০৯.
চাপা গলায় কল্যাণ বলল, আর পারছি না, একটু উঠে বসব?
আনন্দ নাক দিয়ে যে শব্দটা করল তার অর্থ বুঝতে অসুবিধে হল না। প্রায় ঘণ্টাখানেক হয়ে গেছে ওরা দুজনে গাড়ির পেছনের সিটের পা রাখার জায়গায় হাঁটুমুড়ে বসে আছে। সামান্য নড়াচড়াও করতে পারছে না। এখন খুব মৃদু আওয়াজও জোরে শোনাবে। বসে থাকতে থাকতে দুই পা অসাড় হয়ে গেছে। কোমরে ব্যথা হচ্ছে। কল্যাণ সুদীপের কথা ভাবল? বেশ আরামে শুয়ে আছে। নিশ্চয়ই জয়িতার সঙ্গে! জয়িতার মুখটা মনে পড়তেই আবার তার অস্বস্তি হল। জয়িতা যে মেয়ে এমন ভাবার কখনও কারণ ঘটেনি। ওর শারীরিক গঠনের কথা মনেই আসত না কখনও। নিজের পরিচিত বৃত্তে এমন মেয়ে সে কখনও দ্যাখেনি। কিন্তু আজ শাড়ি পরার পর থেকেই জয়িতা যেন আচমকা পালটে গেল। হাবভাবে একটু জড়তা এসে গেছে। যখন গাড়ির সামনের সিটে বসেছিল সুদীপের পাশে তখন তো একদম অপিরিচিত বলে মনে হচ্ছিল। সুদীপের সঙ্গে, সম্ভবত এয়ারকন্ডিশন্ড ঘরে জয়িতা এখন কি করতে পারে? কুঁজো হয়ে বসে কল্যাণ দৃশ্যটা কিছুতেই কল্পনায় আনতে পারছিল না।
এইভাবে বসে থাকতে আনন্দরও কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু ভেতরে ঢোকার তত অন্য কোন উপায় ছিল না। সঙ্গে নারী না থাকলে প্রধান ফটক ওরা পেরোতেই দেবে না। এছাড়া গাড়ি অবশ্যই চাই। সুদীপ যে এই গাড়িটা সহজেই আনতে পেরেছে এটা সুলক্ষণ। ওরা এমন ভাবে বসে আছে, গাড়ির পাশ দিয়ে কেউ চলে গেলেও বুঝতে পারবে না কেউ আছে। তাছাড়া গাড়িটার কাচও ওদের সাহায্য করছে। বাইরে থেকে বোঝাও যাবে না। ওরা যদি সোজা হয়ে বসত তাহলে সামান্যই ঝুঁকি থাকত। অবশ্য সামনের কাঁচ দিয়ে যদি কেউ তাকায় তাহলেই বিপদ। কিন্তু না, কোনও ঝুঁকি নিতে চায়নি আনন্দ। কিন্তু সে বুঝতে পারছিল এইভাবে বেশিক্ষণ থাকাও যায় না। এর পরে যখন সময় আসবে তখন হয়তো অ্যাকশনে নামা দুরের কথা হাঁটাও সম্ভব হবে না। সুদীপ জয়িতা সামনের দরজায় চাবি দিয়ে নেমে গেছে। অনেকক্ষণ। এই সময়ে কোন সন্দেহজনক কিছু আশপাশে ঘটেনি। আনন্দ ফিসফিসিয়ে বলল, আমি উঠে বসছি, তুই পা ছড়িয়ে শুয়ে পড় এখানে।
ধীরে ধীরে সিটের ওপর উঠে বসতেই আনন্দ বুঝতে পারল আর দেরি করলে ভুল হয়ে যেত। কোমর থেকে হাঁটু পর্যন্ত কোন সাড়া নেই। সে মাথা ঝুঁকিয়ে বসে কিছুটা সময় নিল। তারপর একটু সুস্থ বোধ করলে সে ধীরে ধীরে জানলার নিচে চোখ রাখল। ভৌতিক ছবির মত দেখাচ্ছে সামনের রাস্তা, গাছপালা, এবং লনটাকে। ওপাশে মৃত মোষের মত পড়ে আছে গাড়ির সারি। আনন্দ সতর্ক চোখে দেখতে চেষ্টা করছিল। বাইরে আলো খুবই কম। কিন্তু তাতে দৃষ্টি ব্যাহত হচ্ছিল না। পাহারাদারদের খোঁজার চেষ্টা করল আনন্দ। কাউকেই চোখে পড়ছে না। সে নিজের শরীরটাকে গাড়ির দরজার গায়ে এমনভাবে লেপটে রেখেছিল যে একমাত্র বনেটের ওপর বসে মুখে টর্চ না ফেললে কেউ তাকে দেখতে পাবে না। এই সময় পায়ের তলায় সমস্ত শরীর যতটা সম্ভব ছড়িয়ে নিঃশ্বাস ফেলে কল্যাণ বলল, আঃ কি আরাম।
আনন্দ ঘড়ির দিকে তাকাল। এখনও অনেক দেরি আছে। তাড়াহুড়ো করে কোন লাভ নেই। শুধু দুটো জিনিস আগে থেকে পরিষ্কার রাখা দরকার। সদর দরজার তালাটা খুলে রাখতে হবে আর পাহারাদারদের কোনরকমে নিষ্ক্রিয় করে কাজ হাসিল করতে হবে। সে যে তথ্য পেয়েছিল তাতে যদি ভুল না থাকে তাহলে অসুবিধা হবার কথা নয়। এখন শুধু সঠিক সময়ের জন্যে অপেক্ষা করে থাকা। সুদীপটা ঠিক থাকলেই হল। জয়িতার ওপর গোড়া থেকেই ভাল আস্থা রাখে সে। শুধু এই কল্যাণটা ঠিক সময়ে নার্ভ না হারালেই হল।
চাপা গলায় কল্যাণ বলল, আর পারছি না, একটু উঠে বসব?
আনন্দ নাক দিয়ে যে শব্দটা করল তার অর্থ বুঝতে অসুবিধে হল না। প্রায় ঘণ্টাখানেক হয়ে গেছে ওরা দুজনে গাড়ির পেছনের সিটের পা রাখার জায়গায় হাঁটুমুড়ে বসে আছে। সামান্য নড়াচড়াও করতে পারছে না। এখন খুব মৃদু আওয়াজও জোরে শোনাবে। বসে থাকতে থাকতে দুই পা অসাড় হয়ে গেছে। কোমরে ব্যথা হচ্ছে। কল্যাণ সুদীপের কথা ভাবল? বেশ আরামে শুয়ে আছে। নিশ্চয়ই জয়িতার সঙ্গে! জয়িতার মুখটা মনে পড়তেই আবার তার অস্বস্তি হল। জয়িতা যে মেয়ে এমন ভাবার কখনও কারণ ঘটেনি। ওর শারীরিক গঠনের কথা মনেই আসত না কখনও। নিজের পরিচিত বৃত্তে এমন মেয়ে সে কখনও দ্যাখেনি। কিন্তু আজ শাড়ি পরার পর থেকেই জয়িতা যেন আচমকা পালটে গেল। হাবভাবে একটু জড়তা এসে গেছে। যখন গাড়ির সামনের সিটে বসেছিল সুদীপের পাশে তখন তো একদম অপিরিচিত বলে মনে হচ্ছিল। সুদীপের সঙ্গে, সম্ভবত এয়ারকন্ডিশন্ড ঘরে জয়িতা এখন কি করতে পারে? কুঁজো হয়ে বসে কল্যাণ দৃশ্যটা কিছুতেই কল্পনায় আনতে পারছিল না।
এইভাবে বসে থাকতে আনন্দরও কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু ভেতরে ঢোকার তত অন্য কোন উপায় ছিল না। সঙ্গে নারী না থাকলে প্রধান ফটক ওরা পেরোতেই দেবে না। এছাড়া গাড়ি অবশ্যই চাই। সুদীপ যে এই গাড়িটা সহজেই আনতে পেরেছে এটা সুলক্ষণ। ওরা এমন ভাবে বসে আছে, গাড়ির পাশ দিয়ে কেউ চলে গেলেও বুঝতে পারবে না কেউ আছে। তাছাড়া গাড়িটার কাচও ওদের সাহায্য করছে। বাইরে থেকে বোঝাও যাবে না। ওরা যদি সোজা হয়ে বসত তাহলে সামান্যই ঝুঁকি থাকত। অবশ্য সামনের কাঁচ দিয়ে যদি কেউ তাকায় তাহলেই বিপদ। কিন্তু না, কোনও ঝুঁকি নিতে চায়নি আনন্দ। কিন্তু সে বুঝতে পারছিল এইভাবে বেশিক্ষণ থাকাও যায় না। এর পরে যখন সময় আসবে তখন হয়তো অ্যাকশনে নামা দুরের কথা হাঁটাও সম্ভব হবে না। সুদীপ জয়িতা সামনের দরজায় চাবি দিয়ে নেমে গেছে। অনেকক্ষণ। এই সময়ে কোন সন্দেহজনক কিছু আশপাশে ঘটেনি। আনন্দ ফিসফিসিয়ে বলল, আমি উঠে বসছি, তুই পা ছড়িয়ে শুয়ে পড় এখানে।
ধীরে ধীরে সিটের ওপর উঠে বসতেই আনন্দ বুঝতে পারল আর দেরি করলে ভুল হয়ে যেত। কোমর থেকে হাঁটু পর্যন্ত কোন সাড়া নেই। সে মাথা ঝুঁকিয়ে বসে কিছুটা সময় নিল। তারপর একটু সুস্থ বোধ করলে সে ধীরে ধীরে জানলার নিচে চোখ রাখল। ভৌতিক ছবির মত দেখাচ্ছে সামনের রাস্তা, গাছপালা, এবং লনটাকে। ওপাশে মৃত মোষের মত পড়ে আছে গাড়ির সারি। আনন্দ সতর্ক চোখে দেখতে চেষ্টা করছিল। বাইরে আলো খুবই কম। কিন্তু তাতে দৃষ্টি ব্যাহত হচ্ছিল না। পাহারাদারদের খোঁজার চেষ্টা করল আনন্দ। কাউকেই চোখে পড়ছে না। সে নিজের শরীরটাকে গাড়ির দরজার গায়ে এমনভাবে লেপটে রেখেছিল যে একমাত্র বনেটের ওপর বসে মুখে টর্চ না ফেললে কেউ তাকে দেখতে পাবে না। এই সময় পায়ের তলায় সমস্ত শরীর যতটা সম্ভব ছড়িয়ে নিঃশ্বাস ফেলে কল্যাণ বলল, আঃ কি আরাম।
আনন্দ ঘড়ির দিকে তাকাল। এখনও অনেক দেরি আছে। তাড়াহুড়ো করে কোন লাভ নেই। শুধু দুটো জিনিস আগে থেকে পরিষ্কার রাখা দরকার। সদর দরজার তালাটা খুলে রাখতে হবে আর পাহারাদারদের কোনরকমে নিষ্ক্রিয় করে কাজ হাসিল করতে হবে। সে যে তথ্য পেয়েছিল তাতে যদি ভুল না থাকে তাহলে অসুবিধা হবার কথা নয়। এখন শুধু সঠিক সময়ের জন্যে অপেক্ষা করে থাকা। সুদীপটা ঠিক থাকলেই হল। জয়িতার ওপর গোড়া থেকেই ভাল আস্থা রাখে সে। শুধু এই কল্যাণটা ঠিক সময়ে নার্ভ না হারালেই হল।