পর মধ্যরাত্রে ডায়মন্ডহারবার রোডের একটি প্রমোদনিবাসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড হয়ে গিয়েছে। শেষরাত্রে এই অগ্নিকাণ্ডের খবর আমাদের অফিসে আসে। দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখি দমকল আপ্রাণ চেষ্টা করছে আগুন নিবিয়ে ফেলতে, কিন্তু ততক্ষণে প্রচুর ক্ষতি হয়ে গেছে। পুলিশসূত্রে জানা যায় একাধিক ব্যক্তি ডাকাতির উদ্দেশ্যে ওই প্রমোদনিবাসে প্রবেশ করে এবং নির্বিচারে প্যারাডাইসের মালিক এবং দুজন কর্মীকে হত্যা করে আগুন ধরিয়ে দেয়। প্যারাডাইস নামক ওই প্রমোদনিবাসটি সরকারের অলক্ষ্যে মধুকুঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল বলে গ্রামবাসীদের অভিযোগ। ওই অগ্নিকাণ্ডের ফলে ঠিক কতজন অগ্নিদগ্ধ কিংবা আহত হয়েছেন তা জানা যায়নি। কারণ সেইরাত্রে যারা মধুকুঞ্জের মধু আস্বাদন করতে গিয়েছিলেন তারা কেউ প্রকাশ্যে আসতে চাইছেন না। অনুমান সংখ্যাটি দশের কম নয়। ডাকাতরা তাদের কাজ শেষ করে নির্বিঘ্নে গা-ঢাকা দেয়। প্রকাশ, সেই রাতেই ডায়মন্ডহারবার রোডের একটি পেট্রলপাম্প থেকে গাড়ি চুরি হয় এবং অনুমান ডাকাতরা সেই গাড়ি ব্যবহার করেছে। পুলিশ সন্দেহ। করছে ডাকাতরা স্থানীয়। কিন্তু কি উদ্দেশ্যে এই ডাকাতি তা এখনও বোঝা যাচ্ছে না। প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ থেকে জানা যায় ডাকাতদের সংখ্যা বেশি ছিল না, এবং তারা প্রত্যেকেই তরুণ। প্যারাডাইসের ক্রিয়াকলাপ আশেপাশের গ্রামের মানুষ কখনই ভাল চোখে দ্যাখেনি। তথাকথিত ডাকাতি হোক বা না হোক এই কাজ প্যারাডাইসকে চিরকালের জন্যে খুঁড়িয়ে দিয়েছে বলে অনেকেই খুশী, যদিও মৃত্যুর খবরে কেউ আনন্দিত হননি। পুলিশ বলেছে, অপরাধীরা দু-একদিনের মধ্যে ধরা পড়বেই কারণ তদন্ত খুব দ্রুত এগোচ্ছে।
ধীরে ধীরে কনকনানিটা স্থির হল। কোথাও তার কথা লেখা হয়নি। একটি মেয়েও যে ওই দলে ছিল তা রিপোর্টে বলা হয়নি। কেউ কি পুলিশকে এই খবরটা দেয়নি? ক্রমশ নিজেকে বেশ হালকা মনে হচ্ছিল তার। কিন্তু তারপরেই মনে হল এটা একটা চাল হতে পারে। পুলিশ তাদের নিশ্চিন্ত করতে চায় বলেই খবরটা বেমালুম চেপে গেছে। শেষের লাইনটা খুব অস্বস্তিকর। পুলিশ কি কোন সূত্র খুঁজে পেয়েছে? যদি ওরা আনন্দর বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে যায় তাহলে! যে হালকাভাবটা এসেছিল তা আচমকাই চলে গেল। কাগজটাকে ভাজ করে ঠোঁট কামড়াল জয়িতা। কাল সারা দিন এবং রাত্রে এই ব্যাপারটা নিয়ে মোটেই মাথা ঘামায়নি সে। অথচ কাগজটা পড়ামাত্র ওইসব চিন্তা মাথা তুলল। সে চা শেষ করে কাগজটা নিয়ে সুদীপের ঘরের দিকে পা বাড়াল।
শুয়ে শুয়ে সুদীপ সিগারেট খাচ্ছিল। জয়িতাকে দেখে উঠে বসল, এখনই বের হব?
তোর যা ইচ্ছে। আমি তোকে যাওয়ার কথা বলতে আসিনি।
আমি একটু বাদে বের হব। মালগুলো নিয়ে তো ঘোরা যাবে না, এগুলো এখানে রাখা যাবে? মানে তোদের যদি কোন অসুবিধে না হয়?
তোদের তোদের করছিস কেন?
আই অ্যাম সরি। তোর বাবা মা ফিরেছেন?
বাবা এসেছে।
আমার কথা জানেন?
হ্যাঁ। বললেন, তার কোন আপত্তি নেই তোর এখানে থাকতে, যদি আমার বিবেক পরিষ্কার থাকে। আজকের কাগজ। জয়িতা কাগজটা ছুঁড়ে দিল। দিয়ে দেখল সুদীপের মাথার একদিক বেঢপ ফুলে উঠেছে।
কাগজের ভাজ খুলতে খুলতে সুদীপ বলল, তোর বাবা তো দেখছি চমৎকার ভদ্রলোক। কখন যে এরা ঘ্যাম ব্যবহার করে আর কখন যে জালি হয়ে যায় তা শালা অনুমান করাই মুশকিল। আই বাপ, একি রে, একদম হেডলাইন। সুদীপ এবার গম্ভীর হয়ে কাগজটা পড়া শুরু করল। শেষ লাইন অবধি খুঁটিয়ে পড়ে কাগজটাকে সরিয়ে রেখে সে মন্তব্য করল, কোন কাজ হল না।
মানে?
আনন্দ চেয়েছিল এইসব ঘটনা থেকে কাগজগুলো এমন মাতামাতি করবে যে সাধারণ মানুষ ধরতে পারবে ব্যাপারটা। একটার পর একটা ঘটনা ঘটাবো আমরা আর সাধারণ মানুষের অসাড় হয়ে যাওয়া বোধটায় টান লাগবে। এই সো-কলড ডেমোক্রেসিতে অর্থবান মানুষদের ব্যভিচার করাই সবচেয়ে সুবিধে। যত রকমের অন্যায় করেও আইনের দোহাই দিয়ে তারা পার হয়ে যায়। ঠিকঠিক পয়েন্টে ঘা দিয়ে ওদের মুখোশ খুলে দিলে মানুষ নিজেরাই এগিয়ে আসবে। কিন্তু পরশুর ঘটনাটা কাগজ কিভাবে লিখেছে দেখেছিস? যেন আমরা সত্যি ডাকাতি করতে গিয়েছিলাম! কি ডাকাতি করলাম তা লেখেনি!
তুই একটা কথা ভুলে যাচ্ছিস।
কি কথা?
আমরা সবে একটা ঘটনা ঘটালাম। পুলিশ কিংবা সাংবাদিকদের কোন সুযোগ নেই জানার, কারা করেছে কি জন্যে করেছে? আমরা কোন সূত্র রেখে আসিনি। কাগজে কোথাও লেখেনি আমার কথা, আই মিন দলে মহিলা ছিল সেইকথা। অর্থাৎ হয় পুলিশ চেপেছে নয় ওরা টোটাল ইনফরমেশন পায়নি। কিন্তু আরও কয়েকটা ঘটনা ঘটলে জনসাধারণ জেনে যাবেই। রিপোর্টটায় পরিষ্কার বলা আছে প্যারাডাইসে মধুচক্র ছিল। পাবলিক নিশ্চয়ই এই ব্যাপারটায় খুব কষ্ট পাবে না।
জয়িতার কথা শেষ হওয়ামাত্র সুদীপ শুয়ে পড়ল। জয়িতা অবাক হল, কি ব্যাপার?
ঘুম পাচ্ছে। খুব টায়ার্ড লাগছে।
একটা অ্যাকশন করেই–!
না, নিজের সঙ্গে লড়াই করে। তুই বুঝবি না। আমাকে যখন যেতে হবে ডেকে দিস।
তোর যতক্ষণ ইচ্ছে ততক্ষণ থাক।
বাঃ, হঠাৎ এই বাড়ির ওপর তোর কর্তৃত্ব এসে গেছে মনে হচ্ছে! আনন্দ ফোন করবে, বলবি বিকেলের আগে আমি ফ্রি হব না, অবশ্য কোন জরুরী ব্যাপার থাকলে আলাদা কথা। সুদীপ পাশ ফিরে শুতেই জয়িতা উঠে এল। এই মুহূর্তে ওর মনে হল সুদীপ ঠিক আগের মতন নেই। কাল রাত্রে যাকে কাঁদতে শুনেছে সে এখনও সুদীপকে ছেড়ে যায়নি, কিংবা আর একটা ব্যাপার হতে পারে—আমরা যেসব মানুষকে বাইরের জীবনে নিয়মিত দেখে থাকি, যাদের সঙ্গে বন্ধু হয়ে অথবা কর্মসূত্রে মিশি তাদের একটাই চেহারা আমাদের কাছে ধরা পড়ে। তারা যখন নিজের শোওয়ার ঘরে ফিরে যায় তখন তাদের আচরণ সম্পর্কে আমাদের কোন ধারণাই থাকে না। সুদীপকে তো বাইরে থেকেই সে দেখে এসেছে। ছটফটে, টিজ করতে ভালবাসে, কোন কিছুই গায়ে মাখে না, চক্ষুলজ্জার ধার ধারে না। এইরকম ছেলেও হয়তো বাড়িতে চুপচাপ গম্ভীর, একা একা থাকতেই ভালবাসে। জয়িতা মাথা নাড়ল, কখনও কখনও একাকী নিজেকেই বিরক্তিকর মনে হয়। সুদীপ দুই ভুমিকায় থেকে নিজেকে ব্যালেন্স করে।
রামানন্দ রায় বাইরে নেই। কাগজটাকে টেবিলের ওপর রেখে পা বাড়াবার আগেই টেলিফোন বাজল। রিসিভার তুলে সাড়া দিতেই আনন্দর গলা শুনতে পেল, নম্বর জিজ্ঞাসা করছে। জয়িতা বলল, তোকে ডিজিট চিনিয়েছিল কে? মাসিমা? ঠিক শিখিয়েছিলেন। বল্ কি বলবি।
আনন্দ একটু হকচকিয়ে গিয়েছিল, তারপর বলল, পারিস। শোন, সুদীপ কাল ঠিকঠাক ছিল তো?
ঠিকঠাক মানে? জয়িতার গলাটা করকরে হয়ে উঠল আচমকা।
কোন অসুবিধের কথা জিজ্ঞাসা করছি।
অসুবিধের সম্ভাবনা থাকলে আমি ওকে ডেকে আনতাম না।
ওইভাবে কথা বলছিস কেন?
জয়িতা নিজেকে সামলালো। কেন যে ফট করে রাগ হয়ে যায়। সে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক গলায় বলবার চেষ্টা করল, ওয়েল, ঠিক আছে, কি বলবি বল।
আনন্দ চট করে কথা বলল না। যেন সময় নিয়ে কি বলবে স্থির করল, জয়িতা, তোকে একটা কথা শেষবার জিজ্ঞাসা করছি, আমাদের সম্পর্কে কোন অসুবিধে আছে?
না। নেভার। হঠাৎ এই প্রশ্ন?
তাহলে চটজলদি ভুল বুঝছিস কেন?
আই অ্যাম সরি। আসলে একটু আগে বাবার সঙ্গে–, মেজাজটা ভাল ছিল না। তারপর তুই যখন জিজ্ঞাসা করলি, ঠিকঠাক শব্দটা উচ্চারণ করলি তখন, রিয়েলি আই অ্যাম সরি। হ্যাঁ, সুদীপ ভালই ঘুমিয়েছে। একটু আগে কথা বলেছি। ও আবার ঘুমাচ্ছে।
তোর বাবা কি টের পেয়েছেন?
সুদীপকে বাবা দেখেছেন।
দূর, সুদীপের কথা বলছি না, টাকাটার কথা!
ওটা মায়ের ডিপার্টমেন্ট। শী হ্যাজ নট কাম ব্যাক।
ও। আমি সকালে বেরিয়ে যাচ্ছি। অ্যারেঞ্জমেন্ট করে ফিরতে ফিরতে বিকেল হয়ে যাবে। ইউ ক্যান মিট আফটার দ্যাট। কোন অবস্থাতেই আজ ঠাকুরপুকুরে যাওয়া হবে বলে মনে হচ্ছে না। কিন্তু কাল যেতেই হবে। সুদীপ আজ কোথায় থাকবে তোরা ঠিক করে নে। আর সন্ধ্যেবেলায় বসুশ্রী কফিহাউসে মিট করবি। অ্যারাউন্ড সিক্স। সুদীপকে বলবি ও যদি পারে যেটা যোগাড় করবে বলেছে যেন করে রাখে। হয়তো আজই দরকার হবে। ও কে?
কি আছে। কল্যাণ কোথায়?
ওর বাড়িতেই। কাগজ দেখেছিস?
হ্যাঁ। আনন্দবাজার।
টেলিগ্রাফটা দেখিস। স্বর্গে কি কি হত তার ডিটেলস ছেপে দিয়েছে। ওরা মন্তব্য করেছে যে বা যারাই কাজটা করুক তারা আইনের চোখে অন্যায় করেছে, কিন্তু গ্রামবাসীরা আশীর্বাদ বলে যদি মনে করে তাহলে দোষ দেওয়া যায় কি? দ্যাটস অল, তাই না? আনন্দর গলায় খুশীর সুর। সকাল থেকে এই প্রথমবার ভাল লাগল জয়িতার।
ধীরে ধীরে কনকনানিটা স্থির হল। কোথাও তার কথা লেখা হয়নি। একটি মেয়েও যে ওই দলে ছিল তা রিপোর্টে বলা হয়নি। কেউ কি পুলিশকে এই খবরটা দেয়নি? ক্রমশ নিজেকে বেশ হালকা মনে হচ্ছিল তার। কিন্তু তারপরেই মনে হল এটা একটা চাল হতে পারে। পুলিশ তাদের নিশ্চিন্ত করতে চায় বলেই খবরটা বেমালুম চেপে গেছে। শেষের লাইনটা খুব অস্বস্তিকর। পুলিশ কি কোন সূত্র খুঁজে পেয়েছে? যদি ওরা আনন্দর বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে যায় তাহলে! যে হালকাভাবটা এসেছিল তা আচমকাই চলে গেল। কাগজটাকে ভাজ করে ঠোঁট কামড়াল জয়িতা। কাল সারা দিন এবং রাত্রে এই ব্যাপারটা নিয়ে মোটেই মাথা ঘামায়নি সে। অথচ কাগজটা পড়ামাত্র ওইসব চিন্তা মাথা তুলল। সে চা শেষ করে কাগজটা নিয়ে সুদীপের ঘরের দিকে পা বাড়াল।
শুয়ে শুয়ে সুদীপ সিগারেট খাচ্ছিল। জয়িতাকে দেখে উঠে বসল, এখনই বের হব?
তোর যা ইচ্ছে। আমি তোকে যাওয়ার কথা বলতে আসিনি।
আমি একটু বাদে বের হব। মালগুলো নিয়ে তো ঘোরা যাবে না, এগুলো এখানে রাখা যাবে? মানে তোদের যদি কোন অসুবিধে না হয়?
তোদের তোদের করছিস কেন?
আই অ্যাম সরি। তোর বাবা মা ফিরেছেন?
বাবা এসেছে।
আমার কথা জানেন?
হ্যাঁ। বললেন, তার কোন আপত্তি নেই তোর এখানে থাকতে, যদি আমার বিবেক পরিষ্কার থাকে। আজকের কাগজ। জয়িতা কাগজটা ছুঁড়ে দিল। দিয়ে দেখল সুদীপের মাথার একদিক বেঢপ ফুলে উঠেছে।
কাগজের ভাজ খুলতে খুলতে সুদীপ বলল, তোর বাবা তো দেখছি চমৎকার ভদ্রলোক। কখন যে এরা ঘ্যাম ব্যবহার করে আর কখন যে জালি হয়ে যায় তা শালা অনুমান করাই মুশকিল। আই বাপ, একি রে, একদম হেডলাইন। সুদীপ এবার গম্ভীর হয়ে কাগজটা পড়া শুরু করল। শেষ লাইন অবধি খুঁটিয়ে পড়ে কাগজটাকে সরিয়ে রেখে সে মন্তব্য করল, কোন কাজ হল না।
মানে?
আনন্দ চেয়েছিল এইসব ঘটনা থেকে কাগজগুলো এমন মাতামাতি করবে যে সাধারণ মানুষ ধরতে পারবে ব্যাপারটা। একটার পর একটা ঘটনা ঘটাবো আমরা আর সাধারণ মানুষের অসাড় হয়ে যাওয়া বোধটায় টান লাগবে। এই সো-কলড ডেমোক্রেসিতে অর্থবান মানুষদের ব্যভিচার করাই সবচেয়ে সুবিধে। যত রকমের অন্যায় করেও আইনের দোহাই দিয়ে তারা পার হয়ে যায়। ঠিকঠিক পয়েন্টে ঘা দিয়ে ওদের মুখোশ খুলে দিলে মানুষ নিজেরাই এগিয়ে আসবে। কিন্তু পরশুর ঘটনাটা কাগজ কিভাবে লিখেছে দেখেছিস? যেন আমরা সত্যি ডাকাতি করতে গিয়েছিলাম! কি ডাকাতি করলাম তা লেখেনি!
তুই একটা কথা ভুলে যাচ্ছিস।
কি কথা?
আমরা সবে একটা ঘটনা ঘটালাম। পুলিশ কিংবা সাংবাদিকদের কোন সুযোগ নেই জানার, কারা করেছে কি জন্যে করেছে? আমরা কোন সূত্র রেখে আসিনি। কাগজে কোথাও লেখেনি আমার কথা, আই মিন দলে মহিলা ছিল সেইকথা। অর্থাৎ হয় পুলিশ চেপেছে নয় ওরা টোটাল ইনফরমেশন পায়নি। কিন্তু আরও কয়েকটা ঘটনা ঘটলে জনসাধারণ জেনে যাবেই। রিপোর্টটায় পরিষ্কার বলা আছে প্যারাডাইসে মধুচক্র ছিল। পাবলিক নিশ্চয়ই এই ব্যাপারটায় খুব কষ্ট পাবে না।
জয়িতার কথা শেষ হওয়ামাত্র সুদীপ শুয়ে পড়ল। জয়িতা অবাক হল, কি ব্যাপার?
ঘুম পাচ্ছে। খুব টায়ার্ড লাগছে।
একটা অ্যাকশন করেই–!
না, নিজের সঙ্গে লড়াই করে। তুই বুঝবি না। আমাকে যখন যেতে হবে ডেকে দিস।
তোর যতক্ষণ ইচ্ছে ততক্ষণ থাক।
বাঃ, হঠাৎ এই বাড়ির ওপর তোর কর্তৃত্ব এসে গেছে মনে হচ্ছে! আনন্দ ফোন করবে, বলবি বিকেলের আগে আমি ফ্রি হব না, অবশ্য কোন জরুরী ব্যাপার থাকলে আলাদা কথা। সুদীপ পাশ ফিরে শুতেই জয়িতা উঠে এল। এই মুহূর্তে ওর মনে হল সুদীপ ঠিক আগের মতন নেই। কাল রাত্রে যাকে কাঁদতে শুনেছে সে এখনও সুদীপকে ছেড়ে যায়নি, কিংবা আর একটা ব্যাপার হতে পারে—আমরা যেসব মানুষকে বাইরের জীবনে নিয়মিত দেখে থাকি, যাদের সঙ্গে বন্ধু হয়ে অথবা কর্মসূত্রে মিশি তাদের একটাই চেহারা আমাদের কাছে ধরা পড়ে। তারা যখন নিজের শোওয়ার ঘরে ফিরে যায় তখন তাদের আচরণ সম্পর্কে আমাদের কোন ধারণাই থাকে না। সুদীপকে তো বাইরে থেকেই সে দেখে এসেছে। ছটফটে, টিজ করতে ভালবাসে, কোন কিছুই গায়ে মাখে না, চক্ষুলজ্জার ধার ধারে না। এইরকম ছেলেও হয়তো বাড়িতে চুপচাপ গম্ভীর, একা একা থাকতেই ভালবাসে। জয়িতা মাথা নাড়ল, কখনও কখনও একাকী নিজেকেই বিরক্তিকর মনে হয়। সুদীপ দুই ভুমিকায় থেকে নিজেকে ব্যালেন্স করে।
রামানন্দ রায় বাইরে নেই। কাগজটাকে টেবিলের ওপর রেখে পা বাড়াবার আগেই টেলিফোন বাজল। রিসিভার তুলে সাড়া দিতেই আনন্দর গলা শুনতে পেল, নম্বর জিজ্ঞাসা করছে। জয়িতা বলল, তোকে ডিজিট চিনিয়েছিল কে? মাসিমা? ঠিক শিখিয়েছিলেন। বল্ কি বলবি।
আনন্দ একটু হকচকিয়ে গিয়েছিল, তারপর বলল, পারিস। শোন, সুদীপ কাল ঠিকঠাক ছিল তো?
ঠিকঠাক মানে? জয়িতার গলাটা করকরে হয়ে উঠল আচমকা।
কোন অসুবিধের কথা জিজ্ঞাসা করছি।
অসুবিধের সম্ভাবনা থাকলে আমি ওকে ডেকে আনতাম না।
ওইভাবে কথা বলছিস কেন?
জয়িতা নিজেকে সামলালো। কেন যে ফট করে রাগ হয়ে যায়। সে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক গলায় বলবার চেষ্টা করল, ওয়েল, ঠিক আছে, কি বলবি বল।
আনন্দ চট করে কথা বলল না। যেন সময় নিয়ে কি বলবে স্থির করল, জয়িতা, তোকে একটা কথা শেষবার জিজ্ঞাসা করছি, আমাদের সম্পর্কে কোন অসুবিধে আছে?
না। নেভার। হঠাৎ এই প্রশ্ন?
তাহলে চটজলদি ভুল বুঝছিস কেন?
আই অ্যাম সরি। আসলে একটু আগে বাবার সঙ্গে–, মেজাজটা ভাল ছিল না। তারপর তুই যখন জিজ্ঞাসা করলি, ঠিকঠাক শব্দটা উচ্চারণ করলি তখন, রিয়েলি আই অ্যাম সরি। হ্যাঁ, সুদীপ ভালই ঘুমিয়েছে। একটু আগে কথা বলেছি। ও আবার ঘুমাচ্ছে।
তোর বাবা কি টের পেয়েছেন?
সুদীপকে বাবা দেখেছেন।
দূর, সুদীপের কথা বলছি না, টাকাটার কথা!
ওটা মায়ের ডিপার্টমেন্ট। শী হ্যাজ নট কাম ব্যাক।
ও। আমি সকালে বেরিয়ে যাচ্ছি। অ্যারেঞ্জমেন্ট করে ফিরতে ফিরতে বিকেল হয়ে যাবে। ইউ ক্যান মিট আফটার দ্যাট। কোন অবস্থাতেই আজ ঠাকুরপুকুরে যাওয়া হবে বলে মনে হচ্ছে না। কিন্তু কাল যেতেই হবে। সুদীপ আজ কোথায় থাকবে তোরা ঠিক করে নে। আর সন্ধ্যেবেলায় বসুশ্রী কফিহাউসে মিট করবি। অ্যারাউন্ড সিক্স। সুদীপকে বলবি ও যদি পারে যেটা যোগাড় করবে বলেছে যেন করে রাখে। হয়তো আজই দরকার হবে। ও কে?
কি আছে। কল্যাণ কোথায়?
ওর বাড়িতেই। কাগজ দেখেছিস?
হ্যাঁ। আনন্দবাজার।
টেলিগ্রাফটা দেখিস। স্বর্গে কি কি হত তার ডিটেলস ছেপে দিয়েছে। ওরা মন্তব্য করেছে যে বা যারাই কাজটা করুক তারা আইনের চোখে অন্যায় করেছে, কিন্তু গ্রামবাসীরা আশীর্বাদ বলে যদি মনে করে তাহলে দোষ দেওয়া যায় কি? দ্যাটস অল, তাই না? আনন্দর গলায় খুশীর সুর। সকাল থেকে এই প্রথমবার ভাল লাগল জয়িতার।