জয়িতাকে অনুসরণ করে আনন্দ হলঘরটায় এল। রামানন্দ রায় এখানে নেই। শূন্য ঘরটায় আলো জ্বলছে। টেলিফোনের পাশের চেয়ারটায় বসে আনন্দ সর্বাধিক প্রচারিত কাগজটির নাম্বার গাইড থেকে খুঁজে বার করে জয়িতাকে বলল, বাকি তিনটে কাগজের নাম্বার বের করে রাখ।
জয়িতা আবার হাসল, গড়িয়াহাটার টেলিফোনটা পেয়ে কাজ হত না। তুই সেখানে গাইড পেতিস। তোর উচিত ছিল আগে থেকে নাম্বারটা নোট করে রাখা।
কলকাতায় রাত্রে সবকিছু ঠিকঠাক থাকে। একবারেই লাইন পেয়ে গেল। ওপাশ থেকে হ্যালো শুনে আনন্দ বলল, আমি একটা জরুরি খবর দেব। দায়িত্ববান কেউ কিংবা নিউজ এডিটার আছেন?
আপনি কে বলছেন?
আমার পরিচয় পরে দিচ্ছি, আপনি কে?
আমি এই কাগজের রিপোর্টার। নাইট ডিউটিতে আছি। বলতে পারেন যা বলবার।
শুনুন, খানিক আগে বড়বাজারের সত্যনারায়ণ পার্কের পাশে মোহনলালজীর বিরাট ওষুধের কারখানা উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ওটাতে আগুন লেগেছে। মোহনলাল দুটো জাল ওষুধের কারবার করতেন। যার একটা খেলে ক্ষতি হত না কাজও দিত না। দুটো খেলে প্রাণহানির সম্ভাবনা থাকত। আমরা মনে করেছি এই ধরনের মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার নেই। মোহনলাল অক্ষত আছেন, তার নিরীহ কর্মচারীরাও সম্ভব–, কিন্তু কারখানা ধসে গেছে।
আপনারা কারা?
আমরাই ডায়মন্ডহারবার রোডে প্যারাডাইস ধ্বংস করেছি। আইনের ফাঁক ব্যবহার করে যারা সাধারণ মানুষের সর্বনাশ করছে তাদের আমরা একে একে ধ্বংস করব। মোহনলালের জাল ওষুধ স্টক করা আছে ব্র্যাবোর্ন রোডের এস পি অ্যান্ড কোম্পানির স্টোর রুমে। ওখান থেকে ওটা সরিয়ে নেওয়ার আগেই আপনারা খবর নিন। আপনাদের কাগজের মাধ্যমে আমরা সেইসব মানুষকে সতর্ক করে দিচ্ছি, যাতে তারা হাত পোটায়, নইলে একটির পর একটি এই ধরনের অ্যাকশন নেব আমরা। আমরা চাই একটি সুষম সমাজব্যবস্থা। বর্তমান সংবিধানের আশ্রয়ে তা সম্ভব নয়। এই সব কাজগুলো সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করুক এটাই কাম্য।
রিসিভার নামিয়ে রেখে পর পর তিনটি কাগজে একই কথা বলল আনন্দ। শেষের কাগজের এডিটার স্বয়ং ফোন ধরেছিলেন। রাজনৈতিক রচনা লিখে তিনি খুব জনপ্রিয়। ফোন নামাবার আগে প্রশ্ন করলেন, আপনারা কি নকশালপন্থী?
আনন্দ বলল, না। আমাদের আগে কেউ এই পথে হাঁটেননি।
এডিটার প্রশ্ন করলেন, আপনাদের নেক্সট অ্যাকশন জানতে পারি?
রেসকোর্স। রিসিভার নামিয়ে রেখে আনন্দ বলল, এক গ্লাস জল খাওয়াবি জয়?
জয়িতা চাপা গলায় বলল, তোর কি মাথাখারাপ হয়ে গেছে? রেসকোর্সের কথাটা বলে দিলি? আনন্দ উঠে সুদীপদের ঘরের দিকে এগোতে এগোতে বলল, রবীনহুডের মত কায়দা আর কি। না , আমাদের সেই রঘু ডাকাতই তো এমন করত। আমরা এই মুহূর্তে রেসকোর্সকে কিছু করতে পারব। যত সহজে দুটো কাজ করেছি রেসকোর্সে তা সম্ভব হবে না। কাগজে যদি বের হয় খবরটা তাহলে তার নিশ্চয়ই প্রতিক্রিয়া হবে, সেটাই দেখার।
জল খেয়ে আনন্দ বন্ধুদের কাছে ফোনের কথা বলল। অন্তত কাল সকালে কাউকে আর অনুমানের মধ্যে থাকতে হবে না, কে বা কারা কেন এই কাজ করল। জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া স্পষ্ট বোঝা যাবে। রেসকোর্সের ব্যাপারটা সে খুলে বলল। সরকারের প্রত্যক্ষ মদত পাচ্ছেন রেসকোর্সের কর্মকর্তারা। কারণ প্রচুর ট্যাক্স আসছে ওখান থেকে। বোমা বা গ্রেনেড ছুঁড়ে রেসকোর্স উড়িয়ে দিলে কোন কাজ হবে না। আস্তাবল থেকে যে ঘোড়াগুলো রেস করতে মাঠে আসে তাদের ক্ষতি করে কি লাভ! কিন্তু একটা ভয়ের আবহাওয়া তৈরি করতে হবে। প্রথমেই তার শিকার হবে দামী ঘোড়ার মালিকরা। তারা যদি এখান থেকে বোড়া বোম্বে ব্যাঙ্গালোরে নিয়ে যায় তাহলে এখানকার রেসে ভিড় কমবে।
সুদীপ বলল, তাতে আমাদের কোন লাভ হচ্ছে না। শুনেছি বোম্বেতে ঘোড়া ছুটছে আর কলকাতা রেসকোর্সে তার রিলে শুনে লোকে টাকা লাগাচ্ছে। লাগাতার একটা প্যানিক তৈরি করতে পারলে ওখানকার ভিড় কমবে। কিন্তু কলকাতা না, হয় বন্ধ হল, বোষে-মাদ্রাজ-ব্যাঙ্গালোরে তো চলবে!
আনন্দ মাথা নাড়ল, কলকাতায় আমাদের দৃষ্টান্ত অন্যান্য শহরের ছেলেদের উদ্বুদ্ধ করবে, দেখিস।
জয়িতা আবার হাসল, গড়িয়াহাটার টেলিফোনটা পেয়ে কাজ হত না। তুই সেখানে গাইড পেতিস। তোর উচিত ছিল আগে থেকে নাম্বারটা নোট করে রাখা।
কলকাতায় রাত্রে সবকিছু ঠিকঠাক থাকে। একবারেই লাইন পেয়ে গেল। ওপাশ থেকে হ্যালো শুনে আনন্দ বলল, আমি একটা জরুরি খবর দেব। দায়িত্ববান কেউ কিংবা নিউজ এডিটার আছেন?
আপনি কে বলছেন?
আমার পরিচয় পরে দিচ্ছি, আপনি কে?
আমি এই কাগজের রিপোর্টার। নাইট ডিউটিতে আছি। বলতে পারেন যা বলবার।
শুনুন, খানিক আগে বড়বাজারের সত্যনারায়ণ পার্কের পাশে মোহনলালজীর বিরাট ওষুধের কারখানা উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ওটাতে আগুন লেগেছে। মোহনলাল দুটো জাল ওষুধের কারবার করতেন। যার একটা খেলে ক্ষতি হত না কাজও দিত না। দুটো খেলে প্রাণহানির সম্ভাবনা থাকত। আমরা মনে করেছি এই ধরনের মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার নেই। মোহনলাল অক্ষত আছেন, তার নিরীহ কর্মচারীরাও সম্ভব–, কিন্তু কারখানা ধসে গেছে।
আপনারা কারা?
আমরাই ডায়মন্ডহারবার রোডে প্যারাডাইস ধ্বংস করেছি। আইনের ফাঁক ব্যবহার করে যারা সাধারণ মানুষের সর্বনাশ করছে তাদের আমরা একে একে ধ্বংস করব। মোহনলালের জাল ওষুধ স্টক করা আছে ব্র্যাবোর্ন রোডের এস পি অ্যান্ড কোম্পানির স্টোর রুমে। ওখান থেকে ওটা সরিয়ে নেওয়ার আগেই আপনারা খবর নিন। আপনাদের কাগজের মাধ্যমে আমরা সেইসব মানুষকে সতর্ক করে দিচ্ছি, যাতে তারা হাত পোটায়, নইলে একটির পর একটি এই ধরনের অ্যাকশন নেব আমরা। আমরা চাই একটি সুষম সমাজব্যবস্থা। বর্তমান সংবিধানের আশ্রয়ে তা সম্ভব নয়। এই সব কাজগুলো সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করুক এটাই কাম্য।
রিসিভার নামিয়ে রেখে পর পর তিনটি কাগজে একই কথা বলল আনন্দ। শেষের কাগজের এডিটার স্বয়ং ফোন ধরেছিলেন। রাজনৈতিক রচনা লিখে তিনি খুব জনপ্রিয়। ফোন নামাবার আগে প্রশ্ন করলেন, আপনারা কি নকশালপন্থী?
আনন্দ বলল, না। আমাদের আগে কেউ এই পথে হাঁটেননি।
এডিটার প্রশ্ন করলেন, আপনাদের নেক্সট অ্যাকশন জানতে পারি?
রেসকোর্স। রিসিভার নামিয়ে রেখে আনন্দ বলল, এক গ্লাস জল খাওয়াবি জয়?
জয়িতা চাপা গলায় বলল, তোর কি মাথাখারাপ হয়ে গেছে? রেসকোর্সের কথাটা বলে দিলি? আনন্দ উঠে সুদীপদের ঘরের দিকে এগোতে এগোতে বলল, রবীনহুডের মত কায়দা আর কি। না , আমাদের সেই রঘু ডাকাতই তো এমন করত। আমরা এই মুহূর্তে রেসকোর্সকে কিছু করতে পারব। যত সহজে দুটো কাজ করেছি রেসকোর্সে তা সম্ভব হবে না। কাগজে যদি বের হয় খবরটা তাহলে তার নিশ্চয়ই প্রতিক্রিয়া হবে, সেটাই দেখার।
জল খেয়ে আনন্দ বন্ধুদের কাছে ফোনের কথা বলল। অন্তত কাল সকালে কাউকে আর অনুমানের মধ্যে থাকতে হবে না, কে বা কারা কেন এই কাজ করল। জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া স্পষ্ট বোঝা যাবে। রেসকোর্সের ব্যাপারটা সে খুলে বলল। সরকারের প্রত্যক্ষ মদত পাচ্ছেন রেসকোর্সের কর্মকর্তারা। কারণ প্রচুর ট্যাক্স আসছে ওখান থেকে। বোমা বা গ্রেনেড ছুঁড়ে রেসকোর্স উড়িয়ে দিলে কোন কাজ হবে না। আস্তাবল থেকে যে ঘোড়াগুলো রেস করতে মাঠে আসে তাদের ক্ষতি করে কি লাভ! কিন্তু একটা ভয়ের আবহাওয়া তৈরি করতে হবে। প্রথমেই তার শিকার হবে দামী ঘোড়ার মালিকরা। তারা যদি এখান থেকে বোড়া বোম্বে ব্যাঙ্গালোরে নিয়ে যায় তাহলে এখানকার রেসে ভিড় কমবে।
সুদীপ বলল, তাতে আমাদের কোন লাভ হচ্ছে না। শুনেছি বোম্বেতে ঘোড়া ছুটছে আর কলকাতা রেসকোর্সে তার রিলে শুনে লোকে টাকা লাগাচ্ছে। লাগাতার একটা প্যানিক তৈরি করতে পারলে ওখানকার ভিড় কমবে। কিন্তু কলকাতা না, হয় বন্ধ হল, বোষে-মাদ্রাজ-ব্যাঙ্গালোরে তো চলবে!
আনন্দ মাথা নাড়ল, কলকাতায় আমাদের দৃষ্টান্ত অন্যান্য শহরের ছেলেদের উদ্বুদ্ধ করবে, দেখিস।