অবনী তালুকদারের চোখ জ্বলে উঠল, আপনার বাড়িতে এসেছি ভদ্রতাবোধে! অনর্থক আমাকে অপমান করছেন আপনি। এই আমার শেষ আসা। তবে আপনাকে বলে দিচ্ছি সে যদি এখানে কখনও আসে তাহলে পুলিশে খবর দেবেন।
আর দাঁড়ালেন না অবনী তালুকদার। স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন বৃদ্ধা। সুদীপ উঠে দাঁড়াল। গলি থেকে অবনী তালুকদারের গাড়িটা বেরিয়ে গেল। এক পলকে নিজের কর্তব্য ঠিক করে নিল সুদীপ। একবার ঘরের দিকে তাকাল। বন্ধুদের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনার দরকার নেই। সে সোজা নিজে নেমে এল। বৃদ্ধা তখনও একই ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে। তাঁর কোরা থান আরও বিষণ্ণ করে তুলেছিল তাঁকে। সুদীপকে দেখতে পাওয়া মাত্র তিনি দ্রুতবেগে ভেতরে চলে গেলেন উলটো দিকে মুখ করে। সুদীপ এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থেকে প্রথমে সদর দরজাটা বন্ধ করল। তারপর বারান্দায় উঠে সোজা দরজায় গিয়ে দাঁড়াল। একটা সাবেকী আমলের খাট। ঘরে তেমন আসবার নেই। বৃদ্ধা সেই খাটে বসে আছেন মুখ ফিরিয়ে। সুদীপ পাশে গিয়ে দাঁড়াল, বাবা আপনাকে যা বলে গেল তা আমি শুনেছি। আপনি যদি ওসব কথা বিশ্বাস করেন তাহলে আমরা এই মুহূর্তে বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছি। কথাটা বলেই সুদীপের খেয়াল হল, বুড়ি যদি চিৎকার করে তাদের চলে যেতে বলে, যদি অবনী তালুকদারের অভিযোগগুলো আওড়াতে থাকে তাহলে দেখতে হবে না। ডায়মন্ডহারবার রোড পর্যন্ত তাদের পৌঁছতে হবে না আর। কিন্তু তার কথার উত্তরে বৃদ্ধা কিছুই বললেন না। তার ভঙ্গিরও কোন পরিবর্তন ঘটল না। সুদীপ কি করবে বুঝতে পারছিল না। এই আশ্রয়টুকু সে কিছুতেই হারাতে চাইছিল না। অথচ ওই প্রশ্নটির উত্তর না পেলে এখানে থাকাটা মোটেই নিরাপদ নয়। সে আবার জিজ্ঞাসা করল, আমি কি করব বলে দিন।
হঠাৎ বৃদ্ধা উঠে দাঁড়ালেন, আমারই মাথার গোলমাল নইলে ডিম আনাই! আমার বাড়িতে বসে মায়ের কাজ করতে হবে। ছেলে বেঁচে থাকতে সে যদি কাজ না করে তাহলে মা কখনও শান্তি পায় না। অবনী যাই বলুক তাতে আমার কিছু যায় আসে না। সে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করছে, না করুণা করছে তা সে-ই জানে। মেয়েটাকে আমি ভালবাসতাম। কেউ যদি ডাকাতি করে কিংবা বাপের টাকাপয়সা কেড়ে নিয়ে আমার কাছে আশ্রয় চায় তাহলে তাকে আমি আশ্রয় দেব না। কিন্তু ওই মেয়ের ছেলে বলেই থাকতে দিয়েছি, মনে থাকে যেন। কথাগুলো বলে তিনি তার রান্নাঘরে ঢুকে ডিমগুলো বের করলেন। বোঝাই যাচ্ছিল হয় ফেলে দেবেন নয় কাউকে দিয়ে দিতে চান।
সুদীপ চটপট বলল, ঠিক আছে, এখন যদি ডিম খেলে আপত্তি থাকে তাহলে পরে খাওয়া যাবে। কিংবা আমার বন্ধুরা তো কোন দোষ করেনি, ওদের মা-ও মারা যায়নি, ওরা তো খেতে পারে।
বৃদ্ধা দাঁড়ালেন। প্রস্তাবটা যেন তার অপছন্দ হল না। শেষ পর্যন্ত ডিমের প্যাকেটটা মাটিতে নামিয়ে রেখে ফিরে যেতে যেতে বললেন, যে খাবে খাক। আমি রাঁধতে পারব না। আমার বাড়িতে কাজ হবে আর আমি ডিম বাঁধব?
আপাতত ঝড় উঠল না। সুদীপ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। তারপর ডিমের প্যাকেটটা তুলে উপরে উঠে এল। ওকে দেখামাত্র আনন্দ জিজ্ঞাসা করল, কি হয়েছে?
ওদের উদ্বিগ্ন মুখগুলোর দিকে তাকিয়ে সুদীপ বলল, কেস খুব সিরিয়াস। অবনী তালুকদার এসেছিল শ্রাদ্ধের নেমন্তন্ন করতে! আমার নামে বহুৎ স্টোরি বলে গেল। ওসবের একটা যদি বুড়ি বিশ্বাস করে তাহলে এখান থেকেই আমাদের থানায় যেতে হবে।
সে কি! কল্যাণ প্রায় সাদা হয়ে গেল, অবনী, মানে তোর বাবা, আমাদের এখানকার খবর জেনে গেছেন?
খুব কপাল জোর, বুড়ি ওকে কিছু বলেনি। আশ্চর্য জালি পার্টি মাইরি, নেমন্তন্ন করতে এসে বলছে গেলেও চলবে! জয়ী, ডিমগুলো নে। বুড়ি আমাদের জন্যে আনিয়েছিল। মায়ের কাজ না হওয়া পর্যন্ত আর ছোঁবে না। দেখব তুই কি বকম ডিমের কাবি করতে পারিস। চা বানিয়েছিস? সুদীপ সিগারেট ধরাল।
জয়িতা চুপচাপ সুদাপের কথাগুলো শুনছিল। ও যেভাবে চুপচাপ নেমে গেল তাতেই ওদের উদ্বেগ বেড়ে গিয়েছিল। একটা লোক এসে বৃদ্ধার সঙ্গে কথা বলছে উত্তেজিত ভঙ্গিতে, এইটে স্বস্তিদায়ক ছিল না। কিন্তু এখন সুদীপের কথার ধরনে ওর সর্বাঙ্গ জুলে গেল। সে সোজাসুজি জিজ্ঞাসা করল, সুদীপ, এখানে আরও দুজন বসে আছে। তুই শুধু আমাকে কেন জিজ্ঞাসা করলি ডিমের কারি বাঁধতে কেমন পাবি?
সুদীপ একটু হকচকিয়ে গেল। তারপর হেসে বলল, তুই কাছাকাছি বসে আছিস, তাই।
আর দাঁড়ালেন না অবনী তালুকদার। স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন বৃদ্ধা। সুদীপ উঠে দাঁড়াল। গলি থেকে অবনী তালুকদারের গাড়িটা বেরিয়ে গেল। এক পলকে নিজের কর্তব্য ঠিক করে নিল সুদীপ। একবার ঘরের দিকে তাকাল। বন্ধুদের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনার দরকার নেই। সে সোজা নিজে নেমে এল। বৃদ্ধা তখনও একই ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে। তাঁর কোরা থান আরও বিষণ্ণ করে তুলেছিল তাঁকে। সুদীপকে দেখতে পাওয়া মাত্র তিনি দ্রুতবেগে ভেতরে চলে গেলেন উলটো দিকে মুখ করে। সুদীপ এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থেকে প্রথমে সদর দরজাটা বন্ধ করল। তারপর বারান্দায় উঠে সোজা দরজায় গিয়ে দাঁড়াল। একটা সাবেকী আমলের খাট। ঘরে তেমন আসবার নেই। বৃদ্ধা সেই খাটে বসে আছেন মুখ ফিরিয়ে। সুদীপ পাশে গিয়ে দাঁড়াল, বাবা আপনাকে যা বলে গেল তা আমি শুনেছি। আপনি যদি ওসব কথা বিশ্বাস করেন তাহলে আমরা এই মুহূর্তে বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছি। কথাটা বলেই সুদীপের খেয়াল হল, বুড়ি যদি চিৎকার করে তাদের চলে যেতে বলে, যদি অবনী তালুকদারের অভিযোগগুলো আওড়াতে থাকে তাহলে দেখতে হবে না। ডায়মন্ডহারবার রোড পর্যন্ত তাদের পৌঁছতে হবে না আর। কিন্তু তার কথার উত্তরে বৃদ্ধা কিছুই বললেন না। তার ভঙ্গিরও কোন পরিবর্তন ঘটল না। সুদীপ কি করবে বুঝতে পারছিল না। এই আশ্রয়টুকু সে কিছুতেই হারাতে চাইছিল না। অথচ ওই প্রশ্নটির উত্তর না পেলে এখানে থাকাটা মোটেই নিরাপদ নয়। সে আবার জিজ্ঞাসা করল, আমি কি করব বলে দিন।
হঠাৎ বৃদ্ধা উঠে দাঁড়ালেন, আমারই মাথার গোলমাল নইলে ডিম আনাই! আমার বাড়িতে বসে মায়ের কাজ করতে হবে। ছেলে বেঁচে থাকতে সে যদি কাজ না করে তাহলে মা কখনও শান্তি পায় না। অবনী যাই বলুক তাতে আমার কিছু যায় আসে না। সে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করছে, না করুণা করছে তা সে-ই জানে। মেয়েটাকে আমি ভালবাসতাম। কেউ যদি ডাকাতি করে কিংবা বাপের টাকাপয়সা কেড়ে নিয়ে আমার কাছে আশ্রয় চায় তাহলে তাকে আমি আশ্রয় দেব না। কিন্তু ওই মেয়ের ছেলে বলেই থাকতে দিয়েছি, মনে থাকে যেন। কথাগুলো বলে তিনি তার রান্নাঘরে ঢুকে ডিমগুলো বের করলেন। বোঝাই যাচ্ছিল হয় ফেলে দেবেন নয় কাউকে দিয়ে দিতে চান।
সুদীপ চটপট বলল, ঠিক আছে, এখন যদি ডিম খেলে আপত্তি থাকে তাহলে পরে খাওয়া যাবে। কিংবা আমার বন্ধুরা তো কোন দোষ করেনি, ওদের মা-ও মারা যায়নি, ওরা তো খেতে পারে।
বৃদ্ধা দাঁড়ালেন। প্রস্তাবটা যেন তার অপছন্দ হল না। শেষ পর্যন্ত ডিমের প্যাকেটটা মাটিতে নামিয়ে রেখে ফিরে যেতে যেতে বললেন, যে খাবে খাক। আমি রাঁধতে পারব না। আমার বাড়িতে কাজ হবে আর আমি ডিম বাঁধব?
আপাতত ঝড় উঠল না। সুদীপ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। তারপর ডিমের প্যাকেটটা তুলে উপরে উঠে এল। ওকে দেখামাত্র আনন্দ জিজ্ঞাসা করল, কি হয়েছে?
ওদের উদ্বিগ্ন মুখগুলোর দিকে তাকিয়ে সুদীপ বলল, কেস খুব সিরিয়াস। অবনী তালুকদার এসেছিল শ্রাদ্ধের নেমন্তন্ন করতে! আমার নামে বহুৎ স্টোরি বলে গেল। ওসবের একটা যদি বুড়ি বিশ্বাস করে তাহলে এখান থেকেই আমাদের থানায় যেতে হবে।
সে কি! কল্যাণ প্রায় সাদা হয়ে গেল, অবনী, মানে তোর বাবা, আমাদের এখানকার খবর জেনে গেছেন?
খুব কপাল জোর, বুড়ি ওকে কিছু বলেনি। আশ্চর্য জালি পার্টি মাইরি, নেমন্তন্ন করতে এসে বলছে গেলেও চলবে! জয়ী, ডিমগুলো নে। বুড়ি আমাদের জন্যে আনিয়েছিল। মায়ের কাজ না হওয়া পর্যন্ত আর ছোঁবে না। দেখব তুই কি বকম ডিমের কাবি করতে পারিস। চা বানিয়েছিস? সুদীপ সিগারেট ধরাল।
জয়িতা চুপচাপ সুদাপের কথাগুলো শুনছিল। ও যেভাবে চুপচাপ নেমে গেল তাতেই ওদের উদ্বেগ বেড়ে গিয়েছিল। একটা লোক এসে বৃদ্ধার সঙ্গে কথা বলছে উত্তেজিত ভঙ্গিতে, এইটে স্বস্তিদায়ক ছিল না। কিন্তু এখন সুদীপের কথার ধরনে ওর সর্বাঙ্গ জুলে গেল। সে সোজাসুজি জিজ্ঞাসা করল, সুদীপ, এখানে আরও দুজন বসে আছে। তুই শুধু আমাকে কেন জিজ্ঞাসা করলি ডিমের কারি বাঁধতে কেমন পাবি?
সুদীপ একটু হকচকিয়ে গেল। তারপর হেসে বলল, তুই কাছাকাছি বসে আছিস, তাই।