খাওয়া শেষ হয়ে এলে সুদীপ বৃদ্ধাকে উঠে যেতে দেখে আনন্দকে জিজ্ঞাসা করল, কল্যাণদের কথা বলব? এই রকমই কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ নিজের কাছেই বাধোবাধো ঠেকতে লাগল আনন্দব। এই বিশ্বাস এবং সেহ নষ্ট হতে পারত আজ সকালে অবনী তালুকদারের কথা শুনে। কিন্তু হয়নি। এবং এখন ইনি নিজে থেকেই সুদীপের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। হঠাৎ যদি জানতে পারেন ওঁরই বাড়ির ছাদেব ঘরে দুটি ছেলেমেয়ে গোপনে বাস করছে তাহলে চট করেই অবিশ্বাস আসবে। সুদীপ সম্পর্কে তাঁর এই নরম অনুভূতি দূর হবেই এবং আজ অবনী তালুকদারের কথাগুলো সত্যি বলে বোধ হবে। সে ইশাবা করল সুদীপকে কিছু না বলতে।
এই সময় পাশের দরজায় ক্রমাগত শব্দ শুরু হল। বৃদ্ধা বিরক্ত হয়ে বারান্দায় এলেন, আবার কি জ্বালাতন— এই ধরনের কিছু বলে উঠোনে নেমে গলা তুলবেন, কে? কি চাই? এত রাত্রে কেন?
ওপাশ থেকে চাপা গলায় শোনা গেল, দিদিমা, তাড়াতাড়ি খুলুন সর্বনাশ হয়ে গেছে।
বৃদ্ধা ছুটে গেলেন। ওদের খাওয়া হয়ে গিয়েছিল। শেষ কথাটা কানে আসায় ওরা কোনমতে হাত ধুয়ে উঠোনে নামল। বৃদ্ধা পেছনের দরজা খুলতেই একজন মধ্যবয়স্ক রোগা লোক সামনে এসে দাঁড়াল, দিদিমা আমাকে বাঁচান। ও–ও মনে হয় বিষ খেয়েছে।
কি খেয়েছে? বিষ? বৃদ্ধা আঁতকে উঠলেন, ওমা কি সব্বনেশে কাণ্ড। বিষ খেতে গেল কেন?
আমার দোষ! বিশ্বাস করুন, কিন্তু তাতে যে বিষ খাবে ভাবিনি। একটা কথা শুনে বাড়ি ফিরে ওকে খুব বকেছিলাম। তারপর চুপচাপ ছিল। হঠাৎ দেখি কাতরাচ্ছে। জিজ্ঞাসা করায় বলল ও মরে যেতে চায় বলে বিষ খেয়েছে। আমি এখন কি করি? লোকটি অসহায় গলায় বলছিল।
মরেনি তো! তাহলে হাসপাতালে নিয়ে যাও। দাঁড়িয়ে দেখছ কি? গাড়ি ডাক! বৃদ্ধা ধমকালেন।
আহা আপনি বুঝতে পারছেন না! হাসপাতালে নিয়ে গেলেই পুলিশ কেস হবে। এখন চারপাশে যেরকম গৃহবধূ হত্যার কেস হচ্ছে তাতে আমাকে ফাঁসিয়ে রে ওর ভাইরা। ও তো বলবে আমি বকেছি বলে বিষ খেয়েছি।
লোকটির অবস্থা সত্যি করুণ। সে এবার আনন্দদের দেখতে পেল। বৃদ্ধা বললেন, চল তো, যদি তেমন দেখি তাহলে তো হাসপাতালে নিয়ে যেতেই হবে। তোমার পাশের ভাড়াটে জানে?
না। তাহলে আজ রাত্রে পৃথিবীর সব লোক জেনে যাবে। লোকটি বৃদ্ধাকে অনুসরণ করছিল।
বৃদ্ধা দরজার আড়ালে যেতে যেতে জিজ্ঞাসা করলেন, তেঁতুলজল আছে? আর নুন? নিয়ে এস এখনই।
সুদীপ বলল, কেসটা কি, একবার দেখা দরকার।
আনন্দ আপত্তি করল, না। খামোক জড়াস না। আমাদের অনেক ঝামেলা আছে।
সুদীপ বলল, কে বিষ খেয়েছে বুঝতে পারছিস? পুকুরধারের সেই মেয়েটা, আমার কাছে নিমপাতা চেয়েছিল। এই লোকটা মনে হচ্ছে ওর স্বামী। এমনও তো হতে পারে ও-ই বিষ খাইয়ে এখানে এসে অ্যাক্টিং করছিল! সকালে যাকে দেখেছি সে বিষ খাবে ভাবাই যায় না।
এই সময় বৃদ্ধা চলে এলেন এপাশে। ওদের দিকে তাকিয়ে থতমত হয়ে গেলেন। তারপর না বলে যেন পারলেন না, চোখ উলটে যাচ্ছে। দাঁতে দাঁত লেগে যাচ্ছে। আমি বলে দিলাম হাসপাতালে নিয়ে যেতে। ছেলেটার কোন দোষ নেই। নির্দোষীরাই তো মরে।
হঠাৎ সুদীপ জিজ্ঞাসা করল, প্রাণ আছে?
এখনও আছে মনে হচ্ছে।
উনি যদি হাসপাতালে না নিয়ে যান তাহলে তো আরও বিপদ। মারা গেলে ডেথ সার্টিফিকেট লেখার ডাক্তার পাবেন না। যা হয় তোক, ওর উচিত স্ত্রীকে সেখানে নিয়ে যাওয়া। আমি একবার দেখতে পারি?
তুমি! তুমি আবার কি দেখবে? তুমি ডাক্তার নাকি? বৃদ্ধা উড়িয়ে দিতে চাইলেন।
আমি ফার্স্ট এইড ট্রেনিংটা নিয়েছিলাম। সুদীপ তার গলায় আত্মবিশ্বাস বোঝাল। বৃদ্ধা যে ধন্ধে পড়লেন। মনে হচ্ছিল ওই ঝামেলায় সুদীপ যেন না জড়ায় সেটাই ওঁর কাম্য ছিল। কিন্তু সুদীপের ট্রেনিং-এর খবরটা শোনার পর সরাসরি না বলতে বাধছে।
তিনি মাথা নেড়ে ডাকলেন, এসো। দুজনেই এসো। যেন শুধু সুদীপকে নিয়ে যেতে তিনি সাহস পাচ্ছেন না। দরজার গায়েই সিঁড়ি। দুই ভাড়াটের অস্তিত্ব একটা পার্টিশন তুলে আলাদা করে দেওয়া হয়েছে। সামনের ঘরের দরজা ভেজানো ছিল। ভেতরের অল্প আলোর সামান্যই বাইরে আসছে। বৃদ্ধা দরজাটা খুলতেই ওরা একটা টেবিলল্যাম্প জুলতে দেখল। যুবতী শুয়ে আছে খাটেব ওপর। ওর পায়ের কাছে মাথায় হাত রেখে সেই লোকটি কঁদছে যতটা সম্ভব নিচু গলায়। বৃদ্ধা বললেন, কি ঠিক করলে? এরা আমার বাড়িতে এসেছে। খুব ভাল ছেলে। এসবের চিকিৎসা জানে বলল। দ্যাখো তো বাপু, কিছু করতে পার কিনা। না পারলে খামোক এখানে দাঁড়িয়ে থাকার কোন দরকার নেই।
সুদীপ এগিয়ে গেল বিছানার পাশে। পড়ে থাকা হাতটা তুলে পালস্ দেখল। জীবনের চিহ্ন রয়েছে এবং সামান্য দ্রুত ছাড়া কোন অস্বাভাবিকতা নেই। বিষ খেলে কারও দাঁত লেগে যায় বলে সে জানতে না। কিন্তু মহিলার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে অবস্থা প্রায় শেষেব দিকে। অথচ নাড়ি তার বিপরীত কথা বলছে। সে লোকটিকে বলল, বমি কবনো যায় এমন কিছু আনুন।
বমি? কি খেলে বমি করে? অত্যন্ত নির্বোধের মত প্রশ্নটা করল লোকটা। ঠিক কাকে করল তা সে নিজেই জানে না। বৃদ্ধা বললেন, এসো আমার সঙ্গে, আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি।
এই সময় পাশের দরজায় ক্রমাগত শব্দ শুরু হল। বৃদ্ধা বিরক্ত হয়ে বারান্দায় এলেন, আবার কি জ্বালাতন— এই ধরনের কিছু বলে উঠোনে নেমে গলা তুলবেন, কে? কি চাই? এত রাত্রে কেন?
ওপাশ থেকে চাপা গলায় শোনা গেল, দিদিমা, তাড়াতাড়ি খুলুন সর্বনাশ হয়ে গেছে।
বৃদ্ধা ছুটে গেলেন। ওদের খাওয়া হয়ে গিয়েছিল। শেষ কথাটা কানে আসায় ওরা কোনমতে হাত ধুয়ে উঠোনে নামল। বৃদ্ধা পেছনের দরজা খুলতেই একজন মধ্যবয়স্ক রোগা লোক সামনে এসে দাঁড়াল, দিদিমা আমাকে বাঁচান। ও–ও মনে হয় বিষ খেয়েছে।
কি খেয়েছে? বিষ? বৃদ্ধা আঁতকে উঠলেন, ওমা কি সব্বনেশে কাণ্ড। বিষ খেতে গেল কেন?
আমার দোষ! বিশ্বাস করুন, কিন্তু তাতে যে বিষ খাবে ভাবিনি। একটা কথা শুনে বাড়ি ফিরে ওকে খুব বকেছিলাম। তারপর চুপচাপ ছিল। হঠাৎ দেখি কাতরাচ্ছে। জিজ্ঞাসা করায় বলল ও মরে যেতে চায় বলে বিষ খেয়েছে। আমি এখন কি করি? লোকটি অসহায় গলায় বলছিল।
মরেনি তো! তাহলে হাসপাতালে নিয়ে যাও। দাঁড়িয়ে দেখছ কি? গাড়ি ডাক! বৃদ্ধা ধমকালেন।
আহা আপনি বুঝতে পারছেন না! হাসপাতালে নিয়ে গেলেই পুলিশ কেস হবে। এখন চারপাশে যেরকম গৃহবধূ হত্যার কেস হচ্ছে তাতে আমাকে ফাঁসিয়ে রে ওর ভাইরা। ও তো বলবে আমি বকেছি বলে বিষ খেয়েছি।
লোকটির অবস্থা সত্যি করুণ। সে এবার আনন্দদের দেখতে পেল। বৃদ্ধা বললেন, চল তো, যদি তেমন দেখি তাহলে তো হাসপাতালে নিয়ে যেতেই হবে। তোমার পাশের ভাড়াটে জানে?
না। তাহলে আজ রাত্রে পৃথিবীর সব লোক জেনে যাবে। লোকটি বৃদ্ধাকে অনুসরণ করছিল।
বৃদ্ধা দরজার আড়ালে যেতে যেতে জিজ্ঞাসা করলেন, তেঁতুলজল আছে? আর নুন? নিয়ে এস এখনই।
সুদীপ বলল, কেসটা কি, একবার দেখা দরকার।
আনন্দ আপত্তি করল, না। খামোক জড়াস না। আমাদের অনেক ঝামেলা আছে।
সুদীপ বলল, কে বিষ খেয়েছে বুঝতে পারছিস? পুকুরধারের সেই মেয়েটা, আমার কাছে নিমপাতা চেয়েছিল। এই লোকটা মনে হচ্ছে ওর স্বামী। এমনও তো হতে পারে ও-ই বিষ খাইয়ে এখানে এসে অ্যাক্টিং করছিল! সকালে যাকে দেখেছি সে বিষ খাবে ভাবাই যায় না।
এই সময় বৃদ্ধা চলে এলেন এপাশে। ওদের দিকে তাকিয়ে থতমত হয়ে গেলেন। তারপর না বলে যেন পারলেন না, চোখ উলটে যাচ্ছে। দাঁতে দাঁত লেগে যাচ্ছে। আমি বলে দিলাম হাসপাতালে নিয়ে যেতে। ছেলেটার কোন দোষ নেই। নির্দোষীরাই তো মরে।
হঠাৎ সুদীপ জিজ্ঞাসা করল, প্রাণ আছে?
এখনও আছে মনে হচ্ছে।
উনি যদি হাসপাতালে না নিয়ে যান তাহলে তো আরও বিপদ। মারা গেলে ডেথ সার্টিফিকেট লেখার ডাক্তার পাবেন না। যা হয় তোক, ওর উচিত স্ত্রীকে সেখানে নিয়ে যাওয়া। আমি একবার দেখতে পারি?
তুমি! তুমি আবার কি দেখবে? তুমি ডাক্তার নাকি? বৃদ্ধা উড়িয়ে দিতে চাইলেন।
আমি ফার্স্ট এইড ট্রেনিংটা নিয়েছিলাম। সুদীপ তার গলায় আত্মবিশ্বাস বোঝাল। বৃদ্ধা যে ধন্ধে পড়লেন। মনে হচ্ছিল ওই ঝামেলায় সুদীপ যেন না জড়ায় সেটাই ওঁর কাম্য ছিল। কিন্তু সুদীপের ট্রেনিং-এর খবরটা শোনার পর সরাসরি না বলতে বাধছে।
তিনি মাথা নেড়ে ডাকলেন, এসো। দুজনেই এসো। যেন শুধু সুদীপকে নিয়ে যেতে তিনি সাহস পাচ্ছেন না। দরজার গায়েই সিঁড়ি। দুই ভাড়াটের অস্তিত্ব একটা পার্টিশন তুলে আলাদা করে দেওয়া হয়েছে। সামনের ঘরের দরজা ভেজানো ছিল। ভেতরের অল্প আলোর সামান্যই বাইরে আসছে। বৃদ্ধা দরজাটা খুলতেই ওরা একটা টেবিলল্যাম্প জুলতে দেখল। যুবতী শুয়ে আছে খাটেব ওপর। ওর পায়ের কাছে মাথায় হাত রেখে সেই লোকটি কঁদছে যতটা সম্ভব নিচু গলায়। বৃদ্ধা বললেন, কি ঠিক করলে? এরা আমার বাড়িতে এসেছে। খুব ভাল ছেলে। এসবের চিকিৎসা জানে বলল। দ্যাখো তো বাপু, কিছু করতে পার কিনা। না পারলে খামোক এখানে দাঁড়িয়ে থাকার কোন দরকার নেই।
সুদীপ এগিয়ে গেল বিছানার পাশে। পড়ে থাকা হাতটা তুলে পালস্ দেখল। জীবনের চিহ্ন রয়েছে এবং সামান্য দ্রুত ছাড়া কোন অস্বাভাবিকতা নেই। বিষ খেলে কারও দাঁত লেগে যায় বলে সে জানতে না। কিন্তু মহিলার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে অবস্থা প্রায় শেষেব দিকে। অথচ নাড়ি তার বিপরীত কথা বলছে। সে লোকটিকে বলল, বমি কবনো যায় এমন কিছু আনুন।
বমি? কি খেলে বমি করে? অত্যন্ত নির্বোধের মত প্রশ্নটা করল লোকটা। ঠিক কাকে করল তা সে নিজেই জানে না। বৃদ্ধা বললেন, এসো আমার সঙ্গে, আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি।