১৮.
সুদীপ চুপচাপ গাড়ি চালাচ্ছিল। পুরো রাস্তাটা আনন্দ ওদের বোঝাতে বোঝাতে এসেছে। ওরা কেউ কথা বলেনি। জয়িতা এবং কল্যাণ খুব গম্ভীর মুখে শুনছিল, কিন্তু সুদীপের ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছিল সে সিনেমা দেখতে যাচ্ছে। আনন্দ সেটা লক্ষ্য করলেও কিছু বলেনি। তার ধারণা ছিল যে শিস দিচ্ছে কিংবা রাস্তার দিকে তাকাচ্ছে, মানে এই নয় যে কিছুই তার কানে যাচ্ছে না। জয়িতা শেষ পর্যন্ত পারল না, সে আনন্দকে ইশারায় থামতে বলে রাগত গলায় বলল, সুদীপ, ইউ মাস্ট বি সিরিয়াস!
সুদীপ শিস থামিয়ে বলল, তাই? তারপর আবার শিস দিতে শুরু করল।
জয়িতা কাঁধ ঝাঁকাল, সব কিছুর একটা লিমিট আছে!
কি করব বল, আমার বেশ খিদে পেয়েছে! সুদীপ বাঁদিকে আচমকা গাড়িটা পার্ক করল, আনন্দ, আমরা মিনিট পনেরো পরে স্পটে পৌঁছালে খুব অসুবিধে হবে? এবার আনন্দ হতাশ হল। ওরা রাত্রের খাওয়া সেরেছে ঘণ্টা দেড়েক আগে। এখন প্রায় সওয়া এগারোটা। রাস্তাঘাট ফাঁকা। দোকানপাট বন্ধ হলেও সুদীপ যেখানে গাড়ি থামিয়েছে সেখানে একটা পাঞ্জাবী হোটেল তখনও চালু।
কল্যাণ বলল, আমরা তো একটু আগে খেলাম, তোর আজ এখনই খিদে পেয়ে গেল?
খিদে লাগলেই শুধু খেতে ইচ্ছে করে একথা তোকে কে বলল? অনেক সময় মনের শান্তির জন্যেও ললাকে খায়! ওই দোকানে দারুণ কাবাব করে। অনেকদিন ভেবেছি কিন্তু খাওয়া হয়নি। আজ যদি কিছু হয়ে যায়, হয়তো এক জীবনের জন্যে বড় দেরি হয়ে যাবে। সুতরাং ইচ্ছেটা পূর্ণ করে নিতে আপত্তি কি? অবশ্য আনন্দ যদি অ্যালাউ করে!
আনন্দ সুদীপের দিকে তাকাল। তারপর হেসে ফেলল, তোর কি মনে হচ্ছে এটাই অগস্ত্যযাত্রা?
হুঁ নোজ। তারপর সুর করে গাইল, এ খাওয়াই শেষ খাওয়া হয় তো।
আনন্দ বলল, ঠিক আছে, চটপট খেয়ে আয়।
সুদীপ কথা না বাড়িয়ে গাড়ি থেকে নেমে জিজ্ঞাসা করল, তোরা খাবি না? আহা, কি জিনিস হারাচ্ছিস জানলি না। ও দোকানের দিকে পা বাড়াল।
জয়িতা নিঃশ্বাস ফেলল, কোনদিন যে জিনিস জিতে দেয়নি তার হয়ে বিজ্ঞাপন করছে। কেউ কোন কথা বলল না।
কল্যাণ পেছনের সিটে শরীর এলিয়ে বসেছিল। বাড়ির সঙ্গে তার আজ সম্পর্ক চুকল। কিছু জামাপ্যান্ট, একটা বই এবং টুকিটাকি কিছু জিনিস নিয়ে সে চলে এসেছে নিঃশব্দে। একবার মনে হয়েছিল বাড়ির সবাইকে ডেকে বলে যে সে চলে যাচ্ছে। কিন্তু সেই মুহূর্তে মায়ের সঙ্গে বড় বউদির ঝগড়া লাগল। এটা একটু অভিনব ব্যাপার। কেননা মা এতকাল বড় বউদির ক্যাম্পেই ছিলেন। মেজদা ফিরে আসার পর এমন কি ঘটনা ঘটল, কিংবা তারকেশ্বর থেকে এসে মায়ের কোন কারণে মানসিকতা পান্টাল তা সে বুঝতে পারেনি। কিন্তু চিৎকারটা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল, আর আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নেবার ইচ্ছেটা রইল না। কল্যাণের একটা ধারণা জন্মেছে যে যাদের হাতে পয়সা থাকে না তারাই অকারণে ঝগড়া করে নিজের অস্তিত্ব জাহির করতে চায়।
এই সময় জয়িতা বলল, গাড়িটাকে এভাবে সেন্ট্রাল অ্যাভির ওপরে দাঁড় করিয়ে রাখা অন্যায় হচ্ছে। পুলিশ যে কোন সময় নাম্বারপ্লেট দেখে ফেলতে পারে।
আনন্দ বলল, এখনও তার সময় হয়নি। লাইটহাউসের সামনে ড্রাইভারটা গাড়ির খোঁজ করে না পেয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করবে। তার মালিক সিনেমা দেখে বের হবে পৌনে বারোটা নাগাদ। ড্রাইভারের কাছে খবর পেয়ে থানায় যাবে লোকটা। থানার অফিসার যদি সেই সময় চেয়ারে থাকেন তাহলে তিনি ডায়েরি নেবেন। নিয়ে লালবাজারে রিপোর্ট করবেন। লালবাজার সেই খবর ওয়ারলেসকে যখন জানাবে তখন খুব কমপক্ষে সাড়ে বারোটা বেজে যাবে। কাল সকাল হলেও অবাক হব না।
জয়িতার পছন্দ হল না ব্যাখ্যাটা। বলল, আমরা অকারণে ঝুঁকি নিচ্ছি। এই গাড়িটাকে চেনে এমন কেউ আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। সুদীপকে তাড়া দে।
আনন্দ তাকাল পাঞ্জাবীর দোকানটার দিকে। সুদীপ ভেতরে ঢুকে গেছে। ও হয় সত্যিকারের সহজ কিংবা এই মুহূর্তে অত্যন্ত নার্ভাস হয়ে পড়েছে। এখন ওকে বাধা দিয়ে কোন লাভ হবে না। ওকে ওর মত ভাবেই স্বাভাবিক হতে দেওয়া উচিত। রাতটা কলকাতায় ধীরেসুস্থে গড়াতে গড়াতে যেন আচমকা ছুটতে থাকে। রাস্তার আলোর রঙ যেন পালটে যায়। শান্ত হয়ে যায় শহরটা কয়েক ঘণ্টার জন্যে। আনন্দ দরজা খোলার শব্দ শুনল। কল্যাণ নামতে যাচ্ছিল, জয়িতা বাধা দিল, কোথায় যাচ্ছিস?
সিগারেট স্টক করে রাখি। যদি ওখান থেকে সরাসরি ঠাকুরপুকুরে যেতে হয় তাহলে অসুবিধে হবে।
কল্যাণ জবাব দিল। তার গাড়িতে বসে থাকতে মোটেই ইচ্ছে করছিল না। যখন চলছিল তখন একরকম ছিল কিন্তু সুদীপ পার্ক করার পর থেকেই অস্বস্তিটা হচ্ছিল। ডায়মন্ডহারবার রোডে সেই কেসটা করার সময় তার এই রকম অনুভূতি হয়নি।
জয়িতা বলল, ঠাকুরপুকুরটা কোন গভীর জঙ্গল নয় যে সিগারেট পাওয়া যাবে না। সবাই মিলে নামাওঠা করলে ঝামেলা বাড়বে। কে কখন দেখে ফেলবে তারই জের চলবে। সেদিন আগাথা ক্রিস্টির একটা লেখায় পড়ছিলাম, সবরকম সতর্কতা নিয়েও শুধু সিগারেটের টুকরো এলোমেলো ফেলার জন্যে অপরাধী ধরা পড়ল। সুদীপটাকে ডাকলি না আনন্দ?
কল্যাণ দরজাটা বন্ধ করল। আনন্দ বলল, ওকে ওর মত থাকতে দে। তোকে হঠাৎ নার্ভাস লাগছে!
নার্ভাস? আমি-হাসল জয়িতা। হাসলে ওকে হঠাৎ খুব সুন্দর দেখায়। পাশে বসে কল্যাণের মনে হল।
সুদীপ চুপচাপ গাড়ি চালাচ্ছিল। পুরো রাস্তাটা আনন্দ ওদের বোঝাতে বোঝাতে এসেছে। ওরা কেউ কথা বলেনি। জয়িতা এবং কল্যাণ খুব গম্ভীর মুখে শুনছিল, কিন্তু সুদীপের ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছিল সে সিনেমা দেখতে যাচ্ছে। আনন্দ সেটা লক্ষ্য করলেও কিছু বলেনি। তার ধারণা ছিল যে শিস দিচ্ছে কিংবা রাস্তার দিকে তাকাচ্ছে, মানে এই নয় যে কিছুই তার কানে যাচ্ছে না। জয়িতা শেষ পর্যন্ত পারল না, সে আনন্দকে ইশারায় থামতে বলে রাগত গলায় বলল, সুদীপ, ইউ মাস্ট বি সিরিয়াস!
সুদীপ শিস থামিয়ে বলল, তাই? তারপর আবার শিস দিতে শুরু করল।
জয়িতা কাঁধ ঝাঁকাল, সব কিছুর একটা লিমিট আছে!
কি করব বল, আমার বেশ খিদে পেয়েছে! সুদীপ বাঁদিকে আচমকা গাড়িটা পার্ক করল, আনন্দ, আমরা মিনিট পনেরো পরে স্পটে পৌঁছালে খুব অসুবিধে হবে? এবার আনন্দ হতাশ হল। ওরা রাত্রের খাওয়া সেরেছে ঘণ্টা দেড়েক আগে। এখন প্রায় সওয়া এগারোটা। রাস্তাঘাট ফাঁকা। দোকানপাট বন্ধ হলেও সুদীপ যেখানে গাড়ি থামিয়েছে সেখানে একটা পাঞ্জাবী হোটেল তখনও চালু।
কল্যাণ বলল, আমরা তো একটু আগে খেলাম, তোর আজ এখনই খিদে পেয়ে গেল?
খিদে লাগলেই শুধু খেতে ইচ্ছে করে একথা তোকে কে বলল? অনেক সময় মনের শান্তির জন্যেও ললাকে খায়! ওই দোকানে দারুণ কাবাব করে। অনেকদিন ভেবেছি কিন্তু খাওয়া হয়নি। আজ যদি কিছু হয়ে যায়, হয়তো এক জীবনের জন্যে বড় দেরি হয়ে যাবে। সুতরাং ইচ্ছেটা পূর্ণ করে নিতে আপত্তি কি? অবশ্য আনন্দ যদি অ্যালাউ করে!
আনন্দ সুদীপের দিকে তাকাল। তারপর হেসে ফেলল, তোর কি মনে হচ্ছে এটাই অগস্ত্যযাত্রা?
হুঁ নোজ। তারপর সুর করে গাইল, এ খাওয়াই শেষ খাওয়া হয় তো।
আনন্দ বলল, ঠিক আছে, চটপট খেয়ে আয়।
সুদীপ কথা না বাড়িয়ে গাড়ি থেকে নেমে জিজ্ঞাসা করল, তোরা খাবি না? আহা, কি জিনিস হারাচ্ছিস জানলি না। ও দোকানের দিকে পা বাড়াল।
জয়িতা নিঃশ্বাস ফেলল, কোনদিন যে জিনিস জিতে দেয়নি তার হয়ে বিজ্ঞাপন করছে। কেউ কোন কথা বলল না।
কল্যাণ পেছনের সিটে শরীর এলিয়ে বসেছিল। বাড়ির সঙ্গে তার আজ সম্পর্ক চুকল। কিছু জামাপ্যান্ট, একটা বই এবং টুকিটাকি কিছু জিনিস নিয়ে সে চলে এসেছে নিঃশব্দে। একবার মনে হয়েছিল বাড়ির সবাইকে ডেকে বলে যে সে চলে যাচ্ছে। কিন্তু সেই মুহূর্তে মায়ের সঙ্গে বড় বউদির ঝগড়া লাগল। এটা একটু অভিনব ব্যাপার। কেননা মা এতকাল বড় বউদির ক্যাম্পেই ছিলেন। মেজদা ফিরে আসার পর এমন কি ঘটনা ঘটল, কিংবা তারকেশ্বর থেকে এসে মায়ের কোন কারণে মানসিকতা পান্টাল তা সে বুঝতে পারেনি। কিন্তু চিৎকারটা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল, আর আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নেবার ইচ্ছেটা রইল না। কল্যাণের একটা ধারণা জন্মেছে যে যাদের হাতে পয়সা থাকে না তারাই অকারণে ঝগড়া করে নিজের অস্তিত্ব জাহির করতে চায়।
এই সময় জয়িতা বলল, গাড়িটাকে এভাবে সেন্ট্রাল অ্যাভির ওপরে দাঁড় করিয়ে রাখা অন্যায় হচ্ছে। পুলিশ যে কোন সময় নাম্বারপ্লেট দেখে ফেলতে পারে।
আনন্দ বলল, এখনও তার সময় হয়নি। লাইটহাউসের সামনে ড্রাইভারটা গাড়ির খোঁজ করে না পেয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করবে। তার মালিক সিনেমা দেখে বের হবে পৌনে বারোটা নাগাদ। ড্রাইভারের কাছে খবর পেয়ে থানায় যাবে লোকটা। থানার অফিসার যদি সেই সময় চেয়ারে থাকেন তাহলে তিনি ডায়েরি নেবেন। নিয়ে লালবাজারে রিপোর্ট করবেন। লালবাজার সেই খবর ওয়ারলেসকে যখন জানাবে তখন খুব কমপক্ষে সাড়ে বারোটা বেজে যাবে। কাল সকাল হলেও অবাক হব না।
জয়িতার পছন্দ হল না ব্যাখ্যাটা। বলল, আমরা অকারণে ঝুঁকি নিচ্ছি। এই গাড়িটাকে চেনে এমন কেউ আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। সুদীপকে তাড়া দে।
আনন্দ তাকাল পাঞ্জাবীর দোকানটার দিকে। সুদীপ ভেতরে ঢুকে গেছে। ও হয় সত্যিকারের সহজ কিংবা এই মুহূর্তে অত্যন্ত নার্ভাস হয়ে পড়েছে। এখন ওকে বাধা দিয়ে কোন লাভ হবে না। ওকে ওর মত ভাবেই স্বাভাবিক হতে দেওয়া উচিত। রাতটা কলকাতায় ধীরেসুস্থে গড়াতে গড়াতে যেন আচমকা ছুটতে থাকে। রাস্তার আলোর রঙ যেন পালটে যায়। শান্ত হয়ে যায় শহরটা কয়েক ঘণ্টার জন্যে। আনন্দ দরজা খোলার শব্দ শুনল। কল্যাণ নামতে যাচ্ছিল, জয়িতা বাধা দিল, কোথায় যাচ্ছিস?
সিগারেট স্টক করে রাখি। যদি ওখান থেকে সরাসরি ঠাকুরপুকুরে যেতে হয় তাহলে অসুবিধে হবে।
কল্যাণ জবাব দিল। তার গাড়িতে বসে থাকতে মোটেই ইচ্ছে করছিল না। যখন চলছিল তখন একরকম ছিল কিন্তু সুদীপ পার্ক করার পর থেকেই অস্বস্তিটা হচ্ছিল। ডায়মন্ডহারবার রোডে সেই কেসটা করার সময় তার এই রকম অনুভূতি হয়নি।
জয়িতা বলল, ঠাকুরপুকুরটা কোন গভীর জঙ্গল নয় যে সিগারেট পাওয়া যাবে না। সবাই মিলে নামাওঠা করলে ঝামেলা বাড়বে। কে কখন দেখে ফেলবে তারই জের চলবে। সেদিন আগাথা ক্রিস্টির একটা লেখায় পড়ছিলাম, সবরকম সতর্কতা নিয়েও শুধু সিগারেটের টুকরো এলোমেলো ফেলার জন্যে অপরাধী ধরা পড়ল। সুদীপটাকে ডাকলি না আনন্দ?
কল্যাণ দরজাটা বন্ধ করল। আনন্দ বলল, ওকে ওর মত থাকতে দে। তোকে হঠাৎ নার্ভাস লাগছে!
নার্ভাস? আমি-হাসল জয়িতা। হাসলে ওকে হঠাৎ খুব সুন্দর দেখায়। পাশে বসে কল্যাণের মনে হল।