What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

প্রতিশোধ: দ্যা রিভেঞ্জ by Monen2000 (3 Viewers)

[HIDE]

যুদ্ধ জয়ের পর সবাই হর্ষধ্বনি করে উঠলো কেউ সিটি দিচ্ছে, কেউ তালি মারছে শুধু আমির বাদে, সে দ্রুত বাড়ির দিকে গেল পিছু পিছু বশির এবং আরও কয়েকজন গেল। গেট ঠেলে ঢুকেই তার মুখ থেকে বেরিয়ে এল "সর্বনাশ হয়ে গেছে" কারণ সেখানে রয়ের গাড়িটা নেই, আর সে খুব ভালো করেই জানে রয় বেরোলে গাড়ি নিয়েই বেরোয় গাড়ি নেই মানে রয় নেই আমির মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো, কিন্তু বেশিক্ষণ না আম্মির কথা মনে পড়তেই সে ছুটে বাড়ির ভিতরে গেল কেউ নেই সে জানে এখানে একটা দ্বিতীয় দরজা আছে এমার্জেন্সীতে বেরোনোর জন্য, সে তৎক্ষণাৎ ওটা দিয়ে বেরিয়ে ছুট লাগালো, বাড়ির পিছনের দিকে ওদিক দিয়ে একটা রাস্তা আছে সেটা দিয়ে কিছুদূর গিয়ে বস্তির একেবারে উল্টোদিকে বেরোনোর রাস্তা আছে সেখান থেকে বেরোলে একটা খাল পড়বে সেটা পার করার একটা ছোট্ট কাঠের সাঁকো আছে সেটা পার করলেই আরেকটা কলোনি আছে সেটার ভিতর দিয়ে সোজা অনেকটা গেলে কলোনি ছাড়িয়ে কিছুটা দূরে একটা হাইওয়ে পরে, আমির ওই রাস্তা দিয়েই ছুটে চলে পিছনে বশির আর কয়েকজন আসছে, বস্তিটা পেরিয়ে খাল পার হয়ে কলোনির ভিতর দিয়ে দৌড়ে হাইওয়ের সামনে আসে কিন্তু সেখানে কাউকে দেখতে পায় না, একটু এদিক ওদিক খুঁজতেই দেখে রাস্তার একদম উল্টোদিকে কিছুটা ডানদিকে একটা বাসস্টপে কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছে চিনতে অসুবিধা হয়না আমিরের এক দৌড়ে রাস্তাটা কোনোমতে পার করে সেখানে পৌঁছে দুই হাঁটতে ভর দিয়ে ঝুঁকে হাঁফাতে থাকে, আম্মি, বিন্দু মাসি আর বিদিশা ঠিক আছে, ঠিক সময়ে তাদের বাইরে বার করে আনা হয়েছে।

কতক্ষণ পরে অজ্ঞান হয়ে ছিল বুঝতে পারে না অভয় এখন রাত না দিন সেটাও বুঝতে পারে না, ঠিক আগের বারের মতোই তাড়াহুড়ো না করে ধীরে ধীরে নিজের চেতনা সম্পূর্ণ জাগ্রত হবার অপেক্ষা করতে থাকে, বুঝতে পারে প্রচণ্ড মারধর করা হয়েছে তাকে সারা গায়ে ব্যাথা কিন্তু গুপ্ত মেডিটেশনের জন্য সেগুলো সহ্য করে নেয়, আরেকটা জিনিস খেয়াল করে এখন তাকে মেঝেতে উবুড় করে শুইয়ে রাখা হয়েছেহ শেষ বার যখন জ্ঞান ছিল তখন দাঁড় করিয়ে রাখা হয়ে ছিল, যদিও এখনো তার হাতপা বাঁধা আরেকটা জিনিস তার প্রচণ্ড পিপাসা পেয়েছে গলা শুকিয়ে কাঠ এবং ক্ষিদেও পেয়েছে সেই মাহমুদের কথা শুনে বেরোনোর আগে খেয়েছিল তারপর কতক্ষণ যে পেটে কিছু পড়েনি তা আন্দাজ করা কঠিন।
এখান থেকে পালাতে গেলে আগে গায়ে কিছুটা শক্তি দরকার তার থেকেও বড়ো কথা অন্তত হাতদুটো মুক্ত করতে হবে, কিন্তু কিভাবে? সে চুপ করে পরে র‌ইলো আবার মেডিটেশনে ডুবে গেল দেহে যতটুকু শক্তি আছে তা একত্রিত করার চেষ্টা করতে থাকে, সাথে মানসিক শক্তিকেও কিন্তু সমস্যা হলো মন তারবশীভূত কিন্তু এইমুহূর্তে শরীরের উপর যা অত্যাচার হয়েছে তাতে তাকে বশে আনা কিছুটা কঠিন তার উপরে অভুক্ত তৃষ্ণার্ত অবস্থায় আছে সে।
হাতপা বাধা অবস্থাতেই উবুড় হয়ে ছিল অভয় এবার একটু নড়ার চেষ্টা করতেই বুঝলেন শরীরের অবস্থা যতটা ভেবেছিল তার থেকেও খারাপ মারের যন্ত্রণা তো আছেই তার উপর প্রচণ্ড দুর্বল লাগছে, অভয় আরও কিছুক্ষণ অসাড় হয়ে পড়ে র‌ইলো, একসময় আবার গাঢ় ঘুমে ডুবে গেল যখন ঘুম ভাঙলো তখন নিজেকে কিছুটা চাঙ্গা লাগছে যদিও পেটে ক্ষিদে ,গলায় তৃষ্ণা আর শরীরে ব্যাথা তিনটেই আছে, সে আস্তে আস্তে নিজের হাতদুটো মুক্ত করতে চেষ্টা করে এখান থেকে পালাতে হলে আগে হাতপা বাঁধন মুক্ত করতে হবে। দুটো হাত একসাথে কবজির কাছে দড়ি দিয়ে পেঁচিয়ে বাধা ছিল ধীরে ধীরে অনেকক্ষণ ধরে দুটো কবজি নাড়িয়ে দাঁত দিয়ে চেষ্টা করে কয়েকটা প্যাচ থেকে মুক্ত করলো কিন্তু এখনো কিছুটা বাকী এদিকে তার বড়ো বড়ো নিঃশ্বাস পড়ছে আরও কিছুক্ষণ পরে দুটো হাত‌ই বন্ধন মুক্ত করতে সক্ষম হলো, এখানকার গুণ্ডাদের ঘটে তেমন কিছু নেই হ এই দড়িটাই যদি নাইলনের সরু অথচ শক্ত দড়ি হতো তাহলে খুলতে পারতো না কারণ সেক্ষেত্রে দড়িটা চামড়া কেটে মাংসে বসে যেত
অভয় দুহাতে ভর দিয়ে উঠে বসতে চাইলো কিন্তু পারলো না সারা গায়ে প্রচণ্ড ব্যাথা সে আবার চেষ্টা করলো কিন্তু এবারও ব্যার্থ হলো, তৃতীয় বারে ব্যাথা সহ্য করে কোনোমতে উঠে বসলো, তারপর আস্তে আস্তে পায়ের বাঁধনটা খুলে নিল এখন সে সম্পূর্ণ বন্ধন মুক্ত, আস্তে আস্তে উঠে ঘরের ভিতরেই পায়চারি করতে থাকে কিন্তু প্রতিটা পদক্ষেপেই মনে হচ্ছে য়যেন কেউ শরীরে বিদ্যুৎ শক্ দিচ্ছে, বেশীক্ষণ থাকতে পারলো না, আবার মেঝেতে বসে হাঁফাতে লাগলো, এখান থেকে পালাতে হলে এখানের গার্ড যারা আছে তাদের মোকাবেলা করতেই হবে আর তার জন্য আগে শরীরের ব্যাথাটার সাথে যুঝতে হবে। অনেকক্ষণ বসে থাকার পরে বন্ধ দরজার ওপাশে পায়ের আওয়াজ শুনতে পায় বেশি না একজনের, অভয় বোঝে এটাই সুযোগ সে মেঝেতে পরে থাকা যে দুটো দড়ি দিয়ে তাকে বাধা হয়েছিল সেই দুটো নিয়ে দরজার আড়ালে লুকিয়ে থাকে দুহাতে দড়ির দুটো প্রান্ত ধরে, একটু পরেই দরজা খুলে একজন ভিতরে ঢুকলো কিন্তু সে কিছু করা বা বোঝার আগেই পিছন থেকে তার গলায় দড়িটা পেঁচিয়ে ধরে অভয়, লোকটা ছটফট করতে থাকে অভয় জানে এইভাবে সে বেশীক্ষণ ধরে থাকতে পারবে না তার শরীর এখন দুর্বল যতটুকু শক্তি সে সঞ্চয় করতে পেরেছে তা মেপে ব্যবহার করতে হবে।
এবার দড়ির দুটো প্রান্ত বাহাতে ধরে ডানহাতের তালুর কোনা দিয়ে লোকটার মাথার পিছনে আঘাত করে, প্রথম আঘাতে কিছু হয় না, লোকটা তখন‌ও নিজেকে মুক্ত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকে এবার অভয় দ্বিতীয়বার আবার আঘাত করে এবার আগেরবারের থেকে একটু বেশি জোড়ে সঙ্গে সঙ্গে লোকটা অচেতন হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরে। অভয় এবার দ্রুত লোকটার গা থেকে জামা প্যান্ট খুলে পরে নেয় ঠিকঠাক ফিটিং হয় না কিন্তু আপাতত এতেই কাজ চালাতে হবে। এবার ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে যাবে এমন সময় বাইরে আরো একজনের পায়ের আওয়াজ পায় সে তৎক্ষণাৎ আবার দরজার আড়ালে চলে যায়, আরেকটা লোক টলতে টলতে তার সঙ্গীকে ডাকতে ডাকতে ঘরে ঢোকে এবং ঢুকেই মেঝেতে একজনকে পরে থাকতে দেখে ভালো করে দেখার জন্য একটু ঝুঁকতেই অভয় পিছন থেকে একেও মাথায় আঘাত করে সঙ্গে সঙ্গে এও লুটিয়ে পরে এবার এর পকেট সার্চ করে নিজের মোবাইলটা পেয়ে যায় যদিও সেটা সুইচড অফ হয়ে গেছে সাথে কিছু টাকা আর একটা পিস্তল পায়।
এবার আস্তে আস্তে ঘর থেকে বেরিয়ে বারান্দায় আসে, দেখে এক কোনে একটা টেবিলে মুখোমুখি বসে বাকি দুজন মদ খাচ্ছে, নেশার জন্যই বোধহয় ওরা অভয়ের উপস্থিতি এখনো টের পায়নি, অভয় জানে সুস্থ থাকলে এই দুজনকে একসাথে ঝেড়ে ফেলা তার কাছে কিছুই নয়, কিন্তু শরীরের এই দুর্বলতায় সেটা যথেষ্ট কঠিন কিন্তু উপায় নেই একদিকে সুবিধা ওরা নেশা করে আছে। অভয় প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে একজনের পিছনে গেল তারপর আচমকাই পিস্তলের বাট দিয়ে ওর মাথায় মারলো সঙ্গে সঙ্গে তার মাথাটা টেবিলের উপর পরে গেল আঘাতের জায়গা থেকে রক্ত বেরোতে থাকে, প্রথমেই গুলি চালালো না কারণ গুলির আওয়াজে যদি বাইরে কেউ থাকে সে ভিতরে চলে আসবে তখন অভয়ের পালানো আটকে যেতে পারে, এই হটাৎ আক্রমণে অপরজন হতভম্ব হয়ে যায় সে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াতেই অভয় তার দিকে পিস্তল তাক করে ইশারায় দুহাত মাথার উপর তুলতে বলে লোকটা তাই করে, অভয় জিজ্ঞেস করে: বাইরে কেউ আছে?
লোকটা ঘাড় নেড়ে না জানায়, অভয় আবার জিজ্ঞেস করে আমার ঘড়ি কোথায়?, লোকটা নিজের পকেট থেকে অভয়ের হাতঘড়িটা বার করে টেবিলের উপর রাখে, "আমার জুতো?" শুনে লোকটা চোখ দিয়ে একটা জায়গায় দেখায়।





[/HIDE]
 
[HIDE]

লোকটা আস্তে আস্তে এগোতে থাকে অভয় ধীরে ধীরে ওর পিছনে যেতে থাকে এবার বারান্দার এক কোণে যেতেই অভয় নিজের জুতো জোড়া দেখতে পায় এগুলো বোধহয় সত্যিই ওদের পছন্দ হয়েছিল, লোকটা এতক্ষণ অভয়ের দিকে পিছন ফিরে ছিল এবার সে ঘোরার আগেই অভয় একেও পিস্তলের বাট দিয়ে অজ্ঞান করে,পিস্তল চালালো না কারণ এর কথা সে বিশ্বাস করেনি যদি বাইরে কেউ থাকে তখন? কিন্তু না জুতো পড়ে ঘড়ি নিয়ে বাইরে আসে, আসার আগে প্রথম জনের মতো বাকিদের পকেট থেকেও যত টাকা ছিল সব নিয়ে এসেছে, সেদিন আমিরের বিপদের কথা শুনে তাড়াহুড়ো করে ওয়ালেটটা আনেনি তারপর মোবাইল বন্ধ হয়ে গেছে, গাড়িটাও নেই কাজেই ক্যাশ টাকার প্রয়োজনে হবে বুঝেই সে টাকাগুলো নিয়ে নেয়, বাইরে এসে দেখে কেউ নেই, ঘড়ির সময় দেখে বোঝে রাত হয়ে গেছে কিন্তু এটা সেই জায়গা নয় যেখানে তাকে ধরা হয়েছিল, তাকে অজ্ঞান অবস্থায় অন্যত্র নিয়ে আসা হয়েছে, আর ওর গাড়িটাও নেই, কোথায় ওকে নিয়ে এসেছে সেটা এই মুহুর্তে বোঝা মুশকিল আন্দাজমতো একটা দিকে সে যত দ্রুত সম্ভব দৌড়াতে থাকে যদিও শরীরের এই অবস্থায় সেটা একটু জোরে হাঁটার‌ই সমান, সে জানে চারজনের জ্ঞান যে কোনো সময় ফিরে আসবে কারণ আঘাতগুলো ঠিক মতো হয়নি আর জ্ঞান ফিরে এলেই ওরা অভয়কে খুঁজতে বেরোবো, তার আগেই একটা সুরক্ষিত জায়গায় যেতে হবে অভয়কে।
অভয় প্রাণপণে দৌড়াতে থাকে কিন্তু বেশিক্ষণ পারে না একটু পর পর‌ই হাঁফাতে থাকে, কিছুক্ষণ এইভাবে চলার পরে কিছুটা দূরে গাড়ি চলাচলের আওয়াজ পায় যদিও খুব কম,মনে হয় সেদিকে রাস্তা আছে। অভয় নতুন উদ্যমে সেদিকে যেতে থাকে সত্যিই একটা হাইওয়ে আছে, গাড়ি চলাচল কম, এদিক ওদিক চাইতেই একদিকে একটা গাড়ি আসতে দেখে অভয় সেদিকে হাত নাড়াতে নাড়াতে দৌড়াতে থাকে গাড়িটা কে চালাচ্ছে সেটা দেখার সময় নেই, কিন্তু আর পারে না একে খালি পেট, তার উপরে পিপাসায় গলা কাঠ অনেকক্ষণ থেকেই পালানোর তাড়ায় যেখানে বন্দী ছিল সেখানে জল খেতে ভুলে গেছে, সব থেকে বেশি শরীরের যন্ত্রণা নিয়ে এতটা পথ দৌড়ে এসেছে, সে গাড়ির বনেটের উপরে হুমড়ি খেয়ে পরে তারপর নীচে পরে যায়, ভাগ্য এবারেও ভালো যে গাড়ির ড্রাইভার সঠিক সময়ে গাড়ির ব্রেক কষেছিলেন, অজ্ঞান হবার আগে অভয় কারো একটা পায়ের আওয়াজ শুনতে পায়।

"আমির তুমি এখানে, আর এত হাফাচ্ছো কেন? হঠাৎই আমির এবং সাথে আরো কয়েকজনকে দৌড়ে তাদের দিকে আসতে দেখে প্রশ্নটা করেন অমৃতাদেবী।
কিছুনা আম্মি দৌড়াতে দৌড়াতে আসছিলাম যাতে দেরী না হয়ে যায়।
দেরী কিসের আর তোমার বন্ধু কোথায়? ওকে ফোনে পাচ্ছি না, এদিকে এরা আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে।
আম্মি সেইজন্যই তো দৌড়াতে দৌড়াতে এলাম।
মানে।
আসলে প্রথমে ঠিক ছিল আমরা আবার নিজেদের শহরে ফিরে যাবো, রয় ওদিকে একটা মিটিং সেরে।সোজা এয়ারপোর্টে দেখা করবে তাই এদের বলে আপনাদের নিয়ে যাচ্ছিল।
তা এখন কি হয়েছে?
এখন ওর যাওয়াটা একটু আটকে গেছে আরেকটা ইম্পরট্যান্ট মিটিং এসে গেছে, বুঝতেই তো পারছেন নতুন কনট্র্যাক্ট পেয়েছি আমরা তাই, এদিকে আপনারা এয়ারপোর্টে অপেক্ষা করবেন তাই আমি দৌড়াতে দৌড়াতে এলাম আরকি।
তুমি সব কথা বলছো না, আমার ছেলের কিছু একটা বিপদ হয়েছে আমি বুঝতে পারছি।
আম্মি আম্মি আমার কথা শুনুন ওর কিছু হয়নি এইতো খানিকক্ষণ আগেও ওর সাথে আমার কথা হয়েছে, মিটিংয়ে ঢোকার আগে মোবাইল বন্ধ করতে হবে তাই আমাকে জানিয়ে দিয়েছে, আপনি চলুন ঘরে গিয়ে রেস্ট নেবেন।
তুমি সত্যি বলছো, আমার ছেলের সাথে তোমার কথা হয়েছে?
হ্যাঁ, আম্মি হয়েছে।
অমৃতাদেবীর কপালে ভ্রুকুটি তাও থেকেই যায় যদিও তিনি মুখে কিছু বলেন না। প্রায় ভোররাতে অমৃতাদেবী ও বিন্দু মাসি ঘুমিয়ে পড়লে বিদিশা আমিরকে চেপে ধরে "আমির এবার সত্যিটা বলো তো, রয় কোথায়?"
বললাম তো একটা মিটিংয়ে।
উঁহু, মিটিং নয়, এখান থেকে যখন আমাদের নিয়ে যাওয়া হয় তখন একপ্রকার তাড়াহুড়ো করে নিয়ে যাওয়া হয় আর সেটা এয়ারপোর্টে যাওয়ার জন্য নয়, আসল ব্যাপারটা কি?
কি আবার আসল ব্যাপার? বললাম তো রয় মিটিংয়ে যান আপনি গিয়ে শুয়ে পড়ুন।
বিদিশা কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু এমন সময় বশির ছুটতে ছুটতে আসে "ভাইজান ভাইজান" ওর গলায় আতঙ্ক দুঃখ সব একসাথে।
কি হয়েছে বশির?
আপনি একবার চলুন।
কোথায়?
চলুন না।


কোথায় সেটা তো বলবে? শেষের কথাটা বলে বিদিশা। কিন্তু বশির কিছু বলে না।
আমি এখন আম্মিকে একা ছেড়ে কোথাও যেতে পারবো না বশির।
ভাইজান আম্মি এখন ঘুমিয়ে আছেন কিন্তু..
কিন্তু কি হয়েছে সেটা তো বলবে। এবার বিদিশার গলায় একটু রাগ।
ভাইজান ওইদিকে একটা গাড়ি ওভার ব্রিজ থেকে নীচে রেললাইনের উপরে পরে গেছে মানে গাড়ি পাওয়া গেছে ভাঙাচোরা অবস্থায় আর গাড়িটা বসের গাড়ির মতো লাগছে।
আমির সঙ্গে সঙ্গে বশিরের কলার চেপে ধরে"কি বলছো বশির, ভেবে বলছো?"
ভাইজান সেইজন্যই তো বলছি আপনি একবার চলুন আপনি ঠিক চিনতে পারবেন, আর আম্মির খেয়াল আমার লোকেরা রাখবে তাছাড়া বীরেন ভট্টাচার্য একবার মাত খেয়েছে এত তাড়াতাড়ি দ্বিতীয় বার অ্যাটাক করবে না।
দ্বিতীয় বার? তারমানে আগে একবার অ্যাটাক হয়েছে? কাল রাতেই তাই না? সত্যি বলো আমির.. রয় কোথায়?
আমির উত্তর দেবে কি তার মাথা কাজ করছে না, বিদিশা আবার বলে "আমির তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করছি"।
বসকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মিনমিন করে বশির উত্তর দেয়।
তোমার নাম বশির না? চলো আমি যাবো আমির থাকুক এখানে। বলে হাঁটা লাগায়, পিছনে বশির যায় এবং সব শেষে আমির। যেতে যেতে বিদিশা জিজ্ঞেস করে "এসব কিভাবে হলো আমির?"
আমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে। সারা রাস্তা আর কেউ কোনো কথা বলে না, স্পটে পৌঁছে সবাই দেখে পুলিশ ঘিরে রেখেছে জায়গাটা আর লোকজন ভীড় করে আছে, ট্রেন চলাচল আপাতত বন্ধ। আমিররা ভীড় ঠেলে এগিয়ে যায়, পুলিশকে বলে গাড়িটা দেখতে গিয়ে দেখে একটা ভাঙা এবং আগুনে পুড়ে যাওয়া একটা গাড়ির অবশেষ পরে আছে, এবং এদিক ওদিক গাড়ির কিছু পুড়ে যাওয়া বা কিছু আধপোড়া অংশ ছিটকে পরে আছে।
আশেপাশের লোকজন নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছে, পুলিশের একজন আমিরের দিকে এগিয়ে আসেন আমিরকে জিজ্ঞেস করেন "গাড়িটা কি আপনাদের কারো?
অফিসার গাড়িটা তো পুরো পুড়ে গেছে শনাক্ত করা যায় এমন কিছু পেয়েছেন? গাড়ির ভিতরে কেউ ছিল?।
না, গাড়ির ভিতরে কোনো বডি এখনো পাইনি তবে ফরেনসিক এলে আরও ক্লিয়ার হবে,তবে একটা জিনিস পেয়েছি এই দেখুন।বলে অফিসারটি একটা গাড়ির নাম্বার প্লেট দেখায় তারপর বলেন "এটা কোনো কারনে উপর থেকে নীচে পরার সাথে সাথে খুলে ছিটকে অন্য জায়গায় পরে তাই আগুনে তেমন ক্ষতি হয় নি, নাম্বারপ্লেটটা দেখতেই হাত থেকে পরে যায় আমিরের, সে নিজেও কয়েকপা পিছনে পিছিয়ে যায় প্রায় পরে যাচ্ছিল কিন্তু বিদিশা ধরে ফেলে সে হাঁটু মুড়ি বসে পরে, একজন শিশুর মতো চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে।
বিদিশা ওকে সান্ত্বনা দিতে গিয়েও পারে না কারণ তার‌ও তখন কান্না পাচ্ছে তবুও কোনোমতে নিজেকে সামলে আমিরের সামনে গিয়ে ওর মুখটা ধরে বলে "ছিঃ আমির এভাবে কাঁদছো কেন? শুনলে না অফিসার কি বললেন কোনো বডি পাওয়া যায় নি, তার মানে রয়ের কিছু হয়নি"।
কিন্তু... কিন্তু ওই গাড়িটা রয়ের।
হতে পারে, কিন্তু রয় তো ওর মধ্যে নেই।
আমি আম্মিকে কি বলবো, কি জবাব দেবো?
বিদিশার কাছেও একথার উত্তর নেই আর থাকলেও সে দিতে পারতো না কারণ তখন তার‌ও সংযম ভেঙে গেছে তার‌ও চোখ থেকে জল পরছে, কিন্তু আমিরের অবস্থা তার থেকেও খারাপ, বিদিশা হটাৎ আমিরকে জড়িয়ে ধরে, আর আমিরের যেন এখন হুঁশ নেই সে বিদিশার কাঁধে মাথা থেকে অঝোড়ে কাঁদতে থাকে।


[/HIDE]
 
[HIDE]


তোমাকে আগেই বলেছিলাম মামা ওটাকে বাঁচিয়ে রেখো না, শেষ করে দাও কিন্তু তুমি... সামনের টেবিলে একটা চাপড় মেরে উত্তেজিত ভাবে কথাটা বলে রকি, তারা এখন সেই বাড়িতে আছে যেখানে এআরসিকে বন্দী করে রেখেছিল তারা মানে বীরেন বাবু তার ভাই ধীরেন বাবু, রকি, জগা এবং বাইরে আরো কয়েকজন লোক আছে। বীরেন ভট্টাচার্যের মুখ থমথমে তিনি বুঝতে পারছেন অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসে মস্ত ভুল করে ফেলেছেন ,নিশ্চিত জয়ের দিকে এগোচ্ছিলেন কিন্তু এখন একেবারে দু দুটো ধাক্কা একসাথে খেয়েছেন, দুটো নয় আসলে তিনটে, ওদিকে আমির নামের এআরসির পোষা কুত্তাটা বেঁচে গেছে, দুই বস্তি দখল হতে হতে হয়নি তার দলকে পালিয়ে আসতে হয়েছে আর তিন তার কবল থেকে এআরসি পালিয়ে গেছে। এরমধ্যে প্রথম শেষেরটাই তাকে বেশী ভাবাচ্ছে বস্তি দখলটা তার ইগোর ব্যাপার ছিল কিন্তু এখন.. তিনি ভালো করেই জানেন এ খেলার নিয়ম এআরসি তো বলেওছিল "আমাকে মেরে ফেল আমি যদি এখান থেকে বেঁচে বেরোতে পারি তাহলে তোকে বাঁচতে দেবো না", এখন সেই এআরসি বেঁচে এখান থেকে বেরিয়ে গেছে এবার সে অ্যাটাক করবে কখন কোথায় কিভাবে আন্দাজ করা মুশকিল, এর থেকে মেরে ফেললেই বোধহয় ভালো হতো টাকা উদ্ধারের লোভে এখন তার প্রাণ সংশয় হয়ে গেছে, বীরেন ভট্টাচার্যের চোখে আবার বাণিজ্যনগরীতে ঘটা সেই রাতের ঘটনা মনে পড়লো যখন এআরসির লোকেরা হোটেলে তার চোখের সামনে তাণ্ডব চালিয়েছিল, বীরেন বাবুর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে থাকে।
ছোটোমামা ছোটোমামা তুমি কি ভাবছো বলোতো? ধীরেন বাবুকে চুপচাপ দেখে প্রশ্নটা করে রকি।
ধীরেন বাবু চমক ভেঙে জেগে ওঠেন "অ্যাঁ, হ্যাঁ কিছু বলছিস?
বলছি তুমি চুপচাপ কি ভাবছো?
ভাবছি এই এআরসিকে এত চেনা চেনা কেন লাগছে কে ও?
তুমি এখন এইসব ভাবছো? আগে ওকে কিভাবে শেষ করা যায় সেটা ভাবো?
এবারে বীরেন বাবু কথা বলেন "খুলে বলতো তুই কি ভাবছিস?"
দাদা ওর মুখটা ভালো করে দেখেছিলে? আমি দেখেছিলাম কার সাথে যেন একটা মিল আছে, কিন্তু কে সেটাই মনে পড়ছে না।
মামা এখন ওইসব ভেবে কি লাভ? ও আমাদের শত্রু, ব্যাস এইটুকুই যথেষ্ট।
শত্রুতার একটা কারন থাকে রকি, আর এআরসির ক্ষেত্রে সেই কারনটা জানার জন্য ওর পরিচয় জানাটা জরুরী।
কারন আবার কি এই শহরের দখল নেওয়া।
সেটা হলে তোর বড়োমামাকে ওর শহরে পেয়েও ছেড়ে দিত না, বা এখানে নিজে আসতো না নিজের কোনো লোক বা ভাড়া করা সুপারি কিলার দিয়েই আমাদের মেরে দিতে পারতো।
তুই কি বলতে চাইছিস ধীরেন?
দাদা ও যেটা চাইছে সেটা ক্ষমতা নয়, প্রতিশোধ। ভেবে দেখো ও কিন্তু চাইলেই তোমাকে মারতে পারতো কিন্তু মারেনি বা নিজের অন্য লোক পাঠিয়ে এখানেও আমাদের মারতে পারতো কিন্তু সেটা করেনি নিজে এসেছে শুধু তাই নয় আমাদের মারার আগে আমাদের থেকে এক এক করে কিছু না কিছু কেড়ে নিচ্ছে, না দাদা এ শুধু ক্ষমতা বা শহর দখল নয় এটা প্রতিশোধ ও এয়ন কেউ যে প্রতিশোধ নিতে এসেছে।
কে হতে পারে?
সেটাই তো ধরতে পারছি না দাদা। এইসময় ধীরেন বাবুর ফোন বেজে উঠলো "তোমার আবার কি হলো?
তাথৈ এখনো বাড়ি ফেরেনি। সরমা দেবীর উদ্বিগ্ন গলা।
তাথৈ বাড়ি ফেরেনি মানে?
জানিনা কখন বেরিয়েছে বলে যায়নি, ইদানিং মনটাও ভালো ছিল না ওর।
কেন কি হয়েছে?
জানিনা, জিজ্ঞেস করলে কিছু বলে না, তুমি একবার ফোন করে কথা বলো না।
ঠিক আছে দেখছি।
কি হয়েছে? ধীরেন বাবু ফোন রাখার পরে প্রশ্নটা করেন বীরেন ভট্টাচার্য।
আর বোলো না দাদা মেয়েটাও মায়ের মতো হয়েছে একটু শান্তি দিল না সেই ছোটো থেকেই আমাকে... হটাৎ তিনি চুপ করে গেলেন যেন কিছু একটা মনে পড়েছে তার।
কি হলো চুপ করে গেলি কেন?
ধীরেন বাবু কথা না বলে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালেন, তারপর জগার পিছনে গিয়ে হটাৎ তার মাথা ধরে টেবিলের উপর চেপে ধরলেন, এই দেখে বীরেন বাবু এবং রকি দুজনেই হতবাক হয়ে গেল।
কি হয়েছে দাদা? কোনোমতে কথা বলে জগা।
আমি তোকে একটা প্রশ্ন করবো তার সোজা সত্যি উত্তর দিবি।
কি কথা?
ষোলো বছর আগে রুদ্রের সাথে ওর ছেলে-ব‌উকেও তুই শেষ করে দিয়েছিলি নাকি ওর ছেলে বেঁচে গিয়েছিল?
প্রশ্নটা শুনে বীরেন বাবু, রকি এবং জগা তিনজনেই চমকে ওঠেন, "এটা কি বলছেন দাদা?"গুঙিয়ে ওঠে জগা তার মাথা এখনো টেবিলে চেপে ধরে রেখেছেন ধীরেন বাবু।
সত্যি বল জগা। চেঁচিয়ে ওঠেন ধীরেন বাবু।

বলছি বলছি, ওর ছেলে আর ব‌উ পালিয়ে যায় আমি চেষ্টা করেও ধরতে পারিনি তাই...
এবার ধীরেন বাবু জগাকে তুলে তার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে বলেন "ইচ্ছা করছে তোকে এখনই শেষ করে দি‌ই", তারপর একটা ধাক্কায় সরিয়ে দিয়ে বীরেন বাবুর উদ্দেশ্যে বলেন: এই এআরসি আর কেউ নয় ওই।রুদ্রের ছেলে অভয়, আর ও এখানে এসেছে প্রতিশোধ নিতে এ বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই সেই জন্যই ওর মুখটা চেনা চেনা লাগছিল, রুদ্রের সাথে মুখের আদলের মিল আছে।
এবার বীরেন বাবু জগাকে কাছে ডাকেন, "আমার ভুল হয়ে গেছে দাদা" হাতজোড় করে কাঁদতে কাঁদতে এগিয়ে আসে জগা, কাছে এলে বীরেন বাবু।হটাৎ নিজের পায়ের এক পাটি জুতো খুলে তাই দিয়ে জগাকে মারতে থাকেন। তারপর বলেন "আমার সামনে থেকে বেরিয়ে যা জগা, নেহাত এতগুলো বছর আমার প্রতি বিশ্বস্ত ছিলি তাই প্রাণে না মেরে আরেকটা চান্স দিচ্ছি, যে করেই হোক এই এআরসি কে আমার চাই জ্যান্ত বা মৃত, যদি পারিস তবেই আমাকে নিজের মুখ দেখাবি নচেৎ নয়"। জগা আর কোনো কথা না বলে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়।

"বাবু পালা তোর মাকে নিয়ে পালা"
না বাবা, গেলে তিনজনেই যাবো।
বাবু কথা শোন, তোর মাকে নিয়ে যা।
হটাৎ একটা কানফাটানো আওয়াজ সাথে একটা আর্তনাদ।
"তোর মাকে দেখিস বাবু, তোর মাকে দেখিস"।
না... বাবা....বাবা...না...বাবা...
"মিস্টার অভয়... মিস্টার অভয়" দূর থেকে কে যেন অস্পষ্ট ভাবে তার নাম ডাকছে কিন্তু...
বাবা...বাবা.... বাবাআআআআআ। হঠাৎই চোখ খুলে উঠে বসে অভয়, কপালে ঘাম জমে গেছে, বড়ো বড়ো নিঃশ্বাস পড়ছে,হটাৎ পাশে "মিস্টার অভয়" শুনে পাশে তাকায় দেখে একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে, লোক নয় ডাক্তার, তার পিছনে একজন লেডি নার্স, এবার অভয় ভালো করে চারপাশটা দেখে যে কোথায় শুয়ে ছিল সে? তার গায়ের জামাটা খুলে ফেলা হয়েছে, পরনে এখন অন্য একটা পোশাক ইউনিফর্ম জাতীয় কোনো হাসপাতালের পেশেন্ট ড্রেস।
আমি কোথায়? জিজ্ঞেস করে অভয়।
আপনি এখন হাসপাতালে
আমি এখানে কিভাবে এলাম?
আপনার ওয়াইফ আপনাকে এখানে এনেছে?
কে এনেছে? অভয়ের স্বরে বিস্ময়।
আপনার ওয়াইফ মিস্টার অভয়।
কে আমার ওয়াইফ? আমার কোনো ওয়াইফ নেই আর আমার নাম রয়।
কিন্তু যে মেয়েটি আপনাকে এখানে এনেছে তিনি তো বললেন আপনি তার হাজব্যান্ড?
অজ্ঞান হবার আগে পর্যন্ত তো ব্যাচেলর ছিলাম, জ্ঞান হবার পরে হাজব্যান্ড কিভাবে হয়ে গেলাম?
কেমন হাজব্যান্ড আপনি? নার্সের কথা আসে এবার,আপনার ওয়াইফ আপনাকে এখানে আনার পর থেকে পাগলের মতো কান্নাকাটি করছে, না খেয়ে না ঘুমিয়ে আপনার পাশে বসে থেকেছে, আপনাকে কত ভালোবাসেন আর আপনি?
অভয় চুপ করে শুনতে থাকে নার্স আবার শুরু করেন: আপনি সেই গতকাল রাতে অজ্ঞান অবস্থায় এখানে এসেছেন তারপর থেকে আজ এই সন্ধ্যায় জ্ঞান ফিরলো, আপনার স্ত্রী আপনার পাশেই বসে ছিলেন সমানে কেঁদে চলেছেন।
তা আমার এই ওয়াইফটি এই মুহূর্তে কোথায়?
বাইরে ঠাকুরের সামনে প্রার্থনা করছেন।


[/HIDE]
 
[HIDE]

অভয় আস্তে আস্তে বেড থেকে নামছে দেখে ডাক্তার জিজ্ঞেস করেন "কি হলো কোথায় যাচ্ছেন?"
আমার এই ওয়াইফকে দেখতে, এখন তো শুধু হাজব্যান্ড হয়েছি, এখন না গেলে পরে না জানি আরও কত কি হয়ে যাবো। বলে আস্তে আস্তে কেবিনের বাইরে এসে এদিক ওদিক তাকাতে থাকে, এরপর দেখে একদিকে একটা ছোট ঠাকুরের সিংহাসনের সামনে দাঁড়িয়ে একটা মেয়ে প্রার্থনা করছে, যদিও অভয় মেয়েটার শুধু পিছন দিকটাই দেখতে পারছে তবুও কেন যেন তার মনে একজনের মুখের ছবি ভেসে ওঠে এবং কেন যেন মনে হতে থাকে যে সামনে দাঁড়ানো এই মেয়েটি সে ছাড়া আর কেউ নয়, অভয় আস্তে আস্তে মেয়েটির পাশে গিয়ে দাঁড়ায় আর চিনতে অসুবিধা হবার কথা নয়, সে কয়েক সেকেণ্ড মেয়েটির প্রার্থনারত মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে, তার কঠিন বুকের ভেতর কেউ যেন হাতুড়ি পেটা করতে থাকে, তার ইচ্ছা করছে এই মুহুর্তে মেয়েটিকে কাছে টেনে নিতে হয়তো নিতো‌ও কিন্তু পরমুহূর্তেই মনে পরে সেই একরাতে রেস্টুরেন্টের বাইরে একটা ছেলের বলা একটা কথা "ও আমার গার্লফ্রেন্ড", নিজেকে সামলে নেয় অভয় "আপনার বয়ফ্রেন্ড জানে যে আপনি এখানে নিজেকে অন্য একজনের স্ত্রী হিসেবে পরিচিত দিয়েছেন মিস্ ভট্টাচার্য?"।

জ্যেঠিমা শেফালী দেবীর কাছ থেকে সত্যিটা জানার পর থেকেই তাথৈএর আর কোনো কিছু ভালো লাগছে না, সারা রাত ঘুমায়নি খালি কেঁদেছে, ভোর থাকতে থাকতে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়েছে কোথায় যাচ্ছে কেন যাচ্ছে কিছু ঠিক নেই, নিজেই গাড়ি চালিয়ে যায় মাঝে মাঝে যখন খুব কান্না পাচ্ছে তখন গাড়ি থামিয়ে স্টিয়ারিংএ মাথা রেখে কাঁদতে থাকে, একবার ভাবে অভয়ের কাছে যাবে যদিও জানে যে অভয় দেখা করবে না কিন্তু তবুও যাবে, একবার ভেবেছিল সুইসাইড করবে কিন্তু পরক্ষণেই রাতে জ্যেঠিমার কথা মনে পড়লো "এমন কিছু করিস না যাতে তোর মা কষ্ট পায়, তোর মায়ের তুই ছাড়া কেউ নেই", কিন্তু সে করবে কি? অভয় ওকে কাছে টেনে নেবে না আর অভয়কে ছাড়া থাকা ওর পক্ষে সম্ভব নয়।
এতদিন তাও একটা বিশ্বাস ছিল যে একদিন অভয়ের কাছে ঠিক ফিরবে কিন্তু এখন তো সেটাও নেই, সারাদিনটা এভাবেই কাটালো তাথৈ, বাড়ি থেকে ফোন করলে ধরেনি কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না আসলে কিছু করতেই ইচ্ছা করছে না, সারাদিন কিছু খায়নি, খাওয়ার কথা মনেই হয়নি কখনো রাস্তার পাশে ফাঁকা মাঠ দেখে গাড়ি থামিয়ে সেখানে কিছুক্ষণ বসে থাকে, ছোটোবেলায় অভয়ের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো মনে করে তারপর আবার গাড়িতে চাপে আবার কখনো মন্দির দেখে সেখানে গিয়ে অভয়ের নামে পূজো দেয়।
সন্ধ্যা প্রায় পার হয়ে গেছে কিন্তু তাথৈএর হুঁশ নেই, শহরের বাইরের দিকে একটা হাইওয়ে ধরে গাড়ি চালাচ্ছে সে রাস্তাটা ফাঁকাই গাড়ি চলাচল প্রায় নেই সোজা রাস্তা চলে গেছে সেই রাস্তা ধরে চলেছে সে কোথায় উত্তর নেই কেন সেটার‌ও উত্তর নেই মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে "আচ্ছা এই রাস্তায় কি অ্যাক্সিডেন্ট হয় না? এক্ষুনি যদি কোনো লরি ওকে চাপা দিয়ে চলে যায় তাহলে? কি ভালো হয় সব কষ্ট থেকে মুক্তি"।
এইসব ভাবতে ভাবতে একটু অন্যমনস্ক হয়ে যায় হটাৎ গাড়ির সামনে একজনকে চলে আসতে দেখে সজোড়ে ব্রেক কষে, লোকটা তার গাড়ির বনেটের উপরে হুমড়ি খেয়ে পরে তারপর নীচে পরে যায় একটু বিরক্ত হয় তাথৈ কোথায় সে মরার কথা ভাবছে তা না অন্য একজন তার গাড়ির সামনে মরতে চলে এসেছে, গাড়ি থেকে নেমে সামনে যায় তাথৈ দেখে একটা ছেলে রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পরে আছে মুখটা লম্বা এলোমেলো চুলে ঢাকা, গায়ে শার্টের বোতাম আটকানো নেই, আশেপাশে তাকিয়ে দেখে রাস্তাটা ফাঁকা একটা লোক চোখে পরছে না। তাথৈ ঝুঁকে ডাকে "শুনছেন? হ্যালো" উত্তর না পেয়ে মুখ থেকে চুলগুলো সরায় আর সঙ্গে সঙ্গে যেন ওর মাথায় বজ্রপাত হয়।
অভয়.. আর্তনাদ করে ওঠে তাথৈ তারপর কান্নায় ভেঙে পড়ে, অভয়.. অভয় কি হয়েছে তোমার? অভয়...। তাথৈ এবার লক্ষ্য করে অভয়ের খোলা শার্টের নীচে বুকে পেটে অনেকগুলো লম্বা কালশিটে দাগ বুঝতে বাকী থাকে না যে কেউ বা কারা প্রচণ্ড মারধর করেছে অভয়কে, "অভয় তোমার কিচ্ছু হবে না অভয়.." কোনোমতে অজ্ঞান অভয়কে প্রথমি বসিয়ে তারপর একটা হাত নিজের কাঁধে নিয়ে অনেক কষ্টে দাঁড় করায় তারপর কোনোমতে গাড়ির ব্যাকসিটে শুইয়ে দেয়, এবং তাড়াতাড়ি নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট করে।


লোকজনকে জিজ্ঞেস করে কাছাকাছি একটা হাসপাতালে পৌঁছে তাথৈএর কান্না আরও বেড়ে যায় কিছুতেই সে অভয়কে ছেড়ে যাবে না, ডাক্তার অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেন বারবার বলেন বাইরে যেতে কিন্তু তাথৈ অনড় সে উল্টে এক‌ই কথা বলতে থাকে কোনোমতেই সে তার স্বামীকে ছেড়ে যাবে না, কাঁদতে কাঁদতে বারবার অজ্ঞান অভয়ের মাথায় হাত বোলাতে থাকে বলতে থাকে "অভয় অভয় প্লিজ চোখ খোলো অভয়, ডাক্তার ওর কি হয়েছে চোখ খুলছে না কেন?"
ওনার শরীরের চিহ্ন দেখে মনে হচ্ছে ওনাকে কেউ প্রচণ্ড মারধর করেছে তাতেই জ্ঞান হারিয়েছেন।
ওকে বাঁচান ডাক্তার, ওকে বাঁচান প্লিজ।
আগে আপনি শান্ত হোন।
পুরো রাত এমনকি পরের দিন সকালেও অভয়ের জ্ঞান ফেরেনি দেখে তাথৈ আরো ভয় পেয়ে যায়।
ডাক্তার আশ্বাস দেন "আপনি চিন্তা করবেন না মারের আঘাত এবং দুর্বলতার জন্যই উনি এখনো অজ্ঞান"
কিন্তু ও ঠিক হয়ে যাবে তো?
সেরকমই আশা করছি, ইন্টারনাল কোনো আঘাত হয়নি যা হয়েছে বাইরে।খুব সম্ভবত ওনাকে টর্চার করা হয়েছে সাধারণ রাস্তার মারামারি নয় এটা আপনি বরং পুলিশে একটা খবর দিতে পারেন।
ঠিক আছে আমি সেটা পরে ভেবে দেখবো, আপাতত আপনি ওর জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করুন। মাঝে একবার অল্প সময়ের জন্য অভয়ের জ্ঞান ফেরে যদিও সে পুরোপুরি চেতনায় ছিল না, চোখ‌ও খোলেনি বিড়বিড় করে কিছু একটা বলতে গিয়ে পারে না তারপর আবার যে কে সেই, তাথৈ আর থাকতে পারে না, কেবিনের বাইরে একটা ছোট্ট ঠাকুরের সিংহাসন দেখেছিল সেখানে গিয়ে হাতজোড় করে এক মনে প্রার্থনা করতে থাকে।

"আপনার বয়ফ্রেন্ড জানে যে আপনি এখানে নিজেকে অন্য একজনের স্ত্রী হিসেবে পরিচিত দিয়েছেন মিস্ ভট্টাচার্য?" প্রশ্নটা শুনেও তৎক্ষণাৎ চোখ খোলে না তাথৈ আরো কিছুক্ষণ পরে প্রার্থনা সেরে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অভয়ের দিকে ফেরে অনেকদিন পর দুজনের চোখাচোখি হয় যদিও কেউ কোনো কথা বলে না, তাথৈ কোনো কথা না বলে পিছনে ফিরে কেবিনের দিকে যায় পিছনে অভয়,কেবিনে ঢুকে তাথৈ ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করে "এখন ওকে কেমন দেখলেন ডক্টর?"
আপনাকে তো আগেই বলেছি ওনার কোনো ইন্টারনাল আঘাত হয়নি, তাই..
আমি ঠিক আছি ডক্টর, থ্যাংকস।
সব কৃতিত্ব আপনার ওয়াইফের তিনিই আপনাকে এখানে নিয়ে এসেছিলেন।
আপনি আমার ডিসচার্জের ব্যবস্থা করুন, আমাকে যেতে হবে।
আরো কিছুটা সময় থেকে যান।
আমি থাকতে পারবো না ডক্টর, আমাকে যেতে হবে।
ডাক্তার আর কোনো কথা না বলে বেরিয়ে যান, কেবিনে এখন অভয় আর তাথৈ অভয় বেডের পাশে টেবিলে একটা জলের বোতল দেখে সেটা হাতে নেয়।
কি হয়েছিল তোমার? তাথৈ প্রশ্ন করে।
বললে বিশ্বাস করবেন? এক নিঃশ্বাসে অনেকটা জল খেয়ে বোতলটা আবার যথাস্থানে রেখে উত্তর দেয় অভয়।
বলেই দেখো।
আপনার জ্যেঠু আর বাবার বন্দী ছিলাম মনের সুখে ঠ্যেঙিয়েছে একেবারে আড়ং ধোলাই যাকে বলে, আরেকটা রাত থাকলে মেরেই ফেলতো।
তাথৈ কোনো কথা বলে না অভয় আবার বলে "কিন্তু আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর দিলেন না?"
কোন প্রশ্ন?
ওই যে আপনার বয়ফ্রেন্ড জানে যে আপনি এখানে নিজেকে অন্য একজনের স্ত্রী হিসেবে পরিচিত দিয়েছেন?
অভয়.. তুমি বারবার কেন এরকম বলছো, আমাকে কষ্ট দিতে তোমার ভালো লাগে?
আমার নাম রয় আর আমি আপনাকে কি কষ্ট দিলাম?
কষ্ট দাওনি?
কি কষ্ট?
তাথৈ কোনো কথা না বলে অভয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। অভয় আবার প্রশ্ন করে "আপনি আমাকে কোথায় আর কিভাবে পেলেন?"


[/HIDE]
 
[HIDE]
তাথৈ তাকে রাস্তায় পাওয়ার পুরো ঘটনাটা বলে সব শুনে অভয় বলে "থ্যাংকস, তারমানে আপনি অনেকক্ষণ বাড়ি থেকে বাইরে আছেন, আপনার এবার বাড়ি ফেরা উচিত"।
আমি তো বাড়ি ফিরবো বলে বেরোইনি, তাই যাওয়ার ইচ্ছা নেই।
আপনার বাড়ির লোক খুঁজবে তারা চিন্তা করবেন সাথে আপনার বয়ফ্রেন্ড‌ও।
তাথৈ বুঝতে পারছে অভয় তাকে ইচ্ছে করে আঘাত করছে অন্য কাউকে তার বয়ফ্রেন্ড বলে, সে বললো: আমি চলে গেলে তুমি খুশী হবে?
আমার খুশীর কথা আপনার ভেবে লাভ নেই।
অভয়.....
আমার নাম রয়।
তুমি সত্যিই চাও যে আমি চলে যাই?
অভয় চুপ করে আছে দেখে আবার বলে: কি হলো বলো তুমি সত্যিই চাও যে আমি তোমাকে ছেড়ে চলে যাই?
অভয় তাও চুপ করে থাকে, তাথৈ আর থাকতে পারে না তার ভীষণ কান্না পায় কিন্তু কোনোমতে চোখের জল সামলে বলে: বেশ, তুমি যখন চাইছো আমি চলেই যাবো চিরদিনের জন্য আর কখনও তোমার কাছে আসবো না আর কখনও তুমি তাথৈএর মুখ দেখতে পারবে না। বলে এক ছুটে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল।
তাথৈ বেরিয়ে যাওয়ার পরমুহূর্তেই অভয়ের মাথায় তাথৈএর কথাটা স্ট্রাইক করলো, কি বলে গেল? চিরদিনের জন্য মানে? বিদ্যুৎ ঝলকের মতো একটা চিন্তা ওর মাথায় আসতেই "ওহ্ শিটঃ" বলেই সেও ছুট লাগায়, তাড়াতাড়ি লিফটের কাছে এসে দেখে দুটোই নেই অভয় লক্ষ্য করে একটা লিফট একদম গ্ৰাউণ্ড ফ্লোর থেকে উপরে উঠছে সুতরাং ওটায় তাথৈ যায়নি এত তাড়াতাড়ি সেটা নীচে গিয়ে ফিরতে পারে না, অপর লিফট্ টা উপরের ফ্লোরে উঠেছে অভয়ের বুঝতে বাকী র‌ইলো না তাথৈ উপরে গেছে সে লিফটের জন্য আর সে কি করতে যাচ্ছে সেটা বুঝতেও অসুবিধা হবার কথা নয়, অভয় প্রাণপণে পাশের সিঁড়ি দিয়ে লাফিয়ে উঠতে লাগলো।

অভয়ের কেবিন থেকে বেরিয়েই তাথৈ দৌড়াতে লাগলো, সে ঠিক করে নিয়েছে এবার কি করবে, আর নয় অনেক হয়েছে, আর পারছে না সে, অভয় চায় সে চলে যাক বেশ তাহলে তাথৈ চলেই যাবে চিরদিনের জন্য যাবে এবং সেটা অভয়ের চোখের সামনে থেকেই, আজ না হোক একসময় তো অভয় তাকে ভালোবাসতো তাই ওর সামনে দিয়েই ও নিজের জীবন শেষ করবে।
লিফটটা থামতেই সে ঢুকে একদম টপ ফ্লোরের বোতাম টিপে দিল, লিফট থামতেই সে বেরিয়ে এল এটা হাসপাতালের একদম উপরের ভাগ, এখানে পেশেন্টরা থাকে না একসাইডে কয়েকটা রুম বোধহয় স্টাফদের জন্য, আর অন্য দিকে কিছুটা অংশ নিয়ে একটু খোলা ছাদের মতো আছে যদিও চারিদিকে ঘেরা কোমর সমান উঁচু পাঁচিল দেওয়া সেখানে স্টাফরা বা পেশেন্টরা মাঝে মাঝে খোলা হাওয়া খেতে আসে, এই মুহূর্তে ওই জায়গাটায় কেউ নেই তাথৈ দৌড়ে ওদিকে গেল তারপর কোমরের উপরে উঠে দাঁড়ালো, চোখ বন্ধ করে নীচে লাফ মারতে যাবে হটাৎ পিছন থেকে একটা শক্ত হাত তার হাতটা ধরে এক হ্যাঁচকা টানে তাকে উপর থেকে নীচে নামিয়ে আনলো এবং নীচে যাতে পরার আগে আরেকটা হাত শক্ত করে তার কোমর জড়িয়ে ধরে নিল তারপর আস্তে করে দাঁড় করালো।
চোখ খুলেই যে তার হাত ধরে টেনে নামালো তাকে দেখেই এক ঝটকায় ধাক্কা দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে কয়েকপা পিছনে সরে এল।
কি করতে যাচ্ছিলে এটা? বলো কি করতে যাচ্ছিলে? অভয় প্রচণ্ড রেগে গেছে তার বড়ো বড়ো নিঃশ্বাস পড়ছে।
কে আপনি? আপনি এখানে কেন? তাথৈও এবার তেজের সাথে উত্তর দেয়।
আগে বলো কি করতে যাচ্ছিলে তুমি এটা?
আপনি কেন আমার হাত ধরেছেন? কোন অধিকারে ধরেছেন? কোন অধিকারে আমাকে প্রশ্ন করছেন? আপনার কোনো অধিকার নেই আমাকে স্পর্শ করার বা কোনো প্রশ্ন করার বুঝতে পেরেছেন মিস্টার রয়?
আমি জানি আমার কোনো অধিকার নেই, আমার অধিকার এবং আমার যোগ্যতা দুটোই তুমি আমাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলে ষোলো বছর ধরে আগে আমি আমার যোগ্যতা বা অধিকার কোনোটাই ভুলিনি..
তাহলে অধিকার পার করলেন কেন? আপনি তো আমাকে ঘেন্না করেন তাহলে কেন বাঁচালেন আমাকে? বলুন..আমাকে বাঁচালেন কেন? আপনিই তো বললেন যেন আমি চলে যাই কারণ আপনি আমাকে ঘেন্না করেন, আমি তো চলেই যাচ্ছিলাম তাহলে আটকালেন কেন? বলুন।


কারন আমি তোমাকে ভালোবাসি, আজ‌ও খুব ভালোবাসি। যে কথাটাকে এতবছর অভয় নিজের মধ্যে বন্দী করে রেখেছিল সেটা হটাৎ সমস্ত প্রতিরোধ ভেঙে বেরিয়ে এল। কথাটা শুনে তাথৈ চুপ করে র‌ইলো কিন্তু অভয় বলে চলে: আমি তোমাকে কোনোদিন ঘেন্না করিনি শুধু ভালোবেসেছি এটা জানার পরেও যে তুমি আমাকে ঠকিয়েছো, তুমি অনেক আগেই আমার বিশ্বাস ভেঙে আমার ভালোবাসাকে পায়ের তলায় মাড়িয়ে এগিয়ে গিয়েছিলে, কিন্তু তবুও তোমাকে ভালোবেসে এসেছি, কতবার ভেবেছি তোমাকে ভুলে তোমার মতো এগিয়ে যাবো কিন্তু পারিনি, কিছুতেই তোমাকে ভুলতে পারিনি তাই আজ‌ও তোমার আঘাত লাগলে আমার কষ্ট হয় আর এখন তো তুমি....
ভালোবাসায় বিশ্বাস থাকে অভয়, যেটা আমি করেছিলাম এত বছর তোমার থেকে দূরে থাকার পরেও বিশ্বাস ছিল যে একদিন তোমার কাছে ফিরবো, নিজেকে অপরাধী মনে হয়েছে যে যাওয়ার আগে তোমাকে জানিয়ে যেতে পারিনি তোমার কোনো ধারণা আছে এত বছর আমি কিভাবে কাটিয়েছি? ফিরে এসে শুনলাম তুমি আর নেই মারা গেছো কিন্তু আমি বিশ্বাস করিনি অপেক্ষা করে গিয়েছি তোমার... কিন্তু তুমি..
আমি তোমাকে ভালোবাসিনি?
ভালোবাসলে অবিশ্বাস করতে না, এটা বিশ্বাস করতে না যে তোমার তাথৈ তোমাকে ঠকাতে পারে।
ওয়াও... এখন সব দোষ আমার?
হ্যাঁ তোমার দোষ, তুমিই আমাকে অবিশ্বাস করেছিলে
আর তোমার সেই ম্যাসেজ সেটা?
কোন ম্যাসেজ? তাথৈ ভীষণ অবাক হয় কারণ এই ম্যাসেজের কথা তাকে অমিয়‌ও বলেনি।
ও মনে নেই বুঝি? ওই ম্যাসেজটা যেটা তুমি আমাকে পাঠিয়েছিলে এটা বলে যে তুমি চলে যাচ্ছো কারণ আমি তোমার যোগ্য ন‌ই।
আমি তোমাকে কোনো ম্যাসেজ পাঠাইনি অভয়..
তাহলে তোমার ফোন থেকে আমাকে কে ম্যাসেজ করেছিল?
আমি জানিনা,
বেশ.. তাহলে আমি যখন ফোন করছিলাম তখন ধরছিলে না কেন? কেন নিজের দিদিকে দিয়ে দিয়েছিলে ফোনটা?
তাথৈ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে: আমি বললে বিশ্বাস করবে? কারণ তুমি তো অলরেডি ধরেই নিয়েছো আমি তোমাকে ঠকিয়েছি।
আচ্ছা শুনি..
সেদিন আমার সাথে তোমার কথা হয়নি এমনকি কোনো ম্যাসেজ‌ও করিনি কারণ আমার কাছে ফোন ছিল না, সেদিন জ্যেঠু হটাৎ বললেন আমাকে পড়াশোনার জন্য বাইরে যেতে হবে আমি যেতে চাইনি কিন্তু কাউকে কিছু বলার উপায় ছিল না, যাওয়ার আগে পিসি আমার থেকে ফোনটা নিয়ে নিয়েছিল তারপর কি হয়েছিল আমি জানিনা, আমি সত্যিই জানিনা।
এবার অভয়ের অবাক হবার পালা কারণ এটা সে ভাবতেও পারেনি অথচ সেদিন সত্যিই এক মহিলা কথা বলেছিল। তাথৈ বলে চলে: তুমি বুঝবেও না এই কটা বছর আমার কিভাবে কেটেছে যার সাথে কথা না বললে দেখা না করলে আমি থাকতে পারতাম না দিনের পর দিন তার সাথে কথা বলতে পারছি না, দেখা করতে পারছি না, ফিরে এসে শুনি এক দুর্ঘটনায় তুমি...
শেষ‌ই হয়ে যেতাম নেহাত আয়ু ছিল তাই বেঁচে গেছি কিন্তু আমার বাবা পারেননি.. কিন্তু ওর থেকে আমি মরে গেলেই ভালো হতো অন্তত এত কষ্ট পেতে হতো না।
দুজনের মধ্যে আরো অনেকক্ষণ বাক বিতণ্ডা চললো দুজনের মনের ভিতরে জমা কথাগুলো বেরোতে থাকে দুজনের ভিতরের জমা কথা, রাগ, অভিমান বাঁধ ভেঙ্গে নদীর উচ্ছ্বল স্রোতের মতো বেরিয়ে আসতে থাকে।
একসময় তাথৈ বলে: আমার জ্যেঠু তোমার সাথে যা করেছে তারপরে তুমি তো আমাকে ঘেন্নাই করতে তাহলে আমাকে মরতে দিলে না কেন, বললে তো চলে যেতে, চলেই তো যাচ্ছিলাম


[/HIDE]
 
[HIDE]
তুমি কোনোদিন‌ও আমাকে বুঝবে না, আমি তোমাকে কখনো ঘেন্না করিনি, করতে পারিনি আর তোমার জ্যেঠু যা করেছে তার জন্যও না, আমার রাগ হয়েছিল কারণ আমি ভাবতে পারিনি যে তোমার থেকে আঘাত পাবো, তুমি আমাকে ঠকাবে খালি ভাবতাম জীবনে একবার তোমার সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করবো কেন করেছিলে এরকম আমার সাথে।
তাহলে জিজ্ঞেস করোনি কেন? মন্দিরের পিছনে তো দেখা হয়েছিল।
হ্যাঁ, বহু বছর পরে তোমাকে সেদিন দেখেছিলাম খুব ইচ্ছা করছিল সেদিন তোমাকে কাছে টেনে নিতে কথা বলতে।
তাহলে বলোনি কেন?
পারিনি কারণ তখন তোমার সেই ম্যাসেজ আর তোমার দিদি আর ওই মহিলার কথা মনে পড়ে তাই আর পারিনি।
সেদিন যদি একবারও আমার দিকে মন দিতে তাহলে শুনতে পেতে যখন তুমি আমার হাত ধরেছিলে তখন তোমার নামটাই বেরিয়েছিল আমার মুখ থেকে।
না শুনিনি, পরে আবার দেখলাম তোমাকে রেস্টুরেন্টে যদিও জানতাম না তোমরা ওখানে যাবে তাহলে যেতাম না পরের দিন তোমার জন্মদিন ছিল সেদিন‌ও খুব ইচ্ছা করছিল তোমার কাছে যেতে তোমাকে উইশ করতে।
তাহলে আসোনি কেন? আমি তো এসেছিলাম তোমার কাছে তুমি নিজের পরিচয় দাওনি, আমাকে সম্পূর্ণ অগ্ৰাহ্য করে এড়িয়ে চলে গিয়েছিলে। তাথৈ এবং অভয় দুজনেই উত্তেজিত স্বরে কথা বলতে থাকে তাথৈ এবার এগিয়ে এসে দুহাতে অভয়ের কলার দুটো চেপে ধরে বলে: বলো কেন সেদিন নিজের পরিচয় দাওনি... কেন?
কেন পরিচয় দেবো? বেশ খুশীতেই তো ছিলে ওই সাম্যর সাথে।
বাইরে থেকে দেখেই বুঝে গেলে আমি খুশী আছি?
বাইরে থেকে কেন বুঝবো? আমার সামনে দাঁড়িয়ে সাম্য আমাকে বলছে তুমি ওর গার্লফ্রেন্ড আর তোমরা দুজনে দুজনকে খুব ভালোবাসো একসাথে সবাই মিলে টাইম এনজয় করতে বেরিয়েছো তাহলে কেন নিজের পরিচয় দেবো, বলো কেন নিজের পরিচয় দিয়ে তোমার খুশিতে বিঘ্ন ঘটাবো? আমি কোনোদিন‌ও তোমার খুশী নষ্ট করতে চাইনি সেদিন বাড়ি ফিরে ইচ্ছা করছিল... যদি মায়ের চিন্তা না থাকতো তাহলে হয়তো সেদিনই নিজেকে শেষ করে দিতাম।
ও বললো আর তুমি বিশ্বাস করে নিলে?
কেন করবো না, তুমিও তো চুপ করে দাঁড়িয়ে শুনছিলে তাহলে কেন বিশ্বাস করবো না।
আমি ওকে কিছু বলিনি কারণ আমি ওর কথা শুনিই নি কারণ আমি তোমাকে দেখছিলাম।
যদি শুনতেও তাহলেই বা কি করে নিতে?
তাহলে যে থাপ্পড়টা পরদিন ওকে একাকী মেরেছিলাম সেটা তখনই সবার সামনে মারতাম।
তুমি সাম্যকে থাপ্পড় মেরেছিলে? অভয়ের স্বরে অবাক ভাব।
হ্যাঁ।
কেন?
ও আমার হাত ধরেছিল তাই।
ও হাত ধরেছিল বলে তুমি থাপ্পড় মারলে, কেন?
কারণ একজন ছাড়া আর কারো আমার হাত ধরার অধিকার নেই।
আর সেই একজনটা কে?
ছিল একজন, এখন মনে হচ্ছে ভুল করেছি কারণ সে খালি আমাকে কষ্ট দিতে জানে, এর থেকে তো..
ওই সাম্য ভালো? তাহলে যাও ওর কাছে আমি তো বললাম যেতে কিন্তু এখানে হাইজাম্প মারতে এসেছো কেন?
বেশ করেছি তুমি কে জিজ্ঞেস করার?
আমি আবার কে? আমাকে তুমি বাঁচিয়েছো তাই আমারও দায়িত্ব..
দরকার নেই তোমার দায়িত্ব পালনের?
সত্যি বলোতো তুমি হাইজাম্প মারতেই এসেছিলে তো? না মানে যে মেয়ে অন্ধকারে ভয় পায় সে এত উঁচু বিল্ডিং থেকে নীচে জাম্প মারবে এটা ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না।
তাথৈ শুনে আবার ঘুরে পাঁচিলের উপর উঠতে গেল সঙ্গে সঙ্গে অভয় আবার ওর একটা হাত ধরে নিজের কাছে টেনে নিল, অভয় বুঝতে পেরেছে সে এতবছর একটা ভুল ধারণা নিয়ে বেঁচে ছিল তাথৈ ওকে ঠকায়নি তারা দুজনেই পরিস্থিতি আর কিছু মানুষের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে। হাত টানার সাথে তাথৈ অভয়ের কাছে চলে আসে দুজনে পরস্পরের একদম কাছে চলে এসেছে পরস্পরের কপালে কপাল ঠেকিয়ে চোখ বুজে দাঁড়িয়ে আছে।
আয়্যাম সরি তাথৈ, আমার তোমার উপর বিশ্বাস রাখা উচিত ছিল কিন্তু কি করবো বলো তোমার ফোন থেকে ওরকম ম্যাসেজ তারপর তুমি ফোন ধরছো না, তারপর তোমার দিদি আর ওই মহিলার ওরকম কথাবার্তা অন্য কিছু মাথায় আসেনি।
তাথৈ এতক্ষণ কান্না আটকে রেখেছিল এবার পুরো ভেঙে পরলো, "কেন বলো কেন এটা ভাবলে যে আমি তোমাকে ঠকাবো? কি করে ভাবলে যে আমি তোমাকে ভুলে অন্য কাউকে মন দেবো? আমি শুধু তোমাকে ভালোবেসেছি আর আজ‌ও তোমাকেই ভালোবাসি।
আমিও তো শুধু তোমাকেই ভালোবেসেছি।

মিথ্যে বলছো তুমি, আমাকে তুমি ভালোবাসোনা সেই জন্যই ওই কলোনিতে তোমার কাছে গেলে তুমি দেখা করতে না, আমাকে তাড়িয়ে দিতে।
তোমার কি মনে হয় প্রথম দিন আমি না চাইলে তোমাকে ওরা আমার বাড়িতে ঢুকতে দিত? আমি তোমাকে কাছ থেকে দেখতে চাইছিলাম, তোমার সাথে একা কিছু সময় কাটাতে চাইছিলাম, কিন্তু নিজের পরিচয় দিতে পারিনি।
আমি তো বারবার বোঝাচ্ছিলাম যে আমি তোমাকে চিনতে পেরেছি তবুও তুমি নিজেকে লুকিয়ে রেখেছিলে আবার তারপর থেকেতো তুমি দেখাই করতে না।
আসলে সেদিন তুমি তোমার জ্যেঠুর কাজকে সাপোর্ট করেছিলে তাই রাগ হয়েছিল..
আমি জানতাম না, সত্যিই জানতাম না, একবার তো পুরো সত্যি বলতে পারতে, বলোনি কেন?
বললাম না পারিনি তোমার মনে তোমার জ্যেঠু আর বাবার যে জায়গাটা আছে সেটা খারাপ করতে পারিনি।
তুমি হয়তো জানোনা আমার মা আমাকে শিখিয়েছেন যেন কোনোদিন অন্যায়কে প্রশ্রয় না দি‌ই।
অভয় দুটো হাত দিয়ে তাথৈএর দুটো গাল ধরে বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে ওর চোখের জল মুছে দিল তারপর বললো: তাথৈ আমি যা বলছি সেটা মন দিয়ে শোনো।
কি?
তোমার জ্যেঠু আর আমার মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে, প্রথমে এটা শুধুমাত্র আমার নিজস্ব প্রতিশোধের লড়াই ছিল কিন্তু এখন অনেক গরীব অসহায় মানুষছর ভাগ্য জড়িয়ে গেছে যারা আমার উপরে ভরসা করে আছে তাই আমি এখানে থেকে পিছনে হটতে পারবো না, আর তোমার বাবাও তোমার জ্যেঠুর সঙ্গ ছাড়বেন না তাই..
তুমি কি বলতে চাইছো?
আমি চাইনা তুমি কোনো রকম দ্বিধা বা কষ্টের মধ্যে কাটাও তাই তুমি ফিরে যাও আর আমাকে ভুলে যাও।
মুহূর্তে তাথৈ নিজেকে ছাড়িয়ে পিছনে সরে গেল তারপর একটু জোর গলায় বললো: এটা তুমি বললে কি করে?
তাথৈ..
আগে বলো এটা বললে কি করে?
অভয় তাথৈএর কাছে গিয়ে দুহাতে ওর দুটো হাত ধরে তারপর বলে: একটু বোঝার চেষ্টা করো আমি বীরেন ভট্টাচার্য আর ওনার ভাই মানে তোমার বাবাকে ছাড়তে পারবো না, আমি ওনাদের ক্ষমা করতে পারবো না তাই আমি নিজে কি করে আশা করবো যে তুমি তোমার পরিবারের লোকেদের ক্ষতিকারীকে ক্ষমা করবে, তাই আমি চাই।
তুমি তো ক্ষতি করছো না।
মানে?
আমি ছোটো থেকেই দেখেছি জ্যেঠু জ্যেঠিমাকে আর বাবা মাকে অত্যাচার করতো এমনকি মারধর পর্যন্ত, আমি কখনো কিছু বলিনি কারণ মা বারণ করতেন, কিন্তু ওনারা তোমার‌ও ক্ষতি করেছেন শুধু তাই নয় জ্যেঠিমা বলছিলেন ওনারা আরও অনেক লোকের ক্ষতি করেছেন তাই ওনাদের শাস্তি পাওয়া দরকার, আর এই লড়াইতে আমি তোমার সঙ্গে থাকবো।



[/HIDE]
 
[HIDE]

তাথৈ তুমি তোমার জ্যেঠুকে চেনোনা, উনি নিজের স্বার্থের জন্য তোমার ক্ষতি করতেও পিছপা হবেন না আর আমাদের এই লড়াইতে তোমার গায়ে যদি একটাও আঁচড় পরে তাহলে সেটা আমি সহ্য করতে পারবো না।
আর আমার থেকে দূরে থাকতে পারবে? হ্যাঁ এখন তো পারবেই, কিন্তু আমি পারবো না।
তাথৈ তুমি এখনো বোঝোনি তোমার থেকে দূরে থাকতে চাওয়াটা আমার জন্য কতটা কষ্টকর,আমি তোমাকে..
তুমি আমাকে নিজের থেকে দূরে রাখতে পারবে না আর। অভয়কে কথা শেষ করতে না দিয়েই বলে উঠলো তাথৈ...
বললাম তো না তবুও তুমি যদি জোর করো তাহলে তুমি কিন্তু এবার সত্যি সত্যিই আত্মহত্যা করবো, বাড়িতে কিন্তু তুমি আমাকে আটকাতে পারবে না।
তাথৈ... বেশ জোরেই নামটা নেয় অভয়, বলেছিলাম না এরকম কথা বলবে না
তাহলে তুমিও আর আমাকে দূরে যেতে বলবে না, আমি তোমার থেকে দূরে গিয়ে আর থাকতে পারবো না। তাথৈ অভয়কে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রাখে, অভয়‌ও আর কিছু বলে না সেও দুহাতে তাথৈকে বাহুবন্দী করে নেয়, প্রথমবার তারা পরস্পরকে আলিঙ্গনাবদ্ধ করে কিশোর অবস্থায় তারা নিজেরাই নিজেদের মধ্যে একটা গণ্ডি টেনেছিল কিন্তু আজ সেই গণ্ডি নেই তাই তাদের বাধাও নেই।


নীচে নেমে নিজের কেবিনের দিকে যেতে যেতে বেশ কিছু লোককে দেখে অভয় যাদের আপাতদৃষ্টিতে অন্যান্য পেশেন্টদের বাড়ির লোক বা নার্সিং হোমের স্টাফ মনে হলেও অভয়ের ষষ্ঠেন্দ্রিয় সজাগ হয়ে ওঠে। কেবিনে ঢুকে দেখে সেখানে ডাক্তার এবং হাতে স্ক্যালপেল, সিজার (সোজা ভাষায় কাঁচি) ইত্যাদি র ট্রে হাতে লেডি নার্স উপস্থিত সাথে আরো একজন লোক আছে যিনি স্টাফ ড্রেস পরে থাকলেও অভয়ের সন্দেহ হয় যে সে আদৌ স্টাফ কি না।

তো ডক্টর আমার ডিসচার্জের সমস্ত ফর্মালিটি কমপ্লিট?
আপনাকে এখন ছাড়া যাবে না।
মানে?
আপনি এখনো সম্পূর্ণ সুস্থ নন।
আমি সম্পূর্ণ সুস্থ।
সেটা আমি ঠিক করবো, ডাক্তার আমি।
অভয় দেখে ডাক্তার একটা ওষুধ সিরিঞ্জে ভরছেন, কিন্তু তার হাত কাঁপছে চোখেমুখে প্রচণ্ড টেনশন।
কি হয়েছে ডক্টর?
কিছু না এবার আপনি বেডে শুয়ে পড়ুন।
এটা কিসের ইঞ্জেকশন?
ব্যাথার।
আমার দরকার নেই, আপনি আমার ডিসচার্জের ব্যবস্থা করুন।
বললাম তো আপনাকে এখন ডিসচার্জ করা যাবে না।
কিন্তু আমি আর এখানে থাকতে পারবো না।
এবার তাথৈ কথা বলে: ডক্টর আপনি তো তখন রাজী হয়েই গেলেন ওর ডিসচার্জের জন্য তাহলে এখন..
ডক্টর আমি তাই আমি ঠিক করবো পেশেন্ট কখন ডিসচার্জ হবে, নিন এখন শুয়ে পড়ুন। শেষের কথাটা অভয়কে বলা।
আমি ইঞ্জেকশন নেবোনা ডক্টর। অভয় দাঁড়িয়েই কথাটা বললো।
ইঞ্জেকশনতো নিতেই হবে।
বললাম তো না।
কথাটা বলার সঙ্গে সঙ্গে চোখের পলকে স্টাফ ড্রেস পরা লোকটা পিছন থেকে একটা দড়ি দিয়ে হটাৎ অভয়ের গলায় ফাঁস লাগালো যদিও অভয়‌ও মুহুর্তের মধ্যে একটা হাত ফাঁস আর গলার মাঝে দিয়ে ফাঁসটা গলায় বসে যাওয়া থেকে আটকাচ্ছে কিন্তু ডাক্তার ইঞ্জেকশনটা লাগাতে যেতেই অপরহাতে ডাক্তারের কবজি ধরে নেয়, অভয় তাথৈকে উদ্দেশ্য করে বলে: পালাও তাথৈ, কিন্তু তাথৈ অভয়কে সাহায্য করতে এগিয়ে আসতেই লেডি নার্স একটা স্ক্যালপেল তাথৈএর গলায় ধরে।
ডাক্তার গায়ের জোরে চেপে ইঞ্জেকশনটা অভয়ের শরীরে ঢোকাতে চেষ্টা করছেন, সুঁচের মুখ এখন অভয়ের বুকের অনেকটা কাছে চলে এসেছে, অপরদিকে অভয়ের গলায় ফাঁস আরো দৃঢ় হচ্ছে, এখন ফাঁস মুক্ত হতে গেলে দুটো হাত লাগবে অথচ ডাক্তারের হাত ধরে থাকায় সেটা পারছে না। এখানে মুশকিল আসান হলো তাথৈ হটাৎ একটা ধাতব আওয়াজের সাথে একটা মেয়েলি আর্তনাদ শুনে সবাই মুহুর্তের জন্য ওদিকে তাকায় দেখে তাথৈ কোনোভাবে নিজেকে মুক্ত করে সার্জারি ইনস্ট্রুমেন্টের ট্রে দিয়ে সজোরে লেডি নার্সের মাথায় আঘাত করেছে, এইটুকু অবসর পেয়ে অভয়‌ও একটা পা একটু ভাঁজ করে সজোরে চালায় ডাক্তারের তলপেটে ডাক্তার ছিটকে পিছনে গিয়ে পড়ে তারপর বা অনুইটা উপরে তুলে পিছনে চালায় আর সেটা লাগে পিছনের লোকটার মুখে সঙ্গে সঙ্গে গলায় ফাঁসটা খুলে যায় এবার অভয় লোকটার মাথা ধরে দেয়ালে ঠুকে দেয় ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোতে থাকে এবং লোকটা একটা আর্তনাদ করে মাথায় হাত দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
এবার বলোতো ডাক্তার ওটা কিসের ওষুধ ছিল সিরিঞ্জে ঘুমের নাকি বিষ?
জানিনা আমাকে ওরা দিতে বলেছিল তবে বিষ ছিল বোধহয়, আমি দিতে চাইনি বিশ্বাস করুন।

সেটা আপনার হাত কাঁপা দেখেই সন্দেহ হয়েছিল।
ওরা হাসপাতালে ঢুকে আছে আমাকে হুমকি দেয় আমি যদি না করি তাহলে ওরা এখানে সবাইকে... কথা শেষ হলো না হটাৎ আঃ করে ডাক্তার বেডে শুয়ে পড়লো, তাথৈ এবার ট্রে দিয়ে ডাক্তারের মাথায় আঘাত করেছে, অভয় তাকিয়ে দেখে সে রাগে ফুঁসছে।
এটা কি করলে? জিজ্ঞেস করে অভয়।
বেশ করেছি, উনি একজন ডাক্তার, পেশেন্টকে মারার কথা ভাবাও পাপ আর উনি আমার সামনে আমার অভয়কে বিষ দিতে চাইছিলেন।
অভয়ের মনে পরলো ছোটোবেলায় স্কুলের একটা ঘটনা, তখন ক্লাসের প্রায় সবাই জানে অভয় আর তাথৈএর সম্পর্কের কথা যদিও সাম্য এবং ওর কাছের কয়েকজন বন্ধু মানতে পারেনি এটা একদিন সাম্যর এক বন্ধু অভয়কে অপমান করে অভয়রা আর্থিকভাবে গরীব ছিল সেটা নিয়েই কথা শোনায় এদিকে ছোটো থেকেই অভয়ের আত্মসম্মানবোধ প্রবল, তারপর সে তাথৈএর থেকে দূরে থাকতে শুরু করে এমনকি কথা বলাও বন্ধ করে দেয়, তাথৈ এসবের কিছু জানতো না আর অভয় বলেওনি, তাই তাথৈ বুঝতে পারছিল না হটাৎ কি হলো যাতে অভয় তার সাথে এমন করছে।
একদিন ছুটির পরে অভয় ক্লাস থেকে বেরিয়ে এসেছে এমন সময় ক্লাসের একজন ছুটে ছুটে এসে অভয়কে বলে: অভয় তাড়াতাড়ি চল।
কোথায়?
তাথৈ দেখ কি শুরু করেছে।
কি করছে?
চল গিয়ে দেখবি।
অভয় গিয়ে দেখে তাথৈ রনংদেহী মূর্তি ধরে হুঙ্কার ছাড়ছে ওর হাতে লম্বা একটা ডান্ডা আর কিছুদিন আগে যে ছেলেটা অভয়কে অপমান করেছিল সে একটা বেঞ্চের নীচে লুকিয়ে আছে, সাম্য, বৃষ্টি, সুস্মিতা আরও কয়েকজন মিলেও তাথৈকে শান্ত করতে পারছে না। তাথৈ একটা কথাই বলছে "সরে যা সবাই ওর সাহস হয় কি করে অভয়কে অপমান করার আজ ওকে মারবোই"।
অভয় অবাক হয়ে দেখছিল পাশ থেকে একজন বললো: তাথৈকে কেউ বলেছে যে তোকে অপমান করেছে ওরা তাই.. তুই ওকে থামা অভয়।
ততক্ষণে তাথৈএর ওই রনংদেহী রূপের সামনে আর হাতে ডান্ডা দেখে কেউ ওর কাছে যেতে সাহস পাচ্ছে না, যারা ওকে আটকাচ্ছিল তারাও ভয়ে সরে গেছে, তাথৈ ডান্ডাটা দিয়ে সজোরে ছেলেটাকে মারতে যাবে কিন্তু পিছন থেকে অভয় ডান্ডাটা ধরে একটানে ছিনিয়ে নেয়, তাথৈ ঘুরে অভয়কে দেখে
অভয়: কি করছো টা কি এটা?
তাথৈ কয়েকমিনিট চুপ করে দাঁড়িয়ে অভয়ের দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তারপর পাশ কাটিয়ে চলে যায় অভয় ডান্ডাটা অন্য একজনকে দিয়ে তাথৈএর পিছনে ছুট লাগায়।
আজ তুমি কি করতে যাচ্ছিলে তাথৈ? ওরকম কেউ করে?
তাথৈ উত্তর দেয় না চুপ করে থাকে দেখে অভয় আবার বলে: কথা বলবে না? আচ্ছা তোমার সাথে কথা বলা বন্ধ করাটা আমার ঠিক হয়নি, আমার ভুল হয়ে গেছে এবার তো কথা বলো।
তাথৈ তাও কথা বলছে না দেখে অভয় তার স্পেশাল ট্রিক ইউজ করে যদিও এটায় রিস্ক আছে কিন্তু তাথৈ এরপর কথা না বলে থাকতে পারবে না সে জানে
তুমি কথা বলবে না, বেশ তাহলে আমি আর থেকে কি করবো আমি যাই, ওহ্ ভালো কথা তুমি জানো আজ একজন মেয়ে আমাকে লাভলেটার পাঠিয়েছে, স্কুলের পরে দেখা করতে বলেছে, ঠিক আছে আমি আসছি তুমি থাকো।


[/HIDE]
 
[HIDE]

এরপর আর তাথৈ চুপ থাকতে পারে না যদিও তাথৈ জানে এসব অভয়ের চালাকি কেউ ওকে লাভলেটার দেয়নি কিন্তু তবুও সে চুপ থাকতে পারে না মুহূর্তে অভয়ের কলার চেপে ধরে: খুব শখ না অন্য মেয়ের কাছে যাওয়ার আজ তোমাকেই ডান্ডা পেটা করবো অসভ্য ছেলে।
অভয় হাসছে দেখে তাথৈ আরও রেগে যায় গজরাতে থাকে: কে লাভলেটার দিয়েছে দেখাও তারপর তোমার একদিন আর ওই মেয়েটার একদিন দেখাও।
অভয় হাসতে হাসতে বলে: যাক শেষে কথা বললে আরে কলার ছাড়ো ছিঁড়ে যাবে।
ছিঁড়ুক, আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করেছিলে কেন?
আচ্ছা বললাম তো ভুল হয়ে গেছে, এবার তো কলার ছাড়ো।
তুমি জানোনা তুমি আমার থেকে একটু দূরে গেলেই আমার কষ্ট হয়।
আচ্ছা বললাম তো আমার ভুল হয়ে গেছে, এবার তো হাসো।
তাথৈ অভয়ের কলার ছেড়ে একটা বাহু জড়িয়ে ধরে, পরদিন থেকে আবার দুজনের মধ্যে সব নরমাল তবে এখন আর কেউ অভয়কে অপমান করতে সাহস পায় না, ওই ছেলেটার তরফ থেকেও তাথৈএর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করা হয়নি। তাথৈ এমনিতে খুব শান্ত সবার সাথে ভদ্রভাবেই মেশে ওর যত রাগ অভিমান লড়াই সব অভয়ের সাথে কিন্তু কেউ যদি অভয়কে খারাপ কিছু বলে তাহলে তার আর নিস্তার নেই।
আজ তাথৈএর এই রাগী রূপ দেখে স্কুলের সেই ঘটনার কথা মনে পড়ে যায়, কিন্তু নষ্ট করার মতো সময় নেই "আমার ড্রেস কোথায় তাথৈ আর আমার মোবাইল ঘড়ি? জিজ্ঞেস করে অভয়।
বেডের পাশে যে টেবিল আছে ওটার নীচের ড্রয়ারে।
অভয় তাড়াতাড়ি সেগুলো বার করে তাথৈকে বলে: ওদিকে দেখো কেউ আসছে কি না, এদিকে দেখবে না।
কেন?
কেন আবার কি? আমি চেঞ্জ করবো এই পেশেন্ট ড্রেসে বেরোবো নাকি? তাড়াতাড়ি করো।
আমার সামনে পাল্টাও।
এসব কি বলছো তাড়াতাড়ি ওদিকে মুখ ঘোরাও তাকাবে না এদিকে।
তাথৈ যদিও মুখ ঘোরালো কিন্তু মুখ বন্ধ করলো না।
তোমাকে আর কিছু বলার নেই এমন করছো যেন?
যেন কি? অভয় দ্রুত হাতে পেশেন্ট ড্রেস ছেড়ে অন্য পোশাক পড়তে পড়তে বলে কথাটা।
কিছু না, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এখন আমি তোমাকে না তুমি আমাকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যেতে আমাদের বাচ্চা সহ।
ইসসস কি মেয়ে রে, একটুও লজ্জা করে না তোমার এগুলো বলতে?
লজ্জা কেন করবে, যা সত্যি সেটাই বলেছি, কি স্বপ্ন দেখেছিলাম আর কি হচ্ছে?
কি স্বপ্ন দেখেছিলে?
আমার একটা ছোট্ট হাসিখুশি পরিবার হবে শ্বশুর শাশুড়ি, স্বামী আর অনেকগুলো ছোটো ছোটো ছেলেমেয়ে।
নাঃ ডেঁপোমিটা একটুও কমেনি দেখছি, যাইহোক চলো।
পোষাক পাল্টে অভয় তাথৈএর হাত ধরে কেবিন থেকে বাইরে আসে আসার আগে ডাক্তারের গোঙানির আওয়াজ শুনে তাথৈ আবার ওনার চোয়ালে একটা ঘুষি মেরে আসে। বাইরে এসেই অভয় বোঝে তার ষষ্ঠেন্দ্রিয় তাকে সঠিক সংকেত দিচ্ছিল, বাইরে যারা আছে তাদের মধ্যে অন্তত ছজন তাকে মারতে বা আবার ধরে নিয়ে যেতে এসেছে কিন্তু ওরা জানলো কিভাবে যে অভয় এখানে?
এখন এসব ভাবার সময় নেই, এখন ওদের মোকাবেলা করতে হবে। অভয়ের শরীরে ব্যাথা পুরো না কমলেও আগের থেকে অনেক কম আর দুর্বলতাও অনেক কমে গেছে, অভয় একবার তাথৈএর দিকে তাকালো ওর চোখেমুখে ভয়, অভয় তাথৈকে নিজের পিছনে সরিয়ে এগিয়ে গেল।
প্রথমে একজন এগিয়ে এল হাতে একটা ছুরি নিয়ে, ছুরিটা চালিয়েও দিল কিন্তু অভয়ের কাছে এসব এড়ানো জলভাত, সে আঘাতটা এড়িয়ে একহাতে লোকটার ছুরি ধরা হাতের কবজি ধরলো তারপর অপর হাত দিয়ে লোকটার কনুই চেপে হাতটা ছুরি সহ লোকটার পেটের দিকে ঘুরিয়ে দিল বলে ছুরিটা লোকটার নিজের পেটেই ঢুকে গেল, এবার দ্বিতীয় জন খালি হাতে এগিয়ে আসতেই অভয় লোকটার মাথাটা পাশ থেকে ঠেলে পাশের দেয়ালে ঠুকে দিলহ তারপর চোয়ালে সজোড়ে একটা ঘুষি মারলো। এবার একসাথে দুজন এগিয়ে এল, কিন্তু একজনের হাতে পিস্তল অপরজন একটু এগিয়ে এসেছিল তাতেই অভয় সুযোগটা কাজে লাগালো লোকটাকে নিজের গার্ড হিসেবে ব্যবহার করলো, লোকটার হাত দুটো ধরে পিছনে ঠেলে দিল ফলে সে পিস্তলধারী লোকটার গায়ের উপর পরলো এবং দুজনেই টাল সামলাতে না পেরে নীচে পরে গেল, ওঠার আগেই অভয় একজনের হাঁটুতে সজোরে লাথি মারলো ,একটা শব্দ এবং আর্তনাদে বোঝা গেল লোকটার হাঁটু ভেঙে গেছে, এই দেখে বাকী দুজন সটান পিছনে দৌড় লাগালো, পিস্তলধারী লোকটা উপরের সঙ্গীকে ঠেলে সরিয়ে নিজে উঠে দাঁড়ালো তার হাত থেকে পিস্তল ছিটকে পরে গেছে সে খালি হাতেই এগিয়ে এল কিন্তু এবারও অভয় তার আঘাতটা এড়িয়ে তাকে দেয়ালে ঠেলে দিল এবং লোকটা এগিয়ে আসার আগেই একপা তুলে লোকটার তলপেটে লাথি কষালো, এদিকে দুজন আগেই পালিয়েছে কাজেই এই যুদ্ধে সে বিজয়ী, এদিকে যারা সত্যিই কোনো পেশেন্টের বাড়ির লোক ছিল তারাও পালিয়েছে।

এবার আর দেরী না করে তাথৈকে নিয়ে নীচে নামতে থাকে অভয় তবে লিফট বা সাধারনের জন্য ব্যবহৃত সিঁড়ি দিয়ে নয়, এমার্জেন্সী এক্সিট দিয়ে, দুজনে বাইরে এল যেখানে তাথৈ তার গাড়ি পার্ক করেছিল, গাড়িতে উঠতে যাবে এমন সময় তাথৈ হটাৎ প্রায় অচেতন হয়ে পরে যাচ্ছিল কিন্তু অভয় ওকে ধরে নিল।
তাথৈ তাথৈ কি হলো তোমার? অভয় ব্যাকুল হয়ে ওঠে।
তাথৈ প্রায় অভয়ের কাঁধে মাথা রেখে ওর উপরে নিজেকে ছেড়ে দেয়, অভয় আরও ভয় পেয়ে যায়: এই তাথৈ কি হয়েছে? তাথৈ।
খানিকক্ষণ পরে অভয় কাছে একটা জলের কল থেকে জল এনে তাথৈএর চোখেমুখে দিতে তাথৈ চোখ খুলে তাকায়।
কি হয়েছিল?
জানিনা মাথাটা হটাৎ ঘুরে গেল? তাথৈ দুর্বল কণ্ঠে বলে।
তুমি না খেয়ে আছো?
তাথৈ উত্তর দেয় না, কিন্তু অভয় জানে এটাই সত্যি, খুব বেশিক্ষণ না খেয়ে থাকলে তাথৈএর মাথা ঘোরে, এটা ওর ছোটোবেলার অভ্যাস সেইজন্য যখন অভয়ের জন্য উপোস রাখতো অভয় বারণ করতো কিন্তু তাথৈ শুনতো না আর এখন তো প্রায় দুদিন ও কিছু না খেয়ে আছে। অভয় তাড়াতাড়ি তাথৈকে গাড়িতে বসিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট করলো।
এ ঘন্টাখানেক পরে একটা রেস্টুরেন্টে খাওয়ার পরে তাথৈ অনেকটা সুস্থ বোধ করলো। গাড়িতে ওঠার আগে অভয় তাথৈকে বললো: এবার কোথায় যাবে?
তুমি কোথায় যাবে?
আমাকে বস্তিতে ফিরতে হবে, জানিনা ওখানের অবস্থা কিরকম, মা কেমন আছেন কিছু জানিনা এদিকে আমার ফোনটাও বন্ধ, চার্জ নেই।
আমিতো আগেই বলেছি আমি তোমার সাথেই থাকবো।
তাথৈ আরেকবার ভেবে দেখো
কি ভাববো?
তুমি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছো সেটার ব্যাপারে।
এ বিষয়ে আমাদের কথা হয়ে গেছে অভয়।
তাথৈ তোমার জ্যেঠু আর বাবার সাথে আমার একটা লড়াই চলছে আমি এই লড়াই থেকে পিছিয়ে আসবো না তাই।
তাই কি? তুমি আমাকে চলে যেতে বলছো?
তাথৈ আমি চাইনা এই লড়াইতে তোমাকে কষ্ট পেতে হোক বা তোমার কোনো ক্ষতি হোক।
আমার জ্যেঠু আর বাবার সত্যিটা জানার পরেও আমি ওনাদের সাথে থাকবো এটা ভাবলে কিভাবে?
আমার সাথে থাকা এখন তোমার জন্য রিস্কের, দেখলে না ওখানে ওরা আমাকে মারতে এসেছিল, তোমার জ্যেঠু এতক্ষণে তার পুরো দলকে আমার পিছনে লাগিয়ে দিয়েছেন, আর আমি ওনাকে যতদূর চিনেছি উনি নিজের স্বার্থের জন্য তোমার ক্ষতি করতেও পিছপা হবেন না।
তবুও তুমি আমাকে চলে যেতে বলছো?
আমি শুধু তোমাকে খুশী আর সুরক্ষিত দেখতে চাই।



[/HIDE]
 
[HIDE]

আমার খুশি তোমার সাথে, আমার জ্যেঠু যদি ভালো মানুষ হতেন তাহলে আমি কোনো অবস্থাতেই ওনাকে ছাড়তাম না কিন্তু উনি আর আমার বাপি যা করেছেন তার জন্য ওনাদের কঠিন শাস্তি হ‌ওয়া উচিত, তাই আমি তোমাকে এই লড়াইটা বন্ধ করতে বলবো না আমি শুধু তোমার সাথে থাকতে চাই।
তুমি সত্যিই বড়ো হয়ে গেছো।
দুজনে গাড়িতে উঠে পড়লো কিন্তু বেশ কিছুদূর যাবার পরেই হটাৎ গাড়ি থেমে গেল।
কি হলো? তাথৈ জিজ্ঞেস করে।
তেল শেষ।
এবার কি হবে?
আমাদের গাড়িটা এখানেই ছাড়তে হবে, উপায় নেই।
দুজনে গাড়ি থেকে নামলো, আশেপাশে কয়েকটা দোকান আছে কিন্তু বন্ধ, রাত শহরের তুলনায় খুব বেশী নয় কিন্তু তবুও রাস্তায় লোক চলাচল কম, দুজনে যেদিক থেকে এসেছিল তার উল্টোদিকে হাঁটতে লাগলো, কিছু দূর যাবার পরে একটা হোটেলে কিছু লোক দেখে সেখানে যায়, তাদের সঙ্গে কথা বলে জানে এখান থেকে অনেকটা দূরে একটা রেলস্টেশন আছে, কিন্তু এখন গাড়ি পাবে না। রাতে কোথাও থাকা যাবে কি না জিজ্ঞেস করায় একজন বললো: না, ওরা এই হোটেলে কাজ করে, এখন বন্ধ করে চলে যাচ্ছে, তবি হোটেলের পাশ দিয়ে একটা পথ দেখিয়ে বলে ওদিকে কিছুদূর গেলে একটা মন্দির আছে, সেখানে আপনারা থাকতে পারেন।
ধন্যবাদ। বলে অভয় আর তাথৈ সেদিকে এগিয়ে গেল, রাতে মন্দিরের চাতালে একটা কোনায় দুজনে আশ্রয় নিল, খানিকক্ষণ পরে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলো সাথে বজ্রপাত এবং সেরকম জোরে ঠান্ডা হাওয়া,যার ফলে বেশ শীত শীত করতে থাকে, দুজনেরই খুব কষ্ট হচ্ছে তাথৈএর বেশি কারণ সে এর আগে কখনো এরকমভাবে থাকেনি, সে অভয়ের গা ঘেঁষে প্রায় গুঁটিসুঁটি মেরে কোনোমতে সহ্য করতে থাকলো
আমি আগেই বলেছিলাম আমার সাথে থেকোনা, তুমি শুনলে না এখন দেখছো তো কত কষ্ট হচ্ছে, রীতিমতো ঠাণ্ডায় কাঁপছো তুমি। তাথৈকে প্রায় নিজের শরীরের সাথে জড়িয়ে কথাটা বলে অভয়।
কেন বারবার এক কথা বলছো, তুমি কেন বুঝতে চাইছো না এইটুকু কষ্টে আমার কিছু হবে না কারন তুমি আমার সাথে আছো কিন্তু তোমাকে ছেড়ে গেলে আমি বাঁচবো না।
অভয় নিজের গায়ের জামাটা খুলে তাথৈএর শরীরে জড়িয়ে দেয়, এতে তার নিজের কষ্ট আরো বেড়ে যায় কারণ সে সম্পূর্ণ খালি গা।
এটা কি করছো? জিজ্ঞেস করে তাথৈ।
এটা জড়িয়ে নাও।
তোমার ঠান্ডা লাগবে।
আমার অভ্যাস আছে।
না অভয় তোমার শরীরে জামা ছাড়া কিছু নেই, জামাটা পরে নাও।
না, তোমার বেশি ঠান্ডা লাগছে, তুমি জড়িয়ে নাও।
দুজনে কোনোমতে সময় কাটাতে থাকে এবং গুটিসুটি মেরে কোনোমতে বৃষ্টির জলের ছাট থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখে ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে দুজনে সকালের আলো ফোটবার অপেক্ষা করতে থাকে, মন্দিরের চাতালে থাকায় তবুও কিছুটা রক্ষে, একটু আগুন জ্বালানো গেলে আরও ভালো হতো কিন্তু প্রথমত দেশলাই আনতে মনে ছিল না ওদের তাছাড়া মন্দিরের চাতালে আগুন জ্বালাবেই বা কিভাবে? ভোরের ঠাণ্ডা হাওয়ায় দুজনের কষ্ট আরও বেড়ে যায় ওরা ভেবেছিল ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথেই আবার র‌ওনা দেবে কিন্তু ঠাণ্ডায় এমন অবস্থা হয় যে তারা ভোরের আলো ফোটার অনেকক্ষণ পরেও অসাড় হয়ে থাকে, ধীরে ধীরে সূর্যের আলো আরো বাড়লে ঠাণ্ডা ভাবটা কিছুটা কমে, আকাশ মোটামুটি পরিষ্কার হ‌ওয়ার সাথে সাথেই দুজনে আবার বেরিয়ে পরে।

একটা ট্রেকারে করে দুজনে যখন স্টেশনে পৌঁছায় তখন বেলা আরও বেড়েছে, স্টেশন চত্ত্বরে লোক বেশি নেই টিকিট কেটে প্লাটফর্মে যায়, চোখে মুখে জল দেয়। অনেকগুলো ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে টাইম দেখে ওরা একটা কামরায় ওঠে ওঠার আগে অভয় লক্ষ্য করে কয়েকজন লোক পাশের কামরায় উঠলো, লোকগুলোকে দেখে অভয়ের ঠিক ভালো লাগলো না।
ট্রেন ছাড়ার ঠিক আগের মুহূর্তে অভয় তাথৈকে নিয়ে নেমে গেল এতে তাথৈ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো: কি হলো এই ট্রেনে..
পরেরটায় যাবো আসো।
তাথৈএর হাত ধরে পাশের প্লাটফর্মে যাওয়ার জন্য ফুটব্রীজে উঠতে উঠতে হটাৎ অভয়ের চোখে পড়লো সেই লোকগুলো দ্রুতপায়ে তাদেরই দিকে হেঁটে আসছে এবার আর অভয়ের সন্দেহ র‌ইলো না যে ওরা ওদের‌ই পিছনে আছে, কিন্তু কথা হলো ওরা অভয় আর তাথৈএর ব্যাপারে জানছে কিভাবে? কিভাবে জানছে ওরা কোথায়?।
অভয়ের মুখ গম্ভীর দেখে তাথৈ একটু অবাক হয়, জিজ্ঞেস করে: কি হয়েছে তোমার?
কিছুনা।
কিছু তো একটা হয়েছে।
আমাদের পিছনে লোক লেগেছে।
কি? তাথৈ চারপাশে শঙ্কিত দৃষ্টিতে তাকায়।
ওইভাবে দেখতে পাবে না, কিন্তু কথা হচ্ছে ওরা জানছে কিভাবে আমরা কোথায়?
তোমার কি মনে হয়?
আমাদের দুজনের কারো কাছে ট্র্যাকার আছে?
ট্র্যাকার?
লোকেশন ট্র্যাকার, যেটা দিয়ে কারো লোকেশন ট্র্যাক করা হয়, এবং খুব সম্ভবত সেটা তোমার কাছে।
এটা কি বলছো?
দেখো তোমার জ্যেঠুর স্থির বিশ্বাস ছিল আমি ওনার কবল থেকে পালাতে পারবো না এবং উনি যখন খুশি আমাকে মেরে ফেলতে পারবেন তাই আমার আশেপাশে ট্র্যাকার লাগানোর সম্ভাবনা প্রায় নেই।
কিন্তু আমার কাছে কেন?
কারণ তুমি ওই পরিবারের মেয়ে,যদি খুব ভুল না করি তাহলে তোমার এবং তোমার দিদির লোকেশন সবসময় নজরে রাখার জন্যই উনি তোমাদের দুজনের সাথেই ট্র্যাকার ফিট করেছেন।
কিন্তু তাহলে গতরাতে ওরা আমাদের কাছে পৌঁছালো না কেন?
এটা খুব ভালো প্রশ্ন করেছো তুমি। তারপর কিছু একটা ভেবে অভয় বলে: গতকাল রাতে প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টি হয়েছিল তাও বজ্রপাত সহ।
তাতে কি?
বজ্রপাতে হয়তো ট্র্যাকিং ডিভাইসটা নেট‌ওয়ার্কের সাথে কানেকশন হারিয়ে ফেলেছিল, সকালে আকাশ পরিষ্কার হতেই আবার সব ঠিক হয়ে গেছে, এছাড়া আর কোনো ব্যাখ্যা মাথায় আসছে না, কিন্তু আমাদের সাথে ট্র্যাকিং ডিভাইস আছে এটা শিওর।
বিশ্বাস করো আমি এবিষয়ে কিছুই জানিনা।
আমি তোমাকে অবিশ্বাস করছি না তাথৈ, আমার তোমাকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছে।
কেন?
তোমার জ্যেঠুকে তুমি কতটা চেনো জানিনা কিন্তু যেটা আমি বলেছিলাম উনি নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য যে কারো ক্ষতি করতে পারেন।
তাথৈ চুপ করে থাকে কিন্তু অভয় বলে চলে: জানি কথাগুলো তোমার খারাপ লাগছে কিন্তু এটাই সত্যি উনি এমন একজন মানুষ যিনি নিজের ছেলেকেও প্রাণে মারবার ভয় দেখান শুধুমাত্র ছেলের মাকে নিজের নিয়ণ্ত্রনে রাখবেন বলে।
মানে,এটা কি বলছো তুমি জ্যেঠুমণির ছেলে?
হ্যাঁ, ওনার আরও একজন ছেলে আছেন এবং তার মাকে তুমি হয়তো চেনো?
কে?
তুমি তোমার দিদি বৃষ্টির মাসিকে চেনো?
শিউলী মাসি?
হ্যাঁ, উনি এবং ওনার ছেলে রোহিত।
শিউলী মাসি তো নিরুদ্দেশ।

[/HIDE]
 
[HIDE]

না,তাকে এতবছর এই শহরেই রেখেছিলেন বীরেন বাবু, একটা বিশেষ কারনে তাকে মারেননি।
তুমি শিউলী মাসির কথা কিভাবে জানলে?
জেনেছি, তোমার জ্যেঠু নিজের ওই ছেলের প্রতি কোনো দায়িত্ব‌ই পালন করেননি এমনকি নিজের স্বীকৃতিটুকুও দেননি, শুধু শিউলী দেবীকে কিছু টাকা দিতেন মাসে মাসে।
একজন মানুষ এতটা নীচে কিভাবে নামতে পারে? তাথৈএর গলায় রাগ, ঘেন্না, চাপা কষ্ট মেশানো।
ক্ষমতার লোভ এবং ক্ষমতা অর্জনের পরে তাকে নিয়ণ্ত্রন না করতে পারা এই দুইতেই তিনি এতটা নীচে নেমেছেন।
আর আমার বাপি? তার তরফ থেকেও কি আমার কোনো ভাই বোন আছে?
বোধহয় না, তবে উনি অসম্ভব দাদাভক্ত, বীরেন ভট্টাচার্যের প্রায় সব খারাপ কাজের সঙ্গী উনি।
জানো ছোটোবেলায় না আমি বাপিকে মাকে মারতে দেখেছি, কিন্তু কিছু বলতে পারতাম না খুব ভয় পেতাম, কিন্তু বিশ্বাস করো আমি ওনাদের মতো খারাপ ন‌ই।
আমি জানি, একবার তোমাকে অবিশ্বাস করে ভুল করেছিলাম দ্বিতীয় বার করবো না।

আমিরকে দেখে এক অদ্ভুত অনুভূতি হয় বিদিশার, এক নতুন অনুভূতি যেটা আগে কখনো অনুভব করেনি, সে বুঝতে পারে না এটাই কি ভালোবাসা? সে কি আমিরকে ভালোবেসে ফেলেছে? আমিরের সাথে আলাপ বেশী দিনের নয়,রয়ের সাথে পরিচয়ের পরে প্রায়ই ও রয়ের বাড়িতে আসতো অবশ্য‌ই রয়কে বলে, মাঝে মাঝেই রয় থাকতো না কিন্তু নিজে না থাকলেও আমিরকে রেখে যেত, বিদিশার‌ও খারাপ লাগতো না আমিরের সঙ্গ দুজনে গল্প করতো, ধীরে ধীরে আমিরের সঙ্গ আরও ভালো লাগতে থাকে, তার সাথে ভালো লাগতে থাকে এই আমিরকে এমন নয় যে রয়কে সে অপছন্দ করে কিন্তু রয় স্রেফ বন্ধু, অথচ আমির.. সে তার থেকে বেশী কিছু কিন্তু ঠিক কি সেটা বিদিশা বুঝতে পারতো না, কিন্তু এইকদিন রয়ের অনুপস্থিতিতে আমিরকে ভেঙে পরতে দেখে বিদিশার খুব কষ্ট হয়, আমিরকে সে এইভাবে কল্পনাও করতে পারে না, সে অনেক চেষ্টা করেছে আমিরকে বোঝানোর অনেকবার বলেছে কিন্তু লাভ হয়নি আজ আবার ওকে ভেঙে পরতে দেখে আর থাকতে পারলো না বিদিশা বললো "আমির, এইভাবে ভেঙে পরতে নেই, রয় তোমাকে ভরসা করতো তোমার বিপদের কথা শুনে কিছু না ভেবে ছুটে গিয়েছিল এখন তোমার উচিত ওকে বিপদ থেকে উদ্ধার করা"।
কিন্তু ওকে পাবো কোথায়? ওর ফোনটাও বন্ধ।
আমির ওর গাড়িতে ও ছিল না, হয়তো বীরেন ভট্টাচার্য ওকে কোথাও আটকে রেখেছে, টর্চার করছে, আমাদের উচিত যেভাবেই হোক ওকে খুঁজে বার করা।
যদি এটা সত্যি হয় তাহলে আমি ওকে খুঁজে বার করবোই কিন্তু..
কিন্তু কি আমির?
আম্মিকে আর কতদিন মিথ্যা বলবো? আমার আম্মি যাওয়ার পরে উনি‌ই আমাকে নিজের ছেলের মতো কাছে টেনে নিয়েছিলেন কোনোদিন রয়ের সাথে আমার তফাৎ করেননি আর আমি.. আমির কাঁদতে থাকে।
বিদিশা ওর কাছে বসে আমিরকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দিতে থাকে: আমির তুমি ওনাকে আম্মি বলেছো আর রয় তোমাকে ভরসা করতো তাই ওনার দায়িত্ব তোমাকে দিয়েছে এখন তুমি ওনার খেয়াল রাখবে না তো কে রাখবে?
কিন্তু আমি আর পারছি না ওনাকে মিথ্যা বলতে।
এটুকু আমাদের করতেই হবে আমির, নাহলে রয় ফিরে এলে কি উত্তর দেবো?


আমির আবার ভেঙে পরে বিদিশার কাঁধে মাথা রেখে কাঁদতে থাকে বিদিশা আমিরের মাথায় পিঠে হাত বোলাতে থাকে।
বীরেন ভট্টাচার্যের অবস্থা এখন পাগলপ্রায়, একে তো এআরসি তার লোকদের মেরে পালিয়েছে তার সাথে টাকা আর শিউলীর হদিশ ও নিয়ে গেছে ,রকি আর ধীরেন ঠিকই বলেছিল ওকে শেষ করে দেওয়াই উচিত ছিল, জগা অবশ্য খবর দিয়েছিল যে এক হাসপাতালে ও আছে সেখানেও লোক পাঠিয়েছিলেন কিন্তু সেখান থেকেও বেঁচে গেছে, তিনি ভালো করেই জানেন এআরসি এখন একা, ওকে শেষ করার এটাই উপযুক্ত সময় এআরসি একবার যদি নিজের দলের কাছে পৌঁছাতে পারে তাহলে আবার পুরো শক্তি দিয়ে তার উপরে আঘাত হানবে আর সেটা কত ভয়াবহ কত নির্মম, কত নৃশংস হতে পারে তার একটা ছোট নমুনা তো বাণিজ্যনগরীতে স্বচক্ষে দেখে এসেছেন, সেদিনের ঘটনা মনে পরতেই বীরেন ভট্টাচার্যের সারা শরীরে আতঙ্কের চোরাস্রোত বয়ে যায়, কিন্তু এআরসি এখনো তার দলের কাছে পৌঁছাতে পারেনি এটাই ভরসা সে এখনো একা... না একা নয় তার সাথে আরও একজন আছে যে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল, যে এখন তার সাথে আছে তার ভাইজি তাথৈ।
তিনি তার ভাইকে বলেন: ধীরেন ওকে খুঁজে বার কর, এআরসিকে বাঁচতে দেওয়া যাবে না ওকে শেষ করতেই হবে।
তুমি চিন্তা কোরো না দাদা ওর পিছনে আমার লোক ধাওয়া করে বেড়াচ্ছে একটু সুযোগ এলেই শেষ করবে।
কিন্তু ওর সাথে তাথৈ আছে।
তাথৈএর জন্যই তো ওর খোঁজ পেলাম, আগে ওই এআরসিকে শেষ করি তারপর তাথৈএর ব্যবস্থা করবো। ধীরেন ভট্টাচার্য ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর বীরেন ভট্টাচার্য জগাকে বললেন: কি রে খুব তো বলেছিলি ওই এআরসিকে তুই শেষ করবি কি হলো?
দাদা ছোটদাদার মতো আমার লোকেরাও ওদের পিছনে লেগে আছে কিন্তু তাথৈ দিদিমণির জন্য কিছু করতে পারছে না।
তাহলে দুটোকেই শেষ কর।
এটা কি বলছেন দাদা? জগা যে বেশ অবাক হয়েছে সেটা ওর গলার স্বরেই বোঝা যাচ্ছে।
ঠিকই বলছি, ও ওই ছেলেটার সাথে গেছে আমাদের ছেড়ে তাই আমিই বা কেন ওর কথা ভাববো?
কিন্তু ছোটদাদা?
তোকে যা বলেছি সেটা কর, ধীরেন যদি ওর মেয়েকে ফিরিয়ে আনতে পারে তো ভালো নাহলে তুই ওকেও ওই এআরসির সাথে শেষ করে দিবি, বুঝেছিস?
হ্যাঁ দাদা, বুঝেছি।
আর এটা যেন কেউ না জানে,মনে থাকবে?
হ্যাঁ দাদা।
ট্রেন নিজের গতিতে এগিয়ে চলেছে একের পর এক স্টেশন আসছে আবার পিছনে চলে যাচ্ছে লোক উঠছে আবার নেমেও যাচ্ছে অভয়দের কামরায় খুব ভিড় নেই, মোটামুটি খালি‌ই বলা চলে, তাথৈ আর অভয় একটা বেঞ্চে বসে আছে তাথৈ জানালার ধারে আর পাশে বসে অভয় ওর মাথায় এখন অনেক চিন্তা ঘুরছে, তার মধ্যে মায়ের চিন্তা, বস্তির লোকেদের চিন্তা আর এইমুহূর্তে যেটা সবথেকে বেশি ভাবাচ্ছে সেটা হলো ওদের পিছনে ধাওয়া করা লোকগুলো, এটা নিয়ে কোনো সংশয় নেই যে ওরা ট্র্যাকারের সাহায্যেই ওদের লোকেশন ট্র্যাক করছে কিন্তু কোথায় ট্র্যাকিং ডিভাইসটা?
একসময় অভয় দেখে তাথৈ ঘুমে ঢুলছে যেটা স্বাভাবিক এই কদিনে মেয়েটার উপর থেকে কম ধকল যায়নি অভয়কে হাসপাতালে আনা সেখানে রাত জেগে থাকা তার আগে বাড়ি থেকে না জানি কখন বেরিয়েছে তার উপরে গত রাতেও ঘুম হয়নি। অভয় তাথৈএর মাথাটা ধরে নিজের কাঁধে টেনে নেয়, তাথৈ একবার অভয়ের দিকে তাকিয়ে নিশ্চিন্ত মনে অভয়ের কাঁধে মাথা রাখে একসময় ঘুমিয়ে পড়ে।
অভয় একদৃষ্টিতে তাথৈএর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে, এই মেয়েটাকে সে ভুল বুঝেছিল মেয়েটা শুধু তার জন্য এতগুলো বছর অপেক্ষা করে আছে আর সে... ভুল বুঝে তাকে রীতিমতো কষ্ট দিয়ে গেছে। তাথৈএর মুখের উপর চুল আসছিল অভয় সেটা সরিয়ে দেয়, নিজের মনেই বলে "তোমার জ্যেঠু আর বাবার সাথে আমার লড়াই শেষ হবার পরে যদি তুমি আমার সাথে থাকতে চাও তাহলে কথা দিচ্ছি কখনো তোমার চোখে জল আসতে দেবো না , তোমাকে ভালোবাসায় ভরিয়ে রাখবো, কিন্তু জানিনা আমার হাতে তোমার বাবা আর জ্যেঠুকে মরতে দেখার পরেও তুমি আমার সাথে থাকতে রাজী হবে কি না, যদি নাও হ‌ও তাহলেও আমি সারাজীবন তোমাকেই ভালোবেসে যাবো।"

[/HIDE]
 

Users who are viewing this thread

Back
Top