What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

প্রতিশোধ: দ্যা রিভেঞ্জ by Monen2000 (1 Viewer)

[HIDE]
অভয়ের কাছে যেতে গিয়ে আবার বাধা পায় তাথৈ, ওখানকার লোকেরা ওকে যেতেই দেয় না আজ যদিও ও একা আসেনি সাথে অমিয়কেও নিয়ে এসেছে, যদিও অমিয় আসতে চায়নি ওর কিছুতেই বিশ্বাস হয়নি যে অভয় বেঁচে আছে ও বারবার বলেছে "আপনার ভুল হচ্ছে মিস্ ভট্টাচার্য, অভয় বেঁচে থাকলে আমার সাথে যোগাযোগ করতোই"
কিন্তু তবুও তাথৈ কোনোমতে বুঝিয়ে নিয়ে এসেছে, কিন্তু ঢুকতে দিলে তো। তাথৈ বারবার ওদের বোঝাতে চেষ্টা করে যে ওকে ওদের বস চেনে এর আগেও সে দেখা করে গেছে কিন্তু কে শোনে কার কথা।
"কি হচ্ছে এখানে?" একটা পুরুষ টণ্ঠ শুনে সবাই চমকে তাকায়, তাথৈ আর অমিয় দুজনেই লক্ষ্য করে যে আগন্তুক কে দেখে ওখানের লোকগুলো সম্মানের সাথে এগিয়ে যায় গিয়ে কিছু বলে, তারপর আগন্তুক তাদের দিকে এগিয়ে এসে বলে: আপনি এখানে কি করছেন মিস্ ভট্টাচার্য?।
আপনি আমাকে চেনেন?
আপনার সাথে সম্মুখ পরিচয় এর আগে হয়নি।
ওহ, আমি অভয়ের সাথে দেখা করতে এসেছিলাম আর ও অমিয় ও অভয়ের সাথে দেখা করতে এসেছে।
এইসময় একজন লোকাল লোক এগিয়ে এসে আগন্তুককে বলে: দেখুন না ভাইজান কতবার বলেছি যে ওই নামে এখানে কেউ থাকে না তবুও উনি শুনছেন না।
ঠিক আছে তুমি যাও। লোকটা চলে গেলে তাথৈ বলে: দেখুন আমি এর আগে এসে অভয়ের সাথে দেখা করে গেছি, কিন্তু এখন আর আমাকে যেতে দিচ্ছে না আপনি প্লিজ আমাদের যেতে দিন।
কোনো লাভ নেই, আপনি যার সাথে দেখা করতে এসেছেন তিনি এখন এখানে নেই, কবে ফিরবেন ঠিক নেই, কাজেই আপনারা ফিরে যান, আর তার নাম রয়।
কিন্তু..
কোনো কিন্তু নয় আমি চাইলে আপনাদের এখান থেকে বার করে দিতে পারতাম কিন্তু সেটা করিনি, এবার আপনারা নিজেই চলে যান।
তাথৈ আর অমিয় ফিরে আসছে এমন সময় আমিরের ফোন বাজলো, সে ফোনটা কানে দিয়ে বলে "বলো, সব ঠিক আছে?"।

অফিসে মায়ের শরীর খারাপের খবরটা শুনেই কোনোমতে তাড়হুড়ো করে বাণিজ্যনগরীতে নিজের বাংলোয় ফেরে এআরসি। মায়ের রুমে ঢুকে দেখে তিনি বিছানায় শুয়ে আছেন পাশে মাসি বসে আছে।
কি হয়েছে মা? এখন কেমন আছো? ডাক্তার কোথায়?
আস্তে আস্তে বাবু আগে শান্ত হয়ে বস তারপর বলছি। কথাটা বললেন মাসি।
আগে বলো কি হয়েছে? ডাক্তার কোথায়, আসেনি?
ডাক্তার এসেছিল দেখে গেছে।
কি হয়েছে?
কিছুনা, পূজোয় উপোস রেখেছিল তাই শরীর দুর্বল ছিল তাই মাথাটা একটু ঘুরে গিয়েছিল।
এত পূজো আর উপোস কিসের? প্রায় গর্জে ওঠে এআরসি।
এই শুরু হলো। আস্তে আস্তে বলে এআরসির মা অমৃতাদেবী।
আমি ভালোভাবে বলছি এসব বন্ধ করো নাহলে কিন্তু..
নাহলে কি করবি?
এবাড়িতে পূজোআচ্চা বন্ধ করে দেবো।
তোর কথামতো নাকি?
হ্যাঁ, আমার কথা মতো।
তোর বাড়ি বলে যা খুশি করবি?
যদি তাই মনে করো তাহলে তাই।
দিদি, চলোতো ওর বাড়িতে ওই থাকুক আমরা চলে যাবো।
তোমরা মা-ব্যাটায় কথা বলো আমি নীচে যাই। বলে বিন্দু মাসি চলে গেলেন।

তোমাকে কে বেরোতে দেয় আমি দেখবো, পূজো করে শরীর খারাপ করলে এখন কোন ঠাকুর দেখতে আসছে?
বাবু, তোকে বলেছি না এসব বলবি না। এবার অমৃতা দেবীও গর্জে উঠলেন, কিন্তু শরীর দুর্বল তাই আবার বিছানায় এলিয়ে পরলেন।
মা.. তুমি ঠিক আছো? আচ্ছা আচ্ছা তুমি পূজো করো কিন্তু উপোস করার কি দরকার?
এত‌ই যদি মায়ের চিন্তা তাহলে কোথায় ছিলি এতদিন?
মা তোমাকে তো বলেছি আমি কোথায় ছিলাম..
এবার ওসব ছাড় অভয়, ওসব পুরনো কথা, এখানে আমরা নতুন জীবন শুরু করেছি।
যতদিন না ওই লোকটাকে শেষ করছি ততদিন আমি শান্তিতে থাকতে পারবো না মা, ওই লোকটা আমার বাবাকে আমার থেকে কেড়ে নিয়েছে, আমাদের যে জমিতে আমরা নিজেদের স্বর্গ বানিয়েছিলাম ওই জায়গায় লোকটা নিজের পাপের হেড অফিস করেছে, আমাদের শান্ত সুখী আনন্দের জীবনটাকে তছনছ করে দিয়েছে, ওকে আমি ছাড়বো না।
আর ওই মেয়েটা?
কোন মেয়েটা? অবাক হয় এআরসি।
ওই যে যার সাথে তুই স্কুলে..
না, ওর সাথে আমার আর কোনো সম্পর্ক নেই।
তোর বাবার কিন্তু ওকে খুব পছন্দ ছিল, কি যেন নাম?
ওর কথা ছাড়ো মা, ও ওর পরিবারের মতোই, একটুও আলাদা নয়।
আলাদা হতেও তো পারে।
না, আলাদা নয় আর ওর কথা ছাড়ো, তুমি রেস্ট নাও।
তুই কি আবার যাবি?
যাবো, তবে আগে তুমি সুস্থ হবে তারপর।
পরদিন লাঞ্চে অনেকদিন পর মায়ের হাতের রান্না খেলো এআরসি, ছেলেকে কাছে পেয়ে অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
এবার কিন্তু আমি তোর সাথে যাবো। খাওয়া শেষ হতেই ছেলেকে কথাটা বললেন অমৃতাদেবী।
এখনই কি? তুমি আরও সুস্থ হ‌ও তারপর যেয়ো।
আমি ঠিক আছি, এবার আমি কোনো কথা শুনবো না তোর সাথে যাবোই।
মা..
না, তুই এবার নিয়ে যাবি ব্যাস।
আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি এখন যাও রেস্ট নাও, যখন আমি যাবো তখন দেখা যাবে।
মা চলে যাওয়ার পর এআরসি ফোন করে "হ্যালো, আমির?"
বলো, সব ঠিক আছে?"।
হ্যাঁ।
আম্মির শরীর ভালো?
হুমমম, আগের থেকে বেটার,আচ্ছা শোনো মা এবার আমার সাথে আসতে চাইছে।
তাতে অসুবিধা কোথায়?
অসুবিধা তেমন কিছু না, তুমি একটা কাজ করতে পারবে?
কি বলো?
একটা নতুন বাড়ি বা ফ্ল্যাট দেখো, ভাড়া পাওয়া গেলে ভালো নাহলে কিনে নাও।
দরকার কি, আমি যে ফ্ল্যাটে থাকি ওখানে থাকবেন।
সেটা হয় না আমির।
কেন উনি আমার আম্মি নন?
সেটা নয়, প্রবলেম টা অন্য, ওই এরিয়াটা বীরেন ভট্টাচার্যের বাড়ির খুব কাছে, ওখানে তোমার থাকাটা জরুরী আর ওখানে সিকিউরিটি কম, মাকে সিকিউরিটি ছাড়া রাখতে সাহস হয় না।
ঠিক বলেছো, তোমার ওখানেই তো আম্মি থাকতে পারে।
উঁহু ওখানে বিদিশা আসে।
তাতে কি হয়েছে? তুমি ওখানেই আসো আম্মিকে নিয়ে, ওখানে সিকিউরিটি বেশী আমি আরো বাড়িয়ে দিচ্ছি তাছাড়া ওখানে বাগান আছে, ওনার ভালো লাগবে।
একদিকে ঠিক।
তাহলে সেটাই করো, আচ্ছা শোনো একটা কথা আছে।
বলো।
মিস্ ভট্টাচার্য এসেছিলেন সাথে একজন ছেলে, বললো তোমার ছোটোবেলার বন্ধু।
কি নাম?
অমিয়, আমি ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছি।
ঠিক করেছো, আচ্ছা তাহলে ওটাই করো সিকিউরিটি বাড়িয়ে দাও আমি আমার বাড়িতেই মা আর মাসিকে নিয়ে যাবো।
আচ্ছা ঠিক আছে।



[/HIDE]
 
[HIDE]
একটা কর্পোরেট অফিসে উচ্চপদে কাজ করে অমিয়, অফিসের পরেও এমন কিছু কাজ থাকে যেগুলো তাকে বাড়িতে সেরে রাখতে হয়, সেদিন‌ও অফিস থেকে ফিরে কাজ করছিল এমন সময় একটা অচেনা নম্বর থেকে ফোন এল, হ্যালো কে বলছেন?
আমি। একটা মেয়ের গলা শোনা যায়।
কে আমি?
বৃষ্টি। নামটা শুনে কিছুক্ষনের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায় অমিয় কোনো কথা বলে না, ফোনের ওপার থেকে ক্রমাগত ভেসে আসতে থাকে হ্যালো.. হ্যালো শুনতে পাচ্ছো?
আমাকে কেন ফোন করেছেন? গম্ভীরকণ্ঠে বলে অমিয়।
আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই।
কিন্তু আমি চাই না।
অমিয় প্লিজ দেখা করো প্লিজ আমার কিছু কথা আছে।
কিন্তু আমার কোনো কথা নেই।
অমিয়... তুমি আমাকে স্কুলে প্রপোজ করেছিলে, আমাকে আরেকবার সুযোগ দেবে?
অমিয়‌ বিস্মিত হয়, সে বুঝতে পারে না যে সে জেগে আছে না স্বপ্ন দেখছে?
কি হলো দেবে?
আপনার আজ কি হয়েছে মিস্ ভট্টাচার্য?
এবারে তাথৈ‌এর আওয়াজ আসে সে বলে: ওকে আরেকটা সুযোগ দে না, প্রত্যেককেই তো দ্বিতীয় সুযোগ দেওয়া উচিত।
না মিস্ ভট্টাচার্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে দ্বিতীয় সুযোগ হয়না।
এরকম বলিস না অমিয়।
দেখুন সত্যি বলছি আমি এখনো আপনার দিদির যোগ্য হ‌ইনি, আর ওনাকে খুশী রাখার মতো আর্থিক সামর্থ্য‌ও আমার এখনো হয়নি,আপনার দিদি আমার সাথে সুখী হবে না আর আমি ওনাকে কষ্ট দিতে চাইনা,
অমিয় বৃষ্টি সত্যি নিজেকে বদলাতে চাইছে, ওকে একটা সুযোগ দে।
বদলাবে, কেন? উনি যেরকম আছেন ভালো আছেন সুখে আছেন তাহলে নিজেকে বদলাবেন কেন?
তুমি কি এখন আমাকে ভালোবাসো না? প্রশ্নটা বৃষ্টি করে।
কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে অমিয়।
কি রে উত্তর দে? এবারে তাথৈ প্রশ্ন করে,অমিয় উত্তর দেয় কিন্তু উত্তরটা তাথৈ‌এর বুকে তীরের মতো বিঁধে যায়।
"শেষবার অভয়ের সাথে আমার কি কথা হয়েছিল জানেন? আপনি তো ওর ফোন ধরেননি, আপনার দিদি কথা বলেছিল এবং কি বলেছিল সেটা তো আগেই বলেছি, সেদিন আপনার দিদি ফোন কাটার পরে ও আমাকে একটা কথা বলেছিল জানেন?"
কি কথা?
আপনার কাছ থেকে ঠকে গিয়ে ছেলেটার মন ভেঙে গিয়েছিল ও বলেছিল "আমি যা ভুল করেছি তুই কোনোদিন করিস না অমিয়, কোনোদিন নিজের লেভেলের থেকে উঁচু লেভেলের কাউকে ভালোবাসিস না, কোনোদিন না"।
আমি ওকে ঠকাইনি অমিয়।
সেসব কথা এখন অর্থহীন, কারণ ও বেঁচে নেই।
তাথৈ কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই অমিয় বলে: ছাড়ুন ওর কথা, আপনার দিদিকে বলবেন নিজেকে বদলানোর দরকার নেই ,উনি যেমন আছেন সেরকমই থাকুন কেউ না কেউ তো ঠিক পছন্দ করবেই ওনাকে, গুড নাইট।

"তুই এখানে থাকিস?" ছেলের বাগানবাড়িটা।দেখে প্রশ্ন করেন অমৃতাদেবী।
হ্যাঁ।
ভালো জায়গাটা। এবার কথাটা বলেন বিন্দু মাসি, তাকেও নিয়ে এসেছেন অমৃতাদেবী, দুইজন ঘুরে ঘুরে পুরো বাড়ি আর বাগানটা দেখছিলেন পিছনে এআরসি আর আমির। এমন সময় এআরসির ফোনে একটা ম্যাসেজ আসে, সেটা পড়ে ওর চোখ বড়ো বড়ো হয়ে যায়, আমির লক্ষ্য করে সেটা জিজ্ঞেস করে "কার ম্যাসেজ?"
বিদিশার।
কি লিখেছে।
আমির আমাকে এখনই যেতে হবে, তুমি মা আর মাসিকে সামলাও।
আরে হয়েছে টা কি?
বিদিশা ইজ ইন গ্ৰেট ডেঞ্জার, আই হ্যাভ টু সেভ হার।
কি বিপদ?
রকি, ও বিদিশাকে কোথাও নিয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু তুমি ওকে খুঁজবে কোথায়? রকি ওকে যেকোনো জায়গায় নিয়ে যেতে পারে আর তাছাড়া রকি বিদিশার হাজবেন্ড ও বিদিশাকে কোথাও নিয়ে যেতেই পারে।
কোনো একটা কারনে বিদিশার সন্দেহ হয়েছে, ও আমার কাছে হেল্প চেয়েছে, আর আমিও ওকে কথা দিয়েছিলাম যে আমি ওকে প্রোটেক্ট করবো।
কিন্তু তুমি ওদের পাবে কোথায়?
নিকুঞ্জ আছে না।
নিকুঞ্জ? মানে ওই ছেলেটা যে মোবাইলের লোকেশন ট্র্যাক করে আমাদের হয়ে।
হুমম।
আরে হ্যাঁ আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম ওকেও তো এখানে নিয়ে এসেছি আমরা, কিন্তু তুমি একা যাবে? কয়েকজন কে নিয়ে যাও।
অত সময় নেই, তুমি মা আর মাসিকে দেখো, আমার কিছু হবে না।
কোথায় যাচ্ছিস তুই? ছেলেকে প্রশ্নটা করেন অমৃতাদেবী।
একটা ছোট্ট কাজ এসেছে সেখানেই যাচ্ছি, আমির র‌ইলো আমি একটু পরেই চলে আসবো।


হাইওয়ে ছেড়ে পাশের কাচা রাস্তায় গাড়িটা ঢুকতেই বিদিশার সন্দেহটা দৃঢ় হয়, আর ভয়টা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। আজ সকাল থেকেই রকি অদ্ভুতভাবে ভালো ব্যবহার করছে তার সাথে যেটা সে আগে কখনো করেনি, একসময় বলে আজ ওকে নিয়ে ঘুরতে বেরোবো সারাদিন ওর সাথে কটাবে। তখনই সন্দেহ হয়েছিল বিদিশার তাই একসময় সুযোগ বুঝে রয়কে ম্যাসেজ করে সাহায্যের আর্তি জানায়, কিন্তু এইখানে রয় খুঁজে পাবে ওকে?
কাঁচা এবড়োখেবড়ো রাস্তা দিয়ে কিছুটা গিয়ে একটা পাঁচিল ঘেরা গোডাউনের ভিতরে ঢোকে গাড়িটা, বিদিশা লক্ষ্য করে পাঁচিল আর গোডাউনের মধ্যবর্তী এলাকায় অনেককটা বড়ো বড়ো গাছ রয়েছে, সবথেকে বড়ো কথা পুরো এলাকাটায় বেশ কয়েকজন রাইফেলধারী দাঁড়িয়ে আছে, আরও একজনকে চোখে পড়লো লম্বা মতো, মাথায় টাক, গায়ের রঙ শ্যামলা শরীরের পেশীর আধিক্য এতটাই যে একে দানব বলা উচিত।
বিদিশা ওর দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দেখে রকি বলে: ওকে আমরা পালোয়ান বলে ডাকি, একটা সময় কুস্তি করতো এখন আমার হয়ে কাজ করে, কারো শরীরের হাড় ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিতে ও এক্সপার্ট।
"আমাকে এখানে কেন এনেছো" ভয়ার্ত স্বরে জিজ্ঞেস করে বিদিশা।
এখানে তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।
সারপ্রাইজ?
হুমমম, চলো ভিতরে চলো। দুজনে গোডাউনের ভিতরে ঢোকে, বিদিশা লক্ষ্য করে গোডাউনটা ফাঁকা সে রকিকে জিজ্ঞেস করে: এখানে কিসের সারপ্রাইজ?
ওয়েলকাম... ওয়েলকাম। হটাৎ তৃতীয় কণ্ঠস্বরে বিদিশা চমকে ওঠে, অতীন সান্যাল দাঁড়িয়ে আছে তবে গায়ে পুলিশের উর্দি নেই ফরমাল পোষাক পরা, চোখে একটা সানগ্লাস।
উনি এখানে কি করছেন?
ওকে আমি ডেকেছি তাই।
তুমি, কেন?
একটা ছোট্ট কাজের জন্য।
কাজ, কি কাজ?
হটাৎ একটা গোঙানির শব্দ পেয়ে বিদিশা এদিক ওদিক তাকাতে থাকে, দেখে দুজন লোক অন্য একজনকে ধরে নিয়ে আসছে, বোঝাই যাচ্ছে এই তৃতীয় ব্যাক্তিটিকে প্রচণ্ড মারধর করা হয়েছে, সে হাঁটতে পারছে না ওই দুজন তাকে টানতে টানতে এনে ধুপ করে মেঝেতে ফেলে দিল। এবারে বিদিশা চিনতে পারে তার বাবা অনিমেষ বাবু।
বাবা। একটা আর্তনাদ করে বিদিশা ছুটে যেতে চায় কিন্তু রকি তার হাত ধরে ফেলে, বিদিশা কাঁদতে শুরু করে "বাবা.. বাবা"
আরে তোমার বাবা এখনো বেঁচে আছেন, তবে কতক্ষণ থাকবেন জানিনা।
রকি.. কেন করছো তুমি এরকম, উনি তোমার কি ক্ষতি করেছেন?
ক্ষতি তুমি করেছো, তার শাস্তি তো পেতে হবে তাই না?
আমি তোমার কি ক্ষতি করেছি? বিদিশা নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকে কিন্তু রকির শক্ত হাত থেকে নিজেকে ছাড়াতে ব্যর্থ হয়।
যে বস্তিটা মামা উচ্ছেদ করার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না, ওখানে বাইরের কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না অথচ তুমি ওখানে অনায়াসে ঢুকে যাও কিভাবে, কার কাছে যাও? রকির প্রশ্ন শুনে বিদিশা হতভম্ব হয়ে যায়, সে চুপ করে থাকে,
কি হলো উত্তর দিন। এবার অতীন কথা বলে। দেখুন আপনি উত্তর দিয়ে দিলে আমরা আপনি এবং আপনার বাবাকে যেতে দেবো আর না হলে...
রকি বিশ্বাস করো, আমি ওদিকে..
আমার লোক আপনাকে ওখানে যেতে দেখেছে, কাজেই মিথ্যা বলে লাভ নেই। বিদিশাকে কথা শেষ করতে দেয়না অতীন, সে গিয়ে নীচে পরে থাকা অনিমেষ বাবুর পেটে এক লাথি মারে।



[/HIDE]
 
[HIDE]


গাড়িতে উঠেই এআরসি নিকুঞ্জকে ফোন করে ব্লুটুথ হেডফোনটা কানে লাগিয়ে নেয়, এই নিকুঞ্জ বলে ছেলেটা তার দলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সদস্য, বয়স ২৫-২৬ হবে, ছিপছিপে দোহারা চেহারা খুব একটা চোখে পরার মতো নয় কিন্তু যেজন্য এআরসি ওকে নিজের দলে রেখেছে সেটা হলো ও একজন হ্যাকার, আর যে কারো ফোনের লোকেশন ট্র্যাক করতে পারে, গরীব অনাথ এই ছেলেটি চাকরির জন্য অনেক জায়গায় ঘুরেছে শেষে অন্ধকার জগতে জড়িয়ে পড়ে পুলিশের খপ্পড়েও পড়েছিল বেশ কয়েকবার, এআরসি ছেলেটার দক্ষতা দেখে পুলিশের কাছ থেকে ছাড়িয়ে এনে নিজের দলে ভিড়িয়েছে সেই থেকে ছেলেটি তাকে খুবই সম্মান করে,এবং তার সাথেই থেকেছে, খুব তাড়াতাড়ি এআরসি বুঝতে পারে এই ছেলেটি সত্যিই তার খুব কাজে আসবে তাই সে পার্মানেন্টলি তাকে নিজের কাছে রেখে দেয়, মাঝে মাঝেই নিজের সাথে নিয়ে যায়।
"হ্যালো নিকুঞ্জ?"
বলুন স্যার।
তোমাকে একজনের লোকেশন বার করতে হবে, আমি ডিটেইলস পাঠিয়ে দিয়েছি, সাথে আমাকেও কানেক্ট করে নাও আমাকে ডিরেকশন দিতে পারবে। একটু পরে নিকুঞ্জ বলে "স্যার এই নাম্বার তো বন্ধ আছে, আর বন্ধ নাম্বার ট্র্যাক করা যায় না"।
ঠিক আছে আমি আরো একটা নাম্বার পাঠাচ্ছি।
নিকুঞ্জের ইনস্ট্রাকশন মতো চলছিল এআরসি, নিকুঞ্জের কথা মতো হাইওয়ের রাস্তা ধরে চলছিল সে,
স্যার, নাম্বারটা মুভ করছে আপনার দিকে এগিয়ে আসছে।
মানে?
হ্যাঁ স্যার, আপনার কাছাকাছি চলে এসেছে। একটু পরেই এআরসি দেখে একটা গাড়ি উল্টোদিক থেকে তার দিকে এগিয়ে আসছে, গাড়িটা তার পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে গেল... রকি তাকে খেয়াল করেনি, বা করলেও এড়িয়ে গেল। দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় এআরসি, সে কি দেরী করে ফেললো আসতে?রকি কি অলরেডি বিদিশাকে...
স্যার... স্যার শুনছেন। ফোনে নিকুঞ্জের গলা ভেসে আসতে থাকে।
নিকুঞ্জ, যে এরিয়ায় এতক্ষণ লোকেশন দেখাচ্ছিল ওটা এখান থেকে কোনদিকে কতদূর?
বেশি দূর নয়, কিন্তু স্যার।
তুমি জায়গাটার ডিরেকশন দাও। নিকুঞ্জের কথামতো এআরসি হাইওয়ে ছেড়ে কাঁচা রাস্তায় গাড়ি ঘোরালো।
স্যার, আপনি সোজা চলতে থাকুন, ওখান থেকে কিছুটা দূরে লোকেশন ছিল।
ঠিক আছে।
পাঁচিল ঘেরা গোডাউনটা থেকে কিছুটা দূরেই গাড়ি দাঁড় করিয়ে নামলো এআরসি, খুব সন্তর্পণে পাঁচিলের কাছে যায়, পাঁচিলটা প্রায় তার কাঁধ পর্যন্ত উঁচু, গেট দিয়ে ঢুকতে পারবে না এটা আর তাকে বলতে হবে না, সে একটু ঝুঁকে পাঁচিল ধরে ধরে ঢোকার জায়গা খুঁজতে থাকে, একটু পরেই মেইন গেট থেকে কিছুটা সরে এসে গোডাউনের পিছন দিকে দেখে প্রায় পাঁচিলের গা ঘেষে একটা পড়ো গাছ, কোনোমতে পাঁচিলের উপরে উঠে গাছে চড়তে পারে তাহলে ঘন পাতার আড়ালে থেকে জায়গাটা ভালো করে দেখে নিতে পারবে।
যেমন ভাবা তেমন কাজ প্রথমে পাঁচিলের উপর থেকে অল্প উঁকি মেরে কেউ নেই দেখে মুহূর্তের মধ্যে দুহাতে পাঁচিলের উপরে ভর দিয়ে উঠে সেখান থেকে গাছে লাফিয়ে ঘন পাতার আড়ালে লুকোলো এআরসি সেখানে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে র‌ইলো যদিও সময় বয়ে যাচ্ছে বিদিশা কি অবস্থায় আছে এখনো জানে না সে, বেশীক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না তাকে গোডাউন আর পাঁচিলের মধ্যবর্তী জমিতে বেশ কয়েকজনকে টহল দিতে দেখলো তাদের প্রত্যেকের হাতে রাইফেল, পিছন দিকে বড়ো গাছের আধিক্য বেশি, গাছে থেকেই কোমরের পিছনে গোঁজা পিস্তলটা বার করে এআরসি তারপর ম্যাগাজিনটা খুলে বুলেট চেক করে নেয় এবার পকেট থেকে সাইলেন্সার বার করে পিস্তলের নলে লাগিয়ে আস্তে আস্তে গাছ থেকে নামে পা টিপে টিপে অথচ দ্রুত গতিতে এগিয়ে গিয়ে অপর একটা গাছের আড়ালে লুকোয় দেখে একজন ওদিকেই আসছে টহল দিতে, লোকটা এসে কয়েকসেকেণ্ড দাঁড়িয়ে আশেপাশে নজর বোলায় তারপর আবার যাওয়ার জন্য পিছনে ফেরে সঙ্গে সঙ্গে গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে পিছন থেকে লোকটার মুখ একহাতে চেপে ধরে অপর হাতে কপালের পাশে কানের উপরে পিস্তল ঠেকিয়ে ট্রিগার চাপে এআরসি আস্তে আস্তে লোকটার নিথর দেহটা মাটিতে শুইয়ে এগিয়ে যায়।
সঙ্গীর আসতে দেরী দেখে একজন ওদিকে আসে সামনে নিজের সঙ্গীর লাশ দেখে চেঁচাতে যাবে এমন সময় আচমকা একটা বুলেট তার কপালের একেবারে মাঝখান ভেদ করে বেরিয়ে যায়, মাটিতে পরার আগে তাকেও ধরে ফেলে এআরসি আস্তে আস্তে তাকেও মাটিতে শুইয়ে দেয়।
এক এক করে টহল দিতে থাকা সবকটাকে শেষ করে সে, সবাইকেই যে কাছে গিয়ে শেষ করে এমন নয় ,দূর থেকেও শ্যুট করে, এআরসি যাকে বলে ক্র্যাকশট্ অর্থাৎ ওর গুলি খুব একটা ফস্কায় না, শেষ জনকে শেষ করে সবে ভিতরে ঢুকতে যাবে এমন সময় সামনে যাকে দেখে তার জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিল না সে, তার সামনে এক দানব দাঁড়িয়ে আছে, একে টহল দিতে দেখেনি তাই কথা জানতে পারেনি ভাগ্য ভালো লোকটা এখনো চেঁচায়নি, আরেকটা ভালো কথা ওর হাতে কোনো অস্ত্র নেই এদিকে ম্যাগাজিনের গুলি শেষ, এ দানব তাকে নতুন ম্যাগাজিন লোড করার টাইম দেবে না তাই পিস্তলটা আবার কোমরের পিছনে গুঁজে খালি হাতেই মোকাবেলা করার জন্য তৈরি হয়।

পালোয়ান নামের যে দানব এই মুহূর্তে এআরসির সামনে দাঁড়িয়ে আছে সে পরপর বেশ কয়েকটা ঘুষি চালালো তার চোয়াল লক্ষ্য করে কিন্তু প্রতিটা ঘুষি‌ই খুবই ক্ষিপ্রতার সাথে এড়িয়ে গেল, ঘুষিগুলোর একটাও যদি তার চোয়ালে লাগতো তাহলে নির্ঘাৎ চোয়ালের হাড় ভেঙে যেত। পরপর ঘুষিগুলো না লাগায় পালোয়ান যেন আরো রেগে গেল সে এবার এলোপাতাড়ি ঘুষি চালাতে লাগলো, কিন্তু তার সমস্যা হচ্ছে তার চেহারা, তার গায়ে জোর অনেক বেশি কিন্তু গতি অনেক স্লথ অপরদিকে এআরসির শরীর এই দানবের তুলনায় যথেষ্ট ছোটো এবং তার রিফ্লেক্স অনেক দ্রুত, সে সবকটা ঘুষি‌ই এড়িয়ে গেল, এইভাবে বেশ কিছুক্ষণ চললো, এআরসির কয়েকটা পাঞ্চ পালোয়ানের পেটে বুকে লাগলেও তেমন এফেক্ট পরলো না, উল্টে পালোয়ানের একটা ঘুষি সে এড়াতে পারলো না যদিও সে দুহাত ঠিক মুখের সামনে গার্ড করে চোয়ালটা বাঁচালো কিন্তু ঘুষির জোরের জন্য পিছনে ছিটকে পরলো, পালোয়ানটা এবার এগিয়ে এসে একটা লাথি মারতে চাইলো কিন্তু এআরসি একপাশে সরে গিয়ে লোকটার উ
ঊরুতে প্রচণ্ড আঘাত করে লোকটা কয়েকপা পিছনে পরে যায় এবার আবার ঘুষি পাকিয়ে তেড়ে এল কিন্তু এবার এআরসি ঘুষি এড়িয়ে পিছনে গিয়ে পালোয়ানের ডান পাঁজরে একটা লাথি কষালো, অন্য কেউ হলে পাঁজরে হাত দিয়ে বসে পরতো কিন্তু পালোয়ানের তেমন কিছু হলো না, সে আবার ঘুষি মারতে উদ্যত হলো কিন্তু এআরসি তার থেকে অনেক দ্রুত গতির ফাইটার, অত্যন্ত ক্ষিপ্রতার সাথে এআরসি আবার ঘুষি এড়িয়ে পিছনে গিয়ে আবার ডান পাজরে পরপর কয়েকটা লাথি মারলো এবার পালোয়ানটা পাজরে হাত দিয়ে একটা হাঁটু ভাঁজ করে মাটিতে বসলো, লোকটা চেঁচাতে যাবে কিন্তু পারলো না, এমন সময় তার ব্রহ্মতালুতে একটা প্রচণ্ড আঘাত হলো এবং পর মুহূর্তেই গলায় প্রচণ্ড আঘাত পেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরলো, কপাল থেকে ঘাম ঝেড়ে ফেললো এআরসি পিস্তলটা বার করে তাতে নতুন ম্যাগাজিন লোড করছে এমন সময় গোডাউনের ভিতরে পরপর দুটো গুলির আওয়াজ এল, আর দেরি করলো না একটা বুলেট মাটিতে পরে থাকা পালোয়ানের মাথায় লক্ষ্য করে চালিয়ে দৌড়ে ভিতরে গেল।


[/HIDE]
 
[HIDE]

মৃত বাবার মাথাটা নিজের কোলে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পরেছিল বিদিশা কিন্তু একটু পরেই যেন শোকে পাথর হয়ে গেল, এবার তার মাথায় পিস্তল ঠেকানো হয়েছে সে চোখদুটো বন্ধ করে, অতীনের বিদ্রুপ মেশানো কণ্ঠ শুনতে পেলো সে: কি করবো বলুন মিসেস ভট্টাচার্য? বীরেন ভট্টাচার্য হুকুম দিয়েছেন অবজ্ঞা করতে পারবো না।
লোকদুটো ট্রিগার চাপতে যাবে এমন সময় অতীন লক্ষ্য করে হটাৎ কি একটা তাদের কপালের একেবারে মাঝখান ভেদ করে যায়, আর লোকদুটো কাটা গাছের মতো মাটিতে লুটিয়ে পড়ে, সঙ্গে সঙ্গে সে নিজের পায়ে মোজার মধ্যে রাখা পিস্তলটা খুলে আনতে যাবে সঙ্গে সঙ্গে তার পায়ের খুব কাজে মাটিতে একটা বুলেট এসে লাগে সঙ্গে সঙ্গেসে সোজা হয়ে কয়েকপা পিছিয়ে যায়, গোডাউনের দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে সেখানে এক অচেনা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে তার‌ই দিকে পিস্তল উঁচিয়ে, এবার সে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে।
হটাৎ অট্টহাসিতে ফেটে পরে অতীন সান্যাল "এআরসি... এআরসি" বলে আবার হাসতে থাকে, একটু পরে হাসি থামিয়ে বলে "আমার বিশ্বাস হচ্ছে না যে স্বয়ং এআরসি এখানে এসেছে, এই আপনি খুব অবাক হচ্ছেন না যে আমি চিনলাম কিভাবে? এটা আমার অনুমান আর আমার অনুমান যে নির্ভুল সেটা আপনিও জানেন আর আমিও জানি"।
এআরসি একবার বিদিশার দিকে একবার মৃত অনিমেষ বাবুর দিকে তাকায় যদিও তার হাতের পিস্তল অতীনের দিকে স্থির, বিদিশাও একবার এআরসির দিকে তাকায়। আবার অতীনের গলা শোনা যায় "কি করবো বলুন বীরেন ভট্টাচার্যের হুকুম ছিল, তাই পালন করতে হয়েছে"।
এআরসি আবার অতীনের দিকে তাকায় রাগী গলায় বলে "কাজটা ঠিক করেননি"
এখন কি করবেন, আমাকে গুলি করবেন?
ইচ্ছা তো সেরকমই আছে।
না, এবার বিদিশা কথা বলে, ও আমার বাবাকে খুন করার আগে যণ্ত্রনা দিয়েছে মারধর করেছে, ওকেও ওইভাবে যণ্ত্রনা দিয়ে মারো রয়, ওইভাবে মারো।
পিস্তলটা আবার পিছনে গুঁজে নেয় এআরসি দেখে অতীন বলে: হাতাহাতি লড়াই.. গুড, অনেকদিন পর কাউকে পেলাম যে আমার সাথে হাতাহাতি করতে চাইছে, আমি জানিনা বাইরে পালোয়ান সহ আমার অতগুলো লোককে কিভাবে এড়িয়ে নিঃশব্দে তুই ভিতরে এলি তবে এখান থেকে তুই আর বেঁচে ফিরতে পারবি না।
এড়াবো কিভাবে? আপনার প্রতিটা লোকের সাথেই আমার মোলাকাত হয়েছে এমনকি ওই পালোয়ানের সাথে একটু কসরৎ ও করেছি যদিও সবকটাই এখন যমের বাড়ি, আর খুব শীঘ্রই আপনিও যাবেন।
তাই নাকি তাহলে আয় আগে তোর হাতপা ভাঙবো তারপর তোর চোখের সামনে ওই বিদিশাকে মারবো, ওকেই বাঁচাতে এসেছিলি না? তারপর বিদিশার দিকে তাকিয়ে বলে: বীরেন ভট্টাচার্য বলেছেন ওনার শত্রুদের শেষ করলেই উনি ওনার ভাইঝির সাথে আমার বিয়ে দেবেন, তাথৈ... আমার আর তর স‌ইছে না তাথৈ‌এর জন্য, ওকে..
কথাটা শেষ করে না কিন্তু ওটুকু শুনেই এআরসির মাথায় রাগ উঠে যায় সে দ্রুত পায়ে প্রতিদ্বন্দ্বীর দিকে এগিয়ে এসে ডানহাত দিয়ে এক ঘুষি মারতে যায়, কিন্তু অতীন বা হাত বাড়িয়ে ধরে ফেলে তারপর ডানহাতে তার পেটে কয়েকটা সজোরে ঘুষি মারে এবং একটা লাথি, এআরসি ছিটকে কয়েকহাত পিছিয়ে পড়ে যায়, অতীন শুধু পুলিশ অফিসার নয় একসময় সে ও রকি স্টেট লেভেলে বক্সিং চ্যাম্পিয়ন ছিল তার উপর পুলিশের ট্রেনিং কাজেই সে নিজেও একজন দক্ষ ফাইটার সেটা আর না বললেও চলে।
ঘুষি আর লাথি খেয়ে এআরসির দম বন্ধ হয়ে আসতে থাকে কিন্তু তাও নিজেকে সামলে নেয় আবার উঠে আক্রমণ করে কিন্তু এবারেও সে অতীনকে আঘাত করতে পারে না বরঞ্চ অতীন আবার তার আঘাতকে আটকে তাকে একটা ঘুষি মেরে ছিটকে ফেলে দেয়।
এবার বিদ্রুপের হাসি শুনতে পায় এআরসি সাথে কিছু কথা "ইসস মেয়েটাকে বাঁচাতে এলি আর ওর সামনেই মার খাচ্ছিস, জানিস শুধুমাত্র তোর জন্য মেয়েটার বাবা মারা গেল", একথা শুনে আবার এআরসির রাগ সপ্তমে চড়ে সে উঠে আক্রমণ করতে গিয়েও করে না, থেমে যায় সে বুঝতে পারে সে ভুল করছে, তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রফেশনাল ফাইটার এবং যথেষ্ট এক্সপার্ট, এরকম লোকেদের সাথে লড়াইতে জিততে গেলে তাকে ফোকাস করতে হবে আর তার জন্য নিজের রাগটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

আবার আওয়াজ আসে "কি রে থেমে গেলি? ভয় পেয়ে গেলি নাকি?" তারপরেই আবার বিদ্রুপের হাসির শব্দ শোনে সে, কিন্তু এবারে সে ভুল করে না,সে হাত এগিয়ে দুটো আঙ্গুল দিয়ে অতীনকে ডাকে যেন চ্যালেঞ্জ জানায়, অতীন একটু অবাক হয় কিন্তু তারপরেই একটু মুচকি হেসে এআরসির দিকে তেড়ে আসে ঘুষি মারার জন্য কিন্তু এবারে এআরসি অতীনের ঘুষিটা ঠিক সময়ে একটু সরে এড়িয়ে যায়, কিন্তু অতীনের কবজি ধরে এবং পায়ে একটা ল্যাং মারে ফলে অতীন নিজের নিয়ণ্ত্রন হারিয়ে ফেলে এবং এআরসি তার কবজি টেনে ছুঁড়ে ফেলে দেয় অতীন কিছুটা দূরে গিয়ে পরে, চোখ থেকে চশমাটা খুলে পড়ে যায় তার।
কিন্তু তৎক্ষণাৎ উঠে ঘুরে দাঁড়ায় এবার এগিয়ে এসে দুহাতে এলোপাতাড়ি ঘুষি চালাতে থাকে কিন্তু এআরসি নিজের হাত দিয়ে নিজের মুখটা শিল্ড করে ঘুষি গুলো আটকাতে থাকে, কিন্তু এবার অতীন হটাৎ ঘুষি চালানোর টার্গেট পালটে তার পেটে চালায়, দুসেকেন্ডের মতো দেরী হয়েছে হাতটা নামাতে ফলে ঘুষিটা আবার সজোরে এআরসির বুকের একটু নীচে লাগে সে কয়েক পা পিছিয়ে যায়।
কিন্তু অতীন আবার এগিয়ে এসে আগের মতো এলোপাতাড়ি ঘুষি চালাতে থাকে এবং এআরসি আবার শিল্ড করতে থাকে কিন্তু এবার এআরসি হটাৎ অতীনেরর ঘুষি ওর মুখে লাগার আগে বা হাতে একটা মোক্ষম আপার কাট পাঞ্চ মারে অতীনের থুতনিতে, অতীন কয়েকপা পিছিয়ে টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যায়।
কিন্তু আবার উঠে দ্রুত এগিয়ে এসে পা তুলে লাথি মারতে যায় কিন্তু এআরসি লাথিটা এড়িয়ে একহাতে তার পা ধরে অপর হাতের কনুই দিয়ে হাঁটুতে জোড়ে আঘাত করতে থাকে, দু-তিনটে আঘাত খাবার পরে অতীন অপর পাটা শূন্যে তুলে লাথি মারতে যায় কিন্তু এআরসি ধরে থাকা পা টা টেনে ছেড়ে দিয়ে সরে আসে, ফলে লাথিটা তার না লাগলেও অতীন মাটিতে বেকায়দায় পড়ে যায় এবং আঘাতপ্রাপ্ত হয়।
তাও উঠে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এগিয়ে আসে ঘুষি মারার জন্য কিন্তু পায়ে চোট পাওয়ার জন্য অতীনের গতি কিছুটা কমে গেছে, এআরসি সহজেই ঘুষিটা এড়িয়ে যায় এবং আবার আগের মতো কবজিটা ধরে ফেলে তবে এবার ছুঁড়ে না ফেলে হাতটাকে টেনে সোজা করে ধরে কনুইয়ের জয়েন্টে জোড়ে আঘাত করে "মট" করে একটা শব্দ হয় এবং অতীন আঃ করে আর্তনাদ করে ওঠে, হাত ভেঙে গেছে।
কিন্তু তাও হার স্বীকার না করে অপর হাতটা দিয়ে ঘুষি মারতে যায়, এবার এআরসি নিজের একটা পা দিয়ে অতীনের এগিয়ে থাকা পায়ের পাতাটাকে চেপে ধরে শরীরে ঠেলা মারে এতে অতীন টাল সামলাতে পারে না পড়ে যায় কিন্তু একটা পা এআরসি মাটির সাথে চেপে ধরায় পুরো শরীরটা বেখাপ্পা হয়ে পড়ে এবং আরেকটা "মট" করে শব্দ আর অতীনের আগের থেকে জোরে আর্তনাদের শব্দে বোঝা যায় একটা পা‌ও ভাঙলো।
এবার সে আর মাটি থেকে ওঠে না ঘষটে ঘষটে গোঁগোঁ করতে করতে পিছনে সরতে থাকে, এআরসি ওর দিকে আস্তে আস্তে এগোতে থাকে, কোমরের পিছন থেকে পিস্তলটা হাতে নেয় তারপর বিদিশার দিকে তাকিয়ে ওকে ডাকে, বিদিশা উঠে ওর পাশে এলে পিস্তলটা ওর হাতে ধরিয়ে দেয়, বিদিশা অতীনকে লক্ষ্য করে পিস্তল তাক করে, একসময় ক্রমাগত ট্রিগার চাপতেই থাকে পুরো ম্যাগাজিন খালি করেও তার হুঁশ হয় না সে ট্রিগার চাপতেই থাকে, যদিও সাইলেন্সার লাগানো থাকায় কোনো আওয়াজ হয় না।




[/HIDE]
 
[HIDE]

শ্মশানের পাশে নদীতে সদ্য ভস্মীভূত করা দেহাবশেষ ভাসিয়ে দিচ্ছে বিদিশা, কিন্তু তার চোখে জলের বদলে আগুন জ্বলছে, একটু দূরে ঘাটের উপরে দাঁড়িয়ে আছে এআরসি, রকির গোডাউন থেকে অনিমেষ বাবুর মৃতদেহটা নিয়ে সটান মিসেস দাশগুপ্তর হাসপাতালে গিয়েছিল, তিনি যতটা সম্ভব গোপনে ফর্মালিটি সারেন তারপর শ্মশানে এসে দেহ জ্বালানো আর এখন অস্থি বিসর্জন, যদিও এগুলো মৃতের ছেলের করার কথা কিন্তু এইমুহূর্তেয়অনিমেষ বাবুর পরিবারে একমাত্র মেয়ে বিদিশা কাছে আছে বলে সেই করলো, পুরো সময়টায় একটা কথাও বলেনি সে।
অস্থি বিসর্জন হয়ে গেলে বিদিশা জলে ডুব দেয় তারপর বাকি আচার অনুষ্ঠান সারে, এরপর এআরসিকে সম্পূর্ণ পাশ কাটিয়ে হনহন করে কোথাও যেতে থাকে। রয় ওরফে এআরসি তার পিছু নেয় "বিদিশা শোনো কোথায় যাচ্ছো?" কিন্তু বিদিশা উত্তরের বদলে হাঁটার গতি বাড়িয়ে দেয়, পিছনে রয় একটু দৌড়ে তার একটা হাত ধরে সঙ্গে সঙ্গে এক ঝটকায় হাতটা ছাড়িয়ে নেয় বিদিশা তারপর তেজের সঙ্গে রয়কে বলতে থাকে "কোন অধিকারে তুমি আমার হাত ধরেছো? আজ আমার বাবা আমাকে ছেড়ে চিরদিনের জন্য চলে গেলেন শুধু তোমার জন্য, যতদিন তুমি আমার জীবনে আসোনি ততদিন সব ঠিক ছিল"।
রয় চুপ করে সব অভিযোগ মেনে নিতে থাকে, বিদিশা বলে চলে "কেন এলে তুমি আমার জীবনে?
বিদিশা শান্ত হ‌ও আমি সব বলছি।
আমি আর তোমার কোনো কথা শুনবো না, আমি এখনই যাবো আর ওই রকি আর বীরেন ভট্টাচার্যকে শেষ করবো। বলে বিদিশা আবার এগিয়ে যায় কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই রয় তার হাতটা ধরে টেনে নেয় বলে "বিদিশা শান্ত হয়ে আমার কথা শোনো"।
কেন শুনবো তোমার কথা, কে তুমি? কখনো রয় কখনো এআরসি, কি তোমার আসল পরিচয়?"
আমি যেই হ‌ই তোমার বন্ধু।
আমি বিশ্বাস করি না, তুমিই বলতে না তোমার মধ্যে তো কোনো ইমোশন নেই, আমি বুঝতে পারছি তুমি শুধু আমাকে ইউজ করেছো, আর আজ তার পরিণাম আমার বাবাকে ওরা মেরে ফেলেছে, আর এবার আমি ওদের মারবো।
হ্যাঁ আমার মধ্যে কোনো ইমোশন নেই ঝাঁঝিয়ে ওঠে রয়, তুমি যেতে চাও তবে যাও, কি ভেবেছো তুমি বীরেন ভট্টাচার্য এখন তোমাকে স্বাগত জানাবে যে আসো বৌমা আমাকে মেরে যাও, তোমাকে দেখতেই গুলি করে মারবে।
বিদিশা এবার চুপ করে রয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে, রয় বলে চলে "কি জানো তুমি আমার সম্বন্ধে? তুমি শুধু আমার বাইরেটা দেখেছো ,ভিতরটা না, মানছি যে হয়তো আমার জন্য আজ তোমার বাবা নেই কিন্তু ভেবে দেখো তুমি যেটাকে জীবন বলে মেনে নিয়েছিলে সেই জীবন কি তোমার বাবা তোমাকে দিতে চেয়েছিলেন? না, উনি নিশ্চয়ই দিনরাত তোমার জন্য কষ্ট পেতেন, আর যে কষ্টটা তুমি আজ পাচ্ছো, আমি সেটা ষোলো বছর আগে ভোগ করেছি আজ‌ও করে চলেছি, আমার মধ্যে কোনো ইমোশন নেই কারণ সেটাকে ষোলো বছর আগে শেষ করেছে ওই বীরেন ভট্টাচার্য, আমার বাবাকেও আমার চোখের সামনে গুলি করে বীরেন ভট্টাচার্য আর ওর দলের লোক, আমার চোখের সামনে আমার বাবা মারা যান তুমি তাও প্রতিশোধ নেওয়ার কথা ভাবছো, আজ এখানে নির্ভয়ে তোমার বাবার সৎকার করছো কিন্তু তখন আমি প্রতিশোধের ভাবনা তো দূরের কথা বাবার অন্তিম কাজ কিভাবে শেষ করে মাকে নিয়ে সুরক্ষিত পালিয়ে যাবো সেই চিন্তা করছি কারণ তখন‌ও আমাদের পিছনে বীরেন ভট্টাচার্য আর ওর দলের লোক পাগলা কুকুরের মতো তাড়া করে বেড়াচ্ছে।
কে তুমি, কি হয়েছিল তোমার সাথে? বিদিশার স্বর এখন অনেকটাই শান্ত। দুজনে গিয়ে ঘাটের নির্জন এলাকায় গিয়ে বসে তারপর রয় শুরু করে তার কাহিনী, তার অতীতের কাহিনী যেটা সে এতদিন কারো কাছে প্রকাশ করেনি ,

মার যে দুটো নাম তুমি জানো সেগুলো নকল নয় আমার আসল নামের সাঙ্কেতিক প্রতিরূপ, আমার আসল নাম অভয় রায় চৌধুরী, আমি এই শহরেই থাকতাম আমার বাবা আর মায়ের সাথে। ওই যে জমিতে এখন বীরেন ভট্টাচার্য তার হেড অফিস খুলেছে যেখান থেকে ও এখন ওর সমস্ত লিগ্যাল- ইল্লিগ্যাল বিজনেস অপারেট করে সেটা আমাদের ছিল, খুব সুখেই আমরা তিনজন, আর্থিক স্বচ্ছলতা হয়তো তেমন ছিল না কিন্তু জীবনে সুখ ছিল, আনন্দ ছিল। ভেবেছিলাম এরকম সুখে আনন্দে সারা জীবনটা কেটে যাবে আমি মা বাবা আর...
আর?? রয় থামতেই প্রশ্নটা করে বিদিশা, তার কণ্ঠে তখন রাগের বদলে উৎসুকতা, সে বুঝতে পারলো রয় কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে গেল একটু পরে নিজেকে সামলে নিয়ে রয় আবার শুরু করে,
কিন্তু আমাদের সেই আনন্দের জীবনে কুদৃষ্টি দিল বীরেন ভট্টাচার্য, তার নজর পরলো আমাদের জমিটার উপর সেখানে সে প্রোমোটিং করতে চায়, কিন্তু আমার বাবা তাকে জমি দিল না, ওই জমিটা যে শুধু আমার বাবা পরিশ্রম করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কিনেছিলেন তাই নয় ওই জমিতে আমার মা নিজের হাতে অনেক গাছ লাগিয়ে বাগান করেছিলেন ওই জমিটা আমাদের কাছে সাক্ষাৎ স্বর্গ ছিল, কিন্তু ওই জমিটা তাকে না দেওয়ায় বীরেন ভট্টাচার্য রেগে গেল, অথচ সে বাবাকে বেশি কিছু বলতে বা করতে পারছিল না কারন এলাকায় ভালো পরোপকারী মানুষ হিসেবে আমার বাবার খুব সুনাম ছিল, সবাই বাবাকে খুব ভালোবাসতো, তারপর একসময় ইলেকশনে বাবাকে দাঁড় করানোর অফার করেন এলাকার নেতারা যদিও আমার বাবা বারন।করেছিলেন কিন্তু এতে বীরেন ভট্টাচার্যের আক্রোশ চরমে পৌঁছায়, সে ঠিক করে আমাদের শেষ করে দেবে, এলাকায় এমন অনেক লোক ছিল যারা পেটের দায়ে বীরেন ভট্টাচার্যের চাকরি করলেও আমার বাবার, আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী ছিলেন তারা বাবাকে সাবধান করেন, যদিও আমার বাবা এতটাই ভালো মনের মানুষ ছিলেন যে কেউ যে তার এত বড়ো ক্ষতি করতে চাইবে এটা বিশ্বাস করেননি, একরাতে আমার বাবা মা ঘুমিয়ে পরলেও একটা বিশেষ কারণে আমি ঘুমাইনি, গভীর রাতে হটাৎ আমার কানে কিছু আওয়াজ আছে আর সাথে একটা গন্ধ পেট্রোলের গন্ধ আর সেটা বাইরে থেকে আমাদের ঘরে ছেটানো হচ্ছে একটু পরেই আমাদের স্বর্গে আমাদের বাড়িতে আগুন জ্বলে ওঠে, কিন্তু আগুন লাগানোর কিছু আগেই বাবার এক শুভাকাঙ্ক্ষী বন্ধু ফোন করে আমাদের সতর্ক করে দেন ফলে আমরা আগুন লাগার একটু আগেই আমাদের বাড়ির পিছন দিকের একটা দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাই, কিন্তু দুর্ভাগ্য কি জানো? বীরেন ভট্টাচার্যের দলে এমন একজন ছিল যে আমাদের আত্মীয় আমার পিসেমশাই তিনি জানতেন আমাদের বাড়ির পিছনের এই দরজার কথা আর তিনি বীরেন ভট্টাচার্য কে সেটার কথা বলে দেন, ফলে আমরা আগুন থেকে বেঁচে গেলেও বীরেন ভট্টাচার্যের হাত থেকে বাঁচতে পারি না, তারা বুঝতে পারে যে আমরা আগুনে মরিনি তখন তারা আমাদের তাড়া করে।


[/HIDE]
 
[HIDE]
তারপর? রয় আবার একটু থামতেই প্রশ্ন করে বিদিশা, রয় আবার শুরু করে,
আমার বাবার সেই বন্ধু একটা অটো জোগাড় করে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তাতে উঠে আমরা পালানোর চেষ্টা করি কিন্তু একটু পরেই বুঝতে পারি সেটা সম্ভব নয় কারণ পিছনে আরো দ্রুত গতির গাড়িতে ওরা তাড়া করছে, তখন বাবার সেই বন্ধু আমাদের বাঁচানোর জন্য আমাদের একজায়গায় নামিয়ে নিজে অন্য দিকে অটো নিয়ে গিয়ে বীরেন ভট্টাচার্যের লোকদের ডিস্ট্র্যাক্ট করার চেষ্টা করেন, এদিকে আমরা অন্য পথে যত দ্রুত পালাতে থাকি, কিন্তু বেশিদূর যাবার আগেই একটা অস্পষ্ট আর্তনাদ ভেসে আসে বাবার বন্ধুর মরণ আর্তনাদ। তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে আবার আমাদের পিছু নেয় একটু পরেই পিছন থেকে একটা বুলেট আমার বাবার পিঠে এসে লাগে, ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখি সেটা বীরেন ভট্টাচার্য চালিয়েছে, আমাদের সৌভাগ্য যে যে রাস্তায় আমরা যাচ্ছিলাম সেখানে একটু দূরেই একটা রেললাইনের ক্রসিং ছিল, আর সেখানে পাশাপাশি দুটো লাইনের একটায় একটা ট্রেন দাঁড়িয়ে ছিল, আমরা মানে আমি আর মা কোনোমতে বাবাকে নিয়ে.. প্রথম লাইনটা পার করে ওটাতে উঠলাম কিন্তু ওরা লাইনটা পার করার আগেই সেই লাইনে একটা ট্রেন চলে আসে ফলে ওদের কিছুটা দেরী হয়ে যায়, এদিকে আমার বাবার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ট্রিটমেন্ট দরকার, তাই কয়েকটা স্টেশনে পার করে একটা জংশনে নামি, বাবার অবস্থা তখন আরও খারাপ অনেক রক্ত বয়ে গেছে, কোনো মতে একটা ডাক্তারের চেম্বারের সামনে পৌঁছাই, সেখানে এক লেডি ডাক্তার প্র্যাকটিস করতেন, তিনি ওই চেম্বারেই থাকা নূন্যতম সার্জারি কিট দিয়ে বাবার সার্জারি করেন, বুলেটটা বার করলেও বাবা....
বিদিশা লক্ষ্য করে রয়ের চোখ থেকে জল পড়ছে, সে সত্যিই অবাক হয় সে ভাবতেও পারে না যে এই ছেলেটা কাঁদতেও জানে, সে বলে: তারপর কি করলে?
ওই ডাক্তার মহিলা আর ওনার স্বামী আমাদের পাশে দাঁড়ান, বাবার অন্তিম কাজটা পূরণ করি, কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি বুঝতে পারি যে তখনও আমাদের পিছনে পাগলা কুকুর তাড়া করছে, আমার বাবা বা মা কোনোদিকেই কোনো আত্মীয় ছিল না, এক ছিল পিসি আর পিসেমশাই যারা আমাদের মারার জন্য বীরেন ভট্টাচার্যকে সাহায্য করছে, আমার মা তখনও বাবার শোক কাটাতে পারেননি, আমি ভালো করে কাঁদতেও পারিনি কারণ তখন আমার মাথায় ঘুরছে বাবার শেষ কথা "মাকে দেখিস বাবু", তাই কোনোমতে মাকে নিয়ে এই শহর ছেড়ে পালিয়ে গেলাম ওই ডাক্তার দম্পতি সাহায্য করেছিলেন, কিন্তু যাবো কোথায়? রাজ্য ছেড়েই চলে গেলাম, সেখানে গিয়ে আবার বাঁচার নতুন সংগ্ৰাম শুরু হলো ততদিনে অভয় মরে গেছে জন্ম নিয়েছে রয়... আর তার অনেক বছর পরে এআরসি।
আয়্যাম সরি, বিদিশার গলা এখন পুরো শান্ত। রয় বলে: আমি তোমাকে সত্যিই ইউজ করবো ভেবেছিলাম কিন্তু যতদিন গেল বুঝলাম তুমিও আমার মতো ওদের অত্যাচারের শিকার তখন আর পারিনি তোমাকে ইউজ করতে, আমি জানি আমাকে বিশ্বাস করা তোমার পক্ষে কঠিন কিন্তু তাও আমি বলছি তোমার প্রতিশোধ পূরণ হবে, আমি থাকবো তোমার পাশে একজন বন্ধু হয়ে, কিন্তু এখন যদি তুমি যাও তাহলে মারা পরবে, আর সেটা হলে তোমার প্রতিশোধ তো পূরণ হবেই না তোমার লয়্যার হ‌ওয়াও হবে না, তুমিই বলেছিলে না যে ওটা শুধু তোমার নয় তোমার বাবার‌ও স্বপ্ন ছিল, সেটা পূরণ করবে না?
আয়্যাম সরি রয়, আমি বুঝতে পারিনি যে.. তোমাকে দেখে কখনো বোঝা যায়নি যে তোমার...
আমার অতীত এরকম?
হ্যাঁ, কিন্তু তুমি তখন কি একটা বলতে গিয়েও থেমে গেলে?
ওটা আমার নিজস্ব, ওটা আমি কাউকে বলিনি ওটা আমার নিজের‌ই থাক।


বিদিশাকে নিয়ে বাড়িতে ঢুকতেই অমৃতাদেবী হামলে পড়লেন ছেলের উপর "কোথায় গিয়েছিলি তুই? আর.." এটুকু বলে বিদিশার দিকে তাকালেন।
মাসি ওকে ভিতরে নিয়ে যাও আর তোমার একটা শাড়ি দাও ওকে পরতে আমি পরে ওর জন্য ড্রেস এনে দেবো আর কিছু খেতে দাও। তারপর বিদিশার দিকে তাকিয়ে রয় বলে: যাও ভিতরে গিয়ে চেঞ্জ করে রেস্ট নাও।
বিদিশা ভিতরে চলে যেতেই মায়ের ৎজিজ্ঞাসু দৃষ্টির সামনে পরলো। "তুমি যেটা ভাবছো সেটা একদমই নয়, ও আমার বন্ধু আমাকে অনেক কাজে হেল্প করেছে আর আজ ওর চোখের সামনে ওর বাবাকে... বাইরে থাকলে ওকেও মেরে দেবে তাই এখানে নিয়ে এসেছি" মাকে কথাটা বলেই বাইরে এসে বাগানে রাখা একটা বেতের মোড়ায় বসে, সামনে আমির।
কি হয়েছিল? জিজ্ঞেস করে আমির। একে একে সবকথা তাকে বলে রয়, শেষে বলে "যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে আমির, তুমি চাইলে বাণিজ্যনগরী ফিরে যেতে পারো"
হটাৎ একথা কেন বলছো?
বললাম যে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে, এবার খালি আঘাত-প্রত্যাঘাত হবে।
তাহলে তুমিও জেনে রাখো এই আমির তোমার সাথে সারাজীবন থাকবে, সব পরিস্থিতিতে থাকবে। দুজনে কিছুক্ষণ চুপ থাকে এই সময় একজন এসে বলে "দাদা, একটা ছেলে আপনার সাথে দেখা করতে চাইছে"।
মোবাইল ঘাটতে ঘাটতে রয় জিজ্ঞেস করে "কি নাম?"
নাম.... অমিয় বললো। নামটা শুনে মোবাইল ঘাটা বন্ধ করে সামনে তাকায় রয়।
এই ছেলেটাই বোধহয় আগে একদিন এসেছিল, একা এসেছে?
হ্যাঁ, ভাইজান।
দেখা করবে তুমি?
না।
তুমি চেনো ওকে?
হ্যাঁ।
তাহলে দেখা করে নাও।
না, আমির তুমি যাও আর ওকে বলে দাও ও যেন আর এখানে না আসে।
একথা কেন বলছো? এই বস্তির উপর বীরেন ভট্টাচার্যের নজর আছে, বিদিশা এখানে ঘনঘন আসতো তাই বিপদে পড়েছিল ও বারবার এলে ওকেও বিপদে পরতে হবে।
ঠিক আছে যাচ্ছি কিন্তু তুমি নিজে ওর সাথে দেখা করলে।
আমি পরে দেখা করে নেবো।

আজ আবার বস্তিতে ঢুকতে গিয়ে বাধা পায় অমিয়, তাথৈ বারবার বলছে যে অভয় বেঁচে আছে আর এই বস্তিতেই থাকে, কিন্তু কথাটা বিশ্বাস হয় না অমিয়‌র তাই আবার সে একাই চলে এসেছে, অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছে আজ সে ঠিক করেছে যাকে তাথৈ অভয় বলে ভাবছে তার সাথে দেখা না করে যাবে না, এই সময় সেই আগের দিনের দেখা ছেলেটা এসে বললো: আপনি আবার কেন এসেছেন?
অমিয় বলে: আপনি জানেন আমি কেন এসেছি, আমার প্রিয় বন্ধু এখানে থাকে বলে শুনেছি আমি তার সাথে দেখা করতে এসেছি।
কিন্তু তিনি এখন ব্যস্ত।
প্লিজ ওনাকে একবার বলুন যে
আপনি এখান থেকে চলে যান, আর কখনো এখানে আসবেন না
কিন্তু.
কোনো কিন্তু নয়, আপনি চলে যান।
বাধ্য হয়েই অমিয় ফিরতি পথ ধরে, একটু দূরে আড়াল থেকে সবটাই দেখছিল অভয় সে স্বগোতোক্তি করে "আমাকে ক্ষমা করিস ভাই অমিয় কিন্তু এই মুহূর্তে আমি তোর সামনে যেতে পারবো না, এতে তোর‌ই বিপদ বাড়বে, আমার কাজ শেষ হলে আমি নিজে তোর কাছে যাবো।



[/HIDE]
 
[HIDE]

রাতে নিজের রুমের ব্যালকনিতে বসে চিন্তা করছে তাথৈ যে এবার সে কি করবে? অমিয় জানিয়েছে তাকে ওই বস্তি থেকে বার করে দেওয়া হয়েছে, বলাইবাহুল্য ওকেও আর ঢুকতে দেওয়া হবে না, এদিকে ক্রমাগত মিস্টার গুপ্তকে ফোনে না পেয়ে সে ওনার অফিসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে যে কিছুদিন আগে এক রোড অ্যাক্সিডেন্টে ওনার মৃত্যু হয়েছে, যদিও কয়েকজন বললো মৃত্যুটা নাকি সন্দেহজনক। বাড়িতে সবার মুখ গম্ভীর, সে জানতে পেরেছে ওই অতীন সান্যাল মারা গেছে আর তার বৌদি বেপাত্তা, জ্যেঠুমণি আর তার বাপি সবসময় রেগে আছে বাড়িটায় সবসময় একটা থমথমে ভাব। সে ভাবতে থাকে কিভাবে সত্যিটা জানা যায়, একটা সত্যি সে জেনেছে এবার বাকিটা কিন্তু জানবে কার থেকে?
তাথৈ? সরমা দেবী ঘরে ঢুকলেন সাথে আরও একজন মহিলা বয়স সরমা দেবীর থেকে একটু বেশী একটু পৃথুলা এনারো গায়ের রং ফর্সা তবে সরমা দেবীর মতো নয় ইনি শেফালী ভট্টাচার্য বীরেন ভট্টাচার্যের স্ত্রী এবং বৃষ্টির মা।
আসো মা, আরে জ্যেঠিমা আসো।
কি করছিস তুই? জিজ্ঞেস করেন সরমা দেবী।
কিছুনা কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর পাচ্ছি না, সেগুলোই চিন্তা করছিলাম।
তুই কোনো পরীক্ষা দিচ্ছিস নাকি? প্রশ্নটা করেন শেফালী দেবী।
দিচ্ছি তবে জীবনের পরীক্ষা।
মানে।
কিছুনা তোমরা বলো, কোনো দরকার ছিল?
কেন দরকার ছাড়া আসা যায় না?
সেটা নয়, আসলে এখন হটাৎ আমার রুমে তাই..
একটা কথা জানার ছিল। বলেন শেফালী দেবী।
কি?
বৃষ্টির কি হয়েছে রে? কয়েকদিন থেকে দেখছি মেয়েটা একদম চুপ মেরে গেছে।
ও কিছুনা সামান্য ব্যাপার একটা কয়েকদিন পরেই ঠিক হয়ে যাবে।
সামান্য ব্যাপার? কিন্তু ব্যাপারটা কি?
তাথৈ বলতে ইতস্তত করছে দেখে এবার সরমা দেবী জিজ্ঞেস করেন: কি হয়েছে বৃষ্টির?
একজন ওর ইগো ওর অহংকারে আঘাত করেছে।
মানে?
তাথৈ বৃষ্টি আর অমিয়র ব্যাপারটা সব বলে এমনকি স্কুলে থাকতে বৃষ্টির ওকে রিফিউজ থেকে এখন বৃষ্টির ওকে প্রপোজ আর অমিয়র রিফিউজ অব্দি।
এই ছেলেটা কেমন? সব শুনে প্রশ্ন করেন শেফালী দেবী।
যে ছেলে তোমার মেয়ের মুখের উপর তার প্রপোজাল রিফিউজ করতে পারে, যে তোমার মেয়ের মুখের উপর বলতে পারে আমি আপনার যোগ্য ন‌ই কারণ আপনি টাকা আর নিজেকে ছাড়া কাউকে ভালোবাসতে পারেন না, যে বলতে পারে আপনাকে ভালোবেসে আমি ভুল করেছিলাম আপনি রিফিউজ করায় আমার জীবন বেঁচে গেছে সেই ছেলে কেমন ভেবে দেখো।
সত্যি আমার মেয়েটা পুরো ওর বাবা আর পিসির মতো কেন হলো কে জানে?
সত্যি জ্যেঠিমা ওর ইগো প্রচণ্ড।
ওই ছেলেটার সাথে আমার কথা বলিয়ে দিবি?
কেন?
বলতাম যে আমার মেয়েটাকে যদি..
কোনো লাভ নেই, ও আমাদের পছন্দ করে না।
কেন?
বৃষ্টি আর পিসি মিলে একজনের সাথে খুব অন্যায় ব্যবহার করেছে।
তুই কি রুদ্রবাবুর ছেলের কথা বলছিস, যে তোকে..
হ্যাঁ, অভয়, অভয় ওর খুব ভালো বন্ধু ছিল।
কি অবস্থা পাপ করলো বড়োরা আর শাস্তি পাচ্ছে মেয়েদুটো।
কখনো কখনো ইচ্ছা করে এই বাড়ির সবার..
দিদি... শেফালী দেবী কিছু বলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু সরমা দেবী আটকালেন।
তাথৈ বুঝলো তার জ্যেঠিমা কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে গেলেন কিন্তু সে তখন আর পীড়াপীড়ি করলো না কারণ তার মা তাকে বলতে দেবেন না। সে জানে আজ রাতে জ্যেঠিমা একা থাকবেন জ্যেঠুমণি বলে গেছেন তিনি ফিরবেন না, সে অপেক্ষা করতে থাকে, রাতে সবাই যে যার নিজের ঘরে গেলে তাথৈ আস্তে আস্তে জ্যেঠিমার ঘরে যায়, অতো রাতে তাকে দেখে কিছুটা আশ্চর্য হন শেফালী দেবী।
কিছু বলবি তাথৈ?
হ্যাঁ, আমি কিছু জানতে চাই।
কি?
তখন তুমি কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে গেলে সেটা কি?।
শেফালী দেবীর বুকে ধুকপুকানি শুরু হয়ে যায়, তিনি একটা ঢোঁক গিলে কোনোমতে বলেন: ক‌ই কিছু না তো।
তাথৈ এগিয়ে এসে জ্যেঠিমার দুটোহাত শক্ত করে ধরে তারপর বলে: জ্যেঠিমা প্লিজ বলো, এই বাড়ির লোকেরা কি সত্যিই ভালো নাকি ভালো মানুষের মুখোশ পরে ঘোরে?
চুপ কর তাথৈ, তোর পিসি বাড়িতে আছে, সে শুনতে পেলে সর্বনাশ হবে।
তাহলে বলো।
কি?
ষোলো বছর আগে আমাকে হটাৎ করে এই শহর থেকে দূরে সরানো হলো কেন? শুধু পড়াশোনা কারণ নয় এটা আমি জানি।
শেফালী দেবী একটা বড়ো নিঃশ্বাস ফেলে বলতে থাকেন: যাতে তুই ওই ছেলেটার সাথে মেলামেশা না করতে পারিস।
আমি খবর নিয়েছি ওদের বাড়িতে একটা দুর্ঘটনা ঘটে যার ফলে ওরা সবাই মারা যায়, এতে কি কারো হাত ছিল?
শেফালী দেবী কিছুক্ষণ চুপ করে থাকেন তারপর বলেন কোনো দুর্ঘটনা হয়নি, ওটাকে দুর্ঘটনা বলে প্রচার করা হয়েছিল।
মানে?
রুদ্রবাবু মানে ওই ছেলেটা কি যেন নাম অভয়, ওর বাবার সাথে তোর জ্যেঠুর একটু ঝামেলা ছিল ওদের জমিটা তোর জ্যেঠু্ চাইছিলেন কিন্তু রুদ্রবাবু দিতে রাজী হননি এর সাথে এলাকার লোক তাকে বেশি ভক্তি শ্রদ্ধা করে এগুলো তোর জ্যেঠুর সহ্য হয়নি তার উপরে তোর সাথে ওনার ছেলের সম্পর্ক... তোর জ্যেঠুকে তুই কি ভাবিস জানিনা কিন্তু উনি মোটেই ভালো লোক নন, কত লোকের যে সর্বনাশ করেছেন কত লোকের সর্বস্য কেড়ে নিয়েছেন তার হিসাব নেই।
তাথৈ বুঝতে পারে সেদিন কেন অভয় রেগে গিয়েছিল সে বলে: অভয়দের বাড়িতে আগুনটা তাহলে?
তোর জ্যেঠু বাবা আর ওদের দলের লোকেরা মিলে লাগিয়েছিল, তোর পিসিও এই ষড়যন্ত্রে যুক্ত ছিল, উনি‌ই প্রথম বলেন ওদের মেরে ফেলার কথা।
রাত শুয়েও তাথৈএর ঘুম আসেনা তার চোখ থেকে অবিরাম জল পড়েছে, সে বুঝতে পেরেছে অভয়ের কাছে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ তার, সে জানে অভয় তার বাবাকে প্রচণ্ড ভালোবাসতো আর সেই বাবাকেই.... সে বুঝতে পারে না যে তার এখন কি করা উচিত? একবার কি অভয়ের কাছে যাবে? কিন্তু ও তো এখন দেখা করতেই চায় না, তাহলে কি করবে তাথৈ? কাঁদতে কাঁদতেই অভয়ের ছবিটা হাতে নেয় কোনো কথা বলে না শুধু ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকে। তাথৈ ঠিক করে একবার শেষবারের মতো অভয়ের সাথে দেখা করবে ক্ষমা চেয়ে বিদায় নেওয়ার জন্য আগের বার শহর ছেড়ে যাওয়ার আগে বলে যেতে পারেনি কিন্তু এবার সে অভয়কে বলেই যাবে, তবে শহর ছেড়ে নয় পৃথিবী ছেড়ে।

বেশ কয়েকবার ফোন করেও যখন আমিরের ফোন বন্ধ পেলো তখন দুশ্চিন্তা হলো এআরসি ওরফে রয় ওরফে অভয়ের, এমন তো হবার কথা নয়, সে আমিরকে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়ে রেখেছে যাতে কোনো অবস্থাতেই আমির ফোন বন্ধ না করে তাহলে ওর ফোন বন্ধ কেন? রাতে ঘুমিয়ে পরলেও ফোন চালু রাখার কথা তাহলে? মাথায় নানা দুশ্চিন্তা আসতে থাকে আমিরের কোনো বিপদ হয়নি তো? যতই হোক এই শহরে এখন বীরেন ভট্টাচার্যের হুকুম চলে, আর আমিরের লড়াই নয় এটা ও শুধু বন্ধুত্বের খাতিরেই এখানে থেকে গেছে এখন ওর কিছু হয়ে গেলে অভয় নিজেকে কোনোদিন‌ও ক্ষমা করতে পারবে না।
হঠাৎ মোবাইলটা বেজে উঠলো, মাহমুদের ফোন এই মাহমুদ উসমানের ছোটো ভাই, কিন্তু এখন ও ফোন করছে কেন? ফোনটা কানে দেয় অভয় "বলো মাহমুদ"
বস আপনি কোথায়? মাহমুদের গলায় ভীতির ছাপ।
কেন কি হয়েছে?
স্যার আপনি এখনই।একটা জায়গায় আসতে পারবেন?
কোথায় আর কেন?
মনে হয় আমির ভাইজানের খুব বিপদ?
হোয়াট? প্রায় গর্জে ওঠে অভয়।
হ্যাঁ বস আজ একটা অচেনা নম্বর থেকে ফোন আসে আমার কাছে একটা মেয়ের সে আমাকে বলে বীরেন ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে ওর কাছে প্রমাণ আছে, এবং আমরা যে বীরেন ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে কাজ করছি সেটা উনি জানেন, তাই প্রমাণটা আমাদের দিতে চান।
মেয়েটা কে আর আমরা যে বীরেন ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে আছি সেটা জানলো কিভাবে?
কে জানিনা বস তবে বললো উনিও বীরেন ভট্টাচার্যের পিছনে পরে আছেন অনেকদিন ধরে, আমাকে বললো যদি প্রমাণ নিতে চান তাহলে বসকে বলবেন এই নাম্বারে ফোন করতে।
তারপর?
তারপর আমি আমির ভাইজানকে বলি ব্যাপারটা উনি ফোন করেন, মেয়েটা টাকা চায়।






[/HIDE]
 
[HIDE]
আর তোমরা টাকা নিয়ে বেরিয়ে পরো তাইতো?
মানে হ্যাঁ বস, এখানে এসে আমির ভাইজান আমাকে একটু দূরে অপেক্ষা করতে বলে নিজে একাই যান, অনেকক্ষণ হয়ে গেল কিন্তু উনি ফিরলেন না।
ইউ ফুল আর তুমি এটা এতক্ষণ পরে আমাকে জানাচ্ছো? আমাকে ঠিকানটা দাও আমি আসছি আর অন্যদের বলে দিচ্ছি ওখানে পৌঁছে যেতে।
বস আপনি তাড়াতাড়ি চলে আসুন, আমি বাকিদের ডেকে নিচ্ছি।
ঠিক আছে, যতক্ষণ না আমরা পোঁছাচ্ছি তুমি নিজের খেয়াল রাখো।
"এমন বোকামি কেন করলে আমির" স্বগোতোক্তি করে দ্রুত গাড়িতে উঠে স্টার্ট দেয় অভয়। মাহমুদের দেওয়া ঠিকানায় পৌঁছে দেখে সেখানে একটা পুরনো কারখানা আছে, কিন্তু সে আর কাউকে দেখতে পারে না তবে কি এখনো কেউ এসে পৌঁছায়নি? মাহমুদ কোথায়? ওকেও কি ধরে নিয়েছে নাকি আমির আর মাহমুদকে.. চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে অভয়ের সে দ্রুত পায়ে কারখানার ভিতরে ঢুকে যায় কিন্তু সেখানেও অন্ধকার শুধু একটু দূরে একটা ঘরে একটা নাইট বাল্ব জ্বলছে বলে মনে হলো অভয় তাড়াতাড়ি ওই ঘরে যায় কিন্তু সেখানেও ফাঁকা, না ফাঁকা নয় সেখানে হাত পা বাধা অবস্থায় পড়ে আছে মাহমুদ, তাড়াতাড়ি সে মাহমুদের বাধন খুলে তাকে মুক্ত করে "মাহমুদ মাহমুদ, তুমি ঠিক আছো? আমির কোথায়?"
বস্ ভাইজানকে ওরা অন্য ঘরে আটকে রেখেছে মারধর করছে।
কোথায়?
আসুন। বলে কোনোমতে উঠে দাঁড়ায় মাহমুদ তারপর পথ দেখিয়ে নিয়ে চলে, কিছুদূর গিয়ে একটা বড়ো ফাঁকা ঘরে পৌঁছায় ওরা, হটাৎ পরপর অনেককটা বড়ো লাইট জ্বলে ওঠে তার কয়েকটা সোজা অভয়ের মুখ লক্ষ্য করে এই অপ্রত্যাশিত আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে যায় হখত দিয়ে মুখটা আড়াল করে অভয় এবার হটাৎ তার ষষ্ঠেন্দ্রিয় সজাগ হয়ে উঠে তাকে বিপদের ইঙ্গিত দেয় সঙ্গে সঙ্গে সে কোমরের পিছনে রাখা পিস্তলটা নিতে চায় কিন্তু পারে না সেই মুহূর্তে ঘাড়ের কাছে একটা সুই ফোটার মতো ইঞ্জেকশন ফোঁটে কোনোমতে ঘাড় ঘুরিয়ে বোঝে শুধু আমির নয় সে নিজেও বোকামি করে ফেলেছে, একটা হাত দিয়ে মাহমুদের গলা টিপে ধরতে যায় কিন্তু তখনই পিছন দিকে মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পায় দুচোখে অন্ধকার নেমে আসে তারপর আর কিছু মনে নেই।

রয়ের বাড়ি থেকে ফিরে নিজের অ্যাপার্টমেন্টে ঢোকার আগেই থামতে হয় আমিরকে শহরের বিলাশবহুল এই অ্যাপার্টমেন্টটা তার জন্য বরাদ্দ হয়েছে এখান থেকে কিছুটা দূরেই বীরেন ভট্টাচার্যের বাড়ি এখানে বীরেন বাবুর দলের লোকজন যেমন থাকে তেমনি থাকে তাদের দলের লোকজন। গেটের সামনেই তাকে গাড়ি থামাতে হয় কারণ উসমান এসে দাঁড়িয়েছে, আমির গাড়ি থেকে নামে
কি ব্যাপার উসমান, এখন এখানে?
ভাইজান একটা খবর ছিল আপনাকে ফোন করছিলাম কিন্তু নেটওয়ার্ক পাচ্ছিলাম না তাই নিজে চলে আসতে হলো।
কি খবর?
আমার ভাই মাহমুদ খবরটা এনেছে, ওর সাথে নাকি একজন মেয়ে দেখা করেছে যার কাছে বীরেন ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে প্রমাণ আছে, কিন্তু উনি শুধু আমাদের বসকেই দেবেন এদিকে আপনি তো জানেন আমি বসকে একটু ভয় পাই তাই আপনাকে জানালাম।
মেয়েটা কে?
তা জানিনা মেয়েটা পরিচয় দেয়নি, সে বলেছে যদি প্রমাণ নিতে চায় তাহলে যেন গিয়ে দেখা করে।
কি প্রমাণ?
একটা ভিডিও আছে নাকি।
আমির ফোন বার করেছে দেখে উসমান জিজ্ঞেস করে: বসকে ফোন করছেন?
হ্যাঁ।
ভাইজান যদি কিছু মনে না করেন আমি একটা কথা বলি।
বলো।


ভাইজান আগে চলুন আমরা গিয়ে প্রমাণটা হাতিয়ে নি‌ই তারপর নাহয় সোজা বসের ওখানে যাবো, দেরী করলে যদি ওই মেয়েটা হাতছাড়া হয়ে যায় বা ধরুন বীরেন ভট্টাচার্য জানতে পেরে গেল তখন তো ওই মেয়েটার জীবন ডেঞ্জার হয়ে যাবে।
আমির একবার উসমানের দিকে তাকায় একটু দোনোমনো করে, রয়কে না জানিয়ে যাওয়াটা কি ঠিক হবে? শেষমেশ বলে: ঠিক আছে চলো গাড়িতে বসো।
তুমি ঠিক জানো মেয়েটা কোথায় আছে? জিজ্ঞেস করে আমির।
মাহমুদ মেয়েটার পিছু নিয়ে দেখে এসেছে, আপনি চলুন।
গাড়ি চালাতে চালাতে আমিরের ফোনে টুং করে ম্যাসেজ ঢোকে, স্টিয়ারিং এ একটা হাত রেখে অপর হাতে মোবাইলটা নিয়ে মেসেজটা দেখে তার দলের বশিরের ম্যাসেজ "ভাইজান সাবধানে থাকুন উসমান আর মাহমুদ গদ্দারি করেছে", ম্যাসেজটা পড়ে আমির পাশে বসা উসমানের দিকে তাকায় সেও সোজা আমিরের দিকে তাকিয়ে আছে কয়েকসেকেণ্ড তারপর হটাৎ চকিতে উসমান কোমরে গোঁজা একটা ছুরি বার করে আমিরকে আঘাত করতে যায় আর আমির বাহাতের কনুই দিয়ে উসমানকে আঘাত করে কিন্তু এর ফলে স্টিয়ারিং এ আমিরের নিয়ণ্ত্রন হারিয়ে যায় গাড়িটা রাস্তার পাশে কেদরে গিয়ে একটা গাছে ধাক্কা মারে দুজনেই সামনে হুমড়ি খেয়ে পরে।
উসমানের হাত থেকে ছুরিটা গাড়িতে নীচে পরে যায়, আমির এই সুযোগে আরো একটা মোক্ষম ঘুষি মারে উসমানের চোয়ালে সে অচেতন হয়ে যায়, আমার এবার গাড়িটা চালানোর চেষ্টা করে কিন্তু বোঝে গাছে ধাক্কা খেয়ে কিছু একটা খারাপ হয়েছে এ গাড়ি এখন চলবে না, সে গাড়ি থেকে নেমে আসে, তার নিজের মাথায় চোট লেগেছে, বুকেও লেগেছে কিন্তু এখন এসব ভাবার সময় নেই তাড়াতাড়ি আবার গাড়ি থেকে ফোনটা আনতে গিয়ে পায়না, নীচে একটু খোঁজাখুঁজি করতেই ফোনটা হাতে ঠেকে সেটা নিয়ে বেরিয়ে আসে, রয়কে জানাতে হবে তাড়াতাড়ি রয়কে ফোন করতে গিয়ে থেমে যায় কারণ তখনই আরও একটা গাড়ি এসে থামে এবং সেটা থেকে যারা নামে তারা যে তার বন্ধু নয় এটা দেখেই বুঝতে পারে, আমির উল্টোদিকে দৌড়াতে শুরু করে কিন্তু বেশীদূর যেতে পারে না ধরা পরে যায়, লোকগুলো এবার হামলে পড়ে, আমির একাই ওদের সাথে লড়ার চেষ্টা করে কিন্তু তারা সংখ্যায় অনেক তাই বেশীক্ষণ যুঝতে পারে না আচমকা চোয়ালে একটা মোক্ষম ঘুষি খেয়ে ছিটকে পড়ে, এবার লোকগুলো তার উপর লাথির বর্ষণ করতে থাকে।
একটু পরে চারজন লোক তার দুটো হাত ধরে টেনে দাঁড় করায়, সে দেখে ইতিমধ্যে উসমানের জ্ঞান ফিরেছে, সে মুচকি হেসে তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে, আমির একটু থুতু ফেলে ঘৃণাভরে বলে: উসমান গদ্দার।
কি করবো ভাইজান? বাইরের শহর থেকে এসে আমাদের উপর হুকুম চালাবে এটা কতদিন সহ্য করবো আর তাছাড়া..
তাছাড়া?
সামনে ইলেকশন বীরেন বাবু নিশ্চিত জিতবেন এবং এবার উনি‌ই সিএম হচ্ছেন, উনি কথা দিয়েছেন আমাকে আর আমার ভাইকে ওনার ক্যাবিনেটে কোনো না কোনো পদ দেবেন বলেছেন।
আর তোরা বোকার মতো ওনার কথায় বিশ্বাস করলি? একটু ব্যাঙ্গাত্মক হাসি হাসে আমির, এই হাসিতে উসমানের মুখটা গম্ভীর হয়ে যায় সে এগিয়ে এসে আমিরের তলপেটে পরপর কয়েকটা ঘুষি মারে, আর্তনাদ করে ওঠে আমির।




[/HIDE]
 
[HIDE]
মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে আছিস তবুও তেজ কমেনা তোর?
আমিরের মুখে বিদ্রুপের হাসি দেখা দেয়, তারপর আবার সে বলে: মেরে দে আমাকে কিন্তু তারপর রয় তোদের কি অবস্থা করবে তোরা ভাবতেও পারছিস না।
রয়... তোকে খুব ভালোবাসে না?
নিজের ভাইয়ের মতো ভালোবাসে।
সেইজন্যই তোর বিপদের কথা শুনে তোকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেই বীরেন বাবুর জালে ধরা পড়বে,
কথাটা শুনে হতভম্ব হয়ে যায় আমির, উসমান আবার বলে: ঠিকই শুনছিস তুই আমার ভাই মাহমুদ ওকে তোর বিপদের কথা জানাবে তারপর ওকে নিয়ে সোজা বীরেন বাবুর হাতে তুলে দেবে তারপর যা করার উনি করবেন।
আমির হিংস্র জন্তুর মতো ঝটকা মেরে নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করে কিন্তু ব্যর্থ হয়, ওর এই প্রচেষ্টা দেখে উসমান ও বাকি লোকগুলো হাসতে থাকে।
"গদ্দার, নেমকহারাম" আমির ফুঁসতে থাকে রাগে ঘেন্নায়, কিন্তু বেশীক্ষণ নয় আবার তলপেটে কয়েকটা ঘুষি খেয়ে গোঙাতে থাকে।
আচ্ছা ওর নাম কি সত্যিই রয়? কারণ বীরেন বাবু বলছিলেন ওর নাম এআরসি?
আমির চুপ করে থাকে।
বলবি না? ঠিক আছে। যাক অনেক সময় দিয়েছি তোকে এবার তোকে শেষ করতে হবে আরও অনেক কাজ আছে ,বস্তি উচ্ছেদ করতে হবে।
ওই বস্তির একটা লোকের গায়েও যদি আঁচড়‌ও পরে তাহলে তোকে আমি ছাড়বো না উসমান।
তাই বুঝি? কিন্তু তুই সেটা করবি কিভাবে? তোকে তো এখানেই মেরে ফেলে যাবো। এবার উসমান পাশের একজনের হাত থেকে পিস্তলটা নেয় তারপর আমিরের বুকের দিকে তাক করে, কিন্তু তবুও আমির ঘৃণাভরে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে মনে মনে বলতে থাকে "আমাকে ক্ষমা কোরো রয়, আমি তোমার হেফাজত করতে পারলাম না, আমি আম্মির হেফাজত করতে পারলাম না"। হটাৎ গুলি চলার কানফাটানো আওয়াজ হয়, প্রথমে একটা তারপর একসাথে পরপর অনেকগুলো।

গভীর জল থেকে ধীরে ধীরে উঠে আসার মতো অচেতনতার গভীর অন্ধকার থেকে ধীরে ধীরে চেতনার আলোয় ফিরছিল অভয়, ধীরে ধীরে তার জ্ঞান ফিরলো, চেতনা সম্পূর্ণ জাগ্ৰত হলো তবুও তাড়াহুড়ো না করে যেভাবে আছে সেইভাবেই র‌ইলো সে, সব ঘটনা একে একে মনে পরলো, বোঝার চেষ্টা করলো বর্তমানে কোথায় আছে সে, কিভাবে আছে, তার বর্তমান পরিস্থিতি কেমন? আরও একটা প্রশ্ন মাথায় ঘুরতে লাগলো আমির কোথায়? কি হয়েছে ওর, ওকে কি এরা মেরে ফেলেছে?
কোথায় আছে সে বোঝা মুশকিল, কিন্তু খুবই খারাপ পরিস্থিতিতে আছে সেটা বুঝতে পারলো, হাত পা চারটে শক্ত দড়ি দিয়ে বাধা আছে, নড়ার উপায় নেই তার উপরে একটু নড়ার চেষ্টা করতেই অনুভব করলো পুরো শরীরে প্রচণ্ড ব্যাথা,অভয় বুঝলো অজ্ঞান অবস্থায় তাকে প্রচণ্ড মারধর করা হয়েছে ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করলো সে এক বিশেষ সাধনা বা মেডিটেশনে লিপ্ত হলো ওই বন্দী অবস্থাতেই।
তার গুরু শেখর রাও তাকে মার্শাল আর্টের বিভিন্ন টেকনিকের সাথে একটি বিশেষ গুপ্ত বিদ্যা শিখিয়েছিলেন নিজের মধ্যেই নিজের আরো এক বিকল্প সত্তাকে জাগ্ৰত করার, এই বিশেষ বিদ্যাটি শেখর রাও শিখেছিলেন এক পাহাড়ি উপজাতির লোকের থেকে, এই বিদ্যাটির ফলে দেহ ও মনের শক্তিকে একত্রিত করে তাদের চেতনাকে পরস্পরের থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায়, তখন দেহের আঘাত যত বড়োই হোক সেটা আহত করে না, শেখর রাও নিজে একজন কম্যাণ্ডো প্লাস এজেন্ট ছিলেন অসংখ্য বার তাকে শত্রুর হাতে আটকা পরে অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে তখন এই বিশেষ বিদ্যাটির সাহায্যে তিনি আঘাত সহ্য করে নিতেন। পরবর্তীকালে তিনি এই বিদ্যাটি সযত্নে শেখান তার যোগ্যতম শিষ্য অভয়কে যদিও এটা এক দুদিনের ব্যাপার নয় দিনের পর দিন অভ্যাস করতে হয়, সাধনা করে যেতে হয় তবে আয়ত্তে আসে। আহমেদ ভাইয়ের দলে থাকার সময় কয়েকবার তাকে এই বিদ্যা প্রয়োগ করতে হয়েছে আর আজ আবার করতে হবে, আঘাত টা সহ্য করতে হবে

হটাৎ মুখে জলের ঝাপটা এসে লাগে অভয়ের, ধীরে ধীরে চোখ খোলে।সামনে কয়েকজন গুণ্ডা প্রকৃতির লোক দাঁড়িয়ে আছে আর তাদের পিছনে দাঁড়িয়ে আছে স্বয়ং বীরেন ভট্টাচার্য, দুপাশে একটু পিছনে রকি আর ধীরেন ভট্টাচার্য, বীরেন বাবু তার কাছে এগিয়ে আসেন "অবশেষে আমাদের দেখা হলো, মিস্টার এআরসি, দেখুন আপনার শহরে আপনি দেখা করতে আসেননি কিন্তু আমার শহরে আমি এসেছি"।

স্বয়ং বীরেন ভট্টাচার্য যে। কোনোমতে কথা বলে অভয়।
হুমম, আমাকে আসতেই হলো ,কিছু কথা জানার আছে।
আমাকে মেরে ফেল এরকম সুযোগ বারবার পাবি না,
মেরেই ফেলতাম কিন্তু তারপর ভাবলাম বাণিজ্যনগরীতে তুই আর তোর লোকেরা আমার সাথে যা করেছিস সেটার প্রতিশোধ না নিয়ে এত সহজে মারবো কেন?
অভয়ের ঠোঁটে একটা বিদ্রুপের হাসি ফুটে ওঠে সে বলে: আমাকে মেরে ফেল আমি যদি এখান থেকে বেঁচে বেরোতে পারি তাহলে তোকে বাঁচতে দেবো না।
তোর মনে হয় আমি তোকে এখান থেকে বেঁচে বেরোতে দেবো? আচ্ছা একটা কথা বলতো।
কি কথা?
আমার পিছনে পরলি কেন? শুধুমাত্র বাণিজ্যনগরীতে নিজের ব্যাবসা ছড়াতে চেয়েছি তাই?
অভয় উত্তর না দিয়ে চুপ করে আছে দেখে আবার জিজ্ঞেস করেন প্রশ্নটা কিন্তু তাও অভয় চুপ করে থাকে।
বলবিনা? আচ্ছা অন্য প্রশ্ন করছি আমার সমস্ত টাকা তুই নিয়েছিস আমি জানি? কোথায় টাকাগুলো?
বিলিয়ে দিয়েছি।
কাদের?
অনেকেই আছে যাদের তুই সর্বনাশ করেছিস।
শিউলী কোথায়?
তোর নাগালের বাইরে।
কোথায়?
অভয় এবার চুপ করে যায়। বীরেন ভট্টাচার্য এবার একহাতে অভয়ের লম্বা চুল টেনে ধরেন "বল কোথায় আছে আমার টাকা, বল"
বললাম তো বিলিয়ে দিয়েছি।
ওত টাকা তুই বিলিয়ে দিয়েছিস এটা আমাকে বিশ্বাস করতে হবে?
সেটা তোর ব্যাপার।
শিউলীকে কোথায় রেখেছিস?
অভয় আবার চুপ হয়ে যায় দেখে বীরেন বাবু বলেন: বলবিনা। আচ্ছা সত্যি বলতো তুই কে?
আমার নাম তো জানিস "এআরসি"
ওটা তো আসল নয়, তোর আসল নাম কি?
আবার অভয় চুপ করে যায়।
এটাও বলবিনা বেশ তোর ইচ্ছা,এবার বীরেন বাবু একজনের হাত থেকে রবারের চ‌ওড়া শক্ত অথচ নমনীয় লম্বা একটা বেল্টের মতো জিনিস হাতে তুলে নেন বোঝাই যায় এগুলো দিয়েই এতক্ষণ ওরা অভয়কে মেরেছে "তবে এটা জেনে রাখ তোকে এখনই মারবো না আরও অনেক হিসাব বাকি আছে আগে তোর মুখ থেকে শিউলীর ঠিকানা আর আমার টাকার হদিস বার করবো তারপর তিলে তিলে মারবো" বলে ওই বেল্ট দিয়ে অভয়কে মারতে শুরু করেন, কিছুক্ষণ পর থেমে বড়ো বড়ো নিঃশ্বাস ফেলতে থাকেন।
অভয় বিদ্রুপের স্বরে বলে: ভুল করছিস, মেরে ফেল আমাকে। কথাটা বলার সাথেই চোয়াল একটা ঘুষি খেলো অভয় আর ঘুষিটা মেরেছে রকি। এবার রকির পিছনে মাহমুদকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাকে একটা প্রশ্ন করে অভয় "কেন এরকম করলে মাহমুদ, কেন বিশ্বাসঘাতকতা করলে?"
মাহমুদ হেসে বলে "সেটা না জানলেও চলবে"
আমির কোথায় মাহমুদ?
বডিটা নিয়ে উসমান ভাইজান কি করেছে বলা মুশকিল।
দোয়া করো আমি যেন এখান থেকে বেঁচে বেরোতে না পারি, আর যদি পারি তাহলে বীরেন ভট্টাচার্যের আগে তোমাদের দুই ভাইকে মারবো। কথাটা বলার সাথে সাথে পেটে দুটো ঘুষি আছড়ে পরে তারপর রকির গলা শুনতে পায়: মামা বলোতো এটাকে এখানেই খতম করে দিচ্ছি।
সবুড় কর রকি এত তাড়া কিসের, আগে আমার অপমানের জ্বালাটা নেভাই।
আবার বিদ্রুপের হাসি শোনা যায় অভয়ের মুখ থেকে সাথে কিছু কথা "ওই অপেক্ষায় থাকিস না বীরেন ভট্টাচার্য, তাহলে তোর জীবন নিভে যাবে"।
রকি এবার পিস্তল বার করে কিন্তু এবারও বীরেন বাবু তাকে নিরস্ত করেন,তারপর কয়েকজনকে আদেশ দেন "একে সামলে রাখবি যেন পালাতে না পারে, তোরা এর খাতিরযত্ন করতে থাক, কিন্তু দেখিস মেরে ফেলিস না" তারপর অভয়ের দিকে ফিরে বলেন "আমি আসছি বস্তিটা দখল করতে হবে, এতদিন তুই আটকে রেখেছিলি, এখন তুইও ওখানে নেই আর তোর সেই বিশ্বস্ত কুকুর টাও নেই তাই আমাকে আটকানোর কেউ নেই"।
কথাটা শুনেই চমকে ওঠে অভয় ওখানে মা আছে, এই লোকটা মাকে দেখতে পেলে তাকে ছাড়বে না কিন্তু এইমুহূর্তে সে চাইলেও কিছু করতে পারবে না, কোনোমতে যদি হাতদুটো মুক্ত করতে পারতো, যদিও এই শহরে আসার সাথে সাথেই মায়ের সুরক্ষার ব্যবস্থা করে রেখেছে ওখানে বাণিজ্যনগরী থেকে আনা নিজের অতি বিশ্বস্ত কয়েকজন লোক আছে যার কথা সে আর আমির ছাড়া কেউ জানেনা তাদের কাজ সাধারণ ভাবে বসবাস করা কিন্তু যদি কখনো প্রয়োজনে হয় তাহলে তৎক্ষণাৎ মাকে নিয়ে বস্তি ছেড়ে চলে যাবে এইরকমই হুকুম দেওয়া আছে আর অভয় জানে ওই লোকগুলো তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে না। বীরেন বাবু বলে চলেন: ওরা এতদিন আমাকে জ্বালিয়েছে আজ আমি ওদের পুরো বস্তি জ্বালিয়ে দেবো"।

[/HIDE]
 
[HIDE]
বীরেন ভট্টাচার্য... একটা শান্ত অথচ দৃঢ় স্বর শোনা যায় অভয়ের মুখ থেকে যা করার কর কিন্তু আমাকে বাঁচিয়ে রাখিস না।
চিন্তা করিস না, বস্তি দখল করে এসে তোকে মারবো ততক্ষণ আমার লোকেরা তোর খাতিরযত্ন করবে। বলে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন বীরেন বাবু আর তার পিছনে রকি ও ধীরেন বাবু, যাওয়ার আগে ধীরেন বাবু অভয়ের কাছে এসে তাকে বললেন: কে তুই? তোকে আমার ভীষণ চেনা চেনা লাগছে।
আপনার দাদা ভুল করলেন আমাকে বাঁচিয়ে রেখে, চিন্তা নেই কথা দিচ্ছি যেদিন আমার পরিচয় পাবেন সেদিন পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাবে।
তার আগে আমি তোকে শেষ করবো।
ধীরেন... বীরেন বাবুর ডাক শোনা যায়, ধীরেন বাবু অভয়কে ছেড়ে বেরিয়ে যান।
দাদা ওকে ছেড়ে দিয়ে ভুল করছো।
কে বললো ওকে ছেড়ে দেবো, আগে শিউলীর হদিস আর এটা জানি আমার টাকা কার কার কাছে রেখেছে তারপর ওকে মেরে ফেলতে কতক্ষণ।
ওর মুখটা ভীষণ চেনা চেনা লাগছে কার সাথে যেন মিল আছে।
হুমম এটা তুই ঠিক বলেছিস, আমারও সেটাই মনে হচ্ছিল, ঠিক আছে বস্তিতে যে বাড়িতে ও থাকতো সেখানে কিছু না কিছু ঠিক জানা যাবে।
বীরেন ভট্টাচার্য আর তার সাথের লোকজন ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরে অভয় একটু ধাতস্থ হয়ে ভালো করে চেয়ে দেখে ঘরে এখন টোটাল চারজন লোক আর চারজন‌ই পুরো গুণ্ডা প্রকৃতির, ওরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছে অভয়ের জিনিসগুলো নিয়ে।
একজন বলে ঘড়িটা নিশ্চয়ই খুব দামী।
হ্যাঁ, মোবাইলটাও।
জুতো জোড়া দেখো, দামি তো বটেই বিদেশি কোম্পানির মনে হচ্ছে।
অভয় ওদের উদ্দেশ্যে বলে: দেখে কি লাভ? বীরেন ভট্টাচার্য ওগুলো কোনোদিন‌ও তোমাদের দেবে না, কিন্তু আমি দিতে পারি।
লোকগুলো এবার একসাথে ওর দিকে তাকায়, একজন বলে: তোর কি মনে হয় আমাদের লোভ দেখালে তোকে যেতে দেবো?
আমি শুধু সত্যিটা বললাম আর সেটা তোমরাও জানো।
তার দরকার নেই তোকে মারার পরে এগুলোই আমরা ভাগ করে নেবো।
ওগুলো আমি এখান থেকে যাওয়ার সময় নিয়ে যাবো।
তোর এখনো মনে হয় তুই এখান থেকে পালাতে পারবি?
সেটা দেখতেই পারবে।
তবে রে। বলে লোকগুলো আবার অভয়ের জিনিসগুলো রেখে ঘরের এক কোনে রাখা কয়েকটা নীরেট রবারের ডাণ্ডা হাতে নেয়, অভয় আবার চোখ বন্ধ করে মেডিটেশনে ডুবে যেতে থাকে, জামাটা অনেক আগেই খুলে ফেলা হয়েছে গায়ের গেঞ্জিটাও আগের প্রহারের পরে অক্ষত নেই সেটাও গায়ে নেই, শুধু জাঙ্গিয়া পরে আছে সে, খালি গায়ে পিঠে বুকে পাঁজরের উপর একের পর এক আঘাত পরতে থাকে একটা সময় আবার সে অচেতনতার অন্ধকারে তলিয়ে যায়।

আমাকে ক্ষমা কোরো রয়, আমি তোমার হেফাজত করতে পারলাম না, আমি আম্মির হেফাজত করতে পারলাম না"। মনে মনে নিজেকে ধিক্কার দিচ্ছে আমির, রয় তাকে নিজের ভাইয়ের মতো দেখে ভালোবাসে তার আম্মিকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছে আর এখন সে রয়ের আম্মিকে বাঁচাতে পারছে না, ওই বস্তিতে যদিও আম্মির হেফাজতের জন্য লোক আছে কিন্তু তারা কি সময় মতো আম্মিকে নিয়ে বেরোতে পারবে? আমির আর ভাবতে পারে না সে চোখ বন্ধ করে, হটাৎ গুলি চলার কানফাটানো আওয়াজ হয়, প্রথমে একটা তারপর একসাথে পরপর অনেকগুলো, আমির অনুভব করে যারা তার হাত ধরে রেখেছিল তারা মাটিতে পরে গেল আর উসমান ও আরো কয়েকজন পালাচ্ছে, আমিরের পিছন থেকে কেউ বা কারা ওদের লক্ষ্য করে গুলি চালাচ্ছে।
আমির পিছনে ফিরে তাকায় দেখে বশির ও আরও কয়েকজন উসমান আর তার দলের উপর আক্রমণ করেছে, এবার বশির আমিরের কাছে আসে "ভাইজান আপনি ঠিক আছেন?" তারপর বাকিদের উদ্দেশ্যে হুকুম দেয় "এই ওদের পিছু নে সবকটাকে শেষ করবো"।
আমির ওদের থামায়: এখন দরকার নেই বশির কিন্তু.. কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে যায় সে তারপর একটু চুপ থেকে বলে তুমি কিভাবে জানলে যে উসমান গদ্দারি করেছে?
ভাইজান ওর উপর অনেকদিন থেকেই আমার নজর ছিল, কিন্তু প্রমাণ পাইনি।
এখন কি এমন প্রমাণ পেয়েছো?
আপনি বলেছিলেন মনে আছে যে বীরেন ভট্টাচার্যের কাছাকাছি থাকবে এমন একজন ফিট করতে?
হ্যাঁ।
সেরকম লোক ছিল সেই বলেছে যে ইদানিং বেশ কয়েকদিন ধরে উসমান আর ওর ভাই মাহমুদ ঘনঘন বীরেন ভট্টাচার্যের সাথে দেখা করছে আগে যেত না এখন কয়েকদিন ধরে যাচ্ছে দীর্ঘক্ষণ কথা বলছে, যদিও কি কথা হতো সেটা সে জানতে পারেনি।
তারপর?
তারপর আজ সে আমাকে জানায় বীরেন ভট্টাচার্য ভয়ংকর কিছু প্ল্যান করেছে তখনই আমি আপনার ওখানে যাই কিন্তু আমি পৌঁছনোর আগেই আপনি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যান‌
তখনই তুমি আমাদের পিছু নাও এবং আমাকে ম্যাসেজ করো।
না, আমি আপনার অ্যাপার্টমেন্টের সিকিউরিটি র সাথে কথা বলি, সেই বলে আপনি এই কিছুক্ষণ আগে একজনের সাথে বেরিয়ে গেছেন, আমি বুঝতে পারি সে কে তবুও উসমানের ছবি দেখিয়ে শিওর হ‌ই।
তুমি আমাকে খুঁজে পেলে কিভাবে?
আমি সিকিউরিটি কে জিজ্ঞেস করে জেনে নি‌ই আপনি কোনদিকে গেছেন, তারপর ওইদিকে র‌ওনা দি‌ই ভাগ্য ভালো রাস্তাতেই আপনাদের পেয়ে যাই, নাহলে কোথায় নিয়ে যেতো বলা মুশকিল।

ম্যাসেজটা যে ওকে নিয়ে ছিল সেটা কোনোভাবে ও বুঝতে পারে, কিন্তু তোমাকে ধন্যবাদ, তুমি ঠিক টাইমে না এলে..
আমি ট্রাফিক সিগন্যালে একটু আটকে পরি তারপর আবার একটা লরি আমাদের সামনে অনেকক্ষণ থাকায় পিছিয়ে পড়ি ,তারপর রাস্তায় আপনার গাড়িটা গাছের সাথে ধাক্কা লেগে থাকতে দেখি তখনই বুঝি আপনি কাছাকাছি কোথাও আছেন তারপর খুঁজতে খুঁজতে চলে আসি ইস যদি আরেকটু আগে আসতে পারতাম তাহলে আপনাকে এতটা কষ্ট পেতে হতো না।
যাইহোক বশির এখন তাড়াতাড়ি চলো বস্তিতে হামলা হবে তার আগে আমাদের ওখানে গিয়ে বসকে সব জানাতে হবে,আমাদের ওখানের লোকদের বাঁচাতে হবে আর আরো একজনকে বাঁচাতে হবে তাড়াতাড়ি চলো।
কিন্তু ভাইজান এইমুহূর্তে আপনার চোট লেগেছে আগে ডাক্তারের কাছে চলুন।
তার সময় নেই তাড়াতাড়ি চলো।
গাড়িতে উঠেই আমির বশিরের কাছে ফোন চায় ওর ফোনটা উসমান ভেঙে দিয়েছে, ফোন নিয়ে সে রয়কে ফোন করে কিন্তু এখন রয়ের ফোন সুইচড অফ, আমিরের দুশ্চিন্তা শতগুণ বেড়ে যায়, একটু পরেই তারা বস্তিতে পৌঁছায় তখন সেখানে রীতিমতো ফায়ারিং চলছে, এই এলাকায় আগে থেকেই পুলিশের লোকের ঢোকা বারণ আছে তার উপর বীরেন ভট্টাচার্য নিজের প্রভাব খাটিয়ে আজ রাতে এদিকে কোনো অবস্থাতেই পুলিশের না আসার ব্যাপারটা আরো পোক্ত ও সুনিশ্চিত করেছেন তাই দুপক্ষই নিশ্চিন্তে গুলি চালাচ্ছে, যদিও বীরেন ভট্টাচার্য উপস্থিত নেই কিন্তু জগা রকি সহ বীরেন ভট্টাচার্যের দলের বেশ কয়েকজন বড়ো বড়ো মাথা আছে সাথে আরও কিছু লোক।
বীরেন ভট্টাচার্য ভেবেছিলেন এআরসি আর আমিরের অনুপস্থিতিতে বস্তিতে তার দলের লোকদের আটকানো তো দূরের কথা সামনে আসতেও কেউ সাহস পাবে না, উসমান ও মাহমুদের সাহায্যে খুব সহজেই এখানকার দখল নিতে পারবেন কিন্তু বাস্তবে হলো উল্টো বশির আগেই এখানের কয়েকজনকে জানিয়ে দিয়েজিল যে উসমান আর মাহমুদ গদ্দারি করেছে তাই মাহমুদকে আসতে দেখেই এলাকার লোক আটকে দেয় ফলে দুপক্ষে ফায়ারিং শুরু হয়ে যায়।
মাহমুদ একপ্রকার নিশ্চিত ছিল যে তার দাদা আমিরকে খতম করে দিয়েছে তাই সে নিশ্চিন্ত মনে সাহসের সাথে বস্তিতে ঢুকে পরেছিল কিন্তু হঠাৎ করেই আমিরকে আসতে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো, বস্তির দিক থেকে তাদের উপর ফায়ারিং তো হচ্ছিলোই এখন পিছন থেকেও আমির বশিররা গুলি চালাতে লাগলো যদিও লড়াইটা একেবারে খোলা মাঠে হচ্ছিল না পুরো বস্তিটা অনেকটা এলাকা জুড়ে এবং তার মধ্যে অসংখ্য অলিগলি আছে, সেখানেই প্রায় প্রতি গলিতে কারো না কারো লাশ পড়ে আছে বা কোথাও কেউ আহত হয়ে গোঙাচ্ছে।
বস্তিটা এবং এখানকার অলিগলি বশির আর মাহমুদের দলের লোক এবং বস্তির বাসিন্দারা খুব ভালো করে চেনে আমির‌ও এতদিন ঘুরে ভালোই চিনে গেছে কিন্তু রকি জগা আর ওদের নিজস্ব দলের লোকেরা ততটা ভালো চেনেনা তার উপরে রাতের বেলা, ফলে তাদের লুকোনোর জায়গা র‌ইলো না এবং যেখানেই যায় বা লুকোতে চেষ্টা করে সামনে বিপক্ষের লোক তাদের খুঁজে পায়, একে একে তারা মারা মরতে লাগলো মাহমুদ ও বুঝলো এখানে সে আর বেশীক্ষণ থাকতে পারবে না থাকলে মারা পড়বে ফলে সে পালাতে বাধ্য হলো অপরদিকে রকি জগা এখনো বেঁচে আছে বটে কিন্তু তারাও বুঝলো এখান থেকে না পালালে তারা বাঁচবে না ফলে তারাও পিছু হটলো এবং কোনোমতে বস্তি থেকে বেরিয়ে পালিয়ে বাঁচলো।




[/HIDE]
 

Users who are viewing this thread

Back
Top