What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

প্রতিশোধ: দ্যা রিভেঞ্জ by Monen2000 (1 Viewer)

[HIDE]
নিজের অফিসে একা বসে ছিলেন বীরেন ভট্টাচার্য একটু পর বাইরে থেকে ভাই ধীরেন বাবুর গলার আওয়াজ এল "দাদা বাড়ি চলো রাত হয়েছে"।
তুমি যাও আমি একটু পর আসছি, এখন একটু একা থাকতে চাই।
আসলে বাইরে যতই নিজেকে শক্ত দেখান ভেতর অনেকটাই ভেঙে পরেছেন বীরেন বাবু, তার এতবছরের সঞ্চিত ধন কেউ এভাবে সাফ করে দিয়ে যাবে এটা কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না তার কিন্তু সেটা তো হয়েছে, এখন কথা হচ্ছে কে করেছে?। গত কয়েকমাস ধরেই বুঝতে পারছিলেন কেউ বা কারা যেন তার পিছনে লেগেছে, তার কন্সট্রাকশন সাইটে তার‌ই দলের লোকদের মেরে পুড়িয়ে দিয়েছে, তার রক্ষিতাকে কেউ সাথে নিয়ে গেছে সেখানেও তার দলের কিছু লোককে শেষ করেছে, তার সঞ্চিত ধন সাফ করেছে এবং তারপরেও খবর পেয়েছেন যে শহর জুড়ে তার যে কটা চোলাই মদের ঠেক ছিল সবকটায় হামলা হয়েছে সব শেষ করে দিয়েছে। বীরেন বাবু ভেবেছিলেন এসব সরকারের কাজ তাই তাকে শেষ করেছেন কিন্তু তারপরেও...... কে করেছে সেটা কিছুতেই ধরতে পারছেন না।
ছোটো থেকেই মস্তান গোছের ছিলেন বীরেন ভট্টাচার্য, স্কুলে উচ্চশিক্ষা পাঠের সময়‌ই ভাই এবং ক্লাসের আরও কয়েকজন ছেলে নিয়ে দল গড়েছিলেন তারপর কলেজে উঠে দলে আরও ছেলে যোগ দেয়। কলেজ ছাড়ার পরে প্রমোটিংএর ব্যাবসা শুরু করেন বাপের‌ও অনেক টাকা ছিল দুনম্বরি টাকা তাই ব্যাবসা শুরু করতে অসুবিধা হয় নি, এই প্রোমোটিংএর ব্যাবসার সাথে এলাকায় নিজের ক্ষমতা দেখাতে শুরু করেন, দলে যারা ছিল তারাও তো খুব সুবিধার ছিল না তার‌ই মতো ছিল, কত লোকের জমি কেড়ে নিয়েছেন কত লোককে স্রেফ গায়েব করে দিয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই, কত মেয়ে-ব‌উদের সর্বনাশ করেছেন তার হিসাব নেই, বাপের টাকা আর কিছু ক্ষমতাশালী লোকের সাথে পরিচয় থাকার জন্য কয়েকবার জেলে গিয়েও ছাড়া পেয়েছিলেন তার বেশি কিছু হয়নি, ধীরে ধীরে তার দাপট এত বাড়তে থাকে যে সবাই তার নাম শুনলেই ভয়ে কাঁপতে থাকতো। এই আতঙ্কটার জন্যেই এতদিন কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খোলেনি ,একজন ছাড়া... রুদ্র, রুদ্র রায় চৌধুরী।
বীরেন ভট্টাচার্য অতীতের কোনো এক স্মৃতির অতলে তলিয়ে যান, এই রুদ্র রায় চৌধুরীকে ছোটো থেকেই চিনতেন তিনি, দুজনে আলাদা স্কুলে পড়তেন একবার ইন্টার স্কুল কম্পিটিশনে দেখা হয়েছিল, দুজনের স্কুল ফুটবল প্রতিযোগিতার ফাইনালে উঠেছিল কিন্তু ফাইনালে রুদ্রবাবু নাচিয়ে ছেড়েছিলেন বীরেন ভট্টাচার্যকে বলাইবাহুল্য রুদ্রবাবুর স্কুল জিতেছিল এবং সেরার পুরষ্কার উঠেছিল রুদ্রবাবুর হাতে। তারপর দুজনের মোলাকাত হয় কলেজে, এক‌ই কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন যদিও স্ট্রিম আলাদা, বীরেন বাবুর কমার্স আর রুদ্রবাবুর সায়েন্স, দুজনের বিল্ডিং আলাদা কিন্তু ক্যাম্পাসে, ক্যান্টিনে বা কমনরুমে মাঝে মাঝেই সাক্ষাৎ হতো। আর তারপর তো রুদ্রবাবু তার‌ই এলাকায় জমি কিনে বাড়ি বানিয়ে থাকতে এলেন স্ত্রী আর একরত্তি ছেলেকে নিয়ে।
দুজনের সামাজিক ব্যাবধান অনেকটাই ছিল, বীরেন ভট্টাচার্য আর্থিক দিক থেকে অনেকটাই ধনী ছিলেন রুদ্রবাবুর তুলনায়, রুদ্রবাবু কোনোমতে কিছুটা জমি কিনে তাতে একটা একতলা বাড়ি করেছিলেন, এলাকায় আসার কিছুদিনের মধ্যেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন রুদ্র বাবু, ভীষণ পরোপকারী ছিলেন তিনি এবং তার স্ত্রী, তার উপর নির্ভিক স্পষ্টবাদী। এইভাবেই সময় কাটতে থাকে ধীরে ধীরে বীরেন ভট্টাচার্য বুঝতে পারছিলেন যে এলাকায় তার আধিপত্য বিস্তারের প্রধান কাঁটা হয়ে উঠছেন রুদ্রবাবু, এলাকার প্রায় বেশিরভাগ মানুষই তার সাথে থাকে, তাকে ভালোবাসে। ধীরে ধীরে রুদ্রবাবুর প্রভাব এতটাই বিস্তৃত হয় যে বীরেন ভট্টাচার্য প্রমাদ গোনেন, দুজনের বেশ কয়েকবার ঝামেলা‌ও হয়, বীরেন ভট্টাচার্য ই ঝামেলা করেন হুমকিও দেন কিন্তু রুদ্রবাবু তাতে বিশেষ বদলান না, তারপর শেষে যখন তিনি জানতে পারেন যে এলাকা থেকে ভোটে দাঁড়ানোর জন্য তাকে বাদ দিয়ে রুদ্রবাবুর ধাম চিন্তা করছে পার্টি তখন আর চুপ করে বসে থাকতে পারেন না, এরমধ্যেই তিনি জানতে পারেন যে রুদ্রবাবুর ছেলে কিশোর অভয়ের সাথে তার কিশোরী ভাইঝি তাথৈএর একটা সম্পর্কের গুজব ছড়াচ্ছে, রাগে পুরো শরীর জ্বলতে থাকে তার ব্যাটার বামন হয়ে চাঁদে হাত দেওয়ার শখ হয়েছে, এবং শিক্ষা দিতেই হবে, তখন তিনি স্থির করেন যে এই রুদ্র রায় চৌধুরীকে সপরিবারে শেষ করবেন তিনি।


প্রথমটায় ভাইকেই দায়িত্ব দেন তিনি কাজটা করার কিন্তু পরে বুঝতে পারেন কাজটা শুধু করলেই হবে না এমন ভাবে করতে হবে যাতে লোকজন ক্ষেপে না যায়, তাই একরাতে দলবল সহ হামলা করেন রুদ্রবাবুর বাড়িতে যদিও তার একটু আগেই রুদ্রবাবুর এক দূর সম্পর্কের বোনের স্বামী মদন যে তার হয়ে কাজ করে সে খবর দেয় কাজ হয়ে গেছে, তার স্ত্রী ধীরেন বাবুর কথামতো বিষটা পাঠিয়ে দিয়েছেন।
কিন্তু তাও নিশ্চিন্ত হন না বীরেন ভট্টাচার্য, রাতের অন্ধকারে দলবল নিয়ে গিয়ে রুদ্রবাবুর বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেন, পরদিন এলাকায় বিশ্বস্ত লোক দিয়ে রটিয়ে দেন যে কারেন্টেথ লাইনে শর্টসার্কিট করে আগুন লেগে গেছে।, এলাকার কয়েকজন তার নামে পুলিশে কমপ্লেইন জানিয়েছিল রাজনৈতিক মহলে যোগাযোগ থাকায় খুব একটা ঝামেলায় জড়াননি বীরেন ভট্টাচার্য, যদিও পরে যেকজন তার বিরুদ্ধে পুলিশে গিয়েছিল সবকটাকে সাবাড় করেছিলেন।
এও আজ প্রায় ১৫-১৬ বছর আগের কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলেন তাদের কথা এই সেদিন ভাই ধীরেন আবার রুদ্রের নামটা নেওয়ায় মনে পরে তার,তারপর আজ হটাৎ আবার মনে পরলো, এই যে অফিসে বসে আছেন তিনি এই অফিসটা যে জমিতে সেখানেই বাড়ি ছিল রুদ্রবাবুর, রুদ্রবাবু আর তার পরিবার মারা যাবার পরে অধিকার করেন তিনি, কিন্তু সেদিন যেকোনো ভাবেই হোক আগুন থেকে বেঁচে যায় রুদ্র আর তার পরিবার এটা একটু পরেই বুঝতে পারেন তিনি, বাড়ির পিছন দিক থেকে পালাতে দেখে ধাওয়া করেন , বীরেন ভট্টাচার্যের করা একটা বুলেট লাগে রুদ্রবাবুর পিঠে কিন্তু তাও নাগাল পান না তাদের, পুরো দলকে চারিদিকে ছড়িয়ে খুঁজতে পাঠান তিনি, শেষে তার বিশ্বস্ত জগা এসে উৎফুল্ল গলায় জানায় দাদা, শেষ করে দিয়েছি... তিনজনকে মেরে জ্বালিয়ে দিয়েছি, আশেপাশে আনেকটা জায়গা ফাঁকা ছিল ফলে পতিবেশীরা কিছু জানতে পারেনি, শুধু তাই নয় আগুনে তো রুদ্রবাবুরা মারা যাননি কিন্তু সবার কাছে আগুনে মরাটাই প্রমাণিত করতে রাতারাতি তিনটে লাশ মর্গ থেকে সরিয়ে এনে এই আগুন লাগা বাড়ির মধ্যে ফেলে দিয়েছিলেন, ওদের আত্মীয় বলতে ওই বোন আর তার স্বামী মদন ছিল শুধু সুতরাং ওদের দিয়েই মিথ্যা শনাক্ত করিয়েছিলেন যে আগুনে পোড়া তিধটে বডি রুদ্রবাবু তাঁর স্ত্রী আর ছেলের।
হটাৎ করে সম্বিত ফিরে জেগে উঠলেন বীরেন ভট্টাচার্য এতবছর পরে না জানি কেন পুরনো কথা মনে পরলো তার সাথে কিছুদিন আগে তাকেই উদ্দেশ্য করে বলা কটা কথা মনে পরলো "তোমার‌ও পতনের সময় এসে গেছে সপরিবারে বিনাশ হবে, আর তোমার বিনাশ করবে যে সে আসছে... মৃত্যুর কোল থেকে মৃত্যুঞ্জয় হয়ে আসছে সে তোমার মৃত্যু পরোয়ানা নিয়ে, সমূলে বিনাশ হবে তুমি", বীরেন ভট্টাচার্য বুঝলেন অজানা ভয়ে তার পা আড়ষ্ট, কাঁপছে, কে আসছে তার মৃত্যু পরোয়ানা নিয়ে?




[/HIDE]
 
[HIDE]

অভয়.... অভয়, কোথায় তুমি?" অন্ধকার পথে এগিয়ে চলেছে তাথৈ কিন্তু এটা কোন জায়গা?, যাকে খুঁজছে তাকে দেখতে না পেয়ে আবার ডাকে "অভয় এবার কিন্তু খারাপ হচ্ছে, তুমি জানো আমার অন্ধকারে ভয় লাগে..." চারিদিকে ভালো করে দেখে অন্ধকারেও জায়গাটা চিনতে পারে তাথৈ এটা তো মন্দিরের পিছনের বাগানটা, হটাৎ একটু দূরে আবছা অন্ধকারে একটা গাছের তলায় একটা কালো মূর্তিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, তাথৈ খুশিতে তার মুখে হাসি ফুটে ওঠে দ্রুত পা চালিয়ে কাছে যায় "অভয়" মূর্তিটা পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে ছিল, ডাক শুনে ঘুরে দাঁড়ায়, অবাক হয়ে দেখে তাথৈ এ যে সেই ছেলেটা যার সাথে রেস্টুরেন্টে সাক্ষাৎ হয়েছিল, নিজেকে বিপদ বলে এড়িয়ে গিয়েছিল। "আমি জানতাম তুমি বেঁচে আছো, আমি তোমাকে দেখেই চিনেছি......" আনন্দে গদগদ কণ্ঠে বলে তাথৈ "কিন্তু তুমি কোথায় গিয়েছিলে? তুমি জানো তোমাকে ছেড়ে থাকতে আমার কত কষ্ট হয়েছে?" ছেলেটা তাও চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে দেখে তাথৈ বলে "কি হলো অভয় কথা বলছো না কেন? জানো সাম্য বলছিল যে আমার জ্যেঠুমণি আর বাপি নাকি তোমাকে..... বলোনা অভয় ওরা কি কিছু করেছিল? বলোনা সাম্য মিথ্যা কথা বলছিল বলো?, তুমি কথা বলছো না কেন?"
"আমি তোমাকে ঘেন্না করি তাথৈ, ঘেন্না করি" কঠোর স্বরে বলে ছেলেটা সঙ্গে সঙ্গেই তাথৈএর উজ্জ্বল মুখে অন্ধকার নেমে আসে কোনোমতে বলে "তুমি এ কি বলছো অভয়?"
ঠিক বলছি, আমি তোমাকে ঘেন্না করি তুমি আর তোমার পরিবার আমাদের সাথে যা করেছে তারপরেও তুমি ভাবলে কিভাবে যে আমি তোমাকে ভালোবাসবো?
অভয়...
আর তুমি? তুমিও তো ওই সাম্যর সাথে
না... তুমি ভুল বুঝছো অভয়, বিশ্বাস করো আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি, সাম্যর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই কোনোদিন‌ও ছিল না।
কিন্তু আমি তোমাকে ঘেন্না করি।
না.. তুমি আমাকে ঘেন্না করো না আমি জানি, তুমি আমাকে ঘেন্না করতে পারো না।
আমি তোমাকে ঘেন্না করি তাথৈ, ঘেন্না করি।
ছেলেটা আস্তে আস্তে পিছনে গাঢ় অন্ধকারে মিলিয়ে যেতে হবে লাগলো।
অভয়.. কোথায় যাচ্ছো শোনো অভয়...


তুমি..... উমমম...তুমি.... আমাকে ঘেন্না করতে.. পারো না.... অভয়... যেয়ো না... শোনো...
ঘুমের মধ্যে অস্ফুটস্বরে বিড়বিড় করতে করতে হটাৎ "অভয়"বলে একটু জোরে ডেকে ঘুম ভেঙ্গে জেগে ওঠে তাথৈ, সারা কপাল ঘেমে গেছে. আশেপাশের জায়গাটা বুঝতে একটু সময় নেয়, ডান হাত দিয়ে কপালের ঘাম মুছে নেয় তারপর বেডের পাশে টেবিলে রাখা জলের গ্লাসের ঢাকনা সরিয়ে জল খায়।
স্বপ্ন দেখছিল সে, কি ভয়ানক দুঃস্বপ্ন নাকি ভবিষ্যতে হতে চলা ঘটনা বুঝতে পারে না তাথৈ, আতংকে তার বুক কাঁপতে থাকে সে মনেপ্রাণে চায় যে সাম্য তাথৈএর পরিবার সম্পর্কে যা বলেছে সেটা মিথ্যা হোক কিন্তু যদি সত্যি হয় তখন? তখন কি হবে? অভয়ের কাছে তো মুখ দেখানোর কোনো অধিকার থাকবে না তার.. আর অভয় সে কি সত্যিই তাকে ঘেন্না করে? সেইজন্যেই কি দু দুবার তার সামনে এসেও নিজের পরিচয় না দিয়ে এড়িয়ে গেছে? না তাথৈএর দৃঢ় বিশ্বাস সাম্য যা বলেছে সেটা মিথ্যা, তার পরিবার অভয়ের সাথে কোনো অন্যায় করেনি।
ঘড়ি দেখে তাথৈ তিনটে বাজে কিন্তু তার চোখে এখন আর ঘুম নেই, ড্রয়ার থেকে অভয়ের ছবিটা বার করে চোখের সামনে ধরে তারপর আপনমনে বলে "তোমাকে বড্ড দেখতে ইচ্ছে করছে অভয়, মিস্টার গুপ্ত তোমার ঠিকানাটা দিলেই যাবো আমি তোমার কাছে, প্লিজ আমাকে ঘেন্না কোরো না অভয়, ঘেন্না কোরো না"।



কাকভোরে ঘুম ভেঙে গেল রয়ের, পাশে তাকিয়ে দেখে তার‌ই দিকে মুখ করে কাত হয়ে সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে ঘুমাচ্ছে বিদিশা, তার সারা মুখে গতরাতের সঙ্গমের তৃপ্তির ছাপ বিদ্যমান, রাতে দুজনেই একটাই চাদর গায়ে দিয়ে ঘুমিয়েছিল সেটা এখন ওর গায়ে নেই ফলে ভোরের শীতে একটু জড়োসড়ো হয়ে আছে, রয় চাদরটা দিয়ে ভালো করে ঢেকে দিল বিদিশার শরীর তারপর বিছানা ছেড়ে উঠে পরলো তারপর বাইরে এসে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।
কিছুক্ষণ পরে অত ভোরেই শাওয়ার নিয়ে ফ্রেশ হয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে একটা পাজামা আর একটা ভি গলা ফুলস্লিভ টি-শার্ট গায়ে দিল। ড্রয়িং রুমের একটা দিকে একটা ফাইবারের বড়ো স্লাইডিং দরজা ছিল তার ওপারে একটা বারান্দার মতো একটু জায়গা, বাড়ির পিছন দিক এটা এখানে একটা ছোট গোল টেবিল ঘিরে চারটে ভেলভেটের হাইব্যাক চেয়ার রাখা আছে, তার‌ই একটায় বসে বামপায়ের উপর ডানপাটা ভাঁজ করে তুলে পিঠটা পিছনে হেলিয়ে দেয় ফলে মাথাটাও হেলে যায় ভোরের দিকে এখানে বেশ ভালো আরামদায়ক ঠাণ্ডা হাওয়া বইতে থাকে আস্তে আস্তে তার চোখদুটো বন্ধ হয়ে আসে।

"কি হলো শার্ট প্যান্ট খোলো আমার কাছে বেশি সময় নেই" এক চল্লিশোর্ধ্ব মহিলার কণ্ঠস্বর স্মৃতির অতল থেকে উঠে এসে রয়ের কানে বাজতে থাকে, মেয়েদের সাথে সঙ্গম জিনিসটা নতুন নয় তার জীবনে বহু মেয়ে বা মহিলার সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়েছে সে তবে কাউকেই জোর করে বা অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে নয় বরং উল্টো সুন্দর সুপুরুষ সুগঠিত চেহারার অধিকারী সুদর্শন রয়ের প্রতি মেয়ে বা মহিলাদের আগ্ৰহ বরাবরই ছিল তবে কেউই তার প্রেমিকা নয় বরং সবারই চাহিদা শুধু সেক্স সব সমাজের উঁচু তলায় থাকা ধনী ঘরের মেয়ে মহিলা সব কেউ বিবাহিত কেউ সেপারেটেড বা কেউ ডিভোর্সি, সবার সাথেই ওই ওয়ান নাইট স্ট্যান্ডের মতো কেস তাই কাল রাতে বিদিশার মুখে ওই ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড শুনে আর দ্বিরুক্তি করেনি, প্রায় সবার সাথেই ওই এক-দুবার তার বেশি নয় ব্যাতিক্রম একজন, মায়া.... এক চল্লিশোর্ধ্ব মহিলা, শ্যামলা গায়ের রঙ, মাথায় ছোট করে কাটা চুল, একটু পৃথুলা চেহারা, বুকে দুটো বড়ো ভরাট স্তন, বড়ো নিতম্ব, শাড়ি পরলে সেটা নাভীর আনেকটা নীচে পরেন ফলে সুগভীর নাভি দৃশ্যমান থাকে, সন্তান ছিল না স্বামী বেশিরভাগ সময়ই চাকরিসূত্রে বাইরে থাকতেন, ধীরে ধীরে নিজের পুরনো জীবনের কিছু ঘটনা স্বপ্নের মতো চোখের সামনে ভেসে আসছিল।
মহিলার রয়ের সাথে আলাপ করিয়ে দিয়েছিল একজন ছেলে, তখন সদ্য বাবা মারা গেছেন সবকিছু হারিয়ে কোনোমতে সম্পূর্ণ অজানা শহরে এসেছে সে, কোনোমতে একটা বস্তিতে একটা মাথা গোঁজার ঠাই জোগাড় করেছে তাও নিজের হয় অন্য একজনের বাসায়, পরিবার বলতে শুধু মা, সেও অসুস্থ, সদ্য স্বামীকে হারানোর শোকে বিধ্বস্ত তবুও স্বামীর ইচ্ছা পূরণ করার জন্য ছেলেকে পড়াশোনা আবার শুরু করতে বলেছেন, রয়‌ও বাবার ইচ্ছা পূরণ করতে চায় কিন্তু সাথে এটাও বোঝে যে এটা কার্যত অসম্ভব কারণ এই নতুন শহরে তাদের বেঁচে থাকার নূন্যতম প্রয়োজনগুলো মেটানোর আর্থিক সামর্থ্য তাদের নেই তার উপর তার আগের ক্লাসের রেজাল্ট সহ সব ডকুমেন্ট হারিয়েছে কোনো কিছুই তার কাছে নেই। ভাগ্য ভালো যে এক সহৃদয় বিধবা মহিলা যিনি তার মায়ের‌ই সমবয়সী, তিনি তাদের তাঁর বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছেন, দুনিয়ায় ওই মহিলারও কেউ নেই তাই বোধহয় রয় আর তার মাকে আপন করে নিয়েছিলেন।



[/HIDE]
 
[HIDE]

ওই বস্তিতে সমবয়সী কিছু ছেলের সাথে আলাপ হয় রয়ের তখন সে একটা কাজ খুঁজছে কিন্তু এই অচেনা অজানা শহরে কে তাকে কাজ দেবে ,তখন একজন তাকে মায়া নামক মহিলার কাছে নিয়ে যায়, কিশোর বয়সেও যথেষ্ট সুদর্শন ছিল রয়, মহিলার তাকে পছন্দ হলেও কাজটা শুনে রয় পিছিয়ে আসে, কিন্তু যে তাকে নিয়ে গিয়েছিল সে বোঝাতে থাকে যে এ ছাড়া এই মুহূর্তে আর কোনো কাজ পাবে না সে, আর এর ফলে টাকাও ইনকাম করতে পারবে সে তাই প্রথমে রাজী না হলেও কতকটা বাধ্য হয়েই সে যোগ দেয়, ওই মহিলা ছিলেন নিম্ফোম্যানিয়াক, মহিলা টাকা দিয়ে মেল এসকর্ট ডেকে নিজের যৌন ক্ষুধা নিবৃত্ত করে থাকেন। রয় একেবারে নতুন তাই প্রথম প্রথম পিঠে শরীরে মালিশ করে দেওয়া, হাত পা টিপে দেওয়া... তারপর ধীরে ধীরে নিজের স্তন মালিশ করানো.... যোনী লেহন... রয়ের যৌনাঙ্গ মৈথুন করা ,শেষে সঙ্গম সব করতে লাগলেন বা বলা ভালো রয়কে সেক্স এডুকেশন দিতে থাকেন, সাথে নিজের চাহিদা মেটাতে থাকেন, বললেন: তোমাকে সব কিছু শেখাবো, শেখাবো আমি কিন্তু.....উপভোগ অনেকেই করবে।
তারপর ধীরে ধীরে ওই মায়া রয়কে একজন মেল এসকর্ট বানানোর চেষ্টা করেন, শুধু তিনি নন তার পরিচিত অনেক মহিলাই এবার রয়কে বিছানায় ডাকতে থাকেন, বলাবাহুল্য ততদিনে রয় অনেক কিছুই শিখে গেছে কিভাবে মহিলাদের উত্তেজিত করতে হয়, বা কোন ধরনের মহিলাকে কিভাবে সন্তুষ্ট করতে হয় সব শিখে গেছে, এবং এই মহিলারা টাকার বিনিময়ে অনেক সময়ই মেল এসকর্ট ভাড়া করে নিয়ে এসে নিজেদের যৌন ক্ষুধা মেটায়, তখন রয়ের টাকার সত্যিই খুব দরকার, তাই ওসব মেনে নিয়েছিল, প্রথম প্রথম একটু খারাপ লাগতো, ধীরে ধীরে অভ্যাস হয়ে যায়, ওই মহিলাদের বেশিরভাগ এতটাই উগ্ৰ স্বভাবের ছিলেন যে নিজের প্রয়োজন মেটানোর জন্য রয়কে আঁচড়ে কামড়ে ওর শরীরে দাগ বসিয়ে দিত, যন্ত্রনায় ছটফট করলেও সে বাধা দিতে পারতো না, যদিও এইসব দাগ তাকে মায়ের থেকে লুকিয়ে রাখতে হয়, মাঝে মাঝেই রাত করে বাড়ি ফেরে, মাকে বলেছে একটা কাজ পেয়েছে তাই....
তার মা অবশ্য বারন করেন বলেন: বাবু তুই আবার পড়াশোনা শুরু কর, দেখনা কোথাও ভর্তি হতে পারিস কিনা, টাকার কথাটা আমি ভাববো, মা তাদের বস্তি থেকে কিছুটা দূরে এক দোকানে সেলাইয়ের কাজ করে আরো অনেক মহিলাদের সাথে অবশ্যই সেই মহিলাও থাকেন যিনি তাদের আশ্রয় দিয়েছেন, তিনি বোন বলে ডেকেছেন রয়ের মাকে আর রয় তাকে মাসি বলে ডাকে।
মা বারণ করলেও রয় শোনে না সে জানে বাবার মৃত্যুশোক মা এখনো ঠিক কাটিয়ে ওঠেনি, মাকে দিয়ে বেশি কাজ সে করাতে চায় না ফলে দিনের পর দিন তার শরীরে দাগ বাড়তে থাকে, যণ্ত্রনা হতে থাকে কিন্তু মায়ের সামনে চুপচাপ সহ্য করতে হয়, মাকে বুঝতে দেয় না, যদিও মা সন্দেহ করে মাঝে মাঝেই জিজ্ঞেস করে "কি রে তোর শরীর ঠিক আছে তো, তোর মুখ কেমন যেন লাগছে?" সে ভাসা ভাসা উত্তর দিয়ে সরে পরে। কিন্তু যখন একা থাকে পার্কে বা নির্জন কোনো জায়গায় তখন মাঝে মাঝেই যণ্ত্রনায় চিৎকার করতে থাকে, কাতরাতে থাকে, একবার তো পার্কে অজ্ঞান‌ই হয়ে গিয়েছিল।

যখন জ্ঞান ফিরলো তখন সে আর পার্কে নেই কারো একটা বাড়িতে বিছানায় শুয়ে আছে, বিছানা থেকে উঠে বসে চারিদিকে দেখতে থাকে, ঘরের এক কোণে একটা তাকের উপর বেশ কিছু মেডেল এবং পুরষ্কার চোখে পড়ে, সে সেদিকে এগিয়ে যায়, সাথে ফ্রেমে বাধানো অনেককটা শংসাপত্র দেখে তাতে নাম লেখা আছে শেখর রাও।
"ওগুলো স্পর্শ করবে না" বাঁজখাই আওয়াজ শুনে চমকে পিছনে ফিরে দেখে এক প্রায় ছফুটের উপরে লম্বা একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে, তার বয়স ৬০-৬৫ হবে, গায়ের রঙ শ্যামলা, মাথায় কাঁচা-পাকা মেশানো চুল, গালে ফ্রেঞ্চ কাট দাঁড়ি, এই বয়সেও যথেষ্ট পেটানো শক্ত সামর্থ্য শরীর, পরে বুঝেছিল এই লোকটা সাক্ষাৎ দেবদূত ছিলেন তার জীবনে।
আমি আসলে দেখছিলাম....
তুমি পার্কে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলে, আমি দেখতে পেয়ে..
ধন্যবাদ।
তোমার বাড়িতে জানে যে তুমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে মেয়েদের সাথে ফূর্তি করতে যাও?
সে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে দেখে লোকটা আবার বললো: তোমাকে আগেও পার্কে চিৎকার করতে দেখেছি, আর আজ এখানে তোমার গায়ের দাগগুলো দেখে বুঝলাম সেগুলো কিসের দাগ।
এতক্ষণে রয় খেয়াল করলো তার গায়ের শার্টটা খোলা হয়েছে, সে চুপ করে দাঁড়িয়ে র‌ইলো।
লোকটা আবার বললো: এখনো তো অ্যাডাল্ট হয়েছো বলে মনে হয় না, বয়স কত তোমার?
১৭ তে পরবো।
বাঃ এখনই এইসব,আচ্ছা এইসব করে কি পাও? এসবের জন্য পুরো জীবন পরে আছে আর তাছাড়া অন্তত নিজের শরীরের কথা ভেবেও তো ছাড়তে পারো,যণ্ত্রনায় ছটফট করতে দেখেছি তোমাকে যদিও এটার জন্য কিনা শিওর জানিনা।
এটার জন্যই।
তাহলে? যাইহোক সেটা তোমার পার্সোনাল ব্যাপার, পারলে নিজেকে শোধরাও।
আপনি আমাকে খারাপ ছেলে ভাবছেন তাই না?
ভাববো আবার কেন? তোমার মতো ছেলেরা এমনই হয়।
কারো সম্বন্ধে না জেনে কমেন্ট করা অনেক সহজ স্যার, আচ্ছা আপনি বলুন রেড লাইটেড এরিয়ায় যারা কাজ করেন তাদের প্রত্যেকেরই কি স্বভাব খারাপ? নাকি কেউ কেউ পরিস্থিতির চাপে বাধ্য হয়ে ওই পথে আসে?
প্রশ্নটা শুনে অনেকক্ষণ চুপ করে তার দিকে তাকিয়ে থাকে লোকটা। রয় আবার বলে: আপনি যা করেছেন তার জন্য ধন্যবাদ, এখন আমি আসি। বলে চলে যাবার জন্য বিছানার উপর একপাশে রাখা শার্টটা নিতেই লোকটা আবার বললো: এখন রেস্ট নাও পরে চলে যেও, আর আমার কথায় আঘাত পেলে আমি দুঃখিত।
না না, সেটা নয় আপনার কোনো দোষ নেই, সবাই তাই ভাববে যেটা আপনি ভেবেছেন।
তুমি কেন করো ওসব?
আমার টাকার দরকার স্যার।
টাকা তো সবারই দরকার।

একদম তাই, শুধু কারো আছে তবুও আরো দরকার তাই তারা অন্যের থেকে ছিনিয়ে নেয়.... আর কারো কাছে একদম নেই তাআ তারা উপার্জনের জন্য কষ্ট সহ্য করে।
তোমার নাম কি? আমি শেখর রাও..মেজর শেখর রাও।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে তাকে নামটা বললো রয়, নিজের আসল নামটাই বলেছিল তারপর একটু থেমে বললো: আপনি আমাকে রয় বলে ডাকতে পারেন,আপনি আর্মিতে ছিলেন?
এক্স কম্যাণ্ডো।
আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
কি?
আপনার ওই সার্টিফিকেটগুলো দেখছিলাম, মার্শাল আর্ট কম্পিটিশনে জেতার জন্য, আপনি মার্শাল আর্ট জানেন?
জিতেছি যখন তখন নিশ্চয়ই জানি আর বললাম তো আমি রিটায়ার্ড কম্যাণ্ডো ছিলাম, আমাদের শিখতে হয়।
আমাকে শেখাবেন? আমি শিখতে চাই। আগ্ৰহ ভরে কথাটা বলে উঠলো।
না, গম্ভীর স্বরে বললেন শেখর রাও, এগুলো সাধনার জিনিস ,তুমি এর যোগ্য ন‌ও।

[/HIDE]
 
[HIDE]
আপনি তো আমার যোগ্যতার কোনো পরীক্ষাই নেননি।
তোমার কি মনে হয় হে ছোকড়া? এসব শেখা এত‌ই সহজ? আর তাছাড়া তোমার যা পেশা শুনলাম।
ওটা আমার পেশা নয়, বাধ্য হয়ে করছি আপনাকে বললাম তো। বেশ জোরের সঙ্গেই বললো রয়।
এমন কি দরকার যে তোমাকে এসব করতে হয় তাও এইটুকু বয়সেই? তোমার বাবা-মা জানেন?
বাবা মারা গেছেন, মা অসুস্থ তাই বলিনি। কথাটা শুনে একটু শান্ত হলো শেখর রাও, শান্তভাবে জিজ্ঞেস করলেন: কি হয়েছিল, শরীর খারাপ?
না।
তাহলে?
প্রথমে বলবে কি না এই নিয়ে দোটানায় ভুগলেও কেন যেন সব সত্যি কথা বলেই ফেললো রয়, বাবার মৃত্যু তারপর কিভাবে আর কেন সবকিছু হারিয়ে নিজের শহর ছেড়ে সে এই বাণিজ্যনগরীতে এসেছে, এসে কোথায় উঠেছে এমনকি প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা দিতে চাওয়া এবং তার পরের কথাও যে কিভাবে সে প্রায় মেল এসকর্ট হয়ে গেছে সব বললো।
শুনে গম্ভীরভাবে শেখর রাও জিজ্ঞেস করলেন: তোমার বাকি ক্লায়েন্টদের নাম কি?
মাপ করবেন সেটা বলতে পারবো না, তাহলে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে।
শেখর রাও অবাক হয়ে গম্ভীর হয়ে তাকিয়ে র‌ইলেন।
রয়: এবার আমি আসি স্যার। বলে শার্টটা পরে নিয়ে ঘর থেকে বাইরে চলে এল, উঠোন পার করে মেইন গেট দিয়ে বেরিয়ে চলে গেল, শেখর রাও পিছনে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকেন।
এরপর বেশ কিছুদিন আর তার সাথে দেখা হয়নি রয়ের, বর্তমানে মহিলাদের দৌরাত্ম্য কম তাই পড়াশোনায় মন দিয়েছে, পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয় আর মাঝে মাঝে পার্কে নির্জনে গিয়ে বসে।
এরকমই প্রায় দু-সপ্তাহ পর একদিন পার্কে বসে আছে, এমন সময় তার পাশে এসে বসলেন তাকে দেখে রয় সসম্মানে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো, শেখর রাও বললেন: তোমাকে কয়েকদিন ধরেই খুঁজছিলাম।
কেন?
কিছু বলার ছিল।
বলুন।
তুমি ওই কাজ ছাড়তে পারবে?
আমার একটা উপার্জনের রাস্তা চাই সেটা পেলেই ছেড়ে দেবো, আশা করছি কোথাও না কোথাও একটা না একটা উপায় নিশ্চয়ই হবে।
আর ততদিন?
রয় মাথা নীচু করে র‌ইলো। শেখর রাও বলতে থাকেন: তোমাকে আমি শেখাবো কিন্তু একটা শর্তে তোমাকে এই কাজ ছাড়তে হবে, তুমি এখনো অনেক ছোটো, এতে তোমার শরীর নষ্ট হয়ে যাবে।
রয়ের মুখে একটা উজ্জ্বলভাব এসেই মিলিয়ে গেল বললো: আমি শিখতে চাই ঠিকই কিন্তু আপনাকে ফিস দেওয়ার সামর্থ্য আমার নেই।
তোমার কাছে চেয়েছি? প্রায় খেঁকিয়ে উঠলেন শেখর রাও।
একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
কি?
সেদিন বললেন শেখাবেন না আবার আজ নিজে থেকেই বলছেন শেখাবেন এর কারনটা কি?
শেখর রাও গম্ভীর হয়ে গেলেন বললেন: তা এখনই জেনে তোমার লাভ নেই যখন সময় আসবে তখন বলবো, শেখাবো বলেছি শেখাবো কিন্তু শর্তে রাজী কি না বলো?
আমি তো ছাড়তেই চাই কিন্তু..
তোমাকে একটা কাজ আমি জোগাড় করে দেবো।
রয়ের পুরো মুখ আবার উজ্জ্বল হয়ে উঠলো আনন্দে, সে গিয়ে শেখর রাওয়ের পায়ের কাছে বসে পরলো।
পরদিন থেকে তার ট্রেনিং শুরু হলো, শেখর রাওয়ের বাড়ির উঠোনে সাদা চাদরে ঢাকা দেওয়া কিছু আছে এটা সে সেদিন দেখেছিল কিন্তু বুঝতে পারেনি কি আজ দেখলো সেগুলো সব মার্শাল আর্ট ট্রেনিংয়ের ইন্সট্রুমেন্ট, কাঠের ডামি হেড, কিছু জায়গায় কয়েকটা লম্বা লাঠি এছাড়াও শেখর রাও একটা বড়ো বাক্স এনে রাখলেন কিন্তু না খোলায় জানলো না যে তার মধ্যে কি আছে।

বেসিক ট্রেনিং‌ই শুরু হলো কিন্তু এত কড়া ট্রেনিং যে মাঝে মাঝে রয়ের মনে হতো "ধুত্তেরি, কেন যে শেখানোর কথা বলতে গেলাম" মাঝে মাঝে একটু নরম ট্রেনিংয়ের কথা বললেই শেখর রাও আরো কড়াকড়ি চালু করতেন, এরপর শুরু হলো পরবর্তী ধাপ।
শেখর রাও নিজের সোর্সে তাকে একটা ছোটোখাটো কাজের ব্যবস্থাও করে দিলেন, মার্শাল আর্ট ট্রেনিংয়ের সাথে সাথেই তিনি রয়কে বিভিন্ন বিষয়ে পড়াতে লাগলেন, শুধু মার্শাল আর্ট ছাড়াও আরো অনেক বিষয়ে তার দখল ছিল সেসব তিনি রয়কে শেখাতে থাকেন।
যেমন একজন প্রকৃত গুরু যোগ্য শিষ্য পেলে নিজের জ্ঞানকক্ষের দরজা খুলে দেন ঠিক তেমনই রয়ের আগ্ৰহ, মেধা, পরিশ্রম আর সাধনা দেখে শেখর রাও তার এতদিনের অর্জিত জ্ঞানের দরজা খুলে দেন, শেখর রাও শুধু কম্যাণ্ডো নন, তিনি একজন এজেন্ট যাকে মাঝে মাঝেই দেশবিদেশে বিভিন্ন মিশনে যেতে হয়েছে সেখানে থাকতে হয়েছে সেখানকার লোকেদের সাথে মিশতে হয়েছে, ফলে তার জ্ঞানের পরিধি অন্য অনেকের তুলনায় অনেকটাই বেশি এসবই তিনি রয়কে হাতে ধরে শেখাতে থাকেন বক্সিং, ক্যারাটে, জুডো, মুয়ে থাই, উইং চুং ইত্যাদি কৌশল শেখাতে লাগলেন, মেধাতো ছিল‌ই সাথে একাগ্ৰতা আগ্ৰহ, পরিশ্রম, অধ্যবসায়ের ফলে খুব অল্প সময়েই এক্সপার্ট হয়ে উঠলো এর সাথে নানচাকু, টনফা, টনফা ব্লেড, সানজিগান ছাড়াও বিভিন্ন মার্শাল আর্টের অস্ত্র সাথে বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্র যেমন পিস্তল, স্নাইপার, বিভিন্ন ধরনের রাইফেল ইত্যাদি অস্ত্রচালনাও শেখাতে থাকেন, এর মধ্যে কিছু অস্ত্র ওই বাক্সটায় ছিল যেটা রয় প্রথম ট্রেনিংয়ের দিন দেখেছিল, শেখর রাও বলেন এসব তিনি বিভিন্ন দেশ থেকে সংগ্ৰহ করেছেন, আর আগ্নেয়াস্ত্রগুলো জোগাড় করা শেখর রাওয়ের পক্ষে খুব একটা কঠিন নয় যদিও ট্রেনিংয়ে আসল বুলেট ব্যবহার করতেন না। অস্ত্রচালনার পাশাপাশি খালি হাতে শত্রুর মোকাবেলা করা, শত্রুকে ঘায়েল করে এমনকি মেরে ফেলাতেও রয় এক্সপার্ট হয়ে উঠতে থাকে। বছর কাটতে থাকে এমনসময় একদিন একটা ভয়ানক দুঃসংবাদ পায় সে, তার গুরু শেখর রাও এক দুরারোগ্য অসুখে আক্রান্ত, বেশিদিন আর নেই। মৃত্যুর আগে তিনি তার সুযোগ্য শিষ্যকে বলে যান কেন তিনি তাকে সব শিখিয়েছেন।

শেখর রাওয়ের একটা পরিবার ছিল একজন স্ত্রী এবং একটা ছেলে তারা দুজনেই এক গাড়ি অ্যাক্সিডেন্টে মারা যান, সেই ছেলে যদি বেঁচে থাকতো তাহলে তার বয়স রয়ের মতোই হতো, রয়কে তাই তিনি নিজের ছেলের মতোই দেখেছেন। শেখর রাও মারা যাওয়ার আগে তার সবকিছু রয়কে দিয়ে যান, তিনি মারা গেলে রয় বুঝতে পারে তার মাথার উপর থেকে আবার একটা ছাদ সরে গেছে, যদিও ততদিনে সে কিশোর বয়স পেরিয়ে যুবক হলেও মানসিকভাবে সম্পূর্ণ পুরুষ, কিন্তু তবুও সে দিশাহারা হয়ে পরলো কারন তার জীবনের লক্ষ্য সে অনেক আগেই স্থির করে নিলেও তার রাস্তা খুঁজে পাচ্ছিল না, তার জীবনের লক্ষ্য প্রতিশোধ এক শয়তানের উপর প্রতিশোধ, শেখর রাও অনেকবার তাকে বলেছেন তুমি এখন গিয়ে তাকে সহজেই মারতে পারো কিন্তু প্রতিবারই রয় বলেছে: মারবো তো বটেই তবে তিলে তিলে মারবো, এক ঝটকায় মারলে সেটা শাস্তির বদলে পুরষ্কার হয়ে যাবে।
শেখর রাও বলেন: তুমি যা চাইছো সেটার জন্য তোমাকে আগে ক্ষমতা অর্জন করতে হবে অনেক ক্ষমতাশালী হতে হবে তবেই পারবে।

[/HIDE]
 
[HIDE]

কথায় বলে যদি তুমি কোনো কিছু খুব মন থেকে চাও তাহলে পুরো দুনিয়া তোমাকে সেটা পাইয়ে দেবার ব্যবস্থা করে। রয়ের জীবনের লক্ষ্যপূরণ করার রাস্তা খুঁজতে খুঁজতে যখন সে ক্লান্ত হতাশ তখনই তার পরিচয় হয় বাণিজ্যনগরীর অন্ধকার জগতের অন্যতম বড়ো মুখ আহমেদ খান ওরফে আহমেদ ভাই এর সঙ্গে।
এতদিনে যয়ের বেশ কয়েকজন বন্ধু হয়েছে এরকম কয়েকজন বন্ধু নিয়ে যায় তার কাছে নিয়ে যায় এই আহমেদ খানের দলের একজনের কাছে, রয় তার দলে যোগ দেয় এইভাবেই ধীরে ধীরে অন্ধকার জগতে পদার্পণ হয় রয়ের, কাজে উন্নতি করতে থাকে যেমন তেমনি টাকাও আসতে থাকে তারপর একদিন আহমেদ ভাইয়ের সুনজরে পরে, জহুরী যেমন জহর চিনতে ভুল করে না ঠিক তেমনি অভিজ্ঞ আহমেদ খান‌ও চিনতে ভুল করেননি তার দলের সেরা রত্নটিকে, নিজের কাছে টেনে নেন রয়কে, খুব তাড়াতাড়ি রয় আহমেদ ভাইয়ের ঘনিষ্ঠদের একজন হয়ে ওঠে।
রয়ের কাজ ছিল শিল্পীর কাজ, কাজ বলতে অবশ্য প্রধানত শত্রুদের শেষ করা এছাড়া কিডন্যাপিং, কারো থেকে টাকা আদায় ইত্যাদি কোথাও কোনো প্রমাণ বা চিহ্ন না রেখে কাজ হাসিল করে রয় ফলে পুলিশ তাকে ছুঁতে পারে না আর তাছাড়া অন্ধকার জগতে অনেকেই একজন নতুন কারো অস্তিত্ব অনুভব করলেও কয়েকজন ছাড়া কেউ তার সম্পর্কে জানে না, বহুবার খোদ আহমেদ ভাইয়ের জীবন বাঁচিয়েছে শত্রুদের হাত থেকে, বহুবার এমন হয়েছে আহমেদ ভাইকে চলে যাওয়ার রাস্তা করতে গিয়ে একা খালি হাতে একাধিক শত্রুর সাথে মোকাবেলায় নেমেছে, এইকারনে আহমেদ ভাই‌ও যথেষ্ট ভালোবাসেন এবং লুকিয়ে রাখেন তার অস্ত্রভাণ্ডারের সবথেকে ভয়ংকর ও সেরা অস্ত্রটিকে।
সময় নিজের মতো বয়ে চলে, আরও কয়েকবছর কেটে গেল.. রয় এখন আহমেদ ভাইয়ের দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য‌ই শুধু নয়, নিজস্ব দল গড়ে রীতিমতো ক্ষমতাধর হয়ে উঠেছে সবথেকে বড়ো কথা সে এখন নিজের আলাদা একটা আইডেন্টিটি বানিয়েছে যেটা অন্ধকার জগতে নয় তার বাইরের জগতে বিদ্যমান, অন্ধকার জগতের কাজ ছাড়াও নিজস্ব লিগ্যাল বিজনেস শুরু করেছে সেগুলোতেও উন্নতি হচ্ছে সব মিলিয়ে সে এখন খালি উপরে উঠছে, যদিও এটা শুনতে যতটা সহজ মনে হচ্ছে ততটা কিন্তু নয় বহুবার সে প্রায় মৃত্যুর মুখে পৌঁছে গিয়েছিল কিন্তু তার গুরুর ট্রেনিংয়ের জন্যই হোক বা তার মধ্যে থাকা সারভাইভাল ইনস্টিংক্ট এবং কিলার ইন্সিংক্টের অদ্ভুত মিশ্রনের জন্য প্রতিবারই সবরকম বিপদ কাটিয়েই সে বেরিয়ে এসেছে, এইসময়েই রয়ের আরও একজন বিশ্বস্ত সঙ্গী জোটে....আমির।
আরও কিছু বছর কাটে এখন সে অন্ধকার জগতে অতটা হস্তক্ষেপ করে না যদিও এখনো আহমেদ খানের দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য সে, অবশ্য তার দরকারো পরে না সে তার নিজস্ব বিজনেস নিয়েই ব্যস্ত থাকে,সেগুলো যে বাড়াচ্ছে তাই নয়, অনেকরকম বিজনেসে হাত পাকিয়েছে একসময় যে সবকিছু হারিয়ে এই শহরে এসেছিল টাকার জন্য প্রায় মেল এসকর্ট হয়ে উঠেছিল এখন সে টাকার বিছানায় শুয়ে থাকে। এমনই সময় খুন হন আহমেদ খান, তার‌ই ঘনিষ্ঠ কিছুলোক বিরোধী দলের সাথে হাত মিলিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করে তাকে এবং তার আরও কয়েকজন বিশ্বস্ত অনুচরকে হত্যা করে ফলে আহমেদ খানের দল ভেঙে যায়, রয় এসব খবর পেলেও গা করে না তার লক্ষ্য এখন আরও টাকা এবং ক্ষমতা অর্জন যাতে সে তার জীবনের লক্ষ্য পূরণ করতে পারে ,দেশের প্রতিটা শহরে সে নিজের ব্যাবসা ছড়াচ্ছে সেই সাথে নিজের দলের বিশ্বস্ত লোকজন ছড়িয়ে দিচ্ছে সেখানে দল বিস্তার করার জন্য, একসময় যে শহর ছেড়ে এসেছিল সেই শহরেও নিজের দল বিস্তার করে সে।

কিন্তু আবার তাকে ছেড়ে আসা অন্ধকার জগতে ফিরতে হয়, আহমেদ খানের মৃত্যুর পরে তার যেকজন বিশ্বস্ত লোক বেঁচে ছিল তারা একরাতে একটা মিটিং ডাকে সেখানেই রয়কেও আমণ্ত্রন জানায়, যদিও রয় প্রথমে যেতে চায়নি কিন্তু পরে একজনের অনুরোধে যেতে হয়, ইনি আহমেদ খানের সবথেকে ঘনিষ্ঠ লোক, ইনিও রয়কে খুব পছন্দ করেন, দলের সবাই তাকে পণ্ডিতজী বলে ডাকে।
মিটিংয়ে দলের বাকি সদস্যদের সুরক্ষা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা হয় সেখানে নতুন লিডার নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, বলাইবাহুল্য সেই মিটিংয়ে যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের সবার মধ্যে রয়ের মতো ক্ষমতাশালী কেউ ছিল না কাজেই তাকেই দলের দায়িত্ব নিতে হয় তাছাড়া আরেকটা কারণ ও ছিল সেটা হলো পণ্ডিতজী, আহমেদ খানের পরে তিনিই দলের অঘোষিত নেতা কিন্তু তিনি নিজে নতুন যুবক কাউকে লিডার করতে চান ,এবং তার ভোট রয়ের দিকে, তাই আর কেউ কোনো উচ্চবাচ্য না করে মেনে নেয়।
মিটিংয়ের পরে রয় একাকী পণ্ডিতজীকে জিজ্ঞেস করে "আমাকে আবার কেন টানলেন এখানে?"
পণ্ডিতজী: কারণ এই মুহূর্তে যদি কেউ দলের হাল ধরতে পারে সেটা তুমি, যদি কেউ দলের লোকেদের সুরক্ষা দিতে পারে সেটা তুমি, যদি কেউ আহমেদের প্রতিশোধ নিতে পারে সেটা তুমি।
রয়: আপনি নিশ্চিত যে আমি পারবো?
পণ্ডিতজী: শুধু আমি নয়, আহমেদ‌ও বিশ্বাস করতো যে ওর পরে তুমিই একমাত্র লোক যে ওর দলের দায়িত্ব সামলাতে পারবে।
এরপর কিছুদিন বাণিজ্যনগরীতে তাণ্ডব চললো, শুধু রক্ত ব‌ইলো, সমস্ত বিশ্বাসঘাতকদের এবং যেসব বিরোধীরা তার সামনে মাথা নোয়াচ্ছে না তাদের পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে দুবার ভাবছে না রয়, ফলে অবিলম্বেই বাণিজ্যনগরীর পুরো অন্ধকার জগতের নিয়ণ্ত্রন চলে আসে রয়ের হাতে, ধীরে ধীরে রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নিজের বিশ্বস্ত লোকদের বসিয়ে সেখানেও ক্ষমতা বিস্তার করে, সবথেকে বড়ো বিষয় কখনো সাধারণ অসহায় নিরপরাধ লোকদের উপর অত্যাচার না করা এবং সবসময় তাদের পাশে থাকার জন্য তাদের মনেও জায়গা করে নেয়, ফলস্বরূপ অচিরেই সম্পূর্ণ বাণিজ্যনগরী তার নিয়ণ্ত্রনে চলে আসে, কিন্তু কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ না থাকায় এবং তার ক্ষমতার জন্য পুলিশ‌ও তার গায়ে হাত দিতে পারে না, পুরো বিজনেসটাকে লিগ্যাল পদ্ধতিতে চালায়, যদিও পুরো দেশের মানুষ তাকে এখন অন্য নামে চেনে, যে পরিচয় টা সে নিজে তৈরী করেছে ,তাকে না চিনলেও তার এই নতুন নামটা সবাই জানে আর সেই নামটা হলো....


[/HIDE]
 
[HIDE]
গুড মর্ণিং... কফি?
একটা মেয়ের কণ্ঠস্বর শুনে আবার অতীতের স্মৃতির সরণি থেকে বর্তমানে ফিরে আসে রয়, চোখ খুলে দেখে এর মধ্যে অনেকটা সময় অতিক্রান্ত হয়েছে বিদিশা ঘুম থেকে উঠে শাওয়ার নিয়ে ফ্রেশ হয়ে হাতে ট্রে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
রয়: বসো, কখন উঠলে?
"খানিকক্ষণ আগে, তুমি কি ভাবছিলে বলোতো?" কাপে কফি তৈরী করতে করতে প্রশ্নটা করে বিদিশা।
ভাবছিলাম যে কিভাবে জীবনটা কাটাবো ভেবেছিলাম আর কিভাবে কাটাচ্ছি।
বিদিশা কফির কাপ রয়ের দিকে এগিয়ে দেয়, রয় একটা চুমুক দিয়ে বলে: উমমম তুমিও ভালো কফি বানাও, তারপর এবার কি করবে?
মানে?
তুমি চাইলে এখনই নিজের পড়াশোনা স্টার্ট করতে পারো, আমি ব্যবস্থা করে দেবো।
আমাকে তাড়াতে চাইছো? আমাকে এখন আর দরকার নেই?
একদম নয়, আমার দেওয়া কথা রাখতে চাইছি।
আগে বীরেন ভট্টাচার্য শেষ হোক তারপর যাবো।
তুমি এখন ওই বাড়িতে সাবধানে থাকবে, বীরেন ভট্টাচার্য এখন সবাইকে সন্দেহ করবে।
কিন্তু তুমি এখন কি করবে তার প্ল্যান করেছো?
তুমি প্ল্যান করেছো মনে হচ্ছে?
এখন ওর লিগ্যাল বিজনেসগুলোকে শেষ করতে হবে যদিও সেগুলো আদতেই লিগ্যাল নয়।
যেমন?
কন্সট্রাকশনের বিজনেস গুলো, সেগুলোর কন্ট্রাক্ট ও ছাড়া কেউ পায় না, ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে সেগুলো নেয়, বড়ো বড়ো অ্যপার্টমেন্ট, হোটেল, ওভার ব্রিজ, কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স, হাউজিং কমপ্লেক্স ইত্যাদির কন্ট্রাক্ট পাওয়াটা যদি বন্ধ হয় তাহলে....
আর পাবে না।
তুমি এত শিওর হচ্ছো কিভাবে? কি করবে তুমি?
দেখতেই পারবে তবে যা বললাম সেটা মাথায় রেখো ও আর কন্ট্রাক্ট পাবে না।
বেশি দিন বাকি নেই কন্ট্রাক্ট কে পাবে সেই নাম ঘোষণা হ‌ওয়ার এর মধ্যেই ব্যবস্থা করতে পারবে?
জাস্ট ওয়েট এণ্ড ওয়াচ।

রাতে ডিনারের পরে ফ্রেশ হয়ে টিভিটা চালিয়েছিলেন শিউলী দেবী, ছেলের অ্যাডমিশন হয়ে গেছে সে হস্টেলে থাকে, এখানে তাই তিনি একা, সামনে টিভি চললেও তার টিভির দিকে মন নেই তিনি রয়ের কথা ভাবছেন সেই রাতের পরে রয় আর আসে না তবে যখন যা দরকার পাঠিয়ে দেয় বোধহয় অপরাধবোধে ভুগছে, কিন্তু তার মনে কোনো অনুশোচনা নেই ভাবছেন পরদিন সকালে একবার রয়কে ফোন করে কথা বলবেন, কিন্তু তার আর দরকার হলো না তখনই দরজার কলিংবেল বাজলো এবং দরজা খুলেই দেখলেন রয় দাঁড়িয়ে আছে হাত একটা বড়ো ব্যাগ।
বাব্বা এতদিনে আসার সময় হলো?
একটু কাজে ব্যস্ত ছিলাম। ঘরে ঢুকে উত্তর দিল রয়।
বসো, আমি তো ভাবলাম সেই রাতের জন্য গিল্‌টি ফিল করছো তাই আসছো না।
আমার এখন কোনো কিছু ফিল হয় না।
মানে?
যণ্ত্রের কি কিছু ফিল হয়? হয়না আমি এখন একটা যণ্ত্রে পরিণত হয়েছি যার কোনো কিছু ফিল করার ক্ষমতা নেই।
মাঝে মাঝে তোমার কথা আমি বুঝতে পারি না।
আমার কথা ছাড়ো এটা ধরো। বলে ব্যাগটা শিউলী দেবীকে দিল রয়।
এতে কি আছে?
খুলেই দেখো।
ব্যাগ খুলেই গম্ভীর হয়ে গেলেন শিউলী দেবী, বললেন: এগুলো?
তোমার আর তোমার ছেলের জন্য।


বিদিশা দেবী কিছু না বুঝে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে র‌ইলেন।
রয় একটু কাষ্ঠ হেসে বললো: খবরে শোনোনি? শহরের কবরস্থানে কবর ফুঁড়ে প্রেতাত্মা উঠে এসেছে?
এবার শিউলী দেবী আরও অবাক হলেন, তখন রয় তাকে খুলে বললো ব্যাপারটা: ওই কবরগুলোতে বীরেন ভট্টাচার্যের কালো টাকা লুকোনো ছিল।
এবার শিউলী দেবীর ঠোঁটে হাসি দেখা গেল।
রয় বললো: এটা তোমার ছেলের ভবিষ্যতের জন্য।
কিন্তু এ তো পাপের টাকা।
টাকার পাপ-পূণ্য হয় না, আর তাও যদি তোমার মনে খচখচানি থাকে তাহলে বলি যত টাকা পাওয়া গেছে তার অর্ধেকটা কিছু অনাথ আশ্রম, বৃদ্ধাশ্রম, স্কুলে দিয়েছি, এবার আশা করি পাপ-পূণ্য নিয়ে আর মাথা ঘামাবে না?
শিউলী দেবী কোনো মতো চোখের জলয়আটকে বললেন: থ্যাংক‌ ইউ।
তোমাকে তোমার ছেলের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি, এবার থেকে তুমি ওখানেই থাকবে, বীরেন ভট্টাচার্যের আয়ত্ত্বের বাইরে, চিরদিনের জন্য।
এবারে শিউলী দেবীর চোখের জল আটকালো না, অনেকক্ষণ পরে তিনি বললেন: যাওয়ার আগে তোমাকেও কিছু দিতে চাই।
রয় অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো: কি?
শিউলী দেবী উঠে গিয়ে ভিতর ঘর থেকে একটা পেনড্রাইভ এনে রয়কে দিলেন।
"এতে কি আছে?" জিজ্ঞেস করলো রয়।
ভিডিও আছে।
কিসের ভিডিও?
বীরেন ভট্টাচার্যের কুকীর্তির প্রমাণ। শিউলী দেবী বলতে থাকেন: অনেকদিন আগে বীরেন ভট্টাচার্য এক জমি দখল নিয়ে একজনকে খুন করেন, সেটা তার‌ই দলের একজন লুকোনো ক্যামেরায় রেকর্ড করে নেয়, ইচ্ছা ছিল ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায় করবে, সেটা করতে গিয়ে সেও বীরেন ভট্টাচার্যের হাতে খুন হয় কিন্তু মরার আগে সে তার এক বন্ধুর কাছে ভিডিওটা দিয়ে আসে, সেই ছেলেটা আমার পরিচিত ছিল তাই ওর থেকে ভিডিওটার একটা কপি করে আমার কাছে রেখে দি‌ই।
কিন্তু তাহলে তোমরা ভিডিওটা ছড়িয়ে দিলে না কেন?
সাহস ছিল না, জানতাম যে কোনো উপায়ে বীরেন ভট্টাচার্য নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করবে আর তারপর আমাদের শেষ করবে, আমি ওকে এটা দেখিয়ে ভয় দেখিয়েছিলাম বলেছিলাম যে ও যদি আমাকে আর আমার ছেলের দায়িত্ব না নেয় তাহলে এই ভিডিও ছড়িয়ে দেবো।
কিন্তু তাতে তো ও তোমাদের‌ও খুন করতে চাইবে।
চেয়েছিল তো কিন্তু আমি আরো বলেছিলাম যে এই ভিডিওর আরও কপি আছে, আমাদের কিছু হলে অন্যরা ছড়িয়ে দেবে।
বুঝেছি।
এখন তুমি এর ব্যবহার করতে পারবে, আমার আর দরকার নেই।
ধন্যবাদ।
পরদিন রয়ের লোক শিউলী দেবীকে নিয়ে চলে গেল, নিজের রুমে পেনড্রাইভের ভিডিওটা দেখে রয় আশ্বস্ত হয় যে শিউলী দেবী এক বর্ণ মিথ্যা বলেননি, সে ঠিক করে এই ভিডিওটা সঠিক সময়ে প্রকাশ করবে।



[/HIDE]
 
[HIDE]

দূর থেকে পাঁচিল ঘেরা বাগানবাড়ি আর তার বাইরের বড়ো গেটটা দেখে আনন্দে উত্তেজনায় বুকটা ধুকপুক করছিল তাথৈএর কিন্তু অকষ্মাৎ কিছু গুণ্ডা প্রকৃতির লোক তার গাড়ির সামনে এসে তার রাস্তা দাঁড়িয়েছে। গতকালই মিস্টার গুপ্তর সাথে দেখা করেছিল সে,
খোঁজ পেয়েছেন, জানতে পেরেছেন ও কোথায় থাকে?
ওই বাচ্চাগুলোর খোঁজ পেয়েছি, ওরা সবাই একটা কলোনিতে থাকে আর সেখানকার এক স্কুলে পড়ে, সেদিন ওদের একজনের জন্মদিন ছিল তাই ওদের খাওয়াতে নিয়ে এসেছিল।
আর ও কোথায় থাকে?
বাচ্চাগুলোই বললো ওই কলোনির একটু ভিতরের দিকে একটা বাগানবাড়ি গোছের বাড়ি আছে ওখানে থাকে।
আপনি দেখেছেন?
না গিয়েছিলাম কিন্তু ওই এলাকার লোক ওই বাগানবাড়ির ধারেকাছে বাইরের কাউকে ঘেঁষতে দেয় না, অনেকটা দূর থেকেই ফিরে আসতে হয়েছে আমাকে।
বাচ্চাগুলো ওর নাম বলেছে?
হ্যাঁ বলেছে তো, ওরা "রয় দাদা" বলে ডাকে।
খুব ভালো কাজ করেছেন, আচ্ছা আপনাকে যে আরেকটা কাজ বলেছিলাম সেটা করেছেন?
ওটা কি জানতেই হবে আপনাকে? এবারে তাথৈ লক্ষ্য করলো ভদ্রলোকের চোখেমুখে ভয়ের ছাপ, যেন কাউকে ভয় পাচ্ছেন।
একথা কেন বলছেন, কি জানতে পেরেছেন?
না মানে ম্যাডাম। তাথৈ স্পষ্ট বোঝে মিস্টার গুপ্ত কিছু বলতে চেয়েও বলছেন না।
কি বলতে চান স্পষ্ট বলুন।
ম্যাডাম আপনি যার কথা বলছিলেন তাদের বাড়িটা চিনতেন?
না, কখনো যাইনি কেন বলুনতো?
কিছু লোকের সাথে কথা হয়েছে, বেশিরভাগই ওদের চেনে না, জানে না তবে খুব পুরনো বাসিন্দাদের কয়েকজন এখানো অল্প অল্প মনে রেখেছে ওদের বিশেষ করে ওই ছেলেটা কি যেন নাম? হ্যাঁ, অভয় ওর বাবা আর মাকে, ওনাদের খুব খাতির ছিল এলাকায়, খুবই সজ্জন মানুষ ছিলেন দুজনে।
কিন্তু ওনাদের হয়েছিল কি?
বাড়িতে আগুন লেগেছিল, তারা বলে শর্টসার্কিট হয়েছিল।
কারো হাত থাকতে পারে?
বলা মুশকিল তবে দুটো জিনিস খেয়াল করেছি
কি?
এক ওনাদের এক আত্মীয় থাকেন সেটা তো বলেছি আগে আপনাকে, ওই অভয়ের পিসি থাকেন তার সাথে কথা বলতে গিয়েছিলাম আগের বার যখন গিয়েছিলাম তখনও খেয়াল করেছিলাম আর এবারও করেছি
কি?
ভদ্রমহিলা জানেন ওদের কি হয়েছিল কিন্তু কারো ভয়ে লুকিয়ে যাচ্ছেন।
কার ভয়ে বলে আপনার মনে হয়?
সে উত্তর এখনো পাইনি।
আর দ্বিতীয় জিনিস কি খেয়াল করেছেন?
হয়তো কাকতলীয় হতে পারে কিন্তু যেখানে ওদের বাড়ি ছিল সেই জায়গাটায় এখন আপনার জ্যেঠু মিস্টার বীরেন ভট্টাচার্যের অফিস, আর শুনলাম অভয়ের বাবার সাথে নাকি আপনার জ্যেঠুর ঠিক সদ্ভাব ছিল না, ঝামেলা ছিল।
হতবাক হয়ে যায় তাথৈ, তবে কি সাম্য সত্যি বলেছিল? ঠিক বিশ্বাস হয় না তাথৈএর তার দৃঢ় বিশ্বাস কোথাও ভুল হচ্ছে তার জ্যেঠুমণি এমন কাজ করতেই পারেন না, সেইদিন থেকে সে এই প্রার্থনাই করে এসেছে যে সাম্য যা বলেছে তা যেন মিথ্যা হয়। সে ঠিক করে আগে অভয়ের কাছে আসবে তার থেকেই জানবে সত্যিটা, তাই আজ সকাল হতে না হতেই সে একাই গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছে রাস্তার নির্দেশনা মিস্টার গুপ্তর থেকেই নিয়ে নিয়েছিল।
"ওদিকে যাওয়া বারণ" তাথৈএর রাস্তা যারা আটকেছিল তাদেরই একজন তার গাড়ির জানালার কাছে এসে কথাটা বলে।
কেন?
কেন কথার উত্তর নেই।
এখান থেকে ফিরে যান।
ওই বাড়িতে কে থাকেন? একথার উত্তর না পেয়ে তাথৈ আবার প্রশ্ন করে: কি হলো বলুন এ বাড়িতে কে থাকেন?
উত্তরে লোকটা বলে: এখান থেকে ফিরে যান।
আমার ওখানে যাওয়াটা জরুরী।
কিন্তু আপনাকে যেতে দেওয়ার হুকুম নেই। এবার আরেকজন জানালার কাছে এসে কথাটা বলে।
প্লিজ ওনাকে আমার কথা বলুন, বলুন তাথৈ এসেছে তাহলেই...
আর কিছু বলার আগেই ওদের একজনের ফোন বাজলো, কথা বলার পরে লোকটা তার সঙ্গীকে বললো: বস ওনাকে যেতে দিতে বললেন।
এবার লোকটা তাথৈকে বললো: যান, তবে গাড়িটা গেটের বাইরে রেখে যাবেন, ওই দেখুন একটা বটগাছ আছে ওর তলায় গাড়িটা দাঁড় করিয়ে ভিতরে যান। বড়ো গেট খুলে ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে তাথৈ দেখলো রাস্তার একপাশে একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে এই গাড়িটা তাথৈ চিনতে পারলো সেদিন রাতে রেস্টুরেন্টে এই গাড়ি করেই.... তাথৈ বুঝতে পারলো তার বুকের ধুকপুকানি বেড়ে গেছে, মেইন গেট থেকে একটা পায়ে চলার নুড়ি পথ সোজা চলে গেছে, দুদিকে সুন্দর করে ছাটা সবুজ ঘাস তার উপর অনেক রকম ফুলগাছ টবে করে বসানো আছে, সে আস্তে আস্তে বাড়ির দরজার কাছে গেল দরজা বন্ধ আছে কলিং বেল বাজাতে যাবে এমন সময় পুরুষকণ্ঠে "হাউ ক্যান আই হেল্প ইউ?" শুনে চমকে পিছনে ফিরলো কয়েকহাত দূরে হাতে প্রুনিং নাইফ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে।
তাথৈএর পরনে সোনালী রঙের কাজ করা দুধ সাদা হাফ স্লিভ চুরিদার সাথে এক‌ইরকম পাজামা, দুহাতে অনেকগুলো রঙিন চুরি, মাথায় চুলটা হাফ-আপ, হাফ-ডাউন খোঁপা করা, উল্টোদিকে যে দাঁড়িয়ে আছে তার গায়ে একটা কালো ভেস্ট যার উপর লাল পাইপিং করা, আর কালো রঙের পাজামা পায়ে চপ্পল, হাতে প্রুনিং নাইফ, বোঝাই যাচ্ছে যে সে বাগানে কাজ করছিল। দুজনে একে অপরের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে র‌ইলো, তাথৈ বুঝলো সে চিনতে ভুল করেনি তার সামনে যে দাঁড়িয়ে আছে সে অভয়।।

তাথৈ আর নিজেকে সামলাতে পারলো না, এক ছুটে অভয়ের কাছে গিয়ে দুহাতে তার গলা জড়িয়ে ধরলো ,তারপর পাগলের মতো অভয়ের কপালে দুগালে চুম্বন দিতে থাকে, চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় জল পরছে, কাঁদতে কাঁদতে বলছে "জানতাম আমি জানতাম তুমি বেঁচে আছো, যে যাই বলুক আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল তুমি একদিন ফিরে আসবে আমার কাছে"। অভয় চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে দেখে তাথৈ আবার বললো: কি হলো অভয়, তোমার কি হয়েছিল? কোথায় চলে গিয়েছিলে তুমি? জানো আমি তোমাকে কত খুঁজেছি" তবুও অভয় কথা বলছে না দেখে তাথৈ বললো: কি হলো অভয় তুমি কথা বলছো না কেন? তারপর অভয়ের দুগাল ধরে বলে: বুঝেছি তুমি রেগে আছো আমার উপর, আচ্ছা আমি সরি বলছি এবার হয়েছে? কি হলো এবার কথা বলো, অভয় উত্তর দিল: হাউ ক্যান আই হেল্প ইউ?। তাথৈ অবাক হলো সে কিছু বলতে যাবে এমন সময় "এক্সকিউজ মি" শুনে সম্বিত ফিরে পেয়ে দেখে এতক্ষণ সে কল্পনার জগতে চলে গিয়েছিল, বাস্তবে সে এখনো এক‌ই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।
এবার তাথৈ বললো: তুমি হয়তো আমাকে চিনতে পারছো না আমি..
আমি জানি আপনি কে মিস্ তাথৈ ভট্টাচার্য, কিন্তু আপনি এখানে কেন সেটা জানিনা।
আসলে আমি... তাথৈ তোতলাতে থাকে।
আপনার বয়ফ্রেন্ড জানে যে আপনি আমার সাথে দেখা করতে এসেছেন?
কথাটা তাথৈএর বুকে তীরের মতো বিঁধলো, সে বললো: তুমি যাকে আমার বয়ফ্রেন্ড বলছো সে আমার বয়ফ্রেন্ড নয়।
হুমম, অভয় একটা ব্যাঙ্গাত্মক শব্দ করলো।
তাথৈ তাড়াতাড়ি আবার বললো: তুমি বিশ্বাস করো ও আমার বয়ফ্রেন্ড নয়।
আমি কি বিশ্বাস বা না করি তাতে কি যায় আসে? বলতে বলতে সে একটু দূরে একটা জলের কল খুলে ভালো করে হাত পা আর মুখ ধুয়ে নিল তারপর ঘাসের উপর রাখা একটা ভি গলা ফুলস্লিভ টিশার্ট পরে "আসুন" বলে ঘরের ভিতরে ঢুকে গেল, তাথৈ‌ও ঢুকলো।
চা না কফি? জিজ্ঞেস করলো ছেলেটা।
চা।
একটু পরেই ট্রে তে গরম জল, সুগার কিউবের ডিব্বা, দুধ এবং টি ব্যাগ নিয়ে এসে চা তৈরি করতে লাগলো, তাথৈ লক্ষ্য করলো ছেলেটা জিজ্ঞেস টরলো না যে তাথৈ কটা সুগার কিউব নেবে যেন সে আগে থেকেই জানে এমন ভাবেই দুটো কিউব মিশিয়ে একটা টি ব্যাগ কাপে দিয়ে তাথৈএর দিকে এগিয়ে দিল, তাথৈ নিয়ে একটা চুমুক দিয়ে বললো: তোমার মনে আছে যে আমি দুটো সুগার কিউব খাই চায়ে?
সামনের ছেলেটা তখন নিজের জন্য চা তৈরি করে চুমুক দিতে যাবে, প্রশ্নটা শুনে চমকে তাথৈএর দিকে তাকালো, বললো: মানে?
সুগার কিউব,আমি কটা সুগার কিউব নি‌ই এটা খুব বেশি লোক জানে না।
ছেলেটা নিজেকে সামলে নিয়ে বললো: আন্দাজে চালিয়েছি, এবার বলুন আপনি এখানে কেন এসেছেন?
তাথৈ মনে মনে বললো: আমি জানি তুমি অভয়, তবুও আমি দেখতে চাই তুমি কতদিন নিজেকে আমার থেকে লুকিয়ে রাখো, একবার শুধু জানতে পারি যে তুমি কেন নিজেকে লুকাচ্ছো।
মুখে বললো: কেন আপনার অসুবিধা হয়েছে? তাহলে দুঃখিত।
দুঃখিত হবার কিছু হয়নি কিন্তু এভাবে একজন অচেনা লোকের বাড়িতে এলেন.. নাকি প্লট দেখতে এসেছিলেন?
প্লট? কিসের প্লট?
কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে তাথৈএর দিকে তাকিয়ে ছেলেটা বললো: আপনি সত্যিই জানেন না নাকি না জানার অভিনয় করছেন?
অভিনয় মানে?
আপনার জ্যেঠুমণি এবং আপনার বাবা এখানকার লোকদের উচ্ছেদ করে এখানে একটা অ্যাপার্টমেন্ট বানাতে চান, আপনার আর আপনার কাজিনের নামে।
এসব কি বলছো?
যেটা সত্যি, অবশ্য এটা নতুন নয় এর আগেও অনেকলোকের অনেককিছু কেড়ে নিয়েছেন তারা।
"আমি বিশ্বাস করি না" বেশ জোরের সঙ্গেই বললো তাথৈ।
সেটা আপনার ইচ্ছা।
প্রমাণ দিতে পারেন? এতক্ষণ তাথৈ তুমি করে কথা বলছিল এখন আপনি করে বলতে শুরু করলো।
আপনাকে প্রমাণ দিতে আমি বাধ্য ন‌ই।
প্রমাণ নেই তো দেবেন কোথা থেকে? আমার বাপি এবং জ্যেঠুমণি খুব ভালো মানুষ তারা কখনো কারো সাথে অন্যায় করতে পারেন না, আমি নিজে ওনাদের দুঃস্থ লোকেদের সাহায্য করতে দেখেছি।



[/HIDE]
 
[HIDE]


সব ভাঁওতাবাজি, বাইরের যে কোনো লোককে গিয়ে জিজ্ঞেস করুন সত্যিটা জানতে পারবেন।
ওরা তো আপনার অনুগত, আপনার শেখানো বুলি‌ই আওড়াবে।
কিন্তু আপনার জ্যেঠুমণি আর বাবা যদি এত‌ই ভালো আর পরোপকারী হন তাহলে ওই গরীব লোকেরা ওনাদের বিরুদ্ধে যাবেই বা কেন?
ওদের ব্রেন ওয়াশ করা হয়েছে।
যে চোখ খুলে ঘুমায় তাকে জাগানো যায় না।
নিজের বাবার নামে এরকম শুনে তাথৈ রেগে যায় সে একটু জোরেই বলে: আমার বাপি কারো সাথে কখনো কোনো অন্যায় করেন নি,বরঞ্চ যারা অন্যায় করে তাদের শাস্তি দেন, হয়তো এমনই কাউকে অন্যায়ের শাস্তি দিতে দেখেছেন তাই, আমার বাপি যদি কারো সাথে কিছু করে তার মানে সে কোনো খারাপ লোক ছিল কোনো খারাপ কাজ করেছে তাই বাপি তাকে শাস্তি দিচ্ছিল, আমার বাপি কোনো অন্যায় করতেই পারে না।
নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য কোনো নিরপরাধ মানুষকে খুন করা, কারো জমি দখল করার জন্য পরিবার সহ কারো বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া এটা অন্যায় নয়?
আপনি মিথ্যা বলছেন, আমার বাপি যদি কোথাও আগুন লাগিয়েও থাকে তাহলে হয়তো সেখানে কোনো খারাপ কাজ হতো বা খারাপ লোক থাকতো..
মিস তাথৈ ভট্টাচার্য... তাথৈকে চমকে দিয়ে রাগে প্রায় চিৎকার করে ওঠে ছেলেটা, কিন্তু মুহূর্তেই নিজেকে সামলে নেয়, কয়েক সেকেন্ড চোখ বন্ধ করে থেকে নিজেকে সামলে নেয়, নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করে তারপর বলে: কারো সম্পর্কে কিছু না জেনে তাকে খারাপ লোক বলাটা ভদ্রতা নয়, আপনাকে প্রথমে ওদের থেকে আলাদা ভেবেছিলাম কিন্তু দেখছি আপনিও ওদের থেকে কিছু কম নন, আপনার পরিবার যা করে সেটা হয়তো আপনার কাছে খুবই সাধারণ বিষয় তাই ওটা আপনার চোখেও অন্যায় নয় হাজার হোক আপনি নিজেই তো ওই পরিবারের সন্তান নিজেও না জানি কত ছেলের সাথে অন্যায় করেছেন, তাদের জীবন বরবাদ করেছেন।
এবারে তাথৈএর মনে আর কোনো সন্দেহ থাকে না যে তার সামনে যে বসে আছে সে অভয় ছাড়া আর কেউ হতেই পারে না, এই এক‌ইভাবে নিজের রাগকে বহুবার কন্ট্রোল করতে দেখেছে অভয়কে, এ অভয় ছাড়া আর কেউ নয়, সে বললো: আমি কোনোদিন কখনো কারো সাথেই কোনো অন্যায় করিনি।
হয়তো করেছেন নিজের সুন্দর চেহারা আর মিষ্টি কথার জালে ফাঁসিয়ে না জানি কত ছেলের জীবন নিয়ে খেলেছেন, তাদের জীবন বিষিয়ে দিয়েছেন।
আপনি আমাকে অপমান করছেন, আমি কখনো কারো জীবন নিয়ে খেলিনি।
খেলেছেন, হয়তো আপনার মনে নেই কিন্তু হতেই পারে যে কারো একজনের বিশ্বাস ভেঙেছেন, আর সেটা আপনার কাছে এতটাই সাধারণ বিষয় যে সেটা আপনার চোখে অন্যায় নয় তাই ভুলে গেছেন অথচ যার সাথে করেছেন সে না বাঁচতে পারছে না মরতে।
তাথৈএর কথা বন্ধ হয়ে গেল, সে মনে মনে ভাবছে: এসব কি বলছে অভয়? সে কার জীবন নিয়ে খেলেছে? কার বিশ্বাস নিয়ে খেলেছে, অভয়ের? কিন্তু অভয় এটা কেন ভাবছে অভয় তো জানে যে সে তাকে কতটা ভালোবাসে।
আপনি কিসের কথা বলছেন? আমি কার সাথে কি করেছি?
সময় করে ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখবেন, নিজের অতীতে ডুব দেবেন, মনে পড়লেও পড়তে পারে, বললাম তো আপনার কাছে সেটা সাধারণ ঘটনা কিন্তু যার সাথে করেছিলেন হয়তো তার জীবনটাই নষ্ট হয়ে গেছে, তার জীবন থেকে বিশ্বাস ভালোবাসা সব শেষ হয়ে গেছে।

নদীর ঘাটে একটা সিঁড়িতে একা বসে আছে তাথৈ গতকাল থেকে তার মনটা ভালো নেই বুঝতে পারছে সে একটু খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছে অভয়ের সাথে তার রাগ কমাতে গিয়ে আরো বাড়িয়ে দিয়ে এসেছে। আসলে নিজের বাপির বিরুদ্ধে কথা শুনে মাথাটা গরম হয়ে গিয়েছিল তার উপরে অভয় একদম অপরিচিত মানুষের মতো ব্যবহার করছিল,একবার তো তাথৈএর মনে হয়েছিল যে সে ভুল করছে না তো এই ছেলেটা যদি অভয় না হয় তখন? কিন্তু এখন তাথৈ শতভাগ নিশ্চিত যে ওটাই অভয়, কিন্তু সে ভেবে পাচ্ছে না অভয় কেন তার সাথে এমন ব্যবহার করলো সে কি এমন করেছে, হ্যাঁ একটা ভুল করেছে অভয়কে জানিয়ে যেতে পারেনি যে তাকে বাইরে পাঠানো হচ্ছে পড়াশোনা করার জন্য, কিন্তু তার‌ও কারণ ছিল, অভয় যদি জিজ্ঞেস করতো তাহলে নিশ্চয়ই বলতো, কিন্তু এখন সে কি করবে? অভয় তার উপর আগে থেকেই রেগে ছিল এখন তো আরো রেগে গেছে।
আরেকটা কথা অভয় বলেছিল যে তার জ্যেঠুমণি আর বাপি কারো জমি দখল করার জন্য তার বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল, কাদের বাড়িতে? অভয়দের? কিন্তু সেটা জানবে কিভাবে তাথৈ একবার মিস্টার গুপ্তকে ফোন করলো কিন্তু ফোন সুইচড অফ, ফোন রেখে সে ঘাটে চারিদিকে দেখতে লাগলো।
ঘাটের অনেক জায়গায় অনেক কাপলরা বসে আছে, একে অপরের হাত ধরে, কোনো প্রেমিক তার প্রেমিকার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে, এইসব‌ই সে দেখতে থাকে হটাৎ একটা কাপলকে দেখে তার চোখ আটকে যায় সেখানে দুজন কিশোর-কিশোরী বসে আছে দুজনের পরনেই স্কুল ড্রেস বোঝাই যাচ্ছে হয় স্কুল ছুটির পরে এসেছে না হয় পালিয়ে এসে প্রেম করছে কিন্তু তাথৈএর চোখ আটকালো অন্য কারনে ওরা দুজন একে অপরের ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে আছে, কিশোরী মেয়েটির চোখ বন্ধ সে তার প্রেমিককে বাধা তো দিচ্ছেই না উপরোন্ত তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে এতে খুব খুশি। ওদের দিকে দেখতে দেখতে তাথৈ‌এর বহুকাল আগে এক বিকেলের কথা মনে পরে..
এই তুমিকি করছো এটা, বন্ধ করো। চোখ পাকিয়ে পাশে বসা প্রেমিক অভয়কে হুকুম করে কিশোরী তাথৈ।
কেন কি হয়েছে?
এক্ষুনি বন্ধ করো।
না, আরেকটু
এক্ষুনি বন্ধ করো বলছি, লোকে কি বলবে?
আরে কি সমস্যা?
আর এখানে লোক কোথায়? আর দেখলে তারা কিছু ভাববে না।
তাই বলে তুমি ব‌ই নিয়ে প্রেম করতে আসবে? আর এসেই ব‌ই খুলে বসবে? কখনো শুনেছো কেউ প্রেম করতে এসে ব‌ই পড়ে?
শোনো আমি বলি কি তুমিও একটা ব‌ই পড়ো সামনে পরীক্ষা, এইসব প্রেমের চক্করে যদি রেজাল্ট খারাপ হয় না তাহলে দুজনের বাড়ি থেকেই সবকটা বাটাম পিঠে পরবে একটাও নীচে পরবে না।
তাহলে বাড়িতেই থাকতে পারতে প্রেম করতে আসার কি দরকার ছিল?
তুমি না দিনদিন বড্ড ডেঁপো মেয়ে হয়ে যাচ্ছো।
কি...ডেঁপো মেয়ে মানে??
এঁচোড়ে পাকা মানে বোঝো?
তবে রে, আমি এঁচোড়ে পাকা আর তুমি কি? বলে তাথৈ অভয়ের পিঠে আর বাহুতে চটাস চটাস করে চড় মারতে থাকে।
আঃ কি মেয়ে রে.. গুণ্ডা পুরো।
কথা শুনে তাথৈ আরও রেগে যায় "আমি গুণ্ডা"বলে আরো কয়েকটা চড় বসিয়ে দেয় অভয়ের পিঠে।
দেখ খালি মারছে এর থেকে তো ওই মেয়েটা ভালো ছিল ওর কাছে গেলেই ভালো হতো, কত ভালো ব্যবহার করে।
"কোন মেয়েটা?" কথাটা শুনে চড় থামিয়ে জিজ্ঞেস করে তাথৈ।
ওই যে কি যেন নাম তোমারই তো বন্ধু।
কথাটার সাথে অভয়ের ঠোঁটের কোণে একটা হাসি ফুটে ওঠে ,তাতে যেন আগুনে ঘি ঢালে চকিতে তাথৈ অভয়ের শার্টের বুকের কাছটা খামচে ধরে বলে "তার আগে আমি তোমাকে খুন করবো আর নিজেও মরবো, দেখি তখন কার দিকে তাকাও" কথার পরে আবার যথেচ্ছভাবে চড়, চিমটি দিতে থাকে তাথৈ।



[/HIDE]
 
[HIDE]

. আঃ তাথৈ.. কি ডেঞ্জারাস মেয়ে রে।
হ্যাঁ... অসভ্য ছোটোলোক ছেলে, খালি অন্য মেয়ের দিকে নজর, আমার তোমার সাথে থাকাই ভুল হয়েছে, আমি চলেই যাবো। কথাটা বললেও তাথৈ যায় না শুধু অভয়কে ছেড়ে দিয়ে পাশে বসে থাকে, অভয় আবার ব‌ইতে মন দেয়। একটু পরে ফোঁপানির আওয়াজ শুনে পাশে তাকিয়ে দেখে তাথৈ মাথা নীচু করে কাঁদছে.. অভয় জানে তাথৈ এরকমই এক্ষুনি রাগ দেখাচ্ছে তো পরমুহূর্তেই ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদছে, সে তাথৈকে বলে: আবার কাঁদছো কেন? আচ্ছা এই নাও ব‌ই বন্ধ করলাম। বলে সত্যি সত্যিই হাতের ব‌ইটা বন্ধ করে ব্যাগে ঢুকিয়ে নেয় তবুও তাথৈএর কান্না থামছে না দেখে আবার বলে: এবার তো ব‌ই‌ও বন্ধ করে দিয়েছি আবার কি হলো?
"তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসো না" ফোঁপাতে ফোঁপাতে উত্তর দেয় তাথৈ।
তাথৈ... তুমি জানো আমার বাবা-মায়ের পরে আমি যদি কাউকে সব থেকে বেশি ভালোবাসি তাহলে সেটা তুমি।
তাহলে তুমি বললে কেন যে অন্য মেয়ের কাছে যাবে?
আরে আমি তো মজা করছিলাম, তোমার মনে হয় আমি তোমাকে ছেড়ে অন্য কারো কাছে যাবো?
তাথৈ চুপ করে থাকে অভয় আবার বলতে থাকে: আমি তোমাকে ছেড়ে কারো কাছে যাবো না।
এবার তাথৈ অভয়ের একটা বাহু জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রেখে বলে: তুমি চলে গেলে আমি মরেই যাবো।
তাথৈ.. একটু জোরে নামটা নেয় অভয়, তারপর আবার শান্ত হয়ে বলে: বলেছি না এরকম বলবে না।
এবার তাথৈএর ঠোঁটেও হাসির রেখা দেখা যায় সে সোজা অভয়ের দিকে তাকিয়ে আছে তার কান্না থেমে গেছে অভয়‌ও তার দিকে তাকিয়ে আছে দুজনের মনেইয়এক নতুন অনুভূতি, এক নতুন অজানা আকর্ষণ অনুভব করে, যেন কিছু একটা দুজনকে পরস্পরের কাছে টানছে, আস্তে আস্তে দুজনের মুখ এগিয়ে যায় আসন্ন মুহূর্তের জন্য তাথৈএর দেহমন এক অজানা অনুভূতিতে ভরে ওঠে সে দুচোখ বন্ধ করে অপেক্ষা করতে থাকে নিজের ঠোঁটে অভয়ের ঠোঁটের স্পর্শ পাওয়ার জন্য, উত্তেজনা বাড়তে থাকে সারা শরীরে শিহরণ জেগে ওঠে কিন্তু এখনো স্পর্শ পাচ্ছে না কেন?
ব্যাঁ.......ব্যাঁ
একটু দূরে হটাৎ একটা ছাগলের ডাকার আওয়াজটা শুনে দুজনেই সচকিত হয়ে ওঠে, তাথৈএর মুখ লজ্জায় লাল হয়ে গেছে সে অভয়ের দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু অভয় অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে একটু পরে তাথৈএর দিকে না তাকিয়েই বলে: আমি দুঃখিত জানিনা আমার কি হয়েছিল.. আমার এরকম করাটা উচিত হয়নি।
তাথৈ অভয়ের মুখটা ধরে নিজের দিকে ঘোরায়। অভয় আবার বলে "আয়্যাম সরি তাথৈ"।
তাথৈ একহাতে অভয়ের দুটো চোখ চেপে ধরলো তারপর একে একে অভয়ের দুটো গালে দুটো চুম্বন দিয়ে অভয়ের কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো: আপাতত এটাই নাও ওটা পরে হবে, যেদিন আমরা দুজনেই আঠারো বছরের হবো সেদিনই নাহয় আমাদের প্রথম কিসটা হবে।
তারপর চোখ ছেড়ে দেয়, "আমি অপেক্ষায় থাকবো" মুখে হাসি নিয়ে বলে অভয়।


নিজের মোবাইলে ক্যামেরায় তোলা মিস্টার গুপ্তর দেওয়া অভয়ের ছবিটার ছবি দেখতে থাকে তাথৈ তারপর ছবিটাকেই উদ্দেশ্য করে বলে: আমাদের প্রথম কিসটা এখনো বাকি আছে কিন্তু, মনে আছে তো? জানি তোমাকে আরও রাগিয়ে দিয়েছি, কিন্তু তুমিও তো কিছু বললে না খালি বলছো আমি তোমার সাথে কিছু করেছি যাতে তোমার জীবন নষ্ট হয়েছে কিন্তু আমি কি করেছি.... না.. আমাকে জানতেই হবে যে করেই হোক আমাকে জানতেই হবে যে আমি তোমার সাথে কি করেছি আর আমার বাপি‌ই বা কি করেছে?। তাথৈ আবার মিস্টার গুপ্তকে ফোন করে কিন্তু ফোন এখনও বন্ধ।

নিজের অফিসে ভাগ্নে রকি এবং আরো কয়েকজনের সাথে মিটিং করছিলেন বীরেন ভট্টাচার্য তার লক্ষ্য নিজেদের কনস্ট্রাকশন সহ অন্যান্য ব্যাবসা আছে সেগুলো দিয়ে নিজের ক্ষতির কিছুটা পূরণ করা।
"শোন রকি", ভাগ্নেকে উদ্দেশ্য করে বললেন বীরেন বাবু, "প্রজেক্টটা আমরা পাবো এটা তো শিওর আর বাজেটও অনেক, তাই কোনো গাফিলতি বা ভুল কিন্তু বরদাস্ত করবো না, এখন থেকে এটাতেই পুরো মন দিয়ে কাজ করবে"।
ঠিক আছে মামা।
আমাদের পরিচিত সব ইনভেস্টরদের সাথে কথা হয়েছে তাদের সাথে শুধু ফর্মালিটির জন্য ডিল সাইন করতে হবে, তারা সবাই ইনভেস্ট করতে রাজী হয়েছে।
ওই রঘু আর লাল্টুর জন্য আমাদের প্রফিট কমে যাবে ওদের একবার হাতে পাই মামা...
এটা তো বুঝতেই পারছো যে কেউ বা কারা আমাদের পিছনে লেগেছে কিন্তু কে সেটা ধরতে পারছি না সে নিশ্চয়ই এবারও আমাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করবে তাই সজাগ থাকতে হবে।
কিন্তু মামা কে ক্ষতি করতে চাইছে সেটা তো খুঁজে বার করতে হবে।
সেটা হবে কিন্তু...
বীরেন ভট্টাচার্য কিছু বলতে যাচ্ছিলেন এমন সময় ঘরের দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলেন ধীরেন বাবু পিছনে জগা।
"আয় ধীরেন আয়" বীরেন ভট্টাচার্য ভাইকে ঢুকতে দেখে বললেন "এই রকিকে বলছিলাম যে এবার মন দিয়ে কাজ করতে হবে, অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে"
কিন্তু ধীরেন বাবু তাতে বিশেষ উৎসাহ দেখালেন না তিনি বেজার মুখে বললেন: একটা খারাপ খবর আছে দাদা।
খারাপ খবর... কি?
কন্ট্রাক্টটা আমরা পাইনি। ঘরের মধ্যে বাজ পরলেও বীরেন ভট্টাচার্য এতটা আশ্চর্য হতেন না তিনি একপ্রকার নিশ্চিত ছিলেন যে আগামী পাঁচতারা হোটেলের কনস্ট্রাকশনের কন্ট্রাক্টটা তারাই পাবেন, এত বছর সেটাই হয়ে এসেছে এই শহরে কোনো বড়ো কনস্ট্রাকশনের কাজ হলে সেটা তাদের কোম্পানি ছাড়া আর কারো কাছে যেত না, একে তো তিনি একজন মণ্ত্রী, তার উপর লোকবল অনেক আর তার ক্ষমতার কথা সবাই জানে তাই তিনি ছাড়া আর কাউকে কন্ট্রাক্ট দেওয়ার কথা কেউ ভাবেও না আর সাহস‌ও হয় না।
কিন্তু আজ এ যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত হলো ধীরেন বাবুর কথাটা কেউই ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না।
রকি: কি? আমরা পাইনি.. এটা কিভাবে সম্ভব?
সম্ভব হয়েছে রকি, বললেন ধীরেন বাবু।
কে পেয়েছে? কিভাবে? এই শহরে আমাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার সাহস কার আছে? ও ঠিক আছে যেই পাক... দেখে নেবো, মাথায় পিস্তল ঠেকালেই সব বাপ বাপ বলে কন্ট্রাক্ট ছেড়ে দেবে, আর তাও না ছাড়লে খালাস করে দেবো।
এবারে জগা মুখ খোলে: যে পেয়েছে তার মাথায় পিস্তল ঠেকানো তো দূর তার মাথার একটা চুল‌ও ছুঁতে পারবে না তুমি।
কেন.. কে পেয়েছে? জিজ্ঞেস করে রকি। কিন্তু জগা উত্তর না দিয়ে বীরেন বাবুর গম্ভীর মুখের দিকে তাকিয়ে ঢোঁক গেলে।
কি হলো জগাদা বলো কে পেয়েছে? আবার জিজ্ঞেস করে রকি। কিন্তু তাও জগা চুপ করে থাকে।
"কে পেয়েছে ধীরেন?" গুরুগম্ভীর স্বরে জিজ্ঞেস করেন বীরেন বাবু।
দাদা কন্ট্রাক্ট পেয়েছে.... এআরসি ইন্ডাস্ট্রিজ।
[/HIDE]
 
[HIDE]
নামটা শুনে চমকে উঠলেন বীরেন ভট্টাচার্য তার মুখে একে একে ভয় রাগ ঘৃণা সবকিছুই প্রতিফলিত হলো।
ধীরেন বাবু বলে চলেন: ওদের‌ই পুরো বিজনেসের একটা উইং কনস্ট্রাকশনের বিজনেস করে,সবথেকে বড়ো কথা ওদের মতো বড়ো ইন্ডাস্ট্রি নিজে বিড পেপার জমা দিয়েছে, পুরো দেশে ওদের সুনাম আছে তাই...
রকি: কিন্তু একটা জিনিস বুঝতে পারছি না, ওরা বাণিজ্যনগরী ছেড়ে হটাৎ আমাদের শহরে এলো কেন?
"কারন এই একটা শহরেই ওর আধিপত্য বাকি আছে, তাই এখন এই শহরে হাত বাড়িয়েছে" উত্তর দেন ধীরেন বাবু।
"অর্ধেক শহরে" গম্ভীর কণ্ঠে বলেন বীরেন বাবু, একটু থেমে আবার বলেন "অর্ধেক শহরে অলরেডি দখল নিয়ে নিয়েছে"
কি বলছো দাদা?
ঠিক বলছি, তোর মনে আছে তাথৈ আর বৃষ্টির জন্য একটা অ্যাপার্টমেন্ট বানাতে চেয়ে একটা বস্তি খালি করতে চেয়েছিলাম।
হ্যাঁ ,মনে আছে।
"ওটা উচ্ছেদ করা যাবে না উপর থেকে অর্ডার এসেছে, আর এটা যে এই এআরসি র কাজ সেই কথাটা কানে এসেছে, আর এটাও কানে এসেছে যে ওই বস্তির লোকেদের সাহস খুব বেড়ে গেছে, ওই এলাকায় বাইরের লোক ঢোকা বারণ এমনকি পুলিশ‌ও ঢুকতে পারে না"।
এসব কি বলছো দাদা?
ঠিক বলছি।
এবার কি করবে মামা?
আপাতত আমাকে একা থাকতে দাও।
সবাই জানে এটা হুকুম আর এই হুকুম অমান্য করার সাহস কারো নেই তাই সবাই বেরিয়ে গেল।

"এআরসি এআরসি এআরসি আমার পথে পাহাড় হয়ে দাঁড়িয়েছে এই লোকটা" সবাই বেরিয়ে যেতেই রাগে ফেটে পড়লেন বীরেন ভট্টাচার্য। তার অনেকদিনের স্বপ্ন বাণিজ্যনগরীতে নিজের ব্যাবসার প্রসার বাড়ানো কিন্তু তিনি সফল হননি কারণ সেখানে তার সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় এই এআরসি, পুরো বাণিজ্যনগরী ওর হুকুমে চলে সেখানকার প্রতিটা লোকের মুখে তার নাম, দেশের ইয়াং বিজনেস টাইক্যুন অথচ বাইরের কেউ তাকে চেনে না, তার ছবি কোথাও বেরোয় না, কোনো বিজনেস পার্টি সে অ্যাটেণ্ড করে না, কোনো সাংবাদিক তার লাইভ ইন্টারভিউ নিতে পারে না, কে এই এআরসি কেমন দেখতে তার পরিবারে কে কে আছে সেটা বাইরের কেউ জানে না, যারা জানে তারা কারো কাছে মুখ খোলে না অথচ পুরো শহরের লোক তার নাম জানে কেউ তার নাম শুনলে আতঙ্কে প্রায় হার্টফেল করে তো কেউ দুহাত তুলে আশীর্বাদ করে।
বানিজ্যনগরীর একটু বাইরের দিকে বিশাল বাংলো তার, বাংলো না বলে রাজপ্রাসাদ বলা ভালো যেটাকে সে সুরক্ষিত করে প্রায় দুর্গ বানিয়ে ফেলেছে ভিতরে সুরক্ষা তো আছেই তার উপরে ওই বাংলোকে ঘিরে কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যারা বাস করে তারাও অচেনা, অজানা কাউকে ওদিকে যেতে দেয় না। বীরেন বাবু অনেক চেষ্টা করেছেন এই এআরসির সম্পর্কে জানতে, অনেক লোক পাঠিয়েছিলেন কিন্তু সবাই জাস্ট নিঁখোজ হয়ে গেছে, কয়েকজন ছোটোখাটো ব্যাবসায়ীকে লোভ দেখিয়ে নিজের সাথে নিয়েছিলেন বীরেন বাবু কিন্তু ২৪ ঘন্টার মধ্যে তাদের শেষ করে দেওয়া হয়েছে।

দুই বছর আগে একবার খোদ বীরেন বাবু নিজে গিয়েছিলেন তার সাথে দেখা করতে সাথে জগা এবং আরো কয়েকজন ছিল অফিসে ঢুকতে না পেরে বাংলোর দিকে গিয়েছিলেন কিন্তু ঢুকতে পারেননি, ভেবেছিলেন বাইরের লোকের সাথে কথা বলে খবর বার করবেন, এই আশায় এক চায়ের দোকানে ঢোকেন, ওখানে আরও অনেক লোক ছিল। এটা ওটা কথার পরে আসল কথা পাড়লেন কিন্তু সবাই কথা পাল্টে যেতে থাকে বা ছড়িয়ে যেতে থাকে, বীরেন বাবু ভেবেছিলেন টাকার লোভ দেখালে হয়তো কাজ হাসিল হয়ে যাবে তাই টাকার অফার করেছিলেন কিন্তু তার বদলে যেটা হয়েছিল সেটা আমৃত্যু তার মনে থাকবে, মুহূর্তের মধ্যে চায়ের দোকানে উপস্থিত প্রত্যেকের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র উঠে এল, এছাড়াও আশেপাশে থাকা বেশ কয়েকজন এগিয়ে এল তাদের হাতেও উদ্যত আগ্নেয়াস্ত্র, জগা আর তার সাথে যারা গিয়েছিল তাদের প্রত্যেকের কোমরে একটা পিস্তল গোঁজা ছিল সেটা তারা বার করতে যেতেই দেখলো তাদের প্রত্যেকের মাথা লক্ষ্য করে অন্তত ৫টা রাইফেল উদ্যত হয়ে উঠলো, এমনকি চায়ের দোকানির হাতেও একটা পিস্তল উঠে এসেছে আর সেটা সে সটান বীরেন বাবুর কপালে ঠেকালো, বীরেন বাবু অবাক অথচ সভয়ে দেখলেন এক নিরীহ চায়ের দোকানির মুখ মুহূর্তে একটা জাত খুনির মুখে বদলে গেল, দোকানি শীতল কণ্ঠে বললো: তোকে বিনা পয়সাতেই খবর দিচ্ছি তবে তার আগে একটা উপদেশ.. এখান থেকে চলে যা আর কোনোদিন এখানে আসবি না, এবার খবর.. এআরসির সাথে সেই দেখা করতে পারে যার সাথে এআরসি দেখা করতে চায় তার বাইরে কেউ দেখা করতে পারে না যদি কেউ করতে চায় তাহলে তাকে আর এই পৃথিবীতে দেখা যায় না, চল এবার যা এখান থেকে। বীরেন ভট্টাচার্যকে তারা জ্যান্ত ফেরত পাঠালো বটে তবে শাস্তিস্বরূপ প্রত্যেককে জামাকাপড় খুলিয়ে শুধুমাত্র নিম্নের অন্তর্বাস পরিয়ে হাঁটিয়ে হাঁটিয়ে এলাকা থেকে অনেকটা বাইরে বার করে দিল, ভাগ্য ভালো ছিল যে কোনো মিডিয়া ডাকেনি নাহলে সেদিনই তার সব সম্মান শেষ হয়ে যেত। বীরেন ভট্টাচার্য অপমান হজম করার লোক নন, তাই তিনি ঠিক করেছিলেন রাতে ওই এলাকায় হামলা করে তাদের যারা অপমান করেছে তাদের শেষ করবেন, যদি তাদের নাও পান তাহলে ওখানে যেপব বাড়িতে ঢুকে যারা থাকবে সবাইকে শেষ করবেন, এই উদ্দেশ্যে তিনি নিজের শহর থেকে দলের কয়েকজন লোককে ডেকে পাঠান, একটা ছোট্ট লজের রুমে সবাইকে নিয়ে হামলার প্ল্যান করছেন এমন সময় কোনোভাবে খবর পেয়ে সেখানে আগে হামলা চালায় এআরসির লোকেরা এই অতর্কিত হামলায় তার দলের প্রায় সবাইকে মেরে ফেলে ওরা কিন্তু অদ্ভুতভাবে বীরেন বাবু এবং জগাকে এবারও ছেড়ে দেয়, সেই থেকে আর ওদিকে পা বাড়াননি বীরেন বাবু..
আজকেও সেই রাতের ঘটনা মনে পরায় তার কপালে ঘাম দেখা যায়, পা কাঁপতে থাকে নেহাত চেয়ারে বসে ছিলেন নাহলে নির্ঘাত পরে যেতেন, লোকগুলো তার দলের লোকগুলোকে শুধু মারছিল না রীতিমতো নৃশংসভাবে মারছিল, যখন তাদের তাণ্ডব শেষ হয় তখন পুরো ঘরের মেঝে রক্তে ভেসে যাচ্ছে, বীরেন বাবু আর জগার পুরো শরীর রক্তে মাখামাখি, দুজনেই ভয়ে আতঙ্কে থরথর করে কাঁপছেন। সেই এআরসি এখন তার শহরে হাত বাড়িয়েছে, তবে কি এতদিন তারসাথে যা যা হয়েছে তার পিছনে এই এআরসি? এই এআরসি তার পিছনে লেগেছে? বীরেন বাবুর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা যায় তিনি সেদিনের ঘটনা মনে করে শিউরে ওঠেন, বীরেন বাবু ভালো করেই জানেন যে এই এআরসির সাথে লড়ার ক্ষমতা তার নেই, তিনি নেতা হতে পারেন কিন্তু সেটা শুধু এই রাজ্যের, অথচ এআরসির দল দেশের সব শহরে ছড়িয়ে আছে, তার আধিপত্য শুধু এই শহরে তাও তার অর্ধেক নিয়ে নিয়েছে এআরসি। কিন্তু তিনি বীরেন ভট্টাচার্য এত সহজে হার মানবেন না তিনি টেবিলের উপরে রাখা ফোনটা তুলে কাউকে ফোন করেন তারপর স্পিকার চালু করে টেবিলে রাখেন একটু পরে ওপার থেকে একটা পুরুষ কণ্ঠ শোনা যায় "হ্যালো"
অতীন আমি বীরেন ভট্টাচার্য বলছি।
এতদিন পর আমাকে মনে পরলো কেন?
তোমার অনেকদিনের শখ এই শহরে পোস্টিং নেওয়ার, আমি সেটা করতে পারি..
হঠাৎ... কিন্তু এই উপকারের বিনিময়ে আপনি কি চান?
এআরসি।
এআরসি?
এআরসির সম্পর্কে সব খবর চাই, তুমি পুলিশের লোক ওর সম্পর্কে খোঁজখবর জোগাড় করতে হবে।
আপনি জানেন আপনি কার সম্পর্কে কথা বলছেন?
জানি।
তাহলে এটাও জানেন যে ওর বিরুদ্ধে যারা স্পাইং করতে গেছে সবাই গায়েব হয়ে গেছে, বাণিজ্যনগরীতে রাজ করে ও, ওখানের কেউ ওর বিরুদ্ধে যাবে না।
ও এই শহরে আছে।



[/HIDE]
 

Users who are viewing this thread

Back
Top