[HIDE]
আপনি শিওর?
পুরো না, আমার একটা কন্ট্রাক্ট ও ছিনিয়ে নিয়েছে, আমাকে একটা বস্তি উচ্ছেদ করতে দিচ্ছে না, ওই বস্তিতে বাইরের কেউ ঢুকতে পারে না খুব সম্ভবত ওখানেই ও আছে, এবং আমার পিছনে লেগেছে।
বেশ.. আমি চেষ্টা করবো কিন্তু সফল হবো কিনা এখনই কথা দিতে পারছি না, কাজটা রিস্কি আর সফল হলে কি পাবো?
আগে সফল হও।
যদি হই তখন?
কি চাও তুমি?
আপনি জানেন।
নিজের লিমিট ক্রশ কোরো না অতীন ,বৃষ্টি আমার মেয়ে।
উঁহু আমার চয়েস পাল্টে গেছে বৃষ্টি নয় তাথৈ... আমার তাথৈকে চাই।
কিছুক্ষণ চুপ করে থাকেন বীরেন বাবু তারপর বলেন তোমার ট্রান্সফার অর্ডার তোমার হাতে চলে যাবে, যত তাড়াতাড়ি চলে আসো।
[/HIDE]
[HIDE]
তুমি আবার ওই পুরোহিত ব্যাটাকে বাড়িতে ডেকেছো?" ফোনেই মাকে জিজ্ঞেস করে এআরসি, নিজের অফিসে বসে ফোনে মায়ের সাথে কথা বলছে সে।
এই বাড়িতে পূজো দেবো না নাকি?
এত পূজো করো কেন?
ফালতু বকিস না কি জন্য ফোন করেছিস বল।
আমি একটা বড়ো প্রজেক্টের কন্ট্রাক্ট পেয়েছি ,একটা পাঁচতারা হোটেলের কনস্ট্রাকশনের প্রজেক্ট।
কয়েকবার ঠাকুরের উদ্দেশ্যে প্রণাম জানিয়ে ছেলেকে বলেন: তুই আরও উন্নতি কর.. আজ তোর বাবা থাকলে খুব খুশি হতেন ছেলের এই উন্নতি দেখে।
মায়ের কথা শুনে মুখটা গম্ভীর হয়ে যায় এআরসির, সে বলে: আমি জানি বাবা যেখানেই আছেন আমাকে দেখে খুশীই হচ্ছেন।
তোর কাজ তো হয়ে গেছে মনে হচ্ছে তাহলে এবার ফিরে আয়।
আসবো আর একটু বাকি আছে সেটা শেষ করেই ফিরবো।
আমার ছেলে কি ফিরবে?
মানে? কি বলছো তুমি মা?
বলছি তুই তো ফিরবি কিন্তু আমার ছেলে কি ফিরবে?
প্রশ্নটার তাৎপর্য বুঝতে একটু সময় নেয় এআরসি, সে চুপ করে থাকে।
আমার ছেলেকে ফিরিয়ে আন... আমি আর কিচ্ছু চাই না।
মা...
তুই না জানি কত কি হয়ে গেছিস তোকে আজকাল চিনতেই পারি না.....কিসব নাম রেখেছিস নিজের, কেউ ডাকে রয় নামে তো কেউ ডাকে এআরসি নামে কিন্তু এসবের মাঝে তোর বাবার দেওয়া নামটা হারিয়ে গেছে আমাদের ছেলে অ..
মা। মাকে কথাটা শেষ করতে দেয় না, তুমি যার কথা বলছো সে মারা গেছে আর মারা যাওয়া লোক ফিরে আসে না।
বাবু.. তুই
ওই নামটা নেবে না.. তুমি যাকে ফেরত চাইছো সে দুর্বল ছিল তাই নিজের বাবাকে বাঁচাতে পারেনি কিন্তু এখন যে আছে সে প্রচণ্ড ক্ষমতাধর, যাকগে ওসব ছাড়ো তোমার শরীর ঠিক আছে তো?
আছে.. আচ্ছা শোন কটা মেয়ের ছবি বেছে রেখেছি তুই এলে দেখবি নাকি পাঠিয়ে দেবো তোর কাছে?
মা... তোমাকে বলেছি না এইসব ফালতু চিন্তা বাদ দিতে।
একদম বাজে বকবি না, উনি বিয়ে করবেন না সারাজীবন এভাবেই থাকবি নাকি?
কারো কোনো ক্ষতি তো হচ্ছে না।
হটাৎ ছেলেকে একটা প্রশ্ন করেন এআরসির মা: আচ্ছা বাবু তুই কি এখনো ওই মেয়েটাকে..
না... মায়ের কথা শেষ করতে না দিয়েই জোরে উত্তর দেয় এআরসি।
তাহলে?
আমার জীবনে ওর জন্য আর কোনো জায়গা নেই।
তাহলে সমস্যা কিসের, কেন বিয়ে করতে চাইছিস না?
ছাড়ো ওসব।
সবই তো ছাড়তে বলছিস, আচ্ছা তুই কোথায় আছিস আমাকে নিয়ে চল না তোর কাছে।
দরকার কি? আমিও তো আর কিছুদিন পরেই ফিরবো
অনেকদিন ধরেই এক কথা বলে যাচ্ছিস, সত্যি বলতো তুই কোথায় আছিস?
আমি কাজের জন্য শহরের বাইরে আছি, বলেছি তো তোমাকে।
তুই এখন আমাদের ওই শহরে আছিস তাই না?
চমকে ওঠে এআরসি, বুঝতে পারে তার মা ঠিক আন্দাজ করেছে সে চুপ করে থাকে।
কি রে বল তুই ওখানেই গেছিস না?
না, তবে কন্ট্রাক্ট টা ওই শহরের পেয়েছি তাই ওখানে যেতে হবে।
তুই মিথ্যা বলছিস, তুই ওখানেই আছিস..
এআরসি বোঝে তার মা সব আন্দাজ করেছে তাই চুপ করে থাকে।
কি রে তুই ওখানেই গেছিস না?
বললাম তো না আমি অন্য জায়গায় আছি, পরে ওখানে যেতে হবে।
আচ্ছা আমিও যাবো।
মা তুমি
আমি কোনো কথা শুনতে চাই না,আমি যাবো তোর কাছে, আমি তোর বাবাকে হারিয়েছি কিন্তু এখন তোকে হারাতে পারবো না। কেঁদে ওঠেন তিনি।
মা..
না.. আমি কোনো কথা শুনতে চাই না আমি যাবো।
ঠিক আছে আমি ব্যবস্থা করছি তবে এখন নয় আর কিছুদিন পর, তুমি এলে তোমার হাতে পূজো দিয়ে নতুন কনস্ট্রাকশনের কাজ শুরু করবো, এখন ছাড়ছি।
কথা বলার সময় এআরসির মায়ের পাশে এসে বসেছেন তিনি যাকে নিজের দিদি বলে সম্মান দেন এআরসির মা আর তার ছেলে মাসি বলে সম্মান দেয়, সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব অবস্থায় যখন দুই মা আর ছেলে এই নতুন শহরে আসেন তখন ইনিই কাছে টেনে নেন, নিজের বস্তির ঘরে থাকতে দেন, দুনিয়ায় কেউ নেই তার এদিকে মা-ছেলেরও কেউ নেই তাই মিলেছিল ভালো। পরে ধীরে ধীরে যখন অভয় বড়ো বিজনেসম্যান হয়ে ওঠে নিজস্ব বাংলো তৈরি করে তখন মায়ের সাথে মাসিকেও নিয়ে আসে, যখন বস্তিতে থাকতেন তখন ওখানের অনেকেই ওনাকে বিন্দু মাসি বা বিন্দু দি বলে ডাকতো তাই উনিও প্রথমে বিন্দু দি বলে ডাকতেন পরে শুধু দিদি হয়ে যায় ডাকটা।
"কি বললো তোর ছেলে, কোথায় গেছে ও?" জিজ্ঞেস করেন বিন্দু দি।
সেখানেই গেছে যেখানে ওর যাওয়া ঠিক হয়নি।
তুই কিচ্ছু চিন্তা করিস না, বাবু আমাদের খুব ভালো কত লোকের আশীর্বাদ আছে ওর উপর, ওর কোনো ক্ষতি হবে না।
তাই যেন হয় দিদি, তাই যেন হয়।
আর কোন মেয়ের কথা বলছিলি যেন?
ছিল একটা মেয়ে, খুব বড়োলোকের মেয়ে.... আমার ছেলেটা খুব ভালোবাসতো ওকে, ছোটোবেলার প্রেম আমি ভেবেছিলাম ও হয়তো ভুলে গেছে কিন্তু বোধহয় আমি ভুল করেছি... ছেলেটা আমার এখনো ভোলেনি ওকে।
মায়ের সাথে কথা বলে ফোনটা টেবিলে রেখে দেয় এআরসি, মায়ের কথাগুলো তাকে ভাবায়, তার কানে বাজতে থাকে মায়ের বলা কথাগুলো "তুই না জানি কত কি হয়ে গেছিস তোকে আজকাল চিনতেই পারি না.....কি সব নাম রেখেছিস নিজের, কেউ ডাকে রয় নামে তো কেউ ডাকে এআরসি নামে কিন্তু এসবের মাঝে তোর বাবার দেওয়া নামটা হারিয়ে গেছে", সত্যিই তো সে কেন নিজের নাম লুকিয়ে বেড়াবে? সে কেন তার বাবার দেওয়া পরিচয় লুকিয়ে রাখবে.... বাবা.. মনে করতেই এআরসির চোখে এক সদাহাস্য মধ্যবয়স্ক মানুষের মুখটা ভেসে ওঠে তার সাথে কানে বাজতে থাকে ছোটো থেকে শোনা ডাক যেটা সে আর কোনোদিন শুনতে পারবে না, বাবার মুখে তার নাম "অভয়" তার বাবা রুদ্র রায় চৌধুরী তার মা অমৃতা রায় চৌধুরী আর সে অভয় রায় চৌধুরী তিনজনের কি সুন্দর জীবন ছিল, কিন্তু সব শেষ করে দিয়েছে, তার বাবাকে তার থেকে কেড়ে নিয়েছে ওই লোকটা ওই বীরেন ভট্টাচার্য... "আর তাথৈ?" অভয় ওরফে এআরসির ভিতর থেকে কেউ যেন প্রশ্নটা করে, হ্যাঁ.. তাথৈ, অভয় ভালোবেসেছিল ওকে খুব ভালোবেসেছিল কিন্তু বুঝতে পারেনি যে তাথৈ ওর সাথে খেলা করছে, টাইমপাস করছে কখনো বুঝতেই পারেনি বুঝলো সেদিন যেদিন অভয়ের ফোন তাথৈ ধরলো না বদলে হটাৎ করেই একটা ম্যাসেজ এল ফোনে "আমি চলে যাচ্ছি পড়াশোনা করতে, তোমার সাথে আর সম্পর্ক রাখতে চাইনা. ভেবে দেখলাম আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক হতেই পারে না তোমার সেই যোগ্যতা বা স্বচ্ছলতা কোনোটাই নেই, আমার তুলনায় তোমার স্ট্যাণ্ডার্ড অনেক নীচুতে, তোমার মতো গরীবের সাথে আমি থাকতে পারবো না আর তাছাড়া আমার বাড়িতে ঠিক বলেছে এখন কেরিয়ার গড়ার সময়, তাই আমি চলে যাচ্ছি, আমাকে কন্টাক্ট করার চেষ্টা কোরো না" ম্যাসেজটা পড়ে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল অভয় প্রথমে ভেবেছিল তাথৈ মজা করছে, তাই ফোন করেছিল একবার.. দুবার.. পরপর বেশ কয়েকবার করেছিল কিন্তু তাথৈ ধরেনি, একটা বন্ধুর ফোন থেকে কল করেছিল নিজে কনফারেন্স কলে থেকে তখন ফোনের ওপার থেকে একটা মেয়ের উত্তর এল "কেন বারবার বিরক্ত করছো ওকে, বুঝতে পারছো না ও তোমার মতো ভিখিরির সাথে রিলেশন রাখতে চায় না তাই ফোন ধরছে না" অভয় কাতরভাবে বলেছিল একবার ওর সাথে কথা বলতে চাই, আমি জানি ও আমাকে ভালোবাসে, এখন হয়তো রেগে আছে প্লিজ একবার ফোনটা দিন"
এবারে এক মহিলা কথা বললেন: না, ওর সাথে কথা বলা যাবে না, কেন বুঝতে পারছো না যেটাকে তুমি ভালোবাসা ভাবছো সেটা জাস্ট টাইমপাস ছিল, তুমি ভাবলে কিকরে যে তাথৈ তোমার মতো একজন লোয়ার ক্লাস ছেলেকে পছন্দ করবে?, তুমি তাথৈএর যোগ্য নও, ওকে নিজের মতো থাকতে দাও আর ওকে বিরক্ত কোরো না। ফোনটা কেটে গিয়েছিল, যে দুজন কথা বলেছিল তারা উভয়েই তাথৈএর খুব কাছের মানুষ।
আমি তো ওকে ভুলে গিয়েছিলাম, তাহলে কেন... কেন আজও ওকে দেখলে দুর্বল হয়ে পরি.. সত্যিই তো তখন তাথৈদের তুলনায় অনেক গরীব ছিলাম আমরা, আর বড়োলোকের মেয়েরা এটাই করবে সেটাই তো স্বাভাবিক, বৃষ্টিও তো ওরকম একটু আর্থিকভাবে গরীব পরিবারের ছেলেদের দুচোখে সহ্য করতে পারতো না ,তাথৈ আলাদা হবে কিভাবে একই পরিবারের মেয়ে তো, তবুও কেন মনে হয় যে ও এখনো সেই ছোটোবেলার সেই সরল তাথৈ আছে কেন মনে হয় যে ওর সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো মিথ্যা ছিল না? না মিথ্যা নয় সত্যি ছিল কিন্তু সেটা শুধু অভয়ের কাছে, তাথৈএর কাছে তো শুধু খেলা ছিল একটু টাইমপাস। না... আর ওর কথা ভাববো না নিজের কাছেই যেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয় অভয় ওরফে এআরসি, আমি এখানে প্রতিশোধ নিতে এসেছি বীরেন ভট্টাচার্যকে শেষ করতে এসেছি আর সেটাই করবো...অভয় মরে গেছে ,এখন শুধু একটা প্রেতাত্মা বেঁচে আছে, এই প্রেতাত্মা শুধু প্রতিশোধ নিতে চায় আর সেটা সে নেবেই কেউ আটকাতে পারবে না।
[/HIDE]
আপনি শিওর?
পুরো না, আমার একটা কন্ট্রাক্ট ও ছিনিয়ে নিয়েছে, আমাকে একটা বস্তি উচ্ছেদ করতে দিচ্ছে না, ওই বস্তিতে বাইরের কেউ ঢুকতে পারে না খুব সম্ভবত ওখানেই ও আছে, এবং আমার পিছনে লেগেছে।
বেশ.. আমি চেষ্টা করবো কিন্তু সফল হবো কিনা এখনই কথা দিতে পারছি না, কাজটা রিস্কি আর সফল হলে কি পাবো?
আগে সফল হও।
যদি হই তখন?
কি চাও তুমি?
আপনি জানেন।
নিজের লিমিট ক্রশ কোরো না অতীন ,বৃষ্টি আমার মেয়ে।
উঁহু আমার চয়েস পাল্টে গেছে বৃষ্টি নয় তাথৈ... আমার তাথৈকে চাই।
কিছুক্ষণ চুপ করে থাকেন বীরেন বাবু তারপর বলেন তোমার ট্রান্সফার অর্ডার তোমার হাতে চলে যাবে, যত তাড়াতাড়ি চলে আসো।
[/HIDE]
[HIDE]
তুমি আবার ওই পুরোহিত ব্যাটাকে বাড়িতে ডেকেছো?" ফোনেই মাকে জিজ্ঞেস করে এআরসি, নিজের অফিসে বসে ফোনে মায়ের সাথে কথা বলছে সে।
এই বাড়িতে পূজো দেবো না নাকি?
এত পূজো করো কেন?
ফালতু বকিস না কি জন্য ফোন করেছিস বল।
আমি একটা বড়ো প্রজেক্টের কন্ট্রাক্ট পেয়েছি ,একটা পাঁচতারা হোটেলের কনস্ট্রাকশনের প্রজেক্ট।
কয়েকবার ঠাকুরের উদ্দেশ্যে প্রণাম জানিয়ে ছেলেকে বলেন: তুই আরও উন্নতি কর.. আজ তোর বাবা থাকলে খুব খুশি হতেন ছেলের এই উন্নতি দেখে।
মায়ের কথা শুনে মুখটা গম্ভীর হয়ে যায় এআরসির, সে বলে: আমি জানি বাবা যেখানেই আছেন আমাকে দেখে খুশীই হচ্ছেন।
তোর কাজ তো হয়ে গেছে মনে হচ্ছে তাহলে এবার ফিরে আয়।
আসবো আর একটু বাকি আছে সেটা শেষ করেই ফিরবো।
আমার ছেলে কি ফিরবে?
মানে? কি বলছো তুমি মা?
বলছি তুই তো ফিরবি কিন্তু আমার ছেলে কি ফিরবে?
প্রশ্নটার তাৎপর্য বুঝতে একটু সময় নেয় এআরসি, সে চুপ করে থাকে।
আমার ছেলেকে ফিরিয়ে আন... আমি আর কিচ্ছু চাই না।
মা...
তুই না জানি কত কি হয়ে গেছিস তোকে আজকাল চিনতেই পারি না.....কিসব নাম রেখেছিস নিজের, কেউ ডাকে রয় নামে তো কেউ ডাকে এআরসি নামে কিন্তু এসবের মাঝে তোর বাবার দেওয়া নামটা হারিয়ে গেছে আমাদের ছেলে অ..
মা। মাকে কথাটা শেষ করতে দেয় না, তুমি যার কথা বলছো সে মারা গেছে আর মারা যাওয়া লোক ফিরে আসে না।
বাবু.. তুই
ওই নামটা নেবে না.. তুমি যাকে ফেরত চাইছো সে দুর্বল ছিল তাই নিজের বাবাকে বাঁচাতে পারেনি কিন্তু এখন যে আছে সে প্রচণ্ড ক্ষমতাধর, যাকগে ওসব ছাড়ো তোমার শরীর ঠিক আছে তো?
আছে.. আচ্ছা শোন কটা মেয়ের ছবি বেছে রেখেছি তুই এলে দেখবি নাকি পাঠিয়ে দেবো তোর কাছে?
মা... তোমাকে বলেছি না এইসব ফালতু চিন্তা বাদ দিতে।
একদম বাজে বকবি না, উনি বিয়ে করবেন না সারাজীবন এভাবেই থাকবি নাকি?
কারো কোনো ক্ষতি তো হচ্ছে না।
হটাৎ ছেলেকে একটা প্রশ্ন করেন এআরসির মা: আচ্ছা বাবু তুই কি এখনো ওই মেয়েটাকে..
না... মায়ের কথা শেষ করতে না দিয়েই জোরে উত্তর দেয় এআরসি।
তাহলে?
আমার জীবনে ওর জন্য আর কোনো জায়গা নেই।
তাহলে সমস্যা কিসের, কেন বিয়ে করতে চাইছিস না?
ছাড়ো ওসব।
সবই তো ছাড়তে বলছিস, আচ্ছা তুই কোথায় আছিস আমাকে নিয়ে চল না তোর কাছে।
দরকার কি? আমিও তো আর কিছুদিন পরেই ফিরবো
অনেকদিন ধরেই এক কথা বলে যাচ্ছিস, সত্যি বলতো তুই কোথায় আছিস?
আমি কাজের জন্য শহরের বাইরে আছি, বলেছি তো তোমাকে।
তুই এখন আমাদের ওই শহরে আছিস তাই না?
চমকে ওঠে এআরসি, বুঝতে পারে তার মা ঠিক আন্দাজ করেছে সে চুপ করে থাকে।
কি রে বল তুই ওখানেই গেছিস না?
না, তবে কন্ট্রাক্ট টা ওই শহরের পেয়েছি তাই ওখানে যেতে হবে।
তুই মিথ্যা বলছিস, তুই ওখানেই আছিস..
এআরসি বোঝে তার মা সব আন্দাজ করেছে তাই চুপ করে থাকে।
কি রে তুই ওখানেই গেছিস না?
বললাম তো না আমি অন্য জায়গায় আছি, পরে ওখানে যেতে হবে।
আচ্ছা আমিও যাবো।
মা তুমি
আমি কোনো কথা শুনতে চাই না,আমি যাবো তোর কাছে, আমি তোর বাবাকে হারিয়েছি কিন্তু এখন তোকে হারাতে পারবো না। কেঁদে ওঠেন তিনি।
মা..
না.. আমি কোনো কথা শুনতে চাই না আমি যাবো।
ঠিক আছে আমি ব্যবস্থা করছি তবে এখন নয় আর কিছুদিন পর, তুমি এলে তোমার হাতে পূজো দিয়ে নতুন কনস্ট্রাকশনের কাজ শুরু করবো, এখন ছাড়ছি।
কথা বলার সময় এআরসির মায়ের পাশে এসে বসেছেন তিনি যাকে নিজের দিদি বলে সম্মান দেন এআরসির মা আর তার ছেলে মাসি বলে সম্মান দেয়, সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব অবস্থায় যখন দুই মা আর ছেলে এই নতুন শহরে আসেন তখন ইনিই কাছে টেনে নেন, নিজের বস্তির ঘরে থাকতে দেন, দুনিয়ায় কেউ নেই তার এদিকে মা-ছেলেরও কেউ নেই তাই মিলেছিল ভালো। পরে ধীরে ধীরে যখন অভয় বড়ো বিজনেসম্যান হয়ে ওঠে নিজস্ব বাংলো তৈরি করে তখন মায়ের সাথে মাসিকেও নিয়ে আসে, যখন বস্তিতে থাকতেন তখন ওখানের অনেকেই ওনাকে বিন্দু মাসি বা বিন্দু দি বলে ডাকতো তাই উনিও প্রথমে বিন্দু দি বলে ডাকতেন পরে শুধু দিদি হয়ে যায় ডাকটা।
"কি বললো তোর ছেলে, কোথায় গেছে ও?" জিজ্ঞেস করেন বিন্দু দি।
সেখানেই গেছে যেখানে ওর যাওয়া ঠিক হয়নি।
তুই কিচ্ছু চিন্তা করিস না, বাবু আমাদের খুব ভালো কত লোকের আশীর্বাদ আছে ওর উপর, ওর কোনো ক্ষতি হবে না।
তাই যেন হয় দিদি, তাই যেন হয়।
আর কোন মেয়ের কথা বলছিলি যেন?
ছিল একটা মেয়ে, খুব বড়োলোকের মেয়ে.... আমার ছেলেটা খুব ভালোবাসতো ওকে, ছোটোবেলার প্রেম আমি ভেবেছিলাম ও হয়তো ভুলে গেছে কিন্তু বোধহয় আমি ভুল করেছি... ছেলেটা আমার এখনো ভোলেনি ওকে।
মায়ের সাথে কথা বলে ফোনটা টেবিলে রেখে দেয় এআরসি, মায়ের কথাগুলো তাকে ভাবায়, তার কানে বাজতে থাকে মায়ের বলা কথাগুলো "তুই না জানি কত কি হয়ে গেছিস তোকে আজকাল চিনতেই পারি না.....কি সব নাম রেখেছিস নিজের, কেউ ডাকে রয় নামে তো কেউ ডাকে এআরসি নামে কিন্তু এসবের মাঝে তোর বাবার দেওয়া নামটা হারিয়ে গেছে", সত্যিই তো সে কেন নিজের নাম লুকিয়ে বেড়াবে? সে কেন তার বাবার দেওয়া পরিচয় লুকিয়ে রাখবে.... বাবা.. মনে করতেই এআরসির চোখে এক সদাহাস্য মধ্যবয়স্ক মানুষের মুখটা ভেসে ওঠে তার সাথে কানে বাজতে থাকে ছোটো থেকে শোনা ডাক যেটা সে আর কোনোদিন শুনতে পারবে না, বাবার মুখে তার নাম "অভয়" তার বাবা রুদ্র রায় চৌধুরী তার মা অমৃতা রায় চৌধুরী আর সে অভয় রায় চৌধুরী তিনজনের কি সুন্দর জীবন ছিল, কিন্তু সব শেষ করে দিয়েছে, তার বাবাকে তার থেকে কেড়ে নিয়েছে ওই লোকটা ওই বীরেন ভট্টাচার্য... "আর তাথৈ?" অভয় ওরফে এআরসির ভিতর থেকে কেউ যেন প্রশ্নটা করে, হ্যাঁ.. তাথৈ, অভয় ভালোবেসেছিল ওকে খুব ভালোবেসেছিল কিন্তু বুঝতে পারেনি যে তাথৈ ওর সাথে খেলা করছে, টাইমপাস করছে কখনো বুঝতেই পারেনি বুঝলো সেদিন যেদিন অভয়ের ফোন তাথৈ ধরলো না বদলে হটাৎ করেই একটা ম্যাসেজ এল ফোনে "আমি চলে যাচ্ছি পড়াশোনা করতে, তোমার সাথে আর সম্পর্ক রাখতে চাইনা. ভেবে দেখলাম আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক হতেই পারে না তোমার সেই যোগ্যতা বা স্বচ্ছলতা কোনোটাই নেই, আমার তুলনায় তোমার স্ট্যাণ্ডার্ড অনেক নীচুতে, তোমার মতো গরীবের সাথে আমি থাকতে পারবো না আর তাছাড়া আমার বাড়িতে ঠিক বলেছে এখন কেরিয়ার গড়ার সময়, তাই আমি চলে যাচ্ছি, আমাকে কন্টাক্ট করার চেষ্টা কোরো না" ম্যাসেজটা পড়ে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল অভয় প্রথমে ভেবেছিল তাথৈ মজা করছে, তাই ফোন করেছিল একবার.. দুবার.. পরপর বেশ কয়েকবার করেছিল কিন্তু তাথৈ ধরেনি, একটা বন্ধুর ফোন থেকে কল করেছিল নিজে কনফারেন্স কলে থেকে তখন ফোনের ওপার থেকে একটা মেয়ের উত্তর এল "কেন বারবার বিরক্ত করছো ওকে, বুঝতে পারছো না ও তোমার মতো ভিখিরির সাথে রিলেশন রাখতে চায় না তাই ফোন ধরছে না" অভয় কাতরভাবে বলেছিল একবার ওর সাথে কথা বলতে চাই, আমি জানি ও আমাকে ভালোবাসে, এখন হয়তো রেগে আছে প্লিজ একবার ফোনটা দিন"
এবারে এক মহিলা কথা বললেন: না, ওর সাথে কথা বলা যাবে না, কেন বুঝতে পারছো না যেটাকে তুমি ভালোবাসা ভাবছো সেটা জাস্ট টাইমপাস ছিল, তুমি ভাবলে কিকরে যে তাথৈ তোমার মতো একজন লোয়ার ক্লাস ছেলেকে পছন্দ করবে?, তুমি তাথৈএর যোগ্য নও, ওকে নিজের মতো থাকতে দাও আর ওকে বিরক্ত কোরো না। ফোনটা কেটে গিয়েছিল, যে দুজন কথা বলেছিল তারা উভয়েই তাথৈএর খুব কাছের মানুষ।
আমি তো ওকে ভুলে গিয়েছিলাম, তাহলে কেন... কেন আজও ওকে দেখলে দুর্বল হয়ে পরি.. সত্যিই তো তখন তাথৈদের তুলনায় অনেক গরীব ছিলাম আমরা, আর বড়োলোকের মেয়েরা এটাই করবে সেটাই তো স্বাভাবিক, বৃষ্টিও তো ওরকম একটু আর্থিকভাবে গরীব পরিবারের ছেলেদের দুচোখে সহ্য করতে পারতো না ,তাথৈ আলাদা হবে কিভাবে একই পরিবারের মেয়ে তো, তবুও কেন মনে হয় যে ও এখনো সেই ছোটোবেলার সেই সরল তাথৈ আছে কেন মনে হয় যে ওর সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো মিথ্যা ছিল না? না মিথ্যা নয় সত্যি ছিল কিন্তু সেটা শুধু অভয়ের কাছে, তাথৈএর কাছে তো শুধু খেলা ছিল একটু টাইমপাস। না... আর ওর কথা ভাববো না নিজের কাছেই যেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয় অভয় ওরফে এআরসি, আমি এখানে প্রতিশোধ নিতে এসেছি বীরেন ভট্টাচার্যকে শেষ করতে এসেছি আর সেটাই করবো...অভয় মরে গেছে ,এখন শুধু একটা প্রেতাত্মা বেঁচে আছে, এই প্রেতাত্মা শুধু প্রতিশোধ নিতে চায় আর সেটা সে নেবেই কেউ আটকাতে পারবে না।
[/HIDE]