What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

প্রতিশোধ: দ্যা রিভেঞ্জ by Monen2000 (1 Viewer)

[HIDE]

তোমাকে আমি.. বলে তাথৈ একটু ছটফট করতেই অভয় "আঃ" করে ওঠে সঙ্গে সঙ্গে তাথৈ ভয়ার্ত গলায় "অভয়.. কোথায় লাগলো?"বলে ওঠে।
আমি ঠিক আছি। অভয় আবার তাথৈএর মাথাটা ধরে নিজের বুকে টেনে নেয়।
আমার ভীষণ ভয় করছে অভয়? একটু পরে তাথৈ বলে।
কেন?
জ্যেঠু পালিয়ে গেছেন, উনি আবার তোমার ক্ষতি করতে চাইবেন, কোর্টের সামনেই তো মাকে মারতে চাইলেন, আমার সত্যিই খুব ভয় করছে।
আমার উপর বিশ্বাস আছে?
নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করি তোমাকে।
তাহলে ভয় পেয়ো না।
কিন্তু উনি যদি..
উনি আর কোনো ক্ষতি করতে পারবেন না, চিন্তা কোরো না।
আসবো অভয়। হটাত দরজার সামনে বৃষ্টির আওয়াজ শুনে অভয় আর তাথৈ আলাদা হয়ে বসে।
আসো।
বৃষ্টি ভিতরে ঢোকে ওর চোখেও জল। "কি হয়েছে তুমি আবার কাঁদছো কেন?" জিজ্ঞেস করে অভয়।
আমি বুঝতে পারছি না কি বলবো, তুমি সেদিন আমাকে বাঁচালে আর আজ আমার বাবা আমার তোমাকে..আমি হাতজোড় করে ক্ষমা চাইছি।
বৃষ্টি তোমার বাবা যা করেছেন তার জন্য তুমি দায়ী ন‌ও তবে আমি আশা করবো তুমি নিজেকে পাল্টেছো, তোমার ইগো তোমার অহংকার কমেছে।
বৃষ্টি চুপ করে শুনতে থাকে অভয় বলে চলে "ভেবোনা তোমাকে কথা শোনাচ্ছি কিন্তু এটাই সত্যি তোমার মধ্যে আগে খুব অহংকার ছিল, তবে এখন সেটা না থাকলেই ভালো, যাইহোক অমিয় কোথায়?"
ও বাইরে ওই কি যেন নাম আমিরের সাথে আছেহ ডাকবো?
না থাক,অমিয় তোমাকে খুব ভালোবাসে পারলে ওকে..
তোমার বন্ধু তোমাকে বেশি ভালোবাসে সেইজন্য এত বছর পরে আমি যখন ওকে পাল্টা প্রপোজ করি তখন ও রিফিউজ করে।
তবুও তোমাকে বিপদে দেখে এসেছিল তো?
হ্যাঁ।
তাহলে?
অভয় তুমি সত্যিই আমার ড্যাডির জন্য আমার উপরে রেগে নেই?
না, আর যদি কিছু মনে না করো এখন আমাকে আর তাথৈকে একটু একা ছেড়ে দেবে প্লিজ।
বৃষ্টি একটু হেসে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। অভয় আবার তাথৈকে কাছে টেনে নেয়।

"এখন আবার দুইজন কোথায় যাচ্ছিস?" রাতে অভয় আর আমির বেরোনোর উদ্যোগ করছিল, এমন সময় অমৃতাদেবী ঘরে এসে ব্যাপারটা দেখে কথাটা বললেন।
মা, একটা কাজ এসে গেছে সেটাই সারতে যাচ্ছি।
কোথাও যাবি না তুই এখন, সকালে যা ফাড়া গেছে তারপর এখন বেরোনোর নাম নিবি না।
মা..
বললাম তো না, কিছু বলা হয়না বলে যা খুশি তাই শুরু করেছিস।
মা, আমি ঠিক আছি, খানিকক্ষণের কাজ সেরেই চলে আসবো আর আমির‌ও তো থাকছে আমার সাথে।
অমৃতাদেবী এবার আমিরের দিকে তাকান বলেন "আমির, তোর‌ই বা এখন বেরোবার কি দরকার?"
আম্মি, মানে মানে...
মানে মানে কি করছিস...
মা আমি ওকে ডেকেছি তুমি চিন্তা কোরো না, আমি চলে আসবো।
তুই শুনবি না আমার কথা, তোর হাতে এখনো ব্যাণ্ডেজ কত রক্ত বেরিয়েছে আর তুই
অভয় মাকে জড়িয়ে ধরলো বললো: তুমি চিন্তা কোরো না, যাও ঘুমিয়ে পড়ো ওষুধ খেয়েছো?
তুমি আবার কোথায় যাচ্ছো এখন? দরজার কাছে এবার তাথৈএর আওয়াজ শোনা গেল।
এবার তুমিও? শোনো আমার একটা কাজ আছে সেটা সারতে যাচ্ছি।
কিন্তু তোমার হাতে..
দেখনা মা, তুই ওকে আটকা এত রাতে এই অবস্থায় কোথায় যাচ্ছে আবার। তাথৈএর কথা মাঝখানে আটকে বলে ওঠেন অমৃতাদেবী। তাথৈ কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই অভয় বলে "মা বললাম তো একটা কাজে যাচ্ছি"। অমৃতাদেবী গজগজ করতে থাকেন "শুনবি না আমার কথা, পুরো বাপের মতো হয়েছে"। অভয় মাকে ধরে বিছানায় বসায় তারপর পায়ের কাছে বসে বলে "মা, আজকে ছেড়ে দাও এরপর তুমি যা বলবে শুনবো"
তোর কিছু হয়ে গেলে আমি..
আম্মি আমি থাকতে ওর কিচ্ছু হবে না, কোর্টে আমি ছিলাম না কিন্তু এখন আমি থাকবো ওর সাথে। এবার আমির‌ও অমৃতাদেবীর পায়ের কাছে বসে কথাটা বলে।

মা, যাও তুমি গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। কথাটা বলে অভয় উঠে যাওয়ার জন্য ঘুরতেই তাথৈএর দিকে চোখ পড়ে, ওর মুখ দেখে বোঝা যায় ও চায়না অভয় এখন কোথাও বেরোক কিন্তু বলতে পারছে না, অভয় সেটা বোঝে তাথৈএর একটা গালে আলতো করে হাত দিয়ে বলে "মায়ের খেয়াল রেখো, আমি চলে আসবো"। বলে আর কোনো কথা বলার অবকাশ না দিয়ে অভয় আর আমির বেরিয়ে যায়, গাড়িতে উঠে অভয় আমিরকে জিজ্ঞেস করে "ইঞ্জেকশনটা এনেছো?"
হ্যাঁ, এই নাও। বলে আমির একটা ইঞ্জেকশন আর একটা অ্যাম্পুল দিয়ে বলে "এটাতে বেশ কিছুক্ষণের জন্য তোমার ব্যাথা কম ফিল হবে", অভয় সিরিঞ্জে ওষুধ নিয়ে শার্টের হাতাটা গুটিয়ে ইঞ্জেকশনের সুঁইটা নার্ভে ঢুকিয়ে দেয়, গাড়ি স্টার্ট দেয় আমির বলে "আর দুদিন রেস্ট নিয়ে কাজটা করলে হতোনা?"
হয়তো হতো কিন্তু আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাজটা শেষ করতে চাই তারপর একটা স্বাভাবিক সুস্থ জীবন কাটাতে চাই।
কাজটা নাহয় আমি করে দিতাম।
না আমির ঋণটা আমার উপর তাই শোধ‌ও আমি‌ই করবো।
আমির আর কোনো কথা না বলে গাড়ি চালাতে থাকে।

"বললাম তো যতক্ষণ না ওই অভয়কে শেষ করতে পারছি ততক্ষণ আমি শান্তি পাবো না" দেয়ালে একটা চাপড় মেরে কথাটা বললেন বীরেন বাবু, কোর্ট থেকে পালিয়ে এসেছেন বলা ভালো তাকে নিয়ে আসা হয়েছে কিন্তু আসার আগে ওই অভয়ের সামনে ওর মাকে মারবেন বলে গুলি চালিয়েছিলেন কিন্তু অভয় এবারও ঝর মাকে বাঁচিয়ে নেয় যদিও ও নিজে আহত হয়, আবার রিভলভার চালিয়েছিলেন কিন্তু গুলি শেষ হয়ে যাওয়ায় আর কিছু হয়নি। বীরেন বাবু খুব ভালো করেই জানেন যে এতক্ষণে একদিকে পুলিশ আর অপরদিকে অভয়ের দলের লোক পুরো শহরে তাকে খুঁজতে শুরু করেছে, কি অবস্থা হয়েছে তার এই কদিন আগেও এই শহরের বেতাজ বাদশা ছিলেন তিনি তার সামনে দাঁড়ানোর সাহস হতো না কারো আর আজ তাকে এই শহরেই লুকিয়ে থাকতে হচ্ছে, যারা তাকে কোর্ট থেকে নিয়ে এসেছে তারা শহরের একা অনামী হোটেলে রেখেছে, এরকম হোটেলে থাকার কথা তিনি কোনোদিন ভাবতেও পারেননি আর আজ... সব ওই অভয়ের জন্য, এখানে এসেই তিনি একজন ঢ্যাঙা মতো একটা লোককে দেখেন যে নিজেকে বাপ্পা বলে পরিচয় দেয়, বীরেন বাবুর যদিও মনে পড়ে না যে উনি ওকে আগে দেখেছেন কি না কিন্তু এইমুহূর্তে ওর উপর নির্ভর করা ছাড়া উপায় নেই, ওকেই বললেন যেভাবেই হোক ওই অভয়কে মারতে চান তার ব্যবস্থা করে দিতে, উত্তরে বাপ্পা বললো "আপাতত কিছুদিন শান্ত হয়ে থাকতে, পরে সুযোগ আসবেই" কিন্তু বীরেন বাবু জানান যতক্ষণ না উনি অভয়কে শেষ করছেন ততক্ষণ উনি শান্ত হতে পারবেন না। শেষমেশ বাপ্পা জানায় "ঠিক আছে স্যার, আমি চেষ্টা করছি"
আরেকটা কথা বাপ্পা।
বলুন।
অভয়ের আগে ওর মাকে মারতে চাই।
কিন্তু স্যার।
কোনো কিন্তু নয়, ওর চোখের সামনে ওর মাকে মারবো তারপর ওকে, ওর বাবাকে মেরেছিলাম বলে আমার উপর প্রতিশোধ নিতে ফিরে এসেছে এবার দেখি ওর মাকে মারার পরে ও কি করে?।
ঠিক আছে স্যার, আমি দলের যারা বেঁচে আছে তাদের সাথে যোগাযোগ করছি।



[/HIDE]
 
[HIDE]

কর তবে বেশি সময় নিস না।
সেই রাতেই বাপ্পা এসে বীরেন বাবুকে নিয়ে চললো, বীরেন বাবু "কোথায় যাচ্ছি" জিজ্ঞেস করায় বললো "একজনের সঙ্গে দেখা করতে"
কার সঙ্গে?
ওই অভয়ের একজন শত্রু, বাণিজ্যনগরী থেকে এসেছেন।
কে তিনি?
নাম এখনো জানিনা তবে ওই অভয় তার‌ও অনেক ক্ষতি করেছে।
তুই কিভাবে জানলি?
উনি নিজে আপনার খোঁজ করতে লোক লাগিয়েছিলেন।
এত তাড়াতাড়ি খোঁজ পেয়ে গেলেন? বীরেন বাবুর গলায় সন্দেহ।
তাড়াতাড়ি নয়তো অনেকদিন থেকেই সত্যি বলতে উনিই আপনাকে পালাতে সাহায্য করেছেন ওনার সাহায্য ছাড়া আমরা কিছুই করতে পারতাম না আমাদের দলের প্রায় সবাইকেই শেষ করে দেওয়া হয়েছে।
কি বলছিস তুই?
ঠিকই বলছি স্যার, কাউকে পুলিশ দিয়ে এনকাউন্টার করিয়ে দেওয়া হয়েছে তো কাউকে নিজেই গুম করে দিয়েছে ওই অভয়।
বীরেন বাবু আর অবিশ্বাস করতে পারলেন না, এতদিনে তিনি বুঝতে পেরেছেন এই অভয়ের ক্ষমতা কতটা তিনি জিজ্ঞেস করলেন "এখন তো আমার আর ক্ষমতা নেই তাহলে তোর এই ইনি আমাকে ডেকেছেন কেন?"
সেটা উনিই ভালো বলতে পারবেন তবে আমার যতটুকু মনে হচ্ছে উনি আপনার সাথে কোনো ডিল করতে চাইছেন যেটাতে আপনার এবং ওনার দুজনেরই লাভ হবে।
কিন্তু আমার এখন ক্ষমতা নেই তাহলে?
উনি দেখা করতে চেয়েছেন করুন তারপর দেখা যাবে, এইতো আমরা প্রায় এসেই গেছি।
বাপ্পার কথাটা বীরেন বাবু মেনে নিলেন মনে মনে বললেন "ঠিকই তো দেখাই যাক না কি চান, তারপর ব্যবস্থা করা যাবে"। বীরেন বাবু দেখলেন বাপ্পা একটা বন্ধ কারখানার সামনে এসে গাড়ি থামালো, এই কারখানাটার আশেপাশের অনেকটা জায়গা খালি জনশূন্য এলাকায় এবং এই কারখানাটা তিনি চেনেন তিনি জানেন কারণ এটা তার‌ই ছিল এখান থেকেই তার ড্রাগসের চালান হতো পরে নারকোটিকস্ ডিপার্টমেন্টের অফিসাররা বন্ধ করে দেয়, যদিও বীরেন বাবুর নাম জড়ায়নি, তার ভাই ধীরেন বাবু সব সামলে নিয়েছিলেন, বীরেন বাবু প্রথমে না বুঝলেও এখন তিনি বুঝেছেন যে এটা বন্ধ করার পিছনে অভয়ের হাত আছে, তিনি একটু অবাক হয়ে বাপ্পাকে জিজ্ঞেস করেন "এখানে?"
হ্যাঁ স্যার আসুন।
দুজনে ভিতরে ঢোকেন একটা বড়ো হলঘর টাইপের জায়গায় আসেন এখানে ড্রাগস চালান হবার জন্য প্যাকিং হতো কিন্তু সেখানে প্রথমে কাউকে না দেখতে পেয়ে বীরেন বাবু একটু অবাক হন সন্দিগ্ধ স্বরে জিজ্ঞেস করেন "কি রে এখানে তো কেউ নেই, এখানে কেন আনলি আমাকে?"
"কারণ ওকে আমি বলেছি তাই।" তৃতীয় ব্যক্তির আওয়াজ শুনে চমকে ওঠেন বীরেন বাবু, আওয়াজটা পরিচিত গলার হলেও তিনি এখানে সেটা আশা করেননি আওয়াজটা যেদিক থেকে এসেছে তিনি সেদিকে ফিরলেন, এতক্ষণ অত বড়ো হলঘরে অল্প আলোর দু-তিনটে বাল্ব জ্বলছিল ফলে বেশিরভাগই অন্ধকার হয়ে ছিল এখন হটাৎ পরপর বেশ কয়েকটা হ্যাজাক লাইট জ্বলে উঠলো, বীরেন বাবু তাকিয়ে দেখলেন হলঘরের একটা দিকে একটা টেবিলের উপরে বসে আছে তার জাতশত্রু এআরসি ওরফে অভয় রায় চৌধুরী।
বীরেন বাবু সঙ্গে সঙ্গে পিছনে ফিরে বাপ্পার দিকে ফেরেন কিন্তু ততক্ষণে সে নিঃশব্দে আরো।পিছনে সরে গিয়েছে, বীরেন বাবু এটাও লক্ষ্য করলেন যে এখানে তিনি বাপ্পা আর এআরসি ছাড়া আরও লোক আছে অর্থাৎ তার পালাবার রাস্তা বন্ধ, তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে।
"আপনি নিশ্চয়ই আমাকে এখানে দেখে অবাক হয়েছেন তাই না?" ব্যাঙ্গের স্বরে জিজ্ঞেস করে অভয়, কিন্তু বীরেন বাবু কোনো কথা বলেন না অভয় টেবিল থেকে নেমে আস্তে আস্তে বীরেন বাবুর কাছে আসে বলে "আপনি খেয়াল করেছিলেন যে যেকটা গাড়িতে বিস্ফোরণ হয়েছে তার একটিতেও কোনো লোক ছিল না বা যারা আপনাকে নিয়ে আসতে গেছে তারা কারো উপর গুলি চালায় নি বুঝতে পারছেন না?"

বীরেন বাবু তবুও চুপ করে তাকিয়ে আছে দেখে অভয় আবার বলতে শুরু করে "তাহলে আপনাকে খুলেই বলি, আপনাকে কোর্ট চত্ত্বর থেকে বার করে আনার পুরো প্ল্যানটা আমার ছিল,আমিই ওই কনস্টেবল, বাপ্পা এবং ওর ওয়াইফকে পাঠিয়েছিলাম থ্যাংক ইউ বাপ্পা"
কি যে বলেন স্যার কি এমন করেছি আপনি না থাকলে ব‌উ বাচ্চা নিয়ে না খেতে পেয়ে মরে যেতাম, তার বিনিময়ে এটুকু করতে পেরেছি এ তো আমার সৌভাগ্য স্যার।
"হ্যাঁ যেটা বলছিলাম সবকিছু আমার প্ল্যানেই ছিল শুধু একটা জিনিস ছাড়া, আমি ভেবেছিলাম আপনি পালানোর চান্স পেলে আগে পালানোর কথাই ভাববেন কিন্তু আপনি যে রিভলবার জোগাড় করে সঙ্গে সঙ্গে অ্যাটাক করবেন এটা ভাবতে পারিনি, অবশ্য পুলিশকে মারায় আমার সুবিধাই হয়েছে পুরো পুলিশ ডিপার্টমেন্ট এখন আপনার বিরুদ্ধে, কিন্তু আপনি আরও একজনকে মারতে চেয়েছিলেন, আমার মাকে তাইতো?"
"দুর্ভাগ্য গুলিটা তোর হাতে লাগে" এতক্ষণে মুখ খুললেন বীরেন বাবু, "আমি ভেবেছিলাম তোর সামনে তোর মাকে মারবো ঠিক যেভাবে তোর বাপকে মেরেছিলাম"
"আপনার মধ্যে একটুও মনুষ্যত্ব নেই না? জীবনে কত পাপ করেছেন আপনার সাথে আজ কেউ নেই আপনার ছায়াসঙ্গী যেদুজন ছিল আপনার ভাই আর জগা তারা নেই আপনার দিদি আর ভাগ্নে নেই আপনার স্ত্রীকে আপনি মেরেছেন আপনি আপনার মেয়েকে মারতে লোক পাঠিয়েছেন, আপনার ছেলে আপনাকে কোনোদিন চিনবে না।"
আমার ছেলে?
"আপনার আর শিউলী দেবীর ছেলে, আমি ওর কথা জানি। আপনি একবারও আয়নায় নিজেকে দেখেছেন? মানুষ রূপী পশু আপনি, আপনি কোর্ট থেকে পালানোর সুযোগ কাজে না লাগিয়ে আবার আমার মাকে মারতে চেয়েছিলেন কি ভেবেছিলেন আমার মাকে মারতে পারবেন? আমার মায়ের গায়ে যদি একটা আঁচড় লাগতো না তাহলে ওখানেই আপনাকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারতাম। আর আপনাকে কেন কোর্ট থেকে নিয়ে এসেছি জানেন? যাতে নিজে হাতে আপনাকে মারতে পারি, আপনি সমাজের চোখে একজন পলাতক আসামী, যে কোর্ট থেকে পালিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে আপনি আজীবন সেটাই থাকবেন কেউ জানবে না আপনার কি হয়েছে, ঠিক যেভাবে এই শহরে আমাদের নিরুদ্দেশ করে দিয়েছিলেন, আপনি পিছন থেকে আমার বাবাকে পিঠে গুলি করেছিলেন কিন্তু আমি আপনার সামনে দাঁড়িয়ে আপনার চোখে চোখ রেখে আপনার কপালে গুলি করবো" অভয় নিজের ডান হাতের তর্জনী নিজের কপালে ঠেকায়।

তুই ঠিক বলেছিস আজ আমি একা আমার সাথে কেউ নেই সারাজীবন যে ক্ষমতার পিছনে ছুটেছি আজ সেই ক্ষমতাও হারিয়েছি, আমার মেয়ে আমার সাথে নেই যে ভাই সবসময় আমার পাশে থাকতো সে আজ নেই, আমার দিদিও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে, আমার সিএম হবার স্বপ্ন ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে, আর এইসব তোর জন্য তোকে আমি ছাড়বো না" বলে বীরেন বাবু অভয়ের দিকে তেড়ে এলেন এবং এসেই অভয়ের চোয়ালে একটা ঘুষি মারলেন তারপর একটু ঝুঁকে গুঁতোনোর মতো অভয়ের কোমর ধরে ঠেলে পিছনে নিয়ে যেতে লাগলেন,পিছনের দেয়ালে অভয়কে ফেলে দেওয়ার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে অভয়‌ও বেশ কয়েকপা পিছিয়ে গেল কিন্তু তারপর নিজেকে সামলে নিল বীরেন বাবু আর ঠেলে ওকে নড়াতে পারছেন না, অভয় দুহাতের কনুই দিয়ে বীরেন বাবুর পিঠে সজোড়ে আঘাত করতে থাকে কিন্তু তবুও বীরেন বাবু ওকে ছাড়েন না শেষে নীচ থেকে হাঁটু উপরে তুলে বীরেন বাবুর পেটে আঘাত করতে থাকে এর ফলে বীরেন বাবুর হাত অভয়ের কোমর থেকে একটু আলগা হয় আর অভয় তৎক্ষণাৎ বীরেন বাবুর কোমর ধরে আলুর বস্তা তোলার মতো দুহাতে মাথার উপরে তুলে মাটিতে আছাড় মারে, বীরেন বাবুর মুখ থেকে একটা "আঃ" আর্তনাদ বেরিয়ে আসে, কিন্তু তিনি সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়ান একসময়ে তিনি তার নিজের এলাকার নাম করা মস্তান ছিলেন মারামারিতে যথেষ্ট পটু ছিলেন এবং এলাকায় যথেষ্ট আতঙ্ক ছিল তার আজ বয়স হলেও এখনো শরীরে যথেষ্ট শক্তি ধরেন তিনি আবার অভয়কে আঘাত করতে উদ্যত হন, এদিকে অভয়‌ও যেন এরকমই একটা কিছুর প্রত্যাশা করছিল সেইজন্য সে পিস্তল বার না করে খালি হাতেই লড়াই করছে। বীরেন বাবু এগিয়ে এসে অভয়ের চোয়ালে আঘাত করেন ,অভয় এক পা পিছিয়ে যায় আবার বীরেন বাবু এগিয়ে আসেন তবে এবার আঘাতটা অভয়ের বাহাতের বাহুতে করেন তিনি জানেন ওখানেই তার চালানো গুলি লেগেছিল, আঘাতের ফলে অভয়ের ওই অংশের শার্ট রক্তে ভিজে যায় বীরেন বাবু আবার ওখানে আঘাত করেন এবার কিছুটা রক্ত শার্টের গোটানো স্লিভেল থেকে বেরিয়ে কবজিতে পৌঁছায় কিন্তু ইঞ্জেকশনের জন্যই হোক বা নিজের ইচ্ছাশক্তির জন্যই হোক অভয় ব্যাথাটা সহ্য করে নেয়, বীরেন বাবু তৃতীয় বার আঘাত করতে এলে সে বাহাতে আটকে ডান হাতে বীরেন বাবুর চোয়ালে আঘাত করে হ বীরেন বাবু কয়েকপা পিছিয়ে যান, কিন্তু পরক্ষনেই আবার অগ্ৰসর হলে অভয় ডান পা তুলে ওনার বুকে সজোড়ে একটা লাথি মারেন, বীরেন বাবু আঘাতটা সামলাতে না পেরে মাটিতে পড়ে যান।

[/HIDE]
 
[HIDE]

.. উঠুন" অভয় ডাকতে থাকে, বীরেন বাবু উঠে আবার অভয়ের বাহাতের বাহুতে আঘাত করে, এবার অভয়ের ব্যাথা অনুভূত হয় তার চোখমুখ একটু কুঁচকে যায় কিন্তু বীরেন বাবু আবার আঘাত করতে উদ্যত হলে আবার সে হাতটা ধরে অপর হাত দিয়ে বীরেন বাবুর তলপেটে পরপর কয়েকটা ঘুষি মারে, তারপর হাতটা ছেড়ে দিয়ে আবার বুকে জোড়ে লাথি মারে, বীরেন বাবু আবার নীচে পড়ে যান কিন্তু এবার তিনি দ্রুত উঠতে পারেন না, কোনোমতে উঠে অভয়কে আবার মারতে চাইলে আবার অভয় হখত ধরে অপর হাতে তলপেটে পরপর ঘুষি মারতে থাকে, তারপর চোয়ালে একটা ঘুষি মারে, বীরেন বাবু কয়েকপা পিছিয়ে যান কিন্তু তাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে যে আর তার লড়ার শক্তি নেই তার দমেও ঘাটতি পড়েছে তিনি টলছেন কোনোমতে এগিয়ে আসছেন কিন্তু অভয়ের ঘুষি, লাথি খেয়ে মাটিতে পড়ে যাচ্ছেন, তারপর আবার উঠছেন আবার মার খেয়ে পড়ে যাচ্ছেন, এভাবে কিছুক্ষণ চললো একসময় দেখা গেল বীরেন বাবু আর পারছেন না, তখন অভয় পিস্তল বার করলো বললো "বলেছিলাম না আপনার সামনে দাঁড়িয়ে আপনার চোখে চোখ রেখে কপালে গুলি করবো" কথাটা বলে অভয় সোজা পিস্তলটা বীরেন বাবুর কপালে তাক করে এতক্ষণে বীরেন বাবু বুঝতে পারেন কি হতে যাচ্ছে, তিনি ডুকরে কেঁদে ওঠেন বারবার অনুরোধ করতে থাকেন তাকে না মারার জন্য "অভয়.. অভয় আমার ভুল হয়ে গেছে আমাকে মেরোনা দয়া করো আমাকে, অভয়.." কিন্তু অভয় তার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে ট্রিগার চাপে, সঙ্গে সঙ্গে একটা আওয়াজ আজ বীরেন বাবুর কপালে আর মাথার পিছনে গুলি ঢোকা আর বেরোনোর ছিদ্র হয়ে কিছুটা রক্ত বেরিয়ে এল এবং তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন, কিন্তু অভয়ের যেন শান্তি হলো না সে পাগলের মতো মৃত বীরেন বাবুর উপরে পিস্তলের বাকি গুলি চালাতে লাগলো আর চেঁচিয়ে বলতে লাগলো "কেন আমার বাবাকে মেরেছিলেন, কেন? এখন দেখান আপনার ক্ষমতা উঠুন" শেষে যখন আর গুলি বেরোচ্ছে না তখন পিস্তল ফেলে হাঁটু মুড়ে মাটিতে বসে একবার চেঁচিয়ে উঠলো "বাবাআআআআআআ আমি প্রতিশোধ নিয়েছি, তোমাকে যে আমার থেকে কেড়ে নিয়েছিল আমি তাকে শেষ করেছি, বাবাআআআআ" তারপর মাথা নীচু করে দুহাতে মুখ চেপে কাঁদতে থাকে।

বেশ কয়েকমাস পরে,
বাণিজ্যনগরীতে এআরসি ম্যানসনে তুমুল ব্যাস্ততা আর লোকজনের ভিড়, অমৃতাদেবী আর বিন্দুমাসির দম ফেলবার ফুরসৎ নেই ওনারা অতিথি আপ্যায়নে এবং তাদের দেখাশোনায় ব্যস্ত আর হবে নাই বা কেন? শহরের বেতাজ বাদশা, বিজনেস টাইক্যুন "এআরসি"র বিয়ের রিসেপশন, কিছুদিন আগেই সে বাণিজ্যনগরীতে ফিরেছে আর আসার কয়েকদিন পরে বিয়ে করেছে বিয়েটা অনাড়ম্বরভাবে হলেও রিসেপশন বড়ো জাঁকজমকপূর্ণভাবে হচ্ছে, শহরের সব বড়ো বড়ো বিজনেসম্যান, ফিল্মস্টার, পলিটিশিয়ান রা আসছে সাথে সাধারণ মানুষরা তো আছেই, বিশেষ করে অসংখ্য ছোটো ছোটো বাচ্চারা তারা আনন্দ করছে এসব দেখে পণ্ডিতজী অভয়ের কাছে এলেন বললেন "রয় তোমার নিজের সিকিউরিটির প্রতি একটু নজর দেওয়া উচিত"
কেন?
কেন আবার বলতে হবে? এই শহরে তোমার কত শত্রু আছে তার হিসাব রাখো?
দরকার কি আপনি আছেন তো?
যদি আমিই তোমাকে মারতে চাই?
চলুন নিরিবিলিতে চলুন সেখানে মারবেন।
পণ্ডিতজী কৃত্তিম রাগ দেখিয়ে বলেন "তুমি শোধরাবে না, তাই না?"
অভয় শান্ত স্বরে বলে "পণ্ডিতজী এই সব লোকেরাই আমাকে তখন আপন করে নিয়েছিল যখন আমার কিছু ছিল না একদম নিঃস্ব ছিলাম, আর আজ সবকিছু হয়েছে বলে ওদের কিকরে দূরে সরিয়ে দি‌ই বলুন, তাহলে আমিও কি বেইমানের দলে পরবো না?"
"আহমেদ ঠিকই বলতো রয়, তুমিই ওর পরে ওর জায়গা সামলানোর যোগ্য লোক,সবসময় আহমেদের মতো সবার কথা ভাবো অসহায়, দুর্বলদের পাশে থাকো কিন্তু রয় তুমি এখন অনেক উঁচুতে চলে গেছোতুমি এখন এআরসি"
তাতে কি হয়েছে?
ধরো যদি কখনো আবার কেউ আসে যারা এদের কষ্টের কারণ হয় তখন তুমি যে উচ্চতায় চলে গেছো সেখান থেকে নেমে আসবে? এআরসি কি আসবে?
না, এআরসি আসবে না, আসবে রয়, এই শহর আমাকে নতুন জীবন দিয়েছে, বাঁচার স্বপ্ন দেখিয়েছে এই শহরে সবারই অধিকার আছে ভালো ভাবে বাঁচার, স্বপ্ন দেখার কিন্তু যেটা আপনি বললেন যদি কেউ সেই অধিকার কেড়ে নিতে চায় তাহলে রয় তার জীবন কেড়ে নেবে।
এটাই শুনতে চাইছিলাম রয়, ক্ষমতা তোমার মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছে কি না সেটাই দেখতে চাইছিলাম। পণ্ডিতজী রয়কে জড়িয়ে ধরলেন, একটু পরে অভয় তাথৈএর কাছে গিয়ে দেখে সেখানে বিদিশা, আমির, বৃষ্টি আর অমিয় মিলে কথা বলছে, তাকে দেখে অমিয় বললো "তারপর তুই এখানেই থাকবি?"
এটাই এখন আমার শহর।
আর ওইটা?
ওখানেও যাবো, ওখানেও তো কাজ আছে।
বৃষ্টি বললো "অভয় বলাটা উচিত হবে কি না জানিনা তাও বলছি, আমাদের যত বিজনেস আছে আমি চাই সব তুমি নাও এবার"
না বৃষ্টি ওগুলো তোমার আমার দরকার নেই।
আমারও দরকার নেই, আমি অমিয়র সাথে এই ভালো আছি।
তাহলে এক কাজ করো ওগুলো যোগ্য উত্তরাধিকারীর জন্য তোলা থাক।
কে?

তোমার ভাই, তোমার বাবার ছেলে।
বৃষ্টি অবাক হয় কিন্তু তাথৈ ওকে শিউলী দেবীর ব্যাপারে বলে তখন বৃষ্টি বলে "বেশ তবে তাই হোক কিন্তু মাসির ব্যাপারে যখন তুমি জানো অভয় তখন ডাকলে না কেন আজ?"
ডেকেছি কিন্তু রোহিতের পরীক্ষা চলছে তাই আসতে পারেননি, পরে এসে তোমাদের সাথে দেখা করবেন। তবে শুধু আমার বাবার জমিটা যেটা তোমার বাবা নিয়েছিলেন ওটা আমি নিলাম।
বেশ, তাই হবে। বৃষ্টি শান্ত স্বরে বললো।
অমিয়র মুখ একটু ছোটো দেখে অভয় জিজ্ঞেস করে "কি রে তোর আবার কি হলো?"
তোরা এখানে থাকবি, আমাকে ওখানে ফিরে যেতে হবে, আবার কবে তোদের সাথে দেখা হবে কে জানে।
তা কেন? আমির বলে ওঠে, অমিয় তুমি যে কোম্পানিতে কাজ করো সেটার একটা ব্রাঞ্চ এই শহরে আছে আর ওই কোম্পানির এমডি আমাদের পরিচিত তোমাকে এখানে ট্রান্সফার করিয়ে নিয়ে আসছি চিন্তা কোরো না।



[/HIDE]
 
[HIDE]
রাতে নিজের রুমে ঢুকলো অভয়, পুরো ঘরটা চমৎকার ভাবে সাজানো হয়েছে, তার উপরে সুগন্ধি ছড়ানো হয়েছে ফলে পুরো ঘরেই সুগন্ধে ভরপুর, উচ্চ পাওয়ারের লাইট নয়, ছোটো ছোটো প্রদীপের মতো দেখতে লাইট দিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে।এছাড়া সারা ঘরে লাইটিংএর আলো আঁধারির খেলা চলছে, মেঝেতে গোলাপের পাপড়ি দিয়ে আলপনার মতো সাজানো হয়েছে, বিছানাতেও গোলাপের পাপড়ি দিয়ে সাজানো আর তার উপরে ঘোমটা টেনে বসে আছে তাথৈ, পরনে সোনালী রঙের জড়ির কাজ করা টকটকে লাল চোলি ও সেম ডিজানের টকটকে লাল লেহেঙ্গা, মাথায় টিকলি, যেটা সিঁথিতে সিঁদুরের উপরে আছে, কানে ঝুমকো, নাকে নোলক, গলায় সোনার চেইন এবং মঙ্গলসূত্র, দুহাতে মেহেন্দি, কবজির অনেকটা উপর পর্যন্ত সেম লাল রঙের চুরি সাথে সোনার বেশ কয়েকটা চুরিও আছে, দুহাতে এবং দুপায়ের নখে কাপড়ের সাথে ম্যাচিং লাল নেলপালিশ, ঠোঁটেও লাল লিপস্টিক, কপালে টিপ, পায়ে নূপুর। অভয় আস্তে আস্তে বিছানার দিকে এগিয়ে গেল, তাথৈও ঘোমটার ভিতর থেকে দেখছে তার প্রিয়তম পুরুষটিকে, অভয়ের পরনে সিলভার রঙের ডিজাইন করা কালো কুর্তা পাঞ্জাবি, গলায় উত্তরীয়, ক্লিন শেভড গাল এবং ঘাড় পর্যন্ত লম্বা চুল একটু ছোটো করে কাটা,।মাঝখান থেকে সিঁথি করে দু সাইডে পিছন দিকে আচড়ানো, অভয় এমনিতেই সুদর্শন কিন্তু আজ তাথৈ যেন চোখ ফেরাতে পারে না সে ঘোমটার ভিতর থেকেই একদৃষ্টিতে দেখতে থাকে অভয়কে।
অভয় বিছানায় বসে আস্তে করে ঘোমটা তোলে এতক্ষণে তাথৈএর মুখ দৃশ্যমান হয় তার কাছে, অত্যন্ত মোহময়ী লাগছিল তাথৈকে, এতক্ষণ তাথৈ অভয়কে দেখছিল এখন অভয়‌ও মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সে হারিয়ে যেতে থাকে এতে খুব সম্ভবত তাথৈ একটু লজ্জা পায় সে চোখ নামিয়ে ফেলে বলে "কি দেখছো?"
তোমাকে।
কেন? এত দেখার কি আছে?
তুমিও তো দেখছিলে আমাকে।
বেশ করেছি, আমার বর আমি দেখছিলাম।
তাহলে আমিও বেশ করেছি আমার ব‌উকে আমি দেখছিলাম। কিছুক্ষণ দুজনেই চুপ তারপর অভয় বলে "তোমার মনে আছে তোমার কাছে আমার একটা জিনিস পাওনা বাকি আছে?"
তাথৈ মুখ তুলে তাকায় ওর ভ্রু কুঁচকে গেছে বলে "কি জিনিস?"
কেন মনে নেই? তুমি বলেছিলে তোমার যেদিন ১৮ বছর বয়স হবে সেদিন দেবে।
একটু ভাবতেই তাথৈএর মনে পড়ে যায় কয়েকবছর আগের সেই পুরনো মন্দিরের পিছনের বাগানের বটতলায় এক বিশেষ দিনের কথা, সঙ্গে সঙ্গে সে আবার লজ্জায় মুখ নামিয়ে ফেলে বলে "তুমিই আসতে দেরী করেছো আমি কি করবো?"
কি করবে মানে? আজ দেবে।
হবে না, তুমি দেরী করে ফেলেছো।
ঠিক তো?
হুমম।
বেশ তাহলে আমিও চললাম।
চললাম মানে কোথায়?
কেন তোমাকে বলেছি তো ববিতা আমাকে ডিনারে ডেকেছিল, মায়ের কথায় দেখা করতে গিয়েছিলাম শুধু এটুকুই মিথ্যা ছিল এটুকু বাদে বাকিটা সত্যি ছিল ,এখনো আমাকে ডাকছে ডিনারে।
তাথৈএর মুখ গম্ভীর হয়ে গেল সে অভয়ের কুর্তার কলার ধরে বিছানায় টেনে শুইয়ে ওই বুকের উপর চেপে বললো "মিস্টার অভয় রায় চৌধুরী একটা কথা মন দিয়ে শোনো আর মগজে ঢুকিয়ে নাও আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে এখন তুমি আমার, শুধু আমার অন্য কোনো মেয়ের দিকে যদি তাকিয়েছো তাহলে তোমার জন্য কতটা খারাপ হবে সেটা তুমি ভাবতেও পারছো না"
কি করবে?
দেখতেই পারবে, মা তো বলেই দিয়েছেন ওনার ছেলেকে শোধরানোর দায়িত্ব উনি আমাকে দিয়েছেন।
অ্যাঁ।

আজ্ঞে হ্যাঁ এবার বুঝতে পারছো তো যে আমি পার্মিশন পেয়েই গেছি।
অভয় এবার এক ঝটকায় তাথৈকে বিছানায় শুইয়ে নিজে ওর পাশে কাত হয়ে শুয়ে শরীরের অর্ধেক তাথৈএর উপর তুলে বলে "মিসেস তাথৈ রায় চৌধুরী, আমি এখন সেই পুরনো অভয় নেই যে তোমার হাত‌ও ধরবে না এখন এই অভয় নিজের পাওনা কখনো ছাড়ে না, আমার যেটা পাওনা সেটা তো আমি নেবোই"।
কি চাই তোমার?
অভয় কথা না বলে আস্তে আস্তে নিজের ঠোঁট দুটো তাথৈএর দুটো ঠোঁট লক্ষ্য করে নামিয়ে আনে, তাথৈ দুহাতে অভয়ের গলা জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে তবে এবার আর তাকে অপেক্ষা করতে হয় না বা কারো ডাক‌ও বাধা হয়ে দাঁড়ায় না, দুজনেই একে অপরকে গাঢ় প্রেমচুম্বনে আবদ্ধ করে।
প্রায় ১২০০ মাইল দূরে অন্য এক শহরের শিব মন্দিরের চাতালে এখন সাধু রাত্রির জন্য আশ্রয় গ্রহণ করেছেন, একজন‌ই প্রধান গুরু বাকিরা তার শিষ্য, রাতে গুরুকে না ঘুমিয়ে একটু দূরে একটা বট গাছের উপরে তাকিয়ে থাকতে দেখে তার এক শিষ্য জিজ্ঞেস করেন "গুরুদেব, ওখানে কি দেখছেন?"
তুমিও দেখো কি দেখতে পারছো?
শিষ্যটি গাছের দিকে তাকায় আকাশে তখন পূর্ণিমার সম্পূর্ণ উজ্বল চাঁদ দেখা যাচ্ছে যার আলোয় চারিদিক উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে, একটু ভালো করে দেখতেই শিষ্যটি দেখতে পেলেন গাছের একদম উপরের দিকে একটা ডালে একটা পাখির বাসা এবং তাতে দুটো পাখি বসে আছে একে অপরের গা ঘেঁষে একে অপরের চঞ্চুতে চঞ্চু লাগিয়ে কখনো গলায় গলা ঘষে আদর প্রকাশ করছে, প্রেম নিবেদন করছে। যদিও শিষ্য ঠিক বুঝতে পারলেন না ওটা কি পাখি? তিনি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে গুরুর দিকে তাকালেন, গুরু একটু স্মিত হেসে বললেন "আজ ওদের মিলনের রাত, এত বছরের অপেক্ষা, বিরহ আজ শেষ আজ ওরা চিরতরে একে অপরের কাছে বাধা পড়ে গেছে অবশ্য এটা তো হওয়ার‌ই ছিল, ওদের ভাগ্য‌ই তো ওদের এক সাথে বেধে রেখেছে ওদের তো এক হতেই হতো। শিষ্য বুঝলেন তার গুরু পাখি দেখিয়ে অন্য কারো কথা বলছে কিন্তু কে সেটা বুঝতে পারছে না এতক্ষণে বাকি শিষ্যরাও উঠে পড়েছে তারা গুরুকে ঘিরে বসে পড়েছেন তাদেরই একজন জিজ্ঞেস করেন "গুরুদেব তাহলে তো ওদের জীবন এবার সুখেই কাটবে কারণ আপনিই বলেছিলেন ভালোবাসাই জীবনে সুখের সন্ধান দেয়"।
গুরু আবার স্মিত হাসি দেন, বলেন "সুখ বা দুঃখ কোনোটাই চিরস্থায়ী নয়, সেটা চক্রাকারে আবর্তিত হতে থাকে ঠিক যেমন দিন আর রাত এর বিরাম নেই চলতেই থাকে ঘুরতেই থাকে"।
তার মানে গুরুদেব আবার ওদের জীবনে দুঃখ নেমে আসবে?
জীবনের পরীক্ষা তো চলতেই থাকে, সেই পরীক্ষা থেকে পালানোর উপায় নেই।

বাণিজ্যনগরীর এক অন্ধকার ঘরে, পুরো অন্ধকার নয় একটা নাইটল্যাম্প জ্বলছে ঘরে তাতে ঘরটাকে আরও রহস্যময় মনে হচ্ছে, সোফার উপর এক তরুণী যুবতী বসে আছে বয়স ২৭-২৮, পরনে একটা পরু স্ট্রিপের টপ, আর শর্ট প্যান্ট সোফার সামনে দুটো অ্যালকোহলের বোতল যার একটা পুরো এবং অপরটা অর্ধেক খালি পাশে একটা গ্লাস আর একটা পাত্রে বরফ, আর একটা জলের জগ, টেবিলেই একটা ল্যাপটপ রাখা তাতে স্ক্রিনে এক দম্পতির ছবি, অভয় আর তাথৈএর ছবি, যুবতী গ্লাসে কিছুটা অ্যালকোহল ঢেলে তাতে কিছুটা জল মেশায় তারপর দুটো বরফের টুকরো গ্লাসে দেয় এবার গ্লাসটা হাতে তুলে এক চুমুকে প্রায় শেষ করে ফেলে। এই সময় দরজায় নক হবার শব্দ আসে, যুবতী নেশা জড়ানো গলায় বলে "আসুন"
একটা পুরুষের অবয়ব দেখা যায়, যুবতী বলে "আপনার ভাইকে এআরসি জেলে দিয়েছিল মনে আছে?"
আছে। পুরুষটি গম্ভীরকণ্ঠে বলে।
প্রতিশোধ নিতে ইচ্ছা করে না?
না।
না? যুবতীটি বিস্ময় প্রকাশ করে।
না।
তাহলে এখানে এসেছেন কেন?
আপনাকে কয়েকটা কথা বলতে।
কি?
আমার ভাইকে এআরসি জেলে দিয়েছিল এটা ঠিক কারণ সে একটা গর্হিত অপরাধ করেছিল এবং সেখানে সে আত্মহত্যা করে কিন্তু এআরসি আমার সাথে শত্রুতা করেনি, কিন্তু এখন যদি আমি ওর বিরুদ্ধে কিছু করি তাহলে ও আমাকে শেষ করতে দুবার ভাববে না।
আপনি ওকে ভয় পাচ্ছেন?
এই শহরের প্রায় সবাই ওকে যেমন ভয় পায় তেমনি সম্মান করে আবার অনেকে ভালো‌ওবাসে, আপনার সাথে আমার পারিবারিক পরিচয় আছে তাই সাবধান করছি, এআরসির বিরুদ্ধে যাবেন না কারণ ও যদি জানতে পারে তাহলে আপনাকে কেউ বাঁচাতে পারবে না, এআরসি ছাড়ুন আমির যদি জানতে পারে কিংবা আমির‌ও ছাড়ুন এই শহরের যেকোনো সাধারণ খেটে খাওয়া লোক যদি জানতে পারে যে আপনি এআরসির ক্ষতি করতে চাইছেন তাহলে ওরাই আপনাকে মেরে ফেলতে চেষ্টা করবে তাই..
বেরিয়ে যান এখান থেকে। হটাৎ যুবতী চিৎকার করে ওঠে, বেরিয়ে যান নাহলে এখন আমি আপনাকে মেরে ফেলবো।
পুরুষটি বেরিয়ে যায়, ঘরে যুবতী একা সে ল্যাপটপের ছবির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, এবার সে স্বগতোক্তি করতে থাকে "ছোটো থেকেই যেটা আমার পছন্দ হয়েছে সেটা আমি নিয়েছি এটাই আমার অভ্যাস, তোমাকে আমার পছন্দ হয়েছিল এআরসি, সেই তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম একটা বারে, আমাকে একা পেয়ে যখন কিছু বদমাইশ ছেলে আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করছিল তখন তুমি আমাকে ওদের হাত থেকে উদ্ধার করেছিলে, তারপর অনেক খুঁজে তোমার সম্বন্ধে জানলাম তোমার অফিসে তোমার পিএ হিসাবে চাকরি নিলাম যাতে সবসময় তোমার কাছে থাকতে পারি তোমার পাশে থাকতে পারি, তারপর থেকে প্রতিদিন চেষ্টা করতাম তোমাকে ইমপ্রেস করার, তোমার মন জয় করার কিন্তু পারিনি, তুমি আমার দিকে নজর‌ই দাওনি তবুও আমি চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম কিন্তু আজ তুমি কোথা থেকে একটা মেয়েকে নিয়ে এসে বিয়ে করে নিয়েছো... এটা আমি কিছুতেই সহ্য করবো না, তুমি আমার আর যদি তোমাকে আমি নিজের করে না পাই তাহলে তোমাকে অন্য কারো হতেও দেবো না, ওই মেয়েটা তাথৈ ও আমাদের মাঝে এসে ভুল করেছে ওকে সরতে হবে, আর তা নাহলে তোমাকে এই পৃথিবী থেকে সরতে হবে, আমাকে ইগনোর করে তুমি আমাকে অপমান করেছো তার মূল্য তো চোকাতেই হবে মিস্টার এআরসি, হয় তোমাকে নিজের করে নেবো ওই তাথৈকে মেরে আর নাহয় তোমাকে মেরে আমাকে অপমান করার প্রতিশোধ নেবো... প্রতিশোধ

[/HIDE]
 

Users who are viewing this thread

Back
Top