[HIDE]
বীরেন বাবুর সাথে কথা বলে অভয় ফিরে এসেছে, অমৃতাদেবী জিজ্ঞেস করলেন "তুই ওনার কাছে গিয়েছিলি কেন?"
এমনি চলো। সবাই গাড়িতে উঠতে যাবে এমন সময় পরপর বিস্ফোরণ অমৃতাদেবী, সরমা দেবী সহ তাথৈ এবং বৃষ্টিও হতবাক হয়ে যায়, এরপর হঠাৎই পরপর গুলির শব্দ, কোর্ট চত্ত্বরে সবাই হুড়োহুড়ি করছে অভয় তাড়াতাড়ি সবাইকে গাড়িতে উঠতে বলে। একটা গাড়ির আওয়াজ পেয়ে অভয় দেখে একটা গাড়ি অত্যন্ত দ্রুত গতিতে কোর্ট চত্ত্বর ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে, হটাৎ গাড়িটার একটা জানালার কাঁচ নীচে নেমে যায় এবং সেটা থেকে একটা রিভলভার ধরা হাত বার হয় সাথে বীরেন বাবুর মুখ, অভয় সভয়ে দেখে বীরেন বাবু গুলি চালাতে উদ্যত তবে তার লক্ষ্য সে নয় তার লক্ষ্য তার মা সঙ্গে ঈ সে বা হাত দিয়ে মাকে ঠেলে সরিয়ে দেয় কিন্তু গুলিটা তার বা হাতের বাহুতে লাগে রক্ত বেরোতে থাকে, অমৃতাদেবী সহ বাকিরা ভয়ার্ত গলায় চিৎকার করে ওঠেন "অভয়"। অভয় মাটিতে পড়ে যায় সে ডানহাতে বাহু চেপে বীরেন বাবুর দিকে তাকায় দেখে গাড়িটা বেরিয়ে যাচ্ছে বীরেন বাবু আরও কয়েকবার ট্রিগার চাপলেন কিন্তু গুলি বেরোচ্ছে না দেখে রিভলভার ফেলে দিলেন গাড়িটাও তাকে নিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল।
অমৃতাদেবী তাড়াতাড়ি ছেলের কাছে এসে কাঁদতে শুরু করেন অভয় কোনোমতে বলে "মা, তুমি ঠিক আছো?"
হ্যাঁ, বাবু, তোর কিচ্ছু হবে না।
আমি ঠিক আছি মা। এটুকু বলেই অভয় জ্ঞান হারায়।
অভয়কে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, আমির ওখানেই ছিল ও তো পাগলের মতো করতে থাকে, কিছুক্ষণ পরে ডাক্তার জানায় গুলিটা অভয়ের বাহুর অনেকটা মাংস খুবলে নিয়ে বেরিয়ে গেছে, অনেকটা রক্ত বেরিয়ে যাওয়ায় একটু দুর্বলতা আসতে পারে, তবে চিন্তা নেই ওয়াশ করে স্টিচ করে ব্যাণ্ডেজ করে দিয়েছেন, এবং ব্যাথার ওষুধও দিয়ে দিয়েছেন, সবাই গিয়ে দেখা করতে পারেন। সবার আগে অমৃতাদেবী ভিতরে ঢুকলেন দেখেন তার ছেলে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে, খালি গায়ে বাহুতে অনেকটা জায়গা জুড়ে ব্যাণ্ডেজ বাঁধা, তিনি ছেলের মাথায় হাত বোলান, অভয় চোখ খুলে মায়ের চোখে জল দেখেই বলে "মা আমি ঠিক আছি তুমি কেঁদোনা"। কিন্তু তবুও অমৃতাদেবী কেঁদেই চলেন, অমৃতাদেবীর পিছনে একে একে ঢোকে আমির, তাথৈ এবং বাকিরা এর মধ্যে আমির আর তাথৈএর চোখেও জল তাই দেখে অভয় বলে "আরে সবাই কাঁদছো কেন আমি এখনো বেঁচে আছি, মরিনি"
এক থাপ্পড় মারবো। অমৃতাদেবী রেগে যান, অভয় হাসতে থাকে "মা, আমি ঠিক আছি"
তুই কেন আমাকে ঠেলতে গেলি, গুলি লাগতো আমার লাগতো।
মা, আমি থাকতে তোমার গায়ে আমি লাগতে দিতাম এটা তুমি ভাবলে কিভাবে?
আর তোর যে লেগেছে?
আমার কিছু হয়নি, বাড়ি চলো ক্ষিদে পেয়েছে।
ডাক্তার যদিও ছাড়তে চাইছিলেন না কিন্তু অভয়ের জিদের কাছে শেষপর্যন্ত ছাড়তে বাধ্য হন, বাড়িতে আসতেই বিন্দু মাসিও তাকে জড়িয়ে কাঁদতে শুরু করেন তাকেও অনেক কষ্টে সামলাতে হয়। খাওয়ার পরে নিজের রুমে একা একটু বিশ্রাম করছে অভয় ওষুধের প্রভাবে ব্যাথাটা কিছুটা কম হটাৎ দরজায় নক করার আওয়াজ শুনে দেখে তাথৈ।
"আরে তাথৈ আসো" বলে তাড়াতাড়ি একহাতে ভর দিয়ে উঠতে যায় কিন্তু অপর হাতে ব্যাথায় "আঃ" করে ওঠে তাথৈ তাড়াতাড়ি এসে ওকে ধরে ওর চোখে জল।
তাথৈ তুমি কাঁদছো কেন?
তাথৈ দুহাত জোড় করে ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গিতে কাঁদতে কাঁদতে বলে " আমার পরিবারের জন্য তোমার বাবা আজ বেঁচে নেই, তোমাকে না জানি কত কষ্ট করতে হয়েছে, আজ সেই আমার জ্যেঠুই মাকে মারতে চাইছিলেন আর এখন তোমার.... আমি যতই অস্বীকার করি কিন্তু এটা তো সত্যি যে আমি ওই বীরেন ভট্টাচার্যের পরিবারের মেয়ে"
তাথৈ.. এসব কি বলছো?
আমি হয়তো তোমার জীবনে অভিশাপ।
তুমি কি চলে যেতে চাইছো?
এতেই বোধহয় তোমার জন্য ভালো হবে।
এদিকে এসো, বসো। অভয় তাথৈকে কাছে ডাকে, তাথৈ বিছানায় অভয়ের ডানদিকে বসে, ও এখনো কেঁদে চলেছে, অভয় বলে "সত্যি বলোতো তুমি চলে যেতে চাইছো অন্য কাউকে পছন্দ হয়েছে নাকি?"
কথাটা শুনে তাথৈ অভয়ের মুখের দিকে তাকিয়েই বোঝে সে মজা করছে সে চুপ করে থাকে, অভয় আবার বলে "বেশ তুমি যখন চলে যেতে চাইছো তখন তোমাকে আটকাবো না ভালোই হলো আমিও ববিতার কাছে যেতে পারবো"
ববিতা কে? এবার ধীরে ধীরে আসল তাথৈ বেরিয়ে আসছে যে অভয়ের আশেপাশে কোনো মেয়েকে সহ্য করতে পারে না। অভয় বোঝে সেটা, মনে মনে বলে "এইতো এটাই তো চাইছিলাম" মুখে বলে "ববিতা একজন হিরোইন"
হিরোইন?
হ্যাঁ, মা ওকে ঠিক করেছিলেন আমার সাথে বিয়ের জন্য, একটা হোটেলে দেখা করতে গিয়েছিলাম।
তাথৈএর বড়ো বড়ো নিঃশ্বাস পড়ছে সে বলে "তুমি দেখাও করতে গিয়েছিলে?"
হ্যাঁ, ওহহ কি দেখেছিলাম আজও চোখে ভাসে।
কি দেখেছিলে?
দুজনে ফোনে কথা বলেই ঠিক করেছিলাম যে হোটেলে দেখা করবো তারপর লাঞ্চ একসাথে সারবো, তা সেখানে গিয়ে শুনি উনি সুইমিং পুলে গেছেন স্নান করতে আমাকেও যেতে বলেছেন, গেলাম গিয়ে দেখি উনি সাঁতার কাটছেন আমাকে দেখে জল থেকে উঠে এলেন কি বলবো তোমাকে মাত্র একটা টু-পিস মনোকিনি পড়েছিলেন পুরো শরীর থেকে জল চুঁইয়ে পড়ছে শরীরের প্রতিটা কার্ভ দেখতে পাচ্ছি উফফফফ, জল থেকে উঠে ধীরে ধীরে আমার কাছে এলেন হ্যালো বললেন আমি তখনও একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি মুখে কথাই বেরোচ্ছে না।
অভয় রায় চৌধুরী। তাথৈ ঝাঁপিয়ে পড়ে অভয়ের উপর কিন্তু অভয় ডানহাত দিয়ে তাথৈকে নিজের বুকে চেপে ধরে, তাথৈ অভয়ের জামা খামচে ধরে বলতে থাকে "আমি জানতাম তোমার চরিত্র খারাপ, অসভ্য ছোটোলোক ছেলে খালি অন্য মেয়ের দিকে নজর ঘোচাচ্ছি অসভ্যতামি"
বা রে তুমিই তো বললে তুমি চলে যাচ্ছো তো আমি সারাজীবন একা থাকবো নাকি?
আমি কোথাও যাবো না, দেখি তুমি কোন হিরোইনের কাছে যাও।
তার মানে তুমি যাবে না?
না। আবার টু পিস দেখছিলেন উনি
শুধু টু পিস কেন ডিনারটা একসাথে সারলে হয়তো..
আবার ডিনার?
হ্যাঁ আমাকে ইনভাইট করেছিলেন তো ডিনারে নেহাত আমার একটা ইম্পরট্যান্ট কাজ চলে এসেছিল তাই নাহলে।
তাথৈ আর সহ্য করতে পারে না, এক ঝটকায় নিজেকে অভয়ের বুক থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে "বেশ যাও তুমি তোমার ববিতা হিরোইনের কাছে আমি চললাম" বলে বিছানা থেকে নামতে যেতেই অভয় আবার তাথৈএর হাত ধরে নিজের বুকে টেনে নেয়।
ছাড়ো আমাকে, যাও তোমার হিরোইনের কাছে। তাথৈ মুখে একথা বললেও নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টাও করে না।
অভয় শান্ত স্বরে ওকে বলে "এই তো বললে তুমি যাবে না, আমাকে হিরোইনের কাছে যেতে দেবে না"
তাথৈ চুপ করে অভয়ের বুকে মাথা রেখে বসে থাকে, অভয় বলে চলে "আমাদের সাথে যা হয়েছিল সেটা তোমার জন্য হয়নি, তুমি আমার জীবনে অভিশাপ নয় তাথৈ আর কখনো এরকম বলবে না, আমি আগেও বলেছি আজ আবার বলছি তোমার জ্যেঠু যা করেছেন তার জন্য আমি কখনো তোমাকে দায়ী করিনি, আমি তোমাকে ভালোবাসি তাথৈ"
তাহলে ওই ববিতাকে বিয়ের জন্য দেখতে গিয়েছিলে কেন?
বললাম তো মা বলেছিল।
"মাকে বলতে পারলে না তুমি আমাকে ভালোবাসো, যদি সত্যিই বিয়ে করতে বলতেন তখন?" তাথৈএর কথা শুনে অভয় হেসে ওঠে।
"হাসছো কেন?" জিজ্ঞেস করে তাথৈ।
কারণ ওসব কিচ্ছু নয়।
তারমানে মা বলেননি?
না, হ্যাঁ মা মেয়ে দেখছিলেন এটা ঠিক তবে ওদের সবাইকেই আমি মানা করে দিয়েছিলাম।
আর ববিতা?
ওনার সাথে দেখা হওয়া আর তার পরের ঘটনা পুরোটাই সত্যি তবে আমি হোটেলে ওনার সাথে দেখা করতে যাইনি গিয়েছিলাম আমার একটা মিটিংয়ে, কোইন্সিডেন্টলি উনিও ওখানে ছিলেন।
আর তুমি ওনাকে ওইভাবে দেখলে?
ইচ্ছাকৃতভাবে নয়, হয়ে গেছে।
[/HIDE]