What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

প্রতিশোধ: দ্যা রিভেঞ্জ by Monen2000 (5 Viewers)

[HIDE]
রয় চুপ করে থাকে, রকি আমিরের দিকে ফিরে বলে: আর তোর সাথে তো আমার দেখাই হয়নি, যাইহোক তোদের মারার আগে আলাপটা হয়ে ভালোই হলো। রয় তবুও চুপ করে আছে দেখে রকি আবার হাসতে হাসতে বলে: চিন্তা নেই মামা ভুল করেছিলেন সেদিন তোকে জ্যান্ত ছেড়ে রেখে আমি সেই ভুল করবো না।

রয় এবং আমির দুজনেই চটপট একবার চারিদিকে চোখ বুলিয়ে নেয়, আশেপাশের লোকজন এই একাধিক পিস্তলধারীকে দেখে ভয়ে সরে গেছে, বেশ ফাঁকাই হয়ে গেছে জায়গাটা। মুখ ঢাকা থাকায় রয়ের মুখের ভাব বোঝা না গেলেও যে কোনো কারনেই আমিরের মুখের ভাব পাল্টে গেছে তার চোখেমুখে একটা চাপা উত্তেজনা যেন সে যেটা চাইছে সেটাই হচ্ছে, রকি এবার রয়কে উদ্দেশ্য করে বলে "কি রে মুখ থেকে কথা বেরোচ্ছে না কেন তুই নাকি আমাদের শেষ করবি মামাকে থ্রেট দিয়েছিলি এখন চুপ কেন, আমার ছোটোমামাকে একা পেয়ে মেরেছিস, এবার কি করবি?"
এবার আমির কথা বলে আর তার স্বরে ভয়ের কোনো চিহ্ন নেই: আপনার মামাকে আমরা মারিনি অন্য লোক মেরেছে।
তোর মনে হয় তোর কথা বিশ্বাস করবো?
সেটা আপনার নিজস্ব ব্যাপার।
রকি এবার এগিয়ে এসে আমিরের একদম মুখোমুখি দাঁড়ায় বলে: বিদিশাকে কোথায় লুকিয়ে রেখেছিস? আমি জানি ও তোদের সাথেই থাকে।
ও যেখানেই আছে ভালো আছে। আমির নির্ভয়ে উত্তর দেয়।
"ভাইজান এবার এদের শেষ করে দিন"। মাহমুদ রকিকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বলে।
পিপীলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে কথাটা শুনেছেন মিস্টার রকি? আওয়াজটা শুনে রকি অবাক হয়ে যায় এমনকি উসমান ও মাহমুদ‌ও, কথাটা আমির বলেনি বলেছে তার পাশে দাঁড়ানো রয় কিন্তু ওর আওয়াজ এরকম নয়, এবার ওদের আশ্চর্যভাবটা কয়েকগুণ বাড়িয়ে আমিরের পাশে দাঁড়ানো ছেলেটা নিজের চোখ থেকে গগলস্ খোলে তারপর মাথা থেকে হুডিটা সরায় সবাই অবাক হয়ে দেখে এর চুল রয়ের মতো বড়ো নয় ছোটো আর সবশেষে মুখের স্কার্ফটা খুলতেই বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায় দেখে যাকে এতক্ষণ তারা রয় ভাবছিল সে আসলে অন্য কেউ রয় আসেনি, উসমানের মুখ থেকে একটা নাম উচ্চারিত হয় "বশির"।
হ্যাঁ, উসমান আমি, যখনই খবর পেলাম যে তোরা এভাবে খোলাখুলি বাইরে আসছিস তখনই বুঝেছিলাম যে এটা ফাঁদ, বসকে ধরার জন্য তাই ওনাকে কিভাবে আগে আসতে দি‌ই বল? তাই নিজেই চলে এলাম আমি জানতাম আমার হাইট, বডির শেপ বসের মতো,ওনার মতো সাজলে মুখ না দেখে বা আওয়াজ না শুনে আমাকে চেনা মুশকিল। এদিকে তোদের শাস্তি তো দিতে হবে তাই না, গদ্দারি করেছিস তার শাস্তি তাই চলে এলাম। তোদের মতো গদ্দার মসজিদে ঢুকে সেটাকে নাপাক করেছিস, আমি তো তোদের ওখানেই শেষ করতে চেয়েছিলাম কিন্তু বসের হুকুম মসজিদে রক্তপাত চলবে না, তাই বাইরেই মারবো তোদের।
এদিকে নিজের প্ল্যান ফেল হয়ে গেছে দেখে রকি রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে নিজের লোকদের বললো: শেষ করে দে এদের। কিন্তু হুকুমটা তামিল হবার আগেই হটাৎ কোথা থেকে কি হয়ে গেল বুঝতে পারলো না, রকির পাশে দাঁড়ানো দুজন বডিগার্ডের কপাল ফুটো করে দুটো বুলেট বেরিয়ে গেল এবং আর আমিরের দলের যারা অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে ছিল তাদের কারো হাতে ম্যাজিকের মতো ধারালো ছুরি চলে এল এবং কিছু বোঝা বা করার আগেই তারা ঘুরে রকির দলের লোকদের গলায় পেটে বা পাঁজরে চালাতে শুরু করে, সাথে কয়েকজন পিস্তল উঠিয়ে নেয় এবং তার থেকেও আশ্চর্যের আশেপাশে এতক্ষণ কাউকে দেখা না গেলেও হটাৎ আশেপাশের বিভিন্ন ছোটোখাটো গলি থেকে অনেকগুলো লোক পিস্তলহাতে বেরিয়ে আসে, পরপর পিস্তলের আওয়াজ হতে থাকে একটা সময় সম্বিত ফিরে পেয়ে রকি উসমান এবং মাহমুদ দেখে তাদের চারপাশে তাদের দলের লোকদের রক্ত মাখা লাশ পড়ে আছে, উসমান এবং মাহমুদ পালাতে যায় কিন্তু আবার ধরা পরে যায়, যে লোকটা আমিরের পাশে রয় সেজে দাঁড়িয়ে ছিল সে এবার রকির মুখোমুখি হয় একটা পিস্তল রকির মাথায় ঠেকিয়ে বলে: রয়কে খুঁজছিলেন না আপনাকে ওর কাছেই নিয়ে যাবো‌। রকি বাধা দিতে গিয়েও পারে না তখনই মাথার পিছনে একটা আঘাত পেয়ে চোখে অন্ধকার নেমে আসে।
অনেকক্ষণ পরে যখন রকির চোখ খোলে তখন প্রথমে বুঝতে পারে না কোথায় আছে ধীরে ধীরে ধাতস্থ হয়ে দেখে ও একটা চেয়ারে বসে আছে জায়গাটা একটা বড়ো গোডাউন মনে হয় তার, এবার দুজন লোকের চিৎকারের আওয়াজ পেয়ে পাশের দিকে তাকায়, কিছুক্ষণ থেকেই চিৎকার শুনতে পারছিল এখন তাকিয়ে দেখে একটু দূরে দুজনকে দুহাত উপরে ঝুলিয়ে বেধে রাখা হয়েছে আর জনা ২০ মতন লোক পাঞ্চিং ব্যাগের মতো ওদের বুকে পিঠে মুখে পাঞ্চ করে যাচ্ছে ,ওদের চিনতে পারে রকি উসমান ও মাহমুদ। রকি উঠতে যায় কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই একজন বলে: চেষ্টাও করবেন না মিস্টার রকি আপনার দিকে দুটো পিস্তল তাক করা আছে উঠলেই ওরা গুলি চালাবে, রকি গলাটা চিনতে পারে ওই বশির বলে লোকটার, সে বলে: আমাকে কোথায় নিয়ে এসেছিস?
বশির এবার রকির সামনে আসে বলে: আপনি বসের সাথে দেখা করতে চাইছিলেন না তাই নিয়ে এসেছি, ওই যে বস।
বশির যেদিকে দেখায় সেদিকে তাকায় রকি দেখে উসমান ও মাহমুদকে যেখানে পেটানো হচ্ছে তার পাশেই একজন দাঁড়িয়ে আছে তাকে চিনতে অসুবিধা হয় না রকির একেই সে কিছুদিন আগে হাত পা বাঁধা অবস্থায় দেখেছে এআরসি ওরফে রয়, পরনে কালো ফুলস্লিভ শার্ট যার স্লিভদুটো কবজির একটু উপর পর্যন্ত গোটানো আর বুকের কাছে শার্টের একটা বোতাম খোলা সাথে কালো জিন্সের ট্রাউজার, চোখে কালো গগলস্। এবার রয় এগিয়ে এসে রকির উদ্দেশ্যে নিজের একটা হাত বাড়িয়ে দেয় করমর্দন করার জন্য "হ্যালো রকি, আমাদের আবার দেখা হলো,বুঝতেই পারছেন যে আপনি যেমন আমাকে ধরার জন্য টোঁপ ফেলেছিলেন ঠিক তেমনি আমিও আপনাকে ধরার জন্য ফাঁদ পেতেছিলাম, যাকে বলে এক তীরে দুই শিকার"। রকি হাত মেলায় বলে: আমাকে মারবি তো? নে মার।
আপনার সাথে আমার কোনো শত্রুতা ছিল না কিন্তু আমাদের দুজনের পরিচিত একজনের সাথে আপনার শত্রুতা আছে, আর সে প্রতিশোধ চায় আমি তাকে কথা দিয়েছি তার প্রতিশোধে আমি তার পাশে থাকবো তাই আপনাকে এখানে তার কাছে নিয়ে এসেছি এরপর সে যা করবে সেটাই হবে। রয় থামলে রকি কথা বলা শুরু করে "বিদিশার জন্য এতকিছু? কেন ওকে পছন্দ ওকে বিয়ে করবি নাকি?"
রয়ের সাথে আমির‌ও এসেছিল রকির কথা শুনে সে থাকতে পারে না এসে এক থাপ্পড় লাগায় রকির গালে, আবার মারতে যাচ্ছিল কিন্তু রয়ের "আমির.. রিল্যাক্স" শুনে থেমে যায়। রকি আবার ব্যাঙ্গ করে"আরিব্বাস একটা ফুলের পিছনে দুটো মৌমাছি?"
আজ বুঝলাম বিদিশা আপনাকে কেন এত ঘেন্না করে, আমার‌ই ইচ্ছা করছে মেরে আপনার মুখ ফাটিয়ে দিতে। শান্ত কণ্ঠে বলে রয়।
তাহলে আর দেরী কেন আয়। রকি এবার চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে নিজের দুটো হাত মুঠো করে রয়কে লড়াইয়ের জন্য আহ্বান করে, দেখে রয়ের ঠোঁটে ব্যাঙ্গাত্মক হাসি দেখা যায়।




[/HIDE]
 
[HIDE]

ওর চ্যালেঞ্জ এক্সেপ্ট করো রয়, প্রত্যেকেরই শেষ ইচ্ছা পূরণ করার সুযোগ পাওয়া উচিত। এক মেয়ের কণ্ঠস্বর ভেসে এল ,রকি আওয়াজটার উৎস লক্ষ্য করে তাকাতেই বিদিশাকে দেখতে পেল ,সঙ্গে সঙ্গেই এবার তার মুখে ব্যাঙ্গাত্মক হাসির সাথে ব্যাঙ্গ মিশ্রিত কথা: আরে বেবি... তুমি এখানে আর আমি তোমাকে কোথায় না কোথায় খুঁজছি, কেন বেবি নিজের স্বামীকে ছেড়ে থাকতে ভালো লাগছে?
স্বামী? আমার নিরপরাধ বাবাকে মারার পরেও তোমার লজ্জা করছে না আমার সামনে দাঁড়িয়ে একথা বলতে?
রকি আবার হাসতে লাগলো তারপর হাসি থামিয়ে বললো: ঠিক আছে আমি না হয় নাই হলাম তা এই দুজনের মধ্যে কে? দুজনেরই দেখলাম তোমার প্রতি সমান দরদ।
তোমার নোংরা মনে নোংরামি ছাড়া এর থেকে ভালো আরকি আশা করতে পারি?
কি করবো বলো, আমি এরকমই তা এবার কাকে পাঠাচ্ছো আমার সাথে লড়তে? তবে যদি আমি জিতি তাহলে?
তাহলে?
তাহলে আমাকে এখান থেকে জ্যান্ত যেতে দিতে হবে আর তোমাকেও আমার সাথে যেতে হবে।
আর যদি তুমি হেরে যাও?
তাহলে আমাকে মেরে দিও।
আমি রাজী।
বেশ তাহলে পাঠাও কাকে পাঠাবে, তবে যাকেই পাঠাও নিজে তৈরি থেকো তার মরামুখ দেখার জন্য।
আমি তৈরী আছি তোমার মরামুখ দেখার জন্য।
কথাটা শুনে আবার রকি একটু হেসে রয়ের দিকে তাকিয়ে বললো: তাহলে তুই আসবি, আয়।
রয় ওরফে অভয় একটু হেসে নিজের দুহাতে কনুইয়ের কাছে শার্টের হাতাটা ধরে একটু টেনে উপরে তুলে এগিয়ে গেল এবং পরক্ষনেই রকি আক্রমণ করলো সে একসময় স্টেট লেভেলে বক্সিং চ্যাম্পিয়ন ছিল এবং নিঃসন্দেহে একজন সেরা মুষ্টিযোদ্ধা সে আর তার নীতি হলো অ্যাটাক ইজ দ্যা বেস্ট ডিফেন্স, বরাবরই সে প্রতিপক্ষকে কোনো সুযোগ না দিয়ে আগে আক্রমণ করে প্রতিপক্ষকে কুপোকাত করায় বিশ্বাসী সেটাই সে করে এসেছে আজ‌ও সে তাই করলো, কিন্তু সে জানেনা আজ যে তার সামনে তার প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে নিজেও একজন সেরা ফাইটার।
পরপর রকির আঘাতগুলো প্রতিহত করছে অভয়, কখনো মাথা সরিয়ে এড়িয়ে যাচ্ছে তো কখনো রকির হাতটা নিজের হাত দিয়ে আটকে যাচ্ছে, এবং ফাঁক পেলে নিজেও আঘাত করছে যেটা রকিও প্রতিহত করছে, এইভাবে বেশ খানিকক্ষণ কেটে গেল কেউ কাউকে ঘায়েল করতে পারলো না সমানে সমানে টক্কর চলছে, হঠাৎ রকির একটা মুষ্টি প্রহার আটকাতে অভয়ের একটু দেরী হয়ে গেল ফলে আঘাতটা সোজা ওর চোয়ালে আঘাত করলো, অভয় কয়েকপা পিছিয়ে গেল ওর ঠোঁটের কোন থেকে একটু রক্ত বেরিয়ে এল পরক্ষনেই সে এগিয়ে এসে ঘুষি পাকিয়ে রকির চোয়ালে আঘাত করতে গেল কিন্তু পারলো না রকি অভয়ের মুষ্টিটা ধরে ফেললো তার হয়তো ইচ্ছা ছিল অভয়ের হাতটা মোচড়িয়ে বা আঘাত করে ভেঙে দেওয়ার কিন্তু সেটা করার আগেই অভয় ঘুরে রকিকে নিজের পিছনে পিঠের দিকে নিয়ে কনুইটা তুলে পিছনে চালিয়ে দিল আর সেটা সোজা গিয়ে লাগলো রকির নাকে, রকি অভয়ের হাত ছেড়ে দিয়ে কয়েকপা পিছিয়ে নাকে হাত দিয়ে চেপে ধরলো যখন হাত সরালো তখন দেখা গেল রকির নাক ফেটে রক্ত গড়াচ্ছে।
রকি বা হাতের তালুর উল্টোপিঠ দিয়ে কিছুটা রক্ত মুছে নিল তারপর আবার এগিয়ে এল এবার আরও ক্ষিপ্র আরও দ্রুত গতিতে আঘাত করছে অভয়‌ও ঠিক ততোধিক দ্রুততায় ততোধিক ক্ষিপ্রতার সাথে আঘাতগুলো প্রতিহত করছে কিন্তু তাও কয়েকটা আঘাত অভয়ের চোয়ালে, পেটে এসে লাগলো, বদলে অভয়ের কয়েকটা আঘাত‌ও রকির চোয়ালে নাকে গিয়ে লাগলো আরও খানিকক্ষণ কেটে যাওয়ার পরেও কেউ কাউকে হারাতে পারলো না। রকি বলে উঠলো "তুই তো বিদিশাকে হতাশ করছিস ও কত আশা নিয়ে তোকে আমার সাথে লড়তে পাঠালো আর তুই.."।
অভয় ব্যাঙ্গের উত্তর দেয় না ,শুধু ঠোঁটের কোণে একটা ছোট্ট হাসি দেখা দেয়। রকি এগিয়ে আসে অভয়ের চোয়াল লক্ষ্য করে ঘুষি চালায় অভয় ঘুষিটা ধরে নেয় কিন্তু রকি অপর হাত দিয়ে অভয়ের তলপেটে পাঞ্চ মারে অভয় কয়েকপা পিছিয়ে যায় ,এবার রকি এগিয়ে আসে পরপর দ্রুতগতিতে দুহাতে অভয়ের চোয়াল মুখ লক্ষ্য করে ঘুষি চালাতে থাকে কিন্তু অভয় হাত দিয়ে সেগুলো ব্লক করতে থাকে মাঝে হঠাৎ রকি হাঁটু উঠিয়ে আঘাত করতে গেলে অভয় নিজের একটা কনুই হাঁটুর উপর আঘাত করে এতে রকি হাঁটু দিয়ে আঘাত করতে পারে না এটা ঠিক তবে পরমুহূর্তেই একটা হাত দিয়ে অভয়ের চোয়ালে একটা মোক্ষম পাঞ্চ মারে।

আবার রকি পরপর ঘুষি মারতে থাকে এবং অভয়‌ও আগের মতো ব্লক করতে থাকে এবারও রকি আবার তার হাঁটু উপরে তোলে তবে এবার অভয় তার কনুইয়ের বদলে হাঁটু তুলে আঘাতটা ব্লক করে এবং রকি হাত দিয়ে আঘাত করতে গেলে সেটা এড়িয়ে রকির চোয়ালে পাঞ্চ মারে এবার রকি কিছুটা পিছিয়ে যায় কিন্তু পরক্ষনেই আবার এগিয়ে এসে আঘাত করতে যায় এবারও দুজনের মধ্যে অনেকক্ষণ সমানে সমানে লড়াই চলে, দুজনেই দুজনের আঘাত ব্লক করে নিজেকে বাঁচিয়ে অপরকে আঘাত করার চেষ্টা চালাতে থাকে একসময় অভয় রকির হাতটা ধরে আঘাতটা আটকাতেই রকি চকিতে লুকিয়ে রাখা একটা ছোট্ট ছুরি অন্য হাতে বার করে দ্রুত পেট লক্ষ্য করে চালিয়ে দেয় কিন্তু সেটা খেয়াল করে অভয় আঘাতটা এড়ানোর জন্য পিছনে সরে আসে তবুও ছুরিটা অভয়ের পেটের চামড়া ছুঁয়ে যায় এবং ছুরিটা ধারালো হবার জন্য কিছুটা কেটে রক্ত বেরোতে থাকে। আমির সেটা দেখেই রকিকে মারার জন্য পিস্তল বার করতেই অভয় হাত উঁচু করে বারণ করে তারপর আবার রকির উদ্দেশ্যে একটা বিদ্রুপের হাসি দিয়ে ওকে আক্রমণ করার জন্য ইশারা করে, এতে রকি একটু অবাক এবং রেগে যায় সে ছুরি হাতে এগিয়ে আসে এবং দ্রুতগতিতে ছুরি দিয়ে অভয়কে আঘাত করার চেষ্টা করতে থাকে কখনো ডানহাতে ছুরি ধরে অভয়ের গলা লক্ষ্য করে চালায় তো কখনো মুহূর্তের মধ্যে বা হাতে নিয়ে পেটে ঢোকাতে চেষ্টা করে, অভয়‌ও ক্রমাগত আঘাতগুলো কখনো এড়িয়ে যেতে থাকে তো কখনো রকির হাত ধরে আঘাতগুলো আটকে দিতে থাকে মাঝে অবশ্য রকি চকিতে আঘাতের লক্ষ্য পাল্টে ফেলে মানে অভয়ের গলা লক্ষ্য করে চালিয়ে চকিতে অন্য হাতে ছুরি নিয়ে একটু ঝুঁকে অভয়ের থাইয়ে বা পেটে চালায় কয়েকবার একটু কেটে গিয়ে রক্ত বেরোতে থাকে এইভাবে চলতে চলতে একসময় অভয় রকির ছুরি ধরা ডানহাতের আঘাতটা মাথা সরিয়ে এড়িয়ে যায় এবং রকির কবজিটা ধরে ফেলে পরক্ষনেই নিজের বা হাঁটুটা তুলে রকির ডান পাঁজরে সজোরে আঘাত করে, একটা "আঃ" আর্তনাদের সাথে রকি কয়েকপা পিছিয়ে বা হাত দিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত পাঁজর চেপে ধরে ছক হাঁটু মুড়ে মাটিতে বসে পরে, সুযোগটা কাজে লাগায় অভয় কারণ সে এখন জয়ের গন্ধ পেতে শুরু করেছে সে এবার এগিয়ে যায় কি টেক্সট রকি পাঁজরে ব্যাথা নিয়েও উঠে দাঁড়িয়ে আবার অভয়কে আঘাত করতে এলে অভয় আবার আঘাতটা এড়িয়ে রকির থুতনিতে একটা আপারকাট পাঞ্চ মারে রকি ছিটকে পিছনে মাটিতে পড়ে যায় এবং তার হাত থেকে ছুরিটা একটু তফাতে পরে যায়, কিন্তু রকিও একজন চ্যাম্পিয়ন ফাইটার সে সঙ্গে সঙ্গে উঠে ছুরি ছাড়াই আঘাত করতে এলে অভয় তার কমন অথচ ভীষণ কার্যকরী ট্যাকটিক্স ব্যবহার করে, এক পা তুলে রকির এক পায়ের পাতা মাটিতে চেপে ধরে আর এক হাত দিয়ে রকির চোয়ালে ঘুষি চালায় রকি আঘাতটা ছড়ানোর জন্য মাথাটা পিছনে সরিয়ে আঘাতটা এড়ালেও একটা পা মাটির সাথে অভয় চেপে ধরে থাকায় শরীরের ব্যালেন্স ঠিক রাখতে পারে না এবং একটা তীব্র আর্তনাদ করে মাটিতে পরে যায় এবং বলাবাহুল্য রকির‌ও একটা পায়ের পাতার জয়েন্ট ভেঙে গেছে।
অভয় এর আগেও কয়েকবার এটা করতে চেষ্টা করেছে কিন্তু রকি সঠিক সময়ে সরে যাওয়ায় সফল হয়নি অবশেষে হয়েছে রকি মাটিতে পরে কাতরাতে থাকে আর যন্ত্রনায় আর্তনাদ করতে থাকে অভয় রকির কাছে গিয়ে ওর চোয়ালে একটা মোক্ষম পাঞ্চ মারে। এবার বিদিশা এগিয়ে রকির সামনে আসে অভয় পিছিয়ে যায় যাওয়ার আগে বিদিশাকে বলে: তোমাকে বলেছিলাম না তোমার প্রতিশোধ পূরণ হবে, আমি সাহায্য করবো আমি আমার কথা রেখেছি, যাও নিজের প্রতিশোধ পূরণ করো।
বিদিশার হাতে পিস্তল রকি এবার বিদিশার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকায় কোনোমতে বলে: কি মারবে আমাকে?
বিদিশা শান্ত কণ্ঠে জবাব দেয়: তোমাকে মুক্তি দিচ্ছি পারলে পরের জন্মে একজন ভালো মানুষ হয়ে জন্মিও। কথাটার সাথে সাথেই পিস্তল পরপর কয়েকবার গর্জে ওঠে এবং রকি দুহাত দুদিকে ছড়িয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।



[/HIDE]
 
[HIDE]

খবরটা এসে পৌঁছানো মাত্র বীরেন ভট্টাচার্যের পায়ের তলার মাটি সরে গেল তার ভাইয়ের পরে এবার তার ভাগ্নে রকিও... পুলিশ থেকে অবশ্য তাদের বডি শনাক্তের জন্য ডেকেছে কিন্তু বীরেন বাবু জানেন রকি এআরসির পিছনে ছিল আর এআরসি যে কতটা ভয়ানক সেটার প্রমাণ তো তিনি অনেক আগেই পেয়েছেন তবুও তিনি রকিকে পাঠিয়েছিলেন এআরসির পিছনে, রাগে দুঃখে হতাশায় নিজের মাথার চুল টেনে ছিঁড়তে ইচ্ছা করছে বীরেন বাবুর।
মর্গে নিজের ছেলের মৃতদেহের উপরে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বৈশালী দেবী তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন শেফালী দেবী ও বৃষ্টি কিছুটা দূরে গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে আছেন বীরেন বাবু। শ্মশানে রকির দেহটা চুল্লিতে ঢোকানোর সাথে সাথেই বৈশালী দেবী ভাইয়ের কাছে এসে চেঁচাতে শুরু করেন, "বীরেন তুই এখনো দাঁড়িয়ে থাকবি? আমার ছেলেকে যে বা যারা মেরেছে তাদের তুই ছেড়ে দিবি? আমার ওদের লাশ চাই, রক্ত চাই" বীরেন বাবু দিদির কথায় কোনো উত্তর না দিলেও শেফালী দেবী আর চুপ থাকতে পারেন না এত বছরের বিবাহিত জীবনে যেটা করেননি সেটাই এখন করলেন নিজের স্বামীর উদ্দেশ্যে উঁচু গলায় কথা বললেন "দেখছো তোমার পাপের পরিণাম? প্রথমে তোমার ভাই গেলো আর এখন রকি, জানিনা তোমার আর কত পাপের শাস্তি পাওয়া বাকি আছে আমাদের"।
এবার বীরেন বাবুও গর্জে ওঠেন: পাপ নয় ভুল একটা ভুল করেছিলাম তার মাশুল এখন দিতে হচ্ছে কিন্তু আমিও বীরেন ভট্টাচার্য, এত সহজে হারবো না ওই রুদ্রের ছেলে অভয়কে এবার নিজের হাতে শেষ করবো"
চেষ্টা তো করেছিলে ষোলো বছর আগে তুমি তোমার দিদি আর ঠাকুরপো সাথে জগাও ছিল সবাই তাদের পাপের শাস্তি পেয়েছে এবার তোমার পালা, এবার তো অন্তত নিজেকে শোধরাও।
অনেক কথা হয়েছে তোর... এত বছর আমার পায়ের তলায় ছিলি আর আজ..
আর আজ মুখ ফুটেছে, শেষের কথাটা বলেন বৈশালী দেবী একটু থেমে তিনি আবার বলতে শুরু করেন: আজ তোমার মুখ ফুটেছে শেফালী ভুলে যাচ্ছো তুমি কার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছো।
না, তবে আপনি ভুলে যাচ্ছেন আজ রকির এই অবস্থা শুধুমাত্র আপনাদের জন্য।
চোপ গর্জন করে ওঠেন বীরেন বাবু , তিনি আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু তার আগেই বৃষ্টির কাছে বাধা পান, বৃষ্টি বলে: মা তো ভুল কিছু বলেনি, রকি দাদা কি কি করতো সেটা আমরা সবাই জানি, বৌদিকে কিরকম মারতো অত্যাচার করতো সেটাও আমরা দেখেছি।
এখন দেখছি তোমার‌ও মুখ ফুটেছে বৃষ্টি। চাপা গর্জনে কথাটা বলেন বীরেন বাবু।
যেটা সত্যি সেটাই বলছি ড্যাডি, তোমাদের করা অন্যায়ের শাস্তি আমরা ভোগ করছি যে তাথৈ আগে আমার সাথে কথা না বলে থাকতো না সে এখন আমার থেকে দূরে দেখাও করে না ,যে ছেলেটা একসময় আমাকে ভালোবাসতো সে এখন আমাকে ঘেন্না করে শুধুমাত্র তোমাদের জন্য, আর তোমাদের কথা শুনে আমি ছোটোবেলায় যে অন্যায়টা করেছিলাম তার জন্য কিন্তু আঃ। হটাৎ বৃষ্টি আর্তনাদ করে ওঠে কারণ বৈশালী দেবী এখন ওর চুলের মুঠি চেপে ধরেছেন এবং ক্রুদ্ধ স্বরে বলতে থাকেন: আমরা যা করেছি বেশ করেছি, আবার করবো যে আমার ছেলেকে মেরেছে তাকে আর তার পুরো পরিবারকে জ্যান্ত পোড়াবো।
ওকে ছেড়ে দাও দিদি, শেফালী দেবী অনুরোধ করতে থাকেন,বৃষ্টিও আর্তনাদ করতে থাকে কিন্তু বৈশালী দেবী তাতে কর্ণপাত করেন না তিনি এক‌ইভাবে বলতে থাকেন: তবে তার আগে তোদের মা-মেয়ের উচিত শিক্ষা দেবো। কিন্তু তিনি কিছু করার আগেই শেফালী দেবী নিজের মেয়েকে ছাড়িয়ে নেন, বৈশালী দেবী রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে আবার বৃষ্টিকে ধরার জন্য এগিয়ে আসতেই শেফালী দেবী নিজের মেয়েকে আড়খল করে বলতে থাকেন: আপনারা কি মানুষ? এতটা নীচে একজন মানুষ কিভাবে নামতে পারে?
দেখবি তুই? তাহলে দেখ বলে এবার বীরেন বাবু তার স্ত্রী শেফালী দেবীর গলা টিপে ধরেন আর চিৎকার করে বলতে থাকেন "আজ সবাইকে শেষ করে দেবো"
ড্যাডি.. বৃষ্টি ভয়ে আর্তনাদ করে ওঠে, "ছাড়ো মা কে ছাড়ো" বীরেন বাবুকে একটা ধাক্কা দিয়ে নিজের মাকে ছাড়িয়ে নেয় বৃষ্টি, শেফালী দেবী কাশতে থাকেন, বৃষ্টি বলতে শুরু করে "তোমরা মানুষের‌ও অধম, পিশাচ তোমরা"
মনে হচ্ছে আজ মা-মেয়ে দুটোকেই শেষ করতে হবে। বলে ক্রুদ্ধ বৈশালী দেবী বৃষ্টির দিকে এগিয়ে যেতেই ,চকিতে বৃষ্টি নিজের গোড়ালির কাছে জিন্সের তলায় লুকোনো পিস্তল বার করে আনে আর সটান সেটা নিজের পিসির দিকে তাক করে, এক মুহূর্ত থমকে যান বৈশালী দেবী, কিন্তু বীরেন ভট্টাচার্যের কয়েকজন লোক বৃষ্টিকে ধরার জন্য এগিয়ে আসতেই বৃষ্টি ওদের দিকে পিস্তল ঘোরায় বলে: কেউ আমাদের ধরার চেষ্টা করলে আমি গুলি চালাবো।
চালা গুলি। বীরেন বাবুর গুরুগম্ভীর স্বর শোনা যায়, তিনি এগিয়ে আসছেন বৃষ্টির দিকে।
ড্যাডি আমি কিন্তু চালিয়ে দেবো।

চালা গুলি, মেয়ে হয়ে নিজের বাবার দিকে পিস্তল ধরেছিস, নিজের মেয়েই শত্রু হয়ে গেছে আর বীরেন ভট্টাচার্য শত্রুর শেষ রাখে না। বীরেন ভট্টাচার্য এগোতে থাকেন আর বৃষ্টি এবং সরমাদেবী পিছোতে থাকেন তাদের চোখে ভয়। হঠাৎই সরমাদেবী মেয়ের হাত থেকে পিস্তল ছিনিয়ে নিয়ে সেটা সোজা নিজের স্বামীর দিকে উঁচিয়ে ধরে মেয়ের উদ্দেশ্যে বলেন: পালা বৃষ্টি, পারলে তাথৈএর সাথে যোগাযোগ কর, ও অভয়ের কাছে আছে।
মা তুমিও চলো, আমি তোমাকে একা ছেড়ে..
কথা বাড়াস না বৃষ্টি পালা নাহলে এরা তোকে মেরে ফেলবে। ইতিমধ্যে বীরেন বাবু এগিয়ে এসে নিজের স্ত্রীর হাত থেকে পিস্তল কেড়ে নিতে চাইছেন কিন্তু সরমাদেবী ছাড়তে চাইছেন না এই নিয়ে ধস্তাধস্তি চলছে, বৃষ্টি তবুও দাঁড়িয়ে আছে দেখে সরমাদেবী আবার বলেন: দৌড়ো বৃষ্টি, পালিয়ে যা। এবার বৃষ্টি দৌড়াতে যেতেই বৈশালী দেবী কয়েকজনকে হুকুম দেন ওকে ধরার কিন্তু তখনই সরমাদেবী একটা জোরে ধাক্কায় বীরেন বাবুকে মাটিতে ফেলে দিয়ে আগুয়ান লোকদের উদ্দেশ্যে পরপর দুটো গুলি চালান, একজনের গায়ে গুলি লাগায় সে একটা আর্তনাদ করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
বৃষ্টি দাঁড়িয়ে থাকিস না পালা। এবার মায়ের কথা শোনে বৃষ্টি সে দৌড় লাগায় কিন্তু তখনই বীরেন বাবু উঠে নিজের স্ত্রীকে ধরতে এগিয়ে আসতেই তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালান সরমাদেবী কিন্তু অনভ্যস্ত হাতে চালানোর জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে গুলি লাগে বৈশালীদেবীর বুকে, রক্তাক্ত অবস্থায় একটা চিৎকার করে মাটিতে পড়ে যান পরক্ষনেই বীরেন বাবুর হাতের পিস্তল গর্জে ওঠে এবার সরমাদেবী মাটিতে পড়ে যান।
"তোরা যা বৃষ্টিকে ধরে আন ও যেন কোনোমতেই পালাতে না পারে" পাগলের মতো চিৎকার করতে থাকেন বীরেন বাবু, তার লোকের বেরিয়ে যায়। দৌড়াতে থাকে বৃষ্টি, একটু আগেই সে পরপর দুবার পিস্তলের আওয়াজ শুনেছে সাথে দুজন মহিলার চিৎকার চিনতে কষ্ট হয়নি তার একজন তার পিসি আর অপরজন তার মা, বুকফাটা কান্না বেরিয়ে আসতে চায় কিন্তু তার মনে পবে তার মা তাকে বাঁচানোর জন্য প্রাণ দিয়েছে, তাই তাকে পালাতে হবে তার মায়ের বলিদান ব্যার্থ হতে দেবে না সে।
আরো জোরে দৌড়াতে থাকে সে শ্মশান থেকে বেশ কিছুটা দূরে গাড়ি চলাচলের রাস্তা, সেখানে বাসস্টপ আছে সেদিকে দৌড়াতে থাকে, একটু পরে দাঁড়িয়ে ঝুঁকে দুহাঁটুতে হাত দিয়ে হাঁফাতে শুরু করে কিন্তু পিছনে একাধিক পায়ের আওয়াজ পেয়ে সে বোঝে তাকে ধাওয়া করা হচ্ছে, সে আবার দৌড় লাগায়।



[/HIDE]
 
[HIDE]
কোনোমতে বাসস্টপে পোঁছেই যে বাসটা সবার আগে এল সেটাতেই উঠে গেল বৃষ্টি কোথায় যাবে সেটাও দেখলো না অবশ্য কোথায় যাবে সেটাই তো জানেনা মনে পড়লো মা বলেছিলেন তাথৈএর কাছে যেতে, তাথৈ অভয়ের কাছে আছে। অভয়.. ও বেঁচে আছে? কিন্তু থাকলেও ও কোথায় আছে সেটা বৃষ্টির জানা নেই তাথৈকে ফোন করতে পারে কিন্তু তাথৈ তো এখন ওর সাথে কথাই বলতে চায় না ও কি ফোন ধরবে?
অনেক ভেবে তাথৈকে ফোন করে বৃষ্টি কিন্তু দুর্ভাগ্য যে তাথৈএর ফোন সুইচড অফ, এবার সত্যিই ভয় করতে থাকে বৃষ্টির এবার কি করবে, কোথায় যাবে? হটাৎ ওর মনে পড়লো অমিয়র কথা অমিয় নিশ্চয়ই জানে তাথৈ আর অভয় কোথায় আছে কিন্তু অমিয়‌ও তো ওকে ঘৃণা করে ও কি সাহায্য করবে? অমিয়‌কে ফোন করে বৃষ্টি কিন্তু অমিয় ওর ফোন ধরে না একটু পরে আবার ফোন করলে কেটে দেয় নিজের মনেই নিজেকে ব্যাঙ্গ করে বৃষ্টি, নিজেকেই বলে: আমাকে এখন সবাই ঘেন্না করে, কেন বাঁচতে চাইছি এর থেকে তো মারা গেলেই ভালো হতো। কিন্তু পরক্ষনেই মায়ের মৃত্যুর কথা মনে পড়তেই ঠিক করে তাকে বাঁচতে হবে, তার মায়ের হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তাই প্রথমে দোনোমোনো করলেও শেষ পর্যন্ত বৃষ্টি ঠিক করে সে অমিয়র সাথে দেখা করে সাহায্য করবে। বাসে একদম পিছনে গিয়ে একটা সিট পেয়ে বসে দুহাতে নিজের মুখ ঢাকে বৃষ্টি, লুকোনো মুখ চোখের জলে ভিজে যায় যদিও সবার অলক্ষ্যেই থাকে ব্যাপারটা, একটু পরে চোখের জল মুছে নেয় এখন চোখের জল ফেলার সময় নয়।
কিছুক্ষণ পরে যখন একটা বাসস্টপে নামলো বৃষ্টি তখন সন্ধ্যা উত্তীর্ণ হয়ে গেছে অমিয়র বাড়ি চেনে না সে কিন্তু অফিসটা চেনে সেখানেই যাওয়া ঠিক করে বৃষ্টি একটা অটো নিয়ে অমিয়র অফিসে পৌঁছে সিকিউরিটির কাছ থেকে জানতে পারেও আসতে একটু দেরী হয়ে গেছে অমিয় এইমাত্র বেরিয়ে গেছে, বৃষ্টি জানে অমিয় মাঝে মাঝে অফিস থেকে বেরিয়ে সামনের চায়ের দোকানে আড্ডা দেয় বৃষ্টি সেই দিকে ছূটলো। চায়ের দোকানের কাছে পৌঁছেও বৃষ্টি অমিয়কে যদিও দেখতে পেলো না কিন্তু যাদের পেলো তাদের দেখে ওর হৃৎকম্প শুরু হয়ে গেল ,এদের সে চেনে তার ড্যাডির হয়ে কাজ করে নির্ঘাত ওকে খুঁজছে, বৃষ্টি চট করে একটু আড়ালে লুকিয়ে গেল।
একটু পড়ে লোকগুলো অন্যদিকে চলে গেলে আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে চায়ের দোকানে অমিয়র খোঁজ করে জানে অমিয় এখান থেকেও একটু আগে বেরিয়ে গেছে, বৃষ্টি জানে অমিয় ওর ফোন ধরবে না তাই চায়ের দোকানের দোকানদারের থেকে ফোন চেয়ে অমিয়কে ফোন করে কিন্তু এবারও দুর্ভাগ্য যে অমিয়র ফোন বিজি পরপর কয়েকবার করে কিন্তু প্রতিবারই বিজি, শেষে হতাশ হয়ে ফোনটা ফেরত দিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে যায়।
আর কিছু করার নেই বৃষ্টির, ওর সব রাস্তা বন্ধ কিন্তু তবুও শেষ চেষ্টা হিসেবে তাথৈকে আরেকবার ফোন করে যদিও ওর মনে আর বেশি আশা নেই, তবুও যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ এইভেবে ফোন করেছে যদি তাথৈএর ফোন চালু হয় এবং তাথৈ ফোন ধরে তাহলে তাথৈর কাছে সাহায্য না চাইলেও অন্তত ক্ষমা চেয়ে নেবে কারণ এইভাবে একা বেশীক্ষণ সে তার ড্যাডির লোকেদের থেকে পালাতে পারবে না ধরা পড়বেই। ফোনটা কানে দিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে এবার অবশ্য তাথৈএর ফোন চালু হয়েছে কিন্তু রিং হয়ে যাচ্ছে তাথৈ ধরছে না, বৃষ্টি ভাবছে ফোন কেটে দেবে এমন সময় ওপাশ থেকে ভেসে এলো "কি হয়েছে বল"।
হ্যালো, হ্যালো তাথৈ
বল কি হয়েছে?
তাথৈ আমাকে বাঁচা, ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।
কারা? কি হয়েছে তোর?
তাথৈ ওরা মাকেও মেরেছে এবার আমার পিছনে ধাওয়া করছে।
কারা? তুই শান্ত হ আগে তারপর বল কি হয়েছে?
হ্যালো হ্যালো। কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না বৃষ্টি কারণ ঠিক তখনই ফোনের চার্জ শেষ হয়ে ফোনটা বন্ধ হয়ে গেল, ফোনটা রেখে কিছুক্ষণ দুচোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে বৃষ্টি, তার বন্ধ চোখ দিয়েও জল ঝড়ছে সে জানে আর কোনো উপায় নেই সে একবার চারিদিকে তাকায় অনেক পথচারীদের দেখলেও একটু আগের দেখা নিজের ড্যাডির লোকদের দেখতে পায় না। বৃষ্টি হাঁটতে থাকে কোথায় যাচ্ছে কার কাছে যাচ্ছে কোনো ঠিক নেই ফোন বন্ধ থাকায় তাথৈকে জানাতে পারেনি কোথায় আছে কাজেই ওর থেকে সাহায্য পাওয়ার আশাও নেই, অন্য কারো থেকে ফোন করে লোকেশন দিতে পারে কিন্তু ও আসার আগেই যে ওর ড্যাডির লোকগুলো ওকে ধরে ফেলবে না তার গ্যারান্টি নেই, এদিকে তৃষ্ণায় গলা কাঠ, ক্ষিদেতে পেটে মোচড় দিচ্ছে, একটু এগিয়ে একটা ফাস্টফুডের দোকান দেখতে পেলো বৃষ্টি সেখানে ঢুকে আগে অনেকটা জল খেয়ে তেষ্টা মেটালো, তারপর খাবার খাবে বলে অর্ডার দিতে গিয়ে মনে পড়ে ওর কাছে বেশি ক্যাশ নেই যা ছিল সেটা গাড়ি ভাড়ায় খরচ হয়ে গেছে আর অল্প যা আছে সেটায় এখানে খাওয়া হবে না, অন্য কোনো কমদামি খাবারের দোকান খুঁজতে হবে বেশী ক্যাশ কখনোই সঙ্গে রাখার অভ্যাস নেই, বেশিরভাগ সময় মোবাইল থেকেই পেমেন্ট করে দেয় কিন্তু এখন সে উপায়‌ও নেই, আরও কিছুটা জল খেয়ে দোকান থেকে বাইরে বেরিয়ে আসে ও খেয়াল‌ও করে না যে দোকানে ঢোকা ইস্তক একজোড়া চোখ অবাক দৃষ্টিতে ওর কার্যকলাপ লক্ষ্য করছে।

বে দোকানের বাইরে পা দিয়েছে এমন সময় বৃষ্টি শুনতে পেলো "ওই যে ওখানে ধর ওকে", তাকিয়ে দেখে লোকগুলো ফিরে এসেছে, সে আবার দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে দৌড় লাগায় পিছনে লোকগুলো দৌড়াতে থাকে কিন্তু কজন শক্ত সমর্থ জোয়ান লোকের সাথে সে পারবে কেন লোকগুলো ওর অনেক কাছে চলে এসেছে ওকে প্রায় ধরেই ফেলবে এমন সময় বৃষ্টির সামনে এক বাইক এসে থামে আর চালক বলে: তাড়াতাড়ি উঠে এসো। বাইক চালক হেলমেট করে থাকায় প্রথমে চিনতে পারে না বৃষ্টি তাই একটু হকচকিয়ে যায়, চালক আবার বলে "কি হলো উঠে আসো" শুনে তাড়াতাড়ি বাইকের পিছনের সীটে উঠে বসে আর সঙ্গে সঙ্গে বাইক দ্রুত গতিতে বেরিয়ে যায়।
ওই লোকগুলো তোমার পিছনে পড়েছিল কেন? জিজ্ঞেস করে বাইক চালক, কিন্তু বৃষ্টি চুপ করে থাকে তার এখন হতবিহ্বল অবস্থা এই চালক একজন ছেলে এবং সবথেকে বড়ো ব্যাপার একে সে চেনে, মুখ না দেখলেও গলার আওয়াজে চিনেছে, অমিয়... যার সাথে দেখা করার জন্য এতক্ষণ ধরে সে পাগলের মতো ছুটছে কিন্তু সবজায়গায় শোনে সে চলে গেছে কিন্তু ওর সৌভাগ্য ঠিক সময় ওর সামনে চলে এলো। বৃষ্টি পিছন থেকে দুহাতে অমিয়কে আঁকড়ে জড়িয়ে ধরে পিঠে মাথা রাখে কিন্তু চালকের প্রশ্নের উত্তরের বদলে বলে "ওরা কিন্তু এখন তোমার‌ও পিছনে পড়বে"
কিন্তু ওরা কারা? আর বীরেন ভট্টাচার্যের মেয়ের পিছনে পড়েছেই বা কেন? এত সাহস এই শহরে কার?
ওরা বীরেন ভট্টাচার্যের‌ই লোক।
অবাক হয় অমিয় বলে "তোমার ড্যাডি তোমাকে ধরতে লোক পাঠিয়েছেন কেন?"
অনেক লম্বা ঘটনা।
তুমি আমাকে খুঁজছিলে কেন?
কারণ তোমার কাছে আসতেই আমার মন চেয়েছে তাই, তোমাকে তো ফোন‌ও করেছিলাম তুমি ধরোনি।
হ্যাঁ মিটিংয়ে ছিলাম পরে কাজের চাপে কলব্যাক করতে ভুলে গেছি, এবার বলোতো কি হয়েছে? ও এই নাও এটা খেয়ে নাও আর তারপর হেলমেট পড়ে নাও। কথাটা বলে অমিয় একটা প্যাকেট বৃষ্টির হাতে দেয়।
বৃষ্টি সেটা নিতেই অমিয় আবার বলে: আপাতত এটাই খেয়ে নাও, কি আর করবো বলো তোমার পছন্দের খাবার এইমুহূর্তে আনতে পারলাম না তার জন্য দুঃখিত।
বৃষ্টি বোঝে অমিয় এখনো ওর উপরে রেগে আছে সে চুপ করে প্যাকেট খোলে তাতে একটা রোল আছে, বৃষ্টি চুপচাপ খেতে থাকে, মাঝে একবার জিজ্ঞেস করে: তুমি খেয়েছো?
হুম।
সত্যি বলছো?
তুমি যে দোকান থেকে জল খেলে ওখানেই আমি খাচ্ছিলাম তুমি খেয়াল করোনি।্ও আচ্ছা।
এবার সব খুলে বলোতো।



[/HIDE]
 
[HIDE]

বৃষ্টি একে একে সব বলতে থাকে এমনকি ওকে পালাতে বলে মায়ের ওদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকার কথাও, অমিয় চুপ করে শুনতে থাকে হটাৎ রাস্তায় একটা বাঁক নেওয়ার সময় বৃষ্টি ওদের পিছনে তাকায় আর তাকাতেই ওর বুকটা ছ্যাঁৎ করে ওঠে তাড়াতাড়ি অমিয়কে বলে "আরো জোরে চালাও ওরা আমাদের পিছু নিয়েছে" অমিয় বাইকের স্পিড বাড়িয়ে দেয় কিন্তু এখন মাঝরাত নয় যে রাস্তা ফাঁকা থাকবে তাই না চাইলেও মাঝে মাঝে ওকে স্পিড কমাতে হচ্ছে। বৃষ্টি ভয়ার্ত গলায় বলে "ওরা আমার পিছনে আছে তুমি এক কাজ করো"। অমিয় বুঝতে পারে বৃষ্টি কি বলতে চাইছে সে বলে "চুপ করে বসে থাকো"। বৃষ্টি আবার বলে "তুমি আমাকে কোথাও নামিয়ে চলে যাও ওরা ধরতে পারলে তোমাকে ছাড়বে না"। অমিয় এবার ধমক দেয় "বললাম তো চুপ করে থাকতে, আমাকে ভাবতে দাও", বৃষ্টি চুপ করে যায় কিন্তু অমিয় একহাতে পকেট থেকে মোবালটা বার করে কাকে যেন ফোন করে তারপর আবার পকেটে রেখে দেয় বৃষ্টি বোঝে অমিয় হেডফোন লাগিয়ে রেখেছে।



বীরেন ভট্টাচার্যের হেড অফিসে আগুন, কিন্তু কেন? কফির পেয়ালায় চুমুক দিয়ে অভয়কে উদ্দেশ্য করে প্রশ্নটা করে আমির ,মাহমুদ আর উসমানকে ওদের বিশ্বাসঘাতকতার চরম শাস্তি দিয়েছে এরপর রকির দেহ যাতে ওর পরিবারের হাতে পৌঁছে যেতে পারে তার ব্যবস্থা করে ফিরে এসে দুই বন্ধু বাগানে বসে নিজেদের পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করছে তখনই অভয় বলে কথাটা যে সে এখন বীরেন ভট্টাচার্যের অফিসে অর্থাৎ যেখান থেকে উনি নিজের সব কাজ কারবার কন্ট্রোল করেন সেখানে আগুন লাগাতে চায়, তার‌ই উত্তরে আমির প্রশ্নটা করে।
দরকার আছে আমির আর আমিও তোমাদের সাথে যাবো।
সে নাহয় আগুন লাগানো গেল কিন্তু হটাৎ ওখানে কেন? মানে কোনো বিশেষ কারণ কি?
হ্যাঁ।
ওহ্ ঠিক আছে কখন করতে হবে?
আজ রাতেই।
ঠিক আছে। আমির উঠতে যায় কিন্তু অভয় বসতে বলে, আমির আবার বসে পড়ে, একটু চুপ করে থেকে অভয় বলতে থাকে: তুমি হয়তো ভাবছো আমি কি পাগলামি শুরু করেছি, কিন্তু ওখানে আগুন লাগাতে চাওয়ার একটা উদ্দেশ্য আছে।
আমির চুপ করে শুনতে থাকে অভয় বলতে থাকে: তুমি হয়তো ভুলে গেছো যে জমিটায় বীরেন ভট্টাচার্য নিজের সমস্ত পাপের কন্ট্রোল রুম বানিয়েছেন সেটা একসময় আমাদের ছিল, আমার বাবা খুব কষ্ট করে ওইটুকু জমি কিনে একটা ছোটো বাড়ি বানিয়েছিলেন, আমাদের কাছে সাক্ষাৎ স্বর্গ ছিল ওটা কিন্তু একরাতে বীরেন ভট্টাচার্য আমাদের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে আমাদের স্বর্গকে নরকে পরিণত করেছেন, আমার বাবার স্মৃতিধন্য জমি ওটা আমার কাছে পরম পবিত্র কিন্তু বীরেন ভট্টাচার্য ওখানে বসে অজস্র পাপ করেছেন ফলে ওটা অপবিত্র হয়ে গেছে তাই ওটাকে আবার পবিত্র করতে হবে, আগুন দিয়েই ওই জমিকে অপবিত্র করার সূচনা করেছিলেন বীরেন ভট্টাচার্য আর আমি আগুন লাগিয়েই আমি আবার ওই জমিকে পবিত্র করবো।
তুমি চিন্তা কোরো না হয়ে যাবে। অভয়ের কথা শেষ হতেই বলে ওঠে আমির।
আরেকটা কাজ করতে হবে।
কি?
শিউলী দেবীর দেওয়া ব্রহ্মাস্ত্রটা প্রয়োগ করার সময় এসে গেছে।
আমিরের মুখে হাসি দেখা দেয় বলে: তাহলে তো ওনার খেল খতম।
হ্যাঁ, এবার সময় হয়েছে শেষ আঘাতটা করার, রকির মৃত্যুর পর উনি আর চুপ করে থাকবেন না, এখন উনি আমাকে শেষ করার জন্য যা করা সম্ভব তাই করবেন আমার পরিচিত কাছের মানুষদের মারার চেষ্টা করবেন সাথে ক্ষমতা অর্জনের জন্য ভোটে জিতে সিএমের গদিতে বসতে চাইবেন কিন্তু ওনার ইচ্ছা অপূর্ণ রয়ে যাবে, আমি পূরণ হতে দেবো না।
দুই বন্ধু আলোচনা করছে এমন সময় হন্তদন্ত হয়ে তাথৈ এসে দাঁড়ায় ওকে দেখে দুজনেই একটু অবাক হয় অভয় জিজ্ঞেস করে: কিছু বলবে?
হ্যাঁ, মানে।
কি হয়েছে? কিছু দরকার?
একটা কথা ছিল, কিন্তু বুঝতে পারছি না কিভাবে বলবো?
তুমি কবে থেকে আমাকে কিছু বলার আগে ভাবতে শুরু করলে?
একটু ভেবে তাথৈ বলেই ফেলে "এক্ষুনি বৃষ্টির ফোন এসেছিল"
ও, তা কি বললো?। অভয়ের গলা নিস্পৃহ।
কিসব উল্টোপাল্টা বকছিল, বললো কারা জ্যেঠিমাকে মেরেছে এখন ওকে মারতে চায়।
তো তুমি কি চাও আমি ওর খোঁজ করি?
হ্যাঁ, আমি জানি ও তোমাকে অপমান করেছিল কিন্তু আজ ওর কথাবার্তা কেমন শোনাচ্ছিল তুমি যদি একবার..
এটা তুমি কি বলছো তাথৈ? পিছন থেকে কখন যেন বিদিশা এসে দাঁড়িয়েছে, কথাটাও সেই বললো।
বৌদি বিশ্বাস করো আজ বৃষ্টির আওয়াজ নরমাল ছিল না।
হতে পারে আবার এটাও হতে পারে এটা বীরেন ভট্টাচার্যের নতুন প্ল্যান।
মানে? কথাটা তাথৈকে বেশ অবাক করে বোঝা যায়।
বীরেন ভট্টাচার্য খুব ভালো করেই জানেন যে তোমাদের দুই বোনের পরস্পরের মধ্যে খুব মিল, তাই একজনের বিপদের কথা শুনে অপরজন ঠিক থাকতে পারবে না যেখানেই থাকুক সে আসবেই।
তাতে কি হলো?
তুমি এখনো বুঝতে পারছো না, বীরেন বাবু এখন যেনতেনভাবে রয়কে মারতে চাইবেন আর উনি এটা ভালো করেই জানেন যে রয়কে মারা তো দূর এখন ওর অবধি পৌঁছানো ওনার পক্ষে ইমপসিবল, কিন্তু যদি কোনোভাবে রয়ের কোনো দুর্বলতা হাতে পান তাহলে সহজেই রয়কে পেয়ে যাবেন ঠিক যেমন আগের বার আমিরকে ব্যবহার করেছিলেন।
তাথৈ বুঝলো ব্যাপারটা সে বলে:কিন্তু কেন জানিনা আজ বৃষ্টির গলা অন্যরকম শোনালো, এখন ওর ফোনটাও বন্ধ, বারবার বলছিল ওকে বাঁচাতে। বলে অভয়ের দিকে তাকালো, কভয় বুঝলো তাথৈ কি বলতে চাইছে কিন্তু বিদিশা যেটা বলছে সেটাও যুক্তিযুক্ত আবার যদি সত্যিই বৃষ্টির কোনো বিপদ হয় তাহলে অভয়ের উচিত ওকে বাঁচানো, বিপন্নকে বাঁচানোর শিক্ষাই সে পেয়েছে তার বাবা এবং গুরুর কাছ থেকে।
আমার মনে হয় বিদিশা ঠিক বলছে এটা প্ল্যান হতে পারে। বলে আমির‌। অভয় উত্তর দেওয়ার আগেই ওর মোবাইলটা বাজতে শুরু করে, ফোনটা রিসিভ করে সে "বল"
ভাই, আই নিড ইওর হেল্প। ফোনের ওপাশ থেকে অমিয়র গলা শোনা যায়।
তোর আবার কি হয়েছে?
বীরেন ভট্টাচার্যের লোকজন বৃষ্টিকে তাড়া করছে, আর আমি ওকে নিয়ে পালানোর চেষ্টা করছি কিন্তু জানিনা কতক্ষণ পারবো?
তোরা কোথায়?
বাইকে করে পালাচ্ছি, কিন্তু যেখানেই যাচ্ছি যেদিকেই যাচ্ছি ওরা ঠিক খোঁজ পেয়ে যাচ্ছে।
গাঁড়ল কোথাকার, আমার বাড়ির দিকে আয়, আমিও বেরোচ্ছি।
থ্যাংকস ভাই।
তুমি যাবে? ফোন রেখে অভয় বেরোনোর উদ্যোগ করতেই জিজ্ঞেস করে আমির।
হ্যাঁ, যেতেই হবে, সত্যি মিথ্যা যাই হোক অমিয় এখন বৃষ্টির সাথে আছে আর দুজনের পিছনেই লোক তাড়া করছে।
ঠিক আছে আমিও যাবো তোমার সাথে।
আমিও যাবো। তাথৈ বলে ওঠে।
না, তুমি এখানে থাকবে।
অভয় আমি যাবো, প্লিজ আমাকে নিয়ে চলো।
তাথৈ আমার উপরে ভরসা রাখো।
তাথৈ আর কিছু না বলে চুপ করে যায়।
দুই বন্ধু বেরিয়ে আসে গাড়িতে উঠতে উঠতে অভয় আমিরকে বলে আমির নিকুঞ্জকে ফোন করো।
একটু ফাঁকা রাস্তা পেয়ে অমিয় বাইকের স্পিড বাড়িয়ে দিয়েছে পিছনে বৃষ্টি দুহাতে ওকে আঁকড়ে ধরে আছে হটাৎ একটা কানফাটানো আওয়াজ আর ওদের মাথার পাশ থেকে কি যেন বেরিয়ে গেল বুঝতে অসুবিধা হলো না যে পিছনে যারা তাড়া করছে এতক্ষণ অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল আসছিল এখন তারা এখন গুলি চালাচ্ছে, পরপর আরও কয়েকটা গুলি চললো কিন্তু বাইরের স্পিডের জন্যই হোক বা সৌভাগ্যের জন্য গুলিগুলো ওদের লাগেনি নাহলে... সামনে একটা সিগন্যাল অমিয় লক্ষ্য করে হলুদ হয়ে আছে এক্ষুনি লাল বাতি জ্বলবে কিন্তু এখন থামলে অবধারিত মৃত্যু সে বাইকের স্পিড আরো কিছুটা বাড়িয়ে দেয়।
বেশ কিছুদূর পর্যন্ত পিছনে কাউকে ওদের তাড়া করতে না দেখে কিছুটা আশ্বস্ত হয় অমিয় এবং বৃষ্টি দুজনেই একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। "তুমি তো আমাকে পছন্দ করো না তাহলে আমাকে বাঁচাতে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিলে কেন? বৃষ্টি জিজ্ঞেস করে।
তুমি আমাকে না কোনোদিন বুঝেছো না বুঝবে।
তাহলে বুঝিয়ে দাও।
তুমিও তো আমাকে পছন্দ করো না তাহলে আমার কাছে এলে কেন?
ভেবেছিলাম তুমি জানো তাথৈ কোথায় আছে।
ওহ।
বৃষ্টি আরও জোরে আঁকড়ে ধরে অমিয়কে, বলে: জানিনা কেন যখন ওরা আমাকে তাড়া করছিল তখন যে দুজনের কথা মনে পড়েছে তাদের একজন তাথৈ আর অপরজন তুমি, আমার মা আমাকে বাঁচাতে নিজে..... আমি শেষবারের মতো দেখতেও পেলাম না।
আয়্যাম সরি।
বৃষ্টি অমিয়র পিঠে মাথা রাখে, অমিয় বোঝে বৃষ্টি কাঁদছে সে বাঁধা দেয় না সে একমনে বাইক চালাতে থাকে কিন্তু আর কতদূর, ইসস যদি শুরুতেই অভয়ের বাড়ির দিকে আসার কথাটা মনে পড়তো তাহলে হয়তো এতক্ষণে ওর সাথে দেখাও হয়ে যেত তাড়াহুড়োয় সে বৃষ্টিকে নিয়ে উল্টো দিকে চলে গিয়েছিল তারপর অন্য রাস্তা দিয়ে ঘুরে আসছে, অভয়‌ও আসছে বললো কিন্তু ও খুঁজে পাবে ওদের? অমিয়র মনে একটু শঙ্কা দেখা দিতেই নিজেই সেটা উড়িয়ে দিল, অভয় যখন বলেছে ও আপছে তখন ও ঠিক খুঁজে নেবে ও ছোটো থেকেই নিজের কথা রাখে।

[/HIDE]
 
[HIDE]

বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতোই হটাৎ একটা ক্রসিং পার হবার সময় সাইড থেকে একটা মারুতি এসে ওদের প্রায় ধাক্কা মারছিল কিন্তু অল্পের জন্য অমিয়রা বেঁচে যায়, বাইকটা একটু থামিয়ে পিছনে ঘুরে কিছু বলতে যাচ্ছিল সে কিন্তু পিছন ঘুরতেই তার হৃৎকম্প শুরু হয়ে গেল, যারা তাদের তাড়া করছিল তারা যেভাবেই হোক ওরা ঠিক অমিয়দের খুঁজে পেয়েছে, অমিয় তাড়াতাড়ি সামনে ঘুরে আবার বাইকে স্পিড তোলে সঙ্গে সঙ্গে পিছনের গাড়িটাও ওদের ধাওয়া করে, অমিয়র বাইকের খুব কাছেই চলে এসেছে গাড়িটা ওটার উদ্দেশ্যে বাইকটাকে ধাক্কা মারা, মেরেই দিচ্ছিল কিন্তু মোক্ষম সময়ে একটা গুলির আওয়াজ আর তারসাথে টায়ার ফাটার কানফাটানো আওয়াজ এবং গাড়িটা একদিকে কেদরে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো, কৌতূহলবশত ব্যাপারটা কি দেখার জন্য অমিয় বাইক থামিয়ে পিছনে ঘুরে তাকায় দেখে ওদের পিছনে যারা তাড়া করছিল সেটার পিছনে আরেকটা গাড়ি এসে দাঁড়িয়েছে, অমিয় দেখলো পিছনের গাড়িটা থেকে নেমে এলো অভয় আর আমির এবং যারা ওকে আর বৃষ্টিকে তাড়া করছিল তারা মোট পাঁচজন টায়ার ফাটা গাড়ি ছেড়ে অশ্রাব্য অশ্লীল গালাগালি দিতে দিতে বেরিয়ে আসতেই অভয় আর আমির ওদের দিকে গুলি চালাতে থাকে প্রত্যুত্তরে এরাও গুলি চালাতে থাকে, অমিয় বৃষ্টিকে নিয়ে বাইক ছেড়ে রাস্তার পাশে গিয়ে লুকিয়ে পড়ে।
দুতরফ থেকেই অনবরত গুলি চলতে থাকে একদিকে আমির আর অভয় গাড়ির দরজার আড়াল থেকে চালাচ্ছে অপরদিকে এই পাঁচজন‌ও তাই, একসময় হটাৎ অভয় নিজের জায়গা ছেড়ে এগিয়ে এলো পিছন থেকে আমির ওকে কভার করছে, আসতে আসতে অভয় দুজনকে আর আমির দুজনকে স্পট ডেড করে দিল বাকি একজন ওর বিরুদ্ধে দুজন পিস্তলধারীকে দেখে নিজের পিস্তল ফেলে মাথার উপর দুটো হাত তুলে স্যারেণ্ডার করলো সাহস পেয়ে অমিয় আর বৃষ্টি বেরিয়ে এল। অভয় জিজ্ঞেস করলো: তোরা ঠিক আছিস?
হ্যাঁ।
অভয়.. তুই মানে আপনি। বৃষ্টি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেছে তবে সেটা অভয়কে জীবিত দেখে না আগে রেস্টুরেন্টের ঘটনা মনে করে বোঝা যায় না। অভয় এবার স্যারেণ্ডার করা লোকটাকে বলে: তোরা ওদেরতাড়া করছিলি ধরতে পারলে মেরে দিতি এখন তোর সাথে কি করবো? লোকটা চুপ করে থাকে সে বোঝে তাকে জ্যান্ত ছেড়ে দেবে না, অভয় পিস্তল লোকটার কপাল লক্ষ্য করে চালিয়ে দেয়।
বৃষ্টি এবং অমিয়র নিয়ে অভয় আর আমির বাড়ির বদলে একটা হাসপাতালে এসে মর্গের সামনে দাঁড়াতেই বৃষ্টি অবাক হয়ে যায়, অভয় নামতেই সে জিজ্ঞেস করে: এখানে?
আসো। অভয় শান্ত স্বরে উত্তর দেয়, মর্গের ভিতরে ঢোকে সবাই সেখানে একজন কর্মী ৎঅভয়কে দেখেই এগিয়ে আসে বলে "এদিকে আসুন স্যার" বলে ওদের একটা ডেডবডির কাছে নিয়ে যায় তারপর বডির মুখের ঢাকাটা খুলে দেয়, বৃষ্টি প্রথমে চমকে ওঠে তারপর নিজের মায়ের মৃতদেহের উপরে কান্নায় ভেঙে পড়ে, অমিয় কিছু বুঝতে না পেরে অভয়ের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই আমির কথা বলে: বীরেন বাবু ওনাকে শ্মশানে গুলি করে ফেলে চলে যান, ওখানের কয়েকজন লোক ওনাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন কিন্তু বাঁচাতে পারেন নি। তারপর যে কর্মীটা ওদের নিয়ে এসেছে তাকে দেখিয়ে বলে ইনি আমাদের পরিচিত উনি চিনতে পেরেছিলেন এটা কে তখনই উনি আমাদের জানান আমরা শেফালী দেবীর বডি রেখে দিতে বলি যাতে বৃষ্টি ম্যাডামকে নিয়ে আসতে পারি।
আমাদের কিভাবে খুঁজলে?
উপায় আছে, অভয় বলে, তোকে তো ফোন‌ও করেছিলাম তুই ধরিসনি তোর ভাগ্য ভালো ওই ক্রসিংটায় আসতে আসতে তোদের দেখতে পেয়েছিলাম যাইহোক আপাতত ওর কাছে যা, ওকে সামলা। বলে অমিয়কে বৃষ্টির কাছে যেতে ইঙ্গিত করে।
সকালে শ্মশানে নিজের মায়ের অন্তিম সংস্কার করে বৃষ্টি সোজা একটু দূরে দাঁড়ানো অভয়ের সামনে এসে দাঁড়ায় ওর মুখে এখন কান্নার বদলে একটা কাঠিন্য এসেছে, এসে সটান বলে: অভয় তুমি আমার একটা কাজ করবে?
কি?
বীরেন ভট্টাচার্যকে মারতে হবে?
ওর কথা শুনে অভয় তো বটেই এমনকি পাশে দাঁড়ানো অমিয় থেকে শুরু করে তাথৈ এবং সরমাদেবী পর্যন্ত অবাক হয়ে যায়।
বৃষ্টি আপাতত একথা থাক।
না অভয়, তুমি হেজিটেট কোরো না, ওই লোকটা আমাকে মারার জন্য লোক পাঠিয়েছিল তার থেকেও বড়ো আমার মাকে মেরেছে এর প্রতিশোধ তো আমি নেবোই, তুমি ওনাকে না মারলে আমি মারবো।
বৃষ্টি আমার কথা শোনো, এখন বাড়ি চলো, এসব কথা পরে ভাবা যাবে তবে তোমাকে এতটা আশ্বস্ত করছি যে উনি ওনার কাজের উপযুক্ত শাস্তি পাবেন আর সেটা খুব তাড়াতাড়ি।
আমি এখন‌ই ওনাকে মারতে চাই। বলে বৃষ্টি চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই অমিয় আর তাথৈ এসে ওকে ধরে, বৃষ্টি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলে: ছাড়ো আমাকে আমি..
বৃষ্টি বৃষ্টি আমার কথা শোনো। অমিয় বৃষ্টিকে নিজের কাছে টেনে ধরে বলে, আপাতত শান্ত হয়ে যাও পরে যদি অভয় কিছু না করে তখন তুমি যা করার কোরো আমি যাবো তোমার সাথে। বৃষ্টি অমিয়র দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে অমিয় ওকে নিজের বুকে টেনে নেয়। গাড়িতে ওঠার সময় অভয় আমিরকে বলে: আমির তুমি ওদের সবাইকে নিয়ে বাড়িতে যাও আমি একটু পরে আসছি
তুমি এখন কোথায় যাচ্ছো। আমির অবাক হয়।
কাজ আছে এসে বলবো।
একা যাবে?
হ্যাঁ, চিন্তা কোরো না আমার


কিছু হবে না আর অমিয় তোকেও এখন তোর বাড়ি ফিরতে হবে না তুই বৃষ্টির সাথে থাক।
কিন্তু অভয়।
তোর কোম্পানির এমডিকে আমি ফোন করে দেবো, চিন্তা নেই তোর চাকরী যাবে না, দরকার হলে ওয়ার্ক ফ্রম হোম করবি।
সাবধানে যাও আর তাড়াতাড়ি ফিরো। তাথৈ বলে অভয়কে, উত্তরে অভয় সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়ে। আমির ওদের নিয়ে চলে যেতেই অভয় একটা ক্যাব বুক করে তাতে উঠে পড়ে ওর গন্তব্য শহরের পুলিশের হেড কোয়ার্টার, সেখানে পুলিশ কমিশনারের অফিস।
ফাঁকা বাড়িতে এখন মাঝে মাঝে সত্যি সত্যিই বীরেন ভট্টাচার্যের ভয় করে, বাড়িটা যেন এক কালান্তক রাক্ষসের মতো তাকে গিলে নিচ্ছে, পুরো বাড়িটায় এখন তিনি একা অবশ্য শুধু বাড়িতেই তার জীবন‌ও এখন একা সবসময়ের ছায়াসঙ্গী যে দুজন ছিল তার ভাই আর জগা তারা গেছে, দিদি গেছে, ভাগ্নে গেছে, স্ত্রী গেছে একটু আগে লোক খবর দিল যারা তাদের র মেয়েকে তাড়া করছিল রাস্তায় তাদের কয়েকজনের লাশ পাওয়া গেছে কিন্তু তার মেয়ের কোনো পাত্তা নেই মেয়েও তাকে ছেড়ে চলে গেছে, আরেকজন খবর দিল তার নিজের অফিস আগুনে পুড়ে গেছে কিছু অবশিষ্ট নেই বেঁচে থেকে কি করবেন তিনি, নিজের পিস্তলটা মাথায় ঠেকিয়েও নামিয়ে নেন তিনি, না এখন মরলে চলবে না তিনি বীরেন ভট্টাচার্য একসময় তার নামে পুরো শহরের লোক ভয়ে কাঁপতো তিনি তার কোনো শত্রুকেই পৃথিবীতে বাঁচিয়ে রাখেন নি তাই শেষ শত্রুকেও না মেরে তিনি মরবেন না ,অভয়.. হ্যাঁ অভয় রায় চৌধুরী ওই রুদ্রের ছেলে ওকে না মেরে তিনি মরবেন না যেভাবেই হোক ওকে তিনি মারবেন‌ই ওর জন্যই তার সব গেছে কি কুক্ষণেই যে ওকে হাতে পেয়েও সঙ্গে সঙ্গে না মেরে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন নিজের গালেই চড় মারতে থাকেন বীরেন বাবু, সেই তার থেকে সবকিছু কেড়ে নিয়েছে এমনকি তার অফিসে আগুন যে এই অভয় লাগিয়েছে এ ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত, তিনি ঠিক করেন যেভাবেই হোক তিনি অভয়কে শেষ করবেন।


[/HIDE]
 
[HIDE]

এইসব ভাবছেন এমন সময় তার ফোনটা বেজে উঠলো নাম্বারটা দেখে বুঝলেন পুলিশ ডিপার্টমেন্টের একজন ফোন করেছে
হ্যালো, বীরেন বাবু?
বলছি।
একটা খারাপ খবর আছে স্যার।
বীরেন বাবু ভাবেন তার জীবনে আর কি খারাপ খবর বাকি থাকতে পারে? জিজ্ঞেস করেন: কি খবর?
আপনার নামে অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট বেরিয়েছে, আপনাকে অ্যারেস্ট করার জন্য পুলিশ আপনার বাড়ির উদ্দেশ্যে র‌ওনা দিয়ে দিয়েছে।
হোয়াট?
হ্যাঁ, স্যার।
কিন্তু কেন?
আপনি খবর দেখছেন না?
খবর?
হ্যাঁ, দেখুন।
বীরেন বাবু ড্রয়িংরুমে টিভিটা অন করে একটা নিউজ চ্যানেল চালান এবং যেটা দেখলেন সেটা দেখার পর তার মুখে প্রথমে ভয় তারপর রাগের অভিব্যক্তি প্রকাশ পেলো এবং অবশেষে ঘৃণা, তিনি অনুচ্চস্বরে প্রথমে শিউলী দেবী ও পরে অভয়ের উদ্দেশ্যে অশ্রাব্য গালি দেন।
স্যার আপনি কোথাও গা ঢাকা দিন। ফোনের ওপাশের আওয়াজে চমক ভাঙে।
ফোনটা রাখার পরেও বীরেন বাবুর রাগ কমে না, তিনি পরপর অনেকগুলো নিউজ চ্যানেল ঘুরিয়ে দেখেন প্রতিটা চ্যানেলেই এক‌ই দৃশ্য।
বেশ কয়েকবছর আগে তখন তিনি সদ্য ইলেকশনে দাঁড়িয়েছেন সেইসময় প্রোমোটিংএর জন্য একটা জমি পছন্দ হয় সেই জমিতে একটা পরিবার বাস করতো স্বামী-স্ত্রী, বৃদ্ধ বাবা, বৃদ্ধা মা আর ১২-১৩ বছরের একটা কিশোর, তাদের কাছে জমিটা চেয়েছিলেন কিন্তু তারা অস্বীকার করে পরে তাদের ভয় দেখালে হুমকি দিলে তারা পুলিশের কাছে গিয়ে ডায়রী করে আসে এদিকে সেইসময় তার নামে কোনো খারাপ কিছু রটলে তার পলিটিক্যাল কেরিয়ার ওখানেই ইতি হয়ে যেত তাই তিনি ওই পরিবারের সবাইকে নিজের হাতে খুন করেন কিন্তু বুঝতে পারেন নি সেইখানে উপস্থিত তার দলের একজন লুকোনো ক্যামেরায় পুরো ঘটনাটা রেকর্ড করে যেটার সাহায্যে সে পরে বীরেন বাবুকে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করে ফলে তাকেও সরিয়ে দেন তিনি কিন্তু ভিডিওটা উদ্ধার করতে পারেন না, পরে কিভাবে যেন সেটা শিউলীর হাতে আসে যেটা দিয়ে সেও তাকে ব্ল্যাকমেইল করতে থাকে শিউলীকেও শেষ করে দিতেন কিন্তু শিউলীর কাছে ভিডিও কিভাবে এলো এটা খোঁজ করতে গিয়ে জানতে পারেন যে লোকটা প্রথম ভিডিওটা রেকর্ড করেছিল সে তার এক বন্ধুর কাছে ভিডিওটা রেখেছিল সেই বন্ধু আবার শিউলীর পরিচিত ছিল ভিডিওটা সেই শিউলীকে দেয়, বীরেন বাবু অনেক চেষ্টা করেও সেই বন্ধুটির খোঁজ পাননি এদিকে শিউলীকে মারলে সে যদি ভিডিওটা ছড়িয়ে দেয়, সেই ভয়ে শিউলীকে মারতে পারেননি উল্টে তাকে এবং তার ভরনপোষণের দায়িত্ব নিতে হয়। সেই ভিডিওটাই এখন ভাইরাল হয়েছে এবং তিনি নিশ্চিত এর পিছনেও অভয়ের হাত, অভয়‌ই যে শিউলীকে তার কবল থেকে মুক্ত করে নিয়ে গিয়েছিল এটা তিনি জানেন এবং শিউলীই যে অভয়কে ভিডিওটা দিয়ে গিয়েছে এব্যাপারে আর কোনো সন্দেহ নেই যেটা অভয় এখন সুযোগ বুঝে প্রকাশ করেছে, টিভি বন্ধ করে বীরেন বাবু ফোনটা হাতে তুলে নেন তিনি একটা নাম্বার ডায়াল করেন একটু পরেই ওপার থেকে আওয়াজ আসে "হ্যালো"
হ্যালো চ্যাটার্জী?
বলুন। মিস্টার চ্যাটার্জির কণ্ঠে তাচ্ছিল্য এবং ব্যাঙ্গ।
আমি কেন ফোন করেছি সেটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন।
আপনি কি চান?
আপনার সাহায্য বিনিময়ে আমি আপনাকে..
শুনুন বীরেন ভট্টাচার্য বীরেন বাবুকে থামিয়ে মাঝপথে বলে ওঠেন মিস্টার চ্যাটার্জী, আপনি এখন কাউকে কিছু দেবার অবস্থায় নেই, পুলিশ আপনার পিছনে, এআরসি আপনার পিছনে এখন তো পুরো শহরের লোক আপনার পিছনে পড়বে, আমি আপনাকে সাহায্য করে নিজের জন্য বিপদ ঢেকে আনতে পারবো না আর তাছাড়া হবু সিএমের পক্ষে একজন ক্রিমিনালকে সাহায্য করাটা উচিত হবে না।

হ্যালো, চ্যাটার্জী, হ্যালো.. বীরেন বাবু কিছু বলতে পারেন না তার আগেই মিস্টার চ্যাটার্জী ফোন কেটে দিয়েছেন। বীরেন বাবু বুঝতে পারছেন এখনি তাকে পালাতে হবে নাহলে তিনি বাঁচতে পারবেন না, ধরা পড়ে যাবেন তখনই ড্রাইভারকে ডেকে গাড়ি স্টার্ট দিতে বলেন, যখন তার গাড়িটা ভট্টাচার্য ম্যানসনের গেট ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে তখন বীরেন বাবু খেয়াল করলেন উল্টোদিক থেকে একটা পুলিশের জিপ তার বাড়ির দিকেই আসছে তিনি ড্রাইভারকে দ্রুত গাড়ি চালাতে হুকুম দেন, ড্রাইভার তৎক্ষণাৎ সে হুকুম তামিল করে, এদিকে বীরেন বাবুকে অ্যারেস্ট করতে আসা পুলিশরাও খেয়াল করেছে বীরেন বাবুর গাড়িটা দ্রুত চলে যাচ্ছে তারাও স্পিড বাড়িয়ে পিছনে ধাওয়া করতে থাকে, একজন পুলিশ ওয়াকিটকিতে খবর পাঠিয়ে দেন যে বীরেন ভট্টাচার্য পালানোর চেষ্টা করছেন।
বীরেন বাবু অবশ্য বেশীদূর পালাতে পারেন না একটু পরেই তিনি যেদিকে যাচ্ছেন সেদিক থেকে একটা পুলিশের জিপ এসে তার পথ আটকে দাঁড়ায়, নিজের গাড়িটাকে পিছনে নিতে বলে দেখেন পিছন থেকেও আরেকটা পুলিশের গাড়ি এসে পড়েছে, এবার একটা গাবি থেকে একজন পুলিশ মাইকে বীরেন বাবুকে উদ্দেশ্য করে বলেন স্যারেণ্ডার করতে, কিন্তু বীরেন ভট্টাচার্য যে সহজে স্যারেণ্ডার করবেন না সেটা বুঝতে তাদের একটু দেরি হয়, মাইকের আওয়াজের উত্তরে বীরেন বাবুর গাড়ি থেকে সামনে পুলিশের গাড়ি এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চলতে থাকে, ফলে কয়েকজন পুলিশ গুরুতর আহত হন ,এবং বাকিরা নিজেদের আড়াল করেন এইটুকু সময়ে বীরেন বাবুর ড্রাইভার সামনের পুলিশের গাড়িটাকে কোনোমতে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যায় কিন্তু পিছনের গাড়িটা পিছনে ধাওয়া করতে থাকে এবার বীরেন বাবু পিছনের গাড়িটার উদ্দেশ্যে গুলি চালাতে থাকেন, প্রত্যুত্তরে সেখান থেকেও গুলি চলতে থাকে, বীরেন বাবু হয়তো পালাতে সক্ষম হতেন কিন্তু পারলেন না কারণ ঠিক এইসময় একটা গুলি তার গাড়ির টায়ারে লেগে টায়ার ফেটে যায়, ড্রাইভার কোনোমতে গাড়িটা উল্টে যাওয়া থেকে বাঁচিয়ে দাঁড় করিয়ে দেয়, বীরেন বাবু বোঝেন আর উপায় নেই কারণ তার পিস্তলেও গুলি নেই যে তিনি পুলিশের উপরে চালাবেন তিনি গাড়ি থেকে নেমে দুহাত উপরে তুলে স্যারেণ্ডার করেন।
থমথমে মুখ নিয়ে কোর্টে ঢুকলেন বীরেন বাবু তিনি ভালো করেই জানেন তার বিরুদ্ধে যা প্রমাণ আছে তাতে হয়তো আজ‌ই কোর্ট তার রায় দিয়ে দিতে পারে। পার্টি তাকে বরখাস্ত করেছে, পুরো শহরের লোক তার কুশপুত্তলিকা পোড়াচ্ছে, তাকে গালাগালি দিচ্ছে ,শাপশাপান্ত করছে এতদিন যারা তার সামনে চোখ তুলে তাকানোর সাহস পেতো না তারা এখন তার সামনে গলা তুলে কথা বলার সাহস পাচ্ছে, কোর্ট চত্ত্বরে অজস্র লোকের ভিড় সবাই তার ফাঁসির দাবি জানাচ্ছে, বেশ কয়েকজন তো জুতো ছুঁড়ে মারছে তার উদ্দেশ্যে, এছাড়া টমেটো, পচা ডিম তো আছেই। পাবলিকের এত রোষের কারণ প্রায় তার সব কুকীর্তি ফাঁস হয়ে গেছে শুধু যে ওই একটা পরিবারকে খুন তাই নয়, আরও অনেকেই যারা এতদিন তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে ভয় পেতো, তার থেকে পালিয়ে লুকিয়ে আত্মগোপন করে ছিল তারাও এখন গর্ত থেকে বেরিয়ে এসেছে, মিডিয়ায় লোক‌ও কিভাবে যেন তাদের খোঁজ পেয়ে গেছে, অবশ্য বীরেন বাবু খুব ভালো করেই বুঝতে পারছেন এসবের পিছনে কে, শুধু একবার এখান থেকে বেরোতে পারলেই হলো অভয়কে তিনি শেষ করবেন‌ই দাঁতে দাঁত চেপে নিজের মনেই প্রতিজ্ঞা করেন তিনি, তিনি চারিদিকে তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে তাকাতে থাকেন যেন ভিড়ের মধ্যে কাউকে খুঁজছেন, হটাৎ একজন কনস্টেবলের সাথে চোখাচোখি হয় তার, কনস্টেবলটি ঘাড় ঘুরিয়ে ইশারা করে একদিকে তাকায় বীরেন বাবু সেদিকে তাকিয়ে একজনকে দেখতে পান তারপর পরপর আরো কয়েকজনকে তার ঠোঁটের কোণে একটা মুচকি হাসি দেখা যায় ত র মানে সব ব্যবস্থা কমপ্লিট এখন সুযোগ ও সময়ের অপেক্ষা।



[/HIDE]
 
[HIDE]

গ্ৰেপ্তারের পরে প্রথমে পুলিশ তাকে ১৪ দিনের হেফাজতে রাখে যদিও তার উপরে কোনোরকম শারীরিক বা মানসিক টর্চার করা হয়নি, তাকে কোনোকিছু জিজ্ঞাসাবাদ‌ও করা হয়নি যেন সবকিছুই আগে থেকে সাজানো ছিল ,একটা নাটকের উপস্থাপনার জন্য শুরুতে যেমন একটু সময় লাগে সেই সময়টাই হলো ওই ১৪ দিন, জেলে খুব সাধারণভাবেই দিন কাটছিল তার শুধু খাওয়া দাওয়ায় একটু অসুবিধা হচ্ছিল, যদিও এর আগে কয়েকদিন জেলের খাবার খেতে হয়েছিল কিন্তু সেটা বহুবছর আগে তারপর আর তাকে জেলে ঢোকানো তো দূরের কথা তার গায়ে হাত দেওয়ার সাহস হয়নি কারো। তবুও তিনি চুপচাপ সব সহ্য করে দিন কাটাচ্ছিলেন আর একটাই কথা বারবার জপে যাচ্ছিলেন মনে মনে "অভয় তোকে আমি ছাড়বো না"। গার্ড থেকে শুরু করে অন্যান্য কয়েদিরা সবাই তাকে একপ্রকার পাগল বলেই ধরে নিয়েছে, তিনদিন আগে প্রতিদিনের থালায় জেলের খাবারের বদলে একটা টিফিন ক্যারিয়ারে খাবার এলো একজন কনস্টেবল আর তার সাথে একটা গ্ৰাম্য মহিলা এল খাবারটা নিয়ে, নিজের সেলে তখন একাই ছিলেন তিনি প্রথমে অবাকই হয়েছিলেন বীরেন বাবু কারণ তিনি এটা আশা করেননি খেতে সংকোচ করছিলেন তিনি যদি বিষ মেশানো থাকে, কিন্তু মহিলার "খেয়ে লিন বাবু, আমি অনেক কষ্ট করে বানিয়ে এনেছি" শুনে টিফিন ক্যারিয়ার খুলতে থাকেন, জিজ্ঞেস করেন "তুই কে?আমার জন্য খাবার এনেছিস যে, তোকে তো চিনতে পারছি না?"
আমাকে আপনি চেনেন না বাবু, কিন্তু আমার মরদকে চেনেন হয়তো আপনি ওর অনেক উপকার করেছেন।
কি নাম তোর মরদের?
বাপ্পা বাবু?
বাপ্পা? এই নামে তো কাউকে চিনি না।
মুখ দেখলে হয়তো চিনতে পারবেন বাবু।
তা সে আসেনি কেন?
সে জোগাড় করতে ব্যাস্ত।
জোগাড়? কিসের জোগাড়?
আপনাকে বার করে নিয়ে যাওয়ার। শেষের কথাটা অবশ্য বলেন কনস্টেবল আর সেটা গলার আওয়াজ অনেকটা নামিয়ে। চমকে ওঠেন বীরেন বাবু সোজা তাকান কনস্টেবলের দিকে, কনস্টেবল একবার চারিদিকে তাকিয়ে কেউ লক্ষ্য করছে কি না দেখে গলাটা আরও নামিয়ে বলে "স্যার একদম ভিতরের খবর পেয়েছি আপনার বিরুদ্ধে সব প্রমাণ তৈরি, সেইজন্যই কেউ আপনাকে কোনো জিজ্ঞাসাবাদ করছে না নেহাত ফর্মালিটির জন্য জেল হেফাজতে রেখেছে, একজন উঁচু পজিশনের প্রচণ্ড ক্ষমতাধর কেউ একজন সব প্রমাণ তুলে দিয়েছে, সেই নাকি কমিশনারের সাথে মিটিং করে সব ব্যবস্থা করেছে"।
বীরেন বাবুর বুঝতে বাকি র‌ইলো না সে কে, এটা অভয় ছাড়া আর কেউ হতেই পারে না, তিনি কনস্টেবলকে জিজ্ঞেস করেন: কিন্তু আমাকে কিভাবে বার করবেন?
এখন নয় স্যার আপনাকে ঠিক সময়ে জানাবো এখন আপনি খেয়ে নিন। বীরেন বাবু আর দ্বিরুক্তি না করে খাবারটা খেয়ে নেন, পরের দিন আবার খাবার এলো পরের দিন আবার তবে এবার খাবারের সাথে একটা ছোটো চিরকুট পেলেন তিনি তাতে লেখা "সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে, আগামীকাল কোর্টের রায় যাই হোক বেরোনোর পরে কাজটা করা হবে, তৈরী থাকবেন"। বীরেন বাবু পুরোপুরি বিশ্বাস না করলেও তিনি তৈরী থাকেন দেখাই যাক না যদি সত্যিই পালানোর সুযোগ আসে তাহলে ক্ষতি কোথায়? এখন তার একটাই লক্ষ্য যেভাবেই হোক অভয়কে শেষ করা।


কোর্টে ঢুকে শান্তভাবে আসামীর কাঠগড়ায় গিয়ে দাঁড়ান বীরেন ভট্টাচার্য বাইরে তখনও ক্ষিপ্ত জনতা তার ফাঁসির দাবিতে সোচ্চার। বীরেন বাবু চারিদিকে তাকিয়ে দেখতে থাকেন, একবারে প্রথমেই চোখে পড়ে বৃষ্টিকে, একেবারে প্রথম সারিতে বসে আছে সে সোজা বীরেন বাবুর দিকে তাকিয়ে চোখেমুখে অসম্ভব ঘৃণা,তার এক পাশে একটা ছেলেকে দেখেন সে বৃষ্টির একটা হাত চেপে ধরে আছে অপর পাশেই বসে থাকতে দেখেন সরমাদেবীকে এবং তার পাশে বসে ওটা কে? বীরেন বাবু অবাক হয়ে দেখেন বিদিশা বসে তার পাশে তাথৈ, তার পরিবারের যারা আছে তারা সবাই আছে এবং তারা প্রত্যেকেই ঘৃণাভরে তার দিকে তাকিয়ে আছে। এবার কোর্টরুমের দরজার দিকে চোখ পড়তেই তিনি হতবাক হয়ে যান এ কাকে দেখছেন তিনি ও কে দাঁড়িয়ে আছে? এত বছর পরে দেখেও ঠিক চিনতে পেরেছেন তিনি, ষোলো বছর আগের সেইরাতে তিনি শেষ দেখেছিলেন যে রাতে তিনি রুদ্র আর তার পরিবারকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু সেইরাতে তার চোখে মুখে ছিল আতঙ্ক বেঁচে থাকার নিজের ছেলে আর স্বামীকে বাঁচানোর আকুতি আর আজ তার চোখেও ঘৃণা, অমৃতা.. অমৃতা রায় চৌধুরী ,রুদ্রের স্ত্রী অভয়ের মা, অমৃতা যে বেঁচে আছে বা বেঁচে থাকতে পারে এটা তার একমুহূর্তের জন্যও মনে হয়নি এমনকি অভয় বেঁচে আছে এটা জানার পরেও নয়।
অমৃতাদেবী এগিয়ে এসে তাথৈএর পাশে বসেন তখন‌ও তার দৃষ্টি সোজা বীরেন বাবুর দিকে, বীরেন বাবু মনে মনে খুশীই হন অভয় তার থেকে সবকিছু কেড়ে নিয়েছে এবার তার পালা প্রথমে অভয়ের চোখের সামনে ওর মাকে মারবেন তারপর ওকে আজ‌ই অমৃতাদেবীকে শেষ করবেন তিনি। এবার দরজা দিয়ে যাকে ঢুকতে দেখেন বীরেন বাবু তাকে দেখে তার হাত নিশপিশ করতে থাকে, অভয় ঢুকছে বহুকাল হয়ে গেল নিজের হাতে কাউকে মারেননি তিনি তার হয়ে জগা এবং অন্যান্য লোকেরাই কাজটা করে দিত কিন্তু আজ তার সেই কাজটাই নিজের হাতে করতে ইচ্ছে করছে, ইচ্ছা করছে এখনই গিয়ে অভয়ের গলা টিপে ধরেন অতিকষ্টে নিজেকে সংবরণ করেন তিনি, না আগে ওর সামনে ওর মাকে শেষ করবেন তারপর ওকে, অভয় ঢুকতে ঢুকতে চোখ থেকে চশমাটা খুললে তিনি দেখেন সেও তা দিকে তাকিয়ে আছে, তার ঠোঁটের কোণে একটা মুচকি হাসি সেও এসে অমৃতাদেবীর পাশে বসলো তার দৃষ্টিও সোজা বীরেন বাবুর দিকে।
বিচার শুরু হলে একে একে প্রায় সব সাক্ষ্য‌ই তার বিরুদ্ধে আসতে থাকে বলাইবাহুল্য তার পক্ষে শহরের কোনো উকিল‌ই না দাঁড়াতে চাওয়ায় নিয়মমাফিক সরকারের তরফ থেকে একজনকে ঠিক করা হয় কিন্তু তিনি টিকতেই পারছেন না, আর সবশেষে যখন বহুবছর আগে করা খুনের ভিডিওটা আর তার সত্যতার প্রমাণ দেওয়া হলো তখন অবশ্য আর কিছু করার ছিল‌ও না, স্বভাবতই বিচারক তার মৃত্যুদণ্ডের রায় দিলেন তার এত ক্রাইম এবং এত প্রমাণ যে এটাই হ‌ওয়ার ছিল।
কোর্ট থেকে বেরোতেই জনতার উল্লাস দেখতে পান বীরেন বাবু, একটু দূরে অভয়, অমৃতা আর বাকীদের দেখেন তিনি। তাকে দেখে অভয় তার কাছে এগিয়ে আসে বলে "বলেছিলাম না আপনাকে বাঁচতে দেবো না, আমি সবসময় আমার কথা রাখি"। কোর্টের ভিতরে তাকে বেশি কথা বলতে হয়নি, বলেন‌ওনি তিনি, চুপ করেই দাঁড়িয়েছিলেন বলা যায় কিন্তু এবার তিনি মুখ খোলেন "আজ আমিও তোকে বলছি ঠিক যেমনভাবে তোর বাপকে মেরেছিলাম ঠিক সেভাবেই তোকে মারবো তবে তার আগে...."
তাহলে দেখাই যাক।
বেশ, দেখাই যাক।
অভয় পিছনে ফিরে গেল পুলিশ আবার বীরেন বাবুকে নিয়ে পুলিশ ভ্যানের দিকে এগোতে থাকে যখন তারা পুলিশ ভ্যানটার প্রায় কাছেই চলে এসেছেন জাস্ট একটু দূরে তখনই আচমকা ঘটে গেল ব্যাপারটা একটা ছোটো বিস্ফোরণের শব্দে পুলিশ ভ্যানটা মাটি থেকে ছিটকে উপরে উঠে তারপর আবার নীচে আছড়ে পড়লো এবং তাতে আগুন লেগে গেল ঘটনায় আকস্মিকতায় বীরেন বাবু এবং তার সঙ্গের পাঁচজন পুলিশ‌ও ছিটকে কয়েকপা পিছনে পড়ে গেল, সঙ্গে সঙ্গে পরপর আরো কয়েকটা গাড়িতে বিস্ফোরণ এবং এক‌ইভাবে গাড়িগুলোতে আগুন লেগে গেল সঙ্গে সঙ্গে কোর্ট চত্ত্বরে হুড়োহুড়ি লেগে গেল যারা এতক্ষণ বীরেন ভট্টাচার্যের শাস্তির দাবিতে সোচ্চার ছিল এবং রায় ঘোষণার পরে উল্লাসে ফেটে পড়েছিল তারাই এখন প্রাণভয়ে পালানোর জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে শুরু করে দিল, এর‌ইমধ্যে বীরেন দুজন লোক মুখ ঢেকে দৌড়ে বীরেন বাবুর কাছে গিয়ে তাকে ধরে তুললো পুলিশগুলো তাকে ধরার জন্য রিভলবার বার করলে লোকগুলো লাথি মেরে বীরেন বাবুকে ছাড়িয়ে নেয়, কিন্তু বীরেন বাবুর দুহাতে তখনও হাতকড়া তবুও তিনি একটা রিভলবার তুলে নেন তারপর সঙ্গের পুলিশগুলোর উদ্দেশ্যে চালিয়ে দেন, পুলিশগুলোকে মেরে বীরেন বাবু লোকদুটোর সাথে দৌড়াতে থাকেন।



[/HIDE]
 
[HIDE]

বীরেন বাবুর সাথে কথা বলে অভয় ফিরে এসেছে, অমৃতাদেবী জিজ্ঞেস করলেন "তুই ওনার কাছে গিয়েছিলি কেন?"
এমনি চলো। সবাই গাড়িতে উঠতে যাবে এমন সময় পরপর বিস্ফোরণ অমৃতাদেবী, সরমা দেবী সহ তাথৈ এবং বৃষ্টিও হতবাক হয়ে যায়, এরপর হঠাৎই পরপর গুলির শব্দ, কোর্ট চত্ত্বরে সবাই হুড়োহুড়ি করছে অভয় তাড়াতাড়ি সবাইকে গাড়িতে উঠতে বলে। একটা গাড়ির আওয়াজ পেয়ে অভয় দেখে একটা গাড়ি অত্যন্ত দ্রুত গতিতে কোর্ট চত্ত্বর ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে, হটাৎ গাড়িটার একটা জানালার কাঁচ নীচে নেমে যায় এবং সেটা থেকে একটা রিভলভার ধরা হাত বার হয় সাথে বীরেন বাবুর মুখ, অভয় সভয়ে দেখে বীরেন বাবু গুলি চালাতে উদ্যত তবে তার লক্ষ্য সে নয় তার লক্ষ্য তার মা সঙ্গে ঈ সে বা হাত দিয়ে মাকে ঠেলে সরিয়ে দেয় কিন্তু গুলিটা তার বা হাতের বাহুতে লাগে রক্ত বেরোতে থাকে, অমৃতাদেবী সহ বাকিরা ভয়ার্ত গলায় চিৎকার করে ওঠেন "অভয়"। অভয় মাটিতে পড়ে যায় সে ডানহাতে বাহু চেপে বীরেন বাবুর দিকে তাকায় দেখে গাড়িটা বেরিয়ে যাচ্ছে বীরেন বাবু আরও কয়েকবার ট্রিগার চাপলেন কিন্তু গুলি বেরোচ্ছে না দেখে রিভলভার ফেলে দিলেন গাড়িটাও তাকে নিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল।
অমৃতাদেবী তাড়াতাড়ি ছেলের কাছে এসে কাঁদতে শুরু করেন অভয় কোনোমতে বলে "মা, তুমি ঠিক আছো?"
হ্যাঁ, বাবু, তোর কিচ্ছু হবে না।
আমি ঠিক আছি মা। এটুকু বলেই অভয় জ্ঞান হারায়।

অভয়কে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, আমির ওখানেই ছিল ও তো পাগলের মতো করতে থাকে, কিছুক্ষণ পরে ডাক্তার জানায় গুলিটা অভয়ের বাহুর অনেকটা মাংস খুবলে নিয়ে বেরিয়ে গেছে, অনেকটা রক্ত বেরিয়ে যাওয়ায় একটু দুর্বলতা আসতে পারে, তবে চিন্তা নেই ওয়াশ করে স্টিচ করে ব্যাণ্ডেজ করে দিয়েছেন, এবং ব্যাথার ওষুধ‌ও দিয়ে দিয়েছেন, সবাই গিয়ে দেখা করতে পারেন। সবার আগে অমৃতাদেবী ভিতরে ঢুকলেন দেখেন তার ছেলে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে, খালি গায়ে বাহুতে অনেকটা জায়গা জুড়ে ব্যাণ্ডেজ বাঁধা, তিনি ছেলের মাথায় হাত বোলান, অভয় চোখ খুলে মায়ের চোখে জল দেখেই বলে "মা আমি ঠিক আছি তুমি কেঁদোনা"। কিন্তু তবুও অমৃতাদেবী কেঁদেই চলেন, অমৃতাদেবীর পিছনে একে একে ঢোকে আমির, তাথৈ এবং বাকিরা এর মধ্যে আমির আর তাথৈএর চোখেও জল তাই দেখে অভয় বলে "আরে সবাই কাঁদছো কেন আমি এখনো বেঁচে আছি, মরিনি"
এক থাপ্পড় মারবো। অমৃতাদেবী রেগে যান, অভয় হাসতে থাকে "মা, আমি ঠিক আছি"
তুই কেন আমাকে ঠেলতে গেলি, গুলি লাগতো আমার লাগতো।
মা, আমি থাকতে তোমার গায়ে আমি লাগতে দিতাম এটা তুমি ভাবলে কিভাবে?
আর তোর যে লেগেছে?
আমার কিছু হয়নি, বাড়ি চলো ক্ষিদে পেয়েছে।
ডাক্তার যদিও ছাড়তে চাইছিলেন না কিন্তু অভয়ের জিদের কাছে শেষপর্যন্ত ছাড়তে বাধ্য হন, বাড়িতে আসতেই বিন্দু মাসিও তাকে জড়িয়ে কাঁদতে শুরু করেন তাকেও অনেক কষ্টে সামলাতে হয়। খাওয়ার পরে নিজের রুমে একা একটু বিশ্রাম করছে অভয় ওষুধের প্রভাবে ব্যাথাটা কিছুটা কম হটাৎ দরজায় নক করার আওয়াজ শুনে দেখে তাথৈ।
"আরে তাথৈ আসো" বলে তাড়াতাড়ি একহাতে ভর দিয়ে উঠতে যায় কিন্তু অপর হাতে ব্যাথায় "আঃ" করে ওঠে তাথৈ তাড়াতাড়ি এসে ওকে ধরে ওর চোখে জল।
তাথৈ তুমি কাঁদছো কেন?
তাথৈ দুহাত জোড় করে ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গিতে কাঁদতে কাঁদতে বলে " আমার পরিবারের জন্য তোমার বাবা আজ বেঁচে নেই, তোমাকে না জানি কত কষ্ট করতে হয়েছে, আজ সেই আমার জ্যেঠুই মাকে মারতে চাইছিলেন আর এখন তোমার.... আমি যতই অস্বীকার করি কিন্তু এটা তো সত্যি যে আমি ওই বীরেন ভট্টাচার্যের পরিবারের মেয়ে"
তাথৈ.. এসব কি বলছো?
আমি হয়তো তোমার জীবনে অভিশাপ।
তুমি কি চলে যেতে চাইছো?
এতেই বোধহয় তোমার জন্য ভালো হবে।
এদিকে এসো, বসো। অভয় তাথৈকে কাছে ডাকে, তাথৈ বিছানায় অভয়ের ডানদিকে বসে, ও এখনো কেঁদে চলেছে, অভয় বলে "সত্যি বলোতো তুমি চলে যেতে চাইছো অন্য কাউকে পছন্দ হয়েছে নাকি?"
কথাটা শুনে তাথৈ অভয়ের মুখের দিকে তাকিয়েই বোঝে সে মজা করছে সে চুপ করে থাকে, অভয় আবার বলে "বেশ তুমি যখন চলে যেতে চাইছো তখন তোমাকে আটকাবো না ভালোই হলো আমিও ববিতার কাছে যেতে পারবো"
ববিতা কে? এবার ধীরে ধীরে আসল তাথৈ বেরিয়ে আসছে যে অভয়ের আশেপাশে কোনো মেয়েকে সহ্য করতে পারে না। অভয় বোঝে সেটা, মনে মনে বলে "এইতো এটাই তো চাইছিলাম" মুখে বলে "ববিতা একজন হিরোইন"
হিরোইন?
হ্যাঁ, মা ওকে ঠিক করেছিলেন আমার সাথে বিয়ের জন্য, একটা হোটেলে দেখা করতে গিয়েছিলাম।
তাথৈএর বড়ো বড়ো নিঃশ্বাস পড়ছে সে বলে "তুমি দেখাও করতে গিয়েছিলে?"
হ্যাঁ, ওহহ কি দেখেছিলাম আজ‌ও চোখে ভাসে।
কি দেখেছিলে?
দুজনে ফোনে কথা বলেই ঠিক করেছিলাম যে হোটেলে দেখা করবো তারপর লাঞ্চ একসাথে সারবো, তা সেখানে গিয়ে শুনি উনি সুইমিং পুলে গেছেন স্নান করতে আমাকেও যেতে বলেছেন, গেলাম গিয়ে দেখি উনি সাঁতার কাটছেন আমাকে দেখে জল থেকে উঠে এলেন কি বলবো তোমাকে মাত্র একটা টু-পিস মনোকিনি পড়েছিলেন পুরো শরীর থেকে জল চুঁইয়ে পড়ছে শরীরের প্রতিটা কার্ভ দেখতে পাচ্ছি উফফফফ, জল থেকে উঠে ধীরে ধীরে আমার কাছে এলেন হ্যালো বললেন আমি তখন‌ও একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি মুখে কথাই বেরোচ্ছে না।

অভয় রায় চৌধুরী। তাথৈ ঝাঁপিয়ে পড়ে অভয়ের উপর কিন্তু অভয় ডানহাত দিয়ে তাথৈকে নিজের বুকে চেপে ধরে, তাথৈ অভয়ের জামা খামচে ধরে বলতে থাকে "আমি জানতাম তোমার চরিত্র খারাপ, অসভ্য ছোটোলোক ছেলে খালি অন্য মেয়ের দিকে নজর ঘোচাচ্ছি অসভ্যতামি"
বা রে তুমিই তো বললে তুমি চলে যাচ্ছো তো আমি সারাজীবন একা থাকবো নাকি?
আমি কোথাও যাবো না, দেখি তুমি কোন হিরোইনের কাছে যাও।
তার মানে তুমি যাবে না?
না। আবার টু পিস দেখছিলেন উনি
শুধু টু পিস কেন ডিনারটা একসাথে সারলে হয়তো..
আবার ডিনার?
হ্যাঁ আমাকে ইনভাইট করেছিলেন তো ডিনারে নেহাত আমার একটা ইম্পরট্যান্ট কাজ চলে এসেছিল তাই নাহলে।
তাথৈ আর সহ্য করতে পারে না, এক ঝটকায় নিজেকে অভয়ের বুক থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে "বেশ যাও তুমি তোমার ববিতা হিরোইনের কাছে আমি চললাম" বলে বিছানা থেকে নামতে যেতেই অভয় আবার তাথৈএর হাত ধরে নিজের বুকে টেনে নেয়।
ছাড়ো আমাকে, যাও তোমার হিরোইনের কাছে। তাথৈ মুখে একথা বললেও নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টাও করে না।
অভয় শান্ত স্বরে ওকে বলে "এই তো বললে তুমি যাবে না, আমাকে হিরোইনের কাছে যেতে দেবে না"
তাথৈ চুপ করে অভয়ের বুকে মাথা রেখে বসে থাকে, অভয় বলে চলে "আমাদের সাথে যা হয়েছিল সেটা তোমার জন্য হয়নি, তুমি আমার জীবনে অভিশাপ নয় তাথৈ আর কখনো এরকম বলবে না, আমি আগেও বলেছি আজ আবার বলছি তোমার জ্যেঠু যা করেছেন তার জন্য আমি কখনো তোমাকে দায়ী করিনি, আমি তোমাকে ভালোবাসি তাথৈ"
তাহলে ওই ববিতাকে বিয়ের জন্য দেখতে গিয়েছিলে কেন?
বললাম তো মা বলেছিল।
"মাকে বলতে পারলে না তুমি আমাকে ভালোবাসো, যদি সত্যিই বিয়ে করতে বলতেন তখন?" তাথৈএর কথা শুনে অভয় হেসে ওঠে।
"হাসছো কেন?" জিজ্ঞেস করে তাথৈ।
কারণ ওসব কিচ্ছু নয়।
তারমানে মা বলেননি?
না, হ্যাঁ মা মেয়ে দেখছিলেন এটা ঠিক তবে ওদের সবাইকেই আমি মানা করে দিয়েছিলাম।
আর ববিতা?
ওনার সাথে দেখা হ‌ওয়া আর তার পরের ঘটনা পুরোটাই সত্যি তবে আমি হোটেলে ওনার সাথে দেখা করতে যাইনি গিয়েছিলাম আমার একটা মিটিংয়ে, কোইন্সিডেন্টলি উনিও ওখানে ছিলেন।
আর তুমি ওনাকে ওইভাবে দেখলে?
ইচ্ছাকৃতভাবে নয়, হয়ে গেছে।

[/HIDE]
 

Users who are viewing this thread

Back
Top