সুদীপের বিছানাটা বের করে সে একপাশে বিছিয়ে দিয়ে সুদীপকে ডাকল, সুদীপ আয়। মাথা নাড়ল সুদীপ। মুখে কিছু বলল না। ভঙ্গিও পালটাল না। আর এতেই খুশী হল জয়িতা। অন্তত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে ও। অর্থাৎ স্বাভাবিক হবে একসময়। বুকের ভেতর জমে থাকা পাহাড়টা যেন আচমকা সরে গেল জয়িতার। সে দেখল ভালকুটাকে ওরা অনেকটা দূরে টেনে নিয়ে গিয়েছে। লা-ছিরিঙ কোমর থেকে একটা ছুরি বের করে চিৎ-করা ভালুকের বুকের চামড়া কাটতে লাগল। এখন গলগল করে রক্ত বের হচ্ছে। জয়িতা চোখ বন্ধ করল। তার শরীর গোলাতে লাগল। সারারাত জেগে, ভোরে এই পরিশ্রম করে এখন সমস্ত শরীরে বমি-ভাব ছড়িয়ে পড়ল। হঠাৎ খুব অসুস্থ মনে হল নিজেকে। সে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিল না। কোনরকমে বাইরে এসে ভালুকটার বিপরীতে গিয়ে পেটে হাত রেখে বমি করল। শুধু তেতো জল ছাড়া আর কিছু বের হল না। ওরা সবাই ভালুকটাকে নিয়ে ব্যস্ত এখন। দমক আসছে জয়িতার কিন্তু মুখ থেকে কিছুই বের হচ্ছে না। এবং এখানে আসার পর সম্ভবত এই প্রথম তার হিমবাতাস ভাল লাগল। মুখের খোলা ফাটা জায়গাতেও তার স্পর্শ অনেক রমণীয় মনে হচ্ছে। সে চোখ বন্ধ করে নিজের শরীরটা ঠিক করে নিতে চেষ্টা করছিল। বমি-ভাবটা কমে এলে সে চোখ মেলল। চারপাশে শুধু বরফ আর বরফ। তার ওপর কচি কলাপাতার মত রোদের চাদর বিছানো। সুন্দর যেন সুন্দরতর হয়ে এসে দাঁড়াল সামনে। মুগ্ধ হয়ে দেখছিল জয়িতা। এবং হঠাৎ তার মনে হল কিছু একটা নড়ছে ওপাশের বরফের ঢিপির গায়ে। জিনিসটা কি সঠিক বোঝা গেল না। কিন্তু নিশ্চয়ই কোন প্রাণী রয়েছে আশেপাশে। এই জায়গা খুব নিরাপদের নয় তা বোঝাই যাচ্ছে। জন্তুটা ঠিক কি প্রকৃতির তা দেখার জন্যে এগিয়ে যেতে ইচ্ছে করছিল না। জয়িতা গুহার পাশে পাথরের ওপর থেকে বরফ সরিয়ে বসতে গিয়ে দেখল সেটা অসম্ভব। অতএব বাধ্য হয়ে সেখানেই বসে পড়ল।
অন্তত সতেরো হাজার ফুট উঁচুতে ওরা এখন। তাপল্যাঙে থাকতে থাকতে ঠাণ্ডা অনেকটা সহ্যের মধ্যে এসে গেছে। কলকাতায় বসে এই পরিবেশে থাকার কথা কল্পনাতেই আসত না। জয়িতার হঠাৎ মনে পড়ল সে অনেককাল নিজের মুখ দ্যাখেনি। আয়নার কথা মনেই ছিল না তার। কতকাল স্নান করা হয়নি এবং সেটা হয়নি বলে অসুবিধে যে খুব হচ্ছে তাও নয়। অথচ কলকাতায় স্নান না করে একটা দিন কাটানোর কথা সে কল্পনা করতে পারত না।
জয়িতা চোখ তুলল। চ্যামলা, বারুনৎসে, নুপসে, ললাসে, এভারেস্ট, মাকালু, ঘোমোলা এখন চোখের সামনে। দু-একটা পেজা মেঘ ছাড়া কোন আড়াল নেই। এত সুন্দর তবু সুন্দর শব্দটা বলার সঙ্গে সঙ্গেই বুক কাপে। একেই কি ভয়ঙ্কর সুন্দর বলে? কে জানে! পৃথিবীর কোথাও কোনও অশান্তি নেই, শুধু স্থির হয়ে থাকা, সময় মুঠোয় নিয়ে বসে থাকা। শুধু অনন্ত নিঃসঙ্গতায় হৃদয় ধুয়ে নেওয়া।
আনন্দর ডাকে চমক ভাঙল। পেছন থেকে আনন্দ বলল, কিরে, ধ্যান শুরু করে দিলি? উঠে আয়, চা হয়ে গেছে। চা শব্দটা শোনামাত্র শরীরে একটা আরাম এল যেন। জয়িতা কৃতজ্ঞ চোখে আনন্দকে দেখতে গিয়ে আবিষ্কার করল সে ফিরে গেছে। সে উঠে এল।
গুহার সামনে ভালুকটার অস্তিত্ব নেই। শুধু তার বিশাল চামড়াটা পরিষ্কার করে গাছের ডালে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। গুহার মুখেই চাপ চাপ মাংসের স্তুপ ঠিক করছে লা-ছিরিঙ। ওকে দেখে সরল হাসল সে, পুরো গ্রামের মানুষ একবেলা এটা খেতে পারবে।
তোমরা ভালুকের মাংস খাও? হতভম্ব হয়ে গেল জয়িতা।
কেন নয়? ভালুকের মাংস পাওয়া কত কষ্টের তা তো জানো না।
খেতে কেমন?
চমৎকার। তুমি কখনও খাওনি?
দ্রুত মাথা নাড়ল জয়িতা। লা-ছিরিঙ বলল, আজ খেয়ে দেখো, মজা লাগবে।
জয়িতা মনে মনে বলল, রক্ষা কর। তারপর গুহাতে ঢুকতেই মেয়েটা এক পাত্র চা এগিয়ে দিল। জিভে সেটা ঠেকাতে মনে হল এর নাম অমৃত। সে চেঁচিয়ে আনন্দকে বলল, থ্যাঙ্কস।
আনন্দ জিজ্ঞাসা করল, কয়েকটা বিস্কুট এখনও পড়ে আছে, খাবি?
না থাক।
থাক কেন? ওটা তো শেষ হবেই। আনন্দ ওর হাতে বিস্কুট ধরিয়ে দিল। তারপর চাপাগলায় বলল, সুদীপ চা খাচ্ছে, যদিও এখনও নর্মাল হয়নি। ওকে বুঝতে দিস না যে আমরা চিন্তিত।
অন্তত সতেরো হাজার ফুট উঁচুতে ওরা এখন। তাপল্যাঙে থাকতে থাকতে ঠাণ্ডা অনেকটা সহ্যের মধ্যে এসে গেছে। কলকাতায় বসে এই পরিবেশে থাকার কথা কল্পনাতেই আসত না। জয়িতার হঠাৎ মনে পড়ল সে অনেককাল নিজের মুখ দ্যাখেনি। আয়নার কথা মনেই ছিল না তার। কতকাল স্নান করা হয়নি এবং সেটা হয়নি বলে অসুবিধে যে খুব হচ্ছে তাও নয়। অথচ কলকাতায় স্নান না করে একটা দিন কাটানোর কথা সে কল্পনা করতে পারত না।
জয়িতা চোখ তুলল। চ্যামলা, বারুনৎসে, নুপসে, ললাসে, এভারেস্ট, মাকালু, ঘোমোলা এখন চোখের সামনে। দু-একটা পেজা মেঘ ছাড়া কোন আড়াল নেই। এত সুন্দর তবু সুন্দর শব্দটা বলার সঙ্গে সঙ্গেই বুক কাপে। একেই কি ভয়ঙ্কর সুন্দর বলে? কে জানে! পৃথিবীর কোথাও কোনও অশান্তি নেই, শুধু স্থির হয়ে থাকা, সময় মুঠোয় নিয়ে বসে থাকা। শুধু অনন্ত নিঃসঙ্গতায় হৃদয় ধুয়ে নেওয়া।
আনন্দর ডাকে চমক ভাঙল। পেছন থেকে আনন্দ বলল, কিরে, ধ্যান শুরু করে দিলি? উঠে আয়, চা হয়ে গেছে। চা শব্দটা শোনামাত্র শরীরে একটা আরাম এল যেন। জয়িতা কৃতজ্ঞ চোখে আনন্দকে দেখতে গিয়ে আবিষ্কার করল সে ফিরে গেছে। সে উঠে এল।
গুহার সামনে ভালুকটার অস্তিত্ব নেই। শুধু তার বিশাল চামড়াটা পরিষ্কার করে গাছের ডালে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। গুহার মুখেই চাপ চাপ মাংসের স্তুপ ঠিক করছে লা-ছিরিঙ। ওকে দেখে সরল হাসল সে, পুরো গ্রামের মানুষ একবেলা এটা খেতে পারবে।
তোমরা ভালুকের মাংস খাও? হতভম্ব হয়ে গেল জয়িতা।
কেন নয়? ভালুকের মাংস পাওয়া কত কষ্টের তা তো জানো না।
খেতে কেমন?
চমৎকার। তুমি কখনও খাওনি?
দ্রুত মাথা নাড়ল জয়িতা। লা-ছিরিঙ বলল, আজ খেয়ে দেখো, মজা লাগবে।
জয়িতা মনে মনে বলল, রক্ষা কর। তারপর গুহাতে ঢুকতেই মেয়েটা এক পাত্র চা এগিয়ে দিল। জিভে সেটা ঠেকাতে মনে হল এর নাম অমৃত। সে চেঁচিয়ে আনন্দকে বলল, থ্যাঙ্কস।
আনন্দ জিজ্ঞাসা করল, কয়েকটা বিস্কুট এখনও পড়ে আছে, খাবি?
না থাক।
থাক কেন? ওটা তো শেষ হবেই। আনন্দ ওর হাতে বিস্কুট ধরিয়ে দিল। তারপর চাপাগলায় বলল, সুদীপ চা খাচ্ছে, যদিও এখনও নর্মাল হয়নি। ওকে বুঝতে দিস না যে আমরা চিন্তিত।