হঠাৎ জয়িতার গলা শীতল হল, না। তোমার এখানে থাকা চলবে না। ঠিক আছে, তোমার যদি ওখানে একা শুতে ভয় করে তাহলে আমি থাকব তোমার সঙ্গে। আমার কাছে যে অল্প আছে তার ভয়ে তোমার দানোর বাবাও কাছে আসবে না। তারপর আনন্দর দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল, আমি যদি ওর ঘরে থাকি তোদের আপত্তি আছে?
উইদ প্লেজার। সুদীপ বলল, এতে তোর প্রাইভেসিও থাকবে। কিন্তু মেয়েটা মনে হচ্ছে আমার প্রেমে পড়েছে। কেমন ঘুরে ঘুরে আমার দিকে তাকাচ্ছে দ্যাখ!
জয়িতা কথা না বাড়িয়ে ভেতরে ঢুকে গেল। সুদীপ মেয়েটাকে বলল, তুমি আমায় কি করেছ দ্যাখো! গ্রামের অন্য কেউ হলে তোমাকে মেরেই ফেলত।
মেয়েটা ঝকমকিয়ে হাসল, গ্রামের কেউ হলে আমাকে বাঁচাতেই যেত না।
এই সময় জয়িতা তার বিছানা গুটিয়ে নিয়ে বেরিয়ে এল, আনন্দ, সুদীপটাকে বারণ কর। ও বেড়ালটাকে মাছ দেখাচ্ছে। মানুষকে প্রভোক করা একই অপরাধ।
ঠিক তখনই চিৎকার উঠল। কান্নাটা আকাশে ছড়িয়ে পড়ল। ওরা পাথরের মত স্তব্ধ হয়ে সেই নারীকন্ঠের বিলাপ শুনছিল। ক্রমশ সেই চিৎকারে আকৃষ্ট হয়ে আশেপাশের ঘরে কণ্ঠ পরিষ্কার হল। এই সময় সামনে দাঁড়ানো মেয়েটি বলে উঠল, যাঃ, মরে গেল!
কথাটা কানে যাওয়ামাত্র বিছানা ফেলে রেখে জয়িতা দৌড়তে লাগল। আনন্দ একবার ঘরের দিকে তাকাল। সুদীপ জিজ্ঞাসা করল, কে মরেছে রে?
আনন্দ বলল, মনে হচ্ছে সেই বাচ্চা মেয়েটা। তুই এখানে থাক। ঘরে মালপত্রগুলো আছে। তাছাড়া ওরা এখন তোকে দেখুক তা আমি চাই না। বলেই সে ছুটল। সুদীপ খুব নার্ভাস হয়ে গেল।
এখন অবশ্য তাদের কাছে অস্ত্র আছে। কিন্তু ওই মেয়েটা যদি মরে যায় তাহলে গ্রামের মানুষরা ছেড়ে দেবে না বলে শাসিয়ে রেখেছে। তার মনে হল অস্ত্রগুলো হাতের কাছে রেখে দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। হবে। তারপরেই সে মন পালটাল। সে বাচ্চা মেয়েটার কোন ক্ষতি করেনি। উপকার করতে গিয়ে যদি লোকে ভুল বোঝে তো তার কিছু করার নেই। দেখাই যাক কি হয়। সে দেখল মেয়েটা তার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চোখাচোখি হতে মেয়েটি জিজ্ঞাসা করল, তুমি গেলে না?
সুদীপ মাথা নাড়ল, না।
মেয়েটি হাসল, না গিয়ে ভালই করেছ। ওরা তোমাকে দেখলেই ক্ষেপে যেত। বউটার তো আর বাচ্চা হবে না। পনেরো বছরের স্বামী এতদিন ছেলের মতন ছিল।
তুমি যাও না। সুদীপ মেয়েটিকে এড়াতে চাইল এবার।
না বাবা। আমি মৃত্যু দেখতে পারি না। ভীষণ ভয় লাগে। মেয়েটি উদাস গলায় বলল।
ভয় লাগে অথচ নিজে তো মরতে যাচ্ছিলে। সুদীপ খিঁচিয়ে উঠল।
মেয়েটি কিছু মনে করল না। সুদীপের দিকে তাকিয়ে আবার হাসল।
জয়িতা দেখল বেশ ভিড় জমে গেছে এর মধ্যে। মেয়েটির মা পাগলের মত মাথা ঠুকছে। বোঝা গেল একটু আগেই ওর প্রাণ বেরিয়ে গেছে। জয়িতাদের দেখে ভিড় আলগা হল। ওরা সেই পথে ঘরে ঢুকে দাঁড়াল। মেয়েটির কিশোর স্বামী মাথা নেড়ে জানাল মরে গেছে। এবার মহিলার নজর পড়ল ওদের দিকে। জয়িতা ভেবেছিল সে নির্ঘাৎ একটা কাণ্ড করবে। কিন্তু কিছুই না করে আশ্চর্যজনকভাবে কান্নাটা থামিয়ে দিল। জয়িতা এগিয়ে গিয়ে ওর কাধে হাত রাখল। এখন কিছুই করার নেই। আনন্দ বাইরে বেরিয়ে এল। তার মনে হল উপস্থিত জনতা তাকে লক্ষ্য করছে। পালদেম ধারেকাছে নেই। সম্ভবত ও কোন অপ্রিয় ব্যাপারের মুখোমুখি হতে চায় না। কাউকে ডেকে নিজেদের অপরাধহীনতার কথা বোঝনোর চেষ্টা করাও বৃথা। সে ঠিক করল পরিস্থিতি যেমন হবে তেমন করা যাবে। ভেতর থেকে আর কান্না ভেসে আসছে না। হঠাৎ যেন থমথমে হয়ে গেল চারপাশ। আজ তাপল্যাঙের মানুষ ঘুমাতে পারছে না। আগুন জ্বলে উঠেছে চার-পাঁচ জায়গায়। সেগুলো ঘিরে বসে আছে সবাই। অন্ধকারে কোন মানুষ পৃথিবী থেকে চলে গেলে ভোরের জন্যে জেগে বসে থাকতে হয়। কারণ চোখ বন্ধ করলেই মৃতরা ডাক দিতে পারে সঙ্গী হওয়ার জন্যে।
এই সময় কাহনকে আবার নেমে আসতে দেখল আনন্দ। গম্ভীরমুখে দুজন অনুচরকে নিয়ে কাহন এগিয়ে যাচ্ছেন ঘরের দিকে যেখানে মৃত মেয়েটি শুয়ে রয়েছে। আনন্দর সামনে দিয়ে তিনি যখন যাচ্ছিলেন তখন সে নীরবে মাথা নাড়ল। কিন্তু তার কোন প্রতিক্রিয়া হল না কানের মধ্যে। এবার পালদেমকে দেখা গেল। কোন একটা অগ্নিকুণ্ডের পাশে সে নিশ্চয়ই বসেছিল, কাহুনকে দেখে এগিয়ে এল। দুজনে চাপাগলায় কিছু বলল। তারপর দুজনেই ঘরের মধ্যে ঢুকে গেল। মুহূর্তের জন্যে আনন্দর মনে হল এই অশিক্ষিত এবং কুসংস্কারগ্রস্ত মানুষদের বিশ্বাস করা যাচ্ছে না। এই মুহূর্তে ওরা লাফিয়ে পড়তে পারে তাদের ওপরে। এবং কাহুন যদি নির্দেশ দেন ধর্মের নামে তাহলে তো কথাই নেই। বন্দুকের সঙ্গেও হয়তো খালি হাতে লড়ে যেতে চাইবে। অতএব এখান খেকে আপাতত আস্তানায় সরে যাওয়াই উচিত। রাতের অন্ধকারে মানুষের মুখ যতই অচেনা হয়ে যাক দিনের আলোয় তার মোকাবিলা করা সহজ। সে চিৎকার করে জয়িতাকে ডাকল। এবং তার এই চেঁচিয়ে কথা বলায় গ্রামবাসীরা তো চমকে তাকালই, তার নিজের কানেও অত্যন্ত কর্কশ ঠেকল।
উইদ প্লেজার। সুদীপ বলল, এতে তোর প্রাইভেসিও থাকবে। কিন্তু মেয়েটা মনে হচ্ছে আমার প্রেমে পড়েছে। কেমন ঘুরে ঘুরে আমার দিকে তাকাচ্ছে দ্যাখ!
জয়িতা কথা না বাড়িয়ে ভেতরে ঢুকে গেল। সুদীপ মেয়েটাকে বলল, তুমি আমায় কি করেছ দ্যাখো! গ্রামের অন্য কেউ হলে তোমাকে মেরেই ফেলত।
মেয়েটা ঝকমকিয়ে হাসল, গ্রামের কেউ হলে আমাকে বাঁচাতেই যেত না।
এই সময় জয়িতা তার বিছানা গুটিয়ে নিয়ে বেরিয়ে এল, আনন্দ, সুদীপটাকে বারণ কর। ও বেড়ালটাকে মাছ দেখাচ্ছে। মানুষকে প্রভোক করা একই অপরাধ।
ঠিক তখনই চিৎকার উঠল। কান্নাটা আকাশে ছড়িয়ে পড়ল। ওরা পাথরের মত স্তব্ধ হয়ে সেই নারীকন্ঠের বিলাপ শুনছিল। ক্রমশ সেই চিৎকারে আকৃষ্ট হয়ে আশেপাশের ঘরে কণ্ঠ পরিষ্কার হল। এই সময় সামনে দাঁড়ানো মেয়েটি বলে উঠল, যাঃ, মরে গেল!
কথাটা কানে যাওয়ামাত্র বিছানা ফেলে রেখে জয়িতা দৌড়তে লাগল। আনন্দ একবার ঘরের দিকে তাকাল। সুদীপ জিজ্ঞাসা করল, কে মরেছে রে?
আনন্দ বলল, মনে হচ্ছে সেই বাচ্চা মেয়েটা। তুই এখানে থাক। ঘরে মালপত্রগুলো আছে। তাছাড়া ওরা এখন তোকে দেখুক তা আমি চাই না। বলেই সে ছুটল। সুদীপ খুব নার্ভাস হয়ে গেল।
এখন অবশ্য তাদের কাছে অস্ত্র আছে। কিন্তু ওই মেয়েটা যদি মরে যায় তাহলে গ্রামের মানুষরা ছেড়ে দেবে না বলে শাসিয়ে রেখেছে। তার মনে হল অস্ত্রগুলো হাতের কাছে রেখে দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। হবে। তারপরেই সে মন পালটাল। সে বাচ্চা মেয়েটার কোন ক্ষতি করেনি। উপকার করতে গিয়ে যদি লোকে ভুল বোঝে তো তার কিছু করার নেই। দেখাই যাক কি হয়। সে দেখল মেয়েটা তার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চোখাচোখি হতে মেয়েটি জিজ্ঞাসা করল, তুমি গেলে না?
সুদীপ মাথা নাড়ল, না।
মেয়েটি হাসল, না গিয়ে ভালই করেছ। ওরা তোমাকে দেখলেই ক্ষেপে যেত। বউটার তো আর বাচ্চা হবে না। পনেরো বছরের স্বামী এতদিন ছেলের মতন ছিল।
তুমি যাও না। সুদীপ মেয়েটিকে এড়াতে চাইল এবার।
না বাবা। আমি মৃত্যু দেখতে পারি না। ভীষণ ভয় লাগে। মেয়েটি উদাস গলায় বলল।
ভয় লাগে অথচ নিজে তো মরতে যাচ্ছিলে। সুদীপ খিঁচিয়ে উঠল।
মেয়েটি কিছু মনে করল না। সুদীপের দিকে তাকিয়ে আবার হাসল।
জয়িতা দেখল বেশ ভিড় জমে গেছে এর মধ্যে। মেয়েটির মা পাগলের মত মাথা ঠুকছে। বোঝা গেল একটু আগেই ওর প্রাণ বেরিয়ে গেছে। জয়িতাদের দেখে ভিড় আলগা হল। ওরা সেই পথে ঘরে ঢুকে দাঁড়াল। মেয়েটির কিশোর স্বামী মাথা নেড়ে জানাল মরে গেছে। এবার মহিলার নজর পড়ল ওদের দিকে। জয়িতা ভেবেছিল সে নির্ঘাৎ একটা কাণ্ড করবে। কিন্তু কিছুই না করে আশ্চর্যজনকভাবে কান্নাটা থামিয়ে দিল। জয়িতা এগিয়ে গিয়ে ওর কাধে হাত রাখল। এখন কিছুই করার নেই। আনন্দ বাইরে বেরিয়ে এল। তার মনে হল উপস্থিত জনতা তাকে লক্ষ্য করছে। পালদেম ধারেকাছে নেই। সম্ভবত ও কোন অপ্রিয় ব্যাপারের মুখোমুখি হতে চায় না। কাউকে ডেকে নিজেদের অপরাধহীনতার কথা বোঝনোর চেষ্টা করাও বৃথা। সে ঠিক করল পরিস্থিতি যেমন হবে তেমন করা যাবে। ভেতর থেকে আর কান্না ভেসে আসছে না। হঠাৎ যেন থমথমে হয়ে গেল চারপাশ। আজ তাপল্যাঙের মানুষ ঘুমাতে পারছে না। আগুন জ্বলে উঠেছে চার-পাঁচ জায়গায়। সেগুলো ঘিরে বসে আছে সবাই। অন্ধকারে কোন মানুষ পৃথিবী থেকে চলে গেলে ভোরের জন্যে জেগে বসে থাকতে হয়। কারণ চোখ বন্ধ করলেই মৃতরা ডাক দিতে পারে সঙ্গী হওয়ার জন্যে।
এই সময় কাহনকে আবার নেমে আসতে দেখল আনন্দ। গম্ভীরমুখে দুজন অনুচরকে নিয়ে কাহন এগিয়ে যাচ্ছেন ঘরের দিকে যেখানে মৃত মেয়েটি শুয়ে রয়েছে। আনন্দর সামনে দিয়ে তিনি যখন যাচ্ছিলেন তখন সে নীরবে মাথা নাড়ল। কিন্তু তার কোন প্রতিক্রিয়া হল না কানের মধ্যে। এবার পালদেমকে দেখা গেল। কোন একটা অগ্নিকুণ্ডের পাশে সে নিশ্চয়ই বসেছিল, কাহুনকে দেখে এগিয়ে এল। দুজনে চাপাগলায় কিছু বলল। তারপর দুজনেই ঘরের মধ্যে ঢুকে গেল। মুহূর্তের জন্যে আনন্দর মনে হল এই অশিক্ষিত এবং কুসংস্কারগ্রস্ত মানুষদের বিশ্বাস করা যাচ্ছে না। এই মুহূর্তে ওরা লাফিয়ে পড়তে পারে তাদের ওপরে। এবং কাহুন যদি নির্দেশ দেন ধর্মের নামে তাহলে তো কথাই নেই। বন্দুকের সঙ্গেও হয়তো খালি হাতে লড়ে যেতে চাইবে। অতএব এখান খেকে আপাতত আস্তানায় সরে যাওয়াই উচিত। রাতের অন্ধকারে মানুষের মুখ যতই অচেনা হয়ে যাক দিনের আলোয় তার মোকাবিলা করা সহজ। সে চিৎকার করে জয়িতাকে ডাকল। এবং তার এই চেঁচিয়ে কথা বলায় গ্রামবাসীরা তো চমকে তাকালই, তার নিজের কানেও অত্যন্ত কর্কশ ঠেকল।