নিরাপদ বিছানায় শুয়ে জয়িতারও ঘুম আসছিল না। হাওয়া বইছে কিংবা বেড়ে যাওয়া ঠাণ্ডার জন্যে নয় ওর শরীর এবং মনে অস্বস্তি কাজ করছিল। সময় এসে গিয়েছে। কলকাতায় থাকতে এই ব্যাপারটা কোন গুরুত্বই পেত না। সে স্থির করে নিল যে প্রয়োজনে বন্ধুদের বলবে। এই কদিনে তাপল্যাঙের মানুষদের সঙ্গে মিশে সে অনেক কিছু জেনেছে। ব্যাপারটা অদ্ভুত। এই পাহাড়ি মানুষরা সুদীপ আনন্দর সঙ্গে দূরত্ব রেখেছে, তার সঙ্গে রাখেনি। বোধহয় মেয়েরা খুব চট করেই বিশ্বাস কিংবা আস্থাযযাগ্য হতে পারে। জয়িতা কৌতূহলী হয়েছিল এখানকার মেয়েরা তাদের ওই সমস্যার সমাধান কিভাবে করে তা জানতে। জানার পর শিউরে উঠেছিল। অল্পবয়েসীরা সেই কয়দিন প্রায় ঘরের বাইরে যায় না। স্বেচ্ছাবলী হয়ে সবার আড়ালে থেকে যায়। কার লেখা মনে নেই, জয়িতা পড়েছিল বাংলাদেশের মেয়েরাও এক সময় ওই একই জীবনযাপন করত। ওই কদিন বিছানায় শুতো না, মাথায় তেল দিত না। তারও আগে ঘর ছেড়ে বের হত না। নিজেদের অশুচি মনে করত। এখনও পুজোপার্বণে বাংলাদেশের মেয়েরা যোগ দিতে চায় না। এ হীনমন্যতা বোধ কি কারণে তা কেউ ভাবেনি। যেন প্রকাশ্যে বললে সেটা অশ্লীলতার পর্যায়ে চলে যাবে। দিন পালটেছে কলকাতায়। এখানকার বয়স্কা মেয়েরা যেভাবে নিজেদের সামলায় তা আদৌ অস্বাস্থ্যকর নয়। বোধহয় সেই কারণেই এদের অসুখবিসুখ অনিবার্য ঘটনা। সে নিজে না হয় কিছুদিন সামলে নিতে পারবে। কল্যাণ যখন গেল তখন তাকেও বিজ্ঞাপিত সাহায্য আনতে বলতে পারত কিন্তু তাই বা কদিন সাহায্যে আসত? একটা উপায় বের করতেই হবে।
ওদিকে সুদীপের নাক ডাকছে। আনন্দ চুপচাপ। সুদীপটাকে জয়িতা আজকাল ঠিক বুঝতে পারছে। সারাক্ষণ এত কি ভাবে? গ্রামের পুরুষদের চেয়ে মেয়েদের সঙ্গে কথা বলার প্রবণতা ওর মধ্যে। কিন্তু এখনও এখানকাব ভাষা শেখার ইচ্ছে ওর নেই। গ্রামটা ছোট। মানুষগুলো সরল। আর যে ব্যাপারটা সবচেয়ে ভাল লেগেছে জয়িতার সেটা হল পুরুষরা মেয়েদের পদানসীন করে রাখে না। বরং বলা যায় মেয়ে পুরুষ সমানতালে কাজ করে, মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে সমান অধিকার আছে। শুধু বিবাহের বেলায় তাদের পরিবারের নির্দেশ মানতেই হয়। অথচ বিবাহের আগে যে যৌনাভ্যাস নেই এমন নয়। সেটা সবাই জানেও কিন্তু তা নিয়ে মাথা ঘামায় না যতক্ষণ না সন্তানসম্ভবা হচ্ছে কেউ। কিন্তু এখানকার মেয়েদের মধ্যে নানা ব্যাপারে যে সংস্কার তা মূলত অজ্ঞতা থেকেই। এদের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করতে হলে ওই অজ্ঞতা আগে দূর করতে হবে। দ্বিতীয়ত শারীরিক কারণে এদের অনেকেই সন্তানসম্ভবা হতে পারছে না। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে গলগণ্ড রোগের ব্যাপক শিকার হচ্ছে। এইটে বাদ দিয়েও তাপল্যাঙকে মিনি ভারতবর্ষ ভাবা যায় না। কিন্তু তাপল্যাঙের মানুষগুলো যারা এখনও আধাআদিম যুগে বাস করছে তাদের জীবন বিপ্লব পরবর্তী স্বপ্নের সমাজ ব্যবস্থায় নিয়ে যাওয়ার অবাধ সুযোগ রয়েছে। ভারতবর্ষে মানুষের জীবনয়াব্রা পালটে যাওয়ার সে স্বপ্ন নকশালরা দেখেছিল, সি পি এম মুখে বললেও কাজে যার উলটো করেছে, চে গুয়েভারা অথবা মাও কিংবা হো চি মিন যে স্বপ্ন দেখতেন সেই কাজ এখানে করা সম্ভব। কয়েক কোটি না হোক কয়েকশ মানুষকে জীবনের স্বাদ এবং স্বাধীনতা পাইয়ে দিয়ে স্বনির্ভর করলে পৃথিবীতে বেঁচে থাকা অর্থপূর্ণ হবে। এই ব্যাপারে সে একমত অনন্দের সঙ্গে জয়িতা চোখ বন্ধ করতেই কল্যাণের মুখটা দেখতে পেল। কল্যাণের ফেরার সময় হয়ে গিয়েছে। ঝুঁকিটা অবশ্য কাউকে না কাউকে নিতেই হত। কিন্তু কল্যাণ যদি ধরা পড়ে যায়? পুলিশ যদি কল্যাণের পরিচয় জানতে পারে তা হলে মৃত্যুদণ্ড অনিবার্য। জয়িতা জানে কল্যাণ বাঁচতে বড় ভালবাসে। এবং আর একটা জিনিস ইদানীং সে কল্যাণের মধ্যে লক্ষ্য করছিল। তার সঙ্গে ব্যবহারে যেন পরিবর্তন এসেছিল। কিরকম চোখে মাঝে মাঝে তাকাত কল্যাণ। এবং তখনই তার মনে হত সে যে মেয়ে এটা কল্যাণের দৃষ্টিতে এসেছে। ভাল লাগত না, অস্বস্তি বাড়ত। কিন্তু ওইটুকু ছাড়া আর কোন প্রিটেনশন বা বুজরুকি কল্যাণের ছিল না। বরং বুদ্ধি দিয়ে সব কিছু সামলে নেবার ক্ষমতার অভাব বড় চোখে পড়ত। সেই কল্যাণ দার্জিলিং-এ নিশ্চয়ই পৌঁছেছে। কিন্তু গোঁছবার পর কতটা বোকামি করল তার ওপর নির্ভর করছে ওর ফিরে আসা। সুদীপটা তো প্রসঙ্গ উঠলেই বলে, ও শালা ফিরবে না। ঠিক হাওয়া হয়ে যাবে। সুদীপ কল্যাণকে, ঠিক কল্যাণ নয়, ওই ক্লাসটাকেই অবিশ্বাস করে।
হঠাৎ আনন্দ কথা বলল, জয়ী, জেগে আছিস?
জয়িতা নড়ল না। বলল, হুঁ।
আনন্দ বলল, আজ রাত্রে মেয়েটা মরে যাবে। তারপর কি হবে কে জানে?
জয়িতা বলল, আমি কল্যাণের কথা ভাবছি।
আনন্দ বলল, কল্যাণ পালাবে না। ও আসবেই। কাল নয় পরশু। কিন্তু জানিস, আমাদের মধ্যে কেউ যদি ডাক্তার হত তা হলে এখানে আরও ভাল কাজ করতে পারতাম।
জয়িতা প্রশ্ন করল, কল্যাণ ফিরবেই এই বিশ্বাস হল কেন তোর?
ওদিকে সুদীপের নাক ডাকছে। আনন্দ চুপচাপ। সুদীপটাকে জয়িতা আজকাল ঠিক বুঝতে পারছে। সারাক্ষণ এত কি ভাবে? গ্রামের পুরুষদের চেয়ে মেয়েদের সঙ্গে কথা বলার প্রবণতা ওর মধ্যে। কিন্তু এখনও এখানকাব ভাষা শেখার ইচ্ছে ওর নেই। গ্রামটা ছোট। মানুষগুলো সরল। আর যে ব্যাপারটা সবচেয়ে ভাল লেগেছে জয়িতার সেটা হল পুরুষরা মেয়েদের পদানসীন করে রাখে না। বরং বলা যায় মেয়ে পুরুষ সমানতালে কাজ করে, মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে সমান অধিকার আছে। শুধু বিবাহের বেলায় তাদের পরিবারের নির্দেশ মানতেই হয়। অথচ বিবাহের আগে যে যৌনাভ্যাস নেই এমন নয়। সেটা সবাই জানেও কিন্তু তা নিয়ে মাথা ঘামায় না যতক্ষণ না সন্তানসম্ভবা হচ্ছে কেউ। কিন্তু এখানকার মেয়েদের মধ্যে নানা ব্যাপারে যে সংস্কার তা মূলত অজ্ঞতা থেকেই। এদের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করতে হলে ওই অজ্ঞতা আগে দূর করতে হবে। দ্বিতীয়ত শারীরিক কারণে এদের অনেকেই সন্তানসম্ভবা হতে পারছে না। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে গলগণ্ড রোগের ব্যাপক শিকার হচ্ছে। এইটে বাদ দিয়েও তাপল্যাঙকে মিনি ভারতবর্ষ ভাবা যায় না। কিন্তু তাপল্যাঙের মানুষগুলো যারা এখনও আধাআদিম যুগে বাস করছে তাদের জীবন বিপ্লব পরবর্তী স্বপ্নের সমাজ ব্যবস্থায় নিয়ে যাওয়ার অবাধ সুযোগ রয়েছে। ভারতবর্ষে মানুষের জীবনয়াব্রা পালটে যাওয়ার সে স্বপ্ন নকশালরা দেখেছিল, সি পি এম মুখে বললেও কাজে যার উলটো করেছে, চে গুয়েভারা অথবা মাও কিংবা হো চি মিন যে স্বপ্ন দেখতেন সেই কাজ এখানে করা সম্ভব। কয়েক কোটি না হোক কয়েকশ মানুষকে জীবনের স্বাদ এবং স্বাধীনতা পাইয়ে দিয়ে স্বনির্ভর করলে পৃথিবীতে বেঁচে থাকা অর্থপূর্ণ হবে। এই ব্যাপারে সে একমত অনন্দের সঙ্গে জয়িতা চোখ বন্ধ করতেই কল্যাণের মুখটা দেখতে পেল। কল্যাণের ফেরার সময় হয়ে গিয়েছে। ঝুঁকিটা অবশ্য কাউকে না কাউকে নিতেই হত। কিন্তু কল্যাণ যদি ধরা পড়ে যায়? পুলিশ যদি কল্যাণের পরিচয় জানতে পারে তা হলে মৃত্যুদণ্ড অনিবার্য। জয়িতা জানে কল্যাণ বাঁচতে বড় ভালবাসে। এবং আর একটা জিনিস ইদানীং সে কল্যাণের মধ্যে লক্ষ্য করছিল। তার সঙ্গে ব্যবহারে যেন পরিবর্তন এসেছিল। কিরকম চোখে মাঝে মাঝে তাকাত কল্যাণ। এবং তখনই তার মনে হত সে যে মেয়ে এটা কল্যাণের দৃষ্টিতে এসেছে। ভাল লাগত না, অস্বস্তি বাড়ত। কিন্তু ওইটুকু ছাড়া আর কোন প্রিটেনশন বা বুজরুকি কল্যাণের ছিল না। বরং বুদ্ধি দিয়ে সব কিছু সামলে নেবার ক্ষমতার অভাব বড় চোখে পড়ত। সেই কল্যাণ দার্জিলিং-এ নিশ্চয়ই পৌঁছেছে। কিন্তু গোঁছবার পর কতটা বোকামি করল তার ওপর নির্ভর করছে ওর ফিরে আসা। সুদীপটা তো প্রসঙ্গ উঠলেই বলে, ও শালা ফিরবে না। ঠিক হাওয়া হয়ে যাবে। সুদীপ কল্যাণকে, ঠিক কল্যাণ নয়, ওই ক্লাসটাকেই অবিশ্বাস করে।
হঠাৎ আনন্দ কথা বলল, জয়ী, জেগে আছিস?
জয়িতা নড়ল না। বলল, হুঁ।
আনন্দ বলল, আজ রাত্রে মেয়েটা মরে যাবে। তারপর কি হবে কে জানে?
জয়িতা বলল, আমি কল্যাণের কথা ভাবছি।
আনন্দ বলল, কল্যাণ পালাবে না। ও আসবেই। কাল নয় পরশু। কিন্তু জানিস, আমাদের মধ্যে কেউ যদি ডাক্তার হত তা হলে এখানে আরও ভাল কাজ করতে পারতাম।
জয়িতা প্রশ্ন করল, কল্যাণ ফিরবেই এই বিশ্বাস হল কেন তোর?