আর তখনই তার নজরে পড়ল দুটো মানুষ এগিয়ে আসছে। ওদের হাঁটার ভঙ্গি স্বাভাবিক নয়। একটু কাছাকাছি হতে সে বুঝল দুজনের একজন নারী, পুরুষটিকে সে ধরে ধরে নিয়ে আসছে। আনন্দ অপেক্ষা করল। হাত দশেক দূরে পৌঁছে ওরা দাঁড়াল। পুরুষটি সোজা হতে পারছে না। বোঝাই যাচ্ছে লোকটা বেশ অসুস্থ। নারীটি হাত নেড়ে আনন্দর দিকে তাকিয়ে অনর্গল কিছু বলে পুরষটিকে দেখাল। ওদের পায়ের তলায় ঘাসে কুচি কুচি বরফ অথচ পুরুষটি সেখানেই বসতে চাইছে দেখে আনন্দ উঠে দাঁড়িয়ে ইঙ্গিত করল বারান্দায় উঠে আসতে। ওরা কৃতজ্ঞ ভঙ্গিতে এগিয়ে এসে বসে পড়ল। এবার আনন্দ বুঝল দুজনেরই বেশ বয়স হয়েছে। সমস্ত শরীর ছেড়া গরম কাপড়ের আড়ালে থাকায় এতক্ষণ বোঝা যাচ্ছিল না। বৃদ্ধ মাথা গুঁজে বসে আছে। মাঝে মাঝে তার শরীর কেঁপে উঠছে। বৃদ্ধা দুহাত তুলে আনন্দকে অনুনয় করছিল। ভাষা বুঝতে না পারলেও বক্তব্য জানতে অসুবিধে হল না। পরে পড়ল আনন্দ। বৃদ্ধের কি হয়েছে সে বুঝতে পারছে না। বা বুঝলেও কোন্ ওষুধ দেওয়া উচিত এবং তা সঙ্গে নাও থাকতে পারে। সে হাঁটুমুড়ে বসে বৃদ্ধের কপালে হাত রাখল। না, জ্বর নেই কিন্তু শরীর কাঁপছে। এবং তখনই তার গলগণ্ডটি নজরে এল। ওই কারণেই শরীর অসুস্থ কিনা কে জানে? পেটের যন্ত্রণাও হতে পারে, কারণ মাঝে মাঝেই বৃদ্ধের মুখ কুঁচকে যাচ্ছিল। বারংবার কানে ঘষার পর অচেনা শব্দও চেনা হয়ে যায়। আনন্দ বৃদ্ধাকে ইঙ্গিত করল বৃদ্ধকে শুইয়ে দিতে। তারপর ঘরে ঢুকে ওষুধের বাক্সটার দিকে সে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল। নিজেকে ভীষণ নির্বোধ মনে হচ্ছিল। এক্ষেত্রে ওষুধ দিলে যদি বিপরীত প্রতিক্রিয়া হয়? চিকিৎসার এক্তিয়ার একমাত্র চিকিৎসকের। কিন্তু এক্ষেত্রে সে কি করতে পারে? বোঝাই যাচ্ছে পালদেমের ছেলের সুস্থ হওয়ার খবর পেয়ে এরা অনুপ্রাণিত হয়েছে। আনন্দ একটা অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেট এনে বৃদ্ধার হাতে দিয়ে খাইতে দিতে বলল। এমন কি তাকে ট্যাবলেটটাকে কাগজমুক্ত করে জলের ব্যবহারের কথাও বলতে হল।
ওদের ওখানে রেখে সে ভিতরে ঢুকল। কেরোসিন পোড়াতে আর সাহস হচ্ছে না। সে আবার বাইরে বেরিয়ে এসে উনুনটার সামনে কেটলি রাখল। কাঠ নেই। আশেপাশে তাকাল আনন্দ। সুদীপ গতকাল কোথায় কাঠ পেয়েছিল? এই সময় বৃদ্ধা বারান্দা থেকে নেমে এসে তার সামনে দাঁড়িয়ে হাসল। পৃথিবীর সর্বত্র বোধ হয় স্নেহের হাসি একরকম হয়। বৃদ্ধা হাত নেড়ে যা বলল, তার মানেটা বোধ হয় এই রকম, তুমি সরে যাও, যা করার আমিই করছি। কৃতজ্ঞ আনন্দ উঠে এল ওপরে। বৃদ্ধ চুপচাপ শুয়ে আছে। তার চোখ খোলা কিন্তু শরীর কাঁপছে না আগের মত। নিজেকে একটি প্রতারক বলে মনে হচ্ছিল। চিকিৎসাশাস্ত্রের বিন্দুমাত্র না জেনে আগ বাড়িয়ে সাহায্য করার ফল হাতে হাতে পাওয়া যাবে। হয়তো যা দরকার তার বিপরীত ওষুধ বৃদ্ধকে দেওয়া হল। ও মারা গেলে এখন তাকেই নিমিত্তের ভাগী হতে হবে। সে বৃদ্ধের পাশে বসল। তারপর কপালে হাত রাখল। ধীরে ধীরে বৃদ্ধের মুখে হাসি ফুটল। অজস্র শিরা ওঠা কাঁপা হাতে বৃদ্ধ আনন্দর হাত ধরল। কে বলে শুধু যৌবনেই উত্তাপ থাকে!
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লোক বাড়তে লাগল। এখন আকাশ পরিষ্কার। রোদ আছে কিন্তু তার তেজ নেই। ওদের আস্তানার সামনে এখন অন্তত সত্তরজন মানুষ। প্রত্যেকেই অসুস্থ। প্রত্যেকেই ওষুধ চায়। অথচ কেউ কথা বলছে না। এই রকম মূক অসুস্থ মানুষদের মুখোমুখি হয়ে ওরা হতভম্ব হয়ে পড়েছিল। জয়িতাকে নিয়ে সুদীপরা ফিরে এসেছিল এর আগে। মেয়েটির অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। জয়িতার ধারণা ঘা ওর পাজরার ভেতরে চলে গেছে। বড় হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ ছাড়া এই মেয়েটিকে বাঁচানো মুশকিল। ওরা যে ওষুধ দিচ্ছে তাতে ওপরে ওপরে কাজ হচ্ছে। বিস্ময়ের ব্যাপার, এই বিকট ঘা নিয়ে মেয়েটি কি করে এতদিন হেঁটে চলে বেড়াতো? সুদীপের যুক্তি হল ওটা অনেকটা ক্যানসারের মত। বেশ আছে, হেঁটে চলে বেড়াচ্ছে, যেই বায়োপসি করা হল, খোঁচানো হল, অমনি দুদ্দাড় করে বেড়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে রোগী বিছানায়, যন্ত্রণার শুরু।
ওদের ওখানে রেখে সে ভিতরে ঢুকল। কেরোসিন পোড়াতে আর সাহস হচ্ছে না। সে আবার বাইরে বেরিয়ে এসে উনুনটার সামনে কেটলি রাখল। কাঠ নেই। আশেপাশে তাকাল আনন্দ। সুদীপ গতকাল কোথায় কাঠ পেয়েছিল? এই সময় বৃদ্ধা বারান্দা থেকে নেমে এসে তার সামনে দাঁড়িয়ে হাসল। পৃথিবীর সর্বত্র বোধ হয় স্নেহের হাসি একরকম হয়। বৃদ্ধা হাত নেড়ে যা বলল, তার মানেটা বোধ হয় এই রকম, তুমি সরে যাও, যা করার আমিই করছি। কৃতজ্ঞ আনন্দ উঠে এল ওপরে। বৃদ্ধ চুপচাপ শুয়ে আছে। তার চোখ খোলা কিন্তু শরীর কাঁপছে না আগের মত। নিজেকে একটি প্রতারক বলে মনে হচ্ছিল। চিকিৎসাশাস্ত্রের বিন্দুমাত্র না জেনে আগ বাড়িয়ে সাহায্য করার ফল হাতে হাতে পাওয়া যাবে। হয়তো যা দরকার তার বিপরীত ওষুধ বৃদ্ধকে দেওয়া হল। ও মারা গেলে এখন তাকেই নিমিত্তের ভাগী হতে হবে। সে বৃদ্ধের পাশে বসল। তারপর কপালে হাত রাখল। ধীরে ধীরে বৃদ্ধের মুখে হাসি ফুটল। অজস্র শিরা ওঠা কাঁপা হাতে বৃদ্ধ আনন্দর হাত ধরল। কে বলে শুধু যৌবনেই উত্তাপ থাকে!
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লোক বাড়তে লাগল। এখন আকাশ পরিষ্কার। রোদ আছে কিন্তু তার তেজ নেই। ওদের আস্তানার সামনে এখন অন্তত সত্তরজন মানুষ। প্রত্যেকেই অসুস্থ। প্রত্যেকেই ওষুধ চায়। অথচ কেউ কথা বলছে না। এই রকম মূক অসুস্থ মানুষদের মুখোমুখি হয়ে ওরা হতভম্ব হয়ে পড়েছিল। জয়িতাকে নিয়ে সুদীপরা ফিরে এসেছিল এর আগে। মেয়েটির অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। জয়িতার ধারণা ঘা ওর পাজরার ভেতরে চলে গেছে। বড় হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ ছাড়া এই মেয়েটিকে বাঁচানো মুশকিল। ওরা যে ওষুধ দিচ্ছে তাতে ওপরে ওপরে কাজ হচ্ছে। বিস্ময়ের ব্যাপার, এই বিকট ঘা নিয়ে মেয়েটি কি করে এতদিন হেঁটে চলে বেড়াতো? সুদীপের যুক্তি হল ওটা অনেকটা ক্যানসারের মত। বেশ আছে, হেঁটে চলে বেড়াচ্ছে, যেই বায়োপসি করা হল, খোঁচানো হল, অমনি দুদ্দাড় করে বেড়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে রোগী বিছানায়, যন্ত্রণার শুরু।