What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

দেখি নাই ফিরে (উপন্যাস) (1 Viewer)

অষ্টাদশী তরুনী পুকুর ধারে গা ধুচ্ছে, আমি আবার জানলার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম, চারিদিক শুনশান, গ্রামের ঘরে এই সময় বিশেষ কেউ থাকে না। ঘরে ফিরে আসা পাখিদের কুজনে চারি দিক ম ম করছে। নীপা পায়ে সাবান মাখছে, পাথরে পাটা ঘোসে ঘোসে পরিষ্কার করছে, তারপর পুকুরের জলে পাটা ডুবিয়ে, আস্তে আস্তে জলে নামলো, স্কার্ট ব্লাউজ পরা অবস্থায়। তারপর উঠে এসে ব্লাউজটা খুলে ফেললো, অনাবৃত বুকে খালি ব্রেসিয়ার পরা, পেছন দিকে হাত দিয়ে ব্রেসিয়ারটাও খুলে ফেললো, আমি অবাক হয়ে ওর মাই দেখছি, কি সুন্দর, থোকা থোকা গাঁদা ফুলের মতো টাইট, একটুও ঝুলে পরে নি। ও সাবান নিয়ে দুই মাইয়ের ওপর ভালো করে ঘোষলো, ঘারে গলায় সাবান লাগালো, তারপর স্কার্টের হুক খুলে স্কার্টটা কোমর থেকে নামিয়ে দিলো, ওর পরনে এখন শুধু একটা ইজের পেন্ট। গ্রামের মেয়েরা পেন্টি পরে না আমি ওর অনাবৃত শরীর লোভাতুর দৃষ্টিতে দেখচ্ছি, আমার নুনুটা মনে হয় হাই তুললো, আমি একবার হাত দিয়ে ঠিক ঠাক করে নিলাম।
আর একটা সিগারেট ধরালাম, জানলার থেকে একটু দূরে সরে এসে ওকে দেখতে লাগলাম, নীপা সারা শরীরে সাবান লাগালো, আবার পুকুরের জলে নেমে ধুয়ে চলে এলো, ইজেরটা এক টানে কোমর থেকে খসিয়ে নীচু হয়ে ও কি যেন একটা ঘাটের ধার থেকে তুলে নিলো, আমি ওর দু পায়ের মাঝখানে অবাক দৃষ্টিতে চোখ রাখলাম, নাভির নীচ থেকে কোন মেদ নেই, নির্মেদ শরীরে দুপায়ের ফাঁকে ত্রিভুজাকৃতি জমিটা কালো ঘাসে ঢাকা, ঘোমটা দেওয়া নারীর মতো লজ্জাশীলা, নীপা ত্রস্তে চারিদিক একবার দেখে নিলো। তারপর হাতটা ওর পুশিতে রেখে দুচারবার ওপর নীচ করলো, ওর হাতে একটা কাঁচি দেখলাম, মাথাটা নীচু করে ও কাঁচি দিয়ে ওর পুশির চুল কাটলো, আমি ঠায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওর পুশির চুল কাটা দেখলাম, একটু আগের দেখা নীপার পুশির সঙ্গে এই মুহূর্তে দেখা নীপার পুশির কোন মিল খুঁজে পেলাম না। নীপার পুশি এই মুহূর্তে আরো মোহময়ী হয়ে উঠেছে, নীপা ওর চেরা জায়গাটায় তর্জনী নিয়ে ঘোষলো, তারপর জলে নেমে গেলো, বেশ বুঝলাম গলা জলে নেমে ও সারা শরীরে হাত বোলাচ্ছে, তারপর ধীরে ধীরে উঠে এলো, গা হাত পা মুছে, গামছাটা জড়িয়ে ঘরে চলে গেলো।
অনি , ও অনি।
সুরমাসীর গলা না।
আমি বারান্দায় বেরিয়ে এলাম।
জামাইবাবু বললো বিজয়কে বাজারে পাঠাচ্ছে, তোমাকে যেতে হবে না।
কেনো। আমি তো যাবো বললাম, কাকার আর তর সইছে না।
সুর মাসি নীচ থেকেই চলে গেলো।
বেলা পরে এসেছে, গ্রামের ঘরে বেলা পরতে আরম্ভ করলেই ঝিঁ ঝিঁ পোকা আর জোনাকীর দেখা মেলে, কতদিন জোনাকী দেখি নি, ছোট বেলায় এই রাতের বেলা কত জোনাকী ধরেছি, একটা কাপড়ের মধ্যে ওদের রেখে অন্ধকারে ওদের আলো দেখেছি, কা ভালো লাগতো। আমার খাটটা পরিপাটী করে গোছানো। একটু শুয়ে পরলাম, নীপা আমার ব্যাগ গুলো ঘরের একটা কোনে রেখেছে। ল্যাপটপটা আসার সময় সঙ্গে করে নিয়ে এসেছি। সময় সুযোগ পেলে একটু লেখালিখি করবো। তানিয়া যাবার সময় একটা পেন ড্রাইভ দিয়ে গেছিলো, বলেছিলো আমি না থাকলে এখানে কয়েকটা ফিল্ম আছে দেখো মন ভালো থাকবে। শুয়ে শুয়ে আড়মোড়া ভাঙছিলাম, চোখ দুটো ঘুমে জড়িয়ে আসছে। ঘরটা আধা অন্ধকার।
অনিদা ও অনিদা। বাবাঃ অন্ধকারে ভুতের মতো কি করছো।
আলো জলে উঠলো।
সামনে নীপা দাঁড়িয়ে। ওর পরনে একটা শর্ট শালোয়াড়, বুকগুলো অসম্ভব উদ্ধত লাগছে, ঠোঁটে লিপস্টিকের হালকা প্রলেপ, কপালে ছোট্ট বিন্দীর টিপ, আমি ওর দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম, এই কিছুক্ষণ আগে ওকে পুকুর ঘাটে দেখেছিলাম, আর এখন।
কি দেখছো কি বলোতো তখন থেকে, আমাকে কি নতুন দেখছো।
মাথা দোলালাম।
মনিমা ঠিক বলেছে, যা দেখ ও আবার যায় কিনা।
কেনো।
তুমি ভীষণ গেঁতো।
তাই বুঝি। আমার বায়ো ডাটা এরি মধ্যে জোগাড় হয়ে গেছে।
নীপা মুচকি হাসলো।
চলো চলো আর দেরি করলে হাটে লোকজন থাকবে না।
সে তো আরো ভালো।
যাঃ তাই হয় নাকি। চলো চলো আমি আবার একটা জিনিষ কিনবো।
কি কিনবে।
সে তোমায় বলা যাবে না।
আমি উঠে পরলাম।
এই অবস্থায় যাবে নাকি।
হ্যাঁ।
এই একটা আধ ময়লা পাজামা পাঞ্জাবী পরে।
আধ ময়লা কোথায় এর রংটাই এরকম।
না, ঐ জিনসের পেন্ট আর গেঞ্জিটা পরো।
হাসলাম। নীপা জানে না একসময় একটা ইজের পেন্ট আর সেন্ডো গেঞ্জি পরেও আমি হাটে গেছি। কাকার হাত ধরে । একটু বর হয়ে পাজামা আর হাফ শার্ট। আজ নীপা আমায় জিনসের পেন্ট আর গেঞ্জি পরতে বলছে। একটু ইতস্ততঃ করলাম।
ঠিক আছে ঠিক আছে আমি নীচে অপেক্ষা করছি তুমি তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে চলে এসো।
আমি পাজামা পাঞ্জাবী খুলে পেন্ট গেঞ্জি চড়ালাম। নীচে এসে দেখি বাইরের বারান্দায় বেশ কয়েকজন বসে আছে। কাকা মাঝখানে তাকে ঘিরে বাকি সকলে। আমাকে দেখেই ওরা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো। আমি কাছে গিয়ে কাকাকে বললাম, আমি একটু নীপার সঙ্গে হাটের দিকে যাচ্ছি।
তুই এখনো যাস নি।

না।
 
ওঃ।
কেনো।
নীপাতো অনেকক্ষণ আগে বেরিয়ে গেছে।
ওইতো দাঁড়িয়ে আছে।
দেখো দেখি কান্ড।
আমাকে এক ঘন্টা আগে বললো হাটে যাবে।
আমি হাসলাম।
যা যা তাড়াতাড়ি ঘুরে আয়, ৫.৩০ বেজে গেছে এখুনি সন্ধ্যা হয়ে যাবে। সবাই চলে যাবে। তবে বেশ কয়েকটা নতুন দোকান হয়েছে দেখে আয়।
আমি সবার মুখের দিকে একবার তাকালাম।
এরা তোর জন্য বসে আছে তোর সঙ্গে দুটো কথা বলবে বলে।
আমার সঙ্গে।
কেনো।
সে অনেক কথা আগে তুই ঘুরে আয় তারপর বলছি। কৈ হে এই হচ্ছে অনি দেখে চিন্তে পারছ। আমার তো চোখ গেছে, ওকে ঠিক মতো দেখতেও পাই নি।
মনটা খারাপ হয়ে গেলো। সবাই কোমন হই হই করে উঠলো।
আমি বললাম ঠিক আছে আমি যাই।
এসো। আর শোন একটা টর্চ নিয়ে নে, আস্তে আস্তে বেলা পরে যাবে, কোথায় হোঁচোট ফোঁচট খাবি।
আমি হাসলাম, না না লাগবে না।
ও অনিদা কি হলো।
যা যা ঐ পাগলী ডাকছে।
আমি বেরিয়ে এলাম, নীপা কখনো আমার পাশে কখনো আমার থেকে একহাত আগে। বাঁধের ওপর দিয়ে প্রায় আধঘন্টা হাঁটলে, তবে হাটে গিয়ে পৌঁছবো। যেতে যেতে নীপার সঙ্গে অনেক কথা হলো, নীপা এখন এই গ্রামের খুব পরিচিত, অনেকে যেতে যেতে আমাকে যেমন তির্যক দৃষ্টিতে দেখছে, তেমনি নীপার সঙ্গে যেচে যেচে কথা বলছে। নীপা এই গ্রামের মেয়েদের নিয়ে একটা নাচের দল করেছে, এখানে ওখানে নাচতে যায়, সপ্তাহে তিনদিন করে নাচের মহরা হয়, এখানে এসে কাকার কাছ থেকে আমার সব কিছু জেনেছে, তাছাড়া, এই গ্রামে আমাকে নিয়ে খুব আলোচনা হয়, প্রত্যেক দিন আমাদের বাইরের দালানে আড্ডা বসে চলে রাত ৯টা পর্যন্ত তারপর সকলে ফিরে যায়, আমার লেখা নিয়ে আলোচনা হয়, বাক-বিতন্ডা চলে, আরো কত কি।
নীপা কল কল করে কথা বলে চলেছে, আমি খালি হুঁ হাঁ করে ছেড়ে দিচ্ছি। এক সময় নীপা বলে উঠলো, মামনি ঠিক কথা বলেছে, দেখিস ও সাত চড়ে রা করে না।
আমি বললাম কে মামনি।
কেনো তোমার কাকীমা।
বুঝলাম, ঊষাকাকীমাকে নীপা মামনি বলে ডাকে।
আমাকে নিয়ে তোমরা অনেক আলোচনা করো তাই না।
হ্যাঁ। তুমি আমাদের গ্রামের গর্ব, তাছাড়া তুমি আমাদের বাড়ির ছেলে, সেই ফ্লেভার টুকু তো আমরা পাইই।
সেই জন্য কলকাতায় খেত বসে আমি এত বিষম খাই।
তাই বুঝি। ......এঁ কি বললে। ......বিষম খাও, .....আমাদের জন্য, নীপা আমার হাতে একটা রাম চিমটি দিলো। আমি উঃ করে উঠলাম, নীপার চোখদুটো কেমন হয়ে গেলো, ও বললো সরি অনিদা।
আমি হাসলাম। ওর আয়ত চোখদুটি, ঝিরি ঝিরি হাওয়ায় কেঁপে কেঁপে উঠলো। সূর্য্যি মামা পশ্চিমদিকে একেবারে হেলে পরেছে, দূরে একটা মিহি মিহি আওয়াজ কানে এলো অনেক লোকে একসঙ্গে কথা বললে মিলে মিশে যেমন একটা শব্দ বের হয় ঠিক তেমনি। বুঝলাম আমরা হাটের খুব কাছাকাছি এসে গেছি।
অনিদা।
উঁ।
আমার ওপর রাগ করলে।
কেনো।
না থাক।
নীপা।
উঁ।
তুমি হাটে রেগুলার আসো।
হ্যাঁ। কেনো।
একটা সময় ছিলো, তোমার বয়সি কোন মেয়ে হাটে আসতে পারতো না।
তাই।
হ্যাঁ।
সে অনেক দিন আগের কথা। একন সব বদলে গেছে।
তাই।
দেখছো না চারিদিকে।
হাসলাম।
অনি না।
ভদ্রলোকের দিকে তাকালাম।
মুখটা চিনি চিনি কিন্তু ঠিক ঠাহর করতে পারছি না।
কি নীপা আমি ঠিক কথা বলছি।
হ্যাঁ।
শালা, ঢেমনা চিন্তে পারছো না।
বলে আমার হাতটা ধরে এমন জোরে করমর্দন করলো আমি কঁকিয়ে উঠলাম।
নীপা বললো, চিন্তে পারছো না, যার কথা আজ দুপুরে খেতে খেতে বলছিলে এইই সেই বিশেষ ব্যক্তি।
অনাদি!
হ্যাঁরে, ঢেমনা অনাদি।
অনাদির পাশে অনেকে দাঁড়িয়ে ছিল, নেতা হলে যা হয়, ফেউরা ভিড় করে থাকে। আমি অনাদিকে বুকে জরিয়ে ধরলাম। দশবছর আগে দেখা অনাদির সঙ্গে এখনকার অনাদির অনেক পার্থক্য, অনের সার্প। কেমন আছিস।
ভাল। কদিন থাকবিতো এখন।
হ্যাঁ, তবে পর্শুদিন চলে যাবার কথা।
সে কি রে.......আচ্ছা আচ্ছা তুই এখন হাটে যাচ্ছিস তো।
হ্যাঁ।
নীপা তোরা বাসুর দোকানে থাকিস আমি এখুনি একটা কাজ সেরে ঘুরে আসছি। চলে যাসনা যেন।
আমরা আবার হাঁটতে আরম্ভ করলাম। নীপা আমার পাশে পাশে চলেছে। কখনো মাথাটা মাটির দিকে করে আবার কখনো মাথাটা সামনের দিকে।
তোমাকে দেখে আমার হিংসে হয় জানো অনিদা।
হাসলাম। কেনো।
তোমার পপুলারিটি।
তাহলে বলো আমি এই গ্রামের একজন সেলিব্রেটি।
সেলিব্রেটি বললে ভুল হবে, তার থেকেও যদি বেশি কিছু থাকে তুমি তাই।
বাড়িয়ে বলছো।
না গো, সত্যি বলছি। বারান্দায় যাদের দেখলে, তারা প্রত্যেক দিন এসে মসাইএর কাছে তোমার খোঁজ খবর নেবে। তুমি তো কোনদিন ফোনও করো না, আর চিঠি পত্রও দাও না। মশাই ওদের প্রত্যেকদিন বানিয়ে বানিয়ে তোমার কথা বলে, তারপর কাগজ বার করে তোমার লেখা পরা হয়, তুমি নাকি রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ।
আমি নীপার দিকে তাকালাম। সত্যি তো, গত চার বছরে আমি একটা চিঠিও লিখি নি, মনাকাকা অফিসের ঠিকানায়, কয়েকটা চিঠি লিখেছে, অমিতাভদা আমায় বলেছেন এই মাত্র। তবে নিয়ম করে টাকাটা আসতো আর আমার খবরা খবর অমিতাভদাই দিতেন। নীপার দিকে অপরাধীর মতো তাকালাম,

সত্যি নীপা একদম সময় পাই না।
 
একটা ফোন করার সময় পর্যন্ত পাও না।
ফোন যে এখানে আছে তাই জানি না।
তুমি জানোনা!
না, সত্যি বলছি। আর মাবাইলটার কথা বলছো, এই গত মাসে ভাইজ্যাক গেছিলাম, ইলেকসন কভার করতে তখন অমিতাভদা এটা কিনে দিয়েছেন।
ও আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো।
আমি সত্যি বলছি। তবে এবার দেখো এ ভুল আর হবে না।
নীপা হাসলো। ওর হাসিটাই বলে দিচ্ছে, ও জিতে গেছে।

আমরা হাটে পৌঁছেগেলাম। নীপা বললো চলো একবার বিউটি স্টেশনার্সে যাব।
সেটা আবার কি।
ওঃ তোমায় বলেছি না, তোমার দশ বছর আগের দেখা হাট আর এখনকার হাটের মধ্যে অনেক পার্থক্য।
ওখানে কি পাওয়া যায়।
ওখানে সাজগোজের জিনিষ পাওয়া যায়।
সে তো মনিহারীর দোকানে পাওয়া যায়।
কনসেপ্ট বদলে গেছে।
হাসলাম। সত্যি লোকজন অনেক কমে এসেছে, তবে আগে সন্ধ্যা হয়ে এলে লম্ফ ছাড়া কোন আলো হাটে দেখা যেতো না, এখন দেখছি বেশ কিছু দোকানে নিওন আলো জলে উঠেছে। আগের থেকে অনেক ঝকঝকে, এখন আর হাট বলে মনে হয় না, বাজার বলাই ঠিক হবে।
এসো ভেতরে এসো।
আমি নীপার পেছন পেছন দোকানের ভেতরে গেলাম। একটা বছর কুড়ির ছেলে জিনিষ দেখাচ্ছে, মেয়েদের ভিড়ই বেশি। এই আজ পাড়াগাঁয়ে, এই সন্ধ্যে বেলা মেয়েদের এত ভিড় দেখে অবাক হয়ে গেলাম। দুচারজন মেয়ে নীপাকে দেখে এগিয়ে এলো, চোরা চোখে আমাকে দেখে, নীচু স্বরে নীপাকে আমার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলো। নীপা কিছু কথা বলতেই ওদের চোখের চাহুনি বদলে গেলো। নীপা যেন ডগমগ করছে, ওর পা যেন মাটিতে পরতে চাইছে না।
ঋজুদা জিনিষ গুলো এনেছো।
হ্যাঁ, সব পায় নি।
তা হলে।
এই দিয়ে এখনকার মতো চালিয়ে দাও।
সে কি হয় নাকি।
আগামী শুক্রবার ফাংসন।
দেখি যদি কলকাতা যাই আমি এনে দেবো।
উঃ তোমায় নিয়ে আর পরা যাবেনা।
পিঠে দরাম করে একটা ঘুসি পরলো, শালা সন্ধ্যের সময় হাটে এসেছো, যাতে কেউ দেখতে না পায় , তাই না।
বড্ড লেগেছে, তবু বুঝলাম এ পরিচিত কেউ হবে, পেছন ফিরে তাকালাম, ভানু, দিবাকর, সত্যেন, পচা আরো অনেকে আমার সব স্কুল লাইফের বন্ধু, হেসে ফেললাম, দিবাকর আমার হাত ধরে তো প্রায় মুচড়ে ভেঙেই ফেলবে এমন অবস্থা।
হাত ছাড়তেই ভানুকে জড়িয়ে ধরলাম। কেমন যেন দেখতে হয়ে গেছে। কম বয়সে বুরোটে মারকা চেহারা, সেই ভানুর তাগড়াই শরীর কোথায়!
কিরে চেহারার এ কি অবস্থা।
আর বলিস কেনো, মাঠে খাটতে খাটতে..........
আরে দোকানের মধ্যে নয় বইরে চল, যতই হোক ব্যবসার স্থান।

ওকে তুই চিনিস।
না। চিনবো কি করে।
উনা মাস্টারের ছেলে। যাকে তুই হামা দিতে দেখেছিস।
ছেলেটি এবার কাউন্টার থেকে বেরিয়ে এসে আমার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো। বাবর কাছে আজ সকালে আপনার কথা শুনেছি।
হ্যাঁ স্যারের সাথে তো সকালে দেখা হয়েছিলো।
নীপার দিকে তাকালাম। নীপা আমার দিকে বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে, ওর চোখে অহংকারের প্রলেপ। আমি ছেলেটিকে বললাম, এই নীপা যা যা জিনিষ নেয় দিয়ে দাও, পয়সা নিও না, আমি দেবো।
ঠিক আছে।
এই নীপা শোন আমরা বাসুর দোকানে আছি, তোর সব কেনা কাটা হয়ে গেলে, ওখানে আসবি। অনি ওখানে থাকবে। পাঁচু বললো।
নীপা কোন উত্তর দেবার আগেই আমি ওদের হাতে চালান হয়ে গেলাম।
বাসুর দোকানে এলাম, বাসু আমাদের সঙ্গে ক্লাস এইট পর্যন্ত পরেছিলো , তারপর দুবার ফেল, ওর বাবা বললো আর পরতে হবে না বাপ , মাঠে কাজ করো খাওয়া পরার অভাব হবে না, সেই বাসু এখন বেশ জমপেশ করে রেডিমেড জামা কাপড়ের দোকান করেছে।
আমরা এক দঙ্গল ঢুকতে বাসু এগিয়ে এলো, বুঝলাম আজ ওর বেচা কেনা লাটে। ভানু স্বভাব সিদ্ধ মতো লিডারের পার্ট নিলো। আমি ওদের হাতের পুতুল, বাসু বললো অনি তুই আজ অতিথি কি খাবি বল।
তোর দোকান তো লাটে উঠে যাবে।
দূর সারাদিন ব্যবসা অনেক করেছি এবার একটু আড্ডা, কতদিন পরে তোর সঙ্গে দেখা। বললি নাতো কি খাবি।
খাওয়াবি।
অফকোর্স।
কে যেন বলে উঠলো শালা ইংরেজি ঝারছে রে।
ভানু পচাটাকে সামলাতো। বাসু বললো।
আমি বললাম, একশো গ্রাম ছোলার পাটালি নিয়ে আয়।
হ্যাঁরে তোর কি আর কিছু চাওয়ার নেই। সেই ছোলার পাটালি।
দশবছর খাই নি।
আজ সকালে কাকীর কাছে পান্তা খেয়েছি। তোর কাছে ছোলার পাটালি চাইলাম।
ভানু চেঁচিয়ে উঠলো পচা, দেখতো জানা ঘরের বুরীর কাছে ছোলার পাটালি আছে কিনা। ওখানে যদি না পাস কামরঘরের অশ্বিনীর কাছে থাকবে।
পচা আরএকটা জিনিষ নিয়ে আসিস, একটু ছোলা সেদ্ধ আর কাঁচা লঙ্কা। আমি বললাম।
সবাই আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে। ওরা বিশ্বাস করতে পারে না আমি এই ধরনের কিছু ওদের কাছে চাইতে পারি। আমি যেনো আবার সেই আমার স্কুল লাইফে ফিরে গেলাম, এরি মধ্যে বাসুকে বললাম, নীপার জন্য তোর দোকানে বেস্ট যে শালোয়ার কামিজটা আছে প্যাক করে রাখ। অনাদি এলো, আবার একচোট হই হুল্লা হলো, পাটালি আর ছোলা সেদ্ধ এলো সকলে ভাগ করে খেলাম, শেষে চা।
আমি অনাদি ভানু আর বাসু আলাদা করে কাকার বিষয় নিয়ে আলোচনা করলাম, ওরা আমাকে বললো এখানে খুব ভালো একটা নার্সিং হোম হয়েছে, তুই যদি বলিস তাহলে ব্যবস্থা করি, আমি বললাম আমি থাকাকালীন এটা করে যেতে চাই, ওরা আমায় কথা দিলো কাল দুপুরের মধ্যে সব ব্যবস্থা করে দেবে। আমি ওদের এ্যাসুয়র করলাম, টাকার ব্যাপার নিয়ে ভাববি না আমি কাকার চোখের আলোটা আবার ফিরিয়ে আনতে চাই। ওরা বললো ঠিক আছে। আর একটা কথা, আমার জমি জমা নিয়ে একটু কথা আছে, কাল তোরা আয় দুপুরের দিকে জমিয়ে আড্ডা মারা যাবে। অনাদি একটা সিগারেট এগিয়ে দিলো, আমি হেসেফেললাম, অনাদির হাতটা চেপে ধরে বললাম, এখনো এটা অভ্যাস করি নি। কালে ভদ্রে একটা দুটো খাই। বাসুর চোখ কপালে উঠলো, অনাদি বললো কালেভদ্রে খাস যখন এখন একটা খা। চারিদিক চেয়ে দেখলাম, অনাদিকে বললাম, বড়রা যদি কেউ থাকে। সতীপনা করিস না আশে পাসে এখন সিনিয়াররা কেউ নেই, সবাই এখন তোর বাড়িতে , ওখানে একটা মিটিং চলছে।
আমি অনাদির দিকে তাকালাম। ভানু কোথায় গেলো রে।
আর বলিস না। কাল সব বলবো।
অবাক হোলাম।
উনা মাস্টারের ছেলের দোকানে কিছু টাকা পাবে, নীপা কিছু জিনিষপত্র কিনেছে।

ও কাল দিবি।
 
না না। তুই পচাকে বল একটু দিয়ে আসতে।
অনাদি পচা পচা বলে চেঁচাতেই, পচা এসে হাজির মানিপার্টস থেকে একটা হাজার টাকার নোট বার করে বাসুর দিকে এগিয়ে দিলাম, তোর দামটা নিয়ে বাকিটা পচাকে দে।
দূর শালা, সকাল থেকে পাঁচশো টাকা বিক্রি হয় নি তুই হাজার টাকা দেখাচ্ছিস।
আচ্ছা তোর দামটা নিয়ে দিবি তো।
না থাক।
তাহলে নেবো না।
বাসু আমার দিকে কটমট করে তাকালো। অনিচ্ছা সত্বে উঠে গেলো। একটা পাঁচশো টাকার নোট পচার হাতে দিয়ে বললো যা দিয়ে আয়।
আমি পচাকে বললাম, নীপাকে একবার বলে আসিস, এবার উঠবো।
সকলে হো হো করে হেসে উঠলো।
হাসলি যে।
ঐ দেখ নীপা দাঁড়িয়ে আছে।
বাইরে দেখলাম নীপা ওর সম বয়সী বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলছে।
বেশ কিছুক্ষণ হই হই করে কাটলো। আমি বললাম এবার উঠবো রে, ওরা বললো আর কিছুক্ষণ থাক না, আমি বললাম, কাকা তাড়তাড়ি যেতে বলেছে, কারা যেন এসেছে, অনাদি বললো, আজকে ২৫ ভাগ এসেছে, কাল ঠেলা বুঝবি। হাসলাম। নীপা মিথ্যে কথা বলে নি। আমি সত্যি সেলিব্রেটি।
তুই এক কাজ কর আমার বাইকে বসে যা। অনাদি বললো।
আমি নয় তোর বাইকে বসলাম, নীপা যাবে কি করে।
সে ব্যাবস্থা আমি করে দিচ্ছি।
অনাদি বেরিয়ে এলো। বাসুকে বললাম কাল তাহলে আসিস। ও বললো ঠিক আছে। নীপা বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল, আমি আসতেই বললো, অনিদা এসো আমার বন্ধুদের সঙ্গে তোমায় আলাপ করিয়ে দিই।
নীপা একে একে সবার নাম বলে চলেছে, কেউ আমার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে, কেউ আবার হাত জোড় করে। কারুরি মুখ এই আধো অন্ধকারে পরিষ্কার দেখতে পেলাম না। সবাইকে বললাম একদিন এসো , জমিয়ে গল্প করা যাবে। ওরা কল কল করে উঠলো।
আমি অনাদির পেছন পেছন এলাম, নীপা আমার পাশে। অনাদি বাইকে স্টার্ট দিলো, বললো তুই আমার পেছনে বোস, নীপা তুই অনির পেছনে বোস।
আমার চক্ষু চড়কগাছ। এই অন্ধকারে তিনজন!
বোসতো, নীপা আছে বলে , না হলে তোকে...........।
ঠিক আছে ঠিক আছে, হাত পা যদি ভাঙে, ......।
নীপা হো হো করে হেসে উঠলো, আমরা অনাদিদার বাইকে চারজনে বসি।
আমি অবাক হলাম।
আমি অনাদির পেছনে বসলাম। নীপা আমার পেছনে। অনাদি বাইক চালাতে আরম্ভ করলো। বাজার ছেড়ে বেরিয়ে এলাম। আলো থেকে অন্ধকারে, কিন্তু না, জ্যোতস্নার আলোয় মাঠ ভরে গেছে, অনেকদূর পর্যন্ত দেখা যায়, আজ বোধ হয় ত্রয়োদশী, চাঁদটা বেশ বড়, নীপা আমার শরীরের সঙ্গে সেঁটে আছে , ওর হাত আমার থাইতে, মাঝে মাঝে আমার নুনুর কাছে এসে আবার সরে যাচ্ছে, ওর ডাঁসা ডাঁসা মাই আমার পিঠে হুল ফোটাচ্ছে, বাইকের আওয়াজ, চারিদিকের নিস্তব্ধতা ভেঙে এগিয়ে চলেছে, মাঝে মাঝে দুএকটা পোকা মাকড় ঠকাস ঠকাস করে চোখে মুখে লাগছে, নীপা ওর ঠোঁট দুটো আমার পিঠে ছোঁয়ালো, মাথা রাখলো, আমার পিঠটা যেনো ওর বালিশ। আমরা তিনজনেই চুপচাপ।

মিনিট দশেকের মধ্যে আমরা সবাই পৌঁছে গেলাম, মনা কাকা চেঁচামিচি করছে। তোমরা ছেলেটাকে পাঠিয়ে দিলে, এখনো এলো না। ........কে এলি রে।
স্যার আমি অনাদি ।
ও অনাদি , দেখতো ছেলেটা হাটের দিকে গেছে, এখনো এলো না।
কে।
অনি।
এই তো আমি ওকে নিয়ে এসেছি।
নিয়ে এসেছিস, আয় আয়। ভাতরে আয়।
অনাদি দাওয়ায় উঠে কাকাকে প্রণাম করলো।
আমি এই সোনা ঝরা জ্যোতস্নায় নীপার দিকে তাকালাম, ওর চোখে এখন অন্য কথা, আমি প্যাকেটটা ওর হাতে দিলাম।
কি এটা।
ভেতরে গিয়ে খুলে দেখো।
নীপা ভেতরে চলে গেলো।

আসর ভাঙতে অনেক রাত হলো, খেতে খেত আরো দেরি হলো, প্রায় এগারোটা। আমি কাকাকে চোখের ব্যাপারে বললাম, কাকা হাঁই হাঁই করে উঠলো, আমি খালি একটা কথাই বললাম, তাহলে কাল সকালে উঠেই আমি এখান থেকে চলে যাব , এজীবনে আমার সঙ্গে আর দেখা হবে না। কাকা কেঁদে ফেললেন, ঠিক আছে তুই যা বলবি তাই হবে। কিন্তু অনেক খরচ, সে নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। আমার কন্ঠের দৃঢ়তা কাকাকে সব কিছু মেনে নিতে বাধ্য করালো, সম্পত্তির ব্যাপার নিয়ে কাকাকে বললাম , আমি একটা চিন্তা ভাবনা করে রেখেছি কাল তোমায় জানাবো। সুর মাসি বললেন, হ্যাঁরে অনি তুই একলা ও বাড়িতে শুতে পারবি।
আমি বললাম কেনো পারবো না।
নীপা বলছিলো তোর ওখানে শোবে।
আমি নীপার দিকে তাকালাম, ও মাথা নীচু করে আছে।
এমনি সময় এ বাড়িতে কে থাকে রাতে।
ভাট পাড়ার দুটো ছেলে আছে, ওরা এসে থাকে।
ও বাড়িতে।
আমি আর নীপা শুই।
তুমি কোথায় শোবে।
আমি এ বাড়িতে থাকবো।
ঠিক আছে।
খাওয়া শেষ, আমি উঠে মুখ ধুয়ে ও বাড়িতে চলে গেলাম। বাইরের বারান্দায় দুটো ছেলেকে বসে থাকতে দেখলাম, আমাকে দেখে ওরা উঠে দাঁড়ালো,
তোমরা কার ঘরের ?
দাদ আমরা ভাটের ঘরে।
তোমাদের বাবর নাম কি।
একজন বললো বিধান রায়, অপরজন বললো, বানু রায়।
আমি অবাক হয়ে ওদের দিকে তাকালাম, এই ছোট ছোট দেখেছি, এখন সব সমত্ত বয়স।
নিজের ঘরে এলাম।
ছোট একটা ডিম লাইট জ্বলছে, তার আলোয় যতটা দেখা যায়। আমি পেন্ট গেঞ্জি খুলে পাজামা পাঞ্জাবী পোরলাম, কতদিন এই ঘরে একা একা শুয়ে কাটিয়েছি। তখন কেউ আমার সঙ্গে শুতে আসতো না। ভানু থাকতো, হাঁড়ি পারার বিজন এসে থাকতো, একা থাকাটা আমার যেন জন্মগতো অধিকার, সেই জন্য আমার কোন ভয়ডর নেই। রাতের অন্ধকার আমার কাছে ভীষণ প্রিয়।
উঃ তোমাকে নিয়ে আর পারা যাবে না।
পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখি নীপা এসে হাজির, এরি মধ্যে পোষাক বদল হয়ে গেছে, একটা হাতকাটা ম্যাক্সি পরেছে, ঘরের লাইটটা জাললো, লো ভল্টেজ, টিম টিম করে জলছে। আমি ওর দিকে তাকালাম,
সত্যি অনিদা তুমি একটি লেডিস ফিঙ্গার।
হাসলাম।
হাসছো। তোমার খাটের পাশটা দেখেছো।
না।
দেখো ওখানে তোমার রাতের পোষাক ভাঁজ করে রাখা আছে।

থাক কাল পোরবো।
 
দাঁড়াও আমি একটু আসছি। বলে নীপা চলে গেলো, কিছুক্ষণ পর একটা বড় টর্চলাইট আর একটা জলের মগ নিয়ে এলো। আবার বেরিয়ে গেলো, একটা টেবিল ল্যাম্প নিয়ে এলো।
এটা আবার কি হবে।
দেখতেই পাবে। এ তো আর তোমাদের শহর নয়। একটু পরেই লাইট ফুস হয়ে যাবে।
তাই নাকি।
হ্যাঁ। আমরা সারারাত লাইট জালালে তোমরা পাবে কি করে।
নীপা বেশ টরটরি আছে, কটকট করে কথা বলে। এরি মধ্যে ও যেন আমার কতো আপন, আমাকে শাসন করছে। সোহাগ করছে। নীপা খাটটা ঝেরে দিয়ে নিচে রাখা বাক্স থেকে একটা চাদর বার করে বিছানায় পেতে দিল, চাদরটা চেনা চেনা মনে হলো। আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি।
কার বলোতো চাদরটা।
কার।
মনে কোরে দেখো।
মনে পরছে না।
মনিমা বলেছিল, তুমি যখন স্কুল ফাইন্যালে স্টার পেয়েছিলে, সেই সময় মশাই তোমাকে এটা প্রেজেন্ট করেছিলো।
চেয়ে চেয়ে দেখলাম, নীপা সত্যি কথা বলেছে। আমি মাদুর পেতে শুতাম, অবস্থা খুব একটা ভাল ছিল না, কাকা চাদরটা কিনে দিয়েছিলো। কিন্তু আমি এতে শুতাম না। সেটা যে এতো যত্ন সহকারে তোলা আছে, জানতাম না। চাদরের গায়ে নেপথলিনের গন্ধ ম ম করছে।
যাও শুয়ে পর। নীপা বললো।
তুমি কোথায় শোবে।
ভেতর বারান্দায়।
কেনো।
সে তুমি বুঝবে না।
নীপা নিজে থেকেই একটা আড়াল তোলার চেষ্টা করছে। কিছু বললাম না।
দরকার পরলে ডাকবে।
আমি বিছানায় টানটান হয়ে শুলাম, আঃ কি আরাম, কলকাতায় আমার গদি ওয়ালা বিছানার থেকে এ বিছানার মাধুর্যই আলাদা। মাথাটা ভীষণ যন্ত্রনা করছে। নিজে নিজেই মাথায় হাত বোলাতে লাগলাম, নীপা বাইরের বারান্দায়, বিছানা করছে, ঝুপ ঝাপ শব্দে । কিছুক্ষণ পর ও আবার ভেতরে এলো।
দরজা বন্ধ করবে না।.........কি হলো........মাথা যন্ত্রণা করছে।
আমি ওর দিকে তাকালাম, ওর চোখ দুটো কেমন যেন হয়ে গেলো, আমার মাথার শিয়রে এসে বসলো।
আজ সারাদিন তোমার অনেক ধকল গেলো।
হ্যাঁ।
দাঁড়াও তোমার মাথায় একটু বাম লাগিয়ে দিই।
না, থাক।
থাক কেনো।
আমি ওসব লাগাই না।
ওঃ তুমি না......নীপা মাথা থেকে আমার হাতটা সরিয়ে দিয়ে নিজের হাত রাখলো, নরম হাতের ছোঁয়ায় আমার চোখ বন্ধ হয়ে এলো, নীপা আমার চুলর মধ্যে হাত ঢুকিয়ে বিলি কাটছে। একটা পিন পরলেও এ ঘরে শব্দ হবে। এখনো কারেন্ট আছে, ডিম লাইটটা মিট মিট করে জলছে, আমার মাথার শিয়রের জানলাটা খোলা, একফালি চাঁদের আলো, জানলার ফাঁক দিয়ে বিছানায় এসে পরেছে।
অনিদা।
উঁ।
তুমি আমার জন্য এত দাম দিয়ে ওটা কিনলে কেনো।
তোমার পছন্দ হয়েছে।
হ্যাঁ। যেদিন বাসুদা ওটা নিয়ে এসেছিল, আমি দেখেছিলাম, কিন্তু.........
কিন্তু কি।
তুমি তো জানো আমাদের অবস্থা।
একটা কাজ করবে।
কি।
আমার বন্ধু গুলো........উঃ তাড়াহুড়োয় আমার একটা ভুল হয়ে গেছে। কালকে তুমি এক ফাঁকে একবার বাসুর দোকানে যেতে পারবে।
তুমি বললে নিশ্চই যাব।
তুমি বাসুর দোকানে গিয়ে তোমার পছন্দ মতো, সুরমাসীর জন্য, কাকীমার জন্য আর কাকার জন্য বেশ কয়েকটা করে কাপড়, শায়া ব্লাউজ আর তোমরা যা যা পরো নিয়ে আসতে পারবে।
নীপা মুচকি হাসল।
হাসছো কেন।
তোমার কথায়।
ঐ যে বললে......
আরে ধ্যুত, আমিতো কোনো দিন কারোর জন্য কিনি নি।
জানি।
কি করে জানলে।
তোমার কথায়। তুমিও যাবে আমার সঙ্গে।
না। কাল আমার অনেক কাজ।
জানি।
কি করে জানলে।
মশাই বলছিলো। তুমি যা ডিসিসন দেবো তাই ফাইন্যাল। মশাই তোমাকে ছাড়া কাউকে পাত্তা দেয় না। জান। কাল দেখবে সবাই তোমার কাছে আসবে কত কাজ নিয়ে। সত্যি অনিদা তোমায় এতো দিন দেখিনি, আজ যত দেখছি তত অবাক হয়ে যাচ্ছি।
নীপা।
উঁ।
তোমার কোলে একটু মাথা রাখবো।
রাখো।
মনে কিছু করবে না।
ধ্যাত। আমার সৌভাগ্য।
কেনো।
আমার বন্ধু গুলোকে দেখেছিলে তখন।
হ্যাঁ।
ওদের দেখে তুমি কিছু বোঝো নি।
না।
সত্যি অনিদা তুমি কি।
আমি মানুষ।
আমি তাই বলেছি নাকি।
তুমি চাইলে এখুনি সকলকে পেতে পারো।
কি ভাবে।
যে ভাবে চাইবো।
হ্যাঁ।
তোমাকে যদি চাই।
ধ্যাত।

আমি কি সিনেমা আর্টিষ্ট।
 
তা নয় তবে আমাদের কাছে তুমি তাদের থেকেও অনেক কিছু।
আমি নিপার কোলে মাথা রাখলাম, ওর নরম কোলের স্পর্শে আমার মাথা ব্যাথা অনেকটাই সেরে গেছে, নীপার শরু শরু আঙুল আমার চুলে বিলি কাটছে , অনুভব করলাম নিপা ভেতরে কিছু পরে নি। হাত দুটো দিয়ে নীপাকে একটু কাছে টেনে নিলাম, না ওর কোনো সংকোচ নেই। ও কোন আনইজি ফিল করছে না। ওর বুকটা আমার ঠোঁটের খুব কাছে, আমি চোখ বন্ধ করে আছি। নীপা গর গর করে ওদের কথা বলছে, কবে ওরা এখানে এসেছে, কেনো এসেছে, এই সব। আমি চোখ বন্ধ করে শুনে যাচ্ছি। সবেতেই আমি জড়িয়ে আছি। এটুকু বুঝলাম, নীপা ক্লাস এইটে যখন পরে তখন ওর মা ওকে নিয়ে চলে আসে , তারপর থেকে ওরা এখানেই আছে, নীপার বাবা ভাল নয়, সে কোন এক মহিলার সঙ্গে চলে গেছেন। এখন কাকা কাকীমার দেখভালের দায়িত্ব ওদের। কাকা কাকীমাও ওদের ওপর ভীষণ ভাবে নির্ভরশীল।
নীপা।
উঁ।
যাও এবার শুয়ে পরো।
আর একটু তোমার সঙ্গে গল্প করি।
আমি কিছু বললাম না, ভীষণ ঘুম পাচ্ছে, নীপার হাতের স্পর্শে ওর শরীরের ওমে আমার চোখ জুরিয়ে আসছে।
নীপা।
উঁ।
আমি যখন এলাম, তখন আমাকে দেখে ওরকম দৌড়ে চলে গেলে কেনো।
ভয় পেয়ে গেছিলাম।
আমি বাঘ না ভাল্লুক।
না। তবে একজন অপরিচিত......
এখন।
তুমি আমার। সম্পূর্ণ আমার।
হাসলাম। বুঝতে পারছি নীপা আমার দিকে হাপুস নয়নে চেয়ে আছে। ওর অনেক প্রশ্ন, হয়তো তার কিছুটা আমি উত্তর দিতে পারবো, বাকিটা পারবো না। সাতপাঁচ নানা কথা ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পরেছি জানি না। হঠাত একটা অদ্ভূত স্বপ্ন দেখে ঘুমটা ভেঙে গেলো, কেউ যেন আমার গলা চেপে ধরেছে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। হাত পা কেমন যেন অসাড় হয়ে আসছে। চোখ মেলে তাকালাম, ঘরটা ঘুট ঘুটে অন্ধকার, কেরোসিনের ডিম লাইটটাও নিভে গেছে। আমি নড়তে চড়তে পারছি না। কেউ যেন আমাকে আষ্টে পৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আছে। আমি নড়াচড়া না করেই বুঝতে চেষ্টা করলাম। একটা কোমল শরীরের স্পর্শ অনুভব করলাম। কাল রাতে নীপার কোলে মাথা রেখে আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। নীপা কোথায়? চোখ মেলে তাকালাম, নীপা আমাকে পাশ বালিশের মতো জাপ্টে ধরে শুয়ে আছে, ওর মুখ আমার কাঁধের কাছে, ওর উষ্ণ নিঃশ্বাস আমার কানের লতিকে আরো উষ্ণ করে তুলছে, হাতটা আমার বুকের ওপর, ডানপাটা আমার লিঙ্গের ওপর, ওর ভারী বুক আমার শরীর স্পর্শ করে আছে। নরম বুকের ছোঁয়ায় আমি স্নাত। মাথার ওপর জানলাটা খোলা, ঝির ঝিরে বাতাস ঘরে এসে আছড়ে পরছে, চাঁদ মধ্য গগনে। অন্ধকারেও আলোর রেখা দেখতে পেলাম, আস্তে আস্তে ঘরের সমস্ত অংশটই পরিষ্কার হয়ে এলো। আমি নীপাকে খুব সন্তর্পনে আমার শরীর থেকে আলাদা করলাম, বালিশটা ওর মাথার তলায় গুঁজে দিলাম। খাট থেকে নেমে জলের জগ থেকে একটু জল খেলাম। মিটসেফের মাথা থেকে সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বার করলাম, আস্তে আস্তে পা টিপে টিপে বাইরের বারন্দায় এলাম।
সিগারেট ধরালাম, চারিদিক নিস্তব্ধ চাঁদের আলো গাছের পাতার ওপর রুপোর মতো গলে গলে পরছে, ঝিঁ ঝিঁ পোকার একটানা তারস্বর চিতকার, পরিবেশটাকে স্বপ্নিল করে তুলেছে। আমি নিজের মধ্যে নিজে হারিয়ে গেলাম।
কেউ যেন আমাকে জাপ্টে ধরলো, তার নরম বুক আমার পিঠে স্পর্শ করেছে, ঠোঁট দুটো ছবি আঁকছে আমার ঘারের কাছে, আমি হাতদুটো আলগা করে, তার সামনা সামনি হলাম, নীপা। এ নীপাকে আমি চিনি না জানি না, ওর চোখের রং বদলে গেছে।
নীপার ঠোঁটদুটো আমার ঠোঁটের খুব কাছে। ওর সুডৌল বুক আমার বুকে আছড়ে পরেছে। থিরি থিরি কাঁপছে ঠোঁট দুটি, আমি নীপার ঠোঁটে ডুব দিলাম। কতোক্ষণ জানি না। মনে পরলো রবীন্দ্রনাথের কবিতাটা সাগর জলে সিনান করি সজল এলো চুলে বসিয়া আছি উপল উপকূলে। চারিদকে জ্যোতস্না স্নাত রাত, কোথাও একটা মোরোগ ডেকে উঠলো কঁ কঁকর কঁ।
নীপা ঠোঁট থেকে ঠোঁট সরালো, আমার কিছুতেই সরাতে ইচ্ছে করছে না, আমি ওকে জাপ্টে আমার শরীরের সঙ্গে বেঁধে রেখেছি, নীপা চোখের ঈশারায় ভেতরে যেতে বললো। আমি ওকে জাপ্টে ধরে পায়ে পায়ে ঘরে এলাম।

নীপা আমার সামনে দাঁড়িয়ে, আমি আবার ওর ঠোঁটে ডুব দিলাম, নীপার হাত আমার পিঠ খামচে খামচে ধরছে। আমার খোকা ধীরে ধীরে মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে, বুঝতে পারছি আমার পাজামার ফাঁক দিয়ে সে নীপার তলপেটে তার জায়গা খুঁজে নিতে চাইছে।
চলো খাটে যাই। নীপা বললো।
আমি সম্মোহনের মতো নীপাকে অনুসরন করলাম, নীপা খাটে উঠে বসলো। আমি ওর পাশে বসলাম, নীপার মুখটা ভাল করে দেখতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু এই আলো আঁধারিতে তা সম্ভব না, কিন্তু বেশ বুঝতে পারছি একটা ঘুম ঘুম নেশা দুজনের মধ্যে। আমি নীপার গালে হাত ছোঁয়ালাম, ঠোঁটে আঙুলের স্পর্শ দিলাম, নীপা আমার হাত দুটো চেপে ধরলো। আমি ওকে জড়িয়ে ধরে বিছানায় আছড়ে পরলাম। নীপা আমার বুকের ওপর। নীপা ঠোঁটে ঠোঁট রাখলো। এ যেন অমৃত ফল, যত সেবন কর আশ মেটে না। নীপা আমার পাঞ্জাবীর ভেতর দিয়ে বুকে হাত রখল, ওর উষ্ণ হাতের ছোঁয়ায় আমার শরীরে কাঁটা দিল। নীপা বুক পর্যন্ত আমার পাঞ্জাবীটা তুলে আমার বুকের নিপিলে মুখ দিল। আমি ওর বুকে হাত দিলাম। নীপা থির থির করে কেঁপে উঠলো।
অনিদা জামাটা খোলো।
তুমিও খোলো।
না।
তাহলে আমিও খুলবো........
নীপা ঝাঁপিয়ে পরে আমার ঠোঁট কামরে দিলো। আমি উঃ করে উঠলাম। নীপা জিভ দিয়ে আমার ঠোঁট দুটো ভিঁজিয়ে দিলো।
নীপা ওর ম্যাক্সিটা খুলে ফেলেই আমার বুকের ওপর ঝাঁপিয়ে পরলো। তারপর টেনে হিঁচড়ে আমার পাঞ্জাবীটা মাথা গলিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে আমার বুকে ওর বুক ঢাকলো।
লোকাচ্ছ কেনো।
তোমায় দেখতে দেবো না।
নীপার একটা হাত আমার নুনুর সঙ্গে খেলা করছে আমারও একটা হাত নীতার তানপুরার মতো পাছায় ।
আমি দেখেছি।
যাঃ।
হ্যাঁ।
কখন।
বলবো কেনো।
আমিও দেখেছি।
তাই।
হ্যাঁ।
কখন।
বলবো কেন।
আগে তুমি বলো, তারপর আমি বলবো।
না আগে তুমি বলো তারপর আমি বলবো।
আজ বিকেলে পুকুর ঘাটে।
নীপার আমার বুকের নিপিলে দাঁত দিলো, আমার বুকটা একটু ওপরে উঠে আবার বিছানা নিলো, নীপা খিল খিল করে হেসে উঠলো।
চোর।
কে।
তুমি।
আর তুমি।
আমি ডাকাত।
লিঙ্গে ভুল হলো।
কেনো।
ডাকাতনী হবে।
ধ্যাত।
সত্যি।
কখন দেখলে।
বিকেলে তুমি যখন পুকুর ঘাটে গা ধুচ্ছিলে।
ওরে শয়তান। এই ঘরের জানলা দিয়ে.......
আমি মাথা নাড়লাম।
কি দেখলে।
তুমি কেমন ভাবে আস্তে আস্তে.........
নীপা ডান হাত দিয়ে আমার ঠোঁট চেপে ধরলো।
কি হলো।
শুনতে নেই।
ঠিক আছে, তাহলে আমারটা বলো।
তুমি যখন স্নান করছিলে।
হুঁ।
আমি তখন বাঁশ ঝারের পেছনে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিলাম।
কি দেখলে।
তোমার সারা শরীরটা।
কি রকম।
পুরুষ মানুষের শরীর হবে ঠিক তোমার মতো, ছিপ ছিপে বেতের মতো।
আমি তো রোগা পেটকা।
কে বললে।
সবাই বলে।
ওরা তাহলে মেয়েদের টেস্ট জানে না।
আর কি দেখলে।

তুমি যখন গামছা ছারছিলে........
 
আমি নীপার মাথাটা টেনে এনে ঠোঁটে ঠোঁট রাখলাম। নীপার ঠোঁট দুটো এখন আগের থেকেও বেশ উষ্ণ। ওর শরীরের ওম আমার সারা শরীরে। নীপা আমার জিভ নিয়ে ওর জিভের সঙ্গে খেলা করছে। চোখে কামনার আগুন, আমি বুঝতে পারলাম, নীপা আমার পাজামার বাঁধন খুলে ফেললো, পাজামা একটু নীচে নামিয়ে, আমার নুনু শক্ত করে ধরলো। আমি ওর পাছার ওপর দিয়ে পুশিতে হাত দেওয়ার চেষ্টা করলাম, হাত পাচ্ছি না। নীপা ঠোঁটে ঠোঁট রেখেই মাথা দোলালো, কি, আমি ওকে ঈশারায় বোঝাতে চেষ্টা করলাম , আর একটু ওপরে উঠে এসো। নীপা পাছাটা আমার দিকে এগিয়ে দিলো। আমি হাত পেলাম, উরি বাবা কি গরম, আমার হাত যেন পুরে যাবে, নীপার পুশি ভিজে জ্যাব জ্যাব করছে । ও সমানে আমার থাইতে ওর পুশি ঘষে চলেছে। আমি নীপার মাইতে হাত দিলাম, বোঁটা দুটো পাকা ভুট্টাদানার মতো শক্ত আবার নরম।
নীপার বুকে মুখ রাখলাম, জিভের পরশ পেতেই নীপার বোঁটার চারধার দানা দানা মতো হয়ে গেলো, আমি আঙুল ছোঁয়ালাম, নীপার একটা পা আমার পায়ের সঙ্গে খেলা করছে। আমি একটা ছেরে আর একটা এই ভাবে বেশ কিছু ক্ষণ নীপার দুধ চুষলাম। নীপা আমার শক্ত হয়ে ওঠা নুনু থেকে কিছুতেই হাত সরালো না। আমি আস্তে আস্তে বুক থেকে নীপার তলপেটে ঠোঁট রাখলাম, নীপা আঃ করে উঠলে, আমার নুনু থেকে ওর খসে পরলো, আমি আরও একটু নীচে নাভির কাছে জিভটা গোল করে ঘোরালাম, নিপা কেঁপে কেঁপে উঠলো। আমি আর একটু নীচে নামতেই নীপা তরাক করে উঠে বসলো, আমার মুখটা ধরে বার বার ঘার নারছে, আমি ঈশারায় জিভ দেখিয়ে বললাম, একটু প্লীজ, একটু। নীপা দুহাত পেছনে দিয়ে একটু হেলে পরলো, নীচু হয়ে আমি ওর পুশিতে আঙুল ছোঁয়ালাম, ও পাদুটো জোরা করে নিলো। আমি ওর দিকে তাকালাম, ও না না করছে, এবার অভিমান ভরা চোখে ওর দিকে তাকালাম, বরফ গললো, পা দুটো আবার ফাঁক হয়ে গেলো। আমি ওর পুশিতে জিভ দিলাম, সদ্য ছাঁটা ছোট ছোট চুলে ঢাকা পুশিটা আমার দিকে জুল জুল করে তাকিয়ে আছে, অষ্টাদশীর ভার্জিন ভেজাইনা, আমার জিভের জলে স্নান করলো, ওঃ আঃ উঃ, নীপার মুখ থেকে মৃদু শীতকার, আমার শুনতে ভীষন ভাল লাগছে, যত ও শীতকার দিচ্ছে আমার জিভ শরু হয়ে ওর পুশির গর্তে তত গভীরে চলে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে ও পা দুটো কাছে নিয়ে আসছে আবার দূরে সরিয়ে দিচ্ছে, আমি জাভ সরালাম না। উষ্ণ জল পান করে চলেছি, মাঝে মাঝে ওর দিকে তাকাচ্ছি, পূবদিকের আকাশটার রং বদলে যাচ্ছে, তার আবছা আলো নীপার চোখে মুখে এসে পরেছে, হঠাত নীপা প্রচন্ড জোরে কেঁপে উঠল, খাটটা নরে উঠলো, নীপা বালিশের ওপর ঢলে পরলো। চোখ দুটো বোঁজা, মুখ দিয়ে একটা গঁ গঁ শব্দ। আমি উঠে বসলাম, চাদর ওর পুশির জলে ভিঁজে যাচ্ছে। ওর জীবনের প্রথম চরম আনন্দ, আমি নীপার গালে একটা আস্তে করে থাপ্পর মারলাম, নীপা বেশ কিছুক্ষণ পর চোখ খুললো, উঁ। চোখমুখ লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠলো, আমাকে জাপ্টে ধরে আমার ঠোঁটে ঠোঁট রাখলো। পূব দিকের আকাশটা গাঢ় কমলা রংয়ে রাঙা হয়ে উঠেছে, মাঝে মাঝে কালো কালো ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ ভেসে যাচ্ছে।

নীপা নিরাভরণ শরীরে উপুর হয়ে জানলার দিকে মুখ করে শুয় আছে। আকাশে সূর্য্য ওঠার পূর্বাভাস, আমি পাজামা পাঞ্জাবী পরে সিগারেটের প্যাকেট মোবাইলটা পকেটে ঢোকালাম, নীপার কাছে গিয়ে ওর পাছুতে হাত রাখলাম, নীপা আমার দিকে তাকালো, ওর আয়ত চোখ দুটি ভিজে কাদা হয়েগেছে, আমি কিছু বললাম না, ওর কপাল ঠোঁট ছোঁয়ালাম, বেরিয়ে এলাম। নীচে নেমে দরজাটা ভেতর থেকে টেনে বন্ধ করলাম, খামারে এসে দাঁড়ালাম, পেছন ফিরে তাকালাম, নীপা জানলা থেকে মুখ সরিয়ে নিল, আমি মাঠের পথ ধরলাম।
প্রথমে পড়বে চন্দ্র পাড়া, তারপর তাঁতী পাড়া, তারপর কামার পাড়া, একেবারে শেষে হাঁড়ি পাড়া হাঁড়ি পাড়া পেরিয়ে আমার গন্তব্য স্থল দীঘা আড়ি। আমার এক সময়ের সবচেয়ে মনকারা জায়গা, আমি ওখানে গেলে কেমন যেন নিজের মধ্যে নিজে হারিয়ে যাই। সোনাঝড়া রোদ কচি ধান গাছের গায়ে আবির লাগিয়ে দিয়েছে, এরি মধ্যে কেউ কেউ মাঠে নেমে পরেছে, এখন বাছার (আগাছা পরিষ্কার করা) সময়, কয়েকদিন পর, ধানের বুকে শীষ আসবে, এই সময় একটু যত্ন আত্তি করতে হয়। কেউ আমার দিকে তাকালো, কেউ তাকালো না, সাঁওতাল মেয়ে গুলো নীচু হয়ে ওদের ভাষায় মিহি সুরে গান করছে, ওদের শরীর গুলো সত্যি দেখার মতো, কালো কষ্টি পাথরে কোন শিল্পী যেন কুঁদে কুঁদে ওদের সৃষ্টি করেছে। খালি গায়ে বুকের ওপর কাপরটাকে পেঁচিয়ে পরেছে, নীচু হয়ে কাজ করায় ওদের অনাবৃত বুকের কিছুটা দেখা যাচ্ছে, আমি আর চোখে মাঝে মাঝে ওদের দেখতে দেখতে এগিয়ে চলেছি।
হাঁড়ি পারা পেরিয়ে চলে এলাম দীঘা আড়ি, আঃ যেমন দেখেছিলাম আজ থেকে দশ বছর আগে ঠিক তেমনি আছে, বরষার সময় দুকুল পেরিয়ে জলের ঢল নামে, এখন জল অনেকটা মরে গেছে, তবু যে টুকু আছে তা নয়নাভিরাম, মাঝখানে পানকৌড়ি আর সরাল পখির হুটো পুটি, আকাশ থেকে ডানা মেলে ঝুপ করে জলে আছড়ে পরছে বক, কোকিলের কুহু কুহু স্বর চারিদিক ম ম করছে, এত প্রচন্ড নিস্তব্ধতা যে নিজের নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ নিজে শুনতে পাচ্ছি। কালীচরণের ঝিকে নিয়ে ভানুর সেই কীর্তি কলাপের জায়গায়টায় একটু থমকে দাঁড়ালাম, চোখ বন্ধ করলে এখনো সেই দৃশ্য আমি দেখতে পাই। পায়ে পায়ে আমার সেই চেনা ঝোপের ধারে এসে বসলাম, এখন অনেকটা নোংরা হয়ে গেছে, কেউ হয়তো আসে না, আমার মতো পাগল কজন আছে, আমি একটু পরিষ্কার করে বসলাম, পেছনটা ভিজে গেল, বুঝলাম, সারারাতের শিশির স্নাত ঘস গুলি আমাকে স্নান করিয়ে তার কোলে জায়গা দিল। দীঘির জল কাঁচের মত ঝকঝকে, স্থির। মাঝে মাঝে একটা দুটো মাছ লেজ নেরে দীঘির জলে কাঁপন তুলছে, কাঁপা কাঁপা ঢেউ গুলি কিছু দূরে গিয়ে আবার মিলিয়েও যাচ্ছে। সূর্যের আলো এসে পরেছে দীঘির জলে, তার আলো ছায়ার স্পর্শ গাছের ডালে , তার পাতায়।
ঝন ঝন করে ফোনটা বেজে উঠলো, মনেই ছিলো না, পকেট থেকে ফোনটা বের করলাম, মিত্রার ফোন।
কখন ঘুম থেকে উঠলি।
চারটে।
যাঃ।
হ্যাঁরে।
এখন কোথায়।
আমার স্বপ্নের সেই জায়গায়।
কোথায় বসে আছিস বলতো পাখির আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি।
সে অনেক কথা, ফোনটা অফ করিস না কথা না বলে শুধু শুনে যা। আমি লাউড স্পিকার মুডে এলাম, মিত্রা মনে হয় গাড়ি করে কোথাও যাচ্ছে, গাড়ির হরনের আওয়াজ পাচ্ছি।
কি রে কোথায় হারিয়ে গেলি।
হারিয়ে যাই নি, হারায়ে খুঁজি।
বাবাঃ কবি কবি ভাব , ছন্দের অভাব।
শুনলি।
হ্যাঁ। লাইভ।
সত্যি তাই। আমি সেই ঝিলের ধারে একা।
একা একা কেন, দোকা করে নে।
কে আসবে বল।
চাইলেই পাবি।
সব চাওয়া , পাওয়া হয়ে ওঠে না।
ঠিক বলেছিস বুবুন।
জানিস মিত্রা এখানে এই সকালটা এতো ভালো লাগে তোকে বোঝাতে পারব না, পৃথিবীতে অনেক কিছু আছে যা ভাষা দিয়ে বোঝানো যায় না, তাকে অনুভব করতে হয়।
কবে আসছিস।
ঠিক নেই।
তারমানে।
মিত্রাকে এখানকার সমস্ত ব্যাপারটা বললাম।
বুঝেছি তুই অনেক সমস্যায় পরে গেছিস। দাদাকে বলেছিস।
এখন বলি নি।
হ্যাঁরে তুই বড়মাক ফোন করিস নি।
কেনো।
গতকাল বড়মা আমায় প্রায় পনেরোবার ফোন করে তোর খবর নেওয়ার চেষ্টা করেছে। ভেবেছে, আর কাউকে তুই ফোন করিস আর না করিস আমাকে অবশ্যই করবি।
বড়মার ধারনাটা অন্যায় না। সবাইকে ফাঁকি দিতে পারি, বড়মা ছোটমাকে ফাঁকি দিতে পারবো না।
কাকার ব্যাপারে কি ডিসিসন নিলি।
আজ বারোটার পর জানতে পারবো।
আমাকে জানাস।
জানবো।
ভুলে যাবি।
নারে বিশ্বাস কর এখানে মাঝে মাঝে টাওয়ার থাকে আবার চলে যায়। তোরা বরং ফোন করিস না, আমিই তোদের কোরবো। ওদিককার খবর কি।
হিমাংশু সমস্ত এ্যারেঞ্জ করে দিয়েছে। তুই এলে ফাইন্যাল হবে।
তুই এখন কোথায়।
সকালে কি মনে হলো, একটু গঙ্গার ধারে গেছিলাম, স্নান করলাম, অনেক পাপ করেছি , এখন ফিরছি।
একা না কেউ সঙ্গে আছে।
আমি তোরই মতো, তুই ঝিলের ধারে একা, আমি গঙ্গার থেকে একা ড্রাইভ করে ফিরছি।
অফিসে গেছিলি।
না । তুই বারন করেছিস। অমান্য করতে পারি না।
আমি কে।
শুনতে ইচ্ছে করছে। বাঁদর।
হাসলাম।
হাসছিস । তোর লজ্জা করে না।
না।
হ্যাঁরে টাকা পয়সা সঙ্গে আছে।
খুব বেশি নেই।
তোর ঠিকানা বল।
তুই বাড়ি ফিরে যা, প্রয়োজন হলে বলবো।
উঃ তুই মচকাবি তবু ভাঙবি না।
এই টুকু নিয়েই তো বেঁচে আছি। এই পৃথিবীতে আমার বলে কে আছে বল।
চোখ মেলে তাকা, বুঝতে পারবি।
হাসলাম।
আবার বোকার মতো হাসছিস।
আসবি এখানে।
তুই বললেই ছুটে চলে যাব।
থাক।

থাক কেন।
 
উঃ তুই বরো জালাতন করিস।
মিত্রা কোন কথা বলছে না। খালি গাড়ির হর্নের আওয়াজ, ক্যাঁচ করে ব্রেক চাপার শব্দ, বুকটা ধরাস করে উঠলো।
কি রে কথা বলছিস না কেনো, মিত্রা মিত্রা।
এখন রাখি। গলাটা ধরা ধরা।
কি হয়েছে বলবি তো।
তোর এই সময় আমি কি তোর পাশে থাকতে পারি না।
কাঁদছিস কেনো।
কই কাঁদলাম।
আমি দেখতে পাচ্ছি।
ধ্যুস।
ঠিক আছে এখানে ডেটটা ফাইন্যাল করে তোকে জানাবো।
জানাবি ঠিক।
বললামতো জানাবো।
বিকেলে একবার ফোন করিস, বর একারে।
আচ্ছা।
মিত্রা ফোনটা রেখে দিল, কয়েকজন লোক দীঘির পারে এসেছে, ওরা মনে হয় মাছ ধরবে, ওদের কাঁধে জাল দেখছি, কলকাতার ভেঁড়িতে মাছ ধরা দেখেছি, আর এখানকার দীঘিতে মাছ ধরা দেখেছি দুয়ের মধ্যে কত তফাত। না আর বসে থাকা যাবে না, সূর্যের রং বলছে অনেক বেলা হয়েছে, মোবাইলটা পকেট থেকে বার করে, সময় দেখলাম, নটা বাজতে যায়।
ফেরার পথে অনেকের সঙ্গে দেখা হল, কাউকে চিনতে পারলাম কাউকে পারলাম না, স্মৃতি থেকে মুছে গেছে, চন্দ্র পাড়ায় অনাদির বাড়ির কাছে এলাম, দুটো বাচ্চা ওদের খামারে খেলা করছে, ধুলোয় ঢাকা শরীর, হাসলাম, আমিও একসময় এরকম ছিলাম, গ্রামের ছেলেরা ধুলো ঘাঁটতে খুব ভালবাসে, মেয়েটা মনে হচ্ছে বড়। কত বয়স হবে পাঁচ কি ছয়, ছেলেটা তিন কিংবা চার, একজন আরএকজনের মাথায় ধুলো দিচ্ছে, আমি খানিকক্ষণ ওদের খালা দেখলাম, ওরা মাঝে মাঝে আমার দিকে জুল জুল করে তাকাচ্ছে, অনাদি বাড়ি আছিস, একজন বছর চব্বিশের অটপৌরে ভদ্রমহিলা উঁকি দিয়েই আবার ভেতরে চলে গেলো, গরু গুলো খামারের এক পাশে বাঁধা, খড় চিবোচ্ছে, অনাদিরা এ গাঁয়ের সম্ভ্রান্ত কৃষক, ভালো পয়সা আছে, তাছাড় এখন গ্রাম পঞ্চায়েত হয়েছে, নিশ্চই কিছু পয়সাগড়ি করেছে, একজন বয়স্ক ভদ্রলোক বেরিয়ে এলেন, প্রথমে ঠাহর করতে পারি নি, পরে বুঝলাম, কাকাবাবু, অনাদির বাবা।
আমি এগিয়ে গেলাম, পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলাম, কাকাবাবু থাক থাক করলেন।
কে বাবা।
আমি অনি।
আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। এ কি করলি অনি এই সাত সকালে।
কি করলাম।
তুই আমাকে প্রণাম করলি।
কেনো!
তোরা ব্রাহ্মণ, আমরা কায়েত। কায়েতের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে নেই।
ওঃ , তোমরা আমরা গুরুজন।
কাকু আমার গায়ে মাথায় হাত বোলালেন, সৌদামিনি ও সৌদামিনি দেখবে এসো কে এসেছে, জানিস বাবা কাল তোর ঘরে গেছিলাম, তোকে একবার দুচোখ ভরে দেখতে।

কেনো।
তুই কত বড় হেয়েছিস, চারিদিকে তোর কত নামডাক।
এই তো আমি তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আছি, কোথায় বড় হয়েছি।
কাকীমা ভেতর থেকে বেরিয়ে এলেন, কে এসেছে গো , কে এসেছে।
আমাদের অনি এসেছে গো দেখো দেখো।
তাকিয়ে দেখলাম, বারান্দা থেকে সেই ভদ্রমহিলা উঁকি দিয়ে আমাকে দেখছেন। বাচ্চা গুলো পায়ে পায়ে আমার কাছে এসে হাজির। কাকীমা কাছে এলেন, আমি নীচু হয়ে প্রণাম করতে গেলাম, কাকীমা হাত ধরে ফেলেছেন, না বাবা তুই প্রণাম করিস না, তোর বাপ মাকে আমরা প্রণাম করতাম, আজ বেঁচে থাকলে তারা দেখতো তাদের অনি কত বর হয়েছে।
মাথা নীচু করলাম, ও কাঞ্চন আয় এদিকে আয় দেখা যা, অনিকে।
কেনো আমি কি কোনো দ্রষ্টব্য বস্তু।
না রে তোর কথা প্রায় আলোচনা হয়, ওরা তোকে দেখে নি। ভাবে লোকটা কে।
মেয়েটি কাছে এলো, বেশ দেখতে, অযত্নে মরচে পরে গেছে। ঘোমট দেওয়া। আমায় প্রণাম করতে চাইলো। আমি বললাম থাক থাক, প্রণাম করতে হবে না।
কাকীমা বললেন, অনাদির বউ।
তাই নাকি।
একটা ছেলে একটা মেয়ে।
মাথা নীচু করে হাসলাম।
একটু চা করি, বসুন। কাঞ্চন বললো।
না। থাক আর একদিন এসে খাবো। অনেক সকালে বেরিয়েছিলাম, কেউ জানে না।
কোথায় গেছিলি। কাকা জিজ্ঞাসা করলেন।
দীঘা আড়ি।
কাঞ্চন আমার দিকে অবাক হয়ে তাকালো। ওর আয়তো চোখে কত বিস্ময়, ঘোমটা সরে গেছে, মাথার সিঁদুর ফিকে, এলোমেলো চুল মুখের ওপর এসে পরেছে।
কাকা , অনাদি কোথায়।
ও আর দিবাকর রাত থাকতে বেরিয়েছে , বললো একটু টাউনে যাবে কি কাজ আছে।
ও। ঠিক আছে আমি আসি।
বড়মতলার পুকুর ঘাটে সেই পেয়ারাগাছটা এখনো অটুট, কয়েকটা বাচ্চা গাছটার ডাল ধরে দাপা দাপি করছে, পেয়ারা ছিঁড়ে খাচ্ছে, গ্রামের ভাষায় এজমালি গাছ, সবার অধিকার। এক সময় এর ডালে কত নাচানাচি করেছি, গ্রীষ্মের দুপুরে ওর ডাল থেকে, পুকুরে ঝাঁপ দিয়েছি, মনট কেমন আনচান করে উঠলো, আরে দাঁত মাজা হয় নি। আমি কাছে গিয়ে একটা সরু ডাল ভেঙে নিয়ে দাঁতনের মতো করে নিলাম, কিছুক্ষণ গাছটার তলায় দাঁড়ালাম, মগডালে, কয়েকটা পেয়ারা হয়েছে, কিছুতেই লোভ সামলাতে পারলাম না, বাচচা গুলোকে ঈশারায় কাছে ডেকে নিলাম, ওরা প্রথমে কিছুতেই আসতে চায় না, তারপর আমার ওপর বিশ্বাস জনমালো কাছে এগিয়ে এলো, আমি গাছে উঠলাম, মগডাল থেকে পেয়ারা ছিঁড়ে ছিঁড়ে ওদের উদ্দেশ্যে ছুঁড়ে ফেললাম, ওদের সে কি আনন্দ কি চেঁচা মিচি, আমি দুটো পেয়ারা ওদের কাছ থেকে পারিশ্রমিক হিসাবে চেয়ে নিলাম, কে আমাকে পেয়ারা দেবে তার কমপিটিসন লেগে গেলো, আমি এদের কাউকে চিনি না জানি না, সবাই কাকু আমারটা নাও ,কাকু আমারটা নাও, আমি দুজনের কাছ থেকে পেয়ারা নিলাম। বড়মতলার পুকুর ঘাটে মুখ ধুলাম। বাড়ির পথ ধরলাম।
খামারে উঠতেই নীপার গলা শুনতে পেলাম, ঐ উনি আসছেন, মূর্তিমান বিভীষিকা, যাও ভাইপোর কাছে হিসাব চাও তিনি কখন কোথায় গেছিলেন।
কাকা আমতা আমতা করছে নীপার কথায়।
আমি দাওয়ায় পা রাখলাম।
দীঘা আড়ি ছাড়া কি তোমার আর জায়গা নেই। নীপা বললো।
মুখ নীচু করে হাসলাম। চারিদিকে চোখ বোলালাম, আরো অনেকে বসে আছেন, কাউকে চিনি না।
কাকীমা বললেন, ওঃ গিন্নী হয়েগেছেন ধমক্কাচ্ছে দেখ ছেলেটাকে কেমন। হ্যাঁরে বাবা চাটা কিছু না খেয়ে কোথায় গেছিলি।
বললাম।
সে তো আমি এখুনি শুনলাম, কালিচরণের ঝির কাছ থেকে।
একটু চমকে গেলাম। কালিচরণের ঝি।
হ্যাঁ। ওতো বাইশটিকীর কাছে মাঠে কাজ করছিল তোকে দেখেছে।
ও।
কি খাবি।

কিচ্ছু না।
 
তার মানে।
কলকাতায় এত সকালে খাওয়া জোটে না।
তুইতো তোর সাহেবের বাড়িতে থাকিস।
থাকতাম । এখন থাকি না।
কাকীমা একটু অবাক হলেন। নীপা তোর জন্য আলুভেজে রেখেছে মুড়ি দিয়ে মেখে দেবে বলে।
নীপার দিকে তাকালাম, ভেঙচি কেটে মুখটা ঘুরিয়ে নিল। দাও একটু খানি , বেশি না।
নীপা ছুটে চলে গেলো।
তুই চিন্তে পারিস এদের। কাকা বললেন।
না।
এরা পাশের গ্রাম থেকে এসেছে।
আমি বললাম , ও। নমস্কার করতে আর পারছিনা। কালকে থেকে নমস্কার করতে করতে কোমড় ব্যাথা হয়েগেছে। কেবলা কেবলা চোখে সবার দিকে তাকিয়ে একটু হাসলাম।
তোমার কথা অনেক শুনি গো ছোটবাবু।
বুঝলাম কাকা বড়বাবু, আমি ছোটবাবু।
তা বউমাকে সঙ্গে আনলে না কেনো।
কাকা ধমকে উঠলেন, ছুঁচচা ও এখনো বিয়েই করে নি, বউমা।
তা কি করে জানব বলতো বড়বাবু।
নীপা মুড়ির বাটি দিতে এসে ফিস ফিস করে বললো, ওপরের ঘরে এসো কথা আছে।
আমি ওর দিকে তাকালাম।
মুড়ি খেলাম। চা খেলাম। অনাদি আর দিবাকর বাইক নিয়ে খামারে এলো। খামার থেকেই আমাকে দেখতে পেয়েছে। পায়ে পায়ে দাওয়ায় এলো।
কে এলো।
অনাদি বললো স্যার আমি অনাদি। দিবাকার কাকার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো।
কে।
স্যার আমি দিবাকর।
বাবাঃ অনি এসেছে, তাই তোদের দেখা পাই।
দিবাকর মাথা চুলকাচ্ছে, নীপা ছুটে চলে গেলো। ব্যাপরটা বুঝলাম না। অনাদি বললো, চল একটু কথা আছে।
আমি কাকাকে বললাম, কাকা আমি যাই ওরা এসেছে, ওদের সঙ্গে কথা বলি।
যাও।
ও বাড়িতে গেলাম, ঘরে ঢুকতেই নীপা কট কট করে আমার দিকে তাকালো, ঘর গোছাচ্ছিলো, আমার পেছন পেছন অনাদি , দিবাকর ঢুকলো।
এই নীপা একটু কড়া করে চা বানা।
সে আর বলতে, সব চা খোর এক সঙ্গে জরো হয়েছো।
ঠিক বলেছিস।
মুড়ি খাবে।
সকাল থেকে পেটে কিছু পরে নি।
কি রজ কার্যে গেছিলে।
সে অনেক কাজ তুই বরং একটু চা নিয়ে আয় পরে মুরি আনবি।
নীপা চলে গেলো।
অনাদি প্যাকেট থেকে সিগারেট বার করলো, আমি বললাম রাখ, আমি এক প্যাকেট সখ করে কিনে এনে ছিলাম, কটা আর খাব, তোরা খা। প্যাকেটটা বার করলাম, অনাদি দেখে বললো,
আরি বাব, এত দামি সিগারেট খাবো না।
এটা কি দামি সিগারেট।
হ্যাঁ।
জীবনে প্রথম নিজের হাতে কেনা। বলতে পারবো না।
কলকাতায় তোকে সাংবাদিক বলে কেউ চেনে।
আমি চুপ থাকলাম।
অনাদি একটা সিগারেট বার করলো, দিবাকরকে একটা দিলো। আমিও একটা সিগারেট ধরালাম।
তুই শালা বললি সিগারেট খাস না, যে ভাবে খাচ্ছিস এতো পাক্কা সিগারেট খোরের মতো টান।
আমার বসের নকল করা।
ওরা হাসলো।
শোন অনি সব ব্যাবস্থা করেছি। মাইক্রো সারজারি হবে, খরচ একটু বেশি তবে কয়েকঘন্টার ব্যাপার কাকাকে নার্সিংহোমে ঘন্টা পাঁচেক থাকতে হবে, তারপর ছেড়ে দেবে।
তাহলে খুব ভালো।
কিন্তু ভাই রগঢ়াটা অনেক বেশি।
কতো।
পঁয়ত্রিশ চাইছে।
এখানে এটা ঠিক আছে, কলকাতা হলে হাজার পঁচিশের মধ্যে হয়ে যেতো।
তুই এর রেট জানিশ।
হ্যাঁ।
অমিতাভদার করিয়েছি।
এই নার্সিং হোমটা এখানে খুব নাম করেছে। ইকুইপমেন্টও বেশ ভালো।
কোথায়। স্টেশনের পাশে বম্বেরোডের ধারে।
তাহলে তো একটা গাড়ির ব্যবস্থা করতে হবে।
সে হয়ে যাবে।
নীপা মুড়ির বাটি নিয়ে ঢুকলো, তুমি তো এক পেট গিললে আবার হবে নাকি।
না। তবে একটু চা হলে ভালো হয়।
হবে। অনিদা চা কি এখুনি আনবো না পরে।
তোর আনতে আনতে মুড়ি টেনে দেবো, চাষার ছেলে।
আমি হাসলাম।
তোকে খুব শাসন করছে না।
সে আর বলতে, আমি তো খুব ভয় পেতে শুরু করেছি।
তুই জানিস না, এ তল্লাটের দিদি মনি বলে কথা।
অনাদিদা ভাল হচ্ছেনা বলে দিচ্ছি।
তুই খালি সাপ্লাই লাইনটা ভাল রাখ তাহলে তোর কোন গুনের কথা অনিকে বলবো না।
নীপা বেরিয়ে গেলো, দিবাকর বললো দাঁড়া একটু আসি। বলে বেরিয়ে গেলো। অনাদি হাসলো।
মুড়ি খেতে খেতে অনাদি বললো, তুই রাজি হলে আজই বুক করতে হবে।
কত লাগবে।
পাঁচ লাগবে।
পাঁচ কি হাজার না পাঁচশো।
গান্ডু হাজার হাজার।
চল তাহলে দিয়ে আসি।
অনি আছিস নাকি।
বাসুর গলা মনে হলো। অনাদির দিকে তাকিয়ে বললাম কে বলতো।
আবার কে বাসু হারামজাদা।

ওকেতো দুপুরে আসতে বললাম।
 
শালার এই কদিন ব্যবসা লাটে। অনাদি বললো।
অনাদি বাইরের বারান্দায় বেরিয়ে গেলো। এসো সেগোরা এসো, একটু মেরে দিয়ে যাও।
বুঝলাম বাসু একলা না। আরো অনেকে এসেছে। সিঁড়িতে হুড়ুম দুড়ুম আওয়াজ আমার ঘর ভরে গেলো। কালকে যারা দলে ছিলো না, তারাও এসে হাজির। সকলেই আমাকে দেখে খিস্তির বন্য বইয়ে দিলো। সঞ্জীব , চিকনা, পলা। অনাদি বললো সঞ্জীব এখন বর বেওসায়ী।
সঞ্জীব অনাদিকে তেরে খিস্তি দিলো, হারামী বাঁধে মাটি ফেলা নিয়ে কত ঝেড়েছিস বল।
আমি বললাম থাম থাম।
কেনো থামবো বল অনি, যখনি শালার সঙ্গে দেখা হবে তখনি আমাকে এই ভাবে বলবে।
আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে। তোর এখনো মাথাটা........
নীপা ঢুকলো। সবাইকে দেখে ও চোখ দুটো এমন করলো.......আমি আর চা করতে পারবো না।
চিকনা উঠে দাঁড়িয়ে বললো, এই কথা , চল দেখিয়ে দে চায়ের জায়গাটা তারপর বাকিটা আমি সামলে নিচ্ছি।
হ্যাঁ চলো না, মনিমা আছে দেখতে পাবে।
ওরে বাবা, তাহলে আমি নেই, ভানু তুই যা।
স্যার বসে আছেন।
আমি নীপার দিকে তাকালাম, নীপা যাও একটু কষ্ট কর আমার জন্য।
তোমার জন্য করতে আমার একটুও অসুবিধা নেই। এদের জন্য পারবো না।
দেবী দেবী কেন তুমি ক্রোধান্বিত আমাদের ওপর, আমরা তো তোমায় আবাহন করিতেছি........।
সবাই হো হো করে হেসে উঠলাম পলার কথায়।
নীপা কট কট করে পলার দিকে তাকালো। আমাদের ড্রেস মেটেরিয়াল রেডি।
রেডি মেডাম যখন যাবেন পেয়ে যাবেন।
নীপা চলে গেলো, অনাদি বললো দাঁড়া অনির একটা ব্যাপার নিয়ে আমি আর দিবাকর সকালে ব্লুপ্রিন্ট নার্সিংহোমে গেছিলাম এই আসছি। সবাই চুপ করে গেলো। অনাদি সমস্ত ব্যাপারটা বললো, স্যারের এরকম অবস্থা আমরা কেউ জানি না।
তোরা খোঁজ খবর রাখিস নি।
আমাদের হাটের কোন ডাক্তারবাবুকে দেখিয়েছিলেন।
ছাড় ও সব কথা।
কাজের কথায় আসি। পর্শু যদি অপারেশনের ব্যবস্থা করি তোদের পাবো তো।

হারামী এটা আবার জিজ্ঞাসা করতে হয়, নেতা হয়েছিস না ঘর মোছার নেতা। চিকনা বললো।
ঠিক আছে, ঠিক আছে। ভানু গাড়ির ব্যাপারটা।
চল যাচ্ছি তো, গোড়ার সঙ্গে কথা বলে চলে আসবো।
কখন বেরোবি। চিকনা বললো
তাহলে ঘন্টা খানেকের মধ্যে বেরিয়ে যাই চল।
ঠিক হলো আমরা ছজন যাব, বাসুর একটা বাইক অনাদির একটা বাইক আর চিকনার একটা বাইক। সঞ্জীব ভানু আর আমি। আর সবাই বললো আমরা কি আঙুল চুষবো।
না হাতের কাজ শেষ করে নে, পর্শুদিন ওখানে সবাইকে যেতে হবে। সারাদিন লেগে যাবে।
সবাই মেনে নিল অনাদির কথা। নীপা চা নিয়ে এলো, হাসি ঠাট্টা ইয়ার্কি ফাজলামো কত কি হলো, সবার মধ্যমনি, নীপা আমাদের আড্ডায় কিছুক্ষণ অংশগ্রহণ করলো। চিকনা ধমকে বললো বড়দের আড্ডয় ছোটদের থাকতে নেই।
আমি এখন এ্যাডাল্ট।
নীপা এমন ভাবে কথা বললো সবাই হেসে উঠলো, সঞ্জীবের দিকে তাকিয়ে বললাম, হ্যাঁরে তোর দোকানে টিভি আছে।
আনাদি বললো আছে মানে কি চাই বল।
দেখলি ব্যবসার কথা হলেই কেমন টোকে।
উঃ সব কথা গায়ে মাখিস কেনো। আমি বললাম।
এই হল কাল তোর কথা ভাঙিয়ে কত কাজ বাগায় জানিস ও।
সে তো ভালো।
হ্যারে শালা আমি করি, তুই করিস না।
সঞ্জীব হেসে বললো করি তবে কম। তবে একটা কথা কি জানিস তোকে সবাই বেশ ধসে।
কি রকম।
সেদিন ভানুর একটা ব্যাপারে বিডিওর কাছে গেছিলাম, শালা কিছুতেই করবে না, যেই বললাম ঠিক আছে আমার বন্ধুরে তাহলে একবার ফোন করতে হবে।
শালা তোর নাম শুনেই বলে কিনা, আপনি একটু ঘুরে আসুন আপনার কাজ হয়ে যাবে। শালা সত্যি বলছি অনি কাজটা হয়ে গেলো। তুই শালা এখন মিনিস্টার হয়ে গেছিস।
সবাই হো হো করে হাসলো। সিগারেটের প্যাকেটে মাত্র দুটো সিগারেট পরে আছে। চিকনা একটা আমাকে দিয়ে বললো, এটা কাউন্টার হবে। ভানু বললো, আমি ফার্স্ট, চিকনা বললো, ইঁট পাতো। আমি হেসে ফেললাম।
বাসুকে আলাদা করে বললাম, নীপা তোর দোকানে আজ যাবে কিছু জামা কাপড় কিনতে তুই তো থাকবি না, তাহলে কি হবে, বাসু খিস্তি করে বললো তোকে চিন্তা করতে হবে না। সঞ্জীবকে বললাম, তোর দোকানে একটা ভাল টিভি যদি থাকে আজ একটু লাগিয়ে দেবার ব্যবস্থা কর। সঞ্জীব আমার দিকে তাকলো, গান্ডু।
সবাই চলে গেলো, ঠিক হলো এখান থেকে, বারোটার সময় বেরোব ওরা বাইক নিয়ে যে যার চলে আসবে। আমি ও বাড়িতে গিয়ে কাকার সঙ্গে সব আলোচনা করলাম, নীপা ,কাকীমা , সুর মাসিও ছিল, ওরা আমার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে আছে। আমি কাকাকে বললাম তুমি অনুমতি দাও আমি এখানে থাকতে থাকতে সব কাজ সেরে যেতে চাই। কাকা কেঁদে ফেললেন, চশমা লাগিয়েও আমি আবঝা দেখি বুঝলি অনি , যার চোখ নেই পৃথিবী তার কাছে অন্ধকার। তোর লেখা আমি পরতে পারি না, নীপা পরে পরে শোনায় ঘরে একটা টিভি নেই , মেয়াটা সারাদিন কি করে বলতো সন্ধ্যায় চিকনাদের বাড়িতে যায় একটু টিভি দেখার জন্য।
আমি গুম হয়ে কিছুক্ষণ বসে রইলাম। কাকীমার দিকে তাকিয়ে বললাম, পান্তা খেয়ে বেরোবো।
সে কি রে মেয়েটা তোর জন্য সেই সাত সকাল থেকে রান্না করলো।
নীপার দিকে তাকালাম, ঠিক আছে, আমি স্নান সেরে আসি ওরা এসে পরবে এখুনি।
আমি ওবাড়ি হয়ে পুকুর ঘাটে চলে গেলাম, স্নান সেরে ঘরে এসে দেখি নীপা দাঁড়িয়ে আছে খাটের কাছে, কি যেন করছে। আমাকে দেখেই মুখটা গম্ভীর করে নিল। আমি বললাম কি হলো আবার।
কি হয় নি তাই বলো।
আমি ওর দিকে তাকালাম।
তুমি যে এরি মধ্যে এতো সব প্ল্যান ভেঁজেছো আমাকে জানিয়েছো।
সময় পেলাম কোথায়।
কেনো কাল থেকে সময় পাও নি।
হাসলাম।
ও এগিয়ে এসে আমার টাওয়েলটা চেপে ধরলো।
এই খুলে যাবে খুলে যাবে।
যাক খুলে, আমি কি তোমার কেউ নই।
কে বলেছে তুমি কেউ নও।
তাহলে।
আচ্ছা আচ্ছা ঘাট হয়েছে।
ও টাওয়েল ছেড়ে দিয়ে আয়না চিরুনিটা এগিয়ে দিল।
আমি চুল আঁচড়ালাম।
আমায় একটা জিনসের পেন্ট আর গেঞ্জি এগিয়ে দিল।
আমি বললাম এটা নয় পাজামা পাঞ্জাবী দাও। এগুলো কলকাতার জন্য।
না।
কেনো।

এটা পরলে তোমাকে দারুন স্মার্ট লাগে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top