What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

দেখি নাই ফিরে (উপন্যাস) (2 Viewers)

অনি।
উঁ।
আমার হয়ে যাবে।
হোক না।
না।
কেনো।
এক সঙ্গে বার করবো।
তাহলে আমার মতো করে করি।
কি ভাবে।
ঐ যে বাংলা চোদন।
তনু আমার মুকের দিকে তাকালো।
প্লিজ আরএকবার বলো।
আগে তুমি বলো, তোমরটাকে কি বলে।
যাঃ। আমার মাথা টাকে দুহাতে তুলে ধরে একটা চুমু খেয়ে বললো গুদ।
আর আমারটাকে।
বাঁড়া।
হাসলাম।
তনু আমার ঠোঁট কামরে দিলো। শয়তান।
ওঠো তাহলে শুরু করি।
না। এই ভাবেই তুমি আমাকে জাপটে ধরে চিত করে শোয়াও।
বেরিয়ে যাবে।
যাবে না আমি চেপে ধরে আছি।
আমি হাসলাম।
একবার গড়াতেই তনু আমার তলায় চলে গেলো, আমি তনুর ওপরে। তনু হাসছে। এ যেন বিশ্ব জয়ের হাসি। আমি কাঠঠোকরার মতে ওর ঠোঁটে দুচারবার চকাত চকাত শব্দে চুমু খেলাম, তনু উঁ উঁ করে উঠল। ঠোঁট থেকে মুখ সরাতেই ও বললো, রাক্ষস।
আমার কোমর দুলতে আরম্ভ করলো। তনুর চোখের মনি উল্টে গেলো।
কি হলো।
করো করো, ভেতরটা ভীষণ কুর কুর করছে।
এই প্রথম তনুর মুখ থেক এই ধরনের শব্দ বেরোচ্ছে।
আমি দুই হাতের ওপর ভর দিয়ে ডন দেওয়ার মতো করে ওকে চুদছি। আঃ কি আরাম, আমার টা একবার ভেতরে যাচ্ছে আর বেরিয়ে আসছে, একটা ফচাত ফচাত শব্দ, তনু আমার ঘাড়ে হাতে দিয়ে আমার ঠোঁট চুষছে।
তনু।
উঁ।
একটু পেছন থেকে করবো।
পরে।
কেনো।
আমার একবার জল খসুক তারপর।
হাসলাম। গতি বারালাম। তনু চোখ বন্ধ করে পরে আছে। ওর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। ওর পুশির ভেতরটা কয়লার আগুনের মতো গনগন করছে। আমার নুনুতে ফোস্কা পরে যাবার অবস্থা। হঠাত তনু কেঁপে উঠলো। আমার পিঠে নোখ বসালো। ওর পুশির ভেতরটা কেমন উষ্ণ জলের প্রসবন, আমার নুনুকে ধুইয়ে মুছিয়ে একাকার করে দিল, আমি করে যাচ্ছি।
থামো।
কেনো।
আর পারছি না।
হয়ে গেছে।
তনু চোখ বন্ধ করে হাসলো।
আমি তনুর বুকের ওপর শুয়ে মাইতে চুমু খেলাম। তনু স্থির হয়ে শুয়ে আছে।
আমারটা টন টন করছে।
বুঝতে পারছি তনু ওর পুশির ঠোঁট দুটো দিয়ে আমার নুনুকে কামরে কামরে ধরছে। তনু হাসলো।
ভীষণ ভালো লাগছে।
বেশ কিছুক্ষণ পর তনু চোখ খুললো, আমারটা একটু ছোট এবং নরম হয়ে এসেছে। তনু বললো ওঠো এবার পেছন থেকে করো।
থাক আজ আর করবো না।
না। প্লিজ।
থাক না।
এটুকুই তো তোমার কাছ থেকে চাইছি আর তো কিছু চাইছি না। আজি তো শেষ।
আমি কি নিয়ে থাকবো।
তনু আমার ঠোঁটে চুমু খেলো।
আমারটা ছোট হয়ে গেছে।
ঠিক আছে আমি আবার ঠিক করে দিচ্ছি।
আমি ওর পুশি থেকে আমার নুনু টেনে বার করলাম, একটা ফচাত করে আওয়াজ হলো। হেসফেললাম, ওর পুশির জলে আমার নুনু স্নান করেছে। টপ টপ করে রস পরছে। তনু আমার টাওয়েলটা নিয়ে মুছিয়ে দিলো।
তুমি দাঁড়াও।
আমি দাঁড়ালাম, তনু আমার দুপায়ের মাঝখানে ঠেঙ ছড়িয়ে বসলো। তারপর আমারটা ওর মুখে পুরে চুষতে আরম্ভ করলো। এ চোষার সঙ্গে আগের চোষার পার্থক্য বুঝলাম। এ চোষা স্নেহ ভরা নয়, কাম পাগল এক নারীর তীব্র চোষণ, মাঝে মাঝে আমার মুন্ডিতে ও দাঁত বসাচ্ছে, কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার সোনামনি আবার পূর্ব অবস্থায় ফিরে এলো। তনু মুখ থেকে বার করে আমার মুন্ডিটা নাক দিয়ে ঘোষলো। হাসলো। তারপর নিজে থেকেই পেছন ফিরে কোমর তুলে পুশি এগিয়ে দিলো। আমি পুশির দিকে তাকালাম, ভিজে স্যাঁত সেতে, গভীর গর্তটা আমার সোনামনিকে গিলে খাওয়ার জন্য হাঁ করে আছে। আমি সোনামনিকে গর্তের মুখে রেখে চাপ দিলাম, তনুর কোমরটা একটু দুলে উঠলো।
কি হলো।
না। ঢোকাও।
ঢোকাচ্ছি তো।

আর একবার চাপ দিলাম, পুরোটা সেঁদিয়ে গেলো। ভেতরটা ভীষন টাইট, তনু হিস হিস করে উঠলো। আমি আর অপেক্ষা না করে আস্তেআস্তে করতে শুরু করলাম, যত করছি ভেতরটা তত আগুন গরম হয়ে উঠছে। রস গরিয়ে গরিয়ে পরছে। অনি বেশিক্ষণ করতে পারবো না। কেনো। এখন সেফ প্রিয়েড নয় আমি এমনিতেই........
 
হাসলাম।
হেসোনা প্লিজ করো। থেমো না।
করছি তো।
ভেতরে ফেলো না।
তাহলে।
বেরোবার সময় বার করে নিও।
ঠিক আছে।
আমি করে চললাম, তনুর কোমর মাঝে মাঝে নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে আমি দুহাতে ওর কোমর চেপে ধরে করে চলেছি।
অনি আস্তে আর পারছি না।
আমারও হবে।
তাহলে বার করে নাও।
আর একটু খানি।
আমার ভেতরটা ভীষন জালা জালা করছে।
আমি টেনে বার করে নিলাম, তনু আমার সোনামনির সামনে মুখ নিয়ে এলো আমার সোনামনি তখন রাগে ঠর ঠর করে কাঁপছে।
তনু আমার সোনামনিকে মুখের মধ্যে ভরে নিয়ে টেনে টেনে তিন-চারবার চুষলো, ফিচিত ফিচিত ফিচিত, তনু মুখ থেকে বার করার সময় পেলো না। ওর মুখের মধ্যেই হয়ে গেলো। আমার সারা শরীরটা শক্ত হয়ে গেলো আমি তনুর মাথাটাকে আমার সোনামনির ওপর চেপে ধরে ওর মুখেই দু চারটে ঠাপ মারলাম। তনু ওঁ ওঁ করে উঠলো। আমি তখন দিকবিদিক জ্ঞান শূন্য কি করছি জানি না। আমার মধ্যে তখন একটা হিংস্র পশু জেগে উঠেছে। তনু ওয়াক করে উঠল, আমি সম্বিত ফিরে পেলাম। তনুর মুখ থেকে আমার সোনামনিকে এক হেঁচকায় টেনে বার করে আনলাম। তনুর চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। তার মধ্যেও ও হাসছে, ওর ঠোঁটের কষ বেয়ে রস গরিয়ে পরছে। আমার সোনামনির দিকে তাকালাম, ও থির থির করে কাঁপছে। তনু আমার সোনামনিকে ধরে ওর ঠোঁটে ঘষলো।

সকাল বেলা বড়মার ডাকে ঘুম ভাঙলো। প্রথমে একটু অবাক হয়ে গিয়েছিলাম, তারপর সম্বিত ফিরে পেলাম, কাল অনেক রাতে বড়মার কাছে এসেছি। কলকাতার রাস্তা কাল জলে ভেসেছে। তনুকে ট্যাক্সিতে তুলে দিয়ে আমি চলে এলাম, কাল রাতে কারুর সঙ্গেই বিশেষ কথা হয় নি। খেয়েছি আর নিজের ঘরে চলে এসে শুয়ে পরেছি।
আমি আসার আগেই ছোটমা মল্লিকদা চলে গেছেন। বড়মা বললেন, ওরা কাল সকালে চলে আসবে।
কটাবাজে বড়মা।
নটা বেজে গেছে। সকাল থেকে তোর ফোন খালি বেজেই যাচ্ছে। কয়েকটা তোর দাদ ধরেছিল। বাকি গুলো বিরক্ত হয়ে আর ধরে নি।
ও।
ছোটমা এসেছে।
হ্যাঁ তোমার খেঁটনের জোগাড় করছেন।
তুমি কি ঠাকুর নিয়ে ব্যস্ত।
হ্যাঁ। অফিস যাবি না।
না।
কাল তোর একটা চিঠি এসছে।
কোথা থেকে।
তোর বাড়ি থেকে।
আমার বাড়ি!
হ্যাঁ। মনা মাস্টার দিয়েছেন।
ও।
কি লিখেছেন।
জানিনা। তোর দাদা খুলে পোরেছেন। তোর দাদাকেও একটা দিয়েছেন।
কাম সারসে।
হ্যাঁরে মিত্রার সঙ্গে কি হলো সেদিন বললিনাতো।
কেনো সবই তো বললাম।
না, তুই কিছু গোপন করেছিস।
এ কথাটা আবার কে বললো।
সে তোকে বলবো কেন।
ছোট বলেছে।
না।
সে ছাড়া তোমায় লাগাবার লোক এ ভূ-ভারতে কে আছে বলো।
মিত্রা কাল তোর জন্য একটা বড় বাক্স পাঠিয়েছে। কি আছে। বড়মার চোখ চকচক করছে।
আমার জন্য!
হ্যাঁ।
বড় সাহেব জানে।
হ্যাঁ ওইতো রিসিভ করলো।
বাবঃ একদিনেই এতো সব। তার মানে ব্যাপারটা জটিল।
তুই আর ফাজলামো করিস না।
দিদি।
ঐ ছোট ম্যাডাম এলেন, একজনে হচ্ছিল এতোক্ষণ এবার দোসর এসে হাজির।
কি বলছে গো আমর নামে।
না না কিছু না। বাথরুমে যেতে হবে , তো খাবার রেডি কিনা।
কথা ঘোরাস না।
এই দেখো জিলিপির প্যাঁচ আরম্ভ হলো।
উরি বাবা এ কি সাংঘাতিক গো দিদি, আমরা কথা বললেই, জিলিপির প্যাঁচ।
না না ও ......
তুমি থামো তো, শাক দিয়ে আর মাছ ঢেকো না, তোমার জন্যই ও.......
আচ্ছা বাবা আচ্ছা আমার ঘাট হয়েছে।
এই জায়গায় থাকা সুবিধা জনক নয়, আমি আস্তে আস্তে বাথরুমের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। ছোট মা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। বাথরুম থেকে ফ্রেস হয়ে সোজা নিচে চলে এলাম। সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি সোফার একটা দিক দখল করে বসলাম। খাবার এলো। এই বাড়ির এই একটা মজা, সবাই একসঙ্গে খাবে আর গল্প গুজব হাঁসি ঠাট্টা চলবে। এর মধ্যে মল্লিকদা অগ্রণীর ভূমিকা নেয়।
কি বুবুন বাবু, নতুন কি খবর সংগ্রহ করলেন বলুন।
সবে মাত্র একটা ফুলকো লুচি একটা গোটা আলুর সঙ্গে মুখে তুলেছি, মল্লিকদার কথায় একটু অবাক হোলাম। এই নামটা এরা জানল কি করে। এদের তো জানার কথা নয়।
একটু অবাক হলেন, খবর কি আপনি একাই সংগ্রহ করতে পারেন, আমরাও পারি।
মাথা নীচু করে খেয়ে যাচ্ছি, এখানে কথা বলা মানেই বিপদের হাত ছানি।
কালকে মিত্রা তোর জন্য একটা ল্যাপটপ পাঠিয়েছে। অমিতাভদা বললেন।
ও ঐ বাক্সটায় ল্যাপটপ আছে। বড়মা বললেন।
তা তুমি কি ভাবলে।
না মানে।
ল্যাপটপ কাকে দেয় অফিসের মালকিন, যখন সে বস হয়। মল্লিকদা বললেন।
আমি বড়মার পাশে বসেছিলাম। আলুরদমটা ছোটমা হেবি বানিয়েছে, বড়মার পাত থেকে দুটো লুচি আর আলুর দম তুলে নিলাম।
ছোটমা হাঁই হাঁই করে উঠলো তুই নিবি না, আমি তোর জন্য এনে দিচ্ছি।
ততক্ষণে একটা লুচি আমার মুখে পোরা হয়ে গেছে, বড়মা বললেন থাক থাক ছোট, আমি আর কত খাব বল।
সাতখুন মাপ। ব্যাস। মল্লিকদা বললেন।
যাই বলিস মল্লিক অনি দারুন ম্যানেজ করতে জানে। অমিতাভদা ফোরন কাটলেন।
আমি বুঝলাম আজ আমার কপালে দুঃখ আছে। দুদিন আগে যে স্যেঁত স্যেঁতে ভাবটা এই বড়িতে ছিল, পরিবেশে ছিল চাপা গোঁয়ানি। আজ তা সম্পূর্ণ উধাও। এবার প্রেম বিয়ের প্রসঙ্গ আসবে। সেটা তুলবে মল্লিকদা, তাকে সপোর্ট করবে ছোটমা, বড়মা। আর আমি, অমিতাভদা নির্বাক শ্রোতা।
কি হলো গেঁট হয়ে বসে রইলে যে, লুচি নিয়ে এসো। আমি বললাম।
ছোটমা লাফাতে লাফাত রান্না ঘরে চলে গেলো, কিছুক্ষণ পরে লুচির পাত্র আর আলুর দমের পাত্র নিয়ে এসে টেবিলে ঠক করে বসিয়ে দিল।
এই যে তুই এই টোনাটা দিলি, এই জন্য এগুলো এলো না হলে এগুলো বিকেলের জন্য তোলা থাকতো। মল্লিকদা বললেন।
কি বললে।
মল্লিকদা কাঁচুমাচু হয়ে বললেন, না কিছু না। লুচি আলুর দম , কার্টসি বাই বুবুন।
ঠিক বলেছিস, বড়মা বলে উঠলেন, হ্যাঁরে অনি তোর নাম যে বুবুন তুই আগে তো কখনো বলিস নি।
বুঝলাম, ব্যাপারটা ডজ করে বেরিয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু হলো না। এবার বড়মা চেপে ধরলেন।
তোমরা জানলে কি করে।
ছোট বললো।
ছোট জানলো কি করে।
হ্যাঁরে বদমাশ মিত্রার কাছ থেকে। ছোট বললো।
তাই বলো।
এই বার ছোটমা ব্যাপারটা বললেন, মিত্রা কাল ফোন করেছিলো, প্রথমে ও বুবুনকে চেয়েছিলো, ছোটমা ফোন ধরে বলেছেন বুবুন নামে এ বাড়িতে কেউ থাকে না। তারপর অমিতাভদাকে ফোন করেছিলেন, তারপর সব জানা জানি হয়।

হ্যাঁরে তোর এই মিষ্টিনামটা কে দিয়েছিলো। বড়মা বললেন।
 
একটু চুপ থেকে, বললাম মা এ নামে ডাকতো।
হঠাত পরিবেশটা কেমন ভারি হয়ে গেলো বুঝতে পারলাম। আমি নিজেই হাল্কা করে দেবার চেষ্টা করলাম, ছোটমার উদ্দেশ্যে বললাম, বেশতো নাচতে নাচতে গিয়ে লুচির হাঁড়ি নিয়ে এলে আমার আর বড়মার থালা যে খালি, ছোটমা তাড়াতাড়ি উঠে আমাদের লুচি দিলেন।
মল্লিকদা বললেন আমি আর বাদ যাই কেনো, ছোটমা ধমক দিয়ে বললেন, এ মাসের কোলেসটরেলটা চেক করা হয়েছিলো।
মল্লিকদা হাসতে হাসতে বললেন, দুটো লুচি বেশি খেলে কোলেসটরেল বেড়ে যাবে না। কি বল অনি।
অমিতাভদা গম্ভীর হয়ে বললেন, তোর মনা কাকা তোর বিয়ের জন্য আমাকে মেয়ে দেখতে বলেছেন।
অমিতাভদা কথাটা এমন ভাবে বললেন, সবাই হো হো করে হেসে উঠলো, বড়মা নাক সিঁটকে বললেন এই পুঁচকে ছেলেকে কে বিয়ে করবে বলোতো।
তা ঠিক বলেছো বড়।
না না দাদ আপনি দায়িত্বটা আমাকে দেন। মল্লিকদা বললেন।
আমি মললিকদার দিকে কট কট করে তাকালাম। ছোটমা মাথা নিচু করে হাসি চাপার চেষ্টা করছেন। আমার বিষম খাবর জোগাড়।
ফোনটা বেজে উঠলো।
ওই নাও শ্যামের বাঁশী বেজেছে। ছোটমা বললেন।
তুমি লিঙ্গে বড় ভুল করো, শ্যাম নয় শ্যাম নয় রাধার বাঁশী।
রাধা বাঁশী বাজাতে জানতেন নাকি।
ঐ হলো আর কি।
হ্যাঁ বল।
কি করছিস।
ফ্যামিলি পিকনিক চলছে।
চলে আসবো।
চলে আয়।
না থাক। পরে যাব। তোর দাদা তোর সঙ্গে একবার কথা বলতে চায়।
কবে এলেন।
কালকে।
দে।
হ্যালো।
হ্যাঁদাদা বলুন।
আজ বিকেল একটু ক্লাবে এসোনা।
আবার ক্লাব কেনো আমার গরিব খানায় যদি বসা যায় কেমন হয়।
আমার কোন আপত্তি নেই তোমার বন্ধুকে রজি করাও।
দিন ওকে।
বল।
দাদাকে নিয়ে তুই চলে আয়।
না। আমার কেমন যেন.....
দূর পাগলি তুই চলে আয়, কেউ কিছু মনে করবে না।
দাদা কিছু যদি ভাবেন।
কিচ্ছু ভাববেন না।
কখন যাব বল।
লাঞ্চ থেকে ডিনার।
যাঃ।
আমি অফিস যাচ্ছি না। তুই একটা ভাল জিনিষ পাঠিয়েছিস, সারপ্রাইজ গিফট ওটা নিয়ে সারা দিন থাকব। এনি নিউজ।
না। সব ঠিক ঠাক চলছে। বাকিটা গিয়ে বলবো।
ঠিক আছে চলে আয়।
এতক্ষণ সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়েছিলো, ওরা বেশ বুঝতে পারছিলো আমি কার সঙ্গে কথা বলছি কিন্তু বড়মা সাথেও নেই পাঁচেও নেই তাই ফোনটা রাখতে, বড়মা বললেন, তুই কাকে আসতে বললি।
কেনো তুমি বুঝতে পারো নি।
না।
মিত্রাকে।
মল্লিকদা টেবিলের ওপর জোরে একটা চাপর মেরে চেঁচিয়ে উঠলেন কি বলিনি।
ছোটমা চোখ টিপে টিপে হাসছেন।
আমি লুচি খেয়ে চলেছি।
অমিতাভদা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন। যতই হোক একজন মালিক বলে কথা, তারওপর যে সে হাউস নয়, কলকাতার একট বিগ হাউস।
ও ছোট ও তো নেমন্তন্ন করে খালাস, কি খাওয়াবি। বড়মা বললেন।
ছোটমা বড়মার দিকে তাকাল।
আমি খেতে খেতেই বললাম এতো চাপ নিয়ো না।
তুই থাম ।
আমি একটা কথা বলবো।
বড়মা আমার দিকে উতসুখ হয়ে তাকালেন।
আজকের মেনুটা আমি যদি বানাই তোমার আপত্তি আছে।
থাম তুই কোনোদিন বাজারে গেছিস। ছোটমা বললেন।
যা বাবা বাজারে না গেলে কি মেনু বানানো যায় না।
আচ্ছা বল, অমিতাভদা বললেন।
শরু চালের ভাত, ঘন ঘন করে মুগের ডাল, শুক্তো, পাতলা পাতলা আলু ভাজা, পাবদা মাছের ঝোল কিন্তু গোটা গোটা থাকবে, সরষেবাটা হিংয়ের বড়ি আর আমচুর দিয়ে টক, দই , মিষ্টি। ব্যাস।
মল্লিকদা ছোটমা আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।
বড়মা আমার কানটা মূলে বললেন, ছাগল।
সবাই হেঁসে উঠলো।
অমিতাভদ গম্ভীর গলায় বললেন, অনির মেনু ফাইন্যাল।
বড়মা ছেঁচকিয়ে উঠে বললেন, অতো আর সাউকিরি করতে হবে না।
মল্লিকদা বললেন, আমি তবে বাজারটা করে নিয়ে আসি।
যাও। অমিতাভদা বললেন।

আসর ভাঙলো।
 
আমি আমার ঘরে এসে ল্যাপটপটা নিয়ে বসলাম, আমার জীবনের একটা নতুন দিকের উন্মোচন হলো। মানুষের জীবনে কত কিছু জানার আছে। এক জন্মে তা শেষ করা যায় না। আমারও তাই অবস্থা। হঠাত অমিতাভদার গলার শব্দে সচকিতে পেছন ফিরে তাকালাম।
তোর সঙ্গে কিছু কথা ছিলো।
আমি বললাম ভেতরে আসুন। আমার এই ঘরে একটা কাপরের ইজি চেয়ার আছে। অমিতাভদা তাতে এসে বসলেন। বললেন, মনা তোকে যে চিঠিটা দিয়েছে তুই তো পরলি না।
আপনি তো পরেছেন।
পরেছি।
তাহলে।
ও তোকে একবার যেতে বলেছে।
কেনো।
তোর সম্পত্তি বুঝে নেবার জন্য।
সে নিয়ে আমি কি করবো।
তা ঠিক। তবে তারপ্রতি তোর কিছু কর্তব্য আছে। ছোট থেকে সেই তোকে মানুষ করে তুলেছে।
চুপ করে থাকলাম। এতদিন এই ব্যাপারটা নিয়ে খুব একটা ভাবি নি। হঠাত ভাবনাটা মাথা চারা দিয়ে উঠলো। সত্যি তো।
তার এখন বয়েস হয়েছে। আজ বাদে কাল.........। সে তোকে তোর সব কিছু বুঝিয়ে দিতে চায়।
আমি মাথা নীচু করে বসে আছি।
একবার ওখানে যা। তাকে ঋণ মুক্ত কর।
ঠিক আছে যাব।
কবে যাবি।
আপনি বলুন।
কালই চলে যা। এ কদিন তো অফিস ডামা ডোলে চলবে।
কেনো।
আমি সব খোঁজ খবর রাখছি। ওটার দ্বারা কিছু হবে না। কাগজটা দেখিস।
না।
কি করিস তাহলে সারাদিন।
চুপচাপ থাকলাম।
মিত্রা কেনো আসছে।
জানিনা। তবে ওকে বলেছিলাম, আমরা যা আলোচনা করলাম, জামাইবাবুকে একবার জানানো উচিত, আফটারঅল উনি গার্জেন।
মিত্রা কি মিঃ ব্যানার্জিকে........
না সেভাবে পাত্তা দেয়না।
মল্লিকদা এলেন। খাটের ওপর বসলেন। বুঝলেন বেশ গুরু গম্ভীর আলোচনা চলছে।
তুই কি বলিস।
আমার কিছু বলার নেই, মিত্রা যা ডিসিসন নেবে ওটাই ঠিক ও ৭৫ ভাগ শেয়ার হোল্ড করে আছে।
না।
তোমার কাছে খবরটা ভুল আছে।
অমিতাভদা আমার দিকে তাকালেন। মল্লিকদা অবাক হয়ে আমার কথা শুনছেন। ছোটমা চায়ের পট , কাপ নিয়ে এসে হাজির, ঘরের আবহাওয়ায় বুঝলেন পরিবেশ তার অনুকুল নয়। চা দিয়ে চলে গেলেন।
চা খেতে খেতে অমিতাভদা বললেন, তুই যে ডিসিসন গুলো ওকে দিয়েছিস তা কি ঠিক।
বে ঠিক কোথায় বলুন।
ও কি সামলাতে পারবে।
ওর রক্তে বিজনেস। ওদের সাতপুরুষের ব্যবসা, রক্ত কোনদিন বিট্রে করে না।
আমার কথাটা শুনে অমিতাভদা কেমন যেন থমকে গেলেন। মল্লিকদা অবাক বিস্ময়ে আমার দিকে তাকিয় আছেন, কোনমতেই এতোদিনকার দেখা অনির সঙ্গে এই মুহূর্তের অনিকে মেলাতে পারছেন না।
ঐ যে নতুন ছেলে গুলো এসেছে।
ঐ ব্যাপার নিয়ে আপনি ভাববেন না। আপনি এতোদিন সব ব্যাপার নিয়ে ভেবেছেন, তাতে অনেকের আপনি শত্রু হয়েছেন। আপনি এবার আপনার জায়গাটা নিয়ে ভাবুন। আর কে কি করছে তাতে আপনার কি যায় আসে।
কথাটা তুই ঠিক বলেছিস। মল্লিকদা বললেন।
অমিতাভদা মল্লিকদার দিকে তাকালেন। তুই তো কোনদিন এ ভাবে আমাকে বলিস নি।
বলার সময় পেয়ছি কোথায়। তুমি যা বলেছো, তা পালন করার চেষ্টা করেছি।
না সেটা ঠিক আছে, তবে .......
যুগ বদলেছে, সময় বদলেছে, তোমাকে এগুলো মেনে নিতে হবে। আমি বললাম।
তুই কি ভাবছিস অন্যান্যরা এ গুলো মেনে নেবে।
যারা মানবে না, তাদের সরে যেতে হবে।
কি বলছিস।
ঠিক বলছি।
আলুওয়ালিয়ারা ছেরে দেবে।
না দিলে শেয়ার বেচে চলে যাবে।
কে কিনবে।
মিত্রা কিনে নেবে।
কি বলছিস তুই।
আমি ঠিক বলছি। ও যদি মনে করে একাই সমস্ত শেয়ার কিনে নিতে পারে। আমি ভেতর ভেতর সেই ব্যবস্থা করছি।

অমিতাভদা আমার দিকে তাকালেন। মল্লিকদা অবাক। বড়মা ঢুকলেন।
 
আচ্ছা তোমরা কি ছেলেটাকে একটু শান্তিতে থাকতে দেবে না।
অমিতাভ খেঁকিয়ে উঠলেন।
আমি এগিয়ে গিয়ে বড়মাকে ব্যাপারটা বোঝালাম। বড়মা শিশু সুলভ ভাবে বললেন, অনি আমি একটু শুনবো। আমি বড়মাকে একটা চেয়ার দিয়ে বললাম, ঠিক আছে তুমি বসো কিন্তু কোন কথা বলতে পারবে না। বড়মা বললেন ঠিক আছে, অমিতাভ কর্কশ নেত্রে আমার দিকে তাকালেন। মুখে কিছু বললেন না।
ওরা খুব একটা সহজে ছেড়ে দেবে না।
ছেড়ে দেবে না বললে ভুল ছেড়ে দিতে হবে।
২৫ ভাগ শেয়ার কাদের কাদের আছে।
তিনচারজনের মধ্যে আছে। যাদের কাছে আছে তারা বিক্রি করবে।
তুই কি করে জানলি।
এই জন্য কয়েকদিন কাগজ দেখতে পারি নি।
আমিতাভদা কট কট করে আমার দিকে তাকালেন।
আপনি যাদের লবির হয়ে এতদিন কাজ করেছেন তারা আজ থেকে মাস ছয়েক আগে শেয়ার বেচে দিয়েছে, মিত্রার কাছে। আপনি তা জানতেন ?
অমিতাভদা আমার দিকে তাকালেন।
আমি জানতাম আপনাকে বলিনি।
কেনো।
আজ পরিস্থিতি এমন পজিসনে যে আপনি আমার কথা শুনছেন, ৬ মাস আগে বললে আপনি আমার কথা শুনতেন।
বড়মা মাথা নারছেন, মনে মনে বেশ আনন্দ পাচ্ছেন যাক এমন একজন তাহলে তৈরি হয়েছে, যে ওর মুখের ওপর সপাটে উত্তর দিতে পারছে।
অমিতাভদা চুপ।
আমি যদি আপনার পরিচিত না হতাম এবং মিত্রা যদি আমার পূর্ব পরিচিতা না হতো তাহলে আপনাকে আমাকে সবাইকে ঐ হাউস থেকে সরে যেতে হতো।।
অমিতাভদা মাথা নীচু করে বসে আছেন।
আপনি হয়তো জানেন না আপনার লবির ৪০ ভাগ লোককে তারিয়ে দেওয়া হয়েছে, ৬০ ভাগ লোক আপনাকে ছেড়ে সুনীতদার নেওটা হয়েছে।
অমিতাভদার চোখ দুটো ছল ছলে। বড়মার চোখে আগুনের হল্কা, কখন যে ছোটমা এসে দাঁড়িয়েছেন জানি না।
আপনার ঘরে সুনীতদাকে বসাচ্ছি, মানে ওকে আমি বলির পাঁঠা করবো।
কি বলছিস অনি। মল্লিকদা বিস্ময়ে আমার দিকে তাকিয়ে কথা বললেন।
অমিতাভদা আমার দিকে তাকালেন, চোখ দুটো স্থির।
এই কদিনের মধ্যে ২০ পার্সেন্ট শেয়ার আমার চাই, মিত্রাকে বলেছি টাকা জোগাড় করতে।
অমিতাভদা হতাশ দৃষ্টিতে বললেন, ওরা দেবে।
দেবে না, ছেড়ে দেবে। ওটা হিমাংশু ব্যবস্থা করছে।
হিমাংশু কে।
আমর বন্ধু চাটার্ড এ্যাকাউন্টেন্ট। ওকে দিয়ে সব ব্যবস্থা করছি।
কি বলছিস তুই!
আমি ভুল করছি না। খালি আপনাদের দিকে তাকিয়ে আমি এক নোংরা খেলায় মেতেছি।
অমিতাভদার গালে কেউ যেন সপাটে একটা থাপ্পর কষাল, এমন ভাবে আমার দিকে তাকালেন, স্থবিরের মতো ধীর পায়ে আমার দিকে এগিয়ে এলেন। আমার হাত দুটো ধরে আমাক বুক জরিয়ে ধরে ছোট্ট শিশুর মতো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন।

বড়মা কাপড়ের খোঁট দিয়ে চোখ মুছছেন, ছোটমা মাথা নীচু করে পায়ের বুড়ো আঙুল দিয়ে মাটি ঘষছেন, মল্লিকদা খাটের এক কোনে স্থানুর মতো বসে আছেন। কাঁদতে কাঁদতে অমিতাভদা বললেন, মিনু (অমিতাভদার মুখ থেকে এই প্রথম বড়মার নাম শুনলাম, এর আগে বড়বৌ ছাড়া কোনদিন ডাকেন নি) তুমি আমার কাছে সন্তান চেয়েছিলে, তোমাকে দিতে পারি নি, এই নাও তোমার ছেলেকে, বড়মা এগিয়ে এলেন, আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন, মা বাবা কি জিনিষ জানতাম না, আজ জানলাম, ছোটমা কাছে এসে আমার কপালে চুমু খেয়ে বললেন, বুবুন, মাকে পেয়ে ছোটমাকে ভুলে যাবি নাতো।
 
মিত্রারা এলো প্রায় দেড়টা নাগাদ, আমি তখন আমার ঘরে ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছি। অফিসে কমপিউটর ঘাঁটা ঘাঁটি করি তাই সেই ভাবে খুব একটা অসুবিধা হলো না। বেশ তাড়াতাড়ি সরগরো হয় গেলাম। ছোটমা এসে বললেন, চলুন আপনার গেস্টরা চলে এসেছেন, আমি ছোটমার মুখের দিকে তাকালাম, ছোটমা হাসছেন, এ হাসি পরিতৃপ্তির হাসি, এ হাসি মন ভাল হয়ে যাবার হাসি, এ হাসির মধ্যে লুকিয়ে আছে হারিয়ে গিয়ে আবার ফিরে পাওয়া।
কি হলো ঐ ভাবে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয় কি দেখছিস।
তোমাকে।
তবে রে দুষ্টু, বলে আমার কান ধরলেন।
ওঃ ছোটমা লাগছে, ছাড় ছাড়।
দারুন।
কি দারুন।
মিত্রাকে দেখতে।
পছন্দ।
ছোটমা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লেন, পছন্দ হয়ে আর হবে কি।
ঠিক । কপালে নেইকো ঘি ঠক ঠকালে পাবে কি।
আর বুড়োমি করতে হবে না, এবার চলো।
বড়মা কি বলছেন।
খুব শুনতে ইচ্ছে করছে না।
মাথা নারলাম।
বিয়ে না হলে বউ করতেন।
ও তো আমার বউ।
যাঃ।
হ্যাঁগো।
চল চল ওরা বসে আছে।
চলো।
ছোটমার পেছন পেছন নিচে চলে এলাম, এরি মধ্যে মিঃ ব্যানার্জী, মিত্রা, অমিতাভদা, মল্লিকদা বেশ জমিয়ে গল্প শুরু করে দিয়েছেন। আমাকে দেখেই মিত্রার চোখ দুটো চক চক করে উঠলো, সবার চোখ এড়ালেও ছোটমার চোখ এড়ালো না। মিঃ ব্যানার্জী বললেন, এসো অনিন্দ তোমার জন্য ........মল্লিকদা মিঃ ব্যানার্জীকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, না স্যার, অনিন্দ নয়, অনিন্দবাবু। সবাই হো হো করে হসে উঠলো।
আমি মিত্রার পাশে সোফার খালি জায়গায় বসে পরলাম। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম, সবার সঙ্গে দাদার আলাপ করিয়ে দিয়েছিস, ও বোকা বোকা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, আমার আগে মল্লিকদা সবার সঙ্গে আলাপ করেছেন, এবং আলাপ করিয়ে দিয়েছেন।
বড়মার সঙ্গে আলাপ হয়েছে।
হ্যাঁ।
তুই বড়লোক মানুষ , বড়মা বিশ্বাসি করতে পারে নি তুই এখানে আসতে পারিস।
গালে একটি থাপ্পর।
হ্যাঁরে সত্যি। দাদার সঙ্গে কথা বলার পর তোর সঙ্গে যখন কথা বলছিলাম, এরা আমাকে পাগল ভাবছিল।
এতটা ঠিক নয়। মিঃ ব্যানার্জী বললেন।
ছোটমা চোখ পাকিয়ে গোল গোল চোখ করলেন, মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো, বড়মা রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বললেন, ও কোনদিন পরিষ্কার করে কোন কথা বলে না, সব সময় একটা হেঁয়ালি।
ঠিক বলেছেন, এটা ওর চিরকালের অভ্যাস। মিত্রা বললো।
তোমরা আমার থেকে বেশি জানবে মা।
কলেজেও ও এরকম ছিল সব সময় দেখছি , দেখবো, খাচ্ছি, খাবো ভাব। খালি ডঃ রায় যখন কোন কথা বলতেন তখন অনিকে পায় কে। ও তখন সিরিয়াস।
ডঃ রায় কে ?
আমাদের হেড ডিপ ।
সমকালীন পত্রিকায় একসময় খুব ভালো ভালো প্রবন্ধ লিখতেন।
ও বলতে পারবে। ও স্যারের পোষ্যপুত্র ছিলো।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম।
ঠিক বলেছো, এখানেও তাই, খালি বড় সাহেব কিছু বললে ও শুনবে আর কাউকে কোন পাত্তাই দেয়না। অমিতাভদার দিকে তাকিয়ে বড়মা বললেন।
খিদে পেয়েছে। তোর পায় নি।
কি রাক্ষসরে তুই, এইতো কয়েকঘন্টা আগে অতগুলো লুচি খেলি এরি মধ্যে........ছোটমা বললেন।
সকলে আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন।
তাহলে চলো আমার ঘরে গিয়ে বসি।
আমার কথাটা মিঃ ব্যানার্জী লুফে নিলেন। হ্যাঁ হ্যাঁ সেই ভালো কাজের কথা আগে তারপর খাওয়া দাওয়া।
আমরা সবাই আমার ঘরে এলাম, ছোটমা বাধা দিয়ে বলেছিলেন, বড়দার ঘরে বোস না, আমি বললাম কেনো, ছাটমা চোখ পকালেন, আমি মাথা নীচু করে হাসতে হাসতে বললাম, তুমি মিত্রাদের আদি বাড়িতে যাওনি, গেলে এ কথা বলতে না। মিত্রা মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে, মিঃ ব্যানার্জী আমার দিকে একবার তাকালেন।
আয়, আসুন আমি ওদের আমার ঘরে বসালাম, এই বাড়িটার এই ঘরটা সবচেয়ে সুন্দর, আমার কাছে। পিওর ব্যাচেলার্স কোয়ার্টার বলতে যা বোঝায় ঠিক তাই। তবু এটা কিছুটা মন্দের ভালো, সৌজন্যে ছোটমা, বড়মা। আমার জানলার ধারেই বিশাল একটা আমগাছ, তার পাশেই বড় একটা নিমগাছ। এছাড়া আরো কত গাছ আছে। অমিতাভদা ওঁর যৌবন বয়সে এই বাগান বাড়িটা কিনেছিলেন। সামনের দিকে কিছুটা অংশ বাগান, বাকিটা পেছনে, প্রায় ২৫ কাঠা জমির ওপর বাড়িটা। গাছ কিছু ছিল বাকি উনি পুঁতেছেন, এখন পরিচর্যার অভাবে জজ্ঞল, একে একে সবাই বসলেন, আমি আমার ভাঙ্গা চেয়ারে বসলাম, এটারও একটা ইতিহাস আছে, সময় সুযোগ পেলে পরে বলবো।
দাদা কাল কখন ফিরলেন।
বিকেলের ফ্লাইটে।
আপনাকে কাছে পাওয়া খুব মুস্কিল।
কি করবো বলো। ডাক্তারদের কোন জীবন নেই।
না না এমন ভাবে বলবেন না, আপনি শুধু ডাক্তার হলে আলাদা কথা ছিলো, আপনি এশিয়াতে একটা ফিগার।
লোকে বলে।
মিত্রা মুচকি মুচকি হাসছে।
দেখছোতো অনিন্দ তোমার বান্ধবীর অবস্থা। আমাকে ডাক্তার বলে মনে করে না। বলে কিনা আমি ভেটারনারি ডাক্তার।
সবাই হেসে উঠলাম।
একচ্যুয়েলি ও তো আপনার পাশে আছে, তাই। আমরা আপনাকে সেই ভাবে পাই না তাই বলি।
ওকে বোঝাও, ওর পাগলামির চোটে আমি পাগল হয়ে যাবো।
এই দেখো ভাল হচ্ছে না কিন্তু। মিত্রা বললো।
থাক বাড়িতে গিয়ে কুস্তি করিস আমরা কেউ দেখতে যাবো না।
আবার হাসি।
দাদাকে সব বলেছিস। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম।
হ্যাঁ।
দাদা শুনে কি বললেন।
তুই জিজ্ঞাসা কর।
আমি তো দাদাকে প্রশ্ন করিনি, তোকে করেছি।
আমি কিছু জানিনা যা।
বাঃ তুমি মালকিন, সম্পাদক বলে কথা।

না আমি মালকিন নই।
 
তাহলে কে।
জানিনা।
মিঃ ব্যানার্জী হাসলেন। তুমি কি দাদাদের সব বলেছো।
হ্যাঁ।
দাদা আপনাদের মতামত বলুন।
আমরা কি মতামত দেবো বলোতো, আমরা আজ আছি কাল নেই, কাগজটা চালাবেতো ওরা।
ফোনটা বেজে উঠলো। সন্দীপের ফোন। সরি বলে ঘর থেকে বেরিয়ে বারান্দয় এলাম।
কি হয়েছে বল।
অফিসে এলিনা কেনো।
আমি এখন কয়েকদিন যাবো না। তোকে যে দায়িত্ব দিয়ছিলাম করেছিস।
হ্যাঁ।
ওরা কিছু বলছিল।
না। ওরা তোকে বেস ধসে।
তুই কি করে বুঝলি।
সে কি খাতির যত্ন।
থাক। আমার ফোন নম্বরটা দিয়েছিস।
সে আর বলতে।
অফিসের হালচাল।
সুনীতদা ছড়ি ঘোরাচ্ছে। ম্যাডাম অসুস্থ। তাই কয়েকদিন আসতে পারছেন না। এলে আরো কিছু ছাঁটাই হবে।
ম্যাডাম অসুস্থ তোকে কে বললে।
আরে আমাদের ঐ এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার আছে না কি সাম ঘরুই।
হ্যাঁ।
উনিই বললেন।
তাই।
এখনতো উনিই মালিক।
তাই নাকি।
হ্যাঁরে।
আজ আমার মর্নিং ছিলো। এই ফিরছি। আর শোন শোন অফিসে রিমডুলেশন চলছে।
তাই নাকি।
হ্যাঁরে।
কাগজ ঠিক ঠিক বেরোচ্ছে তো।
বেরোচ্ছে তবে ঐ রকম। তুই আমার চাকরিটা একটু দেখিস।
ঠিক আছে।
যে দায়িত্বগুলো তোকে দিয়েছি করে যা।
ঠিক আছে।
ঘরে এলাম।
মিঃ ব্যানার্জী, অমিতাভদা কথা বলছেন। অফিস কি ভাবে সাজানো হবে। পরবর্তী কি কি কাজ করলে ভাল হয়, সেই নিয়ে। আমি আমার জায়গায় বোসলাম। ছোটমা চায়ের সরঞ্জাম নিয়ে হাজির, পেছনে বড়মা। দেখলাম মেনুটা খারাপ নয়, চিংড়িমাছের ভাজা আর চা। আমি জুল জুল করে চেয়ে রইলাম, ছোটমা হেসে বললেন, তোর জন্য নয়, ওনাদের জন্য।
চা খেতে খেতে আবার আলোচনা শুরু হলো।
মিত্রা বললো, হিমাংশুর সাথে কথা হয়েছে, ও এই সপ্তাহের মধ্যে রেডি করে দেবে।
ভালো তো।
না, একটা সমস্যা হয়েছে।
সেটা আবার কি রকম।
ওরা আমার নামে ট্রান্সফার করবে না।
তোর নামে করবে না, দাদার নামে করুক।
আমাদের দুজনের নামে হবে না।
মিঃ ব্যানার্জী আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, একটা কথা বলবো অনিন্দ।
বলুন, শেয়ারটা তোমার নামে ট্রান্সফার করিয়ে নাও।
আমার নামে, খেপেছেন নাকি।
তোর নামে করলে আপত্তি কোথায়। মিত্রা বললো।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম, আমার চাহুনি মিত্রা চেনে।
ঠিক আছে ঠিক আছে, তুই ওর সাথে কথা বল। মিঃ ব্যানার্জীর দিকে দেখিয়ে দিলেন।
আমি ফোনটা তুলে ডায়াল করলাম। ইচ্ছে করে লাউড স্পীকারে দিলাম।
হ্যাঁবল। তোর কাজ করে দিয়েছি। হিমাংসু বললো।
মাঝে কি ঝামেলা হয়েছে। শুনলাম।
হ্যাঁ হয়েছে, সে তো আমি মিত্রাকে বলেছি।
ঝামেলাটা কে সামলাবে তুই না মিত্রা।
এটুকু সাহায্য তুই যদি না করিস তাহলে কি করে হয়।
ঠিক আছে, দুটো ডিড কর, একটা আমার নামে ট্রান্সফার হচ্ছে, আর একটা কর আমি মিত্রার নামে ট্রান্সফার করছি।
আমি তো বলেছিলাম সেই কথা মিত্রা রাজি হয় নি।
সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে, মিত্রা আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে , মুখ লাল হয়েগেছে। ও ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছে।
ঠিক আছে আমি তোকে আধঘন্টা বাদে ফোন করছি।
ফোন নামিয়ে রাখলাম, মিত্রার দিকে তাকালাম, সম্পত্তি নিয়ে পাগলামো করিস না। আজ আমি ভাল আছি, কাল শত্রু হয়ে যাব না কে বলতে পারে। হিমাংশু আমার ইনস্ট্রাকসন ছাড়া একটুও নরবে না।> ও কে যে ভাবে কাজ করতে বলেছি সে ভাবে করতে দে, তোর ভালোর জন্য বলছি। আমাকে তোর যদি কিছু দিতে হয়.......সে তো অনেক সময় রয়েছে। এতো তাড়াহুড়ো করার কি আছে। মিত্রা মাথা নীচু করে বসে আছে, চোখ দুটো ছল ছলে, আমি জ্ঞানতঃ কোন অন্যায় কাজ করবো না।
চোখ মোছ মুখ তোল। মিত্রা মাথা নীচু করে রয়েছে। আমি তোকে অপমান করতে চাই নি, তোকে বোঝাতে চাইলাম, সেদিনও তোকে বুঝিয়েছি, এই টাইমটা খুব ভাইট্যাল তোকে আটঘাট বেঁধে পা ফেলতে হবে, এখানে ইমোশনের কোন দাম নেই, এ্যাডমিনিস্ট্রেসন আর ইমোশন এক নয়, এটা তোকে আগে বুঝতে হবে।
মাথায় রাখবি আমি কিন্তু ভীষ্মর সঙ্গে যুদ্ধ করছি, যে ইচ্ছামৃত্যুর বর নিয়ে বসে আছে। তুই আমার শিখন্ডি। তোর সাহায্য ছাড়া কাউকে কিছু করতে পারবো না। তবে আমিও ভগবান নাই আমারও ভুল হতে পারে, তখন তুই কৃষ্ণের মতো আমাকে তোর বিশ্বরূপ দেখাস।
সবাই হো হো করে হসে উঠলো।
মিত্রা আপাতঃ গম্ভীর কন্ঠে বললো তুই থামবি, বহুত লেকচার মেরেছিস।
সবাই হাসলাম। আসর ভেঙে গেলো। খাবার টেবিলে মজা করে সবাই খেলাম, মিঃ ব্যানার্জী সবচেয়ে আনন্দ পেলেন আজকের মেনুতে । একথাও বললেন, এরকম খাবার কতদিন পরে খেলাম, তা বলতে পারবনা।

মল্লিকদা টিপ্পনি কেটে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন রাইট চয়েস বেবি।
 
খাবার শেষ হতে মিঃ ব্যানার্জী বললেন অনিন্দ তোমার সঙ্গে আমার কিছু কথা ছিল, চলো তোমার ঘরে যাই। আমর বুকটা ধরাস ধরাস করে উঠলো। তাহলে কি সেদিন রাতের ব্যাপারে......। কিন্তু মিত্রার হাব ভাবে সেরকম কিছুতো বুঝতে পারলাম না। তাহলে।
আমি বললাম চলুন, মিত্রা আমার দিকে একবার তাকাল, ওর চোরা চোখের চাহুনি কিছু বলতে চায় , আমি চোখ সরিয়ে নিলাম। পায়ে পায়ে ওপরের ঘরে উঠে এলাম, মিঃ ব্যানার্জী, আমার পেছন পেছন এলেন।
অনিন্দ তোমার এখানে এ্যাসট্রে আছে।
না।
তুমি সিগারেট খাও না।
খাই, তবে ইচ্ছে হলে।
বাঃ। খুব ভাল হেবিট।
আজ কি আমার সঙ্গে একটা খাবে।
দিন।
আমি আমার টেবিলের তলা থেকে একটা ভাঁড় বার করলাম, মিঃ ব্যানার্জী, ইজি চেয়ারে বসলেন, আমি আমার চেয়ারে। উনি একাট সিগারেট আমাকে দিলেন, আর একটা নিজে ধরালেন। দু চারবার সুখ টান দেবার পর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, অনিন্দ আমাকে একটু সাহায্য করতে হবে।
আপনাকে! আমি।
হ্যাঁ।
আমার সাধ্যের মধ্যে হলে অবশ্যই করবো।
আমি তোমাকে অসাধ্য সাধন করতে বলবো না। তবে বিশ্বাস করি তুমি পারবে।
বলুন।
মিত্রা তোমার খুব ভাল বন্ধু।
হ্যাঁ।
মিত্রাকে তুমি একটু সঙ্গ দাও।
সে তো দিচ্ছি। ওর যখনই অসুবিধা হবে আমি ওর পাশে থাকবো।
না অফিসায়ালি নয়, আন অফিসায়ালি।
আমি মিঃ ব্যানার্জীর চোখে চোখ রাখলাম, মনে মনে বললাম ডাক্তার তুমি বড় খেলোয়াড় হতে পার, আমি ছোট খেলোয়াড় এটা ভাবছ কেনো।
আমি আপনার কথাটা ঠিক ধরতে পারছি না।
তুমি সেদিন আমাদের বাড়িতে গেছিলে, মিত্রা আমায় বলেছে, তাছাড়া সেদিন থেকে মিত্রা একটা জিনিষ ছেড়ে দিয়েছে, যা আমি বিগত দেড় বছরে চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারিনি।
কি ?
ও সেদিন থেকে আর ড্রিংক করে না।
বাঃ এটা খুব ভাল খবর।
শুধু ভালখবর নয়, ও তোমার সান্নিধ্যে এসে অনেক বদলে গেছে। ওর চাল চলন কথাবার্তা।
এটা আপনি বারিয়ে বলছেন, মিত্রা বড়াবরি ভাল মেয়ে।
আমি অস্বীকার করতে পারি না। তবে কি জানো অনিন্দ তুমি আমার থেকে অনেক ছোট, আজ তোমার কাছে আমি অকপটে স্বীকার করছি, আমি ওকে আমার স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারি নি। সে অনেক কথা, সময় সুযোগ হলে তোমায় বলবো। আজ মনে হচ্ছে তোমাদের এখানে এসে আমি একটা দিশা খুঁজে পাচ্ছি।
আমি মিঃ ব্যানার্জীর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। একটা সিগারেট শেষে দ্বিতীয়টা ধরেছেন।
অর্থ বাদ দিলে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কিছু কর্তব্য থাকে, আমি তার কোনটাই পালন করতে পারি নি। তুমি হয়তো প্রশ্ন করবে কেনো। ওই যে বললাম সে অনেক কথা। আমি তোমার সঙ্গে দেখা হওয়ার আগে তোমার কথা ওর মুখ থেকে বহুবার শুনেছি। কাকতালীয় ভাবে তুমি যে আমাদের হাউসেই কাজ করো তা জানতাম না। ক্লাবে তোমার সঙ্গে প্রথম পরিচয়, সেদিনই তোমায় আমি মার্ক করেছি। তবে তুমি এর মধ্যে কোন যোগাযোগ রাখ নি মিত্রার সঙ্গে, তুমি ভাইজ্যাক গেছো সেও আমি জানতাম। তুমি এ বাড়িতে থাকো না, তাও আমি জানি। তবে মিত্রা কিছু এ ব্যাপারে আমাকে বলে নি। আমি নিজের ইন্টারেস্টে তোমার খোঁজ খবর নিয়েছি।
আমি মিঃ ব্যানার্জীর দিকে তাকিয়ে আছি, উনি ভাবলেশহীন ভাবে ওনার কথা বলে চলেছেন।
তুমি তো আমার বয়েসটা দেখছো, মিত্রার পাশে আমায় মানায় না।
আমার কানের লতি গরম হয়ে যাচ্ছে।
কোন একটা কারনে মিত্রাকে আমি বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছি। সেটাও তোমাকে আমি একদিন বলবো।
আমি মিঃ ব্যানার্জীর কথায় অবাক হলাম, উনি কি নিজের কথা বলছেন, না বানিয়ে বানিয়ে আমার সঙ্গে গল্প করছেন।
আমি তোমাকে একটা রিকোয়েস্ট করবো, মিঃ ব্যানার্জী ইজি চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে আমার হাত দুটো ধরলেন, ওর সঙ্গে কলেজ লাইফে তুমি যে ভাবে মিশতে ঠিক তেমনি ভাবে মেশো, আমার কোন আপত্তি নেই।
আমি মিঃ ব্যানার্জীর চোখে চোখ রাখলাম, চোখ দুটো কেমন হতাশ, এতো বড় একজন ডাক্তার আমার সামনে কেমন যেন হয়ে পরেছেন। সত্যি বলছি অনিন্দ তুমি যদি ওর বেড পার্টনারও হও তাতেও আমার কোন আপত্তি থাকবে না। আমি ওকে ভীষণ হাসি খুশি দেখতে চাই। ওর মধ্যে যে প্রাণটা হারিয়ে গেছিলো, তুমি কয়েকদিনের মধ্যে তা ফিরিয়ে দিয়েছো।
সবচেয়ে অবাক কথা কি জানো অনিন্দ, আমার কথায় অভিমানে ওর চোখে কোন দিন জল দেখি নি, আজ প্রথম ওর চোখে জল দেখলাম। আমি জানি ও তোমাকে ভীষণ ভালবাসে। আমি সেই মুহূর্তে ডিসিসন নিয়েছিলাম, তোমাকে আমি সব বলবো। আশা রাখি তুমি আমার এই অনুরোধটুকু রাখবে।
এ আপনি কি বলছেন!
আমি ঠিক বলছি, আমি স্ব-জ্ঞানে তোমাকে বলছি, এটা আমার কোন অভিনয় নয়। এটা আমার পরাজয়, তবু এ পরাজয়ের মধ্যে আনন্দ আছে। সে তুমি বুঝবে না। তোমাকে আমি বলবো, সব বলবো।
বলো তুমি এ উপকারটুকু করবে।
আমি কথা দিতে পারবো না। তবে চেষ্টা করবো।
কি হলো এবার যেতে হবে তো। ঘড়ির দিকে একবার তাকিয়েছো, কটা বাজে।

দেখলাম ছোটমা, বড়মা, মিত্রা আমার ঘরের গেটের মুখে দাঁড়িয়ে। মিত্রা আমার দিকে বিস্ময় চোখে তাকালো, মিঃ ব্যানার্জী চশমাটা চোখ থেকে খুলে রুমাল দিয়ে মুখ মুছলেন।
 
চার বছর পর আমার নিজের গ্রামে পা রাখলাম। দেখতে দেখতে চার চারটে বছর কোথা দিয়ে কেটে গেছে জানি না। বাস থেকে চকে (গ্রাম্য ভাষায় বাস স্ট্যান্ডকে চক বলে) নামতেই সবাই কেমন উতসুখ হয়ে আমার দিকে তাকাল। এখান থেকে আমায় ১০ কিলো মিটার হেঁটে যেতে হবে। প্রায় আড়াই ঘন্টার রাস্তা, একটা সময় সাইকেল নিয়ে এসব রাস্তায় কত ঘোরা ঘুরি করেছি। আজ কেমন যেন মনে হচ্ছে।
সূর্যিমামা এখন মধ্য গগনে। আগে এই চকে যে কয়টা দোকান দেখে গেছিলাম, এখন তার থেকে কয়েকটা বেরেছে। পরিচিত যারা ছিলেন তাদের কাউকেই দেখতে পাচ্ছি না, হয়তো চিনতে পারছি না। আমরা যে চায়ের দোকানে এসে আড্ডা মারতাম সেই দোকানে ঢুকলাম, একটা বছর কুড়ির ছেলে বসে বসে চা বানাচ্ছে, আরো অনেকে বসে আছেন। আমি চায়ের কথা বলতে ছেলেটি একটু অবাক হয়ে তাকালো। এটা পরিতোষদার চায়ের দোকান, পরিতোষদার কথা বলতেই ছেলেটি কেমন ভাবে যেন আমার দিকে তাকালো, তারপর আস্তে করে বললো বাব বাড়িতে আছেন। চা দিতে একটু দেরি হবে, আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম ঠিক আছে, তুমি করে দাও। আমি একটু বসছি। আমি জানি এই দুপুর রোদে এখানে কেউ চা খায় না। তাই চায়ের সরঞ্জাম সব ধোয়া হয়ে গেছে, আমার জন্য আবার নতুন করে বানাতে হবে তাই দেরি হবে।
দুটো মিষ্টি চেয়ে নিলাম, না মিষ্টির স্বাদ সেরকমই আছে, জলের স্বাদও একই রকম, যাক এত পরিবর্তনের মধ্যেও এই দুটোর স্বাদ এখনো ঠিক আছে। চা খেলাম, কথা বলতে বলতে জানলাম, এখন আর হেঁটে যাবার দরকার নেই চাইলে ট্রলি পাওয়া যায়, লোক যদি বেশি হয় তাহলে পয়সা কম লাগে না হলে পয়সা একটু বেশি লাগে, চা খেতে খেতে আমাদের হাউসের কাগজটায় একটু চোখ বোলালাম, আমার একটা লেখা বেরিয়েছে দেখছি, এ লেখাটাতো অনেক দিন আগের লেখা, অমিতাভদা সরিয়ে রেখে ছিলেন, মনে মনে হাসলাম।
বাবু আপনি কি যাবেন নাকি ?
হ্যাঁ।
কোথায় যাবেন ?
গ্রামের নাম বলতেই আশেপাশের অনেক লোক আমার দিকে তাকালেন।
কার ঘর যাবেন ?
মনা মাস্টার।
এবার সকলে মুখ চাওয়া চাওয়ি করছেন।
আপনি কে হন ?
আমি ওনার ছাত্র।
ও। তা বাবু আপনি কোথা থেকে আসছেন।
কলকাতা থেকে।
ওনার এক আত্মীয়ও কলকাতা থাকে। কাগজে কাজ করে। বিরাট সাংবাদিক।
হাসলাম।
তুমি থাকো কোথায়?
মনা মাস্টারের পাশের গ্রাম।
ও।
চলো তাহলে।
ওর ট্রলিতে চেপে বসলাম। মিনিট পঁয়তাল্লিশ লাগলো যেতে, যেতে অনেক কথা বললাম, ট্রলিওয়ালার সঙ্গে, গ্রামের খোঁজ খবর নিলাম, কয়েকজনের নাম বলতেই, ও কেমন সন্দেহের চোখে আমার দিকে তাকালো, বললো,
আপনি এঁদের চেনেন নাকি।
বললাম হ্যাঁ অনেক দিন আগে একবার এসেছিলাম, তখন তোমাদের এই রাস্তাটা তৈরি হয় নি,
হ্যাঁ বাবু এতো বছর খানেক হলো, তাও আবার বর্ষার সময় মোরাম ধুয়ে যায়।
যাক রাস্তাটা মোরাম হয়েছে বলে তোমাদেরও কিছু রোজগার হচ্ছে বলো।
সামনের দিকে তাকালাম, সেই বিশাল মাঠ, এখানে আমার কতো স্মৃতি লুকিয়ে আছে, ঐ দূরে দেখা যায় উনা মাস্টারের বাড়ি, ঐ বাঁধের ওপাশ দিয়ে গেলেই সৌমি পূর্নিমাদের বাড়ি, ঐ দূরে দেখা যায় শ্মশানটা, না যেমন দেখেগেছিলাম, ঠিক তেমনি আছে, মাঠে এখন চাষ চলছে, সবুজ গালিচার মতো, যেদিকে তাকাও খালি সবুজ সবুজ একটু আনমনা হয়ে পরেছিলাম।
আরে কে যায় অনি না।
ট্রলিটা বেশ কিছুটা এগিয়ে গেছে। আমি ট্রলিওয়ালাকে থামাতে বললাম, ও ট্রলি থামালো, ছুটে কাছে এলাম, উনা মাস্টার, নীচু হয়ে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলাম,
থাক থাক। আমার থুতনি ধরে চুমু খেলেন।
তুই তো অনেক বড় হয়ে গেছিস।
না স্যার, আপনার কাছে এখনো আমি অনিই আছি।
তোর লেখা গুলো পরি। আজও তোর লেখাটা পরেছি। তোর লেখার হাতটা বড়ো ভালো।
না স্যার। মাথা নীচু করলাম।
তোর লেখা গুলো এখনকার ছেলে গুলোকে পরাই বুঝলি ওদের বলি, আনিও তোদের মতো আমার কাছে পরেছে, কিন্তু তোদের মতো এতো বখাটে ছিলো না। ও আমাদের গ্রামের গর্ব।
এত প্রশংসা আমি আগে কখনো শুনি নি লজ্জায় আমার মাথা আর উঠছে না। খালি মাঝে মাঝে মুখ দিয়ে স্যার স্যার বেরিয়ে আসছে। সত্যি গ্রামের মানুষ গুলো এতো সাধাসিধে হয় যে তাদের কোন তুলনা হয় না।
কলকাতা থেকে আসা হচ্ছে ।
হ্যাঁ।
কয়দিন থাকবি তো।
হ্যাঁ।
মনার আবার শরীরটা খারাপ হয়েছে। বয়স হচ্ছে তো।
উনা মাস্টারের মুখের দিকে তাকালাম।
যা, পারলে একবার আসিস।
ঠিক আছে।
মনটা খারাপ হয়ে গেলো, মনা কাকার শরীর খারাপ। কি হয়েছে। ধীরে ধীরে ট্রলিতে উঠে বসলাম, আর একটু খানি, তারপর নদী পেরিয়ে আমার স্বর্গের সিঁরি।
বাবু আপনি চকে দাঁড়িয়ে মিথ্যে কথা বলেছেন।
আমি, কই নাতো।
ঐ যে আপনার পরিচয় দেন নি। আমি কিন্তু আপনাকে চিন্তে পেরেছি।
তুমি আমাকে চেনো।
হ্যাঁ বাবু, আমি বিজয়।
কুইল্যা ঘরের বিজয়।
হ্যাঁ।
হাঁড়ি পারায় থাকো।
হ্যাঁ বাবু, আমি তো আপনাদের ক্ষেতটা ভাগে চাষ করছি। মনা মাস্টার দিয়েছেন।
আমি অবাক হয়ে বিজয়ের দিকে তাকালাম।
নদী ঘাটের কাছে এসে বিজয় ট্রলি থামালো। আমি নামলাম , বাঁশের সাঁকোটা এখনো সেই জায়গাতেই আছে, না কোন পরিবর্তন নেই।
বিজয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম, কতো দেবো।
না বাবু আপনার কাছ থেকে পয়সা নিতে পারবনা।
কেনো। তুমি এতটা পথ এলে।
সে বৈকালে যখন আপনার ঘর যাব তখন দিবেন।

না না তুমি এখন নাও।
 
না।
বিজয় চলে গেলো।
আমি আমার বাসভূমে পা রাখলাম, এতদিন নিজভূমে পরবাসে ছিলাম, পাশাপাশি দুটো দোতলা মাটির বাড়ি, একটি আমার পৈত্রিক বাড়ি আর একটি মনা মাস্টারের, চারিদক শুনসান, এই দুপুর বেলায় দূরে কোথায় কুব পাখি কুব কুব করে ডাকছে, আমার জন্ম ভিটেয় কিছুক্ষণ দাঁড়ালাম, যেমনটি রেখে গেছি তেমনটি আছে। বাইরের গেটে তালা বন্ধ, দোতলায় বারান্দায় কয়েকটা জামা কাপড় ঝুলছে, হয়তো রাতের বেলায় কেউ থাকে, বুকের ভেতরটা কেমন যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে, একটা অব্যক্ত যন্ত্রণা, চোখের কোল দুটো কেমন জ্বালা জ্বালা করছে। ভেতর থেকে কেউ যেন বললো অনি এসেছিস, চারিদিকে চোখ মেলে তাকালাম, না কেউ নেই।
পায়ে পায়ে আমার বাড়ি ছাড়িয়ে মনি কাকার বাড়ি এলাম, কতটা দূরত্ব , হাত পঞ্চাশেক হবে। ভেতরে এলাম, বাইরের দাওয়ায় বেঞ্চটা যেমন ছিলো ঠিক তেমনি আছে, একটা বছর আঠারোর মেয়ে ভেতর বাইরে বসে, চুনো মাছ বাছছে, পরনে স্কার্ট ব্লাউজ, ব্লাউজটা ঘটি হাতা, টিপিক্যাল গ্রাম্য পোষাক, অনেকদিন পর এই পোষাক চোখে পরলো। হাঁটু পর্যন্ত স্কার্টটা তোলা, স্কার্টের ফাঁক দিয়ে ইজের দেখা যাচ্ছে, মেয়েটা প্রথমে আমাকে দেখেত পায় নি। কাঁধ থেকে হাতের ল্যাপটপটা বেঞ্চের ওপর রাখতেই পলকে তাকিয়ে একটা গঁ গঁ শব্দ করে দৌরে ভেতরে অদৃশ্য হয়ে গেলো। আমি হতবাকের মতো দাঁড়িয়ে আছি। ভেতরে চাঁচামেচির শব্দ, ধুপ ধাপ আওয়াজ, মনিকাকার গলা পেলাম। কিছুক্ষণ পর কাকীমা বেরিয়ে এলেন, পাসে কাকীমার মতো আর একজন ভদ্রমহিলা, তার পেছনে সেই মেয়েটি, পরিষ্কার দেখতে পেলাম এখনো তার বুকটা কামরশালার হাপরের মতো নামা ওঠা করছে। কাকীমা বেশ কিছুক্ষণ আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে, আমি নীচু হয়ে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলাম। ঝড় ঝড় কর কেঁদে আমাকে বুকে জরিয়ে ধরলেন, এতদিন পর কাকা কাকীমাকে মনে পরলো।
ভেতর থেকে কাকা তখনো চেঁচাচ্ছেন, কে এসেছে গো কে এসেছে, তোমরা কথা বলছো না কেনো।
কাকীমা ধরা গলায় বললেন অনি এসেছে।
অনি এসেছে, কোথায় কোথায় ওকে ভেতরে নিয়ে এসো আগে।
মেয়েটার দিকে তাকালাম বিদ্যুতের মতন সামান্য হাসির ঝলক এসেই আবার মিলিয়ে গেলো।
যাচ্ছি কাকা তোমাকে ব্যস্ত হতে হবে না। আমি যাচ্ছি।
ও সুরমা, সুরমা। ওঃ এরা ডাক দিলে সারা দেয়না কেনো। কোথায় যায় এরা।
কাকীমা বললেন এই তো এখানে।
বুঝলাম সুরমা এই ভদ্রমহিলার নাম। গ্রামের রীতি একজনকে প্রনাম করলে সকলকে প্রণাম করতে হয়, আমিও সেই ভদ্রমহিলাকে প্রণাম করলাম, উনি পাটা সামান্য সরিয়ে নিয়ে বললেন থাক থাক বাবা। ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করুন, যাও ভেতরে যাও, তোমার জন্যই ওই লোকটা এখনো বেঁচে আছে।
কাকীমাকে জরিয়ে ধরে ভেতরে এলাম, এ পৃথিবীতে আমার আপনার বলতে কেউ নেই, কিন্তু আমি একা নই, বুকটা আবার কেমন ভারী হয়ে এলো। ভেতরে এলাম, কাকা বিছানায় উঠে বসেছেন। আমি পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতেই কাকা খাট থেকে নেমে এসে আমায় বুকে জরিয়ে ধরলেন, কাঁপা কাঁপা হাতে আমার চোখে মুখে হাত বোলাচ্ছেন, যেন কিছু খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা । তারপর ঝর ঝর করে কেঁদে ফেললেন।
তুই কি আমাদের একবারে ভুলে গেলি।
আমার গলাটাও ধরে এসেছে, খুব কান্না পাচ্ছে কিন্তু নিজেকে শক্ত করে নিলাম,
কোথায় ভুলে গেলাম , তোমার চিঠি পর্শুদিন পেয়েছি, আজই চলে এলাম।
বেশ কিছুক্ষণ এই ভাবে থাকার পর কাকা কাপড়ের খোঁট দিয়ে চোখ মুছে বললেন, যাও যাও ওর খাবার ব্যবস্থা করো। ও এখন একটু বিশ্রাম নিক। ও নিপা। উঃ মেয়েটা যায় কোথা বলোতো।
এই তো আমি এখানে।
যা যা অনিদার ঘরটা একটু গুছিয়ে দে।
গোছানো আছে। তোমাকে হুড়াহুড়ি করতে হবে না।
এবার কাকীমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, এঁদের তো চিনতে পারলাম না।
চিনবি কি করে সেই কবে ছোট সময়ে দেখেছিলি, আমার বোন সুরমা। আর ওটা ওর মেয়ে নিপা, এবার ১২ক্লাস দিয়েছে। তুই যখন সুরকে দেখেছিস তখন ওর বিয়েই হয় নি।
আমি নিপার দিকে তাকালাম, নিপা মাথা নীচু করে মুচকি মুচকি হাসছে।

অনেক দিন পর খোলা আকাশের নিচে পুকুরে স্নান করলাম, ভীষণ ভালো লাগলো। কাকীমাকে বলেছিলাম, দেখো আমার জন্য কিছু রান্না করতে হবে না। পান্তা ভাত আছে, কাকীমা বলেছিলেন, আছে, আমি বললাম, নীপা তো চুনো মাছ বাছছে , ওটাও তোর চোখে পরেছে, হ্যাঁ ওই তো বাইরের বারান্দায় বসে, ওখান থেকে কিছুটা নিয়ে ভজে দাও, লঙ্কা পেঁয়াজ তো আছেই। কাকীমা হাসলেন, তোর কি এখোনো এই সব খাওয়ার অভ্যাস আছে, আমি হেসে বললাম, জন্ম আমার এই ভিটেতে , বড় হয়েছি এখানে, মাটিটাকে ভুলি কি করে বলোতো।
কাকা আমার জন্য ব্যস্ত হয়ে পরলেন। ও নীপা আজ হাটবার না, তুই এক কাজ কর অনিলকে একবার ডাক, ওকে হাটে পাঠাই। আমি বললাম থাক না, আমি যাবখোন খেয়ে দেয়ে। কাকা চুপ করলেন।
খেতে খেতে সবার খবর নিলাম, কাকার চোখে ছানি পরেছে, তাই চোখে কম দেখে, এখানে এক ডাক্তার আছে, সে নাকি বলেছে অনেক টাকা লাগবে। তাই কাকা করাতে চান নি। নীপারা আপাতত এখন এখানেই থাকবে, নীপা এখান থেকেই কলেজে পরবে। আমার বন্ধু অনাদি নাকি গ্রাম পঞ্চায়েত হয়েছে, আমাদের বাড়িতে লাইট এসেছে, কিন্তু ভোল্টেজ কম, এই আরকি কেরোসিনের খরচ কিছুটা বেঁচেছে। আরো সব খবরা খবর নিলাম। সবচেয়ে আনন্দ পেলাম এখানে নাকি মোবাইল টাওয়ার বসেছে অনেকের কাছে মোবাইলওআছে। এই কিছুক্ষণের মধ্যে নীপার সঙ্গে খুব ভাব জমিয়ে ফেললাম, নিজের তাগিদে, এখানে দিন কয়েক যদি থাকতেই হয়, তাহলে আমাকে বোবা হয়ে থাকতে হবে, এই বুড়ো বুড়িদের সঙ্গে কত কথা বলবো।
খাওয়া শেষ হতে আমি আমার ঘরে এলাম, পরিপাটি করে ঘরটা সাজানো। যেমনটি দেখে গেছিলাম, ঠিক তেমনি। আমার বাবা নাকি এই ঘরটা করেছিলেন তার ছেলের জন্য নিজেরা বুড়ো বুড়ি হয়ে নিচে থাকবেন, আর আমি বউ নিয়ে দোতোলার এই ঘরে থাকবো। নিজে নিজে হাসলাম, মনা কাকা সব কিছুই যত্নের সঙ্গে রেখেছেন, আমার কন্ট্রিবিউসন বলতে মাসে মাসে হাজার টাকা, অমিতাভদা প্রত্যেক মাসে আমার মাইনে থেকে হাজার টাকা করে কেটে নিয়ে, মানিঅর্ডার করে এখানে পাঠিয়ে দিতেন। বাকিটা বড়মার হাতে আমি আমর প্রয়োজন মতো বড়মার কাছে নিয়ে নিতাম। যেদিন থেকে আলাদা থাকতে আরম্ভ করলাম সেদিন থেকে আমার মাইনে আমার হাতেই আসতো তবে হাজার টাকা বাদ দিয়ে।
মোবাইলটা অন করতেই অনেক গুলো মিশ কলের ম্যাসেজ এলো, প্রত্যেকটা নম্বর দেখলাম, এর মধ্যে মিত্রার ফোন আছে, বড়মার আছে, আর ফোন নম্বর গুলো বুঝতে পারলাম না। বড়মাকে ফোন করে শেষ পরিস্থিতি জানালাম, বড়মার গলায় অভিমানের সুর, বাড়ি গিয়ে আমাদের ভুলে গেছিস, বড়মাকে সব বোঝালাম, আমাদের এখানের ব্যাপারটা, উনি জানেন আমি গ্রামে থাকি কিন্ত সেই গ্রামটা যে এত অ-অঝোড়ে গ্রাম তা তিনি এখন সবিশেষ জানলেন। শেষ কথা, সাবধানে থাকিস।

একটা সিগারেট খাওয়ার ইচ্ছে হলো। আসার সময় এক প্যাকেট দামি সিগারেট কিনে এনেছি। তাও জীবনের প্রথম। সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বার করে ধরালাম, বেশ ভাল লাগছে খেতে, দুটো টান দিয়ে পুকুর ধারের জানলাটা খুললাম। বাঁশ ঝাড়ের ফাঁক দিয়ে পুকুরটা পুরো পুরি দেখা যাচ্ছে। নীপাকে দেখলাম, পুকুর ঘাটে, হাতে মুখে সাবান দিচ্ছে, মেয়েটাকে দেখতে খুব একটা ভাল নয়, একবার দেখলে চোখে পরে যাবে এমন নয়, কিন্তু অনেকক্ষণ তাকিয়ে দেখলে ওকে বেশ ভাল লাগে, ওর মুখে একটা গ্রাম্য সরলতা, ছিপ ছিপে শরীরের মধ্যে বার বার বুকটার দিকে তাকাতে ইচ্ছে করে। আমি জানলা থেকে সরে আসতে চাইলাম কিন্তু মন কিছুতেই মানছে না।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top