মিলিরা হাসছে। বরুণদাও হাসছে। ফোনটা পকেটে রাখলাম। কুত্তা বিস্কুটটা কিরে। মিত্রা বললো। এলে দেখতে পাবি। কথা বলতে বলতে আমি আমার কাজ করে চলেছি। মিত্রাদি আজ একটা নতুন জিনিষ আবিষ্কার করলাম। মিলি বললো। আবার কি আবিষ্কার করলি। অনিদা বটাদার কাছে উড়িয়া ভাষা শিখেছে। ধ্যাৎ। জিজ্ঞাসা করো। কিরে মিলি কি বলছে ? বরুণদা আমার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে। আমি মিত্রার কথার কোন উত্তর দিলাম না। মিলি গাড়ির বিলগুলো এখন তুমি দেখছো। দুটো বিল আটকে রেখেছি। কেন ? মনে হলো ম্যানিপুলেট। বার করো। এরি মধ্যে তোমার দেখা হয়ে গেলো। বরুণদা আমার দিকে তাকাল। হ্যাঁ। তোমার কি সব মুখস্থ। না। তাহলে। তুমিও কয়েকদিন প্র্যাকটিস করো দেখবে দুয়ে দুয়ে চার হচ্ছে। পাঁচ হবে না। যে পাঁচ করতে যাবে। ধরা পরে যাবে। তোমার কাজ হচ্ছে খবরদারি করা। আর কাজটা করিয়ে নেওয়া। সেতো বুঝলাম, আমাকে একটু বোঝাও শিখি। দেখো কি করি, তাহলে বুঝতে পেরে যাবে। মিলি তুমি মিত্রার কমপিউটারে বসো তো। একটা চিঠি লেখো। তিনটে পয়েন্ট থাকবে। এক গতমাসে কেনো পনেরোটা গাড়ি এক্সট্রা নেওয়া হয়েছে। সেই গাড়িগুলো কি কি পারপাসে ব্যবহার হয়েছে। কারা কারা ব্যবহার করেছে। দুই এ্যাডের জন্য মান্থলি কটা গাড়ি ব্যবহার করাহয় টোটাল কস্টিং কতো লাস্ট থ্রি মান্থসের। তিন নিজেদের গাড়ি প্রতিমাসে কতো কিলোমিটার চলে তার কস্টিং এটাও লাস্ট থ্রি মান্থসের। বাবাঃ তুমিতো বড়ো খেলোয়াড়। ছোট খেলোয়াড় তুই ভাবলি কি করে। কিছু শিখলি। মিত্রা মিলিকে ধমক দিল। শিখলাম মানে এইরকম ছোট ছোট টিপস পেলে, নড়িয়ে দেব একবারে। চিঠিটা কার নামে লিখবে। তোমার নামে। তুমি আমাকে দিচ্ছ। আমি কিংশুকবাবুকে ফরোয়ার্ড করছি। হরিদা বটাদা দুজনে একসঙ্গে ঘরে ঢুকলো। মিত্রারা হো হো করে হেসে উঠলো। কিগো আবার দুজনে একসঙ্গে। আমার কথা বলার ভঙ্গিতে, ওরা আরও জোড়ে হেসে উঠলো। তোমায় দাদা ডাকছে। কেন গো। কি করে জানব। চা খেয়ে নিই। বটা আমাকে একটু দে। ভাগ এখান থেকে। বেশি আনি নি। হরিদা তবু দাঁড়িয়ে রইলো। এইনাও তোমার বিস্কুট। এই বিস্কুট আনলি ? তোকে কথা বলতে বলেছি। হরিদা বটাদার কথায় হেসে ফেললো। হরিদা প্যাকেট থেকে একটা নিয়ে খেতে শুরু করলো। বুঝলি বটা অনেকদিন পর এই বিস্কুট খাচ্ছি। বাবামনিরা এই বিস্কুট আর চা খেতো। তোর মনে আছে। খুব মনে আছে। এখন সব বাবু বুঝলি। অনি বাবু নয়। ও যখনই ওপরে যায় এই বিস্কুট দিয়ে চা খায়। ওর জন্য শুধু নিয়ে আসি। এবার আমার জন্যও নিয়ে আসিস। পয়সা দিস। হরিদা আবার হেসে ফেললো। মিত্রা দাঁতে কামর দিয়েই বলে উঠলো, এটা তোমার কুত্তা বিস্কুট। তুমি খেতে গেলে কেন, তোমার জন্য ক্রিমকেকার নিয়ে এসেছি। এটা খালি অনির জন্য! অনির দাঁত শক্ত। তাই। সবাই হাসছে। বটাদা সকলকে চা দিয়ে বেরিয়ে গেল। আমি চা খেতে খেতেই অদিতিকে বললাম, তোমার অবস্থা কি। সামলে নিয়েছি। প্রথমে একটু ঝামেলা হচ্ছিল। আমার তাহলে কোন প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন নেই মানে। আমার ফাইলগুলো একটু দেখে দাও, ঠিক ঠাক স্টেপ নিয়েছি কিনা। অদিতি নিজের ফাইলগুলো বার করে আনলো। আমি একটার পর একটা চেক করে ওকে বুঝিয়ে দিলাম। ও নোট করে নিল। মিলির চিঠি লেখা হয়েগেছে আমাকে দিল। আমি কয়েকটা জায়গায় কারেকসন করে দিলাম। তোমার কাছ থেকে ইংরাজীটা শিখতে হবে। কেন। একটা শব্দের মধ্যে দিয়ে সব কথা বলে দিলে। এটা আইনের মারপ্যাঁচ সাপও মরবে লাঠি ভাঙবে না। দারুণ দিলে। তোকে কখন থেকে ডাকছি বলতো। কথা বলতে বলতে দাদা ঘরে ঢুকলো। আসুন। ভেতরে আসুন। দাদা ইশারায় ডাকলো। দুজন বয়স্ক ভদ্রলোক ভদ্রমহিলা দাদার পেছন পেছন ভেতরে ঢুকলেন। আপনারা! আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে গিয়ে ওনাদের প্রণাম করলাম। কেমন আছেন ? ভালো। সেই যে ফিরে এলে আর গেলে না। সময় পাই নি। সুমন্ত কেমন আছে। ভালো। ওকে নিয়ে এলেন না কেন। তুমি ওর সঙ্গে চুক্তি করেছ গ্র্যাজুয়েট না হয়ে দেখা করবি না। ব্যাটা মনে রেখেছে। ভদ্রমহিলা মাথা নীচু করলেন। এবার কোন ক্লাস হলো। তোমার মতো বাংলা অনার্স নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছিল। দু’নম্বরের জন্য ফার্স্টক্লাস পায় নি। পার্ট ওয়ানে কম থাকলে কিছু হবে না। পার্টটুতে মেক আপ হয়ে যাবে। তুমি ওকে একটু ফোন করে বলো। খুব মন খারাপ। ওর ফোন নম্বর আমার কাছে নেই। দাও অনিকে কাগজটা। ভদ্রলোক পকেট থেকে একটা কাগজ বার করে আমার হাতে দিলেন। আমি মোবাইলটা বার করে পটাপট ফোন করলাম। ভয়েজ অন করলাম। সবার চোখে উৎকন্ঠা। এরা আবার কারা। কোথা থেকে এলো। হ্যালো। কে বলছি বলতো। অনিদা। কি করে বুঝলি। তোমরা নম্বরটা সেভ করে রেখেছি। কে দিল তোকে। কনিষ্কদা। কেমন আছিস। তোমার জন্য বেঁচে আছি। পুরনো কথা মনে রাখিস না। তুমিতো বলেছ অতীত থেকে শিক্ষা নিতে। বলেছিলাম বোধ হয়। তোমার মনে নেই, আমার মনে আছে। তোমার কথা রাখতে পারলাম না অনিদা। কে বললো রাখতে পারিস নি। সেকেন্ড হাফটা একটু তেড়ে পর, দেখবি হয়ে যাবে। আপ্রাণ চেষ্টা করছি। তারপর বল। কনিষ্কদা বললো তুমি বিয়ে করেছো। বৌদিকে ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করছে। মা-বাবার সঙ্গে চলে আসতে পারতিস। যেতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু তোমার কথা রাখতে পারিনি। দূর পাগল, সব ঠিক হয়ে যাবে। তোমার জন্য আমি একটা পাঞ্জাবী বানিয়েছি, নিজের হাতে কাজ করেছি। বেশ করেছিস। বাবা বৌদির জন্য নিজের হাতে একটা কাপড় বুনেছে। তুমি ফিরিয়ে দিও না। আমাদের তো দেওয়ার কিছু নেই। তাহলে ফিরিয়ে দিচ্ছি। প্লীজ অনিদা। তাহলে বললি কেন। আর বলবো না। একদিন ফোন করে অফিসে চলে আয়। পরীক্ষাটা হয়ে যাক। যাব। একটা কথা বলবো। বল। একটা লেখা লিখেছি। তাঁতীদের ওপর। একটু পরে দেখবে। কোথায়। বাবার হাতে পাঠিয়েছি। ঠিক আছে। এখন রাখি। ভালো থেক। থাকব। শরীরটার দিকে একটু নজর দিস। ওষুধগুলো ঠিক ঠাক খাস। খাচ্ছি। তুমি এ মাসে এতো বেশি টাকা পাঠিয়েছ কেন। মাইনে বেরে গেছে বুঝলি, তাই। তাছাড়া এখন তুই সাবালোক হয়ে গেছিস। তোর হাত খরচা। আমি এখানে একটা ছোটোদের স্কুল করেছি। মাস্টার কে তুই ? হ্যাঁ। দেশোদ্ধার করেছিস। তুমিও তো করছো। হো হো করে হেসে ফেললাম। বৌদিকে নিয়ে একদিন আসবে। দেখি যদি সময় করতে পারি। এসোনা একদিন, ভালো লাগবে। আমার পক্ষে এতদূর জার্নি করা সম্ভব নয়। খুব সম্ভব দু’বছর হয়ে গেছে। এখন তুই দৌড়দৌড়ি করতে পারিস। কনিষ্কদা সামনে মাসে একটা এক্সামিন করবে বলেছে। আসার আগে আমাকে একবার ফোন করিস। আমি তোর নম্বরটা সেভ করে রাখলাম। তোমার মতো মানুষের মোবাইলে আমার নম্বর থাকবে এটা আমার সৌভাগ্য। দাঁড়া তোর সঙ্গে দেখা হোক, তারপর পিট্টি দেব। তোমার সঙ্গে কথা বলে খুব ভালো লাগল। তুমি হচ্ছ আমার অক্সিজেন। একদিন এখানে এসো না। দেখবে তোমার কতো ফ্যান। আমার ফ্যানের দরকার নেই। দুটো পান্তা জুটলেই হবে।
সুমন্ত হেসে ফেললো। রাখি রে। আচ্ছা। সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ভদ্রমহিলার মুখের দিকে তাকালাম। মুখটা চক চক করছে। এই দেখুন এতোক্ষণ আপানাদের বসতেই বলা হয়নি। বৌমাকে দেখতে চাইছেন, তাইতো ? ভদ্রমহিলা মাথা নীচু করে হাসলেন। ওই যে চেয়ারে বসে আছে। মিত্রা প্রথমে একটু হকচকিয়ে গেছিল। তারপরে উঠে এলো। নমস্কার করতে গেলো, ভদ্রমহিলা ওর হাত দুটো ধরে ফেললো, কেউ ওর প্রণাম নিল না। তুমি কতো বড়ো বংশের মেয়ে। ভদ্রমহিলা মিত্রাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। আপনারা একটু বসুন আমি আসছি। আমি ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। দাদা আমার পেছন পেছন বেরিয়ে এলো। কিরে খামটা আমাকে দে। পরে দিচ্ছি। নিউজরুমে এসে ঢুকলাম। অর্ককে খামটা দিয়ে বললাম দেখতো লেখাটা কেমন। খুব খারাপ হলে নিজে লিখে দিবি। দাঁড়ালাম না। সোজা এসে আর্ট ডিপার্টমেন্টে ঢুকলাম। আর্ট ডিরেক্টর মুন্সীবাবু বসে বসে কথা বলছিলেন। আমাকে দেখে উঠে দাঁড়ালেন। কাছে এগিয়ে এলেন। আমি জানি ভদ্রলোক বহুত ধুরন্ধর। আগে নাম ধরে ডাকতেন এখন স্যার বলেন। স্যার দ্বীপায়ন একটু ওপরে গেছে। এলে নিউজ রুমে পাঠান। দাঁড়ালাম না, নিচে চলে এলাম। সনাতনবাবুর ঘরে ঢুকলাম। আরে ছোটবাবু তুমি, ডাকলেই চলে যেতাম। একটা ছোট কাজ করতে হবে। বলো। একটা দুহাজার টাকার চেক লিখুন। সুমন্তর নাম ঠিকানা দিলাম। রাইটার্স রেমুনারেসনের ভাউচার করে মিত্রার ঘরে একটু যান। দেখবেন একজন বয়স্ক ভদ্রলোক ও ভদ্রমহিলা আছে। ওদের দিয়ে ভাউচার সই করাবেন। আমি পরে যাচ্ছি। আচ্ছা। সনাতনবাবুর ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। নিচে নিউজরুমে ঢুকতে দেখলাম দ্বীপায়ন আমার টেবিলে বসে আছে। আমাকে দেখে একগাল হাসল। আমার জন্য তোমাকে ওপরে যেতে হবে, আসা করিনি। নারে চলে গেলাম। কেন বলো। তোর কাছে আমার আর তোর ম্যাডামের বিয়ের দিনের কনো ছবি আছে। অনেক। তোর পছন্দ মতো একটু বড়ো করে ছটা ছবি এখুনি প্রিন্ট করে আনতে পারবি। এই কাজের জন্য তুমি ওপরে ছুটে গেছিলে। হাসলাম। কাউকে দেবে। মাথা দোলালাম। অর্ক কাছে এসে দাঁড়াল। লেখাটা কার বলো তো ? কেন। ডিটো তোমাকে নকল করেছে। কি ধার গো লেখার! বোঝাই যাচ্ছে না তুমি লিখেছ, না সুমন্ত বিষই লিখেছে। ছাপা যাবে। মল্লিকদা নিয়ে দাদার কাছে চলে গেছে। ছেলেটা কি করে। এ বছর বাংলা অনার্স নিয়ে পার্টওয়ান দিয়েছে। দু’নম্বরের জন্য ফার্স্টক্লাস পায় নি। ব্যাডলাক। পার্ট টুতে হয়ে যাবে। আমাদের কাগজে নিয়ে এসো। অনেক দূরে থাকে। তাছাড়া ওর জার্নি করা বারণ। তুমি কি এই ছেলেটিকে ছবি পাঠাবে! দ্বীপায়ণ বললো। মাথা দোলালাম। আমি এখুনি নিয়ে আসছি। ওর বাবা-মা ম্যাডামের ঘরে আছে। নিয়ে যা। দ্বীপায়ণ হন হন করতে করতে চলে গেল। দাদা তোমায় একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো। অর্ক আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। বল। এর নিশ্চই একটা পাস্ট হিস্ট্রি আছে। না হলে তোমার মনে এইভাবে দাগ কাটতে পারে না। আছে। এখন জিজ্ঞাসা করিস না। গলাটা ধরে এলো। কিগো তুমি মন খারাপ করছো কেন। না এমনি। তুমি আমাকে এ্যাড্রেস দাও, আমি যাব। অনেক দূরে থাকে। যেখানেই থাকুক আমি যাব। নবদ্বীপের একটা প্রত্যন্ত গ্রামে। আমি যাব। আমি ওর সঙ্গে দেখা করবো। যে তোমার মনে এতটা রেখাপাত করে, সে সাধারণ ছেলে নয়। ম্যাডামের ঘরে যা। ওর বাবা-মার সঙ্গে কথা বলে আয়। অর্ক হন হন করে বেড়িয়ে গেল। আমি পেছন থেকে ডাকলাম। কাছে এলো। একটা মিথ্যে কথা বলতে পারবি। অর্ক আমার দিকে হাঁ করে তাকাল। বলো। মিলিকে বলবি একটা গাড়ির ব্যবস্থা করতে। ওদের একটু হাওড়া স্টেশনে পৌঁছে দিয়ে আসবে। আমি বটাদার ওখানে আছি। বলবি একটা কাজে বেড়িয়ে গেছি। দাদা পরে ফোন করবে। আচ্ছা। অর্ক বেড়িয়ে গেল। আমি ওপরে বটাদার কাছে এলাম। বটাদা আমার মুখের দিকে তাকাল। চা খাবে। দাও। আমি নিচে যাব। গিয়ে বলোনা যেন আমি এখানে আছি। বটাদা আমার মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকাল। আমি আমার নিজের জায়গায় চলে এলাম। ছাদের এককোনে। এখানে বটাদার সব উপকরণ ডাঁই করে রাখা রয়েছে। একসময় এখানে কয়লা ভাঙতো এখন গ্যাস হয়েছে। বটাদার ছেলেটা চা দিয়ে গেল। এই শোন। কি বলো। একটা সিগারেট নিয়ে আয়তো। তুমি সিগারেট খাবে! নিয়ে আয়, একটা খাই। নানা চিন্তা মাথার মধ্যে ভিড় করে আসছে। চা খাওয়া শেষ হলো। ছেলেটা একটা সিগারেট দিয়ে গেলো। ধরালাম। বেশ মনে পরে, সেদিন অফিস থেকে আর ফ্ল্যাটে গেলাম না। সোজা কনিষ্কদের হস্টেল। বছর চারেক আগের কথা সবে মাত্র চাকরিটা পেয়েছি। গিয়ে দেখলাম কেউ নেই। বুঝলাম রাউন্ডে গেছে। ফিরতে ফিরতে ওদের রাত হলো। সকলে একসঙ্গে ফিরলো। প্রথমে একটু হই হই হলো। তারপর কনিষ্ক বললো, অনি মনটা আজ ভালো নেই বুঝলি। কেন। কয়েকদিন আগে একটা ইয়ং ছেলে ভর্তি হয়েছে। হার্ট ব্লক। তাতে মন খারাপ কেন। সরকারী হাসপাতালে এই অপারেসন হবে না। যদিও বা করা যায় তার যা হ্যাপা মাথা খারাপ হয়ে যাবে। কেন এ কথা বলছিস। অনেক টাকার দরকার। তাহল ছেলেটা মরে যাবে। চষ্টা করছি। আমাদের যারা ওষুধ সাপ্লাই করে তাদের বলেছি। কোথায় থাকে। নবদ্বীপের একটা প্রত্যন্ত গ্রামে। কি করে। ওদের নিজস্ব তাঁত আছে। বাপ বেটা দুজনে তাঁত চালায়। ছেলেটা পড়াশুনো করে। এবছর মাধ্যমিক দিয়ে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হয়েছে। রেজাল্ট। স্টার পাওয়া ছেলে। আলাপ হতে বললো। ডাক্তারি পড়বে। সব গরিব গুলোর দেখবি উচ্চাশা। আর বড়োলোক গুলো দেখ, খালি পয়সা উড়িয়ে যাচ্ছে। ফালতু কথা রাখ, দেখ কোন ভাবে উপকার করতে পারি কিনা। কি করবো বল। আমার তো মাথার ওপর ধারের বোঝা। এ মাসের মাইনেটা পুরো দিতে পারি। তারপর খাবি কি। কর্পোরেশনের জল। ভালো বুদ্ধি দিয়েছিস। নীরু তুই কি বলিস। আমরাও সকলে মিলে এটা করতে পারি। তাহলে ষাটভাগ সল্ভ। বাকি চল্লিশভাগ মেকআপ করে দেব। এবার ব্লাড ডোনার। কেন রক্ত নই ব্লাড ব্যাঙ্কে। অপারেশনের সময় ডাইরেক্ট ট্রান্সফিউসন করতে হবে। যাকে বলে ফ্রেস ব্লাড। ব্যাটা রাজা লোক রে সব কিছু সঙ্গে করে নিয়ে এসে ভর্তি হয়েছে। গ্রুপ কি ? ও পজেটিভ। তোদের কারুর ওই গ্রুপ নেই। না। ওরে ওরা কি একেবারেই অভাগা। তুই দেখলে বুঝতে পারবি। ছেলেটাকে দেখে কেমন মায়া পরে গেছে। ওকে ফুটিয়ে দিয়েছিল। বটা দেখে ফেলেছিল তাই ভর্তি করেছে। যদি শালা কোনদিন বড়োলোক হই, তাহলে একটা কাজ অবশ্যই করবো, এদের জন্য বিনে পয়সায় চকিৎসার ব্যবস্থা করবো। তুই কোন দিন বড়োলোকও হবি না। আর চিকিৎসাও করতে পারবি না। কেন তোরা তো ডাক্তার। আমি যদি কিছু করি হেল্প করবি না। কেন, এখন করছি না ? আমি কি সেই কথা বলেছি। তাহলে কপচাচ্ছিস কেন। আমি এখনো আমার ব্লাডগ্রুপ কোনদিন চেক করিনি। আমারটা চেক করে দেখতে পারিস। যদি মিলে যায়, পাশে শুয়ে পরতে পারি। পরদিন আমার ব্লাডগ্রুপ চেক হলো। কাকতালীয় ভাবে সুমন্তর সঙ্গে মিলেও গেল। ভাগ্য আছে ছেলেটার। অপারেশনের দিন ঠিক হলো। অপারেশন হলো। দুজনে পাশা পাশি শুলাম। জীবনে প্রথম লাইভ অপারেসন দেখলাম। আমার থেকে একটু বেশি ব্লাড টান হয়ে গেছিল। আমিও পাঁচদিন হাসপাতালে থাকলাম। আমাকেও একবোতল ব্লাড দিতে হলো। সুমন্ত সুস্থ হলো। কিন্তু হার্টের অবস্থা খুব একটা উন্নতি হলো তা বলতে পারব না। বাঁচলো এই যা। কনিষ্কদের ডাক্তারী শাস্ত্র বলে পাঁচ বছরও বাঁচতে পারে, আবার পনেরো বছর বাঁচতে পারে। নো গ্যারেন্টি।
দেখি নাই ফিরে উপন্যাসে প্রথম পর্ব এই খন্ডে সমাপ্ত হবে। দ্বিতীয় পর্ব এখন থেকে কাজলদীঘি শশ্মান ও পীরসাহেবের থান নামে প্রকাশিত হবে। --------------------------------------------
শুনে মনটা খারাপ হয়েগেল। ওকে ওর বাড়িতে রেখে এসেছিলাম। তারপর একবার গেছিলাম। নিজের চোখে ওদের দারিদ্রতা দেখেছিলাম। আমাকে যেন ওরা ভগবানের মতো পূজো করতে লাগলো। বুঝলাম পাকে পাকে জড়িয়ে পরছি। সুমন্ত একবার চিঠি লিখল দাদা তুমি যদি সাহায্য না করো আমার পড়াশুনো বন্ধ হয়ে যাবে। সেই থেকে ওকে টাকা পাঠান শুরু, আজও চলছে। অনিদা এবার চলো। সকাল থেকে কিছু খাও নি। ম্যাডাম তোমার জন্য বসে আছে। অর্ক পাশে দাঁড়িয়ে। চোখটা ছল ছল করছে। গেঞ্জির হাতা দিয়ে চোখটা মুছলাম। বটাদার ছেলের কাছ থেকে একটা সিগারেট নিয়ে আয়। আমি মুখটা ধুয়ে নিলাম। অর্ক চা নিয়ে এসেছে। আমার আর ওর জন্য।
ওরা চলে গেছে। হ্যাঁ। কিছু বলছিল। ভদ্রমহিলা যাওয়ার সময় ভীষণ কাঁদছিলেন। কেন। ম্যাডাম ওনার ছেলের সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলেন। উনি সব বললেন। কিছুক্ষণ গুম হয়ে থাকলাম। ছবি আর চেকটা দিয়েছিস। ম্যাডাম দিয়েছেন। তারপর ম্যাডাম নিজে সুমন্তর সঙ্গে কথা বললেন। ছেলেটা কাঁদছিল। আমি চুপ করে রইলাম। আচ্ছা অনিদা ও কি আর বাঁচবে না ? এ ভাবে বেশিদিন বাঁচা যায় না। ও সেটা জানে। জানে। তবে ঠিক বোঝে না। মনের জোরটা অসীম। ওর বাবা-মা। জানে আবার জানে না। আমি আগামী সপ্তাহে একবার যাব। তুমি অনুমতি দাও। যাস। ওর শরীরে ব্যাপার নিয়ে বেশি আলোচনা করিস না। কথা দিচ্ছি। জানি ওটা ওর সবচেয়ে সেন্সেটিভ জায়গা। আর্টিক্যালটা কেমন লিখেছে রে। দাদা কালকেই ছেপে দেবে। ওকে একটা চিঠিও লিখে দিয়েছে। তাহলে ছেলেটা আরও কয়েকদিন বেশি বাঁচবে। একথা বলছো কেন ? সারাদিন বাবার সঙ্গে তাঁত বোনে। সপ্তাহে কুড়ি পঁচিশটা কাপর না বুনলে পেট চলবে কি করে। তাছাড়া নিজেদের কিছু জমি জমা আছে। সেগুলো দেখতে হয়। বলতে পারিস দাদার চিঠিটা ওর বেঁচে থাকার অক্সিজেন। ওর ভাই বোন নেই। না। বাব মার একমাত্র সন্তান। সনাতনবাবু সব শোনার পর ঘর থেকে মনখারাপ করে বেরিয়ে গেলেন। কারুর সঙ্গে কথা বললেন না। দ্বীপায়ন ঘরের বাইরে এসে কেঁদে ফেলল। জানিস অর্ক এরকম অসংখ্য সুমন্ত আমাদের চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কজনের আমরা উপকার করতে পারি বল। তবু তুমি কনিষ্কদা সবাই একটা মিসন নিয়ে চলছো। আমাকে একটা সুযোগ দাও না। চলে আয়, আমি কি বারন করেছি। আমি তোমায় কথা দিচ্ছি। আমার আন্তরিকতার শেষ বিন্দু দিয়ে আমি লড়ে যাব। চল নিচে চল। পায়ে পায়ে নিচে নেমে এলাম। নামতে নামতে নিজেক বোঝালাম। এবার সব ভুলে যা অনি। সামনে অনেক কাজ, এতো ইমোসোন্যাল হলে জগত সংসারটা চলবে না। তোকে তোর কাজ করে যেতে হবে। সেখানে দুর্বলতার কোন স্থান নেই। দুর্বলতা দেখিয়েছিস কি মরেছিস। অর্ক নিউজরুমে গেল। আমি মিত্রার ঘরে ঢুকলাম। ওরা নিজেদের মধ্যে চাপা স্বরে কথা বলছিল। আমায় দেখে থেমে গেল। মিত্রা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। আমি একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসলাম। তুইতো ভগবান রে। তোর আর কতো কীর্তি আছে, একটু বলবি। হাসলাম। তোমার পাঞ্জাবীটা দারুণ সুন্দর। আমি একবার পরে নিয়েছি। মিলি বললো। ভালো করেছো। কি খাবি বল। তোরা যা খাবি। হরিদার ছেলেকে বাইরে দেখলি। চোখে পরলো না। কিরে মিলি। ছাড়ো, অনিদাকে বলতে গেলে কেন। এখুনি বলবে আমি তোদের মতো কর্পোরেট নয়। টিনা আওয়াজ করে হেসে উঠলো। দাও তোমাদের ফাইল গুলো, কাজগুলো শেষ করি। মিলি তোমার চিঠিটা রেডি হয়ে গেছে। মিত্রাদি সাইন করে দিয়েছে। আমি সনাতনবাবুর হাত দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। আজ কোন প্রোগ্রাম আছে নাকি। ছিলো ক্যানসেল করে দিয়েছি। ব্যাচারা শুধু শুধু কষ্ট পাবে, আমাকে দোষারোপ করবে। করুক। দেখলাম মিত্রার চোখ বড়ো বড়ো হয়ে যাচ্ছে। কিরে মিলি! তুই বলছিস ও বুঝছে ও বলছে তুই বুঝছিস ব্যাপারটা কি ? আছে আছে, ইন্টু মিন্টু চলছে। টিনা বললো। কেন আমি একা, তোর স্বার্থ নেই। মিলি ঝামটে উঠলো। অদিতি হো হো করে হাসছে। টিনার মুখটা লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠলো। ব্যাপার কি রে অদিতি। মিত্রা চোখ পাকিয়ে বললো। তোমাকে অনিদা বলবে। ও জানে! জানে কিনা বলতে পারবো না। না জানলে বলছে কি করে। কিরে বুবুন। মিত্রার দিকে তাকালাম। অদিতি কি বলছে। আমি কি করে বলবো। তাহলে। ওদের জিজ্ঞাসা কর। সময় হলে বলবো, এতো ঝামেলা করছো কেন। মিলি বললো। মিত্রা বেল বাজাল। হরিদার ছেলে মুখ বারাল। হিমাংশু হাসতে হাসতে ঘরে ঢুকলো। আরি বাবা সব এক ঘরে। খুব জোর মিটিং চলছে নাকি। তুমি কি খাবে হিমাংশু ? এখনো খাওয়া হয় নি! তোমার বন্ধুকে বলো। না ম্যাডাম এই সময় অনিয়ম করা উচিত নয়। আমি কনটিনিউ মুখ চালিয়ে যাচ্ছি। মিলি ফিক করে হেসে ফেললো। তুই হাসছিস কেনরে ? যা বাবা, হাসি পেল তাই হাসছি। দাঁড়া তোর হচ্ছে। মিলি আমার দিকে হাসি হাসি মুখ করে তাকিয়ে। হিমাংশু পাশে এসে বসলো। মিত্রা খাবার আনতে দিল। বল। আমি হিমাংশুর দিকে তাকালাম। কাজতো আমার বাড়িয়ে দিয়েছিস। কেন। ব্যাঙ্কের নাইনটি পার্সেন্ট মেরে দিয়েছিস। হ্যাঁ। বড়ো হ্যেডেক ছিল। এবার মান্থলিতে চলে যা। সেতো গেলাম, আমার কিছু লোন লাগবে। মিত্রার এ্যাকাউন্ট থেকে দেখিয়ে দে। তোর এ্যাকাউন্ট থেকে কিছু দেখাই। আমার শূন্য। মিত্রার থেকে তোর বেশি আছে। তাহলে নিয়ে নে। এইট্টি এইট জি করে ফেলেছিস। হ্যাঁ। তাহলে কিছু ডোনেট করে দে। আবার ফিরিয়ে দেব। তুই এই জন্য এনজিও বানিয়েছিস। রথ দেখা হবে কলা বেচা হবে। নিজের পয়সায় কেউ দেশোদ্ধার করে নাকি। হিমাংশু মুচকি মুচকি হাসছে। ওরা হাঁ করে আমার কথা শুনছে। তুইতো আমার ভাত মারবি। তাহলে চার্টারটা পাশ করতে হবে। পরীক্ষায় বসে যা। হাসলাম। ওই ঘটনার পর কি কি উদ্ধার হয়েছে, কি কি উদ্ধার হয়নি তার একটা লিস্ট দে। আবার খোঁচা খুঁচি করি। এক কাজ কর। বল। এইভাবে না করে মান্থলি মাইনে থেকে কেটে নে। অনেক আগে ব্যাপারটা ভেবেছি। তবে আমার পিএফের দিকে নজর বেশি। তাছাড়া ভালো জায়গায় ফ্ল্যাটটা বাগিয়েছে লিখিয়ে নেব ভাবছি। তারপর নিজের ফ্ল্যাটে নিজে ভাড়া দিয়ে থাক। মাথা দোলালাম। হিমাংশু হাসছে। খাবার এলো। হিমাংশুর ফাইলপত্র বার করলো। খেতে খেতে হিমাংশুর সঙ্গে বসে এ্যাকাউন্টসটা একটা জায়গায় নিয়ে এসে দাঁড় করালাম। মিত্রা পাশে বসে সব লক্ষ করলো। কি ম্যাডাম কিছু বুঝছেন। মাইনেটা বাড়িয়ে দিতে হবে। এখনো আগের মাইনেতে কাজ করছে! খোঁজ খবর নিই নি। সনাতনবাবুকে একবার জিজ্ঞাসা করতে হবে। আপনার মেশিনটা একটু দেখি। মিলি কি বোর্ডটা এগিয়ে দিল। হিমাংশু লগ করে ভেতরে ঢুকে আমার নাম সার্চ করে এ্যাকাউন্টটা বার করলো। ওরে তোর তো প্রচুর টাকা পরে রয়েছে। কতো টাকা আছে রে। দশলাখ পঁয়ত্রিশ হাজার ছয়শো সাতচ্চলিশ টাকা পঁয়ত্রিশ পয়সা। চোর কোম্পানী। কালই রিজাইন দেব। খালি বসে বসে আমার টাকার ইন্টারেস্ট খেয়ে যাচ্ছে। পারবি। হিমাংশু এমনভাবে বলে উঠলো, ওরা হেসে ফেললো। হিমাংশু আমি এখানে বসে এগুলো ট্র্যাক করতে পারব। মিত্রা বললো। আপনি একটা মাস্টার পাসওয়ার্ড বানিয়ে নিন। দাঁড়াও আজই বরুণদাকে বলছি। এই একটা কাজের লোক পেয়েছিস। যে ভাবে চাইছি সেই ভাবে পাচ্ছি। তোর ওই দিগন্তবাবুটা একেবারে মাল। বরুণদার পরিচয় জেনেছিস। দাদার মুখ থেকে শুনলাম। উনিও আমার কাছে নিজেকে খুললেন না। আমিও সেরকম কিছু বললাম না। ব্যবহার কর, আমার আর একটা ওয়েপনস। সেটা বুঝেছি। চা খাবি। এটা কেমন কথা বললি। সরি জিজ্ঞাসা করাটা অন্যায় হয়ে গেছে।
মিলি একটু বটাদাকে ফোন করো না। হিমাংশুদা আমাদের ব্যাপারটা একটু দেখুন। টিনা বললো। কোনটা বলো। আমাদের রির্টার্ণ। লাস্ট ইয়ারেরটা নিয়ে এসো। করে দেব। আমারটা কিন্তু অনেক হচপচ হয়ে আছে। মিলি বললো। সব ঠিক হয়ে যাবে। কাগজপত্রগুলো সব যত্ন করে রেখেছো। সব আছে। তাহলে অসুবিধে হবে না। কবে নিয়ে আসবো ? এ মাসের শেষের দিকে। আচ্ছা। বটাদা চা নিয়ে ঘরে ঢুকলো। সবাইকে চা দিল। আমার দিকে তাকাল। তুমি একটু বাইরে এসো। আমি বটাদার দিকে তাকালাম। উঠে বাইরে এলাম। বটাদা একবার এদি ওদিক দেখে নিয়ে কিংশুক বাবুর ঘরের চেহারার বর্ণনা দিল। আমি ভেতরে এলাম। কিরে বটাদা কি নিউজ দিয়ে গেল। মিত্রা হাসতে হাসতে বললো। ও আপনাকে বলবে ? সে জানি বলবে না। যখন এ্যাকসন নেবে, তখন বুঝতে পারব। এবার উঠি। ম্যাডামরা সবাইকে বললাম। হিমাংশু চলে গেল। ওদের সঙ্গে বসে অনেকক্ষণ কাজ করলাম। ফইলগুলো প্রায় শেষ করে দিলাম। মাথাটা ধরে গেছে। মিত্রাকে বললাম আমি একটু নিউজরুমে যাচ্ছি। নিউজ রুমে এলাম। অর্কদের সঙ্গে বসলাম। ওদের কিছুক্ষণ সময় দিলাম। সন্দীপ এলো। নিজের টেবিলের চিঠি গুলো সব পরিষ্কার করলাম। এই করতে করতেই সময় চলে গেল। মাঝে মিত্রা একবার ফোন করে বললো, কিরে আমি চলে যাব। ওকে বললাম তুই চলে যা, আমি দাদাদের সঙ্গে ফিরব। সত্যি সত্যি ফিরতে রাত হলো। আমি দাদা মল্লিকদা একসঙ্গে ফিরলাম। আসার সময় গাড়িতে দাদার সঙ্গে টুকরো টুকরো কথা হলো। দাদার কথায় বুঝলাম অফিসের অবস্থা এখন যথেষ্ট স্থিতিশীল। যে ঝড়টা এসেছিল সেই ঝড়টা থেমে গেছে। মিত্রাও দু’একটা বেশ ভালো স্টেপ নিয়েছে। এতে দাদা খুশী। যারা পুরনো স্টাফ ছিল তারা আবার ফিরে আসছে। আস্তে আস্তে অফিসটা আবার নিজের জায়গায় ফিরে আসছে। তার মানে আমি আমার বাকি কাজ টুকুতে হাত দিতেই পারি। আমি মনে মনে এটাই চাইছিলাম একটা রিদিম। রিদিমটা ঠিক থাকলে সব ঠিক। কেউ সচর আচর বেগর বাই করতে পারবে না। আমার কাজে একমাত্র বাধা দিতে পারে বড়মা ছোটমা মিত্রা। এদের কাউকে জানান হবে না। টিনা মিলিদের ব্যাপারেও দাদার একটা স্বচ্ছ ধারণা তৈরি হয়েছে। ওরা কাজের মেয়ে। যখনই কোন অসুবিধে হয় দাদার কাছে ছুটে আসে। দাদার হেল্প নেয়। টিনার ব্যাপারে চম্পকদা মাঝে মাঝেই দাদার কাছে এসে অভিযোগ জানায়। ও নাকি সব ব্যাপারেই ভীষণ আপার হ্যান্ড নিয়ে নিচ্ছে। এ্যাড ডিপার্টমেন্টের কয়েকজন বলেছে এভাবে চললে তারা রিজাইন দিতে বাধ্য হবে। টিনার উত্তর, আজই রিজাইন দিক। এরকম প্যাকেজে আমাদের কাজের লোক পেতে অসুবিধে হবে না। মোদ্দা কথা টিনা চম্পকদাকে প্রায় হ্যান্ডিক্রাফ্ট বানিয়ে দিয়েছে। মিলির ডিপার্টমেন্টটা ওর এতদিনের চেনা জগতের বাইরে, তাই প্রথম প্রথম ভীষণ অসুবিধে হচ্ছিল। এখন আস্তে আস্তে গুছিয়ে নিচ্ছে। দাদার কথায় এটুকু বুঝলাম এদের তিনজনের কাজে দাদা খুশী। তাছাড়া মিত্রা যে বরুণদাকে নিয়ে এসেছে। তাতেও দাদা খুশী। মাঝে একবার আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল। তুই হঠাৎ পনেরদিন কোথায় উধাও হয়ে গেলি। আমি দিল্লীর ব্যাপারটা দিয়ে ধামা চাপা দিলাম। দাদা আরও অনেক প্রশ্ন করতে চেয়েছিল। বাড়িতে এসে ঢুকে পরলাম। কোন প্রকারে রক্ষা পেয়ে গেলাম। নিচের ঘরে ঢুকলাম। দেখলাম বড়মা ছোটমা মিত্রা সোফায় হেলান দিয়ে বসে আরাম করে টিভি দেখছে আর গল্প করছে। আমায় দেখে বড়মা উঠে এলো। ভালো করে মুখটা দেখে গালে হাত বোলাল। আমি প্রণাম করলাম। দেখছিস মিত্রা। এতোক্ষণ বসে বসে কি কথা বলছিল। ছোটমা বললো। ছাড় তো তুমি। বড়মা একবার ছোটমার দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসল। আমি ছোটমার কাছে গেলাম। নিয়ম মাফিক একটা পেন্নাম ঠুকে দিলাম। সাত খুন মাপ। সব ঠিক আছে। আর ন্যাকামো করতে হবে না। তুই না থাকলে কি সব বেঠিক থাকবে ভেবেছিস। মুচকি হাসলাম। শোন কাল সকালে কোন প্রোগ্রাম রাখবি না। সামন্তদা বলেগেছে কাল সকালে তোর আর মিত্রার সঙ্গে বসবে, কারা যেন আসবে। হবে না। সামন্তদা খেতে আসছে। জানিয়ে দিবি। ও ছোট, ও ঠিক থাকবে দেখিস। মুখে ওরকম বলছে। তুমি তোমার ছেলেকে সামলাবে। ঠিক আছে ডাক্তার আসুক। মিত্রা একটা ট্রেতে করে তিন গ্লাস সরবৎ নিয়ে এলো। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলাম। হাসলি কেন। বুঝলি না। তুই জল নিয়ে এলি। করিতকর্মা হয়ে উঠেছিস। ছোটমা সমানে মুখ ছুটিয়ে চলেছে। কেন তোকে ও বাড়িতে দিই নি। আমি ঢক ঢক করে গ্লাসটা শেষ করে টেবিলে রাখলাম। চা খাবি। ছোটমা তড়তড়িয়ে উঠলো। মুচকি হাসলাম। হাসছিস কেনো। হাসতেও মানা। ছোট আজ বাবুর নতুন ঘটনা শুনেছ। মল্লিকদার কথায় ছোটমা মুখ টিপে হাসল। এটা আজকের এপিসোড। আমার দিকে তাকিয়ে। পনেরদিনের এপিসোড জানতে পেরেছ। তুমি জেনেছ ? ছোটমা ফিক করে হেসে রান্নাঘরে চলে গেল। আমি সোফায় বসলাম। বড়মা এসে বসলো। কোন কথা জিজ্ঞাসা করবে না। কেনোরে! কোথায় গেলি কি করলি একটু ভালো মন্দের খবর নেব না। সব বলা যাবে না। তোর নতুন ফোন নম্বরটা দে। ওটা শুধু মাত্র কাজের জন্য। আমরা কি অকাজের লোক। তোমাদের জন্য আর একটা নম্বর আছে। ওটাও দে। পকেট থেকে ফোনটা বার করে দিলাম। এটা নিয়ে করবো কি। তুই নাকি কি সব পাসওয়ার্ড ফাসওয়ার্ড দিয়ে রেখেছিস। মিত্রা বড়মার ঘর থেকে ফোনে কথা বলতে বলতে বেরিয়ে এলো। কথা বলবি।….এই মিনিট দশেক হলো এসেছে।….জ্যেঠিমনি…. আমার কাছে এগিয়ে এলো। নে জ্যেঠিমনি তোর সঙ্গে কথা বলবে। আমি ওর দিকে বড়ো বড়ো চেখ করে তাকালাম। চোখ গেলে দেব। তুই টুক টুক করে লাগিয়েছিস। একটুও না। তোর কীর্তি বরুণদা গিয়ে বলেছে। ফোনটা হাতে নিলাম। বলো। কেমন আছিস। ভালো। হঠাৎ কোথায় উধাও হয়ে গেলি। কলকাতাতেই ছিলাম। সেতো তোর বড়মার কাছ থেকে শুনলাম। তাহলে সব জেনে গেছো। এখন বিয়ে করেছিস। তোর নিজের একটা সংসার আছে। হুটহাট চলে গেলে চলবে কি করে। ঠিক কথা। কিন্তু আমার যে এখনো অনেক কাজ বাকি। সে জানি। এখন তো অনেকটা স্থিতাশীল। আর গন্ডগোল করিস না। কোথায় গন্ডগোল করলাম। এই কদিন তো তোকে দেখলাম। না না ওরা তোমায় ভুল ইনফর্মেসন দিয়েছে। তোর সম্বন্ধে ছুটকিও ভুল বলবে। তোমার ছুটকি চায় আমি সব সময় ওর সামনে পুতুলের মতো বসে থাকি। একটু আধটু বসবি। সম্ভব নয় জ্যেঠিমনি। ও এখনো সেফ্টি নয়। তোমরা চাওনা ও সেফ্টি থাকুক। চাই। তবু তোকে নিয়েও তো আমাদের চিনতা হয়। আমাকে নিয়ে ভেব না। আমি ঠিক থাকব। তুই মুখে বলছিস। মন মানে না। তোমাদের সবার মুখে এক কথা হলে চলে কি করে। কালই আমি মিত্রাকে ডিভোর্স করে দিচ্ছি। জ্যেঠিমনির সঙ্গে ঘরের সকলে হেসে ফেললো। পারবি। খুব পারবো। করে দেখা। তারমানে তুমি বলতে চাইছো, অনি মরিয়া গিয়ে প্রমাণ করিল সে মরে নাই। আবার ঘরের সকলে হেসে উঠলো। কার সঙ্গে বক বক করছে ও। ছোটমা চায়ের ট্রে নিয়ে এসে হাজির হলো। জ্যেঠিমনি। মিত্রা বললো। ওকে বলে কিছু হবে না দিদি। আপনাকে সেদিন কি বলেছিলাম মনে আছে। কেরে ছোট। হ্যাঁ। কথা বলো। আমি ছোটমার হাতে ফোনটা দিলাম। কল্কে পেলিনা নিশ্চই। চেপে ধরেছে। ওমনি ছোটমা ধরো। হাসলাম। ছোটমা জ্যেঠিমনির সঙ্গে কথা বলতে বলতে রান্নাঘরে চলে গেল। আমি চায়ে চুমুক দিলাম। বড়মা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ঠায় বসে আছে। দাদা মল্লিকদা আমাদের দুজনকে দেখে আর হাসে। তুমি কি পারবে ওর পেট থেকে বার করতে। ওকে পেটে ধরিনি। পারব কি করে। সেন্টু দিয়ে লাভ নেই। তোমরা আমার পাকা ঘুঁটি সব কেঁচিয়ে দিয়েছ। তোর পাকা ঘুঁটি কোথায় কেঁচালাম রে। বড়মা বললো। যাও না বিধানদাকে ফোন করো, সব বলে দেবে। লাড্ডু খেয়েছিস। ওই তো সামনে জল জ্যান্ত বসে আছে। এরপরও খেতে বলো। মিত্রার দিকে তাকালাম।
আমি লাড্ডু। মিত্রা তেড়ে এলো। তারমানে সবাইকে লাড্ডু খাওয়াবি আর নিজের কাজ উদ্ধার করবি। বড়মা বললো। যা ভাবো। উঠে দাঁড়ালাম। আর একটু বোস না। জামা প্যান্টটা ছাড়ি। সেই সাত সকালে পরেছি। আচ্ছা যা। খেতে বসে বলবি ? পেছন ফিরে একবার হাসলাম। বাথরুম থেকে বেড়িয়ে দেখলাম মিত্রা হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে। এইরকম অবস্থায় ওকে বহুদিন দেখিনি। এখন বেশ বোঝা যাচ্ছে। ও মা হতে চলেছে। ওর সারাটা শরীরে একটা মা মা গন্ধ। আমার দিকে একবার মুখ ফিরিয়ে দেখল। আমি ওকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে দেখছি। অমন কোরে কি দেখছিস। তোকে। দেখলাম বিছানার এক কোনে আমার পাজামা পাঞ্জাবী গুছিয়ে রাখা। শুয়ে আছিস। শরীরটা ভালো লাগছে না। কেন! কাছে গেলাম। ওর কপালে হাত দিলাম। না ঠিক আছে। কিরকম শরীর খারাপ। ডাক্তারদাদা বললো এই সময় নাকি এরকম হয়। গাদা গাদা ওষুধ দিয়েছে। খাবার চার্ট করে দিয়েছে। ফিক করে একবার হাসলাম। রাতে টর্চ জ্বালিয়ে একবার দেখব। তোকে দেখাব দাঁড়া। আবার বাঁদরের মতো দাঁত মুখ খেঁচাচ্ছিস কেন। উঠে বসবো ? আরাম করে একটু শুয়ে আছিস, আবার ঝামেলা করবি কেন। মিত্রা কট কট করে আমার দিকে তাকাল। আমি হাসলাম। পাজামা পাঞ্জাবী গলালাম। চুল আঁচড়ালাম। আড় চোখে দেখলাম মিত্রা আমাকে মেপে চলেছে। গোয়া গেছিলি কেন ? ঢিল ছুঁড়ে লাভ নেই। শুকনো পুকুর। তাহলে আমার কাছে খবরটা ভুল এসেছে বল। যে দিয়েছে তাকে জিজ্ঞাসা কর। আমাকে জিজ্ঞাসা করে লাভ কি। মিত্রা খাট থেকে নেমে এলো। তাহলে কোথায় গেছিলি বল। আমি হাসলাম। ঝামেলা করিস না। মিত্রা জড়িয়ে ধরলো। বল না। এরকম করিস কেন। আমি কি তোর শত্রু। তুই আমার মিত্র এটা কে বলেছে। দাঁড়া নিচে চল বড়মাকে বলছি। তোর পেটটা বেশ বড়ো হয়েছে। কথাটা এড়িয়ে যাচ্ছিস। নারে সত্যি। এখন মনে হচ্ছে তুই মা হতে চলেছিস। তুই। তোর কথায় আমি জীবন দাতা। ভাবতেই ভীষণ ভালো লাগছে। বড়মা বলেছে এই সপ্তাহটা অফিসে যাবি, তারপর থেকে অফিসে যাওয়া বন্ধ। অফিস এখানে তুলে আন। শয়তানটা ছাড়া পেয়েছে না। আমি মিত্রার দিকে তাকালাম। ও জানল কি করে। ওরতো জানার কথা নয়। তোকে কে বললো ? প্রবীরদা এখন কমবেশি রেগুলার আসে। সেদিন বড়মাকে বলেছে। মিত্রা আমার ভাতৃবধূ ওর কেউ ক্ষতি করতে চাইলে, অনির আগে আমার হাত পড়ে যাবে। যাক। নিশ্চিন্ত। তাহলে তোর চিনতা করার একটা লোক বারল। প্রবীরদার স্ত্রী ছেলে একদিন এসেছিল। অনেকক্ষণ ছিল। কথায় কথায় বার বার তোর কথা বলছিল। তুই প্রবীরদার জীবন ফিরিয়ে দিয়েছিস। আমি না তুই। চিঠিটা দেখেছিলি। হ্যাঁ। যত্ন করে রেখেছিস তো। তোর ফাইলে আছে। আমাদের ভালোবাসার সাক্ষীকে বড়ো হলে তার বাবার কীর্তি কলাপ দেখাস। কেন তুই কোথায় যাবি। আমি কয়েকদিনের জন্য বাইরে যাব। এই অবস্থায়, আমাকে ফেলে রেখে! একবার বলেছি না, তোকে তৈরি হতে হবে। আমার ওপর নির্ভরশীলতা তোকে ছাড়তে হবে। তোকে ছাড়া আমি বাঁচব না। পাগলামো করিস না। আমি কি মরে গেছি। তুই কোথাও যাস না। তুই আমার সবচেয়ে বড়ো বল ভরসা। সব ঠিক হয়ে যাবে। চল ওরা নীচে অপেক্ষা করছে। মিত্রা কোন কথা বললো না। আমার সঙ্গে নিচে চলে এলো। টেবিলে দেখলাম সব রেডি করা হয়ে গেছে। খালি বসার অপেক্ষা। দাদা মল্লিকদাকে দেখতে পেলাম না। বুঝলাম দাদার ঘরে আছে দুজনে। কিরে বাবু মুখ খুললেন ? ছোটমা ছেঁচকিয়ে উঠলো। মিত্রা কোন কথা বললো না গম্ভীর হয়ে রইলো। কিরে চুপ করে রইলি কেন। তোকে কিছু বলেছে বুঝি। না। তাহলে মুখটা ওরকম কেন। কিছু না। দেখলাম দাদার ঘর থেকে ডাক্তারদাদা, মল্লিকদা, দাদা বেড়িয়ে এলো। বান্ধবী এবার দাও। অনি চলে এসেছে। বড়মা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে একবার আমার দিকে তাকাল। একবার মিত্রার দিকে। কোন কথা বললো না। বসো তোমরা, দিয়ে দিচ্ছি। আমি চেয়ারে গিয়ে বসলাম। মিত্রা আমার পাশে বসলো। দুপাশের দুটো চেয়ার ফাঁকা। অপজিটের চেয়ারে ডাক্তারদাদারা বসলো। কাল তোর কি প্রোগ্রাম আছে। ডাক্তারদাদা বললো। সকালে একটু বেরোব। কখন ফিরবি। বলতে পারব না। তুই একা। না। বড়মা ছোটমা মিত্রাকে সঙ্গে নেব। বুঝেছি। কি বুঝেছো। মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে। তারমানে কালকে আর একটা কাজ সারবি। কি করে বুঝলে। তুইতো প্রথমে গানটা লিখিস তারপর সুর দিস। এখুনি বড়মা বলবে তোমরা এইরকম কথা বলো না। আমরা যখন তোমাদের কথা বুঝি না, তখন আমাদের সামনে বলবে না। বড়মা আমার কানে হাত দিল। আমি মাথা সরিয়ে নিলাম। আমি এখন বিবাহিত। সংসারী মানুষ। ডাক্তারদাদা হেসেফেললো। মিত্রাও হাসছে। সেই জন্য দুটো ফোন পকেটে রেখেছিস। ছোটমা ফুট কাটল। দুজনে দুপাশে বসলো। খাওয়া শুরু হলো। কাল সকালে আমি কয়েকজনকে ডেকে পাঠিয়েছি। ছোটমা বলছিল। আমাকে ঘন্টা খানেক সময় দে। কিসের জন্য বলো। তোকে মিত্রা কোন কথা বলে নি। সময় পায় নি। মিত্রা খাওয়া থামালো। দেখছো বড়মা। থাক, ওকে বলতে দে। আমরা এবার ওর সঙ্গে ধর্মঘট করবো। পারবে তুমি ? খুব পারব। দাঁড়ানা দেখবি। ছোটমা মল্লিকদা ফিক করে হাসল। মরণ। হাসছিস কেনরে মল্লিক। এবার আমি হেসেফেললাম। ছোট আমাকে দুটি ভাত দাও খুব খিদে লেগেছে। ছোটমা ডাক্তারদার পাতে ভাত দিল। দাদা একটা মাছ দিই। দাও। বেশি খেও না বয়স হচ্ছে। দাদা বললো। অনি দশ বছর কমিয়ে দিয়েছে বুঝলে এডিটর। সারাদিন চড়কি মেরে ঘুরছো। এবার একটা কিছু না বাদিয়ে ছাড়বে না দেখছি। নাগো এডিটর এ কাজে যে কি মজা, এতদিন টের পাই নি। এখন বেশ লাগছে। বিশেষ করে যাদের সম্বন্ধে কোনদিন ধারণা ছিল না। তাদের মধ্যে সত্যিকারের মানুষ খুঁজে পাচ্ছি। আমার এই কাজে কোন ক্লান্তি আসছেনা বুঝলে। বাবা তুমি যে অনির ভক্ত হয়ে গেলে। যা বলো। তোমাদের বলা হয় নি। গতো পর্শুদিন হঠাৎ কনিষ্ক টনা মনাদের ওখানে নিয়ে গেল। আমাদের নিয়ে গেলে না কেন। বড়মা খ্যাঁক করে উঠলো। দূর ছাই ঠিক ছিল নাকি। কনিষ্ক নীরুকে ডাকতে এলো। ওখানে ওষুধ দিতে যাবে। আর কাদের কাদের যেন দেখতে হবে। তা আমি দামিনী পেছন ধরলাম। ওই জন্য সেদিন আসতে পারলাম না। সত্যি কলকাতার উপকন্ঠে এতো সুন্দর একটা জায়গা আছে আগে কখনো ভেবে দেখি নি। তুমি ভীষণ স্বার্থপর। মিত্রা বললো। বিশ্বাস কর। ঠিক আছে তোদের নিয়ে যাব। কি করলে ওখানে গিয়ে। বাঁশের বেঞ্চে বসে রইলাম সারাক্ষণ। দামিনী তবু এদিক ওদিক ঘুরে ঘুরে দেখল। ওরা পেঁয়াজ কুঁচি সরষের তেল দিয়ে মুড়ি মেখে দিল। আর ভেঁড়ি থেকে চিংড়ি মাছ ধরে ভেজে দিল। তার সঙ্গে র চা। সত্যি যেন অমৃত। তুমি খেলে! মিত্রা বললো। বললামতো তোকে নিয়ে যাব। বড়মার দিকে তাকাল। বুঝলে বান্ধবী মানুষ দেখলাম। কি অমায়িক। এখনো ওদের মধ্যে সরলতা আছে। সেটা দেখে আরও ভালো লাগল। ডাক্তারদাদা দাদার দিকে তাকাল। বুঝলে এডিটর অনিকে ওরা সত্যি ভীষণ ভালবাসে। নিস্তব্ধ খাবার টেবিল। যে যার নিজের মতো খেয়ে যাচ্ছে। ডাক্তারদা স্বগোতোক্তির সুরে বললো। নার্সিংহোম গুলোর ব্যাপারে কিছু সমস্য তৈরি হয়েছে বুঝলি অনি। আমি ডাক্তারদার মুখের দিকে তাকালাম। কি বলতে চায়। ওটা কোন সমস্যা নয়। হিমাংশুকে আমি বলে দিয়েছি। তুমি মিত্রা যেভাবে পরিচালনা করবে সেই ভাবে চলবে। কেউ বাড়াবাড়ি করলে তাকে সরিয়ে দিয়ে নতুন লোক নিয়ে নেবে। তাছাড়াও কিছু উটকো সমস্যা তৈরি হয়েছে। সে সমস্যগুলো আমি মিটিয়ে দিয়েছি। পৃথিবীর যে প্রান্তেই আমি থাকিনা কেন, আমার শকুনের চোখ। এটা তোমার থেকে ভালো কেউ বুঝবে না। এই যে তুই বললি তুই কিছুই জানিস না। নার্সিংহোম নিয়ে সমস্যা হয়েছে তুমি বলোনি।
দাদা মল্লিকদা খাওয়া থামিয়ে আমার মুখের দিকে তাকাল। কিরে মিত্রা তোকে তখন ফোন করে আমি কি বললাম। মিত্রা আমার দিকে তাকাল। তুই গোয়া গেছিলি কেন। ডাক্তারদা আমার মুখের দিকে তাকাল। লিন্ডা তোমার সঙ্গে এসে দেখা করেছিল! মিত্রা সজোরে আমার কোমরে চিমটি কাটল। আমি উঃ করে উঠলাম। এই যে তুই বললি আমি গোয়া যাই নি। তোকে যে খবর দিয়েছে ভুল খবর দিয়েছে। মিত্রা ভেংচি কাটার ভঙ্গি করে বললো। মিত্রা ওরকম করিসনা মা। বেচারা সারাদিনের পর খেতে বসেছে। বড়মা করুণ সুরে বললো। ছোটমা হাসছে। এই যে তুমি বললে ওর সঙ্গে ধর্মঘট করবে। করবো তো, তেকে কথা দিচ্ছি। তাহলে বুঝতে পারছ ও কোথায় গেছিল। খালি আমাকে দোষ দাও। বুঝতে পারছি। যাওয়ার সময় কি বলে গেল। আমি দেশের বাড়িতে যাচ্ছি। ইসলামভাই-এর সঙ্গে দরকার আছে। ওখান থেকে ও দিল্লী গোয়া চলে গেল ? ও কোন দিন সত্যি কথা বলে। মিত্রা আমার দিকে হাসি হাসি চোখে তাকাল। ব্যানার্জী একটু গোলমাল পাকিয়েছে। আর পাকাবে না। তুই কি ভগবান ? না মানুষ। এবার বলো কারা আসবে। ডাক্তারদা আমার মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে। দাদা হেসে ফেললো। রথীনকে সেদিন বলেছিলাম। ও রাজি হয়েছে। একবার তোর সঙ্গে কথা বলতে চায়। আরও দু’তিনজনকে আমি বলেছি। ওরা মিত্রার ব্যাপারটা জানে। কম বেশি সকলেই জানে। কেউ মুখে প্রকাশ করে না। আমাকে উহ্য রাখবে। সে বললে চলবে কি করে। আমার জায়গায় তুই থাকলে তোর উৎসাহ হত না। ঠিক। মাথাগুলোকে সব বদলে দাও। তুমি তোমার মতো সাজিয়ে নাও। সে কাজটুকু করে ফেলেছি। কোনটার হাল সবচেয়ে খারাপ দেখলে। তুই কি এ্যাকাউন্টস দেখেছিস। হিমাংশু দেখেছে ওর কাছ থেকে শুনেছি। তাহলে আমার থেকে তুই ভালো জানবি। ওখান থেকে এই মুহূর্তে টাকা নেওয়ার কোন প্রশ্ন নেই। বরং আধুনিক মেশিনপত্র যদি কিছু আনার থাকে তার ব্যবস্থা করো। করেছি। তোমার কি আর টাকা লাগবে। কিছু লাগবে। তাহলে হিমাংশুকে বলবে, কাগজের এ্যাকাউন্ট থেকে নিয়ে নেবে। সেটা হিমাংশু বলেছে। তাহলে কনো সমস্যা নেই। আছে। কি আছে। মিত্রার শরীরের অবস্থা আমার থেকে তুই ভালো জানিস। আমার কাছে এই ব্যাপারটা অপ্রত্যাশিত ছিল। খাওয়ার টেবিলে যে এই ভাবে কথাটা ডাক্তারদাদার মুখ থেকে বেরতে পারে আমি ভাবতে পারি নি। এখন বুঝতে পারলাম ব্যাপারটা প্রি-প্ল্যান্ড। ডাক্তারদাদার মুখ থেকেই মিত্রা গোয়ার ব্যাপারটা জেনেছে। তারমানে লিন্ডা প্রচন্ড ভয় পেয়েগেছে। তাই ডাক্তারদাদার কাছে এসে স্যারেন্ডার করেছে। আমি সবার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম। সকলের চোখে খুশির ছোঁয়া। ওর শরীর ঠিক আছে। তুই গা জোয়াড়ি করছিস। আমাকে কি করতে হবে বলো। তোর এখন দূরে কোথাও যাওয়া চলবে না। আমি আগামী মাসে লন্ডন যাব। যাওয়া হবে না। তুই ওটা পিছিয়ে দে। দেরি হয়ে যাবে। ওর ব্যাপারটা আমাদের থেকে তুই বেশি জানিস। কোন সমস্যা হলে তুই যে ভাবে ট্যাকেল করতে পারবি, আমরা সেই ভাবে পারব না। এটা তোকে বুঝতে হবে। ঠিক আছে আর কি আছে বলো। সুমন্তকে আমি রথীনকে দিয়ে একবার দেখাব। কনিষ্ককে বলেছি ওকে একবার কলকাতায় আনার ব্যবস্থা করতে। আমি ডাক্তারদার দিকে তাকালাম। তারপর মিত্রার দিকে। খুব সুন্দর ব্রিফ করেছিস দেখছি। কই কাজের বেলায় তো এত সুন্দর ব্রিফ করতে পারিস না। আমি বলিনি বড়মা বলেছে। বড়মা জানল কি করে। আমি বলেছি। দাদা বললো। উরি বাবা বেশ স্ট্রং এ্যালায়েন্স তৈরি করে ফেলেছ দেখছি। মল্লিকদা হেসে ফেললো। ছোটমা মিত্রাকে ডিঙিয়ে আমার পিঠে হাত রাখল। রাগ করছিস কেন। তুই তো ভালোছেলে। আমরা কেউ ধর্মঘট করবো না। ফোনটা বেজে উঠলো পকেট থেকে বার করলাম। দেখছো কোন ফোনটা বাজছে দেখো। মিত্রা বড়মার দিকে তাকিয়ে গজ গজ করে উঠলো। বল।….হয়েগেছে!….ঠিক আছে নিজেদের জায়গায় চলে যা। ফোনটা স্যুইচ অফ করে পকেটে রাখলাম। মিত্রার দিকে তাকালাম। তুই মাছগুলো খেয়ে নে। ভালো লাগছে না। উঠে দাঁড়ালাম। সবাই আমার দিকে একটু অবাক হয়ে তাকাল। মিত্রার চোরা চাহুনি যেন আমায় গিলে খাচ্ছে। বোস আরও অনেক কথা আছে। ডাক্তারদা ধমক মারলো। সব কথা এখন বলে ফেললে কাল সকালে কি বলবে। ডাক্তারদা আমার মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকল। আমি বেসিনের সামনে চলে এলাম। মুখটা ধুয়ে সোজা ওপরে চলে এলাম। লাইট জাললাম না খালি পাখার স্যুইচটা দিলাম। জানলার সামনে এসে দাঁড়ালাম। সেই এক চিত্র তবু কেমন যেন নতুনত্ব আছে। টেবিলের ওপর পড়ে থাকা সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বার করে ধরাতে গেলাম। কি মনে হলো, সিগারেটটা প্যাকেটের মধ্যে রেখে আবার ফিরে এলাম। চিকনাকে ফোনে ধরলাম। বেশ কিছুক্ষণ বেজে যাবার পর ধরলো। কিরে ঘুমিয়ে পরেছিস। হ্যাঁ। তুই কবে ফিরলি। আজ সকালে। ওদিককার কাজ সারলি। হ্যাঁ। কাকার শরীর কেমন আছে। ভালো। আজ নিয়ে গেছিলাম। থরো চেক আপ করেছে। কি বললো। হার্টটা একটু সমস্যা করছে। ওষুধ দিয়েছে। খাওয়ার রেস্ট্রিকসন করেছে। কে শুনবে বল। নীপার খবর। ম্যাডাম কতো করে বললো, শেষ পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছে। হস্টেলে থাকছে। না ডেলি যাতায়াত করছে। এতটা পথ কি ভাবে যাওয়া আসা করছে। ইসলামভাই-এর গাড়ি নিয়ে যাচ্ছে। না হলে আমারটা। কেউ প্যাঁক পুঁক দিচ্ছে না। কার ঘাড়ে কটা মাথা আছে বল। সবাই জানে ও অনি ব্যানার্জীর আত্মীয়। তাছাড়া ম্যাডাম এখন জিনসের প্যান্ট, পাঞ্জাবী, সালোয়াড় কামিজ, ছাড়া কিছুই পরছেন না। রোয়াবি আলাদা। হ্যাঁরে ম্যাডামের শরীর কেমন। কেন খারাপ হয়েছিল নাকি ? নেকু তুই জানিস না। আয় একবার এখানে অনাদি কেলাবে বলেছে। কেন! এতো বড়ো একটা সুখবর তুই চেপে গেছিস। দুদিন পর জানতেই পারতিস। ভাগ্যিস সেদিন অনাদি গেছিল। দেখেই বুঝতে পেরেছে। তারপর বড়মাকে জিজ্ঞাসা করতে বড়মা বলেছে। সেই শুনে কাকী আবার এখানে ঠাকুরকে পায়েস করে দিল। তোরা তো অনেক কিছু করে ফেলেছিস। চিকনা হো হো করে হাসছে। এ সপ্তাহে এক লাখ টাকা প্রফিট করেছি। কোথা থেকে! মিলে চার গাড়ি সাপ্লাই দিলাম। তাহলে সব ধান শেষ করে দিলি। ও বাড়িটা খালি করেছি। এবারেই তো ধানের টান ধরা শুরু হয়েছে। মৌসুমি মাসি বললো কিছু চাল করে দে আমার ছেলেগুলো হাটে গিয়ে বেচে আসবে। কুঁড়ো গুলো কি করছিস। এখানে গরুর অভাব। দিয়ে শেষ করতে পারছি না। জেনারেটর নিয়ে এসেছিস। সঞ্জুরটা দিয়ে গেছে। তারমানে ভাড়া দিতে হচ্ছে। কি করবো। কাল দিয়েছি খিস্তি। বলেছে আগামী সপ্তাহে এনে দেব। ওদিককার খবর। অনাদি আজও গেছিল। আস্তে আস্তে এগোচ্ছে। ব্যাঙ্কের খবর। জানিনা। তবে প্রতিদিন বেশ লোক আসছে। তুই যাস না। প্রতিদিন রাতে যাই। আর সবাই ঠিক আছে। তোর জন্য গ্রামের ছেলেগুলো করেকম্মে খাচ্ছে। কেউ বসে নেই। দেখি আগামী সপ্তাহে যাব। প্রবীরদা এর মধ্যে একদিন এসে হারিকেন ট্যুর দিয়ে গেছে। প্রবীরদা গেছিল! শুধু আসেনি পুকুরে স্নান করে কাকীমার কাছে দুটি গরম ভাত খেয়ে গেছে। আমাদের বুক এখন ছাপান্ন ইঞ্চি। বেশি ফোলাস না। ফেটে যাবে। চিকনা হাসছে। নিরঞ্জনাদা। তোর জায়গা নিয়ে ব্যস্ত। শুনেছি মাটি কাটা শুরু হয়েছে। তুই দেখতে যাস নি। সঞ্জু একদিন গেছিল। দেখে এসেছে। দেবাদা নির্মাল্য প্রায়ই আসছে। তোক যা দিয়িত্ব দিয়েছি পালন করবি। তোর টিমটার সঙ্গে আমাকে একবার বসতে হবে। তুই আয় বসিয়ে দেব। ওরাও বলছিল। কি। তোর সঙ্গে ওরা বসবে। ঠিক আছে আমি আগামী সপ্তাহে যাব। তুই কোন বাড়িতে। তোর বাড়ির নিচের তলায়। নীপা। ও বাড়িতে। তোর ঘরটা ছাড়া সব জায়গায় ধানের বস্তা রেখেছি। লোকজন রেখেছিস ?
ও নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না। শোন পুকুরটা সংস্কার করেছি। মাছ ছেড়েছি। ভালো করেছিস। কাকা কাকী কেমন আছে। আগের থেকে এখন ভালো। ডাক্তারদাদার ওষুধগুলো খাওয়াচ্ছিস। আমাকে কিছু বলতে হয় না। তারা নিজেরা নিজেরা খায়। খুড়তোত ভইবোন গুলো এখন ঝামেলা করছে। এরপর আর কেউ ঝামেলা করে। বুঝলি অনি সবাই আমাকে বলতো অকর্মন্যের ঢেঁকি। এখন সেই অকর্মন্যের ঢেঁকিকে সবাই তেল দেয়। বেশ ভালোলাগে। মাঝে মাঝে ভাবি তুই না থাকলে আমি হয়তো হেজে পচে মরে যেতাম। আবার ফ্যাচ ফ্যাচ করে। নারে সত্যি বলছি। ভানুর খবর কি। আনাদি ভানুকে লোন দিয়েছে একটা ট্রেকার কেনার জন্য। আমাদের গ্রামে প্রথম গাড়ি ঢুকবে। আগামী সপ্তাহে ভানু অনাদি বাসু গিয়ে নিয়ে আসবে। তুই যাবি না। এদিকে খুব চাপ বেরে গেছে। অনাদি বলেছিল। আমি বলেছি তোরা যা। ভানু মন খারাপ করেছে। একটু করেছে। তুই বরং যা। নীপাকে একটু দায়িত্ব দিয়ে যা। তুই বলছিস। ভেবে দেখ। তাহলে যাব। গাড়ি কে চালাবে, ভানু নিজে ? সে ওর ব্যাপার। অনাদি বলেছে প্রথম দু’মাস টাকা নেবে না। তিন মাসের মাথা থেকে টাকা শোধ দিতে হবে। ভানু রাজি হয়েছে। বর্যাকালে। গ্রামে ঢুকবে না। তবে চক পর্যন্ত যাওয়া আসা করবে। পারমিট। এখানে কোন গাড়ির পারমিট নেই। তারওপর সবাই এখন নিরঞ্জনদার নাম করে চমকায়। এটা খারাপ। তুই এসে বলবি। ঠিক আছে এখন ঘুমো। কেন। কেন মানে, কতো রাত হলো খেয়াল আছে। তোর সঙ্গে কতদিন পরে কথা বললাম। অনেকবার ইচ্ছে করছিল তোকে ফোন করি। তুই বারন করেছিস। তাই ফোন করিনি। আগামী সপ্তাহে যাব। আসার আগে একবার ফোন করিস। আচ্ছা। আমি ফোনটা পকেটে রেখে ঘুরে দাঁড়ালাম। মিত্রা একেবারে মুখো মুখি দাঁড়িয়ে। এই অন্ধকারেও লক্ষ্য করলাম ওর চোখ দুটো চক চক করছে। দরজার দিকে তাকালাম। দেখলাম বন্ধ। তারমানে মিত্রা নিস্তব্ধে কাজ করেছে। আমি একটুও টের পাই নি। আমাকে জড়য়ি ধরলো পাঞ্জাবীটা সরিয়ে বুকে ঠোঁট রাখল। আমার ঠোঁটের কাছে ঠোঁটটা তুলে ধরলো। আমি ঠোঁট ছোঁয়ালাম। মিত্রার চোখে মুখে হাঁসির ছটা ছড়িয়ে পরলো। কথাবলা হলো। কার সঙ্গে কথা বললাম বলতো। চিকনার সঙ্গে। কি করে বুঝলি। ও যেভাবে জোড়ে জোড়ে কথা বলছিল স্পিকার অন না থাকলেও শুনতে পেয়েছি। হাসলাম। ও এখন তোর ট্রাম্পকার্ড। সকালে একবার ফোন করে, বিকেলে একবার ফোন করে। আমাকে গুরুমা বলে। সেই জন্য সন্তানের পেটে একটু আধটু খোঁচা মারিস। মিত্রা আমাকে জড়িয়ে ধরলো। বুকে মুখ ঘোসছে। আনাদি এসেছিল আমাকে বলিস নি তো। তোক সব কথা বলতে গেলে সাতদিন আমাকে চব্বিশঘন্টা করে দিতে হবে। ওখানকার সবাই জেনেগেছে। কাকীমা পূজোদিয়ে প্রসাদ পাঠিয়েছিল। কে এসেছিল। কেউ আসে নি। দেবার হাত দিয়ে পাঠিয়েছিল। দেবা! দেবারা এখন রেগুলার যায়। তোকে তো চিকনা বললো। নিরঞ্জনদা কাজ শুরু করে দিয়েছে। প্রবীরদা গেছিল। তোকে হিন্টস দিয়েছি। ওখানে গেছিল। তার হিন্টস দিস নি। এ বাড়িতে যখন ঘনো ঘনো আসছে। তারমানে নিশ্চই ও বাড়িতেও গেছিল। প্রবীরদা খুব ইমপ্রেসড ওদের কাজকর্ম দেখে। টাকা পাচ্ছে কোথায়। আমি দিয়েছি। ভালো করেছিস। হিমাংশু জানে। হিমাংশুর সঙ্গে আলোচনা করেই দিয়েছি। হিমাংশু ব্যাঙ্কের ম্যানেজারের সঙ্গে লোনের ব্যাপারে কথা বলেছে। ব্যাঙ্ক ম্যানেজার কি বলেছে। ওরা এক পায়ে খাঁড়া। অনিমেষদা বলেছে স্টেট কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক থেকে লোনের ব্যবস্থা করে দেবে। বাবাঃ তুইতো পাকা ব্যবসায়ী হয়ে গেছিস। অনি ব্যানার্জীর বৌ না। আমি মিত্রাকে বুকের সঙ্গে জাপ্টে ধরলাম। তোকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো আমাকে লুকবি না। কি বল। আমাকে তোর বিশ্বাস হয়। তোকে ছাড়া কাকে বিশ্বাস করবো বল। আজ আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি শুধু তোর জন্য। তুই আমাকে কাছে টেনে না নিলে আমি হয়তো যেমন চলছিলাম সেইভাবেই কোন প্রকারে চালিয়ে দিতাম। আবার তুই একথা বলছিস। যা সত্যি তাই বললাম। সাগির অবতারকে কোথায় রেখেছিস। কেন। তুই যেদিন গেছিস সেদিন থেকে সাগির অবতারের টিকি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ইসলামভাই দামিনীমাসি, আবিদ আর নেপলাকে খুব ঝেড়েছে। তবু মুখ থেকে কোন কথা বার করতে পারে নি। তারপরে ইসলামভাই আবিদকে বলেছে তোরা কি ছেলেটাকে মারার ব্যবস্থা করছিস। তখন নেপলা রেগে বলে ফেলেছে। বস তুমি যদি কোনদিন ভুল করে অনিদার গায়ে হাত তোলার কথা ভাবো, আমি যদি তা জানতে পারি, তোমায় ফিনিস করে দেব। সে কিরে! তোকে বলছি কি তাহলে। এই ঘরে একদিন এসে দামিনী মাসি ছোটমাকে আমাকে সব বলেছে। ইসলামভাই নেপলার কথা শুনে হাসবে না কাঁদবে, কিছুই ভেবে পায় না। আবিদ থাপ্পর মারতে গেছিল। ইসলামভাই বারন করেছে। বলেছে আমি তোদের কাছে অনিকে রেখে মরেও শান্তি পাব। মাসি বললো, জানিস মামনি তখন আমি বুঝলাম সাগির অবতার অনির কাজ করছে। আবিদ নেপলা সব জানে। মুখে রাটি পর্যন্ত করে না। এমনকি রতন পর্যন্ত কিছু জানে না। আবার রতন নাকি কিছু কাজ করছে, সেটা আবিদ নেপলা জানে না। অনি কিরকম ছাতার কল করেছে দেখ। তারপর আর কি, আমি পরে ইসলামভাইকে ফোন করলাম। ইসলামভাই-এর সে কি হাসি। বলে মামনি ও আমার বাপ, যাদের ওপর আমি কোনদিন আস্থা রাখতে পারি নি। ও তাদেরকে নিয়ে দিব্যি কাজ করছে। ওর আর একটা ট্রাম্পকার্ড আছে বুঝলি, চিকনা। আমাকে বলেছিল ওকে ভরসা করতে পারো। ও মা, সেতো দেখি আমার আগে যায়। গ্রামের রাজনীতি অনাদি যতটা বোঝে, তার থেকে চিকনা আরও ভালো বোঝে। ব্যাশ তোর ঘুঁটি গুলো ধরে ফেললাম। কাউকে অবশ্য বলিনি। আমি মিত্রার চোখে চোখ রেখেছি। ও কল কল করে যাচ্ছে। সেদিন রাতে সবাই একসঙ্গে খেতে বসেছি, ডাক্তারদাও ছিল। খেতে খেতে আমাকে বললো মামনি তুই লিন্ডা বলে কাউকে চিনিস। আমি প্রথমে ডাক্তারদাকে স্ট্রেট সট ডিনাই করি। তোর মুখ থেকে নামটা আমি একবার শুনেছি। তারপর। ডাক্তারদা তারপর সবার সামনেই বললো। জানিস আজ মেয়েটা এসে আমার পায়ে ধরে কি কান্না। আমাকে আপনি বাঁচান। আমরা সবাই অবাক হয়ে ডাক্তারদার দিকে তাকিয়ে। ডাক্তারদা গম্ভীর হয়ে বললো, অনি গোয়া গেছে। মেয়েটাকে দিয়ে নার্সিংহোমটা বেচিয়ে দিয়েছে। বলেছে টাকা পয়সা নিয়ে ইন্ডিয়া থেকে ভেগে পরো, না হলে তোমার খেল খতম। কে মারান নে কে তাকে সঙ্গে করে নিয়ে গেছিল। আমি মিত্রার দিকে তাকিয়ে। চোখে হাসি। কিরে কিছু বল। কি বলবো, তুইতো বলছিস। সত্যি তুই গোয়ার নার্সিংহোমটা বেচিয়ে দিয়েছিস। হ্যাঁ। বকলমে মারান কিনেছে। সেই ভাইজ্যাকের দাদা। হ্যাঁ। তোর সঙ্গে এখনো যোগাযোগ আছে। হ্যাঁ। আমার মাঝে মাঝে ভীষণ ভয় করে বুবুন। কেন। এদের সঙ্গে তুই ওঠা বসা করিস। সবাই নিজের স্বার্থ নিয়ে চলে। আমিও নিজেরটা আখেরে গোছাই। স্বার্থে আঘাত লাগলে বিপদ। স্বার্থে আঘাত না লাগলে বিপদ নেই। শয়তানটা এখনো বেঁচে আছে। বলতে পারব না। তারমানে তুই সাগির অবতারকে ওর পেছনে লাগিয়েছিস। হ্যাঁ। আমার ভীষণ ভয় করছে বুবুন এর একটা উল্টো রি-অ্যাকসন আছে। খামকা ঝামেলা করছিস। তোকে বলেছি না আমার কাজে মাথা গলাবি না। তুই বিশ্বাস কর। আহত সিংহকে বাঁচিয়ে রাখা ঠিক নয়। বাঁচিয়ে রাখলে বিপদ। না হলে কোন বিপদ নেই। তার মানে তুই মেরে দিয়েছিস। এখনো খবর পাই নি। তুই সত্যি করে বল না। বিশ্বাস কর। তাহলে তুই যে খেতে বসে বললি, হয়েগেছে….নিজের কাজে চলে যা। আমি মিত্রার দিকে তাকালাম। তোর চোখ বলছে তুই ধরা পরে গেছিস। আমি চুপ করে রইলাম। বলনা এরকম করছিস কেন। পিকনিক গার্ডেনের রেল লাইনে স্যুইসাইড করেছে। মিত্রা কিছুক্ষণ আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকল। তারপর পাগলের মতো আমার মাথাটা চেপে ধরে আমার ঠোঁটে মুখে চোখে বুকে চুমু খেতে লাগলো। আমি নিস্তব্ধে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে। তারপর পাগলের মতো কল কল করে হেসে উঠলো।
সত্যি স্যুইসাইড করেছে! আমি স্থির চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছি। জানিস বুবুন, আমার সবচেয়ে আনন্দের দিন। তুই বিশ্বাস কর। আমি মনে মনে প্রতিটা মুহূর্তে ওর মৃত্যু কামনা করেছি। নিজে হাতে মারতে পারলে, অনেক বেশি শান্তি পেতাম। আমার হয়ে তুই কাজটা করলি। শয়তানটা আমার মাকে স্লো-পয়জন করে মেরেছে। চোখের সামনে দেখেছি কিছু বলতে পারি নি। আমার শরীরটাকে বাজারের বেশ্যার থেকেও ঘৃন্য করে দিয়েছে। আমি মিত্রার চোখে জিঘাংসার চিহ্ন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। আঃ কি শান্তি। তারপরই মিত্রা আমার বুকে মুখ লুকিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলো। আমি স্থানুর মতো দাঁড়িয়ে আছি। আলো আঁধারি ঘরে মায়ার খেলা। পাঁচিলের ওপার থেকে রাস্তার নিওন আলো ঘরে এসে লুটপুটি খাচ্ছে। মিত্রা আমার বুকে মুখ লুকিয়ে। কান্না থেমেছে। কিন্তু মুখ তুলছে না। কিরে অনেক রাত হয়েছে। জেগে থাকলে শরীর খারাপ করবে। এবার শুবি চল। মিত্রা আমার দিকে তাকাল। চোখের পাতা ভেঁজা দুর্বাঘাসের মতো নেতান। আমি ঠোঁট ছোঁয়ালাম। মিত্রা চোখ বন্ধ করলো। আমি ওকে জড়িয়ে ধরে বিছানায় এলাম। কাপর ছাড়বি না। ছেড়েছি। তোর সেই বালিসের ওয়াড়গুলো কোথায়। সেটা কি! যেটা পরে রাতে আমার পাশে শুস। দিলো আমার কোমরে রাম চিমটি। আমি উহ আহ করে হেসে উঠলাম। অতো সুন্দর নাইটগাউনটা বালিশের ওয়াড়। আচ্ছা আর বলবো না এবার ছাড়। মনে থাকে যেন। খুব মনে থাকবে। আমি মিত্রার হাত থেকে মুক্তি পেয়ে নিজের শরীরটাকে বিছানায় ছুঁড়ে দিলাম। মিত্রা ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে হাসছে। তোর আঙুলতো নয় যেন শাঁড়াসি। তোকে এইটা দিয়ে জব্দ করবো। সুরো শিখিয়ে দিয়ে গেছে। বুঝেছি তোর গুরু এখন সুরো হয়েছে। ওর কাছ থেকে জব্দ করার টিপ্স নিচ্ছিস। মিত্রা বিছানায় উঠে এসে আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পরলো। এরকম করিসনা, কোথায় লেগে টেগে যাবে। তখন হিতে বিপরীত। তুই আমার কথা ভাবিস। ভাবি বলেই, না থাকার প্ল্যান করেছি। কেন। থাকলেই তুই গন্ডগোল করবি। আমি না থাকলে আর গন্ডগোল করতে পারবি না। তবেরে শয়তান। দেখছিস কে শুরু করছে। বেশ করেছি, তুই কিছু করতে পারবি। ছোটমার কান জানিস, মাইক্রস্কোপ লাগানো আছে। থাক। এই যাঃ….। কি হলো রে! ওষুধ লাগান হয়নি। ওষুধ খেতে হয় জানতাম, লাগাতে হয় নাকি। তুই আমার কিছু খোঁজ খবর রাখিস। বড়মা, ছোটমা আছে। তারওপর জ্যেঠিমনি। আমি এখানে পাত্তাই পাব না। ওষুধটা লাগিয়ে দিবি। যা টর্চ আর ওষুধ নিয়ে আয়। খুব সখ না। যা বাবা নিজের জিনিস দেখব তাতে সখের কি আছে। ওখানে না। পেটে লাগাতে হবে। তাহলে তুই নিজে নিজে লাগিয়ে নে। দেখলি দেখলি তুই কিরকম স্বার্থপর দেখ। আচ্ছা নিয়ে আয় লাগিয়ে দিচ্ছি। মিত্রা উঠে গিয়ে আলমাড়ি খুলে একটা ক্রিমের কৌট নিয়ে এলো। এটা কি রে। এটা একটা ক্রিম, পেটের চামড়াটা যাতে ফেটে না যায় তার জন্য ডাক্তারদাদা নিয়ে এসেছে। আমি না থাকলে কে লাগাত। তুই ছিলি না। আমি বড়মার কাছে শুতাম, দাদা তোর ঘরে এসে শুত। বড়মা লাগিয়ে দিত। তাহলে তোর আদড়ের কোন খামতি নেই। বড়ামাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরতাম। ভালোই আছিস। মিত্রা আমার বুকে মাথা রাখল। মন্দ থাকব কেন। তুই আমাকে ঘর দিয়েছিস। বড়মাকে দিয়েছিস, ছোটমাকে দিয়েছিস, আমার জীবন থেকে প্রায় হারিয়ে যাওয়া গর্ভধারিণীকে আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিস। দিদিভাই জ্যেঠিমনি প্রতিদিন নিয়ম করে তিনবার ফোন করে আমার খোঁজ খবর নেয়। সবাই ঠিক আছে বুঝলি বুবুন, খালি তুই না থকলে মনটা খচ খচ করে। কাউকে বলতে পারি না। আমি মিত্রার মুখটা বুক থেকে তুলে ধরলাম। বুবুন সব সময় তোর পাশে আছে। ফিজিক্যালি নয় মেন্টালি। এটা তুই বিশ্বাস করিস। মিত্রা মাথা ঝাঁকাল। তুই তোর বুবুনকে অনেকগুলো কাজের দায়িত্ব দিয়েছিস। জানি। তাহলে। তবু মন মানে না। মনটাকে গঙ্গাজলে ধুয়ে দে। মিত্রা কোন কথা না বলে বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে রইলো। ওঠ ওটা লাগিয়ে দিই। তারপর একটু ঘুম। আবার কিছু বাদাবি, দোষ আমার ঘাড়ে পরবে। দেখছিস দেখছিস তুই কেমন করছিস। একটু শুয়ে আছি। তাতেও তোর সহ্য হচ্ছে না। আমি হেসে ওর বুকে হাত রাখলাম। ও হাতটা সড়িয়ে দিল। বুঝলাম মাথাটা গরম হয়েছে। আমার কথাটা ঠিক ঠাক মনে ধরে নি। চুপ চাপ শুয়ে রইলাম কোন কথা বললাম না। ভীষণ ঘুম পাচ্ছে। ঘুমোতেও পারছি না। যদি খেপে যায়। কতোক্ষণ শুয়ে শুয়ে চলন্ত পাখার ব্লেড গুণলাম ঠিক নেই। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলাম। তিনটে বাজে। আস্তে করে মিত্রার পিঠে হাত রাখলাম। দেখলাম কোন সাড়া শব্দ নেই। মাথার বালিসটা একটু উঁচু করে ওর মুখ দেখার চেষ্টা করলাম, দেখলাম চোখ বন্ধ করে আছে। আমার মাথার বালিসটা টেনে নিয়ে পাশে রাখলাম। বুকের থেকে ওর মাথাটা আস্তে করে তুলে নিয়ে বালিশে রাখলাম। অঘোরে ঘুমোচ্ছে। পাদুটো সোজা করে কোমড় থেকে কাপরটাকে আলগা করে দিলাম। কোনো সাড়া শব্দ নেই। নাভির ঠিক নিচের থেকে তলপেটটা সামান্য উঁচু হয়ে আছে। নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে। সারাটা শরীরে মা মা গন্ধ আমি একবার কানপেতে শেনার চেষ্টা করলাম। গঁ গঁ একটা আওয়াজ হচ্ছে। শায়ার দড়িটা ঢিলে করে দিয়ে পেটে ক্রিমটা ভাল করে লাগিয়ে দিলাম। কৌটটা আলমাড়িতে তুলে রাখলাম। ওর ঘুমন্ত শরীরটা আজ একটুও নেশা ধরাচ্ছে না। কেমন যেন একটা ভালোলাগা আবেশ আমার সারাটা শরীরে রিনি ঝিনি করে বাজছে। আস্তে করে ওর পাশে এসে শুলাম। অনেকক্ষণ ওর ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। আমার ভালবাসা গ্রহণ করে মিত্রা নারী জীবনের পরিপূর্ণতা পেতে চলেছে। ভাবতেই মনটা কেমন উসখুশ করে উঠলো। ভীষণ আদর করতে ইচ্ছে করলো ওকে। কিন্তু ওকে ছুঁতে পারলাম না। কিছুতেই মন থেকে সায় দিল না। ঘুম আসছে না। বিছানা থেকে উঠে এসে মিটসেফের ওপর থেকে জলের বোতলটা নিয়ে কিছুটা জল খেলাম। সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বার করে জানলার ধারে গেলাম। সিগারেটটা ধরাতে গিয়ে আর ধরালাম না। সিগারেটের ধোঁয়ায় যদি ওর খতি হয়। দরজাটা আস্তে করে খুলে বাইরের বারান্দায় এলাম। সিগারেট ধরালাম। দু’একটা পাখি কিচির মিচির করে উঠলো। নিস্তব্ধ রাতে তাদের ডাকটা যেন আরও তীব্র হয়ে কানে এসে লাগল। কেউ আবার ডানা ঝাপটাচ্ছে। গাছের পাতা মৃদু হাওয়ায় দুলছে। বাইরের গেট বন্ধ। উঁচু পাঁচিলের বাইরের রাস্তাটা শুনশান। জুঁই ফুলের গাছটা একমাথা পাকা চুল নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। অনি জীবনে কখনো তুই এরকম ফ্যাসাদে পরিসনি, তাই না। হেসে ফেললাম। সত্যি মানুষের জীবন রহস্যটা কতো গভীর, কেউ অনুভব করতে চাইলে তার গভীরতা বুঝতে পারবে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষের জীবনটা গড্ডালিকা প্রবাহের মতো। তুই কি আর দশটা মানুষের থেকে আলাদা। বলতে পারব না। তবে পরের কষ্টটা নিজের মতো করে বোঝার চেষ্টা করি। কখনো ভেবে দেখেছিস এই মেয়েটা কতটা তোকে ভালবাসে। জানি বলেই ওর জন্য জীবন দিয়ে দিতে পারি। ভালবাসলে শুধু মাত্র এইটুকুই করতে হয়। আর কিছু করতে নেই। কে বললো আমি করছি না। আমি যা করছি সব ওর জন্য। এর বাইরেও মিত্রার কিছু চাওয়া পাওয়া থাকতে পারে। এটা তুই কখনো ভেবেছিস। সেই ভাবে ভাবিনি। কেন। যেটা নিয়ে ও একটু আগে আমার ওপর অভিমান করলো। কেন করলো, কখনো ভেবে দেখেছিস। দেখেছি। দেখেছি বলেই, ওকে নিশ্চিন্তে ঘুম পাড়িয়ে, আমি বাইরের বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে আছি। ঘুম আসছে না। বুবুন। জড়ানো কন্ঠস্বরে নিজের নামটা শুনে ছুটে বিছানার কাছে গেলাম। মিত্রা অঘোরে ঘুমচ্ছে। আমি কি তাহলে ভুল শুনলাম। মুখটা ওর মুখের কাছে নিয়ে গেলাম। কপালে হাত রাখলাম। মিত্রার বুক চিড়ে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস বেরিয়ে এলো। কাপড় এলোমেলো হয়ে গেছে। ভাবলাম একবার ঠিক করে দিই। তারপর ভাবলাম থাক কে আর দেখবে আমি ছাড়া। আবার একটু ওর পাশে শুয়ে পরলাম। কিছুতেই ঘুম আসছে না। মাঝে মাঝে আমার এরকম হয়। দামিনী মাসির ওখানে কত রাত এরকম অনিদ্রায় কেটে গেছে। নানা চিন্তা মাথা ফুঁরে বেরিয়ে আস্তে চাইছে। অনি তুই এবার একটু ঘুমো। দূর ঘুম আসলে তো। উঠে বসলাম। মিত্রা পাশ ফিরলো। হাতটা নাড়াচাড়া করলো কাউকে যেন খুঁজতে চাইছে। আমি পাশ বালিশটা ওর হাতের নাগালে এগিয়ে দিলাম ও জাপ্টে ধরলো। ও জানে ওর বুবুন আছে। চিন্তা কিসের। কিন্তু বুবুনের কে আছে ? মাথার মধ্যে অজস্র চিন্তা কিলবিল করছে। চোখ দুটো কেমন জ্বালা জ্বালা করছে। ঘন ঘন হাই উঠছে। বিছানায় এপাশ ওপাশ করতে করতে কখন যেন ঘুমিয়ে পরলাম। এক ধাক্কায় ঘুমটা ভেঙে চূড়মার হয়ে গেলো। চোখ খুলতে ইচ্ছে করছে না। ঘুমে জড়িয়ে আসছে। চোখ খুলতে গেলেই জ্বালা জ্বালা করছে। শয়তান সারারাত জেগে এখন পড়ে পড়ে ঘুম হচ্ছে। ওঠ সবাই নিচে তোর জন্য বসে আছে। মিত্রা আমার মুখের কাছে মুখ নিয়ে এসেছে। চোখ মেলে তাকালাম। মিত্রার চোখে মুখে হাসির ছটা। সিঁথিতে লালা ডগডগে সিঁদুরের প্রলেপ। দেখেই মনে হচ্ছে স্নান সারা হয়ে গেছে। আমি ওর মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম। কাঁচা ঘুমটা ভাঙালি। তোর হচ্ছে দাঁড়া। কেন আবার কি করলাম। কি করিস নি। উঠে বসলাম। ভাগ্যিস ছোটমা উঠেছিল প্রথমে। না হলে একটা কেলোর কীর্তি হতো। সক্কাল সক্কাল মেজাজটা বিগড়ে দিলি। আমি দিলাম। তাহলে কে। তোকে কাল সারারাত কে জাগতে বলেছিল।
তুইতো জাগিয়ে রাখলি। বিছানা থেকে উঠে টেবিলের কাছে গেলাম। কালরাতে দরজা বন্ধ করেছিলি। একহাত জিভ বার করে ফেললাম। মিত্রা হেসে ফেললো। তোকে শেখাতে শেখাতে বুড়ী হয়ে যাব। কেন তুই নেংটো হয়ে শুয়েছিলি। তুই কাপরটা ঠিকমতো পরিয়েছিলি। আমি খুললাম কখন। নেকু কিছু জানেনা যেন। চল না নিচে বড়মা ছোটমা দুজনে পিট্টি দেবে। আজ থেকে বড়মার কাছে শুবি। বাথরুমে ঢুকলাম। সত্যিতো ঘরে ঢোকার পর আমি কি দরজা বন্ধ করিনি। মনে হয় করেছিলাম। দূর এতো সব মনে থাকে কখনো। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে বাথরুমের কাজ শেষ করলাম। বেরিয়ে এলাম। মিত্রা আলনা থেকে আমার পাজামা পাঞ্জাবী বার করে বিছানার ওপর রেখেছে। এরি মধ্যে বিছানাটা গোছানও হয়ে গেছে। একটা সুন্দর চাদর পেতেছে বিছানাতে। তুই সব কাজ গুছিয়ে নিয়েছিস মনে হচ্ছে। হ্যাঁ। কটা বাজে বলতো। পৌনে নটা। কাম সারসে। টেবিলের ওপর থেকে আমার ফোনটা এনে দে। কেন দাদুকে ফোন করবি। ওর দিকে তাকালাম। জানলো কি করে! আজ তোর দাদু, দিদাকে আবিষ্কার করলাম। অ্যাঁ! অ্যাঁ না হ্যাঁ। খেয়েছে। মিত্রা মুচকি মুচকি হাসছে। অনেকক্ষণ গল্প করলাম। কার সঙ্গে গল্প করলি। প্রথমে মামীমা, তারপর মামা। তারপর দাদু, দিদা। সব চটকে দিয়েছিস। একটুও চটকাই নি। তাড়াতাড়ি মিটিং সার। বেরবো। বড়মা ছোটমাকে কিছু বলেছিস। না বলিনি। গোপন আছে, গোপন থাক। এইতো তোর বুদ্ধি হয়েছে। চিনলি কি করে। প্রথমে তোকে খুঁজছিল। বললাম তুই ঘুমোচ্ছিস। তারপর বললো তুমি কে মিত্রা। আমি বললাম হ্যাঁ। তারপর সব জেনে নিলাম। আমার নামে অনেক রিপোর্ট করেছিস। সব এক তরফা হয়ে গেছে, মনে রাখিস। আমি হাসলাম। কালকে দরজাটা খুলে রেখেছিলি কেন। ভুলে গেছি। সিগারেটটা ঘরে খেতে কি অসুবিধা ছিল। আমার না তোর যদি অসুবিধা হয়। ঢং। চুপ করে থাকলাম। আলমাড়ির আয়নায় চুলটা আঁচড়ালাম। তুই সায়ার দড়িটাও লাগিয়ে দিতে পারিস নি ? দূর ছাই মনে থাকলে তো। তোকে খুলতে কে বলেছিল। ঘুমিয়ে পরলি কেন। তোকে আমি ক্রিম লাগাতে বলেছিলাম। না আমার সখ হয়েছিল। তোকে আমি বলেছিলাম, আমার পায়ের কাছে শুয়ে থাক। এতো বড়ো বিছানায় জায়গা রেখেছিলি। হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে থাকলে আমি শোব কোথায়। এবার থেকে নিচে মাদুর পেতে শোব। তোকে শায়াব। ছোটমা না এলে কি লজ্জায় পরে যেতাম। এ বাড়িতে যখন আছিস তখন তুই মালকিন নোস এ বাড়ির বৌ। তাছাড়া তুই অনির বৌ, অনির মতো একটু আধটু বেসামাল না হলে চলে কি করে। তোকে জ্ঞান দেওয়াব। কি লজ্জা করছিল। এই প্রথম জীবনে লজ্জাপেলি, লজ্জাটা উপভোগ কর। মিত্রা এসে কোমরটা চিমটে ধরলো। এই দেখো কথায় কথায় চিমটি কাটলে চলে। আমার সব রোগ তোর শরীরে ঢুকে যাবে। ঢুকুক। মিত্রা হাত সরিয়ে নিল। আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আবার কি হলো। কাল তুই ওরকম করলি কেন। সেই জন্য রাগ হয়ে গেল। কি করলাম, কেনই বা তোর রাগ হলো বুঝলাম না। তোর বুকে একটু মাথা দিয়ে শুয়েছি তাতে কি খতি হয়েছে। কোন খতি হয় নি। এই সময় একটু নিয়ম কানুন মানতে হয় শুনেছি। আমিতো ঘুমিয়ে পরেছি। সেতো অনেক পরে। আর কোনদিন হবে না। এবার নিচে চল। দাদুর কাছে কখন যাবি। দেখি নিচের কাজ শেষ করি আগে। ওই পথে লোকনাথ বাবার মন্দির পরে একবার নিয়ে যাবি। বলে রেখেছি। সত্যি! হ্যাঁ। চল তাহলে কাজগুলো তাড়াতাড়ি সেরে নে। কারা কারা এসেছে। সব ডাক্তারদাদার বন্ধু। সব এক একজন দিকপাল। কথায় কথায় বললো তারা আমাদের নার্সিংহোমে কোন না কোন কাজে এসেছে। তবে ব্যাব্যহার ভালো পায়নি বলে নিজে থেকেই সরে গেছে। ও আর একটা কথা বলতে ভুলে গেছি। কি। ইসলামভাই ফোন করেছিল। কি জন্য। খবর পৌঁছে গেছে। একটু পর আসবে। আর কে জানে। সবাই জানে। বড়মা শুনে বললো আপদ গেছে। তুই কাউকে কিছু বলিস নিতো ? না। ইসলামভাই কাকে ফোন করেছিল। ছোটমাকে। তারপর দাদার সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা হয়েছে। ডাক্তারদাদা কি বললো। সবাই শুনে বললো পাপিষ্ঠদের এইরকম অবস্থাই হয়। চল। দুজনে কথা বলতে বলতে নিচে নামলাম। বাগানে, গেটের বাইরে বেশ কয়েকটা গাড়ি দাঁড়িয়ে। ঘর ভর্তি ডাক্তারদার বন্ধু বান্ধব। গুনে দেখলাম দশজন। ডাক্তারদাদা, রথীনডাক্তার, আর. এল. দাস ছাড়া কাউকে চিনতে পারলাম না। সবাই মেজাজে আড্ডা মারছে। দাদা মল্লিকদাও রয়েছে। আমি ঘরে ঢুকতেই ডাক্তারদা চেঁচিয়ে উঠলো আসুন স্যার আসুন। মিত্রা ফিক করে হেসে ফেললো। তুই ওই ভাবে হাসিস না। মালকিনের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে এবার মালিকের সঙ্গে পরিচয় পর্ব সারতে হবে। আমি রেডিমেড কোমড় ধাপিয়ে সকলকে প্রণাম করতে শুরু করলাম। প্রণাম শেষ। বুঝলে শান্তনু এই হচ্ছে অনি। ডাক্তারদাদা বলে উঠলো। এই ছোঁড়া এই সব কর্মের মালিক! না বাপু ভেবে দেখতে হবে কাজ করবো কিনা। সবাই হেসে উঠলো। রথীন ডাক্তার হাত তালি দিয়ে উঠলো। তুমি আবার হাতে তালি মারছো কেনো। সেদিনকার কথাটা একবার মনে করো। আমি খালি বক বক করি না। তোমার একটু স্বভাব আছে। যাই বলো সামন্ত ওকে দু’একবার দেখেছি। সেই দেখা আর এই দেখার মধ্যে অনেক পার্থক্য চোখে পরছে। ডঃ দাস বললেন। তুমি ওকে আগে দেখেছ! রথীন ডাক্তার ডঃ দাসের দিকে তাকিয়ে বললেন। তুই কনিষ্কদের সঙ্গে যেতিস না ? হ্যাঁ, স্যার। শেয়ালদার নায়ক তুই ছিলি। মিত্রা জোড়ে হেসে উঠলো। ছোটমা রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে এলো। আমি মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে। তুমি ওর কীর্তি কিছু জান ? ডাক্তার দাস ডাক্তারদাদার দিকে তাকিয়ে বললেন। কিছু কিছু জানি। তবে তুমি যেটা বলছো সেটা জানি না। ওর অনেক গুণ বুঝলে সামন্ত। কনিষ্কদের কাছ থেকে কিছু কিছু উদ্ধার করেছি। তবে হাতের নাগালে কোনদিন পাই নি। এইবার হাতের নাগালে পেয়ে গেলে। দাদা এবার কচুরি আনি। ছোটমা হাসতে হাসতে বললো। নিয়ে এসো। তুমি কি সকাল বেলা শুধু কচুরি খাওয়াবে। রথীনডাক্তার চেঁচিয়ে উঠলো। দেখো না কি আনে, তোমার পছন্দ হবে। ওর খাই ঢুকলে বাইটা এখন গেলনা তাই নারে সামন্ত। বাজখাঁই গলায় আর এক ডাক্তার বলে উঠলো। সবাই হাসাহাসি করছে। তুই বোস কতোক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবি। ওরা আবার যে যার কাজে যাবে। হিমাংশু হাসতে হাসতে ঘরে ঢুকলো। এসো এসো হিমাংশু। ডাক্তাদাদা হিমাংশুকে দেখে বলে উঠলো। আমি একটু অবাক হয়ে হিমাংশুর দিকে তাকালাম। ডাক্তারদাদা হিমাংশুর সঙ্গে সকলের পরিচয় করিয়ে দিল। আমার মতো হিমাংশুও সকলকে প্রণাম করলো। ডিড তৈরি করেছো ? ডাক্তারদাদা বললো। হ্যাঁ। যে ভাবে বলেছিলাম সেই ভাবেই তৈরি করেছো ? হ্যাঁ। অনিকে এর মধ্যে রাখনিতো। না। বেশ করেছো। আগে খেয়ে নাও। খেতে খেতে এদের বুঝিয়ে দাও। তারপর সই সাবুদ হবে। হিমাংশু একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসে পরলো। ছোটমা ট্রেতে করে খাবার প্লেট এনে সেন্টার টেবিলে রাখল। আরও আছে চাইলে পাবেন কোন অসুবিধে নেই। রথীনডাক্তার বলে উঠলো সে আর বলতে। ওরা হাসাহাসি করছে।
আমার মাথায় ব্যাপার গুলো ঠিক ঢুকছে না। তবে এটুকু বুঝলাম ডাক্তারদাদা নিজের মতো করে সব সাজিয়ে নিয়েছে। মিত্রার চোখ মুখ দেখে বুঝতে পারছি, ও সব জানে। ছোটমার পেছন পেছন একবার রান্নাঘরে যাচ্ছে আর আসছে। হিমাংশু হাসছে। খেতে খেতে ডাক্তারদা বললো, তোকে সব কথা বলা হয়নি। আমি সংক্ষেপে বলছি শুনে নে। আমি ডাক্তারদার দিকে তাকালাম। নার্সিংহোমগুলো সব আলাদা আলাদা বডি ছিল। আমি সবকটাকে একজায়গায় নিয়ে এলাম। একছাতার তলায় নিয়ে আসলাম প্রাইভেট ট্রাস্ট চ্যারিটেবিল ফর্মেসনে নিয়ে আসলাম। তাতে কাজ করার অনেক সুবিধা আছে। হেসে ফেললাম। ধরে ফেলেছিস। আমি মাথা নীচু করলাম। মাথা উঁচু করে বল আমি তোর মতো বুদ্ধি লাগাতে পেরেছি কিনা। আমি হাসছি। তোকে ছাড়া আমি সবার সঙ্গে আলোচনা করেছি। ওরা সবাই আমার মতে সায় দিয়েছে। যাই করো কেউ যেন অসন্তুষ্ট না হয়। কেউ অসন্তুষ্ট হবে না। আমাদের এই বয়সে পাওয়ার কিছু নেই। খালি এর মধ্যে অনিমেষকে রেখেছি। তোর আপত্তি আছে। আমার কোন কিছুতে আপত্তি নেই। অনিমেষকে ফোন করেছি এখুনি এসে পরবে। আমি ডাক্তারদার দিকে তাকালাম। তুই এই পনেরো দিনে তোর কাজ করেছিস। আমি আমার কাজ করেছি। অনিমেষ সব জানে। আমি একপলক ডাক্তারদার দিকে তাকালাম। এরাও কম বেশি সকলে সব জানে। রতনলাল তোর কীর্তি কলাপের কথা বলছিল। তোর এরকম ভুরি ভুরি কীর্তি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। অনিমেষদা, অনুপদা, প্রবীরদা ঘরে এসে ঢুকলো। পেছনে দামিনীমাসি, ইসলামভাই। আমি উঠে দাঁড়ালাম। সামন্তদা একটু দেরি হয়ে গেল। ক্ষমা করবেন। অনিমেষদা হাসতে হাসতে হাতজোড় করে সবার সামনে এসে দাঁড়াল। সকলে এগিয়ে এসে অনিমেষদার সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করলো। আমার দিকে তাকিয়ে। কখন ঘুম থেকে উঠলি। চুপ করে রইলাম। বড়মার দিকে তাকিয়ে। দিদি আজ ওর একটু কানটা ধরি। আজ থাক সবাই আছে। পাশ থেকে মিত্রা বলে উঠলো। ঘর ভর্তি সবাই হেসে উঠলো। ইসলামভাই দামিনী মাসি আমাকে হাসতে হাসতে এক দৃষ্টে দেখে যাচ্ছে। প্রবীরদা অনুপদাও ঠিক একি ভাবে দেখছে। ভজুরাম পটাপট এঘর থেকে ওঘর থেকে চেয়ার নিয়ে এসে জড়ো করে দিয়েছে। সামন্তদা তাহলে দিদি ছাড়াও ওর আর একজন সাপোর্টার আছে। কিছুক্ষণের জন্য। মিত্রা বললো। আবার সবাই হেসে উঠলো। দাদা কচুরী নিয়ে আসি। নিয়ে এসো। ডাক্তারদাদা কারুর সঙ্গেই পরিচয় করিয়ে দিলেন না। বুঝলাম এদের সঙ্গে এরকম সিটিং এর আগে দু-চারবার হয়ে গেছে। সবাই সবার পরিচিত। ওকে বলেছেন। অনিমেষদা আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বললো। সংক্ষেপে। কি বললেন স্যার। স্যারের কোন কিছুতেই আপত্তি নেই। খালি বললেন কেউ যেন অসন্তুষ্ট না হয়। এদিকে টনটনে জ্ঞান আছে। আবার সকলে হেসে উঠলেন। যাই বলুন অনিমেষবাবু পুঁচকে ছেলের কান্ড কারখানা কিন্তু তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করার মতো। ডঃ দাস বলে উঠলেন। এগুলো ওর অনেক দিনের স্বপ্ন। সুতপাকে ও প্রায়ই বলতো পয়সা যদি ওর হাতে কোন দিন আসে, তাহলে ও জগৎতটাকে একবার দেখে নেবে। আমার দিকে তাকিয়ে। কিরে ঠিক বললাম। ও এখন ভিজে বেড়াল, ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানে না। ছোটমা ফুট কাটল। দাও আর কয়েকখানা কচুরী দাও। ডাক্তারদাদা বললো। আমাদেরও দিও। রথীন ডাক্তার বলে উঠলো। হাসাহাসি খাওয়া দাওয়া গল্প। বেশ চলছে। তার মধ্যে অনিমেষদা হিমাংশুর সঙ্গে কথা বলে নিল। দাদা আর দেরি করে লাভ নেই। শুভস্য শীঘ্রম। হিমাংশু দুটোই এনেছো ? অনিমেষদা হিমাংশুর দিকে তাকাল। হ্যাঁ। বার করো তোমাকে আবার কোর্টে যেতে হবে। হিমাংশু হাসছে। আমার দিকে তাকাল। ওর দিকে তাকিয়ে লাভ নেই। ওকে দিয়েই প্রথমে সই করাও। ডাক্তারদাদা বললো। আমি কেন সই করবো। তোমরা এর মধ্যে থাকবে। তোমরা সই করো। বক বক করবি না। যা বলছি কর। অনিমেষদা ধমক দিল। ছোটমা হেসে ফেললো। তোমরা সবাই মিলে ওরকম করলে বেচারা যায় কোথায় বলো। বড়মা বলে উঠলো। অনিমেষ আর একজন। দাদা ফুট কাটল। বড়মা একবার দাদার দিকে কট কট করে তাকাল। সকলে হাসছে। হিমাংশু আমাকে যেখানে যেখানে দেখাল সই করে দিলাম। দুখানা ডিড বানান হয়েছে। একটা এনজিওর আর একটা নার্সিংহোমের। সই করতে করতে যেটুকু চোখে পরলো তাতে বুঝলাম, মিত্রা সবেতেই চেয়ারম্যান পদে রয়েছে। দেখলাম প্রবীরদা অনুপদাও সই করলো। তুমি এসেছিলে, না হলে এই নিয়ে একটা ঝামেলা করতো। মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে বললো। তোরা সবাই মিলে ওকে ধরে মারতে পারিস না। অনিমেষদা হাসতে হাসতে বললো। বড়মাকে বলো। আদরের ছেলে বলে কথা। অনিমেষদা জোরে হেসে ফেললো। বড়মা বাঁকা চোখে একবার মিত্রার দিকে তাকাল। আচ্ছা আচ্ছা আর বলবো না, হয়েছে তো। মিত্রা গিয়ে বড়মাকে জড়িয়ে ধরলো। চা পর্ব শেষ হোল। হাসাহাসি টুকরো টুকরো কথা। আমাকে নিয়ে অনিমেষদা খুব রসিকতা করলো। বুঝলাম বেশ ভালো মুডে আছে। তারপর ডাক্তারদা তার বন্ধুদের সবাইকে গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে এলো। অনিমেষদা আমার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে। দাদা একটা সিগারেট দিন। দাদা অনিমেষদার দিকে প্যাকেটটা এগিয়ে দিল। ছোট। বলুন দাদা। একটু লিকার চা খাওয়াতে পার। এইতো খেলেন। দাও একটু, সকাল থেকে অনেক যুদ্ধ করলাম। কেন দাদা! আজ অনির অমর কীর্তি শোন নি! অনিমেষদা আমার দিকে তাকিয়ে বললো। কোনটা বলো। ডাক্তারদাদা অনিমেষদার দিকে তাকাল। ডাক্তার ব্যানার্জী কাল রাতে স্যুইসাইড করেছেন। সারা ঘড় নিস্তব্ধ হয়ে গেল। বান্ধবী সকাল বেলা বললো। ভেরি স্যাড নিউজ। ভদ্রলোক এরকম করবে ভাবি নি। ডাক্তারদাদা স্বগতোক্তির সুরে বললো। আপনার মনে কোন প্রশ্ন আসেনি। হঠাৎ কেন স্যুইসাইড করতে গেলেন ভদ্রলোক। সে ভাবে ভাবি নি। একটু ভাবুন উত্তর পেয়ে যাবেন। তোমাকে সেদিনের ঘটনা বলিনি না। কি বলুন তো! এই দেখো এর মধ্যে তোমার সঙ্গে তিন চারবার দেখা হোলো। বলা উচিত ছিল। অনিমেষদা ডাক্তারদাদার দিকে তাকিয়ে থাকল। অনি এর মধ্যে গোয়া গেছিল। শুধু গোয়া নয়। আরও অনেক জায়গায় গেছিল। আমি গোয়ার ব্যাপারটা জেনেছি। তাও একজন মেমসাহেব বেশ কয়েকদিন আগে আমাকে এসে বললো আপনি আমাকে বাঁচান। ভাবলাম কোন রোগটোগ হয়েছে হয়তো। তারপর বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে বুঝলাম, ও অনির ভয়ে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।