What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

দেখি নাই ফিরে (উপন্যাস) (3 Viewers)

সনাতনবাবু গিয়ে হরিদাকে আটকায়। যে ল-ইয়ার এসেছিল তার মুখ চুন।
বরুণদা এতো ঠান্ডা মাথার ছেলে চেয়ার ছেড়ে উঠে ঘরের বাইরে চলে গেল।
এরকম একটা ঘটনা ঘটতে পারে, সে বুঝে উঠতে পারে নি।
বুড়োকে ধরে রাখা যায়, হরিদা হাঁপিয়ে গেল।
তারপর একটু থিতু হতে বললো, নীচে অনুপ বলে একজন ভদ্রলোক বসে আছেন, দিদিমনির সঙ্গে দেখা করতে চান।
তুই ডেকে নিয়ে আয়, এ ঘরেই আসুক, কি বলিস মিত্রা ?
চম্পকদা বললো।
আমি মাথা দোলালাম।
হরিদা বেরিয়ে যেতে চাইছিল।
চম্পকদা চায়ের কথা বললো।
দাদা কাঁদছে কেন আগে বলো।
হরিদাও কাঁদতে শুরু করে দিয়েছে।
বলছি বলছি তুই আগে সবার জন্য চা বল বটাদাকে।
হরিদা চোখ মুছতে মুছতে চলে গেল।
ওরে তোকে কি বলবো। তোর অনুপ সবে মাত্র ঘরে ঢুকেছে। ঠিক পেছন পেছন বটাদা হাজির।
হরিদাকে তো আটকান গেছিল।
বটাদাকে ধরে রাখা যায় না। দেবাশীষ, বিতান, নির্মাল্য হাঁপিয়ে গেল।
দুই উড়ে তখন রাজ করছে ঘরের মধ্যে। বুড়োর সে কি তেজ।
বলে কিনা, একটাকে খেয়েছিস আর দুটোকে খেতে এসেছিস। তোর রক্ত টাটকা খেয়ে নেব।
বাধ্য হয়ে আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে গেলাম।
কোনপ্রকারে বুঝিয়ে শুনিয়ে বললাম তোমাদের ছোটবাবু বেঁচে আছে।
কথাটা শোনা মাত্রই দুজনে কেমন ফ্যাল ফ্যাল করে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।
তার কথা আমরা এতোক্ষণ শুনছিলাম।
তোকে কি বলবো বুবুন, নিমেষে মুখের ভঙ্গিটা কেমন চেঞ্জ হয়ে গেল।
বটাদা কেমন কাঁপতে কাঁপতে বসে পরলো।
আমিতো ভাবলাম এইরে স্ট্রোক হয়েগেল।
চোখে মুখে জলের ছিটে দিলাম দেখলাম বটাদা নড়েচড়ে উঠলো।
আমার মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে বললো, কালকেই আমি মায়ের কাছে জোড়া পাঁঠা দেব।
তোর অনুপ এসব দেখে পুরো ফিউজ।
তাকে কি দেখভাল করবো। ঘর সামলাতেই আমরা সবাই হিমশিম খেয়ে গেলাম।
প্রায় আধঘন্টা পর স্বাভাবিক হতে পারলাম।
অনুপ তার নিজের পরিচয় দিল।
সে নাকি সুপ্রীমকোর্টে প্র্যাক্টিশ করে।
কলকাতায় বাড়ি। তুই নাকি ওকে সুপ্রীমকোর্টে প্র্যাক্টিশের ব্যবস্থা করে দিয়েছিস।
মিত্রাদেবী কে।
আমি।
তাকালাম।
আপনার সঙ্গে কিছু ব্যক্তিগত কথা আছে।
আপনি এখানে বলতে পারেন। আমি সবার সঙ্গে ওনার পরিচয় করাই আর উনি বলতে থাকেন আমি সবার নাম শুনেছি। কারুর সঙ্গে পরিচয় হয় নি। সবাইকে আমি এই প্রথম দেখছি।
বটাদা চা নিয়ে ঢুকল।
চা খেতে খেতে দাদা একটু স্বাভাবিক হলো।
হ্যাঁ গো অনুপ তোমার সঙ্গে অনির পরিচয় কি করে।
দাদা বললো।
আমি ও একসঙ্গে ইউনিভার্সিটিতে পরতাম।
তুমিও কি জার্নালিজম নিয়ে পরেছো।
হ্যাঁ। তারপর ওর বুদ্ধিতে ওকালতি পরি।
এখানে ব্যাঙ্কশাল কোর্টে প্র্যাক্টিশ করতাম। তারপর আমাকে ধরে নিয়ে গেল দিল্লিতে।
তোমার সঙ্গে ওর শেষ দেখা কবে হয়েছিলো।
যে দিন আপনাদের লাস্ট কেশের ডেট ছিল।
তুমি সেদিন কোর্টে ছিলে!
আমি ছিলাম না। আমার লোক ছিল। আমি কোর্টের বাইরে ছিলাম।
চম্পক তুমি সনাতনবাবু সেদিন গেছিলে না।
গেছিলাম।
অনিকে দেখেছ।
দেখলে কি খালি হাতে ফিরতাম।
তোর অনুপ হাসছে।
হাসছো কেন অনুপ।
ও চেনার মতো পোষাক পরিচ্ছদ পরে এখানে আসে নি। সুনীতবাবু কে ?
সুনীতদা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল।
উঠতে হবে না বসুন।
দাদার দিকে তাকিয়ে।
দাদা নিচে আমার একটা বড়ো ভিআইপি স্যুটকেস আছে। বেশ ভাড়ি। নিয়ে আসতে হবে। কেউ যদি আমার সঙ্গে একটু যায়।
তোমায় যেতে হবে না। আমি বলে দিচ্ছি।
দাদা ফোনে বলে দিল।
হায়, দেখি নিউজরুম থেকে সন্দীপ, অর্ক, অরিত্র, দ্বীপায়ণ তোর রাত্রি, খুশী সব এসে হাজির। সারা অফিস রাষ্ট্র হয়েগেছে। দাদা সবাইকে ধমকে ঘর থেকে বার করে দিল।
আর বার করা। একদল যায় তো একদল আসে। তারা সবাই সুনীতদাকে দেখে নেবে।
আমি হাসব না কাঁদব। বোবার মতো বসে আছি।
দেবাশীষরা সুনীতদার মোবাইল থেকে তোর রেকর্ড করা গলা ব্লুটুথে ট্রন্সফার করে নিল।
সেই ভিআইপি স্যুটকেশ এলো।
এখানে সবাই অনির খুব ক্লোজ। আমি নির্ভয়ে খুলতে পারি।
হ্যাঁ হ্যাঁ তুমি খোল।
স্যুটকেশটা খুলতেই আমি উঁকি মারলাম। ঠাসা মালপত্র, মিষ্টির বাক্স, অনুপ একটা ফাইল বার করলো।
দাদা এর মধ্যে সব আছে। আপনি দেখে নিন।
আমি কি বুঝবো বলো। তুমি উকিল তুমি এদের বুঝিয়ে দাও। হিমাংশু তুমিও বুঝে নাও।
মল্লিকদা দেখলাম ঘরের এককোনে ফিস ফিস করে কথা বলছে। বুঝলাম কার সঙ্গে কথা বলছে।
অনুপ সুনীতদার ল-ইয়ারের হাতে দোলিলগুলো দিল। উনি দেখে চোখ কপালে তুললেন।
সুনীতদার দিকে তাকালেন।
আপনি এই অরিজিন্যল কাগজের এগেনস্টে লড়ছিলেন।
সুনীতদা চুপ।
আপনি হাইকোর্টে জিততেন। তারপর কেশটা সুপ্রীম কোর্টে গেলে কি হতো বুঝতে পারছেন। আপনি সব জেনেও একটা সাজান কেশ করতে গেলেন।
সুনীতদা মাথা আর তোলে না।
ভদ্রলোক রাগ করে বললেন এখানে আর বসে থেকে লাভ নেই। কোর্টে গিয়ে কাজ সারি।
এই নিন, আপনারা যে কেশটা উইথড্র করবেন তার ফাইল। এখানে সবকিছু বলা আছে।
ফাইল ঘুরছে সবার হাতে, ডাক্তারদাদা ডুব দিল কাগজপত্রের মধ্যে।
সেই ল-ইয়ার ভদ্রলোক এবার দাদাকে বললেন।
দাদা আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো।
বলুন।
বছর দশেক আগে আপনাদের কাগজে অনি ব্যানার্জী বলে একজন কাজ করতো।
রাজনাথ বাবুর সম্বন্ধে ডঃ ব্যানার্জীর সম্বন্ধে তখন বহু লেখা লেখি হয়েছিল। উনি লিখেছিলেন। তখন একটা ঝড় বইছিল কলকাতা শহরে।
হ্যাঁ ওই অনি ব্যানার্জীই এই অনি ব্যানার্জী।
বাবাঃ গলা শুনে তো মনে হচ্ছিল উনি ডন।
এই শয়তানরা ওকে ডন বানিয়েছে। আজ ও দেশ ছাড়া। কেন আপনার গুনমন্ত্র মক্কেল সব খোলসা করে বলে নি।
বললে কি কেশটা হাতে নিতাম দাদা। কাগজের এগেনস্টে কেশ, জিতলে একটু নাম ডাক হবে। মক্কেল বেশি পাব। এই ভেবে কেশটা হাতে নিয়েছিলাম।
এরই মামা ডঃ ব্যানার্জী। আর কিছু বললাম না। ওর মুখ থেকে শুনে নেবেন।
মিত্রাদেবী ?
অনির স্ত্রী।
বোঝা হয়ে গেছে।
আপনি শুধু সুনীতবাবুকে বাঁচালেন না। আমাকেও একটা নোংরামোর হাত থেকে বাঁচালেন।
উঠি দাদা।
ভদ্রলোক হাতজোড় করলেন।
হিমাংশু কোর্টে গেল, সনাতনবাবু, চম্পকদা সঙ্গে গেল।
এবার তোর অনুপ ঝোলা থেকে সব বার করতে আরম্ভ করল।
প্রথমে দাদার হাতে একটা খাম দিল।
এটা আপনার জন্য।
কি এটা ?
প্রশ্ন করলে উত্তর দিতে পারব না দাদা।
এই দেখুন এই কাগজে সিরিয়ালি লেখা আছে। আমি ধরে ধরে দিয়ে যাচ্ছি।
ইসলামভাই।
আমি।
এই খামটা আপনার।
একে একে নাম ধরে ধরে ডাকে আর একটা করে খাম হাতে দেয়।
মিলি, টিনা, দেবা, সনাতনবাবু, চম্পকদা, নির্মাল্য, বরুণদা, জ্যেঠিমনি, মল্লিকদা সবার খাম।
দুটো প্যাকেট বার করলো একটা বড়মার একটা ছোটমার।
এগুলো দিল্লির লাড্ডু হুকুম ছিল কিনে পাঠান হয়েছে।
ম্যাডাম আপনি এগুলো সবার মধ্যে ভাগ করে দিন।
এর ভেতরে দুটো প্যাকেট আছে। ওটা বার করলাম না। বাড়িতে গিয়ে আপনি দেখবেন।
আর বড়মা ছোটমার প্যাকেটটা ওনারা খুলবেন আর কেউ খুলবে না।
অনুপ আমার দিকে তাকিয়ে বললো।
দাদা দেখি আপন মনে হো হো করে হেসে ফেললো।
সবাই প্রথমে একটু অবাক হয়ে গেল।
ওরে আগে কম্পোজে পাঠা মল্লিক, বলে কিনা নিজস্ব সংবাদদাতা। আমি ওর নাম ছেপে দেব। দেখি তুই কতোবরো দাদা হয়েছিস।
ডাক্তারদাদা দাদার দিকে ফ্যাকাশে চোখে তাকাল।
তুমি কি পাগল হয়ে গেলে।
হ্যাঁ ডাক্তার, আমি পাগল হয়ে গেছি। দেখো দেখো আমি যে জিনিসটা চাই সেটাই পাঠিয়েছে। উইথ ফটোগ্রাফ।
বিতান, হরিকে ডাক, চা আনতে বল।
নাঃ যাই করুক লেখাটা ভোলে নি, বুঝলি মা। কি কনস্ট্রাকসন শব্দগুলোর কি তেজ।
দাদা আমার দিকে তাকাল।
একেবারে তোর ছেলেমেয়ের মতো আচরণ করছে।

হরিদা বটাদা চা নিয়ে ঢুকলো। পেছন পেছন অর্ক, অরিত্র, সায়ন্তন, সন্দীপ, দ্বীপায়ন।
দেখ সন্দীপ দেখ অনি লেখা পাঠিয়েছে। একচ্যুয়েলি তিনটে ইনস্টলমেন্টে পুরোটা বেরিয়ে যায়। একসপ্তাহ ধরে কনটিনিউ করবি। দ্বীপায়ন ছবিগুলো ভালো করে প্লেস কর।
ঘরের মধ্যে যেন হরির লুট চলছে।
দাদা বড়মাকে ফোন করলো।
ইসলামভাই ওর্ণাদিয়ে চোখ মুছছে।
তোমার আবার কি হলো ইসলাম।
ডাক্তারদাদা বললো।
গতো সপ্তাহ পর্যন্ত যা ভুল কাজ করেছি, তার একটা লিস্ট পাঠিয়েছে। কি করতে হবে তাও বলে দিয়েছে।
তার মানে গত সপ্তাহ পর্যন্ত ও কলকাতায় ছিল ?
ডাক্তারদাদা অনুপের দিকে তাকাল।
কি অনুপ তুমি মিছে কথা বলছো কেন।
বিশ্বাস করুণ স্যার। আজ সকালে এই স্যুটকেশ আর এই চিঠিটা আমার বাড়িতে আসে। গাড়ির কাঁচে লেখা ছিল প্রেস বিবিসি।
আমাকে বাক্সটা হ্যান্ড ওভার করে গাড়িটা ভোঁ করে চলে গেল।
তারপর আমার মোবাইলে একটা ম্যাসেজ এলো আধঘন্টা পর। পরলাম। সব জানতে পারলাম। আপনি যদি ম্যাসেজটা দেখতে চান এখুনি দেখাতে পারি।
দেখাও।
ডাক্তারদাদা মুখের কথা আর কিছুতেই বিশ্বাস করতে চায় না।
অনুপ মোবাইল থেকে ম্যাসেজটা বার করে ডাক্তারদাদার হাতে দিল।
অনুপ ম্যাসেজটা ফরোয়ার্ড করে দাও না।
দেবাশীষ বললো।
অনুপ হাসছে।
নিয়ে নিন।
ঘরে তখন হৈ হৈ রৈ রৈ।
আচ্ছা মামনি।
আমি ইসলামভাই-এর দিকে তাকালাম।
এখানে কেউ আবার অনির ইনফর্মার নেই তো।
সবাই উচ্চশ্বরে হেসে ফেললো।
জব্বর কথা বলেছো ইসলাম।
দাদা বললো।
কাকে বিশ্বাস করি বলুন দাদা। সব কেমন যেন স্বপ্ন দেখছি মনে হচ্ছে।
তুমি স্বপ্ন দেখ আমি আর দেখতে রাজি নই। ছেলেটা এলো, তোমরা খপ করে ধরতে পারলে না।
কি করে বুঝবো। যে কটাকে আমি ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছিলাম, তাদের গলা শুনলেন।
তুমি খোঁজ লাগাও, দেখ ওদের চ্যালা চামুন্ডা কে আছে।
আমি কি বসে আছি দাদা। নো ট্রেস।
একবার ভালকরে খুঁজে দেখ ঠিক পেয়ে যাবে।
দেখি।
অনুপ তার কার্ডটা আমাকে দিল।
আমি আমার কার্ড দিতে গেলাম।
আপনাদের সবার নম্বর আমার কাছে আছে।
তারপর দাদার কাছে গিয়ে বললো দাদা একটা অপরাধ হয়ে গেছে।
আবার কি হলো ?
আপনাদের কাউকে প্রণাম করা হয় নি।
কেন খবরটা চলে গেছে বুঝি।
সবাই আবার হেসে ফেললো।
অনুপ সবাইকে প্রণাম করে চলে গেল।
যাওয়ার আগে বললো, আমাকে প্রয়োজন হলে ফোন করবেন।
ফোন করবো কি হে তুমিই তো এখন শিখন্ডি।
আবার সবাই হাসে।
আমি অনুপের পেছন পেছন বাইরে এলাম।
গেটের মুখে দাঁড়ালাম।
এটা আমার তরফ থেকে আপনাকে দিলাম। কেউ যেন জানতে না পারে। এমনকি অনি পর্যন্ত। তাহলে ওর হাতেই আমার মৃত্যু লেখা থাকবে। আপনাকে বিশ্বাস করতে পারি।
আমি ছোট্ট খামটা ওর হাত থেকে নিলাম। হাসলাম।
আসি ম্যাডাম।
নিজের ঘরে গেলাম। ব্যাগটা গুছিয়ে নিলাম। দাদার ঘরে গেলাম।
দাদা আজ আর ভাল লাগছে না। আমি বাড়ি যাই।
ডাক্তারদাদা হঁ হঁ করে উঠলো। তুই একা কেন। আমিও যাব।
ইসলামভাই উঠে দাঁড়াল। আমিও যাব।
আমার গাড়িতেই সকলে এক সঙ্গে উঠলাম।
গাড়ি এসে গেটের কাছে দাঁড়াতেই বারান্দা দিয়ে দেখলাম দামিনীমাসি নেমে বাগানে চলে এল। পেছন পেছন বড়মা, ছোটমা, জ্যেঠিমনি।
মনে মনে ভাবলাম এরি মধ্যে দামিনীমাসি, জ্যেঠিমনি এলো কোথা থেকে!
আমাদের কি নামতে দেয়।
আমি নামতেই দামিনীমাসি আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মুখ গুঁজলো।
ছোটমা, বড়মা, জ্যেঠিমনির মুখ কাঁদো কাঁদো। দিদিভাই বারান্দায় দাঁড়িয়ে। তোর ছেলে মেয়ে পিকু তার স্বরে চেঁচা মিচি করছে।
অনি কোথায় আছে বল।
আচ্ছাই শুরু করলে তোমরা, ভেতরে চলো, সব বলছি।
কে কার কথা শোনে।
ততক্ষণে রবীন গাড়ির পেছন থেকে সেই বড়ো এ্যাটাচিটা নামিয়ে নিয়েছে।
দিদিভাই এইবার বারান্দা থেকে বাগানে নেমে এলো।
তোর ছেলেমেয়েদের কোন হুঁস নেই। পিকুদাকে পেয়ে তারা স্বর্গরাজ্য দেখেছে।
দিদিভাই ইসারা করে বললো বল না একটু।
আমি মনে মনে হাসি। আসল লোকটার দেখা নেই। তার গলা নিয়ে কি কান্ডটাই না ঘটে যাচ্ছে।
আচ্ছা তোর কি একটুও ইচ্ছে করে না। এদের মুখ গুলো দেখতে।
আমরা তিনজনে এসে ভেতরের ঘরে বসলাম।
তোর মেয়ে ইসলামভাই-এর গলা জড়িয়ে ধরে বললো, ভাইদাদাই আমরা চোর পুলিশ খেলছি।
তোরা ওই ঘরে গিয়ে খেল, আমরা একটু কথা বলি।
ওরা চলে গেল।
ডাক্তারদাদা ইসির দিকে তাকিয়ে বললো, একটু চা কর না।
কিছু খেয়েছো।
বড়মা বললো।
না সকাল থেকে যা চললো জুটবে কোথা থেকে।
ভাত খাও।
আগে একটু চা দাও।
দিদিভাই রান্নাঘরের দিকে গেল। বুঝলাম কানটা এদিকে রেখে গেল।
কি বলবো। খালি ওর গলা শুনলাম।
মল্লিক যে বললো ও কলকাতায় এসেছিল। বড়মা বললো।
ইসলাম বললো সাতদিন আগে পর্যন্ত ছিল। দামিনীমাসি বললো।

ইসলামভাইকে জিজ্ঞাসা করো।
 
এসেছিল আমরা কেউ দেখতে পাই নি। অনুপ বলে ছেলেটি ওর সঙ্গে ছিল।
ডাক্তারদাদা বললো।
হ্যাঁগো ইসলাম তুমি কি করছিলে।
কি করবো তুমি আমাকে বলো দিদি।
রতন আবিদ কি করছে।
ওরা হয়তো আমার থেকে বেশি জানে।
আসুক আজকে ঝেঁটা মেরে বিদায় করবো।
এই মুহূর্তে আমার হাসি পেল না। কেমন যেন একটা ঘোরের মধ্যে আছি।
দিদিভাই চা নিয়ে এলো।
চা খেতে খেতে আমি ওদের রেকর্ডিংটা শোনালাম। জ্যেঠিমনি, বড়মা ডুকরে কেঁদে উঠলো।
এই দেখো তোমরা এরকম করলে আমি উঠে চলে যাব।
বড়মা আমার পাশে এসে বসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
কান্না থামাও আর একটা জিনিষ শোনাব।
বড়মা চোখ মুছছে।
শোনার পর কাঁদতে পারবে না। প্রমিস।
বড়মা মাথা দোলাচ্ছে।
আবার কি শোনাবি!
ইসলামভাই-এর চোখ বড়ো বড়ো।
শোন না আগে তারপর বলছি।
সবাই হুমড়ি খেয়ে পরেছে। আমার মোবাইলটার ওপর। আবার সকলের চোখে মুখে উত্তেজনা।
আমি দশ বছর আগে তোর গলার রেকর্ডিংটা অন করলাম।
কিরে আজ আবার পা পিছলে ছিলি।
কই।
তাহলে মিত্রাকে খবর পাঠালি কেন।
এ খবরটাও তোর কাছে চলে গেছে।
তোকে বলেছিনা চিকনা আমি সাধনা করছি। আমার সাধনায় ব্যাঘাত ঘটাবার চেষ্টা করবি না।
ক্ষমা কর।
আমার কাছে ভুলের কোন ক্ষমা নেই। এটা তুই ভাল করে জানিস।
কি করবো, গুরুমার মুখের দিকে তাকাতে পারছি না।
ওটা তোর আর তোর গুরুমার ব্যাপার।
একটুক্ষণ চুপ।
চুপ করে রইলি কেন।
কি করবো বক বক করবো, তুই আমাকে আর ফোন করে জানতে চাইবি না।
তাহলে সরে যেতে হবে।
কবে সরাবি বল, আমি প্রস্তুত। আমার আর ভাল লাগছে না।
চিকনার কান্না।
বাচ্চা দু’টোকে কোলে নিয়েছিলাম বললো তুমি আমার বাবাকে দেখাবে। কি উত্তর দেব।
মেয়ের দিব্যি খেয়ে বলছি চিকনা টোডিকে এমন মার মারব, ওর বডির একটা টুকরো তোরা কেউ খুঁজে পাবি না। খালি কয়েক টুকরো পোড়া মাংসো পাবি।
একটু থেমে।
শালা জীবনটাকে জ্বালিয়ে পুরিয়ে খাক করে দিলো। গলাটা ধরে গেল।
চুপ চাপ।
কথা বলছিস না কেন, আমার প্রশ্নের উত্তর দে। পৃথিবীতে তুই ঠিক আর সবাই ভুল।
চুপ চাপ।
বোবার শত্রু নেই তাই না। তুই কি হনু হয়ে গেছিস। আমি আর কতো জবাব দিহি করবো। কতো মিথ্যে কথা বলবো। বড়মা, ছোটমা, জ্যেঠিমনি, সুরো কতো নাম বলবো।
সুরো এসেছে!
হ্যাঁ।
কাঁদছিস ?
না।
বৌদি।
এসেছে।
হ্যাঁরে বাচ্চাদুটো তোকে কি বললো।
দেখলাম বড়মা মুখে কাপর চাপা দিয়েছে। কাঁদতে পারছে না। ছোটমা, জ্যেঠিমনি, দামিনীমাসির একই অবস্থা।
ডাক্তারদাদার চোখ মুখ স্থির, যাকে বলে একেবারে কুল।
ইসলামভাই-এর গাল বেয়ে জল গড়াচ্ছে।
কি বলবে, পাটালি খাওয়ালাম। নিজে হাতে বানিয়ে ছিলাম।
খাইয়েছিস। কি বললো খেয়ে।
কি বলবে, কিছুটা খেয়ে আমার মুখে ঢুকিয়ে দিল।
কেমন দেখতে হয়েছেরে, মিত্রার মতো ?
কাল এসএমএস করে তোকে ছবি পাঠাব।
পাঠা।
বুঝলি এবার কলকাতা গিয়ে তিনবার চান্স নিলাম দেখার জন্য, দেখতে পেলাম না। কেউ নিয়ে বাগানে বেরলই না।
তুই এখন কোথায়। দুবাই না লন্ডন।
লন্ডন।
মিথ্যে কথা বলছিস।
বিশ্বাস কর। কাগজের অফিসটা বানাব তার তোর জোর করছি।
হ্যাঁরে, বড়মার চুলগুলো একেবারে সাদা হয়ে গেছ তাই না।
আচ্ছা তার আগে বল কারা কারা এসেছে।
সবাই। দামিনীমাসি পর্যন্ত।
দামিনীমাসি এসেছে!
হ্যাঁ।
শোবার জায়গা কোথায়।
রাজপ্রাসাদ বানিয়েছি।
আবার ঝামেলা শুরু করে দিলি।
ছাড়, কথা বলতে ভালো লাগছে না।
তুই এখন কোথায়।
পীরসাহেবের থানে বসে আছি।
কটা বাজে বলতো।
দুটো ফুটো হবে।
আমাদের এখানে সবে মাত্র বিকেল হলো।
হ্যাঁরে ছোটমাকে দেখতে কেমন হয়েছে।
ছবি তুলে পাঠাব, দেখে নিবি।
তুই গরম খেয়ে যাচ্ছিস কেন।
বেশ করছি, কবে মারবি বল।
তোকে মারলে আমিই মরে যাব।
মেয়েটা তোর মতো দেখতে হয়েছে।
ধ্যাত।
দেখে নিবি।
কোনটা বেশি দুষ্টু।
মেয়েটা। ছলেটা ভিঁজে বেড়াল।
কি রকম করে কথা বলছে।
রেকর্ড করে পাঠাব।
পাঠা। প্রজেক্টের খবর বল।
ঠিক ঠাক চলছে। একটু ঝামেলা হচ্ছিল পার্টিগত ভাবে।
অনিমেষদাকে জানিয়েছিস।
না। সামলে নিয়েছি।
রসদ আছে।
আছে।
কাকা কেমন আছে।
ভাল। তোর ওদিকের কাজের খবর কি।
মিঃ মুখার্জীকে যে মাল গুলো সাল্টে ছিল। তার চারটেকে হজম করেছি। আর দুটো বাকি আছে। আশা রাখছি আগামী সপ্তাহে হজম করে নেব।
অবতার সাগির কোথায়।
দুবাইতে।
টোডি।
লন্ডনে।
তাই তুই লন্ডনে।
হ্যাঁ। ওকে চেইন করে বেঙ্গলে নিয়ে যাব। শালা নাম ভাঁড়িয়ে বড়ো ব্যবসায়ী হয়েছে।
কতোদিন সময় নিবি।
বলতে পারছি না। তবে ওই কাজটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারুর সঙ্গে কথা বলবো না।
নেক্সট ডেট বল।
ম্যাসেজ করবো।
তোর নম্বরটা গুরুমাকে দেব।
না। কাজের জায়গায় দুর্বলতার কোন স্থান নেই। একথা তোকে আগেও বলেছি।
আমার পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছে না।
সম্ভব না হলে অনাদি বাসুকে দায়িত্ব দিতাম, তোকে দিতাম না।
অনাদি এখানে স্কুল করতে চাইছে।
কোথায় ?
মোরাম রাস্তার ধারে।
জমি যেটা নেওয়া হবে সবাই যেন পয়সা পায়। ফোঁকটসে নয় মাথায় রাখবি।
ও হাফদাম দেবে বলেছে।
পয়সাকি ওর বাবার ঘর থেকে দেবে।
আমিও সেই কথা বলেছি।
চেপে যা দেখনা কি করে। তারপর আমি লোক পাঠাব। হিমাংশুর কাছে গেছিলি।
হ্যাঁ।
ডিডটা তৈরি করে দিয়েছে।
দিয়েছে।
আগামী সপ্তাহে পরিদার দোকানে লোক যাবে দিয়ে দিবি। সাইন করে পাঠিয়ে দেব।
তুই কি সত্যি সব উইল করে দিবি।
আমার নিজস্ব বলে কি আছে বলতো চিকনা। বাবার কয়েক বিঘে জমি।
ওটাও তো বাসন্তী মাকে দিয়ে দিলি।
যদি না ফিরি। যাদের জিনিষ তাদের দিয়ে দেওয়া ভালো।
আর কয়েকদিন পর করলে হতো না।
হতো। তবে ডিসিসন নিলাম যখন করেই ফেলি।
তনুদি কবে আসবে।
লন্ডনের অফিসটা বানিয়ে নিই তারপর।
তুই এতো টাকা পাচ্ছিস কোথায়।
মস্তানি করে।
খিস্তি দেব।
দে। অনেকদিন তোর মুখের গালাগাল শুনি নি।
তুই কবে আসবি।
কেন, কথা বলছি, তাতে আশ মিটছে না।
গুরুমার সঙ্গে একটু কথা বল না। মনটা শান্তি পেত।
আমাকে দুর্বল করে দিসনা চিকনা। তুই পাশে আছিস এই যথেষ্ট।
বাচ্চাদুটোর সঙ্গে কথা বল।
ওরা বড়ো হলে নিজের তাগিদে তাদের বাবাকে খুঁজে নেবে। শোন আমি একটু বেরোব। একটা মিটিং আছে। পারলে কালকের আপডেটটা দিস, ঠিক এই সময়ে।
কে ফোন করবে তুই না আমি।
আমিই করবো।
আচ্ছা।
রাখছি।
ফটোগুলো পাঠাতে ভুলিস না যেন।
ফোনটা কেটে গেলো।
আমি ফোনটা হাতে তুলে নিলাম।
বড়মা চোখ মুছতে মুছতে বললো। তোকে কবে ফোন করেছিল।
আমাকে করে নি। চিকনাকে করেছিল। চিকনা কনফারেন্সে আমাকে শুনিয়েছে।
কবে করেছিল বললি না।
দশ বছর আগে। যেদিন কৃষিফার্মটার উদ্বোধন হয় তার আগের দিন।
আমাকে এতদিন জানাস নি কেন।
শুনলে তোমার ছেলের কথা, কি বললো।
বড়মা ডুকরে কেঁদে উঠলো। আমাকে আষ্টে পৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো।
তুমি এরকম করলে আমি কি নিয়ে থাকব।
কিছুতেই কান্না থামে না।
ডাক্তারদাদা উঠে এলো। কোনপ্রকারে সামলে নিলাম নিজেকে।
তারপর হাজার প্রশ্ন। ইসলামভাই, ডাক্তারদাদার। উত্তর দিতে দিতে আমি হাঁপিয়ে উঠলাম।
দাদা মল্লিকদা ফিরে এলো।
দাদা ঢুকেই স্বভাব সিদ্ধ ভঙ্গিতে বড়মাকে বললো, জানো বড়ো আজ অনি লেখা পাঠিয়েছে।
বড়মা কোন কথা বললো না।
দাদা চুপ করে গেল।
তোমার প্যাকেটটা খুলেছো। দেখো কি আছে। আমার জন্য খালি একটা লেখা পাঠিয়েছে।
বড়মা কথার কোন উত্তর দিচ্ছে না।
বুঝেছি খালি তোমারই একা কষ্ট হয় আমার হয় না। আমি পাষাণ।
দাদা নিজের ঘরে চলে গেল।
দেখলাম বড়মা দাদার পেছন পেছন ঘরে গিয়ে ঢুকলো।
ছেলে-মেয়ে এসে দাপাদাপি শুরু করে দিয়েছে মল্লিকদার সঙ্গে।
আমি ছোটমার দিকে তাকালাম।
একটু ওপর থেকে আসি খাবার রেডি কর।
বেরিয়ে এলাম।
নিজের ঘরে ঢুকলাম।

আজ ভারি ভালো লাগছে।
 
সারাটাদিন লোকের ভিড় আর বড়মাকে সামলাতে আমি হিমসিম খেয়ে গেলাম। সবাই আছে। তবু ঘন ঘন আমার ডাক। আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না।
তুইও অনির মতো হয়ে গেলি। দশ বছর ধরে নিজের কাছে গোপন রাখলি আমাকে একটি বারের জন্যও শোনালি না।
কাকে কি বলবো। সব তুই। তোর জন্য আজ এই অবস্থা।
রাতে অনিমেষদা এলো তাকেও আমার সম্বন্ধে এক ঝুড়ি নালিশ করলো। লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যায়। ব্যাপারটা এরকম আমি তুই শলা-পরামর্শ করে এসব করছি।
মাঝে মাঝে তোর ওপর ভীষন রাগ হয়। তারপর কি জানি, মনে হয় তুইই ঠিক। তুই যদি ঠিক না থাকতিস তাহলে হয়তো এই জায়গায় পৌঁছন যেত না।
অনেক ঝড় এই কয় বছরে গেল, সব উতরে গেছি।
বেশ মনে পরে যখন ওই জায়গাটায় অফিস এক্সটেনসনের জন্য হাত দিলাম। তখন মলের আত্মীয় স্বজন বাধা দিল।
ইসলামভাই যথেষ্ট করলো কিন্তু হলে হবে কি পার্টির একটা লবি দেখলাম মলের আত্মীয়দের হয়ে কথা বলছে।
অনিমেষদা সব শুনলো। বললো একটু অপেক্ষা কর। আমি আগে নিজের ঘরটা সামলে নিই। পার্টির ভেতরে কথা বলি, তারপর তুই কাজে হাত দিস।
তখন আমার কি টেনসন।
কাকে বলবো মনের কথা।
হিমাংশু খালি একটা জেরক্স দিতে পেরেছিল।
তাতে কি কাজ হয়।
ইসলামভাই বললো টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করে কাজ শুরু করি।
অগত্যা আমি রাজি হলাম।
অনিমেষদাকে সব বললাম।
অনিমেষদা শুনে বললো ঠিক আছে তোরা তোদের মতো এগো পার্টির ব্যাপারটা আমি বুঝে নেব।
সুজিতদাকে ধরে টাকা জোগাড় করলাম।
সুজিতদা এক কথায় দিয়ে দিল।
টাকা দিয়েও দিলাম। কম নয় তিন কোটি টাকা।
প্রায় দিন পনের হয়ে গেছে। কাজ শুরু করলাম। ইসলামভাই-ই সব দেখা শোনা করছে।
একদিন সাত সকালে ইসলামভাই একজন অপরিচিত লোককে নিয়ে হাজির আমি তাকে কোনদিন দেখি নি।
ইসলামভাই বললো, ইনি তোর সঙ্গে একটু আলাদা করে কথা বলতে চান। আমাকে কিছুতেই ভেঙে বলছেন না। ইনি মলের ভাইপো।
দাদা মল্লিকদা ছিল।
আমি বললাম, আমি একা আপনার কথা শুনবো না। দাদা মল্লিকদা ইসলামভাই-এর সামনে আপনাকে বলতে হবে।
ভদ্রলোক রাজি হলেন। বললেন খালি আপনি হ্যাঁ বলবেন, না হলে আমি মার্ডার হয়ে যাব। আমার কাকা আপনার সঙ্গে ভালো বিহেভ করে নি।
ওপরের ঘরে সবাই বসলাম।
উনি নিজের পরিচয় দিলেন আমি ওম আছি ম্যাডাম। চাচা বহুত ব্লান্ডার কিয়া আপনাকো সাথ। অনিবাবু আপনার হাজব্যান্ড আছে।
আমি চুপ চাপ শুনে যাচ্ছি।
ও দো মকান আপনে রেনোভেসন কা কাম চালু কিয়া ও আপ কুছদিন বন্ধ রাখিয়ে।
কেন। আপনারা যে টাকা ডিমান্ড করেছিলেন সে টাকা দিয়ে দিয়েছি।
ওহিতো গজব হো গয়া। হামি আপনাকে টাকা ওয়াপাস করবে।
কেন।
সে আপনাকে বলতে পারবে না। নেহিতো গজব হো জায়েগা। হামি মার্ডার ভি হো সাকতা হ্যায়।
ও আপনাদের ব্যাপার, কাজ আমি বন্ধ করবো না।
আপনি বলেন তো হামি আপনার পাও ভি ছুঁ সাকতা হুঁ।
কেন বলছেন ও কথা।
বহুত দুঃখ কি বাত।
ভদ্রলোক চুপ করে রইলেন।
ও জায়গা ভি আপনা পিতাজীকা হ্যায়। মেরা চাচা ডুপ্লিকেট ডিড বানাকে ও জায়গা লে লিয়া। অনিবাবুকা পাস অরিজিন্যাল ডিডকা কপি হ্যায়। চাচাকা পুত্তর আপনাকো প্রেসার কারকে ও রুপিয়া লেকে ভাগ গিয়া।
আমি ওমের কথা শুনে থ। কি বলে কি ভদ্রলোক ওই জায়গাটা বাবার!
আভি হাম শুনা ও ভাগা নেহি অনিবাবু উসকো উঠাকে দুবাই লেকে চালা গিয়া। উসকা টোটাল যো প্রপার্টি হ্যায় ও ভি রেজিস্ট্রি করকে আপনা নাম কর লিয়া। কলকাত্তাকা প্রপার্টি ওউর রাজস্থানকা প্রপার্টি। হামারা সাথ উসকা বাত হুয়া।
আপনার সাথে ওর কথা হয়েছে!
সবার চোখ বড়ো বড়ো।
হ্যাঁ। আভি ও পত্রকার নেহি দাদা বন গায়া।
মুখটা কাঁচু মাচু করে বললো।
হামকো বোলা টাকা ওয়াপাস করনেকে লিয়ে।
উসকা সাথ বাতচিত করনেকে বাদ হাম রাজি হো গয়া।
বাত এহি হ্যায় হামারা পাস ক্যাস হ্যায় চেক মে হাম নেহি দে সাকতা। অনিবাবু বোলা জরুর চেক লেকে আপনা পাস আনেকে লিয়ে। আপ ক্যাস লে লিজিয়ে মেম সাব।
দাদা খেপে উঠলো। তোমরা এসব কি নোংরামি শুরু করেছ।
দাদা আপকো হাম বোল নেহি সাকতা, কেয়া হুয়া কেয়া নেহি হুয়া। স্রিফ আপ যো রুপায়া হামি লোগ লিয়া ও আপনে ওয়াপাস লে লিজিয়ে।
ইসলাম তুমি কি বলো।
হামি ইসলামকো থোরা হিন্টস দিয়া। ইসলাম মেরে জানপাহচন আদমি হ্যায়।
কি বলবো বলুনতো দাদা, হাতের কাছে ওকে পাচ্ছিনা যে চেপে ধরবো।
ইসলামভাই, অবতার সাগির ভি উসকা পাস হ্যায়। ওহি সব কুছ অপারেট কিয়া।
ইসলামভাই আমার দিকে তাকাল।
এ যো ড্রিল হোগা দুসরা কোই আদমী জানেগা নেহি। তো ভি হামকো লিয়ে খতরনাক বন সাকতা। এ মেরা রিকোয়েস্ট।
চুপ করে রইলাম।
ছোটমা চা নিয়ে এলো।
দাদা সব কথা বললো ছোটমাকে।
কি শুরু করেছে বলোতো ছেলেটা।
ছোটমার চোখ ছল ছল করে উঠলো।
শেষ পর্যন্ত টাকাটা আমাকে নিতে হলো।
ওখানে বসেই ভদ্রলোক একটা ম্যাসেজ করলো।
মিনিট পাঁচেকের মধ্যে তার রিপ্লাইও এলো। খালি ইসলামভাইকে দেখাল। ইসলামভাই আবার নিজের ফোন থেকে ম্যাসেজ করলো। তারও রিপ্লাই এলো। তারপর ভদ্রলোক চলে গেল।
ইসলামভাই-এর কাছ থেকে নম্বরটা নিয়ে ফোন করতে দেখলাম ওটা তনুর নম্বর।
আর কি শুনতে চাস বল। এরকম কতো ঘটনা আছে লিখে শেষ করতে পারব না।
তুই বড়মাকে কি লিখেছিস বাঁদর একবার আয় তোর হবে।
আমি মহা সুখে আছি।
জানিস চিঠিটা বড়মা পড়তে পড়তে কতো বার যে কাঁদল কি বলবো। তোর মেয়ের হাজার প্রশ্ন। তার উত্তর দেওয়া সত্যি খুব মুস্কিল।
বড়মা একটা লাড্ডু নিয়ে এসে তোর মুখে ছোঁয়াল। তোর মেয়ে তাই দেখে বললো দিদানটা কি বোকা দেখ, বাবা খেতে পারে নাকি, ওটা বাবার ছবি তার থেকে আমাকে দাও খেয়ে নিচ্ছি।
ছোটমা, জ্যেঠিমনি সবার একই অবস্থা।
আমার জন্য কিছু পাঠাস নি। আমি কি তোর কেউ নই।
তোর মেয়ের জামাটা ভীষণ সুন্দর হয়েছে। ছেলে প্যান্ট পরে তখন থেকে ঘুরে বেরিয়েছে সারাটা দিন।
রাতে ল্যাপটপে অনুপের দেওয়া পেনড্রাইভ থেকে খালি তোকে দেখলাম। মন ভরে গেল।
এটা শুধু আমার। এর ভাগ কাউকে দেওয়া যাবে না।
তোর গলা শুনছি। তোর মুভমেন্ট দেখছি। কতোবার যে দেখলাম তার ইয়ত্তানেই। বুঝলাম পুরোটা অনুপ নিজের মোবাইলে তুলেছে। তুই জানিস ?
তোকে কিন্তু আগের থেকে আরো বেশি সুন্দর লাগছে।
একেবারে চ্যেংরা ছেলের মতো। তোর পাসে আমাকে একেবারে বেমানান।
তুই কি শরীর চর্চা করছিস।
বল না।
তোর হাসিটা কিন্তু আগের থেকে আরো বেশি কিউট। যে কোন মেয়ে পটে যেতে পারে।
কিরে কারুর সঙ্গে ইন্টু-মিন্টু করছিস নাকি। তাহলে আমি কিন্তু স্যুইসাইড করব। তখন তোর মিত্রাকে তুই খুঁজে পাবি না।
দূর ছাই কার সঙ্গে বক বক করছি।
তুই তো ছবি।
ছবি হয়েই থাক।
আজকের দিনটা অনেক দিন মনে থাকবে বুঝলি।
একটু ফ্রেস অক্সিজেন পেলাম।
ঘুম পাচ্ছে।
আর ভালো লাগছে না।
পারলে একবার মিত্রার নম্বরে ভুল করে ফোন করিস। নম্বরটা চেঞ্জ করিনি।
আজ অফিসে যাওয়ার পথে আকাশের দিকে তাকালাম। দেখলাম পশ্চমি দিকটা মেঘলা করেছে।
সেই দিনটার কথা মনে পরে গেল বুঝলি।
তখন সবে মাত্র তিন মাস।
বড়মা অফিসে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
সপ্তাহে একদিন অফিসে যাই।
নিজের ঘরে বসে কাজ করছিলাম।
তুই হুড়মুড় করে দরজা ঠেলে ঢুকলি।
কি করছিস রে।
ট্রান্সপোর্টের ফাইলটা দেখছি।
বন্ধ কর।
কেন!
যা বলছি কর না।
কেন বলবি তো।
খালি বক বক। নিজে ড্রাইভ করতে পারবি।
পারবো।
নীচে আয়। ঝটপট।
কোথায় যাবি কিছুই বললি না। তোর সবকিছুতেই এইরকম।
নীচে গিয়ে দেখলাম মেঘটা কালো করে রয়েছে। একটু পরেই প্রবল বৃষ্টি হবে।
নে ঝটপট কর। সময় হয়েগেছে।
কোথায় যাবি বলবি তো ? এই বৃষ্টি মাথায় নিয়ে!
যাহান্নামে।
হেসেফেললাম।
গাড়িতে উঠেই বললি সোজা সেকেন্ড হুগলি ব্রিজ দিয়ে বোম্বে রোডে চল।
তোর কথা মতো রাস্তা দিয়ে এলাম।
তখন সবে মাত্র বৃষ্টিটা ঝিড় ঝিড় করে পরছে।
বোম্বেরোডে উঠে কিছুটা আস্তেই তুই একটা ফাঁকা মাঠের মতো জায়গায় গাড়িটা দাঁড় করাতে বললি। গাড়ি সাইড করে থামালাম।
দুজনে গাড়ি থেকে নামলাম।
ঝোড়ো হাওয়া বইছে। সামান্য বৃষ্টি। মিশ কালো মেঘটা ছাতার মতো পৃথিবীটাকে যেন ঢেকে রেখেছে। যতোদূর চোখ যায় খালি কালো মেঘের আস্তরণ।
দূরে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। তুই অবাক হয়ে চারদিক দেখছিস। তোর চোখে বিশ্বগ্রাসী ক্ষুধা।
পাশ দিয়ে হুস হুস করে গাড়ি চলে যাচ্ছে।
হাওয়া দিতে শুরু হলো প্রথমে আস্তে তারপর প্রবল ঝড়।
আমরা দুজনে গাড়িতে উঠে এলাম।
জানলার কাঁচটা একটু নামানো।
সোঁ সোঁ একটা শব্দ। গাছপালা গুলো বেঁকে ধনুকের মতো হয়ে যাচ্ছে।
ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। বাজ পরছে। কড় কড় করে।
আমি তোকে জড়িয়ে ধরে আছি। চোখ বন্ধ।
মিত্রা।
উঁ।
তুই চুপ।
কি বলবি তো।
সামনের দিকটা একবার তাকা।
না। আমার ভয় করছে।
দূর ভয়। আমিতো আছি। মেঘগুলো একে অপরের সঙ্গে কিভাবে মারপিট করছে দেখ।
তোর কথায় চোখ খুলে তাকালাম।
এই ভাবে আগে কোনদিন মেঘ দেখি নি। মুষল ধারে বৃষ্টি পরছে। দূর থেকে বৃষ্টিটা কেমন আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে আমাদের গাড়ির দিকে। কে আগে আসবে তার জন্য যেন যুদ্ধ চলছে। তারপর হুড়মুড় করে আমাদের গাড়িটাকে গ্রাস করে ফেললো। কি দারুণ সেই দৃশ্য।
তারপর বৃষ্টির ঝম ঝম শব্দ। ফাঁকা মাঠে গাড়ির ভেতর আমরা দুজন। গাড়ির ছাদটা ফুটো হয়ে যেন বৃষ্টির ফোঁটা আমাদের গায়ে পরছে। বৃষ্টির প্রবল বেগে সামনে ধূসর হয়ে গেছে কিছু দেখা যাচ্ছে না।
মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। কি প্রচন্ড জোরে মঘের সেই গর্জন। ভয়ে আমার বুক ঢিপ ঢিপ করছে।
তোর ভালো লাগছে না।
হুঁ।
এইভাবে আগে কখনো বৃষ্টি দেখেছিস।
তোর মতো পাগলের পাল্লায় পরি নি তো।
এইরকম বৃষ্টিতে কখনো ভিঁজেছিস।
না।
জানিস আমি যখন ক্লাস নাইনে পরতাম সেই সময় একবার ভীষণ কালবৈশাখী হয়েছিল।
চিকনা আমি মেঘ করতেই দে ছুট। স্কুল থেকে ফেরার পথে শবর পাড়ার কাছে যে আমবাগান, এক দৌড়ে সেখানে। তারপর সে কি ভীষণ ঝড়। ঝপাঝপ আম পরছে।
বিদ্যুৎ গুলো মাঠের মধ্যে আছড়ে আছড়ে পরছে। পরমুহূর্তেই সেই বিকট শব্দ কড় কড় কড়। আমার ভীষণ ভালো লাগছিল। চিকনা আম গাছের তলায় দেখি গুটি সুঁটি মেরে বসে কাঁপছে।
কিরে।
বাড়ি চল।
দাঁড়া বৃষ্টিটা থামুক।
থামবে না।
তুই কি করে বুঝলি।
আকাশের অবস্থা দেখেছিস।
তাহলে ভিঁজে যাবি।
বাকি কি আছে।
তারপর দিলো আমাকে গালাগালি।
সে কি ওর লম্ফ ঝম্প।
কিন্তু আমাকে ছেড়ে যাবে না।
বৃষ্টিতে ভিঁজে দুজনে কাকস্নান করে ফেলেছি।
ঘন্টা খানেক পর বৃষ্টি থামল।
দুজনে বাড়ি ফিরলাম।
ফিরেই একেবারে কাকার মুখো মুখী। কপালে উত্তম মধ্যম জুটলো।
জানিস বুবুন আমরা তোর মতো ভিঁজতে পারতাম না। কখনো সখনো স্কুল থেকে ফেরার পথে বৃষ্টি এলে ছাতা থাকলেও ইচ্ছে করে ছাতাটা মাথা থেকে সরিয়ে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিঁজতাম। জুতো জামা ভিঁজে যেত। দুদিন স্কুল যাওয়া বন্ধ।
তুই আমাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছিস।
হঠাৎ তুই বললি মিত্রা তুই একটু শো তো।
কেন। করবি।
শো না। খালি খুচখুচানি।
আমি পেছনের সিটে শুলাম।
তুই আমার পেটের কাপর সরিয়ে কানটা রাখলি।
বুবুন সুর সুর করছে।
দাঁড়া না।
কি করছিস বলবিতো।
আবার কথা বলে। চুপ করে শো।
বাইরে তখন প্রবল বৃষ্টি।
গাড়ির কাঁচগুলো ঝাপসা হয়ে গেছে।
না, কাঁদছে না বুঝলি।
কে কাঁদবে।
তুই বোকার মতো হাসলি।
বুঝলি না।
না।
তোর পেটে যেটা আছে। কান দিয়ে শুনলাম। মেঘের গর্জনে সে কাঁদছে কিনা।
তোর ইনোসেন্ট মুখটা আজও আমার চোখের সামনে ভাসে।
তোকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেলাম।
তবু তোর চোখের ভাষা বদলালো না।
প্রায় একঘন্টা আমরা ওই ফাঁকা মাঠে বসে বসে বৃষ্টি দেখলাম।
দুজনে ফিরে এলাম বৃষ্টি স্নাত রাস্ত দিয়ে। তখন বৃষ্টি একটু থেমেছে।
আমার সেই বুবুন এখন কোথায়। কেন বুবুনকে আমি হারিয়ে ফেললাম।
কিছুতেই মেলাতে পারি না।
এখনো কি আমার বুবুন আমাকে ছাড়া একা একা বৃষ্টি দেখে। ওই রকম ইনোসেন্ট হয়ে পরে ?
ম্যাডাম এসেগেছি।
রবীনের ডাকে চমকে তাকালাম।
রবীন গাড়িথেকে নেমে দাঁড়িয়ে আছে।
দূর কোথায় চলে গেছিলাম। আর কোথায় এলাম।
গাড়ি থেকে নামলাম।
ভেতরে এলাম। সবাই কেমন নড়ে চরে বসলো। সদ্য কালকের ঘটনা। অফিসের অবস্থা দেখলাম বেশ চনমনে।

নিজের ঘরে এসে বসতেই, চম্পকদার ফোন।
 
তুই এসেছিস।
জাস্ট ঢুকলাম। কেনগো ?
তোর কাছে যাচ্ছি।
আবার কি হলো।
একটা মিটিং কল করেছি অনির কোর কমিটি। তুই প্রধান অতিথি।
হাসলাম।
হাসিস না। কি ধুরন্ধর, আমার চিঠিটা তোকে গিয়ে পরাচ্ছি।
তোমরাই দেখো, মানুষটা কিন্তু এখানে নেই। আজ বারো বছর হয়ে গেল তোমরা কেউ খুঁজে আনতে পারলে না।
তুই তো সব জানিষ। আমাকে এইভাবে বলিস না।
ঠিক আছে আধ ঘন্টা পর এসো।
আচ্ছা।
আমি বাথরুমে গেলাম। ঠিক ঠাক হয়ে বাথরুম থেকে বেরতেই দেখি বিতান মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।
কিরে তুই এই অসময়ে।
বিতান সোজা উঠে আমার কাছে এলো।
তোর চোখ মুখটা কেমন শুকনো শুকনো লাগছে।
আমাকে বাঁচাও বৌদি।
কি হয়েছে বলবি তো।
কাল সারারাত ঘুমোইনি।
কেন মামার শরীর খারাপ!
না।
তাহলে মামীর!
না।
বাচ্চাটা কেমন আছে ?
সব ভালো আছে। খালি আমি ভালো নেই।
কেন বলবিতো।
তুমি বাঁচাও বৌদি না হলে বৌ বাচ্চা নিয়ে একেবারে পথে বসে যাব।
কি পাগলামো করছিস।
কাল মিলিদিকে টিনাদিকে ফোনে সব জানিয়েছি। ওরা বলেছে কিচ্ছু করতে পারবে না। বাবা-মা বললো পিসিকে জানাতে। আমি না করেছি।
তুই আসল কথাটা বলবিতো।
বলছি, তোমার পাটা একটু ছুঁই আগে।
এই দেখো খালি মাথা খারাপ করে। যা বোস।
বিতান গিয়ে চেয়ারে বসলো। গেলাস থেকে জল খেলাম।
বেল বাজিয়ে হরিদার ছেলেকে ডাকলাম।
দু’কাপ চা দেতো। কোথাও যাসনি যেন। অনেকে আসবে।
হরিদার ছেলেটা চলে গেল। কিছুক্ষণ পর চা নিয়ে এলো। বিতান মাথা নীচু করে বসে আছে।
নে চা খা। এবার বল।
বিতান একটা খাম আমার দিকে এগিয়ে দিলো।
কি এটা।
পরো না।
তোর চিঠি আমি পরবো কেনো।
আমিতো বলছি।
চিঠিটা পরলাম। যে দিন থেকে বিতান জয়েন করেছে। সে দিন থেকে ও কি কি ভুল কাজ করেছে তার একটা লিস্ট দেওয়া আছে। শেষে ওর ভুলের জন্য কোম্পানীর কত লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে, সেই এ্যামাউন্টটাও লেখা আছে। শেষ লাইনে একটা প্রচ্ছন্ন ধমকানি।
আমি চিঠি থেকে মুখ তুলে হাসলাম।
তুমি হাসছো। আমার প্যান্ট নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতো টাকা আমি নষ্ট করেছি। কি করে মেটাব।
তুমি বিশ্বাস করো।
আমি হাসছি।
তুমি হেসো না একটা পথ বাতলে দাও। দাদু থাকলে রেহাই পেয়ে যেতাম।
পেতিস না।
এরপর সুনীতদার মতো যদি একটা ফোন আসে আমি কোথায় যাব বলো।
তাহলে তুই ভুল করেছিস।
কিছুতেই ধরতে পারছিনা বিশ্বাস করো। সকালে এসেই বরুণদাকে একটা লিস্ট দিতে বলেছি। আমি মেলাবো।
বরুণদা দিয়েছে।
বললো একটু বোস, বার করে দিচ্ছি। আচ্ছা তুমি বলো কলকাতার ত্রিসি মানায় নেই কি করে এতো ডিটেলসে অফিসের খবর রাখছে।
আমি হাসছি।
মিলি, টিনা, অদিতি দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো।
কাল রাতে মোবাইলের স্যুইচ অফ করে রেখেছিলে কেন।
আর ভালো লাগছিলো না। সারাটা দিন যা ধকল গেল।
কিরে বিতান বৌদি বাঁচাবে বলেছে।
এখনো কিছু বলে নি।
অর্ক একবার দারজাটা খুলে উঁকি মারল।
আপনি ব্যস্ত।
কেন রে।
আপনার সঙ্গে আনন্দটা শেয়ার করতে না পারলে ভালো লাগছে না।
ভেতরে আয়।
অর্ক ভেতরে এলো।
একবার পাঁচ মিনিটের জন্য ওপরে চলুন।
কেন বলবি তো।
আপনি একটু রিসেপসনে বলে দিন নিউজরুমের ফোনটা একটু বন্ধ রাখতে।
আমি হাসছি।
আপনি হাসছেন আমরা পাগল হয়ে যাচ্ছি।
টিনারা জোরে হেসে উঠলো।
ফোন বন্ধ করলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
কিছুক্ষণের জন্য রিলিফ পাব। ওপরে সকলের থুতুতে আঁঠা জমে গেছে।
বেশি করে জল খা।
চলুন না চলুন একবার রগড়টা দেখবেন চলুন।
তোরা দেখ।
অনিদার ফ্যান এতো স্ট্রং এতদিন বুঝিনি। তেরো বছর ঘষা হয়ে গেল কিছু করতে পারলাম না।
আমি হাসছি।
আমায় কি লিখেছে জানেন।
কি লিখেছে।
বলেছে একটা নামিয়েছিস দ্বিতীয়টা যেন না নামে। কি লজ্জার কথা। রাত্রির চিঠিটা পরে কান গরম হয়ে গেছে। বলে অনিদা এইভাবে লিখতে পারে।
খুব সাবধান অর্ক কথার খেলাপ হলেই ঢিসুম ঢিসুম। জানিস অনিদা এখন ডন।
মিলির কথায় সবাই জোরে হেসে ফেললো।
ম্যাডাম বিতান ভেটকি মাছের মতো বসে আছে কেন।
ওর চাকরি চলে গেছে।
যাঃ তাহলে খাবে কি।
ওকে জিজ্ঞাসা কর।
আপনি খালি একবার সন্দীপদাকে দেখে আসুন, এমন ঠাসান ঠেসেছে লেচি হয়ে রুটি হয়ে গেছে। আমাকে চিঠিটার কয়েকটা জায়গা আন্ডার লাইন করে দেখাল। সাজেসন দিয়েছে, চিঠিটা পাওয়ার পর প্যান্ট জামা ছেড়ে কাপর ব্লাউজ আর সিঁদুর পরে অফিসে আসতে। সত্যি মালটা এতো খবর রাখছে কি করে বলুন। আমাদের অফিসেই অনিদার খাস লোক কেউ আছে।
খুঁজে বার কর। তুই অনিদার চ্যালা।
মাথাটা অনিদার মতো নয়।
সুমন্তকে কিছু লেখে নি।
ভালমন্দের খবর নিয়েছে। লাস্টে একটা লাইন ছোট্ট করে গুছিয়ে লিখেছে।
লেখাটা ঠিক জমছে না। খেলা আরও খেলা।
একমাত্র দ্বীপায়ণদাকে কিছু বলে নি।
কিরে তুই আমাকে বললি আধঘন্টা পর আসতে এতো দেখি ঘর ভরে গেছে।
আবার হাসির রোল।
চম্পকদা, সনাতনবাবু ঘরে ঢুকলেন।
এইনে তোর ফাইল। সবকিছু ঠিকঠাক মিটলো। হিমাংশু হয়তো আসবে তোর কাছে কয়েকটা ব্যাপারে পার্মিসন নিতে, না হলে মুভ করতে পারবে না।
কি বলুন।
কি জানি। ওকে একটা লম্বা চিঠি দিয়েছে।
আপনাকে ধরায় নি।
অর্ক বললো।
দিয়েছে। যা ভাগ।
কোথায় যাব চম্পকদা, আপনি একবার নিউজ রুমে চলুন অবস্থাটা দেখতে পাবেন।
অফিসটা আজকে কিরকম চনমনে লাগছে না।
চনমনে কি বলছেন, দৌড়চ্ছে।
তুই হরিদার ছেলেটাকে চা আনতে বল।
অর্ক বেরতে গেল, বরুণদা ঘরে ঢুকলো।
আমার দিকে তাকিয়ে একগাল হাসি।
মন ভালো।
মাথা দোলালাম। বসো।
চম্পকদার দিকে তাকালাম।
কাল সব ভালোয় ভালোয় মিটে গেছে।
এরপরও না মিটলে কিছু বলার নেই। কেন যে দুবছর ধরে ঘাউড়ামি করলো কে যানে।
আমার মনে হয় অনি কলকাতায় রয়েছে। লোককে বলে বেরাচ্ছে দু’বাইতে আছে।
খুঁজে বার করোনা।
আমার গলাটা ভারি হয়ে গেল।
ঠিক আছে অন্যায় হয়েছে আর বলবো না। নামটা পর্যন্ত মুখ উচ্চারণ করবো না।
এটা তোমার রাগের কথা।
নামটা শোনা মাত্রই তোর যদি গলা ভাড়ি হয়ে যায় কথা বলি কি করে।
সত্যিতো চম্পকদা অন্যায় কিছু বলে নি।
আমি চুপ করে রইলাম।
বিতানের কি হলো।
অনিদা একটা দরখাস্ত ধরিয়েছে।
মিলি বললো।
তোকেও ধরিয়েছে!
তারপর স্বগোতক্তির সুরে।
আমাকেও ধরিয়েছে। কি করবি বল।
তোমার তো কোন চিন্তা নেই। আমি পথে বসবো।
আমি হেসে ফেললাম।
দেখ মিত্রা হাসছে। তুই বৃথা টেনসন নিচ্ছিস।
টেনসন কালকের ডায়লগ শুনেছ। আমার আত্মারাম খাঁচা।
তাহলে তুই কিছু একটা গন্ডগোল করেছিস।
আমি বুঝতে পারছি না।
নিশ্চই তেলচুরি হয়েছে। তোর মাথায় কাঁঠাল ভেঙেছে।
সেইরকম।
দেখ খুঁজে সেই সব গাড়িগুলো হাওয়া হয়ে গেছে।
বুঝতে পারছি না।
কাগজপত্র দেখেছিস।
বরুণদাকে বলেছি।
বরুণদা হাসছে। বিতানের হাতে প্রিন্টআউট এগিয়ে দিল।
টিনা তুই ছেলেটাকে ডোবাবি। একটুও গাইড করছিস না।
আমার কথা শুনলে তো।
টিনাদি ভাল হবে না বলে দিচ্ছি।
মাস তিনেক আগে তোকে বলেছিলাম। মাইলেজটা তুই ঠিক মতো দেখ, এখন কেউ আর পনেরতে গাড়ি নিচ্ছে না তুই ওটা আঠার করে দে। তুই শুনেছিস আমার কথা।
বিতান চুপ করে রইল।
বুঝেছি ওইখানেই জল মিশিয়েছে। আচ্ছা অনিদা কি করে ধরলো বলো।
ওসব নিয়ে মাথা ঘামাস না। মাথা ফুটো হয়ে যাবে।
যা এবার নিজের কাজে যা।
বিতান বরুণদার হাত থেকে কাগজপত্র নিয়ে বেরিয়ে গেল।
শোন অনি অনেক কাজের দায়িত্ব দিয়েছে আমাকে। তোদের কি কি দিয়েছে।
চম্পকদা মিলিদের দিকে তাকাল।
আমাদেরও। বলতে পারো গলা পর্যন্ত।
দেবা নির্মাল্য কই।
চিঠি পেয়ে কাল থেকে শরীর খারাপ। বললো তোমরা যাও ওষুধ খেয়ে যাচ্ছি।
চম্পকদা নীচু স্বরে হাসছে।
তুই বল মিত্রা ঘরের খবর ওকে কে দিচ্ছে।
খুঁজে বার করো। ওতো বলে সরষের মধ্যে ভূত আছে। আমার কারবার সরষেকে নিয়ে।
ভূত এমনি আমার পায়ে এসে লুটিয়ে পরবে।
কথাটা খারাপ বলে নি। যাক তোকে কিছু লিখেছে।
একটা লাইনও আমার জন্য খরচ করে নি।
স্ট্রেঞ্জ।
বলছি কি তাহলে। খালি এইটুকু বুঝিয়ে দিয়েছে আমি মরিনি। সব সময় পাশে আছি।
সুনীতের থেকে ওর উকিলটা কাল বেশি ভরকেগেছে। নে আর একটু চা বল। কাজগুলো সারি। দাদা আসবে না ?
আসবে।
মিলি দেখনা দাদা এসেছে কিনা। তাহলে দাদার ঘরেই বসবো।
মিলি বেরিয়ে গেল।
জানিস মিত্রা আমাকে বলেছে তুমি এখন ঠুঁটো জগন্নাথের মতো চুপ চাপ বসে থাকবে। তোমার কাজ পাহাড়া দেওয়া। বল সম্ভব।
ওই যে নতুন টিমটা জয়েন করেছে, বলেছে ব্যাটারা বেদম ফাঁকি বাজ। তুমি দেখভাল করো।
চল দাদার কাছে যাই, আরও লিখেছে।
দেবাশীষ নির্মাল্য ঢুকলো।
আমি হাসলাম। চোখ মুখ লাল।
শরীর ঠিক আছে।
ঠিক আছে মানে। খারাপ হওয়ার যো আছে। যা দিয়েছে একহাত। জানলো কি করে বলতো এতো সব। আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না।
চম্পকদা তোমার।
আমারও তোদের মতো অবস্থা। তবে একটা কথা ঠিক ও যে গাইডলাইনটা দিয়েছে। খুব ভেবে চিন্তে দিয়েছে। একেবারে ফেলে দেবার মতো নয়।
আমাকে একটা নতুন দায়িত্ব দিয়েছে।

কি।
 
ফার্মের প্রোডাক্ট সেলের ব্যাপারে ও হেল্প করবে। তবে কোয়ালিটি ডিটোরিয়েট করলে কপালে দুঃখ আছে। এমনকি এ্যাডের ব্যাপারে আমাকে কয়েকটা জায়গায় যেতে বলেছে।
ভেবে দেখ কোথায় আছে জানিনা আমাদের মালের ব্যাপারটা জোগাড়ের চিন্তা ভাবনা করছে।
বুঝলে চম্পকদা অনির একটা বদ অভ্যাস হচ্ছে ও ঘাড়ে সচর আচর কিছু নেয় না। একবার নিয়ে নিলে তুমি নিশ্চিন্ত। খালি ফলো আপ করো নিশ্চিত রেজাল্ট।
মিলি ফিরে এলো। সবাই দাদার ঘরে গেলাম। সারাটা দিন দাদার ঘরে কাটল।
প্রত্যেকের চিঠি পরে পরে দাদাকে শোনান হলো। তারপর ডিসিসনে আসা হলো।
দাদা একবার মাঝে ইসলামভাইকে অফিসে আসতে বললো। হিমাংশুকে তুই লিখেছিস রতনের নামে এবং আবিদের নামে একটা এক্সপোর্ট লাইসেন্স বার করতে। ওরা বাইরে মাল পাঠাবে। ইসলামভাই আমাদের ফার্মের ষাটভাগ মাল কিনে রতনদের সেল করবে।
ইসলামভাই প্রথমে ব্যাপারটা ধরতে পারে নি। তারপর হিমাংশু বুঝিয়ে দিল।
ইসলামভাই খালি মাথা দুলিয়ে যাচ্ছে। ও কি করতে যাচ্ছে আমার বোধগম্য হচ্ছে না।
হিমাংশু বললো, আমাকে লিখেছে লাইসেন্স বেরিয়ে যাবার পর অনুপকে জানাতে। অনুপ সব ব্যবস্থা করবে। এ্যাকাউন্টসের পার্ট আমার বাকি পার্ট অনুপের।
আচ্ছা তুই এতো খবর পাস কি করে। তোর কে আছে আমাদের অফিসে বল না।
তোকে নিয়ে অফিসে কতো মাতামাতি। আমি তার ফ্লেভারটুকু উপভোগ করি। তোকে কাছে পাই না। পেলে আরও ভালো লাগতো।
আজ সুরোর বিয়ে হলো।
শেষটা এমন হলো মনটা ভারি হয়ে গেলো। কান্নাছাড়া আমার জীবনে কিছু নেই বুঝলি। লোকে এরপর থেকে আমাকে কাঁদুনি মাসি বলবে।
তোর সঙ্গে ওর চুক্তি হয়েছিল, এক তুই যেখানেই থাকিস ওর বিয়েতে আসবি। দুই তোর বিয়ে যেখানে হবে ওর বিয়ে সেখান থেকে হবে। মানে সেই বাড়ি থেকে।
তাই এই বাড়িকে বেছে নেওয়া হয়েছে।
ছেলের নাম অংশুমান। তুই চিনিস, সুরো বললো।
একবার নাকি তোর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছিল। ওর থেকে তিন বছরের সিনিয়ার। আমাদের কলেজেই পরতো।
এখন প্রফেসারি করছে।
দেখতে বেশ ভালো ছেলেটাকে।
অনিমেষদা বৌদি দুজনে দায়িত্ব দিয়েছে আমাকে সব কেনা কাটার জন্য।
ইসলামভাই বিয়ের সব অনুষ্ঠানের দায়িত্ব নিয়েছে।
এলাহি ব্যবস্থা।
তোর ছেলে মেয়ের কি আনন্দ সুরো পিসির বিয়ে। পাত পেরে খাবে। পিকু একটু বরো সে তো আর এক কাঁটা ওপরে।
এখানেও তুই নেই।
সবার সেই এক কথা।
সবাই আগের রাত থেকে আমাদের বাড়িতে। সুরো গত সাতদিন ধরে রয়েছে।
শয়নে স্বপনে অনিদা।
কতোবার যে চিকনাকে ফোন করে বলেছে, তুমি অনিদার সঙ্গে আমাকে একবার কথা বলিয়ে দাও না।
কে কার কথা শোনে। অনিমেষদাকে পর্যন্ত ফিরিয়ে দিয়েছে।
বলেছে অনি নম্বর চেঞ্জ করেছে।
সকাল বেলা সুরো একটু কান্না কাটি করছিল। তারপর আবার ঠিক হয়ে গেছে।
মিলি তার ছেলেকে নিয়ে এসেছে। টিনা তার মেয়েকে নিয়ে এসেছে। সব গ্যাঁড়া গ্যাঁড়া। অদিতির ছেলেটা একটু বড়ো। প্রথমটা নষ্ট হয়ে গেছিল। দ্বিতীয়টাকে যাই হোক নীরু জানপ্রাণ দিয়ে বাঁচিয়ে দিয়েছে। সেটারই এখন বয়স দশ।
সবাই এসেছে। আড্ডা খাওয়া দাওয়া। হই হুল্লোড়।
ছেলের বাড়ি থেকে গায়ে হলুদ এসেছে।
সুরোর শ্বশুর নিজে এসেছেন।
সব কাজ মিটে যাবার পর আমাকে এসে বললো মা আমাকে একটা জিনিষ দেখাবে।
প্রথমে আমি একটু অবাক হয়ে গেছিলাম।
বলুন।
অনির একটা ছবি তোমার ঘরে আছে আমাকে একটু দেখাবে।
হাসলাম।
আমার বৌমা অনেকবার আমাকে তার দাদার গল্প করেছে। লোকের মুখে খোঁজ খবর নিয়েছি। অনিমেষবাবুর কাছ থেকেও সব শুনেছি। ও তো একটা মিথে পরিণত হয়ে গেছে।
নিজের ঘরে নিয়ে গেলাম। তোর ছবিটার সামনে ভদ্রলোক অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন। কি বিড় বিড় করলেন কি জানি।
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন।
চোখ দুটো যেন কথা বলছে মা।
তারপর ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।
এখন আর সেই ভাবে মন খারাপ হয় না। এটুকু মনে মনে জানি তুই আছিস।
তোর মেয়ে ছুটতে ছুটতে এলো, মা আমাকে দুটো লুচি দেবে।
কেনরে এই তো খেলি।
না আমি খাবো না। বাইরে একটা পাগল বসে আছে খেতে চাইছে।
তোকে বুঝি খেতে চাইল।
মাথা দোলাল।
হাসলাম।
একা একা যেও না। কাউকে সঙ্গে নিয়ে যাও। না হলে পাগলটা আবার ধরে নিয়ে যাবে।
রান্নাঘর থেকে দুটো লুচি তরকারি একটা প্লেটে করে মেয়ের হাতে দিলাম।
মেয়ে নাচতে নাচতে বেরিয়ে গেল।
কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে বললো, জল দাও।
ভাগ এখান থেকে খেতে পেলে শুতে চায়। ছগন দাদাকে বল তারিয়ে দিতে। কাজের বাড়িতে এরকম অনেক পাগল আসে।
দাও না।
আবার জল দিলাম।
মেয়ে দিয়ে এলো।
একবার আমি নিজে গিয়েও বাইরে বেরিয়ে দেখে এলাম। একটা নয় তিনটে পাগল।
আবার তোর মেয়েকে ডেকে লুচি দিলাম।
অনিমেষদা হাসতে হাসতে বললো। মিত্রা তোর মেয়ে দরিদ্র নারায়ণ সেবা করছে।
ছগনলাল একবার তারিয়ে দিল। দেখলাম এই ফুটপাথ থেকে ওই ফুটপাথে গিয়ে বসলো।
দুপুরে দেখলাম তোর মেয়ে নিজে হাফ খেয়ে থালা নিয়ে উঠে যাচ্ছে।
ধর ধর বলে চেঁচিয়ে উঠলো সকলে।
বললো বাইরের পাগলটা খায় নি। ওদের দিয়ে আসি।
বড়মা খেতে খেতে উঠে গেল।
আচ্ছা পাগলের পাল্লায় পরেছি। সকাল থেকে বড্ড জ্বালাচ্ছে।
চল তোর পাগলদের খেতে দিয়ে আসি।
রান্নাঘর থেকে খাবার নিয়ে, নিজে মেয়ের সঙ্গে গিয়ে খাবার দিয়ে আসল।
মনে হয় দুটো মুখও করে আসলো। গলা পাচ্ছিলাম।
আমাকে এসে বললো কোথায় তুই অনেকগুলো বললি। দেখলাম তো একটা। কি দুগ্গন্ধ বেরচ্ছে। ছগনলালকে বলে এসেছি দূর কর। কাজের বাড়ি বলে কথা।
বিকেল বেলা সুরো সাজতে গেল।
সেজেগুজে সুরো ফিরে এলো সাড়ে পাঁচটা নাগাদ।
চারিদিকে লাইট জ্বলছে।
বাড়ি ভর্তি লোকজন। তোর মেয়ে আবার জ্বালাতন শুরু করলো। খালি ঘ্যানর ঘ্যানর।
আজ ওকে পাগলে পেয়েছে।
শেষ মেষ সুরোকে ধরলো।
সুরো কনের সাজে নিজে গিয়ে তোর মেয়ের সঙ্গে পাগলকে খাইয়ে এলো।
সবাই সুরোর পেছনে কি লাগা। সুরো পুন্যি করলো।
তখন কটা হবে ছটা।
এরপর বড় এলো।
আমরা সবাই বিয়েতে মেতে গেলাম। ছেলের বাড়ি থেকে বড় যাত্রী এসেছে। তাদের দেখভাল করছে সবাই। আমি ঘর সামলাচ্ছি।
প্রথমে রেস্ট্রি হলো তারপর বিয়ের আসর বসলো।
নীপা আজ খুব সুন্দর সেজেছে। ভীষণ মিষ্টি লাগছে।
ওর পেছনে কনিষ্ক, বটা, নীরু পরে রয়েছে।
এবার তোর পালা নীপা, তৈরি হয়ে যা।
বরুণদা হেভি সার্ভিস দিচ্ছে।
মাঝে একবার অনিমেষদা নীপাকে বলেছিল।
হ্যাঁরে নীপা সবাই এলো চিকনা এলো না কেন।
সে এখন নেতা হয়েছে। সময় নেই।
সবাই নীপার কথায় হাসে।
রাতে নাচ গান হলো। তারপর খেতে বসা হলো।
আমার বিয়ের মতো সবাই এক সঙ্গে বুফে সিস্টেমে। সুরোর ইচ্ছে।
হঠাৎ দেখি সুরোর চোখ ছল ছল।
বুঝলাম মনে পরে গেছে। কাছে গেলাম।
বেশতো ছিলি সারাদিন, আবার কি হলো।
অনিদাটা থাকল না। বলেছিল তোর বিয়েতে খুব আনন্দ করবো।
বিধানদা বোঝাল।
প্রবীরদা বোঝাল, অনুপদা, রূপায়ণদা কেউ বাকি নেই।
কে কাকে বোঝায় তার ফোঁপানি বন্ধ হল না।
তারপর যা হোক তার কান্না থামল।
খাওয়া তখন বলতে পারিস শেষ।
তোর ছেলে মেয়ে তাছাড়া যতো গুলো বাচ্চা ছিল ঘুমোতে গেছে ডাক্তারদাদার বাড়িতে।
আমরা বেশ হৈ চৈ করছি।
আমাদের বিয়ের টুকরো টুকরো গল্প হচ্ছে।
অনুপদা বললো মনে আছে সুরো অনির বিয়েতে সেই নাচ, চল চল আর একবার নেচে নিই।
পাবলিকের সামনে নাচলে পেঁদাবে।
বেশ আনন্দ হচ্ছিল।
হঠাৎ সুরোর ফোনটা বেজে উঠলো।
সুরো আমার দিকে তাকিয়ে বললো, শিষ্য ফোন করেছে।
বলো।
আমি পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম।
কে রে ?
বৌদি বললো।
চিকনা।
বৌদি মুখ টিপে হাসল।
সুরো কথা বলিসনা ওর সঙ্গে।
খাওয়া দাওয়া হয়ে গেছে।
হ্যাঁ আঙুল চাটছি। তুমি কোথায় ?
পীরসাহেবের থানে বসে আছি।
তোমার সঙ্গে কথা বলবো না।
কেন।
তুমি এলে না।
কি কথা হলো চিকনার সঙ্গে বুঝলাম না। কথা বলতে বলতেই সুরোর মুখটা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেল, ফোনটা নিয়ে পরি কি মরি করে গেটের দিকে রুদ্ধ শ্বাসে দৌড়ল।
আমি ধরতে পেরেছিলাম কিছু একটা হয়েছে।
অংশু ওর পেছন পেছন দৌড়চ্ছে।
আমি কি ওর সঙ্গে পারি।
আবিদ রতন সবাই দৌড়ে গেল।
একটা হতোভম্ব করা পরিবেশ। হুট করে কি যে হোল।
সুরো সটাং গেটের বাইরে এসে কাকে যেন খুঁজছে।
আমি ছুটতে ছুটতে কাছে গেলাম।
সুরো আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পরে হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলো।
অনিদাকে তোমরা কেউ চিনতে পারলে না।
আমি তখনো হাঁপাচ্ছি। কথা বলতে পারছি না।
নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলাম না।
হাঁপাতে হাঁপাতে বললাম, কি পাগলের মতো বলছিস!
হ্যাঁগো বৌদি চিকনাদা এখুনি বললো। অনিদা এসেছিল।
ততক্ষণে সবাই কাছে চলে এসেছে। সুরো অঝোড়ে কাঁদছে।
রতন আবিদ গেট থেকে বেরিয়ে ছিটকে গেল।
ইসলামভাই কাকে যেন বললো গাড়িটা ওপাশ থেকে নিয়ে আয়।
মুহূর্তের মধ্যে সবকিছু ওলট-পালট হয়েগেল।
ছগনলাল গেটের মুখে দাঁড়িয়ে আছে। ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেছে।
কি হয়েছে বল। আমি সুরোকে জড়িয়ে ধরে আছি।
সুরো বললো।
চিকনাদা বললো, মনটা ভাল নয় সুরো।
কেন।
সে তোকে বলা যাবে না।
আমারও মনটা ভাল নয়।
কেন।
আমি বললাম আমার দাদা নেই।
চিকনাদা বললো, কেন, দাদাকে অতো পরি পাটি করে খাইয়ে দিয়ে এলি।
কি বাজে বকছো।
কনে সেজে তুই অনিসা খেতে দিস নি কাউকে।
সে তো বাইরে একটা পাগল ছিলি। সকাল থেকে বহু জ্বালাচ্ছিল।
ওটাই তোর অনিদা।
তুমি বলো বৌদি সকাল থেকে আমার দাদা গেটের বাইরে বসে রইলো। তোমরা কেউ চিনতে পারলে না।
ইসলামভাই রতন আবিদ তখন রাস্তায় বেরিয়ে গেছে।
ছগনলাল চেঁচিয়ে উঠলো।
কুথা যাবেন বাবু, তাকে পুলিশে উঠায়ে লিয়ে গেছে।
অনিমেষদা, প্রবীরদা, বিধানদা থম মেরে গেছে। রূপায়ণদা, অনুপদা কাকে ফোন করছে।
দাদা, মল্লিকদা, ডাক্তারদাদা কেমন যেন বোবা হয়ে গেছে।
সবাই কেমন হতভম্ব হয়ে গেছে কথাটা শোনার পর।
ইসলামভাই তখন ফোনটা বার করেছে পকেট থেকে। আমি ইশারায় না করলাম। আমার ফোনটা এগিয়ে দিলাম।
চিকনাকে রিং করে আমাকে দাও।
সুরো আমার বুকে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে কেঁদে চলেছে।
কার চোখে জল নেই। বড়মা, ছোটমা, জ্যেঠিমনি, দামিনীমাসি মাথায় হাত দিয়ে মাটিতে বসে পরেছে। সবার এঁটো মুখ, কারুর হাত ধোয়া হয় নি।
টিনা, মিলি, অদিতি, নীপা ভেতর থেকে জলের বোতল আনতে ছুটল।
ইসলামভাই ফোনটা ধরে আমাকে দিল।
ভয়েজ অন করা আছে সবাই শুনবে, নাহলে আমার ষষ্ঠী পূজো হবে।
বলো গুরুমা।
গলাটা ভাড়ি ভাড়ি কেন।
পীরসাহেবের থানে বসে আছি, একটু ঠান্ডা লেগেছে।
কাঁদছো কেন।
তোমরা আমার গুরুকে দুটো খেতে দিতে পারলে না। তোমাদের বাড়িতে খাওয়ার এতই অভাব।
চিকনা ঝাঁজিয়ে উঠলো।
চোখ ফেটে জল বেরিয়ে আসছে, তবু কাঁদতে পারছি না।
অনিমেষদাকে দেখলাম চোখ থেকে চশমাটা খুলে রুমাল দিয়ে মুখ মুছছে। এই প্রথম একটা দোর্দন্ড প্রতাপ লোককে এতোটা ভেঙে পরতে দেখলাম।
আমার কথাটা শোনো।
শুনবো না, তুমি আমাকে একা থাকতে দাও।
বুঝলাম চিকনা অঝোড়ে কেঁদে চলেছে। সবাই নিস্তব্ধ।
কান্নাকি আমারও পাচ্ছে না, কি করবো। দিনে দিনে কেমন যেন হয়ে যাচ্ছি। জীবনের সব তাপ উত্তাপ হারিয়ে ফেলেছি।
তবু নিজের মেয়েটার হাতে দুটো লুচি এঁটো ভাত খেয়েছে।
বুকের ভেতরটা ভীষণ যন্ত্রণা করছে বুঝলি বুবুন।
যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে।
একদিকে সুরো আর এক দিকে চিকনা।
যার দিকে তাকাই সেদিকে ছলছলে চোখ ছাড়া কিছুই চোখে পরে না। আমি নিজেই কাঁদতে ভুলে গেছি।
ফোনে তখনো চিকনার ডুকরে ডুকরে কান্নার শব্দ ভেসে আসছে।
তুমি এতো দিন কি করে ঘর করলে ওর সঙ্গে।
তুমি একটু আমার কথাটা ভাবো।
ঠিক আছে ওকে চিনতে পারনি, টনা মনাকে চিনতে পারেল না কেন।
প্রবীরদা কাছে এগিয়ে এলো। ফোনটা বার করতে গেল পকেটে থেকে।
অনুপদা হাতটা চেপে ধরলো।
টনা, মনাও ছিল!
ছিলতো।
কি করে বুঝবো বলো।
সবাই আমাকে ঘিরে ধরে আছে।
পাঁচিলের পাশে একটা ছেঁড়া পোঁটলা পরে আছে। ওটা নিয়ে এসো।
বুঝলাম চিকনা ফোঁপাচ্ছে।
আর কি বললো।
বম্বে এয়ার পোর্টে নেমে আমাকে ফোন করলো। রাত দেড়টার ফ্লাইটে লন্ডন যাবে। বললো চিকনা আজ আর কাউকে কিছু বলিস না। কাল সকালে বলিস।
মেয়ের হাতের লুচিগুলো ভীষণ ভালো খেলাম বুঝলি।
চিকনা কেঁদে ফেললো।
সারাদিন না খেলেও চলতো। শেষ বেলায় সুরোর হাতে খেলাম।
চিকনা ঢেউ তুলে তুলে কাঁদছে আর বলে যাচ্ছে।
ইসলামভাই মেনুগুলো বেশ ভালো বানিয়েছে। মাংসটা আর একটু সেদ্ধ হতো, তবে রাতের দিকে ঠিক হয়ে যাবে।

দেখলাম ইসলামভাই ওর্ণা দিয়ে চোখ মুছছে।
 
আর কি বললো।
জানিনা বলতে ভালো লাগছে না। তোমার সঙ্গে পরে কথা বলবো।
সুরো আমার বুক থেকে মুখ তুললো।
সুরো কথা বলবে বলেছে।
পরে বলবো। কারো সঙ্গে আমার কথা বলতে ভালো লাগছে না।
আচ্ছা। তুমি বাড়ি যাও।
পরে যাব।
গুরুমার কথা রাখবে না।
ঠিক আছে আর একটুক্ষণ বসি।
আচ্ছা।
বড়মা কাঁদছে।
কাছে গেলাম।

আমার কেন মরণ হয় না মিত্রা। কেন আমাকে ঈশ্বর নেয় না। আমি কি জমের অরুচি।
এ সব কি কথা বলছো তুমি!
ছেলেটাকে তখন আমি কতো গালাগাল দিলাম। অনিকে আমি কোনদিন গাল দিই নি।
বড়মার চোখমুখটা কেমন যেন লাগছে।
তুমি না জেনে দিয়েছো।
ঠাকুর আমার চোখটা অন্ধ করে দেয়না কেন।
বুঝলাম বড়মা ভুল বকতে শুরু করেছে।
কাকে বলবো নিয়ে যাবার জন্য।
জ্যেঠিমনি আমার মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে। তারও চোখে অনেক প্রশ্ন।
কনিষ্ক এগিয়ে এলো।
আস্তে করে বললাম পারলে প্যথিডিন দিয়ে দাও।
আবিদ পাঁচিলের গা থেকে পোঁটলাটা তুলে নিয়ে এসেছে।
চ্যাটচেটে কালো নেগড়ায় মোড়া।
কারুর কোন মুভমেন্ট নেই।
আমার দিকে তাকাল।
খুলবো।
খোলো।
নেগড়ার গিটটা খুলতেই একটা লাল পরিষ্কার কাপর বেরিয়ে এল মনে হলো একটা বাক্স আছে।
ঠিক তাই একটা বড় বাক্স তার ভেতর আর একটা বাক্স। তার ভেতর একটা গয়নার বাক্স আর একটা কাপড়।
সুরোর ফোনটা আবার বেজে উঠলো।
সুরো আমার দিকে তাকালো।
চিকনাদা।
কথা বল।
বলো।
তোদের ভিডিও তুলেছে কে রে।
কেন।
তুই যখন তোর অনিদাকে খাওয়াচ্ছিলি ওই ছেলেটা তখন ভিডিও তুলেছে। ছবিটা যদি ঠিক মতো আসে, আমাকে একটা স্টিল বানিয়ে দিবি।
ফোনটা কেটে গেল।
কিরে কি বললো ?
বললো আমি যখন অনিদাকে খাওয়াচ্ছিলাম সেই সময় ভিডিওর ছেলেটা ছবি তুলেছে।
সুরোর কথা শেষ হল না। রতন দৌড় দিল।
অনিমেষদার চোখ দুটো লাল, থম থমে মুখ। বিধানদা গুম মেরে দাঁড়িয়ে। ক্যাটারিংয়ের ছেলে গুলো চেয়ার এনে দিয়েছে বসার জন্য।
অংশুর বাবা এইরকম পরিস্থিতে জীবনে কোনদিন পরে নি। কেমন যেন মুখ করে দাঁড়িয়ে। ভদ্রলোক সবে মাত্র বাড়ি ফিরে যাবার জন্য তোর জোড় করছিলেন।
সবাই চেয়ারে বসলো।
অনিমেষদা ছগনলালকে ডাকলো।
ছগনলাল কাছে এলো।
তুমি ঠিক দেখেছ পুলিসের গাড়িতে তুলে নিয়ে গেছে।
হ্যাঁ বাবু বড়া গাড়ি থা দো গো পুলিস ভি থা ভিতর মে।
উস সময় কিতনা টাইম থা।
ও ছোটা দিদিমনি যব খানা দেকে আয়া উস টাইম।
প্রবীর থানার বড়বাবুকে একবার ডেকে পাঠাও।
প্রবীরদা ফোনটা বার করলো।
আর শোনো। না থাক।
বলুন না।
টনা-মনাকে এখন পাবে।
রতনকে পাঠিয়ে দিই। একবার ট্রাই করুক।
হ্যাঁরে রতন তোরা কেউ কিছুই জানতিস না! এই সময় অন্ততঃ সত্যি কথা বল।
বিশ্বাস করুণ দাদা।
তোদের কথা আর বিশ্বাস করতে পারি না।
রতন মাথা নীচু করে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকল।
অনুপ তুমি ছেলেটাকে দেখেছ।
বহুবার দেখেছি। মাথায় এই সিকোয়েন্সটা আসে নি। আর যেই ভাবে বসেছিল….।
ব্যাটা সকলকে ঘোল খাইয়ে দিল।
বিধানদা মুচকি মুচকি হাসছে।
বিধানবাবু আপনি একবার ভাবুন।
আমার মাথাটা কোন কাজ করছে না অনিমেষ।
না করারই কথা। আমার কি আর করছে, করাবার চেষ্টা করছি।
সুরোর দিকে তাকাল।
দেখতো মা তোর এই প্যাকেটে কিছু লিখেছে-টিখেছে কিনা।
বৌদির মুখটা গম্ভীর। খালি কাপরের খুঁট দিয়ে চোখ মুছছে।
সুতপা কেঁদে কিছু হবে না।
অনিমেষদার গলাটা কেমন ভার ভার।
বোকাদের মধ্যে তুমিও একজন। আমার থেকে তুমি ওকে বেশি চিনতে।
দামিনী মাসি তখনো মাথায় হাত দিয়ে মাটিতে বসে আছে।
কিগো দামিনী তুমিও চিনতে পারেল না। তোমার কাছে অনি আঠারো মাস ছিল।
দামিনীমাসি মাথা নীচু করে রইলো।
সুরো প্যাকেট থেকে একটা খাম বার করে আমার হাতে দিল।
দেখনা মা কি লিখেছে গুণধর।
অনিমেষদা আমার দিকে করুণভাবে তাকাল।
একটু জোড়ে পর। সবাই শুনুক।
কিরকম রাম ঠকান ঠকালুম বলতো। তোর কথা রেখেছি। অনিদা কোনোদিন তোকে ফিরিয়ে দেবে না। আকাশের চাঁদ চাইলেও তোকে এনে দেবে। যদি তার পক্ষে সম্ভব হয়। তোকে যে কয়টা কথা দিয়েছি সব কটা রাখব। হারটা নিজের হাতে কিনেছি। জীবনে প্রথম। জানিনা তোর পছন্দ হবে কিনা। ক্যাশমেমো আছে, পছন্দ না হলে চেঞ্জ করে নিয়ে আসিস। খুব ভালো খেলাম বুঝলি। আমার মেয়েটাকে একেবারে আমার মতো দেখতে হয়েছে। ছেলেটা গাড়ল। একবারও কাছে এলো না। মেয়েকে একটা ক্যান্ডি দিয়েছি। পাগলের হাত থেকে ক্যান্ডিটা প্রথমে নিতে চায় নি বুঝলি, তারপর নিলো। সবাইকে চোখের আশ মিটিয়ে দেখলাম। কতদিন পর দেখলাম। কনিষ্কটার চোখে নেবা হয়েছে বুঝলি। কতবার বাইরে এলো, সিগারেট খেলো। পোড়া সিগারেটটা একবার ফেলে যাবি তো। তা না পা দিয়ে ডলে ভেতরে চলে গেলো।
অনিদা।
তোর এসব লেখা পরলে কার মন ভাল থাকে বল।
কনিষ্কর পর্যন্ত চোখ ছল ছল করে উঠলো। বটা নীরুর চোখ লাল।
কি কনিষ্কবাবু চোখ মুছলে হবে, পাখি উড়ে গেছে। চিঠিটা কেন পড়তে বললাম বলো।
কনিষ্ক মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।
এইখানেই তোমাদের সঙ্গে অনির তফাৎ। ও খুব সন্তর্পণে ইচ্ছে করে একটা ভুল করেগেছে। বলতে পার ওকে খোঁজার জন্য একটা অস্ত্র ও তুলে দিয়ে গেছে।
অনুপ তুমি বলতে পারবে।
ক্যাশ মেমোটা।
ঠিক ধরেছো।
দেখ ওটা কোন বড়ো দোকান থেকে কেনা।
পিসি চন্দ্র।
ও যেটা কিনে দিয়েছে সুরোর অপছন্দ হওয়ার কথা নয়। তবু তোমরা যদি ওর ট্রেস পেতে চাও খুঁজে নাও। প্রমাণ দিয়ে গেলাম।
কালকে তোমার একটা কাজ আছে অনুপ।
ওই দোকানের ক্যামে ওর কোন ছবি ধরা পরেছে কিনা রেকর্ড করে আনব।
ইয়েস।
আমার দরকার। শেষ চেষ্টা একটা করবো।
অনিমেষদা ইসলামভাই-এর দিকে তাকাল।
ইসলাম তোমার ছেলেটাকে বলনা যদি একটু চা খাওয়াতে পারে।
ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দিল ছেলেটা।
অংশুর বাবা মন দিয়ে সব শুনছে।
বুঝলেন বিধানবাবু আমার সবচেয়ে বড়কষ্ট, ছেলেটাকে কাজে লাগাতে পারলাম না। হাজার চোখকে ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে গেল। চাড্ডিখানি ব্যাপার।
আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে, বুক ফেটে যাচ্ছে মুখে কিছু বলতে পারছি না।
দেখলাম বড়মাকে ধরে ধরে দিদিভাই ছোটমা নিয়ে আসছে।
তাড়াতাড়ি কাছে গেলাম।
তুমি একটু শোও না। কেন অমন করছো।
তুই আমাকে থাপ্পর মার। বড়মা আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
কেন এরকম করছো।
আমি কনোদিন ওকে বাজে কথা বলিনি।
আচ্ছা ঠিক আছে, ও কি তোমায় কিছু বলেছে।
তখন ও বোবার মতো বসে আছে, ঘামে ভিঁজে গেছে, মুখটাও ভাল করে দেখতে পেলাম না। কেমন কালিঝুলি মাখা।
ঠিক আছে, ঠিক আছে তুমি একটু শান্ত হও।
ছেলেটা আমাকে পর্যন্ত একবার বললো না।
এই আবার শুরু করলে।
চিকনাকে আমাকে একটু ধরিয়ে দে আমি কথা বলবো।
ওর কি মন ভাল আছে।
আমি কথা বলবো। বড়মা তোর মেয়ের মতো কথা বলতে লাগল।
তখন আমার মাথা খারাপ হয়ে যাবার জোগাড়, বুঝলি। তুই তখন মহা আনন্দে বোনের বিয়ের নেমন্তন্ন খেয়ে লন্ডনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিস। মেয়ের হাতে লুচি খেয়েছিস।
বাধ্য হয়ে চিকনাকে ফোন করলাম।
বলো।
বাড়ি যাও নি।
এইবার যাব।
বড়মা কাঁদছে, তোমার সঙ্গে কথা বলবে।
দাও।
চিকনা বাবা।
কথা আর হলো না দুজনে খানিকক্ষণ কেঁদে নিল।
তুমি তবু দেখলে, আমি ওকে এখনো চোখের দেখা দেখি নি। তুমিও চিনতে পারলে না।
আমি যে ওকে পেটে ধরি নি বাবা।
তোমায় ও পায়ে হাত দিল। তুমি গালাগাল করছিলে ও তখন মুখ নীচু করে হাসছিল, তুমি খেয়াল করনি।
বিশ্বাস কর বাবা, খেয়াল করলে কি ওকে ছাড়ি।
অনিসা তখন যে জামাটা পরেছিল ওটা কি কেচে দিয়েছ।
জানি না।
ওর জামার পকেটে একটা কাগজের টুকরো আছে, দেখো কি আছে।
ও মিত্রা, চিকনা কি বলে।
বলো চিকনা।
দেখলাম দিদিভাই ভেতরে দৌড় দিল। অনিমেষদা প্রবীরদা দেখি গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসছে। অংশু চুপচাপ স্থবিরের মতো দাঁড়িয়ে।
অনিসার সঙ্গে ওর অনেক কথা হয়েছে। কি কথা হয়েছে ওকে জিজ্ঞাসা করো।
ও তো ঘুমচ্ছে।
কাল উঠলে জিজ্ঞাসা করবে।
অনিমেষদা ইশারা করলো কথা বলবে।
আমি বড়মার হাত থেকে ফোনটা নিলাম। চিকনার গলাটা তখনো ভাড়ি ভাড়ি।
চিকনা।
বলো।
অনিমেষদা তোমার সঙ্গে কথা বলবে।
দাও।
আমি অনিমেষদাকে ফোনটা দিলাম।
হ্যালো।
বলুন।
তুমি কোথায়।
অনি যেখানে এসে বসে থাকত, আমি সেখানে বসে আছি।
কি করছো।
কি আবার করবো। আমার কি কোথাও যাওয়ার জো আছে। পাহাড়া দিচ্ছি। যক্ষের ধন।
ও কবে এসেছিল।
জানিনা। আটটা নাগাদ ফোন করে বললো। চিকনা কলকাতা এসেছিলাম, কতকগুলো কাজ সারলাম। বোম্বে যাচ্ছি। ওখান থেকে লন্ডনের ফ্লাইট ধরবো।
আমি বললাম আজ সুরোর বিয়ে তুই জানতিস।
বললো সকাল থেকে ওখানেই ছিলাম। আমার সঙ্গে টনা মনা ছিল। তুই এলিনা কেন। তাহলে দেখা হতো।
আপনি বলুন দাদা ও আসবে জানলে আমি কি না গিয়ে থাকতাম।
চিকনা আবার কাঁদতে শুরু করলো।
কাঁদছো কেন, কাঁদলে কি অনিকে পাবে।
ও ফিরে আসুক তারপর দেখাচ্ছি, ওর একদিন কি আমার একদিন।
শুধু ফোঁপানর শব্দ।
রাখছি দাদা, কথা বলতে ভালো লাগছে না।
চিকনা ফোনটা কেটে দিল।
অনিমেষদা ভাবলেশহীন মুখে ফোনটা আমার হাতে দিল।
একটা পুলিসের গাড়ি এসে গেটের সামনে দাঁড়াল।
অনিমেষদা ধীর পায়ে এগিয়ে গেল।
পুলিশ কেন।
বড়মা আমার হাতটা চেপে ধরলো।
অনিমেষদা ডেকে পাঠিয়েছে।
আমাকে নিয়ে চল আমি শুনবো।
কাঁদতে পারবে না।
দিদিভাই ছুটতে ছুটতে এলো।
কাগজতো পেলাম না এই সিগারেটের প্যাকেটটা পেলাম। আমার হাতে দিল।
অনিমেষদা দেখি আবার ফিরে এলো।
কি আছেরে এতে।
চিকনা বললো। মেয়ের সঙ্গে বুবুন অনেক কথা বলেছে। মেয়েকে প্যাকেটটা দিয়ে গেছে।
তোরাও আর অনিসাকে ফলোআপ করিস নি।
কি করে বুঝবো বলুন দাদা।
তাও ঠিক। কি কথা বলে ফেললাম।
কি সুন্দর সুযোগটা নিয়েছে। দেখতো ওর মধ্যে কিছু আছে নাকি।
আমি প্যাকেটটা খুললাম। একটা ছবি। তোর আর আমার। কয়েকটা ক্যান্ডি লজেন। একটুকরো কাগজ।
ছবিটার পেছনে লেখা আছে, এই পাগলটা তোমার বাবা, তোমার মার সঙ্গে তোমার পাগল বাবার ছবি।
ছেঁড়া টুকরো কাগজটায় লেখা আছে।
বড়মা তোমার হাতে অনেকদিন পর খেলাম। এর স্বাদই আলাদা। আজ মিত্রাকে কোনও ভাগই দিলাম না। তুমি সম্পূর্ণ আমার। আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত নাতি নাতনিকে গুছিয়ে রাখবে। অনি।
বুঝলি বুবুন বুকের ভেতরটা এতো প্রচন্ড যন্ত্রণা করছে। কথা বলতে পারলাম না। খালি কাগজের টুকরটা অনিমেষদার হাতে এগিয়ে দিলাম।
বলনা ও কি লিখেছে।
বড়মার মুখের দিকে তাকালাম কোন কথা বলতে পারলাম না।
অনিমেষদা একবার দেখে নিয়ে দিদিভাই-এর হাতে কাগজের টুকরোটা দিয়ে ফিরে গেল।
তোর পাগল সাজার চলমান ছবি দেখলাম। একঝলক দেখলে কিছুতেই বোঝা যাবে না তুই। অনেকক্ষণ ভাল করে দেখলে বোঝা যাবে তুই। তোকে যে কোনদিন দেখে নি, তারপক্ষে ধরা অসম্ভব।
আবার একবার কান্নাকাটি হলো।
সারারাত আমার আর ঘুম হলো না। ডাক্তারদাদা, অনিমেষদারা গোল হয়ে বসে অনেকক্ষণ কি সব শলাপরামর্শ করলো।
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে এসেই তোর মেয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। কাঁদো কাঁদো মুখে বললো জানো মা, পাগলটা চলে গেছে।
আমি মেয়ের মুখের দিকে তাকালাম। হায়রে ও যদি জানত ওই পাগলটা ওর বাবা।
তারপর ঘরের মধ্যে ঢুকে জামার পকেটে হাত দিল। কিছু না পেয়ে মুখটা কেমন শুকিয়ে গেল। আমি কাছে গেলাম।
কি খুঁজছিস।
আমার তাস।
কোথায় ছিল।
আমার পকেটে ছিল।
তাস কোথায় পেলি।
মেয়ে চুপ করে গেল। কিছুতেই বলে না।
আমাকে সত্যি কথা বললে দিতে পারি।
পাগলটা দিয়েছে।
মেয়েকে নিয়ে ওপরে চলে গেলাম।
সুরো তখন যাওয়ার তোরজোড় করছে। কার আর মন ভালো থাকে। অনিমেষদা আমাকে দেখলো, ইসারায় বললো দেখ কিছু পাস কিনা।

আলমাড়ি থেকে প্যাকেটটা বার করলাম।
 
পাগলটা তোকে কালকে একটা ক্যান্ডি দিয়েছিল।
তুমি জানো।
মাথা দোলালাম।
পাগলটা কি বললো জানো।
কি বললো।
পাগলটা তোমাকে চেনে। বললো ওটা তোমার মা ?
আমি বললাম হ্যাঁ।
পাগলটা দিদান দাদাই সবাইকে চেনে।
তোকে আর কি বললো।
বললো আমার বাবাকে চেনে আমার বাবা পাগলটার সঙ্গে থাকে।
তুই কি বললি।
আমাকে নিয়ে যাবে।
বললো হ্যাঁ।
গেলিনা কেন।
তুমি যে বললে ওরা ছেলেধরা, ধরে নিয়ে যাবে তাই গেলাম না।
মেয়ের সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বললাম। কাজের কাজ কিছুই হলো না।
সুরো চলে গেলো, যাওয়ার সময় তোর মেয়েকে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ কাঁদল।
অনিসার চোখদুটো কেমন ঝাপসা হয়ে গেছে।
বুকের ভেতরটা কেমন দম বন্ধ হয়ে যাবার মতো অবস্থা। ঠিক যন্ত্রণা হচ্ছে না আবার কিন কিন করে যন্ত্রণা হচ্ছে।
ডান হাতের তালু দিয়ে চোখটা মুছলো। আবার ঝাপসা হয়ে গেল।
মায়ের কতো কষ্ট। মা কিরকম চুপচাপ সব সহ্য করে আছে। সব জানে অথচো কিছু জানে না।
সত্যি এতদিন ও কিছুই জানতো না।
কেন বাবা আজ আঠারো বছর বাড়ির বাইরে। লেখাগুলো পরে মনে হচ্ছে বাবার সঙ্গে একমাত্র চিকনাদার ডাইরেক্ট যোগাযোগ আছে। আর সবাই ভাসা ভাসা, সব জানে। পরিষ্কার করে কিছুই নয়।
তাহলে মা কার সঙ্গে রাতে কথা বলে। বাবার সঙ্গে ?
এতোক্ষণ যেটুকু পরেছে তার থেকে এইটুকু পরিষ্কার বাবা কিছুতেই মার সঙ্গে কথা বলবে না।
বাবা সত্যি সত্যি কেন বাইরে পরে রয়েছে ?
সুরো পিসির বিয়ের দিনটা ও ভালো করে ভাববার চেষ্টা করলো।
একটু একটু আবঝা আবঝা মনে পরছে। একটা পাগলের সঙ্গে ও অনেকক্ষণ কথা বলেছে। কিন্তু কি কথা বলেছে। আজ ঠিক পরিষ্কার মনে নেই। মা লিখে রেখেছে বলে ও মনে করতে পারছে। না হলে ও ভুলেই গেছিল।
বাবা ওকে দেখেছে। ও নিজে বাবাকে দেখেছে। কথা বলেছে।
অনিসা কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে ভাববার চেষ্টা করলো। সব কেমন যেন আবঝা আবঝা চোখের সামনে ভেসে আসছে।
হঠাৎ বাগানের আমগাছটা থেকে দু’একটা কাক কা কা করে ডেকে উঠলো। অনিসা চোখ খুলে জানলার দিকে তাকাল। পূব আকাশটা ফর্সা হয়ে এসেছে।
নিশ্চই দুদুন বাগানে ঘুরতে বেরিয়ে পরেছে।
অনিসা ল্যাপটপটা বন্ধ করলো।
সারাটা রাত ও জেগে আছে। চোখে একফোঁটা ঘুম নেই। এক নিঃশ্বাসে খালি পরে গেছে।
সত্যি ওর বাবার সম্বন্ধে ভীষণ জানতে ইচ্ছে করছে। কেন বাবা এরকম কান্ড করলো।
মিঃ মুখার্জী, ডঃ ব্যানার্জী, রাজনাথ এরা কারা। দুদুনের মুখ থেকে এদের নাম কোনদিন শোনে নি। মনে হচ্ছে ইতিহাসের মধ্যে ইতাহাস লুকিয়ে আছে।
বিতান আঙ্কেলকে জিজ্ঞাসা করলে যে জানতে পারবে তাও নয়। এখানে পরে যেটুকু ও বুঝলো বাবাকে বিতান আঙ্কেল যথেষ্ট ভয় পায়।
মিলিমনি, টিনামনি কিছুতেই বলবে না। কালকে ইচ্ছে করে ভিডিও ক্লিপিংস গুলো পেনড্রাইভে ভরে দেয় নি।
আজ সুরো পিসির কাছ থেকে বিয়ের সিডিটা নিয়ে ল্যাপটপে কপি করে নিতে হবে। কিন্তু কি বলে চাইবে।
শুভ কালকে পুরনো কাগজগুলো দেখতে দেখতে গম্ভীর হয়ে চলে এলো। বাবা দুবাইতে আছে। ওর বাবাও দুবাইতে ছিল। তাহলে কি মিঃ মুখার্জী শুভদীপের কেউ হয় ? মার লেখাগুলো পরে মনে হচ্ছে বাবার সঙ্গে মিঃ মুখার্জীর খুব ভাল রিলেসন ছিল।
মিঃ মুখার্জী খুন হয়েছিলেন। বাবা তার প্রতিশোধ নিয়েছে।
মা তাই লিখেছে। চিকনাদার কথোপকথনের থেকে তাই বোঝা যাচ্ছে।
শুভ বলছিল ওর দাদু কিছুতেই ওর বাবা-মার সম্বন্ধে বলতে চায় না। বড়ো হলে জানতে পারবি। এই বলে এড়িয়ে গেছে। আচ্ছা আমরা কি এখনো ছোট আছি ?
দাদাকি এই ব্যাপারগুলো কিছু জানে ?
যদি জেনে থাকে ওকে কোনদিন কিছু বলে নি।
টোডি কে ? কেন বাবা টোডির পেছনে দৌড়চ্ছে।
ইসলামদাদাই কেন কিছু করতে পারবে না।
ইকবালদাদাই বললো, তুই খোঁজ, ঠিক তোর বাবার দেখা পেয়ে যাবি।
অনিসার মাথাটা কেমন ঝিম ঝিম করছে।
টেবিল থেকে উঠে দাঁড়াল। ঘুম হবে না। ব্রাসে মাজনটা লাগিয়ে সোজা বাথরুমে চলে গেল। ফ্রেস হয়ে জামাকাপরটা বদলে নিচে চলে এলো।
কেউ এখনো ওঠে নি।
বাগানের শেষপ্রান্তে চলে এলো। দুদুন একটা গাছের গোড়ার মাটি খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নরম করছে।
পেছনে এসে দাঁড়াল।
কি করছো।
বাবাঃ তুই এত সকালে, সূর্য আজ কোন দিকে উঠেছে।
সূর্য ঠিক দিকেই উঠেছে। ঘুম ভেঙে গেল, ভাবলাম তোমার সঙ্গে বাগানে একটু হাঁটি।
তা বেশ।
অনিসা দুদুনের পাশে হাঁটতে শুরু করলো।
কোন কথা নেই। অনিসা প্রথম কথা বললো।
দুদুন।
বল।
তুমি কোন কলেজ থেকে পরেছো।
বিদ্যাসাগর।
দিদান।
একি কলেজে।
তার মানে তোমরা দুজনেই দুজনকে চিনতে।
অমিতাভদা থমকে দাঁড়াল নাতনির মুখের দিকে একবার তাকাল।
বলোনা।
চিনতাম।
অমিতাভদা হাসলো।
তুই হঠাৎ এই প্রশ্ন করছিস।
আমি তোমার কলেজে পরবো।
কেন ? তোর বাবার কলেজে ভর্তি হবি।
বাবা কোন কলেজে পরতো।
স্কটিশচার্চ।
বাবা-মা এক কলেজে পরতো না ?
হ্যাঁ। এক ক্লাশে।
তোমাদের মতো।
না তোর দিদান আমার থেকে জুনিয়ার।
আচ্ছা বাবার সঙ্গে তোমার আলাপ কি ভাবে হলো।
সে অনেক কথা।
অনিসা বলতে যাচ্ছিল আমি জানি। চুপ করে গেলো।
আবার নিস্তব্ধে হাঁটা।
কালকে বাবার লেখা গুলো পরলি।
পরলাম। তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো।
বল।
ডঃ ব্যানার্জী, রাজনাথ কে ?
ওরা এক একটা বর্ন ক্রিমিন্যাল। তোর বাবা ওদের শায়েস্তা করেছে।
কেন ? ওরা কি বাবার কোন ক্ষতি করেছিল ?
অমিতাভদা আবার দাঁড়াল, বোঝার চেষ্টা করলো। নাতনির প্রশ্নটা খুব ভালো ঠেকছে না। মনে হচ্ছে ও ওর বাবার মতো শম্বুক গতিতে এগোচ্ছে।
চুপচাপ আবার হাঁটতে আরম্ভ করলো।
অনিসা পাসে পাসে হাঁটছে।

কিগো বললে না।
কি বলতো।
ওরা কি বাবার কোন ক্ষতি করেছে।
তা একটু করেছে।
তোমার সঙ্গে বাবার কথা হয়।
একদম না।
এই কয় বছরে বাবাকে তুমি চোখের দেখাও দেখ নি।
না।
বাবা কি সত্যি বেঁচে আছে।
এইতো তুই বেঢপ সব প্রশ্ন করছিস। চল একটু চা বানা, দুজনে একটু চা খাই।
খাওয়াব, আগে বলো।
আমি তোর প্রশ্নের উত্তর দিতে পারব না।
তাহলে বাবা মরে গেছে, এটাই সত্যি।
একবারে বাজে কথা বলবি না।
তাহলে তুমি সত্যিটা বলো।
তোর ডাক্তারদাদাই জানে।
ডাক্তারদাদাই জানে, তুমি জান না, সেটা হয়।
তোর ডাক্তারদাদাই আমার থেকে বেশি জানে।
বাবা তোমার কাছে থাকতো।
তাতে কি হয়েছে।
বারে, তোমার কাছে থাকবে, আর ডাক্তারদাদাই সব জানবে, কেমন করে হয়।
বললাম তো আমি কিছু জানি না।
বুঝেছি তুমি বলবে না। এই তো। যাও তোমাকে বলতে হবে না।
অনিসা হন হন করে সামনের দিকে এগিয়ে গেল।
এই দেখো মেয়ের রাগ হয়ে গেলো।
অনিসা হেঁটে গেটের কাছে এগিয়ে এলো।
গেটের তালা খোলাই ছিল। অনিসা আস্তে করে গেটটা একটু ফাঁক করে বাইরে বেরিয়ে এলো। শুনসান রাস্তা। দু’একটা কুকুর গুটি শুটি মেরে শুয়ে আছে।
একবার ডান দিকটায় তাকাল।
ঠিক ওই জায়গায় বাবা বসেছিল।
অনিসা ধীর পায়ে এগিয়ে এলো।
একবার চোখ বন্ধ করে ভাববার চেষ্টা করলো।
হ্যাঁ একটু একটু মনে পরছে।
সুরো পিসির বিয়ে। বাড়িতে প্রচুর লোকজন। ওরা সবাই এক সঙ্গে বাগানের এই প্রান্তে চোর পুলিস খেলছিল। তখন গুবলুদা পুলিস হয়েছিল।
গুবলুদা পুলিস হলেই ওকে চোর সাজাতো।
অনিসা খেলতে খেলতে বাইরে বেরিয়ে এসেছিল। গেটের বাইরে এসে লুকিয়েছিল।
তখন পাগলটা ঠিক এই জায়গাতে বসে।
ও পাগলটাকে মুখে আঙুল দেখিয়ে চুপ করতে বলেছিল।
পাগলটা হাসলো, অনিসাও হাসলো।
পাগলটা পাঁচিলে ঠেসান দিয়ে চুপ করে বসেছিল।
অনিসা তাকাল।
পাগালটা ওকে ইসারায় বললো একটু জল খাওয়াবে।
অনিসা এক ছুটে ছগনদাদুর ঘর থেকে জলের ঘটিটা নিয়ে এসেছিল।
পাগলটা দুহাত জড়ো করে আঁচলা মতো করলো।
অনিসা জল ঢাললো। প্রথমটায় একটু বেশি পরে গেছিল। পাগলটার চোখে মুখে জল ছিটকে গেলো।
ঘামে ভেঁজা চট চটে মুখটায় কে যেন একগাদা কালি লেপে দিয়েছে। চুল গুলোয় জট পরে গেছে, ধুলো ভর্তি। গা দিয়ে কেমন যেন একটা বঁটকা গন্ধ বেরচ্ছিল।
অনিসার দেখে কেমন যেন একটা লেগেছিল।
পাগলটা ইসারায় ওকে বললো খিদে পেয়েছে একটু খাবার দেবে।
অনিসা একছুটে ভেতরে চলে এসেছিল। মাকে বলেছিল খাবার দেবার কথা।
এই তো বেশ পরিষ্কার মনে পরে যাচ্ছে।
মা লুচি দিয়েছিল।
অনিসা ছুটে এসে সেই লুচির প্লেটটা ওই পাগলটার কাছে এসে দিয়েছিল। তারপর আরও দু’জনকে ও দেখেছিল। মুখটা ঠিক মনে পরছে না।
আবার ও ছুটে মার কাছে এসেছিল।
এইবার মা ওর সঙ্গে বাইরে বেরিয়ে এসেছিল।
অনিসা পাগলটার দিকে তাকিয়ে বলেছিল, আমার মা।
বেশ মনে পরে মা ওর কথায় হেসেছিল।
তারপর অনিসার হাত দিয়ে খাবার প্লেটটা দিয়ে ভেতরে চলে গেছিল। তখন জটাজুটো ধারি পাগলটা মাথা নীচু করে বসেছিল।
অনিসা বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়েছিল। তারপর পাগলটা খেতে খেতে ইশারায় ওকে ডেকেছিল।
তোমার মা।
হ্যাঁ।
অনিসা পাগলটার কাছে বসে পরেছিল।
তোমার বাবাকে আমি চিনি।
তুমি চেনো!
জানো আমার বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।
তোমার বাবা আমাদের কাছে আছে।
আমাকে নিয়ে যাবে।
নিয়ে যাব। একটা জিনিষ দেব আগে নেবে বলো ?
তাহলে নিয়ে যাবে।
যাব।
অনিশার পর পর ছবিগুলো চোখের সামনে ভেস উঠছে।
বুকের ভেতরটা কেমন যেন দলা পাকাতে শুরু করেছে। মনে হচ্ছে চোখ দুটো ছল ছল করে উঠছে। অনিসা নিজেকে সামলে নিল।
কেন বাবা তুমি আমার সঙ্গে এরকম করলে। আমি তোমার সঙ্গে কোন অন্যায় করিনি।
এখনো যেন অনিসার মনে হচ্ছে পাগলের রূপ ধরে ওর বাবা ওখানে বসে আছে।
বেশ মনে পরে।
পাগলটা ঝোলার ভেতর থেকে একটা ক্যান্ডি বার করে ওর হাতে দিয়েছিল।
ক্যান্ডিটা নিয়েই ছুটে ভেতরে চলে এসে পিকুদাদের সঙ্গে অনেকক্ষণ খেলা করেছিল। বেশ মনে আছে এরপর একবারও ও হারে নি।
দুপুর বেলা দিদানের সঙ্গে আবার খেতে দিতে এসেছিল।
দিদান বলেছিল, মরণ তোমাদের কি আর যাওয়ার জায়গা নেই। অনুষ্ঠান বাড়ির সামনে ঘর আলো করে বসে আছ। আরও কয়েকটা কথা দিদান বলেছিল। ঠিক মনে পরছে না।
তবে পাগল থালাটা টানতে গিয়ে দিদানের পা ছুঁয়েছিল।
দিদান খ্যাঁক খ্যাঁক করে উঠেছিল।
দিলো তো ছুঁয়ে। তোমরা কি একটু চানটান করতে পার না। কি দুগ্গন্ধ ছাড়ছে।
তারপর গেট দিয়ে ঢোকার সময় ছগনদাদুকে বলেছিল। দেখো বাবা কিছু যেন চুরি টুরি করে নিয়ে না পালায়।
পাগলটা হেসেছিল।
তারপর ও নিজেই বিকেলে জেদ ধরেছিল। পাগলটাকে নেমন্তন্ন খাওয়াবে বলে।
সুরো পিসি তখন ওকে সঙ্গে করে নিয়ে ইসলামদাদাই-এর কাছে থেকে খাবার এনে তিনজনকে দিয়ে গেছিল।
তারপর বিয়ে বাড়ি। হ্যাঁ ভারি মজায় কেটেছিল সেই রাতটা।
তারমানে মা যে ঘটনা লিখেছে ঠিক। ওই ঘটনা ওরা শুতে যাবার পরই ঘটেছে।
অনিসা কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো।
পরের অংশটুকু পরা হয় নি।
কিরে ওখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি করছিস।
অনিসা পেছন ফিরে তাকাল।
দিদান।
আয়, সক্কাল সক্কাল উঠে দুদুনের সঙ্গে ঝগড়া করেছিস।
অনিসা কাছে এগিয়ে এলো।
কিরে চোখ দুটো কেমন ছল ছল করছে।
অনিসা চুপ করে রইলো।
দুদুনের সঙ্গে ঝগড়া করবি, আবার কাঁদবি।
অনিসা দিদানের পাসে হাঁটতে আরম্ভ করলো।
বলবিতো কি হয়েছে।
অনিসা চুপ করে থাকল।
চল দুদুনকে দেখাচ্ছি। সক্কাল সক্কাল মেয়েটাকে….বুড়ো বয়সে ভীমরতি।
না কিছু হয় নি।
তাহলে তোর চোখটা ছল ছল করছে কেন।
এমনি। তুমি দুদুনকে কিছু বলবে না।
অনিসা বুঝতে পারল দিদান ওর দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে।
বল আমাকে কি হয়েছে।
বলছিতো কিছু হয়নি।
হাঁটতে হাঁটতে বারান্দা পেরিয়ে বসার ঘরে এলো।

দুদুন ওর দিকে তাকাল।
 
দেখলি তোর জন্য তোর দিদান সক্কাল সক্কাল আমাকে মুখ করলো।
আর করবে না আমি বলে দিয়েছি।
দুদুনের পাশে এসে বসলো।
মা রান্না ঘরে, দিদাইও উঠে পরেছে। দাদাকে দেখতে পেল না।
দিদাই দাদা কোথায়।
বাবু উঠেছেন। আসছে, তুই বোস।
মা রান্নাঘর থেকেই ওর দিকে একবার তাকাল।
ডাক্তারদাদাই আসবে না।
এসে পরলো বলে।
দিদান রান্নাঘরে গেল।
মা চায়ের ট্রে নিয়ে এসে সামনের সোফায় বসলো।
কাল রাতে ঘুমোস নি।
হ্যাঁ।
তোর ঘরে অনেক রাত পর্যন্ত টেবিল ল্যাম্প জলছিল।
একটু পড়াশোনা করছিলাম।
মিত্র মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো।
আচ্ছা মা তোমাকে কতকগুলো প্রশ্ন করলে উত্তর দিতে পারবে।
জানলে বলবো।
সকাল বেলা এই নিয়ে তোর সঙ্গে গন্ডগোল হয়েছে।
অনিসা দুদুনের দিকে তাকাল।
ঠিক আছে ঠিক আছে আর বলবো না।
সকাল বেলাই দুদুনের সঙ্গে ঝগড়া করেছিস।
ঝগড়া না দুদুনকে কয়েকটা প্রশ্ন করেছিলাম। বললো কিছু জানে না। সব ডাক্তারদাদাই জানে।
দুদুন সব নাও জানতে পারে।
বারে বাবা দুদুনের কাছে থাকতো নিশ্চই ডাক্তারদাদাই-এর কাছে থাকত না।
কি জানতে চাস বল।
দিদান আমার চা।
অনন্য ঘরে এসে ঢুকলো।
পেছন পেছন ডাক্তারদাদাই।
ছোটগিন্নী এতো সকাল সকাল!
এখন প্রশ্ন উত্তর পর্ব চলছে। চুপ চাপ শুনে যাবে। যদি কিছু জেনে থাক তাহলে উত্তর দেবে।
দুদুনের কথায় ডাক্তারদাদাই চুপ করে গেল।
আচ্ছা মা মনিদাদাই কবে মারা গেছে।
তোর বাবা চলে যাবার ঠিক তিন বছর পর।
তুমি সেই সময় ওখানে গেছিলে।
গেছিলাম।
ওটা কি ফার্মটা উদ্বোধন হওয়ার আগে না পরে।
দেড় বছর পর।
নীপা পিসির বিয়ে কবে হয়েছে।
তারও বছর দুয়েক পর।
তখন তুমি গেছিলে।
গেছিলাম।
একা না আমরা সঙ্গে ছিলাম।
তোর মনে নেই, আমরাও গেছিলাম।
অনিসা দাদার দিকে একবার তাকাল।
সকাল থেকে তুই খুব গরম খেয়ে আছিস মনে হচ্ছে। দিদান ব্যাপারটা কি।
তুই জিজ্ঞাসা কর।
আচ্ছা ডাক্তারদাদাই তুমি বাবার সম্বন্ধে সব জান। দুদুন বললো।
সব জানি না। কিছু কিছু জানি।
বাবা চলে যাবার পর তোমার সঙ্গে বাবার কোনদিন কথা হয়েছে।
না। তবে কখনো সখনো তোর বাবার গলা শুনেছি। সেখান থেকে গেইজ করেছি সে জীবিত।
আর কিছু।
না।
অনিসা একবার ডাক্তারদাদই-এর দিকে স্থির চোখে তাকাল। ডাক্তারদাদাই মুচকি হাসল।
তোর চোখ বলছে তুই কথাটা বিশ্বাস করতে পারছিস না।
ঠিক তাই।
এর বেশি বলতে পারব না। বাকিটা সব গল্প, তার কোন ভিত্তি নেই আমার কাছে।
শুভদীপ এসে দরজার সামনে দাঁড়াল।
কিরে তুই এতো সকালে!
অনিসা সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল।
দাদু এসেছে।
কোথায়!
গেটের বাইরে গাড়িতে বসে আছে।
মিত্রা উঠে দাঁড়াল।
গাড়ল দাদুকে বাইরে রেখে তুই কি করতে ভেতরে এলি।
তুই উঠেছিস কিনা দেখতে।
না উঠলে কি করতিস।
ফিরে যেতাম।
তাহলে এলি কেন।
তোর সঙ্গে কথা বলতে।
অনন্য উঠে এলো।
ছগনদাদু গেট খোলে নি।
খোলা আছে।
চল দাদুকে ভেতরে নিয়ে আয়।
তিনজনে বেরিয়ে গেল।
ব্যাপরটা কি বলতো মিত্রা। শুভ এই সাত সকালে দাদুকে নিয়ে। উনিতো বড়ো একটা এই বাড়িতে আসেন নি।
ডাক্তারদাদার কথায় মিত্রা একবার তাকাল।
বলতে পারবো না। কাল শুভ লাইব্রেরী থেকে কাউকে না বলেই চলে এসেছে।
কোথায় যেন একটা গন্ডগোল ঠেকছে।
ওরা চারজন ঘরে এসে ঢুকলো। শুভর দাদু হাসতে হাসতে ঘরে ঢুকলো। ভদ্রলোক বেশ লম্বা চওড়া। এখনও শরীরটাকে বেশ মজবুত রেখেছেন।
জানো মা শুভ কাল দাদুর সঙ্গে ঝগড়া করেছে।
তুইও আমার সঙ্গে সকালে ঝগড়া করলি। দাদা বললো।
মোটেও না।
আপনাদের বাড়িতে এই নিয়ে তৃতীয়বার এলাম। অবশ্য ওর ঠাকুমা অনেকবার এসেছে।
ওনাকে আনলেন না কেন। দাদা বললো।
কাল রাতে শুভর পিসী এসেছে দিল্লী থেকে নাতি নাতনি সহ।
আপনি হঠাৎ এই সাত সকালে।
আর বলবেন না। শুভ এখন এ্যাডাল্ট তার কথার সঠিক জবাব দিতে না পরলে সে বলেছে আমার এগেনস্টে আইনত ব্যবস্থা নেবে।
সবাই হেসে ফেললো।
কিরে শুভ দাদু কি বলছে।
ডাক্তারদাদার কথায় শুভ মাথা নীচু করলো।
আমার কিছু প্রশ্ন আছে। দাদু তার কোন সঠিক উত্তর দিতে পারছে না। দাদু বলেছে আন্টি জানে। তাই দাদুকে ধরে এনেছি। আমাকে প্রশ্ন গুলোর উত্তর জানতে হবে।
আরি বাবা তোর প্রশ্ন অনিসার প্রশ্ন তোরা করছিসটা কি বলতো।
দাদা এমন ভাবে বললো আবার সবাই হাসলো।
বুঝলে এডিটর ব্যাপারটা বেশ জটিল বলে মনে হচ্ছে।
আর কি বলেছিস বল।
শুভ দাদুর দিকে তাকাল।
ওটা না বললে তুমি আসতে না।
ঢেঁড়স তোর ঘটে একটুও বুদ্ধি নেই।
অনিসা বলে উঠলো।
শুভ একবার অনিসার দিকে কট কট করে তাকালো।
তাকাস না চোখে ছানি পরে যাবে।
মিত্রা মেয়ের কীর্তিকলাপ দেখে হাসছে।
বড়মা চা নিয়ে এলো।
দাদা লুচি ভাজছি কয়েকটা দিই।
এটা কি আবার জিজ্ঞাসা করতে হয় নাকি। ডাক্তারদাদা বললো।
তোমার মতো নাকি যা দেখো তাই খেতে চাও। উনি হিসেব করে খান।
না না দিদি এ অপবাদ দেবেন না। একটা সময় মেইনটেন করেছি এখন আর পারি না।
দেখো, দেখে শেখো।
বুড়ো বয়সে সবারই একটু আধটু ওরকম হয়। কি বলো ডাক্তার। দাদা টিপ্পনি কাটল।
তুমি আবার আমাকে দলে টানছ কেন।
হাসা হাসি চলছে। কথা বলা চলছে।
মিত্রা তোমার সঙ্গে আমি একটু একা কথা বলতে চাই।
একা হবে না। আমি সঙ্গে থাকব।
শুভর কথায় সবাই ওর দিকে তাকাল।
আমি তো কথা দিয়ছি।
যা হবে আমার সামনে, আমার জানার দরকার আছে।
কি হয়েছে কি বলুন। ডাক্তারদাদা বললো।
আর কি বলবো দাদা আমার হয়েছে যতো জ্বালা।
পৈতে থেকে লকারের চাবিটা খুলে দাও তোমাকে আর কোন প্রশ্ন করবো না। আমার প্রশ্নের উত্তর আমি পেয়ে যাব। শুভ বলে উঠলো।
তোকে দেবো বলেছি।
একথা তুমি বহুবার বলেছো।
ঠিক আছে লুচি কয়টা খেয়ে নিই।
তুই ওরকম করছিস কেন।
অনিসা শুভর দিক তাকাল।
বেশি ভ্যাড় ভ্যাড় করবি না। ব্যাপারটা আমার আর দাদুর, তুই এর মধ্যে মাথা গলাচ্ছিস কেন।
তুই আমার বাড়িতে দাঁড়িয়ে আছিস।
দাদু আন্টির নাম করেছে তাই।
আমি তোর থেকে অনেক বেশি জানি।
অনিসা গট গট করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
শুভ কিছুক্ষণ দাঁড়াল তারপর কি ভেবে অনিসার পেছন পেছন ঘরের বাইরে চলে গেলো।
ছেলেটার সত্যি কাল থেক মাথা খারাপ হয়ে গেছে।
মিত্রা মন মনে হাসছে। কি বলবে। এখনকার ছেলেমেয়ে এদের কাছে কিছু চেপে রাখা যাবে না।
কি হয়েছে বলুন ?
ডাকতারদাদা শুভর দাদুর দিকে তাকাল।
সে অনেক কথা দাদা, এতদিন তবু ধামাচাপা দিয়ে রেখেছিলাম। কাল বাস্ট আউট।
ভদ্রলোক কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলেন।
কাল সকালের দিকে কোথায় বেরিয়েছিল। একটু বেলার দিকে ওর ঠাকুমাকে ফোন করে বললো, আপনাদের অফিসে যাবে। ফিরতে দেরি হবে। সাতটা নাগাদ ফিরে গেল। বাড়িতে ঢোকার পর থেকেই দেখি গুম হয়ে আছে। কারুর সঙ্গে কথা বলেনি।
তারপর ওর পিসি এলো। ভাই বোনের সঙ্গে কয়েকটা কথা বললো, না বলারই মতো। তারপর খেতে বসে আমার সঙ্গে তুমুল হলো। না খেয়ে উঠে চলে গেল।
ওর ঠাকুমা আমার জ্যান্ত শ্রাদ্ধ করে ছেড়ে দিল।
বাধ্য হয়ে বললাম অনিসার মা সব জানে।
তবে ছেলে দুটো খেলো। তারপর আমাকে ধরে নিয়ে এসেছে।
দেখোনা মা ছেলেটা গেল কোথায়।

শুভর দাদু মিত্রার দিকে তাকাল।
 
এখানেই আছে কোথাও যাবে না।
মিত্রা মাথা নীচু করলো।
বুড়োটাকে একটু বাঁচাও মা। তোমাকে ও ভীষণ শ্রদ্ধা করে, ভালবাসে।
শুভর দাদু ভেঙ্গে পরলেন।
আমার একমাত্র বংশধর। ও এখনকার ছেলে কিছু ঘটিয়ে ফেললে…।
একথা বলছেন কেন, শুভ খারাপ ছেলে নয়।
সব বুঝি মা, মন মানে না। কয়েকদিন ধরে দেখতে পাচ্ছি ওর চাল চলন আগের মতো নেই।
বড়মা লুচির প্লেট নিয়ে এলো।
ঠিক আছে আপনি খান, আমি ওদের সঙ্গে কথা বলে নিচ্ছি।
ওরা দুটো গেল কোথায় ?
বাইরের বারান্দায়।
বড়মা অনন্যর দিকে তাকালো।
ডাকতে পারছিস না। ঘটের মতো বসে আছিস কেন।
দাঁড়াও না। খালি বক বক।
তুই কিছু বুঝিস।
বুঝে কাজ নেই, মাথা ফুটো হয়ে যাবে।
অনন্য উঠে বাইরে চলেগেল।
তোমরা বরং বসো আমি ওদের নিয়ে আমার ঘরে যাই।
আগে খেয়ে নে।
ভজু প্লেটগুলো নিয়ে আয় তো।
ভজু মাটিতে বসেছিল, উঠে এলো।
আমরা যাবো না।
মিত্রা ডাক্তারদাদার দিকে তাকাল।
এখন না একটু পরে।
মিত্রা বেরিয়ে এলো।
কিরে তোরা ওখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি করছিস ? আয় আমার ঘরে আয়।
মিত্রা বারান্দা দিয়ে হেঁটে সোজা নিজের ঘর চলে এলো। ঘরের দরজা খুলে ভেতরে এলো। নিজে খাটে বসলো ওদের সোফায় বসতে বললো।
ভজুরাম খাবার প্লেটগুলো নিয়ে এলো। সেন্টার টেবিলে রাখল।
আমরা খেতে খেতে কথা বলি কি বলো শুভ।
আমার কোন অসুবিধে নেই আন্টি।
কিরে অনন্য তুই বসবি।
তোমরা কথা বলো আমি বরং দুদুনের সঙ্গে একটু আড্ডামারি।
তাহলে যা।
অনন্য নিজের প্লেটটা নিয়ে বেরিয়ে গেল।
শুভ মাথা নীচু করে বসে আছে। অনিসা খেতে শুরু করলো।
নাও, খেতে খেতে বলো কেন তুমি দাদুর সঙ্গে কাল রাতে অমন ব্যবহার করেছো।
শুভ চুপ করে থাকল।
বলো। তুমি চুপ করে থাকলে আমি তোমাকে হেল্প করবো কি করে।
শুভ প্লেটটা সেন্টার টেবিলে রেখে উঠে এলো।
মিত্রা নিজের খাবার প্লেটটা টেবিলের ওপর রাখল। বুঝলো একটা কিছু ঘটবে।
শুভ সোজা চলে এসে, মিত্রার কোলে মুখ গুঁজে কেঁদে ফললো।
প্রথমটায় একটু অস্বস্তি হয়েছিল মিত্রার, তারপর নিজেকে সামলে নিল। অনিসার দিকে তাকাল মুখটা কেমন পাংশু।
এই দেখো বোকার মতো কাঁদলে যে কাজ করতে নেমেছো শেষ করবে কি করে। দাদু তোমাকে কিছু বলে নি। তুমি আমার কাছে জানতে এসেছো। কেনো ? আমি জানি বলে।
আন্টি তুমি আমাকে ক্ষমা করো। আমি দাদুকে কয়েকটা নোংরা কথা বলে ফেলেছি।
কেন বলেছো বলো।
দাদুকে যতোবার বাবার কথা জিজ্ঞাসা করেছি দাদু তার কোন সঠিক উত্তর দেয় নি। তোমার আর আঙ্কেলের সঙ্গে বাবার একটা ছবি পেয়েছিলাম বেশ কিছুদিন আগে। তারপর থেকে অনিসাকে আমি সব বলেছি। তবু দাদু কিছুতেই স্বীকার করতে চায় নি।
কি বলেছে বলো।
বাবা দুবাইতে খুন হয়েছেন এমনকি মাকেও খুন করা হয়েছে। আমাকে তখন কেউ নিয়ে বাজারে বেরিয়েছিল। তাই আমি বেঁচে গেছি।
কিন্তু কেন বাবা খুন হয়েছেন কারা খুন করেছে আমি জানি না। দাদুর কাছে জানতে চেয়েছি।
দাদু সব সময় আমার প্রশ্নটা এড়িয়ে গেছে।
কাল অনিসার সঙ্গে লাইব্রেরীতে গিয়ে পুরনো কাগজ ঘাঁটতে ঘাঁটতে বাবার একটা ইন্টারভিউ দেখতে পাই। তখন আমি সিওর হই তোমাদের সঙ্গে বাবার খুব ভালো রিলেসন ছিল।
দাদু কিছুতেই এসব স্বীকার করছে না। শেষে কাগজের কথা যখন বলেছি। বলেছে তুমি সব জানো।
মিত্রা কোন কথা বলতে পারলো না। মেয়ের মুখের দিকে তাকাল। মেয়ে স্থির চোখে ওর দিকে তাকিয়ে। নিজেকে মনে মনে তৈরি করে নিল। এভাবে এদের আটকান যাবে না।
কি করবে ও ? ও কি সব জানে ? জানলে আজ ও নিজে মনে মনে এতো কষ্ট পেত। বুবুনকে ও দোষ দিতে পারে না। তবু মিত্রা গেইজ করছে মিঃ মুখার্জীর সম্বন্ধেই শুভ কথা বলছে।
ঠিক আছে তুমি ওঠো।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস আঙ্কেলের সঙ্গে দাদুর যোগাযোগ আছে। আমি লুকিয়ে আঙ্কেলের সঙ্গে দাদুকে কথা বলতে শুনেছি। দাদু আঙ্কেলকে হেল্প করে।
মিত্রার পিঠে কে যেন সজোরে চাবুকের বাড়ি মারলো। শিরদাঁড়া দিয়ে কেমন যেন একটা গরম স্রোত বয়ে যাচ্ছে। দাঁতে দাঁত চিপে মিত্রা সহ্য করছে।
তোমার দাদুর সঙ্গে আঙ্কেলের কিভাবে পরিচয় হলো।
দাদু এক্স মিলিটারি ম্যান মিলিটারি ইনটেলিজেন্স ব্যুরতে কাজ করতো। বাবাও প্রথমে চান্স পেয়েছিল দাদু যেতে দেয় নি। তাই বাবা সিবিআইতে জয়েন করে।
তুমি আমাকে ফটোটা দেখাতে পারবে।
পারবো। গাড়িতে আছে।
ঠিক আছে খেয়ে নাও, তারপর গাড়ি থেকে নিয়ে এসো।
শুভর যেন তর সয় না।
আমি ফটোটা নিয়ে আসি।
ঠিক আছে যাও নিয়ে এসো।
শুভ ছুটে বেরিয়ে গেল।
মিত্রা মেয়ের দিকে তাকাল।
থমে থমে মুখ। মিত্রা মুখটা পড়ার চেষ্টা করলো। বুঝতে পারলো এরা দুজন অনেক কিছু জেনে ফেলেছে। অনেক ভেতরে ঢুকে পরেছে।
তুই আজ সকালে দুদুনের সঙ্গে ঝগড়া করেছিস কেন।
ঠিক ঝগড়া নয়। দুদুনকে কয়েকটা কথা জিজ্ঞাসা করলাম।
দুদুন কেমন ইরিটেট ফিল করলো। তারপর আর কথা বলি নি।
বাইরে গিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চোখ মুছছিলি কেন।
কান্নাপেল তাই।
এমনি এমনি।
অনিসা চুপ করে রইলো।
তোরা কাঁদলেই তোর বাবা চলে আসবে।
না।
তাহলে।
তোমার কষ্টটা অনুভব করতে পারলাম আজ সকালে তাই।
মিত্রা চুপ করে গেল। বুঝলো ছেলের থেকে মেয়ে অনেক বেশি ম্যাচিওর।
শুভ ঘরে ঢুকলো।
খামটা মিত্রার হাতে দিলো।
মিত্রা খামটা খুলে ছবিটা একবার দেখে ভেতরে ঢুকিয়ে রাখল। বৌভাতের দিন রাতে তোলা। মিঃ মুখার্জী যখন তার দলবল নিয়ে এসেছিলেন সেই সময় মিঃ মুখার্জী নিজের মোবাইলে ছবিটা তুলেছিলেন।
অর্ক ছবিটা তুলে দিয়েছিল।
এ ছবি তুমি কোথায় পেলে।
বাবা মার একটা এ্যালবাম ছিল দাদু সেটা কোনোদিন আমাকে দেখতে দেয় নি। কয়েকদিন আগে দাদুর আলমাড়ি থেকে আমি এ্যালবামটা সরিয়ে দিই। তারপর থেকে দাদুর সঙ্গে আমার কথা বন্ধ।
অনিসা ছবিটা দেখেছে।
দেখেছে।
তোমার আঙ্কেলের সঙ্গে তোমার বাবার খুব ভাল রিলেসন ছিল।
তাহলে বাবা খুন হলেন কেন।
সেটা আমি বলতে পারব না। তোমার আঙ্কেল ফিরে এলে জানতে পারবে।
আঙ্কেল ফিরে আসবে ?
অবশ্যই।
কবে আসবে।
তার কাজ শেষ হলেই ফিরে আসবে।
কি এমন কাজ।
অপেক্ষা করো জানতে পারবে। নাও খাও।
শুভ মাথা নীচু করে রইলো।
খাওয়া শুরু করো। খেতে খেতে তোমার যদি আর কিছু জানার থাকে বলো, আমি চেষ্টা করবো উত্তর দিতে।
আচ্ছা মা। তুমিতো বাবার সম্বন্ধে কোন কিছু আমাদের বলো নি। বাবার সম্বন্ধে একটু বলবে।
কি জানতে চাস বল।
বাবা হঠাৎ কেন উধাও হয়ে গেল।
মিত্রা মেয়ের দিকে একবার তাকাল। কি বলতে চায় ও। বাবার সম্বন্ধে ওর কোন সন্দেহ।
বলো না বাবাকে এতো লোকে শ্রদ্ধা করে ভালবাসে। তবু কেন বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেল। বাবার কি একবারও ইচ্ছে করে না আমাদের দেখতে।
ইচ্ছে অবশ্যই করে। তাই তোমাদের আগলে রাখে।
তুমি কি করে বোঝ।
এখান থেকে সেখান থেকে খবর পাই।
সেই জায়গা গুলো একটু বলো না। তোমাকে আর বিরক্ত করবো না।
আমিও সঠিক জানি না।
মিত্রার গলাটা ভাড়ি হয়ে এলো।
অনিসা সোফা থেকে উঠে এসে মায়ের পাশে বসলো।
মাকে জড়িয়ে ধরলো। গালে গাল ঘোষলো।
মিত্রা মেয়ের দিকে তাকাল। চোখটা সামান্য ছল ছল করছে।
তোমার অনেক কষ্ট। আমি জানি।
কি করে জানলি।
মিত্রা মাথা নীচু করে নিল।
জেনেছি।
একবার ভাবলো ওদের সব বলে দেবে তারপর ভাবলো না।
ওরা নিজের থেকে জানুক। ওর মা কোথা থেকে কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে। ওর জন্য ওদের বাবার কতটা সেক্রিফাইস করেছে জীবনে।
শুভর দাদু এবং ডাক্তারদাদা ঘরে এসে ঢুকলো।
কি ছোট ম্যাডাম সব জানা হয়েগেছে।
তোমাকে বলেছি না। আমাকে ম্যাডাম বলবে না।
ঠিক আছে বুঁচকি। তাহলে হবে।
তাই বলবে।
অনিসা কট কট করে উঠলো।
মিত্রা মেয়ের কথায় হাসল।
ডাক্তারদাদাই।
বল।
ওরা সোফাতে এসে বসলো।
দুদুন বলে তুমি নাকি বাবাকে খুব ভালো ইন্ট্রোগেট করতে পারতে।
পুরোটা না একটু একটু।
আচ্ছা বাবাকি ডন।
একেবারেই না।
তাহলে মস্তান।
না।
তাহলে।
তোর আমার মতো সাধারণ মানুষ।
তাহলে বাবার সবকিছু পর্দার আড়ালে কেন।
তোকে তাহলে প্রথম থেকে জানতে হবে। তুইতো জানার চেষ্টা করছিস।
করছি, পারছি কই ?
চেষ্টা কর পারবি। তোর বাবাকে কেউ কোনদিন হাতে ধরে শেখায় নি।
একটা কথা বলবো কিছু মনে করবে না।
বল।
বাবার সঙ্গে অন্য কারুর রিলেসন আছে।
মিত্রা মেয়ের মুখের দিকে একবার তাকাল। এই কথাটা যে ওর সন্তানের মুখে একদিন নয় একদিন আসবে সেটা ও জানতো।
যদি একথাটা ভেবে থাকিস তাহলে ভুল।
দামিনীদিদার সঙ্গে বাবার রিলেসন কি করে তৈরি হল।
তোর বাবা কলকাতায় পড়তে এসে যখন হস্টেল থেকে বিতারিত হলো। তখন দামিনীদিদার আশ্রয়ে আঠারো মাস ছিল।
হোস্টেল থেকে বাতাড়িত হলো কেনো ?
কলেজে যে কদিন ছিল হস্টেলে ছিলো, কলেজ ছাড়ার পর হোস্টেল ছেড়ে দিতে হলো। শুনেছি ফুটপাথে মাস খানেক ছিল। তারপর দামিনী দিদার আশ্রয়ে।
ফুটপাথে!
হ্যাঁ।
তারপর।
ইউনিভার্সিটি, টিউসিনি, পরোপকার, রাস্তার কলের জল, হোটেলের রাঁধুনী, কাগজের স্বাধীন সাংবাদিকতা।
তুমি বাজে কথা বলছো।
একটুও না। বিশ্বাস না করলে বাজিয়ে দেখতে পারিস। তোর বাবাকে নিয়ে লিখলে একটা গোটা উপন্যাস হয়ে যাবে।
রাস্তার কলের জল মানে, ঠিক বুঝলাম না।
বহুদিন পয়সার অভাবে খাওয়া জুটতো না। তাই কলের জন খেয়ে কাটিয়ে দিত।
মিত্রা ডাক্তারদাদার দিকে তাকাল।
ওদের জানতে দে মা। এভাবে ওদের তুই দমিয়ে রাখতে পারবি না। আজ না হয় কাল ওরা জানবে। বাবার প্রতি সন্তানের ইন্টারেস্ট থাকবে না এ কখনো হয়। অনির রক্তটা ওদের শরীরে বইছে। এটা তুই অস্বীকার করবি কি করে।
বাবা এখনো অফিসের সমস্ত খোঁজ খবর রাখে। এমনকি নার্সিংহোম ফার্ম সব কিছুর।
কার কাছ থেকে কিভাবে খোঁজ খবর নেয়, বলতে পারব না। তবে তোর কথাটা ঠিক।
অনিমেষদাদু এতো পাওয়ার ফুল লোক কিছু করতে পারছে না।
তোর বাবা ক্রিমিন্যাল নয় যে পুলিশের খাতায় নাম থাকবে। পুলিশের খাতায় নাম থাকলে তোর অনিমেষদাদু কিছু করতে পারত।
ইকবালদাদাই-এর সঙ্গে তোমার পরিচয় আছে।
আছে।
এবাড়িতে ইকবাল দাদাইকে কোনদিন আমি দেখি নি।
তোদের জন্মের সময় এসেছিল। তাছাড়া তোদের শরীর খারাপ হলে দেখতে এসেছে। তাও কচিৎ কদাচিৎ। কেন তুই গেছিলি।
গেছিলাম।
কি বললো।
বললো কেউ যদি জানতে পারে তুই অনির মেয়ে তোকে ভিড় করে সবাই দেখতে আসবে।
কেন।
তার কোন উত্তর পাই নি। বলেছে জানার চেষ্টা কর পেয়ে যাবি।
চেষ্টা কর।
করছিতো। পাচ্ছি কোথায়।
কি হলো সব জানা হয়ে গেছে। পুঁচকে ছোঁড়ার দল, তেজ দেখেছো।
ছোটমা চায়ের ট্রে নিয়ে ঘরে ঢুকলো।
কিরে তুই খেয়ে বেরবি না, না দাদার হাত দিয়ে পাঠিয়ে দেব।
ছোটমা মিত্রার দিকে তাকাল।
পাঠিয়ে দিও।
দাদা আপনার।
ছোটমা ডাক্তারদাদার দিকে তাকাল।
আজ বাড়িতে থাকব বলে এসেছি। সব দায়িত্ব ওদের ঘারে দিয়ে এসেছি। বলেছি প্রয়োজন পরলে ফোন করিস।
আজ কোথাও যাবেন না!
না ছোট। আজ শুয়ে বসে গল্প করে কাটিয়ে দেব।
ছোটমা বেরিয়ে গেল।
মিত্রা উঠে দাঁড়ালো।
আমি এবার যাই।
ওর সব প্রশ্ন করা হয়েগেছে ?
শুভর দাদু মিত্রার দিকে তাকাল।
একদিনে সব হয়। যেটা ওর কাছে এসেন্সিয়াল ছিল সেটা জানতে পেরেছে।
চা খেতে খেতে শুভর দাদুর সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বললো।
মিত্রা বেরিয়ে গেল।
কিরে আমি এবার যাই। তুই থাকবি না যাবি।
শুভর দাদু শুভর দিকে তাকাল।
তুমি যাও, আমি পরে যাচ্ছি।
ডাক্তারদাদা হাসল।
শুভরদাদু উঠে দাঁড়াল। ডাক্তারদাদাও উঠে দাঁড়াল।
তুমি কোথায় যাচ্ছ।
একটু বাড়িতে যাই।
এই যে বললে সারাটাদিন শুয়ে বসে গল্প করে কাটাবে। বসো এখানে। তোমার যাওয়া হবে না। শুভ দাদুকে তুলে দিয়ে আয়।
আমি ফিরে এলে শুরু করবি।
ঠিক আছে।
তারমানে!
তুমি বসো আগে তারপর বলছি।
অনিসা ডাক্তারদাদাই-এর হাত ধরে সোফায় বসিয়ে দিল।
তুই ঝামেলা করিস না অনেক কাজ।
এই যে বললে শুয়ে বসে কাটাবে।
তারমানে, বাড়িতে যে ফাইল গুলো নিয়ে এসেছি তার কাজগুলো কে করবে।
ওইতো তোমার নার্সিংহোম আর এনজিওর ফাইল ও তোমার এক ঘন্টার কাজ।
তা হোক আমার কাজ তুই করে দিবি না।
শিখিয়ে দাও, করে দেব।
পড়াশুনো শেষ কর সব শিখিয়ে দেব। বয়স হচ্ছে আর কতদিন।
একেবারে বয়স হচ্ছে বয়স হচ্ছে করবে না। তুমি এখনো ইয়ং।
ডাক্তারদাদাই হাসছে।
তোর মনের কথাটা বল শুনি।
অনেক কথা, তোমকে যে কি করে বলি।
অনিসা খানিকক্ষণ চুপ করে রইলো।
বলোনা শুভর বাবা মিঃ মুখার্জীর সঙ্গে বাবার রিলেসনটা কি।
আমার সঙ্গে ভদ্রলোকের তিনবার দেখা হয়েছে।
শুভ এসে ঘরে ঢুকলো।
বোস। কোন কথা বলবি না। খালি শুনে যাবি।
প্রথম কবে তোমার সঙ্গে দেখা হয়েছে।
সেদিন সকালে উঠে দেখলাম তোদের বাড়ির সামনে অনেকগুলো গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। অনি বেশ উত্তেজিত। ওর গলার স্বর শুনতে পেলাম।
আমি ওকে যতটুকু জানতাম ও কোনোদিন উঁচু স্বরে কথা বলতো না।
সেদিনটা কেমন যেন লাগলো।
ভাবলাম মামনির আবার শরীর খারাপ করলো নাকি।
অনির একটা স্বভাব ছিল ও সচর আচর কাউকে বিরক্ত করতো না।
এমনও অনেক দিন গেছে তোর মায়ের প্রচন্ড শরীর খারাপ হয়েছে। ও নিজের বুদ্ধিতে লড়ে গেছে। সকাল বেলা এসে আমি দেখেছি।
পাশেই থাকি কিন্তু আমাকে ডাকে নি। এমনকি তোর দিদান দাদু বারান্দার ওই কোনে থাকতো তারাও জানতে পারতো না।
সেদিন সকালে পায়ে পায়ে এসে দেখলাম। তোর মা ঠিক আছে।
কিন্তু গন্ডগোল একটা হয়েছে।
প্রথমে বুঝতে পারি নি।
তারপর অনেক পরে বুঝলাম।
সেদিন মিঃ মুখার্জীকে ও ফোনে ডেকেছিল। পরে জেনেছিলাম মিঃ মুখার্জী ওর কাছে কৃতজ্ঞ। কেন কৃতজ্ঞ, কিসের জন্য কৃতজ্ঞ তা জানতাম না। তারপরও মিঃ মুখার্জীর সঙ্গে ও অনেকগুলো কাজ করেছে।

বলতে পারিস একে অপরের পরিপূরক।
 
অনিমেষদাদু জানতো।
সব জানতো। তোর বাবাকে মনে মনে সাপোর্ট করতো। এখনো করে। নিজে যেটা করতে পারে না। অনি সেটা করলে মুখ বুঁজে সহ্য করে। চোখ বন্ধ করে থাকে।
এখনো করে মানে! অনিমেষদাদুর সঙ্গে বাবার যোগাযোগ আছে!
এইরে, না না তোর বাবার সঙ্গে অনিমেষের কোন যোগা যোগ নেই।
এখন উঠি বুঝলি।
উঠি উঠি করবে না। বোসো চুপ করে।
ডঃ ব্যানার্জী কে।
খুব সেন্সেটিভ জায়গা। তোকে বলতে পারব না। তুই জানলি কি করে ?
কাল পুরনো কাগজে পরে জেনেছি। যা পরলাম তাতে উনি আমাদের কাগজের মালিক ছিলেন। উনি কি খারাপ কাজ করেছিলেন। বাবা কেন শাস্তি দিয়েছিল।
তোকে অপেক্ষা করতে হবে। এই কোশ্চেনটা পাশ দিলাম।
ঠিক আছে রাজনাথ কে।
এটাও পাশ দিলাম।
টোডি কে।
তুই এতো নাম জানলি কি করে বল।
তোমাকে জানতে হবে না। যা বলছি তার উত্তর দাও।
বাবাঃ তুই অমন করে ধমকাচ্ছিস কেন।
ঠিক আছে তোমাকে বলতে হবে না আমি জেনে নেব।
সেই ভালো। তাহলে আমি উঠি।
আবার উঠি উঠি করে।
এইতো, সব প্রশ্ন শেষ হয়ে গেল।
কিচ্ছু শেষ হয়নি। সবে শুরু।
ডাক্তার অনিসার মুখের দিকে তাকাল।
আচ্ছা বাবা এখান থেকে চলে যাবার পর কখনো এই বাড়িতে এসেছে।
হ্যাঁ। না কখনো আসে নি।
ধরা পরে গেছ।
কি বলতো।
বাবা এসেছিল।
বলছি আসে নি, তুই জোর করে বলাবি এসেছিল।
আচ্ছা সুরো পিসির বিয়ের সময় কোন ঘটনা ঘটেছিল।
কার বিয়ে।
সুরো পিসির বিয়ে।
সেতো এখান থেকে হয় নি।
কোথা থেকে হয়েছিল।
তোর মায়ের বাড়ি থেকে।
এখান থেকে হয়েছিল। বাবা সেদিন এই বাড়িতে এসেছিল। তোমরা অনেক পরে ঘটনাটা জানতে পেরেছিলে। বলতে পারো চিকনাদার কাছ থেকে।
নির্ঘাৎ তোর মাথাটা খারাপ হয়েছে।
তুমি তো ডাক্তার, ওষুধ দাও।
দেখছিস শুভ বুড়টাকে একা পেয়ে কিরকম করছে।
তুমি আমার কথার একটারও সঠিক জবাব দাও নি।
বেঠিকটা কি দিয়েছি।
সব পাশ কাটিয়ে গেছ। আমার মন বলছে একটা জট পেকে আছে কোথাও, বাবা সেই জটটা খুলতে গেছে। এসপার না হয় ওসপার।
তুই সার কথাটা বুঝেছিস। এবার উঠি।
আজ ছেরে দিলাম। আবার বিরক্ত করতে পারি।
ডাক্তার ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
অনিসা কিছুক্ষণ একা একা বসে থাকল। শুভ ওর দিকে তাকিয়ে।
তুই এতো সব জানলি কোথা থেকে!
তোর কবে বুদ্ধি হবে বলতো। এই জন্য তোকে বলি লেডিস ফিঙ্গার।
আমার বাবাকে দেখেছিস।
অনিসা আঙুল তুলে টেবিলের ওপর রাখা ছবিটার দিকে দেখাল।
দেখে শেখ। তোর বাবার মতো লোক তার কথায় উঠতো বসতো।
আর তুই কিনা দাদুর সঙ্গে ঝগড়া করে বসলি। আর কয়েকদিন অপেক্ষা করলে মহাভারত অসুদ্ধ হয়ে যেত।
তুই বিশ্বাস কর।
কি বিশ্বাস করবো। তোকে বলেছিলাম বাবার সঙ্গে মুখার্জী কাকুর রিলেসন ছিল। লাইব্রেরীতে গিয়ে কাগজ পরতে পরতে গুম হয়ে চলে এলি। একবার বলে আসার প্রয়োজন বোধ করলি না।
তখন নিজেকে ঠিক রাখতে পারি নি।
গঙ্গায় গিয়ে ডুবে মর। না পারলে সেকেন্ড হুগলীব্রিজ থেকে ঝাঁপ মার। ডিসগাস্টিং।
শুভ চুপ করে থাকল।
ছবিটার দিক তাকা। চোখদুটো দেখ। এখনও যেন কথা বলছে।
সামনে গিয়ে দাঁড়া দেখবি তোর সঙ্গেও কথা বলবে।
আমি ফিল করি। ভেবেছিলাম তুই আমার মতো। এখন দেখছি….। না থাক।
শুভ মাথা নীচু করে চুপ করে বসে রইলো।
দাদুর সঙ্গে ঝগড়া করেছিস কেন।
শুভ চুপ।
ঝগড়া করে কিছু জানতে পেরেছিস।
বাবার সঙ্গে আঙ্কেলের ভালো রিলেসন ছিল। আন্টি বাবাকে চিনতো।
তাতে তুই কি করতে পারলি।
বাবাকে যারা মেরেছে হাতের কাছে পেলে প্রতিশোধ নিতাম।
তোর কাছে এসে বলবে, শুভ আমরা তোমার বাবাকে মেরেছি।
আর তুই পটাপট তাদের মেরে দিতিস।
শুভ চুপ করে গেল।
মারতে গেলেও বুকের পাটা থাকা দরকার। তোর আছে।
শুভ মাথা নীচু করে আছে।
তোর বাবা কবে মরেছে জানিস।
শুনেছি আমার তখন চোদ্দমাস বয়স।
তারমানে আজ আঠার বছর হতে চলেছে। ভাবলি কি করে তারা এখনো বেঁচে আছে।
তাহলে!
পড়াশুনোয় ফার্স্ট হলেই হয় না। মাথাটাকে একটু খাটাতে হয়। আমার বাবা যেটা করেছে। কালকেতো কাগজ গুলো গিললি। কিছু ঘটে ঢুকেছে।
কিছুটা।
কি ঢুকেছে শুনি।
তোর বাবা আমার বাবা দুজনেই খুব ডেঞ্জার লোক ছিল।
ছাগল।
ফালতু কথা বলবি না।
শুভ রেগে উঠলো।
ফালতু কথা মানে। বুঝেছি তুই লেডিস ফিংগার। যা ভাগ। আমি একাই বার করে নেব।
প্লিজ তুই এরকম করিস না। তুই যা যা বলেছিস আমি তাই তাই করেছি। একটা ভুল করেছি।
ওই একটা ভুলের জন্যই আবার নতুন করে শুরু করতে হবে।
কেন।
সে বুদ্ধি তোর থাকলে জিজ্ঞাসা করতিস না। চিকনাদাকে দেখেছিস।
দেখেছি।
একমাত্র লোক যে বাবার সম্বন্ধে সব জানে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কেউ পেট থেকে কথা বার করতে পারবি না। এমনকি অনিমেষদাদু পর্যন্ত হাল ছেড়ে দিয়েছে। যেদিন বাবার মৃতদেহটা নিয়ে সবাই কান্না কাটি করেছে একমাত্র চিকনাদা কাঁদে নি। ও রকম হতে পারবি।
অনিসা চুপ করে গেল।
কিছুক্ষণ চলন্ত পাখার দিকে তাকিয়ে থাকল।
একমাত্র মায়ের কাছে চিকনাদা স্বীকার করেছে ও সব জানে। কেন জানিস ?
কেন ?
চিকনাদা মাকে গুরুমা বলে। বাবাকে গুরু বলে। আমরা চিকনাদার ভাই বোন।
তোকে দেখিয়ে দেবো।
আজ থেকে তুই ছাড়া আমার পেট থেকে কেউ কথা বার করতে পারবে না।
কে রে বীর পুত্তুর।
দেখ ওই ভাবে বলবি না। কাল সারারাত ঘুমই নি।
আমিও সারারাত জেগে আছি। তোর মতো জাহির করতে যাই না।
তোর সব পড়া হয়ে গেছে!
এখনো বাকি আছে।
একটু বল।
মেয়েদের মতো করছিস কেন।
তুই ছেলে বলে।
এক থাপ্পর।
অনিসা হেসে ফেললো।
ব্যাশ ঠিক আছে এবার বল।
চল আমার ঘরে চল।
দুজনে বাইরে বেরিয়ে এলো।
বারান্দায় আসতেই দেখল মা সিঁড়ি দিয়ে নামছে।
তুমি রেডি।
হ্যাঁ।
দাদা ?
আমার সঙ্গে বেরচ্ছে।
অনিসা মাথা নীচু করে হাসলো।
হাসছিস যে।
এমনি।
সবাই তোর মতো হবে ভাবলি কি করে।
না আমি সেই জন্য হাসি নি।
মিত্রা বাইরের ঘরে ঢুকলো। অনিসা শুভ পেছন পেছন ঢুকলো।
দুদুন তোমার সঙ্গে যাবে।
দুদুনের গাড়ি আসবে।
তোমার গাড়িটা আজ একটু দেবে।
কেন।
আমি আর শুভ একটু বেরবো।
রবীনকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
শুভ ড্রাইভ করবে।
মিত্রা মেয়ের মুখের দিকে তাকাল।
ঠিক আছে। আমি দুদুনের গাড়ি করে চলে যাচ্ছি।
একিরে ও বললো তুই ওমনি হ্যাঁ করে দিলি।
মিত্রা ছোটমার দিকে তাকাল।
যাক।
তারমানে ?
কি হলোরে ছোট।
বড়মা রান্নাঘর থেকে চেঁচিয়ে উঠলো।
বুঁচকি গাড়ি চাইলো অমনি মিত্রা দিয়ে দিল।
কোথায় যাবি রে।
বড়মা রান্নাঘরের গেটে।
কথা দিচ্ছি বেইরে কোথাও যাব না।
না হবে না।
কেন। আমি কি ছোট আছি।
না তুমি তালগাছের মতো ঢ্যাঙা হয়ে গেছ।
অনিসা ছুটে গিয়ে দিদুনকে জড়িয়ে ধরলো।
যতই জড়িয়ে ধরো, গাড়ি পাবে না। কোথায় কি ঘটাবে।
তুমি বিশ্বাস করো। অনেকগুলো জায়গায় যাব।
হবে না।
তাহলে বাবার মতে বাসে অটোতে করে ঘুরব।
তাও হবে না।
তাহলে কি হবে।
বাড়ির বাইরে যাওয়া হবে না।
কেন বলবে তো!
কেনর কোন উত্তর নেই।
তাহলে না বলে চলে যাব।
একবার বেড়িয়ে দেখ না ঠ্যাঙ ভেঙে দেব।
পারবে।
ছাড় আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
আগে বলো। তারপর।
দুদুনকে জিজ্ঞাসা কর যদি হ্যাঁ বলে তারপর।
দুদুন হ্যাঁ বলে দিয়েছে।
কোথায় যাবি।
মিত্রা মেয়ের দিকে তাকালো।
দেখি।
আজকে না বেরিয়ে যদি কাল বেরোস।
ঠিক আছে। কাল কিন্তু সক্কাল সক্কাল বেরোব।
আচ্ছা।
শুভ তুমি তাহলে এখানে খেয়ে নিও।
শুভ মাথা নীচু করে রইলো।
বাড়ি যাবে ?
হ্যাঁ।
তাহলে এখুনি বেরিয়ে যাও। আর কোথাও যাবে না।
আচ্ছা।
পাতার পর পাতা পড়তে পড়তে অনিসা হাঁপিয়ে উঠলো।
কখনো চোখে জল এসে পরেছে। কখনো রাগে সারাটা শরীর জ্বালা জ্বালা করে উঠছে। বাবা ঠিক কাজ করেছে। আর কেউ বাবাকে সাপোর্ট করুক আর ছাই না করুক আমি করবো।
মায়ের জন্য বাবা জীবনে কতোটা সেক্রিফাইস করেছে।
এই ঘটনাগুলো সত্যি দুদুন দিদানদের জানার কথা নয়।
এটা মা ছাড়া আর কউ জানতে পারে না।
সত্যি মায়ের কষ্টটা অনিসাকে আরও বেশি কষ্ট দিচ্ছে।
আচ্ছা বাবাটা কি ? একটা অজ গ্রামের ছেলে হয়ে এতো সব জানল কি করে ?
ওই ঘটনার পর বাবা অনিমেষদাদুর সঙ্গে কথা বলেছে!
মার সঙ্গে কথা বলে না কেন ?
তাহলে কি মার প্রতি বাবার কোন অভিমান!
মায়ের লেখার মধ্যে দিয়ে তনু মাসির ঘটনা জানতে পেরেছে।
তনু মাসিও বাবার জন্য কতটা সেক্রিফাইস করেছে।
টিনামনি বাবাকে ভালবাসতো।
মার লেখার একটা জায়গায় ও পেয়েছে। সত্যিতো এরকম ছেলে পেলে অনিসাও ভালোবেসে ফেলতো। ওর খুব গর্ব হচ্ছে ও অনি ব্যানার্জীর সন্তান।
এইরকম বাবার সন্তান হওয়ার মর্যাদা রাখতে হবে।
আচ্ছা দাদাটা কি ? বাবার প্রতি ওর কোন ইন্টারেস্ট নেই।
না, ও ওর মতো চুপি চুপি কাজ করে চলেছে ?
একবার খোঁজ করতে হবে।
জলের বোতলটা টেনে নিয়ে একটুখানি গলায় ঢেলে নিলো।
আবার ল্যাপটপের এলসিডিতে চোখ রাখলো।
আজ সুরোর ছেলে হলো।
অনিমেষদা প্রথমে কিছুতেই নার্সিংহোমে ভর্তি করতে চাইছিল না। শেষমেষ ডাক্তারদাদার কথায় রাজি হল। সর্ত একটা পয়সা নিতে হবে।
সব শুনে ডাক্তারদাদা একটা কথাই বলেছিল, অনিমেষ মাথায় রাখবে সুরো অনির বোন। খাতায় কলমে এই নার্সিংহোমের মালিক অনি।
আজ না হোক কাল কথাটা ওর কানে পৌঁছবে।
তখন অনিমেষদা বললো, ঠিক আছে আপনি যা ভাল বুঝবেন করুণ আমি আর এর মধ্যে নেই।
তারপর সুরোকে নার্সিংহোমে ভর্তি করা হলো।
সুরোর ছেলে হলো আমরা সবাই হইচই করছি।
সুরোর পাশের কেবিনে এক মৌনীবাবা ভর্তি ছিলো। ডঃ রাজনের আন্ডারে।
জটাজুটধারী ভদ্রলোকের যে কি রোগ হয়েছে। কেউ ধরতে পারে না। ভদ্রলোক নাকি দিন পাঁচেক আগে এখানে ভর্তি হয়েছে।
সব সময় দেখি চার পাঁচজন করে সন্ন্যাসী ঘরে থাকে।

বেঢপ সব চেহারা।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top