সনাতনবাবু গিয়ে হরিদাকে আটকায়। যে ল-ইয়ার এসেছিল তার মুখ চুন।
বরুণদা এতো ঠান্ডা মাথার ছেলে চেয়ার ছেড়ে উঠে ঘরের বাইরে চলে গেল।
এরকম একটা ঘটনা ঘটতে পারে, সে বুঝে উঠতে পারে নি।
বুড়োকে ধরে রাখা যায়, হরিদা হাঁপিয়ে গেল।
তারপর একটু থিতু হতে বললো, নীচে অনুপ বলে একজন ভদ্রলোক বসে আছেন, দিদিমনির সঙ্গে দেখা করতে চান।
তুই ডেকে নিয়ে আয়, এ ঘরেই আসুক, কি বলিস মিত্রা ?
চম্পকদা বললো।
আমি মাথা দোলালাম।
হরিদা বেরিয়ে যেতে চাইছিল।
চম্পকদা চায়ের কথা বললো।
দাদা কাঁদছে কেন আগে বলো।
হরিদাও কাঁদতে শুরু করে দিয়েছে।
বলছি বলছি তুই আগে সবার জন্য চা বল বটাদাকে।
হরিদা চোখ মুছতে মুছতে চলে গেল।
ওরে তোকে কি বলবো। তোর অনুপ সবে মাত্র ঘরে ঢুকেছে। ঠিক পেছন পেছন বটাদা হাজির।
হরিদাকে তো আটকান গেছিল।
বটাদাকে ধরে রাখা যায় না। দেবাশীষ, বিতান, নির্মাল্য হাঁপিয়ে গেল।
দুই উড়ে তখন রাজ করছে ঘরের মধ্যে। বুড়োর সে কি তেজ।
বলে কিনা, একটাকে খেয়েছিস আর দুটোকে খেতে এসেছিস। তোর রক্ত টাটকা খেয়ে নেব।
বাধ্য হয়ে আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে গেলাম।
কোনপ্রকারে বুঝিয়ে শুনিয়ে বললাম তোমাদের ছোটবাবু বেঁচে আছে।
কথাটা শোনা মাত্রই দুজনে কেমন ফ্যাল ফ্যাল করে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।
তার কথা আমরা এতোক্ষণ শুনছিলাম।
তোকে কি বলবো বুবুন, নিমেষে মুখের ভঙ্গিটা কেমন চেঞ্জ হয়ে গেল।
বটাদা কেমন কাঁপতে কাঁপতে বসে পরলো।
আমিতো ভাবলাম এইরে স্ট্রোক হয়েগেল।
চোখে মুখে জলের ছিটে দিলাম দেখলাম বটাদা নড়েচড়ে উঠলো।
আমার মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে বললো, কালকেই আমি মায়ের কাছে জোড়া পাঁঠা দেব।
তোর অনুপ এসব দেখে পুরো ফিউজ।
তাকে কি দেখভাল করবো। ঘর সামলাতেই আমরা সবাই হিমশিম খেয়ে গেলাম।
প্রায় আধঘন্টা পর স্বাভাবিক হতে পারলাম।
অনুপ তার নিজের পরিচয় দিল।
সে নাকি সুপ্রীমকোর্টে প্র্যাক্টিশ করে।
কলকাতায় বাড়ি। তুই নাকি ওকে সুপ্রীমকোর্টে প্র্যাক্টিশের ব্যবস্থা করে দিয়েছিস।
মিত্রাদেবী কে।
আমি।
তাকালাম।
আপনার সঙ্গে কিছু ব্যক্তিগত কথা আছে।
আপনি এখানে বলতে পারেন। আমি সবার সঙ্গে ওনার পরিচয় করাই আর উনি বলতে থাকেন আমি সবার নাম শুনেছি। কারুর সঙ্গে পরিচয় হয় নি। সবাইকে আমি এই প্রথম দেখছি।
বটাদা চা নিয়ে ঢুকল।
চা খেতে খেতে দাদা একটু স্বাভাবিক হলো।
হ্যাঁ গো অনুপ তোমার সঙ্গে অনির পরিচয় কি করে।
দাদা বললো।
আমি ও একসঙ্গে ইউনিভার্সিটিতে পরতাম।
তুমিও কি জার্নালিজম নিয়ে পরেছো।
হ্যাঁ। তারপর ওর বুদ্ধিতে ওকালতি পরি।
এখানে ব্যাঙ্কশাল কোর্টে প্র্যাক্টিশ করতাম। তারপর আমাকে ধরে নিয়ে গেল দিল্লিতে।
তোমার সঙ্গে ওর শেষ দেখা কবে হয়েছিলো।
যে দিন আপনাদের লাস্ট কেশের ডেট ছিল।
তুমি সেদিন কোর্টে ছিলে!
আমি ছিলাম না। আমার লোক ছিল। আমি কোর্টের বাইরে ছিলাম।
চম্পক তুমি সনাতনবাবু সেদিন গেছিলে না।
গেছিলাম।
অনিকে দেখেছ।
দেখলে কি খালি হাতে ফিরতাম।
তোর অনুপ হাসছে।
হাসছো কেন অনুপ।
ও চেনার মতো পোষাক পরিচ্ছদ পরে এখানে আসে নি। সুনীতবাবু কে ?
সুনীতদা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল।
উঠতে হবে না বসুন।
দাদার দিকে তাকিয়ে।
দাদা নিচে আমার একটা বড়ো ভিআইপি স্যুটকেস আছে। বেশ ভাড়ি। নিয়ে আসতে হবে। কেউ যদি আমার সঙ্গে একটু যায়।
তোমায় যেতে হবে না। আমি বলে দিচ্ছি।
দাদা ফোনে বলে দিল।
হায়, দেখি নিউজরুম থেকে সন্দীপ, অর্ক, অরিত্র, দ্বীপায়ণ তোর রাত্রি, খুশী সব এসে হাজির। সারা অফিস রাষ্ট্র হয়েগেছে। দাদা সবাইকে ধমকে ঘর থেকে বার করে দিল।
আর বার করা। একদল যায় তো একদল আসে। তারা সবাই সুনীতদাকে দেখে নেবে।
আমি হাসব না কাঁদব। বোবার মতো বসে আছি।
দেবাশীষরা সুনীতদার মোবাইল থেকে তোর রেকর্ড করা গলা ব্লুটুথে ট্রন্সফার করে নিল।
সেই ভিআইপি স্যুটকেশ এলো।
এখানে সবাই অনির খুব ক্লোজ। আমি নির্ভয়ে খুলতে পারি।
হ্যাঁ হ্যাঁ তুমি খোল।
স্যুটকেশটা খুলতেই আমি উঁকি মারলাম। ঠাসা মালপত্র, মিষ্টির বাক্স, অনুপ একটা ফাইল বার করলো।
দাদা এর মধ্যে সব আছে। আপনি দেখে নিন।
আমি কি বুঝবো বলো। তুমি উকিল তুমি এদের বুঝিয়ে দাও। হিমাংশু তুমিও বুঝে নাও।
মল্লিকদা দেখলাম ঘরের এককোনে ফিস ফিস করে কথা বলছে। বুঝলাম কার সঙ্গে কথা বলছে।
অনুপ সুনীতদার ল-ইয়ারের হাতে দোলিলগুলো দিল। উনি দেখে চোখ কপালে তুললেন।
সুনীতদার দিকে তাকালেন।
আপনি এই অরিজিন্যল কাগজের এগেনস্টে লড়ছিলেন।
সুনীতদা চুপ।
আপনি হাইকোর্টে জিততেন। তারপর কেশটা সুপ্রীম কোর্টে গেলে কি হতো বুঝতে পারছেন। আপনি সব জেনেও একটা সাজান কেশ করতে গেলেন।
সুনীতদা মাথা আর তোলে না।
ভদ্রলোক রাগ করে বললেন এখানে আর বসে থেকে লাভ নেই। কোর্টে গিয়ে কাজ সারি।
এই নিন, আপনারা যে কেশটা উইথড্র করবেন তার ফাইল। এখানে সবকিছু বলা আছে।
ফাইল ঘুরছে সবার হাতে, ডাক্তারদাদা ডুব দিল কাগজপত্রের মধ্যে।
সেই ল-ইয়ার ভদ্রলোক এবার দাদাকে বললেন।
দাদা আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো।
বলুন।
বছর দশেক আগে আপনাদের কাগজে অনি ব্যানার্জী বলে একজন কাজ করতো।
রাজনাথ বাবুর সম্বন্ধে ডঃ ব্যানার্জীর সম্বন্ধে তখন বহু লেখা লেখি হয়েছিল। উনি লিখেছিলেন। তখন একটা ঝড় বইছিল কলকাতা শহরে।
হ্যাঁ ওই অনি ব্যানার্জীই এই অনি ব্যানার্জী।
বাবাঃ গলা শুনে তো মনে হচ্ছিল উনি ডন।
এই শয়তানরা ওকে ডন বানিয়েছে। আজ ও দেশ ছাড়া। কেন আপনার গুনমন্ত্র মক্কেল সব খোলসা করে বলে নি।
বললে কি কেশটা হাতে নিতাম দাদা। কাগজের এগেনস্টে কেশ, জিতলে একটু নাম ডাক হবে। মক্কেল বেশি পাব। এই ভেবে কেশটা হাতে নিয়েছিলাম।
এরই মামা ডঃ ব্যানার্জী। আর কিছু বললাম না। ওর মুখ থেকে শুনে নেবেন।
মিত্রাদেবী ?
অনির স্ত্রী।
বোঝা হয়ে গেছে।
আপনি শুধু সুনীতবাবুকে বাঁচালেন না। আমাকেও একটা নোংরামোর হাত থেকে বাঁচালেন।
উঠি দাদা।
ভদ্রলোক হাতজোড় করলেন।
হিমাংশু কোর্টে গেল, সনাতনবাবু, চম্পকদা সঙ্গে গেল।
এবার তোর অনুপ ঝোলা থেকে সব বার করতে আরম্ভ করল।
প্রথমে দাদার হাতে একটা খাম দিল।
এটা আপনার জন্য।
কি এটা ?
প্রশ্ন করলে উত্তর দিতে পারব না দাদা।
এই দেখুন এই কাগজে সিরিয়ালি লেখা আছে। আমি ধরে ধরে দিয়ে যাচ্ছি।
ইসলামভাই।
আমি।
এই খামটা আপনার।
একে একে নাম ধরে ধরে ডাকে আর একটা করে খাম হাতে দেয়।
মিলি, টিনা, দেবা, সনাতনবাবু, চম্পকদা, নির্মাল্য, বরুণদা, জ্যেঠিমনি, মল্লিকদা সবার খাম।
দুটো প্যাকেট বার করলো একটা বড়মার একটা ছোটমার।
এগুলো দিল্লির লাড্ডু হুকুম ছিল কিনে পাঠান হয়েছে।
ম্যাডাম আপনি এগুলো সবার মধ্যে ভাগ করে দিন।
এর ভেতরে দুটো প্যাকেট আছে। ওটা বার করলাম না। বাড়িতে গিয়ে আপনি দেখবেন।
আর বড়মা ছোটমার প্যাকেটটা ওনারা খুলবেন আর কেউ খুলবে না।
অনুপ আমার দিকে তাকিয়ে বললো।
দাদা দেখি আপন মনে হো হো করে হেসে ফেললো।
সবাই প্রথমে একটু অবাক হয়ে গেল।
ওরে আগে কম্পোজে পাঠা মল্লিক, বলে কিনা নিজস্ব সংবাদদাতা। আমি ওর নাম ছেপে দেব। দেখি তুই কতোবরো দাদা হয়েছিস।
ডাক্তারদাদা দাদার দিকে ফ্যাকাশে চোখে তাকাল।
তুমি কি পাগল হয়ে গেলে।
হ্যাঁ ডাক্তার, আমি পাগল হয়ে গেছি। দেখো দেখো আমি যে জিনিসটা চাই সেটাই পাঠিয়েছে। উইথ ফটোগ্রাফ।
বিতান, হরিকে ডাক, চা আনতে বল।
নাঃ যাই করুক লেখাটা ভোলে নি, বুঝলি মা। কি কনস্ট্রাকসন শব্দগুলোর কি তেজ।
দাদা আমার দিকে তাকাল।
একেবারে তোর ছেলেমেয়ের মতো আচরণ করছে।
হরিদা বটাদা চা নিয়ে ঢুকলো। পেছন পেছন অর্ক, অরিত্র, সায়ন্তন, সন্দীপ, দ্বীপায়ন।
দেখ সন্দীপ দেখ অনি লেখা পাঠিয়েছে। একচ্যুয়েলি তিনটে ইনস্টলমেন্টে পুরোটা বেরিয়ে যায়। একসপ্তাহ ধরে কনটিনিউ করবি। দ্বীপায়ন ছবিগুলো ভালো করে প্লেস কর।
ঘরের মধ্যে যেন হরির লুট চলছে।
দাদা বড়মাকে ফোন করলো।
ইসলামভাই ওর্ণাদিয়ে চোখ মুছছে।
তোমার আবার কি হলো ইসলাম।
ডাক্তারদাদা বললো।
গতো সপ্তাহ পর্যন্ত যা ভুল কাজ করেছি, তার একটা লিস্ট পাঠিয়েছে। কি করতে হবে তাও বলে দিয়েছে।
তার মানে গত সপ্তাহ পর্যন্ত ও কলকাতায় ছিল ?
ডাক্তারদাদা অনুপের দিকে তাকাল।
কি অনুপ তুমি মিছে কথা বলছো কেন।
বিশ্বাস করুণ স্যার। আজ সকালে এই স্যুটকেশ আর এই চিঠিটা আমার বাড়িতে আসে। গাড়ির কাঁচে লেখা ছিল প্রেস বিবিসি।
আমাকে বাক্সটা হ্যান্ড ওভার করে গাড়িটা ভোঁ করে চলে গেল।
তারপর আমার মোবাইলে একটা ম্যাসেজ এলো আধঘন্টা পর। পরলাম। সব জানতে পারলাম। আপনি যদি ম্যাসেজটা দেখতে চান এখুনি দেখাতে পারি।
দেখাও।
ডাক্তারদাদা মুখের কথা আর কিছুতেই বিশ্বাস করতে চায় না।
অনুপ মোবাইল থেকে ম্যাসেজটা বার করে ডাক্তারদাদার হাতে দিল।
অনুপ ম্যাসেজটা ফরোয়ার্ড করে দাও না।
দেবাশীষ বললো।
অনুপ হাসছে।
নিয়ে নিন।
ঘরে তখন হৈ হৈ রৈ রৈ।
আচ্ছা মামনি।
আমি ইসলামভাই-এর দিকে তাকালাম।
এখানে কেউ আবার অনির ইনফর্মার নেই তো।
সবাই উচ্চশ্বরে হেসে ফেললো।
জব্বর কথা বলেছো ইসলাম।
দাদা বললো।
কাকে বিশ্বাস করি বলুন দাদা। সব কেমন যেন স্বপ্ন দেখছি মনে হচ্ছে।
তুমি স্বপ্ন দেখ আমি আর দেখতে রাজি নই। ছেলেটা এলো, তোমরা খপ করে ধরতে পারলে না।
কি করে বুঝবো। যে কটাকে আমি ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছিলাম, তাদের গলা শুনলেন।
তুমি খোঁজ লাগাও, দেখ ওদের চ্যালা চামুন্ডা কে আছে।
আমি কি বসে আছি দাদা। নো ট্রেস।
একবার ভালকরে খুঁজে দেখ ঠিক পেয়ে যাবে।
দেখি।
অনুপ তার কার্ডটা আমাকে দিল।
আমি আমার কার্ড দিতে গেলাম।
আপনাদের সবার নম্বর আমার কাছে আছে।
তারপর দাদার কাছে গিয়ে বললো দাদা একটা অপরাধ হয়ে গেছে।
আবার কি হলো ?
আপনাদের কাউকে প্রণাম করা হয় নি।
কেন খবরটা চলে গেছে বুঝি।
সবাই আবার হেসে ফেললো।
অনুপ সবাইকে প্রণাম করে চলে গেল।
যাওয়ার আগে বললো, আমাকে প্রয়োজন হলে ফোন করবেন।
ফোন করবো কি হে তুমিই তো এখন শিখন্ডি।
আবার সবাই হাসে।
আমি অনুপের পেছন পেছন বাইরে এলাম।
গেটের মুখে দাঁড়ালাম।
এটা আমার তরফ থেকে আপনাকে দিলাম। কেউ যেন জানতে না পারে। এমনকি অনি পর্যন্ত। তাহলে ওর হাতেই আমার মৃত্যু লেখা থাকবে। আপনাকে বিশ্বাস করতে পারি।
আমি ছোট্ট খামটা ওর হাত থেকে নিলাম। হাসলাম।
আসি ম্যাডাম।
নিজের ঘরে গেলাম। ব্যাগটা গুছিয়ে নিলাম। দাদার ঘরে গেলাম।
দাদা আজ আর ভাল লাগছে না। আমি বাড়ি যাই।
ডাক্তারদাদা হঁ হঁ করে উঠলো। তুই একা কেন। আমিও যাব।
ইসলামভাই উঠে দাঁড়াল। আমিও যাব।
আমার গাড়িতেই সকলে এক সঙ্গে উঠলাম।
গাড়ি এসে গেটের কাছে দাঁড়াতেই বারান্দা দিয়ে দেখলাম দামিনীমাসি নেমে বাগানে চলে এল। পেছন পেছন বড়মা, ছোটমা, জ্যেঠিমনি।
মনে মনে ভাবলাম এরি মধ্যে দামিনীমাসি, জ্যেঠিমনি এলো কোথা থেকে!
আমাদের কি নামতে দেয়।
আমি নামতেই দামিনীমাসি আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মুখ গুঁজলো।
ছোটমা, বড়মা, জ্যেঠিমনির মুখ কাঁদো কাঁদো। দিদিভাই বারান্দায় দাঁড়িয়ে। তোর ছেলে মেয়ে পিকু তার স্বরে চেঁচা মিচি করছে।
অনি কোথায় আছে বল।
আচ্ছাই শুরু করলে তোমরা, ভেতরে চলো, সব বলছি।
কে কার কথা শোনে।
ততক্ষণে রবীন গাড়ির পেছন থেকে সেই বড়ো এ্যাটাচিটা নামিয়ে নিয়েছে।
দিদিভাই এইবার বারান্দা থেকে বাগানে নেমে এলো।
তোর ছেলেমেয়েদের কোন হুঁস নেই। পিকুদাকে পেয়ে তারা স্বর্গরাজ্য দেখেছে।
দিদিভাই ইসারা করে বললো বল না একটু।
আমি মনে মনে হাসি। আসল লোকটার দেখা নেই। তার গলা নিয়ে কি কান্ডটাই না ঘটে যাচ্ছে।
আচ্ছা তোর কি একটুও ইচ্ছে করে না। এদের মুখ গুলো দেখতে।
আমরা তিনজনে এসে ভেতরের ঘরে বসলাম।
তোর মেয়ে ইসলামভাই-এর গলা জড়িয়ে ধরে বললো, ভাইদাদাই আমরা চোর পুলিশ খেলছি।
তোরা ওই ঘরে গিয়ে খেল, আমরা একটু কথা বলি।
ওরা চলে গেল।
ডাক্তারদাদা ইসির দিকে তাকিয়ে বললো, একটু চা কর না।
কিছু খেয়েছো।
বড়মা বললো।
না সকাল থেকে যা চললো জুটবে কোথা থেকে।
ভাত খাও।
আগে একটু চা দাও।
দিদিভাই রান্নাঘরের দিকে গেল। বুঝলাম কানটা এদিকে রেখে গেল।
কি বলবো। খালি ওর গলা শুনলাম।
মল্লিক যে বললো ও কলকাতায় এসেছিল। বড়মা বললো।
ইসলাম বললো সাতদিন আগে পর্যন্ত ছিল। দামিনীমাসি বললো।
ইসলামভাইকে জিজ্ঞাসা করো।
বরুণদা এতো ঠান্ডা মাথার ছেলে চেয়ার ছেড়ে উঠে ঘরের বাইরে চলে গেল।
এরকম একটা ঘটনা ঘটতে পারে, সে বুঝে উঠতে পারে নি।
বুড়োকে ধরে রাখা যায়, হরিদা হাঁপিয়ে গেল।
তারপর একটু থিতু হতে বললো, নীচে অনুপ বলে একজন ভদ্রলোক বসে আছেন, দিদিমনির সঙ্গে দেখা করতে চান।
তুই ডেকে নিয়ে আয়, এ ঘরেই আসুক, কি বলিস মিত্রা ?
চম্পকদা বললো।
আমি মাথা দোলালাম।
হরিদা বেরিয়ে যেতে চাইছিল।
চম্পকদা চায়ের কথা বললো।
দাদা কাঁদছে কেন আগে বলো।
হরিদাও কাঁদতে শুরু করে দিয়েছে।
বলছি বলছি তুই আগে সবার জন্য চা বল বটাদাকে।
হরিদা চোখ মুছতে মুছতে চলে গেল।
ওরে তোকে কি বলবো। তোর অনুপ সবে মাত্র ঘরে ঢুকেছে। ঠিক পেছন পেছন বটাদা হাজির।
হরিদাকে তো আটকান গেছিল।
বটাদাকে ধরে রাখা যায় না। দেবাশীষ, বিতান, নির্মাল্য হাঁপিয়ে গেল।
দুই উড়ে তখন রাজ করছে ঘরের মধ্যে। বুড়োর সে কি তেজ।
বলে কিনা, একটাকে খেয়েছিস আর দুটোকে খেতে এসেছিস। তোর রক্ত টাটকা খেয়ে নেব।
বাধ্য হয়ে আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে গেলাম।
কোনপ্রকারে বুঝিয়ে শুনিয়ে বললাম তোমাদের ছোটবাবু বেঁচে আছে।
কথাটা শোনা মাত্রই দুজনে কেমন ফ্যাল ফ্যাল করে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।
তার কথা আমরা এতোক্ষণ শুনছিলাম।
তোকে কি বলবো বুবুন, নিমেষে মুখের ভঙ্গিটা কেমন চেঞ্জ হয়ে গেল।
বটাদা কেমন কাঁপতে কাঁপতে বসে পরলো।
আমিতো ভাবলাম এইরে স্ট্রোক হয়েগেল।
চোখে মুখে জলের ছিটে দিলাম দেখলাম বটাদা নড়েচড়ে উঠলো।
আমার মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে বললো, কালকেই আমি মায়ের কাছে জোড়া পাঁঠা দেব।
তোর অনুপ এসব দেখে পুরো ফিউজ।
তাকে কি দেখভাল করবো। ঘর সামলাতেই আমরা সবাই হিমশিম খেয়ে গেলাম।
প্রায় আধঘন্টা পর স্বাভাবিক হতে পারলাম।
অনুপ তার নিজের পরিচয় দিল।
সে নাকি সুপ্রীমকোর্টে প্র্যাক্টিশ করে।
কলকাতায় বাড়ি। তুই নাকি ওকে সুপ্রীমকোর্টে প্র্যাক্টিশের ব্যবস্থা করে দিয়েছিস।
মিত্রাদেবী কে।
আমি।
তাকালাম।
আপনার সঙ্গে কিছু ব্যক্তিগত কথা আছে।
আপনি এখানে বলতে পারেন। আমি সবার সঙ্গে ওনার পরিচয় করাই আর উনি বলতে থাকেন আমি সবার নাম শুনেছি। কারুর সঙ্গে পরিচয় হয় নি। সবাইকে আমি এই প্রথম দেখছি।
বটাদা চা নিয়ে ঢুকল।
চা খেতে খেতে দাদা একটু স্বাভাবিক হলো।
হ্যাঁ গো অনুপ তোমার সঙ্গে অনির পরিচয় কি করে।
দাদা বললো।
আমি ও একসঙ্গে ইউনিভার্সিটিতে পরতাম।
তুমিও কি জার্নালিজম নিয়ে পরেছো।
হ্যাঁ। তারপর ওর বুদ্ধিতে ওকালতি পরি।
এখানে ব্যাঙ্কশাল কোর্টে প্র্যাক্টিশ করতাম। তারপর আমাকে ধরে নিয়ে গেল দিল্লিতে।
তোমার সঙ্গে ওর শেষ দেখা কবে হয়েছিলো।
যে দিন আপনাদের লাস্ট কেশের ডেট ছিল।
তুমি সেদিন কোর্টে ছিলে!
আমি ছিলাম না। আমার লোক ছিল। আমি কোর্টের বাইরে ছিলাম।
চম্পক তুমি সনাতনবাবু সেদিন গেছিলে না।
গেছিলাম।
অনিকে দেখেছ।
দেখলে কি খালি হাতে ফিরতাম।
তোর অনুপ হাসছে।
হাসছো কেন অনুপ।
ও চেনার মতো পোষাক পরিচ্ছদ পরে এখানে আসে নি। সুনীতবাবু কে ?
সুনীতদা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল।
উঠতে হবে না বসুন।
দাদার দিকে তাকিয়ে।
দাদা নিচে আমার একটা বড়ো ভিআইপি স্যুটকেস আছে। বেশ ভাড়ি। নিয়ে আসতে হবে। কেউ যদি আমার সঙ্গে একটু যায়।
তোমায় যেতে হবে না। আমি বলে দিচ্ছি।
দাদা ফোনে বলে দিল।
হায়, দেখি নিউজরুম থেকে সন্দীপ, অর্ক, অরিত্র, দ্বীপায়ণ তোর রাত্রি, খুশী সব এসে হাজির। সারা অফিস রাষ্ট্র হয়েগেছে। দাদা সবাইকে ধমকে ঘর থেকে বার করে দিল।
আর বার করা। একদল যায় তো একদল আসে। তারা সবাই সুনীতদাকে দেখে নেবে।
আমি হাসব না কাঁদব। বোবার মতো বসে আছি।
দেবাশীষরা সুনীতদার মোবাইল থেকে তোর রেকর্ড করা গলা ব্লুটুথে ট্রন্সফার করে নিল।
সেই ভিআইপি স্যুটকেশ এলো।
এখানে সবাই অনির খুব ক্লোজ। আমি নির্ভয়ে খুলতে পারি।
হ্যাঁ হ্যাঁ তুমি খোল।
স্যুটকেশটা খুলতেই আমি উঁকি মারলাম। ঠাসা মালপত্র, মিষ্টির বাক্স, অনুপ একটা ফাইল বার করলো।
দাদা এর মধ্যে সব আছে। আপনি দেখে নিন।
আমি কি বুঝবো বলো। তুমি উকিল তুমি এদের বুঝিয়ে দাও। হিমাংশু তুমিও বুঝে নাও।
মল্লিকদা দেখলাম ঘরের এককোনে ফিস ফিস করে কথা বলছে। বুঝলাম কার সঙ্গে কথা বলছে।
অনুপ সুনীতদার ল-ইয়ারের হাতে দোলিলগুলো দিল। উনি দেখে চোখ কপালে তুললেন।
সুনীতদার দিকে তাকালেন।
আপনি এই অরিজিন্যল কাগজের এগেনস্টে লড়ছিলেন।
সুনীতদা চুপ।
আপনি হাইকোর্টে জিততেন। তারপর কেশটা সুপ্রীম কোর্টে গেলে কি হতো বুঝতে পারছেন। আপনি সব জেনেও একটা সাজান কেশ করতে গেলেন।
সুনীতদা মাথা আর তোলে না।
ভদ্রলোক রাগ করে বললেন এখানে আর বসে থেকে লাভ নেই। কোর্টে গিয়ে কাজ সারি।
এই নিন, আপনারা যে কেশটা উইথড্র করবেন তার ফাইল। এখানে সবকিছু বলা আছে।
ফাইল ঘুরছে সবার হাতে, ডাক্তারদাদা ডুব দিল কাগজপত্রের মধ্যে।
সেই ল-ইয়ার ভদ্রলোক এবার দাদাকে বললেন।
দাদা আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো।
বলুন।
বছর দশেক আগে আপনাদের কাগজে অনি ব্যানার্জী বলে একজন কাজ করতো।
রাজনাথ বাবুর সম্বন্ধে ডঃ ব্যানার্জীর সম্বন্ধে তখন বহু লেখা লেখি হয়েছিল। উনি লিখেছিলেন। তখন একটা ঝড় বইছিল কলকাতা শহরে।
হ্যাঁ ওই অনি ব্যানার্জীই এই অনি ব্যানার্জী।
বাবাঃ গলা শুনে তো মনে হচ্ছিল উনি ডন।
এই শয়তানরা ওকে ডন বানিয়েছে। আজ ও দেশ ছাড়া। কেন আপনার গুনমন্ত্র মক্কেল সব খোলসা করে বলে নি।
বললে কি কেশটা হাতে নিতাম দাদা। কাগজের এগেনস্টে কেশ, জিতলে একটু নাম ডাক হবে। মক্কেল বেশি পাব। এই ভেবে কেশটা হাতে নিয়েছিলাম।
এরই মামা ডঃ ব্যানার্জী। আর কিছু বললাম না। ওর মুখ থেকে শুনে নেবেন।
মিত্রাদেবী ?
অনির স্ত্রী।
বোঝা হয়ে গেছে।
আপনি শুধু সুনীতবাবুকে বাঁচালেন না। আমাকেও একটা নোংরামোর হাত থেকে বাঁচালেন।
উঠি দাদা।
ভদ্রলোক হাতজোড় করলেন।
হিমাংশু কোর্টে গেল, সনাতনবাবু, চম্পকদা সঙ্গে গেল।
এবার তোর অনুপ ঝোলা থেকে সব বার করতে আরম্ভ করল।
প্রথমে দাদার হাতে একটা খাম দিল।
এটা আপনার জন্য।
কি এটা ?
প্রশ্ন করলে উত্তর দিতে পারব না দাদা।
এই দেখুন এই কাগজে সিরিয়ালি লেখা আছে। আমি ধরে ধরে দিয়ে যাচ্ছি।
ইসলামভাই।
আমি।
এই খামটা আপনার।
একে একে নাম ধরে ধরে ডাকে আর একটা করে খাম হাতে দেয়।
মিলি, টিনা, দেবা, সনাতনবাবু, চম্পকদা, নির্মাল্য, বরুণদা, জ্যেঠিমনি, মল্লিকদা সবার খাম।
দুটো প্যাকেট বার করলো একটা বড়মার একটা ছোটমার।
এগুলো দিল্লির লাড্ডু হুকুম ছিল কিনে পাঠান হয়েছে।
ম্যাডাম আপনি এগুলো সবার মধ্যে ভাগ করে দিন।
এর ভেতরে দুটো প্যাকেট আছে। ওটা বার করলাম না। বাড়িতে গিয়ে আপনি দেখবেন।
আর বড়মা ছোটমার প্যাকেটটা ওনারা খুলবেন আর কেউ খুলবে না।
অনুপ আমার দিকে তাকিয়ে বললো।
দাদা দেখি আপন মনে হো হো করে হেসে ফেললো।
সবাই প্রথমে একটু অবাক হয়ে গেল।
ওরে আগে কম্পোজে পাঠা মল্লিক, বলে কিনা নিজস্ব সংবাদদাতা। আমি ওর নাম ছেপে দেব। দেখি তুই কতোবরো দাদা হয়েছিস।
ডাক্তারদাদা দাদার দিকে ফ্যাকাশে চোখে তাকাল।
তুমি কি পাগল হয়ে গেলে।
হ্যাঁ ডাক্তার, আমি পাগল হয়ে গেছি। দেখো দেখো আমি যে জিনিসটা চাই সেটাই পাঠিয়েছে। উইথ ফটোগ্রাফ।
বিতান, হরিকে ডাক, চা আনতে বল।
নাঃ যাই করুক লেখাটা ভোলে নি, বুঝলি মা। কি কনস্ট্রাকসন শব্দগুলোর কি তেজ।
দাদা আমার দিকে তাকাল।
একেবারে তোর ছেলেমেয়ের মতো আচরণ করছে।
হরিদা বটাদা চা নিয়ে ঢুকলো। পেছন পেছন অর্ক, অরিত্র, সায়ন্তন, সন্দীপ, দ্বীপায়ন।
দেখ সন্দীপ দেখ অনি লেখা পাঠিয়েছে। একচ্যুয়েলি তিনটে ইনস্টলমেন্টে পুরোটা বেরিয়ে যায়। একসপ্তাহ ধরে কনটিনিউ করবি। দ্বীপায়ন ছবিগুলো ভালো করে প্লেস কর।
ঘরের মধ্যে যেন হরির লুট চলছে।
দাদা বড়মাকে ফোন করলো।
ইসলামভাই ওর্ণাদিয়ে চোখ মুছছে।
তোমার আবার কি হলো ইসলাম।
ডাক্তারদাদা বললো।
গতো সপ্তাহ পর্যন্ত যা ভুল কাজ করেছি, তার একটা লিস্ট পাঠিয়েছে। কি করতে হবে তাও বলে দিয়েছে।
তার মানে গত সপ্তাহ পর্যন্ত ও কলকাতায় ছিল ?
ডাক্তারদাদা অনুপের দিকে তাকাল।
কি অনুপ তুমি মিছে কথা বলছো কেন।
বিশ্বাস করুণ স্যার। আজ সকালে এই স্যুটকেশ আর এই চিঠিটা আমার বাড়িতে আসে। গাড়ির কাঁচে লেখা ছিল প্রেস বিবিসি।
আমাকে বাক্সটা হ্যান্ড ওভার করে গাড়িটা ভোঁ করে চলে গেল।
তারপর আমার মোবাইলে একটা ম্যাসেজ এলো আধঘন্টা পর। পরলাম। সব জানতে পারলাম। আপনি যদি ম্যাসেজটা দেখতে চান এখুনি দেখাতে পারি।
দেখাও।
ডাক্তারদাদা মুখের কথা আর কিছুতেই বিশ্বাস করতে চায় না।
অনুপ মোবাইল থেকে ম্যাসেজটা বার করে ডাক্তারদাদার হাতে দিল।
অনুপ ম্যাসেজটা ফরোয়ার্ড করে দাও না।
দেবাশীষ বললো।
অনুপ হাসছে।
নিয়ে নিন।
ঘরে তখন হৈ হৈ রৈ রৈ।
আচ্ছা মামনি।
আমি ইসলামভাই-এর দিকে তাকালাম।
এখানে কেউ আবার অনির ইনফর্মার নেই তো।
সবাই উচ্চশ্বরে হেসে ফেললো।
জব্বর কথা বলেছো ইসলাম।
দাদা বললো।
কাকে বিশ্বাস করি বলুন দাদা। সব কেমন যেন স্বপ্ন দেখছি মনে হচ্ছে।
তুমি স্বপ্ন দেখ আমি আর দেখতে রাজি নই। ছেলেটা এলো, তোমরা খপ করে ধরতে পারলে না।
কি করে বুঝবো। যে কটাকে আমি ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছিলাম, তাদের গলা শুনলেন।
তুমি খোঁজ লাগাও, দেখ ওদের চ্যালা চামুন্ডা কে আছে।
আমি কি বসে আছি দাদা। নো ট্রেস।
একবার ভালকরে খুঁজে দেখ ঠিক পেয়ে যাবে।
দেখি।
অনুপ তার কার্ডটা আমাকে দিল।
আমি আমার কার্ড দিতে গেলাম।
আপনাদের সবার নম্বর আমার কাছে আছে।
তারপর দাদার কাছে গিয়ে বললো দাদা একটা অপরাধ হয়ে গেছে।
আবার কি হলো ?
আপনাদের কাউকে প্রণাম করা হয় নি।
কেন খবরটা চলে গেছে বুঝি।
সবাই আবার হেসে ফেললো।
অনুপ সবাইকে প্রণাম করে চলে গেল।
যাওয়ার আগে বললো, আমাকে প্রয়োজন হলে ফোন করবেন।
ফোন করবো কি হে তুমিই তো এখন শিখন্ডি।
আবার সবাই হাসে।
আমি অনুপের পেছন পেছন বাইরে এলাম।
গেটের মুখে দাঁড়ালাম।
এটা আমার তরফ থেকে আপনাকে দিলাম। কেউ যেন জানতে না পারে। এমনকি অনি পর্যন্ত। তাহলে ওর হাতেই আমার মৃত্যু লেখা থাকবে। আপনাকে বিশ্বাস করতে পারি।
আমি ছোট্ট খামটা ওর হাত থেকে নিলাম। হাসলাম।
আসি ম্যাডাম।
নিজের ঘরে গেলাম। ব্যাগটা গুছিয়ে নিলাম। দাদার ঘরে গেলাম।
দাদা আজ আর ভাল লাগছে না। আমি বাড়ি যাই।
ডাক্তারদাদা হঁ হঁ করে উঠলো। তুই একা কেন। আমিও যাব।
ইসলামভাই উঠে দাঁড়াল। আমিও যাব।
আমার গাড়িতেই সকলে এক সঙ্গে উঠলাম।
গাড়ি এসে গেটের কাছে দাঁড়াতেই বারান্দা দিয়ে দেখলাম দামিনীমাসি নেমে বাগানে চলে এল। পেছন পেছন বড়মা, ছোটমা, জ্যেঠিমনি।
মনে মনে ভাবলাম এরি মধ্যে দামিনীমাসি, জ্যেঠিমনি এলো কোথা থেকে!
আমাদের কি নামতে দেয়।
আমি নামতেই দামিনীমাসি আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মুখ গুঁজলো।
ছোটমা, বড়মা, জ্যেঠিমনির মুখ কাঁদো কাঁদো। দিদিভাই বারান্দায় দাঁড়িয়ে। তোর ছেলে মেয়ে পিকু তার স্বরে চেঁচা মিচি করছে।
অনি কোথায় আছে বল।
আচ্ছাই শুরু করলে তোমরা, ভেতরে চলো, সব বলছি।
কে কার কথা শোনে।
ততক্ষণে রবীন গাড়ির পেছন থেকে সেই বড়ো এ্যাটাচিটা নামিয়ে নিয়েছে।
দিদিভাই এইবার বারান্দা থেকে বাগানে নেমে এলো।
তোর ছেলেমেয়েদের কোন হুঁস নেই। পিকুদাকে পেয়ে তারা স্বর্গরাজ্য দেখেছে।
দিদিভাই ইসারা করে বললো বল না একটু।
আমি মনে মনে হাসি। আসল লোকটার দেখা নেই। তার গলা নিয়ে কি কান্ডটাই না ঘটে যাচ্ছে।
আচ্ছা তোর কি একটুও ইচ্ছে করে না। এদের মুখ গুলো দেখতে।
আমরা তিনজনে এসে ভেতরের ঘরে বসলাম।
তোর মেয়ে ইসলামভাই-এর গলা জড়িয়ে ধরে বললো, ভাইদাদাই আমরা চোর পুলিশ খেলছি।
তোরা ওই ঘরে গিয়ে খেল, আমরা একটু কথা বলি।
ওরা চলে গেল।
ডাক্তারদাদা ইসির দিকে তাকিয়ে বললো, একটু চা কর না।
কিছু খেয়েছো।
বড়মা বললো।
না সকাল থেকে যা চললো জুটবে কোথা থেকে।
ভাত খাও।
আগে একটু চা দাও।
দিদিভাই রান্নাঘরের দিকে গেল। বুঝলাম কানটা এদিকে রেখে গেল।
কি বলবো। খালি ওর গলা শুনলাম।
মল্লিক যে বললো ও কলকাতায় এসেছিল। বড়মা বললো।
ইসলাম বললো সাতদিন আগে পর্যন্ত ছিল। দামিনীমাসি বললো।
ইসলামভাইকে জিজ্ঞাসা করো।