What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

দেখি নাই ফিরে (উপন্যাস) (3 Viewers)

তারপর জানলাম, ব্যানার্জীর যে নার্সিংহোমটা গোয়াতে আছে সেটার ও মালিক। ডাক সাইটে ব্যানার্জীর স্ত্রী। অনি নাকি ওকে বলেছে তুমি নার্সিংহোম বেচে দিয়ে ইন্ডিয়া ছেড়ে চলে যাও। সে নার্সিংহোম বেচে কলকাতায় এসে এখান থেকে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের প্লেনে লন্ডন চলে যাচ্ছে।
কথা শুনতে শুনতে অনিমেষদার চোখ দুটো ছোট হয়ে গেল। প্রবীরদা অনুপদার চোখ ঠেলে বেড়িয়ে আসতে চাইছে।
আমি বললাম তাহলে তোমাকে বাঁচাব কি করে।
বললো ওর আরও সম্পত্তি আছে। অনি সব জানে। সে গুলো ও বেচতে পারে নি সময় লাগবে। ও আবার ফিরে আসছে। তখন যদি কোন বিপত্তি ঘটে। তবে ও এখানকার সমস্ত খোঁজ খবর রেখেছে। সব জানে। খুব বুদ্ধিমতী মহিলা। তারপর চলে গেল।
প্রবীরদা ফিক করে হেসে ফেললো।
হেসো না প্রবীর। ও কতোটা কুল তুমি বুঝতে পারছ। তুমি নিজে পারতে ? কতো নিস্তব্ধে কাজ করেছে বলো। কেউ ওর শরীরে একটা আঁচড় কাটতে পারবে ?
আমি ওর বাড়িতে গিয়ে ওর কাকাকে কাকীমাকে বলে এসেছি।
ইসলামভাই মুখে ওর্না চাপা দিয়ে হাসছে।
তুমি কি করে এতদিন তোমার দল চালাতে ইসলাম।
অনিমেষদা ইসলামভাই-এর দিকে তাকাল।
আমি অনেকদিন আগে হার স্বীকার করে নিয়েছি দাদা। ওর মাথায় সব ইনস্ট্যান্ট বুদ্ধি আসে। পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী ও বুদ্ধি এ্যাপ্লাই করে। মুহূর্তের মধ্যে প্ল্যান চেঞ্জ করে নেয়। দেখে মনে হবে ওর যেন সব মুখস্থ।
ঘটনাটা কি বলো অনিমেষ। সত্যি কি ডাক্তার স্যুইসাইড করে নি! দাদা বললো।
আইনের খাতায় এটা ছাড়া প্রমাণ করার কোন রাস্তা নেই। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বলছে উনি প্রচুর পরিমানে ড্রিঙ্ক করেছিলেন। লাইন পার হতে গিয়ে বেসামাল হয়ে লাইনে কাটা পরেছেন। তা ছাড়া….
অনিমেষদা মিত্রার দিকে তাকাল, যা দাদার ঘরে গিয়ে বোস।
মিত্রা চলে গেল।
রিপোর্টে, উনি যে কিছুক্ষণ আগে মহিলা সঙ্গ করেছিলেন তারও প্রমাণ মিলেছে।
কোন জায়গায় ?
এর আগের বার যে জায়গা থেকে ওই ছেলেটাকে ও তুলে নিয়ে গেছিল।
স্ট্রেঞ্জ।
আমরা ভেতরের ব্যাপারটা সব জানি বলে বলতে পারছি এটা প্রি-প্ল্যান্ড, না হলে কারুর বোঝার ক্ষমতা নেই।
কারা করেছে।
ওর নতুন রিক্রুটের কিছু ছেলে। তাদেরকে ইসলাম পর্যন্ত চেনে না। তারা সব ভাইজ্যাকের ছেলে। ব্যানার্জী চিনতো তাদের।
ওরা এখানে এসে থাকলো কোথায়, করলো কি করে।
বড়মা আমার পেশে এসে দাঁড়াল। কাঁধে হাত রাখলো।
কিরে তোর কাছে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পৌঁচেছে। অনিমেষদা আমার দিকে তাকাল।
আমি চুপ করে রইলাম।
আমি শুনলাম ডোমটা তিনকপি জেরক্স করেছে। সেগুলো গেল কোথায় ?
জানিনা।
যথা সময়ে পৌঁছে যাবে তাই না।
আমি কনো উত্তর দিলাম না।
তোর বৌদিকে তোর গুণের কথা সব বলে এসেছি। খবরটা আমি কাল রাতেই পেয়েছি।
সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
রাজনাথের কোন ক্ষতি যেন না হয়।
দপ করে মাথাটা কেমন গরম হয়ে গেল।
ওকে কলকাতা ছেড়ে ওর দেশে চলে যেতে বলো। গলাটা সবার কাছেই কর্কশ শোনাল।
তাহলে তোর আরও সুবিধা।
অনুপদা হেসে ফেললো।
হেসো না অনুপ ওর মুখ চোখ দেখে বুঝতে পারছো।
আমার দিকে তাকিয়ে।
ওর কিছু হলে আমি সামলাতে পারব না।
তোমাকে সামলাতে হবে না।
তার মানে!
ওর ঘুঁটি সাজান হয়ে গেছে। ইসলামভাই বললো।
আমি কিছু করিনি।
তাহলে ?
ও প্রবীরদা আর তোমাকে টার্গেট করেছে। কাল রাতে প্রবীরদার বাড়ির আশে পাশে ওর লোক ঘুরে এসেছে।
তুই কি দিবা স্বপ্ন দেখছিস।
যা সত্যি তাই বললাম।
কোথায় আছে তুই জানিস।
জানি।
প্রবীর একবার ফোন করো।
কাল থেকে ওর ফোন ওর কাছে নেই। ওকে ফোন করে পাবে না। আমার কথা বিশ্বাস না হয় ফোন করে দেখতে পার।
সেই জন্য তুই মিত্রাকে ঘুম পাড়িয়ে সারারাত জেগেছিস। ছোটমা ফড় ফড় করে উঠলো।
কালকে তুই খেতে বসে কাকে বললি, হয়েগেছে….ঠিক আছে চলে যা। দাদা বললো।
কটায় বলুনতো দাদা। অনুপদা বললো।
ধরো পৌনে বারোটা নাগাদ। তারপর ও না খেয়ে উঠে চলে গেল।
প্রবীর ওর ফোন থেকে নম্বরটা দেখো তো।
সেকিগো তোমরা জান না। বড়মা বলে উঠলো।
আবার কি হলো।
ও একটা নতুন ফোন নিয়েছে। সেটা আবার পাসওয়ার্ড দিয়ে রেখেছে। আমরা কেউ জানি না। ও ছাড়া কেউ খুলতেও পারবে না।
অনিমেষদা আমার দিকে স্থির চোখে তাকিয়ে আছে।
মিত্রা।
মিত্রা বড়মার ঘর থেকে বলে উঠলো যাচ্ছি।
কালকে এগারোটা পঁয়ত্রিশ চল্লিশ নাগাদ ঘটনাটা ঘটেছে। লাস্ট ট্রেন ছিলো শিয়ালদা থেকে।
মিত্রা কাছে এসে দাঁড়াল।
তোর কাছে ওর নতুন ফোন নম্বরটা আছে।
আমাকে দিলে তো।
তোকে দেয় নি!
বলেছে তোদের জন্য একটা নম্বর আছে। ওটায় করবি, ওটা আমার কাজের ফোন।
ওদের হাতেও একটা করে নতুন ফোন দেখলাম।
ইসলামভাই অনিমেষদার দিকে তাকিয়ে বললো।
সেই জন্য প্রবীর তোমরা কেউ ট্রেস করতে পার নি।
জানেন সামন্তদা আমি খবর পাই বারটা নাগাদ। ওখানকার থানা আমাকে খবর দেয়। তারপর অনুপকে ফোন করি। অনুপ সব ব্যবস্থা করে। প্রত্যক্ষ দর্শীদের কথায় ডাক্তার পরি কি মরি করে দৌড়ে লাইন পার হচ্ছিল। রান ওভার হয়। কেন ডাক্তার দৌড়চ্ছিল আপনি বুঝে নিন।
ঘরের সবাই চুপ চাপ, নিস্তব্ধ ঘর।
আমার ফোনটা বেজে উঠলো। সবাই উৎসুক হয়ে আমার দিকে তাকাল। আমি ফোনটা বার করে দেখলাম, তারপর মিত্রার হাতে দিয়ে বললাম, কথা বল। বলবি একটু পরে বেরবো।
মিত্রা আমার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেল।
আমি এবার বেরবো। তোমাদের আর কি জানার আছে।
কোথায় যাবি।
বড়মা ছোটমাকে নিয়ে এক জায়গায় যাব। সেখানে আগে থেকে বলা আছে।
ফিরবি কখন।
ফিরতে রাত হয়ে যাবে।
রাজনাথকে ছেড়ে দে।
দায়িত্ব তোমার, এরপর আমার কানে যদি কোন খবর আসে ও বেঁচে থাকবে না।
অনিমেষদা আমার মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকল।
তাকিয়ে লাভ নেই। আমি যা বলছি খোঁজ নিয়ে দেখ ওর লোক জন এগুলো করেছে কিনা।
আমি খোঁজ নিয়েছি। ওরা তোর ভয়ে সেল্টার নিতে গেছিল প্রবীরের কাছে।
উইথ ওয়েপনস।
বলতে পারব না।
প্রবীরদা।
আমার সঙ্গে কাল রাতে শেষ কথা হয়েছে। ঘটনাটা ঘটার পর থেকে আর কথা হয় নি।
অবতার সাগির কোথায় ? ইসলামভাই বললো।
তোমার জেনে লাভ।
ইসলামভাই হেসে উঠলো।
ওরা বাচ্চা ছেলে কোথায় কি করে বসবে।
তোমার থেকে বেশি বুদ্ধি রাখে।
সেতো এখন টের পাচ্ছি।
দামিনী মাসি মুখে কাপর চাপা দিয়ে হাসছে।
আমি উঠে দাঁড়ালাম। মোবাইলটা পকেট থেকে বার করলাম স্যুইচ অন করে পাসওয়ার্ড দিলাম। তারপর ডায়াল করলাম।

ওরা আমাকে স্থির চোখে সবাই লক্ষ করছে।
 
বলো।
কোথায় রেখেছিস।
ঠিক জায়গায় আছে। রিপোর্ট পেয়েছ।
এখনো আসে নি। শোন এখন পাঠাতে হবে না। পরে নিয়ে নেব। রাজনাথকে পার্টি অফিসের সামনে নামিয়ে দে।
ঘন্টা দুয়েক দেরি হবে।
কটার সময় বল।
একটা বাজবে।
আচ্ছা। প্রবীরদার বাড়ি থেকে চোখ সরাবি না।
ওখানে লোক আছে।
আর গুলোকে পেয়েছিস।
নেপলা ধরে বিট দিয়ে দিয়েছে। বললো ওদের চেনে।
এখানকার।
হ্যাঁ।
পকেটে পয়সা আছে।
না।
তাহলে আবিদের কাছ থেকে নিয়ে নে। ওর কাছে রাখা আছে। রাজনাথকে ছেড়ে দিয়ে মাসির ওখানে গিয়ে কাজগুলো দেখশুনো কর।
আচ্ছা।
ফোনটা কেটে দিলাম।
আমি চেয়ারে এসে বসলাম।
অনিমেষদা মাথা দোলাচ্ছে আর হাসছে।
অনিমেষদা মিত্রার দিকে তাকাল।
কিরে কথা হলো।
হ্যাঁ।
কখন যাবি বললি।
বললাম বুবুন একটা মিটিং করছে মিটিং শেষ হলেই যাব।
দামিনী একটু চা করো। দিদি আপনারা রেডি হয়ে নিন।
আমার দিকে তাকিয়ে।
তুই বিশ্বাস কর ও প্রবীরের কাছে সেল্টার নিতে চেয়েছিল।
আমাকে বিশ্বাস করাতে পারবে না। তুমি অনেকক্ষণ থেকে এক তরফা কথা বলে চলেছ। আমাকে বলতে পারবে এই কেসে ও যামিন পায় কি করে ?
আইন বলছে ও যামিন পেতে পারে তাই পেয়েছে।
আমি বলছি তোমাদের লবির বিচারকটা সুবিধার নয়। আমাকে একটা কথা সত্যি করে বলো, ওর প্রতি তোমাদের এতো দুর্বলতা কেন ?
তোকে বলবো। পার্টির ভেতরের সব কথা তোকে বলা যায় না। বলতে পারিস রাজনীতি করছি। আমি তোকে কথা দিচ্ছি একটু সময় দে।
অনিমেষদা এমনভাবে কথা বললো আমি কোন কথা বলতে পারলাম না।
তুই বিশ্বাস কর অনুপ প্রবীর মনিটরিং করছে। মাঝে মাঝে ওদের চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে। কথা দিচ্ছি এবার হবে না।
এই প্রসঙ্গে আর একটা কথা বলে রাখি ও আরও দু’চার জায়গায় চোখ দিয়েছে। সেটা আমি বুঝতে পেরেছি। এটা ওকে জানিয়ে দেবে। ও যদি ভেবে থাকে অনির দুর্বল জায়গা গুলো ও জেনে ফেলেছে তাহলে ও ভুল করছে।
তুই সব মনগড়া কথা বলছিস।
আমি পাটিগণিতে কোনদিন ভালো ছাত্র ছিলাম না। নম্বরও পাই নি। নম্বর পেতাম বীজগনিতে। ওখানে অঙ্ক মেলাতে গেলে সব সময় একটা এক্স ধরতে হয়।
অনিমেষদা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। আমি যে এ ভাবে সপাটে জবাব দিতে পারি অনিমেষদা বিশ্বাস করতে পারে নি।
অনুপদা, প্রবীরদা হেসে ফেললো।
বয়স হয়েছে রাজনীতি করতে করতে চুল পেকে গেল। তোর কথা বোঝার ক্ষমতা আছে।
আমি অনিমেষদার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
তুই যা ভাবছিস তা কখনো ঘটবে না। তাহলে তোর অনিমেষদা চুপচাপ বসে থাকত না।
এর আগেও তোমাকে সাবধান করেছি তা সত্বেও তুমি ভুল করেছ।
পার্টির কাজ করতে গেলে দশজনের ওপর নির্ভর করতে হয়। তারা যদি ভুল ইনফর্মেসন দেয় কি করবো।
তাড়িয়ে দেবে।
সংগঠন চালাতে গেলে পার্টি থেকে তাড়িয়ে দিয়ে সমস্যার সমাধান করা যায় না। তাকে পার্টির মধ্যে রেখে রাজনীতি দিয়ে সেই সম্যার সমাধন করতে হয়। তোর অঙ্কটা অবশ্য আলাদা।
সবাই আমাদের কথা অবাক হয়ে শুনছে। ভাবছে অনি কার সঙ্গে এই ভাবে কথা বলছে। যার মুখের ওপর কথা বলতে গেলে লোকে দশবার ভাবে। তাকে অনি এই ভাবে ক্রশ করছে।
এক সময় পার্টিটা আমি মন দিয়ে করেছি।
তুই পার্টি করিস নি। তুই পার্টিকে একান্ত ভাবে ভালবসেছিস। আজও ভালবাসিস। তাই আমার কথা ভাবিস প্রবীরের কথা ভাবিস। পার্টির স্বার্থ দেখিস। কিছু নোংরাম দেখলে আমার কাছে ছুটে যাস। নিজের চেষ্টায় পার্টির সংগঠন তৈরি করিস। বলতে পারিস তাদেরকে আমাদের পার্টির প্রতি একনিষ্ঠ হতে অনুপ্রেরণা দিস।
আমরা তোকে বলতে যাই নি। কজন নিজে থেকে দায়িত্ব নিয়ে এই কাজ করে। তুই যদি ভাবিস আমি বুঝি না। তাহলে ভুল। আমি বুঝি সময়ের অপেক্ষা করি।
তোমার সময়ের অপেক্ষা করতে করতে অনেক কিছু ক্ষতি হয়ে গেছে।
তোর কথা মেনে নিচ্ছি। তবে কিছুটা রিভাইভ করেছি। তুই এতো খবর রাখিস ওই খবর রাখিস না, এটা আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।
আমি চুপ করে রইলাম।
তুই এই কদিনের মধ্যে ভালোপাহাড়েও গেছিলি। নিশ্চই শুনেছিস আমি অনুপকে শ্যামের কাছে পাঠিয়েছিলাম। অনুপ কিছুটা কাজ করে এসেছে। আবার যাবে।
সবাই একবার আমার দিকে অবাক হয়ে তাকাল।
ও কবে ভালোপাহাড়ে গেল ?
বড়মা অনিমেষদার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো।
আপনারা ওকে ঠিক চিনতে পারেন নি দিদি। অনুপদা বললো।
ছোটমা চা নিয়ে এলো।
কিগো দিদি ভালোপাহাড়ের কথা শুনলাম।
ছোটমা সবাইকে চায়ের প্লেট এগিয়ে দিল।
তুই একবার ভেবে দেখ ছোট, অনি এর মধ্যে নাকি ভালোপাহাড়ে গেছিল। বড়মা হতাশ গলায় বললো।
অনিমেষদা চায়ে চুমুক দিল। ডাক্তারদাদার দিকে তাকাল।
আচ্ছা সামন্তদা অনুপ আমার একেবারে কাছের মানুষ এটা আপনি মানেন।
না হলে তুমি অনুপকে সঙ্গে নেবে কেন।
অনুপ যদি অনির ইনফর্মার হয় এবং আমার সব গোপন খবর অনির কাছে পৌঁছে দেয় আপনার ক্ষমতা আছে ইনট্রগেট করার।
কি বলছো তুমি!
আপনাকে একটা ছোট্ট উদাহরণ দিলাম।
আর একটা কথা বলি। একটু মন দিয়ে শুনুন। ওর অফিসের বটাদা ওর সবচেয়ে বড়ো ইনফর্মার। এটা কম বেশি সবাই জানে। তবে কি বটাদার সামনে কেউ আলচনা করবে।
না।
তাহলে বটাদা সব জেনে ওকে ইনফর্ম করে কি করে ?
ডাক্তারদাদা ঘন ঘন চায়ে চুমুক দিল।
এই বার বলুন ওর কথা কিছু বুঝলেন।
তারমানে ও তো আমার পেছনেও লোক লাগিয়ে রেখেছে!
সকলে হেসে ফেললো। আমি মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছি।
এরকম অসংখ্য উদাহরণ আপনাকে দিতে পারি। আমি সংগ্রহ করেছি, এখনও করছি বলতে পারেন। এখন আমি নিয়ম করে ওর পেছনে এক ঘন্টা করে সময় দিই।
অনিমেষদা চায়ে চুমুক দিল।
আপনি হঠাৎ করে ওর কথা বুঝতে পারবেন না। ওর কথাগুল আপনাকে মনে রাখতে হবে। তারপর একা একা একটু ভাবলে উত্তর পেয়ে যাবেন।
তুমিতো আমার পথ ধরেছ। আমিও ওকে একই ভাবে স্টাডি করি। ডাক্তারদাদা বললো।
তাহলে বুঝুন।
দিদি, ছোট, অমিতাভদা, মল্লিক ওকে কি করে বুঝবে। মিত্রাকে আমি খরচের খাতায় ধরি।
আমি উঠে দাঁড়ালাম। জামাকাপরটা চেঞ্জ করে আসি ?
ঘরে একটা হাসির রোল উঠলো।
যা।
অনিমেষদা এমন ভাবে বললো আবার সকলে হেসে ফেললো।
আমি ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।
নিচে নেমে দেখলাম দাদা মল্লিকদা টেবিলে বসে খাচ্ছে। আর সবাই চলে গেছে। বাইরের বাগানে দুটো গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। রবীন ইসমাইল দুজনেই আছে। বুঝলাম ইসমাইল দাদাদের নিতে এসেছে। ঘড়ির দিকে তাকালাম। দেখলাম সাড়ে এগারটা বাজে।
বড়মা ছোটমা মিত্রা কাউকেই দেখতে পেলাম না। বুঝলাম সব কাপর পরতে ব্যাস্ত। আমি সোফায় এসে বসলাম।
আজ তাহলে ওপাশে যাচ্ছিস না।
মনে হয় হবে না।

তুই কিন্তু অনেক দিন কিছু দিস নি।
 
দেবো একটু অপেক্ষা করো।
ব্যানার্জীর ব্যাপারটা কি করবি।
একটা বক্স করে একটা নিউজ করে দেবে আমরা দুঃখিত।
ওর বডিটা সুনীত হ্যান্ড ওভার করেছে। ওর সম্বন্ধে কিছু ভাবলি।
ও নিয়ে তুমি ভেব না। আগে লিগ্যালি কি এ্যাকসন নেয় দেখো তারপর। সুনীতদার ফাইল রেডি করে হিমাংশুর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। এবার আমি আমারটা ডিমান্ড করে চিঠি দিতে বলেছি।
কালকে কিংশুক গন্ডগল করেছে। টিনা শো কজ করে দিয়েছে।
তার জবাব দিতে না পরলে টিনাই ব্যবস্থা করবে।
তুই কি করে জানলি।
জানলাম।
মেয়েটা যে এতো স্ট্রং মেন্টালিটির আগে বুঝতে পারি নি।
ওকে একটু হেল্প করবে। এখনো ঠিক ঠিক সড়োগড়ো হয়ে উঠতে পারে নি।
তোর সেই আগের গাড়ির ড্রাইভার তাপস এসেছিল।
কি বলেছে।
ওকে নিয়ে গন্ডগোল করে রেখেছে।
ওটাও টিনা সামলে নেবে। টিনাকে বলে দিয়েছি।
ঠাকুরের ব্যবস্থা কি করবি।
আমার সঙ্গে বসতে বলবে। আমি না যাওয়া পর্যন্ত যেমন চলছে তেমন চলবে।
ঠাকুর বলেছে তার পক্ষে সম্ভব নয়।
ছেড়েদেবে প্রচুর লোক আছে।
একটা গন্ডগোল পাকাবার বন্দোবস্ত করছে।
জানি।
তুই সব জানিস!
জানি বলেই উত্তর দিতে পারছি। তুমি এক কাজ করবে ঠাকুরের হিসাবটা করে রাখতে বলবে টিনাকে।
দাদা খাওয়া থামিয়ে আমার দিকে তাকাল।
কিরে তুই এই জামা প্যান্ট পরে যাবি।
ছোটমা কথা বলতে বলতে আমার সামনে এসে দাঁড়াল।
আর কিছু বলবে।
ওকে তারাবার মতলব করছিস।
অনেকদিন আগে থেকে ঠিক করেছি। তাই একটু আধটু ঝামেলা করছে।
সামলাবে কে।
তিনজন লাইন দিয়ে আছে। তোমাকে ভাবতে হবে না।
ছোটমা এসে থমকে দাঁড়িয়ে পরেছে। মল্লিকদার সঙ্গে চোখের ইশারায় কথা হলো।
বুঝলাম ছোটমাকে এখন কথা বলতে মানা করছে।
তোকে একটা কথা বলবো।
বলো।
তাপস ছেলেটাকে যদি দায়িত্ব দিস কেমন হয়।
আমি একবার দাদার দিকে তাকালাম।
দাদা নিজে থেকে বলছে, না কারুর কাছ থেকে শুনে বলছে।
তাপস কি তোমায় কিছু বলেছে ?
ছেলেটার সঙ্গে কথা বলে ভালো লাগল। মনে হলো স্বভাবটা ভালো।
পয়সার মুখ দেখলে সকলের স্বভাব বদলে যায়। আমাকে দেখছ না। তোমাকে আগের মতো আর লেখা-ফেখা দিচ্ছি না।
দাদা আমার দিকে একবার বিরক্তিভরা চোখে তাকাল।
দেখলি দেখলি মল্লিক কি কথা থেকে ও কি কথায় চলে এলো।
মল্লিকদা হেসে ফেললো। ছোটমাও হাসছে।
তোমাকে এ নিয়ে ভেবো না।
আমি ভাবতে চাই না। তোর বড়মাই খোঁচায়, তুমি একটু ওর চাপ নিতে পার না।
ওটা তোমার সঙ্গে বড়মার ব্যাপার, এর মধ্যে আমি ঢুকবো না।
বলেদিস তোর বড়মাকে, আমাকে যেন খ্যাচ খ্যাচ না করে।
কি বলছেরে অনি। বড়মা ঘর থেকে বাজখাঁই গলায় চেঁচিয়ে উঠলো।
আমার সঙ্গে কথা হচ্ছে, তুমি এর মধ্যে ঢুকছো কেন।
এবার দাদাও হসে ফেললো।
মিত্রা ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। সাজগোজ হয়ে গেছে। ওর দিকে তাকালাম।
এরপর বেরলে আর যাওয়া যাবে না।
তোকে একটা কথা বলবো।
আবার কি হলো ?
জ্যেঠিমনি দিদভাই যেতে চাইছে। ওরা কোনদিন দেখে নি।
সবাইকে মোটামুটি গাওনা গেয়ে দিয়েছিস।
আমি কি করবো বড়মা যদি জিজ্ঞাসা করে।
সত্যবাদী যুধিষ্ঠির।
খেঁচাচ্ছিস কেন।
রেডি হতে বল, যাওয়ার সময় তুলে নিয়ে যাব।
আমি বলে দিয়েছি।
কৃতার্থ করেছ।
বড়মা ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। পরিপাটি করে সেজেছে। দামী একটা তাঁতের শাড়ি পরেছে।
খুব মাঞ্জা দিয়েছ দেখছি।
দাদা মল্লিকদা হাসলো।
মন্দিরে যাব তাই একটু সেজেছি।
এটা মন্দিরে যাওয়ার সাজ হয়েছে ? বিয়ে বাড়ির সাজটা একবার দেখাবে তো।
তোর বিয়ের সময়েই সেজেছিলাম। তুই এটা পরে যাবি!
তোমরা যখন আমাকে সঙ্গে নিয়ে যাবে তখন তোমাদের মতো পোষাক পরবো, নাহলে আমি আমার মতো।
তাহলে যাব না।
যেও না। আমি একা চলে যাব।
আচ্ছা দিদি যখন বলছে চেঞ্জ করে নে। মল্লিকদা বললো।
বাধ্য হয়ে চেঞ্জ করলাম। সবাই এক সঙ্গে বেরিয়ে এলাম। শ্যামবাজারে এসে জ্যেঠিমনিদের তুললাম। ওরা সবাই রেডি হয়েছিল। মিত্রা ইসিকে সামনের সিটে বসতে বললাম মাঝে ছোটমা বড়মা জ্যেঠিমনি। পেছনে আমি পিকু ভজুরাম।
রবীনকে বললাম একটা মিষ্টর দোকান দেখে দাঁড় করাস।
চিত্তরঞ্জন থেকে নিয়ে নাও।
আবার এতটা ঘুরতে হবে।
রাস্তায় যদি আবার পছন্দ মতো না পাই।
ঠিক আছে তাই কর।
অগত্যা আবার গাড়ি ঘুরিয়ে চিত্তরঞ্জনে এলাম। মিষ্টি কেনা হল।
আমার মিষ্টি কেনার ধরন দখে বড়মার চোখ ছানাবড়া।
কিরে এতো মিষ্টি কিনছিস কেন।
তোমার যেনে লাভ।
আমরা খাব না। মিত্রা বলে উঠলো।
জ্যেঠিমনি হাসছে।
ছাড়োনা মিনু ও যা করছে করতে দাও।
রাস্তায় টুকরো টুকরো কথা খুনসুটি করতে করতে আমরা পৌঁছে গেলাম। বেশিক্ষণ সময় গেল পিকুর পেছনে। ওর প্রশ্নের আর শেষ নেই। আমি যতটা সম্ভব ওর প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করলাম।
মন্দিরে ঢোকবার আগে গৌতমদাকে একবার ফোন করলাম।
আজ উৎসবের দিন চারদিকে বেশ ভিড়। লোক থিক থিক করছে। গৌতমদা যথা সময়ে গাড়ির কাছে এসে হাজির হলেন। গাড়ি রাখার একটা সুবন্দবস্ত করে দিলেন।
আমি সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলাম। গৌতমদা একেবারে গদো গদো। পায়ে পায়ে মন্দিরের দিকে এগোলাম।
বড়মাকে বললাম জানো বড়মা এই একজন মানুষ যার কোন শিষ্য নেই সবাই ভক্ত। তুমি যদি মনে করো তাহলে তুমি ভেবে নিতে পার ইনি তোমার গুরু দেব। নচেৎ নয়। ব্যাপারটা ভাড়ি মজার তাই না।
ওরা আমার কথা শুনে দাঁড়িয়ে পরেছে। ভজুরাম পিকু একটু এগিয়ে গেছে।
দেখো এতো লোক সমাগম হয়েছে আজকের উৎসবে কেউ কিন্তু এনার শিষ্য নন।
অনি ভেতরে চলো এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গল্প করলে হবে না। ভাতরে গিয়ে বড়মাকে সব দেখাও গল্প করো। গৌতমদা বললো।
আমি কেন ? তুমি আছো। আমি এই মন্দিরের ভক্ত নই।
তাহলে এসেছ কেন।
দুচোখ ভরে মানুষ দেখতে এসেছি। কিসের টানে মানুষ এখানে আসে।
দেখছেন বড়মা, ওর কথা শুনছেন। এই মন্দিরটা যখন তৈরি হচ্ছে। তখন ওইই প্রথম কাগজে হাইলাইট করে। কেন করেছিল ওকে একবার জিজ্ঞাসা করুণ।
এই তুমি পুরনো কাসুন্দি ঘাঁটতে শুরু করলে। চলো খিদে লেগেছে।
আগে বিগ্রহ দর্শন করো তারপর খাওয়া দাওয়া।
আমরা সবাই মন্দিরে এলাম। নাটমন্দিরে লোক গিজ গিজ করছে তিল ধারণের জায়গা নেই। আমরা যেহেতু গেস্ট গৌতমদা ওদের ভেতরের দরজা দিয়ে নিয়ে গেল। আমি বাইরে রইলাম।
শ্বেত পদ্মের ওপর গোমুখাসনে একটা কাঠের তক্তায় হেলান দিয়ে তিনি বসে আছেন। শ্বেতশুভ্র পোষাক। জটাজুট ধারী। কিন্তু চোখ দুটোর মধ্যে অসম্ভব দীপ্তি। আমি বেশ তাড়িয়ে তাড়িয়ে বিগ্রহ মূর্তিটা দেখছিলাম। একেবারে একা।

জীবনে একটা মানুষ কতটা কৃচ্ছসাধনা করলে এই জায়গায় পৌঁছতে পারেন তার কথাই ভাবছিলাম।
 
স্বপ্নে দেখা পীরসাহেবের মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো। পক্ককেশ শুভ্রবসন। ফর্সা টকটকে রং। শরীর থেকে একটা জ্যোতি বেরিয়ে আসছে। তার চোখ দুটোর মধ্যেও অসম্ভব রকমের দীপ্তি চোখে পরেছিল। অশ্বিনীকাকার মুখ থেকে গল্প শুনেছিলাম। তারপর নিজের মতো করে ভেবে নিয়েছিলাম। তাই হয়তো ওরকম দেখেছিলাম।
তাঁর কোন ছবি আমি দেখি নি। এনাকে সামনা সামনি দেখছি। কোথাও কোন অমিল খুঁজে পাচ্ছিনা। স্থান কাল পাত্র ভেদে এনারা আলাদা আলাদা বিরাজ করছেন। দুজনেরি মত পথ এক। হিংসা নয় ভালবাসা। মানুষকে ভালবাসা দিয়ে জয় করো, হিংসা দিয়ে নয়।
অনি তুই তাহলে কি করছিস।
কেন, ধর্ম সংস্থাপনার্থায় সম্ভাবামি যুগে যুগে।
আমি সত্যের পূজা করছি। সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছি। গীতায় এর ব্যাখ্যা দেওয়া আছে। আমি নিজে কোন অন্যায় করছি না। দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন করছি।
তোর মনের মধ্যে এতো কন্ট্রাডিক্টরি কেন। মনে হচ্ছে বলিষ্ঠতার অভাব।
দিলে এতো সুন্দর মনটাকে মাটি করে।
নিজে নিজে হাসলাম।
বাবা লোকনাথ। কথাটার অর্থ কি ? যিনি লোকের হিত করেন ? মানে যিনি সাধারণ মানুষের সবসময় ভাল চান ? তিনিই লোকনাথ ? তর্ক বিতর্ক থাকতে পারে। সাদা চোখে এটাই বোঝায়। যখন এই মন্দিরটা নিয়ে লিখেছিলাম, তখন বেশ কিছুদিন ওনার সম্বন্ধে পড়াশুন করেছিলাম। লেখাটা ছাপা হবার পর প্রচুর চিঠি এসেছিল অফিসে।
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অবাক চোখে দেখছি, কাতারে কাতারে মানুষ ভক্তি সহকারে মাথা নোয়াচ্ছেন। প্রত্যেকেরি চোখে মুখে না পাওয়ার যন্ত্রণা স্পষ্ট। সবাই তার মনের আকুতি বিগ্রহের পদযুগলে সমর্পণ করছে। বেশ লাগছিল।
কিরে তুই ভেতরে গেলি না ?
ফিরে তাকালাম। মিত্রা পাশে দাঁড়িয়ে হাঁ করে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
প্রণাম করবি না ?
করেছি।
কোথায় করলি!
মনে মনে।
ওরা সবাই একে একে এলো।
আঙ্কেল আমি দুবার চন্নামিত্ত খেয়েছি।
কেনরে।
কি মিষ্টি।
মিত্রার দিকে তাকালাম।
এই প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে পারবি।
ইসি আমার দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে।
তোরা ঠাকুর ঠাকুর করিস। ওর সঙ্গে ঠাকুরের মানসিক বন্ধনটা একবার চিন্তা কর। তাহলেই সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবি।
তোর গভীরতা দিয়ে তুই সকলকে দেখিস কেন।
গৌতমদা বললো।
ঠিক বলেছো, গৌতমদা মাঝে মাঝে আমার অবস্থানটা আমি নিজেই গুলিয়ে ফেলি।
আগে খেয়ে নে। তারপর ঘুরে ঘুরে বড়মাদের দেখাস।
তুমিকি আমাদের জন্য স্পেশাল ব্যবস্থা করেছো।
করবো না। ম্যাডাম আজকে আমাদের গেস্ট।
তাহলে ম্যাডামকে নিয়ে যাও।
এইতো, তুই কথাটা শেষ করতে দে।
গৌতমদা হাসছে।
জান বড়মা, গৌতমদা এই মন্দিরের ট্রস্টিবোর্ডের একজন কত্তা।
বড়মা হাসছে।
এই মন্দিরটা হিন্দুদের এটা তুমি নিশ্চই অবিশ্বাস করবে না।
বড়মা মাথা দোলাচ্ছে ওরা আমার দিকে সবাই তাকিয়ে।
মজার ঘটনা কি জান। এই মন্দিরের ট্রাস্টি বোর্ডের যিনি প্রধান তিনি একজন মুসলমান।
চলতে চলতে বড়মা থেমে গেল, ওরাও সবাই দাঁড়াল।
নিশ্চই আমার কথাটা শুনে শক্ড হলে।
বড়মা আমার দিকে তাকিয়ে।
তুমি ভাবছো অনি কি বলতে চায়।
বড়মার গভীর চোখ আমার প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে।
না আমি তেমন কিছু বার্তা তোমার কাছে পৌঁছে দিচ্ছি না। খালি এই টুকু বলবো তোমার মনের মধ্যে যদি কোন বিভেদ না থাকে তাহলে তুমি পরিপূর্ণ মানুষ।
যাঁদের আমরা এখন দেবতা বলে পূজো করি তারা কিন্তু একদিন সাধারণ মানুষ ছিলেন। বলতে পার তোমার আমার মতো গেহস্থ। তাদের জীবনধারা, চাল-চলনে কোন বাঁধন ছিল না। তারা সবখানেতেই বিরাজমান।
জাতপাতের বালাইটা এখন যেমন আছে তখনও ছিল। বরং অনেক বেশি। কোন অংশেই সেটা কম ছিল না। খুব ভালো করে ভেবে দেখবে। যাঁদের আমরা সাধক বলছি। তাদের কিন্তু এই সবের কোন বালাই ছিল না।
কেউ তখন তাঁকে প্রশ্ন করে নি। আপনি কেন ওখানে গেছেন।
আবার কোন পন্ডিত বিজ্ঞজন এসে বলেন নি, আপনি যখন ওখানে গেছেন তখন আপনি সমাজচ্যুত আপনার জাত গেছে।
আর যদি কেউ প্রশ্নও করে থাকে, তিনি ঠিক কি উত্তর দিয়েছিলেন তার সাঙ্গ পাঙ্গরা কেউ সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করে যান নি। কেন করেন নি বলতে পারব না। তবে আমি ব্যক্তিগত ভাবে অনুভব করি তাদের মধ্যে কোন বিভেদ ছিল না।
রামকৃষ্ণের কথা ভাবো। একটা গ্রামের ছেলে। মাঠে ঘাটে ঘুরে বেড়াত। তার নিজের খেয়াল খুশি মতো। পৈতের সময় ভিক্ষে মা করলেন একজন নীচু জাতের মেয়েকে। সে নাকি তার ভিক্ষে মা হবে। বাচ্চা ছেলের বায়না। তখনকার সমাজের মাথারা ওই বাচ্চাটার জেদ বলো বায়না বলো মেনে নিল।
তারপর তিনি চলে এলেন পুরুত গিরি করতে কলকাতার দক্ষিণেশ্বরে। মানুষ দেখলেন। তাদের আচার আচরণ দেখলেন। মাতৃমূর্তি বিগ্রহকে তিনি তাঁর মায়ের আসনে বসালেন। সাধনা করলেন। কিসের সাধনা ?
কথিত আছে তিনি মুসলমান ধর্ম নিয়ে মসজিদে গিয়ে নমাজ পরেছেন। আবার চার্চেও গেছেন। আবার তন্ত্র মন্ত্রের সাধনাও করেছেন। তখনকার দিনের শিক্ষিত ডেঁপো ছেলেরা তাঁকে গিয়ে বিরক্ত করতো। তার মধ্যে বিবেকানন্দও ছিলেন। ছেলেটাকে তিনি ভালবেসে ফেললেন।
বিবেকানন্দ যখন চাচার হোটেলে বসে রুটি দিয়ে গো-মাংসো খেতেন, তখন রামকৃষ্ণের কাছে অনেকে গিয়ে নালিশ করতো, তোমার নরেন চাচার হোটেলে বসে গো মাংস খাচ্ছে। তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, ওর সহ্য হয় তাই খায়, তোর সহ্য হলে তুই খা।
এইসব সাধারণ ব্যাপার গুলো একটু ভাব, দেখবে তিনি অত্যন্ত সাধারণ কথা সাধারণ ভাবে বলেছেন। কিন্তু এর মধ্যেই তাঁর জীবনদর্শনটা উঁকি ঝুঁকি মারছে। এটা নিয়ে কেউ কিন্তু কোনদিন একফোঁটাও ভাবে নি।
বড়মা আমাকে আবেগে বুকে জড়িয়ে ধরলো।
জান, এই দিকপাল মানুষগুলো কখনো বলে যান নি, তোমরা আমাকে মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করে পূজো করো। আমরা বোকা, তাই আমরা মন্দির বানিয়ে এদের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে দেবতা বানিয়ে দিয়েছি। এঁরা কিন্তু সব সময় তাঁদের কাজের পরিমন্ডলের মধ্যে দিয়ে বলেগেছেন, আমি যে পথের দিশা তোমাদের দেখালাম, তোমরা সেই পথে হেঁটে মানুষের উপকার করো। মানুষের পাশে দাঁড়াও।
আমার একটাই দুঃখ বড়মা, গীতাটা আমরা কেউ ভালো করে মন দিয়ে পড়ি না। কেউ মারা গেলে কিংবা শ্রাদ্ধের সময় শ্রদ্ধা সহকারে দান করি। আর ঠাকুরের সিংহাসনে রেখে দুবেলা ফুল চন্দন সহকারে পূজো করি। কিন্তু গীতাটা যদি আমরা বার বার পড়ি, তার মর্মোদ্ধার করি, তাহলে আমরা সার্থক জীবন রচনা করতে পারি। সেইটা সবচেয়ে বড় পূজো। যিনি ওটা লিপিবদ্ধ করেগেছেন তাঁরও পরিশ্রম সার্থক।
জ্যেঠিমনি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের পলক পরছে না।
কিগো কি ভাবছো। অনিটা কি পাগল, তাই না।
আমার কথায় জ্যেঠিমনি সম্বিত ফিরে পেল।
তোর কথাগুলো ভাবছিলাম।
আমার কথা! কেন ?
সত্যিতো কথামৃত আমি পড়েছি। লোকনাথ বাবার জীবনী পরেছি। কিন্তু তোর মতো করে ভাবি নি। ভেবেছি বয়স হলে একটু ধম্মেকম্মে মতি হয়, আমারও হয়েছে হয়তো।
আমি বলছিনা তুমি আমার মতো করে ভাব। তবে দেখবে তুমি তাদের দেবতা না মনে করে যদি তোমার ঘরের একজন মেম্বার করে নাও, তাহলে তাদের কাজকর্ম চিনতা ভাবনার তুমিও সামিল হয়ে যাবে। দেবতা ভেবে ফেললেই তার স্থান হয়ে যাবে ঠাকুর ঘরের সিংহাসন। তোমার সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি হয়ে যাবে।
তোর সব সময় যুদ্ধং দেহি মনোভাব এতো ভাবিস কখন।
ইসির কথায় চোখ ফেরালাম।
এই জন্য তোর ছুটকি মনে মনে ভীষণ গালাগাল দেয়।
দেখলে বড়মা দেখলে, শেষমেষ সেই আমাকে খোঁচা দিল। মিত্রা বললো।
বড়মা হাসলো। ছোটমা আমার দিকে তখনো তাকিয়ে আছে। আমি মাথাটা ধরে একটু ঝাঁকিয়ে দিলাম।
কিগো অনির কথার ঘোর এখনো কাটে নি। অনি সব সময় খালি বক বক আর বক বক।
ছোটমা চুপ করে আছে। আমি ছোটমাকে জড়িয়ে ধরে হাঁটতে আরম্ভ করলাম।

খাওয়ার জায়গায় এলাম। গৌতমদা আমাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করেছে। কাছে আসতেই সবার সঙ্গে আমাদের আলাপ করিয়ে দিলেন। সকলে গদো গদো এই রকম একদল গেস্ট আজকের দিনে উপস্থিত হতে পারে ভাবতে পারে নি।
 
তৃপ্তি সহকারে সকলে খেল। ওরা সকলেই কম বেশি চেয়ে খেল। নিরামিষ খাবার। বড়মা জ্যেঠিমনি আমার গুণাগুন নিয়ে বিচার বিবেচনা শুরু করে দিয়েছে। আমি শারীরিক ভাবে নাস্তিক কিন্তু মনে মনে প্রবলভাবে আস্তিক।
খাওয়া দাওয়ার শেষে আমি ওদের নিয়ে ঠাকুরের আতুঁড়ঘর, বাসস্থান তার পূজা করা বিগ্রহ ঘুরে ঘুরে দেখাতে লাগলাম টুকরো টুকরো গল্প বলি ওরা অবাক হয়ে শোনে। পায়ে পায়ে আমবাগানে এসে দাঁড়ালাম। ইসি মিত্রা ভজুরাম পুকুরের ধারে গেল যারা বাঁকে করে জল আনছে তাদের জল ঢালা দেখতে।
আমি বড়মার মুখো মুখি দাঁড়ালাম। দুপাশে জ্যেঠিমনি ছোটমা। বড়মার কাঁধে হাত রাখলাম। চোখে চোখ রাখলাম। কোন ভনিতা নয় একে বারে সরাসরি কথা বললাম।
আচ্ছা বড়মা এখান থেকে তোমার বাড়িটা কতোদূর।
বড়মা আমার চোখে চোখ রাখলো।
এ চোখের ভাষা বড়মা পড়ে ফেলেছে। কেন অনি এ কথা বলছে।
জ্যেঠিমনি ছোটমা আমার দিকে তাকিয়ে। চোখে অবাক বিষ্ময়।
বড়মার চোখ জলে টল টল করে উঠলো।
এই মন্দিরে আগে কখনো এসেছো।
বড়মা মাথা দোলাল। না।
এই জায়গায় আগে কখনো এসেছো।
বাবার হাত ধরে একবার এসেছিলাম।
দাদুর শরীর খারাপ। আমি এখান থেকে দাদুর কাছে যাব। উনি তোমার জন্য সকাল থেকে অপেক্ষা করছেন।
জ্যেঠিমনির চোখ যেন ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে। ছোটমার চোখে কে যেন হাজার পাওয়ারের বাল্ব জেলে দিয়েছে।
বড়মা আমার বুকে মাথা রেখে ডুকরে কেঁদে উঠলো।
কাঁদলে হবে না বড়মা।
বড়মা আমাকে আরও জোরে জাপ্টে ধরে কেঁদে উঠলো।
এই জায়গায় দেবতাদের মতো অনির চোখ দুটোও পাথরের, একফোঁটাও জল পরবে না। আমি দাদুকে কথা দিয়েছি। তোমাকে নিয়ে যাব।
বাবা আমাকে কোনদিন ক্ষমা করতে পারবে না।
উনত্রিশ বছর ধরে যে মানুষটা আত্মীয় স্বজনদের কাছে তার সন্তানের খোঁজ খবর নিয়েছে তার কতটুকু খবর তুমি রেখেছ।
আমি বাবার সম্মান রাখতে পারি নি। বাবার কাছে আমি মৃত।
তবু তুমি তাঁর সন্তান। দাদু দিদা দুজনেই অসুস্থ।
আমি জানি।
জ্যেঠিমনি ছোটমা দুজনেই বড়মার পিঠে হাত রেখেছে। ইসিরা কাছে এসে দাঁড়াল। বড়মার অঝোড়ে কান্নাদেখে প্রথমে একটু অবাক। মিত্রা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পেরেগেছে ঘটনা কি ঘটেছে। আমি নিথরের মতো দাঁড়িয়ে আছি।
আঙ্কেল তুমি দিদাকে বকেছো।
পিকুর দিকে তাকালাম। হাসলাম।
দুষ্টুমি করেছে তাই বকেছি।
বেশ করেছ। মাও আমাকে বকে।
বড়মা আমার বুক থেকে মুখ তুলে পিকুর দিকে তাকাল। চোখ ছলছলে। তবু হেসে ফেললো।
আমি ওদের কছা থেকে একটু দূরে সরে এলাম। গৌতমদাকে একটা ফোন করলাম। অনুরোধ করলাম, আমার জন্য যদি একটুপ্রসাদ প্যাক করে দাও খুব ভালো হয়। আমরা বেরিয়ে যাব। গৌতমদা কথা রেখেছিল। কিচুক্ষণের মধ্যে নিজে গাড়ির সামনে এসে প্রসাদ দিয়ে গেল।
গাড়িতে ওঠার সময় বড়মা বললো তুই আমার পাসে এসে বোস।
আমি বড়মার দিকে একবার তাকালাম। বড়মা জ্যেঠিমনির মাঝে চাপাচাপি করে বসলাম। বড়মা আমার হাতটা চেপে ধরে আছে। কারুর মুখে কোন কথা নেই। রবীনকে বললাম সামনে একটা চৌমাথা পরবে ওখানে গিয়ে গাড়িটাকে ডানদিকে টার্ণ করবি।
বড়মা আমার কাঁধে মাথা রেখেছে। আর একদিকে জ্যেঠিমনিও আমার কাঁধে মাথা রেখেছে। বুঝতে পারছি এদের ভেতরকার টেনসন। দুজনেরি ভেতরটা তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে। উনত্রিশ বছর আগের একটা দিন।
দাদা এই রাস্তায়।
হ্যাঁ। মিত্রা।
বল।
চিনিয়ে নিয়ে যেতে পারবি।
মিত্রা পেছন ফিরে চোখের ইশারায় আমাকে বললো পারব।
বড়মা ছোটমা দুজনেই আমার হাতটা আরও জোড়ে চেপে ধরেছে। ছোটমার মুখটা থম থমে। ইসি সব বুঝেও যেন কিছু বুঝে উঠতে পারছে না।
ফোনটা পকেট থেকে বারকরলাম। হ্যাঁ শোনো আমরা কাছাকাছি চলে এসেছি মিনিট তিনেক লাগবে পৌঁছতে।
ফোনটা পকেটে রাখলাম।
তোমরা দুজনে বৃথা টেনসন করছো।
জ্যেঠিমনির বুক থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।
বড়মা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের কোল দুটো এখনো চিক চিক করছে।
ইসি পেছন ফিরে তাকাল। মুখটা থম থমে। পেছনে পিকু ভজুরাম তাদের মতো করে মত্ত।
গাড়িটা আমবাগানের ভেতর দিয়ে গেটের সামনে এসে দাঁড়াল। বড়মা জ্যেঠিমনি মাথা নীচু করে আছে। সামনের ভিউংগ্লাস দিয়ে পরিষ্কার দেখতে পেলাম বরুণদা মামীমা দাঁড়িয়ে। ইসি পেছন ফিরে আমার দিকে একবার তাকাল। মুখে হাসি।
গাড়ি থেকে ওরা নামতেই বরুণদা হাতজোড় করে ইসি মিত্রাকে সম্বোধন করলো।
তুমি এখানে! বললে অফিসে যাচ্ছি।
মাফ করবেন ম্যাডাম আজ আমার এখানে ডিউটি।
মিত্রা খিল খিল করে হাসলো। ইসি অবাক চোখে বরুণদার দিকে তাকাল। পিকু বাবা বাবা করতে করতে পেছন থেকে দুরদার করে ছুটে নামল। বড়মা ছোটমা জ্যেঠিমনি আমার দিকে তাকিয়ে। আমি ভাবলেশহীন মুখে জ্যেঠিমনির দিকে তাকিয়ে বললাম এবার নামতে হবে।
বরুণদা গেট খুললো।
জ্যেঠিমনি বরুণদার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে।
আসুন।
জ্যেঠিমনির মুখে কোন কথা নেই।
আস্তে আস্তে সবাই নেমে এলাম জ্যেঠিমনি বড়মা শক্তকরে আমার হাতটা চেপে ধরেছে। চারিদিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। হয়তো উনত্রিশ বছরের আগেকার কোন একটা ছবি খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছে।
মামীমার সঙ্গে সকলের পরিচয় করিয়ে দিলাম। বড়মার একমাত্র ভাইয়ের স্ত্রী।
মামা কোথায় মামীমা ?
তোর মামা আর সানা চৌমহিনীতে গেল। বললো দেখি ওরা আসছে কিনা।
বিতান।
সবাইকে ডাকতে গেছে তোর সঙ্গে আলাপ করাবে।
আমরা গেট পেরিয়ে ভেতরের বাগানে এলাম। তিন মহল্লা বাড়ি। রাজা আছেন কিন্তু সেই রাজবাড়ি আর নেই। নেই তার আভিজাত্য। চারিদিকে দীর্ণতার চিহ্ন স্পষ্ট। শরীরের পলেস্তরা খোসে পড়েছে। তবু পূজার মন্দিরটা ঠিক আছে।
বছর বছর পূজো হয়। তাই পরিষ্কার হয় রং হয়।
ইসি মিত্রা সর্বগ্রাসী ক্ষুধা নিয়ে চারদিক চেয়ে চেয়ে দেখছে। আর একবার করে আমার দিকে তাকাচ্ছে।
দাদুকে কয়েকটা প্রশ্ন করেছিলাম। দাদু সংক্ষেপে বলেছিলেন, বছরে একবার এই পরিবারের সব আত্মীয় স্বজন একত্রে মিলিত হন। হৈ হুল্লোড় চলে। পাঁচটা দিন বেশ ভাল কাটে। তখন বোঝা যায় এই বাড়ির আভিজাত্য এক সময় ছিল। দাদু কথাগুলো বলতে বলতে কেঁদে ফেলেছিলেন।
তুই এতো সব জানলি কি করে।
বই পড়ে।
আর আমার এক কলেজের বন্ধু ছিলো হাটখোলা দত্ত ফ্যামিলির তাদের দুর্গা পূজোয় একবছর উপস্থিত ছিলাম।
তুই এইসব নিয়ে খুব ঘাঁটা ঘাঁটি করিস না।
ঠিক তা নয়, আমার পুরনো জিনিষ নিয়ে ঘাঁটা ঘাঁটি করতে বেশ ভালো লাগে।
আমাদের এই পূজোটার বয়স প্রায় আড়াইশো বছর পার হয়ে গেছে। তখন এই তল্লাটে একটাই পূজো ছিল। আমার দাদুর মুখ থেকে শুনেছিলাম তখন খুব জাঁক যমক করে পূজ হতো। বলি-টলি হতো। এখন সে সব বন্ধ হয়ে গেছে।
বড়মা জ্যেঠিমনি আমার দুহাত দুজনে এখনও শক্ত করে ধরে।
দাদু তোমায় বকবে না, এবার হাতটা ছাড়।
বড়মা হাসলো। এই হাসির মধ্যে প্রাণ নেই। মুখটা ভয়ে পাংশু।
এখনো এতো ভয় পাও। তখন তাহলে এতটা সাহস দেখালে কি করে।
বড়মা মাথা নীচু করে রইলো।
আমি মামীমার দিকে তাকালাম।
তোমার বৌমাকে চিনতে পেরেছ।
মামীমা মিত্রাকে জড়িয়ে ধরলো।
ইসির দিকে ইসারা করে বললাম এটা নয় কেন।
মামীমা ফিক করে হাসলো, তোকে পরে বলবো।
বড়মার দিকে তাকালাম যাও তোমাদের দুর্গামন্দিরটা এদের সবাইকে নিয়ে একবার ঘুরে এসো। তোমার অনেক স্মৃতি ওখানে গচ্ছিত আছে।

চলুন দিদিভাই।
 
মামীমা বড়মার হাতটা চেপে ধরলো।
তুই চল।
বড়মা আমার হাতটা ছাড়লো না।
তুমি জ্যেঠিমনিকে চিনতে পেরেছ।
মামীমা মাথা দুলিয়ে মুখ নীচু করলো।
দিদি বলছে যখন চল। মামীমা বললো।
বড়মার বাড়ি, নিজে সবাইকে ঘুরে ঘুরে দেখাক।
বিতানরা সবাই হৈ হৈ করতে করতে এসে ঢুকে পরলো। আমায় ঘিরে ধরলো। বড়মারা তখন দুর্গামন্দিরের শিঁড়ি দিয়ে উঠছে।
পিসিমনি কই অনিদা।
খুঁজে নে।
এটা তুমি সট্টিয়ালি করছো। তোমার সঙ্গে এই চুক্তি ছিল না।
ইসি মিত্রা ওইখান থেকেই শব্দ করে হেসে উঠলো।
ঠিক আছে মার কাছ থেকে জেনে নিচ্ছি। বৌদি কোনটা বলো।
দুটোই।
বরুণদা তুমি বলো এটা ঠিক হচ্ছে।
একবারেই না।
বিতান একবার আমার দিকে একবার বরুণদার দিকে তাকাচ্ছে।
সামনের লনটায় আমরা দাঁড়িয়ে বড়মারা সব দুর্গামন্দিরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে।
বিতান হুড়মুড় করে ওদের কাছে চলে গেল। ওর পেছন পেছন ওর বন্ধুরা।
বরুণদার দিকে তাকালাম।
সব ঠিক আছে ?
হ্যাঁ।
ওপরে কে আছে।
জ্যেঠু, জ্যেঠি, আরও দু’চারজন আত্মীয়। সকলকে তো চিনি না। সবেমাত্র চিনতে শুরু করেছি। মা সকলকে কম বেশি চেনে, মাকে সঙ্গে নিয়ে এসেছি।
তাই। ভালো করেছো।
সত্যি তুমি গ্রেট।
কেন এ কথা বলছো।
আমাদের পারিবারিক দ্বন্দের পরিসমাপ্তি ঘটালে। আবার সবাইকে এক ছাতার তলায় নিয়ে এলে।
একচ্যুয়েলি কি জানো বরুণদা আমি ঘটকের রোলটা প্লে করছি। আর এটাই বোঝাতে চাইছি। পৃথিবীটা খুব ছোট। তুমি তাকে হাতের মুঠোয় পেতেই পারো।
নাট মন্দিরে হৈ হৈ চলছে। মজা লুটে নিচ্ছে পিকু ভজুরাম।
একটা বাইক এসে পাশে দাঁড়াল। সানা নেমেই আমাকে চোটপাট করতে শুরু করলো।
এটা কি হলো অনিদা।
আমি কি করলাম।
তুমি ফোন করবে বলেছিলে।
পরিবেশ পরিস্থিতি পারমিট করেনি।
মামা আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো। সানা নাটমন্দিরের দিকে দৌড় লাগাল। মামা পেছন পেছন গেলো।
আবার একচোট ভাইবোনে জড়াজড়ি করে কান্নাকাটি হলো। আমি এখান থেকেই লক্ষ্য করছি।
বরুণদা তুমি ওদের নিয়ে ওপরে যাও আমি একটু আসছি।
কোথায় যাবে!
অনেকক্ষণ সিগারেট খাওয়া হয়নি। এই ফাঁকে একটা খেয়ে নিই।
বরুণদা হাসলো।
তারাতারি, জ্যেঠু কিন্তু তোমাকে খুঁজছে।
ধ্যুস তুমি কি পাগল হয়েছো। মেয়েকে এনে হাজির করে দিয়েছি। এখন অনি আমের আঁটি।
আমি বাইরে বেরিয়ে এলাম।
রবীন এগিয়ে এলো।
দাদা এগুলো নামাবে না।
অপেক্ষা কর।
সিগারেট বার করে ধরালাম। সবে মাত্র সুখ টান দিয়েছি। মিত্রা ইসি এসে হাজির। পেছন পেছন বিতান ওর বন্ধুরা সানা।
তুমি আচ্ছা লোক। বিতান বললো।
কেনরে।
সবাইকে ভিড়িয়ে দিয়ে ফুটে এলে।
সকাল থেকে সিগারেট খাওয়া হয় নি। খাবি।
যাঃ বৌদিরা আছে।
ও কিছু হবে না।
তুই চল। মিত্রা বললো।
বিতানরা সবাই আমাদের দুজনের দিকে চমকে তাকাল।
তুমি মাইরি সত্যি। অনেক হেদিয়েছো। এবার তুইটা ছাড়ো।
সানা ইসি খিল খিল করে উঠলো।
বিতান ওর বন্ধুদের সঙ্গে একে একে পরিচয় করিয়ে দিল। সবাই কম বেশি পড়াশুন করছে। কেউ এমবিএ পরছে কেউ চ্যার্টার পরছে কেউ ইঞ্জিনীয়ারিং পরছে। কেউ হেদি-পেদি নয়।
একটু পরে আমার বন্ধুরা আসবে। সানা বললো।
দু’একটা পাবো ?
খারাপ হয়ে যাবে অনিদা, বৌদি আছে।
তা থাক সাইড লাইনে বসিয়ে রাখব।
ঠিক আছ তোমাকে তিনপিস দেখাব একটা পছন্দ করে নিও।
ঝাক্কাস।
একেবারে ঝাক্কাস।
মিত্রা হাসছে।
বরুণদা গেটের মুখে এসে দাঁড়াল।
অনি জ্যেঠু তোমায় ডাকছে।
সত্যি বুড়ো বহুত ঘাঘু মাল।
ওরা আমার কথায় হাসা হাসি করছে।
বিতান।
বলো।
গাড়ির পেছন দিকে কিছু মাল পত্র আছে ধরাধরি করে একটু ওপরে নিয়ে যা।
ফেলনা সিগারেটটা। মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো।
শেষটান। মনে আছে সেই ডায়লগটা।
হ্যাঁ মনে আছে, কচি মেয়েকে চুমু খাওয়া।
আঃ ছুটকি।
বিতানের বন্ধুরা হাসছে।
পায়ে পায়ে ভেতরে এলাম।
কি ইসি ম্যাডাম শ্বশুর বাড়ির আত্মীয়দের সঙ্গে পরিচয় হলো।
সামান্য। ইসি লজ্জা পেয়েগেল।
কোথা থেকে কি হয়েগেল তাই না।
ইসি ঘাড় নারছে।
তুই এতো সব জানলি কি করে ?
তোর বরুণদা এখনো পর্যন্ত আমাকে কিছু বলেনি। তুই জানতিস ছুটকি।
না।
জানো না বৌদি অনিদা একটা বিষ মাল। প্রথম যেদিন এসেছিল। সেই ঘটনা তোমায় যদি বলি হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যাবে। বিতান বেশ রসিয়ে রসিয়ে বললো।
মিত্রা আমার দিকে তাকাল। ভাবটা এরকম তোকে আমার থেকে বেশি কে চেনে বল।
তারপর আস্তে আস্তে খাপ খুললো।
প্রথমে তো পরিচয় জানতাম না। আমি সানা চেটে পরিষ্কার করে দিলাম।
সেদিন সানার কয়েকজন বন্ধুও ছিল।
দাঁড়াওনা একটু পরে আসবে। তারপর তোমার হবে।
সানা চোখ পাকিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো।
তারপর একটু একটু করে খাপ খুলতে শুরু করলো। শেষে দাদুর মতো স্ট্রং মেন্টালিটির মানুষকে পর্যন্ত পটকে দিল। সেই থেকে দাদু দিনে অন্ততঃ দশবার অনিদার খোঁজ নেবে। একবার কথা বলিয়ে দিতে হবে। ব্যাশ শান্তি। নাহলে ঘ্যানর ঘ্যানর।
বাতেলা কম কর।
সবাই হেসে ফেললো।
ওপরের ঘরে এলাম। দাদু বিছানায় শুয়ে। শরীরটা বিছানার সঙ্গে একেবারে মিশে গেছে। গায়ের রং চোখ মুখ দেখলে মনে হয় একসময় যথেষ্ট রাশভারি লোক ছিলেন। এই তল্লাটের জমিদার বলে কথা। এখনো অনেকে দাদুর সঙ্গে দেখা করতে আসেন।
থম থমে পরিবেশ। দাদুর মাথার শিয়রের একপাশে বড়মা। আর একপাশে দিদা। পায়ের কাছে জ্যেঠিমনি ছোটমা চেয়ারে একজন বসে আছেন চিনতে পারলাম না।
আমি কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম।
ফোকলা দাঁতে দাদু হাসলো। উঠে বসার চেষ্টা করলো।
একবারে না।
আমি পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলাম।
দাদু কাঁপা কাঁপা হাতে আমার মাথায় হাত রাখলো।
কিগো মেয়ে পেলে।

দাদু হাসলো।
 
এবার আমার বকশিস।
নাতবৌকে যে দিলাম।
বড়মা হেসে ফেললো।
নাতবৌকে দেখেছ।
দাদু মাথা দোলাল।
তুই আমাকে উঠে বসা।
তোমার জন্য অনিদা পেঁড়া এনেছে। বিতান চেঁচিয়ে উঠলো।
দাদু হাত বাড়াল।
কিগো তুমি থম মেরে বসে আছো কেন।
দিদার দিকে তাকালাম।
দিদা হাসলো।
তুইতো আমাকে এই খবরটা দিস নি।
খবর তৈরি হোক তবে না দেব।
বড়োবৌ ও ভীষণ চালাক নিজের গোছান না হলে কিছু দেয় না।
আমি দাদুকে আস্তে করে বুকে জড়িয়ে উঠে বসালাম। বড়মা বালিশগুলো পেছনদিকে খাঁড়া করে দিল।
তোমাকে যে বলেছিলাম বিকেল বেলা প্রতিদিন একটু একটু করে হাঁটবে।
সানা ধরে না।
দাঁড়াও বুড়ো কাল থেকে তোমাকে ধরবো না। অনিদার কাছে নালিশ হচ্ছে। সানা খড় খড় করে উঠলো।
দাদু হাসছে।
দিনু এসেছিল, তোর খোঁজ করছিল তুই তখন কলকাতায় ছিলি না।
কোথায় গেছিল জিজ্ঞাসা করো।
বড়মা দাদুর দিকে তাকাল।
কেন তোকে বলে নি।
বড়মা মাথা দোলালো।
এর মধ্যে একদিন ও নিজে এসেছিল। আর একদিন বরুণকে নিয়ে এসেছিল।
এখানে এসে সেটা জানলাম।
দিদা এসেছে শুনলাম, কোথায়।
কথা ঘোরাচ্ছিস কেন। বড়মা বাঁকা চোখে আমার দিকে তাকাল।
আমি হাসলাম।
বৌমার সঙ্গে রান্নাঘরে গেল। ওকে দেখেছিস আগে ? দাদু বললো।
না।
ও মিনুর পিসতোতো বোন। টাকিতে থাকে।
আমি গিয়ে প্রণাম করলাম। নিয়ম মোতাবেক সবাইকে পায়ে হাত দিতে হলো।
মামীমা চায়ের প্লেট হাতে ঘরে ঢুকলো। বরুণদার মাও এলেন।
তুই আজ সকালে কি গন্ডগোল করেছিস।
বরুণদার মার দিকে তাকালাম।
কে বোললো।
বরুণ।
ইসি এগিয়ে গিয়ে শ্বাশুরীর হাত থেকে চায়ের ট্রেটা নিল।
বরুণদা কিছু জানে না।
বড়মা ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে হাসল।
কেন তুই গন্ডগোল করিস। দাদু বোললো।
চায়ের কাপ হাতে তুলে নিলাম।
আজ এখানে থাকতে হবে। মামীমা বললো।
খেপেছো। কতো কাজ আছে জান।
তোর ওই একটা অছিলা।
আমায় বাদ দিয়ে এরা যদি থাকে আমার আপত্তি নেই।
বড়মা হাসছে।
বরুণদা তুমি কি তাপসকে নিয়ে এসেছো।
হ্যাঁ।
ওকে দেখছি না।
বললো বসিরহাটে ওর কে আত্মীয় আছে দেখা করতে গেছে।
বড়মা দাদুকে চা বিস্কুট খাইয়ে দিল। ছোটমা, জ্যেঠিমনি চুপচাপ বসে বসে দেখছে।
আনিদা চলো তোমার সঙ্গে পার্সোনাল টকটা এবার সেরে নিই। বিতান বললো।
এখুনি!
নাহলে তুমি হুট করে বলে বসবে, আজ যাই কাল সকালে আসছি।
দেখেছিস তোর ব্যাপারটা সকলে জেনে ফেলেছে। মিত্রা বললো।
তুই খুশী।
ভীষণ খুশী।
আমাকে সবাই তোর মতো করে বুঝতে পেরেছে, তাই না।
দেখছো বড়মা ও কিরকম অন্য দিকে চলে যাচ্ছে।
ছাড়ো বৌদি তুমি এতো দিনেও অনিদাকে চিনতে পারলে না। বাড়ি থেকে যখন বেরবে বলবে পশ্চিমদিকে যাচ্ছি। দেখবে দক্ষিণে গিয়ে হাজির হয়েছে।
মিত্রা চায়ে চুমুক দিতে দিতে হাসছে।
কি খাবি।
মামীমা আমার দিকে তাকাল।
এইতো চা খাচ্ছি ব্যাশ।
তাহলে ওগুলো নিয়ে এসেছিস কেন।
বড়মার হুকুম।
দিদি কি জানতো তুই এখানে আসবি।
মিত্রা চায়ের কাপটা খাটে রেখে হাততালি দিয়ে উঠলো।
জবাবটা দে।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম। হাসলাম, বিতানদের সঙ্গে বাইরে বেরিয়ে এলাম।
অনেকক্ষণ বিতানদের সঙ্গে কথা বললাম। ওদের অনেক গুলো আর্জি আমার কাছে। তার মধ্যে ওর দুই বন্ধুর লেখার সখ আছে, তাদের একটু ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
ভাঙা বারান্দা দিয়ে নিচের দিকে তাকালাম। দেখলাম বেশ কয়েকটা মেয়ে গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকলো। একবার ওপরের দিকে তাকাল।
বিতানদা সানা কই।
ওপরে চলে এসো পেয়ে যাবে।
এগুলো সানার বন্ধু ?
সব তোমার ফ্যান।
কেন।
তোমার লেখা পড়তে ভালবাসে। জান অনিদা এখন আমার রেলাটা আগের থেকে বেড়ে গেছে।
কেন ?
আগে সকলকে তোমার কথা টুকটাক বলতাম। অনি ব্যানার্জী আমাদের আত্মীয়। তখন ওরা প্যাঁক দিত, কথায় কথায় চ্যালেঞ্জ করতো, একবার নিয়ে চল। পারতাম না। তখন তোমাকে পাই নি।
হাসলাম।
এখন ?
সবাইকে মুখে ঝামা ঘসে দিয়েছি।
বেশ করেছিস।
ওর বন্ধুরাও আমার সঙ্গে কথা বলছে। সবারই এক কথা আপনি এইরকম লেখেন কি করে। আমাদের এখানে আপনাদের কাগজের আরও দু’তিনজন করেসপন্ডেন্স আছে তাদের আপনার কথা বলেছি। বলার পরই ওরা কেমন টেরিয়ে টেরিয়ে তাকায়।
ওরা কথা বলছে আমার বেশ মজা লাগছে। আমার ফ্লেভারটা ওরা বেশ উপভোগ করছে।
সানা ওর বন্ধুদের নিয়ে এলো।
একপ্রস্থ তাদের সঙ্গেও হলো। এক একজনকে একটু আধটু কথার চিমটি দিলাম। দু’একজনের সঙ্গে দেখলাম বিতানের বন্ধুদের সঙ্গেও বেশ ভালো আলাপ। আমাদের হৈ হট্টগোলে জ্যেঠিমনি একবার উঁকি মেরে গেল।
ওদের কতো প্রশ্ন।
আপনি যে এইভাবে লেখেন, স্পটে যান ? আপনার ভয় করে না ? আপনার সঙ্গে এতো লোকের আলাপ কি করে হলো ?
আমি ওদের সঙ্গে হাল্কা খেজুরে আলাপের ভঙ্গিতে গল্প করলাম বেশ কিছুক্ষণ। আমার কথাবলার ধরণ ধারনে ওদের ডাগর চোখে বিষ্ময়।
মামীমা হাত ধরে হির হির করে টেনে নিয়ে এলো। দেখলাম লুচি আলুভাজা বানানো হয়েছে। সঙ্গে আমার আনা মিষ্টি। বড়মা দাদুকে একটা রসোগোল্লা ভেঙে ভেঙে খাওয়াচ্ছে। দাদু আমার দিকে তকিয়ে হাসলো।
সন্ধ্যে হয়ে আসছে। আমাকে এইবার কাটতে হবে। এদের হাবভাব বলছে আজকে এখান থেকে এরা নড়বে না। খেতে খেতে দুচারটে আওয়াজ দিলাম তাতেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে গেল। বড়মারা আজ থাকছে। তাপসকে একটা ফোন লাগালাম
কোথায় আছিস ?
তুমি কোথায় ?
তুই যেখানে বরুণদাকে নিয়ে এসেছিস আমি সেখানে।
তাই।
হ্যাঁ। তাড়াতাড়ি আয় আমি কলকাতায় ফিরবো।

কাছাকাছি চলে এসেছি।
 
ঠিক আছে।
বড়মা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। ফোনটা পকেটে রাখলাম।
সত্যি তুই চলে যাবি।
আবার কাল না হয় আসা যাবে।
হয়েছে থাক। সানা আধো আধো গলায় বললো।
বিশ্বাস কর। তোর বৌদি কিন্তু মাঝে মাঝে ঠকে যায়।
মিত্রা হাসছে।
দাদুর দিকে তাকালাম।
দাদার সঙ্গে কথা বলেছ।
দাদু মাথা দোলাল।
এখানে আসার কথা বলেছ।
দাদু হাসলো।
কি বললো দাদা।
আসবে বলেছে।
তাহলে আমার কাজ শেষ। আমে দুধে মিশে গেছে এবার আঁটি গড়া গড়ি।
বড়মা হাতটা বাড়াল, আমার কানের নাগাল পেল না।
আমি ধরবো। মিত্রা বলে উঠলো।
ধ্যাৎ। ছোটমা বললো।
প্রক্সি। বড়মার মায়ার শরীর।
বড়মা চোখ পাকিয়ে মিত্রার দিকে তাকাল।
আমার খাওয়া শেষ। প্লেটটা নিচে নামিয়ে রেখে হাতটা প্যান্টেই মুছলাম।
মিত্রা কট কট করে আমার দিকে তাকাল।
বড়মা তোমরা তাহলে থাক। আমি কাল সকালে আবার আসছি।
চা করেছি। খেয়ে যা।
মামীমা বললো।
তারাতারি।
কি রাজকার্যে যাবি।
সে তুমি বুঝবে না।
কাল সত্যি আসবি।
আসবো।
তাপস চলে এসেছে। ওর জন্য খাবার পাঠান হলো। আমি চা খেয়ে নিচে নেমে এলাম। মিত্রা, ইসি, বিতান, সানা ওদের বন্ধুরা নিচে নেমে এলো।
কাল কখন আসবি।
বলতে পারছি না। তবে চলে আসবো। রবীন কাছে এগিয়ে এলো। ওকে বললাম আজ রাতটা এখানে থেকে যা।
রবীন চুপ করে রইলো।
সবার সঙ্গেই একটু ইয়ার্কি ফাজলাম মারলাম। বারান্দার দিকে একবার তাকালাম। দেখলাম সবাই দাঁড়িয়ে আছে। দাদু দিদাকে দেখতে পেলাম না। হাত নাড়লাম।
গাড়িতে উঠে তাপসকে বললাম, চল।
তাপস গাড়ি স্টার্ট করে বেরিয়ে এলো।
আমি পেছনের সিটে বসেছি। বড় রাস্তায় উঠে তাপসকে বললাম, কলকাতা যেতে কতক্ষণ লাগবে।
ঘন্টা দুয়েক।
তার মানে রাত নটার মধ্যে পৌঁছে যাব কি বলিস।
হ্যাঁ।
আমি পকেট থেকে মোবাইলটা বার করে বেশ কয়েকটা ফোন করলাম। ঘুটঘুটে অন্ধকার রাস্তা। হেডলাইটের আলোয় যতটুকু রাস্তা আলোকিত করে রেখেছে ততটুকু দেখতে পাচ্ছি। দুপাশের মাঠ ঘাট সব নিশ্চিদ্র অন্ধকারে ডুবে আছে। তাপস ডিপার করে করে গাড়ি নিয়ে এগিয়ে চলেছে। হাল্কা করে রবীন্দ্রসংগীত চালিয়েছে দেবব্রত বিশ্বাসের কন্ঠে।
সত্যি ছেলেটার রুচি আছে।
দূর থেকে দেখতে পেলাম একটা গাড়ি এগিয়ে আসছে। যতো কাছে আসছে বুঝতে পারলাম এটা ছোটো গাড়ি নয়। বড়ো গাড়ি। তাপস ডিপার করা শুরু করলো। কিন্তু গাড়িটা কিছুতেই সেই সিগন্যালের গুরুত্ব দিলো না।
মনে হচ্ছে গাড়িটা যেন আমাদের ঘাড়ে এসে পরছে। তাপস গাড়িটা স্লো করে দিল। প্রচন্ড জোড়ে একটা গালাগালি দিয়ে উঠলো। পর মুহূর্তেই একটা দড়াম করে আওয়াজ হলো। একটা প্রবল ঝাঁকুনি। আমার মাথাটা জানলায় সজোরে ধাক্কাখেল। চোখ মুখ অন্ধকার দেখলাম। অসহ্য যন্ত্রণা সারাটা শরীরে ছড়িয়ে পরলো। আমি যেন অন্ধকারের অতল গহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছি। ধীরে ধীরে আরো গভীরে।

-------------------------------

প্রথমখন্ড সমাপ্ত এরপর দ্বিতীয় খন্ড > কাজলদীঘি শ্মশান ও পীরসাহেবের থান
 
কিছু কথাঃ দেখি নাই ফিরে এর দ্বিতীয় পর্ব কাজলদীঘি শ্মশান ও পীরসাহেবের থান নামে লেখা হচ্ছে এখন। মূল লেখক মামনজাফরান নামে পরিচিত। আসল নাম জ্যোতি বন্দোপধ্যায়।
---------------------------------------------
কাজলদীঘি শ্মশান ও পীরসাহেবের থান, লেখক = মামনজাফরান (মূল নাম – জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়)

ইদানিং মায়ের ব্যবহারটা অনিশার ঠিক ভাল লাগছে না। দিন দিন মা কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে। প্রায়ই মায়ের প্রতি অনিশার অভিমান হয়।
একটা সময় ছিল মা বুক দিয়ে ওদের দুই ভাইবোনকে আগলে রাখত। কিছু হলে মায়ের মুখ চোখ কেমন শুকিয়ে যেত। নীরুমামা, কনিষ্কমামা, বটামামাকে চব্বিশঘন্টা বাড়িতে হাজির থাকতে হত। তারওপর ডাক্তারদাদু।
কিন্তু কিছুতেই মনের অনুসন্ধিৎসু গুলো মাকে খুলে বলতে পারে না। মাকে জিজ্ঞাসা করতে পারে না কেন তুমি দিন দিন এরকম হয়ে যাচ্ছ। মা যদি কিছু মনে করে।

কিন্তু ও এখন বড়ো হয়ে গেছে। দুদিন পরে ও এ্যাডাল্ট হয়ে যাবে। দিদানকে জিজ্ঞাসা করে দিদানেরও এক কথা সময় হোক সব জানতে পারবি।
আগে এরকম হতো না! সেই টেন পাশ করার পর থেকেই ওর মনের মধ্যে নানা প্রশ্ন উঁকি ঝুঁকি মারতে শুরু করেছে। হাজার চেষ্টা করেও কিছুতেই মন থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারছে না।
দিদান বলেছে অনি ব্যানার্জী ওর বাবা সেটা ও ছোট থেকেই শুনে আসছে।
স্কুলের প্রিন্সিপ্যাল আন্টি একবার ওকে ডেকে জিজ্ঞাসা করেছিল,
হু ইজ অনি ব্যানার্জী ? জার্নালিস্ট, সোস্যাল ওয়ার্কার ?
প্রিনসিপ্যাল আন্টির কথা শোনার পর মনটা খারাপ হয়ে গেছিল,
আন্টিকে বলেছিল, জানো আমি এখনো বাবাকে দেখি নি।
আন্টি বলেছিলেন, কিছু ভেব না মাই ডটার গডের কোনদিন মৃত্যু নেই।
সেদিন কথাটার অর্থ ধরতে পারি নি। আমার বাবা গড হতে যাবে কেন ? গডরা মন্দিরে থাকে। তাদের পূজো করা হয়। কই আমার বাবাকে কেউ পূজ করে না।
পরে ও হিডমিস্ট্রেস আন্টির কাছে জানতে পেরেছিল প্রিন্সিপাল আন্টিকে ওর বাবা একবার সাহায্য করেছিল। সেদিন ওর বাবা যদি প্রিন্সিপাল আন্টির পাসে না দাঁড়াতেন তাহলে প্রন্সিপাল আন্টির একটা বড়ো বিপদ হতে পারত। সেই থেকে প্রন্সিপাল আন্টি বাবাকে ভীষণ শ্রদ্ধা করেন। মাকে এখনো মাঝে মাঝে ফোন করেন।
সত্যি, জ্ঞান হওয়ার পর থেকে আজও ওর বাবার দেখা পেল না। বাবাকে ও ছবিতে দেখেছে। আর লোকের মুখে বাবার গল্প শুনেছে। যাকেই বাবার কথা জিজ্ঞাসা করেছে তারাই বলেছে, তোর বাবা! ওঃ একটা ডেঞ্জারাস পার্সেন। সবাই কেমন যেন বাবার কথা শুনলে এড়িয়ে এড়িয়ে গেছে।
বাবার কিছু কিছু কথা ইসলামদাদাই রতন আঙ্কেল বলেছে। তবু কেমন কেমন যেন লাগে। মাকে একবার জিজ্ঞাসা করেছিল, মা বাবা কবে ফিরবে ? মায়ের চোখের পাতা ভাড়ি হয়ে উঠেছিল। তারপর থেকে মাকে ও আর বিরক্ত করে না।
উচ্চ মাধ্যমিকের ফইন্যাল পরীক্ষার তিন মাস আগে থেকে অনিশা রাতজেগে পড়তে শুরু করে। শুতে শুতে প্রায় মাঝরাত হয়ে যায়। আগে মা অনিশার সঙ্গে একসঙ্গে শুত এখন আর মা অনিশার সঙ্গে শোয় না। নীচের ঘরে শোয়।
বাবার আলমাড়িটা পর্যন্ত নিচের ঘরে নিয়ে চলে গেছে। বাবার ঘরটা এখন সম্পূর্ণ ওর নিজের ঘর। ছোটদিদানের ঘরটা দাদা দখল করেছে।
বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে অনিশা লক্ষ করেছে সপ্তাহের একটা বিশেষ দিন একটা বিশেষ সময়ে মা অনেক রাতে বাগানের একটা কোনে চলে যায়। পায়চারি করে বাগানের এই প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত পর্যন্ত। মোবাইলে নীচু স্বরে কার সঙ্গে কথা বলে। তখন চারদিক শুনসান।
সেদিনটা আকাশে মেঘলা করেছে। ঘনো ঘনো বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।
অনিসা জানলার কাছে এসে জানলার পাল্লাদুটো বন্ধ করতে গেল। হঠাৎ নিচে আমগাছের তলায় চোখ পরতেই দেখল মা বাগানে পায়চারি করছে। বিদ্যুতের আলোয় মায়ের মুখটা স্পষ্ট দেখতে পেয়েছিল।
এতো রাতে মা নিচে আমগাছের তলায়!
ও একটু নিজেকে আড়াল করে স্পষ্ট দেখতে পেল মা ফোনে কার সঙ্গে কথা বলছে।
এতো রাতে মা কার সঙ্গে কথা বলছে!
সেদিনটা ও অনেক ভেবেছে কিন্তু কোন উত্তর পায় নি। কাকে ও মনের কথা জিজ্ঞাসা করবে।
একদিন ও সাহস করে নিচে নেমে এসেছিল। অন্ধকারে পা টিপে টিপে মায়ের ঘরে ঢুকেছিল দেখেছিল বাবার আলমাড়িটা হাট করে খোলা। ঘর ঘুট ঘুটে অন্ধকার। মা বাগানে আম গাছের তলায় দাঁড়িয়ে ফোনে কার সঙ্গে হেঁসে হেঁসে নীচু স্বরে কথা বলছে।
রাস্তার নিওন আলোর ছেঁড়া ছেঁড়া স্পর্শ মায়ের চোখে মুখে। উজ্জ্বল মুখটা খুশিতে ভরপুর। চোখে মুখে উচ্ছ্বলতা। ঝর্ণার জলধারার মতো কল কল শব্দে মা কথা বলে চলেছে।
অনিশা অনেকক্ষণ ধরে লুকিয়ে শোনার চেষ্টা করেছে। পরিষ্কার শুনতে পায় নি। তবে ওর কথা দাদার কথা, ছোটদিদা, বড়দিদা, দাদাই, দুদুন, সবার কথা মা বলছে। এমনকি অফিসের কথাও মা বলছে।
কথা বলা শেষ হলে মা ফোনটা অফ করে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে চোখের জল মুছেছে। ধীর পায়ে আমগাছের তলা থেকে ঘরে এসেছে। অনিসা ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে শিঁড়ির কাছে লুকিয়ে থেকেছে।
মা ঘরে ঢুকলে আস্তে আস্তে ভেজানে ঘরের দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকি মের দেখেছে। মা ফোনটা আলমাড়িতে তুলে রেখে একটা খাতা বার করে টেবিলে গিয়ে বসেছে। টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে অনেকক্ষণ ধরে কি যেন লিখলো। তারপর খাতাটা তুলে রেখে আলমাড়িতে চাবিটা দিল।
বাবার টেবিলের ড্রয়ারের এক কোনে চাবিটা লুকিয়ে রাখল। বাবার সেই বড়ো সন্ন্যাসী সাজা ফটোটার কাছে গিয়ে প্রণাম করলো। টেবিলের ওপর রাখা ফোনটা নিয়ে মাথার শিয়রে রাখল। তারপর শুয়ে পরলো।
তাহলে কি মায়ের দুটো ফোন! এই ফোনটা মা খালি সপ্তাহে একদিন রাতে কথা বলার জন্য ব্যবহার করে!
ছোট থেকেই নিষিদ্ধ জিনিষের প্রতি অনিশার প্রবল আকর্ষণ।
মা বাধা দিয়েছে। বকেছে। তবু ও লুকিয়ে লুকিয়ে সে গুলো জানার চেষ্টা করেছে, দেখেছে। নিজের মনের ক্ষুধা মিটিয়েছে। কেউ টেরটি পায় নি।
মনে মন ঠিক করল এখন এই নিয়ে ও একটুও ভাববে না। আগে পরীক্ষাটা ভাল করে দেবে। ভাল রেজাল্ট কর সকলের মুখ বন্ধ করে দেবে। তারপর নিজের কাজ গোছাবে। ওকে জানতেই হবে মা কার সঙ্গে কথা বলে।
ও বেশ লক্ষ করেছে এই দিনটার পরের দিনটা মা বেশ ফুর ফুরে থাকে।
ওই দিন মা রাগ করতে জানে না। মার কাছে যা চাওয়া যায় তাই পাওয়া যায়। মা একবারও জিজ্ঞাসা করে না। কি জন্য তুমি এটা চাইছো, কি প্রয়োজন।
মাঝে মাঝে বাড়িতে আড্ডা বসে সেখানে বেশির ভাগ সময়টা বাবার কথা বলেই হাসাহাসি হয়। বাবা আমাদের কাছে নেই তবু বাবা যেন সব খানেতেই আছে।
সেদিন সুরঞ্জনা মনি কথায় কথায় বলছিল, জানিস অনিসা অনিদা যদি থাকত না এ সময় দেখতিস। মাথা তো নয়….। তারপরই সুরঞ্জনা মাসি কথাটা আর বললো না।
এইরকম ছেঁড়া ছেঁড়া কথা প্রায়ই অনিসা শোনে মাথাটা মাঝে মাঝে ঝিম ঝিম করে। আর মনের মধ্যে জেদ চেপে বসে। যে ভাবেই হোক ব্যাপার গুল সব জানতে হবে। এখনো সময় আছে। নিজেক অনেক ধীর স্থির থাকতে হবে।
মার মুখ থেকে শুনেছে। বাবা কোনদিন কাউকে দোষারপ করত না। নিজের কাজ নিজে চুপ চাপ করে যেত। ববার ওপর দিয়ে অনেক ঝড় গেছে। বাবা কাউকে কোনদিন তা জানতে দেয়নি।
এমনকি মা পর্যন্ত বাবার মনের কথা জানতে পারে নি। কাজের শেষে সকলে জানতে পারত বাবা এই কাজটা করলো।
এই রকম সাত পাঁচ চিন্তা অনিশার মাথায় খালি ঘুর পাক খায়। মাস তিনেক ও দাঁতে দাঁত চেপে থাকল। দাদাকে একবার বলেছিলো ব্যাপারটা। দাদা খালি বললো, ও সব জানে। ও নিজেও ওয়াচ করছে সব ব্যাপর গুলো।
ধোঁয়াশাটা নিজেদের খুঁজে বার করতে হবে। যে কোন মূল্যে বাবাকে চাই। সে জীবিত হোক আর মৃত। কিন্তু মাঝে মাঝে একটা প্রশ্ন প্রায়শই ওর মনে দানা বাঁধে। বাবা যদি বেঁচেই থাকবেন তবে কেন ফিরে আসছে না।
দিন পনেরো হলো পরীক্ষা শেষ হয়েছে। আজ বাড়ি সম্পূর্ণ ফাঁকা।
মা দাদাকে নিয়ে অফিসে গেছে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর থেকেই মা দাদাকে অফিসে নিয়ে যাচ্ছে। আজ দাদা যেতে চায় নি। মা জোড় করে নিয়ে গেছে। অফিসের কাজ বোঝাচ্ছে। ওকেও যেতে বলেছিল ও যায় নি।
দাদাইরা দামিনী দিদার ওখানে গেছে। কি কাজ আছে। দিদাইরা জ্যেঠিদিদার বাড়িতে গেছে। অনিসা এই সুযোগটা কোনমতে হাত ছাড়া করতে চাইল না। সবাই বেড়িয়ে যাওয়ার পর। ও পিকুকে ফোন করলো।
পিকুদা।
বল।
তুই কোথায় ?
অফিসে। মনির ঘরে।
কে রে ? মায়ের গলা স্পষ্ট শুনতে পেল অনিশা। পিকুদা বললো, অনিসা ফোন করেছে।
ধর মনি তোর সঙ্গে কথা বলবে।
কিরে একা থাকতে ভাল লাগছে না। রবীনকে পাঠাব।
না না এমনি পিকুদাকে একটু ফোন করলাম। কোথায় আছে তাই।
তুই কি করছিস।
নেটে বসেছি।
নেটে বসে কি করছিস।
তোমাকে সব কথা বলা যায়।
তা ঠিক, বড়ো হয়ে গেছিস।
দাদাকে দাও।
নিউজরুমে গেছে।
অর্ক মামাকে দাও।
সবাই কি তোর জন্য এখানে বসে থাকবে। কাজ নেই। তুই চলে আয়। সবার সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে।
ঠিক আছে, ছাড়ছি।
রবীনকে পাঠাব।
দরকার পরলে ফোন করবো।
অনিশা ফোনটা কেটে দিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়াল। এই সুযোগটা হাতছাড়া করা যাবে না। নিচে নেমে এলো। বুকের ভেতরটা ধুক পুক করছে।
যে কাজ করতে ও যাচ্ছে যদি ধরা পড়ে যায় তাহলে সব পন্ড। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিজের সঙ্গে নিজে বেশ কিছুক্ষণ যুদ্ধ করলো।
কাজটা করা ঠিক হবে ? নিজেই ডিসিসন নিলো। একটা সত্যিকে ও জানার চেষ্টা করছে। তাতে অন্যায় কোথায়। মা কেন গোপন করছে সব কিছু।
বারান্দায় দাঁড়িয়েই গেটের দিকে একবার তাকাল। ছগনদাদু গেটে হেলান দিয়ে ঝিমচ্ছে। ভজুমামা কোথায় ?
এদিক ওদিক তাকিয়ে বারান্দা থেকে বাগানে নেমে এলো। দেখল ভজুমামা বাগানের এক কোনে বসে গাছের চাড়া লাগাচ্ছে। সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাইলো না অনিশা। পায়ে পায়ে মায়ের ঘরে চলে এলো।
দরজাটা ভেজিয়ে দিল। বাবার ছবিটা টেবিলে দাঁড় করান। মা বলেছিল বিয়ের দিন নীরু মামারা এই ছবিটা তুলেছিল। বাবার ওই গল্পটা মনে পড়তেই অনিশা হেসে ফেললো। ছবিটার সামনে এসে দাঁড়ালো। বাবা যেন ওর দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে।
কিরে কি ভাবছিস। ভয় করছে।
চমকে উঠলো অনিশা।
কে, কে কথা বললো।
আবার বাবার ফটোটার দিকে তাকাল।
না। কেউ না। তাহলে!
থমকে দাঁড়িয়ে গেলি কেন।
তোমাকে দেখছি।
কেন।
এতোদিন তোমাকে দেখেছি। আর আজকে তোমাকে দেখছি…..কি বলবো তোমাকে, তোমার মতো ভাল বাংলা লিখতে পারিনা। বলতেও পারি না।
চুটিয়ে বই পড়। দেখবি আপসেই ভাল বাংলা বলতে পারছিস। তুই যা বলতে চাইছিস সেটা হলো ফারাক, তফাৎ, কোন মিল খুঁজে পাচ্ছিস না।
তুমি একেবারে আমার মনের কথাটা বলে দিয়েছ।
দেখলি আমি কিরকম তোর মনের কথাটা জেনে ফেললাম।
কি করে জানলে।
নিজে নিজেকে প্রশ্ন করবি আর নিজে নিজে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করবি।
করিতো উত্তর পাই না।
জাস্ট প্র্যাক্টিস, দেখবি কারুর হেল্প দরকার লাগবে না।
সত্যি।
হ্যাঁ সত্যি।
বলো আমি এখন কি করতে এসেছি।
আলমাড়িটার ভেতর কি আছে তাই দেখবি তাইতো।
কি করে বুঝলে!
বুঝলাম।
আচ্ছা তুমি মাকে ভালবাসো।
খুউউউউউউব।
তাহলে ফিরে আসছনা কেন।
দামী প্রশ্ন করেছিস। একটু সময় লাগবে উত্তর দিতে।
আর একটা প্রশ্ন করব।
বল।
তোমার একটুও ইচ্ছে করে না আমাকে দাদাকে দেখতে।
আমি সপ্তাহে একদিন তোদের একবার করে দেখি।
কি করে।
সে বলবো না।
ওমা তুমি কার সঙ্গে বক বক করছো।
অনিশা পেছেন ফিরে তাকাল।
ভজুমামা ঘরের ভেতর এলো।
অনিশা একদৃষ্টে ভজুর দিকে তাকিয়ে, গায়ের লোম গুলো কেমন খাঁড়া হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে তুমি অনিদার ফটোর সঙ্গে কথা বলছিলে। আমি সারা বাড়ি খুঁজে পেলাম না। শেষে এই ঘরের ভেতর থেকে শব্দ আসছে দেখে ভেতরে এলাম।
অনিশা ভজুর চোখ থেকে চোখ সরাল না।
তুমি অমনভাবে তাকিয়ে আছ কেন। কথা বলবে না ?
বাবার সঙ্গে তুমি কতদিন থেকেছ।
ও মা তোকে দেখে আমার ভয় লাগে কেন। তোর চোখ গুল ওরকম ঘোলাটে কেন।
যা বলছি তার উত্তর দাও।
আগাগোড়া তোর বাপের সঙ্গে আছি।
এ বাড়িতে কবে এসেছ।
তোর জম্মের আগে।
আমি যে এ ঘরে ঢুকেছি কেউ যেন জানতে না পারে।
ভজু হাঁ করে তাকিয়ে থাকল অনিশার দিকে।
মনে রাখবে জানতে পারলে বাবাকে বলে দেব।
তোমার সঙ্গে অনিদা কথা বলছিল।
হ্যাঁ।
আমার সঙ্গে একটু কথা বলিয়ে দাও। কতোদিন গলার স্বর শুনিনি।
আমি যা বলবো তাই করবে।
তুমি যা বলবে তাই করব।
ঠিক আছে নেক্সট যেদিন কথা বলবো সেদিন বলিয়ে দেব।
কথা বলাবে তো ?
আমার কথা শুনলে।
শুনবো।
যাও দরজাটা ভেজিয়ে বাইরে গিয়ে বসো।
ভজু বেরিয়ে গেল।
অনিশার বুকের ভেতর ধক ধকানিটা অনেকটা কমে গেছে। একটু আগে বুকের ভেতর যেরকম উথাল পাতাল করছিল এখন সেটা অনেক কম। নেই বললেই চলে।
আবার বাবার ফটোটার দিকে ঘুরে তাকাল। পায়ে হাত দিয়ে মনে মনে বললো, আমাকে ক্ষমা করো বাবা। আমাকে জানতেই হবে।
টেবিলের ড্রয়ারটা খুললো। ডাঁই করা সব কাগজের টুকরো। কোথাও চাবিটা দেখতে পেল না। একটা পুরনো মানিপার্স। ড্রয়ারের কোনের দিকে পরে আছে। পার্সটা হাতে নিয়ে একবার উল্টে পাল্টে দেখলো। বহুযুগ আগেকার পার্স।
কিন্তু চাবিটা গেল কোথায়। মাকে এখানেই কাল রাতে রাখতে দেখেছি।
তাহলে কি মা জায়গা বদলেছে ?
মানিপার্সটা খুলতেই বাবা-মার একটা ছবি চোখে পরলো। মনে হচ্ছে সেই সময়কার তোলা। একবার বাবার ফটোটার দিকে তাকাল। একবার মানিপার্সের ছবিটার দিকে। নিজে নিজেই হেসে ফেললো। মায়ের পাশে বাবাকে কেমন কেমন যেন লাগছে। পার্সের বাঁ পাশের খাপ খুলতেই অনিশার চোখ চক চক করে উঠলো। একটা মর্চে পরা চাবি।
তাহলে কি এইটা ?
অনিশা চাবিটা হাতে নিলো। গা-হাত-পা কেমন ভারি ভারি লাগছে। শরীরের শক্তিটা নিমেষে কেমন যেন উধাও হয়ে গেল। মনে হচ্ছে এইখান থেকে ওই এই টুকু ও যেতে পারছে না।
কেন এরকম হচ্ছে ?
মার মুখ থেকে শুনেছে বাবা রাতের বেলা শ্মশানে গিয়ে বসে থাকত। বাবার নাকি প্রিয় জায়গা। চিকনামামার সঙ্গে একবার গিয়ে ওখানটা ঘুরে এসেছে। তাহলে আজ এরকম হচ্ছে কেন।
দূর যত্তো সব।
অনিশা পায়ে পায়ে আলমাড়িটার দিকে এগিয়ে এলো।
চাবি ঘুরিয়ে আলমাড়িটা খুললো।
আলমাড়িটা খোলার আগে মনে মনে অনেক কল্পনা করেছিল। কিন্তু কল্পনার সঙ্গে বাস্তবের কোন মিল খুঁজে পেল না।
ইস কি অগোছাল। মা একটু পরিষ্কার করতে পারে না।
ওপরের তাকে বাবার প্যান্ট গেঞ্জি, পাজামা পাঞ্জাবী, কেমনভাবে যেন রাখা। এর থেকে আমার আলমাড়িটা অনেক পরিষ্কার। তার পরেরটায় মার কাপর শালোয়াড়।
মা এই জামা কাপর এখন আর পরে না! মাকে কোনোদিন এগুলো পরতে দেখে নি।
কেনো ? তাহলে কি মা…..।
পরের তাকে খালি কাগজ পত্র আর ফাইল। ডানদিকে চারটে এক্সাসাইজ খাতা। মনে হয় আট নম্বর হবে। অনিশা হাত বাড়িয়ে একটা খাতা বার করে আনলো। হ্যাঁ মায়ের হাতের লেখা। ওপরে তারিখ দেওয়া।
বুবুন আমি আর পারছি না।
দু’চারলাইন পরার পর ওর গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো। না সময় নষ্ট করা যাবে না।
খাতাগুলো এখান থেকে নিয়ে গেলে মা বুঝে যাবে। জেরক্স করলে কেমন হয় ?
তাহলে এখন জেরক্স করাবার জন্য বেরতে হবে।

না বেরনো যাবে না।
 
ভজুমামা বুঝে যাবে। মাকে বলে দিতে পারে। না তার থেকে স্ক্যান করে নেওয়াই ভাল। তাহলে ওর ল্যপটপেই থাকবে। রাতে সময় নিয়ে পড়তে পারবে।
অনিশা স্ক্যান করার সিদ্ধান্ত নিল। নিচ থেকে একটা খাতা বার করে আনল।
কেউ চলে আসার আগে স্ক্যানটা শেষ করে ফেলতে হবে। রাতে সময় নিয়ে পরতে হবে। আলমাড়িটা বন্ধ করে চাবিটা ঠিক জায়গায় রাখল। মা যাতে বুঝতে না পারে।
ঘরের বাইরে এলো। ভজুমামা বাগানে গাছের ডাল ছাঁটছে।
অনিসা ওপরে উঠে এলো। নিজের ঘরে এসে আগে ল্যাপটপটা অন করলো। মোবাইলটা হাতে তুলে নিল। তিনটে মিস কল! খেয়েছে। মা ফোন করেছিল।
সঙ্গে সঙ্গে রিং ব্যাক করলো।
কোথায় ছিলি।
বাগানে।
কি করছিলি।
ভজুমামার সঙ্গে কথা বলছিলাম।
নেট থেকে কখন উঠলি।
তোমার সঙ্গে কথা বলার পরই উঠে পরেছি।
একা একা থাকতে ভাল লাগছে না।
তোমাকে তাই বললাম।
চলে আয়।
না এখন অনেক কাজ।
কি কাজ করছিস।
আচ্ছা আমি কি এখনো ছোট আছি।
মিত্রা হো হো করে হেসে ফেললো।
অমনি হেসে দিলে।
নে মিলি মাসি কথা বলবে।
দাও।
অনিসা মনে মনে বিরক্ত হচ্ছে।
একেই হাতে সময় নেই। খাতাটা স্ক্যানকরে সঠিক জায়গায় রেখে আসতে হবে না হলে ধরা পরে যাবে।
কিরে কি করছিস।
কাজ করছি।
পরীক্ষা শেষ, আবার কিসের কাজ।
শেষতো কি হয়েছে। আমার নিজের কাজ থেকতে পারে না।
বাবা তুইতো গিন্নীদের মতো কথা বলছিস।
এখন রাখি তোমার সঙ্গে বিকেলে কথা বলবো।
খুব তাড়া।
খুউউব। রাখছি।
আচ্ছা।
অনিশা সময় নষ্ট করলো না। স্ক্যানারটা রেডি করে পটা পট স্ক্যান করতে শুরু করলো। প্রায় একশো পাতা স্ক্যান করতে বিকেল গড়িয়ে গেল। খুব সন্তর্পনে খাতাটা সঠিক জায়গায় রেখে এলো। একবার ভাবল আর একটা খাতা নিয়ে গিয়ে স্ক্যান করে ফেলি। তারপর ভাবল না ব্যাপারটা রিক্স হয়ে যাচ্ছে। আজ থাক, আবার আগামীকাল দুপুরে।
অনিসা আজ খুব জোর মার হাত থেকে বেঁচে গেছে। বলতে গেলে বাবাই বাঁচিয়েছে। সাতদিন লাগল খাতাগুলো সব স্ক্যান করতে। সময় করে করতেই পারে না। একটু করে আবার রেখে যায়। এই কদিন ও একা শুতে পারে নি।
ছোটদিদাই-এর শরীরটা খারাপ ছিল, তাই ছোটদিদাই-এর কাছে শুতে হয়েছিল।
এইকদিন সবাই বাড়িতেই ছিল, ফাঁক মতো খাতা ওপরে নিয়ে গিয়ে স্ক্যান করতে হতো। যাতে কেউ জানতে না পারে।
আজ সবে মাত্র শেষ খাতাটা স্ক্যান শেষ করলো। মায়ের ঘরে ঢোকার আগে বড়দিদাই জিজ্ঞাসা করেছিল, ওই ঘরে কি করতে যাচ্ছিস।
অনিসা চোখ পাকিয়ে খালি তাকিয়ে ছিল।
আলমাড়িতে ঠিক জায়গায় খাতাটা তুলে রেখে, চাবিটা যথাস্থানে রেখে, বাবার ফটোটার সামনে এসে দাঁড়াল। সন্ধ্যে হয়ে এসেছে। ঘরের ছোট লাইটটা জলছিল। খেয়াল নেই। বাবার সঙ্গে ও কথা বলছিল। মা কখন এসে পেছনে দাঁড়িয়েছে জানে না। ও আপনমনে বাবার সঙ্গে কথা বলছিল।
হঠাৎ মায়ের গলা।
কিরে তুই কার সঙ্গে কথা বলছিস।
অনিশা মার দিকে ঘুকে তাকাল।
মা ওর দিকে তাকিয়ে কি বুঝলো কি জানে, দৌড়ে গিয়ে ঘরের বড়ো লাইটটা জ্বালিয়ে দিল। তারপর কাছে এসে বুকে জড়িয়ে ধরলো।
তোর চোখ মুখের অবস্থা এই রকম কেন ? কি হয়েছে তোর!
অনিশা মার দিকে তাকিয়ে রইলো।
মিত্রার চেঁচামিচিতে ছোটমা, বড়মা এসে ঘরের সামনে দাঁড়াল।
কি হয়েছে!
দেখো দেখো ওর চোখ মুখের অবস্থা দেখো। বুবুনের ফটোটার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল।
কার সঙ্গে কথা বলছিলি মা। এই তুই ওপর থেকে নামলি। বড়মা বললো।
বাবার সঙ্গে।
অনিশার গলাটা একটু অন্যরকম শোনাল।
মিত্রা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল।
তুমি কাঁদছো কেনো ? দেখ আমার কিছু হয় নি। বাবা আমার সঙ্গে কথা বলতে চাইলো, তাই কথা বললাম।
দেখছ ছোটমা দেখ একেবারে বুবুনের মতো কথা।
আমিও অনিদার সঙ্গে কথা বলেছি।
সবাই পেছন দিকে তাকিয়ে দেখল, ভজু গেটের সামনে দাঁড়িয়ে।
তুই এই জন্য একা একা বাড়িতে থাকিস।
মিত্রা মেয়ের মুখের দিকে তাকাল।
তুমি কেঁদ না কাঁদলে কোনদিন কিছু পাওয়া যায় না। ভেতর থেকে আর্চ থাকা দরকার।
তুই এসব কথা কোথা থেকে শিখলি।
বাবা বলেছে।
ছোটমা তুমি জ্যোতিষদাদাকে ফোন করো।
কি করবে তোমার জ্যোতিষদাদা। আমাকে নিয়ে গেছিলে। সব ফালতু।
মিত্রা মেয়ের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে। এ কথার কি উত্তর দেবে। মেয়ের কথা শুনে মাথাটা ভোঁ ভোঁ করছে।
ঠিক আছে। তুই ও ঘরে চল। মিত্রা তুই জামা কাপড় ছেড়ে নে।
বড়মা অনিশার হাত ধরে ঘরের বাইরে চলে এলো। মিত্রা মেয়ের চলার পথের দিকে একবার উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখল। এতোদিন ও লক্ষ করে নি। আজ ও লক্ষ করলো একেবারে বাবার মতো চলন।
কিন্তু অনন্য। ওকে কখনো এইভাবে কথা বলতে শুনি নি বরং অনেক বেশি চুপচাপ। দশটা কথা বললে একটা উত্তর দেয়।
আজ অফিস থেকে বেরবার সময় বললো, তুমি চলে যাও আমি রাতে ফিরব।
মিত্রা কেন কি বৃতান্ত জিজ্ঞাসা করে নি। খালি আসার সময় সন্দীপকে ফোন করে বলে এসেছিল, ও রইল তুমি দেখবে।
দরজাটা বন্ধ করে ফটোটার সামনে এসে দাঁড়াল।
কিরে কি ভাবছিস।
কোন উত্তর নেই।
মনে পরেছে, তোকে একদিন বলেছিলাম। তোমাকে বধিবে যে গোকুলে বারিছে সে। আমার কথাটা শুনে খুব হেসেছিলি। আজ নিজের চোখের সামনে দেখলি।
মিত্রা মাথাটা নীচু করে নিল।
বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলো।
আর কতোদিন অপেক্ষা করতে হবে বলতে পারিস ?
মিত্রা কাপরের খুঁট দিয়ে চোখ মুছলো।
কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলো তারপর বাথরুমে চলে গেল।
খাওয়ার সময় মিত্রা একবার মেয়েকে বলেছিলো, কিরে আজ রাতে আমার সঙ্গে শুবি।
অনিশা সড়াসরি মায়ের মুখের ওপর না বলে দিয়েছে।
খাওয়ার শেষে অনিশা নিজের ঘরে চলে এলো। আলোটা জালতে ভাল লাগল না। পাখাটা ছেড়ে দিলো। আজ হঠাৎ করে গরমটা কেমন যেন অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে।
অনিশা বাগানের দিকের জানলাটা খুলে দিল।
অন্ধকার ঘরটায় রাস্তার নিওন আলো ঠিকরে এসে পরলো। আমগাছের তলাটা ঘনো অন্ধকার। অনিশা জানলার সামনে এসে দাঁড়ালো।
আমগাছের পাতায় হাওয়ার স্পর্শে একটা শব্দ শোনা যাচ্ছে।
এই শব্দটাকে কি করে ব্যাখ্যা করবে।
দূর ছাই, ভাল করে বাংলাটা লিখতে পারি না। বলতেও পারি না। বাবা বলেছে প্রচুর পর দেখবি ঠিক হয়ে যাবে।
কই আগেও অনিশা বহুবার এই জানলার ধারে এসে দাঁড়িয়েছে। কই এমন অদ্ভূত একটা ভালো লাগা ওকে গ্রাস করেনি। আজ তাহলে কেন এমন ভালো লাগছে।

মার মুখ থেকে ও বহুবার শুনেছে। বাবা সময় পেলে এই জানলাটার সামনে এসে দাঁড়াত। ওই আমগাছটার সঙ্গে কথা বলতো। আরও কতো কি।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top