What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

দেখি নাই ফিরে (উপন্যাস) (2 Viewers)

নাও মিষ্টি মুখ করো। আমি চিত্তরঞ্জন থেকে নিয়ে এসেছি।
চিত্তরঞ্জন কোয়ালিটি খারাপ করে ফেলেছে, নকু এখনো ধরে রেখেছে।
মিত্রা খিল খিল করে হেসে উঠলো।
ও হাসলো কেন। রথীন ডাক্তার বললো।
অনি নকুর দোকান থেকে নিয়ে এসেছে। আমি চিত্তরঞ্জন, তাই হাসি।
কোনটা নকুর রে ইসিতা। রথীন ডাক্তার বললো।
সব কটা।
খেয়ে দেখি আগে। তুমি খাবে না।
দুপুরে ভাতের পাতে খেয়েছি।
ও ইসি ওকে এনে দে না হলে আর এক ডাক্তারের ব্যামো হবে।
বড়মার কথায় ডাক্তারদাদা হাসছে।
আমি ভ্যাবলার মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এদের রকম সকম দেখছি।
তুই বোস, দাঁড়িয়ে রইলি কেন। যাই বলো সামন্ত তোমার সঙ্গে অনেক দিন পর দেখা হলো।
তা বছর দশেক হবে।
তা হবে। রিলেসন বলতে আমার প্রেসকিপসন নিয়ে তোমার কাছে পেসেন্ট যায়, তোমার প্রেসকিপসন নিয়ে আমার কাছে পেসেন্ট আসে।
আমি গিয়ে খাটে বসলাম।
কিরে চা খাবি ?
ইসির দিকে তাকিয়ে হাসলাম।
প্রবীরদার ফোনটা বেজে উঠলো। বুঝলাম অনিমেষদা এসে গেছে।
হ্যাঁ দাদা….চলে এসেছেন ?….যাচ্ছি।
প্রবীরদা উঠে দাঁড়াল।
ডাক্তারদাদা আমি একটু ঘুরে আসি।
অনিমেষ চলে এসেছে।
হ্যাঁ।
যাও।
প্রবীরদা বেরিয়ে গেল সঙ্গে সেই দুই ভদ্রলোক।
অনিমেষবাবু এখানে আসবে মানে!
তোমায় বলছি না। একদিনে সব জানতে পারবে না। অনিমেষের মেয়ে আর অনি দুই ভাইবোন।
রথীন ডাক্তারের মিষ্টি খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে।
মিষ্টিটা গিলে নাও না হলে বিষম খাবে।
তুমি আজ খালি মেঘে মেঘে কথা বলছো।
লেখা লিখি করো নাকি।
কেন।
সাহিত্য ঘেঁষা কথা বলছো।
একটু আধটু করি।
ঠিক আছে আমি অমিতাভকে বলে দেব। তোমার লেখা ছেপে দেবে।
অনি তোদের কাগজে স্বাস্থ্যের ওপর কনো পাতা নেই।
আছে।
কবে বেরোয় বল।
মনে হয় বুধবার।
দাঁড়া আমি হার্টের ওপর একটা জব্বর লেখা দেব।
আমি চুপ করে থাকলাম।
সন্ধ্যে হয়ে এসেছে। বুঝলাম ওখানে আর যাওয়া হবে না। আজ কপালে আমার দুঃখ আছে। ডাক্তারদাদা কথাটা না বললে কিছুই হতো না। ভালোয় ভালোয় সব মিটে যেত। কেন যে ডাক্তারদাদা বলতে গেল।
কিরে খুব বোড় লাগছে না।
আমি ডাক্তারদাদার মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলাম।
ইসি চা নিয়ে এলো। মিত্রা সকলকে হাতে হাতে এগিয়ে দিলো। বুঝতে পারছি আজ এ বাড়ির মানুষ গুলোর ওপর খুব চাপ সৃষ্টি করা হয়ে যাচ্ছে। কি করা যাবে। বরুণদাকে দেখতে পেলাম না। বুঝলাম বরুণদা নীরু দুজনে কোথাও বেরিয়েছে। ছোটমাও ঘরে নেই।
চা খেয়ে ইসলামভাইকে বললাম, চলো একটু ছাদ থেকে ঘুরে আসি।
ইসলামভাই উঠে দাঁড়াল। বড়মা দামিনী মাসি আমার দিকে তাকিয়ে একবার মুচকি হাসল।
দুজনে ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। ওপরে চলে এলাম। দেখলাম খোলা আকাশের তলায় পিকু ব্যাট করছে, আর ভজুরাম গড়িয়ে গড়িয়ে বল করছে। সন্ধ্যে হতে আর মিনিট পনেরো বাকি।
ভজু পিকুকে নিয়ে নীচে চলে যা, সন্ধ্যে হয়ে যাচ্ছে।
আর একটু। পিকু আঙুল তুলে বললো।
না বাবা আবার পরে।
ভজু পিকুকে কোলে তুলে নীচে চলে গেল।
সিগারেট আছে।
এখন খাবি ?
কেন।
অনিমেষদা এখুনি চলে আসবে।
আসুক।
ইসলামভাই পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বার করে নিজে একটা নিল আমাকে একটা দিল। বুঝতে পারছি ইসলামভাই আমার চোখে চোখ রেখে বোঝার চেষ্টা করছে কেন আমি এখানে ডেকে নিয়ে এলাম।
সত্যি তুই রাজনাথকে টার্গেট করেছিলি।
না।
তাহলে প্রবীরদা বললো।
সঠিক খবর পায় নি। প্রবীরদার খুব কাছের লোক এটা করেছে।
তুই বুঝলি কি করে।
পর্শুদিন বুঝতে পেরেছি।
যেদিন অনিমেষদার সঙ্গে মিটিং করছিলি।
হ্যাঁ।
ইসলামভাই আমার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে ঘন ঘন সিগারেটে টান দিল। আমার সিগারেটটা খেতে ভালো লাগলো না। ছুঁড়ে ফেল দিলাম।
তোমার চোখে আজকাল ছানি পড়ে যাচ্ছে। পরিষ্কার করো।
একথা বলছিস কেন।
বুঝতে পারছি তাই। তুমি এরকম ছিলে না।
আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।
বোঝার চেষ্টা করো। তোমার পুরনো শত্রুরা হাত মিলিয়েছে। যদিও কিছু করতে পারবে না।
কি করে বুঝলি।
খোঁজ খবর নাও।
রতন আবিদ আমাকে কিছু বলেনি।
বলতে চেয়েছে, তুমি বোঝ নি। আমি বুঝলাম কি করে।
খোঁজ নিতে হবে।
তোমাকে আর খোঁজ নিতে হবে না। তুমি তোমার কাজ করো। অনিমেষদার কাজ কি করলে।
অনাদি সব দেখে এসেছে। আমি এই সপ্তাহে যাব।
কবে যাবে।
তোর এই কাজটা বুঝিয়ে দিয়ে চলে যাব।
তুমি যাও, পরে আমি যাচ্ছি। ওখানে কাকে নিয়ে যাবে।
রতনকে বলেছি।
কি বললো রতন।
জায়গাটা দেখতে চাইল।
নিয়ে যাবে ওকে।
হ্যাঁ।
বেশিদিন আটকে রাখবে না। ছেড়ে দেবে। একবারে নতুন ছেলেদের নিয়ে কাজটা করো। যাদের গায়ে এখনো দাগ পরে নি।
এ কথা বলছিস কেন।
তুমি ভাবছো কি করে অপনেন্ট ঘুঁটি সাজাচ্ছে না।
তুই ঠিক কি বলতে চাইছিস খোলসা করে বল।
যা বলার তা তো বললাম। তাছাড়া অনাদিকে আমি কিছু দায়িত্ব দিয়েছি। গেলে জানতে পারবে। পারলে চিকনাকে বেশি করে কাজে লাগাবে। গ্রামের ব্যাপারটা চিকনা ভালো বোঝে।
আমি ওকে মাইনাস করে রেখেছিলাম।
মনে রাখবে ওইই হবে তোমার ট্রাম্প কার্ড।
কি বলছিস!
ঠিক বলছি। মিলিয়ে নেবে।
কিরে নীচে চল দাদা ডাকছে। মিত্রা পেছনে এসে দাঁড়াল।
এসে গেছে ?
অনেকক্ষণ। নতুন ডাক্তারের সঙ্গে বেশ জমপেশ করে গল্প করছে।
তুই এলি কি করতে।
খাওয়া দাওয়া হলো, বললো মিত্রা যা এবার অনিকে ডেকে আন।
কিছু বিশেষণ প্রয়োগ করে নি।
তোকে বলা যাবে না।
ইসলামভাই হাসছে।
আমি ইসলামভাই মিত্রার পেছন পেছন নিচে নেমে এলাম।
ইসির ঘরে তখন জোড় আড্ডা চলছে। সবাই আড্ডার অংশীদার এমনকি জ্যেঠিমনি পর্যন্ত বেশ টকাটক কথা বলছে অনিমেষদার সঙ্গে। সবার হাতেই চায়ের কাপ। বুঝলাম আতিথেয়তার কোন ত্রুটি রাখে নি ইসি ছোটমা। আমি ঘরে ঢুকতেই অনিমেষদা হেসে উঠলো।
আয় তোর কথাই হচ্ছিল।
আমি তাকালাম।
দিদিকে বলছিলাম, তোর বিয়ে করে কোন উপকার হয় নি।
আমি অনিমেষদার মুখের দিকে তাকালাম।।
তুই যে তিমিরে থাকার সেই তিমিরেই আছিস।
আমি মুখ টিপে হাসলাম।
বোনের সঙ্গে কথা বলেছিস।
তিনদিন কথা বলিনি।
সেইজন্য ওর মেজাজ সপ্তমে।
কেন।
ফোন করে জান।
ওতো একবার ফোন করতে পারতো।
তোর ফোন বন্ধ থাকে।
চুপ করে গেলাম।
তুই নিজের প্রয়োজন ছাড়া ফোনটা ব্যবহার করিস না।
ঘরের সবাই হাসছে।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই তোমাদের এখানে নিয়ে চলে এলো। অনিমেষদা বড়মার দিকে তাকিয়ে বললো।
ঘুম থেকে ওঠার পর দেখলাম মুখটা ভার ভার। আমি জিজ্ঞাসা করলাম কি হয়েছে রে। কিছু বললো না। ভাবলাম রাতে হয়তো মিত্রার সঙ্গে ঝগড়া করেছে। তারপর কচুরি খেয়ে ওপরে চলে গেল। বেশ কিছুক্ষণ পর নিচে নেমে এসে বললো রেডি হও ও বাড়ি যাব।
আমি বড়মার দিকে তাকিয়ে একবার হাসলাম।
মিত্রাকে ফোন করে বললো তুই অফিস থেকে চলে আয়। অনিমেষদা বললো।
মিত্রাকে ছোট ফোন করেছিল। বড়মা বললো।
অনিমেষদা হাসছে।
তোর জন্য সুরোই ঠিক। ও-ই তোকে শাসন করতে পারবে। মিত্রার দ্বারা কিছু হবে না।
মিত্রা হাসছে।
তোর এদিককার কাজ শেষ।
এদিকে কোন কাজ ছিলো না। এমনি এলাম।
তুই কি আজকাল এমনি এমনি যাওয়া আসা করছিস নাকি। সেটা জানতাম না।
সবাই অনিমেষদার দিকে তাকিয়ে। বুঝতে পারছে কি ভাবে অনিমেষদা অনিকে বাঁধছে।
আমি চুপ করে আছি।
একটু সময় হবে। দুটো কথা বলতাম।
এবার সবাই জোরে হেসে ফেললো।

ডাক্তারবাবু আপনি একবারে হাসবেন না। অনিবাবু এখন ভিভিআইপি। দেখলেন না প্রবীরের এক ফোনে আমি এসে হাজির হয়ে গেলাম। কত কাজ নষ্ট হলো।
 
এবার সবাই আরও জোরে হেসে ফেললো।
ওরে থাম থাম পাশের বাড়ি থেকে সব লোক জন চলে আসবে। অনিমেষদা বললো।
তুমিও শেষ পর্যন্ত ভিআইপি বললে। মিত্রা হাসতে হাসতে বললো।
কেন বলতো অন্যায় করে ফেললাম নাকি।
সকাল থেকে বড়মার সঙ্গে এই নিয়ে ঘুসো ঘুসি চলছে। কি তেজ।
তাই। তাহলে উইথড্র। কিন্তু সুরো, সুতপা বলে যে।
উঁ সেদিন বৌদি বলেছিল, বলে কিনা এখনো ভেতরে ঢুকি নি, জুতোও খুলি নি, সোজা নিচে নেমে যাব। তারপর বৌদি ঘাড় ধরে ভেতরে ঢোকাল।
আমি যে ওরকম পারলাম না। তাই ওর পেছন পেছন ছুটি। ওকে স্নেহ করে বড়ো অপরাধ করে ফেলেছি।
ঘরটা মুহূর্তের মধ্যে নিস্তব্ধ হয়ে গেল। কারুর মুখে কোন কথা নেই। অনিমেষদা একবার চারদিক ভালো করে লক্ষ্য করে নিল।
ইসি।
ইসি অনিমেষদার দিকে তাকাল।
ও ঘরে কেউ আছে।
পিকু আর ভজু খেলা করছে।
চল, তুই আমি গিয়ে একটু বসি।
ইসির দিকে তাকিয়ে, চা খেলাম বুঝলি ঠিক মজাটা পেলাম না। আর একবার দিবি।
ইসি হেসে ফেললো।
প্রবীরদার দিকে তাকিয়ে।
তোমরা বসো প্রয়োজনে ডাকবো।
সবাই আমার দিকে তাকিয়ে। এমনকি রথীন ডাক্তার পর্যন্ত অবাক হয়ে গেছে। চোখে মুখে তা ফুটে উঠছে। আমি অনিমেষদার পেছন পেছন জ্যেঠিমনির ঘরে এলাম। আমাদের দেখেই ভজুরাম হেসে ফেললো।
আমরা ওপরেরে ঘরে গিয়ে খেলা করি।
তাই কর।
অনিমেষদা পিকুর গালটা ধরে একটু টিপে দিল।
ভেতরে এলাম। অনিমেষদা জ্যেঠিমনির ইজিচেয়ারে হেলান দিয়ে বসলো। আমি খাটে বসলাম।
প্রবীরের কাছে সব শুনলাম। আবার কি হলো।
কি শুনেছো বলো। তারপর বলছি।
তুইতো সব জানিষ।
জানি তবে প্রবীরদা কি বলেছে একটু শোনার দরকার আছে।
কেন প্রবীর কি আবার গন্ডগোল করছে।
মনে হচ্ছে প্রবীরদা নয় অন্য কেউ।
তুই কি করে বুঝলি।
আমাকে আজ রাত টুকু সময় দাও।
ওরা বলছে তুই করাচ্ছিস।
তুমি বিশ্বাস করো ?
করছি না বলেই তোকে জিজ্ঞাসা করছি।
আবীর মুখার্জী কে।
অনিমেষদা ইজি চেয়ারে এতোক্ষণ হেলান দিয়ে বসেছিল। এবার সোজা হয়ে বসলো।
কেন।
যা জিজ্ঞাসা করছি বলো।
এখানকার জোনাল কমিটির সেক্রেটারি।
তার সঙ্গে প্রবীরদার সম্পর্ক কি রকম।
সঠিক বলতে পারব না। ওইতো ও ঘরে বসে আছে। তোর সঙ্গে আলাপ হয় নি ?
না।
স্ট্রেঞ্জ।
প্রবীরদা আলাপ করায় নি। ওদের মধ্যে কেউ কি ইসির ব্যাপারে বিরোধিতা করেছিল।
এরা কেউ করে নি। তবে এখানকার ব্রাঞ্চ করেছিল।
এই ব্রাঞ্চ কার হাতে।
মনে হয় আবীর বাবুর দিকে আছে।
তোমায় গল্প বলছি তুমি খালি ফলো আপ করে আমাকে জানাবে। পারলে প্রবীরদা অনুপদার সঙ্গে কনসাল্ট করবে।
বল।
অবতারকে আমার বিয়ের দিনে দেখেছিলে।
হ্যাঁ।
ওর ভাই চিনা এখন জেলে। রাজনাথ যেদিন থেকে জেলে গেছে সেদিন থেকে আমি অবতারের মাধ্যমে চিনাকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম রাজনাথ আর ডাক্তারকে ওয়াচ করার জন্য।
অনিমেষদা আমার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে চোখের পলক পরছে না।
রাজনাথকে ছাড়াবার জন্য দিল্লীথেকে তোমাদের একটা লবি তদবির করছে। মুখার্জীর ওপরও কম বেশি প্রেসার আসছে।
রাজনাথের পকেটের চারজন এখন জেলে আছে। তারা যে কোন ভাবে কয়েকদিন আগে পাল্টি খেয়ে গেছে। তোমাদের সঙ্গে সেই রাতে কথা বলার পর অবতার আমাকে রাতে ফোন করে জানায়। ওই চারজন রাজনাথকে কাস্টডির ভেতর মারার প্ল্যান করেছে। দোষটা চাপান হবে প্রবীরদার ওপর।
আমি পর্শুদিন রাতেই অবতার সাগিরকে মুখার্জীর কাছে পাঠাই ওদের একটা ফলস কেসে এ্যারেস্ট করাই। গতকাল বেল করাই নি। এখন আলিপুর জেলে রেখেছি। বলতে পার গটআপ গেম খেলছি। অবতার সাগিরকে সব বুঝিয়ে দিয়েছি।
আজ সকাল থেকে তিনবার রাজনাথের ওপর এ্যাটেম্পট হয়েছে। আবীর মুখার্জীর সঙ্গে তোমাদের অপোনেন্ট পার্টি বেহালার একজন পার্টি নেতার খুব দহরম মহরম আছে। তার লোক নাচি। সেও এখন জেলে। সে এই চারজনকে নিয়ে কাজটা হাসিল করতে চাইছে।
সকাল থেকে অবতার সাগিরের সঙ্গে ওদের প্রচুর মারপিট হয়েছে। ওদের তিনচারজন উনডেড হয়েছে। তোমাদের দিল্লী লবির সঙ্গে হাত মিলিয়ে আবীরবাবু এই কাজটা করছে। ও এক সময় রাজনাথের খুব ক্লোজ ছিল।
রাজনাথের ভাইপো প্রথমে ওর আশ্রয়ে এসে উঠেছিল, তারপর প্রবীরদার কাছে পাঠায় ওই ভদ্রলোক। কেশ খায় প্রবীরদা। সিং সাহেবের রিপোর্টে আবীরবাবুর নাম পাই। ওয়েপনসের ব্যবসা রাজনাথ করতো। ঘার ভাঙতো প্রবীরদার। প্রবীরদা ভাগ পেতো। এখন সেই ব্যাপারটা বকলমে আবীরবাবু করতে চাইছে। প্রবীরদা মনে হয় বাধা দিয়েছে। তাই এই পথ বেছে নিয়েছে।
ছোটমা চা নিয়ে ঘরে ঢুকলো।
বাবা কি ফিস ফিস করছিস গেট থেকে শোনা যাচ্ছে না।
অনিমেষদা ট্রে থেকে একটা চায়ের কাপ তুলে নিল।
দাদা কিছু নোনতা মুখে দেবেন।
না। দেখো তো ও ঘরে মনে হয় আমার সিগারেটের প্যাকেটটা ফেলে এসেছি।
ছোটমা বেরিয়ে গেল।
কটা বাজে বলো।
সাতটা।
চলো ছাদে যাই। তোমাকে একটা জিনিষ শোনাই।
এখানে শোনা।
না।
চা খেয়ে নিই।
প্লেটে ঢেলে খেয়ে নাও।
ছোটমা ও ঘর থেকে অনিমেষদার সিগারেট প্যাকেট আনার আগেই আমাদের চা খাওয়া শেষ।
দাদা চা কি ঠান্ডা ছিল ?
না বেশ গরম ছিল।
ছোটমা একবার দুজনের দিকে তাকাল। কিছু বোঝার চেষ্টা করলো, তারপর বেরিয়ে গেল।
চল ওপরে যাই।
আমরা দুজনে শিঁড়ি ভেঙে ছাদে চলে এলাম। একবারে ছাদের এক সাইডে এসে দাঁড়ালাম। অবতারের সঙ্গে আমার কথার রেকর্ডিং অনিমেষদাকে শোনালাম। অনিমেষদা মন দিয়ে সব শুনে আমার দিকে তাকাল।
আমাকে জানাস নি কেন।
জানালে তুমি বিশ্বাস করতে।
অনিমেষদা আমার চোখে চোখ রাখল।
কিছু অঘটন ঘটলে।
ঘটবে না।
দেখছিস তো বিরোধীরা ল্যাজে গোবরে করে দিচ্ছে।
তাতে খতিটা কি হচ্ছে। যে লেখটা শুরু করেছিল সেতো আর কিছু লিখছে না। তাহলে তোমার চিনতা কিসের।
দাঁড়াও লাস্ট আপডেটটা নিই।
আমি অবতারের মোবাইলে মিস কল করলাম। অনিমেষদার দিকে তাকালাম।
হয়তো গালা গালি করতে পারে, মনে কিছু করো না। ওরা জানে না তুমি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছো।
অনিমেষদা মুচকি হাসলো।
তুইতো ঝানু গোয়েন্দা হয়েগেছিস।
নিজে বাঁচার তাগিদে। মিত্রার জায়গায় অন্য কেউ হলে এতোটা ঝুঁকি নিতাম না।
মেয়েটা মানুষ চেনে বুঝলি। নাহলে এতো ছেলে থাকতে তোকেই বা ভালবাসতে যাবে কেন।
তোমাদের আশীর্বাদ।
অবতার রিং ব্যাক করলো।
কি খবর বল।
তুমি পার্মিসন দাও ওই চারটেকে আজ রাতেই উড়িয়ে দিই।
কেন।
ওরা আজ রাতেই কাজ হাসিল করবে ঠিক করেছে। প্রচুর টাকা ছড়িয়েছে।
তুই কিছু লুটে নে।
তুমি না থাকলে লুটে নিতাম। সারাজীবন তো ভেতরে থাকব না। বাইরে বেরলে, তোমার হাত থেকে বাঁচব না।
কি হয়েছে বল।
ওরা চারজন আজ রাজনাথের আশে পাশের সেলে থাকবে। শুনলাম ওয়েপনস নিয়ে এসেছে।
তুই কি করতে চাস।
আর কিছুক্ষণ পর খাওয়ার ঘন্টা বাজবে। খাওয়ার পর কাজ শেষ করে দেব।
জানা জানি হলে।
আমার জিভের তলায় ব্লেড আছে। শিরা কেটে দেব।
আবীরবাবুর কি খবর।
চিনাটা একেবারে ঢ্যামনা। আগে বল। তাহলে আমি ভেতরে আসতাম না। বাইরেই সাঁটিয়ে দিতাম। আমার ছেলেগুলো ঠিক ঠাক কাজ করছে।
হ্যাঁ।
তুমি মিথ্যে কথা বলছো।
কেন।
একটা ডাক্তারদাদার কাছে ধরা খেয়ে গেছে।
তোকে কে বললো।
চার নম্বরের মামনি।
ঠিক আছে তোকে এসব নিয়ে ভাবতে হবে না। আমি ঘুঁটি গুলো একটু সাজিয়ে নিই, পাঁচ মিনিট পর ফোন কর।
আচ্ছা।
আমি অনিমেষদার মুখের দিকে তাকালাম। অনিমেষদা মুচকি হাসলো।
আমি মাথা নীচু করে নিলাম।
আমার তো আর সরকারী ক্ষমতা নেই। প্রয়োজন পরলে চারটেকে সরিয়ে দেব। এটুকু ক্ষমতা আমার আছে।
আমি না আসলে তুই কি এই পথ বেছে নিতিস।
প্রবীরদাকে বাঁচাতে, বাধ্য হয়ে বেছে নিতাম।
ব্যাপরটা কেউ জানতেও পারত না বল।
তোমাদের আবীরবাবু বুঝতে পারত, তারপর অবতাররা বেরিয়ে এলে ও হাফিস হয়ে যেত। ওদের কথা কিছু কিছু আমাকে শুনতে হয়।
তুই তো এরকম ছিলি না।
আমি কোথায় অন্যায় করছি বলো। সময় হয়ে যাচ্ছে। একটা ডিসিসন নাও।
অনিমেষদা ফোনটা বার করে অন করলো।
তুমিও ফোন বন্ধ করে রেখেছিলে!

তোর সঙ্গে কথা বলবো বলে।
 
অনিমেষদা ডায়াল করে কানে ধরলো।
অনুপ।….হ্যাঁ ফোনের সুইচ অফ ছিলো….তুমি এক কাজ করো বিশ্বজিত বাবুকে একটা ফোন করো বলো আলিপুর জেলের জেলারকে যেন এখুনি একবার ওখানে যেতে বলে তুমিও যাও আমিও যাচ্ছি।….তোমার কাছে খবর চলে এসেছে ?….আমি অনির সামনেই দাঁড়িয়ে আছি….ঠিক আছে তুমি যাও, আমি যাচ্ছি। আর শোন রাজনাথের সেলের সামনে যেন আর্মড ফোর্স থাকে, তারপর তোমায় গিয়ে সব বলছি।
চল নিচে যাই।
অবতার, সাগির কিন্তু নিজের নামে ঢোকে নি।
তাহলে!
একজন জাকির নামে ঢুকেছে আর একজন মহিন নামে ঢুকেছে।
তুইতো মাথা খারাপ করে দিবি।
আমি মুচকি হাসলাম।
তুই কোথাও বেরবি না তো।
না।
আমি তাহলে অবতারকে জানিয়ে দিই।
তাই দে।
তুমি নিচে যাও আমি ফোন করে যাচ্ছি।
ফোন করে নে একসঙ্গে যাই।
আমি অবতারের সঙ্গে ফোনে কথা বলে নিলাম। ওকে সব জানালাম।
আমি অনিমেষদা নিচে নেমে এলাম। সবাই গল্প করছে। অনিমেষদা ঢুকতে বড়মা চেঁচিয়ে উঠলো।
কি গো অনিমেষ, তোমরা যে ম্যারাথন মিটিং করলে।
মিটিং না ওর সঙ্গে একটু গল্প করছিলাম। ছাদে বেশ ফুর ফুরে হাওয়া দিচ্ছিল।
তুমিও আজকাল হাওয়া খাও নাকি। ডাক্তারদা হাসতে হাসতে বললো।
কি করবো দাদা অনির পাল্লায় পরে সেটাও অভ্যাস করতে হচ্ছে।
দাদা চা খাবেন। ছোটমা বললো।
আমি ভাবছিলাম চা না খেয়েই চলে যাব। একটা জরুরি মিটিং আছে।
আপনি বসুন, ঠিক এক মিনিট।
অনিমেষদা চেয়ারে বসলো। রথীন ডাক্তার এখনো আছে। সেই কখন এসেছে।
অনিমেষদা মিত্রার দিকে তাকাল।
কিরে বাংলার পাঁচের মতো মুখ করে দাঁড়িয়ে আছিস কেন।
মিত্রা হাসলো।
কি করবি বল। ওর সঙ্গে ঘর করতে হলে তোকে একটু আধটু টেনসন ভোগ করতে হবে।
জ্যেঠিমনির দিকে তাকিয়ে।
কি দিদি অন্যায় বললাম।
জ্যেঠিমনি হাসছে।
অনিমেষদা আবার মিত্রার দিকে তাকাল।
এখন মাঝে মাঝে মনে হয় কি জানিস ওর মগজাস্ত্রটা যদি আর কয়েকদিন আগে কাজে লাগাতে পারতাম বড়ো উপকার হতো। অনেক দেরি করে ফেলেছি।
অনিমেষদার ফোনটা বেজে উঠলো।
হ্যাঁ বলো।….পেয়েগেছো….হ্যাঁ আমি ডাইরেক্ট যাচ্ছি….প্রবীরকে সঙ্গে নেব….ঠিক আছে….প্রবীরের ফোন বন্ধ….হবে হয়তো….আমরা সব মিত্রার বাড়িতে একটু আড্ডা মারছি। অনিমেষদা হেসে ফেললো।
কিগো প্রবীর।
খেয়াল নেই দাদা।
ছোটমা চা নিয়ে এলো। সবাই চা খেলাম। এবারও প্রবীরদা আমার সঙ্গে ওই দুজনের আলাপ করিয়ে দিল না। এমনকি অনিমেষদাও খুব একটা পাত্তা দিল না। চোখা চুখি হলো। চা খাওয়া শেষ অনিমেষদা উঠে দাঁড়াল। রথীন ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে।
ডাক্তারবাবু এখন আসি। যাক অনির শ্বশুর বাড়ির দৌলতে আপনাদের পাড়ায় কিছুক্ষণ আড্ডা মারে হলো।
মাঝে মাঝে এরকম হলে খুব ভালো লাগে।
সবই তো বোঝেন নতুন করে আর কি বলি বলুন।
আমি অনিমেষদার সঙ্গে নিচে নেমে এলাম। নিচে বেশ ভিড় দেখলাম। বুঝলাম উৎসাহী মানুষের অভাব এখনো কমে নি। আবীরবাবু অনেকের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলেন। পার্টিগতো ডেকরাম। অনিমেষদা গাড়িতে উঠে বসলো। প্রবীরদা আর একটা গাড়িতে।
গাড়িতে ওঠার আগে অনিমেষদা ইশারায় বললো, ফোনটা খোলা রাখিস যদি কিছু দরকার পরে।
আমি মাথা দোলালাম
আমি অনিমেষদাকে গাড়িতে তুলে দিয়ে ওপরে উঠে এলাম।
বড়মা, জ্যেঠিমনি, দামিনী মাসি মুচকি মুচকি হাসছে।
কাজ শেষ হলো।
কিছুটা। এবার যেতে হবে। কাল সকাল থেকে অনিকে আটকাবার চেষ্টা করবে না।
তোর সঙ্গে আমার কথা বলাই হলো না। দামিনী মাসি বললো।
হাসলাম। অসুবিধা না থাকলে সঙ্গে চলো, ও বাড়িতে সারারাত কথা বলবো।
দামিনীমাসি বড়মার দিকে তাকাল।
যাবে ?
দামিনী মাসি মাথা নীচু করলো।
আমি তাহলে বাদ যাই কেনো। ইসলামভাই চেঁচিয়ে উঠলো।
আমি হাসলাম।
বাড়ির গেটে গাড়ি এসে দাঁড়াতেই দেখলাম ভেতরে সব লাইট জ্বলছে। তারমানে বাড়িতে কেউ আছে। বড়মার দিকে তাকালাম। বড়মা হাসলো। বুঝলাম বড়মা ব্যাপারটা জানে। ছগনলাল গেট খুলে দিল। গাড়ি ভেতরে এসে বাগানের রাস্তায় দাঁড়াল। আমি গাড়ি থেকে নামলাম। ওরাও সবাই নেমে এলো।
মিত্রার ফোনটা বেজে উঠলো।
হ্যালো….হ্যাঁ সবে মাত্র বাড়িতে ঢুকলাম। এখনো ঘরে যাই নি।….হয়তো বন্ধ….হো হো হো….
দেখলাম ভেতর থেকে টিনা মিলি বেরিয়ে এলো। বুঝলাম এরা অফিস থেকে সোজা এখানে চলে এসেছে। তারমানে এরাও কিছুটা আঁচ করেছে আজকের ঘটনার সম্বন্ধে।
তোমরা কখন আসবে….রান্না টিনা মিলি করছে….ঠিক আছে তোমরা নিয়ে এসো….বৌদি সুরো আসবে! কি মজা হবে….শোন একটু কষা কষা নিয়ে আসবে….আচ্ছা।
মিত্রা এতোক্ষণ কথা বলেছে, দামিনী মাসি ইসলামভাই ছোটমা বড়মা ওর মুখের দিকে সমানে চেয়ে আছে, বোঝার চেষ্টা করেছে মিত্রা কার সঙ্গে কথা বলছে। কথা শেষ করেই মিত্রা আমার সামনে এগিয়ে এলো। পেছন পেছন ওরা। চোখে মুখে বিস্ময়ের হাঁসি।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলাম ফোনটা কার হতে পারে। কথা শুনে বুঝলাম, খাওয়ার একটা আয়োজন হতে পারে। ডাক্তারদাদা গাড়ি থেকে নেমে এলো।
আবার কি হলো, তোমরা সব ওকে ঘিরে ধরে দাঁড়িয়ে আছ কেন।
একটু পরে বুঝতে পারবে।
কেন আবার কি হলো!
ওর সব কীর্তি এবার থেকে দেয়ালে খোদাই করে রাখতে হবে।
মিত্রা হাসি হাসি মুখ করে ডাক্তারদাকে বললো।
নীরু মিত্রার কথায় হাসছে।
আমি আর দাঁড়ালাম না। প্রচন্ড জোড়ে বাথরুম পেয়েগেছে। সোজা হাঁটা লাগালাম।
কিরে হন হন করে কোথায় যাচ্ছিস। তোর হবে দাঁড়া।
শিঁড়ি বেয়ে ওপরে তর তর করে উঠে এলাম। জামা প্যান্টটা কোন প্রকারে ছেড়ে বাথরুমে দৌড়লাম। সব কাজ সেরে ভালো করে স্নান করলাম। শরীরটা এখন বেশ হাল্কা হাল্কা লাগছে। বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখলাম সুরো আমার খাটে চিত্তাল হয়ে শুয়ে আছে। বেশ সুন্দর একটা শালোয়াড় কামিজ পরেছে। মাথার ওপর পাখাটা বন বন করে ঘুরছে।
কিরে তুই, এই অসময়ে!
তড়াক করে বিছানায় উঠে বসলো।
ঢং, কিছু জানেনা যেন।
তারমানে!
এখানে জোর খাওয়া দাওয়া আছে।
স্পন্সর কে।
বাবা।
তোর বিয়ে ?
ছুটে এসে দিলো আমার পেটে গোঁতা।
আমার বিয়ে খাওয়ার সখ হয়েছে।
আমি হেসে উঠলাম।
কেন তুইতো ইন্টু মিন্টু করছিস আমার কাছে সেরকমই খবর আছে।
আবার তেড়ে এলো। আমি ওর হাতটা চেপে ধরলাম। ধস্তা ধস্তি শুরু হয়ে গেলো। সুরো চেঁচিয়ে উঠলো।
কে বলেছে শুনি আগে।
কে আবার বলবে আমি জানলাম।
কোথা থেকে জানলে বলো।
তাহলে আমার কাছে খবরটা ঠিক এসেছে বল।
ফালতু খবর। সুরো কোনদিন এলি তেলি ছেলের সঙ্গে প্রেম করবে না।
তা ঠিক। তোর তো আবার….
খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিচ্ছি অনিদা।
আমি ওর হাতটা ছেড়ে দিলাম।
আমাকে যে ফোন করে বললো তুই সেন্ট্রাল পার্কে হাতে হাত ধরে বসে আছিস।
সুরো গঁ গঁ করতে করতে আবার তেড়ে এলো।
তবেড়ে।
আমি আবার ওর হাত দুটো চেপে ধরলাম।
টাওয়েল খুলে গেলে কিন্তু হুলুস্থূলুস কান্ড বেঁধে যাবে।
খুলুক।
সে কিরে! তোর বৌদি একেবারে কালি ঠাকুর হয়ে যাবে।
ও কিরে দুজনে মারপিট করছিস কেনো। গেটের সামনে ছোটমা।
দেখ না অনিদা বাথরুম থেকে বেড়িয়ে কিসব বলছে।
যা সত্যি তাই বলছি।
ছোটমার পেছনে এসে বৌদি মিত্রা দাঁড়াল।
ওরা আমাদের এই অবস্থায় দেখে হাসছে।
ওরা মারপিট করুক। চল আমরা নিচে যাই।
দেখ না মা অনিদা কি সব বলছে।
ও তোর অনিদা আর তোর ব্যাপার।
তাহলে বলি বল।
আমি সুরোর দিকে ভ্রু নাচিয়ে বললাম।
সুরো দাঁত মুখ খিঁচিয়ে আমার পেট চিমটে ধরলো।
আর হবে বলো।
আমি উ উ করে উঠলাম।
আগে বলো আর বলবে।
না আর বলবো না। ছাড়।
বলো, যা বলিলাম মিথ্যে বলিলাম।
যা বলিলাম মিথ্যে বলিলাম।
আমার অপরাধ হইয়া গেছে সুরো।
এতো সাধু ভাষা বলতে পারব না।
চলিত ভাষায় বলো।
তুই আগে ছাড় তারপর বলবো।
আগে বলো তারপর ছাড়ব।
বললাম।
মুখে উচ্চারণ করে বলো।
নোট পাবি না। ফার্স্ট ক্লাস হবে না।
না হোক তবু মুখে বলো।
ওরা তিনজনে গেটের সামনে সুরোর কীর্তি দেখে হেসে গড়িয়ে পরে।
আচ্ছা পরে বলছি। এবার কিন্তু আমার টাওয়েল খুলে পরে যাবে।
খুলুক।
সেকিরে, বৌদি গেটের মুখ থেকে চেঁচিয়ে উঠলো।

সুরো পেট থেকে হাত সড়াল আমি একটু হাত বুলিয়ে নিলাম। জায়গাটা সামান্য লালা হয়ে গেছে। বহুত জোড়ে চিমটে ধরে ছিল।
 
মনে রাখিস কষা মাংসের এক টুকরোও পাবি না। চেটে চেটে সব পাতে সাজিয়ে রেখে দেব।
আমি তাই খাবো।
ছোটমারা আমাদের রকম সকম দেখে হেসে গড়িয়ে পরে যায়।
আমি একটা সাবেক পাজামা পাঞ্জাবী আলনা থেকে টেনে বার করলাম।
সুরো ছুটে এলো।
এটা পরা হবে না।
সেকিরে তুইও আমার ওপর খবর দারি করবি নাকি।
বেশ করবো।
খেয়েছে।
খেয়েছে না খাইসে।
ওই হলো আর কি।
মিত্রা পায়ে পায়ে এসে ঘরে ঢুকলো।
কোনটা পরবে বল।
বিয়ের দিন সকালে যে গেড়ুয়া রংয়ের টা পরেছিল সেইটা।
আমার কি আজ বিয়ে।
আবার।
সুরো তেরে এলো।
ঠিক আছে ঠিক আছে মিত্রা তাই দে ডাকিনী যোগিনীর হাত থেকে অন্ততঃ বাঁচি।
সুরো আবার তেড়ে এলো, আমি মিত্রার পেছনে আশ্রয় নিলাম। ঢাল বানালাম মিত্রাকে।
কি ভেবেছ কি বৌদি তোমাকে বাঁচাবে।
না। তুই হাফ মার্ডার করবি আর তোর বৌদি হাফ। তাহলেই ষোলকলা পূর্ণ।
কিগো তোমার জামা কাপর পড়তে এতো দেরি।
হাসতে হাসতে টিনা ওখানেই বসে পরলো।
তোমরা তিনজনে কি করছো ?
ঘুসো ঘুসি। সুরো মারছে আমি মিত্রাকে দিয়ে আটকাচ্ছি।
এই মিলি দেখবি আয় অনিদার অবস্থা।
টিনা তারস্বরে চেঁচিয়ে উঠলো।
দেখলি দেখলি একেবারে কেল করে দিলি।
বেশ করেছি।
এবার সারা পাড়া রাষ্ট্র হয়ে যাবে।
হোক।
ঠিক আছে ঠিক আছে। উইথড্র।
ঠিক।
ঠিক। যা বলেছি সব।
সুরো ঘুরে দাঁড়াল।
মাথায় রাখিস, এবারের মতো ছেড়ে দিলাম পরের বার হলে….
সুরো দাঁত মুখ খিঁচিয়ে তেড়ে এলো।
তুমি কিছু করতে পারো না।
মিত্রার দিকে তাকিয়ে ঝাঁঝিয়ে উঠলো।
মিত্রা খিল খিল করে হাসছে।
আমি কি করবো বল।
চিমটি কেটে পেটের মাংস তুলে নেবে।
মিলি বড়মা এসে হাঁসির আসরে জোগ দিয়েছে।
ওরা কি করছে রে ছোট।
কথা বলো না বৌদি বলেছে খালি দেখে যেতে।
ও সুতপা।
থামো তো তুমি। খালি সুতপা সুতপা।
তা বলে ধিংগি গুলো মারপিট করবে।
আজ দেখছো তাই বলছো, আমার দেখে দেখে চোখে ছানি পরে গেছে।
ও সুরো ছাড় ছাড় রোগা পেটকা ছেলেটা….
রোগা পেটকা। সুরো ভেংচি কাটল।
জানো গায়ে অসুরের মতো শক্তি।
মিত্রা হাসতে হাসতে খাটে গিয়ে বসে পরলো। আমি সুরো কে জড়িয়ে ধরলাম।
দেখ ঘেমে গেছি। অনেকক্ষণ ধস্তা ধস্তি হয়েছে। বহুত খিদে পেয়ে গেছে।
মাংস আমার।
সবাই এবার জোড়ে হেসে উঠলো।
শুধু মাংসো নয় আমার পাতে যা পরবে সব তোর।
সুরো আমার কি থাকবে। মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো।
তোমাকেও ভাগ দেব।
ওরা সবাই হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে।
ধস্তা ধস্তির পরিসমাপ্তি হলো। হাসতে হাসতে যে যার ক্লান্ত।
ওরে বাবারে সত্যি তোরা পারিসও বটে। ছোটমা বলে উঠলো।
আমি মিত্রার বার করা পাজামা পাঞ্জাবী নিয়ে ছোটমার ঘরে চলে গেলাম। বাথরুমে গিয়ে আবার গায়ে একটু জল ঢাললাম। তারপর পাজামা পাঞ্জাবী পরলাম।
এ ঘরে এসে দেখি সব নিচে চলে গেছে। বারান্দা দিয়ে লক্ষ্য করলাম পাঁচ খানা গাড়ি লম্বা করে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বুঝলাম নিচে অনেকে ভিড়ভাট্টা। আমি মোবাইলটা পকেটে নিয়ে নীচে নেমে এলাম।
আয় আয় বিধানদা আমাকে দেখেই বলে উঠলো। আমি মুচকি হাসলাম।
ঘরে পা রেখেই চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম। সোফায় পাঁচ মাথা, চেয়ারে দামিনীমাসি ইসলামভাই। রতন আবিদ অবতার সাগির এক কোনে বসে আছে। বুঝে গেলাম কেশটা কি হয়েছে। এরাও সব জেনে গেছে। রান্নাঘরের সামনে নীরু সুরো খেয়ো খেয়ি করছে সঙ্গে মিত্রা। তালে তাল দিচ্ছে মিলি, টিনা। বড়মার ঘরে উঁকি মেরে দেখলাম ডাক্তারদাদা, দাদা, মল্লিকদা। তারমানে দাদা মল্লিকদাও চলে এসেছে!
প্রবীরদা আমাকে দেখেই উঠে দাঁড়াল। এগিয়ে আসতে গিয়ে বাধা পেল।
বিধানদা চেঁচিয়ে উঠলো।
না প্রবীর আমাদের আইডিয়োলজিতে ইমোশনের কনো দাম নেই, বি-প্র্যাকটিক্যাল। বাস্তব যেটা সেটা মেনে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলি।
অনুপদা আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো।
ইসলামভাই, দামিনীমাসিও হাসছে।
অবতার, সাগির দুজনেই আমার কাছে এগিয়ে এলো।
এই তোরা কি ফুস ফুস করতে যাচ্ছিসরে। এতোক্ষণ বোবা হয়েছিলি, অনিকে দেখামাত্রই মুখে বোল ফুটে গেল। রূপায়ণদা চেঁচিয়ে উঠলো।
ওরা মাথা নীচু করে এসে আমার সামনে দাঁড়াল। সবাই তাকিয়ে দেখছে।
বাবুর সময় হলো নিচে নামার।
ঘর থেকে বেরতে বেরতে দাদা আমার দিকে তাকিয়ে বললো।
মল্লিকদা আমাকে দেখে হাসতে হাসতে বললো। তুই পারিসও বটে।
তোমার কাজটা এবারও পুরো করতে পারলাম না। অবতার মাথা নীচু করে বললো।
অনিমেষদা বিধানদা আমার দিকে তাকিয়ে। মিটি মিটি হাসছে।
ওদের মতো এরকম বিশ্বস্ত সৈনিক পেলে আমরা অনেক দূর এগোব বুঝলি অনি।
রূপায়ণদা ফুট কাটলো।
দাদাদের সব বলেছিস।
সাগির মাথা দোলাল। বলে নি।
মাসি কিছু বলেছে।
না।
ইসলামভাই।
না।
রতন আমার হাতে একটা খাম দিল।
গেছিলি।
রতন মাথা দোলাল।
করে দিয়েছে।
হ্যাঁ।
কনো ঝামেলা করে নি।
বললো তুই আবার কবে থেকে একে চিনলি।
একটু ছুঁয়ে দিলি।
রতন হাসতে হাসতে মাথা দোলাচ্ছে।
সাগির ওদিককার খবর।
ঠিক আছে। একটু ঝামেলা করেছিল। আমি লোক লাগিয়ে দিয়েছি।
ফোন টোন কিছু করেছিল।
না।
খবরা খবর নিয়ে রাখবি।
দাদা দেখছেন ওর কারবারটা। ইসলামভাই বললো।
দেখছি, দাঁড়াও বোঝার চেষ্টা করছি। বিধানদা বললো।
দাদাদের এবার সব বলে দে। যা যা প্রশ্ন করবে সব।
অবতার, সাগির আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো।
আবিদ তুই বাইরে আয়।
কেন ও বাইরে যাবে এতক্ষণ বেশ হচ্ছিল হোক না। অনিমেষদা বললো।
না এটা একেবারে অন্য, তোমাদের এখন জানান যাবে না।
সুতপা।
আবার কি হলো।
তোমার পুত্রবতের অবস্থা দেখেছ। আমরা এখানে বসে আছি। পাত্তাই দিচ্ছে না।
তোমাদের কোন ক্ষতি করেছে কি ?
বিধানবাবু উত্তর শুনলেন।
শুনলাম। সুতপা একটু চা দাও তারপর খাব।
দাদা কটা বাজে খেয়াল আছে।
আছে আছে। এতোবড়ো একটা অসম্মানের হাত থেকে অনি সকলকে বাঁচাল, সেই উপলক্ষে একটু চা চাইছি।
বাবাঃ ছেলের কীর্তিটা তাহলে স্বীকার করছেন। আপনারা সহজে কিছু স্বীকার করেন না।
বিধানদা হেসে উঠলো।
আমি বাইরে বেড়িয়ে এলাম। আবিদের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথা বললাম। তারপর ভেতরে এলাম। দেখলাম তখনো চায়ের সঙ্গে অনিমেষদা বিধানদা, সাগির অবতারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে চলেছে। ওরা কখনো চুপ করে আছে কখনো উত্তর দিচ্ছে। আমি ভেতরে এসে একটা চেয়ার নিয়ে বসলাম।
এবার ওদের ছেড়ে দাও। খেয়ে দেয়ে যাক, অনেক কাজ আছে।
আবার কিসের কাজ।
আছে কিছু ছোট ছোট কাজ আছে।
সাগির, অবতারের দিকে তাকিয়ে বললাম।
যা বাথরুমে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে নে।
আমি বলার সঙ্গে সঙ্গে ওরা উঠে দাঁড়াল। ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। অনিমেষদার দিকে তাকালাম।
খোঁজ খবর নিলে। আমি যা বলেছিলাম মিললো কিছু।
অনিমেষদা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
প্রবীরদা আর কাউকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করো না।
তুই বিশ্বাস কর অনি।
আমার গায়ে জননেতার গন্ধ নেই তোমার আছে। চোখের সামনে প্রমাণ করে দিলাম।
আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছিনা।
বিশ্বাস করা না করা তোমার ব্যাপার।
একটু থেমে।
ডাক্তারদাদা ধরতে না পারলে তোমরা কিছুই জানতে পারতে না।
সে তো বুঝলাম। বিধানদা বললেন।
ওই ভদ্রলোকের সম্বন্ধে কি ডিসিসান নিলে।
এখনো কিছু নিই নি। কালকে একবার সকলে বসবো। মিটিং-এ ডেকে পাঠাই তারপর।
দেরি করো না।

কেন।
 
যে টুকু খতি করার করে দিয়েছে। বাকিটা সুযোগ দিও না। আর একটা কথা।
বল।
মাসিকে এখন কোন দায়িত্ব দিও না। কিছুদিন যাক তারপর দিও।
কেন বলছিস।
পরিবেশটা অনুকূল নয়।
তুই অরিত্র আর অর্ককে কোথাও পাঠিয়েছিস। দাদা বললো।
আমি! কোথাও পাঠাই নি।
ওরা বেশ কয়েকদিন অফিসে আসছে না।
ফোন করে দেখ।
সন্দীপ বহুবার ফোন করেছে, স্যুইচ অফ।
তোমার কি দরকার অফিসে হাজিরা দেওয়া না লেখা।
অনিমেষদা বিধানদা হেসে উঠলো।
দুটোই।
সম্ভব নয়।
তারমানে।
কোন মানে নেই।
অনি, কি বলছেরে তোর দাদা। বড়মা রান্নাঘর থেকে চেঁচিয়ে উঠলো।
এবার অনুপদা, রূপায়ণদা, প্রবীরদা তিনজনে একসঙ্গে হেসে উঠলো।
দেখলে, দেখলে ডাক্তার অবস্থাটা দেখলে।
দেখে কি করবো। তোমার লেখা পাওয়া নিয়ে দরকার, পেয়ে যাবে।
অনেক হয়েছে এবার ওঠো। বিধানদা চটপট করে রেডি হতে হবে। রাত হয়ে গেছে। বৌদি এসে তাড়া লাগাল।
সবাই উঠে দাঁড়াল। ইসলামভাই গিয়ে রতনদের ডেকে নিয়ে এলো ওরা ধরা ধরি করে সব টেবিল চেয়ার একপাশ সরিয়ে দিলো। নিচে আসন পাতা হল।
বড়মা আজ আমি অনিদার পাশে।
বড়মা সুরোর দিকে তাকিয়ে হাসল।
আবার শুরু করবি।
না।
মনে থাকে যেন।
হ্যাঁ।
তোর বৌদি কোথায় বসবে।
আর এক পাশে বসবে।
এটা কি হলো সুতপা। অনিমেষদা বৌদিকে বললো।
আর বোল না। এসে একচোট অনির সঙ্গে হয়ে গেছে।
কেন।
জিজ্ঞাসা করো তোমার মেয়েকে।
নাগো বাবা আনিদা বাজে কথা বললো তাই।
তাই বলে তুই….।
একটু, বেশি না।
ঠিক করেছিস, আমি বলছি তোকে, পারলে বেশি করে করবি। তোকে এবর ওর নজরদারি করার দায়িত্ব দেব। বিধানদা বললো।
দেবে।
পারবি।
তুমি বলোনা এক চিমটিতে পেট থেকে সব কথা বার করে নেব।
সুরোর কথায় সবাই হাসে।
মাথায় রাখিস আমার পাশে বসা হবে না।
বড়মা বলেছে।
বড়মার পাশে বসবি।
মাংস গুলো দিয়ে দেবে।
সবাই হাসছে।
খেতে বসা হলো।
খেতে খেতে অনিমেষদা বললো।
জানিষ অনি তোর সব কথা ঠিক ঠিক লেগে গেছে, একটা কথা লাগে নি।
কোনটা বলো।
ওরা প্রবীরকে ফাঁসাতে চেয়েছিল ঠিক, তবে তার আগে তোর নামটা ছিল।
তুমি আমার কাছ থেকে যেটা জানতে চইছো, সেটা এত সহজে জানতে পারবে না। তবে একটা কথা বলে রাখি, আমি যদি টার্গেট হতাম। কাজটা অবতাররা ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে খতম হয়ে যেত। সময় দিত না। এবার তুমি যা বোঝার বুঝে নাও।
সবাই খাওয়া থামিয়ে আমার মুখের দিকে তাকাল।
যা বলছি ঠিক বলছি। তুমি অবতার আর সাগিরকে ছাড়িয়ে এনেছ। ওদের চারজনকে ছাড়িয়ে আনতে পারনি। ওদের কাল পরশু ছাড়িয়ে আনব। একচ্যুয়েলি অবতার, সাগির ফিডব্যাক দিত, কাজটা করতো ওরা। অবতার, সাগিরও ওদের চেনে না।
তাই কি আবিদের সঙ্গে বাইরে দাঁড়িয়ে সেই কথাই আলোচনা করলি।
চুপ করে থাকলাম, কোন কথা বললাম না।
আন্ডারওয়ার্ল্ডের ব্যাপারটা তুই বেশ ভাল রপ্ত করে ফেলেছিস।
বাঁচার তাগিদে, না হলে কুকুর বেড়ালের মতো সকলে ছিঁড়ে খেয়ে ফলতো। আশা রাখি তার প্রমাণ তোমাদের এই কয়মাসে বহুবার দিয়েছি।
আস্বীকার করছিনা।
তোমরা পলিটিক্যালি ব্যাপারটা জানতে পেরেছিলে। কবে জানতে পেরেছিলে ?
আজ সকালে জেনেছিলাম। অনুপদা বললো।
আমি যদি টার্গেট হোতাম কাল রাতেই কাজ হাসিল হয়ে যেত। তোমরা বড়োজোড় একটা তদন্ত কমিশন বসাতে। তার রিপোর্ট জমা পরতো তিন বছর পর। কি হতো ?
সবাই চুপ করে গেল। সুরো আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। আমি ওর পাতে আমার পাত থেকে দুটো মাংসের টুকরো তুলে দিলাম। সুরো হাসলো। দুটো তুলে দিলাম মিত্রার পাতে।
তুই খাবি না। মিত্রা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
আমার দুটে আছে। বড়মা তোদেরটাও আমার পাতে দিয়ে দিয়েছে। না হলে কম পরে যাবে।
তাহলে আর একটা দাও।
চেটে নিই তারপর দিচ্ছি।
উঁ খায় কতো।
দেখেছিস তোর বাবা খাওয়ার সময় ইনটরোগেসন শুরু করে দিয়েছে।
ওই জন্য তোমায় বললাম আমাকে একটু শিখিয়ে দাও। বাবাকে নিয়েই প্রথম লিখব।
কি লিখবি বাবা খারাপ কজ করছে।
তা না।
তাহলে।
তুমি বলে দেবে।
সুরো মাংসের হাড়টা ভালো করে চুষলো।
এটা খাবে।
দে।
এ্যাঁ কত খায়।
হাসলাম।
প্রবীরদা।
বল।
তোমার এখনো দুটো ফাঁড়া আছে। তুমি একটু চোখ কান খোলা রেখে চলো, বুঝতে পারবে।
অনিমেষদা আমার দিকে তাকাল। মুচকি মুচকি হাসল।
কিগো ইসলাম তোমার কাছে এরকম কোন খবর আছে।
সত্যি বলছি দাদা, গত দেড়মাস আমি রতন আবিদকে সব ছেড়ে দিয়েছি। আমি খালি আপনার কাজটায় মন দিয়েছি। এদিকটা ওরাই দেখে।
হ্যাঁরে রতন।
রতন মুখ তুললো।
তোদের নামে পুলিশের খাতায় কোন খারাপ রিপোর্ট দেখিনা। এতো সব কাজ করিস কি করে।
দাদা খারপ কাজ করতে বারণ করে দিয়েছে।
তাহলে খারাপ কাজগুলো করে কারা।
রতন চুপ করে রইলো।
বলবি না এই তো।
অমিতাভদা আপনি কিছু ধরতে পারছেন।
সত্যি কথা বলবো অনিমেষ।
বলুন।
তোমার সঙ্গে বিধানবাবুর সঙ্গে আমার পরিচয় ছিল। বলতে পার একজন কাগজের সম্পাদক হিসাবে যতটা পরিচয় থাকা দরকার ততটা। এককথায় মুখ চেনা। এর বেশি কিছু নয়। কিন্তু গত দেড়মাসে তোমাদের সঙ্গে যতটা ঘনিষ্ঠতা হল সেটা ছিল না।
তোমার সঙ্গে যে ওর এতটা ঘনিষ্ঠতা আছে সেটাও ঘুণাক্ষরে জানতাম না। তুমি ওর বড়মাকে জিজ্ঞাসা করতে পার। অফিসে গন্ডগোল হলো। একদিন ওকে ডেকে মিত্রার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম। সেদিন প্রথম ওর চোখে মুখের চেহারার পরিবর্তন দেখলাম।
এরপর মিত্রা যখন আমাদের সঙ্গে জড়িয়ে পরলো। তারপর থেকে এই ঘটনা গুলো একটু একটু জানতে পারলাম। তার আগে অনি এ বাড়িতে থেকেছে খেয়েছে শুয়েছে, ঘুণাক্ষরেও কিছু জানতে পারি নি। তবে ওর আর্টিক্যালগুলো দেখে মাঝে মাঝে সন্দেহ হতো। এ ধরণের আর্টিক্যাল সেই-ই লিখতে পারে যে ওই ক্লাসের সঙ্গে গভীরভাবে মেশে। বিশেষ করে যে লেখাটা লিখে ও নাম করলো।
মাসিদের নিয়ে লেখাটা বলছেন তো।
হ্যাঁ।
প্রত্যেকটা ইনস্টলমেন্ট আপনার কাগজে দেওয়ার আগে ও সুতপাকে পরিয়ে নিত। আমি সুতপার কাছ থেকেই জেনেছি। আমার সঙ্গে প্রয়োজন ছাড়া ও বিশেষ কথা বলতো না। যতো জাড়ি জুড়ি সুতপার কাছে। সুতপাকে ও মন খুলে অনেক কথাই বলতো, মিত্রার কথাও একবার নয় বহুবার বলেছে, সুতপার মুখ থেকে ওর কথা শুনে শুনে ওর প্রতি একটা দুর্বলতা এলো বলতে পারেন ইনটারেস্ট, তখন ওর সম্বন্ধে একটু আধটু খবর নেওয়া শুরু করলাম। কিন্তু চেষ্টা করেও ওর স্থায়ী ঠিকানা জোগাড় করতে পারি নি। কারন জানেন ?
না।
ও তখন ওই জায়গায় অনি নামে বিখ্যাত ছিল না। সকলে মাস্টার বলে জানত। তা ছাড়া দামিনী, ইসলাম ছাড়া ও যে সাংবাদিকতা করে এটাও কেউ জানত না। কি দামিনী আমি ঠিক কথা বলছি ?
দামিনী মাসি মাথা দোলালো। আমি ওই আলোচনায় কোন ইন্টারফেয়ার করলাম না। বুঝলাম অনিমেষদা একটা জাল বিস্তার করছে, কিছু জানার তাগিদে।
আপনাক সংক্ষেপে বললাম। আরও অনেক কিছু ওর সম্বন্ধে এই কদিনে উদ্ধার করেছি।
খারাপ না ভালো।
সময় বলবে।
বলা যাবে না।
না।
ছোট দুটো ভাত দাও। বিধানদা বললো।
হ্যাঁ দাদা দিই।
ছোটমা উঠে গেল।
হ্যাঁরে অনি জিজ্ঞাসা করলি না আজকের খাওয়াটা কি উপলক্ষে।
আমি বিধানদার দিকে তাকালাম। তারপর সুরোর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলাম।
চিমটি কেটে পেটের মাংসো তুলে নেব। সুরো খিঁচিয়ে উঠলো।
কে কি বুঝলো জানি না, আমি হেসে ফেললাম।
কিরে তোর আবার কি হলো। অনিমেষদা বললো।
তোমাকে জানতে হবে না।
ওরকম করে উঠলি কেন।
আসাতক এরকম চলছে। বৌদি বললো।
টিন হাসছে।
টিনাদি খুব খারাপ হয়ে যাবে। সুরো আবার চেঁচাল।
না না আমি বলবো না। মিত্রাদি যদি বলে দেয়।
তুমি বৌদিকে বলেছো!
একটু।
সুরো ঘ্যান ঘ্যান করে উঠলো।

সবাই হাসছে।
 
কি হয়েছেরে অনি। বিধানদা বললো।
বলে দিই। সাসপেন্সে রেখে লাভ কি। আমি বললাম।
খুব খারাপ হয়ে যাবে।
আচ্ছা বলবো না। তোর ভাগের মিষ্টি গুলো আমার।
ঠিক আছে।
অনিমেষদা হেসে উঠলো।
বিধানবাবু।
বুঝলাম। তারমানে এখানেও একটা গন্ডগোল আছে।
কোন গন্ডগোল নেই। সুরো চেঁচিয়ে উঠলো।
তাহলে।
তাহলে আবার কি।
তোকে নজরদারির চাকরিটা দেওয়া যাবে না।
দিও না। বয়েই গেছে।
তাহলে খাওয়া দাওয়াটা কিসের জন্য তুই বল। বিধানদা বললো।
আমি সুরোর দিকে তাকালাম।
বাবা বললো অনি একটা ভালো কাজ করেছে।
সুরো আমার দিকে তাকিয়ে।
তাই প্রবীর বলেছে অনির বাড়িতে আজ রাতে খাওয়া দাওয়া। চলে আয়। তাই চলে এলাম।
তোর বিশ্বাস হয় অনি ভালো কাজ করেছে ? বিধানদা বললো।
অনিদা খারাপ কাজ করে না। প্রবীরকাকু তো বললো অনিদা বয়সে বড়ো হলে অনিদেকে প্রণাম করতো। খারাপ কাজ করলে প্রবীরকাকু এই কথা বলতো।
বিধানদা হাসছে।
জব্বর কথা বলেছে সুরো। কি বিধানবাবু এর পর আর কোন প্রশ্ন করবেন। ডাক্তারদাদা বললো।
বিধানদা হাসছে।
ইসলাম। ডাক্তারদা ইসলামভাই-এর দিকে তাকালো।
বলুন দাদা।
তুমিতো পর্শু চলে যাবে। এদিককার কাজের কি ব্যবস্থা করেছো।
আমি কালকে সব বুঝিয়ে দিয়ে যাব।
অনি।
বলো।
আমার টাকার কি হলো।
পেয়ে যাবে।
কিসের টাকা! অনিমেষদা বললো।
বাড়িটা সারাতে হবে না।
অনুপ ব্যবস্থা করবে।
না। আমি বললাম।
কেন।
তোমরা অনেক সাহায্য করছো এটাই যথেষ্ট। বাকিটা আমি ঠিক জোগাড় করে নেব।
আমরা যদি কিছু সাহায্য করি।
ব্যাঙ্ক এ্যাকাউন্টটা করতে দিয়েছি। হয়ে যাক, তোমরা সাহায্য পাঠিয়ে দেবে। তখন কোন বাধা দেব না।
অনিমেষদা আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো।
তোকে সবাই কান ধরে, এবার আমি কান ধরবো।
তা ধরতে পারো। কিন্তু ওটা আমার খুব সফ্ট কর্নার। বরং সুরোর কাছ থেকে আমি সাহায্য নেব।
ও তোকে সাহায্য করবে বলেছে।
হ্যাঁ। ডোনেসনের বিল ছাপতে দিয়েছি। ওকে একটা দেব ও সাহায্য নিয়ে আসবে। ও তো এই ফাউন্ডেসনের একজন মেম্বার।
সুরো মিটি মিটি হাসছে।
আর কাকে কাকে মেম্বার করলি।
তোমাদের সকলের নাম প্রস্তাব করে চিঠি পাঠান হয়েছে। যারা যারা সম্মতি দেবে তাদের আমরা মেম্বার করবো।
কি করতে হবে।
ওখানে ডিটেলসে লেখা আছে।
দাদা, পাকা পোক্ত কাজ। অনুপদা ফুট কাটল।
সে আর বলতে।
তোমরা সকলে মিলে ওকে চেপে ধরেছো কেন বলো। বড়মা বললো।
ওকে সেই ভাবে পাই কোথায় বলুন দিদি।
অনিমেষদা এমনভাবে কথাটা বলে থামলো, সারাটা ঘর নিস্তব্ধ হয়ে গেল।
আমরা চেষ্টা করলে ওর মতো কাজ করতে পারি। কিন্তু আমাদের অনেক অবলিগেসন। ও যেটা একলা তাৎক্ষণিক ভাবে ডিসিসন নিতে পারে আমাদের সেটা একটু বেশি সময় লাগে। তাতে সব সময় যে ক্ষতি হয় তা নয়, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের ক্ষতি হয়ে যায়। পলিটিক্যালি তাকে ধামা চাপা দেবার ব্যবস্থা করি। সব সময় হয়ে ওঠেনা। এসব কথা যদিও বলা ঠিক নয়, তবু আপনারা সবাই ঘরের লোক বলে মনে করছি। তাই বলছি।
ওর কাছ থেকে আমাদেরও কিছু শেখার আছে। প্রবীরকে আমি ব্যক্তিগতভাবে বলেছি। তুমি অন্যায় করেছ এটা স্বীকার করো। ও মেনে নিয়েছে। এও বলেছি সেদিন রাতে তেমার সঙ্গে অনি যে ব্যবহার করেছে তাতে তেমার মনে কোন দাগ কেটেছে। ও স্বীকার করে নিয়েছে। অনির জায়গায় অন্য কেউ হলে ও ভেবে দেখতো। অনি মন থেকে এটা করতে চায় নি। তবে অনি আমাকে শিক্ষা দিয়েছে।
জিজ্ঞাসা করুণ আমি কিন্তু প্রবীরের সামনে এই কথা বলছি। আজও প্রবীর যখন আমাকে বললো, দাদা আপনার সঙ্গে জরুরি কথা আছে। তখনই মনে একটা কু গেয়েছে। আস্তে আস্তে অনুপকে ফোন করলাম। দেখো তো কনো খবর আছে কিনা অনিকে নিয়ে। তারপরে প্রবীর গাড়িতে আস্তে আস্তে সব বললো। বুঝলাম আবার কোথাও একটা গন্ডগোল পেকেছে। অনির কাছে সব শোনার পর অনুপকে ফোন করতেই বললো ও সব খবর জোগাড় করেছে। বুঝে গেলাম।
ওখানে আমি পৌঁছবার আগে বিধানবাবু পৌঁছে গেছিলেন। আবহাওয়া খুব একটা যে ভালো ছিলো তা বলবো না। তবে ওর সৈনিকগুলো ওকে খুব ভালবাসে। ও যদি মন থেকে ওদের কাছে কিছু চায় সেই কাজটার জন্য ওরা জীবন পর্যন্ত বিসর্জন দিয়ে দেবে।
আমি মাথা তুলে ঘরের পরিবেশটা একবার চোখ বুলিয়ে দেখে নিলাম। সবাই অনিমেষদার কথা মন দিয়ে শুনছে বলতে পারা যায় গিলছে। ইসলামভাই রতন আবিদরা এই প্রথম অনিমেষদাকে এতো কাছ থেকে আলাপচারিতায় দেখছে। অবতার সাগিরের চোখে কেউ যেন হাজার পাওয়ারের বাল্ব জেলে দিয়েছে।
আচ্ছা মিত্রা তোকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো।
বলুন।
কিছু মনে করবি না।
না।
অনিকে তুই কতো মাইনে দিতিস।
ও মালিক হওয়ার আগে প্রায় হাজার পঞ্চাশেক টাকা।
এখন।
এখনো ও সেই টাকা নেয়। ওর ডিরেকটরশিপ রেমুনারেসন নেয় না। রিফিউজ করেছে।
তোর সঙ্গে যখন ওর আবার দেখা হলো তারপর এই সব ঘটনা ঘটলো। তুই ওর আরও কাছে এলি। কখনো ওকে জিজ্ঞাসা করেছিস ও একা মানুষ এতো টাকা ও খরচ করে কোথায় ?
একবার করেছিলাম। উল্টে বলেছিল ওই টাকায় ওর কুলোয় না।
অনিমেষদা মিত্রার দিকে মুখ তুলে তাকাল, বিধানদার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। ব্যাপারটা এরকম আমি যে অনুসন্ধিৎসু নিয়ে এই কথা বলছি তা মিলছে। বিধানদা চোখে চোখে হাসল।
ওর খাওয়া দাওয়ার পয়সা লাগে না। বেশিরভাগ সময় ওর যাবতীয় প্রয়োজনীয় জিনিষ তুই কিংবা দিদি বা ছোট কিনে দিস। তারপর ওর বৌদি আছে মাসি আছে, ইসলাম আছে। ওর খাওয়া খরচ লাগে না, থাকার খরচ লাগে না। বাজে খরচ ও করে না। একটা মানুষ খালি ট্রাভেলিংয়ে এত টাকা খরচ করতে পারে।
মিত্রা চুপ করে রইলো।
অনিমেষদা বড়মার দিকে তাকাল। দিদি আপনি কখনো জিজ্ঞাসা করেছেন।
আমি যতোটুকু জানি ওর দাদা ওর মাইনের কিছু টাকা কেটে ওর বাড়িতে প্রতিমাসে মানি অর্ডার করে পাঠায়। আগে কম পাঠাতো এখন বেশি পাঠায়। ওর টাকা ও খরচ করে।
অমিতাভদা আপনি কিছু জানেন।
না।
অনিমেষদা এবার আমার দিকে তাকাল।
কিরে আমাকে দাদা বলে ডাকিস, সম্মান করিস, এবার সবার সামনে আমার প্রশ্নের উত্তর দে।
আমি অনিমেষদার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে রইলাম মুচকি হেসে মাথা নীচু করলাম। মনে মনে বললাম তুমি অনেক ঘোড়েল মাল। ঠিক খবর তুমি জোগাড় করে ফেলেছ।
অফিসের টাকা ছাড়াও তুই আরও রোজগার করিস। সব তোর কঠোর পরিশ্রমের টাকা। সেগুলো কি করিস ?
অনুপদা জানে অনুপদাকে জিজ্ঞাসা করো।
সবাই আমার দিকে তাকাল।
অনুপদা জোড়ে হেসে উঠলো।
অনিমেষদা মুচকি হাসল।
হাসছো কেন।
তোর মেধাকে কুর্নিশ করছি।
কেন।
অনুপ জানবে কি করে।
অনুপদা লোক পাঠিয়েছিল। নিজে সেই সব জায়গায় ভিজিট করে এসেছে।
নীরু।
গলার স্বরটা একটু বদলে গেল।
তুই বিশ্বাস কর, বটার কোন দেষ নেই।
আমি নীরুর দিকে কট কট করে তাকিয়ে।
অনুপদা ডাক্তারকে টোপ দিয়েছে, প্রমোসন করিয়ে দেবে, এক মাসের মধ্যে। বটা বলে এসেছে অনুপদা আপনাকে অনির হাত থেকে বাঁচাতে পারে। ডাক্তার রাজি হয়েছে, অনুপদা কথা দিয়ে এসেছে।
নীরু এক নিঃশ্বাসে কথা বলে থামল।
বিধানদা অট্টহাসির মতো হাসতে শুরু করলো। বৌদি, ছোটমা, বড়মা, দামিনীমাসি খাওয়া থামিয়ে আমার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে। ডাক্তারদাদা স্থির চোখে আমার দিকে তাকিয়ে। আমি পকেট থেকে ফোনটা বার করলাম।
ওটা পকেটে রাখ। অনিমেষদা আমার দিকে তাকিয়ে।
আমি অর্ক অরিত্রকে আর ওই মেয়েদুটোর কি যেন নাম….।
রাত্রি আর খুশী। মিত্রা ফুট কাটল।
হ্যাঁ।
ছোট আমাকে আরও দুটো মিষ্টি দাও।
ছোটমা উঠে দাঁড়ালো।
সেকিগো! এ মাসের সুগারটা একটু নর্মাল আছে তাই বলে….। বৌদি বললো।
অনি আমার সুগার নর্মাল রাখতে দেবে না। বরং মিষ্টি খেয়ে নর্মাল রাখি।
ছোট আমাকেও দিও। বিধানদা বললো।
ছোটবান্ধবী আমিই বা বাদ যাই কেন। ডাক্তারদাদা বললো।
ছোটমা সবাইকে দিতে দিতে আমার সামনে এসে দাঁড়াল।
লাগবে না।
কেন, পেট ভড়ে গেছে। ছোটমা বাঁকা চোখে তির্যক দৃষ্টি হানল।
ছোটমার দিকে তাকালাম। সবাই মুচকি মুচকি হাসছে।
অনিদার ভাগেরটা আমাকে দাও। সুরো বললো।
সুরোর দিকে তাকালাম।
অনেক খেয়েছো। হজম হতে সময় লাগবে।
হাসলাম। খুব মজা না।
এমনি এমনি বললাম। বাবা তোমাকে বেশি ভালবাসে কিনা।
মাথায় রাখিস।
ফুটো হয়ে গেছে।
ঠিক সময়ে ঝালাই করে দেব।
সে দিও এখন তোমার ভাগেরটা খাই।
আমি উঠে দাঁড়ালাম।

কিরে উঠছিস কেন। শেষটুকু শুনে যা। অনিমেষদা হাসতে হাসতে বললো।
 
বড়মাকে শোনাও। চোখ দুটো দেখেছো।
তুইও শুনে যা।
না।
গিয়ে আবার ফোন করিসনা যেন। সব দায় আমার আর বিধানবাবুর ঘারে নিয়ে নিয়েছি।
পেছন ফিরে একবার হাসলাম। বাইরের বারান্দার বেসিনে মুখ ধুয়ে ওপরে চলে এলাম।
ঠিক পনেরো দিন পরে অফিসের গলির মুখে এসে দাঁড়ালাম। এই কটা দিন খুব চাপ গেল শরীররে ওপর দিয়ে। কলকাতায় সাকুল্যে ছিলাম মাত্র দুদিন, বাকি কটা দিন বাইরে বাইরেই কেটেছে। যে দুদিন কলকাতায় ছিলাম মিত্রা আমার সঙ্গে ঠিক ভাবে কথা বলেনি। ওর একটাই কথা আমারও কিছু কথা থাকতে পারে তোর সঙ্গে।
ওকে বলে বোঝাতে পারি না, আমি নিজের জন্য সময় নষ্ট করছি না। তুই আমাকে পাকে পাকে জড়িয়ে দিচ্ছিস। এই গেড়ো থেকে বেড়িয়ে আসা সত্যি খুব মুস্কিল। এই কদিন অফিসের যে টুকু খোঁজ খবর রেখেছি তা নিজস্ব প্রয়োজনে। আর কোন খোঁজ খবর রাখি নি। সব ওদের ঘাড়ে ছেড়ে দিয়েছিলাম। জানিনা কি অবস্থা, কেউ আমাকে ফোনও করে নি।
তুমি এখন আসছো ?
একটু অন্যমনস্ক হয়ে পরেছিলাম। দেখলাম তাপস। আমাদের অফিসে ওর গাড়ি ভাড়ায় খাটে।
হ্যাঁ।
তোমার সঙ্গে একটু কথা আছে।
বল।
এখানে বলা যাবে না।
তাহলে।
মোড়ের মাথায় চলো।
চল।
আমি ওর সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে একটু এগিয়ে গেলাম।
বল।
ঠাকুর আমার গাড়িটা বসিয়ে দিয়েছে।
কেন!
ও সন্দেহ করেছে আমি সব খবর তোমায় দিয়েছি।
কতদিন বসিয়ে দিয়েছে।
পনেরো দিন।
তোকে দায়িত্ব দিলে তুই চালাতে পারবি।
পারবো। তুমি একটা মাস দিয়ে দেখ।
ঠিক আছে আমাকে একবার ফোন করে কাল আসিস।
আমায় কিছু টাকা দাও। পকেট একদম খালি।
মানি পার্টস থেকে ওকে একটা পাঁচশো টাকার নোট বার করে দিলাম।
কবে ফেরত দিবি।
বিলটা পাই পেলে দিয়ে দেব।
বিল দিস নি।
আটকে রেখেছে, কি গন্ডগোল আছে।
কে।
তোমার ওই ম্যানেজার।
ম্যাডামকে বলেছিস।
ঢুকতেই দেয় না।
কে।
কে আবার কিংশুকবাবু।
তাপস মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।
পোনেরো দিন ধরে এখানে এসে বসে থাকি তোমার সঙ্গে দেখা করার জন্য।
আমি ছিলাম না।
ছিদাম বললো।
কে ছিদাম।
সিকুরিটির ছেলেটা যে তোমাকে একদিন রাতে আটকেছিল।
ও মনে পরেছে।
তাপসের দিকে তাকালাম ছিদামের সম্বন্ধে ও আর কিছু জানে কিনা। না ওর চোখ সেই কথা বলছে না। ওর সঙ্গে দাঁড়িয়ে আরও কিছুক্ষণ কথা বললাম।
ঠিক আছে তুই যা। কাল একবার দেখা করিস।
আচ্ছা।
পায়ে পায়ে অফিসের গেটের সামনে এলাম। দেখলাম আজ অন্য একটি ছেলে গেটের মুখে দাঁড়িয়ে। রবীন, ইসমাইল আমাকে দেখতে পেয়ে কাছে এগিয়ে এলো।
দাদা কেমন আছো।
ভালো আছি। তোরা কেমন আছিস।
ভাল।
ইসমাইল ছেলে কেমন আছে।
আগের থেকে একটু ভালো।
ওষুধ গুলো ঠিক ঠিক খাওয়াচ্ছিস।
হ্যাঁ। নীরুদা কিছু দিয়েছে। বাকিটা কিনে নিয়েছি।
অফিস থেকে বিল নিয়ে নিয়েছিস।
হ্যাঁ।
রবীন দাদারা এসেছে ?
রবীন মাথা দোলাল।
গেট পেরিয়ে ভেতরে এলাম। রনিতা ম্যাডাম দেখেই উঠে দাঁড়াল। মর্নিং।
হাত নাড়লাম।
পায়ে পায়ে লিফ্ট বক্সের কাছে এলাম। সোজা ওপরে উঠে এলাম। মিত্রার ঘরের দিকে একবার তাকালাম। দেখলাম হরিদার ছেলে সোজা হয়ে বসে কাগজ পরছে। নিউজরুমে এলাম। আজ ঘর ভর্তি। সায়ন্তন কাছে এগিয়ে এলো।
কোথায় ছিলে এতোদিন। পুরো বেপাত্তা।
হাসলাম।
আমাকে দেখা মাত্র মল্লিকদা ফোনটা কানে তুলছে। বুঝে গেলাম। নিজের টেবিলে এসে বসলাম। অগোছাল টেবিল, চিঠির পাহাড় জমেছে। নতুন ঘরে কাঁচের রং বদলেছে। কাঁচের ওপর ফিল্ম লাগানো হয়েছে। ভেতর থেকে দেখা যাবে বাইরে থেকে কেউ ভেতরটা দেখতে পাবে না। এটা নিশ্চই দেবার আর্জি মতো মিত্রা করে দিয়েছে।
অর্ক অরিত্র হাসতে হাসতে কাছে এলো।
তুমি বহুত দুগ্গি আছো। ফাঁসিয়ে দিয়ে কেটে পরলে।
মুচকি মুচকি হাসলাম। মল্লিকদা চেয়ার ছেড়ে উঠে এলো। অর্ক একটা চেয়ার এগিয়ে দিল।
পাঁচদিন ট্রেস নেই তোর ব্যাপারটা কি।
কেন! প্রত্যেক দিন তিনবার করে ফোনে কথা বলেছি সবার সঙ্গে। তোমার কাছে খবর না পৌঁছলে আলাদা।
পকেটে ফোনটা নাড়া চাড়া করে উঠলো। বার করলাম। নম্বরটা দেখে বুঝলাম ঠিক জায়গা থেকে খবর এসেছে।
বল।….কনফার্ম…..কাজে লেগে যা।…..মাথায় রাখিস মিস যেন না হয়।
ফোনটা পকেটে রাখলাম।
তোমার ফোন স্যুইচ অফ না। অরিত্র বড়ো বড়ো চোখ করে আমার দিকে তাকাল।
হ্যাঁ।
তাহলে কার সঙ্গে তুমি কথা বললে।
একটা ছেলের সঙ্গে।
সেতো বুঝলাম। দাঁড়াও দাঁড়াও মাথায় ঢুকছে না। এটা কি আবার তোমার নতুন স্কিম।
বাজে বকিস না। চা খাওয়াবি। অনেক কাজ।
মল্লিকদা মুচকি মুচকি হাসছে আর আমাকে মেপে যাচ্ছে। দেখলাম নিউজরুমের গেটটা ঠেলে হরিদা আমার দিকে এগিয়ে আসছে। বুঝে গেলাম।
চা আনব, না বড়ো সাহেবের ঘরে গিয়ে খাবে। অরিত্র ফুট কাটলো।
আমি হাসতে হাসতে মল্লিকদার দিকে তাকালাম।
আর কাকে কাকে ফোন করে জানানো হয়েছে।
যারা এটলিস্ট তোর খবরটা পেতে চায় তাদের জানিয়েছি।
হরিদা কাছে এসে দাঁড়ালো।
বড়সাহেব ডেকে পাঠিয়েছে। অর্ক ফুট কাটলো।
শুধু বড়ো সাহেব না। দিদমনিও আছে। হরিদা অর্কর দিকে তাকিয়ে খেঁকিয়ে উঠলো।
কার কাছে গেলে চা পাবো। আমি হাসলাম।
হরিদা হেসে ফেললো। চলোতো মেলা বকিও না।
সন্দীপ আসে নি। মল্লিকদার দিকে তাকালাম।
দেরি হবে আসতে।
দেবাশীষ, নির্মাল্য ?
সকালে বেরিয়েছে। তুই এখন কোথা থেকে আসছিস ?
দিল্লি থেকে।
মল্লিকদা হেসে ফেললো।
হাসলে যে।
হাসির কথা বললি তাই।
ঠিক আছে বড়সাহেবের ঘরে এসো।
আমি উঠে দাঁড়ালাম।
আমাদের সঙ্গে একটা ছোট্ট মিটিং করতে হবে। অরিত্র বললো।
আজ সারাদিন অফিসে আছি।
বিশ্বাস করতে পারি।
হ্যাঁ।
পায়ে পায়ে নিউজরুমের বাইরে চলে এলাম। আমার সামনে হরিদা। আমি মিত্রার ঘরের দিকে যাচ্ছিলাম।
ওদিকে কোথায় যাচ্ছ ? হরিদা ধমকে উঠলো।
দিদিমনির সঙ্গে দেখা করে আসি।
সবাই এই ঘরে।
হাসলাম।
দাদার ঘরের দরজা খুলতেই চোখে পরলো মিত্রা দাদার পাশের চেয়ারে বসে আছে। চোখ চলে গেলো ওর শরীররে দিকে। পনেরোদিন ঠিক মতো ওকে দেখি নি। পেটটা সামান্য উঁচু হয়েছে। এই সময় আমার একটা দায়িত্ব আছে। প্রবল চাপে আমি সেই দায়িত্ব পালন করতে পারি নি। এবার যে কেউ একটু ভালো করে তাকালে বুঝতে পারবে মিত্রা মা হতে চলেছে। ও আমার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে। চোখে মুখে তীব্র উত্তেজনা। অপরজিটের চেয়ারে মিলি, টিনা, অদিতি। আমি মুখটা বাড়িয়ে ফিক করে হেসে ফেললাম।
আয়।
দাদার কন্ঠস্বর ভীষণভাবে স্বাভাবিক। মিত্রা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিল। বুঝতে পারছি ভেতর ভেতর ভীষণভাবে গরম খেয়ে রয়েছে। আমাকে মনের সুখে তুলধুনো না করতে পারলে শান্তি নেই।
চেয়ার টেনে নিয়ে বসলাম। এমনভাবে বসলাম যাতে সবার মুখ নজরে আসে।
কিছু খাওয়াবে।
তুই মালিক বলে কথা। খাওয়াব আমি ?
উঠে দাঁড়ালাম।
উঠলি কেনো।
মালিক যখন তখন এডিটরকে আমার কাছে ডেকে পাঠাব।
তোর ঘড় আছে। দাদা হেসে ফেললো।
নিউজরুমের চেয়ারটা এখনো আছে।
ওখানে বসে একটা কাগজের এডিটর মালিকের সঙ্গে কথা বলবে ?
মালিক যদি বলতে চায় এডিটর পারবে না কেন। তাছাড়া এই অফিসে কথা বলার মতো অনেক জায়গা আছে, তোমার আপত্তি থাকতে পারে, আমার নেই।
বোস, বেশি বক বক করিস না।
টিনারা মাথা নীচু করে মুচকি মুচকি হাসছে।
ছিলি কোথায় ?
দেখলাম দরজা ঠেলে মল্লিকদা ঘরে ঢুকলো।
প্রথম থেকে বলবো না আজ সকালে যেখান থেকে এলাম তার কথা বলবো।
এখন কোথা থেকে এলি ?

এয়ারপোর্ট থেকে ব্যাগটা নেপলাকে দিয়ে বাড়িতে পাঠালাম। নেপলা এয়ারলাইন্সের সামনে নামিয়ে দিল হাঁটতে হাঁটতে অফিস।
 
দুঘন্টা আগে পাঠিয়েছিস। এয়ারলাইন্স থেকে এখানে আসতে নিশ্চই দুঘন্টা সময় লাগে না।
ফোনটা পকেটে আবার নাড়া চাড়া করে উঠলো পকেটে হাত ঢুকিয়ে বার করলাম।
বল।…দে…হ্যাঁ ম্যাডাম প্যাকেটটা দাদার ঘরে পাঠিয়ে দিন।
সবাই কট কট করে আমার দিকে তাকিয়ে।
ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে রাখলাম।
আর কি জানতে চাও বলো।
এটাকি তোর নতুন নম্বর।
হ্যাঁ।
কবে নিলি।
দিন পাঁচেক হয়েছে।
নম্বরটা দে।
দেওয়া যাবে না। তোমাদের জন্য একটা নম্বর আছে। ওটাই থাকবে।
দরজা ঠেলে হরিদা ঢুকলো। হাতে প্যাকেট।
নাও নিচ থেকে পাঠাল।
ডিমটোস্ট খাওয়াবে।
ওপরে বলে পাঠিয়েছি। আসছে।
একটা না সবার জন্য।
দেখি কটা দিয়ে যায়।
প্যাকেট থেকে ফোনটা বারকরলাম, মানি পার্টস থেকে সিমটা ঢুকিয়ে দিয়ে সেটটা চালু করলাম। সবাই আমার দিকে চেয়ে চেয়ে দেখছে।
কিরে একটায় হচ্ছে না। দাদা হাসতে হাসতে বললো।
প্রয়োজন পরলো। তাই কিনে নিলাম।
টিনার দিকে তাকিয়ে, ফোনটা আর চার্জারটা দিয়ে বললাম, যাওতো একটু চার্জে বসিয়ে দাও।
টিনা উঠে দাঁড়ালো।
তোর ওই ফোনটা দেখি।
এতোক্ষণ পর মিত্রা নিস্তব্ধতা ভাঙলো।
আমি উঠে দাঁড়িয়ে পকেট থেকে ফোনটা ওর হাতে দিলাম। আমার মুখে হাসি।
মিত্রা ফোনটা নিয়েই টেপা টিপি করতে শুরু করলো।
বুঝলাম নিজের মোবাইলে ডায়াল করার চেষ্টা করছে। আমার দিকে কট কট করে তাকাল।
দাদার দিকে তাকিয়ে বললো। দেখো দেখো একবার, ওর কান্ডটা।
কেন কি হয়েছে!
পাসওয়ার্ড দিয়ে রেখেছে। ও ছাড়া এই ফোনটা অচল।
ওই জন্য তুই চাইতেই তোকে সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে দিল। মল্লিকদা বললো।
মিলি অদিতি আওয়াজ করে হাসলো।
মিত্রাদি তুমি কি অনিদাকে এতো কাঁচা ভেবেছ। মিলি বললো।
এইবার তুমি অনিদাকে আর হাতের নাগালের মধ্যে পাবে না। অদিতি বললো।
ওই ফোনটা বেজে উঠলো।
টিনাকে বললাম, দেখো কে ফোন করলো।
টিনা উঠে গেলো। আমার দিকে তাকালো।
বড়মা।
কথা বলো।
আমাকে দে। মিত্রা বললো।
টিনা ফোনটা নিয়ে এসে মিত্রার হাতে দিল।
বুঝলাম মিত্রা ভয়েজ অন করে দিলো রিংয়ের আওয়াজ পেলাম।
হ্যালো।
বলো।
তুই! অনি কোথায়।
আমাদের সামনে ছত্রিশপাটি দাঁত বার করে বসে আছে।
ওর দাঁত ভেঙে দিতে পারছিস না।
তুমি আবার কষ্ট পাবে।
আমি কষ্ট পাব না তুই ভাঙ। আমি বলছি।
শোনো তিনি আর একটা ফোন কিনেছেন তার নম্বরটা আমরা কেউ চেষ্টা করলেও পাব না।
তার মানে!
পাসওয়ার্ড দিয়ে রেখেছেন।
ওকে দে।
তোমার কথা শুনতে পাচ্ছে।
কিরে আমার কথা শুনতে পাচ্ছিস।
সকাল থেকে খাওয়া জোটে নি। দাদাকে বললাম কিছু খাওয়াবে, বললো তুইতো মালিক।
সকাল থেকে কিছু খাস নি! সেকিরে আয় চলে আয়। দুজনে একসঙ্গে খাব।
দেখলি দেখলি টিনা, ছেলের গলা শুনে একেবারে গলে জল।
দেখ ছেলেটা সকাল থেকে কিছু খায় নি। ও তো বড়ো একটা খেতে চায় না।
তাহলে দাঁত ভাঙবো কি করে।
থাক এখন ভাঙতে হবে না। পরে ভাঙিস।
টিনারা সবাই হাসছে।
তোরা হাসছিস কেন।
তোমার কথা শুনে। মিত্রা বললো।
দেখ ও নিশ্চই বাজে কাজে সময় নষ্ট করে নি।
বুঝেছি।
রাতে যাব। আর শোনো ব্যাগের নিচের দিকে একটা প্যাকেট আছে। বার করে নিও।
তুই কি দিল্লী গেছিলি।
কি করে বুঝলে।
আমি আর ছোট একটা করে লাড্ডু খেয়েছি।
হ্যাঁরে বদমাস, তুইতো দিল্লীকা লাড্ডু খেলেও পস্তাব না খেলেও পস্তাব। তার থেকে খেয়েই পস্তাই। ছোটমা চেঁচিয়ে উঠলো।
মল্লিকদা দাদা হাসছে।
একটু বেশি করে আনতে পারিস নি।
ঠিক আছে আগামী সপ্তাহে এনে দেব।
বড়মা ফোনটা কেটে দিল। টিনা মিত্রার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে আবার চার্জে বসিয়ে দিল।
ছোটমা ঠিক কথা বলেছে। তাই না দাদা ?
টিনা দাদার মুখের দিকে তাকাল।
আমাদের সবারি অবস্থা ছোটর মতো। বুঝলে টিনা।
হরিদা ঘরের দরজা খুললো। পেছনে ক্যান্টিনের ছেলেটা। আমাকে দেখেই হেসে ফেললো।
তুমি এসে গেছ!
কেন রে।
বটাদা তোমায় খুঁজছে।
কি হলো আবার।
সে অনেক ব্যাপার।
বক বক করিস না। এখন যা। হরিদা খেঁকিয়ে উঠলো।
তুমি তর তর করছো কেন। এবার ওপরে যেও, চায়ে নুন মিশিয়ে দেব।
হরিদা আর বাচ্চাটার মধ্যে লেগে গেল।
আমি ওদের কথা শুনে হাসছি।
ঠিক আছে তুই ওপরে যা আমি পরে যাচ্ছি।
পাঁউরুটি খাওয়া শুরু করলাম। মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে, আমি টপাটপ খাচ্ছি।
কিরে খাচ্ছিস না গিলছিস। দাদা বললো।
যা মনে করতে পার।
আবার সেদিনকার মতো কিছু আছে নাকি।
সবাই দাদার মুখের দিকে তাকাল। মল্লিকদা হাসছে।
মানে! মিত্রা দাদার মুখের দিকে তাকিয়ে।
তুই খা। দাদা আমার দিকে তাকিয়ে বললো।
মিত্রার দিকে তাকিয়ে।
ওর কথা বার্তায় স্বাভাবিক মনে হচ্ছে।
সেতো দেখতে পাচ্ছি।
খেয়ে নে।
আমার খাওয়া শেষ। প্যান্টে হাতটা মুছে নিলাম।
তোমার পকেটে রুমাল নেই। মিলি বললো।
হাসলাম।
ঘরের আলনায় শোভা পায়। পকেটে থাকে না। রুমাল রাখলে কাগজপত্র রাখার জায়গা থাকে না। মিত্রা টিপ্পুনি কাটল।
মল্লিকদা হাসছে।
আমরা সব কর্পোরেট জগতের মানুষ ও কর্পোরেট জগতের বাইরে।
চম্পকদা সনাতনবাবু দরজা ঠেলে ভেতরে এলো। আমার দিকে তাকাল।
তুই! কখন এলি ? চম্পকদা ভেতরে এলো।
অনেক দিন পর ছোটবাবুর দেখা পেলাম, কি বলুন ম্যাডাম।
আমি দুজনের দিকে তাকিয়ে হাসলাম।
বোস চম্পক, সেদিনের মতো বাবু খেলেন না, গিললেন।
কেন আবার কোন গন্ডগোল ?
কি করে বুঝি বল।
চম্পকদা টিনার পাশের চেয়ারে বসলো।
টিনা এবার তোর চাকরি নট।
চম্পকদা টিনার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বললো।
বেঁচে যাই।
তুইও এ কথা বলছিস।
যা শুরু করেছে সব।
তুই কিছু বলেছিস ? চম্পকদা টিনার দিকে তাকাল।
আমার কি আর বলতে লাগে ? যে ভাবে গিললো। বুঝলাম এবার আমাদের গিলবে।
মিত্রা ফিক করে হেসে ফেললো।
কিগো চায়ের কথা বলো।
দাদার দিকে তাকালাম।
সবার খাওয়া শেষ হোক তারপর।
চম্পকদা ফাইল থেকে একটা চিঠি বার করে টিনার হাতে দিল।
দেখ ইয়োলা কালার দিয়ে মার্ক করে দিয়েছি। ওই জায়গা গুলো পরবি।
টিনা খেতে খেতেই চোখ বোলাতে শুরু করলো। মিলি, টিনার দিকে ঝুঁকে পরলো। টিনা চিঠিটা পড়তে পড়তে মুচকি মুচকি হাসছে। মিলি জোড়ে হেসে ফেললো।
এইবার মিত্রাদি তুমি অনিদার ওপর রাগ করতে পারবে না। টিনা মুখ তুললো।
কেন! মিত্রাকি অনির ওপর রাগ করে বসে আছে।
চম্পকদা মিত্রার দিকে তাকাল।
বাবু পনেরদিন বেপাত্তা। দিনে তিনবার করে সবাইকে ম্যাসেজ। তারপর ফোনের স্যুইচ অফ।
আমাকে একদিন ফোন করলো। দেখলাম পাবলিক বুথ থেকে ফোন করছে। জিজ্ঞাসা করলাম বললো, রিফিলিং করতে ভুলে গেছি।
আপনি ওর কথা বিশ্বাস করলেন। মিত্রা চম্পকদার দিকে তাকাল।
বিশ্বাস করিনি। তবু মনকে বোঝালাম ওর পক্ষেই এটা সম্ভব।
তারপর।
কয়েকটা কথা জিজ্ঞাসা করলো। ফোনটা কেটে দিল।
নম্বরটা আছে।
তোকে হলফ করে বলতে পারি ওটা মোবাইল নম্বর নয়।
দরজাটা সামান্য খুললো। কানে ভেসে এলো।
তুই এলি কি করতে।
বেশ করেছি এসেছি, তোর কি।
এখুনি বলতে হবে।
ওর কি হকের জিনিষ। যার জিনিষ সে কোনদিন না করে না।
সবাই হরিদা আর বটাদার দিকে তাকিয়ে।
আবার কি হলো। আমি বলে উঠলাম।
দরজাটা ধর। বটাদা হরিদার দিকে তাকিয়ে গজ গজ করলো।

বটাদা, হরিদা এই দুজন এই হাউসের সবচেয়ে পুরনো মানুষ সেই মিত্রার মামাদাদুর আমলের। শুনেছি বছর ষোল বয়সে এরা এই হাউসে এসেছিল। সেই থেকে এই হাউসটা এদের ঘর বাড়ি। দুজনেই উড়িষ্যার বাসিন্দা। কিন্তু কেউ দেখলে বিশ্বাস করবে না। দাদা বটাদা হরিদা সবাই প্রায় এক বয়সী। ষাটের কাছা কাছি।
 
তোমাকে আজকেই এর মীমাংসা করতে হবে।
চায়ের কাপটা আমার সামনে রাখতে রাখতে বটাদা গজ গজ করে উঠলো।
তোর আবার কি হলো। দাদা বললো।
ও কম্ম তোমার নয়।
সেতো বুঝলুম।
মিত্রারা বটাদার দিকে তাকিয়ে মাথা নীচু করে হাসছে।
বটাদা সকলকে চায়ের কাপ দেওয়ার পর আমার সামনে এসে দাঁড়াল। এক বোঝা কাগজ সামনে রাখলো।
তুমি যতদূর পর্যন্ত হিসাব করেছিলে ততদূর পর্যন্ত ঠিক ছিল। তারপর বলে কিনা আমি জল মিশিয়েছি। আমিও বলে এসেছি চোরের দল সব, অনি আসুক আমি দেখাচ্ছি মজা।
চম্পকদা সনাতন বাবু ম্যায় দাদা পর্যন্ত বটাদার কথায় হেসে যাচ্ছে।
সুদে টাকা নিলে কি হতো বলো। ভাগ্যিস তুমি দিয়েছিলে। তাই চালাতে পারলুম। তোমার টাকা পর্যন্ত শোধ করতে পারলুম না। দুমাস হয়েগেল।
ঠিক আছে তুমি যাও আমি দেখে দিচ্ছি।
দাঁড়া দাঁড়া বটাদা ঠিক বুঝতে পারলাম না। চম্পকদা বললেন।
তোমার বুঝে কাজ নেই।
তুই ব্যবসা করিস অনি টাকা দেয়।
কেন দেবে না। আমি কি অসৎ।
না মানে….।
টকা ছিল না, চাইলাম তাই দিয়েছে। কেন ও তো প্রথম থেকেই দেয়।
বটাদা আমার দিকে তাকাল।
সব শ্লিপ এই ঠোঙার মধ্যে আছে।
আজকে পারব না। কালকে করে দেব।
যখন হোক তুমি করে দিলেই হবে।
তাহলে আর একটু চা খাওয়াও।
দাঁড়াও বানিয়ে আনি।
কিগো বটাদা অনির জন্য স্পেশাল। চম্পকদা বললো।
তোমরা ওর মতো কাজ করো।
চম্পকদা হেসে উঠলো।
বটাদা গজ গজ করতে করতে বেরিয়ে গেল।
এ নিশ্চই বটাদার চায়ের হিসাব। তাই না অনি ?
চম্পকদার কথায় আমি মাথা দোলালাম।
তুই পারিসও বটে।
চম্পকদা এবার চিঠিটা টিনার কাছ থেকে দাদার দিকে এগিয়ে দিল।
কি লেখা আছে বলনা।
স্যার দিল্লী গেছিলেন ডিএভিপির সঙ্গে কনট্রাক্ট করতে।
আমাদের ডিএভিপির এ্যাড আসতো না ? দাদা বললো।
আসতো। নামমাত্র। বলার মতো নয়। এবার বলার মতো আসবে।
কতো।
ইয়ারলি পঞ্চাশ থেকে পঁচাত্তর কোটি।
দাদা মিত্রার দিকে তাকাল।
মিত্রা মুচকি হেসে মাথা নীচু করে নিল।
সনাতনবাবু আমাদের গাড়ির ব্যাপারটা এখন কে দেখছেন।
সনাতনবাবু আমার মুখের দিকে তাকালেন।
কেন আবার কি হল।
এমনি।
তুমি প্রশ্ন করলেই ভয় লাগে আবার হয়তো গন্ডগোল করছে।
হাসলাম।
কিংশুকবাবু দেখেন। তার ওপরে মিলি ম্যাডাম।
এর মধ্যে কিছু গন্ডগোল হয়েছে। দাদা সনাতনবাবুকে জিজ্ঞাসা করলো।
কই সেরকম কিছু শুনি নি।
মিলি তোমার কাছে এরকম কোন খবর আছে।
দাদার কথা শুনে মিলি আমার দিকে অবাক হয়ে তাকাল।
বটাদার ব্যাপারটা কে দেখে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম।
ওটাও কিংশুক দেখছে। সনাতনবাবু বললেন।
কিংশুকবাবু টাকা ফেরত দিয়েছেন।
পঁচাত্তর ভাগ দিয়েছেন। পঁচিশভাগ বাকি আছে।
আমি উঠে দাঁড়ালাম।
কোথায় যাচ্ছিস। দাদা বললো।
মিত্রার ঘরে আছি। ওখান থেকে এই মুহূর্তে নড়ছি না। চিন্তা নেই।
বটা চা আনতে গেল।
এলে ও ঘরে পাঠিয়ে দাও।
আমার শারীরিক ভাব-ভঙ্গিতে সকলে বুঝল আমার নাকে কোন গন্ধ এসেছে। কারুর দিকে আর তাকালাম না বটাদার কাগজগুলো নিয়ে সোজা মিত্রার ঘরে চলে এলাম। দেখলাম মিত্রার টেবিলে সব ফাইল ডাঁই করা রয়েছে। তারমানে বুঝলাম এরা কোন ডিসিসন নিতে পারে নি। একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসলাম।
ফোনটা বেজে উঠলো। নাম ভেসে উঠলো দাদু। বুঝলাম কোথা তেকে ফোন এসেছে।
বলো।
কিরে তুই এলি না।
আমি একটু বাইরে গেছিলাম। আজ ফিরলাম।
কখন ফিরলি।
সকালে।
তোর বড়মা কেমন আছে।
ভালো আছে।
অমিতাভ।
ভালো আছে। আমি এখনো কাউকে বলিনি। তোমরা ফোনটোন করোনি তো ?
না। তুই বারন করেছিস।
কাল কিংবা পর্শুদিন যাব।
আসার আগে একবার ফোন করিস।
করবো। কি খাওয়াবে।
তুই যা বলেছিলি তাই খাওয়াব।
গিয়ে মাছ ধরবো।
ধরিস।
দাদুকে দাও।
ধর দিচ্ছি।
কাঁপা কাঁপা গলায় দাদু কথা বললো।
কিরে কবে মিনুকে নিয়ে আসবি।
মামীকে বললাম কাল কিংবা পর্শুদিন।
এখানে এসে খাবি।
তাই হবে।
মিত্রাকে নিয়ে আসবি ?
নিয়ে যাব। আমি যা বলে এসেছি মাথায় আছে।
আছে।
এতদিন শুধু শুধু কষ্ট পেলে।
তোর মতো কেউ এসে বোঝায় নি। ওপর ওয়ালা তোকে পাঠিয়েছে এইসব করার জন্য।
আবার মন খারাপ করে। তাহলে যাব না।
ঠিক আছে। আসিস।
প্রণাম নিও।
নিলাম।
ফোনটা কেটে দিলাম।
মিত্রা পাশে এসে দাঁড়াল।
চোখ চক চক করছে। দরজার দিকে একবার তাকালাম। দেখলাম লক করা হয়ে গেছে।
কাছে টেনে নিলাম। কাপরটা সড়িয়ে ওর পেটে একটা চুমু খেলাম।
দাদু! মামীমা! কোথায় খুঁজে পেলি ? আবার কাল কিংবা পর্শুদিন যাবি!
তোর ব্যাপারটা কি বলতো।
সব বলবো তুই মাঝে মাঝে এমন গরম খেয়ে যাস।
এমনি এমনি গরম খাই। নিজের দোষটা কোনদিন দেখলি না।
ধরিয়ে দে।
এই যে না বলে পনেরো দিনের জন্য হাওয়া হয়ে গেলি।
প্রত্যেকদিন তোকে ম্যাসেজ করেছি।
কথা বলিসনি।
মাঝে দুদিন কলকাতায় ছিলাম। তোকে ডেকেছি। তুই আসিস নি।
তোর জন্য আমাকে জ্যেঠিমনির কাছে কথা শুনতে হচ্ছে। বড়মা ছোটমা সবাই বলছে। আমিতো আমার ভেতরটা কাউকে দেখাতে পারি না।
ছাড় ওসব কথা। তুই আমি ঠিক থাকলেই সব ঠিক।
এখন অনিমেষদা, বিধানদা নিয়ম করে আমায় ফোন করে। তোর কথা জিজ্ঞাসা করে। কি বলি ?
যা সত্যি তাই বলবি।
কি বলবো, ও আমাকে কিছু বলে যায় নি। এটা কাউকে বলা যায়।
তোকে বলতে ভয় লাগে তুই বড়ো পেট পাতলা।
সবাই যদি চেপে ধরে তখন মিথ্যে কথা বলতে পারি ?
অশ্বথমা হতো ইতি গজো।
আমি এইভাবে বলতে পারি না।
আমি মিত্রাকে আরও কাছে টেনে নিলাম।
দাদু মামীমাকে কোথায় পেলি বল।
এখুনি জানতে হবে।
আবার দেখবো একটু পরে বেরিয়ে গেলি, একটা ম্যাসেজ করে জানালি কয়েকদিনের জন্য বাইরে যাচ্ছি মনে কিছু করিস না।
তুই বিশ্বাস কর।
আমি জানি। তোকে ধরে রাখার ক্ষমতা আমার নেই। এটা আমার কপালেই লেখা আছে। কে খন্ডাবে। তবু যেটা পেটে আছে তাকে নিয়েই কোন প্রকারে জীবনটা কাটিয়ে দেব।
মিত্রার গলাটা ভারি হয়ে এলো।
আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ধরলাম। চোখদুটো ছল ছল করছে।
আমি মিত্রার ঠোঁটে ঠোঁট রাখলাম। মিত্রা চোখ বন্ধ করলো। গাল বেয়ে দুফোঁটা মুক্তদানা গড়িয়ে পরলো। আমি ওর কপালে হাত রাখলাম।
কেন তুই আমাকে কষ্ট দিস।
কোথায় কষ্ট দিলাম। কাজগুলো সারতে হবে। জানিসনা চারদিকটা ক্যানসার হয়ে আছে। যেখানে হাত দিচ্ছি। সেখানেই দগদগে ঘা।
অনেক হয়েছে এবার ছেড়ে দে।
তুই বললে ছেড়ে দিতে পারি। কিন্তু আমার অসমাপ্ত কাজ যে আসছে তার ওপর বর্তাবে, তুই সেটা চাস।
কি করে বুঝলি।
আজ তোর বাবা যদি সব পরিষ্কার রাখতো তাহলে কি এই ঘটনাগুলো তোর সঙ্গে ঘটতো।
মিত্রা চোখ খুলে আমার দিকে তাকাল।
বড়ো জটিল অঙ্ক। তোকে বোঝাতে চাইলেও তোর মাথায় ঢুকবে না।
মিত্রা আমার বুকে মাথা রাখল।
শুধু তোকে একটা কথা এ্যাডভান্স বলেরাখি। বেশ কিছুদিন তোকে একলা একলা চলতে হবে। আমি বাইরে থেকে ইনভিজিবিল হয়ে সব অপারেট করবো।
সে কি করে হয়! তোকে ছাড়া আমি বাঁচবো না।
কেন পারবি না। এতোদিন পারলি কি করে।
যা হয়েগেছে গেছে। আর পারব না।
পারবি, সময়ে সব পারবি। না হলে আমি হেরে যাব। ভাববো মিত্রাকে আমি আমার মতো তৈরি করতে পারি নি।
কেন তুই এ কথা বলছিস।

এই কদিনে সেরকমই আভাস পেলাম। তোকে আর একটু গুছিয়ে দিই।
 
মিত্রা আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো।
নে এবার কাজগুলো সারি, অনেক কাজ জমে আছে।
তোকে ছাড়তে ভালো লাগছে না।
এই ভাবে পাগলামো করলে বিজনেস চালাবি কি করে।
ঠিক চলে যাবে।
যা বাথরুমে গিয়ে মুখটা ধুয়ে আয়। দেখ চোখ মুখের চেহারা কি করেছিস।
তোর ঠোঁটটা বাথরুমের আয়নায় দেখবি চল।
কেন।
মিত্রা হাসছে।
আমার হাতটা ধরে হিড় হিড় করে বাথরুমে টেনে নিয়ে গেল। বাথরুমের আয়নায় দেখলাম ওর ঠোঁটের রং আমার ঠোঁটে। ভালো করে সাবান দিয়ে মুখ ধুলাম। মিত্রা আবার নতুন করে ঠোঁটে রং লাগাল। মুখটা ঠিক করে নিল।
যা দরজারা লকটা খুলে দিয়ে আয়।
খোলা আছে।
তারমানে!
হরিদার ছেলেকে বলে এসেছিলাম, কেউ যেন ডিস্টার্ব না করে।
আমি মিত্রার দিকে তাকিয়ে।
মিত্রা আমার হাতটা চেপে ধরলো। তুই আমার চেয়ারটায় বোস।
না। তোর পাশে বসতে পারি। তোর চেয়ারে নয়।
কেন!
তোকে বোঝাতে পারব না।
কেন বোঝাতে পারবি না বল।
রানীর চেয়ারে রাজা বসে না। রানীর সন্তান যখন রাজা কিংবা রানী হয় তারা বসে।
তুই এতোটা ভাবিস।
আবার মুখটা নষ্ট হয়ে যাবে।
মিত্রা হাসছে।
তুই একবার বরুণদাকে ফোন কর।
ফোন করতে হবে না। বরুণদা ওপরে আছে।
তারমানে!
তুইতো বরুণদাকে রিজাইন দিতে বলেছিলি।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম।
মিলিদের মতো বরুণদাকে মাথায় বসিয়ে দিয়েছি।
আমি হাসতে হাসতে মিত্রার কাছে এগিয়ে গেলাম।
একেবারে না, মুখ নষ্ট হয়ে যাবে।
মিত্রা ফোনটা তুলে নিয়ে কথা বললো। বরুণদাকে আসতে বলে। নিজের চেয়ারে গিয়ে বসলো। আমি ওর অপরজিট টেবিলে বসলাম।
বল অফিসের হাল কি।
মিলির একটু অসুবিধে হচ্ছে। কিংশুকবাবু একটু গন্ডগোল করছে।
বুঝতে পারছিস তাহলে।
দূর করে দে।
আর একটু কাজ বাকি আছে। চম্পকদার কি অবস্থা।
খুব শ্রুট। পলিটিক্সটা ভাল বোঝে। যা কিছু সব টিনার ঘাড়ে। টিনাও সবাইকে টাইট দিয়ে দিচ্ছে। এমন সব টার্গেট দিচ্ছে। সবকটার নাভিশ্বাস উঠছে।
অদিতি।
সনাতনবাবুকে হ্যান্ডিক্রাফ্ট করে দিয়েছে।
আসতে পারি।
আমি মাথা ঘুরিয়ে পেছন ফিরে তাকালাম। হাসলাম।
কাকে বলছো।
দুজনকেই।
বরুণদা ভেতরে ঢুকে চেয়ারে বসলো।
জানো বরুণদা, এ সম্মান পাওয়ার যোগ্যতা আমার নেই।
তুমি সব সময় নিজেকে এতো ছোট ছোট ভাব কেন।
নিজে ছোট বলে।
কি মিত্রা অনি কি কথা বলছে।
ওর কথা ছাড়ুন। পাত্তা দেবেন না।
সেকিগো! একটু আগে আমি খবর পেলাম ও এসেছে। তারপরেই আবহাওয়া টোটাল চেঞ্জ। সবাই তো ওর ভয়ে তটস্থ।
কেন।
সে কি করে বলবো। তুমি থাকলেও যা না থাকলেও সেই একই অবস্থা।
আমি হাসলাম। পিকুবাবু কেমন আছে।
তার নেমন্তন্ন খাওয়া হচ্ছে না, মন খারাপ।
জ্যেঠিমনি।
খ্যাতির বিড়ম্বনা।
কেন।
এতোদিন বেশ চলছিল আমাদের জীবনটা। হঠাৎ তোমার আগমনে পাড়ায় যেন একটা বিরাট পজিসন পেয়েগেছি। প্রত্যেকদিন কেউ না কেউ এসে তোমাদের খোঁজ খবর নেবে। সেলিব্রিটি বলে কথা।
খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না।
একটুও না, বরং বেশ মজা পাচ্ছি। ইসি আবার সেই পুরনো জায়গায় ফিরে গেছে। এখন বরং ভিড় বেশি। সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে।
রেট বাড়িয়ে দিতে বলো।
সে আর বলতে। তাতেও ভিড় আটকে রাখতে পারছে না। তারপর দাদা, দিদিরা আছে।
ইসিকে বলো আমার খাওয়া পাওনা রয়েছে।
কথা বলে নাও।
এখন না। পরে। অফিসের হালচাল কি বুঝছো।
কেউ কি আর কাজ করতে দেয়। কাজ করে নিতে হয়। তা সত্বেও যদি না হয় বাঘের ভয় দেখাতে হয়। কখনো ডাইরেক্ট কখনো ইনডাইরেক্ট।
তুমি আমার একটা উপকার করতে পারবে।
বলো।
আমাকে আমাদের গাড়ির লাস্ট তিনমাসের ডেটা বার করে দাও।
ডিটেলস।
হলে ভাল হয়। নিজে হাতে কিন্তু।
জানি।
বরুণদা হাসছে।
আবার কাকে বধ করবে।
বধ করবো না। প্যারালালি ওয়াল তুলব।
লড়ে জায়গা করে নাও।
এইতো তুমি বুঝতে পেরেছো।
তোমার এই নীতিটা আমার ভীষণ ভালো লাগে। তবে সবাই ইমপ্লিমেন্ট করতে পারে না।
তুমি তাহলে বার করে নিয়ে এসো। আমি আর কয়েকটা কাজ সারি। চা খাবে নাকি ?
প্রিন্টআউটটা নিয়ে আসি।
এসো।
বরুণদা বেড়িয়ে গেল।
তুই কি সুন্দর বরুণদাকে বললি!
শিখলি। আমার অবর্তমানে এইভাবে চলবি। তুই অফিসে থাকবি না। তবু সবাই মনে করবে তুই আছিস। মিউ মিউ করবি না। মিলি টিনা অদিতিকে ডাক, বল প্রবলেম ফাইল গুলো সঙ্গে নিয়ে আসতে।
সব এখানে জড়ো হয়ে আছে।
ডাক তাহলে।
মিত্রা টকা টক ফোন ঘুরিয়ে ওদের ডাকল।
তুই পাশে থাকলে কাজে একটা এনথু পাই।
আর এনথু পেতে হবে না। নিজে নিজে এনথু জোগাড় করো।
তুই ব্যবস্থা করে দে।
চল বাথরুমে চল।
তুই সেই কলেজ লাইফের মতো কথা বলছিস।
কেন।
সুমিতা একবার সবার সামনে তোকে বলেছিল তুই ছেলে কিনা আমার সন্দেহ আছে। তুই তখন বলেছিলি বাথরুমে চল প্রমাণ করে দেব।
তাই বুঝি।
নেকু। কিছু জানে না যেন।
কিগো দুজনে আবার শুরু করে দিয়েছ।
হুড়মুড় করে সবাই ঘরে ঢুকলো।
নারে সেই কথাটা বলছিলাম। বলে কিনা তাই নাকি।
সত্যি তুমি বলার আর জায়গা খুঁজে পেলে না।
বসো।
বলুন বস।
মিলির দিকে তাকালাম। মুচকি হাসলাম।
কিগো অনিদা হাসছ কেন। তোমার হাসিতে একটা গন্ধ গন্ধ ভাব। টিনা বললো।
শুঁকে দেখ। মিলি বললো।
শুঁকতে হবে না, খবর পেয়ে যাব।
মিত্রা হো হো করে হাসছে।
টিনা ম্যাডাম তোমার মেমোর উত্তর পেলে।
তুমি শোন নি।
না।
কেঁদে কেটে একসা। মিত্রাদি দাদা বললো ছেড়েদে। এবার থেকে তুই দেখ ওকে দেখতে হবে না।
তাহলে ওর কাজ কি।
ওকে প্রসে পাঠিয়ে দিয়েছি। ডে টু ডে হিসাব আমার টেবিলে রাখতে বলে দিয়েছি। ওদিকে সুতনুবাবুকে একটা আলাদা হিসাব দিতে বলেছি।
তাহলে তোমার কোন সমস্যা নেই।
নেই মানে। এ্যাড ডিপার্টমেন্টের দু’একটা ফোড়ে গন্ডগোল করছে।
গাড়ি নিয়ে।
তুমি জানলে কি করে! আমি কাউকে বলি নি।
আরি ব্যাস, আমি ফুলের বাগানে ঢুকে পরেছি।
বরুণদা ঘরে ঢুকলো।
মধু খেতে যেয়ো না ইসি ডিভোর্স করে দেবে। অমি বললাম।
সত্যি তোমার মুখে কিছু আটকায় না।
দাও।
আমি মোবাইলটা হাতে নিয়ে বোতাম টিপলাম। ভয়েজ অন।
বসো। বরুণদার দিকে তাকালাম।
রিং বাজছে।
বটাদা।
বলো।
তখন চা খাওয়ালে না।
গেছিলাম হরির ছেলেটা ঢুকতে দিল না।
এখন খাওয়াবে।
কটা।
গোটা ছয়েক নিয়ে এসো।
ছটা না সাতটা।
তোমার ম্যাডামের ঘরে ছটা, দাদার ঘরে একটা।
দাদাকে এখুনি দিয়ে এসেছি। দাদার ঘরে একজন বুড়ো বুড়ি এসেছে তোমায় খুঁজছে।
তুমি কি জোয়ান।
বটাদা হেসে ফেললো।
আর শোন।
বলো।
সেই বিস্কুট।
কুত্তা বিস্কুট।

হ্যাঁ।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top