বৌদি উঠে গিয়ে টেবিলথেকে একটা গাডার মোড়া কাগজ নিয়ে এলো।
ধর মিত্রা দিল।
আমি বৌদির দিকে তাকিয়ে ইশারায় বললাম বিধানদাকে দাও।
বৌদি বিধানদাকে রোলটা দিল।
এটা কি সুতপা ?
অনি কি কাগজ চাইল, মিত্রা দিল।
কিরে এটায় কি আছে।
প্রবীরদাকে কিভাবে নিয়ে এলাম তার ডিটেলস।
বিধানদা চা খেতে খেতে চারটে চিঠি ভাল করে দেখল। তারপর অনিমেষদার হাতে চিঠিগুলো তুলে দিল।
তুইতো দেখছি আইনটাও ভাল জেনে ফেলেছিস।
আমি মাথা নীচু করে বসে রইলাম।
ওরা সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ডাক্তারদাদার মুখটা হাসি হাসি।
কি সামন্তবাবু, দিদির মুখ থেকে শুনছিলাম আপনি ওকে কিছুটা ধরতে পেরেছেন। কি বুঝছেন।
বিধানদার কথায় ডাক্তারদাদা চায়ের কাপ থেকে মুখ তুললো।
আপনারা এমন কিছু ঘটনা কাল ওর সামনে করেছেন যার জন্য ও নিজে চলে গেল। মনেহয় নিজের বন্ডেই ও ছাড়িয়ে নিয়ে এসেছে।
আপনি ঠিক ধরেছেন। কাগজের মালিক এবং মালকিন জয়েন্ট বন্ডে ছাড়িয়েছে। আর একটাতে অনি নিজে সাংবাদিক হিসাবে ওখানে উপস্থিত রয়েছে। প্রবীররের বাড়ি থেকে সে করম কিছু পাওয়া যায় নি।
বিধানদার কথা শেষ হবার আগেই অনুপদা খাট থেকে নেমে এসে আমার সামনে দাঁড়াল। আমাকে হাত ধরে দাঁড় করাল বুকে জড়িয়ে ধরলো। সবাই অবাক হয়ে দেখছে। আমি চুপচাপ।
তুই কাল আমার মনের কথা ধরে ফেলেছিলি।
সবাই কিংকর্তব্য বিমূঢ়।
কি বলছো কি অনুপ। আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। বিধানদা বললেন।
তুই বোস তোর কাছে মাঝে মাঝে আসবো। তোর কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। বিশেষ করে কি ভাবে মানুষ চিনতে হয়।
আমি বসলাম।
অনুপদা ঠক ঠক করে বড়মা, ছোটমা, বৌদি, জ্যেঠিমনিকে প্রণাম করলো। ছোটমা হাঁই হাঁই করে উঠলো।
এ কি করছো অনুপ।
নাগো ছোটবৌদি অনির মতো তোমাকে যদি ছোটমা বলে ডাকতে পারতাম খুব ভালো লাগতো।
আচ্ছা অনুপ আমরা বাম রাজনীতি করি। আমাদের রাজনীতিতে ইমোসনের কোন জায়গা নেই। তুমি এসব কি শুরু করলে।
দাদা, আপনার আর অনিমেষদার হাতে আমি, রূপায়ণ, প্রবীর তৈরি হয়েছি। অনিমেষদাকে সব কথা কম বেশি বললেও আপনাকে ভয়ে বলতে পারিনা। বলতে পারেন সেই ভয়টা অত্যাধিক শ্রদ্ধা। আমি চেষ্টা করলেও আপনার পার্মিসন নিয়ে কালকে ওই ভাবে প্রবীরের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে পারতাম না।
তখন ওকে আমি প্রবল ভাবে বোঝার চেষ্টা করছি। তার আগেই রূপায়ণ বলেছিল, ওরে ও অনেক পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ। তুই পারবি না। তখন ওর চোখ আমি দেখেছিলাম। আপনারা কেউ ওকে ফলো করেছিলেন কিনা জানিনা। ও কারুর কোন কথা শোনেনি। ও ওর কাজ করে বেড়িয়ে এসেছে। অনিমেষদা যখন অরিত্রকে ডেকে বললো, ওদের গ্রীণ সিগন্যাল দিয়ে দাও।
মুখে কিছু বলতে পারিনি। মনে মনে খুব আপসেট হয়ে পরেছিলাম।
আমাদের তিনজনের একজন সরে যাবে। তারপর একঘন্টা অনিকে দেখেছি।
আপনাদের কথা শুনেছি। অনি যখন ওপরে চলে আসছে, ওর হাতটা চেপে ধরেছিলাম। ওর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম। মুখে কিছু বলিনি, মনে মনে বলেছিলাম। তুই প্রবীরকে ক্ষমা করে দে। আমাদের পাঁচজনের থেকে একজনকে সরিয়ে দিস না।
আপনাদের সঙ্গে ও বাড়িতে গেছি। ঘুম হয়নি। সকালে শুনলাম অনি মিত্রা দুজনেই বাড়ি নেই। মনটা প্রথমে কু গাইল। প্রবীরকে ফোন করলাম। ওর ফোনের স্যুইচ অফ, ওর পরিচিত সবার ফোনের স্যুইচ অফ। নিজের সমস্ত সোর্স ফেল, কাউকে বলতে পারছিনা ঘটনাটা।
শেষে আমি সল্টলেকে ওই আফিসে আমার একজন পরিচিত কে ফোন করি। তখন আমার বর্ণনা শুনে ও বললো, মিঃ সিংকে নিয়ে ওরা বেরিয়ে এসেছে। আপনাকে ভয়ে ফোন করিনি। যদি আপনি কিছু বলেন।
অনিমেষদাকে ফোন করতে গেলাম। তখন অনিমেষদা ফোন করে জানাল অনি গেটের মুখে গাড়ি থেকে নামছে। জিজ্ঞাসা করুণ অনিমেষদাকে আমি প্রথমেই জিজ্ঞাসা করেছি, প্রবীর আছে কিনা। অনিমেষদা বললেন উইথ ফ্যামিলি।
অনুপদা হাঁপাচ্ছে।
জানি বিধানদা, আমাদের বাম রাজনীতিতে ইমোসনের কনো জায়গা নেই। সেখানে আমরা বাস্তববাদী। কিন্তু আজ এই মুহূর্তে আমার এই অবস্থার জন্য একমাত্র অনি দায়ী।
সারা ঘড় নিস্তব্ধ। পিন পরলে শব্দ হবে। অনিমেষদা ভাবলেশহীন মুখে বসে।
ছোট তোমার ফ্লাক্সে একটু চা হবে। বিধানদা বললো।
আমার জন্য যদি হয় একটু দেখ। ডাক্তারদাদা বললো।
দাঁড়ান আমি বলে আসছি।
দাঁড়া তোর সঙ্গে আমি যাচ্ছি। বৌদি বললো।
তুমি বসো আমি পারবো।
ছোট।
বলুন।
একবার পারলে দামিনীকে একটু ডাকো।
আচ্ছা।
ছোটমা ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। অনুপদা বাইরের বারান্দায় বেরিয়ে গেল। চোখ ছল-ছল।
প্রবীর অনির সম্বন্ধে তোমার ধারনা বলো।
প্রবীরদা মাথা নীচু করে বসে। বুক থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।
দেখো প্রবীর তুমি এবং বনানী এই কয়দিনে আমাকে অনেক কথা বলেছো, এমনকি এও বলেছো, অনি পার্টির অনেক ক্ষতি করছে। আমি শুনে গেছি। তোমাদের কথার কোন উত্তর দিই নি। আমাদের পার্টির মধ্যে অনেক দ্বন্দ্ব আছে, আমরা পার্টির মধ্যে বসেই তার সমাধান করি।
এই ঘটনাটা এখনো পর্যন্ত কেউ জানে না। হয়তো কেউ জানবেও না। যদি সত্যি সত্যি ঘটনাটা কাগজে বেরতো, পার্টি কিভাবে তার মোকাবিলা করতো। আমরা তার স্ট্র্যাটিজি তৈরি করি, আজ এই মুহূর্তে তোমাকে দায়িত্ব দিলাম। তুমি বলো।
ছোটমা বৌদি ঘরে ঢুকলো। পেছনে দামিনী মাসি।
বসো মাসি। বিধানদা বললো।
আমাকে নাম ধরে ডাকুন দাদা।
নাগো মাসি। তোমরা সবাই মিলে অনির মতো একটা ছেলে উপহার দিলে। তোমাদের নাম ধরে ডাকতে পারি। সুতপাকেও আজ থেকে আর নাম ধরে ডাকব না।
মাসি চুপ করে গেল।
তোকে একবার কনিষ্ক ডাকছে। ও চলে যাবে।
কোথায় কনিষ্ক ? অনিমেষদা বললো।
বাইরের বারান্দায়।
ওকে ভেতরে ডাকো।
মাসি গেটের কাছে চলে গেল। ইশারায় কনিষ্ককে ডাকলো।
আয় বাবা আয়। ওদের খবর কিরে। অনিমেষদা বললেন।
এখন ভাল আছে।
কোথায় রেখেছিস ?
নীরুর নার্সিংহোমে।
ওই তল্লাটে লোক পাঠিয়েছিস ?
হ্যাঁ।
সব ঠিক আছে।
না।
আবার কি সমস্যা।
অনিকেতের সঙ্গে টনা মনার বৌ এসেছে। আরো দশ পনেরো জন। ওরা অনির সঙ্গে কথা বলতে চায়।
অনিকেত কি সব সত্যি কথা বলেছে।
না বলে উপায় ছিল না। ওরা এমনি খুব সহজ সরল। বিশ্বাস হারালে ডেঞ্জার।
অনিমেষদা একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছাড়ল। বৌদি সবাইকে চা দিল।
তুই একটু বোস।
আমাকে হাসপাতালে যেতে হবে। কয়েকটা অপারেসন আছে। তাছাড়া ভালোপাহাড় থেকে লোক এসেছে। ওদের কি সমস্যা আছে। ওরা কোথা থেকে জানতে পেরেছে রাজনাথ বাবুর ঘটনাটা। ওরাও অনির সঙ্গে দেখা করতে চায়। বুঝিয়ে সুঝিয়ে রেখে এসেছি।
বিধানদা হেসে ফেললো। হ্যাঁগো অনিমেষ ভালোপাহাড়টা আবার কোথায় ?
অনিমেষদা চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন। ঝাড়খন্ডে। কেন আপনাকে বলিনি। ওখানে আমাদের একটা সংগঠন তৈরি হয়েছে। ওরা এসে বার বার যোগাযোগ করছে। রূপায়ণকে দায়িত্ব দিয়েছি।
কে এসেছে কনিষ্ক।
শ্যাম।
তোমরা ওদের চিনলে কি করে।
তোমরা পার্টির সংগঠন কর কি করে বলতে পারো। বড়মা খ্যার খ্যার করে উঠলো।
কি করে জানবো বৌদি।
ওখানে অনি যায়। আজ নয় বিগত সাত বছর ধরে। কনিষ্করাও যায় ডাক্তারী করতে। সুতপা জানে তো।
আমি পর্শু জানলাম। অনির বিয়ের দিন। কনিষ্ক গল্প করছিল।
কি অমিতাভবাবু আপনি অনিকে অনেকদিন দেখছেন। ও আপনার হাতে তৈরি। আপনি কিছু জানতেন। বিধানদা বললো।
রাখো ওর কথা, আমি যা জানি ও তা জানে না। বড়মা বলে উঠলো।
বিধানদা হাসছে।
বিধানবাবু এক কাজ করুণ। রূপায়ণ, অনুপ পার্টি অফিসে যাক। ওদিকটা ওরা সামলাক। আমি আপনি এখানে থাকি। কনিষ্ক ওদের এখানে আনা যাবে ?
ওরা আসতে চাইছে, আমি না বলেছি।
তুই ওদের নিয়ে আয়। এ বাড়ি না হোক ডাক্তারবাবুর বাড়িতে বসে ওদের সঙ্গে কথা বলবো। প্রবীর তুমি এখানে থাকবে, না বাড়ি যাবে।
আমি একটু বাড়ি যাই, বিকেলে আসছি।
তুই একটু শুয়ে পর। তোর চোখ-মুখ লালা হয়ে গেছে।
আর একজন নীচে বড়দির ঘরে ভঁস ভঁস করে ঘুমচ্ছে। ছোটমা বললো।
বেচারা কি করে বলো, অনি এরকম বদমাস সে কি জানত, তাহলে হয়তো বিয়ে করতো না।
অনিমেষদা বললো।
বিধানদা, ডাক্তারদা, মল্লিকদা হাসছে দাদা মুচকি মুচকি হাসছে।
বলুন না একবার গিয়ে চোখে জল ভরে যাবে। আপনার সঙ্গে কথা বলাই বন্ধ করে দেবে।
ছোটমা বললো।
আমার আর হাসতে ইচ্ছে করছে না কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। বেদম ঘুম পাচ্ছে। মনে মনে বলছি তোমরা ঘর থেকে বেরলেই আমি ঘুমবো।
সত্যি সত্যি ওরা বেরিয়ে গেল। কারুর সঙ্গে আমার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।
কনিষ্ককে বললাম, ওদের নিয়ে বিকেলে আয় কথা বলবো।
ওরা খালি ঘর থেকে বেরবার অপেক্ষা, আমার আর জামা কাপর খুলতে ইচ্ছে করলো না। চিঠিগুলো মনে হয় অনিমেষদা নিয়ে গেল। আমি সোজা বিছানায় শুয়ে পরলাম। শোয়া মাত্রই ঘুমে চোখ জুড়িয়ে এলো। কে কোথায় কি ভাবে আছে কিছু চিন্তা করতে ভাল লাগছে না। ঘুমিয়ে পড়লাম।
ঘুমটা ভাঙলো তবু চোখে যতো রাজ্যের ঘুম জড়িয়ে আছে। কিছুতেই উঠতে ইচ্ছে করছে না।
তুই ওকে তুলতে পারবি না দিদিভাই। ও হচ্ছে স্টেট বাসের মতো, চললে থামে না। আবার থামলে চলে না।
ইসি হো হো করে হাসছে।
অতো জোরে হাসিসনা এখুনি জেগে যাবে।
তুই না সত্যি কি হয়েগেছিস।
যা বলছি শোন। না ঘুমলে আটচল্লিশ ঘন্টা জেগে কাটিয়ে দেবে। আবার ঘুমলে কুম্ভকর্ণ।
ছোটমা বললো তুলতে।
ছোটমাকে আস্তে বল। শুনলি নিজের কানে, মিলির কার গুষ্টি উদ্ধার করছিল।
মিলির কি লাইফ বল।
কি করবে। একটা ভুল করে ফেলেছে।
ও কোথা থেকে জানলো।
সকাল থেকে কি শুনছিস। দশবছর আগের বুবুন আর এখনকার বুবুন।
ধর মিত্রা দিল।
আমি বৌদির দিকে তাকিয়ে ইশারায় বললাম বিধানদাকে দাও।
বৌদি বিধানদাকে রোলটা দিল।
এটা কি সুতপা ?
অনি কি কাগজ চাইল, মিত্রা দিল।
কিরে এটায় কি আছে।
প্রবীরদাকে কিভাবে নিয়ে এলাম তার ডিটেলস।
বিধানদা চা খেতে খেতে চারটে চিঠি ভাল করে দেখল। তারপর অনিমেষদার হাতে চিঠিগুলো তুলে দিল।
তুইতো দেখছি আইনটাও ভাল জেনে ফেলেছিস।
আমি মাথা নীচু করে বসে রইলাম।
ওরা সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ডাক্তারদাদার মুখটা হাসি হাসি।
কি সামন্তবাবু, দিদির মুখ থেকে শুনছিলাম আপনি ওকে কিছুটা ধরতে পেরেছেন। কি বুঝছেন।
বিধানদার কথায় ডাক্তারদাদা চায়ের কাপ থেকে মুখ তুললো।
আপনারা এমন কিছু ঘটনা কাল ওর সামনে করেছেন যার জন্য ও নিজে চলে গেল। মনেহয় নিজের বন্ডেই ও ছাড়িয়ে নিয়ে এসেছে।
আপনি ঠিক ধরেছেন। কাগজের মালিক এবং মালকিন জয়েন্ট বন্ডে ছাড়িয়েছে। আর একটাতে অনি নিজে সাংবাদিক হিসাবে ওখানে উপস্থিত রয়েছে। প্রবীররের বাড়ি থেকে সে করম কিছু পাওয়া যায় নি।
বিধানদার কথা শেষ হবার আগেই অনুপদা খাট থেকে নেমে এসে আমার সামনে দাঁড়াল। আমাকে হাত ধরে দাঁড় করাল বুকে জড়িয়ে ধরলো। সবাই অবাক হয়ে দেখছে। আমি চুপচাপ।
তুই কাল আমার মনের কথা ধরে ফেলেছিলি।
সবাই কিংকর্তব্য বিমূঢ়।
কি বলছো কি অনুপ। আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। বিধানদা বললেন।
তুই বোস তোর কাছে মাঝে মাঝে আসবো। তোর কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। বিশেষ করে কি ভাবে মানুষ চিনতে হয়।
আমি বসলাম।
অনুপদা ঠক ঠক করে বড়মা, ছোটমা, বৌদি, জ্যেঠিমনিকে প্রণাম করলো। ছোটমা হাঁই হাঁই করে উঠলো।
এ কি করছো অনুপ।
নাগো ছোটবৌদি অনির মতো তোমাকে যদি ছোটমা বলে ডাকতে পারতাম খুব ভালো লাগতো।
আচ্ছা অনুপ আমরা বাম রাজনীতি করি। আমাদের রাজনীতিতে ইমোসনের কোন জায়গা নেই। তুমি এসব কি শুরু করলে।
দাদা, আপনার আর অনিমেষদার হাতে আমি, রূপায়ণ, প্রবীর তৈরি হয়েছি। অনিমেষদাকে সব কথা কম বেশি বললেও আপনাকে ভয়ে বলতে পারিনা। বলতে পারেন সেই ভয়টা অত্যাধিক শ্রদ্ধা। আমি চেষ্টা করলেও আপনার পার্মিসন নিয়ে কালকে ওই ভাবে প্রবীরের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে পারতাম না।
তখন ওকে আমি প্রবল ভাবে বোঝার চেষ্টা করছি। তার আগেই রূপায়ণ বলেছিল, ওরে ও অনেক পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ। তুই পারবি না। তখন ওর চোখ আমি দেখেছিলাম। আপনারা কেউ ওকে ফলো করেছিলেন কিনা জানিনা। ও কারুর কোন কথা শোনেনি। ও ওর কাজ করে বেড়িয়ে এসেছে। অনিমেষদা যখন অরিত্রকে ডেকে বললো, ওদের গ্রীণ সিগন্যাল দিয়ে দাও।
মুখে কিছু বলতে পারিনি। মনে মনে খুব আপসেট হয়ে পরেছিলাম।
আমাদের তিনজনের একজন সরে যাবে। তারপর একঘন্টা অনিকে দেখেছি।
আপনাদের কথা শুনেছি। অনি যখন ওপরে চলে আসছে, ওর হাতটা চেপে ধরেছিলাম। ওর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম। মুখে কিছু বলিনি, মনে মনে বলেছিলাম। তুই প্রবীরকে ক্ষমা করে দে। আমাদের পাঁচজনের থেকে একজনকে সরিয়ে দিস না।
আপনাদের সঙ্গে ও বাড়িতে গেছি। ঘুম হয়নি। সকালে শুনলাম অনি মিত্রা দুজনেই বাড়ি নেই। মনটা প্রথমে কু গাইল। প্রবীরকে ফোন করলাম। ওর ফোনের স্যুইচ অফ, ওর পরিচিত সবার ফোনের স্যুইচ অফ। নিজের সমস্ত সোর্স ফেল, কাউকে বলতে পারছিনা ঘটনাটা।
শেষে আমি সল্টলেকে ওই আফিসে আমার একজন পরিচিত কে ফোন করি। তখন আমার বর্ণনা শুনে ও বললো, মিঃ সিংকে নিয়ে ওরা বেরিয়ে এসেছে। আপনাকে ভয়ে ফোন করিনি। যদি আপনি কিছু বলেন।
অনিমেষদাকে ফোন করতে গেলাম। তখন অনিমেষদা ফোন করে জানাল অনি গেটের মুখে গাড়ি থেকে নামছে। জিজ্ঞাসা করুণ অনিমেষদাকে আমি প্রথমেই জিজ্ঞাসা করেছি, প্রবীর আছে কিনা। অনিমেষদা বললেন উইথ ফ্যামিলি।
অনুপদা হাঁপাচ্ছে।
জানি বিধানদা, আমাদের বাম রাজনীতিতে ইমোসনের কনো জায়গা নেই। সেখানে আমরা বাস্তববাদী। কিন্তু আজ এই মুহূর্তে আমার এই অবস্থার জন্য একমাত্র অনি দায়ী।
সারা ঘড় নিস্তব্ধ। পিন পরলে শব্দ হবে। অনিমেষদা ভাবলেশহীন মুখে বসে।
ছোট তোমার ফ্লাক্সে একটু চা হবে। বিধানদা বললো।
আমার জন্য যদি হয় একটু দেখ। ডাক্তারদাদা বললো।
দাঁড়ান আমি বলে আসছি।
দাঁড়া তোর সঙ্গে আমি যাচ্ছি। বৌদি বললো।
তুমি বসো আমি পারবো।
ছোট।
বলুন।
একবার পারলে দামিনীকে একটু ডাকো।
আচ্ছা।
ছোটমা ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। অনুপদা বাইরের বারান্দায় বেরিয়ে গেল। চোখ ছল-ছল।
প্রবীর অনির সম্বন্ধে তোমার ধারনা বলো।
প্রবীরদা মাথা নীচু করে বসে। বুক থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।
দেখো প্রবীর তুমি এবং বনানী এই কয়দিনে আমাকে অনেক কথা বলেছো, এমনকি এও বলেছো, অনি পার্টির অনেক ক্ষতি করছে। আমি শুনে গেছি। তোমাদের কথার কোন উত্তর দিই নি। আমাদের পার্টির মধ্যে অনেক দ্বন্দ্ব আছে, আমরা পার্টির মধ্যে বসেই তার সমাধান করি।
এই ঘটনাটা এখনো পর্যন্ত কেউ জানে না। হয়তো কেউ জানবেও না। যদি সত্যি সত্যি ঘটনাটা কাগজে বেরতো, পার্টি কিভাবে তার মোকাবিলা করতো। আমরা তার স্ট্র্যাটিজি তৈরি করি, আজ এই মুহূর্তে তোমাকে দায়িত্ব দিলাম। তুমি বলো।
ছোটমা বৌদি ঘরে ঢুকলো। পেছনে দামিনী মাসি।
বসো মাসি। বিধানদা বললো।
আমাকে নাম ধরে ডাকুন দাদা।
নাগো মাসি। তোমরা সবাই মিলে অনির মতো একটা ছেলে উপহার দিলে। তোমাদের নাম ধরে ডাকতে পারি। সুতপাকেও আজ থেকে আর নাম ধরে ডাকব না।
মাসি চুপ করে গেল।
তোকে একবার কনিষ্ক ডাকছে। ও চলে যাবে।
কোথায় কনিষ্ক ? অনিমেষদা বললো।
বাইরের বারান্দায়।
ওকে ভেতরে ডাকো।
মাসি গেটের কাছে চলে গেল। ইশারায় কনিষ্ককে ডাকলো।
আয় বাবা আয়। ওদের খবর কিরে। অনিমেষদা বললেন।
এখন ভাল আছে।
কোথায় রেখেছিস ?
নীরুর নার্সিংহোমে।
ওই তল্লাটে লোক পাঠিয়েছিস ?
হ্যাঁ।
সব ঠিক আছে।
না।
আবার কি সমস্যা।
অনিকেতের সঙ্গে টনা মনার বৌ এসেছে। আরো দশ পনেরো জন। ওরা অনির সঙ্গে কথা বলতে চায়।
অনিকেত কি সব সত্যি কথা বলেছে।
না বলে উপায় ছিল না। ওরা এমনি খুব সহজ সরল। বিশ্বাস হারালে ডেঞ্জার।
অনিমেষদা একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছাড়ল। বৌদি সবাইকে চা দিল।
তুই একটু বোস।
আমাকে হাসপাতালে যেতে হবে। কয়েকটা অপারেসন আছে। তাছাড়া ভালোপাহাড় থেকে লোক এসেছে। ওদের কি সমস্যা আছে। ওরা কোথা থেকে জানতে পেরেছে রাজনাথ বাবুর ঘটনাটা। ওরাও অনির সঙ্গে দেখা করতে চায়। বুঝিয়ে সুঝিয়ে রেখে এসেছি।
বিধানদা হেসে ফেললো। হ্যাঁগো অনিমেষ ভালোপাহাড়টা আবার কোথায় ?
অনিমেষদা চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন। ঝাড়খন্ডে। কেন আপনাকে বলিনি। ওখানে আমাদের একটা সংগঠন তৈরি হয়েছে। ওরা এসে বার বার যোগাযোগ করছে। রূপায়ণকে দায়িত্ব দিয়েছি।
কে এসেছে কনিষ্ক।
শ্যাম।
তোমরা ওদের চিনলে কি করে।
তোমরা পার্টির সংগঠন কর কি করে বলতে পারো। বড়মা খ্যার খ্যার করে উঠলো।
কি করে জানবো বৌদি।
ওখানে অনি যায়। আজ নয় বিগত সাত বছর ধরে। কনিষ্করাও যায় ডাক্তারী করতে। সুতপা জানে তো।
আমি পর্শু জানলাম। অনির বিয়ের দিন। কনিষ্ক গল্প করছিল।
কি অমিতাভবাবু আপনি অনিকে অনেকদিন দেখছেন। ও আপনার হাতে তৈরি। আপনি কিছু জানতেন। বিধানদা বললো।
রাখো ওর কথা, আমি যা জানি ও তা জানে না। বড়মা বলে উঠলো।
বিধানদা হাসছে।
বিধানবাবু এক কাজ করুণ। রূপায়ণ, অনুপ পার্টি অফিসে যাক। ওদিকটা ওরা সামলাক। আমি আপনি এখানে থাকি। কনিষ্ক ওদের এখানে আনা যাবে ?
ওরা আসতে চাইছে, আমি না বলেছি।
তুই ওদের নিয়ে আয়। এ বাড়ি না হোক ডাক্তারবাবুর বাড়িতে বসে ওদের সঙ্গে কথা বলবো। প্রবীর তুমি এখানে থাকবে, না বাড়ি যাবে।
আমি একটু বাড়ি যাই, বিকেলে আসছি।
তুই একটু শুয়ে পর। তোর চোখ-মুখ লালা হয়ে গেছে।
আর একজন নীচে বড়দির ঘরে ভঁস ভঁস করে ঘুমচ্ছে। ছোটমা বললো।
বেচারা কি করে বলো, অনি এরকম বদমাস সে কি জানত, তাহলে হয়তো বিয়ে করতো না।
অনিমেষদা বললো।
বিধানদা, ডাক্তারদা, মল্লিকদা হাসছে দাদা মুচকি মুচকি হাসছে।
বলুন না একবার গিয়ে চোখে জল ভরে যাবে। আপনার সঙ্গে কথা বলাই বন্ধ করে দেবে।
ছোটমা বললো।
আমার আর হাসতে ইচ্ছে করছে না কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। বেদম ঘুম পাচ্ছে। মনে মনে বলছি তোমরা ঘর থেকে বেরলেই আমি ঘুমবো।
সত্যি সত্যি ওরা বেরিয়ে গেল। কারুর সঙ্গে আমার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।
কনিষ্ককে বললাম, ওদের নিয়ে বিকেলে আয় কথা বলবো।
ওরা খালি ঘর থেকে বেরবার অপেক্ষা, আমার আর জামা কাপর খুলতে ইচ্ছে করলো না। চিঠিগুলো মনে হয় অনিমেষদা নিয়ে গেল। আমি সোজা বিছানায় শুয়ে পরলাম। শোয়া মাত্রই ঘুমে চোখ জুড়িয়ে এলো। কে কোথায় কি ভাবে আছে কিছু চিন্তা করতে ভাল লাগছে না। ঘুমিয়ে পড়লাম।
ঘুমটা ভাঙলো তবু চোখে যতো রাজ্যের ঘুম জড়িয়ে আছে। কিছুতেই উঠতে ইচ্ছে করছে না।
তুই ওকে তুলতে পারবি না দিদিভাই। ও হচ্ছে স্টেট বাসের মতো, চললে থামে না। আবার থামলে চলে না।
ইসি হো হো করে হাসছে।
অতো জোরে হাসিসনা এখুনি জেগে যাবে।
তুই না সত্যি কি হয়েগেছিস।
যা বলছি শোন। না ঘুমলে আটচল্লিশ ঘন্টা জেগে কাটিয়ে দেবে। আবার ঘুমলে কুম্ভকর্ণ।
ছোটমা বললো তুলতে।
ছোটমাকে আস্তে বল। শুনলি নিজের কানে, মিলির কার গুষ্টি উদ্ধার করছিল।
মিলির কি লাইফ বল।
কি করবে। একটা ভুল করে ফেলেছে।
ও কোথা থেকে জানলো।
সকাল থেকে কি শুনছিস। দশবছর আগের বুবুন আর এখনকার বুবুন।