What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

দেখি নাই ফিরে (উপন্যাস) (3 Viewers)

বৌদি উঠে গিয়ে টেবিলথেকে একটা গাডার মোড়া কাগজ নিয়ে এলো।
ধর মিত্রা দিল।
আমি বৌদির দিকে তাকিয়ে ইশারায় বললাম বিধানদাকে দাও।
বৌদি বিধানদাকে রোলটা দিল।
এটা কি সুতপা ?
অনি কি কাগজ চাইল, মিত্রা দিল।
কিরে এটায় কি আছে।
প্রবীরদাকে কিভাবে নিয়ে এলাম তার ডিটেলস।
বিধানদা চা খেতে খেতে চারটে চিঠি ভাল করে দেখল। তারপর অনিমেষদার হাতে চিঠিগুলো তুলে দিল।
তুইতো দেখছি আইনটাও ভাল জেনে ফেলেছিস।
আমি মাথা নীচু করে বসে রইলাম।
ওরা সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ডাক্তারদাদার মুখটা হাসি হাসি।
কি সামন্তবাবু, দিদির মুখ থেকে শুনছিলাম আপনি ওকে কিছুটা ধরতে পেরেছেন। কি বুঝছেন।
বিধানদার কথায় ডাক্তারদাদা চায়ের কাপ থেকে মুখ তুললো।
আপনারা এমন কিছু ঘটনা কাল ওর সামনে করেছেন যার জন্য ও নিজে চলে গেল। মনেহয় নিজের বন্ডেই ও ছাড়িয়ে নিয়ে এসেছে।
আপনি ঠিক ধরেছেন। কাগজের মালিক এবং মালকিন জয়েন্ট বন্ডে ছাড়িয়েছে। আর একটাতে অনি নিজে সাংবাদিক হিসাবে ওখানে উপস্থিত রয়েছে। প্রবীররের বাড়ি থেকে সে করম কিছু পাওয়া যায় নি।
বিধানদার কথা শেষ হবার আগেই অনুপদা খাট থেকে নেমে এসে আমার সামনে দাঁড়াল। আমাকে হাত ধরে দাঁড় করাল বুকে জড়িয়ে ধরলো। সবাই অবাক হয়ে দেখছে। আমি চুপচাপ।
তুই কাল আমার মনের কথা ধরে ফেলেছিলি।
সবাই কিংকর্তব্য বিমূঢ়।
কি বলছো কি অনুপ। আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। বিধানদা বললেন।
তুই বোস তোর কাছে মাঝে মাঝে আসবো। তোর কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। বিশেষ করে কি ভাবে মানুষ চিনতে হয়।
আমি বসলাম।
অনুপদা ঠক ঠক করে বড়মা, ছোটমা, বৌদি, জ্যেঠিমনিকে প্রণাম করলো। ছোটমা হাঁই হাঁই করে উঠলো।
এ কি করছো অনুপ।
নাগো ছোটবৌদি অনির মতো তোমাকে যদি ছোটমা বলে ডাকতে পারতাম খুব ভালো লাগতো।
আচ্ছা অনুপ আমরা বাম রাজনীতি করি। আমাদের রাজনীতিতে ইমোসনের কোন জায়গা নেই। তুমি এসব কি শুরু করলে।
দাদা, আপনার আর অনিমেষদার হাতে আমি, রূপায়ণ, প্রবীর তৈরি হয়েছি। অনিমেষদাকে সব কথা কম বেশি বললেও আপনাকে ভয়ে বলতে পারিনা। বলতে পারেন সেই ভয়টা অত্যাধিক শ্রদ্ধা। আমি চেষ্টা করলেও আপনার পার্মিসন নিয়ে কালকে ওই ভাবে প্রবীরের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে পারতাম না।
তখন ওকে আমি প্রবল ভাবে বোঝার চেষ্টা করছি। তার আগেই রূপায়ণ বলেছিল, ওরে ও অনেক পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ। তুই পারবি না। তখন ওর চোখ আমি দেখেছিলাম। আপনারা কেউ ওকে ফলো করেছিলেন কিনা জানিনা। ও কারুর কোন কথা শোনেনি। ও ওর কাজ করে বেড়িয়ে এসেছে। অনিমেষদা যখন অরিত্রকে ডেকে বললো, ওদের গ্রীণ সিগন্যাল দিয়ে দাও।
মুখে কিছু বলতে পারিনি। মনে মনে খুব আপসেট হয়ে পরেছিলাম।
আমাদের তিনজনের একজন সরে যাবে। তারপর একঘন্টা অনিকে দেখেছি।
আপনাদের কথা শুনেছি। অনি যখন ওপরে চলে আসছে, ওর হাতটা চেপে ধরেছিলাম। ওর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম। মুখে কিছু বলিনি, মনে মনে বলেছিলাম। তুই প্রবীরকে ক্ষমা করে দে। আমাদের পাঁচজনের থেকে একজনকে সরিয়ে দিস না।
আপনাদের সঙ্গে ও বাড়িতে গেছি। ঘুম হয়নি। সকালে শুনলাম অনি মিত্রা দুজনেই বাড়ি নেই। মনটা প্রথমে কু গাইল। প্রবীরকে ফোন করলাম। ওর ফোনের স্যুইচ অফ, ওর পরিচিত সবার ফোনের স্যুইচ অফ। নিজের সমস্ত সোর্স ফেল, কাউকে বলতে পারছিনা ঘটনাটা।
শেষে আমি সল্টলেকে ওই আফিসে আমার একজন পরিচিত কে ফোন করি। তখন আমার বর্ণনা শুনে ও বললো, মিঃ সিংকে নিয়ে ওরা বেরিয়ে এসেছে। আপনাকে ভয়ে ফোন করিনি। যদি আপনি কিছু বলেন।
অনিমেষদাকে ফোন করতে গেলাম। তখন অনিমেষদা ফোন করে জানাল অনি গেটের মুখে গাড়ি থেকে নামছে। জিজ্ঞাসা করুণ অনিমেষদাকে আমি প্রথমেই জিজ্ঞাসা করেছি, প্রবীর আছে কিনা। অনিমেষদা বললেন উইথ ফ্যামিলি।
অনুপদা হাঁপাচ্ছে।
জানি বিধানদা, আমাদের বাম রাজনীতিতে ইমোসনের কনো জায়গা নেই। সেখানে আমরা বাস্তববাদী। কিন্তু আজ এই মুহূর্তে আমার এই অবস্থার জন্য একমাত্র অনি দায়ী।
সারা ঘড় নিস্তব্ধ। পিন পরলে শব্দ হবে। অনিমেষদা ভাবলেশহীন মুখে বসে।
ছোট তোমার ফ্লাক্সে একটু চা হবে। বিধানদা বললো।
আমার জন্য যদি হয় একটু দেখ। ডাক্তারদাদা বললো।
দাঁড়ান আমি বলে আসছি।
দাঁড়া তোর সঙ্গে আমি যাচ্ছি। বৌদি বললো।
তুমি বসো আমি পারবো।
ছোট।
বলুন।
একবার পারলে দামিনীকে একটু ডাকো।
আচ্ছা।
ছোটমা ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। অনুপদা বাইরের বারান্দায় বেরিয়ে গেল। চোখ ছল-ছল।
প্রবীর অনির সম্বন্ধে তোমার ধারনা বলো।
প্রবীরদা মাথা নীচু করে বসে। বুক থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।
দেখো প্রবীর তুমি এবং বনানী এই কয়দিনে আমাকে অনেক কথা বলেছো, এমনকি এও বলেছো, অনি পার্টির অনেক ক্ষতি করছে। আমি শুনে গেছি। তোমাদের কথার কোন উত্তর দিই নি। আমাদের পার্টির মধ্যে অনেক দ্বন্দ্ব আছে, আমরা পার্টির মধ্যে বসেই তার সমাধান করি।
এই ঘটনাটা এখনো পর্যন্ত কেউ জানে না। হয়তো কেউ জানবেও না। যদি সত্যি সত্যি ঘটনাটা কাগজে বেরতো, পার্টি কিভাবে তার মোকাবিলা করতো। আমরা তার স্ট্র্যাটিজি তৈরি করি, আজ এই মুহূর্তে তোমাকে দায়িত্ব দিলাম। তুমি বলো।
ছোটমা বৌদি ঘরে ঢুকলো। পেছনে দামিনী মাসি।
বসো মাসি। বিধানদা বললো।
আমাকে নাম ধরে ডাকুন দাদা।
নাগো মাসি। তোমরা সবাই মিলে অনির মতো একটা ছেলে উপহার দিলে। তোমাদের নাম ধরে ডাকতে পারি। সুতপাকেও আজ থেকে আর নাম ধরে ডাকব না।
মাসি চুপ করে গেল।
তোকে একবার কনিষ্ক ডাকছে। ও চলে যাবে।
কোথায় কনিষ্ক ? অনিমেষদা বললো।
বাইরের বারান্দায়।
ওকে ভেতরে ডাকো।
মাসি গেটের কাছে চলে গেল। ইশারায় কনিষ্ককে ডাকলো।
আয় বাবা আয়। ওদের খবর কিরে। অনিমেষদা বললেন।
এখন ভাল আছে।
কোথায় রেখেছিস ?
নীরুর নার্সিংহোমে।
ওই তল্লাটে লোক পাঠিয়েছিস ?
হ্যাঁ।
সব ঠিক আছে।
না।
আবার কি সমস্যা।
অনিকেতের সঙ্গে টনা মনার বৌ এসেছে। আরো দশ পনেরো জন। ওরা অনির সঙ্গে কথা বলতে চায়।
অনিকেত কি সব সত্যি কথা বলেছে।
না বলে উপায় ছিল না। ওরা এমনি খুব সহজ সরল। বিশ্বাস হারালে ডেঞ্জার।
অনিমেষদা একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছাড়ল। বৌদি সবাইকে চা দিল।
তুই একটু বোস।
আমাকে হাসপাতালে যেতে হবে। কয়েকটা অপারেসন আছে। তাছাড়া ভালোপাহাড় থেকে লোক এসেছে। ওদের কি সমস্যা আছে। ওরা কোথা থেকে জানতে পেরেছে রাজনাথ বাবুর ঘটনাটা। ওরাও অনির সঙ্গে দেখা করতে চায়। বুঝিয়ে সুঝিয়ে রেখে এসেছি।
বিধানদা হেসে ফেললো। হ্যাঁগো অনিমেষ ভালোপাহাড়টা আবার কোথায় ?
অনিমেষদা চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন। ঝাড়খন্ডে। কেন আপনাকে বলিনি। ওখানে আমাদের একটা সংগঠন তৈরি হয়েছে। ওরা এসে বার বার যোগাযোগ করছে। রূপায়ণকে দায়িত্ব দিয়েছি।
কে এসেছে কনিষ্ক।
শ্যাম।
তোমরা ওদের চিনলে কি করে।
তোমরা পার্টির সংগঠন কর কি করে বলতে পারো। বড়মা খ্যার খ্যার করে উঠলো।
কি করে জানবো বৌদি।
ওখানে অনি যায়। আজ নয় বিগত সাত বছর ধরে। কনিষ্করাও যায় ডাক্তারী করতে। সুতপা জানে তো।
আমি পর্শু জানলাম। অনির বিয়ের দিন। কনিষ্ক গল্প করছিল।
কি অমিতাভবাবু আপনি অনিকে অনেকদিন দেখছেন। ও আপনার হাতে তৈরি। আপনি কিছু জানতেন। বিধানদা বললো।
রাখো ওর কথা, আমি যা জানি ও তা জানে না। বড়মা বলে উঠলো।
বিধানদা হাসছে।
বিধানবাবু এক কাজ করুণ। রূপায়ণ, অনুপ পার্টি অফিসে যাক। ওদিকটা ওরা সামলাক। আমি আপনি এখানে থাকি। কনিষ্ক ওদের এখানে আনা যাবে ?
ওরা আসতে চাইছে, আমি না বলেছি।
তুই ওদের নিয়ে আয়। এ বাড়ি না হোক ডাক্তারবাবুর বাড়িতে বসে ওদের সঙ্গে কথা বলবো। প্রবীর তুমি এখানে থাকবে, না বাড়ি যাবে।
আমি একটু বাড়ি যাই, বিকেলে আসছি।
তুই একটু শুয়ে পর। তোর চোখ-মুখ লালা হয়ে গেছে।
আর একজন নীচে বড়দির ঘরে ভঁস ভঁস করে ঘুমচ্ছে। ছোটমা বললো।
বেচারা কি করে বলো, অনি এরকম বদমাস সে কি জানত, তাহলে হয়তো বিয়ে করতো না।
অনিমেষদা বললো।
বিধানদা, ডাক্তারদা, মল্লিকদা হাসছে দাদা মুচকি মুচকি হাসছে।
বলুন না একবার গিয়ে চোখে জল ভরে যাবে। আপনার সঙ্গে কথা বলাই বন্ধ করে দেবে।
ছোটমা বললো।
আমার আর হাসতে ইচ্ছে করছে না কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। বেদম ঘুম পাচ্ছে। মনে মনে বলছি তোমরা ঘর থেকে বেরলেই আমি ঘুমবো।
সত্যি সত্যি ওরা বেরিয়ে গেল। কারুর সঙ্গে আমার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।
কনিষ্ককে বললাম, ওদের নিয়ে বিকেলে আয় কথা বলবো।
ওরা খালি ঘর থেকে বেরবার অপেক্ষা, আমার আর জামা কাপর খুলতে ইচ্ছে করলো না। চিঠিগুলো মনে হয় অনিমেষদা নিয়ে গেল। আমি সোজা বিছানায় শুয়ে পরলাম। শোয়া মাত্রই ঘুমে চোখ জুড়িয়ে এলো। কে কোথায় কি ভাবে আছে কিছু চিন্তা করতে ভাল লাগছে না। ঘুমিয়ে পড়লাম।
ঘুমটা ভাঙলো তবু চোখে যতো রাজ্যের ঘুম জড়িয়ে আছে। কিছুতেই উঠতে ইচ্ছে করছে না।
তুই ওকে তুলতে পারবি না দিদিভাই। ও হচ্ছে স্টেট বাসের মতো, চললে থামে না। আবার থামলে চলে না।
ইসি হো হো করে হাসছে।
অতো জোরে হাসিসনা এখুনি জেগে যাবে।
তুই না সত্যি কি হয়েগেছিস।
যা বলছি শোন। না ঘুমলে আটচল্লিশ ঘন্টা জেগে কাটিয়ে দেবে। আবার ঘুমলে কুম্ভকর্ণ।
ছোটমা বললো তুলতে।
ছোটমাকে আস্তে বল। শুনলি নিজের কানে, মিলির কার গুষ্টি উদ্ধার করছিল।
মিলির কি লাইফ বল।
কি করবে। একটা ভুল করে ফেলেছে।
ও কোথা থেকে জানলো।

সকাল থেকে কি শুনছিস। দশবছর আগের বুবুন আর এখনকার বুবুন।
 
আমি ওকে যত দেখছি তত অবাক হয়ে যাচ্ছি।
ওর কোনো ভ্রুক্ষেপ আছে।
সত্যি ওর কোন বিকার নেই।
অনিমেষদা বিধানদা পার্টির অতো বড়ো বড়ো মাথা। ওরা পর্যন্ত তল খুঁজে পাচ্ছে না।
ওর প্রতি সুরোর কি জোড়।
জোড় মানে। বলতে পারিস কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে। সেই দিনের অবস্থা তুই দেখিস নি। অনিমেষদার রূপ দেখলে তুই ভয় পেয়ে যেতিস। সেদিন বুঝলাম ওরা তিনজন ওকে কতো ভালবাসে। ইসলামভাই, দামিনীমাসি পর্যন্ত কেঁদে ভাসিয় দিচ্ছে। ও নির্বিকার।
পর্শুদিনের কথা ভাব।
সত্যি বলছি দিদিভাই আমি ভাবতেই পারি নি ও তোদের এনে হাজির করবে।
মিত্রার গলাটা ভারি হয়ে গেল।
আবার কাঁদে। যা হয়ে গেছে, গেছে, এবার আমরা সবাই এক সাথে।
বুবুন না থাকলে এ জন্মে জ্যেঠিমনিকে পেতাম না।
ঠিক আছে একেবারে চোখের জল ফেলবি না। নে কাপরটা পরে নে। ওকে ডাক।
মিত্রাদি ও মিত্রাদি।
দরজাটা খোল, মিলি এসেছে।
ব্লাউজটা পর।
পড়ছি তুই খোল না, এখন কেউ আসবে না।
ইসি দরজা খুললো।
কিগো অনিদা ওঠে নি ?
তুই ডাক, এতোক্ষণ তোর ষষ্ঠী পূজো করলো।
আমার কি হবে দিদি।
কি আর হবে।
তুমি জান না। গত তিনদিনে প্রায় তিরিশ বার ফোন করেছে।
কই তুই বলিস নি!
কখন বলবো তুমি বলো। সেই পরিস্থিতি ছিল।
আমাকে বলতে পারতিস।
ওই জন্য সেদিন তোমার বাড়ি থেকে আমি টিনা সোজা বাড়ি গেছিলাম। আমার ফ্ল্যাটে না। টিনার ফ্ল্যাটে। কথা বলেছি। বলে কিনা এখুনি চলে এসো। তোমার সঙ্গে ভীষণ দরকার। বার বার অনিদার নাম করছে।
তুই কি বললি।
আমি কিছু বলিনি। বলেছি আমার ল-ইয়ারের সঙ্গে কথা বলো। টিনার সঙ্গে কথা বলিয়ে দিয়েছি।
টিনা তোর ল-ইয়ার ?
ওই মুহূর্তের জন্য।
টিনা কি বললো।
ডাইরেক্ট ঝাড়, কবে সই করছেন।
তুই কেশ করেছিস।
না আমার পরিচিত একজন ল-ইয়ারকে দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছি।
রিসিভ করেছে।
হ্যাঁ।
কোন উত্তর দিয়েছে।
না।
কতোদিন হয়েছে।
দু’মাস হয়েগেছে।
বুবুন জানল কি করে।
আমি ঠিক ধরতে পারছি না দিদি। হয়তো কথা প্রসঙ্গে কখনো বলে ফেলেছি। কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারছি না। আমি সবাইকে জিজ্ঞাসা করেছি, সবাই বলছে আমরা বলিনি।
তাহলে বুঝতে পারছিস তোর অনিদা কি চিজ।
সে বলতে।
তোদের গল্প বলি, তোরা বিশ্বাস করিস না।
আচ্ছা তোরা কি বলতো, বেলা হয়েছে না হয়নি। মিলিকে পাঠালাম সেও এসে জমেগেল।
ছোটমার গলা।
ভেতরে এসো।
ওকে এখনো তুলতে পারিস নি।
ডেকো না ডেকো না। তোমার ছেলের কীর্তিটা একবার শুনে যাও। মিত্রা বললো।
আবার কি হলো!
তোমায় মিলির ব্যাপারটা বলেছিলাম হাল্কা করে।
হ্যাঁ। কোন গন্ডগোল!
গন্ডগোল তোমার ছেলে করেছে।
আবার!
আস্তে কথা বলো না। জেগে গেলে আবার শুরু করে দেবে।
কি হয়েছে বল। গলা নামিয়ে।
তখন চিকনা ডাকতে গেল, মনে আছে।
হ্যাঁ। চিকনা তোকে ধরে নিয়ে এলো।
বাবু তখন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে মিলির তাকে ধমকাচ্ছিলেন। বাহাত্তর ঘন্টা সময় দিয়েছেন।
একে নিয়ে কি করি বলতো। জিজ্ঞাসা করলে সব অস্বীকার করবে।
এখন মিলির মুখ থেকে শুনছি, আমার বিয়ের দিন থেকে উনি নাকি মিলিকে কনটিনিউ ফোন করে চলেছেন।
কি বলছে ?
মিলির সঙ্গে দেখা করতে চায়।
এখানে আসতে বল।
তাহলে তো ল্যাটা চুকে যেত। তুমি একটা কাজ করতে পারবে।
বল।
মিলি কোথায় থাকে রে। মিত্রা মিলিকে জিজ্ঞাসা করলো।
মিলি সল্টলেকের এ্যাড্রেস দিল।
কি করে।
সফ্টওয়ার ইঞ্জিনিয়ার।
তোর সঙ্গে কি করে আলাপ।
এমবিএ করতে গিয়ে।
সেপারেসন চাইছিস কেন।
চরিত্রের ঠিক নেই। আর কিছু বলতে পারব না।
বলতে হবে না।
শুনলে মিলির সব কথা।
শুনলাম। ছোটমা বললো।
তুমি একটা ঢিল ছোঁড়। ইসি বললো।
কাকে! অনিকে ?
হ্যাঁ।
দূর ওকে ছুঁড়লে কিছুই পাবি না। মিত্রা বললো।
বল তাহলে।
ওই যে নেপলা বলে ছেলেটা আছে না।
হ্যাঁ।
ওকে একবার ধমকাও, এই তুই মিলি যে ঠিকানাটা বললো ওই ঠিকানা বলে তুই ওখানে কি করতে গেছিলি।
তুই ভবলি ও আমাকে গড় গড় করে সব বলে দেবে। সেদিন অনিমেষদা একটা কথাও ওদের পেট থেকে বের করতে পারলো।
তাহলে ইসলামভাইকে বলো।
দাঁড়া ভাবতে দে। ওকে বললে ও বলবে দিদিভাই অনি আমার সমস্ত উইং বন্ধ করে দিয়েছে। আচ্ছা ও অরিত্র অর্ককে দিয়ে অপারেট করাচ্ছে না ?
এইতো ছোটমা তুমি ঠিক বলেছো।
ওরে ছাড় ছাড় ওকে ডাক এখুনি দিদি এসে হাজির হবে। টনার বৌ এখনো বাচ্চা নিয়ে বসে আছে। অনিদার পায়ে ছুঁইয়ে তবে সে বাড়ি যাবে। বাচ্চাটাকে একবাটি দুধ দিয়ে এসেছি খাওয়াবার জন্য।
ছোটমা আমার কি হবে। মিলি বললো।
থাম তুই। কতো রথী মহারথী গেল তল, মশা বলে কতো জল।
মিত্রা, ইসি হাসছে।
আমি এতোক্ষণ মটকা মেরে পরে ছিলাম। এবার একটু নড়েচড়ে উঠলাম, পাশ ফিরলাম। ছোটমা আমার কপালে হাত দিল।
ও অনি এবার ওঠ, অনেক বেলা হলো। তোর জন্য আমরা সবাই বসে আছি।
আমি চোখ মেলে তাকালাম। দেখলম সবাই আমার দিকে জুল জুল করে চেয়ে আছে। আমি ফিক করে হেসে আড়মোড়া ভাঙলাম। একটু সরে এসে ছোটমার কোলে মাথা রাখলাম।
ওঠ বাবা ওঠ।
কটা বাজে গো ছোটমা।
দুটো বেজে গেছে।
আমাকে ডাক নি কেন।
ওঠ আর ঢং করতে হবে না। মিত্রা বললো।
ভালোই তো ঘুমলি।
তোর থেকে কম।
তোর থেকে তিনঘন্টা পরে ঘুমিয়েছি।
তেমনি তোর আগে উঠেছি।
কখন উঠেছে। ছোটমার দিকে তাকালাম।
অনেকক্ষণ।
এরা তিনজন এ ঘরে কি করছে।
তোকে পাহাড়া দিচ্ছি। আজো ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে আবার লেকচার ঝাড়লি।
রেকর্ডিং করেছিস।
ওমা কি শয়তান দেখেছো ছোটমা।
মিত্রা ঘুসি পাকিয়ে তেড়ে এলো, আমি ছোটমার কোল থেকে গড়িয়ে খাটের একপাশে চলে গেলাম। মিত্রা বিছানার ওপর ঘুসি মারলো।
দাঁড়া তোকে দেখাচ্ছি।
মিত্রা খাটের ওপর উঠে এলো।
আমি কিন্তু গন্ডগোল করে দেব।
কর না কর। তুই তো সব সময় গন্ডগোল করছিস।
একিরে তোরা কি দুজনে ঘুসো ঘুসি করছিস। দেখলাম দরজার মুখে বড়মা, বৌদি।
দেখছিস দেখছিস সুতপা কান্ড দেখ।
বৌদি হাসছে।
ছোট তুই ওখানে বসে কি করছিস।
এতোক্ষণ তোমার ছেলের কর্তি কলাপ শুনলাম, এখন ঘুসো-ঘুসি দেখছি।
কেন, আবার কি করলো!
বড়মা বৌদি ঘরের ভেতর এলো।
ছেড়ে দিলাম।
মিত্রা বিছানা থেকে নেমে এলো।
তুই সং-এর মতো দাঁড়িয় আছিস কেন। তোকে ডাকতে পাঠালাম এসে জমে গেলি।
মিলির দিকে তাকিয়ে বড়মা বললো।
এবার ওকে নিয়ে পরেছে। জিজ্ঞাসা করো। মিত্রা খ্যাড় খ্যাড় করে উঠলো।
তোকে বলেছে।
ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে বক বক করছিল।
ও ওরকম করে। তা বোলে কি….।
দেখলি দেখলি দিদিভাই, বড়মার কথা শুনলি। বুবুন কোন দোষ করে না। একবারে ধোয়া তুলসী পাতা।
তুই যে সকাল বেলা ফোন বন্ধ করে রেখেছিলি।
সেটাও তোমার ছেলের কথায়।
ওর কথা শুনিস কেন।
মিত্রা বড়মাকে জড়িয়ে ধরলো। গালে গাল ঘোষে বললো, তুমিও বলবে।
তাহলে, দেখিস ও কোন অন্যায় করে না। করলেই নয় তোকে নয় আমাকে এসে বলবে। দু’জনকে যদি না পায় তাহলে ছোটকে বলবে। বলে কিনা বল।
মিত্রা বড়মার গলা জড়িয়ে ধরে আছে।
আমি ওদের দিকে তাকিয়ে আছি।

দেখছো দেখছো, চোখদুটো কেমন ছোট ছোট করে দেখছে। মিত্রা বললো।
 
কিরে বসে থাকলে হবে। সকালথেকে গোটা চারেক লুচি খেলি, যা স্নান সেরে নে। বৌদি বললো।
একটু চা খাওয়াবে।
না হবে না ভাগ। ছোটমা বললো।
আমি করে নিয়ে আসবো ছোটমা। মিলি বললো।
ছোটমা হাসলো।
যা নিয়ে আয়। আর টনার বৌটাকে ডেকে দে।
টনার বৌ এসেছে ?
সকাল থেকে হত্যে দিয়ে পরে আছে। অনিদার সঙ্গে দেখা না করে যাবে না। বড়মা বললো।
একা না আর কেউ আছে।

পাঁচ সাতজন আছে।
আমি খাট থেকে নেমে এলাম। টেবিলের কাছে গিয়ে মোবাইলটা নিলাম।
কনিষ্ককে ফোন করবি তো ? মিত্রা বললো।
হ্যাঁ।
ওরা ভাল আছে। তুই উঠলে আমাকে ফোন করতে বলেছে। তাহলে আসবে।
সকালে বলছিল, শ্যামেরা এসেছে।
সেটাও মাথায় আছে। ছোটমা বললো।
হাসলাম।
তোর বায়োডাটা এখনো অসম্পূর্ণ, এবার পুরোটা দিস।
মাথা নীচু করে থাকলাম।
বাপের জন্মে এরকম ছেলে দেখিনি।
আমি মুখ তুলে ছোটমার দিকে তাকিয়ে হাসলাম।
আর হাসিস নি।
দেখো ইসি কেমন ভাবে আমাকে দেখছে। কি ভাবছে বলো তো।
ভাবাভাবির কিছু নেই। দুদিনে ও আমাদের মতো সেগুনকাঠ হয়ে গেছে। তাও তোর দু-আনা দেখেছে। আর একজনকে ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পারাতে হচ্ছে।
টনার বৌ মালতী ঘরে ঢুকলো। কোলে মাস সাতেকের বাচ্চা। চোখ ছল ছলে। ওর পেছন পেছন আরও চার পাঁচ জন। ওদের আমি দেখেছি নাম জানি না।
আমি এগিয়ে গেলাম। মিলি চায়ের পট নিয়ে ঘরে ঢুকলো। ওরা যে যার আমার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো।
থাক থাক। টনাকে দেখেছিস।
মালতী কাঁদছে।
আমি বাচ্চাটার মাথায় হাত দিলাম। নরম তুলতুলে মাথাটা, আমার স্পর্শ পেয়ে নড়ে উঠলো। পিট পিট করে তাকাচ্ছে। আমার পাশে মিত্রা, ইসি, ছোটমা, বড়মা, বৌদি।
টনাকে দেখেছিস।
মালতী ঘাড় দোলালো।
ঠিক হয়ে যাবে। কাঁদিস না।
বাচ্চাটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
এটা ছেলে না মেয়ে।
ছেলে।
বাঃ।
তুমি ওকে একটু কোলে নাও।
দাঁড়া বাবু হয়ে বসি। না হলে নিতে পারবো না।
আমি মাটিতে বসলাম। মালতী আমার কোলে বাচ্চাটাকে দিল। বেশ গোল গাল। টনার মতো গায়ের রং কালো। চক চক করছে।
কনিষ্কদা ইঞ্জেকসন দিয়েছে।
দুটো দিয়েছে। আবার আগামী মাসে যেতে বলেছে।
নিয়ম করে ইঞ্জেকসন দিবি।
আমার কি হবে অনিদা।
সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি টনার বৌ-এর মাথায় হাত রাখলাম।
বাচ্চাটা আমার কোলে ভীষণ নড়া চড়া করছে। আমি ঠিক মতো ম্যানেজ করতে পারছিনা। ইসি মিত্রা আমার রকম সকম দেখে হাসছে। তারপর দেখলাম কেমন ভিঁজে ভিঁজে লাগছে।
ও মালতী দেখ দেখ ব্যাটা মনে হয় পেচ্ছাপ করলো। কেমন কেমন লাগছে।
ইসি, মিত্রা, মিলি জোরে হেসে উঠলো।
বাচ্চাটা চোখ বড়ো বড়ো করে চারদিক ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে।
মালতী আমার কোল থেকে বাচ্চাটাকে তুললো। সত্যি ব্যাটা আমার কোলে মুতে দিয়েছে। পাঞ্জাবী কুর্তা ভিঁজে একসা হয়ে গেছে।
খেয়েছিস।
মালতী মাথা দোলালো।
বাড়ি যাবি কি করে।
ভক্তা এসেছে।
মনার বৌ আসে নি।
ও পোয়াতি। অনিকেতদা এখন বেরতে বারণ করেছে।
যা নিচে যা। আমি স্নান সেরে যাচ্ছি।
ওরা নিচে চলে গেল।
আমি উঠে দাঁড়ালাম। মিত্রা, ইসি, মিলি আমাকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে দেখছে। ছোটমা, বড়মা, বৌদির চোখে বিষ্ময়।
দাও চা দাও। খেয়ে বাথরুমে যাব।
দিলো মুতে তোর গায়ে। মিত্রা বললো।
এরকম অনেক বাচ্চাই মোতে, আবার গায়েই শুকিয়ে যায়।
তারমানে!
তিনজনে একসঙ্গে বলে উঠলো।
আমি হাসলাম, চায়ের কাপে চুমুক দিলাম।
তোর কটা বাচ্চা আছে।
বুঝবে না।
দেখ ছোট এই টুকুর জন্য ওরা সকাল থেকে বসে আছে। বৌদি বললো।
নাগো বৌদি ঠিক তা নয়। ওরা ঋণ শোধ করতে জানে। আর একটা সবচেয়ে বড়ো ব্যাপার ওরা বেইমান না। ওরা উপকারীর উপকারটা স্বীকার করে। ওরা যে অশিক্ষিত।
ইসি আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে।
তুই ওদের ওখানে কখন যাস।
ঠিক নেই মন খারাপ হলে যাই। বলতে পার ওদের ওখানটা আমার এনটারটেনমেন্টের জায়গা। ওদের সঙ্গে কথা বললে মন ভালো হয়ে যায়।
বৌদি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বড়মার চোখে অনেক জিজ্ঞাসা।
মিত্রা।
বড়মার ডাকে মিত্রা ফিরে তাকাল।
ওকে ইসির আনা পাজামা পাঞ্জাবীটা বার করে দে।
আবার নতুন!
ভালো লাগছেনা বল। মিত্রা ফুট কাটল।
ইসি হাসছে।
অনিকে ঠিক নতুন জামা কাপরে মানায় না, তাই না।
আমি মিত্রার দিকে তাকিয়ে হাসলাম।
আয় তাড়াতাড়ি, ওরা আবার এসে পরবে। বড়মা বললো।
আবার কারা আসবে ?
তোর অনিমেষদা, তার সাঙ্গ পাঙ্গ। তুই তো ওদের ভাবিয়ে তুলেছিস। বৌদি বললো।
তুমি বিশ্বাস করো।
বিশ্বাস করতাম না। এখন সব শুনে বিশ্বাস করতে হচ্ছে।
সুরো কোথায় ?
কলেজে গেছে। এসে খাবে।
ওকে একবার ফোন করে দাও।
তুই রেডি হ। চলে আসবে।
ওরা চলে গেল, আমি টাওয়েলটা নিয়ে বাথরুমে ঢুকলাম। শরীরটা এখন বেশ ঝড়ে ঝড়ে লাগছে। ভালো করে স্নান করলাম। বার বার টনা মনার মুখটা ভেসে আসছে। মালতীর মুখটা ভেসে উঠছে। বাচ্চাটার মুখ চোখের সামনে জ্বল জ্বল করছে। আমি যখন বাচ্চাটাকে কোলে নিলাম তখন মিত্রার মুখটা লক্ষ করছিলাম। কি পরিতৃপ্ত মুখ। মা হওয়ার জন্য কতটা উদগ্রীব। আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়েছিল আমিই লজ্জা পেয়ে গেছি। সবার চোখ এড়ালেও ছোটমার চোখ এড়াতে পারি নি।
মালতী বাচ্চাটাকে যত্ন করে। তাছাড়া ওরা প্রকৃতির কোলে লালিত পালিত। ওদের ওখানে গিয়ে বেশ কয়েকবার দেখেছি, দুধের বাচ্চা গুলোকে চপচপে করে তেল মাখিয়ে রোদে ফেলে রাখে। ওদের কাছে অলিভ অয়েল স্বপ্ন। ঘানিতে ভাঙা কাদানি সরষের তেল ভাল করে মাখিয়ে ফেলে রেখে দিল। মালতীর বাচ্চাটা হাসপাতালে হয়েছে। নীরু কনিষ্ক ছিল। হওয়ার পর আমাকে ফোন করেছিল।
কিরে আরও কতো সময় লাগবে। মিত্রার গলা।
দাঁড়া বেরচ্ছি।
আমি পাজামা পাঞ্জীবীটা জলে চুবিয়ে ভালো করে ধুয়ে দিলাম।
টাওয়েল পরে বেড়োলাম।
মিত্রা বাথরুমের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে। আমি বেরতেই একেবারে মুখো মুখি। ডাগর চোখে আমার দিকে তাকিয়ে। দরজা ভেজানো। ছিটকানি দেওয়া নেই। বুঝলাম দুষ্টুমি করবে না।
একটু ধরি।
আবার কি হলো।
তোকে না ধরতে পারলে ভালো লাগে না।
দরজা খোলা আছে।
এমনি তোকে একটু জড়িয়ে ধরবো।
বাবা এতো ভদ্রহলি কবে থেকে।
আজ থেকে।
কেন।
তুই আমার মাথাটা অনেক উঁচু করে দিয়েছিস।
তোর মাথা নীচু ছিল নাকি।
মাটির সঙ্গে মিশে ছিল।
বাবা অতো বড়ো কাগজের মালকিন।
একবারে মালকিন মালকিন করবি না।
হেসে ফেললাম।
দে পাজামা পাঞ্জাবীটা দে পরে নিই।
মিত্রা আমাকে জাপ্টে ধরে আছে। খাটের কাছে এলাম।
এটা কি ইসি কিনে এনেছে।
আজ গিয়ে কিনে এনেছে।
হঠাৎ।
জানিনা, জিজ্ঞাসা করিস।
মালতীরা তোর জন্য গল্দা চিংড়ি নিয়ে এসেছে।
কেন।
তুই বিয়ে করেছিস।
হাসলাম।
তোকে কি ভালো বাসে। তোর জন্য আমিও একটু পেলাম।
আমি না থাকলেও পেতিস।
আমাকে একবার নিয়ে যাবি।
কনিষ্করা প্রায় যায় ওদের সঙ্গে চলে যাস।
তুই নিয়ে যাবি না।
আমার কোন দিনক্ষণ নেই। তোর অফিসের ঝামেলা যখন মেটাচ্ছিলাম তখন ওখানে গিয়ে পড়ে থাকতাম। ওরাও আমার অনেক কাজ করে দেয়। মাস দুয়েক যাই নি।
পাঞ্জাবীর হাতাগুলো বেশ বড়ো, মিত্রা হাতাটা ভাঁজ করে দিল।
জানিস বুবুন যে দিদিভাই আজ ছয় বছর আমাকে একটা ফোন করে নি। আমার খোঁজ খবর নেয় নি, আজ আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো, জানিস ছুটকি একটা বড়ো ভুল করে ফেলছিলাম।
সব তোর জন্য।
আমার জন্য কেন ?
তুই আমাকে যদি মালিক না বানাতিস তাহলে আমি এই কাজ করার সুযোগ পেতাম না।
তুই আমাকে টুকলি।
একটুও না তুই বিশ্বাস কর। তুই একটু ভেবে দেখ। তুই তোর মতো আছিস, আমি আমার মতো আছি। তাহলে কি এই ঘটনা গুলো ঘটতো।

না।
 
তাহলে।
তুই মালিক বানালি, পর পর ঘটনা ঘটে চলেছে। আমি খালি তোর সেফ্টি দেখতে চাইছি। পারছি কই। সবার স্বার্থে আঘাত লাগছে। আমি খালি পরিষ্কার করতে চাইছি।
ঠিক বলেছিস।
চল। এবার যাই। না হলে ছোটমা এসে হাজির হবে।
তোর পারফর্মেন্সে ছোটমা সবচেয়ে খুশী।
জ্যেঠিমনি ?
কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।
সকাল থেকে আমাদের যারা আত্মীয় আছে সবাইকে ফোন করা হয়েগেছে। যেই শুনেছে তুই ছুটকির বড়। সবাই সকাল থেকে একবার করে এসে চলে গেছে। তোর ঘুমন্ত শরীরটা ঘরে এসে দেখে, তোর ঘুমেরো প্রশংসা করে সকলে।
আমি মিত্রার মুখের দিকে তাকিয়ে।
সত্য বলছি বিশ্বাস কর।
জ্যেঠিমনিকে বলেছে ওই বাড়িতে একটা অনুষ্ঠান করো।
জ্যেঠিমনি কি বললো ?
ওর মতি গতির কথা শুনছো তো। আগে হ্যাঁ বলুক তারপর। জ্যেঠিমনিকে কেউ ছেড়ে কথা বললো না। দু’একটা কথা শোনাল।
সেই জন্য তোর মাথাটা উঁচু হয়ে গেছে।
মিত্রা চোখ বুঁজিয়ে মাথা দোলাল।
দুজনে বেরিয়ে এলাম।
নীচে নামলাম। মালতী সিঁড়ির কাছে বসে আছে। বাচ্চাটাকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছে। আমাকে দেখে বাচ্চাটার মুখে কাপর চাপা দিলো। আমি কাছে গেলাম।
ভক্তা কইরে।
ও পাসে গেছে।
একবার ডাক।
একজন উঠে গিয়ে ভক্তাকে ডেকে নিয়ে এলো। আমাকে দেখেই পায়ে হাত দিল।
কিরে বাড়ি যাবি ?
বড়মা বললো খাবার দেবে।
কিসে যাবি।
ট্রলি নিয়ে এসেছি।
যেতে পারবি ?
খুব পারবো।
আমি মানি পার্টস থেকে দুটো পাঁচশো টাকার নোট মালতীর হাতে দিতে গেলাম।
নাগো অনিদা আছে।
থাক তবু রাখ কাজে লাগবে।
সকালে অনিকেতদা দিয়ে এসেছে।
বাধ্য হয়ে পার্সে ঢুকিয়ে রাখলাম। মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
তুমি সকাল থেকে কিছু খাও নি। খেয়ে নাও। তুমি খেয়ে উঠলে আমি যাব। মালতী বললো।
কেন টনা বলে দিয়েছে।
মালতী চুপ করে রইলো।
বাইরের গেটে ট্যাক্সি এসে দাঁড়াল। দেখলাম বটা, নীরু, কনিষ্ক, অনিকেত নামছে।
নীরু ট্যাক্সি ভাড়া দিল। আমি এগিয়ে গেলাম। আমার পাশে পাশে মিত্রাও এলো।
কিরে খাওয়া হয়েছে।
না।
শরীর ঠিক আছে।
হ্যাঁ।
টনা কেমন আছে।
টনা ঠিক আছে, মনা একটু সমস্যা করেছিল। এখন ঠিক আছে। কাল ছেড়ে দেব।
চোখটা।
যা ভয় করেছিলাম তা নয়। স্যার দেখে বললেন, একটু বেশি ধাক্কা লেগেগেছে। ওষুধ চলবে।
দিন পনেরো লাগবে।
পেছনে দেখলাম মালতী দাঁড়িয়ে আছে।
কিরে তুই বাড়ি যাস নি। নীরু মালতীর দিকে তাকিয়ে বললো।
মালতী মুখ নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
সব ঠিক আছে চিনতা করতে হবে না।
আমরা হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে এলাম। বারান্দায় বড়মা ছোটমা দাঁড়িয়ে।
খাবার রেডি করো, বহুত খিদে পেয়ে গেছে। কনিষ্ক চেঁচিয়ে উঠলো।
অনিকেত ওষুধের প্যাকেটটা ভক্তার হাতে দে, ও মনার বউকে দিয়ে দেবে। নীরু বললো।
কিসের ওষুধ।
মনার বৌ-এর।
ওর আবার কি হলো!
তোর হোক বুঝবি।
নীরু এমন ভাবে বললো, মিত্রা পর্যন্ত ফিক করে হেসে ফেললো।
আমি নীরুর দিকে তাকালাম।
নীরু জমা হয়েগেলি মাথায় রাখিস। বটা বললো।
অনি বললো কেন।
আমি কিছু জানি না।
আজ একটা ঝামেলা হয়ে গেল বুঝলি অনি। কনিষ্ক বললো।
কাজের কথাটা বল। নীরু বললো।
আমি কনিষ্কর দিকে তাকালাম।
সুপারের সঙ্গে একচোট আজ হয়ে গেল।
কেন।
সকালে তিনটে একসিরা কাটার ছিল। যা কেচাল বাধল। হাসপাতালে যেতে দেরি হয়ে গেল। একটা করতে পেরেছি। আর দুটো হয় নি।
পেসেন্ট কিছু বলছিল ?
না।
তাহলে।
আমাদের এখনকার সার্জারীর হেড ডিপটা হারামী। বক বক করছিল।
তারপর।
দিলাম ঝাড়। দেখি সুপারকে রিপোর্ট করেছে। মেজাজ গরম ছিল। শালা পার্টি দেখাচ্ছিল।
দাঁড়া কালকেই করকে দিচ্ছি। ওর সাতদিনের ঘুমের বারটা বাজিয়ে দেব।
তোকে করতে হবে না। কনিষ্ক হাই তুলে এসেছে। বটা বললো।
মানে!
ন্যানো, সব বোঝ এটা বোঝ না। নীরু বললো।
মিত্রা হাসছে।
তোর বউ বুঝেছে তুই বুঝিস নি।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম।
ওরা সবাই হাসে।
ওর মাথায় এখন ওটা নেই। ওই যে কনিষ্ককে সুপার বলেছে। সেদিকে কনসেন্ট করেছে।
মিত্রা বললো।
তোকে কিছু করতে হবে না। এমনি তোর নাম শুনে প্যান্ট হলুদ হয়ে গেছে।
আমি তাকিয়ে আছি।
নীরু আমার চোখের সামনে দুবার হাত নাড়াল।
ফিরে আয় বাবা মর্তে ফিরে আয়। কনিষ্কর কিছু হয় নি।
সবাই হাসছে।
বুঝলে বড়মা তোমার অনিকে বেশামাল করতে আমাদের বেশি সময় লাগবে না। এক ডোজ ব্যাশ অনি বেশামাল। পুরো ওপরে চলে গেছে। কিছুতেই মর্তে নামাতে পারছিনা।
তারপর কি হলো।
তোর পায়ে ধরছি, কিছু হয়নি। সব ঠিক হয়ে গেছে, সুপার সাহেব ঘেমে চান করে গেছে।
কাজ মিটে গেছে।
হ্যাঁ বাবা কাজ মিটে গেছে।
যাক বাবার এবার মর্তে আগমন হলো বুঝলি কনিষ্ক। নীরু চেঁচিয়ে উঠলো।
দেখলাম বসার ঘর থেকে ইসি বেরিয়ে এলো ওরা সবাই হাসাহাসি করছে। মিত্রা এগিয়ে গেছে। ও মনে হয় সবাইকে বললো। বড়মা আমার দিকে কেমনভাবে যেন তাকিয়ে আছে। আমি গিয়ে সোফায় বসলাম। আমার একপাশে কনিষ্ক, আর একপাশে নীরু বসলো।
বড়মা খিদে পেয়েছে। নীরু চেঁচিয়ে উঠলো।
আমি পকেট থেকে মোবাইলটা বার করে ডায়াল করলাম।
কিরে কাকে ফোন করছিস। আমি জানি তোর ঘোর এখনো কাটে নি। কনিষ্ক বললো।
কেন তুই বলতে গেলি। নীরু বললো।
যা পারিস কর আর ভালো লাগছে না। কনিষ্ক বললো।
অর্ক।
হ্যাঁ দাদা।
তুই কয়েকদিন আগে একটা আর্টিকেল লিখে আমাকে দেখিয়েছিলি মনে আছে।
মেডিকেল কলেজের ওপর।
হ্যাঁ।
ছবি করেছিস।
না।
সায়ন্তনকে পাঠিয়ে দে। কি ভাবে ছবি করবে বলে দে।
ঠিক আছে।
আর শোন। ছবি গুলো প্রিন্ট করে, লেখাটা রাতে দাদার হাতে পাঠাবি। যেন দেখতে না পায়।
আচ্ছা।
আজকে অশ্বিনীনগরের লেখাটা নামিয়েছিস।
হ্যাঁ।
দাদাকে দিয়েছিস।
দাদা বললো তোমার সঙ্গে কথা বলে ফাইন্যাল করবে।
দাদাকে বল ওটা ছেড়ে দিতে। কালকে যেন কাগজে বেরোয়।
আচ্ছা।
ফোনটা পকেটে রাখলাম।
হয়েছে এবার শান্তি। মাথা থেকে কেলাটা নামলো। নীরু খেঁকিয়ে উঠলো।
আমি হাসলাম।
তোকে কিছু করতে হবে না। কতবার বলছি সুপার তোর নাম শোনার পর থেকে পঞ্চাশবার কনিষ্ককে ফোন করেছে। ক্ষমা চেয়ে নিয়েছে। কেন হুলোটা দিবি।
অন্যায় করলে শাস্তি পেতে হবে।
মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা মেরে লাভ কি।
বলবে কেন।
বেশ করেছে বলবে, তোর কি।
বললেই হলো।
মিত্রা কাছে এসে দাঁড়াল।
খিদে লেগেছে। তোর লাগে নি।
চল।
উঠে দাঁড়ালাম।
বড়মা, দামিনীমাসি ইসলামভাই কাউকে দেখতে পাচ্ছিনা।
সব কি তোর জন্য এখানে খুঁটি গেড়ে বসে থাকবে। তাদের কি কোন কাজ-কম্ম নেই।
ও আচ্ছা।
আবার কি হলো।
না কিছু নয়।
তোর কাজ করতে গেছে। অনুপ বাড়ি দেখাতে নিয়ে গেছে।
দাও খেতে দাও।
টিনা, অদিতিরা কোথায়।

অফিসে গেছে। মিত্রা বললো।
 
কোথায় বসবো।
টেবিলে।
সবার এক সঙ্গে হবে না ?
তোরা খেয়ে নে তারপর খাব। বড়মা বললো।
নীচে বসলে হতো না।
ও কবিতা, মা নীচে জায়গা কর।
কবিতার দিকে তাকালাম। হাসছে।
ঘুমিয়ে শরীর ভালো হয়ে গেছে। মাথার পোকা গুলো আবার কিলবিল করতে শুরু করেছে।
হাসলাম।
মিত্রার দিকে তাকালাম।
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কোমড় দোলাচ্ছিস কেন, হাতে হাতে জায়গা কর না।
ওকে ধমকাচ্ছিস কেন। আবার কোথাও বেরবার মতলব করছিস নাকি। আজ বেরবার নাম করলেই ঠ্যাং ভাঙবো। ছোটমা বললো।
আমার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। আমি পকেট থেকে ফোনটা বার করলাম।
মিত্রা ওর কাছ থেকে ফোনটা নিয়ে নে। বড়মা চেঁচালো।
মিত্রা এগিয়ে এলো।
উঃ দাঁড়া না। বড়মা বললো অমনি নাচতে নাচতে চলে এলি।
কাকে ফোন করছিস।
কাজ আছে।
টিনা।
হ্যাঁ।
কোথায় তুমি।
অফিসে।
সে তো বুঝলাম।
তাহলে।
মিত্রার ঘরে না অন্য কোথাও।
সনাতন বাবুর কাছ থেকে ফিরছি।
হাওয়া কি রকম।
গিয়ে বলবো।
তুমি একটা কাজ করতে পারবে।
বলো।
একবার সুজিতদাকে ফলো আপ করবে।
সুজিতদা সকালে চেক পাঠিয়ে দিয়েছে। একটা চিঠি তোমাকে দিয়েছে। আমি এবার বেরচ্ছি।
আমরা খেতে বসছি, চলে এসো।
ঠিক আছে।
নির্মাল্য, দেবা কোথায়।
কিছুক্ষণ আগে ঢুকেছে। অদিতির ঘরে।
ওদেরকেও সঙ্গে করে নিয়ে চলে এসো।
আচ্ছা।
ফোনটা কেটে পকেটে রাখলাম।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
কিরে সুজিতদা চেক পাঠিয়েছে।
মাথা দোলালাম।
কি ম্যাডাম আবার আমদানি ? নীরু বললো।
মিত্রা মাথা দোলাল।
সেই মডেল কন্যা।
মিত্রা হেসে ফেললো।
বটা তুই অনিকে সামলে দিস, আমি ঝিমিকে….।
নীরুর কথায় বটা কট কট করে তাকাচ্ছে। ইসি হাসছে।
এই নীরু এখন আর ফক্করি করতে হবে না। জায়গা হয়ে গেছে। ছোটমা বললো।
আমি গিয়ে একটা ধারে বসলাম।
তুই ওখানে বসবি না। ছোটমা বললো।
তাহলে।
মাঝখানে।
কেন।
বোস তারপর বুঝতে পারবি।
আচ্ছা।
ইসি হাসছে।
আমি উঠে পড়লাম।
ইসি জ্যেঠিমনি কোথায় ?
ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছি।
খেয়েছে।
হ্যাঁ।
পিকু।
পিকু তার দিদার কাছে শুয়ে ঘুমচ্ছে, বরুণদা তোর অফিসে গেছে। কাজ আছে।
আমি চুপ করে থাকলাম।
আর কোন খবর নেওয়ার আছে।
না।
তুই কি এখনো মর্তে ফিরিস নি। নীরু চেঁচিয়ে উঠলো।
তখন থেকে খালি মর্তে মর্তে করে চেঁচাচ্ছিস, আমি কখন স্বর্গে গেলাম।
এখনো স্বর্গে বিচরণ করছিস।
চুপ করে থাকলাম।
ফোনটা বেজে উঠলো। পকেট থেকে বার করে দেখলাম, দাদার ফোন।
বলো।
খেয়েছিস।
না খেতে বসছি।
থাক, তাহলে পরে বলবো।
না বলো।
কে ফোন করেছে রে মিত্রা। বড়মা রান্নাঘর থেকে চেঁচিয়ে উঠলো।
শুনতে পাচ্ছিনা।
কিরে তোর বড়মা চেঁচাচ্ছে।
ও তো সব সময় চেঁচায়।
দাদা ফোন করেছে। মিত্রা চেঁচালো।
আমাকে একটু দিবি কথা বলবো। বড়মা বললো।
শুনতে পাচ্ছ।
শুনছি।
বলো।
অর্ক এসেছিল।
ওই রিপোর্টটা করে দাও। দরকার আছে। খালি রাজনাথের ভাইপো এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে, সেটা উল্লেখ করে দেবে। পারলে সিংজীর সঙ্গে কথা বলে নেবে।
সিং একটা ফাইল পাঠিয়ে দিয়েছে।
ডিটেলস আছে।
আছে।
তাহলে ছেড়ে দাও।
অনুপ বারন করছিল।
কিসের জন্য।
তুই একবার কথা বল।
তুমি কথা বলে নাও।
না তুই বল।
ঠিক আছে কথা বলে নিচ্ছি।
আমি ফোনটা মিত্রার হাতে দিলাম। মিত্রা রান্নাঘরের সামনে গেল।
বড়মা কথা বলছে। আজ কোন রাগা রাগি নয়। বেশ হেসে হেসে কথা বলছে। বুঝলাম খুব খুশ।
কিরে তুই এখনো ঠিক হোস নি। ইসি বললো।
কেন, আমি ঠিক আছি।
ওই যে ডাক্তার বলছে।
কে।
নীরু।
ওটা একটা ছাগল।
হ্যাঁরে আমি ছাগল, তুই কি। নীরু চেঁচালো।
আমি হাসছি।
মিত্রা আমার হাতে ফোনটা দিল।
তুই ওকে এখন জিজ্ঞাসা করে ঠিক উত্তর পাবি না।
ইসি হাসছে।
তোর সঙ্গে কথা বলছে ঠিক কিন্তু মাথাটা অন্য জায়গায়।
ফোনটা নিয়ে ডায়াল করলাম।
আবার কাকে ফোন করছিস। মিত্রা বললো।
আবার বিরক্ত করে।
আমি ঘর থেকে বারান্দায় বেরিয়ে এলাম।
তুমি কোথায়।
তোর বাড়ির সামনে। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে পৌঁছে যাব। কেন ?
একটু দরকার ছিল।
অপেক্ষা কর পৌঁছে যাচ্ছি।
আচ্ছা।
একটু থাম না, ভালো লাগছে না।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম।
সব সময় পেছন পেছন ঘুরলে চলবে। ডাক্তারদাদা কোথায় রে ?
কাজে গেছে।
খাবে না।
এসে খাবে।
কখন আসবে।
খবর চলে গেছে, আসছে।
তুই এখন যা। পেছন পেছন ঘুর ঘুর করিস না।
যাব না কিছু করতে পারবি।
মহা মুস্কিল।
ম্যাডাম চলে আসুন, মর্তে আসতে সময় লাগবে। ঘুঁটি সাজাচ্ছে। নীরু ভেতর থেকে চেঁচাল।
দেখছিস নীরু কি বলছে।
বলুক। কাজ ও করবে না। আমাকে করতে হবে।
এখন খেয়ে নে।
দিক যাচ্ছি।
তোকে একটা কথা বলবো।
বুঝেছি, তুই আমাকে বিরক্ত করবি। চল।
না, এখানে দাঁড়িয়ে।
বল।
মিলির কেশটা কি করলি।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম।
কিরে চোখের মনিদুটো স্থির হয়ে গেল। উত্তর দে।
তুই জানলি কি করে ?
তুই ঘুমলে তোকে সব সময় পাহাড়া দিতে হবে, তাহলে অনেক কিছু জানা যাবে।
হাসলাম। তাই তখন বলছিলি মিলিকে নিয়ে এবার পরবো।
হ্যাঁ। কাকে দায়িত্ব দিয়েছিস।
কেন।
গত তিন দিন মিলিকে তিরিশবার ফোন করেছে।
তাই! মিলিকে ডাক।
এখন না পরে।
ডাক না।
কেন যে তোকে বলতে গেলাম।

মিত্রা ভেতরে গেল।
 
কি ম্যাডাম কেশ খেয়েছেন। কনিষ্ক চেঁচালো।
মিত্রা হাসলো।
বুঝলাম মিলি বড়মার ঘরে আছে। মিত্রা সেই দিকেই গেল।
আমি রতনকে একটা ফোন করলাম।
বলো অনিদা।
কোথায় আছিস।
কেন।
ব্যস্ত আছিস।
না।
তোকে একটা কাজ দিয়েছিলাম। মনে আছে।
কোনটা বলো।
ওই যে সল্টলেকের এ্যাড্রেস।
হ্যাঁ হ্যাঁ।
রেজাল্ট কি।
তুমি যে ভাবে বলেছো, সেই ভাবেই বলে এসেছি।
তাতে কি বললো।
ব্যাটা আইন দেখাচ্ছিল।
তারপর।
প্রথমে ভেবেছিল দিদি পাঠিয়েছে, আবিদ ব্যাটা ঘউড়া। তোমার নামটা ফট করে বলে দিয়েছে। ব্যাস যাবে কোথায়।
তারপর।
ত ত করছিল। আমি বললাম দাদা পাঠিয়েছে ভাই তুই তাড়াতাড়ি কাজটা সাল্টে দে। না হলে হিতে বিপরীত হয়ে যাবে।
তুই কখন আসবি।
রাতে যাব, তোমার সঙ্গে একটু দরকার আছে।
ঠিক আছে আয়।
পেছন ফিরে দেখলাম, মিলি, ইসি, মিত্রা, ছোটমা। আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে।
কাকে ফোন করলি। মিত্রা বললো।
তোর জেনে লাভ।
বড়মা বলেছে এখন কোন গন্ডগোল করবি না।
গন্ডগোল ছাড়া বাঁচতে পারবি।
বুঝতে পারলাম আমার গলার স্বরটা একটু কঠিন হয়ে গেছে। ওরা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
মিলি ওই ভদ্রলোকের ফোন নম্বরটা দাও।
এখন থাক না অনিদা।
যা বলছি করো।
দেখলাম কনিষ্ক নীরু উঠে এলো।
মিলি ফোন নম্বরটা দিল।
কি যেন নাম।
অনীশ।
আমি ডায়াল করলাম।
ইচ্ছে করেই ভয়েজ অন করলাম। সবাই শুনুক।
রিং হচ্ছে।
হ্যালো।
কে বলছেন।
কাকে চান আপনি। ঝাঁজিয়ে উঠলো ভদ্রলোক।
আপনি কি অনীশ বাবু।
হ্যাঁ।
আমি অনি ব্যানার্জী। আলাদা করে আমার পরিচয় দেওয়ার দরকার আছে।
না স্যার, না স্যার।
ভদ্রলোকের গলা মুহূর্তের মধ্যে আমূল পরিবর্তন হয়ে গেল। মিলি হেসে ফেললো।
আমার লোক আপনার কাছে গেছিল।
আমি স্যার বার বার ওকে ফোন করছি, ফোন ধরছেনা।
ও এখন আমার সামনে দাঁড়িয়ে। আমার সঙ্গে ওর কি রিলেসন নতুন করে বলতে হবে।
না স্যার, আমি সব খোঁজ খবর নিয়ে নিয়েছি।
কি করতে চাইছেন।
ও যা বলবে আমি তাই করে দেব।
এতদিন করেন নি কেন।
আপনি যদি সময় দেন তাহলে আপনার কাছে গিয়ে বলতাম।
আপনি তো অনেক দিন আগেই বিয়ে করে ফেলেছেন।
না স্যার আপনাকে মিথ্যে কথা বলেছে।
প্রমাণ চান।
চুপচাপ।
কি হলো চুপ করে রইলেন কেন।
না স্যার একটা ভুল হয়ে গেছে।
তাহলে দুবছর ধরে ল্যাজে খেলাচ্ছিলেন কেন। ফ্ল্যাটটা লিখিয়ে নিতে চান।
না স্যার।
মিলি ছোটমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো।
আপনি কোথায় কাজ করেন, কি করেন না করেন, সমস্ত খবর আমার কাছে আছে।
ওই ছেলেটি আমাকে সব বলেছে।
কালকে বারোটার মধ্যে কাজটা শেষ করে ফেলবেন। ওর সঙ্গে আমার স্ত্রী যাবে।
আচ্ছা স্যার।
সব ব্যবস্থা ও করে রাখবে। আপনি খালি এসে কষ্ট করে সইটা করে দেবেন। লোক পাঠাতে হবে।
না স্যার আমি চলে যেতে পারবো।
মিলি আপনাকে রাতে ডিটেলসে বলে দেবে। দ্বিতীয়বার ওকে বিরক্ত করবেন না।
আচ্ছা স্যার।
এটা আমার ফোন নম্বর সেভ করে রাখুন পরে ফোন করে আসবেন। আপনার কথা শুনবো।
আচ্ছা স্যার।
ফোনটা কেটে রেকর্ডিংটা সেভ করলাম।
দেখলাম বড়মা গেটের সামনে দাঁড়িয়ে। নীরু ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেছে। কনিষ্ক স্থির দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বাইরের গেটে অনুপদার গাড়ি এসে থামল।
দেখলাম ইসলামভাই, ডাক্তারদা, দামিনী মাসি নামল। আমি ভেতরে এলাম। বড়মা গেট ছেড়ে দাঁড়াল। কোন কথা বললাম না। থম থমে পরিবেশ। আমি সোফায় এসে বসলাম।
বড়মা সামনে এসে দাঁড়াল।
এবার খেতে বসবি।
দাও। সবাই এসেছে ?
বসে পর সবাই এসে পরবে।
বড়মা রান্না ঘরে চলে গেল। দেখলাম বারান্দায় দাঁড়িয়ে অনুপদা, ছোটমা, ইসলামভাই, দামিনী মাসি কথা বলছে। পাশে দাঁড়িয়ে ইসি, মিত্রা, মিলি। বুঝলাম এতক্ষণ যা হলো তার রিপোর্ট সার্ভ করা চলছে।
আমি উঠে গিয়ে টেবিলের ওপর রাখা জলের জাগটা থেকে ঢক ঢক করে কিছুটা জল খেলাম।
তোর কাজ করে দিলাম।
অনুপদা ঘরে ঢুকলো।
আমি অনুপদার দিকে তাকিয়ে হাসলাম।
তিনজনকেই দেখিয়েছি। পছন্দ।
একে একে সবাই ভেতরে এলো।
চলো খেতে বসে কথা হবে।
কিগো বান্ধবী আমার খাওয়া জুটবে। ডাক্তারদাদা চেঁচিয়ে উঠলো।
বুড়ো ছেলের ঢং দেখ।
বড়মার কথায় সবাই হাসছে, আমিও হেসে ফেললাম।
তোমার স্ট্রং ম্যানের মেজাজ ঠিক নেই। মিত্রা বললো।
তোরা খালি বিরক্ত করবি, তাহলে মেজাজ ঠিক থাকে কি করে।
আর সাউকিরি করতে হবে না।
দামিনী মাসি রান্নাঘরের কাছে গেল। ইসলামভাই এসে আমার পাশে বসলো।
দামিনী সব নিয়ে গিয়ে মাঝখানে জড়ো করো, তারপর পাতে পাতে দিয়ে দাও।
নাও হাত ধুয়ে নাও খেতে বসে যাই। ইসলামভাই-এর দিকে তাকিয়ে বললাম।
অনুপদার দিকে তাকালাম।
দাদাকে সকাল বেলা কিছু বলেছো।
কি ব্যাপারে বলতো।
কালকের ব্যাপারে।
দাদাকে বলে দে ছাপতে। সকালের পজিসন আর এখনকার পজিসন সেপারেট।
দাদাকে তুমি বলে দাও।
এই জন্য তুই ফিউজ ?
আমি ফিউজ কে বললো।
ওই তো ছোটবৌদি বললো।
ওরা মনগড়া কথা বলে।
আমরা সব মনগড়া কথা বলি। যাবো দেখবি। ছোটমা চেঁচিয়ে উঠলো।
ও ছোট আবার কি হলো।
বলবো দিদিকে।
বলো।
এবার খেতে বসে উদ্ধার করো।
আমি উঠে দাঁড়ালাম।
কনিষ্করা বাইরে দাঁড়িয়ে, ভেতরে ডাকলাম।
আমি গিয়ে মাঝখানে বসলাম। কনিষ্করা আমার অপরজিট সাইডে বসলো।
ছোটবৌদি আমি যদি অনির পাশে বসি অসুবিধে আছে। অনুপদা বললো।
অসুবিধে আছে। তুমি অনির বাঁদিক থেকে দুটো আর ডানিদেক থেকে দুটো ছেড়ে বসবে।
ওরে সব্বনাশ এগুলো বুক।
হ্যাঁ।
তাই হোক।
দামিনী মাসি হাসছে।
যে যার জায়গায় বসলো, খাওয়া শুরু হলো। ভাসিলা ভেড়ির গলদা চিংড়ির মালাইকারি এলো।
অনি কে আনল রে। কনিষ্ক বললো।
মালতী নিয়ে এসেছে।
নীরু চেঁচিয়ে উঠলো।
বড়মা চাইলে পাওয়া যাবে।
না। গোনা গুনতি।
তাহলে আমাকে দিও না।
বড়মা নীরুর দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো।
সবাই নীরুর দিকে তাকিয়ে। ও যে এই কথাটা বলতে পারে কেউ বিশ্বাস করতে পারছে না।
তাকিয়ে লাভ নেই। তুমি একটা দেবে। সেটাও আমার ভাগ্যে জুটবে না। আমারটা রেখে দাও। যাওয়ার সময় খাব।
বড়মা ওরটা আমার পাতে দাও। বটা বললো।
নীরু সটাং উঠে দাঁড়াল।
কি হলো! খেতে খেতে উঠে দাঁড়ালি কেনো ? বড়মা বললো।
ওর শরীর খারাপ লাগছে, আর খাবে না। কনিষ্ক বললো।
বড়মা আমি যদি পাতাটা নিয়ে তোমার কাছে যাই অসুবিধে আছে।
বড়মা হাসছে।
আয়।
নে আর একটা নিয়ে চব্বচোষ্য খা। নীরু বটার দিকে তাকিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বললো।
আসন ছাড়াই নীরু বড়মার পাতের কাছে এসে থেবড়ে বসে পরলো।
কম বেশি হাঁসা হাঁসি চলছে। চেঁচা মিচি হচ্ছেই। হঠাৎ বড়মার ঘরের গেট খুলে পিকু দাঁড়াল।
আংকেল তুমি নেমন্তন্ন খাচ্ছ।
ঘর শুদ্ধ সবাই হাসছে।
পিকুর কোন ভ্রুক্ষেপ নেই, সোজা চলে এসে আমার পাত ডিঙিয়ে, মিত্রাকে সরিয়ে মাঝখানে বসে পরলো।
নীরু পিকুর দিকে তাকিয়ে আছে।

ভাত খাবি।
 
না।
তাহলে কি খাবি।
লব স্টার।
আবার হাসি।
নীরু পিকুর দিক তাকিয়ে। বাবা আমার যখের ধন, অনেক কষ্টে আগলে রেখেছি, তুই তোর মেসোরটা নে।
মেসো না অংকেল।
জয় হোক বাবা, তোর আংকেলেরটা নিয়ে তুই ঝামেলা কর।
আমাদের চেঁচামিচিতে জ্যেঠিমনির ঘুম ভেঙেগেছে। গেটের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। পরিবেশ দেখে হেসে ফেললো। আমি একটু চিংড়িমাছ ভেঙে ওর মুখে দিলাম।
মুখে দিয়েই ফেলে দিল। চেঁচিয়ে উঠলো দিদাই।
দামিনী মাসি, বড়মা, ছোটমা তিনজনেই বলে উঠলো, বলো।
রসো নেই।
পিকু উঃ আঃ করছে। ঝাল লেগেছে।
জানিস পিকু তোর আংকেলের থেকেও এটা বেশি ঝাল। নীরু পিকুর দিকে তাকিয়ে।
দামিনী মাসি উঠতে যাচ্ছিল। কবিতা উঠে গিয়ে মিষ্টার হাঁড়িটা নিয়ে এলো।
বড়মা একটা তুলে আমার পাতে দিল। এবার আর পিকুকে খাইয়ে দিতে হলো না। পিকু নিজে নিয়ে খেতে শুরু করলো। আমার কোলে উঠে বসেছে।
বুঝলে বড়মা ওপার বাংলা থেকে এপার বাংলায় আসাতে খাওয়াটা ভালই হলো।
কনিষ্ক বটা অনিকেত একবার দেখে নিল, ব্যাপারটা এরকম খেয়ে নে, তারপর তোর বাংলার হিসাব দেব।
গেটের মুখে টিনা, নির্মাল্য, অদিতি, দেবা এসে দাঁড়াল। বড়মা বললো, হাত ধুয়ে বসে পর। দেরি করিস না।
কবিতা উঠে দাঁড়াল।
তোমায় উঠতে হবে না আমরা নিয়ে নিচ্ছি। টিনা বললো।
যে যার মতো হাত মুখে ধুয়ে বসে পরলো।
টিনা তুমি চিংড়ি খাবে ? নীরু বললো।
কেন বলো।
বটা বলছিল, আর একটা হলে ভালো হয়, তা বড়মা বললো গোনাগুনতি।
তোরটা দেনা। দেবা বললো।
ওটা পিকুর জন্য।
আবার হাসি। টিনা মাটিতে থেবড়ে বসে পরেছে।
খাওয়া শেষ হলো।
তোমার সঙ্গে কথা বলা হলো না। একটু রেস্ট নাও আসছি। অনুপদাকে বললাম।
আমি মুখ ধুয়ে ওপরে চলে এলাম। নিজের ঘরে ঢুকলাম। চিকনাদের কাউকে দেখতে পাচ্ছিনা, ওরা মনে হয় চলে গেছে। মিত্রার কাছ থেক শেষ খবরটা নিতে হবে। অনিমেষদা বলছিল বিকেল বেলা আসবে। সুরো এখনো এলো না। এই ঘরে আমার সবচেয়ে পছন্দের জায়গায় এসে দাঁড়ালাম। একটা সিগারেট ধরালাম। বাগানটা অনেক পরিষ্কার হয়ে গেছে।
ইসলামভাই-এর টিমটা বেশ ভালো। কালকে কাজ হয়েছে, আর আজ সকালের মধ্যে বাগান নব্বইভাগ পরিষ্কার।
সকালে নিশ্চই আমি ঘুমবার পর ওরা মিটিং করেছে। মিত্রাটা একটা ঢেঁড়স ওই সময় ভোঁস ভোঁস করে ঘুমচ্ছিল। দেখি ইসির পেটে একটা কিল মেরে কিছু পাওয়া যায় কিনা। ও অন্যদিক থেকে বুদ্ধিমতী কিন্তু এই দিক থেকে কতটা সরেস একবার ঘাঁটা ঘাঁটি করতে হবে।
অনিমেষদা বিধানদা আসবে। তারমানে এবার অনেক আটঘাট বেঁধে নামবে। হয়তো আমার অনেক ঘুঁটিকে ওরা অফ করে দেবে। আবার নতুন করে তৈরি করতে হবে।
চিকনা গেল কোথায় সকাল থেকে দেখতে পাচ্ছি না। ফোনটা পকেট থেকে বার করলাম। ডায়াল করলাম। চিকনার গলা।
কিরে কোথায় ?
ক্ষমা কর। তোর সঙ্গে আসার সময় দেখা করে আসতে পারি নি।
এখন কোথায়।
আদাশিমলার বিলে।
একা না কেউ আছে।
পাঁচুকে ফোন করেছিলাম, পাঁচু নিতে এসেছে।
অনাদিরা কখন গেছে।
ওরা সকালে চলে এসেছে। কাকাকে কিছু জানাই নি। বলেছি তুই একটা কাজে গেছিস। নীপা জেনেছে। তুই কিছু ভাবিস না, আমরা সবাই তৈরি হয়ে গেছি।
তৈরি হলেই ভালো। দেখছিস তো আমার চাপ।
জানি গুরু, তোমাকে এদিকে মাথা গলাতে হবে না। তুমি দেখো আমরা ঠিক তৈরি করে নেব।
দেখি যদি পারি এই সপ্তাহে যাব।
তুই আগে ওই দিকটা সামলা। অনিমেষদা, বিধানদা সকালে প্রবীরদাকে হেবি ঝেড়েছে।
হ্যাঁরে মিলি কেশটা কি।
কেন।
তুই ভুল ভাল বকছিলি। ভাবলাম আবার পীরবাবা ভড় করল কিনা।
হাসলাম।
তোকে নিয়ে আমাদের টেনসন।
আমি ঠিক আছি। প্রবীরদাকে কি বললো।
আমাকে ফুটিয়ে দিল। দাদা, মল্লিকদা, ডাক্তারদাদা ছিল। তবে সব তোর ফরে।
ঠিক আছে। রাতে পারলে অনাদিকে একবার ফোন করতে বলিস। আর শোন, কাকাকে এই সপ্তাহে একবার ডাক্তার দেখাবার ব্যবস্থা করিস।
আচ্ছা।
ফোনটা পকেটে রাখলাম। আস্তে করে পিঠে একটা টোকা পরলো। ফিরে তাকালাম। মিত্রা পিটি পিটি হাসছে। গেটের মুখে ওরা সবাই। মিত্রা আমার দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে। চোখের মনি দুটো খুশিতে চক চকে।
কি হলো। তোমরা ভেতরে এসো।
চিকনাকে ফোন করলি।
হ্যাঁ।
তোর কথা বলার ধরণ দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম।
তোরা এলি কনিষ্করা এলো না।
অনুপদার সঙ্গে কথা বলছে।
ও।
ও করিস না। তোর জন্য সুপার বেচারা ঝাড় খাচ্ছে।
ওরা ঠান্ডা ঘরের মধ্যে বসে এ্যাডমিনিস্ট্রেসন চালায়, নিচের তলায় সুবিধা অসুবিধা বোঝে না।
তুই বুঝিস।
চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিস। মালতী বাড়ি গেছে ?
হ্যাঁ। অনুপদা বলেছে কনো সমস্যা হলে খবর দিতে।
নীরুকে দেখলি, মনার বৌ-এর জন্য ওষুধ পাঠাল, ওটা কি ওর কাজ, আমার মতো ও একটা পাগল। স্যাম্পেল কপি পাঠাল, হয়তো নিজের পয়সায় কিছু ওষুধ কিনে দিয়েছে। অন্য ডাক্তার হলে ওই স্যাম্পেল কপি বিক্রি করে ওই পয়সায় পিটার ক্যাটে বৌকে নিয়ে ডিনার করতো।
বৌ-এর কাছে আদর্শ স্বামী সাজতো। ওই মেয়েটা যদি ঠিক মতো পথ্য না পায় তাহলে একটা রিকেট রুগীর জন্ম দেবে। হাসপাতালে যা দেখতে পাবি একটা বেডে দুটো মা তার বাচ্চা নিয়ে শুয়ে আছে। এ মুখো ও মুখো হয়ে।
রোগ আছে। ওষুধ নেই। যদিওবা ওষুধ আছে, যা পাওয়ার লেখা আছে, তা নেই। তার হাফ পাওয়ার আছে। একটা ডাক্তার কি নিয়ে লড়বে। ঢাল নেই তরোয়াল নেই নিধিরাম সর্দার।
অর্ক একটা লেখা লিখেছে। উইথ ডকুমেন্টস। স্টোরিটা করতে তোর হাউসের দশহাজার টাকা খরচ করেছি। যদি না ছাপি তাহলে যে ছেলেটা কষ্ট করে স্টোরিটা করলো তার কষ্টটা মাঠে মারা যাবে। যদি ছাপি, সুপারের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিসন বসবে। প্রশাসনে বিরাট আলোড়ন পরে যাবে। বল কোনটা ঠিক।
মিত্রার চোখ ছল ছল করে উঠলো। আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
তুই বলবি বুবুন তুই এসব ছেড়ে দে। আর ভালো লাগছে না। তোর কথা মেনে নিয়ে যদি তাই করি, তাহলে দেখবি, টোটাল ব্যবস্থাটা একদিন ভেঙে পরবে। তুই বলবি তুই কি সবার ঠেকা নিয়ে বসে আছিস। না আমি আমার কাজ করছি। তবু লেখালিখি করাতে ওরা কিছুটা ধাক্কা পায় নড়ে চড়ে বসে সামান্য কাজ হয়। না হলে সেই গড্ডালিকা প্রবাহ।
তা বলে আমি ভগবান নই। নিজের কেউ নেই। তাই প্রচুর মানুষের সঙ্গে মিশি। বন্ধুত্ব করি। কিছু টেঁকে কিছু টেঁকে না। আমি আমার কাজ করে চলি। সেই ঘুরে ফিরে এক কথা পাগলের গোবরানন্দ।
মিত্রা চোখে জল চিক চিক অবস্থায় হেসে ফেললো।
এসো টিনা। সবসময় অনিদার কথায় মন খারাপ করবে না। অনিদা যখন কিছু সহ্য করতে পারে না, তখন মন খারাপ করে। তোমরা ঠিক থেকো।
টিনা মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে।
কিরে দেবা দাঁড়িয়ে রইলি কেন। বোস।
তোর কথা শুনছিলাম। আর ভাবছিলাম তোর কাছে না এলে নিজের কতো ক্ষতি করতাম। সবচেয়ে বড় ব্যাপার তোকে চেনা মুস্কিল হতো। এখন বার বার মনে হচ্ছে, তোকে কিছুদিন আগে পেলে খুব ভালো হতো। এতদিন খুব মিস করেছি।
জানিস দেবা তোর মতো আমিও এই দুদিনে অনিকে দেখে অবাক হচ্ছি। আর ছুটকিকে ভীষণ হিংসে করছি। কেন ও স্কটিশে পড়লো। ওতো প্রেসিডেন্সিতে চান্স পেয়েছিল।
ইসি কথাটা বলে হেসে ফেললো।
দেবা একটা কিনলে একটা ফাউ, কি বলিস। আজকাল এরকমই অফার চলছে।
শয়তান, মিত্রা কোমড়ে চিমটি কাটল।
ইসি তেড়ে এলো।
দেখাচ্ছি দাঁড়া।
ইসি আমি কিন্তু চোখ বন্ধ করে ভেবে নেব, তুই মিত্রা, বুঝতে পারছিস।
মিলিরা হাসে।
অদিতি চেঁচিয়ে উঠলো যাক বাবা মেঘ কাটল।
টিনা সুজিতদা কি দিয়েছে দাও।
মিত্রাদির কাছে।
কিরে আমার পার্সোনাল চিঠি তোর কাছে কেন ?
তোর এখন আর কিছু পার্সোনাল নেই, সবাই দেখেছে।
তার মানে তোদের সবার দেখা হয়ে গেছে!
বাড়ি শুদ্ধ সবার। কি খাওয়াবি বল।
কি লেখা আছে দেখলামই না। খাওয়াব কি।
টিনা, মিলি, অদিতি মুচকি মুচকি হাসছে।
কি ম্যাডামরা মুচকি মুচকি হাসছেন, কিরে দেবা।
মিত্রা বলবে, আমরা দর্শক।
তুই বল আগে কি খাওয়াবি।
আগে দেখি কি লেখা আছে তারপর খাওয়াবার প্রশ্ন।
তোকে দেখতে হবে না। ওটা আমাদের জন্য। ঠিক আছে তোকে খাওয়াতে হবে না। ভালো পাহাড়ে কবে নিয়ে যাবি।
আরি বাবা এতো কিডন্যাপ কান্ড।
গিভ এন্ড টেক পলিসি।
দরকার নেই আমি সুজিতদাকে ফোন করছি।
দেখেছিস দিদিভাই দেখেছিস কি তেঁদড়।
নীরু হন্ত দন্ত হয়ে ঘরে ঢুকলো। আমার সামনে এসে বললো, ম্যাডাম একটু সরুন তো। ওকে কোলে নিই।
কেন আমি কি তোর বউ।
কনিষ্করা গেটের মুখে দাঁড়িয়ে হাসছে।
নীরুর কি হলো রে। আমায় কোলে নেবে বলছে।
সুখবর আছে। কনিষ্ক বললো।
হবে নাকি।
দেখলি বটা ইমোসানটাকে চটকে একেবারে কাদা করে দিল।
আমি নীরুকে বুকে জড়িয়ে ধরলাম। কি হয়েছে বল।
আর পরের নার্সিংহোমে কাজ করতে ইচ্ছে করছে না। এবার নিজেদের নার্সিংহোম।
হাসলাম। হাসপাতাল ছাড়া চলবে না।
পাগল তুই, অনুপদা সুপারকে ধরে আচ্ছা করে কর্কে দিয়েছে।
অনুপদাকে বলতে গেলি কেন।
আমি বলবো কি ছোটমা গ্যাস খাওয়াল, বড়মার গালাগালি। সাং সাং কাজ। স্যারকে অফার দিয়েছে মেডিক্যাল বোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য।

ডাক্তারদাদা কি বললো।
 
সাতটা নার্সিংহোম নিয়ে হিমসিম খাচ্ছি, আর দায়িত্ব নিতে পারব না।
তোরা চারজন না সবাই।
আপাতত চারজন, বাকি কনিষ্ককে দায়িত্ব দিয়েছে।
তোর বউ।
লাইনে আছে। ফোন করে বলেছি ইঁট পাতো।
সবাই নীরুর কথা শুনে হাসছে।
শ্যাম নিচে এসেছে একটু কথা বলে নে। ওরা আবার রাতের ট্রেনে ফিরবে। কনিষ্ক বললো।
ডেকে আন।
অনিকেত বেরিয়ে গেল।
দেবা প্যাকেট থেকে সিগারেট বের করলো। নিজে একটা বার করে কনিষ্কর দিকে প্যাকেটটা এগিয়ে দিল।
তুই খাবি।
না।
কবে থেকে সতী হলি।
কোনদিন ছিলাম।
কেন মুখ লাগাচ্ছ দেবাদা। মিলি বললো।
শালা সব সময় এরকম করে।
কনিষ্ক টনা মনাকে কাল ছেড়ে দিবি।
সাত্যকি বললো, আজই ছেড়ে দিতে আমি বললাম আজ রাতটা রেখে দে। কাল ছেড়ে দিস।
বিল।
অনুপদা নীরুকে বলেদিয়েছে, কার নামে কি ভাবে করতে হবে।
নীচে গাড়ির শব্দ শুনলাম।
কিরে আবার কে এলো।
দেখি দাঁড়া।
বটা বারান্দায় বেড়িয়ে গেল।
ওখান থেকেই বললো। অনিমেষদা, বিধানদা, রূপায়ণদা, প্রবীরদা।
দেখলি। আমি জানতাম। তুই এবার আপার লেবেলে চলে যাবি, তোকে এখন পাওয়া যাবে না। মিত্রা মুখ বেঁকিয়ে বললো।
শ্যাম, শিবু, দারু এসে ঘরে ঢুকলো। সটান এসে আমার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো।
কালো কুচ কুচে চেহারা। চক চক করছে। মাথা থেকে তেল চুঁইয়ে পড়ছে। হাতের চেটো গুলো বেদানা কালারের। গাঁট্টা গোট্টা চেহারা। এক একটা যেন বাচ্চা হাতি। প্রণাম করে উঠেই আমাকে সড়াসরি প্রশ্ন।
তুই গেলি না কেনে।
শ্যামের কথা শুনে মিত্রা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকাল। সাঁওতালী টান বাংলার মধ্যে তার ওপর আমাকে তুই বলছে।
হাসলাম। কেন, কনিষ্কদা যায় নি।
তুই গেলি না।
যাব। অনেক কাজ ছিল। সেগুলো সারলাম।
আমি ওদের এক একজনকে বুকে টেনে নিলাম।
ধারা গিড়ির সুবল কইলকাতা এসছিল, ফিরে গেয়ে বইললে কে যেন তোকে মাইরবে বইলছে, একবার দেইখে দে, হাঁসুয়া দিয়ে কাইটে দিই। শ্যামের চোখ দুটো বদলে গেল।
দূর বোকা কেউ মারবে না।
তাইলে ও মিছে কথা বইলছে বল।
না ও মিছে কথা বলে নি। ঠিক কথা বলেছে।
ঠিক আছে ও আমি পরে বুঝে লিবেক। তোকে বুঝতে হবেক লাই।
বউমনিকে দেখেছিস।
না। কনিষ্কদা ফোন কইরে বইললো।
এই যে তোদের বউমনি।
মিত্রাকে দেখালাম। ওরা মিত্রার দিকে তাকিয়ে মাথা নীচু করে মিটি মিটি হাসছে। একবারে লজ্জা পেয়ে গেছে।
কিরে হাসছিস যে।
তুর বউটা সন্দর।
পছন্দ। চূড়ার থেকেও সুন্দর।
হ। চূড়া কালা, তোর বউ সাদা।
মিত্রা ইসি হাসছে।
শিবু ব্যাগটা লিয়ে আয়।
শিবু একটা সাইড ব্যাগ নিয়ে এলো।
কি আছে এতে।
তোর জন্য লিয়ে এসছি।
দুটো বড়ো বড়ো বোতল বার করলো।
কিরে এতো দেখছি মধু। ওটা কি ? মহুয়া!
শিবু মাথা নাড়ছে।
তুই বলছিলি খাবি। চূড়া বনায়ে দিছে। শ্যাম বললো।
মিত্রা আমার হাত থেকে নিয়ে নিল।
কিরে শ্যাম অনিদাকে দিলি। আমারটা কই। কনিষ্ক বললো।
তুই গেলে তুকে খাওয়াব।
আচ্ছা এবার প্যাঁক প্যাঁক করে ইঞ্জেকসন দেব।
তুই দিবি লাই।
ওরা সবাই হাসছে।
অনিদা মহুয়া খায় না। তুদের দিয়ে দেবে।
বাবা তুই সব জানিস।
দারু একটা প্লাসটিকের প্যাকেট আমার হাতে দিল।
এটা কিরে।
হুড়ুং-এর সত্তু।
সবাই আমার দিকে তাকিয়ে।
কি ম্যাডাম ধরতে পারলেন না। নীরু বললো।
মিত্রা মাথা দোলাচ্ছে।
মুড়ির ছাতু।
ওরা সবাই হাসছে।
তুর সঙ্গে কথা আইছে। তুই ওখানে চইল।
শ্যাম বারান্দার দিকে হাত দেখাল।
ওরা সবাই তিনজনকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে দেখছে। কি সহজ সরল এরা। শহুরে বাতাবরণ একটুও নেই। না আছে রাখ ঢাক, না আছে কিছু। ওরা সম্পূর্ণ ওদের মতো।
তোর বৌদিমনিরা যাবে বলছে।
কবে জিবে বল। তোকে লিয়ে যেতে হবেক লাই। আমি এসে লিজে লিয়ে যাবেক।
মিত্রা সমেত মিলিরা সবাই হৈ হৈ করে উঠলো।
তুই কি করে নিয়ে যাবি।
কেনে দোলায় করে লিয়ে যাবেক।
মৌসুমি মাসি ওখানে না ফিরে এসেছে।
ওখানে আছে, চাঁদ উঠলে ফিরে আসবেক।
আমি ওদের নিয়ে গেটের সামনে এলাম। দেখলাম ছোটমা, বড়মা, জ্যেঠিমনি।
শ্যাম আমার মায়েদের সঙ্গে কথা বলেছিস।
নিচে কনিষ্কদা বলায়ে দিল।
তোমরা বসো আসছি।
আমি ছোটমার ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে ওদের সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বললাম। তারপর ফিরে এলাম।
বড়মা ওরা চলে যাবে, ওদের কিছু খাবার দিয়ে দাও। পথে যেতে যেতে খাবে।
কবিতা গুছিয়ে রেখেছে।
তোরা কিছু নিয়ে এসেছিস।
তুই পাতায় করে দে বেঁধে লিচ্ছি।
কিগো শ্যাম তুমি অনির জন্য মহুয়া নিয়ে এসেছো কেন।
আগুবার গিয়ে চূড়াকে বইললে, মহুয়া খাওয়াস তাই চূড়া দিলে।
খেলে নেসা হয়।
টোকচা খেলে লেসা হবেক লাই। ফলের রস। শরীল টাটালে ভালো হয়।
ছোটমা হাসে।
আমি ওদের নিয়ে নীচে এলাম। অনিমেষদাদের সঙ্গে দেখা করালাম। বিধানদাকে বললাম, ওরা ওদের কথা বললো। আমি শুনেছি পরে তোমাদের সঙ্গে আলোচনা করবো। ওরা এখন চলে যাবে।
সবাই ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। নীরু, কনিষ্ক, বটা, অনিকেত চলে যেতে চাইল। আমি বললাম ডাক্তারদাদার সঙ্গে একবার দেখা করে আয়। ওরা দেখা করে এলো।
কিরে কি বললো।
চারজনকে রাতে একবার আসতে বললো।
চলে আয়। রবীন পৌঁছে দিচ্ছে।
আমি ওদের গেটের মুখ পর্যন্ত এগিয়ে দিলাম। ওরা চলে গেল। ফোনট পকেট থেকে বার করে একবার হিমাংশুর সঙ্গে কথা বললাম মিলির ব্যাপর নিয়ে। ও প্রথমে অবাক হয়ে গেল।
তাই! জানতম না।
তুই কালকে একটা ব্যবস্থা কর। মিউচুয়াল সেটেলমেন্ট। আইন বাঁচিয়ে।
এটা আমি করতে পারব না। দেখি দাঁড়া কাকে দিয়ে করান যায়।
তুই একবার রাতের বেলায় আসবি।
ফেরার পথে যাব।
কালকে লতার সঙ্গে কথাই বলা হলো না।
কেন বলিসনি সেতো আজ জানলাম দাদার মুখ থেকে।
অফিসে গেছিলি ?
হ্যাঁ।
হাওয়া কি বুঝলি।
সবাই তোর ভয়ে তটস্থ। কার ঘাড়ে কখন খাঁড়া পরে কেউ জানে না। তবে কাজে অনেক গতি বেরেছে।
তুই আয় রাতে কথা বলবো।
আচ্ছা।
বসার ঘরে উঁকি মারলাম। দেখলাম পাঁচ মহারথী, ডাক্তারদাদা, ইসলামভাই, দামিনীমাসি বসে কথা বলছে।
তুই কি এখন বসবি। অনিমেষদা বললো।
আমাকে খুব দরকার আছে।
ইসলামভাই হেসে ফেললো। বিধানদাও হাসছে।
নীচে বসবে না ওপরে বসবে।
তোর ঘড়ে হলে ভালো হয়।
ঠিক আছে এসো।
যাচ্ছি তুই যা।
আমি ওপরে চলে এলাম। বড়মারা নিচেই থাকল। ওপরে এসে একটা সিগারেট ধরালাম। সন্ধ্যে হয়ে এসেছে, ঘরের ছোট লাইটটা জালালাম, মানসিক ভাবে নিজেকে ভীষণ ক্লান্ত লাগছে। কিছুতেই অনেক ব্যাপার নিজের মন থেকে মনে নিতে পারছি না। তবু মেনে নিতে হচ্ছে।
একেই মনে হয় বলে কমপ্রমাইজ। আমাকেও কমপ্রমাইজ করতে হবে। অনিমেষদার মুখের ওপর কথা বলতে পারি না। এদের জন্যই আজ আমি কলকাতা শহরে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছি। না হলে কবে মরে হেজে যেতাম তার ঠিক ঠিকানা নেই।
সত্যি তুই একটা পাগল। তোকে নিয়ে….
ঘরে লাইট জলে উঠলো।
পেছন ফিরে তাকালাম। ইসি মিত্রা দুবোন আমার ঘরে। একজনের হাতে চায়ের ট্রে। আর একজনের হাতে চায়ের পট।
তুই আধ ঘন্টা সময় দে। এরপর তোকে আর পাব না। তুই ভিভিআইপি বলে কথা। ইসি বললো।
হাসলাম।
আমি ভিভিআইপি নয়, তোদের থেকেও নগন্য। তোরা আমাকে ভিভিআইপি বানিয়ে দিচ্ছিস।
আয় তিনজনে একটু চা খাই।
আমি জানলার কাছ থেকে এগিয়ে এলাম। খাটে বসলাম। ইসি চা ঢাললো।
অনিমেষদারা কোথায়।
নিচে।

কি করছে।
 
জোর গল্প হচ্ছে। দিদিভাই অনিমেষদাকে বললো, আপনারা একটু গল্প করুণ আমি একটু অনির সঙ্গে কথা বলে নিই।
হাসলাম।
দেখলি দিদিভাই, কিরকম হাসছে দেখ।
বল ইসি তোর কি কথা আছে।
কবে যাবি।
কোথায়।
আমাদের বাড়ি।
ইচ্ছে ছিল আজই তোদের গিয়ে রেখে আসবো। জ্যেঠিমনিকে সেরকমই কথা দিয়েছিলাম।
দেখ কিরকম তুই খোঁচা মেরে কথা বলছিস, তুই এখনো সেই দিনকার কথা ভুলতে পারিস নি।
আচ্ছা আর বলবনা।
তুই আমার একটা উপকার করবি।
বল।
আমি খাট থেকে নেমে টেবিলের কাছে গেলাম। সেদিন যে ফটোটা আমায় বরুণদা দিয়েছিল সেটা নিয়ে এলাম।
কিরে এটা নিয়ে এলি। মিত্রা বললো।
এটা নিয়ে গিয়ে যেখানে ছিল সেখানে রাখবি। আমি গিয়ে দেখব।
কেন এটা তোর বরুণদা দিয়েছে।
তুই বুঝবিনা। তোকে যা বললাম তাই করিস।
মিত্রা আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে।
আমি এর থেকে একটা কপি করে নিই, তারপর দিয়ে দিস।
তাহলে দায়িত্বটা তোর ওপর থাকল। আমি যেকোন মুহূর্তে গেলে জ্যেঠিমনির ঘরে যেন ছবিটা দেখতে পাই।
আমি দায়িত্ব নিচ্ছি।
এবার বল ইসি কি বলতে চাস আমাকে।
প্রথমে বল তুই কবে যাবি।
কালও যেতে পারি, আবার ছ’মাস বাদেও যেতে পারি। তুই সব দেখছিস।
দেখছি বলেই বলছি।
তাহলে।
মা বলছিল, নতুন জামাইকে মা একবার খাওয়াবে।
সেদিন এতো খাওয়ালি….সরি ভুল হয়ে গেছে। তুই ছুটকিকে নিয়ে চলে যা। কয়েকদিন থেকে আসুক।
তুই চল, তুই না গেলে আমি যাব না। মিত্রা বললো।
বড়মা, ছোটমাকে নিয়ে চলে যা।
বড়মা ছোটমা যাবে বলেছে, তোকেও যেতে হবে।
দেখি। আসল কথা বল। এই জন্য তুই ওপরে আমার সঙ্গে কথা বলতে আসিস নি।
বলছি, দাঁড়া না।
আমি ইসির দিকে তাকালাম।
দেখছিস কিরকম ভাবে তাকিয়ে আছে, যেন গিলে খাবে।
মিত্রা হাসছে।
তুই বাড়িতে বসে ঘর সংসার করছিস, না অন্য কিছু করছিস।
ঘর সংসার করছি। পিকু এখন একটু বড়ো হয়েছে।
বিরাট বড়ো হয়েগেছে, তোর আর বরুণদার ভাড় বইতে পারবে।
দেখছিস তুই কেমন খোঁচা মারছিস।
আর মারবনা। বল।
দুবার হলো।
হাসলাম।
আমি ওখানে একটা নার্সারী স্কুল করতে চাই, শুরুও করেছিলাম, ভীষণ বাধা পাচ্ছি।
কারা বাধা দিচ্ছে।
আমার গলার স্বরটা ওদের কাছে বেমানান লাগল।
ইসি মাথা নীচু করে নিল।
রাজনাথের লোক জোন।
ইসি মাথা দোলাল।
স্কুলটা আছে, না বন্ধ করে দিয়েছিস।
প্রায় বন্ধ।
কোথায় করেছিলি।
আমার বাড়ির থেকে কয়েকটা বাড়ির পরে, একজনের নীচের তলাটা ভাড়া নিয়ে।
ঠিক আছে, তুই যা। আমি একটু খোঁজ খবর নিয়ে নিই। তুই একবার পারলে অনিমেষদা কিংবা বিধানদার সঙ্গে কথা বলে নে।
তুই বল, আমার বলতে কেমন যেন লাগছে।
আর।
সব একদিনে বলতে পারব না। তুই এখন ঘরের লোক, তোকে সব জানাতে হবে। না হলে বেঁচে থাকাটা দুষ্কর হয়ে যাচ্ছে।
অনিমেষদারা এসে ঘরে ঢুকলো।
কিরে কথা শেষ হয়েছে।
আমার ইসি আর মিত্রার মুখের দিকে তাকাল।
কিরে মুখটা কেমন থম থম করছে।
আবার কি হলো! অনুপদা বললো।
ইসি তোমার সঙ্গে কিছু কথা বলবে, ওর কথা শুনে নাও, আমি নীচ থেকে একটু আসছি।
আমি নীচে নেমে এলাম। শিঁড়ির মুখে দামিনী মাসি ইসলামভাই-এর সঙ্গে দেখা হলো, দুজনে ওপরে আসছে। আমায় দেখে বললো।
কোথায় যাচ্ছিস।
আসছি। ঘরে গিয়ে বসো।
অনেক রাত পর্যন্ত অনিমেষদাদের সঙ্গে কথা হলো। এর মধ্যে আমি দুবার উঠেছি। একবার হিমাংশু যখন এসেছে তখন। আমি মিলির সঙ্গে হিমাংশুকে বসিয়ে দিয়ে চলে এসেছি, বলেছি মিত্রা মিলির সঙ্গে যাবে। তুই থাকবি।
আর একবার ইসিরা যখন ফিরে গেল। জ্যেঠিমনি আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেছিল। আমি মুখে কিছু বলিনি। মন মনে বলেছি, জ্যেঠিমনি আমি জিতেগেছি।
অনিমেষদারা ফিরে যাবার পর, দামিনী মাসি, কবিতা, ইসলামভাই ফিরে গেল। টিনা, মিলিকে যেতে দিলাম না। বললাম তোমরা আজ রাতটা থেকে যাও। কাল থেকে যে যার নিজের জায়গায় ফিরে যাবে। ওরা আমার কথা রাখল। নির্মাল্যরা যথা সময়ে ফিরে গেল। কনিষ্করা আসতে পারে নি, ডাক্তারদাদার সঙ্গে ফোন করে কথা বলে নিয়েছে।
খাওয়ার টেবিলে ডাক্তারদাদা মাতিয়ে রাখল। মল্লিকদা দাদা সঙ্গ দিল। বেশির ভাগ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু আমি। আমি খুব একটা কথা বললাম না। চুপ চাপ খেয়ে দেয়ে ওপরে চলে এলাম। ওরা তখনও বসে আছে।
বুঝলাম ছোটমা বড়মার একটু অভিমান হলো, তবু আমাকে মুখে কিছু বললো না। জামা কাপড় ছেড়ে বিছানায় শুলাম। মিত্রা আজও একটা নতুন চাদর পেতেছে। বালিশের ওয়ারগুলোও এক। সব ম্যাচিং। সামান্য শীত শীত করছে। একটা পাতলা চাদর গায়ে টেনে নিলাম।
সারাটা দিন আজ কি ভাবে কাটল। বলতে গেলে গত পর্শু সকাল থেকে, সেই যে জ্যেঠিমনিকে আনতে গেছিলাম। তারপর থেকে নিঃশ্বাস নিতে পারলাম না। একটা ঝড় যেন আমার শরীরের ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে। আজও সারাটা দিন তার রেশ চলেছে। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে চোখটা বন্ধ হয়ে এলো।
একটা মিষ্টি আবেশ আমার সারাটা শরীরে। হঠাৎ আমার চোখের পাতা দুটো কে যেন টেনে ধরে ফাঁক করলো, তারপর জোড়ে একটা ফুঁ দিলো। আমি একটু কেঁপে উঠলাম। বুঝতে পারলাম মিত্রা। জোর করে হাতটা চেপে ধরতে গেলাম। ছিটকে বেরিয়ে গেল।
দাঁড়া, চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমনো বার করছি। সকলকে সময় দেওয়ার সময় ঘুম পায় না। খালি আমাকে সময় দিতে গেলে চোখে ঘুম জড়িয়ে আসে।
পিট পিট করে তাকালাম। মিত্রা শরীর থেকে কাপরটা টেনে খুলছে আর বক বক করছে।
ঘুমলেই গায়ে জল ঢেলে দেব। আমার অনেক কথা আছে, পেট ফুলে যাচ্ছে। কালকে ভাবলাম বেশ মৌজ করে ফুলশয্যা করবো ও মা উনি কাজ বাড়িয়ে বসে আছেন।
আমি চাদরটা টেনে নিয়ে আপাদ মস্তক চাপা দিলাম।
বুবুন খুব খারাপ হয়ে যাবে। আমি সত্যি সত্যি গায়ে জল ঢেলে দেব।
আমি নির্বিকার।
দিলো একটানে আমার চাদর খুলে।
শয়তান কখন থেকে বলছি ঘুমবি না। পাত্তাই দিচ্ছে না।
মিত্রা ব্রা শায়া পড়ে দাঁড়িয়ে, আমি ওর দিকে তাকিয়ে হাসলাম।
প্লীজ প্লীজ এখন না। আমি বাথরুম থেকে ঘুরে আসি।
আমি উঠে বসলাম।
তাহলে চাদর খুললি কেন।
তুই ঘুমবি না। সেই আমার বাড়িতে তোর সঙ্গে কথা বলেছি, তারপর থেকে তোর সঙ্গে কথা বলা হয় নি।
মাথায় রাখবি। বিছানায় আয় চটকে একবারে লেচি বানিয়ে দেব।
দিবি ? দাঁড়া তাড়াতারি মুখটা ধুয়ে আসি।
মিত্রা নাচতে নাচতে বাথরুমে চলে গেল। আমি আবার চাদরটা টেনে নিলাম বুঝলাম আজ আমার ঘুমের বারোটার তেরোটা। ওর বক বক শুনতে হবে। কে আমার নামে কি বলেছে। তার গুণাগুন বিচার হবে। চুপচাপ চাদর মুড়ি দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলাম। মিত্রা বাথরুম থেকে বেরোলো।
আমি পিট পিট করে দেখলাম, বুকের সঙ্গে টাওয়েলটা বাঁধা। সারা অঙ্গে টাওয়েলটা ছাড়া আর কিছু নেই। ভাবলাম গিয়ে একটু কচলিয়ে দিই। তারপর ভাবলাম না থাক। ও পা টিপে টিপে আমার সামনে এলো মুখের কাছে মুখটা নামিয়ে নিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো, আমি ঘুমিয়েছি না মটকা মেরে পরে আছি।
মিত্রা ঘরের বড়ো লাইটটা নিবিয়ে দিয়ে ছোট লাইটটা জাললো, আলমাড়ী খুলে পাউডারের কৌট বার করলো। এটা ছিল কোথায়! এই কৌট আগে দেখি নি ? মিত্রার শরীর থেকে টাওয়েল খসে পরলো। নিরাভরণ শরীর।
আমার দিকে পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে আছে। আমি নিঃশব্দে উঠে গিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম। মিত্রা কল কল করে উঠলো, আমার গালে ঠোঁট ছোঁয়াল।
আমি জানতাম তুই উঠে আসবি।
কি করে।
তোর চোখ পিট পিট করছিল, ঘাপটি মেরে পরেছিলি।
ঘেঁচু।
শিওর হওয়ার জন্য বড়লাইটটা নিভিয়ে ছোটলাইট জাললাম, পেছন ফিরে শরীর থেকে টাওয়েলটা খসিয়ে দিলাম। এতেও তুই যদি উঠে না আসতিস, তাহলে বুঝতাম তুই আবার ঘুমিয়েছিস। তখন তোকে বিরক্ত করতাম।
আমি মিত্রাকে আরো জোড়ে চেপে ধরে গালে গাল ঘোসলাম।
বুবুন।
বল।
আমি সখ করে একটা নাইটি কিনেছি, ভেবেছিলাম ওটা পরে তোর সঙ্গে ফুলশয্যা করবো।
এখনো সখ আছে।
বারে থাকবে না কেন! আমার তো ফুলশয্যা হয় নি।
সব যদি এ জন্মে সেরে ফেলিস, পরের জন্মের জন্য কি বাকি রাখবি।
পরের জম্মে তোকে যদি না পাই।
পাবি পাবি।
বলনা পরবো ?
পর।
তুই কিছু বলবি না।
কেনো।
আমি জানি তুই ওটা দেখলেই খ্যাচ খ্যাচ করবি।
তাহলে পরছিস কেন ?
খালি আজকের দিনটা, আর কোন দিন না। আমার সব সখ মেটালি এটুকু মেটা।
তাহলে আমি খ্যাচ খ্যাচ করবো।

সে তুই কর।
 
মিত্রা আলমাড়ি থেকে একটা প্যাকেট বার করলো। একটা সাদা রং-এর সুতোর নাইট গাউন বার করলো। আমি দেখে অবাক হয়ে গেলাম, পুরোটা কুরুশ কাঠি দিয়ে বোনা। সম্পূর্ন সুতোর তৈরি। কি সুন্দর তার বুনোট, সারাটা শরীরে একটা ময়ূরের ডিজাইন। আমি ওকে চেয়ে চেয়ে দেখছিলাম।
কিরে তোর ভালো লাগছে ?
ভীষণ সুন্দর। কোথা থেকে কিনেছিস ?
এইটা একপিসই আছে। আমি একটা বুটিক থেকে অর্ডার দিয়ে বানিয়েছি।
কবে বানিয়েছিলি!
তোর বাড়ি থেকে ফিরে আসার পর।
তুই জানতিস।
মনে মনে।
খালি আমার সঙ্গে একরাত পরে শুবি বলে!
হ্যাঁ।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি। কি পাগল মেয়েরে বাবা।
যদি অন্য দিক থেকে ভাবি, তাহলে ও ঠিক। ওর কোনদিন বিয়ে হয় নি। যে বিয়েটা হয়েছে, তা ধর্ষণের নামান্তর। এই বিয়েকে ও বিয়ে বলে মনে করছে, এনজয় করছে। তবু মনে মনে একটা অপরিপূর্ণতা থেকে গেল। কাল এটা ওর পড়ার কথা ছিল আজ পড়লো।
আবার ভাবতে শুরু করলি ?
না।
তাহলে।
কালকে কাজটা না করলেই পারতাম। তাহলে তোর এইটা পড়তে একদিন লেট হোত না।
নারে তুই ঠিক করেছিস।
মিত্রা আমার কাছে এগিয়ে এলো, লতানো গাছের মতো আমাকে আষ্টে পৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো। আমার বুকে ঠোঁট ছোঁয়ালো।
জানিস বুবুন, আজ আমার সবচেয়ে আনন্দের দিন।
কেন।
তুই আমার গর্ভধারিনী মাক আমার কাছে নিয়ে এসেছিস।
আমি তুই ছাড়া ঘটনাটা কেউ জানে না।
দিদিভাই শুনেছে, তবে ধরতে পারে নি। তবে কিছু একটা আন্দাজ করতে পেরেছে।
বরুণদা।
বলতে পারব না।
আমি মিত্রার দিকে তাকিয়ে আছি।
জানিস বুবুন, আমি জানতাম না বরুণদা আমাদের অফিসে কাজ করতে আসে। দিদিভাই-এর বিয়ের সময় আমি যাই নি। দেখিও নি। বুড়ীমাসির মুখ থেকে মাঝে মাঝে ওদের কথা শুনতাম। খারাপ লাগতো। আগ বাড়িয়ে কিছু করতে গেলে যদি অপমানিত বোধ করে।
মিত্রা আমার বুকে মাথা রাখল।
বরুণদা আজ একটা দারুণ কথা বলেছে।
কি।
জান ছোট ম্যাডাম, এখানে না এলে মিত্রা-অনি আমার কাছে গল্পের নায়ক-নায়িকা থাকত, আজ সেই গল্পের নায়ক-নায়িকা আমার চোখের সামনে হেঁসে-খেলে বেরাচ্ছে, আনন্দ ফুর্তি করছে। আমি দু’চোখ ভরে চেয়ে চেয়ে দেখছি। ভীষণ ভালো লাগছে।
কখন বললো।
সকালে একটা ফোন এলো বরুণদার অফিস থেকে। বললো আমাদের অফিসের কম্পিউটার ডিভিসনের যিনি ম্যানেজার, কি যেন নাম ?
দিগন্ত চৌধুরী।
হ্যাঁ হ্যাঁ। তিনি কল করেছেন মেসিনের কি প্রবলেম হয়েছে। তখন বরুণদাকে বড়মা তাড়াতারি খাবার ব্যবস্থা করে দিল। আমি ভাবছিলাম একবার ফোন করে বলে দিই। তারপর ভাবলাম, না এতো তাড়াতাড়ি ব্যাপারটা লিক আউট করবো না। খেতে বসে বরুণদা বললো। সবাই শুনে অবাক।
আমি মিত্রাকে দেখছি। মিত্রা কল কল করছে।
দূর ছাই তোকে কিছুই দেখান হয় নি।
মিত্রা আবার আলমাড়ির পাল্লা খুললো। অর্নামেন্টের বাক্স থেকে একটা বিছে হার বার করলো। দেখেছিস এটা।
আমি অবাক হয়ে গেলাম।
কিরে কি ভাবছিস, এতো মোটা কেন ?
আমি মাথা দোলালাম।
দাদু আমার জম্মের সময় বানিয়েছিল। জম্মের সময় আমার যতটা হাইট ছিল সেই হাইটের, আর আমার ওজনের দশভাগের একভাগ ওজনের সোনা দিয়ে।
সোনা সেটা বুঝতে পারছি।
তাহলে।
তোর ওজনের দশভাগ ব্যাপারটা ধরতে পারছি না।
এটা সাতাশ ভড়ি। দিদিভাই-এরও একটা আছে। সেটা উনত্রিশ ভড়ি। দুই বোনের জন্য দুটো বিনিয়েছিল।
এবার মাথায় ঢুকেছে।
কি বলতো।
তার মানে জম্মের সময় তোর ওজন ছিল দু’কিলো সাতশো আর ইসির দু’কিলো নশো।
হবে হয়তো।
তবে তোর দাদু হেবি মালদার লোক ছিল।
তা ছিল।
চ এবার শুয়ে পরি, অনেক গল্প শুনলাম।
তারমানে! এখনো শুরুই করলাম না।
শুরু করলি না মানে!
এতো কথা এক রাতে শেষ হবে না।
তাহলে থাক বলতে হবে না।
সেকিরে! তোকে না বললে আমার পেট ফেটে যাবে।
তাহলে যেটাকে পেটে ধরেছিস তার কি হবে।
ঠিক মনে করিয়ে দিয়েছিস।
আবার কি মনে করালাম।
আজ সকালে একটা কেলো হয়েছে।
কি!
বড়মার ঘরে ঘুমচ্ছিলাম, হঠাৎ ঘুমটা ভেঙে গেল, গাটা কেমন গুলিয়ে উঠলো। তখন ঘরে বড়মা, ছোটমা, জ্যেঠিমনি, দিদভাই। ওরা পাটি পেরে গল্প করছিল, আমি ধরফর করে উঠে বসলাম। আমার অবস্থা দেখে ছোটমা বুঝতে পেরেছে, আমার শরীরটা গন্ডগোল করেছে।
আমি ইশারায় বললাম, বমি পাচ্ছে। ছোটমা ছুটে গিয়ে আমার ছেড়ে রাখা কাপরটা, মাটি থেকে তুলে আমার দিকে ছুঁড়ে দিল। ঘরের দরজা বন্ধ করলো। বমিতো আর হলো না। কিছুক্ষণ পেট ধরে ওয়াক ওয়াক করলাম। কিছুটা লালা বেরলো।
ছোটমা ফিক করে হেসে ফেললো। আমার তখন প্রাণ যায় যায় অবস্থা। চোখ জলে ভড়ে গেছে। সেই সময় বড়মার মুখটা যদি দেখতিস, কি বলবো বুবুন, যেন সোনা গলে গলে পরছে। বড়মার মুখটা দেখে আমার তখন যে কষ্টটা হচ্ছিল, সব ভুলে গেলাম। খাটে উঠে এসে আমার মাথাটা বুকে চেপে ধরলো।
কপালে মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। ততক্ষণে ছোটমা জল নিয়ে চলে এসেছে। খাটে বসে বসেই, আমি মুখে চোখে জল দিলাম। তারপর ছোটমা ডিটেলসে সব গুছিয়ে বলে দিল। সব শোনার পর, জ্যেঠিমনির আনন্দ আর ধরেনা। দিদিভাইতো বলেই ফেললো, বড়মা নার্সিংহোম থেকে সোজা আমাদের বাড়ি, একমাস ওখানে, তারপর এই বাড়ি।
আমি একটু ঠান্ডা হতে, বড়মা গিয়ে ডাক্তারদাদাকে ডেকে আনল, সব বললো। ডাক্তারদাদার হাসি দেখলে তোর মাথা খারাপ হয়ে যাবে। আস্তে করে বললো, বুঝলে বান্ধবী, ছেলেটার অঙ্কের মাথা খুব ভালো।
তখন এক বাড়ি লোক, আমি ভাবলাম এই বুঝি জানাজানি হয়ে গেল।
বৌদি, সুরো ছিলো না ?
তখন ওরা বেরিয়ে গেছে।
বড়মা এবার ডাক্তারদাদাকে চেপে ধরলো, ও সামন্ত ভয়ের কিছু নেই।
আগে চা খাওয়াও তারপর বলবো।
বড়মা খিঁচিয়ে উঠলো।
জ্যেঠিমনির তখন কি হাসি, ফুলে ফুলে উঠছে।
তুই খুব এনজয় করছিলি বল।
খুব।
তারপর ছোটমা চা নিয়ে এলো। ডাক্তারদাদা চায়ে চুমুক দিল। বড়মা বললো।
সামন্ত তুমিতো আমাদের থেকে অনিকে অনেক বেশি চেন।
চিনি।
তাহলে একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো, সত্যি করে বলবে।
পারলে বলবো, তবে সব সময় যে আমি ওকে বুঝতে পারি, সে কথা হলপ করে বলতে পারব না। সত্যি কথা বলতে কি ও নিজেই নিজেকে ঠিক মতো চেনে না। আমরা তো কোন ছাড়।
এই তুমি হেঁয়ালি শুরু করলে। খালি অনির মতো পাশ কাটাবার ফন্দি।
আচ্ছা তুমি বলো, পাশ কাটাব না।
জ্যেঠিমনি, ডাক্তারদাদা আর বড়মার কথা শুনে হেসে গড়িয়ে পরে।
বড়মা তোকে জ্যেঠিমনির সম্বন্ধে কিছু জিজ্ঞাসা করে নি।
হাল্কা আওয়াজ দিয়েছিল।
কি।
হ্যাঁরে তোর জ্যেঠিমনিকে অনি কোথা থেকে ধরে আনলো। তুইতো কোনদিন বলিস নি।
আমি সঙ্গে সঙ্গে পাল্টি। তোমাকে বলেছি আকারে ইঙ্গিতে, তুমি ধরতে পার নি।
আমি হাসছি।
তুই বেশ পাকা খেলোয়াড় হয়েগেছিস।
তোর থেকেও ?
হুঁ।
দুজনে বিছানায় এসে শুয়ে পরলাম। মিত্রা আমার বুকে উঠে এলো।
আজ কিন্তু একবার, বেশিক্ষণ না। মিত্রা হাসতে হাসতে বললো।
না আমার দম নেই।
আমি দম দিয়ে দেব।
আমি হাসলাম।
তারপর শোন না।
বলবি তো।
দেখছিস দেখছিস, তুই কেমন খোঁচা খুঁচি শুরু করেদিলি।
ঠিক আছে বল। হাতটা একটু রাখি ?
আচ্ছা।
তারপর বড়মা বললো, আচ্ছা ডাক্তার অনি যাকে ওরকম দেড়ে মুশে গালাগাল দিল, তাকে হঠাৎ ছাড়িয়ে আনতে গেল কেন ?
আমি ওর দিকে তাকিয়ে।
আচ্ছা বুবুন, সত্যি করে বলতো, তুই কেন প্রবীরদাকে ছাড়িয়ে আনতে গেলি ?
কেন ডাক্তারদাদা তো তার ব্যাখ্যা দিয়েছে।
দিয়েছে, বড়মার মন পসন্দ হয় নি।
তাহলে।
সব শোনার পর বড়মা বললো, যতই বলো ডাক্তার তোমার এই ব্যাখ্যাটা ঠিক জুৎসই হলো না। কেমন যেন ফলকা ফলকা।
আমি মিত্রার কথায় হাসছি।
বলনা, তুই ওরকম করিস কেন।
তুইতো গেছিলি আমার সঙ্গে। কিছু বুঝিস নি।
দাঁড়া এটাকে খুলি। তোর সঙ্গে বডি কন্টাক্ট হচ্ছে না।
খোলার কি আছে। সবই তো দেখতে পাচ্ছি। ভেতরে কিছু পরিস নি। ফাঁক ফোঁকর দিয়ে যতটা কন্টাক্ট হয় ভালো।
এই তুই শুরু করলি। যা আমি খুলে ফেলছি।
তাহলে আমি ঘুমিয়ে পরবো।
ঘুমনা, চোখে খোঁচা মারবো। দাঁতে দাঁত চিপে বললো।
মিত্রা নাইট গাউনের বুকের কাছের হুক গুলো খুলে ফেললো। আমি হেসে ফেললাম।

তুই জানিস না, তোর বুকে বুকটা দিয়ে শুলে কি আরাম পাই।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top