What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

দেখি নাই ফিরে (উপন্যাস) (6 Viewers)

আমি কোনদিন যাই নি আপনাদের ক্লাবে। মিত্রা নিয়ে গেলেই যাব।
যাসনি মানে! তাহলে আমাদের ক্লাবের এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ম্যানেজার তোর কে হয় ?
ঠিক আছে ঠিক আছে, আগামী সপ্তাহে অনিন্দিতার বার্থডে, তুই ওনাকে নিয়ে আয়।
গেলেই নিয়ে যাব।
আমি হাসলাম। সময় পেলে অবশ্যই যাব।
গেট পর্যন্ত আমি মিত্রা এগিয়ে দিলাম।
ওরা চলে গেল। দেখি একটা ট্যাক্সি থেকে হিমাংশু রেবা নামলো।
ওদরকে ভতরে নিয়ে এলাম। কবিষ্কদের সঙ্গ জমে গেল।
মনটা ঠিক নেই বার বার খচ খচ করছে।
একে একে নিমন্ত্রিত যারা ছিল সবাই কম বেশি চলে গেল। এখনো কিছু আছে। তারা অফিসের লোকজন। দাদা যে এতো জনকে বলবে আশা করিনি। কাকা কাকীমা সুরো মাসি খেয়ে নিয়েছে। ওরা এই রান্না খাবে না, তার জন্য সুরো মাসি আলাদা রান্না করছে, ওরা তাই খেয়েছে। ওরা ডাক্তারদাদার বাড়িতে শুতে গেল। নীপা সব দেখিয়ে দিয়ে এলো। আমি রান্নার জায়গায় এলাম। ইসলামভাই-এগিয়ে এলো।
দারুন সার্ভিস দিলে।
জীবনে প্রথম, বিশ্বাস কর। ভয় করছিল।
কেন।
এতো যে সে লোকের বিয়ে নয়। অনির বিয়ে বলে কথা। গেস্ট কারা দেখতে হবে।
এই আবার শুরু করলে।
কিরে মামনি আমি ভুল কথা বলেছি।
একেবারে না। আমরা সব চুনপুঁটি। ও বাবু বলে কথা।
ইসি হাসছে।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম। মাথায় রাখিস কথাটা।
তুই একটুতেই কেমন আজ রাগ করছিস। এরকম তো ছিলি না। তোর কিছু হয়েছে ?
ওর চোখের দিকে তাকালাম। মিত্রা এখন অনেক বেশি পরিণত। হয়তো ছিল। আমাকে এতদিন বুঝে নিল। এবার খোলস থেকে নিজেকে আস্তে আস্তে বার করছে।
দেখ ইসলামভাই আমার দিকে কেমনভাবে তাকিয়ে আছে, যেন আজ প্রথম দেখছে।
ঠিকি তো। তোকে আজ ও প্রথম দেখছে। ইসলামভাই হাসছে।
আমি হাসলাম।
পকেটে মোবাইলাটা ভাইব্রেট করছে। রিং অফ করে ভাইব্রেসন মুডে দিয়ে রেখেছি। বুঝছি কেউ ফোন করছে। বার করতে পারছি না। মিত্রা ধরে ফেলবে। এদিক ওদিক তাকালাম রতন ধারে কাছে নেই।
তোমার মামনিকে একটা ঠ্যাং এনে দাও বসে বসে চিবোক।
তুই কোথায় যাবি ?
বাবু বলে কথা, লোকজনদের দেখা শোনা করতে হবে না। ঠিক মতো খাচ্ছে কিনা।
মিত্রা হেসে ফেললো। আমাকে জড়িয়ে ধরে গাল ফুলিয়ে বললো, কি রাগ তোর।
দেখলে ইসলামভাই কোথায় রাগ করলাম বলো।
ইসলামভাই হাসছে।
সাগির দুটো প্লেটে করে মুরগীর ঠ্যাং এনে দিল। সবাই একটা একটা করে তুলে নিল। আমিও একটা তুলে নিয়ে হাঁটা দিলাম। ওরা সবাই ওখানে দাঁড়িয়ে রইল। মিত্রা একবার আমাকে খালি আড়চোখে দেখলো। সোজা গেটের বাইরে চলে এলাম। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলাম কেউ দেখছে কিনা। আমি মিত্রার চোখের আড়ালে চলে এসেছি। ঠ্যাং খাওয়া মাথায়। ফোনটা পকেট থেকে বার করে দেখলাম আবিদের ফোন। রিং ব্যাক করলাম।
আবিদ ধরলো।
বল।
আমি আসার আগেই ওম গ্যারেজ করে দিয়েছে।
কজন ছিল ?
চারজন ছিল।
বসির কোথায় ?
আমার পাশে।
ও আমাকে চেনে ?
না। তোমার নাম শুনেছে। ও তোমার নম্বর জানলে ওখানেই পুঁতে দিত।
এখন কোথায় ?
বসিরের ডেরায়।
ওখানে রাখিস না। তুলে এনে তোদের ডেরায় ঢুকিয়ে দে।
ঠিক আছে।
কি বুঝলি কথা বলে।
নিপাট ছেলে পুলে বলে মনে হচ্ছে। সঙ্গে কোন মালপত্র নেই।
তাহলে!
এদের মধ্যে একজন বলছে রাজনাথের ভাইপো।
আমার নম্বর পেল কি করে ?
প্রবীরদা এসেছিল বিকেলে। ওরা তাই বলছে।
প্রবীরদা!
হ্যাঁ।
শোন তুই এখুনি চলে আয় ওদের রেখে। তুই এলে খেতে বসবো। চারদিকটা বেঁধে আসিস।
আচ্ছা।
সঙ্গে সঙ্গে তিনটে ফোন করলাম। অরিত্র অর্ককে ম্যাসেজ করে বললাম সজাগ থাকবি।
ভেতরে চলে এলাম। দেখলাম মিত্রা গেটের মুখে একলা। আমাকে দেখেই এগিয়ে এলো।
প্লিজ বুবুন তুই বল কি হয়েছে। ফোনটা আসার পর থেকে দেখছি তুই তোর মধ্যে নেই। আজ এই আনন্দের দিনে কেন তুই ঝামেলা করছিস। আমার একটুও ভাল লাগছে না।
তোর কি আমাকে দেখে তাই মনে হচ্ছে।
তাহলে তুই আমাকে লুকচ্ছিস কেন।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে।
চিকনা সব শুনেছে। ওকে জিজ্ঞাসা করলেই পিছলে বেরিয়ে যাচ্ছে। কি সব বিচ্চু তৈরি করেছিস সকলকে। আমি ইসলামভাইকে গিয়ে এখুনি বলবো।
কি হবে। একটা কেওশ হবে, তুই সেটা চাস।
তাহলে বলছিস না কেন।
সারারাত পরে আছে। আমি কি পালিয়ে যাচ্ছি।
কোন খারপ খবর।
ভালো খবর থাকলে আমাকে উতলা দেখায়।
গলা নামিয়ে বললাম।
একমাত্র তুই ধরতে পেরেছিস। আর কেউ ধরতে পারে নি।
কনিষ্ক কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছে।
ও বহুত শেয়ানা ছেলে।
শেয়ানা মানে। আমি এতদিন তোর পাশে শুয়ে যা বুঝতে পারি না ও বুঝে যায়।
মিত্রার গালটা ধরে একটু নেড়ে দিলাম।
এই যে স্যার আমরা এসে গেছি।
পেছন ফিরে তাকালাম। দেখলাম মুখার্জীদা তার গ্যাং।
অর্ক অরিত্ররা ছুটে এলো। আমার দিকে তাকিয়ে একবার সিগন্যাল করলো পেয়েছি।
আবার হৈ হৈ শুরু হয়ে গেল। সবাই আজ সাধারণ পোষাকে। কিন্তু দেখে বোঝা যাচ্ছে কোমরে সাঁটান আছে সবকটার, দলে প্রায় পনেরো জন।
আমাদের হৈ হৈ শুনে বিধানদা, অনিমেষদা, অনুপদা, রূপায়ণদা বাইরে বেরিয়ে এলেন। সকলের সঙ্গে কুশল বিনিময় হলো।
ওরা চারটে বড়ো বড়ো ফুলের বুকে নিয়ে এসেছে। আর একটা ব্যাগ। সবাই এখন বাগানে। আমি আলাপ করিয়ে দিলাম মিত্রার সঙ্গে। ওরা ফুলের বুকে গুলো মিত্রার হাতে দিল। ব্যাগটা আমার হাতে দিল।
এটা কি মুখার্জীবাবু।
আপনার এনজিওর জন্য আগাম ডোনেসন। আমার ছেলেপুলেদের আপনার এনজিওর ব্যাপারে সব বলেছি, ওরা বলেছে, অনিবাবু ভালো কাজ করছেন, আমাদের যদি সাহায্য লাগে আমরা সাহায্য করবো। পারলে সপ্তাহে একদিন ফ্রি সার্ভিস দেব।
অনুপ, মুখার্জীবাবুর কথা শুনলে। ডোনেসন চলে এলো। তোমার বাড়ি এখনো ঠিক হলো না। অনিমেষদা বললেন।
হয়েগেছে। ঝামেলাটা শেষ হলেই অনিকে নিয়ে যাব। দামিনীমাসিকে দেখিয়েছি। ওনার পছন্দ।
তাহলে আমার দেখার কি আছে। কাজ তো ওরা করবে। আমি খালি জোগাড় যন্ত্র করে দেব।
সে বললে হয় বাবা, খালি গা বাঁচিয়ে চললে চলবে।
একচোট হাঁসা হাঁসি হলো।
মুখার্জীবাবু তার দল বল অনুরোধ করলো দামিনীমাসিকে দেখবে কথা বলবে। ওদের অনুরোধ রাখলাম। মিত্রা সমস্ত ব্যাপারটা সামলালো।
সন্দীপ এলো ওর বউকে নিয়ে, সেতো মিত্রার সামনে কিছুতেই দাঁড়িয়ে কথা বলবে না। মিত্রা আমার স্ত্রী নয় ওর মালকিন। শেষমেষ দাদা এসে রফা করলো।
বেশ হাসা হাসি হলো।
ওরা সবাই বেশ হৈ হৈ করে তৃপ্তি সহকারে খাওয়া দাওয়া করলেন। তারপর একে একে সবাই বিদায় নিলেন। আমি মিত্রা মাঝে মাঝে গেট পর্যন্ত যাই আর এগিয়ে দিই।
এখন লনটা বেশ ফাঁকা ফাঁকা। চারিদিকে আলোর রোশনাই। বসার ঘরে এলাম।
সবাই গা এলিয়ে দিয়েছে। বৌদি অনিমেষদা পাশাপাশি বসে গল্প করছে।
আর একদিকে বিধানদা, অনুপদা, রূপায়ণদা, নিরঞ্জনদা।
এইযে ড্যাবা ডেবী, বাইরের দিকে কোথায় যাওয়া হয়েছিল। অনিমেষদা বললেন।
আমি হাসলাম।
অনিমেষদা হাসছে।
ফটোটা দেখেছিস।
দারুণ গিফ্ট। আমার জীবনের সেরা।
আমি গিয়ে অনিমেষদা বৌদির মাঝখানে বসলাম।
দেখলে দেখলে ছেলের কান্ড। উনি আর কোথাও জায়গা পেলেন না। বৌদি বলে উঠলো।
তোমরা তো কিছু খাও নি। খিদে পায় নি ?
বুঝেছি তোর খিদে লেগেছে। ও ছোট দেখ তোর পোলা কি বলে। বৌদি চেঁচিয়ে উঠলো।
মিত্রা খিল খিল করে হেসে উঠলো।
ছোটমা রান্নাঘর থেকে একবার মুখ বার করলো।
দেখ বেচারার মুখটা খিদেয় একেবারে আমসি হয়েগেছে।
অনিমেষদার দিকে তাকালাম।
ব্যাগটা নিয়ে গেছিলে সেদিন।
ঠিক মনে করিয়েছিস। তুই কতো দিয়েছিলি।
জানিনা। মিত্রাকে বলেছিলাম, তোমাকে ব্যাগটা দিতে।
গুনিস নি।
না।
অনেক বেশি ছিল।
ফেরত দাও।
দিয়েগেছি, তোকে মিত্রা বলে নি ?
মিত্রা আমাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।
কিরে তুই বলিস নি ? অনিমেষদা বললো।
তুই সব বলিস।
দেখলে দেখলে বৌদি।
বেশ করেছে, তোর বেশি আছে একটু যাওয়া ভাল।
না গো কাজের জন্য সুজিতদা ওটা দিয়েছে।
মিত্রা হাসছে।
আমি ওকে বলেছিলাম, অনিমেষদারটা দিয়ে বাকিটা তুই রেখে দিস।
দেখলাম অনুপদার ফোনটা বেজে উঠলো অনুপদা উঠে দাঁড়িয়ে বাইরের দিকে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর ফিরে এলো। তারপর বিধানদাকে বাইরে ডেকে নিল। মুখটা গম্ভীর।
ছোটমা একটা প্লেটে করে মিষ্টি নিয়ে এসে আমার মুখে একটা দিল একটা মিত্রার মুখে দিল।
এখন মিষ্টি খাওয়াচ্ছিস খেতে দিবিনা ? বৌদি বললো।
তুমি একটা খাও।
বৌদি হাঁ করলো। ছোটমা মুখে দিয়ে দিল।
দাদা আপনি একটা তুলে নিন।
নাগো অনেক মিষ্টি খেয়ে ফেলেছি, আর না।
ছোটমা নিরঞ্জনদাকে দিল, রূপায়নদাকে দিল।
ছোটমা অনিমেষদার দিকে তাকাল।
দাদা, বিধানদা অনুপ গেলো কোথায়।

বাইরে।
 
ছোটমা বাইরে গেল। ঘরে ঢুকে বললো, দাদা আপনাকে বিধানদা একবার ডাকছেন।
অনিমেষদা উঠে চলে গেল।
মিত্রা ঝুপ করে বৌদির পাশে এসে বসলো।
বৌদি হাসছে। তুই এতোক্ষণ সুযোগ খুঁজছিলি না।
মিত্রা মাথা দোলাল।
হ্যাঁরে মিত্রা কনিষ্কদের দেখতে পাচ্ছি না।
তোর ঘরে জোড় আড্ডা চলছে। সুরো দু’বার এসে বলে গেছে, কনিষ্কদা অনিদার গল্প বলছে, শুনবে যদি চলে এসো। বৌদি বললো।
কনিষ্কটা কি পাগল বলো। আমি বললাম।
কনিষ্ক পাগল না তুই পাগল। ওদের পাগল বানাল কে ?
বাবাঃ তুমি যে ছক্কা হাঁকিয়ে দিলে।
হাঁকাব না।
বিধানদা, অনিমেষদা, অনুপদা ভাবলেশহীন মুখে ঘরে ঢুকলেন।
ওরা অপরজিট সোফায় বসলেন।
তিনজনেই নীচু স্বরে কথা বলছেন। আমাকে আড়চোখে দেখছে। আমি বৌদির সঙ্গে গল্প করছি।
ডাক্তারদাদা ঘরে ঢুকলো, চেঁচিয়ে বললো অনিমেষবাবু খাওয়া দাওয়া হবে না। বেশ রাত হয়ছে।
আমি উঠে দাঁড়ালাম। দাঁড়াও দেখে আসি বাইরে না ভেতরে কোথায় ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আজ ভেতরে খাব না। সকলে মিলে একসঙ্গে বাইরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খাব। ডাক্তারদাদা বললো।
বড়মার ঘরে একবার উঁকি মারলাম। দেখলাম বেশ জমিয়ে গল্প হচ্ছে। আমাকে দেখে বড়মা বললো, আয় ভেতরে আয়।
ডাক্তারদাদার খিদে লেগেছে।
মরন, সন্ধ্যে থেকে এটা নয় সেটা খালি খেয়ে যাচ্ছে, কোন পেটে খিদে লাগে শুনি।
কথা বলতে বলতে বড়মা খাট থেকে নেমে এলো। কাছে এসে বললো।
কোথায় সামন্ত।
ডাক্তারদাদা সামনেই ছিল।
আমি এখানে।
তোমার নাকি খিদে লেগেছে।
সবাই হেসে ফেললো।
তুমি কোন পেটে খাবে বলো। সন্ধ্যে থেকে তো মুখ থেমে নেই।
ওগুলো টুক টাক এবার পেট ভর্তি করে খেতে হবে।
বিধানদা, অনিমেষদা হাসছে বড়মা ডাক্তারদাদার কথায়।
ও ছোট, এখানে ব্যবস্থা করবি, না বাইরে খাবি।
আজ ঘরে খাব না। বাইরে খাব। ডাক্তারদাদা বললো।
দেখ কান্ড, বুড়ো হয়েছো এখনো সখ যায় নি।
ইসলামভাই গেটের মুখে এসে দাঁড়াল।
কিগো তোমার সব ব্যবস্থা হয়েছে। ডাক্তারদাদা বললো।
আমি সেই জন্য এলাম এখানে না বাগানে।
বাগানে ব্যবস্থা করো।
বড়মার ঘর থেকে সবাই বেরিয়ে এসেছে। দামিনী মাসিকে আজ ভীষণ ভাল লাগছে। দেখে কেউ বলবে না দামিনী মাসি ওই পাড়ার মেয়ে। আমি কাছে গিয়ে আস্তে করে বললাম, খুশি।
মাসি পরিতৃপ্ত চোখে আমার গালে হাত বুলিয়ে দিল।
আমি ঘরের বাইরে বেরিয়ে এলাম। দেখলাম বারান্দার এক কোনে রতন, আবিদ, নেপলা দাঁড়িয়ে। ইসারায় বললাম এখন কোন কথা বলিস না।
নেপলাকে বললাম যা আমার ঘর থেকে সবাইকে ডেকে আন।
একে একে সব বাগানে আসছে। তিনটে টেবিল পাতা হয়েছে।
যার যেরকম প্রয়োজন দাঁড়িয়েও খেতে পারে আবার বসেও খেতে পারে। সার্ভিসের ছেলে গুলো আমাকে দেখে হাসলো।
অনিদা এতদিন আপনার নাম শুনেছি, দেখি নি। আজ দেখলাম।
আমি হাসলাম।
সুরো ছুটতে ছুটতে এলো।
অনিদা অনিদা আজ আমি তোমার পাশে বসবো।
কোন বসা বসির সিন নেই, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাড় চিবোবি।
ওরা সবাই টেবিলের কাছে এসে পরেছে, হাসছে।
বুফে।
হ্যাঁ।
কি মজা নিজে নিজে নিয়ে খেতে হবে।
পারলে নিবি নাহলে ওরা দিয়ে দেবে।
ওর দিকে একবার ভালো করে তাকালাম।
একটু আগে খোঁপা বাধাঁ ছিল এখন খোঁপা খুলে এলো চুল। ওকে বললাম।
এই নিয়ে ফোর্থ টাইম ড্রেস চেঞ্জ হলো।
সুরো হাসছে।
একরাতে চারবার ড্রেস চেঞ্জ!
হ্যাঁ। একটা বড়মা, একটা ছোটমা একটা ইসলামভাই, একটা মাসি। তুমিতো কিছু দিলে না।
ওরা হাসছে। হাসির চোটে ইসির শরীর কাঁপছে।
আমি দিলাম না মানে!
মিত্রাকে দেখিয়ে বললাম।
এরকম একটা জলজ্যান্ত বৌদি দিলাম তোকে। তুই বললি সেদিন, অনিদার বিয়েতে সাজবো। তাই বাধ্য হয়ে বিয়ে করলাম, আর তুই বলছিস কিছু দিই না। নেমকহারাম, মনে রাখিস নোট পাবি না।
চাই না। বৌদি দিয়ে দিয়েছে।
তারমানে!
তুমি তখন নিচে ছিলে, আলমাড়ি থেকে বার করে তোমার সব খাতা দিয়ে দিয়েছে।
অনিমেষদা, বিধানদা পর্যন্ত সুরোর কথায় হাসছে।
তোকে ওইই জব্দ করতে পারবে। অনিমেষদা বললো।
ইসি এগিয়ে এসে বললো, তোর ওপর ওর কি জোর।
ওকে যখন প্রথম দেখি তখন ওর দশ বছর বয়স, এখন ও লেডি, আমার সব অলিগলি ওর ঘোরা হয়েগেছে।
সুরো লাফাতে লাফাতে চলেগেল ইসলামভাই-এর ওখানে হল্লা শুরু করে দিল। নীপাও ওর পেছনে। বড়মা, ছোটমা, বৌদি জ্যেঠিমনি কথা বলছে।
পিকু কোথায় ইসি।
বড়মার খাটে ঘুম দিচ্ছে।
খুব পরিশ্রম হয়েগেছে বাচারার আজ।
পরিশ্রম মানে। সুরো চারটে চেঞ্জ করেছে ও সাতটা।
হাসলাম।
খাবার এলো।
ছেলেগুলো সব ঝপাঝপ দিচ্ছে। খাওয়া শুরু হয়েছে। হাসি মস্করা চলছেই। কনিষ্ক, বটা নীরুর পেছনে কন্টিনিউ লেগে রয়েছে। শ্রীপর্ণা হেসেই চলেছে। ওদিকে সঞ্জু চিকনার ডুয়েট চলছে। আমরা সবাই গোল করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খাচ্ছি। অনিমেষদা খেতে খেতে বললো।
অনি তোকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো ?
অনিমেষদার দিকে তাকালাম।
আমি জানি তুই কোন ভনিতা পছন্দ করিসনা। কাজের ব্যাপারে তুই ভীষণ রাফ এবং টাফ।
মিত্রা আমার দিকে তাকাল। চোখে জিজ্ঞাসা সবাই আমাকে দেখছে।
অনিমেষদার কথা বলার ভঙ্গিতে দাদা কিছু আঁচ করতে পারল।
কেন অনিমেষ ও কি আবার কোন গন্ডগোল পাকিয়েছে।
সেরকম কিছু নয়। আবার বলতে পারেন একটু পাকিয়েছে।
কিরে অনি ঠিক বলছি।
অনিমেষদা আমার দিকে তাকাল।
আমি কি করে বলবো। তুমি বললে কিছু একটা জিজ্ঞাসা করবে। এখনো করলে না।
সরাসরি অনিমেষদার চোখে চোখ রাখলাম।
আগে তোমার প্রশ্নটা কি বলো তারপর উত্তর দেব।
আমি কি বলতে চাই তুই বুঝতে পেরেছিস। আমি বড়দি, ছোট, দাদা, মল্লিক, তোর বৌদি আমরা যারা আছি তাদের সবার হয়ে তোকে রিকোয়েস্ট করছি ওদের ছেড়ে দে। একটা ভুল করে ফেলেছে। এবারটার মতো মাফ করে দে। ওরা আর এ ভুল করবে না। আমি বিধানবাবু যা বলার বলে দিয়েছি।
কি হয়েছে দাদা! ইসলামভাই বললো।
দেখলাম সবাই গুটি গুটি পায়ে আমাদের চারপাশে এসে ভিড় করেছে। তা বলে খাওয়া বন্ধ নেই খাওয়া চলছে।
তুমি কিছু জান না! অনিমেষদা বললো।
না দাদা।
তাহলে তোমার থেকেও অনির ক্ষমতা বেশি।
অস্বীকার করবনা। ও এখন মাঝে মাঝে আমাকেই ধমকায়।
রতনের দিকে তাকিয়ে।
কিরে রতন কি হয়েছে ?
কিছু না।
তাহলে দাদা কি বলছে।
বুঝতে পারছি না।
ইসলামভাই হেসে ফেললো।
দাদা এরা এখন আমার হাতের বাইরে।
দেখছো তাহলে ইসলাম তোমার লোকজন তোমাকে কিছু বলেনা।
কিরে অনি তুই কিছু বলছিস না চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছিস। দাদা ধমক লাগাল।
যা বাবা, আমি কি করে বলবো।
অনিমেষদা খোলসা করে বলুক আগে ব্যাপারটা কি। তারপরে আমি বলবো।
জানেন দাদা আমরা প্রসাশন চালাই, আমরা যে কাজটা করতে ঘন্টা পাঁচেক সময় নেব ও সেটা একঘন্টাতে করে দেয়। বুঝুন ওর নেটওয়ার্ক।
আমাদের টুকরো টুকরো কথা চলছে সবাই খেয়ে যাচ্ছে আর শুনে যাচ্ছে। মিত্রা আমাকে প্রবল ভাবে মেপে চলেছে। ইসি বরুণদা বুঝতে পারছে কিছু একটা গন্ডগোল হয়েছে। চোখে মুখে একরাশ বিস্ময়।
আমি ইচ্ছে করে বললাম, দাদা তুমি একটা অন্যায় করেছ।
আমি আবার কি অন্যায় করলাম।
বড়মা দাদার দিকে তাকাল।
তুমি সবাইকে নেমন্তন্ন করলে প্রবীরদাকে নেমন্তন্ন করলে না।
অনিমেষদার দিকে তাকালাম। অনিমেষদা আমার দিকে তাকিয়ে। শেয়ানে শেয়ানে কোলা কুলি চলছে বিধানদা, রূপায়ণদা, অনুপদা, নিরঞ্জনাদার চোখ স্থির।
করিনি মানে! তুই অনিমেষকে জিজ্ঞাসা কর, আমি নিজে গিয়ে বলে এসেছি সকলকে।
অনিমেষদা ফিক করে হেসে ফেললো।
টোপ দিচ্ছিস, চার ফেলে দেখছিস, মাছ খায় কিনা। তোর বুদ্ধির কাছে মাঝে মাঝে আমিও হার মেনে যাই। অনিমেষদা বললো।
কনিষ্ক স্থির চোখে আমাকে দেখছে। নীরু বটারও চোখ স্থির। ওরা আমার এরকম পারফর্মেন্স প্রথম দেখছে।
কি হলো তুমি হাসলে কেন। নিজেরা চলে এলে প্রবীরদাকে আনতে পারলে না।
আমি কথাটা রূপায়নদাদের দিকে ছুঁড়ে দিলাম।
বৌদি একবার আমার দিকে তাকায় একবার অনিমেষদার দিকে তাকায়।
লজ্জায় আসে নি। একটা দুম করে অন্যায় করে ফেললো।
আমি হাসলাম।
যখন সবই জানিস তখন ছেড়েদে।
মহা মুস্কিল তখন থেকে খালি ছেড়েদে ছেড়েদে করছো। ধরলে তো ছাড়ব। আমি হাসতে হাসতে বললাম।
দেখছো ইসলাম তোমার ওই পাঁচটা সাগরেদকে দেখো কিরকম চুপ চাপ খেয়ে যাচ্ছে। যেন ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানে না।
অনিমেষদা রতনদের দিকে তাকিয়ে বললো। ওরা নির্বিকার।
সত্যি দাদা বিশ্বাস করুণ। ইসলামভাই বললো।
আমি জানি তুমি কিছু জান না।
সাতটার সময় অনির মোবাইলে একটা ফোন এসেছিল। মিত্রা বলে উঠলো।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম। সবাই মিত্রার দিকে তাকিয়ে।
বল তো মা তুই বল। ওকে জব্দ করতে তুই আর সুরো পারবি।

তোদের দুজনের প্রতি ওর দুর্বলতা আছে। আর সবার প্রতি ও কর্তব্য পালন করে। তা বলে এই নয় তাদের কিছু হলে ও নাকে সরষের তেল দিয়ে ঘুমবে। অনিমেষদা বললেন।
 
আমরা তখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলাম।
তখন কটা হবে ?
সাতটা।
তারপর ?
ও বললো একটু দাঁড়া আমি আসছি। আমি ওকে জিজ্ঞাসা করলাম। ও কিছু বললো না। মুখটা কেমন ফ্যাকাশে লাগছিল।
অনুপ তুমি এগুলো মাথায় রাখ। কালকে আলোচনা করবো মিটিং-এ। অনিমেষদা বললেন।
আবার মিত্রার দিকে তাকিয়ে, তারপর বল মা।
ও ওখান থেকে চলে আসে। আমি চিকনাকে বলি দেখোতো তোমার গুরুর কি হয়েছে। চিকনা সব শুনেছে। ও তারপর সব সময় বুবুনের পেছন পেছন ছিল। চিকনাও তারপর আমাকে বলেছে ও কিছু জানেনা।
কি বুঝছেন অমিতাভদা সব কটা মাস্টার ডগ। মাস্টার ছাড়া কারুর কাছে মাথা নোয়াবে না। অনুপদা বললো।
অনিমেষদা চিকনার দিকে তাকাল।
বাবা চিকনা এবার বলে ফেলো ম্যাডামের পরের কথাগুলো।
অনিমেষদা এমনভাবে বললো সবাই হাসছে। চিকনা হাসতে হাসতে আমার দিকে তাকাল।
ও তোমাকে কোনদিন বলতে বলবেনা। কিন্তু আমি তোমাকে বলছি তুমি বলো। অনি কিছু বলবে না।
আমি কিছু জানিনা। আমি শুনেছি। রতনদা সব জানে।
কি ইসলাম কিছু বুঝতে পারছ।
ইসলামভাই হাসছে।
দেখনা কোথাকার জল কোথায় গিয়ে গড়ায়।
মিত্রার দিকে তাকিয়ে অনিমেষদা বললো।
আচ্ছা মা তুই অনিকে কখন আবার স্বাভাবিক দেখলি।
সাড়ে আটটা পৌনে নটা থেকে।
তারমানে দেড়ঘন্টা। দেড়ঘন্টায় ও কাজ শেষ করে দিল।
ওরা সবাই মুচকি মুচকি হাসছে।
আমি পুলিশ কমিশনারকে ফোন করলেও দেড়ঘন্টায় কাজ শেষ করতে পারত না। কাল সকাল পর্যন্ত লাগিয়ে দিত।
তুমিতো লেবু নিগড়তে নিগড়তে তেঁতো করে ফেললে।
বৌদি অনিমেষদার দিকে তাকিয়ে বললো।
সুতপা লেবু আমার হাতে এখনো এসে পৌঁছয়নি নিংড়বো কি করে। আমি বিধানবাবু এখনো অন্ধকারে। একটু আগে অনুপের ফোনে প্রবীর ফোন করে বললো, অনি চারটে ছেলেকে কিডন্যাপ করেছে। এখুনি যেন ছেড়ে দেয়।
আমি দপ করে জ্বলে উঠলাম।
প্রবীরদাকে বলে দিও ওর দম যদি থাকে অনিকে ফোন করতে। ব্যাপারটা যখন অনি ভার্সেস প্রবীর তখন আমরা দু’জনে বুঝে নেব। তোমরা এর মধ্যে মাথা গলাবে না।
সবাই আমার গলার স্বরে চমকে উঠলো। যারা আমাকে এর আগে দেখেনি তারাও আমার দিকে বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে। সবাই কেমন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে। কেউ বুঝতে পারে নি আমি হাসতে হাসতে এইভাবে আচরণ করতে পারি।
আমি জানতাম তুই এই কথা বলবি।
তাই তো আমি ধীরে ধীরে এগচ্ছিলাম। তোর বৌদি মাঝখানে টুকে দিল।
প্রবীরদা জানল কি করে অনি তুলেছে। তারমানে চারজন ছাড়াও আরও কয়েকজন আছে। তাদেরকে আমার সামনে হাজির করতে বলো।
সেইজন্য আমি একমুখে ঝাল খাচ্ছিনা দু’মুখে ঝাল খাওয়ার চেষ্টা করছি।
অনিমেষদা খুব শান্ত ধীরস্থির ভাবে বললো।
বিধানদার দিকে তাকিয়ে।
কি বিধানবাবু শেকড়টা কতদূর গেছে এবার বুঝতে পারছেন। আমার হয়েছে যতো জ্বালা।
প্রবীরদার এতো ক্ষমতা থার্ড পার্টি দিয়ে আমাকে হুমকি দেয় আমাকে কাল উড়িয়ে দেবে। আমি বিয়ে করে মজমা নিচ্ছি। এতো বড়ো স্পর্ধা।
উনিকি রাজ্য কমিটির নেতা বলে সাপের পাঁচপা দেখেছেন। এক সপ্তাহের মধ্যে ওকে আমি বাটি হাতে কলকাতার রাস্তায় বসিয়ে দেব। যাতে ওর ভিক্ষে না জোটে তার ব্যবস্থা করবো।
বিধানদা প্লেট হাতে এগিয়ে এলো।
মিত্রা থালাটা টেবিলে রেখে আমার হাত চেপে ধরেছে। কনিষ্করা ফ্যাল ফ্যাল করে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। অনি কার সঙ্গে এইভাবে গলা উঁচু করে কথা বলছে! যার একটা ফোনে এখুনি এই বাড়িতে পুলিসের হেডকোয়ার্টারের টপ টপ লোক চলে আসতে পারে।
যে বৌদি একটু আগেও আমার সঙ্গে হাসাহাসি করছিল। সেই বৌদি পর্যন্ত অবাক হয়ে তাকিয়ে। বুঝতে পারছে কিছু একটা জট পেকেছে। জ্যেঠিমনির মুখটা কেমন শুকনো শুকনো। ইসির চোখে কে যেন হাজার পাওয়ারের বাল্ব জেলে দিয়েছে।
বরুণদা কেমন থতমতো খেয়ে গেছে। বড়মা, ছোটমা, মল্লিকদা, ডাক্তারদাদা স্বাভাবিক। ইসলামভাই মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে। ওরা আমার এই অবস্থা আগে দেখেছে। যারা দেখে নি এই অনিকে তাদের কাছে অজানা অনির চেহারা বেরিয়ে পরেছে।
তুই রাগ করিসনা। আজ আনন্দের দিন। আমি অনিমেষকে বারণ করেছিলাম। আজ অনিকে কিছু বলোনা কালকে পার্টি অফিসে ডেকে আলোচনা করবো। বিধানদা বললেন।
শুনে নাও ওরা সব ইউপি থেকে এসেছে। তার মধ্যে একটা রাজনাথের ভাইপো আছে। প্রবীরদা বিকেলে ওদের সঙ্গে বসে আলোচনা করেছে। আমার ফোন নম্বর ওদের দিয়েছে। এতো বড়ো অর্ডার সিটি ওনাকে কে দিয়েছে।
অনিমেষদা স্থির চোখে আমার দিকে তাকিয়ে। রূপায়ণদা, অনুপদা, নিরঞ্জনদা থ হয়ে গেছে।
আমি সব বুঝতে পারছি। তুই একটু শান্ত হ। আমি তোকে কথা দিচ্ছি আমি নিজে পার্টির তরফ থেকে ডাস্ট্রিক এ্যাকসন নেব। তুই কোন অন্যায় কাজ করিস নি।
কি সাহস আবার অনুপদাকে ফোন করে হুইপ করছেন তুই ওকে ছেড়ে দিতে বল। আমি কি ওনার চাকর।
অনিমেষদার দিকে তাকিয়ে।
অনিমেষ তুমি শুধু শুধু সারাদিনের আনন্দটা নষ্ট করলে।
একটুও নষ্ট হয়নি। অনুপদা চেঁচিয়ে উঠলো। ইসলামভাই মুরগীর ঠ্যাং নিয়ে এসো। জমিয়ে খাব। আজ এমন খাব যেন দুদিন খেতে না হয়।
আমার কাছে এসে, এবার একটু হাস। অন্যায় হয়ে গেছে ভাই। যতো নষ্টের গোড়া আমি। তোর মতো সব হজম করতে পারি না।
ইসলামভাই।
দাদা।
তোমাদের কোন নাচার মিউজিক নেই, চালাও তো একটু নাচি। অনেক দিন নাচিনি। কিরে চিকনা গুরুর বিয়েতে একটু নাচবি তো আমার সঙ্গে।
চিকনা ফিক করে হেসে ফললো।
সুরো আয় আয় সকলে একটু নেচে নিই।
ম্যাডামরা তোমরা ছবি-টবি একটু তোল, তবে কাগজে ছেপে দিও না।
সবাই অনুপদার কথায় এবার হেসে ফেললো।
মিত্রা আমার হাতটা ধরে কাঁধে মাথা রেখেছে।
কিরে মিত্রা ভড়কে গেলে হয়, অনি কি তোর একার নাকি। অনি সবার। তোকে অনুপদা কথা দিচ্ছে ওর কিছু হবে না। অনুপদারও কিছু ক্ষমতা আছে মাথায় রাখিস।
মিত্রা হাসছে।
অবস্থাটা আবার কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে এলো। কিন্তু থেকে থেকে যেন কোথায় তাল কেটে যাচ্ছে।
অনুপদার উৎসাহে প্রায় আধঘন্টা নাচাগানা হলো।
চিকনা, সুরো, নীপা, সঞ্জু, মিলি, অর্ক, অরিত্র, প্রধান কলা কুশলী আমরা সবাই একবার করে কোমর দোলালাম। শেষটুকু দারুণ মজা হলো। কোমর নাচান থেকে কেউ বাদ গেল না। আমি, ইসি, মিত্রা, কনিষ্ক, নীরু, শ্রীপর্ণা, বটা সবাই একসাথে একটু হাত ধরাধরি করে নাচলাম। খুব হৈ হৈ হলো। সবাই থামলাম। শেষে সবাই আইসক্রীম খেলাম বেশ মজা হলো। শেষে ডাক্তারদাদা বললো, তাহলে বান্ধবী শেষ ভালো যার সব ভালো তার। তাই তো ?
বড়মা এমনভাবে ডাক্তারদাদার দিকে তাকাল। সবাই হেসে ফেললো।
ওরা গল্প করছে। আমি ইচ্ছে করেই একটু আলাদা হয়ে পরলাম। ভিড়ের মধ্যে থেকে বেরিয়ে এলাম। বাড়ির ভেতরে এলাম। পর পর গোটা চারেক ফোন করে ফেললাম। লাস্ট আপডেট নিলাম। আপাতত ঠিক আছে।
ওরা সবাই ভেতরে এলো। অনিমেষদা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। বুঝছি কিছু বলতে চায়। আমি ইশারায় বললাম একটু বসো, আমি আসছি।
ইসি কাছে এলো। অনি এবার ছাড়, যেতে হবে।
না গেলেই নয়।
বাড়ি খালি পরে আছে।
দিনের পর দিন খালি পরে থাকলেও কিছু হবে না। লোক আছে।
তুই কোথায় লোক দেখলি।
বরুণদা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। মিত্রা হাসলো।
কিরে ছুটকি তুই হাসলি।
ওর লোকজোন আছে।
জ্যেঠিমনি গল্প করছে বড়মা, ছোটমা, বৌদির সঙ্গে। পাশে দামিনী মাসি দাঁড়িয়ে।
তুই কি সত্যি যাবি।
গেলে ভালো হতো।
জ্যেঠিমনি।
এখন যাবে বলছে। কালকে না হয় আসবো।
বরুণদা আপনার সঙ্গে কথা বলা হলো না।
আরে ঠিক আছে। সময় চলে যাচ্ছে নাকি।
মিত্রার দিকে তাকালাম।
রবীনকে বলেদে ওদের পৌঁছে দিয়ে আসুক। হ্যাঁরে সকাল থেকে বুড়ীমাসিকে দেখলাম না।
তোর চোখ থাকলে তো দেখবি।
হাসলাম।
আটটার সময় খাবার বেঁধে নিয়ে গেছে। রবীন দিয়ে এসেছে।
তোমরা কথা বলো আমি একটু আসছি।
ভেতরে দেখলাম অনিমেষদারা কথা বলছে দাদার সঙ্গে। আমি বললাম এসো ওপরে একটু কথা বলবো।
দাদা আমার দিকে তাকাল।
এখন কোন কথা নয় কাল হবে।
ডাক্তারদাদা বললো খামকা বাধা দিচ্ছ কেন এডিটর, ও যদি কথা বলতে চায় বলুক না।
অনিমেষদা, বিধানদা হাসছে।
বাইরে বেরিয়ে এলাম। মিত্রাকে বললাম তোর ফোনটা একটু দে।
কেন।
দরকার আছে।
মাঠে দেখলাম অর্ক অরিত্র ফোনে কার সঙ্গে কথা বলছে। বুঝলাম কাজ শুরু করে দিয়েছে।
মিত্রা আমার হাতে ফোনটা দিল। সিমটা খুলে ওর হাতে দিলাম। রাখ, আধঘন্টা পরে ফেরত দিচ্ছি।
অনিমেষদারা পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
আমি যাব। মিত্রা বললো।
ওরা ফিরে যাবে তুই একটু ব্যবস্থা করেদে।
কনিষ্করা মাঠে দাঁড়িয়ে আমাকে লক্ষ্য করছে।
সিঁড়িতে ওঠার মুখে দেখলাম সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ওপরে ছোটমার ঘরে এলাম।
কিরে আবার কি হলো।
বসোনা বলছি।
একটা জলের বোতল নিয়ে আসি। অনুপদা বললো।
আমি বলে দিচ্ছি।
বারান্দায় এসে চিকনাকে ডেকে বললাম।
বল কি হয়েছে, আবার কোন গন্ডগোল। বিধানদা বললেন।
না গন্ডগোল নয়, তোমাদের খুব সমস্যা আমাকে নিয়ে।
তোর কি মাথা খারাপ। অনিমেষদা বললো।
তোমরা খালি চুপচাপ দেখে যাও। আমি কি করি। তারপর আমাকে যা বলবে আমি তাই করবো। এতে তোমরা যদি আমাকে কঠিন শাস্তি দাও, তাও আমি মাথা পেতে নেব।
অনুপদা আমার দিকে তাকিয়ে।
তুই খোলসা করে বল।
আচ্ছা তোমাদের পার্টির নিজস্ব কোন ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো নেই।
কি হবে রেখে।

তোমাদের পার্টির নিচের তলার কর্মীরা কে কি করছে তার হিসাব কি করে পাও।
 
কেন ব্রাঞ্চ, লোকাল তারপর জোনাল।
ধাপে ধাপে।
হ্যাঁ।
এগুলো যারা পরিচালনা করছে তাদের মনিটরিং করে কে।
জোনাল কমিটি করে, ওখানকার যারা রিপ্রেজেন্টেটিভ আছে তারা করে।
আচ্ছা তোমাকে যদি বলি এখুনি ওই ব্রাঞ্চের আন্ডারে একটা বাড়িতে প্রচুর আন ওয়ান্টেড ওয়েপন্স আছে, তুমি কি করে মনিটরিং করবে।
অনিমেষদা আমার দিকে তাকাল।
ধরো এতো ওয়েপন্স আছে, তোমরা কল্পনাও করতে পারবে না। ধরো তোমাদের পার্টির কিছু কর্মী তার সঙ্গে জড়িত। আমি বলতে পারব না, তাদের কাছে তোমাদের পার্টর সদস্য পদ আছে কিনা। এখন সবাই তোমাদের পার্টির লোক। তোমরা মাথা।
অনিমেষদা কেমন গুম হয়ে গেল। বিধানদা আমার দিকে তাকাল।
চিকনা জলের বোতলটা রেখে একবার সবার দিকে তাকাল। তারপর চলে গেল।
ঘরের দরজা হাট করে খোলা।
আমি যদি কারুর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তোমাদের একটু গালমন্দ করি খারাপ ভাববে না।
সবাই আমার দিকে তাকিয়ে।
অনুপদা।
বল।
তোমার সিমটা খুলে মিত্রার মোবাইলে লাগাও।
অনিমেষদা আমার চোখে চোখ রাখলো।
দাদা আপনাদের দু’জনের মোবাইলটা কিছুক্ষণের জন্য স্যুইচ অফ করুণ।
বিধানদা একবার আমার দিকে তাকাল। পকেট থেকে ফোনটা বার করে স্যুইচ অফ করল।
অনুপদা সিমটা লাগিয়েছ।
হ্যাঁ।
তুমি যখন কথা বলবে, ভয়েজ অন করবে। সবাই শুনবে।
ঠিক আছে।
রূপায়ণদা তোমায় পরিচিত কেউ ফোন করলে তুমি বার বার কেটে দেবে।
রূপায়ণদা আমার দিকে তাকিয়ে হাসল।
তুই কি চার ফেলছিস মাছ ধরার জন্য।
হ্যাঁ।
ওরে প্রবীর এতো বোকা নয়।
আমি জানি তবু একটা জিনিষ আমার জানার দরকার আছে। একজনের কাছ থেকে ইনফর্মেসন পেয়ে কাজটা করে ফেলেছি। যাচাই করে দেখি নি।
পেট থেকে বার করতে পারবি কিনা সন্দেহ।
জানো রূপায়ণদা মানুষ যখন পরের পর অন্যায় করে, তখন সে সবচেয়ে বেশি দুর্বল হয়ে যায় নিজের কাছে।
ও পোর খাওয়া মানুষ, বহুদিন রাজনীতি করছে।
তোমাদের কাছে, আমার কাছে নয়। মাথায় রাখবে যে সাপ জলে সাঁতার কাটে সেই সাপই কিন্তু বন্যার সময় গাছে চড়ে বাঁচার আপ্রাণ চেষ্টা করে, তখন তাকে কখনো দেখেছ।
অনি। অনুপদার মুখ থেকে স্বগতোক্তির সুর।
ঠিক আছে তোর খেলাটা একটু দেখি, শিখে নিই। রূপায়ণদা বললো।
কেউ কোন কথা বলবে না। ভেবে নাও এই ঘরে খালি আমি একা আছি তোমরা কেউ নেই।
আমি আমার মোবাইল থেকে প্রবীরদার নম্বরে ডায়াল করলাম। ভয়েজ অন করলাম। রিং বাজছে।
হ্যালো।
রেকর্ডিং চালু করলাম।
প্রবীরদা আমি অনি।
হ্যাঁ বল। কথা জড়িয়ে যাচ্ছে।
আজ এলে না। তোমাকে খুব এক্সপেক্ট করেছিলাম।
শরীর ভালো নয়।
দাদা মনে হয় ঠিকমতো নেমন্তন্ন করতে পারে নি। তাই না।
চুপ। কোন কথা নেই।
কিগো কথা বোলছ না যে।
না তা নয়।
আমার ওপর রাগ করেছো।
না।
তাহলে। এলেনা যে।
চুপ। কোন কথা নেই।
ঠিক আছে। ছোটভাই হিসেবে কোন অন্যায় করে থাকলে ক্ষমা করে দিও।
কিসের ক্ষমা। তুই আমার কেরিয়ারটা ডুম করে দিলি।
আমি! তোমার কেরিয়ার ? একজন সাধারণ সাংবাদিক তোমার কেরিয়ার নিয়ে ছনিমিনি খললো, তুমি তাকে ছেড়ে দিলে।
তুই এখন সাধারণ নোস। তুই এখন কলকাতার ডন।
তুমিও বলবে।
আজ যে কটাকে তুলে নিয়ে গিছিস ছেড়ে দে। এর ফল ভাল হবে না।
আমি! কাকে তুললাম ? তুমি কি পাগলের মতো বকছো ? শরীর ঠিক আছে ?
ফালতু কথা একেবারে বলবি না। কাল সকালের মধ্যে ওদের ছেড়ে না দিলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।
তুমি কি করে জানলে আমি তুলেছি ?
তুই যে ভাবে জেনেছিস।
তাহলে আরও কয়েকজন আছে, ওদেরকে একটু দেখাও দেখি।
তুইকি আমার সঙ্গে টক্কর নিচ্ছিস।
যদি মনে করো নিচ্ছি, তাহলে তাই।
খুব ভালো হবে না অনি বলে দিচ্ছি। শেষবারের মতো বলছি।
আমি এবার আস্তে আস্তে টপ গিয়ারে উঠতে আরম্ভ করলাম। গলার ভল্যুম চেঞ্জ হতে শুরু করলো।
তোমাকেও বলে দিচ্ছি। তোমরা অবস্থা রাজনাথের থেকেও খারপ করে ছেড়ে দেব। তোমাকে টাডা আইনে ফাঁসাব। জীবনে আর জেল থেকে বেরতে পারবে না।
তোর এতো বড়ো দম।
দম আছে কিনা তা প্রমাণ করে দিয়েছি। তোমার ওই পার্টির দুটো ভেড়ুয়া নেতাও তোমাকে বাঁচাতে পারবে না।
কি বললি তুই।
যা বলছি ঠিক বলছি।
এ্যাঁ।
তোমার দম থাকে লড়ে যাও। আমি প্রস্তুত। আর একটা কথা বলেদিচ্ছি। কাল সকালের মধ্যে ওই গেস্ট হাউসে যদি বাকি গুলকে পৌঁছে না দাও, চারটেকে কুত্তার মতো মেরে দেব। দেখব তোমার কটা বাপ আছে।
তুই আমার বাপ তুললি।
শুধু বাপ নয় তোর চোদ্দগুষ্টি এলেও বাঁচাতে পারবে না।
কি তুই আমাকে তুই বলছিস।
এর থেকেও যদি নিকৃষ্ট কিছু থাকে বলবো।
গেটের মুখ বড়মা, ছোটমা, বৌদি, দামিনী মাসি। পেছনে সবাই। অনিমেষদা হাত তুললো মুখে ইশারা করে দেখাল কেউ টুঁ শব্দটি করবে না।
এ্যাঁ।
এ্যাঁ নয়, হ্যাঁ। আমার দম দেখতে চাস। তাহলে ঘরের বাইরে এসে বারান্দায় একবার উঁকি মেরে দেখ। অনি চুপচাপ হাত গুটিয়ে বসে থাকে না।
ওরা চারজন আমার দিকে বিষ্ময়ে তাকিয়ে আছে।
কিছুক্ষণ চুপচাপ। আমি সবার দিকে একবার তাকালাম। থম থমে সবার মুখ। উৎকন্ঠা চোখে মুখে। জ্যেঠিমনি ইসি বরুণদাকে দেখলাম। বুঝলাম ওদের যাওয়া হয়নি। সবাই আমাদের কথা শুনছে।
কিরে প্যান্ট হলুদ হয়ে যাচ্ছে। কথা বলছিস না কেন।
তুই কি আমাকে মারতে চাস।
শুধু মারা নয়। বডি পর্যন্ত গাইপ করে দেব। কেউ খুঁজে পাবে না। বারান্দায় এসেছিস ? আমি সত্যি কি মিথ্যে একবার বল তোর মুখ থেকে শুনি।
তুই কি করতে চাস। গলার স্বর নরম।
কি শুকিয়ে গেল। একটা ফোন করবো। তোর ঘর রেট করতে শুরু করবে। ওরা তৈরি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তোর বাড়িটার চারিদিকটা একবার ছাদে উঠে দেখ। মাছি গলতে পারবে না।
আমি অনিমেষদাকে ফোন করছি।
দিলাম অনিমেষদার নামে কাঁচা কাঁচা গালাগাল। ওকি আমার ঠেকা নিয়ে বসে আছে।
অনিমেষদা মুখে হাত চাপা দিয়েছে। বিধানদা মাথা নীচু করে মুচকি মুচকি হাসছে। রূপায়ণদা, অনুপদা না পারছে হাসতে না পারছে গম্ভীর হয়ে থাকতে।
বৌদি আমার দিকে বিষ্ময়ে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে। অনিমেষদা আঙুল তুলে ইশারা করছে।
তোর এতো বড়ো ক্ষমতা তুই আমাদের পার্টির টপ লিডারকে….।
রেকর্ডিং করে রাখ, আমার গলাটা ভেড়ুয়াটাকে কাল সকালে শুনিয়ে দিবি। আর একটা ভেড়ুয়া আছে। বিধান হারামী।
তুই বিধানদাকে হারামী বলছিস।
বেশ করেছি।
দাঁড়া তোকে দেখাচ্ছি।
বেশি দেখাতে যাস নি। বাড়ি থেকে একপাও বেরবি না। বেরলেই ওখানে দানা খেয়ে পরে থাকবি।
তোর এতো বড়ো ক্ষমতা।
ক্ষমতা আছে কিনা দেখতেই পাচ্ছিস। এক ফোনে যদি এই হয়, আর এক ফোনে তোর কি দশা হবে। আর একটা কথা বলে রাখি মন দিয়ে শোন, তোর অশ্বিনীনগরের অস্ত্র কারখানাতেও লোক পাঠিয়ে দিয়েছি। পর্শু ইউপি থেকে চার ট্রাক মাল এসেছে। ওখানে ফোন করে বলে দে নখরামি যেন না করে। ওখানে তুই ছেলে গুলোকে তুলে নিয়ে এসেছিস।
তোকে খুন করে দেব।
প্রবীরদা এমনভাবে চেঁচিয়ে উঠলো যেন আমার ফোনের স্পিকারটা ফেটে যাবে।
সময় পাবি না। আগে অস্ত্র কারখানাটা খাব। তারপর তোকে।
তুই তার সময় পাবি না।
আবার বলে রাখছি। নখরামি করবি পুরো বডিটা গাইপ। আমি চারদিক বেঁধে ফেলেছি। এবার বল কি করতে চাস।
কিছুক্ষণ চুপ। কোন কথা নেই।
শোন তুই তো নিজে মুখে বলবি না। আমি রফা করি।
বল।
কিরে গলা ভাড়ি কেন। কাঁদছিস।
না।
অনেক কামিয়েছিস। কাগজের গুষ্টির তেইশ। এতদিন যা করলাম সব একটিং। মিত্রার সঙ্গে যা করার করা হয়েগেছে। আমার বহু টাকার দরকার। টাকা পেলে সব ছেড়ে ছুড়ে ফেটে যাব। তোর রাজনাথ, ডাক্তারও অনেক কামিয়েছে মিত্রার কাছ থেকে। আমিই বা বাদ যাই কেন।
তুইও ডাক্তারের কাছ থেকে টাকা টেনে নিয়েছিস।
ওটা আমার নয় মিত্রার। সাদা টাকা। মিত্রাকে ট্যাক্স দিতে হবে। ওখানেই মিত্রাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছি। আমার হার্ড ক্যাশ চাই।
কতো।
তোর জন্য কাল অনিমেষদা আমার কাছ থেকে টাকা টেনেছে।
কতো।
পাঁচ কোটি। তোর নাকি দেওয়ার কথা ছিল।
এ কথা তোকে কে বললো।
তাহলে আনিমেষ আমার কাছ থেকে নিল কেন।
কি করে বলবো।
প্রবীরদার গলাটা ভাড়ি ভাড়ি।
কিরে তুই মেয়েছেলের মতো কাঁদছিস নাকি।
না।

দেখলাম রূপায়ণদা অনুপদা ঘরের এক কোনে চলে গিয়ে মুখে রুমাল চাপা দিয়ে হাসছে। বৌদিরা বারান্দায়, মুখে কাপর চাপা দেওয়া। চোখে বিষ্ময়। এতোক্ষণে ওরা বুঝতে পেরেছে কার সঙ্গে আমি কথা বলছি।
 
তুই এখন কোথায় ?
আমি নিচের বাগানে আম গাছের তলায়। বাড়ির সবাই ঘুমচ্ছে।
তুই আমাকে বাঁচা অনি।
বাঁচাব পরে। আমার দশকটি চাই। কি করবি বল।
পেয়ে যাবি।
কাল সকালে চাই।
হবে না। কাল বিকেলে মালটা ডেলিভারি করতে হবে।
আমার কাছে খবর আছে, ওখানে যা মাল আছে আর আমি যা চাইলাম নস্যি।
তোর কখন দরকার।
যতো সকালে সম্ভব। এরা উঠতে উঠতে ফেটে যাব।
কোথায়।
আমার বাড়িতে।
না তুই এক কাজ কর।
বল।
তুই ভিআইপির মুখে চলে আয়।
আবার স্কিম।
বিশ্বাস কর।
না তুই ট্রাংগুলার পার্কের মুখে নিয়ে আয়।
ঠিক আছে পৌঁছে যাব।
শোন আজ থেকে আমরা বন্ধু। অনিমেষ, বিধান যেন জানতে না পারে।
তুই তাহলে ওগুলো সরিয়ে নে। ছেলেগুলোকে ছেড়ে দে।
দেবো আগে কাল সকালে মাল পৌঁছবে, তারপর। ওদের পেছনে খরচ করতে হয়েছে। মাগনায় হয় নাকি এসব।
তাহলে হবে না।
অনি ঝপ পাল্টি খেয়ে যাবে। দামিনীকে বলবো, ছেলেগুলোকে রেপ করে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেবে। কনিষ্ক বটা হাসপাতালের ডাক্তার আমার বন্ধু নিশ্চই খবর রাখিস। অপারেসন করে বাদ দিয়ে দেব।
প্লিজ তুই এটা করিস না। আমি জানি তুই সব পারিস। ওখানে রাজনাথের ভাইপো আছে।
রাখছি, কাল ভোর রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করবো। তারপর কাজ চালু করে দেব। আমি বাগানে পায়চারি করছি। কি ডিসিসান নিলি জানাবি।
তাহলে আমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারি।
পারিস। ফালতু তখন ছেলে গুলকে দিয়ে ফোন করালি। মিত্রার সঙ্গে মজমা নিচ্ছিলাম। না করালেই পারতিস।
চুপ।
রাখছি।
ফোনটা কেটে রেকর্ডিংটা সেভ করলাম। ওরা আমার দিকে তাকিয়ে। নিস্তব্ধ ঘর। আমি আবার ডায়াল করলাম।
ভয়েজ অন করা আছে।
হ্যাঁ বলেন অনিবাবু।
উনি বারান্দায় এসেছিলেন।
হ্যাঁ।
দেখে কি বুঝলেন।
ধ্বসে গেছে।
ওখানে কারা আছে।
একটু আগে খবর নিয়েছি। সব ঠিক ঠাক আছে।
একবারে চোখ সরাবেন না।
অনুপদার ফোনটা বেজে উঠলো। হাত তুললাম।
দাঁড়ান একটু বাদে আপনাকে ফোন করছি। আর একটা ফোন এসেছে।
অনুপদা আমার দিকে তাকিয়ে। ইসারা করলো।
কিরে কি করবো।
উঠে গিয়ে ভয়েজ অন করে রেকর্ডিংটা চালু করে দিলাম।
ঘুমচ্ছিলে, ঘুমভেঙে ফোন ধরছো। অনুপদার দিকে তাকিয়ে বললাম।
আমার জন্য একটু অভিনয় করো। প্লিজ।
অনুপদা হাসলো।
হ্যালো।
কিরে কখন থেকে রিং বেজে যাচ্ছে।
কি হলো আবার। এই কানারাতে কি করতে ফোন করলি।
অনি এখনো ছাড়ে নি।
কেন আমার সামনে অনিমেষদার সঙ্গে কথা হয়েছে। বললো ছেড়ে দেবে।
ছাড়ে নি। এখুনি ফোনে কথা হলো।
কি বলছে।
দশকোটি টাকা চাইছে।
অনি টাকা চাইছে!
তাহলে বলছি কি।
কি পাগলের মতো বকছিস।
অনিমেষদা বিধানদার নামে যা মুখে এলো বলে গেলো। কাঁচা কাঁচা খিস্তি দিল।
তোর শরীর ঠিক আছে।
একটুও মিথ্যে বলছি না। রেকর্ডিং করেছি।
বেশ করেছিস। এখন ঘুমিয়ে পর।
ভোররাত পর্যন্ত টাইম দিয়েছে।
কিসের।
ওর দাদার বাড়িতে টাকা পৌঁছে দিতে হবে। না হলে ওই চারটে ছেলেকে হাপিস করে দেবে।
কে বলতো ওই ছেলে গুলো। আমাদের পার্টির ছেলে। তখনও তুই বললি।
ওর মধ্যে রাজনাথের ভাইপো আছে।
রাজনাথকে পার্টি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তুই আবার ঝামেলায় জড়াতে যাচ্ছিস কেন।
যতই হোক রাজনাথ আমাদের পার্টির মেম্বার ছিল এতদিন।
ছিল, এখন নেই। শুধু রাজনাথকে নিয়ে আমাদের পার্টি নয়। তাছাড়া তুই জানলি কি করে অনি তুলেছে।
আরও দুজন ছিল। খাবার কিনতে বাইরে বেড়িয়েছিল। সটকে চলে এসেছে।
ওগুলোকে কোথায় রেখেছিস।
অশ্বিনীনগরে একজন পার্টি কর্মীর বাড়িতে।
এখন ঘুমো, ভাল লাগছে না। পারলে অনিমেষদাকে ফোন কর।
অনিমেষদার ফোন স্যুইচ অফ।
তাহলে বিধানদাকে কর।
বিধানদারও স্যুইচ অফ।
ল্যান্ড লাইনে কর।
রিং বেজে যাচ্ছে। একটু ধরতো আর একটা ফোনে ফোন এসেছে।
তুই কি সারারাত ঘুমোস না।
গায়ে একটা দাগ লেগে গেছে।
অন্যায় করেছিস।
দাঁড়া।
অ্যাঁ কি বললি।….এখনো আছে।….বেরোয় নি…. ঠিক বলছিস….ঠিক আছে।
হ্যালো।
বল।
অনিমেষদারা এখনো অনির বাড়িতে আছে ? গলায় উৎকন্ঠা।
তুইকি গাঁজা খেয়েছিস। আমার সঙ্গে একসঙ্গে বেরল।
আমার লোক বললো। অনিমেষদার গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে।
দেখলাম ইসলামভাই চিকনা ঘরের দরজার সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল।
রাখ ভালো লাগছে না। কাল পার্টি অফিসে আয় দেখছি।
তাহলে কাল সকালে টাকাটা পাঠিয়ে দিই।
কেন বলবি তো।
যদি ঝেড়ে দেয়।
কি করে বুঝলি ঝেড়ে দেবে।
ওর গলা শুনে মনে হচ্ছে। তারওপর ওর সেই মুখার্জীর লোক আমার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
কি করতে।
মনে হয় রেইড করবে।
কেন। আবার কি গন্ডগোল করলি।
অনুপ তুই আমাকে অনির হাত থেকে বাঁচা।
তখন থেকে কি ভেজর ভেজর করছিস বল তো।
তোরা কিছু না করলে অনিকে কাল আমি ঝেড়ে দেব।
তারপর সামলাতে পারবি।
নিজে তো মরেই গেছি। একটাকে নিয়ে মরি অন্ততঃ।
ওখানে ইসলাম আছে।
কিছু চিনতা করতে ভাল লাগছে না।
আমি কি করবো। তোর জন্য আমি কি পার্টি থেকে এক্সপেল হবো নাকি। অনুপদা রেগে গেল।
ঠিক আছে, আমি আমার মতো করে কাজ শুরু করছি।
আগু পিছু ভেবে করিস।
ভাবতে গেলে শেষ হয়ে যাব।
যা পারিস কর। আমি এখন রাখছি।
অনুপদা ফোনটা কেটে দিল।
আমি ছোঁ মেরে অনুপদার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে রেকর্ডিংটা সেভ করলাম।
ফোনটা স্যুইচ অফ করে দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।
খালি অনিমেষদার ক্ষীণ কন্ঠ কানে ভেসে এলো। সুতপা ওকে আটকাও।
একটা হৈ হৈ পরে গেল।
ছুটে নীচে চলে এলাম। বাগানে এসে দাঁড়ালাম। নেপলা, চিকনা, সঞ্জু বেধড়ক মারছে একটা ছেলেকে। আর একটাকে টেনে হিঁচড়ে আবিদ নিয়ে আসছে। পেছনে রতন।
ইসলামভাই আমাকে দেখে বললো। তুই ওপরে যা।
চারিদিক আধো অন্ধকার। লাইট সব নিবিয়ে দিয়েছে ইসলামভাই। ছেলেগুলোর মুখ ঠিক মতো দেখতে পাচ্ছি না। ফিরে আসছিলাম।
অনিদা বাঁচাও। আমি কিছু করিনি।
ঘুরে দাঁড়ালাম।
নেপলা আমার নাম শুনে ছেলেটাকে ছেড়ে দিয়েছে। ছেলেটা ঘসরাতে ঘসরাতে আমার কাছে এসে পা জড়িয়ে ধরলো।
অনিদা তুমি বিশ্বাস করো।
দেখলাম কনিষ্ক পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
কেরে টনা। কনিষ্কর গলা।
কনিষ্কদা তুমি! এরা আমাকে মেরে ফেললো।
আমি স্থানুর মতো দাঁড়িয়ে।
তুই এখানে, এত রাতে! কনিষ্কর গলাটা এই নিশুত রাতে গম গম করে উঠলো।
ওপরের দিকে তাকিয়ে দেখলাম বারান্দায় বৌদিরা দাঁড়িয়ে। মিত্রা ইশি পাশে এসে দাঁড়াল। আমার দুহাত দুজনে শক্ত করে ধরেছে।
কনিষ্কদা একটু জল।
চিকনা জলের বোতলটা নিয়ে আয়। অনি তুই ওপরে চলে যা। কনিষ্কর এই গলা সবার কাছে অপরিচিত।
কেরে কনিষ্ক। বটার গলাটা গম গম করে উঠলো।
টনা।
ভাসিলা ভেঁড়ি।
হ্যাঁ।
ওটা আবার এতো রাতে এখানে কোথা থেকে এলো।
বলছি বটাদা, সব বলছি। টনা হাঁপাতে হাঁপাতে বলে উঠলো।
ইসলামভাই অবাক হয়ে কনিষ্ক আর বটার দিকে তাকিয়ে আছে।
অনি তুই ওপরে চলে যা। কনিষ্ক গুরু গম্ভীর গলায় ফের বলে উঠলো।

আমি আর দাঁড়ালাম না। সোজা ওপরে চলে এলাম। পেছন পেছন সবাই। দেখলাম অরিত্র ফোনে কার সঙ্গে কথা বলছে। আমি সোজা চলে এসে অনিমেষদা বিধানদার পায়ের কাছে বসলাম। মাথা নীচু। মিত্রা ইশি দাঁড়িয়ে। বুঝলাম এই টুকু দৌড় ঝাঁপে ওরা হাঁফিয়ে গেছে। ঘরের সবাই চুপ চাপ।
 
তুমি আমাকে ক্ষমা করো দাদা।
আয় পাশে উঠে বোস।
আমি তোমায় অনেক অ-কথা কু-কথা বলেছি।
সে তো তুই পার্মিসন নিয়েই বলেছিস। রাগ করিনি।
ছোট। বিধানদা চেঁচিয়ে উঠলো।
হ্যাঁ দাদা।
একটু চা খাওয়াবে।
এতো রাতে!
বিধানদা হাসছে।
অনির ফুলশয্যা হচ্ছে, আমরা পাহারা দিচ্ছি। যাও যাও একটু কড়া করে বানিয়ে নিয়ে এসো।
অমিতাভবাবু।
বলুন।
আপনার পকেটে সিগারেটের প্যাকেট আছে।
দিচ্ছি।
মল্লিকদা টেবিলের ওপর থেকে সিগারেটের প্যাকেট আর এ্যাসট্রেটা সেন্টার টেবিলে রাখলো। দুজনে দুটো সিগারেট বার করে ধরালো। সবাই কেমন যেন বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে।
কিরে তোরা গিয়ে খাটে বোস। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ও সব কাজ সেরে রেখেছে। অনিমেষদা ভাবলেশহীন গলায় বললো।
সিগারেটে একটা টান মারলো।
কি বিধানবাবু ভুল কথা বলেছি।
না।
রামের কাছে হুনুমান গিয়ে যেমন সব শেষে বলতো প্রভু অনুমতি দিন। ও সেরকম ভাবে বসে আছে। অনিমেষদা ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বললো।
অনিমেষদার কথায় সবাই ফিক ফিক করে হাসছে।
সুতপা, মুখ ভেটকে দাঁড়িয়ে রইলে কেন। ভেতরে এসো। বসো। সুরো মাকে দেখছি না।
নিচে, ঘুমিয়ে পরেছে।
যাক রক্ষে। লাইভ দেখলে মাথা খারাপ করে দিত।
বৌদি ভেতরে এলো।
অনিমেষদা আমার দিকে তাকিয়ে বললো।
আর ওখানে বসে থেকে লাভ নেই এবার পাশে বোস।
আমি উঠে দাঁড়িয়ে দু’জনের মাঝখানে বসলাম। মাথা তুলছি না।
কিরে আমরা চা খেতে খেতে তোর বাকি কাজ গুলো সেরে নে। অনিমেষদা বললো।
আমি মাথা নীচু করে বসে আছি।
আমি বলছি।
যা না অনি রেকর্ডিংগুল ল্যাপটপে ট্রান্সফার করে সিমটা দে। অনুপদা বললো।
আমি তাকালাম।
তুইতো বিয়ে করলি না, যেন যুদ্ধ করলি। অনুপদা বললো।
অরিত্র।
হ্যাঁ দাদা।
অরিত্র দ্বীপায়ণ ঘরের মধ্যে এসে ঢুকলো।
দেখছেন বিধানবাবু কোন টেনসন দেখতে পাচ্ছেন মুখে। অনিমেষদা ওদের দিকে তাকিয়ে বললো।
বিধানদা মুচকি মুচকি হাসছে।
আমি পকেট থেকে মাবাইলটা বার করলাম। দ্বীপায়ন এগিয়ে এলো। হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে মিত্রার দিকে একবার তাকাল।
যাও, দরজা খোলা আছে। মিত্রা বললো।
ইসি চারদিক চেয়ে চেয়ে দেখছে। ফ্যাকাশে মুখ। যেন হাসতেও ভুলে গেছে। বরুণদা গেটের মুখে গম্ভীর হয়ে দাঁড়িয়ে।
ইসলামভাই গেটের কাছে এসে দাঁড়াল।
কাজ শেষ হলো ইসলাম। অনিমেষদা বললেন।
আমায় কিছুই করতে দিল না।
তার মানে।
কনিষ্ক বটার পরিচিত। আমাকে বললো তুমি ওপরে চলে যাও।
তারমানে! দলে সরকারী ডাক্তারও আছে। অনিমেষদা এমনভাবে বললো এবার দেখলাম সবাই হেসে ফেললো।
ও অনিমেষ একটা কিছু করো। বড়মা মুখ খুললো।
অনিমেষদা আমার দিকে তাকাল।
কিরে দিদি কি বলছে। আমার জন্য কিছু বাকি রেখেছিস ?
আমি চুপচাপ। অনিমেষদা বড়মার দিকে তাকাল।
দিদি আপনি এতোক্ষণ সব দেখলেন, কিছু বুঝতে পারলেন না।
কই দেখলুম সব শুনলুম। গা হিম হয়ে যাচ্ছে।
রাজাকে ও চেক দিয়েছে। রাজার এক ঘরও নড়া চড়া করার শক্তি নেই। নয় গেম হার। নয় রাজাকে খোয়াও। কি বুঝলেন। আমরা সব বোড়ে। ইসলাম পর্যন্ত। অনিমেষদা বললো।
ছোটমা চা নিয়ে ঘরে ঢুকলো।
এসো এসো ছোট চা না খেলে মাথা খুলবে না। বিধানদা বললো।
ইসি উঠে এলো। মিত্রা ভেটকে বসে আছে। টিনা, মিলি ভেতরে এলো। হাতে হাতে সবাইকে চায়ের কাপ এগিয়ে দিল। বিধানদা চায়ে চুমুক দিয়ে আঃ করে উঠলো।
বেশ ভাল বানিয়েছ ছোট।
ছোটমা একবার হাসল। আমার দিকে তাকাল। এখন আর সেই আতঙ্ক মুখে নেই। ডাক্তারদাদা চুপ করে খাটের এক কোনায় বোসে।
বুঝলে অনিমেষ যা শুনলুম অনির নেটওয়ার্কটা বেশ মজবুত। মাছি গলতে পারবে না। ওর সিপাই গুলোর মাথা খুব পরিষ্কার। বিধানদা বললেন।
হ্যাঁরে মুখার্জীর লোকজন চলে এসেছে, না এখনো আছে।
ওখানে মুখার্জীর লোক নেই।
তারমানে!
অনিমেষদা আমার দিকে অবাক বিষ্ময়ে তাকালেন। ঘরের সবাই নড়ে চড়ে বসলো। মিত্রা এতোক্ষণ পা ঝুলিয়ে বসেছিল। এবার বাবু হয়ে বসলো। নিশ্চিন্তে চায়ে চুমুক দিচ্ছে।
তাহলে এরা কারা।
সিবিআই দিল্লিব্যুরোর লোকজন।
তুই কি এদের ইনফর্মার।
হেসে ফেললাম।
বলনা একটু শুনি।
মুখার্জী রাতে এলো। ওর লোকজন এলো। অতো যত্নআত্তি করে খাওয়ালি দাওয়ালি। ওকে কাজটা দিলি না! বাইপাস করে সিবিআই দিল্লিব্যুরো ঢুকিয়ে দিলি।
আমি মাথা নীচু করে আছি।
ওদেরকে ফোন করে বলে দিলে ফিরে আসবে ?
আমি চুপ করে আছি।
কি দিদি ছেলের মনের কথা কিছু বুঝছেন। অনিমেষদা বড়মার দিকে তাকাল।
আবার আমার দিকে ফিরে তাকাল।
তুইকি আমাদের এখানে বসিয়ে রেখে কাজ সারছিস।
তোমরা বললে শুরু করবো।
আমরা যদি না বলি ওদের চলে আসতে বলবি।
ওরা চলে আসবে, কাল গট আপ গেম খেলবে।
এনকাউন্টার!
আমি চুপ করে রইলাম।
তোর থার্ড অপসন বল।
এখনো কিছু ঠিক করিনি।
ওই মেয়েটার মুখের দিকে একবার তাকা। আমরা সবাই ফালতু। ও তোর বিয়ে করা বউ।
আমি কি নিজের জন্য করছি। চেঁচিয়ে উঠলাম।
হক কথার এক কথা।
বিধানবাবু আমার মুখ বন্ধ। এবার আপনার কিছু জিজ্ঞাস্য থাকলে ওকে করুণ।
কি বলবো অনিমেষ, গায়ে গন্ধ আছে। সব শুনে এক ঘর লোকের সামনে অস্বীকার করি কি করে। মিটিং-এ বক্তৃত্বা দিতে হলে সব নস্যাত করে দিতাম।
দ্বীপায়ণ ফোনদুটো নিয়ে ঘরে ঢুকলো। আমার হাতে দিল। আমি মিত্রার ফোন থেকে চিপটা অদল বদল করে দিতে বললাম। অরিত্র ঘরে ঢুকলো।
অনিদা পার্মিসন চাইছে। কি বলবো।
অরিত্রর দিকে তাকালাম।
হ্যাঁরে ছেলেটাকে মেরেদেবে না ? অনিমেষদা আমার দিকে তাকাল।
উনি যদি আমাকে মারতে চান আমি ছেড়েদেব কেন। চেঁচিয়ে উঠলাম।
তুই রেগে যাস না। ভয় লাগে।
অনিমেষদা এমনভাবে বললো, হেসে ফেললাম।
অনুপ, অশ্বিনীনগরের খবরটা আমাদের কাছে ছিল না।
অনুপদা অনিমেষদার কথায় মাথা দোলাল।
হ্যাঁরে অনি তুই এই খবরটা পেলি কোথায়।
বৃহস্পতিবার পার্কস্ট্রীটে এ্যাসিয়াটিক সোসাইটির তলায় একটা ভিখারীর সঙ্গে বুবুন বসে বসে কথা বলছিল। আমরা দেখেছি। ডাক্তারদাদা বললো, ও ভিখারী নয়। রাতে ওকে জিজ্ঞাসা করতে ও রেগে গেল, বললো আইবির লোক। মিত্রা কট কট করে বলে উঠলো।
অনিমেষদা মাথায় হাত দিয়ে বসলেন। বিধানদা মিটি মিটি হাসছেন। রূপায়ণদা, অনুপদা গম্ভীর থাকার চেষ্টা করেও হেসে ফেলছে।
অনি। গেটের মুখ থেকে কনিষ্ক ডেকে উঠলো।
আমি উঠে দাঁড়ালাম।
তুই উঠলি কেন, বোস। অনিমেষদা বলে উঠলো।
আয় বাবা ভেতরে আয়।
অনিমেষদা কনিষ্ককে ভেতরে ডাকলেন।
কনিষ্ক ভেতরে এলো।
তোর আর দুই বন্ধু কোথায় ?
নীচে আছে।
ওরা কারারে বাবা।
প্রবীর বাবুর লোক।
কোথায় থাকে।
ভাসিলা ভেঁড়ি।
তোদের চিনলো কি করে।
অনির মাধ্যমে।
কি করে সেটাই জিজ্ঞাসা করছি ?
আপনাদের অপনেন্ট পার্টির সঙ্গে ওদের মারপিট হতো এলাকা দখল নিয়ে, ওরা ইনজিওর্ড হলে অনি ওদের তুলে আনতো। আমরা বকলমে ট্রিটমেন্ট করতাম। সেই থেকে পরিচয়।
কজন এসেছে।
দুজন।
একটাকে নিয়ে আসতে পারবি।
ডাকছি।
কনিষ্ক বেরিয়ে গেল।
বিধানবাবু, সরকারী হাসপাতালের ডাক্তার দেখছেন। এরা নিশ্চই ভেতরে ভেতর আমাদের সংগঠন করে। না হলে অনির কথায় এ ধরনের কাজ করবে না।
মুখ চোখ ফোলা হাতে ব্যান্ডেজ বাঁধা একটা ছেলে ঘরে ঢুকলো।
হাতজোড় করে হাউ মাউ করে কেঁদে উঠলো। স্যার বিশ্বাস করুণ অনিদার নামটা আগে জানলে এ কাজ করতুম না।
তুই থামবি। কনিষ্ক ধমকে উঠলো।
বোস বোস।
টনা নিচে মাটিতে বসে পরলো।
তুই অনিকে চিনলি কি করে ?
অনিদা আমাদের ভেঁড়ি এলাকায় যায়।
কেন যায় ?
অনিদা আমাদের সংগঠনটা কি করে বারাব তার বুদ্ধি দেয়। তার বিনিময়ে অনিদাকে আমরা নিউজ দিই।
তোরা কোন সংগঠন করিস।

টনা বললো।
 
কোন ব্রাঞ্চ।
ভাসিলা এক নম্বর।
অনিদা আমাদের পার্টির মেম্বার নয় এটা জানিস।
অনিদা কোন খারাপ বুদ্ধি দেয় না।
অনেক লেখাপড়া জানা ছেলে অনিদার জন্য আমাদের সংগঠনে এসেছে। ওখানে অনিদা সকলকে পড়ায়। কনিষ্কদা, বটাদা, নীরুদা, অনিকেতদা সবাই যায়। চব্বিশঘন্টা জলে পরে থাকি ছেলেমেয়েদের রোগে চিকিৎসা করে, ওষুধ দেয়।
পয়সা নেয় না।
একি বলছেন স্যার। টনা কানে হাত দিল।
তোকে কনিষ্ক শিখিয়ে পরিয়ে নিয়ে এলো।
টনা আবার কান ধরে। কাল আমার বউ আমাকে মারবে স্যার। হাউ মাউ করে কেঁদে উঠলো।
কেন রে!
যদি জানতে পারে আমি অনিদার খবর নিতে এসেছিলাম।
অনিমেষদার সাথে সাথে সবাই হেসে ফেললো।
অরিত্র। অনিমেষদা চেঁচিয়ে উঠলো।
অরিত্র ঘরে ঢুকলো।
ওদের গ্রীণ সিগন্যাল দিয়ে দে। দু’জায়গাতেই। অনিমেষদা বললো।
দেখলাম ঘরে সবার মুখের চেহারা বদলে গেল।
অনুপ ফোনগুলো অন কর। এবার বাজতে শুরু করবে। বিধানদা বললো।
হ্যাঁরে অনিকে তোর বউ ভালবাসে।
গত মাসে আমার ছেলের ভাতে অনিদা আমার বাড়িতে জল ঢালা ভাত খেয়ে এসেছে। বলেছিল পরে গিয়ে গরম ভাত খাবে, আর যায় নি। আমার মুখ ফোলা দেখলে জিজ্ঞাসা করবে। মিথ্যে কথা বললে মনা বলে দেবে।
মনা কে রে!
নিচে আছে। ও ভাসিলা দুনম্বর ভেরি দেখে। আমার সম্বন্ধি।
ও অনিকে চেনে।
হ্যাঁ চেনে।
আবার কাঁদে। তোকে কে ব্যান্ডেজ বাঁধলো।
নীরুদা।
ছোট ঘুম হলো না। আর একটু চা খাওয়াবে। বিধানদা আবার বললো।
ছোটমা হাসতে হাসতে উঠে দাঁড়াল। অরিত্র ঘরে ঢুকলো। হাতে ফোন।
তোমার সঙ্গে একটু কথা বলবে। আমার হাতে ফোনটা দিল।
হ্যাঁ বলুন সিং সাহেব।
একবারে পরিষ্কার করে দেব।
বাংলায় হিন্দী টান। সবাই শুনছে।
ভিখিরী করে দিন। ওদিকেরটা।
ওটা ঘন্টা খানেক আগে খতম করে দিয়েছি।
কেউ পরেছে।
না একবারে ঠান্ডা ঠান্ডায় হয়ে গেল।
কালকে সিনপসিসটা পাঠান।
ঠিক আছে। ওই চারটেকে দিন।
কাজ শেষ হলে শ্যামবাজারের পাঁচ মাথার মোড়ে চলে আসবেন। ঘোঁড়ার ল্যাজ যেদিকে সে দিকে দাঁড়াবেন গাড়িতে তুলে দেব।
আমরা ঘন্টা খানেকের মধ্যে কাজ সেরে নিচ্ছি।
কাগজপত্র আছে।
সব স্পেশ্যাল ভাবে দিল্লীথেকে তৈরি করে আনিয়েছি।
ঠিক আছে।
অরিত্রর হাতে ফোনটা দিলাম। অরিত্র ফোনটা নিয়েই টেপাটেপি করে নিল।
তোরা একেবারে অনিদার মতো তৈরি হয়েগেছিস না। নো টেনসন ডু ফুর্তি। অনিমেষদা বললো।
বৌদি হাসছে।
বিধানবাবু এবার দেখছেন সুতপার মুখটা কেমন হাসি হাসি।
বিধানদা মিটি মিটি হাসছে।
কিরে অনুপ অনিকে আমাদের পার্টির সদস্য পদটা দিবি।
ভাবছি কামিং ইলেকসনে ওকে এমপি বানাব। ওর জন্য কোন প্রচারের দরকার নেই।
আমরা খাটব স্যার।
এ ব্যাটা বলে কি অনুপ।
টনার দিকে তাকিয়ে।
তোদের ওখানে গোপাল আছে না।
গোপালদা অনিদাকে ভয় পায়।
কেন।
কয়েকদিন আগে অনিদা ছট্টুকে মেরে দিয়েছে। কাগজে খপর বেরিয়েছে। গোপাল ওপারে চলে গাছে।
ওপারে মানে।
খুলনায় চলে গেছে।
কেন।
যদি অনিদা মেরে দেয়।
তাহলে অনিদা তোদের দাদা বল।
না না, অনিদা, অনিদা।
ছোটমা চা নিয়ে ঘরে ঢুকলো। এবার মিত্রা উঠে এলো। সবাইকে চা দিচ্ছে।
আমি উঠে দাঁড়ালাম।
তুই যাচ্ছিস কোথায়। অনিমেষদা বলে উঠলো।
একটু আসছি।
এগিয়ে যেতে টনা পা ধরে ফেললো। আবার কান্না।
কি হলো বলবি তো।
তুমি একটু মনাকে বলে দাও।
মনা কোথায়।
নিচে।
ছাড়, বলেদিচ্ছি। সকালে হাসপাতাল গিয়ে ওষুধ নিয়ে আসবি।
আমি দুটো ফুঁড়ে দিয়েছি। নীরু চেঁচিয়ে উঠলো।
ওই দেখুন বিধানবাবু এতোক্ষণ গলা পেয়েছিলেন ? এখন একটু একটু গলার স্বর বেরচ্ছে।
বিধানদা হাসছে।
বুঝলে ছোট, তোমাদের এখানে শোবার জায়গা থাকলে আর বাড়ি ফিরতাম না।
কেন আমার অতগুলো ঘর ফাঁকা পরে আছে। ডাক্তারদাদা চেঁচিয়ে উঠলো।
ডাক্তারবাবু ঠিক কথা বলেছেন। আপনারা দুজনেই কুমার অসুবিধা নেই। অনিমেষদা বললেন।
সবাই হাসছে।
ওরে যাচ্ছিস যা মারার অর্ডারটা দিস না। অনিমেষদা কথাটা ছুঁড়ে দিল।
আমি বেরিয়ে এলাম। ইসির সঙ্গে বারান্দায় দেখা হলো। বরুণদা ও নীচু স্বরে কথা বলছে। আমার পথ আটকাল।
যা নিচে গিয়ে শুয়ে পর।
ইসি আমার দিকে তাকাল।
কি দেখছিস ওমন করে।
তোকে ছুঁলে মনে হয় অনেক জম্মের পাপ থেকে মুক্ত পাব।
যা একটু শুয়ে পর, বরুণদার কাল অফিস আছে।
যাবে না।
জ্যেঠিমনি কোথায় ?
আর টেনসন নিতে পারল না। ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পারিয়ে দিয়েছি।
কে দিল।
তোর নীরু ডাক্তার।
হাসলাম।
হাসলি যে।
এমনি। সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে এলাম। কনিষ্ক পাশে পাশে এলো। নিচে আসতেই চিকনা জড়িয়ে ধরলো। সবাই ঘিরে ধরেছে। রতন, আবিদ, নেপলা, সাগির, অবতার কাকে বাদ দেব।
একটা সিগারেট দিবি।
বটাদা। চিকনা চেঁচালো।
বটা এগিয়ে এলো। সিগারেট দিল।
রতন।
বলো দাদা। ওমকে একবার ফোন কর।
ওম ওখান থেকে মালদের নিয়ে হাওয়া হয়ে গেছে।
কেন।
আবিদ কি গন্ধ পেয়েছে।
এখন কোথায় আছে।
পিলখানায়। আবিদের খাশ ডেরায়।
ওদের হ্যান্ডওভার করতে হবে।
কাজ শেষ!
হ্যাঁ।
রতন দু’হাত তুলে একবার ঝাঁকুনি দিল।
মনা কোথায়রে ?
নিচের ঘরে শুইয়ে রেখেছি। নীরু বললো।
কেনরে।
মারটা একটু বেশি পরে গেছে দাদা। নেপলা মাথা নীচু করে বললো।
ভাঙ্গা ভাঙ্গি করেছিস না কি ?
না চোখটা একটু কালসিটে পরে গেছে।
ছাগল তুই থাকতে এতোটা মারল কেন। কনিষ্কর দিকে তাকালাম।
আমি তুই নিচে নামার আগেই কাজ সেরে দিয়েছে।
চল দেখি।
আমি নিচেরে ঘরে এলাম। দেখলাম মনা গুটি সুঁটি মেরে শুয়ে আছে। আমি ওর পাশে বাবু হয়ে বসলাম। সত্যি বেচারার মুখটা ফুলে একাকার হয়ে গেছে। আমি মাথায় হাত রাখলাম।
মনা।
মনা চোখ চাইল। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।
আমি অন্যায় করে ফেলেছি দাদা।
কাঁদে না।
শালা প্রবীরকে কালই হাঁসুয়াদিয়ে টুকরো করে দেব।
আমি ওর মাথাটা কোলে তুলে নিলাম। আস্তে আস্তে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম।
পাগল, আগে আমার নামটা বলবি তো।
কি করে জানব। এটা তোমার বাড়ি। সেই তুমি গেলে একমাস আগে ভাগ্নের অন্নপ্রাসনে, আর গেলে না।
কেন, কনিষ্করা যায় নি।
একমাত্র অনিকেতদা গেছিল দু-বার। বললো তোমার সঙ্গে দেখা হয় নি।
কথা বলিস না। কষ্ট হবে।
শালা ওর জন্য মার খেলাম।
নীরুদা ওষুধ দিয়েছে।
হ্যাঁ।
একটু ঘুমো। কাল সকালে বাড়ি পৌঁছে দেব।
আজ রাতেই ফিরব। কাল মিটিং আছে।
ঠিক আছে কনিষ্কদা পৌঁছে দিয়ে আসবে সকালে।
কিছু খেয়ে বেরিয়েছিলি।
সেই দুপুরে বেরিয়েছি।
কনিষ্ক দেখনা কিছু খাবার আছে কিনা।
অনেক আছে।
যা টনাকে নিয়ে আয়। দু’জনকে বসিয়ে দুটো খেতে দে।
চিকনা দৌড়ে বেরিয়ে গেল। ওরা আমাকে ঘিরে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। চোখটা ছল ছল করে উঠলো।
তুমি কাঁদছ কেন।
মনা আমার হাতটা ধরে ফেললো।
আমি অন্যায় করেছি, শাস্তি দিয়েছে।
কেন অন্যায় করতে গেলি।

না জেনে করে ফেলেছি দাদা।
 
এখানে ভিড় করে কি করছিস সবাই। অনিমেষদার গলা।
ভিড়টা একটু সরে গেল। দেখলাম গেটের সামনে ওরা সবাই। আমাকে এই অবস্থায় দেখে ওরা এগিয়ে এলো মিত্রা এসে পাশে বসলো।
মনা আধচোখ বন্ধ ফোলা মুখে তাকিয়ে তাকিয়ে মিত্রাকে দেখছে।
তোর বৌদি।
মনা উঠে বসতে গেল। মিত্রার পা ছুঁতে চাইল। একটু হাসার চেষ্টা করলো, পারল না। দুফোঁটা জল চোখ দিয়ে গড়িয়ে পরলো। অনিমেষদা, বিধানদা স্থানুর মতো দাঁড়িয়ে।
তুই শুয়ে থাক। কিছু খেয়ে নে।
আমি ওর চোখটা মুছিয়ে দিলাম। আস্তে করে ওর মাথাটা বালিসে রাখলাম।
উঠে দাঁড়ালাম। অনিমেষদার দিকে তাকালাম।
নিজের চোখে একবার দেখ, সত্যি কারের যারা পার্টিটাকে ভালবাসে তারা এইভাবে মার খায়। আর বাবুরা এসি গাড়ি চড়ে।
গমগম করে উঠলো আমার গলাটা। কোথাও দাঁড়ালাম না। কারুর দিকে তাকালাম না। ফোনটা বার করে ডায়াল করলাম।
সিংজী কি খবর।
কাম শেষ করলাম।
এমন দিন মুখের জিওগ্রাফি যেন বদলে যায়। বাকিটা আমি বুঝে নেব।
কি বলছেন অনিবাবু, এ আপনার রাগের কথা।
আপনি না পারলে, আমি অন্য ব্যবস্থা করবো।
ঠিক আছে ঠিক আছে। আপনি রাগ কিয়েন না।
ক্যাশ কতো পেলেন।
আরে রাম রাম। কি বলবে আপনাকে। জালি নোট ভি আছে। নেতা লোককা ঘরমে গন্ধী সিডি ভি আছে। আপনা পত্রকার যে এসেছে সে ভি বলে দু-একজনকে চেনে।
কি বলতে চায় কি।
ফরফরা রাহা হ্যায় বোলে কি হামি দিল্লিমে বাত করবে। উধার কই ক্যাবিনেট মিনিস্টার লোগোকে সাথ।
ওকে তুলে নিয়ে চলে আসুন। এখন ফ্ল্যাশ করবেন না। কালকের দিনটা যাক তারপর দেখছি।
আপনার অনিমেষবাবু ভি ওহি বোলা। হামারা সাথ বাত হুয়া।
ঠিক আছে।
হামার ওহি লোক।
একমিনিট দাঁড়ান।
আবিদ।
দাদা দুমিনিট পর ফোন করলে হতো না।
সিংজি মিনিট পাঁচেক বাদে আপনাকে ফোন করছি।
আচ্ছা।
অনিমেষদা কাছে এগিয়ে এলো। আমার হাতটা চেপে ধরলো। অনুপদা আমার সামনে। কেউ কোন কথা বলছে না। ফ্যাল ফ্যাল করে আমার দিকে তাকিয়ে।
আবিদ ছুটে এলো, দাদা ওম রুবীর সামনে দাঁড়াচ্ছে। এই গাড়ির নম্বর।
আমি আবার সিংজীকে ফোন করলাম।
হ্যাঁ বলেন অনিবাবু।
গাড়ির নম্বর লিখুন।
হ্যাঁ বলেন।
গাড়ির নম্বর বললাম।
ওরা রুবীর সামনে দাঁড়াবে আপনার গাড়িতে তুলে দেবে।
ঠিক আছে অনিবাবু। কাজ শেষ হবার পর আমাকে একবার জানাবেন।
ফোনটা কেটে সেভ করলাম।
অরিত্র।
হ্যাঁ দাদা।
ওখানে কে আছে। সায়ন্তন আর অর্ক আছে।
অর্ক কখন গেল।
তোমার ম্যাসেজ পেয়েই অর্ক সায়ন্তনকে পাঠিয়ে দিয়েছিল, তারপর নিজে চলে গেছে।
কাজ হয়ে গেলে চলে আসতে বল। নিউজটা বেরবে না। সব ডকুমেন্টস রেডি রাখ। সময় হলে বলবো। আর কেউ খবরটা পায় নি ?
না।
অনুপদার দিকে তাকালাম।
অসুবিধে না হলে। ডাক্তারদাদার বাড়িতে গিয়ে একটু শুয়ে পরো। কাল সকালে কথা বলবো।
কারুর দিকে তাকালাম না। সোজা নিজের ঘরে চলে এলাম। ঘর অন্ধকার। রাস্তার নিওন আলোর কিছুটা ঘরে এসে পরেছে। টেবিলের ওপর রাখা সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বার করলাম। সোজা জানলার ধারে চলে এলাম। আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা।
টনা, মনা। শালা সম্বন্ধি। দুজনে ওই এলাকার নেতা। ডাকসাইটে এলাকার দাদা। এদের ভয়ে কেউ ওই তল্লাটে রা করতে পারে না। তাদের কি অবস্থা করে ছেড়েছে এরা।
কিন্তু দুজনে কতো ভালো। মনে পরে যাচ্ছে প্রথম দিনকার কথা। আমি গেছিলাম চিংড়ি মাছ নিয়ে লিখতে। ওদের ভেঁড়ি থেকে চিংড়িমাছ বিদেশে রপ্তানী হয়। কিভাবে চাষ হয়, কতদিন লাগে, কতটুকু অংশ বিদেশে যায় এই সব।
নতুন কেউ এলাকায় পা রাখলেই টনার কাছে প্রথমে খবর চলে যায়। তারপর মনার কাছে। অনেক নোংরামি ওই ভেঁড়ি এলাকায়। ফলে মানুষগুলো কিছুদিনের মধ্যে নোংরা হয়ে যায়। ওদের মন বলে আর কিছু থাকে না।
সারাদিন ভেঁড়িতে, রাতে মদ, জুয়া, মেয়ে নিয়ে নোংরামি। কি নেই।
আস্তে আস্তে ওদের মধ্যে ঢুকলাম। মাথার পোকাটা নরে উঠলো, মানুষের ভালো করতে হবে। একদিন টনাকে বললাম, এখানে একটা স্কুল করনা, বাচ্চাগুলো একটু লেখা পরা শিখুক।
রাখো তুমি অনিদা। তার থেকে ভেঁড়িতে জাল টানলে দুটো পয়সা আসবে।
অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে একটা স্কুল করলাম। তাও আবার ভেঁড়ির ধারেই পাহারা দেবার একটা টংয়ে। চারদিক খোলা। শীতকালে খোলা মাঠে। ওদের সঙ্গে যতোক্ষণ থাকতাম আমি উনা মাস্টার ওরা অনি হয়ে যেতো। নিজের দুষ্টুমিগুলো ওদের মধ্যে দিয়ে দেখার চেষ্টা করতাম।
বেশ ভালো লাগতো। প্রথম প্রথম কনিষ্করা যায় নি। ওদের ভাড়ি ধরণের শরীর খারাপ হলে, চিঠি লিখে কনিষ্কদের কাছে পাঠাতাম। পরে একদিন কনিষ্ক বললো, আমাদের নিয়ে চল।
ওদের নিয়ে এলাম। টনা মনার সে কি আনন্দ। ওরা প্রস্তাব দিল, একটা ঘর করে দে। আমরা সপ্তাহে সপ্তাহে কেউ না কেউ আসবো। তোদের চিকিৎসা করবো। ওষুধ হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসতো। কিছু শ্যাম্পেল কপি ওদের দিত।
সারাদিন টেনসন কাজের চাপের মধ্যে যখন নাভিশ্বাস উঠতো ওদের ওখানে চলে যেতাম। কয়েকঘন্টা বেশ ভালো কাটতো। খাওয়া জুটতো কলাই করা থালায় মুড়ি, মাছভাজা।
একেবারে ঘরের তৈরি।
খোলা আকাশের তলায় জলের ধারে বসে আমরা আড্ডা মারতাম। কখনো কখনো ওরা চিংড়িমাছ ধরে ভেজে খাওয়াত। আমার মতো কনিষ্ক, বটা, নীরু, অনিকেত সবার মধ্যে একটা নেশা ধরে গেল। ভালোপাহাড়ের মতো এটাও আমাদের একটা এনটারটেনমেন্টের জায়গা।
এদিকে জড়িয়ে পরার পর আমি মাঝে মাঝে যেতাম, কনিষ্করা রেগুলার যাওয়া আসা করতো। আমাদের কিছু চাওয়ার ছিলো না। তাই ভালোবাসা কাকে বলে ওরা উজার করে দিত। ওরা বাম রাজনীতিতে বিশ্বাস করতো। আমরাও সবাই করতাম, ফলে মনের মিল হলো।
ওদের বুদ্ধি দিতাম কি ভাবে চলবি। তার ফল ওরা হাতে নাতে পেত। আমরা হয়ে পরলাম ওদের বিশ্বাসের স্থল। বেশ কাটছিল। গতমাসেই তো টনার ছেলেটার অন্নপ্রাসনে গেছিলাম।
মনের মধ্যে প্রচন্ড টেনসন।
কি করবো, হঠাৎ হাজির, গিয়ে দেখি টনার ছেলের অন্নপ্রাসন। ওর বউ কিছুতেই ছাড়বে না। আমারও কাজ আছে। চলে আসবো। বাধ্য হয়ে পান্তা খেয়ে চলে এলাম। ওর বউটা কাঁদছিল। অনিদা তোমাকে গরমভাত খাওয়াতে পারলাম না।
বলেছিলাম পরে একদিন এসে খেয়ে যাব। সেই শেষ যাওয়া। আর আজ।
বুকের ভেতর কে যেন পাথর চাপা দিয়ে রেখেছে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। জানলার ধাপিতে হাতটা রেখে মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে ছিলাম। অন্ধকারের মধ্যেও আমগাছের পাতা গুলোকে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি।
ঘরের লাইটটা জ্বলে উঠলো। ফিরে তাকালাম। গেটের মুখে বড়মা, ছোটমা, বৌদি, মিত্রা, ইসি।
জোড় করে হেসেফেললাম। জানলা থেকে পায়ে পায়ে এগিয়ে এলাম। কাছে এসে দাঁড়ালাম।
অনিমেষদারা ডাক্তারদাদার বাড়িতে গেছে ?
বৌদি মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বললো। দাদা, মল্লিকও গেছে।
কনিষ্করা ফিরে গেছে।
ওরা নিচের ঘরে শুয়েছে।
তোমরা একটু শুয়ে পরো। নাহলে সকালে উঠতে পারবে না।
বড়মা ছোটমা আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে। ইসি মিত্রা আমাকে অবাক হয়ে দেখছে।
হেসে ফেললাম। কি দেখছো অমন করে।
ছোটমা জড়িয়ে ধরলো। আরও কতো ব্যাথা এই বুকে লুকিয়ে রেখেছিস।
এই দেখো বোকার মতো কাঁদে। অনি ঠিক আছে, একটুও বিগড়ে যায় নি। যাও অনেক রাত হয়েছে।
দেখলাম ইসির চোখ দিয়ে নিঃশব্দে জল গড়িয়ে পরছে।
তোমরা এরকম করলে চলে কি করে। আমার যা কিছু, সব তোমরা। তোমরা এরকম করলে অনি দুর্বল হয়ে পরবে। তোমরা কি এটা চাও। যাও আর দেরি করো না।
ছোটমা আমাকে ছাড়ল।
তোমরা কোথায় শোবে নিচে না ছোটর ঘরে।
দেখি। বৌদি বললো।
তুমি অনিমেষদাকে কিছু বলো না। দাদা বড়ো একা হয়ে পরেছে।
বৌদি মাথা নীচু করে কাপরের খুঁট দিয়ে চোখ মুছলো।
আমি ওদের ধরে নিয়ে বারান্দা দিয়ে আস্তে আস্তে ছোটমার ঘরের কাছে এলাম।
একবার করে সকলকে জড়িয়ে ধরলাম।
সবাই আবেগে আপ্লুত। ইসিকে বললাম, অনিকে দশ বছর পর দেখছিস, অনি হয়তো অনেক নোংরা হয়ে গেছে। পারলে ক্ষমা করিস।
ইসি আমাকে জাপ্টে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।
ওদেরকে ছোটমার ঘরে ঢুকিয়ে আমি মিত্রা ফিরে এলাম। দুজনে ঘরে ঢুকতে গিয়ে দেখলাম ওরা ছোটমার ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। হাতনাড়লাম। ওরা ঘরে ঢুকে গেল।
আমরা দরজা বন্ধ করলাম।
পায়ে পায়ে টেবিলের সামনে এলাম। মোবাইলটা টেবিল থেকে তুলে নিলাম। স্যুইচ অফ করা ছিল অন করলাম। দেখলাম কয়েকটা মিস কল। তার মধ্যে সিংজীর মিশ কলও আছে। অর্ক একটা ম্যাসেজ করেছে।
তোমার মতিগতি বোঝা মুস্কিল, কতো কষ্ট করে মালটা তুললাম, অরিত্র বললো যাবে না।
বুবুন।
মিত্রা আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
আমি ওর দিকে তাকালাম। চোখ ছল ছল করছে।
আমার সঙ্গে একজায়গায় যাবি। আমি বললাম।
এখন ? কোথায়!
তুই বুবুনকে ভালবাসিস। তাহলে প্রশ্ন করছিস কেন।
মিত্রা আমার বুকে মুখ রাখলো।
একটু দাঁড়া।
আমি সিংজীকে ফোন করলাম।
বলুন অনিবাবু।
আপনি কি অফিসে।
হ্যাঁ।
একটা গাড়ি পাঠাতে পারবেন।
আভি।
হ্যাঁ।
কোথায় বলেন।
আমার বাড়ির সামনে।
ওই ট্র্যাংগুলার পার্কে।
হ্যাঁ।
গাড়িটাকে বাড়ির থেকে একটু দূরে দাঁড়াতে বলবেন।
ঠিক আছে আমি আভি পাঠিয়ে দিচ্ছে।
আর একটা কথা।
বলেন।
কোন কেশ লিখবেন না। আমি না যাওয়া পর্যন্ত।
এ কি বলছেন অনিবাবু!
আমি গিয়ে বলছি।

ঠিক আছে আপনি আসেন।
 
মিত্রা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ওকে ঠোঁটের ওপর আঙুল দিয়ে চুপ থাকার ইশারা করলাম। আলমাড়িটা আস্তে করে খুলে পার্টনারের স্টাম্প এবং প্যাড বার করলাম।
মিত্রার হাতে দিলাম।
একটু ধর। আমি নিচে গিয়ে ইশারা করলে পা টিপে টিপে চলে আসবি।
ওর চোখ দুটো চক চক করে উঠলো। মুখে এক চিলতে হাসি।
আমি ঘরের লাইটটা নিভিয়ে দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। নিঃশ্বাসে বুঝতে চেষ্টা করলাম কেউ জেগে আছে কিনা। দেখলাম সারা বাড়ি নিস্তব্ধ। পা টিপে টিপে নীচে নেমে এলাম। গেটে তালা ঝুলছে। দেখলাম ছগনলালের ঘরের দরজাটা সামান্য ভেজান আছে।
একটু ঠেলতেই খুলে গেল। আমি জানি দরজার পাশেই একটা হুকে চাবিটা ঝোলান থাকে। হুকথেকে চাবিটা নিয়ে বারান্দায় তাকালাম। দেখলাম মিত্রা বারান্দায় দাঁড়িয়ে। ওকে ইশারায় ডাকলাম। ও নিচে চলে এলো। আস্তে করে গেটের তালাটা খুলে। একটু ফাঁক করে মিত্রাকে প্রথমে বাইরে বার করলাম, তারপর নিজে বেরিয়ে এলাম।
তালাটা লাগিয়ে চাবিটা ছুঁড়ে বাগানের রাস্তায় ফেলেদিলাম। যাতে সকালে কারুর কনো অসুবিধা না হয়। দুজনে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম। চারিদিক শুনশান। জনমানব শূন্য। দু একটা রাস্তার কুকুর গুটি শুঁটি মেরে শুয়ে আছে।
আমাদের দুজনকে একবার মুখ তুলে দেখে ওউ ওউ করে ডেকে উঠলো। মিত্রা আমার হাতটা শক্ত করে ধরেছে। দুজনে হন হন করে হাঁটছি। ট্র্যাংগুলার পার্কের কাছে আসতে দেখলাম গাড়িটা এসে কাছে দাঁড়াল।
স্যার আপনি অনিবাবু।
হ্যাঁ।
দু’জনে গাড়িতে উঠে বসলাম। ড্রইভার সাহেব মোবাইলে আমাদের ওঠার সংবাদ পৌঁছে দিলেন।
দুজনে গাড়ির পেছনের সিটে স্থানুর মতো বসে আছি। কাল রাতের পোষাক এখনো ছাড়া হয়ে ওঠে নি। কারুর মুখে কনো কথা নেই।
মিত্রাকে ইশারায় বললাম মোবাইলের স্যুইচ অফ করে দে। মিত্রা মোবাইলের স্যুইচ অফ করে দিল। দুজনে দুজনের দিকে তাকাই আর মিটি মিটি হাসি। গাড়িটা সল্টলেকে ওদের দফতরে যখন এসে পৌঁছল দেখলাম ভোরের আলো ফুটছে।
গাড়ি থেকে নামতেই দেখি সিংজী গেটের কাছে দাঁড়িয়ে। এগিয়ে এলেন। হাসছেন।
একি অনিবাবু, একেবারে ভাবিকে সঙ্গে করে লিয়ে এসেছেন।
মিত্রার সঙ্গে সিংজীর পরিচয় করিয়ে দিলাম।
সিংজী।
বলুন।
আমরা যে এখানে এটা কাউকে জানাবেন না।
ঠিক আছে।
প্রবীরদা কোথায় ?
ভেতরে।
কেশ লিখে ফেলেছেন।
না বেলের অর্ডারটা লিখেছি। আপনি জামিন নিবেন। আপনার মতো লোক জামিন করাতে এসেছে। আমি না ছেড়ে পারি কি করে।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
পায়ে পায়ে ভেতরে চলে এলাম। বাইরে কিছু লোককে দেখলাম। আমাদের দেখে চাপাস্বরে কিছু কথা বলছে। ভেতরে আসতেই দেখলাম প্রবীরদা সিংজীর ঘরে মাথা নীচু করে বসে আছে।
আমাদের দুজনকে এইভাবে এই পোষাকে দেখবে কল্পনাও করতে পারে নি। ঝট করে উঠে দাঁড়ালো। ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললো।
মিত্রা প্রবীরদার পিঠে হাত বুলতে বুলতে বললো, একি করছেন প্রবীরদা।
তুই আমাকে প্রবীরদা বলিস না। তোর মুখে ওই নামটা শোভা পায় না।
ওকে ছাড়ুন, বুবুনের এখন অনেক কাজ।
প্রবীরদা আমাকে ছেড়ে দিয়ে চোখ মুছছে।
তোমার মোবাইলটা কোথায়।
বাইরে।
কার কাছে আছে।
তোর বৌদির কাছে।
যাও গিয়ে বলে এসো, মোবাইলের স্যুইচ অফ করতে। আমরা যে এখানে আছি কেউ যেন জানতে না পারে। যে চেলারা এখানে এসেছে, তাদের যেন মুখ বন্ধ থাকে। লোকাল, ব্রাঞ্চেও খবর পাঠিয়ে দাও।
মিত্রার দিকে ঘুরে তাকালাম।
তুই প্রবীরদার সঙ্গে থাক। আমি ভেতরে যাই।
আমি সিংজীর সঙ্গে ভেতরে চলে এলাম। সব গুছিয়ে কাজ সারতে প্রায় দেড় ঘন্টা লাগলো। আমাদের অফিসের প্যাডে চার রকমের চিঠি লেখা হলো। সব আইন বাঁচিয়ে, আমি মিত্রা দুজনে সই করলাম। প্রায় গোটা পঁচিশেক। সব জায়গাতেই অফিসের স্টাম্প লাগাতে হলো। কাজ শেষে সিংজীকে বললাম চলুন আমার বাড়িতে।
এখন না, খুব টায়ার্ড।
আমার থেকেও।
সিংজী হেসে ফেললেন।
বাইরে বেরিয়ে এলাম।
সিংজীর কাজ সেরে বেরিয়ে আসতে আরও পনেরো মিনিট সময় নিলো।
বাইরে বেরতেই প্রবীরদা একচোট জড়িয়ে ধরে আবার হাপুশ নয়নে কেঁদে উঠলো।
এখন ছাড়ো। চলো দেরি হয়ে যাচ্ছে।
মিত্রা প্রবীরদার স্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিল। পিকুর মতো প্রবীরদারও একটা ছেলে আছে। ওর গালটা ধরে একটু নেড়ে দিলাম।
তোমার গাড়ি আছে।
হ্যাঁ।
তুমি মিত্রাকে নিয়ে তোমার গাড়িতে বসো। আমি সিংজীর গাড়িতে বসছি।
প্রবীরদা বাধ্য ছেলের মতো আমার কথা শুনলো।
সবাই গাড়িতে উঠে যাত্রা শুরু করলাম। বাড়ির গেটের মুখে এসে যখন দাঁড়ালাম, তখন সূর্য অনেকটা ওপরে। আমি প্রথম গাড়ি থেকে নামলাম। গেটের মধ্য দিয়ে উঁকি মেরে দেখলাম। অনিমেষদা, বিধানদা, দাদা, মল্লিকদা, ডাক্তারদাদা বসে আছে অনুপদা, রূপায়ণদাকে দেখতে পেলাম না। আমি গেটের দরজা খুললাম। ওরা সবাই নেমে এসেছে।
প্রবীরদা এসে আমার হাতটা চেপে ধরলো। দূর থেকে দেখলাম ওরা সবাই উঠে দাঁড়িয়েছে। বিধানদার মুখে একচিলতে হাঁসি। এই হাঁসি এবার সবার মুখে ছড়িয়ে পরলো। পায়ে পায়ে ওরা এগিয়ে আসছে। অনিমেষদা ফোনের বোতাম টিপছে।
ডাক্তারদাদা চেঁচিয়ে উঠলো, বান্ধবী দেখবে এসো তোমার ছেলের কীর্তি।
আমরা বাগানে ঢুকে পরেছি। নিচের বারান্দায় চেনা মুখের ভিড়। বিধানদা এসে আমার কাঁধটা জোড়ে ঝাঁকিয়ে দিয়ে বুকে টেনে নিল।
বিধানবাবু সব মাংস আপনি খেলে আমি কি ঝোল খাব।
বিধানদা আমাকে ছেড়ে মিত্রাকে বুকে টেনে নিল।
তোদের দুটোকে কেউ হারাতে পারবে না। তোরা সকলকে বুকে করে আগলে রাখিস।
প্রবীরদা মাথা নীচু করে কেঁদে চলেছে। সবাই মাঠের মধ্যে আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
সবার চোখেই বিষ্ময়।
অনিমেষদা ফোনটা পকেটে রেখে আমার দিকে তাকাল।
আয় আমার বুকে আয়। তোর মতো আমার বুক অতোটা চওড়া নয় বুঝলি।
সবাই আমার দিকে কেমন অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।
কি প্রবীর জীবনে প্রথম কাঁদছো। এটা হেরে যাওয়ার কান্না, না দুঃখের।
বিধানদা প্রবীরদার সামনে দাঁড়িয়ে।
অনিকে আমি নিজের হাতে তৈরি করিনি। ওকে প্রকৃতি তৈরি করেছে। তোমাদের নিজে হাতে গড়েছি। এখন দেখছি মানুষ গড়তে গিয়ে বাঁদর তৈরি করে ফেলেছি।
প্রবীরদা মাথা নীচু করে।
কি বনানী। অনির সম্বন্ধে অনেক কথা পার্টি অফিসে গিয়ে আমাকে বলেছো। মুখ বুঁজে তোমার সব কথা শুনেছি। কোন উত্তর দিই নি। আজ তোমার প্রশ্নের উত্তর পাচ্ছ।
ওঃ বিধানবাবু।
থামো অনিমেষ। ওইটুকু দুধের শিশু কেমন তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে দেখ। ও কি শিখবে। আমাদের কীর্তি কলাপ।
ঠিক আছে, ঠিক আছে। এখন ওরা এসেছে। চলুন ভেতরে যাই।
আমি মিত্রা তখন বড়মা ছোটমা বৌদির সামনে দাঁড়িয়ে। ওরা অবাক চোখে দেখছে।
এমা তুমি ভয় পাচ্ছ কেন আমরা ঠিক আছি। মিত্রার গলা কানে এলো।
থাম তুই, তুইও দেখি অনির মতো ফর ফর করছিস।
বড়মার কথায় ডাক্তারদা হেসে ফেললো। হাসি একটা রোগ। সবাই হাসছে।
বড়মা বাঁকা চোখে একবার ডাক্তারদাদার দিকে তাকাল।
আমি বৌদির বুকে আশ্রয় নিলাম। আমার পিঠে হাত বুলচ্ছে বৌদি।
তুই যে মায়াবী আগে অনুভব করতাম, আজ চাক্ষুষ দেখলাম।
আমি বৌদির গালে গাল ঘোষলাম।
দেখলাম পিকু বাবু ছুটতে ছুটতে বাইরে এলো। ঠোঁটে দুধের দাগ। তারমানে দুধ খাচ্ছিল।
আংকেল আজ নেমন্তন্ন খাব না।
আমি বৌদিকে ছেড়ে ওকে কোলে তুলে নিলাম। ছোটমার দিকে তাকালাম।
তুইতো দুধ খেলি, আমাকে চা খেতে দে, তারপর নেমন্তন্ন খাব।
ছোটমার কাছে গেলাম, পিকু আমার কোল থেকে মিত্রার কোলে চলে গেল। ছোটমার কাঁধটা ঝাঁকিয়ে বললাম, একটু চা দাও। আর পারছিনা।
ছোটমা আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
দু’জনে জড়ামরি করে বারান্দায় উঠে এলাম।
বুঝলে ছোট এবার জামা কাপরটা ছাড়ি। কাল থেকে পরে আছি।
ছোটমা আমার দিকে ডাগর চোখে তাকাল।
বসার ঘরে এলাম। দেখলাম জ্যেঠিমনি থম মেরে বসে আছে। কালকের শেষটুকু জানেনি। আজ মনে হয় জেনেছে। আমাকে দেখে হাসলো।
একটু জল খাওয়াবে।
ছোটমা আমার মুখে হাত বুলিয়ে, রান্নাঘরের দিকে গেল। দেখলাম দামিনী মাসি উঁকি দিয়ে একবার দেখে ভেতরে অদৃশ্য হয়ে গেল। ঠোঁটে এক ঝলক হাঁসি।
আমি সোফাতে গা ছেড়ে দিয়েছি।
ছোটমা এক গ্লাস জল এনে দিল। ঠোঁটে স্পর্শ করলাম।
কই অনি, অনি কই চেঁচাতে চেঁচাতে অনুপদা, রূপায়ণদা, নিরঞ্জনদা, ইসলামভাই, রতন, আবিদ, নেপলা, চিকনা, অনাদি ঢুকলো।
অনুপদা ছুটে এসে আমার পায়ের কাছে বসলো। কোলে মাথা রেখে কেঁদে ফেললো।
আমি গ্লাসটা ছোটমার হাতে দিলাম।
নিজেকে ভীষণ অপ্রস্তুত লাগছে। ওরা সবাই আমার দিকে তাকিয়ে।
এই অনুপ এ কি হচ্ছে। ছোটমা অনুপদার কাঁধে হাত রেখেছে।
না বৌদি না। ও আমাদের চাপগে চাপগে শিক্ষা দিচ্ছে, কি ভাবে মানুষকে ভালবাসতে হয় দেখো। ক্ষমতাটা শুধু দাঁপের নয়, ভালবাসার জোড় তার থেকে অনেক বেশি।
ঠিক আছে, ওঠো।
আ-মোলো ওটা আবার ওখানে বসে বসে চোখের জল ফেলে কেন। আমরা মেয়ে কাঁদতে পারি, তোরা সব ব্যাটাছেলে, কাঁদিস কেন।
অনুপদা আমার কোল থেকে মাথা তুললো মুখে কান্নাভেঁজা হাঁসি। সবাই ঘরে ঢুকেছে। দেখলাম সিংজীও এসেছেন। সবাই এলো। আমি উঠে দাঁড়ালাম।
মিলি টিনা এসে জড়িয়ে ধরলো। মুখটা শুকনো শুকনো।
কোথায় গেছিলে, দেখতে পেলাম না।
ওদের নীরুদার নার্সিংহোমে রেখে এলাম।
কেন।
শরীরটা খারাপ হয়েছিল।
কনিষ্ক কোথায় ?
এখুনি এসে পরবে।
ওরা ভাল আছে।
কনিষ্কদা বললো। অনেকটা রক্ত বেরিয়েছে। রক্ত দিতে হবে।
জোগাড় করতে পেরেছে।
হ্যাঁ।
আমি মোবাইলটা পকেট থেকে বার করলাম।

ওটা বার করছিস কেন। চলে ?
 
বড়মা খ্যার খ্যার করে উঠলো।
বড়মার দিকে তাকিয়ে হাসলাম।
ওরকম গা জ্বালান হাসি হাসিস না।
উঃ দিদি। ছোটমা বলে উঠলো।
থাম তুই।
ছোটমা মাথা নীচু করলো।
আজকে ওর পাল্লায় পরে মেয়েটাও মোবাইল বন্ধ করে রেখেছে। দুটোতে মিলে যুক্তিকরে আমাদের মারার তালে রয়েছে।
জ্যেঠিমনি হাসছে।
আমি কি করবো, বুবুন বললো মোবাইল বন্ধ করে দে। আমি বন্ধ করে দিলাম।
সোহাগী আমার দেখ কেমন। খেতে বসিস পাশে, কান ধরে উঠিয়ে দেব। বড়মা চিবিয়ে চিবিয়ে বললো।
মিত্রা গিয়ে বড়মাকে জড়িয়ে ধরলো।
তুমি এরকম করলে চলে কি করে বলো।
রাখ তোদের চলন বলন। তিরিশ বছর ধরে ঘর করছি, বাপের জম্মে এমন দেখি নি।
কি বান্ধবী তোমার প্রেসারটা একবার মাপবো।
রাখো তোমার ডাক্তারী।
আমি ঘরের বাইরে আসতে চাইলাম।
ওই দেখ ছোট ও বাইরে যাচ্ছে। আজ একপাও বেরবি না বলে দিচ্ছি, তাহলে অনাসৃষ্টি হবে।
আচ্ছা আচ্ছা ও বেরবে না। আমি কথা দিচ্ছি। অনিমেষদা বললো।
রাখ তোমার কথা। তোমাদের কারুর কথা ও শুনেছে। ও ওর নিজের মতো চলছে, কালকে ধরে যাকে ঠেঙাল, আজ সকালে তাকে নিয়ে হাজির। তোমরা কেউ আগে থেকে জানতে পেরেছিলে।
বড়মা এক তরফা বলে যাচ্ছে। সবাই মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে।
বড়মার কথাটা যেন আমার কানেই ঢোকে নি। এমনভাবে আমি বারান্দায় বেরিয়ে এলাম। মোবাইল থেকে কনিষ্ককে একটা ডায়াল করলাম।
মিত্রা এসে পাশে দাঁড়াল। সঙ্গে ইশি, মিলি, টিনা।
কখন ফিরলি।
আধঘন্টা হলো।
খবর পেয়েছি। শোন মনার চোখটা একটু প্রবলেম হয়েছে। কয়েকদিন থাকতে হবে। অনিকেত কে পাঠিয়ে দিয়েছি ওর বাড়িতে খবর দিতে। বলেছি সামলে দিস।
পারবে ?
পারবে।
আমাকে যেতে হবে।
না। বটা সেন স্যারকে ধরে আনতে গেছে।
কে, শ্যামল সেন।
হ্যাঁ।
অপারেসন করতে হবে।
না মনে হয়। চোখের ভেতরে ব্লাডটা ক্লড করে গেছে।
দেখ চেষ্টা করে, গায়ে গতরে খেটে খায়। চোখ চলে গেলে খাবে কি।
কনিষ্ক চুপ করে আছে।
কখন আসবি ?
ঘন্টা খানেক বাদে।
সোজা ওপরে চলে এলাম। নিজের ঘরে।
ফোনটা টেবিলে রাখলাম। মনটা খারাপ হয়ে গেল। পাঞ্জাবীটা খুলতে গিয়ে দেখলাম। ঘরের দরজার সামনে পাঁচ মূর্তি হাজির। দাদা, মল্লিকদা, ইসলামভাই, ডাক্তারদাদাও আছে।
খোল খোল কাল থেকে পরে আছিস। অনিমেষদা ভেতরে ঢুকল।
থাক পরে খুলবো।
তুই ওদের জন্য ভাবিস না, ওদের সব চিকিৎসার খরচ পার্টি দেবে।
দাঁড়িয়ে রইলে কেন, বসো।
অনিমেষদারা সকলে ভেতরে এলো। আমি আর জামা খুললাম না।
তোমরা একটু বসো, আমি চোখে মুখে একটু জল দিয়ে আসি।
যা।
আমি বাথরুমে ঢুকলাম। দাঁত মাজলাম। ভালকরে মুখ হাত ধুলাম। কাল রাত থেকে যা গেল।
সত্যি ভাবলেই কেমন যেন লাগছে।
অনুপদা ঠিক কথা বলেছে, বিয়ে তো করলি না যেন যুদ্ধ করলি।
বাথরুমের ভেতর থেকে বুঝতে পারছি ওরা সবাই এতক্ষণ ঘটে যাওয়া বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে যে আমি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বৌদির গলা পাচ্ছি। ডাক্তারদাদার গলাও পাচ্ছি। ঠিক বুঝতে পারছি না কি আলোচনা হচ্ছে।
আমি টাওয়েল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বাথরুম থেকে বেরলাম। বৌদি কাছে এগিয়ে এলো। মুখে হাত বোলাল। বুকে জড়িয়ে ধরলো। সবাই তাকিয়ে আছে।
এগুলো এবারে ছাড়।
ছাড়ছি। মিত্রা কোথায় গো।
কেন।
ওকে বলো কাগজগুলো দিতে।
স্নান করছে। বেরলে বলছি। ছোট লুচি ভাজছে, খাবি।
আমি একা।
বৌদি হাসলো। অনিমেষদার দিকে তাকাল। তোমরা ওকে এবার একটু ছাড়।
হ্যাঁ সুতপা ছেড়ে দেব। ও কোথায় শেষ করলো একটু শুনি।
আমাদের তারপর থেকে এগতে হবে। বিধানদা বললো।
বৌদি ঘর থেকে বেরতে গেল। গেটের মুখে ছোটমা। চায়ের পট হাতে।
জিজ্ঞাসা করেছো।
কিরে।
বাবু এখন ভিআইপি। খাবার সময় আছে কিনা।
ঘরের সকলে হাসছে।
বৌদি ছোটমা হাতে হাতে সকলকে চা দিল। আমার কাছে এগিয়ে এলো। হাতে কাপটা দিয়ে বললো, কনিষ্ক এসেছে। তোর কীর্তি কলাপ শুনছি।
অনিমেষদার দিকে তাকিয়ে, দাদা ভালো করে ওর খোঁজ খবর নিন, ওর আরও কটা টনা মনা আছে, কটা কনিষ্ক আছে।
সবাই হাসছে।
ও ছোট, থাক বেচারা কাল সকাল থেকে….। বৌদি বললো।
ওর সব ক্রিয়েটেড, খালি কাজ খোঁজে। তুমি দেখবে একটা না একটা ও করেই চলেছে। এই আট মাসে আমার আর দিদির হাড়মাস এক করে দিল।
আমি ছোটমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছি।
দেখছো দেখছো ওর হাসিটা দেখছো।
চল ও লুচি খাবে বলেছে।
আজ বাড়ি থেকে বেড়বার নাম করিস।
সবাই ছোটমার কথা শুনে যাচ্ছে এমনকি দাদা, মল্লিকদা, ডাক্তারদাদা পর্যন্ত প্রতিবাদ করছে না। ছোটমা বৌদি চলে গেল।
বিধানদা ইজি চেয়ারে। অনিমেষদা আমার খাটে। বাকি সবাই চেয়ারে।
অমিতাভবাবু।
বলুন।
একটা সিগারেট দিন।
দাদা প্যাকেটটা এগিয়ে দিলেন।
আয় এখানে এসে বোস।
আমি অনিমেষদার পাশে গিয়ে বসলাম।
দাদা মল্লিকদা আমার দিকে তাকিয়ে।
বিধানবাবু আপনি বলুন।
তুমি শুরু করো।
অনুপ।
বলুন।
আচ্ছা অশ্বিনীনগরের খবরটা কবে আসে আমাদের কাছে।
অনির বিয়ের দিন।
মিত্রার কথা মতো অনি কবে জেনেছে।
তার আগের দিন।
আচ্ছা প্রবীর ওই ব্যাপারটার সঙ্গে তোমার কোন ভাবে লিঙ্ক আছে।
প্রবীরদা চুপ করে আছে।
না প্রবীর তোমায় বলতে হবে। কাল তুমি অনির সঙ্গে ফোনে কি বলেছ তা আমরা শুনেছি। সবাই শুনেছে। অনি আমাদের পার্মিসন নিয়েই কথা বলেছে তোমার সঙ্গে।
ভদ্রলোক ওই ব্যবসা করেন। আমি সেল্টার দিয়েছিলাম।
তুমি আমাদের ব্যাপারটা জানিয়েছিলে।
দাদা। রূপায়ণদা বলে উঠলো।
বলো।
পুরনো ইতিহাসে গিয়ে লাভ নেই। প্রবীর অস্বীকার করতে পারবে না, এই ঘটনার সঙ্গে ও জড়িত নয়। আমি সকালে অনিকে খুঁজতে গিয়ে আরও খোঁজ খবর নিয়েছি। পরে বলবো আপনাকে। তারাও দেখলাম অনিকে চেনে।
আমি মাথা নীচু করে বসে আছি।
ডাক্তারদাদা হাসছে।
বিধানবাবু আপনি বলুন।
অনি।
আমি মুখ তুললাম।
প্রবীরকে কি বলে নিয়ে এলি।
প্রবীরদা কোন অন্যায় করে নি।
বিধানদা হেলান দিয়ে শুয়ে ছিল। তড়াক করে উঠে বসলো।
কি বললি।
প্রবীরদা নির্দোষ।
ছোটমা, বড়োমা, বৌদি, জ্যেঠিমনি ঘরে ঢুকলো।
বড়োমা পরিষ্কার বললো, ও অনিমেষ আমরা তোমাদের কথা শুনবো, যেতে বলবে না। না হলে টিঁকে ওঠা দায় হয়ে উঠছে।
বিধানদা হাসতে গিয়ে কেশে ফেললো।
ঠিক আছে বসুন।
ছোটমা বৌদি সকলকে খাবার প্লেট এগিয়ে দিল।
বিধানদা লুচির প্লেট হাতে নিয়েই বললো।
ছোট খাওয়া হলে একটু চা খাওয়াবে।
হ্যাঁ দাদা সব নিয়ে চলে এসেছি।
লুচি কয়েকটা বেশি নিয়ে এসেছো। ডক্তারদাদা বললো।
আ মরণ খাও না। দেবে খোন।
অনুপদা হেসে ফেললো।
বড়মা, ছোটমা আমার দুপাশে। বড়মার পাশে জ্যেঠিমনি, ছোটমার পাশে বৌদি।
হ্যাঁগো বিধানবাবু অনি ঠিক ঠিক জবাব দিচ্ছে। বড়মা বললো।
বিধানদা খেতে খেতেই বললো। সবে ইন্ট্রোগেসন শুরু করেছি। প্রথমেই ও চ্যাপ্টার ক্লোজ করে দিল।
আমি বড়মার দিকে তাকালাম।
দেখছো তোমরা, কেমন ভাবে তাকায়। এখুনি বলবে তোমরা থাকো আমি চললুম।
তুমি থামো। খালি বক বক। দাদা বললো।
ধমকাও কেন, এতদিনে তুমি কিছু করতে পার নি।
আমি কি ওর পেছন পেছন ঘুরি।
ঘুরতে কে মানা করেছে।
বিধানদার খাওয়া শেষ।
কোথায় রাখি বলো ছোট।
দাদা আর দুটো নিন।
আবার তোমাদের নিচে যেতে হবে।
না না নিয়ে এসেছি।
দাও তাহলে। বাটি চচ্চড়িটা ভারি সুন্দর করেছো।
এটা অনির প্রিয় খাবার, ওর জ্যেঠিমনি করেছে।
বাঃ বাঃ। তাহলে অনিবাবু।
আমি বিধানদার দিকে তাকালাম।

তাহলে প্রবীর কোন দোষ করে নি।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top