বলা যাবে না।
অন্যদিন কাজটা করলে হতো না।
না।
আমায় জিজ্ঞাসা করলে কি জবাব দেব।
বলবে সকালে উঠে চলে গেছে, দেখা হয়নি।
কখন আসবি।
বলতে পারছিনা।
তারমানে!
কাজটা শেষ করে আসতে হবে।
কালকেই করতে হবে।
ভেবেছিলাম তোমাকে বলবো না। তোমরা কেউ জানতেই পারবে না। তখন কথায় কথায় বললে একটু বললে যদি ঝামেলা কমে তাহলে বলবিনা কেন তাই হিন্টস দিলাম।
ফোনটা অন্ততঃ পক্ষে খোলা রাখিস।
হয়তো হবে না।
দুপুরে এসে খাবি।
চেষ্টা করবো।
আবার কোন গন্ডগোল পাকাচ্ছিস।
না।
ঠিক।
তুমি বিশ্বাস করতে পার।
ভজুরাম মাথাটা বেশ ভালো ম্যাসাজ করে। এমনভাবে টেপে মাথাটা একেবারে হাল্কা হয়ে যায়। কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি জানি না। ঠিক সময়ে ঘুম ভাঙলো। উঠে দেখলাম ওরা দু’জনে অঘোরে ঘুমচ্ছে। আমি মুখ হাত ধুয়ে ফ্রেস হলাম। জামা প্যান্ট পরলাম। আলমাড়ি থেকে জাঙ্গিয়া বার করে পরতে ভুললাম না। ফ্ল্যাটের চাবিটা দেখে নিলাম টেবিলের ওপর আছে কিনা। মোবাইলের ঘরিতে দেখলাম, পৌনে পাঁচটা বাজে। বাইরে হাল্কা আলো। আমি বেরিয়ে এলাম। দরজায় দাঁড়িয়ে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম, আজকের কাজটা আমার জীবনের একটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ, আমাকে এই কাজটা ঠিক মতো শেষ করতেই হবে।
দরজাটা ভেজিয়ে বেরিয়ে এলাম। বাইরে এসে লক করে দিলাম। সোজা নিচে নেমে এলাম। এখনো ঠিক ঠিক আলো ফোটে নি। রাস্তার নিওন আলো গুলো সমান তেজে জ্বলছে। গেটের মুখে সেই ছেলেটি। ঝিমচ্ছে। ওর গায়ে হাত দিয়ে ডাকলাম। চমকে উঠে পরলো।
দাদা আপনি! এত সকালে ?
একটু বেরবো দরজাটা একবার খুলে দাও।
ছেলেটি চাবি নিয়ে এসে দরজা খুললো। আমি বেরিয়ে এলাম। হাঁটতে হাঁটতে সোজা চলে এলাম গড়িয়াহাট। সকালে সবাই মর্নিং ওয়াক করতে বেরিয়েছে। মোটা মোটা থল থলে চেহারার মানুষ। সব বয়সের। কেউ কেউ আবার গোল পার্কের দিকে হেঁটে যাচ্ছে। হয়তো লেকে ঢুকবে। সকাল হতে না হতে কতো লোকের কতো কাজ। আমি যেমন চলেছি মানুষ খুঁজতে।
নিজের মনে নিজে হাসলাম। একটু জোরে হেসে ফেলেছি। একবার পেছন ফিরে দেখলাম। না আমার আশে পাশে কেউ নেই।
চায়ের দোকনটার সামনে এসে দাঁড়ালাম। এককালে রোজ এখানে চা খেতাম। এখন খাই না। তাই আমাকে চেনার বালাই নেই। জলের মগটা নিয়ে ঢক ঢক করে কিছুটা জল খেলাম। তারপর একভাঁড় চা একটা বিস্কুট সহযোগে মারলাম। বাড়িতে থাকলে একটু আতিথেয়তা পেতাম, এখানে তার বালাই নেই।
পয়সা ফেকো তামাসা দেখো। ভাঁড়টা সঠিক জায়গায় ফেলে একটা সিগারেট কিনলাম। কালকের কেনা বেশ কয়েকটা ক্যান্ডি পকেটে পরে আছে। সিগারেট ধরালাম। এতো সকালে কোনদিন সিগারেট খাই না। গলায় লাগলো, খক খক করে কেশে উঠলাম।
দুর শালা বলে সিগারেটটা ছুঁড়ে ফেলদিলাম।
আবার হাঁটতে শুরু করলাম। দেশপ্রিয় পার্কের মুখে এসে বাস উঠলাম।
কন্ডাকটর টিকিট চাইল। বললাম ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি। কলকাতায় বিখ্যাত কালীবাড়ি। আমাদের কলেজের সামনে।
বলতে গেলে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে। মিত্রা আমি দু’একবার এখানে এসেছি। পূজোও দিয়েছি। ঘন্টাখানেক লাগল এখানে আসতে। বাস থেকে নামলাম। বিশেষ ভিড় নেই। মন্দিরে ঢুকে প্রণাম করলাম। আমার খুব একটা ধর্মে মতি নেই। তবু মনকে প্রশ্ন করলাম আজ এলাম কেন ? উত্তর পেলাম না। যেটুকু আচার ধর্ম পালন করার দরকার, তাই করলাম।
তিনটে প্যাকেটে পূজো দিলাম একটা মিত্রা আমার নামে, একটা বড়মা দাদার নামে আর একটা ছোটমা মল্লিকদার নামে। ব্রাহ্মণ মশাই গোত্র জিজ্ঞাসা করলেন বলতে পারলাম না। পূজোর প্রসাদী আমার হাতে দিলেন। আমি নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলাম।
ঠিক পাশেই বীণা সিনেমা। হলের নীচের সিঁড়িতে একটু বসলাম। হুড় মুড় করে কতো কথা মনে পরে যাচ্ছে। নিজের মনেই হেসে বললাম, থামনা বাপু। অনেক হয়েছে। আর ভালো লাগছে না। তবু চোখের সামনে মিত্রা আমার হাত ধরে বুকে রেখেছে, বোঝার পর আমার হাত সরিয়ে নেওয়ার স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠলো। মনে মনে হাসলাম। দূর, উঠে পরলাম। আমার চেনা রাজপথ। আমার কলেজ জীবন কেটেছে এই রাজপথে। অলিতে গলিতে কত স্মৃতি আঁকি বুকি কাটা হয়ে রয়েছে।
সোজা কলেজ পেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে শ্যামবাজার চলে এলাম। গোলবাড়ির বড়ো ঘরিতে দেখলাম সোয়া সাতটা বাজে। এতোক্ষণে বাড়িতে হুলুস্থূলুস কান্ড বেঁধে গেছে। ইসলামভাই-এর সাপ-সাপান্তর চলছে। শ্যামবাজার বাটার সামনে এসে কিছুক্ষণ দাঁড়ালাম। এই প্রথম আমি মনে হয় ঈশ্বরের স্মরণাপন্ন হচ্ছি।
চোখ বন্ধ করতেই ঠনঠনিয়া কালীমার মুখটা ভেসে উঠলো। মনে মনে বললাম আজ আমি যেখানে যাচ্ছি, আমাকে সেখানে জিততেই হবে। তুমি আমার সঙ্গে থেকো। মায়ের হাসি হাসি মুখটা চোখের সামনে ভেসে এলো।
যেন মনে হচ্ছে ভেতরে ভেতরে বল পাচ্ছি। কেন এমন হচ্ছে ? এটা হওয়ার কথা নয়। এর আগে বহু সমস্যা সঙ্কুল কাজ আমি করেছি। তখন এমন মনে হয় নি।
তাহলে আজ কেন হচ্ছে ? পায়ে পায়ে হাঁটতে শুরু করলাম।
গলি পথ পেরিয়ে সেই বাড়িটার সামনে এসে দাঁড়ালাম। না এখনো সেই রকম আছে। গত দশ বছরে তার কোন পরিবর্তন হয় নি। হয়তো পলেস্তরা খসিয়ে দেয়ালে নতুন পলেস্তরা পরেছে। সেই দরজা। কড়া দুটোও সেই রকম। আমি আস্তে করে কড়া নারলাম। একবার দুবার তিনবার। দরজা খুলে গেল।
বছর পাঁচেকের একটা ছেলে। এক মাথা ভর্তি চুল। কি মিষ্টি দেখতে।
তুমি কাকে খুঁজছো।
আমি ওর দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছি।
বলোনা আংকেল, তুমি কাকে খুঁজছো।
কি বলবো এই দুধের শিশুকে। আমি কিসের টানে এই বাড়িতে, এই সাত সকালে ছুটে এসেছি।
কেরে পিকু কার সঙ্গে কথা বলছিস।
ভেতর থেকে মহিলা কন্ঠ ভেসে এলো। দশবছর আগে এই গলার স্বর শুনেছি। মেলাবার চেষ্টা করলাম। সেই কিনা।
একটা আংকেল এসেছে। কথা বলছে না। বোবা।
হেসে ফেললাম।
আবার হাসছে দেখো না।
মুখ বাড়িয়ে ভেতরে তাকালাম। না কারুর দেখা নেই। আমি পকেট থেকে একটা ক্যান্ডি বার করলাম। পিকুর চোখের সামনে ধোরলাম।
আমি খাই না। দাঁতে পোকা হবে।
হাসলাম। মনে মনে বললাম কি পাকা পাকা কথা রে বাবা।
নাও না এটা খেলে পোকা হবে না। সব পোকা মরে যাবে।
মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে বললো, তুমি কথা বলতে পার।
হাসলাম।
মা বকবে।
বকবে না। আমি মাকে বকে দেবো।
তুমি আমার মাকে চেনো।
হুঁ।
কেরে পিকু।
দরজার সামনে এই মুহূর্তে যে এসে দাঁড়াল তাকে আমি দশ বছর আগে দেখেছি। মুখশ্রীর কোন পরিবর্তন হয় নি। সিঁথির সিঁদুর বেশ ঝকঝকে। এখুনি স্নান করে উঠে এসেছে, গায়ার রং আগের মতোই। মাজা মাজা। আমার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে, আমিও তাকিয়ে আছি। চোখের দৃষ্টিতে বিষ্ময়। চেনা চেনা মুখ, তবু যেন অচেনা।
আংকেল তুমি যে বললে মাকে চেন।
ইসিতা পিকুকে হাত ধরে ভেতরে টেনে নিল। মুখের রং বদলে গেল। কঠিন কিছু কথা বলতে গিয়েও থেমে গেল।
কেন এসেছিস ?
ইসিতা গলার কাঠিন্য তবু লোকাতে পারল না।
মা তুমি আংকেলকে বকছো কেন ?
থামো, পাকা পাকা কথা বলতে হবে না।
কেগো ইসিতা। ভেতর থেকে পুরুষের কণ্ঠস্বর ভেসে এলো।
ইসিতা আমার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে। কিছু বোঝার চেষ্টা করছে।
বাইরে দাঁড়িয়েই সব কথা বলবো।
আমি খুব মৃদু স্বরে ইসিতার দিকে তাকিয়ে বললাম।
পেছনে একজন বছর পঁয়ত্রিশের ভদ্রলোক এসে দাঁড়ালেন।
স্টাউট ফিগার। একটা বাটিক প্রিন্টের লুঙ্গি এবং পাঞ্জাবী পরা।
কাকে চান আপনি ?
ইসিতা মাথা নীচু করে আস্তে করে বললো, ও অনি।
অনি! তোমাদের সেই অনি।
হ্যাঁ।
আশ্চর্য, ওনাকে বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখেছ কেন, ভেতরে আস্তে দাও।
পিকু আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে।
আসুন আসুন।
ইসিতা গেট থেকে সরে দাঁড়াল, আমি ধীর পায়ে ভেতরে এলাম। নিচের বসার ঘরটা সেরকমই আছে। সেই টেবিল। এখানে কতো স্মৃতি আঁকা হয়ে রয়েছে। এই দু’বোনের সঙ্গে কতো কথা বলেছি এই টেবিলে বসে। হুড়মুড় কর সব চোখের সামনে ভেসে উঠছে। আমি চারিদিকে একবার তাকালাম। আট দশবছর আগেকার স্মৃতি। ফাইন্যালের রেজাল্টটা নিয়ে আমি শেষবারের মতো এই বাড়িতে পা রেখেছিলাম। সেদিন মিত্রার তথাকথিত মা আমার সঙ্গে খুব একটা ভালো ব্যবহার করেন নি। তারপর দু’একবার মিত্রার সঙ্গে দেখা হয়েছিল মাস খানেকের মধ্যে। তারপর আমি হারিয়ে গেলাম।
বসুন।
ইসিতা নিশ্চই আপনার সহধর্মিনী।
আমি বরুন মুখার্জী।
আমি অনি….।
আপনার গল্প বহু শুনেছি ইসির মুখ থেকে। তাছাড়া আপনি একজন রিনাউন্ড পার্সেন। আপনাকে কলকাতায় একডাকে সকলে চেনে। দাঁড়িয়ে রইলেন কেন বসুন।
উনি টেবিলের অপর্জিট চেয়ারে বসলেন। আমি একটা চেয়ারে বসলাম। আগেকার দিনের কাঠের চেয়ার। অযত্নে মলিন।
বাড়ি থেকে কখন বেরিয়েছিস। ইসিতা বললো।
গতকাল সন্ধ্যায়।
তার মানে!
হাসলাম।
এতো সকালে কোথা থেকে আসছিস!
এইতো, ঘুরতে ঘুরতে এসে পরলাম।
সেতো দেখতে পাচ্ছি।
আমি বেশ ভালো করে লক্ষ্য করছি। ভদ্রলোক আমার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে। পরিষ্কার মাপছে।
ব্যাপারটা ঠিক বোধগম্য হচ্ছে না।
দশবছর সময়টা নেহাত কম নয়। একটু অপেক্ষা কর, বোধগম্য হবে।
ইসিতা আমার কথায় চমকে উঠলো।
যাও তুমি চা করে নিয়ে এসো। উনি….।
প্লীজ বরুনদা আমাকে আপনি করে বলবেন না। আমি ইসিতার সমবয়সী।
প্রথম প্রথম হবে না। একটু সময় লাগবে।
পিকুকে দেখতে পেলাম না।
ইসিতা বেরিয়ে গেল। এই বাড়ির নিচেরটা বসারঘর, খাবারঘর, রান্নাঘর, গেস্টরুম, ওপরে সব থাকার ঘর। বেশ মনে আছে। ওপরে আমি দুবার উঠেছি। তিনতলায় মিত্রাদের পড়ার ঘর।
আপনার লেখা আমি পড়ি।
বরুনদার দিকে তাকালাম।
সরি তোমার লেখার হাতটা দারুণ।
হাসলাম।
কাগজে চাকরি করি। যে যেভাবে বলে লিখে দিই।
তুমি চাকরি করো!
হ্যাঁ।
তাহলে যে লোকে বলে তুমি ওই কাগজের মালিক!
লোকে বলে। আমি বলি না। আমায় দেখে কি তাই মনে হয় ?
সেটা ঠিক বলেছ। তোমাকে দেখে কিন্তু সেটা মনে হচ্ছে না।
তাহলে।
আমি আমার অফিসের কাজে প্রায় তোমাদের কাগজের অফিসে যাই।
তাই! কেন ?
আমাদের কোম্পানীর কাজে।
আপনি কোথায় আছেন।
আইবিএম। তোমাদের কমপিউটার ডিভিসনটা আইবিএমকে মেনটেনান্সের দায়িত্ব দেওয়া আছে।
সফটওয়ার না হার্ডওয়ার।
সফটওয়ার।
তার মানে আপনি সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার।
বরুণদা হাসলেন।
ওটা আপনাদের কাগজ।
শুনেছি, একসময় ছিলো। এখন নেই।
কে বললো।
এদের মুখ থেকেই শুনি।
একটু খানি নাড়া চাড়া করেই বুঝতে পারলাম ভদ্রলোক খুব অমায়িক। রাখঢাক নেই।
ইসিতা ট্রেতে করে চায়ের কাপ নিয়ে ঢুকলো।
আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
ইসিতা সকালে ঠনঠনিয়াতে গেছিলাম। প্রসাদ আছে। জ্যেঠিমনিকে দিয়ে আয়। পিকুকে দেখতে পাচ্ছি না।
ইসিতা আমার দিকে তাকিয়ে। বুদ্ধিমতী মেয়ে। বোঝার চেষ্টা করছে অনি কি ভাবে অন্দরমহলে প্রবেশ করতে চাইছে। আমি ওর চোখ দেখে বুঝতে পারছি। ও কিছুতেই আমাকে অন্দরমহলে প্রবেশ করতে দেবে না।
মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম অনি তুই যখন একবার গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢুকতে পেরেছিস। তোকে জিততেই হবে। যে করেই হোক। কারুর বাধা তুই শুনবি না।
মা পূজো না করে কিছু খান না।
জানি। এটা কিন্তু পূজোরই প্রসাদ।
ইসিতা একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসলো।
নাও চা খাও। বরুণদা বললো।
হ্যাঁ নিচ্ছি।
একটা কাপ এগিয়ে নিলাম। চায়ে চুমুক দিলাম।
প্রশ্ন করলি না এতোবছর পরে হঠাৎ কেন এতো সকালে এসে উপস্থিত হলাম।
ইসিতা আমার চোখে চোখ রেখেছে। শেয়ানে শেয়ানে কোলাকুলি।
বিয়ে করছিস তাই নেমন্তন্ন করতে এসেছিস। ইসিতা টেরা টেরা কথা বলা শুরু করলো।
বৌভাতের দিন কেউ নেমন্তন্ন করতে আসে।
তোর আজকে বৌভাত!
কেন তুই জানতিস না।
বরুণদার দিকে তাকালাম।
দাদা ইসিতার সামনে আপনি একটা সত্যি কথা বলবেন।
বলো।
আমি অনি। এই নামটা আপনি শুনেছেন। হয়তো আমার সম্বন্ধে অনেক গল্পও আপনি ইসিতার মুখ থেকে শুনে থাকবেন। ভালো খারাপ দুটোই। এটা কি আপনি শোনেন নি আমি পর্শুদিন বিয়ে করেছি, ইসিতার আর এক বোন মিত্রাকে ? আর আজ আমার বৌভাত।
বরুণদা মাথা নীচু করে চুপ করে বসে রইল।
ও কিছু জানে না।
ইসি বরুণদার থেকেও তুই আমাকে ভাল করে চিনিস। কেন আমি এসেছি এই সাত সকালে, নতুন করে বলতে হবে ?
আমাদের সঙ্গে মিত্রার কোন সম্পর্ক নেই।
সেটা আমি জেনেছি পর্শুরাতে। কেন নেই সেটাও জেনেছি।
ইসিতা চুপ করে রয়েছে। চায়ে চুমুক দিল।
আমি মিত্রাকে বিয়ে করছি এটা জানলি কি করে ?
আমি চায়ে চুমুক দিলাম। নিস্তব্ধ ঘর। পিন পরলে শব্দ হবে। বরুণদা আমার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে। চোখের পলক পরছে না।
তোকে বলতে হবে না। আমি বলছি।
ইসিতা আমার দিকে মুখ তুলে তাকাল। চোখ দুটো জিঘাংসায় পরিপূর্ণ। পারলে আমাকে এখুন ছিঁড়ে খাবে যেন।
বুড়ীমাসি এসে বলেছে।
বুড়ীমাসি এ বাড়িতে আসে না। ইসিতা চেঁচিয়ে উঠলো।
বরুণদা মুখ নামিয়ে নিল।
আমি কিন্তু এ বাড়িতে এসেছি তোদের নিয়ে যেতে।
কোনদিন হবে না।
আমি এই কাজ করবোই।
আমার গলার স্বরে ঘরটা গম গম করে উঠলো।
তুই কি বলতে চাস।
আমি এই পরিবারের আত্মীয়। বরুণদার মতো আমিও এই বাড়ির জামাই। সেই দৃষ্টিকোন থেকে আমার কিছু ডিমান্ড আছে। আমি আমার সেই ডিমান্ড জানাতে এসেছি।
জানাতে এসেছিস জানালি, এবার চলে যা।
আমি চলে যেতে আসি নি ইসি।
ইসির চোখে প্রতিহিংসা।
কাল সারাটা রাত না ঘুমিয়ে কাটিয়েছি। ছটফট করেছি। জ্যেঠিমনির সঙ্গে আমাকে দেখা করতেই হবে।
করুণা দেখাতে এসেছিস। বেরো এখান থেকে।
ইসিতা দপ করে জ্বলে উঠলো।
বরুণদা উঠে দাঁড়াল।
এ কি বলছো ইসি। অনি আমাদের….।
রাখো। আজ আট বছর কোথায় ছিল অনি। কে খোঁজ খবর নিয়েছে, আমরা কেমন আছি।
ইসিতা রাগে কাঁপছে।
তুই এখুনি আমাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবি। ইসিতা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল।
আমি যাব না ইসি। তুই আমাকে গলা ধাক্কা দিয়ে বার করে দিলেও আমি যাব না। আজ থেকে দশবছর আগে আমি যেটা মুখ বুঁজে মেনে নিয়েছি। আজ আমি কিছুতেই সেটা মানব না।
তুই মানিস কি না মানিস তোর ব্যাপার, তুই এখন বেরিয়ে যা।
ইসিতা উঠে দাঁড়াল। ছুটে এসে আমার হাত ধরলো।
এই ইসি, এ তুমি কি করছো! তুমি অনির হাত ছাড়ো।
ও এখুনি বেরিয়ে যাবে, আর একমুহূর্ত এই বাড়িতে ওর থাকা হবে না।
ঠিক আছে, ঠিক আছে। তুমি ওপরে চলো। অনি তুমি একটু বসো।
বরুণদা ইসিতাকে ধরে ওপরে নিয়ে চলে গেল।
আমি বসে রইলাম। একা।
কতোক্ষণ বসে আছি জানি না। নানা কথা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। ইসিতা যে ব্যবহারটা আমার সঙ্গে করলো, আমি তাতে একটুও দুঃখ পাই নি। কেননা আমি মন থেকে বিশ্বাস করি, আমি যদি ওর জায়গায় থাকতাম তাহলে এর থেকেও খারাপ ব্যবহার করতাম।
মিত্রার বাবা ইসিতাদের ফাঁকি দিয়েছে। তার লক্ষ্য চরিতার্থতার জন্য। অতএব বাবার কৃতকর্মের ফল মিত্রাকে ভোগ করতে হতেই পারে।
যতো সময় যাচ্ছে আমার মধ্যে তত জেদ চেপে বসছে। আমাকে যে ভাবেই হোক জ্যেঠিমনিকে নিয়ে যেতে হবে। আমি এই কাজ করবই। এইটুকু কথা বলে যেটুকু বুঝলাম ইসি সব জানে না যা মিত্রা জানে। বরুণদাও জানে না। পারিবারিক এমন কিছু ব্যাপার থাকে যা জামাইদের জানান যায় না। এমনকি তাদের পরিবারের কেউ জানতেও পারে না।
সময়ে সেটা আগুনের স্ফুলিঙ্গের মতে দাউ দাউ করে জলে ওঠে তারপর একসময় সেই আগুন ছাই চাপা পরে যায়। কালের নিয়মে তা মাটিতে পরিণত হয়।
মিত্রা আমাকে যা জানিয়েছে, তা ইসি জানে কিনা আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। মিত্রা তার বাবার দিনলিপি পরে সব জেনেছে। ইসি তা কোনদিন হাতে পায় নি। এমনকি জ্যেঠিমনি পর্যন্ত মিত্রার বাবার দিনলিপির হদিস জানতেন না। ওদের অনেক কিছুই অজানা। আমার হাতে প্রচুর অস্ত্র। যে কোন অস্ত্রের বিনিময়ে আমাকে জিততেই হবে।
অনি।
বরুণদার ডাকে মুখ তুলে তাকালাম।
দরজার সামনে যিনি দাঁড়িয়ে তাঁকে আমি আজ থেকে দশ বছর আগে দেখেছি। সেই পাকা গমের মতো গায়ের রং এখনো অটুট। সেই বুদ্ধিদীপ্ত চোখ, টিয়াপাখির ঠোঁটের মতো টিকলো নাক। মাথার চুলে এখোনো সেইভাবে পাক ধরে নি। দু’একটা রূপালি তার এদিক সেদিক উঁকি ঝুঁকি মারছে।
সাদা ধবধবে কালো পাড় শাড়ি পরা। গালদুটো সামান্য ভেঙেছে।
আমি এগিয়ে গিয়ে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলাম।
থাক বাবা থাক।
আমায় চিনতে পেরেছ জ্যেঠিমনি ?
ইসি না বললে পারতাম না। বয়স হয়েছে, চোখের জ্যোতি কেমেছে।
তুমি কেমন আছ।
ভালো।
আমি মিত্রাকে বিয়ে করেছি।
ইসি বললো।
আমি জ্যেঠিমনির চোখের দিকে তাকিয়ে আছি। বুঝতে পারলাম জ্যেঠিমনি সত্যি বলছে না। উত্তেজনা হীন চোখ। পোর খাওয়া মানুষ। আমি হাত ধরে ভেতরে নিয়ে এলাম। চেয়ারটা এগিয়ে দিলাম। জ্যেঠিমনি বসলো।
তোমরা কথা বলো। আমি একটু চা নিয়ে আসি।
বুঝলাম বরুণদা আমাকে কথা বলার সুযোগ দিয়ে গেলেন।
তোমার জন্য পূজোর প্রসাদ নিয়ে এসেছি, খাবে ?
জ্যেঠিমনি আমার দিকে তাকাল। অনেক না বলা কথা এই চোখে।
রাখো, পরে খাচ্ছি।
বরুণদা বেরিয়ে গেল।
পিকু কোথায়। ?
ওর কথা আর বোলো না। ওপরে দুষ্টুমি করছে।
আমার আজ বৌভাত, তোমাকে নিয়ে যেতে এসেছি।
জ্যেঠিমনি আমার দিকে তাকাল। এ চোখে অনেক জিজ্ঞাসা।
আমি কোথাও বেরোই না বাবা।
আজ বেরবে, শুধু মাত্র আমার জন্য বেরবে। মাত্র দশমিনিটের জন্য আমার সঙ্গে যাবে। আমি তোমায় আবার পৌঁছে দিয়ে যাব।
না বাবা থাক, আর একদিন যাব।
ইসিতা বরুণদা ঘরে ঢুকলো। মিষ্টিরপ্লেট এবং চা হাতে। ইশিতা মুখ নীচু করে আছে। বুঝলাম ওপরে গিয়ে খুব কান্নাকাটি করেছে। মুহূর্তের উত্তেজনা। তার রেশ ওর চোখের পাতায়।
আমি তাকালাম না।
আমি কিছু খাব না ইসি, খালি চা খাব।
কেন বাবা, তুমি আজ প্রথম আমাদের বাড়িতে এলে।
আজ প্রথম নয় জ্যেঠিমনি, এর আগেও বহুবার এসেছি। তোমার হাতের তৈরি বাটি চচ্চড়ি লুচি খেয়ে গেছি।
সেতো বহুকাল আগে।
আজ আমি এবাড়িতে নতুন নয়।
তুমি নতুন জামাই বলে কথা।
এটা তুমি স্বীকার করে নিচ্ছ না জ্যেঠিমনি। ইসিও মানতে চাইছে না।
অন্যদিন কাজটা করলে হতো না।
না।
আমায় জিজ্ঞাসা করলে কি জবাব দেব।
বলবে সকালে উঠে চলে গেছে, দেখা হয়নি।
কখন আসবি।
বলতে পারছিনা।
তারমানে!
কাজটা শেষ করে আসতে হবে।
কালকেই করতে হবে।
ভেবেছিলাম তোমাকে বলবো না। তোমরা কেউ জানতেই পারবে না। তখন কথায় কথায় বললে একটু বললে যদি ঝামেলা কমে তাহলে বলবিনা কেন তাই হিন্টস দিলাম।
ফোনটা অন্ততঃ পক্ষে খোলা রাখিস।
হয়তো হবে না।
দুপুরে এসে খাবি।
চেষ্টা করবো।
আবার কোন গন্ডগোল পাকাচ্ছিস।
না।
ঠিক।
তুমি বিশ্বাস করতে পার।
ভজুরাম মাথাটা বেশ ভালো ম্যাসাজ করে। এমনভাবে টেপে মাথাটা একেবারে হাল্কা হয়ে যায়। কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি জানি না। ঠিক সময়ে ঘুম ভাঙলো। উঠে দেখলাম ওরা দু’জনে অঘোরে ঘুমচ্ছে। আমি মুখ হাত ধুয়ে ফ্রেস হলাম। জামা প্যান্ট পরলাম। আলমাড়ি থেকে জাঙ্গিয়া বার করে পরতে ভুললাম না। ফ্ল্যাটের চাবিটা দেখে নিলাম টেবিলের ওপর আছে কিনা। মোবাইলের ঘরিতে দেখলাম, পৌনে পাঁচটা বাজে। বাইরে হাল্কা আলো। আমি বেরিয়ে এলাম। দরজায় দাঁড়িয়ে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম, আজকের কাজটা আমার জীবনের একটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ, আমাকে এই কাজটা ঠিক মতো শেষ করতেই হবে।
দরজাটা ভেজিয়ে বেরিয়ে এলাম। বাইরে এসে লক করে দিলাম। সোজা নিচে নেমে এলাম। এখনো ঠিক ঠিক আলো ফোটে নি। রাস্তার নিওন আলো গুলো সমান তেজে জ্বলছে। গেটের মুখে সেই ছেলেটি। ঝিমচ্ছে। ওর গায়ে হাত দিয়ে ডাকলাম। চমকে উঠে পরলো।
দাদা আপনি! এত সকালে ?
একটু বেরবো দরজাটা একবার খুলে দাও।
ছেলেটি চাবি নিয়ে এসে দরজা খুললো। আমি বেরিয়ে এলাম। হাঁটতে হাঁটতে সোজা চলে এলাম গড়িয়াহাট। সকালে সবাই মর্নিং ওয়াক করতে বেরিয়েছে। মোটা মোটা থল থলে চেহারার মানুষ। সব বয়সের। কেউ কেউ আবার গোল পার্কের দিকে হেঁটে যাচ্ছে। হয়তো লেকে ঢুকবে। সকাল হতে না হতে কতো লোকের কতো কাজ। আমি যেমন চলেছি মানুষ খুঁজতে।
নিজের মনে নিজে হাসলাম। একটু জোরে হেসে ফেলেছি। একবার পেছন ফিরে দেখলাম। না আমার আশে পাশে কেউ নেই।
চায়ের দোকনটার সামনে এসে দাঁড়ালাম। এককালে রোজ এখানে চা খেতাম। এখন খাই না। তাই আমাকে চেনার বালাই নেই। জলের মগটা নিয়ে ঢক ঢক করে কিছুটা জল খেলাম। তারপর একভাঁড় চা একটা বিস্কুট সহযোগে মারলাম। বাড়িতে থাকলে একটু আতিথেয়তা পেতাম, এখানে তার বালাই নেই।
পয়সা ফেকো তামাসা দেখো। ভাঁড়টা সঠিক জায়গায় ফেলে একটা সিগারেট কিনলাম। কালকের কেনা বেশ কয়েকটা ক্যান্ডি পকেটে পরে আছে। সিগারেট ধরালাম। এতো সকালে কোনদিন সিগারেট খাই না। গলায় লাগলো, খক খক করে কেশে উঠলাম।
দুর শালা বলে সিগারেটটা ছুঁড়ে ফেলদিলাম।
আবার হাঁটতে শুরু করলাম। দেশপ্রিয় পার্কের মুখে এসে বাস উঠলাম।
কন্ডাকটর টিকিট চাইল। বললাম ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি। কলকাতায় বিখ্যাত কালীবাড়ি। আমাদের কলেজের সামনে।
বলতে গেলে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে। মিত্রা আমি দু’একবার এখানে এসেছি। পূজোও দিয়েছি। ঘন্টাখানেক লাগল এখানে আসতে। বাস থেকে নামলাম। বিশেষ ভিড় নেই। মন্দিরে ঢুকে প্রণাম করলাম। আমার খুব একটা ধর্মে মতি নেই। তবু মনকে প্রশ্ন করলাম আজ এলাম কেন ? উত্তর পেলাম না। যেটুকু আচার ধর্ম পালন করার দরকার, তাই করলাম।
তিনটে প্যাকেটে পূজো দিলাম একটা মিত্রা আমার নামে, একটা বড়মা দাদার নামে আর একটা ছোটমা মল্লিকদার নামে। ব্রাহ্মণ মশাই গোত্র জিজ্ঞাসা করলেন বলতে পারলাম না। পূজোর প্রসাদী আমার হাতে দিলেন। আমি নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলাম।
ঠিক পাশেই বীণা সিনেমা। হলের নীচের সিঁড়িতে একটু বসলাম। হুড় মুড় করে কতো কথা মনে পরে যাচ্ছে। নিজের মনেই হেসে বললাম, থামনা বাপু। অনেক হয়েছে। আর ভালো লাগছে না। তবু চোখের সামনে মিত্রা আমার হাত ধরে বুকে রেখেছে, বোঝার পর আমার হাত সরিয়ে নেওয়ার স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠলো। মনে মনে হাসলাম। দূর, উঠে পরলাম। আমার চেনা রাজপথ। আমার কলেজ জীবন কেটেছে এই রাজপথে। অলিতে গলিতে কত স্মৃতি আঁকি বুকি কাটা হয়ে রয়েছে।
সোজা কলেজ পেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে শ্যামবাজার চলে এলাম। গোলবাড়ির বড়ো ঘরিতে দেখলাম সোয়া সাতটা বাজে। এতোক্ষণে বাড়িতে হুলুস্থূলুস কান্ড বেঁধে গেছে। ইসলামভাই-এর সাপ-সাপান্তর চলছে। শ্যামবাজার বাটার সামনে এসে কিছুক্ষণ দাঁড়ালাম। এই প্রথম আমি মনে হয় ঈশ্বরের স্মরণাপন্ন হচ্ছি।
চোখ বন্ধ করতেই ঠনঠনিয়া কালীমার মুখটা ভেসে উঠলো। মনে মনে বললাম আজ আমি যেখানে যাচ্ছি, আমাকে সেখানে জিততেই হবে। তুমি আমার সঙ্গে থেকো। মায়ের হাসি হাসি মুখটা চোখের সামনে ভেসে এলো।
যেন মনে হচ্ছে ভেতরে ভেতরে বল পাচ্ছি। কেন এমন হচ্ছে ? এটা হওয়ার কথা নয়। এর আগে বহু সমস্যা সঙ্কুল কাজ আমি করেছি। তখন এমন মনে হয় নি।
তাহলে আজ কেন হচ্ছে ? পায়ে পায়ে হাঁটতে শুরু করলাম।
গলি পথ পেরিয়ে সেই বাড়িটার সামনে এসে দাঁড়ালাম। না এখনো সেই রকম আছে। গত দশ বছরে তার কোন পরিবর্তন হয় নি। হয়তো পলেস্তরা খসিয়ে দেয়ালে নতুন পলেস্তরা পরেছে। সেই দরজা। কড়া দুটোও সেই রকম। আমি আস্তে করে কড়া নারলাম। একবার দুবার তিনবার। দরজা খুলে গেল।
বছর পাঁচেকের একটা ছেলে। এক মাথা ভর্তি চুল। কি মিষ্টি দেখতে।
তুমি কাকে খুঁজছো।
আমি ওর দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছি।
বলোনা আংকেল, তুমি কাকে খুঁজছো।
কি বলবো এই দুধের শিশুকে। আমি কিসের টানে এই বাড়িতে, এই সাত সকালে ছুটে এসেছি।
কেরে পিকু কার সঙ্গে কথা বলছিস।
ভেতর থেকে মহিলা কন্ঠ ভেসে এলো। দশবছর আগে এই গলার স্বর শুনেছি। মেলাবার চেষ্টা করলাম। সেই কিনা।
একটা আংকেল এসেছে। কথা বলছে না। বোবা।
হেসে ফেললাম।
আবার হাসছে দেখো না।
মুখ বাড়িয়ে ভেতরে তাকালাম। না কারুর দেখা নেই। আমি পকেট থেকে একটা ক্যান্ডি বার করলাম। পিকুর চোখের সামনে ধোরলাম।
আমি খাই না। দাঁতে পোকা হবে।
হাসলাম। মনে মনে বললাম কি পাকা পাকা কথা রে বাবা।
নাও না এটা খেলে পোকা হবে না। সব পোকা মরে যাবে।
মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে বললো, তুমি কথা বলতে পার।
হাসলাম।
মা বকবে।
বকবে না। আমি মাকে বকে দেবো।
তুমি আমার মাকে চেনো।
হুঁ।
কেরে পিকু।
দরজার সামনে এই মুহূর্তে যে এসে দাঁড়াল তাকে আমি দশ বছর আগে দেখেছি। মুখশ্রীর কোন পরিবর্তন হয় নি। সিঁথির সিঁদুর বেশ ঝকঝকে। এখুনি স্নান করে উঠে এসেছে, গায়ার রং আগের মতোই। মাজা মাজা। আমার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে, আমিও তাকিয়ে আছি। চোখের দৃষ্টিতে বিষ্ময়। চেনা চেনা মুখ, তবু যেন অচেনা।
আংকেল তুমি যে বললে মাকে চেন।
ইসিতা পিকুকে হাত ধরে ভেতরে টেনে নিল। মুখের রং বদলে গেল। কঠিন কিছু কথা বলতে গিয়েও থেমে গেল।
কেন এসেছিস ?
ইসিতা গলার কাঠিন্য তবু লোকাতে পারল না।
মা তুমি আংকেলকে বকছো কেন ?
থামো, পাকা পাকা কথা বলতে হবে না।
কেগো ইসিতা। ভেতর থেকে পুরুষের কণ্ঠস্বর ভেসে এলো।
ইসিতা আমার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে। কিছু বোঝার চেষ্টা করছে।
বাইরে দাঁড়িয়েই সব কথা বলবো।
আমি খুব মৃদু স্বরে ইসিতার দিকে তাকিয়ে বললাম।
পেছনে একজন বছর পঁয়ত্রিশের ভদ্রলোক এসে দাঁড়ালেন।
স্টাউট ফিগার। একটা বাটিক প্রিন্টের লুঙ্গি এবং পাঞ্জাবী পরা।
কাকে চান আপনি ?
ইসিতা মাথা নীচু করে আস্তে করে বললো, ও অনি।
অনি! তোমাদের সেই অনি।
হ্যাঁ।
আশ্চর্য, ওনাকে বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখেছ কেন, ভেতরে আস্তে দাও।
পিকু আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে।
আসুন আসুন।
ইসিতা গেট থেকে সরে দাঁড়াল, আমি ধীর পায়ে ভেতরে এলাম। নিচের বসার ঘরটা সেরকমই আছে। সেই টেবিল। এখানে কতো স্মৃতি আঁকা হয়ে রয়েছে। এই দু’বোনের সঙ্গে কতো কথা বলেছি এই টেবিলে বসে। হুড়মুড় কর সব চোখের সামনে ভেসে উঠছে। আমি চারিদিকে একবার তাকালাম। আট দশবছর আগেকার স্মৃতি। ফাইন্যালের রেজাল্টটা নিয়ে আমি শেষবারের মতো এই বাড়িতে পা রেখেছিলাম। সেদিন মিত্রার তথাকথিত মা আমার সঙ্গে খুব একটা ভালো ব্যবহার করেন নি। তারপর দু’একবার মিত্রার সঙ্গে দেখা হয়েছিল মাস খানেকের মধ্যে। তারপর আমি হারিয়ে গেলাম।
বসুন।
ইসিতা নিশ্চই আপনার সহধর্মিনী।
আমি বরুন মুখার্জী।
আমি অনি….।
আপনার গল্প বহু শুনেছি ইসির মুখ থেকে। তাছাড়া আপনি একজন রিনাউন্ড পার্সেন। আপনাকে কলকাতায় একডাকে সকলে চেনে। দাঁড়িয়ে রইলেন কেন বসুন।
উনি টেবিলের অপর্জিট চেয়ারে বসলেন। আমি একটা চেয়ারে বসলাম। আগেকার দিনের কাঠের চেয়ার। অযত্নে মলিন।
বাড়ি থেকে কখন বেরিয়েছিস। ইসিতা বললো।
গতকাল সন্ধ্যায়।
তার মানে!
হাসলাম।
এতো সকালে কোথা থেকে আসছিস!
এইতো, ঘুরতে ঘুরতে এসে পরলাম।
সেতো দেখতে পাচ্ছি।
আমি বেশ ভালো করে লক্ষ্য করছি। ভদ্রলোক আমার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে। পরিষ্কার মাপছে।
ব্যাপারটা ঠিক বোধগম্য হচ্ছে না।
দশবছর সময়টা নেহাত কম নয়। একটু অপেক্ষা কর, বোধগম্য হবে।
ইসিতা আমার কথায় চমকে উঠলো।
যাও তুমি চা করে নিয়ে এসো। উনি….।
প্লীজ বরুনদা আমাকে আপনি করে বলবেন না। আমি ইসিতার সমবয়সী।
প্রথম প্রথম হবে না। একটু সময় লাগবে।
পিকুকে দেখতে পেলাম না।
ইসিতা বেরিয়ে গেল। এই বাড়ির নিচেরটা বসারঘর, খাবারঘর, রান্নাঘর, গেস্টরুম, ওপরে সব থাকার ঘর। বেশ মনে আছে। ওপরে আমি দুবার উঠেছি। তিনতলায় মিত্রাদের পড়ার ঘর।
আপনার লেখা আমি পড়ি।
বরুনদার দিকে তাকালাম।
সরি তোমার লেখার হাতটা দারুণ।
হাসলাম।
কাগজে চাকরি করি। যে যেভাবে বলে লিখে দিই।
তুমি চাকরি করো!
হ্যাঁ।
তাহলে যে লোকে বলে তুমি ওই কাগজের মালিক!
লোকে বলে। আমি বলি না। আমায় দেখে কি তাই মনে হয় ?
সেটা ঠিক বলেছ। তোমাকে দেখে কিন্তু সেটা মনে হচ্ছে না।
তাহলে।
আমি আমার অফিসের কাজে প্রায় তোমাদের কাগজের অফিসে যাই।
তাই! কেন ?
আমাদের কোম্পানীর কাজে।
আপনি কোথায় আছেন।
আইবিএম। তোমাদের কমপিউটার ডিভিসনটা আইবিএমকে মেনটেনান্সের দায়িত্ব দেওয়া আছে।
সফটওয়ার না হার্ডওয়ার।
সফটওয়ার।
তার মানে আপনি সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার।
বরুণদা হাসলেন।
ওটা আপনাদের কাগজ।
শুনেছি, একসময় ছিলো। এখন নেই।
কে বললো।
এদের মুখ থেকেই শুনি।
একটু খানি নাড়া চাড়া করেই বুঝতে পারলাম ভদ্রলোক খুব অমায়িক। রাখঢাক নেই।
ইসিতা ট্রেতে করে চায়ের কাপ নিয়ে ঢুকলো।
আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
ইসিতা সকালে ঠনঠনিয়াতে গেছিলাম। প্রসাদ আছে। জ্যেঠিমনিকে দিয়ে আয়। পিকুকে দেখতে পাচ্ছি না।
ইসিতা আমার দিকে তাকিয়ে। বুদ্ধিমতী মেয়ে। বোঝার চেষ্টা করছে অনি কি ভাবে অন্দরমহলে প্রবেশ করতে চাইছে। আমি ওর চোখ দেখে বুঝতে পারছি। ও কিছুতেই আমাকে অন্দরমহলে প্রবেশ করতে দেবে না।
মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম অনি তুই যখন একবার গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢুকতে পেরেছিস। তোকে জিততেই হবে। যে করেই হোক। কারুর বাধা তুই শুনবি না।
মা পূজো না করে কিছু খান না।
জানি। এটা কিন্তু পূজোরই প্রসাদ।
ইসিতা একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসলো।
নাও চা খাও। বরুণদা বললো।
হ্যাঁ নিচ্ছি।
একটা কাপ এগিয়ে নিলাম। চায়ে চুমুক দিলাম।
প্রশ্ন করলি না এতোবছর পরে হঠাৎ কেন এতো সকালে এসে উপস্থিত হলাম।
ইসিতা আমার চোখে চোখ রেখেছে। শেয়ানে শেয়ানে কোলাকুলি।
বিয়ে করছিস তাই নেমন্তন্ন করতে এসেছিস। ইসিতা টেরা টেরা কথা বলা শুরু করলো।
বৌভাতের দিন কেউ নেমন্তন্ন করতে আসে।
তোর আজকে বৌভাত!
কেন তুই জানতিস না।
বরুণদার দিকে তাকালাম।
দাদা ইসিতার সামনে আপনি একটা সত্যি কথা বলবেন।
বলো।
আমি অনি। এই নামটা আপনি শুনেছেন। হয়তো আমার সম্বন্ধে অনেক গল্পও আপনি ইসিতার মুখ থেকে শুনে থাকবেন। ভালো খারাপ দুটোই। এটা কি আপনি শোনেন নি আমি পর্শুদিন বিয়ে করেছি, ইসিতার আর এক বোন মিত্রাকে ? আর আজ আমার বৌভাত।
বরুণদা মাথা নীচু করে চুপ করে বসে রইল।
ও কিছু জানে না।
ইসি বরুণদার থেকেও তুই আমাকে ভাল করে চিনিস। কেন আমি এসেছি এই সাত সকালে, নতুন করে বলতে হবে ?
আমাদের সঙ্গে মিত্রার কোন সম্পর্ক নেই।
সেটা আমি জেনেছি পর্শুরাতে। কেন নেই সেটাও জেনেছি।
ইসিতা চুপ করে রয়েছে। চায়ে চুমুক দিল।
আমি মিত্রাকে বিয়ে করছি এটা জানলি কি করে ?
আমি চায়ে চুমুক দিলাম। নিস্তব্ধ ঘর। পিন পরলে শব্দ হবে। বরুণদা আমার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে। চোখের পলক পরছে না।
তোকে বলতে হবে না। আমি বলছি।
ইসিতা আমার দিকে মুখ তুলে তাকাল। চোখ দুটো জিঘাংসায় পরিপূর্ণ। পারলে আমাকে এখুন ছিঁড়ে খাবে যেন।
বুড়ীমাসি এসে বলেছে।
বুড়ীমাসি এ বাড়িতে আসে না। ইসিতা চেঁচিয়ে উঠলো।
বরুণদা মুখ নামিয়ে নিল।
আমি কিন্তু এ বাড়িতে এসেছি তোদের নিয়ে যেতে।
কোনদিন হবে না।
আমি এই কাজ করবোই।
আমার গলার স্বরে ঘরটা গম গম করে উঠলো।
তুই কি বলতে চাস।
আমি এই পরিবারের আত্মীয়। বরুণদার মতো আমিও এই বাড়ির জামাই। সেই দৃষ্টিকোন থেকে আমার কিছু ডিমান্ড আছে। আমি আমার সেই ডিমান্ড জানাতে এসেছি।
জানাতে এসেছিস জানালি, এবার চলে যা।
আমি চলে যেতে আসি নি ইসি।
ইসির চোখে প্রতিহিংসা।
কাল সারাটা রাত না ঘুমিয়ে কাটিয়েছি। ছটফট করেছি। জ্যেঠিমনির সঙ্গে আমাকে দেখা করতেই হবে।
করুণা দেখাতে এসেছিস। বেরো এখান থেকে।
ইসিতা দপ করে জ্বলে উঠলো।
বরুণদা উঠে দাঁড়াল।
এ কি বলছো ইসি। অনি আমাদের….।
রাখো। আজ আট বছর কোথায় ছিল অনি। কে খোঁজ খবর নিয়েছে, আমরা কেমন আছি।
ইসিতা রাগে কাঁপছে।
তুই এখুনি আমাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবি। ইসিতা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল।
আমি যাব না ইসি। তুই আমাকে গলা ধাক্কা দিয়ে বার করে দিলেও আমি যাব না। আজ থেকে দশবছর আগে আমি যেটা মুখ বুঁজে মেনে নিয়েছি। আজ আমি কিছুতেই সেটা মানব না।
তুই মানিস কি না মানিস তোর ব্যাপার, তুই এখন বেরিয়ে যা।
ইসিতা উঠে দাঁড়াল। ছুটে এসে আমার হাত ধরলো।
এই ইসি, এ তুমি কি করছো! তুমি অনির হাত ছাড়ো।
ও এখুনি বেরিয়ে যাবে, আর একমুহূর্ত এই বাড়িতে ওর থাকা হবে না।
ঠিক আছে, ঠিক আছে। তুমি ওপরে চলো। অনি তুমি একটু বসো।
বরুণদা ইসিতাকে ধরে ওপরে নিয়ে চলে গেল।
আমি বসে রইলাম। একা।
কতোক্ষণ বসে আছি জানি না। নানা কথা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। ইসিতা যে ব্যবহারটা আমার সঙ্গে করলো, আমি তাতে একটুও দুঃখ পাই নি। কেননা আমি মন থেকে বিশ্বাস করি, আমি যদি ওর জায়গায় থাকতাম তাহলে এর থেকেও খারাপ ব্যবহার করতাম।
মিত্রার বাবা ইসিতাদের ফাঁকি দিয়েছে। তার লক্ষ্য চরিতার্থতার জন্য। অতএব বাবার কৃতকর্মের ফল মিত্রাকে ভোগ করতে হতেই পারে।
যতো সময় যাচ্ছে আমার মধ্যে তত জেদ চেপে বসছে। আমাকে যে ভাবেই হোক জ্যেঠিমনিকে নিয়ে যেতে হবে। আমি এই কাজ করবই। এইটুকু কথা বলে যেটুকু বুঝলাম ইসি সব জানে না যা মিত্রা জানে। বরুণদাও জানে না। পারিবারিক এমন কিছু ব্যাপার থাকে যা জামাইদের জানান যায় না। এমনকি তাদের পরিবারের কেউ জানতেও পারে না।
সময়ে সেটা আগুনের স্ফুলিঙ্গের মতে দাউ দাউ করে জলে ওঠে তারপর একসময় সেই আগুন ছাই চাপা পরে যায়। কালের নিয়মে তা মাটিতে পরিণত হয়।
মিত্রা আমাকে যা জানিয়েছে, তা ইসি জানে কিনা আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। মিত্রা তার বাবার দিনলিপি পরে সব জেনেছে। ইসি তা কোনদিন হাতে পায় নি। এমনকি জ্যেঠিমনি পর্যন্ত মিত্রার বাবার দিনলিপির হদিস জানতেন না। ওদের অনেক কিছুই অজানা। আমার হাতে প্রচুর অস্ত্র। যে কোন অস্ত্রের বিনিময়ে আমাকে জিততেই হবে।
অনি।
বরুণদার ডাকে মুখ তুলে তাকালাম।
দরজার সামনে যিনি দাঁড়িয়ে তাঁকে আমি আজ থেকে দশ বছর আগে দেখেছি। সেই পাকা গমের মতো গায়ের রং এখনো অটুট। সেই বুদ্ধিদীপ্ত চোখ, টিয়াপাখির ঠোঁটের মতো টিকলো নাক। মাথার চুলে এখোনো সেইভাবে পাক ধরে নি। দু’একটা রূপালি তার এদিক সেদিক উঁকি ঝুঁকি মারছে।
সাদা ধবধবে কালো পাড় শাড়ি পরা। গালদুটো সামান্য ভেঙেছে।
আমি এগিয়ে গিয়ে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলাম।
থাক বাবা থাক।
আমায় চিনতে পেরেছ জ্যেঠিমনি ?
ইসি না বললে পারতাম না। বয়স হয়েছে, চোখের জ্যোতি কেমেছে।
তুমি কেমন আছ।
ভালো।
আমি মিত্রাকে বিয়ে করেছি।
ইসি বললো।
আমি জ্যেঠিমনির চোখের দিকে তাকিয়ে আছি। বুঝতে পারলাম জ্যেঠিমনি সত্যি বলছে না। উত্তেজনা হীন চোখ। পোর খাওয়া মানুষ। আমি হাত ধরে ভেতরে নিয়ে এলাম। চেয়ারটা এগিয়ে দিলাম। জ্যেঠিমনি বসলো।
তোমরা কথা বলো। আমি একটু চা নিয়ে আসি।
বুঝলাম বরুণদা আমাকে কথা বলার সুযোগ দিয়ে গেলেন।
তোমার জন্য পূজোর প্রসাদ নিয়ে এসেছি, খাবে ?
জ্যেঠিমনি আমার দিকে তাকাল। অনেক না বলা কথা এই চোখে।
রাখো, পরে খাচ্ছি।
বরুণদা বেরিয়ে গেল।
পিকু কোথায়। ?
ওর কথা আর বোলো না। ওপরে দুষ্টুমি করছে।
আমার আজ বৌভাত, তোমাকে নিয়ে যেতে এসেছি।
জ্যেঠিমনি আমার দিকে তাকাল। এ চোখে অনেক জিজ্ঞাসা।
আমি কোথাও বেরোই না বাবা।
আজ বেরবে, শুধু মাত্র আমার জন্য বেরবে। মাত্র দশমিনিটের জন্য আমার সঙ্গে যাবে। আমি তোমায় আবার পৌঁছে দিয়ে যাব।
না বাবা থাক, আর একদিন যাব।
ইসিতা বরুণদা ঘরে ঢুকলো। মিষ্টিরপ্লেট এবং চা হাতে। ইশিতা মুখ নীচু করে আছে। বুঝলাম ওপরে গিয়ে খুব কান্নাকাটি করেছে। মুহূর্তের উত্তেজনা। তার রেশ ওর চোখের পাতায়।
আমি তাকালাম না।
আমি কিছু খাব না ইসি, খালি চা খাব।
কেন বাবা, তুমি আজ প্রথম আমাদের বাড়িতে এলে।
আজ প্রথম নয় জ্যেঠিমনি, এর আগেও বহুবার এসেছি। তোমার হাতের তৈরি বাটি চচ্চড়ি লুচি খেয়ে গেছি।
সেতো বহুকাল আগে।
আজ আমি এবাড়িতে নতুন নয়।
তুমি নতুন জামাই বলে কথা।
এটা তুমি স্বীকার করে নিচ্ছ না জ্যেঠিমনি। ইসিও মানতে চাইছে না।