What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

দেখি নাই ফিরে (উপন্যাস) (5 Viewers)

আচ্ছা মিত্রা যাকে আমি এতো ভালবাসি যার দায় অদায় সম্পূর্ণ আমার তাকে যদি একটা জিনিষ চাই, সে যদি সন্দেহ প্রকাশ করে, আমি তার কাছ থেকে সেই জিনিষটা হাত পেতে নিই কি করে বল। আমি কি তখন বিশ্বাস করতে পারি, সে আমাকে ঠিক ঠিক ভাবে বিশ্বাস করতে পারছে না। যার জন্য এতো কৌতূহল।
জানিষ মিত্রা, সে আমার যতো আপনজন হোক। হয়তো ক্ষণিকের জন্য তার কাছ থেকে নিই। তারপর তাকে ফেরত দিয়ে দিই। সে যদি আমার ঔরসজাত সন্তান হয় সেও আমার এই মানসিকতার থেকে দূরে থাকবে না।
সেই জন্য তখন তুই বললি আমি তোকে ফেরতে দিয়ে দেব।
আমি মিত্রার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম।
তুই জানিষ সেই কথাটা শুনে আমার মনটা কতোটা খারাপ হয়েছিল। যার জন্য তোকে এতো কথা বললাম, সারাদিন কষ্ট পেলাম।
তুই যতোটা কষ্ট পেয়েছিস তার থেকেও বেশি কষ্ট আমি পেয়েছি। তার থেকে কিছুটা দেবাদের সঙ্গে শেয়ার করেছি।
টিনা নিচে আমাকে আলাদা ভাবে সব বলেছে।
একটা উপকার হয়েছে। কাকতালীয় হলেও সুজিতদার কাছ থেকে একটা কাজ পাওয়া গেছে। অনেক টাকা পাওয়া গেছে। তোর সঙ্গে কিছুক্ষণ মান অভিমানের পালা চলেছে। দু’জনে কিছুটা হলেও মানসিক দিক থেকে পরিশোধিত হয়েছি।
তুই একটা তুচ্ছ কথায় এতটা ভেবে বসে থাকতে পারিস, এটা আমি কল্পনাও করতে পারি নি।
তুই আমাকে ভালবেসেছিস ঠিক, আমার মনের গহনে ডুব মারতে পারিস নি। আমি তোর মনের গভীরে কতটা ডুব মারতে পেরেছি, বলতে পারব না। এটা তোর অপরাধ নয়। আমার অপরাধ। আমি তোকে হয়তো আমার মনের অন্দরে ঢুকতে দিই নি।
যখন তুই ফাইলটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বললি, যেখানেই থাকিস নটার মধ্যে আসবি, না হলে আজ থেকে তোর সঙ্গে আমার কোন সম্পর্ক থাকবে না, তখন আমার ভেতরটা আরও দুমরে মুচরেএকাকার হয়ে গেল। একবার ভাবলাম না আমি ফিরবো না।
দাদা আজ পর্যন্ত আমাকে এই ভাবে কথা বলতে পারে নি। মিত্রা কে ? তারপর ভাবলাম, না আমি যেখানেই থাকি আজকের দিনটা আমি ডিউ টাইমে ফিরে আসব, মিত্রাকে আমি জেতাবই, মিত্রাকে আমি কখনো কোনদিন হারতে দেব না। তুই বিশ্বাস কর আমি আটটার সময় ফিরে এসেছি। আর কোথাও বেরই নি।
মিত্রার চোখ দুটো চক চক করে উঠলো। আমার পাঞ্জাবীর বোতামটা খুলে আমার খোলা বুকে ঠোঁট ছোঁয়াল।
একফোঁটাও চোখ দিয়ে জল বার করবি না। এটা তোর সঙ্গে, আমার বোঝা পড়া।
তুই বিশ্বাস কর বুবুন এটা আমার দুঃখের অশ্রু নয়, এটা আমার অনন্দের অশ্রু। আমি আমার বুবুনকে যেভাবে পেতে চাই, বুবুনকে আমি সেই ভাবেই পাচ্ছি।
জানিস মিত্র ভালবাসাটা শুধু শরীরী নয়, মনটাও অনেকখানি জুড়ে থাকে, তাই দেখবি প্রাচ্যের মেয়েদের খুব একটা ডিভোর্স হয় না। যেটা পাশ্চাত্যে আকছাড় হয়ে থাকে।
তুই কতো গভীরে গিয়ে ভাবিস। আমি যে সব গুলিয়ে ফেলি।
গুলিয়ে ফেললে কষ্ট পেতে হবে। তার দায় আমার নয়। সম্পূর্ণ তোর।
আজ মায়ের ফটোটার দিকে তাকিয়ে একটা কথা বার বার মনে হচ্ছিল। আমার রক্তের সম্পর্কের কোন আত্মীয় নেই। খুঁজলে তোর দু’একটা পাওয়া যাবে। আমার পাওয়া যাবে না। আমি যেন কলম করা গাছ। বহু চেষ্টা করেছি খুঁজে পাই নি। এখনো চেষ্টা করে যাচ্ছি। জানিনা আমার ভাগ্যে কি লেখা আছে। তবু তুই আমাকে আশ্রয় দিয়েছিস। কাছে টেনে নিয়েছিস।
এভাবে বলিস না।
যা সত্যি তাই বললাম।
চল এবার শুই। চাদরটা কেমন হয়েছে কিছু বললিনা।
জানিস মিত্রা দারিদ্রতা এতো কাছ থেকে দেখেছি,….তারপর যখন এগুলো পাই ঠিক ঠিক উপভোগ করতে পারিনা। মনের মধ্যে বার বার খচ খচ করে, অনি তুই এটা কি করছিস ? এটা তোর পথ নয়, তুই গা ভাসিয়ে দিচ্ছিস।
মিত্রা আমার হাতটা ধরে খাটের কাছে দাঁড়িয়ে।
তখন তুই প্যান্ট জামার কথা বললি, বিশ্বাস কর হাতের সামনে থাকতেও ইচ্ছে করে ওটা পরে গেছিলাম। মনের মধ্যে একটা আলাদা স্পিরিট অনুভব করলাম। মিঃ নেওটিয়াকে তো কাত করলাম। আজ প্রতিজ্ঞা করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিলাম। আমাকে দেড় কোটি টাকা যেখান থেকে হোক আনতে হবেই।
সেই জায়গায় তুই মিত্রাকে জিততে দিবি না।
হেসে ফেললাম।
এই হেরে যাওয়াতে কোন দুঃখ নেই জানিস বুবুন, এই হেরে যাওয়াটা সবচেয়ে বেশি আনন্দের। আমি এইরকম ক্ষেত্রে বার বার তোর কাছে হারতে চাই।
মিত্রা আমার অনেক কাছে।
তুই তখন বললি আলবাৎ পারব। সেই সময় তোর চোখের আগুনে আমি নিজেকে পুরে যেতে দেখেছি। তুই বললি পৃথিবীটাকে তুই হাতের মুঠোয় দুমরে মুচরে একাকার করে দিবি। আমি তোর চোখের আগুনে নিজেকে পুরিয়ে শুদ্ধ করেছি। আমি যে এই বুবুনকে চাই।
আমি মিত্রার চোখে চোখ রেখেছি।
বুবুনরে ভেতরের এই স্পিরিটটা আমাকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে এসেছে। তাই জন্য তোর কোন কাজে আমি বাধা দিই নি। কষ্ট পেয়েছি। কিন্তু মনকে বলেছি বুবুন যে কাজে হাত দেবে ও জিতবে। ও কোনদিন হারতে জানে না।
না আমি ভগবান নই। তবে অন্যায় যে করবে মন থেকে যদি বুঝি সে সত্যি অন্যায় করেছে। তোকে বলে রাখি তার শাস্তি তাকে পেতেই হবে। আমার হাত থেকে তার নিস্তার নেই।
এবার শুই চল।
তুই ওঠ আমি আসছি।
না তুই আগে উঠবি। আমি তোর হাত ধরে বিছানায় উঠবো।
কোন সংস্কার।
না।
তাহলে।
এখানে তোর অনুভূতি কাজ করবে না।
বুঝেছি। তাহলে দুজনে একসঙ্গে উঠবো।
তাই হবে।
কোন দুষ্টুমি একেবারে নয়।
একটু, বেশি নয়।
ঠিক আছে।
কিগো তোমার বিয়ে আর তুমি পরে পরে ঘুমচ্ছ।
এক ঠেলায় ঘুমের বারটা বেজে গেল।
কইরে অনি, যার বিয়ে তার হুঁশ নেই পাড়াপড়শির ঘুম নেই। দে ওর গায়ে জল ঢেলে।
বুঝলাম বৌদি আর সুরো এসে হামলা শুরু করেছে।
বৌদিগো ঘুম থেকে ওঠা বড়ো কষ্ট।
দাঁড়া তোকে কষ্ট দেখাচ্ছি। চাদর মুড়ি দিয়ে ভোঁস ভোঁস। কটা বাজে খেয়াল আছে।
কেন মিত্রাতো আছে।
মিত্রা তোকে ছেড়ে পালিয়ে গেছে। তোর সঙ্গে কে থাকবে।
আমি চোখ মেলে তাকালাম। চাদরটা মুখ থেকে সরাতেই দেখলাম বৌদি, বড়মা, ছোটমা, সুরো।
ওমা দেখেছো বড়দি যেই মিত্রার কথা বলেছি, ড্যাব ড্যাব করে কেমন তাকাচ্ছে। ওরে শয়তান।
আমি হাসছি।
ওঠ আগে।
উঠছি, তাড়াহুড় করছো কেন। তুমি কি এখুনি এলে ?
আবার কথা। আজ যা বলবো চোখ কান বন্ধ করে শুনে যাবি।
আমি হাসছি।
একবারে দাঁত বার করবি না।
আমি উঠে বসলাম। সুরোর দিকে তাকালাম।
কিরে সাজিস নি।
এখন সাজবো কেন, সে তো বিকেলে।
দুর এখন থেকে সেজেগুজে বসে থাক। অনেকে আসবে পছন্দ হলে তোরটাও সেরে ফেলবো।
তোমাকে আর ঘটকালি করতে হবে না।
বড়মা, ছোটমা মিটি মিটি হাসছে।
মুখ ধুয়ে ওই পাজামা পাঞ্জাবীটা পর। এখুনি বেরোব।
কোথায় ?
বলেছি না কোন কথা বলবি না।
আমি ভ্যাবলার মতো কিছুক্ষণ তাকালাম তারপর উঠে বাথরুমে গেলাম। ওরা সবাই চলে গেল।
আমি বাথরুম থেকে বেড়িয়ে পাজামা পাঞ্জাবীটা পরলাম। গেড়ুয়া কালারের একটা পাঞ্জাবী আর চোস্তা। মনকে বোঝালাম, এখন কোন বিদ্রোহ নয়। এই তিনটে দিন তুমি ওদের আনন্দের সঙ্গী।
আলমাড়ির আয়নটার সামনে এসে দাঁড়ালাম। খারাপ লাগছে না। চুলটা আঁচড়ে নিচে এলাম। দেখলাম বাগানে রবীন দাঁড়িয়ে আছে। মিত্রার বড়ো গাড়িটা আছে।
বসার ঘরে আসতেই দেখলাম চারজনে ফিট ফাট হয়ে বসে আছে।
আমি সবাইকে নমস্কার করলাম।
কিগো সব কোথায়!
বললামনা, তোকে ছেড়ে সব পালিয়ে গেছে। বৌদি বললো।
কিগো বড়মা, মিত্রা কোথায় ?
বড়মা মুখ টিপে হাসছে।
ছোটমা একটু চা খাওয়াবে না।
এখানে হাঁড়ি বন্ধ।
তারমানে!
ও সব জানি না, আমার চা চাই।
চল গিয়ে খাবি।
কোথায় যাব ?
সুরো মুচকি মুচকি হাসছে।
কিরে সুরো ?
কেমন মজা বলো।
চল চল ওঠ।
বড়মার দিকে তাকিয়ে।
দিদি ওই ব্যাগ দুটো নিলেই হবে।
হ্যাঁ।
ছোট তোরগুলো।
রবীনকে বলেছি গাড়িতে তুলে নিতে।
মনে হচ্ছে তোমরা কিছু একটা ঘোটালা পাকাচ্ছ।
একবারে কথা বলবি না।
বাবাঃ সেই ঘুমথেকে ওঠা ইস্তক ধমকে যাচ্ছ।
আমার কথায় ছোটমা মুখ টিপে হাসছে।
আমি উঠে দাঁড়ালাম। চা না খাইয়ে বার করছো, এটা মনে থাকে যেন।
সব মনে আছে এখন চল।
আমি বড়মাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। বলোনা কোথায় টেনে নিয়ে যাচ্ছ। এই বাড়ি শুনসান সকলে কোথায় ? মিত্রাকে দেখছি না, দাদা, মল্লিকদা, টিনা, মিলি, নীপা, সব গেল কোথায়!
এত বুঝিস এটা বুঝতে পারিস না।
ঠিক তা নয় তোমরা প্রোগ্রাম চেঞ্জ করে থাকলে আলাদা ব্যাপার। বাড়ি মাত্র দুটো, নয় এ বাড়ি, নয় ও বাড়ি।
তাহলে।
বাঃ দারুণ লাগছে এবার, সুরো বড় বিয়ে করতে যাচ্ছে বুঝলি। তুই নিধ কনে। বড়কর্তা বৌদি। বড়মা, ছোটমা বড়যাত্রী।
ছোটমা তেরে এলো, দাঁড়া তোকে দেখাচ্ছি।
আমি ছুটে বারান্দায় চলে এলাম।
আগে বলতে হয় তাহলে জলটাও খেতাম না।
ওতে কোন দোষ হয়না। বড়মা বললো।
ছেলের বাড়ির ব্রাহ্মণ কে ছোটমা ?
হ্যাঁরে গাঢ়ল। ছোটমা বড়মার ঘর থেকে চেঁচিয়ে উঠলো।
তাহলে।
সব দেখতে পাবি গেলে।
আমার বেশ ভয় ভয় করছে বড়মা।
ছোটমা এসে কানটা ধরলো।
ভয় ভয় করছে বড়মা।

সুরো খিল খিল করে হাসছে।
 
আমরা পাঁচ মূর্তিমান গাড়িতে উঠলাম।
আমি সুরো সামনের সিটে। বড়মারা তিনজন মাঝে।
বড়মা ছগনলালকে বললো, তালা দিয়ে দাও আমাদের আস্তে আস্তে সন্ধ্যে হয়ে যাবে।
আমরা বেরিয়ে এলাম।
ছোটমা বৌদি আমার পেছনে, আমি স্পিকটি নট।
মাঝে মাঝে সুরোর দিকে তাকিয়ে হাসি। সুরোও হাসে।
এক ঘন্টার একটু কম সময়ে আমরা পৌঁছে গেলাম মিত্রার বাড়িতে। গেট দিয়ে ঢুকতেই দেখলাম, চিকনা ছুটে এলো। রবীন বাগানে গাড়িটা দাঁড় করাল। সুরো দরজা খুলে নিচে নেমে গেছে। আমি নামতে গেলাম।
একবারে নামবি না আগে আমরা নামি তারপর নামবি। ছোটমা পেছন থেকে চেঁচিয়ে উঠলো।
চিকনা হাসছে।
কি গুরু আজ কিন্তু সঞ্জুর পাকা দেখা নয়।
তুই কখন এলি ?
ম্যাডাম কাল ফোন করলো, আজ সকালে এসে হাজির।
আর কেউ আসে নি।
অপেক্ষা কর দেখতে পাবি।
ওখানকার কাজ কর্ম।
একবারে কাজের কথা বলবিনা, সব সোমবার থেকে।
ঠিক বলেছিস, ওখানে গেলে একেবারে….ছোটমা ঘুসি দেখাচ্ছে।
চিকনা হেসে গড়িয়ে পড়ে।
গুরু ছোটমা পার্মিসন দিয়ে দিয়েছে।
কিগো এবার নামব।
না বলেছি।
বড়মা তুমি একটু দেখো।
দেখছি তো।
কোথায় দেখছো।
বড়মা হাসছে, তুই একটু থাম না বাপু।
মিত্রা কোথায়রে চিকনা।
সকলে আমার অবস্থা দেখে হাসে।
দেখলাম দাদা, মল্লিকদা, ডাক্তারদাদা ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো।
সুরো খিল খিল করছে। গাড়ির দরজা খুলে আমি বসে আছি।
বাঁদড়ী খালি দাঁত বার করে হাসে।
দেব না একটা।
সুরো ঘুসি বাগিয়ে এগিয়ে এলো। আমি ওর হাতটা ধরে বড়মার মুখের দিকে তাকালাম।
কিগো কখন নামব।
বিয়ে করার সখ জেগেছে, একটু কষ্ট করবি না। ছোটমা চিবিয়ে চিবিয়ে বললো।
দেখলাম ভেতর থেকে দামিনী মাসি ইসলামভাই এগিয়ে আসলো। দামিনী মাসির হাতে একটা পেতলের থালায় কি সব যেন। দামিনী মাসি এসে বড়মার হাতে দিল। একটা প্রদীপও জ্বলছে দেখছি। বড়মা প্রদীপের তাপ এবং হলুদ চন্দনের ফোঁটা আমার কপালে লাগিয়ে দিল। চিকনা বাসু, অনাদি উলু দিল। আমি ওদের দিকে তাকিয়ে দাঁত কড় মড় করছি। একে একে সবাই মাথায় ধান দুর্বো দিয়ে আর্শীবাদ করলো। আমি গাড়ি থেকে নামলাম প্রত্যেককে প্রনাম করলাম।
সবাই এসে হাজির। আমি যেন এক আজব বস্তু সকলে আমার দিকে সেইভাবে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।
বড়মা এবার চা।
খালি চা চা করে গেল। ছোটমা খঁচিয়ে উঠলো।
তোমরা ওকে চা দাও নি! মল্লিকদা বললো।
কেন দিতে হবে শুনি, একদিন না খেলে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে।
বড়মা হাসছে।
তুমি মাথায় রাখবে, এরপর তোমাকে কোন কথা বলবো না। তুমি সব জানতে কিছু বলো নি।
তুই বলিস, কাজ শেষ হয়ে যাবার পর বলিস।
দিদি কি করবে রে, দিদি কি করবে, দিদি তোকে বাঁচাবে। তোকে আজ দেখনা কি করি।
ছোটমার কথায় সবাই হাসছে।
আমরা সবাই ভেতরে এলাম। দেখলাম বুড়ীমাসি দাঁড়িয়ে গেটের কাছে, চোখটা ছল ছল।
কিগো বুড়ীমাসি তোমার আবার চোখে জল।
বড়বাবু থাকলে কি আনন্দ করতেন।
বুড়ীমাসি ভেতরে চলো, এখন একবারে ওসব নয়। ছোটমা বললো।
ব্যাশ কাজ শেষ, এবার কচুরী জিলিপি।
কাজ শেষ মানে! তোকে আচ্ছা করে হলুদ মাখাই আগে। বড় হবে হলুদ মাখবে না।
বৌদি দাঁতে দাঁত চিপেছে।
দেখলাম শিঁড়িদিয়ে টিনা, মিলি, অদিতি, নীপা নামছে।
কি অনিদা হেবি মাঞ্জা দিয়েছ।
কোথায় আর দিলাম। বললো আরও বাকি আছে।
তুই যাকে খুঁজছিস পাবি না, ঠিক সময়ে দেখতে পাবি। বৌদি বললো।
আমি ছোটমার দিকে হাঁসি হাঁসি মুখ করে তাকালাম।
ওইখানে গিয়ে চুপটি করে বসবি যখন ডাকব তখন আসবি।
আমি দাদা মল্লিকদার মাঝখানে গিয়ে বসলাম।
ফোনটা বেজে উঠলো।
পকেট থেকে বার করলাম। দেখলাম সুজিতদা। উঠে এলাম।
হ্যাঁ বলো দাদা।
কিরে সব ঠিক আছে।
তোমার এ্যাড সানডে বেরবে। চিন্তা নেই। তুমি রবিবার কি করছো।
কেনোরে।
একবার আসতে পারবে ?
কোথায়।
দাদার বাড়িতে।
যে বাড়িতে গেছিলাম।
হ্যাঁ।
কেন।
আমার বিয়ে।
ভাগ। গুল মারার জায়গা পায় না।
বিশ্বাস করো।
তোকে বিশ্বাস করা মুস্কিল।
ঠিক আছে তোমায় আসতে হবে না। তুমি বৌদিকে আমায় ফোন করতে বলবে।
ঠিক আছে।
দেখলাম মল্লিকদা এসে পাশে দাঁড়িয়েছে।
আমি ফোনটা কাটতেই আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো।
এখানেও ব্যবসা ?
কি করবো বলো। দায়িত্ব নিয়েছি। সুজিতদা জানে না।
কালকের সুজিত।
চম্পকদাটা সব গজব করে দেবে বুঝলে মল্লিকদা।
তোকে অনেকদিন বলেছি।
কি করবো। পুরনো লোক দাদা দুঃখ পাবে।
ওকি এ্যাডটা যাবে না বলেছে।
তা বলে নি। বলেছে একজন নতুন ম্যাডাম জয়েন করেছে তিনি পার্মিসন না দিলে যাবে না।
দাঁড়া আজ চম্পকের সঙ্গে দেখা হোক।
তুমি কিছু বলতে গেলে বলবে ওই দেখ পারিবারিক তন্ত্র।
তাবলে যা খুশি করবে মেনে নিতে হবে।
তুমি দাদাকে দিয়ে বলাবে।
যাই অফিসে আজ।
হ্যাঁগো আমি সন্দীপদের বলিনি, দাদা বলেছে।
তোকে ভাবতে বলেছি।
এখানে কি ফুসুর ফুসুর হচ্ছে শুনি, চল ভেতরে চল। ছোটমা মল্লিকদার দিকে তাকিয়ে হাসল।
আমি ছোটমার পেছন পেছন শুর শুর করে ভেতরে চলে এলাম।
দামিনী মাসি কাছে এসে বললো একটু চা খাবি।
চা খাব মানে। এটা জিজ্ঞাসা করে কেউ। সকাল থেকে চা চা করে চাতক পাখির মতো মরছি।
মাসি মিত্রাকে কিছু খেতে দিয়েছ। ছোটমা বললো।
বললো কিছু খাবে না। সকাল বেলা সরবত খেয়েছে।
আমি একবার ছোটমা একবার দামিনী মাসির দিকে তাকালাম। ইসলামভাই হাসছে।
কোথায় লুকিয়ে রেখেছ।
আমি শিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে গেলাম। ছোটমা হাঁই হাঁই করে উঠলো।
আমি হাসছি।
ছোটো ওকে ওপরে যেতে দাও। দাদা হাসতে হাসতে বললো।
ছোটমা চুপ করে গেল। আমার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো।
আমি ওপরে উঠে এলাম। দেখলাম মিত্রার ঘর থেকে চেঁচামিচির শব্দ। বারান্দা শুনসান। আমি ধীর পায়ে মিত্রার ঘরের সামনে এলাম। আমাকে দেখে সবাই হৈ হৈ করে উঠলো। মিত্রা একটা কাশ্মীরি গালিচার ওপর বসে। ওকে ঘিরে টিনা মিলি সবাই।
বড়মা বৌদি সোফায় বসে। প্রথম যেদিন এই বাড়িতে এসেছিলাম মিত্রার সঙ্গে ওই সোফাতে বসেছিলাম। সে রাত্রিটার কথা এখনো চোখের সামনে বাঁধান ছবির ফ্রেমের মতো ভেসে আছে।
মিত্রা একটা হলুদ রং-এর শাড়ি পরেছে। লাল ব্লাউজ। কপালে আমার মতো হলুদের টিপ তেল গড়িয়ে পরেছে। আমার দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসল।
বড়মা বড় এখানে কেন। টিনা চেঁচিয়ে উঠলো।
টিনার কথাটা আমার যেন কানেই ঢুকছে না। আমি কিছুক্ষণ দাঁড়ালাম। এক দৃষ্টে ওর দিকে তাকালাম। তারপর ফিরে এলাম। শিঁড়ি দিয়ে ধীর পায়ে নিচে নেমে এলাম।
শিঁড়ির মুখে দামিনী মাসি চায়ের কাপ হাতে দাঁড়িয়ে। মাসির হাত থেকে চায়ের কাপটা নিয়ে সোজা বাগানে চলে এলাম। কারুর দিকে তাকালাম না। রবীন গাড়ি মুছছে। পায়ে পায়ে রবীনের দিকে এগিয়ে গেলাম। চায়ের কাপটা রবীনের হাতে দিয়ে বাগানের পেছনে চলে এলাম।
মিত্রার বাগানটা ও বাড়ির থেকেও সুন্দর। এ বাড়িতে দুটো মালি আছে। ওরা মেইনটেন করে। সব ধরনের ফুল কম বেশি ফুটে আছে। আমি ডালিয়ার টব গুলোর কাছে গিয়ে বসলাম। দারুন লাগছে ডালিয়া গুলো দেখতে।
পাশেই হাসনুহানা। কি রং যেন যৌবন ফুটে বেরচ্ছে। চার রকমের গোলাপ। মেরুণ কালারের গোলাপ গুলো আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো। আমি ঘাসের ওপর বসে পরলাম। মনে হলো আমি এদের কতোদিনের পরিচিত।
দেয়ালের ধার ঘেঁসে পাম, সুপুরি, নারকেল গাছ। আমি চেয়ে চেয়ে দেখছি। সামনেই দুটো চড়ুই পাখি উড়ে এসে বসলো। ঠোঁটে ঠোঁট রেখে একে অপরকে সোহাগ করলো তারপর আবার ফুরুত করে উড়ে চলে গেল।
আমি একমনে দেখছি। মিত্রাকে আজ কি সুন্দর লাগছে। হয়তো ওর প্রথম বিয়ের দিন আরও বেশি সুন্দর লেগেছে ওকে। এ বাড়িতে তখন কতো লোকের হৈ চৈ। কতো ব্যস্ততা। আজও হয়তো সেইটা ফিরিয়ে আনার আপ্রাণ চেষ্টা চলছে।
কিরে এখানে একা একা বসে আছিস।।
মুখ তুলে তাকালাম। মিত্রা পাশে এসে বসলো। আমি ওর দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে।
কি দেখছিস অমন করে।
তোকে ভীষণ সুন্দর লাগছে।
তাই।
মাথা দোলালাম।
হঠাৎ ওই ভাবে চলে এলি।
সকাল থেকে তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল। দেখা হয়ে গেল, চলে এলাম।
ছোটমা বললো, তুই মিত্রা মিত্রা করে পাগল করে দিয়েছিস।
হাসলাম।
আমাকে বকলি না।
কেন।
তোকে না বলে চলে এলাম।
তুই আমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিস, আমি সারপ্রাইজড হলাম।
তাই নিচে চলে এলি, মন খারাপ করে।
কই মন খারাপ করলাম।

চা রবীনকে দিয়ে দিয়েছিস।
 
তোকে দেখার পর খেতে ইচ্ছে করলো না।
কেন।
তুই আমার জন্য কষ্ট করছিস, আমি এইটুকু পারব না।
কই আমি কষ্ট করছি।
তুই তো কিছু খাস নি।
সরবত খেয়েছি।
আমি জল খেয়েছি।
মিত্রা খিল খিল করে হেসে উঠলো। চল ভেতরে চল, ছোটমা হলুদ মাখাবে দুজনকে।
এই সুন্দর জামাটা নষ্ট করে ফেলব।
আবার কিনে দেব তোকে।
তোর বাবা মার কাছে একবার নিয়ে যাবি।
চল। আমার ঘরে কোন ফটো নেই। মায়ের ঘরে আছে। ও ঘরে তুই কোনদিন ঢুকিস নি।
বড়মা কোথায় ?
তোর মন খারাপ হয়েছে দেখে বড়মারও মুখটা কেমন ভারি হয়ে গেল। দামিনী মাসি বললো তুই যা মিত্রা, তুই গেলে ও ঠিক হবে।
নারে আমার মন খারাপ হয়নি। মাঝে মাঝে নিজেকে নিজে প্রশ্ন করি, আমি এসবের যোগ্য কিনা।
কেন তোর মনে এতো সংকোচ।
সংকোচ নয়। না পাওয়ার বেদনা। যখন পাই ঠিক মতো গ্রহণ করতে পারিনা।
আমি আছি তোর পাশে, ভয় কিসের।
তোকে হারাবার ভয়, আমাকে কুড়ে কুড়ে খায়।
আর আমাকে হারাবি না। এবার ওঠ। আজকে তুই আমার স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন আমি সার্থক করবো।
আমি বাধা দেব না। আর কি কি আছে।
নাই বা জানলি।
ঠিক আছে জানতে চাইব না।
পায়ে পায়ে দুজনে মিত্রার মায়ের ঘরে এলাম। দুজনকে আগে যেমন দেখেছিলাম। ফটোতেও সেরকম দেখলাম। সমান জীবন্ত। ফুলের মালা দিয়ে সাজানো। আমি মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করলাম।
জানিস বুবুন আজ বাবা থাকলে ভীষণ খুশী হতো।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম।
তুই প্রণাম করে কি বললি।
যে দায়িত্ব মাথা পেতে নিচ্ছি তা বহন করবার শক্তি দিন।
মিত্রা কাছে এসে আমার বুকে ঠোঁট রাখল।
এবার তুই কিছু খা।
না। আমাকে এই ঘরে একটু একা থাকতে দিবি।
না।
কেনো।
তুই আবার মন খারাপ করবি।
না করবো না।
তুই আজ আমার সঙ্গে থাকবি। একটুক্ষণের জন্যও আমার চোখের আড়াল হবি না।
তোর আত্মীয়রা কেউ আসবে না।
সবাইকে বলেছি, যারা আসে আসবে, নাহলে কি করবো।
তুই কখন এসেছিস।
ভোর বেলা। সবাই মিলে গঙ্গায় স্নান করলাম। তারপর চলে এলাম।
আমাকে একা রেখে চলে এলি।
তুই বড়, তোকে সঙ্গে আনা যায়।
হেসে ফেললাম।
তুই বিয়ে করতে চেয়েছিস, বিয়েটা শুধু কাগজ কলমে হয়, একটু অনুষ্ঠান না করলে চলে।
তার মানে ছাঁদনা তলা শুভ দৃষ্টি ?
দূর ওসব কবে হয়ে গেছে।
তাহলে।
দেখবি, সময় হোক।
এখন কি করবো।
কি করবি, ঘুরে ঘুরে বেড়াবি।
দু’জনে পায়ে পায়ে নিচে নেমে এলাম।
ডাক্তারদাদা আমার দিকে তাকিয়ে, কি স্ট্রংম্যান মনে হচ্ছে চিন্তা শক্তির কোথাও ছেদ পরছে ?
মাথা নীচু করে হাসলাম।
তুমি ভাবতেই পার নি এরকম কিছু একটা হতে পারে।
মাথা দোলালাম।
তোমায় কিরকম সারপ্রাইজ দেওয়া হলো বলো।
হাসলাম।
হাসলে হবে, তোকে মুখে কিছু বলতে হবে। দাদা বললো।
দাঁড়াও না এডিটর, বাবু এখন নিজের সঙ্গে নিজে যুদ্ধ করছে।
কি করে বুঝলে।
ওর মুখ বলছে।
থামো তুমি, হ্যাঁরে তোরা দু’জন কিছু খা। বড়মা বললো।
আমি খাব না মিত্রা খাক।
তুই খেলে খাব।
এই যে বললি খেতে নেই।
তোকে মিত্রা বলেছে।
বললো খালি সরবৎ খেয়েছি আর কিছু খাব না।
একটু মিষ্টি খা কিছু হবে না।
মিত্রার দিকে তাকালাম।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল।
দেখলাম অনাদি বাসু নিচের বিশাল ড্রইংরুমের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে। ইশারায় ওদের ডেকে নিলাম। তিনজনে বাগানের সবুজ গালিচার মতো ঘাসে এসে বসলাম। সামান্য গরম লাগছে। গাছতলায় বসে অনাদিকে বললাম একটা সিগারেট দিবি।
আমার কাছে নেই, চিকনার কাছে আছে।
বাসু বললো দাঁড়া চিকনাকে ডাকি।
ও কোথায় ?
আবার কোথায়, বড়মার পেছন পেছন ঘুরছে, আর খেয়ে যাচ্ছে।
বাসু উঠে দাঁড়াল।
হ্যাঁরে অনাদি মৌসুমি মাসি এখন ওখানে আছে।
না, দেশে গেছে, মাস খানেক পরে আসবে, লোক জোগাড় করে।
কেন।
চিকনা মৌসুমি মাসিকে বলেছে।
কেন আমাদের ওখানে লোক পাওয়া যাবে না।
চিকনার বিশ্বাস নেই। তারওপর তোর বাবার আমলের লোক। চিকনা বললো মাসি তার লোকজন নিয়ে ধান সেদ্ধকরা শুকনো করা ওই সব করবে। বাকি পচা, পাঁচু, হাঁড়ি পাড়ার কিছু ছেলে।
মাসির বয়স হয়েছে।
কে শুনবে কার কথা। যেই শুনেছে অনি মিনি রাইস মিল করবে সেই থেকে স্যারের মাথা খেয়ে ফেলছে। চাষের সময় ছাড়া গ্রামের ঘরে কাজ কোথায় বল। সব সময় তোর ওখানে পরে আছে।
ঠিক।
তুই মৌসুমি মাসির দেশের বাড়ি গেছিস। অনাদি বললো।
মাস দুয়েক আগেও গেছিলাম। মৌসুমি মাসির বড়ভাই ওখানকার মুখিয়া। আমার ভীষণ ভালো লাগে জায়গাটা। নামটাও ভীষণ সুন্দর ভালোপাহাড়। জানিস ওখানে প্রায় সকলে আমাকে চেনে। এক একটা ছোট ছোট টিলার মতো পাহাড় আট দশটা পরিবার নিয়ে এক একটা গ্রাম। পাঁচটা গ্রাম পঞ্চাশটা পরিবার। পাঁচ ছশো মানুষ। আমরা শহরে বসে অনেক লেকচার দিই বুঝেছিস অনাদি। তুই গেছিস কখনো ?
না।
দেখলাম বাসু চিকনা হাসতে হাসতে আসছে। কাছে এসে একটা ভেউ করে ঢেঁকুড় তুললো।
কিরে!
খাওয়াটা একটু বেশি হয়ে গেছে বুঝলি অনি।
কি খেলি ?
বেশি না, গোটা কুড়ি লুচি, আর দশটা রসোগোল্লা।
এটা টিফিন!
তাহলে কি।
দুপুরে।
ইসলামভাই-এর লোকজন তৈরি করছে। বিড়িয়ানি, মুরগীর ঠ্যাং।
আমি চিকনার দিকে তাকালাম।
তাকিয়ে লাভ নেই। এই জন্য বলেছিলাম, অনি বিয়ে করিস না। বিয়ে করলে খাওয়া জুটবে না।
আমি হাসছি।
তুই এইকথা কখন বললি অনিকে। বাসু বললো।
আশাপুরায় যখন পড়তাম। ক্লাস ফোর।
আমার হাসি থামে না।
অনি একটা সিগারেট চাইছে। অনাদি বললো।
তোরা পাবি না।
কেন ?
একটাই প্যাকেট আছে। সন্ধ্যে পর্যন্ত চালাতে হবে।
কিনে নিবি।
এখন ব্যবসা মন্দা, বুঝে শুনে খরচ করতে হবে।
শুনছিস অনি চিকনার বাতেলা।
সঞ্জুকে আসতে দে, সব হিসেব করে দেব।
কেন ও কি আমার বাপ।
বাপ কি মা এলেই বোঝাব।
অনি তুই এখন ভিভিআইপি তোকে এখন ধরা খুব মুস্কিল। এই ফাঁকে কিছু কথা সেরে নিই।
চিকনা আমার হাতে একটা সিগারেট দিল। ওদেরও দিল। সিগারেট ধরালাম। চিকনা বসলো।
বল।
ধান রাখার আর জায়গা নেই।
আমি কি করবো।
তুই কি করবি মানে! গাছে তুলে দিয়ে মই কেরে নিবি ?
জায়গা বার কর।
অনাদির বাড়িতে রেখেছি, বাসুর বাড়িতে রেখেছি।
কিছু বেচে দে।
এখন বেচলে লাভ হবে না।
তাহলে সেদ্ধ করে চাল বানিয়ে নে। মেসিন পত্র নিয়ে এসেছিস ?
মেসিন এসেছে, এখনো ফিটিং হয় নি।
কেন।
অনাদিকে জিজ্ঞাসা কর। হারামী আমাকে নাকে দড়ি দিয়ে চড়কি ঘোরাচ্ছে।
আমি হাসছি।
হাসিসনা, ও শালা অনেক টাকা চাইছে। মেসিন বসাবার জন্য।
তোর যদি পোষায় অনাদিকে দিয়ে কাজ করাবি, না হলে করাবি না।
সেখানেও ও পুটকি মেরে রেখেছে।
কেন।
তুই জিজ্ঞাসা কর।
ব্যবসা করবি তুই, আমি অনাদিকে জিজ্ঞাসা করবো কেন।
অনাদি, বাসু হাসছে।
চিকনা গাল দিল। হাসি হচ্ছে অনির সামনে। আমাকে কেশ খাওয়ানো।
নিশ্চই কিছু একটা অসুবিধা আছে, তাই অনাদি পরে করবে বলছে।
তোকে বলেছে, আমাকে বলেনি।
আমাকে অনাদি কিছু বলেনি।
তাহলে তুই জানলি কি করে।
তোর কথা শুনে।
আমার কথা শুনে তুই সব জেনেগেলি!
আমি হাসি।

মাথাটা একটু খাটা না। কতদিন গবেট গোবিন্দ হয়ে থাকবি।
 
ও বলেছে ব্যাঙ্কের বিল্ডিং-এর মেটিরিয়াল যখন আসবে তখন মেসিন বসাবে।
ঠিকই তো বলেছে। ডবল খরচ করবে কেন।
কিসের ডবল খরচ।
তোর জন্য একবার গাড়ি ভাড়াদিয়ে মেটিরিয়াল নিয়ে আসবে, আবার ব্যাঙ্কের জন্য মেটেরিয়াল নিয়ে আসবে।
কেন ও শালা গাড়িভাড়া আমার কাছ থেকে নেবে না, মাগনায় নিয়ে আসবে।
তোর কাছ থেকে কম নেবে।
শালা ওমনি অনির সামনে আমাকে কেশ খাওয়ালি।
চিকনা অনাদিকে তেরে গেল।
এটা ম্যাডামের বাড়ি নো ঝামেলা।
ওখানে গিয়ে রাম কেলান কেলাব।
দেখলাম মিত্রা একবার বেরিয়ে এসে আমাদের দেখে আবার ভেতরে চলে গেল।
দেখলি দেখলি ম্যাডাম তোর গলার আওয়াজে একবার দেখে গেল। বাসু বললো।
এর থেকে আস্তে কথা বলা যায় না।
বোস বোস। এবার বাকিটা বল।
এইটাই আর কিছু নয়।
এই যে বললি রাখার জায়গা নেই।
অনাদি একটা ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
তাহলে যে বললি অনাদি কিছু করছে না।
আমি তোকে তাই বললাম নাকি।
কতো ধান তুলেছিস।
পাঁচ টন।
ওরে বাবা টাকা পেলি কোথায়।
ইসলামভাই দিয়ে এসেছে।
ইসলামভাইকে শোধ করবি কি করে।
ধান বিক্রি করে।
টাকার সুদ।
নেবেনা বলেছে।
তাহলে।
ও তুই বুঝবি।
আমি বুঝলে তুই কি ব্যবসা করবি।
দাঁড়া একটু চা নিয়ে আসি।
অমনি সটকে পরার ধান্দা।
চিকনা হন হন করে চলে গেল, আমি চেঁচিয়ে বললাম, আমি কিন্তু খাব না।
চিকনা একবার পেছন ফিরে দাঁড়াল।
সেকিরে ভূতের মুখে রাম নাম।
বিয়েতো করলি না।
ওমনি দিলি।
আমি হাসলাম। চিকনা গট গট করে চলে গেল।
অনাদিকে বললাম কি হাল রে।
কাজ চলছে পুরো দমে।
আমি দিন পনেরোর আগে ওখানে যেতে পারব না।
তুই কাজ শেষ করে আয়।
নিরঞ্জনদা এলো না।
এসেছে। দাদা কোথায় পাঠিয়েছে।
নিরঞ্জনদা জায়গাটার ব্যাপারে কি বললো।
শুনেছি কাগজপত্র রেডি হচ্ছে। নিরঞ্জনদা খুব দৌড়দৌড়ি করছে।
আমি অনাদির দিকে তাকিয়ে।
তোকে একটা সুখবর দেওয়া হয় নি।
আবার বাপ হবি নাকি ?
দুর।
বাসু জোরে হাসল।
বাসু চান্স নিচ্ছে ?
ঢেমনা। বাসু বলে উঠলো।
আমাকে লোকাল কমিটির দায়িত্ব দিয়েছে।
তার মানে! অমল কোথায় ?
মাঝে ও একটা ঘোটালা করেছে, মেয়ে ঘটিত।
দিবাকর কেশ!
কাছা কাছি।
তারপর।
নিরঞ্জনদা প্রায়ই এখন ওখানে যাচ্ছে। ওকে সাসপেন করেছে, আমাকে বলেছে তুই দেখ।
আমি মুচকি মুচকি হাসছি।
তারপর দেখছি।
তারমানে তোর চাপ বেরে গেছে।
সকাল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত দৌড়।
তোকে একটা কথা বলেছিলাম মনে আছে।
কমিউনিকেসন বাড়াতে, আর যতটা পারি লোকের উপকার করতে। বিশ্বাস কর অনি আমি আপ্রাণ চেষ্টা করছি। আমি জানি আমি এখন যেখানে আছি স্রেফ তোর জন্য। জীবনে কোনদিন ভাবতে পারিনি অনিমেষদার সঙ্গে বসবো। কথা বলবো। আমার সেই শাধ পূর্ণ হয়েছে।
কবে বসেছিলি।
তুই যেদিন অসুস্থ হয়েছিলি।
ওই যে ম্যাসেজ পেয়ে আমরা চলে এলাম। বাসু বললো।
ওইদিন। আমাদের প্রত্যেককে ডেকে পাই টু পাই তোর সম্বন্ধে জেনেছে। কি জেরা রে। প্যান্ট ভিঁজে যায় আর কি।
চিকনা।
দুর ওর কোন বুদ্ধি শুদ্ধি আছে। অনিমেষদার সামনে বলে আমাকে একবার ডাক্তারকে ধরে এনে দিতে পারেন।
এ্যাঁ।
এ্যাঁ না হ্যাঁ। ও ডাক্তারকে একবার দেখে নেবে, ডাক্তার যেন দিবাকর।
তারপর।
সারাক্ষণ তোর পা ধরে বসে থাকল আর কাঁদে। কেউ নড়াতে পারল না ওখান থেকে। পকেট থেকে পাঁচসিকে বার করে তোর কপালে ঠেকিয়ে মানতে করেছে। আগামী বছর রাসের সমস্ত খরচ ওর।
কি পাগল বলতো।
পাগল না। তখন যা অবস্থা ছিল ডাক্তারদাদার মতো ওরকম জাঁদরেল মানুষ ঘাবড়ে গেছিল।
আমি পরে অনেক চিন্তা করেছি বুঝলি, কেন হলো কিছুই বুঝতে পারছি না।
তোর ওপর তখন পীরবাবা ভর করেছিল।
কচু।
তুই বাসুকে জিজ্ঞাসা কর।
তোকে তখন ধরে রাখা যাচ্ছিল না। আমরা তিনজনে হাঁপিয়ে যাচ্ছিলাম। কি শক্তি তোর গায়ে।
যাঃ যতো সব গাঁজা খুরি।
তুই যখন চোখ খুললি তোর চোখ দুটো জবা ফুলের মতো লাল। কি হয়েছিল বলতো।
মৃগী হয়েছিলি।
তুই সব কিছুতে হেঁপি মেরে উড়িয়ে দিস।
তোরা আজকের দিনে বসে যদি এসব কথা বলিস, চলে কি করে।
তাহলে তুই পীরবাবার থানে যাস কেন।
ওটা আমার বিশ্বাস, ভালবাসা। তাই বলে পীরবাবা আমার ওপর ভর করবে, এটা মানা যায়।
দেখলাম চিকনা মিত্রা সমেত সবাইকে ধরে নিয়ে আসছে। আমি ওদের দিকে তাকিয়ে হাসলাম।
মিত্রা আমার পাশে এসে বললো।
চা খাবিনা কেন।
এমনি।
আমি ফোন করেছিলাম খেতে বলেছে।
হাসলাম।
হাসলি যে।
তুই ফোন করে পার্মিসন নিলি।
আজকের দিনটা মানব।
বুঝেছি আবার একটা ঘোটালা।
এই জন্য তোকে বলেছিলাম বিয়ে করিস না অনি, ফুর ফুর করে ঘোরা যাবে।
চিকনাদা। নীপা চেঁচাল।
ওরে বাবা, এ স্মার্ট ম্যাডাম ছিল কই।
মিত্রা হাসছে।
বিশ্বাস করুণ ম্যাডাম এটা মনের কথা নয়। নীপার দিকে তাকিয়ে।
কালকে পর্যন্ত হিসাব করে এসেছো। নীপা গম্ভীর হয়ে বললো।
অনি বলেছে এখানে কোন বিজনেস টক হবে না। খালি খাওয়া দাওয়া আনন্দফূর্তি।
আংরেজী! অনাদি বলে উঠলো।
হ্যাঁরে….তারপর নিজের মুখ নিজে চেপে ধরলো।
অনাদিরা জিভ বার করে হাসছে।
এখুনি সব্বনাশ করে দিচ্ছিলি।
আটকে দিয়েছি।
তোকে অনি কখন বললো এ সব কথা। অনাদি বললো।
তোর কানে বয়রা, শুনবি কি করে।
হাসি থেমে নেই।
মিত্রা আমার হাতে চায়ের কাপ দিয়ে পাশে বসলো। সবাই ঘাসের ওপর গোল করে বসেছে।
অদিতি, দেবা নির্মাল্যকে দেখছি না।
আর বোলোনা তিনঘন্টা হয়ে গেছে। ইসলামভাই-এর ফোনের বিল চড় চড় করে বারছে।
কোথায় গেছে ?
নিউ মার্কেটে পাঠিয়েছে, মাংস আনতে।
চিকেন না মটন।
দুটোই। তাহলে ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা বার করে আনছে।
ওরা হাসে।
সেরকমই হবে। তাও ইসলামভাই-এর পরিচিত দোকান, সব বলে রেখেছে ইসলামভাই।
ম্যাডাম আপনারে কিন্তু আজ চাকমা দেখাচ্ছে। চিকনা বললো।
মিত্রা মুচকি মুচকি হাসছে।
চিকনা একবার নীপার দিকে তাকাল।
তুই তাকাস না। অনির বে বলে কথা। একটু আনন্দ ফূর্তি করবো না।
বে কি চিকনা। মিত্রা বললো।
গাঁইয়া কোথাকার। নীপা বললো।
দেখলি অনি, আমি গাঁইয়া।
বিয়ে বলতে পার না।
অনি কি ? অনি কি ? ও শউরে।
সবাই হাসছে।
ম্যাডাম একটা পার্মিসন নেব।
কি।
অনির বিয়ে উপলক্ষে একটা বিড়ি খাব।
মিত্রা মুচকি মুচকি হাসে।
অনি একটা খাবে।
ও বিড়ি খায় !
পাইলে ছাড়ে না।
তোর বিড়ি খাওয়ার প্রথম দিনটা মনে আছে। আমি বললাম।
এইতো শুরু করলি, আমার প্রেসার কুকারে গ্যামো মারার ধান্দা।
চিকনা এমন ভাবে কথাটা বললো সবাই হেসে গড়া গড়ি যায়।
মিত্রা হাসতে হাসতে আমার গায়ে ঢলে পরলো, সেটা কিরে বুবুন।
বুঝলি না।
মিত্রা মাথা নাড়ে।
অনি একবারে না। তাহলে আমি এ্যান্টাসিড খেয়ে মরে যাবে।
মরো না মরো। নীপা দাঁত খিঁচিয়ে বললো।

ওরকম করে বলিস না, দাঁত ভেঙে যাবে।
 
সবাই হাসে।
কিরে বুবুন। বলনা চিকনার কোড ল্যাঙ্গুয়েজ গুলো।
প্রেসার কুকার হচ্ছে প্রেসটিজ। প্রসটিজ প্রেসার কুকার আছে না।
ওরা হেসে এ ওর গায়ে ঢলে পরে।
গ্যামো হচ্ছে গ্যামাকসিন।
অনিদা তুমি থাম। মিলি বললো।
এ্যান্টাসিড হচ্ছে ম্যাটাসিড। ধানে পোকা লাগলে দেয়। ওটা বিষ।
চিকনা এতো জানে। মিত্রা এমন ভাবে বললো সবার অবস্থা সঙ্গীন।
এইতো ম্যাডাম। আমি সেই পুকুর ঘাটের কেশটা এবার দেখাই।
মিত্রা আমার হাতটা ধরে বললো ওকে তুই থামতে বল।
আমি বললে ও থামবে। সবে তো শুরু। এখনো সঞ্জু আসে নি। এলে হাতাহাতি হয়ে যেত।
বিড়ি খাওয়ার কেশটা।
দেখলি চিকনা দেখলি, মিত্রা আবার মনে করিয়ে দিল।
কি আছে বললে, তোর প্রেসার কুকার ফেটে যাবে নাতো। অনাদি বললো।
আমি কাঞ্চন কেস বলবো।
বলবি।
অনিদা বলো এটা শোনা হয়নি। নীপা বললো।
দেখো কিরকম ছত্তিশ পাটি বের করেছে। খুব সখ না। চিকনা বললো।
ওখানে চলো ছত্রিশ পাটি দেখাব।
ওখানে কেন এখানে দেখা।
উঠবো।
ওঠা উঠি কেনো, বসে বসে তো বেশ হচ্ছে।
সবাই হাসে।
বুবুন বলনা।
আমি চিকনার দিকে তাকাই।
চিকনা মাথা নীচু করে বললো, বল। ম্যাডাম যখন শুনতে চাইছে।
অনাদি হেসে ফললো।
তোর মাটি কাটার গল্প বলি।
বলনা। পঞ্চায়েত হবো দুটো পয়সা কামাবনা তা হয়।
শুনলি শুনলি অনি।
আর আমি ধানে দু’টাকা বেশি চাইলে, বলে গ্রামসভা বসাব।
এটা অন্যায়, এটা আমি মানতে পারছি না। অনাদি এটা ঠিক নয়, ও ওর ব্যাবসা করবে। সে দু’টাকা বেশি নিক আর কম নিক।
সেটা খাতায় লেখে না। গেঁড়ায়। ওটা বলছোনাতো। নীপা চেঁচিয়ে উঠলো।
তুই আমাকে তেল কেনার পয়সা দিস। আমি যে এদিক ওদিক যাই। বিড়া খাওয়ার পয়সা দিস।
তেল না থাকলে তুমি ইসলামভাই-এর বাইক নিয়ে যাও। তুমি ওই পাড়ায় কি করতে যাও। অনিদাকে বলবো।
চিকনা ছুটে গিয়ে নীপার পা ধরে।
তোর পায়ে ধরি তুই বলিস না। তুই যে ঘর শত্তুর বিভীষণ জানতাম না।
সবাই জোরে জোরে হাসছে।
আমি ঘরশত্রু বিভীষণ। দাঁড়াও তোমায় দেখাচ্ছি।
কিরে নীপা বলতো একটু শুনি গিয়েই গ্রাম সভা বসাব। অনাদি বললো।
তুই আবার আগুনে ঘি ঢালছিস কেন। চিকনা অনাদির দিকে ঘুরে বললো।
মিত্রা হেসে আমার কোলে মাথা দিয়েছে।
বুবুন একিরে, কি থেকে কি বেরচ্ছে।
দাঁড়া আরও বেরবে।
চিকনা আমাদের দুজনের কাছে এসে বসলো। বিশ্বাস কর অনি সব মিথ্যে। তুই গেলে আমি তোকে সব বলবো।
মিনতিকে খুঁজে পেয়েছিস। আমি চোখ নাচিয়ে বললাম।
বাসু মুচকি মুচকি হাসছিল। এবার জোরে হেসে উঠলো।
বিকেল হলেই সঞ্জুদা চিকনাদা নেই। কোথায় ? ফোন করো, খালি বলবে আসছি দাঁড়া না। নীপা বললো।
এই কেশটা কতোদিন চলছে নীপা।
আমি এখানে আসার পর থেকে বেশি হচ্ছে। আমি সব খবর রাখছি। সঞ্জুদা পালের গোদা।
তুই বিশ্বাস কর অনি, নীপা মিছে কথা বলছে।
ঠিক আছে সঞ্জু আসুক।
তুমি কাকে বলবে, সঞ্জুদাও ওইরকম। তুমি স্যারকে বলে আসার পর, মিনতিও এখন রেগুলার এ্যাপো করছে।
ওরে বাবা, তুই থাম নীপা। আমার হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা হয়ে গেল। মিত্রা বললো।
কি বুঝছো টিনা।
সব বুঝেছি অনিদা তুমি আর খুঁচিও না। পেটে খিল ধরে গেছে।
চিকনা আমার আর মিত্রার সামনে বসে। আমি চিকনার দিকে হাসি হাসি মুখ করে তাকালাম।
তুই বিশ্বাস কর অনি।
মিনুকে তুই তুলে আনিস বাড়ি থেকে।
হ।
এনে সঞ্জুর কাছে গ্যারেজ করে দিস।
হ।
তারপর দুজনকে পাহারা দিস।
চিকনা লজ্জা পেয়েগেল, মাথা নীচু করে ঘাড় দোলাল।
আবার বাড়িতে দিয়ে আসিস।
চিকনা হাসে।
সঞ্জু তোকে তেলের পয়সা দেয় ?
না।
কেন ?
ডিউ স্লিপ।
সবাই হাসছে।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, তুই ওর পেট থেকে কথা বার করে ফেললি ?
ওর প্রেম করার দম নেই, মেয়ে দেখলে দশহাত দূর থেকে পালায়।
একমাত্র তুই বুঝেছিস, নীপাটা কিরকম করলো বল।
তুই ওকে বলিসনি কেন।
ও স্যারকে বলে দেবে।
নীপা তোকে মাইনে দেয় না।
খালি খাটিয়ে মারে বলে কিনা ব্যবসা মন্দা।
ঘোর অন্যায়। আমি যে নীপাকে বলেছিলাম।
প্রতিদিন কুড়িটাকা দেয়। বাবাকে গিয়ে টাকা দিয়ে আসে। আমাকে দেয় না।
তুমি টাকা ওড়াবে।
দেখেছিস কিরকম টট্টরি।
আমি মিত্রা হাসি।
ম্যাডাম তুমি বলো না নীপাকে প্রতিদিন পাঁচটা টাকা বেশি দিতে।
মিত্রা কোন কথা বলে না খালি হাসে।
দেবাদের গাড়িটা গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকলো।
অদিতি চেঁচিয়ে উঠলো বাবুরা এলেন।
আবার হাসিতে সকলে ফেটে পরলো।
দেবা গেট দিয়ে ঢোকার মুখেই আমাদের দেখেছে। দেখলাম পেছনের সিটে আর একজন বসে। মিত্রাকে একটা কনুইয়ের খোঁচা মারলাম।
কিরে।
দেখ পেছনের মালটাকে চিন্তে পারিস কিনা ?
মিত্রা ভালো করে দেখে আমার দিকে তাকিয়ে ঘার দোলালো, চিনতে পারছে না।
দেবা, মৈনাক নামলো। নির্মাল্যকে বললো এগুলো ভেতরে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা কর।
দু’জনে কাছে এলো। মৈনাক একবার আমাকে দেখল একবার মিত্রার দিকে তাকাল।
শালা হারামী চোখ মেরে মেরে আমার রেটিনা শুকিয়ে গেল, আর তুই মালটাকে তুলে নিলি।
টিনা মিলি মনে হয় আগে কখনো দেখে নি। ওরা ঠিক বুঝতে পারছে না।
ওই জন্য তোর চোখে কাঁচের গ্লাস, আমি বিন্দাস।
মৈনাক কাছে এসে উবু হয়ে বসলো।
মিত্রাকে পুরো আপেল লাগছেরে অনি।
কবে কিসমিস ছিলো।
দেখ অনি দেখ, মিত্রা আমাকে চিনতে পারছে না। কিরকম ভাবে তাকিয়ে আছে।
তোর পরিচয়টা ছোট্ট করে দিই মনে পরে যাবে।
মিলি ইশারা করে বললো, বলো বলো।
তুই ওদের চিনিস।
মৈনাক পেছন ফিরে ওদের দেখলো।
না।
আগে তোর পরিচয় দিই, তারপর ওদেরটা দেব।
তোর কি এখনো বয়স হয় নি।
কোথায় হলো।
মৈনাক মুচকি মুচকি হাসছে।
দেখ সবাই তোর পরিচয় দিতে বলছে।
তোকে অলংকার ঝাড়তে হবে না।
সবাই মুখে হাত চাপা দিয়ে হাসছে।
দেবা তুই বলে দে।
ওতো আর একজন।
কেন।
ফোন করে বললো, অনির বিয়ে চলে আয়। তারপর ফোন অফ।
আমি ফোন করি পাই না। তারপর কোনক্রমে পেলাম। বললো, নিউমার্কেটে মাংসের বাজার।
ভেবে দেখ, অনির বিয়ে নিউ মার্কেটের মাংসের বাজার। কিরকম খার লাগে।
সবাই হাসছে।
মিত্রার দিকে তাকালাম, আস্তে করে বললাম, তোর মনে পরে সেই প্যান্টের চেন খোলা, বাচ্চাটা খামচে ধরেছে।
ভ্যাট। মৈনাক বলে উঠলো।
মিত্রা হাসতে গিয়ে বিষম খেলো। মিলি টিনা ছুটে এলো।
কি হলো মিত্রাদি!
মিত্রা হাত দেখাচ্ছে। তোরা থাম থাম। আমি ঠিক হয়ে যাব।
সবাই এগিয়ে এসেছে।
ওরে বাবারে আমি আর হাসতে পারছি না।
মিত্রা ওদের নিয়ে একটু তফাতে সরে গেল। মৈনাক আমার পাশে বসলো।
মৈনাক হাসছে। বাচ্চা বাচ্চা মেয়েগুলোর সামনে প্রেসটিজ ঝুল করে দিস না।
আমরা যখন থার্ড ইয়ার ওরা তখন ইলেভেন টুয়েলভ।
সব আমাদের কলেজের!
সবাই।
খালি ওটা নয়। ওটা এবার ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হবে। নীপার দিকে আঙুল তুলে বললাম।
একটা অট্টহাসির রোল উঠলো মিত্রাদের ওখান থেকে।
কিরে তোদের আবার কি হলো।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম।
ঝেড়ে দিয়েছিস।
মিত্রা হাসতে হাসতে মাথা দোলাচ্ছে।

মৈনাক বিষ্ময়ে আমার দিকে তাকাল।
 
তুই মাইরি এখনো সেরকমই আছিস। শোন আমি আসার পথে নীরুকে ফোন করলাম, বলে আমরা বেড়িয়ে পরেছি। ওরা এসে পরলো বলে।
তুইতো পুরো কেলো করে দিলি।
কিরে বুবুন।
মৈনাক আমার দিকে তাকাল, তোকে মিত্রা এখনো সেইনামে ডাকে।
হাসছি। মৈনাক নীরুকে ফোন করেছিল, ওরা এসে পরলো বলে।
ওরা এতো জোর হৈ হৈ করে উঠলো ভেতর থেকে বড়মা, ছোটমা, বৌদি বেরিয়ে এলো।
মিত্রারা ছুটে চলে গেল।
দেবা মৈনাককে ছোটমার সঙ্গে পরিচয় করাবার জন্য টেনে নিয়ে গেল।
চিকনা কাছে এসে বললো, গুরু কেশটা কি বলতো একটু খানি শুনেছি।
কিসের!

ওই যে তোর নতুন বন্ধু মৈনাক না কি যেন নাম।
আমি হেসে ফেললাম।
আরে বলনা, এখুনি সব চলে আসবে।
চিকনা ঠিক বলেছে অনি। আমাদের শোনা হয়নি।
আমি হাসছি।
হাসিসনা বলনা।
দেখলাম মৈনাককে নিয়ে ওরা ভেতরে যাচ্ছে।
একটা সিগারেট দে।
একটা না পুরো প্যাকেটটা দিচ্ছি।
চিকনা উঠে দাঁড়িয়ে তাড়াহুড়ো করে পকেট থেক প্যাকেটটা বার করে দিল।
বল বল।
আমি হাসছি।
হাসিসনা বলনা।
আমি একটা সিগারেট ধরালাম। হুস করে ধোঁয়া ছেড়ে বলতে আরম্ভ করলাম।
সেদিন বসিরহাটে মৈনাকের এক আত্মীয় বাড়ি গেছিলাম। ফিরছি বিকেলের বাসে। থ্রিসিটে বসেছি। জানলার ধারে একজন মহিলা, কোলে একটা বাচ্চা। মাঝখানে মৈনাক সাইডে আমি। বাসটা ফাঁকা ফাঁকা। অনেকটা জার্নি। তাই বাসে ওঠার আগে দুজনেই তলপেট খালি করে নিলাম। এবার গিয়ে সিটে জমিয়ে বসলাম। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হয়েছে। বাসের ভেতরে একটা মাত্র লাইট জ্বলছে। দুজনেই ঘুমিয়ে পরেছি। হঠাৎ মৈনাক হাঁই হাঁই করে চেঁচিয়ে উঠলো। ঘুম ভেঙে গেলো।
কিরে কি হয়েছে!
মৈনাক চুপ।
ভদ্রমহিলা যিনি জানলার ধারে বসেছিলেন তিনি মুচকি মুচকি হাসছেন। বাচ্চাটা ভদ্রমহিলার কোলে বেশ ছট-ফট, ছট-ফট করছে। মৈনাক নেন্টুর জায়গাটা ধরে বসে আছে।
আমি ভাবলাম ভদ্রমহিলা কি ওর নেন্টু টিপে দিল নাকি। মৈনাক একবার ভদ্রমহিলার দিকে তাকায় একবার বাচ্চাটার দিকে তাকায়। বাচ্চাটা তখনো হ হ করছে। চুপ করে গেলাম।
বাস থেক এসপ্লেনেডে নেমে মৈনাককে জিজ্ঞাসা করলাম কিরে কি হয়েছিলো তখন। তুই চেঁচিয়ে উঠলি কেন। ভদ্রমহিলা কি তোর গোপন জায়গায় হাত দিয়েছিল।
মৈনাক গম্ভীর। অনেক বার জিজ্ঞাসা করার পর বললো, কি হারামী বাচ্চারে।
আমি বললাম, কেন! কি হয়েছে ?
শালা আমার নেন্টু ধরেছিল।
তারমানে!
আজ জাঙ্গিয়া পরিনি। এতটা জার্নি ভেবেছিলাম পাছা গরম হয়ে যাবে।
তুই খালি পাছায় প্যান্ট পরেছিলি!
হ্যাঁ।
চেন খোলা ছিল!
হবে হয়তো।
চুল ধরে খামচা মেরেছে!
হ্যাঁ।
ওই জন্য তুই চেঁচিয়ে উঠলি!
মৈনাক মুখ ভেটকে বললো, কতগুলো চুল ছিঁড়েছে জানিস। শালা….
আমাকে আর শেষ করতে হলো না। ওরা তিনজনে হাসতে হাসতে মাটিতে শুয়ে পরলো।
বাসু হাসতে হাসতে বলে উঠলো ওরে অনি আমরা কি জিনিষ তোর এই বন্ধুরা এক একজন এক একদিকে দিকপাল।
চিকনা হাসতে হাসতে বেদম কেশে উঠলো।
মিত্রা আবার ভেতর থেকে বেরিয়ে এসেছে।
ছুটে আমার কাছে এলো।
ও হাসছে।
তুই এদের বলেছিস নিশ্চই।
কি করবো শুনতে চাইলো।
চিকনা তখনো খং খং করে কাসছে।
সত্যি, মৈনাকটা কিরে।
ম্যাডাম আপনি থামুন, আর বলতে হবে না। বাসু বলে উঠলো।
ফোনটা বেজে উঠলো।
দেখলাম কনিষ্ক।
ফনটা ধরতেই তেড়ে খিস্তি। তারপর বললো তোর মিত্রার বাড়ি খুঁজে পাচ্ছি না। মৈনাক হারামী এমনভাবে বললো, কিছুই বুঝতে পারলাম না। ওদের আবার ঠিক মতো ডিরেকসন দিলাম।
কেরে।
ডাক্তাররা আসছে।
এর মধ্যে আবার ওরা!
কেন তোর ভালো লাগছে না।
আমার মাথা খারাপ হয়ে যাবে। তোর বন্ধু নয়তো এক এক জন এক এক পদ।
ম্যাডাম আপনি বলুন এদের ডাক্তার বলে মনে হয়। মনে হয়না এরা ছ্যাবলা। চিকনা বললো।
তবু ওরা ডাক্তার, ডাক্তারদাদা বলছিল ওদের বেশ নাম ডাক আছে।
আমার দিকে তাকাল, ভেতরে চল হলুদ মাখাবে বলছে বৌদি।
হলুদ আবার কেন।
তুমি জান না। চিকনা এমন ভাবে মুখ ভেংচালো মিত্রা হাসতে হাসতে আমাকে ধরে ফেলল।
চিকনারটা কিন্তু শোনা হয়নি।
মৈনাকদারটা শোনার পরও আমারটা শুনতে হবে।
মিত্রা হাসছে।
ভেতরে এলাম। ছোটমা এগিয়ে এলো। আমার সামনে এসে দাঁড়াল। চোখে মুখে হাসির ছটা।
তোর বন্ধু গুলো কি সব তোর মতো ?
কেন।
তোর গ্রামের বন্ধু আর শহরের বন্ধুর মধ্যে কোনো পার্থক্য দেখতে পাচ্ছি না।
ডাক্তাররা আসছে।
ওদের কে বললো!
মৈনাক। বুঝতে পারছো এবার।
সবতো লন্ড ভন্ড করে দেবে।
অনির বিয়ে বলে কথা। এই জন্য অনি চুপি চুপি সারতে চেয়েছিল।
ছোটমা আমার মাথাটা টেনে নিয়ে কপালে চুমু খেলো।
বাইরে গাড়ির তাড়স্বর হর্ণ বেজে উঠলো।
এইরে ওরা এলো। যাই দিদিকে গিয়ে বলি। ছোটমা ভেতরে গেল।
আমি বেরিয়ে এলাম।
সেদিন ছিলো ছয়জন আজকে আরও চারজন জুটেছে। সবাই হৈ হৈ করতে করতে ভেতরে এলো। বাকি চারজনের সঙ্গে ওরাই সবার পরিচয় করিয়ে দিল।
কনিষ্ক চেঁচিয়ে উঠলো। বড়মা, দাদা মল্লিকদা স্যারকে দেখতে পাচ্ছি না।
একটু বাইরে গেছে, এখুনি এসে পরবে।
ম্যাডাম এটা কি হলো। কথাছিল রবিবার। কনিষ্ক চেঁচিয়ে উঠলো। নীরু।
বলনা, ওরকম করিস কেন।
তোর সঙ্গে আগে অনির বিয়েটা সেরে নে, তারপর ম্যাডামের সঙ্গে হবে।
সেটা আবার কিরে। বড়মা বললো।
তুমি বুঝবেনা। দেখনা কি হয়। দুজনের এনগেজমেন্ট আজ থেকে আট বছর আগে হয়েছে।
মিত্রা আমার পাশে, সবাই চারিদিকে ভিড় করে আছে। ওরা আমাকে মিত্রাকে ঘিরে ধরে আছে। সবাই হাসা হাসি করছে। নীরু এগিয়ে এলো। বলনা তুমি আমাকে কবে বিয়ে করবে ? কবে ঘরে তুলবে ? চিরিদিক একবার দেখে নিলাম আমাকে কে কে লক্ষ করছে। খুব গম্ভীর হয়ে দিলাম নীরুর তলাটা টিপে। একমাত্রা মিত্রা ছাড়া কেউ বুঝতে পারল না। মিত্রা মুখে হাত দিয়েছে। নীরু অক করে দূরে সরে গেল, বটা চেঁচিয়ে উঠলো।
কিরে নীরু পেনিসিলিন না ট্যারামাইসিন ?
কনিষ্ক বড় বড় চোখ করে বললো, এরি মধ্যে অনি হাত….।
তবে। হাতকি সাফাই বলে কথা। বটা বলে উঠলো।
আমি গম্ভীর হয়ে হাসছি। নীরু গিয়ে সোফায় বসে পরেছে।
বাপ আমায় একটা সম্পত্তি দিয়েছে করে কর্মে খাওয়ার জন্য, তাও যদি হরণ হয়ে যায় থাকব কি নিয়ে।
ঘর ভর্তি সবাই হেসে উঠলো।
এরপর হলুদ মাখা মাখি হলো। কেউ বাদ গেল না। এমনকি ইসলামভাইকে পর্যন্ত হলুদ মাখান হলো। তার মধ্যেই কনিষ্ক গিয়ে বড়মার সঙ্গে কি কথা বললো। বড়মা খালি হেসে বললো তোরা দেখিস বাবা। তোদের বন্ধু।
কাল মিত্রা ঠিক কথা বলেছিল তোকে নিয়ে পুতুল খেলব। তুই না করবি না। আমি সত্যি আজ গোবর গণেশ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। এমনকি ভজুরাম, সে পর্যন্ত আমার মুখে হলুদ মাখিয়ে চলে গেল। কি আনন্দ তার। এতগুলো লোকের আতিথেয়তার কোন খামতি ওরা রাখে নি।
যে যার ইচ্ছে মতো ছবি তুলছে। হৈ হট্টগল হাসা হাসি। একমাত্র দাদা, ডাক্তারদাদা, মল্লিকদা এখনো ফিরল না । মনে হয় অফিসের দিকে একবার গেছে।
হলুদ মাখা মাখি শেষ হতেই কনিষ্করা আমাকে এসে ঘিরে ধরলো। ম্যাডাম অনিকে একটু ছাড়তে হবে। মিটিং আছে ওর সঙ্গে।
মিত্রা আমার দিকে তাকাল, ওকে ইশারায় বোঝাবার চেষ্টা করলাম, না বল। ও তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসে। ব্যাপারটা এরকম ডাকছে যখন যা না।
অনি ম্যাডাম না বললেও তোকে তুলে নিয়ে যাব এটা মাথায় রাখিস। বটা বললো।
বুঝলাম বেগতিক।
বড়মা, ছোটমা, বৌদি হাসে।
বটা চেঁচিয়ে উঠলো বড়মা কোন ঘরে।
তোরা কি এখনই করবি ওই সব।
হ্যাঁ।
তাহলে ওই ঘরে যা। স্নানটা সেরে নিলে হতো না।
আমি খালি শুনে আঁচ করার চেষ্টা করছি ওরা কি করতে চায়।
ওটা পরাস না চুলকুনি হবে।
ওষুধ দিয়ে দেব তোমায় ভাবতে হবে না।
এ ওর মুখের দিকে তাকায়।
নীরু মাল গুলো নিয়ে আয়।
নীরু লাফাতে লাফাতে রান্নাঘরের দিকে চলে গেল। ওরা আমাকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে ঘরে চলে গেলো।
হৈ হৈ রৈ রৈ। হাসা হাসি।
ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করলো।
শালা তুই সবাইকে ভুগিয়েছিস এবার তোকে একটু ভোগাই।
বলবিতো কি। কি করতে চাস তোরা।
পাজামা পাঞ্জাবী খোল।
নেংটো হয়ে নৃত্য করবো।
দরজা ধাক্কা দেবার শব্দ। বটা দরজা খুললো। নীরু ভতরে এলো।
সোহাগী তুমি আজ আমায় একটু ঝেঁটার বাড়ি মার।
গান্ডু।
দেখলাম বটা প্লাসটিকের প্যাকেট থেকে সেই ওঝার জামা কাপর কৌপিন উইগ দাড়ি গোঁফ বার করেছে। কমন্ডুল লাঠি। এমনকি সিঁদুর পর্যন্ত নিয়ে এসেছে।
ওরে শালা এগুলো কোথা থেকে নিয়ে এলি।
কনিষ্ক সিগারেট বার করে দিল।
নে নে দু’টান মেরে নে।
ধরালাম।
কিরকম দিলাম বল। অনিকেত বললো।
দারুণ। শালা নীরুর কথা মনে পরে যাচ্ছে। এই হারামী নীরু।
বলনা।
একটু নারকেল তেল আর একটা ছেঁড়া কাপরের টুকরে বড়মার কাছ থেকে নিয়ে আয়।
নীরু দরজা খুলে বেরিয়ে গেল।
একটু ফাঁক হতেই দেখলাম সবাই উৎসুক চোখে ঘরের দরজার দিকে চেয়ে বসে আছে।
হ্যাঁরে কনিষ্ক বড়মা বলছিল পরলে চুলকোবে সেটা কি রে।
গান্ডু সব দিকে কান আছে। অনেক কষ্টে নীরুর রুম থেকে তোর কৌপিনটা খুঁজে বার করেছি, বাকি সব কিনে এনেছি।
আবার নীরুর ঘাড় ভেঙেছিস!
তাহলে কি, শালা পেটে হাত বুলিয়ে বহুত কামাচ্ছে।

খোল খোল দেরি করিস না।
 
দাঁড়া না মুখটা মুছি আগে।
নীরু দরজা ধাক্কালো দেখলাম মৈনাক, দেবা নীরুর সঙ্গে ঢুকলো।
তোরা এলি কি করতে ?
হারামী সেদিন গল্প বলেছিস, আজ দেখি ভাল করে।
বটা এটা কি হলো। মৈনাক বললো।
কেন তোর আবার কিসের চুলকুনি।
অনি হারামী সেই কেশ পর্দাফাঁস করে দিয়েছে। কচি কচি মেয়েগুলো আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
প্যান্টের চেন খুলে রাখবে ধরলেই দোষ।
তোরা ওর একটা কিছু বার কর।
ও এখন কাপর ছাড়ছে, পারলে একটু হাত বুলিয়ে দে, দেবা মোবাইলে ছবি তুলে রাখছে।
বোকা…।
পুরো দেনা। আজ কেনো আধা আধা বাপের কথায় সুতো বাঁধা।
আমি হাসছি।
হাসিস না তোর মালটা অনেক দিন পর ঝারলাম।
ওরা পুরোটা জানে।
মৈনাক শালা জানে, দেখছিস না মুখ ফোলাল।
কিরে অনি কলসি থেকে জল গড়িয়েছিস। কনিষ্ক বললো।
চেঁখে দেখেছি।
নোনতা না মিষ্টি।
দুটোর মাঝামাঝি।
শালা, দুদিন পরতো আমি দেখবই। নীরু চেঁচিয়ে উঠলো।
তার আগে তোর বউটাকে নিয়ে একরাত দীঘায় কাটিয়ে আসব।
দেখলি দেখলি বটা অনি কি কথার কি মানে করলো।
কেন তুমি বাচ্চা দেখতে গিয়ে হাত ছোঁয়াবে ও করলেই দোষ।
তাহলে আমরা সবাইকে করি।
সবাইকে করো না ওর বউকে করবে।
নীরু চুপ করে গেল।
আমি পাজামা পাঞ্জাবী খুলে সেই রক্তবর্ণ চেলি পরলাম। মাথায় উইগ দাড়ি গোঁফ। মাথায় লাল টিপ লম্বা করে। বরং সেদিনের থেকে একটু সময় নিয়ে ভাল করে সাজলাম।
ওরা ভেতরেই হৈ হৈ করে উঠলো। দরজায় দু’চারবার ধাক্কার আওয়াজ পেলাম।
গুরু সেদিনের মতো একটু করবে। নীরুকে ফিট করছি, বাইরে গিয়ে। বটা বললো।
ঝাঁটা লাগবে।
তুই শালা আমাকে আজও ঝেঁটা মারবি। নীরু চেঁচিয়ে উঠলো।
ঠিক আছে, তাহলে হবে না।
অভিনয় করতে গেলে কয়েকটা ঝাঁটার বাড়ি খেতেই হবে। কনিষ্ক বললো।
ক্যানসেল।
বটা আমি কিছু জানিনা। কনিষ্ক বললো।
তুই আজকে কনিষ্কের ভূত ছাড়া। নীরু বললো।
সেকিরে, আমাকে কি ভূতে ধরেছে।
তাহলে মৈনাকের।
আমাকে ক্ষমা দে। সকাল থেকে অনি আমার প্রেসটিজ পিসে মেরে দিয়েছে।
ঠিক আছে তোদের মন রাখতে আমিই বলির পাঁঠা হই। নীরু বললো।
নীরু দরজা খুলতেই দেখলাম মিত্রারা সবাই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে। আমাকে এক ঝলক দেখে ওদের সে কি হাঁসি।
সবাই গড়িয়ে পরে। খালি কানে এলো, বড়মাগো তোমার ছেলেকে দেখবে এসো।
দরজা বন্ধ।
আমি রেডি হলাম।
তোকে কিন্তু দারুণ মানিয়েছে অনি। দেবা বললো।
তুই শালা সব মোবাইলে তুলেছিস ?
হ্যাঁ।
অদিতিকে দেখিয়ে খুশবু নিবি।
মিত্রাকেও দেখাব।
হারামী।
দরজা খোলা হলো। আমি বেরলাম। গম্ভীর মুখশ্রী। আমাকে দেখে সকলে এতো জোরে হেসে উঠলো। নীরু ব্যাটা পর্যন্ত উঠে দাঁড়াল। আমার ভূত পালিয়ে গেছে অনি তোকে আর ভূত ছাড়াতে হবে না। ওরা যে যার ইচ্ছে মতো ছবি তুলছে। দাদা, মল্লিকদা, ডাক্তারদাদা হাসতে হাসতে সোফায় গা এলিয়ে দিয়েছে।
বটা এগিয়ে গিয়ে বড়মাকে ধরে নিয়ে এলো আমার সামনে। দেখ তোমার ছেলেকে চিনতে পারো। তবু মেকআপটা সেদিনের মতো হয় নি।
বড়মা আমার মুখে হাত দিয়েছে।
কনিষ্ক বলে উঠলো হাত দিও না খুলে যাবে।
সে এক হৈ হৈ ব্যাপার।
চিকনা এসে শাষ্টাঙ্গে প্রণাম। বড়মা এতো গুণীনকাকার বাবাগো।
আবার হাসির রোল।
ছোটমা এসে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলো। মিত্রা এসে আমার দাড়িতে একবার হাত বোলাল। যে যার ইচ্ছে মতো ছবি তুলছে, হাসছে। সুরো এগিয়ে এসে আমার মুখের কাছে মুখ নিয়ে এসে বললো সত্যি অনিদাতো।
নীরু বড়মাকে জড়িয়ে ধরে বললো দেখছো এইবেশে সেদিন আমাকে ঝেঁটার বাড়ি মেরেছিল। যতো নষ্টের গোড়া ওই কনিষ্ক।
বড়মা হাসছে।
এবার খুলে ফেলি কুট কুট করছে।
তোরা ওকে ওইটা পরিয়েছিস! বড়মা বললো
পরাব না মানে।
বড়মা আমার কাপরে হাত দিল।
এই দ্যাখো, দাঁড়াও সবাই আছে।
আবার হো হো করে হাসি।
খোল তুই আগে।
ঘরে যাই।
এখানে খোল।
ভারি মজা না। পাগলাম করবে না।
তোরা এরকম করলে, পাগল হতে কে বাকি থাকবে।
দামিনী মাসি কাছে এসে মুখে কাপর চাপা দিয়েছে। ভাল করে আমার মুখের দিকে তাকাচ্ছে।
নীরু কাছে এলো, অনি সেই ডায়লগটা একবার দে কানে এখনো বাজে।
ফিস ফিস করে বললাম হারামী।
বড়মা দেখছো, অনি গালাগালি দিচ্ছে।
ওরা যে যার ওদের মতো হাসছে।
ইসলামভাই এগিয়ে এলো। মোবাইলটা মিত্রার হাতে দিয়ে বললো, মামনি আমার সঙ্গে সাধুবাবার একটা ছবি তুলে দে।
সবাই ছবি তুললো আমি বড়মা ছোটমা দামিনী মাসি বৌদি একটা ছবি তুললাম। মিত্রার সঙ্গে আলাদাকরে ছবি তোলা হলো, বিভিন্ন পোজে। দাদার সঙ্গে ছবি তুললাম। ওরা যে যার ইচ্ছে মতো ভিডিও স্টিল করছে। আমার মোবাইলটা নিয়ে এসে মিত্রা ইচ্ছে মতো ছবি তুললো। শেষে আমি উইগ খুলে বাথরুমে ঢুকলাম।
ভালো করে স্নান করলাম। মিত্রা এসে পাজামা পাঞ্জাবী দিয়ে গেল। স্নান সেরে বেরলাম।
মিত্রা দেখলাম আমার আগে রেডি হয়ে গেছে। এগিয়ে এসে আমাকে চিরুনিটা দিল। আমি চুলটা আঁচড়ালাম। খাওয়ার জায়গা করা হচ্ছে। কর্নারের টেবিলে ভিড়, সবাই চেঁচা মিচি করছে হাসছে।
ওখানে কি হচ্ছে রে ?
সবার তোলা ছবি টিনা ল্যাপটপে লোড করছে।
কোন ছবি।
গায়ে হলুদ তোর ওঝা সাজা।
অনিদা। মিলি এদিকে ফিরে ডাকলো।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে হাসলাম।
ঋতি অনুযায়ী বাড়ির সকল গুরুজনকে আমি মিত্রা পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলাম।
ডাক্তারদাদা মাথায় হাত দিয়ে বললেন, যাই বল অনি তোর গল্পের সঙ্গে চরিত্রটা বেশ মানানসই।
মল্লিকদার হাসি আর থামান যায় না।
আমি মল্লিকদার দিকে তাকালাম।
তাকাস নি। একটা আর্টিকেল নামাচ্ছি জমপেশ করে। সাধুবাবার কাহিনী। টিনাকে বলেছি ছবিগুলো বেছে রাখ কাজে লাগাব।
ছোটমা এসে ঘরে ঢুকলো। পেছনে বৌদি। দুজনের হাতে মিষ্টির প্লেট, জলের গ্লাস।
কি হয়েছে গো।
অনিকে বললাম ওই কথাটা।
ছোটমা টেবিলে মিষ্টির প্লেটটা রেখে হাসতে আরম্ভ করলো।
কিরে ছোট। বৌদি বললো।
ও অনিকে নিয়ে লিখবে, সাধুবাবার কাহিনী।
সত্যি দেখ, এখন ওকে দেখ, তখন কিরকম সেজেছিল। আমি সুরোর মুখ থেকে শুনেছিলাম, বিশ্বাস করিনি, আজতো দেখছি সত্যি ও এসব করেছিল।
মৈনাকের কথা তখন শুনলে না।
মিত্রা হেসে ফেললো। ছোটমা বৌদি দুজনেই হাসে।
দাদা বললো ছোট এই ব্যাপারটা আবার কি।
আপনাকে শুনতে হবে না।
আচ্ছা থাক।
সব কিছুতে তোমার ইন্টারেস্ট কেন এডিটর।
দাদা হাসছে।
খাবার জায়গা করেছি, চলুন বসে পরবেন।
ওরা বসুক আগে।
সবাই একসঙ্গে। এরপর অনেক কাজ।
ওরা সবাই বেরিয়ে গেল। ছোটমা বেরবার আগে বললো।
বৌদি তুমি ওদের দুটোকে মিষ্টিগুলো খাইয়ে এসো।
আমি বৌদির দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললাম।
তুই এতো করার সময় পেতিস কি করে বলতো।
আমি না কনিষ্ক।
কনিষ্ককে জিজ্ঞাসা করলে বলে এসবের হোতা অনি। তোকে জিজ্ঞাসা করলে বলিস কনিষ্ক।
নে খেয়েনে দু’টোতে।
একটা খাব বৌদি। বাকিটা মিত্রা খাক।
আমি কি রাক্ষস নাকি। তুই খা।
তুইতো খেতে ভালবাসিস।
এই শুরু করলি।
কিরে দুটো মিষ্টি খেতে বেলা বইয়ে দিলি যে।
ছোটমা আবার ঘরে ঢুকলো।
নে নে, খেয়ে নে।
আমি একটা খাব।
আমিও।
তোরা কি যুক্তি করে চলছিস।
হাসলাম। ওরা খেতে বসেছে।
দেখনা গিয়ে একবার, নীরুটাকে নিয়ে কি করছে, ও বেচারা প্লেট হাতে নিয়ে দিদির পেছন পেছন ঘুরছে।
দাঁড়াও আমি যাই। না হলে ওরা থামবে না।
মিষ্টিটা খেয়ে নে।
আমি একটা নিয়ে মুখে দিলাম। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম, তুই খেয়ে আয়।
আমি আসতেই নীরু বলে উঠলো, অনি তুই বল, আমাকে এরা একটু শান্তিতে খেতে দেবে না ?
অনি একবারে এদিকে মাথা গলাবি না। আজ তোর বিয়ে। বটা চেঁচিয়ে উঠলো।
ওকে খেতে দে।
ওকি শুঁকছে। দুবার নেওয়া হয়ে গেছে। জিজ্ঞাসা কর মাসিকে। কনিষ্ক বললো।
দামিনী মাসি আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
আচ্ছা তুই মিলিদের কাছে বসবি চল।

ওকিরে! ওরতো আছে তার ওপর উপরি। কনিষ্ক বলে উঠলো।
 
যতই হোক ঝাঁটা পেটার গুণ বুঝলি কনিষ্ক। বটা বললো।
মিলিরা মুখ নীচু করে হাসছে।
অনি একটা বোম ঝারবো। নীরু বললো।
দাঁড়া খেয়ে উঠি তোর বোম ফাটাব। কনিষ্ক বললো।
দেখলি অনি দেখলি, এবার তুই সামলাবি।
মিত্রা ঘর থেকে বেড়িয়ে আমার পাশে এসে দাঁড়াল।
কেন তুই বলতে পারছিস না। তোদের আমার কাছে আসতেই হবে।
বটা হয়তো আসবে, কনিষ্ক আসবে না।
কেন।
তোকে পরে বলবো।
পরে বলাবোরে ছাগল। এখন মাংস চিবচ্ছি হারগুলো তোর খাব।
বড়মা তুমি এখান থেকে যাও তো। কনিষ্ক চেঁচাল।
কেন বড়মা থাকলে তোর অসুবিধা আছে।
আছে। তোকে ধুতে পারছি না।
কাচলি কোথায় যে ধুবি।
সবাই হাসে।
নীরু তুই বরং বাড়ি চলে যা। আমি বললাম।
কখনই না। বাড়িতে বলে এসেছি রাতে খাব না। চেম্বার বন্ধ করেছি।
বটা দেখতো পকেটটা।
কেন।
চেম্বার বন্ধ করেছে আজ, তারমানে আজকের কামাই গতকাল করে নিয়েছে।
সকালে অনির ড্রেস কিনতে ফুটে গেছে।
অনির জন্য কি কিনেছিস। বড়মা ফুট কাটল।
ওইযে লাল কাপড় দাড়ি। দেখলে না।
বড়মা না হেসে থাকতে পারল না।
কনিষ্ক একবার কট কট করে তাকাল নীরুর দিকে।
আমি হাসছি।
ম্যাডাম, বিয়ে অনি করছে, হনিমুন স্পট বেছেছেন। কনিষ্ক বললো।
তোমাদের বন্ধু জানে।
কিরে অনি, ভালোপাহাড় ?
আমি হাসছি।
সেটা আবার কোথায়! মিত্রা বললো।
কেন আপনাকে বলেনি!
না।
ওটা একটা পাগল বুঝেছেন ম্যাডাম। তবে ওর পাগলামির সামিল আমরাও।
এতে একটা উপকার হয়েছে। টাকা পয়সা কিছু জোটেনি। প্রচুর মানুষ দেখেছি, আর প্রণভারা ভালবাসা কি জিনিষ তা অনুভব করেছি।
কনিষ্ক ক্যাজুয়েলি কথাটা বললো, কিন্তু কথাটার মধ্যে এতটাই সংবেদনশীল মনের পরিচয় দিলো, সারা ঘর নিস্তব্ধ হয়ে গেল।
চুপচাপ সবাই খেয়ে যাচ্ছে।
তুই এর মধ্যে কি ওখানে যাবি। বটা আমার দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো।
দেখি।
গত সপ্তাহে অনিকেত গেছিল। শ্যামের কাছে ওষুধ পত্র দিয়ে এসেছে। নীরু তুই কবে যাবি।
মঙ্গলবার যাওয়ার কথা।
ম্যাডাম একটু সন্দেহের চোখে দেখছেন আমাদের। ব্যাপারটা ঠিক ঠাহর করতে পারছেন না।
কনিষ্কের কথায় মিত্রা ফ্যাল ফ্যাল করে ওর দিকে তাকিয়ে।
কনিষ্ক হাসলো। অনির গল্প বলতে গেলে মাস পাঁচেক টানা বলতে হবে। তবে যদি শেষ হয়।
একটু থেমে।
মাসি।
দামিনী মাসি সারা দিলো।
কিগো থামলে কেন। গোটা চারেক ঠ্যাং নিয়ে এসো।
আবার সবাই নিজের জায়গায় ফিরে এলো।
এই ফাঁকে নীরুর খাওয়াটা শান্তিতে হলো। ওরা খেয়ে দেয়ে উঠলো। হাতমুখ ধোয়ার পর কনিষ্ক মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললো, ম্যাডাম একটু মাঠের দিকে গিয়ে বসলে হতো না। মিত্রা আমার দিকে তাকালো। আমি ইশারায় বললাম, যা।
আরে ওর পার্মিসন নিতে হবে না। আপনি চলে আসুন।
তুই আপনি বলছিস কেন। মৈনাক বললো।
মাঠে চল, আর ইসলামদার কাছ থেকে একটু পোড়া তেল নিয়ে আয়।
সবাই কনিষ্কের কথায় হাসে।
দেখলি অনি কনিষ্কের কথার ছিড়ি দেখলি।
মাঠে চলে যা।
ওরা সব দঙ্গল বেঁধে মাঠে গেল। আমি কিছুক্ষণের জন্য ওদের সঙ্গে গেলাম। তারপর বাড়ির ভেতরে চলে এলাম। ওখানে জোর আড্ডা চলছে। আমি এসে দাদাদের সঙ্গে কিছুক্ষণ সময় কাটালাম।
ওরা কেউ খেল না। বললো রাত্রি বেলা খাবে। আগে কাজ মিটুক। এমনকি ইসলামভাই পর্যন্ত খেল না। একফাঁকে একবার ইসলামভাইকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, কিগো রতনরা কই।
চলে আসবে সন্ধ্যার সময়।
তুমি একটা কাজ করতে পারবে।
বল।
একটু অবতার সাগির আর লক্ষ্মীকে আনতে পারবে।
ইসলামভাই আমার দিকে তাকাল। চোখে জিজ্ঞাসা।
নিয়ে এসো না, আমি বলছি, কিছু হবে না।
দামিনীকে একবার বলি।
বলতে হবে না। কিছু বললে আমার ঘারে দোষ চাপাবে।
ঠিক আছে আমি রতনকে বলে দিচ্ছি।
বলে দাও।
দেখতে দেখতে সন্ধ্যে হয়ে এলো। আমি বড়মাদের কাছে বসে গল্প করছি। ওরা বাগান থেকে উঠে এসে ওপরে মিত্রার ঘরে সবাই গল্প করছিল। হঠাৎ চিকনা চোখ মুখ লালকরে আমার কাছে এসে আমার পা জড়িয়ে ধরলো, হাউ হাউ করে কান্না। ওর সেই কান্না থামান যায় না।
দেখলাম কনিষ্ক, অনাদি, বাসু, মিলি সবাই নিচে নেমে এসেছে।
এই দেখ পাগলাম করে। কি হয়েছে বলবিতো। কে তোকে বকেছে।
ও আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে।
কিরে বাসু তোরা কিছু বলেছিস চিকনাকে।
সকলে অবাক।
না।
তাহলে।
কনিষ্কদা তোর সম্বন্ধে গল্প করছিল ও উঠে চলে এলো। তখনই ওর মুখ চোখের অবস্থা দেখে বুঝেছি ও তোর কাছে আসছে।
দূর পাগল কনিষ্ক সব বাজে কথা বলছে আমার সম্বন্ধে, সব বানিয়ে বানিয়ে বলছে, একটাও সত্যি কথা নয়।
তবু ওর কান্না থামে না।
আমি ওকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলাম, ওর কাছ থেকে সিগারেট চেয়ে খেলাম, বোঝালাম।
তারপর ওর কান্না থামে।
বাগান থেকে পায়ে পায়ে ভেতরে এলাম। দেখলাম কনিষ্কর পায়ের কাছে সাগির, অবতার বসে আছে। পাশে দাঁড়িয়ে বাড়ির সকলে। আমি কাছে গেলাম।
কি হলো কনিষ্ক ?
আর বলিসনা। পায়ে ধরে কেঁদে গড়িয়ে পরছে।
কিরে অবতার আবার কি হলো ?
দুজনে মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে।
যা আজ কোন কথা নয়। অনিদার বিয়ে খেতে চেয়েছিলি। তাইতো ?
দুজনে মাথা নাড়ে।
যা ভেতরে যা, অনেক কাজ। হাতে হাতে সবাই কাজ কর।
ওটা ঠান্ডা হয়েছে। চিকনাকে দেখিয়ে কনিষ্ক বললো।
হ্যাঁ।
পুরো কাদামাটিরে অনি।
হাসলাম।
মিত্রা আমার মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে।
সবাই ভেতরে এলাম।
এবার লোকজন আসতে শুরু করেছে। মনে হলো সত্যি সত্যি বিয়ে বাড়ি।
ব্রাহ্মণকে দেখে আমার চক্ষু চড়কগাছ রক্তবর্ণ পোষাক, দেখে মনে হচ্ছে তান্ত্রিক হবে। মিত্রার সিলেকসন। অনিমেষদা, বিধানদা, অনুপদা, রূপায়ণদা ঠিক সময়ে এলো। নিরঞ্জনদা নিয়ে এসেছে। হিমাংশু ম্যারেজ রেজিস্ট্রারকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে। বিয়ের আয়োজনের কোন খামতি নেই দেখলাম। সব মিত্রা, ছোটমা, বড়মার ইচ্ছে অনুসারে হচ্ছে।
সন্দীপ, অর্ক, অরিত্র এসেছে। যে যার মতো মজা লুটে নিচ্ছে।
আমার ডাক পরলো, বৌদি ছোটমা মনের মতো করে সাজাল। বিয়ের পিঁড়িতে গিয়ে বসলাম। মিত্রাকে বড়মা নিয়ে এলো। ঘন্টা চারেক সময় লাগল। বুঝলাম না কি মতে বিয়ে হলো। যা বললো তাই করে গেলাম। কিছু বাদ থাকলো না।
মিত্রা একটা বেণারসী পরেছে কিন্তু দেখে মনে হলো খুব জমকালো নয়। বাসন্তী রং। বেশ সুন্দর। কেমন যেন পুরনো পুরনো। ডাক্তারদাদা কন্যা সম্প্রদান করলেন। হৈ হৈ করে বিয়ে হয়ে গেল। সবাই খুব খুশি। প্রচুর ফটো তোলা হচ্ছে বুঝতে পারলাম।
কার হাতে ক্যামেরা নেই। কনিষ্করা ইয়ার্কি ফাজলামর চূড়ান্ত জায়গায় পৌঁছে গেল। যে যেমন ভাবে পারে আনন্দ করছে। আমি খালি একটা কথাই মনে মনে বললাম, মিত্রা বলেছে, আজকের দিনটা তুই আমাকে দিবি, আমি যেমন ভাবে তোকে দেখতে চাইবো, তুই দেখাবি।
আমি অক্ষরে অক্ষরে তা পালন করলাম। সই সাবুদ হলো। আমার পক্ষে দাদা, মল্লিকদা, অনিমেষদা মিত্রার পক্ষে বড়মা, ছোটমা, বৌদি।
সব কাজ শেষ হতে হতে বেশ রাত হলো। একসঙ্গে বসে খাওয়া হলো। আমার ডাক্তারবন্ধুরা চলে গেল, যাবার আগে বড়মাকে বলেগেল, রবিবার সকাল থেকে এসে জ্বালাবে।
দাদা, বড়মা, মল্লিকদা, ডাক্তারদাদা, ইসলামভাই, নীপা, আরও সবাই ও বাড়িতে চলে গেল। কিছু এ বাড়িতে রয়ে গেল। কাল যাবে আমার সঙ্গে। দামিনী মাসি ফিরে গেল। কাল সকালে আসবে।
রাত একটার সময় আমি মিত্রা শুতে এলাম বড় বৌ-এর পোষাকে। ছোটমা বৌদি মিত্রার ঘরে দুজনকে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করলো। আমি ঘরের চারিদকটা চেয়ে চেয়ে দেখছি। গত দশমাস আগে এই ঘরটাই আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। সব ঘটনা হুড়মুড় করে আমার সামনে এসে দাঁড়াল। মিত্রা আমার একেবারে কাছে। মুখের দিকে তাকিয়ে। ওর ভাসা ভাসা চোখ দুটো আনন্দে আত্মহারা। আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
আবার কি হলো। মন খারাপ করিস না।
না বুবুন আজ আমার সবচেয়ে আনন্দের দিন।
কেন এতদিন কি নিরানন্দে ছিলি।
না।
তাহলে।
এতদিন আমার কোনো অভিভাবক ছিল না। আজ আমি একজন অভিভাবক পেলাম।
বলতে যাচ্ছিলাম ডাক্তার। মুখে এসেও বলতে পারলাম না। মনে পরে গেলো, এই মধু রাত শুধু তোমার আমার।
এই দেখো বোকা বোকা কথা বলে।
মিত্রা আমার বুকে মুখ লুকিয়েছে।
আমি ওর মুখটা বুক থেকে তুললাম, প্রস্ফুটিত পদ্ম। দীঘির বুকে জল টল টল করছে। হাওয়ার দোলায় ফুলের পাঁপড়ি থিরি থিরি কেঁপে কেঁপে উঠছে। কেন জানিনা আজ মিত্রাকে অনেক বেশি সুন্দর লাগছে। হয়তে নববধূর বেশে ওকে আগে কখনো দেখিনি বলে।
তোকে এতো সুন্দর করে কে সাজিয়েছে।
মিলি, অদিতি, টিনা।
দারুণ মিষ্টি সাজিয়েছে তোকে। এই দেখো আবার চোখে জল আসে।
আজ আমাকে একটু কাঁদতে দে।
কেন।
তোকে সম্পূর্ণ দিতে পারলাম না। কিছুটা দিলাম।
তুই সম্পূর্ণ নোস, একথা কে বললো ?

আমার বিবেক।
 
ভুল কথা। সময় বলে একজন ব্যক্তি আছে জানিস। সে সর্টিয়ালি করে তোকে আমার কাছ থেকে কিছুটা সময় আলাদা করে দিয়েছিল। মনের দিক থেকে আমরা এক ছিলাম।
সেটা তুই মন থেকে মনে নিয়েছিস, আমার মনের মধ্যে সেই খচ খচানি এখনো রয়েগেছে।
কেন আমি তোকে কিছু মনে করিয়ে দিয়েছি।
না।
তাহলে এরকম ভাবিস না। তুই কষ্ট পেলে, আমিও যে কষ্ট পাই।
জানিস বুবুন। আজ আমি যা চেয়েছিলাম তাই পেয়েছি।
তাই ? আমি কিন্তু আজ একটুও দুষ্টুমি করি নি।
মিত্রা আমার ঠোঁটে একটা চুমু খেলো।
আমি তোর মতো এখন সাধনা করি।
কি রকম ?
তুই বলিসনা যে মাটির ওপর দাঁড়িয়ে সাধনা করবে সেই মাটি পর্যন্ত জানতে পারবে না তুমি কিসের সাধনা করছো।
তাই!
মিত্রা চোখ বন্ধ করে মিষ্টি করে মাথা দোলাল।
আমি সকলকে এই জ্ঞানটা দিই।
হাসলাম।
দেখলাম আমিও সফল।
তাহলে আমি ভুল নয় এটা প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি বল।
নিশ্চই।
তোকে আমি আজ কয়েকটা কথা বলবো কয়েকটা জিনিষ দেখাব। তুই আমাকে ভুল বুঝবি না।
কেন একথা বলছিস।
হয়তো তুই ভাবতে পারিস মিত্রা নিজেরটা গুছিয়ে নিয়ে এইগুলো দেখাচ্ছে। আগে দেখালে হয়তো এই কাজটা করতাম না।
কেন ?
তোকে হারাবর ভয়ে এইগুলো এতদিন গোপন করেছি, বলতে পারিস এই দিক থেকে আমি ভীষণ স্বার্থপর।
তুই স্বর্থপর হলে, আমি তোর পাশে থাকতাম না।
ঠিক বলছিস ?
হ্যাঁ।
তোকে দেখালে তুই তোর মিত্রাকে ভুল বুঝবি না।
একটুও না।
আমাকে ছেড়ে চলে যাবি না।
একবারে না।
তোকে দাখাব। তুই জ্যোতিষ দাদাকে দেখলি।
কোথায়! কখন এসেছিলো।
বাবাঃ চারঘন্টা ধরে মন দিয়ে তার মন্ত্র উচ্চারণ করে আমাকে অতো যত্নো করে গ্রহণ করলি, আর বলছিস চিনতে পারলাম না।
ওইটা তোর জ্যোতিষদাদা!
হ্যাঁ।
তুই ছাড়া আমরা এখন সবাই ওনার নেওটা।
দেখে মনে হলো ভদ্রলোকের একটু আধটু পড়াশুন আছে।
একটু আধটু নয় অগাধ। যাওয়ার সময় কি বললো জানিষ।
কি।
আজকের দিন না হলে উনি তোর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতেন।
কেন বার খাওয়াচ্ছিস, আমি কি অবতার না সুপার ম্যান ?
তা জানি না। তবে উনি বললেন, ও পৃথিবীতে এসেছে মানুষের উপকার করতে। কিন্তু নিজে বড় দুঃখী। শাস্ত্রকে যদি মানি তন্ত্রসাধনাকে যদি বিশ্বাস করি, তাহলে তুই ঈশ্বরের অংশ বিশেষ।
তোর বংশের কেউ না কেউ একদিন সন্ন্যাসী ছিলেন। তুই অনেক বড়ো বংশের ছেলে। তোদের বংশের মূল জিনটা তুই বহন করছিস।
আমার বংশই নেই, তায় আবার সন্ন্যাস। সাতপুরুষের কাউকে চিনি না। এমনকি নিজের রক্তের সম্পর্কের কাউকে আজও পর্যন্ত চোখে দেখি নি।
তুই কাল মায়ের ফটোটা নিয়ে কাঁদছিলি। বার বার জানতে চেয়েছিস তোর শেকড়।
তুই জানলি কি করে।
আমি যে তোর অস্ফুট চাওয়া গুলো লুকিয়ে লুকিয়ে শুনেছি।
তুই শুনেছিস!
মিত্রা আমার চোখে চোখ রাখলো। আমি তোর শেকড়ের সন্ধান দেব।
তুই! কোথা থেকে পেলি ?
চুরি করেছি।
কোথা থেকে ?
তোর মায়ের আলমাড়ি থেকে।
তাই!
হ্যাঁ।
কি করে বুঝলি।
তোর পথে হেঁটে। প্রথমে ভীষণ ভয় করছিল। তারপর হাঁটতে শুরু করলাম। কি মজা। নেশা ধরে যায়।
আমি মিত্রাকে বুকের সঙ্গে জাপ্টে ধরলাম।
তোর সঙ্গে কতো কথা আছে। তোকে না বলতে পেরে আমার পেট ফুলে যাচ্ছে।
কেন আমি তোর কাছেই আছি।
দুদিন ট্রাই করলাম, তুই ঘুমিয়ে পরলি। ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল তোকে জাগাতে।
ডাকতে পারতিস।
মন থেকে সায় দেয়নি, বিশ্বাস কর।
দুজনে দুজনকে জড়িয়ে ধরে খাটে এসে বসলাম।
জানিস মিত্রা আজ বার বার এই ঘরটার কথা মনে পরে যাচ্ছে।
কেন।
তুই আমাকে চিঠি দিয়ে ডেকে পাঠালি। তারপর রাতে এই ঘরে ওই সোফাটায় দুজনে বসলাম। আমার কাঁধে মাথা রাখলি। ওই দিন পর্যন্ত আমার জীবনটা একটা খাদে বইছিল। আট আটটা বছর ধরে সযত্নে তাকে লালিত পালিত করেছি। এক লহোমায় তুই সব ওলট পালট করে দিলি।
তুই আমাকে তোর সব কথা এখনো বলিসনি।
কে বললো তোকে।
কনিষ্ক আজ মাঠে বসে কিছু কথা বললো।
আমি বালিশটা টেনে নিয়ে বিছানায় শুলাম। মিত্রা আমার বুকের ওপর উঠে এলো।
কনিষ্ক আর নীরু কিছুটা আমাকে চিনেছে। তবু আমি ওদের সময় দিতে পারি না। আমার দেখান পথে ওরা এখনো হাঁটে। বাকি সব ধ্বজা ধরা।
কনিষ্কর কথা শুনে আজ চিকনা কেঁদে ফেললো।
সত্যিতো মনে পড়ে গেছে, চিকনা তখন ওরকম ভেউ ভেউ করে কাঁদল কেন বলতো।
তুই বল কি কথা শুনলে চিকনা কাঁদতে পারে। আর কেউ ওর মতো কাঁদল না। মন খারাপ হয়েছিল সকলের।
কি করে বলবো।
তুই তোর জীবনের একটা রাত জেলে কাটিয়েছিস।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম, বোঝার চেষ্টা করলাম কনিষ্ক কতটা ওদের বলেছে।
কিরে তাকিয়ে আছিস কেন। সাজিয়ে নিচ্ছিস কি ভাবে গুছিয়ে মিথ্যে কথা বলবি।
হাসলাম। ছিলাম।
কই আগে বলিসনি ?
বলে কি করবো। তোর মনের মধ্যে করুণার উদ্রেক জাগাব। বলবো আমার এইসব কথা শুনে মিত্রা তুই আমাকে আরো ভালবাস।
আমি সে কথা তোর মুখ থেকে শুনতে চাইনি।
প্রত্যেক মানুষের জীবনে এরকম ঘটনা ঘটে, খালি স্ফেয়ারটা আলাদা।
কনিষ্কর কথা শুনে বড়মা, ছোটমা, দামিনী মাসি, ইসলামভাই পর্যন্ত চোখের জল ফেলেছে।
কনিষ্ক ভুল করেছে।
কনিষ্ক ভুল করেনি, কনিষ্ক ঠিক কথা বলেছে। মৈনাক যদি ওকে না খোঁচাত তাহলে তোর এই কথা আমরা কোনোদিন জানতে পারতাম না। তুই নিজের মুখে কোনদিন কোন কথা বলিস না।
তোরা সবাই আমাকে দেবতা বানিয়ে দিচ্ছিস। কিন্তু আমি যে সাধারণ মানুষ। খুব বেশি হলে বলতে পারিস তোদের থেকে আমার জীবনের গতিপথ একটু আলাদা।
কনিষ্কর কথা শুনে আমারও কান্না পেয়েছিল। কিন্তু কাঁদিনি। মনটাকে শক্ত করেছি। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছি তোর এতো কষ্টের স্বপ্নগুলো সার্থক করবো।
হয়তো কিছুটা হবে, সব হবে না।
তখন মৈনাক হাঁসতে হাঁসতে কনিষ্ককে বললো, কনিষ্ক অনি সবার কিছুনা কিছুনা বার করে প্রেসটিজ গ্যামাকসিন করে দিচ্ছে। তুই ওকে আমাদের থেকে বেশি চিনিস। ওর একটা কিছু বল, একটু মজা করি।
কনিষ্ক বললো বললে সহ্য করতে পারবি।
আমিও তালে তাল দিলাম। বিশ্বাস কর পরে এরকম ঘটতে পারে বিশ্বাস করিনি।
সেদিন তুই কনিষ্ক দুজনে শেয়ালদায় পথ শিশুদের স্কুলে পড়িয়ে বেরনর সময় কনিষ্ক তোকে খেতে বলেছিল।
হ্যাঁ।
তুই খাসনি। বলেছিলি পেট ভর্তি আছে। তারপর বলেছিলি। আমি একটু ব্যারাকপুর যাব।
মিত্রার চোখে চোখ রাখলাম।
কনিষ্ককে তুই এড়িয়ে গেছিলি। কনিষ্ক তোর সেই অবস্থা বুঝতে পেরে তোকে ফলো করেছিল।
তুই জানিস ?
না।
তারপর স্টেশনের কলে পেট ভর্তি করে জল খেয়ে ট্রেনে বসেছিলি।
হ্যাঁ।
তুই জানিস সে রাতে কনিষ্কও কিছু খায় নি।
পরে জেনেছি। যখন হস্টেলে গেলাম।
তারপর কি হলো বল।
কেন কনিষ্ক বলে নি।
কনিষ্ক ওই সময় থাকবে কি করে তোর সঙ্গে। ও চলে এসেছিল।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম। সত্যি কথা বলবো না মিথ্যে কথা বলবো।
একবারে বানিয়ে বানিয়ে বলবি না। আমি সব জেনেছি। আমি তোর মুখ থেকে শুনতে চাই সত্যি না মিথ্যে।
কি হবে শুনে। বুবুনের প্রতি তোর করুণা একটু বেরে যাবে।
তবু তুই নিজেকে ভাঙবি না।
অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল জেলখানায় যারা থাকে তাদের নিয়ে একটা লেখা লিখব। বানিয়ে বানিয়ে লিখতে পারি না। যদি একবার জেল খানায় ঢোকার চান্স পাই। যদি একটু থাকার সুযোগ হয়, তাহলে ওই জীবনটা দেখতে পাব। বেশ ভালো করে লিখতে পারব। রাত এগারটা চল্লিশের ব্যারাকপুর লোকালে উঠে বসলাম। উইদাউট টিকিট। ব্যারাকপুর এলাম। যাওয়ার কোন জায়গা নেই। ট্রেনেই পরে থাকলাম। তারপর একটু বেশিরাতে স্টেশনে নেমে ঘোরাঘুরি করছিলাম। আমাকে সন্দেহভাজন বলে জিআরপি ধরলো।
যাক বাঁচা গেল আমার মনস্কামনা পূর্ণ হলো। ফার্স্ট ট্রেনে আমাকে শিয়ালদহ জিআরপিতে ট্রান্সফার করা হলো। সেই সময় মনে হয় বটা আমাকে দেখেছিল। ও নাইট করে বাড়ি ফিরছিল। ওই সবাইকে খবরটা দেয়। তারপর ওরা আমাকে ছাড়াল। আমার লেখাটা আর হলো না।
তুই মিথ্যে কথা বললি।
বিশ্বাস কর।
বিশ্বাস করছি না। সার্জারীর হেড ডঃ আর এল দাস স্টেশন ম্যানেজারকে ফোন করেছিল। তিনি সব কথা বলেন ওনাকে। তারপর তোকে ওরা ছাড়ে।
হবে হয়তো।
তারপর বল।
তারপর আর কি, কিছু না।
তুই এখনো মিত্রাকে সব কথা মন খুলে বলতে সংকোচ বোধ করছিস!
বিশ্বাস কর তখন কি বলেছিলাম মনে নেই।
আমাকে তোর এই কথাটা বিশ্বাস করতে হবে! তুই নীরুকে বলিস নি, কেন তোরা আমাকে ছাড়ালি। অন্ততঃ পক্ষে পনেরোটা দিন থাকা খাওয়ার কোন অভাব হতো না। পনেরো দিনের মধ্যে জেলে একটু বদমাইশি করতাম তাহলে ওটা এক্সটেনসন হয়ে মাস দেড়েক হয়ে যেত।
আমি মিত্রার চোখে চোখ রেখে চুপ করে গেলাম।

তোর তখন থাকার জায়গা ছিল না। হোস্টেলে পয়সা দিতে পারিসনি বলে তোর জিনিষপত্র আটকে রেখে তোকে বের করে দিয়েছিল।
 
দামিনী মাসি বললো। মনে পরছে না। তবে আমি প্রথমবার ওকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। বলেছিলাম দিন পনেরো পর দেখা করো দেখি তোমায় থাকার জায়গা দিতে পারি কিনা। তাই তুই এই পথ বেছে নিয়েছিলি!
আমি মিত্রার মুখের দিকে তাকিয়ে, ওর চোখ ছল ছল।
বল এই কথা শুনে যদি চিকনা কেঁদে ফেলে সে কি খুব অন্যায় করেছে। না সে তোকে অন্ধের মতো ভালবাসে, এটা তার অমার্জনীয় অপরাধ।
মিত্রার গলাটা ধরে এলো। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আবার শুরু করলো।
তুই ভাবলেশহীন মুখ করে তাকিয়ে থাকিস না। একটু কথা বল। আমার কি একটুও শুনতে ইচ্ছে করে না। কেন আমি তোর বন্ধুদের মুখে তোর কথা শুনবো।
একটু থেমে চোখটা নতুন বেনরসীর খুঁট দিয়ে মুছে….
তুই ভালপাহাড়ে যাস। সাঁওতালদের সঙ্গে থাকিস। ওদের ওখানে স্কুল করেছিস। কনিষ্কদের নিয়ে গিয়ে ওখানে ওদের চিকিৎসা করাস। বিনা পয়সায় ওষুধ নিয়ে যাস। সব ওদের পাওয়া স্যামপেল কপি। বাকি কিনে নিয়ে যাস। কই আমাকে একবারও বলিস নি। খালি বুবুন ফুরুত ফুরুত করে কলকাতা ছেড়ে পালিয়ে যায়।
কোথায় যায় কেউ জানে না। তুই এখন কম যাস। তবু মাসে একবার তোর যাওয়া চাই। ওরা এখন পালা করে কেউ না কেউ প্রতি সপ্তাহে যায়। ওদের মধ্যে তুই ইনজেক্ট করে দিয়েছিস। কনিষ্ক বলেছে সে জীবনে কোনদিন বিয়ে করবে না। বটা কনিষ্কের পথের পথিক। বাকিগুল প্রেম করে। মোবাইলটা হয়ে তোর কাজের অনেক অসুবিধে হয়েছে তাইনা।
মিত্রা এক নিঃশ্বাসে কথা বলে গেল। মনে হয় একটু হাঁফিয়ে গেছে।
ওর বুকের ওঠা নামা লক্ষ্য করলাম।
আমি চুপ করে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।
তোর ওখানের মৌসুমি মাসির বাড়ি ভালোপাহাড়ে। অনাদির কাছ থেকে জানলাম সেই সাঁওতাল ভদ্রমহিলা তোর বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যে থাকে। কই আমি দুবার গেলাম আমাকে মৌসুমি মাসির সঙ্গে আলাপ করালি না।
দু’বারই মৌসুমি মাসি ছিল না।
মিথ্যে কথা বলছিস।
বিশ্বাস কর। তুই চিকনাকে জিজ্ঞাসা কর।
তোর গুণীন কাকা অশ্বিনী জ্যেঠু এটা তুই কখনো বলেছিস। কিন্তু সেই ভদ্রলোক কতবার এসেছে, আমাদের সঙ্গে কথা বলেছে। কই একবারও ঘুণাক্ষরে বলিস নি।
আমি চুপ।
তুই অশ্বিনী জ্যেঠুকে বারন করে দিয়েছিলি।
না। গুণীন কাকা তোকে দেখতে চেয়েছিল, আমি বলেছিলাম পরিচয় দিতে পারবে না।
এটা বারন করা হলো না ?
মিত্রার অবস্থা দেখে আমি হাসব না কাঁদব ঠিক করে উঠতে পারছি না। কি পাগলী মেয়েরে বাবা।
কাকাকেও তুই বারন করে দিয়েছিলি। কিসের ভয় তোর। তোর বিদ্যে আমরা শিখে নেব। কাকা আসুক রবিবার, আমি এবার বুঝে নেব।
হেসে ফেললাম। তুই বৃথা উত্তেজিত হচ্ছিস।
কষ্টটা আমার শরীরের বসন, বুঝলি মিত্রা ছেঁড়া জামাকপরে আমি বেশ কমফর্ট বোধ করি। মনে হয় অনি এবার সত্যি অনি। ভেক না ধরলে ভিক্ষা পাওয়া যায় না। তাই না।
মিত্রা এমন ভাবে ভেংচি কেটে বললো আমি হেসে ফেললাম, বাধ্য হয়ে মিত্রার মুখটা আমার বুকে চেপে ধরলাম।
ছাড় ছাড়।
আজ আটমাস ধরে তোর কথা শুনেগেছি। কনো উত্তর দিই নি। আমাকে কিছু বলতে দে। আমারও বলার থাকতে পারে।
আমি মিত্রাকে জড়িয়ে ধরে বিছানায় একপাক ঘুরে গেলাম। মিত্রা এখন আমার বুকের নীচে। আমি মিত্রার ঠোঁটে ঠোঁট রাখলাম। প্রথমে ও কিছুতেই ঠোঁটে ঠোঁট রাখতে দেবে না। দুবার কামরেও দিল। আমি তবু ওর ঠোঁট থেকে ঠোঁট সরালাম না। বেশ কিছুক্ষণ পর ও সারাদিল। ওর হাত কথা বলতে শুরু করলো। বুঝলাম মাথার আগুন, বুকের জ্বালা এবার কিছুটা কমেছে। আমি ঠোঁট থেকে ঠোঁট তুললাম। মিত্রা হাসলো।
এবার শান্তি।
আমি হাসছি।
মিত্রা ঠান্ডা হলো তাই তো।
তবু আমি হাসছি।
হাসিদিয়ে তুই বিশ্বজয় করতে পারবি না। তুই আমাকে যে জীবন দিয়েছিস, তিলে তিলে আমার শরীরের সুধা পান করে বেড়ে উঠছে। মনে রাখবি, তোমাকে বধিবে যে গকুলে বাড়িছে সে।
সত্যি।
আমি আবার ওর ঠোঁটে ঠোঁট রাখলাম।
কই এখবরটা আমাকে দিসনি।
তুই সব কথা বলিস। কেন তোকে বলতে যাব।
বাবাঃ, গালটা কিরকম মেনি বিড়ালের মতো ফুলে গেছে, আর কে জানে ?
ছোটমা।
কি করে।
তুই সেদিনকে বললি না, তোর পেটটা কেমন শক্ত শক্ত লাগছে।
হ্যাঁ।
আমার কেমন সন্দেহ হলো। ছেলেদের চোখ। তার ওপর তোর চোখ।
ছোটমাকে চুপি চুপি বললাম। একটা কি বেরিয়েছে এখন। সকালের ইউরিন একফোঁটা ওখানে দিলেই নেগেটিভ না পজিটিভ বোঝা যায়। দেখলাম পজিটিভ।
কই আমাকে বলিসনি এতো সব।
তুই তোর বউ-এর খোঁজ রাখিস। তুই নিজের তালে থাকিস। খালি মিত্রা টাকার কথায় কেন বললে অভিমান হয়, টাকার জোগাড় করতে ছুটিস। আমি তোর আপন নয়, শত্রু।
এই আবার সেন্টিমেন্টের শুরশুরি দিচ্ছিস। বড়মা যানে।
ছোটমা হয়তো বলেছে।
ডাক্তারদাদা।
ছোটমা বলেছে কাজটা মিটুক তারপর বলবে।
জিজ্ঞাসা করেনি, কবে হলো।
বলেছি। পীরবাবার ওখানে যেদিন গেছিলাম মনে হয় সেইদিন।
কী বললো ছোটমা।
মাথায় হাত ঠেকিয়ে প্রণাম করলো।
আমি আবার মিত্রার ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়ালাম। কতোক্ষণ ছিলাম জানি না। আজ কিন্তু মিত্রার সঙ্গে একটুও সেক্স করতে ইচ্ছে করছে না। বার বার ওকে আদর করতে ইচ্ছে করছে। ঠোঁট তুললাম। মিত্রা আমার মুখের দিকে হাঁসি হাঁসি মুখ করে তাকিয়ে।
বুবুন।
বল।
তোর ভাল লাগছে।
মাথা দোলালাম।
আমাদের ভালবাসার নতুন প্রাণ।
আমি মিত্রার মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম। দুজনের মুখেই কোন কথা সড়ছে না। যা কিছু কথা চোখে চোখে। আমি মিত্রার কপালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। কপালের চন্দন এখনো ঘেঁটে যায় নি। যেন আরও উজ্জ্বল লাগছে। ডাগর চোখ দুটো এক দৃষ্টে আমাকে গিলে খাচ্ছে।
কি দেখাবি বললি। দেখালিনা।
আজ থাক।
না। এই আনন্দের দিন আমি নিজের শেকড়টা জানতে চাই। অন্ততঃ পক্ষে আগামী ভবিষ্যতকে বলতে পারব, তোমাদের মা এই দিনে আমাকে আমার শেকড়টা খুঁজে বার করতে সাহায্য করেছিল।
সত্যি তুই দেখবি।
হ্যাঁ।
একটুও দুঃখ পাবি না।
পৃথিবীতে অনেক দুঃখ পেয়েছি। দুঃখকে আর ভয় পাই না।
তুই ভাগ্য বিশ্বাস করিস।
আমি মনে করি মানুষ তার নিজের ভাগ্য নিজে রচনা করে। বলতে পারিস, মেন ইজ মেকার অফ হিজ ওউন ফেট।
সব কিছু শোনার পর, সব কিছু দেখার পর, তুই যদি আমাকে ছেড়ে চলে যাস।
যেতেই পারি না।
ঠিক বলছিস।
বলছি তো। যদিও বা যাই তা ক্ষণিকের, মনে রাখবি আমি কনো কাজ শেষ করতে গেছি।
যদি তোর সেই কাজ শেষ না হয়, তুই যদি আর না ফিরিস।
কেন তোর জ্যোতিষ এটাও বলে দিয়েছে।
জ্যোতিষদা তোর সব কথা মিলিয়ে দিয়েছে।
যতো সব গাঁজাখুরি।
আমি তোর বিশ্বাসে কোন দিন আঘাত করিনি।
আমি তোর বিশ্বাসে আঘাত করছি না, তবে তার একটা রিজিন থাকবে।
রিজিন তৈরি হতে কতোক্ষণ।
আচ্ছা আমি….না থাক আজকে বলবো না।
বলনা বল। আমি তোর কাছ থেকে শক্ত হওয়ার মন্ত্রে দীক্ষা নিয়েছি। আজকের পর থেকে দেখবি আমার চোখে তুই জল পাবি না।
পাগলাম করিস না। আমি তোকে কাঁদতে বারণ করিনি। ফরনাথিং কাঁদতে বারণ করেছি।
তুই তোর মতো করে বলবি।
ঠিক আছে আর বলবো না। এবার দেখা।
এখনো বলছি দেখার পর মন খারাপ করতে পারবি না।
একটুও মন খারাপ করবো না।
দুজনে বিছানা ছেড়ে উঠলাম। মিত্রা ফ্রিজ থেকে জলের বোতল বার করলো। দুজনে খেলাম। ওর ড্রেসিন টেবিলের ড্রয়ারের চোরাকুঠরি থেকে আলমাড়ির চাবি বার করলো।
কিরে তুই চাবি এখানে রাখিস ?
কেউ জানতেও পারবে না। এমন একটা খোপ। বাবা বানিয়েছিল।
মিত্রা আলমাড়ি খুললো।
বুবুন তোকে একটু ধরতে হবে।
কি ধরবো।
এই যে থাকটা দেখছিস এটাকে তুলে ধরতে হবে এর ভেতরে ফাইলটা আছে সেটা বার করবো।
তুই একা হলে কি করতিস।
জামা কাপর সব টেনে নামাতাম, তারপর বার করতাম।
এটা কি ঢাকনার মতো।
হ্যাঁ সবকটা তাকই সেরকম তারপর ডবল লক।
আমি ঢাকনাটা তুলে ধরলাম। বেদম ভারি। মিত্রা লক খুলে ভেতর থেকে ফাইল বার করলো।
জানিস বুবুন বাবা মৃত্যুর আগে অসুস্থ অবস্থায় একটা চিরকুটে লিখে এই ফাইলটার হদিস দিয়েছিল। খুঁজে পাওয়ার পর আমাকে একা ঘরে পেয়ে বলেছিল। ওই ফাইলটায় আমার সব আছে। আর ব্যাঙ্কের লকারের চাবির হদিস দিয়েছিল। ব্যাঙ্কের লকারটা এই ছয়বছরে দেখা হয়ে ওঠেনি।
ব্যাঙ্কে গেছিলি।
গেছিলাম।
লকার দেখিস নি।
না।
কেন।
যদি শয়তানটা হদিস পেয়ে যায়।
ইস। আবার ওই নামটা করলি।
এখন আমার কোন ভয় নেই। তুই আছিস। আমার গার্জেন।
আমি মিত্রার নাকটা ধরে নাড়িয়ে দিলাম। দু’জনে পাশাপাশি বসে।
জানিস বুবুন আজ আমার প্রথম বিয়ে হলো।
কেন।
আগে তো কখনো বিয়ে হয় নি। কেউ সিঁদুরও পরিয়ে দেয়নি। ভয় দেখিয়ে বিয়ে হয়। খুব সাধ ছিল কনে সেজে সেজেগুজে বিয়ে করবো। তুই সেই সাধটা পূরন করলি।
আমি তোকে পীরবাবার থানের মাটি তোর কপালে লাগিয়ে দিয়েছিলাম।
জানিস বুবুন, আমি ভীষণ লোভী, ওইটুকুতে আমার কিছু হয়নি। তাই আরও চেয়েছিলাম। যেভাবে একটা মেয়ে একটা পুরুষের হাতে ধরা দিতে চায় ঠিক সেই ভাবে।
আগে যদি জানতাম।
আমি ভেবেছিলাম তুই আমার এতো সব খোঁজ নিয়েছিস, এটাও জানতিস।

আমি মিত্রার দিকে তাকালাম।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top