What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

দেখি নাই ফিরে (উপন্যাস) (4 Viewers)

তুমি কালকে একবার কাউকে আমার কাছে পাঠাতে পারবে।
কিসের ব্যাপারে বলুন।
তুমি ঝিমলিকে কিসের ব্যাপারে বলেছো।
ও হ্যাঁ সত্যি, আপনার বাড়িতে এলাম, আপনাকেই ব্যাপারটা বলতে ভুলে গেছি।
তাতে কি হয়েছে। আমার মনে আছে। তুমি কালকে বারোটার পর কাউকে পাঠাও আমি ছয়মাসের একটা ক্যাম্পেন পাঠিয়ে দেব।
ঠিক আছে।
দেখলাম আমার জায়গা এসে গেছে। আমি নেমে পরলাম। এখান থেকে মিনিট চারেক হাঁটলেই আমার অফিসের গেট। পকেট থেকে ফোনটা বার করে অন করলাম। মিস কলের ছড়া ছড়ি তেমনি ম্যাসেজ।
সিগারেটের দোকান থেকে একটা সিগারেট কিনে ধরালাম।
ফোনটা অন করেই দামিনী মাসিকে একটা ফোন করলাম।
কিরে কোথায় ছিলি! কখন উঠলি ? এখন কোথায় আছিস ? কতোবার ফোন করলাম তোর ফোনের স্যুইচ অফ।
কোন প্রশ্নের উত্তর আগে দেব বলো।
মাসি হাসছে।
বড়মার সঙ্গে কথা হয়নি।
হয়েছে।
তাহলে সব জেনে গেছ।
মাসি হাসছে।
এখন কোথায় আছো ?
নিজের ঘরে বসে আছি।
কতোক্ষণ থাকবে ?
আজ আর বেরতে ভালো লাগছে না।
রতন কোথায় ?
ওর কাজে।
তোমার কাছে যাবে ?
আসতে পারে, রাতের দিকে।
তোমার বৌমাকে নিয়ে যাচ্ছি।
এখানে!
তার ঘুরতে যাবার সখ হয়েছে। আমারও একটা কাজ আছে তোমার সঙ্গে।
কি হয়েছে বল।
গিয়ে বলবো।
সত্যি আসবি!
তাহলে কি মিথ্যে কথা বলছি। দেখো যেন ভড়কে না যায়। কোনদিন দেখে নি, সব গল্প উপন্যাসে পরেছে। এবার রিয়েল লাইফ স্টোরিতে।
ঠিক আছে, তুই কিছু ভাবিস না।
ফোনটা কেটেই বৌদিকে ফোনে ধরলাম।
সকাল থেকে কোথায় থাকিস বলতো ?
ঘুমোচ্ছিলাম।
এগারোটা পর্যন্ত। তারপর।
বাবা, কেন বিধানদাকে ফোন করো, সব খবর পেয়ে যাবে।
বৌদি হেসে ফেললো।
শোনো তোমার ওখানে যাব, আমার বৌ দেখাতে।
ধ্যাত। বাঁদর।
হ্যাঁগো সত্যি বলছি। এই ধরো সাতটা নাগাদ। তার আগেও যেতে পারি। তোমার আপত্তি আছে।
একেবারে না। খালি তুই সত্যি সত্যি আসবি কিনা বল।
তাহলে তোমায় ফোন করতাম না।
ঠিক আছে আয়।
দু-দশ মিনিট দেরি হলে একটু ক্ষমা ঘেন্না করে দিও।
বৌদি হাসছে।
সুরোকে একবার খবর দিয়ো। কোথাও যেন আড্ডা মারতে না যায়।
আচ্ছা।
রাখি তাহলে।
রাখ।
অফিসের একেবারে গেটের সামনে চলে এলাম। ইতি উতি সকলে দাঁড়িয়ে আছে। আমার একটাই সৌভাগ্য এখনো পর্যন্ত সকলে আমাকে চেনে না। গেটে পা রাখতেই সেই সিকুরিটির ছেলেটা মুখ টিপে হাসলো।
আজ তোমার ইভিনিং ডিউটি।
হ্যাঁ স্যার।
চেক করবে না।
ছেলেটি মাথা নীচু করে হাসছে।
আমি সোজা প্রেস রুমে চলে এলাম। আমাকে ঢুকতে দেখেই সুতনুবাবু এগিয়ে এলেন।
ছোটবাবু এখুনি এলেন।
জাস্ট ঢুকলাম।
সকালে আপনার বাড়িতে গেছিলাম আপনি ঘুমচ্ছিলেন।
তাই! এখন কি ছাপা হচ্ছে।
রবিবারের সাপ্লিমেন্ট। এরপর বাইরের কাগজটা ছেপে দেব।
রেডি হয়ে গেছে ?
ফোনটা বেজে উঠলো। পকেট থেকে বার করে দেখলাম মিত্রা।
হ্যালো।
শেষ পর্যন্ত এলি।
হাসলাম।
ওপরে কখন আসছিস।
যাচ্ছি।
ফোনটা পকেটে রাখলাম।
ছোটবাবু আমরা হিমাংশু বাবুর সঙ্গে কথা বলেছি।
দেখলাম আরও দুচারজন প্রেসের স্টাফ পাশে এসে দাঁড়াল।
কি বললো হিমাংশু।
আপনার একটা কনসেন্ট প্রয়োজন।
ঠিক আছে আমি হিমাংশুর সঙ্গে কথা বলে নেব।
আপনি একটু প্রেস ম্যানেজারকে বলে দেবেন উনি ভীষণ বাড়াবাড়ি করছেন। আমরা ওনার কথা মানব না।
কেন আবার কি হলো ?
উনি স্ক্র্যাপ মাল ওনার পরিচিত লোককে বিক্রি করতে চাইছেন। আমরা বলেছি আপনার অনুমতি পেলে তবেই হবে।
ঠিক আছে আমি কথা বলে নেব।
পার্চেজের ব্যাপরটাও আপনি একটু দেখুন।
সোমবার থেকে টিনা ম্যাডাম দেখবেন। উনি আজকে জয়েন করেছেন। একটু বুঝে নিন।
তাহলে দারুণ হবে। আমরা জানি ম্যাডাম আগে কোথায় ছিলেন।
ঠিক আছে। আপনারা কাজ করুণ।
ছোটবাবু টাকাটা আমরা এখনো নিই নি। সার্কুলেসন ম্যানেজারের কাছে জমা রেখেছি।
ওটা আপনাদের ব্যাপার। আমার দেবার কর্তব্য দিয়ে দিয়েছি। মাঝে মাঝে এরকম টোকেন পাবেন। যদি দেখি আপনারা ঠিক আছেন। আর একটা কথা বলে রাখি আমার কাছে কোনদিন ডিমান্ড করবেন না। করলে পাবেন না। আর আপনাদের প্রয়োজনীয় যা কিছু কথা দাদা মল্লিকদাকে বলবেন।

ঠিক আছে ছোটবাবু।
আমি আর রিসেপসন ঘুরে ভেতরে ঢুকলাম না। প্রসেরুমের ভেতর দিয়েই সোজা লিফ্টের সামনে এলাম। দেখলাম বেশ ভিড়। সোজা সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে শুরু করলাম। অনেকেই নামছে উঠছে। আমি সবাইকে চিনি এটা হলপ করে বলতে পারবনা। এরি মধ্যে কেউ গুড ইভিনিং স্যার বলছে। কেউ বলছেন স্যার এখুনি এলেন। আমি হাসি ছাড়া মুখ থেকে একটিও শব্দ উচ্চারণ করছিনা।
ওপরে উঠে এলাম। দেখলাম মিত্রার ঘরের সামনে হরিদার ছেলে বসে আছে। দাদার ঘরের সামনে হরিদা। আমাকে দেখেই বললো।
এখুনি আসা হচ্ছে ?
আমি মাথা দোলালাম।
সোজা নিউজরুমে চলে এলাম। দেখলাম সবাই ঘরের মধ্যে। গেটে পা রাখতেই মল্লিকদা দূর থেকে হাসতে আরম্ভ করলো। যাকে বলে একেবারে অর্থপূর্ণ হাসি। আমি এগিয়ে গিয়ে নিজের টেবিলে বসলাম।
সন্দীপ, ছোটবাবু এলেন। মল্লিকদা বলে উঠলো।
সন্দীপ কি লিখছিল মুখ তুলে একবার দেখল, হাসল। অর্ক একটা জলের বোতল নিয়ে এলো।
কিগো তুমি হাঁপাচ্ছ।
সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে উঠলাম।
হেঁটে উঠলে!
কেন, আজ প্রথম নাকি।
তুমি পারো। অফিসের প্রেস্টিজে একেবারে গ্যামকসিন মেরে দিচ্ছ।
ঢক ঢক করে জল খেলাম।
কিগো অনিদা খুব মাঞ্জা দিয়েছো আজকে।
কিরে অর্ক, অরিত্র কি বলে।
সত্যি অনিদা এতোক্ষণ খেয়াল করিনি।
হাসলাম।
কি লিখলি।
আজ কনো কাজ নেই, খালি ফলো আপ করেই কাটিয়ে দিলাম।
রেস্ট।
বড়ো বস বলেছে খালি ফলোআপ করে যা।
অর্ক তোর ক্লিয়ার।
সনাতনবাবু ট্রান্সফার করে দিয়েছেন।
কাজ মিটিয়ে দিয়েছিস।
হ্যাঁ।
হরিদা সামনে এলো। আমার দিকে তাকাল।
দাদা ডাকছেন, এইতো।
তাড়াতাড়ি। গম্ভীর হয়ে।
আমি যাবনা।
তাহলে তাই বলি গিয়ে।
যাও।
মল্লিকদা হাসছে। হাসির শব্দ এখানে বসে শুনতে পাচ্ছি।
দাদা সকাল থেকে খুব খোশ মেজাজে আছে। অর্ক বললো।
কেনরে ?
সব কাজ ঠিক ঠিক হয়ে যাচ্ছে।
ফোনটা বেজে উঠলো। পকেট থেকে বার করে দেখলাম মিত্রা। কেটে দিলাম।
আবার এখুনি আর একজন আসবে দেখ। এতক্ষণ কারুর প্রয়োজন পরে নি।
অরিত্র হাসছে। তোমার মোবাইল স্যুইচ অফ ছিল।
কেনরে, ফোন করেছিলি ?
বহুবার।
কেন! কোন গড়বড় হয়েছে নাকি ?
এইতো তোমার চোখের ভাষা চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে।
অরিত্র হাসছে।
সায়ন্তনকে দেখতে পাচ্ছি না।
দাদা কোথায় পাঠালেন।
কিগো অনিদা, অরিত্র আমার নামে লাগিয়েছে তোমার কাছে।
না।
তাহলে।
আমি হাসছি। অরিত্রও হাসছে।
একটা রিজাইন দিয়েছে, আর একটাকে পার্টি থেকে সাসপেন্ড করেছে।
মরুকগে যাক। আমাদের কি, আমাদের কাজ আমরা করেছি। নিউজ করেছিস ?
সে আর বলতে।
কিরে একবার গিয়ে মুখটা দেখিয়ে আয়না দুটো ঘরে, তাহলে ল্যাটা চুকে যায়।
সন্দীপ কাছে এসে বললো।
আমার হয়ে তুই দেখিয়ে আয়।
দুধের স্বাদ ঘোলে মেটে।
তোর খবর বল।
মল্লিকদা একটা হাফ সাইজ যা দিয়েছিল। সন্দীপ বললো।
আমি তাকালাম।
ওরকম ড্যাব ড্যাব করে তাকাসনা। এগারটা পর্যন্ত ঠেসে ঘুমিয়েছিস।
মল্লিকদা আছে, নাহলে তোকে চুপ করিয়ে দিতাম। সন্দীপ গড় গড় করছে।
দেখলে, কি কথার কি মানে করলো।
ছোটবাবু একবার দিদিমনি ডাকছেন।
মল্লিকদা হেসে ফেললো। দেখলাম হরিদার ছেলে।
উঠে দাঁড়ালাম।
তোর চিঠি পত্রগুলো একবার দেখ। কিলো দশেক হবে। আরও আছে।
ওগুলো সর্টিং করে দে, আবার বার করে দেব।
সন্দীপের দিকে তাকালাম।
কালকে একটা গড়বড়ি কাজ করেছিস, মাথায় রাখিস।
ম্যাডামকে বলে দিয়েছি, ম্যাডাম সামলে নেবে বলেছে।
ম্যাডাম বাঁচাবে না।
দেখা যাবে।
মল্লিকদা, আজ কি কনটিনিউ করছো ?
আরও দুটো দেবো।
কিছু বুঝছো।
কি বুঝবো, অজস্র ফোন আসছে।
দাঁড়াও একটু মুখ দেখিয়ে আসি।
মল্লিকদা হাসছে।
তুই কি আর আসবি।
কেন।
তোর সেইরকম প্রোগ্রাম আছে কিনা।
এরি মধ্যে খবর হয়ে গেছে।
কি করবো বল, তুই গেটে ঢোকার পর থেকেই খবর চলে আসছে।

আরে বাবা, আমি এখনো এতোটা ভিআইপি হয়ে যাই নি।
 
মল্লিকদা, গল্প শুরু হলো। তারপর বেরিয়ে গিয়েই ফোন করবে অর্ক একবার এখুনি আয়তো, শোন একটা ফটোগ্রাফারকে ট্যাঁকে করে নিয়ে আসিস। দরকার আছে।
অর্ক ক্যারিকেচার করে দেখাচ্ছে সবাই হাসছে।
সত্যি তুমি পারো অনিদা। মাথায় রাখবে কালকের সব খবর পেয়ে গেছি।
নিশ্চই মল্লিকদা বমি করেছে।
সে তোমাকে জানতে হবে না।
দাঁড়া আসছি।
বেরিয়ে এলাম।
দাদার ঘরে ঢুকলাম। দেখলাম সনাতনবাবু আর চম্পকদা বসে আছে। দাদা আমাকে দেখেই ফোনটা তুলে নিল। ইন্টার কমে ডায়াল করেই বললো, সবেমাত্র আমার ঘরে এসে ঢুকলো বুঝেছিস। রেখে দিল।
বুঝলাম মিত্রাকে সংবাদ দেওয়া হলো।
তোকে একটা সারপ্রাইজ দেব তার সুযোগই দিচ্ছিস না। চম্পকদা বললো।
কেন ?
সনাতনবাবু চম্পকদা হাসছেন।
দাদার দিকে তাকিয়ে, আমি আবার কি অন্যায় করলাম।
একনম্বর অন্যায় তুই সেদিন ওরকম একটা দুর্ধর্ষ লেখা লিখলি। আমরা কেউ জানতেই পারলাম না। সকালে কাগজ দেখেই দাদাকে ফোন করলাম। তখন তুই ভীষণ ভাবে গন্ডগোল করছিলি। দু’নম্বর তুই একটা ভালো কাজ করলি প্রেসের এবং সার্কুলেসনের ছেলেদের জন্য। তাও এখানে এসে জানলাম।
ছোটবাবু এইগুলো একটু সই করে দাও দেখিনি।
কি এগুলো ? সনাতনবাবু কয়েকটা কাগজ এগিয়ে দিল।
দাদার দিকে তাকালাম।
একটু চা খাওয়াবে।
দেখছিস, ওর রকম সকম দেখছিস চম্পক। দাদা বললো।
চম্পকদা হাসছে।
মহা মুস্কিল, এসব নিয়ে আমি কি করবো। আমার লাগবে না।
যা বলছে সই করেদে, ঝামেলা করছিস কেন। দাদা বললো।
তুমি বুঝবেনা। অভ্যাস খারাপ হয়ে যাবে।
তুই একটা কাগজের মালিক বলে কথা, তোর একটা এটিকেট আছে। চম্পকদা বললো।
রাখো তোমার এটিকেট। এগুলো আপনাকে কে বানাতে বললো।
ম্যাডাম।
ম্যাডামকে দিয়ে সই করিয়ে নিন।
ম্যাডাম সই করে দিয়েছেন।
ওরতো অনেক কার্ড আছে আরও লাগবে।
এগুলো এ্যাড অন কার্ড। দু’জনের যে কেউ ব্যবহার করতে পারবে।
একজনের কাছে থাকলেই যথেষ্ট। আমি বরং পাসপোর্টের ফর্মটায় সই করে দিচ্ছি।
আমি পাসপোর্ট ফর্মটায় সই করতে শুরু করলাম।
চম্পকদা।
বল।
ওদের একটু বাজিয়ে দেখলেন।
আমি বাজাব কিরে। ওরা আমার থেকে এ্যাডভান্স।
সবার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলেন।
সেটা বরং করিয়ে দিয়েছি।
সনাতনবাবু।
ছোটবাবু।
পছন্দ।
একটু রিলিফ পাব। যা ঝামেলা শুরু করেছে সবাই।
আবার ঝামেলা! মুখ তুললাম।
হরিদা ঘরে ঢুকলো। সবাইকে চায়ের কাপ দিল। আমাকে দিলনা।
আমি হরিদার দিকে তাকালাম।
এঘরে চা খাওয়া হবেনা। সকাল থেকে কিছু খাও নি। ও ঘরে যাও, পাবে।
তোমাকে এ খবর কে দিল।
আমি জানি না।
মহা মুস্কিল।
ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলাম দামিনী মাসি। ধরলাম।
বলো।
কিরে এখনো বেরোস নি।
যাচ্ছি যাচ্ছি। আধঘন্টার মধ্যে পৌঁছে যাব।
ঠিক আছে।
ফোনটা পকেটে রাখলাম।
কোথায় যাবি ? দাদা আমার দিকে তাকিয়ে।
কাজ আছে।
আচ্ছা দাদা আপনি ওকে জিজ্ঞাসা করছেন কেন।
ঠিক বলেছো চম্পক। কেন জিজ্ঞাসা করছি।

হাসলাম।
সব সই করা হয়ে গেল। সনাতনবাবুর দিকে কাগজগুলো এগিয়ে দিলাম।
খুশি সনাতনবাবু।
সনাতনবাবু হাসছেন।
এই প্রথম কোন কাগজ না পরে সই করলে।
উঠে দাঁড়ালাম। চম্পকদা সোমবার একটু বসবো।
আবার কি হলো।
কামিং সিক্স মান্থের টার্গেট সেট করে নেব।
চম্পকদা হাসলো।
আমাকে তোর দরকার পরবেনা। একটা হাউসের জন্য যা যা দরকার, তুই তা করে দিয়েছিস।
দাদার দিকে তাকালম। ফিরতে দেরি হবে। বলে দিও।
দাদা আমার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে। কোথায় যাবি!
দেখি।
এখন গন্ডগোল পাকাস নি।
পাকাব না।
সবাই হেসে ফেললো।
আমি বেরিয়ে এলাম। করিডরের শেষ ঘরটা মিত্রার। এ্যাকাউন্টস ডিপার্টমেন্টের একজনকে ঘর থকে বেরিয়ে যেতে দেখলাম। হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে এলাম। হরিদার ছেলেকে আশে পাশে দেখতে পেলাম না। মিত্রার ঘরের নেমপ্লেটটা বেশ ঝক ঝক করছে। বুঝলাম কাজ হচ্ছে।
আমি দরজাটা একটু ফাঁক করলাম, দেখলাম মিত্রা কি সব কাগজ দেখছে মন দিয়ে, অপরজিটে নীপা মিলি টিনা বসেও একি কাজ করছে। সবাই আমার দিকে পেছন ফিরে।
আস্তে করে বললাম। আস্তে পারি ম্যাডাম।
আসুন।
ভেতরে এসে দাঁড়ালাম।
কেউ আমার দিকে ঘুরে তাকাল না। আমি ঘরের চারিদিক চেয়ে চেয়ে দেখছি। দু’দিন আগে এই ঘরে ঢুকেছিলাম। তখন এই ঘরের চেহারা, আর আজ এই ঘরের চেহারার মধ্যে অনেক তফাৎ। টেবিলের ওপর অনেক গুলো ফুলের বুকে। এতো ফুলের বুকে এখানে কেন! কারা এসেছিল ? এক ডাঁই ফাইল টেবিলের ওপর। আমি দাঁড়িয়ে রইলাম।
বসুন।
মিত্রা মুখ তুললো।
তুই! শয়তান।
ওরা তিনজন পেছন ফিরে তাকাল। হেসে ফেললো।
ম্যাডাম এটা অফিস। অফিসের কিছু এটিকেট আছে, মাথায় রাখবেন। গম্ভীর ভাবে বললাম।
দাঁড়া তোকে এটিকেট দেখাচ্ছি।
ওরা হাসছে। আমি না হেসে গম্ভীর হয়ে দাঁড়িয়ে।
বুঝলি টিনা ঠিক ওই জায়গায়, এখন যেরকম ভাবে দাঁড়িয়ে আছে, ঠিক ওই ভাবে।
বুঝলেন সুনীতদা।
মিত্রা চেয়ারে দোল খাচ্ছে।
আমার যিনি রিসেন্ট বস ছিলেন, তিনি যখন আমাকে এ্যাপয়েন্টমেন্ট দেন, তাকে বলেই ঢুকেছিলাম আমার একটা পা এই হাউসের ভেতরে, আর একটা এই হাউসের বাইরে থাকবে। যে কোন সময় যদি মনে করি ভেতরের পাটাও বাইরে নিয়ে চলে যাব।
মিত্রা ছেলেদের গলা নকল করে বলছে, ওরা সকলে হাসছে।
কি সাহস! মালকিন এই চেয়ারে বসে, ঘরে আরও সব হাউসের সিনিয়ার লোকরা আছেন, সুনীতবাবু আমার আত্মীয়, সেই সময় উনি এ্যাকটিং এডিটর। যার তার চাকরি চলে যাচ্ছে। বাবুর কি রোয়াব!
তারপর চম্পকদা কি একটা যেন বলেছেন, ওমনি চম্পকদাকে সপাটে দিয়ে দিল। আমি জানতাম আপনি এ্যাডম্যানেজার আপনার সাবজেক্ট বিজ্ঞাপন। সাংবাদিক কবে থেকে হলেন।
বুঝলি মিলি তখন আমি হাসব না কাঁদব। এতো লোকের সামনে চম্পকদার মুখটা ছোট হয়ে গেছে। ওর কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।
মিত্রা উঠে দাঁড়াল।
বুকের ওপর ঠিক এইভাবে হাত টাকে রেখে ঠিক এই ভাবে আমার দিকে তাকাল।
ভাবলাম হয়তো চোখ মারবে।
ওমা বলে কিনা ম্যাডাম তাহলে আমি আসি, পারলে শোকজ করুণ। আমি তার ঠিক ঠাক উত্তর না দিতে পারলে স্যেক করবেন।
সোজা দরজার দিকে হাঁটা। আমি ডাকলাম।
ঘরের সবার থোঁতা মুখ দেখি ভোঁতা হয়েগেছে। তখনি বুঝলাম বুবুনের মধ্যে সেই আগুন এখনও আছে। যে আগুনে একদিন আমি পুরে মরেছিলাম। এই সুযোগ আর ছাড়া যাবেনা। তখন আমি মাঝ সমুদ্রে একটা ডিঙি নিয়ে ভাসছি। ব্যাশ খপ করে ওর হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলাম। বল অন্যায় করেছি।
একবারে না। টিনা বললো।
তারপর রাতে ডেকে পাঠালাম। সেদিন ওর পোষাক দেখলে তুই হেঁসে মরে যেতিস।
কেন!
মালকিনের বাড়িতে গেছে একটা পাজামা পাঞ্জাবী পরে। তাও রং ওঠা।
সত্যি!
তোকে বলছি কি। মিত্রা হাসছে।
সেদিন আমার বাড়িতে আরও ভালো করে ওকে বুঝলাম, আমার বুবুন আমাকে ভুলে যায়নি। আমাকে সেই ভাবে মনে রেখেছে। বাবার কথাটা মনে পরে গেল, অনি ফিরে এলে ওকে ফিরিয়ে দিস না। আমি ওকে ফিরিয়ে না দিয়ে অন্যায় করেছি বল।
শেষের কথাটা বলতে গিয়ে ওর গলা ধরে এলো। মিত্রার চোখের কোল জলে ভরে গেলো।
কেঁদে ফেললো।
মিলি চেয়ার ছেড়ে উঠে ছুটে মিত্রার কাছে গেল।
ওরা সবাই অপ্রস্তুত। আমি ওর দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে।
প্লীজ মিত্রাদি এরকম করেনা। তুমি এরকম করলে আমাদের খারাপ লাগবে। টিনা চেয়ার থেকে উঠে কাছে গেল। নীপা হাঁ করে আছে।
মিত্রা রুমাল দিয়ে চোখের জল মুছলো। আমার দিকে তাকাল।
একটু বসবিনা। তুইতো চা খাস নি। চায়ের কথা বলি।
চল বেরবো। বাথরুমে গিয়ে মুখটা ধুয়ে আয়।
কোথায় যাবি!
গেলেই দেখতে পাবি। তোর গাড়ি কোথায় ?
নিচে আছে।
কে চালাচ্ছে।
রবীন।
ওকে চাবিটা দিয়ে যেতে বল। মিলি তোমরা এখন কোথায় যাবে ?
কোথাও না।
যাবে নাকি আমাদের সঙ্গে ?
হ্যাঁ।
মিত্রা বাথরুমে গেল।
ওকে নিয়ে চলে এসো ইন্ডিয়ান এয়ার লাইন্সের সামনে, আমি ওখানে দাঁড়াচ্ছি।
আচ্ছা।
ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।
সোজা নিচে চলে এলাম। দেখলাম রবীন দাঁড়িয়ে আছে।
কাছে ডাকলাম।
চাবিটা দিদিমনিকে দিয়ে আয়।
আমি কি অফিসে থাকব।
হ্যাঁ। দাদাদের দিয়ে আসবি।
ঠিক আছে।
সোজা বেরিয়ে এলাম।
একটা সিগারেট কিনলাম। হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের সামনে। বার বার মিত্রার কান্নাভেঁজা দু’চোখ চোখের সামনে ভেসে আসছে। নিশ্চই আজ ওদের গল্প করেছে। এই কান্না তার শেষ পরিণতি। কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখলাম ওরা চলে এলো।
মিত্রা নিজে ড্রাইভ করছে। সামনের সিটটা খালি। ওরা পেছনে বসে আছে। কাছে এসে দাঁড়াতে আমি উঠে বসলাম। এখন মুখটা অনেক পরিষ্কার। আমাকে দেখে হেসে ফেললো।

কোথায় যাবি ?
 
বৌবাজর কলেজস্ট্রীট ধরে সোজা বিবেকানন্দ রোড চল তারপর বলছি।
কলেজে যাবি ?
ওর দিকে তাকালাম।
বলনা।
কেন আবার কলেজে ভর্তি হবি।
যদি ওই বয়সটা আবার পেতাম।
আগামী জন্মে।
মিলি পেছন দিক থেকে হেঁসে উঠলো।
অনিদা তোমরা কোথায় বসে প্রেম করতে। টিনা বললো।
প্রেম! তুই খেপেছিস। যা কিছু কলেজের লনে। খুব বেশি হলে আমাদের কলেজের গেট দিয়ে বেড়িয়ে হেঁদুয়ায় ঢুকেই বাঁদিকের বেঞ্চটা। কতো কষ্টে একবার মাত্র সিনেমা দেখাতে নিয়ে যেতে পেরেছিলাম।
কেন!
বাবুর তখন কতো কাজ। পার্টি করেন না কিন্তু পার্টির লিডাররা ওর পেছন পেছন ঘুর ঘুর করে। তারপর আমার সঙ্গে ঘুরতে গেলে তোদের পেছনে লাগবে কখন।
মিলি হেসে ফেললো।
নীপা এটা কলেজস্ট্রীট ডানদিকের দোকান গুলো দেখেছিস। এইখানে আমি বুবুন প্রায় আসতাম। আমি বোড় হোতাম সে বাবু পুরনো বই কিনেই চলেছেন।
পয়সা পেত কোথায় ?
কেন আমার মতো কতকগুলো মুর্খকে নোট বেচতো।
টিনা হাসছে।
নীপা এটা ঠনঠনিয়া কালিবাড়ি। আমাদের দুজনের জীবনে একটা মাইলস্টোন। আমরা এই মন্দিরে দাঁড়িয়ে দু’জন দু’জনকে মেনে নিয়ে ছিলাম।
মিলি এই সিনেমাহলে কোনদিন এসেছিস।
বহুবার।
আমরা দু’জনে জীবনে একবারই ঢুকেছিলাম। সেই প্রথম সেই শেষ। আমি একটু দুষ্টুমি করেছিলাম বুঝলি। বাবুর সেকি গোঁসা। আর সিনেমাই দেখতে গেলনা আমার সঙ্গে।
কিগো অনিদা তুমি কিছু বলছো না যে। টিনা বললো।
আমি চুপচাপ সামনের ভিউইংগ্লাস দিয়ে রাস্তা দেখছি।
কিরে বিবেকানন্দ রোড এসে গেলাম, এবার কোথায় যাবি ?
সোজা গিয়ে বেথুনের গা দিয়ে বাঁদিকে ঢোক।
নীপা এই গলির মধ্যে বিবেকান্দর বাড়ি।
একটু এগোতেই।
ওই দেখ চাচার হোটেল, বিবেকান্দ এখানে বসে গরুর মাংস খেতো। এই গলিতে বহুবার বুবুনের সঙ্গে এসেছি। যতবার এসেছি বুঝলি মিলি, ততবার মনে হয়েছে প্রথম এলাম। বুবুন এতো সুন্দর গল্প বলতো। ফাঁক পেলেই দুজনে চলে আসতাম।
সিনেমা দেখার থেকে ভাল।
সেটা পরে বুঝেছিলাম বুঝলি। তখন ওর নেওটা হয়ে পরেছি।
বাঁদিকে ঘোর।
এদিকে কোথায় যাবি ?
চুপ থাকলাম।
বলনা।
সামনে বাঁদিকে দাঁড় করা। ওই গাড়ি বারান্দার তলায়।
এতো মিষ্টির দোকান। মিষ্টি খাওয়াবি!
খাবি ?
হ্যাঁ। গাড়ি থেকে নামবি না।
আচ্ছা।
গাড়ি থামলো।
আমি নামলাম। মিষ্টির অর্ডার দিলাম। ওদের জন্য রসোগোল্লা আর নলেন গুড়ের সন্দেশের অর্ডার দিলাম।
খাবেন, না নিয়ে যাবেন।
রসোগোলা আর সন্দেশ খাবো। আর হাঁড়িতে যেটা বললাম ওটা নিয়ে যাব।

ওটা বুঝেছি।
আপনারা খেতে খেতে ওগুলো রেডি করে দিচ্ছি।
উনি একটা একটা প্লেটে সাজিয়ে দিলেন আমি ওদের এগিয়ে দিলাম।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, চাইলে পাব।
এখানে সব খেয়ে নিলে বাকি জায়গায় খেতে পারবিনা।
তুই কি এখন খাওয়াতে নিয়ে বেরিয়েছিস।
হ্যাঁ।
মিলি তাড়াতাড়ি সাঁটা। বেশি জল খাসনা।
দুর, তুমিনা কি।
সাঁটা সাঁটা।
খাওয়া হলো, আমি একটা মিনারেল ওয়াটারের বোতল কিনে গাড়িতে দিলাম। গাড়ির পেছনের দরজাটা খুলে মিষ্টির হাঁড়িগুলো ঢোকালাম।
কিরে এতো মিষ্টি কার জন্য।
যাচ্ছিস তো, দেখতেই পাবি।
এই মিষ্টির দোকানটার নাম জানিষ।
জানব না। তোর সঙ্গে এখানে এসে কতো মিষ্টি খেয়েছি। তখন তুই খাওয়াতিস না। তুই কোন কাজ করে দিলে, আমরা তোকে খাওয়াতাম।
মনে আছে।
অবশ্যই। চ্যালেঞ্জকর, কাজটা করে দিতে পারলে নকুর রসোগোল্লা। রাজি।
রাজি।
এই হচ্ছে বুবুন।
বুঝলি টিনা।
তোমাদের কথা শুনে মনে হচ্ছে তোমরা কলেজ লাইফটা দারুণ এনজয় করেছো।
তা বলতে পারিস।
কলেজে ক্লাস না থাকলে বুবুনকে নয় লাইব্রেরীতে পাবি নয় মাঠে। নয় ডঃ রায়ের বাড়ি না হয় আমার সঙ্গে হলঘরে নয়তো হেঁদুয়াতে।
নীপা হাসছে। অনিদা তোমাকে কখনো কিস করেছে।
ওইযে বললাম না একবার দুষ্টুমি করেছিলাম, ব্যাশ সিনেমা দেখা বন্ধ। এরপর কিস। ছেড়ে পালিয়ে যেত।
সবাই হেসে ফেললো।
ও ভীষণ শ্রদ্ধা করতে জানতো সকলকে। ওর সামনে বলছি না, তুই দেবাকে জিজ্ঞাসা করিস। বন্ধুদের কেউ এইভাবে শ্রদ্ধা করতে পারে আমি প্রথম শিখেছিলাম ওর কাছ থেকে। ও প্রায়ই বলতো, তোকে যদি আমি শ্রদ্ধা করতে না পারি, তুই আমাকে করবি কি করে।
ডানদিকে ঘোর।
এতো সেন্ট্রাল এ্যাভিনিউ চলে এলাম। তুইকি আমার বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছিস এদের।
আবার কথা বলে। সামনে ট্রাম লাইন এলে গাড়িটা স্লো করবি।
আমি ফোনটা বার করে একবার রতনকে ফোন করলাম।
বলো দাদা, তোমরা কোথায় ?
তুই চলে এসেছিস।
হ্যাঁ মাসি বললো।
আমি পেছন পাশ দিয়ে ঢুকছি।
কেন তুমি সামনের দিক দিয়ে ঢোকো।
সামনের দিক দিয়ে এদের নিয়ে যাওয়া যাবেনা।
ঠিক আছে আমি গেটের সামনে দাঁড়াচ্ছি।
তাই দাঁড়া।
কিরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস।
চলনা, বুবুনের একটা আঁতুড় ঘর দেখেছিস, আর একটা দেখবি।
দামিনী মাসির বাড়ি!
হ্যাঁ।
সবাই এবার নড়ে চড়ে বসলো।
সত্যি অনিদা, আমরা মাসির বাড়ি যাচ্ছি।
আর মিনিট চারেক।
ওরা চারিদিক দেখছে।
ট্রামলাইন দিয়ে বাঁদিকে ঢুকবি। ঢুকেই বাঁদিকের গোলিতে গাড়িটা ঘোরাবি।
আচ্ছা।
মিত্রা আমার পথ নির্দেশে ফলো করলো।
এইটা হচ্ছে এই পাড়ার খিড়কি দরজা। তোদের সামনের দিক দিয়ে ঢোকালাম না। প্রথম তো ভড়কে যেতে পারিস।
কেন ঢোকালেনা। টিনা বললো।
ঠিক আছে ফেরার সময় আসব।
নীপা এটা হচ্ছে কবিরাজ শিবকালী ভট্টাচার্জের বাড়ি। নাম শুনেছো কখনো।
চিরঞ্জীব বনৌষধি যাঁর লেখা। টিনা বললো।
হ্যাঁ।
এই পাড়ায় থাকতেন!
হ্যাঁ। তখন উনিই ছিলেন এদের ডাক্তার। বিনে পয়সায় চিকিৎসা করতেন।
পাশের বাড়িটা অরতি গুপ্তের।
প্রথম মহিলা হিসাবে যিনি ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়েছিলেন। টিনা বললো।
আর এই যে শরু গলিটা দেখছো। এখানে থাকেন গায়ক বিমান মুখোপাধ্যায়, রামকুমার চট্টোপাধ্যায়। বিমানদার বাবা ছিলেন সুবল মুখোপাধ্যায় ওনার কাছে ইন্দুবালা, আঙুরবালা আসতেন। ওরা কিন্তু এই পাড়া থাকে উঠে এসেছেন। দু’জনের কারুর কিন্তু পিতৃপরিচয় নেই, মাতৃ পরিচয়েই তাঁরা রাজ করেছেন।
সুবলবাবুর সঙ্গে ঠাকুর পরিবারের একটা নিভৃত যোগাযোগ ছিল। ওনার কাছে নজরুল, কমল দাশগুপ্ত ওঁর ভাই সুবল দাশগুপ্ত সকলেই আসতেন। এই পাড়ার ভেতর দিয়েই তাঁরা যাতায়াত করতেন।
মিত্রা এবার ওই সামনের বাঁদিকে ঘুরে দুটো বাড়ি পরে গাড়িটা দাঁড় করা।
মিত্রা খুব ধীরে চালাচ্ছে।
দু’পাশে সাড়ি দিয়ে মেয়ারা দাঁড়িয়ে। কেউ হয়তো শায়া ব্লাউজ পরেও দাঁড়িয়ে আছে। এ পাড়ার যা রীতি। আমাদের গাড়িটা দেখে অনেকে অনেক কথা বলছে। দু’একটা কথা ওদের কানেও যে ভেসে আসছেনা তা নয়। ওরা সব যেন চোখ দিয়ে গিলছে। কারুর গলায় কোন শব্দ নেই।
বাঁদিকে ঘুরতেই দেখলাম রাস্তার ওপর রতন আর আবিদ দাঁড়িয়ে আছে।
মিত্রা গাড়ি দাঁড় করাল। রতন দরজা খুললো। আমি নামলাম। ওরা একে একে সব নামলো। সবাই চারিদিক হাঁ করে দেখছে। রূপের হাটে বিকি কিনি চলছে।
মিত্রা গাড়ি থেকে নেমে কাছে এগিয়ে এসে আমার হাতটা ধরলো।
একবার ঘাড় উঁচু করে বাড়িটার দিকে তাকাল।
রতন পেছনে মিষ্টি আছে। দুটো হাঁড়ি দুটো বাক্স নামিয়ে নিয়ে আয়।
তুমি আবার আনতে গেলে কেন।
আমি ভেতরে ঢুকলাম। মিত্রা আমার হাত ধরে আছে।
কিরে ভয় করছে ?
ও আমার মুখের দিকে তাকাল। হাসলো।
একটু দেখে আসিস। অন্ধকার। হোঁচট খেতে পারিস।
ওরা তিনজন আমার ঠিক পেছনে।
দোতলায় উঠতেই একদঙ্গল মেয়ে এসে ঘিরে ধরলো। এদের সাজ পোষাক অনেক রুচি সম্মত কিন্তু চোখে মুখে সেই উগ্রতা।
অনিদা বৌদি কোনটা।
বৌদি! কিসের বৌদি। এতগুলো বৌ থাকতে বিয়ে করতে যাব কেন ?
একজন চেঁচিয়ে উঠলো, মাসি তুমি তোমার নাগরের কথা শুনতে পাচ্ছ। বলেকিনা এতোগুলো বৌ থাকতে বিয়ে করতে যাব কেন।
শিঁড়ির ওপরে মাসির চেহারাটা দেখতে পেলাম। তিন তলা থেকে নিচে নামছে।
একবারে মা মা সেজেছে।
ওমা দেখ কান্ড, তোদেরও নিয়ে এসেছে। মাসি তাড়াহুড়ো করে নিচে নেমে এলো।
কিরে রতন মিষ্টি কে এনেছে ?
আবার কে।
মাসিকে দেখে মিত্রাদের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে।
বৌদি শ্বশুর বাড়িতে এলো মিষ্টি নিয়ে আসবে না। রতন বললো।
ভিড়ের মধ্যে থেকেই একটা মেয়ে চেঁচিয়ে উঠলো।
কইরে নিয়ে আয়।
দেখলাম ভেতর থেকে একজন ফুলের বুকে নিয়ে এলো।
মিত্রা আমার হাতটা শক্ত করে ধরে আছে।
বলোনা অনিদা বৌদি কনটা।
তোদের বুঝতে হবেনা। নিজেদের নাগরকেই খালি চেন। মাসি বললো।
তোমার নাগরের মতো যদি একটা নাগর পেতাম মাসি।
চলতো মামনি এখানে দাঁড়ালে তোর মাথা খারাপ হয়ে যাবে।
সবাই হৈ হৈ করে উঠলো।
মুহুর্তের মধ্যে মিত্রা আমার হাতছাড়া হয়েগেল।
মিত্রা আর আমার হাতে নেই।
কেউ মিত্রার গাল টেপে, কেউ মিত্রার হাত ধরে, কেউ মিত্রাকে জড়িয়ে ধরে।
ওরা তিনজন অবাক হয়ে দেখছে। মিত্রার হাতে ফুলের বুকে তুলে দিল। মাসি কোন প্রকারে ওদের হাত থেকে মিত্রাকে রক্ষা করে ওপরে নিয়ে এলো। পেছনে সবাই।
মাসি আমরা ওপরে যাচ্ছি। তুমি নিচে একটু খবর দিয়ে দাও আধ ঘন্টা কেউ যেন না আসে।
আবিদ বাবা একটু বলে দে।
আমরা ওপরে এলাম। লক্ষ্মী এগিয়ে এলো। দেখলাম কবিতাও আছে। কবিতা এগিয়ে এসে মিলি টিনা নীপার সঙ্গে কথা বললো। লক্ষ্মী আমাকে এসে প্রণাম করলো।
মাসি আর কবিতাদির মুখ থেকে বৌদির গল্প শুনে শুনে বৌদিকে দেখা হয়ে গেছে। লক্ষী বললো।
মিত্রা এটা লক্ষ্মী। মাসির ডান হাত।
আর কবিতা বাম হাত। লক্ষ্মী ঘর সামলায়, কবিতা বাইরেটা।
ও মাসি এগুলো রাখব কোথায় ? রতন বললো।
লক্ষ্মীর ঘরে রাখ, হ্যাঁরে লক্ষ্মী এখন কাউকে আসতে বলেছিস ?
হ্যাঁ।
কাকে।

আমার বৃহন্নলাকে।
 
লক্ষ্মী আমার দিকে তাকিয়ে কথা বলছে। মুচকি মুচকি হাসছে। মাসি প্রথমে ধরতে পারেনি, তারপর জোড়ে হেসে উঠলো।
তুই মাসিকে সব বলে দিয়েছিস।
নইলে মাসি দূর করেদেবে। খাবো কি। তুমিতো আর চাকরি দেবে না।
মিত্রা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। তারপর মাসির মুখের দিকে তাকাল।
সেদিন রাতের কীর্তি। আমরা কেঁদে মরি। ও ওর কাজ করে। তোকে পরে বলবো। মাসি বললো।
মিত্রারা সবাই লক্ষ্মীর ঘরে বসলো। লক্ষ্মী ওদের নিয়ে গেল।
আমি মাসির ঘরে ঢুকলাম। মাসিকে বললাম বেশিক্ষণ বসবোনা আরও দু’জায়গায় যেতে হবে। তোমাকে নেমন্তন্ন করতে এলাম। শুক্রবার বিয়ে করছি, রবিবার বৌ-ভাত।
মাসি আমার কান ধরলো।
কাল যাচ্ছি, আমি বড়দিকে গিয়ে রিপোর্ট করবো।
সে তুমি করতে পারো।
মাসি আমার ভাঙা বাক্স।
খাটের নিচে। কেন ?
বার করতে হবে।
এখুনি!
হ্যাঁ।
কবিতাকে ডাক।
রতন গিয়ে কবিতাকে ডেকে নিয়ে এলো।
ওই ঘর থেকে হাসির শব্দ ভেসে আসছে। কবিতা খাটের তলা থেকে আমার ভাঙা বাক্স বার করলো। আমি মাটিতে থেবড়ে বসে পরলাম।
টিনের এই বাক্সটা কলকাতায় পড়তে আসার সময় কাকা কিনে দিয়েছিল। রঙ চটে গেছে। মাসি একটা কাপর দিয়ে বাক্সটা ঢেকে রেখেছে।
নিচে কেন, খাটে বোস।
না।
মাসি ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। ওই ঘরে হৈ হৈ, হাসাহাসি চলছে। আমি মানি পার্টস থেকে মরচে পরা চাবিটা বার করলাম। বার কয়েক চাপ দিতেই দেখলাম তালাটা খুলে গেল।
এই বাক্স নিয়ে কত স্মৃতি মগজের কোনায় কোনায় গচ্ছিত হয়ে আছে।
আমি আর এখানে থাকব না। আমাকে এবার যেতে হবে। এই কথাটা গুছিয়ে বলতে মাসিকে সাতদিন সময় নিয়েছিলাম।
মেরিনাদি তখন মাস খানেক হলো মারা গেছে। আমার লেখার শেষ ইনস্টলমেন্ট যেদিন ছেপে বেরলো। পর দিন একটু বেলা করে অফিসে গেছি।
মল্লিকদা নিজের চেয়ারে বসে। আমাকে দেখে মুচকি হাসলো।
আসা মাত্রই বড়োসাহেব দেখা করতে বলেছে।
কেন!
আমি কি করে জানবো।
কিছুক্ষণ নিজের চেয়ারে বসলাম।
সন্দীপ কাছে এসে বসলো।
গত চোদ্দদিন যা লিখেছিস তার মধ্যে কালকেরটা সেরা ইনস্টলমেন্ট।
আমি সন্দীপের দিকে তাকালাম।
শেষ প্যারাটা পরতে গিয়ে চোখ ফেটে জল আসছিল।
কেন ?
আচ্ছা ভদ্রমহিলা কি সত্যি তোর কেউ হন ?
ওর মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলাম।
নিজের খুব আপন না হলে এ ধরণের লেখা হাত থেকে বেরতে পারে না।
আমার পরিচিতা।
তারমানে তুই ওই পাড়ায় ঘনিষ্ঠভাবে যাতায়াত করিস।
ঘনিষ্ঠভাবে বলা ভুল। তবে যাতায়াত আছে।
দাদা তোর লেখার ভীষণ প্রশংসা করলেন। আজ দাদাকে খুব উচ্ছ্বসিত লাগছে।
আমি সন্দীপের দিকে তাকালাম।
দাদা কেন ডেকেছে।
হয়তো তোর সঙ্গে এই আনন্দটা শেয়ার করবেন।
আমার থেকেও অনেক সিনিয়ার জার্নালিস্ট এই অফিসে আছেন।
সকলকে আজ ধুয়ে দিয়েছে। সুনিতদাকে তুলে আছাড়ই মেরে দিল।
উঠে দাঁড়ালাম। ধীর পায়ে নিউজরুমের বাইরে চলে এলাম।
একবার চোরা চোখে তাকিয়ে দেখলাম মল্লিকদা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।
দাদার ঘরের সামনে এসে দাঁড়াতে হরিদা আমার দিকে গম্ভীর হয়ে তাকাল।
সকাল থেকে থাকা হয় কোথায় শুনি ?
কেন ?
বার পাঁচেক নিউজরুমে গেছি।
ঘুম থেকে উঠতে দেরি হলো।
ওই এক রোগ।
কেন তোমায় কিছু বলেছে।
না, ভেতরে যাও।
তুমি দাদাকে গিয়ে বলো আমি এসেছি।
বলতে হবে না। তুমি চলে যাও। এখন কেউ নেই।
আমি দরজার লকটা সামান্য মোচড় দিয়ে একটু ফাঁক করে মুখ বারালাম।
দাদা দরজার দিকে তাকিয়ে বললো।
ভেতরে আয়।
তখন দাদাকে সত্যি কত ভয় পেতাম। এটুকু বুঝতাম দাদা আমাকে অন্ধস্নেহ করেন। কেউ কেউ ইয়ার্কির ছলে বলতো সম্পাদক পুত্র।
টেবিলের কাছে এগিয়ে গেলাম।
বোস। সকাল থেকে কিছু খেয়েছিস।
মাথা নীচু করে দাঁড়ালাম।
তোর কাকা শুভঙ্করকে একটা চিঠি দিয়েছে।
দাদার মুখের দিকে তাকালাম।
কলকাতায় তুই কোথায় থাকিস তারা জানে না।
আমি চুপ করে আছি।
অফিসের খাতায় দেখলাম লোকাল এ্যাড্রেসটা ডঃ রায়ের।
আমি কোন কথা বলছি না। দাঁড়িয়ে আছি।
বোস।
আমি চেয়ারে বসলাম।
বুঝলাম দাদা বেল বাজিয়েছে। হরিদা মুখ ঢুকিয়ে বললো চা না ডিম টোস্ট।
দুটোই নিয়ে আয়।
দাদা কি লিখছিলেন আবার লেখায় মনোযোগ দিলেন। আমি চুপ চাপ বসে আছি। হরিদা ডিমটোস্ট নিয়ে এলো। এবার দাদা টেবিলে কলমটা রেখে। চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলো।
চটপট খেয়ে নে।
আমি খেয়ে এসেছি।
ঠিক আছে দুটো পাঁউরুটি খেলে অসুবিধে হবে না।
খেতে শুরু করলাম।
শুভঙ্করের কথা মতো তোর এ্যাকাউন্ট থেকে তোর কাকাকে পাঁচ হাজার টাকা মানি অর্ডার করে দিয়েছি।
একবার দাদার দিকে তাকিয়ে মাথা নীচু করে নিলাম।
কিছু বললি না।
ঠিক আছে।
হরিদা চা নিয়ে এলো। আমার সামনে একটা কাপ দাদার সামনে একটা কাপ বসিয়ে চলে গেল।
পরের লেখাটা কি লিখবি কিছু ভেবেছিস।
মাথা দোলালাম, না।
তুই যা মাইনে পাস তার থেকে ওই টাকাটা প্রতিমাসে তোর কাকাকে পাঠাবার ব্যবস্থা করেছি। তোর আপত্তি আছে ?
না।
কলকাতায় তোর কোন স্থায়ী ঠিকান নেই। আমার বাড়িতে অনেক ঘর খালি পরে আছে। তোর আপত্তি না থাকলে একটা ঘরে থাকতে পারিস।
দাদার মুখের দিকে তাকালাম।
মনে মনে বললাম আমি যে নরকে থাকি এতে আপত্তি করার কিছু নেই।
ঘন্টা খানেক পর আমি বেরবো। আমার সঙ্গে গিয়ে একবার দেখে আসতে পারিস।
সেদিন প্রথম দাদার বাড়িতে পা রেখেছিলাম।
তারপর সাতদিন সময় নিয়েছিলাম দামিনী মাসিকে কথাটা বলতে। সেদিন দামিনীমাসি আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে খুব কেঁদেছিল। বলেছিল তুই এবার আমাদের ভুলে যাবি।
বাক্সটা নিয়ে আসার সময় দামিনী মাসি বলেছিল এটা আমার কাছে থাক। এই বাক্সের টানে তবু তুই মাঝে মাঝে আসবি।
আমি চলে এসেছিলাম ঠিক কিন্তু মন টেঁকে নি। প্রায়ই রাত বিরেতে ফিরতাম। বুঝতাম আমার জন্য সকলের সমস্যা। অফিসের ফ্ল্যাটটা সেই সময় অযাচিত ভাবে পেয়েছিলাম। সেখানে গেলাম ঠিক কিন্তু ততদিনে বড়মা ছোটমার স্নেহের বন্ধনে বাঁধা পরে গেছি।
থাকো যেখানে সেখানে কিন্তু দুবেলা খেতে হবে এখানে।
ওরা সকলে হৈ হৈ করে আমার ঘরে ঢুকলো। আমার ধ্যান ভঙ্গ হলো।
বুবুন বুবুন মাসি মিষ্টি খেয়ে দোকানের নাম বলে দিয়েছে।
মিত্রার দিকে তাকিয়ে হাসলাম।
সবাইকে দিয়েছিস।
হ্যাঁ। এই দেখ ওরা সবাই মিলে আমাকে দিল।
মিত্রার গলায় সোনার হার।
তুই নিলি ?
জোর করে পরিয়ে দিল।
ওই ঘরে গিয়ে বোস, আমি যাচ্ছি।
তুই কি করছিস।
একটা কাজ করছি।
এটা কার বাক্স।
আমার।
বাক্সটা খুলে দেখলাম সব ঠিক আছে। কাগজগুলো একটু নাড়া চাড়া করলাম।
মাসি মিষ্টি নিয়ে এলো।
কিগো আজ আমি নাগর নই।
তাতে কি। বৌমাকে নিয়ে এসেছিস।
বৌমাকে খাওয়ায়।
খাইয়েছি। তোর জন্য নিয়ে এলাম।
এরকম সাজিয়ে গুছিয়ে। কিরে লক্ষী।
আমি জানি না, তুমি মাসিকে বলো।
আমি একটা তুলে নিচ্ছি। বাকি সবাই ভাগ করে নে।
আজ তুই দুটো খা। মাসি এমন ভাবে বললো আমি হেসে ফেললাম।
মাসি এই বাক্সটা নিয়ে যাব।
না।
মাসির দিকে তাকালাম মাসির চোখ অন্য কথা বলছে।
ওটা আমার কাছে থাক তোর একমাত্র স্মৃতি। আমি মরার পর নিয়ে যাস।
হাসলাম। ঠিক আছে রাখো। ইসলামভাই এলো না।
আসবে।
আমি দুটো মিষ্টির একটা খেলাম আর একটা মাসিকে খাইয়ে দিলাম।
প্লেটটা এগিয়ে দিয়ে লক্ষ্মীকে বললাম এবার তোরা খেয়ে নে।
ওরা খালি আমার বলার অপেক্ষায় ছিল। ছোঁ মেরে নিয়ে চলে গেল।
টিনাদের দিকে তাকালাম।
তোমরা ঘুরে দেখলে ?
মিলি হাসতে হাসতে বললো। তুমি চলো।
মাসির দিকে তাকালাম। মাসি হাসছে। তুমি একটু চা করো, আমি আমার আঁতুড় ঘরটা দেখিয়ে আনি। কে আছে ওখানে এখন ?
তুই চলে যাবার পর ভজু থাকত এখন কবিতা এলে শোয়, না হলে তালা বন্ধ থাকে।
খোলা না বন্ধ।
খোলা আছে। কবিতা বললো।
আমি উঠে দাঁড়ালাম। আলো অন্ধকার সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে এলাম।
ওরা চারজন আমার পেছনে। ছাদে এলাম। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। এখন আর গোধূলি বলা চলে না। চারিদিকে হৈ হৈ রৈ রৈ শব্দ।
এতো আওয়াজ কিসের রে বুবুন।
সবার ঘরেই খরিদ্দার আসা শুরু হয়ে গেছে। হাসা-হাসি খেস্তা-খিস্তি শীতকার সব মিলিয়ে একটা শব্দ।
ওরা আমার মুখের দিকে বিষ্ময়ে তাকিয়ে।
আমি নিজের ঘরে এসে দাঁড়ালাম। পাঁচ বাই আট একটা ঘর। এর থেকে এখন আমার ঘরের বাথরুমটাও বড়ো। একটা মসারি টাঙানো। একদিকে বিছানাটা রোল করে গুটিয়ে রাখা। মলিনতার চিহ্ণ ঘরের চারদিকে। আমি যখন ছিলাম তখন একটু পরিষ্কার ছিল। নিজেই করতাম। পরে কবিতা করে দিত।
তুই এই ঘরে থাকতিস!
হ্যাঁ।
মিত্রা আমার সামনে এসে দাঁড়াল। আমার মুখটায় হাত বোলাল।
আঠার মাস। বলতে পারিস ওই আঠার মাস আমাকে আঠার বছরের ম্যাচুরিটি দিয়েছে। অরিজিন্যালের থেকে আমার বয়স এখন আঠার বছর বেশি।
মিত্রা আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার বুকে মাথা রাখল।
এই পাড়ায় এই ঘরটুকুর ভাড়া প্রতি রাতে একশো টাকা।
জান মিলি কখনো কখনো খুব ভিড় হতো।
আমাকে এই ঘরটা সেই রাতের জন্য ছেড়েদিতে হতো। কোন একটা মেয়ে আমার বিছানাতেই তাদের নাগরকে নিয়ে লুটো পুটি খেত। তখন আমি বয় গিরি করতাম। কারুর মদ এনে দিতাম মদের সঙ্গে খাওয়ার জন্য চাট এনে দিতাম। বয় হিসাবে কাজ করে বেশ ভালো টিপস পেতাম।
কতবার ইসলামভাই-এর কাছে টিপস নিয়েছি। এক একদিন সারারাত না ঘুমিয়ে কেটে যেত। শোয়া হতো না। সকালবেলা ছাদের ওই কোনে একটা কল আছে ট্যাঙ্কের সঙ্গে লাগান। স্নান করে বেরিয়ে পরতাম। নিচে চায়ের দোকান থেকে এক ভাঁড় চা খেতাম।
তখন আমি ইউনিভার্সিটিতে পরি। দশটায় ক্লাস থাকত। সোজা চলে যেতাম ইউনিভার্সিটিতে। ফার্স্ট ক্লাসটা করে কলেজ স্কোয়ারের ভেতরে একটা বিহারীর ছাতুর দোকান আছে, সেখান থেকে ছাতু খেতাম। দুপুর পর্যন্ত ইউনিভার্সিটি, তারপর সোজা চলে যেতাম মিত্রার কাগজে।

মিত্রার দিকে তাকালাম।
 
ফ্রি-ল্যান্সার। কোনদিন লেখা পেতাম, কোনদিন পেতাম না। মাস গেলে তিন চারশো টাকা আসতো। তার থেকে বেশি আসতো এই বাড়িতে বয়ের কাজ করে। তবু লেখার নেশটা ছাড়তে পারলাম না। ঘসে মেজে চলে যেত কনো প্রকারে।
সেই সময় আমার কনো বন্ধু ছিলনা। একচুয়েলি বন্ধু পাতাই নি। কেউ না কেউ আসতে চাইবে কাকে নিয়ে আসবো। এমনকি তখন আমার মেলিং এ্যাড্রেস ছিলো ডঃ রায়ের বাড়ি অথবা অনিমেষদার বাড়ি।
তুই তখন সুরোকে পরাতিস ?
হ্যাঁ।
অনিমেষদা জানতো না।
না কাউকে জানাতাম না। বলতাম একজনের বাড়ির ছাদের চিলে কোঠায় থাকি।
একসময় ইউনিভার্সিটি শেষ হলো। হাতে অনেক সময়, কি করি। আমি ভজু রামবাগানের একটা হোটেলে কাজ নিলাম। বিকেল চারটে থেকে রাত এগারটা পর্যন্ত হোটেল, তারপর এখানে এসে বয়ের কাজ। বিন্দাস কেটে যেত সেই সময়টা।
কি নীপা ম্যাডাম। অনিদার থেকেও জীবনে কষ্ট পেয়েছ ?
নীপা মুখ নীচু করে মাথা দোলাল।
আমি এতো কষ্ট করে যদি এই জায়গায় আসতে পারি, অবশ্যই মিত্রার অবদান সেখানে অনস্বীকার্য, তাহলে তোমরা আমার থেকে আরও এগবেনা কেন, অনিদা যদি তোমাদের কাছে ডিমান্ড করে সেটা অন্যায় হবে।
আমার আর কি অবদান। নিজে বাঁচতে তোকে আঁকড়ে ধরলাম। তবে তোকে যে খুঁজিনি তা নয়। তোর হদিস কেউ দিতে পারত না।
নীপা ম্যাডাম, লজ্জার মাথা খেয়ে ওইদিকে একটু তাকাও, ব্লু ফিল্ম কাকে বলে দেখে নাও। এখানে যা দেখবে সব লাইভ। ছাদে বলে দেখতে পাচ্ছ। এখানটা অন্ধকার। তোমাকে কেউ দেখতে পাচ্ছে না। তবে এখানে কেউ জানলা বন্ধ করে বা লাইট নিভিয়ে করে না। তাহলে মজা পাওয়া যায় না।
লজ্জার কিছু নেই মিলি। এটাও একটা পেশা। একটা জীবন। পৃথিবীর সবচেয়ে আদিমতম পেশা। এখানে এলে তোমাদের এমবিএ ম্যানেজমেন্টের থিওরি সব ওলট পালট হয়ে যাবে। এই পাড়ার নিজস্ব একটা থিওরি আছে। তুমি যতোটা কাপড় তুলবে ততটা পয়সা। তোমরা জগৎটা দেখার জন্য উসখুশ করছিলে, তোমাদের নিয়ে এলাম, দেখালাম। তাও তোমরা দশভাগ দেখলে। এখন এই পাড়ার বিকেল, এখনো সন্ধ্যা হয় নি।
ওরা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
কিগো অনিদা নিচে চলো। চা যে জুড়িয়ে গেল।
দেখলাম কবিতা।
যা যাচ্ছি।
কবিতা নিচে চলে গেল।
এই কবিতা মেয়েটাকে দেখলে, একদিন আমি এই ঘরে শুয়ে ছিলাম। আমার দরজা কোনদিন বন্ধ থাকত না। বলতে পার আমি ইচ্ছে করেই এটা করতাম। যাতে মাসির মনে কোন সন্দেহ না হয়। একদিন কবিতা আমার ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করেছিল। বেদম মার মেরেছিলাম, তারপর থেকে কবিতার লাইফটাই বদলে গেল।
তুমি কবিতাকে মেরেছ! টিনা বললো।
আমার আড়ালে একবার ওকে জিজ্ঞাসা করবে। কি বলে শুনে নেবে।
কি মিলি ম্যাডাম এ পাড়ায় এসে কাজ করতে পারবে ?
সত্যি বলতে কি অনিদা, অনেক কিছু ভাবা যায়, বাস্তবে সেটা ইমপ্লিমেন্ট করা ভীষণ টাফ। বইখাতা সিনেমার মাধ্যমে এই পাড়ার একটা ছবি চোখের সামনে ছিল। এখানে এসে একেবারে ওলট পালট হয়ে গেল। আমরা যারা ওদের কেতাবী ভাষায় সেক্স ওয়ার্কার বলি ওদের আজ খুব কাছ থেকে দেখলাম। কথা বললাম। মনে হলো আমিও একজন সেক্স ওয়ার্কার। তুমি সেদিন তোমার দেশের বাড়ি যেতে যেতে একটা কথা বলেছিলে, এভরি ওয়াইফ (উয়ম্যান) ইজ প্রস। কথাটা খুব গায়ে লেগেছিল। এখানে এসে দেখলাম কথাটা কতোটা বাস্তব সত্য।
ওরা মিত্রাদিকে ফুলের বুকে দিল, আমাদের একটা করে গোলাপ দিল, সবাই মিলে পয়সা দিয়ে মিত্রাদির জন্য একটা সোনার হার কিনে এনে দিল। আমাদের জড়িয়ে ধরে আনন্দ করলো। একেবারে পুরুষ বিবর্জিত হয়ে। কিন্তু শরীরটা ওদের পণ্য। আমরা জাস্ট নিজেদের স্বার্থে….।
বুঝলাম মিলি ওর ইমোশানটাকে ঠিক গুছিয়ে বলতে পারল না। শেষ পর্যন্ত গলাটা ধরে এলো। রুমাল দিয়ে চোখ মুছলো। আমার সামনে এসে দাঁড়াল জড়িয়ে ধরে বললো।
একবার সুযোগ দাও। শেষ বিন্দুটুকু দিয়ে লড়ে যাব।
আমি মিলির মাথায় হাত দিলাম। এই মিলি। বোকা কোথাকার, একবারে কাঁদবে না। কান্না দুর্বলতার লক্ষণ। এই পৃথিবীটা লড়ার জায়গা। তোমাকে প্রতি মুহূর্তে লড়াই করতে হবে।
আমি লড়াই করবো অনিদা।
এই দেখ আবার কাঁদে। চলো চলো। নিচে চলো। কবিতা অনেকক্ষণ এসে ঘুরে গেছে। ওরা সকলে আমাকে দেখছে। চোখে মুখের অবস্থা দেখে কারুর মনই যে ঠিক নেই বুঝতে পারছি।
সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতেই দেখলাম বাবুদের আনাগোনা শুরু হয়ে গেছে। দামী সেন্ট আতরের গন্ধে চারিদিক ভরপুর। টিনা আমার দিকে তাকাল।
গন্ধটা পেয়ে তাকাচ্ছ ?
মাথা দোলালো।
সবে ঘুম ভাঙছে। এখন সুন্দর গন্ধ পাচ্ছ। এরপর মদের গন্ধ পাবে। আতর, সেন্ট, মদের গন্ধে জায়গাটা ম ম করবে। চোখ বন্ধ করে একবার ভেবেনাও।
দেখলাম ইসলামভাই সিঁড়ির মুখে দাঁড়িয়ে।
ওপরে যেতে পারতাম। গেলাম না।
যেতে পারতে।
কিরে মামনি কিরকম দেখলি। সখ মিটলো।
নীপা গিয়ে ইসলামভাইকে জড়িয়ে ধরলো।
মেয়েগুলো আবার কল কল করে এগিয়ে এলো। অনিদা তোমার পা-টা দেখি।
কেন।
মাসি বলেছে তুমি শিবঠাকুর আবার পীরসাহেব। আর্শীবাদ করো আজকের ব্যবসাটা যেন ভালো হয়, মাসির কাছে যেন গালাগালি না খাই।
মাসি তোদের গালাগালি দেয়।
ওটা মাসির বীজ মন্ত্র, না দিলে মাসির ভাত হজম হয় না, আমাদেরও কেমন কেমন যেন লাগে।
মিলিদের মুখটা কেমন ফ্যাকাশে।
কি মিলি ম্যাডাম চোখটা লাল কেন। অনিদার কথায় চোখে জল বেরিয়ে এসেছে। ইসলামভাই বললো।
ওরা একে একে আমাকে এসে প্রণাম করে যাচ্ছে।
মিলি মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে।
ইসলামভাই মিলির মুখটা তুলে ধরলো। মিলি চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে। চোখের কোল বেয়ে জল গড়িয়ে পরছে। ইসলামভাই নিজের ওর্ণাদিয়ে মিলির চোখ মুছিয়ে দিল।
কাঁদলে জয় করা যাবেনা। কাজ করতে হবে। অনিদাকে দেখছো।
কোথায় বসবি অনি।
চলো তোমার পুরনো ঘরে বসি। কিরে লক্ষ্মী ?
আমার বাবু রাতে আসে, অসুবিধা নেই।
মাসি এক কনে দাঁড়িয়ে।
কিগো তুমি আবার ভাতের হাঁড়ির মতো মুখ করে দাঁড়িয়ে আছ কেন।
ওই যে তুই বলেছিস বাক্স নিয়ে চলে যাবি।
বলেছিলাম। নিয়ে যাচ্ছি না।
কে বোঝাবে বল।
ওটা তুলে রাখবে, তোমার বৌমাকে কয়েকটা জিনিষ দেখাই, তারপর। তোমার বৌমার অনেক স্মৃতি ওখানে আছে। একসময় ওই জিনিষগুলো আমাকে বাঁচার ইনস্পিরেসন দিয়েছে।
কি আছে ওতে। মিত্রা আমার দিকে তাকাল।
যা দেখে আয়। আমি ওই ঘরে বসছি।
আমরা দেখবো অনিদা। টিনা বললো।
যাও।
ওরা চারজন মাসির ঘরে গেল। আমি ইসলামভাই লক্ষ্মীর ঘরে এলাম।
এই বাড়ির সবচেয়ে দামী মেয়ে লক্ষ্মী। তার ঘরটাও দামী। লক্ষ্মীর ঘরে সোফায় বসলাম। ইসলামভাই আমার পাশে বসলো।
ছোটমার সঙ্গে কথা হয়েছে।
হ্যাঁ।
এখানে এসেছি সেই সংবাদটা দিয়েছ।
দিয়েছি।
ভাল করেছো।
শুক্রবার কোন কাজ রাখবে না।
রাখিনি।
রবিবারও।
রাখিনি।
আজ আবহাওয়া কেমন বুঝলে।
একেবারে কুল। এ পারাও।
মাসিকে কেউ ডিস্টার্ব করেনি।
এরপরও কারুর বুকের পাটা আছে ডিস্টার্ব করার।
এখানে জায়গা দেখেছো।
দেখেছি। দামিনীর পছন্দ নয়।
তাহলে অন্য জায়গা দেখ। যেটা মাসির পছন্দ। দামের জন্য চিন্তা করোনা। মুখার্জীর কাছ থেকে টেনে নেব।
ইসলামভাই হাসছে।

আচ্ছা মুখার্জী তোকে এতো ভয় পায় কেন।
আমি ইসলামভাই-এর দিকে তাকালাম।
ঠিক আছে ঠিক আছে, তোকে জিজ্ঞাসা করবো না।
লক্ষ্মী চা নিয়ে এলো। ওর হাত থেকে নিলাম।
তুমি কি-গো, খালি বউমনিকে কাঁদাও।
আমি কোথায় কাঁদালাম।
তোমার বাক্স থেকে কিসব দেখছে, আর কাঁদছে।
ওগুলো তোর বৌদিমনির লেখা চিঠি বুঝলি লক্ষ্মী। আজ থেকে দশ বছর আগে আমাকে লিখেছিল।
নিজের লেখা চিঠি দেখে বৌদিমনি কাঁদছে!
হ্যাঁ।
লক্ষ্মী বেরিয়ে গেল।
কালকে একবার একটু আসতে পারবে, আমি বাড়িতে থাকব।
কখন বল।
এই বারটা নাগাদ।
আচ্ছা।
এবার উঠবো ইসলামভাই, অনিমেষদার বাড়ি যাব।
তুই এখন অনিমেষদার বাড়ি যাবি!
নেমন্তন্ন করতে।
এখানে তুই নেমন্তন্ন করতে এসেছিলি ?
হ্যাঁ।
ইসলামভাই হাসছে।
হাসছো যে।
আমাকে করলি না।
ওটা ছোটমা করবে। আমি রতন আবিদকে বলতে পারি, তোমাকে নয়।
তাহলে এখানে এলি যে।
তোমার মামনির শ্বশুর বাড়ি দেখাতে নিয়ে এলাম। তোমার মামনির শ্বশুর বাড়ি একটা নয়। দেখুক, না হলে জীবনটা বুঝবে কি করে।
ইসলামভাই আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
তাকিয়ে লাভ নেই, এবার চলো উঠবো। নাহলে বড়মার মুখ গম্ভীর হয়ে যাবে, তাড়াতাড়ি ফিরবো বলে এসেছি।
তুই এতো ব্যালেন্স করিস কি করে।
নিজে থেকেই হয়ে যায়, আমি করিনা।
ওখান থেকে বেরিয়ে এলাম। মাসি নীচ পর্যন্ত এলো। সঙ্গে ইসলামভাই লক্ষ্মী কবিতা আর যাদের ঘরে এখনো বাবু আসেনি তারা। ওরা কিছুটা গণিকাপল্লীর লাইভ দেখলো। সবাইকে বিদায় দিয়ে আমরা চলে এলাম।
মিনিট পঁয়তাল্লিশ পরে আমরা অনিমেষদার বাড়ি এলাম। রাস্তায় কেউ কথা বলেনি। বুঝতে পারছি সবার মনটা ভাড়ি ভাড়ি। আমি খালি পথের দিশা দেখালাম।
কি মিলি ম্যাডাম মন খারাপ না ভেতরটা ওলট পালট হচ্ছে।
মিলি চুপ করে থাকল কোন উত্তর দিল না।
টিনা ম্যাডাম।
আমার উত্তর দেবার কোন ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা। বার বার মনে হচ্ছে তোমার সঙ্গে কেন বছর তিনেক আগে দেখা হয়নি।
আমারও অনিদা। তাহলে আমার জীবনটা এমন ওলট পালট হতো না। মিলি বললো।
সব ঠিক হয়ে যাবে মিলি। সময় সব কথা বলে।
কি মিত্রা বাবু।
নীপা ফিক করে হেসে উঠলো।
নীপা হাসলে যে।
তুমি মিত্রাদিকে বাবু বললে।
তুই আমার চিঠিগুলো এখনো অতো সুন্দর করে গুছিয়ে রেখেছিস।
মিত্রা আমার দিকে তাকাল।
পড়লি ?
পড়লাম। নিজেকে আরও বেশি করে জানলাম।
ওই আঠারো মাস তোর চিঠি গুলো আমাকে নষ্ট হতে দেয়নি। নাহলে আমি হয়তো বয়ে যেতাম। খাতাটা দেখেছিস ?
আমি মাসির কাছ থেকে নিয়ে এসেছি। বলেছি আমি নিজে এসে আবার রেখে যাব।
কেন ?
আমাদের দু’জনের শেষ প্রোগ্রামের খাতা।
তোর মনে আছে ?
বেথুনে যে প্রোগ্রামটা করেছিলাম, ইন্টার কলেজ কম্পিটিশনে।
হ্যাঁ।
এখন পারবি।
পারবো।
অনিদা একবার করবে। টিনা বললো।
করবো।

ডানদিকের গেটের সামনে গাড়িটা রাখ।
 
মিত্রা গাড়িটা রাখল। আমি গাড়ি থেকে নেমে বেল বাজালাম। দারোয়ান গেটটা খুলে দিল।
গাড়িটা ভেতরে রাখুন স্যার।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম।
ঢুকিয়ে দিচ্ছি। একটু সর।
মিত্রা গাড়িটা ভেতরে ঢোকাল। আমি পেছন থেকে দুটো মিষ্টির হাঁড়ি আর সন্দেশের প্যাকেট বার করলাম। ওরা হাতে হাতে ভাগ করে নিল।
শিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে এলাম।
কিরে বুবুন অনিমেষদা এখানে থাকেন!
ভাড়া দিয়ে।
ওরা একে অপরের দিকে তাকাল।
আমি তিনতলায় এসে বেল বাজালাম।
সুরো দরজা খুলেই আমাকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে মিত্রাকে জড়িয়ে ধরলো। নীপার দিকে তাকিয়ে বললো, তুইও এসেছিস। সুরোর চেঁচামিচিতে বৌদি বেরিয়ে এলো।
আসুন চাঁদের কনা।
আমি এখনো গেটের বাইরে, জুতো খুলি নি, এখান থেকে চলে যাব।
যেতে পারিস, মিত্রাকে আর ওদের রেখে যা।
মিত্রাদের দিকে তাকালাম। সুরো তখনো মিত্রাকে জড়িয়ে ধরে আছে।
দেখেছিস, আসলের থেকে সুদের কি মূল্য।
ওরা হাসছে।
তুই এগুলো কি নিয়ে এসেছিস।
ছেলে বিয়ে করে এলো, শ্বশুর বাড়ি থেকে তত্ব পাঠাল।
বৌদি দিলো আমার কান মূলে।
তুমিও ওর কান ধরো। মিত্রা খিল খিল করে হাসে।
আগে প্রতিদিন কান মোলা খেত, সুরোকে ঠিকমতো পরাত না। খালি ফাঁকি মারত। এখন এ বাড়ি আসাই ভুলে গেছে।
বৌদি অনিমেষদা আসবেনা। মিত্রা বললো।
সাড়ে সাতটায় একটা প্রেস কনফারেন্স আছে। ওটা সেরে আসবে বলেছে।
অনিদা তুমি আজকে এতো মাঞ্জা দিয়েছো কেন। সুরো বললো।
তোর পছন্দ।
দারুন লাগছে। হ্যান্ডসাম।
তোর বৌদি সকাল থেকে দেখছে, কিছুই বললো না। তাই ভাবছি বিয়েটা করেই ডিভোর্স করবো।
তার আগেই কর না। শুধু শুধু বিয়ে করবি কেন। বৌদি বললো।
বুঝলে ওটা না করলে সম্পত্তিগুলো হাতান যাবেনা।
আবার কানটা ধরবো গিয়ে।
ধরো না ধরো। মুখে বোলছো কেন। সুরো বলে উঠলো।
কিরে মিলি কি খাবি। তোর টিনার মুখটা কেমন শুকনো শুকনো লাগছে।
মিলি টিনা মাথা নীচু করলো।
আমার দ্বিতীয় আঁতুড় ঘরে নিয়ে গেছিলাম। কি রকম দেখাতে। এখনো ঘোড় কাটে নি।
দামিনীর ওখানে গেছিলি!
হ্যাঁ।
অনিদার ভ্যারিয়েসন বুঝতে পারছিস।
মিলি মাথা নীচু করেই মাথা দোলাল।
ও ভীষণ মানুষের মনকে জাদু করতে জানে বুঝলি। যেমন আমাদের তিনটেকে জাদু করেছে। ওর কিছু হলেই কেঁদে মরি। ওর সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ আছে।
গাড়ি কিন্ত ডি-রেলড হয়ে যাচ্ছে। আমার পরোটা আলুভাজা কোথায়। কিরে মিত্রা হ্যাঁ করে কি দেখছিস। মিষ্টিটা বৌদিকে খাইয়ে দে।
মিত্রা সঙ্গে সঙ্গে রান্না ঘরের দিকে চলে গেল। পেছন পেছন টিনা মিলিও। সুরো নীপাকে নিয়ে ওর ঘরে গেল।
আমি সোফাতে গা এলিয়ে দিলাম। পকেট থেকে মোবাইলটা বার করতেই দেখলাম ম্যাসেজ ফোল্ডারটা ব্লিঙ্ক করছে। বুঝলাম ম্যাসেজ বক্সে আর জায়গা নেই। সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু ম্যাসেজ ডিলিট করে দিলাম। ম্যাসেজ গুলো এবার খুললাম। আমার নতুন সখীরা ম্যাসেজ পাঠিয়েছে। ম্যাসেজের ভাষায় ভালবাসা যেন চুঁইয়ে চুঁইয়ে পরছে। বিশ্বস্ত সূত্রে ওরা জানতে পেরেছে, আমার মডেলিং সম্বন্ধে কিছু পড়াশুন আছে। আমাকে সাহায্য করতে হবে।
নিজে নিজেই হাসলাম।

দেবাকে একটা ফোন করলাম।
ধরেই দেড়ে মুশে আমাকে খিস্তি করলো।
শালা সব সময় মোবাইলের স্যুইচ অফ।
তুই এখন কোথায় ?
ট্রিঙ্কাসে বসে আছি।
কি করছিস ?
আমি অদিতি ডিনার করছি।
এরি মধ্যে।
অদিতির শরীরটা খারাপ, তাই ভাবলাম তাড়াতাড়ি ডিনার করে বাড়ি ফিরে যাব।
কি হয়েছে অদিতির।
সকাল থেকেই বলছিল শরীরটা খারাপ।
কিরে বাধালি নাকি।
হবে হয়তো।
হাসলাম।
জি এ এন ডি উ।
কিরে তুইও কি আজকাল বানান করে দিচ্ছিস।
তোর কাছ থেকে শেখা বিদ্যে নষ্ট করতে পারি। তুই কোথায়।
আমরাও একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছি।
কোথায়।
তোদের কাছা কাছি।
কি অর্ডার দিলি।
পরোটা আলুভাজা ডিমের ওমলেট নকুর দোকানের নলেন গুড়ের সন্দেশ।
শালা হারামী। বাড়িতে আছিস।
বিশ্বাস কর।
দাঁড়া আমি মিলিকে ফোন করছি।
কর। আচ্ছ শোন না।
বল।
কালকে তুই আর নির্মাল্য একবার দশটা নাগাদ আসিস।
কেনরে ?
দরকার আছে।
ঠিক আছে
ফোনটা স্যুইচ অফ করে পকেটে রাখলাম। রান্নাঘর থেকে মিলি বেরিয়ে এলো। নিশ্চই অদিতি ফোন করেছে।
তুই চলে গেলি কেন….কি করে জানবো অনিদা এই প্রোগ্রাম করবে….রাগ করিসনা তোকে আর একদিন নিয়ে যাব….তুই অনিদার সঙ্গে কথা বল।
মিলি আমার হাতে ফোনটা দিল। অদিতি খেপে গেছে, তুমি ওকে নিয়ে যাও নি।
বলো অদিতি।
এটা কি হলো।
কি করে জানবো, তোমার আজকেই শরীরটা খারাপ হবে।
তুমি আজকে গেলে কেন।
এটা একটা পয়েন্ট, সত্যিতো আজকেই বা গেলাম কেন ? আগামীকাল যেতে পারতাম।
যাও তোমার সঙ্গে কথা বলবো না।
ঠিক আছে কথা বলতে হবে না। তোমার শরীর কেমন আছে বলো।
ভালো।
কাজ কর্ম বুঝলে।
কিছুটা। কালকে আবার গিয়ে ফাইল ঘাঁটব।
সোমবার দিন তোমাদের সঙ্গে বসবো।
তার আগেই সব নোট ডাউন করে নেব।
আগামী সপ্তাহে আবার ওই পাড়ায় প্রোগ্রাম রেখেছি। তারপর থেক তোমরাই যাবে, আমি আর যাব না।
সত্যি!
খুব তাড়াতাড়ি কাজটা শুরু করে দেব।
তোমরা এখন অনিমেষদার বাড়ি।
হ্যাঁ।
ব্যাড লাক আমি যেতে পারলাম না।
তাতে কি হয়েছে, দিন ফুরিয়ে যাচ্ছে নাকি। একদিন দেখবে এখানে আস্তে আস্তে বোড় হয়ে যাবে।
কোনদিন হবো না।
নাও মিলির সঙ্গে কথা বলো।
মিলির হাতে ফোনটা দিলাম।
কিরে আমার পরোটা কোথায় গেল। আমি হলে এতোক্ষণ বানিয়ে খেয়ে ফেলতাম।
থাম তুই আর বক বক করিসনা। বৌদি রান্না ঘর থেকে বললো।
ওকি এখানে এসেও রান্না করে ? মিত্রা বললো।
করতো, তোর দাদার সঙ্গে আমি যখন বাইরে যেতাম পার্টি মিটিং-এ তখন দু-ভাইবোনে রান্না করে খেত। তুই ওর হাতের রান্না খেয়েছিস।
খেয়েছি মানে, হাতটা সোঁকো, এখনো গন্ধ পাবে।
বৌদি হাসছে। নে সেঁকা হয়ে গেছে, এবার ঘি দে। কিরে টিনা আলু ধোয়া হয়ে গেছে।
হ্যাঁ।
ওই ওভেনটায় বসিয়ে দে।
মা। ওই ঘর থেকে সুরো চেঁচিয়ে উঠলো।
এই একটা মেয়ে। মা মা করে খালি জ্বালিয়ে মারল।
কি হয়েছে রে।
বাবার ফোন।
নিয়ে আয়।
মিলি আবার রান্নাঘরে ঢুকলো।
সুরো নীপা দুজনেই ঘর থেক বেরিয়ে এলো। তুমি একা একা বসে আছো।
কি করবো। তুই তোর বন্ধু পেয়েছিস, জমিয়ে গল্প করছিস।
সুরো রান্নাঘরে গেল।
হ্যাঁ বলো।….আর বলতে, তোমার বৌমার সঙ্গে সাঙ্গ-পাঙ্গও নিয়ে এসেছে।….অর্ডার দেওয়া হয়ে গেছে।….অসুবিধে হবে না চলে এসো।….আচ্ছা।
কে গো বৌদি। মিত্রার গলা।
তোর দাদা, তিনিও সাঙ্গ পাঙ্গ নিয়ে আসছেন।
এই মিলি আর একটু আটা মাখ। টিনা তুই বরং ভাজ আমি আলুটা কেটে দিই।
দেখো সকাল থেকে গোটা কতক লুচি আর কয়েকটা মিষ্টি ছাড়া আমার পেটে কিছু পরে নি। ওরা তবু খেয়েছে।
তুই খাস নি ? মিত্রা চেঁচালো।
কোথায় খেলাম, দেখলিতো।
মিলি ওকে দুটো দিয়ে আয় আগে।
কি দিয়ে দেবো ? আলু ভাজা হয়নি।
চিনিদিয়ে দে। বৌদি বললো।
যাঃ।
তুই দিয়ে আয় না, আমি বলছি। ওর কোন বালাই নেই। যা দিবি তাই খেয়ে নেবে।
সবাই হাসা হাসি করছে। কাজ করছে। ওই ছোট্ট রান্নাঘরে চারজন গাদা গাদি করে।
বেশ লাগছিল। এরা কিন্তু এক এক জন এক এক দিকের বস। যা রোজগার করে বাড়িতে রান্না করার দরকার পরে না। কিন্তু আজ পরিবেশ পরিস্থিতি ওদের তৈরি করে দিচ্ছে।
মিলির বাড়িতে গেছি। কখনো মনে হয়নি ও আলু কুচিয়ে ভেজে খাওয়াতে পারে।
টিনাকে কাছ থেক দেখেছি ও চেষ্টা করলে পারে। তবে প্রায় দিনই ড্রাই ফুড খেয়ে শুয়ে পরে।
অদিতি দেবাশীষ ট্রিঙ্কাসে বসে আছে। প্রায় দিনই ওরা বাইরে ডিনার করে। জীবনটা এদের একটা স্রোতে বইছে। আবার আমার জীবনের স্রোত ভিন্নমুখী। সেখানে এদের নিয়ে আসা খুব টাফ। তবু চেষ্টা করবো। এদের কাজের ইচ্ছেটা আছে। সেটা হলেই ঠিক আছে।
মিলি দুটো পরোটা দিয়ে গেল। একটু আলুভাজা। মনে হয় আমার জন্য একমুঠো ভেজে দিল। পেটটা চোঁ চাঁ করছে। নিমেষে প্লেটটা খালি হয়ে গেল। টেবিলে রাখলাম। বেলটা বেজে উঠলো। আমি উঠলাম না। আবার বাজল, বার বার গোটা চারবার। সুরো ঘর থেকে উঠে এলো।
খুলতে পারছো না। আমাকে মুখ ঝামটা দিল।
ওর দিকে তাকিয়ে হাসলাম।
তুমি এরি মধ্যে চলে এলে! ওমা তোমরাও এসেছো ?
অনিমেষদা ভেতরে ঢুকল পেছন পেছন অনুপদা, রূপায়ণদা, বিধানদা।
অনিমেষদা আমার দিকে তাকিয়ে হাসল। ওই দেখুন বিধানবাবু কেমন গুটি সুঁটি মেরে বসে আছে। বিধানদা জুতো খুলতে খুলতে আমার দিকে তাকালেন। আমি উঠে দাঁড়ালাম।
কিরে সব সাঙ্গ পাঙ্গ নিয়ে এসেছিস শুনলাম।
সব রান্নাঘরে। পরটা ভাজা চলছে।
বৌদি একবার রান্নাঘর থেকে উঁকি মারল।
ভতরে আর বসতে হবে না। এখানে বসে পরো, খেয়ে কথা বলবে।
কিরে বৌমাকেও রান্নাঘরে পাঠিয়েছিস। অনিমেষদা আমার দিকে তাকিয়ে হাসল।
আমি পাঠাইনি, নিজে থেকে গেছে।
কখন এসেছিস।
আমাকে জিজ্ঞাসা করোনা, বিধানদাকে জিজ্ঞাসা করো।
সবাই হেসে ফেললো।
কিরে তোরা তিনজন মিলে যা সময় নিচ্ছিস আমি এর থেকে কম সময়ে করে ফেলতাম।
ভাগ এখান থেকে খালি ফুটানি। মিত্রা রান্নাঘর থেকে বললো।
সুরো। বৌদি রান্নাঘর থেকে চেঁচিয়ে উঠলো।
ওকে ডাকছো কেন, বলোনা কি করতে হবে। মিলি বললো।
তাহলে তুই যা, সুরোর ঘরের দেয়াল আলমাড়ি থেকে কাপ ডিস গুলো বার করে আন।
কিগো মা।
মিলিদিকে কাপ ডিসগুলো একটু বার করে দে।
কিরে তুই কার সঙ্গে বসে গল্প করছিস। অনিমেষদা বললেন।
নীপার সঙ্গে।
নীপা এসেছে ?
হ্যাঁ।
ডাক ডাক ওকে।

সেই মেয়েটা! অনুপাদা বললো।
 
হ্যাঁ। এবছর হায়ার সেকেন্ডারীতে সিক্সটিনথ পজিসন পেয়েছে।
নীপা গেটের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।
ওদের ডিস্ট্রিক্টে ফার্স্ট। অনিমেষদা বললেন।
ওই গ্রামের স্কুল থেকে! বিধানদা বললেন।
অনি তো স্টার পেয়েছিল।
নীপা মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে।
দেখুন দেখি মেয়েটাকে। কেমন ছোটখাটো।
নীপা আমার দিকে তাকিয়ে একবার হাঁসলো। চোখের ইশারায় বললাম সবাইকে একটা পেন্নাম ঠোকো।
নীপা সকলকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো।
মিলি টিনা প্লেট নিয়ে রান্নাঘর থেকে বেরলো।
এই দেখুন বিধানবাবু সেদিন সকালে এই দুটোকে দেখেছিলেন।
দেখেছি কিন্তু পরিচয় জানা হয় নি।
এই জন হচ্ছে মিলি ম্যাডাম। এয়ারটেলের ইস্টার্ন জোনের সিইও ছিলেন চাকরিটা অনির গ্রামের বাড়ি থেকে এসে রিজাইন দিয়ে অনির পেছনে ঘুরছে। আর ইনি হচ্ছেন টিনা ম্যাডাম সেম পজিসন কোম্পানী আলাদা ইনি রিলায়েন্সে ছিলেন।
ও কি রিজাইন দিয়েছে ?
হ্যাঁ।
দু’জনেই প্লেটটা রেখে, সবাইকে প্রণাম করলো।
আরও তিনটি আছে। সেগুলো মনে হয় আজ সটকে পরেছে।
না অদিতি এখুনি ফোন করেছিল। ও একটু অসুস্থ হয়ে পরেছে। তাই আসতে পারে নি। দেবাদা নির্মাল্যকে অনিদা কাজ দিয়েছে। ওরা সেই কাজটা করছে। মিলি বললো।
কি বুঝছেন বিধানবাবু। নিন এবার খাওয়া শুরু করুণ।
আমি খেতে আরম্ভ করে দিয়েছি।
মিত্রা।
কি বলছিস বলনা। মিত্রা রান্নাঘর থেকে চেঁচালো।
তোদের আছে।
তোকে চিন্তা করতে বলেছি।
কিগো সুতপা। অনিমেষদা চেঁচিয়ে উঠলো।
দেখবে এসো আছে কিনা। ওই পাগলটার কথায় চেঁচাচ্ছ কেন।
আর চিন্তা নেই, এবার নিশ্চিন্তে খাওয়া যেতে পারে বলো। আমি বললাম।
তোর আর লাগবে।
না বাড়ি গিয়ে আবার খেতে হবে। ওখানে বড়মা আছে।
ওরা সবাই প্লেট নিয়ে বাইরে চলে এলো। বৌদি এসে সোফায় আমার পাশে বসলো। ওরাও যে যার মতো বসেছে।
ময়দাটা কে মেখেছে বলো তো।
তোর জানার দরকার আছে। বৌদি মেখেছে। মিত্রা বললো।
তাহলে কিছু বলার নেই।
বল, হোটেলে কাজ করেছি, ময়দা কি ভাবে ঠাসতে হয় জানি। মিত্রা বলে উঠলো।
সবাই হেসে ফেললো।
কিরে অনি তোকে এইভাবে আওয়াজ দিলো, তুই কিনা….। অনুপদা বললো।
ছাড় মালকিন বলে কথা, দু’বেলা দু’মুঠো অন্নের ব্যবস্থা করেদিচ্ছে।
দেখছো বৌদি দেখছো।
মিষ্টি গুলো বার কর।
একিরে, খেতে দে। বৌদি বললো।
দেখছো না আমার শেষ।
তুইতো রাহুর খিদে নিয়ে ঢুকেছিস। তোর অনিমেষদাকে বলেছিস কেন এসেছিস।
মিষ্টিটা খাওয়াও, মিষ্টি মুখ না করালে বলি কি করে।
অনিমেষদা হাসছে। কি করতে এসেছে ?
আমায় ফোন করে বললো। বিয়ে করবো তোমায় বৌ দেখাতে নিয়ে যাচ্ছি।
বিধানদা জরে হেসে ফেললো।
হাসলেন যে। অনিমেষদা বললো।
তারমানে ও এখনো বিয়ে করেনি।
না। খালি লিভ টু গেদার করেছে।
মিত্রা খিক খিক করে হাসছে।
আমি উঠি বুঝলে, মিষ্টি আর আমার কপালে নেই।
বোস বোস আর লজ্জা পেতে হবে না।
বৌদি আমার হাতটা ধরে টেনে বসিয়ে দিল।
মিলি, টিনা মুচকি মুচকি হাসছে।
মিলি, মিষ্টির প্লেট গুলো নিয়ে আয়।
দাঁড়াও না বেশ তো হচ্ছে। চলুক না কিছুক্ষণ। মিলি বললো।
দেখ দেখ। বৌদি হাসতে হাসতে বললো।
দেখে কি করবো, হাতি যখন কাদায় পরে চামচিকিতে লাথি মারে।
দাও দাও ওকে মিষ্টিটা দাও। মিষ্টিটা খেয়ে ওই ঘরে গিয়ে বোস, কথা আছে। অনিমেষদা বললো।
আবার কিসের কথা, সোমবারের আগে কোন কথা হবে না। আমি বললাম।
বিধানদা হাসছে।
মিষ্টি এলো, মিষ্টি খাওয়া শেষ হতেই আমি প্লেটটা রান্না ঘরে রেখে দাদার ঘরে গিয়ে বসলাম। একে একে ওরা সবাই এলো।
মিষ্টিটা নকুর দোকান থেকে নিয়ে এসেছিস।
হ্যাঁ।
তোর চয়েস আছে। দামিনীর ওখানে গেছিলি কেন।
নেমন্তন্ন করতে।
রথ দেখা কলাবেচা দুইই করলি।
না, খালি রথ দেখেছি। কলা বেচি নি।
সবাই হাসছে।
কি উত্তর দেখেছ অনিমেষদা। অনুপদা বললো। তুই এতো কথা শিখলি কি করে বল।
সে অনেক কথা।
সুরো, মা এ্যাসট্রেটা একটু দিয়ে যা না।
অনিমেষদা আমার মুখের দিকে তাকাল।
তারপর বল ওখানে কাজটা কবে শুরু করছিস।
ঘর পাচ্ছি না। ডাক্তারদাদা বলেছে মিনিমাম দোতলা একটা বাড়ি দরকার।
অনুপ একটু খোঁজ খবর নাও। যদি পাওয়া যায়।
আজই কথা বলে নিচ্ছি।
ওদিককার কি ব্যবস্থা করলি।
কোনটা বলো।
বাই ইলেকসন।
আমি অনিমেষদার দিকে তাকালাম। আমার চোখের ভাষা অনিমেষদা বুঝতে পারল।
তুই এঁদের সামনে বলতে পারিস। কোন অসুবিধে নেই।
তুমি কথা বলোনি ?
সময় পেলাম কোথায়। তবে মাঝে আমাকে একবার বলেছে, দাদা আপনি যে দায়িত্ব দিয়েছেন আমি মাথা পেতে তা গ্রহণ করেছি।
কাজের লোক। এটুকু বলতে পারি। ওর আসল পরিচয় তুমি পেয়েছো।
প্রথমে যখন অমিতাভদা বললেন আমি সত্যি বিশ্বাস করতে পারি নি।
আমি অনিমেষদার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।
তারপর ছোট যখন নিজে মুখে বললো বিশ্বাস করতে বাধ্য হলাম। কি জীবন না।
বিধানদারা জানেন।
কিছু কিছু।
ওই জন্য ওর নামে বিশেষ কিছু এলিগেশন পাই না।
মাস খানেক যাক আর পাবে না।
দামিনীর সঙ্গে একবার বসতে হবে। ওই তল্লাটের সংগঠনটা ওকে দিয়ে যদি করাই, তোর কি মনে হয়।
শুক্রবার বসো। একবার এসো দাদার বাড়িতে। তুমি কিন্তু অবশ্যই যাবে। ওনাদের আমি বলতে পারিনা সে জোর আমার নেই।

কেন নেই অনি। রূপায়ণদা বললেন।
 
আমি আপনাদের একদিন দেখেছি। অনিমেষদা আমাকে দীর্ঘদিন চেনেন।
ওই একদিনেই তোকে সম্পূর্ণ দেখে ফেলেছি।
শুক্রবার কখন যাব বল।
রাতে রেষ্ট্রি করবো। বলতে পার বাধ্য হচ্ছি রেষ্ট্রি করতে, না হলে অনেক সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
এই কথাটা তোকে বলবো ভেবেছিলাম। ওদের কি ডিভোর্স হয়ে গেছে।
হ্যাঁ। ছ’মাস আগে। তখন থেকেই তো গন্ডগোল শুরু।
পর্দা সরিয়ে বৌদি ঢুকলো, তোমরা কি শুরু করেছো বলো। কাল অতো রাত পর্যন্ত ছেলেটাকে পিষে মারলে। একটু ঘুরতে এসেছে। তা নয়, আবার শুরু করেছ।

জানোনা বৌদি ওর নামে আজকে যা রিপোর্ট জমা পরেছে। ওকে পার্টির ভীষণ দরকার কামিং ইলেকসনে। অনুপদা বললো।
সেই জন্য এখন থেকে শুরু করে দিয়েছ।
জিজ্ঞাসা করো ওকে কি জিজ্ঞাসা করছি। তোর বৌদিকে বলেছিস। অনিমেষদা বললো।
মিত্রাকে বলেছি বলতে, আমি তোমাকে বলবো ও বৌদিকে বলবে। তুমি আমার পার্টে বৌদি ওর পার্টে।
দেখছো, শুনছো ওর কথা।
মিত্রা বলেছে আমাকে। এবার ওকে ছাড়ো, আমরা একটু কথা বলি।
যাও যাচ্ছে।
তুইকি গেছিলি স্পটে।
না অনাদিকে বলেছি। আমি বুধবার ওখানে যাব। ইসলামভাই অনাদিকে নিয়ে ঘুরে এসেছে।
করিতকর্মা ছেলে তোর অনাদি।
সেই জন্য তোমাদের লোকাল কমিটি ওকে ভালকরে বাঁশ দিচ্ছে।
আর দেবে না। তোকে কথা দিচ্ছি।
ব্যাঙ্কটা উদ্বোধনের সময় তোমাদের একবার যেতে হবে।
কবে করবি।
মাস তিনেক বাকি আছে। দিন পনেরোর মধ্যে কাজ শুরু করে দেব। এখন মাঠে ব্যান রোয়া শুরু হয়ে গেছে। চাষীদের হাতে টাকা তুলে দিতে হবে।
কি বুঝছেন বিধানবাবু।
শুনছি ওর কথা।
কি রকম দিচ্ছিস।
হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকার লোন। হাজার টাকা নিলে প্রতিদিন দশটাকা করে শোধ করতে হবে। ছয়মাস দিতে হবে। দশটাকার আট টাকা ব্যাঙ্ক নেবে দুটাকা তার এ্যাকাউন্টে জমা পরবে। যে পুরো দিতে পারবে এ্যাকাউন্টের টাকা তার। তা নহলে ওখান থেকে ব্যাঙ্ক তার টাকা নিয়ে বাকিটা তাকে ফেরত দিয়ে দেবে। এই রেশিয়োতে কাজ হবে।
এই প্ল্যানিংটা কার।
আমার। ডাক্তারদাদা খালি রেক্টিফাই করে দিয়েছে।
গ্র্যাজুয়েসনে তোর ইকনমিক্স ছিল না।
হায়ার সেকেন্ডারীতে ছিল। মাইক্রো এবং ম্যাক্রো ফাইনান্স এই দুটোর ওপর হিমাংশুকে জোর দিতে বলেছি।
তোকে এবার সিএম বানাতে হবে। বিধানদা হাসতে হাসতে বললো।
আমি এবার উঠবো।
তোকে তো আসল কথাটাই বলা হলো না।
বলো।
তোকে সেদিন টাকার কথা বললাম।
চেক হলে কালকে দিতে পারব। ক্যাশ হলে সোমবার নিতে হবে।
কি বিধানবাবু চেক হলে অসুবিধা আছে।
ওর অসুবিধা না থাকলেই হবে।
আমি কালকে হিমাংশুর সাথে একটু কথা বলে নিই। তোমাকে ফোনে জানাব।
কতো দিবি।
একের বেশি এখন দিতে পারব না।
একটু বাড়া।
ঠিক আছে দেড় করে দিচ্ছি।
তাই দে। আমাদেরও চলতে হবে।
ওদিককার থেকে যে টাকা আসতো সেটা কি হবে।
সেটা বন্ধ হয়ে গেল।
কি করে বুঝলে, খোঁজ নাও। টাকাটা যে অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছে না তার কি মানে আছে।
কিরে অনুপ।
অনিমেষদা অনুপদার দিকে তাকাল।
রূপায়ণ তুই কালকে একবার খোঁজ নে। বিধানদা বললো।
ঠিক আছে নেব।
আমি উঠি, শুক্রবার তুমি কিন্তু যাবে সবাইকে নিয়ে। যদিও দাদা তোমাদের ফোন করবে।
আচ্ছা যা।
আমি সুরোর ঘরে এলাম। দেখলাম সবাই গোল টেবিল বৈঠক করছে। আমাকে দেখেই বৌদি হাসলো।
তোকে গেঞ্জিটা কে কিনে দিয়েছে।
বলতে পারব না। সকলাবেলা বাথরুম থেকে বেরতে ছোটমা বললো, এটা পরে নে, পরে ফেললাম।
মিত্রা হাসছে।
তুই আর কিচ্ছু বলিস নি।
জিজ্ঞাসা কর ছোটমাকে। তারপর খানদশেক লুচি বাটি চড়চড়ি দিয়ে সাঁটালাম। বললো মিত্রা বানিয়েছে। তারপর বেরিয়ে পরলাম।
কোথায় গেলি ? বৌদি বললো।
সেটা বলা যাবে না।
কাকে খুঁচিয়ে এলি।
ওই যে বললাম, বলা যাবে না।
তুই মিত্রাকে কি দিবি।
আমি জিনিষ পত্র কিনতে পারিনা।
সব পারিশ, ওটা পারিশ না।
তাহলে তোমায় একটা গল্প বলতে হয়।
তোর কি গল্প ছাড়া জীবনে কিছু নেই।
এটা আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা, এখন তোমাদের বলছি বলে গল্প।
বল শুনি।
তুমি কিছু মনে করবে না।
কেন বল।
এই ধরণের কথা তোমার সামনে কোন দিন বলিনি।
আজ বল, শুনবো।
আমি ভজু তখন হোটেলে কাজ করি। প্রথম মাইনে পেয়েছি দুজনে।
ভজুরও গেঞ্জি জাঙ্গিয়া নেই, আমারও নেই।
বললাম চল ভজু অন্ততঃ একটা করে গেঞ্জি জাঙ্গিয়া কিনে নিয়ে যাই।
তখন তুই কি পরতিস।
মার্কিন কাপরের কৌপিন।
ছোটমা সেদিন একটা খুঁজে বার করেছে। মিত্রা হাসতে হাসতে বললো।
ওই পাড়ায়, আমাদেরই পরিচিত দোকান। মুখ চেনা, গেলাম। গিয়ে বললাম। সাইজ বলতে বললো। বলতে পারলাম না। হাসলো। বললো, যা বুঝেছি প্যাকেট করে দিচ্ছি, নিয়ে যা।
নাচতে নাচতে দুজনে চলে এলাম। স্নানটান সেরে নতুন গেঞ্জি পরলাম একেবারে ঠিক ঠাক। জাঙ্গিয়া পরলাম। কি সুন্দর দেখতে। সামনে আবার ফুল। পরে দেখি হিসি করার জায়গা নেই।
সবাই হেসে ফেললো।
মহাবিপদ, কি হবে। ভাবলাম হয়তো জায়গা করতে ভুলে গেছে। নতুন স্টাইল।
ভজুরাম মহাখুশি। অস্বস্তি হচ্ছিলো, দুর খুলে রেখে ভজুকে দিয়ে দিলাম।
আমি আবার আমার কৌপিনে ফিরে গেলাম। লাল মার্কিন শালুর কৌপিন।
এর দু’চারদিন পর কোথায় গেছিলাম, রাতে ফিরে এসেছি। দেখি ভজু কাঁদছে। কি ব্যাপার। মাসি বেধড়ক পিটেছে। মাসির কাছে গেলাম। শুনে বললাম ও চুরি করেনি, আমি কিনে এনেছি। বিস্তারিত ভাবে মাসিকে বললাম। আমার কথা শুনে মাসি হেসে লুটো পুটি খায়।
সেদিন প্রথম কোনটা মিত্রাদের আর কোনটা আমাদের চিনলাম। তবে আমি কৌপিন পরা ছারি নি। জাঙ্গিয়াও পরতাম না বড় একটা। বড়মার কাছে যখন এলাম। একদিন মনে হয় ছোটমা ঘরে ঢুকে দেখেছিল।
আমাকে চারটে গেঞ্জি আর জাঙ্গিয়া কিনে দিয়েছিল।
তারপর থেকে ছোটমা বড়মা কেনে।
তুমি মাঝে মাঝে কিনে দাও। আমার চলে যায়। বেশির ভাগ সময় তো পরিই না। আমি নিজে থেকে কোনদিন কিনি নি।
ওরা হেসে এ ওর গায়ে ঢলে পরে। অনিমেষদা পাশের ঘর থেকে একবার উঁকি মেরে চলে গেল।
তোকে দেখে এরকম ছাগল মনে হয়না।
মাঝে মাঝে কেন জানিনা ছাগল হয়ে যাই।
মিলি, সুরো, নীপা হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে।
ওঝা সেজেছিলি কবে।
নিশ্চই তোমাকে সুরো বলেছে।
তোর দাদাও শুনেছে।
খেয়েছে। তোমরা আমার আর কিছুই বাদ রাখলে না।
অনিদা মিলিদির ব্যাপারটা বলো। সুরো বললো।
এই-ই। মিলি চিল্লিয়ে উঠলো।
তোকে নিশ্চই নীপা লাগিয়েছে।
সেটা আবার কি। বৌদি বললো।
তুমি বহুত ঝামেলা করো। মিত্রা চল বেশিক্ষণ থাকলে গন্ডগোল।
আমিও তোর রসের ব্যাপারটা বলেছি বৌদিকে।
নিজেরটা বলিস নি।
মিত্রা মাথা নাড়ছে। বলে নি।
দেখ তুই কিরকম স্বার্থপর। নিজেরটা চেপে রেখে আমারটা বলেছিস।
তাহলে আমার, নীপা, টিনা, মিলি, অদিতি, দেবা, নির্মাল্য সবারটা বলতে হয়।
বলবি। পাটি পেরে শানাতে বসেছিস বৌদিকে।
কিরে মিলি, অনি কি বলে!
তুমি অনিদার কথা বিশ্বাস করো না। খালি গুল মারে।
এবার গুল। আমার গুলো ঠিক।
অনিমেষদা আবার দরজার কাছে। তোমরা কি শুরু করেছ বলো।
রাতে তোমাকে বলবো। তোমার অনির কীর্তি।
অনিমেষদা কিছু বলতে গিয়ে হাঁ করে ফেললো।
বৌদি হাসছে।
ওঠ অনেক রাত হলো।
আমি বড়মাকে ফোন করে দিয়েছি। বৌদিও বড়মার সঙ্গে কথা বলেছে।
তোর এতো তাড়া কিসের ? বৌদি বললো।
আর একটু চা খাওয়াও।
সুরো যা অনিদার জন্য চা বানিয়ে নিয়ে আয়। ও ঘরে বাবাকে জিজ্ঞাসা করিস একবার।
অনিদা যেন এর মধ্যে কোন কিছু না বলে।
ঠিক আছে বলবেনা। তুই এলে আবার বলবে।
সুরো নীপা বেরিয়ে গেল।
আমরা সবাই বৌদির সঙ্গে গল্প করলাম।
বৌদি একবার আমার বাড়িতে যেতে চাইল।
বললাম নিয়ে যাব।
চা খাওয়া হলো। আমরা সবাই অনিমেষদাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলাম। আসার সময় মিলি নিজেই বললো আমি গাড়ি ড্রাইভ করবো মিত্রাদি। মিত্রা না করে নি। আমি মিত্রা টিনা পেছনে বসলাম। ওরা দুজনে সামনে। বাড়িতে যখন ঢুকলাম তখন পৌনে দশটা বাজে। মিত্রা বাড়িতে ঢুকেই বড়মা বলে চেঁচিয়ে উঠলো।
নাও সব এলেন রাজ্য জয় করে।
ছোটমা ঘর থেকে বলতে বলতে বেরিয়ে এলো।
পেছন পেছন ভজুরাম দৌড়ে এলো।
মিত্রা ভজুকে দেখে হেসে ফেললো।
কিরে ভজুকে দেখে পাগলির মতো হাসছিস কেন।

তোমায় বলবো ছোটমা, আজ বুবুনের আর একটা উদ্ধার করেছি।
 
আমি মিত্রার দিকে কট কট করে তাকালাম। পেছনের ডিগ্গিটা খুললাম। ভজু মিষ্টির হাঁড়ি সন্দেশের প্যাকেট বার করলো।
অনিদা ওখান থেকে কিনেছ।
হ্যাঁ।
আচ্ছা তোমার কি আর দোকান চেনা নেই।
আমি ভজুর মাথাটা নেড়ে দিলাম।
সবাই ভেতরে এলাম। দেখলাম ডাক্তারদাদা বসে আছে।
কখন এলে।
অনেকক্ষণ। মিত্রা।
বলো।
মিষ্টি বার করে দে।
কেন কাল সকালে খেলে হতো না। বড়মা খেঁকিয়ে উঠলো।
গরম গরম খাওয়ার মজাটাই আলাদা বুঝলে বান্ধবী।
মিত্রা বার করে বড়মা, ছোটমা, ডাক্তারদাদাকে দে।
দেখলে, এটাই হচ্ছে বড়ো মনের পরিচয়। আমি চাইলাম তোমাদের নামটাও জুড়ে দিল।
থাক অনেক হয়েছে। বড়মা কপট হাসি হেসে বললো।
আমি বড়মাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। দেখলে, আজ কথা রাখলাম কিনা।
রাত দশটা, মাথায় রাখিস। কাল সারাদিন বাড়িতে থাকব না। সবাই বেরব। বাড়ি পাহাড়া দিবি।
কেন ?
সে জেনে তোর লাভ। তুই সব বলিস।
কারুর দরকার নেই, ভজুরাম থাকলেই হলো।
ভজুও যাবে।
ঠিক আছে।
আমি সোফায় এসে বসলাম। বাইরের গেটে হর্ন বাজলো।
ওই আর এক দল ঢুকছেন। ছোটমা বললো।
আমি ছোটমার দিকে তাকিয়ে হাসলাম।
একবারে তাকাবি না চোখ গেলে দেব। ছোটমা চিবিয়ে চিবিয়ে বললো।
ছোটমা ওঘরের চাবি কোথায় ? মিলি বললো।
বড়দির ঘরের ড্রেসিন টেবিলে আছে।
মিলিকে দেখে বোঝাই যাচ্ছে না এই কদিন আগেও এই বাড়ির সঙ্গে ওর কোনো যোগাযোগ ছিল না।
দাদা ঘরে এসে ঢুকল। আমাকে সোফায় বসে থাকতে দেখে হেসে ফেললো।
কিরে মল্লিক, আজ কোন দিকে সূর্য উঠেছে।
পূর্ব দিকে। একটু বসো টের পাবে। ডাক্তারদাদা বললো।
তুমি জানলে কি করে ?
ছোটমা জলের গ্লাস এনে দাদা মল্লিকদার হাতে দিল। আমার দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসলো।
আচ্ছা এডিটর তুমি এই বাড়ির গার্জেন, কোন খোঁজ খবর রাখো এই বাড়ির সম্বন্ধে।
কেন রাখবো না ?
বলো এই বাড়ি রং হচ্ছে কেন ?
ওটা বলতে পারব না। অনি জানে।
দেখো প্রথম বলেই তুমি বোল্ড আউট।
কেন কেন শুনি।
অনিবাবু শুক্রবার বিয়ে করছেন, আর রবিবার বৌভাত।
সেতো কবে হয়ে গেছে, আবার অন্য কাউকে বিয়ে করছে নাকি ?
মরণ, দেখো দিকি কান্ড, ন্যাকা কোথাকার। বড়মা রান্নাঘর থেকে বলে উঠলো।
মিত্রা মিষ্টির প্লেট গুলো নিয়ে এসে টেবিলের ওপর রাখল।
কিরে মা ডাক্তার কি বলে। দাদা মিত্রার দিকে তাকাল।
বুবুন জানে।
কিগো তুমি কিছু জানো। দাদা রান্নাঘরের দিকে তাকিয়ে বললো।
বড়মা ধীরে ধীরে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলো।
আমি একবার বড়মার দিকে তাকালাম। রাতেই মিষ্টি গুলো সব শেষ করেদাও বুঝলে, কাল পর্যন্ত আর থাকবে না।
হ্যাঁরে মিষ্টিগুলো কোন দোকান থেকে নিয়ে এলি। দাদা আমার দিকে তাকিয়ে বললো।
কেন খারাপ।
এর টেস্টটাই আলাদা বুঝলি অনি। খেলে আর অন্য মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করে না। ডাক্তারদাদা বললো।
এতো খাও তবু খাই খাই গেল না। বড়মা বললো।
মিত্রা বড়মার কাছে এসে বললো হাঁ করো হাঁ করো।
কেন রে।
বড়মা হাঁ করলো। মিত্রা নলেন গুড়ের কাঁচা সন্দেশ বড়মার মুখে পুরে দিল। পর পর সবাইকে দিল। দাদা ডাক্তারদাদা আর মল্লিকদার প্লেটে দিল। আমার দিকে তাকিয়ে বললো তুই আমার আঙুলটা চুষবি।
আমি কট কট করে ওর দিকে তাকালাম। উঠে দাঁড়ালাম। হাতের প্লেটটা রান্নাঘরে রেখে বেসিনে হাতটা ধুলাম। দরজা দিয়ে বেরতে যাব, দাদা ডেকে উঠলো।
কিরে, কোথায় যাচ্ছিস।
ওপরে।
বললিনা কার সঙ্গে তোর বিয়ে।
ঘর শুদ্ধু সবাই হাসছে।
আমি আর দাঁড়ালাম না, সোজা ওপরে চলে এলাম। ঘরের দরজাটা ভেজিয়ে দিলাম। জামাপ্যান্ট খুলে বাথরুমে ঢুকলাম। বুঝলাম কাল এরা সব মার্কেটিংয়ে বেরবে। দাদা আমার সঙ্গে এরকম ভাবে কথা বলতে পারে আমি স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারি নি। ভাল করে মুখ হাতপা ধুলাম। টাওয়েল দিয়ে গাটা মুছলাম। বাথরুম থেকে বেরলাম।
বাথরুম থেকে বেরতেই দেখলাম, মিত্রা অর্ধ উলঙ্গ অবস্থায় দাঁড়িয়ে, লক্ষ করলাম ঘরের দরজায় ছিটকিনি দেওয়া।
কিরে এ কি অবস্থা তোর!
তুই বাথরুম থেকে বেরবি, আর আমি জাপ্টে ধরবো।
সবে মাত্র গা ধুয়ে এলাম। এখন বাথরুমে ঢোক। চট পট সেরে নে।
মিত্রা চোখে দুষ্টুমি হাসি হেসে আমার কাছে এগিয়ে এলো। আমি টাওয়েলটা চেপে ধরলাম।
টাওয়েল চেপে ধরে রক্ষা পাবি। বিয়ে করবি, বিয়ে। শখ হয়েছে।
করবো না। আমার কিছু হবে না। আমি যাকে চাইব তাকেই পাব।
তোকে পাওয়াব।
টাওয়েল ছাড়।
মিত্রা আমাকে জাপ্টে ধরলো।
নিচে ওরা আছে কেউ চলে এলে গন্ডগোল হয়ে যাবে।
কেউ আসবেনা। সবাই ব্যস্ত।
লোভও হচ্ছে আবার ভাবছি,এখুনি যদি ছোটমা এসে দরজা ধাক্কা দেয়।
জায়গা করা হয়ে গেছে, কি করছিস তোরা।
তোর পেটটা শক্ত শক্ত লাগছে কেন রে।
এখনো হয়নি।
খেয়েছে। ছোটমাকে বলেছিস।
বলিনি, তবে একটা হিন্টস দিয়েছি।
তুই কি সত্যি বাধিয়েছিস।
কি করে বলবো। এমাসে না হলে টেস্ট করাব।
ওরে আমি মুখ দেখাতে পারব না।
হয়ে যাওয়া ভালো বুঝেছিস।
মিত্রার দিকে তাকিয়ে আছি। ও আমাকে জাপ্টে ধরে আছে।
তুইতো একেবারে তৈরি।
গাড়িতে তোর পাশে যখন বসেছিলাম তখন থেকে।
তাই ওইভাবে খোঁচাচ্ছিলি।
তুইতো গবেট। খালি এনকাউন্টারটা ভাল করে করতে পারিস।
তোর ওখানে।
করনা দেখি, কেমন পারিস।
দেখ আমি কিন্তু আগের থেকে পাকা খেলোয়াড়।
ছাই।
তোকে কতোদিন টাচ করিনি বলতো।
ছোটমা চলে এলে পুরো কেলো।
হাসলাম।
কিছুক্ষণ দুজনে দুজনকে জড়িয়ে ধরে আদিম খেলায় মাতলাম। মিত্রার চোখে পরিতৃপ্তির ছাপ।
দারুন লাগল বুঝেছিস।
নিচটা একবার তাকা।
কেন।
কাজ বারিয়েছিস।
মিত্রা হেসে ফেললো।
আমি মুছে দেব।
এবার ছাড়।
বল এখুনি ছোটমা চলে আসবে।
হাসলাম।
দু’জনের ছন্দে ফিরে আসতে বেশ কিছুক্ষণ সময় লাগলো। নিচে নেমে এলাম। খাওয়ার জায়গা হয়ে গেছে। সবাই গোল হয়ে বসে কথা বলছে।
ছোটমা একবার আমাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।
এতোক্ষণ কি শলা পরামর্শ হচ্ছিলো শুনি।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। আমি গম্ভীর। সোজা টেবিলে এসে বসে পরলাম।
আজ ছ’জনের সিটে তিনটে চেয়ার নতুন সংযোজন হয়েছে দেখলাম। একপাশে চারটে অপরপাশে তিনটে দুপাশে দুটো। আমি যে দিকে তিনটে চেয়ার পাতা হয়েছে সেদিকে গিয়ে বসলাম। দাদারা সোফায় বসে আছে।
নীপা জলের গ্লাস নিয়ে এসে টেবিলে রাখল। ওর দিকে তাকালাম। মুখ টিপে হাসল। বুঝলাম দুজনের এ্যাবসেন্সে নিচে খুব জোর আলোচনা হয়েছে।
ছোটমা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলো।
কিরে তুই ওখানে বসলি কেন ?
তাহলে কোথায় বোসব।
এদিকে বোস।
কেন।
যা বলছি কর।
চুপচাপ উঠে এই দিকে চলে এলাম। একবারে ধারে বসলাম।
ছোটমা প্লেট রেখে রান্নাঘরের দিকে গেল। একবার নীপা বলে চেঁচিয়ে উঠল। নীপা মনে হয় বড়মার ঘরে ছিল।
যাই ছোটমা বলে চেঁচিয়ে উঠলো।
মিলি টিনা ডাক্তারদাদার কথা খুব মন দিয়ে শুনছে। বড়মা রান্নাঘরের মুখে দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে উঠলো।
এখুনি খাওয়ার জন্য তর সইছিল না এখনো বসে বসে গুলতানি চলছে।
মিত্রা রান্নাঘরে বড়মার সঙ্গে কথা বলছে। সবাই এসে খাবার টেবিলে বসলো। আমি ধারের চেয়ারে।
নীপা ভজু সার্ভ করছে। বুঝলাম ওদের খাওয়া হয়ে গেছে। খাওয়া শুরু হলো।
আমি মিত্রা দুজনে দুধারে মাঝে বড়মা ছোটমা। ছোটমা মিত্রার দিকে বড়মা আমার দিকে।
কিরে অনি শুক্রবার আর রবিবার কি প্রোগ্রাম আছে। দাদা বললো।
কিছুই না ঘরের সবাই মিলে একটু খাওয়া দাওয়া করবো।
ব্যাশ। আর কিছু হবে না।
তুমি একটু অনিমেষদাদের ফোন করবে। অফিসে তুমি যাদের মনে করবে বলার দরকার আছে তাদের বলে দেবে। মিত্রা যদি মনে করে ওর কাউকে বলার দরকার আছে বলবে। ছোটমা, বড়মা, ডাক্তারদাদাকে আমি বলবো।
বড়মা কানটা ধরলো।
যা বাবা! আমি আবার কি করলাম।
সব সুতপাকে বলে এসেছিস, সেটা বল।
তাহেল আর কি সব জেনে ফেলেছো।
দামিনী কাল সকালে আসবে। থাকবি, তারপর তোর হচ্ছে।
তুমি বললে বাড়ি পাহাড়া দিতে। আমি সারাদিন থাকব।
 
পেটে পেটে কতো বুদ্ধি দেখেছ। ছোটমা বললো।
ছোটমা পেট নয়, দেবাদার কথাটা মনে করো। টিনা বলে উঠলো।
মিলি হাসতে গিয়ে খক খক করে কেশে উঠলো।
কি হলো মিলি এক ঝটকায় বিষম। ডাক্তারদাদা বললো।
আমি হাসছি।
শুক্রবার কখন বিয়ে করবি। বড়মা বললো।
ছটা নাগাদ হিমাংশু আসবে। তোমরা থাকবে সই সাবুদ হয়ে যাবে বিয়ে হয়ে গেল। কাগজটা মিত্রার গলায় ঝুলিয়ে দেব, তারপর আমার কাজ শেষ।
তারমানে! দাদা আমার দিকে তাকাল।
তারমানে আবার কি। তারপর খাওয়া দাওয়া।
এই যে বললি তোর কাজ শেষ।
আপাতত। তারপর আমাকে কয়েকদিনের জন্য পাবে না।
কোথায় যাবি। বড়মা আমার দিকে তাকিয়ে।
দেখি কোথায় যাওয়া যায়।
এবার তুই দাঁড়ে বসেছিস। কিছু করলে তোর ঠ্যাং ভেঙে দেব।
অনি শেকল কেটে ফুরুৎ।
ধরো ধরো আবার কানটা ধরো। ছোটমা বললো।
দাদা হাসছে।
মল্লিক কয়েকটা আর্টিকেল এই মওকায় লিখিয়ে নে।
ডাক্তারদাদা গম্ভীর ছিল জোড়ে হেসে ফেললো।
মিলি।
বলো।
তুমি মীনাক্ষ্মী চ্যাটার্জীকে চেন।
না।
টিনা তুমি।
কে বলো।
তথ্য জনসংযোগের ডিরেক্টর।
একবার দেখেছি। আমাদের বসের সঙ্গে কথা বলতে এসেছিলেন। কি একটা ব্যাপারে।
আলাপ আছে।
সেই ভাবে না।
কাল তোমরা কখন অফিসে যাবে ?
যেমন আজ বেরিয়ে ছিলাম।
কাল ওরা কেউ অফিসে যাবে না। বড়মা বললো।
তাহলে আমাকে বেরতে হবে।
ডাক্তারদাদা হাসছে।
তুমি হাসলে কেন ?
বান্ধবী তুমি শিঁড়ি ভাঙা অঙ্ক ভুলে গেছ।
বড়মা ডাক্তারদার দিকে তাকিয়ে।
বুঝলে না অনির কথা।
বড়মা আমার দিকে একবার তাকায়, একবার ডাক্তারদার দিকে তাকায়।
ওরে শয়তান তোকে থাকতে বলেছি বলে….।
আমি খেয়ে যাচ্ছি।
তুমি বলোনা অনিদা, আমরা ঠিক ম্যানেজ করে নেব। মিলি বললো।
অদিতি কখন আসবে।
সকালে এখানে চলে আসবে তারপর একসঙ্গে বেরবো।
তাহলে এক কাজ করো।
বলো।
অফিসে গিয়ে তোমরা তিনজনে একটা গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরো। বারটার পর ওনার কাছে যাবার কথা। একটু আগে গেলেও অসুবিধা নেই। সকালে তোমাদের সঙ্গে একটু বসবো। দুটোর পর থেকে বড়মা ছোটমাকে সময় দাও সারারাত। কি পারবে ?
পারবো।
মিত্রা।
বল।
তোকে একটা কাজ দিয়েছিলাম দেশের বাড়িতে থাকতে তোর মনে আছে।
কি বলতো।
মনে কর।
মনে পরছে না।
তোর বাড়ির আলমাড়িতে কিছু কাগজ পত্র আছে….।
সরি সরি কাল সকালে গিয়েই আমি নিয়ে আসব। তোর ঘুম থেকে ওঠার আগেই।
যা আছে সব।
ঠিক আছে।
মিলি তোমরা তিনজনে গিয়ে মীনাক্ষ্মী ম্যাডামের সঙ্গে একটু খেজুরে আলাপ করবে। উনি একটা কাগজ তোমাদের দেবেন। নিয়ে আসবে। পারলে ওখানে বসে ভালো করে পড়ে নেবে। যদি কোন সমস্যা থেকে থাকে আলোচনা করে মিটিয়ে নেবে। বিষয়টা তোমাদের।
কিগো অনিদা। টিনা বললো।
গেলেই দেখতে পাবে।
মিলি হাসছে।
তুই ঘরে চল তোকে আর একটা কথা বলবো। এটা একবারে তোর পার্শোনাল। কাজটা কালই করবি। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম।
তুই এতো সব কাজ দিলি আমরা কখন বেরব। বড়মা বললো।
যা কাজ দিলাম এক ঘন্টার কাজ। তুমি এবার প্রোগ্রাম করেনাও। নাহলে আমাকে বেরতে হবে।
না তোকে বেরতে হবে না।
ঠিক আছে।
উঠে পরলাম। তোমরা খাও আমি একটু ওপরে কাজ সারি।
বড়মা আমার দিকে একবার তাকাল।
তুই আমার ওপর রেগে গেলি।
একবারে না।
ডাক্তারদাদা হাসছে।
বড়মা ডাক্তারদাদার দিকে একবার তাকাল। আমি ওপরে উঠে এলাম।
সকালবেলা যখন ঘুম ভাঙলো তখন দেখলাম আমি বিছানায় একা। চোখ রগড়ালাম, আমি কি স্বপ্ন দেখছি ? না, আমি স্বপ্ন দেখছি না। বিছানাতেই শুয়ে আছি। বেশ মনে আছে কাল অনেক রাতে মিত্রা ওপরে এসেছে। প্রায় সাড়ে বারোটা পৌনে একটা হবে। সেই সময় আমার ঘুমটা একটু ভেঙেছিল।
মিত্রা হেসে বলেছিল। আজ ছেড়ে দিলাম, মনে রাখিস এটা আমি সুদে আসলে তুলবো। হেসে ছিলাম। তারপর দুজনে দুজনকে জাপ্টে ধরে ঘুমিয়ে ছিলাম। বুঝতে পারছি শরীরটা খুব একটা ভাল নেই।
ঘড়ির দিকে তাকালাম। সাড়ে নটা বাজে। উঠে বসলাম। নীচ থেকে কোন সাড়া শব্দ আসছে না। নীচে কেউ নেই ? কোথাও গেলে আমাকে নিশ্চই বলে যেত। গেল কোথায় সকলে!
ব্রাসে পেস্টটা লাগিয়ে বাথরুমে গেলাম। দাঁতটা ব্রাশ করতে করতে বারান্দায় এলাম। বাড়ি রং করা শেষের পর্যায়ে। বাড়িটাকে এখন দারুন দেখতে লাগছে।
এখন মনে হচ্ছে এটা একজন এডিটরের বাড়ি। এ পাড়ায় এই বাড়িটাই সবচেয়ে ম্যাড়মেরে ছিল। এখন অনেক বেশি চকচকে। ছগনলাল আমাকে দেখতে পেয়ে গেট থেকে এগিয়ে এলো।
ছোটবাবু মা একটু বেরিয়েছে। বলেছে চলে আসবে। তুমি কোথাও বেরবে না। আমি চা দেব।
সবাই বেরিয়েছে!
হ্যাঁ। ওই বাবুরাও এসেছিল।
কারা ?
ওই যে তোমার বন্ধু, ফর্সা মতো।
বুঝলাম দেবাশীষ।
কখন বেরিয়েছে।
সকাল বেলা করিব পাঁচটা হবে।
ঠিক আছে, তুমি যাও আমি চা করে নেব।
চা জলখাবার করা আছে। আমাকে দিতে বলেছে।
আমি নিচে যাচ্ছি।
আমি এসে বাথরুমে ঢুকলাম। দেখলাম বিছানার এক সাইডে আমার পাজামা পাঞ্জাবী বার করে রেখে যাওয়া হয়েছে। মনে হচ্ছে নতুন। আমি স্নান সেরে পাজামা পাঞ্জাবী লাগালাম। মোবাইলটা টেবিল থেকে নিয়ে দেখলাম অনেক মিশ কল।
দেখলাম সবাই একবার করে কল করেছে।
দাদা, ডাক্তারদাদা, মল্লিকদার মোবাইল নম্বরও রয়েছে। ম্যাসেজ বক্সটা ব্লিঙ্ক করছে। বুঝলাম ম্যাসেজ বক্স ফুল। খুললাম দেখলাম রিমঝিম ম্যাসেজ করেছে। ওর বন্ধুরাও। একটাই কথা তোমাকে সত্যি ফোনে পাওয়া যায় না।
আমাকে আজ একটু সময় দেবে। সবারই এক কথা।
মনে মনে হাসলাম। ম্যাসেজ রিপ্লাই করলাম, যদি সময় পাই জানাব।
নিচে এসে ফ্লাক্স থেকে চা ঢাললাম। চায়ের কাপটা নিয়ে গেটের কাছে গিয়ে বাড়িটাকে একবার ভাল করে দেখলাম। বাগানটা অনেক পরিষ্কর হয়েছে। একজায়গায় সব শুকনো পাতা ডাঁই করা হয়েছে। গাছগুলোর নিচের দিকটা সাদা রং করা হয়েছে। বুঝলাম উই ধরেছিল।
চা খেতে খেতে বাগানের চারদিক ঘুরলাম। দাদা যাঁর কাছ থেকে বাড়িটা কিনেছিলেন তিনি বেশ রসিক লোক ছিলেন। প্রায় পঁচিশ কাঠা জমির মাঝখানটুকু বাড়ি করেছেন। পেছনে প্রায় পনেরো কাঠা জমি বাগান, সামনে প্রায় পাঁচ কাঠা জমি বাগান।
একপাশ দিয়ে ইটের বাঁধানো রাস্তা সামনে থেকে বাড়ির গা দিয়ে একেবারে পেছনে চলে গেছে। পেছনে একটা টিনের সেড গাড়ি রাখার জায়গা। এছাড়াও গোটা পনেরো গাড়ি অনায়াসে এই রাস্তায় দাঁড়িয়ে যেতে পারে। এখন এই জমির ভ্যালুয়েসন কম করেও আট দশ কোটি টাকা।
আমি আমগাছটার নিচে গিয়ে দাঁড়ালাম। ঝাঁকরা গাছটার কিছুটা ডাল ছাঁটা হয়েছে। এ বছর অনেক মুকুল ধরেছে। আমি রাতের বেলায় এই মুকুলের গন্ধ পাই।
পেয়ারা গাছটার কয়েকটা ডালে নতুন পাতা হয়েছে। বাগানটা দেখলে মনেহচ্ছে ভজুবাবু যত্ন করে। আমি পায়ে পায়ে একেবারে দেয়ালের ধারে এলাম। ভজুবাবু কিছু কিছু চারা গাছ পুঁতেছে। মনে হচ্ছে ডালিয়া। অনেকক্ষণ বাগানের এদিক সেদিক ঘোরা ঘুরি করলাম।
ওপরে চলে এলাম। ঘড়ির দিকে তাকালম, সাড়ে দশটা। দেবাশীষকে আসতে বলেছিলাম। ব্যাটা সকালে বেরিয়ে গেছে ওদের সঙ্গে। ল্যাপটপটা নিয়ে বসলাম। অনেকদিন মেল চেক করা হয়নি। মেল বক্স খুলতেই অবাক হলাম। তনুর প্রচুর মেল। এমনকি রিমঝিম পিঙ্কি চুর্ণী তিয়াও মেল করেছে।
প্রথমে তনুর মেল গুলো চেক করলাম। আরও মেটিরিয়ালস পাঠিয়েছে। বলেছে ঘর ও দেখেছে। আমাকে একবার যেতে হবে, না হলে কিছু করা যাবে না। এখন ও কোলকাতায় আসতে পারবে না। প্রচুর কাজের চাপ। সঙ্গে সঙ্গে ওকে রিপ্লাই করলাম। হাতের কাজ সেরেই তোমার কাছে যাচ্ছি। তুমি একবার কলকাতায় আসবে। আমার মোবাইলে একটা ম্যাসেজ করো।
রিমঝিমদের মেলগুলো খুললাম। খুলেই আমার মাথা ঘুরে গেলো। বিবসনা সব ছবি। মডেল হিসাবে স্যুট করেছে। কিছু ভালো ছবিও পাঠিয়েছে। নিচে লেখা আছে লাভ রিমঝিম, পিঙ্কি লিখেছে স্যুইট হার্ট অনিদাকে। চুর্ণী লিখেছে আমাকে এক মিনিট সময় দাও। তিয়া লিখেছে, বসে আছি পথো চেয়ে।
আমি ছবিগুলো ভালো করে দেখলাম। শরীরী আবেদন মাথা ঘুরিয়ে দেবে।
অন্যান্য মেল গুলো একবার চেক করে নিলাম। ল্যাপটপ পাওয়ার অফ করে হিমাংশুকে একটা ফোন করলাম।
ফোনটা ধরেই হিমাংশু হাসছে।
হাসছিস কেন ?
বাড়িতে একা রেখে দিয়ে সকলে কেটে পরেছে।
তুই কি করে জানলি।
কেন তুই কি একা সাংবাদিক।
আমি হাসলাম। কে বললো তোকে ?
সকালে তোকে একবার ফোন করেছিলাম। দেখলাম রিং বেজে যাচ্ছে। কেউ ধরলো না। তারপর মিত্রাকে ফোন করলাম। বললো তোকে বাচ্চা ছেলের মতো ঘুম পাড়িয়ে চলে এসেছে।
কি করবো বল। মাঝে মাঝে ঢেঁকিও গিলতে হয়।
অফিসে যাবি না।
আজ মনে হয় হবে না। কিছু নিজের কাজ আছে। সাড়তে হবে।
এবার বল।

আমার কাজ গুছিয়েছিস।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top