What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

দেখি নাই ফিরে (উপন্যাস) (4 Viewers)

মিলে যাচ্ছে।
তাহলে আবার কি, ওইটাই হবে। এ্যামাউন্ট কি দেখছেন।
বিশাল।
আজ কিছু তোলা হয়েছে।
হ্যাঁ। কলকাতার সাতটা এটিএম থেকে।
কতো ?
এক।
কোকা না খোকা ?
কোকা।
এ্যামাউন্টগুলো একটু নোট ডাউন করে নিন। পারলে প্রিন্ট আউট।
ঠিক আছে।
কালকে সকালে কাগজ গুলো একটু পাঠিয়ে দেবেন। মুকে গালা আটকে দেবেন।
ঠিক আছে।
ফোনটা পকেটে রাখলাম।
দাদা ডাক্তারদা আমার মুখের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে। আমার কতা শুনেছে। কিন্তু এতোক্ষণ কার সঙ্গে কথা বলছিলাম, বুঝতে পারে নি।
মল্লিকদা নীচু হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে।
কি দেখছো ?
তোকে।
সেতো দেখতেই পাচ্ছি।
তুই কি আজকাল কোড ল্যাঙ্গুয়েজে কথা বলছিস কেউ বুঝতে পারবোনা বলে।
ফিক করে হেসে ফেললাম।
হাসলেই সাতখুন মাপ। সারারাত জাগতে হয় জাগবো। কি ঘটনা ঘটালি বলবি। নাহলে উঠছিনা। তখন অনেক তোড়পেছিস আমার ওপর। একটা কথাও বলিনি।
ঘরটা ঘম গম করে উঠলো দাদার গলার শ্বরে। সকলে চমকে তাকালো। খাবার থালায় হাত থেমে গেছে সকলের।
হো হো করে আমি হেসে উঠলাম। সবাই গম্ভীর। আমি হাসছি।
তোকে আমি এবার কান ধরবো।
সেতো তুমি থাপ্পরও মেরেছো। হাসতে হাসতে।
অনেকদিন পরেনি। তাই ধরাকে সরা জ্ঞান করছিস।
চেঁচিয়োনা ছগনলাল ছুটে চলে আসবে।
বল আগে।
বললে সহ্য করতে পারবে ?
বলেই দেখ।
আবার চুপ চাপ। আমি খেতে শুরু করলাম। সবাই খাওয়া থামিয়ে আমার কথা বলার অপেক্ষায়।
রতন।
বলো দাদা।
তুই তখন ম্যাডামের পা ধরে কেঁদিছিলি কেনো।
তখন তোমার কথা না শুনলে তুমি ছট্টুর মতো আমাকে মেরে দিতে।
শুনলে কথাটা। এই ছট্টুকে একদিন আমি বুকে করে আগলে রেখেছি। সাক্ষাত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছি। আজ কুকুরের মতো চোখের সামনে গুলি খেয়ে মরতে দেখেছি। বলতে পারো আমার কথামতো গুলি করা হয়েছে।
কেনো। দাদা ঝাঁজিয়ে উঠলো।
আমার কথা শোনেনি। বেইমানি করেছে।
সবাই বসে আছে আমি খাচ্ছি।
ওকে কিন্তু আমি ভালোবাসতাম। আজ ওর একটা কথায় অবিশ্বাস করলাম। তুড়ন্ত ডিসিসান নিলাম ওর পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অধিকার নেই। আর আমি যদি বিচার বুদ্ধি দিয়ে একবার মনে করি আমি ঠিক কাজ করতে যাচ্ছি। তোমরা কেউ আমাকে আটকাতে পারবেনা। আমার কাছে ছয় থেকে সাত রকমের অপসন থাকে। একজন না বললে আর একজনকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেবো।
কেনো তুই এই কাজ করলি। এখনো দাদার গলায় সেই ঝাঁজ।
নিরূপায় হয়ে।
আর কোনো পথ ছিলোনা।
না।
তার মানে! এইবার দাদার গলাটা বুঁজে এলো।
সড়াসরি দাদার চোখে চোখ রাখলাম। তাহলে তোমাদের সকলকে আমাকে হারাতে হতো। মিত্রা পর্যন্ত বাদ যেতোনা।
আমি খাচ্ছি, সকলের হাত থেমে গেছে। পিন পরলে ঘরে শব্দ হবে। বুঝতে পারছি সকলে আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে।
কিহলো বসে রইলে কেনো, খাও। আর শুনবে, না এখানে থামিয়ে দেবো।
দাদা আমার দিকে তাকিয়ে। চোখের পলক পরছেনা।
তুমি যাকে ফোন করে আমার জন্য সাহায্য চাইবে মনে করেছিলে, তার হাতপা বাঁধা। সে কিছু করতে পারবেনা।
দাদা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
আবার সবাই চুপচাপ। নিস্তব্ধে খেয়ে যাচ্ছে।
যে ছেলেটা আমার গ্রামের বাড়ি পর্যন্ত ধাওয়া করতে পারে, তাকে কোন সাহসে বাঁচিয়ে রাখবো বলো।
দাদার পিঠো কে যেনো চাবুকের বাড়ি মারলো। আমার দিকে সড়াসরি তাকালো।
তুই কি করে জানলি।
পরিদা।
পরিদা! ইসলামভাই আমার দিকে তাকালো।
হ্যাঁ। পরিদা। চকে দাঁড়িয়ে তোমরা যখন সবাই চা খাচ্ছিলে। পরিদা আমাকে আলাদা ডেকে নিয়ে গিয়ে বললো। তোকে একজন খুঁজতে এসেছিলো। তাকে দেখতে এই রকম। সব খোঁজ খবর নিলো। লোকটাকে দেখে আমার তেমন শুবিধার মনে হলোনা। তাই বাড়িতে ঢুকেই সময় নষ্ট করতে চাই নি।
আবার চুপচাপ।
রতনকে জিজ্ঞাসা করো, ওর পেট থেকে আমি কথা বের করেছিলাম কিনা। কিরে রতন আমি ঠিক বলছি।
রতন হ্যাঁ বলতে গিয়ে কেঁদে ফেললো।
খেতে বসে কাঁদতে নেই রতন। আমি বলতে চাইনি, তোরা সবাই শুনতে চেয়েছিস।
দামিনীমাসি বড়মা নিজেদের পাত ছেড়ে উঠে এসে, এঁঠো হাতে আমার সামনে এসে বসলো। বাঁহাতে কাপরের খোঁট দিয়ে চোখ মুছছে।
কিহলো! তোমরা উঠে এলে কেনো। যাও আমি বলছিতো।
তোর মুখটা একটু দেখবো।
দেখে লাভ নেই।
ঠিক আছে, বল।
আবার খাওয়া শুরু করলাম।
তখন আমার মধ্যে একটা হিংস্র পশু কাজ করছিলো। তোমরা কেউ সামনে এসে দাঁড়ালে, তারও অবস্থা ছট্টুর মতো হতো।
একটু থেমে।
রতন চাক্ষুষ দেখেছে, লাইভ দেখেছে অর্ক সায়ন্তন। তুমিতো সায়ন্তনের মুখ থেকে সব শুনেছো।
ফোনটায় ম্যাসেজ এলো। পকেট থেকে বার করলাম। দেখলাম অর্ক ম্যাসেজ করেছে।
দাদা লাটবাগানের বাড়িতে একটা কালো গাড়ি ঢুকলো। নম্বর এই। ব্যাপারটা বুঝতে পারছিনা। আমি বাড়িতে, আমার চেলুয়ারা খবর দিলো।
নম্বরটা দেখেই বুঝলাম স্পেশাল নম্বর।

সঙ্গে সঙ্গে মুখার্জীকে ফোন করলাম। ইচ্ছে করে লাউড স্পিকারে দিলাম।
মিঃ মুখার্জীর গলা ভেসে এলো। আপনাকে নিয়ে আর পারা যাবে না।
কেনো।
এই কানা রাতে ওখানে আপনার লোক আছে!
গাড়ি কেনো বাড়িতে ঢুকলো।
আমাকে বাঁচতে হবেতো।
আমার প্রতি বিশ্বাস নেই।
এ আপনি কি বলছেন অনিবাবু।
আমার খাবারে আপনি ভাগ বসাবেন না। আপনারটা আপনাকে দিয়েছি। ওটা আমার।
না না আমি খালি খবরটা পৌঁছে দিচ্ছি। ওখানে থেকে বেরোবার চেষ্টা করলে, এনকাউন্টার করতে বাধ্য হবো।
আপনি অর্কর পেট থেকে কথা বার করেছেন।
ঠিক।
আপনার সঙ্গে অর্ককে আলাপ করিয়ে দেবার পরই অর্ককে এই কাজ থেকে অফ করে দিয়েছি।
সত্যি।
ফোন করে দেখতে পারেন।
ব্যাটা নম্বরটা ভুল দিয়েছে।
মাথায় রাখবেন ওই পাড়ায় সাত বছরের একটা ভিখারীর ছেলে আমার ইনফর্মার হিসাবে কাজ করছে।
সত্যি! এক কাজ করুণ, আপনি আমাদের দপ্তরে জয়েন করুন।
টাকা দিতে পারবেনা।
ফোনটা কেটেই অর্ককে ফোন করলাম।
বলো।
ঘুমিয়ে পরেছিস।
দূর ঘুম আসে। মাথার মধ্যে যা ঢুকিয়ে দিয়েছো। তারপর যা লাইভ দেখালে।
ঘুমের ট্যাবলেট খা, একটাকে হাফ করে।
দু’একদিন না ঘুমোলে কিছু হবে না।
তুই মুখার্জীকে তোর নম্বর দিয়েছিলি।
দিয়েছি। শ্যামবাজারের একটা এসটিডি বুথের।
সকলে মুখে হাত চাপা দিলো।
নে ঘুমিয়ে পর।
শুধু এটুকু মশলা নেবার জন্য ফোন।
হ্যাঁ।
অনিদা।
বল।
বড়মা ছোটমা দামিনী মাসি ঠিক আছে।
আছে।
ম্যাডাম।
ঠিক আছে।
নেক্সট ভেঞ্চার বলো। এটাতো কাল খতম করবে।
কয়েকদিন রেস্ট নে, তারপর।
আচ্ছা। গুড নাইট।
এটা অর্ক। দাদা চোখ বড়ো বড়ো করে বললো।
হ্যাঁ।
মল্লিক শুনলি।
দাদা হো হো করে হেসে ফেললো।
এর জন্য আজ তোমরা বেঁচে আছো। গত চারদিন ধরে ও দামিনী মাসির বাড়ির দালাল হিসাবে কাজ করেছে। আমাকে ঘন্টায় ঘন্টায় আপডেট দিয়েগেছে। দামিনী মাসি জানে না ?
তুই কি বলছিস! দামিনী মাসি বললো।
তোমার বউমাকে জিজ্ঞাসা করো। এক বর্ণও মিথ্যে নয়।
বড়মা মিত্রার দিকে তাকালো।

মিত্রা মাথা নীচু করে রয়েছে।
 
তুই জানতিস! মিত্রার দিকে তাকিয়ে দামিনী মাসি বললো।
বৃহস্পতিবার রাত থেকে। তার আগের কিছু জানিনা।
এবার বলো, আমি কোথায় ভুল করেছি।
তুই একটুও ভুল করিসনি। আমি এতোক্ষণ খুব কষ্ট পাচ্ছিলাম। তুই তখন তোর দাদার ওপর ওরকম চোটপাট করলি বলে। বড়মা কাঁদতে কাঁদতে বললো।
কাঁদলে উঠে চলে যাবো। খাবোনা বলে দিচ্ছি।
ঠিক আছে কাঁদবোনা। তুইতো একটু বলতে পারিস। গলাটা কান্না ভেঁজা।
সময়ের অপেক্ষা করতে হবে।
মায়ের মন মানে।
তাহলে মরতে হবে।
যে তোকে পেটে ধরেছিলো সে পারতো ?
সেই জন্য তিনি মারা গেছেন। তুমি ছোটমা দামিনী মাসি পারবে, তাই বেঁচে আছো।
স্পষ্ট কথার কষ্ট নেই, বুঝলে বান্ধবী। অনি হচ্ছে জেমস বন্ড ০০৭।
থামো তুমি, মস্করা করোনা। বড়মার গলাটা ধরা।
একথা তোমায় এভাবে মানায় না। দাদা বললো।
থামো তুমি। ছেলেটাকে একবার দেখলেনা। যদি ওর বুকে এসে একবার লাগতো।
সে হতো না। দাদা এমনভাবে বললো সবাই হেসে ফেললো।
ও বহুত চালাক। সায়ন্তন বললোতো, দাদা এখান থেকে কন্ডিসন করে গেছে। বুলেট প্রুফ গাড়িতে নিয়ে যেতে হবে। গাড়িতে ঘাপটি মেরে বসেছিলো। সব শেষ হবার পর, ছবি তুলে পালিয়ে এসেছে। ওতো ওই বাড়িটার ভেতরেও ঢোকেনি।
যাঃ, তুমি ফোক্করি করছো এডিটর। ডাক্তারদাদা বললো।
বিশ্বাস করো। লেখাটা এমন লিখেছে ও যেনো নিজে ঢ্যে ঢ্যে ঢ্যে করে গুলি করছে।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো। বড়মাও হেসে ফেললো।
সত্যি বলছি অনিদা, তুমি পাঁচটা ঘন্টা এমন সাসপেন্সে রেখেছিলে। আমাদের পিলে চমকে গেছিলো। এর আগে তোমার অনেক রাগ দেখেছি, এরকম কথা মুখ থেকে আগে শুনিনি। রতন বললো।
ইসলামভাই হাসছে।
তখন তোকে কি যেনো বলেছিলো।
হজম করে দেবো।
অনিদা আমাকে সব সময় বলে। ভজু বলে উঠলো।
দামিনী মাসি ভজুর দিকে হাসি হাসি মুখ করে তাকালো।
কিগো বসে থাকলে হবে। রতন সেইযে দুপুরে একটা চিকেন প্যাটিস খাইয়েছিলো। তারপর বটাদার হাফ ডিম পাঁউরুটি। বাকিটা দাও কালকে অনেক কাজ লড়তে হবে।
তারপর আমরাও আর কিছু খাইনি অনিদা, আবিদ বলে উঠলো।
দাও দাও ওদের দাও। দাদা বলে উঠলো।
হ্যাঁরে অনি কালকে রাজনাথ না ডাক্তার। ডাক্তারদাদা বললো।
বলবোনা। সময় বলবে।
কেনো জিজ্ঞাসা করছো বলোতো ওকে। ও সোজা কথা কখনো বলে। আবার কাল রাতে ধমকাবে, তখন শুর শুর করে বলে দেবে।
ডাক্তারদাদা খিক খিক করে হেসফেললো।
ডাক্তার তুমি কি নেবে ? বড়মা জিজ্ঞাসা করলো।
থাকলে দাও। আমারতো বড় ভয় করছে, অনি যদি আমাকে হজম করে দেয়।
আবার সকলে হেসে ফেললো।
হ্যাঁরে অনি কোকা আর খোকা কি বস্তু। মল্লিকদা গম্ভীর হয়ে বললো।
গুড কোশ্চেন মল্লিক।
আমার দিকে তাকিয়ে।
বল তোর কোড ল্যাঙ্গুয়েজ।
ইসলামভাই হাসছে।
ইসলামভাই জানে। জিজ্ঞাসা করো।
মুন্না।
সত্যি দাদা, বিশ্বাস করুণ আমি জানিনা। রতন তোরা কেউ জানিস ?
না দাদা।
বল।
কোকা মানে কোটি, খোকা মানে লাখ।
ইসলামভাই হাসতে হাসতে বিষম খেলো।
কি হলো!
ইসলামভাই কাশতে কাশতে হাত দখাচ্ছে। কাছে আসতে হবে না।
ছোটমা আমার দিকে চোখ পাকিয়ে ইশারায় কান মুলছে।
এক কোটি টাকার ড্রিল। মল্লিকদা বললো।
তাহলে কি বুঝলে। একটা পরিবারকে উড়িয়ে দেবার জন্য। সেখানে কি আমি গোলাপ ফুল দিয়ে তাকে বরণ করবো।
মিত্রা।
মিত্রা মল্লিকদার দিকে ঘুরে তাকালো।
কালকে আমি রিজাইন দিচ্ছি কাগজ থেকে।
কেনো!
আমি অনির সঙ্গে কালকে থেকে এই কাজ করবো।
ঢং দেখো। ছোটমা বললো।
তোমার দ্বারা হবেনা।
কেনো ?
বুবুনের মতো তাহলে তোমাকে গিরগিটি সাজতে হবে।
কেনো! দাদা বললো।
দেখলেন না, এক ঘন্টা আগের বুবুন, আর এক ঘন্টা পরের বুবুনের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ।
দেখলে এডিটর, রতনে রতন চেনে, শুয়োরে চেনে কদু।
তারমানে! তুমি কি বলতে চাও।
কথাটা স্পষ্ট হচ্ছে না। আরো ভেঙে বলতে হবে। বড়মা চিবিয়ে চিবিয়ে বললো।
আবার হাসি।
আমি উঠে গিয়ে ছোটর পাত থেকে একটা মাংসের টুকরো তুলে নিয়ে সোফায় হেলান দিয়ে বসলাম।
মিত্রা হাঁই হাঁই করে উঠলো।
তুমি কিছু বলতে পারোনা। বড়মার দিকে তাকিয়ে গঁ গঁ করে উঠলো।
তোকে দিচ্ছি। আছে।
দামিনী মাসি হাসছে।
দিদি আপনি বসুন আমি দিচ্ছি। দামিনী মাসি উঠে গেলো।
আমি বেসিনে মুখটা ধুয়ে বেরিয়ে এলাম। বাগানে এসে দাঁড়ালাম। বেশ শীত শীত করছে। কাক ডাকছে। বুঝলাম ভোর হয়ে আসছে। এখনো অন্ধকার। ইসলামভাই পাশে এসে দাঁড়ালো। রতন আবিদ নেপলা সঙ্গে।
চলো ওপাশে গিয়ে দাঁড়াই।
চল।
সিগারেট আছে।

আছে।
তুমি খাও! রতন বললো।
মাঝে মাঝে খায়। ইসলামভাই বললো।
নেপলা ঠক করে একটা পেন্নাম করলো।
কিরে হঠাৎ!
দাদাকে দেখেছি। তুমি দাদার দাদা।
ধ্যুস।
ও ঠিক কথা বলেছে অনি। সত্যি যদি ঘটনাটা ঘটতো। ভাবলেই গা সিউড়ে উঠছে।
ঘটতো বলতে তুমি কি বলছো। এখন হয়তো তোমাকে দেখতে পেতাম না। ওদের টাইম ছিলো আজ নাইট। সেই মতো ওখানে গাড়ি পৌঁছে গেছিলো। খাওয়া দাওয়া চলছিলো। আর একটু দেরি হলে বেরিয়ে পরতো।
কি বলছিস তুই!
এক বর্ণও বানিয়ে বলছি না।
মুখার্জী যদি রিফিউজ করতো।
ঘোষ ছিলো। অনেক দিন শুকনো হাতে বসে আছে।
ছট্টু বলছিলো ঘোষদার কথা। আবিদ বললো।
তুইকি সকলকে ম্যাসেজ করেছিলি ?
কেনো বলোতো!
আবিদ তোর ম্যাসেজ পেয়েছে। নেপলা পেয়েছে। রতন পেয়েছে। দিদি পেয়েছে। কার নাম বাদ দেবো।
গজব হয়ে গেছে।
কেনো!
আমার পার্সোনাল ফোল্ডার সিলেক্ট করে অল করে দিয়েছিলাম মনে হচ্ছে। তখন মাথার ঠিক ছিলোনা।
সেইজন্য চিকনা অনাদি বাসু সঞ্জু ফোন করেছিলো। টিনা মিলি দেবাশীষ সবাই ফোন করে মামনিকে জিজ্ঞাসা করছে।
ইস এই একটা কাজ ভুল করে ফেললাম। যদিও আমার খুব ঘনিষ্ঠজন আর বন্ধু-বান্ধব ছাড়া কারুর নাম নেই ওই ফোল্ডারে।
তবু রক্ষে।
কিরে শুবিনা। মিত্রা ওপরের বারান্দা থেকে চাঁচালো।
তুই যা যাচ্ছি।
আবিদ।
বলো দাদা।
কাল টানতে পারবি।
এখনো বাহাত্তর ঘন্টার দম আছে।
মাথায় রাখবি যে মাটিতে দাঁড়িয়ে আছিস, সেই মাটি পর্যন্ত জানতে পারবেনা তোর মনের কথা।
তোমাকে ভাবতে হবেনা। কয়েক ঘন্টায় যা পেলাম তোমার কাছে, মাথা খুলে গেছে।
ছট্টু এই বাড়িতে এসে ঘুরে গেছে, তোরা কেউ জানতে পারলিনা।
বিশ্বাসকরো অনিদা অবাক হচ্ছিলাম ওর কথা শুনে। আমি দাদাকে বলেছি সব কথা। রতন বললো।
আর ভুল করিসনা। একটা ভুলে কতো বড়ো ক্ষতি হয়ে যেতো বলতো।
ছট্টুকে আমি আন্ডার এসটিমেট করেছিলাম। ইসলামভাই বললো।
তোমাকে একদিন বলেছি। এবার চোখ কান খোলা রাখো। আর ড্রাগস থেকে একেবারে সোরে এসো।
আমাকে মাস খানেক সময় দে।
অন্যটিম কাজ করুক। তোমরা সরে এসো।
সরে আসবো। ছেলেগুলোকে একটু সেট করে নিই।
কি নেপলাবাবু তখন আমার কথায় খুব কষ্ট পেয়েছো।
একটুও না। সেই সময় অবশ্য মটকা গরম হয়ে গেছিলো। তারপর তুমি যখন ঘুরে এলে, তখন বুঝলাম তোমার দম। মাত্র কয়েকঘন্টার মধ্যে এতোবড়ো স্কিম। ইসলামভাই পারতো না।
দুর পাগল আমি। ওদের আর্মস দেখেছিস। এই কাজের জন্য এক কোটি!
হিসাবে যা পাচ্ছি। হয়তো এর বেশিই হবে। তোমাদের শোবার ব্যবস্থা কোথায় করেছে মাসি।
ড্রইংরুমে লম্বা বিছানা পরছে। ভজু তোর গেটের কাছে। ওকে নড়ানো যাবেনা।
যাও শুয়ে পরো আমি শুই গিয়ে ভীষণ শীত করছে।
কেনোরে শরীর খারাপ নাকি।
না খুব টায়ার্ড লাগছে।

ওপরে চলে এলাম। দেখলাম সত্যি কারের ভজুরাম আমার দরজার গোড়ায়। কুকুর যেমন ভাবে মোড়ামুড়ি করে শুয়ে থাকে, ঠিক সেই ভাবে। আমি আসতে একবার তাকিয়ে দেখলো, হাসলো, চোখ বন্ধ করলো।
 
আমি ঘরে ঢুকলাম, দরজা বন্ধ করলাম। মিত্রা চুল আঁচড়াচ্ছে। আমার দিকে একবার তাকালো। ভ্রু-জোড়া কুঁচকে গেছে। হাতের চিরুণি থেমে গেছে।
কিরে কি হয়েছে!
কিছু হয়নিতো।
তাহলে কাঁপছিস।
শীত করছে।
শরীর খারাপ লাগছেনাতো ?
নারে বাবা না। আমি মানি পার্টস থেকে একটা ক্যালপোল মুখে দিয়ে ঢক ঢক করে জল খেলাম।
ওষুধ খেলি।
প্রিকোয়েসন।
দেখি তোর গাটা।
মিত্রা আমার গায়ে হাত দিলো। কপালে হাত দিলো। আমার গালে গাল ঠেকিয়ে গায়ের উত্তাপ বোঝার চেষ্টা করলো।
কি দেখলি।
না ঠিক আছে।
মাথাটা ভীষণ যন্ত্রণা করছে, একটু টিপে দিবি।
শুয়ে পর যাচ্ছি।
মিত্রা কাপর ছাড়তে ছাড়তে আমি কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরলাম। মিত্রা জামা কাপর ছেড়ে বাথরুমে গেলো। কাজ শেষ করে খাটে উঠে এলো। প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে। কপালের দু’পাশটা যেন ছিঁড়ে যাচ্ছে।
অনেকটা খাওয়া হয়েগেছে, না খেলেই ভালো হতো।
একটু সেনসার লাগিয়ে দেবো।
না।
কেনো, এখুনি রিলিফ পেতিস।
বড়ো লাইটটা নিবিয়ে দে।
মিত্রা আমার পাশে আধশোয়া অবস্থায়। ওর নরম হাত আমার কপালে। ওর শরীরের গন্ধ আমার নিঃশ্বাসে এসে ধাক্কা মারছে। আমার মাথাটা ওর আরো বুকের কাছে টেনে নিলো। মিত্রার পাঁচটা আঙুল হারমোনিয়ামের রিডের মতো আমার চুলের মধ্যে খেলা করছে।
বুবুন।
কোন সাড়া শব্দ দিলাম না।
কষ্ট হচ্ছে।
আমার মুখ থেকে কোনো শব্দ বেরোচ্ছে না।
হাতের বুড়ো আঙুলটা দিয়ে আমার কপালে চাপ দিলো। বুঝতে পারছি মিত্রা কিছু বলছে। কিন্তু মনে হচ্ছে ও অনেক দূরে, হাল্কা একটা শব্দ আমার কানে ভেসে আসছে। তারপর সেই শব্দটাও আরো দূরে আরো দূরে কোথায় যেনো মিলে মিশে একাকার হয়ে গেলো।
এখানে আমি একা সম্পূর্ণ একা। কেউ কোথাও নেই। চারিদিক শুনসান। আমি একা বসে আছি সেই অশ্বত্থতলায়। আমার সামনে পীরসাহেব। অবাক হলাম। আগেতো কোনোদিন চাক্ষুষ দেখিনি! ওনার গল্প শুনেছি লোকের মুখে। যা শুনেছি একেবারে সেই রকম। বরং তার থেকে একটু বেশিই। সাদা পক্ককেশ, সাদা আলখোল্লা। সামনে একটা বই খোলা। আরবী ভাষায় কি যেনো লেখা। ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। বই থেকে মুখ তুলে আমার দিকে তাকালেন। এই প্রথম আমি তাঁর মুখ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। টকটকে ফর্সা মুখখানা। ভ্রু দুটো সাদা চুলে ঢাকা, কি অপরূপ মুখখানা। সৌম্য শান্ত। আমার দিকে পিটি পিটি চোখে তাকালেন। হাসলেন।
কিরে তুই! এই অসময়ে।
আপনার কাছে এলাম।
কেনোরে ?
ভালো লাগছেনা। নিজের মনকে ঠিক বুঝিয়ে উঠতে পারছিনা। আজও একটা অন্যায় কাজ করলাম।
পাগল। কে বললো তোকে অন্যায় কাজ করেছিস।
নিজের মন।
তোর মনে এখনো ময়লা আছে। পরিষ্কার হয়নি। পরিষ্কার কর।
কি ভাবে।
ওটা বলতে পারবোনা। তোকে তোর সমস্যা বললাম এবার তোর দায়িত্ব।
আমি যে কাজ করেছি, যা করতে চলেছি সব ঠিক করছি ?
সবটা বলতে পারবোনা। এখনো পর্যন্ত ঠিক কাজ করেছিস।
চুপ চাপ মাথা নীচু করে বসে রইলাম।
যা এবার, আমি একটু পড়াশুনো করি।
তবু বসে রইলাম।
পাগল। তুইতো নিজের জন্য কিছু করিস নি। যা কিছু করেছিস সব পরের জন্য। তোর চিন্তা কি ?
যা জানতে এসেছিলাম, তা জানতে পারলাম না।
পারবি। একটু অপেক্ষা কর। সময় এখনো আসেনি।
চোখের সামনে থেকে সেই পক্ককেশ বৃদ্ধ নিমেষে অদৃশ্য হয়ে গেলো। আমি আবার একা। সম্পূর্ণ একা।

ইস অনিমেষদা কি ভাববে। যখন শুনবে আমি এর মধ্যে জড়িয়ে পরেছি। ভাববে আমি একজন মাস্তান, দাদা, ডন। আমি এনকাউন্টার করাতে পারি। তাও পার্টির একজন ক্ষমতাবান লোকের এগেনস্টে।
শুয়োরের বাচ্চা রাজনাথ আমি জানি তুমি খুব ধীর স্থির গতিতে এগোচ্ছ। তুমি পোড় খাওয়া মাল। যখন বুঝতে পারবো তুমি অনিমেষদার গায়ে হাত তোলার ব্যবস্থা করেছো, তখন তুমি গাইপ। মথায় রাখবে। ততক্ষণ পর্যন্ত তোমায় আমি ছেড়ে রাখবো। আমি জীবনে বহু বিষধর সাপ লাথি মেরে, মেরে দিয়েছি। আমি জানি সাপের সাথে খেলা করা কি ভীষণ মজা।
তুই আবার কিন্তু ঝামেলা করছিস মিত্রা। হা হা হা।
আমার শুর শুরি লাগছে। ভীষণ ঘুম পাচ্ছে। দেখ ছোটমা ভীষণ ডেঞ্জার। জানতে পারলে হাড় মাস এক করে দেবে।
আবার কাঁদে।
তোকে বলেছিনা, আমি কান্না পছন্দ করিনা। কন্না দুর্বল মানুষের পরিচয়।
তোর টডি আমার হাত থেকে ছাড়া পাবেনা।
ইসলামভাই আমার কাছে শিশু। ইসলামভাই জানেনা টোডিকে আমি মারবো। তবে একটু সময় নিয়ে। ইসলামভাই-এর চেলা চামুন্ডার থেকে টোডিকে আমি সরিয়ে নিয়েছি।
ইস তোকে বলে ফেললাম। প্লিজ তুই কাউকে বলিস না। গায়ে হাত দিয়ে শপথ কর।
আচ্ছা মিত্রা, তুই কোনো অন্যায় করিসনিতো! যার জন্য ওরা এই সব করতে বাধ্য হয়েছে।
ঠিক আছে। মাথায় রাখবি তোর কথার ওপর বেইজ করে আমি কাজ করছি।
তবে আমার ইনটিউসন কখনো বিট্রে করেনি।
কি বললে আমার জন্য তুমি পার্টিতে অপদস্থ হচ্ছ।
মিত্র ওঠ আর এক মুহূর্ত এখানে বসবো না।
তোমাকে পুরুষ ভাবতাম। তোমার বৌদ্ধিক চিন্তা ভাবনাকে আমি শ্রদ্ধা করতাম। আর তুমি কিনা তোমার পার্টির একটা কুত্তার কথায় আমাকে এতো বড়ো কথা বললে।
তোমার ক্ষমতা থাকলে তুমি আমার সঙ্গে লড়ে যেও। তোমার হাতে সরকার আছে। তোমার হাতে প্রশাসন আছে। আমার হাতে কলম আছে। এক একটা আঁচড়ে আমি তোমার পার্টিকে ফালা ফালা করে দেবো। আমি কাগজের মাধ্যমে তোমাদের এগেনস্টে জনমত গড়ে তুলবো। দেখি তুমি কতো ডিস্টার্ব করতে পারো আমায়।
না না বৌদি তুমি আমায় রিকোয়েস্ট করবেনা।
যেদিন স্যার, সুনন্দাদি তোমার সঙ্গে আমায় আলাপ করিয়ে দিয়েছিলো। সেইদিন থেকে তুমি তাদের সঙ্গে একি আসনে বসে আছো আমার মনে। তোমার পরে অনিমেষদাকেও সেই আসনে বসিয়েছি। তোমাদের নিঃস্বার্থ ত্যাগ ব্রত আমাকে প্রতি পদে পদে অনুপ্রেরণা দিয়েছে।
নিজেক কতবার বুঝিয়েছি অনি তুই একটা অরফ্যান। তোকে এরা ভালবাসে। এদের ভালোবাসার অমর্যাদা কোনোদিন করবিনা। এখনো পর্যন্ত তোমাদের ভালো ছাড়া মন্দ চিন্তা করিনি। যখনই কোনো অন্যায় হচ্ছে বুঝতে পেরেছি। ছুটে এসে প্রথমে অনিমেষদাকে বলেছি।
সেই অনিমেষদা বলে কিনা আমি তাকে পৃথিবীথেকে সড়িয়ে দেবার ষড়যন্ত্র করেছি। সুরো কি ভাবছে বলোতো। আমারতো কোনো মায়ের পেটের বোন নেই। পৃথিবীতে ওকে আমি আমার মায়ের পেটের বোন হিসাবে স্বীকার করে নিয়েছি। একমাত্র বোন হিসাবে ওর কাছ থেকে আমি ভাইফোঁটা নিই। তারমানে অর্থটা কি দাঁড়াচ্ছে। আমি আমার পিতাকে খুন করবো। কিসের স্বার্থে ?
আর একটা কথা তোমায় বলে যাচ্ছি শোনো। মিত্রাকে স্বাক্ষী রেখেই বলছি। রাজনাথকে তুমি আমার হাত থেকে বাঁচাতে পারবেনা।
গত দশবছরের ইতিহাস আমার কাছে আছে। বাহাত্তর ঘন্টার মধ্যে তুমি ওকে পার্টি থেকে বহিষ্কার করতে বাধ্য হবে। বলতে পারো আমার কলমের জোড়ে তুমি বাধ্য হবে। তারপর বারো ঘন্টার মধ্যে ও পৃথিবীর আলো আর দেখতে পাবে না।

তোমার তৈরি আইনেই আমি ওকে পৃথিবী থেকে সড়িয়ে দেবো।
এনকাউন্টার।
ভারতীয় সংবিধানে যার কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা নেই।
আর একটা কথা বলে রাখি, এনকাউন্টার স্পেশালিস্টরা সরকারী গুন্ডা। ডাক্তারের যেমন মানুষ মারার অধিকার আছে। ওদেরও আছে। এই খেলাটা আমি এখন খুব নিপুন হাতে খেলি।
চল মিত্রা চল। আমার এখেনে দাঁড়িয়ে থাকলে চলবে না। আমার সমস্ত ছক ওলট পালট করে দিতে হবে। আবার নতুন করে পথা চলা শুরু করতে হবে।

কিরে তুই এখানে বসে আছিস। অফিসে যাসনি। বার বার করে তোকে কাল রাতে বলেছি।
ঘুমের ঘোরটা কাটতে একটু সময় লাগলো। মাথায় ঘুরিয়ে চারদিক দেখলাম। ঘর ভর্তি লোক। অনাদি বাসু আমার দু’হাত চেপে ধরে আছে। চিকনা আমার পায়ের ওপর বসে পাদুটো জাপ্টে ধরে আছে। আমার মাথার শিয়রে বড়মা ছোটমা দামিনী মাসি। আমার মুখের কাছে ডাক্তারদাদার মুখটা এগিয়ে এলো। চোখদুটো ছল ছল।
বড়মা।
এইতো আমি। গলাটা ধরা ধরা।
আমার মাথায় হাত রাখলো।
মিত্রা ওখানে কাঠ হয়ে বসে আছে কেনো। তুমি ওকে খাইয়ে অফিসে পাঠাওনি কেনো।
উনি মিত্রা নন, সুতপা।
হাতটা টানতে চেষ্টা করলাম। অনাদি বাসু হাত চেপে ধরে আছে।
ছাড় না। তোরা কি করতে এসেছিস। ওখানে কাজ নেই। সব ফেলে চলে এসেছিস। আগামী সপ্তাহে গিয়ে সব হিসেব নেবো। মাথায় রাখিস।
উঠে বসার চেষ্টা করলাম।
এখন না একটু পরে। ডাক্তারদাদা বললেন।
কেনো! আমার কিছু হয়নি। তোমরা এই টুকুতে ঘবড়ে যাচ্ছ কেনো।
বৌদির দিকে তাকিয়ে, হেসে ফেললাম।
আজ বিকেলে তোমার কাছে যেতাম। তোমাকে ফোন করে জানিয়েছি তো। মিত্রাকে দেখেছো ? সকালে এলে! সত্যি আমার একটা ভুল হয়ে গেছে। ম্যাসেজটা করা উচিত হয়নি। তখন ঠিক মাথাটা কাজ করেনি বুঝলে।
তোমার সঙ্গে বড়মা ছোটমা দামিনী মাসির পরিচয় হয়েছে।
বৌদি এগিয়ে এলেন, মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।
কথা বলিসনা। গলাটা ধরা ধরা।
তোমরা সবাই কাঁদছো কেনো বলোতো ?
এ ঘরে ভিড় করে আছো কেনো ? সত্যি বলছি আমার কিছু হয়নি। দেখো আমি স্ব-শরীরে বেঁচে আছি। আমি মরবো না। এখনো অনেক কাজ বাকি আছে।
কই স্ট্রংম্যানের ঘুম ভেঙেছে।
অনিমেষদা এখানে! বৌদি!
মাথাটা তোলার চেষ্টা করলাম।
না না এখন না।
দাদা আপনি এখানে!
বিধানদা আমার দিকে ফ্যাকাশে মুখে তাকিয়ে।
না জানিয়ে একটা বড় অন্যায় করে ফেলেছি দাদা। ক্ষমা করবেন। এছাড়া আমার আর কোনো উপায় ছিলোনা।
তোকে কথা বলতে হবে না।

আমার ঘুম হয়ে গেছে। এবার উঠি। বড়মা, মিত্রা কোথায়। ওকে দেখছিনা কেনো।
 
মিত্রা আমার সামনে এলো।
কিরে তোর চোখ দুটো এতো ফোলা ফোলা ? কাঁদছিস ? কেনো! তোদের নিয়ে সত্যি মহা মুস্কিল। যা অফিসে চলে যা তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে।
মিত্রা আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।
কথা বলছিস না কেনো!
নাঃ শুয়ে থাকলে হবে না। এবার উঠি। না উঠলে তোরা সব গন্ডগোল পাকাবি।
ওঠার চেষ্টা করলাম।
তুই উঠতে পারবি। ডাক্তারদাদা বললো।
খুব পারবো।
আস্তে আস্তে উঠে বসলাম। ঘরের চারিদিক তাকিয়ে দেখলাম। হেসেফেললাম। তোমরাও পৌঁছে গেছো। সত্যি টিনা খুব বড় অন্যায় হয়ে গেছে। আরে বৃথা ভয় পাচ্ছ।
বড়মা।
বল।
তোমরা সবাই আমাকে ঘিরে এভাবে বসে আছো কেনো বলোতো। আমার কি হয়েছে ? ডাক্তারদাদার মুখটা কেমন শুকনো শুকনো। তোমাদের চোখ ফোলা ফোলা। দাদা মল্লিকদা কোথায়।
নিচে।
এই ঘরে আস্তে মানা করে দিয়েছো।
না।
ছোট।
আমি ছোটমার গলা জড়িয়ে ধরলাম।
ডাকতে পারতে। উঠে পরতাম, ভয় পাওয়ার কি আছে।
এই দেখো আবার কাঁদে। কাঁদলে কিন্তু অনি হাওয়া। আর পাত্তা পাবেনা।
ছোট আমার মুখটা চেপে ধরলো।
একটু চা খাওয়াও।
আমি একা কথা বলে যাচ্ছি। সবাই চুপচাপ। সবাই কেমন সন্দেহের চোখে আমাকে দেখছে।
একটু চা খাওয়াবে।
ছোট যাও একটু চা করে নিয়ে এসো। ডাক্তারদাদা বললো।
ডাক্তারদাদা তুমি ফিউজ কেনো।
তোর শরীরটা একটু প্রবলেম দিচ্ছিলো।
আমার!
হ্যাঁ।
তোহলে তোমার ডাক্তারী শাস্ত্র ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছে।
হবে হয়তো।
তুমি এভাবে বলছো! তুমিতো সহজে হারমানবার পাত্র নও।
ডাক্তারদাদা মুখ নীচু করে রয়েছে।
মিত্রা টেবিলের ওপর থেকে আমার ফোনটা দে।
কেনো কি করবি।
দরকার আছে, দেনা।
ডাক্তারদাদা ইশারা করলো। অনিমেষদা, বিধানদা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
বৌদি, সুরো এসেছে নাকি ?
হ্যাঁ।
কোথায় ?
নীচে।
তোমরা বসো আমি একটু আসছি।
কোথায় যাবি।
ছোটর ঘরে।
না তুই এখন যাবিনা। বড়মা বললো।
কেনো আমার কি হয়েছে!
কিছু হয়নি।
তুমি রাগ করছো আমার ওপর।
বড়মা মাথা নীচু করলো।
তোরা কখন এসেছিস। অনাদির দিকে তাকিয়ে বললাম।
সাড়ে আটটা।
কটা বাজোগো বড়মা।
সাড়ে এগারোটা।
ইস। তোমরা আমাকে ডাকলেনা কেনো।
সবাই চুপ।
মিত্রা মোবাইলটা এনে দিলো।
কিরে মোবাইলটা ওখানে ছিলোনা ?
না।
আমার সাথে একটু আয়তো।
কোথায় ?
ছোটর ঘরে।
যেতে পরবি।
কেনো বলতো ?
এমনি।
চল।
আমি খাট থেকে নেমে দাঁড়ালাম।
সবাই ইশারায় কথা বলছে। বুঝতে পারছি।
আমি মিত্রার সঙ্গে ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। আমার পেছন পেছন টিনা মিলি অদিতি। দেবাশীষ বারান্দায় থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে। ঘর থেকে বেরোবার সময় ওর পিঠে একটা চাপর মারলাম। ও মুখ টিপে ফ্যাকাশে হাসি হাসলো।
আমি ছোটমার ঘরে এসে ঢুকলাম। মিত্রা আমার পাশে।
হ্যাঁরে কি হয়েছে! সবাই এরকম বিহেভ করছে কেনো!
টিনা মিলি অদিতি আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে।
তুই ঠিক আছিস।
কেনো মিলিকে চুমু খেয়ে প্রমাণ করবো, ঠিক আছি কিনা।

তুই সত্যি বলছিস।
তোদের মাথা খারপ হয়েছে।
নাগো অনিদা এতোক্ষণ তোমার কোনো সেন্স ছিলনা। টিনা বললো।
কি পাগলের মতো বলছো।
দাঁড়াও আমি বাথরুম থেকে আসি। মিত্রা আমার পাজামা পাঞ্জাবী নিয়ে আয়।
মিত্রা ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। আমি ছোটমার বাথরুমে ঢুকলাম। ভালো করে হাত মুখ ধুলাম। ছোটমার পেস্ট দিয়ে দাঁত মাজলাম।
কিরে। কতো দেরি।
দাঁড়া খুলছি।
দরজা খুলে ওর হাত থেকে পাজামা পাঞ্জাবী নিলাম। টিনারা ছোটমার খাটে বসে আছে। মিত্রাকে ফিস ফিস করে বললাম ভাতরে আসবি। ও ফ্যাকাশে হাসি হাসলো।
আমি চেঞ্জ করে বেরিয়ে এলাম। একেবারে ফিট লাগছে। ফোনটা হাতে নিয়ে অর্ককে একটা ফোন করলাম।
কোথায় আছিস ?
কেনো দাদা। তুমি ঠিক…..।
ত ত করছিস কেনো।
না মানে।
আমার কাজ কতোদূর।
হয়ে গেছে।
তার মানে।
চ্যাপ্টার ক্লোজ।
তুই কোথায় ?
নিচের ঘরে।
নিচের ঘরে!
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি আর ওদের দিকে তাকালাম না। নিজের ঘরেও গেলাম না। সোজা তড়তর করে সিঁড়িদিয়ে নিচে নেমে এলাম। সিঁড়ির মুখ থেকেই দেখলাম, দাদা মল্লিকদা ইসলামভাই ডাক্তারদাদা অনিমেষদা বিধানদা দাঁড়িয়ে। মিত্রা আমার পেছন পেছন, বুবুন বুবুন বলে ছুটতে ছুটতে নিচে নেমে এলো। একটা হুলু স্থূলুস কান্ড বেঁধে গেলো সারা বাড়িতে।
আমি সবাইকে পাশ কাটিয়ে বসার ঘরে ঢুকলাম। দ্বীপায়ন অর্ক সায়ন্তন সন্দীপ খাওয়ার টেবিলের চেয়ারে বসেছিলো। আমাকে দেখে উঠে দাঁড়ালো।
কিরে তোরা এখানে!
আমি ডেকে পাঠিয়েছি। অনিমেষদা বললো।
আমার ল্যাপটপ এখানে কেনো।
আমি নিয়ে আসতে বলেছি। অনিমেষদা ফের রিপিড করলো।
কেনো, আমি কি তোমাকে বলতাম না। মাথা নীচু করে বললাম।
কেনো আমি বিধানবাবু এখানে এসেছি, তুই কিছু বুঝতে পারছিস না।
বুঝতে পারছি।
তাহলে।
আমিতো তোমার কাছে যেতাম।
আমি এসেছি। খুব অন্যায় করেছি।
এভাবে তোমায় এবাড়িতে আনতে চাইনি। আমার একটা ছোট্টভুলে এই ঘটনা ঘটলো। আর কোনোদিন এই ভুল করবোনা।
তুই ওই ভুলটা না করলে আমি আর বিধানবাবু যে অনেক কিছু জানতে পারতাম না। সেখানে হয়তো ভুল পদক্ষেপ নেওয়া হয়ে যেতো।
তারমানে তুমি সব জেনে ফেলেছো।
সব নয়, বলতে পারিস কিছুটা।
ইসলামভাই।
বল।
আবিদ ফিরে এসেছে।
হ্যাঁ।
কোথায়।
বাগানে।
তোকে চিন্তা করতে হবেনা। আমি তোর হয়ে সব ব্যবস্থা করছি।
না তুমি করবে না। তোমার মতো পবিত্র লোকের কাজ এটা নয়।
অনিমেষদা আমার সামনে এসে দাঁড়ালো।
আমি মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে। আমার দুই কাঁধে হাত রাখলো।
আমার দিকে তাকা। আমাকে দাদা বলিস।
মাথা দোলালাম।
পিতার মতো শ্রদ্ধা করিস।
মাথা নীচু করে রইলাম।
কাল যেমন সমস্ত শোনার পর তোর মাথার ঠিক ছিলোনা, আজ সকালে তোর ঘরে ঢুকে আমারও মাথা কাজ করেনি। তোর বোন কাল রাত থেকে এক গ্লাস জলও খায়নি। তার দাদার এই অবস্থার জন্য সে আমাকে দায়ী করেছে। তোর বৌদির এরকম মুখের ভাষা আমি আজও পর্যন্ত জীবনে শুনিনি। এবার বল আমার কি করার থাকতে পারে। আমার জায়গায় তুই থাকলে কি করতিস।
তুমি যা করেছো, আমিও তাই করতাম।
তাহলে আমরা পাঁচজন আজ তোর সঙ্গে একটু বসবো। ওরা সকলে সিপাই, তুই সেনাপতি। এরা তোর কাজের কোনো হদিস দিতে পারছে না।
ডাক্তারদাদা ?
ডাক্তার আজ জীবনে প্রথম ভয় পেয়েছে।
কেনো, আমি করলাম!
কি করিস নি ?
আমি অনিমেষদার দিকে তাকালাম।
তুমি সব দেখেছো।
ওইযে তোকে বললাম, যতোটুকু হাতের কাছে ছিলো।
বিধানদাও দেখেছেন ?
হ্যাঁরে অনি দেখেছি। না দেখলে তোর ওপর একটা ভুল ধারণা হতো।
ইস। মিত্রা তুই আমার যোগ্য তৈরি হতে পারবিনা।
না হলে মঙ্গল। অন্ততঃ সংসারটা ভালো করে করতে পারবে।
হেসেফেললাম।
তুই তো তোর এই হাসি দিয়ে সকলকে ঘায়েল করলি।
তোমরা চা খাও। আমাকে একটু একা থাকতে দাও। সুরোকে একটু আমার ঘরে পাঠাও। মিত্রা তুইও আয়।
তুই মাথা থেকে সব ব্যাপারগুলো মুছে ফেল। অনিমেষদা চেঁচিয়ে বললো।
আমি বসার ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। দাদার ঘরে কারা যেনো বসে আছে। বাগানে ভর্তি লোক। নিচের বারান্দার এক কোনে রতন নেপলাকে দেখলাম। মুখটা শুকনো। আবিদকে দেখতে পেলাম না। সিঁড়ি দিয়ে উঠে ওপরে চলে এলাম। আমার ঘরে কেউ নেই। পরিষ্কার হয়ে গেছে। খাটে একটা নতুন চাদর পাতা হয়েছে। ভজুরামকে আশে পাশে দেখতে পেলাম না।
আমি সোজা জানলার পাশে এসে দাঁড়ালাম। আমগাছটায় নতুন বোল এসেছে। একটা মিষ্টি গন্ধ চারদিকে ম ম করছে। আম গাছের ঠিক নীচে পেয়ারা গাছটা। না এখন সেই টিয়া দুটো নেই। অনেক পেয়ারা হয়েছে। কয়েকটা একেবারে হলুদ হয়ে গেছে। আম গাছের একটা ডালে চোখ পরে গেলো। একটা কাকা তার বাসায় চুপ্টি করে বসে আছে। বুঝতে পারলাম। এটা মা কাক। সবে মাত্র ডিম দিয়েছে। তা দিচ্ছে। একবার আমার দিকে জুল জুল করে তাকালো। বাবা কাকটা মুখে করে খাবার নিয়ে এসে মা কাকটাকে খাইয়ে দিলো।

মিত্রা এসে আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।
 
আমি ওর হাতটা চেপে ধরে বললাম দেখ মিত্রা, ওই ডালটার দিকে তাকিয়ে দেখ। মা কাকটা কি শান্তিতে চোখ বুজিয়ে ডিমে তা দিচ্ছে। ওদের পৃথিবীতে কোনো হিংসা নেই। কোনো হানা-হানি নেই। ওরা যে অশিক্ষিত। ওদের চাহিদা ভীষণ সীমিত।
আবার কাঁদে। তুই কেঁদে পৃথিবী জয় করতে পারবি না।
আমি সুরো, অনিদা।
এমা, এই দেখ আবার ভুল করে ফেললাম।
সুরোর হাতের অর্গল খুলে, ওর মুখো মুখি দাঁড়ালাম।
তুমি মিত্রাদিকে এইসব দেখাও ?
আমি ওর ঠোঁটে আঙুল ছোঁয়ালাম। চোখের পাতায় শিশিরের ছোঁয়া।
মিত্রাদি নয় বৌদি।
সুরো কান্না ভেঁজা চোখে হেসেফেললো। মিত্রা দূরে দাঁড়িয়ে হাসছে। আমি সুরোকে বুকের সঙ্গে জাপ্টে ধরলাম।
কিরে আমার বিয়েতে সাজবিতো ?
তোমার বিয়েতো হয়ে গেছে।
না এখনো হয়নি। তোর জন্য শুধু বিয়ে করবো। আয় মিত্রা কাছে আয়।
মিত্রা এগিয়ে এলো।
দেখতো তোর বৌদিকে পছন্দ কিনা।
দারুণ দেখতে।
মিত্রা হাসছে।
দুর চোখদুটো দেখেছিস কেমন লক্ষ্মীটেরা, ঠোঁটটা দেখ ছেলেদের মতো মোটা মোটা।
একবারে বাজে কথা বলবেনা। আমার বৌদি।
সুরো মিত্রাকে জড়িয়ে ধরলো।
সেই কলেজ লাইফে পটকে দিয়েছিলাম, বুঝলি।
সুরো খিল খিল করে হেসে উঠলো।
তখন আমি ক্লাস সিক্সে পড়ি নাগো অনিদা।
ঠিক বলেছিস।
তুমি মাকে এসে রান্নাঘরের সামনে দাঁড়িয়ে গল্প বলতে।

তোর মনে আছে।
তুমি বৌদিকে সেই ডানকুনির গল্পটা বলেছো।
উরি তৎতড়ি, তোর সব মনে আছে!
সব।
কোনটারে বুবুন।
সেই শীতলার থানের ব্যাপারটা।
ফেরার সময় জলে ফেলে দিলি সব।
হ্যাঁ।
তখন তুই সুরোকে পরাতিস।
কিরে বল তোর বৌদিকে।
তুমি বৌদিকে তুই তুই করছো কেনো। তুমি বলতে পারছো না।
জব্বর প্রশ্ন। আরে এসো এসো ভেতরে এসো।
টিনা মিলি দেবা নির্মাল্য অদিতি নীপা গেটের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে।
দেবা আমাকে একটু বাঁচাতে পারবি।
তোকে! না।
তুই শুনলিই না আমার কথাটা।
বল শুনি।
সুরোকে চিনিস।
আজ দেখলাম। শুনলাম ও অনিমেষদার মেয়ে।
সুরো জানিষতো তোর বৌদি আমি আর দেবাশীষদা এক ইয়ারের ছাত্র। আর এরা আমাদের জুনিয়ার। সাবই কিন্তু আমাদের কলেজের ছাত্র ছাত্রী।
তাই!
সুরো ঝপাঝপ সবাইকে প্রণাম করলো। ওরা কেউ নিতে চাইলো কেউ চাইলোনা।
আর ওটা হচ্ছে নীপা। এই বছর পরীক্ষা দিয়ে ফেল করেছে।
ওর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছে। কি ভালো ছাত্রী। তুমি ফেল করেছে বলছো কেনো।
সবাই হেসে ফেললো।
জানিস দেবা সুরো এবার এমএ সেকেন্ড ইয়ার। আমাদের কলেজ থেকেই পরছে। কিরে আর একটা ব্যাপার বলবো নাকি।
না একবারে বলবে না।
আমাদের মতো কেস। মিলি বললো।
সামান্য।
সুরো ছুটে এসে আমার মুখ চেপে ধরলো।
একবারে বলবেনা। খুব খারাপ হয়ে যাবে।
ঠিক আছে বলবোনা।
বুঝলি দেবা সুরো একটা খুব কঠিন প্রশ্ন করেছে। তুই উত্তরটা বলে দে।
মিত্রা ফিক করে হেসেফেললো।
সুরো আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো। আমি তোমাকে করেছি, তুমি বলবে, দেবাদা বলবে কেনো।
ওতো আমাদের সঙ্গেই একসঙ্গে পড়াশুনো করেছে, ওর একটু হেল্প নিই।
না।
বলনা সুরো কি বলেছে একটু শুনি।

মিত্রাকে কেনো আমি তুই বলি, তুমি বলিনা।
জব্বর প্রশ্ন। এর উত্তর আমি দিতে পারবোনা। তোমরা দিতে পারবে।
মিলিদের দিকে তাকালো দেবা।
ঠিক বলেছে সুরোঞ্জনা। টিনা বললো।
দেখেছো দেখেছো আমার কথাটা সবাই মেনে নিলো।
ঠিক আছে আগে বিয়ে করতে দে। আমিতো এখনো বিয়েই করিনি।
আবার সকলে হো হো করে হেসে উঠলো।
ছোটমা চায়ের ট্রে নিয়ে ঘরে ঢুকলো। টিনা ছুটে চলে গেলো। ছোটমার হাত থেকে ট্রেটা নিলো। মিলি নীপা এগিয়ে গেলো।
ছোটমা মিটি মিটি হাসছে।
ছোটমা ছোটমা বলে সুরো গিয়ে ছোটমাকে জড়িয়ে ধরলো।
ছোটমা তুমি বলো, কেনো অনিদা বৌদিকে তুই বলবে।
ছোটমা একবার আমার দিকে তাকায়, একবার মিত্রার দিকে তাকায়, তারপর হো হো করে হেসে ফেললো।
তুমি হাসলে যে।
তোর অনিদাটা পাগল। দেখলিনা সকাল থেকে সবাইকে কেমন নাচালো।
তুমিইও অনিদাকে পাগল বলো।
কেনো আর কেউ বলে নাকি ?
বাবা বলে মা বলে। কই আমিতো বলিনা।
তুইও বলবি, দুদিন পর। যেদিন ওর পাগলামো চলে যাবে, সেদিন থেকে তুমি বলবে তোর বৌদিকে।
সুরোর চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে, ও ছোটমার কথাটা ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না।
কি বিশ্বাস হচ্ছেনা।
না।
ঠিক আছে তোকে পরে বলবো।
সবাই হাসছে।
ছোটমা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, হিমাংশু এসেছে। সঙ্গে আরো পাঁচজন। সবাই নাকি ডাক্তার। তুই মেডিকেলে কলেজে আড্ডা মারতে যেতিস। তখনকার সব বন্ধু। আর কোথায় কোথায় যেতিস একটু বলিস। এবার নামের লিস্টি বানাতে হবে।
সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
ওরা কোথায় ?
সামন্তদার সঙ্গে কথা বলছে। তোর গুণ কীর্তন করছে। তার মধ্যে একটাকে ওঝা সেজে ঝেঁটা মেড়ে ভূত তাড়িয়েছিলি। সে নাকি এখন নামকরা চাইল্ড স্পেশালিস্ট।
সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
কিরে অনি। ছোটমা কি বলে। দেবা বললো।
দূর ভুলভাল বোকছে।
ছোটমা এগিয়ে এলো। দেবো কান মূলে।
এমা তুমি এখনো অনিদার কান ধরো। সুরো বলে উঠলো।
কান না ধরলে তোর বৌদিকে তুই বলবে, তুমি বলবেনা।
তাহলে ঠিক আছে।
সবাই হাসলো।
এই দেখ কারা এসেছে। হিমাংশু গেটের মুখে।
ওরা সকলে ঘরে ঢুকলো। আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
কিরে ওঝা। আমার ভূত তাড়ালি, তোকে কি করে ভূতে ধরলো। নিশ্চই সরষেতে ভেজাল ছিলো। নীরব বলে উঠলো।
সবাই হো হো করে হসে উঠলো। ঘরটা গম গম করে উঠলো।
ছোটমা মুখে কাপর চাপা দিয়েছে।

বিয়ে করলি, খবর পর্যন্ত দিলিনা। কনিষ্ক বলে উঠলো।
তোকে কে বললো আমি বিয়ে করেছি।
নীরু তুই ড্রেসটা চেঞ্জকর। ছোটমা একটা মুড়ো ঝেঁটা জোগাড় করে দিনতো। নীরু ওর ভূতটা ছাড়াক। সাত্যকি বলে উঠলো।
সাত্যকি তুই অনিকে ধর, আমি (অনিকেত) বটা (বটুকেশর) ওর ঠ্যাংটা ধরছি কনিষ্ক পাজামা পাঞ্জাবীটা খুলুক। নীরু কাজ শুরু করুক।
আবার সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।
তোরাতো আমার প্রেস্টিজে গ্যামাকসিন মেরেদিবি।
গ্যামাকসিন উঁচু দরের মাল আমরা ডিডিটি নিয়ে এসেছি। তোকে মুখ ধোয়াবো।
সবাই হাসছে।
তোর বৌ কোথায়। কনিষ্ক বললো।
এই ঘরে আছে, খুঁজে নে।
যা হালা। এতগুলো মাইয়ার মধ্যে খুজুম কমনে। নীরব বলে উঠলো।
তুই নাকি চাইল্ড স্পেশালিস্ট।
লোকে বলে। তবে সার্টিফিকেটটা জাল কিনা তোর যখন হবে তখন জানতে পারবো।
আমি ক্যারি করবোনাকি!
দেখলি দেখলি বটা। স্বভাবটা এখনো যায়নি।
তুই একটা মাঝে বৌ বসিয়ে দিতে পারতিস। অনিকেত বললো।
ছোটমা ঠিক জমছেনা। আপনি এক কাজ করুণ একটু চায়ের ব্যবস্থা করুণতো। কনিষ্ক বলে উঠলো।
ছোটমা মুখে কাপর চাপা দিয়ে চলে গেলো।
ছোটমা সবেমাত্র গেটের বাইরে পা দিয়েছে। কনিষ্ক জাপ্টে ধরলো। কাজ শুরু কর। ওরা ছুটে এলো।
করছিস কি। বাচ্চা বাচ্চা মেয়ে গুলো আছে।
সব চৌবাচ্চা।
ঘরে হাসি আর থামছে না।
বল বৌ কোনটা।
হ্যাঁরে বটা একটা কপাল ফাটা আর সব ফর্সা। নীরব সুর করে বলে উঠলো।
তোকে আর বড়ে গোলাম আলি হতে হবে না। বটা খিঁচিয়ে উঠলো।
সবাই হাসছে টিনা মিলি নীপা সুরো পেটে হাত দিয়েছে।
বলে দেনা অনি। নীরু বললো।
ওই জন্য তোকে ঝেঁটা পেটা করেছিলো। অনি কি তোর বৌ। বটা বললো।
হাসি আর থামছে না। মিত্রাদি তুমি নিজে পরিচয় করে নাও, অনিদার আর দরকার পরবেনা। আমরা আর পারছিনা। মিলি বলে উঠলো।
কিরে বটা, সেই মিত্রা! সাত্যকি বড় বড় চোখ করে বললো।
কোনটা বলতো।
ওই যে বীণা সিনেমা। ছোঁবো কি ছোঁবো না, পরেছি যাতনা…..।
আমরাতো মালটা দেখিনি কখনো।
দেখবি কি করে বনেদী না। সোফার গাড়ির দরজা খুললো। উনি নামলেন। সোফার গাড়ির দরজা বন্ধ করলো। উনি চলে গেলেন। কণিষ্ক ক্যারিকেচার করে দেখালো।
সবাই হাসছে।
তুই ঠিক দেখাতে পারলি না। মৈনাক ব্যাপারটা ফ্যানটাসটিক দেখাতো। বটা বললো।
মৈনাক আর একটা জিনিষ ভালো দেখাতে পারতো। হিমাংশু বলে উঠলো।
অনির ডায়লগ। বটা বললো।
আমি মিত্রার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম।
কণিষ্ক চেঁচিয়ে উঠলো, তুই আর একটু দেরি করলে কানকি মারতাম।

আমি কনিষ্ককে একটা লাথি মারলাম। হারামী।
 
বটা চেঁচিয়ে উঠলো, সাত্যকি অনি শুরু করে দিয়েছে। আমরা ফিনিশ করবো।
গুরু মালটা ভালো ফাঁসিয়েছো। অনিকেত বললো।
মিত্রা বেশ এনজয় করছে ওদের কথাবার্তা। ওর চোখে মুখে ফুটে উঠেছে তার অভিব্যক্তি। আমি একে একে সকলের সঙ্গে ওদের পরিচয় করিয়ে দিলাম। কখন যে বাসু অনাদি চিকনা এসে ঘরে দাঁড়িয়েছে খেয়াল করিনি। ওদের সঙ্গেও আলাপ করিয়ে দিলাম।
আচ্ছা নীরু আমরা অনির বউকে কি বলবো। বৌদি না ম্যাডাম না নাম ধরে ডাকবো। কনিষ্ক বললো।
আমরা বৌদি বলবো।
সেগো। বৌদি বাজি করতে ভালো লাগবে না। বটা ঝেড়ে একটা লাথি মারলো নীরবের পাছায়।
জানেন ম্যাডাম অনির গল্প নিয়ে এখনো আমরা সারারাত কাটিয়ে দিই। বলতে পারেন অনি স্পেশাল নাইট। অনিকেত বললো।
একটা গল্প বলুন শুনি। মিত্রা বললো।
বলুন বললে হবে না। বলো বলতে হবে। তবেনা একটু একটু দুর্বলতা আসবে। কনিষ্ক বললো।
বটা কনিষ্ককে একটা ঝেড়ে লাথি মারতো কি সব অসভ্য কথা বলছে। নীরু বলে উঠলো।
তোকে। অনিকেত চেঁচিয়ে উঠলো।
ঘরের কেউ গম্ভীর নেই।
বলতে পারি ম্যাডাম। আপনারা সবাই খাটে বসুন। আমি দেখাচ্ছি। বটা বললো।
সবাই হুরুম দুড়ুম করে খাটে উঠে বসলো। কেউ পাশে সড়ে দাঁড়ালো। বটা সোজা চলে গেলো দরজার কাছে।
ধরে নিন আমি অনি। চুলটা উস্ক খুস্কো। আপনারা যেমন সবাই খাটে বসে আছেন। তখন আমরাও হোস্টেলের খাটে বসে গল্প করছি। অনি ঢুকলো। চোখমুখটা খুব শুকনো শুকনো।
কিরে। কি হয়েছে।
বলছি বলছি। জলের বোতলটা আগে দে।
জলের বোতল এগিয়ে দিলাম। ঢক ঢক করে জল খেলো।
কিরে বলবিতো কি হয়েছে।
বহুত জোর কেলানির হাত থেকে বেঁচে গেছি বুঝলি। এখনো পালিয়ে পালিয়ে বেরাচ্ছি।
কেনোরে!
নীরু চা খাওয়া।
নীরু চা নিয়ে এলো। অনি চিরটাকাল নীরুকে অত্যাচার করেছে। নীরু যদি ওর বৌ হতো তাহলে খরপোষ আদায় করে ছারতো।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
চা খেয়ে দিয়ে বলে। শিয়ালদায় কোন মেয়ে ট্রেনে বসেছিলো বাজি করে একটা মোগলাই পরোটার জন্য তাকে চুমু খেয়েছে। সেদিন আমরা সবাই অনির ঠোঁটে দশবার করে চুমু খেয়ে, সেই মেয়াটাকে চুমু খাওয়ার স্বাদ মিটিয়েছিলাম।
সবাই হাসতে হাসতে গড়িয়ে পরে।
সেদিন কিভাবে অনিকে চুমু খেয়েছিলাম তোমাকে দেখাবো।
মিত্রা হাসতে হাসতে টিনার ওপর গড়িয়ে পরেছে। মাথা দুলিয়ে বলছে না না।
মিলি হাসতে হাসতে চোখে জল বার করে দিয়েছে।
সেই মেয়েটাকে দেখবে। মিত্রা বললো।
ধারে কাছে কোথাও আছে! ম্যাডাম প্লিজ একটু দেখাও। দু’চোখ ভরে তাকে একটু দেখি। শয়নে স্বপনে তাকে কতবার দেখেছি বলতে পারবো না। আরো কি কি হয়েছে বলা যাবে না। কিন্তু এই চর্ম চক্ষু দিয়ে তাকে এখনো দেখা হয়নি। সাত্যকি বলে উঠলো।
এই সেই মেয়ে। মিত্রা মিলিকে জড়িয়ে ধরলো।
কেনো তোমার সঙ্গে আমার পাঁচ বছর আগে দেখা হলো না। তাহলে তোমাকেই বিয়ে করতাম। নীরু সুর করে বলে উঠলো।
বটা এমন ভাবে নীরুর ঘারটা চেপে ধরলো নীরু খেঁকিয়ে উঠে বললো। অসভ্য কোথাকার।

আবার হাসি।
ছোটমা চায়ের ট্রেনিয়ে ঘরে ঢুকলো। নীপা সুরো এগিয়ে গেলো।
কিরে তোদের হাসি এখনো থামলোনা। ওপরে হাসি নীচে হাসি। কতো হাসবো বলতো।
সব অনি ? বটা বললো।
আর কে হবে বলোতো।
ছোটমা আমার দিকে তাকালো।
চা খেয়ে সব রেডি হয়ে নাও। খাবার রেডি।
আমরা চলে যাবো ছোটমা। হাসপাতালে রাউন্ড আছে।
খেয়ে যাবে।
দেরি হয়ে যাবে।
বড়মাকে বলে যেও।
এইতো, একেবারে রাজার মুখে ঠেলে দিলে। ঠিক আছে মনে থাকবে।
ছোটমা বেরিয়ে গেলো।
চা খাওয়া হলো, গল্প হলো। হাসা হাসি হলো।
হিমাংশুর মুখ থেকে তোর সব ব্যাপার শুনলাম। তবে পুরো না একটু একটু। বলতে পারিস পটেটো চিপস।
হাসলাম।
তোরা খবর পেলি কি করে আমাকে ভূতে ধরেছে।
সকালে নিউজ দেখে মাথা খারাপ। তারপর দেখলাম তুই নিউজটা করেছিস। ভাবলাম কিছু হয়েছে কিনা। তোর নম্বর আমাদের কাছে নেই। নীরুকে ফোন করতেই বললো। হিমাংশুকে ফোন কর ও ডিটেলস দিয়ে দেবে। হিমাংশুকে ফোন করতেই সব ছোটো হয়ে গেলো। আউটডোর সেরেই বেরিয়ে এলাম। জুনিয়ার গুলোকে বলে এলাম, তোরা একটু সামলা। বিকেলে আসছি।
তোরাকি সবাই মেডিকেলে আছিস।
আবার কোথায় যাবো ?
অন্য জায়গায় পাঠালেই চাকরি ছেড়ে দেবো। প্র্যাক্টিশে মন দেবো।
এখন করছিস না।
নার্সিংহোম।
বিন্দাস।
স্যারের মুখ থেকে কিছুটা শুনলাম। এবার তোর এখানে ঘনো ঘনো আসতে হবে।
আমাকে পাবি না। মিত্রাকে পাবি। অসুবিধে হবে না।
তাহলেই হবে। নীরু বললো।
কেনো বৌ দেয় না। দেবোনা দেবোনা বলে। বটা চিবিয়ে চিবিয়ে বললো।
দেখলি কনিষ্ক বটাটা কিরকম অন্য মানে করলো।
সবাই হাসছে।
মিত্রাকে বললাম যা তোরা রেডি হয়ে নে। আমরা একটু বসে কথা বলি।
ওরা উঠতে চাইছিলো না। তবু উঠতে হলো। সবাই বেরিয়ে গেলো।
সিগারেট খাওয়া শুরু করেছিস না একনো সতী আছিস।
খাই মাঝা মাঝে।
খাবি।
দে।
বটা তোরটা খালি কর।
বটা প্যাকেটটা বার করতে নিমেষে খালি হয়ে গেলো।
তোর কি হয়েছিলো বলতো। কনিষ্ক বললো।
জানিনা।
স্যারের মুখ থেকে শুনলাম।
কি শুনলি বল। তারপর বলতে পারবো।
আমরা যখন টেনে পরি তখন ওর একবার এরকম হয়েছিলো। আমাদের ওখানকার গুণীন কাকা দেখে বললো ওকে পীরবাবা ভর করেছে। চিকনা বলে উঠলো।
কিরে! এইসব কি শুনছি। তুই কি শেষে সব ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে মাদুলির ব্যবসা শুরু করবি। না পীর সাহেব হয়ে যাবি।
কি জানি।
তোর ওই বন্ধু কি যেনো নাম।

চিকনা।
হ্যাঁ হ্যাঁ। আপনি ঠিক বলেছেন।
আপনি না তুমি।
সরি। বটা হেসে ফেললো।
তুই নাকি সেনস্লেস ছিলিস ঘন্টা পাঁচেক। মাঝে মাঝে তোর নিঃশ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু পালস বিট ঠিক ছিলো। বডি টেম্পারেচার ঠিক ছিলো। প্রেসার ঠিক ছিলো। স্যারতো খুব ঘাবড়ে গেছিলো।
আমি বলতে পারছিনা কি হয়েছিলো। ভোররাতে শুয়েছি। মাথাটা প্রচন্ড যন্ত্রণা করছিলো। মিত্রাকে বললাম মাথাটা একটু টিপে দিবি। ও পাশে এসে বসে মাথায় হাত দিলো। তারপর আর কিছু জানি না। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখছি এই অবস্থা।
স্যার বললো তুই নাকি যোগাভ্যাস করিস।
তা করি। তোদের ডাক্তারি শাস্ত্রে কি বলে এই ব্যাপারটাকে।
পাতি ফিটের ব্যামো। কোনো ওষুধ নেই। যারা দেয় তারা ঢপ দেয়।
কি হয় এতে।
তুই যে কোনো সময় টেঁসে যেতে পারিস। আজও যেতে পারতিস। তাই সকলে ভয় পেয়েছিলো। এবং তোর সেন্স ফিরে আসতে কেউ ঠিক মতো বিশ্বাস করতে পারে নি।
তাহলে উপায়।
কয়েকদিন পড়াশুনো করি। রবিবার বলবো।
আমি হো হো করে হেসে ফেললাম।
চল দেরি করবোনা।
চিকনা ওদের একটু নিচে নিয়ে যা। আমি স্নান সেরে যাচ্ছি।
ওরা ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। আমি টাওয়েলটা নিয়ে বাথরুমে ঢুকলাম। বেশ সময় লাগলো। মিত্রা এসে দুবার বাথরুমের দরজা ঘট ঘট করে গেছে। আমি স্নান সেরে বেরোলাম। দেখলাম ঘরের দরজা বন্ধ করে মিত্রা খাটে বসে আছে। আমাদ দেখে উঠে দাঁড়ালো। চোখে মুখে হাসির ছটা।
আমি বেরোতেই এগিয়ে এলো।
কিরে ঘরের দরজা বন্ধ!
কাল থেকে অনেক জালিয়েছিস। এবার আমি একটু জালাই।
একবারে ঝামেলা করবিনা।
ঝামেলা। আমি খালি তোর প্রেস্টিজে গ্যামাকসিন দিই।
দিস তো।
সকাল বেলা এক ঘর লোকের সামনে আমার প্রেস্টিজে গ্যামাকসিন মেরেছিস। ওই সিচুয়েসনেও সকলে হেসেছে। আমার দিকে কট কট করে তাকিয়ে থেকেছে।
একবারে টাওয়েল ধরবিনা।
টাওয়েল ধরবিনা।
মিত্রা শুশুরি লাগছে। তোর শুশুরি লাগাচ্ছি।
আমি চেঁচাবো।
চেঁচানা চেঁচা। দেখি তোর কতো গলার জোর। নিচে এক ব্যাচ খেতে বসেছে। কেউ ওপরে আসবেনা।
কামরে দেবো।
কামড়া দেখি কতো তোর গায়ের জোড়। সকাল বেলা অনেক গায়ের জোড় দেখিয়েছিস। অনাদিরা পর্যন্ত হিমসিম খেয়ে গেছে।
সত্যি বলনা কি হয়েছিলো। তোর মতো।
আগে গালে দে।
দিলে বলবি।
যতটা দিবি ততটা বলবো।
তাহলে থাক রাতে শুনবো।
তোকে আর এক ঘন্টা পর থেকে পাবো না।
কেনো!
অনিমেষদারা এখানে মিটিং করবে। দাদা অফিসে গেছে। একটু বাদেই ফিরে আসবে। তোর হয়ে মল্লিকদা লিখছে। বাই নেমে।

মিত্রা আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
 
আমি ওর মুখটা তুলে ধরলাম। ওর আয়তো চোখ দুটি থিরি থিরি কাঁপছে।
তুই এতো সেজেছিস কেনো।
বড়মা বললো। লোকজন আসবে, একটু ভদ্র হয়ে থাক।
হাসলাম। ওর ঠোঁটে ঠোঁট রাখলাম। জড়িয়ে ধরলাম।
তুই দুর্বল হোস নি। তাহলে আমি হেরে যাবো।
তুইতো সকলকে কষ্ট দিস। নিজের কষ্টটা চেপে রেখে।
চুপটি করে কিছুক্ষণ দুজনে দাঁড়ালাম।
চল এখন থাক। নিচে যাই। নীরুরা খেতে বসেছে।
তোকে ওরা ভীষণ ভালবাসে। তুই যাসনা কেন ওদের কাছে ?
ভাইজ্যাক যাবার আগ একবার গেছিলাম।
তারপর ?
সময় পেলাম কোথায়।
মিত্রা আমার ঠোঁটে ঠোঁট রাখলো।
বেশ কিছুক্ষণ দুজনে দুজনকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে রইলাম।
ছাড়তে ইচ্ছে করছে না।
আবার পাগলামো করে।
এই পাজামা পাঞ্জাবীটা পর।
কেনো!
বড়মার হুকুম।
বাধ্য ছেলের মতো নতুন একটা পাজামা পাঞ্জাবী পরে নিচে এলাম।
টেবিলে আমার ডাক্তারবন্ধুরা আর হিমাংশু। নিচে আর সবাই। আমি নীরুরু পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম।
বড্ড ভালো খাইতাছি বুঝলি অনি। ডাক্তারগো ভীষণ লোভী হয়।
আমি একটা মুরগীর ঠ্যাং নীরুর পাত থেকে তুলে নিলাম।
নীরু সটাং উঠে দাঁড়ালো।
কি হলোরে!
কখন থেকে বটার লগে সামলায়ে রাখছি তুই কিনা ঝপ…….।
অনেক টেনেছিস। এবার ওঠ।
একিরে সবে মধ্য গগনে তুই উঠ কইলেই উঠুম।
বটা ঝেরে একখানা দেতো। কিছুটা নিচে নেমে যাক। কনিষ্ক বললো।
ছোটমা হো হো কের হাসতে হাসতে বললো। কিরে মিত্রা এতো সেই নাচের মতো কথা বলছে।
সেটাকি ছোটমা। নিশ্চই অনি স্পেশাল।
আবার হাসি।
সোনামনা এরকম করতে নাই। খাওনের সময় ঝামেলা করতে নাই। লক্ষ্মীমনি রাগ করবা এখন।
তোর বাঙাল ভাষা বার করছি, দেবোনা টিপে রগ ফেটে যাবে। বটা চিবিয়ে চিবিয়ে বললো।
আমি বটার দিকে তাকিয়ে ইশারা করতেই ও মুখ নীচু করে খিক খিক করে হেসে উঠলো।
তুই পুরোটা খাসনি। হাফ খেয়ে আমাকে দে। অনেকক্ষণ সামলে রেখেছি। ঠ্যাংটা খালি দেখেছি, আর ফ্রাইড রাইস টানছি। বিশ্বাস কর।
আমি একটু খেয়ে নীরুর পাতে রাখতেই, বটা ছোঁ মেরে নিয়ে নিলো।
বড়মা গ্যাটিস দেন।
সে আবার কি রে! বড়মা চোখ বড়ো বড়ো করলো।
সাবস্টিটিউট একখানা দাও। আমি নিয়ে নিলাম না। বটা বললো।
তারমানে! বড়মা অবাক হয়ে তাকিয়ে নীরুর দিকে।
সবিতো নিয়ে নিলো খেলাম কোই ?
বড়মা। দিলে কিন্তু সকলকে দিতে হবে। অনিকেত চেঁচিয়ে উঠলো।
বড়মা হাসতে হাসতে বললো তাই দিচ্ছি।
আর কারুর কপালে জুটবে না। তুমি অনিকে জিজ্ঞাসা করতে পারো। কনিষ্ক বললো।
তা হোক তোরা খেলেই আমাদের খাওয়া হবে।
দামিনী মাসি রান্নাঘর থেকে নিয়ে এসে সকলকে দিলো।
কনি অনি কিরকম মাঞ্জা দিয়েছে দেখেছিস। বটা বললো।
তোর হিংসে হচ্ছে। নীরু বললো।
বটা একবার তাকালো নীরুরু দিকে। অনিকে লেটেস্ট নিউজটা বলি।
কেনো। শান্তিতে খাচ্ছি, সহ্য হচ্ছে না।
কিরে বটা।
তোকে বলবো। তুইই একমাত্র পারবি সলভ করতে।
কনিষ্ক খিক খিক করে হেসে ফেললো।
আবার বোকার মতো হাসে। নীরু গম্ভীর হয়ে বললো।
নারে অনি কিছু না। বিয়ে করেছি তাই বলছে।
তুই বিয়ে করেছিস!
হ্যাঁ। বয়স হয়েছে বিয়ে করবো না।
কোনটারে বটা।
সেইটা। ঠমক ঠমক পায়েল বাজে……।

বটা এমন ভাবে শরীর দুলিয়ে সুরকরে বললো, সবাই হেসে ফেললো।
আমি নীরুর গালটা টিপে বলে উঠলাম সোনামনা সোনামনা।
একিরে তুই ওর গালে হাত দিলি। অনিকেত বললো।
কেনো কি হয়েছে।
ওর বউ কি বলেছে জিজ্ঞাসা কর।
সেটাও গুরুজনদের সামনে বলতে হবে।
নীরু খিঁচিয়ে উঠলো।
বড়মা তুমি আমার পাশে দাঁড়াও নাহলে এরা আমাকে খেতে দেবে না।
ও অনি ওরকম করছিস কেনো বাবা।
কথাটা মনে রাখিস নীরু। এই সপ্তাহের মধ্যেই তোকে নাগা সন্ন্যাসী বানাবো। ছবিটা তুলে বটার হাত দিয়ে তোর বউয়ের হাতে পাঠিয়ে দেবো।
এইতো। তুই ওদের কথায় বার খেয়ে গেলি।
বউকে কবে নিয়ে আসছিস।
আজ বললে আজ, কাল বললে কাল।
রাউন্ডের কি হবে।
বটা প্রক্সি মারবে।
নেমন্তন্ন কিরসনি কেনো।
হিমাংশু সাক্ষী। জিজ্ঞাসা কর। তখন তোকে কুত্তার মতো খুঁজেছি। পাই নি।
ঠিক আছে আমি পর্শুদিন ঠেকায় যাচ্ছি। থাকবি।
খাওয়া শেষ হতে ওরা সবাই উঠলো। আমি মিত্রা ওদের এগিয়ে দিয়ে এলাম।
রবিবার কিন্তু পুরে গ্যাং আসবো মাথায় রাখিস।
হাসলাম।
ওরা চলে গেলো। বাগান দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আমি মিত্রা ভেতরে এলাম।
তোকে দেখে আমার ভীষণ গর্ব হচ্ছে।
কেনো ?
সকাল থেকে কতো লোক এসেছে জানিস।
কি করে জানবো।
কে বলবে। কার মনের অবস্থা ভালো আছে বল।
এখনো সকলের মনের অবস্থা খারাপ!
আস্তে আস্তে সকলে ধাতস্থ হচ্ছে।
বহুত খিয়ে লেগেছে। চল আগে খেয়ে নিই। তারপর তোর সঙ্গে বসবো।
রাতের আগে সময় পাবিনা।
কেনো।
বিকেল থেকে টানা মিটিং।
তখনো তুই এই কথা বললি। কিসের মিটিং ? কার সঙ্গে মিটিং ? আমার মাথায় কিছু ঢুকছেনা।
ঠিক আছে আগে খেয়েনে তারপর বলছি।
তুই ভেতরে যা আমি একটু রতনদের সঙ্গে কথা বলে আসি।
বেচারাদের সকাল থেকে অবস্থা খারাপ।
কেনোরে।
ইসলামভাই দামিনী মাসির কাছে ঝাড় খাচ্ছে।
কেনো!
কি ভুল করেছে।
আমি চুপচাপ।
জানিস বুবুন।
কি ?
সকাল থেকে ইসলামভাই দাদা মল্লিকদা নিরঞ্জনদা তোর ঘরে ঢোকেনি।
কেনো!
তোর ওই মুখ ওরা কেউ দেখতে চায়নি।
নিরঞ্জনদা কখন এসেছে ?
অনাদিদের সঙ্গে।
ও।
মিত্রা এগিয়ে গেলো। আমি রতনদের কাছে এলাম। মাথা নীচু করে উঠে দাঁড়ালো।
কিরে কথা বলবিনা।
তবু মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।
কি হয়েছে বলবিতো।
রতন হাতের চেটো দিয়ে চোখ মুছলো।
আমি রতনকে জড়িয়ে ধরলাম।
তোমার কিছু হলে আজ স্যুইসাইড করতাম।
কেনো আমার কি হয়েছিলো ?
তোমার শরীর খারাপ হয়েছিলো।
কই আমিতো ঠিক আছি।
ডাক্তারদাদাযে বললো তুমি নাও বাঁচতে পারো।
ভুল বলেছে। আমি কি তাহলে ভূত।
কতো লোক তোমাকে দেখেতে এসেছিলো। সবাই মন খারাপ করে চলে গেলো।
কাঁদিস না। রতন কাঁদলে আমার মন খারাপ করবে।
কাঁদতে কি চাই, তুমিতো কাঁদালে।
কই আমি কাঁদালাম।
তোমার শরীর খারাপ হলো কেনো।
ঠিক বলেছিস। আবিদ কোথায়।
বাগানের ওপাশে বসে আছে।
কেনো।
সবাই তোমার জন্য মন খারাপ করছে।
কোথায় চল দেখি।
রতন নেপলা আমাকে সঙ্গে নিয়ে বাগানের পেছনে গেলো। দেখলাম আবিদ কালি ঝুলি মেখে আমগাছের তলায় বসে আছে।
কিরে আবিদ এখানে বসে।

আবিদ উঠে দাঁড়ালো।
 
আমি তোমার কাজ শেষ করতে পারিনি।
ঠিক আছে। তুই এইভাবে এখানে বসে কেনো।
কিছু ভালো লাগছে না।
ওঠ, যা স্নান সেরে নে। খিদে লেগেছে, খেতে বসবো।
তুমি খেয়ে নাও। ভালো লাগছে না।
পাগলামো করিসনা। যা বাগানের বাথরুমে স্নান করেনে।
আবিদ মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।
রতন বাথরুমে সাবান তেল আছে ?
আছে।
যা চলে যা। দেরি করিসনা। রতন ওর জামাকাপর গুলো বাথরুমে রেখে আয়।
আমি সোজা চলে এলাম। সুরো গেটের সামনে দাঁড়িয়ে।
মা কোথায়রে দেখতে পাচ্ছি না।
কখন চলে গেছে।
কেনো।
কলেজে যাবে। ফেরার পথে আসবে।
আমাকে বলে গেলো না।
তখন তুমি ব্যাস্ত ছিলে।
খেয়েছিস।
এইতো সব একসঙ্গে বসবো। দেখোনা বড়মা আমাকে কিছু করতে দিচ্ছে না।
খুব অন্যায়। বৌদিকে বল।
বৌদি রান্না ঘরে কি করছে।
দেখ গিয়ে গিলছে।
খালি বাজে কথা।
আচ্ছা আমার কথাটা মিলিয়ে দেখ একবার।
বড়মা।
কিরে।
তোমরা সুরোকে কাজ করতে দিচ্ছনা কেনো। অন্ততঃ পক্ষে জলটা দিতে দাও।
সবাই হাসছে।
যা তোকে জল দিতে দেবে।
সুরো বড়মার কাছে চলেগেলো।
আমি দাদার ঘরে ঢুকলাম। দেখলাম ডাক্তারদাদা ইসলামভাই নিরঞ্জনদা দাদার খাটে। দেবাশীষ নির্মাল্য শোফায় বসে গল্প করছে। আমি ডাক্তারদাদার শোফায় গিয়ে বসলাম।
বলুন স্যার, এখন ফিট।
আমি ডাক্তারদাদার চোখের দিকে তাকালাম।
তাকিয়ে কিছু লাভ নেই।
আমি হাসলাম।
শরীরটা অবশ্যই খারাপ হয়েছিলো। কালকে কয়েকটা এমারজেন্সি পেসেন্ট আছে। একটু দেখতে বেরোবো। তারপর এসে আটচল্লিশ ঘন্টা পড়াশুনো।
কেনো আমার কি রোগ হয়েছে যে তোমাকে নতুন করে পড়াশুনো করতে হবে।
এখন বলবোনা, আটচল্লিশ ঘন্টা পরে বলবো।
সে যাই হোক শুক্রবার যত কাজ থাকুক এখানে এসে হাজির হবে।
কেনোরে সেদিন আবার কি আছে।
আমার ব্যক্তিগত কাজ আছে।
নিরঞ্জনদার দিকে তাকালাম।
তুমি কখন এলে।
আটটা সাড়ে আটটা নাগাদ। কালকে একটা ফোন করতে পারিসনি।
কালকে তুমি কি জানতে এখানে আসতে হবে ?
এই আবার উল্টপুরান শুরু করলি।
সকাল থেকে তোমায় দেখতে পেলাম না।
দেখার মতো অবস্থায় তুই ছিলি।
তা ঠিক। ভয়ংকর একটা রোগের স্বীকার হয়েছিলাম। ডাক্তারদাদা তুমি কি বুঝলে ? আমার কি ফিটের ব্যাম আছে।
অন্য কেউ হলে বলতাম হ্যাঁ। কিন্তু তোর তখনকার শারীরিক কন্ডিসন বলছে তোর ওই রোগ নেই।
তাহলে ভূতে ধরেছিল।
ডাক্তারদাদা হাসলো, বেশ বলেছিস। যেমন রোগ নির্নয় করতে ন পারলেই বলে ভাইরাস।
খাওয়া দাওয়া হবে ? সকাল থেকে তো অনেক খেল দাখালি। ছোটমা গম্ভীর হয়ে বললো।
দাদা, মল্লিকদা এসেছে ?
বাইরেটা একটু উঁকি মার।
আমি উঠে দাঁড়ালাম।
ঘর থেকে বেরতেই দাদা আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকাল। মল্লিকদাও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলাম। লক্ষ্য করলাম বড়মা দামিনী মাসি রান্নাঘর থেকে আমাকে লক্ষ্য করছে।
আমাকে না দেখে চলে গেলে।
দাদা মাথা নীচু করলো।
তুমি দেখ আমার কিছু হয়নি। তোমরা বৃথা ভয় পেয়েছো।
দাদা তবু মুখ তুললো না।
কিগো কথা বলবে না।
দাদা মুখ তুললো। উঠে দাঁড়াল। আমার গায়ে মাথায় হাত বোলাল।
তুই ভালো থাকলেই ভাল। তুই খারাপ থাকলে, আমরা ভাল থাকি না।
আমাকে বুকে টেনে নিল, মল্লিকদা উঠে দাঁড়িয়ে আমার পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
নাও রেডি হয়ে নাও। এক সঙ্গে খেতে বসবো।
আমি দাদাকে জড়িয়ে ধরে আছি। দাদার বুকের তীব্র লাবডুব শব্দের অনুভূতি পাচ্ছি। বুঝতে পারছি, চোখ দিয়ে জল না বেরলেও বুকটা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে। দাদা আমাকে ছারলো।
তুমি ভেটকি মাছের মতো দাঁড়িয়ে রইলে কেন। লেখাটা প্রেসে পাঠিয়েছ। কাল ডেড লাইন।
মল্লিকদা হাসতে গিয়েও হাসতে পারলনা।
বড়মা, দামিনী মাসি, ছোটমা মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ঘরের সবাই নীরব দর্শক।
ওরা একবার বিকেলে আসবে বলেছে তোর সঙ্গে দেখা করতে। দাদা বললো।
কারা ?
সার্কুলেশন আর প্রেসের ছেলেগুলো।
কেন ?
কালকে এক লাখের জায়গায় তিন লাখ কাগজ ছেপেছে। তাতেও সামাল দিতে পারেনি।
তুমি কি বলেছো ?
তোর সঙ্গে কথা না বলে কিছু বলতে পারব না।
ফোন করলে, আসতে বলো।
অনিমেষ পাঁচটায় আসবে বলেছে।
ঠিক আছে। চলো খেয়ে নিই।

দাদারা বাথরুমে গেল। আমরা সবাই এক সঙ্গে খেতে বসলাম। আজ আমি বড়মা ছোটমার মাঝখানে। বড়মার পাশে মিত্রা তারপর সবাই লাইন দিয়ে বসেছে। এদিকে ছোটমার পাশে দামিনী মাসি কবিতা। আমাদের একেবারে অপরজিটে ভজু রতন আবিদ নেপলা।
 
দেখি নাই ফিরে (উপন্যাস সিরিজ ৩০)

কিছু কথাঃ দেখি নাই ফিরে বেশ সাড়া জাগানো লেখা। এর আগে অনেক ব্লগ/ফোরামে প্রকাশিত হয়েছে। এর দ্বিতীয় পর্ব কাজলদীঘি শ্মশান ও পীরসাহেবের থান নামে লেখা হচ্ছে এখন। মূল লেখক মামনজাফরান নামে পরিচিত। আসল নাম জ্যোতি বন্দোপধ্যায়। মূলত উনি বেংগলি লাইব্রেরী লিখেন। নির্জনমেলা এর পাঠক দের জন্য ধারাবাহিকভাবে এখন থেকে আবার প্রকাশিত হবে, তবে নিয়মিত নয়।

দু’টো নতুন মেয়েকে দেখলাম চিন্তে পারলাম না। প্রথমে বড়মা দামিনী মাসি ছোটমা সবাইকে দিয়ে দিয়েছে। এবার যদি লাগে ওরা দেবে।
আমরা খাওয়া শুরু করলাম। মিত্রা আমার থালার দিকে একবার তাকিয়ে নিল।
আমি মিচকে পোড়ার মতো দুষ্টুমি হাসি হাসলাম।
বেশি খাসনা, শরীর খারাপ করবে।
আমি চুপ করে থাকলাম।
খাওয়া চলছে।
দেবাশীষ বলে উঠলো।
অনি তোকে একটা রিকোয়েস্ট করবো।
বল।
বড়মা ছোটমা তবু একটু শুনেছে। আমরা তখন ওপরে ছিলাম।
ছোটমা জোরে হেসে উঠলো। দেখা দেখি বড়মা দামিনীমাসি হাসছে।
সবাই গম্ভীর।
তোমরা হাসছ যে।
দাদা খেতে খেত মুখ তুলে বললো।
একটা দুর্দান্ত গল্প আছে বুঝেছ এডিটর। অনিবাবুর জীবনটা গল্পে গল্পে গল্পময়।
বাবা তুমি যে সাহিত্যিক হয়ে যাচ্ছ হে ডাক্তার।
সে যা বলো, এই বয়সেও দেখ কাল সারারাত জাগলাম। এখনো জেগে আছি। গল্পের দৌলতে।
কিরে দেবা। দাদা বললো।
অনি বলনা তোর ওঝা হওয়ার ঘটনাটা।
ওঝা! অনি!
আপনি অনিকে জিজ্ঞাসা করুণ।
শোন এডিটর বয়সকালে তুমিও এসব করেছো। তুমি কম। ও চূড়ান্ত।
কিরে অনি তুই ওঝা হলি কবে ?
ওর সঙ্গে যে মেডিকেলের ডাক্তারদের বন্ধুত্ব আছে তুমি জানতে। বড়মা বললে।
না।
কোনদিন আগে শুনেছো।
না।
আজ ওরা এসেছিল অনিকে দেখতে। ওরা সব সামন্তর ছাত্র। সামন্তকে দেখে ওরা অবাক।
কিগো ডাক্তার গুল মারছো না।
দাদার কথায় সবাই হাসে।
শুনি তোর ওঝার কীর্তি। বল।
বুবুন দাদা বলেছে, বল। মিত্রা বললো।
তোর পাতের ঠ্যাংটা দে।
এই নে।
ছোটমা হাসলো।
এইবার বল।
কি ভালো মেয়েরে! একবার চাইতেই দিয়ে দিলি।
মিত্রা মুচকি হাসলো।
ওঝার বিদ্যেটা শিখতে হবে না।
বলনা। বড়মা বললো।
আমি খেয়ে যাচ্ছি। কিরে বলবিতো। বড়মা খোঁচা মারলো।
তুমি শুনেছো।
সে তো বটা নীরুকে কি বলতে গিয়ে বলে ফেললো। চল নীরু অনি তোর ভূত ছাড়িয়েছিল, তুই এবার অনির ভূতটা ছাড়া।
আমি হাসলাম।
নীরুর মতো সব কলেজে একটা করে পাবে। আমাদের কলেজে যেমন দেবা ছিল।
ফালতু কথা বলবিনা। দেবা চেঁচিয়ে উঠলো।
তাহলে তোর পেছনে বুদ্ধি আছে বুঝিয়ে ছিলাম কি করে।
নীপা সুরো দুজনেই জোড়ে হেসে উঠলো।
এখনো কলেজ ক্যান্টিনের ফটকেদা তোমার কথা বলে। সুরো বললো।
ফটকেদা এখনো আছে! দেবা বললো।
বুবুন কম অত্যাচার করেছে ফটকেদার ওপর। কি খেপাতো, উড়ে বলে। সেই ফটকেদা অসুস্থ হলো। ও নিয়ে গিয়ে মেডিকেলে ভর্তি করলো। ফটকেদার জন্য তিনরাত মেডিকেলে জাগলো। রক্ত জোগাড় করে ফটকেদাকে বাঁচাল।
তোর মনে আছে ?
বাঃ মনে থাকবেনা।
তখন বটারা কিন্তু ফটকেদার জন্য দারুণ সার্ভিস দিয়েছিল। না হলে ফটকেদাকে বাঁচাতে পারতাম না। মৈনাক আমি ফটকেদাকে মেডিকেলে নিয়ে গেছিলাম। বটা মৈনাকের বন্ধু একি পাড়ায় থাকে। সেই থেকে ওদের ওখানে যাতায়াত।
তখন অঢেল সময়, আড্ডামারার জায়গা বলতে ওদের হোস্টেল।
বন্ধুত্বটা আরও গাঢ় হলো যখন একসঙ্গে দল বেঁধে আমরা পরাতে যেতাম।
পরাতে যেতিস ? মিত্রা বললো।
হ্যাঁ।
কই আগে বলিসনি!
শিয়ালদহ স্টেশনের গায়ে একটা পথ শিশুদের স্কুল আছে চোদ্দ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু কিশোরদের ওখানে পড়ান হয়। আমরা সপ্তাহে তিনদিন ফ্রি সার্ভিস দিতাম। সেখানে পড়াতে যেতাম। ওখানকার ফসল সাগির, অবতার, ছট্টু।
ইসলামভাই আমার দিকে তাকাল।
তাকিয়ে লাভ নেই। অবতারকে জিজ্ঞাসা কোরো। তবে কি জানো, আমরা থাকতাম ঘন্টা দুয়েক। তাতে সংশোধন হয়না একটু ঘসা মাজা হয়, এই যা। তবু মন্দের ভালো।
একদিন ফটকেদার সঙ্গে ক্যান্টিনে বিশাল ঝামেলা করছি।
কেনরে! বড়মা বললো।
ঘুগনি পাঁউরুটি চেয়েছি, বলেছে নেই। ব্যাশ আমার জন্য তোমাকে বানিয়ে দিতে হবে। তারপর মৈনাক এলো।
চল তোকে বাইরে খাওয়াচ্ছি।
মৈনাক হার কিপ্পন। হাত দিয়ে পয়সা গলে না। বলে কিনা খাওয়াবে।
বেরিয়ে এলাম। বসন্ত কেবিন। একটা করে মোগলাই পরটা পেঁদালাম।
মৈনাকের কাছে মোগলাই! দেবাশীষ বললো।
হাসলাম।
মৈনাক তখন বললো। তোকে একজনের ভূত ছাড়াতে হবে।
ভূত বলিস কি!
হ্যাঁ।
গাঁজা-টাজা খাস নি তো ?
স্ব-জ্ঞানে বলছি।
দেবা কেশ।
দেবাশীষ হাসছে।
হাসিস না তখন তুই বিখ্যাত।
মৈনাককে বললাম, কার রে ?
তোকে জানতে হবেনা। কনিষ্ক বলেছে তোকে নিয়ে যেতে।
এককথায় রাজি হয়ে গেলাম। বললাম, ড্রেস মেটিরিয়াল।
সব জোগাড় হয়ে যাবে। তুই খালি বাসন পত্রের ফর্দ দে।
মৈনাককে লিখে দিলাম। কনিষ্ককে বলিস, একখানা মড়ার মাথার খুলি কিছু হাড় ল্যাবরেটরি থেকে এনে রাখতে।
তুই তখন মেডিকেলে যেতিস।
রেগুলার।
আমাকে দেখিস নি।
তোমাকে তখন চিন্তাম না। এই বাড়িতে এসে মিত্রার শরীর খারাপের দিন দেখলাম। তাও দেবাশীষ বললো তুমি অনেক বড় ডাক্তার।
ডাক্তারদাদা হাসছে।
জান তোমাদের কলেজে স্টুডেন্টসদের জন্য যে অপারেসনের ফিল্মগুলো দেখান হয় সেগুলো দেখার লোভ ছিল বেশি। ওই কারনে আরও যেতুম।
তুই দেখেছিস!
রেগুলার দেখতাম। আজ হার্ট অপারেসন কাল কিডনি। কতো বলবো তোমায়।
তুইতো ডাক্তাররে।
একবার তোমাদের অপারেসন থিয়েটারে ঢুকেছিলাম বটাদের সঙ্গে ডাক্তার সেজে। আর. এল. দাস তখন সার্জারীর হেডডিপ।
তুই রতনলালকে চিন্তিস।
ওদের সঙ্গেই স্যারের বাড়িতে কয়েকবার গেছি।
তবে হাসপাতালের সবচেয়ে ভালো জায়গা হচ্ছে মর্গ। আমার দারুণ লাগতো।
এমাগো তুই কিরে। মিত্রা বললো।
পরে বলবো ঘটনাটা।
সেদিনটা অমাবস্যা তায় আবার মঙ্গলবার। ঠিক ছটার সময় পৌঁছে গেলাম কনিষ্কদের হস্টেলে। বটা অনিকেত ছিল। দেখলাম ওরা গুছিয়ে সব এ্যারেঞ্জ করেছে। বললাম কেশটা কি বল।
ওরা বললো।
তোর দেবাশীষের থেকে একেবারে রদ্দি। নব্বইভাগ মেয়ে। কমপ্লিট ছেলে বানাতে হবে।
এবার হাসা হাসি শুরু হয়েছে।

হয়ে যাবে। পারিশ্রমিক।
 
মাংস ভাত। সাত্যকি রান্না করছে, ওই হস্টেলে।
আমরা এই কজন না আরও আছে।
আমরা দশজন।
স্পনসর।
ক্লায়েন্ট নিজে।
বাবাঃ ভাল মুরগী ফিট করেছিস, চা খাওয়া।
বড়মা হেসে মিত্রার গায়ে ঢলে পড়লো। নীরুর পয়সায় নীরুর ভূত ছাড়াবি ?
তাহলে কি!
এই তোমরা হাসতে আরম্ভ করলে। তাহলে কিন্তু গল্প হবে না।
হাসবো না কি কাঁদবো। ছোটমা বললো।
ওদিকে অনাদিরা রতনরা হেসে গড়াগড়ি।
কনিষ্ক বললো নাগা হবি, না কৌপিন পরবি।
ক্লায়েন্টের মটিভ বুঝে ডিসিসন নেব। তুই আমাকে সিঁদুরটা আর মড়ার মাথার খুলিটা দে।
কি করবি।
দেখনা কি করি।
তুই কি সিঁদুর লাগাবি ?
তাহলে কি।
কালকে ডঃ দাস দেখতে পেলে আমাকে মড়ার মাথার খুলি বানিয়ে দেবে।
তাহলে হবে না। আমি চললাম।
তুই সিঁদুর তোলার একটা ব্যবস্থা করিস।
হয়ে যাবে।
আমি তখন ভিভিআইপি। যা হুকুম করছি সঙ্গে সঙ্গে তা চলে আসছে।
কাজ শুরু করলাম। ওরা ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। মড়ার মাথাকে সিঁদুর মাখিয়ে লালে লাল করে দিলাম। খুলিটা ভয়ংকর একটা রূপ নিল। নতুন নারকেল ঝাঁটা তাতে সিঁদুর লাগিয়ে সব রেডি করলাম। এবার নিরুর হস্টেলে গিয়ে পৌছলম রাত সাড়ে দশটা নাগাদ। তার আগে অবশ্য বটাকে পাঠিয়ে দিয়েছি।
গিয়েই প্রথমে বললাম আগে আমাকে বাথরুমে ঢোকা।
কেন!
ড্রেস করতে হবে।
বাথরুমে ঢুকলাম। ওরা গাড়ি মোছার লালা চেলি কিনে এনেছে দশ মিটার। সেটাকে টুকরো করে কৌপিন করলাম বাকিটা লুঙ্গির মতো পরে ফেললাম। আর কিছুটা গায়ে জড়ালাম। কপালে লালা সিঁদুরের টিপ, মাথার চুলে ফ্রেঞ্চচক লাগিয়ে ফুলিয়ে দিলাম। চোখে একটু লেবুর রস দিয়ে লাল করে নিলাম। হাতে ত্রিশুল কমন্ডুল। কিছু বাদ নেই বুঝলে।
ওদের বললাম কেউ হাসবিনা। তাহলে সব কেলো হয়ে যাবে।
কনিষ্ক বললো, গুরু দারুণ মানিয়েছে। পুরো ফু বাবা।
তোরা কি নাম বলেছিস ?
বটা জানে।
ওই নামে ডাকিস। খেঁড়োর মতো যেন অনি বলে চেঁচিয়ে উঠিস না।
সে আর বলতে। আজকে সাক্সেস ফুল হলে কাল থেকে ইনকামের ধান্দা করতে হবে। তবে গুরু একটা কথা।
বল।
যা করো ক্ষতি নেই। রক্তারক্তি করোনা।
তুই একটু থাম, আর পারছিনা, পেট ব্যাথা হয়ে গেছে। মিত্রা বললো।
টিনা, মিলি, সুরো, নীপা, অদিতি পেটে হাত দিয়ে বসে আছে।
তাহলে থাক আবার পরে হবে।
না না মাঝ পথে ছাড়লে চলে, এখনো সাসপেন্সেই ঢোকা হয়নি। ডাক্তারদাদা বললো।
আমি ঘরে এলাম। দেখলাম নীরু গোবেচারা হয়ে বসে আছে। ছাগলকে বলি দেবার আগে যেমন পূজো করা হয় নীরুর অবস্থা ঠিক তেমনি। পরিষ্কার ধোপদূরস্ত পাজামা পাঞ্জাবী পরেছে।
ঘরে ঢুকেই আমার ফার্স্ট ডায়লগ, ইশান কোনের জানলাটা বন্ধ করো। নৈরিত কোণের জানলাটা খুলে দাও। আজ সেই প্রেতাত্মা ওই জানলা দিয়েই ছুটে পালাবে।
নীরুর দিকে তাকালাম।
হ্যাঁরে ব্যাটা উপোস করে আছিস ?
হ্যাঁ বাবা।
বলে কি, বাবা! মনে মনে বললাম।
আমি এবার ঝুলি থেকে সব মাল পত্র বার করলাম। ওদের বললাম যা বলে ছিলাম সব এনেছিস।
হ্যাঁ গুরুদেব।
বার কর।
চোখ বন্ধ করে সত্যজিত রায়ের বিরিঞ্চিবাবার কথা স্মরণ করে নিলাম একবার।
তারপর গোছগাছ করে পূজো শুরু করলাম। গায়ত্রীটা পর্যন্ত করলাম। তারপরই হোম জাগ শুরু করে দিলাম। ঘি দিয়ে বেল পাতা পোরান হলো। মাঝে মাঝে নীরুর দিকে লক্ষ করছি ভয়ে একেবারে সিঁটিয়ে আছে। কিরকম যেন বিড় বিড় করছে। ওরা সবাই গম্ভীর।
জল খেলাম ঢক ঢক করে। ওরা হো হো করে হাসছে।
তুই একটু থেমে বল। বড়মা বললো।
মাঝে ইন্টারাপ্ট করলেই বন্ধ করে দেব।
খালি বক বক খালি বক বক। দাদা বললো।
মরন, কতো ইন্টারেস্ট দেখ।
বুঝলে বড়মা গুণীণকাকার কাছ থেকে অনেক কষ্টে তিনটে মন্ত্র শিখেছিলাম। বলতে পারো সাতমোন তেল পুরিয়ে রাধা নাচার মতো আরকি।
গুণীণ কাকার নাম স্মরণ করে তিনটে মন্ত্র ঝেড়ে দিলাম।
ওমা দেখি নীরু আমার পা ধরে হাঁউ মাউ করে কাঁদে। আর বলে আমি ওকে ছেড়ে কিছুতেই যাবনা। আমি ওকে ভালবাসি।
কেলো করেছে। তখন আমার ভয় ভয় করছে। তাহলে কি সত্যি নীরুকে ভূতে ধরেছে ? সব্বনাশ। দেখি অতীন, নীতিন, বলাই ঘর থেকে ভেগে পরলো।
আমার টেনসন বারলো। মৈনাক থম মেরে বসে গেছে। মনে হচ্ছে যেন ওকেই ভূতে ধরেছে।
টেনসন ভয়ে আমার গলার স্বর সপ্তমে চড়ে গেলো। চেঁচিয়ে উঠলাম। জয় তারা। তুই যাবি না আমি তোকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করবো।
বাবা আপনি ঝেঁটার বারি মারুণ ও কষ্ট পাচ্ছে। কনিষ্ক বললো।
দাঁড়াও বৎস ও ওকে ভালবাসে আগের জন্মের স্বাথী এতো তাড়াতাড়ি যেতে পারে।
নীরু তখন উল্টো পাল্টা বকে যাচ্ছে। আমার পা কিছুতেই ছাড়ে না। যত বলি পা ছাড়, কিছুতেই ছাড়ে না। মাথা গরম হয়ে গেল। দিলাম বেধড়ক ঝাঁটার বাড়ি।
কিছুক্ষণ চেল্লালো।
তারপর আমার পা জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে কিনা বাবা আমার শরীর একেবারে ভালো হয়ে গেছে, কি শান্তি। আমাকে তুমি মন্ত্র দাও। তুমি আমার গুরু।
নীরু বলে কি! তখন আমার কাপর খুলে যাবার জোগাড়।
শেষমেষ কনিষ্ক, বটা ওকে অনেক করে বোঝাল।
ঝেঁটার বাড়ি খেয়ে তখন ওর মধ্যে কি চনমনে ভাব।
তাহলে আমাকে বলো আমি কি নিয়ে পড়াশুনো করবো। বাড়ি থেকে সার্জারি নিয়ে পরতে বলছে আমার ভাল লাগছেনা।
আমি গম্ভীর। ওর মুখের দিকে লক্ষ্য করছি।
ঠিক। কেন বল।
কিছুতেই বলতে পারেনা।
কি বলবো। আমি পাতি বাংলার ছাত্র। ওকে তখন সার্জারি নিয়ে কেন পরবেনা বোঝাতে হবে। বোঝ একবার ছেলের আব্দার।
আবার চোখ বন্ধ করে ধ্যানস্থ হলাম। মাঝে মাঝে চোখ মেরে ওকে দেখি ব্যাটা কি করছে, দেখি মাথা নীচু করে বসে আছে।
কনিষ্ককে ইশারা করে বললাম কিছু বল। হেল্প কর।
ঠোঁট বেঁকায়।
শেষে অনিবাবার খেল শুরু করলাম।
বৎস।
বাবা।
ধরতুই সার্জারী নিয়ে পাশ করলি।
না বাবা আমি সার্জারী পরবো না।
আমি তোকে ধরতে বলেছি।
ধরলাম। বলেই আমার হাতটা খামচে ধরলো।
সকাল বেলা তোর কাছে একটা পেসেন্ট এলো তুই তখন ঘুমচ্ছিস। তোকে ঘুম থেকে তুলে জাগালো। তারপর লুঙ্গি তুলে তোকে বললো, আমার পেছনে খুর মেরেছে একটু শেলাই করে দিন। তুই কি করবি।
নীরু হাঁউ মাউ করে কেঁদে উঠলো। বাবা এই কারণে আমি সার্জারি নিয়ে পরবনা। সকাল বেলা ওই নোংরা জায়গা দর্শন।
কনিষ্করা হাঁসবে না কাঁদবে কিছু বুঝতে পারছে না।
আমি আবার ধ্যানস্থ হলাম।
চোখ খুলে বললাম, শোন মা আমাকে বললো, তুই পেড্রিয়াটিক্স নিয়ে পর। সাইন করতে পারবি।
নীরু আমার পা জড়িয়ে ধরে সে কি কান্না। বাবা আপনি আমার মনের কথা বলেছেন। আপনার মাকে আমায় দেখান।
মনে হচ্ছিল ওই সময় ওকে লাথি মেরে পুঁতে দিই। তখন আমার অবস্থা ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি। ও আমাকে মাকে দেখাতে বলছে।

সবাই হাসতে হাসতে খাওয়া ভুলে গেছে। কখন যে সুরো, নীপা, মিলি, টিনা, অদিতি আমার পাতের কাছে এসে বসেছে খেয়াল নেই।
তবে হ্যাঁ। নীরু সে রাতে আমাকে একশো এক টাকা দক্ষিণা দিয়ে পেন্নাম করলো। কাজ শেষ করে যখন উঠলাম রাত তিনটে বাজে। মাংস ভাত খাওয়া হলো। আরো কতো কি বলেছিলাম সেরাতে খেয়াল নেই।
তারপর ছ’মাস মেডিকেল কলেজ মুখ হইনি। মার খাওয়ার ভয়ে।
কেন ?
কেন আবার জিজ্ঞাসা করছ।
বড়মা হাসছে।
দেখো নীরু এখন চাইল্ড স্পেশালিস্ট।
চাইল্ড স্পেশালিস্ট কিরে ওর এখন বেশ ভালো নামডাক হয়েছে। খুব ভালো ডায়গোনেসিস করতে পারে। ডাক্তারদাদা বললো।
ছোটমা আমার মাথার চুলটা ঘেঁটে দিয়ে স্নেহের হাসি হেসে বললো, বিচ্চু।
এবার মর্গেরটা বল। মিত্রা বললো।
পারিশ্রমিক।
সবাই হেসে ফেললো।
দেবো। আগে বল।
ফেলো কড়ি মাখো তেল। তুমি কি আমার পর।
আবার সকলে হাসে।
আবার আগামী কাল। একদিনে সব হয়ে গেলে বদহজম হয়ে যাবে।
আমি যে থাকব না। সুরো বললো।
তোকে পরে বলবো। এর থেকেও ভালো করে।
খাওয়া পর্ব শেষ দামিনী মাসি আমার দিকে তাকায় আর মুচকি মুচকি হাসে। সবাই কম বেশি হাসছে। এরি মধ্যে ইসলামভাইকে ইশারায় বললাম তুমি একবার ওপরে এসো।
আমি ওপরে নিজের ঘরে এলাম। মানিপার্টস থেকে চাবিটা বার করে আলমাড়িটা খুললাম দেখলাম বেশ অগোছালো। তার মানে ঘাঁটা ঘাঁটি হয়েছে। চোরা ড্রয়ারটা খুললাম। মিত্রার জিনিষ গুলো দেখলাম ঠিক আছে। এখানে হাত পরেনি। ফাইলটা মিত্রাকে কালকে রাখতে দিয়েছিলাম, ওটা কোথায় রেখেছে ? সকাল থেকে কারা কারা এসেছিল কিছুই বুঝতে পারছিনা।
কিরে আসবো। ঘরের দরজায় ইসলামভাই।
এসো।
বন্ধ করবো।
করো।
আমি আলমাড়ি বন্ধ করলাম।
ইসলামভাই একটা সিগারেট বার করে আমার হাতে দিল।
আমরা দুজনে জানলার ধারে গেলাম।
কি হয়েছে বলো। আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা।
মামনি তোকে সব বলবে।
তাহলে তোমায় ডাকলাম কেন।
কাল রাতে তুই সবাইকে ম্যাসাজ করেছিলি। কাল কেউ আসতে পারেনি। তারওপর কাগজে আজ নিউজ বেরিয়েছে। তোর নামে। সবাই একটু ভয় পেয়েছে, তোর বুঝি কিছু হয়েছে। সকালে তোর শরীরটাও খারাপ হয়েছিল। একেবারে সোনায় সোহাগা।
অনিমেষদার সঙ্গে তোমার পরিচয় হয়েছে।
হ্যাঁ।
কি বললো।
সকাল থেকে ঝাড় খেতে খেতে প্রাণ যায়। কাউকে বোঝাতে পারিনা, আমার থেকে তোর ক্ষমতা বেশি।
হাসলাম।
হাসিসনা, সকালে পার্টির সব নেতারা এসেছিল। বলতে পারিস কোর কমিটি।
সব্বনাশ।
অনিমেষদা সকলকে ডেকে নিয়ে এসেছিল। তোকে দেখে সকলে চলে গেছে। খালি অনিমেষদা বিধানদা ছিল, দেখলি তো, তোর সঙ্গে দেখা করে গেল।

আবিদ ফিরে এলো কেন।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top