তোর আপত্তি আছে। অবশ্যই। তাহলে আমরা তিনজনে একঘরে শুই তোরা তিনজনে এক ঘরে শো। সেটা হতে পারে। সমস্য মিটে গেলো। মিলির দিকে তাকিয়ে বললাম। তোমরা দুজনে ওপরে চলে এসো। আমি হিমাংশুর ঘরে ঢুকে পরবো। না না তুই বরং ওপরে থাক। হিমাংশু পিকলু নিচে যাক। সেইতো তিন বউ। তাহোক তবু তুই থাকবি আমাদের সঙ্গে। মিলি টিনা মুচকি মুচকি হাসছে। হিমাংশু হো হো করে হেসে ফেললো। তুই হাসলি। ম্যাডামের কথা শুনে। ম্যাডাম তোকে চোখের আড়াল করতে চাইছেনা। আসর ভাঙলো।
দুটো দিন খুব চাপের মধ্যে কাটলো। খালি মিটিং। একবার দাদাদের সঙ্গে তো আর একবার নিরঞ্জনদা ইসলামভাই বাসু অনাদিদের সঙ্গে। কখনও ডাক্তারদার সঙ্গে নার্সিংহোম নিয়ে। মাঝে একবার জায়গাটা সবাই মিলে হৈ হৈ করে দেখে এসেছি। পারদপক্ষে মিত্রাকে কোনো আলাদা করে সময় দিতে পারিনি। শুধু মিত্রা বললে ভুল হবে ওদের কাউকেই সময় দিতে পারিনি। প্ল্যান প্রোগ্রাম করতে করতেই সময় চলে গেছে। আমার কাজ কর্ম দেখে পিকলুর চোখ কপালে উঠে গেছে। হিমাংশু ওকে বার বার বোঝাবার চেষ্টা করেছে, তুমি খুব ভাল করে বুঝে নাও। আমি কিন্তু এখানে খুব বেশি আস্তে পারবোনা। তোমাকে আসতে হবে সব কিছু সামলাতে হবে।
এনজিওর ব্যাপারটা নিয়েও হিমাংশুর সঙ্গে বসেছি। হিমাংশু মাঝে আমাকে বলেছে তুই এতগুলো মাথায় রেখে চলবি কি করে। আমি হাসতে হাসতে বলেছি আমি এক সঙ্গে ছটা জমজ বাচ্চার বাপ হবো। ওরা হেসেছে আমার কথা শুনে। কো-অপারেটিভ নিয়ে একটু মত পার্থক্য হয়েছিলো আমার সঙ্গে সবার। কিন্তু ডাক্তারদাদার মধ্যস্থতায় সেটা মিটে যায়। ডাক্তারদাদার পারফরমেন্স এখানে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এককথায় পোরখাওয়া জিনিষ। নিরঞ্জনদা অনাদি বাসু দায়িত্ব থাকবে। দাদা মল্লিকদা নিরঞ্জনদা সইয়ের অথরিটি। ইসলামভাই দেখাশুনা করবে। আমি ওভার অল দেখাশুনা করবো। আমাদের ইনটারেস্টের বহর দেখে মিলিরা সবাই ফিক্সড করতে চাইলো। হিমাংশু ওদের বললো আগামী সপ্তাহে কাগজপত্র রেডি করে দিই, তারপর ফিক্সড করবেন। তবে ছোটো ছোটো লোন দেওয়া শুরু হয়ে যাবে। এই দায়িত্ব অনাদি আর বাসুর ওপর বর্তালো। লোক যা যা লাগবে অনাদি বাসু নেবে, নিরঞ্জনদা কো-অর্ডিনেট করবে। আমি খালি একটা কথাই নিরঞ্জনদাকে বললাম, পারলে খুব তাড়া তাড়ি দলমত নির্বিশেষ ফ্লারিশ করতে আরম্ভ করো। মাথায় রাখবে রিকভার যেনো হয়। আমার উদ্দেশ্যটা কি তোমাকে আলাদা করতে বলতে হবেনা। নিরঞ্জনদা হাসলো। বড়মা খিঁচিয়ে উঠলো। দাঁত বার করে হাসিস না, এসে হিসেব নেবো মাথায় রাখিস। এর মধ্যেই একটা বিষয় লক্ষ করলাম সময় পেলেই মিলি পিকলু আলাদাভাবে ঘুরছে, দু’জনে দু’জনকে সময় দিচ্ছে। মিত্রাকে বললাম ব্যাপারটা একটু দেখ। লাভ এজ ফার্স্ট সাইট কিনা। একদিন রাতে যাত্রা দেখতে গেলাম। দারুণ এনজয় হলো। আমার পুরনো স্কুলের বান্ধবী সৌমির সঙ্গে দেখা হলো। ও এখনো বিয়ে করেনি। মিত্রার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলাম। ও এখন আমাদের স্কুলের প্যারা টিচার, বিয়ে করবেনা। বিধবামাকে কে দেখবে। বললাম পরের বার এসে তোর সঙ্গে দেখা করবো। ওর মোবাইল নম্বর নিলাম। খাওয়া দাওয়া, হৈ হুল্লোড়, আর কাজ দুটো দিন কোথাদিয়ে যে কেটে গেলো, বুঝতে পারলাম না। মনে হলো এইতো সকাল হলো। এরি মধ্যে রাত্রি হয়ে গেলো! এর মধ্যেই অর্ককে ফলোআপ করেছি। বিষয়টা জটিল থেকে জটিলোতর হয়েছে। এর ফাঁকেই হিমাংশুকে বলেছি আগামী শুক্রবার মিত্রাকে রেস্ট্রি করবো, গিয়েই সব ব্যবস্থা করবি। ওখানকার কাজ চুকিয়ে আমরা সবাই কলকাতা ফিরে এলাম। আসার সময় নীপাকে সঙ্গে করে নিয়ে এলাম। মিত্রার নার্সিংহোমে একবার ঢুকলাম। মিত্রা সকলের সঙ্গে ডাক্তারদাদার আলাপ করিয়ে দিলো। কেউ কেউ ডাক্তারদাদাকে নামে চিনতো। কেউ ডাক্তারদাদার ডাইরেক্ট ছাত্র। হিমাংশু সকলকে নতুন মালিকানার মটিভেসন বুঝিয়ে দিলো। ছোট্ট মিটিং। ডাক্তারদাদা সমস্ত খোঁজখবর নিয়ে নিলেন। এই নার্সিংহোমের দায়িত্ব যাঁর ওপর আছে তাকে একবার কলকাতায় ডেকে পাঠালেন। ফেরার সময় খুব আনন্দ হলো। দেবাদের মনটা একটু খারাপ হয়ে গেলো। নিরঞ্জনদা ধাবা থেকে বিদায় নিলো। আমরা কলকাতার পথে। দ্বিতীয় হুগলী সেতু পেরোবার সময় দামিনী মাসিকে ফোন করলাম। কিরে এখন কোথায় ? হরিশ মুখার্জীতে ঢুকছি। আয় সব রেডি করে রেখেছি। ঠিক আছে। বড়মা ছোটমা দামিনী মাসিকে দেখে নি। দাদার মুখ থেকে যা শুনেছে। আমরা কিছুক্ষণের মধ্যে বাড়ির গেটে হাজির হলাম। ভজুরাম নেমেই গেটের সামনে ডাকতে শুরু করে দিলো ছগনদাদা ছগনদাদা গেট খোলো। ছগনলাল গেট খুললো। আমরা ভেতরে এলাম। সবাই একে একে গাড়ি থেকে নামলো। দামিনী মাসি এগিয়ে এলো। দামিনী মাসির পরনে লালাপাড় শাড়ি। সৌম্য শান্ত মুখমন্ডল। আজ মাসিকে অনেক বেশি সুন্দর লাগছে। ভজু গিয়ে দামিনী মাসিকে প্রণামকরেই জড়িয়ে ধরলো। দামিনী মাসির চোখ ছল ছল। ইসলামভাই চেঁচিয়ে উঠলো, এইতো আবার শুরু করে দিলে। দামিনী মাসি এসে বড়মা ডাক্তারদাদা দাদাকে প্রণাম করলো। থাক থাক ভাই। বাবাঃ তোমার গলা সেদিন শুনছিলাম। ভয়ে একেবারে কাঠ। আজ দেখে তেমন মনে হচ্ছেনা। তাই নারে মুন্না ? যারা কাজ করছে দেখলাম তারা কমবেশি ইসলামভাইকে চেনে। এসে এসে তার ইসলামভাইকে সেলাম আলেকম সালাম করে যাচ্ছে। দাদা আমার দিকে তাকিয় বললো, তুই এসব কি শুরু করেছিস। তারপর ইসলামভাই-এর দিকে তাকিয়ে, তুমিতো বলোনি আমাকে। এটা অনি স্পেশাল। কেন কি বৃত্তান্ত অনি উত্তর দেবে। চলো চলো ভেতরে চলো। আমি বললাম।
আমি তিনটে ঘর রেডি করতে পেরছি অনি। দামিনী মাসি বললো। যথেষ্ট। এইনাও তোমার মিত্রা। দামিনী মাসি এগিয়ে এসে মিত্রাকে জড়িয়ে ধরলো। মিত্রা প্রণাম করতে যাচ্ছিল দামিনী মাসি ওর হাতটা ধরলো। চোখের ভাষায় বুঝিয়ে দিলো। না মা তোর প্রণাম আমি নিতে পারবোনা। কেনো! তুই অনির বৌ। আমার বুকে থাকবি। আমরা সবাই বসার ঘরে এসে বসলাম। কবিতা শরবতের গ্লাস ট্রেতে করে সাজিয়ে নিয়ে এসেছে। বড়মা। বড়মা আমার দিকে তাকালো। কবিতা। এটা কবিতা! সেদিন ওর ওইরকম গলারস্বর! কবিতা সেন্টার টেবিলে ট্রেটা নামিয়ে সকলকে প্রণাম করলো। মাসি আমার ঘর রেডি। মিত্রা জিজ্ঞাসা করলো। ওপরে তোর আর ছোটর ঘর রেডি করেছি। নীচে এই ঘরটা রান্নাঘর আর দাদার ঘর। খাওয়া কি মাসি। বেরোবো। আমি বললাম। তুই কোথায় বেরোবি। বড়মা আমার দিকে বড়ো বড়ো চোখ করে তাকালো। আমাকে এখন দু’তিনদিন পাবেনা। তারমানে! প্রত্যেকদিন বাড়ি ফিরবি। ছোটমা বললো। তোমার মেনুটা বলো। মাসির দিকে তাকালাম। খাবার সময় দেখবি। আমায় খেতে দাও কেটে পরি। তোর কোথাও যওয়া হবেনা। ছোটমা বললো। প্রচুর কাজ, অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। আমরাও একবার অফিসে যাবো, কি বল মল্লিক। দাদা বললো। আমাকেও বেরোতে হবে। ইসলামভাই বললো। তোরা সকলেই বেরিয়ে যা না। ছোটমা চেঁচিয়ে উঠলো। তোমরা বসো আমি আসছি। তুই আগে যাবিনা। আমি যাবো। মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো। তুই ছোটর ঘরে যা। তুই যা। আমি বেরিয়ে এলাম। ওপরে এসে আমার চোখের পলক পরছে না। মাসি দারুণ রং করেছে আমার ঘরটা। হাল্কা কচি কলাপাতা রং। বাথরুমে সাদা টাইলস বসিয়েছে। একবারে ধব ধবে সাদা। আমূল পরিবর্তন করে দিয়েছে ঘরটার। কিন্তু টেবিলটা যেমন অগোছালো ঠিক তেমনি আছে। ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলাম টিনা ফোন করেছে। হ্যালো। বলো টিনা। বাড়ি পৌঁছলাম। ওরা ? সবাই পৌঁছেগেছে, নির্মাল্য আমাকে শেষে নামালো। নির্মাল্য চলে গেছে। না আমার ঘরে বসে। কেমন লাগলো তোমাদের। তুমি এলে তোমাকে বলবো। ঠিক আছে দেখি সময় করতে পারিকিনা। তারমানে! কলকাতায় আসা মানে আবার মূল শ্রোতে মিশে যাওয়া, কোথায় টেনে নিয়ে যায় দেখি। টিনা খিল খিল করে হেসে ফেললো। রাখি। আচ্ছা। আলনা থেকে টাওয়েলটা কাঁধে নিলাম। গেঞ্জি প্যান্ট খুলে বাথরুমে ঢুকে গেলাম। ভালো করে ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে এলাম। আলমাড়িটা খুলে একটা প্যান্ট গেঞ্জি বার করেনিলাম। দেখলাম যেখানে যা রেখে গেছিলাম সব ঠিক আছে। ড্রেস করে নিচে নেমে এলাম। দেখলাম খাওয়ার সাজানো হয়ে গেছে টেবিলে। আমার আগেই মিত্রা রেডি হয়ে গেছে। তুই একটা মেয়ে। মিত্রার দিকে তাকালাম।
ঠিক আছে ঠিক আছে পরে বলিস। সবার সামনে বলতে হবেনা। নীপা হাসছে। বড়মা ছোটমা রান্নাঘরে। ভজু। যাই অনিদা। ভজু এলো। কিগো। শাকের আঁটি গুলো নামিয়েছিস। হ্যাঁ। দামিনী মাসির দিকে তাকালাম। আমি দেখেছি। পছন্দ। দামিনী মাসি হাসছে। কিগো ছোটমা চারটে জায়গা। তোরা চারজন খেয়ে আগে বেরো তারপর আমরা সবাই খাব। মিত্রা। তোকে চিন্তা করতে হবেনা, আমি সব টেস্ট করে নিয়েছি। বড়মা। বল। রাতে কি এ বাড়িতে না ও বাড়িতে। এখনো কিছু ঠিক করিনি। আমি কিন্তু নাও ফিরতে পারি। কেনো ? ছোটমা বললো। দরকার আছে। তুই ফিরে আসবি। কথা দেবোনা। একিরে মিত্রা একা থাকবে। নীপা আছে। তুই কি সেই জন্য নীপাকে নিয়ে এসেছিস। হ্যাঁগো ডাক্তারদাদা কোথায় খাবে। আগে আমার কথার উত্তর দে। দেওয়া হয়ে গেছে। তুই ফিরে আসবি। ঠিক আছে। ডাক্তার স্নান করে আসছে।
আমরা চারজন খেতে বসেছি। দামিনীমাসি ফ্রাইএড রাইস আর চিকেন করেছে। ঘপা ঘপ খেতে শুরু করলাম, খেতে ঠিক ইচ্ছে করছে না। মিত্রা দু’টো চিকেন তুলে নিল। আমি কিছু বললাম না। ওরা সবাই লক্ষ্য করেছে। ছোটমা একবার মুখ টিপে হাসলো। তোমার সঙ্গে নেক্সট কবে দেখা হচ্ছে। ইসলামভাই-এর দিকে তাকিয়ে বললাম। তুই যখন চাইবি। বুঝেছি। এরি মধ্যে বুঝেগেলি! হ্যাঁ। তোমরা অফিসে আসছোতো ? দাদাকে বললাম। হ্যাঁ। আমি খুব তাড়াতাড়ি খাচ্ছি। তুই যে আজকের কাগজে ওটা ছাপলি, লেখাটা ? ওটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবেনা। পুরোটা খেতে পারছি না। মিত্রার দিকে তাকালাম। খেয়ে নিবি ? তোর ওঠার অপেক্ষায়। আমি উঠে দাঁড়ালাম। কিরে তুইতো কিছুই খেলি না। বড়মা কাছে এসে দাঁড়ালো। অনেক খেয়েছি ভালো লাগছেনা। রাতে কোথায় থাকছো, এ বাড়িতে না ও বাড়িতে আমাকে একবার জানিয়ো। তোর কি খুব তাড়া। ইসলামভাই বললো। খুব। পেছনে লোক লাগিয়ো না। প্রইভেট বাসে করে ঘুরবো। ধরে ফেলবো। দামিনী মাসি ইসলামভাই হো হো করে হেসে ফেললো। তুই একটা মালিক। দামিনী মাসি বললো। সেই জন্য প্রাইভেট বাস। দাঁড়ালাম না। মুখ ধুয়ে বেরিয়ে এলাম। মিত্রা গেট পর্যন্ত এলো। ঘ্যানোর ঘ্যানোর। রাতে ফিরে আয়। যত রাত হোক। দেখি। বেরিয়ে এলাম। প্রথমেই অর্ককে একটা ফোন লাগালাম। হ্যাঁ দাদা। গলাটা খুব নীচু স্বরে। কোথায় ? তোমায় পরে রিং ব্যাক করছি। ঠিক আছে। সন্দীপকে ফোন লাগালাম। ফিরে এসেছিস। হ্যাঁ। অফিসে আসবিতো ? জরুরী কিছু আছে। আছে। বল। রাজনাথের সিএ এবং পিএ তোকে তিন চারবার খুঁজে গেছে। তুই বলিসনি ফোনে কথা বলে নিন। বলেছি। কি বলছে। তোর সঙ্গে সাক্ষাতে কথা বলতে চায়। কি বলেছিস। মঙ্গলবারের আগে হবেনা। দেখে কি মনে হচ্ছে। খুব টেনসনে ভুগছে। কবে থেকে আসছে। আজই প্রথম এলো। সকাল থেকে চার বার আসা হয়ে গেলো। শেষে আমার সঙ্গে কথা হলো। আর কোনো ফোন ফান। আপাতত ঠিক আছে। ব্যানার্জী। কোনো সাড়াশব্দ নেই। মঙ্গলবার মালটা বেরোবে মাথায় রাখিস। ঠিক আছে। তুই আসছিস তো ? দেখি। দাদারা যাচ্ছে। আচ্ছা। বাসে উঠলাম, সোজা পিলখানায় এসে নামলাম। অর্কর কথা মতো সেই চায়ের দোকানটা প্রথমেই খুঁজে বার করলাম। তারপর ওমপ্রকাশকে একটা ফোন লাগালাম। তুই কোথায়। দাদ আমি একটা কাজে বেরিয়ে এসেছি। তোমার কাছে একজনকে পাঠাচ্ছি ও তোমাকে আকিবের ঠেকে নিয়ে যাবে। আমি ওকে চিনি। খুব ভালো করে চেনো। অবতার ও একসঙ্গে থাকতো। ওই তল্লাটের গ্যাংটা ওরা চালায়। হাতকাটা ? হ্যাঁ হ্যাঁ। ওর নামতো ছোট্টু। নাম বদলে নিয়েছে। আমি চায়ের দোকানে বসে আছি। ঠিক আছে, আমি ওকে পাঠাচ্ছি। তুমি পাঁচমিনিট বোসো। এই সব কাজে এইরকম চায়ের দোকানের বিশেষ ভূমিকা থাকে। চা খেলাম। একটা সিগারেট ধরালাম। আমি এই তল্লাটে অপরিচিত। অনেকেই চোরা চোখে আমাকে দেখছে। নেপলা এসে বাইক নিয়ে থামলো। আমি ওর দিকে অবাক হয়ে তাকালাম। তুই। তুমি যেখানে যেতে চাও আমি নিয়ে যাচ্ছি। তুই জানলি কি করে। তুমি চলো তারপর বলছি। আমি ওর বাইকের পেছনে চেপে বসলাম। ও আমাকে গলি তস্য গলির ভেতর দিয়ে লাইনের ধারে একটা ঝুপরিতে নিয়ে এলো। আমি বাইক থেকে নামলাম। ভেতরে এসো। প্লাসটিকের ছেড়া পর্দা সরিয়ে ভেতরে ঢুকলাম। দেখলাম ঘরে রতন আবিদ বসে আছে। পাশে আকিব। রতন আমাকে দেখে মাথা নীচু করলো। আবিদ হাসছে। আকিবের মুখ ছোটো হয়েগেছে। বিশ্বাস করো অনিদা। রতনের দিকে কট কট করে তাকালাম। আমি এখানে আসবো তোরা জানলি কি করে। তুমি বসের সঙ্গে কথা বলো। আমি পকেট থেকে ফোনটা বার করতেই বেজে উঠলো। দেখলাম ইসলামভাই। নেপলা জানালো আমি পৌঁছে গেছি। ইসলামভাই হো হো করে হাসছে। বলো। আমি জানতাম তুই ওখানে যাবি। আমার মোবাইলথেকে ম্যাসেজ গুলো ট্রান্সফার করে নিয়েছো। মিথ্যে বলবোনা। মামনি হেল্প করেছে।
এখন থেকে মোবাইল টেবিলের ওপর পরে থাকবে, সিমকার্ড আমার পকেটে থাকবে। তুই রাগ করিসনা। আমাকে মারার স্কিম করবে আর আমি জানতে পারবোনা তা হয়। ওমপ্রকাশ কোথায় ? আমার কাছে। তুই চলে আয়, তোর পার্টের কাজ তুই কর আমার পার্টের কাজ আমাকে করতে দে। চুপ করে থাকলাম। আমি জানি তুই আমাকে বড্ড ভালোবাসিস। মামনিকে জিজ্ঞাসা কর, আমি বেরোবার সময় ওকে হিন্টস দিয়ে এসেছি তুই বেরিয়ে প্রথম কোথায় যাবি। মাসি যানে। আমি বেরোবার সময় বলেছি। তবে তোর ছেলেটা দারুণ ইন্টেলিজেন্ট। ও ম্যাসেজ না করলে একটা অঘটন ঘটলেও ঘটতে পারতো। রতনকে একটু দে। রতনের হাতে ফোনটা ধরিয়ে দিলাম। ও কিছুক্ষণ হুঁ হাঁ হুঁ হাঁ করেগেলো। দেখলাম কথা শুনতে শুনতে ওর চোয়ালদুটো শক্ত হয়ে উঠছে। দাঁত কট কট করছে। ফোনটা রেখেই দাম করে একটা ঘুঁসি মারলো আকিবের নাকে। ঝড় ঝড় করে রক্ত বার হতে আরম্ভ করলো। রতন বাজখাঁই গলায় ষাঁড়ের মতো চেঁচিয়ে উঠলো। খানকির ছেলে তোর জন্য দাদা না খেয়ে চলে এসেছে। নেপলা। তুমি ছাড়ো রতনদা তুমি ছাড়ো। আবিদ বললো। এখন থাক। নেপলা পর্দা সরিয়ে ভেতরে ঢুকলো। দাদাকে একটা টুল এনে দে, দুটো চিকেন প্যাটিস আর কোলড্রিংকস নিয়ে আয়। না আমি খাবোনা। দাদা বলেছে। তোমাকে না খাইয়ে এখান থেকে যেতে দেবোনা। সবার জন্য আনা। এই শালার জন্যও। হ্যাঁ। নেপলা বেরিয়ে গেলো। আমি ছোট্টুর দিকে তাকালাম। রক্তে মুখটা লাল হয়ে গেছে। জামাতেও গড়িয়ে পরেছে দুচার ফোঁটা। খারাপ লাগলেও কিছু করার নেই এদের কাছে এটা জলভাত। এককথায় বলা যায় সকালের চা। এই জন্য তোদের তখন বাঁচিয়েছিলাম। তুমি বিশ্বাস করো অনিদা। কি বিশ্বাস করবো বল। তখন এনকাউন্টারে মিঃ ঘোষ তোকে মেরে দিলেই ভালো করতো। আল্লা কসম আমি ইসলামভাই-এর ক্ষতি হোক চাই না। একবারে আল্লার নাম মুখে এনে মিথ্যে কথা বলবি না। তুমি বিশ্বাস করো। রাজনাথ বাবুর সামনে আমি না করিনি। হ্যাঁ বলেছি কিন্তু আমি কাজটা করতাম না। তুই অবতার সাগির সব এক কথা বলছিস। আমি মিথ্যে বলছিনা। তুই কাজটা না পারলে, তোর পেছনে কাকে লাগিয়েছে। তোকে মারার জন্য। আমাকে কেউ মারতে পারবে না। এতো বড়ো হনু হয়ে গেছিস! আমি বলছি তোমায়। আমি তোকে আজই মেরে দিতাম। তুমি পারো। সে ক্ষমতা তোমার আছে। প্রমাণ পেয়েছি। তাই তোমাকে আমাদের লাইনের সকলে বস বলে ভয়পায়। আমাকে মারার জন্য কাকে ঠিক করেছিস। তোমার পায়ে ধরে বলছি, বিশ্বাস করো কলকাতায় জন্মায় নি। ছোট্টু আমার পায়ে ঝাঁপিয়ে পরলো।
শুয়োরের বাচ্চা বলে কিরে আবিদ। এতক্ষণ চুপচাপ ছিলো। অনিদাকে দেখে গড়গড় করে বলে যাচ্ছে। অনিদা তুমি কি জাদু যানো। রতন বললো। অনিদা তোদের আগে থেকে আমাকে চেনে। সেতো এখন বুঝতে পারছি। তাহলে তুই দাদাকে মারার সুপুরি নিলি কেনো। আমার জায়গায় তুই থাকলে তুইও নিতিস। তুই জানতিস অনিদার সঙ্গে দাদার একটা ভালো সম্পর্ক আছে। জানতাম। কিছু হলে অনিদা তোকে রাখবেনা এটাও জানতিস। হলেতো। তারমানে! লোকটার পলিটিক্যাল পাওয়ার আছে, তাছাড়া বহুত হারামী। তোর সঙ্গে কোথায় বসে কথা হয়েছে। আমি বললাম। পার্টি অফিসে। কোথাকার। মোড়ের মাথায় যেটা আছে। তোকে কে আলাপ করিয়ে দিলো। ওই যে ডাক্তারটা আছেনা। বিএফের বিজনেস করে। তোর সঙ্গে ডাক্তারের আলাপ হলো কি করে। এ তল্লাটে চৌধুরী বাড়িতে যতোগুলো বিএফের স্যুটিং হয় আমি করাই। ভালোই লগ্গা আসে বল। দু’ই আড়াই আসে। নেপলা পর্দা সরিয়ে ঘরে ঢুকল। একটা প্যাটিস নিলাম। সবাইকে নিতে বললাম। খেতে খেতে ছট্টুকে বললাম রাজনাথ তোকে আর কি বললো। এদেরকে বাইরে যেতে বলো আমি বলবো। ওরা আমার কাছের লোক, তোর মতো। তুই বলতে পারিস। যদি লিক করে দেয়। দিলে দেবে। তোর কি। আমি হজম হয়ে যাবো। এই বললি তোকে কেউ হজম করতে পারবে না। এই লাইনে মুখ না ছোটালে কুত্তায় পেচ্ছাপ করবে। ফোনে একটা ম্যাসেজ এলো। বুঝলাম অর্ক। ম্যাসেজটা পরলাম। অনেকটা বড়ো ম্যাসেজ। দাদা অনেক বড়ো লিখে ফেললাম খুব সিরিয়াস হতে যাচ্ছে ব্যাপারটা। পড়তে পড়তে মনে পরে গেলো মুখটার কোনো পরিবর্তন যেনো না হয়। হাসি হাসি ভাবটা মুখে ধরে রাখতে হবে। আজ সকাল থেকে ডাক্তারের কোনো পাত্তানেই যেহেতু আমাদের কাগজে ব্যাপারটা ফ্লাস হয়ে গেছে। ডাক্তার এখন ব্যারাকপুরে লাট বাগানের একটা বাড়িতে গা ঢাকা দিয়েছে। ঠিকানা এই। এটা রাজনাথের বাড়ি। ওখানে রাজনাথের রাখেল থাকে। আমি এখন ফুরফুরা সরিফ থেকে বেরোচ্ছি। এখানে মুজফ্ফরপুর থেকে সাতজন এসেছে। মনে হচ্ছে টেররিস্ট। প্রচুর আর্মস আছে। রাজনাথ বাবু এদের দায়িত্ব দিলো। শুয়োরের বাচ্চা পাগলা কুত্তার মতো আচরণ করছে। তুমি ছাড়াও ইসলামভাইকে ওদের চাইই চাই। আমার বেশ ভয় করছে দাদা। তুমি একটু সাবধানে থেকো। আকিব ওদের দেখিয়ে দেবে ঠেকাগুলো। ওরা কাজ করে বেরিয়ে যাবে। প্রথমে ওরা আকিবের ঠেকায় যাবে। মাসুদুর বলে একটা ছেলে আকিবের ঠেকায় ওদের নিয়ে যাবে। ওখান থেকে আকিবকে তুলে নিয়ে যাবে। এই ছক কষা হয়েছে। ওরা আটচল্লিশ ঘন্টা সময় চেয়েছে। ওরা এখন যে ঠিকানায় আছে তা তোমাকে দিলাম দেখে নিও। হো হো করে হেসে ফেললাম। কেগো অনিদা ? আমার এক বান্ধবী। লন্ডন থেকে ম্যাসেজ করেছে। কলকাতায় আসছে আজ রাতের ফ্লাইটে আমাকে পিকআপ করতে বলছে। আকিবের দিকে তাকিয়ে কথাটা বললাম। দেখলাম আকিবের চোখ স্থির। বুঝতে চাইছে কতটা সত্যি কথাটা। তোমার সেই বান্ধবী। হ্যাঁ। বাঃ অনিদা বাঃ একা একা। আকিব হাসতে হাসতে বলে উঠলো।
কি করবো বল। তুইতো জোগাড় করে দিলিনা, তোকে কতোবার বলেছি। তুই ব্যানার্জীর স্যুটিংয়ের ব্যবস্থা করেদিবি আর মাল কামাবি। আজ থেকে যাও। হয়ে যাবে। ওই বাড়িতে। হ্যাঁ। কজন আসবে। তা সাতটা মতো চামকি আসবে। এখানকার। না। ইউপি থেকে। আমি ঠিক সময় পৌঁছে যাবো। আসবে তো ? কথা যখন দিচ্ছি তখন আসবো। এদের হাত থেকে আমাকে বাঁচাও। রতন ওকে ছেড়ে দে। ছট্টু খুব ভালো ছেলে। তুমি দাদাকে একবার ফোন করো। ফোন করতে হবে না। আবিদ নেপলা থাক। আমি দাদার কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে নিই। কিরে ছট্টু তাই হোক, আমি তোকে আটকে রাখি নি। তবে একটা সত্যি কথা বললে সেটাও হয়ে যাবে। বলবি। তুমি বলো আমি সত্যি কথা বলবো। আচ্ছা এই কদিনে তুই কোথাও ঘাই মারিস নি ইসলামভাই-এর জন্য। মেরেছি। কোথায়। দামিনীর ওখানে তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি। ইসলামভাই নেই। আর কোথায় ? তোমার কাগজের এডিটরের বাড়ি। ওখানে দামিনীকে দেখলাম রং করাচ্ছে। তারপর। তোমার ফ্ল্যাট। কি পেলি। কোথাও নেই। শুনলাম ইসলামভাই তার গ্রামের বাড়িতে ঘুরতে গেছে। সেখানে ঢুঁ মারিস নি। জায়গাটা ডেঞ্জার ঢোকা যাবে বেরোনো যাবেনা। কেনো তুই খোঁজ করছিলি। ইসলামভাইকে বলার জন্য। রাজনাথ আমাকে তোমার সুপুরি দিয়েছে। হ্যাঁ। নেপলা। আমার ডাকেই ছট্টু বুঝতে পেরেগেছে এবার কিছু একটা ঘটবে। রতন থতমতো খেয়ে গেছে। অবিদ এতোক্ষণ হাসাহাসি করছিল উঠে বসলো। দাদা। নাইলন দড়ি। আর লিউকো প্লাস কিনে আন। লিউকো প্লাস চিনিসতো। হ্যাঁ। হাউমাউ করে ছট্টু আমার পা ধরে ফেললো। আমি মিথ্যে কথা বলেছি অনিদা। তুমি ঘোষ সাহেবকে ফোন করোনা। দাঁড়িয়ে রইলি কেনো পাঁচমিনিটের মধ্যে আসবি। পাঁচমিনিটের মধ্যে কাজ সেরে চলে যাবো। আবিদ কোমর থেকে রিভালবার বার করলো। খুপরিতে ঢেলে দিই। না। আমার অনেক কাজ বাকি আছে। তোর মোবাইল কোথায়। আমার কাছে নেই। কার কাছে আছে ? দাম করে সজোরে একটা লাথি মারলো আবিদ ছট্টুর বুকে। রতন ওর মুখ বেঁধে দে। আমার এই অবস্থা ওরা সেদিন দেখেছিলো। আমার কথা শেষ হবার আগেই আবিদ ছট্টুর মুখ চেপে ধরলো। রাজনাথ তোর বড়ো বাবা, তাইনা। আজ রাতের মধ্যেই তোর খেলা শেষ। অনিদা দাদাকে একবার ফোন করি। একবারে ফোন করবিনা। ওরা থতমতো খেয়ে গেছে। নেপলা দড়ি লিউকো প্লাস নিয়ে চলে এলো। ভালো করে বাঁধ মুখে লিউকোপ্লাস আটকে দে। তোরা এখান থেকে ফেটে যা। কাছা কাছি থাক, এই ঝুপড়ির ওপর লক্ষ্য রাখ। ইসলামভাইকে একটা ফোনও করবি না তাহলে তোরা পর্যন্ত হজম হয়ে যাবি, মনে রাখবি। নেপলা আমাকে রাস্তায় ছেড়ে দিয়ে আসবি চল। আমি নেপলার বাইকে বসলাম। ও আমাকে ছেড়েদিলো। শোন। বলো দাদা। একটা কাজ করতে পারবি। কি। আবার কি! এনকাউন্টারে যেতে হতে পারে। হাতে সেরকম মাল আছে। না ঘোষকে বলবো। এইতো এখানে এসে ঘোষের কথা বলেন, ঘোষের কাছে গিয়ে আমার কথা বলেন। আপনি না পরলে ঘোষকে বলবো। পকেট থেকে ফ্ল্যাটের চাবিটা নেপলার হাতে দিয়ে বললাম, এখুনি ইসলামভাইকে এটা পৌঁছে দে আমাকে একটা রিং করতে বলবি। আচ্ছা। আমি অর্ককে ফোন লাগালাম। কোথায় আছিস। দাদা আমি অফিসে। মাল এখন তার জায়গায়। সারাদিন টেনসন গেলো রিলাক্স করছে। তুমি ঠিক আছো ? ঠিক আছে অফিসে থাক, আমি যে কোনো সময় ফোন করতে পারি। আচ্ছা। ট্যাক্সি ধরলাম। সোজা নিজাম প্যালেসে চলে এলাম। মুখার্জীর ঘরে ঢুকলাম। আমাকে দেখেই মুখার্জী বলে উঠলো। আরে সাহেব আমার ঘরে! কি সৌভাগ্য আমার। এক গ্লাস জল খাওয়াবেন। এ কি কথা বলছেন। বেল বাজালেন। একটু গরম চা। হলে খারাপ হয় না। আপনার কাজ করে দিয়েছি। কিন্তু কোনো নিউজ হলো না। দরকার ছিলো। আর দরকার নেই। লেবু বেশি নিংরোলে তেঁতো হয়ে যাবে। আপনার পাওনা গন্ডা কি হলো ? ফাইল প্রসেস হলো। এবার দেখি কি হয়। আর একটা কাজ আজ রাতের মধ্যে ঝেড়ে দিতে পারবেন।আমি কি আপনার কোনো কাজ করে দিই নি। সাতটা টেররিস্ট আছে ফুর ফুরা সরিফের কাছে। ইউপি থেকে এসেছে। দাঁড়ান দাঁড়ান হজম হচ্ছে না। ঢক ঢক করে একগ্লাস জল কঁত কঁত করে খেয়ে নিলেন। আমার ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ খবর পেলো না, আপনি! তাহলে ছেড়ে দিন। একি মশাই বাঘকে চিতল হরিণ দাখালেন, আবার কেরেও নেবেন। কি করবো। আমি এখুনি একটা খবর নিই। নিতে পারেন, কিন্তু পাবেন না পলিটিক্যালি ব্ল্যাক আউট করা আছে। কি বলছেন আপনি! যা বলছি সত্যি। কাজ হয়ে যাবার পর সব আপনাকে বলবো। আমার লোক যাবে আপনার সঙ্গে। সত্যি! মুখার্জীর চোখ চক চক করে উঠলো। কজন আছে। সাতজন। সঙ্গে প্রচুর আর্মস। মুখার্জীর মুখটা গম্ভীর হয়ে গেলো। কি হলো।
আমার এনকাউন্টারের ছেলে গুলোকে একটু দেখেনিই আচে কিনা। না থাকলে এখুনি ডেকে নিন। দেরি করা যাবে না। একটু সবুর করুন। খবরটা আমি কাল ছাপবো। খালি একটা লোককে বাঁচিয়ে রাখতে হবে যে আপনাকে নিয়ে যাবে। তাও প্রয়োজন হলে। আমি প্রমিস করছি। আমার একজন সাংবাদিক একজন ফটোগ্রাফার যাবে আপনার সঙ্গে, আমিও যেতে পারি। তাহলেতো কোনো চিন্তাই নেই। চলুন বেরিয়ে পরি। দাঁড়ান। মুখার্জী ফোন ঘোরালেন, নীচু স্বরে কার সঙ্গে কথা বললেন, আমি টেবিলের এপার থেকে শুনতে পেলাম না। ফোনটা রাখলেন। আমি বুলেট প্রুফ গাড়িতে বসবো। সাদা কাঁচ থেকবে ছবি তুলবো। সব কটা বুলেট প্রুফ গাড়ি থাকবে। আর একটা ব্যাপার। বলুন। আজ রাতেই এক জায়গায় নীল ছবির স্যুটিং হবে সেখানে বড় বড় রাজনৈতিক চাঁই জড়িয়ে আছে ধরতে পারবেন। টাফ ব্যাপার খুব সেন্সেটিভ। তাহলে এই দায়িত্বটা অন্য কাউকে দিই। এইতো, এক যাত্রায় পৃথক ফল হতে পারে। তাহলে বলুন। আমাকে মিনিট দশেক সময় দিন। ওখানে একটা টিমকে ঘাপটি মেরে থাকতে বলুন। বামাল সমেত তুলবেন। তাই হবে। আমি দেরি করছিনা শান্তি নিকেতন বিল্ডিং-এর সামনে দাঁড়াচ্ছি। আপনি আপনার কাজ গুছিয়ে চলে আসুন। আমি আপনাকে ফোন করবো। আচ্ছা। আমি ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। মোবাইলটা স্যুইচ অফ করাছিলো খুললাম। দেখলাম অনেক মিস কল। তার মধ্যে বড়মা ছোটমা মল্লিকদা মিত্রা ইসলামভাই সকলে আছে। ইসলামভাইকে ফোন করলাম। তুই কোথায়। আমাকে খুঁজে পাবে না। তুই এরকম করিসনা। তোর পায়ে পরছি। কোনো কথা বলবেনা। রতনদের যেখানে দাঁড়াতে বলেছিলাম, সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ওখানে চলে এসেছি। নেক্সট যখন ফোন করবো তুমি ওদের নিয়ে ওখান থেকে সরে যাবে। মনে থাকে যেনো। প্লিজ তুই আমার কথা শোন। এই কাজ তোর নয়। শেষ বারের মতো বললাম কোনো কথা বলবে না। মনে থাকে যেনো। আমার কাজ আমাকে করতে দাও। সবাইকে ফোন করে দাও, আমাকে যেনো ডিস্টার্ব না করে। তুই এসব কি করতে যাচ্ছিস। যা করছি ভালোর জন্য করছি। প্লিজ অনি তুই আমার ভাই। তোর কিছু হলে বড়মা ছোটদি মামনির কাছে মুখ দেখাতে পারবোনা। দেখাতে হবেনা। ফোনটা কেটে দিলাম। অর্ককে ফোন লাগালাম। হ্যাঁ দাদা বলো। তুই এখুনি একজন ফটোগ্রাফারকে নিয়ে চলে আয়। আমি শান্তি বিল্ডিংয়ের তলায় দাঁড়িয়ে আছি। সন্দীপদাকে বলে যাবো। না। চুপকে ফেটে আয়। ট্যাক্সি করে। আচ্ছা। আমি একটা সিগারেট ধরালাম। মিনিট দশেকের মধ্যে অর্ক চলে এলো। কিরে কেউ জানে নাতো। না। আমি মুখার্জীকে ফোন লাগালাম। রেডি স্যার, বেরোবো। হ্যাঁ চলে আসুন। আমি আমার ফটোগ্রাফার আর সাংবাদিক আপনার গাড়িতে বসবো। ঠিক আছে। কিগো অনিদা। কোনো কথা বলবিনা। চুপচাপ দেখা যা। তুই যা যা লিখেছিস সব সত্যি। সব সত্যি। ঠিক আছে। ওখানে কাউকে ফিট করে এসেছিস। না। জায়গাটা চিনতে পারবি। পারবো। চুপ চাপ যা বলবো করে যাবি। তোমার নামকি ভাই। সায়ন্তন। কতোগুলো রিল আছে। আনলিমিটেড এমনকি মুভি পর্যন্ত করা যাবে। হেসেফেললাম। ডিজিট্যাল। হ্যাঁ। গুড। মুখার্জীর গাড়ি আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। ধবে ধবে সাদা জিপসি। পেছনে দেখলাম আরো আটটা। আমরা প্রথমে আকিবের ডেরায় এলাম। আসার সময় ফোন করে ইসলামভইকে বলে দিলাম তোমরা ওখান থেকে সরে যাও। ধারে কাছে কেউ যেনো না থাকো। ফোনটা কেটে দিলাম। কাকে ফোন করলেন। টিপারকে রেখে এসেছি। ওটাকে তুলতে হবে। ওকে সঙ্গে নিয়ে যাবো। তাছাড়া এই ভেঞ্চারের সমস্ত কিছুর ইনফর্মেসন এই ছেলেটা দিয়েছে। আমার মতো তৈরি করছি। নাম অর্ক। মুখার্জী পেছন ফিরে তাকালো। নিউজটা কোথায় পেলিরে বাবা। বলা যাবেনা। তবে ঘটনাটা সত্যি। বাবা তুইতো অনিবাবুর থেকে এক কাঁটা ওপরে। গাড়ি এসে ঠিক জায়গায় থামলো। অর্ককে বললাম যা তুলে নিয়ে আয়। ওর ঝুপরিতে বেঁধে রেখে এসেছি। তুমি এসেছিলে এখানে। হ্যাঁ। অর্ক সায়ন্তন গাড়ি থেকে নামলো। একটা গাড়ি ওদের ভেতরে নিয়ে গেলো। সবার হাতেই এসএলআর। ফুল ড্রেস করা। আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে রইলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে ওরা আকিবকে তুলে নিয়ে চলে এলো। সায়ন্তনকে বললাম জায়গাটার ছবি তুলেছিস। হ্যাঁ। এবার আমরা রওনা দিলাম ফুরফুরা সরিফের দিকে। গাড়ি যেনো হাওয়ায় ভাসছে। জীবনে কোনোদিন এনকাউন্টারের সাক্ষী থাকিনি। যতোবার এনকাউন্টার করিয়েছি সব ঘোষ সাহাবকে দিয়ে, খালি জায়গা বলে দিয়েছি। কাজ করে চলে এসেছে। কাগজে লিখেছি। ওদের নাম ফেটেছে। ইনক্রিমেন্ট হয়েছে। রিওয়ার্ড জুটেছে কপালে। আমরা যখন স্পটে পৌঁছলাম তখন সাড়ে আটটা বাজে। চারিদিকে ঘুট ঘুটে অন্ধকার। একেবারে গ্রামের পরিবেশ। এরি মধ্যে মনে হচ্ছে যেনো নিশুতি রাত। দূরে একটা পোড়ো বাড়ি দেখা যাচ্ছে। তার সামনে একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে। মুখার্জীর গাড়ি থামলো। পেছন পেছন সব গাড়ি থামলো। মুখার্জী অর্কর কাছ থেকে সব কিছু জেনে নিয়ে ছক কষে নিলো। এই টিমে কুড়িজন আছে। সবাইকে দেখে মনে হচ্ছে ভীষণ সিম্পল। নো টেনসন ডু ফির্তি। ব্যাপারটা এরকম অনেকদিন পর খাবার পাওয়া গেছে। হরির নামে খাবলা খাবলা করে খেতে হবে। নিমেষের মধ্যে ষোলোজন ছেলে রেডি হয়ে হাওয়া হয়ে গেলো। আমরা যাবো না ? দাঁড়ান মশাই তাড়া হুড়ো করলে হবে। পাখি ফুরুত হয়ে যেতে পারে। আমরা সবাই চুপচাপ। ঝিঁঝি পোকার ডাক। আকাশ ভরা তারা। মুখার্জীর ফোনটা বেজে উঠলো। হ্যাঁ স্যার খবর পাক্কা। তবে টের পেয়ে গেছে। আপনি অনুমতি দিলে স্টার্ট করতে পারি। ওদের ফার্স্ট ডিস্টার্ব করো। কি রিটার্ন দেয় দেখো। সেই বুঝে পজিসন নাও। পারলে ধরবে, না হলে মেরে দেবে। ঠিক আছে স্যার। অর্ক সায়ন্তন গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়িয়ে ঠক ঠক করে কাঁপছে। কিরে। আমরা চলে যাবো। মুখার্জী এক ধমক দিলো। পেছনে কিসের একটা আওয়াজ হলো। একজন ছুটে চলে গেলো। তারপর দেখলাম আকিবকে গাড়ি থেকে বার করে আধমরা করে ফেললো। একটা কথা ভেসে এলো, অনিদা তোমাকে রাজনাথ ছাড়বে না। মুখার্জী আমার দিকে তাকালো। এটা কি রাজনাথের স্কিম। আমি হাসলাম। আপনিতো মশাই বড়ো ঘাঘু লোক। দেখবেন আমাকে যেনো না ফাঁসায়। কেনো ওই কেসটার কথা আপনার মনে নেই। আছে। ওটা আমি অন্য ভাবে মেটাবো। সে সুযোগ আর পাবেন না। কেনো। কালকেই সাসপেনসনের চিঠি ধরাবার ব্যবস্থা করবো। অনিমেষবাবু জানেন ? জানে না। জেনে যাবে। আপনি একটু আমাকে দেখবেন। এইতো দেখছি। মলের কেশের ফাইল প্রসেস হচ্ছে। তারপর এই ফাইলটা প্রসেসে যাবে। মুখার্জী হো হো করে হেসে ফেললো। গুলির আওয়াজ পেলাম। একটা দুটো তারপর পটকার মতো ফাটতে লাগলো। নিস্তব্ধ রাতের মেদুরতা গুলির শব্দে খান খান হয়ে ভেঙে পরছে। দূরে কোথাও আলোর ছটা দেখতে পাচ্ছি। হাল্কা একটা হৈ হৈ শব্দ। চলুন গাড়িতে উঠুন। কাছে যাবেন তো। হ্যাঁ। চলুন। আমরা গাড়িতে উঠলাম। সয়ন্তন ক্যামেরা অন করেছে। অর্ক আমার পাশে সিঁটিয়ে বসে আছে। আমি সন্দীপকে ফোন করলাম। কিরে তুই কোথায়। কথা বলার সময় নেই। প্লিজ। শোন কাগজ এখন প্রেসে পাঠাবি না। আমি না যাওয়া পর্যন্ত। কেনো!। কোনো প্রশ্ন করবিনা। দাদা রাগ করছে। খুব টেনসনে আছে। থাকুক। অর্ক নেই সায়ন্তন নেই। তোকে তার কৈফিয়ত নিতে হবে না। কিরে গুলির আওয়াজ পাচ্ছি! শুনে যা, কুত্তার মতো চেঁচাচ্ছিস কেনো। মল্লিকদার গলা পেলাম। বুঝতে পারলাম। মল্লিকদা সন্দীপের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। তুই আমাকে ফোনটা দে। তোকে কথা বলতে হবেনা। তুই কোথায়। মল্লিকদা
যেখানেই থাকি জানতে হবেনা। আমি না যাওয়া পর্যন্ত কাগজ বেরোবে না। প্লিজ তুই বল। সবাই কান্নাকাটি করছে। আমি মরতে এসেছি। হয়েছে। রাগ করছিস কেনো। এখন কথা বলার সময় নেই। কিরে গুলির আওয়াজ পাচ্ছি। গুলি চলছে, তাই। কেটে দিলাম। আসল কাজ শুরু হলো। ভেতর থেকে প্রচন্ড পরিমানে রেসপন্স এলো। একঘন্টা ধরে রুদ্ধশ্বাস গুলির লড়াই চললো। মুখার্জী এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। সাতজনের মধ্যে ছটা মরলো একটা বেঁচে রইলো। সবাই আমার সঙ্গে এসে হ্যান্ডসেক করলো। আপনারা কেউ ইনজিওরড হন নিতো। ব্যাটারা প্রিপেয়ার্ড ছিলোনা। সত্যি বলেছেন অনিবাবু, প্রচুর আর্মস। মুখার্জী বাবুর দিকে তাকালাম। আপনার ইনটেলিজেন্স ? কালকে কথা বলতে হবে। একটা রিকোয়েস্ট করবো। বলুন। যেটাকে নিয়ে এলাম ওটাকে সেঁটিয়ে দিন। আপনার কাজে লাগবে না! হাসলাম। না। অর্ক আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে। সায়ন্তন ঢোক গিলছে। মুখার্জী ইশারা করলো। একজন এগিয়ে গেলো। যা তোকে ছেড়ে দিলাম। অন্ধকারেও স্পষ্ট দেখলাম। বাঁচার জন্য আকিব গাড়ি থেকে নেমে তীর বেগে দৌড়তে শুরু করলো। একটা ছোট্ট আওয়াজ শরীরটা দুমড়ে মুচড়ে মাটিতে আছাড় খেয়ে পরলো। অর্ক সায়ন্তন চোখ বন্ধ করলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখলাম। আকিবের বডিটা টেনে হিঁচড়ে আমাদের সামনে দিয়ে নিয়ে চলে গেলো। তোরা দাঁড়িয়ে রইলি কেনো প্রত্যেকটা ছবি তুলে নে। ওরা দৌড়ে ভেতরে চলে গেলো। আমি মুখার্জীকে বললাম এবার একটা সিগারেট দিন। মুখার্জী সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বার করে আমাকে দিলেন। আমি ধরালাম। লোকাল থানায় খবর দিয়েছেন। আগে দিইনি এখন দিলাম। কেনো ? ঘিটা ওরা খেয়ে নিতো। আপনার টিম লিস্টটা আমাকে দিন। প্রত্যেকের ছবি নিয়ে নিচ্ছি। কেনো। কালকে এটাই কাগজের মেন স্টরি। কতটা মাইলেজ পাবেন বলুনতো। কিন্তু রাজনাথের কি ব্যবস্থা করবেন। ওটা দ্বিতীয় মল। বলেন কি। ঠিক বলছি। তাহলে ঝেড়ে দিই। তার আগে তিনটে ব্যাঙ্ক এ্যাকাউন্ট আপনাকে দেবো। মুজফ্ফরপুরের। ওটা সিল করেদিন। দিন। অফিসে আছে। কাজ শেষ হলে আপনি একটা ফোন করবেন। ঠিক আছে। আমাদের একটু আগে পাঠিয়ে দেবার ব্যবস্থা করুণ। গিয়ে নিউজটা করি। অর্ক ছুটতে ছুটতে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। ওর হাত পা সব ঠান্ডা। কিরে ঠান্ডা মেরে গেছিস যে। দারুণ এক্সপিরিয়েন্স। মালটা সাজিয়ে নে গিয়েই নামাতে হবে। সায়ন্তন। দাদা লাইভ ছবি তুলেছি। অর্ক একটা ফোন মেরে দে অফিসে, আমরা ঘন্টা খানেকের মধ্যে পৌঁছে যাচ্ছি। ঠিক আছে দাদা। মুখার্জীর ফোনটা বেজে উঠলো। হো হো করে হাসছেন। তাই। ঠিক আছে আমাদের কাজও শেষ। আমরাও বেরোচ্ছি। আমাদের দিকে তাকালেন। আপনাকে আর ছাড়া যাবেনা। কেনো। এক দিনে দুটো এ্যাসাইনমেন্ট কে দেবে বলুন। ওটা কি মাল এবং বামাল সমেত। অবশ্যই। ওই মালটা পাবো কি করে। আপনি অফিসে যান পৌঁছে দিচ্ছি। এবার ফেরার ব্যবস্থা করুণ। আমার গাড়িটা নিয়ে চলে যান। আমাদের যেতে যেতে মিড নাইট হয়ে যাবে। আপনি যা পারুণ করুণ আমাকে গিয়ে নিউজ ধরাতে হবে। হ্যাঁরে সায়ন্তন সবার ছবি নিয়েছিস। হ্যাঁ দাদা। নামের গন্ডগোল করবি নাতো। সব লিখে নিয়েছি। আমরা মুখার্জীর গাড়িতে চেপে বসলাম। গাড়ি ছাড়লো। ঘরির দিকে তাকালাম সাড়ে দশটা। একটা সিগারেট ধরালাম। অনিদা তুমি একটা ফোন করো এবার। সবাই খুব টেনসনে। কি করে বুঝলি। দাদা মল্লিকদা সবাই আমার কথা শোনার জন্য ছুটে এসেছিলো। ঠিক আছে আগে সিগারেটটা খেতে দে। তোমার কোনো টেনসন হচ্ছে না। একেবারে না। সত্যি জীবনে প্রথম লাইভ এ্যাকসন দেখলাম। কিরকম লাগলো বল। গিয়ে লিখে প্রকাশ করবো। সায়ন্তন। দাদা আমাকে একটু আপনার পাশে থাকতে দিন। আছিস তো। আমি খুব ভাগ্যবান। আপনার কথা শুনেছি আপনার সঙ্গে প্রথম কাজ করলাম। তাও টেররিস্ট ভার্সেস এনএসজি। দাদা এরা সব সাদা পোষাকে কেনো। অর্ক বললো। ড্রাইভার সাহেব বলে উঠলেন। সাদা পোষাক না হলে পাখি উড়ে যাবে। গাড়ি গুলো দেখেছো কোনো বোর্ড নেই খালি একটা করে কোড নম্বর লেখা রয়েছে। সত্যি। হ্যাঁ। আপনি চালাতে পারেন। প্রয়োজন পরলে চালাই। এইরকম কেশ এর আগে হ্যান্ডেল করেছেন। না। এই প্রথম। কেনো। আমাদের কাছে খবর আস্তে আস্তে পাখি উড়ে যায়। কেনো। আমাদের মধ্যেই খেয়োখেয়ি আছে। আমি মোবাইলটা বার করলাম। ছোট্ট একটা ম্যাসেজ লিখলাম। কলকাতায় ঢুকে পরেছি। অক্ষত শরীরে। কোনো টেনসন করার দরকার নেই। পর পর সবাইকে ম্যাসেজটা করে দিয়ে মোবাইল অফ করেদিলাম। অফিসে যখন পৌঁছলাম গেটের মুখে বেশ ভিড় দেখলাম। একটু অবাক হলাম। সন্দীপ নিচে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে গাড়ি থেকে নামতে দেখে এগিয়ে এলো। কিরে! সব ঠিক আছে। কি দেখছিস চোখে নেবা হয়েছে। ভিড় কেনো ? সবাই অফিসের স্টাফ। এখানে ভিড় করেছে কেনো। কাগজ দেরি করে বেরোবে। কেনো বেরোবে। কে বলেছেন। গলাটা একটু চড়া হয়ে যেতেই দেখলাম ভিড়টা পাতলা হতে শুরু করলো। স্যার আপনি অনিবাবু। হ্যাঁ। মুখার্জী বাবু এই চিপটা দিতে বললেন। আর কিছু দেন নি ? সরি স্যার। ভদ্রলোক ছুটে গাড়িতে চলে গেলেন। একটা ফাইল আমার হাতে দিয়ে বললেন, সব ইনফর্মেসন এখানে আছে। অসংখ্য ধন্যবাদ ভেতরে এসে একটু কফি খেয়ে যান। সায়ন্তন। দাদা। দেখতো তোর ক্যামেরায় ঢোকে কিনা। ঢুকলে কপি করে নেবো। মেরিটে জায়গা থাকলে করে নে। নাহলে ওপরে চল। সন্দীপ ওনাদের একটু জল আর কফির ব্যবস্থা করো। ওনাদের দিকে তাকিয়ে, আপনারা পাঁচমিনিট একটু বসে যান। সোজা ওপরে চলে এলাম। নিউজরুমে ঢুকতেই দাদা মল্লিকদা এগিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। সবাইকে কেনো কষ্ট দিস। আমি কাউকে কষ্ট দিইনি। অর্ক লিখতে বসে যা। তুই নিউজ কর, আমি গল্প লিখছি। অরিত্র। দাদা। দ্বীপায়নকে ডাক। এখানেই আছে, টয়লেটে গেছে। সায়ন্তন। দাদা। ছবিগুলো ঘপা ঘপ রেডি করে দাদাকে দেখিয়ে নে। দাদার দিকে তাকিয়ে বললাম কিছু খাওয়াবে। তুমি ওরকম ভাবে তাকিয়ে আছো কেনো। মল্লিকদাকে বললাম। মল্লিকদা কোনো কথা বলছে না। আমি আমার টেবিলে বসে গেলাম। অর্ক আমার পাশে। সায়ন্তন। ছুটে আমার কাছে এলো। দাদা তুই মল্লিকদাকে গল্পটা বল আর ছবিগুলে দেখা। আর একটা লেখা তৈরি কর। ঠিক আছে।
আমি লিখতে বসে গেলাম। যেনো পরীক্ষা দিতে বসেছি। হাতটা ঝড়ের মতো চলতে শুরু করলো। এক একটা পাতা রাখছি নিমেষে চলে যাচ্ছে কমপোজের জন্য। যখন লেখা শেষ করলাম তখন রাত সাড়ে বারোটা। অর্ক তখনো লিখে চলেছে। কিরে আর কতোটা লিখবি। থামছে না। তুই কি উপন্যাস লিখছিস। কি করবো, শেষ হচ্ছেনা। শেষ কর শেষ কর। আমি মল্লিকদার টেবিলে এসে বসলাম। আমার লেখার প্রুফ দেখছে। আমার দিকে তাকালো। ফিক করে হাসলো। কি হলো হাসছো যে। এসেই বোমা ফাটালি। তোমরা খামকা টেনসন নিলে। বাড়িতে একবার ফোন কর। করবো না। কেনো। একটু কষ্ট পাক। তুই তোর দিকটা দেখছিস। এই জায়গাটায় আমি খুব সেলফিস। বলতে পারো একরোখা। যদি কোনো অঘটন ঘটতো। ঘটলে ঘটতো। পৃথিবীতে কারুর জন্য কিছু থেমে থাকে। মল্লিকদা হাসি হাসি চোখে আমার দিকে তাকিয়ে। কেমন নামালাম বলো। তুই যেকোনো কাগজের এ্যাসেট। গ্যাস মারতে শুরু করলে। দেখো দাদা চা খাওয়ালোনা। তোর টেবিলটা দেখ। জিভ বার করলাম। কখন দিয়ে গেছে। অনেকক্ষণ। তোকে কেউ ডিস্টার্ব করেনি। দাঁড়াও ঠান্ডা চা খাই। যাঃ তা হয়। মালিক বলে কথা। ছোট মনে হয় আজকাল এইভাবে কথা বলতে বলেছে। অফিসে। খোঁজ নিতে হবে। সন্দীপ কাছে এসে দাঁড়ালো। বটাদা চা নিয়ে এলো। সবাইকে দিলো। রাজ্য জয় করে এলে। তুমি খেপে যাচ্ছ কেনো। তোমার কিছু হলে আমরা না খেতে পেয়ে মরবো। গুরু আমাকে নিয়ে যেতে পারতিস। তোর বৌ বিধবা হলে কাকে জবাবদিহি করতাম। ইস। এইসব বাচ্চা বাচ্চা ছেলে গুলো আছে। একবার সার্কুলেসনের ভদ্রলোককে খবরদেনা। দাদার ঘরে এসে হত্যে দিয়ে পরে আছে। সব কিছু দেখে বলে এক লাখ ইমপ্রেসন বেশি দেবে। দাদা কি বলছে। পঞ্চাশের বেশি উঠতে চাইছে না। হাসলাম। মল্লিকদার ফোনটা বেজে উঠলো। নম্বর দেখেই বললো, তোকে চাইছে। মহা মুস্কিল। একবার কথা বলনা। মহাভারত অশুদ্ধ হবেনা। দাও। বল। লেখা শেষ হলো। হ্যাঁ। আমরা সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছি। ঘুমিয়ে পর। কেনো। আমি ফিরবোনা। প্লিজ। দেখছি। মল্লিকদাকে দে। ধর। আমি মল্লিকদার হাতে ফোনটা ধরিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। নিউজরুম এখন গিজ গিজ করছে। যাদের নটায় ডিউটি শেষ তারাও রয়ে গেছে। রাতের যারা তারাও আছে। আমি এরি মধ্যে অর্ককে ইশারায় ডেকে নিলাম। নিজের টেবিলে বসে কালকের ফলো আপটা করতে বললাম। এও বললাম খুব সাবধানে। ও মাথা নেড়ে গেলো। দ্বীপায়ন কাছে এসে দাঁড়ালো। ছবিগুলো দেখে নাও, সবাই দেখেছে। কি রকম হয়েছে। খুব আপসোস হচ্ছে। কেনো! যদি তোমার সঙ্গে যেতে পারতাম। সায়ন্তন কোথায়। দাদার ঘরে। হয়েগেছে। অর্ক আমার মুখের দিকে তাকালো। কিরে ওর আমাশার ধাত নেইতো। বলতে পারবোনা। তাহলে কি চুজ করলি। তখন হাতের কাছে পেলাম নিয়ে চলে গেলাম। যা যা ডেকে আন। দাদা যদি রাগ করে। রাগ করলে করবে। বল আমি ডাকছি। দ্বীপায়ন হাসছে। তোমার সবদিকে চোখ। না থাকলে তোরা মরে যাবি। ছবিগুলো দেখলাম। একেবারে লাইভ। কাগজটা কেমন সাজিয়েছিস। বেরোলে দেখবে। প্রেসে চলে গেছে। ছাপা শুরু হয়েগেছে। নিয়ে আয়। সায়ন্তন এলো। সঙ্গে অর্ক। কিরে। তোমার কথাই ঠিক ওর আমাশা আছে। ট্যাবলেট দিয়ে দিস। আমার কাছে কাজ করতে গেলে আমাশা রুগী চলবেনা। সায়ন্তন মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে। যা এবার কিছু খেয়ে নে। সায়ন্তন চলে গেলো। আজকের নিউজরুমের অবস্থাটা দেখে দারুণ ভালো লাগছে, সবাই এক সঙ্গে কাজ করছে, দারুণ চনমনে। দাদা আবার নিউজরুমে এলেন। দূর থেকে আমাকে লক্ষ্যকরে পায়ে পায়ে এগিয়ে এলেন। মল্লিকদার দিকে তাকালাম। ফিক করে হেসে ফেললো। দাদার পেছন পেছন সন্দীপ অর্ক সায়ন্তন। কাছে আসতেই সন্দীপ চেয়ার এগিয়ে দিলো। দেখলাম মল্লিকদা চেয়ার ছেড়ে উঠে এলো। দাদা বসতে বসতে আমার দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসছে। লেখাতো ছেপে দিলাম, ডকুমেন্স দে। কেনো সায়ন্তন দেয়নি। ছবি দিয়ে কি হবে। এরা যে টেররিস্ট তুই কি করে জানলি। যারা কেশ করবে তারা প্রমাণ করবে। সে বললে হয়। তুমিকি সায়ন্তনের পেটে কিল মেরেছো। একটু। কিছু পাবেনা। ওটা নীরব দর্শক। এই খেলাটা কবে থেকে খেলছিস। জেনে কি করবে। তোমার কাগজ কালকে একমাত্র এই স্টোরিটা করছে। মাথায় রাখবে এক্সক্লুসিভ। ওরা কেউ জানেনা। জানবে না। আর কোনোদিন কেউ জানতেও পারবেনা। দাদা আমার দিকে হাসি হাসি চোকে তাকিয়ে। তোমরা সরোতো এখানে ভিড় করে আছো কেনো কাজ নেই। বটা দা। এটা খেয়ে নাও। চা নিয়ে আসছি। আমার একার। সবার গেলা হয়ে গেছে। দাদার। দাদা খাবেনা। তুমি নিউজ পেয়ে গেছো। তোমার জন্মের আগে থেকে আছি। সবাই হো হো করে হেসে ফেললো। ডিম পাঁউরুটি নিয়ে এসেছে বটাদা। দেখলাম অনেক গুলো করে নিয়ে এসেছে। সকলেরই হাতে। সার্কুলেসন থেকে কাগজ চলে এলো। একটা হৈ হৈ শব্দ। নিমেষে আমার এখান থেকে ভিড়টা পাতলা হয়ে গেলো। সন্দীপ দাদার হাতে একটা কাগজ দিয়ে গেলো। দাদার মুখটা খুশিতে ভরে উঠলো। মল্লিকদার হাতে কাগজ উল্টে পাল্টে দেখছে। তুই কি করে নামালি বলতো ওই টেনসনের পর। তুমি জিজ্ঞাসা করবে। তোকে নিয়ে আমি রিসার্চ করবো। হাসলাম। তোর বড়মাকে ফোন করেছিস। না। খুব কষ্ট পাচ্ছে। আমার মতো ছেলে যার তাকে একটু কষ্ট পেতেই হবে। চল এবার বেরিয়ে পরি। না তোমরা যাও। আমার আর একটু কাজ আছে। তাহলে বসি তোর কাজ শেষ কর তারপর যাবো। কেনো! তোর বড়মা তোকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে বলেছে।
এইতো গন্ডগোল করলে। তুই ফোন করে বলেদে। আমি বলে এসেছি। আমার সামনে বল। বোসো। দাদা হো হো করে হেসে ফেললো। উঠে দাঁড়ালাম। সন্দীপকে কাছে ডেকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলাম। চাবি কোথায় ? কিসের চাবি! গান্ডু। খামকা গাল দিচ্ছিস। মিত্রার ঘরের চাবি। সন্দীপ জিভ বার করলো। সরি। জেরক্স। আমার ড্রয়ারে। নিয়ে আয়। আমি করিডোরে দাঁড়িয়ে রইলাম। সন্দীপ নিজের ড্রয়ার থেকে চাবি নিয়ে এলো। এই কদিন ঘড় খোলা হয়নি ? কে খুলবে। তুই। কেনো ? এমনি। শালা ঢেমনামো হচ্ছে। চল দরজা খোল। সন্দীপ গিয়ে দরজা খুললো। আমি সন্দীপ ভেতরে ঢুকলাম। নে তাড়াতাড়ি ফাইলটা বার কর। জেরক্সটা নে। ফাইলটা বার কর। সন্দীপ একটা চেয়ার নিয়ে গিয়ে ফাইলটা বার করে নিয়ে এলো। আমি ধুলো ঝেড়ে নিলাম। ফাইলটা খুলে জেরক্সটা ভেতরে রাখলাম। অরিজিন্যাল। ফাইলের মধ্যে। কেনো ? জেরক্স করে ফাইলের মধ্যে রেখে দিয়েছি। তার মানে তুই দ্বিতীয়বার ঢুকেছিলি। হ্যাঁ। সেই রাতেই। ভাল করেছিস। একবার উঁকি দিয়ে দেখে নে। ফেটে যাবো। সন্দীপ উঁকি দিয়ে দেখে নিলো। আমরা দুজনে বেরিয়ে এলাম। নিউজরুমে ঢুকলাম। দাদা মল্লিকদা খুব হাঁসা হাঁসি করছে। অর্ক কাছে এলো। কিরে বাড়ি যাবিনা ? পকেট খালি। আমি মানি পার্টস থেকে একটা হাজার টাকার নোট ওকে দিলাম। আমার কাছে আর নেই। কাল আয় বিকেলে নিয়ে নিবি। কত খরচ হয়েছে। অনেক। এক না দুই। একের একটু বেশি দুয়ের একটু কম। এতো পেলি কোথায়। সব ধারে। কাল আয় তোর এ্যাকাউন্টে ফেলে দিতে বলবো সনাতন বাবুকে। আচ্ছা। আমি যতোক্ষণ তোকে না বলছি ততক্ষোণ ওকে ছাড়বিনা। আচ্ছা। ডাক্তারের পাত্তা লাগা। এই কেসটা হয়ে যাবার পর, ডাক্তার জায়গা চেঞ্জ করতে পারে। ঠিক আছে। যা ভেগে যা। অর্ক নাচতে নাচতে চলে গেলো। আমি দাদার কাছে এলাম। তোর বড়মা অস্থির হয়ে পরছে। আমাকে গাল দিচ্ছে। ও তোমার সয়ে গেছে। চলো। এটা কিরে। সব ব্যাপারে তোমার ইন্টারেস্ট কেনো বলোতো। তুই নিজেই তো একটা ইন্টারেস্টিং পিপল। চলো। দাদা উঠে দাঁড়ালো। সবাই একসঙ্গে বেরোলাম। রবীন গাড়ি ড্রাইভ করছে। আমি সামনে বসলাম। দাদা মল্লিকদা পেছনে। আস্তে আস্তে দেখলাম, ধর্মতলায় কাগজ নিয়ে মারপিট হচ্ছে। দাদার দিকে তাকালাম। কিরে অনি। একটু বেশি ছেপেছো। পঞ্চাশ হাজার। সামাল দিতে পারবেতো। আমি কি করে জানবো। যদি রিটার্ন হয়। মল্লিকদা হো হো করে হেসে ফেললো। তুই হাসলি কেনো। অনি এক লাখের কথা বলেছিলো। তুই বলেছিলি। তখন তোমার প্রিন্ট অর্ডার দেওয়া হয়ে গেছে। তাহলে ছাপতে বলে দিই। না থাক। আমি বললাম। ভবানীপুর রাসবিহারী হাজরাতেও একি অবস্থা। আমরা বাড়ির গেটে এসে দাঁড়ালাম। ছগনলাল দরজা খুললো। দেখলাম বারান্দায় লাইন করে সবাই দাঁড়িয়ে। ইসলামভাই ছোটমা বড়মা ভজু কবিতা নীপা মিত্রা ডাক্তারদাদা। নাও তোমার ছেলে সবাইকে কাঁদিয়ে বিশ্বজয় করে এলেন। মিত্রা ক্যাট ক্যাট করে উঠলো। আমি হাসছি। হাসিসনা। এই মানুষ গুলোর মুখের চেহারা দেখেছিস। এদেরটা প্রকাশ পাচ্ছে না তোরটা প্রকাশ পাচ্ছে। দেখি তোর মোবাইলটা। না। তোকে দিতেই হবে। আচ্ছা দিচ্ছি দাঁড়া। মিত্রা আমার পকেট থেকে জোড় করে মোবাইলটা বার করে নিলো। বড়মার মুখের সামনে গিয়ে ধরলো। দেখো স্যুইচ অফ কিনা। বড়মা ছোটমা দামিনী মাসি ইসলামভাই-এর চোখ ছল ছল করছে। বারান্দার এক কোনে দেখলাম রতন আবিদ নেপলা বসে আছে। আমি বড়ামার কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমাকে পেতে গেলে একটু টেনসন নিতে হবে সবাইকে। ইসলামভাই দাদার হাত থেকে কাগজটা নিয়ে নিলো। চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেছে। আকিবের ছবি ছাপা হয়েছে। আমাদের দিকে তাকালো। চোখ যেনো ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে। তাহলে এডিটর অনিবাবু টাইমের আগেই কাজ সারলো। ডাক্তারদাদা বলে উঠলো। তুমি জানো আর অনিবাবু জানে। আমাকে কিছু বলেনি। আমি মাথা নীচু করে। চলো ভেতরে চলো। তোমরা যাও আমি আসছি। মুন্নাদা। মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো। কিরে মামনি। এদিকে এসো। বুঝলাম মিত্রা লাস্ট ম্যাসেজটা খুঁজে পেয়ে গেছে। আমি রতনদের কাছে এলাম। কিরে তোরা কখন এসেছিস। সেই তখন থেকে, যখন তুমি আকিবকে তুলে নিয়ে গেলে। তোরা দেখেছিস। পাশের ঝুপরিতে ছিলাম। দামিনীমাসি ইসলামভাই আমাকে এসে জড়িয়ে ধরে ঝড় ঝড় করে কেঁদে ফেললো। কিরে অনি। একটু বেশি ছেপেছো। পঞ্চাশ হাজার। সামাল দিতে পারবেতো। আমি কি করে জানবো। যদি রিটার্ন হয়। মল্লিকদা হো হো করে হেসে ফেললো। তুই হাসলি কেনো। অনি এক লাখের কথা বলেছিলো। তুই বলেছিলি। তখন তোমার প্রিন্ট অর্ডার দেওয়া হয়ে গেছে। তাহলে ছাপতে বলে দিই। না থাক। আমি বললাম। ভবানীপুর রাসবিহারী হাজরাতেও একি অবস্থা। আমরা বাড়ির গেটে এসে দাঁড়ালাম। ছগনলাল দরজা খুললো। দেখলাম বারান্দায় লাইন করে সবাই দাঁড়িয়ে। ইসলামভাই ছোটমা বড়মা ভজু কবিতা নীপা মিত্রা ডাক্তারদাদা। নাও তোমার ছেলে সবাইকে কাঁদিয়ে বিশ্বজয় করে এলেন। মিত্রা ক্যাট ক্যাট করে উঠলো। আমি হাসছি। হাসিসনা। এই মানুষ গুলোর মুখের চেহারা দেখেছিস। এদেরটা প্রকাশ পাচ্ছে না তোরটা প্রকাশ পাচ্ছে। দেখি তোর মোবাইলটা। না। তোকে দিতেই হবে। আচ্ছা দিচ্ছি দাঁড়া। মিত্রা আমার পকেট থেকে জোড় করে মোবাইলটা বার করে নিলো। বড়মার মুখের সামনে গিয়ে ধরলো। দেখো স্যুইচ অফ কিনা। বড়মা ছোটমা দামিনী মাসি ইসলামভাই-এর চোখ ছল ছল করছে। বারান্দার এক কোনে দেখলাম রতন আবিদ নেপলা বসে আছে।
আমি বড়ামার কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমাকে পেতে গেলে একটু টেনসন নিতে হবে সবাইকে। ইসলামভাই দাদার হাত থেকে কাগজটা নিয়ে নিলো। চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেছে। আকিবের ছবি ছাপা হয়েছে। আমাদের দিকে তাকালো। চোখ যেনো ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে। তাহলে এডিটর অনিবাবু টাইমের আগেই কাজ সারলো। ডাক্তারদাদা বলে উঠলো। তুমি জানো আর অনিবাবু জানে। আমাকে কিছু বলেনি। আমি মাথা নীচু করে। চলো ভেতরে চলো। তোমরা যাও আমি আসছি। মুন্নাদা। মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো। কিরে মামনি। এদিকে এসো। বুঝলাম মিত্রা লাস্ট ম্যাসেজটা খুঁজে পেয়ে গেছে। আমি রতনদের কাছে এলাম। কিরে তোরা কখন এসেছিস। সেই তখন থেকে, যখন তুমি আকিবকে তুলে নিয়ে গেলে। তোরা দেখেছিস। পাশের ঝুপরিতে ছিলাম। দামিনীমাসি ইসলামভাই আমাকে এসে জড়িয়ে ধরে ঝড় ঝড় করে কেঁদে ফেললো। কিরে অনি। একটু বেশি ছেপেছো। পঞ্চাশ হাজার। সামাল দিতে পারবেতো। আমি কি করে জানবো। যদি রিটার্ন হয়। মল্লিকদা হো হো করে হেসে ফেললো। তুই হাসলি কেনো। অনি এক লাখের কথা বলেছিলো। তুই বলেছিলি। তখন তোমার প্রিন্ট অর্ডার দেওয়া হয়ে গেছে। তাহলে ছাপতে বলে দিই। না থাক। আমি বললাম। ভবানীপুর রাসবিহারী হাজরাতেও একি অবস্থা। আমরা বাড়ির গেটে এসে দাঁড়ালাম। ছগনলাল দরজা খুললো। দেখলাম বারান্দায় লাইন করে সবাই দাঁড়িয়ে। ইসলামভাই ছোটমা বড়মা ভজু কবিতা নীপা মিত্রা ডাক্তারদাদা। নাও তোমার ছেলে সবাইকে কাঁদিয়ে বিশ্বজয় করে এলেন। মিত্রা ক্যাট ক্যাট করে উঠলো। আমি হাসছি। হাসিসনা। এই মানুষ গুলোর মুখের চেহারা দেখেছিস। এদেরটা প্রকাশ পাচ্ছে না তোরটা প্রকাশ পাচ্ছে। দেখি তোর মোবাইলটা। না। তোকে দিতেই হবে। আচ্ছা দিচ্ছি দাঁড়া। মিত্রা আমার পকেট থেকে জোড় করে মোবাইলটা বার করে নিলো। বড়মার মুখের সামনে গিয়ে ধরলো। দেখো স্যুইচ অফ কিনা। বড়মা ছোটমা দামিনী মাসি ইসলামভাই-এর চোখ ছল ছল করছে। বারান্দার এক কোনে দেখলাম রতন আবিদ নেপলা বসে আছে। আমি বড়ামার কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমাকে পেতে গেলে একটু টেনসন নিতে হবে সবাইকে। ইসলামভাই দাদার হাত থেকে কাগজটা নিয়ে নিলো। চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেছে। আকিবের ছবি ছাপা হয়েছে। আমাদের দিকে তাকালো। চোখ যেনো ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে। তাহলে এডিটর অনিবাবু টাইমের আগেই কাজ সারলো। ডাক্তারদাদা বলে উঠলো। তুমি জানো আর অনিবাবু জানে। আমাকে কিছু বলেনি। আমি মাথা নীচু করে। চলো ভেতরে চলো। তোমরা যাও আমি আসছি। মুন্নাদা। মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো। কিরে মামনি। এদিকে এসো। বুঝলাম মিত্রা লাস্ট ম্যাসেজটা খুঁজে পেয়ে গেছে। আমি রতনদের কাছে এলাম। কিরে তোরা কখন এসেছিস। সেই তখন থেকে, যখন তুমি আকিবকে তুলে নিয়ে গেলে। তোরা দেখেছিস। পাশের ঝুপরিতে ছিলাম। দামিনীমাসি ইসলামভাই আমাকে এসে জড়িয়ে ধরে ঝড় ঝড় করে কেঁদে ফেললো। একি তোমরা কাঁদছো কেনো। রতন নেপলা আবিদ উঠে দাঁড়িয়েছে। রতন আজ অনির জন্য বেঁচে গেলাম। এদের হাত থেকে আমিও হয়তো বাঁচতাম না। কি বলছো দাদা তুমি! রতনের গলা কাঁদো কাঁদো। আবিদের চোখ ছল ছল। নেপলা বুঝে উঠতে পারছেনা। রাগে ফুঁসছে। আরে কাঁদলে হবে। ওরা অনিকেও ছারতো না। কি বলছো কি তুমি। ওরা কেউ এখানকার নয়। মিত্রা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। একে একে সবাই এগিয়ে আসছে। তোর কিছু হলে আমি কি নিয়ে থাকবো। মিত্রা ঝড় ঝড় করে কেঁদে উঠলো। দামিনী মাসি আমাকে ছেড়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো। এই দেখো সবাই মিলে পাগলামো করে। আমার কিছু হয়েছে নাকি। ছোটমা বড়মা চোখ মুছছে। দাদা আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। মল্লিকদা পুরো ফিউজ। তোমরা কাঁদলে কিছু হবে না। ওর মুখের কোনো বিকার দেখেছো। ও বৃহস্পতিবার থেকে ফলোআপ করছে। ডাক্তারদাদা বললো। তুমি জানতে। না। তাহলে বললে কি করে। ও ঘন ঘন নিজেকে চেঞ্জ করেছে। আমি বড়োবান্ধবীকে বলেছি। তুমি একবার অনিকে চেপে ধরো। তুমি আমাকে বলোনি কেনো। কি করে জানবো এরকম ঘটনা ঘটতে চলেছে। মুন্না তুমি। বিশ্বাস করুণ দাদা। মামনির সাহায্যে ওর মোবাইলটা চুরি করে যতটুকু জানতে পেরছি। তাও ও জানতে পেরে গেছে। লাস্ট ম্যাসেজটা ওর মোবাইলে টাইম পাঁচটা পঁয়তাল্লিশ। হ্যাঁ তুমি ঠিক বলছো। ঠিক তার ঘন্টা খানেকর মধ্যে অর্ক সায়ন্তন কাউকে কিছু না বলে অফিস থেকে বেরিয়ে গেছে। ও আজকে যাদের সঙ্গে নিয়ে গেছে তারা সবাই এনএসজির লোক। আমি ধোপে টিকবোনা। কি বলছো! ও দুপুর থেকে ছটফট করছিলো। কে ঘটনাটা ঘটাচ্ছে। রাজনাথ। দাঁড়াও আমি ফোন করছি। একবারে করবেনা ওটা আমার খাবার। ফোন করলে অনিকে পাবেনা। তুই যা বলবি শুনতে হবে। শুনতে হবে নাহলে অনিকে ছাড়তে হবে। সবাই চুপ করে গেলো। সবাই ভেতরে যাও।
ইসলামভাই। বল। তুমি আবিদ রতন ওপরে এসো। সবাই আমার গলার স্বরে চমকে গেছে। খাবার ব্যবস্থা করো। অনেক রাত হয়েছে। মিত্রা। বল। এই ফাইলটা রাখ। একটু আগে আমার রূপ আর এখন এই মুহূর্তে আমার রূপ দেখে সবাই থতোমতো খেয়ে গেছে। আমি সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে এলাম।
আমার পেছন পেছন ইসলামভাই আবিদ রতন দেখলাম দামিনীমাসি পেছন ধরেছে। ঘরে চলে এলাম। তুমি এলে। তোমাকে আসতে বলিনি। আমি থাকবো। তুমি থাকবে না। থাকবো। কোনো কথা বলতে পারবেনা। ঠিক আছে শুনবো। কাঁদতে পারবেনা। দামিনী মাসি মাথা দোলালো। ঘরে ঢুকেই ইসলামভাই-এর দিকে তাকালাম। ডাক্তার কোথায় আছে। তুই বিশ্বাস কর আমি জানিনা। রতন। আমি জানিনা। আবিদ। মাথা নীচু করে রইলো। বল কোথায় আছে। শেষ জানতাম রাজনাথ বাবুর বাড়িতে। কোন বাড়িতে। মুরারীপুকুরে। তারপর। আর জানি না। মাসি জানতো। মাসির কথা মতো ওইটুকু খোঁজ পেয়েছিলাম। তারপর আর জানি না। তোর ফোন। মিত্রা ঘরে ঢুকলো। হ্যালো। কি হলো আমার এ্যাকাউন্ট নং। সরি। হাত ধোয়া হলো। হ্যাঁ। যেটা বেঁচে আছে। রাখলাম না। আই উইটনেস করে নিলাম থানার ওসিকে তারপর ঝেড়েদিলাম। রাখলেই ঝামেলা। ভাল করেছেন। নিনি লিখে নিন। মিত্রা দাঁড়িয়ে আছে সব শুনছে। আমি ইচ্ছে করে ভয়েজ অন করে রেখেছি। আমি একে একে সব নম্বর বললাম। গুড। এবার বলুন। এ্যাকাউন্ট গুলো সব রঘুবীর যাদবের নামে আছে। নমিনি রাজনাথ। সব এ্যাকাউন্ট সিল করুন। যে কোনো সময় আপনাকে ডাকতে পারি। টিম নিয়ে রেডি থাকবেন। আচ্ছা ওরা কি আপনাকে টার্গেট করেছিলো। কে বললো আপনাকে। যেটা বেঁচে ছিলো। রেকর্ডিং করেছেন। অবশ্যই। তবে ওরা আপনাকে চেনে না। আকিব বলে ছেলেটা ওদের চিনিয়ে দিতো। কালকে রেকর্ডিংটা এবং একটা কপি আমাকে একটু জেরক্স করে পাঠান। সকালে পাঠিয়ে দেবো। আর একটা অন্যায় করেছি। আবার কি হলো। বড়দা আপনার দাদা রিকোয়েস্ট করলো একটু হিন্টস দিয়ে ফেলেছি।
বেশ করেছেন। কালকে ব্যাঙ্ক খোলার আগেই সিজ করুণ। কালকে কাজ সেরে বাড়ি যাবো। এখন অফিসেই ঘুমবো। কাগজ দেখুন। বেরিয়ে গেছে ? হ্যাঁ। এখুনি আনিয়ে নিচ্ছি। আচ্ছা। ফোনে কথা শেষ করে পেছন ফিরে তাকাতেই দেখলাম। গেটের মুখে সব দাঁড়িয়ে আছে। কি হলো তোমরা এখানে। তোর মাথা ঠান্ডা হয়েছে। দাদা হাসতে হাসতে বললো। আমার মাথা কখনই গরম নয়। তখন যেরকম বাজখাঁই গলায় চেঁচিয়ে উঠলি। আর একটু হলে স্ট্রোক হয়ে যেতো। ভেতরে এসে বোসো। সাগির অবতার কোথায় আছে। আমার কাছে। মাসি বললো। কাল যখন বলবো বার করে দেবো। এনকাউন্টার করাবো। অনি! সবাই আমার মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে। আমার কথার কোনো দ্বিরুক্তি যেনো না হয়। কি কথা মুখার্জীকে বললাম শুনেছো। শুনলাম। ওরা অন্যায় করবেনা। সামলাতে পারবে। আমি কথা দিচ্ছি। মাসি আমার হাতটা চেপে ধরলো। রতন। বলো। কাল সকালে ব্যারাকপুর লাটবাগানে যাবি। ভিখারী হবি। নুলো ভিখারি। পারবি। আমি পারবো দাদা রতনদা পারবেনা। আবিদ বললো। ছোটমা একটু চা খাওয়াতে পারবে। এত রাতে। অনি ঠিক কথা বলেছে। দাদা বললো। যাওনা ছোট একটু নিয়ে এসো। ডাক্তারদাদা বললো। ছোটমা বেরিয়ে গেলো। ঠিকানাটা লিখে নে। মাথায় রাখবি তোকে মার্ক করার জন্য আমার লোক থাকবে। আমি ভুল করবোনা। মাথায় রাখবি। আজ বিকেল থেকে মাথায় রাখছি। সবাই হেসে ফেললো। ঠিকানা বলো। আমি বললাম। আবিদ লিখলো। এই বাড়িতে ডাক্তার লুকিয়ে আছে। দামিনী মাসি বড়মা ইসলামভাই সকলে আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কে যাচ্ছে কে বেরোচ্ছে আমাকে জানাবি। আমি তোর সঙ্গে মিলিয়ে নেবো। আচ্ছা। মিত্রা। বল। কাল দশটায় দাদার সঙ্গে অফিসে যাবি। আমার ল্যাপটপ প্রিন্টার সঙ্গে নিয়ে যাবি। তোকে নিয়ে বিকেল বেলা বেরোবো। কোথায় যাবি ? প্রশ্ন করবি না যেখানে যাবো দেখতে পাবি। ইসলামভাই। বল। কাল সারাদিন তুমি দামিনীমাসি রতন এই বাড়িতে থাকবে। আমি না বলা পর্যন্ত বেরোবে না। আচ্ছা। ছোটমা ভজু চা নিয়ে ঢুকলো। আমাকে চা দিতে দিতে বললো আমাকে বল ওদের কি বললি। মল্লিকদার কাছ থেকে শুনে নেবে। ওরকম গম্ভীর হয়ে কথা বলছিস কেনো। একটু ভালো করে বলনা। দেবো কান মুলে। হেসেফেললাম। এইতো আসল অনি বেরিয়ে পরেছে। সবার মুখ চওড়া হলো। হ্যাঁরে অনি আজ তুই সেমিফাইন্যাল খেললি ফাইন্যাল কবে খেলবি। ডাক্তারদাদা বললো। আগামীকাল, মিত্রাকে নিয়ে অত্যন্ত ভদ্রভাবে। যাক শুনে আশ্বস্ত হলাম। এবার খাওয়ার জায়গা করো। দামিনী মাসি আমাকে জড়িয়ে ধরলো। কিহলো তোমার। না কিছুনা। যাও নিচে যাও। ছোটমা দামিনীকে নিয়ে নিচে চলে গেলো। মিত্রা খালি ঘরে দাঁড়িয়ে রইলো।
কিহলো তুই দাঁড়িয়ে রইলি! মিত্রার চোখ হাসছে। কেনো তুই তাড়িয়ে দিবি। আমার কাছে পা টিপে টিপে এগিয়ে আসছে। নিচে যা, খাবার ব্যবস্থা কর। তবু মিত্রা আমার চোখে চোখ রেখে পা টিপে টিপে এগিয়ে আসছে। চোখের হাসি এবার সারা মুখমন্ডলে ছড়িয়ে পরলো। যাবোনা কি করবি ? এখন একেবারে বিরক্ত করবিনা। আমাকে জড়িয়ে ধরলো। কেনো আমাকে তুই এনকাউন্টারে মারবি। পাগলের মতো কথা বলবিনা। কেনো তুই এরকম করিস। কি করলাম। তোর জন্য সেই সন্ধ্যে থেকে কেঁদে মরছি সকলে। কে কাঁদতে বলেছিলো। আমাকে একটা ফোন করতে পারতিস। তুই কথা রাখিস নি। কি করবো। সবাই যদি আমাকে প্রেসার করে। আমাকে টলাতে পারলো কেউ। তুই আমি সমান। তোর কিছু হলে আমি কি করবো। কারুর জন্য কোনো কিছু আটকে থাকে না। মিত্রা আমার মুখটা চেপে ধরলো। প্লিজ তুই থাম। কেনো তুই দাদার ওপর ওরকম মুখ ঝামটালি। বেশ করেছি। আমার কাজে কেউ ইন্টারফেয়ার করুক আমি তা চাইনা। দাদাকি তোর খারাপের জন্য বলেছে। যার যা কাজ তাকে সেই কাজ করতে দে। দাদা আজকের কাজটা করতে পারতো ? তোর মোবাইল না দেখলে সেটা কেউ জানতে পারতোনা। কেনো দেখতে গেছিস। কেনো দেখাবি না। তুই রতনকে শেষ পর্যন্ত বলেছিস, কথা না শুনলে এনকাউন্টারে উড়িয়ে দিবি। সে বেছারা পরি কি মরি করে আমার কাছে এসে আমার পা ধরে বসে থাকলো আধ ঘন্টা। ইসলামভাই হাউ হাউ করে কাঁদছে। দামিনী মাসি কাঁদছে। তোকে ভালবেসে ওরা কি অন্যায় করেছে ? আমি ন্যায় অন্যায় বুঝি না। আমার কাছে কাজটা কাজ। আমার একার জন্য হাজার জনের ক্ষতি হোক আমি তা চাইবো না। অনি এই অনি। নিচ থেকে দাদা চেঁচিয়ে উঠলো। মিত্রা আমাকে ছেড়েদিলো। যা নিচে গিয়ে দেখ কিহলো। তুই চল। কেনো কি হয়েছে দেখ। আমি পারবোনা। অগত্যা নিচে এলাম। দাদা মোবাইলটা হাতে দিয়ে বললো। অফিসে গন্ডগোল হচ্ছে আরও কাগজ ছাপতে হবে। নাহলে হকাররা কাল থেকে স্ট্রাইক করবে। তুমি কি বললে ? তুই সার্কুলেশনে কথা বল। আমি ফোন ধরলাম। হ্যালো। অনিবাবু আমি সামলাতে পারছি না। মিনিমাম একলাখ কাগজ ছাপার পারমিশন দিন। প্রেসে কে আছে। সবাই আছে আমি আটকে রেখেছি। ছাপতে বলুন। আর এই একলাখ কাগজের যা দাম হবে তা আপনারা সমান ভাবে ভাগ করে নিন। এটা কোনো ক্রেডিট হবেনা। যদি রাজি হয় তাহলে ছাপবেন না হলে ছাপবেন না। সবাই আমার দিকে তাকিয়ে। এইরকম একটা কথা যে আমি বলতে পারি ওরা বিশ্বাস করতে পারেনি। আমি দাদার হাতে ফোনটা দিয়ে সোজা গট গট করে ওপরে উঠে এলাম। গেঞ্জিটা খুলে প্যান্টটা খুললাম। টাওয়েলটা আলনা থেকে টেনে নিলাম। পরতে যাবো মিত্রা ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। প্লিজ একটু। একবারে বিরক্ত করবিনা মন মেজাজা ঠিক নেই। ও তুই তোর কাজের লোকদের দেখাস। আমাকে দেখিয়ে লাভ নেই। সরে যা। আমাকে বাথরুমে যেতে দে। একবার। আমাকে জড়িয়ে ধরে ঠোঁট তুলে ধরেছে। বাধ্যে হয়ে ওর ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়ালাম। চোখ দুটো খুশিতে কল কল করে উঠলো। আমাকে ছেড়ে দিলো। জানিস তোর কথায় নিচের রিপার্কেসন! তোর একটুও দেখতে ইচ্ছে করেনা। কোনো কথা বললাম না। আমি বাথরুমে গেলাম। ভালোকরে মুখ হাতপা ধুয়ে। বেরিয়ে এলাম। মিত্রা আলমাড়ি খুলে আমার পাজামা পাঞ্জাবী বার করে রেখেছে। কিরে এটা পরবিতো। দে। ছোটমা এসে দুবার ঘুরে গেলো। তুই না গেলে কেউ খেতে বসবে না। তোরা কি পেয়েছিস বলতো। ডাক্তারদাদাকে বলনা, বলতে পারছিস না। ডাক্তারদাদা এখনো আছে ? যায় কি করে। তোর কাছ থেকে পুরো ঘটনা শুনতে হবেনা। আজ কিছু হবেনা। আমি নয় পেট পাতলা। তোর সায়ন্তন কি করেছে। কেনো! দাদার কাছে বসে পেট খালি করে দিয়েছে। ওহ স্যাট। যা ভেবেছিলাম ঠিক তাই। ছাগলাটাকে দিয়ে হবেনা। আজ প্রথম ? হ্যাঁ। চুলটা আঁচড়ে নিলাম। দুজনে নিচে নামলাম। সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে গল্প করছে। দাদারা সোফায় গোল হয়ে বসে। আমি ঘরে ঢুকতেই দাদা বলে উঠলো। তোর কথা মতো বলে দিয়েছি। রিটার্ন হলে আমায় কিছু বলবিনা। কালকে বাইরের কাগজে এই লেখাটা এডিট করে ছাপিয়ে দেবে। নাহলে তুমি ঝামেলা পোহাবে। তার মানে। যা বললাম তাই। সে কি করে হয়। তোর টিভি নিউজ এখনো ধরতে পারে নি। খালি ব্রেকিং নিউজ বলে ক্লিপিংস দিয়ে চলেছে। মোবাইলটা পকেট থেকে বার করে সায়ন্তনকে ছোট্ট একটা ম্যাসেজ লিখে দিলাম। আমার পারমিশন ছাড়া, একটিও ছবি এবং ক্লিপিংস যেনো বাইরে না যায়। এটা মাথায় রাখবি। কিরে তোর কাজ শেষ হয়নি। কথাটা কানেই ঢোকালাম না এমন ভান করলাম। বড়মা সবাই কি করে বসবো। তোকে চিন্তা করতে হবেনা। দিয়ে দাও। আমি কোথায় বসবো ? টেবিলে। ভজু কোথায় মাসি ?
ঘুমোচ্ছে। কোথায় ? ছোটর ঘরের মেজেতে। খাওয়া হয়ে গেছে ? না। ওকে খাইয়ে দিতে পারতে। তুই না এলে ও খাবেনা বলে ওপরে চলে গেছে। ডাকো। কবিতা বেরিয়ে গেলো। টেবিলে আবার নিচে করে লাভ কি, সবাই নিচে বসলে হতো না ? তোর মোন চাইলে হবে। বড়মা রান্নাঘর থেকে বলে উঠলো। আমি উঠে দাঁড়ালাম। ইসলামভাই ধরো টেবিলটা একটু ধারে সরিয়ে দিই। তোকে করতে হবে না। রতনকে বলে দিচ্ছি। গোল করে আসন পাতা হলো। আজ আমি ডাক্তারদাদা আর দাদার মাঝখানে। দাদার পাশে মল্লিকদা, ডাক্তারদাদার পাশে ইসলামভাই। ওদিকে ছোটমা বড়মার মাঝখানে মিত্রা বড়মার পাশে নীপা দামিনী মাসি কবিতা ভজু। সবাইকে খাবার বেড়ে দেবার পর মাঝখানে সব হাঁড়ি বসানো হলো যার লাগবে মিত্রা কিংবা কবিতা উঠে উঠে দেবে। আমাদের অপজিটে রতন আবিদ নেপলা। কারুর মুখে কোনো কথানেই, সবাই গম্ভীর। খাওয়া শুরু হলো। মেনু লিস্টে শুধু বিড়িয়ানী, চিকেন। অনেক ক্ষণ পর ডাক্তারদাদ বলে উঠলেন। বড়ো ভালো রেঁধেছো। দারুণ স্বাদ। কিনে এনোছো না বাড়িতে করেছো। আমি বড়মার দিকে তাকিয়ে বললাম। উঁ কতো খায়। আমি বানিয়েছি। মিত্রা বললো। তোর দ্বারা এ জন্মে হবে না, হলে আগামী জম্মে। জিজ্ঞাসা কর মাসিকে। বুঝেগেছি, হেল্পার। আমার মতো তাই না অনিদা। ভজু বললো। সবাই হেসে ফেললো। কাল সকালে হবে, মনে রাখিস। আর বলবোনা। আবার সবাই চুপচাপ। বেশ কিছুক্ষণ পর। কিরে তোর এখন আবার তাড়াহুড়ো নেইতো। ডাক্তারদাদা বললো। না। তোর নেক্সট ভেঞ্চার। বলা যাবেনা। মোবাইলটা পকেটে ভাইব্রেসন মুডে ছিলো। কাঁপছে। বুঝলাম কেউ ফোন করছে। বার করলাম। ডাক্তারদাদা দাদা আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে। দেখলাম মুঃ মুখার্জী। কি হলো। আরে রঘুবীর যদব না রঘুবীর প্রসাদ। কেনো কি নাম দেখছেন। রঘুবীর প্রসাদ। নমিনি।