ইস নীপাটা কি কচিরে। খারাপ হয়ে যাবে বলে দিচ্ছি। কেনো তোর জ্যোতিষি বলেছে আমার কপালে অনেক জুটবে। আমার চোখের আড়ালে যা ইচ্ছে করিস দেখতে যাবোনা। তারমানে একা একা থাকলে নীপাকে করতে পারি। ওরে শয়তান পেটে পেটে এতো বুদ্ধি। ওরে বাবারে। দেবো ফাটিয়ে। কিরে ঢুকিয়ে নিয়েছিস। মিত্রা হাসছে। বুঝতে পারলি। কেমন পাকা খেলোয়াড় হয়ে গেছি। কতদিনের অভিজ্ঞতা। দাঁড়া পুরোটা ঢুকিয়ে নিই। আমি মিত্রার ঠোঁটটা চুষতে আরম্ভ করলাম। বুঝতে পারছি মিত্রা আস্তে আস্তে চাপ বারিয়ে গোগ্রাসে আমার সোনামনিকে ওর মুন্তির মধ্যে ঢুকিয়ে নিচ্ছে। তোরটা কি বড়ো আর শক্ত হয়েগেছে। হাসছি। হাসবিনা। তোর লাগছে। লাগবেনা। তুই ওরকম পেটুক হলে বিষম লাগবেই। একটু নরম করনা। নীচে আয়। না। আমি করবো। কর তাহলে। উরি বাবারে কি জ্বালা করছে ভেতরটা। একটু মুখদে। না। কেনো। তর সইছেনা। তাহলে যা পারিস কর। ভেতরে ঢুকিয়ে আমাকে তোর ওপর শুতে দিবি। হাসলাম। বলনা।
দেবো। মিত্রা ঝট করে আমার ওপর থেক উঠে পরলো। আমি উঠে বসে ওকে জাপ্টে ধরলাম। বুকে মুখ দিলাম। নিপিলদুটো মটরদানার মতো ফুলে ফুলে উঠেছে। আমি ওকে চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিলাম। নিপিল থেকে ঠোঁট তুলে বললাম তোর এটা এতো লালা কেনোরে ? চুষলি, দাঁত দিলি। লাল হবেনাতো কি কালো হবে। আমি ওর দিকে দুষ্টুমি চোখে তাকালাম। ওরকম ভাবে তাকাচ্ছিস কেনো। আমি ছাড়াও আরকেউ মুখ দিয়েছিলো। দিলো আমার পিঠে একটা ঘুসি। শয়তান। আমি ওকে জাপ্টে ধরে বিছানায় শুইয়ে দিলাম। মারলি কেনো। বেশ করেছি। তুই ওই কথা বললি কেনো। আমি আবার ওর ঠোঁটে চুমু খেলাম। ওর দিকে তাকিয়ে আছি। মিত্রার চোখে অনেক না বলা কথা। বুবুন। উঁ। এই দিকেরটায় একটু জিভ দে। আমি ওর ঠোঁটে চুমু খেয়ে বামদিকের নিপিলে মুখ দিলাম। হাতটা অটোমেটিক নিচে চলেগেলো। কতক্ষণ ওর বুকে মুখ দিয়েছিলাম জানি না। ও আমার মাথায় স্নেহের স্পর্শ রেখে চলেছে। মাঝে মাঝে নড়ে চড়ে উঠছে। শরীরে ওমের উত্তাপ বাড়ছে। কিরে একেবারে কাদা করে ফেলেছিস। আমি করেছি। তুইতো করলি। নে আমার কোলে আয়। না, আমি শুয়ে থাকি, তুই কর। কেনো। এ মাসে ডেট পেরিয়ে গেছে। এখনো হয়নি। তারমানে। জানিনা। কিরে বাধিয়েছিস নাকি! কি করে বলবো। এঁ। হলে হবে। আমি কি এতদিন উপোস থাকবো নাকি। জানিনা যা। তাহলে কোরবো না। করনা। এখনোতো হয়নি। বড়মাকে আওয়াজ দিয়েছিস। হাল্কা। কাম সারছে। তুই আমার প্রেসটিজে একবারে গ্যামাকসিন মেরে দিলি। ছাড়। তোর কাছে জীবন চেয়েছিলাম তুই দিয়েছিস। এই দেখ, তোর এই সব কথা শুনে আমারটা কেমন ঘুমিয়ে পরলো। এবার দে ঢুকে যাবে তখন তুই হাতির ঠ্যাঙের মতো মোটা করেছিলি। আজ থেক আর করবোনা। উঃ তুই করনা। মিত্রা শুয়ে আছে। আমি ওর দু’পায়ের মাঝখানে বসলাম। দাঁড়া টর্চ জ্বালিয়ে দেখি। না দেখবিনা। তার মানে তুই কোনো ঢাপলা কেশ করেছিস। বড়মা বলেছে মেয়েদের মাঝে মাঝে এরকম হয়। ডাক্তারদাদার কানে গেছে। আমাকে কিছু বলেনি। দাদা মল্লিকদা কি মনে করবে। ইস কচি খুকী যেনো। বয়স অনেক হয়েছে। এখন হবেনাতো কবে হবে। বুঝেছি তুই আমার সঙ্গে গটআপ গেম খেললি। সেদিন তুই তাই বার বার বলছিলি, আর একটু থাক না। আমি এমন ভাবে মুখ ভেঙচিয়ে বললাম। মিত্রা খিল খিল করে হেসে ফেললো। আমি আবার ওর বুকে আছাড় খেয়ে পরলাম। কিরে সত্যি করে বলনা। অমন করছিস কেনো। তুই চাসনা আমি মা হই। অবশ্যই চাই, কিন্তু তোর এখনো অনেক কাজ বাকি। আমার কাজ করতে ভালো লাগেনা। তুই কর। যেখানে সই করতে বলবি সই করে দেবো। এ কেমন কথা। মিত্রা আমার মাথাটা ঠোঁটের কাছে টেনে নিলো। আমার সোনামনি ওর মুন্তিতে ঘষা খাচ্ছে। মিত্রা হাসছে আমিও হাসছি। ইশারায় বললো দে। আমি কানের কাছে মুখটা নিয়ে গিয়ে বললাম, ধরে ঠিক জায়গায় রাখ, আস্তে আস্তে চাপ দিচ্ছি। মিত্রা আমার কান কামরে দিলো, খালি দুষ্টু বুদ্ধি। আমি কোমরটা একটু তুললাম মিত্রা আমার তলপেটের মধ্যে দিয়ে হাত ঢুকিয়ে ঠিক জায়গায় রেখে পাদুটো সামান্য তুললো। আমি চাপ দিলাম। একটু চাপ দিতেই পুরোটা ঢুকে গেলো। কিরে। লাগেনি। কষ্ট হচ্ছে নাতো। মিত্রা মাথা দোলালো। আমাকে আরো নিবিড় করে জাপ্টে ধরে পাদুটো আমার পাছুর কাছে চেপে ধরলো। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। হোক, কথা বলবিনা। আমি কনুইয়ের ওপর ভর দিয়ে মিত্রার শরীরের ওপর। মিত্রা আমার গলা জড়িয়ে ধরে আছে। আমি মিত্রার দিকে তাকিয়ে আছি। আবেশে ওর চোখ বন্ধ। মাঝে মাঝে ওর মনিদুটো চোখের এপাশ থেকে ওপাশে সরে যাচ্ছে। পরিতৃপ্ত মুখে নিশ্চিন্ত আশ্রয়ের ছোঁয়া। প্লিজ আর একবার। চমকে উঠলাম। মিত্রা চোখ খুললো। না। আর নয়। কেনো। অনিদা জানতে পারলে মেরে ফেলবে। মিত্রা বিস্ময়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখে জিজ্ঞাসা। আমি ইশারায় ওকে চুপ করতে বললাম। ফিশ ফিশ করে বললো, কিরে। কে। মনে হচ্ছে নীপা। ঠিক আছে চলো নীচে যাই। কেনো এখানে। অনিদার কান জানোনা। অনিদাকে আমি কনফেস করবো। আমাকে আস্ত রাখবেনা। কিরে নির্মাল্য! মিত্রা আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে ফিস ফিস করে বললো। মরুক তুই কর। মিত্রা হাসছে। আমি মিত্রার কথায় দু’বার কোমর নাচিয়ে দিলাম। মিত্রা আমাকে জাপ্টে ধরলো। বুবুন কি ভালোলাগছে। আমার শরীর মিত্রার ওপর, কান ঘরের বাইরে। নির্মাল্য তাহলে এরি মধ্যে নীপাকে…..। কিরে কর। করছিতো। একটু জোরে কর।
আমি এবার মিত্রাকে জাপ্টে ধরে বেশ কয়েকবার কোমর দোলালাম। মনটা ঠিক এই সময় মিত্রার দিকে নেই। করতে ঠিক ভালো লাগছেনা। তবু করতে হবে। মিত্রা চোখ বন্ধ করে আমার শরীরের সমস্ত ওম শুষে নিচ্ছে। মনে মনে চিন্তা করলাম বেশিক্ষণ এইভাবে থাকা যাবেনা। তুই কর। মিত্রার কানে ফিস ফিস করে বললাম। না। আমি করলে আঘাত লাগতে পারে। আমি শুয়ে আছি তুই কর। এটা সেফ পজিসন। আমি কিন্তু বেশিক্ষণ রাখতে পারবোনা। আমার একবার হয়ে গেছে। ওরে শয়তান। চোখ বন্ধ করে খালি নিয়ে যাচ্ছিস আমার ভাগে কাঁচকলা। তুই কর। আমি এবার ওর শরীর থেকে উঠে দু’হাতে ভর দিয়ে দু’বার কোমর দোলালাম। মিত্রা আমার হাত দুটো শক্ত করে ধেরে পা দুটো দুপাশে যতটা সম্ভব উঁচু করে তুললো। এবার কর, বেশ ভালো লাগছে। ভেতরটাতো একেবারে হলহলে করে দিয়েছিস। আমি না তুই। হাসলাম। মিত্রা আবার চোখ বন্ধ করলো। আমি করে যাচ্ছি। বুঝতে পারচ্ছি আমার সোনামনি আগের থেকে বেশ শক্ত হয়ে উঠেছে। মিত্রা মাঝে মাঝে মুন্তির ঠোঁট দুটো দিয়ে কামরে কামরে ধরছে। কিরে তোর আবার হয়ে যাচ্ছে নাকি। মিত্রা অস্ফুট স্বরে বললো হবে তুই একটু তাড়াতাড়ি কর। আমি এবার গতি আগের থেকে আর একটু বারিয়ে দিলাম। বুঝতে পারছি মাত্রার মুন্তি আমার সোনামনিকে আবার কামরে কামরে ধরছে। মিত্রার বেরোবার আগে এইরকম হয়। আমিও আর রাখতে পারছিনা। আমি করতে করতেই ওর বুকে ঢলে পরলাম। কিরে ভেতরে না বাইরে। ভেতরে। আমি ওর ঠোঁট চুষতে শুরু করলাম। আমার কোমরটা সামান্য থেমে কেঁপে কেঁপে উঠলো। আমি গায়ের যতটা শক্তি আছে তাই দিয়ে মিত্রাকে জাপ্টে ধরলাম। মিত্রার মুখ থেকে অস্ফুট শব্দ বেরিয়ে এলো। বুবুন আর পারছিনা। তুই আমাকে ধর। আমি পাগল হয়ে যাবো। কতক্ষণ দু’জনে দু’জনকে জাপ্টে ধরে শুয়ে ছিলাম জানি না। দু’জনে দু’জনের ঘন নিঃশ্বাসের শব্দ শুনেছি। বুক পেটের ওঠানামা সমান ভাবে ভাগ করে নিয়েছি। শরীরের ওম ছড়াছড়ি হয়ে গেছে দুজনের শরীরে। কিরে উঠবিনা। তুই না বললে উঠি কি করে। মিত্রা ফিক করে হাসলো। খালি ঠুকে ঠুকে কথাবলা না। কোথায় ঠুকলাম। দাঁড়া ঠুকে দিচ্ছি। দিলাম দুবার কোমর নাচিয়ে। উঃ। কিহলো! লাগলো। মিত্রা চোখ বন্ধ করে। মুখে যন্ত্রনার ছাপ। ভয়পেয়ে গেলাম। তাড়াতাড়ি ওর শরীরী থেক উঠতে গেলাম। মিত্রা আমাকে জাপ্টে ধরে ফিক করে হেসে ফেললো। কিরে! তোকে কিরকম ভয় পাইয়ে দিলাম বলতো। তারমানে। তুইও তাহলে মিত্রাকে ভয় পাস। দিলাম ঠোঁটটা কামরে।
আবার মিত্রা উঃ করে উঠলো। আমি তাকিয়ে তাকিয়ে মিট মিটি হাসছি। এবার কিন্তু আমার লেগেছে। লাগুক। আমিও কামরে দেবো। দেনা। মিত্রা মাথাটা তুলে কামরাতে গেলো আমি ওকে জাপ্টে ধরে বিছানায় শুইয়ে দিলাম। উঃ তোর গায়ে অসুরের মতো শক্তি। সেদিন তোর বড়কে এই অসুরের শক্তি দিয়ে মেরেছি। মিত্রা চুপ করে গেলো। আমার দিকে ফ্যল ফ্যাল করে তাকিয়ে। মনে পরে গেলো ওর কথাটা। সরি। আমার মুখে হাত বোলালো। সেদিন তোর লাগেনিতো। পাটা একটু ব্যাথা ব্যাথা করছিলো। রাতে তোর সঙ্গে কথা বলার পর, একটু মুভ লাগিয়েছিলাম। জানিস বুবুন তখন আমার ভীষণ আনন্দ হচ্ছিলো। তুই বিশ্বাস করতে পারবিনা। মিত্রার চোখদুটো চিক চিক করে উঠলো। এখন আমার কোনো টেনসন নেই। আমি মিত্রার কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালাম। মিত্রা চোখ বন্ধ করলো। বড়মারা খুব ভয় পেয়ে গেছিলো না। ভয় না। একটা টেনসন। তারপর দাদা মল্লিকদার সঙ্গে কথা বলে ফুর ফুরে হয়ে গেলো। তুই কি দেবাশীষদের সব বলেছিস। প্রায়। কেনো বলতে গেলি। তখন চিকনা যা করলো। সত্যি ব্যাটা একটা ঘাউড়া। নারে তোকে অন্ধের মতো ভালোবাসে। আমার থেকেও। যাঃ। একদিন আমি একটু তোর নামে বেফাঁস কথা বলে ফেলেছিলাম। ইয়ার্কির ছলে। ওমনি আমাকে বললো, ম্যাডাম আপনার জায়গায় অন্য কেউ হলে এখুনি খালের জলে ভাসিয়ে দিতাম। আমি ওর কথা শুনে হাসবো না কাঁদবো। মিত্রার চোখ হাসি হাসি। ওর সামনে তোর সম্বন্ধে কোনো কথা বলা যাবেনা। তারপর অবশ্য অনাদি মনে হয় ওকে বুঝিয়েছে। রাতে এসে আমার পা ধরে সে কি কান্না। ম্যাডাম তুমি অনিকে কিছু বলবেনা। বড়মা ছোটমা ওর কান্না থামাতে পারেনা। শেষে ইসলামভাই ওকে বাইরে নিয়ে গিয়ে বোঝায়। বুঝলি ও হচ্ছে মাস্টার ডগ। মাস্টার ছাড়া কাউকে পাত্তা দেয়না। আজও তাই দেখ তোকে জড়িয়ে ধরে কি না করলো। তারপর বাসুর বাড়িতে গিয়ে দেবাশীষের পা ধরে কি কান্না আমাকে ক্ষমা করুণ। আমি অন্যায় করেছি। দেবাশীষ প্রথমে বুঝতে পারেনি ব্যাপারটা। ওরা সবাই অস্বস্তিতে পরে গেছিলো। তারপর আমি বললাম ঠিক আছে তুমি অনির জন্য পাটালি আর ছোলা সেদ্ধ নিয়ে যাও। মুহূর্তের মধ্যে চিকনা চেঞ্জ। নাচতে নাচতে বেরিয়ে গেলো। তারপর দেবাশীষ তোকে চেপে ধরলো। দেবাশীষ নয় টিনা। আমি ওদের বললাম কাল এই ঘটনা ঘটেছিলো। শুনে দেবাশীষ খেপে লাল। অনি শালা ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির। আমি হাসলাম।
টিনাও তোকে ভীষণ ভালোবাসে। কি করে বুঝলি। ওর চোখ সেই কথা বলে। হ্যাঁ টিনার একটা গল্প আছে। সেটা আমি উদ্ধার করলাম দেবাশীষের কাছ থেকে। মাস পাঁচেক আগে। তোকে একদিন সময় করে বলবো। এখন বল। কটা বাজে। আমি মিত্রার শরীরথেকে বিছানায় এলাম। মিত্রা আমার বুকে উঠে এলো। ঠ্যাংতুলে দিলো আমার ওপর। আমি যেনো ওর পাশবালিশ। কিরে তিনটে দশ। ঘুমের পুঁটকি সারা। আর ঘুমতে হবেনা। জানলার দিকে চোখ চলে গেলো। বাইরেটা দেখ কেমন সুন্দর চাঁদের আলো। মিত্রা চোখ ফেরালো। বুবুন। উঁ। থাক পরে বলবো। কেনো! ওটা মেয়েদের মনের কথা। তোকে এখন শুনতে হবেনা। ঠিক আছে পরে মনে থাকলে বলিস। তুইতো আবার ভুলে যাস। ওমনি ঠুকে দিলি। ঠুকলাম কোথায় তোর মুনুতে হাত দিয়ে শুয়ে আছি। মিত্রা আরও সরে এলো। আমি আর ওবাড়িতে যাবোনা। সে কি করে হয়। তাহলে তোকে যেতে হবে। ভাগাভাগি করে থাকতে হবে। বড়মা ছোটমাকে দেখেছিসতো। সব বুঝি তবু নিজের মনকে বোঝাতে পারিনা। ঠিক আছে এবার একটু ঘুমো। ঘুম আসছেনা। খালি তোকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে। শরীরটার দিকে নজর দে। আমার কি হয়েছে বলতো ? ডাক্তারদাদা খালি আমার মুখ দেখে আর বলে এইবার ফ্রেশ ফ্রেশ লাগছে। অনেক অত্যাচার করেছিস। কিছু একটা বাধিয়েছিস। আমি যদি তোর আগে মরে যাই তুই আমার মুখে আগুন দিস। এই যে বললি বাধিয়েছিস। তাহলে আমি দেবো কেনো। আমি সাসপেক্ট করছি। ঠিক আছে তুই বক বক কর আমি একটু ঘুমোই। না তুই ঘুমবিনা। অনি এই অনি। দরজার সেকল ধরে নাড়ার শব্দ। দেবাশীষের গলা। মিত্রার দিকে তাকালাম। মিত্রা ফিক ফিক করে হাসছে। ব্যাপারটা এরকম কেমন মজা দেখ। চোখ দুটো ভালো করে ডোলে নে। কেনো! ঘুমোচ্ছিলি সেটা বোঝাতে হবেতো। দিলো আমার ঠোঁটে একটা ঘুঁসি। শয়তান। কাপরটা পর নাহলে আমি দরজা খুললে তোকে দেখে ওর আবার দাঁড়িয়ে যাবে। শয়তান। আমি উঠে পাজামা পাঞ্জাবীটা পরলাম। মিত্রা কাপরটা আটপৌরে করে কোনো প্রকারে শরীরে জড়িয়ে নিলো। আমি লাইট জাললাম। দরজা খুললাম। একটা হাই তুললাম। দেখলাম নীপা শুয়ে আছে। দেবা আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘরের মধ্যে ঢুকলো। কিরে কি হলো! তুই আমাকে নতুন জীবন দিলি। আমি ওর দিকে অবাক হয়ে তাকালাম। মিত্রাও অবাক হয়ে গেছে। দেবার চোখদুটো জলে ভেঁজা। আজকে আমি প্রথম অদিতিকে সেটিসফায়েড করতে পারলাম। আমি মিত্রার দিকে তাকালাম। মিত্রা আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। হ্যাঁরে মিত্রা বিশ্বাস কর। আজ দুবছর বিয়ে হয়েছে আমাদের। স্বামী-স্ত্রী কি জানতাম না। আজ কলকাতা থেক আসার সময় অনি একটা কথা বলেছিলো। খুব স্ট্রাইক করেছিলো মনে। আমি নিজেকে ভেঙে ফেললাম আজকে। আবিষ্কার করলাম আমি একজন সুস্থ স্বামী হবার অধিকারী। দেবাশীষ মাথা নীচু করে আছে। ঘরের ধরজা ভেজানো। আমি দেবাশীষের কাঁধটা ঝাঁকিয়ে বললাম, সবাইকে আস্তে আস্তে ডাক এই সময় বেরোতে না পরলে আর মজা করা যাবেনা। সত্যি নিয়ে যাবি। হ্যাঁ। দেবাশীষ বেরিয়ে গেলো। আমি পেছন থেকে বললাম, দশমিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে নিবি। আচ্ছা। ঘরের দরজা ভেজালাম। মিত্রা আমার কাছে এগিয়ে এলো। আমাকে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রখলো। তুই সবাইকে বদলে দিলি আমাকে দিলিনা। আমি আমার বুক থেকে মিত্রার মুখটা তুলে ধরলাম। কপালে চুমু খেয়ে বললাম, কেনো তোকে আশ্রয় দিয়েছি। তুইতো এটা চেয়েছিলি। মিত্রার চোখ দুটো ছল ছল করে উঠলো।
আমরা সবাই বেরিয়ে এলাম খিড়কি দরজা দিয়ে। বেরোবার মুখে সবাইকে বললাম কেউ জোড়ে কথা বলবেনা। আর কোনো প্রশ্ন করবেনা। সে কি করে হয় অনিদা। টিনা বললো। ঠিক আছে ফিস ফিস করে বলবে। কিরে বুবুন পেছন দিক দিয়ে কেনো। সামনের দিক দিয়ে বেরোবি না। অনিদা আমরা শ্মশানে যাবো। নীপা বললো। আমি মুখে আঙুল দিয়ে বললাম, ফিস ফিস করে। আচ্ছা আচ্ছা। দেখলাম মিলির চোখ দুটে উত্তজনায় ফেটে পরছে। বাঁশঝাড়ের ভেতর দিয়ে শরু রাস্তা ধরে আমরা হাঁটছি। ওরে বাবা কি সর সর করে উঠলো। মিলি আমার কাচে চলে এলো। চোখে ভয়। হাসলাম কিছুনা। লাইনদিয়ে আমরা হাঁটছি। ডানদিকে খাল। খাল বাঁধে বাঁশঝাড়ের ঘনো বন। মাঝ খানে একফালি শরু রাস্তা। আমি সবার আগে আমার পেছনে মিত্রা টিনা মিলি। সবার পেছনে নির্মাল্য তার ঠিক আগে নীপা। ছেঁড়া ছেঁড়া কথা চলছে। কোথাও মাথা নীচু করে কোথাও ঝুঁকে পরে আমার খালের ধার বরাবর চলে এলাম খাঁড়ে গড়ার বিলে। এইটা কিসের মাঠ রে অনি। এটা খাস জমি গরু চড়ে দিনের বেলা। এক কথায় বলতে পারিস ভাগার। মিলি আমার হাতটা ধরলো মিত্রাও আমার হাত ধরে আছে। আর এক পাশের হাত ধরেছে টিনা। আমি ওদের দিকে তাকালাম। জ্যোতস্নাভেঁজা ওদের চোখে বিস্ময়। দেখ দেবা আমি কি ভাগ্যবান। আমার তিনটে বউ। তোর একটা। যাও তোমার হাত ধরবোনা। টিনা হাত ছেড়ে দিলো। টিনা এখানে কিন্তু ভূতের উপদ্রব আছে। তিনজনেই আমাকে জাপ্টে ধরলো। দেবা অদিতিও ছুটে এলো আমার কাছে। নীপা নির্মাল্য আর জায়গা পাচ্ছে না। সত্যি তোদের ভূতে এতো ভয়। তুই শালা এই জায়গায় নিয়ে এলি কেনো। একবার আকাশটার দিকে তাকা। সবাই আকাশের দিকে তাকলো।
সত্যি তো অনিদা এতো সুন্দর চাঁদের আলো। কতো তাড়া দেখ টিনা। পটা পট মিলি টিনা মিত্রা মোবাইলের ক্যামেরা ফিট করলো। তোরা একটু ছবি টবিতোল আমি একটু আসছি। না তুই যাবিনা। মিত্রা বললো। আচ্ছা তুমিকি একটু অনিদাকে টয়লেটেও যেতে দেবেনা। টিনা বললো। ও টয়লেটে যাচ্ছেনা, মাথায় কিছু দুর্বুদ্ধি আছে, তুই জানিসনা। মিলি টিনা হো হো করে হেসে ফেললো। আচ্ছা পাঁচ মিনিট। দুটো ধেড়ে ছেলে আছে তোর ভয়কি। ওগুলো এখানে মেয়ে। মিলি টিনা হো হো করে হেসে ফেললো। মিত্রাদি। অদিতি চেঁচিয়ে উঠলো। চেঁচাসনা। একটু পরে ঠেলা বুঝবি। তাহলে এলিকেনো। নীপাতো আছে। ও আর একজন, দেখলিনা কেমন ছুটে চলে এলো। ঠিক বলেছে মিত্রা। দেবা বললো। ঠিক আছে। আমি যাবো আসবো। মিত্রার হাতটা ছাড়িয়ে আমি হাঁটতে হাঁটতে সামনের বোনের মধ্যে ঢুকে গেলাম। দূর থেকে পেঁপে গাছটাকে লক্ষ্য করেছিলাম। গুনে গুনে আটটা পেঁপে পাতা ভাঙলাম। ভালো করে পরিষ্কার করেনিলাম। ঝোপের ফাঁক দিয়ে দেখলাম সবাই গোল হয়ে খুব ক্লোজে দাঁড়িয়ে ঝোপের দিকে তাকিয়ে। আমি ওখান থেকে শেয়ালের ডাক ডাকলাম। দু’চারবার ডাকার পরই দেখলাম, ওরা আমার নাম ধরে চেঁচাতে শুরু করে দিয়েছে তারস্বরে। হিতে বিপরীত। আমি দৌড়তে দৌড়তে কাছে এলাম। মিত্রা শক্ত কাঠের মতো দাঁড়িয়ে আছে। দু’দিকে টিনা মিলি। আস্তেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো। ওই দেখ শেয়াল। কোথায় শেয়াল! শেয়ালতো তুই দেখেছিস আগে। তুই বাড়ি চল। আমার ঘোরার দরকার নেই। দেবাশীষ বললো। আমি এতদিন এখানে থাকলাম কানারাতে কোনোদিন বেরোইনি। আমারও কেমন ভয় ভয় করছে মিত্রাদি। নিপা বললো। দেখলি কেমন সাহস। অনিদা তোমার হাতে ওটা কিগো। মিলি বললো। তুই আবার খেজুর রস চুরি করবি। মিত্রা বললো। সবাই হো হো করে হেসে ফেললো। দেখি দেখি মালটা। দেবাশীষ এগিয়ে এলো। শালা এই জন্য তুই ওই ঝোপে গেছিলি। মিত্রা ঠিক কথা বলেছে। অদিতি হাসছে খিল খিল করে। কিরে খাবিতো। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম। জলের ব্যবস্থা রাখিস যদি পটি পেয়ে যায়। উঃ মিত্রাদি তুমিনা কেমন। ওর সঙ্গে এই ভাবে কথা না বললে বিপদ আছে, দেখবি দাঁড়ানা। চল খালটা পেরোতে হবে। আবার সেই পচা পাতা, কাদা জল। কিরে নীপা। ওটাতো ওইদিকে। আমরা অন্য রাস্তায় এসেছি। সেই জায়গা মিত্রাদি। মিলি বললো। উঃ দাঁড়াও না তোমরা। নীপা কোথা দিয়ে আমরা পেরোবো গো। টিনা বললো। সত্যি বলবো টিনাদি আমি এই রাস্তা দিয়ে কোনোদিন আসিনি। এই রাস্তায় মানুষ বিশেষ চলাফেরা করেনা। কেনো! ওই যে অনিদা বললো, ভাগাড়। এই রাস্তায় লোক গরু মড়া ফেলতে আসে। ওরে বাবারে অনি এ তুই কি করলি বেঘোরে প্রাণ যাবে। দেবাশীষ বললো। গ্রাম দেখতে বেরিয়েছিস। গল্প উপন্যাস পরে লোকের কাছে গল্প ঝাড়িস, এইবার ডাইরেক্ট দেখ। তাবলে তুই ভাগাড়ে নিয়ে যাবি। যেতে হয় চল নাহলে তোরা নীপার সঙ্গে চলে যা। আমি তোমার সঙ্গে যাবো অনিদা চলো। নির্মাল্য এগিয়ে এলো। কেরে আমার সাহসী পুরুষ। মুতে নাম লিখতে জান কেলিয়ে গেছিলো। মিলি টোন কাটলো। মিলিদি খুব খারাপ হয়ে যাবে। আমি এবার শুরু করবো। তুই কি বলবি, চুমুর কথা। মিত্রাদি সবাইকে বলে দিয়েছে। আমি হো হো করে হেসে ফেললাম। ওরে মিলি তুই থাম। মিত্রা বললো। সবাই হাসছে। আমি হাঁটতে আরম্ভ করলাম। ওরা আমার পেছন পেছন। আমার খালের ধারে এলাম। দেখ এইখান দিয়ে পেরিয়ে যাবো। জল আছে। না। তুইকি ভালো রে। মিত্রা আমাকে জরিয়ে ধরলো। ধ্যাত বাচ্চা বাচ্চা মেয়েগুলো আছে। আমি বললাম। ওরে ওরা বাচ্চা নয়, চৌবাচ্চা। দেবা হো হো করে হেসে ফেললো। অনি সিগারেট খাবি। এখন খাসনা। মজা পাবিনা। আমরা ধীরে ধীরে নদীর ধারে এলাম। বুবুন আমি তেকে ধরে নামবো। অনিদা আমিও। মিলি বললো। আমিই বা বাদ যাই কেনো। টিনা বললো। তোমাদের আগে আমি নেমে যাচ্ছি। ড্যাম স্মার্টের মতো নির্মাল্য বললো। আমি বারন করলাম দাঁড়া তাড়াহুড়ো করিসনা। কেনো। নির্মাল্যদা শুকনো মাটি রাত ভোর কুয়াশা পরে স্যঁতসেঁতে পা হরকাবে। নীপা বললো। হুঁ। নির্মাল্য এগিয়ে গেলো। সত্যি সত্যি একটু নামতেই ব্যালেন্স রাখতে পারলোনা। কাঁকরমাটিতে পা হড়কালো গড়িয়ে একেবারে নিচে। মিলি চেঁচিয়ে উঠলো কিরে পাঁঠা এবার সাধ মিটিছে। আমি দৌড়তে দৌড়তে নীচে নেমেগেলাম। দেখলাম নির্মাল্যের হাত ছোড়ে গেছে। পরে গিয়ে কাতরাচ্ছে। কেনো তুই তাড়াহুড়ো করলি। আমি বারন করলাম। বুঝতে পারিনি অনিদা। কোথায় লেগেছে। পাছায়। কোমরে লাগেনিতো। না। দাঁড়া। ওপরে তাকিয়ে দেখলাম নীপা অদিতি দেবাশীষকে ধরে ধরে নামাচ্ছে। ওরা তিনজন দাঁড়িয়ে আছে। দাঁড়া আমি আসছি।
নদীর জল এখন শুকনো। এখানে ওখানে সামান্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। আমি রুমাল ভিঁজিয়ে এনে ওর কনুই মুছিয়ে দিলাম। নির্মাল্য পাজামা পাঞ্জাবী পরেছে। হাঁটুর কাছে কাদা লেগে গেছে। আমি নদীর এপারে এসে ককসীমা পাতা খুঁজে বার করলাম। আবার নামলাম। দাঁত দিয়ে চিবিয়ে তার রসটা লাগিয়ে দিলাম নির্মাল্যের কনুইতে। কি জালা করছে গো অনিদা। এটা ডেটলের বাবা। একটু পরেই দেখবি ব্যাথা কমে যাবে। এটা কি পাতাগো অনিদা। নীপা বললো। ককসীমা। নামই শুনিনি। তুমিতো শহরের মেয়ে। টিজ করবেনা বলেদিচ্ছি। দেখছো অদিতি ওইটুকু ছোট্ট শরীরে কি রাগ। অদিতি দেবা হাসছে। তুই ওপরে যা তুই না গেলে ওরা নামবেনা। তোরা নদীটা পেরিয়ে যা। নীপা নিয়ে যাও ওদের, আমি ওগুলোকে নামাই। বালি দেখে দেখে নিয়ে যেও। আমি আবার তড় তড় করে ওপরে উঠো এলাম। জুতো খোল। খালি পায়ে নামবো। পায়ে যদি লাগে। মিত্রা বললো। নির্মাল্যের মতো হড়কাবি। এই রাস্তা ছাড়া তোর সর্টকাট রাস্তা নেই। আছে। সেই রাস্তা এলে লোকে জেগে যাবে তোদের কথায়। তারপর চোর চোর করে চেঁচিয়ে উঠে রাম পেঁদান পেঁদাবে। পেঁদানি খেতাম। টিনা মিলি হাসছে। অগত্যা তিনজনে জুতো খুললো। টিনাকে বললাম তুমি ডান হাতটা ধরে আগে নামো মিত্রা আমার বাম হাত ধরলো মিলি মিত্রার হাত ধরলো। ধীরে ধীরে পা টিপে টিপে নামালাম। এর মাঝে মিলি একবার হড়কেছিলো। দু’জনে মিলে আমাকে জাপ্টে ধরলো। সত্যি অনিদা মিত্রাদি ঠিক বলেছে তুমি আর জায়গা পেলেনা। কষ্ট করলে কেষ্ট মেলে। আমার কেষ্টর দরকার নেই, তোমাকে পেয়েছি এই যথেষ্ট। মিত্রা ফিক করে হেসে ফেললো। এবার অনিদা জিনিষটা কি বুঝতে পারছিস। হারে হারে টের পাচ্ছি। আমরা নদী পেরিয়ে আবার বাঁশ বাগানের মধ্যে দিয়ে হারু জানার কালায় এলাম। এই পচা পুকুরের ধারে কি করতে এলি। দেবাশীষ বললো। এটা হারুজানার কালা। তোর সেই বার। হ্যাঁ। নীপা এগিয়ে এলো। সত্যি মিত্রাদি পাঁচ বছর হয়েগেলো এখানে আছি, নাম শুনেছি কোনোদিন আসিনি। হ্যাঁরে এখন পাওয়া যায়। বিকেলের দিকে এলে পাওয়া যায়। জায়গাটা কি নিঃঝুম। আশেপাশে কোনো লেক নেই। হাফ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো বসতি নেই। বলিস কি! নির্মাল্য বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলো। কি শুঁকছিস। তোমার কথাটা মনে করে গন্ধ পাওয়ার চেষ্টা করছি। শালা হারামী। দেবাশীষ বললো। তোরা দাঁড়া আমি আসছি। আবার কোথায় যাবি। ওই যে গাছটা দেখা যাচ্ছে, দেখতে পাচ্ছিস। হ্যাঁ। ওটা থেকে নামাবি। আমি মিত্রার দিকে তকিয়ে হেসেফেললাম।
চল আমরা যাবো। গু-বোন কিন্তু। সেটা আবার কি গো। ওরে ওখানে পটি করে। মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো। এমাগো। টিনা বললো। তাহলে এখানে দাঁড়াও। জোরে কথা বলবেনা। আমি যাবো তোর সঙ্গে। দেবাশীষ বললো। না তুমি যাবেনা পায়ে নোংরা লেগে যাবে। অদিতি বললো। হাসলাম। আয়। চল। নির্মাল্য। না অনিদা একবার শিক্ষা হয়েছে। আর না। টিনা খিল খিল করে হেসে ফেললো। নীপা মুখে হাত চাপা দিলো। নীপা তুমি এরকম করোনা। বাবাঃ তুমি যা খেল দেখালে। সকালে মিত্রাদির ক্যারিকেচার দেখবে। মিত্রাদি কি দেখাবে আমি যা দেখাবোনা। মিলি বললো। আমি কিছুক্ষণের মধ্যে রসের কল্সি নামিয়ে নিয়ে এলাম। দেবাশীষ এসেই বললো অদিতি অনি বাঁদরের মতে তড়তড় করে গাছে উঠে গেলো। বাঁদর নয় হনুমান বল। ভাগ পাবিনা। উঁ। পটি পেয়ে যাবে। ওইতো জল আছে। তায় অন্ধকার কেউ দেখতে পাবে না। মিত্রাদি। টিনা বলে উঠলো। আমি পেঁপের ডালগুলো একসঙ্গে করে এদিক ওদিক তাকালাম। কি খুঁজছিস। টিনা তোমার ওর্ণাটা দাওতে। কেনো। দাওনা। টিনা ওর্ণাটা দিলো। আমি ভালো করে পেঁপের ডালের একদিকে বেঁধে কলসির মধ্যে ঢুকিয়ে দিলাম। যার যারটা নিয়ে টানতে আরম্ভ কর। বেশি দেরি করা যাবে না। লোক এসে পরলে। পেঁদানি মাথায় রাখবি। উরি বাবারে কি ঠান্ডা। দেবাশীষ বললো। প্রথমটা একটু লাগবে পরে দেখবি ঠিক হয়ে যাবে। অনিদা দারুণ টেস্ট। টিনা বললো। সবাই গোল হয়ে বসে টানতে আরম্ভ করলাম। কারুর মুখে কোনো কথা নেই। চোঁ চাঁ আওয়াজ। দেবাশীষ পেঁপে নল থেক মুখ উঠিয়ে বললো। বিউটি ফুল। ছাগল কথা বলিসনা। কম পরে যাবে। দেখছিস টিনা মিলি কেমন টানছে। যেনো পেপসি খাচ্ছে। হো হো করে সবাই হেসে ফেললো। বুবুন আর পারছিনা। কিরে এরি মধ্যে কেলসে গেলি। যদি পটি পেয়ে যায়। টান টান। পটি পেলে জায়গা আছে। তুইতো আবার নাচতে বলবি। নীপা নল ছেড়ে হাসতে হাসতে পেছনে ধপাস করে পরলো। কিহলো নীপা। আমি আর পারবোনা অনিদা। কিরে হলো। আর একটু দাঁড়া। সব খাওয়া যাবেনা। একটু রাখতে হবে। উঃ কি টেস্ট। টিনা বললো। মিলি গঁ গঁ করে উঠলো। কি হলো মিলি । কথা বলোনা কম পরে যাবে। নির্মাল্য টেনে যাচ্ছে। শয়তান ঢেমনা। এবার ছাড়। মিলি বললো। তুমি খাওনা ডিস্টার্ব করছো কেনো। এবার ছাড় এবার ছাড় কলসি তুলে রেখে আসি। ওরা উঠে দাঁড়ালো। আমি আবার ছুট লাগালাম কলসি তুলে এসেই বললাম এখানে আর দাঁড়ানো যাবেনা। সময় হয়ে গেছে লোক আসার চল এখান থেকে ফেটে পরি। কোথায় যাবি। স্কুলে। তোর সেই স্কুলে। না। আমাদের স্কুলে। নীপা বললো। থাম তোর স্কুল। বারে আমিও ওই স্কুল থেকে এবার উচ্চ মাধ্যমিক দিলাম। এটা ঠিক কথা মিত্রাদি। নির্মাল্য বললো।
ওরে! এটা আবার কবেথেকে সাউকিড়ি করতে শিখলো। আমি সামনে হেঁটে চলেছি ওরা পেছন পেছন আসছে ফিস ফিস করে কথা বলছে সবাই। আমার অনুসন্ধিৎসু চোখ চারিদিকে বন বন করে ঘুরছে। কেউ এদিকে আসছে কিনা। আমাদের কেউ দেখে ফেললো কিনা। কানে এলো…. আমি বলবোনা, তুই বল। তুই বল অনিদা তোকে ভালোবাসে। দুর গালাগালি খাবে কে। চেপে থাক। দুর চাপা যায়। আমি আর পারছিনা। তুই বল। দেবার গলা। বুবুন। কি হলো। অতো তাড়াতাড়ি হাঁটছিস কেনো একটু দাঁড়া না। ধরতে পারলে পেঁদিয়ে লাস বানিয়ে দেবে। খাওয়াতে গেলি কেনো। খেলি কেনো। মনে হচ্ছে কাজ করতে শুরু করেছে। কি! ফিরে দাঁড়ালাম। দেখলাম সবাই হন হন করে এগিয়ে আসছে। তুই বিশ্বাস কর। বলেছিনা কু…..। প্লিজ তুই আর বলিসনা। সকালে খালি পেটে…..। চোব্য চষ্য খাবি। আমার একার নয়…..। অনিদা আমারও…মিলি আমার দিকে কাকুতি মিনতি করে তাকালো। টিনারা দিকে তাকালাম। টিনা মাথা নীচু করে নিয়ে মিটি মিটি হাসছে। ওরা বলতে পারছে না। আমি বলে ফেললাম। দেবাশীষের দিকে তাকালাম। আমরা এই পাশে যাই, ওরা ওই পাশে যাক। এখনতো অন্ধকার। অসুবিধে কোথায়। তোর পায়নি। দেবাশীষ বললো। এখানে জল নেই ঘাসে মুছতে হবে। না হলে পাতায়। তাই করবো। তুই এরকম জায়গায় নিয়ে এলি কেনো। আর মিনিট পাঁচেক চল। একটা পুকুর আছে। সামন্তদের পুকুর পার। নীপা বললো। ওটাতো পেরিয়ে এসেছি। অন্ধকারে কিছুই বুঝতে পারছিনা। তুই কিন্তু ব্যবস্থা কর, নাহলে কেলেঙ্কারী কান্ড হেয়ে যাবে। ঠিক আছে। একটু এগিয়ে এসেই শবরপারার গায়ে সেই পুকুর ধারে এলাম। চারিদিক শুনশান লোক জন নেই। নে যে যার মতো উধাও হয়ে যা। দেবা আমাকে সিগারেটের প্যাকেটটা দে। দেবা একটা সিগারেট বার করে ধরিয়ে প্যাকেটটা আমাকে ছুঁড়ে ফেলেদিয়ে দে দৌড়। নিমেষের মধ্যে সকলে হাওয়া হয়ে গেলো। আমি মাঠের মাঝখানে একা বসে পরলাম। এপাসের মাঠে ধান কাটা হয়ে গেছে ধান তোলাও হয়ে গেছে। এবার সরষে বোনা হবে। কেউ কেউ এরি মধ্যে বুনেও দিয়েছে। চাঁদের আলোটা সামান্য ফিকে হয়ে এসেছে। পূব আকাশটা ফর্সা হয়ে এসেছে। দূরে দিগন্ত রেখাটা আস্তে আস্তে চোখের সামনে স্পষ্ট হয়ে আসছে। সিগারেট ধরালাম। মৌতাত করে সিগারেট খেতে আরম্ভ করলাম। সকালবেলা সিগারেটটা খেতে বেশ ভালো লাগছে। হাল্কা হাল্কা হাওয়া বইছে। শীতটা এখনো সেই ভাবে জাঁকিয়ে বসেনি। অনি। চেঁচিয়ে ডাকলো দেবাশীষ। চমকে পেছনে তাকালাম। চারিদিক থেকে অনি কথাটা রিনি রিনি করে ছড়িয়ে পরলো। দেখলাম দেবাশীষ শেলো টিউবওয়েলের খড়েরছাউনি ঘরটার পাশ দিয়ে হেঁটা আসছে। আমি তাকাতেই হাত নাড়লো। এখান থেকে বুঝতে পারছি মুখে হাসি হাসি ভাব। নির্মাল্যকে দেখতে পেলাম না। এদিকে দূরে পুকুর পারের ঝোপ থেকে একে একে সবাই লাইনদিয়ে বেরোলো। ওরা সবাই কাছে এলো। নির্মাল্যকে দেখতে পেলামনা। অদিতি তোমার এক্সপিরিয়েন্সটা কেমন আগে বলো তারপর আমারটা শেয়ার করবো। দেবাশীষ বললো। আমি ওদের দিকে তাকিয়ে আছি। টিনা মিলি নীপা মুখ টিপে হাসছে। সত্যি অনিদা তোমার গ্রামে এসে মার্ভেলাস এক্সপিরিয়েনেস। অদিতি বললো। সাবানতো পেলে না কি করলে। কেনো কি সুন্দর মাটি। তোমদের অবস্থা দেখে আমার গোপালভাঁড় আর কৃষ্ণচন্দ্রের গল্পটা মনে পরে যাচ্ছে। প্লিজ আর বলতে হবেনা। টিনা বললো। সত্যি অনি গল্পটার সারার্থ আজ উপলব্ধি করলাম। শালা। ওই দূরে মোড়াম রাস্তাটা দেখতে পাচ্ছিস। হ্যাঁ। কাল ওই রাস্তায় এসেছিলাম। উরি শালা এতটা চলে এসেছি। আমরা কিন্তু ওই বনের ভেতর দিয়ে এসেছি। সত্যি অনি ভাবলেই অবাক লাগছে।
নির্মাল্যটা গেলো কোথায় ? ও শালা এখনো বসে আছে। তারমানে। প্রথমবার বসে ছিলো। তারপর চেঁচিয়ে উঠলো, দেবাদাগো মরে গেলাম। আমি ঝট করে উঠে দাঁড়ালাম। তুই বোস, কিছু হয়নি। ওই দিকে তাকিয়ে দেখলাম নির্মাল্য হন হন করে আসছে। দেবা খিল খিল করে হাসছে। তুমি শালা বহুত বেইমান। নিজেরটা যেই হয়ে গেলো ফুটে এলে। সবাই হো হো করে হেসে ফেললো। কেনো তোকে ছুচু করিয়ে দেবে। মিলি বললো। নির্মাল্য মিলির কথাটা গায়েই মাখলোনা। কি বিশাল একটা সাপ। মিত্রা আমার কাছে চলে এলো। কোথায় দেখলি। সবে মাত্র বসেছি। পেছন দিকে সর সর আওয়াজ। তাকিয়ে দেখি এই মোটা এই লম্বা। এঁকে বেঁকে চলে যাচ্ছে। কিরকম দেখতে ? হলুদের ওপর মেরুন কালারের ছোপ। ঢেমনা সাপ। ইঁদুর খেতে বেরিয়ে ছিলো। রাখো তোমার ঢেমনা। সত্যিরে লেজটা ধরে কতোবার আছাড় মেরে মেরেছি। তারপর গোড়ালি দিয়ে মুখটা থঁতলেদিয়ে মাটিতে পুঁতে দিয়েছি। কামরালে কি করতে। ওর বিষ নেই। টিনা কখন আমার হাতটা শক্ত করে ধরেছে বুঝতে পারিনি। তোর বুকটা এখনো ধক ধক করছে। করবেনা। টিনা ফিক করে হাসলো। একবারে চাটবেনা টিনা দি। মিত্রা আমার কাঁধে মাথা রেখেছে। তোর আবার কি হলো। সেদিন কাকা তোর এই কীর্তির কথা ডাক্তারদাদা মল্লিকদা দাদাকে বলছিলো, নীপাকে জিজ্ঞাসা কর। নীপা ফিক ফিক করে হাসছে। সত্যি। মিত্রা বললো। তাতে তুই কেলসে গেলি কেনো। তুই এখনো এইসব করবি। মিলি এগিয়ে এসে আমার হাতটা ধরে দেখতে লাগলো। হ্যাঁরে। মিত্রা টিনা আর মিলির দিকে তাকলো। শুনে বুকটা হিম হয়ে গেছিলো। সাগরেদ কে চিকনা ভানু। তুই এখন ঠিক আছিসতো। নির্মাল্যের দিকে তাকিয়ে বললাম। হ্যাঁ। দেবা ওকে একটা সিগারেট দে। না খাবোনা।
পেটে রস আছে না সব বার করে দিলি। আর থাকে। পুরো জায়গাটা কাদা করে দিয়ে এসেছি। যাক তাহলে এতো দিন পরে নামটা লিখতে পারলি। মিলিদি আবার শুরু করেছো। ঠিক আছে আর বলবোনা। দেবা ওই টালির বাড়িটা দেখতে পাচ্ছিস। হ্যাঁ। ওটা আমার আর নীপার স্কুল। তুই শালা এখান থেকে ওই জায়গায়! হ্যাটস অফ মাইরি। দেবাদা এই ভাবে। টিনা আমার সামনে মার্চ পাস্টের ভঙ্গিতে এসে স্যালুট করলো। টিনা খুলে পরে যাবে। মিলি বললো। ধ্যাত। সবাই হো হো করে হেসে ফেললো। যেতে যেত পথের বামদিকে পীরসাহেবের থান পরলো। আমরা সবাই দাঁড়ালাম। মিত্রা আমাকে ধরে দাঁড়ালো। যা ওদের নিয়ে যা। আমি এখানে বসি। তুই চল। যাচ্ছি তোরা যা। মিত্রা ওদের নিয়ে গেলো। সবাই জুতো খুলে পুকুরে হাত পা মুখ ধুলো। তারপর সেই অশ্বত্থ তলায় প্রণাম করলো। দূর থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বুঝতে পারছি মিত্রা ওদের সেই সব গল্প শোনাচ্ছে। ওর গোল হয়ে সব দাঁড়িয়ে আছে। আমি পুকুরের এপারে বসে আছি। ওরা চারিদিকটা ঘুরে ঘুরে দেখলো। তারপর ধীর পায়ে সবাই আমার কাছে এলো। দেবাশীষ আমাকে এসে জড়িয়ে ধরলো। মিলি টিনা অদিতি নির্মাল্য ঢিপ ঢিপ করে প্রণাম করলো। আরি বাবা এইসব আবার কি হচ্ছে। ওরা মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে। অনিদা আর্শীবাদ করো যেনো তোমার মতো হতেপারি। অদিতি আমার ডানহাতটা নিয়ে মাথায় ঠেকালো। কেনো আমি কি ভগবান। তাকেতো দেখার সৌভাগ্য হবেনা। তার রিপ্রেজেন্টেটিভকে দেখে চোখ জুড়াই। ভুল করছো। জায়গাটা আমার ভালো লাগে। আমিও তোমাদের মতো ওই গাছটার কাছে আসি। সত্যি তুই দেখেছিস। না। তাহলে। বলতে পারবোনা। ব্যাখ্যা করতে পারবোনা। বলতে পারিস একটা মিথ। আমার বিশ্বাসের বড়ো জায়গা। ছবি তুলতে পারবো অনিদা। টিনা বললো। কেনো পারবেনা। মিলি টিনা অদিতি ওদের মোবাইলের সার্টার অন করলো। মিত্রা আমার হাতটাধরে বললো, আজ আর একটা জিনিষ চাইলাম। হাসলাম। ওদর সবার কাপালে মাটি লাগিয়ে দিয়েছি। বেশ করেছিস। নির্মাল্য খুব গম্ভীর হয়ে রয়েছে। ওর দিকে তাকালাম। চোখে চোখ পরতেই মাথাটা নীচু করে নিলো। কি নির্মাল্য বাবু। নির্মাল্য কাছে এগিয়ে এলো। চোখে হাজারো প্রশ্ন।
তুমি রাতের অন্ধকারে এখানে একলা আসো! হ্যাঁ। তাহলে তুমি সাপ মারতেই পারো। এতোক্ষণে তুই বুঝলি। মিলি বললো। নির্মাল্য মাথা নীচু করে নিলো। অনিদা। কি। না থাক তোমায় পরে বলবো। এখন বলনা। মিলিদিরা ইয়ার্কি মারবে। ঠিক আছে। চল। অনিদা কুল খাবো। টিনা বললো। এখানে পাওয়া যাবেনা। যাবে তুমি চেষ্টা করলেই হবে। এখবর তোমায় কে দিলো। হল কালেকসন। টিনা দারুন দিয়েছি মাইরি। দেবাশীষ হাসতে হাসতে বললো। আমরা পায়ে পায়ে স্কুলের সামনে এলাম। সবে মাত্র ভোর হয়েছে। পূব আকাশটায় গাঢ় কমলা রং ছড়িয়ে পরেছে। ওরা ক্যামেরায় কেউ মুভি তুলছে, কেউ স্টিল ফটো তুলছে। নীপা নবোদা এখনো আছে। আছে। এখনো এখানে থাকে ? হ্যাঁ। অনি। পেছন ফিরে তাকালাম। এই মাঠে খালি ধন চাষ হয় না অন্য কিছু। খালি ধান চাষ হয়। এগুলো সব তিন ফসলী জমি। তুই এগুলো সব জানিস। গ্রামের ছেলে। শহরের ছেলেগুলোর কতো মাইনাস পয়েন্ট বলতো। এখানে যখন এসেছিস প্লাস করেনে। একটা করলাম। যা জীবনে কখনো করিনি। অদিতি দেবার দিকে তাকিয়ে বললো যাঃ। মিত্রা কোথায়রে ? ওই দেখ কি করছে। তাকিয়ে দেখলাম স্কুলের সামনে মাঠের ধারে যে ঝোপটা আছে সেখানে দৌড়া দৌড়ি করছে। কি করছিস রে। দাঁড়া একটা জিনিষ ধরছি। অদিতি দেবার হাতটা ছেড়ে তীরের মতো ছুটে চলে গেলো। দেখা দেখি টিনা মিলি দৌড়ালো। নির্মাল্য একটু দূরত্ব রেখে একা একা এদিক ওদিক ঘুরছে। বড় আনমনা মনে হচ্ছে। একটা সিগারেট দে। দেবা পকেট থেকে বার করলো। আমাকে একটা দিলো নিজে একটা ধরালো। নির্মাল্যর দিকে তাকিয়ে বললাম একা একা কি করছিস নির্মাল্য। নির্মাল্য পায়ে পায়ে কাছে এগিয়ে এলো। জানো অনিদা এখানে এসে অলস অথচ এনজয়বেল টাইমটা উপভোগ করছি। ঠিক বুঝতে পারলাম না। দূর তোমার মতো ভাষা আছে নাকি। ঠিক আছে তুই তোর মতো করে বল। কলকাতায় সকালে ঘুম থেকে উঠেই কতো কাজ নাকে মুখে দেখতে পাইনা। মাঝা মাঝে কাজ করতে ইচ্ছে করে না। ঠিক। এখানে দেখো। কোনো কাজ নেই কিন্তু মনের মধ্যে কোনো অলসতা নেই। তার মানে কলকাতায় অলস সময়গুলো তুই এনজয় করতে পারিসনা এখানে সেটা পারছিস। একেবারে ঠিক। জানো অনিদা মায়ের মুখ থেকে শুনেছিলাম আমাদের নাকি একটা দেশ আছে। বর্ধমানের ওইদিকে। সেটাও গ্রাম।
যাস নি ? না। মায়ের মুখে খালি গল্পই শুনেছি। আজ পুরে পুরি উপভোগ করছি। তোর ভালো লাগছে। দারুণ। সবচেয়ে ভালো লাগছে নির্জনতা। এতো নির্জন, এসি রুমে একা বসে থাকলেও পাইনা। দারুণ কথা বললি। ফিরে গিয়ে একাটা আর্টিকেল লিখবো একটু এডিট করেদেবে ? অবশ্যই, কেনো দেবোনা। একটা বড় কাজ এসেছে। আমাদের কপিরাইটাররা কিছুতেই নামাতে পারছেনা। তুমি এখানে নিয়ে এসে আমার মনের পলিগুলো ড্রজার দিয়ে কেটে পরিষ্কার করে দিচ্ছ। বাবা তোর ভাবতো দুধের মতো উথলে উঠছে। দেখছো অনিদা দেখছো দেবাদা কিরকম বলছে। তুই যে একটা অতোবড়ো পোস্ট হোল্ড করে রেখেছিস সেটা পাত্তাই দেয়না। মিথ্যে কথা বলবোনা। দেবাদা অনেক হেল্প করে। দায়ে অদায়ে দেবাদার কাছে ছুটে যাই। অফটার অল দেবাদা এই ফিল্ডে আমার সিনিয়ার। বুবুন। মিত্রার তারস্বর চিৎকারে ফিরে তাকালাম। দেখলাম মিত্রা মাটিতে বসে পা ছুঁড়ছে। অদিতি মিলি টিনা নীপা মাগো বাবাগো মাগো বাবাগো করছে। আমি এক ছুটে কাছে গেলাম। দেবাশীষ নির্মাল্য আমার পেছন পেছন। কাছে যেতেই মিত্রা হাউ হাউ করে কেঁদে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। পার দিকে আঙুল দেখালো। তখনো সজোরে পা ছুঁড়ছে। তাকিয়ে দেখলাম একটা জোঁক ওর পায়ে বসে আছে। টেনে জোঁকটাকে বার করলাম। একটা মাটির ঢেলা দিয়ে পিষে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিলাম। রক্ত বেরোচ্ছে। জায়গাটা চেপে ধরলাম। মিত্রা আমার কাঁধে মাথা দিয়েছে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। আরে বোকার মতো কাঁদে। দেখ কিছু হয়নি। টিনা মিলি অদিতি মাটিতে থেবরে বসে হাঁপাচ্ছে। ভয়ে ওদের চোখ ঠেলে বেরিয়ে আসবে এমন অবস্থা। নীপাকে বললাম যাওতে একটু ককসীমা গাছ ভেঙে আনোতো। নীপা হাঁপাতে হাঁপাতে বললো চিনিনা। মেনি বেড়ালের মতো উঁ উঁ করছিস কেনো। কিচ্ছু হয়নি। কতোটা রক্ত খেয়ে নিলো। তোকে এখানে কে আস্তে বলেছিলো। প্রজাপতি ধরছিলাম। শখ দেখোনা। প্রজাপতি ধরছে বুড়ো বয়সে। টিনা মিলি অদিতি ফিক করে হেসে ফেললো। দেবাশীষ নির্মাল্য থ। আমি জায়গাটা থেকে আঙুল সরালাম দেখলাম রক্ত বন্ধ হয়ে গেছে। বস এখানে আসছি। কোথায় যাচ্ছিস। মরতে। মিত্রা হেসে ফেললো। নির্মাল্য একটু আয়তো। নির্মাল্য আমার কথা মতো পেছন পেছন এলো। আমি স্কুলের পুকুর থেকে একটা পদ্মপাতা তুলে তার মধ্যে জলদিয়ে নির্মাল্যকে বললাম যা গিয়ে পাটা ধুয়ে দে আমি যাচ্ছি। পুকুরের ওপারে গেলাম। ককসীমা গাছ ছিঁড়লাম। এসে দেখলাম ওরা গোল হয়ে বসে আছে। আমি একটা একটা ডাল ভেঙে যে রস বার হলো তা ওর পায়ে লাগালাম। ওরা সবাই তাকিয়ে তাকিয়ে আমার দিকে দেখছে। বুবুন চুলকোচ্ছে। চুলকুনি বন্ধ করার জন্য গোবর লাগাতে হবে। লাগাবি। এমাগো। টিনা নাক সিঁটকিয়ে উঠলো। তুই খেঁচাছিস কেনো। দেহি পদ পল্লব মুদারম। হো হো করে হেঁসে ফেললো সবাই। দেবাশীষ আমার কাঁধটা ঝাঁকিয়ে বললো। হাইড দিয়েছিস গুরু। তুমি পুরো বৈষ্ণব পদাবলী ঝেড়েদিলে। মিলি বললো। তুমি গেঁওটাল মাটি চেনো। নীপার দিকে তাকিয়ে বললাম। কাকে বলে। তুমি গ্রামে আছো কি করে। মশাই একপাও বেরোতে দেয়না। আমাকেও দিতো না। তুমি আমি এক। দাঁড়া। নিয়ে আসি।
আমি আবার পুকুর ঘাটে গিয়ে গেঁওটাল মাটি নিয়ে এলাম। ওর ওখানে লাগালাম। তারপর একটা লতা ছিঁড়ে পদ্মপাতা দিয়ে জায়গাটা বেঁধে দিলাম। দারুণ ব্যান্ডেজ করলিতো। দেবা বললো। কিছু শিখলে মিলিদি। নির্মাল্য গম্ভীর হয়ে বললো। তুই চল তরপর হচ্ছে। কি করবে। চলনা দেখবি। অদিতি সব সানিয়ে রাখবি। আজ তোকে কুরমুর করে খাবো। অনিদা আছে। অনিদা তোকে পাহারা দেবে। পেছন ছাড়ছিনা। আমি ফিক ফিক করে হাসছি। এবার ওঠ। দাঁড়ানা। এতো ঢেপুস হলে চলে। তোর হলে কি করতিস। কেউ জানতেই পারতিসনা। নে উঠে দাঁড়া। মিত্রা আমাকে ধরে উঠে দাঁড়ালো। জুতো কোথায়। ওই যে খুলে চলে গেছে। যা নাচানাচি করলি ছিঁড়ে যায়নি এই ভালো। নীপা গিয়ে জুতো নিয়ে এলো। প্রজাপতি ধরেছিস। সব উড়ে চলে গেলো। ওগুলো মেয়ে প্রজাপতি ছেলে হলে ধরা দিতো। যেমন তুই বল। ছাগল। লিঙ্গে ভুল করলি। আমি মিত্রার দিকে তাকালাম। টিনা মিলি অদিতি মুখে হাত চাপা দিয়েছে। চালা চালা বেশ লাগছে মাইরি। সেই কলেজ লাইফটা যেনো ফিরে পাচ্ছি। ফ্যাটকাসনা। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম, চল অনেক হয়েছে। ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরে চল। না যাবো। কোথায় যাবি। তোর স্কুলে। ওইতো দেখা যাচ্ছে চলে যা। চলনা ওরকম করিস কেনো। ওদের স্কুলে নিয়ে এলাম। মিত্রা আমার হাত ধরে একটু খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে। কি হলো। ব্যাথা লাগছে। বাড়িতে চল পল্তে পুড়িয়ে ছেঁকা দিয়ে দেবো, ঠিক হয়ে যাবে। তুই আমাকে পুড়িয়ে মারবি। টিনা মিলি আমার দুপাশে। হাসছে। তোর একটুও ব্যাথা লাগছে না। তুই মনে মনে ভাবছিস তোর ওখানে ব্যাথা। ওরা স্কুলের ভেতরে ঢুকে অবাক। নীপাকে বললাম একটু নবদাকে ডাকোনা। ও অনি এটা তোদের হায়ার সেকান্ডারী স্কুল। আমার সময় সেকান্ডারী পর্যন্ত ছিলো। তুইতো কলেজে ইলেভেন-টুয়েলভে ভর্তি হয়েছিলি। হ্যাঁ। কি নিস্তব্ধ জায়গাটা না মিলিদি। নির্মাল্য বললো। মিলি হুঁ বললো। আয় আমার নাইন-টেনের বসার জায়গাটা দেখাই। ওরা আমার পেছন পেছন গেলো। আমি ওদের ঘুরে ঘুরে সব দেখালাম। ওদের প্রশ্ন শেষ হয়না। আমি একের পর এক প্রশ্নের উত্তর দিয়ে চলেছি। দেখলাম এখন বেঞ্চির সংখ্যা বেরেছে। আমাদের সময়ে তিনটে মাত্র বেঞ্চ ছিলো। জানিস দেবা এটা তবু পদের, বুবুনের প্রাথমিক স্কুলটা দেখিসনি, ওখানে একটাও বেঞ্চ নেই মাটিতে বসতে হয়। মিত্রা বললো। অনি একবার নিয়ে যাবি। যাবো। কোথায়রে অনি ? ছেলেটার খালি নাম শুনি চোখের দেখা একবার দেখি। নীপার পেছন পেছন নবদা এলো। আমি এগিয়ে গিয়ে নবদার পায়ে হাতদিয়ে প্রণাম করলাম। নবদা আমার থুতনি ধরে চুমু খেলো। এইতো ঠিক আগের মতো আছে। একটু যা ঢ্যাঙা হয়েছে। তুমি কেমন আছো নবদা। আর নবদা। সাতকাল গিয়ে এককালে ঠেকলো। এদের চিন্তে পারলাম না। আমি সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলাম। শেষে মিত্রার সঙ্গে। নবদা মিত্রার থুতনিটা ধরে নাড়িয়ে দিলো। বেশ হয়েছে বউমাটি। সবাই নবদার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। খালি গায়ে একটা গামছা পরে চলে এসেছে। নবদা ল্যাবোরেটরি খোলা আছে। হ্যাঁ চলে যা। এদের একটু গ্রামের স্কুলের ল্যাবোরেটরি রুমটা দেখাই। কি দেখবে বাপু একি আর শহরের স্কুলের মতো। ওরা অনির সব কিছু দেখতে চায়। দুটি মুড়ি খাবি। না। হ্যাঁগো নবদা খাবো। মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো। সবাই হো হো করে হেসে ফেললো। ও নীপা আয়তো মা একটু পেঁয়াজটা কেটে দিয়ে যা। সে কচিটা আসেনি আজকে। মিলি আমার দিকে গোল গোল চোখে তাকালো। টিনা বললো একন না। স্টক করো। আমি হাসলাম। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম
খাই খাই করছিস, মুখ ধুয়েছিস। তুই নিমদাঁতন দিয়েছিস। দাঁড়া। আমি হন হন করে স্কুলের পেছন দিকে চলে গেলাম। নিমডাল ভেঙে নিমদাঁতন তৈরি করে সবার হাতে হাতে দিলাম। নে চিবোতে আরম্ভকর। পেঁয়াজ কাটতে কাটতে দাঁত ঘষা হয়ে যাবে। ল্যাবোরেটরিতে যাবিনা। চিবোতে চিবোতে চল। আমি ওদের ল্যাবোরেটরিতে নিয়ে এলাম। ল্যাবোরেটরি দেখে ওদের চোখ চড়কগাছ। এটা কি ল্যাবোরেটরিরে! এই ল্যাবোরেটরি ব্যবহার করে কতো ছেলে সাইন্সে ফার্স্ট ডিভিসন পাচ্ছে জানিস। দেবা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে। ওই বাক্সটায় কি আছেরে বুবুন। মাইক্রোস্কোপ। সেইটা। কিগো মিত্রাদি নিশ্চই গপ্পো। মিলি বললো। মিত্রা মাথা দোলালো। দাঁড়াও আগে দেখে নিই। তারপর গপ্পোটা শুনবো। খোলো খোলো বাক্সটা। আমি এগিয়ে গেলাম। বাক্সটা খুলে মাইক্রোস্কোপ বার করলাম। কি ভাবে দেখতে হয়। ওদের দেখালাম কোথায় চোখ রেখে কোথায় এ্যাডজাস্ট করে ব্যাপারটা দেখতে হয়। ওরা যে যার নিজের মতো করে দেখলো। আমাকে দেখাবিনা। যা দেখে নে। তুই চল। আমি মিত্রাকে সঙ্গে করে মাইক্রোস্কোপের কাছে গেলাম। নে এখানে চোখ রাখ। মিত্রা রাখলো। দুর কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। তুইকি দু’চোখ খুলে দেখছিস। হ্যাঁ। দুর একটা চোখ এইভাবে বন্ধ কর। যেভাবে চোখ মারে সেই ভাবে ওকে দেখালাম। আর একবার দেখা। দেখালাম। মিত্রা আবার ভিউ ফাইন্ডারে চোখ রাখলো। বুবুন। কি। কিছুই দেখতে পাচ্ছিনা। তোর দ্বারা হবেনা। আমার মতো তোরও গবেট মাথা। এবার রাখ চল মুড়ি খেয়ে বিদায় নিই। আর একবার, আর একবার। আবার ওকে রিপিড দেখালাম ভিউফাইন্ডারে চেখ রাখতেই এ্যাডজাস্ট করলাম। কিরে দেখতে পাচ্ছিস। হ্যাঁ এবার পাচ্ছি। ছাড় অনেক হয়েছে। দারুনরে জিনিসটা। কাট। দেবাশীষ চেঁচিয়ে উঠলো। মিলি ছুটে এসে মিত্রাকে জড়িয়ে ধরলো। কি সুন্দর এ্যাকটিং করলে মিত্রাদি। তারমানে। মিত্রার চোখে বিস্ময়। নির্মাল্য সব মুভি করে রেখেছে। দেবা কাছে এগিয়ে এলো। জানিস অনি তোদের দুজনকে দেখে দত্তার বিজয়া আর নরেনের কথা মনে পরে যাচ্ছিল। কি ফালতু বকছিস। তুলে রেখেছি। চল টিনার ল্যাপটপে ভরে তোকে দেখাবো। কি নাইস লাগছিলো তোকে। একেবারে ইনোসেন্ট। আমি অদিতি চেষ্টা করলেও পারবোনা। আমি মাইক্রোস্কোপ বাক্সে ভরলাম। দরজায় সেকল তুলে স্কুলের বাইরে বেরিয়ে এলাম। তোদের এই মাইক্রোস্কোপ ছাড়া আর কিছু নেই। ওই তো কয়েকটা স্পেসিমেন পরে রয়েছে। ফিজিক্সের ল্যাবোরেটরি। ওই একটা ঘরে সব। দেখলি না দেয়ালের ধারে একটা বস্তা আছে। দেখলামতো। ওর মধ্য ফিজিক্সের কিছু মাল পত্র আছে। কিছু টেস্ট টিউব রয়েছে একটা বার্ণার রয়েছে ব্যাশ আর কি চাস। আমি যদি কিছু জিনিষ কিনে দিই। থমকে দাঁড়ালাম। দেবার মুখের দিকে তাকালাম। সত্য়ি ও ভেতর থেকে বলছে। দিলে খুবি ভালো। ছেলেগুলো পরে বাঁচবে। আমি দেবো তুই ব্যবস্থা কর। আমরাও যদি কিছু কন্ট্রিবিউট করি দেবাদা, তোমার অসুবিধে আছে। টিনা মিলি বললো। একেবারে না। তোরা কাকার সঙ্গে কথা বল। উনা মাস্টার এখনো পড়ায় স্যার ব্যবস্থা করে দেবে। আজই কাকার সঙ্গে কথা বলবো। অনেক পয়সা নষ্ট করি। এখানে কিছু পয়সা নষ্ট করলে খতি হবেনা। একে একে সবাই পুকুর ঘাটে মুখ ধুলাম। নীপাকে নিয়ে মিত্রারা এরি মধ্যে কিছুক্ষণের জন্য হাওয়া হয়ে গেলো। নবোদা মুড়ি এনো দিলো। নিমেষের মধ্যে সব শেষ হয়ে গেলো। চা খেলাম। অনিদা ও অনিদা। আবার কে ডাকেরে অসময়ে। বাইরে বেরিয়ে এসে দেখি বিজয়। কিরে তুই! জানলি কি করে আমরা এখানে। বিজয় হাসছে। বড়মা পাঠালো। তুই একা। হ্যাঁ।
কিরে কে এসেছে। মিত্রা ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। বিজয়ের দিকে তাকিয়ে মিত্রা হেসে ফেললো। বড়মা বললেন তোমাদের নিয়ে যেতে। কেনো আমরা যেতে পারবোনা। তা বলতে পারবোনা। আমি মিত্রার দিকে তাকালাম। তোরা চলে যা, আমি নির্মাল্য দেবা পরে যাচ্ছি। তুই আমাদের সঙ্গে চল। মহা মুস্কিল। ঠিক আছে, ঠিক আছে। সরি। ওদের ডাকি। যা ডেকে আন। নবোদার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা সবাই বেরিয়ে এলাম। আসার সময় নবোদা হাতটা ধরে বললো, আবার আসিস। এদিকে এলে অবশ্যই আসবো। মিত্রারা সবাই ট্রলিতে চাপলো। বিজয় ট্রলি চালাতে শুরু করলো। আমার মোবাইলটা বেজে উঠলো। ম্যাসেজ এলো। আমি মিত্রার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললাম। দাঁড়াও দাঁড়াও বিজয়। কিহলো দিদিমনি। তুমি একটু থামোনা। বিজয় থামালো। মিত্রা ট্রলিথেকে নেমে ছুটে আমার কাছে চলে এলো। দে একটু দেখি। দেবা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখে জিজ্ঞাসা। আমি ওর হাতে মোবাইলটা দিলাম। অর্ক লিখেছে। দাদা সকলা থেকে কাজ শুরু করলাম। আমার সঙ্গে দুটো চেলুয়াকে নিয়েছি। মনে কিছু করবেনা। ওরা তোমার কথা জানেনা। ঘুটি সাজিয়ে নিয়েছি। কাজ খুব স্মুথলি শুরু করে দিয়েছি। একটু আগে, আটটা দশ নাগাদ মিঃ ব্যানার্জী রাজনাথ বাবুর কাছে এসেছেন। গাড়ির নম্বর ডিএল জিরো টু সিক্স এইট নাইন ফোর। সঙ্গে একটা বড় ভিআইপি স্যুটকেস নিয়ে এসেছে। ভেতরে কি আছে খবর নিয়ে একঘন্টা পরে জানাচ্ছি। পড়া শেষ হতে মিত্রা আমার দিকে তাকালো, খুশির ঝলক ওর চোখে মুখে। আমাকে জড়িয়ে ধরে চকাত করেঠোঁটে একটা চুমু খেয়ে নিলো। দেবাশীষের চোখ ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে। নির্মাল্য মাথ নীচু করেনিলো। বুঝতে পারছি মিলি টিনারাও মিত্রার এই অস্বাভাবিক আচরণে একটু অবাক। তুই কি করে আগে থেকে জানলি বল। প্র্যাকটিশ। আমাকে শিখিয়ে দে। দেবো। ছোট্ট মেয়ের মতো মিত্রা ছুটে চলেগেলো ট্রলির কাছে। একটু দাঁড়িয়ে পেছন ফিরে, তাড়াতাড়ি আয় প্লীজ। যা যাচ্ছি। আমরা তিনজন হাঁটতে আরম্ভ করলাম। মাঠ পেরিয়ে পীরবাবার থান। ওখানে মিনিট খানেক দাঁড়ালাম, আমার পাশাপাশি ওড়াও দাঁড়ালো। জুতো খুলে ওখান থেকেই প্রণাম করলাম। দেবারাও প্রণাম করলো। উঠে আবার হাঁটতে আরম্ভ করলাম। দেবা একটা সিগারেট দে। অনি। দেবা আমাকে সিগারেট দিলো। এখানকার ঘটনাটা সত্যি। বলতে পারবোনা। দেবা আমার দিকে তাকিয়ে। বিশ্বাস কর শোনা কথা। তবে আমার বাবা দেখেছিলেন। বাবা এই স্কুলেরই মাস্টার ছিলেন। রিয়েলি। হ্যাঁ। আমার যখন চার বছর বয়স তখন বাবা-মা দুজনেই গত হন। তারমানে তখন থেকে তুমি একা। নির্মাল্য বললো। এইযে কাকা-কাকীমাকে দেখছিস এদের কাছে মানুষ। এরা তোর নিজের কাকা-কাকীমা নন। মিত্রা বলছিলো। বাবার বন্ধু। একি স্কুলে কাজ করতেন। পাশাপাশি বাড়ি করেছেন। জমিজমা সম্পত্তি সব একসঙ্গে। বলতে পারিস হরিহর আত্মা। স্ট্রেঞ্জ। সত্যি অনিদা তোমার সম্বন্ধে ভাষাভাষা জানতাম। তোমার যতো কাছে আসছি, তত অবাক হয়ে যাচ্ছি। কেনো ? এটাও একটা জীবন। হ্যাঁরে মিত্রা হঠাৎ ওরকম করলো। আমি জানতাম তুই এই প্রশ্নটা করবি। তুই কি আবার কিছু ঘটনা ঘটিয়েছিস ? হ্যাঁ। বলবিনা। না। খালি মিত্রাকে কাল রাতে শুয়ে শুয়ে বলেছি। মিলিয়েও দিয়েছি। তাই মিত্রা ইমোশন্যালি ঘটনাটা ঘটালো। ও কাল রাতে বিশ্বাস করতে পারেনি। আমাদের সঙ্গে একটু শেয়ার কর, এখনতো কেউ নেই। জানতে পারবি। না জানলে মঙ্গলবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আন্ডার প্রসেস। অনিদা যখন বলতে চাইছেনা তখন ডিস্টার্ব করোনা। নিশ্চই গুরুত্ব পূর্ণ কিছু। আমরা মাঠের মাঝখান দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কখনযে মোরাম রাস্তায় এসে পরেছি বুঝতে পারিনি। অনিদা এই রাস্তায় কাল আমরা এসেছিনা। হ্যাঁ। ওইতো সেই ক্যালভার্টটা। চিনতে পেরছিস। দেবাদা দেখো অনিদার স্কুলটাকে কেমন ছোটোছোটো লাগছে। দেবা পেছন ফিরে তাকালো।
সত্যিতো। অনি কতটা রাস্তা হবেরে। প্রায় তিন কিলোমিটার। তারমানে সকাল থেকে প্রায় সাত কিলোমাটার হাঁটা হয়া গেলো। হ্যাঁ। গড়িয়া থেকে আমার অফিস! শালা কিছুই বুঝতে পারলামনা। হাসলাম। শ্মশানে যাবি। চল, এসেছি যখন ঘুরেই যাই। মোরাম রাস্তা পেরিয়ে আবার খেতের আইল পথ। শরু রাস্তা। দু’পাশের খেতে কলাই শাক বোনা হয়েছে সবুজ হয়ে আছে খেতগুলো। দাঁড়া একটা ছোট্ট কাজ করে নিই। কি করবি। দাঁড়ানা দেখ। আমি কলাই খেতে নেমে পড়লাম বেছে বেছে কলাই শাক তুলতে আরম্ভ করলাম। আমার দেখা দেখি দেবাশীষ খেতের আইল থেকে মাঠে নেমে এলো। কিভাবে তুলবো দেখিয়ে দে। আমরাও কিছুটা তুলে কোঁচড়ে ভরি। হাসলাম। ওদের দেখিয়ে দিলাম। খালি ডগটা তুলবি না হলে গাছ মরে যাবে। ওরে অনি এতো চা পাতা তোলার মতো কেশ। শিলিগুড়িতে চা বাগানে বেড়াতে গিয়ে দেখেছিলাম। হ্যাঁ। খালি কচি কচি পাতাগুলো তুলবি। যে গাছে ফুল আছে। ওই অংশগুলো বাদ দিস। বেশ কিছুক্ষণ কলাই শাক তুললাম। তিনজনেরই পাঞ্জাবীর কোঁচর ভরে গেছে। কি করবি। ভাজা খতে দারুণ লাগে। চল সুরমাসিকে গিয়ে বলতে হবে। আমরা খেত থেকে উঠে এলাম। হাঁটতে হাঁটতে শ্মশানে এলাম। বেশ লাগছে, বুঝলি অনি। কলকাতায় এই ভাবে রাস্তা দিয়ে হাঁটবো কখনো স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারিনা। কলকাতায় তুমি এরকম রাস্তা পেয়েছো যে হাঁটবে। দেবা নির্মাল্যের কথায় হো হো করে হেসে ফেললো। কেনো। দুর্গাপূজোর সময় থিম হিসাবে গ্রাম দেখিসনা। দূর কার সঙ্গে কার তুলনা করছো। ওটা কৃত্রিম এটা প্রকৃতির নিজের হাতে তৈরি। তোর কি হয়েছে বলতো। কেনো! সকাল থেকে সাহিত্য ঘেঁষা কথা বলছিস। মনটা খালি বলছে কিছু লিখি। চল মিলিকে খবরটা দিতে হবে। এইতো তুমি হ্যাজাতে আরম্ভ করলে। এইযে জঙ্গল মতো জায়গাটা দেখছিস এটাই শ্মশান। মড়া পোরানো হচ্ছে কোথায় ? দূর এখানে কি সব সময় পোরানো হয় নাকি। তাহলে। তুই কি এটাকে নিমতলা শ্মশান পেয়েছিস। তবে কি দেখবো। তুই একটা মিথকে দেখতে এসেছিস। দেখেছিস ধারে কাছে কোনো বসতি আছে। না। কোনো চাষের খেত আছে। না। কেনো বলতো। কেনো। এখানে ভূত আছে। চাষ করলে মানুষকে মাঠে এসে কাজ করতে হবে। যদি ভূত ধরে। তুই কিন্তু সব ডেঞ্জার ডেঞ্জার কথা বলছিস। কেনো ছোটো হয়ে গেছে এরি মধ্যে। বাচ্চা ছেলেটার সামনে যাতা শুরু করে দিয়েছিস। ভেতরে যাবি ? না এখান থেকে পালিয়ে যাবি ? না মানে….। তুমি এখানে দাঁড়িয়ে থাকো দেবাদা, আমি অনিদা একটু ঘুরে আসি। ঢেমনা। ফিক করে হেসে ফেললাম। চল তাহলে। চল, যা থাকে কপালে। আমরা শ্মশানের ভেতরে ঢুকলাম। চারিদিকে পোরাকাঠের ছড়াছড়ি। দেখে মনে হচ্ছে আমি শেষবার যখন এসেছিলাম তার পর কেউকে আর পোরানো হয়নি। যেমনটি দেখে গেছিলাম তেমনটিই আছে। গাছের পাতায় বাতাসের স্পর্শে সোঁ সোঁ আওয়াজ হচ্ছে। আমি ধীর পায়ে পুকুর পারের বট গাছটার তলায় এসে দাঁড়ালাম। চারিদিক নিস্তব্ধ। একবার ওপরে দিকে তাকালাম। সেই একইভাবে বটের ঝুড়িগুলো নিচে নেমে এসেছে। মনে মনে বললাম, মা তোমার ছেলের শহুরে বন্ধুরা তোমায় দেখতে এসেছে। দেখতে পাচ্ছ। তোমার ছেলের বউ-এর মুখ দেখেছো মা ? দেখোনি। দেখি তাকে আনতে পারি কিনা। ভয় পায় মা ও। আসতে চায় না। রাগ কোরোনা। আমিতো আসি তোমার কাছে।
বুঝতে পারলাম মনটা ভারি ভারি হয়ে এলো। বুঝতে পারছি চোখটা ছল ছল করে উঠলো। কোঁচর থেকে দুটো কলাই শাক বটগাছের তলায় রাখলাম। পুকুর থেকে এক মুষ্টি জল এনে কলাই শাকের ওপর ছড়িয়ে দিলাম। আমি স্থির ভাবে দাঁড়িয়ে। চোখের পলক পরছেনা। অনিদা। নির্মাল্যের দিকে তাকালাম। চোখ দুটো ছল ছল করছে। এইখানে মাসীমাকে…..। মাথা দোলালাম। নির্মাল্য হাঁটু মুরে বসে মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করলো। দেবাশীষ স্থানুর মতো দাঁড়িয়ে আছে। আমার পাশে এসে দাঁড়ালো। পাঞ্জাবীর হাতা দিয়ে চোখ মুছলাম। মনখারাপ করিস না। তুমি এখানে একা একা আসো। হ্যাঁ। গলাটা ভারি ভারি। তোমার সঙ্গে কেউ আসেনা। না। তোমার বন্ধুরা। ওরা ভয় পায়। রাতের বেলাও একা আসো। হ্যাঁ। ওই দিকটা কি আছে অনিদা। জঙ্গল হয়ে আছে। সাপ শেয়ালের বাসা। এখানে কেউ আসেনা। আসে। কেউ মারা গেলে গাঁয়ের লোকরা দাহ করার জন্য আসে। জায়গাটা কি নিরিবিলি। বিকেল বেলা এলে আরো ভালো লাগে। ঠিক সন্ধ্যের সময়টা যখন পাখিরা বাসায় ফেরে চারিদিকে কিচির মিচির শব্দ তখন আরো ভালো লাগে। আমাকে একবার নিয়ে আসবে। আসবি। তুমি নিয়ে এলে, আসবো। এইগুলো একটু তোর কোঁচরে নিয়েনেতো নির্মাল্য। নির্মাল্য পাঞ্জাবীর কোঁচরটা খুললো। দেবাশীষ সমস্ত কলাই শাক ঢেলে দিয়ে, জুতো খুলে পুকুর ঘাটে নামলো। হাতপায়ে জল দিয়ে মুখটা ধুলো। তারপর বটগাছের তলায় এসে প্রণাম করলো। তোরা একটু এখানে দাঁড়া আমি আসছি। যা। আমি সামনের ঝোপের আড়ালে চলে গেলাম। ওখানে দইআঁতি পাতার গাছ আছে। অনেকটা দইআঁতি পাতা তুললাম। মোবাইলে সমানে ম্যাসেজ এসে যাচ্ছে। খুলে দেখতে আর ভালো লাগছেনা। ওদের কাছে এসে দেবাশীষের কোঁচরে সমস্ত দই আঁতি পাতা দিয়ে দিলাম। খুব তাড়াতাড়ি হেঁটে বাড়ির পেছন পাশ দিয়ে ঘরে ঢুকলাম। দেবাশীষকে বললাম তুই নির্মাল্য ওই বাড়িতে যা। তুই যাবিনা। না। কেনো শুধু শুধু মন খারাপ করছিস। আমি হন হন করে খিড়কি দরজা দিয়ে ওপরে চলে এলাম। ঢোকার সময় একটা হৈ হৈ আওয়াজ কানে এলো। বুঝলাম নির্মাল্য আর দেবাশীষকে দেখে ওরা হৈ হৈ করে উঠলো। আমার কিছু ভালো লাগছে না। হঠাৎ আজ কেনো মার কাছে গিয়ে কেঁদে ফেললাম। আমিতো যখনই সময় পাই ওখানে যাই। কখনো সবাই জেনে যায় আমি গেছি। কখনো জানতে পারে না। নিজের ঘরের দরজাখুলে ভেতরে ঢুকলাম। বুকের ভেতরটা ভীষণ ষন্ত্রণা করছে। আলমাড়িটা খুললাম। মায়ের বাক্সটা বার করলাম। ছবিটা হাতে নিয়ে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলামনা ঝড় ঝড় করে কেঁদে ফেললাম। কতোক্ষণ ওইভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কেঁদেছি জানিনা। বুবুন। মিত্রার ডাকে ফিরে তাকালাম। আমার একেবারে পেছনে মিত্রা দাঁড়িয়ে আছে। মিত্রাও কাঁদছে। কখন এসে দাঁড়িয়েছে জানিনা। আজও আমাকে মার কাছে নিয়ে গেলিনা। মাথাটা নীচু করলো। আমি মিত্রাকে জড়িয়ে ধরলাম। চোখের জলের বাঁধ মানছে না। কাঁদিস না। তোকে মন খারাপ করতে দেখলে কারুর মন ভালো থাকে না। ও বাড়িতে সবাই বসে আছে। তুই যা। আমি একটু একা থাকি। ঠিক হয়ে যাবে। মিত্রা আমার মুখের দিকে ভাসা ভাসা চোখে তাকালো। কেনো গেলি। দেবারা যেতে চাইলো। মিত্রা আমার চোখে আঙুল ছোঁয়ালো। তুই কাঁদলে আমার মন ভালো থাকে ? ঠিক আছে আর হবেনা। ও বাড়িতে চল। আমি একটু বসি। তুই একটু চা খাওয়াবি। ওদের ডাকি। নিয়ে আয়। তুই একটু মুখে চোখে জল দিয়ে নে। চোখদুটো কেমন ফুলিয়ে ফেলেছিস। মিত্রাকে বুকের সঙ্গে জাপ্টে ধরলাম।
পায়ের ব্যাথা কমেছে। হ্যাঁ। ডাক্তারদাদা কি বলেছে জানিস। কি। তুই ডাক্তারদাদার ভাত মেরে দিবি। হাসলাম। মায়ের ফটোটা তুলে রাখ। আমি মিত্রার কথা মতো ফটোটা ঠিক জায়গায় রেখে আলমাড়িটা বন্ধ করলাম। আমি চা নিয়ে আসি। আয়। মিত্রা বেরিয়ে গেলো। আমি মুখটা ভালো করে জল দিয়ে ধুলাম। ঘরে এসে টাওয়েল দিয়ে মুখ মুছলাম। সিঁড়িতে ধুপ ধাপ আওয়াজ পেলাম। কেউ দৌড়ে আসছে। তাকাবার আগেই চিকনা ঘরে এসে জড়িয়ে ধরলো। আমি ওর দিকে তাকালাম। দেখলাম বাসু অনাদি পলা সঞ্জীব দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে। ওদের মুখটা ভারি। আমার মুখের দিকে তাকিয়েই মাথাটা নীচু করে নিলো। তুই মন খারাপ করলে আমরা কোথায় যাবো। তোকে নিয়ে যে আমাদের অনেক স্বপ্ন। আমি চিকনার দিকে তাকিয়ে আছি। ওদের মুখ বলে দিচ্ছে ওরা কষ্ট পাচ্ছে। আয় ভেতরে আয় ওখানে দাঁড়িয়ে রইলি কেনো। চিকনা আমাকে ছেড়েদিলো। আমি খাটের ওপর বসলাম। ওরা যে যার মতো করে বসলো। আমার একপাশে বাসু একপাশে অনাদি। আমি মোবাইলটা বার করে ম্যাসেজগুলো এক ঝলকে দেখেনিলাম। বুঝলাম অর্ক ঠিক ঠিক ভাবে কাজ এগোচ্ছে। ওদের দিকে তাকালাম। সবাই চুপ চাপ বসে আছে। চিকনা একটা সিগারেট খাওয়াবি। বাসু পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বার করলো। আমার দিকে এগিয়ে দিলো। আমি হেসে ফেললাম। এই হচ্ছে রিয়েল অনি। আর একবার হাস। তুই সিগারেটের প্যাকেট পকেটে রাখছিস। তোর মতো, ইচ্ছে হলে খাই, না হলে খাইনা। আমি একটা বার করে অনাদির হাতে দিলাম। বাসু তুই একটা বার করে নে আমি সঞ্জু পলা কাউন্টার করে নেবো। আমি অনির কাউন্টার নেবো। আগে বলে দিচ্ছি একেবারে ঝামেলা করবি না। সঞ্জু চেঁচিয়ে উঠলো। ঝামেলা করতাম কিন্তু এখন করবো না। ডিউ স্লিপ রইলো। কখন বেরিয়েছিলি। অনাদি বললো। সকালবেলা। না। আরো আগে। হাসলাম। আজও অপকর্ম করেছিস। কে বললো। ম্যাডামদের পেটে কিছু থাকে। হৈ হৈ করে সকলে ঘরে ঢুকে পরলো। ঘর ভরে গেলো। মিলি এসে আমার পায়ের কাছে বসলো। টিনা একটু ধরতো। মিত্রা বললো। টিনা চায়ের ট্রেটা ধরে মিট সেফের ওপর রাখলো। মন ভালো হয়েছে। মিলি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলো। আমি মিলির মুখটা ধরে গালটা টিপে দিলাম। মন খারাপ হয়নি, হঠাৎ লোড শেডিং হয়েগেছিলো। তাহলে, কি বলেছিলাম। চিকনা চেঁচিয়ে উঠলো। কি বলেছিলি! সঞ্জু খেঁকিয়ে উঠলো। কাল রাতে তোর জেনারেটর ফেল করেছিলো। সঞ্জু নিমেষের মধ্যে উঠে দাঁড়িয়ে জলন্ত সিগারেটটা চিকনার মুখের কাছে নিয়ে গিয়ে বললো, দেবো মুখ পুরিয়ে। দেখতে পাবি। ম্যাডাম আপনি সাক্ষী রইলেন। দুই নম্বর হলো। মনে রাখিস। আবার কথা। মিলি একটু ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেছিলো। মিত্রা মিটসেফের কাছ থেকে চেঁচিয়ে উঠলো মিলি ভয় পাসনা। মানিকজোড় সারাদিন এরকম খেয়ো-খেয়ি করে। আবার একজন আর একজনকে দেখতে না পেলে বাড়িতে গিয়ে হাজির হয়। চিকনা মিলির দিকে তাকিয়ে বললো। ম্যাডাম মিছে কথা বললো। মিলি চিকনার কথা বলার ভঙ্গিতে ফিক করে হেসে ফেললো। ম্যাডাম একটু গরম জল দেন মুখটা ধুই। চিকনা চেঁচালো। শুধু বুবুনের জন্য। তাই দেন আমি কাউন্টার মারবো। আমিও আছি। সঞ্জু বললো। সিগারেটে তুই ফার্স্ট আমি সেকেন্ড। চায়ে তুই সেকেন্ড আমি ফার্স্ট। অনাদি তুই সাক্ষী রইলি আমি যেনো পাই। সঞ্জু বললো। আমি নেই এর মধ্যে। অনিদা কি খাবে। তোমাদের যদি দিয়ে দেয়। মিলি বললো। খালি কাপটা দিলেই যথেষ্ট, ধুয়ে ভাগ করে নেবো। মিলি আর থাকতে পারলোনা। হাসতে হাসতে আমার কোলে মাথা রাখলো। কিছু বুঝলি মিলি। মিত্রা বললো। ওরা সবাই হাসছে। আমার ফোনটা ঢং ঢং করে বেজে উঠলো। মিত্রা আমার দিকে তাকালো। মিলি ফোনটা নিয়ে আয়তো। মিত্রার কথায় দেবাশীষ ফিক করে হেসে ফেললো। তুই হাসলি কেনো। প্রাইভেট ম্যাসেজ দেখছিস কিনা।
তোর কি। দেবাশীষ হাসছে। টিনা তোরা একটু ওগুলো দিয়ে দে সবাইকে। আমি এখুনি আসছি। মিলি আমার পায়ের কাছ থেকে উঠে মিটসেফের কাছে চলে গেলো। টিনা মিলি অদিতি সবাইকে চায়ের কাপ এগিয়ে দিলো। তুমি কিছু খাবেনা অনিদা। টিনা বললো। ভালো লাগছেনা। আমরা তোমার তুলে আনা শাক ভাজা দিয়ে পান্তা খেলাম। দারুন। তুই কলাই শাক কার খেত থেক তুললি ? অনাদি বললো। কেনো শ্মশানে যেতে গিয়ে ডান দিকের খেতটা। খেয়েছে। চিকনা বললো। কেনো! হায়রে। কাঞ্চন মাসির খেত। জানতে পারলে বুড়ি মরা বাপকে জ্যান্ত করে দেয়। তবে তুই তুলেছিস জানলে। মাটিতে মুখ ঘোষে রক্ত বার করে দেবে। তার মানে! দেবাশীষের চোখ বড় বড়। বুঝলেন না। টিনা আমাকে চায়ের কাপ দিতে এসে ঘরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে পরেছে। চিকনার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে। না। অনিকে মাসি খুব ভালবাসে। না জেনে গালাগাল করবে, সাপ সাপান্তর করবে। যেই জানবে অনি তুলেছে। অমনি যেই মুখ দিয়ে গালাগাল দিয়েছে সেই মুখটা মাটিতে ঘসবে। সে এক ব্যাপার, ঘটনা ঘটলে জানতে পারবেন। ও স্যাট। টিনার মুখ থেকে বেরিয়ে এলো। হ্যাট না ম্যাডাম হক কথার এক কথা। ম্যাডাম ইংরাজী বলেছে। বাসু বললো। খমাদেন ম্যাডাম ইংরাজী বুঝিনাই ভুল ভাল বলে ফেলেছি। মিলি চিকনার কথা শুনে হো হো করে হেসে ফেললো। আমি চায়ের কাপটা চিকনার দিকে এগিয়ে দিলাম। মনে রাখিস, আমি এখানে বসে আছি। সঞ্জু বললো। বিকেলেরটা নিস। দেবাশীষ চিকনার কীর্তি দেখে হো হো করে হেসে ফেললো। কি পলাবাবু চুপচাপ যে। তোকে নেমন্তন্ন করতে এসেছি। আমাকে! কেনো ? কাল যাত্রা কালীপূজো উপলক্ষে একবার আসবি। কখন ? সন্ধ্যে বেলা। টিনা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। ইশারায় বলছে যাবো, তুমি বলে দাও। মিলিও একি কথা বলছে। বাসু ফিক করে হেসে ফেললো। কিরে পলা তুই ম্যাডামদের নেমন্তন্ন করলিনা। অনি গেলে ওনারাও যাবেন। লজ্জা লজ্জা মুখ করে বললো। সেগগগগগগগ। সঞ্জু চিকনার মুখটা চেপে ধরলো চিকনা গোঁ গোঁ করছে। এই জন্য বলে চাষা। সঞ্জু চিবিয়ে চিবিয়ে বললো। চিকনা আমার দিকে মুখ করে ফিক করে হেসে ফেললো। এই কান মুলছি দেখিস আর হবেনা। নীপাকে ডাকবো। অনাদি বললো। ডাকিসনা, ঝেঁটিয়ে বিষ ঝেরে দেবে। দেবা হাসছে। খুব জোর আড্ডা মারছিস। ইসলামভাই ভেতরে এলো। এসো গুরুদেব তুমি আমার পাশে। চিকনা সোফা থেক উঠে দাঁড়ালো। ইসলামভাই এসে বসলো। মিত্রা হাসতে হাসতে ঘরে ঢুকলো। বুবুন ইসলামভাই চুরি করে দেখে ফেলেছে। আমি ইসলামভাই-এর দিকে তাকিয়ে হাসলাম। দেখে কি করবো বল, ওটা আমার হাতের বাইরে। তোর সঙ্গে পাল্লাদিতে পারবোনা। আমি তাকিয়ে আছি। তাকাসনা। সত্যি বলছি। কালকে থেকে দামিনী অনেক জ্বালিয়েছে। কোনো কথার উত্তর দিতে পারিনি। আজকে কিছুটা অন্ততঃ বলতে পারবো। ঘরের সবাই হাঁ করে আমার আর ইসলামভাই-এর কথা শুনছে। সন্দীপ ফোন করেছিলো। তোর কথা মতো কাজ হয়ে গেছে। মিত্রা বললো। তুই এক ঢিলে সব পাখি মারবি। এক ঢিলে একটাই মরবে। বাকি সব প্রাণের ভয়ে পালিয়ে যাবে। ওই তল্লাটে আর বাসা বাঁধবেনা। দারুণ বললি কথাটা। অদিতি স্টক করো। কলকাতায় গিয়ে ছাড়তে হবে। দেবাদা, অনির কথা লেখতে গেলে মহাভারত হয়ে যাবে। চিকনা বলে উঠলো। সবাই হো হো করে হেসে উঠলো। মামনি আমি একটু পাবোনা। ফ্লাক্সে আছে। টিনা একটু ঢেলে দে।
এইবার ভাইদা আর অনি। আমরা কেউ খাবোনা। চিকনা বললো। কাউন্টারও পাবিনা। সঞ্জু বললো। বড়দের কথার মাঝখানে ফুট কাটিস কেনো। সঞ্জু সজোরে একটা ঘুসি মরলো চিকনার পিঠে। ভাইদাগো মরে গেলাম। সবাই হেসে উঠলো। দুজনে হাতাহাতি শুরু হয়ে গেলো। আরে আরে করছো কি। ইসলামভাই বলে উঠলো। মনে রাখিস এ অপমান আমি সইবোনা। রাতে যদি জেনারেটর বিগড়োয় তুলে নিয়ে গিয়ে পচা পুকুরের জলে। সঞ্জু আবার কিল তুলেছিলো ইসলামভাই ধরে নিলো। মিত্রা টপকে টপকে চলে এসে আমার আর দেবার মাঝখানে বসে পরলো। আমার হাতে মোবাইলটা ধরিয়ে দিলো। গুরু আমার একটা আর্জি রাখবে। চিকনা আস্তে করে বললো। আমি চিকনার দিকে তাকালাম। নির্মাল্যদার নামটা একটু ছোটো করে দেবে। কেনো। দাঁত খুলে যাচ্ছে। দেবা খিক খিক করে হেসফললো। নির্মাল্য দেবার দিকে তাকলো। তাকাচ্ছিস কিরে চোখ গেলে দেবো। মিলি বললো। অনিদা তুমি মার্ক করো ব্যাপারটা। নির্মাল্য বললো। নিমু বলবি। আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই, চিকনা আমার পায়ে আঙুল ঠেকিয়ে জিভে আঙুল ঠেকালো। কিহলো ? ধুলো খেলাম। কেনো ? ইনেসটানট। সবাই হো হো করে হেসে ফেললো। টিনা চায়ের কাপ নিয়ে এগিয়ে এলো। আমি এক কাপ ইসলামভাই আর একটা কাপ টিনার হাত থেকে নিলাম। ম্যাডাম তলানি কিছু আছে। চিকনার কথায় টিনা একবার তাকালো। তুই ওর কথা বুঝতে পারলিনা। ইসলামভাই বললো। না। এবারের কাউন্টার সঞ্জু নেবে চিকনা কি পাবে। ও হরি টিনা হো হো করে হেসে ফেললো। সেদিনকার কথাটা বলবো বুবুনকে। মিত্রা বললো। আমি তাহলে আত্মহত্যা করবো। মিত্রা হো হো করে হেসে ফেললো। তুই কি পাতা তুলে এনেছিসরে। ইসলামভাই বললো। কেনো। ওবাড়িতে বড়দি আর ডাক্তারবাবু ফাটা ফাটি করছে। সঠিক নাম বলতে পারবোনা। ছোটবেলা থেকে শুনেছি দই আঁতি পাতা। ভাজা খায়, না রস করে খায়। রস করে চিনি মিশিয়ে একটা বাটিতে রেখে দিলে দই-এর মতো বসে যাবে। তারপর দই যেমন করে খায় সেই ভাবে খাও। ডাক্তারবাবু বলে ভাজা খাবো। নীপা বলে রস করে খেতে হয়। বড়দি বলে অনি আসুক এ বাড়িতে তরপর হাত দিবি। আমি হো হো করে হেসে ফেললাম। কইগো অনিবাবু মন ভালো হলো। ডাক্তারদাদা ঘরে পা রাখলেন। আরি বাবা এতো মহাআড্ডা। বসার জায়গা নেই। আসুননা ভেতরে ঠিক জায়গা হয়ে যাবে। ইসলামভাই বললো। আমি একা নয়। আ মরণ গোঁতা মারো কেনো। বড়মার গলা। আমি উঠে দাঁড়ালাম। অনাদি বাসুর দিকে ইশারা করলো চল এখন কেটে পরি। ওরা শুর শুর করে বেরিয়ে গেলো। তোমরা কোথায় যাচ্ছ। ডাক্তারদাদা বললো। কাজ গুলো একটু সেরে ফেলি। অনিবাবু তুমি কিন্তু একটা অন্যায় কাজ করেছো। আমার খেঁজুর রস খেয়ে নিয়েছো। আমি মাথা নীচু করলাম। অনিদা একা নয়। মিলি টিনা একসঙ্গে চেঁচিয়ে উঠলো। দেখছো বান্ধবী পথও আটকাবে আবার চোখও রাঙাবে। ও কোনো অন্যায় করেনা। বড়মা বললো। তুমি পারবেনা ডাক্তার। কথা বলতে বলতে দাদা ঘরে ঢুকলো। পেছন পেছন বড়মা ছোটমা নিরঞ্জনদা মল্লিকদা। বড়মা ছোটমা আমার মুখের দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে। আমি এগিয়ে গালাম। একসঙ্গে দু’জনকে জড়িয়ে ধরালাম। ছোট তুই এবার রাগ করতে পারবি। ছোট আমার থুতনিটা ধরে একটু নাড়িয়ে দিয়া মাথা নরলো। আমি দুজনকে ধরে নিয়ে এসে খাটে বসালাম। দাদা মল্লিকদা ডাক্তারদা সোফায় নিরঞ্জনদা চেয়ারে। ওরা কেউ খাটে বসলো কেউ চেয়ারে। হ্যাঁরে তুই যে সকাল বেলা ওদেরকে নিয়ে ওখানে গেলি, জানিস জায়গাটা ভালো নয়। ও গল্প আবার তোমাকে কে দিলো। তোর কাকা। কাকাকে জিজ্ঞাসা করোনি কেনো জায়গাটা খারাপ। তা কি করে বলবো। কাকা বলেছে জায়গাটা খারাপ। আমি বলছি জায়গাটা ভালো। প্রমাণ করতে পারবে ভালো কোনটা খারাপ কোনটা। এই তুই আবার তর্ক শুরু করলি। কেনো ওতো ঠিক কথা বলেছে। তুমি যুক্তি দিয়ে উত্তর দাও। দাদা বললো।
আবার সাউকিরি করে। এডিটর তুমি পারবেনা। অনি পারবে। বল বাবা বল একটু শুনি। সকালথেকে অনেক গালমন্দ খেয়েছি। ওই গাছটা চিকনাদের। ওটা ইজমালি গাছ। সেটা আবার কি। সর্বসাধারণের। সে কি করে হয়। খাস জমির ওপর গাছ। তাই সকলের। খাস জমিটা আবার কি। খাস মানে খাস। কারুর নামে জমিটা নেই। তুই জানতিস। হ্যাঁ। না জানার কি আছে। সকলে জানে। চিকনাযে বললো। ও না যেনে বলেছে। ওখানে প্রচুর বিষধর সাপ আছে। সে থাকতে পারে। আমাদের ওই পুকুরেই আছে। আমি তাহলে আর পুকুরে নামছিনা। মিলি বললো। কেনো! যদি কামরায়। ওদেরও ভয় আছে। ওরা ভয় পেলে কামরায়। তুমি ভয় না দেখালেই হলো। মিত্রাকে জোঁকে কামরালো। সেতো ওর জন্য। আমার জন্য। না ? দিলো আমার পিঠে গুঁতো। দেখলে দেখলে। বড়মার দিকে তাকিয়ে বললাম। তুই ওখানে কি করতে গেছিলি। আমি বড়মাকে বলেছি। তোর মতো চেপে যাইনি। বুড়ো বয়সে প্রজাপতি……। সবাই আবার হেসে উঠলো। হ্যাঁরে অনি আজ কাগজটা দেখেছিস। না। তোর কাগজের প্রতি কোনো টান নেই। কাল রাতে দেখেছি। তার মানে। সন্দীপের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। জেনে নিলাম। কি এডিটর উত্তর পেলে। তোমার থেকে অনেক এ্যাডভান্স। মোবাইলটা আবার ম্যাসেজের সিগন্যাল দিলো। মিত্রা ছোঁ-মেরে মোবাইলটা নিয়ে নিলো। ইসলামভাই ছোটমাকে সরিয়ে খাটে উঠে মিত্রার পাশে বসলো। সবাই ওদের দিকে তাকালো। দেবাশীষ হাসছে। ডাক্তারদাদা তোমায় একটা কথা বলবো। বল। তোমায় যদি কিছু চাই দেবে। আমার দেবার কিছু নেই। শুধু ওই বাড়িটা পরে আছে। আমি যা চাইবো চেষ্টা করলে দিতে পারবে। বল একটু শুনি। মিত্রার নার্সিংহোমগুলোর একটু দায়িত্ব নিতে হবে। ডাক্তারদাদা আমার চোখে চোখ রাখলেন। সবাই আমার কথা শুনে নড়ে চড়ে বসলো। ইসলামভাই মিত্রা আমার মোবাইলের ম্যাসেজ গোগ্রাসে গিলছে। ছোটমা আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে।