কফি এলো। খেয়দেয়ে আমরা বেরিয়ে এলাম। নিচে আসতেই ম্যানেজার ভদ্রলোক সব গাড়ির পেছনে উঠিয়ে দিলেন। নষ্ট হয়ে যাবেনাতো ? স্যার আমি এমন ভাবে প্যাক করে দিয়েছি রাত দশটা পর্যন্ত গরম থাকবে। আমি ম্যানেজার ভদ্রলোকের সঙ্গে হাত মেলালাম। রবিবার ফিরছি। আচ্ছা স্যার। আমাকে যদি একটু আগে ফোন করে দেন। আপনার কোনো কার্ড। উনি ছুটে গিয়ে কার্ড নিয়ে এলেন। আমরাও সবাই ওনাকে কার্ড দিলাম। স্যার আপনাদের কাছ থেকে কোনোদিন পয়সা নেওয়া যাবেনা। কেনো!। আমার দোকানটা ওনার কোম্পানী সাজিয়ে দিয়েছে। দেবাশীষের দিকে তাকিয়ে বললো। আমি দেবাশীষের দিকে তাকালাম। দেবাশীষ হাসছে। তোর কাছ থেকে শিখছি। ম্যানেজার ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে বললো। আপনার এই স্পটে যদি আরো বিজ্ঞাপন করা যায় আপনার আপত্তি আছে। একেবারে না স্যার।
সব কটা কার্ড ভালো করে দেখুন। আমার দেখা হয়েগেছে স্যার। আসার দিন জমিয়ে গল্প হবে। আচ্ছা স্যার। নির্মাল্য এইবার ড্রাইভিং সিটে বসলো। আমি বললাম এবার আমি সামনের সিটে বসি, দেবা তুই পেছনে বোস। কেনো। এইবার তোদের পথ দেখাতে দেখাতে নিয়ে যেতে হবে। দারুণ হবে। তুমি পেছনে এসো। অদিতি বললো। দেবা পেছনে এসে অদিতির পাশে বসলো। গাড়ি চলছে। টুক টাক কথা চলছে। কলেজ লাইফের কিছু কথা। ওরা গান করলো। আমি শুনলাম। অনি। কি। তোর কলেজে লাস্ট ফেস্টের কথা মনে আছে। আছে। অনেকদিন তোদের ডুয়েটে শ্রুতি নাটক শুনিনি। মনে করাসনা, বিপদ আছে। সত্যিতো দেবাদা একেবারে মনে ছিলোনা। টিনা বললো। মিলি তুমি ওদের ডুয়েট কোনোদিন দেখেছো। না। ওরা দু’জনে কতো প্রাইজ নিয়ে এসেছে কলেজের জন্য জানো। কলেজ লেভেল কমপিটিসনে। ইয়েস। আমরা ওদের ডুয়েটে শ্রুতিনাটক শুনতে যেতাম। কলেজ থেকে আমাদের ইয়ারের ছাত্র-ছাত্রীরা ছাড়াও অন্য ইয়ারের ছাত্র-ছাত্রীরা যেতে। আমরা হাততালি দেওয়া শুরু করলেই হল ফেটে পরতে হাততালিতে। সেই সব দিন আর ফিরে আসবেনা। আসবেরে দেবাশীষ। আসবে। চেষ্টা করলে অতোটা হয়তো আসবেনা। তবে কিছুটা অবশ্যই আসবে। এবার শোনাতে হবে। টিনা বললো। সময়ের দরকার বুঝলে টিনা। আর মুড। এটা না থাকলে চেষ্টা করলেও হবেনা। ওসব জানিনা শোনাতে হবে। দেখি। নির্মাল্য সামনের যে মোড়টা আসছে ওখান থেকে বাঁদিকে ঘুরবি। আচ্ছা। গাড়ি চলছে। আমরা চুপচাপ। এই মোরটা অনিদা ? হ্যাঁ। দেবা। বল। এই বাঁদিকে যে নার্সিংহোমটা দেখছিস….। হ্যাঁ। ওটা কালকে ট্রান্সফার করলাম। আরি বাবা এতো বিশাল ক্যামপাসরে। হ্যাঁ। সব মিত্রার পয়সা। বলিসকি। ঈশ্বর ওকে সব দিক থেকে মেরেছে। খালি কিছু পয়সা ছিলো বলে এ যাত্রায় বেঁচে গেলো। সত্যি, যা বলেছিস। ওরা জানলা দিয়ে সবাই মুখ বার করে দেখলো। নির্মাল্য। দাদা। এখানের রাস্তাটা ভালোনয় একটু আস্তে চালাস। আচ্ছা। আর একটা কথা বলি মোন দিয়ে শোন। বলো। এখানে মানুষকে ধাক্কাদিলে তোর ফাইন হবে না। কিন্তু ছাগল বা মুরগিকে মারলে তোর জেল পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। সবাই হো হো করে হেসে ফেললো। ছাড়তো তোর গুল। এক বর্ণও মিথ্যে কথা বলছিনা। যেতে যেতে দেখবি। ছাগল গুলো রাস্তার মাঝখানে চলে আসে। হর্ণ মারলে সরে না। তোকে গাড়ি দাঁড় করিয়ে হ্যাট হ্যাট করলে তারপর সরবে। সাবধান। টিনা আমাকে ঠেলা মারলো। দাঁড়াও মিত্রাদিকে গিয়ে বলবো। মিত্রাদি ফেঁসেছিলো, তাই নির্মাল্যকে সাবধান করলাম।
অনি। বল। যেতে যেতে তোর সেই পীরসাহেবের থান শ্মশানটা দেখা যাবে। দেখা যাবে। রাতে যাওয়া যাবে। তুই গেলে আমার নিয়ে যেতে আপত্তি নেই। না তোমাকে যেতে হবেনা। অদিতি বললো। দেখ তোর বউ তোকে আগলাতে শুরু করে দিয়েছে। অনিদা খারাপ হয়ে যাবে বলেদিচ্ছি। টিনা কিছু বলবে। না অনিদা ওর জিনিষ আমি বলতে গিয়ে খারাপ হবো কেনো। দাঁড়া মুখপুরি তোর হচ্ছে। দেখলে অনিদা তুমি বেমক্কা আমাকে গালাগাল খাওয়ালে। মিলি চুপচাপ কেনো বলোতে। মাপছে। মাপা শেষ হলে ডায়লগ ঝারবে। আবার আমাকে চাটতে শুরু করলি। বেশতো অদিতি চলছিলো। নির্মাল্য হর্ণ মার। সামনে একটা ছাগলের বাচ্চা দাঁড়িয়ে সত্যি সত্যি সে সরলোনা। নির্মাল্য গাড়ি থামাতে বাধ্য হলো। আমি নেমে গিয়ে তাকে কোলে তুললাম। চেঁ চেঁ করছে। অদিতির কাছে নিয়ে এসে বললাম একবার হাত দাও দেখতে পাবে। অদিতি হাত দিতেই বাচ্চাটা ছটফট করে উঠলো। দাঁড়াও দাঁড়াও টিনা মোবাইলটা বার করে একটা ছবি নিলো। কিরে শেষপর্যন্ত ছাগলের সঙ্গে অনিদা। মিলি বললো। আমি হাসছি। গাড়ি চলতে শুরু করলো। মিলি। উঁ। কালকে ফ্রন্ট পেজে যদি আমার এই ছবিটা ছাপা হয় আর…….। সরি সরি আর বলবোনা। কেনো তুই খাপ খুলতে গেলি। অদিতি বললো। দূরছাই অতো কি মনে থাকে। আবার হাসির রোল। আমরা চকে এসে দাঁড়ালাম। গাড়িটা নির্মাল্যকে সাইড করতে বললাম। কিরে চা খাবি। এই তোর পরিদার দোকান। হ্যাঁ। আমাদের বসন্ত কেবিন। চারিদিক নিস্তব্ধ। ঝিঁঝিঁ পোকার মৃদু ডাক। পাখির কুহুতান। দুপুর বেলা লোকজন বিশেষ একটা থাকেনা। দু’একজন দাঁড়িয়ে আছে বাসের জন্য। আমাকে নামতে দেখে রবিন পরিদার দোকান থেকে বেরিয়ে এলো। ওরা সবাই গাড়ি থেকে নামলো। দেবাশীষ চারিদিক দেখে বললো। অদিতি কি নির্জন বলোতো। তুমি কোনো আওয়াজ পাচ্ছ। সত্যি ফ্রেস এয়ার। পলিউসন ফ্রি। কি বাবা রবিন। পরিদা আছে। তোমার জন্য বাড়ি থেকে এসেছে। তুমি আসবে শুনেছে। তাই নাকি। আমি সবাইকে নিয়ে পরিদার দোকানে ঢুকলাম। কিরে তুই একা। হ্যাঁ। চিকনাদা ছেড়ে দিয়ে পালালো। ওখানে অনেক কাজ। পরিদা। আয় বাবা আয়। তোর জন্য দুপুরে ঘুমোলামনা। ছেলে কোথায়। সেইতো ছিল। বললোগিয়ে তুই আসবি চলে এলাম। বুঝলে পরিদা অনাদিরা যেমন আমার এখানকার বন্ধু। এরা আমার সব কলেজের বন্ধু। আমি একে একে সবার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলাম। ওরা পরিদাকে হাঁ করে দেখছে। পরিদার সাজ পোষাক দেখে ওরা সক্ড। একটা আট হাতি ধুতি সেন্ডো গেঞ্জি কাঁধে গামছা। গোবেচারা গোবেচারা চেহারা। সেই বাচ্চা মেয়েটাকে দেখলাম। পরিদা ডেকে উঠলো ও বোকনা। টিনা আমার দিকে তাকাচ্ছে। মিলি মুখে রুমাল চাপা দিয়েছে। অদিতি অবাক। আমি ইশারায় বললাম এর ইতিহাস পরে বলবো। টিনা চোখ দিয়ে বোঝাতে চাইলো আবার গল্প। আমি মুখ টিপে হাসছি। পরিদা কিছু খাওয়াও। কি খাবি বল। কি আছে। রসোগোল্লা আর ছানার জিলিপি। দাও। পরিদা দিলো। সেই বাচ্চা মেয়াটা প্লেটে করে এগিয়ে দিলো। মিলি দেখ কি মিষ্টি মেয়েটা। মিলি মেয়েটাকে ডাকলো। এই শোনো। মেয়েটা কিছুতেই আসবেনা। যা না যা। দিদিমনি ডাকতিছন। মিলি আমার দিকে তাকালো। স্টক করো পরে উত্তরদেবো। মেয়েটি কাছে এলো। মিলি ওকে একটা মিষ্টি নিতে বললো। না নিবনি। দাদু বোকবন। মিলি আমার দিকে তাকায়। আমি উত্তরদিলাম। তোমার নাম। আমায় সকলে কচি বলে ডাকে। দাদু খালি বোকনা কয়। মিলির চোখ বড় বড় হয়ে যাচ্ছে। টিনা আমাকে টপকে মেয়েটির পাশে গিয়ে উবু হয়ে বসলো। দুজনে লেগে পরেছে বাচ্চাটার পেছনে। আমি ওদের দিকে তাকিয়ে দেখছি। বুঝলি অনি। সকালে মাসির মিষ্টি খেলাম। আর এই ছানার জিলিপি খেলেম। আকাশ পাতাল তফাৎ। কোনটা বেটার।
জৌলুসের দিক থেকে মাসির মিষ্টি সেরা। কিন্তু টেস্টে পরিদা। পরিদার নিজের হাতে তৈরি। সত্যি। হ্যাঁ। বাড়ির গরুর দুধ থেকে ছানা তৈরি করে করা। তুই চাইলে আর পাবিনা শেষ। না বাবু আজ গরুটা দুধ কম দিছে, তাই বনাইতে পারিনিগো। দেবা আমার দিকে তাকালো। বস আমরা লাকি চ্যাপ। আরো বাকি আছে। এরি মধ্যে কমেন্ট পাশ করিসনা। পরিদা চা দিলো। চায়ে চুমুক দিয়ে টিনা আমার দিকে তাকালো। দেবাশীষ হাতের ইশারায় বুঝিয়ে দিলো এক্সিলেন্ট। সবেতেই একটা গ্রাম গ্রাম গন্ধ। ফোনটা বেজে উঠলো। দেখো মিত্রাদি। ফোনটা পকেট থেকে বারকরলাম। সত্যি তাই। বল। পরিদার দোকান থেকে রসোগোল্লা নিয়ে আসবি। সব শেষ। কি হাগুড়ে তোরা। আমি না, দেবাশীষ আর নির্মাল্য। তুই খালি আমাকে পেটুক বলিস। অভিমানের সুর। এবার থেকে বলবোনা। মনে থাকে যেনো। তোর কথা সবাই শুনছে। শুনুক। আমি এখন হাটে ঢুকছি। কারা কারা আছে। সবাই। বিজয়ের ট্রলি নিয়ে এসেছি। একটু অপেক্ষা কর পৌঁছে যাবো। তাড়াতাড়ি আয়না। আরি বাবা এসেগেছিতো। আয়। দেবাশীষ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। তুই কি করে ট্যাকেল করছিস বলতো। করতে হচ্ছে কি করবো বল। হ্যাটস অফ তোকে। তোর ধৈর্যকে। টিনা মিলি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। জানিস দেবা যতো জারি জুরি আমার কাছে। আমাকে কিছুতেই কাছ ছাড়া করতে চায়না। ইন-সিকিওর ফিল করে। ওর কথাবার্তায় বুঝতে পারছি। খুব সেন্টিমেন্টাল। বুঝে শুনে কথা বলতে হয়। এমনি খুব নর্ম্যাল তুই বুঝতে পারবিনা। হঠাৎ হঠাৎ কেমন যেন হয়ে যায়। সাইকিয়াটিক কোনো ব্যাপার। না। পুরোটাই নার্ভাস সিসটেম। ডাক্তারদাদার কথায়। আমি ওকে তোলা কাপর হিসাবে ব্যবহার করি। স্ট্রেঞ্জ। একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস বেরিয়ে এলো। চল এবার ওঠা যাক। চল। নির্মাল্য। দাদা। এটুকু রাস্তা রবিন চালাক। ঠিক আছে। তুই রাস্তাটা একবার দেখেনে। নির্মাল্য ঘার দোলালো। ফেরার পথে চালাতে হবে। আমার পাশে বোস। চলো। আমরা সবাই উঠে বসলাম। পরিদার পয়সা মেটালো টিনা। আমি হাস্তে হাস্তে বললাম, ব্যাগ ভর্তি পয়সা থাকলেও খরচ করার জায়গা নেই, এটা মনে রাখবে। টিনা হাসছে। রবিনকে বললাম ক্যালভার্টের সামনে গিয়ে একটু দাঁড় করাস। আচ্ছা দাদা। ওরা রাস্তা দেখতে দেখতে আসছে। মাঠে এখন ধান কাটা চলছে। কোনো কোনো খেতে সোনালি ধান এখনো মাথা উঁচু করে রয়েছে। টিনা মিলি অদিতির হাজারো প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে চলেছি। রবিন গাড়ি চালাতে চালাতে হাসছে। আমরা এসে সেই ক্যালভার্টের সামনে দাঁড়ালাম। সবাই নামলো। বিকেলের সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পরেছে। মিষ্টি সূর্যের আলোর ওম নিতে নিতে দেবাশীষ চারিদিক চেয়ে চেয়ে দেখছে। যতদূর চোখ যায়। হাউ বিউটিফুল। মিলি বলে উঠলো। অনি আমি ভীষণ একসাইটেড হয়ে পরছি। তুই মনে কিছু করিসনা। তোদের নিয়ে আসা আমার সার্থক।
আমার এই ছোট্ট কথায় ওরা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকালো। একে একে ওদের পীরবাবার থান, শ্মশান, বুড়োশিবের মন্দির, আমার স্কুল, সব দেখালাম। দূর থেকে যতটুকু দেখা যায়। ছেঁড়া ছেঁড়া গল্পগুলো বললাম। জানো অনিদা তোমার এই গ্রামটা দেখে অপুর কথা মনে পরে যাচ্ছে। দারুন কথা বললেতো টিনা। দেবা বললো। সেই যতোদূর চোখ যায় চোখ ভরে খালি দেখো। অজানাকে জানা অচেনাকে চেনা। ক্লাস টেনে অচেনার আনন্দ পিসটার কথা মনে পরে যাচ্ছে। তাই না। হ্যাঁগো দেবাদা। এতো সবুজ আগে কখনো দেখিনি। চল। আজ সব দেখে ফেললে চারদিন বোর লাগবে। মিলি চুপচাপ। দু’চোখ ভরে গিলছে। মুখে কোনো শব্দ নেই। আমরা সবাই আবার গাড়িতে বসলাম। মিনিট কুড়ির মধ্যে আমরা পৌঁছে গেলাম। গাড়ি বাসুর দোকানের সামনে আসতেই গ্রামের বাচ্চাগুলো হৈ হৈ করে ঘিড়ে ধরলো। ওরা সবাই তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। চিকনা বাসুর দোকানের বারান্দায় বসেছিলো গাড়িটা থামতেই পায়ে পায়ে এগিয়ে এলো। চিকনার পেছন পেছন বাসুও ওর দোকান থেকে বেরিয়ে এলো। আমি গাড়ি থেকে নামতেই চিকনা আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমার মুখে গায়ে হাত বোলাচ্ছে। আমি চিকনার দিকে তাকিয়ে আছি। তোর কিছু হয়নি। ওর চোখ মুখের চেহারা বদলে যাচ্ছে। আবার এই সময়, তোকে কতবার বুঝিয়েছি। বাসু খেঁকিয়ে উঠলো। শুয়োরের বাচ্চাটাকে যদি হাতের কাছে পেতাম মুরগী কাটার মতো কেটে ফেলতাম। ওঃ তোকে বলেছিনা। থাম তুই। আমার গুরুর গায়ে হাত পরলে এসপার ওসপার হয়ে যাবে তুই অনাদি আমাকে আটকাতে পারবিনা। দেবাশীষরা থতমতো খেয়ে গেছে। ওরা সব ভাসা ভাসা জানে। অনাদি ছুটে এলো। আবার পাগলামো শুরু করেছে চিকনা। সরি আপনারা কিছু মনে করবেন না। আমি চিকনাকে জড়িয়ে ধরলাম। বাচ্চাদের মতো ভেউ ভেউ করে আমার বুকে মুখ লুকিয়ে কেঁদে উঠলো। দেবাশীষ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। পাংশু হয়ে গেছে মুখটা। এইতো আমি, তুই কাঁদছিস কেনো, আমি ঠিক আছি, দেখ। গলাটা ধরে এলো। কাঁদতে কাঁদতে বললো, শালা কুত্তার বাচ্চাটাকে আমাকে একবার দেখিয়ে দে। ঠিক আছে তুই শান্ত হ। এইতো আমি তোর সামনে দাঁড়িয়ে আছি। দেখ আমার কিছু হয়নি। আমি ওর মাথায় পিঠে হাত বোলালাম কিছুক্ষণ। চিকনা আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে। দূর থেক দেখলাম মিত্রা ছুটে আসছে। কাছে এসেই বললো চিকনা এবার আমি একটু ধরি। চিকনা চোখ মুছতে মুছতে ফিক করে হেসেফেললো। মিত্রা আমাকে জড়িয়ে ধরলো। চিকনা আমাকে ছাড়লো। তুই ঠিক আছিস। কেনো বেঠিক থাকবো। বাবাঃ যা গেলো। অনাদি চিকনাকে বাসুর দোকানে ধরে নিয়ে গিয়ে বসালো। একবারে এখান থেকে কোথাও যাবিনা। মিত্রাকে দেখে ওরা আশ্বস্ত হলো। টিনা মিত্রাকে জড়িয়ে ধরলো। মিলি মিত্রার গালে গাল ঘোসে দিলো। দেখলাম নীপা ছুটতে ছুটতে আসছে। অনিদা তুমি ঠিক আছোতো। নীচু হয়ে পায়ে হাতদিলো। আমি হাসছি। দেবাশীষ বুঝতে পেরেছে কিছু একটা বড়ো ঘটনা ওখানে ঘটেছে। হঠাৎ মিত্রার গলা পেলাম। ওকে বলিসনিতো। ভালো করেছিস। তোদের সব কটাকে বাঁশঝাড়ে লাইন করে বসিয়ে দিতো। আমি ওদের দিতে তাকালাম। টিনা ফিক করে হেসে ফেললো। তুমি থামো, অনিদা…..। তুই জানিসনা ও কিরকম। তুই কষ্টপাবি ও ……। মিলি মিত্রার মুখটা চেপে ধরলো। আয় আমার সঙ্গে আয়। দেবা চল হাতমুখটা একটু ধুয়ে নে। নির্মাল্য আয়। ওরা মিত্রার পেছন পেছেন চলেগেলো। আমি দেখলাম মিত্রা গট গট করে ওদের নিয়ে হাটের ভিড়ে মিসে গেলো। অনাদি আমার পেশ দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে দেখছে। আমি অনাদির দিকে তাকিয়ে হেসেফেললাম কি দেখছিস। তোর খোমাখানা। কেনো। কতোটা পরিবর্তন হলো। হাসছি। জিনিসগুলো বার করে বাসুর দোকানে রাখ। তোকে চিন্তা করতে হবেনা। সব নিজের ঘারে নিয়ে মুখটার অবস্থা কি করেছিস দেখতে পাচ্ছিস। আমি মাথা নীচু করলাম। ইসলামভাই কোথায় ? উঁ হুঁ ইসলামভাই নয়, মুন্না ভাই। ফিক করে হেসে ফেললাম। বাসু দাঁড়িয় দাঁড়িয়ে হাসছে। হাসছিস কেনো। তোকে দেখে। চল। এই ভড়া হাটে তোর দোকানে ভিড় করা যাবেনা। বক্তব্য ঝাড়িসনা। গাড়ির চারপাশে তখনো বাচ্চাদের ভিড় থিক থিক করছে। রবিন গাড়ির কাঁচ তুলে দিলো। আমি অনাদির সঙ্গে বাসুর দোকানে এলাম। বড়মা এসেছে। পুরো ব্যাটেলিয়ান। ওরা কোথায়। যে যার ইচ্ছে মতো হাটে ঘুরছে। স্যারও এসেছেন। তাই নাকি! হ্যাঁ। দাদা নিয়ে এলেন। ঘরে কে আছে। সুরমাসি। কাকীমা। চিকনা গেলো কোথায় ? আছে এদিকে কোথাও।
আমরা ঢুকতেই বাসু ওর কাজের ছেলেটাকে বললো দরজাটা হাফ ভেজিয়ে দে। সকাল থেকে অনেক বিক্রী করেছিস। ছেলেটি হাসতে হাসতে উঠে গেলো। আমি টুলে বসলাম। এরা মনে হয় তোর বাড়িতে গেলো। হবে হয়তো। ম্যাডামকে এখন সবাই চিনে গেছে অসুবিধে নেই। চা খাবি। খাওয়া। অনাদি গেলো কোথায় ? তুই ব্যস্ত হচ্ছিস কেনো। বাসু ওর ছেলেটিকে বললো যা একটু চা বলে আয়। এদিকের খবর বল। এদিকের খবর আর কি আছে, সব তোর খবর। হাসলাম। হাসিসনা। তোকে মাঝে মাঝে মনে হয় মেরে পাট করে দিই। দে। সে আর পারছি কোথায়। বাইরে চোখ পরলো দেখলাম বড়মা ছোটমা ইসলামভাই ঢুকছে। আমি উঠে দাঁড়ালাম। বাসু আমার আগেই বাইরে বেরিয়ে গেলো। ওরা ঘরে ঢুকলো। আমি এগিয়ে গিয়ে প্রণাম করলাম। বড়মা আমার মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। চোখের কোলে জল টল টল করছে। আমার মুখে হাত বোলাচ্ছে। আমি জড়িয়ে ধরলাম। কি হয়েছে, বলবেতো। বড়মা কোনো কথা বলতে পারছেনা। যন্ত্রণায় মুখটা পাংশু। ছোটমার দিকে তাকালাম। মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ইসলামভাই-এর চোখও ছলছলে। বাসু চেয়ার এগিয়ে দিলো। বড়মা আমার বুকে মুখ লুকিয়েছে। আমি বড়মার মুখটা তুলে বললাম, আমার কিছু হয়নি। তোর মুখটা দেখেছিস। গলাটা ধরে এলো। ঠিক আছে বোসো। হৈ হৈ করে দেবারা এসে বাসুর দোকানে ঢুকলো। ঘর ভরে গেলো। পেছন পেছন চিকনা। হাতে পাটালি আর ছোলা সেদ্ধ। ওমা বড়মা তুমি এখানে। টিনা চোখ পাকিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো। ঝপা ঝপ সবাই বড়মার পায়ে লুটিয়ে পরলো। কিগো চোখ ছল ছল কেনো! অনিদার কিছু হয়নি। চোখ মোছো। টিনা বড়মার কাপরের খোঁট দিয়ে চোখ মোছালো। ইসলামভাইকে ওরা দেখেনি। একটু ইতস্ততঃ করছিলো। মিত্রা পরিচয় করিয়ে দিলো। দেবা জড়িয়ে ধরলো ইসলামভাইকে। জানো দাদা তোমার কতো গল্প শুনেছি ওর মুখে। আমার বন্ধুটা ভীষণ স্বার্থপর। একটু একটু করে ছারে। কিছুতেই পুরোটা দেবেনা। তবু তোমাদের কিছু দেয়, আমাকে কিছুই দেয়না। আমি মাথা নীচু করে হাসছি। কিরে মাসিকে ফোন করেছিস। মিত্রা বললো। সময় পেলাম কোথায়। আমি জানিয়ে দিয়েছি। ইসলামভাই বললো। অনিদা তোমার সঙ্গে ঝগড়া করবো। অদিতি বললো। কেনো। নীপা এই সব জানলো কি করে। নীপা ঘরের এককোনে দাঁড়িয়ে মিটি মিটি হাসছে। ওকে জিজ্ঞাসা করো। বড়মার গালটা নেড়ে মিলি বললো। বড়মা তুমি বলো এটা ঠিক। ছোটমা মুখে কাপর চাপা দিয়েছে। কি বলবিতো। ওই সব কথা। ওতো মিত্রা গল্প করেছে সবার কাছে। কিগো বড়মা! ছেলেকে বাঁচাতে…..। মিত্রা এমন চোখ বড়ো বড়ো করে বললো। সবাই হো হো করে হেসে ফেললো। মার ধরে ওকে। শয়তানি। আসা মাত্রই হাত করে নিয়েছে। সবাই হাসছে। দূরে দাঁড়িয়ে দেবাশীষ তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করছে ব্যাপারটা। চিকনা। ম্যাডাম। তুমি তোমার গুরুর জন্য খালি নিয়ে এসেছো। নীপা পয়সা দেয়নি। সবাই নীপার দিকে তাকিয়ে হো হো করে হেসে ফেললো। বাসুর মুখ থেকে বেরিয়ে এলো। ছাগল। তুই ছাগল বললি। কতোবার চাইলাম। বলেকিনা বাজে খরচ হবেনা। চিকনাদা। নীপা ধমকে উঠলো। দেখেছিস। তুই যেমন কিপ্টা। তোর ক্যাশিয়ারও কিপ্টা। হাত থেকে জল গলবেনা। মিত্রাদি। থাম তুই। এই ঘরের কেউ আর গম্ভীর নেই। আমি বাসুকে আস্তে করে বললাম দরজাটা বন্ধ করেদে। তোর খরিদ্দাররা শুনলে কি বলবে। তোমায় ফিস ফিস করে কি বলছেগো বাসু। মিত্রা ধমকে উঠলো। কিছুনা। জানো বড়মা ওদের গাড়ি থেকে নামতে দেয়নি। সেই আমাদের কেশ। মিত্রাদি চুপ চুপ। টিনা বললো। তোর সব গুণের কথা বলবো এদের, তুই এতদিন ওদের বলেছিস। তাই নাকি। মিলি কাছে এগিয়ে এলো। কাঁধ নাচিয়ে ভুরু কাঁপিয়ে বললো, কিগো অনিদা, বলেছিলাম না, দলটা আগে ভারি করি, সব উসুল করে নেবো। আমার মুরগীর ঠ্যাং কোথায় বল। মিত্রা কোমরে কাপর জড়িয়ে তেরে এলো। দেবা আমাকে এদের হাত থেকে বাঁচা। দেবা এলে দেবাকে উড়িয়ে দেবো ও ছাগলটা কি করবে। মিত্রাদি। অদিতি চেঁচিয়ে উঠলো। চুপ কর। তুই এখন আমাদের দলে। দেবা হাসতে হাসতে বললো। মিত্রা গাড়ির পেছনে আছে। নিয়ে আয়। চিকনা। যাতো একটু। আমি বললাম। চিকনা বেরিয়ে গেলো। কিছুক্ষণ পর তিনজনে একসঙ্গে ঢুকলো দেখলাম পাঁচু পচা এসেছে। ইসলামভাই নিজের জিনিস চিন্তে পেরেছে। এটা আমার। হ্যাঁ তোমার। তোমার সঙ্গে অনেক হিসেব আছে। সে তুই করিস। তবে লাভ নেই। গেম তোর হাতের বাইরে। ওঃ কি ভারিগো ইসলামভাই। চিকনা বললো। আমি হাসছি। ওদিকে মারা মারি লেগে গেছে। অনাদি ওই ভিড়ে হারিয়ে গেছে। ও অনি আমাকে বাঁচা, এরা আমাকে শুদ্ধু খেয়ে ফেলবে। কি এনেছিস। বড়মা বললো।
মিষ্টির পেটি আর আলু পরটা। মিত্রা ছুটে এলো। হাঁ করো। হাঁ করো। কি বলবিতো। বড়মা বললো। উঃ হাঁ করোনা। বড়মা হাঁ করলো। মিত্রা নলেন গুড়ের কাঁচা সন্দেশ বড়মার মুখে গুঁজে দিলো। তারপর ছোটমা তারপর ইসলামভাই শেষে নিজের মুখে কিছুটা ঢুকিয়ে বললো, কেমন বলো। বড়মা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, কোথা থেকে আনলি। ও আনবে কিগো। সকালবেলা মাসিকে ফোন করেছিলাম। মাসি পাঠিয়েছে। দামিনী সকালে এসেছিলো! আমি মাথা দোলালাম। ওকে দিলি না। সকাল থেকে অনেক খেয়েছে। এবার আমরা খাবো। দেখলাম কাকা নিরঞ্জনদা মল্লিকদা ডাক্তারদাদা দাদা একসঙ্গে বাসুর দোকানে ঢুকলো। আরি বাবা, ডাক্তার দেখো এখানে হাট বসে গেছে। আমি উঠে গিয়ে সকলকে প্রণাম করলাম। কিরে কাগজের খবর কি। দেখছো, দেখছো, মরন। ছেলেটা এখনো বাড়ির চৌকাঠে পা দেয়নি ওর কাগজের খবর জানতে হবে। বড়মা চিবিয়ে চিবিয়ে বললো। ইসলামভাই শেরওয়ানীর ওর্নাটা মুখে চাপা দিয়েছে। তুমি কাগজ পরোনি। পরেছি। বেশ করেছে সন্দীপ। কখন এলি। এইতো আধঘন্টা। ঘরে আর বসার জায়গা নেই। বাসু পাশের দোকান থেকে চেয়ার নিয়ে এলো। ওরা সবাই বসলো। বুঝলে বড়ো, ডাক্তার হাট শুদ্ধু কিনে নিলে। বেশ করেছে। খেতেপায়না ওখানে, কি করবে। এটা ঠিক কথানয় বান্ধবী। আমি হাসছি। মল্লিকদার দিকে তাকালাম। গম্ভীর থাকার চেষ্টা করছে। মিত্রা মিষ্টি এনে সকলের হাতে দিলো। এটা কিরে মামনি। ডাক্তারদাদা বললো। খাওনা। মাসি পাঠিয়েছে। ডাক্তারদাদা মুখে তুলেই বললো এ নিশ্চই উত্তর কোলকাতার। না হলে এরকম স্বাদ আসবেই না। যত্তো সব। বড়মা বললো। যাই বলো বান্ধবী কাঁচা সন্দেশটা নলেন গুড়ে বেশ ভালো পাক দিয়েছে। খাওতো ডাক্তার, আর বক বক করোনা। কাল থেকে খালি খাই খাই। তুমি খাওনি। আমি যা যা বলে কয়ে সুরকে দিয়ে রাঁধিয়েছি তুমিও খেয়েছো। তখনতো না বলোনি। এইবার পেঁচে পরেছে। দাদা বললো। শুঁরির স্বাক্ষী মাতাল। বড়মা চিবিয়ে চিবিয়ে বললো। আমি আর থাকতে না পেরে হো হো করে হেসে ফেললাম। আমার হাসির আওয়াজে মিত্রারা ফিরে তাকালো। কি হলোরে। তরজা গান শুনছি। দেখো বান্ধবী, ওরাও খাচ্ছে। এরজন্যই বেঁচে থাকা। নার্ভগুলোকে খাবার দিতে হবেতো। এই ডাক্তারী শুরু করলে। মল্লিকদা ছোটমা মাথা নীচু করে মিটি মিটি হাসছে। মামনি। মিত্রা ফিরে তাকালো। আর কিছু দিবিনা। আলুপরটা মুরগীর ঠ্যাং, খাবে। নিয়ে আয় নিয়ে আয়। বিকেলের টিফিটনটা সেরে নিই। ভালোই হবে। দাদা।
হলে খারাপ হয়না। সব এক গোয়ালের গরু। কিগো এডিটর বান্ধবী শেষপর্যন্ত গরু বানিয়েদিলে। কাকা এককোনে চুপচাপ বসে সব দেখছে। মিটি মিটি হাসছে। ওরা এরি মধ্যে সব জোগাড় করে নিয়েছে। প্লেটে প্লেটে সবাইকে দিলো। টিনা মিলি অদিতি এগিয়ে এগিয়ে দিচ্ছে। ওমা এরাও এসেছে দেখছি। ডাক্তারদাদা হাসতে হাসতে বললো। টিনারাও মিটি মিটি হাসছে। বড়মাকে এনে দিলো। বড়মা নিলো। ছোটমাও খাচ্ছে। ডাক্তার আবার বড়মার দিকে তাকিয়ে হাসলো। এডিটর। বলো। আমরা তাহলে সকলেই গরু। এতো তুমি অনির মতো কথা বলছো। কেনো। ভীষণ চালাক। সুযোগের অপেক্ষা করে। কিরে তুই খাবি। মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো। আমি না বললাম। বাঁচা গেলো। তোর ভাগেরটা আমি খাবো। সকলের মুখ চলছে। তুইকি অর্ডার দিয়ে বানিয়ে নিয়ে এসেছিস। ইসলামভাই বললো। না। সেদিনের থেকে প্রিপারেসনটা বেশ ভালো করেছে। চিকনা আমার পাটালি। ম্যাডাম খেয়ে নিয়েছে। দেখলাম চিকনা একটা মুরগীর ঠ্যাং চিবোচ্ছে। বাসুও খাচ্ছে। মিত্রা একটা প্লেটে করে হাফ আলুর পরটা আর তড়কা নিয়ে এলো। একটু খা। ভালো লাগছে না। একটু। ওর বলার ঢঙে হেসেফেললাম। অনিবাবু আমার বউ আমাকে এরকম করে কোনোদিন সাধেনি। ডাক্তারদাদা খেতে খেতে খুব গম্ভীর ভাবে বললো। আ মরন বিয়ে করলে কবে। যে বউ হবে। ইস সব কেঁচিয়ে দিলোগো এডিটর। যত্তোসব মস্করা।
আমি আর থাকতে পারলাম না হো হো করে হেসে ফেললাম। ইসলামভাইও হো হো করে হাসছে। ঘরটা গম গম করে উঠলো। দেবারা এবার ওপাশ থেকে সবাই এপাশে এসে আমাদের ঘিরে ধরলো। টিনা ইশারায় জিজ্ঞাসা করছে। কি হয়েছেগো অনিদা। আমি ইশারাতেই ওকে বললাম দাঁড়াও দেখতে পাবে। আচ্ছা এডিটর বান্ধবী কি তোমায় এখনো ভালোবাসে। তোমার জেনে দরকার। বড়মা খেঁক খেঁক করে উঠলো। দাদা ফিক করে হেসে ফেললো। উত্তর পেলে। আমি নিরঞ্জনদার দিকে তাকালাম। কি অনিবাবু তুমি সভাধিপতির দিকে তাকাচ্ছ কেনো। এমনি। ওর সরকার যেমন ও ঠিক তেমনি তার সাগরেদ। সরি সামন্তদা আর কোনোদিন হবেনা। আরে রাখো তোমার হবেনা। মেরে পোস্টমর্টেম করে পুরিয়ে দিলে। আর হবেনা। এইযে অনিরা আনলো। তুমি খাওয়াতে পারতে না। আপনিতো খেতে চাইলেন না। কোথায়হে। বুড়ো হয়েছি দুদিন পরে মরে যাবো। তুমি কি নাখাইয়ে মারতে চাও। মল্লিক এটা কি হচ্ছে। আমাকে দলে ভেরাচ্ছ কেনো। তোমায় জিজ্ঞাসা করেছে তুমি উত্তরদাও। হ্যাঁরে মামনি মিষ্টি আর নেই। আছে। রসোগোল্লা। খাবে ? নিয়ে আয় নিয়ে আয়, কেউ খাক আর না খাক, তুই আমি খাই। কিছুক্ষণ আগে একপেট ভাত খেয়ে এলে। ভাত কি কম খেয়েছিলে। বড়মা আবার একিভাবে কথা বললো। টিনারা আর থাকতে পারলোনা এবার হো হো করে হেসে ফেললো। পাঁচু পাটালি আর ছোলা সেদ্ধ নিয়ে এসে আমার হাতে দিলো। এটা কিরে অনি। পাটালি। হাটে ঢুকেই মামনি খাওয়ালো। বেশ খেতে তোর থেকে একটু দে। আ দেখ কিরকম আদেখলা পানা করে। বড়মা বললো। অনি আমাকেও একটু দিস। দাদা বললো। ও পাঁচু, হাটে যতো পাটালি আছে নিয়ে আয়তো বাবা। আজ রাতে পাটালি খাইয়ে রাখবো। আমি বড়মাকে জাপ্টে ধরে বললাম তুমি এরকম করছো কেনো। তুই জানিস না। আজ সকাল থেকে পেসেন্ট দেখছে আর বলছে এই শাকটা নিয়ে আয় ওই শাকটা নিয়ে আয়। ডাক্তার আর তোর দাদা দশরকম শাক ভাজা খেয়েছে। জানো বান্ধবী কলকাতায় পয়সা দিলেও তুমি খুঁজে পাবেনা। তা বলে এরকম হ্যাংলামো। ইস ছি ছি ছি এডিটর বান্ধবী আর প্রেসটিজটা রাখবেনা। সবাই হাসতে হাসতে এ ওর গায়ে ঢলে পরছে।
হ্যাঁগো বান্ধবী পাটালি আনতে বললে, অনির নাকি জিলিপি খুব ফেভারিট, কয়েকটা আনতে দাও না। না। আর হবেনা। নীপা মা। নীপা হাসতে হাসতে এগিয়ে এলো। কি বলো। এই পকেটে হাত ঢোকা। কেনো বলোনা। হাত ঢোকানা। তুমি বলো। হাটে ঢুকতেই যে ছেলেটা বসে আছে। ওর জিলিপি গুলো বেশ কড়া। তুই আমার অনি এডিটর আর তোর জন্য নিয়ে আয়। গোনাগুন্তি দুটো করে। আমরা কি বানের জলে ভেসে এসেছি। বড়মা চেঁচিয়ে উঠলো। ও এডিটর শুনলে কথা। তুমি শোনো, আমি তিরিশ বছর ধরে শুনছি। সবাই হাসছে। টিনা এসে ডাক্তারের পায়ের কাছে বসলো। তুই আবার এখানে কেনো। দাঁড়াও তোমার আর বড়মার কথাগুলো মুখস্থ করি। পারবিনা। চেষ্টাতো করি। পাঁচু জিলিপির ঠোঙানিয়ে ঢুকলো। দে দে বাবা আগে অনিকে দিয়ে বউনি কর। আমি একটা তুলে নিলাম। টিনা উঠে দাঁড়িয়ে সকলকে ভাগ করে দিলো। মিত্রার দিকে তাকালাম। ও এখনো একটা ঠ্যাং চিবোচ্ছে। কিরে তোর এখনো শেষ হয়নি। তুই তাকাচ্ছিস কেনো এদিকে। জানো মিত্রাদি অনিদা ধাবায় পয়সা দেয়নি। মিলি বললো। তারমানে! ফোঁকটে। ইসলামভাই হো হো করে হেসে ফেললো। তুই একটু ধুলোদিস তোর কাছ থেকে শিখতে হবে। আরে আমি না নিরঞ্জনদা…..। সবাই নিরঞ্জনদার দিকে তাকালো। বুঝলে এডিটর পার্টিটা এই করেই গেলো। না এবার আমি উঠি। নিরঞ্জনদা বললো। আরে ভায়া উঠে যাবে কোথায়। তিনকুড়ি নয় বয়স হয়ে গেলো। নাও এবার উঠে পরো। অনেক বাজার করেছো। রান্না করতে হবে। পথও কম নয়। বাসু বাবা একটু জল হবে। বড়ো নোংরা করে খাই। হাতটা একটু ধোবো। অনাদি জলের মগটা এগিয়ে দিলো। ডাক্তারদাদা বাইরে গিয়ে হাত ধুলো। বড়মা আমার দিকে তাকালো। তুই চল। যাচ্ছি তোমরা যাও। কেনো একসঙ্গে চল। তোমরা যাওনা। পরে যাচ্ছি। ইসলামভাই তুমি একটু থেকো। আবার শলা পরামর্শ, দাঁড়া আমি দামিনীকে ফোন করছি। তুই যেমন বুনো ওল ও তেমনি বাঘা তেঁতুল। সবাই হো হো করে হেসে ফেললো। ওরা এগিয়ে গেলো। বাইরে উঁকি দিয়ে দেখলাম সন্ধ্যা নেমে এসেছে। বাসু ঘরের লাইট জাললো। ধুপ দিলো। চিকনা এবার একটু চা বল। ঘন্টা দুয়েক কোথা থেকে যে চলে গেলো। ডাক্তারদাদা কাকা কাকীদের দেখেছে। দেখেছে মানে অর্ধেক রোগ সেরে গেছে। যাঃ। হ্যাঁরে অনি বিশ্বাস কর। সুবলকাকার মুখ দেখে বললো, মাঠেঘাটে অনেক কাজ করেছেন। হাতটার এখানে বেদনা হয়। কাকা হ্যাঁ বললো। ঘরে গরু আছে। গ্রামের ঘরে কারনা গরুথাকে বল। কাকা হ্যাঁ বললো। দিনে একলিটার করে দুধ খাবেন। আর পাঁচ রকমের শাকের নাম বললো। বেশ ওষুধ দেওয়া হয়ে গেলো। আমি বাসুর দিকে তাকিয়ে আছি। আর একটা ওষুধ দিলো। এখানে পেলাম না আমাদের সুধীন ফার্মাসিস্টকে দিয়েছি, বলেছে এনে দেবে। আমাকে একটা ফোন করতে পারতিস। দুর তুই ছাড়তো। সত্যি অনি দেখলে বোঝা যায়না। হরেকৃষ্ণদা ডাক্তারদাদার সঙ্গে দেখা হতে প্রণাম করলো। বললো সাত মাস পরে এ্যাপয়েন্টমেন্ট পেয়েছিলো। একহাজার টাকা ভিজিট। হাতটা শরু হয়ে গেছিলো। এখন ঠিক হয়ে গেছে। আমাদের কানা সামন্ততো সাষ্টাঙ্গে প্রণাম সারলো। কাল যাবে বলেছে। অনাদি বললো। ইসলামভাই-এর দিকে তাকিয়ে বললাম একটা সিগারেট খাওয়াবে। চিকনা পকেট থেকে সঙ্গে সঙ্গে সিগারেট বার করলো। কিরে সেই প্যাকেটটা। না। বস আর এক প্যাকেট দিয়েছে। বাইরের কেউ এলে সিগারেট। না হলে বিড়ি। আমি হাসলাম। সিগারেট ধরিয়ে ইসলামভাইকে বললাম এদিকের খবর। সব ঠিক আছে কাজ সারতে সারতে একটা বাজলো। তারপর খেয়ে দেয়ে এখানে চলে এলাম। আমি জায়গাটা এখনো দেখিনি।
তুই দেখিসনি! বিশ্বাস করো। দেখো কান্ড, যার জন্য এতোসব, সেইই এখনো দেখেনি। চল চল দেখবি চল। দাঁড়াও সিগারেটটা খেয়ে নিই। অনি। আমি অনাদির দিকে তাকালাম। একটু কাজ সেরে নিয়ে ডাইরেক্ট তোর বাড়ি চলে যাচ্ছি। আচ্ছা আয়। চিকনা চল। চিকনা উঠে দাঁড়ালো। বাসুকে জিজ্ঞাসা করলাম তুই কখন যাবি। তোর ওখানে নেমন্তন্ন, সপরিবারে। সবার। হ্যাঁ। সেই জন্য অনাদি দৌড়লো। না গেলে বৌ খেদাবেনা। আমি হাসলাম। আমি ইসলামভাই যাবো কি করে। তোকে চিন্তা করতে হবেনা। ইসলামভাই-এর বাহন আছে। চিকনারটা ? না ইসলামভাই কিনে নিয়েছে। আমি ইসলামভাই-এর দিকে তাকালাম। কি করবো বল। তুই এখানে যেভাবে তাস সাজাচ্ছিস, ঘনো ঘনো এখানে আস্তে হবে। কাঁহাতক হাঁটি বল। নীপার নামে কিনেছি। আমি না থাকলে নীপা চালাবে। নীপা চালাতে পারে। একটু একটু শিখেছে। সত্যি তুমি পারো। তোর জন্য নাক যখন কেটেছি একটু ভালো করেই কাটি। বাসু উঠিরে, এখানে আর আসবোনা। লতাকে নিয়ে চলে আয়। যা যাচ্ছি। আমি আর ইসলামভাই বেরিয়ে এলাম। গাড়ি কোথায় রেখেছো। সামনে সঞ্জুর দোকানে। সত্যিতো সঞ্জুকে দেখতে পেলামনা। দেখবি কি করে তোর ওখানে ব্যস্ত। কি করছে। এদের জন্য দুটো ঘর রেডি হলো। লাইট লাগাচ্ছে। সত্যি তোর বন্ধুগুলো দারুন। তোমার জন্য একটা সুখবর আছে। কিরে! চলো বলছি। ব্যাঙ্কের টাকা তুমি দিলে। হ্যাঁ। এ্যাকাউন্ট হয়েছে। হ্যাঁ। সাতজনের করিয়েছি। একটা করে সেভিংস। আর ডিডে যে নামটা তুই রেজিস্ট্রেসন করিয়েছিস সেই নামে একটা কারেন্ট এ্যাকাউন্ট। কত টাকা জমা দিলে। দাদা মল্লিকদা বড়দি দিদি চেক দিয়েছে দু’লাখ করে নিরঞ্জনদা মামনি আর আমার এ্যাকাউন্টে আমি ক্যাশ দিয়েছি। আর কো-অপারেটিভের এ্যাকাউন্টে তিরিশ জমা দিয়ে দিয়েছি। সব শেষ করে দিয়েছো। আজতো রতন আবার পাঠালো। সেতো দেখলাম। তোকে ভাবতে হবেনা। পায়ে পায়ে দুজনে জমিটায় এসে দাঁড়ালাম। একেবারে বাজারের মুখে। বেশ ভালো স্পট। এখানটা একটু অন্ধকার অন্ধকার। বুঝতে পারছি এইবার বাজারটা এই পর্যন্ত এগিয়ে আসবে। অনাদিকে বলেছি কাল থেকে কাজ শুরু করে দিতে। অনেক টাকা লাগবে। তুই এটা নিয়ে ভাবিসনা। আমার ওপর ছেড়ে দে। তোমায় যে আরো বড়ো কাজ করতে হবে। তুইতো এখনো বললিনা। অনিমেষদার কাছে গেছিলাম। শুনলাম। তোমার সঙ্গে অনিমেষদা বসতে চেয়েছে। সত্যি! নিমেষের মধ্যে ইসলামভাই আমাকে কোলে তুলে নিলো। আরে ছাড়ো ছাড়ো। করছো কি। আমি শূন্যে উঠে গেলাম। পরে যাবো। ইসলামভাই কয়েকপাক ঘুরে আমাকে নিচে নামিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলো। আমি ইসলামভাই-এর বুকের মধ্যে পায়রার মতো হাঁপাচ্ছি। বিশ্বাস কর অনি। ভদ্রলোকের সঙ্গে বসার জন্য কতো চেষ্টা করেছি। কেউ পাত্তাদেয়নি। তুই আমার সাধটা পূরণ করলি। সাধ পূরণ নয় তোমাকে একটা দায়িত্ব দেবে। বল তুই। যে করেই হোক আমি কাজটা করবো। আমাকে ওই ভদ্রলোকের মন জিততেই হবে। এই ডিস্ট্রিক্টে মাস দুয়েকের মধ্যে পাঁচটা সিটে বাই-ইলেকসন। সিটগুলো বার করতে হবে। আমাকে আড়ালে ডেকে বলেছে। নিরঞ্জনদা জানে না। সেটা শুনলাম নিরঞ্জনদার মুখে। তোর সঙ্গে আলাদা কথা বলেছে। নিরঞ্জনদা এখন তোকে ভীষণ ভয় পাচ্ছে। কেনো।
তোর সঙ্গে অনিমেষদার রিলেসন দেখে। ভয় পাওয়ার কি আছে। ওতো অনেক গজব করে রেখেছে। সেটা অনিমেষদা জানে। নিজেকে শোধরাবে নাহলে মরবে। বড়দি বলেছে এরপর আর অনিকে তোর জন্য বলতে পারবোনা। নিরঞ্জনদা স্বীকার করে নিয়েছে। এ যাত্রায় নিরঞ্জনদা বেঁচে যাবে। এটাই যথেষ্ট। কজন করে। ডাক্তার ব্যানার্জী এখন কেমন আছে। ইসলামভাই আমার চোখে চোখ রাখলো। কেউ যেনো ইসলামভাই-এর গালে কোষে একটা থাপ্পর মারলো। ফিক করে হেসে ফললো। গিভ এন্ড টেক পলিসি। না। তুই আমার পেট থেকে কথা বার করতে পারবিনা। তাহলে আমার সোর্স কাজে লাগাতে হবে। লাগাতে পারিস। কাজ হবেনা। ওকে আমার দরকার। যখনি বলবি তোর কাছে হাজির করেদেবো। টোডি ? মামনিকে প্রমিস করেছি ও আর থাকবে না। বাহাত্তর ঘন্টার মধ্যে কাজ হয়ে যাবে। ভুল করলে। কেনো। ওকে দিয়ে অনেক কাজ করানো বাকি আছে। আর দরকার নেই। এখন যে কাজে হাত দিয়েছিস মন দিয়ে কর। আমি ইসলামভাই-এর দিকে তাকালাম। বোঝার চেষ্টা করলাম। তুমি সব জানো। দামিনী কাল ফোনে সব বলেছে। কাল সারারাত মাসি ঘুমোয়নি কেনো ? মামনির সঙ্গে কথা বলেছে। কখন! তোর সঙ্গে কথা বলার পর। মিত্রার শরীরের ব্যাপারটা মাসি জানে। জানতোনা। আমি বলেছি। দামিনী খালি কাঁদছে। আমি ফিরে যাই। ছোটমার ব্যাপার। বলেছি। কি বললো। তুই খুব ভাগ্যবান। আমার কপালে ঘর সংসার কিছুই জুটলনা, তোর তবু কিছুটা হলো। মাসিকে এখানে নিয়ে আসা যাবে। আর একটু সময়নে। মাসি কষ্ট পাচ্ছিলো। জানি। তবু তুই নিজেকে অনেক ভেঙ্গেছিস। আমি সব বুঝি। তাই তোমার সঙ্গে কথা বলছি। ইসলামভাই চুপ করে রইলো। দাঁড়াও অনিমেষদাকে একটা ফোন করি। এখন! হ্যাঁ। পকেট থেকে মোবাইলটা বার করে ডায়াল করলাম। হ্যালো। দাদা আমি অনি। ভালো করেছিস ফোন করে। তোর নম্বরটা আমার কাছে নেই। এখুনি সুরোকে ফোন করে তোর নম্বর চাইলাম। কেনো দাদা। তুই আমাকে বাঁচতে দিবিনা। আবার কি অন্যায় করলাম। ডাক্তারটাকে গুম করে রেখেছিস কেনো। আমি করলাম কোথায় ? ওই হলো। তুইতো আমার থেকে ক্ষমতাবান। অন্যায় হয়েছে। ওই ভদ্রমহিলার সঙ্গেও একটু বসবো। কেনো। সে তোকে জানতে হবেনা। তুই ডাক্তারকে ছেড়েদে। আমাকে আমার সংসারটা চালাতে হবেতো। যদি গন্ডগোল করে। আমার দায়িত্ব। তুই ওর নামে যা খুশি লেখ। তাতে যদি ওর ক্ষতি হয় হোক আমি বলতে যাবোনা। আমারতো এই মুহূর্তে বলার কিছু নেই। ঠিক আছে। ছেড়ে দিয়ে খবর দেবো। তাই দিস। আর একটা কথা আছে। বল।
হাতের সামনে ডাইরীটা আছে। কেনোরে। আগামী রবিবারের পরের রবিবার সাতটার পর থেকে আমার বাড়িতে সময় দিতে হবে। কেনো। নেমন্তন্ন। কিসের। সুরঞ্জনা সেদিন জমপেশ করে সাজবে বললো। হো হো হো করে অনিমেষদা হেসে ফেললো। তাহলে তুই বিয়ে করেছিস বল। করিনি করবো। আমি সোমবার বিকেলে যাবো। আমি থাকতে পারবোনা। বৌদি আর সুরো থাকলেই হবে। তুই তোর বৌদিকে ফোন করে বলেদে। আচ্ছা। আমার কাজ কতদূর এগোলো। জায়গা গুলোর নাম একটু বলো। দাদা পর পর নামগুলো বলে গেলো। নিরঞ্জনকে বলার দরকার নেই। আচ্ছা। শোন তোর সঙ্গে পরে কথা বলবো। হাতের কাজগুলো একটু সারি। আচ্ছা। রেকর্ডিংটা সেভ করলাম। ইসলামভাই-এর দিকে তাকালাম। ইসলামভাই হাসতে হাসতে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। তুই কি সুন্দর না বলেও আমার কথাটা প্রেজেন্ট করলি। এবার কি করবে। দামিনীকে একটা ফোন কর। আমি করবোনা তুমি কর। কেনো! আমার বলাটা ঠিক হবে। মাসি অন্য কিছু মনে করতে পারে। কিচ্ছু মনে করবেনা। তুমি ফোন করোনা তারপর আমি কথা বলেনেবো। ইসলামভাই ফোন করলো। অনি কেমন আছেরে। ভালো, এখনো বাড়ি ঢোকেনি। আমরা দু’জন সেই জায়গাটায় বসে আছি। সকাল থেকে ছেলাটা স্নান-খাওয়া কিছু করেনি। বাড়িতে গিয়ে করবে। দে ওকে। তোমার কথা শুনতে পাচ্ছে। কিরে। বলো। ফোন করলিনা। সবার ঝামেলা সামলাতেই সময় কেটে গেলো। ইসলাম বলছিলো। মাসি। কি হয়েছেরে। তোর গলাটা কেমন কেমন শোনাচ্ছে। কিছু হয়নি। তোমাকে একটা কথা বলবো। ওখানে কিছু হয়েছে। না। তাহলে! অনিমেষদাকে ফোন করেছিলাম একটু আগে। ডাক্তারকে ছেড়ে দিতে বলছে। তুমি জানলে কি করে। সে তোকে জানতে হবেনা। ওরা দায়িত্ব নেবে। অনিমেষদা নিজে দায়িত্ব নেবে বলেছে। ইসলামকে দে। আমার কথা শোনা বন্ধ কর। আমি ইসলামভাই-এর হাতে মোবাইলটা দিলাম। ইসলামভাই আমার পাশ থেকে উঠে দূরে চলে গেলো। অনেকক্ষণ দামিনীমাসির সঙ্গে কথা হলো। তারপর ধীরলয়ে হাঁটতে হাঁটতে আমার কাছে এগিয়ে এলো। খালি কানে টুকরো টুকরো কথা ভেসে এলো। তোমাকে ও মাসি বলে ডাকে। তুমি কষ্ট পেলে ও কষ্ট পাবে। তুমি চাও ও কষ্ট পাক। তাহলে। আমি উঠে দাঁড়ালাম। ইসলামভাই কেছে এগিয়ে এলো। ধর কাঁদছে কিছুতেই বুঝবেনা। কি হলো মাসি, কাঁদছো কেনো। কই কাঁদছি ইসলাম মিছে কথা বলছে। তোকে সব সময় কাছে কাছে থাকতে হবে। তোর কোথাও যাওয়া চলবেনা। ইসলামভই বললো। ঠিক আছে আমি কাল চলে যাবো। না। তোকে আসতে হবেনা। তুমি এরকম করলে চলে কি করে বলো। মন মানে না। তুমিইতো সকালবেলা আমাকে এতো বোঝালে। তোকে বুঝিয়েছি নিজের মনকে বোঝাতে পারছিনা। তোমরা সবাই যদি এরকম অবুঝপনা করো সামলাবো কি করে। আর করবোনা। তোমার মিষ্টি এখানে সকলে খেয়েছে। সবাই খুব আনন্দ করেছে। আমি সব শুনেছি। ইসলামভাই শুনিয়েছে। হ্যাঁ। ডাক্তারের ভাষণ কেমন লাগলো। বড্ড অমায়িক। তোমার মিষ্টি মুখে দিয়েই বলেছে উত্তর কলকাতার। উনিতো অনেকদিন উত্তর কলকাতায় চেম্বার করেছেন। তুমি আমার থেকে বেশি জানবে। আমি মিত্রার শরীর খারাপ হতে জানলাম। তারপর জানলাম দাদার বুজুম ফ্রেন্ড। তুই রোববার কখন আসবি। খেয়ে দেয়ে বেরোবো। বিকেল বিকেল পৌঁছে যাবো। আচ্ছা। এখন ঘরে যা। তুমি কিন্তু কাঁদবেনা। আচ্ছা। রাখছি। আচ্ছা। কি করি বলোতো ইসলামভাই। কি করবি তোর কলকাতা ছেড়ে কোথাও যাওয়া হবেনা। মাত্র দুদিন এখানে ছিলিনা। বড়দির মুখ ভার দিদির মুখ ভার। তুই ওদিকে ওইসব করছিস। শুনে চিকনারা এই কলকাতায় চলে যায়। সব সামলাতে সামলাতে আমি হিমসিম খেয়ে গেছি। বাধ্য হয়ে আমাকে সব শোনাতে হয়েছে। তাওতো গতকাল আমি মামনি পালিয়ে পালিয়ে বেরিয়েছি। বাইক কবে কিনলে। তুই যে দিন গেলি সেদিন। তুমি গেছিলে।
না। সঞ্জুকে টাকা দিয়েছিলাম। ও অনাদি গিয়ে কিনে এনেছে। চলো অনেক রাত হলো, ওখানে আবার হুলুস্থূলুস কান্ড বেঁধে যাবে। চল। আমরা দুজনে হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম। সঞ্জুর দোকানটা হাফ বন্ধ দেখলাম। এখন মরা হাট। হাতে গোনা কয়েকজন লোক এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। দূরে দেখলাম বাসুর দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। ইসলামভাই বাইকে স্টার্ট দিলো। আমি পেছনে বসলাম। কিগো রাতে চালাতে পারবেতো ? ঠিক করে বোস কথা বলিসনা। ফিক করে হেসে ফেললাম। ইসলামভাই বেশ জোরেই চালিয়ে নিয়ে এলো। উঁচু নীচু রাস্তার জন্য যেটুকু নাচা নাচি করেছি। খামারে এসে দাঁড়াতেই দেখলাম আলো ঝলমলে পরিবেশ। চারিদিকে লাইটে লাইট। বাইক থেকে নেমে দাঁড়ালাম। ইসলামভাই বাইকটাকে স্ট্যান্ড করলো। ভজু এগিয়ে এলো। জরিয়ে ধরলো। কেমন আছো অনিদা। তুই কেমন আছিস। ভালো। তোমাকে নাকি মেরেছে। কে বললো তোকে। মা বোকলো। সেই জন্য আমি মাকে বকে দিয়েছি। দেখলাম নীপা বারান্দায় ছিলো, ছুটে ভেতরে চলে গেলো। কাকারা বাইরের বারান্দায় টিভির নিউজ দেখছে। সবার পোষাক বদল হয়ে গেছে। আমি ইসলামভাই-এর দিকে তাকিয়ে বললাম। মাসি কখন ফোন করবে। আজ হবেনা কাল হবে। কেনো। কলকাতার বাইরে রেখেছে। খেয়েছে। মাসি জানলো কি করে বলোতো। ওই পাড়ার পার্টির দাদারা এসেছিলো। গন্ধে গন্ধে কিছু পেয়েছে হয়তো। এই ক্ষেত্রে যা হয় আরকি। দামিনীকে চাপ দিয়েছে। শেষে ও বলে দিয়েছে। অনি না বললে ছাড়বোনা। এবার বাবুরা ঠুসে গেছে। সব জায়গায়তো টাকা ছড়িয়ে রেখেছে। ফিরে যাই সোমবার থেকে সিরায়াল মারবো। কোন বাপ ওকে বাঁচায় আমি দেখবো। এই তোর মাথা বিগড়ে গেলো। কথাটা একটু জোড়ে বলা হয়েগেছিলো। দেখলাম দাদা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে এদিকে তাকালো। মল্লিকদা দাদার দেখা দেখি উঠে দাঁড়িয়েছে। এদিকে তাকিয়ে আছে। আমি চুপ করে গেলাম। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম। কি ভাবছিস। না। তুমি ভেতরে যাও। আমি একটু টয়লেট করে আসছি। সিগারেটের প্যাকটটা দাও। ইসলামভাই আমার দিকে সন্দেহের চোখে তাকিয়ে। আমার কথাটা ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না। পকেট থেকে প্যাকেটটা বার করে আমার হাতে দিলো। আমি আলো থেকে অন্ধকারেরে দিকে এগোলাম। সোজা চলে এলাম তেঁতুল তলায়। চারিদিক শুনশান। আকাশে আলোর লেশমাত্র নেই। আজ মনে হয় চাঁদ উঠবে সেই মাঝ রাতে। আকাশ ভরা তারার মেলা। কেউ যেন আকাশের গায়ে টুনিবাল্ব জালিয়ে দিয়েছে। আমি রাসমঞ্চের গাঁ ঘেষে বসলাম। পকেট থেকে ফোনটা বার করে সনাতন বাবুকে ধরলাম। ছোটবাবু। আপনি এখন কোথায় ?
অফিসে। মিত্রার ঘরের চাবিটা কোথায়। আমার কাছে। সন্দীপকে চাবিটা দিন। আমাকে একবার মিস কল করতে বলুন। ছোটবাবু আবার কোনো গন্ডগোল……। না। যা বলছি করুন। ঠিক আছে। পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা বার করলাম। একটা সিগারেট বার করে ধরালাম। মনে মনে বললাম শালা শুয়েরের বাচ্চা। তুমি অনেক বড় খেলোয়াড়। নিজেকে বড্ড শেয়ানা মনে করো। ফোনটা বেজেই থেমে গেলো। পকেট থেকে বার করে দেখলাম সন্দীপ। রিংব্যাক করলাম। কিরে আবার কি হলো। কিছু হয়নি। কাগজের খবর কি। ফার্স্টক্লাস। দারুণ স্মুথ এগোচ্ছে। তুই এখন কোথায়। দাদার ঘরের সামনে। আশেপাশে কেউ আছে। না। চাবি পেয়েছিস। হ্যাঁ। মিত্রার ঘরের দরজাটা খোল ভেতরে গিয়ে ইন্টার লক করে দে। কেনোরে! তোকে হুকুম করছি তামিল কর। কোনো প্রশ্ন করবিনা। বাবা এতো কড়া কড়া কথা বলছিস কেনো। যাচ্ছি। ফ্লোরে সন্দীপের বুটের আওয়াজ পেলাম। এই সময় নিউজরুম ছাড়া সারা অফিস শুনশান। বুঝতে পারছি সন্দীপ কানে মোবাইলটা ধরে রেখে, মিত্রার ঘরের লক খুললো। ভাতরে গিয়ে ইন্টার লক করলো। অনি। বল। ম্যাডামের ঘরের ভেতর। আমার কথা পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছিস। পাচ্ছি। তোকে একটা দায়িত্ব দিচ্ছি। তুই আমি ছাড়া কেউ জানতে পারবেনা। এমনকি তোর বউ পর্যন্ত নয় মাথায় রাখিস। যদি আমি বুঝতে পেরেছি তুই আমি ছাড়া তৃতীয় কোনো ব্যক্তি জানতে পেরেছে তাহলে তোর বউ বিধবা হবে। ইস তুই এইভাবে বলছিস। যা বলবো তার গুরুত্ব কতটা তাহলে বুঝতে পেরেছিস। পেরেছি পেরেছি। তুই বল। মিত্রার চেয়ারের দিকে মুখ কর। করেছি। এবার ডানদিকে তিনটে আলমাড়ি দেখতে পাচ্ছিস। পাচ্ছি। প্রথম আলমাড়িটা খুলবি। ওটায় কোনো চাবিনেই। সব সময় খোলা থেকে। কিছু অবাঞ্ছিত কাগজপত্র ওই আলমাড়িতে ভরা আছে। একটা চেয়ার নিয়ে আলমাড়ির সামনে যা। দাঁড়া। বুঝতে পারছি সন্দীপ একটা চেয়ার টানতে টানতে ওখানে নিয়ে যাচ্ছে। এসেছি। আলমাড়ির পাল্লা খোল। খুলেছি। তুই যা বললি একেবারে কারেক্ট। হুঁ। চেয়ারের ওপর ওঠ। দাঁড়া জুতোটা খুলি। উঠেছি। এবার চারতলাটা তোর হাতের কাছে চলে এসেছে। হ্যাঁ। কি নোংরারে কাল হরিদার ছেলেটাকে দিয়ে পরিষ্কার করাবো। শুয়োর তোকে বলেছি পরিষ্কার করাতে। আচ্ছা আচ্ছা আর বলবোনা। বল কি করবো। একেবারে পেছন দিকে হাত দে। জামায় নোংরা লেগে যাবে। আচ্ছা গান্ডুতো। খিস্তি দিসনা চেয়ার থেকে পরে যাবো। হ্যাঁ হাত ঢুকিয়েছি। একটা প্লাসটিকের ফাইলে হাতে ঠেকেছে। হ্যাঁ। ওটা টেনে বারকর, সাবধানে, কোনো কিছু যেনো পরে না যায়।
আচ্ছা। বার করেছিস। দাঁড়া কাগজগুলো সরাই। ধলোয় চোখ মুখ ভরে গেলো। রাত্রে বাড়িতে ফিরে বউকে বলিস ক্লিনজার দিয়ে পরিষ্কার করে দিতে। আচ্ছা। তোর মটকাটা আজ গরম কেনো। যা বলছি তাড়াতাড়ি কর। বার করেছি। চেয়ার থেকে নেমে মিত্রার টেবিলের টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালা। দাঁড়া নামি আগে। আলমাড়ির পাল্লা বন্ধ করবো। না। তুই যখন এই ঘরে ঢুকলি কেউ দেখিছিলো। না। গুড। তোর কাছ থেকে এইটুকু শিখেছি। গোপন কাজ গোপনে করতে হয়। কথাটা মাথায় রাখবি। প্রমিস কোনোদিন ভুল হবেনা। লাইট জাললি। জাললাম। ফাইলটা খুলে দেখ দশটা খাম আছে। গুনিনি। গুনতে হবেনা। দেখ রাজনাথ বাবুর নামে একটা খাম রয়েছে। পেছন দিকের ঝোপটায় সর সর করে একটা আওয়াজ হলো। চমকে পেছনে তাকালাম। জোড়ে চেঁচিয়ে উঠলাম কে ওখানে। কথা বলছোনা কেনো। সামনে এগিয়ে গেলাম। কাউকে দেখতে পেলাম না। অনি অনি। দাঁড়া পরে বলছি। কি হয়েছে বলবিতো। কিছু হয়নি। কে ওখানে। কোনো সাড়া শব্দ নেই। আমি তুলসীমঞ্চের গা থেকে একটু দূরে ফাঁকা জায়গায় চলে এলাম। কি হয়েছেরে। একটা স্বর স্বর আওয়াজ পেলাম সাপ-টাপ হবে হয়তো। পেয়েছিস খামটা। পেয়েছি। খোল খামটা। আঠা দিয়ে আটকানো আছে। ছিঁড়বো। হ্যাঁ। উরি শালা এতো এ্যাটম বোম। তুই পেলি কোথা থেকে। তোকে জানতে হবেনা। ছবিগুলো ঠিক আছে। একেবারে ঝকঝকে। খামটা টেবিলে রেখে ফাইলটা ওপরে তুলে দিয়ে আয়। যেমন ভাবে ছিলো ঠিক তেমন ভাবে। পারলে নোংরা কাগজগুলো একটু ঠেলেদিস। আচ্ছা। বুঝতে পারছি সন্দীপ আমার কথা মতো কাজ করলো। এবার বল। রাত্রিবেলা এটা নিজের হাতে জেরক্স করবি। উইথ ছবি। ঠিক ঠিক ভাবে। কেউ যেনো দেখতে না পায়। আচ্ছা। অফিসের একটা বড়খাম নিয়ে আর্টিকেলটা ভরবি, ওপরে নাম এ্যাড্রেস লিখবি রাজনাথবাবুর। সেন্ডারে আমার নাম এবং ফোন নম্বর। মোবাইল। হ্যাঁ। কাল অফিসে আসার পথে জিপিও থেকে রেজিস্টার্ড পোস্টে ওঠা পাঠাবি। এ্যাকনলেজটা ফিরে এলে গুছিয়ে রাখবি। এইকাজ। গান্ডু। কি বলতে ভুলে গেলাম বলতো তোকে। বলতে পারবোনা। তাহলে এইকাজ বলে খেঁচালি কেনো। বল কি ভুলেগেলি। খামের ওপর কনফিডেনসিয়াল লিখতে ভুলবিনা। ঠিক। খামটা গুছিয়ে রাখবি। কেউ যেনো জানতে না পারে। আর মিত্রার ঘরের চাবি সনাতনবাবুকে দেওয়ার দরকার নেই তোর কাছে রাখবি। আমি গেলে আমার হাতে দিবি। যদি কিছু বলে। আমাকে ফোন করতে বলবি। মালটা ছাপবিনা। এখন না। দুর শালা হাতে গরম জিনিষ এইভাবে ছেড়েদিবি। যা বলছি করবি। আর একটা কাজ করতে হবে। বল। মিঃ ব্যানার্জীর ছবি তোর কাছে আছে। আছে। রবিবার ফ্রন্টপেজে একেবারে বাঁদিকের ওপরের কলমে। ছবি দিয়ে লিখবি ওনার সঙ্গে আমাদের কাগজের এখন কোনো সম্পর্ক নেই কেনো নেই তা আমরা মঙ্গলবারের কাগজে ধারাবাহিক লেখায় জানাবো। আট দশ লাইনের ভেতর একটা গল্প লিখবি। ঠিক আছে। আর একটা কাজ করতে পারবি। বল চেষ্টা করবো। একটা আনকড়া ফ্রিলেন্সার জোগাড় করতে পারবি। ওই ছেলেদুটোর মতো ইনটেলেক্ট হওয়া চাই। পারবোনা।
তাহলে এক কাজ কর। বল। তুই কি কাগজ সামলে নিতে পারবি। পারবো। তাহলে ওদের একজনকে রাজনাথবাবুর পোঁদে লাগিয়ে দে। ব্যাপারটা এরকম কখন ও বাথরুমে যাচ্ছে কতোক্ষণ বাথরুমে কাটাচ্ছে আমাকে জানতে হবে। পারবে। আমাকে ফোন করতে বল। আমি বুঝিয়ে দেবো। ওগুলোর নাম ভুলে যাই। ওদেরও আক্ষেপ তুই ওদের নাম ধরে ডাকিস না। নাম কি বলতো। একটার নাম অরিত্র আর একটার নাম অর্ক। ফর্সাটারা নাম কি ? অরিত্র। তাহলে এক কাজ কর অর্ককে আমায় ফোন করতে বল। এই কদিন ও অফিসে আসবেনা। আমি কলকাতায় না যাওয়া পর্যন্ত। আর অরিত্রকে বাকি নার্সিংহোমগুলো কভার করে নিতে বল। আচ্ছা। চিঠিটা পোস্ট করে আমাকে জানাবি। আচ্ছা। ফোনটা কেটে একটা সিগারেট বার করে ধরালাম। দু’চারটে সুখটান দিলাম। তারপর ধীর পায়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিলাম। বাড়ি থেকে মিনিট পাঁচেক দূরত্বে চলে এসেছি। খামারে আস্তে দেখলাম। সবাই বারান্দায় বসে গল্প করছে। যেমন দেখে গিয়েছিলাম সেইরকম। আমি কাকার বাড়িতে না ঢুকে নিজের বাড়িতে চলে এলাম। বাইরের দরজায় শেকল তোলা। তারমানে এই বাড়িতে কেউ নেই। নিচের ঘরগুলোয় দেখলাম লাইট জ্বলছে। আমি শিঁড়িদিয়ে সোজা ওপরে উঠে চলে এলাম। ঘরের দরজা ভেজানো। আমি ঠেলে ভেতরে ঢুকলাম। আজ ঘরটা অনেক বেশি ডেকরেটেড। বিছানায় একটা নতুন চাদর পাতা হয়েছে। আমি বিছানায় একটু বসলাম। ঘুটিগুলো আবার ঠিকঠাক ভাবে সাজাতে হবে। হাতে মাত্র চারদিন সময়। চুপচাপ বসে ভাবছিলাম। হঠাৎ নিচের দরজাটা খোলার শব্দ পেলাম। একটা হৈ হৈ শব্দ। বুঝলাম মিত্রার সবাই ঢুকলো। উঠে দাঁড়িয়ে পরলাম। আলনার কাছে গিয়ে পাজামা পাঞ্জাবী আর টাওয়েলটা বার করে কাঁধে নিলাম। মিটসেফের কাছে গিয়ে পকেট থেকে মানি পার্টস কাগজ গুলো বার করে রাখলাম। কিরে তুই এখানে। তোকে কখন থেকে খুঁজছি। আমি মিত্রার দিকে তাকালাম। মুখটা চকচক করছে। একদৃষ্টে ওর দিকে তাকলাম। ওর চোখটা ভালো করে লক্ষ্য করলাম। সবাই ওর পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে। কি দেখছিস। সকাল থেকে তোমায় দেখেনি তাই দেখছে। মিলি বললো। ধ্যাত। বলনা এতোক্ষণ কোথায় ছিলি। মিত্রা কল কল করে উঠলো। কেনো এই বাড়িতে বসে ছিলাম। হতেই পারে না। বিশ্বাস কর। ইসলামভাই বললো তুই বাথরুমে গেছিস। হাসলাম।
টিনা দেখ কিরকম মিচকে পোড়া হাসি। অদিতি বললো। দাঁড়িয়ে রইলে কেনো, ভেতরে এসো। ওরা ভেতরে এলো। অনিদা। টিনা বললো। আমি টিনার দিকে তাকালাম। তুমি এটা ঠিক করলেনা। কি বলোতো! সবাইকে আমাদের কথা…..। তোমরা হয়তো বিশ্বাস করবেনা আমি বলিনি। তুই এভাবে বলিসনা। তোর গুণকীর্তন করতে গিয়ে বলে ফেলেছি। মিত্রা হাসতে হাসতে বললো। শুনলে টিনা। টিনা হাসছে। তোর মুডটা অফ মনে হচ্ছে। দেবাশীষ বললো। নারে সকাল থেকে স্নান করিনি। ভাবছি এখন স্নান করবো কিনা। এই ঠান্ডায়। হ্যাঁ। তোমার ঠান্ডা কম লাগে! দেবা তোরা একটু বোস আমি ঝট করে সেরে আসি। সত্যি তুই স্নান করবি। হ্যাঁরে নাহলে একটা অস্বস্তি হচ্ছে। আমি পাজামা পাঞ্জাবী সাবান আর টাওয়েলটা নিয়ে বেরিয়ে এলাম। বাড়ির খিড়কি দরজা দিয়ে পুকুর ঘাটে এলাম। বেশ ঠান্ডা লাগছে। না স্নান করবো না। মাথাটা ধুয়ে টাওয়েল দিয়ে গা-হাত-পা মুছে নিই। যেমন ভাবা তেমন কাজ। খুব তাড়াতাড়ি কাজ সেরে ঘরে ফিরে এলাম। কিরে সত্যি তুই স্নান করলি। না। মাথা ধুলাম। বড়মা ডাকতে এসেছিলো খেতে যেতে বলেছে। নির্মাল্যকে দেখছিনা। এদিক সেদিক কোথাও ঘুরছে। দেবাশীষ বললো। তোরা কোথায় কোথায় ঘুরলি। ঘুরলাম কোথায়! নারকেল কোড়া দিয়ে মুড়ি মাখা খেলাম আর চা। চুটিয়ে আড্ডা। দেবাশীষ বললো। টিনার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে ফেললাম। একবারে হাসবেনা। আমাদের ছেড়ে দিয়ে নিজে বেশ ফুর্তি করে এলে। কেনো মিত্রাদি ছিলোনা। আমি না বলেছি। ঠিক আছে কালকে সারাদিন সময় দেবো। ঘেঁচু। মিত্রাদির মুখ থেকে তোমার সব প্রোগ্রাম জানা হয়ে গেছে। কিরে পেট পাতলা রুগী। দেবোনা পেটের মধ্যে একটা গুঁতো। মিত্রা তেড়ে এলো। আমি ওর হাতদুটো ধরে ফেললাম। বলনা তোর মুখটা অমন শুকনো শুকনো লাগছে কেনো। সারাদিন কি ভাবে কটলো বলতো। কই দেবাদের মুখটা ওরকম লাগছেনা। দেবা আমার থেকে দেখতে সুন্দর। শালা হারামী। দেবাশীষ উঠে এলো। অদিতি তোমার বরের হাত থেকে বাঁচাও। ওসব তোমাদের ব্যাপার আমরা দর্শক। বলনা, সত্যি তোকে বেশ ফিউজ লাগছে। দেবা বললো। বিশ্বাস কর কিছু হয়নি। কাল সকালে নিয়ে যাবি। আমি ওদের বলেছি, ওরা রাজি। নিশ্চই ওই গল্পগুলো ঝেরেছিস। টিনার দিকে তাকালাম। টিনা ফিক করে হেসে মাথা নীচু করলো। মিলি এগিয়ে এলো। মিত্রাদি তুমি পেছন থেকে ধরো আমি সামনেথেকে গুঁতো মারি যদি মুখ থেকে কিছু বেরোয়। তাহলে কাল যাওয়া বন্ধ। মিলি ছেড়েদে ছেড়েদে। কাল যাবে বলেছে। ওমা তোমরা কি করছো। অনিদাকে মারছো। নীপা বড় বড় চোখ করে ঘরে ঢুকলো। তুমি কোথায় ছিলেগো অনিদা। কেউ তোমাকে খুঁজে পায়না। আমিতো এদের হাতে মার খাচ্ছি। চলো চলো খাবার জায়গা হয়ে গেছে। সবাই এলাম। বারান্দায় লম্বা লাইন করে খাবার জায়গা হয়েছে। খেতে খেতে হৈ হট্টোগোল। বড়মা ডাক্তারদাদার তরজা। আমার মিত্রার খুনসুটি। এর মাঝেও ইসলামভাই খালি আমাকে মেপে যাচ্ছে। চোখে চোখ পরতেই জিজ্ঞাসার চিহ্ন আমি হাসছি। খাওয়া শেষ হওয়ার পর মুখ ধোওয়ার সময় খালি ইসলামভাই বললো। কিরে কাজ শেষ করলি ? আমি একবার ইসলামভাই-এর দিকে তাকিয়ে ফিক করে হাসলাম। আরে তোমরা বস লোক। তোমাদের সঙ্গে কি পারি। ইসলামভাই আমার দিকে তাকিয়ে ফ্যাকাশে হাসি হাসলো। চল একটা সিগারেট খাই। না। তুমি কথা বলতে চাইলে যেতে পারি। তাই চল। মিত্রাকে বললাম তোরা যা আমি যাচ্ছি। মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে একবার হাসলো। আমি ইসলামভাই খামারে এসে দাঁড়ালাম। ইসলামভাই একটা সিগারেট ধরালো। কিরে কি কথা হলো। কিসের বলোতো। যার সঙ্গে কথা বললি। কারুর সঙ্গে কথা বলিনি। অফিসে কথা বলছিলাম। কাজের ব্যাপারে। ইসলামভাই আমার চোখে চোখ রাখলো। হাসলাম। চিকনা সব খবর তোমায় দিতে পারেনি। ইসলামভাই আমার কাঁধটা ধরে ঝাঁকিয়ে দিলো। তুই গুরু এটা মানতেই হবে। কেনো। ওই অন্ধকারে তুই দেখলি কি করে। আমিযে মাকড়সা। আমার মাথায় আটটা চোখ আছে। আমি তোর একটা উইং বন্ধ করতে পেরেছি। পারবোনা তোর সঙ্গে। তাহলে লোড়ছো কেনো। ফোনটা বেজে উঠলো। পকেট থেকে বার করলাম।
হ্যালো। দাদা আমি অর্ক। কিরে কাগজ বেরিয়ে গেছে। হ্যাঁ দাদা, দারুন এক্সপিরিয়েন্স। গুড। এখুনি বেরিয়ে যাবি। না। বেরোতে বেরোত দুটো বাজবে। আমি তোকে একটু বাদে ফোন করছি। এইটা তোর মোবাইল নম্বর। হ্যাঁ দাদা। আমি সেভ করে নিলাম। ঠিক আছে। আমি নম্বরটা সেভ করলাম। ইসলামভাই-এর দিকে তাকালাম। ইসলামভাই আমার দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসছে। হেসে লাভ নেই। এই গেমটা তোমাদের জন্য নয়। তোমরা তোমাদের গেম খেলো। আমি আমার গেম খেলবো। কাজ শুরু করে দিয়েছিস। অবশ্যই। আমার সব গোছানো থাকে। তোমাকে সেদিনও বলেছিলাম, আমি দাবা খেলি। ইসলামভাই মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
তুই জানলি কি করে রাজনাথবাবু এর মধ্যে ইনভলভ। তুমি রাজনাথবাবুর নাম পর্যন্ত শুনতে পেয়েছো তারপর আর পারোনি। সত্যি বলছি আর কিছু জানতে পারিনি। তুমি এও জানো অনিকে জিজ্ঞাসা করলে উত্তর পাওয়া যাবেনা। তোর খতি হোক চাইনা। বড়মাকে প্রমিস করেছি। আমার একটা ভুলের জন্য তোমাদের সকলের খতি হোক এটা চাও। কখনই না। তাহলে আমাকে বাধা দেবেনা। তোমাদের ট্রিটমেন্ট দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়া। আর আমি সেই লোকটাকে জীবনমৃত করে রেখে দেবো। ভিক্ষা করা ছাড়া তার কিছুই জুটবেনা। কোনটা বেটার। তোর পথ আমার পথ আলাদা। কিরে মুন্না শুবি না। ছোটমা বারান্দায় দাঁড়িয়ে চেঁচালো। যাচ্ছি তুমি শুয়ে পরো। তোর সঙ্গে কি অনি। হ্যাঁ। ওকি আবার গন্ডগোল করছে নাকি ? না। এমনি কথা বলছি। আয় আয়। মাসি কাল কখন ছাড়বে বলেছে। কলকাতায় নিয়ে চলে এসেছে। ওর বাড়িতে আছে। তোমার লোকজন। ওরা চলে এসেছে। আমাকে বললেনা। দাদাকে জানাতে হবে। এইতো কিছুক্ষণ আগে ফোন করলো। যাও শুয়ে পরো। কাল অনেক কাজ আছে। ইসলামভাই আমার দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলো। তারপর চলে গেলো। খামার থেকে ঘরে এলাম। নিচে সবাই আড্ডা মারছে। মিত্রা মাঝখানে বসে আছে। কিরে তোদের শোয়ার ব্যবস্থা কি হলো। আরি বাবা নীপা ম্যাডাম হেবি দিয়েছে। নীপা আমার দিকে চোরা চাহুনি ঝারলো। দেবাশীষ হাসলো। আয়। আমি ভেতরে গেলাম। আমি অদিতি এই ঘরে। পছন্দ হয়েছে অদিতি। এ কিন্তু তোমার বাড়ির…..। থাক আর বলতে হবেনা। কথা বলার সুযোগ পেলেই……। আমি হো হো করে হেসেফেললাম দেবাশীষ শুধু তোরা দুজন! এই ঠান্ডায়! শালা…..। দেবা কিছু বলতে যাচ্ছিল অদিতি মুখটা চেপে ধরলো। টিনা মিলি নির্মাল্য ? টিনা মিলি এক ঘরে। নির্মাল্য বারান্দায়। নীপা নীপার জায়গায়। মিত্রা বললো। টিনা মিলি! কেনো তোমার অসুবিধে আছে। টিনা বললো। না, টিনা মিলি মিত্রা, আমি নীপা……। দাঁড়া তোকে দেখাচ্ছি। মিত্রা তেড়ে এলো। আচ্ছা আচ্ছা অন্যায় হয়েছে। সত্যি কথা বলতে কি আমার নির্মাল্যর জন্য চিন্তা হচ্ছে। বেচারা। এনি কম্বিনেশনে আমার কোনো অসুবিধে নেই। সবাই হো হো করে হেসে ফেললো। সখ দেখো। দম আছে। মিলি বললো। প্রমাণ করে দেখ। এইতো কথা ফুটেছে। কি মিলি ম্যাডাম হয়ে যাক এসপার নয় ওসপার। না আমার দরকার নেই। আবার ট্রেন কেস খেতে রাজি নই। দেবা তাহলে মিলি হেরে গেলো। না হারি নি। নির্মাল্যর জায়গায় তুমি হলে ভাবা যেতো। এই মুখপুরি আমি কোথায় যাবো। মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো। আচ্ছা আচ্ছা বাবা তোমার জিনিষে আমি হাত দেবোনা। মিলি মিত্রাকে জড়িয়ে ধরলো। মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা চোখে হাসছে। চোখের ভাষা এরকম, আমাকে পেয়ে তোর শান্তি নেই। টিনার দিকে তাকিয়ে বললাম। কেমন এনজয় করছো ম্যাডাম। দারুণ। তোমার কীর্তি কলাপ শুনে মনে হচ্ছে, কলেজে তুমি কিছুই করোনি। সত্যি তুই গাছে উঠতে পারিস। দেবা বললো। চল কাল সকালে দেখাবো। অন্ধকার থাকতে উঠতে পারবিতো। তুই বললে সারারাত ঘুমবোনা।
তুই সারারাত ঘুমো না ঘুমো আমি তোর ঘরে উঁকি মারতে যাবোনা। দেখলি মিত্রা, এবার আমি শুরু করলে। না ঘুমিয়ে পর আমি ঠিক সময়ে ডাকবো। একটা কথা নীপা আমাদের সঙ্গে যাবেনা। মিত্রাদি। গুড নাইট। মিত্রা উঠে এলো। আমি বললাম তুই ওপরে যা আমি একটু আসছি। কোথায় যাবি তুই ? পাঁচ মিনিট। আমি যাবো।
কিরে মিত্রা। দেবাশীষ ঘর থেকে চেঁচিয়ে উঠলো। দেখনা ও আবার কিছু প্ল্যান ভেঁজেছে। দেবাশীষ ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। পেছন পেছন ওরা সবাই। কিরে অনি। কিছুনা তোরা যা। আমি তোর সঙ্গে যাবো ব্যাশ। চল আমি পি করবো তুই পাহারা দিবি। তাই দেবো। ওরা সবাই হো হো করে হেসে ফেললো। তখন তুই বাথরুমের নাম করে দু’ঘন্টা কাটিয়ে এসেছিস। আচ্ছা আমার কি কোনো কাজ কর্মনেই। তোর সব কাজ এই কানা রাতে। তখন মিত্রার মুখে সব শুনলাম। সত্যি অনি তোর কাজ কর্মের বহর দেখে আমাদেরই আত্মারাম খাঁচা ও বেচারা কি করবে। দেবা বললো। ঠিক আছে চল। যাবো না। মিত্রা মুচকি হেসে বললো পি করতে যাবিনা। আমি ওর মুখের দিকে তাকালাম। টিনা মিলি নীপা মিটি মিটি হাসছে। আসিরে দেবা আমি ওপরে উঠে এলাম। বেশ কিছুক্ষণ পর মিত্রা উঠে এলো। বুঝলাম ওরা নিচে আমাকে নিয়ে কথা বলছিলো। দেবাশীষরা মোটামুটি সব জেনে ফেলেছে। আমি এসে টান টান হয়ে শুয়ে পরলাম। মিত্রা ঘরে ঢুকেই মুচকি হাসলো। ঘরেরে দরজা বন্ধ করলো। ছুটে এসে আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পরলো। কপালে গালে ঠোঁটে চুমু খেলো। কথা বলবিনা। চোখটা ছল ছলে। আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি। তুই ভীষণ অবুঝ। আমি তাকিয়ে আছি। আমার ঠোঁটে আঙুল রাখলো। তুই কেনো আবার খুঁচিয়ে ঘা করছিস। সবতো মিটে গেছে। আমি ওর গালের দু’পাশে হাত রেখে মুখটা তুলে ধরলাম। মিত্রার চোখ দুটো আজ বেশ উজ্জ্বল। চোখের কোলে আইলাইনার লাগিয়েছে। মুখ ধোয়ার সময় পুরোপুরি তুলতে পারেনি। আমি ওর ঠোঁটটা আমার ঠোঁটের কাছে টেনে নিলাম। ডুব দিলাম। মনেহল সাগর জলে সিনান করি সজল এলো চুলে বসিয়া আছি উপল উপকূলে। মিত্রা গাঢ় ভাবে আমার ঠোঁট চেপে ধরে আছে। ঠোঁট থেক মুখ তুলে মিত্রা আমার গলায় মুখ গুঁজলো। তুই আমকে একা একা ছেড়ে যাসনা। আমি ওর মাথায় হাত বোলাচ্ছি। ওর নরম বুক আমার বুকে আছড়ে পরেছে। আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে। তুই দু’দিন ছিলিনা যেনো দু’বছর তোকে দেখিনি। আমি চুপ করে আছি। ওর শরীরের ওম আমার শরীরে লুটোপুটি খাচ্ছে। কিরে কাপর ছাড়বিনা। মিত্রা আমার বুকে মুখ ঘোষছে। কাপর পরে শুবি। মিত্রা কোনো কথা বললোনা। আমি একজনের সঙ্গে একটু কথা বলবো। তুই শুনবি, কাউকে বলবিনা। মিত্রা ঝট করে আমার বুক থেকে মুখ তুললো। অস্ফুট শব্দ মুখ থেকে বেরিয়ে এলো, আবার! এখনো কাজ শেষ হয়নি। তুইতো সব লিখিয়ে নিলি। লেখাতেই সব শেষ হয়। তোকে দু’দিন পর কাছে পেলাম, আর ভালো লাগছেনা। তুই অবুঝপনা করিসনা। মিত্রা আমার চোখে চোখ রাখলো। মনে থাকে যেনো তুই আমি ছাড়া দ্বিতীয় ব্যক্তি কেউ জানবেনা। মিত্রা মাথা দোলালো। আমি ফোন করলাম। ফোনের ভয়েজটা আস্তে করে দিলাম। ঘরের বাইরে যাবেনা। হ্যাঁ অনিদা বলো। তুই এখন কোথায়। নিউজরুমে। আর কে আছে। আমি তোমার টেবিলে, আশে পাশে কেউ নেই। কাল থেকে তোকে একটা দায়িত্ব দেবো। পারবি। নিশ্চই। তুমি মরতে বললে মরে যেতে পারি। তাহলে অনিদা হবি কি করে। হো হো করে হেসে ফেললো অর্ক। বলো। তুই কোন এলাকায় থাকিস। সিঁথি। বাঃ শ্যামবাজর তোর কাছেই। হ্যাঁ। রাজনাথবাবুকে চিনিস। চিনবোনা মানে, রাম ঢেমনা। কি করে জানলি।
তোমাকে কয়েকটা লেখা দেবো একটু পরে দেখো। ও কিন্তু রাজ্য কমিটিতে রয়েছে। জানি। তার মানে তুই পড়াশুনো করছিস। তেড়ে করছি। তুমি যেভাবে বলেছো ঠিক সেই ভাবে। গুড। কালকে সকাল থেকে সোমবার পর্যন্ত ওকে ফলো করতে হবে। ম্যায় ও কখন পটিতে যাচ্ছে কতটা সময় কাটাচ্ছে। কি বলতে চাইছি বুঝতে পারছিস। ডিটেলস। আর্ট ফিল্ম। না তোর হেডে বুদ্ধি আছে। হো হো হো। হয়ে যাবে তুমি নিশ্চিন্ত থাকো। ছবি। কথা দেবোনা। ওটা একটু টাফ। চেষ্টা কর। শোন। বলো। ঘন্টায় ঘন্টায় আমাকে ম্যাসেজ করবি। ডিটেলসে। হয়ে যাবে। এবার বল কি করে করবি। ওটা আমার ওপর ছেড়েদাও। গিয়ে বলবি, আমি এই কাগজ থেকে আসছি। খেপেছো পাকা ঘুঁটি কেঁচে যাবে। রাম কেলানি খাই আরকি। তাহলে। তোমার মতো বেশ্যা পট্টির দালাল হবো ওই চারদিন। হো হো করে হেসে ফেললাম। হ্যাঁগো অনিদা, দারুণ ইন্টারেস্টিং তোমার গল্পটা শোনার পর ওই তল্লাটে কতবার গেছি তুমি জানো। কতবার। বার পঞ্চাশেক হবে। তার থেক ওই মাল বেরিয়ে এসেছে। হ্যাঁ অনিদা। মাঝে মাঝে ভাবি জীবনে থ্রিল না থাকলে সাংবাদিক হয়ে লাভ নেই। তার থেকে পাতি কেরাণী হওয়া ভালো। শোন, সন্দীপ যেনো জানতে না পারে। যে মাটিতে দাঁড়িয়ে সাধনা করবো সেই মাটি পর্যন্ত জানতে পারবেনা। বাবা তুইতো সব মুখস্থ করে ফেলেছিস। তোমার ডায়লগগুলো কেমন দিচ্ছি বলো। পাবলিক কিরকম খাচ্ছে। সত্যি বলবো অনিদা। বল। তোমার ডায়লগ বেচে তিনটে চেলুয়া তৈরি করেছি। সন্দীপদার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছি। ট্রনিং প্রিয়েড চলছে। চালিয়ে যা। মনে রাখিস ব্যাপারটা। তুমি নিশ্চিন্তে থাকো। আটটা থেকে ম্যাসেজ শুরু করবো। গুড নাইট। না। শুভ রাত্রি। হো হো করে হেসে ফেললাম। রাখি। রাখ। ফোনটা রাখতেই মিত্রা আমার ঠোঁটে চাকুম চাকুম করে গোটা দশেক চুমু খেলো। আমার চোখে চোখ রাখলো। এচোখের চাহুনিতে পরিতৃপ্ততা। আনন্দ অশ্রুসিক্ত। কি হলো। আমাকে একটু ট্রেনিংদে। নিচ্ছিশতো। ওদের মতো করে। এ জন্মে হবেনা। তনুকে কি করে তৈরি করলি। তনু, মিত্রা দুজনে আলাদা। আমি তনু হবো। তাহলে বুবুন মিত্রাকে ছেড়ে চলে যাবে। না। তাহলে হবে না। তুই ভীষণ স্বার্থপর। ঠিক। ইসলামভাই কি বললো। তুই টয়েলেটের নাম করে হাওয়া হয়ে গেলি, আমি জিজ্ঞাসা করলাম। একটা বড় নিঃশ্বাস ফেলে বললো। আমি, দামিনী ওর বুদ্ধির সঙ্গে পারবোনা। কেনোরে এই কথা বললো! তোকে সব বললে তুই ঢাক পেটাবি। তুই এখন থেকে আমায় বিশ্বাস করতে পারিস। আমি তোকে অবিশ্বাস করিনা। এই সব ক্ষেত্রে। আমি ওর চোখে চোখ রাখলাম। তোর চোখ বলছে তুই আমাকে এখনো ঠিক বিশ্বাস করতে পারছিসনা। তুই পরে ফেলছিস। একটু একটু। প্রমিস করছি।
আমি মিত্রাকে আর একটু জড়িয়ে ধরলাম। ও এখন আমার শরীরে পুরোটা উঠে এসেছে। শরীরের নরম অংশ গুলো আমার শরীরে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। আমি অনিমেষদার সঙ্গে শেষ কথা যা হয়েছে ওকে বললাম। তাহলে! সেই জন্য ইসলামভাই-এর ওপর আর নির্ভর করলামনা। আমায় বলেছে তোর সব উইং বন্ধ করে দিয়েছে। পারবেনা। তুই ইসলামভাই-এর থেকেও বেশি ক্ষমতা রাখিস! অবশ্যই নাহলে আমাকে মানবে কেনো। তোর প্রাক্তন স্বামীটা কাল সকালে রাজনাথের কাছে আসবে। ওর কথা মুখে আনবিনা। কি বলবো। শুয়োরের বাচ্চা বলবি। আমি মিত্রার দিকে তাকালাম ওর চোখদুটো মুহূর্তের মধ্যে বদলেগেলো। মুখটা আমার বুকে রাখলো। কি হলো। সত্যিতো তুই কিইবা বলবি। তাকা আমার দিকে। মিত্রা মুখ তুললো। ও একটা লাস্ট চান্সনেবে। রাজনাথকে দিয়ে অনিমেষদার ওপর প্রেসার করবে। দেখবি পর্শুদিন দুপুরের পর ও আমাকে ফোন করবে, উত্তেজিত ভাবে। ওরা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি তার ওপর পার্লামেন্টারিয়ান। তুই পারবি! দেখবিনা খেলাটা, একটু অপেক্ষাকর। আমার কেমন যেন ভয় করছে। এতদিন ভয়পেয়েও প্রুফ হতে শিখলিনা। চেষ্টা করি। তোর মতো পারিনা। আমার বড়মা ছোটমার একি অবস্থা। ওরা কেউ এই ব্যাপারটা যেনো না জানে। আমার পেট থেকে বার করতে পারবেনা। কথাটা মনে রাখিস। একটু করি। এখনো কথা শেষ হয়নি। কাপরটা খুলে ফেলি। খোল। মিত্রা আমার বুকথেকে উঠে পরলো। ঘরের বড়লাইটটা নিভিয়ে দিলো। টান মেরে কাপরটা শরীরথেকে খুলে শোফার ওপর ছুঁড়ে ফেলে দিলো। পট পট করে ব্লাউজের বোতামটা খুলে সোফার ওপর রাখলো। আমার দিকে তাকিয়ে বললো এটা থাক। আমি হাসলাম। মিত্রা ব্রা-শায়া পরা অবস্থায় আমার বুকে আশ্রয় নিলো। আবার উঠো পরলো। কি হলো। একটু ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে। একটা পাতলা চাদর গায়ের ওপর টেনেনিলো। আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে বললো, এবার বল। খুব আরাম তাই না। ও আমার নাকে ঘষে দিলো। হুঁ। আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে। তোর পাঞ্জাবীটা খোল। কেনো। ভালোলাগেনা। আমি আধশোয়া অবস্থায় পাঞ্জাবীটা খুললাম। মিত্রা আমার বুকে বুক রেখে বললো, আঃ কি আরাম। হাসলাম। হাসিসনা। একটু আরাম করবো তাতেও তোর হাসি। আমার শুরশুরি লাগছে। তাহলে খুলে ফেলি। ফেল। ফিতেটা খোল। তুই খোল। অনেক ঝামেলা, থাক। তোর দরকার হলে খুলে নিবি। আমি ওর ব্রার ফিতেটা খুলে দিলাম। এইতো আমার লক্ষীছেলে। আমার ঠোঁটে চকাত করে একটা চুমু খেলো। মাথার শিয়রে ব্রাটাকে ছুঁড়ে ফেলদিলো। এবার বল। বললে তুই আবার খেপে যাবিনাতো। কেনো তুই কি বলবি। বল আগে খেপবিনা। না। তোর ডিভোর্সের কাগজটা কোথায়। আমার কাছে। অরিজিন্যাল না ডুপ্লিকেট। অরিজিন্যাল। হাইকোর্ট থেকে আমি সই করে তুলেছি। আমাকে একটু দেখাতে হবে।
বাড়িতে আছে। কলকাতায় গিয়ে তোকে দেবো। আর একটা কথা। বল। পর্শু শুক্রবার তার পরের শুক্রবার আমরা রেস্ট্রি করবো। মিত্রা আমার চোখে চোখ রাখলো। মনিদুটো স্থির। চোখের পাতা দুটো ভারি হয়ে এলো। থিরি থিরি কাঁপছে। ওর বুকের লাবডুব শব্দটার গতি বেরে গেছে। আমি আমার বুক দিয়ে তার স্পন্দন শুনতে পাচ্ছি। চোখের পাতা পরলো। গাল বেয়ে জল আমার বুকে গড়িয়ে পরলো। মিত্রা হেসে ফেললো। আমি আমার দু’হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে ওর চোখের পাতা মুছিয়ে দিলাম। ও আমার বুকে মাথা রাখলো। তুই সত্যি রেস্ট্রি করবি। কেনো তোর বিশ্বাস হচ্ছে না। মিত্রা আমার বুকে মাথা দোলালো। না। কেনো! জানিনা। এত দুর্বল হলে বুবুনের সঙ্গে চলবি কিকরে। আমি সবল হলে এই দুর্দশা আমার হয় ? আমি মিত্রাকে জড়িয়ে ধরে একপাক ঘুরে গেলাম। মিত্রা এখন আমার বুকের ঠিক নিচে। মিত্রা ফিক করে হেসে ফেললো। হাসলি কেনো। তোর দুর্বল জায়গাগুলো সবল করতে হবেতো। শয়…..। আমি মিত্রার ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরলাম। মিত্রা চোখ বন্ধ করে ফেলেছে। আমার জিভ ওর মুখের মধ্যে সম্পূর্ণ ভাবে অদৃশ্য হয়ে গেছে। ওর মুখে পরিতৃপ্ততার ছোঁয়া। আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি। হঠাৎ জিভটা বার করে নিলাম। ও চোখ খুললো। আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি। কিরে। চোখে লজ্জা লজ্জা ভাব। আমার মাথাটা যাপ্টে ধরে মুখের কাছে টেনে নিলো। কিছুক্ষণ আমার সারাটা মুখে জিভ ছোঁয়ালো। আমার শায়াটা ভিঁজিয়ে দিলি। আমি ভেঁজালাম না আমার নাম করে নিজেই ভেঁজাচ্ছিস। আমারও ভিঁজে গেছে। হাসলাম। কতদিন বাদে করছিস বলতো। দেবাশীষ আজকে অদিতিকে খুব জোর করছে। হ্যাঁ। তুই দেখতে পাচ্ছিস। খোলনা এটা একটু ধরি। তুই খোল। ওঠ একটু। আমি মিত্রার ওপর থেকে পাশে শুলাম। মিত্রা নিজেই টপাটপ সব খুলে ফেললো। কিরে তোরটা কি বড় হয়ে গেছে। দে তোরটায় হাত দিয়ে বলছি ছোটো আছে কিনা। ধ্যাত। মিত্রা আমার বুকে চলে এলো। বুকে চুমু খেলো। বুবুন। উঁ। নীপা মনেহয় মরেছে। তারমানে। নির্মাল্য পটিয়ে নিয়েছে। যাঃ। হ্যাঁরে। মাঝে মাঝেই নীপা আর নির্মাল্যকে দেখা যাচ্ছে না। ইস। কিহলো!। ভেবেছিলাম নীপাটার লালা ফিতে আমি কাটবো। শয়তান দেবোনা। কেনো। তোর অসুবিধে আছে। আছে। তুই কিন্তু ঘষা ঘষি শুরু করে দিয়েছিস। আমার ধৈর্য্য ধরছেনা। আস্তে আস্তে ম্যাডাম, তাড়াহুড়ো করলে মজাটাই নষ্ট হয়ে যাবে। আজকে ওরা দুজনে আবার বাইরে শুয়েছে। করুক বয়স হয়েছে।