বড়মা ফোন করেছিলো। তোর বড়মা কোনোদিন আমাকে ফোন করে। আমি করলাম। কি বললো। তোর পাগলামোর কথা বললো। আর গাল দিলো। তুমি কি বললে। এ আমার কম্মনয় তুমি পারলে ওকে বুঝিও। ব্যাশ কথা শেষ। ওই হলো আর কি। মরন বলেনি। দু’চারবার বলেছে। কাজ করতে করতেই ফিক করে হাসলাম। আজ একটু দেরি করে অফিসে যাবে। কেনো। অনেকগুলো সই করতে হবে তোমাদের তিনজনকে। আবার কি করবি। সম্পত্তি গুলো গিলতে হবে না। কার। ডাক্তারের। ওটা ডাক্তার না পাষন্ড বলতো। ওনার নামে যা বলবে তাই ম্যাচ করে যাবে। দেখে বোঝা যায়না। আমায় দেখে বোঝা যায় আমি এত শয়তান। দাঁড়া তোর বড়মাকে ফোন করছি। কি হবে। দেখতে পাবি। অনেক হয়েছে আর ফোন করতে হবেনা। মল্লিকদা বললো। তুই কিছু খোলসা করে বলনা। শুনে কি করবে সমাধান করতে পারবে। তা পারবো না শুনতেতো ইচ্ছে করে। মল্লিকদা। বল। আমি এখন নিচে যেতে পারবোনা। নীচটা তুমি একটু ম্যানেজ করো। সে তোকে ভাবতে হবে না। কাজের মাসীকে পটিয়ে নিয়েছি। এইতো কাজের কাজ করেছো। কাল সারারাত এই কাজ করলি। তুমিওতো সারারাত গল্প করলে। তোকে আবার কে বললো। খবর পেলাম। খালি ঢিল ছোঁড়া। লেগে গেলে অনির থার্ড সেন্সেসন বলছে তাইনা। তাহলে ফোন করে খবর নিই। আর উপকার করতে হবেনা। থার্ড সেন্সে। নিরঞ্জনদা হো হো করে হেসে ফেললো। হাসছো কেনো। তোর কথা শুনে। কাল কেমন ঝাড় খেলে। বড়মাকে পর্যন্ত একটা ফোন করলে না। তোকে কে বললো। আবার কে মিত্রা। মল্লিকদা বললো। আমি কিন্তু একবারও বলিনি আমার সঙ্গে কথা হয়নি। তুই বক বক না করে বলনা কি পেলি। দাদা বললো। শুনবে। মল্লিকদা দাদার পালস বিটটা একবার দেখোতো। থাম তুই। খুব ফুর্তিতে আছিস মনে হচ্ছে। তা একটু আছি। দাদার ফোন বেজে উঠলো। নাও বড়মা। হ্যালো। আমার দিকে তাকিয়ে কিরে তোর ফোন বন্ধ। চার্জ শেষ হয়ে গেছে। চার্জে বসাসনি। বসাবো। তোর চার্জার কোথায়। মল্লিকদা বললো। টেবিলে আছে। ধর তোর বড়মা। তুমি কথা বলো। আমার সঙ্গে বললেতো। কি হয়েছে বলো। কাল সারারাত ঘুমোস নি কেনো। এ খবর কে দিলো। তুই খবর রাখতে পারিস আমি পারিনা। তোমার দম নেই। তোমাকে একজন লাগিয়েছে। কে বল। চিকনা। উরি বাবা তুই জানলি কি করে। ওই যে বললাম। কখন সই করাবি। সব চলে এলে হবে। ইসলামভাই আশেপাশে আছে। হ্যাঁ। তোর ফোন বন্ধ। চার্জ নেই। ধর। বল অনি। আমি কি বলবো তুমি লেটেস্ট নিউজ দাও। দামিনী বুড়ী আমার কথা শুনলোনা। কেনো মেরে দিয়েছে। দেয়নি তবে দিয়েছে। সে আবার কি কথা। বুঝে নে। কবিতা কোথায়। সেও দামিনীর সঙ্গে। তুমি আর কি করবে। ঠিক। বেঁচে আছে না মরে গেছে। রতনের কথা অনুযায়ী আশি ভাগ মৃত। রতন কি করছিলো। দামিনীর কাছে ও শিশু। বুঝলাম। আছে কোথায়। দামিনীর ছাদে। দেখি কাজ সেরে একবার যাবো। যা। তোর কথা দামিনী শুনবে। ডাক্তার। কাল শরীর খারাপ হয়েছিলো। রতন ডাক্তার এনে দেখিয়েছে। কি হয়েছিলো। প্রেসার হাই। টেঁসে গেলে গন্ডগোল। টাঁসবেনা। ছোট ফিট আছে। হ্যাঁ। খেজুর রস খেলে। খেলাম। আজ দাদাদের বিকেলের দিকে পাঠাবো। আমি যদি আজ যাই ভালো না হলে কাল সকালে। আজ চলে আয়। না হবে না। দাদারা যাবে আমার যাওয়া হবেনা। কেনো। আরো কিছু কাজ আছে। পারলে আয়। দেখছি। আমার একটা টেনসন গেলো। হ্যাঁ। ঠিক আছে। বড়দি খোঁচা মারছে। দাও। দাদার সঙ্গে কথা বলবে। তোকে বলেছি। ভাবলাম সেই জন্য তাড়াহুড়ো করছো। কি করবি বলনা। এইতো ঘেনোর ঘেনোর শুরু করলে। বলনা। সম্পত্তির মালিক হবো। আমার প্রচুর টাকার দরকার।
বুঝেছি তুই বলবিনা। দে তোর দাদাকে দে। হ্যালো…..না আমি পারবোনা……..ও মল্লিককে বলেছে মল্লিক ম্যানেজ করেছে……নিরঞ্জনের আবার কি হবে…….দোষ করলে শাস্তি পেতে হবে……ঠিক আছে। দাদা মোবাইলটা পকেটে রাখলো। মল্লিকদা এবার তোমরটা বাজবে। কি করে বুঝলি। কথা বলে শান্তি হলোনা। নিরঞ্জনদা হো হো করে হেসে ফেললো। হ্যাঁরে সুরঞ্জনাকে তুই পরাস। না। ওই যে বললো তোর নোট। আমার কলেজের নোট গুলো দিয়েছি। তোর সঙ্গে আলাপ হলো কি করে। বুঝেছি তোমার খচ খচানিটা মনের মধ্যে রয়েগেছে। মল্লিকদা আর এক রাউন্ড হবে। কিরে তোরা এত সকালে। দেখলাম সন্দীপ দ্বীপায়ন আর সেই ছেলদুটো ঘরে ঢুকলো। তুমি কিছু জানোনা। না। ও সকালে ফোন করে ঘুম থেকে তুললো। বললো চলে আয়। কিরে কখন ফোন করলি। আমি বাক্স গোছাচ্ছি। সন্দীপ আমার পাশে এসে বসলো। কাজ করতে করতেই দ্বীপয়নকে বললাম। দ্বীপায়ন টেবিলটা একটু ঠিক করে আমার লেপটপের সঙ্গে স্ক্যানার আর প্রিন্টারটা রেডি করো। কিরে তোরা ভালো আছিস। হ্যাঁ। অনিদা। বোস। মল্লিকদা এইবার একটু ব্যবস্থা করো। তুই আগে বল। বলবো কেনো চোখের সামনে দেখতে পাবে। চাটা নিয়ে এসো তারপর কাজ আরম্ভ করবো। দাদা গুম হয়ে বসে আছে। আমি দাদার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে ফেললাম। তোমরা পাঁচজনে এই পাঁচটা আর্টিক্যাল লিখবে। তারমানে। ডকুমেন্ট দিচ্ছি। লিখে নেবে। ও হবেনা। তুই লিখে দিবি। কেনো। আমরা এসবের কি জানি। কালকে দুম করে বললি। ডাক্তার তোমার সার্টিফিকেটটা ভুয়ো। যা সত্যি তাই বললাম। এতদিন প্র্যাক্টিস করলো কেউ জানতে পারলোনা তুই জেনে ফেললি। ডাক্তার আমার কথার উত্তরে কি বললো। কি করে বলবো তোর সঙ্গে কথা হচ্ছিলো। তোমার বিশ্বাস হয়না। অবিশ্বাসও হয়না। ঘরের সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
খাট থেকে চিপটা তুলে সন্দীপকে বললাম দ্বীপায়নকে এটাদেতো নেটটা কানেকসন করুক। সন্দীপ উঠে চলে গেলো। আমি দাদার দিকে তাকিয়ে বললাম অনির সঙ্গে চ্যালেঞ্জ করে কোনোদিন জিততে পেরেছো। হেরেছি কবে। তারমানে। তোকে দিয়ে লিখিয়েছি। কাগজের মান বারিয়েছি। এ লেখা আমি লিখতে পারবোনা। হ্যাঁরে দ্বীপায়ন এটা কি কালার প্রিন্টার। হ্যাঁ দাদা। তোদের বুদ্ধি আছে। দ্বীপায়ন হাসলো। ছেলেদুটো আমার পেছনে খাটে বসেছে। অনিদা নেট কানেকসন করে ফেলেছি। দাঁড়া যাচ্ছি। আমি উঠে গেলাম নিজের মেল বক্স খুলে কালকের পাঠানো তনুর মেলটা থেকে সমস্ত ডাউনলোড করলাম। ডেক্সটপে রেখে দ্বীপায়নকে বললাম ফটোসপে খুলে সব দেখেনে। তারপর সব প্রিন্ট কর তিন কপি করে। সন্দীপের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেছে। তনু তোকে এইসব পাঠিয়েছে। হ্যাঁ। কিরে সন্দীপ। দেখবেন আসুন। দাদা ইজি চেয়ারে হেলান দিয়ে বসেছিলো। সন্দীপের কথায় তড়াক করে উঠে এলো। ভালো করে ডকুমেন্টসগুলো দেখে নিয়ে স্বগোতক্তির সুরে বললো। কেনো যে মেয়েটা চলে গেলো। না গেলে আমি এইসব মালপত্র পেতাম কি করে। তুইতো বলবি। কাগজের কতো খতি হয়েছে জানিস। তোমরা তাড়িয়েছো। আমি তাড়াইনি। ওই হলো আরকি। ঘরের বেড়াল পরের ঘরে খেতে যাবে কেনো। থাম বক বক করিসনা। সন্দীপ লেখাটার মধ্যে তানিয়ার নাম সৌজন্যে ঢুকিয়ে দিবি। কেনো মেয়েটকে জেল খাটাবার ইচ্ছে হয়েছে। ও কি তোমায় বলেছে দাদা এতো খাটা খাটনি করলাম আমার নামটা একটু কার্টসিতে ঢুকিয়ে দেবেন। দাদা চুপ করে গেলো। মল্লিকদা চায়ের ট্রে নিয়ে ঢুকলো। ছেলেদুটো এগিয়ে গেলো। অনি কি বলছেরে সন্দীপ। দেখবে এসো কি মাল অনি জোগাড় করেছে এতো মলের বাবা। মল্লিকদা ছুটে দ্বীপায়নের কাছে চলে গেলো। তাড়াতাড়ি কর দ্বীপায়ন। এখুনি সব এসে পরবে এখনো অনেকগুলো স্ক্যান বাকি আছে। খাম গুলো দেখা। দাদা বললো। সহ্য করতে পারবেনা। দেখানা। দাদার কাকুতি মিনতির ঢঙে নিরঞ্জনদা হাসছে। ওই দুটো ছেলে জানলার দিকে মুখ ফিরিয়ে মুখে হাত চাপা দিয়েছে। আমি একটা খাম এগিয়ে দিয়ে বললাম ডাক্তার পাঁচটা বিয়ে করেছে। এই খামে তার ডকুমেন্টস আছে। দাদা শুনে থ। বলিসকি পাঁচটা বিয়ে। মিথ্যে কথা বলছিনা। খামটা খোলো। দেখতে পাবে। মল্লিকদা দ্বীপায়নের কাছ থেক ছুটে চলে এলো দাদার কাছে। দাঁড়া কচুরি আনাই। এইতো ভদ্রলোকের মতো কথা। আমিকি এতদিন অভদ্র ছিলাম। আমি তোমায় অভদ্র বলিনি। দাঁড়া তোর ছোটমাকে রিপোট করছি। পারবেনা। বলেছিনা তোমরা পাঁচজন আমি একা। গোল করবোই। মল্লিকদা হো হো করে হেসে ফেললো। একটি ছেলেকে ডেকে বললো যাতো কচুরী নিয়ে আয়। বেসি করে নিয়ে আসিস। খিদে লেগেছে। দাদা আমার দিকে তাকালো।
কি বজ্জাত দেখেছিস। তুমি দেখো। পকেট থেকে তনুর চিঠিটা বার করলাম। হাতে দিয়ে বললাম। আন্ডারলাইন জায়গাগুলো পরবে আর এগোবে না। দাদা হাতে নিয়ে চশমাটা একবার ঠিক করলো। মল্লিকদা পেছনথেকে চিঠির ওপর চোখ রেখেছে। আমি তাকিয়ে আছি দাদার দিকে। নিরঞ্জন ঘুরে দাদার পেছনে দাঁড়ালো। সন্দীপও এসে দাঁড়ালো। সবাই চিঠির ওপর চোখ রেখেছে। প্রিন্টারের আওয়াজ হচ্ছে। তাকিয়ে দেখলাম প্রিন্ট বেরোচ্ছে। দাদার চোখের ভাষা বদলে যাচ্ছে। মল্লিকদার দাঁত কড় কড় করছে। দাদা চিঠি থেকে চোখ তুললেন। আমার দিকে তাকালেন। মনে হচ্ছে হাতের সামনে পেলে এখুনি গলা টিপে মেরে দিতাম। মল্লিকদা বললেন। ওই জন্যইতো কাল মার খেয়েছে। দাদা বললো। মল্লিকদা দাদার দিকে তাকিয়ে আছে। এর বেঁচে থাকা উচিত নয়। সমাজের কলঙ্ক। মেয়েটার কথা একবার ভেবে দেখো। মল্লিকদা বললো। তুই আমার ওখানে নিয়ে চল। খালের জলে মাছের খাবার করে দেবো। নিরঞ্জনদা বললো। সে ব্যবস্থা করার সুযোগ তুমি পাবেনা। তোর বড়মা কাল বলছিলো। তোর দামিনী এটাকে বাঁচিয়ে রাখবেনা। ডাক্তারকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে অনেক কাজ বুঝলে। তোর কথা আমি বুঝিনা। ধীরে ধীরে বুঝবে। এইবার এই চিঠির প্রমাণ দেখবে। না আর দেখবোনা। গা গোলাচ্ছে। দেখো উনি কিন্তু সমাজের উচ্চ বর্গের লোক। তোর বড়মা হলে বলতো ঝাঁটা মারো অমন উচ্চ বর্গকে। তুই এখনো চুপচাপ আছিস কি করে। মল্লিকদা দাঁত কড় কড় করতে করতে বললো। ডাক্তারকে শিখন্ডি করে আরো চারটে পাখিকে মারতে হবে। চারটে পাখি আবার কোথায় পেলি। আছে আছে সব জানতে পারবে। তবে কথা দিচ্ছি অনি নিজে কাউকে মারবেনা। ওরা কেউ জানে। কেউ জানেনা। খবর লিক হলে বুঝতে পারছো এই ঘরের সব কটাকে ধরবো। দেখি কে কতদিন পেটে খবরটা ধরে রাখতে পারো। তোকে কথা দিচ্ছি আমার পেট থেকে বেরোবেনা। দাদা বললো। মল্লিকদা। আমিও বলবোনা। নিরঞ্জনদা আমার বলার আগেই বললো। তোকে কথাদিলাম। মরার আগের দিন পর্যন্ত মুখ থেকে রা করবোনা। মনে থাকে যেনো। এবার তোমাদের আমাকে হেল্প করতে হবে। বল কি করবো। কলকাতা বাদে ডাক্তারের মোট ছটা নার্সিংহোম আছে আমাদের স্টেটে। কলকাতাটা এরা দুজন কভার করবে। বাকি ছটা বিশ্বস্ত লোক খুঁজে বার করো। যারা কভার করবে। কচুরীর ঠোঙা নিয়ে ছেলেটা ঢুকলো। দাঁড়া এখন কিছু বলিসনা। আমি ঝট করে নিচ থেকে প্লেট নিয়ে আসি। মল্লিকদা আমি যাবো তোমার সঙ্গে। ছেলেটা বললো। আয়। ওরা বেরিয়ে গেলো। অনিদা প্রিন্ট গুলো দেখবে। দে। দ্বীপায়ন প্রিন্ট গুলো নিয়ে এলো। দাদা সন্দীপ নিরঞ্জনদা হাতে তুলে নিয়ে দেখতে আরম্ভ করলো। দাদা দেখতে দেখতে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো। ওর আর কি বাকি আছে বলতো। হিসেব করো। বুঝেছিস নিরঞ্জন আমরা এই মালিকের আন্ডারে মাস ছয়েক আগেও কাজ করেছি। এ যদি এই বিষ হয় সুনিতদা আর অতীশবাবু কতো বড়ো বিষ ছিল একবার ভেবে দেখো। সুনিতদা আর বলিসনা সুনিত বল। এটা তোমার রাগের কথা। রাগ বলিস আর যাই বলিস। কম জালিয়েছে আমাদের। গোটা নিউজরুমটাকে ছাড়খাড় করে দিয়ে গেছে। সন্দীপ বললো। শুরু করে দিয়েছিস। মল্লিকদা হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকে বললো। নাগো তুমি এসো তারপর শুরু করছি আবার। সন্দীপ একটু হাত লাগা। সন্দীপ হাত লাগালো। আর একটা ছেলে উঠে এসে প্লেট সাজালো। দাদা। কি হোল। ছগনলালাকে চায়ের কথা বলে এলাম। বেশ করেছিস। সবার প্লেট গোছানো হয়ে গেলো। কচুরীতে একটা কামড় দিয়ে কথা বলতে গেলাম। দাঁড়া তোকে একটু ইন্টারাপ্ট করছি। মল্লিকদা বললো। বলো। কাউকে দরকার নেই তোর এই চেলা দুটোই সব করে ফেলতে পারবে। স্টেইন পরে যাবে। তোমাকে ভাবতে হবেনা অনিদা। তোমার কতদিনের মধ্যে চাই আগে বলো। বাহাত্তর ঘন্টা সময় তোদের দেবো। হয়ে যাবে। তুই ডিস্ট্রিক্ট গুলো বল। নিরঞ্জনদা বললো। আমি পর পর নাম বললাম। তোকে চিন্তা করতে হবে না। আমি অবাক চোখে নিরঞ্জনদার দিকে তাকালাম। তাকাসনা আমারও কিছু ক্ষমতা আছে। বলো। এই ডিস্ট্রিকগুলোর সভাধিপতিদের সঙ্গে আমার ভালো রিলেসন আছে। তাতে নিউজের শুবিধে হবেনা। বরং কেঁচে যাবে। কেনো। তুমি কি ভাবছো ডাক্তার কাঁচা খেলোয়াড়। টাকা খাওয়ার কথা বলছিস। আলবাৎ। দাঁড়া একটু ভাবতে দে। তুমি ভাবো। দেখ সর্বসাকুল্যে চারটে তোরা হাতের কাছে পেয়ে যাবি। কলকাতা থেক পঞ্চাশ কিলো মিটারের মধ্যে। বাকি তিনটে দূরে। দেখ কি করে কি করা যায়। ঠিক আছে আমি স্কিম করে নিচ্ছি। মল্লিকদা বললো। ছগনলাল ঘরে ঢুকলো। নীচের গেটে কালকের বাবু এসেছে। মল্লিকদা বারান্দায় গেলো। আমার দিকে তাকিয়ে বললো। হিমাংশু। কচুরী আছেরে। অনেক। ছগনলাল যাওয়ার সময় বললো চা এখানে নিয়ে আসবো।
হ্যাঁ এখানে নিয়ে আয়। দাদা বললো। আমরা কচুরীতে মনোনিবেশ করলাম। দাদার ফোনটা আবার বেজে উঠলো। দাদা আমার দিকে তাকিয়ে বললো। তোর বড়মা। কি বলি বলতো। কথা বলোনা। কি বলতে চায় দেখো। হ্যালো। ……..কি করবো কচুরীটা মুখে দিয়েছিলাম। না গিলে কথা বলি কি করে….হ্যাঁ অনি খেয়েছে।……তুমি তাড়াতাড়ি কথা শেষ করো।…..হ্যাঁ ঘোড়ায় জিন দিয়ে আছি।…..যা চোলে আমি আবার কি করলাম…..পারবোনা তুমি মল্লিককে বলো…..ধর মল্লিক। দাদা ফোনটা মল্লিকদার হাতে দিয়ে দিলো। মল্লিকদা আস্তে আস্তে বারান্দার দিকে চলে গেলো। হিমাংশু ঘরে ঢুকলো। হাঁসতে হাঁসতে আমাকে বললো। কাল সারারাত ঘুমোসনি। হাসলাম। আমারও ঘুম হয়নি। রেবা যখন রাগারাগি শুরু করলো। তখন ওকে গল্পটা বললাম। হাসতে হাসতে বললাম, রেবা কি বলে। আর কি অনিদার দম আছে। কচুরী খাবে হিমাংশু। হলে খারাপ হয়না। সকালে এককাপ চা খেয়ে চলে এলাম। ওরে সন্দীপ হিমাংশুকে দে। দাদা বললো। মল্লিকদা দেখি তখনো বারান্দায় দাঁড়িয় নীচু স্বরে কথা বলেই চলেছে। বুঝলাম ছোটমার সঙ্গে কথা বলছে। ড্রাফ্ট করেছিস না ফাইন্যাল করে নিয়ে এসেছিস। তুই পাগল হয়েছিস, ড্রাফ্ট বানিয়ে নিয়ে এসেছি। তোর সঙ্গে বসে ফাইন্যাল করবো। ভালো করেছিস। খেয়েনে। তারপর কথা বলছি। সত্যি হিমাংশুর খিদে পেয়েছিলো একসঙ্গে দুটো করে কচুরি মুখে দিয়ে তাড়াতাড়ি প্লেটটা খালি করে দিলো। মল্লিকদা ঘরে এলো। হাসি হাসি মুখ। কি রিলে করলে। পাগল হয়েছিস। ডজ করে বেরিয়ে গেলাম। খালি বললাম সব পজিটিভ। চিন্তার কোনো কারন নেই। মাথায় রাখবে। খবর আমার কাছে ঠিক চলে আসবে। যে যার মতো ঘুঁটি সাজাচ্ছে। সন্দীপ ছেলেদুটোকে নিয়ে আলাদা করে কথা বলছে। দ্বীপায়ন ল্যাপটপে বসে কাজ করে চলেছে। নিরঞ্জনদা চারিদিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। বল তুই কি গল্প লিখেছিস। হিমাংশুর দিকে তাকিয়ে বললাম। দুটো গল্প আছে নার্সিংহোমের ব্যাপারে। এক তুই সবকটা নার্সিংহোমের শেয়ার লিখিয়ে নিতে পারিস। না হলে খালি আমাদের স্টেটের গুলো লিখিয়ে নিতে পারিস। কেনো বলছিস বল। কালকে যা কাগজ পত্র ঘাঁটলাম তাতে বাইরের গুলো হলে বহুত ঝামেলায় পরবি। আমি মাথা দোলাচ্ছি। কিরে তোর মনের কথা বলতে পেরেছি। হুঁ। তোর বুদ্ধি খুলেছে। তোর সঙ্গে থেকে থেকে। তাই কর। ডাক্তারের পাঁচটা বিয়ে। যে কটার সঙ্গে বিয়ে করেছে সে কটার সঙ্গে পার্টনার শিপে নার্সিংহোম বানিয়েছে। এই কাজ উদ্ধার করতে গেলে সারা জীবন লেগে যাবে। তার থেকে বরং কিছু টাকা খিঁচে নেবো এই তালে। সেই ভালো। বাড়ি গুলোর ব্যাপারে। ওর বাড়িটা গন্ডগোলে। ওটা নিসনা। বরং মিত্রা যে বাড়িতে আছে সেটা লিখিয়ে নে। ঠিক আছে। নেক্সট। তোর শেয়ার ট্রন্সফারের সময় মিত্রাকে দিয়ে যেটা সাইন করিয়েছিলো সেটা রেস্ট্রি হয়নি। ওটা তোর নামে ডাইরেক্ট করে দিচ্ছি। সব ঘাঁত ঘুঁত বেঁধে কর। পরে যেনো ফেঁসে না যাই। আর একটা কাজ কর। বল। মিত্রার নামে ওর টোটাল প্রপার্টির একটা পাওয়ার অফ এ্যাটর্নি তৈরি কর। পরে বাকিটা আমি বুঝে নেবো। এটা মাথায় আসেনি। ভালো বুদ্ধি দিয়েছিস। নে কাজ শুরু করে দে। ওদিকে রতনরা ব্যস্ত হয়ে পরেছে। আমার ফোন বন্ধ। হেড অফিসে বার বার ফোন করছে। আমি বুঝতে পারছি। প্রিন্টার নিয়ে চলে এসেছি। তুই ঝট পট কাজ শেষ কর। দাদার দিকে তাকিয়ে বললাম তুমি সব একবার ভালো করে পোরে নাও। আমি বাথরুমে ঢুকি। যা।
আমি বাথরুমে চলে গেলাম। সারতে সারতে আধঘন্টা গেলো। বাইরে ওরা কথা বলছে। ছেঁড়া ছেঁড়া কথা আমার কানে আসছে। সব কথার মধ্যেই আমি আছি। হিমাংশু বেশ রসিয়ে কালকের ঘটনা সবাইকে বলছে। মাজে মাজে দাদা রেগে উঠে বলছে আরো ঘা দুচার দিতে পারতো। তবে কবিতা মেয়েটা বেশ স্টেট ফরোয়ার্ড। আমাকে বলে কিনা তুমি এর বেশি আর জানতে চেওনা। স্নানকরি আর নিজের মনে নিজে হাসি। আজ আমার পাশে কতো লোক। য়াকেই বলছি সেই আমাকে সাহায্যের হাত বারিয়ে দিচ্ছে। একদিন কলকাতার রাস্তার কলের জল পেট ভরে খেয়ে সারাটা দিন কাটিয়ে দিয়েছি। সেই দিনগুলের কথা মনে পরলে মনে হয়, না না এই জীবনে এই সব ঘটনা ঘটে নি। ওই ঘটনা গুলো আমার আগের জীবনের। কাল সারারাত ঘুমোইনি শরীরে জল পরতে কেমন সির সির করে উঠলো। মাঝে মাঝে মনে হয় আমি যা করছি সব ঠিক করছিতো। কোনো অন্যায় করছিনাতো। তারপর যখনি মিত্রার কথাটা মনে পরে যায়। ভেতরের সব রাগটা কেমন বাইরে বেরিয়ে আসে। আমি যা করছি ঠিক করছি। কোনো অন্যায় করছিনা। এক কথায় আমি নিজের জন্য কিছু করছিনা। আজ কেউ প্রশ্ন করলে কালকেই সব লিখে দিয়ে চলে যাবো। বাথরুম থেকে বেরোলাম। দাদা ইজি চেয়ারে বসে হেলান দিয়ে হিমাংশুর লেখা ড্রাফ্ট পরছে। দ্বীপায়নকে জিজ্ঞাসা করলাম দেখতো আমার মোবাইলটা চার্জ হয়ে গেছে কিনা। ও হাতে নিয়ে বললো হয়ে গেছে। আমি ছোটমার ঘরে গিয়ে জামা প্যান্ট পরে এলাম। মল্লিকদা হট ফ্লাক্স থেকে চা ঢেলে দিলো। কিরে হিমাংশু রেডি। হ্যাঁ দাদাকে দিয়েছি দাদা একবার পরে নিচ্ছে। আমি তাহলে ফোন করি। কর। আমি রতনকে ফোন করলাম। কিগো তেমার ফোন সকাল থেকে অফ কেনো। আর বলিসনা চার্জে বসিয়েছিলাম। তুই কোথায়। হোটেলে। ডাক্তারকে নিয়ে চলে আয়। ঠিক আছে। শোন সঙ্গে একটা গাড়ি এক্সট্রা গাড়ি নিয়ে আসিস। তোমাকে ভাবতে হবেনা। চলে আয়। হিমাংশুর দিকে তাকিয়ে বললাম। ম্যাডামকে একবার নক করে দে। নক করার দরকার নেই। প্রত্যুষ এখুনি চলে আসবে। ও নিয়ে আসবে সঙ্গে করে। দাদাকে বললাম তুমি রেডি হয়ে নাও। দাঁড়া আগে সই সাবুদ করি তারপর একবারে স্নান সারবো। আমি ডাক্তারের স্যুটকেস বার করলাম। চেক বই গুলো বার করলাম। দেখলাম প্রত্যেকটা চেক বইয়ে একজনের সই করা আছে। বুঝলাম সেই সব ভদ্রমহিলার। খালি ডাক্তারের সই করলেই হয়ে যাবে। মনে মনে বললাম শালা কতবরো ধুরন্ধর। এইরকম মানুষও পৃথিবীতে থাকে। ঘাঁটতে গেলে দেখবো, ওই মেয়েগুলোর অবস্থাও মিত্রার মতো। অনিদা। দ্বীপায়নের দিকে তাকালাম। ডাক্তার ব্লু ফ্লিমের স্যুটিং করছে তার ছবি দ্বীপায়ন স্ক্যান করছে। আমার দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো। এগুলো পরে করলে হবে। আমি বললাম না। একটু আড়াল করে কর। পারলে মল্লিকদার ঘরে চলে যা। দ্বীপায়ন হাসলো। আমি ওই ঘরে চলে যাই। যা। দ্বীপায়ন সব গুছিয়ে ও ঘরে চলে গেলো। হিমাংশু আমার কাছে এসে বললো। তুই একবার দেখে নে। আমি এখন দেখতে পারবোনা তোরা দেখ। পারলে মল্লিকদা নিরঞ্জনদা আছে। আমি বারান্দায় সন্দীপের কাছে গেলাম। কিরে বুদ্ধি খেলালি। হয়ে গেছে। কি হয়েগেছে। ওরা আজ কলকাতারটা আর কলকাতার কাছের নার্সিংহোম গুলো মেরে দিচ্ছে। ঠিক আছে। বাকি গুলো। কাল দুজনে একসঙ্গে বেরিয়ে যাবে। প্রথমে শিলিগুড় সারবে তারপর সিকিম ভুটান রায়গঞ্জ হয়ে মালদহে ঢুকবে। দাদারা আজ থেকে থাকবেনা। তুই থাকবিতো। হ্যাঁ। তাহলে আর কি আছে। আমার কোনো চিন্তা নেই। আমি শুক্রবার যাবো। ঠিক আছে। হিমাংশুকে বললাম তোকে কালকে যে জমিটার দলিল দিলাম ওটা করেছিস। হ্যাঁ ওটা হয়ে গেছে। ব্যাগে আছে। এখানে তিনজনে আছে। সই করিয়ে নে। বাকিটা নিরঞ্জনদাকে বুঝিয়ে দে। কালকে নিরঞ্জনদা সব ব্যবস্থা করবে। হিমাংশু দাদাদের দিয়ে সব সই করিয়ে নিলো। কিরে তুই করবিনা। ওটা আমার নয় তোমাদের। আমারটা আমি করে দিয়ে চলে এসেছি। একিরে তারপর আমাদের বাঁশ দিবি। তোমাকে দেবোনা। যাক তোর মুখ থেক এই কথাটা শুনে প্রাণ জোড়ালো। কি বলো হিমাংশু। হিমাংশু হাসছে। নিরঞ্জনদা টাকা বড়মার কাছ থেকে নিয়ে নেবে। কোনো ধারবাকি রাখবেনা। কাল থেকেই ওখানে ডেভালপের কাজ শুরু করে দেবে। ওখানকার ব্যাঙ্কে একটা এ্যাকাউন্ট করবে। সইয়ের অথরিটি তুমি দাদা ইসলামভাই। যে কোনো দুজন হলেই চলবে। হিমাংশু রেজুলেসন গুলো কোথায়। সব ফাইলে আছে। দাদা তুমি একবার ওটা পোরে নাও। দে বসে বসে তাই করি ডাক্তার কখন আসবে রে। চলে আসবে।
ছোটমার ঘরে গেলাম। দ্বীপায়ন তেড়ে স্ক্যান করে চলেছে। আমায় দেখে হেসে ফললো। কি দ্বীপায়নবাবু স্যার হাসছেন কেনো। তোমার কালেকসন দেখে। আমার কালেকসন! ঠিক বোলেছো। জানো দ্বীপায়ন এই ভদ্রলোকের মালিকানায় আমরা কাজ করেছি। এটা বিশ্বাস করো। আজ এই মূহূর্তে এইসব দেখার পর বিশ্বাস করতে অসুবিধে হচ্ছে। ভদ্রলোককে দেখে বোঝা যায় তার ভেতরটা এতো কালো। একবারেই না। আমিও প্রথম দিন বুঝতে পারিনি। মিত্রা যেদিন আমায় ক্যালকাটা ক্লাবে প্রথম আলাপ করিয়ে দেয় তখন ওনাকে অনেক ব্রাইট মনে হয়েছিলো। ভেবেছিলাম এতোবড়ো ডাক্তার ওনার সান্নিধ্যে এলাম এটাই ভাগ্যের ব্যাপার। সত্যি অনিদা যত দেখছি তত অবাক হয়ে যাচ্ছি। বুকের ভেতর থেকে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস বেরিয়ে এলো। ফোনটা বেজে উঠলো। পকেট থেকে বার করে দেখলাম মিত্রা ফোন করেছে। বাইরের বারান্দায় বেরিয়ে এলাম। হ্যালো। কাজ শেষ। শুরুই করলামনা। ইসলামভাই বড়মাকে বললো রতন নিয়ে চলে গেছে। এখনো এসে পৌঁছয়নি। তুই কোথায়। পাখির ডাক শুনতে পাচ্ছি। হো হো হো। হাসছিস কেনো। পুকুরপারে বাঁশবাগানের ভেতর। ওখানে কি করছিস। তোকে ফোন করবো তাই চলে এলাম। আমাকে ফোন করার জন্য বাঁশবাগানে! হ্যাঁ মশাই। ওরে আমাকে সবাই এখন ফলো করছে। তুই কাউকে কিছু বলছিসনা। এমনকি ছোটমা মল্লিকদাকে ফোন করেও কিছু বার করতে পারলোনা। দাদাতো বলেই দিলো অনিকে জিজ্ঞাসা করো। আমি হো হো করে হেসে ফেললাম। সবাই ভাবছে কি জানিস। কি। আমাকে তুই সব বলেছিস। আমি চেপে যাচ্ছি। কালকের কেশটা মিলিয়ে দিলাম। তোকে বলতেই ভুলেই গেছি। আমি হাসছি। সত্যি চিকনা কি জিনিষরে। কেনো। আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম। ও নিচ থেকে শুনেছে। কিন্তু পরিষ্কার শুনতে পায়নি বলে পেছনের চাল দিয়ে উঠে বারান্দার চালে এসে আমার কথা শুনেছে। তাহলে বুঝলি। বুঝলাম মানে। এবার তোর সঙ্গে কথা বলতে গেলে মাঝে মাঝে তোর মতো হতে হবে। কি রকম। এইযে বাঁশবাগানে চলে এসেছি। হাসছি। হাসিসনা।
বাঁশবাগান পারহয়ে তোর সেই খালের ধার পর্যন্ত চলে এসেছি। যেখান থেকে খালপার হয়েছিলাম। ফিরে যেতে পারবিতো। পারবো। বড়মা কি বলে জানিস। কি। আমাকে সকালে জিজ্ঞাসা করলো অনি তোকে কি বললো। আমি ডিনাই করে গেলাম। দেখলাম হুঁ বলে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকালো। বুঝেফেললাম খবর হয়ে গেছে। তারপর একফাঁকে চিকনাকে ধরলাম। কিছুতেই স্বীকার করবেনা। বললাম ঠিক আছে দাঁড়া তোর গুরু আসুক। আমি হাসছি। তখন আমার পায়ে হাত দিয়ে বলে ম্যাডাম অন্যায় নেবেননা বড়মার হুকুম। ব্যাশ তারপর থেকে এ্যাকটিং শুরু করেদিলাম। এইতো তুই পাকছিস। তোর মতো হতে পারবোনা। চেষ্টাকর ঠিক হবে। ঠিক। আবশ্যই। তারপর কাজ শেষ, সকলকে বলে দাও। তা বলে তোকে না বলে কোনো কাজ করবোনা। সেটা আলাদা ব্যাপার। রতন এলো বুঝলি। গেটে গাড়ি এসে দাঁড়িয়েছে। আমি এখন রাখি। তোর ঢ্যামনা বরটাও এলো। তুই এত নরম নরম গালাগাল দিস না আরো কঠিন কঠিন দে। ঠিক আছে। ঘন্টাখানেক বাদে করিস। আচ্ছা। আমি আমার ঘরে এলাম। দেখলাম সিঁড়ি দিয়ে রতন আবিদ ওর সাগরেদরা ডাক্তারকে নিয়ে ওপরে উঠে আসছে। ডাক্তারকে দেখে বেশ ঝক ঝকে মনে হচ্ছে। দাদাকে বললাম তোমার সব পড়া হয়ে গেছে। হ্যাঁ। খুব সুন্দর হয়েছে। ওরা এসে গেছে। নে নে কাজ শুরু করে দে। হিমাংশু ম্যাডামকে আনার ব্যবস্থা কর। প্রত্যুষ ডাইরেক্ট চলে গেছে। এখুনি এসে পরবে। রতন ঢুকলো। পেছন পেছন সবাই। কবিতাকে দেখতে পেলাম না। ডাক্তারকে দেখেই আমার মুখের জিওগ্রাফি বদলে গেলো। ডাক্তার ঘরে ঢুকেই দাদার পায়ে হাত দিয়ে ঝড় ঝড় করে কেঁদে ফেললো। দাদাও ডাক্তারের ব্যবহারে কিংকর্তব্য বিমূঢ়। আমায় খমা করুন দাদা আমি অনেক পাপ করেছি। মল্লিকদা গরম খেয়ে গেলো। আপনি পাপী নন নরকের কীট। আবিদ তেড়ে এসেছিলো। রতন কোনো প্রকারে ধরে ফেললো। দাদা মুখে কিছু বলতে পারছেনা। ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে আছে। আপনি আমাকে এদের হাত থেকে বাঁচান দাদা। আমি পারবোনা অনি পারবে। অনি আমাকে মেরে দেবে। আমি কি করবো। অন্যায় করেছেন। আপনারও শুনেছি প্রচুর ক্ষমতা। যাদের ওপর নির্ভর করে আমি ক্ষমতা দেখাতাম তারা অনির খাস লোক। আমি আর থাকতে পারলাম না। উঠুন অনেক নখরামি করেছেন এবার ভালোয় ভালোয় সই করে দিন। তুমি যা বলবে সব সই করে দেবো। আমায় আজ ছেড়ে দাও। দেবো। আবিদ টেনে হিঁচড়ে দাদার পা থেকে ডাক্তারকে তুললো। যা বলবে অনিদা মুখ বুঁজে তাই করে যা। কালকে থেকে অনেক কিছু সহ্য করছি। হিমাংশু। বল। ডাক্তারের সই সাবুদ আগে সেরে নে। ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে বললাম ওপাশে চলে যান। হিমাংশু যা যা বলছে সেখানে সই করুন। আমার গলার স্বরে এমন কিছু ছিলো দাদা নিরঞ্জনদা মল্লিকদা আমার দিকে চমকে তাকালো। ডাক্তার শুর শুর করে হিমাংশুর দিকে চলেগেলো। একবার ভালো করে পরিয়ে নিবি। রতনের দিকে তাকিয়ে বললাম রতন এদিকে একবার আয়। আমি বাইরের বারান্দায় এলাম। রতন আমার পেছনে। ইসলামভাই-এর সঙ্গে কথা হয়েছে। হ্যাঁ। তোমাকে কিছু বলেনি। সাগির অবতারের ব্যাপারে বললো। আমরা যাওয়ার আগেই আধমরা করে দিয়েছে। বাঁচবে। বলতে পারবোনা। কেনোরে। কালকেই শেষ করে দিতো। তুই কি করছিলি। তুমি আমার কথা বলছো। দামিনী মাসি আমাকে পাত্তাদেবে। তাহলে তুই এতদিন কি করলি। রতন হাসলো। তুমি আর আমি। দামিনী তোমার কথা তবু শুনবে আমার কথা……। কাজ শেষ হোক একবার যাবো। কথা বলে তুই কি বুঝলি। একটাই ভুল কাজ করেছে। আমাদের গ্যাংয়ের কিছু ছেলেকে ডাক্তারের সেই লোকের কাছে পাঠিয়েছে। কারা কারা খুঁজে পেয়েছিস। আবিদ কাল রাতেই খুঁজে বার করেছে। ডাক্তার। অনেক ফোন কাল থেকে এসেছে। তোমায় শোনাবো। সব রেকর্ড করে রেখেছে আবিদ। তুমি বুঝতে পারবে। অনিদা হিমাংশুদা ডাকছে। আবিদ এসে বললো। আমি ভাতরে গেলাম। কিরে হিমাংশু। ডাক্তার কি বলে শোন। কি হয়েছে। তুমি সব লিখিয়ে নেবে। বেশি কথা বলার সময় নেই। যা বলছি করুন। তোমায় একটা কথা বলি শোনো। দ্বীপায়ন ছবিগুলো নিয়ে আয়তো। ইস তুমি ওগুলোও পেয়ে গেছো। কেউ এখনো দেখেনি দ্বীপায়ন ছাড়া। ঠিক আছে। ঠিক আছে করে দিচ্ছি। সই করে দিলে সব আমায় ফেরত দেবেতো। সেটা পরে ভাবা যাবে। দাদা আপনারা ঘরের বাইরে জানতো কাজের বহুত অসুবিধে হচ্ছে। অবিদ বাজখাঁই গলায় চেঁচিয়ে উঠলো। দাদা উঠে দাঁড়ালো। ডাক্তার দৌড়ে এসে দাদার পায়ে ধরে হাউ হাউ করে কেঁদে ফললো দাদা আপনি যাবেন না। আর কি বাকি রেখেছেন। হিমাংশুর হাত থেকে দলিলগুলো নিয়ে ডাক্তারের কাছে এগিয়ে দিলো। সই কর। ডাক্তার আবিদের দিকে একবার তাকালো। কাল রাতের কথা মনে আছে তো। মনে আছে ভাই। ডাক্তার কাগজনিয়ে সই মারতে শুরু করলো। হিমাংসু পাশে দাঁড়িয়ে।
আমি হিমাংশুকে বললাম আগের সই-এর সঙ্গে এই সইগুলো মিলিয়ে নে। আমি কিছুই বিশ্বাস করিনা। হিমাংশু সব দেখে নিলো। পাওয়ার অফ এ্যাটর্নিটা সই করা। ওটা আগে করিয়ে নিয়েছি। তখন কিছু বলেনি। মিত্রার নাম লেখা ছিলোনা। আস্তে করে বললাম হারামী। চেকের এ্যামাউন্টগুলো বলে দিয়ে সই করা। আমার কাছে কোনো টাকা নেই অনি। সব আছে এখুনি বেরিয়ে যাবে দেখবেন বিট পরুক। বিশ্বাস করো। দাদা তোমরা বেরওতো। হিমাংশু ওই ঘরে গিয়ে দাদাদের সই করা। আমার গলার স্বরে এমন কিছু ছিলো দাদা আমার দিকে একবার ফ্যাল ফ্যাল করে তাকালো। ধীর পায়ে ঘরের বাইরে চলে গেলো। আবিদ দরজা জানলা বন্ধ কর। আবিদ তুরন্ত কাজ শুরু করে দিলো। বল এবার তোর কথা। এই প্রথম আমি ডাক্তারকে আপনি আজ্ঞা ছেড়ে একবারে তুইতে নেমে গেলাম। আবিদ রতন দুজনেই আমার দিকে একবার তাকালো। বুঝলো আজ অনিদা আরো বেশি ডেঞ্জার। তুমি বিশ্বাস করো অনি। বিয়ে করা বউকে টোডির বিছানায় তুলেছিলি কেনো। আমি তুলি নি। ঠাস করে ডাক্তারের গালে একটা থাপ্পর মারলাম। শুয়োরের বাচ্চা। এই প্রথম রতনদের সামনে আমি মুখ খিস্তি করলাম। ওরা ফ্যালফ্যাল করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। খানকির ছেলে। সিডিটা কোথায়। জানি না। আবার একটা থাপ্পর। বল কোথায়। বলছি। সজোরে একটা ঘুসি ডাক্তারের মুখে আছড়ে পরলো। নাক দিয়ে ঝড় ঝড় করে রক্ত পরতে লাগলো। তলপেটে অটোমেটিক পাটা চলে গেলো। আমার রুদ্রমূর্তি দেখে আবিদ আমাকে জাপ্টে ধরে ফেললো। খানকির ছেলে। তুমি ঘুঘু দেখেছো এখনো ফাঁদ দেখোনি। অনিদা তুমি থামো আমরা আছি। রতন আমাকে জাপ্টে ধরে আছে। শুয়োরের বাচ্চা তোর অনেক নখরামি সহ্য করেছি। পঁয়তাল্লিশ দিন ধরে তোর ওপর আমি হোম ওয়ার্ক করেছি। আমি এই টুকুতে হাঁপিয়ে গেছিলাম। ডাক্তার মাটিতে পরে কাতরাচ্ছে। যা বলবো তাইতে সই করে দে নাহলে এখুনি দুনিয়া থেকে তোকে ওপারে পাঠিয়ে দেবো। আবিদ চেক বইগুলো নিয়ে আয়। আবিদ বলার সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুললো। দেখলাম গেটের মুখে সবাই ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে। দাদা দৌড়ে ভেতরে এলো। চোখ দুটো ছল ছল করছে। তোর কিছু হয়নিতো। কথা বলতে গিয়ে গলাটা ধরে এলো। না। তুমি এখন চলে যাও। ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে বললো। আপনি ছেলেটার লাইফটা একেবারে শেষ করে দিলেন। ডাক্তার ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। নাকের ডগা দিয়ে রক্ত চুঁইয়ে চুঁইয়ে পরছে। হিমাংশু এলো। ম্যাডাম সব রেস্ট্রি করে দিয়েছে। ওনার থাম্ব ইম্প্রেসন দরকার। নিয়ে নে। প্রত্যুষ ছুটে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। মল্লিকদা আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
রতন আমার পাশে। দাদা তুমি শান্ত হও। গাড়ি রেডি রাখ এখুনি ওর বাড়িতে যাবো। আজই এই খেলা শেষ করবো। আরো অনেক মাল আছে। আমায় গিয়ে ঘাঁটতে হবে। তুমি বিশ্বাস করো। দিকবিদিক জ্ঞনশূন্য হয়ে পাটা সজোরে ছুঁড়েদিলাম ডাক্তারের দিকে। রতন ধরে ফেললো। প্রত্যুষ ঘরে ঢুকলো কাগজগুলো নিয়ে। আবিদ ডাক্তারের আঙুলে কালি লাগিয়ে থাম্ব ইমপ্রেসন নিয়ে নিলো। হিমাংশুর দিকে তাকিয়ে বললাম সব ভালো করে দেখে নে। কিছু যেনো বাকি না থাকে। এ মলের থেকেও বিষধর সাপ। ছোবোল খাওয়ার আগে আমি ওর বিষদাঁত সব কটা ভেঙে দেবো। হিমাংশু মাথা নীচু করে আছে। চেক বইগুলো নিয়ে আয়। প্রত্যুষ বেরিয়ে গেলো। হিমাংশু আমার কাছে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলো। তুই একটু শান্ত হ। শান্ত কিরে তোদের এখনো অর্দ্ধেক কথা বলিনি। বললে এখুনি রতন ওকে মেরে দেবে। রতন মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে। চোখ দুটো জবা ফুলের মতো লাল ডগডগে। দাঁতের পাটি দুটো একবার ফুলে উঠছে আবার সমান হচ্ছে। প্রত্যুষ চেক বই নিয়ে ঢুকলো। আমি হাতে নিয়ে বললাম মিত্রার নামে প্রতিটা চেক বই থেকে দশ কোটি টাকা করে লেখ। বিশ্বাস করো সব কটাতে নেই। আমার আশি কোটি টাকা চাই। কিভাবে দিবি আমি জানি না। আমি তিনটে চেকে দিয়ে দিচ্ছি। তাই দে। হিমাংশু। একটা স্ট্যাম্পপেপারের ওপর লিখিয়েনে ওই নার্সিংহোমগুলোর শেয়ার কোনোদিন মিত্রা ডিমান্ড করবেনা। তার বিনিময়ে এই টাকাটা ও দিচ্ছে। লিখছি। একটু জল খাবো। জল মদ মেয়েছেলে সব তোকে দেবো। আগে অনিদা যা বলছে তাই করেদে। তারপর। রতন খুব ধীর স্থির ভাবে বললো। সন্দীপ কোথায়। বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। দাদা বললো। আমি বাথরুমে গেলাম। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না। বুকের ভেতরটা ভীষণ যন্ত্রণা করছে। ক্লাস টেনে পরার সময় একবার চিকনাকে ধরে খুব মেরেছিলাম। ওটাই আমার জীবনের কাউকে শেষমারা। চিকনা একটা অন্যায় কাজ করেছিলো বলে। তারপর পীরসাহেবের থানে এসে খুব কেঁদেছিলাম। আমার হাতদুটোকে তুমি পঙ্গু করে দাও যেনো আমি কাউকে কোনোদিন মারতে না পারি। অনাদি বাসু সেটা দেখতে পেয়ে আমাকে বুঝিয়েছিলো। তুইতো অন্যায় করিসনি। চিকনা স্বীকার করে নিয়েছে। তুই বিশ্বাস কর। আজ আমার পাশে অনাদি বাসু কেউ নেই। আজ আমাকে বোঝাবার কেউ নেই। আমার পাশে কেউ নেই। হাতের কাছে নেই পীর সাহেবের থান। চোখ বন্ধ করে অশ্বত্থ গাছটা দেখতে পেলাম। ঝড় ঝড় করে কেঁদে ফেললাম। কতক্ষোণ বাথরুমে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কেঁদেছিলাম জানিনা। দরজা ধাক্কাবার শব্দে আমার হুঁশ হলো। কিরে অনি দরজা খোল। দাদার গলা। অনি এই অনি কথা বলছিসনা কেনো।
ধরা গলায় বললাম, খুলছি দাঁড়াও। আমি ভালো করে চোখ মুখ ধুয়ে দরজা খুললাম। আমার ঘরে তখন সবাই দাঁড়িয়ে আছে। ডাক্তার সামন্ত এসেছেন। ডাক্তারদাদা আমাকে দেখেই এগিয়ে এলেন। রেজিস্ট্রার ম্যাডাম এগিয়ে এলেন। আমি মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছি। মুখ তুলতে পারছিনা। তুমি কষ্টপেওনা অনি কাল থেকে দেখছি এই বাড়িতে একটা হুলুস্থূলুস কান্ড চলছে। আমার মাথা নীচু। রাতে কিছু বুঝতে পারিনি। আজ নিজে থেকে চলে এসেছি। ভাবলাম তোমার বান্ধবীর আবার কিছু হলো কিনা। এসে দেখলাম এই অবস্থা। অমিতাভ আমাকে সব বলেছে। ডাক্তারকে আমি খুব ভালো করে চিনি। ও আমাদের এ্যাসোসিয়েশনের সদস্য। যেনো মনে হচ্ছে আমার কান দিয়ে কিছু ঢুকছেনা। আমি তোমাকে ওর ব্যাপারে আরো হেল্প করবো। কথা দিচ্ছি আজই ওর রেজিস্ট্রেসন আমি ক্যানসেল করার ব্যবস্থা করছি। ওযে এতটা নীচ জানতাম না। তুমি স্ট্রং ম্যান। ভেঙে পরলে চলবেনা। অমিতাভ ওকে নিচে নিয়ে যাও। আবিদ রতনের দিকে তাকালাম। ওরা মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আমার এই অবস্থাটা ওরা সহ্য করতে পারছেনা। ওদের চোখে মুখে ফুটে উঠেছে। কিন্তু কিছু করার নেই এই পরিবেশ ওদের মতো নয়। আমি নিচে চলে এলাম। আমার পেছন পেছন নিরঞ্জনদা মল্লিকদা রেজিষ্ট্রার ম্যাডাম। বুঝলাম হিমাংশু রেজিষ্ট্রার ম্যাডামকে সমস্ত ঘটনা বলেছে। সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামলাম। বাগানের রাস্তায় চারটে গাড়ি দাঁড়িয়ে। গেটের বাইরে আরো দুটো গাড়ি। গাড়ির মধ্যে কয়েকটা ছেলে তাকিয়ে তাকিয়ে ওপরের দিকে দেখছে। চোখে মুখে চাপা টেনসন। খালি নির্দেশ পাওয়ার অপেক্ষা। আমি নিচের ঘরের সোফায় এসে মাথা নীচু করে বসলাম। ম্যাডাম আমার পাশে বসলেন। নিরঞ্জনদা এক গ্লাস জল এনে দিলেন। আমি টেবিলে রাখতে বললাম। খেয়ে নে। মল্লিকদা বললেন। আমি জলটা খেলাম। বুঝতে পারছি আমার চোখ মুখ জবাফুলের মতো লাল। নিজের চেহারাটা নিজে দেখতে পাচ্ছিনা। তবে সবার চোখ দিয়ে নিজের চেহারাটা দেখতে পাচ্ছি। নিরঞ্জনদা রান্নাঘরে গেলো। বুঝলাম চা করেছে। মল্লিকদাও রান্নাঘরের দিকে গেলো। তোমায় চিন্তা করতে হবেনা অনি। আমি আইনত যা যা করার দরকার করে দিয়েছি। হিমাংশু আমাকে সমস্ত ঘটনা বলেছে। ম্যাডাম আমার পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে বললেন। আমি খুব খারাপ কাজ করে ফেললাম ম্যাডাম। একটুও খারাপ কাজ করোনি। যা করেছো ঠিক করেছো। বরং কম করেছো। না ম্যাডাম। মুখে হাত চাপা দিলাম। এই দেখো পাগলামো করে। মল্লিকদা বললেন। আমি মুখে হাতচাপা দিয়ে নিচু হয়ে বসে আছি। তোরা ষন্ডামার্কা গুলো কি করতে আছিস। তোদের তাহলে কি করতে পাঠিয়েছি। পুঁচকে একটা ছেলে যদি সব চাপ নেবে তোরা ঘোড়ার ঘাস কাট ময়দানে গিয়ে। গলাটা শুনে মাথা তুললাম। এই বাজ খাঁই গলা দামিনী মাসির ছাড়া আর কারুর নয়। উঠে দাঁড়ালাম। মাসি এখানে কেনো! এটা ডাক্তার। হ্যাঁ। রতনের গলা। তোকে কুত্তার মতো মেরে দেবো। তোর কতোবরো ক্ষমতা আমি দেখবো। অনি কোথায়। নিচে। ছেলেটাকে তোরা শান্তিতে একটু বাঁচতে দিবিনা। সারাটা জীবন তোদের জন্য করে যাবে। গলাটা সামান্য ধরে এলো। আমি তাড়াহুড়ো করে ঘরের দরজা দিয়ে সিঁড়িরা কাচে এলাম। দেখলাম আমার সামনে দামিনী মাসি। এই দামিনী মাসিকে আমি আগে কখনো দেখিনি। পাটভাঙা লালপার তাঁতের শাড়ি পরেছে। বাড়িতে মায়েরা যেরকম আটপৌরে ঢঙের কাপর পরে সেই রকম। একেবারে বড়মার মতো লাগছে। মাথায় ডগডগে সিঁদুর। পেছনে কবিতা দাদা সামন্ত ডাক্তার হিমাংশু সন্দীপ। সিঁড়ির ওপর দাঁড়িয়ে। রতন আর আবিদকে দেখতে পেলামনা। আমি দামিনী মাসিকে জড়িয়ে ধরলাম। দামিনী মাসির স্নেহভরা হাত আমার পিঠে। কেঁদে কেঁদে মুখটা কেমন করেছিস দেখেছিস। তুইতো কাঁদার ছেলে নোস। বল আমাকে সব কথা।
আমি দামিনী মাসির কাঁধে মুখ রেখে চোখ বন্ধ করলাম। তোর দামিনী মাসি এখনো মরেনি। মাসি মায়ের সমান। আমার কাছে জীবনের আঠারোমাস কাটিয়েছিস। বল আমাকে সব কথা। আমি দামিনী মাসির কাঁধ থেকে মুখ তুলছিনা। বুঝতে পারছি চোখ দিয়ে ঝড় ঝড় করে জল গড়িয়ে পরছে। রতন। দামিনী মাসির গলার শব্দে সারাটা বাড়ি কেঁপে উঠলো। ওপর থেকে রতন যাই বলে ছুটে চলে এলো। ওপরের ঘরটা খালি কর। আমি অনির সঙ্গে একা কথা বোলবো। ডাক্তারকে আমার গাড়িতে তোল। কবিতা। হ্যাঁ মাসি। যাঁরা এসেছেন দাদাদের সঙ্গে হাতে হাতে কাজ করে চা জলের ব্যবস্থা কর। আবিদ। ওপরে আছে। রতন বললো। কাউকে দিয়ে মিষ্টি আনা। আজকের শুভ দিনে সবাইকে মিষ্টি মুখ করা। আচ্ছা মাসি। আমার পিঠে হাত দিয়ে বললেন। চল আমার সঙ্গে তোর ঘরে। মাসির সঙ্গে সিঁড়ি ভেঙে ওঠার সময় সবার দিকে তাকালাম। ওরা কেমন যেনো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। দাদার চোখ দুটো ছল ছল করছে। সামন্ত ডাক্তার চোখ থেকে চশমা খুলে আঙুল দিয়ে মুছলেন। ওপর তলার সিঁড়ির মুখে আসতেই দেখলাম রতন আবিদ ডাক্তারকে কুত্তার মতো কলার ধরে টানতে টানতে নিচে নামাচ্ছে। আমরা ওপরে গেলাম। তোর ঘরটা খুব সুন্দর। ভজু কোথায় শোয়রে। আমি আঙুল তুলে জায়গাটা দেখালাম। আমি না থাকলে আমার ঘরে। গলাটা ধরে এলো। ঠিক জায়গায় শোয়। এখন শীত পরেছে বলে বড়মা ওকে নিচের ঘরে থাকতে বলেছে। ও। আমি দামিনী মাসিকে নিয়ে খাটে বসলাম। তোর ফোনটা থেকে একবার ইসলামকে ফোন কর। ভয়েজ অন করে দিই। দে। আমি ডায়াল করলাম। রিং বাজতেই ইসলামভাই কথা বলে উঠলো। হ্যাঁ বল অনি। ইসলামভাই-এর গলাটা ধরা ধরা মনে হলো। আমি দামিনী। বলো মাসি। তুই সব জানিস। জানি। এখনকার ঘটনা সব শুনলাম। এখুনি যেতে ইচ্ছে করছে। খালি অনির কথামতো এখানে পরে রয়েছি। ও যা বলছে শুনে যা। শুনছিতো। হ্যাঁ শুনবি। আর আজ থেকে তোকে অনির বিষয়ে মাথা ঘামাতে হবেনা। আমি দায়িত্ব নিলাম। ও আমার ছেলে এটা মনে রাখিস। আমার ছেলের খতি করে কেউ আমার হাত থেকে রেহাই পাবেনা। আমার জন্য কিছুটা রেখো। ভেবে দেখবো। এখন রাখছি। অনি কোথায়। আমার সামনে বসে আছে। একটু কথা বলবো। এখন না। আমি ওর ঘরে বসে আছি। কথা বলছি। ওখানে যারা আছেন তাদের বলে দিবি কোনো চিন্তা করতে হবে না। দামিনী মরে যায়নি। তোমার কথা সবাই শুনছে। ঠিক আছে। এখন রাখ। আধঘন্টা বাদে অনির ফোনে ফোন করবি। আচ্ছা। কবিতা মিষ্টি জলের গ্লাস নিয়ে ঢুকলো। সবাইকে দিয়েছিস। হ্যাঁ। দিয়ে কাজ সেরেছিস না খাইয়েছিস। সবাই খেয়েছে। তুমি গিয়ে দেখো। নিচে যা। কবিতা ট্রেটা রেখে চলে গেলো। নে মিষ্টি মুখে দিয়ে সব বল। তুমি খাও। খাচ্ছি। আমি একটা মিষ্টি মুখে দিলাম। জল খেলাম। একে একে দামিনী মাসিকে সব খুলে বললাম। দামিনী মাসির চোখ মুখের চেহারা বদলে গেলো। কাগজ গুলো তোর কাছে সব আছে। আছে। মিত্রার ছবিগুলো। আমার কাছে। ভিডিও ওর বাড়িতে আছে। স্বীকার করেছে। হ্যাঁ। তোকে চিন্তা করতে হবেনা। ওটা উদ্ধারের দায়িত্ব আমার। তুই এখন কি করতে চাস। কালকে ওখানে ওই ব্যাপার গুলো রেস্ট্রি আছে। দাদারা যাবে। আমাকে লেখাগুলো লিখে ফলতে হবে। এখন ছাপিসনা। আমি দামিনী মাসির দিকে তাকালাম। আরো গল্প আছে মনে হচ্ছে। আমাকে একটু খোঁজ খবর নিতে দে। তুমি বলো। তুই দাদাদের সঙ্গে চলে যা। সবাই চলে গেলে কাগজ চলবেনা। বুঝতে পারছোনা। ঠিক আছে আমি দাদার সঙ্গে কথা বলবো। বলো। মন খারাপ করিসনা। কি করবি। মেয়াটার ভাগ্য আমি তুই লিখি নি। ওর ভাগ্যে যেটুকু ছিলো সে টুকু ঘটেছে। আর ঘটবেনা। আমি মাথা নীচু করে দাঁড়ালাম। ও আদৌ সিডিটা বাজারে ছেড়েছে কিনা কি করে জানবো। সব জেনে নেবো। কবিতা চা নিয়ে এলো। খাটের ওপর রাখলো। কবিতা দাদাদের একটু ডাক। কবিতা নিচে চলে গেলো।
একটু পরে দাদা মল্লিকদা নিরঞ্জনদা সামন্ত ডাক্তার এলেন। দাদা ঘরে ঢোকা মাত্র দামিনী মাসি দাদার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো। সামন্ত ডাক্তারকে প্রণাম করলো। নিরঞ্জনদা মল্লিকদার দিকে তাকিয়ে হাতজোড় করে নমস্কার করলো। আপনারা আমার থেকে অনেক ছোটো তাই প্রণাম করলাম না। ঠিক আছে ঠিক আছে। ডাক্তার বাবু আপনি আমাকে চিন্তে পারবেন না। আপনার গল্প নিচে শুনলাম। আমিতো অবাক হয়ে যাচ্ছি। আপনি আমার ছেলেকে সুস্থ করে তুলছেন। কে ? ভজুর কথা বলছেন। বড়ো ভলোছেলে। হ্যাঁ। তাছাড়াও আমি বহুবার আপনার শ্যামবাজারের চেম্বারে গেছি। আমি দামিনী মাসির দিকে তাকালাম। এ দামিনী মাসি আমার পরিচিত নয়। একেবারে অপরিচিত। অনি তুই বাইরে যা। আমি বাইরে বেরিয়ে এলাম। সন্দীপ দাঁড়িয়েছিলো। হিমাংশু কোথায়। ম্যাডামকে এগিয়ে দিতে গেছেন। সিগারেট আছে। আছে। একটা দিবি। দেবো। চল ওই দিকটায় যাই। বউকে ফোন করেছিলি। করেছিলাম। সব কথা বলার দরকার নেই। কিছু কিছু বলেছি তাতেই রেগে টং। পারলে এখুনি এসে গলা টিপে দেয়। ছেলে দুটোকে কোথায় পাঠিয়েছিস। তোর কথা মতো কাজে পাঠিয়ে দিয়েছি। অফিস সামলাচ্ছে কারা। লোক আছে তোকে চিন্তা করতে হবে না। সিগারেট ধরালাম। ওই ঘর থেকে হাসাহাসির শব্দ শুনলাম। বুঝলাম দামিনী মাসি বেশ জমিয়ে নিয়েছে। কবিতা সিঁড়ি দিয়ে উঠে ওই ঘরে চলে গেলো। আবার কিছুক্ষণ পরে বেরিয়ে এলো। রতন গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। ডাক্তারকে কোন গাড়িতে রেখেছে বুঝতে পারলাম না। সব গাড়িরি কাঁচ তোলা। রতন কাকে যেনো ফোন করছে। তুই কয়েকদিন কাগজটা টেনে দিতে পারবি। তুই নিশ্চিন্তে থাক। এখন কাগজের যা পরিস্থিতি যাকে যা বলবো তাই করবে। কেনো। তোর সঙ্গে আমার রিলেসন। ব্যাপারটা ভারি মজার তাইনা। মজার মানে। সুনিতের মালগুলোও তোকে ধসে। আমি দাদা মল্লিকদা নিশ্চিন্তে যেতে পারি। যা। আর পারছিনা। জানি। তুই বলে তবু টানছিস। অন্য কেউ হলে পটকে যেতো। আমি বললে ভুল হবে। আমার সঙ্গে আরো অনেকে আছে। দামিনীমাসী তার মধ্যে প্রথম। জানিস এই দামিনী মাসিকে নিয়ে একটা সম্পূর্ণ উপন্যাস লিখে ফেলা যায়। তোর মুখ থেকে ভদ্রমহিলার গল্প শুনেছি। আজ চাক্ষুষ দেখলাম। কি বুঝলি। তোর গল্পশুনে ওনার সম্বন্ধে একটা ছবি চোখের সামনে ছিল আজ সেটা একেবারে মিললোনা। হাসলাম। দাদা নিচে বলছিলেন ওনার সম্বন্ধে। শুনলাম। ডাক্তার সামন্ত খুব ইমপ্রেসড হয়ে গেলেন ওঁর কথা শুনতে শুনতে। সন্দীপ সিগারেটে সুখ টান দিলো। কি জানিস অনি আমরা বাইরে থেকে একটা মানুষকে খুব তাড়াতাড়ি বিচার করে ফেলি। কিন্তু যখন ভেতরে ঢুকি তখন সাগর মহাসাগর। এপার ওপার দেখা যায়না। ডাক্তারদাদাকে দেখেছিস। দেখলাম। অতোবড়ো একজন ডাক্তার কি সিমপিল। এরা কোনোদিন আমাদের সমাজে দাম পেলোনা। আর গান্ডুটাকে দেখ।
সন্দীপ সিগারেটটা আঙুলের ডগা দিয়ে বাগানে ছুঁড়ে ফেলেদিলো। যতো ভাববি তত জালে জড়াবি। তার থেকে কাজ করে যাই কপালে যা লেখা আছে তা হবে। কপালের নাম গোপাল। সন্দীপ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলো। অনিদা চা। পেছন ফিরে দেখলাম কবিতা। চায়ের কাপটা ওর হাত থেকে নিলাম। মুচকি মুচকি হাসছে। হাসছিস কেনো। তোমার হবে দাঁড়াও। কেনো। ওখানে সব তোমাকে নিয়ে আলোচনা চলছে। আজ থেকে তোমার সমস্ত ব্যাপার দামিনী মাসি দেখবে। সাগির অবতারের খবর কিরে। তুমি বললেও ওরা বাঁচবেনা। দামিনী মাসিকে আমার থেকে তুমি ভালো করে চেনো। জানি। খুব খারাপ লাগছে। তুমি ভালো মানুষ তাই। হাসলাম। কবিতা চলে গেলো। সন্দীপ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কি পরিষ্কার ভাবে বলেদিলো মাইরি। ওরা পথের কাঁটাকে কখনো জিইয়ে রাখেনা। বিশ্বাসঘাতককে প্রশ্রয় দেয় না। ওর কথার সারমর্ম তাই বলে। আমার ঘর থেকে সবাই হাসতে হাসতে বেরোলো। আমি ওদের দিকে তাকালাম। এদিকে আয়। দামিনী মাসি ডাকলো। আমি এগিয়ে গেলাম। দাদারা কথা বলতে বলতে পাশ দিয়ে চলে গেলো। মল্লিকদা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। সকাল থেকে কিছু খাসনি। কেউই খাইনি। স্নানকরে খেয়ে নে। দাদারা এখন চলে যাক। তুই কাল সকালে যাবি। আমি সন্ধ্যের সময় একবার আসবো। বাড়িতে থাকবি। মাথা নীচু করে রইলাম। দাদারা তোর সম্বন্ধে সব বেলেছে। অনেক অজানা কথা শুনলাম। আমাকে আগে বললে তোকে এতো কষ্ট পেতে হতোনা। রতন বারান্দায় উঠে এলো। ইসলামের ব্যাগটা এই ঘরে রেখে যা। দাদারা যাবার সময় নিয়ে যাবে। গলার টিউনটা সঙ্গে সঙ্গে চেঞ্জ হয়ে গেলো। রতন ছুটে নিচে নেমে গেলো। ইসলামভাইকে ফোন করেছো। হ্যাঁ। তোর বউয়ের সঙ্গে কথা হলো। তুইতো দেখালিনা। মাথা নীচু করে রইলাম। অনেক কাজ এখন যাই। রাতে এসে গল্প করবো। আমি দামিনী মাসিকে গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিলাম। ওরা চলে গেলো। ডাক্তারকে কোনো গাড়িতেই দেখতে পেলামনা। ফিরে এলাম। দাদা নিচের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। সন্দীপ গুছিয়ে নিয়ে নেমে এলো। স্ক্যানার প্রিন্টার তোর মেসিনের সঙ্গে লাগানো রয়েছে। কাগজ পত্র সব ছোটমার ঘরে। পারলে রাতে আসছি। আয়। সন্দীপ চলে গেলো। বুঝলাম দাদার সঙ্গে কথা হয়েগেছে। আশে পাশে সামন্ত ডাক্তারকে দেখতে পেলামনা। যা তাড়াতাড়ি স্নান সেরে নে একসঙ্গে খাবো। অনেকটা পথ যেতে হবে। আমি সিঁড়ি দিয়ে ওপরে চলে এলাম। সবাই একসঙ্গে খেতে বসলাম। দাদা বেশ হাসি মস্করা করলো আমার সঙ্গে। আমি আজ প্রাণখুলে ওদের এই আড্ডায় যোগ দিতে পারলামনা। মাঝে মাঝে দামিনী মাসির কথা উঠে আসছে।
তুইতো ঢোকার সময় দেখিসনি। যেনো রাজরাণী। গট গট করে ওপরে উঠে এলো। রতনকে দিলো এক ধমক। রতন দেখেই নেতিয়ে গেলো। ওনার ধমক খেয়ে যেনো অজ্ঞান হয়ে যায়। অনিকে খুব ভালবাসে। নিরঞ্জনদা বললো। ভালবাসে মানে। গাঢ়ল। শুনলিনা বলে কিনা আমার ছেলের গায়ে হাত পরলে বেঁচে থাকা মুস্কিল। ইসলাম মনে হয় ওনাকে খুব ভয়পায়। মল্লিকদা বললেন। ফোন করলো যখন ইসলাম কিরকম ত ত করছিলো। কি দাপট বলতো। আমি চুপচাপ একটা কথারও উত্তর দিচ্ছিনা। চুপচাপ খেয়ে উঠে চলে গেলাম। বুকের মধ্যে কে যেনো পাথর চাপা দিয়ে রেখেছে। মনটা ভীষণ খারাপ লাগছে। নিজের থেকেও বেশি খারাপ লাগছে মিত্রার জন্য। নিশ্চই রতন ওদের সব শুনিয়েছে। কি ভাবলো। ওর অনেক অজানা কথা ওরা আজ জানতে পেরেগেছে। ভাবছে হয়তো বুবুন কেনো এসব কথা বলতে গেলো। নিজের মাথার তখন ঠিক ছিলোনা। না বললেই পারতাম। সেই সময় মনে হচ্ছিলো যেনো ওকে ছিঁড়ে খেয়ে নিই। কিরে ওখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি করছিস। পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলাম দাদা গেটের মুখে দাঁড়িয়ে আছে। কাপরজামা পরে রেডি। এমনি দাঁড়িয়ে আছি। আমাদের সঙ্গে যাবি। না। তোমরা যাও। কেনো চলনা। সন্দীপ ঠিক গুছিয়ে নেবে বলেছে। আমি কাল সকালে যাবো। তোমরা এখন বেরোচ্ছ। হ্যাঁ। আমি এগিয়ে এলাম। মন খারাপ করছিস কেনো। আমি দাদার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলাম। গাড়ি এসে গেছে। হ্যাঁ। নিরঞ্জনের গাড়িতে যাচ্ছি। পায়ে পায়ে দাদার সঙ্গে নিচে নেমে এলাম। দেখলাম সামন্ত ডাক্তার সঙ্গে আছে। আমাকে দেখে একগাল হেসে বললো। তোমার গ্রামটা একটু ঘুরে আসি। এডিটার বললো না বলতে পারলামনা। মুখ নীচু করে হাসলাম। মল্লিকদা পিঠ চাপরে বললো তোকে শুকনো শুকনো দেখলে মনটা ভালো লাগে না। না ঠিক হয়ে গেছি। কাল কখন যাবি। সকালে বেরোবো। অফিসে যাবি নাকি। না। সন্দীপকে বলেছি সামলে নে। প্রয়োজন হলে ফোন করিস। আচ্ছা। আমি সকলকে প্রণাম করলাম। নিরঞ্জনদা বললো একেবারে রেস্ট্রি অফিসে যাবি না তারপরে যাবি। বেরোবার সময় ফোন করবো। আচ্ছা। ইসলামভাই-এর ব্যাগটা নিয়েছো। হ্যাঁ। ব্যাঙ্কের কাজটা একেবারে সেরে নেবে। ঠিক আছে। ওরা বেরিয়ে গেলো। এ বাড়িতে আমি এখন একা। ছগনলাল গেট বন্ধ করে নিজের ঘরে চলে গেলো। আমি নিচের ঘরগুলো বন্ধ করে ওপরে উঠে এলাম। ছোটমার ঘরে ঢুকলাম। সব কাগজ-পত্র আস্তে আস্তে গুছিয়ে নিজের ঘরে নিয়ে এলাম। ছবির খাম থেকে মিত্রার অর্ধউলঙ্গ ছবিগুলো আলাদা করে সরিয়ে রেখেছিলাম। সেই খামটা বার করলাম। আলমাড়ি খুলে সমস্ত ডকুমেন্টস ঢুকিয়ে রাখলাম। ল্যাপটপটা খাটের ওপর নিয়ে বসলাম। খাম থেকে মিত্রার ছবিগুলো বারকরলাম। মনটা খারাপ হয়ে গেলো। কলেজ লাইফে এই মেয়েটা কতো ইনোসেন্ট ছিলো। আর কি অবস্থার পরিপেক্ষিতে এই মেয়েটা এই রকম করতে বাধ্য হয়েছিলো। ছবিগুলো দেখতে দেখতে মাথাটা গরম হয়ে গেলো। মিত্রার চোখ মুখ দেখে বোঝাযাচ্ছে অনিচ্ছা সত্বেও এসব করতে বাধ্য হয়েছিল। মানুষ কতটা নীচ হলে নিজের বউকে এই কাজে বাধ্য করতে পারে। আমার মিত্রার মার কথাটা মনে পরছে। ভদ্রমহিলা কি একবারেই বুঝতে পারেন নি এই ভদ্রলোককে। না নিজের আত্মীয় বলে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করেছিলেন। না মেয়ের প্রতি জেলাস। অনেক মাকে দেখেছি মেয়ের প্রতি জেলাস করতে। অনুভব করেছি। মিত্রা স্বভাবে একটু নরম প্রকৃতির ছিলো। কলেজ লাইফে ওর সঙ্গে মিশে যতটুকু বুঝেছিলাম। আচ্ছা ওর বাবাই বা কি রকম ছিলো। তিনিকি মেয়ের ভালো বুঝতে পারেন নি। মিত্রা বলেছিলো ওর বাবা ওকে ভীষন ভালোবাসতেন। তাহলে উনিই বা কেন মেনে নিলেন। তাহলে কি মিত্রার মা সেইরকম ভদ্রমহিলা ছিলেন যে কারণে মিত্রার বাবা তাকে ভয় পেতেন। না মিত্রার বাবার কোনো দুর্বলতা ছিল যাতে বাবার প্রতি ওর মা রিভেঞ্জনিতে না পেরে তার মেয়ের প্রতি নিলেন। ছবি গুলো দেখতে দেখতে চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে এলো। মিত্রা বড়মা ছোটমার সামনে আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলো তুই বড়মা ছোটমাকে বেরিয়ে যেতে বল। আমি বড়মা ছোটমাকে সব বলিনি। তাহলে এই কথাই কি মিত্রা বড়মা ছোটমার কাছে গোপন করেছিলো। করতেই পারে। আমি হলেও করতাম। মিত্রা কোনো অন্যায় করেনি।
আচ্ছা আমি এইসব নিয়ে এতো ভাবছি কেনো। আমার মনের মধ্যে কি মিত্রার প্রতি কি কোনো সন্দেহ জাগছে। মিত্রা আমাকে বার বার বলেছে তোর কাছে আমি কনফেস করবো। তারপর আবার বলেছে তুই নিজেই সব জানতে পেরে যাবি। আমাকে বলতে হবেনা। নিজের মুখেই টোডির কথা বলেছে। তাহলে এই ব্যক্তিই কি টোডি! আমাকে খোঁজ খবর নিতে হবে। দামিনী কি করে আগে দেখি। তারপর আমাকে খুঁজে বার করতে হবে। ইসলামভাইকে জানানো যাবেনা। নিজেই নিজেকে মটিভেট করলাম। আগামী একমাসের মধ্যে এই কাজটা আমাকে শেষ করতে হবে। আমি কিছুটা কাজ এগিয়েছি। এখনো অনেক বাকি আছে। মিত্রার কাছ থেকে আগে জানতে হবে এই ব্যক্তিই সেই টোডি কিনা। যদি হয় তাহলে ওর কপালে অনেক দুঃখ আছে। মল এবং ডাক্তারের থেকেও। ছোটবাবু। নিচ থেকে ছগনলালের গলা পেলাম। ছবিগুলো খামের মধ্যে ঝটপট ঢুকিয়ে আমার আলমাড়ির একবারে নিচের খোপে ঢুকিয়ে দিলাম। বাইরের বারান্দায় এসে মুখ বারালাম। দেখলাম গেটে কবিতা দাঁড়িয়ে আছে। আমি ছগনলালাকে বললাম খুলে দাও। ছগনলাল গিয়ে গেট খুলে দিলো। কবিতা গাড়ি নিয়ে ভতরে এলো। একলাই নামলো। হাতে একটা খাম। বুঝতে পারলামনা ভেতরে কেউ আছে কিনা। ছগনলাল গেট বন্ধ করলো। কবিতা আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো। ওপরে আয়। কবিতা ওপরে উঠে এলো। আমি নিজের ঘরে এসে খাটে বসলাম। ল্যাপটপটা খুললাম। কবিতা ঘরে ঢুকলো। মাসি এই খামটা তোমায় দিলো। হাতে নিয়ে বুঝলাম এতে একটা সিডি আছে। ওর দিকে তাকালাম ভাবলেশহীন মুখ। কোথায় গেছিলি। ডাক্তারের বাড়ি। কি হারামীগো লোকটা। কেনো। শালার বিএফের ব্যবসা। ওতেই শালা কোটি কোটি টাকা বানিয়েছে। কি করে জানলি।
মাসি ওর বাড়িতে নিয়েগিয়ে রতনকে দিয়ে উদম কেলালো। সব গড় গড় করে বলে দিলো। তারপর মাসি ওকে নিয়ে একটা ঘরে গেলো। অনেকক্ষণ ছিলো। ডাক্তার এখন কোথায়। ওর বাড়িতে নজর বন্দি। মাসি। মাসির জায়গায়। ফেরার পথে আমাকে এটা দিয়ে বললো। অনিকে দিয়ে আয়। সব বলা আছে। আমাকে একবার ফোন করতে বলবি। তুই চলে যাবি। হ্যাঁ। আমাকে অনেক কাজ দিয়েছে। করতে হবে। বলা যাবেনা। শুনতে হবেনা। তোমার কাজ তুমি করো। এসব নোংরা কাজ তোমার জন্য নয়। আমার জন্য তোদের কতো ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। একবারে ওসব কথা বলবেনা। মাসির কানে গেলে বুঝতে পারছো কি বলবে। ঠিক আছে তুই যা। কবিতা চলে গেলো। ছগনলাল গেট বন্ধ করলো। আমি আবার নিজের জায়গায় এসে বসলাম। খাম খুলে সিডিটা বার করলাম। ল্যাপটপে চালালাম। সত্যিই মিত্রাকে নিয়ে তোলা ছবি। ভালো করে পঙ্খনুপুঙ্খ রূপে দেখলাম। ব্লু-ফ্লিম নয় এককথায় বলা যায় রেপ। মিত্রাকে সম্পূর্ণ নগ্ন করতে পারেনি। নব্বইভাগ নগ্ন করেছে। ধস্তা ধস্তি হয়েছে। তারপর মিত্রা লোকটার বুকে একটা লাথি মেরেছে। একটা মেয়ে এই মুহূর্তে বাঁচার জন্য যা যা করার দরকার তাই করেছে। খুব চেঁচামিচির শব্দ। খেস্তা খিস্তি। বোঝা যাচ্ছে। ঘরের মধ্যে ফিট করা গোপন ক্যামেরায় ছবি তোলা হয়েছে। অস্পষ্ট। বোঝা যাচ্ছে এটা ডাক্তারের চাল। এ ছবি বাজারে বিক্রি হবে না। এটা তোলা হয়েছে মিত্রাকে নিঃশেষ করে দেবার জন্য। এই কারণেই কি মিত্রা ডিভোর্সের পরও মাথায় সিঁদুর রাখতো। ডাক্তারের সঙ্গে নিত্য যোগাযোগ রাখতো। যখন বুঝেছে এখন ওর আশ্রয় হারানোর ভয় নেই তখন থেকে সিঁদুর মুছে দিয়েছে। নানা চিন্তা মাথার মধ্যে খেলা করছে। সবচেয়ে কষ্ট হচ্ছে মিত্রার জন্য। কুড়ি মিনিট উনিশ সেকেন্ডের সিডি। আমি কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে বসে রইলাম। নানা আজেবাজে চিন্তা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। মোবাইলের ঘরিটার দিকে তাকালাম। সাড়ে চারটে বাজে। তারমানে দাদারা এখন ওই ধাবার কাছাকাছি। ঘরের দরজা বন্ধ করে নিচে নামতে গেলাম। দেখলাম ছগনলাল চায়ের কাপ নিয়ে সিঁড়িদিয়ে উঠে আসছে। তুমি চা করতে গেলে কেনো। আরিবাবা। দাদাবাবুর হুকুম। আমি ছগনলালের হাত থেকে চায়ের কাপটা নিয়ে নিলাম। ছগনলাল নিচে নেমে গেলো। আমি আবার ঘরে এলাম। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে। দামিনী মাসিকে ফোন করলাম। হ্যালো। একটা মহিলা কন্ঠস্বর। গলা শুনে মনে হচ্চেনা মাসি। মাসি। কে বলছেন। অনি। অনিদা তুমি। আমি লক্ষী। মাসি কোথায়রে। একটু বেরিয়েছে। ঠিকআছে আমি পরে ফোন করছি। তুমি কেমন আছো অনিদা। ভালো আছি। কতদিন আসোনি। যাবো। কবে আসবে। একটু কাজ গুলো সেরে নিয়ে যাবো। আচ্ছা। উঠেগিয়ে টেবিলের ওপর থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা নিয়ে এলাম। একটা সিগারেট ধরালাম। মিত্রার নম্বরে একটা ম্যাসেজ করলাম। একটু দূরে কোথাও পালিয়ে যা কথ বলবো। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে উত্তর এলো। আমি নীপা বাসুর দোকানে যাচ্ছি। অপেক্ষা কর সুযোগ বুঝে ফোন করবো। ভাবলাম দেবাশীষকে একবার ফোন করি। তারপর কি ভেবে মনে হলো না দেবাশীষকে নয় টিনাকে একটা ফোন করি। করলাম। কিগো ভুল করে ফোন করে ফেললে। আমি চুপ থাকলাম। কিগো কথা বলবেনা। না টিনা খুব বাজে অবস্থার মধ্যে আছি। তোমার গলাটা এরকম ধরা ধরা লাগছে কেনো। টিনার গলায় উৎকন্ঠা। ফোনের ভয়েজটা সমস্যা করছে হয়তো। তুমি কোথায়। বাড়িতে। বাড়িতে! এই সময়। একটু কাজ করছি। ওখান থেকে কবে এলে। গতকাল। অফিসে যাওনি। না। বাড়িতে আর কে আছে। কেউনেই। আমি একা। সামথিংস রং। না। এমনি। তুমিকি এখন বাড়িতেই থাকবে। হ্যাঁ। ঠিক আছে তুমি রাখ। পরে তোমায় ফোন করছি। আচ্ছা। সিগারেটের প্যাকেট থেকে আবার একটা সিগারেট নিয়ে ধরালাম। নেটটা খুললাম। আমার মেল বক্স খুললাম। দেখলাম তানিয়া কতগুলো মেল পাঠিয়েছে। আমি খুললাম দেখলাম আরো অনেক ডকুমেন্টস পাঠিয়েছে। পোরে যেটুকু উদ্ধার করতে পারলাম। তাতে বুঝলাম। ডাক্তার ওখানে খুব ঘৃণ্য কাজ করতে গিয়ে তার ডিগ্রীটা খুইয়েছে। তার ডকুমেন্টস তনু পাঠিয়েছে। আমি একে একে সব ডাউনলোড করতে আরম্ভ করলাম। ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলাম দামিনী মাসির ফোন।
হ্যালো বলতেই দামিনী মাসি বললো দেখেছিস। হ্যাঁ। কি দেখলি। ওরই। ঠিক বলছিস। হ্যাঁ। বিশ্বাস হচ্ছে না। কতো বরো খানকির ছেলে হতে পারে সেটা ভাবছি। সাধে কি অনি কেঁদে ফেলেছিলো। তুই বিশ্বাস কর…….। কিগো কথা বলছোনা কেনো। ও আমার ছেলের বউকে…..। কেঁদোনা মাসি। ওর ভাগ্যে যা লেখা ছিলো তাই হবে। কেনো তোমাকে সব কথা বলতে পারিনি এবার বুঝতে পারছো। ওই লোকটাকে দেখাতে পারবি। ছবিতে দেখাতে পারবো। মনে হয় ইসলামভাই চেনে। ইসলামভাই এই সব ঘটনার সাক্ষী। যেহেতু তখন ও জানতোনা আমার সঙ্গে মিত্রার একটা সম্পর্ক আছে তাই ও সেই ভাবে বাধা দেয়নি। তবে ইসলামভাই আমার কাছে সব স্বীকার করেছে। ওরা আরো কিছু করতে পারতো ইসলামভাই-এর জন্য করতে পারেনি। এই মিত্রাই কি সেই মিত্রা যার কথা তুই আমায় বলেছিলি। হ্যাঁ। ডাক্তার এখন কোথায়। ওর বাড়িতেই রেখেছি। আবিদকে রেখে দিয়েছি। ইসলামভাই খুব কষ্ট পাচ্ছে। জানি। ওকে বার বার বারন করেছি এই সব কাজ হাতে নিবিনা। ইসলামভাই-এর কোনো অপরাধ নেই। যদি বলো তুলনায় আমি বেশি অপরাধ করেছি। কেনো। মিত্রা আমাকে অনেক দিন আগে ওর বাড়িতে যেতে বলেছিলো। আমি অভিমানে ওর বাড়িতে যাই নি। মাসি চুপ করে রইলো। একটা মেয়ের কতটুকু ক্ষমতা তুমি জানো। কি করবি চিন্তা করলি। ওকে মারবোনা। ও নিজে আত্মহত্যা করবে। পারবি। অনি মুখে যা বলে তাই করে দেখাবে। এর প্রমাণ তুমি আগে পেয়েছো। ওই লোকটা। ওটা আমাকে জোগাড় করতে হবে। তবে আমার মন বলছে ইসলামভাই এতোক্ষণে কাজ শুরু করে দিয়েছে। তুই ঠিক বলছিস। ওই যে তখন বললো আমার জন্য একটু রেখো। ওর প্রশ্নের মধ্যেই উত্তর লুকিয়ে আছে। তুই এতো ভাবিস। ভাবি বলেই কষ্টপাই মাসি। আমার যে কথা শোনার কেউ নেই। বুঝতে পারলাম মাসি কাঁদছে। আবার কাঁদে। তোমার কাছে আঠারো মাস থাকার অভিজ্ঞতা এখন কাজে লাগাচ্ছি। চুপচাপ। কথা বলছোনা কেনো। অনিদা মাসি আমার হাতে ফোনটা দিয়ে চলে গেলো। কেরে লক্ষী। হ্যাঁ। ঠিক আছে এখন রাখ। ফনটা কেটে দিলাম। মনটা খারাপ হয়ে গেলো। কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইলাম। বাইরের আলো কমে এসেছে। ঘরটা সামান্য অন্ধকার। দাদারা আমায় কোনো ফোন করেনি। আমিও ফোন করিনি। ল্যাপটপটা খোলা রয়েছে। ভীষণ চা খেতে ইচ্ছে করছে। নিচে গিয়ে করতে ভালো লাগছেনা। সিগারেটের প্যাকেট থেক একটা সিগারেট বার করে ধরালাম। টান টান হয়ে শুলাম। জানলার ফাঁক দিয়ে কমলা রংয়ের সূর্য আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। এখন এই সূর্যের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায়। অসুবিধে হয়না। মাথার ভেতরটা কেমন শূন্য শূন্য মনে হচ্ছে। হিমাংশুকে সকাল থেকে ফোন করা হয়নি। ছেলেটা কি ভাবছে। মোবাইলটা টেনে নিয়ে হিমাংশুকে ফোন করলাম। কোথায়রে বাড়িতে না অফিসে। বাড়িতে। কি করছিস। শুয়ে আছি। একটু ঘুমবার চেষ্টা কর। ঘুম আসছেনা।
শোন মিত্রার চেকগুলো আজই ব্যাঙ্কে ফেলে দিয়েছি। খুব ভালো করেছিস। আগামী সপ্তাহে বোঝা যাবে ওর ব্যাঙ্কের পজিসন। মালটা এখন কোথায়। দামিনী মাসির হেপাজতে চলে গেছে। ওর বাড়িতে আছে। তবে নজর বন্দি। সত্যি কতো মানুষ জীবনে দেখলাম। এরকম হারামী মানুষ দেখিনি। তুই কি দেখেছিস। দামিনী তার সারাজীবনে অন্ততঃ লাখ খানেক মানুষকে তার শরীরে আশ্রয় দিয়েছে মাসি পর্যন্ত কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেললো। খুব খারাপ লাগছে। খারাপ সবার লাগছে। কিন্তু করার কিছু আছে। মেনেনিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। শোন আমি সনাতনবাবুর সঙ্গে আজ কথা বলে এসেছি। আগামী সপ্তাহ থেকে দুটো ছেলে তোর অফিসে গিয়ে বসবে। বেশ করেছিস। তুই প্রেসার কনটিনিউ কর। আমি সামলে নেবো। আচ্ছা। এখন একটু ঘুমোবার চেষ্টা কর। দেখি। হিমাংশু ফোনটা কেটে দিলো। উঠে বসলাম ল্যাপটপটা নিয়ে তনুকে একটা মেল করলাম। ওকে ভাসা ভাসা সব জানালাম। এও বললাম আমি কয়েকদিন কলকাতায় থাকবোনা। তোমার মেল চেক করতে পারবোনা। তোমার কিছু মেল করার থাকলে করবে। আমি সময় মতো খুলে দেখে নেবো। ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলাম মিত্রার ফোন। উঠে বসে ধরলাম। বাইরে অন্ধকার হয়ে এসেছে। ঘরের লাইট জাললাম। বারান্দায় এসে ছগনলালকে দেখতে পেলাম ওর দেশোয়ালী ভাইদের সঙ্গে বসে গল্প করছে। আমায় দেখে ফিরে তাকালো ইশারায় বললাম একটু চা খাওয়াবে। ও হেসে ফেললো। কোথায় তুই। বাসুর বাড়িতে। কে নিয়ে এলো। বাসু এগিয়ে দিয়ে গেলো। খবর কি। কোনখান দিয়ে শুরু করি বলতো। কথা শুনে মনে হচ্ছে মিত্রা বেশ খুশিতে আছে। ওর কোনো টেনসন নেই। তোর থেকে শুরু কর। তুই কোথায়। বাড়িতে। একা। আমার জন্য খুব কষ্ট পেলি আজকে। তা একটু পেয়েছি। তার সঙ্গে আমাকে যে পেলি। তোকে তো আগেই পাওয়া হয়েগেছে। সেটা সম্পূর্ণ ছিল না। আজকে সম্পূর্ণ হলো। আজকে আমার থেকে সুখী এ পৃথিবীতে কেউ নেই। একথা বলছিস কেনো। তুই আজকে ওই বাস্টার্ডটাকে মেরে রক্ত বার করে দিয়েছিস। তুই যদি মেরে ফেলতিস আমি আরো আনন্দ পেতাম। ভাবলাম কতটা জ্বালা এতদিন ও বুকে নিয়ে ঘুরেছে। কেউ ওর পাশে ছিলো না যে ওর কথা শুনে ওকে একটু সাহায্য করবে। যা কিছু করেছে নিজের বুদ্ধিতে। হাতাশা গ্রস্ত হয়ে রাতের বেলা আকণ্ঠ মদ গিলেছে। তারপর নিজের প্রতি ঘেন্নায় গা ভাসিয়ে দিয়েছে। যা হয় হোক। শেষ পরিণতি কি আছে মৃত্যু। এর বেশিতো কিছু নয়। কিরে চুপ করে গেলি। না। এমনি। আজ এখানে কি হয়েছে জানিস। কি। চিকনা বললো। কি বললো। তুই নাকি ক্লাসটেনে পরার সময় ওকে একবার বেধড়ক মেরেছিলি। তারপর কাউকে এইরকম মারলি। তুই যে রেগে যেতে পারিস। তুই যে কাঁচা কাঁচা গালাগাল দিতে পারিস এটা ওরা প্রথম জানলো। তুই। কলেজে তোর মুখ থেকে দু’একটা শুনতাম। তারপর আমি হারিয়ে গেলাম। তোরা সব শুনেছিস। তোর ঘরে মাল ফিট করা ছিলো। তুই ধরতে পারিসনি। তখন আমার মনের অবস্থা সেরকম ছিলোনা। সেই সময় ইসলামভাইকে দেখলে তোর মাথা খারাপ হয়ে যেতো। কেনো। হাতগুলো কেমন করছিলো কেমন এ্যাবনরমাল ভাব। চোখ গুলো কেমন ঘোলাটে। তারপর তুই যখন মারলি হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললো। ছোটমা কতো বোঝালো। কান্না থামানো যায় না। পরে রতনকে যা বললোনা। আমার শুনে আত্মারাম খাঁচা। বড়মারা কেউ ছিলোনা। না। ইসলামভাই আজ আমাকে নিয়ে আড়ালে আড়ালে ঘুরেছে। আমাকে প্রশ্ন করেছে আমি উত্তর দিয়েছি। আর ফোন করে করে খালি মিলিয়ে নিয়েছে। কোথায় ফোন করছিলো। বম্বেতে। ঠাট উর্দুতে কথা বলছিলো। ইসলামভাই কি দারুন উর্দু বলেরে। আমি কিছু বুঝতে পারিনি। তোর কি মনে হয় কোথায় ফোন করছিল। আমার কাছে টোডির ব্যাপারে জানতে চেয়েছে। আমি যতটা জানতাম বলে দিয়েছি। তারপর দামিনীমাসি ফোন করেছিলো। তোর সঙ্গে কথা বলেছে। হ্যাঁ। ইসলামভাই বললো আমার সঙ্গে আছে। কথা বলবে। কথা বললাম। তুইতো নিয়েগেলিনা। দামিনী মাসি বলেছে আমাকে নিয়ে যাবে। ওরে দামিনী মাসি ইসলামভাই দুজনেই বড় খেলোয়াড়। আজ বুঝলি। বুঝলাম। বড়মা ছোটমা। নো টেনসন ডু ফুর্তি। ওরা এসব ঘটনা জানেই না। তুই একা একা মনটা খারাপ লাগছে। তোরা সবাই ঠিক আছিস। তোকে একেবারে ভাবতে হবেনা। নীপা আসছে এখন রাখি। রাতে কথা বলবো। জেগে থাকবি। আচ্ছা।
মিত্রার সঙ্গে কথা বলার পর মনটা একটু হাল্কা হলো বলে মনে হচ্ছে। ভাবছিলাম ওকে একবার জিজ্ঞাসা করি ভিডিও’টার সম্বন্ধে। তারপরে ভাবলাম না থাক। ওর কাছে যখন যাবো তখন ওকে জিজ্ঞাসা করবো। ওর মুখ থেকে ব্যাপারটা শোনার দরকার আছে। ছগনলাল চা নিয়ে এলো। আমি ওর হাত থেকে চায়ের কাপ নিলাম। ছোটবাবু রাতে কি খাবে। আমি যা বলবো তুমি খাওয়াবে ? হ্যাঁ। তুমি যে মাঝে মাঝে ছাতুর ছোটো ছোটো লেট্টি বানাও আজ একটু বেশি করে বানাও। চাটনি পেঁয়াজ আর কাঁচা লঙ্কা দিয়ে খাবো। আমাদের খাবার আপনি খেতে পারবেন! মনে মনে হাসলাম। ছগনলাল তুমি সুদূর বিহারের এক অজ গ্রাম থেকে কলকাতায় এসেছো পেটের সন্ধানে। আমিও তোমার মতো গ্রামের মানুষ। কতদিন কলকাতার রাস্তায় তোমার দেশোয়ালী ভাইয়ের কাছে ছাতুমাখা তেঁতুলের টক দিয়ে মেখে খেয়েছি তার ইয়ত্তানেই। শেষে লোটা ভরা জল খেয়ে সারাদিন কাটিয়ে দিয়েছি। একশোগ্রাম ছাতুর দাম তখন পঞ্চাশ পয়সা ছিলো। ছগনলাল আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। তুমি তৈরি করো আমি খাবো। উঠে গিয়ে মানি পার্টস থেকে টাকা বারকরলাম। না ছোটোবাবু টাকা লাগবেনা। বড়বাবু টাকা দিয়ে গেছেন। তাহলে তুমি একটু বেশি করে করো। যদি কেউ আসে তাদেরও খাওয়াবো। ছগনলাল হো হো করে হেসে ফেললো। না ছোটবাবু আপনার মন চাইলো আপনাকে খাওয়াবো। অন্যেরা আমার বানানো লেট্টি খাবেনা। আচ্ছা তুমি করোনা। আমিতো বলছি। ছগনলাল নাচতে নাচতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। আমি চায়ে চুমুক দিয়ে আবার ল্যাপটপ নিয়ে বসলাম। মেল বক্স খুলতেই দেখলাম তনু অনলাইনে আছে। আমি অনলাইন হতেই ও চ্যাট শুরু করেদিলো। হায়। আমার মেল পেয়েছো। পেলাম। কি বুঝলে। প্রথমে বলো তুমি কেমন আছো। পরে কি বুঝলে ? আমি ভালো আছি। একেবারে না। দেখালম তনু লিখছে। আমি অপেক্ষা করলাম। মিত্রাদির জন্য মনটা খুব খারাপ লাগছে। শুধু তোমার একার নয় সবার। যারা শুনছে তাদেরই খারাপ লাগছে। লিপিড ইট। তনু লিখছে। তোমায় খুব মিশ করছি। এখানে কাজের মধ্যে যখন থাকি তোমার কথা বিশেষ মনে পরেনা। তবে যখন ফ্ল্যাটে চলে আসি তখন তোমার কথা ভীষণ ভাবে মনে পরে। তুমি আমার অবস্থাটা জানো তনু। তোমাকে নতুন করে কিছু বলার নেই। হুঁ। তনু লিখছে। আমি অপেক্ষা করলাম। ডাক্তার ব্যানার্জী মোটেই সুবিধার লোক নয়। যেখানে উনি থাকতেন আমি সেখানে খোঁজ খবর নিয়েছিলাম। ওনার চরিত্রে নুন দেওয়ার জায়গা নেই। তনু লিখছে। এখানকার হাসপাতালে একজন মহিলা পেসেন্টের উনি শ্লীলতা হানি করেছিলেন। সেই নিয়ে ওনার পানিশমেন্ট হয়। তাতে উনি ছ’মাস জেল খেটেছিলেন। তারপর ওনার সব কিছু কেড়ে নিয়ে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ওনার নাম শুনে আমাকে কেউ প্রথমে এনটারটেন করতে চায়নি। ভাগ্যিস আমি বিবিসির রিপ্রেজেন্টেটিভ তাই এনটারটেন করে মেটেরিয়ালস দিয়েছে। সত্যি তনু তোমার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। এইতো হ্যাজানো শুরু করেদিলে। এটা হ্যাজানো হলো। তা নয়তো কি। তোমায় একটা রিকোয়েস্ট করবো। আবার। তাহলে কি বলবো। আদেশ করবে। তোমাকে আদেশ করার ক্ষমতা এখনো হয়নি। কাগজের মালিক হয়েছো আবার কবে হবে। এবার ঝেড়ে কাশোতো। আমার খুব ইচ্ছে ওখানে একটা ব্রাঞ্চ করবো। হেল্প করবে। তাহলে প্রায় ওখানে যাওয়া হবে আর…….। কি দুষ্টু বুদ্ধি তোমার। তারপর বলবে তনু তুমি বিবিসি ছেড়ে আবার এই হাউসে জয়েন করো। ওখানকার ব্রাঞ্চ সামলাও। দুষ্টু কোথাকার খালি মাথায় জিলিপির প্যাঁচ না। রাগ করছো কেনো। আমি কি তোমার ভালো বন্ধু নই। হুম। বুঝেছি। তাহলে রাজি। রাজি কিনা বলতে পারছিনা। কি করতে হবে বলো। ব্রাঞ্চ খুলতে গেলে জায়গা লাগবে। লাগবে। ভাড়া নেবো না। কিনবো। ওরে বাবা। সেতো অনেক টাকার দরকার। দেবো। তোমার এতো টাকা কোথায়। এইতো বললে কাগজের মালিক। হো হো হো। ঠিক আছে। আর। কিছু স্টাফ লাগবে। বুঝেছি আমাকে সব দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে তাইতো। এইতো লক্ষ্মী মেয়ের মতো কথা। আমি কি পাবো। তুমি বুরোচিফ হবে। এই টুকুতে আমার কিছু হবেনা। ঠিক আছে তোমার ডিমান্ড বলো।
প্রত্যেক মাসে একবার এখানে আসতে হবে। পনেরোদিন থাকতে হবে। কথা দেবোনা। তাহলে হবেনা। তুমি আমাকে না করবে। ওই জন্যই মরেছি। হো হো হো। কাল আমি কলকাতার বাইরে চলে যাবো। যেখানে যাবো সেখানে পাওয়ার নেই অতএব নেট কানেকসন দূর অস্ত। আমি ফিরে আসবো নেক্সট সোমবার তখন কথা হবে। মিত্রাদি ওখানে। হ্যাঁ। হাওয়া চেঞ্জে পাঠিয়েছি। তারমানে। ডাক্তার বললো। আজকে ডাক্তার নিজে গেছে। কি হয়েছে মিত্রাদির তুমিতো বলোনি। সব কথা বলা যায়। বলো কি হয়েছে। নার্ভের প্রবলেম। তারমানে! গত ছয় সাত বছর দেহে ও মনে অনেক অত্যাচার হয়েছে। তার ফলস্বরূপ এই রোগ। কি বলছো তুমি! যার স্বামী এই রকম চরিত্রের হয়…….। তুমি মন খারাপ করোনা। দেখবে ঠিক হয়ে যাবে। ঠিক হওয়ার সম্ভবনা নেই। ডাক্তারদাদা বলেছেন। এর পর মনের ওপর স্ট্রেচ পরলে হয়তো পঙ্গু হয়ে যেতে পারে। কি সব আজে বাজে বকছো। আমি তোমায় মিথ্যে কথা বলবোনা তনু। ও আজ পৃথিবীতে একা। আমি ছাড়া ওর আপনজন বলতে কেউ নেই। অনি!। হ্যাঁ তনু। বাইরের গেটে গাড়ির হর্নের আওয়াজ পেলাম। মনে হয় কেউ এসেছে। দেখি তোমায় আবার কবে ধরতে পারি। আমি রেগুলার ইন্ডিয়ান টাইম ছটার পর থেকে রাত দশটা পর্যন্ত থাকি। আচ্ছা। যা বললাম মনে রেখো। বাই। বাই। তাড়াতাড়ি মেল বক্স বন্ধ করে অন্য মেল চেক করতে আরম্ভ করলাম। বেশ কয়েকজনের হই হই শব্দ কানে এলো। সবাই শিঁড়ি দিয়ে উঠে আসছে। কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে দেবারা। আমার ধরনা ঠিক। দেবারা হই হই করতে করতে ঘরে ঢুকলো। কিরে শালা ভূতের মতো এতো বড়ো বাড়িতে বসে বসে কি করছিস। তোদের ছগনলাল ঢুকতে দিলো ? মানে! ছগনলাল সকাল থেকে আমার পারমিসন ছাড়া কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না। তোর নাম বলতেই গেট খুলে দিলো। টিনা অদিতি আমার দুপাশে এসে বসলো। মিলি আমার সামনে। ল্যাপটপটা খোলাই আছে। দেবা ইজিচেয়ারে হেলানদিল নির্মাল্য খাটের এক পাশে এসে বসলো। সবাই আমার দিকে অনুসন্ধিতসু চোখে তাকিয়ে।যেনো গিলে খাচ্ছে। তোকে কিন্তু ফ্রেশ ফ্রেশ লাগছে না। তোর চোখে নেবা (জনডিস) হয়েছে। দেবাদার চোখে নেবা হয়েছে। আমাদের চোখে। টিনা অদিতি মিলি তিনজনে একসঙ্গে আমার দিকে হুমরি খেয়ে তাকালো। চোখে চোখ। বিশ্বাস করো আমার কিছু হয়নি। তাহলে বললে কেনো। ছগনলাল গেট খুললো তোদের। এমনি। সামথিংস রং। টিনা ফের বললো। মিত্রাদি কোথায়। অদিতি বললো বড়মা কোথায়। মিলি বললো। বাবা তোমরা একসঙ্গে প্রশ্ন করলে উত্তর দেবো কি করে। ঠিক আছে তুমি বলো। টিনা বললো। দাঁড়াও একটু চা করি আগে। তোমায় করতে হবে না। আমরা করবো।
না, তা হয় নাকি। তোমরা আমার গেস্ট। তুমি এরিয়ে যাচ্ছ। তুমি আগে বলো তারপর চা খাবো। ছগনলালকে গেটের মুখে এসে দাঁড়াতে দেখলাম। কি ছগনলাল। ছোটোবাবু নিয়ে আসবো। তোমার হয়ে গেছে। হ্যাঁ। কয়েকটা করেছি। তুমি একা করছো না আর কেউ তোমার সঙ্গে আছে ? আমার দেশোয়ালী ভাইরা আছে। কজন ? দুজন। ঠিক আছে তুমি নিয়ে এসো। ছগনলাল চলে গেলো। কিগো অনিদা। একটা জিনিষ খাওয়াচ্ছি তোমাদের। খেয়ে বলতে হবে কি খেলে। ঠিক আছে। সব হবে আগে তুমি কি হয়েছে বলো। এতো মহা মুস্কিল। তুমি বাড়িতে একা রয়েছো। কেউ নেই। মিলি বললো। আরে বাবা আমিকি একা থাকতে পারিনা। দেবাশীষ নির্মাল্য এক ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ও যখন বলতে চায়না তখন ওকে বিরক্ত করছো কেনো। ওতো আমাদের নিজের বলে মনে করে না। এইতো সেন্টুতে ঘা দিচ্ছিস। আমার কথা বলার ঢঙে সবাই হো হো করে হেসে ফললো। আমি বললে তোরা সহ্য করতে পারবিনা। ঠিক সহ্য করতে পারবো। বলো। টিনা বললো। তোর গলার স্বর তখন টিনার কাছে অপরিচিত লেগেছে। খালি তোর নামটা ওর মোবাইলে সেভ করা ছিলো বলে ও বুঝতে পেরেছে। ছগনলাল একটা কাঁসার থালায় লেট্টি নিয়ে এলো। সঙ্গে চাটনি পেঁয়াজ লঙ্কা। দারুন গন্ধ বেরোচ্ছে। ছগনলাল। ছোটবাবু। লাগলে আর পাওয়া যাবে। লাগলে বলবেন আমি নিয়ে আসবো। একটু চা খাওয়াবে। করছি ছোটবাবু। ছগনলাল বেরিয়ে গেলো। নে দেবা একটা খেয়ে দেখ। দারুন জিনিষ। সবাই একটা করে তুলে নিলো। দাঁতে কামরেই অদিতি বললো। দারুন জিনিষ অনিদা। নাম কি গো। এগুলোকে লেট্টি বলে পুরো ছাতু দিয়ে তৈরি। বিহারের লোকরা খুব ভালো বানায়। সত্যি দারুন টেস্ট। একটু তেঁতুলের চাটনি মুখে দাও আরো ভালো লাগবে। যাই করো তোমাকে ছারছিনা বলতে হবে। মিলি খতে খেতে বললো। আমি খেতে খেতে কালকে থেকে যা যা হয়েছে ওদের সব বললাম। বড়মারা এখন কোথায় আছে কেনো গেছে সব বললাম। খালি মিত্রার পোর্সানটা এডিট করে বললাম। আমার কথা শেষ হতে দেবাশীষ উঠে দাঁড়ালো। ওর হাত পা কাঁপছে। তুই শুয়োরের বাচ্চাটাকে ছেড়ে দিলি। বোস। সব সময় রাগ করলে হয়। মিলি টিনা অদিতির চোখ কপালে উঠে গেছে।