তোর চালটা কি দুর্দান্ত হয়েছেরে অনি। ইসলামভাই আমার পিঠে চাপর মারলো। আমি ফিরে তাকাতেই ইসলামভাই সরি বলে চুপ করে গেলো। ও আবার কি চাল দিয়েছেরে মুন্না। ছোটমা ইসলামভাইকে জিজ্ঞাসা করলো। সবার দৃষ্টি এখন ইসলামভাই-এর দিকে। মিত্রা মাথা নীচু করে। মল্লিকদার চোখ ছোট ছোট। নিরঞ্জনদা হাঁ করে আছে। না কিছুনা। তোরা দুজনে অনির মোবাইল নিয়ে কাড়াকাড়ি করলি। ইসলামভাই মিত্রা একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে। আরে বাবা কিছু হয়নি। খালি তোমাদের সন্দেহ। তাহলে ওরকম আহ্লাদে নেচে উঠলি। ঠিক, ঠিক বলেছে ছোট। দাদা বললো। আমার দিকে তাকিয়ে। কিরে আবার ওখানে গন্ডগোল পাকিয়েছিস। আমি কেনো পাকাতে যাবো! সামন্ত ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে। ডাক্তারদাদা আমার প্রশ্নের উত্তরটা। ছোট এখন থাম, ওটা পরে দেখছি। বড়মা বললো। তুই না ভেবে আমাকে বলছিসনা এটা আমি ভালো করে জানি। তুই কি ভেবেছিস বল। এই তোমার প্রশ্নের উত্তর। বান্ধবী তোমরা ওকে কতটুকু চেনো আমি জানিনা। তবে এই কদিনে আমি ওকে হারে হারে চিনেছি। ও ছোট সামন্ত কি বলেরে। তুই আমাকে নিয়ে একটা নির্দিষ্ট প্ল্যান করেছিস। তোর এই বন্ধুদের তুই সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিস। তারও একটা নির্দিষ্ট প্ল্যান আছে। তুই এমনি এমনি ওদের শুধু ঘুরতে নিয়ে আসিসনি। তুই বড় সাংঘাতিক। রথ দেখা কলা বেচা দু’টোই করবি। আমি মাথা নীচু করে রইলাম। মনে মনে বললাম ডাক্তারের পাকা মাথা। মুখ তুললাম ডাক্তারের দিকে তাকালাম। তুই আমার দিকে যতই ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাক, তোর মাথাটা একলক্ষ মাইলে গতিতে দৌড়চ্ছে। তোর চোখ বলছে। আমি ডাক্তার। চল্লিশ বছরে অন্ততঃ চল্লিশ লক্ষ রোগীর চোখ দেখেছি। আমাকে ফাঁকি দিতে পারবিনা। ফিক করে হেসে ফেললাম। তুই আগে তোর রোগটা বল, আমি তারপর ওষুধ দেবো। বুঝতে পারছি সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। ব্যাপারটা এরকম, শেয়ানে শেয়ানে কোলাকুলি হচ্ছে আমরা সবাই নিরব দর্শক।
জানিস অনি আমরা যখন ডাক্তরি পর তখন আমাদের ফার্স্ট ইয়ারে সাইকলজি পরতে হয়। সাইকলজি না পরলে রুগীর মনস্তত্ব জানা যায়না। আমি ওই পেপারটাতে হায়েস্ট নম্বর পেয়েছিলাম। আমি এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছি। আমি তোকে গল্প বলছি এরি মধ্যে তুই তোর ঘুটি সাজিয়ে ফেল। এই ক্ষমতাটা তোর আছে। তারপর বুঝলি যখন প্র্যাকটিশ করতে শুরু করলাম। তখন ওই সাইকলজি পরাটা কতটা উপকারে এলো বুঝতে পারলাম। এখনো আমি সময় সুযোগ পেলে সাইকলজিটা পরি। তুমি ফ্রয়েড পরেছো। হুঁ। তুই আরো বেশি চালাক। বড় মাছকে খেলিয়ে তোলার ফন্দি করছিস। হাসলাম। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি। যদি বলি পরিনি। তাহলে ফাইল ক্লোজ। ফাইল তুই ওপেন করেছিস। ক্লোজ করার দায়িত্ব আমার। যদি বলি পরেছি। তাহলে প্রিকনসাস মাইন্ড সম্বন্ধে তোমাকে দু’চারটে প্রশ্ন করবো। বুঝেছি। তুই আমাকে নিয়ে ভালো হোমওয়ার্ক করেছিস। তোমাকে কতটুকু দেখেছি। আজকে নিয়ে চারদিন। তুমিও আমাকে চারদিন দেখেছো। তাহলে উত্তরটা হচ্ছে আমি তোর সম্বন্ধে এতটা জানলাম তুই কি কিছুই জানিসনা। হাসলাম। কি বান্ধবী তোমার সব মাথার ওপর দিয়ে চলে যাচ্ছে। তোমাদের কথা কিছুই বুঝতে পারছিনা। জীবনে অনেক মানুষ নিয়ে ঘাঁটা ঘাঁটি করেছি। তোমার অনি আমার দেখা সেরা ছেলে। মিলির দিকে তাকিয়ে। মামনি নীপা মাকে একটু গরম জল দিতে বলনা। আমার দিকে তাকিয়ে। এটা তোর কথা। কেমন সঠিক জায়গায় ইনপুট করলাম বল। আমি মুচকি মুচকি হাসছি। মিত্রা আমার কাঁধে মাথা রেখে ডাক্তারদার কথা এক মনে শুনছে। তুমি দাঁড়াও মিলিদি আমি চায়ের কথা বলে এখুনি আসছি। ফাঁকটুকু তোমার কাছ থেকে শুনবো। নির্মাল্য বেরিয়ে গেলো। তাহলে অনিবাবু ফ্রয়েড, প্রিকনসাস মাইন্ড। তাহলে তুমি আমার তৃতীয় চক্ষুর হদিস পেয়েগেছো। সবার মুখে বিস্ময়। মল্লিকদা একটু নড়ে চড়ে বসলো। তুমি এই বয়সে ফ্রয়েড গুলে খেয়ে ফেলেছো, তন্ত্রনিয়ে ঘাঁটা ঘাঁটি করছো, অবশ্য তোমার বড়মার মুখ থেকে শুনলাম। তুমি অনেকদিন বাঁচবে। বাকি কি রাখলে। ফ্রয়েড কেনো তার ঔরসজাত সন্তানকে বিয়ে করেছিলো। সেটা জানা বাকি রয়েছে। তারমানে! দাদা বলে উঠলো। কি এডিটর কিছুই পড়াশুনো করোনা। কি করে যে এতোবড়ো কাগজের এডিটর হলে ভগবান জানে। ইসলামভাই আমার ঘাড়ের কাছে উঠে এলো। যেনো আমাকে গিলে খাবে। জানিস অনি অনেকদিন পর কথাবলার মতো একটা যোগ্য লোকের সন্ধান পেলাম। কথা বলতে নাপেরে বোবা হয়ে গেছিলাম। লোকে আমাকে বলে আঁতেল। আমার নাকি নাক উঁচু। লেবেল সমান সমান না হলে কথা বলে আনন্দনেই। বুঝলি। কথা বলে যদি আনন্দ না পাই তাহলে কথা বলবো কেনো। সামন্ত ডাক্তার চশমাটা খুলে চোখদুটো মুছলো। তুই উত্তর পেয়েছিস। এখনও সার্চ করছি। উত্তর তুই পেয়েছিস আমাকে বলছিস না। তোমার উত্তরের সঙ্গে আমারটা মেলেকিনা দেখছি। সামন্ত ডাক্তার এবার আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন। এক্সপেরিমেন্ট! তবে তিনি ফ্রয়েড বলে কথা। তার বাইরেও কিছু আছে। তোর থার্ডসেন্সটা ভীষণ প্রখর। তাই তুই এতো তাড়াতাড়ি ডিসিসন নিতে পারিস। সাধারণ লোকে বলে ম্যাজিক। বিজ্ঞানের ভাষায় প্র্যাকটিশ। এ্যাম আই রাইট। হুঁ। কলকাতায় এবং এখানে এসে মামনির কাছে তোর কিছু কিছু গপ্প শুনছিলাম। আর মনে মনে জাজ করছিলাম। তুই আমাকে এরকম একটা প্রস্তাব আজ না হোক কাল দিবি। কি করে বুঝলে। এই মুহূর্তে তোর কাছে সেকেন্ড কোনো অপসন নেই। থাকলে তুই আমাকে বাজাতিস, সড়াসরি অফার করতিস না। আমি মাথা নীচু করে নিলাম। সেদিন তুই ওর ষোলোটা নার্সিংহোমের মধ্যে সাতটা রেস্ট্রি করিয়েছিস। বাকিটা নটা এখনো ওর নামে আছে। সেগুলোও তুই রাখবিনা। ধ্বংস করে দিবি। বিনিময়ে কিছু টাকা খিঁচে নিলি। তাও চেকে। সাদা টাকা। তুই কি ডেঞ্জার। তুই খেলাটা কোথায় নিয়ে যেতে চাস। এরা কেউ ধরতেই পারছেনা। এরিমধ্যে তার কাজ তুই শুরু করে দিয়েছিস। এরা এখনো কেউ ঘুনাক্ষরেও জানেনা। ধরতেও পারছেনা। আমি সামন্তর মুখের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকালাম। সকলে চুপচাপ। নিস্তব্ধ ঘর। পিন পরলে আওয়াজ হবে।
আমি সেদিন তোকে বলেছিলাম আমি ওর রেজিস্ট্রেসন ক্যানসেল করে দেবো। চেষ্টা করলে পারতাম। যখনি শুনলাম তুই থেকে যাচ্ছিস আমাদের সঙ্গে আসছিস না, তখনই বুঝলাম তুই আমাকে এর মধ্যে জড়াতে চাসনা। তুই অন্যভাবে আমার সাহায্য চাস। আমার চোখের পলক পরছেনা। তুই এও প্ল্যান করে রেখেছিলি। এমন জায়গায় তুই এই কথাটা বলবি যেখানে আমি তোকে না বলতে পারবোনা। আমি এবার মাথাটা নীচু করলাম। লজ্জাপাস না তোকে নিয়ে এদের অনেক কিউরিয়োসিটি। আমি জানি তুই থাকতে এদের শরীরে একটা লোমও কেউ ছুঁতে পারবেনা। মাঝে মাঝে মনে হয় আমার মতো তোরও কথা বলার লোক নেই। আমি মাথা তুললাম না। আর আমি যে তোর প্রতি দুর্বল এটাও তুই ধরে ফেলেছিস। আমি আবার মাথা তুললাম। কি করে ? আমার কলকাতা শহরে একটু আধটু প্রসার প্রতিপত্তি আছে। লোকে বলে বড় ডাক্তার। তোর সঙ্গে আমার সেই ভাবে কোনো সম্বন্ধ নেই। এডিটারের একটা কথায় আমি গাড়িতে উঠে বসলাম! বুঝলি অনি সেদিনও আমি গাড়িতে উঠে বসার আগে তোর চোখ দেখেছিলাম। তোর চোখ সেদিন বলছিলো ডাক্তার তুমি বহুত ধড়িবাজ, তুমি আমার শেকড়টা দেখতে যাচ্ছ। যাও। আমি তোমাকে ওখানে বধ করবো। কিরে ঠিক বলছি। আমি মুচকি মুচকি হাসছি। প্রিকনসাস, ফ্রয়েড উপকাহিনী মূল কাহিনী আমি বলছি। তাবলে তুই ফ্রয়েড পরিসনি একথা বলছিনা। গুলে খেয়েছিস। তুই ঠিক খবর নিয়ে নিয়েছিস আমি মামনির গ্রুপের তিনটে নার্সিংহোমের সঙ্গে এ্যাটাচ। তাই নিজের মেয়েকে বিয়ে করতে অসুবিধে কোথায়! কিরে দুষ্টু তোর পেটে পেটে এত বুদ্ধি। ছোটমা কানটা মূলে দিলো। ওঃ ছোট ব্যাথা লাগবে। তোমার জন্য ও লায় পাচ্ছে। ব্যাথা ওর লাগেনি তোমার লেগেছে। ওই হলো। ডাক্তারদাদা বলে তোকে ধরতে পেরেছে আমরা সাতজন্মেও তোকে ধরতে পারতামনা। ছোট জানো কাল খেতে বসার পর থেকে আমি লক্ষ্য করছি, ও এখানে ফিজিক্যালি প্রেজেন্ট, মেন্টালি নয়। তোমরা ধরতে পেরেছো। একদম না। আজ সকালে এদেরকে নিয়ে ও ঘুরতে গেছে। তার মধ্যেই ও ওর কাজ সেরে নিয়েছে। এরা কেউ ধরতে পারেনি। ও তো আমাদের সাথেই ছিলো। দেবাশীষ বললো। আমি তোর প্রস্তাব গ্রহণ করবো তার আগে তোকে একটা জিনিষ এদের সবার সামনে বলতে বলবো পারবি। না। মঙ্গলবার জানতে পারবে। দাদা আঁচ পাবে কাল বিকেল থেকে। দেখছো ছেলে কতটা এক্সপার্ট দিনক্ষণ সময় বলে দিচ্ছে। তুই যে এখুনি বললি কিছু হয়নি। দাদা বললো। কিছু হয়নিতো। যাও অনেক বেলা হয়েছে। স্নান করে খেয়ে নাও। তুই নিরঞ্জনকে বেঁধেছিস, তুই ইসলামকে বেঁধেছিস, তুই দামিনীকে বেঁধেছিস আমি জানি তুই থাকতে এদের কেউ স্পর্শ করতে পারবেনা। সব তাস তোর হাতে। নেক্সট কে ? নিরঞ্জনদা এতোক্ষণ চুপচাপ বসেছিলো। এবার উঠে এলো। আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। আমার কাঁধটা ধরে ঝাঁকিয়ে বললো। অনিমেষদা তোকে ও ঘরে ডেকে নিয়ে গিয়ে কি কথা বললো একটু বল। আমি ভেতর ভেতর ভীষণ অশান্ত। কিগো তোমরা এখন চা খাবে স্নান করবেনা বেলা গড়িয়ে গেলো। নীপা ঘরে ঢুকলো। থাম মুখপুরি। ছোটমা বলে উঠলো।
অনি ডাক্তার সব সত্যি কথা বলছে! আমার গা ছুঁয়ে বল। বড়মা বললো। আবার শপথ করাচ্ছ। সেদিনকার কথাটা ভুলে গেছো। আচ্ছা আচ্ছা আর বলবোনা। কিন্তু ডাক্তার কি বলছে সব গুলিয়ে যাচ্ছে। দাঁড়াও আগে চা খাই। বান্ধবী ওর পেট থেকে বার করতে পারবেনা। তোমাকে পড়াশুনো করতে হবে। এই বুড়ো বয়সে সেটা হয়। তাহলে চুপচাপ থাকো। মিলি চায়ের কাপ নিয়ে এলো। হাতে নিলাম। তুমি দাঁড়িয়ে রইলে কেনো। নিজের জায়গায় গিয়ে বোসো। নিরঞ্জনদা চলে গেলো। কিরে তোরকি এখনো ঘোর কাটেনি। ঘারটা ব্যাথা হয়ে গেলো। হোক। তোকে ছুঁয়ে থাকলে যদি কিছু শিখি। অনেক শিখেছিস আর শিখতে হবেনা। খিদে পাচ্ছেনা। পাচ্ছে তো, উঠতে ইচ্ছে করছেনা। আচ্ছা ডাক্তার তোমরা দুজনে কথা দিয়ে এমন সব ছবি আঁকলে আসল প্রশ্নের উত্তরটা পেলামনা। দাদা বললো। তোমায় পেতে হবেনা যে প্রশ্ন করেছে সে ঠিক উত্তর পেয়ে গেছে। বুঝলি অনি ফ্রয়েডের প্রিকনসাস নিয়ে আমার কিছু কিছু জায়গায় খটকা আছে। আমার একেবারে নেই। তোর সঙ্গে বসবো। তোমাদের আলোচনায় আমরা থাকবোনা। টিনা বলে উঠলো। নিরস সাবজেক্ট। নিরস কইগো বেশতো শুনতে ভালোলাগছিলো। বড়মা বললো। চলো এবার উঠি অনেক বেলা হলো। আমি উঠে দাঁড়ালাম। আমি তাহলে রেজুলেসন তৈরি করতে বলেদিচ্ছি। ডাক্তারদাদার দিকে তাকিয়ে বললাম। সেটাকি তুই বাকি রেখেছিস। হেসেফেললাম। হাসিসনা। সবকিছু হাসি দিয়ে ঢাকা যায়। তুই যেমন একা একা কাঁদিস আমরাও কাঁদি। একটু বলতে অসুবিধে কোথায়। মাথা নীচু করে থাকলাম।
বড়রা সবাই বাথরুমে স্নান করলো। আমরা সবাই পুকুরে নামলাম। জল তোলপাড় করে স্নানপর্ব চললো। দেবাশীষ সাঁতার জানেনা। ও পুকুর পারেই বসে বসে স্নান করলো। চিকনা জলে ডুবে পুকুরের মাটি তুলে আনার খেলা দেখালো। টিনা মিলি অদিতি নীপা ওর পাশে পাশে সাঁতার কাটছে। সবাই বেশ মজা করছে। আমি এমনিই সাঁতার কাটছিলাম। বাসু অনাদির সঙ্গে কথা বলছিলাম। চিকনা চেঁচিয়ে বললো, অনি তুই পারবি। তোর এখন আর দম নেই। আমি হাসলাম। যদি পারি কি দিবি। তোকে যেখান থেকে বলবো সেখান থেকে ডুবে মাটি তুলে আনতে হবে। ঠিক আছে, চেষ্টা করবো। তার আগে বল কি দিবি। তোকে পাটালি খাওয়াবো। ওতো তুই রেগুলার খাওয়াচ্ছিস।
আজ তুই আমাদের গাছের রস চুরি করে খেয়েছিস। নামলেখা আছে। তোদের গাছ। আমাদের জমির গাছ। হারুজানার কালা ইজমালি। কখনই না। আমরা মেপে দেখেছি ওটা আমাদের জায়গা। কাকাকে দলিলটা নিয়ে আসতে বল। অনাদি দেখছিস। চুরি করবে আবার…….। ঝপ করে জলে ডুব মারলাম। ডুব সাঁতারে চিকনার কাছে পৌঁছে, ওর গামছা খুলে নিয়ে চলে এলাম। জলে ভেসে উঠতেই চিকনার সে কি তর্জন গর্জন। নীপা হাততালি মারছে। অনিদার সঙ্গে চ্যালেঞ্জ। বুঝতে পেরেছিলে অনিদা এই কু-কীর্তি করবে। প্রথমে মিলিরা বুঝতে পারেনি। বোঝার পর ওদের হাসি ধরেনা। দেবাশীষ ওপর থেকে চেঁচাচ্ছে। কি চিকনাবাবু চ্যালেঞ্জ করবেনাকি অনির সঙ্গে। আর জীবনে করবোনা। তুই গামছাটা দে। অনাদি ওকে জিজ্ঞাসা কর ওই গাছটা ওদের কিনা। ও আমার নামে সকালে বড়মাকে রিপোর্ট করেছে। আমি গ্রামসভা ডাকবো। ডাক। আমি উঠলাম। তোর পায়ে ধরি। তুই গামছাটা দে। সবাই হো হো করে হাসছে। আমি বড়মাকে ডাকবো। ডাক। চিকনা কিছুতেই কাছে আসতে পারছেনা। এক গলা জালে দাঁড়িয়ে। সাঁতারও কাটতে পারছেনা। মিলি ওর কাছে যাওতো। মিলি যেই সাঁতার দিলো। আমি কিন্তু ডুবে মরে যাবো অনি। তুই মরে দেখা তুই মরেছিস। দেনা ভাই, দাদা আমার। উঃ কি রসের কথা শোন। বড়মাগো। আমাকে অনি মেরে ফেললে। পুকুরে দাঁড়িয়েই চেঁচিয়ে উঠলো। সাঁতার কাট দারুন লাগবে। চিকনার তারস্বর চিৎকারে সবাই ঘাটের ধরে চলে এসেছে। আমি মাঝ পুকুরে জলে ভেসে রয়েছি। চিকনা একগলা জলে দাঁড়িয়ে। আমার পাশে মিত্রা অদিতি টিনা নীপা মিলি। সবাই হাসছে। কিরে তোরা জল থেকে ওঠ এবার। বড়মা ওপর থেকে চেঁচালো। আমি চেঁচিয়ে বললাম আগে চিকনাকে উঠতে বলো, তারপর আমরা উঠবো। ও আমাদের উঠতে দিচ্ছেনা। দেবা বাসু জল থেকে হাসতে হাসতে উঠে গেলো। সবাই হাঁসছে। চিকনা বাবা উঠে আয়না। ওরা কি তোর সঙ্গে পারে। চিকনা কোনো কথা বলতে পারছেনা। গুম হয়ে আছে। রাগে গড় গড় করছে। বাসু বড়মার কাছে গিয়ে ফিস ফিস করে বললো। বড়মা প্রথমে আমার দিকে তাকালো চোখে হাসি মুখে গম্ভীর। ছোটমা একটা মাটির ঢেলা তুলে আমাকে ছুড়লো আমি জলে ডুব মারলাম। কথাটা সকলে জেনে ফেললো, সবাই হাসছে। ইসলামভাই হাসতে হাসতে বসে পরলো। কিহলো চিকনা গুরু বিট্রে করলো। চিকনা কোনো কথা বলতে পারছেনা। কিরে আমি তোদের গাছের রস চুরি করে খেয়েছি। না। ওটা কাদের গাছ। ইজমালি। বড়মা শুনলে চিকনা কি বললো। বড়মা হাসছে। তোর মাথায় এরকম বদ বুদ্ধি আসে কি করে বলতো। দেবাশীষ চেঁচিয়ে উঠলো, চিকনা চ্যালেঞ্জ করছিলো অনির সঙ্গে। দেখছো আমরা যারা ওর সঙ্গে কলেজ লাইফে চ্যালেঞ্জ করেছিলাম। তারা এখন কোথায় আছি। চিকনারও হাল সেইরকম হবে। একটু অপেক্ষা করো। ও তোদের মতোই হোক। চিকনা আমি ডুবে মাটি তুলছি। না তোকে ডুবতে হবেনা। তুই আমাকে ছুঁড়ে দে। একটু অপেক্ষা কর। আমি ডুব মেরে চিকনার কাছে গিয়ে ওর পায়ে হাত দিয়ে গামছাটা দিলাম। বুঝতে পারলাম চিকনা আমার হাত ধরতে গেলো, পারলোনা ছিটকে বেরিয়ে এলাম। ও ডুব মারলো। বেশ কিছুক্ষণ জলে দুজনে দাপাদাপি করলাম। দুজনেই হাঁপিয়ে গেছি। পারে উঠে এলাম। চিকনা হাসছে। তোর এখনো এতো দম। মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো কিরে ওপারে যাবিনা। আজ থাক বেলা হয়েগেছে। ছোটমা দাঁত খিঁচিয়ে উঠলো, শখ দেখো মেয়ের। আবার আমি আর চিকনা জলে ঝাঁপ মারলাম। ওদের সবাইকে নিয়ে ওপার থেকে ঘুরে এলাম। খুব এনজয় করলো ওরা। টিনা বললো, মিত্রাদি জলটা কি ভারি গো। নির্মাল্য হাঁপাতে হাঁপাতে বললো এটাকি তোমার সুইমিং পুলের জল। আমরা পারে উঠে এলাম গা মুছে টাওয়েলটা মিত্রার দিকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে চলে এলাম। চিকনা আমার পেছন পেছন। দেখলাম সঞ্জু এসে পথ আগলে দাঁড়িয়েছে। কিরে! তুই আর কিছুক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখতে পারলিনা। আমি এসে জল খাওয়াতাম। চিকনার গামছা ধরলো। চিকনা তারস্বরে চেঁচিয়ে উঠলো। বড়মা। বড়মা ভেতর বারান্দা থেকে চেঁচিয়ে উঠলো, কি হলোরে চিকনা। দেখোনা সঞ্জুটা। সঞ্জু।
নাগো বড়মা মিথ্যে কথা বলছে। আস্তে করে দাঁত কিড়মিড় করে বললো, দাঁড়া খাওয়া হোক তোকে বমি করাবো। আমি ওপরের ঘরে চলে গেলাম। চিকনা নিচের বারান্দায় ওর নিজের জায়গা থেকে জামা কাপর পরলো। নিচে চেঁচামেচির শব্দ। হুড়মুড় করে সবাই চলে এলো। ঘরে ঢুকেই মিত্রা বললো। কিরে তুই রেডি। তাহলে কি তোর জন্য অপেক্ষা করবো। মিত্রা দরজা বন্ধ করলো। আমি আলমাড়ির আয়নাটার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছি। সরনা কি মেয়েদের মতো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াস। আমি আয়না দিয়ে দেখতে পাচ্ছি মিত্রা ভিঁজে কাপরজামা চেয়ারের ওপর রেখে আমার টাওয়েলটা দিয়ে গা মুছছে। আবার আমাকে ঠেলা মারলো। ঘুরে দাঁড়ালাম। মিত্রা সোজা হয়ে বুকের ওপর ক্রশ করে হাতটা রেখেছে। প্লিজ আর করবোনা, এইবারটা ছেড়ে দে। ওপরটাতো ঢেকেছিস। নিচেরটা। চেঁচাবো। বলে দিচ্ছি। চেঁচা। গলা ফাটিয়ে ফেল। নিচে অদিতিরা আছে। কি ভাববে বল। মনে থাকে যেনো। আমি দরজার দিকে এগোলাম। চলে যাবি। হ্যাঁ। একটু দাঁড়া, একসঙ্গে যাবো। খিদে লেগেছে। পেটে আগুন জ্বলছে। তাড়াতাড়ি করে নিচ্ছি। আমি এসে খাটে বসলাম। মোবাইলটা খাটের ওপর পরেছিলো আমি টেনে নিলাম। ম্যাসেজ গুলো দেখলাম। অর্ক ঠিক ঠিক এগোচ্ছে। ছোট্ট একটা ম্যাসেজ করলাম। খালি কাজ করিস না খাওয়াদাওয়াটা ঠিক ঠাক করিস। সঙ্গে সঙ্গে রিপ্লাই এলো। করছি বস আর একটু পর। ঠিক আছে। আমি তোর ম্যাসেজ ফলোআপ করছি। রিপ্লাই এলো থ্যাঙ্ক ইউ বাই। কিরে এত ঘন ঘন ঢং ঢং করছে। অর্কর সঙ্গে একটু হ্যাজালাম। তুই খুব ভালো ফলোআপ করিস। সেই জন্য টিকে আছি। দামিনী মাসিকে ফোন করলাম। রিং বাজতেই ভয়েজ অন করলাম। কিরে মাসিকে মনে পরলো। কেনো ভুলে গেছিলাম নাকি। মাসি হো হো করে হেসে ফেললো। এখনো খেতে বসিসনি কেনো ? মিত্রা ঘরে আটকে রেখেছে। মিথ্যে কথা বলবিনা। নাগো মাসি। কিরে মিত্রা ঘরে আছে নাকি। হ্যাঁ। কাপর পরছে। তুই কি করছিস। তোমার সঙ্গে কথা বলছি। মাসি হো হো করে হাসলো। ডাক্তারকে পটিয়ে নিলি। খবর চলে গেছে। হ্যাঁ। সাগরেদ ভালোই রেখেছো। আবার মাসি হেসেফেললো। শোনো তোমায় একটা কথা বলি।
বল। কাল তোমায় রাজনাথের ছেলেপুলে ডিস্টার্ব করতে পারে। সেতো গতকাল থেকে করছে। কয়েকদিন একটু চুপ থাকবে, মাথা গরম করবেনা। চুপ করেই আছি। ডাক্তারের খোঁজ খবর নিয়েছো। না। মিথ্যে কথা বলছো। সত্যি বিশ্বাস কর। এবার তোমার লোকজন কাজ করছেনা। আমার পকেটের লোক কাজ শুরু করেছে। সেটাও জানি। তাহলে বলে ফেলো। তুই জেনে নে। ঠিক আছে মনে থাকে যেনো কথাটা, আমাকে জিজ্ঞাসা করলে আমিও ঠিক এই কথা বলবো। তুইকি আমায় বলিস। সব বলেছি। কাজ হয়ে যাবার পর। বুঝেছি। কি বুঝেছিস। তোমাকে বুঝতে হবেনা। কবে আসবি। রবিবার দুপুরের দিকে। ও বাড়ি কিন্তু কমপ্লিট হবেনা। মিত্রা আমার দিকে তাকালো। চোখ বড়বড়। তাহলে মিত্রার বাড়িতে থাকবো। সেই ভালো। আমাকে আরো দিন তিনেক সময় দিস। এই রবিবারের পরের রবিবার কাজ। মনে আছে। তুমি খেয়েছো। না, খেতে বসেছি সবে। আমার আগে খেতে বসে গেছো। কি করে জানবো তুই এখনো খাসনি। মাসি তুমি কি দিয়ে খাচ্ছগো। মিত্রা আমার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে বললো। সেদ্ধভাত আলুভাতে ডালভাতে। কেনো ? আজ বৃহস্পতিবার। আমার নিরামিষ। জানো বুবুন আজ সকালে কলাই শাক, দই আঁতিপাতা তুলে এনেছে। আসার সময় আমার জন্য একটু শাকপাতা নিয়ে আসিস। আমিতো চিনি না। বুবুনকে বলো। তুই বলেদে। আচ্ছা। তুমি খেয়ে নাও। যা তোরাও খেতে বসগে যা। আচ্ছা। আমরা চলে এলাম এবাড়িতে। একসঙ্গে সকলের জায়গা হয়েছে। যে যার সঠিক জায়গায় বসলাম। তোরা দুজনে আজ কোনো ঝামেলা করবিনা। বড়মা চোখ পাকিয়ে বললো। তারমানে! তুমি কি বলতে চাও আমি ঝামেলা করি। তুইনা মিত্রা। ও তুমি বলবেই, করলেও বলবে, না করলেও বলবে। তাইনা ছোটমা। মিত্রা ক্যাজুয়েলি বললো। ছোটমা ফিক করে হাসলো। খাবার পরতেই মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো। সুরমাসি বুবুন স্পেশাল। আজ করিনি। কেনো। অনি বারন করলো। আমার দিকে তাকিয়ে। কিরে। ঝামেলা করিসনা, যা দিয়েছে খা না। তুই বারন করেছিস কেনো। কখন করলাম। এ বাড়িতে আমি সকাল থেকে এসেছি। ঠিক। মিত্রা চুপ করে গেলো। খাওয়া শুরু করলো। খাওয়া চলছে। চারিদিক নিস্তব্ধ। দুবার জোরে জোরো নিঃশ্বাস নিয়ে, মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে ফেললো। কিরে সর্দি হয়েছে। না হবে এখুনি। আমিও হাসলাম। সবাই চুপচাপ।
ছোটমা বড়মা মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে। কিরে মিত্রা হাসলি কেনো। ছোটমা বললো। একটু অপেক্ষা করো, দেখতে পাবে। ছোটমা আমার দিকে তাকালো। সুরমাসি। কিরে। তেল লঙ্কা একটু বেশি করে দেবে। যাতে ভাগ দিতে না হয়। হ্যাঁ। মিত্রা দিলো আমার পিঠে গুম করে। বড়মাগো। একিরে! সকাল থেকে আমি এবাড়িতে এসেছি। মিত্রা ভেঙিয়ে ভেঙিয়ে বললো। তা বলে তুই! থামো তুমি। সুরমাসির সঙ্গে ওর ট্যালিপ্যাথি আছে ? বড়মা হাসবে না কাঁদবে। ওরাও সকলে হাসছে। সুরমাসি বাটিটা আমার পাতে বসাবে। কি গন্ধ ছেড়েছে বুঝতে পারছো। রসিয়ে মাখা হচ্ছে। মামনি তুই আর আমি এখানে খানেবালা, আর সবাই খেতে জানেনা বল। ডাক্তারদাদা বলে উঠলো। তোমাকেও দেবোনা। এতোক্ষণ তুমি আমাকে সাপোর্ট করোনি। তুমি আগুনে আর ঘি ঢেলোনা। দাদা বললো। সুর। আমি সবার জন্য মেখেছি দাদা। তাহলে দরকার নেই কি বলো এডিটর। তোমাকে দিলে তো। মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো। তুই আমারটাও নিয়ে নে। আমি বড়মা ছোটমারটা মারি। বড়মা তোর, ছোটমা আমার। মাথায় রাখবি। একিগো এডিটর! ভাগাভাগি আছে নাকি ? আরো অনেক কিছু আছে, দেখতে পাবে। সুরমাসি বাটি বসিয়ে দিয়ে গেলো। মিত্রা বাটির দিকে একবার তাকালো তারপর আমার দিকে। ছোটমা মুখ টিপে হাসছে। কিরে কোনটা ভালো। বুবুনেরটা। তাহলে বাটি দুটো আদলবদল করে নে। না। দেখি সুরমাসি সকলকে দেয় কিনা, তারপর বুবুনেরটা সবাই ভাগ করে নেবো। তোরটা। ওটা আমি একা খাবো। কি স্বার্থপর তুই। খাওয়ার সময়। আবার চেঁচালো, সুরমাসি। আর নেইরে মা। এই যে বললে সবার জন্য। সুরমাসি হাসছে। কি বুঝলে, এটা হচ্ছে ঘরের ছেলে। দিলো আমার কোমরে চিমটি। আমি কি বানের জলে ভেসে এসেছি। তুই খা বাপু বক বক করিসনা। বড়মা বললো। দেখেছো, কেনো প্রথমেই বলেছিলাম বুবুন স্পেশাল। বড়মা মিত্রার দিকে হাসি হাসি মুখে তাকালো। আমি আমার বাটিতে হাত চাপা দিলাম। দে দে, হাতচাপা দিয়ে লাভ নেই, সকলকে দিতে হবে। বুঝুক সকলে কেনো গুম করে বসিয়েছিলাম। মিত্রা ঝোগরুটে, না। আমি হাসছি। মিত্রা আমার বাটি নিয়ে সকলের পাতে ভাগ করে দিলো। সবার হোলোনা। নিজের বাটি থেকে আবার দিলো। মিত্রাদি তুমি আর একটা গুম করে দিলে, আরো কিছুটা বেরোতে পারে। মিলি চেঁচিয়ে উঠলো। বড়মাকে বল। বড়মার ভালো ছেলে বলে কথা। মামনি আর একটু হবে। ইসলামভাই বললো। আর নেই, এটুকু আমার আর বুবুনের। সবাই হেসে ফেললো। দেখেছো এডিটর সকলকে দেওয়া হয়েগেছে। যেটুকু আছে দু’জনের। একজনকে না দিয়ে আর একজন খায়না। তাহলে কি প্রমাণ হলো। খাওনা খালি বক বক। বড়মা বললো। মিত্রার দিকে তাকিয়ে। তোরটা থেকে একটু দে। অ্যাঁ-এ কত খায়। আচ্ছা আমরা তিনদিন এই জিনিষটা পেলামনা কেনো। মিত্রা ঠিক আদায় করলো। নাহলে তো এর স্বাদই পেতাম না। দাদা বললো। আ মরন চব্বচোষ্য খাচ্ছ তবু নোলা কমে না। সবাই হাসছে। খুব এনজয় করে খাওয়া শেষ হলো। ঠিক হলো বিকেল বেলা সবাই মিলে বুড়ো শিবের থানে যাওয়া হবে।
আজকের দলটা অনেক ভাড়ি এবং জমজমাট। সবাই দেখলাম বেশ পরিষ্কার জমাকাপর পরেছে। বাইক এবং ট্রলির মেলা। অনাদি বাসু পুরো পরিবার সমেত এসেছে। সঞ্জু বাইক নিয়ে এসেছে। ইসলামভাইও বললো আমি বাইক নিয়ে যাবো। আমি আপত্তি করলাম না। আমি অনাদিকে বললাম তুই পাঁচু পচা ওদের সবাইকে নিয়ে আয়। আমি বাসু চিকনা আগে যাচ্ছি। বড়মা একটু আপত্ত করেছিলো। দেবাও বললো তুই আমাদের সঙ্গে চল না। আমি বললাম তোরা আয় আমি হয়তো তোদের পৌঁছবার আগেই চলে আসবো। মিলি টিনা অদিতি তিনজনেই আজ শারি পরেছে। ওদের শারি পড়া আবস্থায় আগে দেখিনি। বেশ লাগছিলো। তাড়িয়ে তাড়িয়ে দেখছিলাম। মিলি কাছে এসে বললো অনিদা চোখ খারাপ হয়ে যাবে এইভাবে দেখলে। আমি বেরিয়ে এলাম চিকনা আর বাসুকে নিয়ে। মোরাম রাস্তায় আসতে বাসু বললো, তুই কোথায় যাবি বলতো। একটু গাড়িটা দাঁড় করা। আমি কয়েকটা ফোন করে নিই। একটা সিগারেট দে। বাসু পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা দিলো আমি একটা বার করে ধরিয়ে ওকে ফিরিয়ে দিলাম। ওদের থেকে একটু দূরে চলে গেলাম। প্রথমে অর্কর সঙ্গে ফোনো কথা বললাম, তারপর হিমাংশুকে এখানকার কথা বলে শনিবার সকালের দিকে আসতে বললাম। ও রাজি হলো। আমি ওদের কাছে ফিরে এলাম। কিরে কার ওপর রাগারাগি করলি। না। একটা কাজের দায়িত্ব দিলাম একজনকে। এবার বল কোথায় যাবি। উনা মাস্টারের বাড়ি। উনা মাস্টারের বাড়ি! হ্যাঁ। তোদের যেতে অসুবিধা আছে। এই সময় উনা মাস্টারের বাড়ি! একটু দরকার আছে। তোকে বোঝা মুস্কিল। বাসু হাসলো। আমিও হাসলাম। আমি বাসুর পেছনে বসলাম। মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম স্যারের বাড়ি। দেখলাম স্যার বাড়ির বারান্দায় বসে কাগজ পরছেন। আমরা বাইক রেখে ভেতরে এলাম। স্যারকে প্রণাম করলাম। স্যার মুখের কাছ থেকে কাগজ সরিয়ে বললেন, কে। স্যার আমি অনি। সঙ্গে সঙ্গে স্যার চেঁচামিচি শুরু করে দিলেন। ও বড়োবৌ দেখো কে এসেছে। ধুমকেতু দেখবে এসো। আমি হাসেফেললাম। ওরা কারা। চিকনা আর বাসু। তুই তো আবার একলা আসতে পারবিনা। তোর সাগরেদ দরকার। চিকনা স্যারের কথায় মাথা চুলকোচ্ছে। বাসু মুখ নীচু করে আছে। ওরা স্যারের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো। কাকীমা মিনতি বেরিয়ে এলো ভেতর থেকে আমি কাকীমাকে প্রণাম করলাম। মিনতি আমাকে প্রণাম করলো। বোস।
না এখন বসবোনা। তাহলে এলি কেনো। স্যার বললেন। মিনতিকে নিতে এলাম। দাদারা সব শিবের মন্দিরে আসছেন। ওকে একটু নিয়ে যাই। ঘন্টা দুয়েক পর সবাই আসবো। তারমানে। হ্যাঁ সবাই আসবো। তুই কি বলছিস বুঝতে পারছিনা। কলকাতা থেকে আমার কয়েকজন বন্ধুও এসেছে, ওরাও আসবে আপনার সঙ্গে কথা বলতে চায়। কেনো ? ওদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। ওরাও কি তোর মতো সাংবাদিক। না স্যার ওরা সব বড় বড় কোম্পানির চিফ। বাসু বললো। তোর কথা আমার মাথায় ঢুকছেনা। ঠিক আছে আমি এখন মিনতিকে নিয়ে যাচ্ছি। শিবের মন্দির থেকে আসছি। ওরা হয়তো এতোক্ষণে এসে পরেছে। কিগো বড়বৌ মিনু যাবে ? কেনো যাবেনা, অনি বড় মুখ করে ওকে নিতে এসেছে। মিনতির দিকে তাকিয়ে বললাম, তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে। মিনতি ছুটে ঘরের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেলো। হ্যাঁরে অনি। স্যার। তোর বাড়িতে নাকি সামন্ত ডাক্তার এসেছে। এখানেও আসবে। আমার বাড়িতে! হ্যাঁ। ওনারা সবাই এসেছেন। মনা ? কাকাও এসেছেন। বড়বৌ শুনলে অনির কথা। শুনছি। অতিথিরা আসছেন। আমি কি করবো। কিছু ব্যবস্তা করো। কি করবো। সব মান্য গণ্য ব্যক্তিরা আসছেন তাদের জন্য খাবার কিছু রেখেছো। ঋজুকে একটা ফোন করে দাও। বাজার থেকে মিষ্টি কিনে আনুক। স্যার আমি একটা কথা বলবো। বল শুনি। তোর গেস্ট। আমারও গেস্ট। ঢেঁকি ছাঁটা চিড়ে ভেজে শুকনো লঙ্কা দিয়ে আর কিছু ছোলা ভাজা দিয়ে মেখে রাখুন আর চা। গর্ধভ কোথাকার। এখনো তোর সেই মোটা বুদ্ধি গেলোনা। আমি মাথা নীচু করলাম। আমি বলছি স্যার ওঁরা খুব আনন্দ করে খাবে, দেখবেন। আবার কথা বলে। কতদিন বেতের বাড়ি খাসনি। মান্যগণ্য লোকেদের আমি চিঁড়েভাজা শুকনো লঙ্কা ভাজা খাওয়াবো। তাহলে আপনার যা মন চায় তাই করুণ, কিন্তু নষ্ট হবে।
তুই যা, তোকে পাকামো করতে হবেনা। তুমি ঋজুকে ফোন করে আমাকে দাও। মিনতি কাপর পরে বেরিয়ে এলো। বেশ মিষ্টি লাগছে। ঠোঁটে হাল্কা লিপস্টিক লাগিয়েছে। কপালে ছোট্ট একটা টিপ। রেডি। হ্যাঁ। অনিদা। স্যার আমি আসছি। কখন আসবি। মন্দিরটা ঘুরেই আপনার বাড়ি। ওদেরকে তুই হাঁটিয়ে আনছিস নাকি। না। অনাদি ট্রলি ঠিক করেছে। তোর বড়মার কোমর ঠিক আছেতো ? হ্যাঁ হ্যাঁ। আমরা বেরিয়ে এলাম। খামার পেরিয়ে গাড়ির কাছে এলাম। মিনতি আমার পেছনে। চিকনা একটু দূরে এসে আমাকে ঢিপ করে প্রণাম করলো। কি হলো। গুরু তুমি কতোবরো খেলোয়াড়! কেনো। সকালে সঞ্জু আমাকে বলেছিলো বলে তুমি মিনতিকে তুলে আনলে। না না, সবাই আমরা আনন্দ করবো সঞ্জুর মনটা খারাপ হয়ে যাবে, তাই। শালা আমার কেনো নেই বাসু। চিকনাদা আমি নীপাকে বলে দেবো। মিনতি বললো। তুইতো বহুত নম্বরি। তোর জন্য এতো কষ্ট করলাম, তুই নীপাকে বলে দিবি। আজ সঞ্জুকে আমি খাবো। মিনতি তুই চিকনার পেছনে বোস, আমি বাসুর পেছনে বসে পরি। মিনতি চিকনার পেছনে গিয়ে বসলো। আমরা মিনিট পাঁচেকের মধ্যে চলে এলাম। সঞ্জু দূর থেকে দেখতে পেয়েছে। এগিয়ে এসেছে। মিত্রারাও দেখেছে। সবে মাত্র বিকেল হয়েছে। মন্দিরের সামনে বিশাল একটা দীঘি। দীঘির জলে কমলা রংয়ের সূর্যের আলো পড়ে চারিদিকে ঠিকরে পরছে। আমরা এসে ওদের সামনে দাঁড়ালাম। সঞ্জু গম্ভীর। চিকনা চক চকে। মুখে হাসি আর ধরছেনা। নীপা ছুটে এলো। কিরে তুই। অনিদা নিয়ে এলো। নীপা মিনতিকে জড়িয়ে ধরলো। বড়মা বললো, এটা আবার কেরে ? সঞ্জুর দিকে তাকালাম, মুখ লুকিয়েছে। সকাল বেলা আমার গামছা ধরে খুব করকিয়ে ছিলি মনে আছে। চিকনা চেঁচিয়ে উঠলো। সঞ্জু দাঁত কিরমির করছে। আমি অনাদি বাসু হাসছি। মিত্রা মিনতিকে জড়িয়ে ধরলো। ডাক্তারদাদা কাছে এসে বললো কি অনিবাবু ব্যাপারটা কি ? সুভদ্রা হরণ করতে গেছিলাম। তোমার কি আরো দরকার ? আমার না, অন্যের জন্য। তিনি কে ? মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো। ওই যে তোমার পেছনে। লাইট ম্যান। সকলে হো হো করে হেসে ফললো। আমার গামছা ধরে টান মারবি। বাইকে করে নিয়ে এলাম। চিকনা সবার সামনে সঞ্জুকে ক্যারি কেচার করে দেখাচ্ছে। সেই জন্য তুই শোধ নিলি। বড়মা বললো। নেবোনা মানে। অনি আমার গুরু। গুরু শিষ্যকে হেল্প করবেনা। সকলের হাসি আর থামে না। মিনতি মিত্রার থেকে চালান হয়ে চলে গেছে মিলিদের কাছে। তোমরা মন্দির দেখেছো ? বড়মার দিকে তাকিয়ে বললাম। না। মন্দির বন্ধ। তোর কাকা ব্রাহ্মণকে ডাকতে গেছে। অনাদির দিকে তাকালাম। তোরা যেতে পারলিনা। আমাকে যেতে দিলেতো। তবুতো পাঁচুকে সঙ্গে পাঠিয়েছি। বড়মাদের ঘুরে দেখিয়েছিস। দেখাতে পারতাম কিন্তু তোর মতো গল্প বলতে পারবোনা। কি নেতা হয়েছিস। ঠিক কথা। ডাক্তারদাদা বললো। কিগো তুমি চুপচাপ কেনো। ছোটমার গলা জড়িয়ে ধরলাম। তুই এই কারণ আগে আগে বেরিয়ে ছিলি। হ্যাঁ। স্যারের কাছে গেলাম। আর বলে এলাম একটু পরে আমরা সবাই আসছি। ভালো করেছিস তোর উনা মাস্টারের বাড়িটাও এই ফাঁকে দেখা হয়ে যাবে। বড়মা বললো। স্যার আজকেও অনিকে বলেছে, কতোদিন বেত পিঠে পরেনি। বাসু বললো। দাঁড়া তোর উনা মাস্টারকে গিয়ে দেখাচ্ছি। বড়মা বললো। আমি বড়মাকে জড়িয়ে ধরে গালে গাল ঘোষে বললাম, ওটা স্নেহের মার। তুমি ছোটমাযে কান ধরো। বড়মা আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে। চলো বেলা পরে আসছে। এই ঝিলটা দেখেছো। কতো পদ্মফুল বলোতো। ওই দেখ মেয়েগুলো জলে নেমেছে।
নামতে দাও। প্রাণভেরে দেখে নিক। আবার জোঁকে ধরবে। ধরুকনা খতি কি। দূরে দেখলাম দাদা নিরঞ্জনদা মল্লিকদা ইসলামভাই ডাক্তারদাদা হাঁটতে হাঁটতে পুকুরের ওপারে চলে যাচ্ছে। মিত্রারা একটা গ্রুপে সবাই। আমার কাছে একমাত্র বাসু আর অনাদি। আমরা হাঁটতে হাঁটতে দীঘির ধারে চলে এলাম। জানো বড়মা এটা দুধ পুকুর। গ্রামের ঘরে সন্ন্যাসীদের ভক্তা বলে। চৈত্র মাসে এখানে গাজন হয়। একমাসের উপবাস ভাঙে শিবরাত্রির দিন। যারা সন্ন্যাস নেয় তারা এই দিন এখানকার ভি আইপি। সন্ন্যাসীরা সবাই শিবের মন্দিরে এসে পূজো দেয়। তখন মন্দিরে কোনো ভেদা ভেদ নেই। যারা সন্ন্যস নেয় তারা কিন্তু সবাই যে ব্রাহ্মণ তা নয়। নীচু জাতের লোকও সন্ন্যস নেয়। ধর্মের অনুশাসন এখনো এখানে আছে। কিন্তু ওই কয়দিনের জন্য কোনো অনুশাসন নেই। ভারি অবাক লাগে। তখন সেই নীচুজাতের লোক গুলোকে সবাই পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে। কারণ তারা সন্ন্যসী। কি অদ্ভুত না আমাদের এই ধর্মের অনুশাসন। এখানে দশদিন ধরে মেলা চলে। আগুন ঝাঁপ, কাঁটা ঝাঁপ আরো কতকিছু হয়। সবাই মজা করে দেখে। জানো তখন সেই সন্ন্যাসীদের এক একজনকে ম্যেজিসিয়ান বলে মনে হয়। এই দুধ পুকুরে সকলে স্নানকরে শুদ্ধ হয়। তারপর তাদের দোলায় করে কাঁধে চাপিয়া মন্দিরের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই দোলায় কাঁধ দেবার জন্য এখানে হুরোহুরি পরে যায়। সন্ন্যাসীদের কাঁধে চাপাতে পারলে পুন্ন্যার্জন হবে। কি অদ্ভূত সিস্টেম। তুমি কখনো দেখেছো। বড়মার মুখের দিকে তাকালাম। বুঝলাম একটা ঘোড়ের মধ্যে আছে। আমার কথাগুলো খুব মন দিয়ে শুনছিলো। ছোটমারও একি অবস্থা। আমার দিকে কিছুক্ষণ ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলো। তুই কখনো দেখেছিস ? হ্যাঁ বেশ কয়েকবার। শেষ যখন টেনেপরি তখন। আমি কখনো দেখিনি। শুনেছি। আর আজ এইজায়গাটায় এসে তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে আমি চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি। এই দীঘির চারপাশে হ্রদগুলো দেখছো। বড়মা আমার মুখের দিকে তাকালো। এগুলো কখনো পরিষ্কার হয়না। বছরে একবার পরিষ্কার হয়। তাই। হ্যাঁ। কেনো। গাজনের সময় কাজে লাগে। যেখানে আগুন ঝাঁপ হয়। তার চারপাশে মোটা করে ফেলে রাখা হয়। আগুন ঝাঁপের জায়গাটা তিরিশ ফুট লম্বাহয়। চওড়া ধরে নাও পাঁচ ফুট। কাঠ কয়লা জ্বালানো হয়। তাও আবার যে সে কাঠ নয়, বেল কাঠ। আগুনটা গণগণে করা হয় কুলোর হাওয়া দিয়ে। তারপর প্রচন্ড জোরে ঢাক বেজে ওঠে। ভক্তারা ওই গণগণে আগুনের ওপর দিয়ে হেঁটে এপার থেক ওপারে যায়। ওপার থেকে এপারে আসে। তখন এই হ্রদগুলোকে ভিঁজে সপ সপে করে রাখা হয়। ঘড়া ঘড়া জল ঢালা হয়। পায়ে ফোস্কা পরে যায়না। না। কেনো বলোতো। কেনো। এটাও একটা সাইন্স। যাঃ। হ্যাঁগো। আচ্ছা তুমি নিজে একটু পরীক্ষা করে দেখো। তুমি যদি তোমার পায়ের তলায় আগুনের ছেঁকা মারো দেখবে তোমার সেই উত্তাপ লাগতে বেশ কিছুক্ষণ সময় নেবে। চামড়াটা মোটা। সেই ছোটো বয়েসে দেখেছি, এখনো সেই ছবিটা মনের ভেতর জীবন্ত। এখন তাকে বাস্তবে আনার চেষ্টা করেছি। কি রকম। ওই কুড়িফুট রাস্তাটা ওরা হাঁটতে সময় নিতো তিরিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ সেকেন্ড। গিয়েই ওই জল ভরা হ্রদের ওপর দাঁড়িয়ে যেতো। বেশ কিছুক্ষণ পর আবার ওরা একি ভাবে ফিরে এসে এপাশের ভিঁজে হ্রদের ওপর দাঁড়াতো। অতএব হাঁটার সময় পায়ের তলাটা যতটা গরম হতো জল ভরা হ্রদে এসে দাঁড়াতেই তা ঠান্ডা হয়ে যেতো। তাবলে তুমি কখনোই মনে কোরোনা আমি তাদের কৃচ্ছসাধনাকে ছোটো করে দেখছি। ওই ভাবে একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে আগুণের ওপর দিয়ে হাঁটা সম্ভব নয়। তখন তোমার মনের মধ্যে যতো বড়ো ঐশ্বরিক শক্তির উপলব্ধি আসুকনা কেনো। তুমি কিছুনা কিছু ইনজিওরড হবেই। ওরা কিন্তু বহাল তবিয়েতেই থাকে। বড়মা কাকে যেনো ইশারা করলো। হঠাৎ মনটা ঘুরে গেলো। আমি পেছন ফিরে তাকালাম। দেখলাম আমার পেছনে সকলে ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে। সবাই আমার কথা শুনছে। দাদাও একদৃষ্টে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। লজ্জাপেয়ে গেলাম। কিরে বল বেশ বলছিলি। দিলেতো সব মাটি করে। বড়মা বললো। যাচ্চলে আমি কোথায় মাটি করে দিলুম। টুঁ শব্দটি করিনি। কখন থেকে এসে সব শুনছি। ও টের পেয়েছে। যত্তোসব। চলো ওই পাশে যাই। আমরা সবাই হাঁটতে আরম্ভ করলাম মন্দিরের দিকে। আমার পেছনে পাশে সবাই। এমনকি কাকা সেই ব্রহ্মণ মশাই পর্যন্ত। জানো বড়মা আমাদের স্কুল থেকে একটু দূরে গেলে দত্তদের জমিদার বাড়ি। এই গোটা অঞ্চলটা জমিদার বাবুদের। এই মন্দির তারা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ওই পুকুরটা তারা খনন করেছিলেন। শোনা কথা এই পুকুরের মাঝখানে নাকি অনেক কুয়ো আছে। কেনো বলোতো। কেনো। তুমি আমাদের লোকগাথার মধ্যে এই গল্পগুলো পাবে। চোটমা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। গ্রামের ঘরের ঘুমপারানি গান শুনেছো। বাচ্চাদের ঘুম পারাবার সময় মারা ওই গান গুলে গায়। ভুলে গেছি। আয়ঘুম যায় ঘুম বর্গী এলো দেশে বর্গীদের ছেলে গুলো পথে বসে কাঁদে আর কেঁদোনা আর কেঁদোনা ছোলা ভাজা দেবো এবার যদি কাঁদো তুমি তুলে আছাড়া দেবো। বড়মা হেসে ফেললো। তুই জানলি কি করে। পদি পিসির কাছ থেকে। সেটা আবার কে। ফণি জ্যেঠুর বোন। মরে গেছে। যেটা বলছিলাম। বর্গীরা এক সময় বাংলা আক্রমণ করেছিলো। তখন দুই বাংলা এক ছিলো। কিছু মানুষের নিজের স্বার্থে আমরা নিজেদের ভাগ করেছি। এই বর্গীদের হাত থেকে বাঁচার জন্য, এইসব জমিদাররা প্রচুর মন্দির তৈরি করেছিলো। আর পুকুরের যে সব কুয়ো দেখছো। সেখানে তাদের সোনাদানা এক একটা ঘরায় করে লুকিয়ে রাখতো। বর্গীরা আক্রমণ করলে। ঘর লুঠ করবে। মন্দির লুঠ করবেনা। জানতেও পারবেনা এই রকম একটা পুকুরের মধ্যে তাদের সম্পদ লোকানো আছে। মাঝে মাঝে গুপ্তধনের গল্প পরো, এই কনসেপ্ট থেকে তৈরি। বড়মা আমার সামনে দাঁড়ালো। আমার মুখে হাত বুলোতে বললো। তুই এত পড়ার সময় পাশ কোথায় ? ওই জন্য অফিসে যেতে দেরি হতো। তোমায় ফোন করে বলতাম দাদাকে বলে দাও। ছোটমা হেসে ফেললো। ওরা সবাই আমার দিকে তাকিয়ে। ফণিজ্যেঠুর বাবা ওই জমিদার বাড়ির লেঠেল ছিলেন। একদিন গল্প করতে করতে ফণিজ্যেঠু আমাকে বলে ফেলেছিলো ওই বাড়িতে যে মন্দির আছে তার তলায় একটা অন্ধকার ঘর আছে জমিদারবাবু নাকি যারা দোষ করতো তাদের ওখানে আটকে রেখে দিতো। আমি দুষ্টুমি করলে আমাকেও ওখানে নিয়ে গিয়ে আটকে রেখে দেবে। যখন বড় হলাম দেখলাম তার আগেই জমিদারদের জমিদারিত্ব চলেগেলো। জমিদার বাবুরা এখান থেকে টাউনে চলে গেলো। মন্দির রয়ে গেলো। আমি প্রায়ই জমিদার বাড়িতে যেতাম। মনাকাকা বাবার দৌলতে আমার একটু পরিচিতি ছিলো। ওই বাড়ির একটা কাজের মেয়েকে পটিয়ে, আমি একদিন সেই অন্ধ কুঠরির খোঁজ পেলাম। অনেক খোঁজ খবর নিয়ে তার ইতিহাস জানলাম। ফণিজ্যেঠুকে এসে ধরলাম। জ্যেঠু আমার কথা শুনে প্রথমে অবাক হয়ে বললো তুই জানলি কি করে! আমি বললাম তুমি হ্যাঁ অথবা না বলবে। জ্যেঠু আমার কথায় শায় দিয়েছিলো। সেই দেবদাসী। মিত্রা বললো। হ্যাঁ। দেখলাম কাকা অনেকটা এগিয়ে গেছে আমাদের থেকে। ডাক্তারদাদা আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। তুই এগুলো সব খুঁজে খুঁজে বার করেছিস। হ্যাঁ। তখন তুই কোন ক্লাসে পরতিস।
ক্লাস টেন। একা একা। হ্যাঁ। যানো ডাক্তারদাদা সেই দেবদাসী আর দামিণী মাসির মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। খালি পরিবেশ বদলে গেছে। পরিস্থিতির অদল বদল ঘটেছে এই যা। শেষ বারে এসে সেই দিদাকে অনেক খোঁজ করেছি। পাইনি। ও পাড়ার লোকগুলো বললো তিনি মারা গেছেন। এই জন্য তুই ফ্রয়েড পরিস। আমি মাথা নীচু করলাম। জানো ডাক্তারদাদা মানুষের মনটা আকাশের মতো। তুমি চেষ্টা করলেও ছুঁতে পারবেনা। তুমি উঁকি দিয়ে দেখতে পারো। উপলব্ধি করতে পারো। এর বেশি কিছু নয়। ঠিক বলেছিস। তারপর আমার কাঁধটা ঝাঁকিয়ে বললো, এই জন্য তুই এতো কষ্ট পাস। হয়তো সত্যি হয়তো নয়। জানো বড়মা এমনি এই মন্দিরটা দেখলে তোমার কোনো কিচু মনে দাগ কাটবে না। কিন্তু তুমি যখনি তার ইতিহাসটা জানতে পারবে, তখনি তোমার মনে সেই জায়গাটা দাগ কাটবে। ঠিক বলেছিস। যেমন তোর পীরবাবার থান। হ্যাঁ। শুধু আমি না। অনেকেই কিন্তু নিয়ম করে ওখানে দাঁড়িয়ে প্রণামকরে। বাবাঃ তুই কি গল্প ফেঁদেছিস বলতো। সকলে মোহিত হয়ে শুনছে। কাকা বললো। ও গল্প তুমিও জানোনা মাস্টার। তা বলতে পারো। ছোট থেকে ওর জানার ইচ্ছেটা প্রবল। আমাদের গ্রামের বয়স্করা ওর বন্ধু ছিলো। একবার তো আমাদের গুণিনের কাছে মন্ত্র শিখতে গেছিলো। বাবু গুণিন হবেন। তাই বলি তুই এতো গাছপাতার নাম জানিস কি করে এবং তার গুণাগুন। ডাক্তারদাদা বললো। আমি মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকলাম। যাও মন্দিরে যাও। তুই যাবিনা। তোমরা যাও, আমি যাচ্ছি। হ্যাঁরে হাতপা ধোবো কোথায়। ওইতো টিউবওয়েল আছে। ওরা সবাই জুতে খুলে হাতা পা ধুয়ে মন্দিরে গেলো। আমি মিনতিকে সঞ্জুকে কাছে ডাকলাম। চিকনা এগিয়ে এলো। বাসু অনাদি আমার পাশে। আমার মুখের ভাব ভঙ্গিতে ওরা বুঝতে পারেছে, আমি খুব সিরিয়াস। দুজনেই মাথা নীচু করে। সঞ্জু তুই মিনতিকে ভালোবাসিস। সঞ্জু মাথা নীচু করে রইলো। আমি তোর মুখ থেকে শুনতে চেয়েছি। হ্যাঁ। মিনতি তুই।
হ্যাঁ। এখন বিয়ে করতে চাস। না। কেনো ? আমি পড়াশুনো করবো। সঞ্জু তুই কি বলিস। আমার কোনো আপত্তি নেই। যদি স্যার এখুনি মিনতির বিয়ে দিতে চায়। আমি রাজি। তারপর ওর পড়ার কোনো ডিস্টার্ব হবেনা। না। কোনোদিন হবে না। যদি হয় আমি আলাদা হয়ে পালিয়ে আসবো। সেটা সমস্যার সমাধান হলো। ওর পড়াশুনায় যাতে কোনো খতি না হয় তা আমি দেখবো। যদি খতি হয়। তুই যা শাস্তি দিবি আমি মনে নেবো। মনে থাকবে। হ্যাঁ। যা দু’জনে একসঙ্গে পূজো দিয়ে আয়। ওরা দুজনে চলে গেলো। চিকনা আমার কাছে এসে দাঁড়ালো। আমার মুখটার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে। তোর সঙ্গে এখন কথা বলতে ভয় লাগছে। কেনো! জানিনা। চল মন্দিরে যাই। চল। আমরা মন্দিরের ভেতর এলাম। প্রচুর ফুল মিষ্টি। সবাই যে যার নিজের হাতে পূজো দিচ্ছে। বড়মা মনে হয় ব্রাহ্মণকে জিজ্ঞাসা করেছে, মন্দির সম্বন্ধে, সে কিছু বলতে পারেনি। বড়মা কাকাকে মনে হয় কিছু বলছে। সবাই বেশ গোল হয়ে বসে। সূর্য একবারে পশ্চিম আকাশে ঢলে পরেছে। একটু পরেই মুখ লুকোবে। বুবুন। আমি ঘুরে তাকালাম। আয় একটু। আমি কাছে এগিয়ে গেলাম। শ্যাম এই হচ্ছে অনি। ওকে খুব ছোট সময় দেখেছিলাম। হ্যাঁ। এখনতো ও কলকাতাতেই থাকে। এইটি বউমা। উনি দুজনের দিকে একবার ভালো করে তাকালেন। বুঝতে পারলাম চোখে অনেক প্রশ্ন। বুঝলাম কাকা তাকে সঙ্গে করে আনার সময় অনেক কথা বলেছেন। আমি প্রণাম করলাম। উনি আমার মাথায় আবিরের টিপ লাগিয়ে দিলেন। আরো প্রায় আধঘন্টা পর আমরা সবাই বেরোলাম। এখন গোধূলি। মিহি কুয়াশার মতো অন্ধকার আকাশটাকে ঢেকে ফেলছে। শুকতারা আকাশে জ্বল জ্বল করছে। অদিতি দেবাশীষের হাত ধরে। দুজনের মাতাতেই আবিরের ছোঁয়া। টিনা মিলি নির্মাল্য নীপা সবাই একে একে মন্দির থকে বেরিয়ে এলো। বড়মা সবার হাতে প্রসাদ দিলেন আমরা খেলাম।
জানো বড়মা তোমরা যেখানে বসে পূজো দিলে। চৈত্রমাসে ওই জায়গাটা এক মানুষ গর্ত হয়ে যায়। কেনো। বহু মানুষ কোদাল দিয়ে মাটি কেটে নিয়ে চলে যায়। এ কি কথা। হ্যাঁগো। এই মাটিটা খুব উপকারী, যেকোনো ব্যাথায় তুমি যদি গুলে লাগাও তোমরা ব্যাথা কমে যাবে। গর্ত বোঁজানো হয় কি করে। ওই পুকুর থেকে কেটে নিয়ে আসা হয়। খালি গপ্পো। তুমি ওই ব্রাহ্মণকে জিজ্ঞাসা করো। বড়মা চোটমা আমার কতা শুনে সত্যি সত্যি ব্রাহ্মণের কাছে গেলো। ব্রহ্মণ হাসছে। বড়মা ওখান থেকেই আমার দিকে ফিরে হাসলো। কি অনি গপ্পোবলে। বড়মা আমাকে জড়িয়ে ধরে গালে গাল ঘোষলো। তোকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো অনি। ইসলামভাই আমার দিকে তাকিয়ে বললো। বলো। তোদের এখানটা দেখলাম তোর গল্প শুনলাম। আমার একটা কতা মনে পরে যাচ্ছে। কিন্তু কোথায় পরেছি ঠিক বলতে পারবোনা। কি বলোতো। পীর সাহেব এবং মহাদেব এক ব্যাক্তি। তোমার কথা ঠিক। তুমি এ্যান্টনি ফিরিঙ্গীর জীবনবৃতান্ত পরেছো। না। আমার কাছে আছে নিয়ে পোরেনিয়ো। সেখানে কবিয়াল ফিরিঙ্গী সাহেব একজন বাঙালী ব্রাহ্মণ কন্যাকে বিয়ে করেছিলেন। যদিও কবিয়ালের সঙ্গে তার পরিচয় এক নবাবের বাড়িতে। সেখানে সেই ভদ্রমহিলা একজন বাইজী হিসাবেই প্রসিদ্ধা ছিলেন। তারপর সেই ভদ্রমহিলার দৌলতেই ফিরিঙ্গী সাহেব একদিন একজন নামজাদা কবিয়াল হন। একদিন ফিরিঙ্গী কবিয়ালের সঙ্গে তখনকার দিনের বিখ্যাত কবিয়াল ভোলাময়রার কবির লড়াই চলছে। ভোলাময়রার একটা প্রশ্নের উত্তরে ফিরিঙ্গী কবিয়াল বলেছিলেন, কিষ্ট আর খিস্টতে প্রভেদ নেইকো ভাই/শুধু নামের ফেরে জগত ফেরে/ আরতো কিছুই নয়। এখানে কিষ্ট বলতে কবিয়াল কৃষ্ণকে বুঝিয়েছেন। ইসলামভাই আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে। ডাক্তারদাদা ফিক করে হেসে বললো, কি ভায়া হজম হলোনা। ও তোমার কথাটা একটু ঘুরিয়ে বলে দিলো। উদাহরণ স্বরূপ। তারপর বড়মার দিকে তাকিয়ে বললো। কি বান্ধবী তোমার ছেলের দৌড়টা দেখছো। বড়মা হাসি হাসি মুখ করে বললেন, আমি ওর দৌড়টা জানি তুমি বরং তোমার বন্ধুটিকে একটু বোঝাও। দেবারা হো হো করে হেসে ফেললো। দাদা কপট রাগে বললো, আমাকে আবার এর মধ্যে টানলে কেনো। আমি কি অন্যায় করলাম। চলো আর এখানে নয় স্যার আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন। ওরা সবাই যে যার মতো বসলো। আমি অনাদিকে বললাম, তুই একবার আগে চলে যা স্যারকে গিয়ে বল। পারলে একটু সাহায্য কর। অনাদি হেসে ফেললো। বাসু বললো আমি চিকনা ওর সঙ্গে যাই। যা। ওরা সবাই এগিয়ে গেলো। আমরা পেছন পেছন গেলাম। নীপাদের ট্রলি থেকে গানের কলি ভেসে আসছে। বুঝলাম ওরা আন্তাকসারি খেলছে। বড়মারা নীচু স্বরে কথা বলছে। আমরা কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই পৌঁছে গেলাম।
উনা মাস্টারের বাড়িতে কারেন্ট আছে। লাইট জ্বলছে। কাকা ট্রলি থেকে নেমেই চেঁচিয়ে উঠলো, কিরে উনা কোথায় গেলিরে। স্যার বেরিয়ে এলেন। বড়মা ছোটমার সঙ্গে স্যারের পরিচয় ছিলো। কাকা দাদাদের সঙ্গে পরিচয় করালেন। স্যার সবাইকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলেন। ডাক্তারদাদাকে প্রণাম করে বললেন আপনি আমাকে চিন্তে পারবেন না। আমি একবার আপনার শ্যামবাজারের চেম্বারে গেছিলাম। কেনো। কোমরের হাড় সরে গিয়ে ব্যাথা হচ্ছিল। ব্যাথা কমেছে না বেরেছে। কমেছে। তারপর আর গেছিলেন। না। কেনো। আপনি বলেছিলেন যতদিন বাঁচবেন এই ওষুধ গুলো খাবেন। খেয়ে যাচ্ছেন। যাচ্ছি। সুস্থও আছি। এবার আমাকে কি খাওয়াবেন। অনেকটা পথ এলাম। মিত্রার দিকে তাকিয়ে। কিরে মা ঠিক কথা বললাম কিনা। একবারে ঠিক। বড়মা খিঁচিয়ে উঠলো। খালি খাই খাই। পেটে জায়গা থাকে কি করে। ও তুমি বুঝবেনা বান্ধবী। সবাই আবার হেসে ফেললো। দেবাশীষকে কাছে ডাকলাম। বললাম কাকাকে বলেছিলি তোদের মনের কথা। বলেছিলাম। কাকাকে মনে করিয়ে দে। স্যারকে বলুক। মিত্রা সকলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলো। শেষে বললো তুমি বুবুনকে বেত মারবে বলেছো আজ। সবাই হো হো করে হেসে ফেললো। তোর বুবুন যদি অন্যায় করে। কি করেছে। বলেছে তোদের লঙ্কাভাজা দিয়ে ঢেঁকি ছাঁটা চিঁড়েভাজা খাওয়াতে। বাঃ বাঃ তোফা রেসিপি। ডাক্তারদাদা চেঁচিয়ে উঠলো। কিগো কিছু বুঝলে। মিত্রা বললো। যেনো স্যারকে ধমকাচ্ছে। আমার অন্যায় হয়েছে মা। তোর কাকীমা অনির কথা মতো চিঁড়ে ভেজেছে শুকনো লঙ্কা দিয়ে। ঠিক আছে। এবার বুবুনের বন্ধু মানে আমারও বন্ধু ওরা তোমাকে কিছু বলবে তুমি শোনো। দেবা সবিস্তারে সব বললো। তোদের অনি মাইক্রোস্কোপ দেখিয়েছে! হ্যাঁ। জানিস ওই মাইক্রোস্কোপটা নিয়ে একটা গল্প আছে। জানি। বুবুন বলেছে। তোদের বলেছে। হ্যাঁ। স্যার নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না। মিত্রাকে জড়িয়ে ধরে চোখটা ছল ছল করে উঠলো। জানিস মা। ওই দিনটার কতা এখনো মনে পরলে নিজেকে খমা করতে পারিনা। ও আমার ছাত্র ওর কাছে ক্ষমা চাইতে পারিনা। মনার কাছে গিয়ে বহুবার ক্ষমা চেয়ে এসেছি। আজ তোর কাছে ক্ষমা চাইছি। এমা এ তুমি কি কথা বলছো ভায়া। ডাক্তারদাদা বললো। না ডাক্তারবাবু আমি ঠিক কথা বলছি। সেদিন বুঝিনি, আজ আমি অনুভব করি সেদিন আমি কতোবরো ভুল করেছিলাম। আজো আমার মাঝে মাঝে আক্ষেপ হয়। সে ঠিক আছে। মাথায় রাখবেন অনি আপনার ছাত্র। ও কিন্তু ওর স্যারের বাড়িতে আমাদের নিয়ে এসেছে। ডাক্তারদার কথায় মেঘ কাটলো। স্যার বেঞ্চিতে বসলেন। এবার দেবাদের ব্যাপারটা কি হবে বলুন। মামনি দেখনা চিঁড়েভাজা কতদূর। ওরা যা দেবে আমি ল্যাবোরেটরিতে রাখবো। আপনার কি কি লাগবে বলুন।
আমি কালকে একটা লিস্টি করে দেবো। দেবাবাবু তোমাদের কাজ হয়ে গেলো। এবার কেটে পরো। আচ্ছা অনি গেলো কোথায় বান্ধবী। আছে কোথাও দেখো, নাহলে আবার কোথাও গল্পের সন্ধানে গেছে। আমি অন্ধকারে বাইরের খেতটায় ঘাপটি মেরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব শুনছি। মিনতি মিত্রা টিনা মিলি কাঁচের বাটিতে করে চিঁড়েভাজা সাজিয়ে নিয়ে এলো। ওঃ গন্ধটা দারুণ বেরিয়েছে নারে মামনি। আমি একমুঠো খেয়ে নিয়েছি। দারুণ। অ্যাঁ। হ্যাঁ। তুমি খাও দারুণ টেস্ট। বড়মা ফিক করে হেসে ফেললো। জুড়িদারটা ভালো। স্যার ডাক্তারের কান্ড কারখানায় মুচকি মুচকি হাসছে। বুবুন কোথায় গেলো বড়মা। কেনো ভেতরে নেই। ছিলোতো এখুনি তারপর কোথায় ফুরুত করে হাওয়া হয়ে গেলো। তুই ধরে রাখতে পারলিনা। ডাক্তার বললো। আমার সাধ্যি নেই। সেকিরে! হ্যাঁগো। তোমরা পারছো ? বুঝেছি। মিত্রা চলে গেলো। হ্যাঁগো উনা মাস্টার। বলুন দিদি। তোমায় অনি কোনো কথা বলেছিলো। কিসের ব্যাপারে বলুনতো। তোমার মেয়ের ব্যাপারে। হ্যাঁ বলেছিলো। ও আজকে তোমার মেয়েকে নিয়ে গেছিলো। হ্যাঁ। যাবার সময় বললো। আপনারা সবাই আসবেন। সেতো বুঝলাম। ছাত্রের মনের হদিস পাওনাতো ছাত্রকে কেমন পরিয়েছো। আপনার কথা ঠিক বুঝতে পারছিনা। ওখানে গিয়ে আমাকে বললো সুভদ্রা হরণ করে নিয়ে এলাম। হো হো করে হেসে ফেললেন স্যার। বুঝেছি। এবার মনের কথাটা বলে ফেলো। ওর জেদের কাছে হার মানছি। তাহলে আমি অনিকে বলতে পারি। বলতে পারেন। লাইট ম্যান। ডাক্তার বললো। বড়মা সামন্তর দিকে তাকিয়ে ফিক করে হাসলো। অনি বুঝি তোমায় ঘটকালি করার দায়িত্ব দিয়েছে। আসার সময় ফিস ফিস করে বললো। স্যারের মনের কথাটা একটু জেনে নিও। স্যার আবার হো হো করে হেসে ফেললো। দেখুন ও কতটা সেন্সেটিভ। এর মধ্যেও ওর কোনো প্লেন আছে। তা বলতে পারবোনা। আমাকে বললো তুমি একটু স্যারকে কথাটা পারবে। ওকে বলেদেবেন আমার মনের কথা। ওরা ওদের মতো গল্প করতে শুরু করে দিলো। আমি পেছনের দরজা দিয়ে ঢুকলাম। তখন ওখানে হৈ হৈ চলছে। সঞ্জু চিকনা তরজা। সবাই বেশ এনজয় করছে। মিনতিও আছে। আমাকে দেখে দুজনে চুপ করে গেলো।
কিরে তুই কোথায় ছিলি। দেবাশীষ বললো। বল এইতো এখানেই ছিলাম। মিত্রা বললো। হাসলাম। আমরটা কোথায় ? পাবিনা। আগে সত্যি কথা বলবি তারপর পাবি। আমি মিত্রার পাশে গিয়ে বসলাম। একবারে আমার বাটিতে হাত দিবিনা। বাটিটা চাপা দিয়ে কোলের কাছে তুলে নিলো। মিনতি একটু চা আনোতো। একবারে দিবিনা তুই বোস। মিনতি উঠতে পারছে না। একবার আমার দিকে তাকায় একবার মিত্রার দিকে। দেখছিস কার ক্ষমতা বেশি। অব ভিয়াসলি তোর। তাহলে। আমি মিত্রার মুখের দিকে তাকিয়ে। হাত চলে গেছে ওর কোলের ভেতর লুকিয়ে রাখা বাটিতে। না না না। তার আগেই মুঠো ভর্তি হয়ে গেছে। খেলাম। মনে রাখিস এটা আমার জন্য। রেসিপিটা আমার বুদ্ধিতে। মিত্রা আমার দিকে হাসি হাসি চোখে তাকিয়ে।
কিছু বলবি ? মাথা নীচু করলো, তোর কাছে হেরেও আনন্দ। ঠিক বলেছো মিত্রাদি। মিলি বললো। ভালো সাকরেদ তৈরি করে নিয়েছিস। জল উঁচুতো উঁচু, জল নীচুতো নীচু। কখনই না, যা সত্যি, মিলি তাই বললো। হাসলাম। ওর গালটা ধরে একটু নেড়ে দিলাম। ওর চোখে মুখে খুশির ঝিলিক। এবার দে। বাটিটা এগিয়ে দিলো। এক মুঠো তুলে নিলাম। চিঁড়ে ভাজা চিবোতে চিবোতে মিনতির দিকে তাকিয়ে বললাম। চা। মিনতি উঠে দাঁড়ালো। দেবা তোর কাজ করেছিস। হ্যাঁ। ডাক্তারদাদা আজ ফুল ফর্মে ব্যাট করলো। স্যার ডাক্তারদাদার পুরনো পেসেন্ট। এ গ্রামের সকলেই কি ডাক্তারদাদার পেসেন্ট! এই ফিল্ডে আর কে আছে বলতো ? ঠিক। তোরা কি ঠিক করলি। আগামী সপ্তাহে একবার আসবো। তাতো হবেনা। আমার একটা কাজ আছে রবিবার। হয়তো তোদেরও থাকতে হবে। ধর আমরা সোমবার এলাম সেদিনই ফিরে গেলাম। এরা কষ্ট পাবে। এট লিস্ট ওয়ান নাইট তোকে স্টে করতে হবে। দেখা যাবে। নীপা ছুটে এসে মিত্রার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিস ফিস করে কি বললো। মিত্রা মুচকি হাসলো। উঠে দাঁড়ালো। আমার দিকে তাকিয়ে বললো, আমি একটু আসছি। যা। কি টিনা ম্যাডাম, শিব ঠাকুর কি বললো তোমায়। তিনি কবে আসছেন। প্রার্থনা করলাম যেনো না আসেন। কিরে দেবা! বলে কি ? এই বেশ ভালো আছি অনিদা। কেনো। একটা ছবি মনের মধ্যে গাঁথা হয়ে আছে। যদি সেটা নষ্ট হয়ে যায়। হুঁ। বেশ জটিল। তবে কি জানো টিনা। জীবনের সব ছবিই জল ছবি। তুমি নিজে আবার মনের মতো করে এঁকে নিতে পারো। টিনা আমার দিকে তাকালো। কিছু বলতে চায়। পারলো না। মাথা নীচু করলো। মিলি ম্যাডাম। আমি কিছু চাইনি। তবে প্রার্থনা করেছি অনিদার মতো যেনো হতে পারি। খুব কষ্ট। হোকনা, খতি কি অনিদা। দেবা ? অদিতি চেয়েছে, আমি কিছু চাইনি। তুই আমাকে জিজ্ঞাসা করবিনা। চিকনা বললো। তুইতো সঞ্জুর মতো একটা খুঁজে দিতে বলেছিস। সবাই হো হো করে হেসে ফেললো। কিরে আমি যা বললাম, সত্যি ? তুই কি করে জানলি। চিকনার মাথা নীচু। হবে। সবুরে মেওয়া ফেলে। তোর এখন অনেক কাজ। এটা মাথায় রাখিস। অনেক দায়িত্ব। পাশাপাশি বাসু অনাদি সঞ্জুরও। এটা ভেবেছিস। হুঁ। চাইবিনা কোনো দিন। চাইলেই ফুরিয়ে যাবে। না চাইতেই তুই যদি পাস। খতি কি। চিকনা আমার দিকে তাকালো। চোখদুটো চক চক করছে। ফিক করে হেসে ফেললো। আর কোনোদিন কোনো কিছু চাইবোনা। তুই খালি তোর কাজটা মনদিয়ে করে যা। দেখবি ধরে রাখতে পারছিসনা। আমি করবো অনি। তুই যা বলবি তাই করবো। সোমবার থেকে একেবারে সময় নষ্ট করবিনা। চিকনা মাথ দোলাচ্ছে। মাথায় রাখিস। ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলাম হিমাংশু। হঠাৎ এই সময়!
হ্যালো। তুই কোথায়। কেনো। কাল দুটো কাজ ক্যানসেল হয়েছে। তাই কাল কোনো কাজ নেই, যদি সকালের দিকে বেরোই। খুব ভালো। কখন আসবি বল। একবারে ভোর ভোর বেরিয়ে যাবো। চলে আয়। আমার সঙ্গে আমার এ্যাসিসটেন্ট যাবে। আমি দেখেছি। না। ছেলে না মেয়ে। হিমাংশু হো হো করে হেসে ফেললো। ছেলে। আমাকে চেনে। না। তোর নাম শুনেছে। সব কাগজ সঙ্গে নিয়ে আসবি। ঠিক আছে। হ্যাঁরে চেকগুলো ক্যাশ হয়েছে। হয়েগেছে। একটা টেনসন মিটলো। চিঠি সার্ভ করেছিস। আমার কাছে এ্যাকনলেজ ফিরেও এসেছে। গুড। এবার বল কি ভাবে যাবো। যেভাবে তোকে রুট চার্ট দিয়েছি। ওখান থেকে ? ওটা নিয়ে তোকে ভাবতে হবেনা। ঠিক আছে। আমাকে ফোন করিস কিন্তু। আচ্ছা। কেরে, হিমাংশু ? দেবাশীষ বললো। হ্যাঁ। ও আসছে ? হ্যাঁ। তুইতো আমাদের কি দায়িত্ব দিবি বললিনা। সময় এখনো ফুরিয়ে যায়নি। দেবা চুপ করে গেলো। এবার উঠতে হবে। ওখানে দু’জন মাত্র রয়েছে। সঞ্জু চলে গেছে। অনাদি বললো। কেনো। লাইটের কি হয়েছে। ওকে ফোন করেছিলো। ও। লতা রেবা কোথায় ? কাকীর কাছে। চল দেবা। এবার এগোই, এদের বসিয়ে রাখলে সারারাতে গল্প শেষ হবেনা। আমরা উঠলাম। বাইরে এলাম। খুব জোরে গল্প চলছে। মিত্রা মধ্যমনি হয়ে বড়মা ছোটমার মাঝখানে। আমায় দেখেই ডাক্তারদাদা বলে উঠলো, কি অনিবাবু যাবার সময় হয়েছে ? হ্যাঁ। স্যারের কাছে তোর অনেক অজানা কথা জানলাম। আমি মাথা নীচু করলাম।
সব ভালো, একটুও খারাপ নয়। স্যার কখনো ছাত্রের নিন্দা করেন না। তুই সেই ছাত্র নোস যে তোর নিন্দা করবে। তোর প্ল্যান মতো সব কথা স্যারের কাছ থেকে আদায় করে নেওয়া হয়েছে। মনে মনে বললাম, আমি সব শুনেছি। তুই খুশী। মাথা দোলালাম। তোর কিন্তু অনেক দায়িত্ব বেরেগেলো। আমি চুপ করে থাকলাম। সবাই মিলে একসঙ্গে বেরিয়ে এলাম। স্যার ডাক্তারদাদা, দাদার হাত ধরে বললেন আবার আসবেন। বাড়ি পৌঁছলাম রাত সাড়ে আটটা। খেয়ে দেয়ে শুতে শুতে সেই রাত বারোটা।
সকালে দেবার ডাকে ঘুম ভাঙলো। কিরে যাবিনা ? তোরা যাবি। হ্যাঁ। আমরা সবাই রেডি। চল। মিত্রাকে ডাকলাম। ও তড়াক করে লাফিয়ে উঠলো। মুখ হাতপায়ে জল দিয়ে সবাই বেরিয়ে এলাম। আজ মিত্রা সবার গাইড, খুশিতে কল কল করছে, সকলকে দেখাতে দেখাতে নিয়ে আসছে। বুবুন। উঁ। তুই পেঁপে পাতা ছিঁড়লিনা। ওখানে কিন্তু ফাঁকা মাঠ, কোনো ঝোপাঝাড় নেই, দেখেছিস তো। চেপে রাখবো। কি বল মিলি। মিলি চুপ করে রইলো। হ্যাঁ মিত্রাদি। টিনা বললো। কিরে দেবা। অনি আগে ব্যবস্থা করুক তারপর দেখা যাবে। অনিদা তুমি পেঁপে পাতাটা আগে জোগাড় করতো। মিলি বললো। চল ভূততলায় যাই। আবার ভূত। কিছু হবেনা। দেখবি জায়গাটা দারুণ সুন্দর। মিত্রা বললো। আমরা ভূততলা পেরিয়ে নদীর ধারে চলে এলাম। মিত্রা সব গল্প ওদের শোনাচ্ছে। সেই খেঁজুর গাছ। দেখলাম কলসি ঝুলে রয়েছে। যা নিয়ে আয়। মিত্রা আমাকে ঠেলা দিলো। আবার বলছি, ভেবে দেখ।
ভেবে দেখার সময় নেই তুই যা তো। মিলি টিনা অদিতি চারিদিক চেয়ে চেয়ে দেখছে। যাওনা অনিদা, দেরি কোরোনা প্লিজ, কেউ যদি চলে আসে খাওয়া হবেনা। মিলি বললো। আমি হাসলাম। খেঁজুর গাছে উঠে রস পেরে নিয়ে এলাম। রস খাওয়া হলো। মিত্রা দেখালো রস খাওয়ার পর আমি কিভাবে ওকে নাচতে বলেছিলাম, তারপর কিভাবে ও নেচে ছিলো। ওরা হেসে গড়িয়ে পরে। তখন নতুন, বুঝলি টিনা। ও যা বলছে তাই অন্ধের মতো বিশ্বাস করেছি। ও যে অতো বড়ো বাঁদর তাতো জানতাম না। তুমি আর নেচোনা। আমি হাসছি। আচ্ছা অনি তোরকি একটুও দয়ামায়া হয়নি তখন। দেবা বললো। দয়ামায়া। বারবার বলেছি ওখানে গেলে তোর অসুবিধে হতে পারে। না আমি যাবো। তো চল। ঠেলা বোঝ। শয়তান। মিত্রা আমার কোমরে খোঁচা মারলো। চল বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে সামন্ত কাকা চলে আসবে। আমরা হাঁটতে হাঁটতে পদ্মপুকুরে এলাম। টিনা বললো, অনিদা তুমি এখানে চুপ্টি করে বসে থাকবে। কোথাও যাবেনা। আমাদের কথা চিন্তাও করতে হবেনা। আমরা আমাদের কাজ সেরে আসছি। আমি হো হো করে হেসেফেললাম। তোমায় কিন্তু আজ কোনো ডিস্টার্ব করিনি। মিলি বললো। এতো সুন্দর সকালে প্রতঃকৃত্য। তাও আবার প্রকৃতির কোলে। নির্মাল্য বললো। তোকে কাব্যি করতে হবেনা। যাবি। যাবোনা মানে। রসকি তুমি একা খেয়েছো ? দেবা প্যাকেটটা। দেবা প্যাকেটটা ছুঁড়ে দিলো। তুই নিলি না। নিয়েছি। ওরা চলে গেলো। আজ ওদের পথ প্রদর্শক মিত্রা। আমি পদ্মপুকুরের ধারে বসলাম। ভোর হয়েছে। চারিদিকে পাখির কুজন। মনটা আনমোনা হয়ে গেলো। কাল থেকে অর্কর ম্যাসেজ আর পড়িনি। মোবাইলটা বার করে ম্যাসেজগুলো পড়তে আরম্ভ করলাম। এক জায়গায় এসে থমকে দাঁড়ালাম। ম্যাসেজটা পরে আমার চোয়ালদুটো শক্ত হয়ে গেলো। শুয়োরের বাচ্চা এতদূর এগিয়ে গেছে। আজ তুই খামটা পেলেই তোর দৌড় থেমে যাবে। তখন তুই নিজের প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ো দৌড়ি শুরু করবি। তোর মতো অনেক খানকির ছেলেকে আমি সোজা করে দিয়েছি। অর্ককে একটা ফোন লাগালাম। দেখলাম ফোন বাজছে। কিগো অনিদা এতো সকালে। তোর ম্যাসেজগুলো পড়লাম। ঠিক আছে ? হ্যাঁ। তুই ঠেকাগুলো দেখেছিস। বলতে পারো আশেপাশে ঘুরেছি। আজ আটটায় ডেকে পাঠিয়েছে। দুটো চামকি জোগাড় করেছি। আজ নিয়ে যাবো।
কোথা থেকে জোগাড় করলি। বসিরহাটের মাল। ওরা লাইনের। পাখি পড়ার মতো পরিয়ে নিস। ও তোমাকে ভাবতে হবেনা। সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে, বাঁকা আঙুলে তুলবো তোমার মতো। তোমাকে ভাবতে হবে না, তুমি নিশ্চিন্ত থাকো। আচ্ছা। রবিবার তোর সঙ্গে দেখা হবে। ঠিক আছে। ওরা সবাই এলো। দেখলাম নির্মাল্যের হাতে নিমডাল। আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। কি অনিদা তোমার মতো পেরেছি ? হাসলাম। কিরে বুবুন তোর হাসিটা কেমন ফ্যাকাশে ফ্যাকাশে। তোর কি ঠিক মতো ক্লিয়ার হয়নি ? আমার কথাটা এড়িয়ে যাচ্ছিস। একবারে না। আমি খুব স্বাভাবিক। যাওয়ার সময় তোর চোখটা এরকম ছিলোনা। বাবাঃ সাইক্লোজিস্ট। চল বেলা হয়ে যাচ্ছে। নেক্সট কোনটা। তোর স্কুল। মিত্রা আমার চোখের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে। নির্মাল্য দে একটা ডাল ভেঙে। নির্মাল্য সবাইকে দিলো। আমরা আবার সেই পথে চলেছি। মিত্রা লিড করছে। আমি সবার পেছনে। আমার মনটা এখানে নেই। তবু বুঝতে দেওয়া চলবেনা। মিত্রা এখন বেশ পাকা পোক্ত হয়ে উঠছে। ওকে ফাঁকি দিতে হবে। ওরা প্রাণভরে সমস্ত আনন্দ উপভোগ করছে। হাঁসি মস্করা করছে। আমি মাঝে মাঝে যোগ দিচ্ছি। একসময় আমরা পৌঁছে গেলাম আমার স্কুলে। স্কুলের টিউবওয়েলে সকলে মুখ ধুলাম। মিত্রা ওদের নিয়ে স্কুলের ভেতর ঢুকলো। সবাইকে গল্প বলছে। আজ কিন্তু মিত্রা আমার মতো করেই বলছে। ওর ইমোশানগুলো বেশ সুন্দর। তারপর বকুল গাছের তলায় এলো। মিত্রা ওদের দেখালো কি ভাবে বাঁশি তৈরি করতে হয়। সবাই মিলে লেগে পরলো বাঁশি তৈরি করতে। বুবুন আজ কিন্তু আমি সেফটিপিন নিয়ে এসেছি। কোথা থেকে পেলি। কাল রাতে বড়মার হাত থেকে খুলে নিয়েছি। বড়মা বুঝতে পারেনি। না। ওরা এক একজনে তিনটে চারটে করে বাঁশি তৈরি করলো। এক সঙ্গে সকলে বকুল বাঁশি বাজাচ্ছে। হাসছে দৌড়োদৌড়ি করছে। মনের দুয়ার খুলে মুঠো মুঠো আনান্দে পরিপূর্ণ করে তুলছে নিজের মনকে। আমি বললাম, চল একটু স্কুলের বারান্দায় বসি। কেনোরে ? দেবাশীষ বললো। তুই কালকে বলছিলিনা তোদের কি দায়িত্ব দেবো। টিনা আমার দিকে হাসি হাসি মুখ করে তাকালো। তুমি সত্যি আমাদের দায়িত্ব দেবো। কেনো তোমাদের বিশ্বাস হচ্ছেনা। চলো। মাটির ওপর বসতে অসুবিধে হবেনা। কেনো তুমি আমাদের ক্লাস ওয়ানে বসাবে। বসতে চাইলে বসাবো। অনিদা ওখান থেকেই তার জীবন শুরু করেছিলো। আমরা গাছের তলায় এসে সবাই গোল হয়ে বসলাম।
মিত্রা টিনা আমার দু’পাশে। টিনার পাশে মিলি তারপাশে অদিতি দেবাশীষ নীপা নির্মাল্য। ওরা সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। টিনা। বলো। তোমায় যদি চাকরি ছাড়তে বলি তুমি ছেড়েদেবে। একমাস সময় দিতে হবে। চাকরি ছেড়েদিলে খাবে কি ? তুমি চাকরি দেবে। মিলি ? টিনা চাকরি ছেড়েদিতে পারলে আমিও দেবো। মিত্রার দিকে তাকালাম। কিরে ওদের চাকরি দিবিতো। আমি কেনো দেবো! তুই চাকরি দিবি। আমাকে সই করতে বলবি সই করে দেবো। দেবা শুনলি তোর বান্ধবীর কথা। দেবা হাসছে। অদিতি বললো। তুমি আমাকে কিছু বললেনা। তোমার কাছে একটু পরে আসছি। ভুলে যেওনা যেনো। আমার এ্যাডের কি হবে। ওটা নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবেনা। টিনা বললো। দেবা আমার প্ল্যানটা বলছি ভালো করে শোন। তোমরাও শোনো, পারলে আমাকে এ্যাটাক করবে। ঝগড়া করবে। তোমার সঙ্গে! টিনা বললো। হ্যাঁ। আমি ভগবান নই, ভুল করতে পারি। বলো। আমি দামিনী মাসির ওখানে একটা এনজিও করবো, মূল কাজ শিক্ষা স্বাস্থ্য সচেতনতা। মাসি ইসলামভাই ছাড়া তোরা থাকবি। নিজেদের কাজ করার পর ওখানে সময় দিতে হবে। হিমাংশু ফর্মেসনটা তৈরি করছে। তার আগে আমি অদিতি মিলি আর টিনাকে আমাদের অফিসের এক একটা ব্রাঞ্চের মাথায় বসাবো। আমাদের অফিসের তিনটে ব্রাঞ্চ খুব প্রবলেম দায়ক। আমার কথা শেষ হবার আগেই তিনজনে হৈ হৈ করে উঠে মিত্রাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে আরম্ভ করলো। সে এক অদ্ভূত দৃশ্য। মিত্রার প্রাণ ওষ্ঠাগত। ওরে তোরা ছাড় আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। মিত্রা বললো। তারপর আমাকে ঘপা ঘপ প্রণাম করলো। আমার কি হবে। নির্মাল্য বড়ো বড়ো চোখ করে বললো। তোর কপালে ঘেঁচুকলা। মিলি বললো। অনিদা হবেনা। আমার একটা ব্যবস্থা করো। আমিতো কথা শেষ করিনি। দেবা হাসছে। টিনা তোর ল্যাপটপটা থেকে আজই রিজাইন লেটার পাঠিয়ে দেবো। তাহলে আজ থেকে একমাস কাউন্ট হবে। মিলি বললো। এবার আমাদেরটা বল। দেবাশীষ বললো। আমি এখানে তিনশো একর জমি নিচ্ছি। হয়তো ওটা বাড়তেও পারে। আমি একটা কৃষি খামার তৈরি করবো। পাশাপাশি পোলট্রি এবং কান্ট্রিক্লাব। আরও বাই প্রোডাক্ট বেরোবে। দারুণ আইডিয়া। তুই নির্মাল্য সমস্ত ব্যাপারটার দায়িত্ব নিতে পারবি ? কি বলছিস তুই! ঠিক বলছি। এর মার্কেটিং থেকে আরম্ভ করে সমস্ত কিছু। একটা প্রজেক্ট রিপোর্ট তৈরি কর। ভাব কি করতে চাস। আমার আর হিমাংশুর হেল্প পাবি। আমি মনে মনে একটা ছবি এঁকে রেখেছি। মিত্রা সমস্ত প্রজেক্ট দেখে কমেন্ট পাস করবে। তার আগে ওকে জানাতে পারবিনা, তোরা কি করতে চাস। আমার ভয় করছে। কেনো। কয়েক হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট আমি হ্যান্ডেল করবো! পারবি বলেই বলছি নাহলে পাতি চাকরির অফার দিতাম। দেবাশীষ মাথা নীচু করলো। কেনো দেবাদা তুমি ভয় পাচ্ছো। অনিদাতো আছে। মাথায় রাখবে তোমার সব কাজেই তুমি অনিদার হেল্প পাবে। টিনা বললো। সেটা ঠিক। আমি এ ধরণের কাজ আগে কোনোদিন করিনি। অদিতিকে প্রেম করার আগে কি ভাবে মেয়ে পটাতে হয় জানতিস। কিভাবে চুমু খেতে হয় জানতিস।
এই তোর মটকা গরম হয়ে গেলো। ছাগলের মতো কথা বলবিনা। পৃথিবীতে জন্মেই কেউ হাঁটতে শেখে না। কবে শুরু করবি। মাস ছয়েকের মধ্যে। এই কদিন যেখানে আছিস সেখানেই থাকবি। মাঝে মাঝে এসে ডেভালপমেন্টের কাজ দেখবি। টোটাল প্ল্যান প্রোগ্রাম তৈরি করবি। নিজের টিম তৈরি করবি। আমাকে একটু মেন্টালি প্রিপারেসন নিতে দে। অনিদা, দেবাদা মেন্টাল প্রিপারেসন নিক আমাকে আমার ব্যাপারটা বুঝিয়ে দেবে। আমি দৌড়তে শুরু করে দেবো। নির্মাল্য বললো। সত্যি মিত্রাদি তোমার নামটা কেনো ছাগল দিয়েছিলো এখন বুঝি। অদিতি কপট রাগ করে বললো। এই দেখছিস সকলে চাটতে শুরু করে দিলো। তুই ভাব। আমার কোনো আপত্তি নেই। পারলে আমাকে একবার জানাস। এইতো খোঁচা মারলি। আমাদের দায়িত্ব গুলো একবার বলো। টিনা বললো। তোমাদের এই মুহূর্তে কোনো পার্টিকুলার দায়িত্ব দেবোনা। কিন্তু আমার অফিসের লোকদের বুঝিয়ে দেবো তোমাদের আয়ু শেষ হয়ে এসেছে। কি রকম! টিনা বললো। ধরো আমাদের অফিসে এই মুহূর্তে এ্যাডম্যানেজার চম্পকদা। আমি তোমাকে এ্যাডের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার বানিয়ে দিলাম। তারমানে সমস্ত ক্ষমতাটা চম্পকদার হাত থেকে খাতায় কলমে তোমার কাছে চলে এলো। কিন্তু চম্পকদা তার জায়গায় বহাল তবিয়েতেই থাকবে। ঠিক তেমনি মিলি অদিতিরাও একই পোস্ট হোল্ড করবে। কি অদিতি তুমিকি তোমার বড়ের মতো ঢোক গিলবে। ওর সঙ্গে আমাকে গোলাবেনা। ও ওর মতো, আমি আমার মতো। কাজের জায়গায় আমি যা ডিসিসন নেবো সেটাই ফাইন্যাল। গুড। এই স্পীড না থাকলে কিছু করতে পারবেনা। সবচেয়ে বড় কথা তোমাকে পাশে পাবো। এর থেকে আর বেশি কি চাই। ঠিক বলেছিস। আমাদের বসগুলো হারামী নম্বর ওয়ান। মিলি বললো। এই। মিত্রা ধমক দিলো। সরি সরি মিত্রাদি। অন্যায় হয়েগেছে। মিলি জড়িয়ে ধরলো মিত্রাকে। সত্যি বলছি তুমি টিনাকে জিজ্ঞাসা করো। আমি অদিতি টিনা কি ভাবে কাজ করি সেটা আমরাই জানি। ঠিক আছে। এবার তোদের বস যদি ওরকম করে। তুমি আছো। সোজা চলে যাবো তোমার কাছে। সবাই হো হো করে হেসেফেললো। কবে থেকে যাবো। টিনা বললো। তোমাদের অফিসের কাজগুলো আগে গোছাও। অফিসের কাজ গোছানোর কিছু নেই। তারমানে! তুমি ছাড়তে চাইলে ছেড়ে দেবে। আমার জায়গায় আর একজন চলে আসবে। আমাকে সাতদিন সময় দাও। এরমধ্যে অফিসে না পারো বাড়িতে আসবে মিত্রাদি তোমাদের অফিসের গল্প গুলো শোনাবে। আমাকে হয়তো নাও পেতে পারো। আগে গল্প শুনে নাও, কোথায় কোথায় সমস্যাগুলো তৈরি হয়ে আছে। তাহলে তোমাদের কাজ করতে সুবিধা হবে। সেই ফাঁকে আমি তোমাদের তিনটে ঘর রেডি করি। কিরে মিলি তাহলে আমাদের কাগজে কাজ করার স্বপ্নটা স্বার্থক হচ্ছে। অদিতি বললো। সত্যি ভাবলেই কেমন গা ছম ছম করছে। কেনো! তুমি যেদিন প্রথম তাজে এসেছিলে। টিনাকে আমরা রিকোয়েস্ট করেছিলাম। তুই অনিদাকে বল। তোর কথা অনিদা ফেলতে পারবেনা। অদিতি বললো। টিনা আমাকে বলেনি। তুমি সেই সুযোগ আমাকে দাওনি। টিনা বললো। তুমি মাঠে খেলতে নামলে গোল করার সুযোগ তোমায় কেউ দেবে ? তোমাকে করে নিতে হবে। তুমি যদি কিছু মনে করতে। দেখো মেয়েটা কিরকম হ্যাংলা। আমাকে মিত্রা মালিক বানিয়ে দাবার পর আমি যে তোমাদের কাছে ছুটে গেছিলাম। সেটাকি হ্যাংলামো ছিলো। আমি তোমার মতো কোনোদিন হতে পারবোনা। তুমি আমাকে সবার সামনে চুমু খেতে পারবে। টিনা মাথা দোলালো। পারবেনা। আমি মিলিকে চুমু খেয়েছিলাম কি করে। অনিদা প্লিজ। মিলি চেঁচিয়ে উঠলো। তোমাকে তোমার ভেতর থেকে সেই আর্চটা বের করে আনতে হবে। টিনা মাথা তুললো। আমি করবো। করে দেখাবো। তোমায় কথা দিচ্ছি। এইতো, তোমার চোখ এই সময় ঠিক কথা বলছে। টিনা মাথা দোলাচ্ছে। ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলাম সন্দীপের ফোন। ইচ্ছে করে ভয়েজ অন করলাম। বল। কোথায় ? গাছ তালায় প্রেম করছি। ম্যাডাম তোর সঙ্গে। না। কার সঙ্গে করছিস। এখানে একটা মেয়েকে পটালাম। সবে ঠোঁটে ঠোঁট রেখেছি। মিত্রা আমাকে চিমটি কাটছে। সবাই মুখে চাপা দিয়ে খিক খিক করছে। গান্ডু। ইস। কিরে। তোর বউ কি বলেছে ? বানান করে গালাগাল দিতে বলেছে। ওরা আর চেপে থাকতে পারলোনা। সবাই হো হো করে হেসে ফেললো। কিরে কারা! সবাই তোর কথা শুনছে। এমনকি তোর মালকিন। যাঃ। জিভ বার করেছিস। তোর কবে বুদ্ধি হবে বলতো। বল কি বলছিস। না আমি এখন রাখছি। পরে কথা বলবো। ম্যাডাম কি ভাবলো বলতো। আমি বানান করে বলি। সন্দীপ হো হো করে হেসে ফেললো। বল। হ্যাঁরে নীপা ভট্টাচার্য তোর আত্মীয়া না ? কেনো ওখান থেকে ইঁট পেতেছিস। অনিদা। নীপা চেঁচিয়ে উঠলো। তুই সবাইকে আমার কথা শোনাচ্ছিস।
হ্যাঁ। আমি কেটে দিচ্ছি। তাতে তোর কাজ হবে ? বল। নীপার একটা ছবি লাগবে। কেনো। ওদের রেজাল্ট আগামীকাল। তোর চেলুয়া খবর আগে বার করে নিয়ে চলে এসেছে। কি হয়েছে। নীপা ওই ডিস্ট্রিক্টে মেয়েদের মধ্যে ফার্স্ট হয়েছে। এক থেকে কুড়ির মধ্যে ওর পজিসন সিক্সটিনথ। নীপার চোখ বড়ো বড়ো, মিত্রা অদিতি টিনা মিলি ওর কাছে উঠে গেছে। নির্মাল্য মিটি মিটি হাসছে। ভাবটা এরকম আমি ঠিক মেয়েকেই চুজ করেছি। সকাল বেলা গাঁজা খেয়েছিস। তুই অরিত্রর সঙ্গে কথা বলবি ? না। তাহলে ছবি কোথায় পাবো ? দ্বীপায়নের কাছে আছে। দেখ নীপার সঙ্গে মিত্রার অনেক ছবি আছে। না হলে তোর ই-মেল আইডি ম্যাসেজ করে দে পাঠিয়ে দিচ্ছি। লেখাটা লিখে দে। নিউজ করবে অরিত্র, লিখবো আমি। তাহলে নীপার একটা ইন্টারভিউ-এর ব্যবস্থা কর। নীপা সামনে বসে আছে। তুই ওর সামনে……! শুধু নীপা নয়। সঙ্গে আরো চার সখী আছে। তার মধ্যে তোর ম্যাডামও। আমি রাখছি তোকে পরে ফোন করবো। এই নিয়ে তিনবার বললি। তাহলে কি বলবো বল। তুই এক কাজ কর, ম্যাসেজ কর। পাঠিয়ে দিচ্ছি। নীপা উঠে এসে আমার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো। তারপর আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলো। এমা এই সময় কেউ কাঁদে নাকি। তুমি আমার জীবনটাকে বদলে দিলে। আমি কোথায় বদলালাম নীপা। আমি উপলক্ষ মাত্র, পরীক্ষাটা তুমি দিয়েছো। ওরা সকলে মিলে নীপাকে বোঝালো। মিত্রা বড়মাকে ফোন করে খবরটা দিলো। তোরা কোথায়। আমরা এখন বুবুনের স্কুলে। সবাই আছিস। হ্যাঁ। ঠিক আছে আমি এদের পাঠাচ্ছি। কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখলাম চিকনা অনাদি বাসু ইসলামভাই সঞ্জু এসে হাজির। হাতে মিষ্টির হাঁড়ি। ইসলামভাই গাড়ি থেকে নেমেই নীপাকে কোলে তুলে নিলো। নীপা ছোট্ট শরীরটা শূন্যে। মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো পরে যাবে দাদা। স্কুল চত্বরের ওই ছোট্ট আঙিনায় হৈ হৈ কান্ড। সবাই রসোগোল্লা খেলাম। ইসলামভাই চেঁচিয়ে উঠলো, চিকনা। বলো ভাইদা। হাটে যা মিষ্টি আছে বেশি বেশি করে নিয়ে আয়। চলো এখানে আর দাঁড়াবো না।
ইসলামভাইয়ের পেছনে নীপা মিত্রা বসলো। আমরা সবাই ভাগা ভাগি করে সবার পেছনে বসে চলে এলাম। ঘরে মহা উৎসব। সবাই উৎসবের অংশীদার। দাদা সন্দীপকে ফোন করে কনফার্ম হলো। হিমাংশু ঠিক সময়ে এলো। চিকনা সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে। আমি বারান্দার বেঞ্চিতে বসেছিলাম। উঠে গেলাম। ওর সঙ্গে যে ছেলেটি এসেছে তাকে দেখতে বেশ ভালো। অনেকটা সিনেমা আর্টিস্টের মতো। কাছে যেতেই হিমাংশু পরিচয় করিয়ে দিলো। অতীন্দ্র সরকার। আমি আপনার নাম বহুবার হিমাংশুদার মুখ থেকে শুনেছি। আমাকে সবাই কিন্তু পিকলু বলে ডাকে। বাঃ তোমার নিকনেমটা বেশ মিষ্টি। পিকলু মাথা নীচু করে মিটি মিটি হাসছে। দাদা, তুমি নয় তুই। হাসলাম। আসতে কোনো অসুবিধে হয়নিতো। হিমাংশুর দিকে তাকিয়ে বললাম। একেবারে না। পিকলু গাড়ি ড্রাইভ করলো। খারাপ চালায় নি। চল আমার স্যুইট হোমে। আর সব কোথায় ? আজ নীপার রেজাল্ট বেরিয়েছে। ডিস্ট্রিক্টে ফার্স্ট। এমনিতে সিক্সটিনথ পজিসন। বাঃ দারুণ রেজাল্ট। তোর সেই সব নামী দামী বন্ধুরা। সব আসবে একটু সবুর কর। আমি চিকনার দিকে তাকিয়ে বললাম, চিকনা একটু চা বলে আয়। এটাই চিকনা।! হ্যাঁ। এতোটা রাস্তা ও পথ দেখিয়ে নিয়ে এলো। নামটাই জিজ্ঞাসা করা হয়নি। ওইতো রাইস মিলের মালিক। মালিক মানে! তুই কি বলতে চাস। হিমাংশু হাসছে। স্যার। হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক বলেছিস। চিকনা লজ্জায় মাটিতে মিশে যায়। তোকে রেবা একা ছাড়লো ? আসার সময় বললো এবার একলা যাও। পরের বারে আমি সঙ্গে যাবো, অনিদাকে বলেদিও। সঙ্গে আনতে পারতিস। অনেক হেপা বুঝলি। আয়। হিমাংশু চারিদিকে অবাক হয়ে দেখছে। পুরোটা মাটি! হ্যাঁ। কলকাতায় লোহা সিমেন্ট বালি স্টোনচিপ দিয়ে ছাদ ঢালাই হয়। আমরা এখানে বাঁশের ওপর মাটি ফেলে ঢালাই করি। ভেঙে পরে যায়না ? বাবা বাড়িটা বানিয়েছিলেন। ধরে রাখ আমার বয়স। পিকলুর চোখ ঠেলে বেরিয়ে আসবে। দারুণ লাগছে হিমাংশুদা। কবে সেই ভূগোলে পরেছিলাম। গ্রামের লোকেরা মাটির বাড়িতে থাকে। এখন চাক্ষুষ দেখছি। পিকলু তুমি চ্যার্টার পাশ করে গেছো। হ্যাঁ দাদা। এবছর কস্টিংটা ফাইন্যাল দিলো। হিমাংশু বললো। বাঃ। তা হিমাংশুকে ছেড়ে কবে পালাবে। না না হিমাংশুদাকে ছেড়ে যাবোনা। হিমাংশুদার কাছে আর্টিকেল ছিলাম এখন হিমাংশুদার সঙ্গে এক সঙ্গে কাজ করবো। আমি মাটির শিঁড়িদিয়ে ওপরে আমার নিজের ঘরে নিয়ে এলাম। বুঝলি হিমাংশু এটা আমার ঘর। হ্যাঁরে নিচে অতো বস্তা কিসের। ধানের। এখন ধান ওঠার মরশুম তাই ধান কেনা চলছে। তুই কাজ শুরু করে দিয়েছিস। অনেকদিন। চিকনা আর নীপা দেখে। তুই বেশ অঙ্ক কষে চলছিস। তা বলতে পারিস। তোর এখন অনেক কাজ। দফায় দফায় মিটিং। তুই যে এমনি এমনি ঘুরতে ডাকিসনি তা জানি। বোস। সোফাটা দেখিয়ে দিলাম। তোর এখানে কারেন্ট আছে। আছে। সেটা অর্ধেক সময় থাকেনা। তবে জেনারেটর আছে। তোর অসুবিধে হবেনা। আমার প্রিন্টার মেসিন সব গাড়িতে। তোকে চিন্তা করতে হবেনা। তাই বললো চিকনা। এমনকি গাড়ির চাবিটাও নিয়ে নিলো। ওখানেই কো-অপারেটিভের জমিটা নিয়েছি। কাজ শুরু হয়েগেছে। কিরে এতো আওয়াজ কিসের! ভূমিকম্প হচ্ছে নাকি। ভূমিকম্প নয়, দঙ্গল বেঁধে সব আসছে। কথা শেষ হলোনা সবাই চলে এলো। ঘর ভড়ে গেলো। যে যার মতো বসে পরলো। এর মধ্যে কাকে কাকে চিন্তে পারছিস ? ম্যাডাম ছাড়া কাউকে নয়। বসুন ম্যাডাম।
কখন এলেন। এইতো সবে মাত্র এসে বসেছি। ও কাজের ফর্দ হাতে ধরাচ্ছে। এরি মধ্যে। আর বলবেন না। আমাকে পিষে মেরে দেবে। তুই সবার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দে। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম। তুই আলাপ করিয়ে দে। তুই সবাইকে গল্পে চিনিস। দেখিস নি। তোর সেই কলেজের ব্যাচ। হ্যাঁ। অনিদা এটা কিরকম হলো। তুমি প্রমিস করেছিলে কাউকে বলবেনা। মিলি চোখ পাকিয়ে বললো। আচ্ছা ফুচকা খেতে কে না ভালবাসে, বলো। তাবলে তুমি….। অনেকদিন আগে বলেছি। বিশ্বাস করো। হিমাংশুকে তোমরা জিজ্ঞাসা করতে পারো। হ্যাঁ ও অনেকদিন আগে বলেছে। মনেহয় যেদিন আপনাদের সঙ্গে তাজে ও মিট করেছিলো। হিমাংশু বললো। তুমি হিমাংশুদাকে সব বলো। ও আমার আইনের ডাক্তার। ওকে না বললে চলে। আমি একে একে সবার সঙ্গে হিমাংশুর পরিচয় করিয়ে দিলাম। শেষে পিকলুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলাম। পিকলু একটু থতমতো খেয়ে গেছে। এতো বড়ো বড়ো সব বিগ পার্সোনালিটি। এখানে সব কেমন ভাবে আছে। উঠে এসে সকলের সঙ্গে হ্যান্ডসেক করলো। নিচ থেকে অনাদি চেঁচিয়ে উঠলো, অনি অনি বলে। মিত্রাকে বললাম, দেখতো কি বলে। মিত্রা বেরিয়ে গেলো। ম্যাডাম, হিমাংশুদার জিনিষপত্র কোথায় রাখবো। আমি ঘর থেকেই চেঁচিয়ে বললাম, এখানে নিয়ে আসতে বল। মিত্রা খালি বললো, শুনতে পেয়েছো। কোনো প্রতিউত্তর পেলাম না। কিছুক্ষণ পর বাসু অনাদি এলো। চিকনা কইরে। ওবাড়িতে বড়মার কাজ করছে। আমি হিমাংশুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলাম। বুঝলি হিমাংশু, এই গ্রামের মুখ্যমন্ত্রী। সবাই হো হো করে হেসে ফেললো। এইতো চাটতে শুরু করলি। অনাদি বললো। বারে তোর পোর্ট ফলিওটা বলবোনা। তা বলে মুখ্যমন্ত্রী। বাসু অনাদি হিমাংশুর সঙ্গে করমর্দন করলো। পিকলু নিজে পরিচয় করে নিলো। বুঝলি হিমাংশু এরা কিন্তু এক একজন কো-অপারিটেভের মাথা। তুইতো বেশ বড়ো জাল ফেলেছিস। জালতো ফেলেছি। মাছ উঠবে কিনা বলতে পারছিনা। উঠবে। আমি আস্তে আস্তে যেটুকু লক্ষ করলাম খালি হিসাব করে একটু খেলতে হবে। তোর স্বপ্নের জায়গা বলে কথা। তা বলতে পারিস। নীপা চা নিয়ে এলো। হিমাংশুকে দেখিয়ে বললাম, এই সেই মেয়ে যে এই বছর পরীক্ষা দিয়ে ফেল করেছে। নীপা কাঁই কাঁই করে উঠলো। মিত্রা বলে উঠলো, কেনো তুই ওর কথায় খেপে যাস, ও কোনোদিন সোজা কথা সোজা করে বলে। নীপা সবার ছোট, লম্বাকরে সকলকে প্রণাম করলো। মিলি ওর কোমরটা একটু তেল মালিশ করে দাও। দেখছো মিত্রাদি দেখছো। নীপা আবার হাঁই হাঁই করে উঠলো। চা খেয়ে স্নান করে নে। খাওয়া দাওয়ার পর দুপুর থেকে ফেজে ফেজে বসবো। রবিবার সকালে বেরিয়ে যাবো মাথায় রাখিস। চা খেতে খেতে টুক টাক গল্প খুনসুঁটি। হাঁসা হাঁসি। এরি মধ্যে দেখলাম মিলির সঙ্গে পিকলুর চোখে চোখে কথা হচ্ছে। মাঝে মাঝে ইংরাজীতে ঝড় উঠছে। আমিও যোগ দিচ্ছি। বাসু অনাদির চোখ ছানাবড়া। অনাদিকে বললাম হিমাংশুর ঘর। আর নেই। এবার তুই ব্যবস্থা কর। সবাই হো হো করে হেসে ফেললো। ভালো করেছিস। আজ আমি তিন বউকে নিয়ে শোবো। তার মানে। মিত্রা বড়ো বড়ো চোখ করলো।