ডকুমেন্টস গুলো দেখবি। দেখা। আমি ল্যাপটপ খুলে ওদের দেখালাম। ওরা হুমড়ি খেয়ে পরলো ল্যাপটপের ওপর। আমি আলমাড়ি খুলে ডাক্তারের সব দেখালাম। টিনা আমার হাতটা চেপে ধরে বললো। তুমি এখনো কি করে ঠিক আছো অনিদা। কি করবো বলো টিনা। মাতা নীচু করে ফেললাম। কথাগুলে মনে পরলেই গলাটা ধরে আসছে। চোখদুটো জ্বালা জ্বালা করছে। একা একা এখানে বসে সব হজম করছি। কাকে বলবো আমার কথা। দামিনী মাসি ইসলামভাই না থাকলে কি যে হতো কিছু বলতে পারিনা। তোর দামিনী মাসি কখন আসবে। আসবে বলেছে। কখন আসবে বলতে পারছানি। অদিতি দেখা করে যাবে। ভদ্রমহিলাকে ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করছে। তোমরা দুজন কেনো। আমরাই বা বাদ যাবো কেনো। টিনা বললো। দাঁড়া মাসি চলে আসবে। তুই যা বললি, সত্যি অনি আমি হলে হার্টফেল করে যেতাম। তবে তুই গান্ডুটাকে আরো কেলাতে পারতিস। আমার মারাতে ওর লাগবেনা। রতন আবিদ বাড়িতে নিয়ে গিয়ে যা দিয়েছে তাতেই যথেষ্ট। এর পর কি হবে। জানিনা। দামিনী মাসির হাতে। আমাকে আজ থেকে এসব চিন্তা বন্ধ করতে বলেছে। অনিদা আমার খুব ভয় করছে। টিনার গলাটা ধরে এলো। না টিনা ভয় করলেই ভয়। তোমার মিত্রাদির কথাটা একবার চিন্তা করো। সত্যি কি ব্যাডলাক মেয়েটার। কলেজ লাইফে ওকে কত প্রানোচ্ছল দেখেছি। তোদের দুজনকে কি ভালোলাগতো। এখন দেখলে অবাক হয়ে যাবি। তোর সামনে হাসিখুশির অভিনয় করবে। রাতে আমাকে জড়িয়ে ধরে সারারাত কাঁদে। অনি তুই না থকেলে আমি স্যুসাইড করতাম। কি বলছিস তুই। আমি একটা কথাও মিথ্যে বলছিনা দেবা। তোরা আমার কাছের লোক। তোদের কাছে আমি বার বার সাহায্যের জন্য ছুটে গেছি। সেই সময় মনটা ভীষণ খারাপ লাগলো। বুকের মধ্যে কে যেন পাথর চাপা দিয়ে রেখেছিলো। ভাবলাম তোকে ফোন করি। করতে পারতিস। তুই যদি ব্যস্ত থাকিস। গান্ডু। টিনা ফিক করে হেসে ফেললো। হেসোনা টিনা মাঝে মাঝে অনির কথা শুনলে পায়ের থেক মাথার চুল পর্যন্ত খাঁড়া হয়ে যায়। মিত্রাকি তোর একার বন্ধু আমার বন্ধু ছিলোনা। আমি মাথা নীচু করে আছি। তোমাদের আরো অনেক কথা বলিনি। আগের কেশটা সম্বন্ধে বললে তোমরা সত্যি সত্যি হার্টফেল করবে। তার মানে। মালিক হওয়ার পর থেকে ও শান্তিতে নেই। একটার পর একটা ঝামেলা চলছে। মলের কেশটা তো এই কয়েকদিন আগের ঘটনা। গত সপ্তাহের। আমি বললাম। মিলি অদিতি আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। সত্যি অনিদা তুমি কি পাথর। অদিতি বললো। পাথর না হলে সহ্য করবো কি করে। সেটাও তো খয়ে যায়। হয়তো যাচ্ছে। তোমরা দেখতে পাচ্ছ না। ছোটোবাবু মাজি আয়া। আমি তড়াক করে বিছানা থেকে উঠে গেলাম। বারান্দায় দাঁড়ালাম। দেখলাম দামিনীমাসি আর কবিতা গাড়ি থেকে নামলো। দুটো গাড়ি নিয়ে দামিনী মাসি এসেছে। আমি ছুটে নীচে নেমে গেলাম। দামিনী মাসি আমাকে দেখে বললো। কিরে মন ভালো হয়েছে। মাথা নীচু করে রইলাম। কারা এসেছে। দামিনী মাসিকে বললাম। চল চল তোর বন্ধুদের সঙ্গে আলাপ করি। আমি দামিনী মাসিকে নিয়ে ওপরে উঠে এলাম। ঘরে ঢুকেই দামিনী মাসির গলাটা জড়িয়ে ধরে বললাম, দেবা এখুনি তোদের যার গল্প করছিলাম, আমার মা বলতে পারিস মাসি বলতে পারিস যেটা খুশি। কবিতা আমাদের দুজনের পাশে দাঁড়িয়ে মিটি মিটি হাসছে। ওরা অবাক হয়ে কিছুক্ষণ দামিনী মাসির দিকে তাকিয়ে রইলো। দামিনী মাসি সকালের সাজেই সেজে এসেছে। কাপরটা খালি বদলে ফেলেছে। এখনও একটা তাঁতের শাড়ি পরেছে। সেই আটপৌড়ে ঢঙে। দামিনী মাসিকে কেউ এখন দেখলে বলতে পারবেনা দামিনী মাসি ওই এলাকায় দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর কাটিয়েছে। দামিনী মাসি মিটি মিটি হাসছে। অনি ওরা আমাকে ঠিক বুঝতে পারছেনা। আমি মাসির গালে গাল ঘোসলাম।
টিনা স্থানুর মতো উঠে এসে দামিনী মাসির পায়ে হাত দিয়ে ঠক করে একটা প্রণাম করলো। ওর দেখা দেখি সবাই একে একে এসে দামিনী মাসিকে প্রণাম করলো। দামিনী মাসি কোনো বাধা দিলোনা। ওদের প্রণাম শেষ হতেই কবিতা দেবাদের সকলকে প্রণাম করতে শুরু করলো। অদিতি কবিতার হাত ধরে বললো না। কেনো গো আমি নষ্ট মেয়ে বলে। দামিনী মাসির চোখের চেহারা বদলে গেলো। কবিতার দিকে তাকাতেই কবিতা মুখ নীচু করলো। কতদিন শেখাবো। ভুল হয়ে গেছে মাসি। আর জীবনে যেনো না হয়। হবেনা মাসি। আমি বুঝলাম পরিবেশটা একটু ভারি হয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলাম। একটা জিনিষ খাবে মাসি। কিরে। টিনা থালাতে আছে। আছে। অদিতি ছুটে গিয়ে নিয়ে এলো। মাসিকে বললাম হাঁ করো। কি বলনা। আগে হাঁ করো। মাসি হাঁ করলো আমি মাসির মুখে একটা ঢুকিয়ে দিয়ে বললাম কামড়াও। মাসি কামড়দিলো। বাকিটা আমি নিয়ে খেলাম। বলোতো কি ? লেট্টি। হ্যাঁ। কে বানালোরে। ছগনলাল। অনেকদিন পর খেলাম। টিনা একটা নিয়ে এসে কবিতার হাতে দিয়েছে। ছোটবাবু। পেছন ফিরে তাকালাম। ছগনলাল আর একটা কাঁসার থালায় আরো কয়েকটা লেট্টি নিয়ে এসেছে। মাসিকে নিয়ে এসে খাটে বসালাম। আবার হৈ হৈ করে খাওয়া শুরু হয়ে গেলো। খাওয়ার সাথে সাথে আমি সকলের সঙ্গে মাসির পরিচয় করিয়ে দিলাম। ওরে বাবা এরাতো সব বড় বড় লোকরে। আমিতো এদের কাছে চুনোপুঁটি। অনিদাতো আমাদের থেকেও বড়োলোক। টিনা অভিযোগের সুরে বললো। মাসি হো হো করে হেসে ফেললো। ওকে কিছু বলো। দেখেছিস অনি। আমি হাসছি। কবিতা যানা মা ছগনলালকে একটু চায়ের কথা বল। কবিতা নাচতে নাচতে চলে গেলো। এই মেয়েটা কবিতা! দেবাশীষ বললো। তুই এতোক্ষণ যার গল্প শোনাচ্ছিলি! হ্যাঁ। মাসি মাসি মুচকি মুচকি হাসছে। ওরে ও আমাদের প্রণাম করল কিরে ওকে বরং আমরা সকলে প্রণাম করবো। কেনো। মাসি বললো। জানোনা মাসি ওর কথা শুনতে শুনতে আমাদের কান গরম হয়ে গেছিল। ওর এতো তেজ। দেখে বোঝাই যায়না। আমরা পরিবেশের দাসত্ব করি দেবাশীষ। দেবাশীষ মাসির মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে। কি বললে মাসি আর একবার বলো। মাসি হাসতে হাসতে আবার বললো। দারুন কথা বললে। আমরা সব বেচুবাবু বুঝলে মাসি। সারাদিন খালি হিসেব করি। তোমার কাছে গিয়ে কয়েকদিন ক্লাস করতে হবে। কিছু ভালো ভালো কথা শেখা যাবে। কিরে অনি তোর বন্ধুরা কি বলে। আমি হাসছি। আস্তে আস্তে আড্ডাটা বেশ জমে উঠলো। চা এলো। হাসি ঠাট্টা ইয়ার্কি ফাজলামো সব হলো। দেবাশীষ কবিতার পেছনে খানিকটা লাগলো। কবিতা হাসছে। জানো মাসি অনি বলছিলো ও কবিতার বিয়ে দিয়েছে। বিয়ে কারা দেয় ? নারে দেবাশীষ ও শুধু কবিতার বিয়ে দেয়নি। কন্যাদানও করেছিলো। সাক্ষী আমি। বলো কি। হ্যাঁ। সত্যি ওর মানুষ জন্মটা সার্থক। সে বলতে পারবোনা। তবে ওকে প্রথম দিন দেখে আমারও খুব ভালো লেগেছিলো। ওর চোখ দুটো ভীষণ লোভনীয়। কাঁচা বয়স হলে ওকে ছাড়তামনা। বারে তুমি সব নিলে আমরা কি করবো। টিনা বললো। ওরে দুষ্টু মেয়ে। তোর পেটে পেটে এতো। সবাই হো হো করে হেসে ফেললো। তোরা এক কাজ করনা। বলো। অনিরতো মন মেজাজটা ভালো নয়। ওখানে আর একটা পরে আছে। তারও মনের অবস্থা আমি জানি। তোরা কয়েকদিন অনির সঙ্গে ওর দেশের বাড়িতে ঘুরে আয়না। ওরও মনটা ভালো লাগবে। যেটা ওখানে পরে পরে গুমড়োচ্ছে ওর মনটা একটু হাল্কা হবে। খারাপ বলোনি। কিরে নির্মাল্য তোর অফিসের হাওলা কি। আমার কোনো অসুবিধে নেই। প্রোগ্রাম হলে এক পায়ে খাঁড়া। টিনা। অনিদার দেশের বাড়ি! গল্প শুনেছি। ইনভাইট করুক আগে। আমি হাসলাম। ঠিক বলেছে টিনা। দেবাশীষ আমার দিকে তাকিয়ে বললো। মাসি বললে যাবোনা অনিদা নিজে মুখে একবার অন্ততঃ বলুক। মিলি বললো। কতোবার খেঁচাবার পর পেট থেকে কথা বেরোলো বলোতো। অদিতি বললো। তোরা অনির ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা কর। দেবাশীষ বললো। সব সময় এ্যাডভান্টেজ অনিদা তা হবেনা। টিনা বললো। আমি হাসছি। দামিনী মাসি হাসছে। আচ্ছা অনির হয়ে আমিতো তোদের নেমন্তন্ন করছি। ঠিক আছে যাওয়া হবে। আমার দিকে তাকিয়ে বললো। কাল কখন যাবি। তোরা বল। দশটার আগে হবেনা। একবার অফিসে ঢুঁ মারতে হবে সকলকে। এই যা ভুলে গেছি। কবিতা মিষ্টির বাক্স গাড়িতে আছেনা ? মাসি বললো। হ্যাঁ। তুইও একটা গাঢ়ল। মনেকরাবি তো। যা ছুটে নিয়ে আয়। কবিতা ছুটে চলে গেলো। তাহলে কখন যাবি বল। টিনা বললো। কিরে অনি বল। তোরা কাজ সেরে চলে আয়না। এগারোটা নাগাদ বেরোবো। পাক্কা। তুই কোথায় থাকবি। আমি এইখানেই থাকবো। কিরে ওখানে বড় গাড়ি যাবেতো।
কি নিয়ে যাবি। স্কোরপিও। নির্মাল্যেরটা। কে ড্রইভ করবে। ড্রাইভারের অভাব তুই ছাড়া সকলে ড্রাইভ করতে পারে। বাইরুটে চালাতে হবে। তোকে চিন্তা করতে হবেনা। কবিতা মিষ্টি নিয়ে এলো। হৈ হৈ করে সকলে মিষ্টি খেলাম। দেবাশীষ বলে বসলো মাসি মিষ্টিটা কোথাকার। কেনোরে। সাউথে এরকম মিষ্টি পাওয়া যায়না। নকুর সন্দেশ। দেড়শো বছরের দোকান। চারপুরুষ ধরে ব্যাবসা চালাচ্ছে। নির্মাল্য নোট করে রাখ নামটা একদিন পেট ভরে খালি মিষ্টি খাবো। মাসি হাসছে। তুমি হাসছো কেনো। তোর কথা শুনে। অনি এবার উঠি। কাল ঠিক সাড়েদশটার মধ্যে চলে আসবো। কবে ফিরবে জিজ্ঞাসা করেছো। অদিতি বললো। এটা ঠিক বলেছো। কবেরে। রবিবার ফেরার কথা। সোমবার অফিসে জয়েন করতে পারবোতো। রবিবার বিকেলের দিকে করতে পারিস। দেখলে দেখলে অদিতি কিরকম ছুঁয়ে দিলো। তোকে এমন দেবোনা। দেবাশীষ ঘুসি তুললো। ওরা চলে গেলো। আমি ওদের নীচ পর্যন্ত এগিয়ে দিলাম। নীচে নামার সময় টিনা আমার হাতটা একবার ছুঁলো। আমি ওর দিকে তাকালাম। টিনার চোখ অনেক কথা বলতে চায়। চোখের ইশারায় বললাম রাতে ফোন কোরো। আমি ওপরে এলাম। কিরে মন ঠিক হলো। ঠিক হতে সময় লাগবে মাসি। ওদের সামনে তোমার সঙ্গে কথা বলাই হলোনা। মাসি হাসছে। জানো মাসি এই পাঁচজন আমার কাগজটাকে বাঁচিয়ে দিলো। কি করে। এ্যাড জোগাড় করে দিয়ে। টিনা মেয়েটাকে তোকে খুব ভালবাসে। কি করে বুঝলে। ওর চোখমুখ বলছে। আমি জানতাম না। মালিক হওয়ার পর দেবার কাচে যেদিন প্রথম যাই, সেদিন জানতে পারলাম। তারমানে। কলেজ লাইফে মিত্রা ছাড়া আমি কোনো মেয়ের সঙ্গে সেইভাবে মিশতাম না। অদিতি মিলি টিনা এরা আমার জুনিয়ার। একমাত্র দেবাশীষ আমার সঙ্গে পড়তো। অদিতি আমাকে চিঠি দিয়েছিলো। ওকে একদিন বোঝালাম। তারপর দেবাশীষের পাল্লায় পোরলো, বিয়ে হলো। টিনা। টিনার ভালোবাসাটা অন্তরমুখী আমি কোনোদিন বুঝিনি। ভারি অদ্ভূত। হ্যাঁ। টিনা মুখে শিকারও করেছে। দেখেছো কবিতা কেমন আমার কথা গিলছে। তোমাকে আমিও ভালোবেসেছিলাম। সেই জন্য থাপ্পর খেয়েছিলি। আমি এখন বড় হয়েগেছি মাসির সামনে আর বলবেনা। আমি কবিতার কানটা ধরে একটু নেড়ে দিলাম। কবিতা উঃ করে উঠলো। এদেরও অনেক কষ্ট বুঝলে মাসি। যখনই যে আমাকে একা পায় তখন মনের কথা খুলে বলে। সত্যি। হ্যাঁগো তোমায় একদিন বোলবো। আমার অনেক জ্বালা বুঝলে। দেখছি তাই। মাসি ওদিককার খবর বলো। কবিতা নিচেগিয়ে অনির খাবার রেডি কর ওকে খাইয়ে যাবো। গ্যাস ঠিক মতো জ্বালাতে পারবিতো। পারবো। কবিতা বেরিয়ে গেলো। আমাকে ওই লোকটাকে দেখা। যে সিডিটা পাঠালে ওটা দেখবে। না। নিজের ছেলের বউ-এর ওই অবস্থা দেখতে পারবোনা। আমি স্টিল ছবিগুলো আলমাড়ী থেকে বার করলাম। মাসির হাতে খামটা দিলাম। তুই ওদের এইসব বলেছিস নাকি। না। খালি ডাক্তারের ব্যাপারটা বলেছি। ডাক্তারের ব্যাপার ওরা জানে। আগের থেকেই কিছু কিছু জানে। ডাক্তারের ভাগ্না সুনিত, ওইতো বাজারে চাউর কোরলো। আমাদের অফিসের কয়েকজন গাঢ়ল আছে। কাকে কি বলবো বলোতো। মেয়েটার কথা ভাবলে মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তুমি বিশ্বাস করো মাসি, খালি মিত্রার দিকে তাকিয়ে আমি এই কাজ করছি। পাগল। আমাকে তুই কি বলবি আমি সব জানি।
মাসি ছবিগুলো ভালো করে দেখলো। চোখ মুখের চেহারা কেমন যেনো হয়ে যাচ্ছে। কিগো তুমি ভদ্রলোককে চেনো মনে হচ্ছে। হ্যাঁ। মাসির গলার স্বর বদলে গেলো। কোথায় দেখলে। তোকে জানতে হবেনা। আমাকে খুঁজে বার করতেই হবে। পারবিনা। তুমি চাইলে পারবোনা। ইসলামভাই-এর সঙ্গে কথা বোলেছো। তোর কথা ঠিক। কি ঠিক। ও কাজ শুরু করে দিয়েছে। মাসির দিকে তাকিয়ে হাসলাম। তুমি বললেনা চিনলে কি করে। পরে বোলবো। কাজ শেষ হবার পর। মাসি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ঠিক আছে তোমাকে বিরক্ত করবোনা। এবার খেতে চল। তোকে খাইয়ে আমি বাড়ি যাবো। চলো। আমি ল্যাপটপ বন্ধ করে মাসির সঙ্গে নিচে চলে এলাম। কবিতা টিভি চালিয়ে দেখছে। কিরে খাবার সব গরম করেছিস। হ্যাঁ। নিয়ে আয়। কবিতা একসঙ্গে তিনজনের জন্য। জানি। নাহলে তুমি যে খাবেনা মাসি আগে বলেছে। কি এনেছো। মাসির দিকে তকিয়ে বললাম। দেখনা কি এনেছি। ডাক্তার ঠিক আছে। তোকে বলেছিনা তুই তোর কাজ কর। তোকে এইসব ব্যাপার নিয়ে আজ থেকে ভাবতে হবেনা। আমি না ভাবলে তুমি ভাববে। এইতো। হ্যাঁ। তোর পথের কাঁটা গুলোকে সব সরিয়ে দেবো। আমি এইভাবে চাইনা। তুই যেইভাবে চাইবি সেইভাবে হবে। তাহলে ঠিক আছে। মাসি তড়কা তন্দুরি রুটি আর চিকেন নিয়ে এসেছে। তিনটে প্লেটে কবিতা নিয়ে এলো। খাওয়া শুরু করলাম। আমি মাঝখানে কবিতা মাসি আমার দু’পাশে। তোরা কবে ফিরছিস। রবিবার। কখন আসবি। বিকেলের দিকে। মিত্রার শরীর একন কেমন। খুব একটা ভালো নয়। ডাক্তারদাদা তোমায় সকালে কিছু বলেনি। একটু একটু বলেছে। এখন কনটিনুয়াস ট্রিটমেন্টে থাকতে হবে। মনের ওপর কোনো স্ট্রেস দেওয়া চলবেনা। কি ভাবছিস। ওর জীবনে একটাই পথের কাঁটা আছে। কোনটা। টোডি। তোকে বলেছিনা ওটাকে নিয়ে ভাববি না। আমি কি ভাবছি। তুমি জিজ্ঞাসা করলে বললাম। মেয়েটাক খুব দেখতে ইচ্ছে করে। দেখাবো। একটু সময় দাও। ভজু দিদিমনি বলতে পাগল। হ্যাঁ। আমি না থাকলে ভজুর সঙ্গে খুনসুটি করে। অনেকটা বাচ্চা মেয়ের মতো হয়ে গেছে। জেদ বেরে গেছে। হবে। কম ঝক্কি যায়নি শরীরের ওপর দিয়ে। সাগির অবতারের খবর কি। তোমায় মাসি বলেছেনা ওইসব নিয়ে ভাববে না। কবিতা ধমকে উঠলো। তুই ধমকাচ্ছিস কেনো। মাসি হো হো করে হেসে ফেললো। তোমায় একটা কথা বলবো মাসি। বল। রাগ করবেনা। না। আমি ওখানে একটা একটা এনজিও ফর্ম করবো। ওই পাড়ার মেয়েদের নিয়ে। ওরাতো জীবনে কিছু পায়নি। অন্ততঃ পক্ষে ছেলেমেয়েগুলো হাতের কাজ শিখে কিছু করে কম্মে খেতে পারবে। কারা থাকবে। তুমি ইসলামভাই অদিতি টিনা মিলি মিত্রা। বেশির ভাগ মেয়েরা থাকবে। পারবি। আমার মনের ইচ্ছা। ইসলামভাইকে একটা আওয়াজ দিয়েছিলাম। কি বলেছে। হেসেছে। বলেছে তুই ভীষণ ঝানু। আমিও তাই বলছি। কেনো। আমাদের ভালো করতে চাইছিস। অন্যায় করছি। না। সমাজ সেটা মেনে নেবেনা।
মাসি ছবিগুলো ভালো করে দেখলো। চোখ মুখের চেহারা কেমন যেনো হয়ে যাচ্ছে। কিগো তুমি ভদ্রলোককে চেনো মনে হচ্ছে। হ্যাঁ। মাসির গলার স্বর বদলে গেলো। কোথায় দেখলে। তোকে জানতে হবেনা। আমাকে খুঁজে বার করতেই হবে। পারবিনা। তুমি চাইলে পারবোনা। ইসলামভাই-এর সঙ্গে কথা বোলেছো। তোর কথা ঠিক। কি ঠিক। ও কাজ শুরু করে দিয়েছে। মাসির দিকে তাকিয়ে হাসলাম। তুমি বললেনা চিনলে কি করে। পরে বোলবো। কাজ শেষ হবার পর। মাসি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ঠিক আছে তোমাকে বিরক্ত করবোনা। এবার খেতে চল। তোকে খাইয়ে আমি বাড়ি যাবো। চলো। আমি ল্যাপটপ বন্ধ করে মাসির সঙ্গে নিচে চলে এলাম। কবিতা টিভি চালিয়ে দেখছে। কিরে খাবার সব গরম করেছিস। হ্যাঁ। নিয়ে আয়। কবিতা একসঙ্গে তিনজনের জন্য। জানি। নাহলে তুমি যে খাবেনা মাসি আগে বলেছে। কি এনেছো। মাসির দিকে তকিয়ে বললাম। দেখনা কি এনেছি। ডাক্তার ঠিক আছে। তোকে বলেছিনা তুই তোর কাজ কর। তোকে এইসব ব্যাপার নিয়ে আজ থেকে ভাবতে হবেনা। আমি না ভাবলে তুমি ভাববে। এইতো। হ্যাঁ। তোর পথের কাঁটা গুলোকে সব সরিয়ে দেবো। আমি এইভাবে চাইনা। তুই যেইভাবে চাইবি সেইভাবে হবে। তাহলে ঠিক আছে। মাসি তড়কা তন্দুরি রুটি আর চিকেন নিয়ে এসেছে। তিনটে প্লেটে কবিতা নিয়ে এলো। খাওয়া শুরু করলাম। আমি মাঝখানে কবিতা মাসি আমার দু’পাশে। তোরা কবে ফিরছিস। রবিবার। কখন আসবি। বিকেলের দিকে। মিত্রার শরীর একন কেমন। খুব একটা ভালো নয়। ডাক্তারদাদা তোমায় সকালে কিছু বলেনি। একটু একটু বলেছে। এখন কনটিনুয়াস ট্রিটমেন্টে থাকতে হবে। মনের ওপর কোনো স্ট্রেস দেওয়া চলবেনা। কি ভাবছিস। ওর জীবনে একটাই পথের কাঁটা আছে। কোনটা। টোডি। তোকে বলেছিনা ওটাকে নিয়ে ভাববি না। আমি কি ভাবছি। তুমি জিজ্ঞাসা করলে বললাম। মেয়েটাক খুব দেখতে ইচ্ছে করে। দেখাবো। একটু সময় দাও। ভজু দিদিমনি বলতে পাগল। হ্যাঁ। আমি না থাকলে ভজুর সঙ্গে খুনসুটি করে। অনেকটা বাচ্চা মেয়ের মতো হয়ে গেছে। জেদ বেরে গেছে। হবে। কম ঝক্কি যায়নি শরীরের ওপর দিয়ে। সাগির অবতারের খবর কি। তোমায় মাসি বলেছেনা ওইসব নিয়ে ভাববে না। কবিতা ধমকে উঠলো। তুই ধমকাচ্ছিস কেনো। মাসি হো হো করে হেসে ফেললো। তোমায় একটা কথা বলবো মাসি। বল। রাগ করবেনা। না। আমি ওখানে একটা একটা এনজিও ফর্ম করবো। ওই পাড়ার মেয়েদের নিয়ে। ওরাতো জীবনে কিছু পায়নি। অন্ততঃ পক্ষে ছেলেমেয়েগুলো হাতের কাজ শিখে কিছু করে কম্মে খেতে পারবে। কারা থাকবে। তুমি ইসলামভাই অদিতি টিনা মিলি মিত্রা। বেশির ভাগ মেয়েরা থাকবে। পারবি। আমার মনের ইচ্ছা। ইসলামভাইকে একটা আওয়াজ দিয়েছিলাম। কি বলেছে। হেসেছে। বলেছে তুই ভীষণ ঝানু। আমিও তাই বলছি। কেনো। আমাদের ভালো করতে চাইছিস। অন্যায় করছি। না। সমাজ সেটা মেনে নেবেনা।
আমি কিন্তু কখনো কারুর স্বাধীনতায় হাত দেবোনা। আমি তিনটে বিষয় নিয়ে কাজ করবো। বল। শিক্ষা স্বাস্থ্য পুনর্বাসন। সেটা কি রকম। যারা নেক্সট জেনারেসনে প্রফেসনে আসতে চাইবেনা তাদের জন্য কাজের ব্যবস্থা করবো। তোমার সময়কার কজন তোমার মতো হতে পেরেছে। তাদের জন্য কিছু করবো। এতে ব্যবসার খতি হবেনা। না। তোমাদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়ার জন্য ফ্রি ক্লিনিক তৈরি করবো। কারা যাবে। তারা গিয়ে আবার এই রকম ডাক্তার হবেনাতো। সামন্ত ডাক্তারকে বলবো ভেবেছি। তুমিতো ডাক্তারদাদাকে দেখেছো। লোকটা ভালো। মিত্রার নার্সিংহোমের দায়িত্ব ডাক্তারদাদার হাতে দেবো ভাবছি। মিত্রা আর বড়মাকে দিয়ে বলাবো। খুব ভালো হবে। একটা স্কুল তৈরি করবো ওখানে। টাকা পাবি কোথায়। ভূতে দেবে। আবার ফাজলামো করে। দেবারা জোগাড় করতে পারবে। ওখানে যে বিশাল সাম্রাজ্য তৈরি করছিস। তোমাদের এখানে যারা আর কাজ করতে পারবেনা তাদের ওখানে নিয়ে গিয়ে কাজে লাগাবো। ইসলামের কি করবি। ইসলামভাই থাকবে তবে বলেছি রতনকে আস্তে আস্তে সব বুঝিয়ে দিতে। ইসলামভাই অনেকের টার্গেট হয়ে গেছে। হ্যাঁ। ঠিক খবর পেয়েছিস। আমার ওই জায়গাটা এমন তুমি ঢুকতে পারবে কিন্তু কাজ করে বেরোতে পারবেনা। আমাকে একবার নিয়ে যাবি। কালকে চলো। এদিকের কাজ করবে কে। ঠিক আছে। আমি পনেরোদিন পর আবার যাবো তখন চলো। যাবো। কেউ যদি কিছু মনে করে। আমারতো পরিবার নেই কে কি মনে করবে। তোর বন্ধুরা। তুমি দেখলে বলতে পারবে তারা কেমন। ঠিক আছে। এই রবিবারের পরের রবিবার এই বাড়িতে একটা অনুষ্ঠান করার ইচ্ছে আছে। তোর বিয়ে উপলক্ষে। তুমি যা বলবে। তবে অনিমেষদা নেমন্তন্ন খাবে বলেছে। বাবা এর মধ্যে আমি নেই। ওই বিষয়টা আমার ওপর ছেড়ে দাও। আমাকে বললি কেনো তাহলে। বাড়ি-ঘর গুলো রং করবো এই চার পাঁচদিন খালি ফেলে রাখবো কেনো। তোমারতো অনেক পরিচিত লোক আছে তাদেরদিয়ে কাজটা শুরু করে দাও। মাসি আমার বড়কে বলবো। ওকি এই কাজ করে। তাহলে কি করে। তুমি জানোনা। তোর বিয়ের সময় ওতো লেদে কাজ করতো। সে সব গেছে। এখন কিসব কন্টাকটরি করে। ও মাসি কতা বলছোনা কেনো। ও পারবেরে কবিতা। তুমি বললে পারবে। কালকে একবার ডাকিস। আচ্ছা। অনেক রাত হলো এবার ওঠো। তোমাদের এতটা যেতে হবে। শোন দুটো ছেলে আজ থাকবে। কালকে থেকে কাজ শুরু হলে আর চিন্তা নেই। ওদের শোবার ব্যবস্থা করতে হবেতো। তুই দেখেছিস ওরা সকালে ছিলো। এমা ওরা কি খাবে। ওদের খাবার গাড়িতে আছে তোকে চিন্তা করতে হেবনা। ঠিক আছে। আমি কাল তোর বেরোবার আগে আসবো। আচ্ছা।
মাসি কবিতা চলে গেলো। একটা গাড়ি রেখে গেলো। দুটো ছেলে রয়েছে। তার মধ্যে একটাকে আমি চিনি। সকাল বেলা একবার রতন ওকে নেপলা বলে চেঁচিয়ে উঠেছিলো। আমি ওদের বললাম ভেতরে শোবে চল। না অনিদা আমরা গাড়িতেই থাকবো। কেনো। রতনদার হুকুম। আমি কথা বারালাম না। ছগনলালকে বললাম। তুমি শুয়ে পরো। নিচের সব তালা লাগিয়ে দাও। আচ্ছা ছোটবাবু। আমি ওপরে চলে এলাম। দরজা জানলা বন্ধ করে দিলাম। একটু একটু ঠান্ডা পরেছে। বাথরুমে গেলাম। মুখ হাত পায়ে ভালো করে জল দিয়ে এসে বিছানায় বসলাম। একটা সিগারেট ধরালাম। মাসি মনে হয় আমাকে আর কিছুই বলবেনা। এবার থেকে যা কাজ করার ওরাই করবে। আমার সব সোর্স এরা। মাসি মনে হয় এই বিষয়ে আমার সব সোর্সকে অফ করে দেবে। আজকে মাসির সঙ্গে কথোপকথনে তাইই বুঝলাম। একটাই কথা তোকে ভাবতে হবেনা। তুই তোর কাজ কর। না আর ভাবতে ভালো লাগছেনা। সকাল থেকে নানা ঝামেলা গেলো। কাগজপত্র গুলো ঠিকঠাক ভাবে গুছিয়ে নিলাম। আলমাড়িতে তুলে রাখলাম। দাদারা কখন পৌঁছলো জানতে পারলামনা। ওরাও আমাকে কেউ ফোন করেনি। হয়তো বিরক্ত করতে চায়নি। কালকের কাজটা ঠিক ঠাক ভাবে হয়ে গেলে বাঁচি। ওইদিকের বিষয় নিয়ে আবার চিন্তা করতে হবে। মিত্রা কি করছে ? ভাবতেই মনটা কেমন উসখুশ করে উঠলো। একবার ভাবলাম ফোন করি। তারপর ভাবলাম না থাক ও নিজে ফোন করবে বলেছে। ফোনটা কাছে টেনে নিলাম। দেখলাম মিস কল। অপারেট করতে দেখলাম টিনার নম্বর। তারমানে টিনা ফোন করেছিলো! কল রেজিস্টারে গিয়ে দেখলাম টিনা আধঘন্টা আগে ফোন করেছিলো। আমি তখন নীচে ছিলাম। টিনাকে ডায়াল করলাম। হ্যালো। টিনার গলা। একটু ভারি ভারি। ঘুমিয়ে পরেছিলে নাকি। নাগো অনিদা। ঘুম আসছেনা। শরীর খারাপ। না। তাহলে। জানিনা। তোমার বাড়ি থেকে ফিরে আসার পর থেকে কেমন যেন লাগছে। বার বার তোমার মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে। আমার জন্য ভেবোনা। আমি ঠিক আছি। একটু আগে মিলির সঙ্গে কথা হচ্ছিল। কি বলছে মিলি। ওরও আমার মতো দশা। তোমরা আমাকে নিয়ে এতো ভেবোনা। ভাবতে চাইনা। তিনমাস আগে কি তোমাকে নিয়ে ভাবতাম। তাহলে। কি করে বোঝাবো তোমাকে। কই তিন মাস আগে এমন ভাবে মনে আসতোনা। এখন আসে। তোমরা আমাকে ভীষণ ভালোবাসো তাই। টিনা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস পরলো। আমি শুনতে পেলাম। মিত্রাদি ফোন করেছিলো। না। তুমি করোনি। না। কেনো। সবাইকে জানিয়ে লাভ। সত্যি তুমি না। হ্যাঁগো টিনা নিজের টেনসন নিজের কাছে রাখা ভালো। মাসি। মাসি এই একটু আগে গেলো। এতোরাতে। হ্যাঁ। আমাকে খাইয়ে দিয়ে গেলো।
সত্যি তোমার মুখ থেকে ভদ্রমহিলার গল্প শুনেছিলাম। আজ দেখলাম। স্বপ্নের দেখা আর বাস্তবের দেখার সঙ্গে আকাশ পাতাল তফাৎ। তোমার সঙ্গে সবাই কি একমত। ওরাতো বললো অনিদা আমাদের গুল মেরেছে। হাসলাম। জানো অনিদা ওনার একটা কথা আমার ভীষণ ভালো লাগলো। যদিও দেবাশীষ কথাটা ওনাকে রিপিট করতে বললো। কোনটা বলোতো। ওইযে, কবিতা যখন বললো, নষ্ট মেয়ে। হ্যাঁ হ্যাঁ। মনে পরেছে। তখন বুঝলাম ভদ্রমহিলার গভীরতা কতটা। মাসি বিশেষ পড়াশুনো করেনি। তাই। হ্যাঁ। ষোলো বছর বয়সে পেটের জ্বালায় ওই পাড়ায় আসে। এখন মাসির বয়স সত্তরের কাছাকাছি। দেখে বোঝা যায়না। ছোটবেলা থেকে শরীরটার যত্ন নিতে শিখেছে যে। না হলে খরিদ্দার আসবেনা। কি অদ্ভূত লাইফ। তুমি শুনেছো। চোখে দেখোনি। না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবেনা। আমাকে একবার তোমার সঙ্গে নিয়ে যাবে। তোমাদের নিয়ে একটা কাজ করার ইচ্ছে আছে। তখন নিয়ে যাবো। আমি সব সময় রাজি। দায়িত্ব নিয়ে করতে হবে। খুব সেন্সেটিভ জায়গা। কথা দিচ্ছি পারবো। তার আগে ওদের সম্বন্ধে একটু জানতে হবে। কতটুকু জানতে পেরেছি বলো ওদের সম্বন্ধে। কাগজে কলমে পরে যা জেনেছি। তুমি ওখানে আঠারো মাস কাটিয়েছো। এখনো রেগুলার তোমার সঙ্গে ওদের যোগাযোগ। বলতে পারো ওই পাড়াটা আমার ঘরবাড়ি। কত লাইফ আছে ওখানে না গেলে বুঝতে পারবেনা। আচ্ছা অনিদা তোমার অস্বস্তি হয়না। তুমি যখন নতুন কাজে জয়েন করেছিলে তোমার কোনো অস্বস্তি ছিলো ? হ্যাঁ। তারপর তুমি আস্তে আস্তে নিজেকে মানিয়ে নিলে। হ্যাঁ। তুমি এখন তোমার অফিসের একটা অঙ্গ। হ্যাঁ। ধরেনাও ওরা যা করছে ওটাও ওদের একটা অফিস। আমি সেখানে গেছিলাম। প্রথমে ওই অফিসে ঢুকতে একটু অস্বস্তি হয়েছিলো। তারপর মানিয়ে নিলাম। আমি এখন ওই অফিসের একটা অঙ্গ। দারুন বললেতো। এটা ফ্যাক্ট। একে তুমি অমান্য করবে কি করে। তুমি যেমন জীবিকার জন্য কাজ করো, ওরাও তেমন জীবিকার জন্য দেহ বেচে। তুমি যেমন তোমার পার্টির কাছে ঝোপ বুঝে কোপ মারো। ওরাও ওদের পার্টির কাছে ঝোপ বুঝে কোপ মারে। দারুন এক্সাইটিং। সেক্সটাকে ওদের কাছে কোনো ব্যাপার নয়। তারমানে। জানো টিনা আমি অনেক ভেবে একটা সিদ্ধান্তে এসেছি। বলতে পারো এটা আমার একেবারে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। কি। ওখানে যে মেয়েগুলো থাকে ওদের দেহটা সর্বধর্ম সমন্বয়ে তৈরি। বুঝতে পারলাম না। আবার বলো। ধরো তোমার কাছে যারা কাজের জন্য আসে তাদের তুমি কখনো জিজ্ঞাসা করো তারা কোন ধর্মের কোন জাতের। একবারে না। সেখানে তোমার উদ্দেশ্য থাকে সে তোমার ক্লায়েন্ট তাকে ঠিক ভাবে এনটারটেন করা। একবারে ঠিক। ওদের কাছেও যে পুরুষেরা আসে তাদের ওরা নাগর বলে। কি বললে। নাগর। আর যাদের বাঁধা ধরা পুরুষ থাকে তারা বাবু। ভেরি ইনটারেস্টিং। ওদের নাগরদের কোনো ধর্মনেই। নাগরকে সেটিসফায়েড করা ওদের উদ্দেশ্য। ওরা সেটিসফায়েড করে। তার বিনিময়ে পয়সা পায়। হাউ স্ট্রেঞ্জ। আচ্ছা ওদের তৃপ্তি অতৃপ্তি বলে কিছু নেই। তুমিতো আমাকে বলেছিলে টিনা অনিদা তোমাকে এই কাজটা পেতে গেলে এটা দিতে হবে। গিভ এন্ড টেক পলিসি। সেখানে তৃপ্তি অতৃপ্তি বলে কিছু আছে। ওটা ভেক ব্যাপার। ঠিক। জানো টিনা এমনও বহুদিন গেছে। নাগরের অত্যাচারের তাড়নায় মেয়েটা অসুস্থ হয়ে পরেছে। মাসি আমাকে মাঝরাতে এসে ডেকে নিয়ে গেছে। সারারাত ধরে তার ক্ষতের সেবা শুশ্রুষা করেছি। কখনো মনের মধ্যে কোনো সেক্স জাগেনি। কি বলছো তুমি। এক বর্ণও তোমায় বানিয়ে বানিয়ে বলছিনা। বিশ্বাস করো। টিনা চুপচাপ। এই মেয়ে গুলো আমাকে ভাইফোঁটা দিতো। রাখি পরাতো। সত্যি অনিদা তুমি অনেক ভাগ্যবান। সেটা বলতে পারবোনা। তবে ওদের বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছিলাম। সেই জন্য মাসি তোমায় এতো ভালোবাসে। তারও অনেক কারণ আছে। বলো। না এখন থাক। বলতে গেলে ভোর হয়ে যাবে। হোক না। না। বাবুদের ব্যাপারটা বলো। বাবুদের বাঁধা মেয়েছেলে থাকে। তারা অন্য কোনো মেয়ের ঘরে যায়না। মেয়েটিকে তারা মাসোহারা পয়সা দেয়। মেয়েটিও বাবুর জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় রেখে দেয়। বাকি সময়। অন্য নাগরকে সময় দিয়ে পয়সা ইনকাম করে। ওটা উপরি বলতে পারো। কি বলছো তুমি। ঠিক বলছি এবার ঘুমোও। কাল অনেকটা জার্নি করতে হবে। তোমার সঙ্গে কথা বললে কতোকিছু জানা যায়। বিশ্বাস করো তোমার মতো করে এতোদিন এদের বিষয় নিয়ে ভাবিনি। হ্যাঁ। খালি চোখে ওদের আমরা সেক্স ওয়ার্কার বলি, গণিকা বলি, বেশ্যা বলি। একটু ভেবে দেখো। যারা বিবাহিত জীবন যাপন করছে। সেই সব মেয়েরা কি সেক্স ওয়ার্কার নয়। কি পাগলের মতো বলছো তুমি। আমি তোমাকে ভাবতে বলেছি। পাগলামো করোনা।
তোমায় একটা গল্প বলে শেষ করছি। বলো। আমাদের একজন মনিষী ছিলেন। নামটা তোমায় বলছিনা। নামটা তুমি খুঁজে বার করে আমায় বলবে। খালি একাট ক্লু দিলাম তোমায়। বলো। ব্রিটিশ আমলের ঘটনা। সেতো একশো বছর আগের ঘটনা। হাঁ। তিনি যখন আইএএস পরীক্ষায় পাশ করলেন তখন তার ইন্টারভিউ-এর ডাক এলো। হুঁ। তিনি ইন্টারভিউ দিতে গেলেন। হুঁ। ঘরে ঢুকে চেয়ার বসার আগেই সাহেব প্রথমেই তাকে বললেন ইওর মাদার ইজ এ প্রস্টিটিউট। কি বললে। ইওর মাদার ইজ এ প্রস্টিটিউট। যাঃ। আমি যা বলছি ঠিক বলছি। তা সেই মনিষী প্রথমে একটু ঘবড়ে গেলেন। তারপর ভাবলেন ইন্টারভিউ বোর্ড। সাহেব আমাকে এই ধরণের প্রশ্ন করতেই পারেন। রাগ করলে চলবেনা। কি উত্তর দিলেন সেই মনিষী। কি উত্তর দিতে পারেন বলে তোমার মনে হয়। মাথায় আসছে না। আমি হলে ইন্টারভিউ বোর্ড থেকে বেরিয়ে আসতাম। আমার চাকরির দরকার নেই। তুমি হেরেগেলে। তা কেনো। তিনি কি বলেছিলেন জানো। বলো শুনি। ইয়েস মাই ফাদার ইজ এ লিগাল কাসটোমার। স্ট্রেঞ্জ। কি নাইস অ্যানসার। হ্যাঁ। তারপর সেই সাহেব মনিষীকে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। চাকরি তিনি পেয়েছিলেন। তবে করেন নি। সারাজীবন ধরে দেশোদ্ধার করেছিলেন। কে বলোনা। নাম বলবোনা। তোমায় সেকেন্ড ক্লুটা দিলাম। বলো। তাঁর মৃত্যুর দিন আমরা এখনো জানিনা। উঃ তুমি ভীষণ সাসপেন্সে রাখো। রাখি। কাল দেখা হচ্ছে। ভীষণ ভীষণ ভালো লাগলো। এবার নিশ্চই তোমার ঘুম আসবে। আসবে। ফোনটা কেটে দিলাম। মোবাইলের ঘড়ির দিকে তাকালাম। একটা বাজে। মিত্রা ফোন করবে বলেছে। এখনো করলোনা। ওখানে কি কোনো সমস্য হলো ? বিছানা থেক উঠে এসে, টেবিলের ওপরে রাখা জলের বোতল থেকে ঢক ঢক করে কিছুটা জল খেলাম। বাথরুমে গেলাম। বিছানায় এসে চাদর মুড়ি দিয়ে বসলাম। একবার ভাবলাম ল্যাপটপটা খুলি। তারপর ভাবলাম না থাক। সন্দীপকে একবার ফোন করি। ব্যাটা সকাল থেকে একা লড়ছে। কি হাল একবার জিজ্ঞাসা করি। ফোন করতেই ওপার থেকে ভেসে এলো। গান্ডু কানা রাতে ফোন করার সময় হোলো। তোর বউ তোকে বানান করে গালি দিতে বলেছে। সন্দীপ হো হো করে হেসে উঠলো। খবরকি বল। জীবনে প্রথম একা হাতে কাগজ বারকরলাম। সেটিসফায়েড। অবশ্যই। প্রথম কনসিভ করলাম এবং ডেলিভারি করলাম। কি আনন্দ হচ্ছে জানিস না। তোকে আলাদা করে বলতে হবেনা। তোর কথা শুনেই বুঝতে পারছি। শোন আমার তিনটে নার্সিংহোম ক্লিয়ার হয়ে গেছে। কি বুঝলি। কম বেশি সবেতেই ঘোটালা আছে। বাকি গুলো এখুনি করতে হবেনা। নিউজটা আগামী সপ্তাহে মারবো। ফিরে এলে ছেলেদুটোকে পাঠাস। বাঁচালি। কেনো। আজকেই হিমশিম খাচ্ছিলাম। ওরা আসতে কাজ তুলতে পারলাম। কিছু হারামী এখনো আছে। মার্ক করে রাখ। সব কটাকে দুর কর। আমি আর কয়েকটাকে বেছে রেখেছি। ভালো কাজ করছে। দু’একটা কচি রাখিস। কেনো মালকিনকে নিয়ে সখ মিটছে না। আরো কচি লাগবে। আরে কলির কেষ্ট বলে কথা। হারামী। হাসলাম। দাঁড়া ম্যাডাম আসুক। চাকরি চলে যাবে। এখন আর যাবেনা। হো হো হো। লাস্ট আপডেট কি। দাদারা একটা নাগাদ বেরিয়ে গেলো। আমি বাড়িতে একা। তারপর মাসি এলো সন্ধ্যার সময়। সাড়ে এগারোটা নাগাদ গেলো। সত্যি তোর দামিনী মাসি একটা ক্যারেকটার। বউকে গল্প করেছিস। করিনি। বলেছি বাড়িতে গিয়ে বলবো। কাগজ বেরিয়ে গেছে। ক্যালকাটা এডিসন প্রিন্ট হচ্ছে। দেখেছিস। হ্যাঁ। প্রেসরুমের কি অবস্থা। অতীশবাবু ছাড়া দিব্যি চলছে। সনাতনবাবু। শালা সকালে এসে দেখি মিলিটারি মেজাজে চারিদিকে ঘুরছে। বলেছিস। দাদা ফোন করে বলেদিয়েছে। এইবার ঝটপট তৈরি হয়ে যা। হ্যাঁ। এই কয়দিনে অনেক অভিজ্ঞতা হবে। দাঁড়া দাঁড়া একটা ফোন ঢুকছে। তোকে পরে ফোন করছি। ঠিক আছে। ফোনটা ধরার আগেই মিস কল হয়ে গেলো। দেখলাম মিত্রার নম্বর। আমি ফোন করতে গেলাম। তারপর ভাবলাম না। ওর ফোনে যদি রিং বাজে সবাই জেনে ফেলবে। তার থেকে বরং মিত্রাই ফোন করুক।
বসে রইলাম। কিছুক্ষণ পর আবার রিং বেজে উঠলো। কিরে কখন থেকে তীর্থের কাকের মতো বসে রয়েছি। বসে থাক। আমি এখন বাথরুমে। তার মানে। রাত দেড়টা বাজে। এইতো খেয়ে উঠলাম। এতো রাতে। আর বলিসনা। দাদারা রাত নটার সময় এলো। রাত নটা! তাহলে বলছি কি। এত রাত কেনো। রাস্তায় গাড়ি খারাপ হয়ে গেছিলো। তারপর। নিরঞ্জনদা ফোন করে আর একটা গাড়ি নিয়ে এসেছে। সেরেছে। বড়মা। দেড়েমুসে গালাগাল নিরঞ্জনদাকে। হো হো হো। হাসিসনা। আমি ও বাড়িতে গিয়ে ফান করছি। ঠিক আছে। ফোনটা কেটে দিলাম। বাধ্য হয়ে ল্যাপটপটা খুললাম। নেট চালালাম। বেশ কিছুক্ষণ এদিক সেদিক ঘুরলাম। নিজের মেল বক্স আবার চেক করলাম। না তনু কিছু লেখেনি। কোনো মেলও পাঠায়নি। ও অফলাইনে আছে। চ্যাটে গিয়ে ক্লিক করে দু’কথা লিখে দিলাম। অফলাইন ম্যাসেজ। ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলাম মিত্রা। বল। আজ সারাদিনটা বেশ ভালো কাটলো বুঝলি। সব ভালো যার শেষ ভালো। মধুরেণ সমাপয়েত। দাঁড়া দাঁড়া দাঁড়াবো কেনো। সবে এসে একটু লাট খেলাম। সবিতো বলে ফেললি। তারওপর বেশ কড়া কড়া বাংলা বলছিস। ভাব এবং ভাষা দুটোই গল গল করে বেরোচ্ছে। হুঁ। তোর দিনটা একটু খারাপ কাটলো। তা যাক। ভালো কাজ করতে গেলে ওরকম একটু খারাপ যেতেই পারে। বুঝতে পারলাম মিত্রা আজ ফুল ফর্মে ব্যাট করছে। ও আজ অনেক হাল্কা। ওর ঘাড় থেকে সব বোঝা নেমে গেছে। ও খুশিতে থাকুক। অনেক কষ্ট পেয়েছে। কিরে চুপ করে রইলি কেনো। হুঁ হাঁ করছিসনা। আবার কি ফন্দি আঁটছিস। কই ? তুই বলছিস আমি শুনছি। হুঁ হাঁ করবিতো। বল। আজ থেকে যা বলবো সব শুনবি। হাসলাম। হাসছিস কেনো। কি করবো। মাথায় রাখবি আমি এই কাগজের মালকিন। জানি ম্যাডাম। হ্যাঁ। এবার থেকে মিত্রা মিত্রা করবিনা। ম্যাডাম বলবি। ঠিক আছে ম্যাডাম। এইতো ভালো ছেলের মতো কথা। মিত্রা চুমু খাওয়ার ঢঙে বললো।
জানিস বুবুন আজ এই বাড়িতে আমরা চারজন। কেনো। ও বাড়িতে জায়গা নেই। সব ঘর বুক। হ্যাঁ। তোর বাড়ির নিচের ঘরগুলো আজ পরিষ্কার করা হলো। একেবারে চক চকে। সঞ্জু লাইট লাগিয়ে দিলো। ইসলামভাই ভজু নিচের একটা ঘরে। চিকনা নিচের বারান্দায়। আমি নীপা তোর ঘরে। তুই ফোন করছিস চিকনা আবার রেকর্ড করছে। উঁ উঁ উঁ। উঁ করছিস কেনো। সব হাত করে নিয়েছি। তারমানে! ওপরে ওঠার সময়ে গম্ভীর হয়ে বলেছি। চিকনা আজ তোমার বসের সঙ্গে রাতে কথা হবে। বলে কিনা ওপর তলায় একেবারে রিপোর্ট যাবেনা। গেলে মিথ্যে যাবে। এই কান মুলছি নাক মুলছি। হো হো হো। নীপা। নীপা এখন আমার নেওটা। যা বোলবো তাই শুনবে। কেনো। হুঁ হুঁ। আমি এখন অনি ব্যানার্জীর রোল প্লে করছি। বাবাঃ। তোকে না জানিয়ে আজ একটা অন্যায় কাজ করে ফেলেছি। কি। বল আগে রাগ করবিনা। না শুনলে বলবো কি করে। আজকে স্নানসেরে মায়ের সিঁদুর কৌটো থেকে সিঁদুর নিয়ে পরেছি। ঠাকুর ঘরে পূজো দিয়েছি। হঠাৎ। বড়মার কথায় সিঁদুর পরা বন্ধ করেছিলাম। আজ বড়মা পরতে বললো। কেনো। বললো আপদটা গেছে। এবার তুই সিঁদুর পরতে পারিস। বেশ ভালো। তুই একটুও দুঃখ পেলি না। একবারে না। কাল দেবাদের নিয়ে কখন আসছিস। তুই খবর পেলি কি করে। আমারও সোর্স আছে। ঘেঁচু আছে। ইসলামভাই দামিনী মাসিকে ফোন করেছিলো। জানতে পেরেছিস। দামিনী মাসির সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বললাম। টোডির বিষয় নিয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করলো। হ্যাঁ। কি বললি। যা যা জানি তাই বললাম। মাসি কি বললো। তুই একবারে চিন্তা করবিনা। তুই কি বললি। সেই সময় মনটা খুব খারাপ লাগছিলো। তারপর আবার ঠিক করে ফেললাম। তুই আছিস তো। আমার কিছু হবেনা। ডাক্তারদাদা। দারুন মজা হয়েছে। কি রকম। ডাক্তারদাদা যে আসছে দাদা বলেনি। আমরা জানতাম তিনজন। তারপর ট্রলি আসতে দেখি চারজন। আমি প্রথম দেখি। আমি আর ইসলামভাই খামারে দাঁড়িয়েছিলাম। বড়মাকে দৌড়ে এসে বলি। হো হো হো। বড়মার সে কি লম্ফ ঝম্প। কার ওপর। দাদার ওপর। কেনো। আগে থেকে বলেনি বলে। বলে কিনা মরন বুড়ো বয়সে ঢং কতো দেখো। ডাক্তারদাদা কি বললো। এডিটর আমার বান্ধবীকে বিষয়টা তোমার আগে থেকে জানানো উচিত ছিলো। আমরা ডাক্তারের কথায় হাসতে হাসতে মাটির সঙ্গে মিশে যাই আরকি। আমাকে দেখে বলে মামনি তোমার শরীর কেমন আছে। দেখিতো মুখখানা। তারপর আমার থুতনিটা নেড়ে দিয়ে বললো। হ্যাঁ এখন অনেক সুস্থ। বুঝলি কালকে এখানে লাইন পরবে। কেনো। অনাদি বাসু চিকনা ওদের সবার বাবা মাকে ডাক্তারদাদাকে দেখাতে আসবে। খেয়েছে। ডাক্তারদাদা বলেছে আমি সব পেসেন্ট দেখবো তবে আমার মজুরি চাই। ওরা জিজ্ঞাসা করেছিলো। হ্যাঁ। ডাক্তারদাদা মাছ খেজুর রস নানারকম শাক আরো কতো কি বললো এই গুলো খাওয়াতে হবে। ওরা সব একপায়ে রাজি। কি খেলি। তুইতো বেশ লেট্টি খেলি, মুরগির ঠ্যাং চিবোলি। আমার কথা মনে পরে।
একদম নয়। তা থাকবে কেনো। রাক্ষস। তুই খাওয়ার সময় আমার কথা মনে করেছিস। তোর কথা সব সময় হয়। আমি না বললেও হয় বললেও হয়। ডাক্তারদাদা নিচে বসে খেলো। হ্যাঁ। বলে কিনা অনেকদিন পর একটু আরাম করে খেলাম। কেনো। বলে কিনা কলা পাতায় খাওয়া ভুলেই গেছিলাম। অনিবাবুর জন্য সেটা হলো। পান্তা। কাল খাবে বলেছে। ডাক্তার ভীষণ পেটুক। তোর মতো। এক থাপ্পর। শয়তান, আমি পেটুক। তাহলে কি। খালি খাই খাই। ডাক্তারদাদা আজ চিংড়ি মাছের টকটা দুবার চেয়েছে। কাকা তোর গুণকীর্তন করলো। সেই মাছ ধরা কেশ। নতুন দুটো সংযোজন করেছে। কি বলতো। বলবোনা তুই আয় তারপর বলবো। এরা যাচ্ছে শোবে কোথায় বলতো। ওদের শোবার ব্যবস্থা সব রেডি। কোথায়রে। কাল আবার ইসলামভাই ও বাড়িতে শিফ্ট আমরা সব এই বাড়িতে। কাল কখন বেরোবি রেস্ট্রি অফিসে। যেতে হবেনা। কেনো। নিরঞ্জনদার ফরমা দেখিসনিতো। আবার হো হো করে হেসে ফেললাম। ফোনে ফোনে সব বলে দিলো। এখানকার থানার পুলিশের গাড়ি করে রেস্ট্রি অফিস থেকে লোক আসবে। ব্যাঙ্কের লোকও ওই গাড়িতে আসবে। সব এই বাড়িতেই হবে। জব্বর ব্যবস্থা। দেবারা যাবে বড়মারা জানে। কেউ জানে না। তাহলে। আজ আমি সারাদিন ইসলামভাই-এর পেছন পেছন ঘুরেছি। আবার হাসলাম। ইসলামভাইকে সকাল বেলায় বলেছি আজ তোমায় ছাড়ছিনা। ইসলামভাই কিছু বলেনি। বলেছে। আমি বললাম এতদিন তোমাদের ব্যাপার ছিলো, আজ আমার ব্যাপার, আমায় সব শুনতে হবে। শুনে কি বললো। মুচকি মুচকি হাসলো। বাজার থেকে ফিরে এসে দেখি ইসলামভাই নেই। তারপর। ফোন করলাম। বললো মামনি তুই পেছন দিকের বাঁশ ঝাড়ে চলে আয় আমি অন্ধকারে বসে আছি। আমি গেলাম। রতন প্রথমে খবর দিলো। মাসি তোর কাছে যাবে। রতন আর কি বললো। তুই জানিস না। মাসি বলার পর থেকে খোঁজ খবর আর নিই নি। মনটা ভীষণ খারাপ লাগছিলো। দাদাও তাই বললো। তুই খুব কেঁদেছিস। সেই শুনে বড়মাও কেঁদে ফেললো। তারপর দামিনী মাসির এ্যাপিয়িয়ারেন্স। দাদাতো কোনোদিন দেখেনি। প্রথমে বুঝতে পারেনি। কথা বার্তায় আঁচ করেছে। তারপর তোর নাম ধরে ডেকে যখন কেঁদে ফেলেছে। তখন দাদা শিয়োর হয়েছে এইটা দামিনী মাসি। তুই তো এখনো দেখিস নি। দেখালি কোথায়। এবার দেখবি। জানিস বুবুন গতকাল দামিনী মাসির একটা রূপ দেখেছিলাম। আজ একটা রূপ দেখলাম। দেখলি কই গলার আওয়াজ শুনলি। ওই হলো। আজ দামিনী মাসি স্নেহময়ী মা। হাঁ। আমাকে কত বোঝালো জানিস। আমি হাঁ হুঁ করলাম। তারপর ইসলামভাই-এর কাছ থেকে দামিনী মাসির গল্প শুনলাম। কি বুঝলি। আমাদেরি মতো সাধারণ মানুষ। গুড। তোর এই ফিলিংসটা আমার ভীষণ ভালো লাগলো। মনের কোনে কোনো নোংরা চিন্তা ভাবনা রাখিস না। তোর কাছ থেকে এটা শিখেছি। তুই কি সুন্দর অবলীলায় এদের সঙ্গে মিশে গেছিস। বড়মা ছোটমা কিছু ভাবেনিতো। একেবারে না। খাওয়ার সময় খালি তোর কথা আর দামিনী মাসির কথা। তাও দাদা কিছু বলেনি। সব ডাক্তারদাদা বলেছে। জানিস ডাক্তারদাদাকে যত দেখছি তত অবাক হয়ে যাচ্ছি। যাদের ভেতরে কিছু আছে তাদের তুই ওপর থেকে বিচার করতে পারবিনা। আজ হাড়ে হাড়ে টেরপেলাম। তোর বরের খবর কিছু বার করতে পারলি। মেরে আধমরা করে দিয়েছে। তোর খারাপ লাগছেনা। যার বিবাহিত বউকে টাকার লোভে অন্যের বিছানায় তুলে দিয়ে ক্যামেরাতে ছবিতুলে রাখে, তার খারাপ লাগেনা বরং সে শান্তি পায়।
মিত্রা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো। আমি শুনতে পেলাম। আমি চুপচাপ। মিত্রাও চুপচাপ। ও কোনো কথা বলছেনা। কিরে। দুর তোর সঙ্গে আর কথা বলতে ভালো লাগছেনা। আবার কাঁদে। কেনো তুই জিজ্ঞাসা করলি। সকাল থেকে কতো ভালো ছিলাম। ঠিক আছে আমার অন্যায় হয়েছে। আর কখনো জিজ্ঞাসা করবোনা। সিডি আর ছবি তোর কাছে। হ্যাঁ। সিডিটা ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করেদে। ছবিগুলো পুরিয়ে ফেল। ওগুলো দেখে তোর মন খারাপ হয়নি। হয়েছে। মন খারাপের থেকে বেশি রাগ হয়েছিলো। তাই ভদ্রলোকের গায়ে হাত তুলেছিলাম। ও কবে ভদ্রলোক ছিলো। এটা আমার জীবনের একটা ক্ষতো। বুঝি। আমার কাজ এখনো শেষ হয়নি। কি করবি। ও যাতে আত্মহত্যাকরে তার ব্যবস্থা করবো। পারবি। তোকে কথা দিলাম। দাদা বলছিলো তনু তোকে মেল করে সব জানিয়েছে। হ্যাঁ। সেই তনু যে লন্ডনে আছে। হ্যাঁ। ও এখন বিবিসিতে রয়েছে। তোকে খুব ভালোবাসে না। হাঁ। আমাকে ছেড়ে যাসনা। আবার পাগলামো করে। বলনা। কালকে যাবোনা। আচ্ছা আচ্ছা আর বোলবোনা। এবার ঘুমিয়ে পর। আর একটু কথা বলি। না। কাল সকালে অনেক কাজ আছে। তোরতো কোনো কাজ নেই। আছে। কি কাজ আছে। বাড়ি ঘরদোর রং করার ব্যবস্থা করেছি। বুঝিয়ে দিতে হবে। কেনোরে। বিয়ে করবো। কাকে। জানতে হবেনা। আমি তাহলে কি করবো। তুইও থাকবি। আমি কোথায় থাকবো। দুজনে দুপাশে শুবি। পিট্টি বুঝেছিস। পেটের মধ্যে এমন গুঁতো মারবোনা। তাহলে জিজ্ঞাসা করলি কেনো। বেশ করেছি। বলেছিনা আমি মালকিন। মালকিনের কাছে বিয়ের ব্যাপার বলা যায়। নেমন্তন্নের কার্ড দেওয়া যায়। তুই কাল আয় তোর ফড়ফড়ানি বার করছি। এবার ঘুমো। ঘুম আসেনা যে। চেষ্টা কর। ওষুধ খেয়েছিস। এই যা ভুলে গেছি। সকালেও খাওয়া হয়নি। কেমন মেয়ে তুই দেখ। তুই নিজে মরবি আমাকেও মারবি। সরি সরি এখুনি খেয়ে নিচ্ছি। যা শুয়ে পর আর বক বক করতে হবেনা। তুই রাগ করছিস কেনো। চুমা দেবো। দিবি! দেনা। রাখছি। আর একটু। একবারে না। আমার ঘুম পাচ্ছে। আচ্ছা রাখ। গুড নাইট। শুভ রাত্রি।
সকাল বেলা চোখ মেলে তাকাতেই দেখলাম। দামিনী মাসি মাথার শিয়রে বসে আছে। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আমার পায়ের কাছে কবিতা। আমার গায়ে চাদর ঢাকা। কাল আমি চাদর গায়ে দিয়ে শুই নি, বেশ মনে আছে। আমি জিভ বার করে তড়িঘড়ি উঠে বসলাম। ফিক করে হেসে বললাম, কখন এসেছো। আধঘন্টা। ডাকোনি কেনো। কাল অতোরাত পর্যন্ত গল্প করেছিস। মাথা নীচু করলাম। তুমি জানলে কি করে। আমি জানবোনাতো কে জানবে। আমি মাসির কাঁধে হেলান দিলাম। সব কাগজপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে ঘুমোচ্ছিস। কে আসবে।
কেউতো আসতে পারতো। ছগনলাল ঢুকতে দিতোনা। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কি বক বক করছিলি। কবিতার দিকে তাকালাম। ফিক ফিক করে হাসছে। তুই কি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে মিত্রার সঙ্গে ঝগড়া করিস। ধ্যুস। ধ্যুস কিরে। নিজের কানে শুনলাম। তুমি শুনেছো, আমিতো শুনিনি। কবিতার দিকে তাকিয়ে। বসে আছিস কেনো যানা একটু চা কর। আমি বিছানা থেক নেমে টেবিলের কাছে গেলাম। ব্রাসে মাজন লাগাতে লাগাতে মাসির দিকে তাকিয়ে বললাম। কটা বাজে বলোতো। দশটা। বলোকি এখুনি ওরা এসে পরবে। টিনা ফোন করেছিলো। তুমি কথা বলেছো। বললাম। বাবু এখনো ঘুমোচ্ছে। শুনে টিনা বললো ঠেলে তুলে দাও। হাসলাম। দাঁড়াও ঝট করে মুখটা ধুয়ে আসি। বাথরুমে গিয়ে ভালো করে মুখ ধুয়ে ফ্রেস হয়ে বেরোলাম। স্নান করবিনা। ওখানে গিয়ে করবো। কেনো। এখানে করলেও ওখানে গিয়ে করতে হবে। কবিতা ঘরে ঢুকলো। ট্রেতে কচুরী মিষ্টি। কিরে। মাসিকে বলো। আমাকে বকবেনা। তুই নিয়ে এলি মাসিকে বলবো কেনো। মাসি নিয়ে এসেছে। আর একটা পেটি ভর্তি করে মিষ্টি নিয়ে এসেছে। সঙ্গে নিয়ে যাবে। কিগো মাসি। আমারতো কিছু দিতে ইচ্ছে করে। বুঝেছি। তুই খাবিনা। খাবো। কবিতা শুধু কি আমার জন্য। না। বাকি নিয়ে আয়। তুমি খাও তারপর খাবো। তা হবেনা। যা কবিতা যা। গোঁয়াড় গোবিন্দকে নিয়ে পারবোনা। আমাদের আছে কিনা দেখে তবে উনি খাবেন। কবিতা কোমর দুলিয়ে চলে গেলো। মিত্রার সঙ্গে কথা হলো। তুই কি করে জানলি। তুমি যেমন ভাবে জানো, আমিও ঠিক তেমন ভাবে জানি। মাসি হো হো করে হেসে ফেললো।
তুমিতো দেখোনি। গলা শুনে কেমন মনে হচ্ছে। আমার থেকে তুই ভালো জানবি। তোমার চোখ আর আমার চোখের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। মাসি আমার দিকে তাকালো। ভুল বললাম। মাসি মাথা দোলাচ্ছে। মুখ তুললো। দুচোখ ভরে দেখতে ইচ্ছে করছে। রবিবার চলে আসবো। ভজুবাবু। বললোতো ভালো আছি। ডাক্তার ওকে গিয়েই দেখেছে। আমার সঙ্গে ভজুবাবুর কথা হয়নি। হ্যাঁরে ভালো হবে। ডাক্তার বলেছে সত্তরভাগ ভালো হবে। বাকিটা হবেনা। যতটা হয় ততটা মঙ্গল। আমরা চেষ্টা করতে পারি বুঝলে মাসি। হ্যাঁ রে। তবু তোর কাছে এসে পরেছিলো বলে চিকিৎসাটা হচ্ছে। এইভাবে বলছো কেনো। মাসি আমার দিকে তাকলো। চোখের কোল দুটো চিক চিক করছে। আবার মন খারাপ করে। কালকে থেকে অনেক ভাবলাম তোদের দুটোকে নিয়ে। ভেবে কি পেলে। আর একটু আগে জানতে পারলে ভালো হতো। সব কিছু কি আর মনের মতো হয় মাসি। কবিতা ঘরে ঢুকলো। প্লেট নামিয়ে রাখলো। কিগো তুমি আবার কাঁদছো। আমি কবিতার দিকে তাকালাম। কাল সারারাত ঘুমোয়নি। খালি কেঁদেছে। সকালে দুজনে বাগবাজারের গঙ্গায় গিয়ে স্নান করে সোজা তোমার কাছে চলে এসেছি। আসার সময় শ্যামপুকুরের চিত্তরঞ্জন থেকে মাসি মিষ্টি কিনেছে। মাসি মাথা নীচু করে বসে আছে। আমি উঠে গিয়ে মাসির মুখটা তুলে ধরলাম। চোখ বন্ধ করে আছে। চোখের কোল বেয়ে জল গড়িয়ে পরছে। আমাকে জাপ্ট ধরে মাসি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। কবিতা মাথা নীচু করে বসে আছে। ওরও চোখে জলে টল টল করছে। আমি ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারলামনা। মাসিকে এই ভাবে কাঁদতে কখনো দেখিনি। অনেকক্ষণ কারুর মুখে কোনো কথা নেই। কবিতা আমার দিকে তাকালো। ইশারায় ওকে জিজ্ঞাসা করলাম। কবিতা মাতা দোলাচ্ছে। বলবে না। তুমি জিজ্ঞাসা করো। কিগো বলবেনা। মাসির মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বোললাম। তুই আমাকে ভুলে যাবিনা। আমার দিকে তাকাও। মাসি চোখ বন্ধ করে আছে। চোখ খোলো। মাসি আস্তে আস্তে চোখ খুললো। জলে ভরা চোখ দুটোয় মিনতি। করুণ আর্তি। কেনো বললে ও কথা। তুই এখন কতো বড়ো হয়ে গেছিস। তাতে কি হয়েছে বলো। তোর কতো প্রতিপত্তি। মাকে কেউ ভুলতে পারে। মাসি আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলো। তুমি কাঁদলে আমার খারাপ লাগে। আমি যে মা হতে পারিনি। কে বলেছে বলো। না অনি না অনি। তুই আমাকে দুর্বল করে দিসনা। তুই মায়াবী। তুমি আমাকে ভুলে যেতে পারবে। মাসি মাথা দোলাচ্ছে। কেঁদোনা। তোমরা এরকম করলে আমি কাজ করবো কি করে। তুমি চাওনা আমার পাশে থাকতে। চাই। তাহলে। এরকম দুর্বল হলে চলে। তোমার একনো কতো কাজ। আর পারছিনা অনি। আমাকে একটা সুস্থ জীবন দে। একটু অপেক্ষা করো। আমি সব ব্যবস্থা করেছি। কেঁদোনা। দেখো তোমাকে দেখে ওই মেয়েটাও কাঁদছে। মাসি আমাকে ছেড়ে কাপরের খোঁট দিয়ে চেখ মুছলো। নাও মিষ্টি খেয়ে জল খাও। আমি মাসিকে নিজে হাতে একটা মিষ্টি খাইয়ে দিলাম। মাসির কান্না থামেনা। সবাই একসঙ্গে খেলাম অনেকক্ষণ পর মাসি একটু ঠান্ডা হলো। কালকে মিত্রা তোমায় কি বললো। আমি ওকে বোঝালাম বেচারা কাঁদছিলো। মেয়েদের মন তোকে কি করে বোঝাই। ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলাম মিত্রা ইচ্ছে করে ভয়েজ অন করলাম। কিরে। কখন উঠলি। সাড়ে পাঁচটা। একবারে মিথ্যে কথা বলবিনা। তুই কবে থেকে সত্যবাদি যুধিষ্ঠির হলি। আমি খবর নিয়েছি। তুই ভোঁস ভোঁস করে ঘুমোচ্ছিস। বুঝেছি। নে কথা বল। কেরে। কথা বল। বল মামনি। ওমা তুমি ওখানে। হ্যাঁ। গঙ্গায় স্নান করেছো। করেছি। আমার মিষ্টি কিনেছো। হ্যাঁ। বুঝেছি তোর জন্য মাসি মিষ্টি কিনে এনেছে। বেশ করেছি তুই কিছু করতে পারবি। দাঁড়া একবার যাই। মাসি হাসছে।
জানো মাসি কাজ শেষ। আমি আজ মুক্ত বিহঙ্গ। ভালো ভাবে মিটিছে। ফার্স্টক্লাস। নাও ভজুবাবু কথা বলবে। মা। বল। পান্তা খেলাম। ভালো করেছিস। তুমি ভালো আছো। হ্যাঁ। কবে আসবি। অনিদা আসুক চলে যাবো। আচ্ছা। শোন পরে কথা বলবো। এখন জিল্পি এলো। খাওয়া হবে। ইসলামভাই কোথায়। ওখানে কাগজ পত্র বুঝছে। ঠিক আছে। মাসি জোড়হাত করে কপালে ঠেকালো। ওটা আবার কি হলো। ভালোয় ভালোয় হয়ে গেলো। না হবার কি আছে। আমি মন থেকে চেয়েছি। রতন হন্ত দন্ত হয়ে ঘরে ঢুকলো। কিরে কি হয়েছে! তুমি এখানে। ফোন বন্ধ করে রেখেছো কেনো। মাসি হাসছে। সকাল থেকে তোমায় খুঁজতে খুঁজতে কুত্তা বনে গেছি। কেনো বলবিতো। রতন বারান্দায় চলে গেলো। চেঁচিয়ে কাকে বললো নিয়ে আয়। আমি ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেছি। ওদের চোকে কোনো বিকার দিখতে পেলাম না। একটা ছেলে একটা ভিআইপি স্যুটকেস নিয়ে এলো। এটা কিরে। নিয়ে যাবে বসের হুকুম। তারমানে। তোরা কি আমাকে মারার ধান্দা করেছিস। আমরা থাকতে কেউ তোমার শরীরের একটা লোম ছুঁতে পারবেনা। সব শুনেছি। তুমি আমাদের জন্য অনেক করেছো। বসকে নতুন জীবন দিচ্ছ। তার মানে আমাদেরও দিচ্ছ। আমি মাসির দিকে তাকালাম। মাসি মাথা নীচু করে হাসছে। তোমার ওখানে যে কাজ করবো তার জন্য লাগবে মাসি এগুলো তোমার কাছে রাখো। ইসলাম কাল আমায় বলেছে। তুই নিয়ে যা। তোর এখন অনেক কাজ। কবিতা কচুরী আছে। কয়েকটা আছে। যা রতনের জন্য নিয়ে আয়। কবিতা বেরিয়ে গেলো। রতন। বলো। শেষ খবর আমাকে দিলিনা। তোমাকে মাসি কিছু বলেনি। না। তোমাকে ভাবতে হবেনা। তুমি চাইলেও জানতে পারবেনা। সব পথ বন্ধ করে দিয়েছি। সেটা জানতাম। ব্যাশ তাহলে জানতে চাইছো কেনো। আমাদের কাজ আমাদের করতে দাও। তোমার কাজ তুমি করো। তোদের নিয়ে আমারও চিন্তা হয়। হোক। তবু জানতে চাইবেনা। কিগো মাসি। মাসির দিকে তাকালাম। মাসি মাথা নীচু করে আছে। আস্তে করে বললো। রতনতো তোর প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। মাসি তোমার রংয়ের লোক রেডি করে দিয়েছি। নীচে সব চলে এসেছে। বুঝিয়ে দাও। দাঁড়া অফিসে একটা ফোন করি টাকা আনাই। এই লোকটা মহা ঝামেলা কারক লোক তো। মাসি হাসছে।
তোরা কি ভেবেছিস বলতো। বসকে গিয়ে বলবে। আমাদের কিছু বলবেনা। আমার রংয়ের দরকার নেই। তুমি বললে হবেনা ওখান থেকে হুকুম এলে বন্ধ হবে। কবিতা চা আর রতনের জন্য কচুরী নিয়ে এলো। রতন কবিতার হাত থেকে প্লেটটা ছিনিয়ে নিয়ে দুবারে সব কচুরী খেয়ে ঢক ঢক করে একগ্লাস জল খেলো। বুঝলে মাসি সকাল থেকে কুত্তার মতো ঘুরেছি। জোগাড় করার জন্য। কেউ দেয়না। তারপর পেলাম। কে দিলো। বেনিয়া বেটা। বাইরে গাড়ির হর্নের আওয়াজ পেলাম। বুঝলাম দেবারা চলে এসেছে। বারান্দায় গিয়ে উঁকি মারলাম। দেবা নিচ থেকে চেঁচিয়ে উঠলো কিরে রেডি। আমি ইশারায় ওপরে আস্তে বললাম। কেরে ওরা এলো। হ্যাঁ। পেন্ট গেঞ্জিটা নিয়ে বাথরুমে চলে গেলাম। টাওয়েলটা নিয়ে ভালোকরে গাহাত-পা মুছে ড্রেস করে বেড়িয়ে এলাম। দেখলাম ওরা জমপেশ করে গল্প করছে। প্রত্যেকেই আজ বেশ দারুণ দারুণ শালোয়াড় কামিজ পরেছে। সাজেনি কিন্তু সেজেছে। ভীষণ মার্জিত লাগছে ওদেরকে। কবিতা এক রাউন্ড চা এনে দিয়েছে। কখন উঠলি। দশটা। তাও ঠেলা খেয়ে উঠেছে। টিনা বললো। রতনের সঙ্গে পরিচয় হলো। তোকে আর দয়া করে পরিচয় করাতে হবেনা। হাসলাম। বেরোবিতো। হ্যাঁ। তোদের গাড়িতে জায়গা আছে। কিসের জন্য বল। দুটো জিনিষ উঠবে। মিলি ফিক করে হাসলো। হাসলে কেনো। তোমার কথা শুনে। দেখছো মাসি বিনয়ের অবতার। টিনা বললো। কবিতা ওদের একটু মিষ্টি এনে দে। বাক্স থেকে খুলে দেবো। দে। কবিতা বেরিয়ে গেলো। কিসের মিষ্টি মাসি। মেয়ের জন্য পাঠাচ্ছে। আবদার করে সকালে ফোন করে বলেছে। মাসি তোমার মেয়ের কাছে ওটা পৌঁছবেনা। না বাবা সময় থাকলে তোদের জন্যও নিয়ে আসতাম। কেনো নিয়ে আসোনি। এই প্রথমবার পরের বার হলে গন্ডগোল হয়ে যাবে। আচ্ছা আর ভুল হবেনা। নির্মাল্য ফিক ফিক করে হাসছে। মাসি নির্মাল্যের দিকে তাকিয়ে বললো। তোদের মধ্যে ও খুব শান্ত। টিনা চেঁচিয়ে উঠলো। মিচকে পোরা শয়তান তুমি জানোনা। অনিদা আছে বলে। কেনো অনিকে ভয় পায়। ভয় পায়না। অনিদা মাঝে মাঝে টুক টুক করে এমন দেয় ওর প্রেসটিজ……। শুধু আমার না তোদের নেই। নির্মাল্য চেঁচিয়ে উঠলো। মাসি হাসছে। কবিতা মিষ্টি আনলো। নলেন গুড়ের কাঁচা সন্দেশ, রসোগোল্লা। দেবা মুখে তুলেই বললো, ও মাসি তুমি এসব কোথা থেকে পাও বলোতো। টেস্টি আলাদা। তোদের একদি পেট ভরে খাওয়াবো। দাঁড়াও অনির ওখান থেকে ঘুরে আসি। তারপর তোমায় পাকরাও করবো। অনিদা ওগুলো তুলে দিই। রতন পেছনটা খোলা আছে। ঢুকিয়ে দাও। দেবাশীষ বললো। আমি যাবো। নির্মাল্য বললো। না দাদা তোমরা খাও আমি তুলে দিচ্ছি। রতন বেরিয়ে গেলো। কবিতা জলরে গ্লাস নিয়ে এলো। খাওয়া পর্ব শেষ আমি মাসিকে প্রণাম করলাম। ওরাও সকলে আমার দেখা দেখি মাসিকে প্রণাম করলো। মাসির চোখ দুটো ছল ছলে হয়ে গেলো। বেরিয়ে এলাম। আসার সময় ছগনলালকে সব বলে এলাম।
দেবাশীষ আজ ড্রইভ করছে। সামনের সিটে নির্মাল্য। আমরা চারজন মাঝের সিটে। আমি একদিকের জানলার ধারে অদিতি আর একদিকের জানলার ধারে। মাঝে টিনা মিলি। টিনা আমার গা ঘেঁষে বসেছে। দ্বিতীয় হুগলী সেতু পেরিয়ে কোনা বাইপাসে উঠতে দেবাশীষ প্রথম কথা বললো। অনি অনেকদিন পর লঙ ড্রইভে বেরিয়েছি। কেনো। সময় কোথায় বলতো। আমার সময় হলে অদিতির হয়না অদিতির হলে আমার হয়না। আজকে হলো কি করে। এটা একটা দামি কথা বলেছিস। কেনো জানিনা কালকে টিনার মুখ থেকে সব শোনার পর মনটা কেমন হয়ে গেলো। এসপার নয় ওসপার। চলো বেড়িয়ে পরি। বেরিয়ে পরলাম। এই মেন্টালিটি রাখলে তুই কোনোদিন হারবিনা। দারুন বললি কথাটা। একটু ভেবে দেখে। তুই যখন কলেজে অদিতিকে প্রথম ভালোবাসতে চাইলি তখন তোর মধ্যে এই রোলটা প্লে করেছিলো। একদম ঠিক। আমি ভিউইংগ্লাস দিয়ে দেবাশীষের চোখ লক্ষ্য করছি। ওর উত্তেজিত চোখ দুটো সামনের রাস্তার ওপর। বিশ্বাস কর। তোর সঙ্গে দেখা হওয়ার পর সব কেমন যেন ওলট পালট হয়ে যাচ্ছে। কেনো। তোকে বলতে দ্বিধা নেই। অদিতির সঙ্গে আমার একটা মেনটাল ব্লক তৈরি হয়ে গেছিলো। দূরত্বও বেড়ে যাচ্ছিল। বেশ কয়েকদিন অদিতির সঙ্গে কথা বন্ধ করে দিলাম। তোর আর মিত্রার কথা ভাবলাম। পথ পেয়ে গেলাম। অদিতি তোর পাশে। জিজ্ঞাসা কর আমি একবর্নও মিথ্যে বলছিনা। আমি মিলির কাছে কনফেস করেছি। টিনার কাছে কনফেস করেছি। সত্যি কথা বলতে কি নির্মাল্য আমাদের থেকে তিন বছরের জুনিয়র। ওর কাছেও কনফেস করেছি। এতে তুই উপকার পেয়েছিস। অফকোর্স। কেনো। সেইটা সার্চ করে দেখিনি। জানিস দেবা আমরা প্রত্যেকে আশ্রয় চাই। মা তার সন্তানের কাছে আশ্রয় চায়। একটা শিশু তার মার কোলে আশ্রয় চায়। প্রমিক প্রেমিকার কাছে আশ্রয় চায়। এরকম উদাহরণ দিতে গেলে তোকে অসংখ্য উদাহরণ দিতে পারি। তুই অদিতিকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিস। অদিতি তোকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে। এটা সত্য। মিথ্যে নয়। কিন্তু ভালোবাসার পরিণতি কি ? শরীর না মন। এটা কখনো ভেবে দেখেছিস। আদিতি জানলা থেকে মুখ সরিয়ে নিয়ে আমার মুখের দিকে তাকালো। কালো কাঁচে ঢাকা চশমায় ওর চোখ ভালো করে দেখতে পাচ্ছিনা। তবে এটা ঠিক ও আমার এই কথায় দারুণ সক্ড। টিনা আমার দিকে ফিরে তাকিয়ে আছে। মিলি আমার কথা শুনে হাঁ করে রয়েছে। সত্যি বলছি অনি কখনো ভাবিনি। ভেবে দেখিস উত্তর পাবি। তুই বল। না। এটা সম্পূর্ণ তোর ব্যক্তিগত। তুই যে উত্তরটা পাবি সেটা তোর ভালোবাসার জনের সঙ্গে শেয়ার করিস, দেখবি মিলে যাবে। আমি অদিতিকে বলেছি অনি মিত্রার সম্পর্কটা দেখো কত জটিল। তবু অনি সব হাসি মুখে মেনে নিচ্ছে। কেনো ? শুধু অর্থের জন্য। তাই যদি হয় মিত্রাকে বাঁচানোর জন্য ও আমাদের কাছে এ্যাডের জন্য ছুটে এসেছে কেনো। সেকেন্ডলি মিত্রার শরীর খারাপ। সেই দিন আমি বড় ধাক্কাটা পেলাম তোর কাছ থেকে। যে মিত্রাকে তুই এত ভালোবাসিস তার কাছ থেকে অতবড়ো আঘাত পেয়েও তুই বুক দিয়ে তাকে আগলে রেখেছিস। সেইদিন তোর বাড়ি থেকে ফিরে এসে আমি অদিতি সারারাত ঘুমোতে পারিনি। তোর কথা ভেবে। কালকেরটা বলো। অদিতি বললো। সত্যি দামিনী মাসি।
দেবাশীষদা ওই ভদ্রমহিলাকে দেখলে কখনো মনে হয় উনি ওই এলাকায় বসবাস করেন। বসবাস কি বলছো টিনা। কাল রাতে বাড়ি ফিরে অদিতির সামনে আমার কয়েকজন পরিচিত, তথাকথিত মাস্তানকে ফোন করেছিলাম। তারা আমার হাতে পায়ে ধরে দামিনীমাসির সঙ্গে পরিচয় করার জন্য। অদিতিকে জিজ্ঞাসা করো আমি ভয়েজ অনকরে ওকে শুনিয়েছি। জানিস অনি তোর জন্য এটাও আমাদের বড়ো প্রাপ্তি। কেনো। নাহলে একটা ভুলকে চিরদিন সত্য বলে মেনেনিতাম। এরকম কতো ভুলকে আমরা সত্য বলে মানছি প্রত্যেকদিন প্রতিটি মুহূর্ত তার খবর রাখিস। তোকে অনেকদিন পর পেয়েছি। তোর পাশে থেকে এই বোধ গুলো তৈরি করার চেষ্টা করবো। খুব শক্ত। পারবি ? পারতেই হবে। আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম দামিনী মাসি আমার মাথায় শিয়রে বসে আমার মাথায় হাত বোলাচ্ছে। কবিতা পায়ের কাছে স্থানুর মতো বসে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। তোকে ডাকে নি। না। স্ট্রেঞ্জ। তারপর সমস্ত ঘটনা একটুও এডিট না করে ওদের বললাম। টিনা রুমাল দিয়ে চোখ মুছলো। মিলির চোখ দুটো কেমন ভারি ভারি। অদিতি চোখ থেকে স্নানগ্লাসটা খুলে ব্যাগে রাখলো। সবাই নিস্তব্ধ। ভিউইংগ্লাস দিয়ে দেখলাম। দেবাশীষের চোখে পলক পরছেনা। স্থির চোখদুটো রাস্তার ওপর স্থির হয়ে আছে। দেবা। বল। সামনে ব্রিজটা পেরিয়ে ডানদিকে একটা ধাবা পরবে। গাড়িটা ধাবায় ঢোকাস। খিদে লেগেছে। আচ্ছা। কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা ধাবায় চলে এলাম। সবাই একে একে গাড়ি থেকে নামলাম। আমায় দেখেই ধাবার ম্যানেজার চিনতে পারলো। নিজের সিট থেকে নেমে এসে বললো। স্যার ওপরের কেবিনে চলুন। নিচেরটায় লোক আছে। দেবা আমার দিকে একবার তাকালো। ওর চোখে জিজ্ঞাসা। আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলাম। আমরা সবাই ওপরের কেবিনে এলাম। ম্যানেজার আমাদের সঙ্গে এলেন। কালকে নিরঞ্জনদা বলে গেছিলেন আপনি আজ আসবেন। ওরা কাল কখন এসেছিলেন। পাঁচটা নাগাদ। কেনো! গাড়ি খারাপ হয়ে গেছিলো। তারপর একটা গাড়িতে করে এখানে আসেন। শেষে আমার গাড়ি করে পাঠালাম। আমাদের একটু খাবার ব্যবস্থা করতে হবে। কেবিনে ঢুকলাম। দেবাশীষ চারিদিক দেখছে। কিরে কি খাবি। তুমি বলে দাও। অদিতি বললো। আমি আলুপরটা চিকেন ফ্রাই মটরপণির আর মিক্সড তড়কা বললাম। ম্যানেজার চলে গেলো। জানিস অনি অনেকদিন আগে আমি অদিতি দীঘায় এসেছিলাম। তখন এই ধাবাটা পাইনিতো। পেয়েছিস ঢুকিসনি। তোরা থার্মলপাওয়ারের গেটের সামনে যে ধাবাটা আছে সেখানে ঢুকেছিলি। ঠিক ধরেছিস। এইরকম একটা জায়গায় তাজবেঙ্গলের ডেকরেসন ভাবাই যায়না। তোর ভালো লাগছে। ভালো লাগছে মানে। এই টুরটা অনেকদিন মনে রাখবো। কি টিনা ম্যাডাম মুখটা শুকনো শুকনো। এখনো শকটা কাটলোনা। টিনা মুখ নীচু করে আছে। জীবনটা ধরতে শেখো। দেখবে কোনো দুঃখই দুঃখ নয়। চেষ্টাতো করি। তোমার মতো পারিনা। আমি একদিনে পারিনি। তোমার মতো একদিন আমিও কাঁদতাম এখন কাঁদিনা। কি মিলি ম্যাডাম দুঃখ দুঃখ করে থাকলে চলবে। তোমাকে খুব কাছ থেকে দেখার চেষ্টা করছি। বোঝার চেষ্টা করছি। নাও বাথরুমে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে এসো। মাঝে মাঝে একটা ব্যাপার মনে ভীষণ স্ট্রাইক করে। তুমি বাইরে থেকে যতটা আধুনিক তার থেকেও অনেক বেশি আধুনিক তোমার ভেতরটা। ঠিক বলেছো মিলি প্রথম দিন অনিকে নিয়ে আমরা যখন তাজবেঙ্গলে ঢুকেছিলাম। সেদিন ফিরে ওর সম্বন্ধে আমরা কি আলোচনা করেছিলাম তোমার মনে আছে। হ্যাঁ। আজকের অনির সঙ্গে সেদিনকার অনির কিছু মিল পাচ্ছ। একবারে না। এই দুমাসে ওর পরিবর্তন হয়নি। ওর এই পরিবর্তনটা ভেতর ভেতর ছিলো। ও প্রকাশ করেনি। সময় এবং সুযোগের অপেক্ষা করেছে। আমার দিকে তাকিয়ে। শেষ কথাটা তোর ধারকরা। বাজারে চালু করে দিয়েছি। পাবলিক খাচ্ছেও ভালো। তোমার কিরকম ঘ্যামাটা বেরেছে সেটা বলো। অদিতি বললো। আমি হো হো করে হেসেফেললাম।
হাসিসনা। জিজ্ঞাসা কর নির্মাল্যকে। নির্মাল্যকে পাশে বসিয়ে অনেক ক্লায়েন্টকে তোর কথা দিয়ে পটিয়েছি। শুধু আমি নয় মিলি অদিতি টিনা কেউ বাদ নেই। সবাই হো হো করে হেসে ফেললাম। খাবার এলো। দেবাশীষ বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে বললো, গন্ধে বুঝিয়েদিচ্ছে খাবারটা দারুণ। আমি ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বললাম। ভাই তোমার ম্যানেজার সাহেবকে একটু ডেকে দেবে। পাঠাচ্ছি স্যার। ছেলেটি বেরিয়ে গেলো। সবাই খাওয়া শুরু করলাম। আচ্ছা অনি এখানে আসার পর থেকেই দেখছি সবাই তোকে স্যার স্যার করছে ব্যাপারটা কি বলতো। আমায় না। তাহলে। নিরঞ্জনদার জন্য। সেটা কে। এই জেলার সভাধিপতি। বলতে পারিস মুখ্যমন্ত্রী। দাঁড়া দাঁড়া বিষম লেগে যাবে। টিনা হাসছে। তুমি জিজ্ঞাসা করতে গেলে কেনো। আচ্ছা টিনা তোমার ইনটারেস্ট নেই। আছে। জিজ্ঞাসা করিনি। যদি ঝোলা থেকে সাপ ব্যাঙ বেরিয়ে পরে। সামলাতে পারবোনা। সত্যি সত্যি হাসতে গিয়ে নির্মাল্য বিষম খেলো। আমি উঠে গিয়ে ওর মাথা চাপড়াই পিঠ ডলে দিই। ওরা হাসছে। ওরে নির্মাল্য তুই কি ভাগ্যবান তোকে অনিদা পিঠ ডলে দিলো। মিলি বললো। নির্মাল্য হাসতে হাসতে বললো। তুই বিষম খা দেখবি অনিদা ডলে দেবে। আবার হাসি। নিরঞ্জনদা কে বলনা। কি করে পটালি। বিশ্বাস কর আমি পটাই নি। নিরঞ্জনদা বড়মার ভাই। যাঃ। খালি ঢপ।
অনিদা গুল মারছে দেবাশীষদা। দেখছিস সবাই কি বলছে। তাহলে সত্যি ঘটনা বলতে হয়। আবার গল্প! মিলি বললো। তাহলে থাক। আচ্ছা বলো বলো। মিলি তুই মাঝখান দিয়ে টুকবিনা। ম্যানেজার ভদ্রলোক ঘরে ঢুকলেন। দাদা আমার একটা উপকার করতে হবে। বলুন স্যার। আমরা যা খাচ্ছি। সেই মতো পাঁচটা প্লেট রেডি করে দিতে হবে পার্সেল হবে। খালি আলু পরটা একটু বেশি করে দিয়ে দেবেন। আর এক ক্রেট কোলড্রিংকস। মিশিয়ে দেবেন। সব দুলিটারের বোতল। ঠিক আছে স্যার। আর। বিলটা করে আনুন। তুই দিবি না আমি দেবো। দেবাশীষ চেঁচিয়ে উঠলো। তুই জিজ্ঞাসাকর চাইলেও দিতে পারবিনা। স্যার আপনাদের কারুর কাছ থেকেই বিল নিতে পারবোনা। নিরঞ্জনদার হুকুম। দেবাশীষ আলুর পরটা মুখে ঢুকিয়ে হাঁকরে আছে। আমি নিরঞ্জনদাকে ফোন করছি। না স্যার আমার ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। ভদ্রলোকের সে কি কাকুতি মিনতি। বাধ্য হয়ে বললাম ঠিক আছে আপনি যান। আমি নিরঞ্জনদাকে ফোন করবোনা। ভদ্রলোক আমার মুখ থেকে এই কথাটা আদায়করে বললেন। সব প্যাকিং করে রাখছি। আপনি নিচে গেলে গাড়িতে তুলে দেবো। আচ্ছা। স্যার চা না কফি। দেবাশীষের দিকে তাকিয়ে বললাম, কিরে। কফি। কফি পাঠিয়ে দিন। আচ্ছা স্যার। ভদ্রলোক বেরিয়ে যেতেই অদিতি চেঁচিয়ে উঠলো, সব ফোঁকটসে। থাম তুই, শুনতে পাবে। মিলি বললো। অনিদা সত্যি গুরু তুমি। দেবাশীষ তাজবেঙ্গলে প্রতিদিন লাঞ্চকরতে ঢোকে একদিনও ফোঁকটে খেতে পায়না। আর তুমি….। দাঁড়াও এবার নিরঞ্জনদার কেশটা শুনতেই হবে। বল বল দেরি করিসনা, খাওয়া শেষ হয়ে এলো। ফোনটা বেজে উঠলো। ওঃ স্যাট। দেবাশীষ বলে উঠলো। আমি পকেট থেকে মোবাইলটা বার করলাম। দেখলাম মিত্রা। দেবাশীষের দিকে তাকিয়ে বললাম, মিত্রার ফোন। দে দে আমাকে দে। আমি ভয়েজ অন করে দেবাশীষের হাতে দিলাম। কিরে ধাবায় বসে মুরগীর ঠ্যাং চিবোচ্ছিস। বেশ করছি। তোর কি। দাঁড়া আয় দেখাচ্ছি মজা। বলতো আমি কে। দেবা ছাগল। সবাই হো হো করে হেসে উঠলাম। তুই এখনো আমাকে এই ভাবে বলবি। আমার জন্য নিয়ে আসবি। তোর জন্য পার্সেল হচ্ছে। এইতো ভালো ছেলের মতো কথা। বুবুন কইরে। আমার অপরজিটে বসে ঠ্যাংঙে কামর দিয়েছে। মিত্রা মুখ দিয়ে জিভে জল পড়ার আওয়াজ করলো। কি হলোরে। জিভ দিয়ে জল পরে গেলো। লোভ দিসনা। পেট খারাপ করবে। কোল ড্রিংকস নিয়ে আসবি। আসবো। বুবুনকে দে। তোর কথা শুনতে পাচ্ছে। বল। কখন আসবি। আরো ঘন্টা দুয়েক লাগবে। কাউকে পাঠাবো। রবীনকে একবার পাঠা। কেনো। এতোক্ষণ দেবা গাড়ি চালালো এবার পালা করে নির্মাল্য অদিতি মিলি টিনা চালাবে। কিন্তু ওইটুকু রাস্তার জন্য রবীন। ঠিক আছে পাঠাচ্ছি। তোরা যখন আসবি তখন আমরা হাটে থাকবো। সব কাজ ঠিক ঠাক মিটলো। হ্যাঁ। তোর জিলিপি আমি খেয়ে নিয়েছি। বেশ করেছিস। রাগ করলি। একটুও না। বিকেলে তোকে হাট থেকে কিনে খাওয়াবো। আচ্ছা। তাড়াতাড়ি আয়না। যাচ্ছি। আচ্ছা। আমি ফোন বন্ধ করে পকেটে রাখলাম। অনি ওর প্রবলেমগুলো এখনো সারেনি! সবাই দেবাশীষের দিকে তাকালো। বুঝলাম দেবাশীষ ওদের কিছু বলেনি। ওরা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, উত্তরের অপেক্ষায়। কি বলবো এদের সামনে। মিথ্যে বললেও আজ নয় কাল ওরা জানতে পারবে। না। সারতে সময় লাগবে। ডাক্তারদাদা। ওখানেই আছে। তোর বাড়িতে! হ্যাঁ। সত্যি ট্রিপটা দারুণ হবে। কিগো দেবাদা মিত্রাদির কি হয়েছে। টিনা বললো। গলা শুনে কিছু বুঝলেনা। না। পরে বলবো। দেবা এমন করে বললো। সবাই চুপ করে গেলো। আমি নিস্তব্ধে খেয়ে যাচ্ছি। নিরঞ্জনদার ব্যাপারটা শেষ কর। হাসলাম। এখনো দু’আড়াইঘন্টা যেতে হবে। ঠিক আছে তুই বল। মলের কেশটা যেদিন ঘটালাম। হ্যাঁ। ওটাতো কাগজে সিরিয়াল করলি। দারুন লিখেছিস। এরপর কত জল যে গঙ্গা দিয়ে সমুদ্রে চলেগেলো তার ইয়ত্তানেই। এখনো তার রেশ কাটেনি লড়ে চলেছি। দামিনী মাসি তার জন্য। এইতো তার মাথা কাজ করতে শুরু করেদিয়েছে। তোর পাশে আছিনা। হাসলাম। সেদিন সকাল থেকে যা যা ঘটেছিল সব বললাম। আমার কথা শুনে ওদের চোখ চড়কগাছ। কি বলছিস তুই। হ্যাঁ। ঠিক বলছি। কোথাকার জল কোথায় এসে গড়িয়েছে। তুই চম্পকটাকে দূর কর। ঠিক সময়ে করবো। তোদের নিয়ে যাচ্ছি। অনেক সময় পাবো। বসে আলোচনা করবো। আশা রাখি তোরা আমাকে হেল্প করবি। করবো মানে! তোর বিশ্বাস নেই। তোরা প্রত্যেকে প্রফেসনাল। আমি জীবিকাকে আগে প্রধান্য দিই। গুলি মার। যা কামিয়েছি। এখন কিছু না করলেও সারাজীবন নুনভাত জুটবে। এটা তোর ইমোশনের কথা। সময় আসুক প্রমাণ করে দেবো। টিনা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মিলি ন্যাপকিনে হাতটা মুছে নির্মাল্যকে বললো তুই এদিকে আয় আমি এতক্ষণ শুনলাম এবার অনিদার সঙ্গে একটু ঝগড়া করি। দেবা হাতাহাতি হলে বাঁচাস। ওরা হো হো করে হেসে ফেললো। এবার আমার পাশে এসে বসতে পারো মিলি। তুমিতো প্রথমেই পেরেক ঠুকে দিলে। তুই অনির সঙ্গে পারবি কেনো ঠোকা ঠুকি করছিস। দাঁড়াও ওখানে গিয়ে আগে দল ভাড়ি করি, তারপর। আবার হাসি।