আমি কি করবো। সকাল বেলা অনিমেষদার মূর্তি দেখিসনি। তোকে দেখার পর যেন আগুন হয়ে গেল। গম্ভীর হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। সেই থেকে নীচ ওপর করে যাচ্ছে। তোর জ্ঞান ফেরার খবর পেয়ে একটু স্বস্তি। মামনিকে সব সময় পাশে নিয়ে ঘুরেছে। ওকে আর ওপরে আসতে দেয়নি।
আমিও সমানে নীচ রয়েছি।
আমার কাছ থেকে সমস্ত জানলো। আমি কিছু লুকোই নি। দামিনীর সঙ্গে আলাদা করে কথা বললো। আমাকে বললো আবিদকে ডেকে পাঠান। অমান্য করি কি করে। আবিদকে সমস্ত ঘটনা বললাম। তোর শরীর খারাপের কথা তখন চেপে গেছিলাম। এখানে এসে সব জানার পর ওকে ধরে রাখা দায়।
অনিমেষদা রতন নেপলা আবিদকে আলাদা করে ডাকল। রতন, নেপলা তবু কিছু বলেছে। আবিদ সড়াসরি বলে দিয়েছে, অনিদার পার্মিশন ছাড়া একটা কথাও বলবো না। এতে আপনারা আমাকে মেরে ফেলতে পারেন, আপত্তি নেই।
আমি আবিদের কথা শুনে অবাক। তুই কার কাছে কি বলছিস।
আবিদের কথা ছাড়, তোর অর্ক, সায়ন্তন, দ্বীপায়ন, সন্দীপ কেউ মুখ খোলেনা। তারপর মামনি বললো। তোমরা বলো আমি বুবুনের সঙ্গে বুঝে নেব। তখন সবাই একে একে বললো। তাও অনিমেষদার বিশ্বাস হচ্ছে না।
তখন অনিমেষদার মুখের দিকে তাকাতে পারছিনা। তারপর বিধানদাকে ফোন করলো। বিধানদা এলো। একে একে সবাই। আবিদ যতোক্ষণ ওখানে ছিল ততক্ষণ প্রচুর সাদা পোষাকের পুলিশ ওই বাড়ি ঘিরে ছিল। একটা মাছিও গলতে পারবেনা।
অর্ক।
বলতে পারবনা। ওদের সঙ্গে দরজা বন্ধ করে কথা বলেছে অনিমেষদা। তোর ল্যাপটপ দেখেছে। দ্বীপায়ন অপারেট করেছে।
বুঝে গেছি। মুখার্জীর লোক এসেছিল।
খাম দিয়ে গেছে। সিল করা। খোলা হয়নি। অনিমেষদা বলেছে তুই খুলবি। তবে তোর ফোন থেকে নম্বর নিয়ে মুখার্জীর সঙ্গে আলাদা করে কথা বলে নিয়েছে।
ঠিক আছে তুমি যাও। ওদিকটা সামলাও। মিত্রাকে একটু ডেকে দাও। তোমার ব্যবসা ?
ডকে উঠে গেছে। ভাবলাম সকাল থেকে বেরবো। তোর এই অবস্থা। তারপর মানুষের ঢল। অনিমেষদার স্ত্রীর কি কান্না বড়দিকে জড়িয়ে ধরে। ঠায় তোর পায়ের কাছে বসে রইলো। আর ডাক্তারদাদাকে বার বার বলছে দেখুননা ও ঠিক আছে কিনা।
তখন তোর ঠিক কি হয়েছিলো বলতো ?
বলতে পারবনা।
তোর ওপর মনে হয় কেউ ভর করেছিল।
যতো সব বাজে কথা।
অনিদা ও অনিদা।
ওই দেখো সব চলে এসেছে। দরজা খোল আগে।
ইসলামভাই দরজা খুললো।
সবাই ঘরের মধ্যে এলো। মিত্রা হাসছে।
কিহলো তুই হাসছিস কেন ?
প্রথম রাউন্ড ভালই হলো বল।
ইসলামভাই হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেল।
শোন আমরা এখন যাচ্ছি। মিলি বললো।
কেন! তোমাদের সঙ্গে কথাই বলা হলো না।
বাবাঃ তুমি যা ব্যস্ত তোমাকে আজ পাওয়া যাবেনা। মিত্রাদি বলে দিয়েছে কাল থেকে অফিসে জয়েন করতে। টিনা বললো।
টাকা পয়সার কথা জিজ্ঞাসা করেছো।
না দিলেও চলবে।
ফ্রি সার্ভিস।
হ্যাঁ।
তুমি একা না তিনজন।
আমরা তিনজন।
তোমাদের অফিস।
সকালে রিজাইন দিয়ে চলে এসেছি।
সব্বনাশ। আমার এ্যাডের কি হবে।
তুমি খালি এ্যাড এ্যাড করছো কেন ? আমি মিলি অদিতি বুঝে নেব।
মিত্রার দিকে তাকালাম মিটি মিটি হাসছে। ব্যাপারটা এরকম কিরকম দিলাম বল।
ওদের কোথায় বসাবি।
কাল আমার ঘরে বসবে। সব ফাইল পত্র সনাতন বাবুকে রেডি করতে বলেছি, দেখবো।
ওরা কাল তোর সঙ্গে যাবে, না একা একা ?
কাল আমার সঙ্গে যাবে।
হিমাংশুকে ড্রাফট করতে বল।
বলে দিয়েছি।
তাহলে আমার কাজ শেষ। মিত্রা ম্যাডাম আস্তে আস্তে ম্যাম হয়ে যাচ্ছে।
যাচ্ছে মানে তুমি কি বলতে চাও। মিলি ঝগরুটে মেয়ের মতো তেড়ে এলো।
না না মিলি ম্যাডাম ক্ষমা করুণ। আপনারা এখন দলে ভাড়ি।
মাথায় রাখবে কথাটা। কালকে থেকে অনেক ঝামেলা করেছো। সব তোলা আছে।
দেবা নির্মাল্য আমাদের কথা শুনছে আর হাসছে।
দেবা নির্মাল্যর কি করবি। মিত্রা বললো।
কেনো! ওরাও কি রিজাইন দিয়ে বসে আছে নাকি।
হ্যাঁ। কাল অদিতি দেবার সঙ্গে ঝগড়া করেছে।
ভেরি ব্যাড।
তুমি না শুনে ভেরিব্যাড বললে কেন। অদিতি বললো।
তুমি ঝগড়া করেছো বলে। আমরা বুদ্ধিমান প্রাণী, ঝগড়া করবে কেন। বুদ্ধির লড়াইয়ে ঘায়েল করবে একে অপরকে।
সবাই চুপ করে গেল।
দেবা আজ কিছু ভাবতে ভাল লাগছেনা। যদি পারি রাতে তোর সঙ্গে ফোনে কথা বলবো। আগামীকাল বরং তুই নির্মাল্য ওদের সঙ্গেই চলে আয়। বসে কথা বলবো।
ইসলামভাই গেটের সামনে এসে দাঁড়াল।
আবার কি হলো!
অফিসের সব এসেছে।
আমরা যাই বুঝলি। তোকে এখন ধরা যাবেনা। দেবাশীষ বললো।
আমি হাত দেখিয়ে বললাম, বোস। ঝামেলা করিসনা। এদের সঙ্গেও তো একটা মিটিং হবে। থাকতে ইচ্ছে করছে না।
ইসলামভাই-এর দিকে তাকালাম।
যাও নিয়ে এসো।
ওরে অনেক লোক।
বড়মা, ছোটমা মরে যাবে চায়ের ঠেলায়।
মেসিন বসিয়ে দিয়েছি।
বেশ করেছো।
নিয়ে এসো সবাইকে।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে পরিতৃপ্তির হাসি হাসছে। সবাই আমাকে দেখছে।
অনিদা সত্যি বোঝাই যাচ্ছে না। তোমার শরীর খারাপ হয়েছিল সকালে।
সত্যি কি আমার শরীর খারাপ হয়েছিল ?
বলতে পারবনা। যা চোখে দেখেছি তাই বললাম। টিনা বললো।
ওরা সবাই ঘরে এলো। দাদা মল্লিকদা ওদের সঙ্গে নিয়ে এসেছে। ঘর ভর্তি হয়ে গেল। ওরা মিত্রাকে এসে হাতজোড় করে নমস্কার করলো। কেউ কেউ প্রণাম করতে চাইল। মিত্রা নিল না। দাদাকে দেখিয়ে দিয়ে বললো।
দাদাকে প্রণাম করুণ। দাদা আমাদের গুরুজন।
সার্কুলেসন ম্যানেজার প্রসের লোক জন ছাড়াও দেখলাম চম্পকদা, সনাতনবাবু এসেছেন।
এ্যাড ডিপার্টমেন্টের আরও চার পাঁচজন।
কিরে তুই ভালো আছিস ? চম্পকদা এগিয়ে এলো।
হ্যাঁ।
সকালবেলা যা ভয় পাইয়ে দিয়েছিলি। টিনাদের দিকে তাকিয়ে। আরি ব্যাশ তোমরাও আছো।
হ্যাঁ চম্পকদা ওদের আটকে রেখেছি। কালকে থেকে এই পাঁচজন আমাদের অফিসে জয়েন করছে। ম্যাডামের রিক্রুট।
দাদা, মল্লিকদা আমার দিকে তাকিয়ে। ব্যাপারটা এরকম, তুই এটা আবার কি স্কিম করছিস। তোর মাথাটা কি একটুও থেমে থাকবে না!
বাঁচালি। আমি অধস্তন হয়ে কাজ করবো। এই বয়সে আর টেনসন নিতে ভালো লাগছেনা। তোকে একটা রিকোয়েস্ট করবো।
বলো।
তুই চাকরিটা থেকে রিটায়ার করাস না।
চম্পকদা এমন ভাবে বললো সবাই হেসে ফেললো।
ঘরের সবাই ওদের পাঁচজনকে গিলে খাচ্ছে। ভাবটা এরকম, এরা আবার কারা, উড়ে এসে জুড়ে বসলো।
বলুন আপনাদের আসার কারণ।
সুতনুবাবু আমাদের অফিসের লীডার গোছের মানুষ। এই মুহূর্তে প্রেসটা দেখছেন। ওরা সবাই ফুলের বুকে এনেছ। মিত্রার হাতে দিলো। উনিই শুরু করলেন।
ছোটবাবু। কালকের ব্যাপারটা আমাদের কাছে এক অভাবনীয় ব্যাপার। বিগত পঁচিশ বছরে কেউ আমাদের এই ভাবে টাকা দেয়নি। আপনি প্রথম দিলেন।
অন্যায় করলেন সুতনুবাবু।
কেন স্যার!
দেখলেন চম্পকদা আমাকে নাম ধরে ডাকল আর তুই বলে সম্বোধন করলো। আপনি আমাকে আপনি আজ্ঞে করছেন। এটা ঠিক নয়। আমি একজন সাধারণ সাংবাদিক। এখনো নিজেকে তাই মনে করি।
মিত্রাকে আপনারা ম্যাডাম বলতে পারেন। আমাকে স্যার বলবেন না। স্যার বলতে হলে দাদাকে মল্লিকদাকে চম্পকদাকে সনাতানবাবুকে বলবেন। যারা এই হাউসের সিনিয়ার ব্যক্তি, তারা এই সম্বোধন পাওয়ার যোগ্য, আমি না। এবার বলুন।
সবাই চুপ করে রইলো। কারুর মুখ থেকে কোন কথা সড়েনা।
কিরে এই ঘরে এতো ভিড় কেন! এরা কারা ?
অনিমেষদা, বিধানদা, প্রবীরদা, অনুপদা, রূপায়নদা ঘরে ঢুকলেন।
সুতনু তুই এখানে! কি করতে এসেছিস ?
আমার অফিসের সবাই হকচকিয়ে গেছে। পার্টির দুর্দন্ড প্রতাপ পাঁচ মাথা আমার ঘরে। এই অসময়ে। ওরা ঠিক ঠাহড় করতে পারছে না। ভিড়টা আস্তে আস্তে পাতলা হতে আরম্ভ করলো।
কি চাই তোদের এখানে ?
অনিবাবুর কাছে এসেছিলাম।
কিরে তুই ভালো আছিস ? বিধানদা এগিয়ে এসে আমার মাথায় হাত রাখলেন।
আমি মাথা নীচু করে সকলকে প্রণাম করলাম।
অনিমেষ ওদের ব্যাপারটা শুনে আগে ভাগাও। বিধানদা বললেন।
তোদের কি কোন ডিমান্ড আছে।
না।
তাহলে।
কাল অনিবাবু আমাদের কাগজ বিক্রির সমস্ত পয়সা দিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন সকলে সমান ভাগে ভাগ করেনিও। ভাবলাম অনেক টাকা। যদি একটা কো-অপারেটিভ করি ওনার আপত্তি আছে কিনা।
ওর একেবারে আপত্তি নেই। আমি বলছি। টাকাটা যাতে ভালো কাজে লাগাতে পার সেটা দেখো। গেঁড়াবার ধান্দা করোনা। ও পছন্দ করেনা। যদি আরও কিছু লাগে আমি অনিকে বলে দেব। আর সুতনু তোমাকে দায়িত্ব দিলাম, ওখানে যেন কোন ঝামেলা না হয়। এটা মাথায় রাখবে।
ওরা ঘর থেকে সবাই বেরিয়ে গেল।
কি দেবাশীষ। এবার তোমরা অনির সঙ্গে থাকবে তো ?
হ্যাঁ দাদা, আজ সব চুকিয়ে বুকিয়ে দিয়ে এলাম।
বেশ করেছো। তুমি গিয়ে তোমার বৌদিকে একটু ভালো করে চা বানাতে বলো। র চা। বড়দি ছোটকে যেন বিরক্ত না করে। আমরা একটু অনিকে নিয়ে বসবো। অমিতাভদা, তুমি মল্লিক থাকো। মিত্রা।
মিত্রা অনিমেষদার মুখের দিকে তাকাল।
মা তুই নিচে যা। প্রয়োজন পরলে ডাকব।
মিত্রা দরজার দিকে পা বাড়াল।
শোন মা শোন।
মিত্রা মাথা নীচু করে এগিয়ে এলো।
সকালের কাগজপত্র গুলো কোথায় ?
সব দাদার ঘরে আলমাড়িতে।
একবার ভজুটাকে সঙ্গে করে নিয়ে আয়, আমরা দু’জন দেখেছি। এরা দেখে নি। দেখাতে হবে।
মিত্রা বেরিয়ে গেল।
দেখলাম ভজু ছ’টা চেয়ার নিয়ে এসেছে।
এইতো ভজুরাম। চেয়ারগুলো রেখে ছুটে যা, দিদিমনি কাগজগুলো দেবে নিয়ে আয়। আর ওখানে চুপটি করে বসে থাকবি। কাউকে ঢুকতে দিবি না। কেমন।
ভজুরাম দাঁত বার করে হাসলো।
বুঝলে প্রবীর ছেলেটা এ্যাবনর্মাল। অনির বাহন। এতদিন ওর কোন চিকিৎসা হয়নি। এখন ডাক্তার সামন্তর ট্রিটমেন্টে আছে। অনি ওকে ওখান থেকে তুলে এনেছে। ও কিন্তু সব বোঝে। ঠিক ঠাক প্রকাশ করতে পারেনা।
তাই নাকি! দেখে একেবারে বোঝা যায় না।
অনিকে তোমরা আগে দেখনি।
দেখেছি। তোমার ঘরে আসা যাওয়া করতো। দেখা হলেই ফিক করে হাসতো। ভাবতাম সাংবাদিক।
ও এখনো সাংবাদিক। চিরটাকাল তাই থাকবে। কালকের ঘটনা একবার ভেবে দেখ। মালিক হলে পারতো।
সবাই অনিমেষদার কথায় মাথা নীচু করলো।
অমিতাভদা।
দাদা অনিমেষদার দিকে তাকাল।
অর্ক, সায়ন্তনকে একবার পাওয়া যাবে।
নটার পর হলে ভাল হয়।
তাই হোক। আমি আজকে এই জটটা খুলে বাড়ি যাব। তাতে মধ্যরাত পর্যন্ত চললেও আপত্তি নেই।
আমিও সমানে নীচ রয়েছি।
আমার কাছ থেকে সমস্ত জানলো। আমি কিছু লুকোই নি। দামিনীর সঙ্গে আলাদা করে কথা বললো। আমাকে বললো আবিদকে ডেকে পাঠান। অমান্য করি কি করে। আবিদকে সমস্ত ঘটনা বললাম। তোর শরীর খারাপের কথা তখন চেপে গেছিলাম। এখানে এসে সব জানার পর ওকে ধরে রাখা দায়।
অনিমেষদা রতন নেপলা আবিদকে আলাদা করে ডাকল। রতন, নেপলা তবু কিছু বলেছে। আবিদ সড়াসরি বলে দিয়েছে, অনিদার পার্মিশন ছাড়া একটা কথাও বলবো না। এতে আপনারা আমাকে মেরে ফেলতে পারেন, আপত্তি নেই।
আমি আবিদের কথা শুনে অবাক। তুই কার কাছে কি বলছিস।
আবিদের কথা ছাড়, তোর অর্ক, সায়ন্তন, দ্বীপায়ন, সন্দীপ কেউ মুখ খোলেনা। তারপর মামনি বললো। তোমরা বলো আমি বুবুনের সঙ্গে বুঝে নেব। তখন সবাই একে একে বললো। তাও অনিমেষদার বিশ্বাস হচ্ছে না।
তখন অনিমেষদার মুখের দিকে তাকাতে পারছিনা। তারপর বিধানদাকে ফোন করলো। বিধানদা এলো। একে একে সবাই। আবিদ যতোক্ষণ ওখানে ছিল ততক্ষণ প্রচুর সাদা পোষাকের পুলিশ ওই বাড়ি ঘিরে ছিল। একটা মাছিও গলতে পারবেনা।
অর্ক।
বলতে পারবনা। ওদের সঙ্গে দরজা বন্ধ করে কথা বলেছে অনিমেষদা। তোর ল্যাপটপ দেখেছে। দ্বীপায়ন অপারেট করেছে।
বুঝে গেছি। মুখার্জীর লোক এসেছিল।
খাম দিয়ে গেছে। সিল করা। খোলা হয়নি। অনিমেষদা বলেছে তুই খুলবি। তবে তোর ফোন থেকে নম্বর নিয়ে মুখার্জীর সঙ্গে আলাদা করে কথা বলে নিয়েছে।
ঠিক আছে তুমি যাও। ওদিকটা সামলাও। মিত্রাকে একটু ডেকে দাও। তোমার ব্যবসা ?
ডকে উঠে গেছে। ভাবলাম সকাল থেকে বেরবো। তোর এই অবস্থা। তারপর মানুষের ঢল। অনিমেষদার স্ত্রীর কি কান্না বড়দিকে জড়িয়ে ধরে। ঠায় তোর পায়ের কাছে বসে রইলো। আর ডাক্তারদাদাকে বার বার বলছে দেখুননা ও ঠিক আছে কিনা।
তখন তোর ঠিক কি হয়েছিলো বলতো ?
বলতে পারবনা।
তোর ওপর মনে হয় কেউ ভর করেছিল।
যতো সব বাজে কথা।
অনিদা ও অনিদা।
ওই দেখো সব চলে এসেছে। দরজা খোল আগে।
ইসলামভাই দরজা খুললো।
সবাই ঘরের মধ্যে এলো। মিত্রা হাসছে।
কিহলো তুই হাসছিস কেন ?
প্রথম রাউন্ড ভালই হলো বল।
ইসলামভাই হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেল।
শোন আমরা এখন যাচ্ছি। মিলি বললো।
কেন! তোমাদের সঙ্গে কথাই বলা হলো না।
বাবাঃ তুমি যা ব্যস্ত তোমাকে আজ পাওয়া যাবেনা। মিত্রাদি বলে দিয়েছে কাল থেকে অফিসে জয়েন করতে। টিনা বললো।
টাকা পয়সার কথা জিজ্ঞাসা করেছো।
না দিলেও চলবে।
ফ্রি সার্ভিস।
হ্যাঁ।
তুমি একা না তিনজন।
আমরা তিনজন।
তোমাদের অফিস।
সকালে রিজাইন দিয়ে চলে এসেছি।
সব্বনাশ। আমার এ্যাডের কি হবে।
তুমি খালি এ্যাড এ্যাড করছো কেন ? আমি মিলি অদিতি বুঝে নেব।
মিত্রার দিকে তাকালাম মিটি মিটি হাসছে। ব্যাপারটা এরকম কিরকম দিলাম বল।
ওদের কোথায় বসাবি।
কাল আমার ঘরে বসবে। সব ফাইল পত্র সনাতন বাবুকে রেডি করতে বলেছি, দেখবো।
ওরা কাল তোর সঙ্গে যাবে, না একা একা ?
কাল আমার সঙ্গে যাবে।
হিমাংশুকে ড্রাফট করতে বল।
বলে দিয়েছি।
তাহলে আমার কাজ শেষ। মিত্রা ম্যাডাম আস্তে আস্তে ম্যাম হয়ে যাচ্ছে।
যাচ্ছে মানে তুমি কি বলতে চাও। মিলি ঝগরুটে মেয়ের মতো তেড়ে এলো।
না না মিলি ম্যাডাম ক্ষমা করুণ। আপনারা এখন দলে ভাড়ি।
মাথায় রাখবে কথাটা। কালকে থেকে অনেক ঝামেলা করেছো। সব তোলা আছে।
দেবা নির্মাল্য আমাদের কথা শুনছে আর হাসছে।
দেবা নির্মাল্যর কি করবি। মিত্রা বললো।
কেনো! ওরাও কি রিজাইন দিয়ে বসে আছে নাকি।
হ্যাঁ। কাল অদিতি দেবার সঙ্গে ঝগড়া করেছে।
ভেরি ব্যাড।
তুমি না শুনে ভেরিব্যাড বললে কেন। অদিতি বললো।
তুমি ঝগড়া করেছো বলে। আমরা বুদ্ধিমান প্রাণী, ঝগড়া করবে কেন। বুদ্ধির লড়াইয়ে ঘায়েল করবে একে অপরকে।
সবাই চুপ করে গেল।
দেবা আজ কিছু ভাবতে ভাল লাগছেনা। যদি পারি রাতে তোর সঙ্গে ফোনে কথা বলবো। আগামীকাল বরং তুই নির্মাল্য ওদের সঙ্গেই চলে আয়। বসে কথা বলবো।
ইসলামভাই গেটের সামনে এসে দাঁড়াল।
আবার কি হলো!
অফিসের সব এসেছে।
আমরা যাই বুঝলি। তোকে এখন ধরা যাবেনা। দেবাশীষ বললো।
আমি হাত দেখিয়ে বললাম, বোস। ঝামেলা করিসনা। এদের সঙ্গেও তো একটা মিটিং হবে। থাকতে ইচ্ছে করছে না।
ইসলামভাই-এর দিকে তাকালাম।
যাও নিয়ে এসো।
ওরে অনেক লোক।
বড়মা, ছোটমা মরে যাবে চায়ের ঠেলায়।
মেসিন বসিয়ে দিয়েছি।
বেশ করেছো।
নিয়ে এসো সবাইকে।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে পরিতৃপ্তির হাসি হাসছে। সবাই আমাকে দেখছে।
অনিদা সত্যি বোঝাই যাচ্ছে না। তোমার শরীর খারাপ হয়েছিল সকালে।
সত্যি কি আমার শরীর খারাপ হয়েছিল ?
বলতে পারবনা। যা চোখে দেখেছি তাই বললাম। টিনা বললো।
ওরা সবাই ঘরে এলো। দাদা মল্লিকদা ওদের সঙ্গে নিয়ে এসেছে। ঘর ভর্তি হয়ে গেল। ওরা মিত্রাকে এসে হাতজোড় করে নমস্কার করলো। কেউ কেউ প্রণাম করতে চাইল। মিত্রা নিল না। দাদাকে দেখিয়ে দিয়ে বললো।
দাদাকে প্রণাম করুণ। দাদা আমাদের গুরুজন।
সার্কুলেসন ম্যানেজার প্রসের লোক জন ছাড়াও দেখলাম চম্পকদা, সনাতনবাবু এসেছেন।
এ্যাড ডিপার্টমেন্টের আরও চার পাঁচজন।
কিরে তুই ভালো আছিস ? চম্পকদা এগিয়ে এলো।
হ্যাঁ।
সকালবেলা যা ভয় পাইয়ে দিয়েছিলি। টিনাদের দিকে তাকিয়ে। আরি ব্যাশ তোমরাও আছো।
হ্যাঁ চম্পকদা ওদের আটকে রেখেছি। কালকে থেকে এই পাঁচজন আমাদের অফিসে জয়েন করছে। ম্যাডামের রিক্রুট।
দাদা, মল্লিকদা আমার দিকে তাকিয়ে। ব্যাপারটা এরকম, তুই এটা আবার কি স্কিম করছিস। তোর মাথাটা কি একটুও থেমে থাকবে না!
বাঁচালি। আমি অধস্তন হয়ে কাজ করবো। এই বয়সে আর টেনসন নিতে ভালো লাগছেনা। তোকে একটা রিকোয়েস্ট করবো।
বলো।
তুই চাকরিটা থেকে রিটায়ার করাস না।
চম্পকদা এমন ভাবে বললো সবাই হেসে ফেললো।
ঘরের সবাই ওদের পাঁচজনকে গিলে খাচ্ছে। ভাবটা এরকম, এরা আবার কারা, উড়ে এসে জুড়ে বসলো।
বলুন আপনাদের আসার কারণ।
সুতনুবাবু আমাদের অফিসের লীডার গোছের মানুষ। এই মুহূর্তে প্রেসটা দেখছেন। ওরা সবাই ফুলের বুকে এনেছ। মিত্রার হাতে দিলো। উনিই শুরু করলেন।
ছোটবাবু। কালকের ব্যাপারটা আমাদের কাছে এক অভাবনীয় ব্যাপার। বিগত পঁচিশ বছরে কেউ আমাদের এই ভাবে টাকা দেয়নি। আপনি প্রথম দিলেন।
অন্যায় করলেন সুতনুবাবু।
কেন স্যার!
দেখলেন চম্পকদা আমাকে নাম ধরে ডাকল আর তুই বলে সম্বোধন করলো। আপনি আমাকে আপনি আজ্ঞে করছেন। এটা ঠিক নয়। আমি একজন সাধারণ সাংবাদিক। এখনো নিজেকে তাই মনে করি।
মিত্রাকে আপনারা ম্যাডাম বলতে পারেন। আমাকে স্যার বলবেন না। স্যার বলতে হলে দাদাকে মল্লিকদাকে চম্পকদাকে সনাতানবাবুকে বলবেন। যারা এই হাউসের সিনিয়ার ব্যক্তি, তারা এই সম্বোধন পাওয়ার যোগ্য, আমি না। এবার বলুন।
সবাই চুপ করে রইলো। কারুর মুখ থেকে কোন কথা সড়েনা।
কিরে এই ঘরে এতো ভিড় কেন! এরা কারা ?
অনিমেষদা, বিধানদা, প্রবীরদা, অনুপদা, রূপায়নদা ঘরে ঢুকলেন।
সুতনু তুই এখানে! কি করতে এসেছিস ?
আমার অফিসের সবাই হকচকিয়ে গেছে। পার্টির দুর্দন্ড প্রতাপ পাঁচ মাথা আমার ঘরে। এই অসময়ে। ওরা ঠিক ঠাহড় করতে পারছে না। ভিড়টা আস্তে আস্তে পাতলা হতে আরম্ভ করলো।
কি চাই তোদের এখানে ?
অনিবাবুর কাছে এসেছিলাম।
কিরে তুই ভালো আছিস ? বিধানদা এগিয়ে এসে আমার মাথায় হাত রাখলেন।
আমি মাথা নীচু করে সকলকে প্রণাম করলাম।
অনিমেষ ওদের ব্যাপারটা শুনে আগে ভাগাও। বিধানদা বললেন।
তোদের কি কোন ডিমান্ড আছে।
না।
তাহলে।
কাল অনিবাবু আমাদের কাগজ বিক্রির সমস্ত পয়সা দিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন সকলে সমান ভাগে ভাগ করেনিও। ভাবলাম অনেক টাকা। যদি একটা কো-অপারেটিভ করি ওনার আপত্তি আছে কিনা।
ওর একেবারে আপত্তি নেই। আমি বলছি। টাকাটা যাতে ভালো কাজে লাগাতে পার সেটা দেখো। গেঁড়াবার ধান্দা করোনা। ও পছন্দ করেনা। যদি আরও কিছু লাগে আমি অনিকে বলে দেব। আর সুতনু তোমাকে দায়িত্ব দিলাম, ওখানে যেন কোন ঝামেলা না হয়। এটা মাথায় রাখবে।
ওরা ঘর থেকে সবাই বেরিয়ে গেল।
কি দেবাশীষ। এবার তোমরা অনির সঙ্গে থাকবে তো ?
হ্যাঁ দাদা, আজ সব চুকিয়ে বুকিয়ে দিয়ে এলাম।
বেশ করেছো। তুমি গিয়ে তোমার বৌদিকে একটু ভালো করে চা বানাতে বলো। র চা। বড়দি ছোটকে যেন বিরক্ত না করে। আমরা একটু অনিকে নিয়ে বসবো। অমিতাভদা, তুমি মল্লিক থাকো। মিত্রা।
মিত্রা অনিমেষদার মুখের দিকে তাকাল।
মা তুই নিচে যা। প্রয়োজন পরলে ডাকব।
মিত্রা দরজার দিকে পা বাড়াল।
শোন মা শোন।
মিত্রা মাথা নীচু করে এগিয়ে এলো।
সকালের কাগজপত্র গুলো কোথায় ?
সব দাদার ঘরে আলমাড়িতে।
একবার ভজুটাকে সঙ্গে করে নিয়ে আয়, আমরা দু’জন দেখেছি। এরা দেখে নি। দেখাতে হবে।
মিত্রা বেরিয়ে গেল।
দেখলাম ভজু ছ’টা চেয়ার নিয়ে এসেছে।
এইতো ভজুরাম। চেয়ারগুলো রেখে ছুটে যা, দিদিমনি কাগজগুলো দেবে নিয়ে আয়। আর ওখানে চুপটি করে বসে থাকবি। কাউকে ঢুকতে দিবি না। কেমন।
ভজুরাম দাঁত বার করে হাসলো।
বুঝলে প্রবীর ছেলেটা এ্যাবনর্মাল। অনির বাহন। এতদিন ওর কোন চিকিৎসা হয়নি। এখন ডাক্তার সামন্তর ট্রিটমেন্টে আছে। অনি ওকে ওখান থেকে তুলে এনেছে। ও কিন্তু সব বোঝে। ঠিক ঠাক প্রকাশ করতে পারেনা।
তাই নাকি! দেখে একেবারে বোঝা যায় না।
অনিকে তোমরা আগে দেখনি।
দেখেছি। তোমার ঘরে আসা যাওয়া করতো। দেখা হলেই ফিক করে হাসতো। ভাবতাম সাংবাদিক।
ও এখনো সাংবাদিক। চিরটাকাল তাই থাকবে। কালকের ঘটনা একবার ভেবে দেখ। মালিক হলে পারতো।
সবাই অনিমেষদার কথায় মাথা নীচু করলো।
অমিতাভদা।
দাদা অনিমেষদার দিকে তাকাল।
অর্ক, সায়ন্তনকে একবার পাওয়া যাবে।
নটার পর হলে ভাল হয়।
তাই হোক। আমি আজকে এই জটটা খুলে বাড়ি যাব। তাতে মধ্যরাত পর্যন্ত চললেও আপত্তি নেই।