What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

দেখি নাই ফিরে (উপন্যাস) (3 Viewers)

আমি কি করবো। সকাল বেলা অনিমেষদার মূর্তি দেখিসনি। তোকে দেখার পর যেন আগুন হয়ে গেল। গম্ভীর হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। সেই থেকে নীচ ওপর করে যাচ্ছে। তোর জ্ঞান ফেরার খবর পেয়ে একটু স্বস্তি। মামনিকে সব সময় পাশে নিয়ে ঘুরেছে। ওকে আর ওপরে আসতে দেয়নি।
আমিও সমানে নীচ রয়েছি।
আমার কাছ থেকে সমস্ত জানলো। আমি কিছু লুকোই নি। দামিনীর সঙ্গে আলাদা করে কথা বললো। আমাকে বললো আবিদকে ডেকে পাঠান। অমান্য করি কি করে। আবিদকে সমস্ত ঘটনা বললাম। তোর শরীর খারাপের কথা তখন চেপে গেছিলাম। এখানে এসে সব জানার পর ওকে ধরে রাখা দায়।
অনিমেষদা রতন নেপলা আবিদকে আলাদা করে ডাকল। রতন, নেপলা তবু কিছু বলেছে। আবিদ সড়াসরি বলে দিয়েছে, অনিদার পার্মিশন ছাড়া একটা কথাও বলবো না। এতে আপনারা আমাকে মেরে ফেলতে পারেন, আপত্তি নেই।
আমি আবিদের কথা শুনে অবাক। তুই কার কাছে কি বলছিস।
আবিদের কথা ছাড়, তোর অর্ক, সায়ন্তন, দ্বীপায়ন, সন্দীপ কেউ মুখ খোলেনা। তারপর মামনি বললো। তোমরা বলো আমি বুবুনের সঙ্গে বুঝে নেব। তখন সবাই একে একে বললো। তাও অনিমেষদার বিশ্বাস হচ্ছে না।
তখন অনিমেষদার মুখের দিকে তাকাতে পারছিনা। তারপর বিধানদাকে ফোন করলো। বিধানদা এলো। একে একে সবাই। আবিদ যতোক্ষণ ওখানে ছিল ততক্ষণ প্রচুর সাদা পোষাকের পুলিশ ওই বাড়ি ঘিরে ছিল। একটা মাছিও গলতে পারবেনা।
অর্ক।
বলতে পারবনা। ওদের সঙ্গে দরজা বন্ধ করে কথা বলেছে অনিমেষদা। তোর ল্যাপটপ দেখেছে। দ্বীপায়ন অপারেট করেছে।
বুঝে গেছি। মুখার্জীর লোক এসেছিল।
খাম দিয়ে গেছে। সিল করা। খোলা হয়নি। অনিমেষদা বলেছে তুই খুলবি। তবে তোর ফোন থেকে নম্বর নিয়ে মুখার্জীর সঙ্গে আলাদা করে কথা বলে নিয়েছে।
ঠিক আছে তুমি যাও। ওদিকটা সামলাও। মিত্রাকে একটু ডেকে দাও। তোমার ব্যবসা ?
ডকে উঠে গেছে। ভাবলাম সকাল থেকে বেরবো। তোর এই অবস্থা। তারপর মানুষের ঢল। অনিমেষদার স্ত্রীর কি কান্না বড়দিকে জড়িয়ে ধরে। ঠায় তোর পায়ের কাছে বসে রইলো। আর ডাক্তারদাদাকে বার বার বলছে দেখুননা ও ঠিক আছে কিনা।
তখন তোর ঠিক কি হয়েছিলো বলতো ?
বলতে পারবনা।
তোর ওপর মনে হয় কেউ ভর করেছিল।
যতো সব বাজে কথা।
অনিদা ও অনিদা।
ওই দেখো সব চলে এসেছে। দরজা খোল আগে।
ইসলামভাই দরজা খুললো।
সবাই ঘরের মধ্যে এলো। মিত্রা হাসছে।
কিহলো তুই হাসছিস কেন ?
প্রথম রাউন্ড ভালই হলো বল।
ইসলামভাই হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেল।
শোন আমরা এখন যাচ্ছি। মিলি বললো।
কেন! তোমাদের সঙ্গে কথাই বলা হলো না।
বাবাঃ তুমি যা ব্যস্ত তোমাকে আজ পাওয়া যাবেনা। মিত্রাদি বলে দিয়েছে কাল থেকে অফিসে জয়েন করতে। টিনা বললো।
টাকা পয়সার কথা জিজ্ঞাসা করেছো।
না দিলেও চলবে।
ফ্রি সার্ভিস।
হ্যাঁ।
তুমি একা না তিনজন।
আমরা তিনজন।
তোমাদের অফিস।
সকালে রিজাইন দিয়ে চলে এসেছি।
সব্বনাশ। আমার এ্যাডের কি হবে।
তুমি খালি এ্যাড এ্যাড করছো কেন ? আমি মিলি অদিতি বুঝে নেব।
মিত্রার দিকে তাকালাম মিটি মিটি হাসছে। ব্যাপারটা এরকম কিরকম দিলাম বল।
ওদের কোথায় বসাবি।
কাল আমার ঘরে বসবে। সব ফাইল পত্র সনাতন বাবুকে রেডি করতে বলেছি, দেখবো।
ওরা কাল তোর সঙ্গে যাবে, না একা একা ?
কাল আমার সঙ্গে যাবে।
হিমাংশুকে ড্রাফট করতে বল।
বলে দিয়েছি।
তাহলে আমার কাজ শেষ। মিত্রা ম্যাডাম আস্তে আস্তে ম্যাম হয়ে যাচ্ছে।
যাচ্ছে মানে তুমি কি বলতে চাও। মিলি ঝগরুটে মেয়ের মতো তেড়ে এলো।
না না মিলি ম্যাডাম ক্ষমা করুণ। আপনারা এখন দলে ভাড়ি।

মাথায় রাখবে কথাটা। কালকে থেকে অনেক ঝামেলা করেছো। সব তোলা আছে।
দেবা নির্মাল্য আমাদের কথা শুনছে আর হাসছে।
দেবা নির্মাল্যর কি করবি। মিত্রা বললো।
কেনো! ওরাও কি রিজাইন দিয়ে বসে আছে নাকি।
হ্যাঁ। কাল অদিতি দেবার সঙ্গে ঝগড়া করেছে।
ভেরি ব্যাড।
তুমি না শুনে ভেরিব্যাড বললে কেন। অদিতি বললো।
তুমি ঝগড়া করেছো বলে। আমরা বুদ্ধিমান প্রাণী, ঝগড়া করবে কেন। বুদ্ধির লড়াইয়ে ঘায়েল করবে একে অপরকে।
সবাই চুপ করে গেল।
দেবা আজ কিছু ভাবতে ভাল লাগছেনা। যদি পারি রাতে তোর সঙ্গে ফোনে কথা বলবো। আগামীকাল বরং তুই নির্মাল্য ওদের সঙ্গেই চলে আয়। বসে কথা বলবো।
ইসলামভাই গেটের সামনে এসে দাঁড়াল।
আবার কি হলো!
অফিসের সব এসেছে।
আমরা যাই বুঝলি। তোকে এখন ধরা যাবেনা। দেবাশীষ বললো।
আমি হাত দেখিয়ে বললাম, বোস। ঝামেলা করিসনা। এদের সঙ্গেও তো একটা মিটিং হবে। থাকতে ইচ্ছে করছে না।
ইসলামভাই-এর দিকে তাকালাম।
যাও নিয়ে এসো।
ওরে অনেক লোক।
বড়মা, ছোটমা মরে যাবে চায়ের ঠেলায়।
মেসিন বসিয়ে দিয়েছি।
বেশ করেছো।
নিয়ে এসো সবাইকে।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে পরিতৃপ্তির হাসি হাসছে। সবাই আমাকে দেখছে।
অনিদা সত্যি বোঝাই যাচ্ছে না। তোমার শরীর খারাপ হয়েছিল সকালে।
সত্যি কি আমার শরীর খারাপ হয়েছিল ?
বলতে পারবনা। যা চোখে দেখেছি তাই বললাম। টিনা বললো।
ওরা সবাই ঘরে এলো। দাদা মল্লিকদা ওদের সঙ্গে নিয়ে এসেছে। ঘর ভর্তি হয়ে গেল। ওরা মিত্রাকে এসে হাতজোড় করে নমস্কার করলো। কেউ কেউ প্রণাম করতে চাইল। মিত্রা নিল না। দাদাকে দেখিয়ে দিয়ে বললো।
দাদাকে প্রণাম করুণ। দাদা আমাদের গুরুজন।
সার্কুলেসন ম্যানেজার প্রসের লোক জন ছাড়াও দেখলাম চম্পকদা, সনাতনবাবু এসেছেন।
এ্যাড ডিপার্টমেন্টের আরও চার পাঁচজন।
কিরে তুই ভালো আছিস ? চম্পকদা এগিয়ে এলো।
হ্যাঁ।
সকালবেলা যা ভয় পাইয়ে দিয়েছিলি। টিনাদের দিকে তাকিয়ে। আরি ব্যাশ তোমরাও আছো।
হ্যাঁ চম্পকদা ওদের আটকে রেখেছি। কালকে থেকে এই পাঁচজন আমাদের অফিসে জয়েন করছে। ম্যাডামের রিক্রুট।
দাদা, মল্লিকদা আমার দিকে তাকিয়ে। ব্যাপারটা এরকম, তুই এটা আবার কি স্কিম করছিস। তোর মাথাটা কি একটুও থেমে থাকবে না!
বাঁচালি। আমি অধস্তন হয়ে কাজ করবো। এই বয়সে আর টেনসন নিতে ভালো লাগছেনা। তোকে একটা রিকোয়েস্ট করবো।
বলো।
তুই চাকরিটা থেকে রিটায়ার করাস না।
চম্পকদা এমন ভাবে বললো সবাই হেসে ফেললো।
ঘরের সবাই ওদের পাঁচজনকে গিলে খাচ্ছে। ভাবটা এরকম, এরা আবার কারা, উড়ে এসে জুড়ে বসলো।
বলুন আপনাদের আসার কারণ।
সুতনুবাবু আমাদের অফিসের লীডার গোছের মানুষ। এই মুহূর্তে প্রেসটা দেখছেন। ওরা সবাই ফুলের বুকে এনেছ। মিত্রার হাতে দিলো। উনিই শুরু করলেন।
ছোটবাবু। কালকের ব্যাপারটা আমাদের কাছে এক অভাবনীয় ব্যাপার। বিগত পঁচিশ বছরে কেউ আমাদের এই ভাবে টাকা দেয়নি। আপনি প্রথম দিলেন।
অন্যায় করলেন সুতনুবাবু।
কেন স্যার!
দেখলেন চম্পকদা আমাকে নাম ধরে ডাকল আর তুই বলে সম্বোধন করলো। আপনি আমাকে আপনি আজ্ঞে করছেন। এটা ঠিক নয়। আমি একজন সাধারণ সাংবাদিক। এখনো নিজেকে তাই মনে করি।
মিত্রাকে আপনারা ম্যাডাম বলতে পারেন। আমাকে স্যার বলবেন না। স্যার বলতে হলে দাদাকে মল্লিকদাকে চম্পকদাকে সনাতানবাবুকে বলবেন। যারা এই হাউসের সিনিয়ার ব্যক্তি, তারা এই সম্বোধন পাওয়ার যোগ্য, আমি না। এবার বলুন।
সবাই চুপ করে রইলো। কারুর মুখ থেকে কোন কথা সড়েনা।
কিরে এই ঘরে এতো ভিড় কেন! এরা কারা ?
অনিমেষদা, বিধানদা, প্রবীরদা, অনুপদা, রূপায়নদা ঘরে ঢুকলেন।
সুতনু তুই এখানে! কি করতে এসেছিস ?
আমার অফিসের সবাই হকচকিয়ে গেছে। পার্টির দুর্দন্ড প্রতাপ পাঁচ মাথা আমার ঘরে। এই অসময়ে। ওরা ঠিক ঠাহড় করতে পারছে না। ভিড়টা আস্তে আস্তে পাতলা হতে আরম্ভ করলো।
কি চাই তোদের এখানে ?
অনিবাবুর কাছে এসেছিলাম।
কিরে তুই ভালো আছিস ? বিধানদা এগিয়ে এসে আমার মাথায় হাত রাখলেন।
আমি মাথা নীচু করে সকলকে প্রণাম করলাম।
অনিমেষ ওদের ব্যাপারটা শুনে আগে ভাগাও। বিধানদা বললেন।
তোদের কি কোন ডিমান্ড আছে।
না।
তাহলে।
কাল অনিবাবু আমাদের কাগজ বিক্রির সমস্ত পয়সা দিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন সকলে সমান ভাগে ভাগ করেনিও। ভাবলাম অনেক টাকা। যদি একটা কো-অপারেটিভ করি ওনার আপত্তি আছে কিনা।
ওর একেবারে আপত্তি নেই। আমি বলছি। টাকাটা যাতে ভালো কাজে লাগাতে পার সেটা দেখো। গেঁড়াবার ধান্দা করোনা। ও পছন্দ করেনা। যদি আরও কিছু লাগে আমি অনিকে বলে দেব। আর সুতনু তোমাকে দায়িত্ব দিলাম, ওখানে যেন কোন ঝামেলা না হয়। এটা মাথায় রাখবে।
ওরা ঘর থেকে সবাই বেরিয়ে গেল।
কি দেবাশীষ। এবার তোমরা অনির সঙ্গে থাকবে তো ?
হ্যাঁ দাদা, আজ সব চুকিয়ে বুকিয়ে দিয়ে এলাম।
বেশ করেছো। তুমি গিয়ে তোমার বৌদিকে একটু ভালো করে চা বানাতে বলো। র চা। বড়দি ছোটকে যেন বিরক্ত না করে। আমরা একটু অনিকে নিয়ে বসবো। অমিতাভদা, তুমি মল্লিক থাকো। মিত্রা।
মিত্রা অনিমেষদার মুখের দিকে তাকাল।
মা তুই নিচে যা। প্রয়োজন পরলে ডাকব।
মিত্রা দরজার দিকে পা বাড়াল।
শোন মা শোন।
মিত্রা মাথা নীচু করে এগিয়ে এলো।
সকালের কাগজপত্র গুলো কোথায় ?
সব দাদার ঘরে আলমাড়িতে।
একবার ভজুটাকে সঙ্গে করে নিয়ে আয়, আমরা দু’জন দেখেছি। এরা দেখে নি। দেখাতে হবে।
মিত্রা বেরিয়ে গেল।
দেখলাম ভজু ছ’টা চেয়ার নিয়ে এসেছে।
এইতো ভজুরাম। চেয়ারগুলো রেখে ছুটে যা, দিদিমনি কাগজগুলো দেবে নিয়ে আয়। আর ওখানে চুপটি করে বসে থাকবি। কাউকে ঢুকতে দিবি না। কেমন।
ভজুরাম দাঁত বার করে হাসলো।
বুঝলে প্রবীর ছেলেটা এ্যাবনর্মাল। অনির বাহন। এতদিন ওর কোন চিকিৎসা হয়নি। এখন ডাক্তার সামন্তর ট্রিটমেন্টে আছে। অনি ওকে ওখান থেকে তুলে এনেছে। ও কিন্তু সব বোঝে। ঠিক ঠাক প্রকাশ করতে পারেনা।
তাই নাকি! দেখে একেবারে বোঝা যায় না।
অনিকে তোমরা আগে দেখনি।
দেখেছি। তোমার ঘরে আসা যাওয়া করতো। দেখা হলেই ফিক করে হাসতো। ভাবতাম সাংবাদিক।
ও এখনো সাংবাদিক। চিরটাকাল তাই থাকবে। কালকের ঘটনা একবার ভেবে দেখ। মালিক হলে পারতো।
সবাই অনিমেষদার কথায় মাথা নীচু করলো।
অমিতাভদা।
দাদা অনিমেষদার দিকে তাকাল।
অর্ক, সায়ন্তনকে একবার পাওয়া যাবে।
নটার পর হলে ভাল হয়।

তাই হোক। আমি আজকে এই জটটা খুলে বাড়ি যাব। তাতে মধ্যরাত পর্যন্ত চললেও আপত্তি নেই।
 
কেন সন্দীপকে একটা ফোন করো না। আমি প্রায় সত্তরভাগ কাজ তুলে দিয়ে এসেছি। যদি ওদের ছাড়তে পারে। তারপর নয় সন্দীপ পরে আসবে। মল্লিকদা বললো।
বুঝলে রূপায়ণ এইকটা হচ্ছে অনির কোর টিম। অনি ছাড়া এরা মুখ খুলবে না। আমাকে বিধানবাবুকে সকালে যা বলেছে তা হচ্ছে কাঁঠাল খেল পেট ফুললো মরে গেল।
সবার চোখ আমার দিকে।
আরও আছে!
সবাই এবাড়িতেই আছে। একটা একটা করে ডাকব। দেখতে পাবে।
বড়মা ঘরে ঢুকলো। হাতে চায়ের পট।
আপনি এলেন কেন! আমি সুতপাকে দায়িত্ব দিলাম।
সবাই আসছে।
দেখলাম একে একে ছোটমা, দামিনী মাসি, বৌদি ঢুকলো।
অনির জন্য আপনারা সকলে এবাড়িতে এসেছেন। অনি না থাকলে আপনাদের কাগজে ছবি দেখতাম, টিভিতে দেখতাম। আলাপ কারুর সঙ্গে নেই, তাই যেচে আলাপ করতে এলাম।
এটা বড্ড বাড়াবাড়ি হয়ে গেল।
অনিমেষদা তিনজনের সঙ্গে সকলের আলাপ করিয়ে দিল।
রূপায়ণদা বললেন আমি ওনাকে চিনি, দামিনী মাসির দিকে তাকিয়ে বললেন।
উনি অনির মাসি। অনি ওর জীবনের আঠারো মাস ওনার আশ্রয়ে থেকেছে। ওই পাড়ায়।
হাউ স্ট্রেঞ্জ। প্রবীরদা বলে উঠলেন।
স্ট্রেঞ্জ নয় প্রবীর। দিস ইজ ফ্যাক্ট। অনির মা, মাসির গায়ে হাত পরবে, এটা ও সহ্য করতে পারে নি। তাই কালকে এই কান্ড ঘটিয়েছে। বলতে পার ওনারাও টার্গেট ছিলেন। আমি যে বাদ ছিলাম তা নয়। সেটা আজ সকালে ও সেনস্লেস অবস্থায় বলে ফেলেছে। তখন অনিকে ধরে রাখা দায়। আমাদেরই পার্টি কর্মী ওদের গ্রামের পঞ্চায়েত ওর বন্ধু ওরা ধরে রাখল তখন অনিকে।
কি বলছেন অনিমেষদা!
বিধানবাবুকে জিজ্ঞাসা করতে পার।
আমার সব কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে অনিমেষদা। অনুপদা বললেন।
ব্যাপারটা সেরকম। আজ অনির আমার বাড়িতে যাবার কথা ছিল। ওর বৌদিকে নেমন্তন্ন্ করার জন্য। ও যায়নি আমরা এসেছি।
গত সপ্তাহে বৃহস্পতিবার আমি তোমাদের কথা শুনে ডাক্তারকে ছাড়তে বলি ওকে। ও সঙ্গে সঙ্গে ছেড়ে দেয়। ডাক্তারের কীর্তি কাহিনী কাগজে কিছুটা বেরিয়েছে দেখেছো। এবার আরও বেরবে।
আপনি এখুনি একবার রাজনাথ বাবুকে ডাকুন। প্রবীরদা বলে উঠলেন।
এতো উত্তেজিত হচ্ছো কেন প্রবীর। তুমি এখনো সব দেখনি, সব জানোনা।
এটুকু শুনে বিশ্বাস করার কোন কারন নেই। আমাদের পার্টিতে অন্তরদ্বন্দ আছে কিন্তু আমরা পার্টির মিটিংয়ে সেটা মিটিয়ে নিই। বাইরের কাকপক্ষী টের পায়না।
অনি কিন্তু একা সেই কাজ করে দেখিয়ে দিয়েছে।
চা খেত খেতে কথা চলছে। আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে।
জানো প্রবীর, বড়দি আমাদের পার্টির ছাপান্ন/সাতান্ন সালের কর্মী।
অমিতাভদাও সেই প্রিয়েডের। দাদা বিদ্যাসাগরের জিএস ছিলেন।
একবার ভেবে দেখ, ওই প্রিয়েডে দাদা ওই রকম একটা কলেজের জিএস, ভাবতে পার। তাঁদের আশ্রয়ে অনি লালিত পালিত।
অনিমেষদা থামছে না।
সুতপা যেদিন অনিকে ধরে নিয়ে এলো। সেদিন ওর গোঁফ দাড়ি ঠিক মতন বেরয়নি। ও নাকি সুরঞ্জনাকে পরাবে। সুরো তখন ক্লাস থ্রির ছাত্রী। ও ক্লাস টুয়েলভ। ডঃ রায়ের রেকমেন্ডেসন।
আমি সেদিন হেসেছিলাম। আমার হাসিটা যে কতোবড়ো ভুল তা আজ ও প্রমাণ করে দিয়েছে। তখন থেকে ও আমাদের বাড়িতে যাতায়াত করে। আজও সুরোকে পড়াচ্ছে। ওর নোট লিখে সুরো ফার্স্টক্লাস পেল। সুরো ওকে ভাইফোঁটা দেয়। সেই সুরো কাল থেকে এক গ্লাস জল পর্যন্ত ছোঁয় নি, অনি কথা না বলা পর্যন্ত।
অনির কি হলো একবার খোঁজ নাও। ডঃ রায় আমাকে ব্যক্তিগতভাবে তিনবার ফোন করেছেন। তারপর সুতপাকে সঙ্গে করে নিয়ে এখানে এসে হাজির হয়েছেন। অনিকে দেখে উনি বেশিক্ষণ থাকতে পারেন নি, চলে যান।
আজ সকালে এসে যে দৃশ্য দেখেছি সে এক অভাবনীয় দৃশ্য। তখনই বিধানবাবুকে ডাকলাম। নিজের চোখে একবার দেখে যান।
আমাকে তো পার্টি মিটিংয়ে তোমাদের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
অনিমেষদা একা বলে চলেছে, সবাই শ্রোতা। আমি মথা নীচু করে দাঁড়িয়ে শুনে যাচ্ছি।
বুঝতে পারছি আজ থেকে আমার খেল খতম। টোটাল ব্যাপরটাই অনিমেষদা নিজের হাতে ধীরে ধীরে তুলে নিচ্ছে।
ভজুরাম হাসতে হাসতে ঘরে ঢুকলো। পেছনে মিত্রা। একডাঁই কাগজ পত্র। আমার ল্যাপটপ। সব মাথায় করে নিয়ে এসেছে। এমনকি সেই ফাইলটা পর্যন্ত।
ভজুরামের কোন হেলদোল নেই, আজও ওর পরনে হাফপ্যান্ট হাফ হাতা সার্ট। কাগজপত্র মাথা থেকে খাটে নামিয়ে রাখল। আমার কাছে এগিয়ে এলো।
অনিদা ডাক্তারদাদা ইঞ্জেকসন দেবে বলেছে।
কেন ?
মাথাটা ব্যাথা করছিল বলেছি।
ঠিক আছে দিদিমনি নিচে গিয়ে না বলে দেবে।
ভজুরাম গিয়ে গেটের সামনে বসে পরলো।
কিরে নিচে চল। মিত্রা বললো।
না আমাকে এখানে বসতে বলেছে।
তোকে বসতে হবেনা।
অনিমেষদা হেসে ফেললো।
আমি ওকে বসতে বলেছি। ও এখন এই ঘরের পাহাড়াদার।
মিত্রা ফিক করে হেসে চলে গেল।
বুঝলে রূপায়ণ। মিত্রা অনির কলেজের বন্ধু। এক সঙ্গে একই ইয়ারে পড়াশুন করেছে। ওদের দুজনের মধ্যে একটা সম্পর্ক ছিল। তারপর কোন এক অদৃশ্য কারণে ডাক্তারের সঙ্গে মিত্রার বিয়ে হয়।
বিয়ে বললে ভুল বলা হবে। বলতে পারো মিত্রা ডাক্তারের ক্যাশ বাক্স। অনি তার বান্ধবীর বিপদে পাশে দাঁড়িয়েছে। তাতেই এই সব বিপত্তি। আমরা কি এবার অনির পাশে দাঁড়াতে পারি ?
অফকোর্স, কেন নয়।
এই তুমি আবার ভুল করলে প্রবীর। যাচাই করো, যাচাই করো।
যদি অনি ভুল করে থাকে তাকেও শাস্তি দেবার মনস্থির করো। তুমি নেগেটিভ দিক দিয়ে ভাবছনা কেন। অনিরও কোন স্বার্থ জড়িয়ে থাকতে পারে এর সঙ্গে।
প্রবীরদা চুপ করে গেলেন।
বড়দি এবার আপনারা যান। আমাদের একটু কাজ করতে দিন। আবিদ আর রতনকে একটু থাকতে বলবেন। ওদেরও ডাকতে পারি।
ওরা সকলে বেরিয়ে গেল।
অমিতাভদা সিগারেট খেতে পারি। অনিমেষদা অনুমতি চাইলেন।
হ্যাঁ হ্যাঁ খাও। মল্লিক আমার প্যাকেটটা একটু নিয়ে আয়।
এখান থেকে নিন। অনি একটা এ্যাসট্রে দে।
অনিমেষদা আমার দিকে তাকাল।
দাদার ঘরে আছে।
অনিমেষদা ভজুকে ডেকে এ্যাসট্রে আনতে বললো।
ভজু লাফাতে লাফাতে চলে গেল।
আগে অনির কথা শুনবে না। কাগজ দেখবে।
একটা কাজ করলে হয়না অনিমেষদা।
অনিমেষদা প্রবীরদার দিকে তাকাল।
বল।
রাজনাথকে ডেকে পাঠান। ওরও শোনার দরকার আছে। সামনা সামনি সবার কথা শুনি। নাহলে ও অস্বীকার করতে পারে। বলতে পারে ওর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তারপর ওকে শোকজ করা হোক। কি উত্তরদেয় দেখা যাক। তারপর সাসপেন্ড। পার্টি সদস্যপদ বাতিল।
কথাটা তুমি ঠিক বলেছো। কালকে রাজনাথের ওপর একটা আর্টিকেল বেরবার কথা ছিল অনিদের কাগজে। যার কপি অনি ওকে জেরক্স করে পাঠিয়েছিল রেজিস্টার পোস্টে। তার কপি এখানে আছে।
লেখাটা যে রাজনাথবাবু পেয়েছেন তার ডকুমেন্টসও আছে। তারপরই কিন্তু এই ঘটনা। আমার একটাই দুঃখ, তোমাদের যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তোমরা তা ঠিক ঠিক ভাবে পালন করনি।
প্রবীরদা মাথা নীচু করে রইলো।
বিধানবাবু তোমাদের ওপর নির্ভরশীল। তোমরা ভুল রিপোর্ট দিলে উনি কি করবেন।
প্রবীরদা চুপ করে আছে।
ওই জোনটা তুমি হ্যান্ডেল করছো। তোমার আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত ছিল।
প্রবীর তুমি ওকে ঘার থেকে নামাও। রূপায়ণদা বললেন।
নামাব কি করে। ওখানকার সংগঠনটা নষ্ট হয়ে যাবে।
তা বলে পার্টির ভাবমূর্তি নষ্ট হয়ে যাবে এটা কি তুমি চাও। বিধানদা বললেন।
আমাদেরও ওপর তলায় জবাবদিহি করতে হবে।
অনির কাছে যা ডকুমেন্টস আছে তাতে ও আজ না হোক কাল রাজনাথকে শেষ করবেই। আমি আজ আটকে রেখেছি। কাল পারব না। এটা যদি ভোটের আগে হয় তুমি বিরোধী পক্ষকে সামলাতে পারবে।
প্রবীরদা অনিমেষদার দিকে চমকে তাকালেন। চোখে বিষ্ময়।
এই ফাইলটা অনি গত দশবছর ধরে তৈরি করেছে। শুধু রাজনাথ বললে ভুল হবে। আমাদের আরো অনেক পার্টি কর্মী এতে জড়িয়ে আছে। উইথ ফটো এবং ডাটা। তুমি মিথ্যে বলবে কি করে। সকালে অনেক কষ্টে এই ফাইলটা আমি মিত্রার কাছ থেকে দেখেছি।
প্রবীরদা ডাঁই করা কাগজ থেকে ফাইলটা টেনে নিলেন। অনিমেষদা আমার দিকে তাকালেন।

তুই একটু বাইরের বারান্দায় দাঁড়া। একটু পরে ডাকছি।
আমি গুটি গুটি পায়ে বেরিয়ে এলাম। সোজা চলে এলাম ছোটমার ঘরের সামনে। এদিকটা অন্ধকার। নিচে খুব হৈচৈ হচ্ছে। টিনা মিলি অদিতিদের গলা পাচ্ছি। তারমানে ওরা এখনো যায়নি। নির্মাল্য আর টিনার গাড়িটা বাইরের বাগানে। একটা সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছে। পাবো কোথায়। মিত্রাকে ফোন করলাম। হৈ হৈ একটা শব্দ।
বল। খুব নীচু স্বর।
ঘরের বাইরে বেরিয়ে এলি ?
সবাই জানতে পারবে।
দেবার কাছ থেকে একটা সিগারেট নিয়ে, ছোটমার ঘরের কাছে একটু আসতে পারবি।
যাচ্ছি দাঁড়া।
ফোনটা পকেটে রাখলাম। আগামী শুক্রবার পূর্ণিমা। চাঁদটাকে থালার মতো লাগছে। কিন্তু তার আলো ততটা পরিষ্কার নয়। ফ্যাকাশে। আমগাছে নতুন বোলের গন্ধে চারদিক ম ম করছে। মাঝে মাঝে পাখির ডানার ঝটপটানি শুনতে পাচ্ছি।
কিরে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছিস।
সিগারটটা আমার দিকে এগিয়ে দিল।
কার থেকে নিলি।
ইসলামভাই-এর কাছ থেকে।
আমার দিকে তাকিয়ে।
বললিনা।
কি।
এখানে দাঁড়িয়ে কেন।
অনিমেষদা ঘর থেকে বার করে দিয়েছে। কোর কমিটির মিটিং চলছে। পরে ডাকবে বলেছে।
একটা চুমু খাব তোকে।
কেন।
তোকে দারুণ মিষ্টি লাগছে।
পেছন দিকে তাকা। ভজুরাম ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।
মিত্রা পেছন ফিরে একবার তাকিয়ে ফিক করে হেসে ফেললো।
অন্ধকার দেখতে পাবে না।
শকুনের চোখ, জানিস না। নিচে সব কি করছে।
তোর গল্প হচ্ছে। তোকে অনিমেষদা কি জিজ্ঞাসা করলো।
এখনো আমার ইন্টারভিউ শুরু হয়নি, হবে। এখন ফাইল দেখা শুরু হয়েছে।
তোর সব অরিজিন্যাল আমার কাছে, ওখানে সব জেরক্স আছে।
ওই ফাইলে সব অরিজিন্যাল ছিল!
সন্দীপ তোকে জানায়নি। অরিজিন্যাল গুলো অন্য ফাইলে রেখে জেরক্স গুলো রেখে দিয়েছে। তুই জানতে পারবি। আজ সকালে ভয়ের মারে অরিজিন্যাল ফাইলটা আমাকে দিয়ে গেছে।
কি শয়তান দেখ।
সব তোর মতো হয়ে যাচ্ছে।
হাসলাম।
অনিমেষদা আমাকে সকালবেলা জিজ্ঞাসা করলো, মামনি অরিজিন্যাল কোথায় ? আমি বললাম জানি না। বুবুন জানে। ব্যাশ চুপ।
কোথায় রেখেছিস।
আলমাড়িতে।
অর্করা কি বলেছে রে।
খালি গল্প বলেছে। তোর মোবাইলের ম্যাসেজের কথা কিছুই বলেনি।
তুই।
আমি চুপচাপ।
সন্দীপ।
গোবেচারা মুখ করে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো। তারপর বললো আমি এর বিন্দু বিসর্গ কিছুই জানিনা। অনি রাত্রিবেলা রিপোর্ট লিখে দিল। আমি কম্পোজকরে ছেপে দিলাম।
শুয়োরটার কথা জিজ্ঞাসা করেনি।
বলেছে কেউ চেনেই না। সায়ন্তন মুখের ওপর বলে দিয়েছে, কোন ইমেজ দেখাতে পারব না, অনিদার পার্মিশন ছাড়া।
তুই কালকে ওকে আমাশা রুগী বলেছিস।
মিত্রা হেসে ফেললো।
হ্যাঁ।
বেচারা সবার সামনে রাগের চোটে বলে দিয়েছে। অনিমেষদা বিধানদার সে কি হাসি।
দ্বীপায়ন কি তনুর পাঠান ইমেজগুলো দেখিয়েছে।
হ্যাঁ। ও তোকে বলতে ভুলে গেছি। তনু বেশ কয়েকবার ফোন করেছে। একবার দাদার সঙ্গে বাকি আমার সঙ্গে কথা বলেছে। ও মনেহয় শনিবার আসছে। সঙ্গে আরও অনেক কিছু নিয়ে আসবে। ও বলেছে মিত্রাদি তুমি একেবারে ভাববে না। অনি ছেড়ে দিলেও আমি সারা পৃথিবীতে রাষ্ট্রকরে দেব ওর গুণকীর্তন। জানিস খুব কাঁদছিল।
টিনারা বাড়ি গেল না ?
থাকবে। মিলি টিনা থাকবে। দেবা চলে যাবে, কাল সকালে আবার চলে আসবে।
শোবে কোথায় ?
তোর চিন্তা কি আমি তুই একসঙ্গে শোব।
তোর বাড়ির খবর নিয়েছিলি ?
নিয়েছি মানে। কালকে একবার ফোন করেছিলাম। সকালে বুড়ীমাসি এসে হাজির। তুই রবীনের ফোনেও ম্যাসেজ পাঠিয়েছিস! সকালে ম্যাসেজ দেখে বুড়ীমাসিকে নিয়ে হাজির। তোকে দেখে সে কি কান্না। শয়তানটার শ্রাদ্ধ শান্তি করে তবে শান্তি। কোন প্রকারে বাড়ি পাঠিয়েছি।
অনিমেষদা জেনেছে।
বুড়ীমাসির পেট থেকে অনেক কিছু বার করেছে অনিমেষদা।
অনিদা। ভজুরাম চেঁচিয়ে ডাকল।
যা আমার ডাক পরেছে। বড়মাকে বলনা কিছু খাবার পাঠাতে। খিদে পেয়েছে।
বলছি। তুই যা। সাবধান।

হাসলাম।
 
ঘরে ঢুকেই সবার চেহারা লক্ষ করলাম। সবাই বেশ উত্তেজিত। বিশেষ করে প্রবীরদার চোখ মুখ লাল। বুঝলাম সবাই মিলে প্রবীরদাকে চেপে ধরেছে। প্রবীরদাও ছাড়নেবালা পার্টি নয়।
কথা শুনেই বুঝতে পেরেছি। নেগেটিভ গেম খেলে।
দু’দুটো টাকার খনি প্রবীরদার আন্ডারে। একটা বেশ্যা পট্টি আর একটা আবাসন দপ্তর। মলের কেশটা তবু হজম করেছে। এইটা কিছুতেই হজম করবেনা আমি জানি।
প্রবীরদার সঙ্গে ডাক্তারের লিঙ্ক আছে।
প্রবীরদাই বিধানদাকে দিয়ে অনিমেষদাকে বলিয়ে ডাক্তারকে ছাড়িয়েছে।
অনিমেষদা একবার আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আমার মনটা বোঝার চেষ্টা করলো।
প্রবীর তোকে কিছু প্রশ্ন করবে, তুই তার ঠিক ঠিক উত্তর দে।
কি ব্যাপারে বলো।
আমরা তোর ফাইল দেখলাম। সব সত্যি নয়।
প্রবীরদা খুব ঠান্ডা কিন্তু উত্তেজনা পূর্ণ গলায় বললো।
বুঝলাম প্রথম রাতেই আমাকে বিড়ালটা মারতে হবে।
নাহলে প্রবীরদা গেম বার করে নিয়ে চলে যাবে।
তাহলে সময় নষ্ট করে লাভ কি। কাল হবেনা, পর্শু সিরিয়াল শুরু করছি। তোমরা তারপর দিন আমার এগেনস্টে কোর্টে কেশ কর। আমি ইয়োলো জার্নালিজম করেছি। প্রমাণ হলে আমার চোদ্দ বছরের জেল।
এটা কি উত্তর হলো।
আমি প্রবীরদার চোখে চোখ রেখেই অনিমেষদার সঙ্গে কথা বলছি।
যা বলার বলে দিলাম। নেক্সট যদি কিছু জানার থাকে বলতে পার।
তুই রাগ করছিস কেন।
প্রবীরদার গলা সম্পূর্ণ চেঞ্জ।
এটা কি রাগের কথা হলো। তুমি চার্জ করলে আমি চার্জড হোলাম।
সঙ্গে সঙ্গে পকেট থেকে মোবাইল বার করলাম।
ইচ্ছে করে ভয়েজ অন করে মুখার্জীকে ফোনে ধরলাম।
হ্যালো।
মুখার্জী খুব জোড় হেসে উঠলো।
কি খবর শরীর ভালো আছে।
আপনি খেলাটা খুব জোড় জমিয়ে দিয়েছেন।
সকালে অনিমেষদার সাথে কি কথা হয়েছে।
গলাটা পরিচিত মনে হচ্ছে না। অপিরিচিত অপরিচিত ঠেকছে।
আমার লোক যে আপনার পেছনেও আছে সেটা কাল রাতে বলেছি।
মাথা গরম করছেন কেন।
রাজনাথ বাবুর এ্যাকাউন্ট শিল করেছেন।
করেছি।
ডিটেলস পাঠিয়েছেন।
খামে আছে শিল করা।
ঠিক আছে, পরে আপনার সঙ্গে কথা বলছি।
আরে রাখবেন রাখবেন না।
বলুন।
আমার কিছু জানার আছে।
কি জানতে চান বলুন।

খুব প্রেসার আসছে।
অপেক্ষা করুণ পর্শুদিন থেকে রিলিফ দিয়ে দেব।
যেখানে যেখানে প্রসেসিং করতে বলেছিলাম, করেছেন ?
না হলে বাঁচব কি করে।
কোন রেজাল্ট এসেছে।
এখনো পর্যন্ত আসে নি। মনে হচ্ছে আর ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে পেয়ে যাব।
আর খবর।
আমাকে ট্রান্সফার করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে।
ওটাও রাজনাথবাবুর ঘারে চাপিয়ে দেব। চুপচাপ থাকুন।
ঠিক আছে।
ফোনটা কেটে রেকর্ডিং সেভ করলাম।
প্রবীরদার চোখে চোখ রাখলাম। চোখ দুটো যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসবে।
বিধানদা।
বিধানদা আমার দিকে ফ্যাকাশে চোখে তাকাল।
আপনার দুটো হাতই পঙ্গু হয়ে গেছে। কেটে বাদ দিন।
তুমি কি বলতে চাও। প্রবীরদা আমার দিকে তাকালেন।
বিধানদা প্রবীরদার দিকে তাকালেন। প্রবীরদা মাথা নীচু করে নিলেন।
প্রবীরদা দশবছর আগে আপনি আপনার গ্রামের পঞ্চায়েত ছিলেন। এখন সেই গ্রাম শহর হয়ে যাচ্ছে। তখন আপনি জমি বাঁচাও কমিটির লিডার হিসাবে খুব খ্যতি লাভ করেছিলেন। আর আজ আপনি পার্টির একজন বড়মাপের লিডার মন্ত্রী। সেই সময়কার কথা আপনার মনে আছে ?
প্রবীরদা আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।
ভাবছেন দশবছর আগে আমার গোঁফ দাড়ি বেরোয়নি এখবর পেলাম কোথায়।
দাঁড়া দাঁড়া তুইকি প্রবীরকেও জড়াবি নাকি। অনিমেষদা বললেন।
না। জড়াব না। তবে প্রবীরদা যদি আর একটু পা পিছলে যান, নিজেই জড়িয়ে যাবেন।
আমি প্রবীরদার দিকে তাকালাম।
কি প্রবীরদা আমি মিথ্যে কথা বলছি।
তুই সত্যি কথা বলছিস। সেটা প্রমাণ হয় কি করে।
শুনলেন তো রাজনাথ বাবুর ব্যাঙ্ক এ্যাকাউন্ট শিল করিয়েছি।
উনি সব ব্যাপারটা মুখ মুছে নেবেন। আপনি পারবেন না। উনি মজ্জফরপুর থেকে এসে এখানে পার্টির নেতা হলেন। কি করে ? আপনার বিধানদার প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়ে।
না। উনি ভালো সাংগঠক।
কখনো গিয়ে গণিকা পল্লীতে ঘুরে দেখে এসেছেন আপনাদের সংগঠনের চেহারাটা।
প্রবীরদা চুপ।
ডাকুন ডাক্তার আর রাজনাথ বাবুকে। স্বরূপটা দেখিয়ে দিচ্ছি।
কিরে প্রবীর কি করবি ? বিধানদা বললেন।
আপনি বললে ডেকে পাঠাতে পারি।
ডাক ফয়সালা আজকে এখানেই করবো। বিধানদা বললেন।
আমি অনিমেষদার দিকে তাকালাম।
আচ্ছা আমার একটা প্রশ্নের উত্তর তুমি বিধানদা দিতে পারবে।
বল।
তোমাদের একজন সাংসদের এ্যাকাউন্টে কত টাকা থাকতে পারে।
পার্টির রুলস অনুযায়ী এক পয়সাও না। পার্টির হোলটাইমার। সমস্ত খরচ পার্টি বহন করবে।
রাজনাথ বাবুর যে তিনটে এ্যাকাউন্ট শিল করিয়েছি। সেখানে মিনিমাম একশো কটি আছে। পর্শুদিন সেখান থেকে কাছাকাছি এককোটি তোলা হয়েছে।
অনিমেষদা বিধানদা আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে।
প্রবীরদা আপনি জানেন।
আমার জানার কথা নয়।
বিধানদা আপনি জানেন।
তুই যা বলছিস মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
আমি কিন্তু গল্প বলছিনা। হাতে ডকুমেন্টস নিয়ে কথা বলছি।
দেখাতে পারবি।
পারবো।
কিরে প্রবীর তুই সেদিন বললি ডাক্তার সৎ লোক আজ কি দেখছিস।
প্রবীরদা বিধানদার দিকে তাকিয়ে।
তোর কথায় অনিমেষকে বলে ডাক্তারকে ছাড়লাম। তারপর রাজনাথ। তোরা কি ভেবেছিস। তোদের ওপর পার্টির দায়িত্ব দিলে পার্টি দুদিনে লাটে উঠে যাবে।
সব বাজে কথা।
মিত্রা হাসতে হাসতে গেটের সামনে এসে দাঁড়াল। আসতে পারি।
ঘরের আবহাওয়া মুহূর্তের মধ্যে তুমুল পরিবর্তন হয়ে গেল। সবার হাসি হাসি মুখ। দাদা, মল্লিকদা গম্ভীর।
আয়। মিত্রা ডাকল।
দেখলাম টিনা, মিলি। সবার হাতে ট্রে। ওরা ভেতরে এলো।
অনিমেষদা হাসতে হাসতে বললেন। এতো খেতে পারবনা।
বৌদি বানিয়েছে।
দে তাহলে।
ওরা সবার হাতে প্লেট ধরিয়ে দিয়ে চলে গেল।
খাবার পর্ব চললো। খেতে খেতে কথা হচ্ছে। আমার কাছ থেকে বিধানদা অনিমেষদা ডাক্তারের কথা শুনতে চাইছে। আমি বললাম আস্তে দাও। সব শোনাব। তোমরা দেখতে চাইলে ডকুমেন্টস দেখাব। প্রবীরদা গুম হয়ে আছে।
অনুপদা রূপায়নদা চুপচাপ।
প্রবীরদা ফোন করলো। আমাদের খাবার পর্ব শেষ হতে না হতেই রাজনাথবাবু ডাক্তার এসে হাজির। বুঝতে পারলাম কাছা কাছি ছিল এরা।
সঙ্গে দুজন লোক। চিন্তে পারলাম না। দেখেই মাথাটা আমার গরম হয়ে গেল। ডাক্তারের মুখ ফুলে ঢোল। ভজু দুটো চেয়ার নিয়ে এলো। খাওয়া শেষ। দরজা বন্ধ হলো।
অনিবাবু আপনি কাজটা ভালো করলেন না এরজন্য আপনাকে ভুগতে হবে।
রাজনাথ বাবু বললেন।
দুম করে মাথাটা গরম হয়ে গেল।
মুহূর্তের মধ্যে আমার চেহারার যে পরিবর্তন হলো সেটা ঘরের সবাই লক্ষ্য করলো।
আপনার মতো দশটা এমপির জন্ম আমি একা দিতে পারি।
কাল রাতেই আপনাকে এনকাউন্টারে মারতাম। খালি আমার একটা ভুলে তা হল না। তাহলে আজ আপনি এখানে বসে আমার ঘরে বক্তব্য রাখতে পারতেন না।
এতোবড়ো ক্ষমতা আপনার।
দেখলেন না আপনার আনা কুত্তাগুলোকে কিরকম ভাবে মেরেছি। ছবি দেখেন নি কাগজে।
ওদের সঙ্গে আমার কোন রিলেসন নেই।
সঙ্গে সঙ্গে ফোন তুললাম। ভয়েজ অন করা।
অর্ক।
হ্যাঁ।
কাজ শেষ।
হ্যাঁ দাদা।
তুই সায়ন্তন একবার আমার বাড়িতে আয়।
আচ্ছা দাদা।
কি ডাক্তার শুক্রবার সকালবেলা ভাআইপি স্যুটকেস নিয়ে রাজনাথবাবুর বাড়িতে কি করতে গেছিলেন। গাড়ির নম্বরটা বলে দেব।
আপনি মিথ্যে কথা বলছেন। রাজনাথবাবু চেঁচিয়ে উঠলেন।
আপনি সবার সামনে আমাকে ফাঁসাতে চাইছেন।
কতটাকা রাজনাথ বাবুকে দিয়েছিলেন।
এক পয়সাও দিইনি।
তারমানে এসেছিলেন। কিছু দেন নি এই তো।
আমি যাই নি।
ভিডিও ক্লিপিংস দেখাব।
ডাক্তার চুপ।
একজন সাংসদের কাছে উনি আসতেই পারেন। রাজনাথবাবু বললেন।
তাহলে এতোক্ষণ তরপাচ্ছিলেন কেন।
কি প্রবীরদা এখানেই থামব না আরও এগোব। আপনি যা বলবেন।
প্রবীরদা মাথা নীচু করলো।
বিধানদা রাজনাথবাবুর দিকে কট কট করে তাকিয়ে আছে।
তুই ক্রস কর, আমি নোট ডাউন করাচ্ছি। অনুপ সব লেখ। এটাই মিনিট বুক হিসাবে ট্রিট হবে। অনিমেষদা বললো।
বিশ্বাস করুণ দাদা সব ষড়যন্ত্র। তারপর হতাশ চোখে আমার দিকে তাকালেন।
রাজনাথবাবু আপনি টোডিকে চেনেন।
না।
ডাক্তার আপনি ?
না।
মিত্রাকে চেনেন।
হ্যাঁ।
কে হয় আপনার।
ডাক্তার মাথা নীচু করে রয়েছে।

আপনার বৌ টোডির বিছানায় শুতো, আপনি জানতেন।
 
কি বাজে কথা বলছিস তুই। অনিমেষদা চেঁচিয়ে উঠলো।
কি ডাক্তার বাজে কথা, না ঠিক কথা। মিঃ ব্যানার্জীর দিকে তাকিয়ে বললাম।
বাজে কথা।
ছবি বার করি সবার সামনে। পেছনে আপনার সই আছে।
ডাক্তারের মাথা নীচু।
আপনার মুখের অবস্থা এরকম হলো কি করে।
দুজনেই চুপ করে রইলো।
কাল চৌধুরীবাড়ি থেকে বড়াত জোরে বেঁচে গেছেন দু’জনে। নাহলে ওখানেই খেল খতম করে দিতাম। দৌড়ে পালাতে গিয়ে লাইনে পড়ে মুখের হাল এই করেছেন।
থানায় মিথ্যে ডাইরীও করেছেন আমার নামে। রাজনাথবাবু তখন আপনার পাশে ছিলেন। তখন জানতেন না, বড় খেলাটা আমি খেলে ফেলেছি।
রাজনাথবাবু ডাক্তার মাথা নীচু করে আছে।
রাজনাথবাবু মেয়েগুলো তাদের বয়ানে আপনার আর ডাক্তারের নাম বলেছে। যে মেয়েগুলোকে নিয়ে আপনি কাজ করছিলেন। তাদের সাপ্লায়ার আমার রিক্রুটার। যে হিজরেটা মেয়েগুলোকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিল। সে আমার হাউসের সাংবাদিক।
এর মধ্যে দুটো মেয়ে ছিল যারা সবে মাত্রা ফ্রি-ল্যান্সার হিসেবে আমাদের কাগজে লিখতে শুরু করেছে। মাথায় রাখবেন ওটা টোপ। আপনি গিলেছেন। এবার বুঝেছেন আপনার মতো দশটা এমপির কেন জন্ম দিতে পারি।
দাদা মল্লিকদা একবার উঠে দাঁড়ালেন। অনিমেষদা ইশারায় বললেন, বসুন।
কেউ যেন অনিমেষদা বিধানদার গালে সপাটে একটা থাপ্পর মারল।
প্রবীরদা উঠে আসুন ডাক্তার আর রাজনাথের ছবি দেখবেন আসুন।
আমি টেবিলের ওপর থেকে মানি পার্টসটা তুলে নিলাম।
ভেতর থেকে চাবিটা বার করে আলমাড়ি খুললাম। খামটা বার করতেই দাদা চেঁচিয়ে উঠল, তুই সত্যি দেখাবি নাকি।
কেন দেখাব না। প্রবীরদা এতোক্ষণ সাপোর্ট করছিল রাজনাথ বাবুকে। রাজনাথবাবু বললেন সব অসত্য বলছি। আমি ষড়যন্ত্র করছি। দেখে যাক।
গালা বন্ধ করা খামটা বার করলাম।
দরজায় ধাক্কা পরলো। আমি এগিয়ে গেলাম। দেখলাম অর্ক, সন্দীপ, দ্বীপায়ন, সায়ন্তন। গেটের বাইরে বাড়ির সবাই দাঁড়িয়ে আছে। সবার মুখ শুকনো। ওদের চারজনকে ভেতরে ঢোকালাম। আমি গেট বন্ধ করলাম।
দ্বীপায়ন।
দাদা।
আমার মোবাইল থেকে ম্যাসেজ গুলো ল্যাপটপে ঢেলে প্রিন্ট দাও। অর্ক তোমাকে হেল্প করছে।
সন্দীপ।
বল।
তোর ল্যাপটপে সায়ন্তনের চিপটা ঢুকিয়ে ট্রান্সফার কর।
দাদা আমার ল্যাপটপে সব আছে সায়ন্তনেরটাও আছে অর্করটাও আছে। দ্বীপায়ন বললো।
দ্বীপায়ন কাল মুখার্জী যে চিপটা দিলো সেটা কোথায়।
আমার কাছে। কাউকে দেখাই নি।
তুমি নিজে দেখেছো।
দ্বীপায়ন মাথা নীচু করলো।
তার মধ্যে এদের দুজনের ছবি আছে, ভাল করে দেখতো।
দ্বীপায়ন মাথা দোলাচ্ছে।
ওটাও দেখিয়ে দাও এনাদের। ফস্টি নস্টির সময় নিজেদের ছবিটা কেমন দেখতে লাগে দেখুক।
অনিমেষদার দিকে তাকালাম তোমরাও দেখো। আমি একটু আসছি।
তুই যাবিনা এখন। প্রবীরদা বললো।
ভয় নেই বাইরে অনেক দর্শক, তাদের চাহিদাটা একটু মিটিয়ে আসি।
এখুনি আয়, তারপর এদের দুজনের মজা দেখাচ্ছি।
আমি ঘরের দরজা খুলে বাইরে এলাম।
দরজা আবার বন্ধ করে দিলাম।
মিত্রা এগিয়ে এলো। আমার পাঞ্জাবী খামচে ধরলো। চোখে মুখে চাপা উত্তেজনা।
কিরে তুই চেঁচাচ্ছিলি কেন।
আমি হাসলাম।
বড়মা, ছোটমা, বৌদি এগিয়ে এলো।
দূরে টিনা, মিলি, নীপা, সুরো দাঁড়িয়ে।
ওইদিকে ইসলামভাই, নিরঞ্জনদা, রতন, আবিদ, অনাদি, চিকনা, বাসু।
কিরে কি বলছে শয়তান দুটো।
কিছু না। ওরা ওদের কথা বলছে। সবাই বাঁচতে চায়।
দাঁড়া বাঁচাচ্ছি। বৌদি এগিয়ে গেলো।
তুমি কোথায় যাচ্ছ ?
একবারে কথা বলবিনা। অনেক বার বেড়েছে ওরা।
বৌদি দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে গেলো।
আমি ইসলামভাইকে ইশারায় ডেকে নিচে নেমে এলাম।
নামতে নামতে অরিত্রকে একটা ফোন করলাম। ভয়েজ অন করা আছে।
বলো দাদা।
কাজ মিটেছে ?
হ্যাঁ।
খুব টেনসনে আছিস মনে হচ্ছে।
থাকবো না। তুমি আমাকে ইনভিজিবল ম্যান করে রেখে দিয়েছ।
তুই আমার ট্রাম্প কার্ড।
হো হো করে হেসে ফেললো অরিত্র।
হাসলি যে।
তোমার কাছে কে ট্রম্প কার্ড কে টেক্কা বোঝা মুস্কিল।
তোকে যে যে দায়িত্ব দিয়েছিলাম করেছিস।
সব।
গুড। আচ্ছা তোর সঙ্গে যখন কথা বলবো তোর গলা যাতে এরা বুঝতে না পারে তার ব্যবস্থা করতে পারবি।
কেন পারবনা মেয়েদের গলা বানিয়ে নেব।
পারবি।
প্র্যাক্টিশ করে নিচ্ছি।
কর। নেক্সট টাইম তোকে রিং করলেই তুই মেয়েলি কন্ঠে কথা বলবি। আর না করলে বুঝবি পজিসন আমার অনুকূলে।
আচ্ছা।
তোকে কি নামে ডাকবো বল।
এটাও তোমাকে বলে দিতে হবে।
ওই মেয়েটার নামে।
এইতো তুমি চাটতে শুরু করে দিলে। তাই ডেকো।
কি যেন নামটা ?
রাত্রি।
আর একটা কে ছিলো যেন।
খুশী।
রাত্রি, খুশী, বাবা তুই কবে সকাল হবি বলতো।
খুশীকে অর্ক ইঁট পেতেছে।
কিরে মাল ফাঁস হয়ে যায়নি ?
একেবারে না।
হাসলাম। রেডি থাকিস।
ঠিক আছে।
নিচে নেমে বাগানে এলাম। ওরা সবাই আমার কথা বলা শুনলো।
ওপরে ফাটা ফাটি শুরু হয়ে গেছে। বৌদি তাড়স্বরে চেঁচাচ্ছে। বুঝতে পারছি অনিমেষদা, বিধানদার সঙ্গে একচোট হচ্ছে। মহিলা সমিতির রাজ্যসম্পাদক বলে কথা।
ইসলামভাই আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো।
বাসু একটা সিগারেট বার করে আমার হাতে দিল।
ইসলামভাই।
বল।
দামিনী মাসি ডাক্তারদাদা কোথায় ?
নিচের ঘরে।
কি করছে।
কি আবার করবে বসে আছে। কার ভাল লাগে বল।
ঠিক।
অনাদির দিকে তাকালাম।
কাল সকালে কখন যাবি।
শেষ না দেখে যাব না।
পাগলাম করিসনা। ওখানে অনেক কাজ পরে আছে।
তোর হিসাবের দরকার হিসাব নিবি।
অনাদির দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললাম।
হ্যাঁরে অনি ওই মুখফোলাটা ডাক্তার। চিকনা আমার দিকে তাকিয়ে বললো।
হ্যাঁ।

শালাকে একবার আমাদের ওখানে ভুলিয়ে ভালিয়ে নিয়ে চলনা।
 
কেন তুই আচ্ছা করে আড়ং ধোলাই দিবি।
খড়গাদায় ঢুকিয়ে আগুন জালিয়ে দেব, খুঁজেই পাওয়া যাবে না।
ছাগল।
ইসলামভাই হাসছে। কারসঙ্গে কথা বললি।
শুনলে তো ট্রাম্পকার্ড।
ওর পরে আর কজন আছে।
ওটাই লাস্ট লাইন।
ওকে কি মেয়ে সাজিয়েছিলি।
না।
তাহলে।
কাজ শেষ হোক, বলবো।
লক্ষ্মী কোথায় ?
ইসলামভাই-এর দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকালাম। তাহলে কি ?
কেন লক্ষ্মীর কি হয়েছে!
ও শুক্রবার বাড়ি গেছে, এখনো ফেরে নি।
মাসিকে জিজ্ঞাসা করো।
মাসি বাড়িতে লোক পাঠিয়েছিল। ও বাড়িতে যায় নি।
রতন মাসিকে ডাক।
রতন বিকেলে খবর নিয়ে এসেছে। ও তোর কাছে আছে।
তাহলে সব যখন জেনে ফেলেছ তখন আমায় জিজ্ঞাসা করছো কেন ?
আমি তোর কাছ থেকে কি করে খেলতে হয় শিখছি।
পারবে না। আমি মুহূর্তে মুহূর্তে প্ল্যান চেঞ্জ করি।
আমি বড়দিকে বলতে বাধ্য হয়েছি। তুই একমাত্র বড়দির কাছে ঠিক থাকিস।
আমার মা যে। মা কষ্ট পাবে, এটা চোখে দেখতে পারব না।
এবার বল লক্ষ্মী কোথায় আছে।
আমি ইসলামভাই-এর দিকে তাকালাম।
কিরে ও স্বীকার করেছে। দামিনী মাসির গলা।
আমি পেছন ফিরে দামিনী মাসির দিকে তাকালাম। মাসি মুখ নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে। বাগানের চারিদিকে আলো আঁধারি অন্ধকার। চাঁদের সুরভি ঝড়ে ঝড়ে পরছে। আমি এগিয়ে গিয়ে মাসিকে জড়িয়ে ধরলাম। মাসি মুখ তুলে তাকালো। চোখের পাতা ভিঁজে গেছে।
কিগো সবাই ওপরে গেল তুমি গেলে না।
মাসি মাথা নীচু করলো।
লক্ষ্মী আমার বোন। ওকে একটা ছোট্ট কাজের দায়িত্ব দিয়েছিলাম। ও করেছে।
এখন খবর নাও দেখ ও চলে এসেছে।
মাসি আমার বুকে মাথা রাখলো।
ওর কিছু হয়নি ?
তুমি কথা বলবে ওর সঙ্গে।
ওর ফোন পাচ্ছি না। সুইচ অফ।
ঠিক আছে, তুমি কথা বলো।
আমি ফোনটা পকেট থেকে বার করে ডায়াল করলাম। সবাই আমার দিকে বিষ্ময়ে তাকিয়ে আছে। মুখ দিয়ে কারুর কোন শব্দ বেরচ্ছে না। যেন দম বন্ধ হয়ে আছে সবার।
রিং হতেই ভয়েজ অন করলাম।
অনিদা তুমি কেমন আছো ?
কেনোরে!
তোমার শরীর খারাপ শুনলাম।
আমি ভালো আছি।
কাজ শুরু হয়েছে।
হয়েছে। তুই কোথায় ?
এইতো ঘরে ঢুকে হাত মুখ ধুয়ে একটু শুয়েছি।
কোন অসুবিধে হয়নি।
একেবারে না। দাদাটা কি ভালো গো।
কোন টর্চার করেনি।
না গো না। রাজার হালে ছিলাম। অনিদা।
কিরে।
মাসি আমার ওপর ভীষণ খেপে গেছে। বাড়িতে লোক পাঠিয়েছিল। আমাকে আচ্ছা করে দেবে।
আমার কথা বলবি।
তুমি মাসির বাঁধা নাগর।
তাহলে। নে মাসির সঙ্গে কথা বল।
মাসির সঙ্গে! না না আমাকে শেষ করে ফেলবে মাসি।
আমি তো বলছি করবে না।
লক্ষ্মী চুপ করে রয়েছে।
তোরা সবাই চলে এসেছিস।
হ্যাঁ।
কারুর কনো অসুবিধে হয়নি।
একেবারে না। একটা ভুল হয়েগেছে।
কি ভুল করলি।
শালাকে হাতের কাছে পেয়েও ছেড়েদিলাম।
ঠিক আছে পরেরবার ভুল করিসনা। তোর মোবাইলটা চালু করে দে। এটা ভাইব্রেসন মুডে রেখেদে। ওকি তোর কাছাকাছি আছে।
না, দাদা এখুনি বেরিয়ে গেল।
ওর সঙ্গে আবার ইন্টু মিন্টু করিসনি ?
ধ্যাত তুমি যে কি না।
আর দুটো।
দাদার সঙ্গেই গেছে।
ঠিক আছে তুই মাসির সঙ্গে কথা বল।
মাসির হাতে ফোনটা দিয়ে আমি বসার ঘরের দিকে এগিয়ে গেলাম। ঢুকেই দেখি ডাক্তারদাদা টিভি দেখছে। নিউজ চ্যানেল। আমাকে দেখে মুচকি হাসল।
তুমি একা একা।
খবর আসার প্রতীক্ষায়।
কেন দেখছো তো।
বাসি খবর।
টাটকা পেতে পেতে রাত হবে। এত সহজে কেউ জমি ছেড়ে দেয়।
সে তো বুঝলাম। ওরা ভীষণ ঘোড়েল, মানবে কি।
না মনলে আমার পথ আমি দেখবো। ওদের পথ ওরা দেখে নেবে। তারপর ক্ষমতার লড়াই।
তুই পারবি। অন্যকেউ হলে মাঝপথে রণে ভঙ্গ দিত।
আমি রান্না ঘরের দিকে পা বারালাম।
ওদিকে আবার কোথায় যাচ্ছিস ?
একটু চায়ের সন্ধানে।
থাকলে আমাকে একটু দিস।
রান্না ঘরে ঢুকে ফ্লাক্সটা নাড়িয়ে দেখলাম। একটু আছে, আমার আর ডাক্তারদাদার হয়ে যাবে। দুটো কাপ বার করলাম। ধুয়ে নিলাম।
কিরে তুই এখানে কি করছিস! কি চুরি করতে এসেছিস ?
পেছন ফিরে দেখলাম মিত্রা।
একটু চা খাবো।
একবার বাইরের দিকটা উঁকি মেরেই আমাকে জাপ্টে ধরে গালে চকাত করে একটা চুমু খেলো।
এই দেখো দেখো।
কি হলোরে অনি। ডাক্তারদাদা চেঁচিয়ে উঠলো।
মিত্রা বুকে হাত দিয়ে বড়ো বড়ো চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে। চোখের ভাষা, এক থাপ্পর।
এই যে আপনার মামনি ঠেলা মারল, আর একটু হলে কাপটা পড়ে যাচ্ছিল।
মিত্রা আমার কোমরে রাম চিমটি মারলো। ভীষণ জ্বালা জ্বালা করছে।
আস্তে করে বললো, শয়তান।
তোকে ওপরে ডাকছে। জোরে শব্দ করে বললো।
ঝামেলা করিসনা চা ঢালছি।
ও আবার কি ঝামেলা করছেরে। ডাক্তারদাদা চেঁচালো।
নাগো মিথ্যে কথা বলছে।
তোর ইন্টারভিউ হলো।
আমার আর ইন্টারভিউ কিরে, বৌদি যা মিষ্টি মিষ্টি দিচ্ছে না।
প্রবীর না কে তার মুখ শুকিয়ে একেবারে আমসত্ব।
থাপ্পর-টাপ্পর কিছু মারলি।
মারতে বলেছিল। ছুঁতে ঘেন্না করলো।
ডাক্তারদাদাকে কাপটা দিয়ে আয়।
মিত্রা বেরিয়ে গেল কাপ হাতে। আমি রান্না ঘরে দাঁড়িয়েই চায়ের কাপে চুমুক মারলাম।
কিগো মাসি তোমার চোখটা ছলছলে কেন! মিত্রার গলা।
অনির কীর্তিকলাপে কার চোখ খটখটে শুকনো আছে বলতো। ডাক্তারদাদা বললো।
নিশ্চই বুবুন তোমায় কিছু বলেছে। দাঁড়াও ওর ঘাড় মটকাচ্ছি গিয়ে।
শেষর কথা গুলো চিবিয়ে চিবিয়ে বললো।

ওরে না না ও কিছু বলেনি।
 
তাহলে!
এমনি। কোথায় ও ?
রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে চা গিলছে।
বুঝলাম মাসি রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে আসছে। আমি চা খেয়ে বেসিনে কাপটা ধুলাম।
কিরে তুই ধুচ্ছিস। আমি ধুয়ে রাখতাম।
সকাল থেকে অনেক কাজ করছো। এটুকু করলে তোমাদের উপকার হবে না।
আমি কাপটা রাখলাম। টাওয়েলে হাতটা মুছলাম। মিত্রা রান্নাঘরের মুখে দাঁড়িয়ে।
কথা হলো।
মাসি মুখ তুললো।
চুপ করে থাকলে হবে। হ্যাঁ না কিছু বলো।
মাসি মাথা নীচু করে ধরা গলায় বললো, হ্যাঁ।
দেখলাম মিত্রার চোখের রং বদলে যাচ্ছে। ওর চোখে জিজ্ঞাসা।
দাও মোবাইলটা দাও। ওপরে ডাকছে। শেষটুকু সেরে আসি।
মাসির হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে গট গট করে বেরিয়ে এলাম। সিঁড়ির মুখ বাসুরা দাঁড়িয়ে। ইসলামভাই আমার দিকে তাকিয়ে একবার মুচকি হাসলো।
ওপরে এসে দেখলাম ঘরের দরজা খোলা। সবাই ঘরের বাইরে। সন্দেহ হলো। মিটিং শেষ! ভেতরে ঢুকলাম। চা পর্ব চলছে। দেখলাম রাজনাথবাবু এবং ডাক্তারের হাতেও চায়ের কাপ। রাজনাথবাবু আমার দিকে কট কট করে তাকাল। মাথাটা আবার পূর্ব অবস্থায় ফিরে এলো।
কি প্রবীরদা সব দেখলেন ?
প্রবীরদা আমার দিকে তাকালেন।
অর্ক ডিটেলস দিয়েছিস।
হ্যাঁ অনিদা।
দ্বীপায়ন ম্যাসেজের প্রিন্ট আউট দিয়েছ।
হ্যাঁ।
বলুন প্রবীরদা আমার কাছ থেকে আপনি আর কি জানতে চান ?
তুই তাড়াহুড়ো করছিস কেন। একটু বোস। অনিমেষদা বললো।
আমি একটা চেয়ার নিয়ে এসে বসলাম।
বলো।
তোমরা এবার একটু বাইরে যাও। তুমিও যাও।
বৌদি আর অর্কদের দিকে তাকিয়ে অনিমেষদা বললো।
ওরা সকলে বাইরে বেরিয়ে গেল। আবার দরজা বন্ধ হলো।
আমি নিজের জায়গায় এসে বসলাম।
অনি তুই আমাকে একটা সত্যি কথা বলবি। প্রবীরদা বললেন।
বলুন।
তুই রাজনাথকে ফাঁসাতে চাইছিস কেন।
রাজনাথবাবুকে ফাঁসাতে চাইনি। উনি নিজে থেকে ফেঁসেছেন।
কেন বলছিস।
উনি ডাক্তারকে সাহায্য করতে চাইছেন।
তাহলে ডাক্তারের কাছ থেকে উনি সরে এলে তুই হাত সরিয়ে নিবি।
বাকি দোষ গুলো সোধরাতে পারবেন ?
বল শুনি।
ওনাকে জিজ্ঞাসা করুণ।
কি রাজনাথবাবু অনি কি বলছে ?
সব মিথ্যে।
তাহলে এতোক্ষণ ওরা যা দেখিয়েছে সব মিথ্যে।
মিথ্যে।
কাল বরাত জোরে বেঁচে গেছেন। সেলটা খালি ফাটেনি। ফলস হয়ে গেছে। কচি মেয়েদের নিয়ে ফুর্তি। আর সাতটা টেররিস্ট লাগিয়ে দিলেন। এই গুলোকে শেষ করে দে। স্পন্সর ডাক্তার।
একবারে ফালতু কথা বলবে না।
এরা কেউ আপনাকে বাঁচাতে পারবেনা। আপনার একটা টমিকে কালকে তুলে নিয়ে গিয়ে সাঁটিয়ে দিয়েছি। নিশ্চই আজকের কাগজে ছবি দেখেছেন। আর চারটে ভেতরে আছে। আলিপুর জেলে খবর পাঠিয়ে দিয়েছি।
দাঁড় দাঁড়া দাঁড়া….। প্রবীরদা বলে উঠলো।
আমি কন্টিনিউ বলে যাচ্ছি।
সেলের অন্য ছেলেরা পিটিয়ে মেরে দেবে। আমি লিখবো জেলের ভেতরে বন্দীদের নিজেদের মধ্যে মারা মারিতে এই চারজন মরে গেছে। কি বুঝলেন ?
আপনি কিন্তু বড্ড বেশি বাড়াবাড়ি করছেন। রাজনাথ চেঁচিয়ে উঠলো।
আপনার সঙ্গে কারা মন্ত্রীর সাপে নেউলে সম্পর্ক, তায় আবার অন্য পার্টির লোক। ফোন করলে পাত্তা দেবেনা। পারবেন আটকাতে ? আপনি সাংসদ। অনেক ক্ষমতা।
রাজনাথবাবুর মুখ চোখ লাল হয়ে গেছে। কথা বলতে পারছেন না।
আপনাকে আর একটা কথা এদের সামনে বলে রাখি। ভাল করে শুনে নিন।
সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
আপনি যে এত তাড়াতাড়ি গেমটা ছেড়ে দেবন না সেটা আমি জানি। জানি বলেই আমার ঘুঁটি অনেক দূর পর্যন্ত সাজানো আছে। আপনার নেক্সট টার্গেট অনিমেষদা।
অনি….! বিধানদার মুখ থেকে অস্ফুট স্বর বেরিয়ে এলো। আমি বলে চলেছি।
অনিমেষদার শরীরের একটা লোমে যদি হাত পরে আপনার মুজফ্ফরপুরের পাঁচ বউ সমেত বংশ লোপাট করে দেব। আমি দাদার দাদা। আমার কোন পিছু টান নেই।
কি ভুলভাল বকছিস তুই। অনিমেষদা বললেন।
কি বিধানদা প্রমাণ চান।
দিতে পারবি।
সঙ্গে সঙ্গে ফোনে অরিত্রকে ধরলাম।
হ্যাঁ দাদা। মেয়ের গলা।
সবাই শুনছে।
তোকে মেয়ের গলায় আর কথা বলতে হবে না তুই ছেলের গলায় কথা বল।
ঠিক আছে।
কালকে যে রকর্ডিংটা করেছিস শোনা।
ফোনে শোনালে শুনতে পাবে।
আমি ভয়েজ অন করে রেখেছি। শোন।
বলো।
খালি ওই জায়গাটুকু শোনাবি। পাঁচমিনিট আগে থেকে পাঁচমিনিট পর পর্যন্ত।
আচ্ছা।
অরিত্র রেকর্ডিং শোনাতে শুরু করলো। সবাই শুনছে। চোখ মুখ সবার লাল হয়ে যাচ্ছে। একমাত্র প্রবীরদা ভাবলেশহীন মুখে বসে আছে। চার পাঁচটা মেয়ের গলা। লক্ষ্মীর গলা রাজনাথ আর ডাক্তারের গলা স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে।
শেষ হলো।
এবার রেখেদে। ঘুমিয়ে পর।
আচ্ছা।
আমার পরিবর্তন আমি নিজে বুঝতে পারছি। ওদেরও চোখে মুখের পরিবর্তন হয়েছে। আমি ফোনটা পকেটে রেখে রাজনাথের দিকে তাকালাম
আপনার সামনে যিনি বসে আছেন, গত সপ্তাহে ওর পকেট থেকে বাই চেকে আশি কোটিটাকা বার করে নিয়েছি। এবার ইনকামট্যাক্সকে ওর পেছনে লাগিয়ে দিয়েছি।
ওকে মারব না, এমনিই স্যুইসাইড করবে।
ওর আর চারটে বউ-এর কাছে নোটিস পাঠিয়ে দিয়েছি।
ডাক্তার একবার উঠে দাঁড়িয়ে বসে পরলো।
কি শরীরে পার্টস গুলো সব ঠিক ঠাক আছে তো। আমার ইঙ্গিত পূর্ণ কথা সবাই ধরতে পেরেছে।
ঘরের সবাই আমার কথায় থ।
কি প্রবীরদা আপনি আর কিছু শুনতে চান।
রাজনাথবাবু অনিমেষদাকে মারতে চায়!
সামনে বসে আছে প্রতিবাদ করতে বলুন। আমিতো সব মিথ্যে বলছি। শুনলেন তো নিজের কানে কেমন ষঢ়যন্ত্র করছি।
কি রাজনাথবাবু আপনি অনির কথার প্রতিবাদ করুণ।
আমি এরকম করতে পারিনা।
গলাটা মিথ্যে ? তাহলে ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে পাঠাই।
রাজনাথবাবু চুপ।
সঙ্গে সঙ্গে ফোনটা বার করলাম। লক্ষ্মীর ছবিটা বারকরলাম।
প্রবীরদার কেছে গিয়ে বললাম, দেখুন এই মেয়েটাকে আপনারা এতোক্ষণ ভিডিওতে দেখেছেন।
ওরা দেখাই নি।
তাহলে এতোক্ষণ কি করলেন।
রাজনাথবাবুর কাছে এগিয়ে গেলাম।
দেখুন একে চেনেন।
না চিনি না।
বাঃ এর নথ (বেশ্যা বা বাইজী বাড়িতে একবারে অনকরা মেয়েদের প্রথম সেক্স) ভাঙলেন আর একে চেনেন না।
না চিনি না।
দামিনীকে চেনেন।
আমার সঙ্গে নোংরা মেয়েদের সম্পর্ক নেই।
দাদা তুমি বাইরে যাও।
না দাদা থাকুক তুই বল। অনিমেষদা বললো।
আমি টেবিলের ওপর থেকে খামটা নিলাম। গালা খুলে কাগজগুলো বার করলাম হ্যাঁ সিডিটা আছে। ল্যাপটপটা অন করে আড়াল করে সিডিটা ঢোকালাম। সত্যি মুখার্জী তোমায় হ্যাটস অফ। দারুণ কাজ। হেসে ফেললাম।
কি রাজনাথবাবু দেখবেন নাকি আপনার আর ডাক্তারের ফস্টি নস্টি। আপনি তো নোংরা মেয়েদের সঙ্গে আবার সম্পর্ক রাখেন না।
তোমাকে না আমি খুন করে দেব।
সে সময় আপনাকে দেব না। কি প্রবীরদা কিছু বুঝছেন।
প্রবীরদার চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে।
আসুন একবার, অনি মিথ্যে কথা বলে কিনা দেখে যান। আর এই কাগজগুলো আপনাকে কালকে জেরক্স দেব। এখানে সরকারী কি কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে রাজনাথবাবুর এগেনস্টে তা আছে।
অলরেডি একটা কপি পার্লামেন্ট এ্যাফেয়ারস কমিটিতে চলে গেছে।
কপি টু স্পিকার এবং প্রাইমিনিস্টার।
আর যাকে যাকে পাঠাবার পাঠান হয়ে গেছে। কি রাজনাথবাবু এবার আপনার বক্তব্য বলুন।
সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বসে আছে।
কি হলো। সব চুপ চাপ কেন।
তুই সত্যি এগুলো করে দিয়েছিস! অনিমেষদা বললো।
আমি তোমার ওপর বিশ্বাস রাখতে পারিনি। কারণ তুমি একা ডিসিসন মেকার নয়।
তাহলে একটা বিষয়কে নিয়ে এতোক্ষণ মিটিং করতে না।
বিধানবাবু এখুনি সাসপেনড করুন না হলে মুখ রক্ষা করা যাবে না। ব্যাকডেটে কাজটা করতে হবে। অনিমেষদা চেঁচিয়ে উঠলেন।
তুই একা করেছিস! প্রবীরদা বললেন।
আমার টিম করেছে। আপনারা যা দেখলেন তাছাড়াও আরও অনেক কিছু আমার কাছে আছে, সেগুলো যথাযথ জায়গায় প্রডিউস করা হয়েগেছে।
ডাক্তারের দিকে তাকালাম।
শুধু শুধু আপনি রাজনাথবাবুকে ফাঁসালেন।
আপনি আমার পারফরমেন্সের ব্যাপারটা জানতেন।
তবু কেন ওনাকে বলতে গেলেন।
রাজনাথবাবু আপনাকে বাঁচাতে পারলেন না। নিজে ডুবলেন। এবার আপনি টোডির আশ্রয়ে যাবেন এই তো ? ওটা আরও বড় চেইন মিডিল ইস্ট পর্যন্ত। তবে টোডির পাত্তা আপনি পাবেন না।
প্রবীরদার দিকে তাকালাম।
প্রবীরদা আপনি আর কিছু জানতে চান।
তুইতো সব এন্ড করে দিয়েছিস।
বাধ্য হয়েছি। আপনি যেন তেন প্রকারে রাজনাথবাবুকে বাঁচাতে চেয়েছিলেন। বলতে পারেন প্রেসার ক্রিয়েট করে।
এটা বাজে কথা বললি। একটু চেঁচিয়ে।
অনিমেষদা প্রবীরদার দিকে তাকালেন।
গোপাল হালদারের সঙ্গ ত্যাগ করুণ। ও আপনার এ্যারাইভ্যাল পার্টির লিঙ্কম্যান।
আমি জানি।
তাহলে আপনি আপনার পার্টির গোপন খবর ওর মাধ্যমে বিরোধীদের হাতে তুলে দিচ্ছেন।
কি বলতে চাস তুই।
আপনি এতো উত্তেজিত হচ্ছেন কেন।
তুই বাজে কথা বলছিস দু’জন সিনিয়ার লিডারের সামনে। কান ভাঙাচ্ছিস। তুই কি আমাকে রাজনাথবাবু পেয়েছিস ?
ওটা আজ থেকে বিধানদা বুঝবেন। আমি পার্টি করিনা। আপনার পার্টির সদস্যপদও আমার নেই।
ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলাম লক্ষ্মী। ভয়েজ অন করলাম।
কিগো অনিদা তোমার কাজ হলো। আমার ঘুম পাচ্ছে।
তুই কালকে কার সঙ্গে রাত কাটিয়েছিস।
কেনগো। দু’টোই এখনো তোমার কাছে আছে।
আরো অনেকে আছেন।
বাবা তাহলে তো ভদ্দরলোক হতে হবে গো।
হ্যাঁ। তোরা দিনের বেলা ভদ্দরলোক নোস। খালি রাত টুকু ভদ্দরলোক।
লক্ষ্মী খিল খিল করে হেসে ফেললো।
রাজনাথবাবু প্রবীরদা কট কট করে আমার দিকে তাকিয়ে।
কি রাজনাথবাবু গলাটা চিনতে পারেন। আপনি একে মারার সময় পাবেন না।
ও মারবে কিগো, ওর দুটো কব্জি কেটে বাদ দিয়ে দিয়েছি। তোমার কাছ থেকে শেখা বিদ্যে ভুল হয় কখনো।
ঘুমিয়ে পর।
আচ্ছা গো রাখি।
কি প্রবীরদা কিছু শুনলেন।

প্রবীরদার মাথা নীচু।
 
দেহাতী একটা মেয়ে। বাবার হাত ধরে সুদূর ইউপি থেকে রাজনাথবাবুর কাছে সাহায্য চাইতে এসেছিল। এখন সে রাজনাথবাবুর রাখেল। তাও আবার বিনে পয়সায়।
আগে বাংলা বলতে পারত না, এখন খুব ভালো বাংলা বলতে পারে। আমরা এদের দয়া করার জন্য উথলে উঠি। সত্যি কি করি! প্রবীরদা ?
প্রবীরদার মুখটা ফ্যাকাশে।
ফোনটা বেজে উঠল দেখলাম মিঃ মুখার্জীর।
ধরলাম এবার আর ভয়েজ অন করলাম না।
বলুন।
ওয়ারেন্ট এসে গেছে। আপনার বাড়িতে আছে নাকি ?
হ্যাঁ। কিন্তু আমার বাড়ি থেকে এ্যারেস্ট করা যাবেনা। আমি বাড়ির বাইরে বার করে দিচ্ছি। আপনি এ্যারেস্ট করতে পারেন।
ঠিক আছে।
ফোনটা কান থেকে নামাতে না নামাতেই….।
কিরে কাকে এ্যারেস্ট করবে ? অনিমেষদা হকচকিয়ে গিয়ে আমাকে প্রশ্ন করলো।
রাজনাথবাবু, ডাক্তারকে।
তার মানে! তুই এসব কি করছিস ? অনিমেষদা বললো।
আমি বাড়ি থেকে বাইরে বার করে দিচ্ছি। তুমি বুঝে নাও। মিঃ মুখার্জী তার কাজ করেছেন, তোমরা পলিটিক্যালি ওকে রক্ষা করার চেষ্টা করো।
এই মুহূর্তে সেটা সম্ভব নয়।
তুই কি ভাবলি তুই ছাড়া পেয়ে যাবি। প্রবীরদা চেঁচিয়ে উঠলো।
আপনার হাওলাও সাতদিনের মধ্যে রাজনাথবাবুর মতো করে ছেড়ে দেব, দেখতে চান।
তুই কি আমাকে ধমকাচ্ছিস।
হাউজিং নিয়ে যে কেলোটা করে রেখেছেন, তার সমস্ত ডকুমেন্টস আমার কাছে। রাজনাথ আপনাকে ফাঁসাতে পারে তাই আপনি ভয় পাচ্ছেন। লড়বেন আমার সঙ্গে। ঠান্ডা গাড়ি চড়া দু’দিনে বন্ধ করে দেব।
কি করছিস কি অনি। ও একজন মন্ত্রী। অনিমেষদা চেঁচিয়ে উঠলো।
পাঁচ বছরের জন্য। তারপর উনি মরে যাবেন ? তখন পাবলিকের মার দুনিয়ার বার এটা মনে রাখবে। আমার হাতে কলমটা রয়েছে। তোমার দেওয়া কলম। ভুলে যাবে না।
তুই থাম। একটু শান্ত হ। বিধানদা বললেন।
আমি বিধানদার কথায় থামলাম না।
কালকে একটা আর্টিক্যাল লিখবো। আপনার গদীটা পাওয়ার জন্য যে রেগুলার বিধানদাকে খোঁচাচ্ছে। রেগুলার বিধানদার কান ভাড়ি করার চেষ্টা করছে, আপনার ঘর শত্রু।
তাকে প্রশস্তি করে একটা ঝেড়ে লিখবো। আগামী শুক্রবার পার্টি মিটিংয়ে আপনার থোঁতা মুখটা ভোঁতা হয়ে যাবে।
তোর এতোবড়ো ক্ষমতা।
এখনো পুরো দেখেন নি, এবার দেখবেন। কতোটাকা মন্ত্রীত্ব করে পান। তিনকোটি টাকা দিয়ে বাড়ি বানিয়েছেন।
অনিমেষদা উঠে এসে আমার মুখটা চেপে ধরলো। তুই থাম।
থামো তুমি। তুমি এখনো একটা স্থায়ী ঠিকানা করতে পারলে না। এখনো ভাড়াবাড়িতে থাক। এরা তিনকোটি টাকা দিয়ে বাড়ি বানায়। টাকা পায় কোথায় ?
অনিমেষ ওকে বলতে দাও। এতদিন তুমি আমার কাছে সব চেপে গেছ।
বিধানদা খুব গম্ভীর গলায় বললেন।
না বিধানবাবু এটা পার্টির ভেতরের কথা।
বৌদি দরজা খুলে ঘরে ঢুকলেন। চোখ দুটো গণগনে আগুনের কয়লার টুকরো।
ছিঃ ছিঃ ছিঃ একটা দুধের শিশুর কাছে তোমরা নাস্তানাবুদ হয়ে যাচ্ছ।
সুতপা তুমি যাও আমি দেখছি। অনিমেষদা এগিয়ে গেল।
থামো তুমি, কালকেই তুমি রিজাইন দেবে। বিধানদা পার্টির সিনিয়ার লিডার কে ? আপনি না প্রবীর ? প্রবীর কতদিন পার্টির মেম্বার হয়েছে।
আমার একটা ছোট্টভুলে….।
দু’জনে রক্তজল করে পার্টির সংগঠন তৈরি করলেন। এরা কি মধু খাওয়ার জন্য পার্টি করতে এসেছে। কিরে অনুপ ? তুই রূপায়ণ ভেড়ুয়ার মতো বসে আছিস কেন ?
দেখছি প্রবীর কতটা গাছে উঠতে পারে। মই কেড়েনিতে কতোক্ষণ।
তোমরা কি আমায় এই জন্য এখানে নিয়ে এসেছিলে। প্রবীরদা বলে উঠলো।
অচিন্ত। বিধানদার গলাটা এই নিস্তব্ধ রাতেও গম গম করে উঠলো।
হ্যাঁ স্যার।

গাড়ি থেকে আমার কনফিডেন্সিয়াল এ্যাসিসটেন্টকে একবার ডাকো।
ভদ্রলোক ছুটো বেরিয়ে গেলেন। তখন যে দুজন ভদ্রলোক এসেছিলেন তার মধ্যে ইনি একজন। এর নাম তাহলে অচিন্ত ?
অনি।
আমি মাথা নীচু করে ফেললাম। আমায় ক্ষমা করুণ দাদা।
তুমি অন্যায় করে ফেলেছো। এর জন্য তোমাকে শাস্তি পেতে হবে। এই শাস্তি অনিমেষ দেবে না।
ঘরের সবাই চুপ। মিত্রা গেটের মুখে দাঁড়িয়ে, মুখটা ফ্যাকাশে।
ভদ্রলোক ছুটতে ছুটতে এলেন।
স্যার।
একবার চিফ সেক্রেটারিকে ফোনে ধরুন।
হ্যাঁ স্যার।
প্রবীর তুমি এখুনি একটা রিজাইন লেটার লেখ। তোমার প্যাডে। কালকে শোকজ লেটারটা তোমার বাড়িতে পাঠিয়ে দেব। পনেরদিনের মধ্যে উত্তর দেবে।
স্যার চিফ সেক্রেটারি।
বিধানদা ফোনটা হাতে নিলেন।
হ্যাঁ। আমি বিধানবাবু বলছি।….কালকে থেকে প্রবীরের দপ্তর সিএম দেখবেন, সেই ভাবে ব্যবস্থা করবেন। আমি সিএমকে কাল সকালে বলে দেব।
ফোনটা কেটে ভদ্রলোকের হাতে দিলেন।
সিপিকে একটা ফোন করুণ।
আচ্ছা স্যার।
অনিমেষদা হাঁ করে বিধানদার দিকে তাকিয়ে।
গেটের বাইরে বারান্দায় সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখছে।
দাদা মল্লিকদার মুখ কেমন ফ্যাকাশে।
ভদ্রলোক আবার ফোন করলেন। ঘরে পিন পরলে শব্দ হবে।
রূপায়ণ। বিধানদার গলাটা আবার গম গম করে উঠলো।
বলুন দাদা।
সব নোট ডাউন করেছো।
হ্যাঁ দাদা।
দাও আমি প্রথমে সই করি। তারপর সবাইকে দিয়ে সই করাও। রাজনাথকে দিয়েও সই করিয়ে নাও।
স্যার সিপি ধরেছেন।
শুনুন।….আপনি অনি ব্যানার্জীকে চেনেন….চেনেন, বাঃ বেশ বেশ। কালকে থেকে ও কোথায় যাচ্ছে কি করছে অর্থাৎ ওর ওপর নজরদারি করতে হবে। ডেলি রিপোর্ট আমার চাই।
….কি বললেন….
বিধানদা হো হো হো করে হেসে উঠলেন। আমার দিকে তাকালেন।
কিরে তুই নাকি বাস অটো ট্যাক্সিতে ঘুরিস। এতো কোটি টাকার মালিক, একটা গাড়ি কিনতে পারিস না ?
ঘরের সবাই এই সিরিয়াস অবস্থাতেও মুখ টিপে হাসছে। গেটের বাইরে দাঁড়ান মিত্রা ফিক করে হেসে ফেললো।
তাহলে কি হবে।….কি বলছেন ? চেষ্টা করলেও হবে না। আমার রিপোর্ট চাই।….কি বললেন ? আপনার সোর্সরা ওর কাছের লোক। সবাইকে ও হাত করে নিয়েছে। তাহলে….খোল ননচে বদলে ফেলতে হয়।….সেতো বুঝলাম….কি বলছেন! ও কোন অন্যায় কাজ করছে না!…. আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে আপনিও ওর প্রতি দুর্বল….ঠিক আছে কাল একবার দেখা করুন।
আমার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললেন। কিরে একটা গাড়ি কেনার পয়সা নেই তোর।
ব্যাঙ্কের কাছে দেড়শো কোটি টাকা ঋণ আছে। মিত্রা আমাকে সেই অবস্থায় মালিক বানিয়েছে। গাড়ি কেনার পয়সাটা আমার একজন স্টাফের ছয় মাসের মাইনে।
শুনেছো প্রবীর অনির কথা। তুমি জনসাধারণের পয়সায় এসি গাড়ি চড়ছো। সিপি পর্যন্ত স্বীকার করে ফেললো ওর পেছনে লোক লাগিয়ে লাভ হবেনা। যাকে লাগাবে তাকেই ও চেনে। তোমায় যদি পার্টির তরফ থেকে দায়িত্ব দিই, তুমি পারবে ?
প্রবীরদা মাথা নীচু করে বসে রইলো।
তাহলে তুমি কি মন্ত্রীত্ব চালাচ্ছ। দশটা লোক নিয়ে কাজ করছো। ও একা তোমার ঘেঁটি ধরে নাড়িয়ে দিচ্ছে। সত্যি যদি ও মুখে যা বললো সেই সব কীর্তি করে, সামলাতে পারবে।
ঘরের সবাই চুপ, কারুর মুখে কোন কথা নেই।
বোবা হয়ে বসে থাকলে চলবে না। আমি এতোক্ষণ ওর কথা মনদিয়ে শুনেছি। কোন প্রতিবাদ করিনি। কোন উত্তর দিই নি। কেন জান। ওপর তলায় থাকি, নিচের তলার সুবিধা অসুবিধার দায়িত্ব তোমাদের ওপর। সেটাও দেখছি ঠিক মত করতে পার না।
মিঃ মুখার্জী ঘরের দোরগোড়ায় এসে দাঁড়ালেন।
আমাকে দেখেই হাসতে হাসতে ঘরে ঢুকলেন। পেছনে কার্বাইন হাতে তিনজন। চিনতে পারলাম কালকে যারা গেছিল তাদের মধ্যে তিনজন।
আপনি! বিধানদা তাকাল ভদ্রলোকের দিকে।
আমি মিঃ মুখার্জী….। স্যালুট করলেন।
থাক থাক পরিচয় দিতে হবে না। ওয়ারেন্ট এনেছেন।
হ্যাঁ স্যার।
রূপায়ণ।
হ্যাঁ দাদা, সই করিয়ে নিচ্ছি।
রাজনাথবাবুর দিকে একটা খাতা এগিয়ে দিলেন। সই করিয়ে নিলেন।
একবার ওয়ারেন্টটা দেখাতে পারেন।
অবশ্যই স্যার।
বিধানদা মন দিয়ে ওয়ারেন্টটা পরলেন। ভালই লিখেছেন। দু’জনকেই সঙ্গে নেবেন নাকি।
হ্যাঁ স্যার।
যান নিয়ে যান।
রাজনাথবাবুর দিকে একবার তাকালেন।
মুখার্জী বাবু।
হ্যাঁ স্যার।
আপনার কাজে বাধা দেব না। একটু ভদ্রভাবে নিয়ে যান।
অবশ্যই স্যার।
মুখার্জী বাবু আমার দিকে তাকালেন। ইশারায় বাইরে আসতে বললেন।
আমি ওনার পেছন পেছন এগিয়ে গেলাম।
অনিদা বিট হবে। একজন বলে উঠলো।
আমি দাঁতে দাঁত চেপে বললাম।
একটা স্পটও পরবেনা, পনের দিন বিছানা ছেড়ে উঠতে পারবেনা।
অনিদা আপনার জিনিষ। আর একজন।
খামটা হাত থেকে নিয়ে নিলাম। শিল করা।
মিঃ মুখার্জী হাতটা এগিয়ে দিলেন। আমি হাতে হাত রাখলাম। আমাদের পাশ দিয়ে দু’জনকে ওরা নিয়ে চলে গেল। ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে সকলে অবাক হয়ে দেখছে।
পরে দেখা হবে। নিজে আগে বাঁচি।
হাসলাম। ঠিক আছে।
আমি আবার খামটা নিয়ে ঢুকলাম। ছোটমা, বড়মা, মিত্রা ঘরের মধ্যে বিধানদার সঙ্গে কথা বলছে। আমি সোজা গিয়ে আলমাড়িটা খুললাম। খামটা তুলে রাখলাম।
কিরে ওটা আবার কি। বিধানদা বললেন।
এটা আর একটা সম্পদ।
কার রে। অনিমেষদা এগিয়ে এলো।
একটা সত্যি কথা বলবি।
বলো।
মিঃ মুখার্জী একজন সরকারী অফিসার। তুই তাকে যা বলছিস, সে করছে। কি অবলিগেশনে তাকে বেঁধে রেখেছিস ?
খুব প্রয়োজন জানার।
অনুপদা, রূপায়ণদা হেসে ফেললো। প্রবীরদা গুম হয়ে বসে আছে।
তুই আমাকে আর যন্ত্রণা দিস না।
আবার বলি আমি নিজে থেকে দেব না। কেউ যদি আমার ক্ষমতার যাচাই করে, তখন তাকে দেখাই। আমি অন্যায় করে থাকলে আমাকে শাস্তি দাও।
মিত্রা। আবার গম গম করে উঠলো বিধানদার গলাটা।
মিত্রা পাশে দাঁড়িয়েও হকচকিয়ে গেলো। আঁ।
অনি একটা অন্যায় করেছে। ওর শাস্তি কি হতে পারে।
বুবুন কোন অন্যায় করেনি।
বিধানদা ওর মাথায় হাত রেখে হেসে ফেললো।
তোর এতোটা বিশ্বাস ওর প্রতি।
অবশ্যই। বুবুন যা করে সবার কাছে তা স্বীকার করে।
ঠিক আছে তোমরা এখন যাও। আমি অনিমেষ ওর সঙ্গে একটু কথা বলবো।
বিধানদার কথা বলার ঢঙে কেউ আর ঘরে থাকল না। ঘর থেকে সবাই বেরিয়ে এলো। বিধানদা নিজে গিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করল।
খেয়ে দেয়ে যখন শুতে এলাম। দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালাম।
দুটো কুড়ি বাজে।
মাথার ভেতরটা একেবারে শূন্য। শিমুল তুলর মতো হাল্কা। মিত্রা এক ফাঁকে এসে চাদরটা চেঞ্জ করে দিয়ে গেছে। ঘরের বড়ো লাইটটা নিবিয়ে ছোট লাইটটা জালালাম।
ঘরটা এখন আধো অন্ধকার। দরজাটা ভেজিয়ে বিছানায় টান টান হয়ে শুয়ে পরলাম। আঃ কি আরাম। সারাদিন যা হলো আর চিন্তা করতে ভালো লাগছেনা।
খালি মনে হচ্ছে মিত্রা কখন আসবে। ওকে জাপ্টে ধরে শুয়ে ওর শরীরের ওমে একটু স্নান করবো। ওকে আজকে চটকা চটকি করে একেবারে আটার লেচি বানিয়ে দেব। ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি জানি না।
বড়ামার ডাকে ঘুম ভাঙলো। আধো চোখে দেখলাম বড়মার স্নেহের হাত আমার কপালে।

চারিদিকে আলো থৈ থৈ করছে। আমার গায়ে একটা ধবধবে সাদা শাল চাপা দেওয়া।
 
কিরে উঠবিনা। অনেক বেলা হলো।
তাড়াহুড়ো করে উঠে বসলাম।
থাক থাক হুড়ো হুড়ি করে উঠে বসার দরকার নেই।
তুমি! মিত্রা কোথায় ?
সবাই অফিসে চলে গেছে।
কটা বাজে।
এগারোটা বেজে গেছে।
খেয়েছে। আগে ডাকনি কেন ?
অঘোরে ঘুমোচ্ছিলি। দুদিন যা গেল তোর শরীরের ওপর দিয়ে, মায়া হচ্ছিলো ডাকতে।
হাই তুলতে তুলতে বললাম। ছোটমা কোথায় ?
হ্যাঁ বাবু উঠে বসেছেন। ছোটমা ফোনে কথা বলতে বলতে ঘরে ঢুকলো।
নে তোর সোহাগী ফোন করেছে।
সেটা আবার কে!
কথাবল, বুঝতে পারবি।
আমি ফোনটা হাতে নিয়ে হ্যালো বললাম।
মিত্রা খিল খিল করে হেসে উঠলো।
ও তুই। তোর নাম কবে থেকে সোহাগী হলো।
ছোটমা, কাল রাত থেকে নতুন নামে ডাকতে শুরু করেছে।
বেশ বেশ। তাহলে আমি কি।
ছোটমাকে জিজ্ঞাসা কর।
অফিসে কখন গেলি।
দু’ঘন্টা হয়ে গেছে।
বাজে কথা।
ছোটমাকে জিজ্ঞাসা কর।
আমি ছোটমার দিকে তাকালাম। ছোটমা হাসছে।
তুই কখন আসছিস।
ঠিক নেই।
তোর সঙ্গে কথাই বলা হলনা।
সারা জীবনেও শেষ হবেনা।
ছোটমা হাসছে।
তুমি হাসলে কেন।
তোর কথা শুনে।
শুনছিস ছোটমার কথা।
ঠিক বলেছে।
মন দিয়ে অফিস কর। আমি আর একটু ঘুমোই।
কখন আসছিস বলনা।
টিনারা গেছে।
আমার ঘরেই বসে আছে। তোর গলা শুনতে পাচ্ছে।
ভালো। দেখি সময় পেলে যাব। না হলে যাব না।
এবার কাকে এনকাউন্টার করবি।
এবার টার্গেট তুই।
মিত্রা হাসছে।
আমি ফোনটা ছোটমার হাতে চালান করে দিয়ে বাথরুমে গেলাম।
যেতে যেতে শুনতে পেলাম, উনি এখন বাথরুমে ঢুকছেন। ভিআইপি বলে কথা। সব বড় বড় ব্যাপার। আমরা সব চুনপুঁটি বুঝলি।
আমি বাথরুমে ঢোকার আগে ছোটমা বড়মার মুখটা লক্ষ্য করলাম। পরিতৃপ্ত মুখ। মুখে কোন টেনসনের লেশ মাত্র নেই।
বাথরুম থেকে একেবারে স্নানসেরে বেরলাম। দেখলাম বিছানার ওপর আমার প্যান্ট গেঞ্জি ড্রয়ার রাখা। বুঝলাম আজ এইটা পরে বেরতে হবে। দেখেই মনে হচ্ছে একেবারে আনকোরা। আগে এই প্যান্ট গেঞ্জি পরিনি। দারুন দেখতে গেঞ্জিটা। ফুলহাতা। জিন্সটাও দুর্দান্ত। কালকে বিধানদার কথাটা মনে পরে গেল।
তুই এখনো একটা গাড়ি কিনতে পারিস নি। নিজে নিজেই হেসে ফেললাম।
যাক তাহলে হয়েছে। ছোটমা গেটের সামনে।
আমি হাসলাম।
সত্যি তুই মেয়েছেলে। তাড়াতাড়ি নিচে আয়, তোর জন্য বসে আছি।
আমি প্যান্ট জামা পরে নিচে এলাম। মিস্ত্রীরা রং করছে। বাড়ি ফাঁকা কেউ নেই।
বসার ঘরে ঢুকে খাবার টেবিলে বসলাম।
বড়মা বাড়ি একেবারে শুনশান!
তোর মতো নাকি। সবারই কম বেশি কাজ আছে। আবার ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ভুলভাল বকবি। মনে রাখিস কাজের হিসাব নেব। ছোটমা বললো।
চুপ করে গেলাম। নিজে নিজে ভাবলাম। তাহলে কালকে কি আমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে বহুত ভুলভাল বকেছি। হবে হয়তো।
আজ কি তোমরা দু’জন।
কেন, তুই আছিস।
আমি এখুনি বেরিয়ে যাব।
কোথায় রাজকার্য আছে শুনি। বড়মা খিঁচিয়ে উঠলো।
আছে আছে সব বলা যায়।
ছোটমা লুচি বাটি চচ্চড়ি নিয়ে এলো। তিনটে প্লেট। বুঝলাম আমার দু’পাশে দু’জন বসবে। কপালে আজ শনি লেখা আছে।
কিগ বড়মা আজ নতুন মেনু।
তোমার সোহাগী নিজে হাতে করেছেন। সকলে খেয়েছে। আমরা তিনজন এখন বাকি রয়েছি।

যাক সোহাগীর তাহলে সংসারে মতি গতি হয়েছে বলো।
বড়মা এসে একপাশে বসলো।
কেন তোর মতি গতি নেই। বড়মা বললো।
শোন বসার আগে বলে দিচ্ছি, উঠবো উঠবো করবিনা।
ছোটমা কথাটা বলে আমার আর এক পাশে বসলো।
ছোট ফোনগুলো বন্ধ করে দে।
ছোটমা মোবাইল দুটো নিয়ে টপাটপ স্যুইচ অফ করলো।
কিগো তোমরা দুজনে পিটাপিটি করবে নাকি।
দাদা যখন পিটেছে, আমরা পিটলে দোষ হবে না।
আগে পেটে দিই, তারপর পিঠে দিও।
নে শুরু কর।
খাওয়া শুরু করলাম। তিনজনে খাচ্ছি।
এ বাড়ি রং করার বুদ্ধিটা তোকে কে দিল। বড়মা মুখ খুললো।
অনেকদিন পরে আছে তাই ভাবলাম।
এখন কেন ? ছোটমা ওপাশ থেকে চেপে ধরলো।
এতো শাঁড়াসি আক্রমণ। মনে হচ্ছে সবে মাত্র ছোটগল্প হচ্ছে। তারপরে উপন্যাসে ঢুকবে।
দেখছো দিদি দেখছো। কেমন তেঁয়েটে। বদমাশ।
বড়মা তুমি ছোটমাকে সামলাও। আমি কিন্তু উঠে পালাব।
তোর রং করার উদ্দেশ্যটা বল আগে।
কনো উদ্দেশ্য নেই।
শুক্রবার রবিবার কি প্রোগ্রাম ঠিক করেছিস। বড়মা হাসতে হাসতে বললো।
তোমরা সবাই বেশ জম্পেশ জিনিষ দেখছি!
তোর পাল্লায় পরে হয়ে যাচ্ছি। এরকম ছিলাম না। এখন দেখছি তোর সঙ্গে থাকতে গেলে হতে হবে। না হলে বাঁচব না।
বল বল, দিদির কথার উত্তর দে।
এই উত্তরটা পেয়ে গেলেই ছুটি।
এতো সহজে তোকে ছাড়ব ভেবেছিস। আজ তোকে একা পেয়েছি।
দেখ বড়মা, ছোটমা গন্ডগোল পাকাচ্ছে।
আচ্ছা আগে তুই প্রথম প্রশ্নের উত্তরটা দে।
মিত্রার সঙ্গে রেস্ট্রি করবো। রবিবার কয়েকজনকে ডেকে খাওয়াবার ইচ্ছে আছে।
আগে বলিসনি কেন।
ঠিক সময়ে বলতাম।
কদিন বাকি আছে।
এখনো চারদিন বাকি আছে।
দাদাকে বলেছিস।
বলিনি, আজ বলতাম।
তোর এই প্ল্যানটা কতদিন আগে থেকে ঠিক করেছিস।
যেদিন এখান থেকে দেশের বাড়ি গেলাম সেদিন।
দেখছো দিদি দেখছো! তোমায় কালকেই বলেছিলাম, সেরকম একটা খবর হাওয়ায় ভাসতে শুনলাম। কজন জানে তোর মনের কথা ?
কেউ জানেনা। দামিনী মাসি ইসলামভাই গেইজ করতে পারে। তবে আমি এখনো কিছু বলিনি।
তুই সব একা একা করবি আমরা একটু আনন্দ করবনা। বড়মা বললো।
এইতো তুমি আবার শুরু করেদিলে।
তুই করলে দোষ নেই, দিদি করলেই দোষ।
দাও লুচি দাও। সব হজম হয়ে গেল।
ছোটমা গোটা ছয়েক লুচি আমার পাতে দিল। খানিকটা বাটি চচ্চড়ি।
তোমাদের আছে।
তোকে জানতে হবেনা। নিজের খেঁটনটা ঠিক মতো দাও।
আমি হাসছি।
কালকে যে তুই এসব করলি। তোর কোন ক্ষতি হবেনা।
এইসব কথা রবিবার পর্যন্ত জিজ্ঞাসা করবে না। সব রবিবারের পর।
তোর কাকাকে আসতে বলবি না ?
আমি কাউকে বলতে চাইনা। আসবে গোটা পঞ্চাশেক লোকজন। মনে রাখবে রেস্ট্রি করছি বাধ্য হয়ে। মিত্রার সেফটির জন্য।
কেন! ছোটমা জিজ্ঞাসা করলো।
কয়েকদিন পর আইনের প্রচুর জটিলতা আসবে, তার থেকে বাঁচার জন্য।
আবার ঝামেলা! বড়মা বললো।
ঝামেলা ছাড়া পৃথিবী অচল। তুমি যেমন সংসার করছো। তোমাকেও কিছু কিছু ঝামেলা পোহাতে হয়। ঠিক তেমনি আমাকেও সংসারের মতো ঝামেলা নিয়ে চলতে হবে। না হলে বাঁচবনা।
সে কিরে!
হ্যাঁগো ছোটমা।
আমি না চাইলেও ঝামেলা হবে। প্রত্যেকে তার স্বার্থ দেখবে। আমি তার স্বার্থে বাধা দেব। ঝামেলা এখানে শুরু হয়ে গেল। নাহলে বোঝনা ডাক্তারকে এতো শিক্ষা দিলাম, তাও সে রাজনাথকে দিয়ে বাইরে থেকে লোক আনিয়ে, আমাদের মারতে চাইল। কতো বড়ো সাহস বলো।
আমি অবাক হচ্ছি তুই জানতে পারলি কি করে। বড়মা বললো।
একটা ছোট্ট ব্যাপারে সন্দেহ হলো। অনিমেষদার একটা কথা। ব্যাশ ঘুঁটি গুলো একটু নাড়াচাড়া করতে শুরু করলাম। সব পরিষ্কার হয়ে গেল। দেখলেনা প্রবীরদার অবস্থা। এতো ঘটনার পরও সে রাজনাথকে বাঁচাতে চায়। কেন ?
তুই বল ?
টাকা টাকা। কোটি কোটি টাকা। দামিনী মাসির তল্লাট আর টাউনশিপ। তবে প্রবীরদা একলা খায় না। পার্টিফান্ডে দেয় লোক লস্কর আছে। বাড়িটা দেখলে তোমার মাথা খারাপ হয়ে যাবে। একবার মন্ত্রী হতে পারলে সরাজীবন গুছিয়ে নেবে।
বিধানদা তোকে কালকে কি বললো ?
এটা তোমায় বলা যাবে না ছোটমা। বলতে পারো ভেরি কনফিডেনসিয়াল।
ঠিক আছে জানতে চাইব না।
তুই যে অনিমেষের বাড়িতে যাস, সেটা আগে কখনো বলিসনি।
এটা একটা বলার বিষয়, তুমি বলো। বড়মার দিকে তাকালাম।
ওরে বাবারে অনেক বেলা হয়ে গেল। আর নয় আমাকে এবার বেড়তে হবে।
আর একটু। বড়মা মুখটা কাঁচুমাচু করে বললো।
রাতে তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো।
ঠিক বলছিস।
বোললামতো কোন কাজে ফেঁসে না গলে অবশ্যই আসব।
খাওয়া শেষ করে বেসিনে মুখটা ধুলাম। তারপর দু’জনকে একটা পেন্নাম ঠুকলাম।
কিরে এটা আবার কেন।
মনে হচ্ছে নতুন জামাকাপর পরেছি। তাই।
বড়মা থুতনিটা ধরে চুমু খেলো। ছোটমা কপালে।
গেটের বাইরে এসে মোবাইলটা চালু করলাম। অনেক ম্যাসেজ অনেক মিস কল। লাস্ট মিসকলটা দেখলাম ঝিমলির। বেচারা। কি খেয়াল হতে ভাবলাম ওর বাড়িতেই চলে যাই।
কাছাকাছি থাকে। একবার ভাবলাম ফোন করি। তারপর ভাবলাম না ফোন করে লাভ নেই। একটা সারপ্রাইজ দিই ওকে।
হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম লেক গার্ডেন্স। মোবাইলের নোট বুক থেকে এ্যাড্রেসটা দেখে নিলাম। খুজে বার করে যখন ওর বাড়ির সামনে এলাম, দেখে অবাক হয়ে গেলাম। এতো খুব নামী দামী লোকেদের ফ্ল্যাট বাড়ি।
গেটে একজন সিকিউরিটি গার্ড বসে আছে। তাকে বললাম। তিনি একটি খাতা বার করে আমার সামনে দিলেন তাতে নাম ঠিকানা লিখতেই ছেলেটি আমাকে ভালো করে দেখতে লাগল।
স্যার আপনি কি সেই অনি ব্যানার্জী ?
সেই মানে!
কাগজে লেখেন। সাংবাদিক।
না।
সরি স্যার।
কোন তলায় ভাই।

স্যার লিফ্টে উঠে সাত নম্বর বোতামটা টিপবেন। লিফ্ট থেকে বেরিয়ে বাঁদিকের ফ্ল্যাটটা।
 
সোজা ভেতরে চলে এসে লিফ্টের সামনে দাঁড়ালাম। দরজা খুলতে ভেতরে ঢুকলাম। সিকুরিটি ছেলেটার কথা মতো সাত নম্বর বোতাম টিপলাম। ছেলেটি ঠিক ঠিক বলেছে। নেমপ্লেটে চারজনের নাম। ঝিমলির নামটাও আছে।
বেলে হাত রাখলাম। তিতির পাখীর মতো বেলটা তি তি তি করে বজে উঠলো।
দরজা খুললো। একজন তরুণী আমার সামনে।
প্রথম ঝটকাতেই দেখে মনে হবে তরুণী বিদেশী। হাইট আমার মতো প্রায় পাঁচফুট আট কিংবা নয় ইঞ্চি। পরনে একটা টাইট গেঞ্জি শর্ট সাইজ জিনসের প্যান্ট। চুলগুলো লালা। দেখলে মনে হয় রং করা। কিন্তু ভালো করে দেখলে মনে হবে চুলগুলো কটা কটা।
সেক্স যেন শরীর থেকে চুঁইয়ে চুঁইয়ে পরছে। ভলাপচুয়াস সেক্সি গার্ল বলতে যা বোঝায় ঠিক তা নয়। তবে সেক্স এ্যাপিলিং দুর্দান্ত। দেখে মনে হচ্ছে তরুণী নিশ্চই মডেলিং করেন। তরুণীর মুখের সঙ্গে ঝিমলির মুখের আদলের সামান্য মিল আছে। তবে তরুণী ভীষণ সপ্রতিভ।
আমি বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলামনা, মাথা নীচু করলাম।
বুঝতে পারছি, আমার হ্যাংলার মতো তাকিয়ে থাকা তরুণী বেশ তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করছে।
কাকে চান।
কোকিলের মতো কুহু কুহু স্বরে তরুণী আমাকে প্রশ্ন করলো।
আমি আবার তরুণীর মুখের দিকে সড়াসড়ি তাকালাম। ঠোঁটের কোনায় সামান্য তির্যক হাঁসি। ব্যাপারটা এরকম, কি আমার রূপ যৌবন তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করা শেষ হয়েছে ?
আমি অনি, অনি ব্যানার্জী, ঝিমলি আছে ?
মুহূর্তের মধ্যে তরুণীর মুখের রং বদলে গেল।
চোখে মুখে একরাশ বিষ্ময়। আমি বোকা বোকা চোখে তরুণীর দিকে তাকিয়ে। তরুণী আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পরে আমাকে জাপ্টে ধরে আমার ঠোঁটে ঠোঁট রেখে উম উম করে গোটা পাঁচেক চুমু খেয়ে নিলো। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘটনাটা ঘটে গেল।
আমি ভীষণ অপ্রস্তুত। আরও বেশি সেকি হয়ে গেলাম।
এবার তরুণী অত্যাধিক উচ্ছ্বল, তুমি অনিদা আগে বলবেতো। আমি রিমঝিম। এই পিঙ্কি, চুর্ণী, তিয়া দেখবি আয় কে এসেছে। এসো এসো ভেতরে এসো।
রিমঝিম আমার হাতটা ধরেছে।
রিমিঝিমের চেঁচামিচিতে অপরজিটের ফ্ল্যাটের দরজা খুলে গেল। একজন মাঝ বয়সী ভদ্রলোক গেটের মুখে দাঁড়িয়ে, নাইট গাউন পরা।
মনোময় কাকু দেখো কে এসেছে। চিনতে পার ?
মুহূর্তের মধ্যে এই রকম একটা পরিস্থিতি ঘটতে পারে তার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না।
ঘরের ভেতর থেকে তিনজন তরুণী বেড়িয়ে এলো। কাকে ছেড়ে কাকে দেখব। সবাই ঝিমলির দ্বিতীয় তৃতীয় চতুর্থ সংস্করণ। মনোময় কাকু নামে সেই ব্যক্তিও এগিয়ে এলেন।
গম্ভীর কন্ঠে বললেন, কেরে ঝিমলি।
দূর তোমরা যে কি কর্পোরেট হাউসের কর্ণধার হয়েছো বুঝিনা বাপু। খবর টবর কিছু রাখো ? কালকের কাগজটা কি ভালো করে দেখ নি ?
মনোময়কাকু আমার দিকে সন্দেহের চোকে তাকিয়ে।
অনি ব্যানার্জী!
ইয়েস দিস গাই ইজ অনি ব্যানার্জী। আমাদের অনিদা।
ধ্যুস এইটুকু একটা পুঁচকে ছেলে।
হ্যাঁ কাকু হ্যাঁ। পুঁচকে ছেলে। এখন খবরের কাগজে একটা নামই লোকে খোঁজে, অনি ব্যানার্জী। আমাদের মতো মেয়েদের কাছে নামটা হার্টথ্রব। দিদিভাই যেদিন প্রথম এসে বলেছিল। আমরা পাত্তা দিই নি।
ভদ্রলোক এগিয়ে এসে ডান হাতটা এগিয়ে দিলেন। আমি হাতে হাত রাখলাম।
ভাই, রিমঝিম যা বললো তা সত্যি ?
বলতে পারবনা। বাবা মা এই নামটা রেখেছিলেন।
ভদ্রলোক হেসে ফেললেন।
তুমি ভাই বেশ মিষ্টি করে কথা বলতে পার।
হাসলাম।
এসো এসো ভেতরে এসো। কাকু তুমি পরে এসো।
আচ্ছা।
তিনটি মেয়েই আমাকে চোখ দিয়ে ধর্ষণ করে চলেছে।
আমার ভেতরে চরম অস্বস্তি চোরাস্রোতের মতো খেলা করে চলেছে।
আমি ভেতরে এলাম। দেড় হাজার স্কয়ার ফুটের বিশাল ফ্ল্যাট। আমার পা ডেবে গেল। পুরু কার্পেটে মোরা সমস্ত ফ্ল্যাটটা। আমার স্থান হলো ড্রইংরুমে। বিশাল ড্রইংরুম ঝকঝকে তক তকে। একবারে গুছিয়ে সাজান। অধুনিকতার স্পর্শ প্রতিটি ইঞ্চিতে। এখনো রিমঝিমের তিন বন্ধু আমাকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে।
তুমি কোথায় ?
রিমঝিম ভেতরের ঘর থেকে কানে মোবাইল লাগিয়ে কল কল করতে করতে বেরিয়ে এলো।
অনিদা এসেছে।….বিশ্বাস হচ্ছে না….কথা বলবে….ধরো।
রিমঝিম আমার হাতে মোবাইলটা দিল।
আমি হ্যালো বলতেই ঝিমলি বলে উঠলো।
সত্যি তুমি এসেছো।
কেন বিশ্বাস হচ্ছেনা।
এটা কি সারপ্রাইজ।
হঠাৎ কি মনে হলো চলে এলাম।
একটু বোস, আমি এক্ষুনি যাচ্ছি।
আমি বেশিক্ষণ থাকতে পারবনা। অফিসে যেতে হবে।
প্লিজ।
দেরি করো না।
ফোনটা রিমঝিমের হাতে দিলাম।
তোরা কি রে অনিদার সঙ্গে আলাপ করতে পারিস নি।
আমি রিমঝিমকে দেখছিলাম আর ভাবছিলাম। এরা কতো আধুনিক। আমাদের এখনো আপনি থেকে তুমিতে যেতে বছর খানেক সময় লাগে। আর এরা! প্রথম থেকেই তুমি।
আমার এতে কনো আপত্তি নেই। তবু নিজেকে একই আসনে বসাতে পারছিনা। এখন ইন্টারনেটের যুগ। প্রথমে কিছুক্ষণ চ্যাটে কথা হবে। তারপর কথা বলতে বলতে সেক্স এসে যাবে। তারপর বলবে আর সময় নেই ওয়েব ক্যাম ফিট করে তুমি তোমার শরীরটা দেখাও।
দিদিভাই ঠিক কথা বলে। তুমি থেকে থেকেই কোথায় যেন হারিয়ে যাও।
রিমঝিমের কথায় হেসে ফেললাম।
তুমি বসবে না, কতোক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে।
আমি চারিদিকে চোখ বোলাচ্ছি। মাঝে মাঝে তিনজনের চোখে চোখ পড়ে যাচ্ছে। বুঝতে পারছি এখনো বিস্ময়ের ঘোর ওদের কাটেনি।
এটা পিঙ্কি। এ হচ্ছে চূর্ণি আর ইনি হচ্ছেন না থাক তোমায় পরে বলবো তিয়া।
তিয়া মেয়েটি রিমঝিমের গালটা টিপে বললো যাঃ।
সবাই আমার সঙ্গে হাতে হাত রাখলো। কেউ বুকের ওপর হাত রাখলো না। আমি বসলাম। জিজ্ঞাসা করলাম, তোমরা কে কি করো। একে একে সবাই উত্তর দিল। এবছরে উচ্চমাধ্যমিক দেবো। সবাই মহাদেবী বিড়লা গার্লস কলেজের ছাত্রী। অবাক হলাম কেউ সাইন্স নিয়ে পরছে না। সবাই কমার্সের স্টুডেন্ট, ভবিষ্যতে এমবিএ পড়ার ইচ্ছে।
এখন পাশাপাশি মডেলিংটা শিখছে।
আমার চিন্তা ভাবনা যে ঠিক, আবার নিজেকে নিজে ধন্যবাদ জানালাম।
বেল বেজে উঠলো। রিমঝিম গিয়ে দরজা খুললো। ঝিমলি ঘরের মধ্যে পা রাখলো। হাতের প্যাকেট দেখেই বোঝা যাচ্ছে মার্কেটিং-এ গেছিল। আমাকে দেখেই মিষ্টি করে হাসল। আজ ঝিমলির পরণে একটা কালো ঘাঘড়া ওপরে হলুদ রং-এর টপ। দারুণ লাগছে ওকে দেখতে। সমস্ত শরীর থেকে সৌন্দর্য চুঁইয়ে চুঁইয়ে পরছে। কোনপ্রকারে সেন্টার টেবিলে জিনিষগুলো রেখে আমার পাশে বসে, আমার দু’গালে নিজের গাল ঘোষল।
তাহলে তুমি আমাদের বাড়িতে এলে ?
স্ব-শরীরে।
তোমার সঙ্গে কথায় পারব না।
কিরে অনিদাকে জল টল দিয়েছিস।
তুমি না এলে দিই কি করে।
খালি কল কল করছিস অনিদার সঙ্গে।
সবে শুরু করেছিলাম তুমি এসে হাজির।
এরা আমাকে কি প্যাক দিতো জান। আমি নাকি সব বানিয়ে বানিয়ে বলি। শোনো, মাকে ফোন করেছিলাম এখুনি আসছে, তোমার এখন যাওয়া হবেনা।
মাকে ফোন করতে গেলে কেন। আবার একদিন আসতাম।
তুমি এসেছো। তাসত্বেও মাকে জানাই নি। পরে জানতে পারলে পিট্টি দিত।
কেন আমাকে ফোন করলেই আবার চলে আসতাম।
তোমাকে ফোন করে পাওয়া যায় ?
আমি হাসছি।
আচ্ছা পর্শুদিন কি হয়েছিলো বলো।
কেন!
তোমার ম্যাসেজ পেয়ে আমার আত্মারাম খাঁচা।
আমি ঝিমলির দিকে অবাক চোখে তাকালাম।
কিচ্ছু মনে পরছেনা তাই না ?
তারপর ফোন করি, স্যুইচ অফ। সকালে ফোন করলাম মিত্রাদি ধরলো। বললো তুমি অসুস্থ। তারপর মিনিমাম দশবার ফোন করেছি। মা ফোন করে অমিতাভদার সঙ্গে কথা বললেন। তোমার কি হয়েছিলো বলো ?
কিছুই না।
সকালে কাগজ দেখে চোখ ছানাবড়া। সত্যি তুমি ওখানে গেছিলে।
পাগল কেউ যায় নাকি। বানিয়ে বানিয়ে লিখেদিলাম।
ভাইজ্যাকে তোমায় দেখেছি। তুমি বানিয়ে লেখার পার্টি নও।
আচ্ছা অনিদা কোন কাগজ নিউজটা পেলনা তুমি পেলে কি করে।
হাসছি। পেলাম।
বুঝেছি। তুমি মচকাবে ভাঙবেনা।
আমি হাসছি।
দেখছিস রিমি দেখছিস, কিরকম দুষ্টুমি হাসি। যা বলবি যে কথা বলবি খালি হেসে যাবে।
আমি ঝিমলির মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। ওর মুখে পরিতৃপ্তির ছাপ। দেখেছিস তোদের বলেছিলাম। এখন দেখ আমি সত্যি না মিথ্যে।
এই টিনএজার মেয়ে গুলোর সঙ্গে তোমার আলাপ হয়েছে।
আলাপ হয়নি, শুধু নাম জেনেছি।
দেখেছিস দেখ কিরকম টেরা টেরা উত্তর। সোজা উত্তর তোরা জীবনেও পাবি না।
সত্যি দিদিভাই মনিময় কাকু জিজ্ঞাসা করলো আপনি অনি ব্যানার্জী ? অনিদা উত্তর দিল, বলতে পারবনা বাবা মা আমার এই নামটা রেখেছিল।
কি খাবে হট না কোল্ড।
হটতো খাচ্ছিই। চারিদিকে তাকিয়ে একবার চোখ বুলিয়ে মুচকি হাসলাম। কোল্ড নিয়ে এসো।
শয়তান। ঝিমলি নাচতে নাচতে উঠে চলে গেল।
তারপর রিমঝিম ম্যাডাম আমি আসতে তোমাদের গল্পের আসরটা মাঠে মারা গেল।
সেকিগো বরং আরও জমলো!
দুর তোমার বন্ধুরা সব বোবা, কথাই বলেনা।
এটা অফেন্সিভ কথা। পিঙ্কি বলে উঠলো।
তাহলে ডিফেন্সিভ কি হবে।
আবার সবাই মিষ্টি করে হাসলো।
তিয়া ম্যাডাম।
তিয়া ডাগর চোখে আমার দিকে তাকাল। এ চোখের চাহুনিতে যেকোন ছেলের হার্টবিট থেমে যেতে পারে।
তখন রিমঝিম একটা কথা বলতে গিয়ে থেমে গেল। সেটা কি ?
তিয়া হাসল। আমি ওর বেস্ট ফ্রেন্ড।
পিঙ্কি আর চুর্নী গুড এবং বেটার তাই ?
না না আমরা সবাই সমান চুর্ণী বলে উঠলো।
নিশ্চই আনিদা তোদের পেছনে লাগছে।
ঝিমলি কোল্ড ড্রিংকসের ট্রে নিয়ে ঘরে ঢুকলো।
আমি আসতে করে বললাম পেছনে না সামনে।
ঝিমলি দুষ্টু হাসি হাসল।
বেলটা আবার তি তি করে ডেকে উঠলো। রিমঝিম এগিয়ে গেল। দরজা খুলতেই যে ভদ্রমহিলা ঘরে ঢুকলেন তিনি ঝিমলির মা না হয়ে অন্যকিছু হতেই পারেন না। তিনজনকে পাশা পাশি দাঁড় করিয়ে দিলে পিঠোপিঠি তিন বোন বলে মনে হবে।
এখন বুঝতে পারছি এই বয়সে উনি তড় তড় করে এতোটা ওপরে কি করে উঠে গেছেন। দেহের বাঁধুনিটা এখনো তিরিশ বত্রিশ বয়সের তন্বী যুবতীর মতো ধরে রেখেছেন। আমি উঠে দাঁড়ালাম। ঝিমলি পরিচয় করাবার আগেই, আমি পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলাম।
থাক থাক ঝিমলির মুখ থেকে তোমার কথা শুনে শুনে তোমাকে দেখা হয়ে গেছে।
হাসলাম।
তুমিতো পশ্চিমবাংলায় ঝড় তুলে দিয়েছ।
আপনি বাড়িয়ে বলছেন।
একটুও না।
উনি আমার পাশে এসে বসলেন। কিরে অনিকে মিষ্টি দিয়েছিস।
তুমি দাও। আমরা একটু ঠান্ডা দিয়েছি। এখনো শেষ করে নি।
আমি কিছু খাব না। বাড়ি থেকে একপেট খেয়ে বেড়িয়েছি।
অনেকক্ষণ বেরিয়েছ।
ঘন্টা খানেক হবে।
প্রথম দিন এলে, একটু মিষ্টি মুখ না করলে চলে।
একটা। তার বেশি নয়। আমায় এবার বেরতে হবে। একবার অফিসে যাব।
তোমার গাড়ি কোথায় রেখেছো।
গাড়ি! ঝিমলি খিল খিল করে হেসে উঠলো।
তুমি হাসালে মা। অনিদা গাড়ি চড়েনা, কলকাতায় ব্যাস ট্যাক্সি অটো আছে। ঝমলি হাসতে হাসতে বললো।
ভদ্রমহিলা আমার দিকে তাকালেন। যেন আকাশ থেকে পরলেন।
সত্যি তোমার গাড়ি নেই!
অফিসে আছে। আমার প্রয়োজনে লাগে না।
কেন!
গাড়ি করে এদিক সেদিক যেতে অসুবিধে হয়।
কি বুঝলে, মোদ্দা কথা তুমি অনিদার হদিস সহজে পাবে না। পকেট থেকে মোবাইলটা বার করতে বলো, দেখো স্যুইচ অফ।
আমি হেসে ফেললাম।

তুই এতো জানলি কি করে।
 
বাহাত্তর ঘন্টা কাটিয়েছি। তারমধ্যে আমি দেখেছি দশ বার ঘন্টা। আমাকে হোটেলে রেখে দুদিন হোটেলেই ফিরলনা। আমার কাজ কিন্তু থেমে থাকেনি। ঘন্টায় ঘন্টায় লোক এসেছে আমার খোঁজ খবর নিয়েছে।
আমার এক্সাম সেন্টারে লোক পৌঁছে দিয়ে এসছে। ঠিক সময়ে সেখান থেকে নিয়ে এসেছে।
ট্রেনে উঠে বসলাম, উনি এলেন, বাই বলে আবার হাওয়া। যারা খোঁজ খবর নিতে এসেছিল তাদের জিজ্ঞাসা করি, বলে অনিবাবু কোথায় গেছেন বলতে পারছি না। প্রবলেম চাইল্ড।
ঝিমলি এমন ভাবে কথা বললো সবাই মুচকি মুচকি হাসছে। এটাও পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে ঝিমলি আমার প্রতি যথেষ্ট দুর্বল।
প্রবীরবাবু আজ রিজাইন করেছে, তুমি জান!
আমি ভদ্রমহিলার মুখের দিকে তাকিয়ে ভালো করে মাপার চেষ্টা করলাম।
সরকারী অফিসার। এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ পার্টে আছে। বহুত পোড় খাওয়া। শরীর আছেই, পাশাপাশি মাথাটাও ভালো খেলাচ্ছেন।
কে প্রবীরবাবু!
তোমার লেখার ওপর বেইজ করে একজন সাংসদ সাসপেন্ড হয়ে গেলেন, একজন মন্ত্রী রিজাইন দিতে বাধ্য হলেন, তুমি জান না!
আবাসন মন্ত্রী ?
হ্যাঁ।
আমি টেররিস্টদের নিয়ে লিখেছি, উনি টেররিস্ট নাকি ?
তুমি পারবেনা মা, কেন ঘাঁটাচ্ছ। সাধে কি মিত্রাদি অনিদাকে কাগজের ওয়ান অফ দেম পার্টনার বানিয়েছে। ঝিমলি হাসতে হাসতে বললো।
আমাদের ফ্ল্যাটটা দেখিয়েছিস।
না।
ওকে দেখা, আমি একটু চা করি।
দিদভাই আমি আমরা ঘর দেখাব, তুমি ঢুকবেনা। রিমঝিম বললো।
আমি হাসছি। বেশ মজা লাগছে।
আমি উঠে দাঁড়ালাম ঝিমলির পেছন পেছন ওর ঘরে এলাম। টোটাল পাঁচটা ঘর ডাইনিং ড্রইং কিচেন বাদ দিয়ে। এমনকি গেস্টরুম পর্যন্ত আছে। ছবির মতো সাজান ফ্ল্যাটটা। আমি এসে ঝিমলির ঘরে ঢুকলাম এসি রুম। একপাশে ছোট্ট একটা টেবিল। এক জনের শোবার মতো ছোট্ট একটা খাট। একটা আলমাড়ি আর বুক সেল্ফ।
ঝিমলি ঘরের দরজাটা ভেজিয়েই আস্তে করে ছিটকিনি তুলে ছুটে আমার কাছে এগিয়ে এলো।
তোমায় আজকে দারুণ হ্যান্ডসাম দেখতে লাগছে।
আমি হাসছি।
হাসছো কেন।
প্রথম দর্শনে রিমঝিম কি করছে সেটা বললাম।
আঁ। সত্যি।
হ্যাঁ।
কি শয়তান দেখেছো। আমার সঙ্গে চ্যালেঞ্জ করেছিল। যেদিন অনিদাকে প্রথম দেখব সেদিনই আমি কিস করবো।
হাসলাম। দারুণ স্মার্ট। আমি বুঝতেই পারিনি ও এরকম করতে পারে।
ওর অনেক বন্ধু আছে, কিন্তু কেউ ওকে টাচ করতে পারেনা। বহুত টেঁটিয়া।
আমি হেসে ফেললাম। ওর বন্ধুগুলোও দারুণ স্মার্ট।
হবেনা কেন। সবাই মডেলিং জগতে ঢোকার ছড়পত্র পেতে চলেছে। আর মডেলিং-এর মেয়েরা, তোমাকে নতুন করে কিছু বলার নেই।
হাসছি।
সব এক গোয়ালের গরু। এখুনি তোমায় পেলে কামরে খেয়ে নেবে। চোখ দেখেছো এক একটার।
চলো, আমাকে আবার বেড়তে হবে।
আমি শুক্রবার চলে যাচ্ছি।
ঠিক আছে আমিও ভাইজ্যাক যাচ্ছি। আমার এ্যাড।
মা তোমাকে আজ নিশ্চই বলবে।
দু’জনে বেরিয়ে এলাম।
কইরে রিমঝিম, আমার কাজ শেষ।
ওরা চারজন সামনের ড্রইংরুমে বসেছিল। এগিয়ে এলো। ঝিমলি কিচেনের দিকে গেল। আমি রিমঝিমের পেছন পেছন ওর ঘরে এসে ঢুকলাম। ঝিমলির ঘরের থেকেও অনেক বেশি পরিষ্কার ঘরটা। চারিদিকে রুচির ছাপ আছে। সব কিছুই একই রকম। আমি চারিদিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি ভাবলেশহীণ মুখ। দেয়ালে বেশ কিছু নামী দামী মডেলের বড়ো বড়ো ছবি। শরিরী ভাষায় নিজেদর ফুটিয়ে তুলেছে। ওরা চারজন আমাকে ঘিরে।
রিমঝিম, এগুলো এখানে কেন।
আমাদের এবছর ফাইন্যাল ইয়ার। আমাকে ওদের মতো হতে হবে। তাই টাঙিয়ে রেখেছি। সকালে ঘুম থেকে উঠে ওদের দেখি আর নিজেক মটিভেট করি আমি ওদের থেকে বড়ো হবো।
তাতে করে সঠিকভাবে বড়ো হওয়া যায়।
তারমানে!
আচ্ছা এই ফিগারটার মধ্যে দিয়ে ও কি বলতে চেয়েছে এটা জান।
ওরা চারজনে আমার দিকে তাকিয়ে, আমাকে যেন গিলে খেতে চায়।
আমি আবার ঘরের চারিদিকে চোখ বোলালাম।
তোমার ঘরটা ঝিমলির ঘরের থেকেও সুন্দর।
পিঙ্কি, তাহলে অন্ততঃ একজন ভালো বলেছে বল।
খুশিতে ডগমগ হয়ে উঠলো রিমঝিমের মুখটা।
অনিদা তোমার একটা অটোগ্রাফ দাও।
চুর্ণী একটা খাতা এগিয়ে দিল। আমি ওর গালটা ধরে একটু টিপে দিলাম।
আমি এখনো অটোগ্রাফ দেওয়ার যোগ্য হইনি। যেদিন হবো সেদিন অবশ্যই দেব।
ওমা! তুই কি লাকি, অনিদা তোর গাল টিপলো। রিমঝিম বলে উঠলো।
আমি হাসলাম।
অনিদা তোমার ফোন নম্বরটা দাও। তিয়া বললো।
আমার কিন্তু স্যুইচ অফ থাকে।
ম্যাসেজ করা যাবে।
তা যাবে।
আমি দিলাম। সবাই পটাপট আমার নম্বরটা নিজের নিজের মোবাইলে সেভ করে নিল।
তোমায় কখন ফ্রি পাওয়া যায়।
সব সময়।
একদিন আমাদের বন্ধুদের সঙ্গে একটু আড্ডা মারবে ?
দেখি যদি সময় করতে পারি।
এই যে বললে সব সময় ফ্রি!
হাসলাম।
আচ্ছা তুমি চ্যাট করতে পার।
পারি।
তোমার ইমেইল আইডিটা দাও।
দিলাম।
তোমাকে আজ কিন্তু দারুণ লাগছে। গেঞ্জির কালারটা দারুণ।
আমি তাড়িয়ে তাড়িয়ে ওদের সঙ্গ উপভোগ করছি।
চলো এবার যাই। সবার চোখেই বিস্ময়ের কাজল।
ওদের ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।
এইযে আমরা এখানে।
দেখলাম শুধু ঝিমলির মা ঝিমলি নেই মনোময় বাবু আর একজন ভদ্রমহিলাও রয়েছেন। কাছে যেতেই মনোময়বাবু পরিচয় করিয়ে দিলেন আমার স্ত্রী মনিদীপা।
আমি বুকে হাত রেখে প্রণাম করলাম। চা খেতে খেতে টুক টাক কথা হলো। সব কথার মধ্যেই আমার লেখার ব্যাপার চলে আসছে।
মনোময় বাবুর স্ত্রী বললেন, আজ আপনারা ডঃ ব্যানার্জীকে নিয়ে পরেছেন দেখছি।
সত্যি কথা বলতে কি আমি সকাল থেকে কাগজটা দেখি নি।
বলো কি! তোমার কাগজ তুমি দেখ নি। মনোময় বাবুর চোখ বড়ো বড়ো।
সেই ভাবে যদি বলেন কোনদিনই দেখা হয় না। ওই আরকি, ময়রা তার নিজের মিষ্টি চেঁখে দেখে না, কিরকম খেতে।
সবাই হাসছে।
ডঃ ব্যানার্জী লোকটা মোটেই সুবিধার নন। মনিদীপা বললেন।
খট করে কানে কথাটা বাজলো।
কেন এই কথা বলছেন।
রিমঝিমের মা আমার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে। চায়ে চুমুক দিলাম।

আমি ওনার সঙ্গে কাজ করেছি কয়েক বছর।
কোথায় ?
ওনার নার্সিং হোমে।
আপনি ডাক্তার ?
হ্যাঁ।
কোথায় আছেন।
প্রইভেট প্র্যাক্টিশ করি। এই মুহূর্তে বেলভিউয়ের সঙ্গে এ্যাটাচড।
আজকে কাগজে যা বেড়িয়েছে সব সত্যি লিখেছে, না গল্প লিখেছে ?
ডকুমেন্টস প্রিন্ট করে দিয়েছে মানেই সত্যি। এবার ওনার রেজিস্ট্রেসনটা ক্যানসেল হবে।
আমি মুখ নীচু করে হাসলাম।
আজ কিন্তু বেশিক্ষণ বসা যাবে না। আমাকে উঠতে হবে। কটা বাজে ঝিমলি।
রিমঝিম বলে উঠলো, বেশি হয়নি, আড়াইটে।
আমি উঠে দাঁড়ালাম। আজ উঠি আর একদিন আসব।
আপনার সঙ্গে আলাপ হয়ে ভালো লাগলো। আপনাকে অনেক কাজে লাগবে।
মনোময়বাবু বলে উঠলেন। নিজের হাতটা এগিয়ে দিলেন। আমি হাতে হাত রাখলাম।
আপনাদের মতো ব্যক্তিত্বের কাজে লাগতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করবো।
হুঁ, বিনয়ের অবতার। এরপর আবার আগামী বছর সময় পাবে তাইতো। ঝিমলি বলে উঠলো।
হয়তো আগামী কালও হতে পারে।
থাক।
তুমি এখন কোথায় যাবে ? ঝিমলির মা জিজ্ঞাসা করলেন।
অফিসে যাব।
চলো তোমায় নামিয়ে দিই। আমাকে একবার অফিসে যেতে হবে।
থাক, আমি ট্যাক্সিতে চলে যেতে পারব। বলো, বলবেতো, চুপ করে রইলে কেন। ঝিমলি বললো।
আমি হাসছি।
ওর গাড়ি নেই! মনোময় বাবু বললেন।
গাড়ি! ঝিমলি এমন ভাবে বলে উঠলো, সবাই হেসে উঠলো।
মনোকাকু এই গল্পটা তোমায় চলে যাবার পর বলবো। দেখে কি মনে হচ্ছে, নিপাট একজন ভদ্রছেলে। ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানেনা। তাইনা। একবার একটু খোঁজ খবর নেবে ভালো করে, দেখবে ওর কীর্তি কলাপ শুনলে আঁতকে উঠবে।
ঝিমলির মা উঠে দাঁড়াল। আমি পায়ে পায়ে গেটের দিকে এগিয়ে গেলাম জুতোটা পায়ে গলালাম। সবার দিকে একবার তাকালাম।
সত্যি অনি তোমায় দেখে কিন্তু না সাংবাদিক, না মালিক কিছুই মনে হচ্ছে না। একজন ধোপদুরস্ত সাধারণ ছেলে। মনোময় বাবু বললেন।
আমি হাসলাম।
ঠিক আছে, আবার পরে দেখা হবে। গেট থেকে বেরিয়ে করিডোরটায় একটু দাঁড়ালাম, রিমঝিম লিফ্ট বক্সের বোতাম টিপলো। লিফ্ট এলো। আমি ঝিমলির মা ভেতরে এলাম।
বাই।
টা টা মাঝে মাঝে কিন্তু তোমায় বিরক্ত করবো আমরা। রিমঝিম চেঁচিয়ে উঠলো।
হাসলাম।
ঝিমলির মা স্বগতোক্তির সুরে বললেন, পাগলী একটা।
নিচে নেমে দেখলাম লালবাতি ওয়ালা গাড়ি দাঁড়িয়ে।
ড্রইভার নেমে এসে গাড়ির দরজা খুললো। আমি আগে উঠলাম, ঝিমলির মা পরে উঠলেন। গাড়ি চলতে শুরু করলো।
ম্যাডাম কোথায় যাবেন।
আগে ওকে নামিয়ে দিয়ে, অফিসে যাব।
আমাকে অফিসে নামাতে হবে না, আপনি এসপ্ল্যানেডে নামিয়ে দিলেই হবে।
কেন, তোমায় অফিসে নামিয়ে দিই।
না না আমি ওইটুকু হেঁটে চলে যাব।
তাহলে ঝিমলি ঠিক কথাই বলেছে।
ও আমাকে কিছুটা কাছ থেকে দেখেছে। অফিসেও এসেছে কয়েকবার। যদিও সেই সময় আমি ছিলাম না।
তোমার জন্য ও ডাক্তারী পড়বার সুযোগ পেলো।
আমার জন্য কেন ? ও ভালো পরীক্ষা দিয়েছে, তাই পেয়েছে।
সোর্স ছাড়া ওখানে চান্স পাওয়া যায় না। আমি খোঁজ নিয়েছি।
ভুল ধারনা আপনার।
তুমি এর মধ্যে ভাইজ্যাক যাবে।
না। তবে কাজ পরলে যেতে হবে।
তোমাদের ওখানে ব্রাঞ্চ আছে।
হ্যাঁ।
ওর একটা থাকার ভালো ব্যবস্থা করে দাও।
ঠিক আছে আমি ফোন করে দেব। আমাকে কোচ নম্বর আর সিট নম্বরটা একবার বলবেন।
কালকে তোমাকে ফোন করে বলবো।

ঠিক আছে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top