What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

দেখি নাই ফিরে (উপন্যাস) (1 Viewer)

মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছিল ডাক্তারের বুকে কখনো বুক দিয়ে শুস নি। খুব জোড় সামলে নিলাম। হাসলাম। মিত্রা আমার বুকে নেমে এলো।
এবার বল।
কি ?
কেন প্রবীরদাকে ছাড়িয়ে আনলি। তাও নিজের বন্ডে।
আমার স্বার্থ আছে। তাই।
সে তো বুঝলাম, কিসের স্বার্থ, বল।
তোর কাগজটাকে আরও বড়ো করে তুলতে হবে। পয়সা থাকলেই বড়ো হওয়া যাবে না। সরকারী ক্ষমতাও তার সঙ্গে কিছুটা দরকার।
প্রবীরদার কনো ক্ষমতা নেই!
কে বললো নেই।
তুই এমন লাগলি মন্ত্রীত্ব থেকে রিজাইন দিল।
ওটা সাময়িক।
তবে কালকের কেশটা যদি উইথড্র না করতাম তাহলে পার্টিতে একটা বড়ো-সড়ো গন্ডগোল হতো। বিধানদা, অনিমেষদা দু’জনেরি বিপদ বারতো। টালমাটাল পজিসন তৈরি হয়ে যেত।
কেন ?
তোর মাথায় ঢুকবে না।
তুই ঢোকালেই ঢুকবে।
দেখ আমাদের শরীরে যেমন হাত-পা-মাথা আছে, এরা পাঁচজন পার্টির হাত-পা-মাথা। পাঁচজনে মিলে একটা শরীর। বিধানদা প্রবীরদা, অনুপদাকে তৈরি করেছেন। রূপায়ণদা অনিমেষদার হাতে তৈরি। কিন্তু প্রবীরদা খুব তাড়াতারি ক্ষমতা পেয়েগেছে। ফলে কিছুটা পদস্খলন হয়েছে।
আজ রাজনাথকে (সন্তর্পণে ডাক্তারের ব্যাপারটা এড়িয়ে গেলাম) ঘাঁটতে গিয়ে অনেক কিছু ভেতরের ব্যাপার সামনে চলে আসছে। হয়তো অনিমেষদা, বিধানদা জানে আবার হয়তো জানে না। ওরা ধরতে পারে নি, আমার সোর্সটা ওদের থেকে স্ট্রং।
বৌদির মুখ থেকে শুনেছে। কিন্তু অতটা গেইজ করতে পারে নি। তবে এই কয়দিনে ওরা আমাকে পায়ের নোখ থেকে মাথার চুল পর্যন্ত মেপে নিল। আজ রাতের মিটিংয়ে একে অপরকে বুঝলাম।
আমার তরফ থেকে এই বার্তাও ওদের কাছে পৌঁছে দিলাম, তোমরা আমাকে প্রশাসনিক ক্ষমতা দিয়ে আটকে রাখতে পারবে না। তবে তুই যদি আমার কাছ থেকে সরে যাস আলাদা ব্যাপার।
কেন এ কথা বলছিস ?
আজ পর্যন্ত যা কিছু করতে পেরেছি, তোর জন্য, তুই আমাকে ক্ষমতটা দিয়েছিলি তাই। সত্যিকারের আমার পেছনে যদি মালিকের তকমাটা না থাকতো, তাহলে আমি কিছু করতে পারতাম না।
আমি সেটা ফিল করি। আজ তোকে একটা কথা বলছি, আর কোনদিন বলবো না, তুই আমাকে এভাবে আর কোনদিন বলবিনা। আমি তোকে কোনোদিন আমার জীবন থকে সরাব না। বরং তুই আমাকে সরিয়ে দিতে পারিস, তোর জীবন থেকে।
আমি মিত্রাকে কাছে টেনে নিলাম। ওর কপালে চুমু খেলাম।
রাগ করিসনা, মাঝে মাঝে আমার কেমন যেন মনে হয়। নিজের প্রতি নিজে আস্থা হারিয়ে ফেলি। সব কেমন গোলমাল পাকিয়ে যায়। আমি চাই আমার ভুলগুলো তোর চোখ দিয়ে দেখব।
কাল রাতে টনা মনাকে বৌদি নিজে হাতে খেতে দিয়েছে, বসে বসে খাইয়েছে।
ওই ছেলেগুলোর কথা একবার ভাব। মুখ দুটো চোখের সামনে ভেসে উঠলেই, বার বার শিউরে উঠছি।
তোকে ওরা অন্ধের মতো ভালবাসে।
আমি কোনদিন ওদের কাছে কিছু চাই নি। কিন্তু প্রবীরদা মিস ইউটিলাইজ করলো। এখানে আসার আগে যদি একবার জানতে পরতো ওরা আমার বাড়িতে আসছে। তাহলে প্রবীরদার ক্ষতি করে দিত।
কেন।
ওইযে তুই বললি ভালবাসা।
সেই জন্য মালতীর সঙ্গে অনিমেষদা বিধানদা আলাদা করে কথা বলেছে। সে কি জেরা রে।
তুই ছিলি না।
তখন সবে মাত্র ওই অবস্থা থেকে উঠেছি। ইচ্ছে করেনি শুনতে।
ছাগল।
তুই আমাকে ছাগল বললি ?
তাহলে কি বলবো। কষ্ট হলেও শুনতে হয়। তাহলেই শিখবি। না হলে কাঁচকলা।
বুবুন তুই কিন্তু মুখে যা আসছে বলে যাচ্ছিস। আমি এখন তোর বিয়ে করা বউ।
ঘুমিয়ে পর। আমিও একটু ঘুমিয়ে বাঁচি।
দাঁড়া পেটে টান লাগছে। নীচে নেমে শুই।
কিরে কোন সমস্যা!
এই সময় এরকম একটু হবে, ডাক্তারদাদা বলছিল। গাদাখানেক ওষুধ দিয়েছে। খেতে হবে। বড়মা বলে দিয়েছে। এখন আর কোথাও যাওয়া হবে না। অফিসে তিনঘন্টার বেশি থাকা যাবে না। প্রয়োজনে অফিসকে বাড়িতে নিয়ে চলে আসতে।
তুই আমার বিপদ বাড়ালি।
তুই কিন্তু এখনো বললি না। কেন প্রবীরদাকে ছাড়িয়ে আনলি।
এতো কথা বলার পরও খোলসা করে বলতে হবে, কেন ছাড়ালাম।
ওই জন্য ডাক্তারদাদা বললো, বুঝলে বান্ধবী ব্যাপারটা আমার কাছে এখনো ধোঁয়াসা। তবে ও এই ক্ষেত্রে সর্ট-টার্ম গেম খেললো না। লং-টার্ম গেম খেললো।
আমি মিত্রার দিকে তাকিয়ে।
কিরে তোর চোখ দুটো স্থির কেন। আবার কি প্ল্যান ভাঁজছিস।
কিছু না।
জানিস বুবুন জ্যেঠিমনি দিদিভাই যতো তোর কথা শুনছে, ততো অবাক হয়ে যাচ্ছে।
কেন।
সেই রাতে অতো লোক জন এসেছে, এটা ওরা ভাবতেই পারে নি।
তার ওপর তোর ওই কীর্তি। জ্যেঠিমনি ভীষণ ভয় পেয়ে গেছিল। প্রেসার হাই। নীরু ওষুধ দিল। তারপরই ঘুম। ব্যাশ সব ঠিক।
ইসি তখন অনিমেষদাকে বলেছে।
প্রথমে বলতে চায় নি। লজ্জা পাচ্ছিল। অনিমেষদা বললো, তুই বলনা, তোর কোন ভয় নেই। তখন ও অনিমেষদাকে সব বলেছে।
কি বললো অনিমেষদা।
প্রথমে গম্ভীর হয়ে গেল। প্রবীরদাকে বললো, এই সমস্যার সমাধান তুমি করবে। আমি অনুপকে দায়িত্ব দিতে পারতাম। কিন্তু দেব না।
প্রবীরদা শুনে কি বললো।
কালকেই ওখানে যাবে। আমাদের ও বাড়ির এ্যাড্রেস নিয়ে নিল। জানিস দিদিভাইকে ওরা খুব অপমান করেছে। তোকে ও সব কথা বলে নি। শুনলে তুই যদি কিছু করে বসিস।
জানি।
তুই জানিস।
আমি খবর নিয়ে নিয়েছি।
কখন নিলি ?
তোকে জানতে হবে না। আর কি বললো।
প্রবীরদাকে এক সপ্তাহের মধ্যে সব ব্যবস্থা করে দিতে বলেছে। এও বলেছে অনি যেন এর মধ্যে ইন্টারফেয়ার না করে। সেটা তুমি দেখবে।
তাই জন্য যাওয়ার সময় প্রবীরদা বললো কাল বিকেলে একবার আসব তুই থাকিস।
তোকে বলেছে!
হ্যাঁ।
তখন প্রবীরদার কথা শুনে মনে হচ্ছিল তোকে ভীষণ ভয় পাচ্ছে।
ছাড় ও সব কথা, বরুণদা কি বললো ?
দিদিভাইকে বলেছে, তুমি এই ছেলেটাকে সকালে বাড়ি থেকে বার করে দিচ্ছিলে। আচ্ছা সত্যি করে বলো, সারাজীবন তুমি যদি চেষ্টা করতে এই সব লোকের সান্নিধ্যে আসতে পারতে ?
কি বললো ইসি।
খুব লজ্জা পেয়ে গেল। চোখদুটো ছল ছল করে উঠলো।
জানিস ইসিরটা বেশ টাইট।
কি টাইট।
কিছু না।
ওরে শয়তান, কোন কথা থেকে কোন কথায় চলে এলি।
আমি হো হো কেরে হাসছি। মিত্রা আমার ঠোঁটে কামড় দিল। দুবার কোমড় নাচিয়ে নিল।
আমার পেট ফেটে যাবে। আমি হাসতে হাসতে বললাম।
যাক না যাক।
আমি হাসছি।
আমি জানতাম তুই নীরুর পেট থেকে কথা বার করবি।
তবে তোর থেকে নয়।
দিলো আমার বুকে গুম গুম করে কিল।
মিত্রা আমার বুকে নেমে এলো। আমার ঠোঁটে ঠোঁট রাখল। আমি ওর কথা রাখলাম। শরীর থেকে সুতোর নাইটিটা খসিয়ে দিলাম। মিত্রা আমার আরও কাছে গভীর ভাবে এগিয়ে এলো। চোখে চোখ। ঠোঁটে ঠোঁটে কথা। দুজনে শরীরী খেলায় মেতে উঠলাম। আজ সেই ভাবে না খালি ছোঁয়া ছোঁয়া। কতোক্ষণ খেলা করলাম জানি না। শরীর আর টানছে না। একথা সেকথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পরলাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম আমি ঘরে একা শুয়ে আছি। চারিদিকের দরজা জানলা হাট করে খোলা। এমনকি বাইরের দরজাটাও খোলা। আমাগাছের পাতায় বাতাসের ছোঁয়ায় শির শির করে একটা মিষ্টি আওয়াজ ঘরের চারদিকে ম ম করছে। ভালো করে বোঝার চেষ্টা করলাম এখন কটা বাজে। জানলা দিয়ে সূর্যের চেহারা দেখে বুঝলাম, বেশ বেলা হয়ে গেছে। বিছানা ছেড়ে উঠে বসলাম। কিছুক্ষণ অলস দৃষ্টি নিয়ে জানলা দিয়ে তাকিয়ে থাকলাম।
তারপর নেমে এসে ব্রাসে মাজন লাগিয়ে জানলার সামনে এসে দাঁড়ালাম। আমগাছটায় ছোট ছোট আম হয়েছে। আপন মনে যে যার ঝুলে আছে। সেই কাক দুটোকে আর দেখতে পাচ্ছি না। তাদের পরিত্যক্ত বাসাটা এখনো আমগাছের একটা ডালে ঝুলে আছে। নিচের দিকে তাকালাম। পেয়ারা গাছটায় দুটো শালিক বসে ঠোঁটে ঠোঁট ঘসছে।
একটু দূরে পাঁচিলের গায়ে চোখ পরলো। অনেক গুলো বেল ফুলের গাছ, মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। এ নিশ্চই ভজুরামের কাজ। ভজুরাম সারাদিন বড়মা ছোটমার পেছন পেছন ঘুর ঘুর করে, আর বাগান পরিচর্যা করে। বেশ আছে। গণিকা পল্লীর বয়ের থেকে ভালো আছে। জানলা থেকে সরে এসে বাথরুমে ঢুকলাম। ভালো করে ফ্রেস হয়ে বাথরুমের বাইরে এলাম। ইজি চেয়ারে বড়মা। হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। আমার দিকে তাকাল।
কখন উঠলি।
আমি মুচকি হাসলাম।
বড়মা আমার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে।
আমি মুখ মুছে টাওয়েলটা কাঁধে ফেললাম, আলনা থেকে টেনে একটা পাজামা পাঞ্জাবী বার করলাম। বড়মা আমার দিকে স্থির দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে।
তুই উঠে পরেছিস! ছোটমা বলতে বলতে ঘরের ভেতর এলো।
দিদি এখানে নিয়ে চলে আসি ?
কেন, আমি নিচে যাচ্ছি।
বড়মার দিকে তাকিয়ে।
জানি তোমাদের অনেক প্রশ্ন আছে। আজ তার সঠিক উত্তর আমায় দিতেই হবে।
বড়মা, ছোটমা আমার দিকে তাকিয়ে, আমাকে বোঝার চেষ্টা করছে।
কিগো তাই তো ?
বড়মা এমন ভাবে মুখ টিপে হাসলো, আমি হেসেফেললাম।
খালি ফিচলেমি। দেবনা কান মূলে। ছোটমা তেড়ে এলো।
আজ কোথাও বেরবনা বুঝলে বড়মা। আজ খালি তুমি আমি ছোটমা। খাব আর গল্প করবো। কি মজা বলো।
দেখছিস দেখছিস ছোট। ও কিরকম এখন থেকে প্ল্যান ভাঁজছে দ্যাখ।
তুমি দেখো, ওকে আমি হাড়ে হাড়ে চিনেছি। খাবার নিচে খাবে না ওপরে নিয়ে আসবো ?
এই দ্যাখো, বললাম আমি নিচে যাচ্ছি। তোমরা নিচে গিয়ে টেবিলে বসো, আমি চেঞ্জ করেই চলে যাচ্ছি।
বড়মা ছোটমা দুজনেই বেরিয়ে গেল। ভাবলাম চেঞ্জকরে নিচে চলে যাই, তারপর ভাবলাম না, স্নানটা একেবারে সেরে নিই। ভাবামাত্রই আর অপেক্ষা করলাম না। বাথরুমে ঢুকে স্নান সেরে নিলাম। তারপর নিচে এলাম। দুজনে তখনো গুছিয়ে উঠতে পারে নি। বুঝলাম আরও কিছু কাজ এর মধ্যে সেরে ফেলেছে। আমি টেবিলে এসে বসলাম।

কিগো আমি মাঝখানে দুজনে দুপাশে, না মুখো মুখি।
 
মনে খুব ফূর্তি মনেহচ্ছে। ছোটমা হাসতে হাসতে বললো।
হবে না। বাবু প্ল্যান মাফিক সব কাজ শেষ করলেন। বড়মা প্রতিউত্তর দিল।
এইতো শুরু করলে, অনি তাহলে ভোঁ ভাঁ।
যা না দেখি, তোর কতবরো ক্ষমতা। মেরে ঠ্যাং ভেঙে দেব।
বড়মার কথায় ছোটমা হাসছে।
আমি বড়মাকে পেছন থেকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম।
পারবে অনির ঠ্যাং ভাঙতে।
বড়মা হাসছে।
চলো খিদে পেয়ে গেছে। মিত্রারা কোথায় ? অফিসে ?
অফিসে কেন যাবে। তুই সবাইকে কাজ দিয়ে রেখেছিস। কাজ সারতে গেছে।
দাঁড়াও একটা ফোন করি।
তোর ফোন খোলা আছে ? বাড়িতে থাকবি, তাও স্যুইচ অফ।
আমি ঘুমোচ্ছিলাম, তুমি খুলে দিতে পারতে।
খালি মুখের ওপর কথা।
ঠিক বলেছ এ ভাড়ি অন্যায়।
ফোনটা স্যুইচ অন করলাম, তবে কাউকে ফোন করলাম না। খোলার সঙ্গে সঙ্গে যা হয় কিছু মিস কল আর ম্যাসেজ।
ছোটমা খাবার নিয়ে চলে এলো। আজ কিন্তু বাটি চচ্চড়ি আর লুচি নয়। দেখলাম কড়াইশুঁটির কচুরি বানান হয়েছে, তার সঙ্গে বেশ কষা কষা আলুর দম। দুজনে আমার দুপাশে। বুঝলাম একেবারে শাঁড়াসি আক্রমণ চলবে। আমিও মনে মনে প্রস্তুত হয়ে নিলাম।
খাওয়া শুরু হলো।
দাদা মল্লিকদা কখন বেরিয়েছে।
সব এক সঙ্গে বেরিয়েছে।
খাওয়া-দাওয়া করে বেরিয়েছে, না এসে খাবে ?
টিফিন করে গেছে, বললো অফিসে খেয়ে নেবে।
কিছুক্ষণ চুপচাপ, আমি মাথা নীচু করে আছি। বুঝতে পারছি, দুজনের চোখ আমার দিকে।
মাথা তুললাম।
বলো কোনখান থেকে শুরু করবো। জ্যেঠিমনি থেকে না প্রবীরদা থেকে, না সেদিন রাতে মিত্রার বাড়িতে সারারাত জেগে কি করছিলাম সেখান থেকে।
বড়মা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। গালটা টোবলা হয়ে গেছে। নড়া-চাড়া করছে না। ছোটমা আমার কথা বলার ভঙ্গিমায় থ হয়ে গেছে।
কি ভাবছো। অনি তোমাদের মনের কথা পটাপট বলে দিচ্ছে বলে ? না অনি যাদু জানে ?
দুজনেই ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে।
বুঝলে বড়মা, অনি থট রিডিং করতে পারে।
আমি নির্বিকার ভাবে কথা বলে চলেছি আর খেয়ে যাচ্ছি।
সেদিন রাত জেগে দিদির (জ্যেঠিমনির) কথা উদ্ধার করলি, না আরও কিছু আছে। ছোটমা বললো।
আরো আছে। সেগুলো এখন বলা যাবে না।
বড়মা আর একটা কচুরি আলুরদম সহযোগে মুখে তুললো।
আচ্ছা বড়মা জ্যেঠিমনিকে দেখে তোমার কেমন মনে হলো। আমি যদিও জ্যেঠিমনিকে দশবছর পর দেখলাম।
তুই দিদিকে আগে দেখেছিস ? ছোটমা বললো।
যখন মিত্রাদের বাড়ি যেতাম, সেই কলেজ লাইফে।
কই আগে বলিসনি। বড়মা বললো।
তুমি কখনো বলেছো তুমি ডঃ রায়ের ছাত্রী।
বড়মা হাসতে হাসতে কান ধরার জন্য হাত তুললো।
আমি মাথা সরিয়ে ছোটমার দিকে হেলে পরলাম। বড়মার পাত থেকে একটা কচুরী তুলে নিলাম। ছোটমা আমার দিকে তাকিয়ে হাসল।
সেই ভাবে প্রয়োজন হয় নি। তবে সেই রাতে মিত্রার মুখ থেকে কিছু কথা জানার পর মনে হলো ওই দিনটা জ্যেঠিমনির উপস্থিত থাকা খুব প্রয়োজন। তাই নিয়ে এলাম।
ভদ্রমহিলাকে আগে কোথায় যেন দেখেছি। বড়মা বললো।
আমি অর্থপূর্ণ হাসি হাসলাম।
হাসিসনা বল। ছোটমা বললো।
তুমি তোমার ব্রেনটা সার্চ করো, দেখবে পেয়ে যাবে।
বয়স হয়ে গেছে, স্মরণশক্তিতে ছাতা পরেছে।
আমি হাসছি।
আচ্ছা বড়মা মিত্রা তোমার বিয়ের বেণারসী পরে বিয়ে করতে বসলো। কেন বসলো ?
তা বলতে পারব না। তবে ও এমন ভাবে জেদ ধরলো। না বলতে পারলাম না।
তোমার মনে প্রশ্ন আসে নি, কেন মিত্রা জেদ ধরলো। তোমার বিয়ের বেনারসী পরে তোমার ছেলেকে বিয়ে করবে।
ওরতো অনেক খেয়াল, ভাবলাম ওটাও ওর একটা খেয়াল।
আমি বড়মার দিকে তাকালাম, কিছু লোকাবার চেষ্টা করছে কিনা।
আচ্ছা বড়মা তুমি আমাকে তোমার সব কথা বলেছো, আমি যদি তোমাকে আরও কিছু কথা বলি তুমি মনে কিছু করবে না। কোন দুঃখ পাবে না।
কেন তুই এ কথা বলছিস। ছোটমা বললো।
দাঁড়া ছোট, ওকে বলতে দে।
ছোটমা আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে।
জানো বড়মা মাঝে মাঝে নিজের ওপর ভীষণ আক্ষেপ হয়। মনেহয় পৃথিবীতে আমি জন্মেছি সবার জট ছাড়াতে। ছাড়িয়েও যাচ্ছি। শেষে নিজের জট ছাড়াব। তখন তোমাদের কাছ থেকে কিছু দিনের জন্য ছুটি নেব।
কেন একথা বলছিস!
হঠাৎ মনে হলো, তাই বললাম।
ছোটমার ফোনটা বেজে উঠলো। আমার দিকে তাকাল।
মিত্রা।
কথা বলো।
তুই বল সকাল থেকে তিনবার ফোন হয়েগেছে।
তুমি কথা বলো, তারপর বলছি।
বল।….হ্যাঁ বাবু উঠেছেন….
ছোটমা আমার হাতে ফোনটা বাড়িয়ে দিল। আমি কানে দিলাম।
শয়তান নিশ্চই তোমাদের সঙ্গে আলুরদম কচুরি খাচ্ছে। আমাদের বাড়ি থেকে বার করে….।
কেন তোরা খেয়ে যাস নি।
কাল রাত থেকে সকলকে কাজ দিয়ে দিয়েছিস, খাবার সময় পেলাম কোথায়।
হরিদার ছেলেকে বল আনন্দ থেকে বিড়িয়ানি এনে দেবে।
তাহলে তুই আয়।
আমি একটা জরুররি মিটিং করছি বড়মার সঙ্গে।
ওই ব্যাপারে।
হ্যাঁ।
তাহলে পরে ফোন করবো।….ছাড়িসনা….ধর ধর মিলি একটু কথা বলবে।
দে।
অনিদা।
বলো।
তোমার জন্য এ যাত্রায় বেঁচে গেলাম।
আমার জন্য কেন। তুমি চেয়েছিলে।
তুমি না থাকলে আরও কতদিন ঝুলতাম জানি না।
শুষ্ঠভাবে কাজ হয়েছে।
হবে না মানে। ইসলামভাই নিজে দাঁড়িয়ে থেকে করিয়েছে।
ইসলামভাই গেছিল!
কেন বড়মা কিছু বলে নি।
আমি কি সবাইকে সব কথা বলি।
মিলি হাসছে।
ঠিক আছে দেখি যদি পারি যাচ্ছি।
আচ্ছা।
ছোটমার হাতে মোবাইলটা দিলাম। বড়মার দিকে তাকালাম।
কিগো ইসলামভাই গেছে তুমি বলো নি।
ওইতো উত্তরটা বলে দিলি।
মনে থাকে যেন।
ছোটমা কাঁধে হাত দিল।
সব সময় কান ধরলে চলে এখন অনি বিয়ে করেছে।
ছোটমা হেসে ফেললো।
তারপর বল।
আমি বড়মার দিকে তাকালাম।
হ্যাঁ। সত্যি তোমার মনে কোনো প্রশ্ন আসে নি।
এসেছে উত্তর পাই নি।
আচ্ছা বড়মা এখন যদি তোমাকে আমি কিছু কথা বলি তুমি একটুও দুঃখ পাবে না।
কেনো তুই বার বার এক কথা বলছিস।
নিজের মধ্যে একটা সংকোচ বোধ কাজ করছে। কিন্তু তোমাকে ব্যাপারটা বলা দরকার।
বল।
তাহলে তোমাদের দুজনকে একটা কথা দিতে হবে।
বল। কি কথা।
আমি তোমরা দুজন মিত্রা ছাড়া এই পৃথিবীতে আর কেউ জানবে না।
তোর দাদা মল্লিক!
না। শুধু আমরা এই তিনজন।
বড়মা আমার মুখের দিকে তাকাল।
কি কথা দিচ্ছ।
দিলাম।
আমি খুব ধীর স্থিরভাবে একে একে সেই রাতের সমস্ত কথা বললাম। প্রায় এক ঘন্টা লাগল বলতে। এর মধ্যে বড়মা কোন কথা বলে নি। কখনো গম্ভীর হয়েছে। কখনো অবাক বিস্ময়ে আমাকে দেখেছে। ছোটমা নির্বাক শ্রোতা। খাওয়া শেষ, চা খাওয়া হয়ে গেছে এক রাউন্ড। তবু আমি ছোটমাকে বললাম আর একবার চা নিয়ে এসো, তারপর আর একটা ধাপ তোমাদের বলবো। তারপর তোমরা আমাকে প্রশ্ন করবে। আমি তার উত্তর দেব।
ছোটমা উঠে চলে গেল, রান্নাঘর থেকে চায়ের ফ্লাক্সটা নিয়ে এলো। চা ঢাললো।
এবার আমি সেদিন সকাল থেকে মিত্রার বাড়িতে গিয়ে প্রথম থেকে যা যা ঘটনা ঘটে ছিল সব বললাম, এমন কি জ্যেঠিমনির সঙ্গে কি কথা হয়েছে, আমি জ্যেঠিমনিকে কি কথা বলেছি সব। শুনতে শুনতে ছোটমার চোখ বড়মার চোখ ছল ছল করে উঠলো।
কাঁদলে কিন্তু অনি নিজেকে আর ওপেন করবে না। চুপ করে যাবে। অনি নিজের সঙ্গে নিজে যুদ্ধ করবে। আর তোমাদের কিছু বলবে না।
বড়মা কাপরের খুঁট দিয়ে চোখ মুছলো। ধরাগলায় বললো।
আমাকে একবার নিয়ে চল।
তুমি দুর্বল হয়ে পরছো।
দোষটা আমার।
না দোষটা তোমার নয়, তোমার পরিবারের। মিত্রা একদিন তোমার বসিরহাটের বাড়ি থেকে ঘুরে এসেছে।
মিত্রা আমার বাড়িতে গেছিল!
হ্যাঁ। কোন একটা কারণে তোমার বসিরহাটের বাড়িতে যেতে সে বাধ্য হয়েছিল।
বড়মা মাথানীচু করে রইলো।
সেই জন্য ও আমার পরনের বেনারসীটা পরে বিয়ে করতে বসেছিল, আমার সিঁদুর কৌটো থেকে সিঁদুর নিয়ে বিয়ের আসরে সিঁথিতে দিয়েছিল!
হ্যাঁ।
বড়মা চোখ মুছছে।
তুমি এরকম করলে আমি কিন্তু উঠে চলে যাব।
যাস না। তুই এখন আমার বল ভরসা।
শুধু তোমার না দিদি আমাদের সকলের। ছোটমা বললো।
জ্যেঠিমনি মিত্রাকে গর্ভে ধারণ করেছে, কিন্তু মিত্রা জানে তুমি তার বাবার বিয়ে করা বৌ।
ও কোন অন্যায় করে নি। আমি ওর জায়গায় থাকলে এরকম করতাম।

আমি বড়মার গলা জড়িয়ে ধরলাম। বড়মা আমার কাঁধে মাথা রেখেছে, বুঝতে পারছি চোখের জলে আমার কাঁধ ভিঁজে যাচ্ছে।
 
তুমি কাঁদলে কথা বলি কি করে।
কতো কষ্ট বুকে নিয়ে মেয়েটা বেঁচে আছে বল।
সে তুমি কি করবে, এটা ওর ভাগ্যের লিখন।
ছোট ওকে ডেকে নে।
এখন থাক, ও লজ্জা পাবে। আমি ওকে বলেছিলাম, তুই নিজের মুখে বড়মাকে বল। ও বলেছে আমি কোনদিন বড়মাকে মুখ ফুটে এসব কথা বলতে পারব না।
বড়মা কাপরের খুঁট দিয়ে চোখ মুছে চলেছে।
তাহলে তোমরা কান্নাকাটি কর আমি চললুম।
আমি উঠে দাঁড়ালাম। বড়মা আমার হাতদুটো চেপে ধরলো।
আমায় কিন্তু তোমরা দুজনে কথা দিয়েছ, দাদা মল্লিকদা কোনদিন জানতে পারবে না।
ছোটমা মাথা দোলাচ্ছে।
মিত্রাকে একবার ডাকি। বড়মা বললো।
কেন।
ওকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।
আমি বড়মার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। বড়মা মাথা নীচু করে নিল।
ঠিক আছে ডাকো, কান্নাকাটি করতে পারবে না।
আচ্ছা।
ছোটমা নীচুস্বরে মিত্রার সঙ্গে কথা বললো। আভাসে ইঙ্গিতে বুঝলাম, ও চলে আসছে। আমি আছি কিনা সেটাও ও জিজ্ঞাসা করছে, বড়মা মনখারাপ করছে কিনা সেটাও ও জিজ্ঞাসা করছে। ছোটমা হ্যাঁ হুঁ করে উত্তর দিয়ে চলেছে।
সেদিন ও যে ওর বাবার ফটোটা দেখাল সেটা তো ও নয়।
তোমাকে অরিজিন্যাল ফটো দেখায় নি। যদি তুমি ধরে ফেল। ও তোমাকে ওর দাদুর ছোট বেলাকার একটা ফটো দেখিয়েছিল।
বড়মা মাথা নীচু করে আছে। ছোটমা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
তুই কখনো ওকে দেখেছিস।
সামনা সামনি দুবার কথা হয়েছে। সেই কলেজ লাইফে। তারপর আর যাই নি।
তুই দামানিদের বাড়ি কখনো গেছিস।
সেই সৌভাগ্য আমার হয় নি।
আমি একবার তোর দাদার সঙ্গে গেছিলাম।
মিত্রার মার সঙ্গে তোমার আলাপ হয়নি।
উনি তখন অসুস্থ ছিলেন। তোর দাদাকে খুব ভালো বাসতেন। তাই বড়োমুখ করে বলেছিলেন, একবার বৌমাকে নিয়ে আসিস দেখবো।
তার মানে উনি ব্যাপারটা জানতেন।
বলতে পারব না।
আচ্ছা দাদা কোনদিন জানতেন না।
তোর দাদার সঙ্গে মিত্রার বাবার সম্পর্ক ভালো ছিলো না। তোর দাদা সব সময় দামানির কথা মতো চলতো।
কেন তখনতো মিত্রার বাবা কাগজের সর্বে সর্বা।
ঠিক, তবুও দামানিদের প্রতিপত্তি তখন কমে যায় নি।
তারপর।
তারপর তোর দাদার ওপর একটা প্রেসার ক্রিয়েট করা হলো। তখন তুই সবেমাত্র কাগজে আসা যাওয়া শুরু করেছিস। তোর চাকরিটা দামানির জন্য হয়েছে। তোর দাদা দামানিকে বলে তোর চাকরির ব্যবস্থা করেছিল।
ডাক্তার কবে থেকে কাগজের দায়িত্ব নিল।
যখন মিত্রার বাবা আসা বন্ধ করলো।
তখন দাদা তোমাকে এসে কিছু বলতো না।
একদিন রাতে ফিরে বললো। বুঝলে মিনু আজ থেকে কাগজে নতুন মালিক আসা শুরু করলেন। আমি বললাম কি রকম। তা বললো, দামানির জামাই অসুস্থ, তাই সে তার জামাইকে দায়িত্ব দিয়েছে। আমি বললাম কেন দামানির মেয়ে গেল কোথায়। তা বললো, ওর কথা ছাড়ো, খালি ক্লাব পার্টি করে বেড়াচ্ছে।
তখন দামিনী বেঁচে।
উনি বেঁচে ছিলেন।
তুমি মিত্রাকে কবে প্রথম দেখেছো।
আমাদের বাড়িতে যেদিন প্রথম এলো।
মিত্রা তোমাকে এখানে আসার আগে দেখেছে।
কবে!
তুমি একদিন আমাদের কাগজের কোন একটা ফাংসনে গেছিলে সেদিন।
বড়মা আমার মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে।
তারপরে ও দাদার প্রতি রিভেঞ্জ নেওয়ার জন্য এসব করেছিল। তখন ও ভেসে বেড়াচ্ছে। জীবনটাকে শেষ করে দেওয়ার জন্য উঠে পরে লেগেছে। বাবা মারা গেছে। মাকে স্লো-পয়জেন করে ডাক্তার মেরে দিয়েছে। মিত্রা তখন ডাক্তারের হাতের পুতুল। কাঠগোড়ায় দাঁড় করিয়েছে তোমাকে দাদাকে, সঙ্গে মল্লিকদা। সুনীতদা এই সুযোগটা নিয়েছে। বলতে পার সেই সময় আমার আবির্ভাব।
তুই আর বলিস না।
বড়মা আমাকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। ছোটমা চোখ মুছছে।
তুমি কাঁদছো কেন। তুমি চেষ্টা করলে এখন কিছু করতে পারবে।
দুজনেই নিস্তব্ধে চোখের জল মোছে।
বাইরের বাগানে গাড়ি এসে দাঁড়াবার শব্দ হলো। আমি উঠে দাঁড়ালাম। বড়মা আমার হাতটা ধরে আবার চেয়ারে বসিয়ে দিল। দুজনে আমার দুহাত ধরে আছে। যেন কতো অপরাধী। আমি গেটের দিকে তাকিয়ে আছি। মিত্রা এসে গেটের কাছে দাঁড়াল। চোখ দুটো ছল ছলে। মাথা নীচু করে ধীর পায়ে আমাদের দিকে এগিয়ে এলো। বড়মা এগিয়ে গিয়ে মিত্রাকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলো। তিনজনেই কাঁদে। আমি নির্বাক দর্শকের মতো বসে আছি। নিস্তব্ধ ঘর।
ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলাম দাদা ফোন করেছে।
কি হয়েছে।
তুই কোথায়।
বাড়িতে।
মিত্রা বেরিয়ে গেল। বললো শরীরটা খারাপ লাগছে।
হ্যাঁ বাড়িতে পৌঁচেছে।
তুই ওকে এতো প্রেসার দিচ্ছিস কেন।
কোথায় দিলাম।
সকাল থেকে সব কাজ দিয়েছিস।
ঠিক আছে তোমাকে ভাবতে হবে না। আমি দেখছি।
তোর বড়মাকে দে, ওর ফোন বন্ধ।
বড়মা বাথরুমে।
ছোটকে দে।
ছোটমা বাগানে।
তুই কোথায়।
আমি কচুরি সহযোগে কষা আলুর দম খাচ্ছি।
ঠিক আছে পরে ফোন করবো।
সেই ভালো।
আমি ছোটমার ফোনটা কাছে টেনে নিলাম। স্যুইচ অফ করলাম। তিনজনেই আমার দিকে তাকিয়ে চোখ লাল, মুখে হাসি।
কি এবার সব ঠিক আছে, না কান্না পর্ব আর কিছুক্ষণ কনটিনিউ করবে।
তিনজনেই আমার দিকে তাকিয়ে।
তোমাদের মেয়ে দাদাকে বলে এসেছে তার শরীরটা খারাপ লাগছে। আমি নাকি খুব প্রসার ক্রিয়েট করেছি ওর ওপর।
করেছিস তো, না বলতে পারবি। ছোটমা বললো।
ঠিক কথা।
আমি ফোনটা তুলে নিয়ে ইসিকে ফোন করলাম।
বল।
কি করছিস।
সংসারের কাজ করছি।
কি ধরনের কাজ।
দুদিনের জামাকাপর কাচলাম শুকোলাম এবার ভাঁজ করছি। বাকি গুলো ইস্ত্রি করতে পাঠাব।
তিনজনেই আমার দিকে তাকিয়ে। বোঝার চেষ্টা করছে কার সঙ্গে কথা বলছি।
শোন রান্নাবান্না কিছু করেছিস।
কেন তুই খাবি ?
ভাবছিলাম দুপুরের খাওয়াটা শ্বশুর বাড়িতেই করবো।
মিত্রা হেসে ফেললো।
সত্যি আসবি!
আমি না গেলেও আমার রিপ্রেজেনন্টিভ, বড়মা, ছোটমা যাবে।
সত্যি!
আমি কি মিথ্যে বলছি।
কই ছুটকি কিছু বললো না।
তোর সঙ্গে কখন কথা হয়েছে।
ধর ঘন্টা দুয়েক আগে।
আমি বাড়িতে। তোর ছুটকিও আমার সামনে দাঁড়িয়ে। কিরে পিকু ঝামেলা করছে।
শুধু পিকু, মা সামনে দাঁড়িয়ে।
জ্যেঠিমনিকে দে।
বল।
কিগো তোমার বাড়িতে গেলে দুটো খেতে দেবে, না সেদিনের মতো….।
আমি সব শুনতে পাচ্ছি। ইসির গলা পেলাম।
তুই কি ভয়েজ অন করে রেখেছিস।
বিদ্যেটা তোর কাছ থেকে শেখা।
দক্ষিণা কি দিবি।
তুই আয় তারপর দেখাচ্ছি।
পিঠে না পেটে।
দু জায়গাতেই।
কিগো জ্যেঠিমনি তুমি কিছু বলছো না যে।
কখন আসবি।
ঘন্টা খানেকের মধ্যে। তবে আমি যাব রাতের বেলা।
এই যে বললি এসে খাবি।
কয়েকটা কাজ আছে বুঝলে।
তোর সব সময় কাজ।
আমি ভয়েজ অন করলাম।
তুমি নিজের চোখে দেখে গেলে।
আজ কাজ করতে হবে না।
তোমার ছুটকি অফিস থেকে দূর করে দেবে।
করলেই হলো।
সে তুমি বুঝবেনা জ্যেঠিমনি, কতো জ্বালা।
কখন আসবি।
বলেও মুস্কিলে পরলাম।
চলনা ওরকম করিস কেন। মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো।
শুনলে তোমার ছুটকির গলা।
শুনলাম। সকালে কথা বলেছি।
আমার নামে কি নালিশ করলো।
নালিশ করে নি।
সেকিগো আজ সূর্য কোনদিকে উঠেছে।
জ্যেঠিমনি হেসে ফেললো।
নাও ছুটকি চাইছে কি কথা বলে দেখ।
আমি মিত্রার হাতে ফোনটা দিয়ে ঘরের বাইরে চলে এলাম। আসার সময় বড়মার মুখের দিকে একবার তাকালাম। থমথমে কিন্তু মেঘ কেটে গেছে। ছোটমার হাসি হাসি মুখটা বেশ ভালো লাগলো। আমি বাগানে এলাম, দেখলাম ভজুরাম একেবারে কোনের দিকে ঝাঁট দিয়ে দিয়ে পাতা গুলো একজায়গায় জড়ো করছে।
কিরে কাজ শেষ হয়নি।
কতোদিন ঝাঁট দিই নি বলো।

কখন শেষ করবি কাজ।
 
দেরি আছে।
সেকিরে যা এবার স্নান সেরে নে। বড়মার সঙ্গে একটু ঘুরে আয়।
কোথায় ?
যা না দেখতে পাবি।
তুমি যাবে না ?
না আমি পরে যাব।
ভজুরাম ঝাঁটা ফেলে দিয়ে একদৌড়ে ভেতরে চলে গেল। আমি পায়ে পায়ে ভেতরে এলাম। দেখলাম তিনজনে সোফায় বসে। আমাকে দেখে মিটি মিটি হাসলো।
কি মেঘ কেটেছে।
বড়মা মাথা নীচু করে নিল।
আমি ছেলেটা মোটেই সুবিধার নয় বুঝলে বড়মা।
বড়মা মুখ তুলে আমার দিকে তাকাল।
ছোটমা একটু চা খাওয়াও। দেরি করো না বেরিয়ে পরো।
তুই যাবিনা।
যাবো। প্রথমে একটু অফিসে যাবো। তারপর।
মিত্রার হাত থেকে ফোনটা নিলাম। দেবাশীষকে একটা ফোন করলাম।
কোথায়রে।
আগে বল তুই কোথায়।
বাড়িতে।
কখন উঠলি।
অনেকক্ষণ।
তুইতো একফোনে কাজ সেরে দিলি।
হাসলাম। তোকে যে কাজ দিয়েছিলাম, কতোদূর এগোলি।
সিক্সটি পার্সেন হয়েছে। আমি এখন তোর অফিসে।
নির্মাল্য।
অফিসেই আছে।
অপেক্ষাকর আমি যাচ্ছি।
হ্যাঁরে মিত্রার কি হয়েছে।
কেন।
দাদা বললো শরীর খারাপ।
ওই আরকি।
ঠিক আছে তুই আয়।
আচ্ছা।
মিত্রা হাসছে।
কিগো দ’এর মতো বশে রইলে কেন জামাকাপড় পরো।
তুই চল।
এইতো….।
ছোটোমা চা নিয়ে এলো। সবার জন্য।
চ’ না এরকম করিস কেন।
আমি বড়মার দিকে তাকালাম।
ঠিক আছে যেতে পারি বেশিক্ষণ থাকব না। দিয়েই চলে আসব।
আজকের দিনটা। আজকের কাজ গুলো কালকে করিস। একদিনে কিছু যায় আসবে না।
মনে থাকে যেন।
খুব মনে থাকবে।
বড়মার মুখে হাসি ফুটল।
নাও তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও।
মিত্রার দিকে তাকালাম।
তুই দেবাকে একটা ফোন করে দে। আমি যাব না। দাদাকে বলেদে, শরীর ঠিক আছে, নিজের বাড়িতে যাওয়ার জন্য শরীরটা খারাপ হয়েছিল।
ছোটমা হেসে উঠলো।
আমি ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। নিজের ঘরে এলাম। দেখলাম ভজুরাম ছোটমার ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে একটা আয়নায় নিজের টেরি বাগাচ্ছে। একটা প্যান্ট শার্ট পরেছে।
কিরে চুলে অতো টেরি বাগালে সব উঠে যাবে।
ভজুরাম থতমতো খেয়ে গেছে। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো।
ভালো জায়গায় যাব।
কোথায় যাবি।
দিদিমনি বলেছে নিজের বাড়িতে নিয়ে যাবে।
বেশ করেছে।
আমি নিজের ঘরে এসে ঢুকলাম। আলমাড়ি খুলে চিরাচরিত পোষাক বার করলাম। বাথরুমে গেলাম। মুখে চোখে জল দিলাম।
কিরে তুই এই পরে যাবি। মিত্রা খাটে বসে।
ঝামেলা করবি না। তুই বলেছিলি তিনদিন তোর কথা শুনে চলতে, শুনেছি। এবার আমার মতো চলতে দে।
তা বলে নতুন জামাই!
রাখ তোর নতুন জামাই।
তোর এটা পরা হবে না।
তাহলে যাব না।
আমার একটা প্রসটিজ আছে।
জ্যেঠিমনির কাছে।
যার কাছেই হোক।
ঠিক আছে ওটা সঙ্গে করে নিয়ে নে। যেটা দিবি সেটা পরে যাব। তারপর ওটা পরে বেরিয়ে আসব।
মিত্রা হেসে উঠলো।
কি হলোরে মিত্রা।
ছোটমা গেটের সামনে এসে দাঁড়াল। কাপর পরা হয়ে গেছে।
তুমি ভেতরে এসে দেখ। কি জামা কাপড় বার করেছে।
নিশ্চই ওর মনের মতো সেই শত ছিদ্র….।
হ্যাঁ।
বলেকিনা তোদের মনের মতো জামাকাপড় পরে যাব ও বাড়িতে গিয়ে এটা পড়ে বেরিয়ে আসবো।
আগে যেতে দে তারপর দেখছি।
ঝামেলা করলে অনর্থ হয়ে যাবে বলে দিচ্ছি।
দেখি না তুই কিরকম অনর্থ করিস।
তাহলে যাব না।
উঁউউ বললেই হলো। প্রথম শ্বশুর বাড়ি যাবে….।
আমার শ্বশুর বাড়ি যাবার উদ্বোধন হয়ে গেছে।
বক বক করিস না। যা বলি শোন। দিদি দুবার ফোন করে ফেলেছে। বেরিয়েছি কিনা।
ঠিক আছে তোমরা নিচে যাও আমি যাচ্ছি।
মিত্রার দিকে তাকালাম।
দাদাকে ফোন করেছিস।
করেছি। বড়মা কথা বলেছে।
যা এবার নিচে গিয়ে গাড়িতে বোস, যাচ্ছি।
ওরা নিচে চলে গেল। আমি নতুন জিনসের প্যান্ট আর গেঞ্জি পরলাম খারপ লাগছে না। ভালই লাগছে। বেরিয়ে এলাম। দেখলাম নিচে কয়েকটা বোঁচকা বুঁচকি গাড়ির পেছনে রবীন তুলছে। বড়মার পাসে মিত্রা দাঁড়িয়ে। কার সঙ্গে যেন ফোনে কথা বলছে। আমি সামনে গেলাম।
বুঝলি ভিআইপি বাবু সবে নিচে নামলেন। ধর কথা বল।
কে।
দিদিভাই।
বল।
তুই সত্যি মেয়ের বেহদ্দ।
তাহলে আমাকে প্রমাণ দিতে হয়।
দে।
একবার চান্স দে।
একটা থাপ্পর এমন দেব না।
তোর বোন একবার মেরেছিল, গালটায় খুঁজলে এখনো তোর বোনের আঙুলের ছাপ পাবি। বড়মা ছোটমাকে সারাজীবনের জন্য দুটো কান ইজারা দিয়ে দিয়েছি। সবাই মিলে তোরা যদি মারধোর করিস, আমি যাই কোথায় বলতো।
মিত্রা হেসে উঠলো।
এখন রাখ, বস্তাগুলো তার বাড়িতে ফেলতে পারলে শান্তি।
কি বললি বস্তা। মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো।
ওকে বলতে দেনা সঙ্গে যেতে হচ্ছে না। মেজাজ এখন মনুমেন্ট। ছোটমা বললো।
আমি মিত্রার হাতে ফেনটা দিলাম। নিজের ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলাম প্রবীরদা। প্রবীরদা এই সময় ফোন করছে ? কেন!
ফোনটা ধরে কানে তুললাম।
বলো প্রবীরদা।
তুই কোথায় ?
সবাইকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছি।
কতো নম্বর।
এটা ঠিক কথা বলেছো। কি বলি তোমাকে। মিত্রাদের পুরনো বাড়িতে।
ঠিক আছে আয়। এলে আমাকে একবার ফোন করিস।
কেন।
ওই ব্যাপারটা আজই মেটাব।
তুমি চলে এসো। একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া করা যাবে।
তুই পৌঁছে আমাকে একবার ফোন করিস। আমি এখন দামিনীমাসির ওখানে আছি।
কেন, কোন সমস্যা।
মিত্রা বড়মা ছোটমার চোখের ভ্রু শরু হয়ে গেল। মুখ থমথমে।
আর বলিসনা, মাঝে মাঝে মনে হয় তুই যদি আমার থেকে সিনিয়ার হতিস তোকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতাম।
গ্যাস খাওয়াচ্ছ।
প্রবীরদার অট্ট হাসিতে আমার মোবাইলের স্পিকার প্রায় ফেটে যায়। কান থেকে সরিয়ে নিলাম।
ঠিক আছে তুই এসে আমাকে একটা রিং করিস।
আচ্ছা।
প্রবীর ফোন করেছিলো ? বড়মা গম্ভীরভাবে বললো।
হ্যাঁ।
কেন ?
বললো ও বাড়িতে গিয়ে একবার ফোন করতে, আসবে।
আবার কি হলো ?
কিছুনা।
বড়মার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম আমার উত্তরটা মন পসন্দ হলো না। মুখ ভ্যাটকাল।
ভজুরাম গাড়ির পেছনে উঠে বসেছে, মাঝে বড়মা ছোটমা মিত্রা, আমি সামনে। রবীনকে বললাম, কোথায় যেতে হবে জানিস।
হ্যাঁ।
যাওয়ার সময় শ্যামপুকুরের চিত্তরঞ্জনে একটু দাঁড়াস।
কেন, নকুর দোকানে যাবে না ?
আবার এতটা ঘুরবি।
রবীন চুপ করে রইলো।
ঠিক আছে চল, নকুর দোকান হয়েই যাই।
ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স হয়ে বৌবাজার ছাড়িয়ে কলেজস্ট্রীটে ঢুকতেই মিত্রা বড়মা ছোটমাকে আমাদের কীর্তি কলাপ বলা শুরু করলো। কোথায় কোথায় ঘুরতাম কি করতাম। এসব।
তুই কাকে বাঝাচ্ছিস।
বোঝাচ্ছি না বড়মাকে বলছি।
বড়মা বিদ্যাসাগরে পড়তো, এটা মাথায় রাখিস।
মিত্রা জিভ বার করলো।
সত্যিতো তুই ঠিক বলেছিস।

দিলি তাল কেটে।
 
বড়মা খেঁকিয়ে উঠলো।
আমি পেছন ফিরে তাকালাম।
কেন তুমি দাদা আসো নি ?
তোদের মতো নাকি।
তা ঠিক। তখন তোমরা আবার কমিউনিস্ট পার্টি করতে।
বড়মা মুখটিপে হেসে চুপ করে গেল।
ঠনঠনিয়ার কাছে আসতে বড়মা বললো রবীন গাড়ি দাঁড় করা। রবীন গাড়ি দাঁড় করাল। বড়মা, ছোটমা, মিত্রা নামলো। বুঝলাম এবার পূজো দেওয়া হবে। হোলও তাই। তারপর বীনা সিনেমা দেখান হলো। মিত্রা আবার কল কল শুরু করে দিয়েছে। গাড়ি চলতে শুরু করলো। বড়মা আবার বিবেকানন্দের বাড়ির সামনে এসে ঠোক্কর খেল।
এইজন্য বলেছিলাম তোমরা যাও, আমি পরে যাচ্ছি।
রবীন থামাতে হবে না, চল বাবা ও ঘোড়ায় জিন দিয়ে এসেছে।
ওমনি গোঁসা হয়ে গেল।
তুই এখন ভিআইপি মানুষ বলে কথা, তোর কতো কাজ।
রবীন গাড়ি দাঁড় করা আমি নেমে যাই, তুই এদের নিয়ে যা।
নাম দেখিনি তোর কতো বড়ো সাহস।
উরি বাবা, তোমার তো দেখি রাগও আছে।
আমার বলার ভঙ্গিমায় মিত্রা ছোটমা হাসছে। আমি পেছন ফিরে তাকালাম। বড়মার চোখ হাসছে মুখ গম্ভীর।
জলের বোতলটা দাও একটু মুখে দিই। পেঁড়া খাওয়াবার পর জলের বোতলটা দিতে হয় জান না।
তুই চেয়েছিস।
চাইতে হবে কেন। ভিআইপি মানুষের সঙ্গে যাচ্ছ, তাদের হাবভাবে কিছু বোঝ না।
এবার আর বড়মাকে রোখা গেল না। কানে হাত পরলো। রক্ষে যা নকুর দোকানের সামনে এসে রবীন গাড়ি দাঁড় করাল, বেশিক্ষণ কানে হাত রাখা হলো না।
আমি মিষ্টি কিনলাম।
আমাদের খাওয়া। সেই সাত সকালে কয়েকটা কচুরী মেরেছি।
তার মানে! গিয়ে এখুনি ভাত খাবি।
খাওয়া না।
বড়মার মুখের দিকে তাকালাম।
ও যখন বলছে কেন।
ভালোই আছ।
আবার ওদের জন্য মিষ্টি কিনলাম।
বুঝলি অনি চিত্তরঞ্জনে আর দাঁড়াতে হবে না। এখান থেকে একটু দই নিয়ে নে। ছোটমা বললো।
কে খাবে ?
তোকে খেতে হবে না।
হাসলাম।
আবার দই কিনলাম।
মিত্রার ফোন বেজে উঠলো।
আর দশ মিনিট, এখন বিডনস্ট্রীটে আছি।
কেরে।
দিদিভাই।
ওর এতো তাড়া কিসের।
শুনতে পাচ্ছিস বাবুর কথা।….মেজাজ ঠিক নেই….গিয়ে বলছি।
মিত্রার বাড়ির গলিতে যখন পৌঁছলাম তখন প্রায় একটা বেজে গেছে। রবীনকে বললাম, কিরে গাড়ি ভেতরে যাবে।
যাবে। তবে রাস্তা জ্যাম হয়ে যাবে।
তাহলে এখানে দাঁড় করা। হেঁটে চলে যাব।
না চলো, তোমাদের ভেতরে রেখে আসি।
কেন ঝামেলা করবি। এখানে থাক। একটু হাঁটলে মহাভারত অশুদ্ধ হবেনা।
তুমি তাহলে বড়মাদের নিয়ে যাও। আমি এগুলো নিয়ে যাচ্ছি।
তাই কর।
আমি বড়মাকে গাড়ি থেকে ধরে নামালাম। মিত্রা আমার হাত শক্ত করে ধরেছে।
তোর আবার কি হলো ?
কতদিন পর আসছি বল।
এটা তোর বাড়ি না অন্য কারুর।
ছ’বছর, সময়টা খুব একটা কম নয়।
গলি পেরিয়ে মিত্রার বাড়ির দোরগোড়ায় এলাম। বড়মা চারদিক চেয়ে চেয়ে দেখছে।
বুঝলি ছোট, বাগবাজারটা এখনো সেরকমই রয়েগেছে।
বুঝলাম। আমি টিপ্পনি কাটলাম।
কি বুঝলি।
সব কি আর ইনস্ট্যান্ট বলা যায়। রয়ে সয়ে বলতে হয়।
বড়মা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। গম্ভীর মুখে হাসির বিদ্যুৎ রেখা।
আমি দরজায় কড়া নারলাম। দরজা খুললো। আজ পিকু নয় ইশি সামনে দাঁড়িয়ে। বড়মাকে জড়িয়ে ধরলো। দেখলাম ভেতর থেকে জ্যেঠিমনি বেরিয়ে এসেছে। বড়মাকে হাত ধরে ভেতরে নিয়েগেল। আমি বড়মার মুখের দিকে তাকিয়ে।
একদিন এই ভদ্রমহিলার হাত ধরেই এই বাড়িতে বড়মার প্রবেশাধিকার হবার কথা ছিল। তা হয় নি। হলে হয়তো ইতিহাসটা অন্য ভাবে লেখা হতো। তখন অনির ইতিহাসটাও হয়তো অন্য রকমের হয়ে যেত। আজ এতদিন পর সেই জ্যেঠিমনিই বড়মাকে হাত ধরে এই বাড়ির চৌকাঠ পার করলো।
জানিনা দুজন দুজনকে কতটা চিনেছে। তবে আমার কথায় কিছু একটা আন্দাজ করতে পেরেছে, এটা অস্বীকার করা যাবে না। ওরা ভেতরে গেল। ছোটমা বড়মার পেছনে। তারও ইতিহাস বড়মার থেকে নেহাত কম নয়। আমি বাইরে দাঁড়িয়ে।
দেখ দেখ দিদিভাই বুবুনের চোখ দুটো দেখ। ও নিশ্চই এ জগতে নেই।
মিত্রার কথায় সম্বিত ফিরলো। ইসি হাসছে।
বড়মা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। ধরতে পেরেছে আমার মনের কথা। হাসলো। ছোটমা হেসে মুখ লোকাল।
কি হলো আয়।
ভাবছি।
কি ভাবছিস।
কপালে কতটা দুর্গতি লেখা আছে।
ইসি আমার হাতটা চেপে ধরে ভেতরে নিয়ে এলো। ভজুরামও হাজির, দুহাতে দুটো মিষ্টির হাঁড়ি, রবীনের হাতে আরও দুটো।
কিরে গাড়িতে আর কিছু আছে।
আছে। বড়মার ব্যাগ পত্র।
ইসি এগুলো রাখার ব্যবস্থা কর।
বসার ঘরে রাখুক।
আমি রবীনের দিকে তাকালাম।
ওই ঘরের টেবিলে রাখ।
ভজুরাম রবীনকে দেখিয়ে দিলাম।
ওরা ভেতরে ঢুকে টেবিলের ওপর রেখে এলো।
ভজুরাম মিষ্টির প্যাকেটটা টেবিলে রেখেই পটা পট সবাইকে প্রণাম করে নিল।
বাবাঃ ভজুরাম কতো স্মার্ট দেখেছিস। ইসি বললো।
একবার চুলের টেরিটা দেখ।
ভজু ফিক করে হেসে রবীনের সঙ্গে বেরিয়ে গেল।
ইসি পিকু কোথায় ?
তোর বরুণদার সঙ্গে গেছে।
কোথায় ?
গোলবাড়ির কষামাংস আনতে।
কেন ঝামেলা করতে গেলি।
থাম তুই।
বড়মা, এবার আমি কেটে পরি।
তারমানে!
বড়মা আমার দিকে গাল ফুলিয়ে তাকিয়ে।
দেখনা দিদিভাই সারা রাস্তা বড়মার সঙ্গে ঝগড়া করতে করতে এসেছে।
কেন ?
ও আসবেনা বড়মা নিয়ে আসবে।
জ্যেঠিমনি কাছে এগিয়ে এলো।
চল ওপরে চল।
তুমি এদের নিয়ে যাও। আমি পরে যাচ্ছি।
কেন।
একটু দরকার আছে।
এখানেও কাজ বগলে করে নিয়ে এসেছে। কাজের মানুষ বলে কথা। ছোটমা বললো।
কেউ আসবে ?
হ্যাঁ।
কে ?
প্রবীর। বেরবার সময় ফোন করলো। তুই পৌঁছে ফোন করিস। ছোটমা বললো।
প্রবীরবাবু তোকে ফোন করেছিল ? ইসি বললো।
কেন!
সকাল থেকে কতোজন যে এলো তোকে কি বলবো।
কিসের জন্য।
সকলে আমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। তোর বরুনদা শেষ পর্যন্ত বিরক্ত হয়ে বললো। ঠিক আছে আমরা অন্যায় করে ফেলেছি অনিকে বলে। এক কথা, তাদের ভুল হয়ে গেছে। ম্যাডাম আপনি বলুন কবে স্টার্ট করবেন আমরা সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।
সেই ব্যাপার। বড়মা ইসির দিকে তাকিয়ে বললো।
হ্যাঁ।
অনি প্রবীরকে ফোন কর।
তাই তুই তখন খাবার কথা বলছিলি। মিত্রা বললো।
হ্যাঁ।
আসতে বল।
সেকেন্ড টাইম ভজু রবীন এলো ব্যাগ নিয়ে সঙ্গে পিকু বরুণদা। আমায় দেখে হাত বারিয়ে দিল। আমি হাতে হাত রাখলাম।
আজ কেউ ঝামেলা করেনি।
করেনি, তবে করবে, তার ষড়যন্ত্র চলছে।
এই একবারে বাজে বকবি না। ইসি ঝগরুটে মেয়ের মতো তেড়ে এলো।
জ্যেঠিমনি খেতে কি এখন দেবে, না দেরি হবে।
মাংসটা আসুক।
ইসি তাহলে চা দে। রবীন গাড়ি সাইড করে রেখেছিস ?
হ্যাঁ দাদা।
আঙ্কেল আজ নেমন্তন্ন খেতে যাবে।
আমি পিকুর দিক তাকালাম। লম্বাদের ভিড়ে ছোট্ট মানুষটা হারিয়ে গেছে। ওর গালটা একটু টিপে দিলাম।
এখানে নেমন্তন্ন খাব।
এই নাও।
পিকু পকেট থেকে একটা ক্যাডবেরি লজেন বার করে আমার হাতে দিল।
দেখেছ কি বদমাশ, আমরা চাইলে একটাও দেয় না। আর অনিকে….।
আমি হাসছি।
নিচের ঘরে এসে বসলাম। বরুণদা সঙ্গে এলো। ওরা সবাই ওপরে চলে গেল। আমি প্রবীরদাকে ফোন করলাম।
চলে এসেছিস।
হ্যাঁ।
আমি তোর সামনা সামনি আছি। পাঁচ মিনিটের মধ্যে আসছি।
চিনতে পারবে।
চিনে নেব।
এসো, জ্যেঠিমনিকে চায়ের কথা বললাম। দেরি করলে ঠান্ডা হয়ে যাবে।
যাচ্ছি।
বরুণদা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।

আপানকে সেদিন থেকে একেবারে সময় দিতে পারিনি। যা ঝামেলা চলছে।
 
তুমিতো আবার ঝামেলা ছাড়া চলতে পার না।
না ঠিক তা নয়। ওই আর কি, জড়িয়ে পরি।
এই মওকায় তোমার ফ্লেভারটা আমরাও বেশ উপোভোগ করছি।
কিরকম।
পর্শুদিন তোমার অফিসে গেলাম। চম্পকবাবুর সঙ্গে দেখা হলো। ব্যাশ আগে যে টুকু সম্মান পেতাম, তার থেকে এখন তিনগুণ বেড়ে গেছে। আর একটা জিনিষ লক্ষ্য করলাম, তোমাকে অফিসে সবাই বেশ ভয় আয়।
আপনার কি মনে হয়।
খুব সাধারণ। আচ্ছা অনি তখন থেকে তুমি আপনি আপনি করে যাচ্ছ কেন।
খুব তাড়াতাড়ি শুধরে নেব।
আমি এমনভাবে কথাটা বললাম বরুণদা হেসে ফেললো।
চাকরিটা ছেড়ে দাও।
বরুণদা হাসতে হাসতে হঠাৎ থমকে গেল, চোখে মুখে বিষ্ময়। আমি এই মুহূর্তে এরকম একটা কথা বলতে পারি প্রথমে বিশ্বাস করতে পারে নি।
কেন!
আমাদের অফিসে জয়েন করো।
বেশতো আছি।
বলতে পার তোমার শালির স্বার্থে।
শালির কাজে লাগবে, তোমার কাজে লাগবে না।
আমি কর্মচারী, তোমার শালি মালিক।
এখনো নিজেকে তাই মনে করো।
মনেকরি বলে ঠিক আছি, না হলে বিগড়ে যেতাম।
ইসি চায়ের ট্রে নিয়ে ঘরে ঢুকলো।
কিরে জমিয়ে আড্ডা মারতে শুরু করেছিস, আমি মিস করছি।
তুমি কাল রাতে যে কথাটা বলছিলে, অনি এখন সেই কথাটাই বললো।
সত্যি!
হ্যাঁ।
ওটা আমার কথা নয় মায়ের কথা।
তাই!
আমি ওদের দিকে তাকিয়ে আছি। বুঝলাম আমাকে নিয়ে এই বাড়িতে কাল রাতে জোড় আলোচনা হয়েছে। দুজনেরই চোখে নতুন দিশা। পরিতৃপ্ততা।
মা কাল রাতে বলছিল, দেখিস অনি বরুণকে কাজটা ছেড়ে দিতে বলবে। মা আর একটা কথাও বলেছে। সেটা এখন বলবো না। যদি কখনো মেলে তবে বলবো।
মা কি করে বললো।
ওর সামনে ওর গুণকীর্তন করা যাবে না।
বাইরের দরজার কড়াটা জোরে নড়ে উঠলো।
দেখ প্রবীরদা এলো।
ইসি এগিয়ে গেলো।
আমি ঘর থেকেই দেখলাম প্রবীরদা ইসলামভাই গেটের মুখে দাঁড়িয়ে।
কইরে অনি।
ইসি হো হো করে হাসছে। ভেতরে।
আপনারা যান আমি ফোন করলে একবার আসবেন, আজই ব্যাপারটা মিটিয়ে যাব।
প্রবীরদা কাদের যেন বললো।
দুজনে ভেতরে এলো।
আমি উঠে দাঁড়ালাম। ইসলামভাই-এর অতোবড়ো বুকে আমি হারিয়ে গেলাম।
তুমি কোথা থেকে।
তুই অবাক হয়ে গেছিস।
ঠিক অবাক হই নি। আবার হয়েছি বলতে পার। প্রবীরদা বসো।
চায়ের কাপ নাও ইসি আবার নিয়ে আসছে।
এইটা মিত্রাদের বাড়ি। প্রবীরদা চারিদিক দেখতে দেখতে বললো।
আদি বাড়ি। ধরো একশো বছর হতে চলেছে।
ইসি ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
ইসলামভাই প্রবীরদা চেয়ারে বসলো।
যাই বল একশো বছরের মাল এখনো দাঁড়িয়ে আছে।
হাসলাম।
হাসলি কেন।
পরে বলবো।
প্রবীরদা খুব সাবধান। ইসলামভাই বললো।
সাবধান মানে, একবার পা পিছলে গেছে আর….।
দাদাভাই, তুমি কোথা থেকে এলে। মিত্রা ঘরে ঢুকলো।
তুই অবাক হয়ে গেছিস।
হবোনা। তখন তো বললেনা এপাশে আসবে।
তোরা এখানে আসবি ঠিক ছিলো।
আমাকে বলবেনা। আমিতো অফিসে গেলাম। তারপর ছোটমার ফোন, চলে আয়। চলে এলাম।
তোকে ছাড়ার পর প্রবীরদা ফোন করলো। আমিও চলে এলাম। ওতো সব কাজ সেগরিগেসন করে রেখেছে। ডাক্তারদাদা ওখানে আছে। এখনো খবর পায় নি।
বড়মা, ছোটমা, জ্যেঠিমনি ঘরে ঢুকলো। প্রবীরদা ইসলামভাই দুজনেই উঠে গিয়ে তিনজনকে প্রণাম করলো।
এটা কিসের। বড়মা ইসলামভাই-এর দিকে তাকিয়ে বললো।
এটা অনির কাছ থেকে শেখা। দিদি তোমার মতো আমিও ওকে ওর দেশের বাড়িতে এই প্রশ্নটা করেছিলাম। বললো, ইসলামভাই তোমার এই পৃথিবীতে দেওয়ার মতো কিছু নেই। একটা মানুষের কাছে তুমি যদি একটু মাথানত করো ক্ষতি কি। দেখবে এর বিনিময়ে তুমি তার কাছ থেকে অনেক কিছু পাবে। যা তুমি স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারবে না। তারপর থেকে এটা অভ্যেস করে ফেলেছি।
সবাই চুপ করে গেল। ইসলামভাই জ্যেঠিমনির দিকে তাকাল।
কি দিদি আমি তথাকথিত বিধর্মী কিন্তু কিভাবে ধর্মের বাঁধনকে ভেঙে মানুষ হতে হয় ওকে দেখে শিখেছি। বলতে পার এখনো প্রতিটা দিন যখনই সময় পাই ওর কাছ থেকে শিখি। ও সব মানুষকে এতো তাড়াতাড়ি আপন করে নিতে পারে, না দেখলে বুঝতে পারবে না।
সবাই ইসলামভাই-এর কথায় থ।
ওর বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে একটু আলাদা করে কথা বলবে। দেখবে ওদের মধ্যেও এই ব্যাপারটা নেই। প্রথম প্রথম ওকে দেখে মনে হতো ওর এটা একটা ভড়ং। তারপর যাচাই করে দেখলাম। অনেক ভাবে বাজালাম। তারপর একের পর এক উদাহরণ চোখের সামনে পর পর হাজির করে দিল। এখন দেখি আমার যারা খাশ লোক ছিল, আমাকে এখন তারা যতটা পাত্তা দেয় তার থেকে বেশি পাত্তা দেয় ওকে। মেনে নিলাম। আমরা জাতে খান বংশ। খানরা সব কিছু খুব তাড়াতাড়ি মনে নেয় না। আমাকে ও মানতে, মেনে নিতে বাধ্য করিয়েছে।
ইসলামভাই-এর কথায় পরিবেশটা বেশ থমথমে হয়ে গেল। নিস্তব্ধ ঘর।
আমি বড়মার দিকে তাকালাম।
বক্তৃত্বা শুনলে হবে। চা ঠান্ডা হয়ে গেল। পেটে ছুঁচো ডন বটকি মারছে। ডাক্তারদাদা ওখানে শুকনো মুখে বসে আছে। কিছু একটা ব্যবস্থা করো।
আমি কেন করবো। তুই কর তুই কেজ মানুষ বলে কথা।
বড়মার কথায় থমথমে পরিবেশ কিছুটা হাল্কা হলো।
মাথায় রাখবে। এরপর যখন বলবে অনি বল, উত্তর পাবে।
এই আবার শুরু করলি। মিত্রা বললো।
কেনরে আবার কি হলো ? ইসলামভাই বললো।
সেই বেরবার সময় থেকে বড়মার সঙ্গে চলছে। দুবার রবীনকে বলেছে গাড়ি থামা নেমে যাই।
ইসলামভাই আমার দিকে তাকিয়ে হো হো করে হাসছে।
তুই আজকাল দিদিকেও চমকাচ্ছিস।
ঝামেলা করছে। ফোনটা করো ডাক্তারদাদাকে। ইসলামভাই কাছাকাছি কেউ আছে।
আবিদকে বলে দিচ্ছি।
আর একজন ?
সেও আছে। ওখানে মিটিং করছে। প্রবীরদা বললো।
তোমরা কোথায় ছিলে ?
এখানে একটা ঝামেলা পাকিয়ে রেখেছিস। তার সমাধান করছিলাম। ইসলামভাই বললো।
কিগো প্রবীরদা কিছু হলো।
না হওয়ার কি আছে। ওই যে তোকে তখন বললাম, তুই আমার থেকে সিনিয়ার হলে তোকে প্রণাম করতাম।
মনে হচ্ছে আজ আমার শরীর খারাপ করবে।
ইসলামভাই আমার পেটে খোঁচা মারল।
দেখলে প্রবীরদা, বুঝতে পারলে ও কি কথা বলতে চাইছে। ইসলামভাই বললো।
বোঝার আর কি বাকি রেখেছে।
ওরা সবাই মুচকি মুচকি হাসছে। বরুণদা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে।
মিত্রা ডাক্তারকে একটা ফোন কর। বড়মা বললো।
মিত্রা ডায়াল করলো। রিং-এর আওয়াজ শুনতে পেলাম। বুঝতে পারলাম, ভয়েজ অন করে রেখেছে।
কিরে মামনি।
তুমি কোথায় ?
আর বলিসনা ছেলেটা এই বুড়ো বয়সে আমাকে জোয়ান মরদ করে দিয়েছে।
তোমার কথা শুনতে পাচ্ছে।
তাই, ওকে দেতো একবার, ওর মাথাটা ফাটাই।
কেন।
যা সব ফিরিস্তি দিয়ে রেখেছে সম্ভব।
বড়মা তোমার কথা শুনছে, তুমি বুবুনের মাথা ফাটালে তোমার মাথ আস্ত থাকবে ?
ওরে বাবা তারমানে বিরাট একটা ষড়যন্ত্র চলছে মনে হয়।
আর বক বক করতে হবে না। খিদে লাগে নি। বড়মা খেঁকিয়ে উঠলো।
আরি বাবা বড় বান্ধবী যে। খিদে লাগলে দেবে কে। দামিনীও টুক করে কোথায় কেটে পরলো, ইসলামও সেই যে গেল আর এলো না। আর একটা কে পার্টির নেতা আছে কি যেন নাম।
প্রবীর।
হ্যাঁ। ওদের দ্বারা কিছু হবেনা বুঝলে। খালি বড়ো বড়ো লেকচার।
প্রবীরদা হেসে ফেললো।
কে হাসে বান্ধবী।
প্রবীর।
ও কি ওখানে।
হ্যাঁ। তুমি চলে এসো।
কোথায়।
ইসলামভাই ফোনের কাছে এগিয়ে গেলো।
দাদা আমি আবিদকে বলে দিচ্ছি নিয়ে আসছে।
তোমরা সব কোথায় আছো বলো তো ?
মামনির পুরনো বাড়িতে।
বাগবাজার।
হ্যাঁ।
বাবা, কুটুমবাড়িতে গেলে কিছু নিয়ে যেতে হয়।
মস্করা রাখো চলে এসো।
বড়মার কথায় সবাই হেসে উঠলো।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে। চোখদুটো চক চক করছে।
কিরে ইসি চা তো গঙ্গাজল একটু করে খাওয়া।
ভাত খাবি না।
সবাই আসুক।
তোমরা ওপরে চলো।
একটু পরে দিদি, অনির সঙ্গে একটু কথা সেরে নিই।
জ্যেঠিমনি হাসল। ইসি ওদের তাহলে মিষ্টি এনে দে।
ছোটমা হেসে ফেললো।
দিদি তুমি হাসলে। ইসলামভাই বললো।
জিজ্ঞেস কর বাঁদরটাকে।
মনে থাকে যেন। মাত্র কয়েকটা কচুরি।
সবাই হাসছে।
ওরা সবাই ওপরে চলে গেল।

আমি প্রবীরদা ইসলামভাই বসলাম।
 
কিরে হঠাৎ এখানে। ইসলামভাই বললো।
এমনি জ্যেঠিমনি বলেছিল একবার আসার জন্য তাই।
তুই এতো তাড়াতাড়ি এখানে আসার পাত্র নোস, নিশ্চই কিছু একটা হয়েছে।
কিছুই হয় নি।
তুই এমনি এমনি চলে এলি।
মহা মুস্কিল।
ঠিক আছে বলতে হবে না।
তার মানে এখানে অনি এসেছে নিশ্চই কিছু একটা ঘটেছে। প্রবীরদা বললো।
তোমাকে ভেবে নিতে হবে। ও কোন কাজ ছাড়া একপাও কোথাও নরবে না। কারুর কাছে যাবেও না। এটা ওর স্বভাব।
সাংঘাতিক।
নাগো, ইসলামভাই বাড়িয়ে বলছে। আমি শ্বশুর বাড়িতে আসব না।
সে তুই আসতেই পারিস। আজকেই আসবি….।
ইসি চায়ের ট্রে নিয়ে ঘরে ঢুকলো।
খুব জোর গল্প হচ্ছে।
আর বলিসনা, ও যা তেঁয়েটে।
দুদিন দেখেই বুঝেছি।
তোকে নিয়ে একটু বসবো। কাজটা মিটিয়ে ফেলতে হবে। প্রবীরদা বললো।
সকাল থেকে অনেক লোক এসেছে।
আসবে। কি করি বলতো। আমাদের পার্টির নীচের তলায় যে এতটা পানা পড়ে গেছে আগে বুঝিনি। অনি চোখ খুলে দিল। রিকভার করতে না পারলে সামনে ভারি বিপদ। যেখানে যাচ্ছি পদে পদে বাধা পাচ্ছি।
ইসি মুখ নীচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।
ওই দেখ কারা নামছে।
মুখ বাড়িয়ে দেখলাম, দামিনীমাসি ডাক্তারদাদা নীরু নামল। আবিদ ড্রাইভারের সিটে বসে। ইসি ছুটে বেরিয়ে গেল।
ওরে বাবা তোদের বাড়ি তো জব্বর জায়গায়।
ডাক্তারদাদার কথায় ইসি হাসছে।
সামনেই আমার বন্ধুর বাড়ি।
কার কথা বলছো।
ডঃ আর এন চ্যাটার্জী।
নামটা শুনেই প্রবীরদা তরাক করে উঠে দাঁড়াল।
দাঁড়া ওর সঙ্গে অনেকদিন দেখা হয় নি। আজ একবার দেখা করবো।
কি হলো তোমার আবার।
আরে ওই বাড়িটা নিয়েই তো সমস্যা।
তারমানে!
ইসি যে স্কুলের জন্য ভাড়া নিয়েছে। ওই বাড়িতেই।
তাই।
যাক, সমস্যার সমাধান হলো ডাক্তারবাবুকে বলতে হবে ব্যাপারটা।
সমস্যাটা কি।
ডাক্তারকে পাড়ার লোক বিগড়েছে, ডাক্তার এখন কিছুতেই স্কুল করতে দেবে না।
তাহলে ভাড়া দিয়েছিল কেন।
তখন দিয়েছিল। তারপর যা হয়। ডাক্তারের কান ভাঙচি দিয়েছে। পার্টির মাতব্বররা গিয়ে ক্ষমতা দেখিয়েছে। ব্যাশ ডাক্তার বিগড়ে গেছে।
ও তুমি বোঝ। আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে বাইরে এলাম।
এই দেখ দামিনী। তোমার সুপুত্তুরকে দেখ। আমাদের চড়কি নাচন নাচাচ্ছে আর বাবু শ্বশুর বাড়িতে হাওয়া খেতে এসেছে।
দামিনী মাসি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে হাসল। আটপৌরে করে একটা দামী তাঁতের শাড়ি পরে এসেছে। তুঁতে কালারের পাড় খোলটাও তুঁতে কালারের ওপর সাদা। কাছে এগিয়ে এলো।
কখন এলি।
ঘন্টা খানেক হব। তুমি কোথায় গেছিলে।
কোথাও যাই নি।
তাহলে ডাক্তারদাদা যে তখন বললো।
কাছেই ছিলাম। তুই বুঝতে পারিস নি।
হাসলাম।
নিচে ডাক্তারদাদার গলা পেয়ে জ্যেঠিমনি নেমে এসেছে। পেছন পেছন ছোটমা, মিত্রা।
নীরু আমার দিকে তাকিয়ে ফিক ফিক করে হাসছে।
নীরু।
স্যার।
মিষ্টির হাঁড়ি বার কর।
এসব আবার আনতে গেলেন কেন। জ্যেঠিমনি বললো।
সেকিগো মেয়ের বাপের বাড়িতে এলাম, খালি হাতে আসা যায়। আমার পছন্দের মিষ্টি এনেছি।
ডাক্তারদাদা ভেতরে এলো।
হ্যাঁরে অনি, তা হঠাৎ আজ এ বাড়িতে ঢুঁ মারলি।
ইসলামভাই হেসে ফেললো।
হাসলে কেন ইসলাম।
আমাদেরও একই প্রশ্ন।
ডাক্তারদাদা আমার কাঁধে হাত রাখল।
বড়ো সরেস ছেলে বুঝেছো।
সে আর বুঝতে বাকি আছে।
বড় বান্ধবীকে দেখছিনা।
ওপরে আছে।
খাওয়ার তোড়জোড় করছে ?
জ্যেঠিমনি হাসলো।
ইসলামভাই বাইরে বেড়িয়ে গিয়ে আবিদের সঙ্গে কথা বললো। আবিদ মাথা দুলিয়ে যাচ্ছে। আমরা সবাই ওপরে উঠে এলাম। সবাই ইসির ঘরে এসে বসলো। ঘর ভড়ে গেছে। বড়মাকে দেখতে পেলাম না। বুঝলাম সেই যে ওপরে এসে জ্যেঠিমনির ঘরে ঢুকেছে আর বেরোয় নি।। আমি ওই ঘরে গেলাম। দেখলাম বড়মা জ্যেঠিমনির খাটে থম মেরে বসে আছে। কাছে গেলাম।
এই জন্য আসতে বারন করেছিলাম।
ছোটমা পাশে এসে দাঁড়াল।
ওঠো ডাক্তারদাদা ডাকছে।
বড়মা উঠে দাঁড়াল। আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
একবারে ঝামেলা করবে না। কাজ মিটিয়েছ।
বড়মা মাথা দোলাল।
তুমি জ্যেঠিমনি ছাড়া কেউ জানতে পারেনি।
বড়মা মাথা দোলাল, না।
ওই ঘরে চলো, মাথায় রাখবে ডাক্তারদাদার চোখে মাইক্রোস্কোপ ফিট করা আছে। তার ওপর দামিনীমাসি। তোমাদের নিয়ে বড়ো সমস্যা।
কিরে তুই বড়মার সঙ্গে কি ফুস ফুস করছিস।
ইসি ঘরে ঢুকলো। কাছে এগিয়ে এলো। বড়মার থমথমে মুখ।
কিগো বড়মা, অনি তোমাকে বকাবকি করছে ?
ওর আর কাজ কি বল। আমাদের ওপর ছাড়া কার ওপর হম্বিতম্বি করবে। ছোটমা বললো।
দাঁড়া আমি মাকে গিয়ে বলছি।
বলনা, ঝামেলা করবে আবার বললে মন খারাপ করবে।
তুই যখন করিস।
আমার কথা ছাড়।
তোর কথা ছাড়ব কেন।
ও তুই বুঝবি না।
মিত্রা ঘরে ঢুকলো।
ওকিরে দুজন কি করছিস।
ছোটমা মুচকি মুচকি হাসছে।
বড়মাকে ধমকাচ্ছে। ইসি বললো।
ও এই কথা, দিদিভাই এর মধ্যে মাথা গলাস না। এখন এই দেখছিস, একটু পরেই দেখবি বুবুন ছাড়া বড়মা অন্ধ হয়ে যাবে। তখন তুই আমের আঁটি।
বড়মা হেসে ফেললো।
তুই সার কথা বুঝেছিস। ছোটমা বললো।
জ্যেঠিমনির ঘর থেকে ইসির ঘরে এলাম। এতো লোকজন দেখে পিকু খুশীতে কি করবে ভেবে উঠতে পারছে না।
এই যে বান্ধবী তোমার ছেলের কীত্তি শুনেছ।
বড়মা ডাক্তারদাদার মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলো।
হাসলে হবে না। আমার আর দামিনীর বয়স তিরিশ বছর কমিয়ে দিয়েছে। এবার একটা মেয়ে দেখ। বিয়ে করে ফেলি।
তোমার নয় মেয়ে দেখলাম, দামিনীর ছেলে পাব কোথায়।
সবাই হাসে।
দামিনী মাসি এমনভাবে আমার দিকে তাকাল আমিও হেসে ফেললাম। মাসি এই পরিবেশের সঙ্গে এখনো সরোগড়ো হতে পারে নি।
শোন অনি মামনি যে ব্যাগটা দিয়েছিল খালি হয়ে গেছে। ব্যাগ ভর্তি করার ব্যবস্থা কর।
কবে লাগবে বলো।
যত তাড়াতাড়ি দিবি তত ভালো।
ইসলামভাই হেসে ফেললো।
ইসলাম তুমি খালি হাস কেন বলো তো।
ওর টাকার অভাব। আপনি বললেন, দেখবেন কেউ না কেউ কালকে আপনাকে আবার একটা ব্যাগ দিয়ে যাবে।
ভিআইপি মানুষ ভিক্ষা করতে বেরলে সকলে কম বেশি দেয়।
বড়মা ফিক করে হেসে ফেললো।
কিগো বান্ধবী তুমিও দেখছি খালি ফিক ফিক করে হাসছো।
হাসছে কেন বলোতো। মিত্রা বললো।
কেনোরে।
আসার সময় বড়মা ওকে ভিআইপি বলেছিল, সে কি রাগ, বাবু গাড়ি থেকে এই নামে তো সেই নামে। তোমরা যাও। এই জন্য বলেছিলাম….।
ইসি হেঁসে গড়িয়ে পরে।
ওই ঘরে বড়মাকে কেমন ধমকাচ্ছিল বল।
ওতো আবার গাড়িতে চড়েনা অটো, বাস, ট্যাক্সিতে চরে। ডাক্তারদাদা বললো।
সবাই হাসছে।
তা এরকম মালিককে কে ভিক্ষা দেবে না বল। কোথা কার কে শ্যাম সেও ওকে মধু, মহুয়া দিয়ে যায়। আমি ডাক্তার কতো জায়গায় গেলাম, কেউ এক ফোঁটা মধু দিল না। বান্ধবীর কাছ থেকে নিয়ে একটু খেলাম, ওমা ঘেমে গেলাম। তুই চেষ্টা করলে পাবি।
জ্যেঠিমনি খিদে পেয়ে গেছে, এবার কিন্তু বদহজম হয়ে যাবে। আমি চেঁচিয়ে উঠলাম।
তোর বদ হজম হবে না। কর্পোরেসনের জল খাওয়া পেট। নিরু বলে উঠলো।
আবার সবাই হেসে উঠলো। বড়মার মুখের দিকে তাকালাম। এখন অনেকটা পরিষ্কার।
মেঘ আস্তে আস্তে কেটে যাচ্ছে। আমারে চোখে চোখ রাখল। বড়মা ইশারা বুঝতে পারল। ছোটমা একমাত্র লক্ষ্য করলো আর কারুর চোখে পরলো না।
দিদি খাবার ব্যবস্থা কোথায় করবেন।
বডমা জ্যেঠিমনির দিকে তাকিয়ে বললো।
ওপরের ঘরে করো, একসঙ্গে সকলের হয়ে যাবে।
ওরা সবাই একে একে ওপরে ঘরে চলে গেল, পিকু নীরুকে নিয়ে পরেছে। নীরুর হাত ধরে টানতে টানতে জ্যেঠিমনির ঘরে নিয়ে গেল। এ ঘরে আমি ডাক্তারদাদা, ইসলামভাই, দামিনীমাসি, প্রবীরদা।
ও প্রবীর।
বলুন দাদা।
তোমার ওই বাড়িটায় কয়েকটা সমস্যা হচ্ছে।
কিসের বলুন।
একটা এ্যামবুলেন্স রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
কেন নিচে থাকবে। আমি দামিনী অনেক চেষ্টা করলাম। একটা ঘর নষ্ট হয়ে যাবে।
তোমরা কি ওই বাড়িই রেখে দেবে ভেঙে নতুন করবে না। আমি বললাম।

তুই দেখেছিস ?
 
কোথায় দেখলাম। সেদিন অনুপদা তোমাদের দেখিয়ে নিয়ে গেল, বললো তোমাদের পছন্দ হয়েছে, ব্যাশ।
তুই দেখ। বাড়িটা পুরনো হলেও খারাপ নয় এখনো মজবুত আছে, বেশ বড়ো বড়ো ঘর। একটু সারিয়ে নিলে টেঁকসই হবে। আর তুই যদি ভেঙে নতুন করতে চাস অনেকটা জায়গা নষ্ট হবে।
তোমরা যা ভালো বোঝ করো। আশে পাশে কোথাও এ্যামবুলেন্স রাখার ব্যবস্থা করা যায় না।
কে দেবে জায়গা। মাসি বললো।
তাহলে একটা গ্যারেজ মতো কিনে নিতে হবে।
সেটা একটা যুক্তির কথা। তাছাড়া যে ডাক্তাররা আসবে তারা গাড়ি করে আসবে, তাদের গাড়ি রাখার একটা প্যাসেজ দিতে হবে। ওদের জীবিকার খতি করে তুমি উপকার করতে পারবে না।
আমি মাথা নীচু করে রইলাম।
কিরে কিছু বল।
আগে দেখি। না দেখে কিছু বলতে পারব না। মাসি কি বলছে।
তোর মাসি আবার এক কাঁটা ওপরে। সব সময় এক কথা আপনি যা ভাল বোঝেন করুণ। তারপর অনি আছে।
ইসলামভাই-এর দিকে তাকালাম।
আমাকে কিছু বলিস না। আমি রি-মডেলিংয়ের ব্যাপারে যাবতীয় হেল্প করবো বলে দিয়েছি।
কাজ কি শুরু করেছো ?
কাল থেকে শুরু হয়েগেছে।
চলো খেয়ে নিই। খেয়ে বেরব।
ডাক্তারদাদাকে আমারটা বল। প্রবীরদা বললো।
তুমি বলো।
এখুনি ডাক্তারদা আমাকে উদ্ধার করে দেবে।
ডাক্তারদাদা, দামিনীমাসি হাসছে।
আমার সমস্যা ডাক্তারদাদাকে বোঝাতে পারব না।
আমি ডাক্তারদাদাকে ইসির ব্যাপারটা সংক্ষেপে বললাম।
প্রবীরদা এখানকার পার্টিগত সমস্যা মিটিয়ে দিয়েছে। বাকিটা ডাক্তারের হাতে।
রথীন না দিতে চাইলে অন্য কোথাও করুক। আমার অতো বড়ো বাড়িটা ফাঁকা পরে রয়েছে।
সেতো করাই যায় কিন্তু এখানকার স্কুলটা বন্ধ হয়ে যাবে।
ওটাকি রানিং।
হ্যাঁ। আপাততঃ বন্ধ।
কিহে প্রবীর বাপের জম্মে শুনিনি একটা শিশুদের স্কুল এভাবে বন্ধ করা যায়।
অপরাধ নেবেন না।
অপরাধের প্রশ্ন আসছে না। তোমরা কতটা অধঃপাতে নেমেছ বুঝতে পারছো। আমরা একসময় যারা পার্টিটাকে ভালবাসতাম তারা কেন সরে এসেছি বুঝতে পারছো। তোমরা সব ধরাকে সরাজ্ঞান করেছ। রথীন তো খারাপ লোক নয়। ওকে নিশ্চই তোমরা ধমকা ধমকি করেছো।
তা করেছে।
সেই জন্যই ও বেঁকে বসেছে।
ছোটমা এসে দরজার সামনে দাঁড়াল।
কি ছোটবান্ধবী।
দাদা খাবার জায়গা হয়েগেছে।
ছোটমা একবার পরিবেশটা লক্ষ্য করার চেষ্টা করলো। বুঝলো সামান্য হলেও গন্ডগোল কিছু একটা হয়েছে।
চলো খেয়ে নাও, তারপর তোমাকে আর ইসিকে নিয়ে যাব।
আমরা উঠে দাঁড়ালাম। সবাই বেরিয়ে এলাম দেখলাম বরুণদা দুজনকে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠছে। পোষাক দেখে মনে হচ্ছে এরা নিশ্চই কোন হোটেলের ডেলিভারি ম্যান।
ওপরের ঘরে সকলের আসন পাতা হয়েছে।
আমরা একে একে সব বসলাম। দেখলাম আজ ইসি, মিত্রা, ছোটমা সবাইকে খেতে দিচ্ছে।
কিরে তুই বসবিনা।
পরে বসছি।
ছোটমা হাসলো।
পেছনে না লাগলে হচ্ছে না।
বুঝেছি খাবারটা মনে হয় সেরকম জুতসই নেই। তাই না ডাক্তারদাদা।
ডাক্তারদাদা আমার দিকে তাকাল।
আবার আমাকে এর মধ্যে টানছিস কেন।
নারে অনি গোলবাড়ির কষামাংস। অনেকদিন খাই নি। নীরু বললো।
তুইতো আজকে শান্তিতে খাবি।
তা বলতে, কব্জি ডুবিয়ে।
রিপোর্ট কার্ড রেডি করছি।
দেখছো বড়মা শুরু করে দিল।
বড়মা হাসছে।
বুঝলি নীরু আজ বড়মা জ্যেঠিমনি দু-জনেরটা জমপেশ করে খাওয়া যাবে।
তুই একা!
তাহলে কি দোকা।
ম্যাডামের জায়গায় আমাকে চান্স দে।
এই নীরু।
মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো।
না না আমি চান্স নেব না। যা পাই তাই ভালো।
পিকু এসে আমার কোলে বসে পরেছে। নেমন্তন্ন খেতে বসেছে।
কিরে তুই ওখানে।
ইসি পিকুর দিকে তাকিয়ে বললো।
আমি আঙ্কেলের সঙ্গে নেমন্তন্ন খাব।
পিকুর পাকা পাকা কথা শুনে সবাই হাসে।
খাওয়া-দাওয়া হলো। ডাক্তারদাদা আজ ফোর ফন্টে ব্যাট করলো। বড়মা জ্যেঠিমনি খালি হাসে। মিত্রারা শেষের দিকে বসে পরলো। মিত্রা এসে আমার আর বড়মার পাতের সামনে বসলো।
একিরে তুই এখানে।
বড়মার শেষের গুলো নিতে হবে না। তুইতো মাংস খাস না।
শুঁকি। মাংস তোর মিষ্টি আমার।
তুই মাংস খা আমি মিষ্টি খাই।
আমি থেমে গেলাম।
ডাক্তারদাদা চিত্তরঞ্জন থেকে মিষ্টি নিয়ে এসেছে। আমি নকুর দোকান থেকে। বড়মার সঙ্গে একচোট হলো নকু ভার্সেস চিত্তরঞ্জন। আমরা দর্শক, খালি দুজনের ডুয়েট উপভোগ করলাম।
প্রবীরদা এই প্রথম এইরকম পরিবেশে আমাদের সঙ্গে খেতে বসেছে। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত খালি হেসে গেল।
খাওয়া শেষ। ডাক্তারদাদা, ইসলামভাই, দামিনীমাসি প্রবীরদা সারাটা বাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখল। বরুণদা ওদের ঘুরে ঘুরে দেখাল। আমি নিচে এসে কয়েকটা ফোন করলাম, তার মধ্যে দাদার সঙ্গে একবার ফোনে কথা বললাম। দাদা এখানকার অবস্থার কথা জিজ্ঞাসা করলো। সব বললাম। মিলিকে ফোন করলাম।
কোথায়।
অফিসে। জোর কাজ করছি।
টিনা কোথায়।
ওর ঘরে। ওর সঙ্গে আজ প্রেস ম্যানেজারের এক চোট হয়েছে বুঝলে।
তারপর।
ও মেমো ইস্যু করেছে। সনাতনবাবু প্রথমে দিতে চান নি। যেই বলছে ঠিক আছে অনিদাকে ফোন করে জানাচ্ছি। অমনি প্রেস ম্যানেজারের ঘরে মেমো পাঠিয়ে দিয়েছে।
তারপর।
তারপর আর কি ম্যানেজার মশায়ের মুখ কালো। বাহাত্তর ঘন্টা সময় দিয়েছে টিনা।
দাদা জানে।
ম্যানেজার দাদার কাছে গেছিল। দাদা বলে দিয়েছে, ওর মধ্যে আমি ইন্টারফেয়ার করবো না।
তোমার ডিপার্টমেন্ট।
তোমার সঙ্গে একবার বসবো। প্রচুর জল মেশান আছে। বুঝতে পারছি, ঠিক জায়গাটা ধরতে পারছি না।
কেন।
বলবো গিয়ে।
আজ রাতে আসছো নাকি ?
আজ আমি টিনা আমার ফ্ল্যাটে থাকব। তোমায় পরে সব ঘটনা বলব।
কোন সমস্যা।
সামান্য।
শুনি কি রকম।
এখন না।
অদিতী।
ভালো আছে। সনাতনবাবু সব ফাইল ওর ঘরে পাঠিয়ে দিচ্ছে। বলে দিয়েছে ম্যাডামের ডিসিসন ছাড়া আমি একপাও নড়তে পারব না।
দেবা নির্মাল্য কোথায় ?
তোমার সেই এডিটর রুমের নতুন একটা ঘরে। দুজনে তোমার এ্যাড কোম্পানী নিয়ে হিমসিম খেয়ে যাচ্ছে। ও হ্যাঁ শোনো সুজিতদা লোক পাঠিয়েছিল। একটা নতুন ক্যাম্পেন আছে। এই টিনা এসেগেছে।
আমি টিনার গলা শুনতে পেলাম।
কার সঙ্গে কথা বলছিস।
অনিদা।
দে দে আমি একটু কথা বলি।
আমি বলেছি।
অনিদা ভাল করিনি বলো।
একবারে সঠিক স্টেপ। একটুও পাত্তা দেবে না। দিলেই গাড্ডায় ফেলে দেবে।
এ মাসের স্ক্র্যাপের হিসাব দিয়েছে এক লাখ।
মাত্র!
হ্যাঁ। আমি সব হিসাব পেয়ে গেছি।
কি করে পেলে।
সুতনুবাবুকে বললাম, এমাসে কতো কালি লেগেছে কটা রিল লেগেছে। কয় বান্ডিল প্লেট লেগেছে। হিসেব পেয়ে গেলাম।
আমি হাসলাম।
হেসো না, বলোনা ঠিক করেছি কিনা।
একেবারে ঠিক করেছো। তোমার হিসাবে কি আসছে।
সাড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ।
মেমোতে কি লিখেছো।
লিখেছি আপনার হিসাবে আমি খুশি হতে পারলাম না, আপনার দেওয়া হিসাবটা ক্লারিফাই করে দিন।
কি বলছে।
মেমো হাতে পেয়েই দাদার কাছে গেছে, সনাতনবাবুর কাছে গেছে। মাঝে একবার চম্পকদা এসে বলেছিল এবারটার মতো ছেড়েদে টিনা।
আমি বলে দিয়েছি ওটা অনিদার ব্যাপার। আমি অনিদার হুকুম মতো কাজ করছি। অনিদা ছেড়ে দিতে বললে, ছেড়ে দেব।
তখন কি বললো।
একবারে চুপ। বলে কিনা তুইতো সিংহের মুখে ফেলে দিলি।
মিলি হাসছে।
কেমন লাগছে।
তোমার ফ্লেভারটা বশ উপভোগ করছি। তুমি নেই তবু তুমি সব জায়গায় আছ।
ঠিক আছে কাল অফিসে যাব।
তোমরা সব ঠিক আছো।
এখান থেকে বেরিয়ে একটু দামিনীমাসির ওখানে যাব। কাজটা শুরু হয়েছে। দেখব।
ইসলামভাই বললো যে এখনো শুরু করিনি।
আমাকে বললো করেছি। দেখি গিয়ে কি শুরু করেছে। হাতের কাজ গুলো তাড়াতাড়ি গুছিয়ে নাও । এদিকটায় সময় দিতে হবে। ধরো মিলি কি বলবে।
বলো মিলি।
সুজিতদার ব্যাপারটা কি করবো।
তুমি টিনা চলে যাও। না হলে এক কাজ কর।
বলো।

আমরা এবারে ওই এ্যাড এজেন্সীর থ্রুদিয়ে বিজ্ঞাপন নেব। সেইরকমই তো প্ল্যান করেছিলাম
 
হ্যাঁ।
দেবা, নির্মাল্যকে পাঠিয়ে দাও। ওরা হ্যান্ডেল করুক।
দেবাদা আজকে ওর পুরনো অফিসে প্রপোজাল পাঠিয়েছে।
রি-অ্যাকসন।
জানিনা।
তোমকে আর ডিস্টার্ব করেনি।
তুমি কি গো, এর পর কেউ আর ডিস্টার্ব করে। বলে কিনা তুমি আমার ভাল বন্ধু হতে পার না।
হয়ে যাও।
দেখছো টিনা কিরকম হাসছে।
হাসতে দাও। কাল দেখা হচ্ছে।
আচ্ছা।
ফোনটা পকেটে রাখলাম। আবার ওপরে এলাম। দেখলাম বেশ জমিয়ে গল্প হচ্ছে। মধ্য মনি ডাক্তারদাদা। আমাকে দেখেই বললো।
কিরে সব খোঁজ খবর নেওয়া হলো।
হ্যাঁ। তুমি বেরবে বললে যে।
যেতে হবে না।
কেন ?
রথীন বললো তুই থাক আমি যাচ্ছি। গল্প করতে বসে গেলাম। তুই আমার একটা উপকার কর।
তোমার ? আমি!
সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে হাসছে।
আমি বড়মার পাশে ছোট্ট জায়গাটায় নিজেকে গুঁজে দিলাম। মিত্রা ইসিকে কনুইয়ের গোঁতা মেরে ইশারা করে দেখাল।
ব্যাপারটা এরকম, কি বুঝছিস ? ইসি হাসছে।
বড়মা আমার মুখের দিকে বাঁকা চোখে তাকাল।
কিরে আমার উপকারটা তাহলে করবি না।
বলবে তো কি উপকার করতে হবে।
ওই ছেলেটাকে আর ওখানে দরকার নেই, সরিয়ে নে।
ইসলামভাই প্রবীরদা অবাক হয়ে ডাক্তারদার দিকে তাকাল। দামিনীমাসি মুখ নীচু করে মুচকি মুচকি হাসছে।
ঘরের সবার চোখে হাজার পাওয়ারে বাল্ব জ্বলছে।
আমি প্রথমটায় একটু অবাক হওয়ার ভান করলাম। যেন ব্যাপারটা কিছুই জানি না। এই প্রথম শুনলাম। ডাক্তারদাদা আমার চোখে এমন ভাবে চোখ রাখল যে আমি অস্বীকার করতে পারলাম না। এও বুঝলাম এই কাজের স্বাক্ষী হিসাবে দামিনীমাসিকে ডাক্তারদাদা রেখেছে।
না সরান যাবে না। এখনো অনেক কাজ বাকী আছে।
কি দামিনী তোমায় কি বলেছিলাম তখন।
মাসি আমার দিকে তাকাল। মুখে হাসি।
কিগো সামন্ত ওকি আবার গন্ডগোল পাকাচ্ছে। বড়মা বললো।
গন্ডগোল নয়, গন্ডগোল যাতে না হয় তার আটঘাট বাঁধছে। এই যেমন ধরো প্রবীর, ইসলাম, দামিনী ওরা এতদিন একটা স্রোতে চলছিল, এখন কিছুটা হলেও উল্টো মুখে চলছে। বলতে পার ভালো হতে চাইছে বা ওদের ভালো করার চেষ্টা করছে অনি। অনেকে তা মেনে নেবে না। ওদেরও শত্রু আছে। সেগুলোকে ও বেঁধে দিয়েছে। বলতে পার এখন যারা কাজ করছে তার সব ওর চতুর্থ ধাপের লোক। দ্বিতীয়, তৃতীয়, প্রথম ধাপের লোক জনের দেখা পাই নি। হয়তো আশে পাশে আছে বুঝতে পারছি না। তখন একজনকে দেখে কেমন যেন সন্দেহ হলো, তাই দামিনীকে বললাম, তুমি চেন কিনা। বললো না। কিন্তু ছেলেটার হাবভাব বলছে ও আমাদের সকলকে চেনে।
ইসলামভাই আমার দিকে তাকিয়ে।
তুমি কি ভাবছো ইসলাম ওর কাছে কনো খবর নেই।
ইসলামভাই হাসছে।
সব খবর আছে। তুমি কখন এসেছো, কি কাজ করছো। তোমাকে কেউ ফলো করছে কিনা সব। ম্যায় প্রবীরের পেছনেও ওর খাশ লোক আছে।
কিরে অনি! প্রবীরদা আমার মুখের দিকে তাকাল।
নাগো, ডাক্তারদা সব মন গড়া কথা বলছে।
তাহলে তুই বললি কেন এখন সরান যাবে না।
সম্ভব নয়, তাই বললাম।
ছেড়েদাও প্রবীরদা, ওর কাজ ওকে করতে দাও, আমদের কাজ আমরা করি।
ইসলামভাই বললো।
না ইসলাম তাহলে আমাদের সোর্স ফেল, এটা ধরে নিতে হবে।
ঠিক আছে আমি একটু খোঁজ খবর নিই, তারপর বলবো।
ওতো আমার ওখানকার সব কটা মেয়েকে হাত করে নিয়েছে। কেউ সঠিক কথা বলে না।
দামিনীমাসি বললো।
কি বুঝছো প্রবীর, তুমি হয়তো ওদের সকলকে চেনোও না। ডাক্তারদাদা বললো।
একবারে ঠিক কথা।
ইসলাম চেনে, জিজ্ঞাসা করো ও পর্যন্ত সকলকে চেনে না। কি তোমরা পার্টি পলিটিক্স করবে।
তুমি চিনলে কি করে। বড়মা বললো।
ব্যাটা আমার কাছ থেকে ….। না থাক অনি ওকে সরিয়ে দেবে।
আমি হাসলাম।
কিরে হাসছিস কেন।
যা বাবা, একটু হাসতেও পারব না।
তুই ওকে সরিয়ে দিয়েছিস না।
ডাক্তারদাদা আমার দিকে তাকিয়ে এমনভাবে বললো সকলে হেসে ফেললো।
মহা মুস্কিল। তুমি বেশ রসিয়ে রসিয়ে দিচ্ছ।
আমি যদি মিথ্যে কথা বলি তুই প্রতিবাদ কর।
তোমার কাছ থেকে সিগারেটটা না চাইলেই পারত।
দামিনী মাসি হো হো করে হেসে উঠলো। বড়মা মুখ টিপে হাসছে। ছোটমা ড্যাব ড্যাব করে আমার দিকে তাকিয়ে বললো।
ওরে বাবা কি সাংঘাতিক ছেলেরে তুই।
আচ্ছা এবার একটা সত্যি কথা বল। এখন মনে হচ্ছে আমার ইন্টরোগেসনটা একেবারে কারেক্ট।
বলো।
তুই কি আমাকে টোপ দিলি। আমি ধরতে পারি কিনা।
আমি এবার সত্যি সত্যি হেসে উঠলাম।
দেখলে বান্ধবী দেখলে, তোমার ছেলের বুদ্ধির দৌড় দেখলে।
রাখ তোমার হেঁয়ালী, খোলসা করে বলো।
তুমি বুঝলে না।
কি করে বুঝবো।
তোমার দ্বারা কিছু হবে না। অনিকে তুমি আটকাতে পারবে না।
ও কথা বলছো কেন।
ও একটু নড়াচড়া দিয়ে দখলো কজন ধরতে পেরেছে, সেই ভাবে পরবর্তী ঘুঁটি সাজাবে। হয়তো এতোক্ষণে সাজিয়ে ফেলেছে। দূর কি বোকার মতো ওকে বলে ফেললাম। না বললেই পারতাম। ওর কাছ থেকে কিছু শেখা যেত।
বড়মা আমার দিকে হাসি হাসি মুখ করে তাকিয়ে। ব্যাপারটা এইরকম তুই এতো মিটমিটে।
হ্যাঁরে তুই কি এর মধ্যে আবিদ আর রতনকেও রেখেছিস ?
ইসলামভাই সড়াসড়ি আমার চোখে চোখ রাখল।
ওরা তোমার লোক।
সে ঠিক, আজ আবিদ এলো তোর সঙ্গে একটা কথাও বললো না। আমি যা বললাম হ্যাঁ হুঁ করে ছেড়ে দিল। মনে হলো ওর তাড়া আছে।
পর্শু রাত থেকে সাগির অবতারের দেখা নেই। সেই যে বলে গেল মাসি আমরা একটু কয়েক দিনের জন্য বাইরে যাচ্ছি, দিন পাঁচেক পরে ফিরব। দামিনীমাসি হাসতে হাসতে বললো।
ওকে জিজ্ঞাসা করো বলবে আমি তো বাড়ির বাইরে বেরোই নি। আমি তোমাদের চোখের সামনেই আছি। তাহলে আমাকে সন্দেহ করো কেন বাবা। ডাক্তারদাদা ইনিয়ে বিনিয়ে বললো।
সবাই মিটি মিটি হাসে। প্রবীরদা আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে। পকেট থেকে ফোনটা বার করলো। কাকে যেন রিং করলো।
ফোন করে কোন হদিস পাবে না প্রবীর। ও অনেক দূর ভেবে কাজে হাত দেয়।
একটু দাঁড়ান। বলছি।
আমি প্রবীরদা বলছি।
হ্যাঁরে রাজনাথকে কি ছাড়াবার কোন বন্দোবস্ত হয়েছে।….কি বললি….
সবাই প্রবীরদার মুখের দিকে তাকিয়ে। প্রবীরদার মুখের ভাব ভঙ্গি লক্ষ্য করছে।
কবে ছাড়বে….ঠিক আছে তুই ফলো আপ কর….এ্যাঁ….
প্রবীরদা কানে ফোনটা আরো জোড়ে চেপে ধরলো, কেউ যেন কিছু শুনতে না পায়। মুখের ভাব ভঙ্গিটা আস্তে আস্তে পাংশু হয়ে যাচ্ছে। চোখ দুটো কেমন যেন ঠান্ডা মেরে যাচ্ছে।
প্রবীরদা ফোনটা পকেটে রেখেই উঠে দাঁড়াল। সোজা আমার সামনে এসে দাঁড়াল। আমার হাতটা চেপে ধরলো।
প্লিজ অনি তুই একাজ করিস না। আমি তোর থেকে সিনিয়ার। জগতটা তোর থেকে একদিন হলেও বেশি দেখেছি।
তুমি বৃথা চেষ্টা করছো।
আমার গলার স্বর, চোখের কাঠিন্যে, প্রবীরদা চুপ করে গেল।
ও কিছু করতে পারবে না।
ঘরের সবাই চুপ।
তুমি ওকে যতদিন চেন তার থেকে আমি বেশিদিন চিনি।
ঠিক আছে, আমি সব মেনে নিচ্ছি। আমার এই অনুরোধটুকু তুই রাখ। তোকে আমি কথা দিচ্ছি, আমার কোন ক্ষতি ও করতে পারবে না।
বিশ্বাস করতে পারছি না।
ঘরের পরিবেশ থম থমে। সবাই আমার দিকে তাকিয়ে।
কি হয়েছে প্রবীর, জল অনেক দূর গড়িয়ে গেছে মনে হচ্ছে।
দাঁড়ান ডাক্তারদাদা আমি একটু অনিমেষদাকে ফোন করি, অনিমেষদা বিধানদা ছাড়া ওকে কেউ আটকাতে পারবে না। আমাদের ও চুনো পুঁটি মনে করে। এতোদূর ও যখন এগিয়ে গেছে, ও অনেক কিছু করতে পারে। ওর যে কতো প্লাস পয়েন্ট কল্পনা করতে পারবেন না। প্রবীরদা মোবাইলের বোতাম টিপতে টিপতে আপন মনে কথা বলে চলেছে।
কি হয়েছে তুমি বলবে তো। ডাক্তারদাদা বললো।
পরে বলছি।
প্রবীরদা আবার রিং করলো। এবার মনে হয় ভয়েজ অন করে রিং করলো। সকলে যাতে শুনতে পায়। অনিমেষদার ফোনে রিং হওয়ার আওয়াজ।
বলো প্রবীর ওখানকার কাজ মিটল।
আর্ধেক হয়েছে, অনি আবার একটা গন্ডগোল পাকিয়েছে।
কেন আবার কি হলো।
ফোনে বলা যাবে না। আপনি কোথায় ?
আমি এখন বরাহনগরে।
আমরা অনির শ্বশুর বাড়ি, বাগবাজারে।
মিত্রাদের পুরনো বাড়িতে ?
হ্যাঁ।
তোমরা কি করতে গেছো।
সে অনেক কথা, না এলে জানতে পারতাম না।
আমার এখানে কাজ সারতে আরো ঘন্টা খানেক লাগবে। ফেরার পথে যাব।
কোথায় বসবেন।
অনি কোথায়।
আমার সামনে বসে আছে। কোন কথার উত্তর দিচ্ছে না। চুপ করে আছে।
ওকে দাও।
আপনার কথা শুনতে পাচ্ছে। বড়দি, ছোটদি, ডাক্তারদাদা সবাই আছে।
অনিমেষদা হেসে ফেললো, তারমানে বড়ো ভোজ ছিল বলো দুপুরে। ঠিক আছে, তুমি গিরিশমঞ্চে এসো ঘন্টা খানেক বাদে। ওখানে একটা সমস্যা আছে মিটিয়ে যাচ্ছি।

আচ্ছা।
 
প্রবীরদা আবার নিজের জায়গায় গিয়ে বসলো। আমি চুপচাপ বসে আছি।
কিরে তুই আবার গন্ডগোল পাকিয়েছিস।
বড়মা আমার দিকে তাকিয়ে বললো।
তোমার বিশ্বাস হয়।
এতো কথা হলো অবিশ্বাস করি কি করে।
গন্ডগোল ছাড়া জীবন বৃথা।
তারমানে তুই পাকিয়েছিস।
আমি পাকাই নি, ওরা পাকাল। আমি চেক দিলাম।
তোর চেকগুলো এতো কঠিন আমাদের ত্রাহি ত্রাহি রব উঠছে। প্রবীরদা বললো।
ওকি একেবারে কাস্টডিতে হাত মেরেছে! ইসলামভাই বললো।
হ্যাঁ। সেদিন রাতের মিটিংয়ে ও এই কথা বলেই রাজনাথকে ধমকেছিল। আমি কথাটার গুরুত্ব দিই নি। ভেবেছিলাম ওর মতো এরকম বড়ো বড়ো কথা অনেকেই বলে। এখন দেখছি সত্যি। দুবার এ্যাটেম্পট হয়ে গেছে।
ইসলামভাই আমার দিকে ফ্যাকাশে চোখে তাকাল। একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস বেরিয়ে এলো।
কেউ বুঝতে পারে নি। প্রবীরদা স্বগতোক্তির সুরে বললো।
দূর খালি সব ফালতু আলোচনা। আমি জ্যেঠিমনির ঘরে গিয়ে ঘুমোই।
আমি উঠে দাঁড়ালাম।
নিচে বেলটা বেজে উঠলো।
দেখতো মা রথীন এলো মনে হয়। ডাক্তারদাদা বললো।
আমি ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। জ্যেঠিমনির ঘরে ঢুকলাম। জ্যেঠিমনির বিছানায় টান টান হয়ে শুয়ে পরলাম। নিচে দু-তিনজনের গলার আওয়াজ পেলাম বুঝলাম ডাক্তারদাদার বন্ধু একা নয়, আরও কয়েকজন আছেন।
ওরা ওপরে উঠে এলো। ডাক্তারদাদা হৈ হৈ করে উঠলো। সবার সঙ্গে একে একে পরিচয় করিয়ে দিলো। আমি এ ঘর থকে স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি। অনেকদিন পর বন্ধুর সঙ্গে দেখা, যা হয়। আমি মোবাইলটা বার করে পটাপট কয়েকটা ম্যাসেজ করে দিলাম। পকেটে ফোনটা রেখে দিলাম।
মিত্রা ঘরে ঢুকলো। মুখটা সামান্য ভার ভার।
কিরে তুই আবার ভেটকে গেলি কেন।
কোন কথা বললো না। আমার পাশে উঠে এলো। আমার চোখে চোখ।
কিরে আবার কোন সমস্যা।
তোর বড়টা বহুত গন্ডগোল পাকাচ্ছে।
কোনটা, বর্তমান না প্রাক্তন।
দুটোই।
মিত্রা হেসে ফেললো।
রাজনাথকে কি ছেড়ে দেবে।
তার তোর জোড় চলছে।
তুই জানলি কি করে।
তোকে এসব নিয়ে ভাবতে হবে না।
ভাবছি নাতো, আমার অভ্যেস হয়ে গেছে, বড়মা, ছোটমা, জ্যেঠিমনি টেনসন করছে।
এতদিন বড়মা ছোটমা ছিলো, এবার সঙ্গে লেজুর জ্যেঠিমনি।
বরুণদাও খুব একটা ভালো নেই।
বড়ো বড়ো কাজ করতে গেলে একটু টেনসন নিতে হবে। না হলে পাতি চাকরি করতে হবে।
টিনা আজ প্রেস ম্যানেজারকে মেমো ধরিয়েছে।
খবর পেয়েছি।
তোকে ফোন করেছিল।
আমি করেছিলাম। দাদার সঙ্গে কথা বলেছিস।
বলেছি।
বড়মার সঙ্গে জ্যেঠিমনির বোঝাপড়া হয়েগেছে।
হ্যাঁ।
আর কেউ জানলো।
বরুণদা মনে হয় কিছু একটা আঁচ করতে পেরেছে।
করুক। আজ না হয় কাল জানতে পারবে।
কেউ না বললে জানতে পারবে না।
বললে তুই পেট খোলসা করবি, আমিতো আর করবো না।
আমিও করবো না।
কথাটা মাথায় রাখিস, তাহলেই হবে।
কিরে দুজনে কি ফুসুর ফুসুর গুজুর গুজুর করছিস।
ছোটমা ঘরে ঢুকলো। চকচকে চোখ, ঝকঝকে মুখ, দুজনের মুখের দিকে এক ঝলক তাকাল। বোঝার চেষ্টা করলো পরিবেশের গতি প্রকৃতি।
কিরে অনি রাজনাথ আবার গন্ডগোল করেছে।
শুধু রাজনাথ নয়, সঙ্গে ডাক্তারও আছে। হাতটা ছোট নয়তো।
অনিমেষদা কি করছে তাহলে।
খবরটা পৌঁছতে সময় লাগে।
তোর লাগে না।
আমার লোক যে ওর আশেপাশে ঘুরছে। প্রয়োজন আমার।
দিদি আমাকে ইশারায় গ্রীণ সিগন্যাল দিয়ে দিয়েছে।
তোমরা ঠিক থাকলে আমার কনো অসুবিধে নেই।
আমরা ঠিক আছি।
তোমাদের নতুন সখী।
আমাদের থেকে এক কাঁটা ওপরে। তোর কোন চিন্তা নেই। তোর যাতে কোন খতি না হয় তার ব্যবস্থা কর।
আমার খতি করতে গেলে ওরা দুবার ভাববে।
তাহলে এই যে আবার শুরু করেছে।
আমার কথার অবাধ্য হয়েছে, তাই ধমক দিয়েছি।
এটা তোর ধমক।
ওদের জন্য।
তারমানে তুই প্রত্যেকটা লোকের জন্য আলাদা আলাদা ধমকের ব্যবস্থা করেছিস।
মিত্রা ছোটমার কথা শুনে হাসছে।
তুই ভেবে দেখ। বাপের জম্মে এমন কথা শুনিনি। নতুন শুনলাম। দিদিকে বলতে হবে। তা কোথায় ধমকালি।
শুনতে হবে না।
প্রবীর থম মেরে বসে আছে। আর ওই দুটোর সঙ্গে ফুস ফুস করছে।
কার সঙ্গে।
ওই যে ডাক্তারদার বন্ধুর সঙ্গে এসেছে এই এলাকার লোকাল কমিটির সেক্রেটারি, আর জোনাল কমিটির সেক্রেটারি।
কিগো তুমিও এসে জমে গেছো। ইসি ঘরে ঢুকলো।
কেন ?
ডাক্তারদাদা অস্থির হয়ে পরছে।
হোক। একটা পুঁচকে ছেলের সঙ্গে আলাপ করতে হবে না।
ইসি হেসে ফেললো।
পুঁচকে বলো না। কি সব কান্ডকারখানা করছে বলো।
এটা নস্যি, আগের গুলো দেখিস নি। তিনজনে কতোবার কাপর বদল করেছি কে জানে।
আমি একটায় সাক্ষী।
শেষেরটা।
হ্যাঁ।
তাহলে এবার ভাব।
কিরে শুয়ে আছিস কেন ওঠ।
ইসি আমার দিকে তাকিয়ে বললো।
খাওয়াটা বেশ জোরদার হয়ে গেছে।
ডাক্তারদাদা ডাকছে।
কেন।
তোর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেবে। ভিআইপি মানুষ বলে কথা।
আবার শুরু করলি।
বারে ভিআইপি মানুষকে কি বলে ডাকবো।
তোর চ্যাপ্টার ক্লোজ।
এক মিনিটে।
তারমানে!
ডাক্তারদাদার মুখ থেকে সব শুনে বললো, ও তুমি যখন আছো তাহলে আমার আর কোন চিন্তা নেই। তারপর ডাক্তারদাদার মুখ থেকে তোর কান্ড কারখানা শুনে বললো, ছেলেটাকে একটু দেখাও, আমাকে তাহলে তোমার সঙ্গে জুড়ে নাও। আমিও একটু শেষ বয়সে ভালো কাজ করি।
আমি উঠে বসলাম। মিত্রার দিকে তাকালাম।
আজ মাথাটা যন্ত্রণা করবে, রাতে টিপে দিবি।
কেন তোকে দেয় না। ছোটমা কট কট করে উঠলো।
জিজ্ঞাসা করো।
মিত্রা মুখ টিপে হাসছে।
জ্যেঠিমনির ঘর থেকে তিনজনে ইসির ঘরের দরজার সামনে দাঁড়ালাম।
ডাক্তারদাদা বেশ জমিয়ে বন্ধুর সঙ্গে গল্প করছে। জ্যেঠিমনি, দামিনীমাসি, বড়মা কথা বলছে। আর একদিকে প্রবীরদা ইসলামভাই আর সেই ভদ্রলোক দুজন। আর একদিকে বরুণদা নীরু কথা বলছে। ভজুরামকে দেখতে পেলাম না। বুঝলাম পিকুর সঙ্গে ছাদে খেলা করছে।
আয় আয়। ভেতরে আয়।
সকলের দৃষ্টি এবার আমার দিকে। ডাক্তারদাদার বন্ধু রথীনবাবু আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালেন, প্রবীরদার সঙ্গে যে দুজন কথা বলছিলেন তারাও অবাক।
রথীন এই হচ্ছে অনি।
এই টুকু পুঁচকে ছেলে অনি ব্যানার্জী। তুমি কি আমার সঙ্গে ফাজলাম করছো।
সবাই রথীন ডাক্তারের কথায় হেসে ফেললো।
কেন ডাক্তার আমার ছেলের কথা শুনে কি তোমার বৃদ্ধ মানুষ বলে মনে হচ্ছিল। বড়মা এমনভাবে বলে উঠলো হাসি আর থামে না।
তা না অন্ততঃ পক্ষে ওর মতো হবে ভেবেছিলাম। বরুণদার দিকে ইশারা করলো।
আমি সকলকে একে একে প্রণাম করলাম।
কিরে তোকে যে কেউ অনি বলে পাত্তাই দিচ্ছে না। ডাক্তারদাদা বললো।
আমি কেন, ওদের জিজ্ঞাসা করো, ওকে যারা চেনে না, যারা শুধু নামে জানে তারা কেউ মানবে কিনা।
কথাটা তুমি খাঁটি বলেছ। প্রথম দিন আমারও ওরকম ভ্রম হয়েছিল।
তা বাবা তুমি এ বঙ্গের না ও বঙ্গের।
ও শেকড়হীন বঙ্গের মানুষ।
সেটা কি রকম।
আমি ওকে পাঁচ মাস দেখছি। ম্যায় ওর দেশের বাড়িতেও একবার গেছিলাম। আমিই ওকে ঠিক মতো বুঝতে পারলাম না ও কোন বঙ্গের, আর তুমি কয়েক মিনিটের দেখায় বুঝে যাবে।
ওকে তুমি দেখেছো ?
ডাক্তারদাদা মিত্রার দিকে হাত তুললো।
জম্মাতে দেখেছি। আর কিছু জানতে চাও।
না।
তুমিও এই বাড়িতে এসেছো দু’একবার।
আমি!
হ্যাঁ। আমি তোমাকে নিয়ে এসেছি।
ছুটকির দাদু একবার পরে গিয়ে কোমরে লেগেছিল। তা ধরো বছর তিরিশ আগে।
খালি গুল মারছো।
আমরা তখন মেডিক্যালে চাকরি করি।
ধ্যুস তুমি সেই ত্রেতা জুগের কথা বলছো।
তা বাবা তুই নিজে এসব লিখিস!
আমি মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছি।
তোমাকে একদিন ওর গল্প বলবো। অবশ্য যতটুকু জানি।
যাই বলো সামন্ত ওর চোখ দুটো কিন্তু বেশ সার্প।
ধরে ফেলেছ।
হৃদয়ের অনেক কথা যে চোখ বলে দেয়।
তুমি হার্টের ডাক্তার বলে।
তা নয় হঠাৎ মনে হলো তাই বললাম।

ইসি মিষ্টির ট্রে নিয়ে ঘরে ঢুকলো।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top