What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

EFekrO7.jpg


পিৎজা নামের খাবারটি এখন বিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয় খাদ্যতালিকার শীর্ষের দিকেই অবস্থান করছে। বর্তমান যুগে এমন কোনো দেশ নেই, যেখানে পিৎজা খাওয়া হয় না। তবে এই পিৎজার ইতিবৃত্ত খুঁজতে গিয়ে জানা যায় চমকপ্রদ সব তথ্য। সাধারণভাবে পিৎজার জন্মস্থান ইতালি বলে মনে করা হয়। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই ছড়ানো চ্যাপ্টা রুটির ওপরে বিভিন্ন খাদ্য উপাদানের টপিং দিয়ে খাওয়ার ঐতিহ্য কিন্তু আরও বহু দেশের খাদ্য সংস্কৃতিতেই আছে বলে জানা যায়। তাই পিৎজার ঠিকুজি খুঁজে বের করতে বেরিয়ে পড়া যাক দেশ ভ্রমণে।

ইতালি

পিৎজার যে আধুনিক রূপটি এখন বিশ্বজুড়ে খাদ্যরসিকদের রসনা পরিতৃপ্ত করছে, তা মূলত পিৎজার ইতালিয়ান রূপ। ইতিহাসে আছে, ইতালির নেপলস অঞ্চলে একেবারে খেটে খাওয়া মানুষের ক্ষুধা নিবারণ আর রসনাবিলাসের উদ্দেশ্যে ছড়ানো রুটির ওপর সহজলভ্য টমেটো পেস্ট, বাসিলপাতা আর ক্ষেত্রবিশেষে মোজারেল্লা চিজ আর লবণ পানিতে জারানো আনশভি মাছ ইত্যাদি দিয়ে বিক্রি করা হতো রাস্তার ধারে। এই স্ট্রিট ফুডকে সমাজের উঁচুতলার মানুষ খুব ভালো চোখে না দেখলেও এর জনপ্রিয়তা ও উপযোগিতার কারণে তা ইতালির নেপলসে একটি প্রধান খাদ্য হয়ে ওঠে।

a7Z77tK.jpg


থিন ক্রাস্ট রোমা স্টাইল পিৎজা, ছবি: উইকিপিডিয়া

এরপর নেপলস গ্রিস থেকে ইতালির অধীনে এলে, ১৮৮৯ সালে, ইতালির রানি মার্গারিটার আগ্রহে, তাঁকে নেপলসের সবচেয়ে বিখ্যাত পিৎজার কারিগর পরিবেশন করেন পিৎজা মার্গারিটা। এতে রুটির ওপরে দেওয়া হয়েছিল ধবধবে সাদা মোজারেল্লা, সবুজ বাসিলপাতা আর লাল টুকটুকে টমেটো। ইতালির জাতীয় পতাকার এই তিন রঙের পিৎজা রানির মন ছুঁয়ে যায় এবং পুরো ইতালিতেই এরপর পিৎজা খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পিৎজা নেপোলিতানা, পিৎজা রোমা, সিসিলিয়ান পিৎজা অথবা পিৎজা মনতানারা ইতালির নিজস্ব এই পিৎজাগুলোতে নানা বৈচিত্র্য এনে সারা বিশ্বে কোটি মানুষ এর স্বাদ নিচ্ছে প্রাণ ভরে।

যুক্তরাষ্ট্র

P3zCEBd.jpg


ডেট্রয়েট স্টাইল পিৎজা, ছবি: উইকিপিডিয়া

ইতালির পিৎজা সেই ইতালিয়ান অভিবাসীদেরই হাত ধরে যখন উনিশ শতকের দিকে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছে গেল এবং সেখানকার অধিবাসীদের কাছে ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা লাভ করল। বিশেষত নিউইয়র্কে এই পিৎজা পেল নতুন রূপ, যা এখন সারা বিশ্বে খুব বিখ্যাত। নিউইয়র্ক স্টাইল পিৎজা ছাড়াও শিকাগো ডিপ ডিশ পিৎজা বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেছে। এই পিৎজাতে পিৎজার রুটি একটু গভীর ডিশে নিয়ে তাতে প্রচুর সস, চিজ ও মাংস, সবজি দিয়ে বেক করা হয়। এ ছাড়া চার কোনা ডেট্রয়েট পিৎজাও যুক্তরাষ্ট্রের পিৎজাগুলোর মধ্যে খুবই সমাদৃত।

গ্রিস

B7CTpc3.jpg


গ্রিক পিৎজা, ছবি: উইকিপিডিয়া

প্রাচীন গ্রিসে প্লাকোস নামের চ্যাপটা রুটি বেক করা হতো কাদা দিয়ে বানানো ওভেনে। এর ওপরে দেওয়া হতো অলিভ অয়েল, মসলাপাতি, রসুন আর চিজ। সহজে হাতে নিয়ে খাওয়া যায় বলে তা খেটে খাওয়া মানুষের চটজলদি দুপুরের খাবার হিসেবে বেশ প্রচলিত ছিল। বিখ্যাত ফেটা চিজ, কালো অলিভ আর অলিভ অয়েল টপিং দিয়ে বানানো এই গ্রিক ঘরানার পিৎজা নানা রূপে এখন দুনিয়াজুড়ে খাওয়া হয়। গ্রিক ইতিহাসবেত্তাদের অনেকে তো এমনও দাবি করেন যে গ্রিক প্রভাবেই নেপলসে প্রথম পিৎজা বানানো শুরু হয়।

পারস্য

MMC4qP9.jpg


পার্সিয়ান স্টাইল মিক্সড পিৎজা মখলূট, ছবি: উইকিপিডিয়া

পারসি ইতিহাসে পিৎজা জাতীয় খাবার নিয়ে আছে মজার ইতিহাস। পারসি সৈনিকেরা নাকি খোলা আগুনের ওপরে তাদের লোহার ঢালের ওপরে আটার রুটি দিয়ে তার ওপরে সঙ্গে রসদ হিসেবে আনা পনির আর খেজুর দিয়ে বেক করে খেতেন। পুষ্টিকর আর সহজ এই খাদ্যবস্তুটি সেই ষষ্ঠ শতাব্দীর নিদর্শন হলেও এখনো পারসিয়ান ধাঁচের পিৎজা বেশ জনপ্রিয় সব দেশেই। তবে এতে এখন খেজুরের পরিবর্তে বিভিন্ন রকমের উপকরণ ব্যবহার করা হয়।

লেবানন

SDeroGC.jpg


যাতার দিয়ে তৈরি মানাকিশ, ছবি: উইকিপিডিয়া

লেবাননের চ্যাপটা রুটি সে দেশে মানাকিশ বলে পরিচিত। এই রুটির ওপরে 'যাতার' নামক এক বিশেষ মসলা ও হার্ব মিশ্রণ আর চিজ দিয়ে আবার আগুনে একটু গরম করে বহু যুগ ধরেই লেবানন ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশে খাওয়া হয়। দেখতে একেবারেই পিৎজার মতো এই মানাকিশে এখন আন্তর্জাতিক স্বাদ আনতে মাংসের কিমা, জায়তুন বা অলিভ ইত্যাদি ব্যবহার হয়। সেই দশম শতাব্দীর কিছু লিপিমালাতে এই মানাকিশের কথা উল্লেখ করা আছে। তাই লেবাননের পিৎজাও কিন্তু কম ঐতিহ্যবাহী নয়।

তুর্কিস্তান ও আর্মেনিয়া

Bu5iIMI.jpg


লাহামাকুন, আর্মেনিয়ান পিৎজা, ছবি: উইকিপিডিয়া

টার্কিশ পিৎজা বলে পরিচিত লাহমাচুন কিন্তু দারুণ জনপ্রিয় বিশ্বজুড়ে। তবে আর্মেনিয়াতে একেবারে হুবহু পাকপ্রণালিতে পিৎজার মতো এই খাবারটির ঐতিহাসিক চিহ্ন আছে। আর্মেনিয়াতে এটি লাহমাদজো নামেই পরিচিত। নাম যা–ই হোক না কেন, লাহমাচুন বা লাহমাদজো বলতে বোঝায় চ্যাপটা ছড়ানো রুটি ঠেসে মাংসের কিমা দিয়ে ঢেকে এতে টমেটো, পার্সলি আর টার্কিশ মসলাপাতি দিয়ে আগুনে বেক করা খাবার। এতে পিৎজার তুলনায় পাতলা রুটি বেশ মচমচে করে বেক করা হয়। আর পরিবেশনের সময় বেশ করে লেবু চিপে খাওয়া হয়।

চীন

9yJs1yq.jpg


কং ইউ বিং, চীনের পিৎজা, ছবি: উইকিপিডিয়া

চীন দেশে ঘুরতে গিয়ে সেই ১৩ শতকের দিকে জগৎবিখ্যাত ভেনিস পর্যটক মার্কো পোলো সে দেশে সবুজ পেঁয়াজপাতা ছিটিয়ে বানানো রুটির খুব ভক্ত হয়ে পড়েন। তাঁর গ্রন্থেও এর উল্লেখ আছে। আজকাল এই স্ক্যালিয়ন ফ্ল্যাট ব্রেড বা চীন ভাষায় কং ইউ বিং সারা পৃথিবীতেই সবাই আগ্রহ করে খেয়ে থাকেন চায়নিজ খাবার দোকানগুলোতে।

নেপাল

387ToiB.jpg


মাংস দিয়ে তৈরি নেপালি পিৎজা চাতামারি, ছবি: উইকিপিডিয়া

শুনতে অবাক লাগলেও সত্য যে আমাদের ঘরের কাছে এই নেপালের নেওয়ার নামক লোকসমাজে বহু বছর ধরে এই নেপালি পিৎজা খাওয়ার চল আছে। এতে অবশ্য গমের আটার বদলে চালের আটা আর ডালবাটা মিশিয়ে নেওয়া হয়। এতে ডিম ও মসলা দিয়ে চিতই পিঠার মতো গোলা বানিয়ে গরম তাওয়ায় প্যানকেক বানিয়ে নেওয়া হয়। বানানোর সময়েই এর ওপরে দেওয়া হয় মাংস, পেঁয়াজ, রসুন, টমেটো ইত্যাদি। আর ওপরে ভেঙে দেওয়া হয় একটি ডিম। চাতামারি নামের এই নেপালি পিৎজা সে দেশে খুবই জনপ্রিয়।

বাংলাদেশ

অন্য সব দেশের মতোই পিৎজা এখন আমাদের বাংলাদেশেও খুব সমাদৃত সবার কাছে। বাইরে খেতে গেলে তো বটেই, ঘরেও বিশেষ মজাদার কিছু বানাতে গেলে আজকাল আমাদের প্রথম পছন্দ পিৎজা। আশির দশকে আমাদের দেশের ফাস্ট ফুডের দোকানে পিৎজা নামে যেটা পাওয়া যেত, সেটা আসলে মোটা চ্যাপ্টা পাউরুটির ওপরে কিমা, পেঁয়াজ, টমেটো সস আর পনিরের মিশ্রণ।

KjtpdXg.jpg


বাংলাদেশে বাড়িতে বানানো পিৎজা

সত্যিকারের আন্তর্জাতিক মানের এবং নিয়ম মেনে কিছু পিৎজার দোকান চালু হয়েছিল নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে ঢাকার একেবারে অভিজাত এলাকার দিকে। আর এই শতকের শুরুর দিক থেকে ও মাঝামাঝি সময়ে যখন আন্তর্জাতিক পিৎজা ব্র্যান্ডগুলো এ দেশে শাখা খুলল, তারপর থেকে পিৎজা কালচার আমাদের তরুণ প্রজন্মকে একেবারেই বিমোহিত করে ফেলল। আর এখন তো রাস্তার পাশে ফুডকোর্টে বা পাড়ার দোকানেও যেমন পিৎজা তৈরি হচ্ছে, তেমনি একেবারে আন্তর্জাতিক মানের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী রেসিপি অনুসরণ করে পিৎজা বানায় এমন অনেক বিশেষায়িত পিৎজারিয়াও গড়ে উঠছে। আবার মজার ব্যাপার হচ্ছে, ফিউশনধর্মী 'কালা ভুনা পিৎজা' বা ঢাকাই পনির দেওয়া 'পিৎজা ঢাকা' কিন্তু বাংলাদেশি পিৎজা হিসেবে নিজের পরিচয় গড়ে তুলতে শুরু করেছে।

পিৎজার জন্ম কোথায় আর কোন সালে, সে হিসাব গবেষকেরা করতে থাকুন। আমরা বরং পিৎজা দিবসে ইঞ্চি মেপে পিৎজা খেতে থাকি। স্বাদ নিতে থাকি এক ঐতিহ্যবাহী খাবারের।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top