What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

আকুল পাথার ! (1 Viewer)

Nagar Baul

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
1,152
Messages
13,339
Credits
547,766
Pen edit
Sailboat
Profile Music
আকুল পাথার ! - by dada_of_india

ঝর্না! আমি ঝর্না ! কেন আমার নাম ঝর্না সেটা আমি নিজেও জানিনা ! একটা কালো মেয়ে যার শরীরে কোন ঝলক ছিলোনা ছিলনা তার এই পৃথিবীতে কোন প্রয়োজন তবুও তাকে পৃথিবীতে এনেছিল একজন স্ত্রী আর একজন পুরুষ নিজেদের যৌন লালসা মেটাতে গিয়ে ! কেন আমার নাম ঝর্না রাখা হয়েছিল সেটা জানার বা বোঝার শক্তি বা ইচ্ছা কোনোদিনই আমার ছিলোনা ! তবে আমি বুঝে গেছিলাম আমার জীবন ঝর্নার মতো কোনোদিনই বইতে পারবে না ! যখন পৃথিবীর আলো দেখতে শুরু করলাম কিন্তু প্রান ভরে সেই আলো দেখার আগেই আমি নিজেকে আবিস্কার করলাম অন্যলকের বাড়িতে একজন কাজের মেয়ে হিসাবে !

জাতে আমরা বাগদি ! তবে জাত কি জিনিস সেটাই আজ ৩৫ বছরেও বুঝে উঠতে পারলাম না ! কেনই বা আমাদের বাগদি বলে আর কেনই বা আমাদের ঘৃণার চোখে দ্যাখে সমাজের সব লোক ! পরের দয়াতে লেখাপড়া শিখেছি ! আজ হয়ত আমি নিজে প্রতিষ্ঠিত নিজের জীবনে কিন্তু এখনও সমাজের লোকেরা আমাকে ঘৃণার চোখে দ্যাখে ! হয়ত সামনে কিছুই বলতে পারেনা কিন্তু পিছনে সব সময় চলে একটা ষড়যন্ত্র আমাকে হারাবার ! সব সময় শিডিউল কাস্ট বলে অবহেলা করে ! শিডিউল কাস্ট হয়ে জন্মান কি অপরাধ ? আমি তো নিজে নিজেই জন্ম নিইনি ? তবুও কেন এমন ব্যবহার আমার সাথে ! তবে ওই উঁচু সমাজের লোকেদের চোখে আমার শরীরের খিদে প্রতিপলে বুঝতে পেরেছি ! আমার শরীর নাকি একটা জ্বলন্ত সেক্স বম্ব ! একদিন একটা লরির ডিজেল ট্যাঙ্কের গায়ে লেখা দেখেছিলাম "জন্ম থেকেই জ্বলছি " আমার অবস্থাটাও ঠিক সেই রকম ! জন্ম থেকেই ঘৃণা, অবহেলা, ষড়যন্ত্রের শিকার আমি ! ভালোবাসা যদিও এসেছিল সেটা ছিল ক্ষণস্থায়ী ! ক্ষণস্থায়ী এই কারনেই বলছি সেটা ছিল একতরফা এবং জোর করে কাউর ভালবাসাকে কেরে নেবার চেষ্টা ! লোকের বাড়িতে কাজ করতে করতে আর অপমান সইতে সইতে নিজেকে এতই কঠোর করে নিয়েছিলাম সেটা আজও ভাবলেই হাসি পায় ! তখন আমার মাথায় ছিল শুধুই কেরে নেবার চিন্তা ! আমার নেই ! কেন নেই ? আমাকে পেতেই হবে ! এই বাক্যটিই আমাকে সব সময় হিংসক করে রেখেছিল !

আজ যখন নিজের জীবন নিয়ে আপনাদের বলতে এসেছি তখন আপনাদের মধ্যেই হয়ত কেউ কেউ আছেন আমাকে সেক্সের মাল হিসাবে ভেবে নিতে পারবেন বা পারেন ! আমার শরীরের গঠন বলে দিই আগে ! না হলে আপনাদের ধারনা কি করে হবে যে আমি সেক্স বম্ব কিনা ?

উচ্চতায় আমি ৫ ফুট সাড়ে ৫ ইঞ্চি ! ৩৪-২৪-৩৪ আমার ফিগার ! লোকেদের কথায় যাকে বলে একেবারে খাবো খাবো ফিগার ! আচ্ছা আচ্ছা পুরুশদের দেখেছি আমার শরীরের দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তকাতে ! সেই কোন উঠতি যুবকই হোক বা ঘাটে যাবার পথে কোন বৃদ্ধই হোক ! ভদবান আমার শরীরে কালো রঙ দিয়েছেন ঠিকই কিন্তু আমার শরীরটাকে এত লোভনীয় করে তৈরি করেছেনে বলে মাঝে মাঝেই ভগবান কে আমি ধন্যবাদ জানাই ! পিঠের শেষ পর্যন্ত আমার চুলের ঝার ! টিকালো নাক ! টানা বড়বড় আমার দুই চোখ ! অনেককেই বলতে শুনেছি যদি আমি কালো না হতাম তাহলে হয়ত শ্রিদেবিও আমার নিখের যোগ্য হতো না ! না আমার শ্রিদেবিকে হারানোর কোন ইচ্ছা ছিলনা বা নেই ! আমি কালো মেয়ে ঝর্না ! কালোই থাকতে চাই !

যখন প্রথম বার লোকের বাড়িতে কাজে গেলাম ...... না গেলাম না ! আমার বাবা আমাকে ছেরে এলো ! তখন আমার বয়স মাত্র আট বছর ! কাজের কিছুই জানিনা ! কারন তখন আমার কাজ করার বয়স নয় ! তখন ছিল আমার খেলার বয়স ! আমার পড়ার বয়স ! নতুন চোখে এই পৃথিবীকে দেখার বয়স ! তখন দেখতাম আমার বয়সি মেয়েরা কি সুন্দর পুতুল খেলছে আর সেই সব মেয়েরাই তাদের বাবা মায়ের পুতুল হয়ে আদর পাচ্ছে ! ভালোবাসা পাচ্ছে তখন ওই ছোট্ট মনেই হিংসার আগুন জ্বলত ! সেই সব পুতুল আর ভালোবাসা পাবার জন্য কেঁদে ফেলতাম ! কিন্তু আমার কান্না কেউ শুনত না ! ! উল্টে মেরে মেরে আমাকে দিয়ে কাজ করাত ! বাসন মাজাত, ঘর ঝাঁট দেওয়াত ! কাপর কাছাত ! ছোট্ট ছোট্ট হাত তখন ব্যাথায় যন্ত্রণায় কুঁকড়ে উঠত ! কিন্তু কেউ কোনোদিন আমার যন্ত্রণা নিয়ে মাথা ঘামায় নি ! আমার সমবয়সি বা একটু বড় তাদের বাড়িতেও একটা মেয়ে ছিল ! তার পৃথিবী একরাশ পুতুল, ভালোবাসা, স্বপ্ন ! আর আমার পৃথিবী হাতে ঝাঁটা, ঘর মোছার ন্যাকরা কাপর কাচার সাবান !

তাদের মেয়ে দুধ, মিষ্টি, ফল কতরকমের কৌটোর খাবার, চকলেট ! আর আমার জন্য রাতের বাসি রুটি একটু গুর ! কোনোকোনো দিন সকালে সেটাও জুটতও না ! খালি পেটে দুপুর অবধি কাজ করে একমুঠো ভাত আর একটু ডাল ! যদি কোনোদিন ভাগ্য ভালো থাকত তাহলে তার মেয়ের ফেলে দেওয়া আধখানা মাছের টুকরো ! চোখের জল দিয়ে ভাত ভিজিয়ে নুনের স্বাদ পুরন করতাম ! রাতেও সেই একই খাবার মেয়ের ফেলে দেওয়া রুটি একটু গুর !

আমি তখনও ভেবে পেতাম না মানুষ কি করে এত নিষ্ঠুর হতে পারে ! একজন মানুষ কে দুবেলা দুমুঠো ভাত দিতে কিসের এত কষ্ট ? অভুক্ত অপুষ্টিতে আমি ভুগে ভুগে একদিন জ্বরে পড়লাম ! বাড়ির মালিক আমাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে চাইলে ওনার বউ কিছুতেই যেতে দেবেন না ! ওনার কথা "গরিবদের জ্বর জ্বালা হতেই পারেনা ! ও নাটক করছে ! ! "

রাত হতেই আমার ভেদবমি শুরু হোল ! মুখ দিয়ে রক্ত বেরুতে শুরু করে দিলো ! তখন বাড়ির মালিক আর থাকতে না পেরে আমাকে সোজা সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করে দিয়ে আসলেন ! তিনদিন জমে মানুষে টানাটানির পর আমি একটু সুস্থ হলাম ! মালিক রোজ ই একবার করে আমাকে দেখতে আসতেন ! হাসপাতালেই প্রথম দুধের স্বাদ পেলাম ! প্রথম এই কারনেই বলছি কারন মায়ের দুধের স্বাদ সেই ছোট্ট বেলাতেই ভুলে গেছিলাম ! দিন সাতেক আমি হাসপাতালে ছিলাম ! সেই সাতদিন দুবেলা পেট ভরে খেতে পেয়েছিলাম ! নার্সের হাতে পায়ে ধরে বলেছিলাম "আমাকে এখানেই কাজে রেখে দিন ! আপনারা যা বলবেন তাই করবো ! " কিন্তু তখন আমার কথা কেউ শোনেনি ! কারন আমি একজন পেসেন্ট ছাড়া কিছুই ছিলাম না !
 

Users who are viewing this thread

Back
Top