ভেতো বাঙালি বলে আমাদের নামডাক আছে। ভাত কার না প্রিয়! এক প্লেট ধোঁয়া ওঠা গরম ভাত দেখলে নিজেকে সামলে রাখা কঠিন। বাঙালির তিনবেলা ভাত হলে ভালো হয়। কিন্তু তাতে যে মধ্য প্রদেশ এগিয়ে চলে সবার আগে! তখন শুরু হয় ডায়েট। ডায়েটে অনেক সময় সবার আগে ভাত ছাড়ার পরামর্শ দেন ডায়েটিশিয়ান। তাতে হয় হিতে বিপরীত! জেনে নেওয়া যাক, কীভাবে ভাতও ডায়েটের সঙ্গী হতে পারে।
ভাত, আলু ও মিষ্টিজাতীয় খাবার কম খেতে হবে
লাল চাল, ভুলে যান রাইস কুকার
ভাত যদি খেতেই হয়, তবে লাল চালের ভাত খান। হাঁড়িতে রান্না করুন। ফ্যান ঝরিয়ে ফেলুন। রাইস কুকারে রান্না করা ভাত বা বসাভাত স্মৃতি বানিয়ে ফেলুন। আলুর পরিমাণ কমিয়ে দিন। তরকারিতে আলু দেওয়া বন্ধ করুন। বেশি বেশি খান তাজা সবজি ও শাক।
লাল চালের ভাত খান
ভাত ছেড়ে বেড়ে যেতে পারে ওজন
ডায়েটিশিয়ানের কথা শুনে অনেক কষ্ট করে মনকে বুঝিয়ে ভাত ছাড়লেন। কিন্তু ওজন কমছে না। উল্টো বাড়তে শুরু করেছে। আপনি তো রাগে, দুঃখে, শোকে পাথর। কিন্তু এমন ঘটনা অস্বাভাবিক নয়। এমন পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেছেন ঢাকার বারডেম জেনারেল হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ আখতারুন্নাহার আলো। তিনি বিষয়টি পরিষ্কার করে বলেন, ‘ওজন কমানোর জন্য শুরুতেই আমরা ভাতটাকে বাদ দিয়ে দিই। কিন্তু ভাত খাওয়া তো আমাদের অনেক দিনের অভ্যাস। সে জন্য মন টানবেই। দুপুরে আমরা ভাত না খেয়ে এটা-ওটা নানা জিনিস খেয়ে পেট ভরাই। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে সেই খাবারগুলোতে অতিরিক্ত তেল বা কার্ব থাকে। তাই ওজন কমার বিপরীতে বেড়ে যেতে পারে।
ভাত খেয়েও থাকুন ঝরঝরে
প্লেটে আগে তরকারি, পরে ভাত
প্লেটে আগে সবজি, ডাল, সালাদ, তরকারি, মাছ—যা যা আপনি খাবেন, সেগুলো নিয়ে নিন। সবশেষে নিন ভাত। তাহলে ভাতের পরিমাণ এমনিতেই কমে আসবে। মাছ বা মাংস—যেকোনো একটা খাওয়া যায়। যেদিন মাছ খাবেন, সেদিন মাংস নয়। আবার মাংস মানে রেড মিট নয়। কেবল মুরগির মাংস। রাতের খাবারে রেডমিট ভুলে যান, রেডমিটের দিকে তাকাবেনও না।
কমিয়ে আনুন ভাতের পরিমাণ
যেটুকু ভাত, সেটুকু সালাদ
যেটুকু ভাত খাবেন, সমপরিমাণ কাঁচা সবজির সালাদ খেতে হবে। এই সালাদে থাকতে পারে শসা, টমেটো, বাঁধাকপি, গাজর, পেঁপে, বিট। এতে ভাতের গ্লাইকোজেন জমবে না। সহজে গলে যাবে। সালাদে খুব সামান্য লবণ দিন, তেল দেওয়া যাবে না। একটা কথা মাথায় ঢুকিয়ে নিন। ভাত দিয়ে তরকারি নয়, তরকারি দিয়ে ভাত খান। তাই প্লেটে আগে তরকারি, পরে ভাত।’
ভাত খেয়েও ঝরঝরে থাকা যায়
আগে এক গ্লাস পানি, তারপর এক বাটি সালাদ
ভাতের টেবিলে বসেই আগে এক গ্লাস পানি খান। সম্ভব হলে এরপর খান এক বাটি সালাদ। এরপর ভাত খান। তাতে এমনিতেই প্লেটে ভাতের পরিমণ কম আসবে। কেননা ভাতের খিদে কমে যাবে।
ভাত খেয়ে নয় চা কফি
ভাত খেয়ে নয় চা–কফি, নয় ভাতঘুম
ভাত খেয়ে উঠেই চা বা কফি নৈব চ, নৈব চ। এতে শরীরে ভাতের স্টার্চ থেকে যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। ভাত খেলে স্টার্চ ভাঙায় ঝিমুনি ধরে। কিন্তু ভাত খেয়েই ভাতঘুম নয়। দিনেও নয়, রাতে তো নয়–ই। ঘুমানোর সময় বিপাকের হার কমে যায়। ফলে শরীরে মেদ জমে। তাই ভাত খাওয়ার পরে সেটা হজমের ব্যবস্থা করে এরপর ঘুমাবেন। এ কারণেই রাতে ঘুমানোর অন্তত তিন ঘণ্টা আগে রাতের খাওয়া সারুন।
রাতের খাবারে এড়িয়ে চলুন রেড মিট
রাতে যা খাবেন না
* ভাত এক কাপের বেশি নয়
* কোনো চর্বিজাতীয় খাবার নয়
* বাদ দিন কোল্ড ড্রিংকস, চিনি
* বাদ দিন ভাজাপোড়া খাবার
খাওয়ার পরে ভারী ব্যায়াম নয়। রাতে ভাত খেয়ে একটু হাঁটুন। স্বাভাবিক কাজকর্ম করুন। ঘুমিয়ে পড়ুন। নিয়ম মেনে ভাত খেলে ভাতকে সঙ্গী করেও থাকবেন ঝরঝরে।