What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected লীলাবতী - উপন্যাস (1 Viewer)

লীলা ট্রেনের জানালায় মাথা রেখে বসে আছে। তার চোখে চশমা। চশমা নড়বড় করছে। মনে হচ্ছে যে-কোনো সময় আলগা হয়ে নিচে পড়ে যাবে। খাপ করে হাত বাড়িয়ে ধরার সময় পাওয়া যাবে না। কারণ তার দু’টা হাতই বন্ধ। সে মাথা রেখেছে হাতের উপর। ট্রেন ঝড়ের গতিতে চলছে। প্ৰচণ্ড বাতাস। বাতাসে লীলার চুল উড়ছে। অল্প স্বল্প বাতাসে চুল উড়ে যখন মুখের উপর পড়ে তখন তার খুব বিরক্তি লাগে। এখন বিরক্তি লাগছে না। বরং উল্টোটা হচ্ছে, খুবই ভালো লাগছে। ভালো লাগার সঙ্গে খানিকটা ভয় যুক্ত হয়েছে— মাথার উপরের জানোলা খটখট করছে। ট্রেনের ঝাকুনিতে ধুম করে যে-কোনো সময় হয়তো মাথার উপর পড়বে।

লীলার বয়স একুশ। তার মুখ লম্বাটে। গায়ের রঙ সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। মাঝে মাঝে তাকে খুব ফরসা লাগে। আবার কখনো মনে হয় শ্যামলা। সব মানুষের চেহারায় কিছু বিশেষত্ব থাকে। লীলার বিশেষত্ব হচ্ছে, তাকে দেখেই মনে হয় সে খুব কথা বলে। আসলে ব্যাপারটা উল্টা। লীলা খুবই কম কথা বলে। তবে অন্যরা যখন কথা বলে সে সারাক্ষণই মুখ টিপে হাসতে থাকে এবং এমন আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থাকে যে মনে হয় এ-ধরনের কথা সে আগে কখনো শোনে নি, ভবিষ্যতে শোনার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। যা শোনারএখনি শুনে নিতে হবে।

ট্রেনের বাকুনিতে লীলার ঘুম-ঘুম লাগছে। সে বেশ কষ্ট করে জেগে আছে। সামনের স্টপেজটাই নান্দাইল রোড। তাকে নামতে হবে নান্দাইল রোডে। ট্রেন সেখানে মাত্র দুমিনিটের জন্যে থামবে। এই নিয়েও কিছু সমস্যা আছে, তাকে ট্রেনের যাত্রীরা বলেছে, মেইল ট্রেন নান্দাইল রোডে থামে না। যদি সত্যি সত্যি না থামে। তাহলে বিস্ময়কর ব্যাপার হবে। সে টিকিট কেটেছে নান্দাইল রোডের। ট্রেন না থামলে টিকিট কেন দেয়া হবে?

লীলার সঙ্গে এমন কিছু মালপত্র নেই। একটা বড় সুটকেস, একটা হ্যান্ডব্যাগ। হ্যান্ডব্যাগ সে হাতে করে নামাবে। সুটকেস নামাঝে মঞ্জুমামা। মঞ্জুমামা এখন উপরের বার্থে শুয়ে হাঁ করে ঘুমুচ্ছেন। ট্রেনের গতি কমে এলে তার ঘুম ভাঙাতে হবে। ঘুম ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে তিনি অতিরিক্ত ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। টেনশনে তার গলার স্বর চিকন হয়ে যাবে। এমনিতে তার গলার স্বর ভারী, শুধু টেনশনের সময় গলা চিকন হয়ে যায়। লীলা ভেবেই পায় না একটা মানুষ সারাক্ষণ এত টেনশনে কী করে থাকে! তার চেয়েও আশ্চর্য কথা— এত টেনশন নিয়ে একটা মানুষ যখন-তখন কী করে ঘুমিয়ে পড়ে?

মঞ্জুমামা লীলার আপন মামা না। লীলার মায়ের খালাতো ভাই। নয়াপুরে তার একটা ফার্মেসি, একটা টি স্টল এবং রেডিও সারাই-এর দোকান আছে। কোনো দোকান থেকেই তেমন কিছু আসে না। এই নিয়ে তার মাথাব্যথাও নেই। ব্যবসা পাতির খোঁজখবর নিতে গেলে তার টেনশন হয় বলেই তিনি কোনো খোঁজখবর করেন না। দিনের বেশিরভাগ সময় তার স্কুলজীবনের বন্ধু পরেশের চায়ের দোকানে বসে থাকেন। দোকানের পেছনে চৌকির উপর শীতল পাটি পাতা থাকে। ঘুম পেলে সেখানে ঘুমিয়ে পড়েন। মগুমামার বয়স পয়তাল্লিশ। এখনো বিয়ে করেন নি, তবে বিয়ের কথা চলছে। পত্রিী নয়াপাড়া প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা। মাঘ মাসের ছয় তারিখে বিয়ের কথা পাকা হয়ে আছে। তার পরও স্থানীয় মানুষজনের ধারণা, এই বিয়ে শেষ পর্যন্ত হবে না। আগেও কয়েকবার বিয়ের কথাবার্তা পাকা হয়েছে, শেষ পর্যন্ত বিয়ে হয় নি। মঞ্জুমামাকে লীলা নিয়ে এসেছে তার চড়নদার হিসেবে। সম্পূর্ণ নতুন একটা জায়গায় যাচ্ছে, বয়স্ক একজন পুরুষমানুষ সঙ্গে থাকা দরকার। এই মানুষটাকে লীলার খুবই পছন্দ।

জানালার বাইরে বিপুল অন্ধকার। হঠাৎ-হঠাৎ দু’একটা বাতি জ্বলতে দেখা যায়। বাতিগুলিকে লীলার কাছে মনে হয়। জিনের চোখ। বাতিগুলির দিকে তাকিয়ে থাকতে তার ভালো লাগছে। বাতিগুলি স্থির না। চলন্ত ট্রেনের কারণে হঠাৎ গাছের আড়ালে পড়ে বাতি উধাও হয়ে যাচ্ছে, আবার হুট করে অন্ধকার থেকে বের হচ্ছে। আলোর রঙও একরকম না; কোনোটা গাঢ় লাল, কোনোটা হালকা হলুদ। কোনোটা আবার নীলাভ। সবগুলি বাতির রঙ এক হওয়া উচিত। সবই তো কেরোসিনের আলো। রঙের বেশ-কমটা কি দূরত্বের জন্যে হচ্ছে? পরীক্ষা করতে পারলে হতো। লীলা পরীক্ষাটা করতে পারছে না, কারণ সে চোখই মেলে রাখতে পারছে না।
 
লীলা নিশ্চিত, কিছুক্ষণের মধ্যেই সে ঘুমিয়ে পড়বে। মজার কোনো স্বপ্ন দেখতে শুরু করবে। মঞ্জুমামাও উপরের বার্থে ঘুমিয়ে থাকবেন। তারা নান্দাইল রোড স্টেশন ছাড়িয়ে অনেকদূর চলে যাবে। একসময় মঞ্জুমামার ঘুম ভাঙবে। তিনি চিকন গলায় বলবেন–ধুনছে আমারে! তুলা ধুনা ধুনছে। ও লীলা, এখন করি। কী? লীলা বলবে, চলুন মামা আমরা চলন্ত ট্রেন থেকে লাফ দিয়ে নেমে পড়ি। মঞ্জুমামা অত্যন্ত বিরক্ত গলায় বলবেন, তোর মাথায় কি কিরা ঢুকছে? ট্রেন থেকে লাফ দিয়ে পড়লে তুই বাঁচবি? তোকে সঙ্গে নিয়ে বের হওয়াই ভুল হয়েছে। এইজন্যে শাস্ত্ৰে আছে পথে নারী বিবর্জিতা।

কোন শাস্ত্ৰে আছে?

কোন শাস্ত্ৰে আছে জানি না। কথা বলিস না, চুপ করে থাক। ধুনছেরে আমারে, ধুনছে। হায় খোদা এ কী বিপদ!

ট্রেনের গতি কি কমে এসেছে? ঘটাং ঘটাং শব্দ এখন হচ্ছে না। তার বদলে শো শো শব্দ হচ্ছে। লীলা বুঝতে পারছে সে ঘুমিয়ে পড়েছে, তবে কিছুটা চেতনা এখনো আছে। এক্ষুনি সে স্বপ্ন দেখতে শুরু করবে। সে স্বপ্ন দেখছে, শুরুতে এই বোধটা থাকবে।

লীলা এখন দেখছে সে হাতির পিঠে বসে আছে। হাতিটা দুলতে দুলতে এগোচ্ছে। স্বপ্ন দেখা তাহলে শুরু হয়েছে। লীলা ইচ্ছা করলেই স্বপ্ন নষ্ট করে জেগে উঠতে পারে। স্বপ্ন নষ্ট করতে ইচ্ছা করছে না। হাতির পিঠে চড়তে ভালো লাগছে। আরো কী কাণ্ড, বাদ্য-বাজনা হচ্ছে! কারা যেন আবার পিচকিরি দিয়ে রঙ ছিটাচ্ছে। লাল-নীল রঙ চোখে-মুখে লাগছে। রঙ উঠবে তো? হাতির মাহুত লীলার দিকে তাকিয়ে বলল— তাড়াতাড়ি নামো, তুফান হচ্ছে। মাহুত শুদ্ধভাষায় কথা বলছে। গলার স্বর মঞ্জুমামার মতো। লীলা বলল, নািমব কীভাবে? একটা সিঁড়ি লাগিয়ে দিন-না! মাহুত রাগী গলায় বলল— আরে বেটি তুফান হচ্ছে। এই বলেই ধাক্কা দিয়ে সে লীলাকে ফেলে দেবার চেষ্টা করতে লাগল। লীলার ঘুম ভেঙে গেল। সে অবাক হয়ে দেখে আসলেই তুফান হচ্ছে। ট্রেন থেমে আছে। কামরায় কোনো বাতি নেই। যাত্রীরা জানালা বন্ধ করার চেষ্টা করছে। ছোট একটা বাচ্চা কাঁদছে। একজন একটা টাৰ্চলাইট জুলিয়েছে। টাৰ্চলাইটের আলো ক্ষীণ। সেই ক্ষীণ আলোও আবার কিছুক্ষণ পরপর নিভে যাচ্ছে।

লীলা বলল, মামা, আমরা কোথায়?

মঞ্জু বিরক্ত গলায় বলল, আরো গাধা— ড্রাইভার জঙ্গলের মাঝখানে ট্রেন থামিয়ে দিয়েছে। আরো ব্যাটা, তুই কোনো স্টেশনে নিয়ে গাড়ি থামা। জংলার মধ্যে ট্রেন থামালি, এখন যদি ডাকাতি হয়?

ডাকাতি হবে কেন?

দেশ ভরতি হয়ে গেছে ডাকাতে। ডাকাতি হবে না? আজকাল ট্রেন অ্যাকসিডেন্ট হলে কী হয়? আশেপাশের চার-পাঁচ গ্রামের লোক চলে আসে। সাহায্য করার বদলে তারা করে লুটপাট। সুন্দরী মেয়ে থাকলে ধরে নিয়ে যায় পাটক্ষেতে।

লীলা বলল, মামা, শুধু—শুধু টেনশন করো না তো! কিচ্ছু হবে না।

মঞ্জু বিরক্ত গলায় বলল, কিছু হবে না তুই জানিস কীভাবে?
 
মিটমিটি করে এতক্ষণ যে টর্চলাইট জ্বলছিল সেটিও নিভে গেল। কামরার ভেতর গাঢ় অন্ধকার। মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। সেই আলোয় যাত্রীদের ভীত মুখ দেখা যাচ্ছে। লীলার জানালার পাশে হুড়মুড় শব্দ হলো। লীলা চমকে উঠে বলল, মামা, কী হয়েছে?

মঞ্জু বলল, গাছ ভেঙে পড়েছে, আর কী হবে! ঝড়ের মধ্যে গাধা-ড্রাইভার জঙ্গলে ট্রেন দাঁড় করিয়েছে। দেখিস পুরো জঙ্গলই ট্রেনের উপর ভেঙে পড়বে। পুরো ট্রেন পাটিসাপটা হয়ে যাবে। ভাই, আপনাদের কারো সঙ্গে দেয়াশলাই আছে? দেয়াশলাই থাকলে জ্বালান তো!

দেয়াশলাই-এর কাঠি জ্বলেই নিভে গেল। ট্রেনের জানালা বন্ধ, তার পরও হু-হু করে বাতাস ঢুকছে। যাত্রীদের মধ্যে একজন (টর্চের মালিক) মঞ্জুমামাকে লক্ষ করে বলল, আপনেরা যাইবেন কই?

মঞ্জু বলল, তা দিয়ে আপনার কী? আমাদের যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাবো।

লীলা বলল, আমরা নয়াপাড়া যাব।

কোন নয়াপাড়া? নান্দাইল নয়াপাড়া?

হুঁ।

এইখান থাইক্যা খুব কাছে। উত্তরে হাঁটা দিলে দশ মিনিটের রাস্তা। শিয়ালজানি খাল পার হইলেই…

মঞ্জু বলল, এই যে বৃদ্ধ! চুপ করে থাকেন। বুদ্ধি দিবেন না। আপনার কথা শুনে ঝড়ের মধ্যে হাটা দেই। আর ডাকাতের হাতে পড়ি!

একটা ভালো পরামর্শ দিলাম।

আপনাকে পরামর্শ দিতে হবে না। মরা ব্যাটারিওয়ালা টর্চ নিয়ে যে রওনা হয়। আমি তার পরামর্শ নেই না।

নান্দাইল রোড ইষ্টিশনে নামলে চার মাইল রাস্তা।

চার মাইল কেন, চল্লিশ মাইল হলেও নান্দাইল রোডেই নামব। আপনি চুপ করে বসে থাকেন।

জি আচ্ছা।

আপনার যদি খুব বেশি ইচ্ছা করে আপনি নিজে নেমে হাঁটা দেন।



ঝড় কমে এসেছে। এখন শুধু মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে। কিন্তু ট্রেন নড়ছে না। মঞ্জু বলল, ব্যাপারটা কী?

লীলা বলল, মামা টেনশন কোরো না তো! সময় হলেই ট্রেন ছাড়বে।

মঞ্জু গলা নামিয়ে বলল, ড্রাইভার কাজটা ইচ্ছাকৃত করছে কি না কে জানে!

ইচ্ছাকৃত করবে কেন?

এদের যোগসাজস্য থাকে। বেকায়দা জায়গায় ট্রেন থামায়। আগে থেকে বোঝাপড়া থাকে। ডাকাত এসে সব সাফা করে দেয়।

মামা, তুমি জানালাটা খুলে দাও। এসো বৃষ্টি দেখি।

মঞ্জু বলল, বৃষ্টি দেখতে হবে না। যেভাবে বসে আছিস সেইভাবে বসে থাক। তুই রবি ঠাকুর না যে বৃষ্টি দেখতে হবে।

বাতাস আবারো বাড়তে শুরু করেছে। কিছুক্ষণ পরপর দমকা হাওয়া। মঞ্জু হতাশ গলায় বলল— ধুনছে আমারে। ভালো বিপদে পড়লাম দেখি! ভাই, আপনাদের মধ্যে যাদের কাছে ছাতা আছে তাদের কেউ–একজন ড্রাইভারের কাছ থেকে খোঁজ নিয়ে আসেন না, ঘটনা। কী।

আফনে নিজে যান।

আমি যাব। কীভাবে? আমার সাথে মেয়েছেলে আছে দেখেন না? এইটা আপনাদের কীরকম বিবেচনা!

এমন ঝড়বৃষ্টির মধ্যে ড্রাইভারের কাছে কেউ খোঁজ নিতে যাবে বলে লীলা ভাবে নি। একজন সত্যি সত্যি রওনা হলো। সে খবর যা আনল তা ভয়াবহ–লাইনের উপর বিরাট একটা গাছ পড়ে আছে। লাইনের ফিস প্লেট উঠে গেছে। ময়মনসিংহ থেকে রেসকিউ ট্রেন না। আসা পর্যন্ত এই ট্রেন নড়বে না।
 
কামরার ভেতর গাঢ় অন্ধকার। এক-একবার বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে— আলো ঝলমল করে উঠছে, সঙ্গে সঙ্গে লীলা দু’হাতে কান চেপে ধরছে। বজ্রপাতের শব্দ তার সহ্য হয় না। প্রচণ্ড ভয় লাগে। লীলার মনে হলো, আল্লাহ ভালো ব্যবস্থা করেছেন— প্রথমে আলোর সংকেত পাঠাচ্ছেন, তারপর পাঠাচ্ছেন বজের শব্দ। উল্টোটা হলে লীলার জন্যে খুব সমস্যা হতো। ঝড়বৃষ্টির সময় সারাক্ষণ দুহাতে কান চেপে ধরে রাখতে হতো।

ভইন, আপনে নয়াপাড়া কার বাড়িতে যাইবেন?

প্রশ্নটা কে করেছে। অন্ধকারে দেখা যাচ্ছে না। লীলার ধারণা হলো টর্চওয়ালা বুড়ো। লীলা বলল, সিদ্দিকুর রহমান সাহেবের বাড়িতে যাব।

উনি আপনের কে হয়?

আমার বাবা। উনাকে চেনেন?

উনারে চিনব না। আপনে কী কন? উনি অঞ্চলের বিশিষ্ট ভদ্ৰলোক। অতি বিশিষ্ট ভদ্রলোক। আপনেরে যেটা বললাম সেটা করেন— ঝড়বৃষ্টি থামলে উত্তরমুখী হাঁটা দেন। পাঁচ মিনিটের রাস্তা।

আচ্ছা আমরা তা-ই করব।

মঞ্জু বিরক্ত হয়ে বলল, হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত নিবি না লীলা। হুটহাট সিদ্ধান্ত আমার ভালো লাগে না। এই বুড়ো প্ৰথমবার বলেছে দশ মিনিটের রাস্তা, এখন বলছে পাঁচ মিনিট। এই বুড়ো খবরদার, তুমি আর মুখ নাড়বে না।

লীলা উত্তর দিল না। বেঞ্চে পা উঠিয়ে আরাম করে বসল। হুটহাট সিদ্ধান্ত অন্যের ভালো না লাগলেও তার ভালো লাগে। বাবাকে দেখতে আসার এই সিদ্ধান্তও হুট করে নেয়া। সিদ্দিকুর রহমান নামের মানুষটা ভয়ঙ্কর খারাপ— এই কথা জ্ঞান হবার পর থেকেই সে শুনে আসছে। এই মানুষটা তার প্রথম স্ত্রীকে ত্যাগ করেছে। অসহায় সেই মেয়ে মনের দুঃখে মরেই গেল। লোকটা কোনোদিন খোঁজ নিল না। সেই মেয়েটার ফুটফুটে একটা কন্যাসন্তান একা এক বড় হচ্ছে মামার বাড়িতে। তার খোজেও কোনোদিন এলো না। লোকটা দ্বিতীয়বার বিয়ে করেছে। দুঃখকষ্টে সেই স্ত্রীরও মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তাকে চিকিৎসাও করাচ্ছে না। ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখছে। এমন একজন মানুষকে হঠাৎ দেখতে আসার পেছনে কোনো কারণ নেই। লীলা তাকে দেখে কী বলবো? বাবা বলে বুকে ঝাপিয়ে পড়বে? এমন হাস্যকর কাজ সে কোনোদিনও করবে না। তবে কী করবে তাও জানে না। আবার বিদ্যুৎ চমকাল। লীলা দু’হাতে কান চেপে বসে আছে। বজ্রপাতের প্রতীক্ষা।



সিদ্দিকুর রহমান খাটে হেলান দিয়ে বসে আছেন। তাঁর হাতে পাঁচ-ব্যাটারির একটা টর্চ। টর্চ জ্বালালে আলো বহুদূর পর্যন্ত যায়। মাঝে মাঝে তিনি জানালার ওপাশের জামগাছে আলো ফেলছেন। ঝড় যেভাবে বাড়ছে জামগাছের ডাল ভেঙে টিনের চালে পড়বে। তবে আতঙ্কিত হবার মতো কিছু না। গাছের ডাল জানান দিয়ে ভাঙবে–বেশ কিছু সময় ধরে মড়মড় শব্দ হবে। ঘর ছেড়ে বের হবার সময় পাওয়া যাবে। সিদ্দিকুর রহমান ভয় পাচ্ছেন না। একধরনের উত্তেজনা অনুভব করছেন। তিনি এতক্ষণ পা মেলে বসে ছিলেন, এইবার পা গুটিয়ে বসলেন। চাপা গলায় ডাকলেন, লোকমান!

ডেকেছেন একজনকে, কিন্তু দুই ভাই একসঙ্গে সাড়া দিল। দুজনই চেঁচিয়ে বলল, জি। মনে হয় তারা ডাকের জন্যে অপেক্ষা করছিল। সিদ্দিকুর রহমান শান্ত গলায় বললেন, ঝড়ের গতি কেমন?

এইবার লোকমান জবাব দিল। ভীত গলায় বলল, গতিক ভালো না। টিনের বাড়িতে থাকা নিরাপদ না। চলেন পাকা দালানে যাই। শহরবাড়িতে গিয়া উঠি।

ভয় লাগতেছে?

লোকমান জবাব দিল না। সিদ্দিকুর রহমান বললেন, ভয়ের কিছু নাই। কপালে মৃত্যু থাকলে মৃত্যু হবে। পাকা দালানে থাকলেও হবে, আবার মাটির ভিতরে পঞ্চাশ হাত গর্ত খুঁড়ে বসে থাকলেও হবে। ঠিক না লোকমান?

জি ঠিক।

গোয়ালঘরের গরুগুলির দড়ি খুলে দাও।

জি আচ্ছা।

সুলেমানকে বলে হুক্কা ঠিক করে দিতে। ঝড়-তুফানের রাতে হুঙ্কা টানতে আরাম।
 
সিদ্দিকুর রহমান হুক্কার জন্যে অপেক্ষা করছেন। হুক্কা আসতে সময় লাগবে। হুঙ্কায় পানি ভরতে হবে। টিক্কায় আগুন দিতে হবে। অপেক্ষা করতে কোনো অসুবিধা নেই। চুপচাপ অপেক্ষা করার চেয়ে কারো সঙ্গে গল্প করতে করতে অপেক্ষা করা সহজ। তার গল্প করার লোক নেই। তিনি যাদের সঙ্গে সব সময় ঘোরাফেরা করেন। তারা হ্যাঁ-নার বাইরে কোনো কথা বলে না। নিজের ছেলেমেয়েরাই বলে না। রমিলা সুস্থ থাকলে সে হয়তো কিছু গল্পটল্প করত। সিদ্দিকুর রহমান ভুরু কুঁচকে মনে করার চেষ্টা করলেন, রমিলা যখন সুস্থ ছিল তার সঙ্গে গল্প করেছে কিনা। তেমন কিছু মনে পড়ছে না। হয়তো রমিলাও গল্প করত না।

লোকমান গোয়ালঘরের গরুগুলি ছেড়ে দিয়ে ফিরে এসেছে, চাপা গলায় কেশে সে তার উপস্থিতি জানান দিয়েছে।

লোকমান!

জি।

ভিতরে আসো।

লোকমান ঘরে ঢুকল। সে ভিজে চুপসে গেছে। তার গা বেয়ে পানি পড়ছে। সে অল্প অল্প কঁপিছে। সিদ্দিকুর রহমান বললেন, বৃষ্টির পানি কি বেশি ঠাণ্ডা?

জি, অত্যধিক ঠাণ্ডা।

এটা খারাপ লক্ষণ, ঝড় আরো বাড়বে। বড় ঝড়ের আগে বৃষ্টির পানি অত্যধিক ঠাণ্ডা হয়।

গোয়ালঘরের গরুগুলি ছেড়ে দিয়েছ?

জি।

গরুগুলি কী করল? ঘরেই আছে, না ছুটে বের হয়ে গেছে?

বাইর হইয়া গেছে।

এটাও খারাপ লক্ষণ। পশুপাখিরা গতিক সবচে ভালো বোঝে। বাড়ের সময় গরুর গলার দড়ি খোলার পরেও সে যদি নড়াচড়া না করে তাহলে বুঝতে হবে ঝড় তেমন জোরালো হবে না। আবার যদি দড়ি খোলামাত্র ছুটে বের হয়ে যায় তাহলে মহাবিপদ।

সুলেমান হুক্কা নিয়ে এসেছে। সিদ্দিকুর রহমান নল হাতে নিয়ে আস্তে টান দিলেন। তামাকটা ভালো। অতি সুঘ্ৰাণ।

লোকমান এখনো দাঁড়িয়ে আছে। সিদ্দিকুর রহমান তাকে চলে যেতে না বলা পর্যন্ত সে যাবে না। তিনি কিছু বললেন না। একমনে তামাক টেনে যেতে লাগলেন। ঘরের টিনের চালে প্ৰচণ্ড শব্দ হচ্ছে। পেরেক উঠে গেছে বলে মনে হচ্ছে। বাতাস বড় একটা ধাক্কা দেবে। আর চাল উড়ে যাবে। খাটে বসে থেকে তিনি মাথার উপর ঝড়ের আকাশ দেখতে পাবেন।

লোকমান!

জি।

বোবাপ্ৰাণী ছাড়াও আরো এক কিসিমের মানুষ আছে যারা ঝড়-তুফানের গতিক বুঝতে পারে। তারা কারা বলো দেখি?

জানি না।

পাগল মানুষ বুঝতে পারে। ঝড়-তুফান ভূমিকম্প এইসবের খবর পাগলের কাছেও আছে। তোমার চাচিআম্মারে যদি জিজ্ঞেস করো সে বলতে পারবে। পাগল হওয়ার কিছু উপকারিতাও আছে, ঠিক না লোকমান?

লোকমান কিছু বলল না। মাটির দিকে তাকিয়ে থাকল। তার বুক এখন ধড়ফড় করা শুরু করেছে। চাচাজি অনেকক্ষণ তাকে সামনে দাড় করিয়ে রেখেছেন। এই কাজটা তিনি যখনই করেন তখন বুঝতে হয়। চাচাজি নাখোশ হয়েছেন। সিদ্দিকুর রহমান হুক্কায় লম্বা টান দিয়ে নল একপাশে রেখে খাটে পা বুলিয়ে বসলেন। তাঁর গলার স্বর হঠাৎ বদলে গেল। ভারী হয়ে গেল। তিনি বললেন–আজকে ঝড়-তুফানের রাত। আমার বড় ছেলে মাসুদ বাড়িতে নাই। সে কোথায় গেছে তুমি জানো?

জানি।

কোথায় গেছে?

কুদ্দুস মিয়ার বাড়িতে।

সেখানে সে কী করে?

মাসুদ ভাইজানের গানবাজনার শখ। ঐখানে গানবাজনা করেন।

তাহলে এই ঘটনা আজ প্রথম না। আগেও সে গিয়েছে। ঐ বাড়িতে রাত কাটিয়েছে।

জি।

তোমরা দুই ভাই এই ঘটনা জানতা, আমারে কিছু বলো নাই, কেন?

লোকমান জবাব দিল না। চুপ করে রইল। সিদ্দিকুর রহমান বললেন, কুদ্দুস মিয়ার কি কোনো সেয়ানা মেয়ে আছে?

জি আছে।

মেয়ের নাম কী?

পরী। পরীবানু।
 
সিদ্দিকুর রহমান হুক্কার নিলে কয়েকটা টান দিয়ে শান্ত গলায় বললেন, এখন ঘটনা বোঝা গেল। আমার ছেলে গানবাজনার অজুহাতে সেয়ানা মেয়ের গায়ের গন্ধ শুঁকতে যায়। একটা বয়সের পরে সেয়ানা মেয়ের গায়ের গন্ধের জন্যে যুবক ছেলেরা ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এটা জগতের নিয়ম। তবে সব নিয়ম সব জায়গায় চলে না। লোকমান শোনো, তোমারে একটা কাজ দিতেছি— ঝড় কমলে কুদ্দুস মিয়ার বাড়িতে যাবে। তাকে আর তার মেয়ে পরীবানুকে নিয়ে আসবে।

জি আচ্ছা।

আর আমার পুত্ৰকেও ধরে নিয়ে আসবে। গানবাজনা কী শিখছে তার একটা পরীক্ষা হবে।

জি আচ্ছা।

এখন সামনে থেকে যাও।

লোকমান হাঁপ ছেড়ে বাঁচল। দ্রুত ঘর ছেড়ে বের হয়ে গেল।

সিদ্দিকুর রহমান খাট থেকে নামলেন। আলমিরা খুলে রমিলার ঘরের চাবি বের করলেন। তিনি খানিকটা লজ্জা পাচ্ছেন। গোয়ালঘরের গরগুলির কথা তার মনে হয়েছে। কিন্তু পাগলাস্ত্রীর কথা মনে হয় নাই। যখন গরুর গলার দড়ি খোলা হয়েছে তখন রমিলার ঘরের চাবিও খোলা উচিত ছিল।

রমিলা ঘরের এক কোনায় জড়সড় হয়ে বসেছিল। তালা খুলে সিদ্দিকুর রহমান ঢুকতেই সে উঠে দাঁড়াল। স্বাভাবিক ভঙ্গিতে মাথায় ঘোমটা দিল। সিদ্দিকুর রহমান বললেন, কেমন আছ গো বউ?

রমিলা নিচু গলায় বলল, ভালো আছি।

বিরাট ঝড়-তুফান শুরু হয়েছে। ভয় পাইছিলা?

হুঁ।

ডাক দিলা না কেন?

রমিলা জবাব দিল না। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। সিদ্দিকুর রহমান বললেন, চলো পাকা ঘরে যাই। টিনের এই ঘরের অবস্থা ভালো না। যে-কোনো সময় চাল উড়ে যাবে।

আমি এইখানেই থাকব।

এইখানে থাকবা?

জি।

কেন?

এই ঘর ছাইড়া কোনোখানে যাইতে আমার ভালো লাগে না।

ভালো লাগালাগির কিছু তো নাই বউ। ঝড়-তুফানের সময় নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে হয়।

ঝড়-তুফান শেষ হয়েছে। আর হবে না।

আর হবে না?

না।

সিদ্দিকুর রহমান কান পাতালেন। আসলেই তো তাই, শো শো শব্দ শোনা যাচ্ছে না। শুধুই বৃষ্টির শব্দ। রমিলা মুখে আঁচল চাপা দিয়ে হাসছে। পাগল মানুষের হাসি-কান্না কোনো ব্যাপার নয়। পাগলমানুষ কারণ ছাড়াই হাসে। কারণ ছাড়াই কাদে। তবু সিদ্দুিকুর রহমান অভ্যাসবশে জিজ্ঞেস করলেন, হাসো কেন বউ?

রমিলা হাসি থামিয়ে গম্ভীর গলায় বলল, বাড়িতে কুটুম আসতেছে। আমার মনে আনন্দ, এইজন্যে হাসতাছি।

কুটুমটা কে?

সেটা আপনেরে বলব না।

রমিলা এখনো হাসছে। সিদ্দিকুর রহমান স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আছেন।

খাড়াইয়া আছেন ক্যান?

সিদ্দিকুর রহমান রমিলাকে তালাবন্ধ করে চলে এলেন। রমিলা ঠিক আগের জায়গায় গুটিসুটি মেরে বসে গেল। এখন সে আর হাসছে না।
 
রাত চারটা বাজে। ফজরের আজানের বেশি দেরি নেই। এখন ঘুমোতে যাবার অর্থ হয় না। সিদ্দিকুর রহমান ঠিক করলেন, অজু করে বারান্দায় বসে ভোরের প্রতীক্ষা করবেন। ফজরের নামাজের পর তুফানে গ্রামের কী ক্ষয়ক্ষতি হলো তা দেখতে বের হবেন। ইতিমধ্যে মাসুদ চলে আসবে। তার বিষয়ে ব্যবস্থা কী নেয়া যায় সেটাও ভাবা দরকার।

সিদ্দিকুর রহমান বারান্দায় ইজিচেয়ারে শুয়ে আছেন। তার পাশেই সুলেমান অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বসে আছে। সিদ্দিকুর রহমান বললেন, তুফান কি কমেছে?

সুলেমান বলল, জি।

মাঝে মাঝে বড় রকমের ঝড়-তুফান হওয়া ভালো। বন্যার সময় কী হয় দ্যাখো— জমিতে পলি পড়ে, ফসল ভালো হয়। ঝড়-তুফানেরও সেরকম উপকার আছে।

সুলেমান কিছু বলল না। যেভাবে বসে ছিল সেইভাবেই বসে রইল। সিদ্দিকুর রহমান ভেবেছিলেন সুলেমান বলবে, ঝড়-তুফানের কী উপকার আছে? তখন তিনি উপকার ব্যাখ্যা করবেন। সুলেমান কিছু জানতে চাইল না বলে তাঁরও বলা হলো না। অবিশ্যি ঝড়-তুফানের কী উপকার তিনি জানেন না। ভেবে বের করতে হতো। জটিল জিনিস নিয়ে চিন্তা করতে তার ভালো লাগে। নানান কাজ-কর্মে তিনি ব্যস্ত থাকেন। চিন্তার সময় পাওয়া যায় না। দিনের কিছুটা সময় যদি আলাদা করে রাখা যেত তাহলে ভালো হতো। এই সময় তিনি চিন্তা করবেন। আর কিছু করবেন না।

সুলেমান!

জি?

চা চানাও, চা খাব।

জি আচ্ছা।

একটা পাতলা চাদর এনে আমার গায়ে দিয়ে দাও, শীত–শীত লাগছে।

জি আচ্ছা।

চা বানিয়ে আনার পর যদি দেখ আমি ঘুমিয়ে পড়েছি, তাহলে আমাকে ডাকবে না।

জি আচ্ছা।

লোকমােন কি মাসুদকে আনতে গেছে?

জি।

পাখি কিচিরমিচির করতেছে, শুনতেছ?

জি।

তুফান শেষ হয়েছে এইজন্যে এরা আনন্দ করতেছে। এ তার গায়ে ঠোকর মারতেছে। পশুপাখিরা মারামারি কামড়াকামড়ি করে আনন্দ প্রকাশ করে। পশুপাখির জগতের নিয়মকানুন বড়ই অদ্ভুত। সুলেমান শোনো, আমার গায়ে চাদর দেয়ার দরকার নাই। শীত-শীত ভাবটা ভালো লাগতেছে।

জি আচ্ছা।

সুলেমান চা বানিয়ে এনে দেখে, সিদ্দিকুর রহমান ঘুমোচ্ছেন। ভারী নিঃশ্বাস পড়ছে। সে চায়ের কাপ পাশে রেখে আগের ভঙ্গিতেই বসেই পড়ল। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফজরের আজান পড়ল। সুলেমান ভেবে পেল না। সে এখন কী করবে। চাচাজিকে ডেকে তুলবে? তিনি বলেছিলেন তার ঘুম যেন ভাঙানো না হয়। সুলেমান খুবই দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল।



সিদ্দিকুর রহমানের ঘুম ভাঙল ফজরের আজানের কিছুক্ষণ পর। তিনি চোখ মেলে দেখলেন অসম্ভব রূপবতী অপরিচিত একটি তরুণী তার দিকে তাকিয়ে আছে। তরুণীর মুখ হাসিহাসি। চোখে বিস্ময়। তাকে চোখ মেলতে দেখেই তরুণী তার দিকে ঝুঁকে এসে বলল— বাবা, আমি লীলা। লীলাবতী। আপনার কি শরীর খারাপ?

সিদ্দিকুর রহমান জবাব দিলেন না। মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইলেন। লীলাবতী অসঙ্কোচে তার বুকের উপর হাত রাখল। সিদ্দিকুর রহমানের দুই চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করল। কতদিন পর নিজের মেয়েকে দেখছেন। কী সুন্দর মেয়ে! তাকে অবিকল দেখাচ্ছে কিশোরী আয়নার মতো। আবার সে আয়নাও না, অন্য কেউ। মেয়েকে কিছু বলা দরকার। কোনো কথা মনে আসছে না। আহারে! মেয়েটা খবর দিয়ে কেন এলো না! খবর দিয়ে এলে তিনি সুসং দুর্গাপুর থেকে ভাড়া করে হাতি আনতেন। স্টেশন থেকে মেয়ে আসত হাতিতে চড়ে। সঙ্গে থাকত বাদ্যবাজনা। আহারে! মেয়েটা কেন আগে খবর দিল না?

আচ্ছা এটা কি সম্ভব যে পুরো ব্যাপারটাই স্বপ্নে ঘটছে? কেউ তাঁর কাছে আসে নি। তিনি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। ঘুমের মধ্যেই ইচ্ছাপূরণ জাতীয় একটি স্বপ্ন দেখছেন। আগেও এরকম হয়েছে। দুপুরবেলা ঘুমুচ্ছিলেন— স্বপ্নে দেখলেন, আয়না এসেছে। সে বিছানার পাশে এসে দাঁড়াল। উদ্বিগ্ন গলায় বলল, জ্বর কি বেশি? তিনি বললেন, হু, কপালে হাত দিয়ে দেখো। আয়না বলল, কপালে হাত দিতে পারব না। আমি হলুদ বেটেছি, হাতে হলুদ। তারপরেও আয়না। কপালে হাত দিল। তিনি নাকে কাঁচা হলুদের গন্ধ পেলেন। তার ঘুম ভেঙে গেল। কপালে হলুদের গন্ধ কিন্তু চলে গেল না। সেই গন্ধ সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকল।

লীলা কি সত্যি এসেছে? সত্যি কি মেয়েটা তার বুকে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে? সে তার মায়ের মতো কপালে হাত রাখল না কেন?

সিদ্দিকুর রহমান বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করলেন, তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। তাদের ঘিরে অনেকেই দাঁড়িয়ে আছে। তাদের সামনে কোনো রকম মানসিক দুর্বলতা প্রকাশ করা ঠিক না। তিনি অতি দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে সহজ, গলায় বললেন, পরিশ্রম করে এসেছি। ভিতরের বাড়িতে যাও, হাত-মুখ ধোও।
 
সব জায়গার আলাদা গন্ধ আছে। এই জায়গার গান্ধটা বুনো। লতাপাতার কষটা কড়া গন্ধ। তার পরেও লীলার কাছে মনে হলো, কেমন যেন আপন—আপন গন্ধ। যেন অনেক দিন আগে গভীর কোনো জঙ্গলে সে পথ হারিয়ে খুব ছোটাছুটি করেছিল। পথ হারানোর দুশ্চিন্তায় সেই গভীর বনের কিছুই লীলার মনে নেই, কিন্তু লতাপাতার গন্ধটা নাকে লেগে আছে। অনেক দিন পর আবার সেই বুনো ঘাণ পাওয়া গেল। লীলা নিজের মনেই বলল— বাহ, ভালো তো! নিজের মনে কারণে অকারণে বাহ, ভালো তো বলা লীলার অনেক দিনের অভ্যাস।

গন্ধটা কিসের কাউকে জিজ্ঞেস করলে হতো। লীলা তেমন কাউকে দেখছে। না। টিন এবং কাঠের প্রকাণ্ড বাড়িটা প্ৰায় ফাঁকা। তবে এই ফাকাও অন্যরকম ফাকা। মনে হচ্ছে। এ-বাড়ির লোকজন কাছেই কোথাও বেড়াতে গেছে। সন্ধ্যায়সন্ধ্যায় ফিরে আসবে। তখন খুব হৈচৈ শুরু হবে। বাড়ির এত বড় উঠেন। এই উঠোনে ছসাতজন শিশু কাদা মেখে ছোটাছুটি না করলে কি মানায়? কেউ পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়ে কাঁদবে, কেউ হাসবে।

সবুজ গেঞ্জি পরা প্রচণ্ড বলশালী একজন লোককে দেখা গেল গভীর কৌতূহলে আড়চোখে লীলাকে দেখছে। চোখে চোখ পড়তেই লোকটা চট করে চোখ নামিয়ে ফেলল। মেঝের দিকে তাকিয়ে খাম্বার মতো হয়ে গোল। যেন সে ভয়ঙ্কর কোনো অপরাধ করেছে। এই অপরাধের শাস্তি হলো মেঝের দিকে তাকিয়ে থাকা। লীলা বলল, আপনার নাম কী? লোকটা মেঝে থেকে চোখ না। তুলে বলল, সুলেমান!

এই বাড়ির আর লোকজন কোথায়?

চাচাজি ছাড়া এইখানে আর কেউ থাকে না।

বাকিরা কোথায় থাকে?

শহরবাড়িত থাকে।

শহরে থাকে?

জি না। এইখানেই থাকে–শহরবাড়িত থাকে।

আপনার কথা বুঝতে পারছি না। শহরবাড়িত জিনিসটা কী?

সুলেমান আঙুল তুলে দেখাল। যে-জায়গাটা দেখাল সেখানে ঘন বাঁশের জঙ্গল ছাড়া কিছু নেই। সুলেমান বলতে পারল না যে— শহরবাড়ি হলো শহরের মতো বাড়ি, সে-বাড়িতে সিদ্দিকুর রহমান সাহেবের ছেলেমেয়েরা থাকে। বেশি কথা বলার অভ্যাস তার নেই। চাচাজির বড় মেয়েটির সামনে কী কারণে যেন তার খুব অসহায় লাগছে।

সুলেমানের সঙ্গে কথা বলে লীলা খুব মজা পাচ্ছে। লোকটা এখন পর্যন্ত একবারও চোখ তোলে নি। মেঝের দিকেই তাকিয়ে আছে। লোকটা আঙুল তুলে শহরবাড়ি কোনদিকে দেখিয়েছে। সেই আঙুল সঙ্গে সঙ্গে নামায় নি। অনেকক্ষণ তুলে রেখেছে। লীলা বলল, আপনি মাটির দিকে তাকিয়ে কথা বলছেন কেন? আমার সঙ্গে যখন কথা বলবেন আমার দিকে তাকিয়ে কথা বলবেন।

জি আচ্ছা।

আমার সঙ্গে যে-মানুষটা এসেছেন। উনি সম্পর্কে আমার মামা হয়। উনি কোথায়?

জানি না।

উনাকে খুঁজে বের করুন। উনার খুব ঘনঘন চা খাবার অভ্যাস। উনাকে চা বানিয়ে দেবার ব্যবস্থা করুন। চাপাতা, চিনি, দুধ সব উনার সঙ্গে আছে। ভালো চা ছাড়া উনি খেতে পারেন না বলে এই অবস্থা। উনাকে চা বানিয়ে খাওয়াতে পারবেন না?

জি পারব।

আপনি কিন্তু এখনো একবারও আমার দিকে তাকান নি। আমি কে–সেটা জানেন তো? আমি আপনার চাচাজির মেয়ে। যেহেতু আমার বাবাকে আপনি চাচা ডাকছেন— এখন আমি সম্পর্কে হচ্ছি। আপনার বোন। বোনের দিকে চোখ তুলে তাকানো যায়।

সুলেমান এই প্রথম একটু নড়ল। চোখ তুলে এক ঝলক লীলাকে দেখেই চোখ নামিয়ে ফেলল। লীলা মনে মনে হাসল। সুলেমান নামের খাম্বা টাইপ মানুষটা যে লীলার এই কথায় অবাক হয়ে চোখ তুলে তাকাবে তা লীলা জানত। যেরকম ভাবা হয়। ঘটনা সেরকম ঘটলে বেশ মজা লাগে।
 
এই বাড়িতে শুধু চাচাজি থাকে আর কেউ থাকে না— কথাটা মিথ্যা। কিছুক্ষণের মধ্যেই লীলা তার প্রমাণ পেল। দুটা বেণি দুলানো মেয়েকে দেখা গেল। সারাক্ষণই আড়াল থেকে তাকে দেখছে। হাত ইশারা করে কাছে ডাকলেই তারা সরে যাচ্ছে। এই মেয়ে দুটি কে? বাড়ির শেষ মাথায় একটা ঘরে একজন মহিলাকে দেখা গেল। মহিলা লীলাকে দেখে ভয় পেলেন বলে মনে হলো। মাথায় কাপড় দিয়ে ঘরের এক কোনায় সরে গেলেন। মাথায় বড় করে ঘোমটা দেয়ায় তার কপাল ঢাকা পড়েছে। চোেখও খানিকটা ঢাকা পড়েছে। তবু বোঝা যাচ্ছে তিনি খুবই কৌতূহল নিয়ে লীলাকে দেখছেন। লীলা বলল, স্লামালিকুম। মহিলা জবাব দিলেন না। মহিলাকে ভালোভাবে দেখতে হলে দরজা দিয়ে ঘরে ঢুকতে হবে। লীলা দরজার কাছে গিয়ে খুবই অবাক হলো। দরজার কড়ায় ভারী একটা তালা ঝুলছে। মহিলাকে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। লীলা আবারো জানালার কাছে ফিরে গেল। বিস্মিত গলায় বলল, এই যে শুনুন! আপনি কি একটু সামনে আসবেন? আপনার সঙ্গে কথা বলব।

মহিলা আড়াল থেকে বললেন, আমি সামনে আসব না গো মা। আমার লজ্জা লাগে।

আপনাকে তালাবন্ধ করে রেখেছে কেন?

আমার মাথার ঠিক নাই, এই জন্যে তালাবদ্ধ কইরা রাখে। পাগল-মানুষ, কখন কী করি তার কি ঠিক আছে?

লীলা বুঝতে পারছে এই মহিলা কে। তারপরেও সে বোকার মতো বলল, আপনি কে?

আমি মাসুদের মা।

মাসুদটা কে?

মহিলা জবাব দিলেন না। আড়াল থেকেই শব্দ করে হাসলেন। ভদ্রমহিলার অনেক বয়স। কিন্তু তিনি হাসলেন ঝনঝনে কিশোরীর মতো গলায়। লীলা বলল, আমার নাম লীলা।

আমি জানি, তুমি লীলাবতী।

কীভাবে জানেন?

আমি তোমারে খোয়াবে দেখেছি। খোয়াবে তোমারে যত সুন্দর দেখেছি তুমি তার চেয়েও সুন্দর। তয় গায়ের রঙ সামান্য ময়লা। মা গো, গায়ের রঙ নিয়ে মনে কষ্ট রাখবা না।

লীলা বলল, আমার কোনো কষ্ট নাই।

মহিলা বললেন, গায়ের রঙ নিয়া কষ্ট সব মেয়ের আছে, তোমারও আছে। গায়ের রঙ ঠিক করনের উপায় আছে। তুমি জানতে চাইলে বলব।

লীলা বলল, আচ্ছা কী উপায়?

মহিলা হেসে ফেললেন। হাসতে হাসতে বললেন— গায়ের রঙ নিয়া তোমার যদি কষ্ট না থাকত, রঙ ঠিক করনের উপায় জানতে চাইত না।

আপনার বুদ্ধি ভালো।

পাগলের বুদ্ধি মা। পাগলের বুদ্ধির কোনো ভালো-মন্দ নাই। গায়ের রঙ ঠিক করনের উপায়টা বলব?

বলুন।

জ্যৈষ্ঠমাসে কালো জামের রস সারা শইল্যে মাখবা। সেই রস শুকাইয়া যখন শইল্যে টান দিব তখন কুসুম কুসুম গরম পানিতে গোসল করবা।

একবার করলেই হবে?

না। যতদিন কালোজাম পাওয়া যায় ততদিন করবা। ইনশাল্লাহ রঙ ফুটব।

আপনি সামনে আসুন, আড়াল থেকে কথা বলছেন আমার ভালো লাগছে না। সামনে এসে মুখের ঘোমটা সরান।

সামনে আসব না মা।

কেন আসবেন না?

আমার লজ্জা করে।

আমি আপনার মেয়ে। মেয়ের সঙ্গে কিসের লজা!

আমি পাগল-মানুষ। পাগল-মানুষ সবেরে লজ্জা করে। নিজের মেয়েরেও লজ্জা করে। তুমি তো আমার নিজের মেয়ে না।

আপনার সঙ্গে কি সবসময় আড়াল থেকে কথা বলতে হবে?

জানি না। মা গো, তুমি এই বাড়িতে কয়দিন থাকবা?

আমি বাবাকে দেখতে এসেছিলাম। দেখা হয়েছে, কাজেই কালপরশু চলে যাব।

আইচ্ছা। তোমারে আমার খুবই মনে ধরেছে। পাগল হওনের পর থাইক্যা কাউরে মনে ধরত না। এই প্ৰথম মনে ধরল। এখন যাও, নিজের মনে বেড়াও। বাড়ির পেছনে বাগান আছে, বাগান দেইখ্যা আসো।

বাগান আপনি করেছিলেন?

না। তোমার পিতার বাগান।
 
গ্রামের বাড়ির বাগান ঝোপেঝাড়ে ভরতি থাকে। লীলা অবাক হয়ে দেখল বাগানটা বাকবীক করছে। মনে হচ্ছে কিছুক্ষণ আগে কেউ এসে বাট দিয়ে শুকনো পাতা সরিয়েছে। সবই দেশী ফুলের গাছ। নানান জাতের জবা ফুলের গাছ। কামিনী গাছ, কাঠগোলাপের গাছ, বেলি ফুলের গাছ। বাঁশের বেড়া দেয়া অনেকখানি জায়গায় গোলাপের চাষ করা হয়েছে। গ্রামের মানুষজন শখ করে গোলাপবাগান করে না। এখানে করা হয়েছে। প্রচুর গোলাপ ফুটেছে। লীলা মুগ্ধ হয়ে গেল।

মাঝামাঝি জায়গায় বাঁধানো কুয়া। কুয়া শহর এবং শহরতলির জিনিস। গ্রামে পুকুর কাটা হয়, কুয়া কাটা হয় না। কুয়ার পাড় বাঁধানো। লীলা তার অভ্যাসমতো বলল, বাহ ভালো তো! বাগানের শেষপ্রান্তে বেদির মতো বানানো। হয়তো বসে বিশ্রাম করার জায়গা। এই জায়গাটা ঝোপঝাড়ে ভরতি। বাগান দেখাশোনার দায়িত্বে যে আছে সে নিশ্চয়ই এখানে আসে না। লীলা বেদিতে বসল। সঙ্গে এক কাপ চা থাকলে ভালো হতো। বেদিতে বসে নিরিবিলি চা খাওয়া যেত। তার সামান্য মাথা ধরেছে। যেভাবেই হোক মাথা ধরাটা দূর করতে হবে। দূর করতে না পারলে মাথার এই যন্ত্রণা একসময় খুব বাড়বে। তার নিজের জগতটা এলোমেলো করে ফেলবে। বাগানের খোলা হওয়ায় হয়তো উপকার হবে। লীলা বেদিতে পা তুলে বসল। তার শুয়ে পড়তে ইচ্ছা করছে। শুয়ে পড়লে ক্ষতি নেই, কেউ হাঁ করে তাকিয়ে থাকবে না। বাড়ির পেছনের এই জায়গাটার তিন দিকেই জঙ্গল। একদিকে বাঁশঝাড়, বাকি দুদিকে আমকাঁঠালের বন। এত ঘন করে কেউ আম-কাঠালের গাছ লাগায় না। মনে হচ্ছে ইচ্ছা করেই বন তৈরি করা হয়েছে, যেন বাগানের দিকে কারো চোখ না যায়। লীলা শাড়ির আঁচল বিছিয়ে শুয়ে পড়ল।

মাথার উপরের আকাশ এখনো কালো হয়ে আছে। বড় কেটে গেছে, আকাশের মেঘ এখনো কাটে নি। শুয়ে শুয়ে মেঘলা আকাশ দেখতে ভালো লাগছে। গত রাতটা নানান ঝামেলায় কেটেছে। একফোঁটা ঘুম হয় নি। এখনো যে ঘুম পাচ্ছে তা না, ঝিমঝিম লাগছে। বেলা কত হয়েছে তাও বোঝা যাচ্ছে না। তার হাতে ঘড়ি নেই। তবে বেলা বেশি হয় নি। এ বাড়িতে সে এসে পৌছেছে। ফজরের আজানের পরপর। খুব বেশি হলে ঘণ্টাখানিক সময় পার হয়েছে। এই একঘণ্টায় অনেক কিছু ঘটে গেল। বাবার সঙ্গে প্রথম দেখা হলো। প্রথম দেখাটা কেমন হবে এ নিয়ে সে অনেককিছু ভেবেছিল। বাস্তবের সঙ্গে ভাবনা কিছুই মেলে নি। তার বাবা বারান্দায় ইজিচেয়ারে শুয়েছিলেন। সে বাবার কাছে ঝুঁকে এসে বলেছিল, বাবা আমি লীলা, লীলাবতী। আপনার কি শরীর খারাপ? তিনি তার দিকে তাকালেন। তাঁর দৃষ্টিতে বিস্ময় ছিল কি না লীলা বুঝতে পারল না। আধো-অন্ধকারে চোখের বিস্ময় ধরা পড়ে না। তবে তাঁর চোখ দিয়ে যে পানি পড়ছিল সেটা দেখা গেছে। চোখের জল অন্ধকারেও চিকচিক করে। হঠাৎ কোনোরকম কারণ ছাড়া সে বাবার জন্যে তীব্র মমতা বোধ করল। কোনোরকম কারণ ছাড়া— কথাটা ঠিক হলো না। বাবার চোখের জল একটা কারণ হতে পারে। মানুষের চোখের জল তীব্র অ্যাসিডের মতো ক্ষমতাধর। কঠিন লোহার মতো হৃদয়ও এই অ্যাসিড গলিয়ে ফেলে। লীলা অসঙ্কোচে তার বাবার বুকের উপর হাত রাখল। মানুষটা একটু কেঁপে উঠেই স্থির হয়ে গেলেন। মেয়ের উপর থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে দূরের দিকে তাকিয়ে রইলেন।

বাবা-মানুষটা যেরকম হবেন বলে লীলা ভেবেছিল মানুষটা মোটেই সেরকম না। রোগা ছোটখাটো একজন মানুষ। মুখের চামড়া শক্ত। আবেগশূন্য মানুষ— যারা হাসেও না, কাদেও না— তাদের মুখের চামড়া শক্ত হয়ে যায়। তবে মানুষটার চোখ বড় বড়। আল্লাহ যেসব মানুষকে বিস্মিত হবার জন্যে পৃথিবীতে পাঠান তাদের চোখ বড় বড় করে দেন। কে জানে লীলার বাবাকে তিনি হয়তো বিস্মিত হবার জন্যে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। লীলা তার বাবার একটি ব্যাপারে খুবই অবাক হয়েছে। আবেগকে অতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা। যার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে তিনি মুহুর্তের মধ্যে নিজেকে সামলে সহজ গলায় লীলাকে বললেন, পরিশ্রম করে এসেছ— ভেতরের বাড়িতে যাও। হাতমুখ ধোও। যেন লীলা এ-বাড়িতে প্রায়ই আসে। তার এই আসা নতুন কিছু না।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top