What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

বন্দিনী (Completed) (1 Viewer)

[HIDE]ত্রিশ পর্ব-[/HIDE][HIDE][/hide]​
[HIDE]
জ্বরটা এল ভোররাতের দিকে। কাঁপুনি আর তীব্র মাথাযন্ত্রণা। সুমিত যখন ব্যাপারটা বুঝতে পারল তখন সকাল হয়ে গেছে। ওর ঘুম ভাঙতে সাধারণত আটটা-সাড়ে আটটা বেজে যায়। ওর অনেক আগেই নীলিমা ঘুম থেকে উঠে পড়ে। ফ্রেশ হয়ে স্নান সেরে নেয়। তারপর ঘরের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সুমিতকে ঘুম থেকে প্রতিদিন ওই-ই তোলে। কিন্তু সুমিতের ঘুমটা আজ নিজে থেকেই ভাঙল। দেওয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারল সময় ন’টা ছুঁই ছুঁই। একি এতবেলা হয়ে গেল, নীলিমা ওকে এখনও ঘুম থেকে তোলেনি!? অফিস যেতে তো আজ বেশ দেরী হয়ে যাবে। ও ধড়ফড় করে বিছানায় উঠে বসল। তখনই ওর দৃষ্টি পড়ল পাশে শুয়ে থাকা নীলিমার দিকে। একি নীলিমাও এত বেলা পর্যন্ত ঘুমাচ্ছে! এ তো সত্যি করেই অবিশ্বাস্য ব্যাপার। ও তো এত বেলা পর্যন্ত ঘুমায় না। শরীর-টরীর খারাপ নয়তো? ওর গায়ে হাত ঠেকাতেই আশঙ্কাটা সত্যি হয়ে দাঁড়াল। গাটা জ্বরে একদম পুড়ে যাচ্ছে। প্রথমে কী করবে বুঝে উঠতে পারল না। তারপর চটপট মোবাইলটা নিয়ে ড. দেশাইকে ফোন লাগাল। ড. দেশাই ওর বাবার বন্ধু ছিলেন। এবং ওদের গৃহ চিকিৎসকও বটে। এই মুহুর্তে ওনাকে ছাড়া অন্য কারোর কথা মনে পড়ল না। কিছুক্ষণ রিং বাজার পর ড. দেশাই ফোন তুললেন।
“হ্যালো?”
“হ্যালো, দেশাই আঙ্কল, ম্যায় সুমিত বোল রহা হুঁ।”
“সুমিত!”
“আপকে দোস্ত অমিত, অমিত সেন কা বেটা।”
“হাঁ, হাঁ। ইয়াদ আয়া। বোলো, ইতনে দিনোঁ কে বাদ ইস আঙ্কলকো ইয়াদ ক্যায়সে কিয়া? আপনা তবিয়ত্ তো ঠিক হ্যায় না?”
“জ্বি আঙ্কল, মেরী তবিয়ত্ তো ঠিক হ্যায়। মগর্ নীলিমা, ইয়ানী মেরী পত্নী কো জোর বুখার হ্যায়। ঔর বো বেহোঁশ ভী হো গঈ হ্যায়। ক্যায় আপ্ আভী একবার ইঁহা আ সকতে হ্যায়?”
“জরুর। ম্যায় আভী নিকলতা হুঁ। জল্দী পহুঁচ জাউঙ্গা। তুম চিন্তা মত্ করো।”
“ম্যায় আপকো হামারী নঈ ঘর কী পতাহ্ SMS কর দেতা হুঁ। আপ জল্দী আইয়ে।“
ফোনটা কাটার সুমিত এই ফ্ল্যাটের ঠিকানাটা ড. দেশাইকে SMS করে দিল। তারপর জল আর কাপড় এনে নীলিমার মাথায় জলপটি দিতে লাগল। গায়ে ধুম জ্বর। হাত ঠেকানো যাচ্ছে না। প্রায় আধঘন্টা পর ড. দেশাই এসে পৌঁছলেন। সুমিতকে প্যানিক করতে বারণ করে ধীরেসুস্থে নীলিমাকে চেক্-আপ করতে লাগলেন। সত্যি করেই ওর গায়ে বেশ জ্বর। প্রায় ১০৫°। বেশ কিছুক্ষণ ধরে চেক্-আপ করার পর ড. দেশাই সুমিতকে বললেন, “সুমিত বেটা, মুঝে কুছ ঠিক নেহী লগ্ রহা হ্যায়। বুখার বহুত জ্বাদা হ্যায়। ঔর বেহোঁশ ভী হ্যায়। অ্যায়সা লগ রহা হ্যায় কী নিউমোনিয়া হো গঈ হ্যায়। লেকিন অ্যায়সে বিনা কোই জাঁচ কে বোলনা ঠিক নেহী হোগা। তুম এক কাম করো। আভী কে আভী অ্যাম্বুলেন্স কো ফোন লগাও। বেটী কো নার্সিংহোম লে যানা পড়েগা।”
“লেকিন কুছ ঔর তো নেহী হ্যায় না?”
“তুম ডরো মত্। কোই খাস বাত নেহী হ্যায়। অগর্ ইয়ে নিউমোনিয়া নিকলতি হ্যায়, তব ভী ঘাবড়ানে কী বাত্ নেহী হোগী। নার্সিংহোম মে জল্দী ইলাজ় শুরু হো জায়েগা। অব তুম জল্দী সে অ্যাম্বুলেন্স কো ফোন করো। জিতনি জল্দী উসে নার্সিংহোম মে লে যায়া জায়েগা, উতনি জল্দী সে ইলাজ শুরু হো জায়েগা।”
সুমিত আর দেরী না করে অ্যাম্বুলেন্সে ফোন করে এই ঠিকানায় চলে আসতে বলল। সুমিত ফোন ছাড়ার পর ড. দেশাই জিজ্ঞাসা করলেন, “ইয়ে সব্ হুয়া ক্যায়সে?”
“দরাঅসল কাল্ নীলিমা কুছদের্ বারিষ মে ভিগী থী। সায়দ ইসলিয়ে ইয়ে সব হুয়া।“
কিছুক্ষণের মধ্যেই অ্যাম্বুলেন্স এসে গেল। সবাই ধরাধরি করে অচৈতন্য নীলিমাকে নামালো নীচে। তারপর ওকে তোলা হল অ্যাম্বুলেন্সে। অ্যাম্বুলেন্স ছাড়ার আগে ড. দেশাই বললেন, “সুমিত বেটা, অগর্ তুমারে সাথ কোই নার্সিংহোম চলতা তো আচ্ছা হোতা।” সুমিত বুঝতে পারছিল না এই অপরিচিত মুখগুলোর মাঝে কাকে অনুরোধ করবে আর কে-ই বা ওর সাথে নার্সিংহোম যেতে রাজী হবে। ঠিক সেই সময়ই ওর মুশকিল আসান হয়ে এগিয়ে এলেন মি. মেহরা। উনি সুমিতকে বললেন, “তুম চিন্তা মত্ করো। ম্যায় চলতা হুঁ তুমারে সাথ।” সুমিত ওনার হাত দুটোকে ধরে বলল, “Many many thanks, Mr. Mehra.” মি. মেহরা বললেন, “ইয়ে সব্ বাতে বাদ মে হোগী। অব সবসে জরুরী বাত হ্যায় নীলিমা কো বেটী জল্দ সে জল্দ নার্সিংহোম লে যানা। অব জ্বাদা ওয়াক্ত জায়া মত্ করো। চলো।” তারপর নীলিমা, সুমিত, মি. মেহরা এবং ড. দেশাইকে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স রওনা দিল নার্সিংহোমের দিকে।
[/HIDE]
 
[HIDE]একত্রিশ পর্ব-[/HIDE][HIDE][/hide]​
[HIDE]
কেবিনের বাইরে বসে আছে সুমিত। পাশে মি. মেহরা। বেশ কিছুক্ষণ আগে নীলিমাকে মুম্বাইয়ের এই নামী বেসরকারী নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়েছে। কেবিনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ডা. দেশাইয়ের রেফারেন্সে একজন ডাক্তার চেক করছেন নীলিমাকে। সুমিতকে কেবিনে অ্যালাউ করা হয়নি। তাই ও আর মি. মেহতা কেবিনের বাইরে বসে আছে। বুঝতে পারছে না ভিতরে কী ঘটছে। একটা উদ্বিগ্নতা পাক খেয়ে উঠছে মনের মধ্যে। এই একই উদ্বিগ্নতা ও অনুভব করেছিল আজ থেকে বেশ কয়েকমাস আগে। যখন ও উদ্ভ্রান্তের মত মাকে ভর্তি করেছিল এমনই এক নার্সিংহোমে। আর বিস্তর পরীক্ষার পর ডাক্তারেরা ঘোষণা করেছিলেন মায়ের কর্কট রোগের সম্ভাবনার কথা। সেই সময়েও প্রতিটা মুহুর্তকে অসহ্য লাগছিল। আজকেও লাগছে।বাঁ হাতের কব্জীতে বাঁধা ঘড়িটা বলছে সময় এখন পৌনে বারোটা। অর্থাৎ আধঘন্টার উপর হয়ে গিয়েছে। নিজের জায়গা ছেড়ে উঠে পায়চারী করতে আরম্ভ করল। প্রচণ্ড টেনশন হচ্ছে। ওকে পায়চারী করতে দেখে মি. মেহরা বললেন, “ধীরজ্ রাখো সুমিত। চিন্তা মত্ করো। ডক্টর দেখ রহে হ্যায়। দেখনা সব ঠিক হো জায়েগা।” সুমিত বলল, “মুঝে মালুম হ্যায়, মি. মেহরা। লেকিন ক্যায়া করু, বহুত টেনশন হো রহা হ্যায়।” মি. মেহরা বললেন, “তুম টেনশন মত্ লো। সব ঠিক হো জায়েগা। ভগবান্ পর বিশ্ওয়াস রাখো।”
ভগবান! ঐ নামের কোনও ভদ্রলোক কী সত্যিই এই ধরাধামে আছেন? সুমিতের তা মনে হয়না। প্রথমে অল্প বয়সে বাবার মৃত্যু। তারপর মায়ের ঐ মারণ রোগ। এবং অবশেষে মায়ের মৃত্যু। আর এখন নীলিমার এই মুর্মুষু অবস্থা। ভগবান থাকলে কী এই ঘটনাগুলো পরপর ঘটত? নাঃ, এখন ভগবান নামটার উপরে তার ছিটেফোঁটা বিশ্বাসও আর জীবিত নেই। সে জানে এই পৃথিবীতে কেউই অবিনশ্বর নয়। যে জন্মেছে, সে একদিন না একদিন মারা যাবেই। কিন্তু মা যদি আর ক’টা দিন বেঁচে থাকত, তার আর নীলিমার সাথে আর ক’টা দিন কাটিয়ে যেত, তাহলে কি এমন ক্ষতি হতো? নাঃ এখন এসব পুরানো কথা ভাবার সময় নয়। এখন যে কোন প্রকারে নীলিমাকে সুস্থ করে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। ঠিক এমন সময়ে কেবিন থেকে ডাক্তারবাবু বেরিয়ে এলেন। সুমিত একরাশ উৎকণ্ঠা নিয়ে ওনার কাছে ছুটে গেল। ওনাকে জিজ্ঞাসা করল, “ডক্টরসাহাব ক্যায়সী হ্যায অব্ মেরী পত্নী? আপনে ক্যায়সা দেখা উসকো?” ডাক্তারবাবু বললেন, “আপ বিলকুল চিন্তা মত্ কিজীয়ে। হমনে সারী জাঁচ কর লিয়া হ্যায়। হাঁ, উনকো নিউমোনিয়া হুয়া হ্যায়। মগর ধাবড়ানে কি কোই বাত নেহী হ্যায়। উনকি নিউমোনিয়া একদম্ প্রাইমারী স্টেজ পর হ্যায়। হামনে উনকি ইলাজ় শুরু কর দিয়া হ্যায়। বো জল্দ হী ঠিক হো জায়েঙ্গী।” সুমিত জিজ্ঞাসা করল, “ক্যায়া উসকো হোঁশ আ গয়া হ্যায়?” ডাক্তারবাবু মাথা নেড়ে বললেন, “নেহী, বো আভী তক্ বেহোঁশ হী হ্যায়। ঔর ইসকী কারণ হ্যায় উনকী তেজ বুখার। একবার বুখার উতরনে লাগেগা তো, উনকো হোঁশ আ জায়েগা। হামনে দাওয়াই দে দিয়া হ্যায়। উনকি বুখার জল্দী উতরনে শুরু হো জায়েগী ঔর উনকো হোঁশ ভী আ জায়েগী। Please, excuse me.” বলে ডাক্তারবাবু চলে গেলেন। সুমিত নিজে এই সময় খুবই অসহায় বোধ করছে। যদিও নীলিমার নিউমোনিয়া অতটা জটিল পর্যায়ে যায়নি, এবং ঠিক সময় মতো চিকিৎসাও শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু যতক্ষণ না ওর জ্ঞান ফিরে আসছে ততক্ষণ সে কোনমতেই শান্ত হতে পারবে না। নিজেকে কেমন যেন অস্থির বোধ হচ্ছে।
ঠিক সেই সময়ে কাঁধে কারোর হাতের স্পর্শ টের পেল সুমিত। পিছন ফিরে মি. মেহরাকে দেখতে পেল। মি. মেহরা ওকে সস্নেহে বললেন, “সুমিত, তুম জ্বাদা চিন্তা করো। বৈঠো। সব্ ঠিক হো যায়েগা।” সুমিত ওনাকে কী বলবে কিছু ভেবে পেল না। তবে ওনার কথা মেনে নিয়ে গিয়ে বসল। মনটাকে শান্ত করার চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু ও ব্যর্থ হতে লাগল। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে যাচ্ছে, কিন্তু এখনও কোনও খবর পাচ্ছে না। খাওয়ার ইচ্ছা একেবারেই ছিলনা। কিন্তু মি. মেহরা শুনলেন না। বললেন না খেয়ে থাকলে তার নিজেরও শরীর খারাপ হতে পারে। সেটা হতে দেওয়া একদমই উচিত নয়। কথাটা সুমিতেরও ঠিক বলেই মনে হল। তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাইরে থেকে কিছু খেয়ে এল। তারপর শুরু হল অনন্ত প্রতীক্ষা। বিকালের একটু পরে একজন নার্স এসে বলল, “সুমিত সেন?” সুমিত উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “জ্বি ম্যায়।” নার্সটি বলল, “আপকো ডা. শর্মা বুলা রহে হ্যায়।” ডা. শর্মা মানে যিনি নীলিমার চিকিৎসা করছেন। তিনি হঠাৎ সুমিতকে ডাকছেন কেন? তবে কী খারাপ কিছু? অজানা একটা আশঙ্কা ক্রমশ জগদ্দল পাথরের রূপ নিয়ে বুকে চেপে বসেছে। আশঙ্কাটাকে বুকের মাঝে চাপতে চাপতে ডা. শর্মার চেম্বারের দিকে রওনা দিল সুমিত।
[/HIDE]
 
[HIDE]বত্রিশ পর্ব-[/HIDE][HIDE][/hide]​
[HIDE]
ডা. শর্মার চেম্বার থেকে বের হওয়ার সময় সুমিতকে কিছুটা চিন্তিত মনে হল। ড. শর্মার কয়েকটা কথা ওকে বেশ চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। তবে একটা খবর উনি সুমিতকে দিয়েছেন, যেটা শুনে ও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। ডা. শর্মা বলেছেন কিছুক্ষণ আগে নীলিমার জ্ঞান ফিরেছে। তবে ও এখনও একটা ঘোরের মধ্যে আছে। সেটা ওর জ্বরের কারণেই। সামান্য কমলেও জ্বর এখনও পুরো মাত্রায় আছে। ওটা কমতে বেশ কয়েকদিন লাগবে। ডা. শর্মা অনেকটাই আশাবাদী ওনার রোগিনীর ব্যাপারে। তিনি নিশ্চিত নীলিমা কয়েকদিনের মধ্যেই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে। উনি সুমিতকে টেনশন করতে বারণ করলেন। কিন্তু টেনশন তার হচ্ছেই। ডাক্তারবাবুর কথাটা তার মনে খচখচ করে কাঁটার মত বিঁধছে। ডা. শর্মার চেম্বার থেকে সুমিত ফিরে আসতেই মি. মেহরা ওকে জিজ্ঞাসা করলেন, “ক্যায়া কাহা ডক্টরসাহাবনে?” সুমিত মুখে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে বলল, “ নীলিমাকো হোঁশ আ গয়া হ্যায়। মগর্ উসকা বুখার পুরী তরাহ্ সে উতরা নেহী। ড. শর্মানে কাহা কি কুছ হি দিনোঁ মে বুখার উতর যায়েগা ঔর বো বিলকুল ঠিক হো যায়েগী।” সুমিতের কথা শুনে মি. মেহরা খুব খুশী হলেন হাত তুল্ প্রণাম করে বললেন, “ভগবান, তেরা লাখ লাখ সুকর।” তারপর বললেন, “ম্যায় জ্বারা ইয়ে খুশখবর্ পাম্মী কো বোল দেতা হুঁ। বো বেচারী সুবহ্ সে বহুত টেনশন মে হ্যায়।” বলে উনি চলে গেলেন মিসেস মেহরাকে ফোন করতে। সুমিত বেঞ্চিতে বসল। এই খবরটা শুনে মিসেস মেহরার টেনশন হয়তো একটু কম হবে কিন্তু ডা. শর্মা তাকে যে কথাটা বললেন তাতে তার একটু হলেও টেনশন হচ্ছে।
এখন নীলিমা অসুস্থ। এখন এসব অযৌক্তিক চিন্তাভাবনা করার সময় নয়। তার এখন একটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত, নীলিমাকে পুরোপুরি সুস্থ করে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া। সমস্ত শক্তি দিয়ে চিন্তাটাকে মন থেকে সরাবার চেষ্টা করল সুমিত। কিন্তু পারল না। ও বেশ বুঝতে নিজের অজান্তেই ওর মনে বারবার ধরে ডা. শর্মার কথাটা ভেসে আসছে। হঠাৎ ওর কাঁধে কেউ হাত রাখল। ও চমকে উঠে দেল মি. মেহরা। উনি সুমিতকে চিন্তিত দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, “ক্যায়া হুয়া সুমিত? তুম কুছ শোচ্ রহে থে। কোই সিরিয়াস বাত তো নেহী হ্যায় না?” সামান্য চমকে উঠলেও সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে সামলে নিল ও। যদিও সেটা ওনার নজর এড়াল না। মুখে আবার আগের মতোই হাসি ঝুলিয়ে বলল, “আরে নেহী, নেহী। ম্যায় কোই ঔর বাত শোচ রহা থা। ম্যায় ক্যায়া কহ্ রহা হুঁ কি, অব্ আপ্ ঘর চলে যাইয়ে। ম্যায় আজ ইঁহা রুকুঙ্গা।” মি. মেহরা বললেন, “ঠিক হ্যায় ম্যায় চলা যাতা হুঁ। অগর্ কিসী ভি তরহ্ কি মদদ্ কি জরুরত পড়ে, তো হামে কল্ করনা ভুলনা নেহী।” “নেহী, ম্যায় ভুলুঙ্গা নেহী।” মি. মেহরা চলে গেলেন। সুমিত কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইল। কিচ্ছু ভাল লাগছে না। একবার উঠে গিয়ে বাথরুমে গেল এবং চোখে মুখে জল দিয়ে এল। একটু যেন ভাল লাগছে। সত্যিই কী? না। বারবার কথাটা ঘুরে ফিরে মনের মধ্যে ধাক্কা খাচ্ছে। সত্যিটা না জানা পর্যন্ত ও শান্তি পাবে না। কিন্তু নীলিমা পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত ওকে ধৈর্য ধরতেই হবে। কারণ সত্যিটা কেবল একজনই জানে। সে হল নীলিমা।
আচ্ছা, নিলীমা সুস্থ হয়ে উঠলেই কী সুমিত কি ওকে সত্যিটা সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করতে পারবে? না। পারবে না। কারণ ও কোনদিন নীলিমার কাছে কোন কিছুর বিষয়েই কৈফিয়ত চায়নি। আজও চাইতে পারবে না। কিন্তু সত্যিটা যে ওকে জানতেই হবে। বিশ্বাস হচ্ছে স্বচ্ছ আয়নার মত। আর ও সেই আয়নায় সন্দেহের একটা কাঁকড়ও লাগতে দেবেনা। আজ পর্যন্ত ও বিশ্বাস করত যে, ও নীলিমাকে জানে, ওকে বুঝতে পারে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এসবই ওর ভ্রান্ত ধারণা ছিল। কথায় বলে পরচিত্ত অন্ধকার। কথাটা কী ওর নীলিমার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য? সেই সত্যিটাই ওকে জানতে হবে। সবকিছু নতুন করে বুঝতে হবে। রাত্রিবেলা বাইরে থেকে খেয়ে এসে সুমিত নীলিমার কেবিনে এসে বসল। ও এখন ঘুমাচ্ছে। জ্বরটা এখনও আছে। জ্বরটা ছাড়তে বেশ কিছুদিন লাগবে। একজন নার্স এসে চেক্ করে গেল। বলল সব ঠিক আছে। আবার পরে এসে চেক করে যাবে। এখন সে আর নীলিমা একা। আশেপাশে কেউই এমন নেই যে ওদের বিরক্ত করবে। সুমিত ঘুমন্ত নীলিমার মুখের দিকে ভাল করে তাকাল। নিষ্পাপ সেই মুখে কোথাও কোন পাপবোধ নেই, কোন অপরাধবোধ নেই। তবে ডা. শর্মা যা বললেন তার সত্যতা কতটুকু? অদ্ভুত একটা দোলাচলে পড়ে গেছে ও। মনের একভাগ বলছে ডা. শর্মার কথায় সত্যতা থাকলেও থাকতে পারে। কিন্তু সিংহভাগের পক্ষপাত নীলিমার দিকেই। ডা. শর্মার কথাটা ওকে বড়ই ভাবিয়ে তুলেছে। নীলিমাকে না জানিয়ে কী সত্যিটা কোনভাবেই জানা সম্ভব নয়? তখনই কথাটা ওর মনে এল। ইস্, এটা আগে ওর ভাবা উচিত ছিল। তবে এখন আর কিছু করার নেই। কাল সকালে বাড়ি ফিরে এই জিনিসটাকে ভাল করে দেখতে হবে। ব্যাপারটাকেও বুঝতে হবে। হবেই।
ক্রমশ.......
[/HIDE]
 
[HIDE]তেত্রিশ পর্ব-[/HIDE][HIDE][/hide][HIDE]

আজকে প্রায় এক সপ্তাহ হতে চলল নীলিমা নার্সিংহোমে ভর্তি। জ্বরটা প্রায় ছেড়ে গেছে। কিন্তু শরীরটা বেশ দূর্বল। দাঁড়াতে গেলেই মাথা ঘুরে যাচ্ছে। ডাক্তার ওকে এখন পুরোপুরি বেডরেস্ট নিতে বলেছেন। ও এখানে প্রায় চব্বিশ ঘন্টাই বেডে শুয়ে আছে। মাঝেমধ্যে বেড থেকে উঠে কেবিনে রাখা সোফায় গিয়ে বসছে। কিছুক্ষণ বসার পর আবার বেডে গিয়ে শুচ্ছে। ওর এখন একরকম বন্দীদশা চলছে। একদম প্রাণান্তকর অবস্থা। বিরক্তির একশেষ। কিন্তু কিছু করার নেই। ও সুমিতকে বলেছিল ওকে বাড়ি নিয়ে যেতে। কিন্তু ও রাজী হয়নি। বলেছিল, “আমি ডাক্তারের সাথে কথা বলেছি, নীলিমা। উনি বলেছেন তোমার পুরোপুরি সুস্থ হতে এখনও বেশ কিছুদিন লাগবে। তার পরে আমি তোমাকে আমি বাড়ি নিয়ে যাবো। ততদিন একটু কষ্ট করে থাকো, লক্ষ্মীটি।” এরপরে ও আর কোনও কথা বলেনি। কী-ই বা বলবে। একেই তো লজ্জায় মরে আছে। ছিঃ, ছিঃ, ওর সামান্য ছেলেমানুষীর জন্য সুমিতকে কত ঝক্কিই না সামলাতে হল। কিন্তু ওকে সুমিত এ বিষয়ে একটা কথাও বলেনি। বরঞ্চ বলেছে, “উফ্ এই ক’দিন তো বেশ ছুটি কাটিয়ে নিলে। আর আমাকে দেখো, বউ থাকতেও ব্যাচেলারের জীবন কাটাতে হচ্ছে।” নীলিমা বলেছিল, “সেইজন্যই তো বলছি তুমি আর কতো এইভাবে ছোটাছুটি করবে? তারচেযে় আমাকে বাড়িতে নিয়ে চলো। এইভাবে একা থাকতে থাকতে হাঁফিয়ে উঠেছি।” “সে তো তুমি বাড়িতেও প্রতিদিন একলাই থাকতে।” “হ্যাঁ, সে থাকতাম বটে। তবে ঘরের কাজ করতে করতে কখন যে সময় কেটে যেত বুঝতেই পারতাম না। কিন্তু এখানে সময় একদম কাটতে চায় না।” “এই তো, আর ক’টাদিন একটু কষ্ট করে থাকো তারপর আবার বাড়িতে নিয়ে যাবো।”

প্রথমে জ্বরের ঘোরে ওর কোন জ্ঞানই ছিল না। তাই যখন ওর জ্ঞান এল, তখন ও বুঝতেই পারেনি ও ঠিক কোথায় আছে। পাশে দাঁড়ানো নার্সটা ওকে বলেছিল যে ওর নিউমোনিয়া হয়েছে, এবং ওকে নার্সিং হোমে ভর্তি করা হয়েছে। তারপরেই সুমিতকে খবর দেওয়া হয়। ওর জ্ঞান ফিরে আসতে দেখে সুমিত কতটা খুশী হয়েছে, সেটা ওর মুখের উজ্জ্বলতাই বলে দিচ্ছিল। বলল, “উফ্ বেশ টেনশনে ফেলে দিয়েছিলে। যাহোক এখন ভালো করে বিশ্রাম-টিশ্রাম নিয়ে শরীরটাকে সুস্থ করে তোলো। আর চিন্তা কোরো না। আমি এখানেই আছি।” সুমিতের কথাগুলো ওর মনে একটা নিশ্চিন্ত ভাব এনে দিল। সুমিত যে ওর কাছাকাছিই আছে, এইটুকুই ওর কাছে যথেষ্ট। আর কিছু চায় না। এরপর থেকে সুমিত প্রতিদিন ওর সঙ্গে দু’বার দেখা করতে আসে। সকালে অফিস যাওয়ার আগে। আর সন্ধ্যাবেলায় অফিস থেকে ফেরার পথে। সকালে ও বেশীক্ষণ বসতে পারে না। কিন্তু সন্ধ্যাবেলায় ও অনেকক্ষণ বসে। অনেক গল্প করে। কথা বলে। নানারকম মজার কথা বলে ওকে হাসায়। এখন তো ও সারাদিন অপেক্ষা করে থাকে এই সন্ধ্যাবেলাটার জন্য। কখন সন্ধ্যা হবে। কখন সুমিত আসবে। কখন ওর সাথে কথা বলবে। মন খুলে হাসতে পারবে। জীবনে যা কিছু ঘটে, তার সবসময়ই দুটো দিক থাকে। একটা ভাল, অন্যটা খারাপ। আমরা সবসময়ই খারাপ দিকটাই দেখে থাকি। তাই উল্টোদিকের ভালো দিকটা থেকে যায় আমাদের দৃষ্টির অগোচরে। কিন্তু নীলিমা বুঝতে পারছে একদিক দিয়ে তার এই অসুস্থতা ওর পক্ষে শাপে বর হয়েছে। এই অসুস্থতার ফলে ও নতুন করে অনুভব করতে পারছে সুমিতের প্রতি ওর নির্ভরশীলতা। সুমিতের জন্য এই অপার অপেক্ষা, ওর সাথে কথা বলার অদম্য ইচ্ছা। সারাদিনের পর ওকে একান্তে পাওয়ার লোভ। আচ্ছা ও কি নতুন করে সুমিতের প্রেমে পড়ছে? হতে পারে। কই আগে তো সুমিতের সঙ্গ পাবার জন্য এত আকুলতা লক্ষ্য করেনি নিজের মধ্যে? নতুন করে একটা ভাল লাগা তৈরী হচ্ছে। গড়ে উঠছে নতুন সম্পর্ক।

দেওয়াল ঘড়ি জানান দিচ্ছে সকাল সাড়ে ন’টা বেজে গেছে। সুমিতের আসার সময় হয়ে গেছে। নিজের মধ্যে একটা উন্মাদনা টের পাচ্ছে ও, যেটা প্রতিদিনই টের পায়। কিন্তু আজকে যেন কিছু আলাদা। সময় বেড়ে চলছে তার নিজের গতিতে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ওর আকুলতা। এত দেরী হয়ে গেল, এখনও সুমিত এল না কেন? তবে কী আজকে সকালে আসবে না? কিন্তু কাল রাত্রে বাড়ি ফেরার সময় যথারীতি বলে গিয়েছিল যে আজ সকালে আসবে। তবে কী ভুলে গেছে? না, ও তো ভুলবে না। তাহলে কী হল? ওকে যে ফোন করে জানবে, সে উপায়টাও নেই। ওর ফোনটা বাড়িতে রয়েছে। বারবার ওটা এনে দেবার কথা বললেও সুমিত রাজী হয়নি। বলেছে, “আগে সুস্থ হয়ে ওঠো, তারপর আমি তোমার ফোন এনে দেব। এখন no ফোন, only বিশ্রাম।” ঠিক সেই সময়ই ওর চিন্তাজালকে ছিঁড়ে দিয়ে কেবিনে প্রবেশ ঘটল সুমিতের। ও চেয়ে দেখল নীলিমার মুখটা রাগে লাল হয়ে আছে। এবং সেই রাগের কারণ সহজেই অনুমেয়। ও তাকিয়ে দেখল ঘড়ির কাঁটা দশটা ছুঁইছুঁই। ও তাড়াতাড়ি বলল, “Good morning, ma’am. How are you today?” নীলিমা কিছু বলল না, অন্য দিকে তাকিয়ে রইল। সুমিত বুঝতে পারল বউয়ের রাগ ক্রমশ বিপদসীমা পেরিয়ে যাচ্ছে। তাই ও বলল, “Sorry, sorry. আজ একটু দেরী হয়ে গেল। জানোই তো ব্যাচেলারের জীবন। পাশে বউ নেই যে, ঠিক সময়ে ঘুম থেকে তুলে দেবে। অ্যালার্মের উপর ভরসা। কাল দিতে ভুলে গেছি। আর আজকে উঠতে দেরী হয়ে গেল। কোনরকমে চান-টান করে বেরিয়ে পড়লাম।” “সেকি ব্রেকফাস্ট করোনি? না খেয়ে, খালি পেটেই বেরিয়ে পড়লে? এবার তো শরীর খারাপ করবে?” আর চুপ করে থাকতে না পেরে নীলিমা বলে উঠল। ওর কথা শুনে সুমিত হেসে বলল, “এই বোল ফুটেছে। চিন্তা কোরোনা, আমি খেয়েদেয়েই বেরিয়েছি। আর এই নাও তোমার মোবাইল। না পেয়ে তো হাঁফিয়ে উঠেছিলে।” বলে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে ওর হাতে দিল। তারপর বলল, “এখন আমি আর বসতে পারব না। তাহলে অফিস যেতে অনেক দেরী হয়ে যাবে। তবে ক্ষতিপূরণ হিসাবে তোমার জন্য একজন অতিথিকে এনেছি। বাইরে আছে। পাঠিয়ে দিচ্ছি।” বলে সুমিত উঠে দাঁড়াল। তারপর নীলিমার কপালে চুমু খেয়ে বলল, “Get well soon, my love.” বলে ও বেরিয়ে গেল। নীলিমা ভাবতে লাগল কে সেই অতিথি, যে ওকে দেখতে এসেছে। ওর ভাবনার মাঝেই কেবিনে প্রবেশ ঘটল সেই অতিথির। [/HIDE]
 
[HIDE]চৌত্রিশ পর্ব-[/HIDE][HIDE][/hide][HIDE]

পাম্মী আন্টিকে দেখে খুশী হয়ে গেল নীলিমা। ধড়ফড় করে বিছানায় উঠে বসতে গেল। আন্টি মাথা নেড়ে মানা করে বললেন, “উঁহু, লেটী রহো। তুম আভী তক্ পুরী তরাহ্ সে ঠিক নেহী হুঈ হো।” নীলিমা বলল, “আসুন, আসুন আন্টী। ভালো করেছেন, সুমিতের সঙ্গে চলে এসেছেন। অনেকদিন আপনার সঙ্গে গল্প করা হয়নি।” আন্টি সোফায় বসতে বসতে আবার আগের মত মাথা নেড়ে বললেন, “উঁহু। ম্যায় নেহী আয়ী, বলকী সুমিত নে মুঝে লে কর্ আয়া। কহনে লগা, মিসেস মেহরা, আজ আপ চলিয়ে মেরে সাথ নার্সিংহোম। আজ মুঝে থোড়া দের্ হো গয়া হ্যায়। আকেলা যানে সে ডর লগ রহা হ্যায়। নীলিমা মুঝে জরুর ডাঁটেগী। অগর্ আপ সাথ মে রহেঙ্গী তো, বো মুঝে ডাঁট নেহী সাকেগী।” বলে মৃদু হাসলেন উনি। কিন্তু নীলিমা ওনার কথা শুনে লজ্জা পেয়ে গেল। বলল, “ছাড়ুন তো ওর কথা। একটা পাগল। কখন যে কি বলে, আর কখন যে কি করে তার কোন ঠিক নেই।” ওর কথা শুনে আন্টি বললেন, “নেহী বেটী। সুমিত খারা সোনা হ্যায়। তুমহে মালুম নেহী যব তুমহে ইস নার্সিংহোম মে অ্যাডমিট কিয়া গয়া থা, তব উসনে ক্যায়সে পাগলোঁ কি তরাহ্ বরতাব্ কর রহা থা।” বলে অল্পক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, “সুমিত তুমহে খুদ সে ভী জ্বাদা প্যায়ার করতা হ্যায়। অগর্ তুমহে কুছ হো যায়ে তো বো বরদাস্ত নেহী কর পায়েগা। তুমহে মালুম হ্যায? আতে ওয়াক্ত গাড়ী মে সির্ফ তুমহারী হি বাতেঁ কর রহা থা। নীলিমা ইয়ে, নীলিমা বো। বগেরা, বগেরা।” নীলিমা এই কথাগুলো আগে থেকেই জানে। কিন্তু কেন জানেনা আজ আন্টির মুখ থেকে কথাগুলো শুনতে ভাল লাগছে। ও প্রসঙ্গ পালটে বলল, “আঙ্কল কেমন আছেন?”
“বো ঠিক হ্যায়।”

দুজনেই কিছুক্ষণ চুপচাপ। কে কী বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। ঠিক সেইমুহুর্তে অঘটনটা ঘটল। হাতে ধরা মোবাইলটা হঠাৎ সরব হয়ে উঠল। আবার সেই বার্তা। একরাশ অস্বস্তির সঙ্গে মোবাইলটার দিকে তাকাতেই ভেসে উঠল পুরানো একটা আশঙ্কা। মেঘনাদ। নামটা একরাশ তিক্ততা বয়ে আনল মনে। ও কি চায়? ওকে কেন এইভাবে বিরক্ত করছে? ব্যাপারটা আর চেপে রাখা যাচ্ছে। তার সুখী জীবনে কেন এমনভাবে বারবার কালবৈশাখী হয়ে ঢুকে পড়ছে? যতবার ও নিজেকে গুছিয়ে তোলার চেষ্টা করছে, ঠিক ততবারই সবকিছু ভেঙেচুরে, তছনছ করে দিচ্ছে ও। তাসের ঘরের মত ভেঙে দিচ্ছে ওর সাজানো সংসারটাকে। কিন্তু কেন? ওর সঙ্গেই কেন এমন ঘটছে। সে কার কি এমন ক্ষতি করেছে ওর সাথে এমন ঘটছে। আন্টি না থাকলে হয়তো কেঁদেই ফেলত। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলাল নীলিমা। আন্টির সামনে কান্নাকাটি করাটা ঠিক হবেনা। উনি আবার অন্য কিছু ভেবে বসতে পারেন। “ক্যায়া হুয়া বেটী? সবকুছ ঠিক হ্যায় না?” প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই নিজেকে সামলে নিল নীলিমা। বলল, “না, না। সব ঠিক আছে।” তারপর মোবাইলটা একপাশে রেখে ও আন্টির সঙ্গে গল্পে মেতে উঠল। সময় কেটে যেতে লাগল নিজের তালে। বেশ কিছুক্ষণ গল্প করার পর আন্টি চলে গেলেন। আন্টি চলে যাওয়ার পর আবার মেঘনাদের চিন্তা মাথায় জমা হতে লাগল। আন্টির সামনে মেসেজটা পড়তে পারেনি। এখন অনিচ্ছা সত্ত্বেও মেসেজটা পড়তে লাগল। না, এবার কোনও নির্দেশ নয়, বরং শুভেচ্ছাবার্তা রয়েছে ওতে। “Get well soon, Mrs. Sen.” শুভেচ্ছাবার্তাটা ওর মনে ঘৃণার উদ্রেক ঘটাল। কি মনে করে মেসেজটাকে ডিলিট করে দিল। কিন্তু লক্ষ্য করে দেখল মেঘনাদের আগের সব মেসেজগুলো রয়ে গেছে। হঠাৎ একটা আশঙ্কা ওর মনে জেগে উঠল। সুমিতের চোখে এই মেসেজগুলো পড়েনি তো? তাহলে সুমিত ওর সম্পর্কে কি ভাববে? যদিও ওর পুরো বিশ্বাস সুমিত কখনোই ওর মোবাইল ঘাঁটবে না। তবুও এই অশান্তির বীজটাকে জিইয়ে রাখা অর্থহীন। যদিও ওর অনেক আগেই উচিত ছিল এগুলোকে ডিলিট করে দেওয়া। আগে যখন করেনি তখন এখনই করুক। এই ভেবে ও Message Inbox-র সব মেসেজগুলো ডিলিট করে দিল। তারপর ফোনটাকে সুইচড্ অফ্ করে দিল। এবার বেশ কিছুটা নিশ্চিন্ত লাগছে।

সারাদিনটা একরকম ভাবেই কেটে গেল। কাচের জানালার উল্টো দিকে সন্ধ্যার অন্ধকারটা একটু একটু করে গাঢ় হচ্ছে। বেড থেকে উঠে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়াল নীলিমা। ওর মনেও কি একই ভাবে অন্ধকার জমছে না? যদি কোনদিন সুমিত মেঘনাদের কথা জানতে পারে, তবে কি সুমিত ওকে ক্ষমা করতে পারবে? দূরে সরিয়ে দেবে নাতো ওকে? ওর ভালবাসায় ঘাটতি হবে নাতো? আচ্ছা ও নিজে কি কোনদিন সবকথা সুমিতকে খুলে বলতে পারবে? সুমিত কি বুঝতে পারবে ওর অবস্থাটা? ওদের সম্পর্কটা আবার আগের মত সহজ সরল হয়ে উঠবে তো? প্রশ্নগুলো ওর মনে কালবৈশাখী হয়ে আছাড় খাচ্ছে ওর বুকে। তোলপাড় করে তুলছে ওর মনটাকে। মনের মধ্যে শ্রাবণের কালো মেঘ জমছে। অচিরেই সেই মেঘ বারিধারা হয়ে নেমে এল চোখের কোল বেয়ে। হঠাৎ কেউ ওর কাঁধে হাত রাখল। ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখল সামনে সুমিত দাঁড়িয়ে আছে। নীলিমাকে কাঁদতে দেখে সুমিত বেশ কিছুটা অবাক হয়ে গেল। বলল, “কী হল এভাবে কাঁদছো কেন?” নীলিমা বলল, “আচ্ছা সুমিত, একটা সত্যি কথা বলবে?”
“কী কথা?”
“যদি কোনদিন জানতে পারো যে আমি কোনও ভুল করে ফেলেছি, তুমি পারবে তো আমাকে ক্ষমা করতে? আমার ভুল-ত্রুটিগুলোকে সরিয়ে আমাকে আগের মত আপন করে নিতে?” ওর চোখের জলগুলো মুছিয়ে দিয়ে সুমিত বলল, “আমি জানি, সেরকম ভুল তুমি কখনও করবে না। আর যদি সেরকম ভুল তুমি করেই থাকো, সে বিষয়ে আমি ক্ষণকালও ভাববো না। তুমি আমার যেমন আপন ছিলে, এখনও তেমন আছো। আর ভবিষ্যতে যা কিছুই ঘটে যাক না কেন, তুমি আমার আপনই থাকবে। এই পৃথিবীতে, তুমি ছাড়া আমার আপন আর কেউ নেই। এটুকু বিশ্বাস তো করো আমাকে, তাই না?”
“তার থেকেও অনেক অনেকটা বিশ্বাস করি তোমাকে। I love you.”
“I love you, very much.”

সন্ধ্যার আবছা অন্ধকারে শরীর দুটো ধরা দিল একে অপরের আলিঙ্গনে। [/HIDE]
 
[HIDE]পঁয়ত্রিশ পর্ব-[/HIDE][HIDE][/hide][HIDE][/hide]​
[HIDE]
“ আমি তোমার কাছেই ফিরে আসবো,
তোমায় আবার ভালবাসবো,
তুমি কি ডাকবে মোরে,
চেনা সে নামটি ধরে,
আমি তোমার কাছেই ফিরে আসবো...... ”
বেশ কয়েকদিন হল নীলিমাকে বাড়িতে নিয়ে চলে এসেছে সুমিত। এখন ওকে পুরোপুরি সুস্থই বলা চলে। তবে আগের থেকে অনেক দূর্বল হয়ে পড়েছে। অল্পেতেই হাঁফিয়ে পড়ছে। তবে কাজে কোন খামতি রাখছে না। সুমিত বলে বলে হয়রান হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু ওর কোন কথাই শুনছে না। নীলিমার অসুস্থতার কারণে ওরা আগের থেকে অনেক কাছাকাছি চলে এসেছে। এখন অফিসের কাজের ফাঁকে মাঝেমাঝেই ফোন করে সুমিত। জিজ্ঞাসা করে শরীর আবার খারাপ লাগছে কিনা, দুপুরে ঠিক মতো বিশ্রাম করছে কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি। মাঝেমাঝে নীলিমা ঠাট্টার ছলে বলে, “তুমি অফিসে গেছো কাজ করতে নাকী ফোন করে আমার সঙ্গে আড্ডা মারতে?”
“আঃ, বুঝতে পারছো না, বাড়িতে তোমার মতন একজন সুন্দরী বউ থাকলে, বরেদের একটু আধটু চিন্তা হয়। আমারও তাই হচ্ছে।”
“কেন, এর আগেও তো আমি সারাদিন একলাই থাকতাম। তখন তোমার চিন্তা হত না?”
“হত। তবে ইদানিং একটু বেশীই হচ্ছে।”
“তার মানে?”
“তার মানে। আগে তুমি সুস্থ ছিলে। এখন ততটা নও। তাই চিন্তা হয়। আর কিছু নয়।” বিপদ বুঝে পরিস্থিতিটা সামলায় সুমিত। নীলিমার কাছে ধরা পড়ে গেলে কেলেঙ্কারী হত। ফোনটা কেটে হাঁফ ছেড়ে বাঁচে ও।
মুখে যা-ই বলুক না কেন, নীলিমাও চায় মাঝেমধ্যে সুমিত ওকে ফোন করুক। ওর সাথে কথা বলুক। তাহলে সারাদিনের একাকিত্ব কিছুটা হলেও কাটে। সত্যি কথা বলতে কি, এখন আগের মত অতটা একা লাগেনা। ও সারাদিন নিজেকে কিছু না কিছু কাজে ব্যস্ত রাখে। সময়টা কোথা দিয়ে কেটে যায় খেয়াল থাকেনা। তবে বিকেলের রুটিনটা এখনও সেই একই আছে। পড়ন্ত বিকালের অকাল হোলি দেখতে সময় মত হাজির হয়ে যায় পশ্চিমের ব্যালকনিতে। সন্ধ্যার গাঢ় অন্ধকারের মাঝে উঠে যায়। তারপর সুমিত আসে। ওকে খেতে দেয়। রাতের রান্না সেরে দুজনে এসে বসে ব্যালকনিতে। চাঁদের আদুরে আলো, আরবসাগরের নোনতা ভিজে বাতাস গায়ে মেখে চলে ওদের নিভৃত আলাপচারিতা। দুজনের একজন হয় বক্তা, অন্যজন তখন বাধ্য শ্রোতা। কথার পিঠে কথা। লঘু মজা মাখানো হাসি। আলগা খুনসুটি। আলাপের জাল বিস্তৃত হয় গভীর রাত পর্যন্ত। চাঁদ তখন মধ্যপথে। তবুও হুঁশ থাকেনা কারোরই। তারপর একসময় নৈশাহার শেষে নিশ্চিন্ত নিদ্রা। জীবন এখন অনেক মসৃণ। আশ্চর্যজনকভাবে মোবাইলটাও সারাদিন থাকে নিরুত্তর। সেও জানায় না নতুন কোন বার্তাপ্রাপ্তির ঘোষণা। একে অপরের সান্নিধ্যে জীবনটা হয়ে আসে নিস্তরঙ্গ। অথচ আগের থেকে অনেক প্রাণোচ্ছল। যেমনটি হয়তো ওরা দুজনেই চাইতো। তবে মনে মনে।
এমনই একদিন অফিস থেকে ফিরে সুমিত বলল, “নীলিমা, কাল আমাকে দিন সাতেকের জন্য দিল্লীতে যেতে হবে। দুপুর দু’টোয় ফ্লাইট। তুমি আমার ব্যাগটা একটু গুছিয়ে রেখো প্লিজ।” নীলিমা আশ্চর্য হয়ে গেল। কারণ বিয়ে পর এই প্রথম সুমিত ওকে একলা রেখে কোথাও যাবার কথা বলছে। ও জিজ্ঞাসা করল, “হঠাৎ দিল্লী? তাও আবার সাত দিনের জন্য?”
“আর বোলো না। জানোই তো, দিল্লীতে আমাদের কোম্পানীর হেড অফিস। সেখানে আমাদের একটা সেমিনার হবে। ওই তিন-চার দিনের জন্য। তা আজকে বস্ আমাকে ফোন করে বললেন কালই যেন পৌঁছে যাই।”
“কই সেমিনারের কথা আগে বলোনি তো?”
“তোমার শরীর খারাপের কারণে বলা হয়নি। তারপর বলব বলব করে বলা হয়নি। প্লিজ লক্ষ্মীটি রাগ কোরোনা।”
“রাগ করছি না। তবে আগে থেকে জানলে ধীরেসুস্থে ব্যাগটা গোছানো যেত। এই শেষমুহুর্তে সব তাড়াতাড়ি করে গোছাতে হবে।”
“ওতে অসুবিধা কিছু নেই। সাতদিনের জন্য জামাকাপড় প্যাক করে দাও, তাতেই হবে।”
“কিন্তু তুমি সাতদিন থাকবে না। আমি এখানে একলা থাকবো কি করে?”
“আমি জানি এই ক’দিন তুমি ঠিক ম্যানেজ করে নেবে। After all, you’re my sweet, brave girl. আমি লছমিকে বলে যাবো, এই ক’দিন ও এখানেই থাকবে। আর তাছাড়া মি. আর মিসেস মেহরা তো আছেনই। আর যদি একান্তই কিছু প্রবলেম হয়, তাহলে আমাকে ফোন কোরো।”
নীলিমা আর কিছু বলল না। চুপচাপ সুমিতের ব্যাগ গুছিয়ে দিল। তা ছাড়াও নীলিমার অলক্ষ্যে একটা জিনিস ব্যাগে ঢুকিয়ে নিল ও। এই মুহুর্তে ওই জিনিসটা ওর কাছে খবই গুরুত্বপূর্ণ। পরেরদিন রওনা হওয়ার সময় সুমিত বলল, “একদম চিন্তা করবে না। কাজ শেষ হলেই ফিরে পড়ব। আর যখনই কোন দরকার হবে ফোন করতে ভুলো না।” নীলিমা কোন উত্তর দিল না। কেবল ঘাড় নেড়ে সায় জানাল। এই প্রথম ও সুমিতকে ছেড়ে এতদিন একলা থাকবে। হ্যাঁ, কিছুদিন আগে ও নার্সিং হোমে একলাই ছিল। তবে তার প্রেক্ষিত ছিল আলাদা। এই ক’টাদিন সুমিতকে একবারের জন্যও না দেখে কীভাবে কাটাবে সেটা ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল ওর বুক থেকে।
[/HIDE]
 
[HIDE]ছত্রিশ পর্ব-[/HIDE][HIDE][/hide][HIDE][/hide]​
[HIDE]
“ওরে মনবা, তু তো বাবরা হ্যায়,
তু হি জানে, তু ক্যায়া সোচতা হ্যায়,
তু হি জানে, তু ক্যায়া সোচতা হ্যায়, বাবরে
কিঁউ দিখায়ে সপনে তু শোতে জাগতে.....”
আজ অনেকদিন পর আবার পুরানো অভ্যাসমত জানালার কাছে চেয়ার পেতে বসল রাহুল। আজকাল কিছুই যেন ভাল লাগছে না। মনটা বারবার ফিরে যেতে চাইছে অতীতে। কিন্তু সেটার কোন উপায় নেই। জোর করে চোখটাকে নিয়ে গেল জানালার বাইরের অন্ধকারে। না, চোখে পড়ল না কোন আকাশ। উঁচু হাইরাইজের ছাদ ঢেকে দিয়েছে আকাশটাকে। গত কয়েকমাসে এই প্রথমবার বসল জানালার ধারে। ধুলো, ধোঁয়া আর হাইরাইজে ঢাকা পৃথিবীটাতে থাকতে থাকতে হাঁফিয়ে উঠছে ও। এখানে মানুষ নয় সব যন্ত্র বাস করে। যাদের বেগ আছে। কিন্তু আবেগ? উঁহু, নৈব নৈব চ। সেও কি হয়ে উঠছে ওদের মতই একটা যন্ত্র? তার আবেগী মনটাতেও কি থাবা বসাচ্ছে এই যান্ত্রিকতা? কিন্তু এমনটাতো হওয়ার কথা নয়। ছোটবেলায় দারুণ ছবি আঁকত ও। বাবা বলত, ও নাকি বড় হয়ে শিল্পী হবে। অনেক ছবি আঁকবে, দেশবিদেশে নামডাক হবে। কিছুই হল না। না হওয়া হল শিল্পী। আর না হল তার নামডাক। শিল্পী নাহয় না হল, সে কি ভাল ছেলে হতে পেরেছে? না পারেনি। যে বাবা-মায়ের আঙুল ধরে ও হাঁটতে শিখেছে, সেই বাবা-মাকে একলা রেখে এসেছে কলকাতায়। কলকাতার এক অন্ধগলির প্রায়ান্ধকার বাড়িতে একটু একটু মরছে মানুষদুটো। নিয়ম করে মাসের শেষে কতগুলো কাগজের নোট ফেলে দেয় বাবার অ্যাকাউন্টে। আর মাঝেমধ্যে এক একটা ফোন। “তোমরা কেমন আছো? আমরা ভাল আছি।” ব্যাস। কর্তব্যের সীমারেখার এখানেই ইতি। কোনদিন বাবাকে জিজ্ঞাসা করেনি, “তোমার হাঁফানিটা কেমন আছে? মায়ের বাতের ব্যাথাটা কি আগের থেকে একটু কমেছে?” আজকাল বাবা-মাকে দেখতে খুব ইচ্ছা করছে। ইচ্ছা করছে মায়ের কোলটাতে মাথা রেখে শুতে। মায়ের সেই ‘খোকা’ ডাকেতে “যাই” বলে সাড়া দিতে। ইচ্ছা করছে দৌড়ে গিয়ে ক্লান্ত বাবার হাত থেকে বাজারের ব্যাগটা নিয়ে নিতে।
আচ্ছা, সেকি ভাল স্বামী হতে পেরেছে? না, সেটাও পারেনি। তৃষাকে আজ পর্যন্ত কিছুই দিতে পারেনি। সন্তানসুখটাও সে দিতে পারেনি ওকে। মনে মনে বাঁজা বলে ভেবে এসেছে ওকে। কিন্তু অক্ষমতা তো নিজের মধ্যেও থাকতে পারে, তা কোনদিন ভেবে দেখেনি ও। সে আজ পর্যন্ত তৃষার কোন ইচ্ছারই সঠিক মর্যাদা দিতে পারেনি। সে নিজে একটা অপদার্থ, হেরে যাওয়া, ফুরিয়ে যাওয়া মানুষ। যার নেই কোন অতীত, না বর্তমান, না কোন ভবিষ্যত। কেবল ফুসফুস ভর্তি শ্বাসবায়ু টেনে নিয়ে বেঁচে আছে। ওইটুকুই ওর কৃতিত্ব। মাঝেমাঝে মনে হয়, এসব ছেড়েছুড়ে কোথাও হারিয়ে যাই। না, সেটাও পারবে না। ওর মত নিষ্কর্মা মানুষের পক্ষে সন্ন্যাসী হওয়াও খুবই দুরুহ কাজ। কিছুই ভাল লাগছে না। হঠাৎ মনে হল এভাবে মন খারাপ করে বসে না থেকে কিছু করা যাক। একটা ছবিই আঁকা যাক। আর কিছু না হোক সময়টাতো কাটবে। মনস্থির করে নিয়ে কাগজ পেন্সিল নিয়ে বসল ও। কিসের ছবি আঁকবে? কিসের নয় কার। কার? কার আবার? চোখ বন্ধ করে কল্পনাতে যার ছবি ভেসে উঠবে, তার। চোখটা বন্ধ করল। সাথে সাথে কেবলই কালো অন্ধকার। সেই কালোর মাঝে ও খুঁজে চলেছে বিশেষ একজনের ছবি। কিন্তু পাচ্ছে না। না, মনে পড়ছে না, সেই বিশেষ একজনের মুখের আদল। হঠাৎ করেই যেন সেটা হারিয়ে গেছে ওর মন থেকে। এ কি করে সম্ভব? যাই হোক, মনে না পড়ুক আজ কল্পনা দিয়েই ভরে তুলবে সাদা কাগজটাকে। কল্পনার রূপটাকে বাস্তবতা দেবে আজ। ধীরে ধীরে চোখ খুলল ও। হাতের পেন্সিলটাকে বুলাতে শুরু করল দুধ-সাদা কাগজের বুকে। অনেকদিনের অনভ্যস্ত আঙুল আঁকিবুকি কাটতে লাগল কাগজে। আর যাই হোক আঁকাটা সে ভোলেনি। ধীরে ধীরে সাদা কাগজের বুকে পূর্ণ রূপ পেতে লাগল কল্পনা। কিছুক্ষণের মধ্যেই আঁকা শেষ হল। শান্ত হল আঙুল। সাদা কাগজের বুকে কালো পেন্সিলের আঁকিবুকিতে ফুটে উঠেছে এক নারী। নিজের আঁকা ছবিটার দিকে কয়েক মুহুর্ত নিষ্পলক তাকিয়ে রইল ও। নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছে না। নিজের ভালবাসার, নিজের কল্পনার প্রতিরূপটার দিকে শূণ্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তাহলে কি তার কল্পনা মিথ্যা? ও যা ভেবে এসেছে সেসব ভুল?
“কি করছো একা একা? শুতে যাবে না?” তৃষার প্রশ্নের উত্তরে ঐ শূণ্য দৃষ্টি ছাড়া আর কিছুই দিতে পারলো না। মনের মধ্যে একটা ঝড় উঠেছে। যেটা তোলপাড় করে দিচ্ছে সবকিছু। এতদিনের ভাবনাটা তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়ছে সেই ঝড়ের সামনে। হঠাৎ নতুম একটা ভাবনা আলোর ঝিলিকের মত খেলে গেল মাথায়। ও তো ঠিক ছবিই এঁকেছে। নিজের ভালবাসার। নিজের কল্পনার। ওর মন ঠিক কল্পনাই করত। ও-ই বরং সেটাকে অন্য কিছু ভেবে এসেছে এতদিন। মনের সব দ্বিধা-দ্বন্দ্ব সব কেটে গেল এক মুহুর্তেই। রাহুলের হাতে কাগজ পেন্সিল দেখে তৃষা জিজ্ঞাসা করল, “খাতা পেন নিয়ে কি করছিলে? কবিতা লিখছিলে নাকী?”
“না, ছবি আঁকছিলাম।”
“ছবি? কার?”
“নিজেই দেখে নাও।”
রাহুলের হাত থেকে খাতাটা নিয়ে ছবিটা দেখল তৃষা। তারপর বলল, “একি এতো আমার ছবি? তুমি আমার ছবি আঁকছিলে?”
“হ্যাঁ।”
“কিভাবে আঁকলে, আমাকে না দেখে?”
“কেন? কল্পনাতে।“
“আমি মোটেই এত সুন্দরী নই দেখতে।”
“কে বলল? আমার দৃষ্টিতে তুমিই সবচেয়ে সুন্দরী।”
তৃষা ঘন হয়ে এল রাহুলের কাছে। ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞাসা করল, “ভালবাসো আমায়?” কোনও উত্তর দিল না রাহুল। তার দরকারও নেই। ওর চোখদুটোই সে কথার জবাব দিচ্ছে। রাহুল বলল, “চলো, সবকিছু নতুন করে শুরু করি।” তৃষা বলল, “চলো।” তারপর রাহুলের উদ্যত ঠোঁটদুটোকে মিশে যেতে দিল নিজের ঠোঁটদুটোতে। আর রাহুল নিজের ভালবাসা, নিজের কল্পনার আসল রূপটাকে চিনতে পেরে তৃপ্ত মনে নিজের শরীরটাকে মিশিয়ে দিল তৃষার শরীরের সাথে।
[/HIDE]
 

Users who are viewing this thread

Back
Top