What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

বন্দিনী (Completed) (1 Viewer)

নবম পর্ব-
সকালের নরম রোদ জানালার ফাঁক দিয়ে চুপিসারে ঘরে ঢুকে, ঘুমন্ত নীলিমার সারা শরীরে হাত বুলিয়ে দিয়ে গেল। রোদের নরম স্পর্শে ঘুম ভাঙল ওর। চোখ খুলেই বুঝতে পারল অন্যান্য দিনের চেয়ে আজ বেশ কিছুটা দেরী করেই ঘুম ভেঙেছে তার। কারণটাও ও গোটা শরীরটা দিয়ে বুঝতে পারছে। হালকা ব্যথা ছড়ানো শরীরে আড়মোড়া ভাঙল নীলিমা। আর তারপরেই ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় নিজের নগ্ন প্রতিবিম্ব দেখে লজ্জা পেল সে। রাতের অন্ধকারে সুমিতের কাছে নগ্ন হওয়াটা একটা স্বতন্ত্র, স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। কিন্তু দিনের আলোর সাথে সাথে নিজের সম্ভ্রমটাকেও ফিরে পেল নীলিমা। যদিও এই বাড়িতে তারা দুটি প্রাণী ছাড়া কেউ থাকেনা, তবুও আদিমতা রাতের অন্ধকারেই মানায়। দিনের আলোয় নয়। মেঝেয় অনাদরে পড়ে থাকা শাড়ি, ব্লাউজ ইত্যাদিগুলো তুলে নিয়ে পরে ফেলল নীলিমা। কাল রাতের সুখকর স্মৃতি রোমন্থনের সময় এখন ওর হাতে নেই। এখন ব্যস্ততার চূড়ান্ত সময়। সাত তাড়াতাড়ি ও বাথরুমে ঢুকে গেল ফ্রেশ হবার জন্য।
কিছুক্ষণ পর বাথরুম থেকে বেরিয়ে রান্নাঘরে চলে গেল। চা তৈরি করে নিয়ে এসে আবার বেডরুমে এল। সুমিত এখনও অকাতরে ঘুমাচ্ছে। কালকের উদ্দাম মিলনের পর জামাকাপড় বাহুল্য মনে করে কিছুই অঙ্গে তোলেনি। এভাবে জন্মদিনের পোষাকে সুমিতকে দিনের আলোয় দেখে সলজ্জ হাসি ফুটল নীলিমার মুখে। কাছে গিয়ে আলতো করে ধাক্কা দিল সুমিতকে। তারপর বলল, “সুমিত ওঠো, অনেক বেলা হয়ে গেছে। অফিস যেতে দেরী হয়ে যাবে।“ সুমিতের ঘুম ভাঙল। জিজ্ঞাসা করল, “ক’টা বাজে?” নীলিমা উত্তর দিল, “সাড়ে আটটা বাজতে যাচ্ছে।“ উত্তরটা শুনে ধড়ফড় করে উঠে বসল। বলল, “এতো দেরী হয়ে গেল। আজকে অফিস যেতে সত্যিই দেরী হয়ে যাবে।“ নীলিমা মুচকি হেসে বলল, “চা টা খেয়ে নাও। তার আগে গায়ে কিছু দাও। সারারাত রাত তো জন্মদিনের পোষাকে কাটিয়ে দিলে।“ নীলিমার কথাটা বুঝতে না পেরে সুমিত ওর মুখের দিকে তাকাল। মুখে দুষ্টু হাসি খেলিয়ে আয়নার দিকে ইশারা করল নীলিমা। আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজের অবস্থাটা বুঝতে পারল সুমিত। “Oh shit!”, বলে লাফিয়ে উঠে মেঝে থেকে পাজামাটা তুলে নিয়ে পরে নিল। সুমিতের কাণ্ড দেখে নীলিমা হাসতে লাগল। সুমিত নীলিমার দিকে রাগত দৃষ্টিতে তাকাল। তারপর এক চুমুকে চা টা শেষ করে ছুটল বাথরুমের দিকে।
সকাল সাড়ে ন’টা। এইমাত্র সুমিত অফিসে বেরিয়ে গেল। ব্যালকনি থেকে ওকে হাত নেড়ে ঘরে এল নীলিমা। এরপর গোটা দিন ওর অখণ্ড অবসর। সেই সন্ধ্যা পর্যন্ত। সুমিত বলে গেছে আজ নাইট শো-এ সিনেমা দেখতে যাবে। প্রতিদিন সুমিত অফিসে বেরিয়ে যাবার পর নীলিমা ধীরেসুস্থে বাড়ির কাজ গুছিয়ে নেয়। তারপরে স্নান করতে ঢোকে। আজও নিয়মের ব্যতিক্রম হল না। বাথরুমে ঢুকে দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করতেই একা হল নীলিমা। বাথরুমের এই ছোট্ট পরিসরে সে স্বাধীন। স্বতন্ত্র। নিজের ইচ্ছের মালিক। অন্যদিন সে তাড়াতাড়ি স্নান করে বেরিয়ে আসে। কিন্তু আজ তাড়াতাড়ি স্নান করার ইচ্ছা টের পাচ্ছে না নীলিমা। দেওয়াল জোড়া আয়নার সামনে ধীরপায়ে দাঁড়াল। আয়নাটা সুমিত জোর করে লাগিয়েছে। নীলিমার বারণ শোনেনি। আজ মনে হচ্ছে ভাগ্যিস শোনেনি। দেওয়াল জোড়া ‘নিজের’ মুখোমুখি হল নীলিমা। খুঁটিয়ে দেখতে লাগল নিজেকে। কোন বদল কি নজরে এল? বাহ্যিক কোন পরিবর্তন চোখে পড়বে না, সেটা ও ভালই জানে। বদল একটা হয়েছে। তবে বাইরে নয়। ভিতরে। নিজের অন্তরে।
ছোট ছোট অভ্যাসগুলো বদলাতে লেগেছে। খারাপলাগাগুলো রাতারাতি রঙ বদলে ভাললাগা হচ্ছে। রাতারাতি সব বদলে গেছে। তার ইচ্ছা, তার ভাবনা, তার সুমিত। সঙ্গে সে নিজে। একটা রাত যেন একটা যুগ। আজকের নতুন সকাল তার সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে নতুন ‘আমিকে’। বদলটা মনে মনে মেনে নিল নীলিমা। বদল যদি ভাল হয়, তবে তা সর্বদাই স্বাগত। বদলটা চাক্ষুস করতে হবে। আর তার জন্য নিজেকে খোলস ছেড়ে বের করতে হবে। ধীরেসুস্থে বুক থেকে শাড়ির আঁচলটা সরালো নীলিমা।
 
[HIDE]দশম পর্ব-[/HIDE][HIDE][/hide]​
[HIDE]
উফ্ কার মুখ দেখে উঠেছিলাম কে জানে। সকাল থেকে়ই মেজাজ বিগড়ে গেল রাহুলের। হাতে চা নিয়ে বসতে না বসতেই বউয়ের ফাটা রেকর্ড শুরু। সেই এক কথা। “কী কুক্ষণে যে বিয়েতে হ্যাঁ বলেছিলাম কে জানে। তখন কি আর জানি বাবা সাধ করে একটা ঢ্যাঁড়শের সঙ্গে আমাকে ঝুলিয়ে দেবার মতলব করছে। মুরোদ নেই একফোঁটা আবার নাকি বড় ফ্ল্যাট কিনবে? ও সাধ আর এ জীবনে মেটার নয়। এই পায়রার খোপেই পচতে হবে সারাজীবন।“ ইত্যাদি, ইত্যাদি। এই পাঁচবছরে এইসব শুনে শুনে কান পচে গেছে ওর। আগে রাগ হত, এ়খন হয়না। ভগবানের অশেষ দয়া। চামড়াটা গণ্ডারের না হলে এতদিনে পাগল হয়ে যেত সে।
বউয়ের ফালতু ভ্যাজভ্যাজানিতে কান না দিয়ে খবর কাগজটা খুলেছে সবে, এমন সময় সামনে বউয়ের কালান্তক মূর্তি এসে দাঁড়াল। বিনা প্ররোচনায় বাক্যবাণ শুরু। “বলি, সারা সকাল কাগজ মুখস্থ করলে পেট ভরবে তো? বাজারটা কী আমার বাবা এসে করে দিয়ে যাবে? কাগজ পড়ে আর বিদ্যে জাহির করতে হবেনা। ওটা এ জীবনে উচ্চমাধ্যমিকই থাকবে। তবু যদি নিজের বিদ্যেতে একটা চাকরী জোটাতে পারতে তবে বুঝতাম। ভাগ্যিস বাবা অফিসের বড়বাবুকে ধরে এই চাকরীটা জোগাড় করে দিয়েছিল, তাই রক্ষে। না হলে উপোস করে মরতে। সাধে কী আর বলি ঢ্যাড়শ। পাঁচ বছর হতে চলল, এখনও একটা ছেলেপুলে করতে পারল না। এমন পুরুষ মানুষ। যদি গিলেকুটে অফিস যেতে চাও, তো বাজারটা করে নিয়ে এসো।“ মুখের কাছে বাজারের ব্যাগটা ফেলে দিয়ে দুম দুম করে রান্নাঘরের দিকে রওনা হয়ে গেল তৃষা। ওর চলে যাওয়া দেখতে দেখতে অস্ফুটে মন্তব্য করল রাহুল, “হুম্, বাঁজার আবার মা হবার শখ।“ একঢোঁকে চা-রূপী ঠাণ্ডা চিরতার জলটাকে গলায় ঢেলে বাজারের ব্যাগটা তুলে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল ও।
বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তায় নেমে হাঁটতে শুরু করল। নিজের জীবনের ফেলে আসা পাঁচটা বছর তার কাছে খারাপ একটা স্বপ্ন। যে স্বপ্নটা এ জীবনে আর ভাঙার নয়। পড়াশুনায় ভাল ছেলে কোন কালেই সে ছিল না। প্রতিবার শেষের দিকে তার নাম থাকত। মাধ্যমিক দু’বারের চেষ্টায় টপকাবার পর উচ্চ মাধ্যমিকে তিনবার। তারপর পড়াশুনায় ইতি। চাকরীর বিফল চেষ্টা। তৃষার সাথে বিয়ের সম্বন্ধটা ছিল অনেকটা স্বপ্নের মত। কিছুটা সময় পর্যন্ত তো তাই ছিল। তৃষার বাবা ছিলেন বুদ্ধিমান। নিজের কালো, মোটা, মাধ্যমিক না টপকানো মেয়ের পক্ষে রাহুল ছিল রাজকুমার। সেই সময় রাহুলের দরকার ছিল একটা চাকরী, আর তৃষার বাবার প্রয়োজন ছিল একজন পাত্রের। প্রস্তাবটা আসে মেয়ের বাড়ির পক্ষ থেকেই। তৃষার বাবা নিজের পরিচিতি লাগিয়ে একটি বড় অফিসে রাহুলকে ঢুকিয়ে দেবার ব্যবস্থা করলেন। তবে শর্ত একটাই রাজত্ব পেতে হলে রাজকুমারীকে বিয়ে করতেই হবে। সেই সময় এই বিয়েতে না বলে একমাত্র চাকরীর আশাকে মুছে দেওয়ার স্পর্ধা রাহুলের ছিলনা। তাই রাহুল-তৃষার শুভ পরিণয়।
চাকরীতে পদটা ছোট হলেও কাজটা মন দিয়েই করত রাহুল। কোম্পানী খুশী হয়ে ওকে মুম্বাই ব্রাঞ্চে পাঠিয়ে দিল। মুম্বাই ব্রাঞ্চে মি. সুমিত সেনের আণ্ডারে কাজ করে চাপ কাকে বলে বুঝল রাহুল। গত কয়েক মাসে ওকে নিংড়ে নিয়েছে ওর বস্ সুমিত সেন। বয়সে প্রায় সমান হলেও সুমিতকে বেশ সমীহ করে চলে ও। বস্ মানুষটি এমনিতে খুব ভালো, কিন্তু কাজের বেলায় খুব শক্ত। কাজে অমনোযোগীতা তিনি একদম পছন্দ করেন না। তাই প্রতিদিনই বসের কাছে বকা খাওয়াটা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে ওর। প্রথম প্রথম বসের কেবিনে যেতে বেশ ভয় করতো। এখন অতটা করে না। বরং বেশ ভালোই লাগে। তার কারণটা অবশ্য অন্য। কারণটা মনে করতেই নিজের অজান্তেই একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলল রাহুল সরকার।
[/HIDE]
 
[HIDE]একাদশ পর্ব-[/HIDE][HIDE][/hide][HIDE][/hide]​
[HIDE]
অফিসে এসেও শান্তি নেই। চেয়ারে বসতে না বসতেই পিয়ন মনীশ এসে খবর দিল বস্ তাকে ডাকছে। খবরটা শুনেই বুকের মধ্যে হৃৎকম্প শুরু হয়ে গেল রাহুলের। কাজের শুরুতেই যদি বসের বকুনি খেতে হয় তবে সারাদিনটাই নষ্ট। কি জানি কী ভুল করেছি। ভাবতে ভাবতে বসের কেবিনের সামনে এসে দাঁড়াল। দরজায় টোকা দিয়ে বলল, “May I come in, sir?” ভিতর থেকে উত্তর এল, “Yes, come in.” দুরু দুরু বক্ষে দরজা ঠেলে কেবিনে ঢুকল ও। দেখল বস্ মনোযোগ দিয়ে একটা ফাইল দেখছেন। ওর দিকে না তাকিয়েই বললেন, “Sit down.” ভয়ে ভয়ে সামনের চেয়ারে বসল রাহুল।
বস্ একমনে ফাইলটা পড়ে যাচ্ছেন আর সামনে জবুথবু হয়ে বসে আছে ও। এমন সময় না চাইতেও ওর চোখটা আবার চলে গেল বসের টেবিলে রাখা ছবিটার দিকে। মনের সঙ্গে যুদ্ধ করে চোখটা অন্যদিকে ঘোরাল। কিন্তু ছবিটা চুম্বকের মত ওর মনকে টানছে। তাই চোখটা নিজের অজান্তেই চলে গেল ছবিটার দিকে। ফুসফুস নিংড়ে দীর্ঘশ্বাস পড়তে চাইল। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলাল ও। ভগবানের অশেষ দয়া। ভাগ্যিস বসের খেয়াল নেই। নাহলে আজই বসের সুন্দরী স্ত্রীর ছবির দিকে তাকিয়ে থাকার অপরাধে হয়তো গলাধাক্কা খেতে হত। ঠিক তখনই বস্ ফাইল থেকে মুখ তুলে ওর দিকে তাকালো। চমকে উঠে বসের দিকে চাইল রাহুল।
- “Are you fine, Mr. Rahul?”
- “Yes…yes sir, I’m fine.”
- “Good. শুনুন যে কারণে আপনাকে ডাকলাম।“ রাহুলের হৃৎস্পন্দন কয়েকশো গুণ বাড়িয়ে দিয়ে মোক্ষম সময়ে কথা থামালেন বস্।
কয়েক মুহুর্ত ওর টেনশনটাকে উপভোগ করার পর বস্ আবার বলতে শুরু করলেন, “গত কয়েক মাসে মুম্বাই ব্রাঞ্চে জয়েন করার পর থেকে আপনি সেলসের কাজগুলো দেখছিলেন। কিন্তু লক্ষ্য করে দেখছিলাম কাজে আপনার বিস্তর ভুল। এভাবে তো চলতে পারে না।“ আবার এক নাটকীয় পজ্। অসহ্য টেনশনে নিজেকে পাগল মনে হচ্ছে রাহুলের। অল্পক্ষণ চুপ থেকে আবার কথা শুরু হল। সেইজন্য কয়েকদিন আগে আমাদের কলকাতা ব্রাঞ্চে ফোন করছিলাম। ওরা জানাল সেলসে আপনি উইক হলেও ইংরাজীতে আপনি খুব স্ট্রং।“ সত্যিই মাত্র উচ্চমাধ্যমিক পাশ হলেও ইংরেজীতে দারুন পোক্ত রাহুল। “তাই আজ থেকে আর আপনাকে সেলসের কাজ করতে হবে না। ওটা অনীতা সামলে নেবে। আপনি বরং লেখালেখির দিকে চলে যান। এই ক্লায়েন্টদের চিঠি তৈরী করা, চিঠির উত্তর তৈরী, অ্যানুয়াল রিপোর্ট তৈরী ইত্যাদী। হালকা কাজ। আপনার অসুবিধা হবে না। তা হলেও কিছু প্রবলেম হলে আমাকে জানাবেন।“ রাহুল কোন উত্তর দিলনা। কেবল ঘাড় নেড়ে হ্যাঁ জানাল।
- “Good. তাহলে যান। মনীশ আপনাকে কিছু ফাইল দিয়ে আসবে। ওগুলো পড়ে রেডি করে একটা অ্যানুয়াল রিপোর্ট তৈরী করে আমাকে সাবমিট করবেন।“
কথা বলা শেষ করে বস্ আবার ফাইলে মন দিলেন। রাহুল কেবলমাত্র “Thanks” জানিয়ে বসের কেবিন থেকে বেরিয়ে এল। এই প্রথম ও বসের কাছ থেকে বকুনি না খেয়ে বের হল। চেয়ারে বসে একঢোঁকে পুরো জলের গ্লাসটা শেষ করে দম নিল ও। মনটা ভাল হয়ে গেল। সত্যিই আজ কার মুখ দেখে উঠেছিল কে জানে। নাকি বসের টেবিলে রাখা ছবিটার কারণেই এই অকস্মাৎ ভাগ্যবদল? ভাবনার অতলে তলিয়ে গেল রাহুল।
[/HIDE]
 
[HIDE]দ্বাদশ পর্ব-[/HIDE][HIDE][/hide][HIDE][/hide]​
[HIDE]
“তুমি যাকে ভালবাস
স্নানের ঘরে বাষ্পে ভাসো
তার জীবনে ঝড়.......”
মাথার উপর শ্রাবণের ধারার মত জল পড়লেই মনটা একছুটে চলে যায় অন্যকোথাও। প্রতিদিন এমন না হলেও আজ হচ্ছে তার সাথে। শাওয়ার চালু করে তলায় দাঁড়াতেই মনটা পালক হয়ে উড়ে গেল। জলের প্রতিটা বিন্দু স্পর্শ করছে ওকে। ভিজিয়ে তুলছে শরীরের প্রতিটা বাঁককে। জলের প্রতিটা ফোঁটা সমস্ত শরীরটা ভ্রমণ করে হারিয়ে যাচ্ছে পায়ের কাছে। ভিজে, সিক্ত শরীরটা শীতল বারিস্পর্শে কেঁপে কেঁপে উঠছে বারবার। জলের অবিরাম ধারার তলায় দাঁড়িয়ে থেকেও ধীরে ধীরে গরম হয়ে উঠছে শরীরটা। অদ্ভুত এক উলটপূরাণ! অন্যরকম একটা ইচ্ছে বাসা বাঁধছে মনের গভীরে। প্রবল একটা ইচ্ছে হচ্ছে নিজের যোনিদ্বারটাকে একবার স্পর্শ করার। “ছি: যতসব নোংরা চিন্তা,” ক্রমশ পিছু হটতে থাকা শুভচিন্তাটা মিনমিনে স্বরে বলল। “নোংরা কিসের? শরীরী আবেদনে সাড়া দেওয়াটা তো সুস্থতা, স্বাভাবিকতা। নোংরা হল কবে থেকে?” গর্জে উঠল নিজের মধ্যে থেকে ‘নতুন’ কেউ। এই দুইয়ের মাঝে কিংকর্তব্যবিমূঢ় নীলিমা।
অবশেষে গায়ের জোরে জিতল নতুনই। নিজের অজান্তেই আঙুল পৌঁছে গেল অভীষ্ট লক্ষ্যে। মুহুর্তের মধ্যে বদলে গেল ভাল-খারাপের সূক্ষ্ম সংজ্ঞাটা। নোংরা চিন্তা বদলে গেল শরীরী আবেদনে সাড়া দেওয়ায়। লজ্জা আর কুণ্ঠার বালির বাঁধ ভেঙে, ভেসে এল তীব্র সুখের চোরাস্রোত। সুখের সংজ্ঞাটার যেন বদল ঘটেছে। তাইতো সামান্য আঙুল চালনাতেই শরীরে বান ডাকল সুখের। সামান্য ঝর্ণার জলে সিক্ত পাহাড়ী রাস্তাটা বড়ই পিচ্ছিল। প্রতিমুহুর্তেই পিছলে পড়ার ভয়। আঙুলের সামনে উন্মুক্ত খাদ। যে খাদে পড়তে পারলেই নতুন দিগন্তে হারিয়ে যাবার হাতছানি। পিচ্ছিল রাস্তায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলল অবশ আঙুল। জেনেশুনে লাফ দিল অতল খাদের অন্ধকার গভীরে।
নিমেষে হারিয়ে গেল আঙুলটা। পাহাড়ী ঝর্ণার চোরাস্রোত ভিজিয়ে দিচ্ছে আঙুলের গোড়া পর্যন্ত। তীব্র সুখ ছড়িয়ে পড়ছে শরীরের প্রতিটা কোণায়। প্রতিটি অন্ধগলিতে। অন্ধকার গলির পিচ্ছিল পখ বেয়ে বারবার আনাগোনা করতে শুরু করল অবাধ্য আঙুলটা। চোখ খুলে রাখা যাচ্ছে না। স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকাটা যেন পৃথিবীর সবচেয়ে মুশকিল কাজ এই মুহুর্তে। দাঁড়িয়ে থাকা দুরূহ বুঝে বাথরুমের মেঝেতে আশ্রয় নিল সুখের আবেশে আটকে পড়া দেহটা। আঙুলটার ক্লান্তি নেই, বিরাম নেই। সমাপ্তী নেই তীব্র সুখেরও। অবিরল। অবিরাম। অবশেষে হার মানল শরীর। “আাআআআহহহহহহ......” তীব্র সুখের শীৎকার ধাক্কা খেল বাথরুমের চার দেওয়ালে। পাহাড়ী ঝর্ণা ততক্ষণে রূপ নিয়েছে খরস্রোতা নদীর। পাহাড়ী পথ ভেসে গেল মুহুর্তের মধ্যে। অবশ আঙুল অন্ধকার খাদ থেকে মাথা তুলল একটু একটু করে। অবশ দেহটা তখন আত্মনিয়ন্ত্রণের বিফল চেষ্টায় ব্যস্ত।
হুঁশ আর লজ্জা প্রায় একই সময়ে ফিরল ক্লান্ত দেহটাতে। পিচ্ছিল পাহাড়ী পথটাকে জল দিয়ে পরিষ্কার করে তবে শান্তি। আজকের স্নানপর্ব সত্যিই দীর্ঘতর হল। এই প্রথমবার। স্নানের শেষে তোয়ালে ঢাকা শরীরটাকে টানতে টানতে বাথরুম থেকে বের কর আনল নীলিমা। ঘরে সে একা। বেডরুমের জানালার ভারী পর্দাগুলো টেনে দিতেই মনের মধ্যে নিশ্চিন্ত ভাবটা এল। ড্রেসিংটেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তোয়ালেটা সরে গেল। আয়নায় একটু একটু করে ফুটে উঠছে এক নারী। তার রূপ, তার সৌন্দর্য, তার যৌবন নিয়ে সম্পূর্ণা এক নারী। সে আজকের নয়। সে সেই আদিম যুগের মানবী। যার পীনোদ্ধত বক্ষ ঢাকল কাঁচুলিতে। শরীর লুকাল রেশমী বস্ত্রখণ্ডের আড়ালে। বাহু ভরে উঠল কঙ্গনে। গ্রীবায় উঠল মণিমালা। কর্ণে কুন্তল। আর অর্ধসিক্ত কেশরাশি সেজে উঠল সুগন্ধী ফুলে। প্রেয়সীর সাজ হল সম্পূর্ণ।
হঠাৎ মোবাইলের ডাক অতীত থেকে বর্তমানে নিয়ে এল নীলিমাকে। চমকে উঠল ও। বিশ্বাঘাতকটার কথা মনেই ছিলনা। কয়েকঘন্টা নীরব খাকার পর আবার ডাক দিল তাকে। হাত বাড়িয়ে নিয়ে নিল বস্তুটাকে। নিয়মমতোই নতুন বার্তা উপস্থিত। “I’ve send a precious gift for you. Oblige me by accepting that.”
ক্রমশ.....
[/HIDE]
 

Users who are viewing this thread

Back
Top