What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

বন্দিনী (Completed) (2 Viewers)

ত্রয়োদশ পর্ব-
[HIDE]“আরে রাহুল, নয়া মোবাইল খরীদা, ঔর হমে দিখায়া তক্ নহী?!” চমকে উঠে সামনে তাকিয়ে হর্ষদকে দেখতে পেল রাহুল। অফিসে এখন লাঞ্চ টাইম চলছে। সবাই যে যার ডেস্কেতে বসে লাঞ্চ সারছে। ব্যতিক্রমী কেবল রাহুল। ও আজ টিফিন আনেনি। ক্যন্টিনে গিয়ে খাওয়ার ইচ্ছাটাও জাগছে না। তাই নিজের জায়গায় বসে কয়েকদিন আগেই কেনা নতুন মোবাইলটা ঘাঁটছিল একমনে। এমন সময় হঠাৎই হর্ষদের আগমণ। এই অফিসে বেশী কথা ও হর্ষদের সাথেই বলে। হিন্দীটা খুব সড়গড় না হওয়ায় ও অফিসে কারোর সাথেই খুব একটা কথা বলেনা। কিন্তু হর্ষদের কথাটা আলাদা। ওর থেকে বছর দু’য়েকের বড় হর্ষদ। কিন্তু ওর সাথে মেশে বন্ধুর মত। সবরকম ঠাট্টা ইয়ার্কি চলে দু’জনের মতে। ওর ভাঙা ভাঙা হিন্দী আর হর্ষদের তথৈবচ বাংলা কিন্তু ছাপ ফেলতে পারেনি ওদের বন্ধুত্বে।[/HIDE]​
[HIDE]
হর্ষদই প্রথম ওর কাছে এসে যেচে আলাপ করেছিল। এরপর থেকে ওদের সম্পর্ক গাঢ়ত্ব নিয়েছে। এখন এই পরবাসে হর্ষদই ওর Friend, Philosopher & Guide. তাই হর্ষদের কাছে ধরা পড়ে যাওয়ায় ও লজ্জা লজ্জা মুখ করে ওকে বসতে বলল। ও বসতে রাহুল বলল, “Sorry. তোমাকে জানানো হয়নি। এই তো গেল সপ্তাহে নিলাম।“ হর্ষদ হাত বাড়িয়ে বলল, “দেখু তো জারা, ক্যায়সা হ্যায়।“ প্রমাদ গুণলো রাহুল। রাহুলের ইতস্তত ভাব দেখে পরিস্থিতি বুঝতে পারল হর্ষদ। বলল, “সমঝ্ গয়া। কুছ ছুপা রহা হ্যায় মুঝসে। ঠিক হ্যায়। মত্ দিখা। লেকিন বতা তো সহি কি ক্যায়া চল্ রহা হ্যায়।“ হর্ষদের কথা শুনে মৃদু হাসল ও। তারপর জোর দিয়ে বলল, “আরে না, না। কিচ্ছু লুকাচ্ছি না। আসলে মনটা আজ তেমন ভাল নেই।“ হর্ষদ বলল, “কিঁউ বিবি নে ফিরসে তানা মারা?” রাহুলের বিষন্ন অভব্যক্তি পড়ে সত্যিটা বুঝতে অসুবিধা হল না হর্ষদের। পরিস্থিতিটা স্বাভাবিক করতে বলল, “ছোড় ইয়ার, ইয়ে সব্ বাতে। চল্ আজ পিকচার দেখনে যাতে হ্যায়। বড়িয়া এক্ মুভী আয়ী হ্যায়। ওহী দেখতে হ্যায়। ঔর মোবাইল কী পার্টী ভী বাকী হ্যায়। অফিসকে বাদ তৈয়ার রহনা। একসাথ নিকলেঙ্গে। ইয়াদ রাখনা।“ বলে হাসতে হাসতে চলে গেল হর্ষদ। কী সুন্দর পরিস্থিতিটাকে লঘু করে দিয়ে গেল।
যাওয়ার আগে পার্টীর কথা বলে গেল। পার্টী। শব্দটা কান দিয়ে ঢুকে ধাক্কা মারল মাথায়। মনে পড়ে গেল একটা পার্টীর কথা। যার কথা ও কোনদিন ভুলতে পারবে না। শত চেষ্টা করলেও না। কলকাতায় থাকাকালীন অফিস পার্টী কচ্চিৎ কদাচিৎ হত। আর হলেও সেগুলো এত একঘেয়ে আর বিরক্তিকর যে মন চাইত বেরিয়ে চলে আসতে। কিন্তু সাহসে কুলাত না। এককোণে বসে মদ গেলা আর কূটকচালি। কলিগের ষষ্ঠীপূজো। টলমল পায়ে ডিনার। গুড নাইট। ব্যাস। পার্টীর উপর ঘেন্না ধরে গেছে। তখন ও বেশ কিছুদিন হল মুম্বাই ব্রাঞ্চে জয়েন করেছে। হঠাৎই একদিন শুনল বস্ সুমিত সেন পার্টী দিচ্ছেন। কারণটা ওনার বিয়ে। মাস কয়েক আগে ওনার বিয়ে হয়েছে। তাও আবার পশ্চিমবঙ্গে। মুম্বাইতে থেকে বঙ্গললনাকে বিয়ে করার কারণটা তখন বুঝতে পারেনি রাহুল। পেরেছিল অনেক পরে। পার্টীতে গিয়ে। আর বুঝতে পেরে বাক্যহারা হয়ে গিয়েছিল ও।
হর্ষদ ওকে জানিয়েছিল বসের বিয়ের ব্যাখান। বিয়ের একমাসের মধ্যে ওনার মা মারা যান ক্যান্সারে। তারপর পুরানো বাড়ি ছেড়ে নতুন ফ্ল্যাটে শিফ্ট করছেন কয়েকদিন। এখন অফিসের সবাই বসকে অনুরোধ করেছিল পার্টী দেওয়ার জন্য। রাজী হয়ে যান তিনি। কাজের বাইরে মানুষটা কতটা দিলখোলা আর মিশুকে সেটা সেদিন পার্টীতে গিয়ে বুঝতে পেরেছিল। অফিসের বসের সঙ্গে মেলাতে পারেনি তাকে। যেন আলাদা দুটো মানুষ। দুটো আলাদা সত্তা। সত্যিই পার্টী করার মজা আর আনন্দ দুটোই পেয়েছিল সেদিন। বড় কোনও ব্যাঙ্কোয়েট হল ভাড়া করে রঙচঙে, কৃত্রিম পার্টী নয়। বরং নিজের নতুন ফ্ল্যাটের পরিসরে সব এমপ্লয়ীদের নিয়ে ঘরোয়া একটা পার্টী। সুরাপান থেকে নির্ভেজাল আড্ডা সবই ছিল। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত নয়। সবকিছুতেই পরিমিতির ছাপ ছিল সুস্পষ্ট। সবার সঙ্গে আড্ডা মারছিলেন বস্। তার সঙ্গেও কথা বলেছিলেন। হাতে ধরিয়ে দিয়ছিলেন রঙিন সুরাপাত্র। সেই প্রথমবার এমপ্লয়ীদের সাথে নিজের স্ত্রীর আলাপ আর পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন বস্। বর্তমানে অফিসে বসে থাকা রাহুলের মন কয়েক মাস আগের এক স্বর্ণালী সন্ধ্যার নেশায় মত্ত। ওর মুখের লেগে থাকা হাসিটা চওড়া হচ্ছে ক্রমে ক্রমে।
[/HIDE]
 
চতুর্দশ পর্ব-
[HIDE][/HIDE][HIDE][/hide]​
[HIDE]
“Guys, Let me introduce my better-half with you all. Meet my beautiful wife Neelima.” পার্টী তখন মধ্য গগণে। এমন সময় বলে উঠলেন বস্। পার্টীতে আসার ইচ্ছা একেবারেই ছিলনা রাহুলের। হর্ষদের পাল্লায় পড়ে আসতে হয় ওকে। আরবসাগর কাছেই বসের এই বিশাল বিলাসবহুল ফ্ল্যাট মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছিল ছাপোষা রাহুলের। 5BHKফ্ল্যাটের প্রতিটি কোণা, দেওয়ালে ঝুলতে থাকা প্রতিটা ছবি, জানালার ভারী পর্দা - সবেতেই সুরুচির ছাপ স্পষ্ট। সবেতেই ঝিলিক মারছে গৃহস্বামীর বৈভব। হর্ষদ ওকে জানিয়েছিল এই ফ্ল্যাটের মূল্য কোনমতেই দশ কোটির কম নয়। দশ কোটি!! চোখ ততক্ষণে কপালে উঠেছে ওর। এত বৈভবের মাঝে দাঁড়িয়ে অত্যন্ত নগন্য বলে মনে হচ্ছিল নিজেকে।

পার্টী ততক্ষণে শুরু হয়ে গেছে। অফিসের বেশীর ভাগ কর্মীই হাজির। রঙিন সুরাপাত্র হাতে বেয়ারাদের আনাগোনা। অনুজ্জ্বল আলো। হাল্কা, মিষ্টিসুরে গানের আওয়াজ। রঙিন তরলে আলতো চুমুক। পরিবেশটাই কেমন যেন নেশা ধরানো। বেয়ারার কাছ থেকে নেওয়া সুরাপাত্রে হালকা চুমুক দিতে দিতে পরিবেশটাকে উপভোগ করছিল ও। হর্ষদের তিন নম্বর চলছে। তাড়াহুড়ো কোন কালেই পছন্দ করে না রাহুল। নিজে বেসামাল হয়ে এই পার্টীর মজা নষ্ট করতে চায়না ও। নেশা যত ধীরে ধীরে হয় ততই তার গাঢ়ত্ব বাড়ে। চুপচাপ এককোণে বসে কলিগদের আনাগোনা, ইতস্তত বার্তালাপ শুনছিল ও। এমন সময় প্রবেশ গৃহস্বামীর। পার্টীর মূল হোতা। সুমিত সেন। বসের আগমণে সবাই চুপ। পরিবেশ মুহুর্তে গুমোট। গুমোট ভাব কাটালেন স্বয়ং বস্। উঁহু, ভুল বললাম। বস্ নয়। সুমিত। বসের খোলস সে আগেই ছেড়ে রেখেছিল। আজ সে সেই উদ্দাম সুমিত। “Relax guys. Let’s enjoy the party together.” বেয়ারার হাত থেকে সুরাপাত্র নিয়ে চেঁচিয়ে উঠল সুমিত, “Cheers!” অনেকগুলো গলা তার উত্তরে চেঁচিয়ে উঠল, “Cheers!”

মুহুর্তে পরিবেশ আগের মতোই লঘু। সুমিত সবার সঙ্গে বসে বার্তালাপ শুরু করল। পার্টীর বয়স বাড়ছে। বাড়ছে রাত। বাড়ছে নেশা। নেশা চড়েছে সবার মধ্যে। কারও অল্প। কারও বিস্তর। রাহুল এখনও মধ্যপন্থী। ও লক্ষ্য করল নেশা চাপতে শুরু করেছে সুমিতের মধ্যেও। এমন সময় সবাই চুপ। নির্বাক। নিশ্চল। সবার মত রাহুলও তাকাল। সেও নিশ্চুপ। অকস্মাৎ প্রবেশ এক নারীর। সুন্দরী এক নারী। তণ্বী। বইয়ের পাতায় পড়া বিশেষণগুলো এক মুহুর্তে উধাও হয়ে গেল ওর মাথা থেকে। কে ইনি? পার্টীতে ওঠা গুঞ্জনকে থামিয়ে দিয়ে সুমিত গিয়ে পাশে দাঁড়াল ওনার। বলল, “Guys, Let me introduce my better-half with you all. Meet my beautiful wife Neelima.” একমুহুর্তের নীরবতা। তারপর চারিদিক থেকে অভিনন্দনের ঝড়। রাহুলের অন্তর চাইছিল। কিন্তু ঠোঁট দুটো যেন অসাড়। গলাটা সাহারা মরুভূমি। হাতে ধরে রাখা রঙিন পাত্রটা যেন শতযোজন দূরের কোন বস্তু।

গলা শুকনো থাকলেও চোখ দুটো ভিজে যাচ্ছিল। শান্ত, স্নিগ্ধ রূপে। বসের বঙ্গললনাকে বিয়ের কারণ টের পাচ্ছে সে। শরীরটা কেমন করছে। কেমন একটা অস্বস্তি লাগছে। উঠে গিয়ে বাথরুমে চোখে, মুখে জলের ঝাপটা মারল। এবার ভাল লাগছে। বাথরুম থেকে বেরিয়ে ও গেল ব্যালকনিতে। আরবসাগরের ভিজে, নোনতা বাতাস ঝাপটা মারল মুখে। চোখ বুজে সেটাকে অনুভব করতে চাইল। কিন্তু নতুন এক বিপত্তি। চোখ বুজতেই হাজির তণ্বী নীলিমা। ধনুক-বক্র ভ্রু। কাজল টানা আয়ত চোখ। টিকালো নাক। পাতলা গোলাপী ঠোঁটে লেগে থাকা একচিলতে হাসি। ফর্সা রঙ। কোমর পর্যন্ত চুল। সুউচ্চ বুক। নাভীমূলের তলায় পরে থাকা কালো শাড়িটার আড়াল থেকে উঁকি মারা নির্মেদ পেট। সবমিলিয়ে ছোট্ট একটা আগুনের ফুলকি। যে ফুলকি মুহুর্তের অসাবধানতায় দাবানল হয়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে। পুড়িয়ে দিতে পারে সবুজ বনানীকে। দীর্ঘশ্বাস পড়ল একটা। হঠাৎ কাঁধের উপর চাপ পড়াতে চোখ খুলে ঘুরে তাকাল রাহুল। সামনে একরাশ বিস্ময় নিয়ে হর্ষদ দাঁড়িয়ে। “আরে রাহুল, ইঁহা ক্যাযা কর্ রহা হ্যায়? অন্দর চল্, বস্ তুঝে বুলা রহা হ্যায়।” হর্ষদের পিছন পিছন বাস্তবে ফিরে এল। সত্যিই কী? “আরে মি. রাহুল আপনি কোথায় ছিলেন? যাই হোক আলাপ করিয়ে দিই, he’s my new employee Mr. Rahul Sarkar. And Mr. Rahul meet my wife Neelima, Neelima Sen.” সুমিতের কথার উত্তরে মুখে এক টুকরো হাসি ছাড়া কিছুই দিতে পারল না ও। মালিক পত্নীর নমস্কারের বিনিময়ে নমস্কারের সঙ্গে কেবল, “Congratulation to you both for your marriage life.” ছাড়া আর কিছুই বলতে পারেনি সে। গভীর রাত্রে বাড়ি ফেরার পথে নিজেকে বেসামাল মনে হচ্ছিল। নিজেকে এত নেশাতুর মনে হচ্ছে কেন? তা কী কেবল রঙিন সুরার কারণে না কী.......

পাশের টেবিলে বাজতে থাকা ফোনের রিং রাহুলকে বর্তমানে ফিরিয়ে আনল। হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারল লাঞ্চ টাইম শেষের পথে। একটা জরুরী ফোন করার ছিল। এখনই করতে হবে। নাহলে দেরী হয়ে যাবে। পকেট থেকে নতুন মোবাইলটা বের করে নম্বর ডায়াল করতে লাগল রাহুল।
[/HIDE]
 
পঞ্চদশ পর্ব-
[HIDE]এ.সি.-র ঠাণ্ডা হাওয়াটা সারা অঙ্গে যেন জ্বালা ধরিয়ে দিচ্ছে। ঘরের চারটে দেওয়ালই যেন তার দিকে কয়েক পা এগিয়ে এসেছে। শরীরে কেমন যেন অস্বস্তি হচ্ছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে। ঘরটা যেন কয়েকগুণ বেশী অন্ধকার লাগছে। নিজেকে যেন বন্দিনী বলে মনে হচ্ছে। গলাটা শুকিয়ে কাঠ। চোখ মেলে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করছে না। তবুও একপ্রকার জোর করেই টিভির পর্দার দিকে তাকিয়ে আছে নীলিমা। প্রায় বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে আছে ও টিভির দিকে। নিষ্পলক। নিশ্চল। সময়টাও যেন থেমে গেছে। চারিদিক নিস্তব্ধ। আওয়াজ বলতে ওর নিজের হৃৎস্পন্দন। আর টিভি থেকে ভেসে আসা একটা হালকা শীৎকার।[/HIDE]​
[HIDE]
সর্বশেষ বার্তাটা ওকে কোন এক অনাকাঙ্খিত উপহার প্রাপ্তির সংবাদ জানিয়েছিল। বার্তাটা কয়েকবার পড়েও তার অর্থোদ্ধারে ব্যর্থ হয়েছিল সে। কোন গিফ্টের কথা বলছে ও? হঠাৎই ওকে চমকে দিয়ে দরজার কলিং বেলটা সুমিষ্ট স্বরে বেজে উঠল। এই সময় তো সুমিতের আসার কোন সম্ভাবনাই নেই। তবে কী কোন সেলসম্যান? হতে পারে। তবে এই ভরদুপুরে কোন সেলসম্যানের আগমণ বিস্ময়কর বইকি। ওকে চমকে দিয়ে বেলটা আরও দু’বার বেজে উঠল। তারপর সব চুপচাপ। অল্পক্ষণ অপেক্ষা করল ও। না, আর বেলের আওয়াজ হচ্ছে না। তবে কোন সেলসম্যানই হবে। দরজা না খোলাতে, চলে গেছে। মনের মধ্যে নিশ্চিন্ত ভাবটা আসার আগেই, ওর মোবাইলে নতুন ম্যাসেজ ঢুকল। “Open the door. And collect your gift.”
একবার ভাবল চুলোয় যাক গিফ্ট। দরজা খুলবে না। কিন্তু বিকালে ফেরার পর সুমিতের চোখে গিফ্টটি পড়ে গেলে কেলেঙ্কারীর শেষ থাকবে না। সুমিতের মনে সন্দেহের বীজটা বপণ করতে দেওয়া মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। দেখাই যাক না কী উপহার আছে ওর কপালে। আই-হোলে চোখ রেখে দরজার সামনে কাউকে না দেখতে পেয়ে কিছুটা হলেও নিশ্চিন্ত হল ও। দরজাটা খুলতেই সামনে একটা নিরীহ খাম পড়ে থাকতে দেখল। কী মনে করে খামটাকে তুলে নিয়ে ঘরে এল ও। খামটা খুলতেই হাতের তালুতে গড়িয়ে পড়ল একটা পেন ড্রাইভ। এরকম উপহার প্রাপ্তি ওর জীবনে প্রথম। এটা নিয়ে কী করবে ভেবে পেল না ও। তখনই এল বার্তারূপী নতুন আদেশ। “Connect the pen drive with your TV set. And enjoy the show.” শো! কোন শোয়ের কথা বলছে ও? মনের অবাক ভাবটা মনের মধ্যেই চেপে রেখে পেন ড্রাইভটা টিভির সাথে কানেক্ট করে সেটটা অন্ করল ও। কিছুক্ষণ সব অন্ধকার। তারপর নিকষ কালো অন্ধকারটা কেটে গিয়ে সামান্য নীলচে আলো ফুটে উঠল টিভির পর্দায়। সেই অল্প আলোতে নজরে এল একটা কামরা। দূর থেকে ভেসে আসছে গানের কলি।
আবছা অন্ধকারে সয়ে গেছে চোখদুটো। এখন সব পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। কামরাটা কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে। ধীরে ধীরে সবকিছুই পরিষ্কার হয়ে গেল ওর কাছে। টিভির পর্দায় দেখতে পাওয়া কামরটা, কামরার মধ্যের দুজনের ছায়ামূর্তী, একজন পুরুষ, অন্যজন নারী - সব কিছুই ওর ভীষণ, ভী়ষণ চেনা। আবছা আলো আঁধারিতেও চেনা যাচ্ছে ওদের বেডরুমটাকে। বোঝা যাচ্ছে সুমিতকে। আর নিজেকেও। কাল রাতের প্রতিটা মুহু্র্ত, প্রতিটি পদক্ষেপ ফুটে উঠছে টিভির পর্দায়। তীব্র ঘৃণায় টিভিটা অফ্ করে দিল ও। মাথার রগ্ টিপে ধরে বসে রইল কিছুক্ষণ। মাথাটা অসম্ভব ফাঁকা লাগছে। চিন্তাশক্তি লোপ পেয়েছে ইতিমধ্যে। চোখের সামনের দৃশ্যগুলো কাঁপছে। বাঁধ না মানা চোখের জল গাল বেয়ে চিবুক ছুঁই ছুঁই। হঠাৎ সরব হয়ে উঠল মোবাইলটা। না, এবারে আর ম্যাসেজ টোন নয়। বরং সরাসরি ফোনের রিং বাজছে। মোবাইলের পর্দায় সুমিতের নামটা দেখতে পাবে আশা করছিল। সেই আশাটাকে দলিত মথিত করে দিল Private Number লেখা কথাটা। এই প্রথমবার মনে হচ্ছে ধীরলয়ে বাজতে থাকা সেতারের সুরটা কানে তরল সীসা ঢেলে দিচ্ছে।
- “Hello.” কান্না চাপা গলায় বলল নীলিমা।
অপরদিকে কিছুক্ষণ মাত্রাতিরিক্ত নীরবতা। সে যেন মেপে নিচ্ছে পরিস্থিতিটাকে। তারপর ভরাট গলায় উত্তর এল, “Is this Mrs. Sen? I mean Mrs. Neelima Sen?”
- “Y…yes. But who are you?” কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞাসা করল নীলিমা। যদিও উত্তরটা ওর জানা।
ওর আশঙ্কাকে সত্যি করে জবাব এল, “It’s Meghnaad speaking.”
[/HIDE]
 
ষোড়শ পর্ব-
[HIDE] [/HIDE][HIDE][/hide]​
[HIDE]
কিছুক্ষণ একঘেয়ে নিস্তব্ধতা। যেন দুই পক্ষই মেপে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে একে অপরকে। অবশেষে নীরবতা ভাঙল। ভরাট গলায় ব্যঙ্গ ছুটে এল এদিকে। “So, how was the show, Mrs. Sen?” কোন কথা বলল না নীলিমা। আসলে লোকটার সঙ্গে কোন রকম বার্তালাপ চালাবার তাগিদ অনুভব করতে পারছিল না সে। তবুও কোনও এক অজানা কারণে ফোনটা ছাড়তেও পারছিল না। আসলে ও পরখ করে নিতে চাইছিল লোকটার স্পর্ধার সীমারেখাটাকে। তার নিরুত্তরের জবাবে ভেসে এল, “You like it. Don’t you?” সহ্যের সীমারেখাটা অনেক আগেই পেরিয়ে এসেছিল সে। তাই আর চুপ করে থাকতে পারল না। স্থান-কাল-পাত্র ভুলে চিৎকার করে উঠল সে, “How dare you talking with me like this? Do you know, I can complain in police against you?” ক্ষণিকের নীরবতা। তারপর ভেসে এল বরফ কঠিন কণ্ঠস্বর। “You may accuse only. You can’t prove anything. Can you?” এবার এপক্ষও ঝাঁপিয়ে পড়ল, “Yes, I can. I’ve proof. I’ve your pen drive. In which you capture and send me our private moment.” ফোনের উল্টো দিকে মৃদু হাসির শব্দ শোনা গেল। “I thought you’re intelligent. It seems not. You disappoint me.” কথাটার মর্মার্থ বুঝতে পারল না ও। “What do you mean?”
- “Let me clear it. What’s the proof that I’ve send you the pen drive. You don’t see me. You don’t know me either. So, how can you prove it?”
নীলিমা বুঝতে পারল সে একটা অদৃশ্য চোরাবালিতে আটকে পড়েছে। আর যতই সেখান থেকে বের হবার চেষ্টা করছে বা করবে ততই সে ডুবে যাচ্ছে। এইসব চিন্তার মাঝেও একটা খটকা মনে এল। লোকটা ভিডিওটা তুলল কীভাবে। সপ্তম তলার জানালার কার্ণিসে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার ভাবনাটা দারুণ। কিন্তু কাজটা কষ্ট কল্পিত। তবে কী.....? ভাবনা মনে আসতেই ও বেডরুমে এল। তন্ন তন্ন করে খুঁজতে লাগল ঘরের কোণায় কোণায়। কিন্তু অভীষ্ট বস্তুটি হাতে এল না। কিন্তু ও নিশ্চিত ছিল যে একটু খুঁজতেই লুকানো ক্যামেরাটা বেরিয়ে যাবে। যদিও ও বুঝতে পারছিল না যে ওটা ঘরেতে এল কীভাবে?
অপরদিক খেকে মৃদু তাচ্ছিল্য ধেয়ে এল। “You can’t find it, Mrs. Sen. It’s also invisible. Just like me.” নিজের রসিকতায় নিজেই হেসে উঠল মেঘনাদ।
- “But how?” হতাশা ঝরে পড়ছিল ওর গলায়।
- “That’s my little secret, Mrs. Sen. Let it be secret.”
- “What do you want? Why are you bothering me?”
- “Nothing, but you.”
আবার কয়েক মুহুর্তের অসহ্যকর নিস্তব্ধতা। লোকটার শেষের কথাগুলো নীলিমাকে বাকরুদ্ধ করে দিল। এতটা কল্পনা ও করে উঠতে পারেনি। ওর অবস্থাটা বুঝতে পেরেই হয়তো লোকটা আবার বলতে শুরু করল। “No, no. Don’t worry. I won’t even touch you. No. I want to play a little game. And I want you as my partner.”
- “What game? I can’t understand.”
- “I’ll. I’ve some fantasies. And want to fulfill those with you. It’s so simple. Isn’t it?”
- “I can’t understand what you are saying. What fantasies? And why would I play this game?”
- “That’s completely your choice, Mrs. Sen. If you don’t want, it’s ok. I simply put this video on internet. And you don’t know, this single video will make you a sensation and famous as well in virtual world.”
লোকটার স্পর্ধা প্রতি মুহুর্তে যেন বেড়েই চলছিল। তাই শেষ চেষ্টা করল ও। “Do you know who my husband is. He’s very reputed person. You don’t know him. He’s very powerful.
- “I know Mr. Sumit Sen very well. He’s regional manager of *** private limited company. He sets off at 9.30 am and returns at 6 pm. And he drives car himself. And do you know what’s he doing now? He’s busy in board meeting. And you know very well that either you go to police or tell your husband, I won’t waste time in killing your husband. And believe me, police can’t find me.”
বজ্রকঠিন শব্দগুলো শুনে একটা ঠাণ্ডা স্রোত নেমে এল ওর শিরদাঁড়া বেয়ে। না, না। তার যাই হোকনা কেন, সুমিতের কোন ক্ষতি সে হতে দেবেনা। একটা জিনিস পরিষ্কার,লোকটা তার এবং সুমিতের নাড়িনক্ষত্র জানে। একে বিশ্বাস করাটা মস্ত বড় ভুল হবে। লোকটা তাকে সত্যি সত্যিই চোরাবালিতে এনে ফেলেছে। যেখান থেকে বের হবার কোনও উপায় নেই। এখন একটাই রাস্তা। মেঘনাদ নিজে। তাকে হ্যাঁ বলা ছাড়া কোন রাস্তা নেই। দীর্ঘশ্বাসটাকে বুকে চেপে রেখে, কান্না ভেজা গলায় বলল নীলিমা, “Ok I’m ready.”
ক্রমশ.....
[/HIDE]
 
[HIDE]সপ্তদশ পর্ব-[/HIDE][HIDE][/hide][HIDE][/hide]​
[HIDE]
“Good. I like it.” ফোনের অপর পক্ষ থেকে মেঘনাদের গলা ভেসে এল। “Now listen, I’ll clear you about the rules of this game. First of all I’m the captain of this game. And you’re my partner. I’ll instruct you, how to play this game. And you have to follow my instructions. It’s so simple. Next, you can’t ask anything about the instruction. You can’t deny any instruction of your captain as well. If you do so, or you break any rules of this game then you’ll have punishment. And let me clear, your punishment can be brutal. So you can’t do anything except following the instructions. And the main point is, you can’t tell anything your husband about our game or your punishments. You have to be mum. And one more thing, I’ll send you the instructions through SMS. So don’t try to change your mobile number. This can be lead you to punishment. And you’ll be rewarded if you fulfill the instructions. Got you?”

একটানা বলে থামল মেঘনাদ। নীলিমা আস্তে আস্তে বলল, “Got it.” মেঘনাদ বলল, “Good. Now the game begins. Your first instruction is, take the pen drive to the bathroom.” নীলিমা কোন বাক্যব্যয় না করে পেন ড্রাইভটা নিয়ে বাথরুমে এল। বলল, “Now?” ওপার থেকে আদেশ ভেসে এল, “Flush it out.” ও পেন ড্রাইভটাকে কোমডের ফেলে দিয়ে ফ্লাশ করল। চোখের সামনে ওর একমাত্র আশাটাও জল দিয়ে ধুয়ে বেরিয়ে গেল। মেঘনাদের বিরুদ্ধে একমাত্র প্রমাণটাও হাতছাড়া হয়ে গেল। ওই পেন ড্রাইভটা যে তার বিপদের কারণ হতে পারে সেটা মেঘনাদ ভাল মতই জানত। তাই নীলিমাকে দিয়ে বিপদের বীজটাকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দিল সে। ফ্লাশের আওয়াজটাকে মন দিয়ে শুনল ও। এতক্ষণে নিশ্চিন্ত হল। কিছুক্ষণ আগেও তার মনে সন্দেহের অবকাশ ছিল যে, সে নীলিমাকে রাজী করাতে পারবে কীনা। কিন্তু এখন সে নিশ্চিন্ত। কারণ ও জানে পাখি পোষ মেনে গেছে। এখন শুধু খাঁচায় পোড়ার অপেক্ষা। আরেকটা কারণে সে নিশ্চিন্ত হল। পাখি যে ভয় পেয়েছে সেটা বোঝা গেল। ফ্লাশের ফাঁকা আওয়াজ করে তাকে ভড়কি দেবার সাহস ওর হবেনা। মাছ যখন কাঁটায় গেঁথেই গেছে, তখন ধীরেসুস্থে ডাঙায় তুললেই হল। তাছাড়া তাড়াহুড়ো করা মেঘনাদের ধাতে নেই।

ফ্লাশের শব্দ মিলিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে মেঘনাদ বলল, “Excellent. Now take some rest. You have a programe in the evening. Isn’t it? So enjoy it. Bye, for now.” কট্ আওয়াজ করে লাইনটা কেটে গেল। কিন্তু আরও কিছুক্ষণ হতবাকের মত দাঁড়িয়ে থাকার পর ও বেডরুমে ফিরে এল। সমস্ত পৃথিবীটা চোখের সামনে দুলছে। কাঁপছে। আমার সঙ্গেই কেন এমন হল? প্রশ্নটা বারবার মনের মধ্যে ধাক্কা খেতে লাগল। ফোনটা রেখে নতুন করে কান্নায় ভেঙে পড়ল নীলিমা।

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেছে। প্রতিদিনের মত রঙ ধরতে শুরু করেছে পশ্চিমাকাশে। মুঠো মুঠো রঙ বিলিয়ে আজকের মত ছুটির পথে সূর্য। আরবসাগরের তীরে ভীড় বাড়ছে পর্যটকদের। রাস্তায় অফিস ফেরতা গাড়ির লম্বা সারি। সবকিছুই প্রতিদিনের মত। তাই কী? ধীর পায়ে ব্যালকনিতে এসে বসল নীলিমা। চোখদুটো ফোলা আর লাল। কান্নাপর্ব অনেকক্ষণ ধরে চলেছে। চোখের সামনে দৃশ্যগুলো প্রতিদিনের মত বদলাচ্ছে। আকাশটা অকাল হোলীতে ব্যস্ত। কিন্তু তার উদাশ, শূণ্য দৃষ্টিতে ধরা পড়ছে না কিছুই। কিছুই দাগ কাটছে না তার মনে। ধীরে, ধীরে একটু একটু করে ফুরিয়ে এল দিনের আলো। একটু আগের রঙিন আকাশটা এখন তার সব রঙ হারিয়ে ফ্যাকাশে, কালচে। একটু পরেই কালো অন্ধকারটা ঝাঁপিয়ে পড়বে তার বুকে। কেড়ে নেবে আলোর শেষ নিশানাটুকু। আস্তে আস্তে গোটা আকাশটা অসহায়ের মত ধরা দেবে নিকষ কালো অন্ধকারের কাছে। আর আকাশের সমস্ত রঙ, সমস্ত আলো কেড়ে নিয়ে অন্ধকার তাকে করে তুলবে নিজের মত কালো। কিন্তু আবার সেই অন্ধকারকে ফিকে করে উঠবে নতুন সূর্য। যার চোখ রাঙানিতে পালাবার পথ পাবে না অন্ধকার। আঁধারের শেষে নতুন দিনের নতুন আলো, নতুন রঙ খেলা করবে আকাশের বুকে। তার জীবনেও কী ফুটবে কখনও নতুন আলো? ধরবে নতুন রঙ? নীলিমার মনে প্রশ্নচিহ্ন এঁকে দিয়ে আকাশটা মুখ লুকালো নিকষ কালো অন্ধকারের বুকে। অন্ধকারে ধরা দেওয়া কালো মূর্তীটার ফুসফুস নিংড়ে বেরিয়ে এল একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস।
[/HIDE]
 
[HIDE]অষ্টদশ পর্ব-[/HIDE][HIDE][/hide]​
[HIDE]
সময় বয়ে যাচ্ছে। শো যেকোন সময় শুরু হয়ে যাবে কিন্তু নীলিমা এখনও তৈরী হয়নি। ও দশ মিনিটের মধ্যে তৈরী হয়ে গেছে। কিন্তু প্রায় আধঘন্টা হতে চলল, বেডরুমের দরজা বন্ধ করে কি যে এত সাজছে ভগবানই জানে। বিরক্ত সহকারে দু’বার রিস্ট ওয়াচের দিকে তাকাল সুমিত। না, এবার তাড়া লাগাতে হবে। নাহলে সেজেগুজে আর সিনেমা দেখতে যেতে হবেনা, ঘরেই বসে থাকতে হবে। এদিকে আজকাল ওর চালচলন ঠিক মাথায় ঢুকছে না সুমিতের। তার চেনা নীলিমাটা কেমন যেন পাল্টে যাচ্ছে। আগে অফিস ফেরতা সুমিতকে স্বাগত জানানোর জন্য দরজার কাছেই অপেক্ষমান থাকত সে। কিন্তু এখন সেসব আর হয়না। এই যেমন আজকে বেল বাজিয়ে বাজিয়ে হাত ব্যথা হয়ে গেল কিন্তু দরজা খোলার নাম নেই। তাই বাধ্য হয়ে যখন ও আগের দিনের মত ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলতে যাবে এমন সময় দরজা খুলল। ঘরে ঢুকে অবাক হয়ে গেল সুমিত। গোটা ফ্ল্যাট অন্ধকার। একটাও আলো জ্বলছে না। আগে এমন কখন হয়নি। সুইচ টিপে আলো জ্বালালো। একি ও এখনও তৈরী হয়নি! আগে সিনেমা বা রেস্টুরেন্টে খেতে যাবার প্রোগ্রাম হলে, তার অফিস থেকে ফেরার আগেই তৈরী হয়ে থাকত। চোখেমুখে উজ্জ্বলতা খেলা করত। কিন্তু আজ সেসব কিছুই চোখে পড়ল না সুমিতের।
কেমন যেন গা ছাড়া, আলুথালু লাগছে ওকে। তবে কী ওর শরীর খারাপ? জিজ্ঞাসা করেছিল সুমিত। স্পষ্ট কোন জবাব পায়নি। সিনেমা যাবার প্রশ্নে নিমরাজী হল। সেটা কতটা নিজের ইচ্ছেয় আর কতটা তার মন রাখার জন্য সেটা বুঝতে পারেনি ও। তারপর ওকে জলখাবার খেতে দিয়ে তৈরী হতে গেছে। ইতিমধ্যে ও জলখাবার খেয়ে তৈরী হয়ে গেছে, কিন্তু ওর এখনও দেখা নেই। দরজায় টোকা দিল ও। ভিতর থেকে ভেসে এল, “কে?” প্রশ্নটার অর্থ বোধগম্য হলনা ওর। কে মানে? এঘরে তারা দুজন ছাড়া তৃতীয় কোন সত্তার কথা জানা নেই তার। তাহলে এমন প্রশ্নের অর্থ কী? যাই হোক ও উত্তর দিল, “আমি। সুমিত। তোমার হল? দেরী হয়ে যাচ্ছে যে।” কিছুক্ষণ কোন উত্তর নেই। তারপর ভিতর থেকে উত্তর এল, “ভিতরে এস।“ মাথামুণ্ডু কিছুই বোঝা যাচ্ছেনা। ও দরজাটা খুলে ভিতরে ঢুকল। আর ঢুকেই সামনে যে দৃশ্যটা চোখে পড়ল, তা দেখে বাক্যহারা হয়ে গেল সুমিত।
মেঘনাদের আবির্ভাবের পর থেকেই, তার নিজের জীবনের উপর থেকে নিজেই রাশটা হারিয়ে ফেলছে, সেটা ভালভাবেই বুঝতে শুরু করেছে নীলিমা। দুপুরের সেই ফোনালাপের পর থেকে নীলিমা ভীষণ ভয় পেয়ে গেছে। মন চাইছে সুমিতকে সব খুলে বলি। কিন্তু পারছে না। অজানা একটা আতঙ্ক বুকের মাঝে থাবা গেড়ে বসেছে। যেটাকে শতচেষ্টা করেও স্থানচ্যুত করতে পারছে না। মনে হচ্ছে যেন কোন এক অদৃশ্য নজরদারের ঘেরাটোপে সে বন্দিনী। দুপুরের পর থেকে জীবনটাকে কেমন যেন অসহনীয় বলে মনে হচ্ছে। এমন সময় সিনেমা দেখতে যাওয়টা নিজের কাছেই বাহুল্যতা বলে মনে হচ্ছে। তবুও একপ্রকার দায়ে পড়ে ওকে রাজী হতে হয়েছে। তাও সুমিতের কথা ভেবে রাজী হয়েছে। না হলে ওর সন্দেহ হত। যেটা ও কখনই চায় না। বেডরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করল ও। আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। খুঁটিয়ে দেখল নিজেকে। না, চিনতে পারছে না কয়েকহাত দূরে দাঁড়ানো নিজেকে। সবকিছু কেমন যেন পালটে গেছে। নিজেকে কেমন যেন অচেনা মনে হচ্ছে। আয়নার প্রতিবিম্বটা নীলিমা সেনের নয়। অন্য কারোর। হঠাৎ ফোনে নতুন বার্তারূপী নির্দেশ এল। দীর্ঘশ্বাসটাকে বুকের মধ্যে চেপে রেখে মোবাইলটা হাতে তুলে নিল। “Your hubby is being very Impatient. Calm (or cum) him down.”
[/HIDE]
 
[HIDE]ঊনবিংশ পর্ব-[/HIDE][HIDE][/hide]​
[HIDE]
ঘরে ঢুকেই সামনের দৃশ্যটা দেখে হাঁ হয়ে গেল সুমিত। ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে নীলিমা। দরজার দিকে পিছন ফিরে। সুমিত কেবল ওর পিছন দিকটাই দেখতে পাচ্ছে। দৃশ্যটা আপাতভাবে সাধারণ মনে হলেও, তার মধ্যে অভিনবত্ব আছে। নীলিমা আয়নার দিকে তাকিয়ে কানে দুল পরছে। কিন্তু দৃশ্যটা চোখে পড়তেই সুমিতের ঘাম ছোটার মত অবস্থা। কারণ টিউব লাইটের সাদাটে আলোয় পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে ওকে। তিন হাত দূর থেকে দৃশ্যটা হজম করার চেষ্টা করছিল ও। প্রায় বিস্ফারিত চোখে দেখল নীলিমা তৈরী হচ্ছে। কিন্তু এ কী তৈরী হয়েছে ও!! কারণ অনেক চেষ্টা করেও ওর সর্বাঙ্গে এক টুকরো সুতোও খুঁজে পেলনা সুমিত। নীলিমা সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে!
একে দেরী হচ্ছে বলে বেশ খানিকটা বিরক্তই ছিল। তারপর নীলিমা ওকে যখন ঘরের ভিতর ডাকে তখন অনেকটাই অবাক হয়েছিল ও। কারণ নীলিমার অভ্যাসই হচ্ছে একান্তে তৈরী হওয়া। তখন সবারই প্রবেশ নিষিদ্ধ। এমন কী সুমিতেরও। বিয়ের পর থেকেই একটা জিনিস লক্ষ্য করে এসেছে সে। সর্বগুণসম্পন্না হওয়া সত্ত্বেও তার সুন্দরী স্ত্রীর একটি মাত্র দোষ। সে বড় মুখচোরা। বিয়ের এক বছর হতে চলল, অথচ নীলিমা তার সঙ্গে খোলা মনে মিশতে পারল না। কোথায় যেন সঙ্কোচের একটা পাতলা প্রাচীর মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে তাদের দুজনের মাঝে। যেটাকে শতচেষ্টাতেও একচুলও সরাতে পারেনি। তাই যতটা ইচ্ছা ততটা একান্ত করে পেতে পারেনি ওকে। কিন্তু তা বলে ও কখনোই বাধা পায়নি। সবেতেই নীরব সায় আছে নীলিমার। কিন্তু একটা প্রচ্ছন্ন শীতলতা রয়ে যায় সবকিছুতে। মিলনেও। ভালবাসাতেও। কিন্তু সুমিত চায় সে এই শীতলতা কাটিয়ে উঠুক। সেও হয়ে উঠুক তার মতই উদ্দাম। ঊচ্ছল। ভালবাসায় সঙ্কোচের কোনও স্থান নেই। এটা বিশ্বাস করে সুমিত। কিন্তু আজও সেটা ওকে বুঝিয়ে উঠতে পারেনি।
এর জন্য সুমিত নীলিমার রক্ষণশীল পরিবারকেই অনেকাংশে দায়ী করে। ওর মনে লজ্জা ও সঙ্কোচের বীজ বপণ করার দায়ভার একমাত্র তাদেরই। তাই আজও নীলিমা তার সামনে সহজ হয়ে ওঠেনি। অবিশ্বাস্য হলেও কথাটা সত্যি যে, সুমিত এখনও তার স্ত্রীকে কখনোই নগ্ন দেখেনি। তার প্রধান কারণ নীলিমা নিজে। প্রতিদিন রাতে ঘরের আলো নিভিয়ে তবে মিলনোদ্যতা হয় সে। নাইট ল্যাম্পের মরা আলোতেও নগ্ন হওয়াতে তার তীব্র অনীহা। তাই এতদিনের কল্পনার রূপটা হঠাৎ করে জীবন্ত হয়ে তার সামনে এসে দাঁড়ানোয় হতবাক হয়ে গিয়েছিল সে। অবাক চোখে পান করছিল নিজের গুরুনিতম্বীনী স্ত্রীর রূপসুধা। অন্যভাবে ধরা দিতে চাইছে ও। সে কী জেগে আছে? নাকী তার চোখের সামনের দৃশ্যটা নিছকই কোন স্বপ্ন। নিজেকে চিমটি কেটে পরীক্ষা করার ইচ্ছেটা নিজের মনেই অবদমিত করল ও। কারণ এটা যদি স্বপ্ন হয়, তবে এ স্বপ্ন চিরকালীন হোক, এটাই সে চায়।
কয়েকমুহুর্ত বেকুবের মত তাকিয়ে থাকার পর হুঁশ ফিরল সুমিতের। অস্ফুট স্বরে ডাকল, “নীলিমা......” ঘাড় ঘুরিয়ে তার দিকে তাকাল ও। ঠোঁটে ঝুলে থাকা হাসিটাই কেবল পূর্বপরিচিত লাগল এই মুহুর্তে। বাকী সবই অচেনা। এই ঘর, এই দৃশ্য, সামনে দাঁড়িয়ে থাকা নারীমূর্তিটিও। “ও, তুমি এসেছো। ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন, এদিকে এসো।“ লাস্যময়ী ভঙ্গীতে তার দিকে ঘুরে দাঁড়লো ও। আহ্বান সত্ত্বেও এগিয়ে যেতে পারল না সে। পা দুটো যেন সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানো। সময় যেন ধীরগতিপ্রাপ্ত। বাহ্যিক দুনিয়া এখন ব্রাত্য ওর কাছে। সবকিছু মিথ্যা। সত্য কেবল সে আর অদূরে দাঁড়ানো নীলিমা। ঠিক নীলিমা নয়। যেন কোন দক্ষ কারিগরের দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার পর তৈরী, কোন এক পাথরের দেবীমূর্তি। অদ্ভুতভাবে নগ্নতা প্রকাশ করছে তার শরীরের পেলবতা। আবার সেইসাথে পাথুরে কাঠিন্যতাও বজায় আছে প্রতিটা অঙ্গে। নিষ্পলক তাকিয়ে আছে সুমিত। চোখদুটোতে জ্বালা ধরাচ্ছে নগ্ন সৌন্দর্য্য। টিউব লাইটের আলো প্রতিফলিত হচ্ছে তার থেকে।
আলো ঠিকরে পড়ছে তার অঙ্গ থেকে। সেই আলোতে জ্বলজ্বল করছে স্তন-বিভাজিকায় ঝুলতে থাকা আহ্লাদী লকেটটা। সামান্য অঙ্গচালনাতে আহ্লাদে দোলা খাচ্ছে সে। নাভীমূলসহ ক্ষীণকটিদেশকে আগলে রেখেছে সূবর্ণ বিছাটা। গোড়ালিতে সুর তুলছে নূপুর। হাতের চুড়িগুলো রিনরিন করে জাহির করছে নিজেদের। তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখ ব্যথা করছে। তবু পলক পড়ছে না চোখের। মৃদু ঝড় তুলে তার দিকে এগিয়ে গেল নীলিমা। পুরুষের মুখোমুখি হল নারী। কয়েকমুহুর্তের নিস্তব্ধতা। সময়টাও যেন কোনও এক অদৃশ্য ফ্রেমে বাঁধা পড়েছে। দুজনের চোখ একে অপরের দিকে নিবদ্ধ। নিষ্পলক। অবিচল। গোটা ঘরে এখন কেবল গাঢ় হয়ে আসা দুটো নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে।
[/HIDE]
 
[HIDE]কুড়ি পর্ব-[/HIDE][HIDE][/hide]​
[HIDE]
“অব্ বোল্, ক্যায়া বাত হ্যায়?” নামী কোম্পানীর এক ফুড কোর্টে মুখোমুখি বসে হর্ষদ আর রাহুল। একজনের মনে যখন হাজারো প্রশ্নের ঢেউয়ের পরে ঢেউ উঠছে, তখন অন্যজনের মুখে স্থিমিত একটা হাসি। অফিস ছুটির পর ওরা দুজন সোজা এই মলে এসেছে। প্রথমে কিছু আহার, তারপর সিনেমা। ওরা প্রতিবারেই এখানেই আসে। ছাপোষা চাকুরে বাঙালী সন্তানের পক্ষে ব্যাপারটা লাগামছাড়া হলেও, ও নিজে খুব একটা গায়ে মাখে বলে মনে হয়না। হয়তো সেটা হর্ষদের সঙ্গদোষের কারণেও হতে পারে। আজকের ট্রিটটা পুরোটাই তার ঘাড় দিয়ে যাবে জেনেও রাহুলের মনটা শান্ত। তার কারণটা ভিন্ন। হর্ষদ কিছু একটা আন্দাজ করতে পারছে। কিন্তু সবটা নয়। তাই সবটা জানার করণেই এই ব্যবস্থা। রাহুলও তার মনের কথাটা বুঝতে পারছে। কিন্তু কিছু বলছে না। পরিস্থিতিটাকে উপভোগ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
অফিস থেকে ওরা একসঙ্গে বেরিয়েছিল। পারতপক্ষে ওরা বাসে করে মলে আসে। আজ রাহুল আগে থেকেই অনলাইনে ক্যাব বুক করে রেখেছিল। ব্যাপারটায় প্রথম খটকা লাগে হর্ষদের। ভ্রু কুঁচকে তাকিয়েছিল ওর দিকে। কিছু তো একটা ব্যাপার আছে। তবে সেটা যতক্ষণ ও নিজে মুখে না জানাচ্ছে, ততক্ষণ জানা যাবেনা। ফুড কোর্টে এসে হর্ষদ গেছে অর্ডার দিতে। ফাঁকা একটা টেবিল দখল করে বসল রাহুল। উফ্ দিন গেল বটে একটা! শুরু হয়েছিল বউয়ের মুখ ঝামটা খেয়ে। শেষ হতে যাচ্ছে এই ঝাঁ চকচকে ফুডকোর্টে খাবার খেয়ে আর সিনেমা দেখে। কার মুখ দেখে উঠেছিল কে জানে? কথাটা বলতেই ছবিটা মনের মধ্যে ভেসে উঠল। ছবি। একটা ছবি একজন জলজ্যান্ত মানুষকে এমনভাবে তাড়িয়ে বেড়াতে পারে তা কী কেউ জানত? বসের কেবিনে রাখা ছবিটা যেন ওকে চুম্বকের মত আকর্ষণ করে। দুনির্বার আকাঙ্খায় পতঙ্গ যেমন জেনেবুঝে আগুনে ঝাঁপ দেয়, এখন তার অবস্থাও অনেকটা সেইরকমই।
ছবিটা দেখলেই কেমন যেন একটা নেশার উদ্রেক ঘটে মনের মধ্যে। কেমন যেন একটা ঘোর লেগে যায়। মোহময়ী হাসিটার দিকে তাকিয়ে দুনিয়া ভুলে যায় সে। অবশ্য সে সুযোগ খুব কমই আসে তার কাছে। কারণ বিনা কারণে কেবিনে এমপ্লয়ীদের ডেকে এনে, তাদের সঙ্গে খোশগল্প করা বা তাদের ঘন্টার পর ঘন্টা বসিয়ে রাখা, তার বসের একদমই স্বভাববিরুদ্ধ। তবুও কাজের আলোচনার মাঝে দু এক মুহুর্ত ছবিটার দিকে না তাকালে মনে শান্তি পায়না সে। ওই ছবিটার দিকে তাকালে মনে হয়, চোখদুটো যেন তার দিকেই নিবদ্ধ। মনে হয় একটা গভীর রহস্য লুকিয়ে আছে চোখ দুটোর গভীরে। যার তল পাওয়া সাধারণ মানুষের অসাধ্যতম কাজ। আর হাসির কথা তো আগেই বলেছি। আর শুধু ছবি কেন, ছবির মানুষটাও অদ্বিতীয়া। এখনও চোখ বুজলে পার্টীর সেই মনমুগ্ধকর রূপ ধরা দেয় ওর মনের আয়নায়।
মনের ব্যবস্থাটা বেশ ভালো। শুধু চোখ বোজো। আর যতটা পারো কল্পনার ডানা ভাসিয়ে দাও। কোনও বাধা নেই। কোনও পিছুটান নেই। কেবল তুমি আর তোমার অপার কল্পনা। সেই কল্পনার রঙ কখনোও লাল। কখনোও সবুজ। কখনোও বা নীল। নীল। তার প্রিয় রঙ। তার কল্পনার রঙ। তার ভালবাসার রঙ। সেই রঙে সেজে ওঠে তার কল্পনা। ছোটবেলায় ছবি আঁকতে আর ছবিতে রঙ করতে খুব ভালবাসতো ও। প্যাস্টেল দিয়ে ফুটিয়ে তুলত সাদা কাগজের বুকে রঙিন স্বপ্ন। অনেকদিন আঁকা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ইদানিং আবার শুরু করেছে। তবে এবার খাতায় নয়, মনের কাগজে। মনের দুধ সাদা পাতায় কল্পনার রঙে একটু একটু করে ফুটে ওঠে ছবি। ছোটবেলার থেকে অনেক অনেক বেশী রঙিন হয় তার স্বপ্ন। রামধনুর সাতটা রঙে সেজে ওঠে তার কল্পনা। আরোও আরোও মোহময়ী হয় তার রূপ। শ্রাবণের ঘন কালো মেঘ হয় তার কোমর পর্যন্ত লম্বা ঘন চুল। বিকালের নরম কনে-দেখা রোদ হয়ে ওঠে তার দেহের রঙ। দীঘির শান্ত জল ধরা দেয় তার চোখে। গোলাপের পাপড়ি হেসে ওঠে তার ঠোঁট হয়়ে। পরিপূর্ণতা পায় তার রূপ। তার সৌন্দর্য্য। তার যৌবন।
দীর্ঘশ্বাসটা বুকের খাঁচায় ধাক্কা খেয়ে হারিয়ে গেল কোথাও। ততক্ষণে একরাশ খাবার হাতে ফিরে এসেছে হর্যদ। টেবিলে খাবারগুলো রেখে চটপট ভাগ করে ফেলল নিজেদের মধ্যে। এতক্ষণে খেয়াল পড়ল পেটের মধ্যে ডন বৈঠক করতে থাকা ইঁদুরগুলোর উপরে। দুজনেই খেতে ব্যস্ত। কিছুক্ষণ ওর দিকে নীরব চাহনি মেলে প্রশ্নটা করেই ফেলল হর্ষদ। “অব্ বোল্, ক্যায়া বাত হ্যায়?” প্রশ্নটা শুনে মুচকি হাসি খেলে গেল ওর ঠোঁটে। অল্পক্ষণ নীরব থেকে ধীরে সুস্থে রাহুল বলল, “I’m in love.”
ক্রমশ......
[/HIDE]
 

Users who are viewing this thread

Back
Top