What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

বন্দিনী (Completed) (2 Viewers)

একুশ পর্ব-
নূপুরের সুমিষ্ট স্বর আর চুড়ির রিনরিনে আওয়াজ সুমিতের বাস্তব জ্ঞান ফিরিয়ে আনল। সামনে জলজ্যান্ত দাবানল দাঁড়িয়ে। অবাক চোখে তার রূপসুধা পান করতে লাগল ও। পারফিরমের গন্ধ আছড়ে পড়ছে নাকে। নেশাটা গড়ে উঠছে একটু একটু করে। মুখের উপর ওর গরম নিঃশ্বাস। চোখে একটা দুষ্টু হাসি। পেলব হাতগুলো দিয়ে ওর গলাটা জড়িয়ে ধরল। ওর পুরুষালি বুকে নিষ্পেষিত হচ্ছে নরম মাংসপিণ্ড দুটো। কিন্তু কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। কারোরই। হঠাৎ করে এত গরম লাগছে কেন?! জামাটা গোটাটা ভিজে ডাব। অস্ফুট স্বরে বলতে গেল, “নীলি.......” অর্দ্ধোচারিত কথাগুলো ঠোঁটেই আটকে দিল নরম একটা আঙুল। চুপ করে গেল ও। এরপর আর কীই বা বলার থাকতে পারে? পরের মুহুর্তেই ওকে আরাম দিয়ে জামার বোতামগুলো খুলে ফেলল ত্রস্ত আঙুলগুলো। নির্লোম বুকে এলোমেলো, অদৃশ্য আলপনা এঁকে দিচ্ছে সেগুলো।
এর পরের দায়িত্ব ঠোঁটের। মুহুর্মুহু আছড়ে পড়তে লাগল চুম্বনের ঝড়। এলেমেলো, অবাধ্য চুলগুলোকে পোষ মানানো অসাধ্য কাজ। প্যান্টের ভিতর মাথা তুলে দাঁড়াতে চাইছে উত্তুঙ্গ পুরুষাকার। নরম ঠোঁটের স্পর্শ তখন নাভীমূল ছুঁইছুঁই। গতকাল রাতের কী মধুর প্রতিশোধ। কী অদ্ভুত পুনরাবৃত্তি। শরীরের প্রতিটি ইঞ্চি দিয়ে ও মেপে নিতে চাইছিল সুখের প্রতিটি পরিসর। ঠোঁট নাভীমূল ছুঁতেই ছোট্ট শীৎকার খুঁজে নিল তার বেরোবার পথ। প্যান্টের জিপ টেনে নামাতেই মাথা তুলে দাঁড়াল পুরুষত্ব। নরম হাতের স্পর্শে সাপের মত ফুঁসছে সে। চুড়ির রিনরিনে স্বরে শুরু হল মৈথুন। মন তখন শান্ত। শরীরে অশান্তির বীজ। চামড়াটা উপর নীচ করতেই বেরিয়ে এল জল। পিচ্ছিল হতে শুরু করেছে সে নিজেও। এক শরীরের তাপ ছড়িয়ে পড়ছে অন্যটায়। অনভ্যস্ত আঙুল খুঁজে নিল তার পথ।
পিচ্ছিল হয়ে উঠেছে যোনিদ্বার। সেই পিচ্ছিলতা ভিজিয়ে তুলছে ঊরুসন্ধিকে। খাড়া হয়ে ওঠা ভগাঙ্কুর মাথা তুলে বলছে, “স্পর্শ করো আমায়। ডেকে আনো শরীরে সুখের জোয়ার।” তার ডাকে সাড়া দিলেই বিপদ। কিন্তু শরীর কবেই বা মনের কথা শুনেছে? ভীতু আঙুল স্পর্শ করল তাকে। সত্যি করেই শরীরে ভেসে এল অনাবিল আনন্দ। মেঝেয় হাঁটু মুড়ে বসা শরীরের ব্যস্ত হাতদুটো তখন দুটো শরীরকে দিচ্ছে অফুরন্ত আরাম। গতকাল রাতের স্মৃতি কড়া নাড়ছে মনের দরজায়। চোখের সামনে প্রতি পলে বাড়তে থাকা পুরুষ যন্ত্রটিকে মুখে নেওয়ার ইচ্ছা বাড়ছে। বাধা না মানা শরীরটা আছড়ে পড়ল। একবারেই মুখগহ্বরে প্রবেশ করল আমূল। গতকালের মত আর চাপ দিতে হলনা। স্বাদ পাওয়া শরীর মাথা আগুপিছু করে নিজেই মন্থন করতে লাগল সুখ সমুদ্র। উল্টোদিকে ভীতু আঙুল ততক্ষণে অনেকাংশে সাহসী। তার সাহসী পদক্ষেপ ও বুঝতে পারছে গোটা শরীর দিয়ে। জাগছে শরীর। দুটোই।
পরিণতির পথে দুজনেই। প্রথম হার মানল স্ত্রী শরীর। তিরতিরে নোনতা জল ভিজিয়ে তুলছে জংঘা। বিরাম নেই মুখের। অবিরাম তার গতি। শুধু যাওয়া আর আসা। প্রবেশ ও প্রস্থান। অবশেষে সুখের চূড়ান্ত পরিণতি। মুখগহ্বরে আমূল লিঙ্গ স্থাপনের পর বিস্ফোরণ। মুখগহ্বর ভাসিয়ে প্রেমরস তখন চিবুক অতিক্রান্ত। ক্লান্ত শরীর দুটোতে তখন অবিরাম সুখ। বিচ্ছিন্ন হল শরীর দুটো। একটু একটু হুঁশ ফিরে এল শরীর দুটোতে। টিকটিক করতে থাকা দেওয়াল ঘড়ি জানান দিচ্ছে মাঝখানে আধঘন্টা সময় অতিক্রান্ত।
 
[HIDE]বাইশ পর্ব-[/HIDE][HIDE][/hide]​
[HIDE]
১৭ই জুলাই, ২০১৬, রাত ১১টা ৪০মিনিট- আজ অনেকদিন পর লিখতে বসলাম। লেখার অভ্যাস প্রায় চলে গেছে। কিন্তু মন চাইছিল কিছু লিখি। তাই ডায়েরী বের করে লিখতে বসেছি। বিয়ের পরে প্রথম প্রথম এখানে এসে ডায়েরী লিখতাম। তারপর আস্তে আস্তে সেসব বন্ধ হয়ে যায়। পুরানো তারিখ দেখছি প্রায় আটমাস পুরানো। অর্থাৎ এ ফ্ল্যাটে আসার আগে। একদিক দিয়ে এ ফ্ল্যাটে আজই আমার প্রথম ডায়েরী লেখা। গত একবছরে আমার জীবনটা আমূল বদলে গেছে। কোথায় পশ্চিমবঙ্গের ছোট্ট শহরতলী, আর কোথায় এই বাণিজ্য নগরী। মাঝে মাঝে মনে হয় যে স্বপ্ন দেখছি না তো? দামী কোনও স্বপ্ন। এই প্রবাসে এখানে আমার একটাই বন্ধু। সে হল আমার সামনে গর্জন করতে থাকা আরবসাগর। আমি সময় পেলেই ব্যালকনিতে এসে বসি। সামনে আরবসাগর তার বিশালত্ব নিয়ে অনবরত ঝাঁপ দিতে থাকে সৈকতের বুকে। এখন যেমন গোটা সৈকত অন্ধকারে মোড়া। মাঝে মাঝে সমুদ্রের ফসফরাস শোভিত ফেনাগুলো তটের বুকে আলপনা এঁকে যাচ্ছে। সুমিত বেডরুমে ঘুমাচ্ছে। আর আমি ব্যালকনিতে একা বসে আছি আর ডায়েরী লেখার পুরানো অভ্যাসটাকে ঝালিয়ে নিচ্ছি।
আজ মনে হচ্ছে অনেকদিন পর যেন নিজের আত্মার সাথে কথা বলছি। একটা সময় পর্যন্ত ডায়েরী আমার কাছে তাই-ই ছিল। কত ছোটবেলায় মা মারা গেছে তা মনে নেই। বিধবা পিসির কাছে মানুষ। বাবা খুব ব্যস্ত থাকতো। আমাকে দেওয়ার মত সময় বাবার কাছে থাকত না। তখন খুব অভিমান হত। এখন বুঝতে পারি মায়ের স্মৃতি বাবাকে কাজে ব্যস্ত থাকতে বাধ্য করেছিল। জীবনের চলার পথে তোমার হাতটাকে ধরার মত একটা শক্ত হাত সব সময়ই প্রয়োজন। যাইহোক ডায়েরী লেখার শুরু বাবার হাত ধরেই। বাবাই বুঝিয়েছিল ডায়েরীই হতে পারে আমার একমাত্র সাথী। ছোটবেলায় অনেক বন্ধু ছিল, খেলার সাথী ছিল। কিন্তু তাদের সাথে অতটা অন্তরঙ্গতা অনুভব করে উঠিনি, যতটা আমার ডায়েরীর সঙ্গে অনুভব করতাম। সময়ের সাথে সেটা বেড়েছিল বৈ কমেনি। একটা সময়ে এসে ডায়েরীই হয়ে উঠেছিল আমার বন্ধু, সাথী সবকিছু। ক্রমে ক্রমে আমার আত্মার একটা অংশ হয়ে উঠছিল। সবকিছু খুঁটিনাটির সাথে জড়িয়ে যাচ্ছিল সে। আমার হাসি, কান্না, আনন্দ, দুঃখ, রাগ, অভিমান সবেরই নীরব সাক্ষী থাকত সে। আমার মনের সব কথা, সব লুকানো ইচ্ছা সবই জানাতাম তাকে। নির্দ্বিধায়।
বিয়ের পর এই প্রবাসেও তাকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু নতুন জীবন ছিনিয়ে নিয়েছিল আমার পুরাতন বন্ধুকে। আমার সত্তাকে। মানিয়ে নিচ্ছিলাম নিজেকে এই নতুন জীবনে। নতুন জীবন। নতুন সঙ্গী। নতুন দায়িত্ব। এই নতুনত্বের ঠেলায় হারিয়ে যেতে বসছিল সেই পুরাতন আমিটা। নতুন করে গড়ে উঠছিল নতুন এক আমি। কিন্তু এই নতুন জীবনে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারছিলাম না। মন থেকে মেনে নিতে পারছিলাম না সুমিতের উদ্দামতাকে। কেমন যেন মাত্রাছাড়া মনে হত সেগুলোকে। গুঁটিয়ে নিয়েছিলাম নিজেকে। কিন্তু তা বলে সুমিতকে না বলিনি কখনো। বাধা দিইনি ওকে। ওর প্রত্যেক ডাকে সাড়া দিয়েছি। কিন্তু মন থেকে নয়। কতকটা দায়িত্বের খাতিরে। কিন্তু আমার লজ্জা, আমার সম্ভ্রম প্রতিবার মনে করিয়ে দিয়েছে আমার নিজস্বতাকে। তাই প্রতিবার, প্রতি পদক্ষেপে নিজেকে কেবল পুতুল মনে হতো।
কিন্তু কখনোই নিজেকে সস্তা মনে হয়নি। এখন যেমন মনে হচ্ছে। কেন জানিনা আমি যা ভাবছি, যা কিছু করছি, তাতে সুমিত আমাকে সস্তা ভাবছে। ছোট ভাবছে।আমি আমার স্বামীর চোখে নীচু হয়ে যাচ্ছি। আর এইসবের জন্য দায়ী হচ্ছে একজন। মেঘনাদ। কালবৈশাখী প্রবেশ করেছে আমার জীবনে। আর খড়কুটির মত উড়িয়ে নিয়ে চলেছে। আর আমিও সেই স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়েছি। দেখা যাক কোথায় গিয়ে এই যাত্রা শেষ হয় আমার।
[/HIDE]
 
[HIDE]তেইশ পর্ব-[/HIDE][HIDE][/hide]​
[HIDE]
বাড়ি ফেরার পথে প্রচণ্ড হাসি পাচ্ছিল ওর। তাই মনে মনে একচোট হেসে নিল রাহুল। অনেক চেষ্টাতেও যখন ওর থেকে নামটা জানতে পারল না, তখন হর্ষদের মুখটা দেখার মত হয়েছিল। জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকাল ও। পূর্ণগতিতে ছুটে চলেছে যানটি। তার গন্তব্যের দিকে। গন্তব্য। সত্যিই কী তাই? ওর তা মনে হয়না। সেই এক মুখ। সেই এক উক্তি। সেই এক ব্যবহার। মাঝে মাঝে মনে হয় এসব ছেড়ে ছুড়ে হারিয়ে যাই কোথাও। যেখানে সবাই তোমার কাছে অপরিচিত। তুমি তাদের কাছে অন্য একটা মানুষ। আলাদা একটা সত্তা। মাঝে মধ্যে উদ্ভট সব খেয়াল চাপে ওর মাথায়। কখনো ওর মনে হয়, আচ্ছা, আমি যদি রাহুল না হয়ে যদি অন্য কেউ হতাম। আলাদা একটা মানুষ। অন্য একটা ব্যক্তিত্ত্ব। যার সঙ্গে রাহুলের কোনও মিল নেই। সেই মানুষটা খুব রাগী। একগুঁয়ে। যেটা করবে বলে ভাবে, সেটা করার সামর্থ রাখে। সেই মানুষটা এমন এমন কাজ করার কথা ভাবে যেটা রাহুলের কল্পনার অতীত।
সেই মানুষটার একটা ছবি আঁকা আছে তার মনের পাতায়। বেশ লম্বা, চওড়া, পেটানো চেহারার সুপুরুষ একটা মানুষ। অনেকটা হিন্দী সিনেমার কাঁচের দেওয়াল ভেঙ্গে এন্ট্রি মারা হিরোর মত। হিরোর মত দেখতে হলে কী হবে। তার চিন্তা ভাবনা ভিলেনের থেকেও ভয়ঙ্কর। সে সময়ে সময়ে এমন এমন চিন্তা ভাবনা করে যে রাহুল রীতিমত ভয় পেয়ে যায়। কখনো কখনো ওর মনে হয় অন্যকে ভয় দেখিয়ে মানুষটা খুশী হয়। আনন্দ পায়। সত্যি কথা বলতে কী মানুষটাকে বেশ ভয় পায় রাহুল। ও সবসময়ই চায় মানুষটা অনন্তকাল ধরে ঘুমিয়ে থাকুক তার মনের ভিতরে। তার ঘুম ভাঙলে বড়ই বিপদ। কারণ সে কখন কী করবে তা বোঝা ভগবানেরও অসাধ্য। অবসর সময়ে বসে আবোল তাবোল ভাবতে খুব ভাল লাগে ওর। আগে যখন কলকাতায় থাকত, তখন প্রতিদিন নিয়ম করে রাতের খাওয়ার পর চেয়ার নিয়ে বসত জানালার পাশে। জানালার শিকগুলোর উল্টোদিকে রাতের কালো আকাশটা তার বিশালত্ব নিয়ে থাকত। আর ও অবাক চোখে সেই বিশালত্বকে নিজের অন্তরে গুছিয়ে নেবার চেষ্টা করত।
ওর মনে হত রাতের আকাশটা যেন কোন এক নারীর প্রিয় কোন শাড়ি। আর রাতের অন্ধকারে ঝিকমিক করতে থাকা তারাগুলো সেই শাড়ির গায়ে লেগে থাকা হীরকখণ্ড। ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে যেত সেই বিশাল আকাশের ক্ষুদ্র একটা রূপ প্রত্যক্ষ করতে করতে। সময় যেন যেন ধীরলয়ে বইত। মধ্যরাত্রির নিস্তব্ধতা চারিদিক থেকে ঘিরে ধরত ওকে। একটু আলো আর অনেকটা অন্ধকার। মৃদুমন্দ বয়ে যাওয়া বাতাস। আর নিশাচর পাখির কর্কশ ডাক। সব মিলিয়ে অন্য একটা জগৎ। আর সে নিজে সেই জগতে হারিয়ে যাওয়া একটা মানুষ। কেমন যেন নেশা ধরানো সময়। আর সেই নেশায় মাতাল হয়ে ওঠা। তন্ময় হয়ে তাকিয়ে থাকতে থাকতে সময়ের হিসাব ভুলে যেত ও। রাত্রির গভীরতাকে বাহুল্যতা বলে মনে হত। তারপর কাঁধে নরম হাতের স্পর্শে ঘোর ভাঙত ওর। তাকিয়ে পাশে নিজের নববিবাহিতা স্ত্রীকে দেখতে পেত। “অনেক রাত হল। এবার শুতে চলো।” তার অনুযোগটাকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে কাছে টেনে নিত প্রিয়াকে। লম্বা চুলের মিষ্টি সুগন্ধে নতুন করে নেশা উঠত জমে। নারী শরীরের নরম স্পর্শে আড় ভাঙ্গত পুরুষত্ব। ভেজা ঠোঁটের চুম্বনে হারিয়ে যেত শরীর। ব্যস্ত হাত খুঁজে নিত তার লক্ষ্য। ব্যথা খুঁজে নিত শরীর। নখের আঁচড় বসত পিঠে। দাঁতের আলগা কামড় বুকে। আবছা অন্ধকারে কাপড়ের খোলস ছেড়ে বের হত শরীর দুটো।
কালবৈশাখীর ঝড় বয়ে যেত তাতে। চুম্বনের মাদকতা। স্পর্শের আচরণ। মন্থনের উন্মাদনা। বাহ্যজ্ঞানহারা শরীর দুটো মিলেমিশে এক হয়ে যেত একে অপরের সাথে। কালনাগিনীর মত নারী শরীরটা পেঁচিয়ে ধরত পুরুষকে। কামোত্তোজনায় খাড়া পুংদণ্ড আন্দাজে হাতড়ে বেড়াত তার গন্তব্য। মুচকি হেসে তাকে বিপদের মধ্যে ঠেলে দিত নারী। হালকা শীৎকার দিয়ে নিজের মধ্যে আহ্বান জানাত পুরুষকে। চেনা পথ বেয়ে সুদূর গন্তব্যে পৌঁছে যেত পুরুষ। জানালার ধারে, চেয়ারের উপর দুটো ব্যস্ত শরীর। কেবল উপর আর নীচ। আগু আর পিছু। সুখ আর আরাম। আরোও আরোও গতি। পূর্ণগতিতে গন্তব্যে পৌঁছাত শরীর দুটো। প্রায় একই সঙ্গে। পুরুষের বুকে ক্লান্তিতে মাথা রাখত নারী। তার ঘেমে ওঠা শরীরে ইতিউতি ঘুরছে আঙুল। আঁকিবুঁকি কাটছে। একসময় নারী বলত, “এবার শুতে চলো।” আলাদা হত শরীর দুটো। চ্যাটচ্যাটে ক্লেদ গায়ে মেখেই বিছানায় শুতে যেত দুজনে।
“হামলোগ্ পৌঁছ গয়ে সাহাব।” ড্রাইভারের ডাকে হুঁশ ফিরল রাহুলের। সম্বিত ফিরতেই ভাড়া মিটিয়ে নেমে পড়ল। গলির মুখ থেকে হাঁটতে শুরু করল সে। অতীত দিনের রঙিন স্বপ্নের কয়েক ফোঁটা তখনও লেগে আছে তার চোখে। তবে তার ঘোর কাটতে খুব বেশীক্ষণ সময় লাগল না। বেলের আওয়াজে বিরক্ত মুখে দরজা খুলল তৃষা। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে একরাশ প্রশ্ন বাণ ধেয়ে এল তার দিকে। “কটা বাজে খেয়াল আছে? কোন চুলোয় ছিলে শুনি? রাতটাতো সেখানেই কাটিয়ে আসতে পারতে।........”
[/HIDE]
 
[HIDE]চব্বিশ পর্ব-[/HIDE][HIDE][/hide][HIDE][/hide]​
[HIDE]
“ ওগো বৃষ্টি আমার চোখের পাতা ছুঁয়ো না,
আমার এতো সাধের কান্নার দাগ ধুয়ো না....... ”
আজ সকাল থেকেই আকাশের মন খুবই খারাপ। ঘন কালো মেঘের চাদর জড়িয়ে মুখ লুকিয়েছে। আলসেমি পেয়েছে সূর্যেরও। সকাল থেকে দেখা নেই তারও। আর বৃষ্টি? তার কথা যত কম বলা যায় ততই ভালো। ছিঁচকাঁদুনে মেয়ের মত সেই যে ভোররাত থেকে কান্না শুরু করেছে, এখনও তার বিরাম নেই। জানালার কাঁচে অবিরাম বৃষ্টির ঝংকার। আর সেই বৃষ্টির ফাঁক দিয়ে গা বাঁচিয়ে এক চিলতে ময়লা আলো ঢুকছে ঘরে। যেটা ঘরটাকে আলোকিত করার চেয়ে অন্ধকারই করে তুলছে বেশী। ঠাণ্ডা একটা বাতাস বন্ধ জানালার কাঁচে ধাক্কা খেয়ে ফিরে যাচ্ছে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে। এমন একটা সকালে খুব ভোরে ঘুম ভাঙল নীলিমার। চোখে লেগে থাকা ঘুম। আর আধখানা স্বপ্ন। যেটা দেখতে দেখতে ঘুম ভাঙল ওর। স্বপ্নে দেখছিল ও আর সুমিত একটা নির্জন দ্বীপে হারিয়ে গেছে। কাছেপিঠে কেউ কোত্থাও নেই। সময়টা গোধুলি। সূর্যাস্ত সমাগত। ওরা দুজনে একে অপরের হাত ধরে পশ্চিমদিকে হারিয়ে যাওয়া সূর্যের দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ ওদের তন্ময়তা ছিঁড়েখুঁড়ে দিয়ে উঠল কালবৈশাখী। উত্তরের সামান্য কালো একটা মেঘ কখন যে এতবড় ঝড়ের রূপ নিয়েছে তা হুঁশ ছিলনা ওদের কারোর। ঝড় শুরু হতেই দুজন দুদিকে ছিটকে পড়ল। ও আর সুমিতকে দেখতে পাচ্ছেনা। ও গায়ের জোরে সুমিতকে ডাকার চেষ্টা করল। কিন্তু পারল না। গলা দিয়ে একটা শব্দও বের করা দুঃসাধ্য কাজ। কোনও অদৃশ্য বলশালী হাত ওর মুখ চেপে ধরে আছে। ও প্রাণপণে চেষ্টা করছে মুখ থেকে হাতটা সরাবার। কিন্তু পারছে না। সেই যুদ্ধের মাঝেই ঘুমটা ভেঙে গেল।
চোখ থেকে ঘুমের রেশটা কাটতে বেশ কিছুটা সময় লাগল। ও জানালার দিকে তাকিয়ে আধফোটা ভোরের আলোতে বৃষ্টির ফোঁটাগুলোকে দেখতে পেল। ছোট্ট একটা আড়মোড়া ভেঙে বিছানায় উঠে বসল। বুক থেকে সরে যাওয়া অবাধ্য আঁচলটাকে আবার যথাস্থানে ফিরিয়ে আনল। দেওয়াল ঘড়ি জানাচ্ছে এখন সময় পাঁচটা বেজে বাইশ। এত সকালে ঘুম ভাঙেনা কখনও। কিন্তু আজ ভেঙেছে। আবার শুতে যাওয়া অর্থহীন। গা থেকে চাদরটা সরিয়ে উঠে দাঁড়াল। তাকিয়ে দেখল সুমিতের তখন মধ্যরাত্রি। চাদরটাকে ওর গায়ে ভাল করে চাপা দিয়ে ও ব্যালকনিতে এল। বৃষ্টির লয় এখন মধ্যম। কিন্তু তীব্রতা পূর্ববৎ। আঁচলটাকে ভাল করে গায়ে জড়িয়ে নিয়ে বাইরের দিকে তাকাল। আধফোটা আলোয় বৃষ্টিস্নাত শহরটাকে একদম অন্যরকম লাগছে। বৃষ্টিতে ভিজে তার রূপ হয়েছে মনোহর। তরতাজা। কালো পিচের রাস্তাগুলো জলে ভিজে ফিরে পেয়েছে তার আদি শ্যামল কালো রূপ। দূরে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলো মনের আনন্দে ভিজছে। ডালপালা মেলে বৃষ্টির প্রতিটা ফোঁটাকে পড়তে দিচ্ছে নিজের গায়ে। রাস্তা জনশূণ্য। সমুদ্রতটও তথৈবচ। কেবল আরবসাগরের নিরন্তর ঢেউ বৃষ্টির সাথে পাল্লা দিয়ে ভিজিয়ে তুলছে বালুচর। এই পরবাসে বৃষ্টি মনে করিয়ে দিচ্ছিল ওর নিজের জন্মভূমির কথা। নিজের শিকড়ের কথা।
যখন ও ছোট ছিল তখন বৃষ্টিতে ভিজতে খুব ইচ্ছা করত। কিন্তু কোন না কোন কারণে তা হয়ে ওঠেনি। আজ খুব ইচ্ছা করছে ভিজতে। কিন্তু সুমিত কী ভাববে? ওকে পাগল ঠাওরাবে না তো? ভিজতে না পারি তো কি বৃষ্টিটাকে স্পর্শ তো করতে পারি। ভেবে একটা হাত বাড়িয়ে দিল সামনের দিকে। মুহুর্তের মধ্যে হাতটা ভিজে গেল। একটা ঠাণ্ডা শিরশিরানি ভাব বয়ে গেল গোটা শরীর জুড়ে। মনের মধ্যে একটা অদম্য ইচ্ছা পাক খেয়ে উঠছে। কিন্তু সেটাকে মনের মধ্যেই চাপা দেওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। এখন বৃষ্টিতে ভিজতে গেলে সুমিত ওকে নির্ঘাত পাগল ঠাওরাবে। নাঃ, দরকার নেই এসব ঝামেলায়। তার চেয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বৃষ্টির এই অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করা যাক। বৃষ্টির বেগ সমান তালে চলছে। ধীরে ধীরে দিনের আলো ফুটতে শুরু করল। রাস্তায় একটা একটা করে মানুষজনের দেখা পাওয়া গেল। আস্তে আস্তে একটা নতুন দিনের সূচনা হয়ে গেল। সেই এক কাজ। সেই এক ব্যস্ততা। সেই দশটা-পাঁচটার ডিউটি। সেই সারা দিনের অক্লান্ত ছোটাছুটি। সেই অখণ্ড একাকিত্ব। দিনের শেষে বিছানায় শুয়ে নির্ভাবনার ঘুম। একটা দিনের শেষ। আবার একটা দিনের শুরু।
কিছুক্ষণের মধ্যে বৃষ্টির বেগ কমে আসতে লাগল। পাল্লা দিয়ে বাড়তে লাগল ওর মন খারাপ। বারবার মনে হচ্ছে হঠাৎ করে কোনও পুরানো বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ভালো করে আলাপ শুরু করার আগেই সে বিদায় নিচ্ছে। কিন্তু তার উপর রাগ করা নিস্ফল। তাই নীলিমা ধীরপায়ে ঘরে ফিরে এল। সুমিত এখনও অঘোরে ঘুমাচ্ছে। ও বাথরুমে ঢুকে গেল। সময়ের সাথে সাথে ব্যস্ততা ফিরে এল প্রতিদিনের মত। ঘরের সমস্ত কাজ মিটিয়ে চা করে এনে সুমিতকে ঘুম থেকে তুলল। সুমিতকে খাবার দিল। সুমিত অফিস বেরিয়ে গেলে বাকী কাজ মিটিয়ে স্নানটাও সেরে নিল। কিন্তু কাজের ফাঁকে ফাঁকে ওর দৃষ্টি ছিল আকাশের দিকে। কিন্তু বৃষ্টি থেমে গিয়েছিল। বরঞ্চ বেলার দিকে মেঘের ফাঁক দিয়ে টুকরো টুকরো মরা আলো উঠল। দুপুরে আজ কিছুতেই ঘুম আসছিল না। অভ্যাসবশত ব্যালকনিতে গিয়ে বসল। দেখল আকাশে আবার মেঘেদের আনাগোনা শুরু হয়ে গেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই মেঘেদের দলভারী হয়ে গেল। মেঘেদের ষড়যন্ত্রে পিছু হটল আকাশ। ওকে চমকে দিয়ে বিকট শব্দে বাজ পড়ল কোথাও। মুহুর্তের মধ্যেই ঝেঁপে নামল বৃষ্টি। সেই সঙ্গে ফিরে এল পুরানো একটা আনন্দ। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই হাতে ধরা মোবাইলটায় নতুন বার্তার প্রবেশ ঘটল। এখন আর অতটা ভয় লাগেনা। ব্যাপারটা কেমন যেন গা সওয়া হয়ে যাচ্ছে। অপার কৌতুহলে বার্তাটা পড়ল নীলিমা। “Have you ever taken shower in rain? If not, then try it now.”
ক্রমশ.......
[/HIDE]
 
[HIDE]পঁচিশ পর্ব-[/HIDE][HIDE][/hide][HIDE][/hide]​
[HIDE]
“আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদরদিনে
জানি নে, জানি নে কিছুতে কেন যে মন লাগে না...... ”
আজকে একদম কাজে মন বসছে না। বারবার আনমনা হয়ে যাচ্ছে। চোখ চলে যাচ্ছে জানালার কাঁচে। বৃষ্টির ফোঁটাগুলো যেন ওর মনের মাটিটাকে ভিজিয়ে তুলছে। কাজ থেকে শতহস্ত দূরে পালাচ্ছে মনটা। আজকে অফিস আসার ইচ্ছা একেবারেই ছিল না। কোনও না কোনও বাহানায় আজ ডুব মারার ইচ্ছে ছিল। চায়ের কাপ হাতে সকালে তৃষাকে বলেওছিল। শুনে খেঁকিয়ে উঠেছিল সে। “অফিসে না গিয়ে ঐ জানলার ধারে সারাদিন চেয়ার পেতে বসে থাকবে আর রাজ্যের কাব্যি করবে, ওসব চলবে না। এটা তোমার ঐ কলকাতার পাতি অফিস নয় যে, যেতে ইচ্ছে হল গেলে, না হল গেলেনা। আর পরেরদিন যাহোক ভুজুং ভাজুং দিয়ে ম্যানেজ করবে, তা হবেনা। তৈরী হয়ে নাও। অফিস যাও।” রাহুল তৃষার হাতটা ধরে নিজের দিকে টানার চেষ্টা করল। ব্যর্থ হল সে। জোর করে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিল হাতটা। “এসব আদিখ্যেতা রাখো। আর অফিস যাওয়ার জন্য তৈরী হও।” বলে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়াল তৃষা। একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল বুক ঠেলে।

অফিস আসার পথে বাসের জানালার কাঁচে বৃষ্টির জলগুলো যেন ওর মতোই নিষ্কর্মা। পড়ছে, হারিয়ে যাচ্ছে। আবার পড়ছে। কখনও টিপটিপ। কখনও ঝমঝম। একটা সময় কমে এল তার তীব্রতা। বন্ধ হয়ে গেল। কিন্তু মন আজকে ওর সাথে অফিস আসেনি। অলসতা পেয়ে বসেছে তাকে। এখন সে কলকাতার এক অন্ধগলির প্রায়ান্ধকার ঘরের জানালার ধারে চেয়ার পেতে মৌজ করে বসে প্রকৃতির শোভা দেখছে। আর রাজ্যের কাব্যি করছে। কিছুতেই তাকে ডেকে এনে বসানো যাচ্ছে না কাজে। তবে একটা সুবিধে আছে। এদিক ওদিক ঘাড় ঘুরিয়ে সেটা অনায়াসে টের পাওয়া যাচ্ছে। “আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদরদিনে” কারোরই তেমন কাজে মন বসছে না। দুপুরের একটু পর থেকেই আকাশ কালো করে নামল বৃষ্টি। নাঃ আর কোনও উপায় নেই। একপ্রকার বাধ্য হয়েই ফাইলটা বন্ধ করল। চেয়ার ছেড়ে উঠে গিয়ে দাঁড়াল জানালার কাঁচে। অসংখ্য জলের ফোঁটা ঝাপসা করছে বহির্দৃশ্য। দৃষ্টিপথকে করছে অবরুদ্ধ। চোখের সামনে শহরের চেনা ছবিটা লাগছে অপরিচিত। ভেজা বিন্দুগুলো কাঁচে গড়ে তুলছে নতুন নতুন নকশা। মুহুর্তের মধ্যে তা হারিয়ে গিয়ে তৈরী হচ্ছে নতুন নকশা। নতুন আলপনা। জলের আলপনা।

ও ফিরে এল নিজের জায়গায়। চেয়ারে পিঠ ঠেকিয়ে বেশ আরাম করে বসল। বস্ একটা জরুরী মিটিং-এ অফিসের বাইরে। তাই সবারই একটু গা ছাড়া ভাব। ধীরে ধীরে চোখের পাতা দুটো বন্ধ করল রাহুল। সাথে সাথে একরাশ অন্ধকার ভেসে এল। তারপর একটু একটু করে ফুটতে শুরু করল ছবি। কিন্তু একী! সে যা দেখবে ভেবে চোখ বন্ধ করেছিল, তা তো দেখছে না। বরং ফুটে উঠছে সম্পূর্ণ অন্য একটা দৃশ্য। পরিচিত। খুব পরিচিত। একটু পুরানো। তবে খুব পুরানো নয়। কিন্তু মনে হচ্ছে যেন বহু যুগ আগের একটা ঘটনা। পুরাতন, ধূসর মলাটের নীচে চাপা পড়া, সোঁদা গন্ধে ভরপুর, হলদেটে একটা পাতা। ময়লা, ঝাপসা। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে উজ্জ্বল তার এক একটা অক্ষর। গোটা গোটা শব্দে পড়ে ফেলা যায় সবটা। সময়টা বছর কয়েক আগেকার। যখন সবকিছু এত জটিল ছিলনা। সম্পর্ক তো নয়ই। সে নিজে ছিল বইয়ের পাতা থেকে উঠে আসা উদ্ভ্রান্ত এক প্রেমিক। প্রিয়ারূপী তৃষা যেন জন্মান্তরের প্রেমিকা। ভালবাসার সংজ্ঞা ছিল একদম অন্যরকম। নিয়ম তার কাছে ঘেঁষতে ভয় পেত।

সিনেমার ফ্ল্যাশব্যাকের মত মনের মাল্টিপ্লেক্সে চলছে দৃশ্য। পূর্ণ তার গতি। সময়টা এমনই এক মরা আলোয় নিভে আসা বিকেল। সকাল থেকে বারিস্নানে ক্লান্ত তিলোত্তমা। ব্রেকিং নিউজে জলবন্দী শহরের ছবি সর্বত্র। কিন্তু তা ছাপ ফেলতে ব্যর্থ দুজনের মনে। জানালার ধারে মুখোমুখি বসে দুজনে। পরিচয় অর্থহীন। দুজনের দৃষ্টি সামনের দিকে নিবদ্ধ। জানলার কাঁচে ছুটে আসা বৃষ্টির ফোঁটাগুলো মাথা কুটে মরছে। বারবার। অবিরাম। নিরন্তর। হুঁশ ফিরল প্রিয়ার ডাকে। “অ্যাই, চলো না, ভিজবে?”

“পাগল নাকী? জ্বরে পড়ব যে।”
“দূর, কিচ্ছু হবে না। চলো না। আজ খুব ইচ্ছে করছে বৃষ্টিতে ভিজতে।”
“আর যদি শরীর খারাপ হয়, তখন?”
“সে আমি সেবা করে তোমাকে সুস্থ করে তুলব। এখন চলো না ছাদে।”

বৃষ্টির মাঝেই দুজনে এল ছাদে। নিমেষের মধ্যে আকাশটা চলে এল নাগালের মধ্যে। আকাশ ভাঙা বৃষ্টি আহ্বান জানাচ্ছে তাদেরকে। ছাদে আসতেই মুক্ত বিহঙ্গ হল প্রিয়া। ত্রস্ত পাযে হাজির হল ছাদের মাঝখানে। প্রেমিক রইল পিছনে। ফিরে তাকাল প্রিয়া। হাতছানি ডাকল প্রেমিককে। তারপর নিজেই হাত ধরে টেনে নিয়ে এল বারিধারার মাঝে। বৃষ্টি আমোদে ভিজিয়ে তুলল দুজনকে। প্রিয়া ষোড়শী কন্যার মত চঞ্চলা। এদিক ওদিক দৌড়ে বেড়়াচ্ছে হরিনীর গতিতে। প্রেমিকের দৃষ্টিপথে সিক্তবসনা এক নারী। বৃষ্টির দুষ্টুমিতে ভেজা কাপড়ের ফাঁকে স্পষ্ট হচ্ছে তার নারীত্ব। তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই কারোর। বৃষ্টিতে ভিজে পরিপূর্ণ হচ্ছে তার সৌন্দর্য। প্রস্ফুটিত হচ্ছে তার যৌবন। বুকের আঁচল আর ভেজা ব্লাউজ ঢাকতে অসমর্থ হচ্ছে তার নারী শরীরের প্রতীকি অঙ্গকে। তাতে আরো মনোময় হচ্ছে তার রূপ। একসময় স্তব্ধ হল তার গতি। এগিয়ে এল প্রেমিকের দিকে। “কী দেখছো অমন হাঁ করে?” উত্তর নিষ্প্রয়োজন। প্রেমিকের হাত গিয়ে পৌঁছাল প্রিয়ার কোমরে। এক ঝটকায় দূরত্ব কমল অনেকটাই। ভেজা চুলগুলো লেপটে আছে গালের সাথে। পরম মমতায় সেগুলো সরাতেই সদ্য ফোটা গোলাপ চোখ মেলে তাকাল। তার দৃষ্টি পড়ে নিচ্ছে প্রেমিকের ইচ্ছা। বাধাদান অসম্ভব। প্রেমিকের ঠোঁট নিম্নগামী। গিয়ে পৌঁছাল গন্তব্যে। প্রেমিকের বাহুলগ্না প্রিয়ার ঠোঁট মিশে যেতে দিচ্ছে নিজের সাথে। সময় পাচ্ছে গাঢ়ত্ব। ভেজা শরীর দুটো আরোও, আরোও ঘন হয়ে এল একে অপরের দিকে।
[/HIDE]
 
[HIDE]ছাব্বিশ পর্ব-[/HIDE][HIDE][/hide][HIDE][/hide]​
[HIDE]
“তোমার অঝোর ধারায় ভিজে
আমি নতুন হলাম নিজে
মা মা পা ধা নি ধা নি
আজ হারিয়ে গেছি আমি
বৃষ্টি, বৃষ্টি, বৃষ্টি
কেন এত তুমি মিষ্টি...... ”
বৃষ্টির প্রথম ফোঁটাটা ওর নরম গালে এসে পড়তেই সমস্ত দ্বিধা, সঙ্কোচ সব মুখ লুকিয়ে পালাল। মনের মধ্যে একটা কিন্তু কিন্তু ভাব তখনও রয়ে গেছিল। যাব কি যাব না ভাবনার মাঝেই একটা ভিজে দমকা বাতাস এসে ধাক্কা মারল শরীরে। একটু একটু করে সামনের দিকে এগিয়ে গেল। এই উঁচু হাই-রাইজের টেরিসে প্রথমবার এল নীলিমা। চারদিকের দৃশ্যপট হঠাৎ করে পাল্টে গেছে। পৃথিবীটাকে অনেক, অনেক বড় বলে মনে হচ্ছে। অনেক ছড়ানো। অনেক ছিটানো। এই পড়ন্ত বিকালে, অঝোর বারিধারার মাঝে গোটা টেরিস ফাঁকা। শুনশান। একটু আগের সেই কিন্তু কিন্তু ভাবটা লেজ গুটিয়ে পালাবার পথ পেল না। টেরিসের মাঝে আসতে আসতেই সমস্ত শরীর ভিজে ডাব। সাথে মনটাও। বৃষ্টির তেজ যত বাড়ছে, পাল্লা দিয়ে তত কমছে বয়সের ভার। কমতে কমতে সে এখন ষোড়শী কন্যা। চঞ্চল তার গতি। সবুজ তার মন। সৌন্দর্য তার আধফোটা গোলাপ। বারিধারায় স্নান করে সমস্ত শরীরের সঙ্গে সঙ্গে মনটাও হয়ে উঠছে তরতাজা।
এই মুহুর্তে ঐ দূরে দাঁড়ানো তরুবর আর তার নিজের মধ্যে বিশেষ কোনও ফারাক নেই। দুজনেই নিশ্চল। নিথর। বৃষ্টির প্রতিটা ফোঁটা ভিজিয়ে তুলছে ওদের দুজনকেই। মনের সিক্ত ভূমিতে অঙ্কুরিত হচ্ছে নতুন ইচ্ছা। সঞ্চারিত হচ্ছে নতুন প্রাণ। তৈরী হচ্ছে নতুন সত্তা। সামান্য বৃষ্টির ধারা যে এইভাবে একজন মানুষের মনের আমূল পরিবর্তন ঘটাতে পারে, সেটা এই মুহুর্তে ওকে না দেখলে বিশ্বাস করা শক্ত। এই মুহুর্তে সে নীলিমা নয়। সে কেবলই এক মানবী। নামগোত্রহীনা। তার কোন পরিচয় নেই। পিছুটান নেই। পরিবার নেই। বন্ধু নেই। কোনও সঙ্গী নেই। কেবল আছে সে নিজে। আর কেউ নেই। ভীষণ দুষ্টুমির ইচ্ছা জাগছে মনে। ইচ্ছা হচ্ছে বৃষ্টির সাথে লুকোচুরি খেলতে। বৃষ্টি যেন পুরানো কোন সই। তাদের মধ্যে না আছে কোন বাধা। না বন্ধন। না লজ্জা। না সঙ্কোচ। আঁচলটাকে গাছকোমর করে নিয়ে তৈরী হল ও। কিন্তু কীসের জন্য? সেটা ও নিজেই জানে না।
দু হাত মেলে দাঁড়াল ও। স্বাগত জানাল বারিধারাকে। প্রত্যেকটা ফোঁটা ওর শরীরে অদৃশ্য চুম্বন এঁকে যাচ্ছে। এই সময় কোনও একজনকে পেতে চাইছে মন। চাইছে শরীরও। সে সুমিত হলেই বা দোষ কী? একজন পুরুষ। যে আলিঙ্গন করবে তাকে। টেনে নেবে বুকে। তার ঠোঁট থেকে চুষে খাবে সুমিষ্টতা। যার বিরাট পুরুষালী বুকে নিষ্পেষিত হবে তার নরম স্তনযুগল। যার বুকে যন্ত্রণার অদৃশ্য আলপনা এঁকে দেবে তার নখের তীব্র আঁচড়। যার ঠোঁট ঝড় তুলবে ওর সারা শরীরে। যে ওর পেলব শরীরটাকে নিয়ে খেলবে ছিনিমিনি। যার উদ্যত হাত ওর শরীর থেকে সরিয়ে দেবে বস্ত্রের বাহুল্যতা। ওর লজ্জায় আনত মুখ লুকাবে তার পুরুষালী বুকে। যার ত্রস্ত আঙুল খুঁজে নেবে তার অভীষ্ট লক্ষ্য। যার প্রতিটা পদক্ষেপের কাছে হার মানবে ও। যাকে আকুতি জানাবে মনের সব জ্বালা নেভানোর জন্য। সেই সাথে শরীরেরও। ওর উত্তপ্ত শরীরের তাপ ভাগ করে নেবে তার উত্তুঙ্গ পুরুষত্ব। মনের মধ্যে সেই তৃপ্তি টের পাচ্ছে নীলিমা। অনুভব করতে পারছে যে তার শরীরে প্রবেশ ঘটছে পুরুষের। নীরবে। কিন্তু সবলে। সে চাইছে আরোও আরোও সুখ। পরিবর্তে পুরুষ তাকে দিচ্ছে পরিপূর্ণ তৃপ্তি। তার দিকে এগিয়ে আসছে পুরুষ শরীর। তার শরীর ভাগ করে নেবে সেই উত্তেজনা। সেই কামতাড়না। শীৎকার খুঁজে নেবে পথ। শরীর খুঁজে নেবে তৃপ্তি। গতি পাবে পূর্ণতা। সময় পাবে পরিণতি। এক সময় শান্ত হবে শরীর দুটো। রাগমোচনের শান্তি। দুজনের প্রেমরস মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবে। ক্লান্ত পুরুষ মাথা রাখবে তার বুকে। তার আঙুল বিলি কাটবে পুরুষের চুলে। তারপর শ্রান্তিতে চোখ বুজবে দুজনেই। একসাথে।
চোখ খুলল নীলিমা। সুখকল্পনা দূর হল তার আঁখিপল্লব থেকে। কিন্তু একটু আগে সে যে তৃপ্তিটা টের পাচ্ছিল, সেটা আর অনুভূত হচ্ছে না। উল্টে শরীরে বাসা বাঁধছে তীব্র কামতাড়না। আগে কখনও এমন হয়নি। মন কখনও এভাবে আকুল ভাবে কাছে পেতে চায়নি সুমিতকে। কিন্তু আজ চাইছে। তার মন চাইছে। তার শরীর চাইছে। তার থেকেও বড় কথা, সে নিজে চাইছে। সে নিজে এই মুহুর্তে কাছে, ভীষণ কাছে পেতে চাইছে সুমিতকে। যার বক্ষলগ্না হয়ে ভুলে যাবে সমস্ত পার্থিব চিন্তা। সুমিতের শরীরের উষ্ণতা দূর করে দেবে তার মনের শীতলতাকে। সে ভেঙেগড়ে নতুন ছাঁচে ফেলে তৈরী করবে নতুন এক নারীকে। নতুন এক নীলিমাকে। তারজন্য ওর চাই সুমিতকে। শুধুই সুমিতকে।
[/HIDE]
 
[HIDE]সাতাশ পর্ব-[/HIDE][HIDE][/hide][HIDE][/hide]​
[HIDE]
নিজেদের ফ্ল্যাটের দরজায় পৌছে থমকে গেল নীলিমা। স্পষ্ট মনে আছে টেরিসে যাওয়ার আগে ও দরজায় চাবি দিয়ে গিয়েছিল। এবং সেই চাবি এখনও ওর সাথেই আছে। তাহলে ফ্ল্যাটের দরজা খুলল কে? সুমিতের অফিস থেকে ফিরতে তো এখনও বেশ খানিকটা দেরী আছে। আসলে ও ফিরে এসেছিল এই ভেবেই যে সুমিতকে ফোন করে ওকে আজ তাড়াতাড়ি ফিরতে বলবে। তাহলে কে এল এই অসময়ে? তার চেয়েও বড় কথা তাদের দুজনের অনুপস্থিতিতে সে ঘরে ঢুকলই বা কীভাবে? চোর-টোর নয়তো? একটু ভয় পেল নীলিমা। সুমিতকে যে ফোন করবে, তারও কোনও উপায় নেই। টেরিসে যাওয়ার আগে ফোনটা ফ্ল্যাটেই রেখে গিয়েছিল ও। একবার ভাবল পাশের ফ্ল্যাটের মেহরা আঙ্কলকে ডাকবে। কিন্তু মেহরা আঙ্কলদের ফ্ল্যাটের দরজা লকড্। তার মানে এই বৃষ্টির মধ্যেও মেহরা আঙ্কল, আন্টিকে নিয়ে কোথাও বেরিয়েছেন। উফ্! দরকারের সময় কারোকে পাওয়া যায়না। বেশ অস্থির লাগছে। এখন কী করা যায়? বাকী ফ্ল্যাটগুলোতে গিয়ে চাইলে হয়তো সাহায্য পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে যে, মেহরা আঙ্কল ছাড়া অন্য কারোর সাথেই তেমন বিশেষ আলাপ পরিচয় নেই নীলিমার। সুমিত সারাদিন অফিসে থাকে। ও চাইলে বাকীদের সাথে আলাপ পরিচয় করতে পারে। কিন্তু যেচে পড়ে কারোর সাথে খেজুরে আলাপ করা ওর স্বভাবে নেই। একদিন মেহরা আন্টি নিজে ওদের ফ্ল্যাটে এসে আলাপ করেছিল তাই, নাহলে এই বিল্ডিং-এ ও কাউকেই চিনত না।
চেনেও না। ফ্ল্যাট থেকে ও খুব কমই বের হয়। তাও দরকারে। আর যখনই বের হয় সবসময়ই সাথে সুমিত থাকে। আর খুচরো কেনাকাটা, বাজার-দোকান ওর ঠিকে ঝি লছমী করে দেয়। মেয়েটা বড় ভাল। যা-ই কাজ দেওয়া হোক না কেন, ঠিক করে দেয়। কখনও না করে না। ও না থাকলে এই একা ফ্ল্যাটে থাকতে থাকতে এতদিনে হয়তো হাঁফানি রোগ ধরে যেত ওর। একটাই দোষ মেয়েটার। বড্ড বকবক করে। একবার কথা বলতে শুরু করলে, আর দেখতে হবেনা। কাজের হুঁশ আর থাকেনা। এই হয়েছে, সেই হয়েছে, হেনতেন, কত কী। বাধ্য হয়ে বকে চুপ করাতে হয় তাকে। তবে স্বভাবটা খুব মিষ্টি। ওকে মেহরা আন্টিই ঠিক করে দিয়েছিল। তখন ও আর সুমিত সবে দু-তিনদিন হল এই ফ্ল্যাটে এসেছে। মেহরা আন্টি নিজে আলাপ করতে এলেন। মিষ্টি দেখতে গোলগাল চেহারার ভদ্রমহিলা। হাসলে গালে টোল পড়ে‌। পঁয়ষট্টি-ষেষট্টি বছর বয়স। ওনাকে দেখলেই নীলিমার নিজের মায়ের কথা মনে পড়ে যায়। উনিও নীলিমাকে নিজের মেয়ের মত স্নেহ করেন। আসলে আঙ্কল-আন্টির কোনও সন্তানাদি নেই। মেহরা আঙ্কল ছিলেন ইন্ডিয়ান আর্মিতে। ভারতবর্ষের অনেক জায়গায়, অনেক শহরে পোস্টিং ছিলেন আঙ্কল। রিটায়ার করার পর মুম্বাইয়ে থিতু হয়েছেন। নীলিমা ওনাদের ফ্ল্যাটে বেশ কয়েকবার গেছে। অনেকে ভাবে যাঁরাই আর্মিতে কাজ করেন বা করতেন তাঁরা প্রত্যেকেই খুবই ডিসিপ্লিনড্ হবেন। কথাটা হয়তো ঠিক। কিন্তু মেহরা আঙ্কলের জন্য তা প্রযোজ্য নয়।
মানুষটি খুবই অগোছালো আর ভুলো স্বভাবের। এই জিনিস রাখছেন, আর এই ভুলে যাচ্ছেন। আর চিৎকার করছেন, “পাম্মী, মেরা রুমাল কাঁহা হ্যায়? পাম্মী, মেরা চশমা কিধার চলা গয়া? পাম্মী, মেরা পাইপ নেহী মিল্ রহা, তুমনে দেখা হ্যায় ক্যায়া?” মেহরা আন্টীর নাম পাম্মী। উনি হয়তো নীলিমার সাথে গল্প করছেন, আর তার মাঝেই ঐ চিৎকার। আন্টি মুখে কপট রাগের ভান করে বলতে থাকেন, “ইনকো লে কর্ তঙ্গ্ হো গঈ হুঁ ম্যায়। মালুম নেহী মেরে বগর্ ইয়ে ক্যায়া করেঙ্গে?” কিন্তু ঠিক উঠে গিয়ে সমস্ত জিনিস বের করে আঙ্কলের হাতে ধরিয়ে আসবেন। ওনাদের এই খুনসুটিগুলো দেখতে বেশ মজা লাগে নীলিমার। এই ছোট্ট ছোট্ট ঘটনাগুলোই প্রমাণ করে দেয় যে আঙ্কল আর আন্টির মধ্যে বন্ধন কতটা দৃঢ়। ওনাদের মধ্যে ভালবাসাটা কতটা গভীর। আচ্ছা, এমনটা যদি ওদের সঙ্গেও হত? সুমিত হাঁক পাড়বে, “নীলিমা, আমার পার্সটা কই? আমার জরুরী ফাইলটা খুঁজে পাচ্ছিনা। একটু খুঁজে দাওনা, প্লিজ।” নীলিমা রান্নাঘর থেকে বলতে বলতে বের হবে, “উফ্, কী করো না, এই তাড়াতাড়ির সময়? এখনও একগাদা কাজ পড়ে আছে। সেগুলো করবো, না কী তোমার জিনিস খুঁজবো বলোতো?” তারপর সব জিনিস খুঁজে সুমিতের হাতে তুলে দিয়ে বলবে, “এই নাও। এবার থেকে ঠিক করে রাখবে। আর কিন্তু আমি খুঁজে দেব না।” সুমিত নিজের দু কান ধরে বলবে, “আর কখনও এমন হবে না, মহারাণী।” তা দেখে হেসে ফেলবে নীলিমা। তারপর দুজনে একসাথে হাসতে থাকবে।
আচ্ছা ও আর সুমিত যখন আঙ্কল আর আন্টির মতো বয়সে গিয়ে হাজির হবে, তখন কী আঙ্কলের মতো সুমিতও ওর জন্য গাইবে “এ মেরী জোহরাজবীঁ, তুঝে মালুম নেহী/ তু অভী তক্ হ্যায় হসীন ঔর ম্যায় জবাঁ/ তুঝপে কুরবাঁ মেরী জান, মেরী জান......”? আর তার উত্তরে সেও কী আন্টির মত গেয়ে উঠবে, “ ম্যায় করু হায় রাম, মুঝে বুড্ঢা মিল গয়া.....”? কী জানি কী ঘটবে? ভবিষ্যৎটা আমাদের হাতে নেই। তবে বর্তমানটা আছে। আর সেটাকে যদি সুন্দর করে সাজিয়ে নিতে পারি, তাহলে ভবিষ্যৎটাও নিজে থেকেই সুন্দর হয়ে যাবে। এতক্ষণ পর হুঁশ ফিরল ওর। ফ্ল্যাটে চোর ঢুকেছে, আর ও দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে কী সব আবোল তাবোল ভাবছে? নিজের মনকে ধমক দিল নীলিমা। তারপর মনটাকে শক্ত করে, সাহস জুটিয়ে, ধীর পদক্ষেপে ফ্ল্যাটে প্রবেশ করল।
[/HIDE]
 
[HIDE] আঠাশ পর্ব-[/HIDE][HIDE][/hide]​
[HIDE]
ঘরের ভিতর ঢুকে চমকে উঠল নীলিমা। কেউ কোত্থাও নেই। তবে কে চাবি খুলে ঘরে ঢুকল? ও আবার পা টিপে টিপে এগোতে লাগল। রান্নাঘরেও কারোকে দেখতে পেল না। একটা অজানা ভয় ক্রমশ জগদ্দল পাথরের রূপ নিয়ে বুকের মধ্যে চেপে বসছে। তারপর খেয়াল পড়ল, ও মোবাইলটাকে বেডরুমে রেখেছিল। ওটাকে যদি পাওয়া যায়, তবে এক্ষুণি সুমিতকে ফোন করা যেতে পারে। কিন্তু বোঝা যাচ্ছে না, যে বা যারা ঘরে ঢুকেছে তারা কোথায়? কোনও আওয়াজও পাওয়া যাচ্ছেনা। আর কোনওদিকে নজর না দিয়ে ও সোজা বেডরুমের দিকে এগোতে লাগল। বেডরুমের দরজাটা অর্ধেক খোলা। কিন্তু টেরিসে যাবার আগে ও প্রত্যেকটা রুম ভালভাবে লক্ করে দিয়েছিল। তার মানে এইঘরেই সে বা তারা ঢুকেছে। এই মুহুর্তে নিজের হৃৎস্পন্দন বেশ ভালো ভাবে শুনতে পাচ্ছে ও। শুকিয়ে আসা ঠোঁটটাতে একবার জিভ বুলিয়ে নিল। তাতে লাভ বিশেষ কিছুই হল না। কারণ জিভের অবস্থাও তথৈবচ। মনের কোণে জমাট বাঁধা সাহসটাকে কোনরকমে জড়ো করে বেডরুমের দরজাটা খুলল। ভিতরে আলো জ্বলছে। সেই আলোতে লোকটাকে দেখতে পেল ও। আর ঠিক সেই সময়ই ওর পায়ের আওয়াজ পেয়ে লোকটা ওর দিকে ঘুরে তাকাল।
সামনে সুমিতকে দেখতে পেয়ে বাস্তব জ্ঞান লোপ পেল নীলিমার। স্থান-কাল-পাত্র ভুলে গিয়ে ছুটে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে, ওর বুকে মাথা রেখে কাঁদতে শুরু করল। ব্যাপারটা বুঝতে বেশ কিছুটা সময় গেল সুমিতের। একটু আগেই ও অফিস থেকে ফিরেছে। আজকে একটা জরুরী মিটিং-র কারণে দুপুরেই অফিস থেকে বেরিয়ে পড়েছিল ও। মিটিং শেষ হতে বিকেল হয়ে যায়। অফিসে ফেরত যাবার মরা ইচ্ছাটাকে বিশেষ পাত্তা দেয়নি ও। এই বৃষ্টিস্নাত অলস বিকালে নীলিমার সঙ্গ পাবার ও ওকে সঙ্গ দেবার একটা বেয়াড়া ইচ্ছা মাথাচাড়া দিচ্ছিল। তাই মিটিং শেষে সেক্রেটারীকে আজকে অফিস ফেরত না যাবার কথা জানিয়ে দিয়ে, বাড়ির পথ ধরেছিল ও। ড্রাইভ করতে করতে উইন্ডস্ক্রিনের ফাঁক দিয়ে আকাশের দিকে তাকাল। দিনের শেষ নিভে আসা আলোয় মেঘাচ্ছন্ন আকাশটাকে আরোও ময়লা, আরোও অপরিষ্কার লাগছে। বৃষ্টি। তার তো আজকে থামার কোন নামই নেই। পড়েই চলেছে, পড়েই চলেছে। প্রখম প্রথম ভালো লাগলেও, একঘেয়ে বোধ হচ্ছে এখন। বর্ষা ওর প্রিয় ঋতু ছিল। এখন আর নয়। কারণ এখন আর মা নেই। বর্ষার প্রতি ভালবাসাটা তৈরী হবার পিছনে ওর মায়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। শ্রাবণের বারিধারার প্রতি প্রেমের বীজ অঙ্কুরিত হয়েছিল মায়ের হাত ধরে।
মা ভাল গান গাইতে পারত। বিশেষ করে রবীন্দ্র সঙ্গীত। খালি গলায়, উদ্দাত্ত কণ্ঠে মায়ের গান যে কতদিন শোনা হয়নি, তার ঠিক নেই। আগে মা কাজের ফাঁকে সময় পেলেই গাইতো গান। আর বর্ষাকাল এলে তো কোন কথাই নেই। বর্ষা সংক্রান্ত কত যে গান মায়ের মুখস্থ ছিল তার ইয়ত্তা নেই। তবে মায়ের সবচেয়ে প্রিয় গান ছিল, “মন মোর মেঘের সঙ্গী/ উড়ে চলে দিগদিগন্তের পানে/ নিঃসীম শূণ্যে শ্রাবণবর্ষণসঙ্গীতে/ রিমঝিম রিমঝিম রিমঝিম।।..... ” এমনই বর্ষণক্লান্ত দিনের শেষ মরা আলোয় মায়ের গলায় এই গানটা শোনা একপ্রকার অভ্যাসই হয়ে গিয়েছিল ওর। গান নীলিমাও মাঝেমধ্যে গুণগুণ করে, তবে মায়ের মত ওইভাবে উদ্দাত্ত ভাবে নয়। আর কখনো যদি গাইতে বলা হয়, তাহলে আর একদমই আর গাইবে না। বারবার বলা সত্তেও ওকে কোনদিন গান গাওয়ানো যায়নি। মাঝে মাঝে মনে হয়, এতদিনেও ও নীলিমাকে ঠিক বুঝে উঠতে পারেনি। ও কী করতে চায়, কী বলতে চায়, তার তল পাওয়া ভার। তবে এ নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামায় না সুমিত। যে যেমন, তাকে তার মতই থাকতে দেবার পক্ষপাতী সে। আর যে মেয়েটা এক কথায় এই বিয়েতে রাজী হয়ে এতদূর এই প্রবাসে এসে আছে, তার পক্ষে একটু একাকিত্ব, একটু ভাবুকতা, একটু চুপচাপ থাকা আর নিজের মত বাঁচা - সবই স্বাভাবিক। আর তাই ও নীলিমার কোনও ব্যাপারেই বিশেষ মাথা ঘামায় না। ওকে ওর মত থাকতে দেয়।
তবে আজ ও মনে মনে সংকল্প করে নিয়েছিল আজ বাড়ি ফিরে, ফ্রেশ হয়ে বসবে দুজনে মুখোমুখি। ওকে বলবে গান শোনাবার জন্য। দরকার পড়লে জোর করবে ওকে। সেইমত সময়ের আগেই বাড়ি ফিরেছিল ও। ভেবেছিল নীলিমাকে সারপ্রাইজ দেবে। কিন্তু ও নিজে যে এইভাবে সারপ্রাইজড্ হবে সেটা ও ভাবেনি। বাড়ি ফিরে দেখল দরজা বাইরে থেকে লকড্। এটা খুব কমই হয়। প্রায় হয়ই না বলতে গেলে‌। নীলিমা এইভাবে ফ্ল্যাট থেকে একা একা কোথাও বের হয় না। ক্কচ্চিৎ কদাচিৎ পাশের ফ্ল্যাটে মি. মেহরার বাড়িতে যায় বটে, তবে এই সময়ে ও কোথাও যায়না। সুমিত ওর মোবাইলে ফোন করল। বেজে বেজে কেটে গেল। ধরল না। আরেকবার ট্রাই করল। আবার সেই একই ব্যাপার। মনটা কু ডাকতে শুরু করল। একবার মি. মেহরার ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখবে ভাবল। যদি ওখানেই গিয়ে থাকে। কিন্তু সেখানে গিয়ে হতাশ হল ও। কারণ মি. মেহরার ফ্ল্যাটেও চাবি। তার মানে ওনারা কোথাও বাইরে গেছেন। তাহলে নীলিমা গেল কোথায়? ও ব্যাগ থেকে ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকল। কোথাও ওকে দেখতে পেলনা। সেটাই স্বাভাবিক। কারণ দরজাটা বাইরে থেকে লকড্ ছিল। নীলিমার ফোনটাকে ও বেডরুমে খুঁজে পেল। যেটায় ওর নাম্বারে দুটো মিসড্ কল্ দেখতে পেল। ও ভাবতে লাগল নীলিমা এইভাবে কোথায় যেতে পারে? হঠাৎ কারোর পায়ের শব্দে ও ফিরে তাকাল, আর সঙ্গে সঙ্গে সামনে নীলিমাকে দেখতে পেল। ওর কিছু বলার আগেই নীলিমা ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করল। সুমিত সঙ্গে সঙ্গেই ওকে কিছু বলল না। বরং ওকে কাঁদতে দিল।
[/HIDE]
 
[HIDE]ঊনত্রিশ পর্ব-[/HIDE][HIDE][/hide][HIDE][/hide]​
[HIDE]
“আমার তুমি আছো, আছো আমার মনেতে,
সকল কাজে, সকল খেলাতে,
আমার তুমি আছো.......”
কিছুক্ষণ কাঁদার পর নীলিমা শান্ত হল। কিন্তু সে যেন কেন কাঁদছে, সেটা বারবার নিজের মনকে জিজ্ঞাসা করেও কোনও উত্তর পেল না। কয়েক মুহুর্ত আগেও নিজেকে বড্ড অসহায়, অসুরক্ষিত বোধ হচ্ছিল। কিন্তু সামনে সুমিতকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নিজেকে সামলাতে পারল না। মনে হল এই মানুষটার উপর সে কতটা নির্ভরশীল। এই মানুষটা ছাড়া নিজেকে কেন এতটা অসহায় মনে হচ্ছিল? আচ্ছা, এটাই কী কারোকে ভালবাসার ইঙ্গিত? এটাই কী বিশ্বাসযোগ্যতার প্রথম পরিচয়? এসবের উত্তর ওর কাছে অজানা। কতকটা নিষ্প্রয়োজনও বটে। কারণ ও জানে এই মুহুর্তে ওর কাছে সবচেয়ে প্রিয় মানুষটি হচ্ছে সুমিত। একমাত্র ভরসা স্থল। নীলিমার মনে হল গত বেশ কয়েকদিন ধরে ওর মন বারবার নানারকম ভাঙ্গাগড়ার মধ্যে দিয়ে যাত্রা করেছে। চিন্তাভাবনার উত্থান-পতন ঘটেছে। ভাল-খারাপের পলকা বেড়াটাকে সরে যেতে দেখেছে। কিন্তু আজকে এই প্রথমবার ও যখন সুমিতের বুকে মাথা রেখে কাঁদছে, তখন অন্য কোনও রকম অনুভূতি টের পাচ্ছেনা। বরং একটা শান্তি পাচ্ছে। মনের সব ভার, সব চিন্তা, সব গ্লানি তার চোখের জলের ধারায় ধুয়ে, মুছে, পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। চোখের জলের বৃষ্টিতে ভিজে ওর মনের পৃথিবী পাচ্ছে নতুন রূপ। তার পরিচিত পৃথিবীর রূপটাই যাচ্ছে বদলে। তৈরী হচ্ছে নতুন সংজ্ঞা। ভালবাসার। বিশ্বাসের। আত্মিকতার। এর আগে কখনও এমন অনুভূতি হয়নি। বিয়ের এতদিন পরেও তাদের দুজনের মধ্যে একটা সূক্ষ্ম, অদৃশ্য দেওয়াল মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল। সেটা মনে মনে বেশ ভালোই বুঝতে পারত নীলিমা। এবং সেটার জন্য নিজেকেও অনেকাংশে দায়ী করত সে। আর কিছুটা সুমিতের উদ্দামতা, উশৃঙ্খলতাকে। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে সবকিছু মিথ্যা। তার সনাতনী ধ্যানধারণা। তার চিন্তাভাবনা। তার চারপাশের জগৎ। সবকিছু। সত্যিটা কেবল তারা দুজনে। সত্যি তাদের ভালবাসা। সত্যি তাদের পারষ্পরিক বিশ্বাস। এখন সুমিতের চেয়ে বড় আপনজন এই পৃথিবী কেউ নেই। একটা নতুন বিশ্বাস, একটা ভরসার জায়গা তৈরী হচ্ছে মনে মনে। যাই হোক না কেন, এই মানুষটা কখনও ওকে একলা ছেড়ে দেবেনা। প্রতি পলে, প্রতি মুহুর্তে পাশে পাবে এই মানুষটাকে। যে এইভাবে তাকে সব বিপদ থেকে বুকে আগলে রাখবে। ওকে রক্ষা করবে। বিশ্বাসটা যত দৃঢ় হচ্ছে, ততই শান্তি পাচ্ছে সে।
কিন্তু নীলিমার হঠাৎ করে এই কান্নার কারণ পরিষ্কার নয় সুমিতের কাছে। ওর কাছে এমন অভিজ্ঞতা একদমই নতুন। কিন্তু ও নীলিমাকে থামাল না বা বাধা দিল না। যদি কিছু ঘটেই থাকে এবং ও যদি কেঁদে নিজের মনটাকে হাল্কা করতে চায়, তাহলে কাঁদুক। অবশেষে নীলিমা একটা সময় শান্ত হল। তারপরেও কিছুটা সময় নিল সুমিত। তারপর আস্তে আস্তে নীলিমার মুখটাকে দুহাতে ধরে সামনের দিকে তুলে ধরল। জল টলটলে ভিজে চোখদুটো যেন কোন শান্ত দীঘির কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। কারোকে কারোকে কাঁদলে মোটেও সুন্দর লাগেনা। কিন্তু একথাটা যে নীলিমার পক্ষে একদমই খাটেনা, সেটা আজ বুঝতে পারল সুমিত। নীলিমাকে এইরূপেও খুব সুন্দর লাগছে। এক দৃষ্টে কিছুক্ষণ ওর কান্নাভেজা চোখদুটোর দিকে তাকিয়ে থাকার পর সুমিত জিজ্ঞাসা করল, “কী হয়েছে নীলিমা, কাঁদছো কেন?” ঘাড় নেড়ে উত্তর দিল, “কিছু না, এমনি।” মুচকি হেসে সুমিত বলল, “এমনি এমনি আবার কেউ কাঁদে নাকী?” বলে ওর চোখদুটো মুছিয়ে দিল। নীলিমা হঠাৎ বলল, “তুমি কখনও আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না তো সুমিত?” সুমিত অবাক হয়ে বলল, “এ আবার কী কথা? আমি তোমাকে ছেড়ে কোথায় যাবো?” নীলিমা একগুঁয়ে সুরে বলল, “আমার গা ছুঁয়ে বলো, যাই হোক না কেন, তুমি কখনও আমাকে ভুল বুঝবে না। আর সবসময় আমার সাথে সবসময়ে এইভাবে থাকবে?” “এসব কী ছেলেমানুষী হচ্ছে নীলিমা?” “কিছু ছেলেমানুষী নয়। তুমি বলো।” অবশেষে হার মানল সুমিত। নীলিমার গা ছুঁয়ে বলল, “আচ্ছা বাবা, এই নাও। আমি তোমার গা ছুঁয়ে বলছি, আমি তোমাকে কখনও ভুল বুঝব না। আর সারাজীবন এইভাবে তোমার সাথেই থাকবো। এথন বলোতো তুমি এরকম ভিজলে কী ভাবে?” এতটা সময় পর সুমিতের খেয়াল পড়ল নীলিমার ভিজে শাড়ীর উপর।
সুমিতের প্রশ্ন কিছুটা হলেও নাড়া দিয়ে গেল নীলিমাকে। ও কিছুতেই আসল কারণটা সুমিতকে বলতে পারবে না। তাই কিছুটা আমতা আমতা করে বলল, “ও কিছু না। এমনি।” সুমিত পরিষ্কার বুঝতে পারল নীলিমা ওর কাছে কিছু লুকিয়ে যাচ্ছে। ও বলল, “তুমি কী কিছু লুকাচ্ছো, নীলিমা?” সামান্য হলেও চমকে উঠল নীলিমা। যেটা সুমিতের দৃষ্টি এড়াল না। নীলিমা বলল, “তুমি রাগ করবে বলে, তোমাকে বলতে চাইছিলাম না। বিকালে বৃষ্টিটা শুরু হতেই মনের মধ্যে একটা ইচ্ছা জাগল। মনে হল, একবার অন্তত বৃষ্টিতে ভিজি। তাই টেরিসে গিয়েছিলাম বৃষ্টিতে ভিজতে।” করুণ মুখে নীলিমার এই স্বীকারোক্তি শুনে সুমিত না হেসে পারল না। ও শব্দ করে হেসে উঠল। সুমিতের হাসির আওয়াজ শুনে নীলিমা আশ্চর্য হয়ে ওর মুখের দিকে তাকাল। তারপর যখন বুঝতে পারল যে ও ওর কথা শুনেই হাসছে, তখন সামান্য রেগে বলল, “এতে এত হাসির কী হল?” সুমিত হাসতে হাসতে জবাব দিল, “স্যরি, স্যরি। তুমি এমনভাবে কথাটা বললে যেন তুমি কাউকে মার্ডার করে এসেছো। এতে আমার রাগ করার প্রশ্ন আসে কোথা থেকে? তোমার মন চেয়েছিল, তাই তুমি বৃষ্টিতে ভিজেছো। ঠিক আছে।” নীলিমা বুঝতে পারল সুমিত ওর সাথে মজা করছে। ও কপট রাগ করে বলল, “যাও, আর কোনোদিন তোমাকে কোনো কথা বলব না।” বলে ও যাবার জন্য ঘুরে দাঁড়াল। ঠিক সেই সময় সুমিত খপ করে ধরে গেয়ে উঠল, “সুন্দরীগো, দোহাই দোহাই মান কোরোনা, আজ নিশীথে কাছে থাকো, না বলো না। সুন্দরীগো, দোহাই দোহাই মান কোরোনা.......” তারপর ওকে নিজের দিকে টানল। টাল সামলাতে না পেরে ও হুমড়ি খেয়ে পড়ল সুমিতের বুকে। সলজ্জ কণ্ঠে বলল, “ধ্যাত্, পাগল একটা!” তারপর নীলিমা মুখ লুকালো সুমিতের চওড়া বুকের গভীরে।
[/HIDE]
 

Users who are viewing this thread

Back
Top