আবারও বেড়েছে করোনার সংক্রমণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি বাংলাদেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। তবে অনেক বিশেষজ্ঞ আবার দ্বিমতও পোষণ করেন। তাঁদের মতে, এটি দ্বিতীয় ঢেউয়ের বর্ধিত অংশ। সে যা–ই হোক। মূল বিষয়টি হচ্ছে কঠোরভাবে মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। বিশেষ করে হাত ধুতে হবে নিয়মিত। এ জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ লিকুইড। কারণ, করোনার শুরু থেকেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে বিষয়গুলোর ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হাত ধোয়া।
বাকি বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে মাস্ক পরা, সামাজিক দুরত্ব মেনে চলা, প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া ইত্যাদি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পাশাপাশি আমাদের সরকারও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এসব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্যে সচেতনামূলক নানা প্রচার–প্রচারণাও নিয়মিত চালানো হচ্ছে। এতে হাত ধোয়ার বিষয়টি পাচ্ছে বিশেষ প্রাধান্য। তবে হাত ধোয়ার ক্ষেত্রে সব দিক বিবেচনায় সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ লিকুইড ব্যবহার সবচেয়ে ভালো ও নিরাপদ। এর সঙ্গে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ মাস্ক পরা।
পাঁচটি প্রধান ধাপে হাত ধোয়ার কথা বলা হয়। প্রথমে পরিষ্কার পানিতে হাত ভিজিয়ে নিতে হবে। তারপর হাতের পিঠ, তালু ও আঙুলে পরিমাণমতো সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ লিকুইড ঘষে নিতে হবে। তারপর অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ঘষে নিতে হবে। হাতে কোনো আংটি বা অন্যান্য গয়না থাকলে তার ওপর-নিচ ভালো করে ঘষে নিতে হবে। দুই হাত একে অপরের সঙ্গে ভালো করে ঘষতে হবে। এরপর পরিষ্কার পানিতে হাত ধুয়ে নিতে হবে। হাত ধোয়া শেষ হলে শুকনা কাপড় বা টিস্যু দিয়ে ভালো করে হাত মুছে নিতে হবে।
কখন হাত ধুতে হবে আর কখন হবে না, এ নিয়ে অনেকেই দ্বিধায় থাকেন। আবার অনেকে প্রশ্ন করেন, বাসায় অবস্থান করলেও হাত ধোয়া জরুরি কি না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী বাইরের অরক্ষিত কোনো বস্তুর সংস্পর্শে এলেই সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ লিকুইড দিয়ে হাত ধুতে হবে। সহজ ভাষায় সারা দিনে যতবার বাইরে থেকে ঘরে ফিরবেন, ততবারই ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে হবে। এ ছাড়া শৌচাগার থেকে বেরোনোর আগে অবশ্যই ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে হবে। আবার খাবার তৈরির আগে-পরে, খাওয়ার আগে, অসুস্থ কারও সেবার পর, সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানোর আগে, নাক বা সর্দি পরিষ্কারের পর ভালো করে সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ লিকুইড দিয়ে হাত ধোয়া আবশ্যক।
আসছে ঈদুল আজহা। গরুর হাটও শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে এ ধরনের জনসমাগমস্থলে এ বছর অবশ্যই সরকারের বেঁধে দেওয়া বিধিনিষেধ ও স্বাস্থ্যবিধি মানা আবশ্যক। এ ক্ষেত্রেও প্রাধান্য পেয়েছে সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ লিকুইড দিয়ে হাত ধোয়া। একই সঙ্গে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরা। যাঁরা হাটে যাবেন, তাঁদের অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে এবং নিয়মিত বিরতিতে হাত ধুতে হবে। আর ঈদের দিন পশু কোরবানির আগে ও পরে এমনিতেই বেশ কিছু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার নিয়ম মেনে চলতে হয়।
করোনার প্রকোপ থেকে বাঁচতে এর সঙ্গে যোগ করতে হবে হাত ধোয়া। কারণ, সঠিক নিয়মে হাত ধোয়ার অভ্যাস করোনার সংক্রমণ থেকে নিরাপদ রাখতে পারে। কারণ, কোরবানির রয়েছে নানা পর্ব—মাংস বিলিবণ্টন, ধোয়া, সংরক্ষণ করা; পাশাপাশি আছে রান্না। ফলে প্রতিটি পর্যায়ে হাত ধোয়া অত্যন্ত জরুরি। ভালো করে সাবান–পানি দিয়ে হাত ধোয়ার মাধ্যমে ৩০ থেকে ৪৮ শতাংশ পর্যন্ত বিভিন্ন সংক্রামক রোগ কমানো সম্ভব। আর করোনার সময় তো কথাই নেই।
চলমান অতিমারিকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাত ধোয়ার প্রয়োজনীয়তা অনেকটাই আবশ্যক হয়ে উঠেছে। তাই আমাদের দৈনন্দিন জীবনে হাত ধোয়াকে নিয়মিত চর্চার মধ্যেই অন্তর্ভুক্তির সময় এসেছে। নিয়ম মেনে হাত ধোয়ার কারণে করোনার পাশাপাশি অন্যান্য সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়া থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। এসব বিষয়ে সরকারের পাশাপাশি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকেও সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে।
হাত ধোয়া প্রসঙ্গে অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে ত্বকের স্বাস্থ্য। এ জন্য ভালো মানের সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ লিকুইড ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উন্নত মানের হ্যান্ডওয়াশ লিকুইড ব্যবহারই উত্তম। তাতে সংক্রমণ প্রতিরোধের পাশাপাশি হাতের ত্বকের স্বাস্থ্য সুনিশ্চিত করা যাবে। তবে হ্যান্ডওয়াশ লিকুইড কেনার আগেও যাচাই করে নিতে হবে এর মান।
করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে আমাদের সবাইকে সচেতনভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। এ ক্ষেত্রে অন্যান্য নিয়মাবলি অনুসরণের পাশাপাশি আমাদের সবাইকে হাত ধুতে হবে। এর আসলেই কোনো বিকল্প নেই। একইভাবে মাস্ক পরাও অত্যন্ত জরুরি। স্বাস্থবিধি অনুসরণের ক্ষেত্রে হাত ধোয়া ও মাস্ক পরাকে সবার্ধিক গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় রাখতে হবে। নিরাপদে থাকা ও সংক্রমণ এড়ানোর জন্য নিজে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি পরিবারের সবাইকে সচেতন করতে হবে। উৎসবে আনন্দ অসচেতনতার জন্য মাটি হয়ে যাক, সেটা তো আসলেই আমাদের কারও কাম্য নয়।