What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

অস্ট্রেলিয়ার শীতকালীন দিনরাত্রি (1 Viewer)

uHCdNPE.jpg


বিষণ্ন স্বয়ং কুইন ভিক্টোরিয়াও।

অস্ট্রেলিয়ার ঠান্ডা যেন নাচুনে বুড়ি। নেচে নেচে তার তীব্রতা বাড়িয়ে চলেছে। আর তার ওপর আবার বৃষ্টি এবং ঝোড়ো বাতাস দিচ্ছে ঢোলে বাড়ি। ফলে ঠান্ডার প্রকোপ দিনে দিনে বেড়েই যাচ্ছে। শুধু একটা জ্যাকেট পরে এখন আর বাইরে যাওয়া যায় না। সঙ্গে পায়ের মোজা, কেডস তো থাকেই, উপরন্তু যোগ হয়েছে হাতমোজা এবং কানটুপি।

কানটুপিগুলোকে অস্ট্রেলিয়ায় বলে 'বিনি'। এখানে পোশাকের দোকানগুলোতে এই সময় বাহারি আকারের এবং রঙের বিনি পাওয়া যায়। আবার অনেকেই উল কিনে নিজে নিজে বানিয়ে নেয়। অবশ্য অনেকেই মাথায় টুপিওয়ালা হুডি জ্যাকেট পরে তাহলে আর আলাদাভাবে বাসা থেকে মনে করে বিনি নিয়ে বের হতে হয় না।

ZWO3D3V.jpg


সিডনির সার্কুলার কিয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম থেকে দেখা সিডনি হারবার, বৃষ্টির আবহাওয়ায় আকাশে বিষণ্ন মেঘেদের মেলা।

বাংলাদেশে সাধারণত মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের ফলে গরমে বৃষ্টিপাত হয়ে গরমটাকে একটু কমিয়ে দেয়। ফলে মানুষ শখ করে বৃষ্টিতে ভিজে শরীর–মন জুড়িয়ে নেয়। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় বৃষ্টি হয় শীতকালে। আরও সহজ করে বললে বৃষ্টিই নিমন্ত্রণ জানিয়ে শীতকে ডেকে নিয়ে আসে। ফলে এ বৃষ্টিতে ভেজার কোনো উপায় নেই। এ বৃষ্টিতে ভিজলে নির্ঘাত ঠান্ডা লেগে যাবে। এমনকি ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়ার মতো রোগবালাই হতে পারে। আর অস্ট্রেলিয়ায় ফ্লু খুবই সাধারণ ঘটনা। প্রতিবছর ফ্লুতে অনেক মানুষ মারা যায়। তাই প্রতিবছরই শীতের শুরুতে সবাই ফ্লুর টিকা নিয়ে নেয়। আর এবার তার সঙ্গে যোগ হয়েছে করোনার মতো প্রাণঘাতী ভাইরাস। তাই এইবার আরও বেশি সাবধানে বাসার বাইরে যেতে হয়।

s64ME2M.jpg


কুয়াশার চাদরে মোড়া বিখ্যাত সিডনি টাওয়ার।

আমি সাধারণত হুডিওয়ালা জ্যাকেট পরে বের হই। ঠান্ডা সহনীয় থাকলে আর হুডি মাথায় দিই না। তবে ঠান্ডা বেশি পড়লে হুডিটা মাথার ওপর তুলে দিই। কিন্তু এখন পর্যন্ত হাতমোজা পরার অভ্যাস করতে পারিনি। আর আলাদাভাবে বিনি বা কানটুপি পরার অভ্যাস কোনোকালেই ছিল না। কিন্তু এখানে আসার পর দেশ থেকে আনা একমাত্র কানটুপিটা খুব বেশি ঠান্ডা পরলে মাথায় দিই। এ কানটুপিটা আসলে একটা মাংকি ক্যাপ। মাথায় দিয়ে টেনে নিচে নামালে মাঝের ফাঁকা জায়গাটা দিয়ে শুধু মুখ আর নাক দেখা যায় কিন্তু মাথা থেকে শুরু করে ঘাড় পর্যন্ত ঢেকে যায়। ফলে খুবই আরামবোধ হয়। দিনের বেশির ভাগ সময় অফিসে থাকতে হয়। অফিসের শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের তাপমাত্রা সারা বছরই এমন থাকে যে অফিসের ভেতরে জ্যাকেট পরে চলাফেরা করতে হয়। এমন চিত্র এখানকার প্রায় সব অফিসেই।

c9d6kh0.jpg


জর্জ স্ট্রিটের জনমানবহীন ফুটপাত, যেখানে অন্যান্য সময় মানুষের ভিড়ে পা ফেলাই দায় হয়ে দাঁড়ায়।

সকাল আটটায় শুরু হয়ে অফিস শেষ হয় বিকেল পাঁচটায়। এর মধ্যে দুপুরে আধা ঘণ্টা খাবারের বিরতি। খাওয়ার পরও কিছুক্ষণ সময় হাতে থাকে। তখন বাইরে হাঁটাহাঁটি করে সময়টুকু কাটানো যায়। এখন বাইরে প্রচণ্ড শীত। তাই সবাই জ্যাকেট পরেই দুপুরে বের হয়। আমিও তাই করি। তবে মাঝেমধ্যে জ্যাকেট নিতে ভুলে যাই। আর বাইরে যদি সূর্যের আলো থাকে, তখনো নিই না। ২৭ জুন আমাদের বাসা মিন্টোতে সকালের তাপমাত্রা ছিল মাত্র ২ ডিগ্রি। ভোরে অফিসে যাওয়ার জন্য বাইরে এসে দেখি গাড়ির সারা শরীরে বরফের পুরো স্তর জমে চিকচিক করছে। আমি গাড়ির হিটার অন করে, বোতল থেকে পানি ঢেলে, ওয়াইপার চালিয়ে সামনের বরফ পরিষ্কার করে কোনোমতে স্টেশনে গাড়ি চালিয়ে গিয়েছিলাম। আজ সকালেই তাপমাত্রা ছিল ২ ডিগ্রি কিন্তু বরফ পড়েনি। তবে প্রচণ্ড কুয়াশা পড়েছিল। কুয়াশা এত ঘন ছিল যে সামান্য দূরের জিনিসও দেখা যাচ্ছিল না।

ADUg9zz.jpg


শীতের সকালের পুরু কুয়াশার স্তর।

অবশ্য বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে থাকে। আজকেও দুপুরে বাইরে রোদ দেখে আর জ্যাকেট নিলাম না। দিনের বেলার ঠান্ডার বিষয়ে আমার ভাবনা হলো জ্যাকেট না পরা। তাহলে শরীরে রোদের আঁচ লাগে তখন আর সেভাবে শীতবোধ হয় না। আজ যখন বের হচ্ছি, তখন সহকর্মী মিক দুপুরের খাবার শেষ করে ফিরছে।

আমাকে খালি গায়ে দেখে বলল, আজ কিন্তু অনেক ঠান্ডা। আমি একটা মুচকি হাসি দিয়ে এগিয়ে গেলাম। একটু পরে এখানকার একটা কয়লা মুরগির (চারকোল চিকেন) দোকানে মুরগি পোড়া (গ্রিল চিকেন) আর আলু ভাজির (পটেটো ফ্রাই, অস্ট্রেলিয়ায় বলে চিপস) অর্ডার করে বাইরে অপেক্ষা করতে শুরু করলাম। সবাই শীতের পোশাক পরে ঘুরছে, শুধু আমারই গায়ে শীতের পোশাক নেই। একটু পরে সেগুলোর সঙ্গে রসুনের ভর্তা (গারলিক সস) নিয়ে বেরিয়ে এলাম।

খাবার হাতে নিয়ে ভাবছিলাম কোথায় বসা যায়। শেষমেশ সিদ্ধান্ত নিলাম পার্কে গিয়ে বেঞ্চে বসব। পার্কের খোলা জায়গায় বাতাস লাগলেও রোদের আঁচটা পুরোপুরি পাওয়া যায়। পার্কের দিকে যাওয়ার পথে ফুটপাতে বিপরীত দিক থেকে আসা একজন বয়স্ক ভদ্রমহিলার সঙ্গে দেখা হলো। এখানে পথেঘাটে, ট্রেনে–বাসে পরিচিত–অপরিচিত সবার সঙ্গে কুশল বিনিময়ের সহবত আছে। আমিও ওনাকে দেখে শুভেচ্ছা জানালাম।

3GPkf74.jpg


শীতকালের বাহারি বিনি।

উনি আমাকে দেখে থমকে দাঁড়িয়ে বললেন, তোমাকে দেখেই আমার শীত করছে, আমি ভাবছি তোমার কেন শীত করছে না, তোমার শরীরের মধ্যে কি কোনো কিছু পুড়ে গিয়ে তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। আমি হো হো করে হেসে বললাম হতেও পারে। এরপর আমরা দুজনেই হাসতে হাসতে একে অপরকে বিদায় দিলাম। একটু পরেই দেখলাম এক ভদ্রলোক এই শীতের মধ্যেই পানি দিয়ে তার বাসার দেয়াল পরিষ্কার করছে। আমি বললাম, তোমার কি ঠান্ডা লাগছে না। উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমাকে দেখে সাহস পাচ্ছি। পাশেই দেখি ওনার বছর পাঁচেকের পুতুলের মতো একটা মেয়ে পানি নিয়ে খেলছে। আমাদের বাংলাদেশি মা–বাবা হলে এতক্ষণে চিৎকার করে পুরো বাড়ি মাথায় তুলত কিন্তু ওর বাবাকে দেখলাম খুশি। কারণ তার মেয়ে তাকে কাজে সাহায্য করতে চাইছে।

এরপর পার্কের বেঞ্চে বসে খাবার খেতে শুরু করলাম। অন্যান্য দিন অনেকের সঙ্গেই দেখা হয়। আজ আমার একটু দেরি হয়ে যাওয়াতেই মনে হয় আর কারও দেখা পেলাম না। এরপর একসময় খাবার শেষ করে পার্কের মধ্যে রাখা ডাস্টবিনে খাবার বাক্সটা ফেলে দিয়ে রাস্তার পাশের পানির কলে হাত ধুতে গেলাম। পানিতে হাত দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই প্রথম ঠান্ডাটা অনুভব করলাম। এরপর অফিস পর্যন্ত বাকি রাস্তাটুকু কাঁপতে কাঁপতে এলাম। আসলে এতক্ষণ ঠান্ডা টের পাইনি। কারণ ফুর্তিতে ছিলাম। আর ফুর্তিতে থাকলে অন্য অনেক অনুভূতিই আর তেমন প্রাধান্য পায় না, তাই আমিও ঠান্ডা টের পাইনি। এভাবেই আমাদের একেকটা দিন কেটে যায়। জীবন বয়ে চলে নদীর মতো। আর নদীর বাঁকে বাঁকে মানুষের দেখা হয় আর আমাদের জীবনে তৈরি হয় স্মৃতিময় সব মুহূর্ত। আর এভাবেই একটা জীবন সার্থক হয়ে ওঠে। কবির ভাষায় ...

'মানুষ ধর মানুষ ভজ শোন বলি রে পাগল মন
মানুষের ভিতরে মানুষ করিতেছে বিরাজন।'

* লেখক: মো ইয়াকুব আলী | সিডনি, অস্ট্রেলিয়া
 

Users who are viewing this thread

Back
Top