সব সময় একই নিয়ম মেনে চলা কি জীবনের ধর্ম হতে পারে? নিয়মের ব্যত্যয় তো ঘটতেই পারে কখনো–সখনো। এই যেমন ভিনদেশে চলছে ফুটবল খেলা। কোপা আমেরিকার খেলা দেখতে অনেকেই রাত জাগছেন, কারণ আমাদের রাত মানে ওখানে দিন। দেশের সঙ্গে নাই–বা মিলল সময়, রাত জেগেই খেলা দেখেন ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ। প্রিয় দলের খেলার রাতে জেগে থাকাটাও বুঝি এক উৎসব। কিন্তু খেলা দেখার জন্য রাত জাগার পর থেকে লক্ষ করলেন, ঘুমের বারোটা বেজে গেছে।
একটা ম্যাচের কথা ভাবা যাক। খেলা শেষ হতে হতে রাত গড়িয়েছে আপন গতিতে, কিন্তু টিভির খেলা শেষ হলেই কি ঘুমিয়ে পড়া যায়! এরপর খেলা নিয়ে হয়তো কথা চলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তর্ক-বিতর্কও। বাসার ড্রয়িংরুমে একাধিক সদস্য থাকলে খেলার রেশ থাকে আরও অনেকটা সময়। সেখান থেকে বিছানায় ফিরে খানিকটা প্রশমিত হয়ে এরপর না ঘুমের রাজ্যে গমন। কেউ হয়তো সেই সুযোগও পান না। অফিসে ছুটতে হয় গভীর ঘুমের বদলে ১ ঘণ্টার হালকা ন্যাপ (ঝিমুনি) নিয়েই।
ঘুমের ঘাটতি?
ঘুমের চক্রটি ঠিক করার জন্য কী করা যায়? খেলা না দেখার পরামর্শ দিলে সেটা শোনাবে মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলার মতো। মাঝেমধ্যে দু-এক রাত জেগে খেলা দেখলে খুব একটা সমস্যা নেই বলেই 'সবুজ সংকেত' পাওয়া গেল বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পার্থপ্রতিম দাশ বললেন, ঘুমের ঘাটতি হলে শরীরের ওপর কেমন প্রভাব পড়বে, তা নির্ভর করে বয়স ও শারীরিক অবস্থার ওপর। ঘুমের ঘাটতির কারণে একটু খিটমিটে এবং অমনোযোগী ভাব দেখা দিতেই পারে। ঘাটতি পূরণে তা ঠিক হয়ে যায়। তবে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্রোগ প্রভৃতি সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য রাত জেগে খেলা দেখাটা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
ঘুমের ঘাটতি এড়াতে
খেলা দেখা শেষে সেই রাতেই দীর্ঘ আলাপ বা তর্কবিতর্ক এড়িয়ে যেতে হবে সযত্নে। খেলা শেষ হলে সেই সময়ের মতো খেলা নিয়ে 'তুলকালাম কাণ্ড'কে তুলে রাখুন পরের দিনের জন্য। তবে খেলা চলাকালীন কিংবা খেলার ফলাফল নির্ধারিত হয়ে যাওয়ার পর কোনো সময়ই অধিক উত্তেজিত হবেন না। খেলা নিয়ে খেলোয়াড়োচিত মনোভাব রাখুন। মনে রাখুন, খেলা শেষ পর্যন্ত খেলাই, কোনো জীবন-মরণ বিষয় নয়। সহজভাবে নিলে খেলা শেষে সেই রাতে ঘুম আসবে সহজে। তা ছাড়া রাত জেগে খেলা দেখেছেন বলে পরের সারা দিন ঘুমাচ্ছেন, এমনটা যেন না হয়। সকালে হয়তো খানিকটা দেরি করে উঠলেন, কিন্তু একেবারে ঘুমিয়েই বেলা কাটিয়ে দেবেন না। দুপুরের আহারের পর ঘুমে লম্বা সময়ের জন্য ডুবে না যাওয়াই ভালো, তাতে রাতের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
ঠিকঠাক হোক ঘুমের চক্র
ঘুমের চক্র এলমেলো হয়ে গেলে তা ঠিক করতে পার্থপ্রতিম দাশের পরামর্শ—
- ঘুমের স্বাভাবিক সময়েই ঘুমাতে যান। মিনিট বিশেক সময়ের মধ্যে ঘুম না এলে একটু হাঁটুন, বই পড়ুন বা পছন্দের অডিও ক্লিপ শুনুন।
- বিছানা হতে হবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। সেখানে অন্য কিছু (যেমন: খাওয়াদাওয়া, পড়ালেখা) করবেন না। অবশ্য বইয়ে চোখ বুলাতে বুলাতে ঘুমের অভ্যাস মন্দ নয়।
- ঘুমের ২-৩ ঘণ্টা আগেই ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার শেষ করুন।
- ঘুমের সময় হালকা লাল আলো জ্বালিয়ে নিতে পারেন।
- ভালো ঘুমের জন্য রাতে চা-কফি এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
* রাফিয়া আলম, ঢাকা