What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

পারফিউমের বরপুত্র পিয়ের গারল্যাঁ (1 Viewer)

১৮২৮ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত ১৬৬ বছরে গারল্যাঁ ডাইনেস্টি পৃথিবীকে উপহার দিয়েছে প্রায় ৮০০ পারফিউম। আজ পারফিউমের বরপুত্র পিয়ের ফ্রাঁসোয়া প্যাসকাল গারল্যাঁর জন্মদিন।

TYTexfa.jpg


গারল্যাঁ, পুরো নাম পিয়ের ফ্রাঁসোয়া প্যাসকাল গারল্যাঁ। মোহময় পারফিউমের জাদুজগতে এক অবিস্মরণীয় নাম, জীবদ্দশাতেই হয়ে উঠেছিলেন কিংবদন্তি সৌগন্ধিক। পারফিউমশিল্পকে উন্নীত করেছিলেন অনন্য উচ্চতায়, দিয়েছিলেন এক আলাদা মাত্রা।

vLKTAQF.jpg


পারফিউমের বরপুত্র সৌগন্ধিক পিয়ের ফ্রাঁসোয়া প্যাসকাল গারল্যাঁ, ছবি: মেজোঁ গারল্যাঁ

মা–বাবার সঙ্গে থাকতেন প্যারিস থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার উত্তরে, আব্বেভিল নামের এক মফস্বল শহরে। ১৮১৭ সালে তিনি সবে ১৯ বছরে পা রেখেছেন। সেই তখনই তিনি তাঁর মা–বাবাকে তাঁর স্বপ্নের কথা জানিয়ে দিলেন। বললেন, প্যারিসে চলে যাবেন, সৌগন্ধিক হবেন, সৃষ্টি করবেন সৃষ্টিছাড়া সব সুগন্ধি। পারফিউমের কাব্যময় শিল্পের সাধনায় নিজেকে নিয়োজিত করবেন। নেশায় তখনই জড়িয়ে গেছে সৃষ্টির উন্মাদনা।

মা-বাবা উদ্বিগ্ন হলেন। বর্তমানে যেমন ১৮ বছর বয়সকে ফ্রান্সে প্রাপ্তবয়স্কের স্বীকৃতি দেওয়া হয়, সে সময় তা ছিল ২১ বছর। দূরের নগরী প্যারিস, সেখানে কেউ জানাশোনা নেই, কোথায় গিয়ে উঠবে? অচেনা–অজানা পরিবেশে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা হবে অসম্ভবকে সম্ভব করার মতোই। প্যারিস তখনই দর্শন, বিজ্ঞান, সাহিত্য, শিল্প, সংগীত, ফ্যাশনজগতের নামীদামি রথী-মহারথীদের তীর্থভূমি। সে নগরীর বনেদি মহলে ঠাঁই করে নিতে হলে নিতান্তই অনেক অভিজ্ঞ হতে হয়, গুণী, সচ্ছল এবং শুরুতেই সুধীমহলে কিছুটা নাম থাকতে হয়। তা ছাড়া মাত্র তারুণ্যে প্রবেশকারীদের সেখানে প্রবেশ করা অনেকটাই অলিখিত আইনে নিষিদ্ধ।

at8f6Fk.jpg


বুটিক গারল্যাঁ, ৬৮ অ্যাভিনিউ শঁজেলিজে, প্যারিস

বাবার ছিল মসলা ও টিনপাত্রের ব্যবসা। তিনি অনেকটাই হতাশ হলেন। ছেলে তাঁর ব্যবসার হাল ধরবেন, এই ছিল তাঁর আশা। নিতান্ত বালক বয়স থেকেই বাবার সেই মসলার দোকানটি ছিল পিয়ের গারল্যাঁর খুব প্রিয়, যেন এক অদ্ভুত সুগন্ধির জগৎ। ভেনিলা, শুকনো ফুল ল্যাভেন্ডার, জায়ফল, মৌরি, এলাচি, লবঙ্গ, পোস্তদানা, কালিজিরা, দারুচিনি, তেজপাতা, লেবু, কমলা, সেই সঙ্গে গোলাপের নির্যাস এবং নানা সুগন্ধি গুল্ম, বাহারি সব ঘ্রাণ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা একমনে শুঁকতেন এবং স্মৃতিতে ধরে রাখতেন মন উতাল করা সেসব সুগন্ধি–সৌরভ। আত্মজের এমন আত্মমগ্ন এবং প্রখর ঘ্রাণশক্তি পিতার দৃষ্টিকে ফাঁকি দিতে পারেনি। তাই তিনি ছেলের স্বপ্ন পূরণের পথে বাধা হতে চাইলেন না; বরং খুব করে উৎসাহ দিলেন।

এক কবোষ্ণ সকালে এসে উপস্থিত হলেন স্বপ্নের নগরী প্যারিসে। পিয়ের গারল্যাঁ জানতেন, বড় কিছু করতে হলে আগে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। ঝোঁকের মাথায় কিছু করতে গিয়ে পা ফসকে একবার নিচে পড়ে গেলে হয়তো সারা জীবন চলে যাবে পিচ্ছিল পথ বেয়ে ওপরে ওঠার চেষ্টায়। পায়ের নিচে শক্ত ভিত তৈরি করতে হবে। তাই প্যারিসে এসে বেশ কয়েক বছর দুটি পারফিউম প্রস্তুতকারক এবং ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। এ সময় তিনি বেশ অর্থ সাশ্রয় করে রসায়ন ও চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়াশোনার জন্য ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান। মাতৃভাষা ফরাসি হলেও ইংল্যান্ডে থাকাকালে রপ্ত করেন ইংরেজি। তিনি জানতেন, একাধিক ভাষা রপ্ত করতে পারলে জীবনে প্রতিষ্ঠা পেতে তা সহায়ক হয়।

6dkqO5K.jpg


কিসকিস লিপিস্টিক, ছবি: মেজোঁ গারল্যাঁ

১৮২৮ সালে পিয়ের গারল্যাঁ ৩০ বছরের যুবক, চিকিৎসক-রসায়নবিদ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি পান। সে বছরই তিনি প্যারিসে তাঁর প্রথম পারফিউম প্রস্তুত এবং বিক্রয় প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। সেই তাঁর যাত্রা শুরু। মগ্ন হয়ে পড়েন দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে। নীতিবাক্য হিসেবে তিনি তাঁর পণ্যের মোড়কে উৎকীর্ণ করেন দীর্ঘ একটি বাক্য, 'উত্তম পণ্য তৈরি করুন, গুণগত মানের সঙ্গে আপস করা যাবে না, সহজ ধারণাগুলো খুব যত্ন করে প্রয়োগ করুন'।

সৃষ্টিসুখের উল্লাসে পারফিউমের কাব্যময় রচনায় নিবেদিতপ্রাণ পিয়ের গারল্যাঁ নিসর্গ থেকে নিঃসরণ করেছেন শিল্পের নান্দনিক সুষমা। প্রাচীন জ্ঞান ও বিজ্ঞানের সমন্বয় করেন তিনি। নিজ প্রতিভার দীপ্তিতে একের পর এক সৃষ্টি করেন মন উতাল করা সব সুগন্ধি, প্রসাধনী। অনেকেই মনে রেখেছেন মনহারা সেসব সুগন্ধি—'সেনতুর দা সাম' (মাঠের ঘ্রাণ), 'বুকে দ্যু জাগদ্য দ্যু রোয়া' (রাজার বাগানের ফুলের তোড়া), 'নে মব্লিই পা' (ভুলো না আমায়), 'অডিকোলন ইম্পিরিয়াল' আর সৌন্দর্যচর্চার জন্য সুগন্ধি ক্রিম, পাউডারসহ আরও কত কিছুর নাম!

Q6FNa86.jpg


অডিকোলন ইম্পিরিয়াল, ছবি: মেজোঁ গারল্যাঁ

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করার লোশন উদ্ভাবন করে পিয়ের গারল্যাঁই প্রথম ফ্যাশনসচেতন নারীমহলে আলোড়ন সৃষ্টি করলেন। বেশ নাম করেছিল তাঁর তৈরি সদ্য প্রসূতি নারীদের স্তনের যত্ন নেওয়ার মলম এবং শীতে ঠোঁটের যত্নের জন্য গোলাপের নির্যাসে তৈরি সুগন্ধি তরল। নারী ও পুরুষেরা সৌন্দর্য, আর্দ্রতা এবং যত্নের জন্য ঠোঁট রঞ্জিত করতেন সেই পাঁচ হাজার বছর আগে থেকেই। তবে পিয়ের গারল্যাঁই প্রথম বাণিজ্যিকভাবে সুদৃশ্য টিউবে লিপিস্টিক উৎপাদন শুরু করেন।

ধীরে ধীরে প্যারিসের উঁচু মহলের গণ্ডি ছাড়িয়ে সুনাম ছড়িয়ে পড়ল ইউরোপের রাজরাজড়াদের মহলে। সুনাম ও সাফল্যের সঙ্গে যুক্ত হলো বিরল সব সম্মান, ভূষিত হলেন রাজ পদবিতে। ইউরোপ ছাড়িয়ে অতলান্তিকের অপর পাড়ে ছড়িয়ে পড়ল শিল্পসুষমায় ভরা গারল্যাঁর সুবাস। সেই ১৮২৮ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১৬৬ বছর পারফিউমের জগতের এই আইকনিক প্রতিষ্ঠান ছিল গারল্যাঁ পরিবারের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান। এ সময়ের মধ্যে পাঁচ পাঁচটি প্রজন্মের গারল্যাঁ ডাইনেস্টি পৃথিবীকে উপহার দিয়েছে প্রায় ৮০০ পারফিউম। এর মধ্যে আছে জগদ্বিখ্যাত সব সুগন্ধি, বিশেষ করে জিকি, শালিমার, নীল সময়, মিতসৌকো, গেরলিনাড, ছোট্ট কালো পোশাক, নাহেমা, লাল জামা ইত্যাদি।

e8TULJt.jpg


১৯০৪ সালে ক্রিমের বিজ্ঞাপন, ছবি: মেজোঁ গারল্যাঁ

পিয়ের গারল্যাঁ জন্মেছিলেন ১৭৯৮ সালের ১০ এপ্রিল। ৬৬ বছর বয়সে ১৮৬৪ সালের ২ নভেম্বর মোহময় এ জগৎ থেকে চিরবিদায় নেন। জীবদ্দশায় পিয়ের ফ্রাঁসোয়া প্যাসকাল গারল্যাঁ তাঁর অপার সৌন্দর্যবোধ আর উদ্ভাবনী চিন্তাশক্তি কাজে লাগিয়ে সৃষ্টির উল্লাসে রচনা করেছেন সুগন্ধের কাব্যময় ডালা, যার সুগন্ধে আজও পৃথিবীতে তিনি তাঁর উজ্জ্বল অস্তিত্ব ধরে রেখেছেন।
 
I love perfumes ebong gurleir nam ta khubi popular perfume jogote aj karon ta janlam
 

Users who are viewing this thread

Back
Top