যুগ যুগ ধরে পৃথিবীজুড়ে সমাদৃত হয়ে আসছে ফ্যাশনজগতের অভিজাত কিছু ব্র্যান্ড। দীর্ঘকাল ধরে মান ধরে রাখা, সেই সঙ্গে মৌলিক নকশায় মোড়া ব্র্যান্ডগুলো সব সময়ই জনপ্রিয়। ব্র্যান্ডের যে পোশাক পরে আছি কিংবা যে সুগন্ধির আবেশ ছুঁয়ে যাচ্ছে মনে অথবা যে জুতা জোড়া পথ চলতে পায়ে আরাম দিচ্ছে, সেগুলো সম্পর্কে আসলে কতটুকু জানি। তেমনই কিছু ব্র্যান্ডের কথা বলব আজ।
গুচি
ইতালিয়ান ফ্যাশন ব্র্যান্ড গুচি। হ্যান্ডব্যাগ, তৈরি পোশাক, জুতা, মেকআপ পণ্য, ঘড়ি, সুগন্ধিসহ নানা ধরনের পণ্য তৈরির জন্য বিখ্যাত এ ব্র্যান্ড। ২০২০ সাল শেষে এ কোম্পানির ব্র্যান্ড ভ্যালু দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ৮৫ টাকা ধরে হিসাব করলে বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় গুচি।
এটি বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন ইতালিয়ান ফ্যাশন ব্র্যান্ড। এটির নাম এখন কেবল উচ্চবিত্ত নয়, মধ্যবিত্তের মুখে মুখেও ছড়িয়ে পড়ছে। গুচির প্রতিষ্ঠাতা গুচিও গুচি ছিলেন ইতালির নামকরা ফ্যাশন ডিজাইনার ও ব্যবসায়ী। তাঁর নামের পরের অংশ থেকেই এই ব্র্যান্ডের নাম রাখা হয়। পরবর্তী সময়ে পৈতৃক সূত্রে গুচির মালিকানা পান গুচিও গুচির নাতি মরিৎসিও গুচি। মরিৎসিও গুচি বৈশ্বিক এ ব্র্যান্ডের আজকের এই অবস্থানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯৩ সালে তিনি বাহরাইনভিত্তিক বিকল্প বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টকর্পের সঙ্গে তখনকার সময়ের ১৭ কোটি ডলারের একটি বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এর দেড় বছর পর ১৯৯৫ সালে তাঁকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়। বর্তমানে গুচির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্কো বিজারি ও ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর আলেসান্দ্রো মিশেল। তাঁরাই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন গুচিকে।
নাইকি
খেলাধুলার সামগ্রী প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি সমাদৃত নাইকি। ২০২০ সালের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্র্যান্ড ভ্যালু নাইকির। কোম্পানিটির ব্র্যান্ড ভ্যালু ৩৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ২ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় পণ্য হলো জুতা। তবে মজার কথা, ১৯৬৪ সালে ব্লু রিবন স্পোর্টস নামে যখন এই কোম্পানি প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন এটি জুতা তৈরি করত না। ব্লু রিবন জাপানি কোম্পানির পণ্যের পরিবেশক হিসেবে কাজ করত। ১৯৭১ সালে ব্লু রিবন স্পোর্টস নিজেরা জুতা তৈরি করা শুরু করে। ওই সময় কোম্পানির নামও পরিবর্তন করা হয়। ওই সময় কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ফিল নাইট ও বিল বাওয়ারম্যান নতুন নাম রাখেন নাইকি। প্রাচীন গ্রিসে জয়ের দেবী হলেন নাইকি। সেখান থেকেই এ নাম এসেছে। এখনো নাইকির এমিরেটস চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন ফিল নাইট। প্রধান নির্বাহী জন জোসেফ ডোনাহো। ৬১ বছর বয়সী ডোনাহো মার্কিন ব্যবসায়ী।
লুই ভুইতোঁ
বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ও শক্তিশালী বিলাসবহুল ব্র্যান্ড লুই ভুইতোঁ। কিছুদিন আগেই উড়োজাহাজের আদলে তৈরি এর একটি ব্যাগ সত্যিকারের উড়োজাহাজের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয়েছে; এতটাই বিলাসী এর পণ্য। ফ্যাশনজগতে পুরুষ ও নারী উভয়ের ওপরই দুর্দান্ত প্রভাব তৈরি করেছে এই ব্র্যান্ড। লুই ভুইতোঁর প্রতিষ্ঠাতা লুই ভুইতোঁ ছিলেন একজন ফরাসি উদ্যোক্তা ও ডিজাইনার। তাঁর নামের দুই আদ্যক্ষর এলভি নিয়ে পরিচিতি পেয়েছে এই ব্র্যান্ড।
জীবনের শুরুটা কষ্টে কাটলেও তরুণ বয়স থেকেই সফলতা ধরা দিয়েছে তাঁর কাছে। ১৮৫২ সালে যখন নেপোলিয়ন ফরাসি সম্রাটের খেতাব গ্রহণ করেন, তখন তাঁর স্ত্রী লুই ভুইতোঁকে ব্যক্তিগত বক্স নির্মাতা এবং প্যাকার হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন। আর এর মাধ্যমেই অভিজাত ও রাজকীয় শ্রেণির মধ্যে প্রবেশ করেছিলেন লুই ভুইতোঁ। ১৮৫৪ সালে প্যারিসে নিজের ট্রাংক তৈরি ও প্যাকিংয়ের দোকান খোলেন লুই। সেই থেকে যাত্রা শুরু। বর্তমানে লুই ভুইতোঁর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী বারনার্ড আরনল্ট।
হুগো বস
১৯২৪ সালে জার্মান ফ্যাশন ডিজাইনার হুগো বস প্রতিষ্ঠা করেন 'হুগো বস'। জার্মানির মেটজিনে দুজন অংশীদার নিয়ে শুরু করা এই কোম্পানি প্রথমে শার্ট, জ্যাকেট, কাজের পোশাক, স্পোর্টসওয়্যার ও রেইনকোট তৈরি করত। তবে সে সময় জার্মানির অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো ছিল না। একসময় দেউলিয়া হয়ে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। পরে ১৯৩১ সালে ঋণদাতাদের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছান হুগো বস। ছয়টি সেলাই মেশিন দিয়ে আবার শুরু করেন। বর্তমানে ১১০টি দেশে এক হাজারের বেশি স্টোর রয়েছে হুগো বসের। পোশাক, সুগন্ধি, জুতাসহ নানা ধরনের পণ্যের জন্য বিখ্যাত হুগো বস। এখন হুগো বসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক ল্যাঙ্গার।
কেলভিন ক্লেইন
মার্কিন ব্র্যান্ড কেলভিন ক্লেইন ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। মার্কিন ফ্যাশন ডিজাইনার কেলভিন রিচার্ড ক্লেইন এটি প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর নামেই এ ব্র্যান্ডের নাম। ক্যারিয়ারের শুরুতে প্রথমে কিছুদিন চাকরি করেন। পরে কিছুদিন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করেছেন। একসময় গড়ে তোলেন কেলভিন ক্লেইন। পোশাক থেকে শুরু করে ডেনিম, সুগন্ধি, ঘড়ি, গয়নাসহ নানা ধরনের পণ্য তৈরি করে কেলভিন ক্লেইন। বর্তমানে কেলভিন ক্লেইনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেরিল আবেল হজেস।