What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

গরমে হিম হিম আইসক্রিমের গল্প (1 Viewer)

zr8iO7u.jpg


আইসক্রিম শব্দটি শুনলেই চৈত্রের দাবদাহের মধ্যেও কী যেন এক শীতল পরশ বয়ে যায় দেহ–মনে। হিমায়িত মিষ্টিজাতীয় খাবারটি ছেলে-বুড়ো সবারই যে খুব প্রিয়, তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ দিয়েছেন বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তাঁর মতো প্রকাশ্যে একটার পর একটা না খেলেও আইসক্রিমের প্রতি বুড়োদেরও যে বেজায় আকর্ষণ আছে, সেটা না বললেও চলে। শিশুদের কথা আর কীই–বা বলি। গ্রীষ্মের নিস্তব্ধ দুপুরে আইসক্রিমওয়ালার ডাক শুনে ছোটবেলায় কী করেছিলেন, সেটাই একবার ভেবে দেখুন না!

আইসক্রিমের আদি গল্প কিন্তু অতি প্রাচীন বলে জানা যায়। চায়না, ইরান, ইতালি, গ্রিস, ভারত—সব দেশেরই আছে আইসক্রিম নিয়ে নিজস্ব ইতিহাস। তবে সব অঞ্চলেই প্রাচীনকালে মানুষকে আইসক্রিমের জন্য পাহাড় থেকে আনা বা হিমায়িত জলাশয় থেকে খুঁড়ে নেওয়া বরফের ওপরে নির্ভর করতে হতো। সংগৃহীত বরফ বিশেষ উপায়ে হিমাগারে সংরক্ষণ করা হতো। তাই বরফের দুষ্প্রাপ্যতার জন্য আইসক্রিম জনসাধারণের নাগালের বাইরেই ছিল বলা যায়।

EiFZCqI.jpg


অভিজাত নারীরা আইসক্রিম খাচ্ছে। একটি ফরাসি ক্যারিকেচার, ১৮০১, ছবি: উইকিপিডিয়া

এরপর যখন আঠারো শতকে রেফ্রিজারেটরে বরফ জমানোর কায়দা জানা গেল, তখনই প্রথম সাধারণ মানুষ কনকনে ঠান্ডা আইসক্রিমের স্বাদ পেল। এরপর যখন উনিশ শতকে আইসক্রিম বানানোর মেশিন আবিষ্কার হয়ে গেল, তখন এই ক্রিমি স্বাদের আধুনিক যুগের চিরচেনা আইসক্রিম যুগের শুভসূচনা ঘটল। তবে সত্যি কথা বলতে গেলে, সাধারণভাবে আমরা সব ধরনের ফ্রোজেন ডেজার্ট বা হিমায়িত মিষ্টিজাতীয় খাবারকেই আইসক্রিম বললেও এগুলোর আছে বৈচিত্র্যময় রকমফের। তাই ইতিহাসের ঘটনাপ্রবাহ পাশে রেখে এবার বরং প্রধান কয়েকটি হিম হিম আইসক্রিমের সঙ্গে পরিচিত হওয়া যাক।

শেভড আইস বা কুচো বরফের আইসক্রিম

zltSYjk.jpg


শেভড আইস, ছবি: সংগৃহীত

বরফকে কুরিয়ে মিহি তুষারের মতো পেঁজা ভাব এনে তাতে ফলের রস, বিভিন্ন পানীয়, সিরাপ, রকমারি ফ্লেভার ইত্যাদি মিশিয়ে প্রথমে হিমায়িত মিষ্টি খাবারের চল হয়েছিল। অঞ্চলভেদে এতে দুধ, বিভিন্ন ফল, বাদাম, মধু, জেলি, গম, চালের আটা বা সাবুর তৈরি বুন্দিয়া, সেমাই বা ফিরনির মতো খাবারও মেশানো হতো। কুচানো বরফ দেওয়া এমন সব মিষ্টি খাবারের মধ্যে প্রসিদ্ধ হচ্ছে পারস্য ও আমাদের উপমহাদেশের ফালুদেহ বা ফালুদা, ফিলিপাইনের হালো হালো, জাপানি কাকিগোরি ইত্যাদি। তবে এগুলো ঠিক সে অর্থে আইসক্রিম নয়। বরং পাশ্চাত্য দেশে স্নো কোন বা স্নো বল এবং আমাদের অঞ্চলের গোলা বা চুস্কি আইসক্রিমে কুচানো বরফ চেপে চেপে আকৃতি দিয়ে তাতে বিভিন্ন ফলের রস, রঙিন সিরাপ দিয়ে খাওয়া হয় যুগ যুগ ধরে। আমাদের দেশে সেই চল্লিশ-পঞ্চাশের দশক থেকেই এই গোলা আইসক্রিম খুবই জনপ্রিয়। ইতালিয়ান গ্রানিতা আইসক্রিমে অবশ্য আগে থেকে ফ্লেভার দেওয়া বরফকেই কুচিয়ে বাটিতে দেওয়া হয় খেতে।

আইস ললি বা কাঠি আইসক্রিম

ফলের রস বা দুধ জমিয়ে বরফ করে নিলেই পপসিকল, আইস ললি বা সোজা বাংলায় কাঠি আইসক্রিম হয়ে যায়। এই আইসক্রিমের শুরুর গল্পটি কিন্তু ভারি মজার। সেই ১৯০৫ সালে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া অঞ্চলের ১১ বছর বয়সী ছোট এক ছেলে তার পানিতে গোলানো পাউডার সোডার গ্লাসটি একটি নাড়নকাঠিসহই বাইরে ফেলে গিয়েছিল ভুলে। বরফে ঢাকা সেই স্থানে রাখা গ্লাসটির পানীয় তীব্র ঠান্ডায় জমে একেবারে বরফ হয়ে গিয়েছিল। পরদিন বেরিয়ে কাঠিসহ সেই মিষ্টি মজাদার বরফ খেয়ে অভিভূত কিশোর ফ্র্যাংক এপারসন বড় হয়ে পপসিকলের পেটেন্ট নিয়ে তা বাণিজ্যিকভাবে বিক্রয়ের সূচনা করেছিলেন।

jaCZh0P.jpg


আইস ললি

এ ধরনের আইসক্রিম আমাদের দেশে সেই ষাটের দশক থেকেই পাওয়া যায়। বিভিন্ন রং ও ফ্লেভার দেওয়া চিনি-পানি বা দুধ জমিয়ে বাঁশের চ্যাপ্টা কাঠি দেওয়া আইসক্রিম সবার খুব প্রিয় ছিল। পরে অরেঞ্জ ফ্লেভার, লেমন ফ্লেভার, ওভালটিন দুধ আর নারকেল দুধের বেবি আইসক্রিম কোম্পানির আইস ললি খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠল এ দেশে। এ পথ ধরে ষাটের দশকে ইগলু এসে দেশের আইসক্রিম জগৎটি পাল্টে দিল একেবারেই। পরে ধীরে ধীরে দেশের আনাচকানাচে সব জায়গায় জনপ্রিয় হয়ে উঠল এবং সুলভে মিলতে লাগল কাঠি আইসক্রিম বা আইস ললি।

কুলফি

ঘন দুধ, মালাইয়ের সঙ্গে চিনি, এলাচিগুঁড়া, গোলাপের নির্যাস, পেস্তা, কাজু, কিশমিশ, কাঠবাদাম এবং ক্ষেত্রবিশেষে আমের মসৃণ ঘন ক্বাথ মিশিয়ে আইস ললির প্রক্রিয়াতেই ছাঁচে জমিয়ে কুলফি বানানো হয়। তবে এ ক্ষেত্রে দুধের মিশ্রণটি খুব ঘন হওয়ার ফলে এই বরফ জমাট বাঁধার প্রক্রিয়াটি কিছুটা ধীরগতির হয়। এতে করে কুলফির বিশিষ্ট মসৃণ ক্রিমি ব্যাপারটি সাধারণ দুধের কাঠি আইসক্রিমের চেয়ে বেশি পাওয়া যায়। কুলফি আসলে ফারসি শব্দ, যার অর্থ ঢেকে রাখা বা আচ্ছাদিত। কুলফি আসলেই ঢাকা ধাতব ছাঁচেই জমানো হয় যুগ যুগ ধরে।

Sc3imFA.jpg


কুলফি

জানা যায় যে উপমহাদেশে ষোলো শতকে মোগল প্রভাবেই প্রথমে কুলফির প্রচলন হয়। একেবারেই রাজকীয় স্বাদের এই হিমায়িত মিষ্টান্ন ধাতব ছাঁচে পুরে তাপনিরোধী বড় বাক্সে বরফ আর লবণের মিশ্রণে ডুবিয়ে রেখে জমানো হতো। এই লবণের কাজ হচ্ছে কুলফির ছাঁচটিকে ঘিরে রাখা বরফের হিমাঙ্কে নামিয়ে এনে কুলফি ভালোভাবে জমাতে সাহায্য করা। উনিশ শতকের প্রথম দিকে ভারতীয় উপমহাদেশে বরফকল প্রতিষ্ঠার পর আমাদের দেশে ত্রিশ-চল্লিশের দশক থেকে বড় মাটির মটকায় লবণ-বরফে চুবানো কুলফি পাওয়া যায় দেদারসে। আজকাল আর আধুনিক আইসক্রিমের দৌরাত্ম্যে মালাইয়ে ভরপুর মটকা কুলফির দেখা মেলা ভার।

আইসক্রিম

এবার আসা যাক সত্যিকারের আক্ষরিক অর্থেই যাকে আইসক্রিম বলা যায়, তার প্রসঙ্গে। একেবারে মসৃণ, ক্রিমি ও মুখে মিলিয়ে যাওয়া আইসক্রিম বানানোর জন্য হস্তচালিত আইসক্রিম ফ্রিজার প্রথম বানিয়েছিলেন ন্যান্সি জনসন (২৮ ডিসেম্বর, ১৭৯৪– ২২ এপ্রিল, ১৮৯০) নামের এক মার্কিন নারী, ১৮৪৩ সালে। এটি তিনি নিজের নামে পেটেন্ট করেন আমেরিকায়। এ যন্ত্রে সহজে আইসক্রিম বানানো যেত। এরপর উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ধীরে ধীরে বাণিজ্যিকভাবে আইসক্রিম উৎপাদন ও বিপণন শুরু হয়ে যায়।

zb9LRiQ.jpg


ন্যান্সি মারিয়া ডোনালডসন জনসন, ছবি: উইকিপিডিয়া

আইসক্রিমের ব্যাকরণ অনুযায়ী, অন্তত ১০ শতাংশ দুগ্ধজাত চর্বি বা মিল্কফ্যাট থাকলেই কেবল তাকে আইসক্রিম বলা যাবে। এই মিল্ক ফ্যাট, ডিম, দুধ, বিভিন্ন ফ্লেভারের জন্য মনমতো উপকরণ আর চিনি মিশিয়ে ক্রমাগত ঘুরিয়ে ফেটিয়ে জমিয়ে তৈরি করা হয় আইসক্রিম। এই প্রক্রিয়া চার্নিং নামে পরিচিত। এর ফলে বরফের দানা বা স্ফটিকগুলো বড় হয়ে জমতে পারে না। আর এই সূক্ষ্ম স্ফটিকগুলো মিল্কফ্যাট আর দুধের পানির মসৃণ ফেটানো মিশ্রণ বা ইমালশনের মধ্যে ডুবে থাকে।

SMEr7Vn.jpg


অন্তত ১০ শতাংশ দুগ্ধজাত চর্বি বা মিল্কফ্যাট থাকলেই কেবল তাকে আইসক্রিম বলা যাবে

পুরো বিশ্বে অসংখ্য ফ্লেভারের আইসক্রিম খেয়ে থাকে বিশ্ববাসী। বিভিন্ন উপাদেয় ফল, দুধ, বাদাম ইত্যাদি ছাড়াও অদ্ভুত অদ্ভুত আইসক্রিম পাওয়া যায় বিভিন্ন দেশে। যেমন ঝাঁজালো ওয়াসাবি আইসক্রিম, চারকোল দেওয়া মিশকালো আইসক্রিম, উৎকট গন্ধের ডুরিয়ান আইসক্রিম, নোনতা স্বাদের চিজ আইসক্রিম ইত্যাদি। আমাদের দেশে ইগলু আর পোলার কোম্পানির হাত ধরে এই প্রথাগত আইসক্রিম অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আর এখন তো হাডজেন ডাস বা মুভ এন পিকের মতো বিশ্বখ্যাত সব ব্র্যান্ডের আইসক্রিমও পাওয়া যায় এ দেশে। আবার এই ভ্যানিলা আইসক্রিমের ওপরে মচমচে চকলেটের পাতলা আবরণ দেওয়া চক আইস বা চকবার সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও তুমুল জনপ্রিয়। আবার পাতলা ওয়েফার বিস্কুট দিয়ে বানানো কোনে স্কুপ ভরে দেওয়া কোন আইসক্রিমতো আরেক মাত্রা এনে দিয়েছে আইসক্রিমের দুনিয়ায়।

জেলাটো

RwWMlfG.jpg


ইতালীয় আইসক্রিম জেলাটো, ছবি: উইকিপিডিয়া

ক্ল্যাসিক আইসক্রিমের ইতালীয় সংস্করণ জেলাটোর কথা না বললেই নয়। সারা বিশ্বের আইসক্রিম বোদ্ধাদের কাছে জেলাটোর এক অন্য রকম আবেদন আছে। কথিত আছে, সেই ষোলো শতকেই প্রোকোপিও নামের এক ইতালীয় মিষ্টির কারিগর তাঁর ক্যাফে প্রোকোপে প্রথম জেলাটো পরিবেশন করেছিলেন। জেলাটোতে আইসক্রিমের মতো মিল্কফ্যাট না ব্যবহার করে দুধ দেওয়া হয়। আর আইসক্রিমের মতো অত ফেটানো হয় না। তাই জেলাটোর ফ্লেভার বেশ ভালো রকম বোঝা যায়। জেলাটো কিন্তু আইসক্রিমের চেয়ে আরও একটু নরম অবস্থায় পরিবেশন করা হয়। ইতালিয়ান হিমায়িত ডেজার্ট সেমিফ্রিডোতেও এর ব্যবহার রয়েছে। সারা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশেও এখন ক্লাব জেলাটোর মতো অভিজাত জেলাটো পারলার রয়েছে অনেক।

সরবেট

5qYR1qY.jpg


রাস্পবেরি সরবেট, ছবি: উইকিপিডিয়া

ফলের ক্বাথ আর চিনির সঙ্গে কোনো দুগ্ধজাত উপকরণ ব্যবহার না করেই চার্নিংয়ের মাধ্যমে তৈরি করা হয় সরবেট বা শেরবেট–জাতীয় আইসক্রিম। এতে দুধের চর্বির ইমালশন গঠিত হওয়ার সুযোগ নেই বলে সরবেটকে মসৃণ আর মোলায়েম করা বেশ কঠিন। এতে চিনির ঘনত্বের ফলে বরফের হিমাঙ্ক নেমে আসার বৈজ্ঞানিক জ্ঞানটি কাজে লাগানো হয়। এতে চিনির শিরার জলীয় অংশ দ্রুত বরফের স্ফটিক তৈরি করতে শুরু করায় দ্রবণের শিরা আরও ঘন হতে থাকে। আর সঙ্গে যদি ফলের পাল্প বা ক্বাথটি আম, পিচ ইত্যাদি ফলের মতো আঁশযুক্ত ও ক্রিমি হয় অথবা স্ট্রবেরির মতো প্রাকৃতিকভাবে জেল তৈরি করতে পারে, তবে তো কথাই নেই। কিন্তু লেবুর রসের মতো অম্লীয় ও তরমুজের মতো পানিসর্বস্ব ফলের সরবেট তৈরি করতে চিনির বেশি ঘন শিরা আর বেশ খানিকটা মুনশিয়ানার প্রয়োজন পড়ে।

আইসক্রিমের আবেদন আসলে শুধু সর্বজনীন নয়, একেবারে বিশ্বজনীন। গরমকালে হিমশীতল আইসক্রিমের তুলনা আর কিছুর সঙ্গেই দেওয়া যায় না। আইসক্রিম প্রিয়জনের মুখে নিমেষেই হাসি ফোটাতে পারে সুলভে। পরীক্ষায় ভালো ফলাফল, জন্মদিন বা যেকোনো খুশির খবর আইসক্রিমের সঙ্গে উদ্‌যাপিত হলে যেন খুশি কয়েক গুণ বেড়ে যায়। তাই চলুক হিম হিম আইসক্রিমের জাদু, ভরে যাক খুশি সবার জীবনে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top